এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষেঃ জুলে, লাদাখ!

    সিকি
    অন্যান্য | ২৩ জুন ২০১২ | ১১৩৫৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aka | 85.76.118.96 | ৩০ জুন ২০১২ ১৫:১১558309
  • ওহো আমি ভাবছিলাম এক একদিনের এক একটা অ্যালবাম। ছবি তো হেবি হয়েছে।
  • শ্রী সদা | 69.97.137.83 | ৩০ জুন ২০১২ ১৫:১৫558310
  • লেখা ছবি দুটো ই একদম ফাসক্লাশ। ভাবছি সময় সুযোগ করে দলবল নিয়ে লাদাখ ঘুরে আসি।
  • সিকি | 132.177.187.171 | ৩০ জুন ২০১২ ১৬:০৩558311
  • সব্বাইকে ধন্যবাদ।

    এত সুন্দর এখানকার ন্যাচারাল বিউটি, কোনো হাইফাই ক্যামেরা নিয়ে যাবার দরকারই পড়ে না। যে কোনো পাতি ক্যামেরাতে ভালো ছবি আসে। আমার ক্যামেরাটা কোডাকের পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ছ মেগাপিক্সেলের একটা ক্যামেরা। কার্ড থেকে বের করে কেবল একটু কনট্র্যাস্ট বাড়িয়েছি বা কমিয়েছি, আর সাদা বর্ডার লাগিয়েছি।

    বুনান বা ল্যাদোশদা বা অজ্জিত ওখানে গেলে পাগল হয়ে যাবে ছবি তুলে তুলে।
  • সিকি | 132.177.187.171 | ৩০ জুন ২০১২ ১৭:১২558312
  • ১৩ জুন ২০১২

    কেউ বিছানা ছেড়ে উঠল না। আমাদের হাতে অলরেডি একটা স্পেয়ার দিন রাখা ছিল শেষের দিকে। সেটাকে প্রথম দিকেই খরচা করে ফেলার ইচ্ছে আমার ছিল না, কিন্তু সবার শরীরের দিকে গুরুত্ব দিতেই হবে। আমার মেয়ে একদম সুস্থ হয়ে গেছিল গাড়ি থেকে নামামাত্রই। কিন্তু চৌহানের বৌয়ের কান কটকটানি আর মেয়ের মাথাব্যথা সারল না। অতএব ঠিক হল, কোত্থাও যাওয়া হবে না। সকালের দিকে একজন কর্নেল অথবা মেজর আসবেন, তিনি প্রায় দুবছর ধরে এখানে পোস্টেড, তিনি আমাদের পরের ট্যুর প্ল্যান বিবেচনা করে গাড়ি বুকিং ইত্যাদি ব্যবস্থা করে দেবেন। আমরা সকলেই অবিশ্যি দুদিন আগে থেকেই ডায়ামক্স নিয়ে চলেছি রেগুলার ডোজে।

    বিলালকে পৌঁছনোমাত্র টাকাপয়সা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, বিলাল ফেরত চলে যাবে শ্রীনগরে, ওর আর এখানে গাড়ি চালানোর পারমিট নেই।

    কর্নেল নাকি মেজরকে গুলি মারা যাক, এইখানে আসুন, আমি আপনাদের একটু আইডিয়া দিই লাদাখ সম্বন্ধে, এখানের ট্রিপ সম্বন্ধে। সারাদিনে যখন কিছুই করার নেই। অ্যাক্লাইমেটাইজেশনের জন্য বরাদ্দ আজ সারাদিন। আমরা সমুদ্রতল থেকে নহাজার ফিট ওপরে চলে এসেছি। সমতলের চল্লিশ পার্সেন্ট অক্সিজেন জোটে এখানে। তাই লাফালাফি, দৌড়োদৌড়ি, হুটহাট সিঁড়ি চড়া একেবারে বারণ, যতদিন এখানে থাকব।

    এই ম্যাপটা দেখুন।

    বাঁদিক থেকে আমরা এসেছি। শ্রীনগর থেকে সোনমার্গ হয়ে দ্রাস, কারগিল, মুলবেক, ফোটুলা, লামায়ুরু হয়ে নিমু মেরিয়ে লে। এটা একটা রাস্তা লে আসার। ন্যাশনাল হাইওয়ে ওয়ান ডি। এর অন্য একটা পার্ট হল ওয়ান এ। সেটা আসছে হিমাচল প্রদেশের মানালি থেকে। ম্যাপের একেবারে মাঝে নিচের দিকে দেখুন জিংজিং বার, বারলাচা লা হয়ে সারচু, লাচুং লা, রুমসে, উপসী, কারু হয়ে যে রাস্তাটা লে আসছে, সেটাই ওয়ান এ। জিংজিং বারের একটু নিচেই রোহতাং পাস, সেটা আর ম্যাপে নেই। ওখানেই মানালি।

    লাদাখ এই ম্যাপে দেখানো প্রায় সমস্ত উপত্যকাটার নাম। লে একটা জেলা। তার সদর শহরও লে। এই লাদাখ রিজিয়ন পুরোটাই পামীর মালভূমির ওপর। ভূগোলের ভাষায় বলতে গেলে এটা একটা বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। নিচে হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে মেঘভরা মৌসুমী বাতাস সারা ভারতে বর্ষাকাল আনে, কিন্তু পৃথিবীর ছাদ পামীর মালভূমি রয়ে যায় শুকনো। তবে, তাতে কিন্তু লাদাখবাসীদের কোনো অসুবিধে হয় না। আশেপাশে অজস্র গ্লেসিয়ার। সেই গ্লেসিয়ারগলা জলের দৌলতেই এই অঞ্চলের লোকেদের কখনো জলকষ্ট হয় না। এই অঞ্চল হল পৃথিবীর উচ্চতম জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। তিন হাজার ফিট থেকে শুরু করে উনিশ হাজার ফিট উচ্চতা পর্যন্ত এলাকায় এখানে লোকজন বাস করে। বৃষ্টি খুব কম হবার দরুণ এই পাথুরে এলাকায় চাষবাস প্রায় হয়ই না, তবে গ্লেসিয়ারের গলা জল ধরে রেখে সামান্য কিছু গাছপালা চাষআবাদ হয় এখানে। জনগোষ্ঠী মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। হাজার হাজার বছর আগে এই শহরের ওপর দিয়ে এসেছেন এবং গেছেন হিউয়েন সাং, ফা হিয়েন, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, এঁদের মত মানুষ। ছড়িয়ে গেছেন বৌদ্ধধর্ম।

    সমুদ্রতল থেকে অনেকটা ওপরে হবার জন্য এখানে বাতাস খুব পাতলা, অক্সিজেনের পরিমাণ কম, তাই সমতল থেকে আসা মানুষজনের প্রাথমিক কিছু অসুবিধা হতে পারে। মূলত রক্তচাপজনিত অসুস্থতা, যাকে বলে এএমএস, অ্যাকিউট মাউন্টেনিয়ারিং সিকনেস। নাক প্রতিটা শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন নিতে পারে না, ফলে রক্তে অক্সিজেন কম মেশে এবং ব্রেনে বা শরীরের অন্যান্য জায়গায় সঠিক চাপে অক্সিজেনমিশ্রিত রক্ত পৌঁছয় না, ফলে হঠাৎ করে এই জায়গায় গিয়ে পড়লে হঠাৎ করে মনে হবে মাথা রীল করছে, ঝিমঝিম করছে, ঘুম পাচ্ছে, হাতপা অবশ হয়ে আসছে ইত্যাদি। ঘাবড়ানোর কিছু নেই, এটা নিতান্তই সাময়িক সমস্যা। শরীর কী করে, ব্রেনে বেশি অক্সিজেন পৌঁছে দেবার জন্য হার্টকে নির্দেশ দেয় আরো আরো বেশি রক্ত পাম্প করতে, ফলে হার্টবীট বেড়ে যায় স্বাভাবিক অবস্থাতেই, তাই দৌড়োদৌড়ি করার চেষ্টা করলেই সাথে সাথে হাঁফ ধরে যায়, ব্রেথলেসনেস এসে যায় ইত্যাদি। এই হল AMS।

    এর থেকে নিষ্কৃতি পাবার জন্য ডায়ামক্স নামের এক ট্যাবলেট খেতে হয় পৌঁছনোর দুদিন আগে থেকে, দিনে দুটো করে। সেটা শরীরে রক্তচাপের পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ করে, এএমএস থেকে রক্ষা করে। এবার এই ট্যাবলেট খাবার তাৎক্ষণিক এফেক্ট হিসেবেও হাত পায়ের আঙুলে ঝিঁঝি ধরে যাবার মত অনুভূতি হতে পারে, ঘাবড়াবার কিছু নেই। বাই রোড কারগিলে বা এদিক থেকে মানালি সারচু, কেলং ইত্যাদি জায়গায় থামতে থামতে এলে শরীর নিজে থেকেই আস্তে আস্তে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়, আর কেউ বাই এয়ার লে-তে পৌঁছলে প্রথমেই যেটা অবশ্যকর্তব্য, সেটা হল এক থেকে দেড়দিন শুধু বিছানায় শুয়ে রেস্ট। শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ লাগলেও। একবার উঠে বেরোবার চেষ্টা করলেই সেটা খুব মারাত্মক ব্যাপার হয়ে যেতে পারে অনেকের ক্ষেত্রে, মৃত্যু ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। বাই রোড এলে, একদিন রেস্ট নেওয়া আবশ্যিক আক্লাইমেটাইজেশনের জন্যে, তবে একেবারে শুয়ে না থেকে একটা গাড়ি নিয়ে লোকাল সাইটসিয়িং করে নিলেও চলে, কারণ বাই রোড এলে অনেক আগে থেকে শরীর উচ্চতার জন্য তৈরি হতে হতে আসছে।

    আবার ম্যাপ দেখুন। লে থেকে উত্তর দিকে একটা রাস্তা গেছে, খারদুং লা হয়ে খালসার হয়েএকটা রাস্তা গেছে ডিস্কিট হয়ে তুর্তুকের দিকে, অন্য রাস্তাটা গেছে সুমুর হয়ে পানামিকের দিকে। সিয়াচেন গ্লেসিয়ারে এই পানামিকের দিকেই। খুব কম লোক এই পানামিকে যায়, কারণ প্রথমত ভালো রাস্তা নেই, দ্বিতীয়ত, পানামিক প্রায় বর্ডারের কাছে, সিয়াচেন ওখান থেকে সামান্য দূরত্বে। সাধারণ মানুষের বেশিদূর যাবার অনুমতি মেলে না। উত্তর দিকের এই এলাকাটার নাম নুব্রা ভ্যালি। নুব্রা নদী বয়ে গেছে, শিয়ক নদী বয়ে গেছে, ফলে সবুজ দেখা যায় এই ভ্যালিতে। তুর্তুক থেকে পাকিস্তানের বর্ডার পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে। এক সময়ে এই তুর্তুক গ্রাম পাকিস্তানের একটা গ্রাম ছিল। একাত্তরের যুদ্ধের পরে এই এলাকা ভারতে চলে আসে। মাত্র দুহাজার দশ সাল থেকে তুর্তুকে লোকজনের যাবার অনুমতি মিলছে। এই নুব্রা ভ্যালি কিন্তু কারাকোরাম পর্বতমালার অন্তর্গত। এটা হিমালয় নয়।

    লে থেকে নিচে একটা রাস্তা গেছে দেখুন, কারু। কারু থেকে পূর্বদিকে চাং লা পাস পেরিয়ে তাংসে হয়ে একটা রাস্তা গেছে প্যাংগং লেকের দিকে। এই সেই লেক, যেখানে থ্রি ইডিয়টসের শেষ সীনের শুটিং হয়েছিল। এই এলাকাটার নাম হল চাংথাং ভ্যালি। এটা অপূর্ব সুন্দর, আর প্যাংগং লেকের সৌন্দর্য ছাড়াও অন্য ইম্পর্ট্যান্স আছে। সেসব পরে বলব। এই লেকের তিন ভাগের দুই ভাগ চীনে পড়ে।

    কারু থেকে নিচে উপসী হয়ে তাংলাং লা পাস পেরিয়ে সো কার লেক হয়ে আরেকটা রাস্তা গেছে সো মোরিরি লেকের দিকে। এটাও লাদাখ এলাকার আরেকটা সুন্দর লেক। অনেকে বাইক নিয়ে প্যাংগং থেকেই নিচে মান, মেরাক, চুশূল হয়ে মাহে হয়ে সোমোরিরি পৌঁছয়। রাস্তা প্রায় নেই বললেই চলে এই রুটে, কেবল অ্যাডভেঞ্চারিস্টরা এই রাস্তা নেয়।

    লে শহর থেকে মোটামুটি এই সমস্তই দেখার জিনিস। যে হেতু পুরো এলাকাটা আর্মির কন্ট্রোলে, তাই প্রতিটা এলাকায় যাবার জন্য লে পৌঁছেই পারমিট নিতে হয়। তাকে বলে ইনার লাইন পারমিট। কোথাও ভারতীয়দের যাবার অনুমতি আছে, বিদেশীদের ছাড়পত্র নেই, কোথাও কোনো সিভিলিয়ানেরই যাবার অনুমতি মেলে না। সেই অনুযায়ী রুট প্ল্যান করতে হয়।

    লে থেকে আমাদের পরের ট্রিপ নুব্রা ভ্যালিতে। কিন্তু তার আগে, আজ, সারাদিন রেস্ট। সকালে কোনো এক কর্নেল বা মেজর আমাদের ট্যুর বিবেচনা করতে আসবেন।
  • aka | 85.76.118.96 | ৩০ জুন ২০১২ ২০:১৬558313
  • সিকি তক্কাতক্কি করতে চাইলে দু চারটে মার্ক্সিজমের টই ঘুরছে সেখানে আসতে পারে, এখানে শুধু গপ্পো লিখুক। ছবিগুলো হেবি হয়েছে। যতদিন যাচ্ছে আমি মোটামুটি কনভিন্সড যে একটা ভালো পয়েন্ট অ্যাণ্ড শ্যুট ভালো ছবি তোলার জন্য যথেষ্ট।
  • সিকি | 132.177.187.171 | ০১ জুলাই ২০১২ ০১:৫৭558314
  • সকালবেলা সেই মিলিটারিবাবু এলেন। আদতে অন্ধ্রর ছেলে, দু বছর লে-তে থেকে অতীব কষ্টে আছেন। থেকে থেকেই বাড়ির জন্য প্রাণ কান্দে, তাই দিল্লির সেনাভবনে তদ্বির করে তিনি তাঁর ট্রান্সফারের ফাইল চালিয়েছেন, সেই চালিকাশক্তি চৌহান এবং তার হাতযশ, তাই তিনি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এসেছেন আমাদের ট্যুর প্ল্যান ফাইনালাইজ করে দিতে। প্ল্যান দেখে টেখেই তিনি বলে উঠলেন, সেই এক কথা, এ তো অত্যন্ত হেকটিক ট্যুর, আপনারা আরাম করার সুযোগ পাবেন না, এর থেকে এটা বাদ দিন ওটা বাদ দিন ...

    বাদ চলে গেল সোমোরিরি লেক। শুধু নুব্রা ভ্যালি আর প্যাংগং লেক দেখে নাকি আমরা ফিরে যাব। অতঃপর চৌহান আমার দিকে ঘুরে বসল। আপ কেয়া বোলতে হ্যায়, মুখার্জিসার? ইয়ে প্ল্যান ঠিক রহেগা না? জাদা হেকটিক ভি নেহি হোগা।

    মুখে হাসিটি ঝুলিয়ে রেখে শান্ত ভাবে আমি বললাম, আপনাকে তো আমি আগেও বলেছি, আমি এখানে আরাম করার জন্য আসি নি। আমার, আমার নিজের প্ল্যান অনুযায়ী চলারই ইচ্ছে ছিল। আমি হেকটিক ট্যুর করার জন্যেই এসেছিলাম। এখন আপনারা সবাই মিলে যদি আরাম খোঁজেন তা হলে আমি আপনাদের সাথে আরাম করতে বাধ্য। আদারওয়াইজ আমি এঁর বানিয়ে দেওয়া ট্যুরের সঙ্গে একমত নই। ইনি ভালোবেসে লে-তে পড়ে নেই, চাকরি করার বাধ্যবাধকতায় আছেন, ওঁর এখানে থাকতে ভালো লাগছে না, এমন অনেক কিছু আছে যেসব জিনিস ওঁর মতে দেখার মত কিছু নয়, কিন্তু সেগুলো আমার হিসেবে দেখার মত, আমি লে-কে ভালোবেসে এসেছি এখানে ঘুরতে। সুতরাং, আমার মত নেবার কোনো দরকার নেই। আমার মত অনুযায়ী ঘোর স্ট্যামিনা না আপনার ফ্যামিলির লোকের আছে, না আমার ফ্যামিলির আছে। প্ল্যান আপনারা যা করছেন, করুন, আমাকে শুধু জানিয়ে দিন, আমি সেই অনুযায়ী আপনাদের সাথে গাড়িতে বসব। এর বাইরে আমার আর কিছুই বলার নেই।

    মেজরসাব দৃশ্যতই অসন্তুষ্ট হলেন, এমন ট্যাঁকট্যাঁক কথা শোনার আশা তো উনি করে আসেন নি। চৌহানও অপ্রস্তুত, নেহি নেহি, আপনি তো অনেক পড়াশোনা করে এসেছেন লে সম্পর্কে, আপনি না বললে কী করে হবে ... তাছাড়া আপনার মেয়েরও তো শরীর ভালো নেই, কাল অতবার বমি করেছে ...

    আমার সত্যিই কিছু বলার ছিল না। সিকিনী এবং মেয়ে যদি লে-র প্রকৃতি এনজয় করত, তা হলে আমি লড়ে গিয়ে আলাদা গাড়ি নিয়ে ঘুরে নিতাম, ওদেরকে ওদের মত আরাম করার মত ছেড়ে দিতাম। কিন্তু একদিন বারো ঘণ্টার লং ড্রাইভ সেরেই সিকিনীও ওদের মতই কথা বলছে, এত হেকটিক ওরা পারবে না, শরীর দিচ্ছে না, এই হচ্ছে, ওই হচ্ছে, তাই হচ্ছে, এমতাবস্থায় আমার একা ফাইট দেবার কোনো মানেই হয় না, বরং আপাতত সারেন্ডার করি, আমার ট্রিপ এমনিতেই এদের সঙ্গে পড়ে চটকে গেছে, যা হচ্ছে হোক, আমি দু বছর পরে আসছিই বাইক নিয়ে, তখন প্রাণ ভরে ঘুরব।

    বিশেষ কোনো আর্গুমেন্টে না গিয়ে আমি উঠে গেলাম হ্যাঁ-হুঁ করে, চৌহানের জন্যে আরেক কোনো কৃতজ্ঞ কর্নেল রানা লে-র কোথাও অপেক্ষা করছিলেন, তিনি চৌহানের জন্য গাড়িসমেত এই মেজরকে পাঠিয়েছেন, চৌহানকে নিয়ে যাবার জন্য, একসাথে বসে বোতল খুলবেন, মাল টানবেন। চৌহান তাই তার সাথে বেরিয়ে গেল। আমরা পড়ে রইলাম দিহারের গেস্টহাউসেই। চৌহানের বউ মেয়ে নিজেদের ঘরে বসে কোঁ-কোঁ আওয়াজ পাড়তে লাগল। সিকিনী আর সিকির মেয়ে বই খুলে বসে বসে ল্যাদ খেতে খেতে পড়তে লাগল।

    আমি আর কোনো উপায় না দেখে বেরোলাম, অন্তত লোকালিটিটা তো দেখে আসি। একেবারে বসে থাকার কোনো মানে হয় না, বিশেষত আমি ওষুধ খেয়ে রয়েছি গত তিনদিন ধরে (সবাইই খেয়েছে), আমার কোনোরকমের অসুবিধে হচ্ছে না। লে-তে এসে থেকে আমার ফোন কাজ করছে না। এখানে এয়ারসেল, এয়ারটেল আর বিএসএনএল ছাড়া কোনো মোবাইল চলে না। আমার ভোডাফোন। বাড়িতে একটা ফোন করতে হবে। ঠোঁট ফাটছে, একটা বোরোলীনও কিনতে হবে।

    বেরোলাম। বাইরে চারপাশে কিচ্ছু নেই। ঠিক ডিফেন্স এসট্যাবলিশমেন্টগুলো যেমন হয়। লে শহরের বাইরে, কত বাইরে আগের রাতে বুঝি-ও নি, টায়ার্ড ছিলাম। আজ সকালে বেরিয়ে বুঝলাম অনেকটাই দূরে আছি।

    প্রায় চার কিলোমিটার হাঁটবার পরে প্রথম ফোন বুথ পেলাম, সঙ্গে দুটি দোকান। ফোন করলাম, বোরোলীন না পেয়ে লিপগার্ড কিনলাম। আরেকটু এদিক সেদিক ঘুরে আবার চার কিলোমিটার উজিয়ে ফিরলাম। কোথাও কোনো খাবার জায়গা নেই, ফলে গেস্টহাউসে সেই ভেজ খেতে হবে। অন্য কোনো অপশন নেই।

    মাথা আবার গরম হয়ে যাচ্ছিল। সারাদিন এইখানে পড়ে থাকতে হবে? এমনকি রাতেও এখানেই সেই ভেজ খেতে হবে? লে মার্কেটের এত গল্প শুনেছি, এত খাবার জায়গা, সবরকমের খাবার পাওয়া যায়, দুদিন এই জনহীন প্রান্তরে পড়ে থাকতে হবে সেসব কিছুই না দেখে, অ্যাক্লাইমেটাইজেশনের নামে? শহরের মধ্যে কোনো হোটেলে গিয়ে অ্যাক্লাইমেটাইজ করা যেত না? আর্মি অ্যাকোমোডেশনের শালা এত মধু?

    নিজের মনে খিস্তি মারতে মারতে ফিরলাম। ততক্ষণে চৌহানের ফ্যামিলির থেকে ট্রিপ প্ল্যান পালটে যাবার খবর শুনেছে সিকিনী। আমি ফিরতেই আমার ওপর চোটপাট শুরু করল, তোকে বলেছিলাম চৌহান নিজের মত করে চলবার চেষ্টা করবে, তুই কেন বললি না আলাদা গাড়ি করে নিবি? আমরা সোমোরিরি দেখে আসতাম। কেন তুই চুপচাপ মেনে নিলি?

    পুরো লে হালুয়া। আমি তো তোদের কথা ভেবেই কিছু বললাম না। তোদের কিছু ভালো লাগছে না, তোদের শরীর ঠিক নেই, তোদের আরামের দরকার, সান্নু কী? আমি তো যাতে আর খিস্তি না খেতে হয় তাই সবকিছুতে হ্যাঁ করে দিয়েছি। এখন বলছিস আলাদা হয়ে যাবি, আমার প্ল্যান অনুযায়ী তোরা ঘুরতে পারবি?

    সিকিনী বলল, হ্যাঁ পারব, তুই চৌহানকে একদম মাথায় তুলবি না, একবার সবকিছু নিজের কব্জায় নিয়ে নিলে না, ও পুরো বেড়ানো চৌপাট করে ছেড়ে দেবে। দুপুরেও এরা বলছে সেই রুটি সবজি আর ডাল দেবে, ডালে কিন্তু এখানে শুধুই রাজমা দেয়, তুই খেতে পারবি না, অন্তত রাতে বাইরে খাবার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে বল চৌহানকে, এই তেপান্তরের মাঠে এনে যখন তুলেছে আমাদের।

    এইজন্যেই কবি বলেছেন মেয়েদের বোঝা শালা দেবতারও অসাধ্যি তো কুতো মনুষ্য। চৌহান তো তখন মাল টানতে গেছে কর্নেল রানার সাথে, লে মিলিটারি হাসপাতালে, তাকে আর পাবো কোথায়। চৌহানের কাছে এয়ারটেলের ফোন আছে, কিন্তু তাকে ফোন করতে হলে তো আবার চার কিলোমিটার হেঁটে ফোন বুথে যেতে হবে, আবার কে যাবে?

    অতএব মেসেই জিজ্ঞেস করলাম, হ্যাঁ ভাই, এখান থেকে গাড়ি অ্যারেঞ্জ করা যাবে? রাতে বাইরে খাব। তো, মেসের লোক বলল, না স্যার, গাড়ি তো এখান থেকে বুকিং হবে না, ও আর্মি অফিসে ফোন করতে হবে, যিনি এসেছিলেন তাকে বলে দেখুন, ওরাই গাড়ি অ্যারেঞ্জ করে দেয়। এখানে এমনিতে তো গাড়ি পাবেন না লে মার্কেট ছাড়া।

    মার্কেট কতদূর? খুব বেশি দূর নয়, ন কিলোমিটার মত।

    অসহায়ের মত দুপুরে ভেজ খেলাম, শুধু একটা তরকারি দিয়ে রুটি। বিকেল বিকেল চৌহান ফিরল। সিকিনীই তাকে আমাদের রুমে ডেকে আনল। চৌহান খুব উদ্বিগ্ন, কেয়া হুয়া সার? প্ল্যান পসন্দ নেহি আয়া?

    যতটা সম্ভব ভালোভাবে ঝাড়লাম চৌহানকে। এ কোথায় নিয়ে এনে রেখেছেন আমাদের? একটা ফোন বুথ চার কিলোমিটার দূরে, ইচ্ছে করলে শহরে যাবার জন্য কোনো গাড়ি পাওয়া যায় না, ঘরে টিভি নেই, ঘড়ি চলে না, মেসে ছাড়া খাবার কোনো উপায় নেই, মেসে ভেজ ছাড়া কিছু বানায় না, এই জন্য কি আমরা লে-তে এসেছিলাম, আপনার ওপর অ্যাকোমোডেশন বুকিং-এর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে এসেছিলাম? আপনি তো বন্ধুর কাছে গিয়ে সুন্দর লাঞ্চ করে এসেছেন, আমার কাছে তো এটা একটা অখাদ্যতম লাঞ্চ ছিল। ফ্রি-তে তো থাকছি না, পয়সা দিয়েই থাকছি এই গেস্তহাউসে, তা হলে পয়সা দিয়ে শহরের মধ্যে কোনো হোটেলে কেন থাকছি না? অন্তত নিজের পছন্দমত খাওয়া দাওয়াটা তো তা হলে জুটত! ... আমি রাতে এই খাবার খেতে পারব না, বাইরে খাবো, আপনি যেভাবে হোক গাড়ির ব্যবস্থা করে দিন। আর লে-তে যখন যখন থাকব, আমি আর আর্মির গেস্টহাউসে থাকব না, আপনি থাকলে থাকবেন, আমি আলাদা হোটেল দেখে নেব।

    চৌহান মরিয়া চেষ্টা করল, না না স্যার, আপনি ভুল বুঝছেন, আমি যাকে বুকিং করতে দিয়েছিলাম, সে-ই বলল, লে শহরের মধ্যে কোথাও কোনো হোটেলে জায়গা নেই, সব ভর্তি, সেইজন্যেই তো আমরা এইখানে থাকতে বাধ্য হয়েছি, এর পরে আমরা নুব্রা ভ্যালি ঘুরে এসে যখন থাকব, এয়ারফোর্সের মেসে, নয় তো নিমুতে থাকব, কোনো অসুবিধে হবে না।

    আমি কেটে কেটে জবাব দিলাম, চৌহানজি, আমার অনেক অনেক বন্ধু এখানে ঘুরে গেছে বছরের পর বছর, কোনো মেজর বা কর্নেলকে কনসাল্ট না করেই। তাদের তো আর আর্মির সঙ্গে আপনার মত বন্ধুত্ব নেই। আর আমি এই এলাকা আপনার থেকে বেশি চিনি। আপনার আর্মির বন্ধুরা কতটা চেনেন আমি জানি না, তবে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি আপনার বন্ধুরা আপনাকে টোটালি মিথ্যে কথা বলেছেন, ভুল ইনফর্মেশন দিয়েছেন। লে সিটিতে কখনও জায়গার অভাব হয় না, এত ট্যুরিস্ট এখানেই আসে-ই না। আমি গিয়ে খুঁজলেই হোটেল পাবো। আপনি গাড়ির ব্যবস্থা করে দিন, আমি ষোল সতেরো তারিখের জন্য হোটেল বুক করে আসি। নিমু লে থেকে পঁয়তিরিশ কিলোমিটার দূর, লে বেড়াতে এসে নিমুতে আমি হারগিজ থাকব না।

    চৌহান, এইবারে প্রচন্ড অপমানিত হল। আর্মির অপমান ওর অপমান। মুখ কালো করে বলল, আপনি ওদের মিথ্যেবাদী বললেন? জানেন, ওরা এই এলাকা আপনার থেকে বেশি চেনে?

    আমি গললাম না, চিনতে পারে, তারা তাদের আর্মির চৌহদ্দির মধ্যে যতটুকু চেনার ততটুকু চেনে। শহরের মধ্যে কোথায় কোথায় হোটেল গেস্টহাউস আছে যেখানে সিভিলিয়ানরা থাকে সেসব ওরা জানবে না, কারণ ওরা থাকি আর্মির শেল্টারে। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন দিল্লিতে শস্তায় হোটেল কোথায় আছে, আমি বলতে পারব না, কারণ দিল্লিতে আমি নিজের বাড়িতে থাকি। আর হোটেল পাই বা না পাই, আমি / আমরা রাতে নন ভেজ খাবো, গাড়ির ব্যবস্থা করে দিন।

    চৌহান আর কথা না বাড়িয়ে কাকে একটা ফোন করে বলল গাড়ি পাঠাতে। গাড়ি আসবে পৌনে নটার সময়ে। তারপরে ব্যঙ্গ করে আমায় জিজ্ঞেস করল, অব আপ খুশ তো? অওর কোই সেবা? ট্রিপ প্ল্যান কো লেকর তো কোই শিকায়ত নেহি?

    গলার টোন শুনে আবার গেল মটকা গরম হয়ে। বলেই দিলাম, শিকায়ত তো আছে, কিন্তু বলে কী লাভ বলুন, আপনারা তো সবাই "আরাম" করবেন বলে এসেছেন। বলুন তো, আপনাদের আরাম করার জন্য আপনারা আমাকেই কেন বেছে নিলেন?

    চৌহান সেই একই উত্তর দিল, না, সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে, আমার মেয়ে তো এখনো উঠে দাঁড়াতে পারছে না, ওর জন্য এই ওষুধ নিয়ে এলাম, আপনার মেয়েও তো কাল বমি করছিল ...

    আমি ওকে থামিয়ে দিলাম, আমার মেয়ের মোশন সিকনেস হচ্ছিল, সেটা কোনো বড় জিনিস নয়, ছোটবেলায় আমারও হত। আদারওয়াইজ ও গাড়ি থেকে নামার পর থেকে আমার মতই ফিট। কিন্তু আপনার মেয়ে বউ এখন কাতরে যাচ্ছে। ওরা যখন এত ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়ে, ওদের নিয়ে না আসলেই তো হত! এলেন কেন? আমি তো দিল্লিতেই বলেছিলাম এই ট্যুর হেকটিক হবে। আপনি কি জানতেন না একেকদিন ন ঘন্টা দশ ঘন্টা আমাদের গাড়িতে বসে থাকতে হবে? আমি কি বলি নি?? এখন অসুস্থতার দোহাই এখানে এসে কেন দিচ্ছেন?

    চৌহান দেখল, বসের হাজব্যান্ডের সাথে কথায় পেরে ওঠা যাবে না, তাই খানিক হেঁহেঁ করে ব্যাপারটাকে ডাইলিউট করে দিয়ে, এখানে তো ডিনারের অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে, আর বাইরে গিয়ে কেন খাবেন, নন ভেজ মাঙ্গা লেতে হ্যাঁয়, আপনি চলে যান, হোটেল দেখে নিন, যদি পান, আমাদের জন্যেও বুকিং করে নেবেন, আর নন ভেজ আইটেম কিছু প্যাক করে নিয়ে আসবেন।

    ঠিক পৌনে নটায় একটা মিলিটারি কম্যান্ডার জিপ এল, তাতে দুজন ফৌজি বসে। চৌহানের ছেলেকে নিয়ে আমি বসলাম তাতে।

    কিন্তু মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। মার্কেটের মধ্যে তারা কিছুই চেনে না কোথায় ভালো শস্তার হোটেল গেস্টহাউস আছে, কেবল চেনে জিংস্পা এলাকায় একটা আর্মি মেস আর তার চারপাশের কিছু দোকান হোটেল। সেখানেই গাড়ি নিয়ে গেল আমাদের। একটা গেস্টহাউস দেখে খুব পছন্দ হয়ে গেল আমাদের। পাশেই লাইন দিয়ে খাবারের দোকান, কতরকমের খাবার পাওয়া যাচ্ছে। গেস্টহাউস ষোল সতেরো তারিখের জন্য বুকিং করে নন ভেজ প্যাক করিয়ে প্রফুল্লচিত্তে ফেরার পথ ধরলাম।

    ফেরার পথে ভাবলাম ফৌজিদুটোর সাথে একটু খেজুর করি। তো তারা দেখলাম চূড়ান্ত বীতশ্রদ্ধ, লাইফের প্রতি। এটা আমি সর্বত্রই দেখেছি এই ট্রিপে। একেবারে ঝরতি পড়তি গাঁয়ের লোকজন, যাদের কোথাও কোনো গতি হয় না, পড়াশোনা হয় না, চাকরি জোটে না, তারা সব ভর্তি হয় আর্মিতে নিচের র‍্যাঙ্কে। এদের জীবনে কোনো স্বপ্ন নেই, ভিশন নেই, অ্যাডভেঞ্চার নেই, কেবল মিলিটারি রুল এদেরকে যন্ত্র বানিয়ে রেখেছে। "পুছো মত সাব, হমারা তো সন্ন্যাসী কা জীবন হ্যায়, জিনা হারাম হো জাতা হ্যায় য়ঁহা পে। ফ্যামিলি উধর গাঁও মে হ্যায়, ইধর হম সর্দি মে কাঁপতে রহতে হ্যায়। ডিসেম্বর মে তো মাইনাস ষাঠ তক হো জাতা হ্যায়, দিমাগ কাম নেহি করতা, হাত নেহি চলতা, ফির ভি বোঝ উঠানা পড়তা হ্যায় ... এচ্চেয়ে হায়দরাবাদে আমার গাঁও অনেক ভালো, হায়দরাবাদে কত কী দেখার আছে, সালার জঙ্গ মিউজিয়াম আছে, লে তে কী বা দেখার আছে, খালি বরফ ছাড়া?"

    চুপ করে রইলাম, সত্যি, যাদের বাধ্যবাধকতায় থাকতে হয়, তাদের কাছে সত্যিই কোনো সৌন্দর্য আনে না লে লাদাখের প্রকৃতি।

    ফিরে এলাম আবার, দিহার গেস্টহাউসে। সকালবেলার মেজর পরবর্তে নদিনের পুরো ট্রিপের জন্য আমাদের গাড়ি বুক করে দিয়েছেন আর্মি থেকে ডিসকাউন্টেড রেটে, কাল সকাল আটটায় গাড়ি আসবে, ইনোভা। নুব্রা ভ্যালি যাব আমরা।

    পরিবর্তন অনুযায়ী প্ল্যান এই রকম দাঁড়ালঃ

    ১৪ জুনঃ ডিস্কিটে রাতে থাকা। গিয়ে হোটেল খোঁজা হবে।
    ১৫ জুনঃ তুর্তুকে রাতে থাকা, আমাদের ক্যাম্পিং রিসর্ট বুকিং করা আছে এক রাতের জন্য, চৌহানদেরটা গিয়ে করতে হবে।
    ১৬ জুনঃ সরাসরি লে-তে ফেরত।
    ১৭ জুনঃ আরাম। লোকাল সাইটসিয়িং।
    ১৮ জুনঃ প্যাংগং লেক। তাং সে-তে ফিল্ড হসপিটালে রাত্রিবাস।
    ১৯ জুনঃ কেরি-তে জনোইক কম্যান্ডিং অফিসারের আতিথ্যগ্রহণ (কেরি-র গল্পটা যথাসময়ে বলব, ধৈর্য ধরুন। আপাতত এই টুকুনি জেনে রাখুন কেরি-তে খেজুরের প্ল্যান বানানো হয়েছে সোমোরিরি লেককে বাদ দিয়ে। আমি অ্যাক্টিভলি আর কোনো প্রতিবাদ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কারণ দু বছর বাদে আমি আসছিই আবার)
    ২০ জুনঃ লে-তে ফেরত। ফেরার পথে আরো দু একটা জিনিস দেখা।
    ২১ জুনঃ আরাম। শেষবেলার শপিং।
    ২২ জুনঃ ভোরের ফ্লাইটে দিল্লি ফেরত।

    ----------

    চৌহানের কাছে গিয়ে রেলা নিলাম। বলেছিলাম না, প্রচুর ঘর আছে শহরের মধ্যেই? গেস্টহাউসে ফিরে দেখি সিকিনীর মুখ গম্ভীর। একটাও কথা না বলে খাবার শেষ করে সোজা ঘরে ঢুকে গেল। আমিও পেছু পেছু চলে এলাম।

    অনেকক্ষণ পর। ঘর অন্ধকার। ফিঁচফিঁচিয়ে কান্নার আওয়াজ। মেয়ে ঘুমিয়ে কাদা। "শমীক, ঘুমোলি?"

    কী আর ঘুমবো? সারাদিন তো বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে হেজে গেছি। পাশ ফিরতে হল।

    ফ্যাঁচফ্যাঁচ আর ফিচফিচ থেকে ফিল্টার করে যা শুনলাম, "তুই চৌহানকে ওইভাবে কেন ঝাড়লি? আমার অফিসে গিয়ে আর মুখ দেখানোর রাস্তা রইল না। ওর সাথে এর পরে আমি একসাথে বসে কাজ করব কী করে? জানিস, তুই চলে যাবার পরে ও তোর নামে কী কী বলেছে? বলেছে, মুখার্জিসার তো এমন রেগে গেছেন, আমার মনে হয় উনি এবারে ট্রিপের পয়সাও বোধ হয় আমার সাথে শেয়ার করবেন না। উনি সবাইকে এত দুর্বল আর নিজেকে খুব সবল ভাবেন। আমিও তো ঠিক রয়েছি, আমারও তো কোনো প্রবলেম হয় নি, তাই বলে ফ্যামিলির আরাম আমি দেখব না? উনি একেবারে বলে দিলেন আমাদের আসা উচিত হয় নি? ... শমীক, দিস ইজ টু মাচ, এইভাবে তোর সঙ্গে আর থাকা যাচ্ছে না, মেজাজ কন্ট্রোল না করলে তোর সাথে আমি আর কোনোদিন বেড়াতে আসব না।"

    বোঝো। কেবলমাত্র তাঁর কথায় লড়েছিলাম যে, "চৌহানকে একদম মাথায় তুলবি না"। এখন তিনিই বিরূপ হলেন। ওই যে শালা কবি বলেছেন দেবা ন জানন্তি কুতো ইয়ে ...

    ঘুম আসার আগে লাস্ট প্রতিজ্ঞা করলাম নিজের কাছে, আর মেজাজ খারাপ করব না। আর কোনো প্রতিবাদে যাবো না, শত প্ররোচনাতেও না। যথেষ্ট লোকশিক্ষে হয়েছে। ট্রিপের কন্ট্রোল চৌহানের হাতে, বুকিং এর দায়ভার তার হাতে, সে-ই করুক, আমি পুতুল সেজে থাকব। আমি শুধু এখানে আরেকবার আসব। আলাদা মানুষজনের সাথে। আর এদের কারুর সাথে নয়। যেমন যেমন ঘোরাবে, তেমন তেমন ঘুরব। যেমন যেমন আরাম করাবে, তেমন তেমন আরাম করব। কেবল রাজমা আর মদ থেকে শতহস্ত দূরে থাকব। বাকি এবারের গোটা ট্রিপে আমার কোথাও আর কোনো সে থালবে না।

    ঘুমিয়ে পড়লাম।
  • jhumjhumi | 24.99.195.51 | ০১ জুলাই ২০১২ ২৩:২১558315
  • কালমেঘের স্বাদ ভালো ই পাওয়া যাচ্ছে ! লেখা চলুক।
  • pi | 81.206.11.78 | ০২ জুলাই ২০১২ ০৯:৪৮558316
  • টুকটাক করেও এটা পড়ে যাচ্ছি কিন্তু ঃ)
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ০২ জুলাই ২০১২ ১০:৪৪558317
  • শমীকদা, photoscape নামে একটা ফ্রী টুল আছে, ওটা নেড়ে দেখতে পার। কিন্তু তারপরে কি হলো?
  • cb | 202.193.160.9 | ০২ জুলাই ২০১২ ১১:৩২558319
  • পুরো ট্রিপ এর মোটিভশন হচ্ছে 2014...2014...2014
  • গান্ধী | 213.110.246.230 | ০২ জুলাই ২০১২ ১১:৩৭558320
  • ঃ)
  • sinfaut | 131.241.218.132 | ০২ জুলাই ২০১২ ১৫:২২558321
  • আর এই ট্রিপটা পুরো ১১৪ ... ১১৪ ... ১১৪...

    :P
  • সিকি | 132.177.187.171 | ০২ জুলাই ২০১২ ২০:৪৭558322
  • ১১৪টা আবার কী? ১০৮-এর পরে ৬টা ফাউ? ;)
  • সিকি | 132.177.187.171 | ০২ জুলাই ২০১২ ২১:৫৩558323
  • ১৪ জুন ২০১২

    রাতের মেঘ কেটে গেছিল রাতেই। সকাল হতেই ঝকঝকে আকাশ। ঠিক আটটায় গাড়ি নিয়ে হাজির আমাদের নতুন ড্রাইভার, দোরজি। হাসিখুশি মুখের সুন্দর লাদাখি ছেলে।

    দুদিনের জন্য যাবো, ফিরে এসে আবার লে-তে থাকব, সুতরাং, দুদিন পরের জন্য বুক করা গেস্টহাউসে বেশিরভাগ লাগেজ জমা করে ছোট ব্যাগ নিয়ে আমরা বেরোব। সুটকেস লোড হতে হতে শেষবারের মত দিহারের গেস্টহাউসটা ঘুরে নিলাম। কাল মাথা গরম ছিল বলে তেমন দেখা হয় নি, আজ দেখলাম, একদম রুমের সামনে থেকে পাহাড় উঠে গেছে হঠাৎ করে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়। সামনে বড় তোরণ, তিব্বতী স্টাইলে সাজানো, মাঝখানে ইংরেজিতে লেখা, Juley।

    জুলে মানে কী, জিজ্ঞেস করতে হবে কাউকে, ভেবে রেখেও ভুলে গেলাম, যখন শুনলাম গাড়ি গড়াতে শুরু করতেই গাড়ির মিউজিক সিস্টেম থেকে বাজতে শুরু করল গম্ভীর অথচ মিষ্টি গান, অনেকটা স্তোত্রপাঠের মত। বুদ্ধের উপাসনার গান। সকালের মেজাজটা পুরো পালটে দিল। সামনে সারি দিয়ে বরফে ঢাকা পাহাড়, রাস্তা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে ওপরে, আর সঙ্গে সেই গান, এ জিনিস শোনার জন্য আমি বারবার লাদাখে আসতে পারি।

    নতুন গেস্টহাউসে সুটকেস রেখে আলু পরোটা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে এগোতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম। চৌহানপুত্র এবং কন্যার সেই তিব্বতী গান অত্যন্ত বিরক্তিকর বোরিং লাগছিল বলে তারা নিজেদের পেন ড্রাইভ লাগিয়ে দিয়েছে, সেখানে এখন হালফিলের হিন্দি গান বাজছে, আর দুর্বোধ্য পঞ্জাবী ভাংরা। জলেবী বাই এখন তারস্বরে নিজের নাম জানাচ্ছেন, বাইরে আস্তে আস্তে লে শহর ছোট হতে হতে প্রথমে একগুচ্ছ বাড়ির ছাদ, তারপরে খয়েরি আর নীল রঙের মাঝে এক টুকরো সবুজ দ্বীপ, তারও পরে নীলচে সবুজ হয়ে মিলিয়ে গেল। আমরা যাচ্ছি নুব্রা ভ্যালি, খারদুংলা পাস পেরিয়ে।

    খারদুং লা পাস কথাটা ঠিক নয়, কারণ তিব্বতী ভাষায় লা মানেই পাস। এটা হিমালয় নয়, কারাকোরাম পর্বতশ্রেণীর অংশ। আর দূরে ওই যে বরফে ঢাকা পাহাড়ের লাইন দেখা যাচ্ছে, ওইটা হিমালয়। লে, এই পামীর মালভূমি, দুই পাহাড়ের কোলে। আরেকটু ওপরে উঠলে দেখা যাবে কারাকোরামের বরফ। সাউথ পুলু পর্যন্ত সুন্দর রাস্তা। তারপরেই পাস শুরু হল। ভয়ংকর রকমের এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, জায়গায় জায়গায় পাথর ভেঙে রয়েছে, আর এখানে ওখানে দেখা যাচ্ছে বরফের প্যাচ। দোরজিকে বললাম, দোরজি, একটু দাঁড়াও, ছবি তুলব। তো দোরজি মুচকি হেসে বলল, এর পরে পঁচিশ তিরিশ কিলোমিটার বরফই বরফ, যত খুশি ছবি তুলবেন, এই বরফের আবার ছবি কী?

    তা দোরজি মিথ্যে বলে নি। খানিক বাদেই শুরু হল বরফে ঢাকা দেওয়াল। দুদিকে অবিচ্ছিন্ন শুধু বরফ আর বরফ, মাঝখানে ভিজে ভিজে রাস্তা, যদি সেটাকে রাস্তা বলা যায়, চলতে চলতে আর থাকা গেল না, মাঝে এক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে আমরা তিনজনে নামলাম। খানিক ফটো তুললাম। পুরো অ্যাক্টিভিটিটা বিরক্ত-বিরক্ত আর ঘুম-ঘুম চোখে দেখে গেল চৌহানফ্যামিলি, গাড়ির ভেতর থেকে। একবারও নামল না। এতক্ষণ তারা সবাই ঘুমোচ্ছিল।

    যাই হোক, আবার গাড়িতে এসে বসলাম, খানিক বাদেই বরফের ভেতর থেকে দেখা গেল রাস্তার দুদিকে শিং বাগিয়ে থাকা দুটো পাথরের স্ট্রাকচার, অনেক অনেক ছবি দেখেছি এদের। গেটওয়ে অফ নুব্রা। খারদুংলা টপে প্রায় পৌঁছে যাবার মুখে এদের দেখা যায়। সর্বাঙ্গে পতপত করে উড়ছে তিব্বতী প্রার্থনাপতাকা। আর তার ঠিক পরেই আমরা এসে পড়লাম খারদুংলা টপে। পৃথিবীর উচ্চতম পয়েন্ট, যেখানে গাড়ি চলে। ১৮৩৬০ ফুট উঁচুতে। অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, আর লোকজন দুধসাদা বরফে লাফঝাঁপ করছে। আমরাও নামলাম। এবার চৌহান আর তার ছেলে নামল, কিন্তু চৌহানের মেয়ে বউ নামল না, তাদের যথাক্রমে পেট কামড়াচ্ছে এবং কানে ব্যথা করছে। সিকিনীর মাথা ঝিমঝিম করছে খানিক, কিন্তু তবুও সে নামল।

    এখানে সবকিছুই পৃথিবের উচ্চতম। সামনে আর্মি পরিচালিত একটা ক্যাফেটেরিয়া, সেখানে চমৎকার চা পাওয়া যাচ্ছে, বাইরে লেখা, ওয়র্ল্ডস হায়েস্ট ক্যাফেটেরিয়া। এপাশে আর্মির বানানো একটা স্যুভেনিয়ের শপ, তার ওপর লেখা ওয়র্ল্ডস হায়েস্ট স্যুভেনির শপ। এই আর কি। সামনে একটা ছোট পাঁচিল মত করা, তার ওপরে বড় বড় করে খারদুংলা টপের নাম লেখা বোর্ড, সৌজন্যে জেকে ট্যুরিজম আর ব্রো, মানে বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন। লোকে নর্মালি ওই পাঁচিলে চড়ে ওই বোর্ড টাচ করে ছবি তুলে আসে। সেটাই খারদুংলা বিজয়।

    অতএব আমাদেরও উঠতে হয়! উঠে পড়লাম। সিকিনীও টপাটপ উঠে পরল, এবং চৌহানপুত্রও। ছবি তোলা হল।

    একটা জিনিস খেয়াল করলাম, এত বরফ চারদিকে, কিন্তু ঠাণ্ডা তো তেমন অসহনীয় কিছু নয়! জাস্ট একটা সোয়েটারেই চলে যাচ্ছে, হাতেও কোনো গ্লাভস লাগছে না। শুধু হাঁফ ধরে যাচ্ছে দু পা হাঁটলেই। সে তো হবেই। সমতল এলাকার তুলনায় মাত্র ২০% অক্সিজেন পাওয়া যায় এখানকার বাতাসে।

    সবাই উঠছে থেকে আমি বরফে পা রেখে রেখে বেশ খানিকটা ওপরে উঠে গেলাম। সেখান দাঁড়িয়ে আবার কিছু ফটো তুললাম, এইবার নামতে হবে, এগোতে হবে ডিস্কিটের দিকে। কিন্তু, নামতে গিয়ে দেখি, ওঠা যত সহজ ছিল, নামা তত সহজ নয়। বরফের খাঁজে খাঁজে পা রেখে উঠে তো পড়েছিলাম, কিন্তু সেভাবে তো নামা যাবে না!

    নিচের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম। খুব একটা বেশি দূরে নয়, স্লিপ করে নেমে গেলে কেমন হয়? একেবারেই ঢালু তো!

    যা ভাবা তাই কাজ। দুদিকে হাতে ব্যালেন্স রেখে বরফের ওপর বসে হুশশ করে গড়িয়ে নেমে এলাম। ... বোধ হয় কয়েক সেকেন্ড লেগেছিল নামতে, তাতেই, বরফে গড়িয়ে নামার উত্তেজনায়, যখন মাটিতে পা পেলাম, দেখলাম আমি প্রায় ব্রেথলেস হয়ে গেছি। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, হৃৎপিণ্ড মনে হচ্ছে যেন গলায় এসে আটকে গেছে। তার সাথে দু হাতের আঙুলে কোনো সাড় নেই। দুদিকে বরফে হাত রেখে ব্যালেন্স করেছিলাম, আঙুলের দিকে তাকিয়ে দেখি, ডগাগুলোয় রক্ত জমে গিয়ে বেগুনি হয়ে গেছে।

    এইবারে আমি ভয় খেয়ে গেলাম। সেরেছে। ফ্রস্ট বাইটের কেস হয়ে যাবে না তো? চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম। আক্ষরিক অর্থে জিভ বার করে হাঁফাচ্ছি আর প্রাণপণে দুহাতের আঙুলগুলো ঘষছি।ঙহষার ইমপ্যাক্টে আরও আরও হাঁফাচ্ছি। আমার অবস্থা দেখে সিকিনীও ভয় খেয়ে গেছে তখন। আমি কিছু বলার অবস্থায় নেই।

    টানা দশ মিনিট এই রকম চলার পরে আস্তে আস্তে শ্বাস স্বাভাবিক হল, আঙুলগুলো বেগুনী থেকে গোলাপী হল। আমিও ভয়মুক্ত হলাম। যাক, খারদুংলা বিজয় সম্পন্ন হল।

    ওয়র্ল্ডস হায়েস্ট ক্যাফেটেরিয়া থেকে চা কিনে খেলাম। উল্টোদিক থেকে কিছু গাড়ি আসছিল তাই এদিকের গাড়ি আটকে রাখা হয়েছিল। সেগুলো যতক্ষণে পাস করল, ততক্ষণে আরেকটা ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে এলাম। আজ সকালে ঘটেছে। আমরা পৌঁছবার আগে।

    ধারের দিকে গাড়ি রেখে, গাড়িতে বাচ্চাকে বসিয়ে হ্যান্ডব্রেক তুলে বাবা মা বেরিয়েছে ছবি তুলতে। বাচ্চারা (দুটো বাচ্চা ছিল) খেলতে খেলতে হ্যান্ডব্রেক নামিয়ে দিয়েছে, আর সাথে সাথে গাড়ি গড়িয়ে সামনের খাদে। সামনের বরফের চাদরে সাদা রঙের ট্যাভেরা গাড়িটাকে দেখতেও পেলাম। বাচ্চাদের ততক্ষণে উদ্ধার করা গেছে, দুজনেই বেঁচে, চোটও বিশেষ লাগে নি।

    এবার নামা শুরু করলাম, আস্তে আস্তে বরফ হাল্কা হতে হতে পাথর মাটি বেরোতে শুরু করল, আরও বেশ অনেকক্ষণ চলার পরে মোটামুটি সমতলে নামলাম আমরা। এটাই নুব্রা উপত্যকা। প্রচুর গাছপালা ঘেরা। সমতলে নামামাত্রই আমাদের সং নিল একটা নীলচে রঙের নদী। এর নাম শ্যোক / শিওক (Shyok)। এই উপত্যকায় এঁকেবেঁকে চলতে চলতে এটা সোজা চলে গেছে পাকিস্তানের দিকে।

    বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আমরা ডিস্কিটে পৌঁছলাম। আগে থেকে কোনো বুকিং করা ছিল না, তবে থাকার জায়গা খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হল না। ডিস্কিটে পৌঁছতেই প্রথম যেটা ঘটল, সেটা হল, চৌহানকন্যা, যে সারাদিনে একবারও গাড়ি থেকে নামে নি, তড়াক করে নামল, এবং গাড়ির ঠিক পাশেই হড়হড় করে বমি করে ফেলল। গাড়িতে উঠলেই ওর প্রবলেম হয়, সেখানে সকাল থেকে সারাদিন সে আজ গাড়িতে বসে ছিল।

    সিয়াচেন গেস্ট হাউস খুঁজে বের করলাম। মানে চলতে চলতেই সামনে দেখতে পেয়ে গেলাম। গিয়ে রুম দেখে খুব পছন্দ হয়ে গেল আমার আর চৌহানের, দুজনেরই। সেখানেই থাকা মনস্থ করলাম। খুব শস্তার রুম, সাতশো টাকা করে ভাড়া, সামনে বিশাল বড় ছাদ, দূরে পাহাড়ের ওপর দেখা যাচ্ছে এক বিশাআআল বুদ্ধমূর্তি। সিয়াচেনের মালিক, মিস্টার নোরবে গর্বিতস্বরে বললেন, মাত্র দু বছর আগে এই মূর্তি তৈরি করা হয়েছে, তৈরির তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি নিজে। ওই বুদ্ধমূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে পুরো নুব্রা ভ্যালি দেখা যায়, নুব্রা আর শিওক নদীর সঙ্গম দেখা যায়।

    দেখে আসব? বাকিদের হাল দেখে ভরসা হল না, সকলেই হা-টায়ার্ড। অতএব, ওয়েলকাম টি খেয়ে সবাই রেস্ট নেওয়া মনস্থ করল।

    বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আমি সিকিনী আর সাঁঝ যেই বেরিয়েছি, অমনি চৌহান পিছু নিল, কাঁহা জা রহে হো সার? মার্কিট? হাম ভি চলতে হ্যায়। মেয়ে কেমন আছে? ঠীক হ্যায়, আভি রেস্ট লে রহি হ্যায়, সো রহি হ্যায়।

    বেরোলাম, ছোট্ট গ্রাম ডিস্কিট। সপ্তদশ শতকে এখানে রাজার রাজত্ব ছিল, নুব্রা কিংডম। তার রাজধানী ছিল এই ডিস্কিট। ছোট্ট মার্কেট, তাতে আবার কীসের স্ট্রাইক চলছিল বলে গেস্টহাউসের মালিক আমাদের চিকেন খাওয়াতে পারলেন না। রান্নাবান্না করেন ওঁর স্ত্রীই। উনি অতিথিদের দেখাশোনা করেন। সদাহাসিমুখ, অতীব ভদ্র এক দম্পতি। কী যে ভালো, কী যে ভালো, কী বলব। আমি তো আবার যেদিন ডিস্কিট যাবো, এনার এখানেই উঠব।

    তো সে যাই হোক, বেরোলাম। বেরোতেই দেখি মোড়ের মাথায় এক বিরাট বৌদ্ধ জপযন্ত্র, তিব্বতী ভাষায় এদের বলে "মানে", সেখানে ঠিক গল্পের বইয়ের পাথা থেকে উঠে আসা দুই তিব্বতী বুড়ি বসে। সারা মুখে অসংখ্য বলিরেখা, আর কী মিষ্টি বিনুনি বাঁধা। আমাদের দেখেই একগাল হেসে ছোট ছোট চোখ প্রায় বুজে ফেলে, "জুলে জুলে জুলে" বলতে লাগল।

    এতক্ষণে মনে পড়ল, জুলে মানে কী জিজ্ঞেস করা হয় নি। বুড়িদের জিজ্ঞেস করলাম, কিন্তু তারা কেউই হিন্দি বোঝে না। অগত্যা, অনুমান করলাম তিব্বতী ভাষায় কোনো অভিবাদন টাইপের শব্দ হবে এই "জুলে"। ক্যামেরা দেখিয়ে বললাম, ফটো? ( ঠিক যেন চিড়িয়াখানা সিনেমায় জাপানি সাজা উত্তমকুমার) খুব খুশি হয়ে মেয়ের সঙ্গে তারা ফটো তুললেন।

    আমরা এগোলাম বাজারের দিকে।
  • প্পন | 122.133.206.25 | ০২ জুলাই ২০১২ ২২:২১558325
  • ছবি কই, অ্যাঁ, নুব্রার?
  • সিকি | 132.177.187.171 | ০২ জুলাই ২০১২ ২২:২১558324
  • বাজারে সামান্য কুড়িবাইশটা ছোটমেজবড় দোকান। তার বেশির ভাগই বন্ধ। নাকি কীসের স্ট্রাইক চলছে। একটা বিজেপির পার্টি অফিস আর কিছু পোস্টারও দেখলাম। কান কটকট থেকে বাঁচার জন্য চৌহানগিন্নি দোকানে দোকানে টুপি খুঁজে বেড়াতে লাগলেন, আমরা সেই সুযোগে আলগা হয়ে গেলাম। মেন মার্কেট থেকে বাঁদিকে একটা রাস্তা বেরিয়ে গেছে, সেখানেই ডিস্কিটের নাম করা স্যান্ড ডিউনস গেস্ট হাউস, তার উল্টোদিকে একটা মণিহারি দোকান। তিব্বতী 'মানে', অর্থাৎ জপযন্ত্র, তারপরে বৌদ্ধদের সেই লালনীলহলুদ মন্ত্রলেখা কাপড় লাগানো সুতো, ধূপের প্যাকেট, তার সাথে গ্লাভস, মাফলার, মোজা ইত্যাদি মিলিয়ে মিশিয়ে একটা খোলা দোকান, দোকানে কোনো লোক নেই। একটু দূরে একজন লামা দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ওপরে।

    খানিক দোনামোনা করে, ঢুকব-কি-ঢুকব-না ভাবতে ভাবতে ঢুকলাম। নেব তো না কিছু, জাস্ট দেখব বলে এসেছি।

    ঘুরে ঘুরে জিনিস দেখছি, এমন সময়ে সেই লামা স্মিত হেসে ঢুকলেন দোকানে। লামা এমনিই এসেছেন, না ক্রেতা হিসেবে এসেছেন বুঝতে না পেরে আমরা হালকা হাসতেই লামা দুচোখ বুজিয়ে হেসে বললেন, জুলে, জুলে।

    এখনো জুলে মানে বুঝি না। তাই হেসে বললাম, হ্যালো। শহুরে ভদ্রতা। লামা জিজ্ঞেস করলেন, কেয়া লেনা হ্যায়?

    এইবার সাহস পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা আসলে কিছু নেব না, একটু দেখতে এসেছি দোকানটা। দোকানটা কি আপনার?

    লামা হেসে বললেন, হ্যাঁ।

    আমি হুব্বা। দোকানদার লামা আমি এর আগে কোনোদিন দেখতে পাবো, ভাবি নি। প্রথমেই জানতে চাইলাম, জুলে মানে কী?

    যা ভেবেছিলাম, ঠিক তাই, অভিবাদনের তিব্বতী সংস্করণ। হাই বলতেও জুলে, বাই বলতেও জুলে। দেখা হলেই হেসে জুলে বলতে হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে জুলে বললাম, অল্প ঝুঁকে। তারপরে উনি এক এক করে জ্ঞান দিতে লাগলেন আইটেম সম্বন্ধে। মানে, আসলে একটা মন্ত্র পড়ার যন্ত্র। ওর ভেতরে মন্ত্র লেখা কাগজ রোল করে ঢকানো থাকে। মানে ঘোরাতে হয় ক্লকওয়াইজ। ওটা ঘোরালেই মন্ত্রোচ্চারণের পুণ্যি হয়।

    মন্ত্রলেখা কাপড়ের স্ট্রিংটার কী একটা নাম বললেন উনি, ভুলে গেছি এখন। ওটা যে কেউ কিনে টাঙাতে পারে না। আগে নিয়ারেস্ট গুম্ফাতে নিয়ে গিয়ে মন্ত্রপূত করে শুদ্ধ করতে হয়, তারপরে পাহাড়ে যত উঁচুতে সম্ভব, গিয়ে সেটা লাগিয়ে আসতে হয়, যত দূর থেকে দেখা যায় ওই কাপড়ের স্ট্রিং, ভগবান বুদ্ধ ততদূর পর্যন্ত তাঁর করুণা প্রসারিত করে সবাইকে "বুরি নজর" থেকে বাঁচান।

    তিব্বতী ধূপদানি দেখলাম। বাটিতে ধূপের গুঁড়ো রেখে তার নিচে মালসায় আগুন লাগিয়ে সেই ধূপ জ্বালানো হয়। আমরা নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গেলে পারব না। ওর পুরো সেটাপ না থাকলে জ্বালানো যায় না। প্রদীপ দেখলাম, গুম্ফাতে ব্যবহার করার জন্য।

    দাম জিজ্ঞেস করতে গেলাম, উনি আবার হেসে বললেন, আপনারা কোথা থেকে এসেছেন?

    বললাম, দিল্লি।

    উনি বললেন, এগুলো সব আসে তিব্বত থেকে। প্রথমে আসে দিল্লিতে, আমরা দিল্লি থেকে লে হয়ে ডিস্কিটে নিয়ে আসি এইসব জিনিস। এখানে আপনাকে যা দাম বলব, আপনি দিল্লির টিবেটান মার্কেটে এর অর্ধেকেরও কম দামে পাবেন এই জিনিস। এখান থেকে কিনবেন না।

    একজন দোকানদারের এই সারল্যে আমরা অবাক। উনি নিজেই বললেন, আমি কালই বেরোচ্ছি দিল্লির দিকে। চারদিনে পৌঁছবো দিল্লি। জিনিস লোড করে আবার বাসে করে ফিরব।

    অনেকক্ষণ গল্প করে বেরোবার মুখে দেখি ঘড়ি সারাইয়ের যন্ত্রপাতিও রয়েছে ওঁর দোকানে। ... আপনি ঘড়িও সারান? লামা আবার হাসলেন, হ্যাঁ, এখানে তো আর কোনো ঘড়ি সারানোর দোকান নেই।

    সিকিনীর হাতঘড়ির ব্যান্ডের পিন হারিয়ে গিয়েছে চারদিন হল, পরতে পারছে না। বের করে দিতেই, উনি তিরিশ সেকেন্ডে নতুন পিন লাগিয়ে ব্যান্ড সেট করে দিলেন।

    কত দেব?

    লামা অত্যন্ত বিনয়ী হয়ে বললেন, আরে না না, এইটুকু তো কাজ, এর আবার পয়সা কী? কিচ্ছু দিতে হবে না।

    আমরা, পাঁড় দিল্লিওয়ালারা, এইসব কথা শুনতে অভ্যস্ত নই। ভাবলাম, লামা হয় তো এমনি কথার কথা বলছেন। কী ভেবে পকেট থেকে পার্স বের করে একটা দশ টাকা দিতে গেলাম ওঁকে।

    নরম দুটো হাত দিয়ে আলতো করে আমার হাত চেপে ধরলেন লামা। -- আপনারা আজ এসেছেন, কাল চলে যাবেন, কয়েক ঘণ্টার অতিথি। আপনার কাছে পয়সা নিতে পারব না। আমি তো কিছুই করি নি, একটা পিন লাগিয়েছি শুধু, একটা পিনের আবার দাম হয় নাকি? আপনাদের সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগল। আর তো কেউ এসে এইভাবে আমাদের সম্বন্ধে এত কিছু জিজ্ঞেস করে না। আমি কিছুই করি নি, দয়া করে আমাকে কোনো টাকাপয়সা দেবেন না।

    আমরা হতবাক। চোখে জল এসে গেছিল। প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে ভদ্রলোকের সময় নষ্ট করলাম, কিচ্ছু কিনলাম না, ঘরির ব্যান্ড সারিয়ে নিলাম, তারপরেও কেউ বলতে পারে, আমি কিছুই করি নি?

    মাথা নিচু করে আস্তে করে "জুলে" বলে বেরিয়ে এলাম, আমি, সিকিনী আর মেয়ে।

    এই জন্যেই তো রাস্তায় নামতে হয়। মাথা নিচু করতে শেখা যায়।
  • গান্ধী | 213.110.246.230 | ০২ জুলাই ২০১২ ২২:২২558326
  • হুম্ম।। ছবি দেখতে গিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে এলাম। ছবি দাও বরফের
  • সিকি | 132.177.187.171 | ০২ জুলাই ২০১২ ২২:৪১558327
  • নোর্বে এবং তাঁর স্ত্রী খুব যত্ন করে রাত নটায় খেতে ডাকলেন নিচে ডাইনিং হলে। রাতের জন্য আমরা চাউমিন বলেছিলাম, অন্যরা রুটি, ডাল এবং ম্যাগি বলেছিল। সেই মতই ওঁরা রান্না করেছেন।

    ডাইনিং হলটা অতীব পরিপাটি, সুন্দর। সামনে লাদাখি স্টাইলে সাজানো কিচেন র‍্যাক। পাশে লাদাখি পাত্র সাজানো টেবিলে। মাটিতে পাতা গদীতে বসে সামনে অল্প উঁচু টেবিলে থালা রেখে খাওয়া। আর সে কী খাবার! অমৃত। এত ভালো চাউমিন খেয়েছি বলে মনে পড়ছে না। একমাত্র ছন্দপতন বলতে, হঠাৎ পাশের আসন থেকে চৌহানের ডাক, সার, ভিণ্ডির তরকারিটা একবার টেস্ট করে দেখুন। সিকিনী আবার "না" করতে পারে না, আমি আলতো করে না বললাম। চৌহান তাতেও থামে না, কিঁউ সার? আপ ভিণ্ডি ভি পসন্দ নেহি করতে হো?

    আমি দেঁতো হেসে বললাম, পছন্দ করি, কিন্তু ওটা ঠিক চাইনিজ ডিস নয়। এখন চাউমিন খাচ্ছি তো, চাউমিনের সঙ্গে ভিণ্ডির তরকারি ঠিক খাপ খায় না।

    চৌহান কি তাতে দমে? কোই বাত নেহি সার, ফির ইয়ে আন্ডা কারি জরা টেস্ট করকে দেখিয়ে।

    নোর্বের সাথে অনেক গল্প হল। তার জন্ম এই ডিস্কিটেই। পড়তে গেছিল লে-তে। "তখন লে যাবার জন্য কোনো ভালো রাস্তা ছিল না, গাড়ি তো ছিলই না। ঘোড়ায় চড়ে যেতে হত। এখানে চলত উট। একাত্তরে যখন পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ হল, আমাদের ক্লাসের দুতিনজন ছেলে পাকিস্তানি সেনাদের দলে যোগ দিয়েছিল, এই ডিস্কিট পর্যন্ত এসে গিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা। এখান থেকে তুর্তুক যাবার পথে থোইস এয়ারস্ট্রিপ পাবেন, সেই পর্যন্ত ক্যাপচার করে নিয়েছিল পাকিস্তান। ... সেই ছেলেগুলোর তারপরে জেল হয়, অনেকদিন জেলে ছিল ওরা। পরে ইন্ডিয়ার সরকার ওদের ছেড়ে দেয়।"

    "এই যে রাস্তা ধরে আপনারা এলেন লে থেকে, কাল যাবেন এই রাস্তা ধরে আরো আগে, তুর্তুকে, এটাই সেই হিস্টোরিক সিল্ক রুট। ফা হিয়েন, হিউয়েন সাং, এইখান দিয়েই এসেছিলেন এবং গেছিলেন। তখন উটে করে আসতে হত। মাঝে পথ হারিয়ে সবাই মারা পড়ত। উঠের কঙ্কালের পাহাড় হয়ে যেত এখানে ওখানে। মাত্র দশ বারো বছর হল, এই কারগিল যুদ্ধের পর থেকে এদিকে রাস্তা বানানো এয়ারস্ট্রিপ বানানোর কাজ শুরু হল। তার আগে কেউ তো জানতই না, আমরা এখানে থাকি।"

    "লে-র উচ্চতা দশ হাজার ফুট। আপনারা আজ আঠেরোহাজার ফুট হাইটে খুব তাড়াতাড়ি উঠেছেন, আবার তাড়াতাড়ি নেমে এসেছেন। ডিস্কিট-তুর্তুকের উচ্চতা নহাজার ফুট। এখানে লে-র মত অত ঠাণ্ডা পড়ে না। শীতে মাইনাসে চলে যায় টেম্পারেচার, তবে বরফ পড়ে না। কিন্তু সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বেশির ভাগ সাপ্লাইই তো লে থেকে আসে। চিকেন বলুন, শাকসব্জী বলুন, সব। গরম থাকতে থাকতেই আমাদের শীতের জন্য খাবার স্টক করে নিতে হয়। ... লে থেকে আনতে হয় বলে এখানে জিনিসের দাম খুব বেশি। আলু পঞ্চাশ টাকা কিলো।"

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা তো বৌদ্ধ, আপনারা চিকেন খান?

    নোর্বে হাসলেন, খাই। তবে আমরা কাটি না। মুসলমানরা দোকানে কেটে দেয়, আমরা তাদের থেকে কিনে এনে খাই।

    কথায় কথায় রাত এগারোটা বাজল। পরদিন সকাল নটায় যাত্রা শুরু। চৌহানের মেয়ে এখনো সুস্থ নয়। কাল তুর্তুক যাবার আছে।

    আলো নিভে গেল। জেনারেটর আজ রাতের মত বিশ্রাম নেবে।

    ছবি আপডেট করে দিয়েছি। ২৫০ নং থেকে শুরু আজকের ছবি।
  • rimi | 85.76.118.96 | ০২ জুলাই ২০১২ ২৩:৩৩558328
  • অসা!!! দুর্দান্ত !!! সিকির লেখার ফ্যান হয়ে গেছি। বাকিটা কখন আসবে?

    আর সিকির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করলাম। অসমমনস্ক সঙ্গীদের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার মতন হতাশাজনক ব্যপার খুব কম আছে। লোকে অনেক আশা নিয়ে বেড়াতে যায়। কিন্তু সমমনস্ক সঙ্গীসাথী না থাকলে বেড়ানোর ৫০% মজা মাটি। শরীর খারাপ, ক্লান্তি ইত্যাদির থেকে অনেক বেশি স্ট্রেস হয় যখন সঙ্গীদের সঙ্গে কনফ্লিক্ট হয়, যখন নিজের অসন্তোষ ইত্যাদি চেপে রেখে হাসিমুখের অভিনয় করতে হয় ইত্যাদি। আমার ধারণা, চৌহান ফ্যামিলি না থাকলে, আর চৌহান সিকিনীর আপিসের লোক না হলে, সিকি সিকিনী ঠিকই ফাইনালি একাত্ম হয়ে লে লাদাখের প্রকৃতি উপভোগ করতে পারত, শরীর টরীর খারাপ হওয়া সত্ত্বেও।

    যাক। সিকি ভাই, চটপট গপ্পটা লিখে ফেলো।
  • সিকি | 132.177.186.162 | ০২ জুলাই ২০১২ ২৩:৩৫558330
  • রিমি, সেটাই বোধ হয় বোঝাতে চাইছিলাম। মতান্তর মনান্তরের কারণ সিকির কাছেও সিকিনী নয়, সিকিনীর কাছেও সিকি নয়।
  • achintyarup | 24.96.152.234 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০৪:২৩558331
  • হুঁ, তারপর?
    মন দিয়ে এই একটা টইই পড়ছি শুধু কদিন ধরে
  • একক | 24.99.24.139 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০৫:১৯558332
  • বচ্ছর চারেকের বিবাহিত জেবনে যা বুজেছি : বউ এর কলীগ ( !!!) বউ এর বন্ধু (!!!!) বউ এর বান্ধবী( !!!!!) থেকে কোটি মাইল দূরে থাকতে হয়. মানে নিজেদের কথাবার্তা তে ওসব প্রসঙ্গ উঠলেও "হমম" /"সত্যি"/" তাই"/ "কী কান্ড" /"ইন্টারেস্টিং"/"স্ট্রেঞ্জ" .এইরকম সব ভার্চুয়ালি মাল্টিডাইমেন্সনাল ফীলার দিয়ে আবার চুপ করে থাকাই মঙ্গল .
  • cb | 212.156.11.234 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০৭:১০558333
  • একক = ক
  • kiki | 69.93.193.81 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০৭:৩২558334
  • বরেদের ক্ষেত্রেও সে সত্য।ঃ)
  • প্পন | 122.133.206.25 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০৮:২০558335
  • তাই? ঃ))
  • একক | 24.99.24.139 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০৮:২৮558336
  • যে যাই করুন
    বউ এর বান্ধবীর বয় ফ্রেন্ড কেটে গেছে শুনে "ইন্টারেস্টিং" বলবেন না
    আর
    বর এর বন্ধুর বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে "স্ট্রেঞ্জ" বলবেন না .

    বিশাল ক্যাচাল তাইলে :( :( :(
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১০:১৪558337
  • একক 03 Jul 2012 -- 05:19 AM এক গুচ্ছ ক ,

    আর শমিক্দার লেখা অসামশালা সেই দিল্লি নিয়ে যখন থেকে লিখছে তখন থেকে দেখছি। কোনো কথা হবে না।
  • Toba Tek Singh | 131.241.218.132 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১০:১৬558338
  • আরেকটু বুড়ো হই, তাপ্পর যাবো। যদ্দিন হাঁটু একেবারে না বসে যাচ্ছে তদ্দিন একটু অফ-বীট ঘুরে আসি।
  • Nina | 78.34.167.250 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১০:১৯558339
  • সিকি
    রাত প্রায় একটা--কল চল্লাম লাস ভেগাস-বঙ্গ-কাম ফান ট্রিপ--এক দঙ্গল বন্ধুরামিলে---পোচ্চুর কাজ--কিন্তু তবু তোর এই আটান্না কিলো না পড়লে এনার্জি পেতামনা----
    সিকি নয় একেবারে গোটা এক ট্যাহা তুই--তাও সোনার----

    চৌহানি-পরেশানির এমন চটপটা মসালা দিয়ে একেবারে একঘর উইথ অ্যাটাচড বাথ-দক্ষিণ দিক খোলা--
    একবার তোর সঙ্গে বেড়াতে যাবার খুব ইচ্ছে রইল----ভয় নেই my name is not chouhan ঃ)
  • একক | 24.99.24.139 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১০:২১558341
  • তোবা চাদার ট্রেক করেছেন ? হাঁটু থাকতে থাকতে সেরে নিন . লে-লাদাখ এ ওই একটি জায়গা চ্যালেঞ্জিং.
    আমি আসছে বচ্ছর যাচ্ছি. মানে জাছিইই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন