এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মঠের দেশে, পরণকথার দেশে

    I
    অন্যান্য | ১৩ অক্টোবর ২০১১ | ৬২৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 198.82.27.64 | ১৭ অক্টোবর ২০১১ ২৩:১২494615
  • বড়ো ভালো হচ্ছে। একটা পোশ্নো পেলো। ট্রেনে করে অর্ধেকটা গিয়ে তারপর বাসে করে পদ্মা পেরোনো যায়?

  • I | 14.99.63.43 | ১৭ অক্টোবর ২০১১ ২৩:২৭494616
  • সম্ভবত: না। মৈত্রী এক্সপ্রেসে তো একদমই না। কারণ সে থামে শুধু একটিই স্টেশনে। একদম ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট।
  • nk | 151.141.84.194 | ১৭ অক্টোবর ২০১১ ২৩:৩২494617
  • আমি কেবল এই টইটাই দেখে যাবো দিনান্তে একবার।
    বড়ো ভালো বড়াই, খুব ভালো হইতেছে।
  • kumu | 122.161.242.155 | ১৭ অক্টোবর ২০১১ ২৩:৩৮494618
  • এইবার ল্যাখো,ইন্দো।
    ল্যাখার সময় ল্যাখা ছাইড়া অন্য কামে মন দিতে নাই, মনু।
  • I | 14.99.63.43 | ১৮ অক্টোবর ২০১১ ০০:০২494619
  • আবার নামা। আবার মালপত্তর টানাটানি। তাও কোথা থেকে একটা মন ভালো উঁকি দেয়- এই তবে বাংলাদেশ ! ছোটবেলার স্বপ্নে দেখা দেশ ! এই তো বাংলা হরফে জ্বলজ্বল করছে স্টেশনের নাম-দর্শনা, কোথাও হিন্দীর লেশমাত্র নেই। এই তো বাংলাদেশের পুলিশ, ধূসর -নীল শার্ট পরে কী স্মার্ট দাঁড়িয়ে আছেন,তরুন মুখ, আহ্‌, বাঙালী ! বাক্স টানতে টানতে আমরা নির্দিষ্ট ঘরে গিয়ে ঢুকি।

    ঘরটি, গেদে স্টেশনের তুলনাতেও যথেষ্ট ছোট। তার ওপরে সার সার প্লাস্টিকের চেয়ার বসিয়ে আরো দুর্গম করে রাখা, তাদের নড়ানো-চড়ানো যায় না, ফিক্সড চেয়ার সব। এবং দুটি সারির মধ্যে ব্যবধান প্রায় নেই বললেই চলে। এর মধ্যে এত মানুষ ! এত এত মালপত্র ! পিঁপড়ে গলবারও জায়গা নেই যে ! কোথায় মাল রাখবো, কোথায় দাঁড়িয়েই বা ফর্ম ভরবো (বসা তো দূরস্থান ) আর ঐ লম্বা লাইনে কাকেই বা দাঁড় করাবো ! ইমিগ্রেশনের তিনটে মাত্র কাউন্টার, প্রত্যেকটার সামনে গিজগিজ করছে মানুষ।

    আমাদের লাইনটাই বোধ হয় সবচেয়ে শ্লথ এগোচ্ছে ( চিরকালই তাই হয়, সব স্টেশনে-টিকিট কাউন্টারে-ব্যাংকে এতাবৎকাল তাইই দেখে এসেছি ) ; ভদ্রলোক দুজন বয়স্ক, কম্পিউটার -দুরস্ত নন এবং গেদের তুলনায় এখানে তথ্য ভরাট করার কাজও অনেক বেশী। একজন বলছেন, অন্যজন শুনে শুনে লিখছেন; প্রতিটি কী খুঁজে খুঁজে শিশুর প্রথম হাতের লেখার মত। সবারই মাথা গরম , বাইরে প্রখর শারদ গ্রীষ্ম, ভেতরে অসম্ভব গুমোট। পেছন থেকে টিটকিরি ভেসে আসছে-কম্পিউটার শিখেন নাই, বুড়া বয়সে এসে শিখতে হচ্ছে-বাংলাদেশী মানুষজনই কেউ বলছেন, খুব উঁচুতে নয় যদিও, তবু কানে যাচ্ছে না কি?
    এর মধ্যে হঠাৎ লেগে গেল; আমার তিন-চার মানুষ আগে এক ভদ্রলোক কাউন্টারের জানলায় অনেকক্ষণ ধরেই উঁকিঝুঁকি মারছিলেন, আগেও এঁকে দেখেছি কলকাতা স্টেশনে, দেখতে বেশ মজাদার, মনে রাখা সহজ কেননা এঁর রং-করা বাদামী চুলে চিতার গায়ের মত ছোপছোপ ডোরা কাটা।পেছন থেকে কেউ একজন চেঁচিয়ে বললেন,-এই, এই , আপনে লাইনে আছেন? সরেন, সরেন, সরে যান !
  • I | 14.99.63.43 | ১৮ অক্টোবর ২০১১ ০১:০৪494620
  • সে লোকটিও তেরিয়া-আপনি জানেন, আমি কতক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি? জানেন, ফর্মে একটা ভুল হয়েছিল বলে এঁরা আমাকে ঠিক করে আনতে বলেছেন ?
    এইভাবে এক কথা -দুকথাতে শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। হাতাহাতি নয় যদিও। শেষমেষ আমার পেছনের বাংলাদেশী ভদ্রলোক আমায় প্রায় ঠেলা মেরে -সরেন তো- বলে সরিয়ে ওঁর ঝগড়া-দোসরের সামনে এসে চেঁচিয়ে বললেন- ভাবছেন কী? ইন্ডিয়ায় আমাদের সাথে যেরম ব্যবহার করেন, এখানেও সেইটা চালাবেন? এইটা বাংলাদেশ ! বলে দাঁতে দাঁত চেপে প্রায় অব্যক্ত একটি গালাগালি। আশেপাশের দু-একজন লোক ওঁকে তারিফও করলেন।
    এবার কাউন্টারের কর্তাব্যক্তির পালা। হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বাদামী-চুলকে মুখঝামটা দিয়ে প্রায় মৌখিক ঘাড়-ধাক্কা--আপনে লাইনের পেছনে যান তো ! যান !
    বাদামী চুল কাঁচুমাচু-আগেই ছিলাম, এই লাইনটা একটু গোলমাল হয়ে গেল....
    -আপনে যতবার সামনে আসবেন, ততবার আপনারে পেছনে পাঠাবো। আবার আসতে হলে আপনারে লাইন দিয়েই আসতে হবে.....

    আমি কী খুব গালিবল ছিলাম? আমি কী মালা ও চন্দন প্রত্যাশা করেছিলাম? ট্রেনের নাম মৈত্রী বলে, বাংলাদেশের মধ্যে এককালে বাঁচতাম বলে আমি কি নি:শর্ত বন্ধুতা, নির্ঘাম মসৃণ একটি করমর্দনের আশা বুকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমেছি ? আমি কী একদা-পলাতক-deserter-এর সন্তানধারা নই, ফেলে আসা, ছেড়ে যাওয়া কারবালা-প্রান্তরে আমি তবে কোন প্রদীপ ও মঙ্গলঘটের তৃষ্ণা নিয়ে এসেছি ? আমার স্বদেশ কী নিয়ত কোনো অপমান করে চলেছে এই মানুষটিকে , যে আজ তার সমস্ত বমি উগড়ে কালো করে দিল আমার সাধের নাইওর-যাত্রা ! এঁকে কি ব্যক্তিগত কোনো অপমান সহ্য করতে হয়েছে কলকাতার গলি-কলকাতার পথে-গুজরাটের চকে ! নাকি সম্প্রদায়ের অপমানে-ধর্মের অপমানে অপমানী ইনি ! কয়েক মিনিট আগেও তাহলে ইনি ছিলেন সংখ্যালঘু, এখন সীমান্ত পেরিয়ে, লোহার বেড়ী পেরিয়ে খুব জমজমাট?

    তেতো লাগছে। আমার হাত গলে শান্তিজল কেবলি পড়ে যায়।বারবার মনে হচ্ছে,why me ! আমি তো কোনো দোষ করিনি ! বিশ্বাস করুন, আমি কোনো দোষ করিনি; কোনো অপরাধ করিনি আপনার কাছে, আপনার প্রিয় দেশের কাছে। যা একদা ভুলস্বপ্নে আমারো দেশ ছিল, সার সিরিল র‌্যাডক্লিফ নামে আপনার-আমার -আমাদের পিতৃপিতামহের সম্পূর্ণ অচেনা এক ইংরেজ রাজকর্মচারীর কয়েক দিনের খামখেয়ালে যা আমাদের মধ্যে এমনি তেতো বিষ জমিয়ে তুলল ৬৪ বছরে । ৬৪ বছর ! স্বপ্নের সে ভুল শুধরে নেওয়ার পক্ষে বড্ড বেশী সময়, প্রিয় বাংলাদেশ ! এতখানি সময়, জোর করে কাটা শল্যক্ষতও শরীরে স্বাভাবিক হয়, টুকরো করে কাটা এক-মহাদেশ বরফও দুই ভাসমান হিমশৈলের মত ভাসতে ভাসতে কত দূরে চলে যায়। আর এত বড় বড় সব ঢেউ, এত বিশাল চাকা কূটনীতির-পররাষ্ট্রনীতির, আমরা ছোট মানুষজন, সাধারণ নাগরিক সব, বিশ্বাস করুন, হাত দিয়ে তাদের ঘোরাতে পারি না। সময়ের স্রোতে ভেসে চলে যাই।

    কিন্তু বিষাদ বৃত্তান্ত থাক।যাঁরা এ লেখা পড়ছেন,তাঁদের আশ্বস্ত করে বলি, ঘটনাটি একেবারেই প্রক্ষিপ্ত, গোটা বাংলাদেশের বাকি অভিজ্ঞতার সঙ্গে কোনো মিল নেই এর ; বাদবাকি পুরোটাই এক মিলনের সুখস্মৃতি, মেহমানদারির চূড়ান্ত। তবে কিনা এক্কেবারে শুরুতে তো ! বেড়ানোটা একটু টোল খেয়ে গেছিল, এই আর কী !
  • i | 137.157.8.253 | ১৮ অক্টোবর ২০১১ ০১:০৭494621
  • এন কের ১৭ই অক্টোবর, ১১:৩২এর পোস্টটির প্রতিধ্বনি করি।
  • hu | 12.34.246.73 | ১৮ অক্টোবর ২০১১ ০১:২২494622
  • জমিয়ে রেখেছিলাম। একটু একটু করে পড়বো বলে। বাংলাদেশ মানে তো স্বপ্ন-কল্পনায় মেশানো একটা অস্পষ্ট ভূখন্ড যে দেশ থেকে আমার মাতামহ-মাতামহী চলে এসেছিলেন একদিন। নিজের দেশ নয় জানি, তবু যেন খুব আপন কিছু। লেখো ইন্দোদা। বড় ভালো হচ্ছে।
  • rimi | 168.26.205.19 | ১৮ অক্টোবর ২০১১ ০২:০০494623
  • ভীষণ ভালো লাগছে।
  • achintyarup | 59.93.192.216 | ১৮ অক্টোবর ২০১১ ০৪:১৩494625
  • কত কম কথায় চোখে জল এনে দিতে পার গুরু!
    নিজের গতিতে চলো ডাক্তার, আমরা সঙ্গে সঙ্গে শুনতে শুনতে দেখতে দেখতে যাই।
  • Manish | 59.90.135.107 | ১৮ অক্টোবর ২০১১ ১৭:১১494626
  • খুব ভালো লাগছে।
    কিন্তু ডাক্তার বড়ই কিপ্টে। উজাড় করে দিতে জানেনা।
  • I | 14.99.224.86 | ১৮ অক্টোবর ২০১১ ২৩:১৮494627
  • ডাক্তার কিপ্টে নয় দাদা, সময় বড় ইতর। ডাক্তারের প্রতি নির্দয়। অন্ন আনতে বেলা যায়। দিনান্তে শুধু একবারই লেখা নিয়ে বসতে পারি। রাত ১১টার পরে।
  • I | 14.99.224.86 | ১৯ অক্টোবর ২০১১ ০০:২২494628
  • তো যা বলছিলাম। কী যে ক্ষেতিডা হয় চেকিংবস্তু একবারেই মিটিয়ে ফেলতে ! নয়তো ট্রেনে বসে চেক কর না বাপ যত খুশি, তাতে অন্তত: বুড়ো আঙুলের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না ঘন্টা তিনেক (এপারে দেড়, ওপারে দেড় ), ঠাণ্ডা বাতসটাতাসও লাগে পরাণডায়। আর একান্তই যদি সেসব না পারিস, ঘরগুলো একটু বড় কর না বাপু, যাতায়তের পথগুলো চওড়া কর। মানুষগুলোকে একটু চটপটে কর। দুপারেই।

    এখন লিখছি বটে ঠাণ্ডা মাথায়, সেদিন কিন্তু বেদম রাগ হয়েছিল। একে তো ঐ গরম, ঘাম, ঠেলাঠেলি, পয়সা চাওয়া; তার ওপরে ঐরকম ব্যাভার ! মনে হয়েছিল আর আসব না এদেশে। বিদেশেই যাব না,ধুর! দেশের মধ্যেই শুধু ঘুরব এর পর থেকে। তাতে তো কেউ -দুইজন মানুষ, দুইডা ক্যামেরা ক্যান ? আপনেগো পাসপোর্ট কয়ডা ? এজাতীয় মর্কটোচিত প্রশ্ন করবে না ! দেশে মর্কটশস্যের ফলন কম হয় বলে নয়, এরকম প্রশ্ন করা ও ফাউ হিসাবে ব্যাক্সপ্যাঁটরা আউলাঝাউলা করার এহেন সুযোগ স্বদেশী হনুভ্রাতা ও হনুভগিনীগণ কমই পাবে--এই বিবেচনায় অমন মনে হওয়া।

    অনেকক্ষণ লাগল রাগ ঠাণ্ডা হতে । এসি-র অনেক কারেন্ট পুড়ল। অবশেষে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে আবিদা পারভিনের গলায় লালনগীতি শুনে তবে মনে একটু বল এল। তারপর লাঞ্চের পালা। আমাদের দরজা বন্ধ ছিল, খালি ভাবছি ডাকবে-ডাকবে, ডাকে আর না। শেষমেষ যখন ডাক এল, তখন খাবার প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। রাইস- গোস্ত ছাড়া অপশন আর কিছু নেই। লোকে যে কত লোভানি দিচ্ছিল-"বিরিয়ানি খাব ! বিরিয়ানি খাব !-' বলে, সেসব কী তবে মায়া ?
    সে কী, আগে ডাকলেন না যে ? প্রশ্নের জবাবে বিনীত ছেলেটি বলে-হ্যাঁ সার, ডেকেছিলাম, আপনাদের দরজা বন্ধ ছিল।

    ত্তাই বলো ! একবার-দুবার আমার মনে হয়েছিল বটে , দরজায় কে যেন নক করছে (সঙ্গীতাদেবীরও, জানা গেল, তাই মনে হয়েছে), কিন্তু সে তো -যাকে বলে- আমি মনে ভেবেছিলেম ,বাতাস বুঝি হবে।
    তাহোক। সব বড় বড় মানুষেরই অমন হয়। রবিঠাকুরের হয়েছিল, সে তো প্রমাণ দিয়েই দিলাম। স্বামীজিরও হয়েছিল। জাহাজে ঘুমোতে ঘুমোতে যাচ্ছিলেন, মনে হল কে যেন কানের কাছে পষ্ট বলছে-ব্যাঙ মশাইয়ের বে ! ব্যাঙ মশাইয়ের বে ! চটকা ভাঙতে বুঝলেন, ফরাসী ওয়েটার মৃদুকণ্ঠে বলছে-ব্যাঁ মশিয়েঁ, প্রে -আপনার ব্রেকফাস্‌, মহাশয় !
  • kumu | 122.161.155.14 | ১৯ অক্টোবর ২০১১ ০০:৩৭494629
  • চোখে জল?কেন হে সাংবাদিক?
  • I | 14.99.224.86 | ১৯ অক্টোবর ২০১১ ০১:১০494630
  • তাই খেলাম। রাইস দিয়ে চিকেনকারিই খেলাম, সঙ্গে ডালের জল ও কদুর তরকারি এক ঠাঁই ভাই ভাই। ফাউ হিসেবে এক পিস করে গন্ধরাজ লেবু দিয়েছিল, তার কথা না বললে অনেয্য হবে। খিদের মুখে মন্দ লাগল না।
    খেয়ে উঠে সকলেই ফোঁড়ৎ ফোঁ, মায় মহারাজ পর্যন্ত। টুংকাই আর আমি বাদে। একসময় সত্যিই পদ্মা নদী এল, মস্ত বিরিজ এল। এই নাকি হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ! কতবার বইয়ে পড়া, কতবার স্মৃতিকাতর পরিজন-মুখে শোনা ! যাঁরা বলতেন, তাঁদের উচ্চারণে কী অদ্ভুত ঘোর লাগত এই সেতুর নাম বলতে গিয়ে ! নাকি সে আমারি মস্তিষ্কবিভ্রম !
    দেখলাম পদ্মার ওপর দিয়ে নৌকো করে দুর্গাঠাকুর চলেছেন বাপের বাড়ি; আজ ষষ্ঠী। দেখলাম পদ্মার চর আলো করে ফুটে আছে রাশি রাশি কাশফুল, নিবিড় ঘন সাদা; মধ্যে কোথাও ফাঁক নেই। দেখলাম বটে, দেখাতে পারলাম না কাউকেই। টুংকাইও ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাদা।

    আমরা পেরিয়ে এসেছি চুয়াডাঙা, পেরিয়ে এসেছি কুষ্ঠিয়া (লালন শাহের কুষ্ঠিয়া!), এইমাত্র পেরিয়ে এলাম ঈশ্বরদী, এখানে ট্রেন অল্প সময়ের জন্য থামল, কিন্তু ওঠা-নামা করতে দিল না কাউকে; এবার চলেছি পাবনার ওপর দিয়ে। বিকেলের লালচে আলোয় আমরা যমুনা পার হব। বিশাল ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের উপত্যকায় নেমে এসে নাম নেয় যমুনা, তার পুরুষ ভাব সংবরণ করে সে পরে নেয় নারীবাস; এই যমুনার কথা বলতে গিয়ে আমার বিহ্বল প্রৌঢ় সহযাত্রী বলেন-পদ্মা আর কী দেখলেন ! দেখবেন খন যমুনা ! সমুদ্রের মত।

    দেখলাম বটে ! দেখার মত দেখা। কোথায় যে তার এপার, কোথায় অন্যপার, থই করতে পারা যায় না সত্যি। আর সেই কাশবন! পদ্মা যদি তার ট্রেলার দেখিয়ে থাকে,এ তবে গোটা একটা আস্ত সিনেমা। বেশ খানিকক্ষণ দেখার পরে সঙ্গীতা বলল-ছবি নেবে না ? আমি বললাম-কী আর নেব কাচের ভেতর থেকে ! মহারাজ তখন আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরা হাতে, বললেন, যাই দেখি, ওদিকে টয়লেটের কাছে একটা জানলা খোলা আছে। আমিও তাই শুনে লম্ফ দিয়ে ছুটলাম। প্রাণ ভরে ছবিও তুললাম। তারও প্রায় মিনিট পাঁচেক পর অবধি চলল সেই ঘন কাশের বন। তাহলেই বুঝে দেখুন কী বিস্তার ! (সঙ্গের ছবিও দেখুন)

    আমার সেই সহযাত্রীটি মুগ্‌ধ চোখে জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলেন, যতক্ষণ ধরে ট্রেন যমুনা পার হল। মুখে অদ্ভুত একটা হাসি। সুখাবেশ। সম্ভবত: বাংলাদেশের মানুষ, বহুদিন বাদে দেশে ফিরছেন। দেশের মাটি টানছে তাঁকে। আমায় ডেকে বললেন,আসুন আসুন, এখান থেকে তুলুন। ভালো ভিউ পাবেন।
  • I | 14.99.224.86 | ১৯ অক্টোবর ২০১১ ০১:১২494631
  • ভুল, সংশোধন। ১২: ২২-এর পোস্টে "ফরিদা পারভিন' লিখতে গিয়ে আমি "আবিদা পারভিন' লিখে বসেছি।
  • santanu | 92.96.240.105 | ১৯ অক্টোবর ২০১১ ২২:২৬494632
  • আবার আজ রাতে
  • I | 14.99.17.185 | ১৯ অক্টোবর ২০১১ ২২:৪৫494633
  • সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ট্রেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছল। প্রায় এক ঘন্টা লেট। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সম্ভবত : একটু নতুন স্টেশন, কেজোমত, সাজগোজের তেমন বাহার নেই। কমলাপুর স্টেশনে এলে ভালো লাগতো। নেটে ছবি দেখেছিলাম কমলাপুরের, বেশ ভালো লেগেছিল। পরে ফেরার সময় বাইরে থেকে দেখলামও , দারুণ স্থাপত্য; ভেতরে আর যাওয়া হল না।

    ছোট স্টেশন, সরু একটা গেট; আমি যে ভয় পাচ্ছিলাম ঐ অত লোক-লস্করের মধ্যে মামা কিভাবে আমাদের খুঁজে পাবে, সেটা নেহাতই অমূলক। একটাই গেট, তেমন ভিড়ভাট্টাও নেই, মামা সামনেই দাঁড়িয়েছিল।
    তারো সামনে দাঁড়িয়েছিল সুষেণ। সুষেণ সঙ্গীতার পিসতুতো ভাই, বরিশালের স্বরূপকাঠিতে বাড়ি; ও নিজে ঢাকায় ওর দিদির বাসায় (এখন থেকে বাসা-ই বলব) থেকে পড়াশুনো করে। এই সুষেণ যেদিন থেকে খবর পেয়েছে আমরা বাংলাদেশে আসছি সেদিন থেকে ফোনে-ফোনে পাগল করে মেরেছে। ওর আব্দারে ( ওর কাছেই থাকতে হবে, আর কোথাও যাওয়া চলবে না ইত্যাদি) আমাদের অরিজিন্যাল প্ল্যান প্রায় চৌপাট হওয়ার অবস্থা। অথচ আগে কোনোদিন গলাও শোনে নি আমাদের, চিঠিপত্তরে-ইমেলে যোগাযোগও নেই, চোখে দেখা তো দূরস্থান।

    সুষেণ ! নামটা মজাদার, না? আমি তো রামায়ণের বাইরে আর কারো এমন নাম শুনি নি। ছেলেটিও বেশ মজাদার। অনর্গল কথা বলে, প্রবল ইমোশন্যাল, ভয়ঙ্কর ভালোবাসার অত্যাচার করতে পারে। তা হোক, তাই বলে ইল্ড করলে চলবে না। আপাতত : ঠিক হল আজকের রাতটা আমরা মামার সঙ্গে মামার শালা অরুণমামা'র বাসা মহম্মদপুরে যাবো; সুষেণ জোরজবরদস্তি করলেও শুনবো না, কেননা ওরা থাকে যাত্রাবাড়ি-শনির আখড়া, ঢাকা শহরের আরেক প্রান্তে, সেখানে পৌঁছতে এখান থেকে প্রায় ঘন্টা তিনেক লেগে যাবে। আমরা সকলেই বেজায় ক্লান্ত, একটা ভালো ঘুম দরকার। সুষেণকে বুঝিয়ে-বাঝিয়ে রাজি করা হল যে আজ রাতটা বাপু মহম্মদপুরেই থাকা হবে, কাল সক্কাল-সক্কাল তোমার জিম্মায় দেহ-মন-প্রাণ সঁপে দেব। তুমি আমাদের ঢাকা শহর ঘোরাবে , তোমার বাসায় নিয়ে যাবে-মারবে-কাটবে-যা খুশি করবে। খুণ্নমনে সুষেণ একা একা ফিরে গেল। আমরা মামার সঙ্গে গাড়িতে উঠে বসলাম।

    গাড়ি চলেছে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা দিয়ে। রাতের অন্ধকারেও বুঝতে পারছি চারদিক বেশ ঝাঁ -চকচকে, উঁচু-উঁচু হাইরাইজ, ঝকঝকে দোকানপাট-শপিং মল । গাড়ি চলল গুলশন-বনানী-ধানমণ্ডি ইত্যাদি ঢাকার সব পশ এলাকা পেরিয়ে, সংসদ ভবনকে ডাইনে রেখে। আর সুযোগ পাওয়ামাত্রই ঢাকা শহরের কুখ্যাত ট্রাফিক জ্যাম ঝুপ করে আমাদের ঘাড়ে লাফ দিয়ে পড়ল।

    সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। এতকাল শুনেই এসেছি ঢাকার জ্যামের কথা;সৈকত আবার বলেছিল-সে কী রে , তুই ঢাকা যাচ্ছিস, ওখানে তো কোনো ফ্লাইওভার নেই, রাস্তা পার হতে আড়াই ঘন্টা লাগে।আমার আবার সাধ ছিল, ঢাকার রিক্সা জ্যাম স্বচক্ষে দেখব। তো, তার জন্যে কোনো কষ্টই করতে হল না। সে এক অসম্ভব হট্টমেলা, চারিদিক থেকে রিক্সা-সি এন জি (অটোকে ঢাকার লোকে ঐ নামেই ডাকেন)-মাইক্রো-প্রাইভেট কার-বাস এরা সবাই মিলে মুহূর্তে ঢাকা শহরকে মুজতবা আলীর খাইবার পাস বানিয়ে তুলল। আর আলী সায়েব তো ঢাকারই জামাই, কে জানে "ডাহাইয়া' জ্যাম মাখিয়ে মাখিয়ে উনি ওঁর আফগান-পাঁউরুটিতে অমন তার এনেছিলেন কিনা !
  • I | 14.99.17.185 | ২০ অক্টোবর ২০১১ ০০:২২494634
  • বাড়ি গিয়ে হিসেবনিকেশ চলল-একদিনে কী করে ঢাকা শহরের মেজর ট্যুরিস্ট স্পটগুলোকে কভার করে ফেলা যায়, অ্যাজ ইফ সেটা সম্ভব। আমি পা ঠুকে বললাম, আর যেখানেই নিয়ে যাও না কেন তোমরা, আমি সাভারের স্মৃতিসৌধ আর ঢাকা ইউনিভার্সিটির শহীদ মিনার না দেখে নড়ব না। তো, ঠিক হল সাভার দিয়েই শুরু হবে আমাদের ভ্রমণ, কেননা সেটিই সবচেয়ে দূরে, ঢাকা শহরের বাইরে, যেতে ঘন্টা দেড়েক লাগে। অঞ্জনা মামী ( অরুণ মামা'র স্ত্রী) অসম্ভব চটপটে ও চৌকস, ঢাকার মেয়ে, ঝট করে একটা মাইক্রো ভাড়া করে ফেলল।

    এখানে একটু থেমে আমার বাকি হোস্টদের পরিচিত করিয়ে দিই।( আপনাদের একটু বিরক্ত লাগতে পারে, কিন্তু এ আমার মজবুরি, বাংলাদেশে গিয়ে যে আতিথ্য আমরা পেয়েছি, তারপরে তাঁদের স্মরণ না করা সম্পূর্ণ অকৃতজ্ঞতা হবে।) বাসাটি অরুণমামার, মামা'র সেজ শ্যালক। ওঁরা ছাড়াও থাকেন নীপামামী, মামার ছোট শালার স্ত্রী। ওঁর স্বামী এখন অস্ট্রেলিয়ায়, উনিও অস্ট্রেলিয়া যাবার দিন গুণছেন। নীপামামী খুব শান্ত, অসম্ভব মিষ্টি , সর্বদা হাসিমুখ ; অঞ্জনামামী যেমন গপ্পকথায় চারদিক মজিয়ে রাখতে পারেন, নীপামামী তেমন নন। ইনি শ্রোতা টাইপের। মামী বলছি বটে, আসলে হয়তো আমার থেকে ছোটই হবেন। অরুণমামাও চুপচাপ, কিন্তু বেশ করিৎকর্মা। আসলে মামীরা সব ভাইবোনই বেশ শান্ত।
    সে রাতে বেশ একটা পার্টি-পার্টি ভাব বাড়িতে । না , বাড়িতে নয়, বাসায়। আমরা ক'জন, আমার মামা-মামী, অরুণমামারা এবং নীতা (নাম পরিবর্তিত)। নীতা ওঁদের ডোমেস্টিক হেল্প, অদ্ভুত শান্ত, ভীষণ মায়াবী মুখখানা। এইরকম মুখ দেখলে বোধ হয় মাতাল ঋত্বিক "মা' বলে ডাকতেন। নীতা থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পরে ফিরে এসে ম্যাপ খুলে দেখলাম, সে বেশ দূর।

    বলেছি কী, টুংকাইয়ের কাণ্ড? পাঁচতলা উঠে এসে সে আর কিছুতেই ঘরে ঢুকবে না, দরজা'র বাইরে দাঁড়িয়ে রইল ঠায় মিনিট দশ-পনেরো। অনেক অনুনয়-বিনয়-ভয় দেখানো-কিছুতেই নড়ল না। তার মা তো রেগে কাঁই, থাক আজ সারা রাত দরজার বাইরে। শেষে আমি গিয়ে বলে -কয়ে তবে তাকে নড়াতে পারলাম। তার একটাই প্রশ্ন-আমরা এখানে থাকবো কেন? মানে !

    অনেক ক্ষণ পরে বোঝা গেল মানে। এতকাল টুংকাই যখনি বেড়াতে গেছে, গিয়ে হোটেল -গেস্ট হাউজে উঠেছে, কারো বাড়িতে তো থাকে নি। সেসব জায়গায় আমরা, শুধু আমরাই তার সঙ্গী,সুতরাং বাড়ি-বাড়ি ভাব, সবাই-রাজার-রাজত্ব। বেড়াতে এসে একঘর অচেনা মানুষের বাড়িতে থাকা এই প্রথম টুংকাইয়ের ছোট্ট জীবনে, তাই সে বেশ অবাক, বিব্রত ও নিরাপত্তাহীন-আমরা এখানে থাকবো কেন ! এদের সঙ্গে থাকবো কেন? একটা গোটা রাত লাগলো তার ফ্রী হতে। অবশ্য রাতের আর কী-ই বা তেমন বাকি ছিল ! খেয়ে-দেয়ে দিলাম একটা লম্বা ঘুম।
  • I | 14.99.17.185 | ২০ অক্টোবর ২০১১ ০০:৪৯494636
  • সকালবেলায় একটু তাড়াতাড়ি উঠে যাওয়া, বেড়াতে গেলে আমার যেমন স্বভাব; যদিও বাড়িতে আটটার আগে চোখ খুলতে ইচ্ছে করে না। ভোর হয়েছে ঢাকা শহরে। এই মহম্মদপুর, ঢাকার ব্যস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে একটা, এখানে ভোরের আলো তেমন সহজে ঢোকে না। চারিদিকে ঠাসাঠাসি হাইরাইজ বাক্সবাড়ি, কলকাতারই মত। বাড়িঘরের নক্সা, স্লাইডিং জানলায় অ্যালুমিনিয়ামের প্যানেল, কলকাতারই মত। বলে না দিলে বোঝা মুশকিল, অন্য শহরে এসেছি। আর হ্যাঁ, বলতে বলতে মনে পড়ে গেল-কাল রাতে যখন ট্রাফিক জ্যামে নাকানিচোবানি, তিন কিলোমিটার রাস্তা যেতে এক ঘন্টা লাগছে ( বাড়িয়ে বলছি না একটুও), তখনো রেডিওতে ট্রাফিকের সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হচ্ছে সব রাস্তাই এইমুহূর্তে যানজট মুক্ত, অতএব আপনি স্বচ্ছন্দে যেতে পারেন যে কোনো জায়গায় । হ্যাঁ, কলকাতারই মত। ;-)

    কলকাতার কথায় মনে পড়ে গেল, আজ সপ্তমী। এখানে সেকথা বোঝার কোনো উপায় নেই। ঢাকের বাজনা নেই, ভোর ভোর শিউলি ফুলের গন্ধে ঘুম ভাঙা নেই (আমার জানলার নীচে একটা শিউলিগাছ এই সেদিনও ছিল, প্রচুর ফুল ফোটাতো, এখন মরে গেছে)। মাইকের হট্টগোল নেই। রেডিওতে আসতে আসতে শুনছিলাম বিশেষ দুর্গাপূজা কথিকা- প্রতিবছরের মত এবারেও বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় তাঁদের শারদোৎসব দুর্গাপূজা মহা ধুমধামের সঙ্গে পালন করবেন। গোটা বাংলাদেশে এবার প্রায় আঠাশ হাজার দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামীকাল (অর্থাৎ আজ, সপ্তমী) ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রতিমাদর্শন করতে যাবেন।
  • I | 14.99.17.185 | ২০ অক্টোবর ২০১১ ০১:০৭494637
  • দশটা নাগাদ শেষমেষ বেরোনো হলো। আমরা চারজন, আমার মামী ( বরিশালের মানুষ, ঢাকা শহরে আগে এলেও কোনোদিন ঘুরে দেখেন নি) আর সুষেণ। সুষেণই আমাদের গাইড আজকে। আমরা চলেছি একটা মাইক্রোয় চড়ে। ড্রাইভার রফিক ভাই (নাম পরিবর্তিত)।
    এখানে , যাঁরা মাইক্রোবাস চেনেন না , (তেমন কেউ আছেন কী?) তাঁদের বলি এটি আসলে একটি বড় টেন সীটার SUV, প্রশস্ত; এবং ঢাকা শহরে প্রায় ব্যতিক্রমহীন ভাবে টয়োটা কোম্পানির তৈরী। অন্যান্য গাড়িও টয়োটারই , প্রায় ৯০ শতাংশ; কিছু নিসান দেখলাম, কিছু মিৎসুবিশি, মারুতি একটা-আধটা। বাসগুলো অবশ্য অনেক কটা টাটা-মাহিন্দ্রা'র ,অন্য কোম্পানিও আছে, সেগুলো অন্ত:শহর পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত, এবং ৯০ শতাংশই ( ৯০ আমার লাকি নাম্বার) লজঝড়ে, তারিখ-অতিক্রান্ত বাসভুত বলা যেতে পারে তাদের, যেরকম বাসে শিব্রাম সভগিনী আবাস পেতেছিলেন একবার। তবে কোরিয়ান বেশ কিছু নতুন তরতাজা কোচ চলছে দেখলাম(দূরপাল্লার বাস অবশ্য সবই ঝাঁ-চকচকে, অধিকাংশই শীততাপনিয়ন্ত্রিত)। রফিকভাই দেখলাম এই সব কোরিয়ান কোচের ওপরে বেশ খাপ্পা, ভারতীয় গাড়ি হলে তো কথাই নেই, বললেন-টয়োটা হল বাঘের বাচ্চা, এক-একটা গাড়ি বিশ-তিরিশ বছর সার্ভিস দেয়। আর এখনকার এই গাড়িগুলি দু-তিন বছর পরেই দেখবেন খনে কেমন দশা।
  • Manish | 59.90.135.107 | ২০ অক্টোবর ২০১১ ১২:০০494638
  • কাজের ফাঁকে ঝপ করে পড়ে ফেললাম।

    বেড়ে হচ্ছে।
  • I | 14.96.58.191 | ২০ অক্টোবর ২০১১ ২২:৪৩494639
  • সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঢাকা শহরের কেন্দ্র থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার দূরে। আমরা চলেছি ঢাকা-আরিচা হাইওয়ে দিয়ে, যে রাস্তার ওপরেই মানিকগঞ্জ থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মারা গেছিলেন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর।
    টাক ফাটানো রোদ উঠেছে। আবার একই সঙ্গে আকাশে মেঘের একটা পাতলা আস্তরণ। তাতে যদিও কোনো উপকার হচ্ছে না। বরং অপকারটা হচ্ছে এই যে, বিচ্ছিরি ম্যাড়মেড়ে একটা আলো, তাতে ছবি তোলার বারোটা। এমনিতেও সময় এখন বারোটার কাছাকাছি, সূর্য ঠিক মাথার ওপরে।
    স্মৃতিসৌধের বাইরে প্রচুর ফেরিওলা। ডাব বিক্রি হচ্ছে, বাচ্চাদের খেলনা (প্লাস্টিকের ও মাটির), ছোট ছোট বাঁশের -বেতের তৈরী মিনিয়েচার স্মৃতিসৌধ বিক্কিরি হচ্ছে, আমড়া ফালি ফালি করে ফুলের মত সুন্দর করে কেটে কাঠি ঢুকিয়ে ঝালনুন ছড়িয়ে বিক্কিরি হচ্ছে। প্রেমিক-প্রেমিকারা, কলেজের ছাত্রছাত্রীরা, ছুটকোছাটকা কয়েকটা পরিবার,- আমাদের মত- এদিক ওদিক ঘুরছে। ভিড় নেই। গেটের বাইরেই মনমোহন সিং ও শেখ হাসিনার একসঙ্গে হাঁটার বড় ছবি ঝুলছে, সদ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঘুরে গেলেন এদেশ; উনি এসেছিলেন জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের উদ্দেশ্যে মালা দিতে।
    স্মৃতিসৌধটি সবাই নিশ্চয়ই দেখেছেন, চাক্ষুস না হলেও ছবিতে অন্তত:। সাতটি পিরামিডাকৃতি স্ট্রাকচার গায়ে গা ঠেকিয়ে গড়ে তুলেছে এই স্থাপত্য, মাঝেরটি সবচেয়ে উঁচু,প্রায় দেড়শ ফুট। এই সাতটি ত্রিকোণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি পর্বকে সূচিত করে, মাঝেরটি ৭১-এর চরম বিজয়ের প্রতীক। ৮৪ একর জমির ওপরে ছড়িয়ে এই স্মৃতিসৌধ, এখানে রয়েছে নাম-না জানা অজস্র শহীদদের গণকবর (সর্বমোট দশটি), নানান ফলক, পরিধির দিকে হেলিপ্যাড, কাফেটেরিয়া, মসজিদ, বিদেশী অতিথিদের আপ্যায়ণ করবার ঘর। এর চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় পঁচিশ একর সবুজ ঘাস ও গাছপালায় ঢাকা জমি, তার মধ্যে একটি কৃত্রিম লিলিপুলও, সেখানে দেশের জাতীয় ফুল শাপলা ফুটে রয়েছে। আপাদমস্তক লাল ইঁটে তৈরী এই স্থাপত্য ( মূল সৌধটি বাদে, সেটি কী কংক্রীট?), যেখান থেকেই যান না কেন, মূল স্মৃতিসৌধে পৌঁছতে হলে আপনাকে পেরোতে হবে নানান ধাপে নানান উচ্চাবচতা, মায় একটি জলাশয়ও-- এ সবই প্রতীকী। আপনার হয়তো মনে পড়ে যাবে মুক্তি আন্দোলনের অজস্র আপস অ্যান্ড ডাউনস, পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থা।

    এই স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন বাহাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; আমার তখন এক বছর বয়সও পুরো হয় নি। দেশ জোড়া ডিজাইন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সৈয়ড মইনুল হোসেনের নকশাটি নির্বাচিত হয়েছিল। সৌধের সামনে একটি ফলকে লেখা :

    "উনিশশ একাত্তরের ছাব্বিশে মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। একই বছর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। ত্রিশ লক্ষ অকুতোভয় দেশপ্রেমিক বাঙালী স্বাধীনতার জন্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেন। এই স্মৃতিসৌধ আপামর জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জল নিদর্শন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত।.... সাতটি ত্রিভুজাকৃতি মিনারের শিখরদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের সাতটি পর্যায়ের প্রতিটি এক ভাবব্যঞ্জনাতে প্রবাহিত হচ্ছে। এই সাতটি পর্যায়ের প্রতিটি সূচিত হয় বায়ান্নর মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে চুয়ান্ন, আটান্ন, বাষট্টি , ছেষট্টি ও উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে একাত্তরের মহান মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় ...।'

    অন্য একটি ফলকে লেখা রয়েছে সেই প্রবাদ -হয়ে ওঠা গান :
    এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
    বাংলার স্বাধীনতা
    আনলে যাঁরা
    আমরা তোমাদের ভুলবো না।
  • I | 14.96.58.191 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ০০:৪০494640
  • একটু ইতিহাস ঘাঁটি। জানা কথা, তবুও। যেন ভুলে না যাই। বেদনা পাই, শয়নে-স্বপনে।

    ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ মাঝরাতের একটু আগে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী "অপারেশন সার্চলাইট' শুরু করে ঢাকা সহ বাংলাদেশের অন্যান্য বড় শহরগুলিতে। উদ্দেশ্য ছিল আচমকা হানা দিয়ে শেখ মুজিব সহ আওয়ামী লীগের প্রধান নেতৃবৃন্দ, স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যান্য নেতা ও অগণিত যোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষকে ব্যাপক ধরপাকড় ও নির্বিচার হত্যা করা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মোতায়েন বাংলাদেশী ট্রুপগুলোকে অপারেশন শুরু হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগেই পরিকল্পনামাফিক নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়। ইপিআর এবং সশস্ত্র/নিরস্ত্র বিপ্লবীরা সামান্যই লড়াই দিতে পেরেছিল। ঘন্টাকয়েকেই ঢাকা শহরের সব প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে যায় । জগন্নাথ হল সহ ঢাকা ইউনিভার্সিটির বেশ কিছু আবাসিক হলের ছাত্র এবং অধ্যাপকদের টেনে-হিঁচড়ে বের করে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়। শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হন, যদিও আওয়ামী লীগের অধিকাংশ বড় নেতাই খবর পেয়ে আগেভাগে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন, যেটি ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সামরিক জান্টার পক্ষে মর্মান্তিক ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে।
  • I | 14.96.58.191 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ০১:২৮494641
  • জাহানারা ইমামের "একাত্তরের দিনগুলি' বইতে জ্বলতে থাকা অবরুদ্ধ ঢাকার আঁখো দেখা হাল পাওয়া যাবে :

    ২৫শে মার্চ
    ------------

    "... হঠাৎ ভীষণ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। চমকে উঠে বসলাম। রুমী-জামি ছুটে এল এ ঘরে। কি ব্যাপার? দু'তিন রকমের শব্দ-ভারি বোমার বুমবুম আওয়াজ, মেশিনগানের ঠাঠাঠাঠা আওয়াজ, চিঁ-ই-ই-ই করে আরেকটা শব্দ। আকাশে কি যেন সব জ্বলে জ্বলে উঠছে, তার আলোয় ঘরের ভেতর পর্যন্ত আলোকিত হয়ে উঠছে। সবাই ছুটলাম ছাদে। আমাদের বাড়ির দক্ষিণ দিকে মাঠ পেরিয়ে ইকবাল হল, মোহসীন হল, আরো কয়েকটা হল, ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টার্সের আরো কয়েকটা বিল্ডিং।বেশির ভাগ আওয়াজ সেইদিক থেকেই আসছে, সেই সঙ্গে বহু কণ্ঠের আর্তনাদ, চিৎকার। বেশিক্ষণ ছাদে দাঁড়ানো গেল না। আগুনের ফুলকির মত কি যেন চিঁ-ই-ই-ই শব্দের সঙ্গে এদিক পানে উড়ে আসছে। রুমী হঠাৎ লাফ দিয়ে কালো আর স্বাধীন বাংলা পতাকা দুটো নামিয়ে ফেলল।
    ... বাকি রাত আর ঘুম এল না। আবার ছাদে গেলাম। দূরে দূরে আগুনের আভা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দিক থেকে গোলাগুলি , মেশিনগানের শব্দ আসছে, ট্রেসার হাউই আকাশে রংবাজি করে চলেছে-দূর থেকে চিৎকার ভেসে আসছে। উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে, পশ্চিমে সবদিকেই দূরে আগুনের স্তম্ভ ক্রমেই স্পষ্ট ও আকাশচুম্বী হয়ে উঠছে।...

    ২৬শে মার্চ
    ------------

    ... সাড়ে নটার সময় হঠাৎ যন্ত্রসঙ্গীত বন্ধ হল। শোনা গেল একটা রুক্ষ অবাঙালি কণ্ঠস্বর। প্রথমে উর্দু এবং পরে ইংরেজিতে বলল। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। কারফিউ ভঙ্গ করে কেউ বাইরে বেরোলে কি শাস্তি, তাও বলল। আর বলল, মার্শাল ল জারি করা হয়েছে।
    ... অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারফিউ। যা তাণ্ডব হচ্ছে চারদিকে, কারফিউ না দিলেও বাইরে বের হয় কার সাধ্যি ! গোলাগুলির শব্দ থামেই না। মাঝেমাঝে কমে শুধু। আগুনের স্তম্ভ দেখার জন্য এখন আর ছাদে উঠতে হয় না।
    .... মিকির কান্নায় অস্থির হয়ে উঠেছি সবাই।ওর অ্যালসেসিয়ান চরিত্রই বদলে গেছে যেন। অবিশ্রান্ত গোলাগুলির শব্দে এই জাতের সাহসী কুকুর যে এরকম কাহিল ও উদ্‌ভ্রান্ত হয়ে পড়বে , তা কে ভেবেছিল ?....

    .. টেলিফোন বিকল, রেডিও পঙ্গু, বাইরে কারফিউ-... আমাদের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্কুপ সংবাদদাতা কামাল আতাউর রহমান।....
    ..."কখন গোলাগুলির শব্দ শুনলে?'
    " ঐ বারোটার দিকেই। হয়তো দু-চারমিনিট পরে। আমার এক বন্ধু এসে বলল, "তুই এখনো হলে রয়েছিস? জানিস না শহরের অবস্থা ভয়ানক খারাপ? আর্মি আসছে ক্যাম্পাস অ্যাটাক করতে? আমি বাড়ি চললাম। তুইও বেরিয়ে যা।' কিন্তু আমরা কেউই আর বেরোবার চান্স পেলাম না ।...'
    ..." আর কোথায় কোথায় ওরা অ্যাটাক করেছে বলে মনে হয়?'
    "ঠিক বলতে পারবো না। মনে হয় এস. এম . হল, জগন্নাথ হল, শহীদ মিনার। ঐদিক থেকেই শব্দ বেশী পাওয়া গেছে।'

    ... কাঁহাতক ঘরে বসে থাকা যায়। এক সময় উঠে সদর দরজা খুলে গাড়ি-বারান্দায় গেলাম। আমাদের বাসার সামনের এই গলিটা কানা।.... এ রাস্তার বাড়িগুলোর বাসিন্দারা
    -আমরা অনেক সময় গলির ওপর দাঁড়িয়ে গল্প করি। গলিটা যেন আমাদের সকলের এজমালি উঠান। ১৯৫৯ সালে এখানে বাড়ি করে উঠে আসার পর থেকে এদেশে যতবার কারফিউ পড়েছে, আমরা বাড়ির সামনের এই গলিতে দাঁড়িয়ে বহুসময় গল্পগুজব করে কাটিয়েছি। আজ কিন্তু গাড়ি-বারান্দা পেরিয়ে গলিতে পা রাখতে সাহস হল না। গোলাগুলির শব্দে এখনো আকাশ ফাটছে। মাঝে-মাঝে কুকুরের চীৎকার কানে ভেসে আসছে। সেই সঙ্গে মনে হচ্ছে যেন মানুষেরও চীৎকার। খুব অস্পষ্ট। নাকি আমার ভুল? এত বিরামহীন গোলাগুলির পরও কোন মানুষ কি বেঁচে আছে চিৎকার দেওয়ার জন্য? আশ্চর্যের ব্যাপার, একটা কাক, চিল কি কোন পাখির ডাক নেই।

    ... ঘুরে ঢোকার মুখে গাড়ির দিকে নজর পড়তেই আঁতকে উঠলাম। কাচ জুড়ে জ্বলজ্বল করছে সেই স্টিকার।-"একেকটি বাংলা অক্ষর একেকটি বাঙালীর জীবন।'...

    ...সবাই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছি, হঠাৎ রুমী থমকে দাঁড়াল, "মিকির কোনো সাড়াশব্দ নেই যে? একেবারে নর্মাল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।'
    জামী বলল, " ওকে ভেতরে আনা হয় নি'।
    আবার আমরা সবাই নিচে নামলাম। দরজা খুলে উঠানে নেমে মিকির জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মোমবাতির কাঁপা কাঁপা আলোয় দেখলাম মিকি মরে পড়ে আছে।'
  • Tim | 198.82.27.124 | ২২ অক্টোবর ২০১১ ০০:৪৭494642
  • তুলে রাখলাম।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২২ অক্টোবর ২০১১ ০০:৫২494643
  • উ: মাগো!
  • I | 14.96.213.140 | ২২ অক্টোবর ২০১১ ০১:১০494644
  • ২৬শে মার্চ ভোরবেলা ঢাকা একটি বিদ্ধস্ত নগরী। পুড়ে গেছে ঢাকার সব বস্তি ও বাজার-রায়ের বাজার, ঠাটারী বাজার, নয়া বাজার, শাঁখারী পট্টি। পুড়ে গেছে "ইত্তেফাক' অফিস, "দ্য পিপল' অফিস। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রচণ্ড গুলি বিনিময়ের পর বাঙালী পুলিশরা অধিকাংশই মারা গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামজাদা মধুর ক্যান্টিন পুড়ে ছাই-মধুদা পাকিস্তানী সেনার গুলিতে মৃত। কেবল মাত্র জগন্নাথ হলেই মারা হয়েছে ৬০০-৭০০ আবাসিককে। অজস্র শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী-কবি-শিল্পী নিহত;খুব পরিকল্পিত ভাবে লিস্ট ধরে ধরে এঁদের খুন করেছে পাক সেনা ও তাদের কোলাবরেটর রাজাকার-আল বদর-আল শামস বাহিনী। সেই রাতে এবং পরবর্তী ন'মাসে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে খুন হবেন একটা গোটা প্রজন্মের শ্রেষ্ঠ মেধাজীবী মানুষেরা-৯৯১ জন শিক্ষক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪২ জন ব্যবহারজীবী, ১৬ জন লেখক, শিল্পী ও প্রযুক্তিবিদ। মারা যাবেন ড: মুনীর চৌধুরী, ড: জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, শহীদুল্লা কায়সার, ডা: মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, ড: গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ড: আনোয়ার পাশা। সবচেয়ে ঘৃণ্য আক্রমণ নেমে আসবে পাক সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের ঠিক কয়েক দিন আগে; পরাজয় নিশ্চিত জেনেও যখন তারা আরেকদফা ক্র্যাকডাউন চালিয়ে আরো কিছু কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক-অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করে চোখ বেঁধে ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে-মীরপুর , মহম্মদপুর, রাজারবাগের ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে অকথ্য অত্যাচার চালাবে ও অবশেষে বধ্যভূমিতে দাঁড় করিয়ে একসাথে গুলি করে মেরে ফেলবে। এহ বাহ্য ! দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক দিন পরেও ৩০ ডিসেম্বর চলচ্চিত্র- পরিচালক জহির রায়হান তাঁর নিখোঁজ দাদা সাহিত্যিক শহীদুল্লা কায়সারের তালাশে মীরপুর যাবেন এবং সেখানে আত্মগোপনকারী পাক সৈন্য ও বিহারী মুসলমানরা গুলি করে তাঁকে মেরে ফেলবে।

    টাইম পত্রিকা জনৈক উচ্চ-পদস্থ মার্কিন প্রশাসনিক অফিসারকে উদ্ধৃত করে জানাবে "It is the most incredible, calculated thing since the days of the Nazis in Poland." গিনেস বুক অফ রেকর্ডসের হিসেবে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম পাঁচটি জেনোসাইডের একটি। যদিও পাকিস্তানের সামরিক সরকার এবং তাদের অবৈধ পিতা রিচার্ড নিক্সন ও খুল্লতাত হেনরী কিসিঙ্গার একে জেনোসাইড বলতে অস্বীকার করবেন। তাঁরা এ বিষয়ে হিরণ্ময় নীরবতাই বরং প্রেফার করবেন।

    যেমন নীরবতা প্রেফার করবেন অজস্র ধর্ষিত ও অত্যাচারিত বাঙালী মহিলা। এঁদের কথা কখনো তেমন প্রকাশ্যে জেনে উঠবে না ছিন্ন-রক্তাক্ত বাংলা ও অবশিষ্ট বিশ্ব। ঢাকা পুনরুদ্ধার হলে পাকিস্তানী বাংকার থেকে বেরিয়ে আসবেন অজস্র বন্দী নারী-এঁদের অধিকাংশকেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে পাক আর্মি পিঠে রাইফেল ঠেকিয়ে তুলে আনে; অনেককে তুলে আনা হয় তাঁদের বাড়ি থেকে-বাবা-মা-ভাইয়ের চোখের সামনে, অথবা তাঁদের মৃতদেহ ডিঙিয়ে। জন্ম নেবে অজস্র ওয়ার বেবি। বাংলাদেশের সরকারী হিসাবে যৌন অত্যাচারিত নারীর সংখ্যা দু-লক্ষ। যদিও সাংবাদিক- সমাজ কর্মী সুজান ব্রাউনমিলারের মতে আসল সংখ্যাটা এর প্রায় দ্বিগুণ-চার লক্ষ !
  • Update | 128.231.22.133 | ২২ অক্টোবর ২০১১ ০৭:২৯494645
  • Name:IMail:Country:

    IPAddress:14.96.213.140Date:22Oct2011 -- 01:42AM

    কিসের যুক্তিতে এই নির্বিচার গণহত্যা, সমাজতত্ববিদ রুডল্ফ জোসেফ রামেল যাকে "ডেমোসাইড' ( সরকার কর্তৃক নিরীহ নাগরিকদের হত্যা ) নাম দিয়েছেন? ইয়াহিয়া খান কী প্রত্যাঘাতের বিন্দুমাত্র আশঙ্কাও করেন নি? নাকি ক্ষমতার দম্ভে এক ধরণের অন্ধতাই তাঁদের পেয়ে বসেছিল? আসলে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কোনকালেই বাঙালীদের যুদ্ধপটু ( মার্শাল রেস ) বলে মনে করতেন না। তাঁদের ছক ছিল এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ বিরোধীশূন্য- বুদ্ধিজীবী ও প্রতিবাদী ছাত্রশূন্য করে ফেলতে পারলেই ফুটন্ত বাঙালী জাতীয়তাবাদ চিরতরে না হলেও দূর ভবিষ্যতের জন্য ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।

    এশিয়া টাইমসের একটি উদ্ধৃতি এইরকম :

    "Atameetingofthemilitarytopbrass, YahyaKhandeclared: "Kill3millionofthemandtherestwilleatoutofourhands." Accordingly, onthenightof25March, thePakistaniArmylaunchedOperationSearchlightto "crush" BengaliresistanceinwhichBengalimembersofmilitaryservicesweredisarmedandkilled, studentsandtheintelligentsiasystematicallyliquidatedandable-bodiedBengalimalesjustpickedupandgunneddown.''

    রামেল বলেছেন :

    "InEastPakistan (nowBangladesh) [GeneralAghaMohammedYahyaKhanandhistopgenerals]alsoplannedtomurderitsBengaliintellectual, cultural, andpoliticalelite.TheyalsoplannedtoindiscriminatelymurderhundredsofthousandsofitsHindusanddrivetherestintoIndia.AndtheyplannedtodestroyitseconomicbasetoinsurethatitwouldbesubordinatetoWestPakistanforatleastagenerationtocome.Thisdespicableandcutthroatplanwasoutrightgenocide. ''

    আরো একটু শুনি রামেলের কথা ;

    " Thegenocideandgendercidalatrocitieswerealsoperpetratedbylower-rankingofficersandordinarysoldiers.These“willingexecutioners”werefueledbyanabidinganti-Bengaliracism, especiallyagainsttheHinduminority.“Bengaliswereoftencomparedwithmonkeysandchickens.SaidGeneralNiazi, ‘Itwasalowlyinglandoflowlyingpeople.’TheHindusamongtheBengaliswereasJewstotheNazis:scumandverminthat[should]bestbeexterminated.AstotheMoslemBengalis, theyweretoliveonlyonthesufferanceofthesoldiers:anyinfraction, anysuspicioncastonthem, anyneedforreprisal, couldmeantheirdeath.Andthesoldierswerefreetokillatwill.ThejournalistDanCogginquotedonePunjabicaptainastellinghim, "Wecankillanyoneforanything.Weareaccountabletonoone." ThisisthearroganceofPower.''
    ________________________________________
  • Update | 128.231.22.133 | ২২ অক্টোবর ২০১১ ০৭:৩০494647
  • Name:achintyarupMail:Country:

    IPAddress:59.160.219.101Date:22Oct2011 -- 01:44AM

    একটু ডিস্টার্ব করছি। অদ্ভুত একটা কথা মনে পড়ে গেল। কয়েক বছর আগে লণ্ডনে এক বক্তৃতাসভায় যেতে হয়েছিল। বক্তৃতা শুনতে। মুখ্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত নারীবাদী লেখিকা জার্মেইন গ্রীয়ার। বক্তৃতার শেষে সামান্য পান-ভোজনের ব্যবস্থা ছিল। আমি সেখানে এক কোণায় একা দাঁড়িয়ে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছি। আমার সেণ্টারের ডিরেক্টর আমাণ্ডা জার্মেইনকে আমার কাছে ডেকে নিয়ে এসে আলাপ করিয়ে দিলেন। আমি টাইমস অব ইণ্ডিয়ায় কাজ করি শুনে লেখিকা বললেন সে হাই টু খুশবন্ত! তারপর জানালেন শিগগিরই তাঁর উপমহাদেশে আসার ইচ্ছে। জিগ্যেস অরলেন, আচ্ছা, একাত্তরে নাকি বাংলাদেশে হাণ্ড্রেডস অব থাউজ্যাণ্ডস উইমেন্স হ্যাড বিন রেপড? তাদের মধ্যে বহু মহিলা নিশ্চয়ই কনসিভ করেছিল এবং অন্তত কয়েক হাজার সন্তান প্রসব করেছিল। সেই সব সন্তানদের কি হল কোনো ধারণা আছে? হতভম্ব আমি সবিনয়ে জানালাম আমার কোনো ধারণা নেই এ বিষয়ে
    ________________________________________

    Name:RimiMail:Country:

    IPAddress:174.252.163.152Date:22Oct2011 -- 03:01AM

    এটা কি সেনড করা যাবে
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন