এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মৃত্যুপারের জীবনকথা --- সালমান ও একটা ছুরি

    Pradhanna Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ মে ২০২৪ | ১৬৭ বার পঠিত
  • “Language, too, was a knife. It could cut open the world and reveal its inner workings, its secrets, its truths. It could cut through from one reality to another. It could call bullshit, open people’s eyes, create beauty. Language was my knife.”

    তা বৈ কি। আপনার ভাষা তো ছুরির মতোই। এমন এক ছুরিকাঘাত করলেন, তা দিয়ে অপারেশান হল, না মানুষের আবেগ ক্ষতবিক্ষত হল, তা ঠিকঠাক ঠাহর করার আগেই আপনার মাথার দাম ধার্য হয়ে গেল। এবং আপনি চলে আসতে বাধ্য হলেন আমেরিকায়। কোন বইতে আপনি আপনার ছুরিটি চালিয়েছিলেন? 

    “It was fashionable in some literary quarters to describe the book as unreadable, a book in which it is impossible to get past page 15. In such quarters people spoke of a “Page 15 Club”.” অর্থাৎ, যে বইটির এক দশমাংশও বেশিরভাগ মানুষই পড়ে উঠতে পারে নি। এমনকি যে যুবক ছুরিটা চালিয়েছিল ধর্মের জিগীরে, সেও পড়েনি বইটা। ফলে বইটার প্রকৃত বিষয়বস্তু থেকে অনেক অনেক দূরে থাকা সত্ত্বেও চৌত্রিশ বছর পর যুবকটি আঘাত হানল, স্রেফ ধর্মীয় উন্মাদনার কারণে! অথচ এই বইটা সম্পর্কে রুশদীর মন্তব্য কি? “One of the benefits of the passage of time is that by now there are many younger readers who can approach The Satanic Verses as a plain old novel and not some sort of theological hot potato.” এই হল বাস্তব! “Some of them love it, some don’t, and that’s the ordinary life of a book.”

    Meditation after an Attempting Murder --- এই হল আপনার অভিজ্ঞতার শীর্ষনামা, “In death we are all yesterday’s people, trapped forever in the past tense. That was the cage into which knife wanted to put me.” --- মাত্র সাতাশ সেকেন্ডের ঘটনা। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে ঐ কয়েকটা সেকেন্ড তাকে করে দিয়েছিল শান্ত, সমাহিত। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ কি ভাবে? তিনি কি ভেবেছিলেন? “I thought: I am dying. It didn’t feel dramatic, or particularly awful. It just felt probable. … No “tunnel of light.” No feeling of rising out of my body.” সালমান লিখছেন, “What occupied my thoughts, and was hard to bear, was the idea that I would die far away from the people I loved… What I felt most strongly was a profound loneliness. I would never see Eliza again. I would never see my son again, or my sister, or her daughters.”

    তিনি ফিরে এলেন। ভেন্টিলেটারের আর্মাডিলো লেজের হাত থেকে, বিনা অবশে চোখকে সেলাই করার সুতীব্র যন্ত্রণার মধ্যে থেকে, লিঙ্গে সূঁচ ঢুকিয়ে প্রস্রাব করানোর বীভৎস বেদনার ভিতর থেকে... ফিরে মুখোমুখি হলেন Andrew Wylie-র। বই মার্কেটিং-এর জগতে তাকে ‘The Jackal’ বলা হয়। তিনি জানেন কোন বই মার্কেটে বিকোবে বেশি, তিনি বললেন, “You’ll write about it.”

    কোন সন্দেহ নেই, এ বই বইদুনিয়ায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। অনেকের মতো আমিও অপেক্ষায় ছিলাম, পেঙ্গুইন পাবলিকেশনের দেওয়া নির্দিষ্ট ডেট কবে পার হবে, আর আমি বইটা অর্ডার দেব। এমনকি এই ঘটনার জেরে The Victory City-র (তখনও প্রকাশ পায়নি) চাহিদা তুঙ্গে উঠে গিয়েছিল। আমার প্রথম পড়া রুশদী-র বই ছিল ওটাই এবং একমাত্র ওই ঘটনার জেরেই রুশদী পড়া শুরু করি। কিন্তু সেটাই কি একমাত্র কারণ এই বইটা লেখার?

    না। মৃত্যুর মুখোমুখি হওয়া একজন শিল্পী ফিরে এসে কি করবে? স্বভাবতই সেই মুখোমুখির অভিজ্ঞতাটাকে তাঁর শিল্পে উন্নীত করার চেষ্টা করবে। যে সৌন্দর্যবোধ তাকে শিল্পী বানিয়েছে, সেই সৌন্দর্যবোধই তাকে সৃষ্টি করাতে বাধ্য করবে। শুনেছি, পাবলো পিকাসো মৃত্যুমুহূর্তে একটা কাগজ আর একটা চারকোল চেয়েছিলেন। মৃত্যুর ছবি আঁকবেন বলে। সেই ছিল না কি তাঁর শেষ আকাঙ্ক্ষা। এও তাই। আর তাছাড়া, যে ভয়াবহতার মধ্যে দিয়ে লেখক এসেছেন, তার একটা ‘ট্রমা’ তৈরী হওয়া অস্বাভাবিক নয়, এবং এই ট্রমা কাটানোর সবচেয়ে বড়ো অস্ত্র, ভেতর থেকে সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ভাবগুলোর শব্দে রূপান্তরণ ঘটানো। সালমানের হাতের লেখনীরূপ ছুরি সেই বীভৎস মৃত্যু-আতঙ্ককে ক্ষতবিক্ষত করে শেষ করার জন্য যথেষ্ট। সালমান সেটাই করেছেন --- “Until I dealt with attack, I wouldn’t be able to write anything else. I understood that I had to write the book you’re reading now before I could move on to anything else. To write would be my way of owning what had happened, taking charge of it, making it mine, refusing to be a mere victim. I would answer violence with art.”  

    সালমানের এই বইয়ের একটা বড়ো পর্যায় যুবকের সাথে কল্পিত কথোপকথন। বলাই বাহুল্য, ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে তিনি চিরকালই কথা বলে এসেছেন। তো সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি কথা বলেন আততায়ীর সঙ্গে। তাঁর নাম দেন A। এই A যেন সমগ্র ধর্মীয় অন্ধভক্তির প্রতিনিধি। সুদীর্ঘ কথোপকথনের চারটি সেশান আছে। আমি পড়তে পড়তে স্তব্ধ হয়ে যাই। এক পর্যায়ে A বলে ওঠে, “The truth is that the truth has many enemies. Those who know the truth know also that it is precious, so many people want to make it cheap. Many want to persecute the possessors of the truth. So it is necessary to defend it.” আমি শিউরে উঠি। আমার মনে পড়ে যায় হীরক রাজার দেশ --- মগজ ধোলাই।

    এর উত্তর কিভাবে দিয়েছেন সালমান? “I will express here, one last time, my view of religion…” --- বইয়ের একদম শেষ পর্যায়ে কখন যে চলে এসেছি আমার খেয়াল নেই, “I have never felt the need for religious faith to help me comprehend and deal with the world.” সালমান লিখছেন, “The private faith of anyone is nobody’s business except that of individual concern.” কিন্তু... এর মধ্যে একটা কিন্তু আছে, যেটা এককথায় সাঙ্ঘাতিক, “when religion becomes politicized, even weaponized, then it’s everybody’s business, because of its capacity for harm.”

    সালমান তাঁর এই ভয়ঙ্কর ট্রমার অন্ত ঘটিয়েছেন বড়ো সুন্দরভাবে। তিনি ফিরে গেছেন। ফিরে গেছেন সেই অডিটোরিয়ামে, ফিরে গেছেন ঠিক সেই জায়গাটায়, যেখানে তিনি মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন। সেই জায়গা থেকে তিনি দেখছেন, যুবক এগিয়ে আসছে। তারপরের কয়েক সেকেন্ডে তাঁর সমস্ত জীবন পরিবর্তন হয়ে গেল, “It was a wounded happiness, and there was, and perhaps always would be, a shadow in the corner of it.” 

    সালমান উত্তীর্ণ হচ্ছেন তাঁর সেই ট্রমা থেকে। জীবন আবার ফিরে আসছে পচাত্তর বছরের একচক্ষু বৃদ্ধের কাছে নবতররূপে। আমি দেখতে পাচ্ছি তাকে, এলিজাকে... আর সেই চাটুয়াকোয়া ইন্সটিটিউশানের অডিটোরিয়ামটাকে। তিনি এলিজা-র হাত ধরছেন... এই সেই এলিজা, যে তাঁর জীবনপ্রদীপের দীপশিখা, যে তাঁর মরণ অন্ধকারের নিশ্চিন্ত আলিঙ্গন, যে তাঁর বেচে থাকার সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষা। মৃদু হেসে তাকে বলছেন, “We’re done here. Let’s go home.” 

    ======================
    Knife: Meditation After an Attempted Murder
    Salman Rushdie
    Penguin Publication
    Price: 699/-
    ছবি কৃতজ্ঞতাঃ সমর্পিতা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন