এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আমি আমার বেলুড় জীবন নিয়ে একটা লেখা লিখছিলাম, highly non linear, কারণ linearity আমার ধাতে নেই, এন্তার বানান ভুল আছে, লেখার প্রথম তিনটে কিস্তি দিলাম, লোকজনের ভালো লাগলে আরো দেব,

    Nishan Chatterjee
    অন্যান্য | ০৯ মে ২০১২ | ২৭৭৬৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • নিশান | 82.89.200.226 | ০৯ মে ২০১২ ২১:৫৪546644
  • আমি, রামকৃষ্ণ মিশন ও স্বর্গের সিঁড়ি
    **********************************

    মিনিটা দৌড়ানোর চেষ্টা করছে...কিন্তু ঘুসুড়ির সুড়সুড়ি কাটিয়ে কিছুতেই পেরোতে পারছে না...ঘড়ি তখন আরেকটা দৌড় দিচ্ছে... কাঁটা প্রায় ছয় ছোঁয় ছোঁয় .... ডাকু পেছনে ঘুরে বললে "ভাই আজ কপালে বিস্তর দুঃখ আছে"...আমি চুপ করে বসে বসে কেবল দাঁতে নখ খাচ্ছি...যাক রেল কলোনি দেখা যাচ্ছে...নাহ আর নাটকীয় কিছু ঘটেনি...বীভৎস বেলুড় বাজার পার হয়ে গেছে...মঠের জেলগেট পৌঁছতেই লাফ দিয়ে নামলাম সকলে...বিপন্নতা কেটে গেছে...

    তখনি কি আর জানি? কপালে কি নাচছে?

    অস্বাভাবিক দ্রুততায় রাস্তা পেরিয়ে ঢুকলাম...জেলখানায়...দৌড়লাম প্রেয়ার হলের দিকে...পথে মিনুর সাথে দেখা...(ভেবনা মেয়ে...আমরা নারী সঙ্গ বিবর্জিত বাল ব্রহ্মচারী ছিলাম)...সে বললে ভিপি নাকি আমাদের খুঁজছিল...

    কি গেরো রে বাবা...আসলি বাবা নেই...নকলী বাবা খুঁজছিল...এখন সেও নেই তিসরি বাবা দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে ...

    কোনমতে প্রেয়ার পেরোতেই ডেকে পাঠালো... আমি বললাম খিদে পাচ্ছে ...একটা গেটপাস দিন দেখি....সে বলে "বিস্কুট খেয়ে নে" ...আমি বললাম "যাব্বাবা দুরে দুরে অদ্দুর খেকে এলাম...খিদে পাবে না?"

    করেছে কেলো...ও জায়গায় না বলে যাবার নিয়ম ছিল না...আর সিনেমা...মানুষ খুনের মত একটা কিছু হবে আর কি...খচে গিয়ে জিগ্গেস করলো "কাকে বলে সিনেমায় গেছিলি?" বললাম "বলা হয়নি কাউকেই!" সে বলে "কেন ?"অত্যন্ত জটিল প্রশ্ন...হাজারটা উত্তর হতে পারে...কিন্তু আমিও হারামির হাতবাক্স...ভেবেচিন্তে বললুম "হুট করে ঠিক হয়ে গেল কিনা...কাউকে বলার সময় পাইনি"...যাকগে...ভাগ্য ভালো আর কথা বাড়ায় নি...আমি চুপচাপ গেটপাস নিয়ে কাটলাম... ঘরে ফিরে বিড়িতে দম দিচ্ছি...

    বিড়ি একটা জিনিস...মানে একটা কিছু...একটা প্রতীক গোছের ... আঁতলামির...ফাজলামির এবং নিয়ম ভাঙ্গার...এবং আমাদের বেশ কিছু থিওরী ছিল বিড়ি নিয়ে

    ১.জিনিসটা প্রাকৃতিক
    ২.সিগারেটের চেয়ে কম ধোঁয়া হয়...
    ৩.কম গন্ধ ছড়ায়
    ৪.সহজেই পাতা পোড়ার গন্ধ বলে চালিয়ে দেওয়া যায়...

    আমার ঘরে সবাই টেনশন এ আত্মহারা...

    পরের দিন নকলী বাবা ফিরে এলো... এসে নানা বক্তব্য দিল...আর ভদ্রলোকের ইংরিজিটা একেবারেই সরেস ছিল না ...কিন্তু কি আর করব বোলো...কার আর সাহস আছে রাজার কাপড় নেই দেখানোর...ডাকলো আমাকে...ডেকে বলল "কদ্দিন ধরে হোস্টেলে সিগারেট খাওয়া হয়?" আমি বললুম "সিগারেট তো খাই না"... সে বলে "তাহলে নিশ্চয় বিড়ি জাতীয় কিছু একটা খাওয়া হয়?" কি আরবিট রে বাবা? বিড়ি জাতীয় টা আবার কি জিনিস? আমি ভেবেচিন্তে বললুম (যদিও ভাবার দরকার বা উপায় কোনটাই ছিল না) "ওই বিড়িই খাই আর কি!"...এরকম বিপন্ন সময়ে এরকম একটা উত্তর কিভাবে দিলাম আমার কাছেও রহস্য..."কেন খাস?"...যাব্বাবা আরবিটতর প্রশ্ন...আমি আর ঘাবড়ে গিয়ে বললাম "আগে খেলে মাথা ঝিমঝিম করত এখন না খেলে কষ্ট হয়..." খচে বোম!!! মুড়ি চিবিয়েই চলেছে...বলল "কিরকম কষ্ট হয়? মরে যাবার মত?" এবার আমি ঘাবড়ে ঘ...চুলকে ৪৪...চপে চুল... বললুম "হ্যাঁ!!!"...আর যায় কোথায়...দ্বিতীয় নাগাসাকি...চতুর্থ হিরোশিমা...মুখ খেকে হিংস্র ভাবে মুড়ি ছিটকে বেরুচ্ছে...আমি ভাবছি হে ধরণী দ্বিধা হও....

    বলল কালই বাবা মাকে ডেকে পাঠা...আমি বুকের গভীর হাতড়ে খানিক সাহস সঞ্চয় করে বললুম "আপনি কি আমাকে আরেকটা সুযোগ দেবেন?" একটা সিনেমাটকীয় হাসি দিয়ে বলল "সুযোগ তো দেব...কিন্তু উত্তরপাড়া না শ্রীরামপুর সেটা ভেবে দেখতে হবে"...ফর্দা ফাঁই....জখম মন এবং হৃদয় নিয়ে বেরিয়ে ঘরের দিকে হাঁটা দিলাম...দুদিন বাদে সাসপেনশন...এবং ইতি গজ...

    বেলুড়ীয় সান্ত্বনা
    **************

    এখন ব্যাপারটা হলো, ইতি গজটা হয়ে গেলেও অশ্বত্থামা বধটা হয়নি, মানে আমার পেছনে আছোলা বাঁশ পড়তে তখনও বাকি ছিলো। একে একে ডাকু বাপি সকলেরই ডাক পড়লো, মোটা মুটি ভাবে সিদ্ধান্ত হোলো ডাকু, বাপি, তীর্থ সাসপেণ্ড, রাজুর বাড়ি দূরে অতএব ছাড়! আমি তো, তোমরা জানোই, জেনে গেছি আমার বিদায় পাক্কা! এখন বেলুড়ের মত ভয়াবহ জেলখানা থেকে মুক্তি নিঃসন্দেহে আনন্দের ব্যপার, কিন্তু এভাবে জিনিসটা আসতে চলেছে এ আমার কল্পনাতেও ছিলো না, এসে ভয়াবহ টেনশনে আরেকটা বিড়ি ধরিয়ে বসলাম, অবশ্যই দরজা বন্ধ করে, তীর্থ আতঙ্কের সাথে বললো "আবার বিড়ি", আমি বললুম "দেখ ভাই, যা কেস খাওয়ার খেয়েই গেছি, আর নতুন করে কি হবে" (অবশ্যই এরকম নিরামিষ ভাবে নয়) তখন নিজেকে পাতি জার্মান অধিকৃত ছোট্ট সোভিয়েত গ্রাম, এবং নিজেকে বরফের মধ্যে অসহায় কয়েদী মনে হচ্ছে, যাইহোক, অদৃষ্টের উদ্দেশ্যে, এবং যে চুকলী করেছে সেই অদৃষ্টপূর্বের উদ্দেশ্যে এবং নকলী বাবার উদ্দেশ্যে কয়েকটা কাঁচা খিস্তি মেরে শুয়ে পড়লাম, তখন সবে প্রেমে পড়ছি, বাজারে পুরো ইজ্জত ফালুদা হয়ে গেছে দেখে ভয়ানক রাগ এবং রাগানক ভয় প্রাণকে হাঁকুপাকু করে তুলছে। কি আর করা যায়, পরের দিন সকালে প্রেয়ার গেলাম না! আমি এমনিতেও যেতাম না, এবং তার ফলশ্রুতি সম্বন্ধে আরেকদিন লেখা যাবে। কিন্তু নকলী বাবার আমলে প্রথম গেলাম না, যদিও নকলী বাবা নিজে সকালে হেবি ঢুলতো বসে বসে, মাঝে মাঝে গান ধরলে অবশ্য কেলোর কীর্তি, কারণ হারমোনিয়াম শিয়ালদা সাউথ লাইনে গেলে, মহাপুরুষ দৌড়তেন হাওড়া মেন লাইনে, সে যে কি জিনিস, যে শোনেনি সে বুঝবেও না। এবং প্রায়শঃ আমাকে দায়িত্ব সহকারে জানাতেন আমার গলায় নাকি সুর নেই, যদিও তাতে তাঁর কি এলো গেলো এ রহস্য আজো পরিস্কার নয় আমার কাছে। এখন খিস্তি দেওয়াটাও খুব বাওয়ালের ছিলো, কারণ নকলী বাবা খিস্তি খেতে হেবি ভালোবাসতো, কেউ খিস্তি দিলেই জানলায় আড়ি পেতে শুনতো! বেলুড়, বাবা, বেলুড়, পৃথিবীর বিভীষিকা!

    সে যাই হোক, প্রেয়ারের পর ঘরে এসে জানালো, আজকে আমার কালের যাত্রার রথ স্থগিত, কাল যেন বাবা মাকে আসতে বলি, এইটা ছিলো বিদ্যামন্দিরের মহারাজদের সমস্যা,

    তাঁরা মনে করতেন
    ১) পৃথিবীতে একমাত্র হস্টেল আছে বেলুড়ে।
    ২) তাঁদের তুষ্ট করা ভিন্ন আর কারো কোন কাজ নেই
    ৩) তাঁরা সকলেই ভগবানের ছোটভাই। ( কোনো কু ইঙ্গিত নেই এর মধ্যে কিন্তু :P )
    ৪) ছাত্রদের বাবা মায়েরা সাধারণতঃ বেকার হয়ে থাকে।
    ৫) ছাত্ররা যাই করছে, তা আসলে করছে বাবা মায়ের রিমোটে পরিচালিত হয়ে, অতএব যা কিছুই ঘটুক বাবা মাকে না ডাকলে ষোলকলা পূর্ণ হয় না!

    আমার সাহস ছিলো না বাবাকে ফোন করার, বাবাকে আমি যমের মত ডরাই, (এবং এখনো ডরিয়ে থাকি), অতএব আমার অগতির গতি মিনু, মিনুকে বললাম "ভাই আমার, দয়া করে আমার বাড়িতে ফোন করে বল, আসতে বলেছে" সে রাতে আর ঘুম হোলো না।
    -----------------------------------
    সারারাত জেগে থাকার পর একসময় দেখলাম আকাশ ফর্সা হয়ে এসেছে, পাখিরা ডাকছে টাকছে, কিন্তু আমার হৃদয়ে প্যাঁ পোঁ করে হারমোনিয়াম বাজিয়ে নকলী বাবার গলায় "এ কোন সকাল/রাতের চেয়েও অন্ধকার" বাজছে, সাথে টাক দোলানোর সিন! বেলা ১১টা নাগাদ বারান্দা থেকে দেখলাম, পিতৃদেব, মাতৃদেব এসেছেন, আমার মনে সবে রেকর্ড পাল্টালো, (এখন আপনি শুনছেন স্বামী ইয়ে-আনন্দর কণ্ঠে "হরি বোল, হরি বোল" সাথে খঞ্জনীতে সঙ্গত করছেন ব্রহ্মচারী ইয়ে-চৈতন্য!) !

    কোনোভাবে প্রাণে গিঁট বেঁধে নিচে নামলাম, বাবার মুখ থমথমে, মা বললো "বেলুড়েই এই, জেভিয়ার্সে দিলে তো বিয়ে করে আসতিস" প্রসঙ্গত জানাই জনৈক পরিবার বান্ধব বলেছিলেন, জেভিয়ার্সে ছেলেপিলে গেলেই নাকি ড্রাগ ধরে ফেলে, এবং আমার নরেন্দ্রপুরে ৮ বছরের পর বাইরে মানানো হেবি চাপ হবে, যদিও সেই লজিকে চললে আমার ব্রহ্মচারী ট্রেনিং সেণ্টারে থাকা উচিৎ ছিলো এখন। আমি আর কথা বাড়ালাম না, বাবা মাকে নিযে কলেজের দিকে পা বাড়ালাম...
    -----------------------------
    নকলী বাবার সবচেয়ে বদ স্বভাব ছিলো কেউ দেখা করতে এলেই ঘরের বাইরে দাঁড় করিয়ে নজের ব্যস্ততা প্রমাণ করার জন্য উঠেপড়ে লাগা। কিন্তু আমার দুর্মুখ বলে বিশেষ খ্যাতি ছিলো বোধহয়, তাই ডাকুর মায়ের সাথে যে ইতরামিটা করেছিল প্রায় দু ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে, সেটা আমার বাবা মায়ের সাথে করতে বিশেষ ভরসা পায়নি। ডাক পড়লো, একদিকে বাপি, এবং বাপির বাবা মা বসে রয়েছেন, সকলেরই আতঙ্কিত মুখ, বাপি যথারীতি মুকে পৃথিবীর প্রতি ফসিলীয় উদ্বেগ এবং ঘৃণা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমি মোটামুটি শান্ত প্রোফাইল বজায় রাখছি, মা প্রায় কেঁদে ফেলবে ফেলবে করছে, বাবা ক্রমাগত ঘেমে চলেছে।

    এরকম একটা অবস্থায় স্বামীজির বেলুড় বক্তৃতা আরম্ভ হোলো, যার মূল বক্তব্য
    ১) আজকের যুব সমাজ গোল্লায় যাচ্ছে।
    ২) কচি ছেলেপিলেকে বখানোর পাণ্ডা আমি, ( যদিও সকলেই ১৮ ঊর্ধ্ব)
    ৩) বিড়ি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য কি পরিমাণ খারাপ
    ৪) আমার সহবৎ জ্ঞান নেই।

    বাবা ঘেমেই চলেছে, হঠাৎ বাবা উপলব্ধি করলো বাবারও কিছু একটা বলার দরকার, নাহলে ব্যাপারটা হেবি খাস্তা হয়ে যাচ্ছে, যেন আমার মানুষ হওয়ার বিষয়ে বাবার কোনো বক্তব্য নেই, বাবা বলে উঠলো "ঘরে খাস কেন? সাফোকেশন হবে তো! বারান্দায় গিয়ে খাবি!"

    কেলো করেছে, মা কটমট করে বাবার দিকে তাকিয়েছে, নকলী বাবার চোখ গোল্লা, আর আমার পেট থেকে ক্রমাগত হাসির বুদ্বুদ উঠে আসছে, গুলগুল করে, হাসতেও পাচ্ছি না, চাপতেও পাচ্ছি না, চাপতে গিয়ে আমার গোটা শরীর কাঁপছে। মনে মনে ভাবছি "হে ধরণী দ্বিধা হও"

    নকলী বাবা নৈঃশব্দ ভেঙে জানালো বাবাকে মুচলেকা দিতে হবে যে আমি আর কখনো বিড়ি খাবো না! আবার কেলো করেছে! বাবা ডিঙিয়ে নিশান খাওয়া, বাবা আরবিট রকম খচে জানালো, শুধু কলেজেই না বাবার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে মুচলেকা দিতে হবে যে আমি আর বিড়ি খাব না! সে যাই হোক, অবশেষে ব্যাপারটা দাঁড়ালো, আমাকে আর কষ্ট করে বাড়িতে বলতে হোলো না আমি বিড়ি খাই, বাড়ির লোক আপনেই জেনে গেলো! জানা গেল কম্পিউটার প্র্যাকটিকাল শেষ করে যেন আমি একমাসের জন্য বাড়ি যাই, এবং পার্ট ওয়ানের আগে ফিরে আসি।
    -----------------------
    সেখান থেকে বেরিয়ে আমার ঘরে এলাম, বাবা খচে আমার পাপ ঘরে ঢুকবে না পণ করে নিচে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু কুপুত্র যদিবা হয় কুমাতা কখনো নয় এই দর্শনে বিশ্বাস করে মা উপরে এলো। ঘরের মাঝখানে তীর্থর গেলাস রাখা, মা কে দেখেই তীর্থ, রাজু, বাপি, ডাকু সটকেছে, কারণ মায়ের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে সত্যযুগ হলে আমাদের পাঁচজনকে ভস্ম করে দিতো। তীর্থর গেলাসটা ছিলো আমাদের ছাইদান, সেটা বিড়ির পশ্চাদ্দেশে পরিপূর্ণ, এবং একটা ঝাঁঝালো গন্ধ বেরোচ্ছে, দেখে বোঝা যাচ্ছে কোনো এক সুদূর অতীতে গেলাসের রং রূপোলী গোছের কিছু একটা ছিলো, মা হাতে তুলে একবার শুঁকলো, বোধহয় আমার পাপের ওজন পরীক্ষার জন্য, এবং উঁহহ করে আবার রেখে দিলো দেখলাম, আমি কথা বলছি না একটাও। কিছুক্ষণ পরে বাবা মা চলে গেলো, আমিও ধড়ে প্রাণ ফিরে পেলাম।
    -----------------------------------------
    এই ঘটনাটা জনমানসে বেশ আলোড়ন ফেলেছিলো, চতুর্দিক থেকে সহানুভুতির বন্যা ভেসে এলো, হৃদয় ভেসে যায় যায়.... কিরকম দু একটা উদাহরণ দেওয়া যাক!

    রাজুকে একজন জিজ্ঞেস করলো, নিশান আর বাপির কি হয়েছে রে? ( আশ্চর্য ব্যপার, রাজুরও কিন্তু একই জিনিস হয়েছে!)
    রাজু বললো তেমন কিছুই হয়নি, ওসব হাল্কা কেস ঠিক হয়ে যাবে!
    সে বললে "না রে আমার তো মনে হয় যে অন্ধকার জগতে ওরা ঢুকে পড়েছে সেখান থেকে কি আর বেরোতে পারবে?" বোঝো কাণ্ড, যেন আমি রেপ করে ফেলেছি কিম্বা আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালানে ফেঁসে গেছি!!

    দুদিন বাদে বাপি দেখলাম মুখ থম করে, একমনে বেলুড়ীয় রাবার সোল সদৃশ রুটি চিবোচ্ছে একান্ত নিবিষ্ট মনে, তার ভেতর আরেক বন্ধুবর এসে বললো " কি রে সব ঠিকঠাক তো?"

    আমি পাত্তা দিলাম না, বাপিও না, কিন্তু সে কি আর উপকার না করে ছাড়ে?
    জগতোদ্ধারের মহৎ ব্রত যে তারই কাঁধে পরমেশ্বর দিয়েছেন! সে বললো "অত চিন্তা করিস না, কি আর করা যাবে, আর ধর যদি বারও করে দিলো তাতেই বা কি? তোদের বয়েস কম ( যেন উনি আমার ঠাকুদ্দা) , কিছু না কিছু করে খেতে পারবি"

    এই সেরেছে রে!!! পাক্কা বেলুড়ীয় সান্ত্বনা! আমার খাওয়া দাওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে, আমি আর বাপি কথা না বাড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে হস্টেলের দিকে পা বাড়ালাম...

    ------
    ক্রমশঃ
    ------

    রাজকাহিনী
    **********

    একে একে ডাকু ও তীর্থ চলে গেল, আমি আর বাপি দিন পাঁচেক ছিলাম প্রাক্টিকালের জন্য তারপর আমরাও ধীরে ধীরে কাটলাম, বাড়ি যাবার সময় বুঝতেই পারছিলাম কি হবে বা হতে পারে, কাজেই চাপে ছিলাম অস্বীকার করবো না।

    --------------------------------

    এবার একটু পেছন দিকে ফেরা যাক, প্রথমে একটা জিনিস স্পষ্ট করে নেওয়া ভালো যে এই লেখা সম্পূর্ণতঃ আমার নিজের আঙ্গিক থেকে লেখা, যে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে, তর্ক করতে পারে, গালাগাল করতে পারে, কিন্তু যেহেতু আমি বিশ্বাস করি পষ্ট কথায় কষ্ট নেই আমি যা ঘটেছে আমার চারচোখ দিয়ে যেভাবে দেখেছি সেটাই ধরার চেষ্টা করছি।

    আমি ২০০৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বুঝতে পারি, আমার হাতে কেরিয়ার অপশন জিনিসটা ভীষণ রকম কমে এসেছে, সি.এম.আই, আই.এস.আই, পাইনি অতএব চুঢ়ান্ত ফ্রাস্টুতে ভুগছি, জয়েণ্ট দিইনি কারণ ও পেশায় আগ্রহ ছিলো না, ফলতঃ অঙ্কে স্নাতক হওয়া ছাড়া গতি নেই।

    অতএব কি কি ছিলো আমাদের হাতে

    ১) জেভিয়ার্স
    ২)বেলুড়
    ৩)যাদবপুর

    কিন্তু আমার নানান শুভানুধ্যায়ী আমার স্বার্থে আমার হয়ে ভেবে ঠিক করলেন আমাকে বেলুড়ে দেওয়াই স্বাস্থ্যকর।

    আমার তীব্র আপত্তি বাবার ফুৎকারে উড়ে যাবার পর, জুলাই নাগাদ বিদ্যামন্দিরে ভর্তি হই, আমার পূর্বতন অভিজ্ঞতা নরেন্দ্রপুর যেখানে আইনের কড়াকড়ি এর ২ গুণ হলেও, মজা ছিলো ১০০০ গুণ বেশী, অপরপক্ষে নরেন্দ্রপুর কলেজ, যেখানে সাদা বাংলায় ছাড়া গরু ছিলাম, সেখান থেকে এখানে এসে মনে হোল স্রেফ, এ কি রে ভাই।

    আমার সাথে নরেন্দ্রপুরের আরেকটা ছেলে ভর্তি হতে এসেছিল যার ভালো নাম মনে নেই আমরা ডাকতাম সাতগাছিয়া বলে, সেও তাল বুঝে সটকে পড়েছে, এদিকে পা মাড়ায়নি।

    আমি কোনোদিকেই না যেতে পেরে অবশেষে বাধ্য হয়ে রাজী হলাম।

    ভর্তির দিন, প্রিন্সিপালের ঘরে যাবার মুখে নকলী বাবার সাথে দেখা, আমি সেই একবার ১১ কেলাসে এসেছিলাম, সেই থেকে মালটা আমাকে মনে রেখেছিলো, তখন সাদা ছিলো, এবং নিজেকে মনে করতো সি আই এ এজেণ্ট, কাজেই একটা কথা বলতে গেলেই ঘাড় দুলিয়ে, দাঁত কেলিয়ে এমন একটা হাসি দিত সে কি বলবো, আর তার সাথে যে কথাটা বলতো সেটা পায়ের নখ থেকে মাথার চুল অব্দি জ্বালিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট!

    এইরকম একটি মহামানব আমাকে স্মৃতিপটে এঁকে রেখেছে দেখে আতঙ্ক চরম হারে বেড়ে উঠলো।

    সে যা গেল গেল, প্রিন্সিপালের আপিসে ঢুকলাম, অশোকদার ঘরে বসা যেত, সত্যদার ঘরে কখনোই ১০ সেকেণ্ডের বেশী থাকার অভিজ্ঞতা নেই, কাজেই বসতে যেতেই, হাঁ হাঁ করে বেয়ারা তেড়ে উঠলো, রাজাদের সামনে নাকি বসার নিয়ম নেই।

    কুলোকে প্রিন্সিপালকে ডাকতো পিংকি বলে, ( আমি নিঃসন্দেহে কুলোক), তা পিংকি শুরু করলো তার তামিল বাংলায়

    "য়ে ছে্যেলেকে তো য়ামি য়াগেও দ্যেখেছি, নরেন্দ্রাপূউর তো, য়োখানকার ছ্যেলেরা তো খুব পাআকা হয়"

    ইতিমধ্যে গোড়ালী বার করা ধুতি পরে, পা দুটোর মধ্যে ৩ ফুট তফাৎ রেখে হেঁটে, ৪০ পাটি দাঁত ( সাধারণ মানুষের ৩২ পাটি হয়, বাবা ছাড়), বের করে ঢুকলেন নকলী বাবা।

    জানিয়ে দিলেন কম্বুকণ্ঠে, এখানে কিন্তু মহারাজদের মহারাজই বলতে হবে, নরেন্দ্রপুরের মত দাদা বলা চলবে না...

    পিংকি সেটা শুনে উপরের পাটির দাঁতগুলো বের করে হাসলো...

    এই দেখে বাড়ি ফিরে এসে থেকে আতঙ্কে ভুগতে লাগলাম।

    --------------------

    মাধ্যমিকের পর বেলুড়, নরেন্দ্রপুর দু জায়গাতেই আমি ভর্তির আবরদন জানাই, বেলুড়ের মৌখিক পরীক্ষায় গেছিলাম, দশটা হ্যাপা করে, মনে আছে, সেখানে, স্বর্গত মোহনলাল সিনহা রায়, এবং স্বপন কুমার চক্রবর্তী আমাকে বেশ পছন্দ করেছিলেন, নকলী তখনো বাবা হয়নি, সাদা কাকু ছিলো,, তো সেও সেখানে বসে মোড়লি করছিলো দেখেছিলাম।

    আমাকে বলা হয়েছিল আমার জন্য সিট একটা রাখা থাকবে, যদি আমি কোন কারণে নরেন্দ্রপুরে ভর্তি না হই।

    নরেন্দ্রপুর কলেজের গপপো পরে কখনো বলবো, এখানে কথা প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, সে কালে কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছেলেরা ভয়ানক হারে হুড়ো দিতো, যাকে মোটামুটি র্যাগিং বলা চলে, এবং কোন অজানা কারণে তারা স্কুলের ছেলেদের তারা পছন্দ করতো না, যেমন একবার একটি ছেলে ঘরে এসে জানালো আমরা নাকি জয়েণ্ট দিয়ে চলে যাবো বলে সাধারণ স্নাতক স্তরের ছেলেদের সম্মান দিই না। যাই হোক যথাক্রমে অযাচিত ভাবে কিছু ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিই আমি বেলুড়ে ভর্তি হব, খুব শান্তিপ্রিয় জায়গা।

    যোগাযোগ করা হোল, তাঁরাও রাজী, আমি গেলাম বেলুড়, মায়ের আসার কথা বর্ধমান থেকে, মা এদিকে স্টেশনে এসে আমার অপেক্ষা করছে, এটা খেয়াল নেই যে আমি হাওড়া থেকে আসছি, মাত্র দুটো স্টপ।

    আমি অনেকক্ষণ সামনে হাঁটাহাঁটি করে কি করবো না বুঝে ভিতরে ঢুকলাম, সকালের চাপা ধোঁয়াটে রোদ, দুএকটা গাছে মাকড়সার জাল ঝিকমিক করছে, কাঁচা রাস্তা, সেটা একটু কাদা হয়ে আছে, এই দেখেই পিত্তি জ্বলে গেলো।

    সামনে দেখলাম বিনয় ভবন, কোণার ঘরে দেখলাম দুটি অন্ধ ছাত্র রয়েছে, অন্ধ দেখে ধরে নিলাম নিশ্চয় নরেন্দ্রপুরেরই হবে, কথা বলতে গেলাম, ও মা! দেখি হুশ করলো, বললো এখন কথা বোলো না স্টাডি আওয়ার তো! আমি ঘাবড়ে গেছি, ঘেঁটে ঘ!

    যাহোক, জানলাম ১১ কেলাসের ছেলেপিলে বিদ্যাভবনে থাকে, সেখানে গিয়ে একজন সিউড়ি নিবাসীকে দেখে ঘরে বসে কথা বলছি, সবাই একটু আতঙ্কিত এবং অস্বস্তিতে আছে বুঝতেই পারছি। এর মধ্যে আরেকটা ছেলে এল, সাথে নতুন একটি ছাত্রকে নিয়ে, এসে বলে কিনা "দেখ দেখ, এই নতুন বন্ধু আজ আমাদের সাথে যোগ দিলো"

    এইটা শুনে বুঝলুম চিত্তির করেছে, আমি গেটের কাছে এসে দেখলাম মা দাঁড়িয়ে আছে, আমি মাকে বললাম "আমি ভর্তি হবনা, অসম্ভব", এবং দক্ষিণেশ্বর থেকে মাকে হাওড়ায় ট্রেনে তুলে দিয়ে আবার হরিনাভী মিনি, বেঁচে থাক বাবা নরেন্দ্রপুর
    -----------------------------------

    কদিনের ভেতরেই বিদায়ের বাঁশি বেজে উঠলো, আমি তিতিবিরক্ত হয়ে বোঁচকা বেঁধে বেলুড়োদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম

    *********
    ক্রমশঃ
    *********
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ০৯ মে ২০১২ ২১:৫৭546755
  • টই-এর নামটা হেব্বি, বাকিটা পড়ে বলবো
  • নিশান | 82.89.200.226 | ০৯ মে ২০১২ ২২:০১546866
  • বক্তব্য রাখতে গেছিলাম, ওটাই নাম হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি :P
  • একক | 24.99.43.205 | ১০ মে ২০১২ ০০:৫৮546890
  • শুনেছি বেলুরে এমন ক্যাচাল করে ! লেখাটা বেশ ঝরঝরে হয়েছে . আমরা তো মহারাজ দের সামনেই বিড়ি খেতুম , এখনো গেলে খাই . তবে সেটা ঘরে বসে আড্ডা দেবার সময় . বাইরের লোকের সামনে বারান্দা দিয়ে বিড়ি টানতে টানতে হাঁটা বারন . তবে আরকেএম মানেই একশো মস্তির জায়গা !!
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ০২:৪৭546901
  • ধরা পড়ার পর থার্ড ইয়ারে আমরাও সামনেই খেতাম। তবে RKM হাজার মস্তি এটা বেলুড়ে বিশেষ খাটে না, নরেন্দ্রপুরে ব্যপক মস্তি হোতো :) বেলুড়ে কেলিয়ে গেসলাম!
  • একক | 24.99.96.237 | ১০ মে ২০১২ ০৪:৫৩546912
  • বায় দা ওয়ে , সঞ্জীবদা কি তোমাদের সময় বেলুরে ? আমার সেনীয়র . যদ্দুর জানি ২০০০ নাগাদ গেরুয়া পেয়ে গেসলো . খাসা ছেলে . আর তুমি ম্যাথ এ ,বিধান মহারাজ এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখো নিশ্চই .
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ০৪:৫৫546923
  • নকলী বাবাটা এক সঞ্জীব মহারাজ, পদবী জানি না, তবে গেরুয়া পেয়েছে ২০০২ কিম্বা ২০০৩ এ কারণ আমার ১১র শুরুতে ২০০২ তে সাদা ছিলো।

    বিধান মহারাজকে চিনি না, আমাদের সময় ছিলেন না, আমাদের সময়কার অঙ্কের মহারাজ, শৈবাল মহারাজ আর মহান মহারাজ।

    আমি ২০০৪-০৭ বিএসসি
  • একক | 24.99.96.237 | ১০ মে ২০১২ ০৫:৩০546934
  • মহান মহারাজ মানে যিনি এবছর মাথেমাতিক্স এ নাশানাল অওয়ার্দ পেলেন ? হুল্লাট ফানডু লোক তো !
  • Nishan | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ০৯:৩৭546945
  • হ্যাঁ তিনিই, পোচুর ফাণ্ডা তবে পোচুর ক্যালায়!
  • apu | 24.96.128.100 | ১০ মে ২০১২ ০৯:৫২546645
  • নিশান কি আগে নিম নামে লিখতে?

    প্রভাকর মহারাজ কে চিনতে পারলুম। কিন্তু সুপার মহারাজ কে ছিলেন?

    আমাদের সুপার ছিলেন সঞ্জীবন মহরাজ। খুব ভালো মহারাজ ছিলেন। কোন ছেলে কবে কোন সিনেমা দেখতে যায়। কখন প্রেয়ার কাটে সব জানতেন। সিনেমা দেখতে যাওয়া প্রেয়ার মিস করা ছেলে গুলো নিজের ঘরে ডেকে কফি খাওয়াতেন। বিস্কিট খাবে কিনা জিগেস করতেন। মনে জগতের (n-1) খানা ব্যাপর নিয়ে আলোচনা করতেন। শুধু সিনেমা ছাড়া। কী চাপ? কিন্তু খুব মাই ডিয়ার টাইপস ছিলেন।
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ১০:১৯546656
  • আমাদের সুপার ছিলো সুনীল মহারাজ, ওরকমই মাই ডিয়ার, ওকে বলে প্রেম করতেও গেছি, ঐসময় মানে প্রথম কিস্তির সময় তিনি গেসলেন গেরুয়া নিতে, ফলে সঞ্জীব ছিলো হস্টেল সুপার, যেদিন ধরা পড়েছিলাম সেদিন তার আবার কি অন্য কাজ ছিলো তাই দুদিনের জন্য দেবাঞ্জন ব্রহ্মচারী সুপার ছিলো।
  • অপু | 24.99.139.83 | ১০ মে ২০১২ ১৩:২৬546667
  • সঞ্জীব মহারাজ এখন VP। ছেলেদের কাছে গ্রহনযোগ্য়্তা খুব বেশী নয় বলেই মনে নয়। আমার সাথে অল্প ব্যাটে বলে হয়েছে। তাতে যা বুঝেছি।
  • Nishan | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ১৪:১৫546678
  • পটে পটে, যারা ওনার পেটোয়া তাদের সাথে পটে, তারা মদই খাক, আর গাঁজাই খাক, কি হেরোইন খাক! এমনটা দাবী করছিনা এগুলো ভয়ানক দোষ, আমিও মদ গাঁজা খাই, (হেরোইন খাই না) কিন্তু যেখানে বিড়ি খাওয়ার জন্য এরম শাস্তি সেখানে চোখে লাগে বৈকি, আর আমাদের বেলাতেও তো একেকজনের একেক শাস্তি! ভয়ানক উদ্ধত, চুড়ান্ত অভিনেতা, ভোটে দাঁড়ালে প্রধানমন্ত্রী হবার ক্ষমতা রাখে(দুঃখের বিষয় যাবতীয় প্রতিভা ছাত্রদের দিকেই বিকশিত হচ্ছে, কি অপচয়) আর সব জানে, সে অঙ্কই হোক কি ইণ্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট্রি! এবং ভয়ানক কুচুটে, পেছনে বাঁশ দেবার জন্য এমন extent অব্দি যেতে পারে কিছু বলার নেই, এরকম গপপো পরে দেবো, যেবার ওর কল্যাণে কুকুরের তাড়া খেয়েছিলাম। এবং গার্জেনদের সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে!

    আমাদের হস্টেল থেকে দু বছরে কোন অভিযোগ যায়নি, যাতে উনি একটু অসন্তুষ্ট ছিলেন, তাই ্রথম সুযোগেই বাজিমাত করে আমাদের পাকড়াও করেন!
  • অপু | 24.99.177.187 | ১০ মে ২০১২ ১৪:৩৪546689
  • আমার জেঠুর ছেলে ও বিদ্যামন্দির। +২ এবং ডিগ্রি। ওদের বেলায় ওরা ওদের সুপার কে ঘরে তালা বন্ধ করে রাখে। অনেক পরে অন্য মহারাজ এসে উদ্ধার করেন। বেলুড়ের বিখ্যাত ঘটনা। এই মহারাজ টিও 'তেমন' ছাত্রবৎসল ছিলেন না।
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ১৫:০৮546700
  • কালোয়াত ছেলেপিলে তো, এসব আমরা নরেন্দ্রপুরে থাকতে করতাম, বেলুড়ে সাহস পাইনি, অবশ্য আমাদের সুপার বেশি বাওয়ালও করতো না, আর যে করেছিলো তাকে এসব করলে TC বাঁধা!
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ১৭:৫৮546733
  • প্রথম ঝিমঝিম
    *********************

    বেলুড়ের বিদায় বাঁশীর তাৎপর্য এখানেই ছিলো, যে সেটা কালক্রমে আজ আবিষ্কার করেছি, নিজের কাছে নিজের বিদায়ের বাঁশি ছিলো, এবং দমচাপা অবস্থায় বাড়তে বাড়তে একটি বিকলাঙ্গ কুৎসিত বনসাইতে পরিণত হয়েছি, আমি বলছি না সমস্তর দায় বেলুড়ের, সেটা সম্ভবও না, কিন্তু আমার অন্তঃসত্ত্বার দ্বন্দ এ সময়েই তৈরী হতে থাকে, এবং সেই দ্বন্দ আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এবং আমি ক্রমাগত নিজেকে হারিয়ে ফেলছি, এ কথা হয়তো স্পষ্ট হবে আমি স্কুল নিয়ে বা নরেন্দ্রপুর কলেজ নিয়ে লিখতে শুরু করার পর। এছাড়া আরেকটা কারণ বলা যেতে পারে, বেলুড় পরবর্তী ক্ষেত্রে যেভাবে জীবন চলেছে, সেটাও হয়তো এড়ানো যেত বেলুড়ে না পড়লে, সেক্ষেত্রে বেলুড়কে আমি মনে মনে খানিকটা দায়ী করে ফেলি বৈকি।

    সে যা হোক, দোষারোপের কথা আসছে পরে, এ ছাড়া আমার পাঠক/ পাঠিকাকূল, যৎসামান্যই হোক না কেন, যে রসের সন্ধানে এ জিনিস পড়তে আসছেন তাঁদেরকে বঞ্চিত করার কোনো অধিকার আমার নেই।

    তবে কিনা কিছু অ-মজারু জিনিস আসবেই, কারণ জীবন জিনিসটাতে অ-মজারু জিনিসের সংখ্যা বেশী, আমার বাবার সাধ্য নয়, নকলী বাবারও না, সে জিনিস এড়ায়। আমিও এড়াবো না, ক্ষেত্র বিশেষে লোকের নাম পরিবর্তন করছি, সেক্ষেত্রে একটা লোক নানা নামে আসতে পারে, এবং আমার চেষ্টা হবে যাতে কারোরই বিশেষ পরিচয় ধরা না পড়ে এবং পুরো জিনিসটাকে আমি একটা সময় ক্রমানুযায়ী সাজানো নিখুঁত গল্প হিসেবে না দেখে কোলাজ হিসেবে দেখবো, নাহয় একটা ছবির উপর আরেকটা ছবি পড়ে সম্পূর্ণ চেহারাটাই ঝাপসা হয়ে যাবে, কিন্তু স্মৃতিমাত্রেই তাই, কয়েকটা টুকরো ছবির একের উপর একজন বসে আমৃত্যু রঙের গোলকধাঁধা তৈরী করা

    কথাগুলো আগেই লিখলে ভালো হতো, কিন্তু কখনো না লেখার চেয়ে কোনো এক সময় লিখে ফেলা ভালো।

    ----------------

    ঘরে ঢোকার পর, চাদ্দিকে একটা বন্ধুত্বের(?) উৎসব দেখে মাথা ঘুরে গেল, এই ধরণের বন্ধুত্ব দেখা যেত, দেব সাহিত্য কুটিরের প্রাচীন অনুবাদ সিরিজে, কাজেই জোর করে যখন এত বন্ধু ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে চলেছে, নিঃসন্দেহে বোঝা যায়, প্রত্যেকের ৫০% সম্ভাবনা আছে আমার পেছনে বাঁশ দেবার।

    বাবা, দিদি এসেছিল আমাকে গছাতে, ওরা যাবার সময় মগজ এতটাই গরম ছিলো যে ওরা যাবার সময় ঘুরে তাকাইনি অব্দি, তা আমার কক্ষসঙ্গী ভাবলে, আমিও বোধহয় প্রথম হস্টেলে এসে বাড়ি ছাড়ার ধাক্কাটা নিতে পারিনি।

    আমারও কিছু ব্যাখ্যা করার মত শক্তি ছিলো না বলে, ঝাড়া একঘণ্টা বিছানায় শুয়ে শুয়ে হস্টেল জীবনের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করলাম।

    চাদ্দিকে সোমত্ত ছেলেপিলে দেখছি আর দমে যাচ্ছি, কোথায় কো-এড কলেজে, নদের নিমাই, কলির কেষ্ট হতাম , আর কোথায় এসে বাঁশবাগানে পড়লাম।

    সবাই সতী, কেউ বিড়ি ফিড়ি খায় না, কেউ সিনেমা দেখতে যায় না, কেউ লাইন মারে না, কি আরবিট রে বাবা, কলেজ জীবনের যাবতীয় আশা আকাঙ্খা বিসর্জন দিলাম, আর কে না জানে, এসব বয়েস পেরিয়ে গেলে আর হয় না, বিশেষতঃ অঙ্কের লাইনে।

    যা হোক, কি হয়নি সেসব নিয়ে আক্ষেপের হাজার একটা সময় পাওয়া যাবে।

    জানলাম হস্টেল সুপার সাদা, তাঁকে আমরা অনেকেই, শম বলে ডাকতুম, অবশ্যই আড়ালে।

    ভদ্রলোক সৎ এবং ভালোমানুষ সন্দেহ নেই, সবে মধ্যপ্রদেশ থেকে এসেছেন, বাংলা লেখাপড়া শিখছেন, এবং সব খিস্তির মানে জানেন না, দোষের মধ্যে একটাই, মাঝে মাঝে মাথার পোকা নড়ে উঠতো,

    আমরা গিয়ে পড়েছিলাম, সেরকমই এক নড়মান পোকাসঙ্কুল সময়ে।

    সবচেয়ে আতঙ্কের ছিলো, বেলুড়ে, প্রতি বছর ভবন পরিবর্তন হয়, কিন্তু মালিকের পরিবর্তন ঘটে না, অর্থাৎ কিনা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে আমি যেমন যথাক্রমে বিবেক এবং শ্রী ভবনে যাবো, শমও লেজুড় হয়ে সাথেই যাবে।

    সে যা হোক বেলুড়ের রুটিনটা একটু বলে দিই

    সকাল ৫টায় ওঠা
    প্রার্থনা
    চা ও ডগ বিস্কুট
    পড়াশুনা, ঘরে বসে, বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ
    নটা নাগাদ ভাত, ঘ্যাঁট, ডাল, এবং সাতপুরোনো মাছের ঝোল
    ( রবিবার দুপুরে মাংস)
    সাড়ে নটায় কলেজ
    ৪টে নাগাদ কিছু একটা অখাদ্য টিফিন
    ৬টা অব্দি বাইরে ঘুরতে পারো ( শীতকালে যেটা ৫:৩০, সকালের রুটিন কিন্তু শীতকালে বদলায় না)
    এসে আবার প্রার্থনা
    পড়াশুনা
    নটায় ভাত, ঘ্যাঁট, ডাল, ডিমের ঝোল,
    নটা থেকে সাড়ে নটা একই গান, ভবনে ভবনে লাগানো স্পীকারে বাজবে
    তারপর আবার পড়াশুনা করে ১১টায় আলো বন্ধ!

    এছাড়া নিষিদ্ধ জিনিস হোলো
    ১) ধূমপান ( বাইরে ও ভেতরে)
    ২) মদ্যপান
    ৩)গঞ্জিকা সেবন
    ৪) এফ এম রেডিও
    ৫)বাইরে হাফ প্যাণ্ট পরে যাওয়া

    এই জ্ঞান লাভ হয়ে গেলো এসে এসেই, গাঁয়ে দেখতাম, সকাল বেলা হাঁসগুলোকে ছেড়ে দেয়, আবার সন্ধেবেলা "আ চৈ আ চৈ" করে ডেকে এনে খাঁচায় ভরে দেয়, যদিও সন্ধেবেলা আদর করে ডাকার কেউ না থাকলেও, নিজেকে হাঁস মনে হতে বিশেষ কষ্ট হোতো না।

    আর সমস্ত রামকৃষ্ণ মিশনের মতো, বিদ্যামন্দির কলেজ ছিলো একটি আশ্রমের অংশ, সে আশ্রমকে বলা হয় বেলুড়মঠের নিকটতম শাখা, তার নাম রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠ, বিদ্যামন্দিরের দক্ষিণ দিকে একটা দরজা ছিলো, যেটা, জি টি রোড আর বেলুড় মঠের দরজা সংযোগী রাস্তার উপর, আবার আরেকটা রাস্তা ছিলো পশ্চিম দিক দিয়ে, যেটা ছিলো বিনয় ভবনের পেছনে, আর পেরোলেই তত্ত্বমন্দির, যেখানে আরো কিছু গেরুয়া বাস করতো, এবং বিদ্যামন্দিরের কারো কিছুতে তাদের কিছু না গেলে এলেও তারা মোটেও ছেড়ে কথা বলতো না কাঠি দেবার সময়, তত্ত্বমন্দির পেরোলে শিল্পমন্দির যেটা, আদতে আই.টি.আই, তার পাশে পশ্চিমমুখী দরজাটা খুলতো জিটিরোডে, এ রাস্তা আমরা ব্যবহার করতাম বটে, কিন্তু যখন তখন বন্ধ হবার সম্ভাবনা থাকতো।

    কাজেই সবসময় ভরসা করা যেত না।

    আরেকটা রাস্তা ছিলো, তত্ত্বমন্দির পেরিয়েই, একটা রাস্তা চলে গেছে দক্ষিণদিকে, যেটা দিযে গেলে, সারদামন্দিরের পাশ দিয়ে আবার সেই বেলুড় মঠ ও জিটিরোড সংযোগী রাস্তায় পড়া যাবে, তার আগেও একটা বাইপাস ছিলো, যেটা দিয়ে অন্ধকার না হলে বেরোন খুব মুশকিল, পরে পরে আরো গোটা দুযেক রাস্তা বেরিয়েছিলো, যেগুলো খুবই চমৎকার, কিন্তু ধরা পড়লে, মানে সেই রাস্তা দিয়ে বেরোনর আগেই ধরা পড়লে কেবলমাত্র সেই রাস্তা ব্যবহারের জন্য পেছনে বাঁশ হতে পারতো।

    ---------------------------------------------------------

    এসে এসেই কিছু ঝামেলায় জড়িযে পারলাম, যেমন আমি সকালে উঠতে পারতাম না, প্রার্থনায় যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ছিলো, এবং দু হপ্তার মধ্যে একবার বাড়িতে ফোন গেলো,

    দ্বিতীয়ত কেন প্রার্থনায় যাবো সেই নিয়ে মহারাজের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লাম,

    আমার যুক্তি ছিলো, দুটো জিনিস হতে পারে, হয় ঈশ্বর আছেন, নাহলে নেই, আর তার সাথে আরো দুটো জিনিস হোলো, হয় আমি বিশ্বাস করি নাহলে করি না, ঈশ্বর না থাকলে আমি যাই করি না কেন যাবার দরকার নেই, যদি ঈশ্বর থাকেন এবং আমি বিশ্বাস করি, সেক্ষেত্রে যখন খুশী যেখানে খুশী আমি নিজের পার্থনা সেরে নিতে পারবো, আর যদি ঈশ্বর থাকেন, এবং আমি বিশ্বাস না করি, সেক্ষেত্রে প্রার্থনায় গিয়ে গোটাচারেক খিস্তি করলে, ঈশ্বর মোটেই পছন্দ করবেন না, এবং তা আমার জন্য ভালো হবেনা সে আর কে না জানে,

    বলাই বাহুল্য শম এই যুক্তি মোটেই পছন্দ করেনি!

    এরপর শম চালু করলো, রাত্রে গান বাজানোর পর পড়ার সময়, সেসময় কাউকে অন্যের ঘরে গুলতানি করতে দেখা গেলেই একটাকা ফাইন, আমাকে ধরেছিলো, আমি তিনটাকা দিযে বলেছিলাম, তিনবারের ফাইন দিয়ে দিলাম, এরপর দয়া করে ঝাঁট জ্বালাবেন না।

    তার পরের দিন ফাইন উঠে যায়!

    সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনাটা ঘটেছিলো এই গান বাজানোকে কেন্দ্র করে।

    নটা থেকে যেমন বললাম সেরকম একই গান বাজানো হোতো রোজ, মূলতঃ "তখন তোমার একুশ বছর বয়েস", যেটার বেলুড়ে বাজানোর তাৎপর্য আজও খুঁজে পাইনি! সে যা হোক, হঠাৎ নতুন আমদানী হোলো "ই ডুংরী সি ডুংরী", বাঁকুড়ার ভাষার গান, হেবি রোমাঞ্চকর, স্পীকারটা ছিলো ভবনের দরজার একদম সামনে, স্পীকারের সামনে দিয়ে কেত মেরে দুটো সিঁড়ি উঠে গেছে, (যদিও একটা হলেই চলতো সবাই জানে, খরচা কম হোতো), আমরা সিঁড়ির তলায় দাঁড়িয়ে নাচতাম, সে নাচে শ্লীলতার মাত্রা ছিলো এমন দাবী কেউ করবে না আমি নিঃসন্দেহ, সবচেয়ে অশ্লীল নাচ নাচতাম, আমি আর সব্য, চুম্বন ছুঁড়ে ছুঁড়ে, সায়ন্তন নাচতো মোটামুটি ভদ্রভাবেই, কিন্তু একা। বেশ কয়েকদিন এই নাচ পর্ব চলছে, পাশের ভবনের মহারাজ দেখে বিরক্ত, আমরা তখনও হিরো হয়ে নেচেই চলেছি।

    এরকমই একদিন, আমরা নাচছি, আমি সিঁচির দিকে মুখ করে, সব্য আর আমি মুখোমুখি, ভয়ানক বেগে সর্বাঙ্গ দোলাচ্ছি, আর চুম্বন উড়িয়ে দিচ্ছি, আশেপাশে মুগ্ধ কিছু দর্শক, মিনু নাচছে পাশে, সায়ন্তন দাঁত ফাঁত কেলিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচছে, হঠাৎ শুনলাম, মিনুর চাপা গলায়, "নিশান", উপরে তাকিয়ে দেখি, সাদা মতো কিএকটা দ্রুতবেগে নেমে আসছে, আমি সব্যকে বললাম "সব্য...", আমরা তো হাওয়া, সায়ন্তন বেচারা আর বুঝতে পারেনি কি হোলো, সে নেচেই চলেছে, হঠাৎ ঘর থেকে শুনলাম ঠাস করে একটা ভয়ানক আওয়াজ, বেরিয়ে দেখি শম সায়ন্তনকে উত্তাল ক্যালাচ্ছে, সেই শেষ, আর নাচা হয়নি, তবে আমাদের নাচটা দেখলে যে কি করতো বোঝা দায়, ভয়ানক ক্ষেপে গিয়ে আমাদের সাথে নাচতেও শুরু করতে পারতো।

    ______________________

    দীর্ঘ তিন চারদিন, সিগারেট খেতে পারিনি, একদিন গেছিলাম জেটিতে খেতে, তো কেপি চলে এসেছিলো বলে আর খাওয়া হয়নি, তখন আমার ওষ্ঠাধর ভয়ানক লাল ছিলো, কাজেই কারো পক্ষে এটা ভাবা দুষ্কর ছিলো, যে আমি ফুঁকি, এছাড়া বেলুড়ের তিন বছর এবং তার পরের বাঁশসমৃদ্ধ সিকুযেল গুলো পেরোয়নি কাজেই মুখের সারল্য অটুট ছিলো, সেটা বোঝার রাস্তায় আরেক বাধা।

    আমি গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে দেখি অরুণাভ, মিনু, রাজু, এই তিনজন, বিকেল বিকেল স্টেশনের দিকে এগোচ্ছে, আমি চুপি চুপি পিছু নিলাম, ওরা আমাকে দেখেই আতঙ্কে পড়ে গেছে, আমি গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, "কোথায় যাচ্ছিস তোরা?"

    মিনু আমতা আমতা করে জানালো "ইয়ে মানে ঐ আরকি...."

    আমার তো তখন যাতা অবস্থা, আমি ভয়ের মাথা কেয়ে বললাম "ভাই ৩ দিন ফুঁকিনি, মাথা খিঁচড়ে আছে, ফুঁকতে যাচ্ছিস তো বল, আমিও যাবো"

    সেটার পর তিনজনের মুখেই যে উদ্ভাসিত হাসি দেখলাম তা ভোলার নয়।

    সম্ভবতঃ এই সময়ে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ছিলো মিনু, অরুণাভ ও রাজু, এবং পরে পরে এই গ্রুপটা বেড়ে ওঠাতেই যাবতীয় ঝঞ্ঝাট হয়, নাহলে আমরা দিব্বি ছিলাম এক বছরেরও উপর!

    আমরা গিয়ে শিবু মাইতির দোকান থেকে ধারে দুটো করে সিগারেট নিলাম, আর একটা দেশলাই, বেলুড় মঠ স্টেশন গিয়ে লাইন ধরে আরো কিছুদূর গিয়ে ধরালাম আমার বেলুড়ের প্রথম সিগারেট, বুক ভরে টেনে নিলাম বিষ ধোঁয়া, আর মাথা জুড়ে নেমে এল অনন্ত ঝিমঝিম...

    *********
    ক্রমশঃ
    *********
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ১৭:৫৮546722
  • প্রথম ঝিমঝিম
    *********************

    বেলুড়ের বিদায় বাঁশীর তাৎপর্য এখানেই ছিলো, যে সেটা কালক্রমে আজ আবিষ্কার করেছি, নিজের কাছে নিজের বিদায়ের বাঁশি ছিলো, এবং দমচাপা অবস্থায় বাড়তে বাড়তে একটি বিকলাঙ্গ কুৎসিত বনসাইতে পরিণত হয়েছি, আমি বলছি না সমস্তর দায় বেলুড়ের, সেটা সম্ভবও না, কিন্তু আমার অন্তঃসত্ত্বার দ্বন্দ এ সময়েই তৈরী হতে থাকে, এবং সেই দ্বন্দ আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এবং আমি ক্রমাগত নিজেকে হারিয়ে ফেলছি, এ কথা হয়তো স্পষ্ট হবে আমি স্কুল নিয়ে বা নরেন্দ্রপুর কলেজ নিয়ে লিখতে শুরু করার পর। এছাড়া আরেকটা কারণ বলা যেতে পারে, বেলুড় পরবর্তী ক্ষেত্রে যেভাবে জীবন চলেছে, সেটাও হয়তো এড়ানো যেত বেলুড়ে না পড়লে, সেক্ষেত্রে বেলুড়কে আমি মনে মনে খানিকটা দায়ী করে ফেলি বৈকি।

    সে যা হোক, দোষারোপের কথা আসছে পরে, এ ছাড়া আমার পাঠক/ পাঠিকাকূল, যৎসামান্যই হোক না কেন, যে রসের সন্ধানে এ জিনিস পড়তে আসছেন তাঁদেরকে বঞ্চিত করার কোনো অধিকার আমার নেই।

    তবে কিনা কিছু অ-মজারু জিনিস আসবেই, কারণ জীবন জিনিসটাতে অ-মজারু জিনিসের সংখ্যা বেশী, আমার বাবার সাধ্য নয়, নকলী বাবারও না, সে জিনিস এড়ায়। আমিও এড়াবো না, ক্ষেত্র বিশেষে লোকের নাম পরিবর্তন করছি, সেক্ষেত্রে একটা লোক নানা নামে আসতে পারে, এবং আমার চেষ্টা হবে যাতে কারোরই বিশেষ পরিচয় ধরা না পড়ে এবং পুরো জিনিসটাকে আমি একটা সময় ক্রমানুযায়ী সাজানো নিখুঁত গল্প হিসেবে না দেখে কোলাজ হিসেবে দেখবো, নাহয় একটা ছবির উপর আরেকটা ছবি পড়ে সম্পূর্ণ চেহারাটাই ঝাপসা হয়ে যাবে, কিন্তু স্মৃতিমাত্রেই তাই, কয়েকটা টুকরো ছবির একের উপর একজন বসে আমৃত্যু রঙের গোলকধাঁধা তৈরী করা

    কথাগুলো আগেই লিখলে ভালো হতো, কিন্তু কখনো না লেখার চেয়ে কোনো এক সময় লিখে ফেলা ভালো।

    ----------------

    ঘরে ঢোকার পর, চাদ্দিকে একটা বন্ধুত্বের(?) উৎসব দেখে মাথা ঘুরে গেল, এই ধরণের বন্ধুত্ব দেখা যেত, দেব সাহিত্য কুটিরের প্রাচীন অনুবাদ সিরিজে, কাজেই জোর করে যখন এত বন্ধু ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে চলেছে, নিঃসন্দেহে বোঝা যায়, প্রত্যেকের ৫০% সম্ভাবনা আছে আমার পেছনে বাঁশ দেবার।

    বাবা, দিদি এসেছিল আমাকে গছাতে, ওরা যাবার সময় মগজ এতটাই গরম ছিলো যে ওরা যাবার সময় ঘুরে তাকাইনি অব্দি, তা আমার কক্ষসঙ্গী ভাবলে, আমিও বোধহয় প্রথম হস্টেলে এসে বাড়ি ছাড়ার ধাক্কাটা নিতে পারিনি।

    আমারও কিছু ব্যাখ্যা করার মত শক্তি ছিলো না বলে, ঝাড়া একঘণ্টা বিছানায় শুয়ে শুয়ে হস্টেল জীবনের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করলাম।

    চাদ্দিকে সোমত্ত ছেলেপিলে দেখছি আর দমে যাচ্ছি, কোথায় কো-এড কলেজে, নদের নিমাই, কলির কেষ্ট হতাম , আর কোথায় এসে বাঁশবাগানে পড়লাম।

    সবাই সতী, কেউ বিড়ি ফিড়ি খায় না, কেউ সিনেমা দেখতে যায় না, কেউ লাইন মারে না, কি আরবিট রে বাবা, কলেজ জীবনের যাবতীয় আশা আকাঙ্খা বিসর্জন দিলাম, আর কে না জানে, এসব বয়েস পেরিয়ে গেলে আর হয় না, বিশেষতঃ অঙ্কের লাইনে।

    যা হোক, কি হয়নি সেসব নিয়ে আক্ষেপের হাজার একটা সময় পাওয়া যাবে।

    জানলাম হস্টেল সুপার সাদা, তাঁকে আমরা অনেকেই, শম বলে ডাকতুম, অবশ্যই আড়ালে।

    ভদ্রলোক সৎ এবং ভালোমানুষ সন্দেহ নেই, সবে মধ্যপ্রদেশ থেকে এসেছেন, বাংলা লেখাপড়া শিখছেন, এবং সব খিস্তির মানে জানেন না, দোষের মধ্যে একটাই, মাঝে মাঝে মাথার পোকা নড়ে উঠতো,

    আমরা গিয়ে পড়েছিলাম, সেরকমই এক নড়মান পোকাসঙ্কুল সময়ে।

    সবচেয়ে আতঙ্কের ছিলো, বেলুড়ে, প্রতি বছর ভবন পরিবর্তন হয়, কিন্তু মালিকের পরিবর্তন ঘটে না, অর্থাৎ কিনা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে আমি যেমন যথাক্রমে বিবেক এবং শ্রী ভবনে যাবো, শমও লেজুড় হয়ে সাথেই যাবে।

    সে যা হোক বেলুড়ের রুটিনটা একটু বলে দিই

    সকাল ৫টায় ওঠা
    প্রার্থনা
    চা ও ডগ বিস্কুট
    পড়াশুনা, ঘরে বসে, বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ
    নটা নাগাদ ভাত, ঘ্যাঁট, ডাল, এবং সাতপুরোনো মাছের ঝোল
    ( রবিবার দুপুরে মাংস)
    সাড়ে নটায় কলেজ
    ৪টে নাগাদ কিছু একটা অখাদ্য টিফিন
    ৬টা অব্দি বাইরে ঘুরতে পারো ( শীতকালে যেটা ৫:৩০, সকালের রুটিন কিন্তু শীতকালে বদলায় না)
    এসে আবার প্রার্থনা
    পড়াশুনা
    নটায় ভাত, ঘ্যাঁট, ডাল, ডিমের ঝোল,
    নটা থেকে সাড়ে নটা একই গান, ভবনে ভবনে লাগানো স্পীকারে বাজবে
    তারপর আবার পড়াশুনা করে ১১টায় আলো বন্ধ!

    এছাড়া নিষিদ্ধ জিনিস হোলো
    ১) ধূমপান ( বাইরে ও ভেতরে)
    ২) মদ্যপান
    ৩)গঞ্জিকা সেবন
    ৪) এফ এম রেডিও
    ৫)বাইরে হাফ প্যাণ্ট পরে যাওয়া

    এই জ্ঞান লাভ হয়ে গেলো এসে এসেই, গাঁয়ে দেখতাম, সকাল বেলা হাঁসগুলোকে ছেড়ে দেয়, আবার সন্ধেবেলা "আ চৈ আ চৈ" করে ডেকে এনে খাঁচায় ভরে দেয়, যদিও সন্ধেবেলা আদর করে ডাকার কেউ না থাকলেও, নিজেকে হাঁস মনে হতে বিশেষ কষ্ট হোতো না।

    আর সমস্ত রামকৃষ্ণ মিশনের মতো, বিদ্যামন্দির কলেজ ছিলো একটি আশ্রমের অংশ, সে আশ্রমকে বলা হয় বেলুড়মঠের নিকটতম শাখা, তার নাম রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠ, বিদ্যামন্দিরের দক্ষিণ দিকে একটা দরজা ছিলো, যেটা, জি টি রোড আর বেলুড় মঠের দরজা সংযোগী রাস্তার উপর, আবার আরেকটা রাস্তা ছিলো পশ্চিম দিক দিয়ে, যেটা ছিলো বিনয় ভবনের পেছনে, আর পেরোলেই তত্ত্বমন্দির, যেখানে আরো কিছু গেরুয়া বাস করতো, এবং বিদ্যামন্দিরের কারো কিছুতে তাদের কিছু না গেলে এলেও তারা মোটেও ছেড়ে কথা বলতো না কাঠি দেবার সময়, তত্ত্বমন্দির পেরোলে শিল্পমন্দির যেটা, আদতে আই.টি.আই, তার পাশে পশ্চিমমুখী দরজাটা খুলতো জিটিরোডে, এ রাস্তা আমরা ব্যবহার করতাম বটে, কিন্তু যখন তখন বন্ধ হবার সম্ভাবনা থাকতো।

    কাজেই সবসময় ভরসা করা যেত না।

    আরেকটা রাস্তা ছিলো, তত্ত্বমন্দির পেরিয়েই, একটা রাস্তা চলে গেছে দক্ষিণদিকে, যেটা দিযে গেলে, সারদামন্দিরের পাশ দিয়ে আবার সেই বেলুড় মঠ ও জিটিরোড সংযোগী রাস্তায় পড়া যাবে, তার আগেও একটা বাইপাস ছিলো, যেটা দিয়ে অন্ধকার না হলে বেরোন খুব মুশকিল, পরে পরে আরো গোটা দুযেক রাস্তা বেরিয়েছিলো, যেগুলো খুবই চমৎকার, কিন্তু ধরা পড়লে, মানে সেই রাস্তা দিয়ে বেরোনর আগেই ধরা পড়লে কেবলমাত্র সেই রাস্তা ব্যবহারের জন্য পেছনে বাঁশ হতে পারতো।

    ---------------------------------------------------------

    এসে এসেই কিছু ঝামেলায় জড়িযে পারলাম, যেমন আমি সকালে উঠতে পারতাম না, প্রার্থনায় যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ছিলো, এবং দু হপ্তার মধ্যে একবার বাড়িতে ফোন গেলো,

    দ্বিতীয়ত কেন প্রার্থনায় যাবো সেই নিয়ে মহারাজের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লাম,

    আমার যুক্তি ছিলো, দুটো জিনিস হতে পারে, হয় ঈশ্বর আছেন, নাহলে নেই, আর তার সাথে আরো দুটো জিনিস হোলো, হয় আমি বিশ্বাস করি নাহলে করি না, ঈশ্বর না থাকলে আমি যাই করি না কেন যাবার দরকার নেই, যদি ঈশ্বর থাকেন এবং আমি বিশ্বাস করি, সেক্ষেত্রে যখন খুশী যেখানে খুশী আমি নিজের পার্থনা সেরে নিতে পারবো, আর যদি ঈশ্বর থাকেন, এবং আমি বিশ্বাস না করি, সেক্ষেত্রে প্রার্থনায় গিয়ে গোটাচারেক খিস্তি করলে, ঈশ্বর মোটেই পছন্দ করবেন না, এবং তা আমার জন্য ভালো হবেনা সে আর কে না জানে,

    বলাই বাহুল্য শম এই যুক্তি মোটেই পছন্দ করেনি!

    এরপর শম চালু করলো, রাত্রে গান বাজানোর পর পড়ার সময়, সেসময় কাউকে অন্যের ঘরে গুলতানি করতে দেখা গেলেই একটাকা ফাইন, আমাকে ধরেছিলো, আমি তিনটাকা দিযে বলেছিলাম, তিনবারের ফাইন দিয়ে দিলাম, এরপর দয়া করে ঝাঁট জ্বালাবেন না।

    তার পরের দিন ফাইন উঠে যায়!

    সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনাটা ঘটেছিলো এই গান বাজানোকে কেন্দ্র করে।

    নটা থেকে যেমন বললাম সেরকম একই গান বাজানো হোতো রোজ, মূলতঃ "তখন তোমার একুশ বছর বয়েস", যেটার বেলুড়ে বাজানোর তাৎপর্য আজও খুঁজে পাইনি! সে যা হোক, হঠাৎ নতুন আমদানী হোলো "ই ডুংরী সি ডুংরী", বাঁকুড়ার ভাষার গান, হেবি রোমাঞ্চকর, স্পীকারটা ছিলো ভবনের দরজার একদম সামনে, স্পীকারের সামনে দিয়ে কেত মেরে দুটো সিঁড়ি উঠে গেছে, (যদিও একটা হলেই চলতো সবাই জানে, খরচা কম হোতো), আমরা সিঁড়ির তলায় দাঁড়িয়ে নাচতাম, সে নাচে শ্লীলতার মাত্রা ছিলো এমন দাবী কেউ করবে না আমি নিঃসন্দেহ, সবচেয়ে অশ্লীল নাচ নাচতাম, আমি আর সব্য, চুম্বন ছুঁড়ে ছুঁড়ে, সায়ন্তন নাচতো মোটামুটি ভদ্রভাবেই, কিন্তু একা। বেশ কয়েকদিন এই নাচ পর্ব চলছে, পাশের ভবনের মহারাজ দেখে বিরক্ত, আমরা তখনও হিরো হয়ে নেচেই চলেছি।

    এরকমই একদিন, আমরা নাচছি, আমি সিঁচির দিকে মুখ করে, সব্য আর আমি মুখোমুখি, ভয়ানক বেগে সর্বাঙ্গ দোলাচ্ছি, আর চুম্বন উড়িয়ে দিচ্ছি, আশেপাশে মুগ্ধ কিছু দর্শক, মিনু নাচছে পাশে, সায়ন্তন দাঁত ফাঁত কেলিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচছে, হঠাৎ শুনলাম, মিনুর চাপা গলায়, "নিশান", উপরে তাকিয়ে দেখি, সাদা মতো কিএকটা দ্রুতবেগে নেমে আসছে, আমি সব্যকে বললাম "সব্য...", আমরা তো হাওয়া, সায়ন্তন বেচারা আর বুঝতে পারেনি কি হোলো, সে নেচেই চলেছে, হঠাৎ ঘর থেকে শুনলাম ঠাস করে একটা ভয়ানক আওয়াজ, বেরিয়ে দেখি শম সায়ন্তনকে উত্তাল ক্যালাচ্ছে, সেই শেষ, আর নাচা হয়নি, তবে আমাদের নাচটা দেখলে যে কি করতো বোঝা দায়, ভয়ানক ক্ষেপে গিয়ে আমাদের সাথে নাচতেও শুরু করতে পারতো।

    ______________________

    দীর্ঘ তিন চারদিন, সিগারেট খেতে পারিনি, একদিন গেছিলাম জেটিতে খেতে, তো কেপি চলে এসেছিলো বলে আর খাওয়া হয়নি, তখন আমার ওষ্ঠাধর ভয়ানক লাল ছিলো, কাজেই কারো পক্ষে এটা ভাবা দুষ্কর ছিলো, যে আমি ফুঁকি, এছাড়া বেলুড়ের তিন বছর এবং তার পরের বাঁশসমৃদ্ধ সিকুযেল গুলো পেরোয়নি কাজেই মুখের সারল্য অটুট ছিলো, সেটা বোঝার রাস্তায় আরেক বাধা।

    আমি গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে দেখি অরুণাভ, মিনু, রাজু, এই তিনজন, বিকেল বিকেল স্টেশনের দিকে এগোচ্ছে, আমি চুপি চুপি পিছু নিলাম, ওরা আমাকে দেখেই আতঙ্কে পড়ে গেছে, আমি গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, "কোথায় যাচ্ছিস তোরা?"

    মিনু আমতা আমতা করে জানালো "ইয়ে মানে ঐ আরকি...."

    আমার তো তখন যাতা অবস্থা, আমি ভয়ের মাথা কেয়ে বললাম "ভাই ৩ দিন ফুঁকিনি, মাথা খিঁচড়ে আছে, ফুঁকতে যাচ্ছিস তো বল, আমিও যাবো"

    সেটার পর তিনজনের মুখেই যে উদ্ভাসিত হাসি দেখলাম তা ভোলার নয়।

    সম্ভবতঃ এই সময়ে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ছিলো মিনু, অরুণাভ ও রাজু, এবং পরে পরে এই গ্রুপটা বেড়ে ওঠাতেই যাবতীয় ঝঞ্ঝাট হয়, নাহলে আমরা দিব্বি ছিলাম এক বছরেরও উপর!

    আমরা গিয়ে শিবু মাইতির দোকান থেকে ধারে দুটো করে সিগারেট নিলাম, আর একটা দেশলাই, বেলুড় মঠ স্টেশন গিয়ে লাইন ধরে আরো কিছুদূর গিয়ে ধরালাম আমার বেলুড়ের প্রথম সিগারেট, বুক ভরে টেনে নিলাম বিষ ধোঁয়া, আর মাথা জুড়ে নেমে এল অনন্ত ঝিমঝিম...

    *********
    ক্রমশঃ
    *********
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ১৭:৫৮546711
  • প্রথম ঝিমঝিম
    *********************

    বেলুড়ের বিদায় বাঁশীর তাৎপর্য এখানেই ছিলো, যে সেটা কালক্রমে আজ আবিষ্কার করেছি, নিজের কাছে নিজের বিদায়ের বাঁশি ছিলো, এবং দমচাপা অবস্থায় বাড়তে বাড়তে একটি বিকলাঙ্গ কুৎসিত বনসাইতে পরিণত হয়েছি, আমি বলছি না সমস্তর দায় বেলুড়ের, সেটা সম্ভবও না, কিন্তু আমার অন্তঃসত্ত্বার দ্বন্দ এ সময়েই তৈরী হতে থাকে, এবং সেই দ্বন্দ আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এবং আমি ক্রমাগত নিজেকে হারিয়ে ফেলছি, এ কথা হয়তো স্পষ্ট হবে আমি স্কুল নিয়ে বা নরেন্দ্রপুর কলেজ নিয়ে লিখতে শুরু করার পর। এছাড়া আরেকটা কারণ বলা যেতে পারে, বেলুড় পরবর্তী ক্ষেত্রে যেভাবে জীবন চলেছে, সেটাও হয়তো এড়ানো যেত বেলুড়ে না পড়লে, সেক্ষেত্রে বেলুড়কে আমি মনে মনে খানিকটা দায়ী করে ফেলি বৈকি।

    সে যা হোক, দোষারোপের কথা আসছে পরে, এ ছাড়া আমার পাঠক/ পাঠিকাকূল, যৎসামান্যই হোক না কেন, যে রসের সন্ধানে এ জিনিস পড়তে আসছেন তাঁদেরকে বঞ্চিত করার কোনো অধিকার আমার নেই।

    তবে কিনা কিছু অ-মজারু জিনিস আসবেই, কারণ জীবন জিনিসটাতে অ-মজারু জিনিসের সংখ্যা বেশী, আমার বাবার সাধ্য নয়, নকলী বাবারও না, সে জিনিস এড়ায়। আমিও এড়াবো না, ক্ষেত্র বিশেষে লোকের নাম পরিবর্তন করছি, সেক্ষেত্রে একটা লোক নানা নামে আসতে পারে, এবং আমার চেষ্টা হবে যাতে কারোরই বিশেষ পরিচয় ধরা না পড়ে এবং পুরো জিনিসটাকে আমি একটা সময় ক্রমানুযায়ী সাজানো নিখুঁত গল্প হিসেবে না দেখে কোলাজ হিসেবে দেখবো, নাহয় একটা ছবির উপর আরেকটা ছবি পড়ে সম্পূর্ণ চেহারাটাই ঝাপসা হয়ে যাবে, কিন্তু স্মৃতিমাত্রেই তাই, কয়েকটা টুকরো ছবির একের উপর একজন বসে আমৃত্যু রঙের গোলকধাঁধা তৈরী করা

    কথাগুলো আগেই লিখলে ভালো হতো, কিন্তু কখনো না লেখার চেয়ে কোনো এক সময় লিখে ফেলা ভালো।

    ----------------

    ঘরে ঢোকার পর, চাদ্দিকে একটা বন্ধুত্বের(?) উৎসব দেখে মাথা ঘুরে গেল, এই ধরণের বন্ধুত্ব দেখা যেত, দেব সাহিত্য কুটিরের প্রাচীন অনুবাদ সিরিজে, কাজেই জোর করে যখন এত বন্ধু ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে চলেছে, নিঃসন্দেহে বোঝা যায়, প্রত্যেকের ৫০% সম্ভাবনা আছে আমার পেছনে বাঁশ দেবার।

    বাবা, দিদি এসেছিল আমাকে গছাতে, ওরা যাবার সময় মগজ এতটাই গরম ছিলো যে ওরা যাবার সময় ঘুরে তাকাইনি অব্দি, তা আমার কক্ষসঙ্গী ভাবলে, আমিও বোধহয় প্রথম হস্টেলে এসে বাড়ি ছাড়ার ধাক্কাটা নিতে পারিনি।

    আমারও কিছু ব্যাখ্যা করার মত শক্তি ছিলো না বলে, ঝাড়া একঘণ্টা বিছানায় শুয়ে শুয়ে হস্টেল জীবনের মাহাত্ম্য সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করলাম।

    চাদ্দিকে সোমত্ত ছেলেপিলে দেখছি আর দমে যাচ্ছি, কোথায় কো-এড কলেজে, নদের নিমাই, কলির কেষ্ট হতাম , আর কোথায় এসে বাঁশবাগানে পড়লাম।

    সবাই সতী, কেউ বিড়ি ফিড়ি খায় না, কেউ সিনেমা দেখতে যায় না, কেউ লাইন মারে না, কি আরবিট রে বাবা, কলেজ জীবনের যাবতীয় আশা আকাঙ্খা বিসর্জন দিলাম, আর কে না জানে, এসব বয়েস পেরিয়ে গেলে আর হয় না, বিশেষতঃ অঙ্কের লাইনে।

    যা হোক, কি হয়নি সেসব নিয়ে আক্ষেপের হাজার একটা সময় পাওয়া যাবে।

    জানলাম হস্টেল সুপার সাদা, তাঁকে আমরা অনেকেই, শম বলে ডাকতুম, অবশ্যই আড়ালে।

    ভদ্রলোক সৎ এবং ভালোমানুষ সন্দেহ নেই, সবে মধ্যপ্রদেশ থেকে এসেছেন, বাংলা লেখাপড়া শিখছেন, এবং সব খিস্তির মানে জানেন না, দোষের মধ্যে একটাই, মাঝে মাঝে মাথার পোকা নড়ে উঠতো,

    আমরা গিয়ে পড়েছিলাম, সেরকমই এক নড়মান পোকাসঙ্কুল সময়ে।

    সবচেয়ে আতঙ্কের ছিলো, বেলুড়ে, প্রতি বছর ভবন পরিবর্তন হয়, কিন্তু মালিকের পরিবর্তন ঘটে না, অর্থাৎ কিনা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে আমি যেমন যথাক্রমে বিবেক এবং শ্রী ভবনে যাবো, শমও লেজুড় হয়ে সাথেই যাবে।

    সে যা হোক বেলুড়ের রুটিনটা একটু বলে দিই

    সকাল ৫টায় ওঠা
    প্রার্থনা
    চা ও ডগ বিস্কুট
    পড়াশুনা, ঘরে বসে, বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ
    নটা নাগাদ ভাত, ঘ্যাঁট, ডাল, এবং সাতপুরোনো মাছের ঝোল
    ( রবিবার দুপুরে মাংস)
    সাড়ে নটায় কলেজ
    ৪টে নাগাদ কিছু একটা অখাদ্য টিফিন
    ৬টা অব্দি বাইরে ঘুরতে পারো ( শীতকালে যেটা ৫:৩০, সকালের রুটিন কিন্তু শীতকালে বদলায় না)
    এসে আবার প্রার্থনা
    পড়াশুনা
    নটায় ভাত, ঘ্যাঁট, ডাল, ডিমের ঝোল,
    নটা থেকে সাড়ে নটা একই গান, ভবনে ভবনে লাগানো স্পীকারে বাজবে
    তারপর আবার পড়াশুনা করে ১১টায় আলো বন্ধ!

    এছাড়া নিষিদ্ধ জিনিস হোলো
    ১) ধূমপান ( বাইরে ও ভেতরে)
    ২) মদ্যপান
    ৩)গঞ্জিকা সেবন
    ৪) এফ এম রেডিও
    ৫)বাইরে হাফ প্যাণ্ট পরে যাওয়া

    এই জ্ঞান লাভ হয়ে গেলো এসে এসেই, গাঁয়ে দেখতাম, সকাল বেলা হাঁসগুলোকে ছেড়ে দেয়, আবার সন্ধেবেলা "আ চৈ আ চৈ" করে ডেকে এনে খাঁচায় ভরে দেয়, যদিও সন্ধেবেলা আদর করে ডাকার কেউ না থাকলেও, নিজেকে হাঁস মনে হতে বিশেষ কষ্ট হোতো না।

    আর সমস্ত রামকৃষ্ণ মিশনের মতো, বিদ্যামন্দির কলেজ ছিলো একটি আশ্রমের অংশ, সে আশ্রমকে বলা হয় বেলুড়মঠের নিকটতম শাখা, তার নাম রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠ, বিদ্যামন্দিরের দক্ষিণ দিকে একটা দরজা ছিলো, যেটা, জি টি রোড আর বেলুড় মঠের দরজা সংযোগী রাস্তার উপর, আবার আরেকটা রাস্তা ছিলো পশ্চিম দিক দিয়ে, যেটা ছিলো বিনয় ভবনের পেছনে, আর পেরোলেই তত্ত্বমন্দির, যেখানে আরো কিছু গেরুয়া বাস করতো, এবং বিদ্যামন্দিরের কারো কিছুতে তাদের কিছু না গেলে এলেও তারা মোটেও ছেড়ে কথা বলতো না কাঠি দেবার সময়, তত্ত্বমন্দির পেরোলে শিল্পমন্দির যেটা, আদতে আই.টি.আই, তার পাশে পশ্চিমমুখী দরজাটা খুলতো জিটিরোডে, এ রাস্তা আমরা ব্যবহার করতাম বটে, কিন্তু যখন তখন বন্ধ হবার সম্ভাবনা থাকতো।

    কাজেই সবসময় ভরসা করা যেত না।

    আরেকটা রাস্তা ছিলো, তত্ত্বমন্দির পেরিয়েই, একটা রাস্তা চলে গেছে দক্ষিণদিকে, যেটা দিযে গেলে, সারদামন্দিরের পাশ দিয়ে আবার সেই বেলুড় মঠ ও জিটিরোড সংযোগী রাস্তায় পড়া যাবে, তার আগেও একটা বাইপাস ছিলো, যেটা দিয়ে অন্ধকার না হলে বেরোন খুব মুশকিল, পরে পরে আরো গোটা দুযেক রাস্তা বেরিয়েছিলো, যেগুলো খুবই চমৎকার, কিন্তু ধরা পড়লে, মানে সেই রাস্তা দিয়ে বেরোনর আগেই ধরা পড়লে কেবলমাত্র সেই রাস্তা ব্যবহারের জন্য পেছনে বাঁশ হতে পারতো।

    ---------------------------------------------------------

    এসে এসেই কিছু ঝামেলায় জড়িযে পারলাম, যেমন আমি সকালে উঠতে পারতাম না, প্রার্থনায় যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব ছিলো, এবং দু হপ্তার মধ্যে একবার বাড়িতে ফোন গেলো,

    দ্বিতীয়ত কেন প্রার্থনায় যাবো সেই নিয়ে মহারাজের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লাম,

    আমার যুক্তি ছিলো, দুটো জিনিস হতে পারে, হয় ঈশ্বর আছেন, নাহলে নেই, আর তার সাথে আরো দুটো জিনিস হোলো, হয় আমি বিশ্বাস করি নাহলে করি না, ঈশ্বর না থাকলে আমি যাই করি না কেন যাবার দরকার নেই, যদি ঈশ্বর থাকেন এবং আমি বিশ্বাস করি, সেক্ষেত্রে যখন খুশী যেখানে খুশী আমি নিজের পার্থনা সেরে নিতে পারবো, আর যদি ঈশ্বর থাকেন, এবং আমি বিশ্বাস না করি, সেক্ষেত্রে প্রার্থনায় গিয়ে গোটাচারেক খিস্তি করলে, ঈশ্বর মোটেই পছন্দ করবেন না, এবং তা আমার জন্য ভালো হবেনা সে আর কে না জানে,

    বলাই বাহুল্য শম এই যুক্তি মোটেই পছন্দ করেনি!

    এরপর শম চালু করলো, রাত্রে গান বাজানোর পর পড়ার সময়, সেসময় কাউকে অন্যের ঘরে গুলতানি করতে দেখা গেলেই একটাকা ফাইন, আমাকে ধরেছিলো, আমি তিনটাকা দিযে বলেছিলাম, তিনবারের ফাইন দিয়ে দিলাম, এরপর দয়া করে ঝাঁট জ্বালাবেন না।

    তার পরের দিন ফাইন উঠে যায়!

    সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনাটা ঘটেছিলো এই গান বাজানোকে কেন্দ্র করে।

    নটা থেকে যেমন বললাম সেরকম একই গান বাজানো হোতো রোজ, মূলতঃ "তখন তোমার একুশ বছর বয়েস", যেটার বেলুড়ে বাজানোর তাৎপর্য আজও খুঁজে পাইনি! সে যা হোক, হঠাৎ নতুন আমদানী হোলো "ই ডুংরী সি ডুংরী", বাঁকুড়ার ভাষার গান, হেবি রোমাঞ্চকর, স্পীকারটা ছিলো ভবনের দরজার একদম সামনে, স্পীকারের সামনে দিয়ে কেত মেরে দুটো সিঁড়ি উঠে গেছে, (যদিও একটা হলেই চলতো সবাই জানে, খরচা কম হোতো), আমরা সিঁড়ির তলায় দাঁড়িয়ে নাচতাম, সে নাচে শ্লীলতার মাত্রা ছিলো এমন দাবী কেউ করবে না আমি নিঃসন্দেহ, সবচেয়ে অশ্লীল নাচ নাচতাম, আমি আর সব্য, চুম্বন ছুঁড়ে ছুঁড়ে, সায়ন্তন নাচতো মোটামুটি ভদ্রভাবেই, কিন্তু একা। বেশ কয়েকদিন এই নাচ পর্ব চলছে, পাশের ভবনের মহারাজ দেখে বিরক্ত, আমরা তখনও হিরো হয়ে নেচেই চলেছি।

    এরকমই একদিন, আমরা নাচছি, আমি সিঁচির দিকে মুখ করে, সব্য আর আমি মুখোমুখি, ভয়ানক বেগে সর্বাঙ্গ দোলাচ্ছি, আর চুম্বন উড়িয়ে দিচ্ছি, আশেপাশে মুগ্ধ কিছু দর্শক, মিনু নাচছে পাশে, সায়ন্তন দাঁত ফাঁত কেলিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচছে, হঠাৎ শুনলাম, মিনুর চাপা গলায়, "নিশান", উপরে তাকিয়ে দেখি, সাদা মতো কিএকটা দ্রুতবেগে নেমে আসছে, আমি সব্যকে বললাম "সব্য...", আমরা তো হাওয়া, সায়ন্তন বেচারা আর বুঝতে পারেনি কি হোলো, সে নেচেই চলেছে, হঠাৎ ঘর থেকে শুনলাম ঠাস করে একটা ভয়ানক আওয়াজ, বেরিয়ে দেখি শম সায়ন্তনকে উত্তাল ক্যালাচ্ছে, সেই শেষ, আর নাচা হয়নি, তবে আমাদের নাচটা দেখলে যে কি করতো বোঝা দায়, ভয়ানক ক্ষেপে গিয়ে আমাদের সাথে নাচতেও শুরু করতে পারতো।

    ______________________

    দীর্ঘ তিন চারদিন, সিগারেট খেতে পারিনি, একদিন গেছিলাম জেটিতে খেতে, তো কেপি চলে এসেছিলো বলে আর খাওয়া হয়নি, তখন আমার ওষ্ঠাধর ভয়ানক লাল ছিলো, কাজেই কারো পক্ষে এটা ভাবা দুষ্কর ছিলো, যে আমি ফুঁকি, এছাড়া বেলুড়ের তিন বছর এবং তার পরের বাঁশসমৃদ্ধ সিকুযেল গুলো পেরোয়নি কাজেই মুখের সারল্য অটুট ছিলো, সেটা বোঝার রাস্তায় আরেক বাধা।

    আমি গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে দেখি অরুণাভ, মিনু, রাজু, এই তিনজন, বিকেল বিকেল স্টেশনের দিকে এগোচ্ছে, আমি চুপি চুপি পিছু নিলাম, ওরা আমাকে দেখেই আতঙ্কে পড়ে গেছে, আমি গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, "কোথায় যাচ্ছিস তোরা?"

    মিনু আমতা আমতা করে জানালো "ইয়ে মানে ঐ আরকি...."

    আমার তো তখন যাতা অবস্থা, আমি ভয়ের মাথা কেয়ে বললাম "ভাই ৩ দিন ফুঁকিনি, মাথা খিঁচড়ে আছে, ফুঁকতে যাচ্ছিস তো বল, আমিও যাবো"

    সেটার পর তিনজনের মুখেই যে উদ্ভাসিত হাসি দেখলাম তা ভোলার নয়।

    সম্ভবতঃ এই সময়ে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু ছিলো মিনু, অরুণাভ ও রাজু, এবং পরে পরে এই গ্রুপটা বেড়ে ওঠাতেই যাবতীয় ঝঞ্ঝাট হয়, নাহলে আমরা দিব্বি ছিলাম এক বছরেরও উপর!

    আমরা গিয়ে শিবু মাইতির দোকান থেকে ধারে দুটো করে সিগারেট নিলাম, আর একটা দেশলাই, বেলুড় মঠ স্টেশন গিয়ে লাইন ধরে আরো কিছুদূর গিয়ে ধরালাম আমার বেলুড়ের প্রথম সিগারেট, বুক ভরে টেনে নিলাম বিষ ধোঁয়া, আর মাথা জুড়ে নেমে এল অনন্ত ঝিমঝিম...

    *********
    ক্রমশঃ
    *********
  • rimi | 85.76.118.96 | ১০ মে ২০১২ ১৮:২৬546744
  • ননলিনিয়ারিটি বা লিনিয়ারিটি টা ঠিক কি জিনিস? ননলিনিয়ারিটি বলতে যা বুঝি এই লেখায় তো সেইটা এখনো অবধি কোথাও দেখতে পেলাম না!!

    তবে বেলুড়ের দৈনিক খাদ্যাভ্যাসের রুটিন শুনে শিহরিত হলাম। সকালে ব্রেকফাস্ট চা, বিস্কুট, তারপরে সকাল নটায় ভাত, আর তারপরে সেই বিকেল চারটেয় টিফিন? আর তারপরে আবার রাত নটায় ভাত?

    বেলুড়ের শিক্ষকদের খাবারের রুটিন কেমন ছিল?

    কি এমন দারুণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেলুড় যে বাবা মায়েরা বাচ্চাদের এখানে পড়তে পাঠান, তাদের স্বাস্থ্য অগ্রাহ্য করে? কি এমন আইন্স্টাইন কিম্বা বিবেকানন্দ বেরুচ্ছে বছর বছর বেলুড় থেকে?
  • অপু | 24.96.85.166 | ১০ মে ২০১২ ১৮:৫১546756
  • ১। শিক্ষক রা হোস্টেল এ থাকেন না। কাজেই সেট জানা যায় না।

    ২। সবাই নিজের কাছে খাবার দাবার রাখতো মুড়ি,বিস্কুট, হরলিক্স ইত্যাদি।

    রিমি , বেলুড়ে অনেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত বা আরো গরীব ফ্যামিলি থেকে পড়তে আসে ।তাদের অনেকের থেকে ফি পুরোপুরি বা পার্টলি ওয়েভ করা হয় কেস টু কেস বেসিসে। তাই মহারাজ দের লক্ষ্য থাকে কখনো ই মাসিক খরচ টা যেন খুব বেশী না হয়।

    ৩। বিদ্যামন্দিরে থেকে আইনস্টাইন বা বিবেকানন্দ বেরোয় না। বেরোয় ভালো মানুষ। ওনার উদ্দেশ্য ছিল সেটাই।

    ৪। আমি নিজে এক দিন প্রিন্সিপল মহারাজ কে বলেছিলাম। মহারাজ পদে পদে এত ঘন্টা ভালো লাগে না। ঊনি সস্নেহে বলেছিলেন 'আজকে যেটাকে বাজে বলছিস এক দিন দেখবি সেটাকেই মিস করছিস'। অন্যের কথা জানি না আমার কাছে এই দু বছর পরম পাওয়া যার প্রভাব সার জীবনে থাক্বে।
  • একক | 24.99.180.113 | ১০ মে ২০১২ ২০:১৬546767
  • অনেক কম খরচে ম্যানেজ করতে হয় তো . তাই অমন . খাবারগুলো একঘেয়ে কিন্তু পুষ্টি নেই তা নয় . ঘ্যাট এ অনেকরকম সবজি থাকে . আর ঐভাবে জীবন কাটাবার অভ্যেস যার একবার হয়ে যায় সে আর জীবনে কোনো নতুন জায়গায় গিয়ে যাই অখাদ্য পাক সোনামুখ করে খেয়ে নেয় :D :D
  • hu | 22.34.246.72 | ১০ মে ২০১২ ২১:০৩546778
  • আমি ব্রেবোর্ণের হোস্টেলে থেকেছি। সেখানেও এমন সকাল দশটায় ভাতের পর আবার সেই বিকেলে টিফিন দেওয়া হত। খাবার মেনু মোটামুটি একইরকম। আমরা দুপুরে কলেজের ক্যান্টিন থেকে খেতাম। সকালে অবশ্য শুধু চা-বিস্কুট নয়, পাঁউরুটিও থাকত। প্রার্থনার যাতনাটাও ছিল না।
  • pi | 147.187.241.7 | ১০ মে ২০১২ ২১:০৯546789
  • রিমিদি এতে এত আঁতকে উঠলো কেন ? গ্যাপগুলো দেখে ? এরকম তো বহু লোকজনই খেয়ে থাকে। হস্টেল তো বটেই, তা না হলেও।
  • hu | 22.34.246.72 | ১০ মে ২০১২ ২১:১৯546800
  • পাই, সত্যি বলতে কি এই গ্যাপগুলো এখন চোখে পড়ে খুব বেশি। এইরকম খাদ্যাভ্যাস আমারও ছিল। কিন্তু এটা একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয় সেটা এখন বুঝতে পারি। দামী খাবারের কথা বলছি না। যা আয়ত্বের মধ্যে আছে তার থেকেই অল্প সময়ের ব্যবধানে অল্প খাওয়ার অভ্যেসটাই ভালো। এমএসসি করার সময়েও হোস্টেলে থেকেছি। সেখানে সকালে ব্রেকফাস্ট খেয়ে ক্লাসে যেতাম (যদি ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে পারি), দুপুরে ঘন্টাখানেক লাঞ্চব্রেক থাকত। তখন হোস্টেলে ফিরে ভাত-রুটি কিছু একটা। আবার বিকেলে এবং রাতে। এই নিয়মটা ব্রেবোর্ণের হোস্টেলেও করা যেতে পারত কেউ যদি একটু চিন্তা-ভাবনা করত এগুলো নিয়ে।
  • অপু | 24.99.227.76 | ১০ মে ২০১২ ২৩:১১546811
  • আর ISI লেডিস হোস্স্টেল কলকাতা তে। একে কম মেয়ে । তার ওপর মেয়ে রা একটু হিসেবী হয় কে না জানে। তার ওপর কলকাতা র মেয়ে গুলো সোম থেকে শুক্র থেকে কেটে পড়তো বাড়ি তে। ঐ সময় তাও ভালো মন্দ ওর ই মধ্যে হত। আর উইক-এন্ডে আরো জঘন্য খাবার থাকতো কলকাতার বাইরের মেয়ে গুলো র জন্যে।
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ২৩:১২546822
  • দুঃখের বিষয় আমাদের সময় প্রথম যিনি মেস ম্যানেজার ছিলেন তাঁর উদ্দেশ্যও সৎ ছিলো, আগ্রহও ছিলো, ফলে মেস বিল আসতো কম, খাবারের কোয়ালিটি ভালো, কিন্তু তারপর যে মহাপুরুষ এলেন তাঁর আমলে মেস বিল হয়ে গেলো ভয়ানক রকমের চড়া, খাবার প্রায় রোজদিন পুঁইয়ের ঘ্যাঁট।

    মহারাজরা খেতেন সারদামন্দিরে, তাঁদের খাবার দাবার বেশ ভালোই ছিলো,

    আমার নিজের দিক বলতে গেলে আমি বেলুড় মিস করি না, হয়তো সেটা আমার নরেন্দ্রপুর জীবনের জন্যও বটে, ইশকুলে আমাদের মাইনে ছিলো ১২০০ সব মিলিয়ে, তাতেই দিনে ছবার খাবার, মাসে একদিন বিরিয়ানী/পরোটা মাংস/চিলি চিকেন আসতো।

    নরেন্দ্রপুর ইশকুলে নিয়ম ছিলো বেলুড়ের চতুর্গুণ, কিন্তু কথায় কথায় বাবা মাকে ডেকে পাঠানো হোতো না, এবং একটা পারিবারিক ব্যপার ছিলো, যেটা বেলুড়ে একেবারেই পাইনি!

    নরেন্দ্রপুর কলেজে সব মিলিয়ে মাইনে ছিলো ৯০০, খাবার ভালো দিতো না, কিন্তু নিয়মকানুনের কড়াকড়ি ছিলো না, আর হুলিয়ে মস্তি হোতো।

    আর নরেন্দ্রপুর ইশকুল এবং কলেজে একটা ব্যপার ছিলো, আমরা যা খেতাম, ওয়ার্ডেন এবং মহারাজরাও তাই খেতো, সে ভালোই হোক কি খারাপ!

    বেলুড়ে মেস বিলই আসতো ৯০০র উপর, কলেজে আলাদা ৩৩৫, হস্টেলে আরো ২০০! সব মিলে ১৪৩৫!

    বেলুড়ে খাবার অখাদ্য ছিলো, আবার চাইলে বাইরে ভালোমন্দ খেয়ে আসবো তার উপায়ও ছিলো না
    :-o

    একবার মেস মিটিঙে গেছিলাম, প্রথম ভদ্রলোকের আমলেই, পরিমল মহারাজ যখন মেস ম্যানেজার, তিনি আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করছিলেন, কি পছন্দ, কিসে ভালো হবে কিসে মন্দ ইত্যাদি, VP এবং P দাবী করে ছাত্রদের কথা অত শোনার কি আছে?

    এবং তার পরই আমাদের এক সিনিয়ারের সাথে প্রবল ঝগড়া বেধে যায়, যার মূল issue টাই ছিলো ওনারা অনেক ভালো খাবার দাবার খেয়ে থাকেন :P তারাও মানবে না, এ ছেলেও শুনবে না, আর ছেলেটির প্রতিভা ছিলো সে ভারী গুছিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে কথা বলতো, অমন যে P (প্রভাকরের মহারাজের পরের জন, নাম করবো না, কারণ নাম করলে ডাইরিয়া বাঁধা) যে কিণা পেঁচিয়ে শান্ত ভাবে পেছনে বাঁশ দিতো সেও চেঁচাতে শুরু করেছিলো (সত্যি কথায় গায়ে ফোস্কা পড়ারই কথা) ছেলেটি কিন্তু নির্বিকার হয়ে বলে "cool down মহারাজ, এত চেঁচামেচির কি আছে?" মাইরি সে একখানা কাণ্ড বটে!
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ২৩:১৪546833
  • রিমিদি প্রথম যখন লিখছিলাম খাপছাড়া ছিলো অনেক বেশি, এখন পুরোন লেখাগুলো দিচ্ছি সেজন্য অতটা non linearity বা Chronology র অভাব চোখে পড়ছে না, তবে আছে, পরে পরে, সেটা আমার ব্যর্থতা বলা যেতে পারে :(
  • rimi | 178.26.205.19 | ১০ মে ২০১২ ২৩:১৬546844
  • হ্যাঁ। গ্যাপগুলো দেখেই আঁতকে উঠেছি। আমিও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারেই বড় হয়েছি। আমাদের বাড়িতে সকাল সাতটায় দুধ বিস্কুট (কিম্বা চা বিস্কুট), নটায় ভাত ডাল আলুভাজা, দুপুরে টিফিন, বিকেলে ফিরে এসে ফের ভাত ডাল আলুভাজা, সন্ধ্যেয় আবার দুধ বিস্কুট কিম্বা চা বিস্কুট, তারপরে আবার রাতে সেই ভাত ডাল আলুভাজা। আমার ধারণা যে কোনো বাঙালী বাড়িতেই, তিনবেলা ভাত না হলেও, মোটামুটি এরকম খাবার রুটিন ফলো করা হয়। এর জন্যে বিরাট কিছু খরচ হয় না।

    খরচের কথাই যদি বললে অপুভাই, আমরা হলাম মায়োপিক জাতি। শুধু খাবারের পরিমাণ আর কোয়ালিটি কমিয়ে খরচ বাঁচানোর কথা ভাবি। এটা ভেবে দেখি না যে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়লে শেষ পর্যন্ত দশগুণ খরচেও কুলাবে না। আর দলে দলে লোক অসুস্থ হলে রাজ্যের ডাক্তার হাস্পাতাল সবার উপরে চাপ পড়বে।

    খাবারের রুটিন পরিবর্তনে বিশাল কিছু খরচ লাগে না। লাগে খানিক চিন্তা। হু যেটা বলল। পোলাও কালিয়া তো আর চাওয়া হচ্ছে না। সাধারণ শসা পেঁয়াজ মুড়িও যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর। মহারাজগণের নিজেদের খাওয়া দাওয়া কেমন ছিল জানতে ইচ্ছে করে।

    আমি আমার সুদীর্ঘ জীবনে একজনকেই এইরকম গ্যাপে খাবার খেতে দেখেছি। তার ফলটাও সে হাতে নাতে টের পেয়েছে, ২৪ বছর বয়সের আগেই গ্যাস্ট্রিক আলসার ধরেছে।

    আর ঐ প্রাত্যহিক ঢপের প্রার্থনার জায়্গায় সকালে এক ঘন্টা শরীর চর্চা রাখলে বরং সবদিক দিয়ে ভালো হত। ছেলেদের না খাইয়ে রাখো, আর সকালে প্রার্থনা করাও "হে ভগবান আমার যেন শরীর খারাপ না হয়"!!!! কি অদ্ভুত শিক্ষার কনসেপ্ট!
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ২৩:১৭546867
  • অপুদা, আমি নিম এবং ঘোড়ানিম নামে এখনো লিখি :P তবে নিজের লেখা গপপো কবতেয় পিতৃদত্ত নাম ব্যবহার করি, এই যে জানিয়ে দিলাম, আর নিম বলে লিখবো না , নতুন নাম খুঁজতে হবে :D
  • নিশান | 82.89.200.226 | ১০ মে ২০১২ ২৩:১৭546855
  • অপুদা, আমি নিম এবং ঘোড়ানিম নামে এখনো লিখি :P তবে নিজের লেখা গপপো কবতেয় পিতৃদত্ত নাম ব্যবহার করি, এই যে জানিয়ে দিলাম, আর নিম বলে লিখবো না , নতুন নাম খুঁজতে হবে :D
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন