এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প : প্রতিচ্ছায়া

    shrabani
    অন্যান্য | ১১ অক্টোবর ২০১১ | ২১০০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • de | 69.185.236.53 | ১১ জানুয়ারি ২০১৩ ১৩:৫৪495853
  • দারুণ! আবারো ক্যারেকটারের ফুলঝুরি!
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ১১ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:০৭495854
  • ওফফফ আমার হাতে যে আর নখ নেই, টেনসন এ কি খাব?
  • নেতাই | 131.241.98.225 | ১১ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:১৪495855
  • এই যে,
    আমার হাতে নখ আছে।
    ঃ))
  • নেতাই | 131.241.98.225 | ১১ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:১৫495856
  • জমে গেছে
    চলুক
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ১১ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:২৩495857
  • @নেতাই কিন্তু আমারতো আর লুরু থেকে দিল্লি পজ্জন্ত লম্বা দাত নেই যে এখেন থেকে তোমার নখ খাব :D
  • jhumjhumi | 127.194.247.137 | ১১ জানুয়ারি ২০১৩ ১৮:১২495858
  • নেতাইএর বোধ্হয় দিল্লী তেকে লুরু পজ্জন্ত লম্বা হাত আছে। ঃ-)
  • de | 190.149.51.66 | ১১ জানুয়ারি ২০১৩ ১৮:১৫495859
  • নখ কেটে ঐশিক অব্দি পার্সেল করো নেতাই -- সাপ্লাই-সোর্স যখন নিজেই বলে দিয়েছো -- ঃ)
  • um | 125.113.42.99 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ ১৪:৩৭495860
  • আজ ১ হ্প্তা ।।
  • kumu | 132.160.159.184 | ১৬ জানুয়ারি ২০১৩ ১৪:৫৪495861
  • ইয়েস,আমিও তুলতে যাচ্চিলাম।
    ম্যাম শ্রাবণী,অ ম্যাম,এইদিকে একবার কিরপা করেন্না কেনে-
  • nina | 79.141.168.137 | ১৭ জানুয়ারি ২০১৩ ০৭:২৪495863
  • অরিব্বাস!! আমি বোকার মতন ভাবছিলম এট আগের গল্প-একসঙ্গে করা----তাপ্পর দেখি --নতুন!!!!
    উফ! একেবারে জমে ক্ষীর অলরেডি---এক্দিক থেকে ভাল হল একসঙ্গে অনেকটা পড়লাম ----কিন্তু এবার ?!! ও শ্রাবণী--কই গেলে---
  • শ্রাবণী | 127.239.15.101 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:২৮495864
  • ইন্সপেকটর চোরগোড়ের মত এমন ভদ্র ছিমছাম পুলিশ অফিসার এই রকম একটা মফস্বলের থানায় দেখবে রাই আশা করেনি। পার্থর সঙ্গে নিজে বেরিয়ে এল ওদের গাড়ির কাছে, নেমে থানায় এসে চা খেতে অনুরোধ করল। চান্দ্রেয়ীর একেবারে মত ছিলনা, সে নানা ইশারায় স্বামী ও বোনকে বারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল কিন্তু এরা দুজনে যেন পা বাড়িয়ে আছে, অগত্যা তাকেও নামতে হল।
    থানার ভেতর অবশ্য যেমনটা সিনেমা টিনেমা দেখে মনে হয়, চোর ডাকাত আর বদ পুলিশের লোকে ভর্তি তেমন কিছু নয়। খালিই ছিল তবে অপরিস্কার ধুলো ভরা ছোট জায়গার ছোট থানা। লাশ কাঠঘোরায় পাঠিয়ে দিয়েছে, সেখানে পোস্টমর্টেম করে বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়া হবে। চোরগোড়ে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসাল এদের, ঋকের খুব ইচ্ছে সে অফিসার আঙ্কলের রিভলভার টা হাতে নিয়ে দেখে, কিন্তু আবদার করতে পারছিলনা আর তাই উসখুস করতে রইল। একটা কনস্টেবল আরো দুটো চেয়ার এনে দিল বাইরে থেকে সবার বসার জন্যে। চান্দ্রেয়ী মুখ বেজার করে ভুরু কুঁচকে চেয়ারে বসল। সকাল থেকে লাশের ঝামেলা ইত্যাদি মিটে যাওয়ার পরে চোরগোড়ে এখন ফ্রি, বেশ খোশমেজাজে। সামনের দোকান থেকে মালাই দেওয়া চা আনতে দিল, ঋকের জন্যে ফ্রুটি, সঙ্গে সমোসাও আনাচ্ছিল, এরা বারণ করল।
    পার্থ রাইয়ের সাথে আলাপ করাতে গিয়ে ওর পুলিশদের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা তুলল। বিশদ বলতে গেলে রাই বাধা দেয়, জানায় যে ঘনিষ্ঠ বন্ধু পুলিশ হওয়ার সুবাদে দু একটা কেস কাছ থেকে দেখেছে শুনেছে এইটুকুই। পুলিশের সম্বন্ধে তার ধারণা খুব ভালো, তারা আসলে যথেষ্ট করিতকর্মা হয়, নানারকম চাপের মধ্যে থেকেও বেশ ভালো কাজ করে ইত্যাদি। চোরগোড়ে যতটুকু শুনল তাতেই একাধারে মুগ্ধ ও খুশী। চা খাওয়া শেষ হলে মোতিলালের সম্পর্কে যা জানা গেছে তা এদের জানায়।

    অনেকবছর নর্মদা ট্রান্সপোর্টে কাজ করেছে, সেই ছোট বয়স থেকে, এই পিওন টিওনের কাজ আর কী! মালিকের হাতরির ওদিকে জমি আছে, সেখানে সে কাজকম্মে যেত, তখন ছেলেটাকে ভালো লাগে, নিয়ে এসে কাজ দেয়। আগে সাদাসিধে ছিল, বয়স হলে একটু লায়েক হয়, বিয়ে থা করে। আসলে ট্রান্সপোর্টনগরের কালচার তো তেমন ভালো নয়, দু একটি বদসঙ্গী জোটে, তার মধ্যে একজন হল নর্মদার এক ড্রাইভার, বনোয়ারী। বনোয়ারীর কাছে গাড়ি চালানো শিখত, সাথে তার ফাইফরমাসও খাটত। মালিক প্রথমে ব্যাপারটা ভালো মনেই নিয়েছিল, ভেবেছিল এতদিনকার পুরনো বিশ্বাসী লোক, ড্রাইভারী শিখলে লাইসেন্স টাইসেন্স বানিয়ে দিয়ে বাড়ির গাড়ি চালাতে ওকেই রেখে দেবে।
    এর মধ্যে বনোয়ারী ও তার দু চারজন সঙ্গীসাথী মিলে নানা চুরির জিনিস মালিকের ট্রাকে পাচার করার ব্যবসা ফেঁদে বসেছিল, ওয়াগন থেকে কয়লা, কখনো জঙ্গলের বৈনী কাঠ। মালিক কিছুই জানতনা, একদিন ট্রাক ধরা পড়তে তখন জানতে পেরে শেষে বনোয়ারীকে তাড়িয়ে দেয়। তারপর থেকেই মোতিলাল বেয়াড়াপনা শুরু করল, কথা শুনতনা, কাজ বললে করতনা, মুখে মুখে তর্ক করত, বলত তাকে কম টাকা দিয়ে খাটিয়ে নেয় বেশী, আসলে বনোয়ারীই ওকে উস্কাতো এরকম করতে। বনোয়ারী বদনাম হয়ে গিয়েছিল, এ অঞ্চলের কেউ আর ওকে কাজ দেয় নি, পুলিশের খাতায় নাম উঠেছিল ওদের দলটার। এমনিতে ট্রান্সপোর্ট নগরে সবাই খুব যে একেবারে আইন মেনে চলে তা না, তবে তাদের অন্য ধরণের ব্যবসা, তার জন্যে পুলিশের সাথে আলাদা বোঝাপড়া আছে মালিকদের। স্থানীয় ভাবে ছিঁচকে চুরিটুরির মত ব্যাপারে নাম জড়িয়ে কেউ বদনাম হতে চায় না।
    মোতিলালের ইদানীংকার ব্যবহারে দিনদিন মালিক ওর ওপর খুব বিরক্ত হয়ে উঠছিল, শেষে একদিন না বলে দু তিনদিন না আসা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়ে ওকে জবাব দিয়ে দেয়। মোতিও খুব তেজ দেখিয়ে যে তার নাকি কাজের অভাব হবেনা,বলে চলে যায়। তারপর থেকে এরা তার খবর আর তেমন রাখেনি, তবে এটুকু জানত যে সে অন্য কোথাও কাজে ঢোকেনি। নর্মদার একজন কর্মচারী বলল, তাকে বনোয়ারীর দলের সঙ্গে দারুর দোকানে দেখেছে। ওরা এখনো লুকিয়ে চুরিয়ে অকাজ করে যায়, মোতিও হয়ত ওদের দলে ভিড়েছিল, তবে পুলিশের কাছে কোনো নালিশ ওর বিরূদ্ধে আসেনি কখনো।"

    -"আচ্ছা, বনোয়ারীর কাছে খোঁজ করেছিলেন?"
    চোরগোড়ে হাসল,
    -"না করিনি, করব। তবে কতটা কী জানা যাবে সন্দেহ আছে।"
    এরা অবাক হল, বনোয়ারী মোতির এত ঘনিষ্ঠ, শুনে যা মনে হয় একাধারে বন্ধু ও গুরু, তার কাছে তো আগে যাওয়া উচিত ছিল।
    -"মোতি যেদিন থেকে উধাও তার এক হপ্তা আগে বনোয়ারী জঙ্গলে জানোয়ারের চামড়া, সাপের খোলস এইসব পাচার করতে গিয়ে বনকর্মীদের হাতে ধরা পড়ে। এখন জঙ্গলের আইন খুব কড়া হয়েছে, কোর্ট থেকে তার তিনবছরের জেল আর জরিমানা হয়ে যায়, সে এখন জেলে। তবে একটা ব্যাপার, এখানে একজন লোক্যাল নেতার সাথে বনোয়ারীর খুব দহরম হয়েছিল, ইদানীং চাকরি যাওয়ার পর থেকে। ইলেকশনের সময় তাদের হয়ে ঘুরতে দেখা গেছিল, যদিও প্রকাশ্যে তারা ওকে তাদের লোক বলে স্বীকার করেনা। বনোয়ারী হয়ত ভেবেছিল পুলিশের হাত থেকে বেঁচে ব্যবসা করতে হলে এই উপায়, পলিটিশিয়ানদের ছাতার তলায় থাকা। খুব ভুল করেনি কারণ এর আগে ছোটখাটো দু একটা ব্যাপারে পুলিশ সেজন্যেই ওকে ধরতে পারেনি। এটাও যদি বনদপ্তরের ব্যাপার না হত তাহলে হয়ত এতটা শাস্তি হতনা। ওর উকিল খুব চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কিছু করতে পারেনি।"
    -"মোতিলাল এতদিন উধাও হয়েছিল কেন, কোথায় ছিল, সে সম্বন্ধে কিছু জানতে পারেননি? ঐ নেতাকে জিজ্ঞেস করুন না।" রাই জানতে চায়।
    -"জিজ্ঞেস করব তবে বললাম না, প্রকাশ্যে ওরা বনোয়ারীর সঙ্গে যোগাযোগ স্বীকার করেনা, মোতির কথা কিছু জানলেও বলবে না। এরা আপনাদের বড় শহরের মন্ত্রীদের থেকেও বেশী খতরনাক আর প্রভাবশালী, এদের হাত অনেক লম্বা। এ এলাকা ইন্ডাসট্রীর দিক দিয়ে যে জন্যে গুরুত্বপূর্ণ, খনি, জঙ্গল, রেলের নেটওয়ার্ক এসবের কারণে, ঠিক সেই জন্যেই বদমাশদেরও স্বর্গ এটা। আমরা ছোটামোটা সরকারী লোক, ফ্যামিলী ম্যান ম্যাডাম, আমাদের হাত এখানে খুবই ছোট। আপনার বন্ধু তো বড় অফসর, তার কাছে খোঁজ নেবেন কিভাবে কাজ চলে এসবদিকে। উনি এদিককার না হলেও বড় অফিসারের কাছে দেশের সবজায়গার খবর থাকে।"
    জিজ্ঞেস করতে হবেনা, লোকটার কথায় রাইয়ের বিশ্বাস হচ্ছে, পরিস্কার খোলামেলা ভাবে নিজেদের অবস্থানের কথা বলছে বাইরের লোকের কাছে
    যখন তা সত্যিই হবে। পার্থ এবার বলে,
    -"চোরগোড়ে সাব, মোতি কোনো কারনে কোনো খনিতে গিয়ে কাজ করছিল না তো? আমাদের ওয়াগনে তো লাশ আপনারা বলেন খনি থেকেই আসে।"
    -"তা হলে তো আপনি জানেন সাব, খোঁজ করে কোনো লাভ হয়না। আমি নতুন নতুন এসে দু একবার এরকম কেসে কুশমুন্ডা, গেবরা, এইসব এলাকায়, যেখান থেকে আপনাদের কয়লা আসে, সেখানে তল্লাসি করতে গেসলাম। কিছুই বার করতে পারিনি, এখন হাল ছেড়ে দিয়েছি। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট আসতে দু তিনদিন লাগবে, এখানে তো সব ব্যাপারেই বছরে মাস। তখন আশা করছি বোঝা যাবে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে কী কেউ মেরে ফেলেছে। এমনিতে তো বাইরে তেমন কোনো চোট দেখিনি, মাথাতেই লেগেছে মনে হয়। দেখি রিপোর্টে কী আসে। "
    পার্থ রাইয়ের দিকে তাকালো, চান্দ্রেয়ী অনেকক্ষণ থেকে ওঠার জন্যে ইশারা করছিল। রাইও বুঝল এই মুহূর্তে থানায় এর থেকে আর বেশী কিছু জানা যাবেনা। ওরা চোরগোড়েকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এল। অবশ্য তার আগে চোরগোড়ে কথা দিল যদি তদন্ত কিছু এগোয়, যার সম্ভাবনা অবশ্য খুব কম, তাহলে সে পার্থকে জানাবে।

    বাড়ি এসে রাই গোছগাছ করে নিল, ভোর তিনটের সময় বেরোনো। দুবোনে ঠিক করেছে রাতে আর না ঘুমিয়ে গল্প করেই কাটিয়ে দেবে। রাই একটু দ্বিধায় ছিল, পরদিন ঋকের স্কুল, পার্থর অফিস, চান্দ্রেয়ীর অনেক কাজ কিন্তু চান্দ্রেয়ী সে কথা উড়িয়ে দিল। পার্থর চেনা গাড়ি আসবে, অনেকবার ফোন করেছে সে চেনা আর ভালো ড্রাইভার পাঠানোর জন্যে। রাতে খাবার পর বাড়িতে ফোন করল রাই। মেয়ের সঙ্গে কথা সারা হলে আলোক ধরল,
    -"আরে, সকালে তোমার নাম্বার লাগছিল না, নট রিচেবল আসছিল। আমি অনেকবার চেষ্টা করলাম।"
    রাই আগের রাতেই জানিয়েছিল তাদের সেদিনের বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যানের কথা।
    -"কেন, তুমি তো জানতে আমরা বেড়াতে যাব আজ। হঠাৎ এমন কী দরকার পড়ল?"
    -"সে তো জানতাম, কিন্তু সেখানে যে তোমার ফোন কাজ করবেনা তাতো জানতাম না। অভিনব ফোন করেছিল, কী কাজে দিল্লী এসেছে, আমাদের বাড়ি আসবে। তুমি নেই শুনে এলনা।"
    রাইয়ের একটু আফশোষ হল। অভিনব ওর স্কুলের বন্ধু, পুলিশের ডি এস পি, এখন মীরাটে পোস্টেড। এর আগে দুরে ছিল, অনেকদিন তাই দেখা সাক্ষাত নেই। মীরাটে বদলি হয়ে আসা থেকে দুপক্ষেই অনেক প্ল্যান প্রোগ্রাম হচ্ছে একে অপরের ওখানে যাবার কিন্তু হয়ে ওঠেনি এখনো। এতদিন পরে ঠিক এই সময়ে যখন সে নেই তখন আসতে হয় অভিকে!
    -"তা আমি নেই তো কী হয়েছে, আসত, তুমি আর টুপাই তো আছো। এসে রাতে থাকতে বললে না কেন?"
    আলোক মজা করে বলল,
    -"আরে তোমার ফ্রেন্ড যদি তুমি না থাকলে আসতে না চায়, আমি কী করব? তবে বিশ্বাস কর, বলেছিলাম। ও আজ থাকবে দিল্লীতে, তুমি কাল সকালে আসছ শুনে বলল তাহলে কাল বিকেলের দিকে বাড়ি ফেরার পথে আমাদের বাড়ি হয়ে যাবে। ঠিক বুঝলাম না, বলল আমার সাথে দরকার আছে, একটু চেষ্টা করে যেন তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরি। গোয়েন্দা তো তুমি, পুলিশ সাহেবের হঠাৎ তোমাকে ছেড়ে আমার সঙ্গে কী দরকার পড়ল!"
    -"সেটা কাল তার কাছেই জেনে নিও। গোয়েন্দা যখন নও, মিছে মাথায় জোর দিতে যেওনা, মাথাব্যথাই সার হবে।"

    অভিনব অনেকদিন বাদে দিল্লী এসেছে, স্বাভাবিক ভাবেই তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবে সময় করে। কিন্তু সত্যিই তো, আলোকের সঙ্গে অভির কী দরকার পড়ল! বাকী রাতটুকু কথা গল্পে কাটিয়ে দেবার সংকল্পে তোড়জোড় করে বসলেও একটু পরেই চান্দ্রেয়ী ঢুলতে লাগল, সারাদিনের ধকলে রাইও ক্লান্ত। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। তবু মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করে চোখ বুজে শুয়ে রইল, সারাদিনের নানা ঘটনা ভিড় করার ফাঁকে অভির আসার ব্যাপারটাও উঁকি দিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ যেন মনটা আকুল হয়ে ওঠে নিজের বাড়ি, চেনা শহরে, ফেরার জন্যে।
  • শ্রাবণী | 127.239.15.101 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:৩৭495865
  • ********************************
    ছুটির দিনে সব কিছুই ধীরে সুস্থে ঢিমেতালে চলে শ্রীমতীর সংসারে। তাতাই রবিবারের জলখাবারে লুচি বা আলু পরোটা খাবে তাও আবার মায়ের হাতের। এমনি স্কুল নেই বলে এদিন ঘুম থেকে ওঠাও একটু দেরী করে হয়। আগেও তাই হত, জয়ন্তও রবিবার জলখাবার থেকে শুরু করে সব খাবারেই ভালোমন্দ খুঁজত। এমনিতে স্বাস্থ্যসচেতন খুব কিন্তু এই একটা দিন সেসব রোজকার হেলদি ডায়েট থেকে ছুটি। এখন তো রোজই ছুটি তাই ছুটির দিনে আলাদা করে আর জয়ন্তের রুটিনের কোনো হেরফের হয়না। সময়ে ওঠে, রামনিবাসও এসে পড়ে তার রোজের সময়ে। কিছুদিন হল অবশ্য খাবারদাবারের ব্যাপারটা একটু আগের মত হয়েছে। অল্প খায় তবে ছেলের পছন্দসই ব্রেকফাস্ট, তার সাথে টেবিলে বসে। সেজন্যে শ্রীমতী চেষ্টা করে খুব বেশী রুটিনের এদিক ওদিক না করতে।
    রান্নাঘরের ঝামেলা মেটাতে আজ দেরী হয়ে গেল, তরিবতের খাবার হলে তাকেও রান্নার মেয়ের সঙ্গে লাগতে হয়। কাজের লোকেরা সব এক এক করে চলে গেল, তাতাই গেল গীটার স্কুলে। খুব দুরে নয়, আগে শ্রীমতী গাড়িতে ছাড়তে যেত, এখন নিজে রিক্সা নিয়ে চলে যায়। সাইকেলে যাবে বায়না করেছিল, মা বাপ কেউ রাজী হয়নি, গাড়িঘোড়ার রাস্তায়।
    চা নিয়ে বারান্দায় এল যখন বেশ খানিকটা বেলা হয়ে গেছে। ভেবেছিল জয়ন্তর গোমড়া মুখ দেখবে কিন্তু না, জয়ন্ত কী যেন চিন্তায় মগ্ন। চা দিতে সম্বিত ফিরে পায় তবে টুকটাক কথাবার্তায় শ্রীমতী বুঝতে পারে আজকের আড্ডা কেমন যেন বেতালা, জয়ন্তর মন অন্য কিছুতে। একটু উৎকন্ঠা জড়ানো স্বরে সে জানতে চায়,
    -"কী ব্যাপার, শরীর ঠিক লাগছেনা? তোমাকে কেমন যেন লাগছে।"
    জয়ন্ত প্রথমে উত্তর করেনা, একটু কী চিন্তা করে। তারপরে যেন মনস্থির করেছে এমন ভাবে বলে,
    -"আমি অফিসে ফোন করেছিলাম একটু আগে। ওখান থেকে অ্যালায়েড ইনসিওরেন্সের ফোন নাম্বার নিয়ে সেখানে ফোন করলাম। ওদের ওখানে দাসানি বা সিং বলে কোনো এমপ্লয়ী নেই।"
    শ্রীমতী একটু বেভুল মত হয়ে গেল, কে দাসানি কার কথা বলছে জয়ন্ত! তারপরে মনে পড়তে একটু অবাক, জয়ন্ত ঐ লোকদুটোর কথা এত ভাবছে! তার জন্যেই কি কাল তাতাইকে দিয়ে মোবাইল চার্জ করালো? সেদিন ওদের সঙ্গে যখন কথা বলছিল তখন তো মনে হয়নি জয়ন্ত ওদের কথাবার্তা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছে বলে, মুডও সেসময় ভালোই ছিল। মনের ভাব চেপে রেখে বলল,
    -"ওরা অন্য কোনো ইন্সিওরেন্স কোম্পানি থেকে আসেনি তো? তুমি তোমাদের অফিসে ওদের নাম করে খোঁজ নিয়েছিলে? হতে পারে মিঃ আগরওয়ালের নিজের ইন্সিওরেন্স কোম্পানি আর কর্মচারীদের ইন্সিওরেন্স কোম্পানি আলাদা।"
    -"তা কেন হবে? এরকম তো হওয়ার কথা নয়।"
    -"তা হলেও তুমি একবার মিঃ আগরওয়ালের অফিসে ফোন করনা, ওর পার্সোন্যাল অ্যাসিস্টান্ট বা ওরকম কোনো কাউকে যে ওনার ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো দেখত।"
    জয়ন্ত তবু দোনোমোনো, সরাসরি আগরওয়ালের অফিসে ফোন করাটা ঠিক হবে কিনা। তাছাড়া অফিসে এখন কী ব্যবস্থা কিছুই জানেনা, ওমপ্রকাশের অফিস বা ওর স্টাফ এখনো আছে না তাদের এদিক ওদিক করে দেওয়া হয়েছে কে জানে। এর মাঝে কী ভেবে শ্রীমতী বলে ওঠে,
    -"দাসানি একটা কার্ড দিয়েছিল না, ফোন নাম্বার আছে, কিছু মনে পড়লে ফোন করতে বলেছিল।"
    জয়ন্ত এবার সচকিত,
    -"আরে হ্যাঁ, কোথায় কার্ড টা?"
    -"লিভিং রুমের কার্ডের বক্সটাতেই রেখেছি মনে হয়। আমি তো কোনো ভিজিটিং কার্ড ফেলিনা, ওতেই রেখে দি। দাঁড়াও নিয়ে আসছি।"
    কার্ডটা বক্সের ওপরেই ছিল। নিয়ে এসে দুজনে দেখল কার্ডে কোথাও অ্যালায়েড ইন্সিওরেন্স বা অন্য কোনো ইন্সিওরেন্স কোম্পানির নাম নেই। সেদিন শুধু নিয়েই রেখে দিয়েছিল, ওরা দুজনের কেউই দেখেনি কার্ডটা ভালো করে। দাসানির নামের নীচে লেখা আছে "খোঁজ", তার নীচে ঠিকানা ফোন নাম্বার। জয়ন্ত শ্রীমতীকে ফোন করতে বলে, শ্রীমতী নাম্বার দেখে ল্যান্ড লাইনের নাম্বারটা লাগায়। ওদিক থেকে একটি মেয়েগলায় বলে ওঠে,
    -"হ্যালো, খোঁজ ডিটেকটিভ এজেন্সী। আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?"
    -"মিঃ দাসানি আছেন?"
    -"না, উনি তো এখন অফিসে নেই, বেরিয়েছেন। আপনি ওনার মোবাইলে ফোন করতে পারেন অথবা মেসেজ রেখে দিন, উনি এলে যোগাযোগ করে নেবেন।"
    -"ঠিক আছে, আমি মোবাইলে ফোন করে নিচ্ছি।"

    জয়ন্তকে বলতে গিয়ে মনে পড়ল দাসানি বলেছিল তারা ইন্সিওরেন্স কোম্পানির হয়ে ওমপ্রকাশের মৃত্যুর তদন্ত করছে, ওরা ধরে নিয়েছিল যে দাসানিরাও অ্যালায়েডের লোক। হতেই পারে কোম্পানি প্রাইভেট এজেন্সীকে তদন্তের ভার দিয়েছে, দাসানি মুখে বলেনি যদিও, আসলে সে গোয়েন্দা।
    জয়ন্ত শুনে একটু গুম হয়ে বসে রইল। তারপরে বলল,
    -কী জানি, লোকটা কেন ঠিক এসেছিল বোঝা গেলনা। অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে সেটা সেই জায়গায় গিয়ে দেখলে শুনলেই তো পরিস্কার হয়ে যাবে, তার জন্য এরকম বাড়ি বাড়ি ঘুরে জিজ্ঞাসাবাদ করার কী প্রয়োজন আছে।"
    শ্রীমতীও বুঝতে পারছেনা। তারা যদি তদন্তই করে, জয়ন্তর তাতে এত আপত্তির কী আছে! লোকদুটোর কথা সেও শুনেছে, পরিস্কার কিছু প্রশ্ন ঘটনা সম্বন্ধে, কিন্তু তার মধ্যে তারা এমন কী বলে গেল যে জয়ন্ত কম্পিউটার, মোবাইল সব খুলে বসছে। শুধু তাই নয় নিজের মাইনে, অফিসের কাজ, ভবিষ্যতে চাকরির কী হবে সেসব নিয়েও যে একদা কাজপাগল লোক এতদিন বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাচ্ছিল না সে হঠাৎ আজ আগ বাড়িয়ে অফিসে ফোন করে বসছে শুধু ঐ লোকদুটোর খবর জোগাড় করতে!
  • de | 69.185.236.51 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:৪২495866
  • চলুক! চলুক!
  • শ্রাবণী | 127.239.15.101 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:৫৪495867
  • *********************************************
    সারারাত ঘুম হয়নি, এছাড়া ফিরতি পথের যাত্রা নির্বিঘ্নেই কেটেছে। বাড়ি ফিরল যখন কেউ ছিলনা, চাবি খুলে ঢুকে, জামাকাপড় বদলে এককাপ কড়া করে কফি বানিয়ে খেল। স্নানটান সেরে খাবার গরম করতে করতেই প্রথমে আলোক এসে গেল তারপরে হইহই করে মেয়ে ফিরল স্কুল থেকে। তার ফেরার অনারে ও অভি আসবে বলে আলোক সেকেন্ড হাফে আর অফিস গেলনা।
    গল্প করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতেও পারেনি। ঘুম থেকে উঠল যখন আলোক মেয়ের ঘরে টিভি চালিয়েছে আর টুপাই নীচে খেলতে গেছে। রান্নার মেয়েটা চা বসিয়েছিল। মুখেচোখে জল দিয়ে আসতে আসতে চা রেডি, রাই চা নিয়ে সামনের ঘরে সোফায় বসল। পাঁচটা বেজে গেছে, এরপর অভি কখন আসবে কে জানে! রাতে এখানে থাকলেও নাহয় কথা ছিল, আলোক তো বলল অভি বাড়ি ফিরবে আজ। আলোক টিভি বন্ধ করে চায়ের কাপ নিয়ে ওর সামনে এসে বসে ওর মনের কথাটাই জোরে বলে,
    -"এরপরে অভিনব আর কখন আসবে, এলেও তাড়া থাকবে বাড়ি ফেরার, কতটুকু আর বসতে পারবে।"
    বলার সাথে সাথে রাইয়ের মোবাইল বেজে উঠল, অভির ফোন।
    -"ফিরেছিস? গুড, আমি পাঁচ মিনিটে পৌঁছচ্ছি।"
    রাই তাড়াতাড়ি চা শেষ করে রান্নাঘরে গেল, খাবারদাবারের ব্যবস্থা দেখতে। একটু পরেই করিডরে দুমদাম অভির জুতোর আওয়াজ, গেট থেকে কোনো ফোন আসেনি তা বোধহয় পুলিশের গাড়ি দেখে। অনেকদিন বাদে দেখা হয়ে সবাই খুব খুশী। ফোন হয় প্রায়ই তবু দেখা গেল অনেক কথা জমা হয়ে আছে। কে কত কথা কত আগে বলতে পারে দুই বন্ধুতে তার প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেল, আলোক শ্রোতা তবে মাঝে মাঝে কথার লড়াইয়ে তাকে দুদলের হয়েই চীয়রলীডারের ভূমিকায় দেখা গেল। গল্পের মাঝে কফি এল, খাবারদাবার।
    দীর্ঘকাল পরে দেখা হওয়াজনিত প্রাথমিক উত্তেজনা একটু থিতিয়ে এলে আলোকই এক ফাঁকে কথাটা তোলে,
    -"অভি, তুমি আমার সঙ্গে কী দরকার আছে বলেছিলে না?"
    অভি কফি খাচ্ছিল, শেষ চুমুকটা দিয়ে কাপটা সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে রাইয়ের দিকে তাকালো, তারপরে আলোককে বলে,
    -"জয়ন্ত ঘোষ, যার কিছুদিন আগে রায়পুর রোডে একটা বড়সড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়, সে তোমার বন্ধু? তোমার যাতায়াত আছে ওর বাড়ি?"

    রাই আর আলোক দুজনেই অবাক। অভি কী বলবে তা নিয়ে দুজনে আলোচনা হয়েছিল কিন্তু কেউই কিছু বুঝতে পারেনি। জয়ন্তর ওখানে কিছু হয়েছে বলে তো এদের জানা নেই, ওর নাম অভির মুখে কেন? জয়ন্ত সম্পর্কে আলোকের নামটাই বা কোথায় এল কেন এল তাও বুঝতে পারেনা ওরা। আলোক বলে,
    -"হ্যাঁ, মানে জয়ন্ত আমার কলেজের বন্ধু। ভালোভাবেই জানি ওদের আমরা, যাইও ওর বাড়ি মাঝে মাঝে। কিন্তু হয়েছেটা কী?"
    রাই চুপ থাকে কিন্তু তার চোখভরা প্রশ্ন অভিনব দেখতে পায়।
    -"সরি, আমার বোধহয় আর একটু খুলে বলা উচিত, তাহলে তোমাদের বোঝা সহজ হবে।"

    জয়ন্ত যে অ্যাক্সিডেন্টে আহত হয়, সেই একই দুর্ঘটনায় ওর কম্পানির চেয়ারম্যান ওমপ্রকাশ আগরওয়াল মারা যান। ভদ্রলোকের স্ত্রী ও ছেলে সে সময় বিদেশে ছিল। ছেলে বিদেশে পড়াশোনা করে ও স্ত্রী সেখানে ওদের যে বাড়ি আছে তাতে ছেলেকে নিয়ে থাকে। ভদ্রমহিলা এতদিন খুব আপসেট হয়ে পড়েছিলেন, তার নিজেরই চিকিৎসা চলছিল। এখন ধাতস্থ হলে উনি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করেছেন যে ওর স্বামীর মৃত্যুর পেছনে তার ভাইপোদের হাত আছে।
    ওমপ্রকাশের সঙ্গে তার ব্যবসার অংশীদার দুই ভাইপো অমিত আর অজিত আগরওয়ালের নাকি বেশ কিছুকাল ধরে গন্ডগোল চলছিল। মাঝখানে ভাগ বাঁটোয়ারার কথাও হয়েছিল। ওরা এই ব্যবসা থেকে টাকা পয়সা এদিক ওদিক করে অন্য জায়গায় লাগায় বেনামে, সেসবের কোনো হিসেব নেই, বলে লোকসান হয়ে গেছে।
    ব্যবসাটা মূলত ওমপ্রকাশেরই দাঁড় করানো, ভাইপোদের ওতে খুব কিছু ছিলনা। মাঝখানে উনি বিদেশেও ব্যবসা নিয়ে গেছিলেন আর তাই নিয়ে ব্যস্ততার জন্য এদিকের সব ভার অমিত আর অজিতের ওপর ছিল। সেই সুযোগ নিয়ে এরা অনেক গন্ডগোল করে রেখেছিল।
    হালে কম্পানির অডিটরের চোখে কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়তে তারা ওমপ্রকাশকে জানায়। তখন ওমপ্রকাশ ফিরে এসে খোঁজখবর শুরু করে, উনি ওদের ক্ষমতা অনেক কমিয়ে দিয়েছিলেন যার জন্যে ওরা ওর ওপর খুব চটে ছিল।
    তবে ওরা ঠিক কী কান্ড করেছিল সেসবকিছু জানত শুধু ওমপ্রকাশ নিজে ও তার সেক্রেটারী, তারা দুজনেই এখন নেই। ছেলে ব্যবসার কিছু জানেনা, সে কলেজে পড়ে। ওমপ্রকাশের উকিলের সঙ্গে কথা বললে তিনিও বলেন যে ওমপ্রকাশ তথ্য সাবুদ ইত্যাদি জড়ো করছিলেন ভাইপোদের বিরূদ্ধে এবং তাকে প্রস্তুত হতে বলেছিলেন আইনী ভাবে ওদের ব্যবসা থেকে আলাদা করবার জন্যে। কিন্তু শেষপর্যন্ত উকিলকে কিছুই দিয়ে যায়নি, সেসব কাগজপত্র কোথায় কেউ জানেনা।

    হয়ত ওমপ্রকাশের পরিবার এদেশে আসার আগেই ভাইপোরা সব খুঁজে সরিয়ে ফেলেছে।
    অজিত আর অমিত অবশ্য এসবই অস্বীকার করেছে। তাদের কাকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নাকি অত্যন্ত মধুর ছিল, ব্যবসায় কোনো গন্ডগোল নেই। কাকী এদেশে থাকতনা, সে কিছু জানেনা। ওরা উল্টে বলছে বউ ছেলের সাথেই নাকি ওমপ্রকাশের ভালো সম্পর্ক ছিল না, তাই ওরা আলাদা বিদেশে থাকত।

    এখন দু পক্ষেরই ভালো প্রভাব প্রতিপত্তি আছে উপর মহলে। তাই কেস খুব ক্রিটিক্যাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিছু মহল থেকে চাপ আসছে সত্যিটা বার করার জন্যে।
    পুলিশ একটা প্রাথমিক তদন্ত করে অ্যাক্সিডেন্টের স্পটে গিয়ে, লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জয়ন্তকেও হাসপাতালে দেখা করে প্রশ্ন করেছে। তাতে করে তো অ্যাক্সিডেন্টই মনে হচ্ছে, কিন্তু যতক্ষণ না ঐ ট্রাকটাকে ড্রাইভার সমেত পাওয়া যায় ততক্ষণ কিছু বলা যাচ্ছে না। অ্যাক্সিডেন্ট এমনি হয়েছে না প্ল্যান করে করা হয়েছে কে জানে!

    -"কিন্তু তুই একেসে কিভাবে? আর জয়ন্তরই বা ওর কম্পানির মালিকদের ব্যবসায়িক গোলমালের মধ্যে কী ভূমিকা আছে?
    বেচারা তো এখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারছেনা, চলা ফেরা দুরের কথা।"
    -"কেসটা অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নিজে দেখছেন আর উনি আমার এককালের বস ও এখনকার বসের ব্যাচমেট কাম বন্ধু। উনি একটা অনুষ্ঠানে মীরাটে এসেছিলেন, তার পরদিনই ওর রায়পুর যাবার কথা। সেব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে পুরো ঘটনাটা জানান আমাকে। তারপরে এখন এই কেসের জন্যে একটা টিম বানানো হয়েছে তাতে উনি আমাকে রেখেছেন কারণ এটা ঠিক সাধারণ পুলিশ কেসের মত করে ডীল করলে হবেনা, বড় বড় লোকেদের ব্যাপার।'

    এই পর্যন্ত বলে অভিনব ব্যাগ খুলে ওর ল্যাপটপ বার করে চালু করল। রাই আর আলোক অপেক্ষায়, মুখে কিছু বলেনা। অভিনব ওদের কয়েকটা ফোটো দেখায়, না বললেও ওরা বুঝতে পারে ওগুলো অ্যাক্সিডেন্টের গাড়িটার বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবি।
    -"দেখছিস কী অবস্থা গাড়িটার, পেছন দিকটা পুরো চেপ্টে দিয়েছে। সামনেটা অবিশ্যি অনেকটা অক্ষত আছে। জয়ন্ত সামনে বসেছিল। স্পট থেকে রায়পুরের পুলিশ গিয়ে ওমপ্রকাশের ও অন্যান্যদের জিনিসপত্র সব উদ্ধার করে। সেদিন রাতেই লোক্যাল থানা থেকে লোক যায় খবর পেয়ে। পরে সেসব আগরওয়াল ইন্ডাস্ট্রীজের লোকের হাতে তুলে দেওয়া হয় তারা সবার বাড়িতে পৌঁছে দেবে বলে।
    তখন তো কেউ ভাবেনি এরকম একটা সমস্যার সৃষ্টি হবে।
    জয়ন্ত হচ্ছে একমাত্র লোক যে সঠিক বলতে পারে কিভাবে অ্যাক্সিডেন্ট টা হয়েছিল। তার মাথায় কোনো আঘাত লাগেনি, আঘাত শরীরের নীচের অংশে, মেরুদন্ডে, রায়পুর হসপিটালে যখন পৌঁছয় তখন তার জ্ঞান ছিল বলে জানিয়েছে ওখানের ডাক্তাররা। কিন্তু এখনো সে জিজ্ঞেস করলে কোনো কিছুই বলতে পারেনা ঘটনাটা সম্পর্কে।
    জয়ন্তের সম্বন্ধে খোঁজ নিয়েছে পুলিশ, সে রীতিমত শক্ত ধরণের, খেলাধূলা ব্যায়াম করা লোক। প্রথমে যদিও তার ট্রমা জাতীয় কিছু হয়ে থাকে তাহলেও এতদিন এই পাঁচমাসে তার সব পরিস্কার বলতে পারা উচিত।

    ঘটনাটার আগে কদিন ওমপ্রকাশ রায়পুরে ঘোরাঘুরি করে মন্ত্রী, পলিটিশিয়ানদের সঙ্গে অনেক মিটিং করে, ওদের সুন্দরনগরের নতুন পাওয়ার প্ল্যান্টের ক্লিয়ারেন্স, লাইসেন্স, কয়লা ইত্যাদির ব্যাপারে। এই প্রথম ওমপ্রকাশ এতবড় একটা বিজনেসে হাত দিয়েছিল, একেবারে অন্য সেক্টরে। এর আগে ওদের বড় ব্যবসা বলতে একটা স্টীল ফ্যাক্টরি আছে, সেটাকেই ছোট থেকে বড় করেছিল ওমপ্রকাশ। ওদের উকিল বলছে ওখানে ওদের কোল মাইন যেটা অজিত আগরওয়াল দেখত সেখানে কিছু গোলমাল ছিল সেটাও ঠিক করার জন্যে উনি গিয়েছিলেন। সেজন্যে ওমপ্রকাশের আরো কিছুদিন রায়পুরে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ওমপ্রকাশ বা তার সেক্রেটারীর ব্যাগট্যাগের মধ্যে কোনোরকম কাগজপত্র পাওয়া যায়নি, যেটা একটু অদ্ভুত।
    যাক, আমি যেটা তোদের কাছে জানতে চাই তা হল জয়ন্ত লোক কেমন। আমি যদি রাইয়ের বন্ধু হিসেবে যাই ওর সঙ্গে কথা বলতে ও কী কিছু বলবে বলে মনে হয়?
    ও, পুলিশ জয়ন্তর সঙ্গে অমিত অজিতের কোনোরকম যোগসাজশ আছে কিনা সেটা বোঝার জন্যে ওর কাছে কারা বেশী যায় আসে তার একটা ডিটেল নিয়েছিল ওদের গেটের সিকিউরিটির কাছ থেকে। সেই লিস্টে আমি আলোকের নাম দেখি।"

    আলোক এবার মুখ খুলল,
    -"অভি, জয়ন্ত আমার অনেকদিনের বন্ধু, অনেকদিনের চেনাজানা আমাদের। এছাড়া তোমরা নিশচয়ই জানো যে ও এই কম্পানিতে বছরখানেক আগে জয়েন করেছে। শুনেছি সেদিন ঐ গাড়ীতে ও শুরু থেকে ছিলনা, রাস্তায় গাড়ি খারাপ হতে লিফ্ট নেয়।
    জয়ন্ত নিজের ফিল্ডে যথেষ্ট কৃতী লোক, অনেক কম্পানি ওকে পেলে লুফে নেবে। এরাও অনেক পয়সা দিয়ে ওকে নিয়ে গিয়েছিল সুন্দরনগরের জন্যে, ওদের গরজে। ওর মত লোক কোনো উল্টোপাল্টা ব্যাপারে জড়াতে যাবে কেন? ওর নিজের চোটটা তো আর বানানো হতে পারেনা।"
    রাই আলোকের কথায় সায় দিয়ে যোগ করে,
    -" এমনও তো হতে পারে এটা নিছক অ্যাক্সিডেন্ট। ভদ্রমহিলা ভাইপোদের বিরূদ্ধে অভিযোগ তুলে ওদের চাপে রাখছে যাতে ওরা ছেলেকে কোনোরকমে ঠকাতে সাহস না করে। এসব ফ্যামিলি বিজনেসে অনেক আইনী ঘোরপ্যাঁচ থাকে শুনেছি।"
    -"হতে পারে। আমি দুদিন পরে রায়পুরে যাচ্ছি, সঙ্গে টিমের দুজন যাবে। কয়েকদিন থাকব, অ্যাক্সিডেন্টের স্পটে যাব, এছাড়া ওদিন ওমপ্রকাশ যাদের যাদের সঙ্গে দেখা করেছে তাদের সঙ্গে কথা বলব, আর সুন্দরনগর ও ওদের খনিতেও যাব। ভাবছিলাম যাবার আগে নিজে একবার জয়ন্তর সঙ্গে কথা বলব। তা এখন তোদের কথা শুনে মনে হচ্ছে ফিরে এসে যদি দরকার মনে করি তখন বলব।
    সবচেয়ে প্রথম কাজ হবে ট্রাকটাকে কোনোভাবে খুঁজে বার করা।
    জয়ন্ত পুলিশকে বলেছে যে ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ার আগের মুহূর্ত অবধি সে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল অন্ধকারে। মনে হচ্ছে খুব স্পীডে এসে মেরেছে, কিন্তু তাহলে ট্রাকটার সামনেও অল্পবিস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেসময় যদি ঠিকভাবে খোঁজা হত পুলিশ সহজেই বার করতে পারত, কিন্তু মনে হয়না সে চেষ্টা কেউ করেছিল।"

    অভি রায়পুর যাবে, সুন্দরনগর, খনিতেও যাবে শুনতে শুনতে রাইয়ের মোতিলালের কথা মনে হল। এসে থেকে সেভাবে গল্প হয়নি বলে আলোককেও ব্যাপারটা বলা হয়নি। এখন ও দুজনকেই ঘটনাটা বলল। আলোক শুনে অবশ্য ওর মত চমকালো না, কয়লার গাড়িতে লাশ, জলে ভেসে ওয়াটার ইনলেটে লাশ নাকি অনেক প্ল্যান্টে হমেশাই দেখা যায় ।
    অভি রাইকে কথা দিল ব্যাপারটা নিয়ে খোঁজখবর করবে, রাইয়ের এত কৌতূহল যখন। সম্ভব হলে চোরগোড়ে কে ডেকে কথা বলবে। তবে আলোককেও কথা দিতে হল যে ও অভি ফিরে এলে তাকে জয়ন্তের কাছে নিয়ে যাবে, পুলিশের পরিচয়ে নয়, ওর বন্ধুর পরিচয়ে।
  • kumu | 132.160.159.184 | ১৮ জানুয়ারি ২০১৩ ১৭:০৫495868
  • ওমপ্রকাশ থেকে মঙ্গলা অব্দি-এ যে বিশাল জাল।শ্রাবণীর ক্ষমতাকে বারবার কুর্ণিশ।
  • nina | 79.141.168.137 | ১৯ জানুয়ারি ২০১৩ ০৬:৪৪495869
  • টানটান-----------
  • ঐশিক | 132.181.132.130 | ২২ জানুয়ারি ২০১৩ ১২:০২495870
  • তারপরে কি হলো??? ও শ্রাবনী দি
  • Abhi | 30.139.67.50 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৩ ১৭:৫৬495871
  • দারুন -----------
  • ranjan roy | 24.99.198.162 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ ০৫:৩৬495872
  • ছ'দিন হল। আর পারছিনা।
    ফুটকাপাহাড়, কাটঘোরার ধাবা, বিদ্যুতনগরা, কুসমুন্ডা ও গেবরা কলিয়ারি। হে ভগবান, এ যে আমার জীবনের দশবছর!
    শ্রাবণী নিপুণ হাতে বুনছেন কুরুশকাঠি। স্কেচ থেকে চেহারা নিচ্ছে চরিত্রগুলো। গ্রামীণ চেহারাগুলো, ওদের ঘরদোর বড় চেনা।
    শ্রাবণী, ২৬ জানুয়ারী ও ২৭শে পরপর দুটো
    দিন ছুটি। আশা করি আমাদের কিছু পার্বণী দেবেন।
  • nina | 79.141.168.137 | ২৪ জানুয়ারি ২০১৩ ০৭:২২495874
  • প্লিজ---
  • শ্রাবণী | 69.94.104.116 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:০৩495875
  • মোতিলালের লাশ তার বাড়ির লোকের হাতে তুলে দিয়ে থানায় ফিরল চোরগোড়ে। খালি বসে বসে একবার বিদ্যুতনগর প্ল্যান্টের ঐ ভদ্রলোকের কথা মনে হল, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাওয়া গেলে জানাতে বলেছিল, ওর সঙ্গের আত্মীয়া বিশেষ করে, বার বার। কী ভেবে ফোনে হাত দিতে গিয়েও সরিয়ে নেয় হাত। কাল একবার বিলাসপুর জেলে গিয়ে বনোয়ারীর সঙ্গে কথা বলে দেখবে আগে। এমনি এ কেসের জন্যে কোনো দিক থেকে তাড়া নেই তবু এখন তেমন কাজ নেই হাতে, দুদিন একটু ঘুরেফিরে বাজিয়ে দেখা যায় যদ্দিন না ওপর থেকে কেউ বারণ করে বা অন্য কোনো কেস আসে।
    পরিবার এখানে থাকেনা, নাগপুরের কাছে, এখানে সে একা থাকে। ছোট থানা, তেমন ঝুটঝামেলা তাদের ঘাড়ে আসে কম, জেলাশহর কোরবা আছে কাছে, সেখানকার থানা বড়, সরগরম সর্বদা।

    আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছিল, ঠিক সেই সময় ফোনটা এল। বিলাসপুর থেকে বড়সাহেবের ফোন,বুধবার দিল্লী থেকে পুলিশের বড় কর্তারা আসবে সুন্দরনগরে, কোরবায়। সুন্দরনগরের সরকারী গেস্ট হাউসে থাকবে তারা, চোরগোড়ে যেন থানায় থাকে, এদিক ওদিক না যায়। সাহেব এর বেশী কিছু বললে না, সেও জিজ্ঞেস করল না, আসলে নির্দেশের অভাবনীয়তায় কিিত বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। দিল্লী থেকে কর্তারা ঠিক কোন ব্যাপারে এ অলে আসছে কিছু বুঝতে পারল না। তেমন কোনো বড় ঘটনা তো হালে কিছু ঘটেনি বলেই মনে হচ্ছে, অন্তত তার এলাকায়। একবার ভাবল বিলাসপুরে সদর থানায় ফোন করে বন্ধুদের কাছে খবর নেয়। পরক্ষণে স্থির করে কাল তো যাচ্ছেই বিলাসপুর বনোয়ারীর সঙ্গে দেখা করতে তখনই না হয় থানা ঘুরে আসবে, দিল্লীর টিম আসা নিয়ে খোঁজখবরও তখন করবে।

    জেলে বনোয়ারী একা নেই সঙ্গী দুই শাগরেদও আছে। একই সঙ্গে ধরা পড়েছিল তিনজনে, গুরুর দেখভাল চেলারা মন দিয়ে করে, এমনি কোনো অসুবিধে নেই, জেলে ব্যবস্থা ভালৈ। শুধু ধান্দা বন্ধ বলে বাড়িতে অসুবিধে হচ্ছে, বাপ দেখা করতে এলে ইনিয়েবিনিয়ে কাঁদুনি গায়, তখন বিরক্ত লাগে। নেতাজীকে খবর পাঠিয়েছিল তাড়াতাড়ি বেরোনোর জোগাড় করতে, সেখান থেকে জবাব এসেছে, ধৈর্য্য ধরতে বলা হয়েছে, শীগগির ব্যবস্থা হবে।
    জেলের এক পাহারাদার বন্ধু যার সঙ্গে নেশার জিনিসপত্র, এই পান বিড়িটা মদটা আনার বন্দোবস্ত আছে সেই এসে কাল খবরটা দিল, মোতিলাল মরেছে। বনোয়ারী আর তার শাগরেদরা খবরটা পেয়ে একটু শোক পালন করল, রাতে একটু মদও খাওয়া হল মৃতের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে। ছোঁড়াটা আগে একটু বুদ্ধু আর ডরপোক ছিল কিন্তু তার সঙ্গে থেকে থেকে ভয়টা আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছিল। তবে বুদ্ধি কম হলেও কাজের ছিল,আর কিছুদিন ওদের দলে কাজ করলে পাকা হয়ে যেত। এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে ভাবা যায়নি।
    বিলাসপুরে বসে জেলের পাহারাদার যতটুকু খবর পেয়েছিল এর ওর মুখে ততটুকুই জানিয়েছিল বনোয়ারীকে। একশ কিলোমিটারের পথ চলায় সে খবরে যে অনেক পরিমাণে জল মিশে যাবে বা অনেক কথা তার থেকে বাদ পড়ে যাবে তাতে আর আশ্চর্য কী!
    সে যাই হোক, রাতে শোক মানানোর পরে সকালে আর মোতিকে নিয়ে তেমন চিন্তা ভাবনা করেনি। তাই তার সাথে ওদিকের থানার বড়সাহেব দেখা করতে এসেছে শুনে সে নিজের কথাই ভেবেছিল। নেতাজী হয়ত শেষ পর্যন্ত তাকে জেল থেকে বার করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে, সেই সম্পর্কিত ব্যবস্থার উদ্দেশ্যেই পুলিশ সাব এসেছে নির্ঘাত, নেতাজী তো ওদিককারই লোক!

    বনোয়ারী তার এলাকায় কখনো ধরা পড়েনি তাই চোরগোড়ে এর আগে বনোয়ারীকে দেখেছে বলে মনে পড়লনা। কালো রোগা শুকনো পাকানো চেহারা, চোখদুটোতে ধূর্ততা, উচ্চতা মাঝারি। জেলরের অফিসে এসে নমস্কার ঠুকে এমন মুখ করে দাঁড়ালো যেন মহা সাদাসিধে লোক। জেলর আগেই চোরগোড়েকে বলে রেখেছিল লোকটা ধড়িবাজ, মুখে মধু ঝরে আসলে বদ। কিভাবে তার লোকজনকে হাত করে জেলের মধ্যে পুরো আড্ডা বানিয়ে রেখেছে তা তারা বুঝতে পারলেও হাতেনাতে কাউকেই ধরতে পারেনা, সেসবই এই বনোয়ারীর শয়তানী বুদ্ধির জন্যে।
    এসব শুনে চোরগোড়ে ঠিক করে এদিকওদিক না করে লোকটাকে সব কথা সরাসরি জিজ্ঞেস করবে। ও দেখেছে এই ধরণের প্যাঁচালো বুদ্ধির লোকেরা ঘোরপ্যাঁচে খুব স্বচ্ছন্দে ঘুরতে থাকে কিন্তু সোজাসাপটা কথাবার্তায় অস্বস্তিতে পড়ে যায়।

    -"বনোয়ারী, শুনেছ বোধহয় হাতরির মোতিলালের লাশ মিলেছে বিদ্যুতনগরের কয়লার গাড়িতে?"
    এটা বনোয়ারী জানতনা, তাই সত্যিকথাই বলল,
    -"না সাব শুনিনি। মানে মোতিলালের মৃত্যুর খবর শুনেছি, জেলের সাহেবেরা বলাবলি করছিলেন কিন্তু কিভাবে কোথায়, এসব জানিনা।"
    -"তার আগে যে সে নিখোঁজ ছিল কয়েকমাস ধরে সে কথা জানতে?"
    -"আজ্ঞে হ্যাঁ, আমার বাপু বলেছিল। মোতির বাড়ির লোকে বাপুর কাছে খোঁজ করতে গিয়েছিল।"
    -"তোমার সঙ্গে তো মোতিলালের খুব দহরম মহরম ছিল। বাড়ি থেকে উধাও হয়ে সে তোমার সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করেনি?"
    -"না, আমি তখন তো এখানে, অন্দরে সাহব।"
    -"সে আমি জানি আর এও জানি অন্দর থেকে বাইরে যোগাযোগ তোমরা ঠিকই রাখো।"
    বনোয়ারীর এ কথার উত্তর দেয়না, গোবেচারা মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
    -"বনোয়ারী, মোতিলাল তোমার সাথে ঠিক কী কাজ করত? মানে ওর চাকরি যাবার পর সবাই বলছে ও তোমার সঙ্গে দলে থাকত।"
    -"না সাব, আমার কোনো দল টল নেই। মোতিকে অনেক কাল চিনি, একই মালিকের কাছে কাজ করতাম, ওকে গাড়ি চালানো শিখিয়েছিলাম, আমাকে তাই খুব ভক্তি করত।"
    -"হ্যাঁ,ভক্তি করার মতই মহাপুরুষ তো তুমি।"
    -"সাব, কেন মজাক করছেন? রোজগারের জন্যে এক আধবার একটু গলত কাজ করে ফেলেছি, এছাড়া আমি কোনদিন কারো ক্ষতি করিনি, সেদিক দিয়ে সাচ্চা আছি, সবাই বলবে।"
    -"সে যাক, মোতির কথা বল। মোতি তোমার সঙ্গে ঘুরত কেন, শেষ তোমাদের কোথায় দেখা হয়েছিল?"
    -"সাব, ওর নোকরি চলে গেল। মালিক আসলে আমার ওপর খাপ্পা ছিল, লোকে আমাকে খুব ভালোবাসত, মালিককে ডিঙিয়ে আমায় কাজ দিত। আমি কম টাকায় করে দিতাম সবার কাজ, মালিকের টাকার খাঁই বেশী ছিল, আমার জন্যে তার ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। আমি নর্মদা ছেড়ে দেবার পরেও মোতি আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখত, বাড়ি আসত কখনোসখনো দেখা করতে, ওস্তাদ বলত আমায়। জানতে পেরে ওর ওপরও মালিক ক্ষেপে গেল। আসলে আমি ছেড়ে দেবার পর আমদানী কমে গেসল তো, আবার আমাকে ডেকে পাঠাতে আমি না করে দিয়েছিলাম।
    রাগ করে শেষে বিনাদোষে মোতিকেও ছাড়িয়ে দিল। ও এসেছিল আমার কাছে কাজের জন্য, তখন আমি চেষ্টা করছিলাম স্বাধীন ব্যবসা জমাতে, সবে শুরু করেছিলাম, আমি কোত্থেকে লোক রাখব। তবু মাঝেসাঝে চেনাজানা কারুর লোক লাগলে টেম্পোরারী, মোতিকে ড্রাইভারীর কাজে লাগিয়ে দিয়েছি এধার ওধার। এত কারখানা, খনি চারদিকে, রোজের কাজ ওর জুটে যেত, বসে থাকেনি।"
    -"মোতি নিখোঁজ হওয়ার দিন বাড়িতে বলে যায় পালি যাচ্ছে, বন্ধুর বাড়ি কাজে। তুমি কিছু জানতে এ ব্যাপারে? পালিতে মোতির কী কাজ ছিল?"
    -"না সাব, আমি তো তখন এখানে। মোতি এদিককার ছেলে, তার কতদিকে কত দোস্ত, আমি জানিনা।"
    -"তার তখন একটা পাকা কাজেরও কথা চলছিল, কোথায় জান?"
    -"না সাব। আমি ছাড়াও মোতির আরো অনেকের সাথে যোগাযোগ ছিল যারা ওকে মাঝে মাঝে কাজ দিত।"
    -"তাই নাকি? কারা? তোমার সঙ্গে মোতির শেষ কবে দেখা হয়?"
    -"হাঁ সাব। এখানে অনেক জায়গায় কারখানার কর্মচারীরা নিজেরাই দু তিনটে গাড়ি কিনে দরকারে ভাড়া দেয়, বেনামের ব্যবসা। সুন্দরনগরে, বিদ্যুতনগরে এরকম ক্ষেত্রে টেম্পোরারী ড্রাইভারের দরকার পড়ে। তারাই মোতিকে ডাকত। নর্মদার কাজ যখন করত তখন মোতি গাড়ি চালানোর সুযোগ পেতনা, কাজ ছাড়লে আমি ওকে পাশে বসে সাহস দিয়ে গাড়ি চালাতে দিতাম। হাত সেট হয়ে গেসল, মোটামুটি ভালৈ চালাচ্ছিল, এদিক ওদিক থেকে ডাক আসছিল, পয়সাও মন্দ পেতনা।
    আমার সঙ্গে শেষ দেখা হয় কোর্টে কেস চলছিল যখন তখন। দোস্তলোগ ছিল, মোতিও এসেছিল।"
    -"কিছু কথা হয়েছিল? একটু মনে করার চেষ্টা করো, এমন কিছু কি বলেছিল যাতে মনে হয় যে পরেশান ছিল, বাড়ি থেকে চলে যাবার ধান্দা করছিল? জরুর সাথে কিছু গোলমাল ছিল, তুমি কিছু জানো?"
    বনোয়ারী একটু ভাবার মত মুখ করে এদিক ওদিক ওপর নীচ ঘুরে ঘুরে দেখে। তারপর বলে,
    -"না সাব, সেরকম কিছু তো মনে পড়ছেনা। আমার জন্যে দুখী ছিল, বলছিল ওস্তাদ চিন্তা করোনা, ছাড়া পেয়ে যাবে। ওর জরু একটু মুখরা ছিল, এছাড়া কোনো সমস্যা ছিল বলে আমার জানা নেই। ছেলেটা ছোট, তাকে খুব ভালোবাসত মোতি, বেচারা অনাথ হয়ে গেল।"
    বনোয়ারীর থেকে এর বেশী কিছু জানা যাবে মনে হলনা। ও ভালো করে জানে যে যেহেতু মোতির নিখোঁজ হওয়ার সময় ও জেলে, অতএব ঐ ব্যাপারে পুলিশ ওকে জোর করবে না।

    চোরগোড়ে জেলরকে বলল বনোয়ারীকে যেতে দিয়ে বনোয়ারীর দুই চেলাকে ডেকে পাঠাতে। সে কথা শুনে বনোয়ারীর মুখটা একটু কালো হয়ে গেল মনে হল। বনোয়ারী ঘর থেকে চলে যাবার সাথে সাথেই ওর দুই চেলা ঢুকল। চোরগোড়ে আর জেলরকে লম্বা প্রণাম ঠুকে দুজনে একটু কোণের দিকে সরে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালো।
    দুটোরই বেশ সাধারণ চেহারা, বনোয়ারীর মত চালাক দৃষ্টি নয়, বোকাসোকা, চোখে ভয়ের ছায়া। চোরগোড়ে এক ধমকে বলে,
    -"মোতিলালকে চিনতিস তোরা?'
    -"হাঁ সাব।"
    -"সে মরে গেছে শুনেছিস?"
    -"হাঁ,পাহারাদার সাহেব বলছিল।"
    চোরগোড়ে জেলরের দিকে তাকালো। জেলর মুখভঙ্গী করলেন, "কিছু করার নেই" ধরণের।
    -"মোতি নিখোঁজ হয়ে ছিল অনেক কাল। কোথায় ছিল তোরা কিছু জানিস? পাহারাদার সাহেব বলে নি?"
    ওরা একটু হকচকিয়ে গেল,
    -"না না সাব।"
    -"তোদের যেদিন কোর্টে সাজা হল সেদিন মোতির সঙ্গে দেখা হয়েছিল? কী করছিল মোতি?"
    -"হ্যাঁ,মোতি এসেছিল। ওস্তাদের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, তারপর চলে গেল।"
    -"ওস্তাদ মানে বনোয়ারী? সে তো পুলিশের হেফাজতে ছিল, তোরাও তো তার সঙ্গে ছিলি। কী কথা হয়েছিল শুনিসনি তোরা?"
    -"না সাব, পুলিশ তো তখন নেতাজীর সঙ্গে কথা বলছিল। ওস্তাদ মোতির সঙ্গে আলাদা করে একটু তফাতে গিয়ে কথা বলল, আমরা শুনতে পাইনি কী কথা হচ্ছিল।"
    চোড়গোড়ে একটু ভাবল। বনোয়ারী যা একটু আগে বলেছে সেই কথা বলতে মোতিকে আলাদা নিয়ে যেতে হবে কেন?
    -"তারপর কী হল? তোরা পুলিশ ভ্যানে উঠে পড়লি আর মোতিলাল চলে গেল।"
    -"না তক্ষুনি না। আরো লোক ছিল, আমাদের ঘরের লোক, দোস্তলোগ, বকীলসাব, সবার সঙ্গে দেখা করে তবে আমরা গাড়িতে চড়লাম।"
    -"আর মোতি? তাকে দেখিসনি যেতে?"
    প্রথমজন এতক্ষণ কথা বলছিল, দ্বিতীয়জন শুধু সায় দিয়ে যাচ্ছিল, মুখে কিছু বলেনি। এখনো প্রথমজন ঘাড় নাড়তে যাচ্ছে, দ্বিতীয়জন তাই দেখে বলে উঠল,
    -"হ্যাঁ দেখলাম তো। মোতি নেতাজীর লোক বিরজুর সঙ্গে ওদের জিপে গিয়ে বসল।"
    চোড়গোড়ে একটু চিন্তায় পড়ল। তবে এদের আর কিছু না জিজ্ঞেস করে ছেড়ে দিল। এই ব্যাপারে নেতাজীর সঙ্গে দেখা করে তাকে ঘাঁটানোর তেমন ইচ্ছে নেই ওর। যদিও এর দল এখন ক্ষমতায় নেই এরাজ্যে বা কেন্দ্রে তবু প্রধান বিরোধী দলের নেতা। এ চত্বরে এরই বেশী হাঁকডাক, সরকারপক্ষের যিনি বিধায়ক তিনি তো এখানে থাকেনই না, রাজধানীতে থাকেন, বাইরের লোক।

    জেল থেকে বেরিয়ে সে সদর থানায় গেল। সেখানে সোজা বন্ধু পান্ডের ঘরে গেল। বেশ কিছুদিনের বিরতিতে দেখা, পান্ডে বন্ধুকে পেয়ে খুব খুশী। নানা গল্প, চা জলখাবারের মাঝে ও দিল্লীর কর্তাদের ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিল। বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় মনে পড়ল। দিল্লীর কর্তারা সুন্দরনগর কোরবায় আসছে কেন?
    ওরা তো একদিন আগে রায়পুরে এসে সেখানে কাজ সেরে বুধবার আসবে সুন্দরনগরে। মাস কয়েক আগে যে অ্যাক্সিডেন্ট টা হোলো রায়পুর রোডে, সুন্দরনগর আগরওয়ালদের বড় কর্তা যাতে মারা গেল, তার ব্যাপারেই কীসব খোঁজ তল্লাশ করতে আসছে। বড় লোকদের সব বড় ব্যাপার, ফ্যামিলীতে কিসব ঝগড়াঝাঁটি ছিল বলে বড়কত্তার বউ ছেলে নালিশ করেছে কত্তাকে নাকি মারা হয়েছে অ্যাক্সিডেন্ট করিয়ে।
    -"এতদিন পরে কেন?"
    -"আরে সে বউ ছেলে সব বিদেশে ছিল। প্রথম দিকে তাদের সন্দেহ হয়নি। এখন কী সব বেরিয়েছে, তারা কত্তার ভাইপোদের সন্দেহ করছে।"

    গাড়িতে যেতে যেতে চোড়গোড়ে সদ্য যা শুনে এল সেই সম্বন্ধেই ভাবতে থাকে। তাই যদি হয় তবে তাকে কেন থাকতে বলল বড় সাহেব? সুন্দরনগর ও কোরবার থানা অফিসাররা থাকলেই হবে, তাছাড়া রায়পুরের ও অ্যাক্সিডেন্টের অকুস্থলের কাছাকাছি থানার কর্তারাও নিশ্চয়ই থাকবে। তার তো ওই দুর্ঘটনার সঙ্গে দুর দুর অবধি কোনো যোগাযোগ হয়নি কোনোভাবেও!
  • শ্রাবণী | 69.94.104.116 | ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:১৩495876
  • ****************************************************
    অনেক অনেক দিন হয়ে গেল শ্রীমতী কারো বাড়ি যায়না, কারো সাথে সেভাবে বসে দুদন্ড কথা বলেনা। কদিন ধরেই খুব ইচ্ছে করছে কারো সাথে বসে একটু মন খুলে কথা বলে। চেনাশুনোদের মধ্যে সেরকম কেউ নেই যার সাথে প্রাণ খুলে গল্প করলে প্রাণ ভরে যাবে। আজ বলে নয় চিরকালই এদের সঙ্গে মিশে দেখেছে, মনে হয় বন্ধুত্বের হাসি আলাপ মজা হুজুগের মাঝে সবাই যেন কেমন ছুরি শানিয়ে আছে, এতটুকু দূর্বলতা টের পেলেই আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
    জয়ন্তর বন্ধুরা দুঃসময়ে অনেক করেছে কিন্তু তবু তাদের বা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ও সহজ হতে পারেনা। কোথায় যেন ওদের ঐ আন্তরিক উদ্বেগে ও কৃত্রিমতার আভাস পায়, কিছু দৃষ্টি যেন ওকে বলে যায়, "যা হয়েছে বেশ হয়েছে, খুব বাড় বেড়েছিলে তোমরা"। হয়ত তারই মনের ভুল, তবু জয়ন্তর চাকরি বদলানোর পরে ওদের জীবনযাত্রায় যে পরিবর্তন এসেছিল সেসময় এই লোকেদের নানা কানাঘুষো কথাবার্তা আলোচনা যা কানে আসত সেসব মনে পড়ে যায় আর মন বেজার হয়ে ওঠে।
    একমাত্র আলোক আর রাইয়ের চোখে কোনোদিন সেরকম কিছু দেখেনি, তখনো না এখনো না। আলোক আসলে তাই ও খুশী হয়, রাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়না তবু নিজে যেচেই ফোন করে, ভালো লাগে কথা বলে। মামুলী কথাবার্তা, টুকটাক সংসার আশপাশ নিয়ে, তাতেই মন হাল্কা হয়ে যায়।

    রাই, একমাত্র রাইয়ের সঙ্গেই কথা বলা যায়, সবকথা। একদিন গেলে হয় ওর বাড়িতে, সন্ধ্যের দিকে তাতাইকে জয়ন্তর কাছে রেখে। শুধু সমস্যা হল জয়ন্ত আবার কেন জানে রাইকে খুব একটা পছন্দ করেনা। আলোকের সঙ্গে যদিও ওর খুব দোস্তি কিন্তু রাইয়ের কথা উঠলেই জয়ন্ত বিরক্ত হয়, মুখে বলে অত অতিরিক্ত জ্ঞানী টাইপের নাকের ডগায় চশমা আঁটা মহিলা ওর ভালো লাগেনা, বড্ড অহংকারী, বিদ্যের অহংকার। রাই ওদের বন্ধুমহলের হুল্লোড়ে কম আসে, এলেও হইহই করা ড্রিংক করা এসবে থাকেনা। শ্রীমতীর আজকাল মনে হয় জয়ন্তর চরিত্রের মধ্যে শভিনিস্টের ছোঁয়া বেশ প্রখর আর তাই রাইয়ের মত ব্যক্তিত্বশালিনী মহিলাকে ওর মত পুরুষেরা সহ্য করতে পারেনা।
    যাই হোক, আগে ও জয়ন্তকে না বলে কিছু করার কথা ভাবতে পারত না। কিন্তু জয়ন্তের এই ঘরে বসে যাওয়ার পর থেকে, দিনরাত ওর সঙ্গে, ওর খেয়ালখুশীর খেয়াল করতে করতে সে নিজেও বদলাচ্ছে তাই ভাবল, না বলেই যাবে।

    আজকাল প্রায়সই ফোনে কথা হচ্ছে বলে শ্রীমতী আসবে বলল যখন রাই অবাক হল না, বরং মনে হল এমনটাই হওয়ার কথা। প্রতি ফোনালাপের পরেই ওর মনে হয় কিছু বাকী রয়ে গেল, আরো কিছু বলার ছিল।
    আলোক ছোট একটা ট্যুরে গেছে, একদিনের। সেটাও একরকম সুবিধেজনক ব্যবস্থা, তৃতীয় ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে কথাবার্তা মন খুলে হবে। অভি ফোন করেছিল, ওরা রায়পুর পৌঁছেছে, কাল সুন্দরনগর যাবে অ্যাক্সিডেন্টের জায়গাটা দেখবে রাস্তায়। চোড়গোড়েকে খবর দেওয়া হয়েছে, তবে কী জন্যে তা অভি কাউকে জানায়নি।
    শ্রীমতীকে দেখে আজ ভালো লাগল, মাঝখানে চেহারাটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল, এখন আবার আগের মত সুন্দর লাগছে। রাই ওকে নিয়ে ভেতরের ঘরে বসাল, বিছানার ওপর আরাম করে পা তুলে মাগভর্তি কফি নিয়ে দুজনে নানা গল্প করতে লাগালো। প্রায় ঘন্টাখানেক এরকম আড্ডা দেওয়ার পর শ্রীমতীর চোখ গেল ঘড়ির দিকে,
    -"বাবা, সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। রাই, এবার আমি উঠব গো, জয়ন্ত নটায় খাবে।"
    -"কেন তোমার রান্নার মেয়ে আসেনি বিকেলে?"
    -"হ্যাঁ এসেছে, কিন্তু খাবার গরম করতে হবে। জয়ন্ত তৈরী করে রাখা রুটি খায়না তাই ওর চারটে রুটি আমি খাবার সময় গরম গরম বানাই।"
    -"হোক, আর একটু বোস। গাড়িতে পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাবে।"
    -"না মানে আসলে জয়ন্তকে বলিনি তোমার এখানে আসছি, আমাদের শিব মন্দিরে একটা ইয়োগার ওপরে লেকচার আছে, সেটা শুনতে যাচ্ছি বলেছি।"
    রাই একটু অবাক হল। এমনকি হল যার জন্যে শ্রীমতী স্বামীকে লুকিয়ে তার কাছে এসেছে। শ্রীমতী একটু অপ্রস্তুতের হাসি হেসে বলে,
    -"আসলে আমি একটা ব্যাপার একটু তোমাকে বলতে চাই, নিজে কিছু বুঝতে পারছিনা। এব্যাপারে তোমার সঙ্গে কথা বলতে আসাটা জয়ন্ত ঠিক কিভাবে নেবে জানিনা তাই ওকে বলিনি।"
    রাই আর কিছু বলেনা তবু ওর একটু অদ্ভুত লাগে, কী ব্যাপারে আসছে না বলে শ্রীমতী এমনি আড্ডা মারতেই যদি আসে জয়ন্ত আপত্তি করবে কেন!
    -"তাহলে আর দেরী না করে বল কী ব্যাপার? তোমাকে তো আবার সময়ে যেতে হবে।"
    শ্রীমতী রাইকে দাসানির জয়ন্তর সঙ্গে দেখা করতে আসার বিবরণ দেয় সেই সঙ্গে পরবর্তীতে জয়ন্তর ঐ ব্যাপারে ভাবনা করা ও খোঁজখবর করতে ফোন ইত্যাদি করার পুরো ঘটনাটা জানায়।
    -"তুমি দাসানির সঙ্গে আর কথা বলেছিলে?"
    -"না, জয়ন্ত বলতে দেয়নি। ও ইনসিওরেন্স অফিসে একজনের সঙ্গে কথা বলেছিল যে জয়ন্তর ইনসিওরেন্সের ব্যাপার দেখে। সে বলল তাদের অফিস ওমপ্রকাশের মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো গোয়েন্দাকে খোঁজখবর দিয়েছে এমন কথা তার জানা নেই। ওদের নিজেদের অফিসেই নাকি আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে যারা এরকম কেসে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে খোঁজখবর করে।"
    -"ফোন নাম্বারটা আছে তোমার কাছে?"
    -"হ্যাঁ এই যে লিখে এনেছি।"
    রাই কোনো কথা না বলে ওর ল্যান্ডলাইন থেকে নাম্বারটা ডায়াল করে। দুবার রিং হওয়ার পরে ওদিক থেকে এক পুরুষকন্ঠ "হ্যালো" বলে ওঠে।
    -"মিঃ দাসানি?"
    -"হ্যাঁ বলছি।"
    -"আমি মিসেস জয়ন্ত ঘোষ বলছি, তিলকনগরের একষট্টি সেক্টর থেকে।"
    -"হ্যাঁ বলুন।"
    -"আপনি সেদিন আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন অ্যালায়েড ইন্সিওরেন্সের তরফ থেকে আমার স্বামী মিঃ ঘোষের সঙ্গে দেখা করতে ওর অ্যাক্সিডেন্ট সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতে।"
    -"আমি? আপনি কোথাকার নম্বর লাগিয়েছেন?"
    -"আপনার, মিঃ দাসানির নাম্বার। আপনি যে কার্ড দিয়ে গেছিলেন তাতে এই নম্বর আর খোঁজের, মানে আপনার সংস্থার ঠিকানা আছ।"
    -"ওসব তো ঠিক আছে কিন্তু আমি তিলকনগরে কোনো মিঃ ঘোষের বাড়িতে যাইনি। আপনার কিছু ভুল হচ্ছে। আপনি আবার চেক করুন।"
    বলে ফোনটা কেটে দিল। শ্রীমতী চেয়ে আছে ওর দিকে, রাই কী বলবে ভেবে পায়না। কেমন আনমনেই মোবাইলটার দিকে হাত বাড়ায়, হাতে নিয়ে একটু থমকায়। তারপর মনস্থির করে বোতাম টেপে।
    -"হ্যালো অভি, আমি রাই বলছি। খুব ব্যস্ত না থাকলে মন দিয়ে আমার কথা শোন।"
    ফোনে কথা বলা শেষ করে শ্রীমতীকে বলে,
    -"শ্রীমতী, আমার বন্ধু পুলিশ অফিসার, হয়ত জান। দাসানির ব্যাপারটা গন্ডগোলের হলেও ওমপ্রকাশ আগরওয়ালের মৃত্যু নিয়ে একটা জট আছে এটা কিন্তু সত্যি। ঘটনাচক্রে আমার বন্ধুও এর তদন্তের মধ্যে কিছুটা জড়িয়ে পড়েছে। ওকে দাসানির ফোন নাম্বার দিলাম, ও পুলিশের তরফ থেকে খোঁজখবর নেওয়াবে। যদি তোমাদের বাড়ি আসার কথা অস্বীকার করে তাহলে দাসানিকে পুলিশের লোক নিয়ে আসবে জয়ন্তর কাছে। লোকটি যা তোমাদের বলেছে তার থেকে মনে হয় এই ব্যাপারে সে কিছুটা খোঁজখবর ইতিমধ্যেই করেছে, ড্রাইভারের বয়ান নাহলে ও জানল কী করে। সেসব জানতে পারলে পুলিশের তদন্তেও সুবিধে হবে।
    তবে একটা সমস্যা আছে।
    শ্রীমতী এতক্ষন চুপ করে শুনছিল, রাইয়ের ফোনের কথাবার্তা শুনে কিছুটা আন্দাজও করছিল ব্যাপারটা, বুদ্ধিমতী সে কম নয়। এবার মুখ খুলল,
    -"তুমি কি জয়ন্তর কথা বলছ?"
    -"হ্যাঁ, জয়ন্ত জেনে যাবে যে তুমি এসব কথা আমাকে এসে বলেছ। সে হয়ত সেটা পছন্দ করবেনা এবং তোমার ওপর রাগারাগি করবে। তোমাকে সেদিকটা সামলাতে হবে।"
    শ্রীমতী বুঝতে পারছিল জয়ন্ত খুব খুব রেগে যাবে, তাকে না জানিয়ে রাইয়ের কাছে এসে সব বলা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারবেনা। খুব অসহায় বোধ করতে থাকে সে। সেদিকে তাকিয়ে রাই একটু চিন্তা করে বলে,
    -"শোনো আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। জয়ন্তর সঙ্গে আমার বন্ধু ফিরে এসে দেখা করবে। তার আগে আমি ওকে বলে দিচ্ছি যদি দাসানিকে নিয়ে পুলিশ তোমাদের বাড়িতে যায়ও, আমার বা তোমার নাম যেন না নেয়। জয়ন্তর কোনো কথার উত্তর যেন ওরা না দেয়। তদন্ত চলছে পরে সব জানতে পারবে এই বলে এড়িয়ে যায়।
    এর পরে যখন অভি জয়ন্তর সঙ্গে দেখা করতে যাবে তখন আমি ও আলোক সঙ্গে যাব। আমি পুলিশের সঙ্গে থাকব, জয়ন্ত চাইলেও আমাকে কিছু বলতে পারবেনা। এই সব কথা যা তুমি আমাকে বললে তা আমরা ওকেও জিজ্ঞেস করব এবং আশা করছি ও সবকথা যেমনটি তুমি বললে তেমনটিই বলবে। তাহলে পরে যদি কোনো সুত্রে এসব তথ্য উঠে আসে তাহলে তাতে সোর্স হিসেবে জয়ন্তর নাম আসবে।
    তুমি যে কোনোভাবে এর মধ্যে আছ তা সামনে আসতে দেব না। শুধু এখন থেকে তুমি এরকমই কিছু মনে হলে বা কোনো খটকা লাগলে আমাকে জানিও। বুঝতেই পারছ যতদিন না এর সমাধান হয়, জয়ন্ত এর মধ্যে না চাইলেও জড়িত থাকবে আর যা শুনলাম চিন্তা ভাবনা অশান্তিতে থাকবে যেটা ওর পক্ষে, তোমাদের বাড়ির পক্ষে একেবারেই ভালো কথা নয়।"

    রাইয়ের কথা শুনে শ্রীমতীর মাথা থেকে বোঝা নেমে গেল। স নিশ্চিন্ত, রাই সব সামলে নেবে, ঠিক সামলে নেবে।

    শ্রীমতীকে নীচে গাড়ি অবধি ছেড়ে এসে রাই তাড়াতাড়ি আবার ফোন নিয়ে বসল। অভিকে পুরো প্ল্যানটা বলতে হবে যাতে কোনোভাবে জয়ন্ত না টের পায় যে শ্রীমতীর থেকে ওরা সব জানতে পেরেছে!
  • নেতাই | 131.241.98.225 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৩ ১৩:৩৪495877
  • দারুন সাসপেন্স।
    শেষটা ধামাকাদার হওয়া চাই।
  • nina | 79.141.168.137 | ২৮ জানুয়ারি ২০১৩ ২২:৩৩495878
  • উফ! তাপ্পর---??!!!!
  • raatri | 24.99.29.240 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১১:২৯495879
  • তাপ্পর?????
  • শ্রাবণী | 127.239.15.101 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১২:০৮495880
  • নেতাই, রাত্রি, নিনাদি :))

    ফেবের পনের তারিখ অবধি একেবারে সময় নেই.......ষোল তারিখে কেরালা.......মাসের শেষ নাগাদ আবার লেখার সময় পাব, তখন জানা যাবে তাপ্পর কী হল!
  • PM | 93.231.150.162 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১৫:০৪495881
  • আমি এটা আপাততঃ পড়ছি না। শুধু শুধু সুগার, প্রেসার বাড়ানো। সিকি অখন্ড সংস্করন বার করলে একেবারে পড়বো
  • Suhasini | 125.111.16.10 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১৬:২২495882
  • যাচ্চলে!
  • de | 69.185.236.53 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১৬:২৫495883
  • অখন্ড বেরোলে আবার পড়ব -- ততক্ষণ শ্রাবণীর প্রতীক্ষায় --
  • kumu | 132.160.159.184 | ২৯ জানুয়ারি ২০১৩ ১৭:৪৩495885
  • কেরালায় গেলে লেখা যায় না -এই থিওরীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ পোতিবাদ গড়ে তুলুন কমগ্রীন/বুলুরা--
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন