এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প : প্রতিচ্ছায়া

    shrabani
    অন্যান্য | ১১ অক্টোবর ২০১১ | ২০৮৯২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kabya | 59.249.129.185 | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১২:৪৪495919
  • আমি এখ্ন এসব গপ্পো মোটে পড়বনি কো। এতো টেনশন সহ্য করা যায় না। শেষ হলে পুরোটা এক সাথে পড়বো।
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১২:৪৮495920
  • শ্রাবণী দি দারুন লাগলো, ধীরে সুস্থে শেষ কর
  • de | 69.185.236.51 | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১৭:১৭495921
  • এইবার একটু তাড়া দিতে ভীষণ ইচ্ছে করছে--
  • san | 69.144.58.2 | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১৭:২৩495922
  • এইজন্য শ্রাবণীদির গল্প আমি শেষ হবার আগে পড়তে চাইনা ঃ-(((((((
  • শ্রাবণী | 69.94.105.26 | ১৮ জুলাই ২০১৩ ২১:৪৭495923
  • দীনেশ ড্রাইভারকে অ্যারেস্ট করে বিলাসপুরে আনা হয়েছে। অভিনব কোনো ঝুঁকি নেয় নি, চোরগোড়ের ছোট লোক্যাল থানার ওপর এত বড় কেসের সাক্ষী বা অপরাধীদের ফেলে রাখা যায়না। জয়ন্তর ওখানে বসেই ফোনে ফোনে সব ব্যবস্থা করে ফেলে। শুধু চোরগোড়ের ওপরে না ভরসা করে , অ্যাসিস্টান্ট কমিশনারকে সব জানিয়ে তার কথামত ওমপ্রকাশের উকিলের সঙ্গে কথা বলে। এরপর সুন্দরনগরের প্রজেক্ট ইন চার্জ ও ওখানকার সি আই এস এফের কম্যান্ডারের সঙ্গে সরাসরি নিজে কথা বলে অভি।
    কথায় কথায় এও জানা যায় দীনেশ স্থানীয় লোক, লেখাপড়া জানেনা, বেকার। ওকে চাকরি দেবার জন্যে নেতাজী খুব চাপ দিয়েছিল এদের প্রজেক্ট শুরুর একেবারে প্রথমদিকে, নেতাজীর খাস লোক। তখন এরা আর কী করে, দীনেশকে ড্রাইভারি শিখিয়ে ড্রাইভারের চাকরি দেয়। তবে গাড়ি সে ভালো চালায়, শুরুর দিনগুলোতে কাজ করার দরুন দরকারে হেভি ভেহিকলও চালিয়ে হাত পাকিয়েছে।

    দীনেশ ডিউটিতে ছিল প্ল্যান্টের ভেতরে, অটোবেসে অন্যান্য ড্রাইভারদের সঙ্গে আড্ডা মারছিল। চোরগোড়ে ওয়ারেন্ট নিয়ে যাওয়ার আগেই সুন্দরনগরের সিকিউরিটী দীনেশকে ধরে নিয়ে ওদের ওখানে আটক করে রাখে। ইতিমধ্যে অভিনব বিলাসপুরে পুলিশ সুপারের সঙ্গে দরকারী কথা বলে নেয়। চোরগোড়ে জীপ নিয়ে গিয়ে দীনেশকে সোজা সুন্দরনগর থেকে তুলে বিলাসপুর থানায় নিয়ে গেছে।
    অভিনব আর দুজন অফিসার বিকেলের ফ্লাইটে রায়পুর যাবে। জয়ন্তের ওখান থেকে ফেরার পথে রাইয়ের অনুরোধে অভি ওর বাড়ি ঢোকে। তাড়াতাড়ি করে চারটে রুটি বানিয়ে ওকে লাঞ্চ খাইয়ে দেয় রাই , সারাদিনে এরপর হয়ত আর খাওয়াই হবেনা।
    খেতে খেতে অভি বলে,
    -"তিনখানা ফোন থাকবে আমাদের কাছে, তোকে সবকটা নাম্বার পাঠাচ্ছি। এ দুদিন আর অন্য কারো কল নিস না বুঝলি।"
    রাই হাসে,
    -'দুর, আমাকে অত দরকার পড়বে না। ওখানে গেলে ওদের সঙ্গে কথা বলে তুই নিজেই গন্ডগোল গুলো ধরে ফেলবি। মোতি দীনেশের জায়গায় গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, তাহলে দীনেশ কোথায় ছিল?
    এমন তো নয় যে দীনেশ তখন ট্রাক চালাচ্ছিল, যেটা আসলে বনোয়ারীর চালানোর কথা ছিল। বনোয়ারী জেলে যাওয়ায় সব পরিকল্পনার পরিবর্তন করতে হয়। দীনেশকে কী করে কথা বলাবি সেটা তুই দেখিস।
    আসলে মোতির ঐ অ্যাক্সিডেন্টের ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারটা হল আমাদের মিসিং লিঙ্ক। এখন চেষ্টা করলে ঘটনাগুলোকে সাজানো যাবে মনে হয় আর সেইমত সাক্ষ্যপ্রমাণ খুঁজতে হবে।
    কোর্টে বনোয়ারীর জেল হওয়ার আগের মুহূর্তে নেতাজী বনোয়ারী আর মোতি সবাই একসাথে মিলে এরকম ব্যবস্থাই করছিল হয়ত। যদি সুন্দরনগরের মিটিংয়ের পরে গাড়িদের সবার ডিউটি দশ পনের দিন আগে থেকেই ঠিক করে দেওয়া হয়, আমাদের কম্পানিতে যেমনটা সাধারণভাবে হয়ে থাকে সেরকম, তাহলে দীনেশ জয়ন্তকে নিয়ে ঐসময় গাড়ি চালিয়ে রায়পুর যাবে তা স্থির ছিল।
    গাড়ি খারাপ বলে জয়ন্তকে অন্য কিছুতে তুলে দিয়ে দীনেশ আবার গাড়ি চালু করে বনোয়ারীর ট্রাকের পেছনে যেত এবং অ্যাক্সিডেন্টের স্পট থেকে কাগজ চুরি করত। মোতিও হয়ত সেরকমটাই করেছিল আর বনোয়ারীর জায়গায় ট্রাক চালিয়েছিল দীনেশ।"
    -"গাড়ি খারাপ করা নাহয় ড্রাইভারের হাতে ছিল, কিন্তু জয়ন্ত সময়মত অন্য গাড়ি নাও পেতে পারত। সে ওখানে থাকলে তো আর দীনেশ বা মোতিলাল গাড়ি নিয়ে ট্রাকের পেছনে যেতে পারতনা।"
    -"দুর, তুই ভুলে যাচ্ছিস, অন্য আর কোনো গাড়ি না এলেও ওমপ্রকাশের গাড়ি আসবেই ট্রাকের আসার আগে, এটা তো ওরা জানত। জয়ন্ত বলল না বড় সাহেবের গাড়ি দেখে মোতি একটু দ্বিধা করছিল। আসলে দ্বিধাটা বড় সাহেবের গাড়ি দেখে নয়, ঐ গাড়িতে গেলে জয়ন্তও হয়ত আর বাঁচবেনা বা আহত হবে তাই।
    হয়ত অতখানি রাস্তায় আসতে আসতে জয়ন্তর সঙ্গে ওর ভাব হয়ে গেছিল। ওর মৃত্যু সংবাদে জয়ন্তকে একটু আপসেট মনে হল। নাহলে জয়ন্তর মত রাফ অ্যান্ড টাফ লোক কোথায় কোন ড্রাইভার মরলে বিচলিত হবে কেন!"
    -"জানিনা, তোর কথার যুক্তি আছে কিন্তু কাগজগুলো চুরির জন্যে এত কান্ড করতে গেল কেন? সুন্দরনগরে সুযোগ দেখে এমনিই চুরি করাতে পারত, গেস্টহাউস থেকে বা ওমপ্রকাশ যখন এদিক ওদিক সাইটে যাচ্ছিল তখন।"
    -"সেটা তুই বার করবি। তবে এত জরুরী কাগজ হয়ত ওমপ্রকাশ সুন্দরনগরে ঘোরাঘুরির সময় সঙ্গে নিয়ে যেত না, অফিসের দুর্ভেদ্য কোনো ভল্টে রেখেছিল বা সেরকম রাখার সম্ভাবনা রয়ে যেত, এছাড়া প্রজেক্টের মধ্যে সিকিউরিটি থাকত সঙ্গে। অথচ রায়পুর আসার সময় কাগজগুলো নিয়ে আসতেই হবে, কারণ ঐ কাজেই সে আসছিল খনি আবার চালু করার ব্যাপারে, ছাড়পত্র দেখাতে হত নানা জায়গায়। তাছাড়া ঝুঁকি নিয়ে অত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র অন্য কারো কাছে সুন্দরনগরে রেখে আসত না। রাস্তায় ড্রাইভার আর সেক্রেটারী ছাড়া আর কেউ সঙ্গে নেই ওমপ্রকাশের, সিকিউরিটি নেই। হয়ত ওমপ্রকাশ ভেবেছিল রায়পুরের কাজ মিটলে দিল্লী এসে ওগুলো ব্যাঙ্কের সেফ ডিপোজিট ভল্টে রেখে দেবে চিরকালের মত।
    না, রায়পুরের রাস্তায় কাগজ চুরি করাটাই অনেক যুক্তিযুক্ত লাগছে আমার, আমি হলেও তাই করতাম।"
    অভির খাওয়া শেষ, হাত ধুয়ে মুছতে মুছতে বলল,
    -"হতে পারে। তবে অ্যাক্সিডেন্টে ওরা নাও মরতে পারত, ড্রাইভার তেমন হলে ট্রাক দেখে গাড়ি জোরে ছুটিয়ে দিতে পারত, অ্যাক্সিডেন্টই হত না।"
    -"সে তো একশবার। চান্স নিয়েছে। অভি, তোকে এবার নেতাজীকে ধরতে হবে, নাটের গুরু কিন্তু সেই আর বনোয়ারীকে ভালোভাবে গ্রিল করবি, তারও এই কান্ডে বড় ভূমিকা আছে মনে হয়।
    জানিস, আমারও মনে হয় ওদের অ্যাক্সিডেন্ট করিয়ে কাগজ হাতানোই উদ্দেশ্য ছিল, লোকগুলোকে একেবারে মেরে ফেলতে চায়নি। হয়ত বনোয়ারীর মত পাকা লোক হলে ঠিক মাপমত ধাক্কা লাগাতো, যতটুকু দরকার। দীনেশের মত আনাড়ী লোক বলেই অ্যাক্সিডেন্টটা এত গুরুতর হয়ে গেছে।"
    -"এরকম অ্যাক্সিডেন্ট করাতে গেছে যখন ধরেই নেওয়া যায় মারা যাবে, ওরা আবার অত ভেবেছে নাকি।"
    -"নারে, ভেবে দ্যাখ, মোতিলাল জড়িবুটি নিয়েছিল যা দিয়ে নাকি ঘুমিয়ে পড়ে মানুষ আর ঘুম থেকে উঠলে কিছু মনে থাকেনা, ওদের গাঁয়ের বুড়িটা সেরকমই বলেছে না? মনে হয় মোতিলাল জলে ঐ জড়িবুটি মিশিয়ে কোনোভাবে অ্যাক্সিডেন্টের পরে সাহায্য করার অজুহাতে গাড়ির লোকগুলোকে খাইয়ে তাদের বেহুঁশ করে কাগজ চুরি করত, ওকে যদি ওরা দেখেও নিত তাহলেও জ্ঞান ফিরলে ওষুধের প্রভাবে তাদের কিছু মনে থাকতনা।"
    অভি জুতো পরতে পরতে বলে,
    -"সেটা একটু বেশী ঝুঁকি হয়ে যেতনা, কোন গ্রাম্য বুড়ির জড়িবুটির ভরসায় এত বড় অপারেশন?"
    -"তোর কাছে এটা গ্রাম্য বুড়ির জড়িবুটি মনে হচ্ছে। ওরা সবাই ওদিককার লোক, মায় নেতাজী শুদ্ধু। শহুরে লোকেদের কাছে এগুলো মেনে নেওয়া কঠিন হলেও ওদের কাছে এ জিনিস ট্রায়েড ও টেস্টেড হতে পারে।
    বলতে বলতে মনে হল, জড়িবুটির জল খেয়েই জয়ন্তর মাথা ফর্সা নয়ত? মোতি জল নিয়ে একমাত্র জীবিত লোককে খাইয়ে দেয়নি তো? এর উত্তর অবশ্য একমাত্র মোতিই দিতে পারত, তাই সঠিক কোনোদিনই জানা যাবেনা। তবে নেতাজী দীনেশ এরা মুখ খুললে প্ল্যানটা জানা যাবে।"
    অভি বেরোলো, সোজা এয়ারপোর্ট যাবে, রাস্তায় অফিস থেকে ওর একটা ট্যুরের ব্যাগ থাকে, সেটা তুলে নেবে আর অন্য সঙ্গীদের নিয়ে নেবে। রাই নীচে গেট অবধি ছাড়তে এল,
    -"মোতি কাগজগুলো নিয়ে নেতাজীকে দেয়নি, দিলে নেতাজীর লোকেরা মোতিকে খুঁজে বেড়াত না। যেভাবে হোক আমাদের কিন্তু ওই ডকুমেন্টগুলো দরকার, নাহলে সবাই খুব মুশকিলে পড়ে যাব।"
    রাই ওকে আশ্বস্ত করে,
    -"চিন্তা করিসনা, মাথা ঠান্ডা করে খোঁজ কর। নেতাজী না জানলে বনোয়ারী জানবে। হয়ত বনোয়ারীই মোতিকে কাগজ নিয়ে গা ঢাকা দিতে শিখিয়ে দিয়েছিল। সেদিন কোর্টে বনোয়ারী মোতির সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছিল।
    কী কথা? কাগজ হাতে রেখে বনোয়ারী নেতাজীকে বাধ্য করত তাকে জেলের বাইরে আনতে।
    এভাবে এখান থেকে হয়না, ওখানে পৌঁছে সবার সঙ্গে কথা বল, তোর হাতে এখন অনেক তথ্য, আগেরবারের মত আবছা ধোঁয়াশা নয়। "
    গাড়িতে ওঠার মুহূর্তে কী মনে পড়তে অভি ওকে একটা নাম্বার দিল মোবাইল থেকে,
    -"এই নাম্বারটা নিশানের। এই কেসে আমরা যে কজন আছি তাদের মধ্যে সবচেয়ে জুনিয়র। আমরা রায়পুর যাচ্ছি, ও রয়ে যাবে এদিকটা সামলাতে। তুই কোনো দরকারে ওকে ফোন করতে পারিস, যদি কোনো খবরের বা অন্য কোনো ইনফর্মেশনের দরকার হয় ওকে বলিস। তুইও আমার টীমের, এখনো অনেক জট খোলা বাকি, প্রমাণ, তোর মত করে যা পারিস কর।"

    সন্ধ্যেবেলায় আলোক ফিরলে জয়ন্তের ওখানে কী হয়েছে এবং অভিনব তার জেরে রায়পুর দৌড়েছে, জানিয়ে দিল রাই। আলোক খুব খুশী, তার বন্ধু পুলিশের কাজে এসেছে। রাই ঘড়ি দেখল, অভির ফ্লাইট এখনো পৌঁছয়নি। রায়পুর থেকে ওরা বিলাসপুর যাবে, সেও চার ঘন্টার ধাক্কা। আজ রাতে আর কিছু হবেনা, যা করার ওরা কাল সকালে করবে। এদিক ওদিক করে কিছুতেই মন বসেনা দেখে খাতা পেন নিয়ে বসে আবার। আলোক দেখে মুচকি হাসে,
    -"তোমার দাগ টানা দেখে টুপাইয়ের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।"
    -"কী করব বল, এগুলোই আমার চিন্তার প্রতিফলন, কাগজ পেন আর এই হিজিবিজি হাবজিজাবজি।
    কিন্তু কী যেন করার কথা ছিল ভুলে যাচ্ছি!" আলোক একটু ভেবে বলে,
    -"পার্থকে ফোন করবে বলেছিলে না?"
    -"আলোক, তুমি দারুন, ইউ আর গ্রেট। আমার মনে হয় বয়স হয়ে যাচ্ছে, ভাবছি এবার রিটায়ার করব সব ভার তোমার হাতে দিয়ে।"
    দুজনের হা হা হাসির চোটে টুপাই পড়া ছেড়ে উঠে আসে, আলোক মেয়ের সঙ্গে মাকে নিয়ে উল্টোপাল্টা গল্প ফাঁদার মাঝে রাই ফোন নিয়ে বারান্দায় যায়। পার্থকে লম্বা ফোন করার আছে, সময় লাগবে।
  • শ্রাবণী | 69.94.105.26 | ১৮ জুলাই ২০১৩ ২২:০৬495924
  • ************************************************************************
    বড় থানায় বড় বড় অফিসারদের মাঝে এসে চোরগোড়ের কাজ অনেকটা দর্শকের মত হয়ে গেছে। দিল্লী থেকে ঘন ঘন ফোন আসায়, বিলাসপুরের থানার লোকেদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। চোরগোড়ে কাল দীনেশকে এদের হাতে দিয়ে ফিরে গিয়েছিল আবার সকালে এসেছে। গুপ্তা সাহেব কালকে ওর সঙ্গে কথা বলেছে রায়পুরে নেমেই। রাত হয়ে গেছে বলে ওরা রায়পুরে গেস্টহাউসে থেকে ভোরে রওনা দেবে, ওকেও বিলাসপুরে এসে ওদের জন্যে অপেক্ষা করতে বলেছে।
    দীনেশ বারবার জিজ্ঞেস করছিল কেন তাকে ধরা হচ্ছে, চোরগোড়ে ছাই কিছু জানে নাকি যে বলবে। শুধু গুপ্তা সাহেব একবারই বলেছিল যে ওমপ্রকাশ আগরওয়ালের অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যুর ব্যাপারে মোতিলাল ও দীনেশ দুজনেই জড়িত। ফোনে আর কিছু বলবেনা, দেখা হলে সব বলবে বলে ফোন রেখে দিয়েছিল। এদিকে সে যে সাহেবকে রোজ লম্বা লম্বা রিপোর্ট সব ফোনে দেয়, তখন তো সাহেব বারণ করেনা। যাক বড় সাহেবদের ব্যাপারই আলাদা, তার কাছে এখন সবচেয়ে দরকারী কথা হল আগের দিন গুপ্তা সাহেব জিজ্ঞেস করেছে, চোরগোড়ে দিল্লী বা দিল্লীর কাছাকাছি আসতে আগ্রহী কিনা।
    দীনেশ যখন খুব বেশী ঘ্যানঘ্যান করছিল তখন চোরগোড়ে বিরক্ত হয়ে আন্দাজে একটা বানিয়ে ওকে চুপ করাবার জন্যে বলে,
    -"মোতির সঙ্গে ষড় করে নিজেদের বড় সাহেবকে খুন করে আবার জিজ্ঞেস করছিস কী কসুর!" আশ্চর্যের কথা হল এর পর বিলাসপুরে লক আপে ঢোকানো অবধি দীনেশ আর টুঁ শব্দ করেনি।

    কাল পার্থকে মোতির কেসটা সম্পর্কেভালো করে বোঝাতে গিয়ে সন্তোষ মাস্টারের নাম আসাতে দেখা গেল পার্থ লোকটিকে ভালো চেনে।
    -"আরে, বছর ছয়েক আগে এই ছেলেটা আমাদের এখানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল। তখন ওর ছাব্বিশ সাতাশ বছর বয়স হবে, আদিবাসী কোটায় স্থানীয় লোক নেওয়া হচ্ছিল। আমি ইন্টারভিউ প্যানেলে ছিলাম। এসব ইন্টারভিউ শুধু ফর্মালিটি হয়, উপযুক্ত লোকই পাওয়া যায়না। যে দু তিনজন আসে সবাইকেই চাকরী দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে এই ছেলেটি ইন্টারভিউ ভালো দিলেও শেষ অবধি চাকরি হয়নি, মেডিক্যালে কেটে গিয়েছিল, কালার ব্লাইন্ড। পরে জানতে পেরে আমার খুব অবাক আর খারাপ লাগে কারণ ঐ একমাত্র যোগ্য ক্যান্ডিডেট ছিল, বেশ ব্রাইট মনে হয়েছিল। কথায় কথায় এইচ আরের যে এইসব দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, পোস্টটা ট্রেনিং সেন্টারের ছিল তাতে কালার ব্লাইন্ড হলেও নেওয়াই যেত একটু এদিক ওদিক করে। এমনিতেই কম্পানি এদিকে আদিবাসী ওয়েলফেয়ারে অনেক কিছু করে থাকে, এটাও সেরকম হত।
    তখন উনি আসল ব্যাপারটা বলে অবশ্য গোপন রাখতে বলেন। এমনিতে নিয়মমাফিক পুলিশ ভেরিফিকেশন হলেও এইসব এলাকায় স্থানীয় লোক নেওয়ার সময় আমাদের এইচ আর নিজস্ব কিছু সোর্স দিয়ে খোঁজখবর করে তবেই লোক নেয় আজকাল। কারণ পুলিশ তো সেরকম বড় কিছু ব্যাপার না হলে ঘুষ নিয়ে সবাইকেই ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। তা আমাদের সেই নিজস্ব সোর্সে নাকি জানা যায় যে ছেলেটার ঘরে সন্দেহজনক লোকেদের আনাগোণা, এছাড়া মাঝে মাঝে সে নিজেও কোথায় উধাও হয়ে যায়।
    এর কিছুদিন পরে বোধহয় ছেলেটা ঐ দলে ঢোকে, তখন দল সরকারে, সে জন্যে প্রাইমারী স্কুলে মাস্টারের চাকরি পায় এবং সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করা শুরু করে।"
    পার্থকে রাই বলেছে আরো কিছু খবর জোগাড় করে দিতে, নিজস্ব স্থানীয় সোর্স দিয়ে।

    রায়পুর থেকে বিলাসপুরের রাস্তায় এক মুহূর্তও বোধহয় অভিনবের কান থেকে মোবাইল নামেনি। কাল রাতেই জেনেছে বনোয়ারীর প্যারোলে বেরোনোর দিন আজ। সেই থেকে এদিক ওদিক কথা বলে, পুলিশের কর্তা, উকিল, কোনোভাবে ব্যাপারটাকে পেছোনো গেছে।
    এখন সকাল থেকে বড়সাহেবের সঙ্গে চলছে নেতাজীর ব্যাপারে। সরকারী ওপরওয়ালারা কেউই নাকি চায়না পাকা তথ্যপ্রমাণ ছাড়া নেতাজীকে ঘাঁটানো হোক। যতই হোক এদিককার অনেককালের নেতা, ওদের দল যদি এখন এনিয়ে সরকারের বিরূদ্ধে আন্দোলন শুরু করে মুশকিল হয়ে যাবে। তার সঙ্গে যদি কয়লার ইস্যুও চলে আসে তাহলে শিরে সর্বনাশ!
    যতদুর খবর আছে বিরোধী দল পরবর্তী সংসদের অধিবেশনে কয়লায় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আসবার প্ল্যান করছে। হাতে এখনো মাসখানেক সময় আছে। এপক্ষও ততদিন চেষ্টা করছে ওদের প্রমানাদি যা হাতে এসেছে বা আসতে চলেছে সেসব বানচাল করার। সেই মতেই দু পক্ষ চাইছে ওমপ্রকাশের কাগজপত্র হাতে পেতে।
    এখন সরকারের লোকে চায় না নেতাজীর গ্রেপ্তারের ফলে একমাসের আগেই ব্যাপারটা মিডিয়ায় বা জনগণের সামনে চলে আসুক, তারা তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এখনো তৈরী নয়।
    ফলে অভিনব নেতাজীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেও হয়ত পারবেনা, বনোয়ারী ও দীনেশ সব স্বীকার করলেও না। অভিনব তবু চেষ্টা চালিয়ে যায়, কোনোভাবে যদি পুলিশ কমিশনারের অনুমতি পায়। তিনি অবশ্য সব শুনে এটাই বলছেন যে অভিনব কাগজগুলো খুঁজে বার করুক আগে, তারপর নেতাজীকে ধরার অনুমতি যোগাড় করা সহজ হবে।

    একলা রাই নিজের মত করে ভাবতে বসল কাগজগুলো কোথায় থাকতে পারে, কার কাছে। যদি মোতিলালকে নেতাজীর লোকেরা মেরে তার কাছ থেকে কাগজ পেয়ে থাকে তাহলে কিছু করার নেই। অবশ্য কিছু করার নেই নয়, নেতাজীকে ওমপ্রকাশ দের অ্যাক্সিডেন্টে খুন ও মোতির খুনের ব্যাপারে এক্ষুনি গ্রেফতার করতে পারলে, আপাতত কাগজের ব্যাপারটা হয়ত চাপা দেওয়া যেত।
    মোতি জঙ্গলের ধারে আদিবাসীদের বস্তিতে একটা আধখোলা চালা ঘরে থাকছিল। রাইয়ের কেমন শুধু মনে হচ্ছে, ওমপ্রকাশের কাগজপত্র, যার জন্যে ওকে নেতাজীর লোকেরা খুঁজছে, ওর প্রাণের ভয় জড়িয়ে আছে, সেগুলো মোতি কোনো ভালো জায়গায়, কারো কাছে লুকিয়ে রেখেছিল, নিজের কাছে রাখেনি।
    মঙ্গলার বাড়িতে না এলেও অন্য কোথাও মঙ্গলার সঙ্গে দেখা হতেই পারে মোতির। এ মুহূর্তে মঙ্গলার কথা মনে হলেও এটাও সত্যি যারা কাগজ খুঁজবে তারা মঙ্গলার কাছেই প্রথম খুঁজতে যাবে। মঙ্গলার একখানা ঘরে কোথায় লুকোনো থাকবে কাগজ!
    নেতাজীর লোকেরা অনায়াসেই মঙ্গলার ভাইয়েদের পয়সা দিয়ে ঘর ভালো করে খুঁজে দেখতে পারত, হয়ত বা দেখেছেও। বনোয়ারীর বাড়ির ক্ষেত্রেও সেই একই যুক্তি। নেতাজী গিয়ে তার বাড়িতে ঢুকে খুঁজলে বনোয়ারীর বাপ ভাইরা তাদের আটকাতে পারবেনা। কিন্তু তারা এরকম সম্ভাব্য কোনো জায়গায় কিছু পায়নি, মোতিকেই খুঁজে গেছে, তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।

    মোতি ছেলেকে দেখতে মনিয়ারীর স্কুলে এসেছিল নিশ্চিত, বাচ্চারা এরকম কথা বানিয়ে বলেনা। রাইয়ের বিশ্বাস কানহা প্রথমে ঠিক বলেছে, পরে ভয়ে অস্বীকার করেছে। সন্তোষ মাস্টারের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি তো? মাস্টারের কাছে রাখেনিতো কাগজপত্র? কিন্তু মাস্টার তো দলের ভালো খাতায়, সে মোতির মৃত্যুর পর কাগজগুলো তাহলে দলের হাতে তুলে দিত!
    দুদিন কেটে গেল, অভিনবের ওদিক থেকে কোনো ফোন এলনা। কাজের লোকেদের কাজের মাঝে ফোন করে বিরক্ত করতে খারাপ লাগে রাইয়ের, তাই সেও করেনি ফোন। পরদিন রাই অফিস গেছিল, ঘরে বেশীদিন বসে থাকতেও ভালো লাগেনা। অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যেবেলায় সবে চা নিয়ে বসেছে, শ্রীমতীর ফোন এল।
    -"রাই, খবর শুনেছ?"
    -"না, কিসের খবর? কী হয়েছে?"
    -"জয়ন্তদের কম্পানির অজিত আগরওয়ালকে পুলিশ ধরেছে। খবরটা বাইরে বেরোয়নি। জয়ন্ত আজকাল অফিসের লোকেদের সঙ্গে খুব যোগাযোগ রাখছে, সুন্দরনগরের লোকেদের সঙ্গে, কাজ সংক্রান্ত। তাদেরই একজন জয়ন্তর জুনিয়র, খবর দিয়েছে। অজিত আগরওয়ালকে কী কারণে সুন্দরনগরে ডেকে পাঠিয়েছিল না ও নিজেই গেছিল জানিনা, সেখানেই ধরেছে। অভিনব তো এখন ওখানে, ওর কাছে একটু খবর নাওনা।"
    রাই একটু অবাক হয়, এতবড় খবরটার আঁচও দিলনা অভি একবার। অজিত নেতাজীর বন্ধু হলেও অভির ধারণা এই অ্যাক্সিডেন্টের ও কাগজ চুরির ব্যাপারে অজিত ছিলনা, কাকা মরে ওদের ক্ষতি বেশী, অভিই বলেছিল। তাহলে অজিতকে ওরা ধরল কী জন্যে। শ্রীমতীকে ও শুধু জানায়, অভিনবের সঙ্গে ওর কথা হয়নি।
    -" জয়ন্ত তোমাকে আর কী বলেছে?"
    -"জয়ন্ত কিছুই বলেনি, আমি কথা শুনে আন্দাজ করেছি। জয়ন্ত এখন পুরো গুম হয়ে বসে আছে। অজিত আগরওয়ালই ওর বস ছিল কিনা, সুন্দরনগর প্রজেক্ট তো আগে ওমপ্রকাশ আগরওয়ালের হয়ে অজিতই নাকি দেখাশোনা করত।"
    -"কিন্তু জয়ন্ত তো জানে এখন আর সুন্দরনগর ভাইপোদের হাতে নেই, ওমপ্রকাশের স্ত্রী দেখাশোনা করছেন মানে ওনার লোক দেখছে।"
    -"সেটা ঠিক বলতে পারব না। আমি নীচে হাঁটতে নেমে তোমায় ফোন করছি। কিছু জানতে পারলে আমায় একটা মেসেজ করে দিও প্লিজ। আমার কেমন যেন লাগছে, একটা অস্বস্তি হচ্ছে, কেন তা বলতে পারবনা।"
    রাইয়েরও হচ্ছে, অস্বস্তি, একটা অস্থির ভাব।
    -"শ্রীমতী, জয়ন্তর মোবাইল নাম্বারটা কী বলোতো? অভি নিয়ে রাখতে বলেছিলে, ওর কাছে স্টোর করা নেই, দরকারে জয়ন্তকে ফোন করবে।"
    শ্রীমতী বুদ্ধিমতী হলেও সরল, জয়ন্তর মোবাইল নাম্বার আলোকের কাছেই নেওয়া যায় কিন্তু তফাত হল শ্রীমতী প্রশ্ন করেনা, আলোক হলে অনেক প্রশ্ন করবে।
    ফোন রেখেই রাই কনট্যাক্ট থেকে সদ্য অ্যাড করা নিশানের নাম্বার খুঁজে ফোন লাগায়। নিশানকে অভি বলে রেখেছে, সে রাইয়ের নাম শুনেই চিনতে পারে,
    -"হ্যাঁ ম্যাডাম, বলুন কী করতে পারি আপনার জন্যে?"
    -"এই নাম্বারটার গত আটমাসের সমস্ত কল ডিটেলস বার করুন, আর আগরওয়ালদের অফিসে খবর নিন যে এতদিন দিল্লীতে সুন্দরনগর প্রজেক্টের দায়িত্বে কে ছিল। নিশান, এটা ভীষণ জরুরী।"
    -"প্রথমটা হয়ে যাবে ম্যাডাম। আর দ্বিতীয়টার উত্তর আমি জানি, ওদের অফিসের সব কিছু আমাদের ফাইলে আছে। একটু ধরুন।"
    রাই অপেক্ষা করে, ওদিকে নিশান ফাইল খুঁজছে।
    -"ম্যাডাম, সুন্দরনগর ওমপ্রকাশ নিজে দেখছিলেন, এমনিতে দিল্লী অফিসে ওভার অল কো অর্ডিনেশন করছিলেন এনাদের একজন পুরনো কর্মচারী, তিনি ওমপ্রকাশকে সরাসরি রিপোর্ট করতেন। এখন তিনি খাতায় কলমে মিসেস ওমপ্রকাশকে রিপোর্ট করেন, আসলে নিজেই সব করে, উকিলকে জানিয়ে। লোকটি ওমপ্রকাশের বিশ্বস্ত। ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের হেড জয়ন্ত ঘোষ, সে ও বাকীরা ঐ ভদ্রলোককে রিপোর্ট করত। তবে ওমপ্রকাশ বাইরে থাকলে ফোনে বা মেলে ডিসিশন সব উনি নিলেও কোনো কিছুতে অনুমোদনের দরকার হলে ওনার দুই ভাইপো ও আরেকজন ডাইরেক্টর সই করত। সুন্দরনগর প্রজেক্ট জি এমের সাথেও ওমপ্রকাশের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।"
    -"তাহলে সুন্দরনগরে অজিতের তেমন কোনো রোল ছিলনা?"
    -"না ম্যাম, আর কিছু?"
    -"হ্যাঁ, অভিকে বোলো আমাকে ফোন করতে আর ঐ কল লিস্টে বেশী কল বা গত দু তিন মাসে যেসব নাম্বারে কল হয়েছে তাদের নামও চাই। এতো কম্পিউটারের ব্যাপার, কালকের মধ্যে পাব না?"
    -"হয়ে যাবে। স্যরকে আপনি ফোন করতেও পারেন, অসুবিধে নেই। ওখানে কাজ ভালোই হচ্ছে, দীনেশ কনফেস করেছে।"
    ফোন রাখতেই পার্থর ফোন এল। দুদিন চুপ করে বসে থাকার পর আবার চনমনে লাগে রাইয়ের। সব জট একে একে খুলছে, একটা শেষ টুকরো এখন শুধু বাকী, তবে কেমন যেন মনে হচ্ছে তারও একটা আন্দাজ পাচ্ছে ও। অভির সঙ্গে কথা বলা দরকার, আর ক ঘন্টা অপেক্ষাই হোক নাহয়।
  • শ্রাবণী | 69.94.105.26 | ১৮ জুলাই ২০১৩ ২৩:২২495925
  • ************************************************************
    সকালে অফিসে গিয়ে আগে বসের সঙ্গে দেখা করল রাই। বিদ্যুতনগরে রেনোভেশনের পরে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, ভেন্ডর ঠিকমত রেসপন্স করছেনা। প্যাকেজটা ওই দেখছিল তাই ওরা রাই কে বার বার ফোন করছে।
    -"স্যর, মুখার্জী কালও ফোন করেছিল। ওরা বলছে এটা ম্যানুফাকচারিং ডিফেক্ট, বেশী কমপ্যাক্ট বলে পাওয়ার সাপ্লাই প্রচুর গরম হয়ে ট্রিপ করে সিস্টেম বসিয়ে দিচ্ছে আর ভেন্ডর মানতে রাজী নয়, তারা বলছে এরা ঠিকমত এয়ার কন্ডিশনড এনভারনমেন্ট মেন্টেন করছেনা তাই গরম হচ্ছে, ওদের কিছু করার নেই।"
    -"তা কী করা যায়? সাইটকে ডাকো, ভেন্ডরকেও ডেকে মিটিং করাও। দ্যাখো, যদি দুপক্ষকে রাজী করিয়ে মাঝামাঝি কোনো সমাধানে আসা যায়।"
    -"স্যর, আমি একবার নিজে গিয়ে দেখতে চাই। ভেন্ডর এই সিস্টেমটায় নতুন ভার্সন দিয়েছে, পুরনোটা কিন্তু আমাদের অন্যান্য সাইটে ভালো কাজ করছে।
    একটা জায়গায় অন্তত ওদের বলব নতুনের বদলে পুরনো পাওয়ার সাপ্লাই লাগাতে, পরীক্ষামূলকভাবে। আমি নিজে গিয়ে দেখে এসে জোর দিয়ে কিছু বললে ভেন্ডর ফেলতে পারবেনা। "
    রাই নিজে থেকে কখনো কোথাও যেতে চায়না, তাই বস বেশ খুশীই হল।
    -"তুমি নিজে গিয়ে দেখলে তো ভালোই হয়, তবে এটা খুব দরকারী কিছু না। অন্য কাজ থাকলে এখন যেওনা বা জুনিয়র কাউকে পাঠিয়ে দিতে পার।"
    -"স্যর, এটা ছোট কাজ ছিল বলে আমি একাই করেছিলাম প্রথম থেকে। আমার কথা ভেন্ডর শুনবে, তাহলে আর ঐ অকারণ চোদ্দখানা মিটিং, মেল চালাচালির মধ্যে দিয়ে যেতে হবেনা।"

    যাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে মন ফুরফুরে হয়ে গেল। আলোককে জানিয়ে দিয়ে টিকিট কেটে, পার্থকে ফোন করে এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠাতে বলে দিল। আলোক অবশ্য সন্দেহ করছিল এই ট্যুরের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, কিন্তু রাই খুলে কিছু বলল না। শুধু অভিকেই কিছু জানালো না, রাতে বলবে।

    কাল রাতে অভি ফোন করেছিল। দীনেশ ও বনোয়ারী দুজনে সব কথা স্বীকার করে নিয়েছে। মোটামুটি রাই আর অভি যা ভেবেছিল তাই। বনোয়ারীর ট্রাক চালানোর কথা ছিল, তার বন্ধু এক উড়িষ্যাবাসীর ট্রাক ওটা। সব পরিকল্পনা পাকা যখন তখন বনোয়ারী ধরা পড়ে যাওয়ায় ঝামেলা হয়ে যায়। তখন নেতাজী দীনেশকে ঠিক করে আর মোতিকে এর মধ্যে ঢোকায় বনোয়ারী স্বয়ং।
    ট্রাকের চালক রাস্তার মাঝখানে দীনেশের হাতে ট্রাক দিয়ে, বাসে করে রায়পুরে ঢোকার মুখে এক ধাবায় গিয়ে অপেক্ষা করে। ওর নাকি অত জোরে ধাক্কা দিয়ে গাড়িটাকে ওভাবে মারার কথা থাকেনি, জখম করার কথা ছিল। রাতে ড্রাইভাররা সাবধানে আস্তে গাড়ি চালায় ঐ রাস্তায়। দীনেশ গাড়িটাকে ওভারটেক করার ভান করে সাইড থেকে ধাক্কা দিতে চেয়েছিল, গাড়ি কম স্পীডে থাকলে নাকি যাত্রীরা মরত না। তবে এটা পুরো ফালতু কথা, এখন এরকমই বলবে এরা। অত বড় একটা লরীর ধাক্কায় গাড়ি উল্টে যাত্রীদের মরারই কথা। গাড়িটা নাকি খুব স্পীডে ছিল, সাইড দিচ্ছিল না, শেষে দীনেশ ধৈর্য্য হারিয়ে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়েছে, দুটো গাড়িই স্পীডে ছিল।
    ধাক্কা দিয়ে নাকি ও আর দাঁড়ায় নি সোজা চালিয়ে নিয়ে চলে গেছে ট্রাকের চালকের কাছে। তার টাকাকড়ি বনোয়ারী আগেই মিটিয়ে দিয়েছিল, সেও রাতেই বর্ডার পেরিয়ে নিজের দেশে চলে গেছে গাড়ি নিয়ে।
    মোতিলালের এরপরে গাড়ি নিয়ে আর কাগজ নিয়ে দীনেশের কাছে পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু মোতি তাকে রাস্তায় ফোন করে জানায় যে ঐ গাড়িতে জয়ন্ত ছিল আর অ্যাক্সিডেন্টে জয়ন্ত বেঁচে গেছে, অন্যরা কেউ বেঁচে নেই।
    সে যখন কাগজ আনতে যায় তখন জয়ন্তর জ্ঞান ছিল। তাই তাকে ও জড়িবুটির জল খাইয়ে দিয়েছে। এখন সেখানে অনেক লোক, পুলিশও হয়ত এসে যাবে তাই ও গাড়িটা যেখানে জয়ন্তকে ছেড়েছিল, খারাপ হয়েছে বলে, সেখানেই আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যদি জয়ন্ত হুঁশ ফিরলে গাড়ি কোথায় খারাপ হয়েছিল বলে দেয় আর পুলিশ খোঁজ করতে এসে দেখে গাড়ি সেখানে নেই, তাই। দীনেশ যেন কাল সকালে এসে গাড়িটা নিয়ে যায়। ও বিলাসপুরের দিকে যাচ্ছে, কোরবায় ফিরে গিয়ে যোগাযোগ করে কাগজ পৌঁছে দেবে।

    আসলে বনোয়ারীই মোতিলালকে বারণ করেছিল তার জেল থেকে বেরোবার ব্যবস্থা না করলে ও তাদের পাওনাগন্ডা না মেটালে নেতাজীকে কাগজ না দিতে। বনোয়ারী কোরবায় নিজের ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা খুলবে ঠিক করেছিল, মোতিলাল ও অন্যান্য শাগরেদদের নিয়ে। কথা হয়েছিল নেতাজী সমস্ত লাইসেন্স ইত্যাদি পাইয়ে দেবে, এই কাজটা হয়ে গেলে, এছাড়া কিছু টাকা দেবে মজুরী বাবদ যা দিয়ে এরা ব্যবসা শুরু করবে। এরকম একটা ব্যবসা বনোয়ারীর অনেকদিনের শখ, অন্যের ট্রাক নিয়ে বে আইনী কাজ করে বেড়াতে হবেনা তাকে, নিজের ট্রাক থাকবে সব কাজের জন্যে, সেজন্যেই সে নানা বদমাশী করে তাড়াতাড়ি টাকা জোগাড় করার ধান্দায় ছিল।
    দীনেশ এরপরে একটা ফিরতি ট্রাক ধরে নিজের শ্বশুরবাড়ির রাস্তায় এসে রাতে পায়ে হেঁটে সেখানে গিয়ে রাতটুকু কাটিয়ে সকালে এসে গাড়ি নিয়ে ফিরে যায় সুন্দরনগরে।

    অভির কথা শুনে রাই খুশী, তার অঙ্ক অনেকটাই মিলে গেছে।
    -"অভি, এতো দারুন খবর। বনোয়ারী কাগজের ব্যাপারে কী বলছে?"
    অভির গলা বেজার ঠেকে,
    -"নোপ। মোতির সঙ্গে ওর ডাইরেক্ট যোগাযোগ হয়নি। প্রথমে বনোয়ারী পুরো অস্বীকার করছিল কিন্তু চোরগোড়ের লোক বাবুলাল ওর বাপের কাছে কায়দা করে জেনে নিয়েছে যে মোতি তার সাথে কয়েকবার দেখা করে বনোয়ারীর খবর নিয়ে গেছে। লুকিয়ে আসত, ওদের ক্ষেতের পাশে যে জঙ্গল আছে সেখানে একটু ভেতরে গেলে একটা নালা আছে, তার ধারে আসত মোতি। বনোয়ারী ওর বাবাকে কিছু টাকাও দেয় মোতিকে দেওয়ার জন্যে। আমরা বনোয়ারীকে বাপের কথা বলে চেপে ধরলে তখন স্বীকার করে ওর কথাতেই মোতিলাল কাগজপত্র নিয়ে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। তবে সে কাগজগুলো কোথায় রেখেছিল, নিজের কাছে না অন্য কোথাও, এখন সেগুলো কোথায় কিছুই জানেনা।"
    -"সে জানেনা তবু নেতাজী তাকে বাইরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছিল?"
    -"ও, আসল কথাটা তোকে বলা হয়নি, নেতাজী বেপাত্তা, কাল থেকে। পুলিশের মধ্যে নির্ঘাত ওদের লোক আছে, আমরা সব কাজ খুব চুপি চুপি করলেও, বনোয়ারী আর দীনেশের স্বীকারোক্তি বোধহয় লীক হয়ে গেছে। কাল রাতে আমাদের লোক এসে জানালো নেতাজী তার বাড়িতে নেই, খুব ভোরে উঠে কোথাও চলে গেছে। এয়ারপোর্টে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, প্লেনে যায়নি। ওর বাড়িতে ফোন করলে বলছে অসুস্থ, ফোন ধরতে পারবে না, আসলে বাড়িতে নেই। সম্ভবত গাড়ি করে কিছুটা গিয়ে কোথাও থেকে ট্রেন ধরে দিল্লী গিয়েই লুকিয়ে থাকবে।"
    -"তোর কাগজপত্র তার মানে ওর কাছে নেই। থাকলে প্রথমত সে বনোয়ারীকে বাইরে আনত না, জেলেই পচার ব্যবস্থা করত, বেরিয়ে এসে তাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে ভেবে। দ্বিতীয়ত, সে কোথাও পালাতো না, ডাঁটে বসে থাকত। নিজের দল ও সরকারী দল দুদলকেই ঐ কাগজ দেখিয়ে প্রাপ্য আদায় করত। এদের দিয়ে ওমপ্রকাশের কেস বন্ধ করাতো আর নিজের দলের কাছে হৃতসম্মান পুনরূদ্ধার করত।"
    -"হুঁ,এটা ঠিক বলেছিস। কাগজগুলো যে কোথায় গেল? দুদিন ধরে বনোয়ারীর বাড়ি, মোতির বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি, দীনেশের বাড়ি, সব জায়গায় খুঁজেছে চোরগোড়ের দল। এভাবে হয়না জানি, তবু ওরা বলল, তাই আমিও আপত্তি করিনি।"
    -"আমার মনে হচ্ছে আমি জানি কাগজ কোথায়। তবে তার আগে তুই বল, অজিত আগরওয়ালকে কেন ধরলি? তুই তো বলছিলি ওর মত লোকেরা প্রমাণ ছাড়া তোর ধরাছোঁয়ার বাইরে। হঠাৎ কী প্রমাণ পেলি?"
    -"ও, ওটা ওই খনির গন্ডগোলের ব্যাপারে। আসলে আমরা নেতাজীর বিরূদ্ধেই প্রমাণ জড়ো করতে গিয়েছিলাম, জালে পড়ল অজিত। সুন্দরনগরের পাশেই রায়গড়ে বনসাল রা একটা প্রজেক্ট শুরু করেছে, সুন্দরনগরের রাইভ্যাল প্রজেক্ট।
    অবশ্য ওদের গুজরাটে ইতিমধ্যেই চালু প্রজেক্ট আছে যার জন্যে কোল ব্লকও আগেই পেয়েছে। ওরা অনেক চেষ্টা করেও রায়গড়ের জন্যে নতুন ব্লক আর পায়নি, কোটা শেষ।
    এদিকে সুন্দরনগর প্রজেক্ট চালু হলে যেহেতু তারা কয়লা সস্তায় পাবে, বনসালদের চেয়ে তাদের বিদ্যুতের দাম কম হবে। সবাই সুন্দরনগর থেকে কিনবে, রায়গড় থেকে নয়। তাই সুন্দরনগর ঠিকঠাক চললে বনসালদের লোকসান।
    কয়লার খনি থেকে কয়লা না উঠলে বা কোল ব্লক ডি অ্যালোকেট হলে তাদের দুগনা লাভ, সুন্দরনগরের ক্ষতি ও তাদের অতিরিক্ত কোল ব্লক পাওয়ার চান্স।
    অজিত খনির দায়িত্বে ছিল, তাই ওরা অজিতকে ধরে। টাকা প্লাস ওদের কিছু বিজনেসে শেয়ার। অজিত অমিতের সঙ্গে ওমপ্রকাশের সম্পর্ক ইদানীং ভালো ছিলনা, উনি ওদের থেকে নিজের উকিল, সেক্রেটারী, পুরনো কিছু খাস লোকেদের বেশী বিশ্বাস করছিলেন। তাছাড়া ছেলেও প্রায় তৈরী হয়ে আসছিল তাই ওমপ্রকাশের ভাইপোদের আর দরকার ছিলনা।
    আমরা অজিতের কল ডিটেলস প্লাস নানা লেনদেন ধরে ধরে বনসালের মিডলম্যানের খোঁজ পাই, তিনি আবার কেন্দ্রের সরকারী যে পার্টি, তার সদস্য, দিল্লীর বেশ নামজাদা লোক। কমিশনারের কাছ থেকে সব জেনে মন্ত্রী হাই কম্যান্ডকে খবর দিতে, সেখান থেকে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নেওয়া হয়। ভদ্রলোক সবর্কম প্রমানসহ সাহায্য করতে রাজী হয়।
    সেই কারণেই অজিতকে ধরা সম্ভব হয়েছে। আমরা অজিতের কাছ থেকে নেতাজীর খবর নিয়ে খনির কেসে ওকে ধরব ভাবছিলাম। কিন্তু অজিতও মহা চালাক, ও রায়পুরে ছিল যখন ওকে এখানকার পুলিশ গিয়ে ধরে। খনির ব্যাপারে ওমপ্রকাশের পুরনো কেস ফাইল করা ছিল রায়পুরে, তার রেফারেন্সেই ওকে ধরা হয় কিন্তু ও কিছুই স্বীকার করছেনা, দিল্লী থেকে উকিলরা এসে গেছে, আইনী ঘোরপ্যাঁচ চলছে।
    কিন্তু তুই সিরিয়াসলি জানিস কাগজ কোথায়? "
    -"ঠিক জানি না, অনুমান। তবে তুই আর একটা কথা ভুলে যাসনা, মোতিলালকে কে খুন করল তা এখনো জানা যায়নি।"
    -"নেতাজীকে না পেলে এরকম অনেক কিছু অজানা রয়ে যাবে মনে হয়।"

    তাই কী, রাই ভাবে। বেশীদিন তো হয়নি, বিদ্যুতনগরের সেই বিকেল, সন্ধ্যেয় পার্থর কাছে মোতিলালের লাশের গল্প শোনা। তার এক দিন পরে থানায় গিয়ে চোরগোড়ের কাছে হাতরির মোতিলাল, বনোয়ারী এদের কথা, একটা অন্য জগতের গল্প শোনা। তখন শুধু একটা লাশ, খুন আর তাই নিয়ে নিছক কৌতূহল।
    কখনো ভাবেনি সেই এক খুনের ঘটনার সঙ্গে তার চেনা শহুরে লোকজনদের জীবনও জড়িয়ে পড়বে একদিন, এমনকী অভি আর সে নিজেও, এমনভাবে!
  • Nina | 78.34.162.175 | ১৯ জুলাই ২০১৩ ০৫:৩৭495926
  • পোস্ত করলাম--কোথায় হাওয়া হয়ে গেল? এই রহ্স্যের কে সমাধান করবে ?ঃ-(

    রবার্ট ব্রুসের মতন চেষ্টা করেই যাই------

    তো বলছিলাম--শ্রাবণী দের আয়ে দুরুস্ত আয়ে!!
  • de | 190.149.51.69 | ১৯ জুলাই ২০১৩ ১০:৪৮495927
  • তাপ্পর, তাপ্পর?
  • শ্রাবণী | 69.94.106.116 | ১৯ জুলাই ২০১৩ ১৬:৩৩495929
  • **********************************************************************
    -"ম্যাডাম, আপনি কবে এলেন? গুপ্তাসাব তো কিছু বললেনা কাল, আপনি আসছেন। সাব আপনিও, অনেকদিন বাদে এলেন। বসুন বসুন।" রাই আর পার্থ আবার চোরগোড়ের থানায়, সেই একইরকম আছে বাইরে থেকে শুধু অনেককিছু আর একরকম নেই। চোরগোড়ে আজ আর সদ্য পরিচিত থানা অফিসার নয়, ওর রকম দেখে মনে হচ্ছে অনেককালের চেনা যেন বন্ধু বা আত্মীয় ওরা।
    -"তখন হয়ত আপনার গুপ্তা সাব জানত না, পরে জেনেছে। আমাকে হঠাৎ অফিসের একটা কাজে আসতে হল। ও ফোন করেনি?"
    উত্তরের অপেক্ষা না করে অবশ্য মোবাইল নিয়ে ফোন লাগায়। চোরগোড়ে তাই দেখে আর জবাব না দিয়ে বাইরে যায়, অতিথি আপ্যায়নের জন্যেই হয়ত।
    ফোন বেজে গেল কেউ তুললনা। অভির সাথে কাল রাতে কথা হয়েছিল। আজ সকালে ওর কিছু কাজ করার কথা, সেসব সেরে দুপুরে এখানে এই থানায় আসবে বলেছিল। রাইকে বলেছিল চোরগোড়ের এখানে এসে অপেক্ষা করতে। এখন ফোন তুলছেনা মানে হয়ত গাড়িতে আছে বা অন্য ফোনে কথা বলছে। ফোনটা কেটে বাইরের দিকে তাকালো, দুপুর রোদে এখন কেউ নেই, চায়ের দোকানটারও কেমন একটা ভাজা ভাজা শুকনো চেহারা। ও আর পার্থ খেয়ে বেরিয়েছে, চোরগোড়েকে চা আনতে বারণ করলে হত, সেতো কিছু জিজ্ঞেসও করল না। পার্থ বলল,
    -"কী রে, অভিনব কখন আসবে? আর এসে কী প্ল্যান, কোথায় যাবে সেসব কিছু জানিস? তুই আমাকে নিয়ে এলি, আমি তো কিছুই জানিনা এতসব ঘটে গেছে, কেমন বোকা বোকা লাগছে।"
    রাই হাসে,
    -"প্ল্যান আমিও জানিনা, তবে বোধহয় অভির সাথে আমরা একটু কোথাও ঘুরতে যাব।"
    -"ইয়ার্কি মারছিস? তা বাবা তুই যা না পুলিশ নিয়ে ঘুরতে। আমি ছাপোষা মানুষ, আমাকে অফিস থেকে টেনে নিয়ে এলি কেন?"
    -"আরে তুই না এলে, আমাকে গাড়িতে এই থানা অবধি কে আনত?"
    -"সেতো তুই বললে আমি অফিসের গাড়ি পাঠিয়ে দিতাম।"
    -"আর ঢাক ঢোল তাসা পার্টি পাঠাতিস না? তারপরে কম্পানির সবাই মায় আমার বস শুদ্ধু জেনে যেত আমি আসলে বিদ্যুতনগর প্ল্যান্টের সমস্যার সমাধান করতে আসিনি,থানায় পুলিশদের সঙ্গে খই ভাজতে এসেছি। এমন সব কথা বলিস না পার্থ!"
    -"তা সে না হয় ঠিক আছে, তাহলে আমি যাই এখন। তোর কাজ হয়ে গেলে ফোন করে দিস, এসে নিয়ে যাব।"
    -"আরে না রে, থাক না, অভি এসে পড়বে। পরে সব বুঝিয়ে বলব, তোর অনেক অবদান আছে এ কেসে, তোকে ছাড়া এ জট খুলতনা।"
    বলতে না বলতেই বাইরে গাড়ি থামার আওয়াজ, অভিনবরা এসে পড়েছে। এদিকে একজন কতগুলো চা নিয়ে এসেছে। চোরগোড়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে অভি ঢোকে, রাইকে দেখে একগাল হাসি, পার্থর দিকে চোখ পড়তে, তার হাত ধরে,
    -"পার্থ তো? আমি অভিনব। তুমি দারুন হেল্প করলে। তোমার জন্যেই মোতিলালের ব্যাপারটা রাইয়ের চোখে পড়ে নাহলে আমাদের কেস নিয়ে আজও দিল্লীতে বসে হাবুডুবু খেতাম, কিছুই কুলকিনারা পেতাম না।"
    রাই যোগ করে,
    -"শুধু তাই না, পার্থর দেওয়া খবরের জন্যেই তুই আজ একজন অপরাধীকে ধরতে পারবি।" অভির মনে পড়ে গেছে এমন ভাবে বলে,
    -"ইয়েস, থ্যাঙ্কস ইয়ার, গ্রেট জব। চোরগোড়ে।"
    -"স্যর।"
    -"আপনি তৈরী হয়ে নিন। আমাদের সঙ্গে বাইরে বিলাসপুরের দুজন পুলিশ আছে, আপনিও কিছু লোক নিয়ে নিন। রাই, তুই পার্থর গাড়িতে আয়। আমাদের ড্রাইভার রাস্তা চেনে বলছে, আমরা প্রথমে থাকব, বাকীরা আমাদের ফলো করবে।"

    চোরগোড়ে ফোর্স তৈরী করতে চলে গেল, অভি রাইকে বলে,
    -"বুঝলি, আজ ভোরে পুরো ফোর্স নিয়ে গিয়ে ঐ আদিবাসী বস্তিটা ঘিরে ফেলে পুলিশ, একটা সুবিধে হয়েছে, জায়গাটার কাছাকাছি কোনো গ্রামটাম বা অন্য বস্তি নেই, তাই খুব চুপিসাড়ে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে করা গেছে। ওদের মুরুব্বিদের সঙ্গে এখানকার স্থানীয় অফিসাররা অনেক করে বুঝিয়ে কথা বলার পরে বা তোর আন্দাজমত মোতিকে আশ্রয় ওরা কার কথায় দিয়েছে তা আমরা জেনে গেছি বলাতে ওরা শেষে সব স্বীকার করেছে।
    ওদিন রাতে লোকটা ওদের বলেছে মোতি র সঙ্গে সে রাতে দেখা করতে আসে, মোতির বাড়ির খবর দিতে। মোতি নেশা করেছিল, খুব বদ মেজাজে ছিল, কথায় কথায় তাকে মাওবাদীদের চর বলে গালি দেয়। পুলিশের কাছে গিয়ে পুরো বস্তির লোকদের ধরিয়ে দেবে বলে। এইসব শুনে তার মাথার ঠিক থাকেনি, দুজনের মধ্যে বচসা থেকে হাতহাফাই হয়েছে। এ বোধহয় একটু জোরে মেরে ফেলেছে, আড়েতাড়ে লেগে গিয়ে মোতি মরে গেছে। এখন লাশকে গায়েব করতে ওদের সাহায্য চায়।
    মোতিলাল বাইরের লোক আর এই খুনী ওদের উপকারী বন্ধু। ওরা লাশ জঙ্গলে পুঁতে বা জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু এদিককার জঙ্গল গভীর কিছু নয়, লোকের আনাগোণা আছে, কেউ যদি কিছু দেখে সন্দেহ করে। তাই লোকটিই বুদ্ধি দেয় যে লাশকে ভোরের কয়লার গাড়িতে ফেলে দিতে। পুলিশ যে লাশ বেওয়ারিশ বলে জ্বালায় সে লাশের ব্যাপারে কেউ ঘুরে দেখতে যাবেনা, কোনোদিন কোনো তদন্ত হবেনা।
    কয়লার গাড়ি ভোরের দিকে খুব আস্তে চলে, মুরুব্বীদের একজন লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে পড়ে, ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে একথা ওকথা বলে, সেই ফাঁকে অন্যরা লাশ ফেলে দেয়। ড্রাইভারের সন্দেহ হয় না কারণ এদিকে গাঁয়ের লোকে প্রায়ই কয়লা তুলে নিতে ওরকম করে গাড়ি থামায়, ড্রাইভার দেখেও দেখেনা।"
    -"কিন্তু ঐ আদিবাসী বস্তির লোকেরা তো শুনেছি খুব একরোখা, ভয় ডর নেই, পুলিশ সরকারকে ওরা মানেনা। এভাবে পুলিশের চাপে সব স্বীকার করে উপকারী বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল?"
    -"ব্যাপারটা সেজন্যে ঠিক ভয় দেখিয়ে হয়নি। বুঝিয়ে, ওদের সঙ্গে কথা বলে হয়েছে। এমনিতে ওরা সরল ধর্মভীরু লোকজন, নিজেদের মধ্যে থাকে। ওদের সাথে অন্যায় করলে প্রতিবাদ করেছে বা যদি সেজন্যে অস্ত্রও ধরে থাকে তবু ওরা অপরাধী বা চোরডাকাত তো নয়। আমি ওখানে পরে গেছি। আমাকে একজন অফিসার যে ওদের সঙ্গে কথা বলছিল সে বলল এই মোতিলালের মৃত্যুর ব্যাপারটা নিয়ে ওরা খুব একটা স্বস্তিতে ছিলনা।
    পুলিশের ভয় নয়, নিরপরাধ একজন মানুষের হত্যাতে সাহায্য করার জন্য একটা অপরাধবোধ। মোতিলাল ওখানে বেশ কয়েকমাস ছিল, এদের সঙ্গে তার কোনোদিন কোনো গন্ডগোল কিছু হয়নি, সে এদের শত্রু ছিলনা। যাইহোক, যে কারণেই হোক, এরা সব স্বীকার করে নিতে আমাদের কাজটা সহজ হয়েছে।"
    -"কিন্তু অসাবধানে লেগে গেছে আবার কী? পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট তো বলছে রীতিমত ট্রেনড হাতে মারা।"
    -"ওরকম ওদের বুঝিয়েছে। আসলে তো প্ল্যান করে মেরেছে।"
    চোরগোড়ে এসে জানালো তারা তৈরী। সবাই বেরিয়ে পড়ল, সবার আগে ইনোভাতে অভিনব ও তার সঙ্গীরা, মাঝখানে চোরগোড়েদের জীপ, তাদের পিছু পিছু পার্থর গাড়ি চলে। পার্থ সবটা জানতে চাইলে রাই তাকে একটু ধৈর্য্য ধরতে বলে।

    মিনিট চল্লিশের মধ্যে ওরা গন্তব্যে পৌঁছে যায়। টিনের চাল, ইঁট আর মাটির তৈরী সারি সারি চারটে কামরার ঘরে ক্লাস বসে, একদিকে একটা ছোট ঘরে অফিস ঘর আর মাস্টারদের বসার ঘর।
    স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, সামনে মাঠে কয়েকটা ছাগল চরছে, দুটো গরু বাঁধা আছে। গাড়িগুলো গিয়ে মাঠে দাঁড়ায়, নেমে ভেতরে ঢোকে শুধু অভিনব, চোরগোড়ে আর একজন কনস্টেবল। রাই আর পার্থও এগিয়ে দরজার কাছে দাঁড়ায়, একটু আড়ালে থেকে। একটা টেবিল আর দুটো চেয়ার রাখা আছে, সাইডে একটা বসার বেঞ্চ।
    লোকটা চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর রাখা খাতায় ঝুঁকে পড়ে কী লিখছিল। এদের পায়ের শব্দে মুখ তুলে তাকালো। রাই দেখল মাজা মাজা কালো মুখে দীপ্ত চাহনি, প্রথমটায় এদের দেখে বিস্ময়, পরক্ষণে সেটা কাটিয়ে উঠে,
    -"আরে সাব আসুন আসুন। আপনারা এখানে? গুপ্তা সাব?"
    -"আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।"
    লোকটা ঠিক বুঝতে না পারার মত মুখ করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওদের দিকে। অভি এবার কেটে কেটে প্রতিটি শব্দ পরিস্কার উচ্চারণে বলে,
    -"মাস্টার, মোতিলালকে খুন করার অভিযোগে আপনাকে আমরা গ্রেফতার করলাম। আপনার আদিবাসী বস্তির বন্ধুরা সব স্বীকার করেছে, আপনার নাম তারাই আমাদের বলেছে। আপনার কিছু বলার থাকলে আপনি থানায় গিয়ে বলবেন বা কোর্টে বলবেন।"
    সন্তোষ মাস্টার কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল,
    -"আপনারা ভুল করছেন। আমি কীজন্যে মোতিলালকে খুন করতে যাব। তার সঙ্গে আমার কোনো দুশমনী ছিলনা। তাকে আমি জানতামই বা কতটুকু, এ গাঁয়ের জামাই সে, ব্যস এটুকুই।"
    -"আপনি উঠুন, চলুন, থানায় গিয়ে যা বলার বলবেন বা উকিলও ডাকতে পারেন। আমরা এখানে আর একটুও অপেক্ষা করতে পারব না। আমাকে আজ দিল্লী ফিরতে হবে।"
    এবার সন্তোষ মাস্টার গর্জে ওঠে। শান্ত চোখদুটো কেমন বাঘের চোখের মত জ্বলজ্বল করে আর মুখখানাকে কেমন হিংস্র দেখায়।
    -"আপনারা এভাবে আমাকে দোষী সাজাতে পারেননা। বস্তির অশিক্ষিত গরীব লোকেরা টাকা খেয়ে আমাকে ফাঁসাচ্ছে। এসব ঐ নেতাজীর কাজ, সে নিজের দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে আমাকে ফাঁদে ফেলে, দলে নিজের কতৃত্ব ফিরে পেতে চায়। আপনারা আসল অপরাধীকে ধরতে পারলেন না, সে পালিয়ে গেছে, এখন আমাকে এসে অকারন হেনস্থা করছেন। আমার দলের লোকেরা আপনাদের ছেড়ে দেবেনা। আমাকে নিয়ে গেলে কাল থেকে পুরো এলাকা বন্ধ হয়ে যাবে। আদিবাসীদের ওপর আপনারা চিরটাকাল এমন অন্যায় করে থাকেন, আমাদের মানুষ বলে মনে করেননা। আমি কেন মোতিকে মারব,আমার মোতিকে মেরে লাভ কী?"
    এতসব অনিষ্ট সম্ভাবনাতেও দেখা গেল পুলিশ অফিসারদের হেলদোল নেই। চোরগোড়ে এগিয়ে গিয়ে মাস্টারের হাত ধরে বলল, "উঠুন, চলুন।" অভি কড়াসুরে বলল,
    -"আপনি মোতিকে মেরেছেন কারন তার স্ত্রীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ছিল।
    মোতিকে আপনি আপনার চেনা আদিবাসী বস্তিতে গা ঢাকা দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। অবশ্য আপনি ঠিক জানতেন না মোতিকে কিসের জন্যে নেতাজীর লোক খুঁজছিল, মোতি আপনাকে পুরো ব্যাপারটা বলেনি। আপনি শুধু বনোয়ারীর দলের হয়ে মোতি ওমপ্রকাশ আগরওয়ালের গাড়ির অ্যাক্সিডেন্ট করিয়েছে নেতাজীর কথায়, এটুকু জানতেন। ভেবেছিলেন সেই নিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু গন্ডগোলে এখন নেতাজীর দল মোতিলালের দুশমন, সময় এলে ওদের কাছে ধরিয়ে দিলে ওরাই আপনার পথের কাঁটা দুর করবে।
    এদিকে নেতাজী বনোয়ারীর বেরোনোর ব্যবস্থা প্রায় পাকা করে এনেছিল। বনোয়ারী বেরোলে তাদের বোঝাপড়া হত, মোতিলালেরও আর লুকিয়ে থাকার দরকার হবেনা। মোতিলাল এব্যাপারে খবর শুনেছিল বনোয়ারীর বাবার কাছে। এরকম কানাঘুসো শুনে সে আপনাকে বলেছিল খোঁজ নিতে, হয়ত বা খবর পাকা হলে তার বউকে জানাতে যে সে শীগগির ফিরবে। আপনি খোঁজ নিয়ে জানলেন খবর পাকা!

    মোতিলাল ফিরলে হয় আপনাকে মঙ্গলাকে ছাড়তে হয় নয় মঙ্গলা মোতিলালকে ছাড়ে।
    আপনি সামনের ইলেকশনের সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট, এ অবস্থায় আপনি কোনো স্ক্যান্ডালে জড়াতে চান না। মঙ্গলা মোতিলালকে ছেড়ে এলে বা আপনার সাথে এখনকার মত গোপনে সম্পর্ক রেখে গেলে, কোনোভাবে যদি কেউ কিছু আঁচ করে তো আপনার দল আপনাকে টিকিট দেবেনা। ইলেকশনের এখনো দেড় বছর বাকী, তার মধ্যে আপনি যদি মোতির বিধবাকে বিয়ে করেন, সব দিক বজায় থাকে। চাই কী অসহায় বিধবাকে উদ্ধার করেছেন বলে আপনার ভোটও বেড়ে যেতে পারে।"
    -"এসব সম্পূর্ণ বাজে কথা, বকোয়াস। আমাকে বদনাম করার সাজিশ। ঠিক আছে, আমিও দেখে নেব, এখুনি আমি আমার লোকেদের সঙ্গে কথা বলছি।"
    মাস্টার মোবাইল বার করতে, অভি বিরক্ত হয়ে চোরগোড়েকে বলল,
    -"আমি বাইরে যাচ্ছি, আপনি মাস্টারকে নিয়ে আসুন। আর মাস্টার, ওসব আদিবাসী সেন্টিমেন্ট, আপনার দল এসব দেখিয়ে সবসময় পার পাওয়া যায়না। অপরাধ অপরাধই, সে যেই করুক আর এই মুহূর্তে আমাদের মত পুলিশের কাজ আপনার মত অপরাধীকে ধরে আইনের হাতে সঁপে দেওয়া, আমরা তাই করছি। আমাদের ওসব বন্ধ টন্ধের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।"
    পার্থ এতক্ষণ রাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল, অভি বেরোতে ওরা অভির সঙ্গে গাড়ির দিকে এগোলো। তার মাঝে পার্থ রাইকে বলে,
    -"তুই জানতিস?"
    -"হ্যাঁ,মোতিকে যে মেরেছে তার খালি হাতে মিলিটারীর ট্রেনিংয়ের কায়দায় মারা আয়ত্তে আছে। এই কেসে কোনো প্রাক্তন বা বর্তমান মিলিটারী লোক চোখে পড়ে না। শেষে তোর দেওয়া খবর ও আরো কিছু সোর্স থেকে জানা গেল যে সন্তোষ মাস্টারের মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ। যে সময়টা সে উধাও ছিল সে সময় সে ঐ দলে যোগ দিয়ে ট্রেনিং নিচ্ছিলনা কে বলতে পারে। ওদের কিছু ট্রেনিংও এ ধরণের মিলিটারীর মত হয়, কমব্যাট ট্রেনিং ইত্যাদি কারন শেষ মেশ তো লড়াই সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে, তাই তাদের মত করে সবকিছু শিখতে হয়।
    একসময় বনোয়ারীকেও সন্দেহ করা হয়েছিল, তার সাথেও একটা ক্ষীণ যোগাযোগ আছে মাওবাদীদের, কিন্তু সেটা পরে দেখা গেছে ঐ টাকা নিয়ে বে-আইনী অস্ত্রশস্ত্র পাচারেই সীমিত ছিল। তাছাড়া বনোয়ারী তো মোতির মৃত্যুর সময় জেলে।"
    অভি রাইকে বলে,
    -"মাস্টারকে বিলাসপুর নিয়ে যাওয়া হবে এখনই। কাল ওখান থেকে মেয়ে পুলিশ সঙ্গে এনে মঙ্গলাকেও ধরা হবে। আজ ওর বাড়ির ওখানে একটা পুলিশ পাহারা দিতে বলে দিয়েছি। তোর কী মনে হয়, মঙ্গলা জানত মাস্টার মোতিকে মেরেছে?"
    -"পরিস্কার না জানলেও, আন্দাজ তো করত। আমার মনে হয়, মোতিলালের প্রতি মঙ্গলার অনেকদিনই কোনো টান ছিলনা। মাস্টার ওর গ্রামের ছেলে, হয়ত বিয়ের আগে থেকেই দুজনের সম্পর্ক ছিল, অনাথ চালচুলোহীন বলে ওর বাবা বিয়ে দেয়নি। এগুলো ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে। হাতরি গ্রামের বুড়ির কথা মনে নেই, সে তো সবার সামনে বলেছিল, মঙ্গলার আশিক আছে।
    তবে আমার মনে হয়না মোতিকে খুনের প্ল্যানে সে ছিল মাস্টারের সাথে। মোতি খুন হবার পরে হয়ত সে বুঝতে পেরেছিল মাস্টারের ব্যবহারে বা কথায়, তাই মোতির জন্যে তাকে শোক করতে দেখা যায়নি বটে কিন্তু মাস্টারের জন্যে উদ্বেগ ছিল ষোল আনা।"
    ওরা যে যার গাড়িতে উঠে দেখল চোরগোড়ে মাস্টারকে নিয়ে বেরোচ্ছে। একটু আগে চারদিক ফাঁকা ছিল, দুপুর বেলায় শুনশান গাঁয়ের রাস্তা, কিন্তু এখন কোথা থেকে মাঠের সীমানায় দুই এক জন করে লোকের জটলা। এতগুলো গাড়ি গ্রামে ঢুকেছে, কারুর না কারুর চোখে তো পড়েইছে। পার্থ গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে রাইকে শুধায়,
    -"এখন কোথায় যাবি? বিলাসপুর?"
    -"আরে, অভির সঙ্গে তো এ নিয়ে কথাই হল না। দাঁড়া ফোন করি।"
    অভির সঙ্গে কথা বলে রাই ঠিক করল, আজ ও পার্থর সঙ্গে ওদের বাড়ি ফিরে যাবে। কাল বেলা নটায় একটা ফ্লাইট আছে, তাতে অভি নিজের আর ওর টিকিট বুক করবে। কাল খুব ভোরে ও এখান থেকে গাড়ি নিয়ে বিলাসপুরে অভিনবকে মিট করবে তারপরে দুজনে এয়ারপোর্টে যাবে। পার্থ শুনে বলে,
    -"এমনভাবে এলি, দুদিন থেকে যা না। তোর কাছে পুরো ব্যাপারটা শোনা হবেনা, আমার কাছে বেশীরভাগটা কেমন ধাঁধা লাগছে। তুই টুকরোটাকরা যা বলছিস বা এই যা দেখলাম তাতে কিছুই পরিস্কার হচ্ছে না।"
    -"না রে, থাকার উপায় নেই। এখনো একটা বড় কাজ বা বলতে পারিস প্রধান কাজই বাকী রয়ে গেছে, কাগজ উদ্ধার। তার জন্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের দিল্লী যেতে হবে। আমি অবশ্য এসেছিলাম দুটো কারণে, একবার নিজে এসে সব দেখে যাব আর মঙ্গলা ও মাস্টারকেও দেখার ইচ্ছে ছিল। মাস্টারকে দেখলাম, মঙ্গলাকে দেখা হল না।"
    -"তোর গলার স্বরে কেমন ওদের জন্যে ফিলিংয়ের মত ঠেকছে যে।"
    -"ঠিক তাই। তুই ভাব, সন্তোষ মাস্টারের মত একটা মানুষ, গরীবের বন্ধু, সাহসী, বুদ্ধিমান, শিক্ষিত, সামনে একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যত ছিল। নিজের লোকেদের, আদিবাসীদের জন্যে কত কিছু করতে পারত, এলাকার হাল ফিরিয়ে দিতে পারত, সে শুধু মাত্র মঙ্গলার মত একটা বিবাহিত, ছেলের মায়ের জন্যে এতবড় ঝুঁকি নিল। নিজের সবকিছুকে দাঁও লাগিয়ে দিল।"
    -"ঝুঁকিটা খুব খারাপ নেয়নি, বুদ্ধি করে নিয়েছিল কিন্তু ভাগ্য বিরূপ। নাহলে কয়লার রেকে আসা দুদিনের পুরনো লাশ কেউ চিনতে পারবে কে ভাবতে পারে। আমি আজ পর্যন্ত যা লাশ দেখেছি কয়লার গাড়িতে সবই বেওয়ারিশ বলে চালান হয়েছে, এই একটি ছাড়া।"
    -"হুঁ, ভাগ্য খারাপ। এর চেয়ে মঙ্গলাকে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে বা অন্য কোনো রাজ্যে পালিয়ে যেতে পারত। আসলে রাজনীতির ক্ষমতার হাতছানির লোভ সামলাতে পারেনি। জানিস প্রথমবার অভির সঙ্গে যাই যখন ওর গ্রেফতারী অভিযানে, দেখেশুনে কী শরীর খারাপ করছিল আমার। এবারেও ভাবছিলাম কেমন লাগবে, তবু ইচ্ছে হয়েছিল দেখার। এবারে দেখলাম কিছু মনে হলনা, কোনো অস্বস্তি হচ্ছে না, মনে হয় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি।"
    পার্থ ওর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে, যেন খুঁটিয়ে দেখছে, তারপরে দুজনেই হেসে ফেলে। বিদ্যুতনগরের টাউনশিপে গাড়ি ঢুকতে রাই যেন অনেকক্ষন বাদে খোলা হাওয়ায় নিশ্বাস নেয়,
    -"চ, কয়েক ঘন্টা তো আছে, তিনজনে মিলে আড্ডা মারি চা পকোড়া নিয়ে। তোর প্রশ্নেরও উত্তর দেওয়া যাবে তখন।"
  • শ্রাবণী | 69.94.106.116 | ১৯ জুলাই ২০১৩ ১৬:৫৭495930
  • ******************************************************************
    ফ্লাইট ঠিক সময়েই ছিল। অভিনব আগে খবর দিয়ে রেখেছিল, টি ওয়ানে ওদের জন্যে গাড়ি অপেক্ষা করছিল। সকাল থেকে অভির সঙ্গে গতকালের ঘটনা নিয়েই কথা হচ্ছে খালি, দুজনেই যেন সামনে তাদের জন্যে যা রয়েছে অপেক্ষায় তা এড়িয়ে যাচ্ছে। অবশেষে গাড়ি এয়ারপোর্ট ছাড়াতে রাই বলে,
    -"নিশান থাকবে ওখানে?"
    -"হ্যাঁ, কাল সকাল থেকে দিন রাত আমাদের লোক ওয়াচে আছে। সোস্যাইটির গেটে প্লেন ড্রেসের লোক আছে সিকিউরিটি সেজে। ওবাড়ি থেকে বেরোনো কাজের লোক ও অন্যান্য লোকেদের ভালো করে চেক করছে। ওদের ব্যাঙ্কের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে, দরকার হলে লকার খোলানো হবে।
    একটা ভালো ব্যাপার ঐ সোস্যাইটির, কুরিয়র বা পোস্টে পার্সেল এলে ওরা গেটেই রিসিভ করে নেয় আর ওদের রেজিস্টারে ডিটেল লিখে রাখে। আজেবাজে লোক যাতে কুরিয়রের নামে ভেতরে ঢুকে চুরিচামারি এসব না করতে পারে তাই এই ব্যবস্থা। পরে সিকিউরিটির লোক ফ্ল্যাটে ফ্ল্যটে গিয়ে কুরিয়র দিয়ে আসে। নিশান বলছিল রেজিস্টারে ঐ কুরিয়রের লিস্ট দেখে আমাদের পার্সেলটা কবে এসেছে সহজেই জানা গেছে। কালকে কল লিস্টের ডিটেল পাওয়ার পরে তার সঙ্গে রেজিস্টার মিলিয়ে দেখলে মোটামুটি ঘটনাগুলোর একটা আন্দাজ করা যাচ্ছে।"

    রাইয়ের বুকজোড়া শঙ্কা, এই শেষ ধাপটা ভালোয় ভালোয় পার হলে বাঁচা যায়। এটাই সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা, ভুল হলে অসংখ্য জবাবদিহি ও আরো কী কী যে সইতে হবে কে জানে!
    -"তোর কী মনে হয় রাই, কাগজগুলো কোথায় আছে?"
    -"বাড়িতেই হবে। এরকম জিনিস কেউ নিজের হাতের নাগালের বাইরে রাখবেনা। কারণ সে তো মনে করে সে এই ব্যাপারে সন্দেহের উর্ধে। বাড়ির মধ্যেও আমার আন্দাজ ওর ছেলের ঘরে দেখতে পারিস।
    আজকাল যেমন টুপাই ক্লাস সেভেনে আসার পর থেকে ওর জিনিসপত্রে হাত দিলে খুব রাগ করে, তাই আমি ওর ঘর গুছোই না, খুব অগোছালো মনে হলে ওকেই বলি গোছাতে। এই বয়সের ছেলেমেয়েরা একটু এরকম হয়, প্রাইভেসী সচেতন, সবকিছুতে বড়দের নাক গলানো অপছন্দ ওদের।"
    -"তার মানে ছেলের ঘরের কোথাও রাখলে সেখানে কারুর হাত দেওয়া বা দেখার চান্স কম বলছিস? কিন্তু ছেলে তো পেতে পারে, বাজে কাগজ ভেবে ফেলে দেয় যদি।"
    -"হ্যাঁ, ছেলের মা বাড়ির সর্বত্র হাঁটকালেও ছেলের ঘরে হাত দেবেনা, আমার মত। আরে, সেরকম বুদ্ধি করে রাখলে ছেলেও দেখবেনা। পুরনো বইখাতার মধ্যে, আলমারির ভেতরের দিকে, পুরনো জামাকাপড়ের পেছনে। এটা তো সাময়িক ব্যবস্থা, পরে সুযোগমত বার করে নিলেই হবে।"
    -"আশাকরছি, আমাদের এত খোঁজাখুঁজির দরকার হবেনা। চাপ দিলে নিজেই স্বীকার করে তুলে দেবে আমাদের হাতে। ক্রিমিন্যাল তো আর নয়, একটু বেশী উচ্চাকাঙ্খী চালাক লোক হলেও ভদ্রলোকই তো।"

    কথার মাঝেই রাই দেখল গাড়ি ওদের শহরে ঢুকেছে। অভি কী বলেছে জানেনা, গাড়ি ওর বাড়ির দিকে না গিয়ে সোজা অভির যেখানে যাওয়ার কথা সেদিকে গেল। গেটের কাছে এসে গাড়ি থামতে অন্য একটা গাড়ি থেকে তিনজন এগিয়ে এল। একজন একটু অল্পবয়সী মতন, তাকে দেখিয়ে অভি বলল, "নিশান"। তারপর ওদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
    -"সব ঠিক আছে, কাগজপত্র এনেছো তো, ওয়ারেন্ট? ভেতরে যাওয়া যাক।" নিশান এক গাল হেসে ঘাড় নেড়ে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
    -"ম্যাডাম, গুড মর্নিং।" ওর কথায় রাই সম্বিত ফিরে পায়।
    -"অভি, আমি যাবনা তোদের সঙ্গে।" অভি অন্যদের কিছু একটা বলছিল, প্রথমে কান করল না। দ্বিতীয়বার বলাতে ওর দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালো, তারপর যেন বুঝেছে এমন ভাবে বলল,
    -"ঠিক আছে, তুই বাড়ি চলে যা। গাড়ি তোকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসছে। আমি পরে দরকার পড়লে তোকে ফোন করে নেব।"
    গাড়ি ওকে নিয়ে যখন টার্ণ নিচ্ছে তখন পেছনে তাকিয়ে দেখল অভিদের দলটা গেট পেরিয়ে ঢুকে যাচ্ছে।

    বাড়ি এসে তালা খুলে ঘরে ঢুকল রাই। আলোককে ফোন করার কথা মনে হলেও কী ভেবে করল না। চেঞ্জ করে একটা বই নিয়ে শুয়ে রইল মোবাইল পাশে নিয়ে। একটু পরে কী ভেবে মোবাইল সুইচ অফ করে দিল। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, কখন ঘুম ধরে গেছে টেরও পায়নি। ঘুম ভাঙল ল্যান্ড ফোনের আওয়াজে, আলোকের ফোন।
    -"তুমি এসেছ? আমি কখন থেকে তোমার মোবাইল ট্রাই করছি, চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। সুইচড অফ দেখে ভাবছিলাম ফ্লাইটে আছ বোধায়, কোনো কারণে লেট করেছে। ইন্ডিগোর সাইটও খুলছেনা অফিসে। এত দেরী হয়েছে দেখে শেষে ভাবলাম একবার বাড়িতে ফোন করে দেখি। কী ব্যাপার, ফোন বন্ধ কেন? কখন এলে? সব ঠিক আছে?"
    -"কী জানি? চার্জ নেই বোধহয় তাই বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, দেখিনি। কেন, তুমি কিছু শুনেছ?"
    -"কী শুনব? আমি তো তুমি এসেছ কিনা তাই ফোন করলাম। এখুনি বেরোচ্ছি লাঞ্চে, টুপাইয়ের আজ দেরী হবে, কী এক্সট্রা ক্লাস আছে। তুমি না এলে আমি তাহলে দেরী করে বেরোতাম।"
    -"না কিছু না। ঠিক আছে, এস তুমি। আমি ভাত বসাই।"
    উঠে মুখেচোখে জল দিয়ে রাই প্রথমে রান্নাঘরে গিয়ে ভাত বসাল, তারপর ফ্রিজ থেকে তরকারী ডাল সব বার করে একে একে গরম করল। সব শেষে ঘরে এসে ফোন অন করল। অনেকগুলো মিসড কলের মেসেজ, অভির, শ্রীমতীর। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে প্রথমে অভিকে ফোন করল। ওপার থেকে অভির উচ্ছসিত গলা,
    -"দারুন ব্যাপার। ভদ্রলোক সব স্বীকার করেছে। আমরা ঢুকে ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতে সোজা ছেলের ঘরে ঢুকেছি এমন ভাব করে যেন জানি ওগুলো কোথায় আছে। তাতেই বেশ একটা এফেক্ট তৈরী হয়ে গেল। আলমারিতে ছেলের পুরনো খেলনার ব্যাগে রাখা ছিল।
    আমি এখনই ওগুলো পুলিশ কমিশনারের হাতে দিয়ে এলাম। এখন ওগুলো পুরো সীল করা হচ্ছে, সরকারের কাছে যাবে। সুন্দরনগরের ওদের আবার ফ্রেশ অ্যাপ্লাই করতে হবে কোল ব্লকের জন্যে। ওমপ্রকাশের সঙ্গে সব ডীল কেউ আর অফিশিয়ালি মানবেনা। সে যাইহোক, আমাদের আর ওসব দেখার দরকার নেই, ও ওদের ব্যাপার।"
    -"অভি, ওকে কী তোরা অ্যারেস্ট করেছিস?"
    -"জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিয়ে এসেছি, তবে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই কাগজগুলোর অস্তিত্ব এখন আর স্বীকার করা হচ্ছেনা যখন তার চুরি নিয়ে কারোর বিরূদ্ধে কেস চলে কী করে। একটু ধমকানি, ওয়ার্নিং ইত্যাদি দেওয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে এই কাগজ নিয়ে কোনো কথা না ওঠে। তোকে তো বলার কিছু নেই, এই কাগজগুলো যে ছিল তা আমরা সবাই ভুলে যাব। তুই যা করলি না, তোর হেল্প ছাড়া কিছুই হতনা। অফিশিয়ালি সম্ভব না নাহলে তোকে গ্যালান্ট্রি মেডেল দিতাম রে।"
    রাই এই উচ্ছাসে সাড়া দিতে পারেনা যদিও অভির কথা শুনে অনেকটাই আশ্বস্ত হয়।
    -"অভি, আমাকে আলোককে বলতে হবে। নাহলে অনেক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে রে।" অভি ওর কথা শুনে প্রথমটায় চুপ থাকে, তারপর বলে,
    -"তুই যা ভালো বুঝিস। আমার তোর ওপর ভরসা আছে।"

    আলোক এল যখন তখন রাই খাবার বেড়ে টেড়ে রেডি।
    -"আগে খেয়ে নিই চলো। খুব খিদে পেয়েছে, প্লেনে তো খাইনি কিছুই, বাড়ি এসেও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।" খাওয়াদাওয়ার শেষে দুজনে বসার ঘরে এসে বসে। আলোক উৎসুক,
    -"কী হল ওখানে? ধরা পড়ল লোকজন।" রাই আলোককে সন্তোষ মাস্টার আর মঙ্গলার গল্প শোনায়। এতদিন যা বলেনি সেগুলূ একটু একটু করে বলে। আলোক খুব প্রশংসা করে ওর, অভির,
    -"জয়ন্তও তোমাদের তাহলে দারুন হেল্প করেছে বল। ওর জন্যেই তোমরা দীনেশ ড্রাইভারকে ধরতে পারলে আর পার্থের জন্যে সন্তোষ মাস্টারকে।"
    -"আলোক, আরেকটু গল্প বাকী আছে।"
    -"মানে?"
    -"ওমপ্রকাশের কাগজগুলো আজ সকালে জয়ন্তর বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে।"
    আলোক কিছুক্ষন কেমন বেভুলের মত তাকিয়ে থাকে, তারপর আস্তে আস্তে বলে,
    -"জয়ন্তর বাড়ি থেকে? জয়ন্ত নিয়েছিল ওগুলো। কেন? কিন্তু জয়ন্ত তো অ্যাক্সিডেন্টে জখম হয়ে চলার মত অবস্থায় ছিলনা। ও কাগজ চুরি করবে কেমন করে? রাই, কোথাও কিছু ভুল হচ্ছে না তো।"
    -"তুমি ভালো করে আমার কথা শোনো। আর জয়ন্তর এমনিতে কিছু হবেনা, ওর বিরূদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হবেনা। কারণ তাহলে কাগজগুলোতে কী আছে সে নিয়ে কথা উঠবে, সেটা সরকার এখন চায়না। আসলে জয়ন্ত কাগজগুলো চুরি করেনি, মোতিলাল করেছিল।
    মোতিলালের সঙ্গে জয়ন্তর ভালো আলাপ হয়ে গিয়েছিল সেদিন রাস্তায়। যেমন হয় আজকাল, গাড়িতে উঠে ড্রাইভার ও যাত্রী দুজনেই মোবাইল নাম্বার এক্সচেঞ্জ করে, এইভাবে জয়ন্তর নাম্বার মোতির কাছে রয়ে যায়।
    আমার মনে হয় জয়ন্ত দিল্লীর বড় সাহেব, রাস্তায় কাজকম্ম নিয়েও গল্প হয়ে থাকবে কথায় কথায়। জয়ন্ত হয়ত বলে থাকবে যে কাজের দরকারে মোতি তার সাথে যোগাযোগ করে যেন। জয়ন্ত আগরওয়াল কম্পানিতে ভালো পদে আছে, সে চাইলে ওকে দিল্লীতে এনে কম্পানিতে চাকরি দিয়ে নিজের খাস ড্রাইভার করে রাখতে পারত।
    মোতি হয়ত সেজন্যেই জয়ন্তকে ওমপ্রকাশদের গাড়িতে ওঠাতে ইতস্তত করেছিল, এটা আসল দীনেশ জানতনা, সে তাই গোয়েন্দাদের দেওয়া বয়ানে এরকম কিছু না বললেও, জয়ন্ত নিজে বলেছে।
    হতে পারে মোতি এমনিই জয়ন্তের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, সে কেমন আছে, সুস্থ হচ্ছে কিনা জানতে ফোন করে। জয়ন্ত অবশ্য মোবাইল সবসময় বন্ধ রাখত বাড়ি ফেরার পরে কিন্তু শ্রীমতী বলেছে তাতাই নিয়মিত ফোন চার্জ দিত, অন করত। মোতির নাম্বার দেখে জয়ন্ত হয়ত ফোন করেছে ওকে। এই কমাসে জয়ন্তর কল লিস্টে বেশ কয়েকবার মোতির নাম্বার আছে।

    মোতি তখন একা, গা ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছে। বনোয়ারীও নেই যে তাকে গাইড করবে। ছেলেকে দেখতে লুকিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথাটা মঙ্গলার বাবা সন্তোষ মাস্টারকে বলে দিতে, সন্তোষ তক্কে তক্কে থেকে ওকে ধরে। তখন ও সন্তোষকে সব কথা বললেও কাগজের কথা চেপে যায় বলে আমার ধারণা। মাস্টার এই কাগজের কথা জানলে সে মোতিলালের কাছ থেকে ওটা নেওয়ার চেষ্টা করত। মাস্টারের সাথে নেতাজী বা তার লোকেদেরও সদ্ভাব নেই, তাই তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়না। মাস্টার ভাবে ঐ খনিতে গন্ডগোল করানোর মত অজিতের হয়েই নেতাজী তার কাকার অ্যাক্সিডেন্ট করিয়েছে। সে এদিকে নিজের মতলবের কথা ভাবে, মোতিলালকে বন্ধু সেজে আদিবাসী বস্তিতে পাকা আস্তানা করে দেয়। আমার মনে হয় মোতিলাল এর পরেও মাঝে মাঝে স্কুলে এসে কানহাকে দেখে যেত।
    এদিকে বনোয়ারী ভেবেছিল অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তাকে বার করে নেবে নেতাজী, নিজেরই গরজে। কিন্তু নেতাজীর ক্ষমতা এখন কমে আসছে,তাই কাজটা সহজ হয়না বা যাই কারণেই হোক, অনেকটা সময় চলে যাচ্ছে। মোতিলাল অধৈর্য্য হয়ে পরে এবং কাগজগুলো নিজের কাছে রাখতেও তার ভয় হয়।
    এদিকে সন্তোষ তাকে বারন করে রেখেছে বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ির দিকে যেতে, শত্রুপক্ষ নজর রাখছে।
    সন্তোষ ছাড়া খালি বনোয়ারীর বাবার সঙ্গে যোগাযোগ তার, কিন্তু সে বুড়োমানুষ, ছেলে যা বলে তাই করে, মোতিকে সে সাহায্য করবে কী ভাবে!
    এ অবস্থায় মোতিলাল একদিন জয়ন্তকে জানায় তার কাছে ওমপ্রকাশের জরুরী কাগজ আছে, হয়ত সে জয়ন্তর পরামর্শ চায়, বনোয়ারী না বেরোলে কী করবে তা নিয়ে। কিভাবে পেয়েছে নাও বলতে পারে, কেউ রাখতে দিয়েছে যে এখন জেলে। মনে হয়না দাসানি সেজে ঐ গোয়েন্দারা এসে বলার আগে জয়ন্ত জানত অ্যাক্সিডেন্টের ওখান থেকেই কাগজ চুরি হয়েছে।
    মাস্টার যতই হোক নেতাজীর দলের লোক, কোনদিন দুজনের ভাব হয়ে গেলে তাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে, মোতির মনে এই ভয়ও থাকা স্বাভাবিক।
    আমার মনে হয় জয়ন্ত কাগজের কথা শুনে বুঝতে পারে, কোন কাগজ। সে বুদ্ধিমান লোক, মোতিলালকে পরামর্শ দেয় ওগুলো ওকে পাঠিয়ে দিতে। সে ওগুলো ঠিক লোকেদেরকে দিয়ে তার বদলে মোতিলাল বা দীনেশকে টাকা চাকরি ইত্যাদি পাইয়ে দেবে।
    মোতিলাল কুশমুন্ডা থেকে কুরিয়র করে জয়ন্তকে কাগজগুলো পাঠায়। জয়ন্ত ঐ কাগজ পেয়ে অজিত আগরওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কোল ব্লক না পেলে সুন্দরনগর এক হাতি পোষার মতো প্রজেক্ট হয়ে দাঁড়াবে। ওখান থেকে লাভ করা খুব মুশকিল হবে। কিছুদিন পরে সুন্দরনগর হয়ত ওদের বন্ধই রাখতে হবে।
    অজিত এমনি খনি এলাকার সব ঘাঁতঘোঁত জানে। ওরা দুজনে ঠিক করে ওমপ্রকাশের বউ ছেলের সঙ্গে ভাগাভাগিতে এরা সুন্দরনগরের শেয়ার নিয়ে নেবে। তারপরে ঐ কাগজ দেখিয়ে খনির কাজ চালু করবে। সুন্দরনগরের মালিকানা পুরোপুরি ওদের হাতে আসবে এবং সস্তায় কয়লা পাবে বলে সেখান থেকে লাভও হবে অনেক। জয়ন্তকে ওরা হয়ত বিজনেস পার্টনার করত এবং সুন্দরনগরের পুরো দায়িত্ব দিত, এমনিতেই সে ইঞ্জিনীয়ারিং হেড, প্রজেক্ট সম্বন্ধে খুব ভালো জানে। সেজন্যেই জয়ন্তকে অজিত আবার অফিসে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল এত সুযোগ সুবিধে দিয়ে। মোতিলাল বা যাকে জয়ন্ত দীনেশ বলে জেনেছিল, তাকে জয়ন্ত সুন্দরনগরে ভালো মোটা মাইনের কোনো কাজে লাগাবে ভেবেছিল হয়ত।
    জয়ন্তর মোবাইলে শেষের দিকে অজিত আগরওয়ালের কল বেশী অথচ জয়ন্তর এমনিতে অজিতকে রিপোর্ট করার কথা নয়। এবার জয়ন্ত বা অজিত কেউই জানতনা যে ঐ কাগজের রাজনৈতিক মূল্য কতখানি, বা তার জন্যে পুলিশ কতটা হন্যে হয়ে ওগুলো খুঁজছে। তাই সুন্দরনগর প্রজেক্ট হাত করা ছাড়া তাদের অন্য আর কোনো মোটিভ ছিলনা। মোতিলালকে সন্তোষ মাস্টার সম্পূর্ণ অন্য কারণে খুন না করলে কিন্তু এই প্ল্যানটা খুব সম্ভব সাকসেসফুল হয়ে যেত।"

    আলোক অনেকক্ষণ কিছু কথা বলেনা,
    -"কিন্তু এবার জয়ন্তর কী হবে? চাকরিটা ওর আর থাকবে? অজিত আগরওয়াল নিজেই তো ফেঁসে আছে।"
    রাই আলোককে একটু ধমক দিয়েই বলে,
    -"জয়ন্ত লোভ করেছে, একটু আধটু তার কুফল তো পেতেই হবে। কাগজ নিয়ে অজিত আগরওয়ালের সঙ্গে না মতলব ফেঁদে ওদের উকিলের হাতে তুলে দিলে মিসেস ওমপ্রকাশ বা অন্যান্যরা হয়ত কৃতাজ্ঞতাস্বরূপ ওকে এমনিই লিফট দিত। তবে ওর বিরূদ্ধে কোনো স্টেপ তো নেবেনা কেউ তাই যে কোনো চাকরী ও আবার পেয়ে যাবে, এত অভিজ্ঞতা, সুস্থও হয়ে উঠছে। দ্যাখো, বনসালরাই না রায়গড়ের জন্যে নিয়ে নেয়।"
    আলোক খুব একটা সন্তুষ্ট হলনা এই সমাধানে তবে কিছু বলতেও পারেনা, বলার মুখ রাখেনি বন্ধু। অবশ্য এর পরে জয়ন্ত নিশচয়ই ওর সাথে আর বন্ধুত্ব রাখবেনা।
    এতক্ষণে রাইয়ের মন একটু হাল্কা হয়, আলোককে নিয়ে চিন্তা ছিল কিন্তু সে এমনভাবে সব বুঝিয়েছে, আলোকের আর কিছু বলার ছিলনা।

    ঘরে এসে বিছানায় গা এলিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে কল লিস্টে শ্রীমতীর নাম দেখল। একা হয়ে যাবে মেয়েটা খুব, রাইয়ের খারাপ লাগছিল। আচ্ছা এখনো কি ও অ্যাক্সিডেন্টের স্বপ্ন দেখে? কীসব স্বপ্নের কথা বলত, ঘোড়ার হেডলাইট। এরপরে জয়ন্ত কি ওর সাথে খুব খুব খারাপ আচরণ করবে, রাইয়ের জন্যে রাগ ক্ষোভ সব শ্রীমতীর ওপর মেটাবে? কিন্তু সে কীই বা করতে পারে। নম্বরটার দিকে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ, একটা ফোন করে দেখবে? এখনো ঘুম পাচ্ছে, ক্লান্ত লাগছে, এখন আর এসব ভালো লাগছেনা।
    কী ভেবে শেষে নতুন মেসেজ টাইপ করতে শুরু করল,
    "ভালো থেকো শ্রীমতী, তোমার মত মানুষদের ভালো থাকতেই হবে নাহলে আর কেউ ভালো থাকবেনা পৃথিবীতে। অন্তত আমাদের মতদের জন্যে, তুমি ভালো থেকো - রাই"।

    ***********************************************(শেষ)
  • | 24.97.176.132 | ১৯ জুলাই ২০১৩ ১৭:০৯495931
  • অ্যাইত্তো! এইবারে পুরোটা পড়ব। আমি সমানে কাল থেকে এসে দেখে যাচ্ছি শেষ হল কিনা। তোমার ফ্লো দেখেই বুঝেছিলাম শিগগির শেষ হবে। :-)
  • kumu | 133.63.252.67 | ১৯ জুলাই ২০১৩ ১৭:২১495932
  • অস্ম্ভব উপভোগ্য, ভীষণ বুদ্ধিদীপ্ত প্লট, পরিশ্রম ও আন্তরিকতার ছাপ স্পষ্ট।
    বুদ্ধির খেলা খুব উপভোগ করলাম

    তুমিও খুব খুব ভাল থাকো শ্রাবণী।সোনার মাউস হোক।
  • nina | 22.149.39.84 | ১৯ জুলাই ২০১৩ ১৭:৪৩495933
  • কুমুর প্রতিটি কথায় ক্ক!!
    শ্রাবণী --১০০/১০০
  • 4z | 209.119.232.234 | ১৯ জুলাই ২০১৩ ১৭:৪৪495934
  • আবার আবার টুপি খুললাম।
  • kb | 213.110.243.21 | ১৯ জুলাই ২০১৩ ২২:৪৬495935
  • দারুন। খুবই ভালো লেগেছে। আগের গল্পের থেকে বেশ জটিল।
  • S | 139.115.2.75 | ২০ জুলাই ২০১৩ ০২:০১495936
  • নেক্স গল্প কবে? এবারে রাইকে একটু কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হোক।
  • ranjan roy | 24.99.154.52 | ২০ জুলাই ২০১৩ ০২:১৫495937
  • আপনি গড়ি তোলে বিপদজাল,
    আপনি কাটি দেয় তাহা!

    আমরা তো বলবই-বাহা! বাহা!

    আপনিও খুব ভালো থাকুন।
  • শ্রাবণী | 69.94.106.38 | ২০ জুলাই ২০১৩ ০৯:০৫495938
  • রাই আর কোথাও ঘুরতে যাবেনা বা গেলেও সেখানে গিয়ে গোয়েন্দাগিরি করবেনা। এই টাও শেষ হবে ভাবিনি, শুধুমাত্র এখানে কিছু জনের উৎসাহে আর জ্বরে হল।
    পড়ার জন্যে থ্যাঙ্কস, তবে এই শেষ, রাই এবার থেকে শুধু মন দিয়ে চাকরি আর সংসার করবে!:)
  • phutki | 24.96.75.165 | ২০ জুলাই ২০১৩ ১২:০১495940
  • কি সব্বোনাশ!!!! না না। চাকরী আর সংসারের সাথে বুদ্ধি খাটানোর বাধা কোথায়? ও শ্রাবণীদি গো, এরকম বলতে নেই।
  • san | 213.88.22.133 | ২০ জুলাই ২০১৩ ১২:৩৬495941
  • বাঃ, বেশ !
  • kabya | 59.249.35.58 | ২১ জুলাই ২০১৩ ০১:৩৫495942
  • wow

    খুব ই ভালো লাগলো।
  • nina | 78.34.162.175 | ২১ জুলাই ২০১৩ ০২:৩৪495943
  • প্লিজ প্লিজ--যে রাঁধে সে চুল ও বাঁধে--রাই এমন আরও অনেক রহস্য-সমাধান করুক।
  • de | 69.185.236.53 | ২২ জুলাই ২০১৩ ১৫:২৬495944
  • রাই আরো অনেক রহস্য-সমাধান করুক -- শেষ দুটো এপিসোড যেন একটু তাড়াহুড়ো করে গোটানোর মতো লাগলো -- তাছাড়া অসাধারণ প্লট! এতো প্রাসঙ্গিক!

    রাইকে রিটায়ার করিও না শ্রাবণী --ঃ)
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ২২ জুলাই ২০১৩ ১৬:১৬495945
  • দারুন লাগলো, পিডিএফ চাই
  • jhumjhumi | 127.194.234.229 | ২৩ জুলাই ২০১৩ ১৭:৪১495946
  • খুব ভালো লাগলো। কিন্তু রাই রিটায়ার করলে চলবে কি করে? আমরা যে হাপিত্যেশ করে বসে আছি পরের গল্পের জন্য।
  • শ্রাবণী | 134.124.86.28 | ২৪ জুলাই ২০১৩ ১৭:১২495947
  • টই এভাবে তোলা খুব বাজে লাগে তবু ঐশিক, ঝুমঝুমি সবাইকে যারা পড়েছে ও যারা পড়বে থ্যাঙ্কস, ফাইন্যালি।

    আমার সময় লাগে আর আধাখ্যাঁচড়া কাজ আমার পছন্দের নয়, এটাই শেষ করতে পারছিলাম না বলে খারাপ লাগছিল। এরম অবস্থার মধ্যে আর পড়তে চাইনা :)
    তবে তাড়াহুড়ো তো করিনি, কেন এমন মনে হল জানিনা। সেরকম করলে আরো অনেক আগেই শেষ করে দিতাম।
    মজা করে এখানে রহস্য গল্প লিখতে শুরু করেছিলাম সেই কবে, এখন সত্যি শখ মিটে গেছে, ভাল্লাগে না!:)
  • i | 134.171.7.213 | ২৪ জুলাই ২০১৩ ১৭:২০495948
  • আমার এখনও পড়া হয় নি। অনেক অনেক পিছিয়ে আছি। কিন্তু শ্রাবণী , এরকম মনে হচ্ছে কেন? এতো মোটেও ভালো কথা নয়।
  • নেতাই | 131.241.98.225 | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ১২:৪২495949
  • খুবই ভালো হয়েছে শ্রাবণীদি।
    দারুন লাগলো পড়তে।

    গোয়েন্দা রাই এর আরো অভিযান হোক।
  • nina | 22.149.39.84 | ৩০ আগস্ট ২০১৩ ২৩:২১495952
  • থামিও না--
    রিয়া দির্ঘায়ূ হৌক---গোয়েন্দাগিরিতেও!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন