সোহম সরকারের ছোটবেলার আরো কিছু ঘটনা বলি। সে সময় তাঁর বছর পাঁচেক বয়স। আমার কাছে মাঝেমাঝেই পড়তে আসতেন। পড়তে এসে নানা রকম ফরমাশ এবং বলা বাহুল্য দুষ্টুমিও করতেন। এক দিন বিকেলে পড়তে এসে যা করেছিলেন সে একটা লিখে রাখার মতো ঘটনা বটে। তিনি আমার কাছে একটা নির্দিষ্ট খাতায় লিখতেন। তো সে দিন তাঁর সেই খাতাটা সংশোধন করে তাঁকে আমি দেখাইনি। বলেছিলাম- "একেবারে তোর মা'কে দেখাব।" সোহমের মা অর্থাৎ তেজী বৌদি। সেই সময় অবশ্য তেজী নামটা দেওয়া হয়নি। এখানে তাঁকে নবঝর্ণা বৌদি বলেই উল্লেখ করব। আসল নাম বললে তাঁর তেজে আমাকে পুড়ে যেতে হ'বে। যাই হোক, আমার কথা শুনে সোহম ভাবলেন, ... ...
মানুষ কেন নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, বলা কঠিন। অনেক দুঃখকষ্ট, অনেক অভিমান বুকের মধ্যে সে পুষে রাখে। তারপর এক দিন কোথায় যেন চলে যায়। দূর থেকে সুদূরে। হয়তো দিকচক্রবাল ছাড়িয়ে কোনো অজানা জায়গা তার গন্তব্য। বাড়ির লোক কিছু দিন খোঁজে। পুলিসের কাছে যায়। মিসিং পার্সনস স্কোয়াড সক্রিয় হয়ে ওঠে। কাউকে কাউকে বাড়ি ফেরানো যায়। কাউকে কাউকে কোনো দিনও খুঁজে পাওয়া যায় না। বাড়ির লোক এক সময় হাল ছেড়ে দেয়। মিসিং পার্সনস স্কোয়াডে গিয়ে আর খোঁজ নেয় না। ফাইলে ধুলো জমে। সবাই তাকে ভুলে যায়। শুধু ভুলতে পারে না হারিয়ে যাওয়া মানুষটির সবচেয়ে প্রিয়জন। রাতে শুয়ে শুয়ে বিনিদ্র মা অপেক্ষা করে, দরজায় ... ...
কত বিচিত্র সব নাম কানে আসে বরাবর। কিছু নাম অবাক করে দেয় বই কী!হিন্দিভাষী অবাঙালিদের মধ্যে রতি, কামনা, আঁচল এসব নাম হামেশাই শোনা যায়। গুণবন্তী, লাজবন্তী, ভাগবন্তীও শোনা যায়। রাহুল শব্দটির মানে "মূর্তিমান রাহু" অথচ কত কত ছেলের নাম রাহুল রাখা হয়।অন্য রকম এবং কঠিন কঠিন নাম দেওয়ার ব্যাপারে বাঙালিরাই এগিয়ে ছিল এক সময়। এখন আর নয়। এখন এই শহর এবং অন্যান্য শহরবাসী সমস্ত রাজ্যের শিক্ষিত আধুনিক মানুষ ছেলেমেয়েদের "অন্য রকম" নাম দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। তবে রীতিরেওয়াজ মেনে দেবদেবীদের নামে ছেলেমেয়েদের নামকরণ দক্ষিণ ভারতে সবচেয়ে বেশি। এখনো নামের ব্যাপারে তাঁরা মোটের ওপর রক্ষণশীল। কলকাতার এক বাঙালি দম্পতি পারিবারিক রীতি ... ...
কৌতূহল, যা জানি না সেটা জানার ইচ্ছা। মানুষ মাত্রেরই কৌতূহল থাকে, কারো কম কারো বেশি। মনুষ্যেতর প্রাণীদেরও থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, কৌতূহল থাকা স্বাভাবিক। যার কৌতূহল নেই, সে জড় পদার্থ। তবে এটা প্রকাশ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করলেই ভালো। আমার খরগোশ অ্যান্ডিকে দিয়ে শুরু করি। বাবা মারা যাওয়ার মাস দেড়েক পর আমি ওদের নিয়ে আসি। তারপর আমরা তিনটি প্রাণী অর্থাৎ আমি আর আমার দুই খরগোশের এক সঙ্গে জীবন শুরু হল। যখন এসেছিল দুই ক্ষুদের বয়স তখন এক মাসের একটু বেশি। বাপ রে বাপ, কী প্রাণশক্তি আর কৌতূহল! অ্যান্ডি আর স্যান্ডির মধ্যে অ্যান্ডি ধবধবে সাদা এবং বেশি দুষ্টু। স্যান্ডির ... ...
যখন তিনি শিশু ছিলেন, আমাদের বাড়িটা ছাড়া কিছু জানতেন না। দুই পিসির কাছেই খুব আদর পেয়েছেন তবে মামনপিসিকে বেশি দিন কাছে পাননি। আজকে তাঁর শৈশবের কয়েকটা ঘটনা বলব। সোহমের তখন বছর ছয়েক বয়স। তাঁর ঠাকুমার স্ট্রোক হওয়ার পর ডাক্তারের নির্দেশে সাতসকালে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে শিশুটির বাবা মা ঠাকুমাকে নিয়ে শ্যামবাজারে একটা নার্সিং হোমে ছুটেছিলেন। সোহমকে আমাদের বাড়ি রেখে যাওয়া হয়েছিল। ক্রমশ ভেঙে যাওয়া ঘুমের মধ্যে থেকে ব্যাপারটা আমি একটু একটু টের পাচ্ছিলাম তবে ঘুম থেকে তখনো উঠিনি। তারপরে সোহমের প্রচন্ড কান্নায় বিছানা ছাড়তে বাধ্য হ'লাম। কী ব্যাপার, এত কান্না কিসের? জানা গেল, আমাদের বাড়িতে আসার পরই তাঁর একটা দাঁত পড়ে গিয়েছিল। দাঁতটা তিনি ... ...
কতকগুলো মজার ঘটনা বলি আজ। প্রত্যেকটা ঘটনাই প্রাত্যহিক জীবন থেকে পাওয়া। কিছু আমার দেখা, কিছু শোনা। আমার মামাতো দিদি পিউদের স্কুলে একটি মেয়ে পড়ত। তাকে বকলেই সে টিচারদের কোলে উঠে বসত। এবারের মজার ঘটনা সোহম সরকারের শৈশবের। তাকে আমি মাঝেমাঝে চকোলেট ... ...
গ্রীষ্মের এই অসহনীয় বেলায় নিচে তেজী বৌদি তাঁর এই সময়কার কাজটা করছেন আমাদের ব্লকের বাইরে এসে। তা করুন। এই সময় আমার মনে পড়ছে বৌদির চাঁদের মতো খোকার কথা। সে খোকা অবশ্য এখন এক পরিণত ও গম্ভীর যুবক। এই মুহূর্তে দেরাদূনে আছে। সে খোকাকে নিয়ে আমি চাঁদের খোকা বলে একটি ছড়া এবং অনেক ছড়াকবিতা লিখেছি।চাঁদের প্রসঙ্গে আমাদের প্রাক্তন অফিসের এক ভদ্রলোকের কথা ... ...
ধরা যাক, নাম তার বিন্দিয়া তবে সে মোটেই ভারতীয় নয়। খাস সাদা সাহেব আমেরিকান বাবা ও ব্রিটিশ মায়ের সন্তান। সে নেহাৎ বেবীও নয় এখন। তার বাবা-মায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৫ সালের এপ্রিলে তার জন্ম। তার সৎ দাদা, বাবার আগের পক্ষের বড় ছেলে তার থেকে পনেরো বছরের বড়। বাবা, মা ও সৎ দাদার সঙ্গে সে ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার দক্ষিণ দিকের একটি রাজ্যে থাকে। তবে সম্ভবত এখন তার সৎ ... ...
বয়স বাড়ে। কমে না। এটা একটা বাস্তব। তবে বয়সের এই স্বাভাবিক বাড়বাড়ন্তকে অনেকেই সহজভাবে নিতে পারে না। অনেকেই যতটা পারে নিজের বয়স ততটা কমায়। বয়সের বাড় চাপা দেওয়ার জন্য তাদের বাড়াবাড়ি কখনোই বাড়ন্ত হয় না। বয়স কমানো নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা এখানে বর্ণনা করব। হয়তো মজার কথা তবে এই সব মারাত্মক চিজের ওপর দয়াও হয়। একটি ছেলে আমার সমবয়সী, তার চারটে দিদি। এক সময় ছেলেটি ... ...
মাস্টারমশাইদের নিয়ে অনেকেরই অনেক স্মৃতি। আমারও বেশ কিছু স্মৃতি আছে। তার ওপর আমার পরিচিত অনেককেই টিউশনি করতে দেখেছি। নিজেও করেছি তবে খুব বেশি নয়। সব মিলিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা এখানে লিখছি। আর হ্যাঁ, শব্দটার যথাযথ ইংরিজি উচ্চারণ টিউশন না বলে এই লেখায় আটপৌরে টিউশনিই বলব আমি। একটা সময় আমরা টবিন রোডের কাছাকাছি সরকারি কোয়ার্টারে থাকতাম। অনেক পরে বুঝেছি, আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ওই সাড়ে এগারো বছর। তখন অবশ্য এই বোধ আসেনি। যাক গে, প্রসঙ্গে ঢুকি। "কোয়ার্টার বাস" এর সময় আমাদের ঠিক পাশের ফ্ল্যাটে একটি বড় পরিবার থাকত। গৃহকর্তা, গৃহিণী এবং এক মেয়ে ও চার ছেলে। আমরা যখন ওখানে যাই তখনই ... ...