এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মঠের দেশে, পরণকথার দেশে

    I
    অন্যান্য | ১৩ অক্টোবর ২০১১ | ৬৪২৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • i | 137.157.8.253 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ০৬:৫৯494503
  • লোকসমাগমে অনেক পেছনে দাঁড়িয়ে এই অভাজন। শান্তির জলের ছিটের স্পর্শ তবু এই তপ্ত কপালে, মাথায়।
    বড়াইকে গড় করি।
  • Sujata | 203.197.123.130 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ১০:৩৭494504
  • পড়ছি। খুব ভালো লাগছে। প্রথমে একবার পড়ি, তারপর চুপ করে বসে থাকি। আবার বেশ কিছুক্ষণ পরে এসে একটু একটু করে পড়ি। মনে পড়ে যায়, দিদুর কাছে, বাবার কাছে শোনা 'ভোলা'র কথা। আছেন কেউ 'ভোলা'র লোক ?
  • titir | 128.210.80.42 | ১০ নভেম্বর ২০১১ ২১:১২494505
  • ইন্দ্রণীল,
    বারবার পড়ছি। আশ মিটছে না। দেশ কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে চলে যাই এক অন্য দেশে। সে হয়তো আমার দেশ নয়। কিন্তু কি বা এসে গেল তাতে। পরিতৃপ্ত হয়ে যাই। অসাধারণ লিখনশৈলিতে ।
  • Nina | 12.149.39.84 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ০০:১৯494506
  • আলো ফুটে গেছে ডাগদার----বরিশাল ঘুরতে যাবোনা??
  • I | 14.99.35.112 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ০০:২৫494507
  • সদরঘাট থেকে আমাদের আগে বরিশালের আরো দুটো লঞ্চ ছেড়েছিল, সুরভী ৮ আর এম ভি সুন্দরবন; আগে মানে মিনিট দশ পনেরো আগে। তারা দেখি দিব্যি ভদ্দরলোকের মত ঠিক বরিশালের ঘাটে এসে আমাদের আগে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে বেশ ফুরফুরে বেরাদরি জাগল মনে, সেইসঙ্গে একটু অভিমানও - তোমাদের তো আর ডুবোচরে ঠেকতে হয় নি ভাইডি, তোমরা কি বুঝবে মানুষের ইতিহাসে সংগ্রামের মর্ম ! তবে সে লঞ্চ থেকেও লোকলস্কর নামা শুরু হয় নি; তবে আর লাভ কী হল, ফাস্ট হয়ে লাভ কী হল !

    আলো ক্রমেই আসিতেছে মত হলে আমি দারাপুত্রকলত্র ফেলে ক্যামেরা কাঁধে ডেকে দেছুট। শরৎকাল, তবু কেমন হালকা কুয়াশা মত জড়িয়ে আছে চারদিকে। নীলচে আভার ফেরিঘাট; ঘাটের সব আলো তখনো জ্বলজ্বল করছে, গোটাগোটা অক্ষরে লেখা -বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বরিশাল নদী বন্দর । বরিশাল শব্দটা এই প্রথম বুকের মধ্যে এসে লাগল, এবারের বেড়ানোতে। স্পষ্ট দেখতে পেলাম , মা এই ছবিটার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছে-বরিশাল ! আমার প্রেডিকশান এমনভাবে মিলতে আমি আগে আর কখনো দেখিনি।

    দূরে বরিশালের স্কাইলাইন নম্র, ঢাকার মত স্কাইস্ক্র্যাপারে ভর্তি নয়। জেটিতে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ জেগে বসে আছে; কেউ কেউ ঘুমোচ্ছে লোহার ওপরে কাপড় বিছিয়ে, মাথার ওপরে আস্তরণ আছে তাই বাঁচোয়া, নইলে তাদের আশপাশ হিমে ভেজা। কয়েকটা পিচ্চি লঞ্চ দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে সার দিয়ে, তাদের টিমটিমে আলো জলের মধ্যে পড়ে আলোয়-জলে-কুয়াশায়-আধডোবা চাঁদে মায়া তৈরী করছে। দু-তিনটে নৌকায় ব্যস্ততা অথবা তার অবসান, ইলিশ ধরে ফিরে এলো কী? কাল রাতের অন্ধকারে নদীর বুকে দূরে-কাছে এখানে-ওখানে দেখেছি ইলিশের নৌকা'র আলো জোনাকির মত মিটমিট করছে; কোথাও কোথাও নৌকো নয়,জালের প্রান্তে খুঁটিতে আলো বাঁধা; লঞ্চ সাবধানে জাল বাঁচিয়ে চলছে। আর তো ক'টা দিন, সামনের সপ্তাহ থেকে বেশ কিছুদিনের জন্য ইলিশ -ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে, ইলিশ এই সময় ডিম পাড়ে। নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে একটা পাখী ডানা ঝাপটে ভোরের প্রথম উড়াল দিল;সীগাল জাতীয় পাখি মনে হল। পাড়ের কাছে জল হাল্কা ছলাৎ ছলাৎ শব্দ করে ধাক্কা মারছে; ক'টা শালিখ এসে খুঁটে খুঁটে কী যেন খাচ্ছে, ছোট কাঁকড়াটাকড়া হবে। টুংকাই পাশে থাকলেই ভুল শুধরে দিয়ে বলত, উঁহু, ওগুলো শালিখ নয়, bank myna
  • I | 14.99.35.112 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ০১:০৪494508
  • বেরিয়ে এসেছি ফেরিঘাট থেকে। বাইরে বরিশালের সরু রাস্তা, হঠাৎ করে শহরের ঘুম ভেঙে গিয়ে সবাই যেন খুব ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে হু-হা দৌড় লাগিয়েছে--রিক্সায়-অটোয়-মোটরবাইকে-পথচারীতে ভরপুর জব্দ রাস্তা। চুলায় আগুন ধরেছে চায়ের দোকানের , হোটেলওয়ালা ডাকছেন- আসেন, আসেন, রিক্সাওয়ালা ডাকছেন-কই যাইবেন, সিনেমা হলের কড়া পোস্টার এসে চোখে ধাক্কা দিচ্ছে-আমি যেন কেমন ভ্যাবাচ্যাকামত খেয়ে গেলাম। আসলে রাতের ঘুম না হওয়ার ক্লান্তি, তার ওপরে বাক্স টানতে হচ্ছে, এবং আমার কেমন একটা ধারণা ছিল, বরিশাল শহরটা একটু ফাঁকা-ফাঁকা মত, চওড়া চওড়া রাস্তা, রাস্তার দুধারে রে¾ট্রী গাছ, লাল ইঁটের পুরনো ধাঁচের বাড়িঘরদোর -সেই মোলায়েম ধারণা না মেলার আশাভঙ্গ এই সবকিছু মিলিয়ে। কোত্থেকে যে এইসব ধারণারা পেয়ে বসে, একটা জায়গা দেখবার আগেই মনের মধ্যে তার একটা ছবি আঁকা হয়ে যায়, কে জানে ! বইয়ে পড়েছিলাম কী ? রে¾ট্রী গাছের উল্লেখ তো একাধিক জায়গাতে ছিলই। তারা কী সব মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল?

    এবার আমাদের তিন দলের পথ আলাদা হয়ে যাবে। আমাদের সঙ্গে বরিশালের ঘাটে এসে যোগ দিয়েছে তুলি'র দুই ভাই, এবং অসীম। এই অসীমের নানান কীর্তিকাহিনী আছে, সে সবে পরে ধীরেসুস্থে আসা যাবে, হয়তো সঙ্গীতা লিখবে সেসব কথা, সে অনেক আগে থেকে বলে রেখেছে -"আমি অসীমকে নিয়ে লিখবো'; জানিনা এখন আর ওর মুড হবে কিনা। আপাতত: জানিয়ে রাখা যাক, অসীম একটি ৮-৯ বছর বয়সী ছোট ছেলে, মামীর ভাষায়-"ঐ একখান পিচ্চি, অরে আমি পালছি;আমার বাসায় থাহে, আমার ইস্কুলে ল্যাহাপড়ি করে। পড়তে চায় না, জম্মের দুষ্ট'। সে দুষ্ট হোক আর যা হোক, অসীম একটি তুখোড় স্ট্রীটস্মার্ট ছেলে, চোখেমুখে কথা বলে, মামীকে পেয়ে সে যেন চাঁদ হাতে পেল, কত পরাণের কথা তার মামী'র সঙ্গে !

    ভেন্ন হবার আগে পার্টিং ব্রেকফাস্ট, মামা বলল-'নাস্তা খাইয়া লই, না? ত্যাল-ছাড়া পরোটা খামু অনে'-আর আমি- পরোটা? সকালবেলায়! ইকি অসৈরণ ! বলতে না বলতে দেখি হোটেলে ঢুকে পড়েছি। বেশী নকড়ছকড়-নছল্লা করার সময়ও নেই, খেয়েদেয়ে আমাদের আবার লঞ্চ ধরতে হবে আরেক ফেরিঘাট থেকে, এবার যাত্রা বরিশাল শহর থেকে মেহেন্দীগঞ্জ-পাতারহাট, কীর্তনখোলা নদীর ওপর দিয়ে। সাড়ে সাতটায় লঞ্চ , এদিকে পরোটা আর আসে না; অনেক ধমকচমকের পর শেষে বয়ের দয়া হল। আমরা খেয়ে উঠতে না উঠতেই দেখি অসীম হাওয়া, নাকি লঞ্চে উঠে জায়গা রাখতে গেছে। বিদায় বিদায় শোক অশ্রুজল বলে আমরা তিন পাট্টি যে যার পথ ধরলাম-মা ও সুষেণ বাসে দু-ঘন্টায় স্বরূপকাঠি, অরুণমামারা রিক্সায় কয়েক মিনিটে ঝাউতলা, আমাদের তো জলপথ; ঐ ঘন্টা দুয়েকমতই লাগবে।
  • pi | 128.231.22.133 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ০৬:১১494509
  • 09 Nov 2011 -- 01:34 AM এর শেষ দুই প্যারা বারবারে পড়তে সাধ যায়।
    পরণকথায় আরো নানা রঙের কাঁথাকানি-তাপ্পি-ঝুলপি-ঝালপি জুড়ুক।
  • Nina | 69.141.168.183 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ০৬:৫৬494510
  • এই লেখাটির এক জব্বর নেশা হয়েছে ----ঘুরে ফিরে পড়তে প্রাণ চায়--এমন মানস ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয় নি---সেই ছোট্টবেলা থেকে শোনা সব গল্পের জায়গারা সত্যি হয়ে ধরা দিচ্ছে----কি ভাল লাগছে!
  • Rimi | 66.184.222.91 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ০৯:২৬494511
  • পাইকে ক। ৯ নভেমবর ১।৩৪ পোস্টের ব্যপারে।
  • siki | 123.242.248.130 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ০৯:৫৮494513
  • পাই না আই?
  • Du | 117.194.193.85 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ১০:১৫494514
  • পড়েছিই তো, আবারও যে পড়বো না এমন বলতে পারি না।
  • sumeru | 117.194.97.101 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ১১:৫১494515
  • লেখাটা এবার দাঁড়িয়ে যাবার কথা। ডাগতারের কিস্যু করার নেই।
  • I | 14.99.27.132 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ১৩:৩০494516
  • কিন্তু আপনেরা কেউ কচু দেওয়া মাংস খেয়েছেন?
  • dd | 124.247.203.12 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ১৩:৫৩494517
  • কচু দিয়ে পাঁটা আমি প্র্যাক্টিক্যালি খেয়েছি, মানে বোধয় খেয়েছি।

    লুরুতে প্রথম বাড়ীর প্রতিবেশী ছিলেন দক্ষিনী মোছোলমান। তার বাড়ীতে নিত্তি মাংস হোতো। দু বেলা। ওনারা তরকারী যা খেতেন তাঐ মাংস দিয়েই, মুলো,গাজর,কফি,কুমড়ো এইসব মনে পরছে। কচু ইজ ভেরী কমন হিয়ার। সেটাও নিশ্চয়ই পাকে চক্রে খেতে হয়েছে। অনেক অনেক বার ওদের বাড়ীর মাংস খেয়েছি কিন্তু পাঁটার পাশে আলু ছাড়া আর কাউকেই আমি সহ্য করতে পারি না।

    আর ঐ ন্যাকা সেজে মাংস'র সাথে খামোখা ভেজিটেবেল খাইয়ে দেওয়াকে আমি দ্বিচারিতাই মনে করি।

    আরে, খামোখা বাজে না বকে ল্যাখো তো।
  • kallol | 119.226.79.139 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ১৫:১৫494518
  • অ ডিডি সেই বালক বয়সে পাপ করে ফেলেচো। তা অত কি মনে রাকতে আচে? তাপ্পর থেকে তো প্রাচিত্তির করেই চলেচো। ছ্যালেটা এক্কেবারে নিরামিষের ছোঁয়া খায় না গো। আমি স্বচোক্ষে দেকেছি। প্পন, ন্যাড়া, পারমিতা মায় মামু পজ্জন্ত সাক্ষী আচে।
  • siki | 123.242.248.130 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ১৫:২০494519
  • ডিডিদা পুউরো আমার মতম।
  • Nina | 12.149.39.84 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ২২:৩৪494520
  • কিন্তু মদন মোহনের একটা সিডিতে মানা দে বলেছেন
    মদন জি বোলে মান্না তু আজা --ভিন্ডি মটন খিলাউঙ্গা
    ম্যায় বোলা--ভই য়ে ভিন্ডি আউর মতন একসাথ কিউ --য় এক্যয়্‌সা কম্বিনেশন হুয়া

    মদল বোলে তু আ তো সহি--খা কে তো দেখ

    মানা পরে বলেছেন
    ও ভিন্ডি মটন বাকই বহুত হি বঢ়িয়া বনা থা!!

    তো ডাগদর আমি ভাবছি ট্রাই করব এই মাংস-কচু---রেসিপিটা, ডাগদার??!!

    আরে ডিডি আফনে নাহয় তাতে বেশ করে গোলমরিচ দিয়ে দেবেনখন---খেয়েই দেখেন্না মহায়!
  • I | 14.96.37.54 | ১৩ নভেম্বর ২০১১ ০০:২৩494521
  • এবার চলেছি কীর্তনখোলা নদীর ওপর দিয়ে, দুপাশে বরিশালের অগাধ বিস্তার। পাড়-টাড় অবশ্য তেমন ঠাহর হয় না, এ নদীও কিছু কম যায় না পদ্মা-মেঘনার কাছে। আমরা ঠিক মাঝনদী বরাবর নেই, কোণাকুণি হয়ে চলেছি নদীর বুকে। ফলে প্রথমে বাঁদিক ঘেঁষে চললেও কিছুক্ষণ পরে সরে এসেছি ডানদিকে। এই লঞ্চটি ছোট, দোতলা, ঢাকা-বরিশাল লঞ্চের মত অত পেল্লাই নয় সাইজে। নীচের খোলামেলা ডেকে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে-বসে-গড়িয়ে গাদাগাদি করে চলেছেন; দোতলায় সারি সারি চেয়ার পাতা, সেখানে আমাদের মত বাবুমানুষদের বন্দোবস্ত।

    আমরা এসে ওঠার আগেই অসীম আমাদের জন্য সীট দখল করে রেখেছিল, সে তো আগেই বললাম; আমাদের বসিয়ে এবার সে চলল সামনের খোলা জায়গায়, রেলিংয়ের পাশে মহাসুখে সে এবার একটি সদ্য-দখল করা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে ঠ্যাংয়ের ওপর ঠ্যাং তুলে দিয়েছে, নদীর ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে সে চলেছে জলযাত্রায়। আমাদের বসার জায়গা হয়েছে একেবারে ফ্রন্ট রোয়ে। গদিটি দেয়ালের সঙ্গে লাগানো,ফলে আমরা লঞ্চের সামনে বসলেও উল্টোমুখ করে বসেছি অন্য যাত্রীদের মুখোমুখি, আমাদের পিঠ ফেরানো নদীর দিকে। লঞ্চ ছাড়তে না ছাড়তেই নদীর হাওয়ায় টুংকাইর চোখ জড়িয়ে এল, কাল সারারাত ওরা ওভারটাইম খেটেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই শুরু আরেক বিপত্তি। বিনোদন-অভিলাষী কোনো এক যাত্রী ( না কি লঞ্চেরই কর্মচারী) গিয়ে ফটাস করে টিভিটি চালিয়ে দিলেন, আর তাতে দুমদাড়াক্কা শুরু হয়ে গেল মারকাটারি মেনস্ট্রীম বাংলা সিনেমা বাংলাদেশের, স্বপন সাহাকেও হার মানায়। টুংকাই রেগে কাঁই, তড়াক করে সে লাফ দিয়ে উঠে বসেছে, কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে তুমুল ক্ষিপ্ত। আর কোনোদিন আসবো না এই জায়গায়, এটা বিশ্রী জায়গা, এখুনি চলে যাবো, ঐ লোকটার সঙ্গে ( যে কিনা টিভি চালিয়েছে) কোনোদিন কথা বলবো না। আমরা তাকে বাবাবাছা বলে শান্ত করি, মানে চেষ্টা করি আর কী। আমি বললাম- এখন বলছিস আসবি না, তারপর যখন বড় হবি, অফিস থেকে পাঠাবে, তখন কী আর না এসে পারবি ! টুংকাইর মা বলল-তখন তো প্লেন থেকে গটমট করে নামবি,গুলশন-বনানী'র ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠবি, না বলবি কি রে ! টুংকাই খানিক ভাবল, ভবিষ্যত-অফিসের ভাবী বাংলাদেশ-অ্যাসাইনমেন্টের প্রস্তাবে হবু -বড়কর্তার মুখের ওপরে না-বলাটা কতদূর সমীচীন, তাই নিয়ে কিছু মানসাংক,(তাই বলে বেশী সময় যে নিল, তা নয়) তারপর ভাত ফুটে ওঠার মত উদ্বেগে বলে ফেলল-"কিন্তু তখনো ঐ লোকটার সঙ্গে কথা বলবো না !' গলায় তার রাগ গনগন করছে।
  • I | 14.96.37.54 | ১৩ নভেম্বর ২০১১ ০১:৩৪494522
  • সত্যি বলতে কী, আমার ভোটও টুংকাইয়ের দিকে, সকাল বেলায় রগরগে জিনিষ, যথা পরোটা (ত্যাল ছাড়া অথবা ত্যাল-মাখান্‌ইয়া ), বাংলা সিনেমা, আপিস-কাছারি ইত্যাদি পারতপক্ষে সহ্য হয় না। কিন্তু জীবনবাবু অত্যন্ত নাছোড়বান্দা মাহাজন, তিনি এক সুতো গোটান তো অন্যটা ছাড়েন,আপিসের অভাব পরোটা ও সিনেমা দিয়ে পূরণ করেন। "কাঁহাতক এসব সহ্য হয়' বলে এবং "আর আসবো না বলে' টুংকাইয়ের মত রাগও করতে পারিনা ছাই; উপস্থিত, জীবনের এইসব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আল্লাতালার কাছে নালিশ ঠুকলে কেমন হয় ভেবে আমি মামার পিছুপিছু লঞ্চের সংকীর্ণ - শ্যাওলাগ্রস্ত সিঁড়ি দিয়ে ছাদের ওপর উঠি। নরানাং মাতুলক্রম, আমি মামাকে কায়মনোবাক্যে অনুসরণ করবো বলে ঠিক করেছি, মামাকে আমার সেইদিনই চরম ভালো লেগে গেছে, যেদিন আমাদের সোদপুরের বাড়িতে মামা আমার গৃহশান্তির অমূল্য টিপস্‌ দিয়ে গেছেন, তখনো যদিও আমার বিয়ে হয় নি এবং মামা'র কথা হচ্ছিল বাবা'র সঙ্গে-"হে যত চিল্লাইবে, চুপ কর্‌ইয়া, য্যান শোনতে পান নাই ভাব কর্‌ইয়া টিভি দ্যাখতে থাকপেন। হে আইয়া ফাল পারলে কইবেন-বুড়া হইসি তো, কানে শোনতে পাই না।' বাবা তো মুগ্‌ধ !

    আকাশ মেঘে খানিক খানিক ঢাকা, কবি যাকে বলেছেন "কিছু ক্লাউডি কিছু সানি'। তবে লালচে রোদ্দুর ক্রমেই ফুটে বেরিয়ে আসছে। দূরে-কাছে রঙীন পাল-ওয়ালা কিছু নৌকো দেখা যাচ্ছে, স্পষ্টত:ই তারা যাত্রী-পরিবহন করবার নৌকো নয়; হয়তো মাছ ধরতে বেরিয়েছে। লঞ্চের নিচের তেকোনা অংশটিতে কিছু লটবহর চলেছে , সেইসঙ্গে ক'টি হিরো হন্ডা মোটরবাইক। এরা থাকার বাড়তি সুবিধা এই যে জার্নির সময় জুড়ে ফ্রিতে কিছু আয়না'র সংস্থান হয়, তার ফলে লঞ্চের কিশোর কর্মীর চুলের টেরিটি কীর্তনখোলার হারামজাদা হাওয়াতেও তেমন উদ্‌ব্যস্ত হয় না, কেননা প্রতি দশ-পনেরো মিনিট অন্তর টেরি'র মালিক আলো চকচকে আয়নাসমূহে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এদিক -ওদিক পোজ মেরে টেরির যত্ন নিতে পারে এবং লঞ্চের কাজও তাতে থেমে থাকে না। কিশোর হিরো'র গায়ে ফুল ফুল ছাপওলা জামা, হাতে রিস্টব্যান্ড ও চোখে সানগ্লাস; পকেট থেকে উঁকি মারছে "শারদীয়া'র শুভেচ্ছা' -লেখা একখানি রঙীন প্যামফ্লেট। অনুমান করি, এত আয়না দিয়ে তার সারা জীবন সুখে-শান্তিতে কেটে যাবে।

    ডানপাড় ক্রমেই কাছে চলে আসে, অদূরে দেখা যায় ইঁট ভাঁটি, টিনের চাল-ওলা ঘর, লাউ-মাচা,শশা-র মাচা, কলাবন, কোথাও ধানের ক্ষেত, প্রায়শই ধইঞ্চা ক্ষেত; কোথাও কোথাও নগ্ন নির্জন কালো পাড়, ঢেউয়ে ঢেউয়ে ধসে পড়ছে, কান পেতে রইলে পাড় ভাঙ্গার শব্দও শোনা যাবে এমন জীবন্ত। কালো মাটি যেখানে ধসে পড়ছে, তার ঠিক ওপর দিয়েই উঠে গেছে সবুজ ধানের গুচ্ছ, আর একটা ঢেউ এলে এই ধানের শিশুদের বাঁচাবে কে , এ কেমন অসম লড়াই জীবন ও মৃত্যু'র সঙ্গে মানুষের ! এইখানে বাংলাদেশ, এইখানে সে তার ডাগর চোখ মেলে চেয়ে আছে অজস্র মৃত্যু'র ওপর দিয়ে। ঝড়ে-ভাঙা ঘর কত বলিষ্ঠ বাহু ওঠাবে !

    আর তারপরেই শুরু হয় বারণহীন অবিরল সেই সুপুরি-বনের সারি, যাকে দেখতে পেলে বুকের মধ্যে বাড়ির তাজা জোলো শাপলাশালুক চেনা গন্ধ টের পেত নীলু। সে তো এক পূজার সময়েই, আর এও তো পূজার দিন, শঙ্খবাবু, এই বেশ আপনার কাছাকাছি আসা হল। সুপুরিবনের ছায়ায় ঘেরা নদীপাড়ের গ্রামগুলিতে উঁচু উঁচু একাচোরা সব রাস্তা চলে গেছে মুদিদোকান-নারী ও শিশুশিক্ষাপ্রকল্পের টিনের বাড়ি-ল্যাজ দিয়ে মশা তাড়ানো পটলী গাইয়ের মাঝখান দিয়ে, উদোম গা অবাক ছেলেমেয়েদের পাশ দিয়ে। পাড়ে ভেড়ানো সব্জির নৌকো, মাছের নৌকোকে ঘিরে জমে উঠছে গ্রামের বাজার; জমিয়ে দর কষাকষি চলছে, শুনতে না পেলেও মাঝি কাম ব্যাপারী'র সঙ্গে কিস্তি-টুপি খরিদ্দারের ঘন ঘন মাথা নাড়া দেখে আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে তা; মাছের হাঁড়ি হাতে একটি শিশু দৌড় দিল বাড়ির দিকে, ঐ হাঁড়িতে কী মাছ আছে কে জানে !
    লঞ্চ আবার বাঁক নিল বাঁয়ের দিকে; আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা এসে পৌঁছবো মেহেন্দীগঞ্জ।
  • Nina | 69.141.168.183 | ১৩ নভেম্বর ২০১১ ০২:০৪494524
  • অসাধারন!
  • rimi | 168.26.205.19 | ১৫ নভেম্বর ২০১১ ০০:৪২494525
  • তুলে দিলাম।
  • I | 14.96.176.14 | ১৫ নভেম্বর ২০১১ ২২:৫১494526
  • মেহেন্দীগঞ্জ একটি নিমছোট গঞ্জগ্রাম; মামা'র বাড়ি ফেরিঘাট থেকে কাছেই, আমরা ফেরিঘাটে নেমে রিক্সা করে নিলাম। হেঁটেও যাওয়া যায়, তবে সঙ্গে মালপত্র রয়েছে, ক্লান্তও সবাই।
    এলাকাটি কীর্তনখোলা নদীর একটি শাখানদীর পাড়ে অবস্থিত। এই শাখানদীটি থেকে একখানা বিস্তৃত খাল চলে গেছে মেহেন্দীগঞ্জের বুক চিরে, খালটি এই এলাকার প্রাণধমনী, মূল পণ্যপরিবহন ও যাত্রীপরিবহন এই খালের মাধ্যমেই হয়। তবে রাস্তাও রয়েছে, কিন্তু সেই রাস্তা মেহেন্দীগঞ্জের ভেতরকার জায়গাতালুকে যাতায়তের জন্য। এই স্থানটি জল দিয়ে ঘেরা (সমস্ত বরিশালই তাই), বাইরের সঙ্গে এর সংযোগের উপায় এই খাল, খাল হয়ে কীর্তনখোলা'র শাখানদী। বিকেল ৫টায় বরিশালগামী শেষ লঞ্চটি ছেড়ে চলে যায়, তারপর হাজার দরকার থাকলেও আর শহর বরিশাল পৌঁছতে পারবেন না আপনি। অবশ্য স্থানীয় হাসপাতাল রয়েছে, কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের একটি প্রান্তিক জনপদে যেরকম ব্যবস্থা থেকে থাকে, তার থেকে বেশী ভালো কিছু সেখানে পাওয়া যায় বলে শুনলাম না।

    মাঝখানে খাল, খালের ডানদিকে পাকা রাস্তা। রাস্তার ডানদিকে কিছুদূর এগোলে পরে মামা'র কলেজ-পাতারহাট আর সি কলেজ। আর রাস্তার বাঁদিকে কলেজের ঠিক উল্টোদিকে একটি কংক্রীটের সাঁকো সংযুক্ত করেছে খালের দুই পাড়। মামা'র বাড়ি খালের ওপাড়ে, সাঁকোটি যেখানে শেষ হয়েছে ঠিক সেখানেই। ঘোরানো উল্টোমুখ "C' আকৃতির প্রতিবেশী বাড়িদের সারি, মাঝখানে খোলা উঠোন, আর বাড়িগুলির পেছন থেকে , এধার-ওধার থেকে গজিয়ে উঠেছে অজস্র গাছ ও ফুলবতী সুদর্শিনী লতারা। পেয়ারা গাছ, কুল গাছ, পেঁপে গাছ, নারকেল ও সুপুরি গাছ, কাঁঠাল গাছ চিনলাম, আরো সব অচেনা গাছের অন্যরকম সবুজ ( কালচে, জলে ধোয়া, কচি কলাপাতা , জারুলসবুজ ইত্যাদি) রয়েছে দেখলাম। আশ্চর্য,কোনো আমগাছ নেই। একটি বাড়ির সামনে রাশি রাশি গোলাপী ও সাদা ফুলে ভরা কাগজফুলের লতানে ঝাড় । কোথাও কী লেবুফুল ফুটেছে, তার স্নিগ্‌ধ বনগন্ধ আসছে দূর থেকে? মামা আমাকে একটি হালকা হলদে-সবুজ ফল-ওলা লতা দেখালো। অনেক উঁচুতে ঝুলে রয়েছে লতা, তার তিন ফালি পাতা, দুটি মাত্র ফল ঝুলছে শক্ত বোঁটায়। দেখতে অনেকটা পেয়ারার মত, তবে সাইজে ছোট। নাকি পাকলে পরে এই ফলের খোসা ফেলে ভেতরটা চটকে তা দিয়ে দারুন সুগন্ধী শরবত হয়। Tang নামক ফ্রুট ড্রিংকের নামে এই ফলের নাম রাখা হয়েছে ট্যাং। সবাই বলে ট্যাং ফল।
    ছবি তোলার মুখে কালি দিয়েছে এধার-ওধার থেকে বেখাপ্পা সব ইলেকট্রিকের তার। সব বাড়ির ছাদেই সোলার প্যানেল লাগানো, সোলার এখানকার বিকল্প বিদ্যুত। কনভেনশনাল বিদ্যুতের অবস্থা খুব খারাপ, চাহিদার তুলনায় যোগান অত্যন্ত সীমিত, খুব ঘনঘন লোডশেডিং হয়; সোলার তারই মধ্যে মুখ রাখার একধরণের ব্যবস্থা, কিঞ্চিৎ স্নিগ্‌ধতা। তবে তেমন গরম লাগছে না কারেন্ট চলে গেলেও, নদীপাড়ের তাজা হাওয়া আর এত গাছপালাই এর কারণ। ঢাকায় থাকলে এতক্ষণে দম বন্ধ হয়ে আসত, ঢাকাতেও দেখলাম জায়গাবিশেষে বেশ ভালো লোডশেডিং হয়।

    ঢাকা নয়, ঢাকাকে পেছনে ফেলে এসেছি, ঢাকার ভীড়-জ্যাম-লোডশেডিং-লিস্টে টিক দেওয়া হেকটিক ট্যুর শিডিউল আর নয়। এখানে, এই পাতারহাট-মেহেন্দীগঞ্জে কিচ্ছু দেখতে নয়, শুনতে নয়, শুধু প্রাণ জুড়োতে এসেছি। দুটো দিন গা এলিয়ে আরাম করবো বলে, ইচ্ছে মত ঘুমোবো বলে; কেননা আর কিচ্ছু করবার নেই এখানে, রাত আটটা বাজলে মনে হয় গভীর রাত, কোনো কাজ নেই, নিছক ঘুমোনো ছাড়া। মামার দোতলা'র ঘরের বাইরে ছোট খোলা বারান্দার এক কোণে টবে তুলসী গাছ, অন্যদিকে টবের মরিচ গাছ, পেকে লাল টুসটুসে হয়ে রয়েছে। জানলা খুলে দিয়ে দেখি ঠিক নীচ দিয়েই রাস্তা চলে গেছে, খালের পাশের রাস্তা, তাই দিয়ে লোকজন যাতায়ত করছেন। পাঞ্জাবী-লুঙ্গি পরা বৃদ্ধ, আপাদমস্তক হিজাবে -ঢাকা মহিলা, টি-শার্ট পরা চ্যাংড়া ছোঁড়া; ফেরিওলা-সবজী নিয়ে, মাছ নিয়ে, মইষা দৈ নিয়ে। একজন গেলেন, তাঁর মাথার ঝাঁকায় দুটি কোঁকড়- কো মুরগী, একটি বড় লাউ, একখানা নারকেল। সদ্য বাজার থেকে কিনে ফিরছেন নিশ্চয়ই, আজ বাড়িতে মহাভোজ। খাল দিয়ে সারাক্ষণ ইঞ্জিন -লাগানো স্টীমার , নৌকো যাচ্ছে, তার আওয়াজে মাঝে মধ্যে মনে হয় হেলিকপ্টার নামছে।

    বাড়িটাতে কেমন একটা বিষাদের ছায়া পড়েছে। গোটা এলাকাতেই। যেন জীবনানন্দের গল্পে-গল্পে উপন্যাসে-উপন্যাসে যে সব পুরুষ ও মেয়েরা থাকে, তাদেরই পোশাক পরে নিয়েছি আমরা। খালের ধার ঘেঁষে কলাবন, বাঁশ ঝাঁড় এবং অজস্র রে¾ট্রী গাছ। রে¾ট্রী, অবশেষে ! খালের ও প্রান্তে বাঁশঝাড়ের ওপারেই কালচে-সবুজ পাতাওলা একটি ঝাঁপালো গাছ, তাতে সবেদার মত খয়েরী-বাদামী ফল ফলে রয়েছে অজস্র। অসীম জানালো , ওটা গাব গাছ, দেশী গাব; ওর ফলের আঠা জালে লাগানো হয়, পাকলে পরে খেতেও বেশ লাগে। আরেকরকম হল বিলিতি গাব, সেগুলি খেতে বেশী ভালো। খালপাড়ে রে¾ট্রী গাছের গহন ছায়ার নীচে বসে দুপুর বেলায় ইঁট ভাঙ্গছেন এক প্রৌঢ়, দুনিয়ায় আর কেউ কোত্থাও নেই। এক ধরনের শ্লথ অবসাদ এসে তার আঠালো জিভের লালা মাখিয়ে দেয় মানুষের গায়ে, মানুষের স্বপ্ন-সাধ-কামনা মরে যায়, সে এখানেই বসে থাকে, এই রে¾ট্রী গাছের নীচে, হিজলের ছায়ায়, বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ে। আর কোত্থাও যায় না, কিচ্ছু করে না। বইয়ের তাকে বহুকাল আগেকার শহর থেকে কেনা বইগুলি, তপ্ত ইংরেজী উপন্যাসগুলি, ঢেউ জাগানো উপন্যাসগুলি শুয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখ বোজে, উই আর অবসাদ তাদের কুরে খায়; শহর মরে যায়, তাদের বুকের শহর। শহর জেগে থাকে বহুদূর শহরের ওপারে , লণ্ডন ব্রীজের ওপরে, ঝাপসা ফ্যাকাসে আলোর মধ্যে ময়দা-পাকানো ব্যবসা-মানুষ, শেয়ার ও সার্থকতা, জয় ও নারীকে ছোঁয়া মানুষের মধ্যে। সেখানে সম্রাট ও শনি, শেয়াল ও ভাঁড় কোনো এক নারীর রাং দেখে হো হো করে হাসে।
  • rimi | 168.26.205.19 | ১৫ নভেম্বর ২০১১ ২৩:৪৬494527
  • মনে হচ্ছে যেন আমাদের পাড়াটার কথাই লিখেছ। খালপাড়ের সেই শান্ত পুরোনো পাড়ায় একইরকম বিষাদের ছায়া, আমার পুরোনো বাড়িটিতেও।
  • Nina | 12.149.39.84 | ১৬ নভেম্বর ২০১১ ০০:০৭494528
  • বিষাদ-মধুর!
  • I | 14.96.176.14 | ১৬ নভেম্বর ২০১১ ০১:৫২494529
  • ঘরে ঢুকে হা-ক্লান্ত হাতমুখ ধুয়ে বিছানা খুঁজছি, কিন্তু মামার বাড়ির ভারি মজা , সে কী শুধু কথার কথা ? ত্যাল-ছাড়া পরোটা তো কখন হজম হয়ে গেছে, কীর্তনখোলা'র বাতাস কি সোজা কথা, তাছাড়া নাস্তা'র কালে নাস্তা না করলে কাম চলে কেমতে, মাইনষে কইবেই ডা কি, এইসব বিবেচনা তো আছে, নাকি? কিন্তু নাস্তাটা বানাবে কেডা? মামী তো আমাদেরই সঙ্গে এলেন, এই তো তালা খুলে ঘরে ঢুকলাম আমরা সবাই, ঘরে তো অন্য জনপ্রাণীটি নেই ; তবে?

    কেন? আমাদের ভাবী আছেন না ? ভাবী সেই সাতসকালে উঠে আমাদের জন্য চাউমিন, সেমাইয়ের পায়েস আর পুডিং বানিয়ে রেখেছেন , সে কি এমনি এমনি ?
    আস্তে আস্তে ধোঁয়াশা কাটছে। মামী ঐ যে ঘরে ঢোকার মুখে পাশের দরজায় টোকা মেরে বললেন-"সাথী, অ সাথী, ভাবীরে কও, আইয়া পড়ছি', তারই মধ্যে নিহিত আছে আমরা ঘরে ঢোকার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ফুসমন্তরে (যেন গুপি-বাঘার ভুতের রাজার বর) ডাইনিং টেবিলটি খাদ্যসামগ্রীতে ভরে যাওয়া'র রহস্য। হাত মুখ ধুতে বাথরুমে গেছি, তখনো দেখে গেছি টেবিল ফাঁকা, ফিরে এসে দেখি নানান আকার-আকৃতির বাটিতে সে ভরপুর। এ সবই ভাবীর কীর্তি; ভাবী মামাদের গায়ে গা লাগানো পড়শী, ভাবীর উনি এবং মামা-দুজনে একই কলেজে পড়ান। সাথী ভাবীর একমাত্র কন্যা। বললে তো বিশ্বাস করবেন না, ভাববেন মেটাফরের তাগিদে বানিয়ে বলছি, মামাদের ও ভাবীদের কমন দেওয়ালের মধ্যে একখানি বড় জানলা, গরাদহীন, সেই জানলা দিয়ে যখনতখন পরাণের কথাটা-পানটা আশটা-পুডিংচাউমিনপায়েসটা চালাচালি হয়। এবং প্রয়োজনে মানুষও। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন, বাইরে গেলে মামারা ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে এই জানলাপথে সাথীদের ঘরের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে যান, তাতে বাইরে তালা ঝোলাতে হয় না। সাথীরাও তাই করে। সিকিওরিটির তাগিদ। যা:, গুপ্তকথাটা ফাঁস করে দিলাম, আশা করি মেহেন্দিগঞ্জের চোরেরা কেউ গুরুচণ্ডালী পড়েন না !

    অজিত পাণ্ডের গানে শুনেছিলাম,পারাপারের নাও তো নাই, একখান সেতু বানান চাই; সেতু বিনা তোমার ঘরে ক্যামনে তামাক খাই। আর এখানে তো আস্ত একটা জানলা দেয়ালের মধ্যে তৈরী হয়ে উঠল দেখ কী না দেখ। একটা দেয়াল মাঝখানে, দেয়াল থাকে দেয়ালের নিজের নিয়মে; একটা জানলা , কমন জানালা তার উত্তর। আমাদের প্রাণ-গান-ইলশ্যা মাছের বিরিয়ানি তা নাহলে চালাচালি হবে কোন পথ দিয়ে, শুনি ? ভাবী, আপনার জবাব নেই, এই লেখার মধ্য দিয়ে আপনার পায়ে একটি প্রণাম রাখলাম, আপনি আমার বাংলাদেশের নদীর ধারা; আমরা এত শুকিয়ে গেছি, শহরের হাওয়ায় বড় বালি, আবেগের কথা লিখতে পর্যন্ত ভয় পাই, এত ভালোবাসা কোথায় রাখবো, কী করে ফেরত দেবো; ভাবী, ভালো থাকবেন !

    খেয়েদেয়ে একটি জম্পেশ ঘুম এবং ঘুম ভাঙার পরে আবার দুপুরের ভোজ। এই দুই ভোজের মাঝের সময় আমি ব্রিজের ওপরে উঠি; ব্রীজময় ধানের তুষ শুকোতে দেওয়া, মানুষ-সাইকেল ও রিক্সা তার ওপর দিয়েই পারাপার করছে। অসীম বিচ্ছু দেখি ব্রীজের ওপর উঠে কিসব মতলব করছে, আবার একটি শাগরেদও জুটিয়েছে। শাগরেদের নাম ইমন, দুজনের কেউই পড়াশোনা করতে পছন্দ করে না, ফটো তুলতে দিতে ইচ্ছুক না এবং দুজনেরই প্রিয় পাসটাইমের একটি হচ্ছে এই উঁচু ব্রীজ থেকে নীচে খালের জলে (প্রায় ত্রিশ-চল্লিশ ফুট) ঝাঁপ দিয়ে পড়া। অদূরে খালের কিনারায় কিছু স্টীমার বাঁধা, তার ছাদের ওপর লোকে খালের জল তুলে চান করছে, হাপ পেন্টুল পরা বাচ্চারা পাড় থেকে জলে ঝাঁপ দিচ্ছে ঝপাং ঝপাং। বেলা পরে আসছে, রে¾ট্রী গাছের নীচে বসা প্রৌঢ়ের খোয়া-ভাঙা কর্মের বিরাম নেই।
    বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে হবার মুখে মামা'র সঙ্গে হাঁটতে বেরোই; মামার বৈকালিক ভ্রমণ আমার ঘুম ভাঙতে দেরী হওয়ার কারণে আজকে বেশ ডিলেইড, ভ্রমণসঙ্গীরা অনেক আগেই বেরিয়ে গেছেন সব, এখন তাঁদের ফিরে আসার পালা। মামারা গ্রামের ভেতরকার একটা আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে নদী অবধি হেঁটে যান ও ফিরে আসেন, পঁয়তাল্লিশ পঁয়তাল্লিশ দেড় ঘন্টা সময় লাগে। আজকে বড়জোড় আধা ঘন্টা হাঁটা চলবে, তার পরেই ফিরে আসার পালা। ভাঙাচোরা রাস্তা, গত বর্ষার স্মৃতি দগদগে হয়ে আছে, সন্ধ্যের ছায়ায় বিষণ্ন । গরুর জাবনা ও দুধ দোয়ানোর গন্ধ এসে লাগে নাকে, ভাট ফুল ও আরো কিসব বুনো পাতালতার মিশ্র গন্ধ। মাথার একটু উপর দিয়ে মস্ত বাদুড় উড়ে যায় এক গাছ থেকে আরেক ফলন্ত গাছের সন্ধানে, তার ডানার শিরাগুলি পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পাই। দূরে প্যাঁচা ডাকে। হঠাৎ করে একটা জায়গা বেশ একটু অবারিত হয়ে আসে, এখানে ছায়ায় ঢাকা ঘোমটা-পরা বাড়ির সারি শেষ হয়েছে, এখানে দুপাশে ধানের ক্ষেত। অনেকটা আকাশ দেখা যায়, সন্ধ্যের একটুখানি আগে সূর্যের লাল দগদগে ছোঁয়া লাগা এক টুকরো মেঘ ভেসে আছে আকাশে, এই আলোয় কোনো ছবি হয় না। মামা'র সঙ্গীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, এঁরা সবাই মামার সহকর্মী অধ্যাপক। জিগ্যেস করেন, ভাইগ্ন্যা এই নাকি, ডাক্তার মানুষ, বড় ছোড না? বিলাত ঘুইরা আইছে? বুঝতে পারি, মামার কল্যাণে পাতারহাটে আমার ছোটখাটো একটা নিশ ক্লায়েন্টেল তৈরী হয়েছে, গুমটি খুলে বসে পড়লে আয়পত্তর নেহাত মন্দ হবে না, কলাটা-মূলোটা-পিডা-পায়াসডা; একটু জটিল ও কঠিন রোগ সারাতে পারলে মোরগাখাসির দাওয়াত মিলে যাওয়াও বিচিত্র নয়। মামা'র আমার এই এলাকায় প্রতিপত্তি কেমন জানি না, তবে কলেজের মাষ্টরের সম্মান আছে ভালোই , সেটা বিলক্ষণ বোঝা যাচ্ছে। একজন অধ্যাপক বলেন, হ্যারই কইছিলেন ট্রলার লইয়া মাছ -ধরা দেহনের হাউস? মামা বলেন, এ না, হেই ভাইগ্ন্যা আসে নাই।
    ফেরার পথে অন্ধকার নেমে এসেছে, চেনা পথঘাট দিয়ে মামা হনহনিয়ে হেঁটে চলেছেন; মামা'র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারিনা, আমার শহুরে কলিজা ধড়ফড়ায়, পায়ে ও কোমরে ব্যথা হয়, গা ঘামে জবজবিয়ে ভিজে যায়। গ্রামের বটতলায় চায়ের দোকানে টিমটিম করে বাল্ব জ্বলছে, তাতে আলো যত না, অন্ধকার তার চেয়ে বেশী হাইলাইটেড হচ্ছে; উঁচু হনু,নির্মেদ কপাল, ভাঙা গালের মানুষগুলো, চা ও কিস্‌সা-সন্ধানী মানুষগুলোকে ছবির পট্যাটো-ইটারদের মত দেখায়। এদের পূর্বপুরুষেরা একদা আদিম অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছিল, তাদের সঙ্গে অবৈদিক আল্পো-দিনারীয় আর্যগোষ্ঠীর মানুষের রক্তের মিশ্রণ ঘটেছিল, কোথাও কিঞ্চিৎ দ্রাবিড়ীয় রক্ত, কোথাও ক্ষীণ, অতি ক্ষীণ বৈদিক আর্যরক্তধারা এসে জুড়ে বসেছিল; এরা আমারই ভাই বেরাদর,একই রক্ত আমার গায়ে। মাঝখান থেকে দেশটাই যা বদলে গেছে। (যেন না বদলালেই আমরা এক থাকতাম, আমি এক বাবু ডাক্তার,আর এইসব হাঘরেরা !)

    এইসব জায়গাজমি তবে কাদের ছিল? নদী ও অরণ্য, সরীসৃপ ও শ্বাপদ কাদের হাতে ছেড়ে চলে গিয়েছিল এইসব জমির মালিকানা, ইতিহাস এল যখন পায়ে পায়ে? কিভাবে কত হাত ফেরতা হয়ে আজকের মেহেন্দীগঞ্জ-বরিশাল তৈরী হয়েছে? আমার পড়াশোনা করবার সময় নেই; মামা বলেন, একটা বড় এলাকা পুরনো সার্ভে ম্যাপে দেখেছি ঠাকুর এস্টেট বলে মেনশন করা আছে, সে কি তবে জোঁড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির জমিদারী ছিল একদা?

    রাতে ঘুম আসতে দেরী হয়, সারাদিন ধরে দফায় দফায় ঘুমিয়েছি। খালের হাওয়ায় দূর থেকে ভেসে আসে গান, কখনো জোরে হচ্ছে, কখনো বা ঢিমে। যাও পাখী বলো তারে, সে যেন ভোলে না মোরে। সুখে থেকো ভালো থেকো, মনে রেখো এ আমারে। মনপুরার গান। বুকের ভেতর নোনা ব্যথা, চোখে আমার ঝরে কথা, এপার ওপার তোলপার একা।

    সুখে থেকো ভালো থেকো, মনে রেখো এ আমারে।
  • I | 14.96.176.14 | ১৬ নভেম্বর ২০১১ ০১:৫৪494530
  • যাও পাখী বলো তারে-

  • hu | 12.34.246.73 | ১৬ নভেম্বর ২০১১ ০২:০০494531
  • কি মায়াবী লেখা!
  • pi | 72.83.76.29 | ১৬ নভেম্বর ২০১১ ০২:০৯494532
  • ইন্দোদার লেখার শেষ প্যারাগুলোয় জাদু থাকে। কিছু গান যেমন মাথার ভিতর লুপে ঢুকে যায়, কিছু কথাও তেমনি।

    গানটার এই ভার্শনটা আমার বেশি ভাল্লাগে :


  • Nina | 12.149.39.84 | ১৬ নভেম্বর ২০১১ ০২:১২494533
  • এমন করে দেখালে বন্ধু না দেখা সেই দেশ --তার হাওয়া বাতাস গাছ-গাছালি-পাখ-পাখলি--সব এনে দিলে জীবন্ত করে ---তোমায় কি বলে ধন্যবাদ জানাই?
    কুর্নিশ!
  • Tim | 198.82.18.120 | ১৬ নভেম্বর ২০১১ ০২:১৯494535
  • এরকম এতটা উদাস করে দেওয়া লেখা ইন্দোদাও আগে লেখেনি।
    পাইয়ের দেওয়া ভার্সনটাই আমারো বেশি ভালো লাগে।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন