এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৈঠকি আড্ডায় ১৫ 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ মে ২০২৪ | ৪২৯ বার পঠিত
  • বৈঠকি আড্ডায় ১৫

    পোষাকে আশাকে

    গুরু মশায় বলিলেন,  এটা কি নাট্যশালা ?  

    নয়ের দশকের শেষ দিকে  লন্ডনের ব্যাঙ্কে  হাজিরা দেবার জন্য আবশ্যিক ইউনিফরমের বিধি ঢিলে হলো- নারী পুরুষ তাঁদের যেমন খুশি তেমনি বেশে আসতে পারেন,সুট বা সুরম্য ড্রেস পরে আবির্ভূত হওয়া আর বাধ্যতামূলক নয় । শর্ত: পোশাক হবে স্মার্ট ক্যাজুয়াল।  স্মার্টের বাংলা হয় না অতএব বলা যায় , আরামদায়ক ভব্য পোষাক,   হয়তো  টাই  বাদ। এই স্মার্ট ক্যাজুয়াল বলতে ঠিক কি বোঝায় সে সম্পর্কে আমাদের কারো খুব স্পষ্ট ধারণা ছিল না।  টাই না হয় বাতিল কিন্তু জ্যাকেট পরা প্রয়োজন ? সেটা কি ট্রাউজারের সঙ্গে মিলিয়ে , না ম্যাচ করে? কেমন জুতো ? ব্রাউন জুতো বাতিল? ফিতে ওলা কালো না পায়ে গলিয়ে নেওয়া , সে কালের পাম্প শু? সুইজারল্যান্ডের ফিনিশিং স্কুলে উঁচু ঘরানার বালিকাদের ব্রেকফাস্টের পোশাকে আস্তিন কনুইয়ের কতটা ওপরে থাকা বাঞ্ছনীয় সেটাও শেখানো হয়। কোনো  অফিসে বা ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানে এটিকেট তথা  স্মার্ট ক্যাজুয়ালের  বিস্তৃত  বিবরণ নিয়মিতভাবে নথিবদ্ধ করার জন্য দফতর তৈরি হয় নি।  এর টেকনিকাল দায়িত্ব পারসোনাল দফতরের , তারা  আমাদের কাউকে মুখে বা ইমেলে জানায় নি ।

    গুরু বাক্যি মনে পড়ল।

    জলপাইগুড়ির স্টেট ব্যাঙ্কে সবে চাকরি জীবন শুরু হয়েছে। আমাদের পরম পূজনীয় , আমার প্রথম ব্যাঙ্কিং গুরু অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার ব্যানারজিদা আমাদের মতন কয়েকজন অর্বাচীন ট্রেনি অফিসারদের বলেছিলেন, ‘ একদিন তোমরা লোক চালাবার দায়িত্ব পাবে সেটা হবে তাদের দুর্ভাগ্য ।  ব্যাঙ্কের হিসেবপত্র লেখা জোখার ম্যানুয়াল আছে কিন্তু প্রতিদিনের নানান  পরিস্থিতিতে কখন কি করনীয় সেটা আমাদের ব্যাঙ্কের কোন কেতাবে লেখা নেই।  ব্যাঙ্কের আদি পুরুষ , স্কটিশ ব্যাঙ্কাররা, সে নিয়ে মাথা ঘামানো প্রয়োজন মনে  করেন নি – তাঁরা রাজ প্রতিভূ , হাতে মাথা কাটবার অধিকার নিয়ে আমাদের এই পোড়া দেশে আবির্ভূত হয়েছিলেন । তোমাদের চলতে হবে অত্যন্ত সন্তর্পণে । কোন স্টাফের বেয়াড়া আচরণ দেখলে তাকে  শায়েস্তা করবে , না ঘটনাটি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নিজের  চায়ের পেয়ালায়   চুমুক দেবে সে বিবেচনা একান্ত তোমারই । কোন গণ্ডগোল বা স্ট্রাইক অ্যাকশন হলে অবশ্যই ওপরওলার বকুনি জুটবে – কেন এটাকে সামলাতে পারেন নি ?

    তাহলে কি করনীয় ? ব্যানারজিদা মৃদু হেসে বলেছিলেন, এই রণাঙ্গনে তুমি একা ।

    অ্যাক্ট উইথ ট্যাকট ।

    এই চূড়ান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশে কে কোন পোশাক  পরবে , বিশেষ করে মহিলারা, তা মিটিং ডেকে ঘোষণা করতে পারি না, বোর্ডে লিখে দেওয়া অকল্পনীয় । তুল কালাম ঘটতে কতক্ষণ ।  দৈনিক সান পত্রিকায় বেনামে লেখা হবে , “ লন্ডনের ব্যাঙ্কে স্বৈর শাসন , ভারতীয় মূলের অফিসার দ্বারা নারী মর্যাদার অপমান “। আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি । অতএব অত্যন্ত ট্যাকটফুলি আমার তৎকালীন সেক্রেটারি , বারমিংহামের মারিয়া লালিকে কে বললাম,  তুমি এটা একটু হাওয়ায় ভাসিয়ে দাও দিকি। আমি বলেছি কেউ যেন জিনস অথবা  ট্রেনার জুতো পরে না আসে ।

    মেয়েদের পোশাক সংযত , আর ছেলেদের ক্ষেত্রে টাই বাদে সুট পরলেই সেটা ইনফরমাল হয়ে গেলো অথবা কম্বিনেশান – রঙ মিলিয়ে জ্যাকেট ও ট্রাউজার।  টি শার্ট আউট অফ কোয়েসচেন , পুরো হাতা শার্ট কিন্তু  টেকনিকলার জামা বাদ । কালো বাদামি  যাই হোক না কেন, পরতে হবে  বন্ধ জুতো ।

    প্রসঙ্গত , ক্যালকাটা ক্লাব এই প্রকারের দোলাচলে কখনো ভোগে  নি।  ক্লাবের পোশাক পর্যবেক্ষন  কমিটি সকালে উঠে শোয়াশো বছর আগে লিখিত , সযত্নে রক্ষিত , ড্রেস কোড  ম্যানুয়াল পাঠ করে থাকেন। যেই আপনি রিসেপশান পার হয়ে দুই পা ফেলেছেন, কলকাতার মান মর্যাদা রক্ষায় বদ্ধ পরিকর সেই  সিভিক সোসাইটির দুই সদস্য আপনার  পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিয়ে জানাবেন আপনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ না ফেল । সেবার আমার সুপুত্র ইন্দ্রনীলের  সজ্জা ভালো করে দেখতে গিয়ে তার পদযুগলে তাঁদের দৃষ্টি আটকে গেল । মাথা নেড়ে একজন  জানালেন ক্লাবে স্পোর্টিং জুতো  পরে প্রবেশ নিষেধ,  তবে সে যদি নিতান্ত ক্ষুধার্ত বোধ করে, এই পবিত্র ভূমিকে কলুষিত না করে পিতার সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে পারকিঙ্গকে পাশ কাটিয়ে ডান হাতে একটা রেস্তোরাঁয় সে যেতে পারে – তাঁরা ক্ষমা ঘেন্না করে ঢুকতে দেবেন।

    অবাক হই না, আজও আমার চেনা লন্ডনের ইস্ট ইন্ডিয়া ক্লাব,  লন্ডন ক্যাপিটাল ক্লাব এমনকি এম সি সি সেই একই ধারায় চলে। এম সি সির প্যাভিলিয়নে সুট আবশ্যিক নয়,  কম্বিনেশন মানানসই  তবে টাইটি পরতে হবে । স্যাভয় হোটেলের রিভার রুমে ভিন্স রাইট নামের এক ব্যাঙ্কারের সঙ্গে বসেছি – বেজায় গরম এবং কোন কারণে এয়ার কন্ডিশন বন্ধ , টেমস সামনেই (তাই  তো রিভার রুম !) কিন্তু সেদিকের জানলা বোধ হয় দুশ বছরে খোলা হয় নি। ভিন্স বললে এই গরমে জ্যাকেট গায়ে রাখা যায় না ।  প্রায় একই মুহূর্তে আমরা দুজনে উঠে দাঁড়িয়েছি কোট ত্যাগ করার মানসে । তৎক্ষণাৎ  যেন মাটি  ফুঁড়ে দুই দৈত্যাকার ওয়েটার আমাদের পেছনে এসে আধখোলা জ্যাকেটটি আবার  পরিয়ে দিয়ে বললে, " ইউ ক্যান নট টেক ইট অফ , সার । দিস ইজ রিভার রুম।"  লন্ডন  ক্যাপিটাল ক্লাব ( উঠে গেছে বছর কয়েক আগে ) অবিশ্যি  একটু সহৃদয়  ছিল – জুতো নয়, কয়েকটা জ্যাকেট ও টাই রাখা থাকত রিসেপশানের পেছনের আলমারিতে ।  দীর্ঘ দিন কুঠুরিতে আবদ্ধ থেকে গন্ধময়  সেই জ্যাকেট আপনার শার্ট প্যান্টের সঙ্গে রঙ মিলান্তি না খেলতে  পারলেও সেটি পরিধান করে ক্লাবের মান রক্ষা করার সুযোগ দেওয়া হতো আপনাকে। 

    কণ্ঠ লঙ্গোঠি  নেই বলে সেই মুক্তির আনন্দে জামার দুটো বোতাম  খুলে দেওয়ার বাসনা জেগে ওঠে। বউ বার বার বলে দিয়েছে সভ্য সমাজে শার্টের একটা বোতামও খুলে রাখা বেয়াদপির পরিচয়। তবে আপিসে এসে জ্যাকেটটি  কোথাও ঝুলিয়ে রেখে কাজকর্ম করার অভ্যেসটি যত দূর জানি বিশ্বময় চালু। রোমের সরকারি  অফিসে কোন পাউলো বা আন্তনিও সিটের  পেছনে জ্যাকেট টাঙ্গিয়ে দিয়ে নিজের ভেস্পা স্কুটারে চড়ে অন্য কোম্পানির হয়ে বিল কালেকশনের কাজে বেরিয়ে পড়েন, সেটাই তাঁদের  আসল কাজ, সরকারি খাতা  লেখাটা অতিরিক্ত ; এসেছিলে তবু আসো নাই, জানায়ে গেলে।  এককালের রাইটার্সে চাদর বাঁধা বাবুর মতো । বিকেল বেলা নাগাদ পাউলোরা সরকারি অফিসে ফেরেন , দুটো কাজ কম্ম করে এবার  ভেস্পা স্কুটারে বাড়ি।

    আমাকে জ্যাকেট গায়ে দিতে দেখলে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কে দীর্ঘদিনের ( পনেরো বছর ) সেক্রেটারি লিন জিজ্ঞেস করতো, ‘ আর ইউ গোয়িং আউট ?’  আপিসের বড়ো সায়েবের ডাক পড়লেও সেটা লাগে না। ব্রিটেনে কোন লিখিত সংবিধান নেই;  নিজের মনে আমি ক্যাজুয়াল পোশাকের একটা  সীমা সরহদ্দ মেপে নিয়েছি । অন্যেরা মাইন্ড রিডার নয় । সে অনুমান করা বাতুলতা ।  তবু চেষ্টা করি আমার অফিস যেমন খুশি সাজোর প্রতিযোগিতায় যেন পরিবর্তিত না হয় ।

    একদিন সেই অনর্থের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল,  উদ্ধার করে আনে-সোফি ।

    আনে-সোফির বাবা কমারতসবাঙ্কের পেটার শিকানেদার কাজের ব্যাপারে  প্রতিযোগী হলেও  ব্যক্তিগত ভাবে আমার বিশেষ বন্ধু। পেটার জার্মান , বউ ফরাসিনি।  ছেলে মেয়েদের চিনি । একদিন ওয়াটারলু স্টেশনে পেটারের সঙ্গে দেখা। সে বললে মেয়েটা পড়াশোনা শেষ করে আমাকে এ টি এমের মানবিক অবতার ধরে নিয়ে এখানে ওখানে উড়ে বেড়াচ্ছে,  কাজকর্মের কোন চেষ্টা নেই । আমি বললাম আনে - সোফিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও , কাজ শিখুক ছ মাস । ইন্টার্ন কিন্তু মাইনে দিতে পারব না। পরের সপ্তাহে সে হাজির।  বাড়ি থেকে খাবার এনেছে দেখে বললাম দুপুরে আমাদের ক্যানটিনেই খেয়ো । পেটার বলবে আমার মেয়েকে বেগার খাটায় , দুটো খেতে অবধি দেয় না। তোমার ফরাসি মায়ের রান্নার চেয়ে হয়তো অনেক খারাপ হবে যদিও। তার এই প্রথম চাকরি – প্রফেশনাল এটিকেট সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আনে-সোফি আমাকে  তুমি ( দু ) বলে, তাদের  বাড়িতে যেমন বলেছে ।  কোন  জার্মান অভ্যাগত শুনে অবাক হতেন । তাদের বলেছি  এ আমার দত্তক কন্যা।

    বেশ গরমের একদিনে  আমাদের এক হাঙ্গেরিয়ান সামার ট্রেনি এমন বেশভূষায় হাজির হয়েছে যা সমাজ সম্মত কিনা জানি না, তবে অফিসের ডেকোরাম বহির্ভূত। আনে-সোফিকে ডাক দিলাম - ‘ একমাত্র তোমাকেই বলতে পারি-  সিলভিয়ার ড্রেস দেখেছো ?  আমার নাম না করে তাকে বলো   হয় সে আজ বাড়ি ফিরে যাক,  নয় কাছাকাছি কোন দোকানে গিয়ে একটা লম্বা শার্ট কিনে গায়ে দিক,  আমি দাম দেবো ।‘

    আনে-সোফি হেসে অস্থির । সে গিয়ে কি যে বোঝাল জানি না , বিকেলের দিকে দেখলাম সিলভিয়া একটা ঢোলা  জামা গায়ে দিয়েছে, আমাকে দাম দিতে হয় নি । ছেলেদের ব্লু জিনস বারণ কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে ? আজকাল তো সকল মহিলা  ট্রাউজার পরেন, তার কোনটা জিনস বুঝি কেমনে ! এক গেঁয়ো মানুষকে হাই ফ্যাশন , অত কুতুর ( haute couture ) বোঝাল  আনে- সোফি  –  ছেলেদের ব্যাপারে যাই হোক না কেন, মেয়েদের ট্রাউজারের ক্ষেত্রে কোনটা  জিনস,  কোনটা নয় এই নিয়ে খবরদার আমি যেন কোন বিতণ্ডার সূচনা না করি , তাতে আমার  সমূহ বিপদের সম্ভাবনা আছে!

    বিনা বেতনে ছ মাস কাজ করে আনে - সোফি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কের  ম্যানেজমেন্ট ট্রেনির পরীক্ষা পাশ করে সবেতন  পদে যোগ দেয়। কিছু হয়তো শিখেছিল! পরে মিউনিকে বায়ারিশে মোটোরেন ভেরকেতে  ( বি এম ডব্লিউ)  ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং দফতরে যোগ দেয় । ফেয়ারওয়েলের দিনে সর্বসমক্ষে কান্নাকাটি করে আমাকে রীতিমত বিড়ম্বনায় ফেলেছিল।  

    ১৯৯৯ সাল নাগাদ ড্রেস ডাউন ফ্রাই ডে দিয়ে যা শুরু হয়েছিল, বছর ঘুরতেই সেটা হয়ে দাঁড়ালো ড্রেস  ডাউন এভরি ডে !  আমার আপিসের আলমারিতে একটি সভ্য কালচে জ্যাকেট এবং কয়েকটা টাই রাখা শুরু করলাম , খদ্দের এলে তার উপযোগ হবে।   ছোটবেলায় গুরুজনেরা যেমন বলতেন    বাড়িতে অতিথি এসেছেন, একটু ভদ্দর  সেজে এসো!

    সালভাতোরে ফেরাগামো, এরমেস,  এরমেনগিলদো জেগনার মতো বিশ্ববিজয়ী প্রতিষ্ঠানের আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। তাঁদের মহার্ঘ্য টাই কেনে কে? তখন ইন্টারনেটের , ডট কমের রমরমা, শেয়ার কিনতে না কিনতেই তার দামের তিন গুণ বৃদ্ধি।  টেকনোলজির এই মহান অভ্যুথানের প্রথম বলি সুট , টাই ,  কালো জুতো এবং কাঠের, লোহার বা প্লাস্টিকের অফিস ডেস্ক । ডেস্ক তখন আর কোন স্থাবর বস্তু নয়, আপনার পি সি  আপনার অফিস; সেটি  রীতিমত জঙ্গম-  যেখানে খুশি চরে বেড়াতে পারে।  আপনার সঙ্গে সেও সফরে যায় , স্টারবাকস, পাড়ার চায়ের দোকানে , ট্রেনে, প্লেনে । পুরনো লাইফবয় সাবানের বিজ্ঞাপনের মতন, আপনি যেখানে অফিসও সেখানে।   

    শিল্প বিপ্লবের পরে দেখা গেলো বাণিজ্যিক নেতারা -ক্যাপ্টেনস অফ ইন্ডাস্ট্রি –রাজ পুরুষদের পোশাকের ধাঁচাটা স্ট্যান্ডার্ড বলে ধরে নিলেন। ইংরেজের বদ সংসর্গে  না পড়লে আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠীরা হয়তো ধুতি চাদর বা চাপকান পরে কাঠের পিঁড়িতে পা মুড়ে  বসে বাণিজ্য পরিচালনার  নির্দেশ দিতেন । পোশাক হলো  উপবীত,  তাই  দিয়ে যায় চেনা - কে উঁচু পদাধিকারী,  কে কারখানার ফিটার মিস্ত্রি !  বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রথম টেক কোম্পানি আই বি এমে সাদা শার্ট , নীল বা ডোরা  কাটা টাই ও গাড় ধূসর সুট  আবশ্যিক ইউনিফরম ঘোষিত হয়েছিল - প্রবাদ পুরুষ চেয়ারম্যান টম ওয়াটসন নিজে সদর দরোজায় দাঁড়িয়ে থেকে সেটি লাগু করান-  শার্টের রঙ সাদা না হলে কর্মীদের বাড়ি ফেরাতেন ।  সাতের /আটের দশকে  বিল গেটস , স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক  তার প্রতিবাদে টাই এবং এমনকি জুতো ত্যাগ করেও অফিসে ঢুকলেন ;  মানুষের মেধা, বিবেচনার সঙ্গে তার বেশভূষা একসূত্রে বাঁধা নয়।  আমাদের দেশে,  জাপানে এমনকি ফিনল্যান্ডেও  জুতো পরে বাড়ির ভেতরে ঢোকা  বারণ ; তাহলে কার্পেটে ঢাকা অফিসে তার কি বা প্রয়োজন ?  বিগ শর্ট ছবিতে মাইকেল বেরি খালি পায়ে ঘোরেন । আমাদের মুনি ঋষিরা ছাগলের দুধ খেয়ে , পর্ণ কুটিরে বাস করে ব্রহ্ম সত্য এবং  জগত মিথ্যা কিনা তার বিচার বিমর্শ করেছেন, প্লেন লিভিং  অ্যান্ড হাই থিঙ্কিং । নিরিমিষ  খেয়ে স্টিভ জবস খালি পায়ে হিমালয়ের পাথরের ওপরে হেঁটে যে হাই থিঙ্কিং করলেন সেটা অবশ্য কয়েক  বিলিয়ন ডলারের লেভেলে পৌঁছেছিল।  

    এই শতাব্দীর গোড়ায় ডট কম এবং ক্যাজুয়াল ড্রেসের কল্যাণে পোশাক দেখে কারো পদের ধাপ, মাইনের গ্রেড বা গাড়ির মডেল বোঝা  শক্ত হলো ।

    স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার চাকরির ইন্টারভিউতে জীবনে  প্রথমবার  সুট , টাই  এবং কালো বন্ধ জুতো পরেছি। আর প্রয়োজন হয় নি । জলপাইগুড়ি ও  শ্যাম বাজার ব্রাঞ্চ এবং এক নম্বর স্ট্র্যানড রোডে আমাদের যে  বেশভূষা ছিল সেটাই তো আজকের স্মার্ট বা আরও শুদ্ধ ভাষায় বিজনেস ক্যাজুয়াল!   কেউ আবার একটু বেশি ক্যাজুয়াল রূপে অফিসে দেখা দিলে সুপ্রিয় গুপ্ত সায়েব বলতেন , আপনি কি ছুটিতে আছেন ?

    শোনা যায় আমাদের এক সিনিয়র কলিগ মিস্টার লাল একটা বহু বোতাম লাগানো শার্ট পরে এসেছিলেন দেখে  চিফ ম্যানেজার বিধান মজুমদার তাঁকে বলেছিলেন এটা কি বস্ত্র শিল্পের প্রদর্শনী ? মিস্টার লাল হেসে বলেন , আই অ্যাম ট্রায়িং টু সাপোর্ট দি বাটন ইন্ডাস্ট্রি , সার !

    ফ্রাঙ্কফুর্টে এসেও তার কোন ব্যত্যয় হয় নি।  আমাদের জার্মান সহ ম্যানেজার ফন ভাঙ্গেনহাইম ও  ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মিস্টার অটল ,  আমার বস অরটউইন  আর দুজন ভারতীয় অফিসার সুট পরতেন। কখনো কাস্টমার মিটিঙ্গে থাকলে অটল সায়েব আগাম নোটিস দিতেন, কল জরা  টাই পহেনকে আনা । ফ্রাঙ্কফুর্টে প্রথম আমেরিকান প্রতিষ্ঠান কনটিনেনটাল ব্যাঙ্কেও সাজ বদলায়নি - খদ্দের মুখো বা কাস্টমার ফেসিং কয়েকজন সুসজ্জিত হয়ে আসতেন , বাকিরা যেমন খুশি। পোশাকের পাহারাদার ছিল না কিন্তু  একটা অলিখিত সীমানা  কেউ অতিক্রম করেছেন বলে মনে পড়ে না। আমার দফতরে জনা দশেক, তার মধ্যে ছ জন মহিলা। কেউ কখনো আদিদাস পুমার  জুতো বা জিনস পরে দর্শন দেন  নি । শীতের দিনের খানিক অতিরিক্ত পোশাকের বোঝা বাদ দিলে সেই সাজ সজ্জার সঙ্গে কলকাতা স্ট্র্যানড রোড অফিসের কোন তফাৎ ছিল না। দেশের স্টেট ব্যাঙ্কে বা ফ্রাঙ্কফুর্টের দুই ব্যাঙ্কে কোথাও কাউকে টি শার্ট পরে আসতে দেখি নি ।

    তফাৎ দেখলাম লন্ডনে এসে - ব্যাঙ্কের মেসেঞ্জারও সুট পরেন । ফ্রাঙ্কফুর্টে আমার তিনটে সুট ছিল  কিনা সন্দেহ । এবার চাকরি জীবন শুরুর তেরো বছর বাদে সুট টাই বাধ্যতা মূলক হলো -যস্মিন দেশে ! এতদিন বাদে বলতে পারি সেই যুগটা সহজ ছিল – শার্টের সঙ্গে টাইয়ের রঙ মিলান্তি ছাড়া আর কোন জটিলতা বিহীন।  মনে আছে মারগারেট থ্যাচার বলেছিলেন, ছেলেদের পক্ষে সেদিনের  পোশাক নির্বাচন অত্যন্ত সহজ, মেয়েদের আবার স্কারটের সঙ্গে টপ মেলানোর ঝামেলা আছে।

    এই শতাব্দীর শুরুতে পোশাকের ব্যাপারে এই প্রাত্যহিক নিয়মশূন্যতা পৌঁছুল উচ্চমার্গে ।

    রঙচঙে ফুলহাতা শার্টের বুকের তিনটে বোতাম খোলা, হাতের আস্তিন প্রায় কনুই অবধি গুটনো, লাল রঙ্গের পেনটুলুন,  পায়ে প্রায় লাল টেনিসের  জুতোর ফাঁকে সবুজ রঙের মোজা  পরা এক ব্যক্তি আমার অফিসের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন ।

    ইনি কে ?  যাত্রার দল থেকে ছুটি পেয়ে এখানে হাজির হয়েছেন?  

    এটা কি নাট্যশালা ?

    “ ইটস মি, রজার ! “
    চমক ভাঙল ।

    এই সেই ধনতান্ত্রিক পশ্চিমের ঝাণ্ডা তুলে ধরা রজার,  যার সঙ্গে একসময়ে স্কপয়ে, রিয়েকা , জাগ্রেব , বুখারেস্ট ঘুরে পূর্ব ইউরোপে বাণিজ্যের সন্ধান করেছি ?  ব্যাঙ্কিঙ্গের সর্বজ্ঞ সেজে  খুব চোস্ত ইংরেজিতে যাকে তাকে জ্ঞান দিয়েছে  ?

    একটা চেয়ার টেনে বসে রজার বলল , ‘সবদিনেই আজ ড্রেস ডাঊন , আমার ক্যাজুয়াল পোশাকে তোমার বিভ্রান্ত হবার কোন কারণ নেই । রিল্যাক্স ।  জানি তোমার অফিসে ছড়ি ঘুরিয়ে  তুমি মেয়েদের পোশাক কন্ট্রোল করছ  ; এ খবরটা রটে গেছে । কিন্তু অন্য দফতরগুলো একবার ঘুরে দেখে এসো । সেই জনতা পিকনিকে এসেছে না বন জোভির গিগ শুনতে যাচ্ছে বোঝা শক্ত।‘  



    আমার টিমের ড্রেস ডাউনের একদিন 

    পিছনের সারিতে 
    এডমানড ম্যাগুইয়ার ( ডাবলিন / আয়ারল্যান্ড    )  বেন কনস্টেবল ( স্ট্যাথাম, লন্ডন/ইংল্যান্ড  ) ডেভিড ওয়াই ঝু ( সাংহাই / চিনা ) লিন ওয়েবস্টার (নটিংহাম /ইংল্যান্ড  ) তন্ময় আন্দালিব ( ঢাকা /বাংলাদেশ) স্টেফান ডাইকস ( গ্লাসগো /স্কটল্যান্ড -পোলিশ ইহুদি )

    সামনের সারিতে

    পামেলা গ্রিন ( উইম্বলডন / ব্রিটিশ এবং আইরিশ ) নাতালিয়া সকোলোভা ( কুরস্ক / রাশিয়ান ইহুদি )  ) গুরকান এনসারি ( ইজমির/তুরস্ক) ভিভেক সিনহা ( পাটনা/ভারত  )
     
    ২০০২ সাল নাগাদ ডট কমের উন্মাদনা শেষ হলো ;  জানা গেল ওটা আসলে ডট কম বম্ব ছিল । শেয়ার মার্কেটকে চাঙ্গা করার জন্য পশ্চিমের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক গুলি সুদের হার কমিয়ে দিয়ে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর প্রয়াসে ব্রতী  হলেন । পরের পাঁচ বছরে হাওয়ায় উড়ল সেই সস্তার টাকা যার  অবশ্যম্ভাবী পরিণাম দেখা দিল ২০০৭-২০০৮ সালে । পশ্চিমের বৃহৎ ব্যাঙ্কগুলি দেউলে হল,  তাবড় ব্যাঙ্কাররা দামি কটোরা নিয়ে ব্রিটেন জার্মানি আমেরিকায় সরকারের কাছে ভিক্ষায় গেলেন, ‘  প্রভু আমাদের ব্যাঙ্ক , বেতন ও বোনাস বাঁচান,  নইলে ধরণী রসাতলে যাবে ‘ ।  সরকার মানে  করদাতারা  হাত বাড়িয়ে দেউলে ব্যাঙ্কের প্রাণ ও ব্যাঙ্কারদের টেসলা গাড়ি, প্রাইভেট জেট, নিউ ইরকের হ্যামটনে,  ফ্রান্সের নিসে উদ্যান বাটিকা  রক্ষা করলেন।

    নামি ব্যাঙ্কাররা অবশ্য একবার মাথা চুলকে  নিয়ে বলেছিলেন  , ভুল হয়েছিল, প্রভু, আর হবে না ।

    ড্রেস ডাউন সীমিত বা নিষিদ্ধ হলো । ফিরে এলো সুট টাই কালো জুতো।

    ড্রেস ডাউনের সঙ্গে কি ব্যাঙ্কিঙ্গের  আইন কানুন ঢিলে হয়েছিল ?  সুটের প্রত্যাবর্তনের পরে কাজকর্ম একবারে কেতাব মাফিক চলবে ? এ দুটোর মধ্যে কি কোন গভীর সম্পর্ক  নিহিত আছে ? এইসব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে একটা থিসিস ছাড়ার  সুযোগ জোটে নি ;  কারণ – কোভিদ। তার  আবির্ভাবের ফলে অফিস ঢুকে পড়লো আপনার আমার বসার বা শোবার  ঘরে ।  জুম কলের কল্যাণে  ‘ হোম অফিস ‘ কথাটা জার্মান সহ বিবিধ ইউরোপিয়ান ভাষায় সম্যক চালু।

    আমার মতে পরবর্তী অর্থনৈতিক সঙ্কট খুব বেশি  দূরে নয় আমাদের পোশাক যাই হোক না কেন।

    কিছু কাল আগে গোল্ডম্যান জাখস একটি আভ্যন্তরীণ ই মেলে কর্মীদের জানিয়েছেন ’ পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক আশাকের ব্যাপারে কোন কড়াকড়ির প্রয়োজন নেই। তেমন পোশাক পরুন  যেটা আমাদের ব্যবসায়িক পার্টনার আশা করেন ।   কর্মক্ষেত্রে কোন পোশাক  সঠিক কোনটা বেঠিক এ বিচারের ভার আপনাদের হাতে ।

    আমাদের ব্যানারজিদা , প্রয়াত, প্রনম্য রণদা চরণ ব্যানারজির কথা আবার মনে পড়ল: বাঙালি সেদিন যা ভেবেছিল নিউ ইয়র্ক ভাবলো চল্লিশ বছর বাদে ।

    অ্যাক্ট উইথ ট্যাকট
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ মে ২০২৪ | ৪২৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ও নাম! - Suvasri Roy
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শিবাংশু | ০৪ মে ২০২৪ ১১:৪৬531384
  • @হীরেনস্যার, 
     
    কাউকে অপদস্থ করতে চাইলেই আমাদের ব্যাংকে বস'রা বলতেন 'উসকা ট্যাক্ট নহি হ্যাঁয়'। যদিও অধস্তন অফিসারটি  অকুস্থলের পরিস্থিতি জানিয়ে বারবার বসের কাছে উপদেশ প্রার্থনা করেছে, কিন্তু তিনি ফাটা রেকর্ডের মতো বলে যেতেন 'ট্যাক্টফুলি' সম্ভাল লো'। সেই অধস্তন যেদিন চাকরিবাকরি সামলে নিয়ে 'ঊর্ধ্বতন' হয়ে যাবেন, তিনিও একই রেকর্ড বাজিয়ে যাবেন। চক্রবৎ পরিবর্তন্তে ... ইত্যাদি , 
     
    আমাদের ব্যাংকের পোষাকবিধি সম্বন্ধে বলা হতো সেটা সেকালের পোস্ট অফিস আর সরকারি ট্রেজারির বাবুদের সঙ্গে পাল্লা দেয়। চাইবাসায়  সাতাত্তর সালে যখন প্রথম চাকরি করতে যাই, তখন শুনলুম ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া'র নাকি পোষাক বিধি আছে। এমন কি বাবুদের'ও।  কারণ সেটা এককালে টাটার ব্যাংক ছিলো। 'বিধি' মানে  পুরো হাতা শার্ট, ট্রাউজার্সে গোঁজা। পায়ে রবারের চটি ছাড়া আর যা কিছুই থাকতে পারে। তার রং মিলন্তি বা কাপড়চোপড় যাই হোক না কেন? তবে বছরের ছ মাস চল্লিশের উপর তাপমাত্রা থাকলে পুরো হাতা আর কে পরে ?  ওদের একটা সুবিধে ছিলো।  ভিড়ভাড় খুব মাপা। একটা দোতলা বাড়ির উপরতলায় গোনাগাঁথা কাউন্টার আর চেয়ার-টেবিল। 
     
    আমাদের ব্যাংক তখন অবিভক্ত সিংভূমের জেলাসদরের প্রধান দপ্তর। বিশাল একটা দোতলা প্রাসাদ। সকাল সাড়ে দশটায় খোলে। দ্বারপাল ভিতর থেকে হুড়কোটা খুলে দিয়েই বন্দুক-টন্দুক সামলে ছুটে দেওয়ালের একটা কোনায় ঢুকে যেতো। বন্যার প্লাবনের লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়তো ভিতরে। মূলত সরকারি কাজের বিভাগে। তখন থেকে সাড়ে পাঁচটা- ছটা পর্যন্ত  একই দৃশ্য। ডরেস ? উওহ কিস বলা কা নাম হ্যাঁয়? ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার তৎকালীন শাখাপ্রবন্ধকের স্ত্রী ছিলেন খুব কেতাদুরস্ত মহিলা। তিনি বলতেন, স্টেট ব্যাংকের ছেলেগুলো মহা আনস্মার্ট। 
     
    ব্যক্তিগতভাবে আমি চিরকালই 'পোষাকবিধি' মেনে চলতুম। হাজার হোক একটা পাবলিক অফিস। কালচারটাও খুব রক্ষণশীল।  জিনস, টী, ফ্লোটার, স্পোর্টস শু  কিছু পরতুম না অফিসে। শুনেছি, সহকর্মীরা জনান্তিকে বলতো 'উসকা বহুত 'পর্সনালিটি' হ্যাঁয়'।  ঐ শব্দটা ফান্টুসের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার হতো। অবশ্যই সম্মানজনক কিছু নয়। ঊনচল্লিশ বছর ধরে সেটা  চালিয়ে গেছি। কিছুদিন পরে অন্যত্র এক ম্যানেজারকে পেলুম। তিনি সেই কালে পা-চাপা বিলিতি ডেনিম আর উদ্ভট সব রঙের টী পরতেন। আমাকে ব্যঙ্গ করে বলতেন 'ইয়ে শা...  লগতা চেয়ারম্যান বনেগা।' তবে সেই প্রতিভাকে আমাদের ব্যাংক বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনি। নিয়মকানুনের মা-বাপ করার পর তাঁর চাকরিটি নট হয়ে গিয়েছিলো। 
     
    বম্বেতে নরিম্যান পয়েন্টে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে 'সুরক্ষা'কর্মীদের 'পোষাক দেখে লোক চিনুন'-এর ট্রেনিং দেওয়া হতো। 'এজিএম' মানে পুরো হাতা শার্ট গোঁজা ট্রাউজার্স। 'ডিজিএম' মানে তার সঙ্গে কণ্ঠ লঙ্গোটি। 'জিএম' মানে  একটা কোট (যাকে সম্মান দিয়ে জ্যাকেটও বলা হৈয়া থাকে ), মাইনাস কণ্ঠ লঙ্গোটি । ' 'সিজিএম' মানে টু পিস স্যুট ও কণ্ঠ লঙ্গোটি। 'ডিএমডি' বা 'এমডি'  ইচ্ছেমতো। চেয়ারম্যান' সাহেব যাই পরিধান করুন, তিনি তো আসলে বিষ্ণু-অবতার।  তিনি বাপুজির পোষাকে এলেও ধন্য ধন্য। 
     
    এই সব 'আনস্মার্ট' লোকরাই  ঘষে ঘষে শুধু দেশের নম্বর ওয়ান নয়, সারা পৃথিবীতে আমাদের ব্যাংক-কে একটা বলার মতো জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে পঞ্চান্ন সালের পর থেকে। ভোট বন্ড আসিয়া সেই প্রতিষ্ঠা বিসর্জন দিয়া দিলো। 
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ মে ২০২৪ ১৩:০৭531386
  • শিবাংশু

    অনেক কথা মনে করিয়ে দিলে – এই আনস্মার্ট লোকেরা আমাদের মতন অর্বাচীনদেরও ঘষে ঘষে পাতে দেবার উপযুক্ত বানিয়েছিলেন ।  স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার  ফ্রাঙ্কফুর্ট ব্রাঞ্চে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন সেক্রেটারি ট্রেজারার পি সি ডি নাম্বিয়ারকে একজন জার্মান ব্যাংকার প্রশ্ন করেন- আপনাদের ব্যাঙ্কের সাকসেশন প্ল্যান কি ? প্রবাদ প্রতিম মিস্টার নাম্বিয়ার বললেন ( যাকে বলে উইদ আউট ব্যাটিং অ্যান আইলিড ) , স্টেট ব্যাঙ্কের টপ একশ জন অফিসার যদি একই বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান , তাঁদের শূন্য স্থান পূর্ণ করার জন্য পরের একশ জন সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছেন এবং পরের একশ জন ।
    অটল সায়েবের পেছনে প্রায় গা ঢাকা দিয়ে শ্রীধর ও আমি দাঁড়িয়ে । আমাদের দিকে অঙ্গুলি হেলন করে নাম্বিয়ার সায়েব বললেন, টু অফ দেম আর হিয়ার ! আমার কিছু হওয়া হয়ে ওঠে নি কিন্তু শ্রীধর এম ডি হয়েছিল । নরিমান পয়েন্টের হেড অফিসে যখন ওমি চেয়ারম্যান আর শ্রীধর এম ডি দুজনকেই গল্পটা মনে করিয়ে দিয়েছি।

    এই আমাদের ব্যাঙ্ক, আমার আলমা মাটের  – মাত্র আট বছর কাজ করে শুধু ব্যাংকিং নয় কর্পোরেট জীবনের ট্রেনিং যা পেয়েছি সেটা ভাঙ্গিয়েই তো খেলাম । আচরণ বা পরিধান বিধি , আমাদের কেউ বলে দেয় নি , ম্যানুয়ালে লেখা দেখি নি, কিছুই চাপিয়ে দেওয়া হয় নি  সবটাই একটা আলগা ভাবে , বুঝে নাও – অ্যাক্ট উইথ ট্যাকট ! আই বি এমের টম ওয়াটসন সদর দরজায় দাঁড়িয়েছেন শার্টের রঙ সাদা কিনা চেক করার জন্য । আমাদের গুপ্ত সায়েব বা বিধান মজুমদার অসামান্য তির্যক মন্তব্যে আমাদের সিধে করে দিতেন ! ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গল্পটা জানতাম না তবে খুব মনে আছে ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্কের যে সব অফিসার দেখেছি যেমন জলপাইগুড়িতে সুধাময় প্রামাণিক -তাঁদের ড্রেস কোড ছিল দুর্ধর্ষ । টাই ছাড়া কোনদিন তাঁকে দেখি নি কিন্তু তিনি কাউকে সে রকম সাজতেও  বলেন নি !  তোমার কি মনে আছে বড়ো সায়েবের ঘরে ডাক পড়লে কোট লাগাতে হতো ? আমার আবছা মনে হচ্ছে তবে ভুল হতে পারে ।

    লন্ডনে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে ডেপুটি সি ই ও মাইক রিসের ঘরে ডাক পড়লেও সেটা করতে হতো না । ডিগ্রি অফ ইনফরম্যালিটি এদেশে বেশি , সিটি ব্যাঙ্কের সি ই ও জন রিড করমর্দন করেছেন আই অ্যাম জন বলে  অন্যদিকে ওমি ভাট, শ্রীধর আমি এক ব্যাচ ।  ডানেডিনে ওমির মেয়ের বিয়েতে দেখি শ্রীধর ওমিকে  সার বলছে ।

    প্রতিষ্ঠানের  সুনাম অর্জন করতে বহু বছর লাগে , বর্জন করা যায় একই দিনে । ইলেকটোরাল বন্ডের কাহিনি সেটাই মনে করিয়ে দিলো। তবু  স্টেট ব্যাঙ্কে কাজ করেছি এই গর্ব নিয়েই চলে যাব একদিন।
     
  • সুকি | 223.239.51.202 | ০৪ মে ২০২৪ ১৪:৪৯531388
  • হীরেন-বাবু আর শিবাংশু-দা ঠিক কোন দলে ঠিক বুঝতে পারলাম না :) ক্ল্যাসিক্যাল এর দিকেই ঝুঁকে মনে হল!
     
    দুই চার কথা বলার ছিল ড্রেস এর ব্যাপারে - মানে এদিক ওদিক লিখেছিও। কিন্তু এখানে আর খাপ খোলার সাহস হচ্ছে না! 
  • শিবাংশু | ০৪ মে ২০২৪ ১৫:৪৬531389
  • @সুকি, 
    হীরেনস্যার আমার থেকে অনেকটাই সিনিয়র। কিন্তু কালখণ্ড বিচার করতে গেলে আমরা ক্ল্যাসিক্যাল যুগের লোক। তোমরা পোস্ট-পোস্ট মডার্ন যুগের ছেলেপুলে। ডরেস বিষয়ক তোমার সচিত্র লেখাজোখা বেশ কিছু পড়েছি এদিকওদিক । কোঈ গল নহি। কণ্ঠ লঙ্গোটি বিষয়ে তোমার তীব্র অনাসক্তি এখন বহু লোকেরই নলেজে আছে। আমারও ভালো লেগেছে।সরকারি কারণে এই গরমের দেশে চাপে পড়ে সাহেব সাজতে  আমারও 'ছেড়ে দে মা' গোছের অনুভূতি হতো। মূল তফাতটা হলো তোমরা প্রযুক্তির লোক। ল্যাপটপটা ঠিকঠাক থাকলেই হলো। বার্মুডা-স্যান্ডোগেঞ্জিও চলতা হ্যাঁয়। আমরা অন্য লাইনের হলেও মূলত প্রশাসনিক আমলা। 'ডরেস' ব্যাপারটার একটা ওজন থাকে। এদেশে ফ্রন্টলাইন ব্যাংকিং হোক বা প্রশাসনিক ব্যাংকিং, বার্মুডা পরা ম্যানেজারকে দেখলে পাবলিক টাকাকড়ি তুলে ভেগে যাবে। তোমার মনে আছে কি না জানি না। ঘোর কোভিডকালে যখন বিশ্বশুদ্ধু লোক ঘরে বসে কাজ করছিলো (হয়তো বার্মুডা পরেই ), ডাক্তাররা ছাড়া শুধু ব্যাংকের লোকজনকেই  প্রতিদিন  সেজেগুজে পুরো দফা অফিসে বসে থাকতে হতো। তোমাদের 'পোস্ট মডার্ন' পার্ল্যান্সে  ব্যাংকারদের কথা বলতে গেলে অমরেশের ভাষায় বলতে হবে  'গাঁইয়ার কারবারই আলাদা'  :-))
  • শিবাংশু | ০৪ মে ২০২৪ ১৬:১৮531390
  • @হীরেনস্যার, 
    আমি যখন ব্যাংকে ঢুকি, তখন প্রবাদপ্রতিম পিসিডি আমাদের চেয়ারম্যান। রাজকুমার তলওয়ারের ছেড়ে যাওয়া জুতোয় পা গলিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা সহজ কর্ম ছিলো না। কিন্তু তিনি সেটা অনেকটাই করতে পেরেছিলেন। 
     
    ব্রাঞ্চ লেভেলে 'কোট' পরতে হতো না। তবে  বড়োসাহেবদের অফিসে গেলে অবশ্যই। বিলিতি 'ডরেস' , 'ড্রেসে'র ভোজপুরি ভার্সন,  ব্যাপারটার মধ্যে একটা সহজাত সামন্ততান্ত্রিকতা আছে।  আমাদের দেশে দেখেছি  বিহারের একেবারে প্রত্যন্ত স্থান থেকে কেউ যখন সরকারি মিটিং, ট্রেনিং, ইন্টার্ভিউ দিতে আসতো পরনে থ্রি পিস স্যুট, টাই সহ। তাদের আমরা বলতুম ঝঞ্ঝারপুর কা পাবলিক। মানে দ্বারভাঙা জেলার একেবারে প্রত্যন্ত উত্তর সীমায়,  নেপাল লাগোয়া একটা মফস্সল  ঝঞ্ঝারপুর। কমলা বালান নদীতে বান এলে সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তারা ,  অংরেজি ডরেসের উপর তাদের  সাংঘাতিক টান। জষ্টিমাসে পঁয়তাল্লিশ ডিগ্রি , তারা থ্রিপিস স্যুট- টাই লাগিয়ে লগনে বিয়ে করতে যায়। আমার এক বিহারি বন্ধু, আমাদের সঙ্গে থেকে থেকে বাঙালি হয়ে গিয়েছিলো, ডালটনগঞ্জে ধুতি পাঞ্জাবি পরে বিয়ে করতে গেলে কনে বউ কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। বাবাকে বলে 'কঁহাসে গাঁও কা সংস্কৃত পণ্ডত কো উঠা লায়ে হ্যাঁয় , 
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:b5a8:c767:5d5d:a708 | ০৪ মে ২০২৪ ১৭:১২531391
  • কিছুদিন আগে একটা বুটিক ইনভেস্টমেন্ট ফার্মে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। যে জগতে আমি চলাফেরা করি পোশাকের ব্যাপারে ঢিলেঢালা বলে তাদের নাম আছে, সু না দু সেটা ইন দি আই অফ দি বিহোল্ডার। আমার প্রথম বস হাফ প্যান্ট আর হাওয়াই চটি পরে অফিসে আসত। উত্তমাঙ্গে একটি ইস্তিরি করা ফুল হাতা শার্ট। ইন্টারভিউর দুদিন আগে তাদের এইচআর কল করল। অনেক খেজুরের পর জানাল, তাদের মালিক ইন্টারভিউর পরে একটু আলাপ করতে চেয়েছেন। আমি টি শার্ট পরে যেতে পারি, কিন্তু তাতে যেন কলার থাকে। আর জিনস যেন ফাটা না হয়। ইন্টারভিউর দিন আমার স্পোর্টস জ্যাকেট আর আগে থেকে বেঁধে রাখা টাই দেখে মহিলা একটি মধুর হাসি দিলেন। ভাবটা যতই বেখাপ্পা হোক, একেবারে জানোয়ার নয়।
     
    মালিক অবশ্য বারমুডা আর টি শার্ট। জানিনা সেটা ওদিক থেকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা ছিল কিনা।
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ মে ২০২৪ ১৮:৫৬531394
  • শিবাংশু 
     
    ঐটেই জানতে চাইছিলাম ব্রাঞ্চে সুট কেন কোট পরার বালাই ছিল না তবে বড়ো অফিসে বড়ো সায়েবের ঘরে ডাক পড়লে কোট চরানোট দায় ছিল । আমি অতি ক্ষুদ্র কীট তবে অন্যদের পরতে দেখেছি । গরম দেশে সুট পরা বাহুল্য পবিত্র ভূমি পুস্তকে আমার জেরুসালেমে অর্থ মন্ত্রক মিটিঙের কাহিনি লিখেছি শর্টস পরে জেরি আপফেলবাউম দেখা দিলেন আমার সুট দেখে বললেন,' এ দেশে বেজায় গরম টাই শর্টস পরার ওপরে কোন সরকারি নিষেধাজ্ঞা নেই আপনারও সুট পরে দর্শন দেওয়াটা আবশ্যিক নয় ( নট অ্যান এসেনশিয়াল অ্যাপারেল ফর ডুইং বিজনেস )। 
     
    মিশর , ইউ এ ই, কুয়ায়েট , বাহরেনে একই গরম কিন্তু সবাইকে সুট পরতে দেখেছি।  
     
    তোমার এস বি আই গল্পগুলো ফাইল করে রাখছি । মনে হয় তুমি আমি একটা যুগলবন্দী লিখতে পারি - " স্টেট ব্যাঙ্ককে যেমন দেখেছি"  আমার উত্তর বাংলা , শ্যামবাজার তোমার বিহার থেকে নেপাল ! 
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:f4ca:e934:108e:f321 | ০৪ মে ২০২৪ ১৯:১৫531397
  • এই পর্বটা পড়ে মনে হলো, সত্যি, কোট প্যান্ট টাই পরার রেওয়াজ যে এখনো কতো জায়গায় চালু আছে! আর ফর্মাল ড্রেস, ইনফর্মাল ড্রেস, এসব নিয়েও মাথামুন্ডুহীন নিয়মকানুন যে কতো রকম ভাবে এনফোর্স করা হয়! সত্যি অদ্ভুত। 
     
    তবে একটা ছোট্ট অবসার্ভেশান হলো, চেন্নাইয়ের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ব্রান্ঞ্চে কাউকে জ্যাকেট বা টাই পরতে দেখিনি,  ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদেরও না। সার্ভিস অবশ্য অসাধারন। এই লেখাটা পড়ে মনে হলো, এইটা একটা ভালো ব্যাপার। 
  • সমরেশ মুখার্জী | ০৫ মে ২০২৪ ১৩:২০531413
  • ড্রেস ডাউনের দিন পিছনের সারিতে দুধ সাদা পুরোহাতা শার্ট ও ঘনকালো প‍্যান্টে প্রপারলি ড্রেসড আপ স্টেফান ডাইকসকে রাজপুত্র‌র মতো লাগছে !
     
    শোনা কথা - ক্ষুদ্রনরম কোম্পানির চেয়ারপুরুষ বিল দরোজা নাকি রেডমন্ড মুখ‍্যালয়ের কঠিন সব কোড উদ্ভাবনকারী হীরক সদৃশ কর্মী‌দের ডরেসকোড প্রসঙ্গে একদা বলেছিলেন - writing high end software solution is also a kind of creative trait - so don't want to burden their creative free spirit with strict dress code. Short or long, as long as it covers vital erogenous areas - it's okay. So women should avoid coming to office clad in bikinis (or monokini) - as it may cause creative distraction.  And men in bermuda are okay but not bare chested as the workstation is not beach volleyball court.

    অবশ‍্য‌ই উপরোক্ত বিল-বচনটি  verbatim নয় - তা  উপস্থাপিত হয়েছে স‍্যামের ক্রিয়েটিভ অঙ্গুলি হ‌ইতে - তবে বিল বর্ণিত সারাৎসার‌টি ছিল ঐরূপ‌ই।
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০৫ মে ২০২৪ ১৫:০৮531415
  • দুর্দান্ত মজার পর্ব। ভীষণ ভালো লাগল। শুধু পোশাক পরিচ্ছদের মধ্যে এতটা রাজনীতি, সমাজনীতি লুকিয়ে আছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে পরিবেশের সাথে বেমানান পোশাক পরা বা জোর করে ফর্মাল চাপানোর নিয়ম টিয়ম তুলে দেওয়ার ই পক্ষে।

    সেই আলজিরিয়ান পিতা ও তার পুত্রের সাথে বাক্যালাপের গল্পটা আবার মনে পড়ে গেল। 

    পুত্র বলছে বাবা, মাথায় এই অদ্ভুত মতো কি পরে আছি আমরা ?
    পিতা হেসে জানালেন, এ হল চেচিয়া, এক ধরণের টুপি যা মরুভূমির প্রখর রোদেও মাথা ঠান্ডা রাখে।

    পুত্র আবার বলে, আচ্ছা গায়ে এরকম ঢ‍্যাপসা মতো কি চাপিয়ে রেখেছি আমরা ?
    পিতা আবার বললেন, এ হল জালেবা, মরুভূমিতে প্রচন্ড গরম হয়ে যায় তো হাওয়া, তা থেকে আমাদের শরীরকে শীতল রাখে।

    পুত্র কিছুদূর গিয়ে আবার জানতে চায়, আচ্ছা পায়ে এটা কি পরে থাকি আমরা, বার বার পিছলে বেরিয়ে যায় ?

    পিতা বললেন, এটাকে বলে বাবুচে, মরুভূমির তপ্ত বালির থেকে পা কে বাঁচিয়ে রাখে।

    পুত্র আর থাকতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে বলে, আরেকটা প্রশ্ন করবো ?

    - করো।

    - আচ্ছা তাইই যদি সত্যি হয় আমরা এইসব অদ্ভুতুড়ে জিনিসপত্র পরে  মিশিগানে দাঁড়িয়ে করছি টা কি !

    তবে আমার কাছে সবচেয়ে চিন্তার ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় -

    "আমার মতে পরবর্তী অর্থনৈতিক সঙ্কট খুব বেশি  দূরে নয় আমাদের পোশাক যাই হোক না কেন।"

     
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:d7fa:d9f7:551:2cd | ০৫ মে ২০২৪ ১৬:৩৫531418
  • এবারের সংকট নিয়ে একটু বেশীই চিন্তিত। একটা অর্থনৈতিক মারামারি চলছে। কেনিসিয়ান দাওয়াই আর্থিক বৃদ্ধি ঘটাতে নাও পারতে পারে।
  • হীরেন সিংহরায় | ০৬ মে ২০২৪ ০১:১৯531425
  • পলিটিশিয়ান

    সম্পূর্ণ সহমত ।
    ডট কম বম্ব জনিত ক্ষয় ক্ষতি সারাতে গুণীরা সুদের হার শূন্যে এনে ফেললেন । ব্যাঙ্কগুলো এত সস্তার টাকা কোথায় লাগাই বলে নানান রকমের ওয়েপনস অফ ফিনানশিয়াল ডেস্ত্রাকশন কিনে আমাদের আবার ডোবালেন – সাব প্রাইম সমস্যার জনক চিপ মানি । ইতিমধ্যে ডুবন্ত পর্তুগাল ইতালি আয়ারল্যান্ড গ্রিস ( পিগ ) বাঁচাতে ই সি বি  কোয়ানটিটেটিভ ইজিং নামের  হাঁসজারুকে বাজারে নামালেন( সেটি নোট ছাপানোর ছদ্মনাম ) ।  সোনায় সোহাগা এখন  ইনফ্লেশন নিয়ে সরকার চিন্তিত – এ কি এমন তো কথা ছিল না !

    কলকাতার কাঁটাকলে  আমাদের অর্থনীতির ক্লাসে গুরুরা নোট ছাপানোর কুফল সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তার সবগুলোই এখন চোখের সামনে দেখতে পাই। কোভিড কালে সবাই নাগরিকদের পকেটে টাকা গুঁজে দেবার প্রয়াসে ব্রতী হয়েছেন যেমন শ্রী সুনাকের ইট আউট টু হেল্প আউট – অর্ধেক দামে ভোজন । সাপ্লাই সাইড সামলাতে গিয়ে মুদ্রাস্ফীতির ভূত ঘাড়ে সওয়ার হচ্ছে।  কেইন্সের আত্মা এটি দেখলে ক্ষিপ্ত হতেন।  
     
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:9ea5:a046:3e33:96b5 | ০৬ মে ২০২৪ ০২:২৭531427
  • হীরেনবাবু 
    সাপ্লাই সাইড, আমি যতটা বুঝি, কেনিসিয়ান বুস্ট দিয়ে সামলানো তখনই সম্ভব যখন স্পেয়ার ক্যাপাসিটি যথেষ্ট আছে, কিন্তু উৎপাদন আপাততঃ বন্ধ। কেননা চাহিদা নেই।
     
    তা স্পেয়ার ক্যাপাসিটি যথেষ্টই আছে, কিন্তু সেটা চীনে। কাজেই প্রয়োজনে সেটা অন লাইন কতটা আসবে তা ভূরাজনীতির ওপর নির্ভরশীল। চীনেরা ঝামেলা করতে চাইলে একটা সীমা অবধি করতেই পারে।
     
    ভুল বললে দয়া করে শুধরে দেবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন