এই চূড়ান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশে কে কোন পোশাক পরবে , বিশেষ করে মহিলারা, তা মিটিং ডেকে ঘোষণা করতে পারি না, বোর্ডে লিখে দেওয়া অকল্পনীয় । তুল কালাম ঘটতে কতক্ষণ । দৈনিক সান পত্রিকায় বেনামে লেখা হবে , “ লন্ডনের ব্যাঙ্কে স্বৈর শাসন , ভারতীয় মূলের অফিসার দ্বারা নারী মর্যাদার অপমান “। আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি । অতএব অত্যন্ত ট্যাকটফুলি আমার তৎকালীন সেক্রেটারি , বারমিংহামের মারিয়া লালিকে কে বললাম, তুমি এটা একটু হাওয়ায় ভাসিয়ে দাও দিকি। আমি বলেছি কেউ যেন জিনস অথবা ট্রেনার জুতো পরে না আসে । মেয়েদের পোশাক সংযত , আর ছেলেদের ক্ষেত্রে টাই বাদে সুট পরলেই সেটা ইনফরমাল হয়ে গেলো অথবা কম্বিনেশান – রঙ মিলিয়ে জ্যাকেট ও ট্রাউজার। টি শার্ট আউট অফ কোয়েসচেন , পুরো হাতা শার্ট কিন্তু টেকনিকলার জামা বাদ । কালো বাদামি যাই হোক না কেন, পরতে হবে বন্ধ জুতো । ... ...
যুদ্ধের পরে এই চোদ্দ বছরের অনিশ্চিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট এবং বামপন্থী দলগুলি অরাজকতা সৃষ্টি করার ফলে দেশের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে উঠেছে । গণতন্ত্রের যুগে ব্যক্তিগত ধন সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব নয় , এখন প্রয়োজন সবল নেতৃত্ব ও নতুন চিন্তা। সেটা আমি খুঁজে পেয়েছি জাতীয়তাবাদ এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক শক্তির ভেতরে । সামনের লড়াইটা বাম বনাম দক্ষিণের সম্মুখ সংগ্রাম । আমরা চাই ক্ষমতা দখল করে প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করতে কিন্তু এই লড়াই ততদিন স্থগিত রাখতে হবে যতদিন না আমরা একচ্ছত্র ক্ষমতা আয়ত্ত না করছি। মনে রাখবেন বামপন্থীদের হাতে আপনাদের ধন সম্পদ জমি জিরেত কল কারখানা কিছুই সুরক্ষিত নয় , একবার সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে চেয়ে দেখুন! অর্থনীতি বা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যা কিছু বরণীয় তা সম্ভব হয়েছে কোন দলীয় রাজনীতি নয় , একক ব্যক্তিত্বের ভাবনা ও চিন্তায় , নির্বাধ শক্তি ও ক্ষমতার বলে। সভাগৃহে তখনও আসীন গুম্ফ শোভিত ডক্টর হায়ালমার শাখট , যিনি পরে আবার রাইখসবাঙ্কের প্রেসিডেন্ট এবং ইকনমি মন্ত্রী হবেন । তিনি এতক্ষণ কোন কথা বলেন নি । হিটলার এবং গোয়েরিং বিদায় নিলে তিনি মুখ খুললেন “ এই ভোট যুদ্ধ জিততে গেলে , পার্টির হিসেব অনুযায়ী আমাদের অন্তত তিরিশ লক্ষ রাইখসমার্ক দরকার ( আজকের হিসেবে দু কোটি ইউরো অথবা একশ আশি কোটি টাকা) । এবার আসুন ক্যাশ কাউনটারে !” বাঘের পিঠে সওয়ার যখন হয়েছেন তখন নেমে পড়ার প্রশ্ন ওঠে না। ক্রেডিট কার্ড অনেক দূরে , চেক বই কেউ সঙ্গে আনেন নি । কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করার অধিকার তাঁদের ছিল – তাঁরা বিশাল প্রতিষ্ঠানের মালিক বা শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত । একের পর এক শিল্পপতি ডক্টর শাখটের চাঁদার খাতায় সই করলেন ... ...
জার্মানির ভাবী পরিত্রাতার দুর্বার জয়রথ ছুটে চলে সারা দেশে । মন্ত্রমুগ্ধ জনতা সভায় হাজির হয় তাঁর দুটো কথা শোনার জন্য – তিনি বারবার বলেন, ক্ষমতায় এলে তিনি জার্মানিকে ফিরিয়ে দেবেন তার গর্ব, ষাট লক্ষ বেকার মানুষকে দেবেন কাজের সুযোগ , দেশ গড়বেন নতুন করে । যুদ্ধে পরাজিত অপমানিত জার্মান জাতিকে দেবেন সামরিক সক্ষমতা । তারা আবার মাথা তুলে জগতসভায় দাঁড়াবে। জনতা তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি শব্দকে আঁকড়ে ধরে । তাদের নিজস্ব ভাবনা চিন্তা লুপ্ত হয়েছে । নেতা একবার থামেন । জনতা দাবি করে আরও কিছু বলুন, আগে কহ আর । লক্ষ কি ? এক বিপক্ষ এবং সকল প্রতিরোধকে নির্মূলে বিনাশ করা দুই ভাইমারে তৈরি সাংবিধানিক বেড়াজাল চূর্ণ করা তিন এমন এক দেশ গঠন করা যা হবে হাজার বছর স্থায়ী তৃতীয় সাম্রাজ্য ( থার্ড রাইখ ) ... ...
দক্ষিণ দিক থেকে উদিত হলেন এক অস্ট্রিয়ান নাগরিক , যুদ্ধে কর্পোরাল হয়েছিলেন , দ্বিতীয় শ্রেণির আয়রন ক্রস ঝোলানো থাকে গলায় । মিউনিকের পাবে তাঁর বক্তিমে শুনতে ভিড় জমে যায় ( হোফব্রয় হাউসের তিনতলায় সেই হলটি দেখতে পাবেন ) ; তাঁর মতে জার্মানি একটা জেতা গেমে হেরেছে কারণ সৈন্য বাহিনীর পিছন থেকে ছুরি মারা হয় । তার জন্য দায়ী কমিউনিস্ট , ইহুদি ও কিছু চক্রান্তকারী বিদেশি । ৯ নভেম্বর ১৯২৩ শখানেক লোক যোগাড় করে ব্যাভেরিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ব্যর্থ অভ্যুথানের পরে গ্রেপ্তার হলেন সেই নেতা , আডলফ হিটলার । সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল ১৯২৩ সালে কিন্তু কোন অজানা কারণে তাঁর রেহাই হল নয় মাস বাদে । ২৭শে জানুয়ারি ১৯৩১ ডুসেলডরফের হর্ম্য মণ্ডিত ইন্দুস্ত্রি ক্লুবের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফ্রিতস থুসেন সমবেত ধনপতিদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমাদের দেশের ভাবি পরিত্রাতার সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিই -ইনি আডলফ হিটলার । লম্বা বক্তৃতা দেবার অভ্যেসটি ত্যাগ করে হিটলার মাত্র দশ মিনিট বললেন ... ...
নিহুস বললেন, ব্যালট পত্রে টিক দেবার জায়গা দুটো -প্রার্থীর নাম এবং তার পাশে দলের নাম। সে দল ঐ প্রার্থীরই হতে হবে এমন মানে নেই; ধরুন আপনি ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের প্রার্থীকে ভোট দিলেন । তাঁকে আপনার পছন্দ কিন্তু আপনি রাজনীতিতে রাস্তার বাঁ দিকে হাঁটতে ভালবাসেন , তাই সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দল আপনার বেশি পেয়ারের । অর্থাৎ সরাসরি ভোটটা দিলেন ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টির কাউকে কিন্তু বৃহত্তর অর্থে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দলকে ভালবেসে স্বচ্ছন্দে সেখানে টিক মেরে দিলেন। সরাসরি প্রার্থীর বাইরে প্রত্যেক পার্টির একটা লিস্ট তৈরি করা থাকে, যে দল যত বেশি পারসেন্ট ভোট পাবে তাদের অধিকার তত বেশি বিধায়ক পাঠানোর। কিন্তু হিসেবটা এখানেই শেষ নয়; ঐ যে সরাসরি যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের ভোট সংখ্যার সঙ্গে জোড়া হবে পার্টি যে ভোট পেয়েছে ( ছবিতে দেখুন, দ্বিতীয় লিস্ট ) এই দুটো মিলিয়ে যে দল ৫০.১ % ভোট পেয়েছে সে দল সরকার গঠন করতে পারে । তাদের একার মুরোদে না কুললে কোয়ালিশনের গাঁটছড়া । ... ...
আইনত একজন ফরাসি নাগরিক বছরে ৭৫০০ ইউরো, নির্বাচনী বছরে অতিরিক্ত ৪৬০০ বা মোট ১২১০০ ইউরো পার্টি ফাণ্ডে জমা দিতে পারেন । নিকোলা সারকোজি একটি চতুর স্কিম খাড়া করলেন, ৭৫০০ ইউরো যে কেউ দিতে পারে , ঠিক কে দিচ্ছে তার আধার কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখে কে ? তাঁর চেলা চামুণ্ডারা ফেক বিল বানানোর ফ্যাক্টরি খুলে ফেললেন যার অডিট করার সময় বা অর্থ কোনটাই নির্বাচনী কমিশনের নেই । টাকার ফোয়ারা বইতে লাগলো । এর পরে তিনি ধরলেন একটি বৃহৎ মৎস্য , তাঁর নাম লিলিয়ান বেতেনকুর ( লো রিয়াল সুগন্ধির বৃহত্তম শেয়ার হোল্ডার, পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মহিলা )। সারকোজির রি ইলেকশনের সময়ে ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় লিলিয়ান বেতেনকুরের ক্যাশ বাকসো থেকে এত ইউরো সারকোজির নির্বাচনী তহবিলে প্রবেশ করেছিল সে বিষয়ে বেশি কৌতূহল না দেখানোয় উৎসাহ দেবার মানসে সারকোজি এক বিচারপতিকে এক প্রকাণ্ড রিটায়ারমেনট প্যাকেজ অফার করেন । শেষ রক্ষা হয় নি, বেআইনি ভাবে নির্বাচনী খরচ খরচা যোগাড় করার অভিযোগে ফরাসি আদালত ২০২১ সালে সারকোজির তিন বছরের শাস্তি হয়, দু বছর সাসপেনডেড এক বছর কারাদণ্ড ... ...
অন্য যে কোন দেশের মতন ব্রিটেনে রাজনৈতিক দলের অর্থের প্রাথমিক উৎস বাৎসরিক সদস্য চাঁদা এবং শুভানুধ্যায়ীদের অকুণ্ঠ অর্থ সাহায্য। আপনার যা ইচ্ছে, কৌটোয় ফেলে দিন – লিব ডেমের কোন দাবি নেই ! নির্বাচনী আইন অনুযায়ী কোন প্রার্থী স্থানীয় নির্বাচনে পনেরশ পাউনড, সাধারণ নির্বাচনে চুয়ান্ন হাজার পাউনডের ( ব্রিটেনের গড় পড়তা মাথা পিছু আয় ৪৪,০০০ পাউনড) বেশি ব্যয় করতে পারেন না - তার হিসেব তৈরি রাখতে হয়। নির্বাচন কমিশন সেটি যে কোন সময়ে চাইতে পারেন। যতদূর জানি, ভারতে পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীর ব্যয় সীমা ৯৫ লক্ষ টাকা (ভারতের মাথা পিছু জাতীয় আয়ের ৫২ গুণ) – কিন্তু পার্টি তার দলীয় বা তারকাদের প্রচারে যে কোন পরিমাণ খরচ করতে পারেন। সেটি অসীম। ... ...
কোন প্রকারের ক্যানভাসিং মায়া করবে না, পড়াশোনায় ব্যস্ত । দুয়োরে দুয়োরে ঘোরার শক্তি এবং ইচ্ছে কোনটাই আমার নেই । পনেরোশো পাউনড অবধি সে খরচা করতে পারে, ইস্তেহার ছাপতে , যাতায়াতের খাতে কিন্তু নির্বাচনী আইন অনুযায়ী কোন সম্ভাব্য ভোটারকে নিজের পয়সায় চা পর্যন্ত খাওয়ানো চলবে না – মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট! মে মাসের পাঁচ তারিখে ভোট , চমৎকার দিন । রোদিকার ভোট ডাক বাকসে নিক্ষিপ্ত হয়েছে , আমি প্রতিবেশী আলেক্সের সঙ্গে ভোট দিতে গেলাম লোকাল স্কাউট ক্লাবে । বিকেলে মায়ার ক্লাসের শেষে তাকে নিয়ে গেছি পোলিং স্টেশনে , সে বললে ডাক্তারকে ভোট দিয়েছে । কাগুজে প্রার্থী বা শিখণ্ডিকে সামনে রেখে লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সমর্থিত নির্দলীয় প্রার্থী আকবর আলি দু বারের বিজয়ী কনজারভেটিভ কাউনসিলারকে হটাতে সক্ষম হলেন। পরের বছরের নির্বাচনে আমাদের প্রার্থী স্টিভ গ্রিনট্রি আগের দু বারের বিজয়িনী মেলানিকে হারিয়ে ন্যাপহিলের প্রথম লিব ডেম আসন নিশ্চিত করেন ... ...
- এই ইলেকশানে তো খরচা আছে ! অন্তত তোমার ছবিওলা কয়েকটা লিফলেট ছাপাতে হবে না ? সেটা কোথা থেকে আসবে? পার্টি দেবে , না আমাকে দিতে হবে ? - তুমি লিবারাল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে বহুদিন কাজ করছ কিন্তু জানো কি কাকে শর্ট ক্যানভাসিং বলে ? ইলেকশন ফাইনান্সিং? আমি কত খরচা করতে পারি তার লিমিট আছে , কাউন্সিল ইলেকশনে পনেরশ পাউনড , পারলামেনট ইলেকশানে চুয়ান্ন হাজার পাউনড । পার্টি টাকা তোলে নানান ভাবে । এই আলোচনাটা কাল করতে পারি ? ... ...
জার্মানিতে বাড়ির গেটের পাশে, ফ্ল্যাটের দরোজায় কেবল গৃহীর নামের বোর্ড সাঁটা থাকে না , তিনি যে ডক্টর, ইনগেনিউর, আরখিটেখট, রেখটসআনভালট ( উকিল) নিদেন পক্ষে উচ্চ ডিগ্রির অধিকারী কোনো হের বা ফ্রাউ সেটি জানিয়ে খ্যাত হতে চান। সকালবেলা ফ্রাঙ্কফুর্টের স্পর স্ত্রাসের বাড়ি থেকে অফিস যাবার সময়ে ফ্রিডবেরগার লানড স্ত্রাসের ট্রাম স্টপে অপেক্ষা করার সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে জেনে ফেলেছি লাগোয়া বাড়ির বাসিন্দারা কে কোন কর্ম করেন, কোন ডিগ্রি ধারণ করেন। লন্ডন এসে ইস্তক দেখলাম এখানে বাড়ির মালিক তাঁর সংক্ষিপ্ত সি ভি জানাতে অনিচ্ছুক, , ফ্ল্যাটের দুয়োরে বড়জোর মিস্টার বা মিসেস অমুক । গোলডারস গ্রিনে সেটাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সারের গ্রামে , আমাদের পাড়া পড়শির বাড়ি নম্বর বিহীন , গেটে নাম লেখা – রাসটন লজ, ইনউডস, পার্কভিউ। কারো দেয়ালে মালিকের পরিচিতি সাঁটা নেই। পাস বা পেশা তো নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ফর অ্যান ইংলিশম্যান , হিস হোম ইজ হিস কাসল । তাঁরা খুবই প্রাইভেট পারসন। থাকতে দে না আপন মনে আমায়, অথচ বাড়ি জমি বিক্রির কিসসা সকলকে জানাতে চান ! জার্মানির ঠিক উলটো ! ... ...