এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে: আঁধার মাণিক্যের দেশে

    Samik Mukherjee
    অন্যান্য | ১৮ অক্টোবর ২০১০ | ৩৪১৬৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 122.168.121.68 | ২৩ অক্টোবর ২০১০ ২২:০০459042
  • আমার সাল ১৯৯২। আটদিনের আন্দামান সফর। শমীকের শেষ হলে অল্প সাপ্লিমেন্টারি দেবার ইচ্ছে আছে। হিস্টরি পার্ট টা বাদ দিয়ে। ঐ
    অক্টোবরে দুগ্গোপূজোর সময়ই গেছলাম। সেসব যথা সময়ে বলব, সংক্ষেপে।
    খালি একটা কথা বলে রাখি--- বেড়ানো কি বলছেন-- কেউ কেউ ওখানেই থেকে যেতে
    চায়।
    বেড়ানো?
  • Samik | 122.162.75.185 | ২৩ অক্টোবর ২০১০ ২২:৩৪459043
  • খুব সত্যি কথা।
  • dukhe | 117.194.233.40 | ২৩ অক্টোবর ২০১০ ২২:৩৫459044
  • @Samik(Date:22Oct2010 -- 02:16PM),
    লাইটহাউস ভরসা দিল । আরেট্টু দেখি । তারপর একটা বডিশপার ধরতে হবে ।
  • Samik | 122.162.75.185 | ২৩ অক্টোবর ২০১০ ২৩:৩২459045
  • লাইটহাউস তো জাস্ট টিপ অফ আইসবার্গ! ক্রমশ প্রকাশ্য :-)
  • de | 134.105.166.235 | ২৩ অক্টোবর ২০১০ ২৩:৪১459046
  • এই লেখাটা সবচে' কাজে লাগবে আমার --আমি এই ডিসেম্বরে যাবো! ন'দিন রেখেছি ঘোরার জন্য, আশা করি যথেষ্ট হবে!

    শমীকের অসাধারণ অধ্যবসায়!

    আমার মাঝে মাঝে কেমন সন্দ হয় -ম্মু-ই পিটি নয় তো? :))
  • til | 220.253.185.165 | ২৪ অক্টোবর ২০১০ ০৭:১৩459047
  • আম্মো যাবো এই ডিস অম্বরে। লেকিন কতো জায়গায় যাবো, মোটে তো ৪১ দিন ছুটি!
    দে-দি জানাবেন সুলুক সন্ধান, কবে , কখন। বারাণসীও লিস্টে আছে, বেঙ্গালুরু ও। অর্ধেকদিন তো কিংসমার্কেটে হ্যানা-ত্যানাতে কেটে যাবে।
    নাহ, জব্বর একটা প্ল্যান করতেই হচ্ছে।
  • sana | 110.32.34.140 | ২৪ অক্টোবর ২০১০ ১০:৫৩459048
  • শমীকের লেখার এই যে সহজ ভাব,এইটে বড়ো ভালো লাগে।
  • Manish | 59.90.135.107 | ২৫ অক্টোবর ২০১০ ১২:০১459049
  • তারপর::::::::::::::::::::::::::::::::::
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৫ অক্টোবর ২০১০ ১২:০৩459050
  • লিখছি। উইকেন্ডে একেবারে লেখার টাইম পাই না। আপিসে এলে তবে সময় পাই।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৫ অক্টোবর ২০১০ ১৩:০৮458775
  • পঞ্চম দিনের ছবি। ৩৫১ থেকে ৪১৬।

    লেখা আসছে।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৫ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৫৪458776
  • -- ** -- ** --
    সোমবার, ১১ অক্টোবর, পঞ্চম দিন

    আগের দিন আবার তারিখ ভুল লিখেছি : Date:22 Oct 2010 -- 12:14 PM এর পোস্টে। ওটা ১০ অক্টোবর হবে।

    আগের দুদিনের ট্যুর খুব হেকটিক হয়েছে। আজ তাই হাল্কা চালে ঘোরা। শহরের মধ্যে। সিটি ট্যুর।

    কিন্তু সকালে বেরোবার আগেই ইন্টারনেট থেকে যা যা তথ্যসমূহের প্রিন্টআউট নিয়ে এসেছিলাম, সেগুলো বের করে পড়তে গিয়েই চক্ষুস্থির! সোমবার তো প্রায় সমস্ত মিউজিয়াম বন্ধ থাকে! সামুদ্রিকা বন্ধ, মিনি জু বন্ধ, সাগরিকা বন্ধ! তা হলে সোমবারে সিটি ট্যুর রাখল কেন লোকটা?

    ট্র্যাভেল এজেন্ট আসামাত্র তাকে খুব ঝাড়া হল। সে এতটুকুও দমে না গিয়ে বলল, ওসব শেষ দিন দেখে নেবেন। তার মানে? দুদিন ধরে সিটি ট্যুর করব? তুমি ব্যাটা দুদিন ধরে টাকা নেবে? খুব মহান হয়ে গিয়ে লোকটা বলল, আরে না-না, টাকা আপনাদের কাছ থেকে এক্সট্রা নেব না। যা দেখানো হবে কেবল তারই টাকা নেব। ... কিন্তু গোটা দুটো দিন ধরে কেবল শহরের মধ্যে ঘুরব, মিউজিয়াম দেখে? আর একটা দিন আমাদের খালি আছে বটে, কিন্তু সেদিন কি অন্য কোথাও যাওয়া যায় না? হ্যাভলকে একদিনেরটা এক্সটেন্ড করে দুদিনের করে দেওয়া যায় না? কিংবা, ওখন থেকে নীল আইল্যান্ডটা করে দেওয়া যায় না? শুনেছি তো নীল আইল্যান্ড হ্যাভলকের থেকেও বেশি সুন্দর!

    এজেন্ট আবারও বলল, ঠিক আছে, হ্যাভলকে তো এখন হোটেল বুকিং পাওয়া যাবে না, নীলটা লাস্ট দিন ঘুরিয়ে দেওয়া যায় কিনা, চেষ্টা করে দেখছি।

    হ্যাভলকে হেলিকপ্টার সার্ভিসের জন্যও ফর্ম জমা করতে দিয়েছিলাম, আজ জানা যাবার কথা, আমাদের সীট কনফার্ম হয়েছে কিনা। সেটাও কি জমা করা হয়েছে আদৌ?

    হুঁহাঁ করে পাশ কাটিয়ে গেল, আসলে টুরিস্টদের জন্য তো হেলিকপ্টার দেওয়া হয় না ... এই-ওই-তাই। তাকে বোঝালাম, হেলিকপ্টার সার্ভিস সম্বন্ধে তোমার থেকে বেশি পড়াশোনা আমি করে এসেছি, আমাকে ঐ ব্যাপারে টুপি পরিও না, তুমি ফর্ম জমা করেছো কিনা বলো। সে এজেন্ট, মুখে তো বলল হ্যাঁ, কিন্তু বডি ল্যাঙ্গোয়েজই বলে দিল সে ফর্ম জমা করে নি। ... তখন আর কিছুই বলার নেই, আমাদের বেরোতে হবে, কিন্তু খুব মন ভেঙে গেল।

    আজকের দিনের জন্য একটি মারুতি ওমনি আমাদের জন্য বরাদ্দ। সামনেই হ্যাডো শেষ হয়ে একটা লম্বা ব্রিজ শুরু হয়েছে, চ্যাথামকে কানেক্ট করার জন্য। টিকিট কেটে, সোজা ওম্‌নিশুদ্ধু আমরা জাহাজে উঠে পড়লাম, গন্তব্য তার ঠিক পেছনের আইল্যান্ড। ব্যাম্বু ফ্ল্যাট।

    গাড়িতে চেপেই নেমে পড়লাম জাহাজ থেকে। গাড়ি চলতে শুরু করল। খুব তাড়াতাড়ি বদলাতে লাগল গাছপালার প্রকৃতি। প্রথমে নারকোল-তাল-সুপুরি, তারপরেই আস্তে আস্তে পাহাড়ি টাইপের গাছ শুরু হয়ে গেল।

    একটা জায়গায় এসে ড্রাইভার গাড়ি থামাল পাহাড়ি রাস্তার ধারে। আমরা গাড়ি থেকে নেমে নারকোল গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে দূরে তাকালাম। (ছবি নং ৩৫৬, ৩৫৭, ৩৫৮)। সাদৃশ্যটা জানা, তবুও ড্রাইভার পকেট থেকে বের করে তুলে ধরল একটা কুড়ি টাকার নোট (ছবি নং ৩৫৯)। হুবহু এক দৃশ্য।

    সেই সেদিন নর্থ বে আইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, গল্পটা কেউ জানে কিনা, মনে আছে? এটাই গল্প। আমাদের কুড়ি টাকার পেছন দিকের ঐ ছবিটা, নারকোলপাতার ফাঁক দিয়ে দেখা দ্বীপ আর লাইটহাউসের ছবি, নর্থ বে আইল্যান্ডের ছবি, এই পয়েন্ট থেকে দেখে আঁকা।

    খানিক বাদেই পৌঁছে গেলাম মাউন্ট হ্যারিয়েট ন্যাশনাল পার্কে। সুন্দর করে সাজানো একটা পার্ক। ওখন থেকে ২২ কিমি লম্বা একটা নেচার ট্রেলের রাস্তা গেছে, সেদিকে আর আমরা গেলাম না। খানিক সময় ঐ পার্কেই কাটিয়ে আমরা চলে এলাম জেটিতে। আবার গাড়ি-শুদ্ধ জাহাজে করে ট্র্যান্সফর চ্যাথাম জেটিতে।

    চ্যাথাম দ্বীপ, পোর্ট ব্লেয়ারের গায়ে লাগোয়া একটা ছোট্ট দ্বীপ। পুরো দ্বীপটা একটা শ' মিল। এটা এশিয়ার প্রাচীনতম শ মিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানিরা এখানো বোমা ফেলেছিল। সেই বোম ফেলার গর্তে একটা ডোবা তৈরি হয়ে গেছে, সেই ডোবাটা দেখা যায়। মিলের ভেতরে ঢুকে কাঠ চেরাই, কাটিং, পালিশিং ইত্যাদি বিভিন্ন কাজকর্ম নিজের চোখে দেখতে পাওয়া যায়। মিলের ভেতর ছবি তোলা বারণ, মানে ওয়ার্কশপের ভেতর। সেখানে দু একটা মেশিন দেখা গেল, যেগুলো উনিশ শতকে আনা হয়েছিল লন্ডন থেকে। সেগুলো এখনও কাজ করছে।

    একটা মিউজিয়ামও আছে, শ মিলের বিভিন্ন প্রোডাক্ট, আন্দামান নিকোবর সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য, মডেল ইত্যাদি নিয়ে। সেখানে কিছু ছবি তুলে নিলাম।

    এইবার শহরের দিকে ফেরা। পরের গন্তব্য অ্যা®¾থ্রাপলজিক্যাল মিউজিয়াম। কিন্তু তার আগে, পেটপুজো। খিদে পেয়ে গেছে।

    আগের দিন লাইটহাউসে খেয়েছি। কিন্তু এসি এবং বিদেশি অতিথিদের কল্যাণে সেখানে বিল হয়েছিল আটশো টাকা। আন্দামানে এসেও যদি এত দাম দিয়ে সী ফুডস খেতে হয়, তা হলে আর আনন্দ কী রইল!

    ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাছে দেখেছিলাম আরেকটা রেস্টুরেন্ট, নিউ লাইটহাউস। বোধ হয় আগের দিনের রেস্টুরেন্টটারই নন এসি ভার্সন। ওপেন রেস্টুরেন্ট, ওপরে শুধু ছাউনি দেওয়া। সেখানেই যাওয়া যাক।

    অ্যাবার্ডিন বাজারের মুখে ঢোকার আগেই শুরু হল বৃষ্টি। আকাশ ঘন কালো হয়ে ছিল। গাড়ি একেবারে রেস্টুরেন্টের গা ঘেঁষে দাঁড়াল, আমরা ছাতা বের করে স্যাটাস্যাট ঢুকে পড়লাম ছাউনির তলায়।

    নন-এসি, এবং ব্যবস্থাপনা একই রকম। কাচের বাক্সে সাজানো রয়েছে কাঁকড়া, চিংড়ি, পমফ্রেট আর অন্যান্য মাছ। যেটা পছন্দ বলে দাও, রান্না করে দেবে। যারা সার্ভিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন, সবাই বাঙালি। কাঁকড়াটা পছন্দ করার পরে তার কারির দাম ধার্য হল সাড়ে তিনশো টাকা।

    আনুষঙ্গিক খাবার দাবারের, যেমন মাছভাজা, ভাত ডাল ইত্যাদি, অর্ডার দিয়ে বসতে না বসতেই বৃষ্টির তেজ গেল বেড়ে। সে কী সাংঘাতিক ঝেঁপে বৃষ্টি! ওপরে প্রকাণ্ড টিনের চাল, তাতে পড়ে শব্দ আরও বেড়ে যাচ্ছে, এলোপাথারি হাওয়ায় চেয়ার উড়ে প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে কড়াক্কড় মেঘের ডাক। পুউরো আকাশ ভাঙা বৃষ্টি যাকে বলে। না-চেঁচালে পাশের জনকে কথা শোনানো যাচ্ছে না।

    রেস্টুরেন্টের একজন ওয়েটারের সঙ্গে গল্প জুড়লাম। কলকাতার ছেলে, পঁচ বছর হল আছে পোর্ট ব্লেয়ারে। এখানকার বেশির ভাগ লোকই দক্ষিণবঙ্গের। জানলাম, এই "নিউ লাইটহাউস' আগের দিনের লাইটহাউসের সঙ্গে যুক্ত নয়, আলাদা এনটিটি। সী ফুডের এত দাম কেন? দিল্লিতেও তো কাঁকড়া প্রায় এই দামেই বিক্রি হয়। ... লোকটা বলল, স্যার, আন্দামানে সব কিছুর দাম বেশি। সব কিছু মেনল্যান্ড থেকে সাপ্লাই আসে কিনা! এখানে আর কতটুকু চাষ হয় বলুন। সবজির এখানে আগুন দাম। মাছ-চিংড়ি-কাঁকড়া আপনি খুব শস্তায় পাবেন না, কিন্তু যেটা দিল্লিতে পাবেন না, সেটা হল, এসবের ফ্রেশনেস। এই যা মাছ দেখছেন, কাঁকড়া দেখছেন, সব আজ সকালে ধরা। খেয়ে দেখুন, বুঝতে পারবেন।
  • dukhe | 122.160.114.85 | ২৫ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৫৮458777
  • বা: বা: ! খেয়ে কী বোঝা গেল সেই সরু সুতোর ওপরেই আমার সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে ।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৫ অক্টোবর ২০১০ ১৪:১৪458778
  • তা বুঝলাম। কত বছর বাদে যে কাঁকড়া খেলাম, কে জানে! দুর্দান্ত বানিয়েছিল, কেবল মনে হল শুরু হতে না হতেই যেন শেষ হয়ে গেল। মাছভাজা অবশ্য দুবার করে নিয়ে খেলাম। এখানে মূলত চলে সুরমই আর কুকারি মাছ। সমুদ্রের মাছ, কাঁটা নেই।

    বিল হল ছশো টাকার।

    বাইরে বৃষ্টি তখনো চলছে মুষলধারে। আন্দামানের এই এক প্রবলেম। আকাশের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, মেঘ চলে এখানে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে। এই পরিষ্কার আকাশ, হঠাৎ কখন কোথা থেকে যে মেঘ চলে আসবে, বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে, কেউ বলতে পারে না। ... কাল আমাদের হ্যাভলক যাবার দিন। অন্যতম ইমপর্ট্যান্ট ট্যুর। কী যে হবে! হোটেলে আমাদের পাশের রুমেই এক বাঙালি ফ্যামিলি এসে উঠেছেন, তাঁরাও দিল্লিতে থাকেন, তাঁরা আজ হ্যাভলক গেছেন, শুনে নিতে হবে সন্ধ্যেবেলায় গিয়ে, কেমন ঘুরলেন।

    এইসব আলোচনা করতে করতে আমরা আবার গিয়ে গাড়িতে চড়লাম। গেলাম অ্যা®¾থ্রাপলজিক্যাল মিউজিয়ামে। এই মিউজিয়ামটা আমার বেশ ভালো লাগল। অ্যা®¾থ্রাপলজি সংক্রান্ত সমস্ত কিছু এক ছাদের নিচে। আন্দামানের আদি বাসিন্দারা, কেমন ছিল, এখন কেমন আছে, তারা কীভাবে থাকে, কী খায়, কী কী অস্ত্র ব্যবহার করে, কেমন করে মাছ ধরে, ইত্যাদি কিছুর সঙ্গে পরবর্তীকালে আসা সেটলাররা কেমন করে সেটল করল, তাদের জীবনযাত্রা, এইসব হয়ে আজকের আন্দামান, তার লাইফস্টাইল ইত্যাদি।

    অনেকেই হয় তো জানেন, দেশভাগের সময়ে যখন দক্ষিণবঙ্গ পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের চাপে বিপর্যস্ত, কথা উঠেছিল আন্দামানকে সেই সব বাঙালিদের সেটলমেন্টের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হোক। তা হলে পশ্চিমবঙ্গ ত্রিপুরার মত, আন্দামানও বাঙালিদের একটা বড় বেস হতে পারত।

    বিরোধিতা করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়। বাংলাভাষীদের দূ:খে তাঁর প্রাণ এমনই কেঁদে উঠেছিল, যে তিনি বলেছিলেন, না না, বাংলা ছেড়ে বাঙালিদের কোথাও যাবার দরকার নেই। আমরা সব বাংলাভাষীকে পশ্চিমবাংলাতেই রাখতে পারব।

    এর পরের দণ্ডকারণ্য এবং মরিচঝাঁপি অধ্যায় তো সবারই জানা। পশ্চিমবঙ্গে জায়গা হয় নি তাদের। সরকার পাল্টে ততদিনে গদিতে এসেছে যুক্তফ্রন্ট, পরে বামফ্রন্ট। সে কাসুন্দি ঘেঁটে আর লাভ নেই, মোদ্দা কথা, সেই তালেগোলে হরিবোলে প্রচুর প্রচুর বাঙালি কিন্তু আন্দামানে চলে এসেছিলেন। থেকে গেছিলেন এখানেই। আজও আছে তাঁদের বংশধরেরা। আন্দামানের সংখ্যাগুরু তাই, বাঙালি। এ ছাড়াও তামিল তেলুগু মালয়ালম সবাই আছেন, কিন্তু যেহেতু কারুরই মাতৃভাষা হিন্দি নয়, তাই সকলেই পারফেক্টলি "কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ' হিসেবে মেনে নিয়েছেন হিন্দিকে, এবং তার পাশাপাশি নিজের নিজের কালচার সুন্দরভাবে মেনটেন এবং এক্সচেঞ্জ করে থেকে গেছেন। বাঙালি আর তামিলে এমনিতে কোনও মিল নেই, কিন্তু মিল পাওয়া যায় তখন, যখন মাঝসমুদ্রে লুচি-ঘুগনির সঙ্গে পাতে পড়ে নারকোলের চাটনি, যেটা ধোসার সাথে দেওয়া হয়। এ বোধ হয় শুধু আমাদের দেশেই হয়। :-)

    মিউজিয়ামের স্যুভেনির শপ থেকে কিঞ্চিৎ কেনাকাটা করে যখন বেরোলাম, তখন বৃষ্টি ধরে গেছে, আর আকাশ ছেয়ে গেছে অদ্ভুত নীল রংয়ে। সামনেই একটা কমিউনিটি হল টাইপের, ওপরে ব্যানার দেখে বোঝা গেল, সেখানে কোনও বাঙালি কমিউনিটির দুর্গাপুজোর তোড়জোড় চলছে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, ওটা বেঙ্গলি ক্লাব। ঐ হলের নিচে অনেক শপিং এম্পোরিয়াম আছে, ঠিক করলাম শেষ দিন ওখান থেকে কিছু কেনাকাটা করতে হবে।

    বিকেল চারটে বাজে। আজকের শেষ গন্তব্য, চিড়িয়া টাপু। এখান থেকে চল্লিশ মিনিট লাগবে।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৫ অক্টোবর ২০১০ ১৪:১৬458779
  • দুখে, সাতদিন ছিলাম। শেষদিনের লাঞ্চের বিবরণ পড়ে সিদ্ধান্ত নেবেন :) সেদিন আর ডিনার করতে হয় নি। :-)))
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৫ অক্টোবর ২০১০ ১৪:৩৭458780
  • শহর ছেড়ে গাড়ি চলল চিড়িয়া টাপুর দিকে।

    টাপু মানে, বসতি। এই বিচের চারপাশের বনে নাকি বিভিন্ন কিসিমের পাখি আসে। আর এই বিচ সূর্যাস্ত দেখর আদর্শ জায়গা। অবশ্য যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে!

    শহর ছাড়বার পরেই রাস্তা আর অতটা ভালো রইল না। বেশ বাম্পি রাইড। এমনিতেও অন্ধকার হয়ে আসছে। সূর্যাস্তের আগে পৌঁছতে পারব কিনা, কে জানে!

    অনেকটা চলার পরে, একটা মোড় ঘুরতেই, সমনে বিশাল চেহারা নিয়ে হাজির হল সমুদ্র। ঘন নীল রঙের। ইতিউতি নারকোলগাছ, সে যে কী অপূর্ব সীন, ড্রাইভারকে বললাম, গাড়ি থামাও, ছবি তুলব। ড্রাইভার বলল, স্যার, এ কী দেখছেন, চিড়িয়া টাপু এর থেকে অনেক বেশি সুন্দর। ওখানেই ছবি তুলবেন।

    চিড়িয়া টাপু তখনও খানিকটা দূর। গাড়ি লাফাতে লাফাতে ছুটে চলল, আর আমি দু পাশের দৃষ্য দেখে ইশ্‌শ্‌ উশ্‌শ্‌ করতে লাগলাম, মনের মধ্যে খালি ভেসে উঠছে ব্ল্যাঙ্কির কথা। সে ব্যাটাকে একবার এখানে ফেলতে পারলে, ও ফাটাফাটি ছবি তুলতে পারত। আমি তো ছবির ব্যাপারে গোমুখ্যু।

    চি. টাপু যখন পৌঁছলাম, তখন সত্যিই সূর্যাস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আকাশে "অস্তরাগের' বদলে তখন চলছে ম্যাজিকাল নীল রঙয়ের খেলা। আকাশে বিভিন্ন লেয়ারে মেঘ, সমুদ্র, আর চিড়িয়া টাপু বিচ। হাল্কা অন্ধকার চেপে বসছে। ... না, কোনও পাখি দেখি নি। খালি উঁচু উঁচু গাছ চারদিকে। আর বিচের ধারে পড়ে আছে অনেক ভেঙে যাওয়া গাছের দেহাবশেষ, ইতিউতি। এরা সবাই সুনামির ভিক্টিম। বিচটা আগে সাজানো ছিল, সুনামি ধ্বংস করে দিয়েছে অনেক গাছ সমেত, কিন্তু সেই ধ্বংসের রূপও এত নয়নমনোহর, কেউ সেসব আর পাল্টায় নি।

    ছবি তো তেমন তুলতে পারলাম না। আমি গোমুখ্যু। শুধু চোখ দিয়ে দেখে মুগ্‌ধ হলাম। এখনো চোখ বন্ধ করলে ঐ নীল রংগুলো দেখতে পাচ্ছি ... নীল আমার খুব প্রিয় রং।

    ফেরার পথে একটা ছোট ... গ্রাম না বলে জনপদ বলা ভালো, সেখানে দাঁড়িয়ে ডাব খেলাম। কী যে জলহাওয়ার গুণ, দুপুরে যে এত খেলাম, সব কোথা দিয়ে হজম হয়ে গেছে!

    সাতটা নাগাদ হোটেলে ফেরৎ। সেই বাঙালি ফ্যামিলিও ফিরে এসেছেন হ্যাভলক থেকে। একেবরে এনজয় করতে পারেন নি, সারাক্ষণ ছাতা মাথায় বসে থাকতে হয়েছে, খাবার খুব প্রবলেম হয়েছে, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সবাই বিচের ধারে খাবার শেডগুলোতে ভিড় করেছিল। বসার জায়গা পাওয়া যায় নি।

    মনটা দমে গেল। কাল কী হবে, কে জানে!

    আটটায় ট্র্যাভেল এজেন্ট এল, কাল আমাদের বুকিং হয়েছে ম্যাক্রুজ নামে একটা বিলাসবহুল ক্রুজে। হেলিকপ্টার? ভুলে যান, ও হবে না। ম্যাক্রুজে টিকিটের দাম পারহেড সাড়ে সাতশো করে। মানে যাতায়াতে তিনজনকার সাড়ে চার হাজার টাকা। আর নীল আইল্যান্ড? "দেখছি কী কর যায়।' বুঝলাম ও-ও হবে না।

    ট্র্যাভেল এজেন্ট নয়, আমার তখন আমার বউকে ধরে ঠ্যাঙাতে ইচ্ছে করছিল। মালটা কেসচা, তায় মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, একবার চ্যানেল করতে পারলে আর্মির অ্যাকোমোডেশনে থেকে আর্মির শিপে করে আমরা পুরোটা ঘুরতে পারতাম, হেলিকপ্টারও হয়ে যেত আরামসে, চ্যানেল করাও তেমন অসম্ভব কিছু নয়, ডিফেন্স মিনিস্ট্রি থেকে অনেকেই এইসব ব্যবস্থা করে আন্দামান ঘুরতে আসে। কিন্তু ঐ সর্বক্ষণ একজন আর্মির লোক রেখে দেয় সঙ্গে করে ঘোরার জন্য, গড়ির দরজা খুলে দেবে, কথায় কথায় স্যালুট মারবে, বৃষ্টি হলে মাথায় ছাতা ধরবে নিজে ভিজতে থেকে, এইসব ব্যাপার পোষাবে না, প্রাইভেসি বিঘ্নিত হবে, এইসব ভেবেই আর্মির চ্যানেলটা কাজে লাগানো হয় নি। এখন হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে ছিল ব্যারেন আইল্যান্ডটা দূর থেকে দেখে আসার। সেখান থেকে এখনও ইরাপশন হচ্ছে, কারুর যাবার অনুমতি নেই, নেভির স্পেশাল শিপে পারমিশন পেলে দূর থেকে দেখে আসা যায়, আর নেভি নিজেদের লোক ছাড়া কাউকে পারমিশন দেয় না। সে-সবও হবে না।

    কে জানত, "হবে'-র থেকে "হবে-না'-র লিস্ট এত বড় হয়ে যাবে?

    মনে দূ:খ নিয়ে ঘুমোতে গেলাম। কাল সকাল আটটায় বেরোতে হবে।
  • ranjan roy | 122.168.26.176 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১১:১২458782
  • আহা! হ্যাভলকের বিবরণ শোনার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। পরে আমারটা লিখবো। কেমন মাঝ সমুদ্রে ছোট্ট স্টীমারে মোচার খোলার
    মত দোল খেতে খেতে আর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সামুদ্রিক ঝড় ফেস করেছিলাম।
    শমীকের আশা করি কপাল ভালো ছিল।
    সরি! আগে শমীকেরটা শেষ হোক।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১১:৫১458783
  • সন্ধ্যেবেলায় যখন এজেন্ট শিপের টিকিট দিতে এল, টিকিটের দাম দেখে আঁতকে উঠেছিলাম। যাওয়া আসা মিলিয়ে তিনজনের প্রায় ৪৫০০ টাকা। জিজ্ঞেস করতে যাবো, এমন সময়ে হোটেলের লবিতে জাঁকিয়ে বসলেন আরেক বোর্ডার, ইনিও এই হোটেলেই আছেন, চলনে বলনে পাক্কা দিল্লিওয়ালা। ... প্রসঙ্গত, পুরো আন্দামানে যদিও সে রকম ক্রাউড কোথাও পাই নি, তবু যতটুকু যা পেয়েছি, সকলেই দিল্লি থেকে এসেছেন, কমনওয়েলথ গেমসের ছুটিটা আর এলটিসি কাজে লাগিয়ে। এই দিল্লিওয়ালাও তাদের একজন। ইনি এসেই এজেন্টের সঙ্গে শলা করতে বসলেন: "আপ মুঝে হ্যাভলক আনে জানে কা চার টিকট বানা দো ইয়ার, ম্যায় আপ কো দস্‌ পার্সেন্ট দে দুঙ্গা।' এজেন্ট আপত্তি জানালো, দিল্লিওয়ালা অত:পর "চল্‌ ইয়ার পন্দরাহ্‌ কর দেঙ্গে'। এজেন্ট বিনীতভাবে জানালো হ্যাভলকের টিকিট পেতে গেলে হ্যাভলকের টিকিট কাটতে হয়, টিকিট না কাটলে অন্য কোনও উপায়ে টিকিট পাওয়া যায় না।

    কিন্তু দিল্লিওয়ালা নাছোড়বান্দা। দিল্লিতে তো এই কালচারই চলে! এখানে কেন চলবে না! সে হ্যাভলক না গিয়ে হ্যাভলকের টিকিট চাইছে টিকিটের দশ পার্সেন্ট দাম দিয়ে, তার মানে নিশ্চয়ই হ্যাভলকের শিপের টিকিটও এলটিসিতে রিইমবার্শ করানো যায়! আমরা তো জানতাম পোর্ট ব্লেয়ার পর্যন্ত করানো যায়। এজেন্টকে জিজ্ঞেস করাতে বলল, না, আপনার লাস্ট পয়েন্ট অফ ট্যুর পর্যন্ত আপনি ক্লেম করতে পারেন। অনেকেই এই জন্য আমাকে এসে ধরে, টিকিটের জন্য। কিন্তু ... (দিল্লিওয়ালার দিকে ফিরে) ... আপনাকে আমি আমার প্যাডে লিখে দিতে পারি হ্যাভলকের টিকিটের এত টাকা আপনি আমাকে দিয়েছেন, কিন্তু টিকিট দিতে পরব না, আর টিকিট দেখাতে না পারলে ঐ প্যাডের পাতা দেখিয়ে আপনি এলটিসিও ক্লেইম করতে পারবেন না, আমাকে মাফ করবেন, ঐভাবে টিকিট জোগাড় করা আমার কাজ নয়।'

    আরও বেশ খানিকক্ষণ অনুরোধ উপরোধ চলল, কিন্তু এজেন্ট লোকটা অনড়। শেষমেশ দিল্লিওয়ালা বিরক্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দিল। আমি আরও একবার চমৎকৃত হলাম আন্দামানের এই কোয়ালিটির ব্যাপারে, সত্যি, কেউ চিটিং করে না। এটা দিল্লিতে ভাবা যেত? একটা ট্র্যাভেল এজেন্ট রিফিউজ করছে ফর্জি টিকিট বানাবার রিকোয়েস্ট?

    আর সাথে সাথে চমৎকৃত হলাম রাজমা চাওলের মহিমা আবার প্রত্যক্ষ করে। মাল কি গাড়ল, না পাগল? হ্যাভলক যাবে না, পোর্ট ব্লেয়ার পর্যন্ত এসে? হতে পারে কম দিনের ছুটিতে এসেছে, প্ল্যানে ছিল না, কিন্তু তিন দিনের ট্যুরে এলেও লোকে একদিন হ্যাভলকের জন্য রাখে।

    রাতের খাওয়া। আজ সকালে চ্যাথাম থেকে ফেরার পথে আমাদের হোটেলের কাছেই কিছু খাবার জায়গা আবিষ্কার করেছিলাম। ভাবলাম সেখানেই আজ যাওয়া যাক। গিয়ে দেখলাম সেটা হ্যাডো-র একটা ছোটো বাজার জায়গা, দু তিনটি হোটেল আছে, আর কিছু ছোটোখাটো দোকান। একটা দোকান থেকে Andaman & Nicobar লেখা বিচ টি-শার্ট কিনে ফেললাম, আরেকটা দোকানে দেখি ... উল্‌স্‌, বড় বড় মাছভাজা, প্রন-ভাজা বিক্কিরি হচ্ছে। যে ভাজছে, তার বাড়ি কোলাঘাটে। ঐদিকের ফুটপাথে ফুচকা বিক্রি করছে আরেকজন, তার পাশেই ডাব বিক্রি হচ্ছে।

    আমাদের আর পায় কে! মাছভাজা ডাবের জল তো খেলামই, পরে এসে আবার ওখানকার এক রেস্টুর‌্যান্ট থেকে রাতের খাওয়া সেরে গেলাম। যদিও এরাও সেই একই গল্প শোনাল, কেবল সুরমই মাছ ভাজা আর ঝোল ছাড়া আর কোনও কিছু নেই। এখন নাকি কাঁকড়ার "সীজন' নয়। শুনে হেসে ফেললাম।

    -- ** -- ** --
  • Arpan | 216.52.215.232 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১২:০৪458784
  • গুগলে হ্যাভলক আইল্যান্ড দিয়ে ইমেজ সার্চ করে জাস্ট ব্যোমকে গেলাম। কী সব শেড জলের। আর সোনালি বালুকাবেলা। একটু খুঁজলে বোধহয় জেড পাথরের কুটিরটাও পেয়ে যাবো। :-)
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১২:০৯458786
  • -- ** -- ** --
    ১২ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ষষ্ঠ দিন

    ষষ্ঠ দিনের সমস্ত ছবি আমার অ্যালবামের ৪১৭-৪৯৬ নং।

    আজ আর হোটেল কোনও ঝাম করে নি, সক্কাল সক্কাল ব্রেকফাস্ট পেয়ে গেছিলাম, খেতে খেতে শুনলাম, পুজোর বাজারে ছুটি পায় নি বলে সেদিন রাতারাতি তাদের তিনজন এমপ্লয়ি হোটেল ছেড়ে চলে গেছে কলকাতার জাহাজ ধরতে। সেই জন্য আমাদের ওয়ান্ডুর ট্রিপের দিন খাবার পাওয়া নিয়ে অত ঝামেলা হয়েছিল, যারা খাবার প্যাক করেছিল, তারা ঠিক কিচেন সামলাবার লোক নয়।

    কী আর বলব, খারাপ লাগল সেদিন অত চেঁচামেচি করার জন্য। প্রসঙ্গত, সেদিন ঠিক গলা উঁচিয়ে চেঁচাই নি, কেবল বলেছিলাম যে আমি কে আপনি চেনেন না। আমি কিন্তু ইন্টারনেটে আমার বেড়ানোর গল্প লিখি। একবার যদি লিখে দিই, আপনাদের হোটেল থেকে আমাকে এই রকম খাবার দেওয়া হয়েছে, আপনাদের রেপুটেশন কোথায় নামবে বুঝতে পারছেন? ... তাতেই কাজ হয়ে গেছিল।

    তো যাক, আপৎকালে তারা যে খাবার দিতে পেরেছিল, সেটা অবশ্যই একটা বিশাল ব্যাপার।

    আজকের জাহাজ ছাড়বে ফিনিক্স বে জেটি থেকে। এটা পোর্ট ব্লেয়ারের আরেকটা জেটি, জাহাজ ছাড়ার জেটি, শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা-চেন্নাই মুম্বই-গামী সমস্ত জাহাজ এখান থেকে ছাড়ে ও এখানে এসে ভেড়ে। আমাদের হোটেল থেকে খুব দূরে নয়।

    আমাদের জাহাজটার নাম ম্যাক্রুজ; Makruzz। এটা কিছুদিন আগেও ছিল না। বিলাসবহুল এই ক্রুজ রিসেন্টলি পোর্ট ব্লেয়ার হ্যাভলকের মধ্যে চলা শুরু করেছে। এমনি সরকারি শিপ যেখানে তিন থেকে চার ঘণ্টা নেয় হ্যাভলক পৌঁছতে, সেখানে ম্যাক্রুজ সময় নেয় ঠিক দু-ঘণ্টা। এদের ওয়েবসাইট হল http://www.makruzz.com/। পথে খাবার দেয় না কিছু, তবে ওদের ক্যাফেটেরিয়া থেকে টুকটাক খাবার কিনে খাওয়া যায়। যাত্রাপথে টিভি চলে। বড় বড় এলসিডি টিভিতে আন্দামান ট্যুরিজমের বিভিন্ন ভিডিও চালানো হয়। দেখতে দেখতে কখন দু-ঘন্টা কেটে যায়, বোঝা যায় না।

    সকাল সাড়ে আটটায় ম্যাক্রুজ ছাড়ল। আমাদের জায়গা ছিল দোতলায়। টিভি আর চারপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে চললাম। আকাশ সকালেও বেশ মেঘলা ছিল, এখন মনে হল একটু ছাড়ছে, কিন্তু কিছুই বলা যায় না, কালকের ঐ বাঙালি ফ্যামিলি একেবারে এনজয় করতে পারে নি বৃষ্টির জন্য, বিকেলে জাহাজ ছাড়ার পরে নাকি বৃষ্টি থেমেছিল, এদিকে কাল পোর্ট ব্লেয়ারে আমরাও ভয়ংকর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘুরেছি। নিম্নচাপ হয়েছিল নাকি।

    আজ কী হবে কে জানে!

    ঠিক সাড়ে দশটা নাগাদ যখন ক্যাপ্টেনের ঘোষণা শোনা গেল (ঠিক প্লেনের স্টাইলে) যে আর দশ মিনিটের মধ্যে আমরা হ্যাভলক ঢুকছি, তখন আকাশ মোটামুটি সাফ, ইতিউতি সাদা মেঘ, এমনি সময়ে ক্যাঁ-কোঁ ক্যাঁ-কোঁ করে আমার মোবাইল বেজে উঠল।

    লে হালুয়া। হ্যাভলকেও ভোডাফোনের সিগন্যাল আছে? আমি যে শুনেছিলাম এখানে বিএসএনএল ছাড়া আর কিছু নেই! ভাবো একবার। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি, ম-মামী। অষ্টমীর ভাটে আমি আসছি কিনা জিগাইতেছেন। সপ্তমীতেও দেখা করা যাবে কিনা সেই নিয়ে খানিক আলু-চানা হল, এবং অবশেষে আমরা হ্যাভলকের জেটিতে এসে ভিড়লাম।

    ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশে প্রথম রোদ দেখলাম আন্দামানে এসে। ৪৩৭ নং ছবি দেখুন। সাদা বালি আর নীল জল কীভাবে মিশে গেছে। আর ঢেউবিহীন সমুদ্র।
  • jayanti | 59.178.136.210 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১২:১৮458787
  • শমীকের লেখায় আন্দামান তার সমস্ত রং-রূপ-গন্ধ নিয়ে চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
    যাক, আন্দামান যাওয়ার পরিশ্রম ও খচ্চাটা বেঁচে গ্যালো।
  • Arpan | 216.52.215.232 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১২:৩১458788
  • ৪৮৭ আর ৪৮৮ দারুণ উঠেছে।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১২:৩৭458789
  • একদম সঠিক অর্পণ। এই মুহূর্তে হ্যাভলকেরই একটা ছবি আমার ল্যপটপের ওয়ালপেপার। কিলাউইয়ের সোনাবেলা যদি কোথাও থাকে, তবে তা এখানেই।

    জেটি পেরিয়ে যেতেই একটু ঘিঞ্জি মতন। অজস্র ট্যাক্সিওলা অটোওলা নিজের নিজের গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে। আর সব্বাই, সব্বাই কথা বলছে বাংলায়। আমাদের নাম লেখা কাগজ নিয়ে যে ছেলেটি দাঁড়িয়ে ছিল, তার নাম সন্তোষ। বলল, আমার গাড়ি আসছে, ততক্ষণ ঐখানে ডাব বিক্রি হচ্ছে, খাবেন তো খেয়ে নিন।

    ডাব খেয়ে গাড়িতে চড়ে বসলাম। আমাদের গন্তব্য, রাধানগর বিচ। পৃথিবীর সুন্দরতম বিচগুলোর মধ্যে সাত নম্বরে আছে, আর এশিয়ার মধ্যে বোধ হয় তিন কিংবা পাঁচ।

    চারপাশের সীনসিনারি দেখে বোঝার কোনও উপায় নেই এটা বাংলার বাইরে একটা দ্বীপ। ধানক্ষেত, লোকের বাড়ির উঠোনে জবাগাছ, নারকোল-সুপুরির কথা তো বাদই দিলাম, কাঁচামাটি, হাল্কা পিচের রাস্তা, তবে খুব খারাপ রাস্তা নয়, জায়গায় জায়গায় বাংলায় ব্যানার, দু জায়গায় রাধাকৃষ্ণের মন্দির দেখলাম, বাইরে ইঁটের তোরণে বাংলায় লেখা হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ইত্যাদি।

    সন্তোষ জানাল, হ্যাভলকের ৯৫% লোক বাঙালি। সবকিছু এখানে বাংলায় চলে।

    খানিকক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম রাধানগর। দূর থেকে বিচকে দেখে পুউরো ব্যোমকে গেলাম। ওপরে তখন নীল আকাশ ঝকমকাচ্ছে। সামনে উঁচু উঁচু অর্জুন আর কী-কী সব যেন গাছ দিয়ে একতা গেটওয়ে মত বানানো, তার মাঝখান দিয়ে রাস্তা চলে গেছে দিগন্তবিস্তৃত একটা সবজেটে নীল রঙের কাঁচের দিকে। দূর থেকে সত্যি কাঁচ মনে হচ্ছিল।

    সামনে ঠেলাগাড়ি করে ডাব বিক্রি হচ্ছে অনেক, অন্যপাশে শাঁখ ঝিনুকের আইটেম, আন্দামান লেখা বিচ টি-শার্ট, আর কিছু ভাত খাবার হোটেল টাইপ। ঝুপ্‌স। সবচেয়ে শেষ ঝুপ্‌সটায় গিয়ে দুপুরের খাবারের অর্ডার দিয়ে রাখলাম। কত করে? ভাত ডাল যত খুশি চাই, আর দুটো তরকারি দিয়ে থালি পঞ্চাশ টাকা, সাথে আস্ত পমফ্রেট মাছের ঝোল আরও পঞ্চাশ টাকা। মানে পারহেড একশো। কন্যে তো দুদুভাতু, দু-থালারই অর্ডার দিয়ে আমরা ব্যাগপত্র ঐ দোকানেই জমা রেখে চলে গেলাম সমুদ্রের দিকে।

    কদিন ধরে সমুদ্রে নাচানাচি করে সাহস বেড়ে গেছিল। নর্থ বে আর ওয়ান্ডুরের বিচে তাও ওয়েভ ছিল না, রাধানগর বিচে আছে। আমি প্রথমে অনেক দূর পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে এলাম। বহুদূর পর্যন্ত অগভীর সমুদ্র। এইবার ম্যাডামকে নিয়ে একটু সাহস দিয়ে এগিয়ে এলাম। ম্যাডাম তো এমনিতেই জলে ভয় পান, এখন বড় বড় ঢেউ দেখে আমাকে আঁকড়ে ধরলেন।

    হাতে ছিল ক্যামেরা, যখনই ঢেউ আসছিল, আমি হাতটাকে উঁচু করে ক্যামেরাটা বাঁচাচ্ছিলাম, কিন্তু একটু পরে আর শেষরক্ষা হল না। বউকে সামলাতে গিয়ে হাতটা নিচু হয়ে গেল, আর ঠিক সেই সময়ে একটা বিশাল ঢেউ এসে আমাদের ভিজিয়ে দিল পুরোপুরি, ক্যামেরা সমেত।

    সঙ্গে সঙ্গে তীরের দিকে এসে ক্যামেরা অন করার চেষ্টা করলাম, ক্যামেরা আর সাড়া দিল না। সর্বনাশ করেছে। আমি দুটো ক্যামেরা এনেছিলাম, কিন্তু দ্বিতীয় ক্যামেরা তো পোর্ট ব্লেয়ারের হোটেলে, সেটা তো নিয়ে আসি নি! ব্যাটারির খোল খুলে দেখলাম, ব্যাটারি ভিজেছে, ক্যামেরার ভেতরেও একটু জল গেছে। অন্য খুপরিতে থাকে মেমোরি কার্ড, সেটা খুলে দেখলাম, সেটা বিলকুল শুকনো। উফ্‌ফ্‌। বিশাল রিলিফ। এই এতগুলো ছবি যদি নষ্ট হয়ে যেত তো মারা পড়তাম।

    জলদি দৌড়লাম ঝুপ্‌সের দিকে, যেখানে ব্যাগ রেখে এসেছি। ব্যাটারিটা গেল, নাকি ক্যামেরাটা গেল, নাকি দুটোই গেল, কে জানে!! আপাতত মেমোরি কার্ডটা তো বাঁচাই!

    মেমোরি কার্ডটা রাখতে গিয়ে মনে পড়ল আমার মোবাইলের ক্যামেরার কথা। কয়েক মাস হল কিনেছি, নোকিয়া 5800 XPress Music। তাতে 3.1 মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা রয়েছে, তাতে করেই কিছু ছবি তুলি। একেবারে না তোলার থেকে তো ভালো।

    আমি ভাবতেও পারি নি আমার মোবাইলের ক্যামেরায় এত ভালো ছবি উঠবে। ৪৬১ নং থেকে শুরু করে হ্যাভলকের বাকি সব ছবি মোবাইলে তোলা। এর মধ্যে আবার একটা বুনান সাট্টিফিটি দিয়েছে খুব ভালো ছবি বলে।

    রাধানগরের রূপ কেবল লিখে বর্ণনা করা যায় না। ছবি দেখে বুঝে নিন। নীল, নীল, শুধু নীলের খেলা। আর সোনালি রঙের বালি।

    রাধানগরে স্নরকেলিং আপাতত বন্ধ। দুমাস আগে এক আমেরিকান মেয়ে একা একা স্নরকেলিং করতে গিয়ে চলে গেছিল বেশি গভীর সমুদ্রে, তাকে টেনে নিয়ে যায় কুমীর। যদিও তা রাধানগর বিচ থেকে অনেক দূরের সমুদ্র, তবুও প্রিকশনারি মেজার হিসেবে এখন স্নরকেলিং বন্ধ।

    সাড়ে বারোটা নাগাদ উঠলাম। প্রচুর লোক ছিল বিচে, কিন্তু বিচটা এত বিশাল যে আমরা একটু খানি সরে গেলাম, এই দুশো আড়াইশো মিটার মতন, আর সেখান থেকে তোলা ছবি দেখলে মনে হচ্ছে বিচে আমরা আড়াইজন ছাড়া আর কেউ নেই কোত্থাও।

    উঠে ড্রেস পাল্টে একটা আন্দামান বিচ টিশার্ট কিনলাম কন্যের জন্য, দুটি বড়বড় শঙ্খ কিনলাম, আরও দুটো ডাব খেলাম। পোর্ট ব্লেয়ারে অন্যত্র ডাব বিক্রি হচ্ছিল পনেরো আর কুড়ি টাকায়। এখানে বিক্রি হচ্ছে দশ টাকায়। মেগা সাইজের ডাব।

    তারপরে ডাল, ভাত, আলুভাজা, আলুর তরকারি এবং একটি ইয়াব্বড়ো পমফ্রেট মাছের ঝোল। ভাত ডাল তরকারি যতখুশি নাও। দোকানদারও বাঙালি, রান্নাও টিপিক্যাল বাঙালি স্টাইল। ঘরোয়া।

    যতক্ষণ বিচে ছিলাম, ততক্ষণ ঝকঝকে পরিষ্কার আকাশ, খুব এনজয় করলাম, যেই উঠে এলাম, কোথা থেকে আকাশ ভরে গেল কলো মেঘে, আমরা যখন খেয়ে উঠলাম, তখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। কোনও রকমে গাড়িতে উঠে বসলাম। সন্তোষকে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে এই রকমই যখন তখন বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়? সন্তোষ বলল, শীতকালটা ছাড়া। সেই জন্য এখানে শীতকালেই বেশি লোক আসে। ডিসেম্বর এখানে পিক সীজন।

    পরের গন্তব্য, গোবিন্দনগর বিচ।

    হ্যাভলকে আরও দুটো বিচ আছে, এলিফ্যান্টা আর কৃষ্ণনগর, কিন্তু আমাদের একদিনের ট্রিপে সে-সব আর কভার করা যাবে না। এতক্ষণে বুঝতে পারলাম লোকে কেন হ্যাভলকে এসে একদিন স্টে করে। কিন্তু এখন আর কিসুই করনের নাই। চলো, গোবিন্দনগর বিচ।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১২:৩৯458790
  • ৪৮৭ নংটাই আমার ল্যাপির ওয়ালপেপার। ওটা মোবাইলে তোলা।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৩:০৭458791
  • যখন পৌঁছলাম, তখন পুউরো বিচে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। আকাশে কালচে মেঘ, আমাদের মাথায় ছাতা, ক্যামেরা বলতে মোবাইল, ইতিউতি ছড়ানো দু তিনটে নৌকো, সোনালি বালি, আর নীল জল।

    হ্যাভলকের ছবিগুলোতে কোনও কারিকুরি করতে হয় নি, ওগুলো সমস্ত আনপ্রসেস্‌ড ছবি, প্রথম দিকেরগুলো ৬ মেগাপিক্সেলে, পরে ৩ মেগাপিক্সেলে।

    নতুন কোনও বিশেষণ আর খুঁজে পাচ্ছি না, শুধু দেখে যাচ্ছি। অন্তহীন ক্যানভাস, আর কিছু বেসিক রঙের খেলা। আমি এমন কিছু বিশাল প্রকৃতিপ্রেমিক নই, তবু চোখ ফেরাতে পারছি না।

    পৌনে চারটেয় আবার ক্রুজ ছাড়বে পোর্ট ব্লেয়ারের উদ্দেশ্যে, সোয়া তিনটের মধ্যে পৌঁছতে হবে। সেই মতো খানিকক্ষণ সময় গোবিন্দনগর বিচে কাটিয়ে এবার ফেরৎ চললাম। যেতে যেতে সন্তোষের কাছে হ্যাভলক সম্বন্ধে কিছু শুনলাম।

    এখানকার সমস্ত বাঙালি পার্টিশনের সময়ে এসে সেটল করা। ফলে বাংলার কালচার কিছুই নষ্ট হয় নি তাদের। হ্যাভলকে দু তিনটে দুর্গাপুজোও হয়। এমনিতে বেশির ভাগই বৈষ্ণব।

    পুরো হ্যাভলকে পাওয়ার জেনারেশন হয় ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে। মোট আটটা ডিজি-সেট আছে। তিনটে সকালে বারো ঘন্টা চলে, তিনতে রাতে বারো ঘন্টা চলে, দুটো স্ট্যান্ড-বাই থাকে। আন্দামানের বেশির ভাগ আইল্যান্ডেই বিদ্যুতের উৎস এই ডিজিসেট। এছাড়া প্রাকৃতিক শক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ তৈরি হয় অনেক জায়গাতেই।

    এইসব আলোচনা করতে করতে পৌঁছে গেলাম জেটিতে। ম্যাক্রুজ, সাদা ধবধবে জাহাজ, নীল বর্ডার দেওয়া দাঁড়িয়ে আছে আমাদের জন্য। জেটিতে পা দেওয়া মাত্র সামনের সমুদ্র দেখে অবাক হয়ে গেলাম। তখনই তোলা এই ৪৮৭ নং ছবি, যা আমার ল্যাপটপের ওয়ালপেপার। অসীম আকাশ, তাতে কুন্ডলীকৃত এক প্রকাণ্ড কালো মেঘ অত্যন্ত তাড়াতাড়ি পাক খেতে খেতে ছড়িয়ে পড়ছে আকাশের কোণায় কোণায়, সমুদ্রের রং আস্তে আস্তে পাল্টে যাচ্ছে নীল থেকে সবুজ, সবুজ থেকে কালচে সবুজে।

    বৃষ্টি শুরু হল, এবং ঠিক টাইমে, পৌনে চারটেয় আমাদের ক্রুজ ছেড়ে দিল। কিন্তু এবারের যাত্রা, বুঝতে পারছিলাম, ঠিক আসার সময়কার মত মসৃণ নয়।

    সামনের বিশাল এলসিডি টিভিতে তখন চালিয়েছে ২০০৮-এর সোনি টিভি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডসের ভিডিও। হঠাৎ, দোতলা শিপের ওপর এবং নিচ জুড়ে একটা সম্মিলিত আর্তনাদ, আমি বুঝলাম আমি খানিক টলে গেলাম, আর বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল। পুরো ফ্রি-ফল্‌-এর অভিজ্ঞতা।

    ঝড় উঠেছে। সমুদ্র ফুঁসে উঠেছে। আমি সামনের দিকের রো-তেই ছিলাম। সেখান থেকে দেখলাম, পরের ঢেউটা আসছে। এক মুহূর্ত সামনেটা শুধু জল, তার পরমুহূর্তেই সামনে শুধু আকাশ, তারপরে আরেকবার শূন্য থেকে পতন। বুকের গুড়গুড়ানি গেল বেড়ে। যত ভালো জাহাজই হোক, ঢেউয়ের দোলায় তো নাচতেই হবে।

    জাহাজের কেবিন ক্রু তখন ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। হাতে বালতি আর কাগজের প্যাকেট আর টিস্যু পেপার। টিভিতে তখন পুরোদমে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস, কিন্তু কারুর সেদিকে মন নেই, সবাই তখন বমি করতে ব্যস্ত।

    প্রথমে কোলাপ্‌স করল আমার মেয়ে। তারপরে বউ। একজন কেবিন ক্রুয়ের সাহায্য নিয়ে টানা দুজনকে সামলে গেলাম, সে কী ঝামেলা, আমি ঠিক আছি তখনও, কিন্তু মেয়েকে থামাতে পারছি না, তাকে কোলে বসিয়ে, শুইয়ে দিয়ে, কোনওভাবেই শান্তি দেওয়া যাচ্ছে না। আর এই সময়টাতে জাহাজের লোকেরা যে কী সাহায্য করল প্রত্যেককে, কল্পনা করা যায় না। চাওয়ামাত্র হাতের সামনে কাগজের প্যাকেট, বালতি, টিস্যু পেপার, জলের ঝাপটা দিয়ে দিচ্ছে চোখে মুখে।

    ঘড়ির দিকে তাকানোর অবস্থা তখন আর নেই, মাঝে ক্যাপ্টেন নেমে এলেন, প্রত্যেকের কাছে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে অভয় দিতে লাগলেন। মাঝে মেয়ে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল, আমাকে এসে বললেন, ও যতক্ষণ ঘুমোয় তত ভালো, জাগাবেন না। শেষে এক সময়ে এসে আমার বউকে বললেন, ম্যাডাম, ঐ যে দূরে আলো দেখছেন, দ্যাট ইজ পোর্ট ব্লেয়ার, উই'ল রিচ দেয়ার ইন নেক্সট সেভেন মিনিটস, প্লিজ বিয়ার ফর নেক্সট সেভেন মিনিটস।

    জাহাজ যখন আবার ছটার সময়ে পোর্ট ব্লেয়ারে এসে ভিড়ল, তখন দুজনেই প্রায় নেতিয়ে গেছে কয়েকবার বমি করে। আমার বমি হয় নি, কিন্তু লাগাতার ঐ ফ্রি-ফল্‌এ আমিও তখন পুরোদস্তুর ক্লান্ত।

    গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল জেটির বাইরে, হোটেলে ফিরে সব্বাই বডি ফেলে দিলাম। বোঝা গেল, জলের মাছকে ডাঙায় তুললে সে যেরকম অসহায় হয়ে যায়, খাবি খেতে থাকে, আমাদের ডাঙার প্রণীদের জলে ছেড়ে দিলে আমরা এই রকমই অসহায়।

    খানিক বাদে আমি নেমে গিয়ে মাছভাজা প্যাক করে আনলাম, হোটেলে ডালভাত দিয়ে মাছভাজা খেয়ে লম্বা ঘুম।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৩:১৮458792
  • সন্ধ্যেবেলায় যথারীতি এজেন্ট এল। ওয়েদারের অবস্থা দেখে সে আর নীল আইল্যান্ডের টিকিট বুক করার সাহস পায় নি। আমরাও বললাম, ভালো করেছেন, আর যেতেও পারতাম না, সবারই শরীরের অবস্থা খারাপ। আমাদের ট্রিপ এখানেই শেষ করুন। কাল আমরা নিজেদের মত একটু ঘুরে নেব। আপনি হিসেবপত্র করে দিন।

    সোমবার যে-সব জায়গা বন্ধ ছিল, সেগুলো আমরা কাল নিজেরা নিজেরা ঘুরে নেব অটো নিয়ে, এতদিনে আমরা পোর্ট ব্লেয়ার মোটামুটি চিনে গেছি, খুবই ছোটো জায়গা।

    পাশের রুমে যে বাঙালি ফ্যামিলি ছিলেন, তাঁদের সাথে দেখা করলাম, তাঁদের আজ সিটি ট্যুর ছিল, জানালেন, অ্যাকোয়ারিয়াম, যেটা মেরিন লাইফের মিউজিয়াম, সেটা এখন রিপেয়ারিংয়ের জন্যে বন্ধ আছে। ওটা দেখা যাবে না। আর তাঁরা লাঞ্চ করেছিলেন পোর্ট ব্লেয়ারের অ্যাবার্ডিন বাজার থেকে একটু দূরের আনন্দ রেস্টুরেন্টে। বাঙালি রেস্টুরেন্ট। খুব ভালো নাকি খাওয়ায়।

    ঠিক হ্যায়। কাল সেখানেও খেয়ে দেখা যাবে।

    ক্যামেরাটা নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম। চলল না। ব্যাটারিটা অন্য ক্যামেরায় ভরলাম, অন্য ক্যামেরাটা চলল না। স্পেয়ার ব্যাটারি ভরলাম, অন্য ক্যামেরাটা চলল, এই ক্যামেরাটা চলল না। মানে, ক্যামেরা আর ব্যাটারি দুটোই গেঁজেছে। দোকানে দিতে হবে। ব্যাটারিটা চার্জে বসিয়ে ঘুমোতে গেলাম। বাকি আর এক দিন।
  • d | 14.96.186.85 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৩:২৪458793
  • শমীক,

    ক্যামেরার ব্যাটারী টা ২ সেকেন্ড মাইক্রোতে সেঁকে নাও। আর ক্যামেরাটা খুলে ১ সেকেন্ড। ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা। না হলে দোকানে দিও।
  • d | 14.96.186.85 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৩:২৮458794
  • হ্যাঁ ব্যাটারী সেঁকতে দেবার আগে মাইক্রো যেন ঠান্ডা থাকে। মানে আগে কিছু করেটরে ব্যাটারী দিও না। ওটা হয়ে গেলে বের করে নিয়ে ক্যামেরার সমস্ত চেম্বার খোলা অবস্থায় দিও।
  • til | 220.253.185.165 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৩২458795
  • কার পাপে বা কার শয়তানীতে কে জানে, তবে আন্দামান বাঙালী দ্বীপ হলে কি ভালো যে লাগতো! এবং দন্ডকারণ্য ও। এই ব্যাটা বৃটিশরা যেমন অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড বানিয়ে রেখেছে।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৩৩458797
  • কিস্যুটি করতে হয় নি। ভেতরের জল শুকোবার পরে নিজে নিজেই ক্যামেরা ব্যাটারি দুজনেই ঠিক হয়ে গেছে। পরে দুর্গাপুজোর ছবিটবি হুগলিতে এসে তো ঐ ক্যামেরাতেই তুললাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন