এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে: আঁধার মাণিক্যের দেশে

    Samik Mukherjee
    অন্যান্য | ১৮ অক্টোবর ২০১০ | ৩৪২৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৩৪458798
  • কিন্তু আমি আমার মোবাইলটার প্রেমে পড়ে গেছি। ঐটুকু পুঁচকে একটা লেন্স যে অমন ছবি তুলতে পারে!! হ্যাভলকের গুণ, না মোবাইলের গুণ, কে জানে!
  • d | 14.96.186.85 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৪২458799
  • হুঁ জলদি শুকোবার জন্যই বললাম।

    মোবাইলে ছবি তো খারাপ ওঠে না খুব। আমার অর্কুটে 'বৃষ্টি বৃষ্টি' অ্যালবামের সমস্ত ছবিই সোনি এরিকসনের ফোনের 2 MP ক্যামেরা দিয়ে তোলা।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৩:৪৬458800
  • :-)

    ঠিক তো হয়ে যায়। আমার ভয় ছিল নোনা জলের জন্য। শর্ট সার্কিট যে হয়ে যায় নি ...
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৪:৪৫458801
  • -- ** -- ** --

    ১৩ অক্টোবর, বুধবার, সপ্তম দিন

    আজ ষষ্ঠী। আন্দামানে আমাদের শেষ দিন। কাল ভোরবেলায় ফ্লাইট। খুব মিষ্টি করে একটা সকাল হল। নীল আকাশ, তা হোক। আন্দামানের আকাশকে আর বিশ্বাস নেই। আজ তেমন কোনও বেড়াবার প্ল্যান নেই, সোমবারে যা যা দেখা হয় নি সেগুলো আজ দেখব।

    গোছগাছ করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম কাল যেটা পরে জলে নেমেছিলাম, আমার সেই নীল চাড্ডি, সুইমিং কস্ট্যুমটা নেই। সম্ভবত রাধানগর বিচে উঠে জামাকাপড় চেঞ্জ করার সময়ে সেখানেই ফেলে রেখে এসেছি। ... মনটা খারাপ হয়ে গেল, কোনও এক সময়ে গোয়া থেকে কেনা বেশ দামি কস্ট্যুম ছিল ওটা। তার পরে মনে হল, ঠাকুর বলেছেন, জন্মালি তো দাগ রেখে যা, দাগ তো রাখতে পারি নি, রাধানগর বিচের ধারে স্মৃতি হিসেবে একটা নীল চাড্ডিই ছেড়ে এসেছি, সে হয় তো এখন সুনীল সাগরের শ্যামল কিনারে বসে বসে রোদ পোয়াচ্ছে। আমার তরফে।

    হ্যাডোর সেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে লুচি তরকারি খেয়ে দিনটা শুরু করলাম। তারপরে টুকটুক করে হাঁটতে হাঁটতে হোটেল পেরিয়ে এগোলাম মিনি জু-র দিকে। আমাদের ক্ষুদে ট্যুরিস্টের জন্যেও তো কিছু এন্টারটেইনমেন্ট চাই!

    জু-তে তেমন কিছু দেখার নেই, চিড়িয়া টাপুতে নাকি নতুন একটা জু তৈরি হচ্ছে, সব ওখানে শিফট করে যাচ্ছে, খানিকক্ষণ ওখানে কাটিয়ে এগোলাম পরের গন্তব্য, সামুদ্রিকার দিকে।

    সামুদ্রিকা হল ইন্ডিয়ান নেভির মিউজিয়াম। মূলত মেরিন লাইফের মিউজিয়াম, বিভিন্ন ধরণের শঙ্খ, শেল, ঝিনুক, কোরাল, মাছ আর আন্দামানের ইতিহাস ভূগোল নিয়ে সুন্দর ছিমছাম একটা মিউজিয়াম। ওখানেই জানলাম, ব্যারেন দ্বীপ, যা ভারতের একমাত্র জীবন্ত আগ্নেয়গিরি, কিন্তু আসলে ব্যারেন নয়। লোক নেই কিন্তু ওখানে কিছু বন্য ছাগল আছে। অনুমান করা হয় বহু বছর আগে ওখানে কোনও শিপ রেক হয়েছিল, তার সারভাইভার সেই ছাগলগুলো। এখন তারা সমুদ্রের নোনা জলই দিব্যি খায়।

    দেখুন আমার অ্যালবামে শাঁখের কোরালের সম্ভার। ৫২২ নং ছবিটা দেখেছেন? ন্যাচারাল শেপের অ্যাশট্রে। এই একটা জিনিস কিনে কাবলিদাকে প্রেজেন্ট করেছি :-)

    ছবি দেখুন, ততক্ষণ আজ শোনাই আমার ঝুলি থেকে আন্দামানের ইতিহাসের শেষ কাহিনি। আন্দামান আজ কী করে ভারতের অংশ হল।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৫:১২458802
  • ১৯৪৬-এর নৌবিদ্রোহের পর থেকেই হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছিল। জিন্না তখন বায়না করেছেন পাকিস্তান নিয়ে, কংগ্রেসে সেই অহিংসায় বিশ্বাসী বুড়োর কথা তখন আর কেউ শোনে না, সবাই ক্ষমতার লোভে মত্ত, বুড়ো সবরমতীর আশ্রমে একলা বসে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর মনে পড়ে যায় অহিংসায় অবিশ্বাসী সেই বাঙালি কংগ্রেস সভাপতির কথা। সুভাষচন্দ্র বোস। সে আজ থাকলে বোধ হয় বুড়োকে বুঝত কিছুটা।

    ১৯৪৭ এর ফেব্রুয়ারি মাসে আইসিএস অফিসার ইনামুল মজিদকে প্রথম এই দ্বীপপুঞ্জের ভারতীয় চিফ কমিশনার নিযুক্ত করে পাঠানো হয়। এই সময় থেকেই ব্রিটিশরা এই দ্বীপপুঞ্জের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব ভালোভাবে বুঝতে শুরু করে, এবং চেষ্টা করে যাতে দেশভাগ নিয়ে কথাবার্তায় এই দ্বীপপুঞ্জের প্রসঙ্গ না ওঠে। সেই সময়ের ব্রিটিশ কম্যান্ডার ইন চিফ, ফিল্ড মার্শাল স্যর কড্‌ অকিন্‌লেক্‌-এর লেখা রিপোর্টে পাওয়া যায় : "Should India be unfriendly or liable to be influenced by a power, such as Russia, China or Japan, hostile to the British commonwealth, our strategic position in the Indian Ocean would become untenable and our communications with New Zealand and Australia most insecure."

    এর এক মাস বাদে লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস থেকে জানতে চাওয়া হয়, এই দ্বীপগুলোর কী হবে। তখন তৎকালীন ব্রিটিশ রয়াল আর্মি-নেভি-এয়ার চিফ একসাথে এই মত ব্যক্ত করেন যে, এই দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা জাতিগতভাবে ভারতীয়দের থেকে ভিন্ন, তাই এদের ভারতের সঙ্গে ট্রিট করার কোনও দরকার নেই। এরা ভারতের অংশ নয়। লর্ড পেথিক লরেন্স, লন্ডন থেকে ভাইসরয় লর্ড ওয়েভেলকে লিখলেন -- "Attention has been focussed here on the Andaman and Nicobar Island. The Chiefs of Staff have been giving consideration....... and have represented that from the strategic point of view it is most desirable that we should retain British Sovereignty over the islands and that, if that is not possible, we should at least conclude a special agreement with India allowing usefull freedom to take what defensive measures we consider necessary.'

    উত্তরে লর্ড ওয়েভেল পেথিক লরেন্সকে লিখলেন -- "..... you will appreciate, of course, that the islands are a part of India, and would not easily be given up by the Indian Government expect in return for some very special consideration. The only chance of securing the use of these Islands as a defensive outpost would presumably be to get the matter covered in a general defence agreement. এপ্রিলের ১০ তারিখে ভারতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব কিন্তু একটি রিপোর্টে লিখলেন --"The strategic value of the Islands was assessed by India's Defence Department and the three Service Headquarters were of the considered opinion that the Islands were not required for the development of a (British) Naval Base or for positioning a military garrision but a small meteorological station would be located on the Islands for the benefit of the (Royal) Air Force.'

    এই দ্বীপগুলি এবং লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জকে নিয়ে সেই সময়ে ব্রিটেন, ভারতীয় কংগ্রেস, মুসলিম লিগ ইত্যাদির মধ্যে এক তুমুল বাগ্‌বিতন্ডা শুরু হয়, ব্রিটিশ সরকার বলে এডেন বন্দর যেমন Settlement of Aden আইন পাস করে কমনওয়েলথ নেশনের ব্যবহারের জন্য খোলা রাখা হয়েছে, সেই রকম করা হোক আন্দামানের জন্যেও। অনেক আলোচনার শেষে ফাইনাল ডিসিশন নেবার ভার ছেড়ে দেওয়া হল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের হাতে।

    কিন্তু তিনিও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। আলোচনা হল, চিঠি চালাচালি হল। ব্রিটিশ সরকারকে নিজের পাঠানো রিপোর্টে মাউন্টব্যাটেন লিখলেন -- It is becoming increasingly clear to me that any attempt by His Majesty's Government to claim the Andaman Islands as colonies will cause an absolute flare-up throughout the length and breadth of India........... My own position will be permanently undermined if I were to act on behalf of His Majesty's Government in this matter......... I believe the only reasonable solution would be to suggest some form of joint control or a leasing of the naval and air bases treaty........ the only thing I am quite certain about is that any high-handed action about these Islands at this moment will destroy all the good feelings which now exist between the two countries.'

    গুজব ওঠে, আন্দামান নিকোবরেরও বাঁটোয়ারা হবে। অর্ধেক ভারত পাবে, অর্ধেক পাবে পাকিস্তান। ১৫ই জুন এক স্টাফ মিটিংয়ে মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব রাখেন, আন্দামান ভারতের থাকুক, নিকোবর আর নানকৌরি দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটিশ সরকারের অধীনে থাক।

    ৫ই জুলাই ১৯৪৭। একটি টেলিগ্রামে আর্ল অফ লিস্টোওয়েল জানালেন "The Geographical position of these Islands makes it impossible to assign them to Pakistan, nor did any form of joint control by both india and Pakistan seem to us practicable. We felt that to exclude the Islands altogether from either India would not be acceptable.'

    এই টেলিগ্রাম যখন জিন্নাসাহেব পড়লেন, তিনি তো খেপে বোম। তিনি লিখলেন -- দুটি দেশকে ভারতের ভৌগোলিক ঐশ্বর্য ন্যায়সম্মতভাবে ভোগ করবার কোনও ব্যবস্থাই করা হয় নি। 'Clause 2 of the Indian Independence Bill allots the Andaman and Nicobar Islands to the Dominion of India. These Islands have never formed a subject to discussion of agreement between parties at any time. Their sudden inclusion in India raises a very gave issue. They are not a part of India historically or geographically. They were British possessions administered by the Government of India and are not in the same category as other Chief Commissioners' Provinces being reserved to the Governor General under the Constitution Act 1935. The majority of the population consists of tribes who are not connected to the peoples of Inia by ethnical, religious or cultural ties. Pakistan's claim to these Islands is very strong since the only channel of communication between Eastern and Western Pakistan is by sea and these Islands occupy important strategic positions on the sea route and provide refueling bases. The Dominion of India have no claim. They should form a part of Pakistan.'

    এই টুকুই। এর বেশি কোনও গুরুত্ব তখন জিন্না দেখতে পান নি আন্দামান দ্বীপসমূহের। আবার আলোচনা চলল, মূলত মাউন্টব্যাটেনের ভারতপ্রেমের জন্য, সঙ্গে সর্দার প্যাটেলের জেদ, গান্ধিবুড়োর ব্যক্তিত্ব, ভারতের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের চাপ ইত্যাদি মিলেমিশে পাকিস্তানের যুক্তির ভাঁড়ার ফুরলো। তারা অবশেষে আন্দামান আর লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জের ওপর থেকে নিজেদের দাবি ছাড়ল। আন্দামান স্বাধীন ভারতের অংশ হল।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৫:৫৪458803
  • অনেক হাঁটা হয়েছে। বেরিয়ে আবার গোটা দুই ডাব খেয়ে গলা ভেজালাম। এইবার সেই বেঙ্গলি ক্লাবে যাওয়া যাক। আজ ষষ্ঠী, একটু ঠাকুর দেখাও হবে, আর ঐ হলের নিচেই তো সারিসারি এম্পোরিয়ামের দোকান। কেনাকাটিও হবে।

    গেলাম। ঠাকুর দেখে খানিক বসলাম ওখানে। তারপরে নিচে নেমে এম্পোরিয়ামে ঢুকতে গিয়েই শুনি, দুকান বন্ধ হ্যায়। কেন? লাঞ্চ টাইম। দো বাজে ফির খুলেগা।

    সরকারি এম্পোরিয়াম কিনা। সামনেই অ্যা®¾থ্রাপলজিকাল মিউজিয়াম। ওখানকার স্যুভেনির শপে সেদিন ভালো ভালো শঙ্খ দেখেছিলাম, কেনা হয় নি। টুক করে চলে গেলাম, তারাও তখন লাঞ্চের জন্য এক ঘন্টা বন্ধ হবো হবো করছে। অতএব, কী আর করা, আমরাও এই ফাঁকে লাঞ্চটা করে নিই।

    যাবো সেই আনন্দ রেস্টুরেন্টে। খুব নাকি ভালো খাওয়ায়। সেটা যেতে আসতে দেখেছি কয়েকবার, কিন্তু এই বেঙ্গলি ক্লাব থেকে সেটা কতদূর আমি জানি না।

    একটা অটো ধরলাম (আন্দামানে সব পাহাড়ি রাস্তা। সাইকেল রিক্সা এখানে চলে না, বেসিক যান অটো), আনন্দ রেস্টুরেন্ট চেনেন? -- হ্যাঁ চিনি। ... কত নেবেন? -- দশ টাকা।

    বেশ ঘাবড়ে গেলাম, কত কাছে? দশ টাকাতেও অটো ভাড়া হয়?

    তা বেশ কাছেই ছিল। এক কিলোমিটারও হবে না বোধ হয়। এদিকে তেমন খিদেও পায় নি। সকালে অনেক লুচি খেয়েছি। ধীরেসুস্থে খাবারের অর্ডার দিলাম। কাঁকড়া চিংড়ি সব পাওয়া যাবে এখানে। আর সব্বাই বাঙালি। একটা ক্র্যাব ফ্রাই -এর অর্ডার দিলাম, দুশো টাকা। তা হোক, আগের দিন ঐ নিউ লাইটহাউস তো সাড়ে তিনশো নিয়েছিল ক্র্যাব কারি। তার থেকে তো শস্তা!

    সাথে নিলাম নিকোবরী মাছের কারি। আর ভাত আলুভাজা ডাল। চিংড়ি আজ আর খেলাম না। লোকটাই বলল, অতকিছু খেতে পারবেন না। খেয়ে দেখুন, যদি মনে হয় আমি বানিয়ে দিতে বলব।

    কন্যে সকাল থেকে হেঁটে টায়ার্ড। টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়েই পড়েছিল, তাই দেখে লোকটা এসে বলল, "আমি ডাল আর ভাত দিয়ে যাচ্ছি, আপনি বাচ্চাকে খাওয়াতে শুরু করুন।' আমরা দেখলাম সেইই ভালো, কন্যে তো এমনিতেই কাঁকড়া দেখে আর কাঁকড়া খেতে চায় নি, ওকে ডাল ভাত আলুভাজা খাইয়ে দিলেই খুশি হয়ে যাবে।

    মেয়ের খাওয়া চলতে চলতেই আমাদের খাবার এল। প্রথমে এল নিকোবরী মাছের কারি। বলে গেল, কাঁকড়া আসছে একটু পরে।

    কী দিয়ে যে বানিয়েছিল কে জানে! অমৃত, অমৃত। দামটাও মনে আছে। ৭০ টাকার প্লেট। চারপিস মাছ। খেতে খেতে হাজির হল কাঁকড়া।

    আমি চেয়ার খামচে ধরে সামলে নিলাম নিজেকে। সামনে ওটা কী? একটা ফুল সাইজ থালার ওপর চূড়ো করে রাখা কাঁকড়া, গা-মাখা একটা গ্রেভি, মানে জাস্ট অবিশ্বাস্য রকমের লোভনীয় জিনিস। এদিকে আমাদের তখনই পেট অর্ধেক ভর্তি। বউকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা তো এক প্লেট ক্র্যাবেরই অর্ডার দিয়েছিলাম, না? দু প্লেট দেয় নি তো?

    ঝাড়া এক ঘন্টা ধরে, প্রচুর লড়ে সেই গামা এক থালা চূড়ো করে রাখা কাঁকড়া উদরসাৎ করে ফেললাম। ভাত কখন শেষ! কাঁকড়া শুধু খাচ্ছি, খেয়েই যাচ্ছি, খেয়েই যাচ্ছি ...

    অবশেষে খাওয়া শেষ হল। অতিকষ্টে উঠলাম হাত ধোবার জন্য। বিল এল। আমি আবার শক্‌ খেলাম। তিনশো নব্বই টাকা!!! কাঁকড়া এক প্লেটের দামই ধরেছে। এইটা এক প্লেট কাঁকড়া?????????????? লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম দাদা, কটা কাঁকড়া থাকে এক প্লেটে?

    লোকটা হেসে বলল, ওটা একটাই কাঁকড়া ছিল। দেড় কিলো ওজনের ক্র্যাব!

    আমি যদি কার্টুন ক্যারেক্টার হতাম, এর পরে আমার আর দড়াম করে পড়ে যাওয়া ছাড়া কোনও রাস্তা থাকত না। মানে, দুশো টাকায় আমি আর বউ মিলে দেড় কিলো ওজনের ক্র্যাব খেয়েছি? দেড় কিলো ওজনের ক্র্যাব তো আমি কোনওদিন চোখেই দেখি নি! বললাম, দাদা, আপনাকে তো সোনার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখ উচিত! পরশু নিউ লাইটহাউসে খেলাম, এক বাটি দিল, সাড়ে তিনশো নিল, আর আপনি ... আপনার দোকানের কার্ড দিন। আমি সব্বাইকে গিয়ে বলব আপনার দোকানে এসে খেতে। হায় হায়, শেষদিনে এসে কিনা আপনার দোকানে খেতে এলাম!!

    কার্ড দিল দোকানের মালিক। আমি টুকে দিচ্ছি এখানে। যে-যে আন্দামানে যাবেন, পোর্ট ব্লেয়ারে থাকলে অতি অবশ্যই আনন্দ রেস্টুরেন্টে খাবেন। গুরু-নানক পার্কেট, পোর্ট ব্লেয়ার ৭৪৪১০১। ফোন 03192-244041, মোবাইল +91 9434280276

    তারপরে আরও জানলম, থ্রি আইল্যান্ডের ট্যুর এরাও করায়, এদের শিপে করে, খাবার দাবারও এরা দেয়, এবং সেটা, আমরা যেটাতে করে গেছিলাম (সেই দর্শন ট্র্যাভেল্‌সের কেস) তার থেকে ঢের ঢের ভালো। আপনেরা কেউ আন্দামানে গেলে থ্রি আইল্যান্ডের ট্রিপটাও এদের থেকেই বুক করে নেবেন। ট্যুর বুকিংয়ের জন্য এদের নম্বর +91 9434263473

    একটা লিমকা হাতে নিয়ে এবার হেঁটেই ফিরে এলাম বেঙ্গলি ক্লাবের দিকে। অল্প কেনাকাটা হল। সাড়ে তিনটে বাজে। কী করা যায়? ... ম্যাডাম বললেন, চল্‌ ঐ জেটিটায় গিয়ে বসি, যেখান থেকে থ্রি আইল্যান্ডের ট্যুর করেছিলাম।

    মানে, সেই ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স। সুন্দর বেঞ্চিপাতা লন, বসে বসে সময় কেটে যায়। আজ সারাদিনে একটুও বৃষ্টি পড়ে নি। বসে বসে দূরে রস আইল্যান্ড, জলে খেলতে থাকা ওয়াটার স্কুটার আর বিভিন্ন রংয়ের নৌকো আর জাহাজ দেখতে লাগলাম। ধীরে ধীরে বিকেল গড়াতে থাকল। আন্দামানে অদ্যই শেষ রজনী।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৬:১৪458804
  • শান্ত জল, ছলাৎ ছল করে এসে লাগছে জেটির পাঁচিলে। পৌনে চারটে নাগাদ, আমি আর আমার কন্যে প্রথম আবিষ্কার করলাম। স্বচ্ছ জলে, ওগুলো কী দেখা যাচ্ছে? চকচকে? ছোটো ছোটো মাছ না?

    প্রথমে দেখে মনে হচ্ছিল মাছ, কিংবা মাছ নয়, অন্য কিছু, পাথরও হতে পারে, কিন্তু খানিক বাদেই দেখা গেল ওগুলো মাছই, মৌরলা মাছের মত শেপ, কিন্তু অনেক বেশি উজ্‌জ্বল রূপোলী, ঠিক সাঁতারও কাটছে না, জলের নিচে এমনিই ভেসে ভেসে এগিয়ে আসছে এদিকে।

    তারপরে দেখি অভাবনীয় দৃশ্য! কোথা থেকে এসে হাজির এক রয়াল ব্লু রংয়ের মাছ। না, একটা নয়, দুটো। তারপরে একগুচ্ছ কমলা-কালো ডোরাকাটা মাছ, তারপরে আরেক গুচ্ছ হলুদ রঙের মাছ, দুটো কালো মাছ ... পুরো মাছের হাট বসে গেল ওখানে জলে। চোখের আন্দাজে বলছি, জলের লেভেল থেকে আমার চোখ ছিল পনেরো ফুট মত দূরত্বে, আর মাছগুলো ছিল, রিফ্র্যাকশন ধরেই বলছি, অন্তত জলের পাঁচ ফুট নিচে। অ্যাত্তো ক্লিয়ার জল যে আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম মাছগুলোকে।

    প্রায় চল্লিশ মিনিট তারা এল, খেলল। এদের মধ্যে কিছু কিছু মাছ আজ সকালেই সামুদ্রিকা মিউজিয়ামে চিনেছি। তারপরে হঠাৎ করে ভোজবাজির মত তারা মিলিয়ে গেল। আর তারপরেই সন্ধ্যে নেমে গেল।

    হিসেব টিসেব করে দেখলাম মোটামুটি হাজার দেড়েক ক্যাশ শর্ট পড়ছে। এখানে ক্রেডিট কার্ড প্রায় চলেই না। তবে অ্যাক্সিস ব্যাংক আর এসবিআইয়ের প্রচুর এটিএম আছে। আমার যাদিও আইসিআইসিআই, তবে আজকাল তো যে কোনও ব্যাংকের এটিএম কার্ড যে কোনও ব্যাংকে চলে।

    ফেরৎ এলাম বাজারে। সামনেই। এখানেও একটা দুর্গাপুজো হচ্ছে। পাশেই হ্যুন্ডাইয়ের শোরুম, সেখানে অ্যাক্সিস ব্যাংকের এটিএম। গিয়ে দেখি, আউট অফ অর্ডার।

    বাজারে একটা এসবিআই এটিএম পেলাম, কিন্তু সে আমার কার্ডকে চিনতেই পারল না। মানে, কেসটা হল, এখানে ক্রস ব্যাংক ভিসা কার্ড চলে না। যার যে ব্যাংক, সে সেই ব্যাংকেই তুলতে পারে।

    এইবারে আমার আতংক হল। পুরো পোর্ট ব্লেয়ারে মাত্র একটই আইসিআইসিআই এটিএম, সেটাও যদি না চলে তো আমি গেছি। অটো ধরলাম, বললাম ঐ আইসিআইসিআই এটিএম হয়ে যাবো হ্যাডো, আমাদের হোটেলে। সে বলল, কিন্তু হ্যাডো তো আমি ঐ রাস্তা দিয়ে যাবো না, ওটা ঘুরপথ পড়বে। জোরজার করাতে সে গাঁইগুঁই করে রাজি হয়ে গেল।

    একমাত্র এটিএমটি গোলঘরের মোড়ে, সেই বন্ধ হয়ে যাওয়া লাইটহাউস সিনেমাহলের পাশে অবস্থিত। কী ভাগ্যি, সেটা কাজ করছিল। ঝটপট টাকা তুলে অটোকে বললাম, এবার হোটেল চলো।

    অটোওলা হোটেলে পৌঁছে দিল, একটি টাকাও এক্সট্রা না নিয়ে। তিরিশ টাকায় শুরুতে কথা হয়েছিল, আমি পঞ্চাশ দিলাম, সে আমাকে কুড়ি টাকা ফেরৎ দিল সঙ্গে সঙ্গে।

    ঘরের জানলা দিয়ে শেষবারের মত দেখে নিলাম চ্যাথাম দ্বীপকে। যা খেয়েছি, আর রাতে ডিনার করার দরকার নেই। গোটা চারেক মাছভাজা খেলেই পেট ভরে যাবে।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৬:৩৩458805
  • এখানেই শেষ হতে পারত, কিন্তু পরের দিন ফেরার ফ্লাইটের মেনুটা মেনশন না করলে ট্র্যাভেলগ শেষ হবে না।

    সপ্তমী স্পেশাল। এয়ার ইন্ডিয়ার মেনু ছিল :

    নারকেল দিয়ে ছোলার ডাল,
    কড়াইশুঁটির কচুরি
    অলু কপির চচ্চড়ি
    মুর্গির কিমা
    বোঁদে

    প্রাণ ভরে গেল। এয়ার হোস্টেসরা সকলেই চল্লিশোর্ধ্ব, পঞ্চাশোর্ধ্ব, কিন্তু খাওয়াটা অপার্থিব।

    আর তেমনি অপার্থিব লাগল পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার আগে সুন্দরবনের ছবি।

    কলকাতা এয়ারপোর্টে নামলাম। আবার জ্যাম, নোংরা, ধূলো। সব ঠেলে হাওড়া স্টেশন পৌঁছতে সময় লাগল প্রায় তিন ঘন্টা। শুভ সপ্তমী।
  • jayanti | 59.178.34.155 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৭:২৩458806
  • আন্দামন বেড়িয়ে আনার জন্য অসংখ্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
  • nyara | 122.172.36.151 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৭:৫৫458808
  • ট্র্যাভেলোগ পড়তে ভাল লাগে না। দেশে-বিদেশে ছাড়া আর কোন ভ্রমণবৃত্তান্ত পয়সা দিয়ে কিনিনি। শমীকের লেখাটা বই হয়ে বেরোলে পয়সা দিয়ে কিনব। এর থেকে বড় প্রশংসা জানিনা।
  • r.h | 203.99.212.54 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৭:৫৭458809
  • হ্যাঁ, যথার্থ মানসভ্রমণ বটে। শমীকের লেখা পড়ে হঠাৎ করেই দিল্লী পছন্দের শহর হয়ে গেছিলো, এবার আন্দামানও লিস্টিতে ঢুকলো। আন্দামানে একটা চাকরী জোটে কিনা দেখতে হবে।
  • Tutai | 12.20.48.10 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৮:০৪458810
  • বড়ো ভালো লেখা। মাছে মাছে ছয়লাপ বলেই বোধহয় আরো ভালো। :)
  • aka | 168.26.215.13 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৮:১৪458811
  • শমীকের লেখা মেদহীন, পোস্কার যেন সার্ফে কাচা। খাসা হইছে। ভেরি ভেরি গুজ্জব।
  • pi | 72.83.80.136 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৮:৩২458812
  • এত্ত ফিশি ফিশি ব্যাপার সঙ্কেÄও দারুণ ঘুরে এলাম !
  • Nina | 64.56.33.254 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ১৯:৪৯458813
  • শমীক, জাস্ট এক ঘর নয়--পুরো এক বাড়ী, প্রাসাদোপম! আন্দামান তো বটেই, তোমাকেও দেখার সাধ জেগেছে ;-))

  • Samik | 122.162.75.22 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ২০:৩৫458814
  • :-)
    :-)
    :-)

    এর পরে ভবিষ্যতের ট্যুরিস্টদের জন্য জ্ঞান দেওয়া বাকি আছে।
  • Arpan | 204.138.240.254 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ২০:৫৩458815
  • সুনীল অথচ স্বচ্ছ। অকৃত্রিম।

    আন্দামানের সমুদ্র আর শমীকের ভ্রমণবৃত্তান্ত। দুইয়ের সম্পর্কেই খাটে।
  • Lama | 203.99.212.54 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ২১:২১458816
  • ন্যাড়াদার যা বক্তব্য আমারও প্রায় তাই। তবে হুতো যদি আগে কিনে ফেলে তাহলে আমি আর পয়সা দিয়ে কিনবো না ;)
  • byaang | 122.172.50.146 | ২৬ অক্টোবর ২০১০ ২২:১১458817
  • খুব ভালো লাগলো শমীকের ভ্রমণবৃত্তান্ত। তরতরিয়ে একবার পড়ে, এখন আবার তারিয়ে তারিয়ে পড়ছি। :-)
  • Paramita | 202.3.120.9 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ০০:২৮458820
  • শমীকের লেখায় অদ্ভুত সরলতা আছে, সুনীলের পূর্বজন্মের গদ্যের মতো। খুব ভালো লেগেছে।
  • Shuchismita | 12.34.246.72 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ০০:৩৩458821
  • পড়ে ফেললাম। দুর্দান্ত লাগল। 'নীলের কোলে শ্যামল সে দ্বীপ' - যেতেই হবে। হবেই।
  • rimi | 168.26.215.135 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ০১:২৯458822
  • একটি কঠোর সমালোচনা:
    এত ভালো ভালো লোভনীয় খাবার বর্ণনা আছে লেখায়, অথচ ছবিতে শুধু এয়ার ইন্ডিয়ার ব্রেকফাস্ট ছাড়া কোনো খাবারের ছবি নেই। খুব আশা করেছিলাম অন্তত দেড় কিলো কাঁকড়ার ঝোলে ভরা ছবি দেখতে পাবো। অন্তত দর্শনেও খানিকটা ভোজন হত!
    :-((((
  • sana | 110.32.33.101 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ০৬:৩৩458823
  • খুউব ভালো লাগলো,শমীক, সহজ,সরল,আর হ্যাঁ,অ-কৃত্রিম। আপনার মিসেস কে দেখে-ও এই এক-ই কথা মনে এলো।
  • Samik | 122.162.75.171 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ০৮:৪৯458824
  • পামিতাদি আসল কেসটা ধরে ফেলেছে। হ্যাঁ, আমি হুনীলের পূর্বজন্মের গদ্যের স্টাইলটার বেশ ভক্ত। অবচেতনে সেইটাকে ফলো করার চেষ্টা করি হয় তো। তবে ঐ গদ্যপ্রবাহটা আমার বেশ ভালো লাগে, আজও।
  • d | 14.96.210.150 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ১০:২৪458825
  • যদিও সমুদ্র কেসটা আমার একেবারেই তেমন ভাল লাগে না, তবু আন্দামান একবার যেতেই হবে দেখছি।

    রিমির সাথে ক'য়ে ক'য়ে ক্ক। শুধু খাবার নয়, এমনকি নীল লাল মাছেদেরও ছবি নেই। :(
  • Samik | 122.162.75.171 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ১০:২৭458826
  • খাবার আগে যদি জানতাম ওটা দেড় কিলো ওজনের একটাই কাঁকড়া, অবশ্যই ছবি তুলতাম। আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম দুটো কাঁকড়া, কিংবা দু'প্লেট কাঁকড়া ছিল ওটা।

    আর, আমার নগণ্য ক্যামেরা, জল ভেদ করে লাল নীল মাছেদের দিকে চোখ চলে, ক্যামেরা চলে না। চেষ্টা করে দেখেছিলাম, ওঠে নি।

    সবই যদি ছবি দিয়ে দেবো, তা হলে তো সক্কলে ঐ জয়ন্তীর মত বলবে, বেড়ানো হয়ে গেল, আর সশরীরে গিয়ে কাজ নেই। বলি নিজে গিয়ে দেখার জন্যেও তো কিছু রাখবে নাকি, অ্যাঁ?
  • kumropatash | 59.178.51.53 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ১২:৪৩458827
  • হ্যাঁ-আ-আ,শমীকের চোখ দিয়েআমার আন্দামান দেখা হয়ে গেচে।আমার আর কিছু চাই না।শুধু শমীকের কন্যার চোখে আন্দামান কিভাবে ধরা দিলো -সেইটা জানার ইচ্ছা ছিল।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ১৩:০২458828
  • দেখা হল না অনেক কিছুই। রঙ্গত, মায়াবন্দর, কালীঘাট, ডিগলিপুর, নীল আইল্যান্ড, নিকোবর ... তবু যা দেখলাম তা-ও কম কিছু নয়। আপনারা যারা যাবেন ভবিষ্যতে, তারা এই ট্র্যাভেলগ থেকে কিছু কিছু আইডিয়া পেতে পারেন, তবে বাকিটা আবিষ্কার করতে হবে নিজেকেই।

    আমার ঘুরতে যাবার স্টাইলটা এই রকম, প্রথমে ডেস্টিনেশন ফাইনাল করি, তারপরে ঐ এলাকার ওপর কোথায় কী ট্র্যাভেলগ ইটিনেরারি অছে, সেসব গুগল করে বের করি, তারপরে নিজের ইটিনেরারি বানাই। এরপর জায়গাটা সম্বন্ধে পড়াশোনা করি, এবং সাইমালটেনিয়াসলি ট্র্যাভেল এজেন্ট খুঁজে বের করে তাদের নিজের প্ল্যান পাঠিয়ে দরদস্তুর করি।

    পুরো ট্রিপটায়, শুধু বেড়াতে আমার খরচা হয়েছে ১১৭০০ টাকা। রাউন্ড করলে বারো হাজার টাকা। তিনজনের। এয়ারফেয়ার, হোটেল, নিজেদের খওয়াদাওয়া আর কেনাকাটা বাদ দিয়ে। এমনিতে বিভিন্ন ট্র্যাভেল অপারেটর এর দাম হেঁকেছিল আঠেরো থেকে কুড়ি হাজার টাকা। হোটেলের তরফে এজেন্ট বুকিং করায় ব্যাপারটা অনেক শস্তায় নেমে গেছিল। তবে চাইলে আরও আরও শস্তায় ঘোরা যায়। যারা বাজেট ট্র্যাভেলে উৎসাহী, তাদের কাজে লাগবে।

    প্রথমে থাকার জায়গা। আমি যে হোটেলে ছিলাম, সেটার নাম হোটেল তেজস -- http://www.hoteltejas.mobi/। এর ২০৪ নং রুম, যেটায় আমি ছিলাম, সেটা বেস্ট। সাইটে এর দর দেওয়া আছে ১৫০০ টাকা, তবে আমি পেয়েছিলাম ১৩০০ টাকায়। প্রাথমিকভাবে কিছু ঝামেলা হচ্ছিল, তিনবার ফলোআপ করার পরে জল দেওয়া ইত্যাদি। সে তো পরে জানলাম ওদের এমপ্লয়ি শর্টেজের ব্যাপার ছিল। বাথরুমের ছিটকিনিটা বেশ ঝামেলা করছিল। এ ছাড়া সি-ভিউ রুম হিসেবে একেবারে চমৎকার জায়গা।

    হোটেলটা ছিল হ্যাডো (Haddo)-তে। এমনিতে জায়গা হিসেবে খুবই ভালো, কিন্তু পোর্ট ব্লেয়ারের মূল বাজার, অ্যাবার্ডিন বাজার থেকে অনেকটাই দূরে। প্রতিবার অটোতে যেতে তিরিশ টাকা করে লাগে। অবশ্য সিটি বাস চলে প্রতি দশ পনেরো মিনিটে। চ্যাথাম থেকে হ্যাডো হয়ে বাজার যায়।

    এবার, বাজার মানেই কিন্তু একটু ঘনবসতি হয়ে যায়। ফলে অতটা ভালো খোলামেলা পাওয়া যায় না। বরং বাজার ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে গেলে, ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্ষ, অ্যাকোয়ারিয়ামের ঠিক মুখোমুখি পাবেন Dugong গেস্ট হাউস, এটা পোর্ট ব্লেয়ার মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের গেস্ট হাউস। ছবির মত সুন্দর। আমার দেখা সেরা লোকেশন। আগে থেকে জানা থাকলে এখানেই বুকিংয়ের ব্যবস্থা করতাম। (ডুগং মানে হল সমুদ্র গাভী, Sea Cow, আন্দামানের স্টেট অ্যানিম্যাল)। ডুগংয়ের ঠিক মাথার ওপরে সেলুলার জেল। সামনে দিয়ে রাস্তা ঘুরে ওপরে চলে গেছে।

    দ্বিতীয় সেরা জায়গা আন্দামান টীল হাউস। এটা আগে পিডব্লুডির হাতে ছিল, এখন আন্দামান ট্যুরিজমের হাতে। আমাদের হোটেল থেকে সামান্য দূরে, সামুদ্রিকার উল্টো-ফুটে। নেটে Andaman Teal House দিয়ে সার্চ মারুন, সব পেয়ে যাবেন।

    ট্র্যাভেলগে পড়েছিলাম এয়ারপোর্টের বাইরেই নাকি ট্র্যাভেল এজেন্টরা দাঁড়িয়ে থাকে, ওখান থেকেই বুকিং করে নেওয়া যায়। আমি সে-সব কিছু দেখি নি। অবশ্য আমি যখন পোর্ট ব্লেয়ারে এϾট্র নিই তখন ভারি বর্ষা চলছিল। টেনশন করার কিছু নেই। হোটেলে গিয়ে বললেই আপনার এজেন্ট জুটে যাবে। যাবতীয় লঞ্চ জাহাজ বুকিং ইত্যাদির জন্য আপনি রসিদ পেয়ে যাঅবেন, বাড়তি কেউ নেবে না। ট্যাক্সি সারাদিন ঘোরানোর চার্জ আমার কাছ থেকে এজেন্ট নিয়েছিল ১০০০ টাকা পার ডে। পরে কোনও এক ড্রাইভার জানিয়েছিল, সে পায় ৮০০ টাকা। বাকি ২০০ টাকা এজেন্টের। তো, আপনি সরাসরি ওখানে কোনও ট্যাক্সির সাথেও কথা বলে নিতে পারেন, শস্তায় হয়ে যাবে, অনেক হ্যাসল ফ্রি হয়ে যাবে আপনার জার্নি। ট্যাক্সি ড্রাইভারই আপনাকে সব ট্রিপের টিকিট কেটে দেবে।

    আন্দামান এমন একটা জায়গা, যেখানে নিজের ইচ্ছেমত ট্র্যাভেল প্ল্যান বানানোর বিশেষ স্বাধীনতা নেই, বেশির ভাগ ট্রিপই জাহাজে, সুতরাং, জাহাজের টাইমিং অনুযায়ীই আপনাকে চলতে হবে। মানে, আপনি যদি ভাবেন সকালে রস আর ভাইপার আইল্যান্ড দেখে বিকেলের দিকে হ্যাভলক চলে যাবেন, সেটি হবে না। রস-ভাইপার নর্থ বে, একটা ট্রিপেই করতে হবে, আর তাতে সময় লাগবে একটাই দিন। হ্যাভলকের জাহাজ সকালেই ছাড়ে, বিকেলে চাইলেও হ্যাভলক যেতে পারবেন না।

    তো, আপনার প্রতিদিনের ট্রিপগুলো ভাগ ভাগ করে নিন, প্রয়োজনমত আগু-পিছু করে নেবেন। থ্রি আইল্যান্ড; রস-ভাইপার-নর্থ বে, একদিন। বেস্ট হয় যদি আনন্দ রেস্টুরেন্টের ক্রুজটা নেন। ওয়ান্দুর-রেড স্কিন / জলি বয়, সাথে রাবার প্ল্যান্টেশন ফার্ম, একদিন। সিটি ট্যুর একদিন, সেটা যেন সোমবার না হয়। যেদিন পৌঁছবেন সেদিন কর্বিন্স কুভ বিচ, সেলুলার জেল আর লাইট অ্যান্ড সাউন্ডটা দেখে শুরু করবেন, মন খারাপের রেশটা যেন ট্রিপের শেষের দিকে না ঘটে।

    বারাটাং আইল্যান্ড বেড়াতে যাবার আগের দিন সিটি ট্যুর রাখুন, কারণ সেদিন রাত তিনটেয় উঠে রেডি হতে হবে, ভোর চারটেয় বাস আসবে। খুব হেকটিক ট্যুর। চপ্পল ছেড়ে উডল্যান্ডসের স্নিকার পরে নিন সেদিন।

    হ্যাভলকে অবশ্যই অবশ্যই একদিন থাকবেন। আমি তো থাকি নি, তবে প্রথমে খোঁজখবর করেছিলাম। আমার খুব পছন্দ হয়েছিল ইকোভিলার ডুপ্লেক্স রুম -- http://www.havelock.co.in/ecovilla.html। একদিনে পুরো হ্যাভলক এক্সপ্লোর করতে পারবেন না, দেড় দিন লাগবেই। অথবা মেগাপড রিসর্টে থকতে পারেন।

    হাতে সময় নেবেন, পরদিন অবশ্যই নীল আইল্যান্ড যাবেন, অপেক্ষাকৃত কম ভিড় হয় এখানে, কিন্তু সৌন্দর্য তুলনাহীন। নীলে কোনও স্পিড ক্রুজ চলে না, সরকারি জাহাজ, টাইমিং একটু খুঁজে নিন আন্দামানের সরকারি সাইট থেকে। নীল থেকে পোর্ট ব্লেয়ার ফেরৎ আসতে পারেন, অথবা নীলে একদিন থেকেও আসতে পারেন।

    আন্দামানে পল্যুশন এত কম যে জামাকাপড় নোংরা হয় না। একই জামা দিনের পর দিন পরে যাওয়া যায়। তবে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার জন্য জামাকাপড় শুকোতে সময় নেয়। তাই ছাতা তো ক্যারি করবেনই, এখানে বৃষ্টি যখন তখন হয়, সঙ্গে জলে নামার পোষাক একাধিক ক্যারি করবেন। সাদাসিধে জামাকাপড় নেবেন। আমরা "বেই-বেই' করার মুডে গেছিলাম, দু একটা পুজোর জন্য কেনা জামা পুজোর আগেই নোংরা হয়ে গেছিল।

    পর্যাপ্ত ক্যাশ নিয়ে যাবেন। ওখানে এটিএম আছে, মূলত এসবিআই আর অ্যাক্সিস ব্যাংক, তবে যদ্দূর মনে হল সেগুলো ভিসা এনেব্‌লড নয়। ক্রস ব্যাংক ট্র্যানজ্যাকশন চলে না।

    ট্যুরিজম খুব প্রিমিটিভ শেপের। বিচের ধারে জলে নামার আগে বা পরে জামাকাপড় চেঞ্জ করার জন্য পর্যাপ্ত আড়াল পাওয়া যায় না, কোনওরকমে মানিয়ে নিতে হয়। সঙ্গে কেউ এসকর্ট থাকলে ভালো হয়।
  • Samik | 121.242.177.19 | ২৭ অক্টোবর ২০১০ ১৩:১৬458830
  • আদর্শবাদী হোন আর যাইই হোন, যদি সত্যিকারের হাতে টাইম নিয়ে আন্দামান এক্সপ্লোর করতে চান, তা হলে আর্মির চ্যানেল বের করুন। নান্যপন্থাবিদ্যতে। পুরো আন্দামান আর্মি-নেভি-এয়ারফোর্সের একটা স্ট্রং বেস। যে কেউ চাইলেই নিজের ক্রুজ চালাতে পারে না এখানকার জলে। এই আন্দামানের স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনের জন্যেই পুরো বঙ্গোপসাগর ইন্ডিয়ান টেরিটরির মধ্যে, যা সুরক্ষিত রাখছে আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব দিক।

    নিকোবরে কোনও ট্র্যাভেল অপারেটর আপনাকে নিয়ে যাবে না। আর্মির পারমিশন নিতে হয়। বিদেশীদের নিকোবরে প্রবেশ নিষেধ, কেবল ইন্ডিয়ানরা যেতে পারে, উইথ প্রপার পাস ফ্রম ডিফেন্স পার্সোনেল। ব্যারেন আইল্যান্ড দেখতে যাবার কেস হলেও তাই। সুতরাং, চ্যানেল ছাড়া এসব সম্ভব নয়। রামা শ্যামা জগাই মাধাইকে তারা পাস দেবে না।

    পোর্ট ব্লেয়ার দক্ষিণ আন্দামানে। উত্তর দিকে, ম্যাপ যদি দেখেন, দেখবেন আরও পয়েন্ট আছে, রঙ্গত, মায়াবন্দর, ডিগলিপুর ইত্যাদি। প্রতিটা জায়গায় আন্দামান নিকোবর ট্যুরিজমের রিসর্ট আছে, বুকিং সেরে নিন, যদি যেতে চান। শিপের বুকিং ওখানে গিয়ে করিয়ে নেবেন। এজেন্টকে দিয়ে করাবেন, নইলে নিজে লাইনে দাঁড়াতে গেলে আপনার বেড়ানো ভোগে যাবে।

    পীক সিজন ডিসেম্বর। এই সময়ে হোটেলের রেট বেড়ে যায়, ভিড়ও বেড়ে যায়। আর নভেম্বর পর্যন্ত বর্ষা চলে অল্পবিস্তর।

    সাঁতার জানুন আর না-ই জানুন, বিচে গিয়ে জলকে ভয় পাবেন না। খুব শান্ত জল, ঢেউ খুব কম, বা নেই, স্নরকেলিংয়ের সুযোগ ছাড়বেন না। আমার বউ যদি সাঁতার না জেনে পারে, আপনিও পারবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন