এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষেঃ জুলে, লাদাখ!

    সিকি
    অন্যান্য | ২৩ জুন ২০১২ | ১১৩৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ০৫ জুলাই ২০১২ ০০:৩৬558409
  • ওটা ২০১৪ হবে। অন্ধকারে একটা ঘর এদিক-ওদিক হয়ে গেছে।

    হুম্ম। কেউ সাহস করে বাইক দিচ্ছেনাঃ(
  • প্পন | 132.252.231.8 | ০৫ জুলাই ২০১২ ০০:৩৮558410
  • কেউ দেবে না। আমাকেও কিনে শিখতে হয়েছিল।
  • aranya | 78.38.243.161 | ০৫ জুলাই ২০১২ ০৯:৩৫558411
  • সাড়ে পাঁচ পাতা পড়লাম, বাকিটা কাল। ফাটাফাটি ব্যাপার। সিকি কাঁপিয়ে দিয়েছে।
    হিমালয়-টা প্রায় দেখাই হয় নি, এক সান্দাকফু ছাড়া, আর নেপালে একটু অন্নপূর্ণা।
    যেতে হবে, যেতে হবে .....
  • aranya | 78.38.243.161 | ০৫ জুলাই ২০১২ ১০:১১558412
  • নাঃ, পুরোটাই পড়ে ফেললাম, তুর্তুক অব্দি। সন্দীপন দেব আইআইটি-তে আমার সিনিয়র ছিল, আউটলুকে ওর লেখাটা উপরি পাওনা হল।
    এই টইটার দিকে চোখ রাখব এবার থেকে। সিকি-র টুপিতে আরেকটা পালক - এই ট্রাভেলোগ।
  • mugdha paaThak | 34.7.46.251 | ০৫ জুলাই ২০১২ ১৪:২৩558413
  • অসম্ভব ভাল লাগছে এই ভ্রমণকহিনী। লেখকের লেখার হাতটি চমৎকার, বেড়ানোর জায়্গাগুলো স্বর্গীয় আর তারসঙ্গে চৌহানের ভিলেনগিরি, এককথায় অসাধারণ। অনেক ধন্যবাদ, সিকিবাবু।
  • সিকি | 132.177.186.162 | ০৫ জুলাই ২০১২ ২৩:০৬558414
  • আগের দিনের একটা উল্লেখযোগ্য নয়, কিন্তু লিখতে ইচ্ছে করছে একটা ঘটনা লিখতে ইচ্ছে করল। তুর্তুক থেকে ফেরার পথে বা যাবার পথে রাস্তায় একটা ছোট্ট গ্রাম পড়ে, বুকাদাং নামে। ছোট্ট গ্রাম, লোকজন, বিশেষত বাচ্চারা অপূর্ব সুন্দর দেখতে। আমাদের গাড়ি যখন যাচ্ছিল, তখন দেবদূতের মত বাচ্চারা হাত নেড়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে "জুলে জুলে" বলে চলেছিল। রাস্তার একপাশে খয়েরি রঙের পাহাড়, অন্যপাশে শিওক নদীর পাড়ে যতটা ফাঁকা সমতল জায়গা পাওয়া গেছে, সেই জায়গা জুড়ে গমের ক্ষেত, ডালের ক্ষেত। সবুজ ক্ষেত, নীল নদী আর খয়েরি পাহাড়ের সে যে কী অসাধারণ কম্বিনেশন, সে পরের বার যখন বাইক নিয়ে যাবো, স্পেশালি এই গ্রামের ছবি তুলে আনব, এখন থেকেই ঠিক করে রেখেছি।

    বুকাদাং গ্রাম পেরোতেই একটা চেকপোস্ট, সেখানে রিপোর্ট করতে হয়। দোরজি গেল রিপোর্ট করতে, ফিরে এল একজন বয়স্ক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি লিফট চান সামনের আরেকটা গ্রাম পর্যন্ত। গ্রামের নামটা এখন ভুলে গেছি, হুন্ডার ফেরার রাস্তাতেই পড়ে, থোইস এয়ারস্ট্রিপের একটু আগে।

    দিল্লিতে কোনও অচেনা মানুষকে লিফট দেওয়া স্ট্রিক্টলি নো-নো। কিন্তু এটা লাদাখ। এখানে দিল্লির তুলনায় অক্সিজেন কম ঠিকই, কিন্তু মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস দিল্লির থেকে অনেক, অনেক বেশি। প্রচুর পড়েছি লাদাখ অঞ্চল সম্বন্ধে, তাই জানি, এখানে অচেনা লাদাখিকে লিফট দেওয়া সম্পূর্ণ, সম্পূর্ণ নিরাপদ। যানবাহন এত অপ্রতুল, লোকের সাহায্যের ওপরেই বেঁচে থাকে এরা।

    তুলে নিলাম ভদ্রলোককে। নিজের পাশেই বসালাম। জায়গা সেরকম ছিল না, তবে মেয়েকে কোলে নিয়ে নিল সিকিনী। আমরা গল্প জুড়লাম লোকটির সঙ্গে।

    তিনি একজন স্কুলটিচার। নাম, ইমতিয়াজ। বয়েসে প্রবীণ, হয় তো রিটায়ারমেন্টের বয়েস হয়ে গেছে আগেই, কিন্তু এই বয়েসেও তিনি সাঙ্ঘাতিক ফিট। রোজ সকালে তুর্তুক থেকে একটা আর্মির গাড়ি আসে বা ট্রাক আসে, তাতে করে তিনি পরের সেই গ্রামের স্কুলে যান পড়াতে, সন্ধ্যের দিকে অন্য কোনো ট্রাক ধরে ফেরত আসেন বাড়িতে। প্রায়ই যেমন হয়, আজও তেমনি, অনেকক্ষণ কোনো গাড়ি আসে নি এই রাস্তায়, উনি স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছেন। তাই লিফট নেবেন বলে আর্মি চেকপোস্টের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর্মি এঁদের রোজ গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করে।

    ছোট ছোট গ্রাম, লোকসংখ্যা কম, তাই শিক্ষকতা করার মত মানুষও কম। তাই ষাটোর্দ্ধ হয়েও তাঁর ছুটি মেলে নি। এখানে সমস্ত গ্রামেই আর্মি থেকে স্কুল সেটআপ করে রেখেছে। তাদের নাম আর্মি গুডউইল স্কুল। আসার পথে এরকম বেশ অনেক গুডউইল স্কুল দেখেছি। এমনকি ডিস্কিটে একটা কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ও দেখেছি। গুডউইল স্কুলগুলোতে বোর্ডিং ফেসিলিটিও থাকে, গ্রামের লোকজন এত গরীব, শীতে বাচ্চাদের উষ্ণ রাখার মত পর্যাপ্ত রসদ থাকে না তাদের বাড়িতে প্রায়ই। আর্মি থেকে সেই বাচ্চাদের স্কুলেই থাকার জায়গা দেওয়া হয়, আধুনিক সুযোগসুবিধা সমেত।

    ইমতিয়াজ প্রথম যৌবনে পাকিস্তানি ছিলেন। এই অঞ্চল তখন পাকিস্তানের অংশ ছিল। এখন ভারতীয়। কথায় কথায় বললেন, এই নুব্রা ভ্যালির লোকজন মনেপ্রাণেই ভারতীয়। পাকিস্তানের জন্য এদের মনে কোথাও কোনো সহানুভূতি নেই। পাকিস্তান তো এদের জন্য কখনোই কিছু করে নি। বরং ইন্ডিয়ান আর্মি এদের জন্য অনেক কিছু করেছে। সরকার থেকে এদের অনেক অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। বছরে একবার থেকে দুবার কালটিভেশন করতে পারে, সেই চাষের জন্য এইড, পড়াশোনার জন্য এইড, ডেইলি রেশনের জন্য এইড, লোকাল প্রডাক্ট যেমন অ্যাপ্রিকট, আখরোট ইয়াকের পশমের চাদর ইত্যাদি লে-র মার্কেটে নিয়ে গিয়ে বেচার জন্য এইড, মানে ইন্ডিয়ান আর্মি যে এদের জন্য কী না-করে, সে এখানে না এলে বোঝা যায় না। এদের তাই জীবনযাত্রার মান ফিরে গেছে, অনেক সুখেশান্তিতে আছে, শিক্ষাদীক্ষার প্রসার হচ্ছে, অনেকেই বড় হয়ে আর্মিতে জয়েন করে, বা বাইরে ব্যবসা করে। ভারতের বিরুদ্ধে এদের তাই কোনও রকমের অসূয়া নেই।

    পরের গ্রামে নেমে গেলেন ইমতিয়াজ, আমাদের অনেক ধন্যবাদ দিতে দিতে।

    ========================

    ১৭ জুন।

    আজ চৌহানকন্যার কাতরানি থেমেছে, তিনি এখন মোটামুটি সুস্থ। আজ আমাদের লোকাল সাইটসিয়িং। আগের দিনের গেস্টহাউসটা পালটে নিতে হল, কারণ আগের গেস্টহাউসটাতে ছিল শেয়ারড টয়লেট। পুরো ফ্লোরের জন্য একটা। মানে প্রায় চার পাঁচটা রুমের জন্য। ফলে সকালে উঠে আমরা যতক্ষণে বাথরুমের অ্যাক্সেস পেলাম ততক্ষণে বাথরুম বেশ নোংরা হয়ে গেছে। আর এই বয়েসে শেয়ার করা বাথরুম ইউজ করতেও কেমন যেন লাগে। তাই কাছেই লে মার্কেটের একদম মধ্যিখানে বেশ শস্তায় আরেকটা গেস্ট হাউসে উঠে এলাম। চৌহানের মুখ খুব গোমড়া, কারণ এগুলো আর যাই হোক আর্মি অ্যাকোমোডেশন নয়। ওর তো আর্মির গেস্টহাউস না হলে "আরাম" হয় না।

    সে যাক, এসব ইগনোর করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি বলেইছিলাম, আপনারা চাইলে আর্মি গেস্টহাউসে চলে যেতে পারেন, আমি এই মার্কেটের মধ্যের গেস্টহাউসেই থাকব। তো, তা-ও সে শুনল না, আমাদের সাথেই এসে উঠল পল গেস্ট হাউসে। বেশ সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গেস্টহাউস। ভাড়া মাত্র আটশো টাকা।

    ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে সাড়ে দশটা এগারোটা নাগাদ বেরোলাম আমরা। আজ লোকাল সাইটসিয়িং।

    প্রথমে হল অফ ফেম। ভারতীয় আর্মির তরফ থেকে লাদাখের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি, সংখ্যাতত্ত্ব সব মিলিয়ে একটা সুন্দর ইনফরমেটিভ কালেকশন বানিয়ে দেওয়া হয়েছে এখানে। ষাটের দশকের ভারত চীন যুদ্ধ, সত্তরের দশকের পাকিস্তান যুদ্ধ, আর নিরানব্বইয়ের দ্বিতীয় পাকিস্তান যুদ্ধ, সমস্ত যুদ্ধের ব্যবহৃত সাজসরঞ্জাম, অস্ত্রশস্ত্র, ম্যাপ, চার্ট, মৃত সৈনিকদের ছবি, তালিকা, লাদাখের সমস্ত বেস হসপিটালের ছবি, ফিল্ড হসপিটালের বিস্তারিত বিবরণ, দু বছর আগে হয়ে যাওয়া ভয়ঙ্কর বন্যার পরে বিদ্ধস্ত লে, তার পুরো ডকুমেন্টেশন, কীভাবে সবাই মিলে হাতে হাত মিলিয়ে আবার আজকের লে-কে ফিরিয়ে এনেছে, তার বিবরণ, সমস্ত, সমস্ত কিছু এক ছাদের তলায়। উৎসাহীদের জন্য এক অবশ্য দর্শনীয় জিনিস।

    লাদাখের ইতিহাস বহু প্রাচীন। সিল্ক রুটের মাধ্যমে প্রথম এখানে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার হয়। সে প্রায় দ্বিতীয় শতাব্দীর ঘটনা। তখন এখানে ছিল কুশান সাম্রাজ্যের বিস্তার। ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম এই জনপদের উল্লেখ করেন বৌদ্ধ পরিব্রাজক ফা-হিয়েন। লাদাখের কথা জানতে পারে মানুষ। এর পরে এই জায়গার অধিকার নিয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে বহু বছর ধরে লড়াই হয় তিব্বতের, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। বিভিন্ন রাজবংশ এখানে রাজত্ব করে গেছে এবং তিব্বতের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে।

    ত্রয়োদশ শতক থেকে শুরু হয় মুসলমান আক্রমণ। এলাকায় মুসলিম পপুলেশন বাড়তে থাকে। লাদাখিদের নিজেদের মধ্যেই মারামারি শুরু হয়, লাদাখ ভাগ হয়ে যায় আপার আর লোয়ার লাদাখে। শেষে উনিশ শতকে এসে শে-বাসগো গোষ্ঠীর রাজা ভাগান, দুই লাদাখকে ফের এক করেন এবং নামগিয়াল রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।

    এই নামগিয়াল রাজবংশ আজও আছে। এঁরা বৌদ্ধই ছিলেন, পরে সপ্তদশ শতকে আবার যখন তিব্বত আক্রমণ করে, রাজা কাশ্মীরিদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। সেই সময়ের ভারত অধীশ্বর সাহায্য মঞ্জুর করেন এই শর্তে যে রাজা দেলদান নামগিয়াল ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন এবং লে শহরে একটি মসজিদ বানাবেন।

    ভারত অধীশ্বরের নাম গেস করবার জন্য কোনো নকুলদানা নেই। তিনি ছিলেন আওরঙ্গজেব। সেই জামা মসজিদ আজও রয়েছে লে মার্কেটের একপ্রান্তে। এর পরে উনিশ শতকে শিখ সাম্রাজ্য দখল করে নেয় লাদাখকে। ১৮৩৪ সালে জেনারেল জোরাওয়ার সিং, রাজা শেসপাল নামগিয়ালকে সিংহাসনচ্যুত করেন এবং নির্বাসন দেন স্টক এলাকায়। স্টক কাংড়ি, আজ যেখানে লোকজন ট্রেক করতে যায়, সেখানেই আজও বাস করেন নামগিয়াল রাজার বংশধরেরা।

    এর পর ১৯৪৭এর বাঁটোয়ারায় লাদাখ পড়ে ভারতে। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান লাদাখ এবং কারগিল দখল করে নেয়। তাদের তাড়াতে না তাড়াতেই ১৯৪৯ সালে চীন নুব্রা ভ্যালির বর্ডার চিরতরে বন্ধ করে দেয়। পরিসমাপ্তি ঘটে সহস্রাব্দপ্রাচীন সিল্ক রুটের। পরের বছর, ১৯৫০এ, চীন তিব্বত দখল করে নেয়, দলাই লামার সাথে হাজার হাজার তিব্বতী চলে আসে এই এলাকায়, আশ্রয় নেয় ভারতে।

    এর পর ১৯৬২ সালে চীনের আগ্রাসী মনোভাব দেখে, চীন যুদ্ধের পরে পরেই ভারত সরকার তৈরি করে শ্রীনগর লে হাইওয়ে। সেই সময়েই চীন লে থেকে তিব্বতে যাবার সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে লাদাখকে নিয়ে পরের পর প্রকল্প তৈরি হয়, কারগিল থেকে লাদাখকে আলাদা করে দেওয়া হয়। লাদাখ অটোনোমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল তৈরি হয়। এই সমস্তকিছুর পরিণতি আজকের লাদাখ।

    ছবি দেখুন।

    আমাদের পরের গন্তব্য স্পিটুক গুম্ফা। একাদশ শতাব্দীতে বানানো এই গুম্ফা লে এয়ারপোর্টের ঠিক পাশের পাহাড়ে। বৌদ্ধ ধর্ম কীভাবে হিন্দুধর্মের সাথে আস্তে আস্তে জড়িয়ে গেছে, সেসব বোঝা যায় এখানে এলে। গুম্ফার মধ্যেই রয়েছে এক প্রাচীন কালীমন্দির। আমরা যখন গেলাম, তখন গুম্ফায় লামারা প্রেয়ার হলের মধ্যে ডাঁই ডাঁই রংবেরংয়ের চিনি, ক্রিম, চিনির ডাস্ট আর সুগার কিউব নিয়ে একটা বিশাল বড় আলপনা বানাচ্ছিলেন। সে যে কী অদ্ভূত সুন্দর দেখতে, কী বলব। লামাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, একে বলে মণ্ডল। এটা বুদ্ধের ঘর। বুদ্ধপূর্ণিমা বা বিশেষ কোনো বৌদ্ধ পবিত্র দিনে এই মণ্ডল বানানো হয়। বড় সুন্দর জিনিস।

    সেখান থেকে আমরা গেলাম শান্তি স্তুপ দেখতে। লে শহরের মাঝে পাহাড়ের মাথায় এই স্তুপ বানিয়েছিলেন জাপানি বৌদ্ধ ভিক্ষু গিওমিও নাকামুরা, ১৯৯১ সালে। (জাপানি ভিক্ষুদের কী পয়সা, মাইরি!) সুন্দর দেখতে এই স্তুপের হুবহু রেপ্লিকা দেখতে পাবেন সাড্ডি দিল্লিতে, ইন্দ্রপ্রস্থ পার্কের ভেতর।

    এরপর মার্কেটে ফিরে এসে লাঞ্চ, এবং শেষপাতে লে প্যালেস।

    সেংগে নামগিয়াল এই প্যালেস তৈরি করেন সতেরো শতকে। কাঠ আর কাদা দিয়ে বানানো এই প্যালেস সেই সময়ের টিপিকাল লাদাখি স্থাপত্যের এক সুন্দর নমুনা। অন্ধকার, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা একের পর এক ঘর পেরিয়ে যখন ওপরে উঠছি, মনটা এক নিমেষে চলে যায় সেই সময়ে যখন অ্যাকচুয়্যাল লোকজন এই প্যালেসে থাকত, যাতায়াত করত এই ঘর থেকে ওই ঘরে। ন তলা উঁচু এই প্যালেস ভগ্নদশায় আবিষ্কার করে সম্পূর্ণ রিস্টোর করে আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া। চারতলায় একটা ফটো এগজিবিশন রাখা আছে রিস্টোরেশনের আগের আর পরের ছবি নিয়ে।

    লোকাল সাইটসিয়িং আরো বাকি রয়ে গেল, তবে সেসব হবে পরের ট্রিপে, যখন আমরা প্যাংগং লেক থেকে ফিরব। সেসব ওই রাস্তায় পড়বে। শে প্যালেস, হেমিস গুম্ফা, থিকসে মনাস্ট্রি।

    কাল আমরা বেরবো প্যাংগং লেক দেখতে। আজ তাই বিকেলটা এলোমেলো খানিক মার্কেটে ঘুরে গেস্টহাউসে ফেরত চলে এলাম।

    ৩৭৮ নম্বর থেকে আজকের ছবি।
  • ninduk | 127.194.199.141 | ০৬ জুলাই ২০১২ ০২:০৮558415
  • ভাষা আপনার সত্যি গুরুবচণ্ডা৯ বটেক!
  • santanu | 102.99.188.118 | ০৬ জুলাই ২০১২ ০২:০৯558416
  • সিকি বা সিকিনি ক্যানো চৌহান কে সাথে নিয়েছিল, সেটা কিছুটা বোঝা যায়, কিন্তু অতীব ক্ষমতাশালী চৌহান, সিকির নিরন্তর লাথি ঝ্যাঁটা খেয়ে ও ক্যানো সাথে পরেছিল, সেটা জানার জন্যে চটপট করছি।
  • সিকি | 132.177.186.162 | ০৬ জুলাই ২০১২ ২২:৪৪558417
  • ১৮ জুন ২০১২

    আমি তো বলেইছিলাম, শান্তিকল্যাণ বজায় রাখবার জন্য আমি আর মেজাজ খারাপ করব না, কোনও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাব না, পারফেক্ট গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ফলো করব। মেজরিটি জনতা যে রাস্তায় যাবে, আমি ঠিক সেই রাস্তাতেই তাদের পেছন পেছন যাব, আর কোনও ব্যাপারে আমি লীড নেব না এই ট্রিপে। না হলে আমি কি পারতাম না প্যাংগং লেকের ধারে টেন্টে থাকার ব্যবস্থা করতে? লে-তে বিভিন্ন দোকানে অজস্র নোটিস লাগানো দেখেছি ক্যাম্প বুকিং-এর। কিন্তু ওই যে, শুরুতেই সব কর্নেল মেজরের দল এদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে "থাকতে পারবেন না", "সাবজিরো টেম্পারেচার হয়", "আরাম করতে পারবেন না", আর চৌহান ফ্যামিলি তো এসব কথা শুনলেই অর্ধেক ফেইন্ট হয়ে যায়, সিকিনীও অলমোস্ট কনভিন্সড যে সেখানে লেকের ধারে রাতে টেন্টে থাকা যাবে না।

    তা হলে উপায়? উপায় আবার কী? সমগ্র লাদাখ রিজিয়ন যখন মিলিটারি কন্ট্রোলে, তখন আর্মি অ্যাকোমোডেশনের কি অভাব পড়িয়াছে? হলেই বা আসল জায়গা থেকে অনেক দূরে দূরে, তবু, "আরাম" তো মিলবে! সুতরাং, প্যাংগং থেকে তিরিশ কিলোমিটার দূরে তাং শে নামক জায়গায় এক ফিল্ড হাসপাতালের অফিসার্স মেসে আমাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা হল। প্যাংগং দেখে তিরিশ কিলোমিটার উজিয়ে আবার একই রাস্তায় ফেরত আসব রাতে থাকার জন্য।

    এমনিতে তিরিশ কিলোমিটার খুব একটা বেশি দূর নয়, ঘণ্টাখানেকের দূরত্ব, তাই খুব বেশি আশাহত হলাম না, যাক, অন্তত প্যাংগং-এর ধারে সূর্যাস্ত দেখেই ফেরা যাবে। যদিও এত উত্তরে সূর্য অস্ত যায় অনেক অনেক দেরিতে, তবু, আটটায় সূর্যাস্ত হলে নটা সাড়ে নটার মধ্যে তো পৌঁছে যেতেই পারব। এতশত চিন্তাভাবনা করে আমি আর একেবারেই মুখ খুললাম না। কে সেরা সেরা ইত্যাদি।

    সকাল সকাল যাত্রা শুরু হল। চৌহানকে তো লে লাদাখের যত আর্মি হাসপাতাল আছে, সমস্ত হাসপাতালের কম্যান্ডিং অফিসার, কর্নেল, মেজর, সুবেদার-হাবিলদার ইত্যাদি যে পায় সে-ই প্রায় মাথায় তুলে রাখতে চায়। সবাইই তাকে নিজেদের গেস্টহাউসে রাখতে চায়, সবাইই তাকে ব্রেকফাস্ট খিলাতে চায়, লাঞ্চ খিলাতে চায়, অথচ অদ্ভুত ভাবে লক্ষ্য করে চলি, প্রায় প্রতি জায়গাতেই থাকার পরে, খাবার পরে আমাদের টাকা পয়সা দিতে হয়। কোনোটাই কিন্তু ফ্রি-তে হয় না। এবারেও যখন চৌহান বলল, কর্নেল অমুকের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে, আমরা এন রুট জিঙ্গরাল আর্মি ব্যারাকে ব্রেকফাস্ট করব, আর প্যাংগং লেকের ধারে আর্মি ক্যাম্পে লাঞ্চ করব, উনি সমস্ত ব্যবস্থা করে রাখবেন, আমি বিশেষ আশ্চর্য হই নি। এতদিনে আর্মির কর্নেল মেজরদের সঙ্গে চৌহানের ইন্টিমেসির লেভেল দেখে দেখে আমি হেজে গেছি। সবকটার মুখে মিষ্টি, হেঁ-হেঁ করে হাসে, আর যাবার সময়ে ঠিক পয়সা নিয়ে নেয়।

    আগের রাতেই তাই যখন কথা হল, আমরা এখান থেকে কিছুটি না খেয়ে বেরোব সকাল সাড়ে ছটায়, বেলা আটটায় জিঙ্গরালে পৌঁছে ব্রেকফাস্ট করব, তখন সিকিনী আবারও ক্ষেপে গেল, অবশ্যই চৌহানের অ্যাবসেন্সে এবং আমার প্রেজেন্সে, কোনো মানে হয়? সকাল সকাল উঠে খালিপেটে এই রাস্তায় দেড় দু ঘণ্টা গাড়িতে জার্নি করতে হবে? আমাদের যা হবে হবে, কিন্তু ওর নিজেরই মেয়ে বউ তো ধকল নিতে পারবে না, মাঝরাস্তায় বমি করে মাথা ঘুরে পেটে ব্যথা হয়ে একাকার করবে। নিজেদেরও বেড়ানোটা মাটি করবে, আমাদেরও করবে। তুই কিছু বললি না কেন, যে ওখানে ব্রেকফাস্ট করার দরকার নেই, আমরা এখানেই খেয়ে বেরোব?

    আমি ততক্ষণে পুরোপুরি নির্মোহ ব প্রাপ্ত হয়ে গেছি। আর কোনও "তুই-বললি-না-কেন"-তেই আমি প্রোভোকিত হই না। টিপিকাল পঞ্জাবী "সান্নু-কী" স্টাইলে হাত উলটে বললাম, আমি কী জানি? আমার তো প্রবলেম হবে না, তোদের প্রবলেম হলে তোরা বল, যার প্রবলেম হবে, সে জানাবে। আমার কাছে অলরেডি এই ট্রিপ খরচার খাতায়। গিয়ে পৌঁছলে ভালো, না পৌঁছলেও আমার কোনো চাপ নেই। আমি আর কোনো কনফ্রন্টেশনে যাব না। বাপ রে, মিলিটারির ব্রেকফাস্টের নেমন্তন্ন রিফিউজ করলে আবার যদি চৌহানের অপমানে লাগে?

    সেই মত, আজ সকালে, ভোর পাঁচটায় চেক আউট করে, আমার সাথে গজগজ করতে করতে সিকিনী গাড়িতে চড়ে বসেছে। ঠিক সাড়ে ছটাতেই গাড়ি স্টার্ট করেছে।

    লে শহর ছাড়িয়ে প্রায় তিরিশ কিলোমিটার মত পরিষ্কার সমতলের রাস্তা। দুধারে লাইন দিয়ে চিনার গাছ। মাঝে পেরিয়ে গেল শে প্যালেস, থিকশে গুম্ফা। এগুলো আমরা দেখব পরশু দিন, ফেরার পথে। তিরিশ কিলোমিটার পরে এল কারু। এটা একটা ছোট্ট শহর, মূলত আর্মির "ত্রিশূল" বাহিনীর বেস ক্যাম্প। সমস্ত জনপদ জুড়ে কেবলই আর্মির এসট্যাবলিশমেন্ট। ত্রিশূল রেজিমেন্ট হল ইন্ডিয়ান আর্মির এক অত্যন্ত নামকরা বাহিনী। পাকিস্তান, চীন, সমস্ত রকমের যুদ্ধে এরা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে দশকের পর দশক ধরে।

    কারু, লোকাল উচ্চারণে "খারু"-তে এক ঝলক দেখলাম একটা নীলচে জলের নদী। ড্রাইভার দোরজি বলল, এটা সিন্ধু নদ। কাল আমরা যখন "খেরি" যাব, তখন এই নদীর ধার ধরে ধরে যাব। ... এখান থেকেই একটা রাস্তা উঠে গেছে পাহাড়ের ওপর, পাক খেতে খেতে। শুরুর মাইলস্টোনে লেখা, জিঙ্গরাল ২২ কিমি।

    পরবর্তী বাইশ কিমি আমাদের বেশ কষ্টে কাটল। সকলের খালিপেট, পাকদণ্ডী রাস্তা, গাড়ির ভেতরে তারস্বরে পাঞ্জাবী ভাংড়া আর পেছনের সীট থেকে চৌহানগিন্নি আর চৌহানকন্যার যুগপৎ "উঃ", "আঃ", "ওফহোঃ", "মর গয়া রে" টাইপের আওয়াজ। সিকিনী আমার একপাশে নেতিয়ে পড়ে আছে, ওর বাঁ হাতে সাড় পাচ্ছে না, মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা। আমারও তখন খালিপেটে অল্প অল্প অস্বস্তি হতে শুরু করেছে।

    এমনি সময়ে পাহাড়ের একটা বাঁক ঘুরতেই সামনে এল জিঙ্গরাল আর্মি পোস্ট। রাস্তার ধারে সামান্য দু চারটে টিন অ্যাসবেস্টস দিয়ে বানানো ছাউনি মত, সেখানে খাবার ব্যবস্থা। জল এল, চা এল। তারপরে এল তেল চুপচুপে আলু পরোটা। দেখেই সবাই আঁতকে উঠল। দিল্লির লোক খুব তেল কনশাস। তেল মাখানো প্রায় কিছুই খায় না। এমনিতে হলে অন্য কথা ছিল, কিন্তু এই তেলালো আলু পরোটা খেয়ে পাকদণ্ডী পথে চলন্ত গাড়িতে বসে থাকা যথেষ্ট রিস্কি, বমি হয়ে যাবার চান্স প্রচুর থাকে। প্রায় কেউই কিছু খেল না। এই রিমোট এলাকায় নেমন্তন্ন করেই হোক, আর এমনিই হোক, আলু পরোটার পরে আর বিশেষ কোনো খাবারের অপশন থাকে না। সিকিনী আর আমি বুদ্ধি করে আগের দিন লে মার্কেট থেকে কিছু ফ্রুটকেক বিস্কিটের প্যাকেট ইত্যাদি নিয়ে এসেছিলাম। পরে রাস্তায় সেগুলোরই সদ্ব্যবহার করেছিলাম কিছু কিছু করে, ততক্ষণে খালিপেটের গ্যাস মাথায় উঠে সিকিনীর হাল খারাপ। চৌহান দাম টাম মিটিয়ে দিল। আমি আবারও মনে মনে ভাবলাম, শালা পয়সা দিয়েই যদি খেলাম, তা হলে খালিপেটে সবাই অসুস্থ হয়ে যাবার আগে লে-তেই তো পয়সা দিয়ে খেয়ে এলে হত, আর্মি ব্যারাকের আলু পরোটার কী এমন মধুর স্বাদ যে তার জন্য লে মার্কেটের অন্য অপশনদের হেলায় ত্যাগ করা যায়? ওখানে অন্তত ব্রেড জ্যাম, বা মোমো, বা অন্য কিছু খেয়ে আসা যেত, যেগুলো তেল ছাড়াই তৈরি হয়। আর্মি মেসের খাবারের যে কী মধু, আমি কিছুতেই বুঝতে পারলাম না। যাই হোক, মুখ খুললাম না এবারেও।

    গাড়ি চলতে শুরু করল। প্যাঁচালো রাস্তা ধরে শুধু উঠছি, উঠছি, উঠছি, হঠাৎ দূরের বরফের পাহাড় একেবারে সামনে চলে এল, খানিক বাদেই সামনে শুরু হয়ে গেল বরফের দেওয়াল। বেলা এগারোটা বাগাদ আমরা এসে পৌঁছলাম চাং লা পাসে। এটা পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম মোটরেবল রোড। উচ্চতা ১৭৫৮৬ ফুট।

    নামলাম আমি আর চৌহানপুত্র। খানিক এদিক ওদিক ফটো তুললাম। বাকিরা তখন করুণ অবস্থায় গাড়ির মধ্যে বসে আছে। চৌহানের মেয়ে বৌয়ের অসুখের নেচারটা একদম কনসিস্টেন্ট, একজনের বমি পাচ্ছে আর পেটে ব্যথা, অন্যজনের "কান মে দর্দ হো রহা হ্যায়"। ও শুরু থেকেই আমি শুনে শুনে মুখস্থ করে ফেলেছি। এর বাইরে সিকিনীর মাথা অসম্ভব যন্ত্রণা করছে, আমারও মাথা বেশ টিপটিপ করছে, একমাত্র আমার মেয়েই ফ্রেশ। সে একঘুম দিয়ে উঠেছে। তার কোনো প্রবলেম নেই।

    এ রকম কেন হচ্ছে? এর চেয়ে উঁচু খারদুংলা পাস পেরিয়ে এসেছি দুবার কোনো প্রবলেম হয় নি, আজ চাং লা তে এসে এমন কেন হচ্ছে? তবে কি ফিজিকাল ফিটনেসের এখানেই শেষ?

    আজ সকালেই একজন অল্পবয়েসী ছেলেকে এখান থেকে এমার্জেন্সী বেসিসে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছেলেটি বরফ দেখে উত্তেজিত হয়ে প্রচুর মদ খেয়ে এখানে হুল্লাট নাচানাচি করেছে, ফলে সাথে সাথে ব্রেথলেসনেস ওকে পাকড়ে ধরেছে, নিচ পর্যন্ত নিয়ে যাবার সময় পাওয়া যায় নি, তার আগে রাস্তাতেই শেষ হয়ে গেছে ছেলেটার জীবন।

    চাং লা থেকে আমরা এগোতে শুরু করলাম। এবার রাস্তা নিচের দিকে নামছে। কিন্তু মাথার যন্ত্রণা পিছু ছাড়ছে না। বেলা দেড়টা নাগাদ আমরা পৌঁছলাম তাং শে-তে। এখানে এমনিতে এখন আমাদের থামার কথা নয়, ফেরার পথে থাকার কথা, তবু গাড়ির সকলের অবস্থা দেখে খানিক গাড়ি থামানোর কথা উঠল। সেখানে গাড়ি থামামাত্র সিকিনী বাইরে গিয়ে একটা পাথরের ওপর বসে হাঁফাতে লাগল। আর বাঁহাতটাকে সমানে ঝাঁকুনি দিতে লাগল। চৌহানকন্যা তখন ভেউ ভেউ করে কাঁদছে।

    সামনেই দেখা যাচ্ছে তাং শে ফিল্ড হসপিটাল। বেগতিক দেখে গাড়ি ওদিকেও ঘোরানো হল, মাত্র এক দেড় কিলোমিটার দূরে। সেখানে আবার কোন কর্নেল আছেন চৌহানের চেনা, গিয়ে নাম করামাত্র দুজন আর্মি অফিসার দৌড়ে এল, সিকিনী আর চৌহানকন্যাকে নিয়ে গেল ভেতরে ডাক্তারদের চেম্বারে, খুব যত্ন করে পরীক্ষা করে মেজর ভোঁসলে বললেন (ভোঁসলের কথা বলার স্টাইলটা বিলকুল আমীর খানের মত, তাই নামটা মনে রেখেছিলাম), একেবারেই চিন্তার কোনো কারণ নেই, অলটিটিউড সিকনেস এটা নয়, স্রেফ খালিপেটে গ্যাস ফর্ম হয়ে সেটা এদিক ওদিক ধাক্কা মারছে। এই ওষুধগুলো নিয়ে নিন ডিসপেন্সারি থেকে, এখন দুটো ট্যাবলেট খেয়ে নিন, রাতে ওই দুটো খাবেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।

    চৌহানগিন্নির প্রায় কান ধরে ভোঁসলে বললেন, ম্যাডাম, প্রবলেম আপনার কানে নেই, আপনার মনে। আপনার কান বিলকুল সাফ। তাও আমি এই ড্রপটা লিখে দিচ্ছি, কানে দুবার দিয়ে নেবেন, আরাম পাবেন। চৌহানের মেয়েকেও বমি রোধক ট্যাবলেট দিয়ে ভোঁসলে বললেন, আরে ম্যাডাম, আপনারা তো আসল সমস্ত রাস্তা পার করেই এসেছেন। ফৌজির লোকেদের পর্যন্ত এখানে আসার পর তিনদিন শুধু শুইয়ে রাখা হয় অ্যাক্লাইমেটাইজ করার জন্য, তারপরে ধীরে ধীরে কাজ দেওয়া হয়। আগের ট্রিপে আপনারা খারদুংলা তে উঠেছিলেন খুব তাড়াতাড়ি, নেমেও এসেছিলেন খুব তাড়াতাড়ি, তাই অলটিটিউডের মারটা বুঝতে পারেন নি। লে ১০০০০ ফুট, খারদুংলা ১৮৩৬০ ফুট, আর তার পরেই ডিস্কিট ছিল ৯০০০ ফুট উচ্চতায়। এদিকে আজ আসলে আপনারা অনেকক্ষণ ধরে প্রায় একই অলটিটিউডে রয়েছেন। চাং লা পাসের হাইট ১৭৫৮৬ ফুট, আর এইখানে এই ফিল্ড হসপিটালের হাইট প্রায় সাড়ে ষোল হাজার ফুট। আপনারা চাং লা থেকে খুব একটা নিচে নেই। তাই এইটুকু অসুস্থতা হওয়া খুব স্বাভাবিক। চিন্তা করবেন না, প্যাংগং লেক ঘুরে আসুন, রাতে এখানে রেস্ট নিলেই দেখবেন শরীর ফিট হয়ে গেছে। কাল আবার চাং লা পাস দিয়ে ফেরত যাবেন, কোনো অসুবিধেই হবে না।

    ভোঁসলের ভোকাল টনিকের সাথে সাথে চৌহানের পরিচিত সেই মেজর কিংবা কর্নেলের তরফ থেকে সবার জন্যে এল আনারসের জুস, এক গ্লাস করে। দাদারা, জীবনে আনারসের প্যাকেট করা জুস কম খাই নি, কিন্তু সেইখানে যে আনারসের জুস খেলাম, তেমন সুস্বাদু জুস আমি জীবনে কোনোদিন খাই নি।

    ওষুধ নিয়ে সবাই লাস্ট ল্যাপ কভার করার জন্য প্রস্তুত। গাড়ি স্টার্ট দিল। আর ঠিক তিরিশ কিলোমিটার দূরে প্যাংগং লেক। বিশ্বের উচ্চতম লেক, ১৪২৭০ ফুট উঁচুতে।

    গাড়িতে বসে থেকে দুদিক দেখছিলাম, কিন্তু যেটা দেখার কথা, সেটা কিছুতেই নজরে আসছিল না। এত পড়েছি প্রাণীটার সম্বন্ধে, প্যাংগং যাবার পথে প্রায় সব্বাই দেখতে পায়, আমরা পাবো না?
  • শঙ্খ | 169.53.46.140 | ০৬ জুলাই ২০১২ ২৩:১৪558419
  • কি কি?

    ইয়েতি না চমরি গাই? এক্সাইটেড স্মাইলি ঃ-~)
  • kd | 69.93.242.89 | ০৬ জুলাই ২০১২ ২৩:৪৫558420
  • সিকি, সিকিমের গুরুদোংমার লেক তো আরও উঁচুতে - ১৭,১০০ ফুট। তাই না?
    ব্ল্যাঙ্কি, ঠিক বলছি কি?
  • সিকি | 132.177.186.162 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:০০558421
  • দোরজিকে জিজ্ঞেস করতে যাব, এমন সময়ে আমিই স্পট করলাম, পাশের মাঠে অনেকগুলো ছোট ছোট গর্ত। দুই তিনটি গর্ত থেকে তাঁরা উঁকি মেরে দেখছেন এদিক ওদিক।

    মারমট! মারমট! এই লেক যে উপত্যকায়, তার নাম চাংথাং। চাং লা পাস পেরোবার পরেই অপেক্ষাকৃত সমতল রাস্তা, হাল্কা উঁচুনিচু এই উপত্যকায় কাঠবেড়ালি-ভোঁদড়সদৃশ এই প্রাণীর দেখা মেলে খুব সহজেই। খুব হিউম্যান ফ্রেন্ডলি, চট করে কাছে চলে আসে। বিস্কুট বাদাম দিলে আগ্রহ সহকারে চেটেপুটে খায়।

    হাসপাতালে খানিক ব্রেক নিয়ে সিকিনী তখন সুস্থ, চৌহানকন্যা যদিও কখনোই সুস্থ হন না, তবু, আমি সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামালাম, আর বাঁচিওয়ে রাখা বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে দৌড়োলাম। আমাকে আসতে দেখেই লজ্জা পেয়ে গোটা তিনেক মারমট গর্তে সেঁধিয়ে গেল, কিন্তু একজন প্রবীণ মারমট দু-পায়ে বসে ঘাড় উঁচিয়ে আমাকে দেখতে লাগলেন। বিস্কুট দিলাম, দুই হাতে ধরে কপকপিয়ে খেয়ে খুশি খুশি মুখে আমার দিকে আবার চাইলেন। আমি তখন মারমটকে বিস্কুট দিচ্ছি আর পটাপট ছবি তুলছি। মারমটের কাণ্ড দেখে সব্বার অসুস্থতা তখন এক নিমেষে উধাও। মাঝে একবার মারমট কেবল আমার হাতের ক্যামেরাটাকে বিস্কুট ভেবে থাবা বাড়িয়েছিল, ঠিক সময়ে হাত না সরালে হাতে একটা আঁচড় পড়ত।

    খানিক সেখানে মারমটের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, যখন মনে হল মারমটের পেট ভরে গেছে, আমরা ফিরছি গাড়ির দিকে, দেখি আমাদের পেছনেই আরেকটা ইনোভা এসে থামল, আর একজন লোক হাতে ক্যামেরা নিয়ে মারমটের দিকে দৌড়চ্ছে। আমি আবার উপযাচক হয়ে বললাম, সাথ মে বিস্কিট লে জাইয়ে, আচ্ছা ফোটো খিঁচনে কা মওকা মিলেগা। লোকটা তাই শুনে কেমন উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, নেহি নেহি, বারণ কিয়া হ্যায়।

    বারণ কিয়া হ্যায়? এখানেও বঙ্গপুঙ্গব? আমি আর রিস্ক না নিয়ে বাংলাতেই জিজ্ঞেস করলাম, কে বারণ করল আপনাকে? লোকটা অত্যন্ত ব্যস্তসমস্ত হয়ে বলল, গাইড বারণ করেছে, এদের কিছু না খাওয়াতে বলেছে। মানা আছে।

    যাব্বাবা, এমন কথা তো আমি কখনো শুনি নি, সব জায়গাতেই পড়েছি লোকে হাতে করে এদের বিস্কুট বাদাম খাইয়ে যায়। খাওয়ালে কি পুলিশে ধরে নাকি? ধুর, যা খুশি করুক গে, বলে আমরা আবার গাড়িতে গিয়ে বসলাম, আর খানিক বাদেই পৌঁছে গেলাম স্বর্গে।

    আমি মুখে আর কী বলব, প্রকাণ্ড, অন্তহীন ক্যানভাসে কে যেন রংতুলি নিয়ে বসে যত্ন করে ধৈর্য ধরে এঁকেছে পাহাড়, আকাশ, মেঘ আর ... প্যাংগং লেক। সম্পূর্ণ নীল রঙের জল, আর এক এক দিক থেকে এক এক রকমের নীলের শেড। হাল্কা আকাশী থেকে পুরো ইন্ডিগো ব্লু রঙ। ছবি দেখুন, প্যাংগং-এর জলের। প্রায় দেড়শো কিলোমিটার লম্বা এই লেকের দুই তৃতীয়াংশই পড়ে চীনে, মানে, তিব্বতে। শীতকালে এই সুবিশাল লেকের পুরোটাই জমে বরফ হয়ে যায়। লেকের জলে কোনো মাছ নেই, কেবল বিভিন্ন ধরণের পাখি দেখা যায়, মূলত সীগাল এবং পানকৌড়ি টাইপের জলজ পাখি।

    তিব্বতীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র এই লেক। দলাই লামা একদিন এই লেকের ধার ধরেই তিব্বত থেকে চলে এসেছিলেন ভারতে। এই লেকের ধার ধরেই ছিল সুপ্রাচীন সিল্ক রুট।

    দোরজি আমাদের গাড়ি চালিয়ে লেক বরাবর প্রায় দশ কিলোমিটার মত নিয়ে গেল একটা জায়গায়, যেখানে খুচরো টুরিস্টের ভিড় প্রায় নেই বললেই চলে। খুব কম লোক। আর জায়গাটা দেখামাত্রই চিনতে পারা যায়। থ্রি ইডিয়টসের শেষ সীনের শুটিং হয়েছিল এইখানেই, যেখানে চতুর জানতে পারে র‍্যাঞ্চো আর ফুংসুক ওয়াংড়ু আসলে একই লোক, তার এককালের সহপাঠী। সিনেমাতে যা-ই দেখাক, ওই লেকের ত্রিসীমানায় কিন্তু কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। তবে আমীর খানের দৌলতে লেকের শুরুর দিকে রমরমিয়ে চলছে রেস্টুরেন্টের বিজনেস। থ্রি ইডিয়টস রেস্টুরেন্ট, র‍্যাঞ্চো'জ রেস্টুরেন্ট, আমীর খান রেস্টুরেন্ট, এমনি কতশত।

    এদিকে প্যাংগং ধরে আরও সামনের দিকে এগিয়ে গেলে পরপর পড়ে কিছু গ্রাম, যেখানে হোমস্টে বা টেন্টিং-এর অপশন মেলে। ম্যাপ দেখুন আবার।

    আমরা গেছিলাম জাস্ট লুকুং আর স্প্যাংমিক-এর মাঝখান পর্যন্ত। এর পরে আছে মান, মেরাক, খালসে ইত্যাদি গ্রাম, একদম চীন বর্ডারের গা ঘেঁষে। রাস্তা নিচে নেমে আসছে চুশূলের দিকে। এই চুশূল হল ব্যাং অন দা চায়না বর্ডার। বাষট্টির চীন যুদ্ধে এই এলাকায় প্রচুর ভারতীয় সৈন্য কচুকাটা হয়েছিল চীনাদের হাতে। চুশূল হল ভারতের শীতলতম স্থান। পরশুদিনের হিন্দুস্তান টাইমস থেকেই তুলে দিচ্ছি, যখন দিল্লির টেম্পারেচার সাতচল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তখন চুশূলের টেম্পারেচার মাইনাস টু। চুশূল থেকে মিতপাল সো, মাহে হয়ে সোজা চলে আসা যায় সোমোরিরি। খুব খারাপ রাস্তা, বাইক ছাড়া অন্য কোনো গাড়ির পক্ষে এই রাস্তায় যাওয়া সাঙ্ঘাতিক টাফ।

    সোমোরিরি তো যাওয়া হবে না। প্যাংগং দেখেই মনের সাধ মেটাই, ভাবতেও পারি নি, এই পর্যন্ত আসতে পারব। দুচোখ ভরে সৌন্দর্য শুষছি, আর পাগলের মত ছবি তুলছি। ছবি দেখুন, তুলে দিয়েছি আজ।

    এর মাঝেই রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে চৌহান পরিবার গিয়ে বসল দূরের একটা শেডের নিচে। চৌহানকন্যা আবার একটি বিখ্যাত উক্তি করে বসলেন, ধুর, সকাল থেকে এত কষ্ট করে উজিয়ে এসে সারাদিনে মাত্র একটা লেক দেখা হল?

    আমি নির্মোহ ব। কিছুই বললাম না। এককান দিয়ে শুনলাম ও অন্য কান দিয়ে বের করে দিলাম।

    ঘন্টাখানেক পরে চৌহানের ডাক, মুখার্জিসার, এবার যাই?

    যাই মানে?

    মানে লাঞ্চ করে তাং শে ফেরত যাই। সবাই তো টায়ার্ড।

    আমি পুরো হুব্বা, কিন্তু আমি যে সানসেট দেখব বলে এসেছি এখানে! জলের রঙ পালটে যায়, নীল থেকে লাল হয়ে কালো হয়ে যায়, সেটা দেখে যাবো না? লাঞ্চ করে না হয় সানসেট পর্যন্ত এখানেই বসি?

    চৌহানের মনে হয় ধৈর্যচ্যুতি হল, লেক তো দেখে নিয়েছেন। সানসেটে আর আলাদা করে কী দেখবেন? বিটিয়া বিমার হ্যায়, সবলোগ থকে হুয়ে হ্যায়, চলুন, ওখানে লেকের মুখে আর্মি ক্যাম্পে আমাদের লাঞ্চের অ্যারেঞ্জমেন্ট করে রাখা আছে, খেয়ে নিয়ে ফেরত যাই।

    আমি একবার সিকিনীর মুখের দিকে তাকালাম। সিকিনী তখন সুস্থ, কিন্তু সকাল থেকে খালিপেটে গ্যাসের ধাক্কায় কাহিল, ক্লান্ত। ... কী বলব? আমার আর কিছু বলা সাজে না। এরা একেবারেই এনজয় করছে না, সেটা বুঝতেই পারছি, কেন যে এল, কেন যে জুড়ল আমার সাথে, আমাদের সাথে ... প্যাংগং-এর এই রূপের সামনে থেকে কেউ এইভাবে ফিরে যেতে পারে, এ আমার বোধের অতীত।

    আমি কোনো কনফ্রন্টেশনে যাবো না, মুখ বুজে আমি পেছন ফিরলাম। প্যাংগংকে মনে মনে বললাম, আমি আবার আসবো, বছর দুই পরে, তোমার সাথে আরো অনেক বেশি সময় কাটাবো।

    গাড়ি ফিরে চলল। লেকের একদম শুরুর দিকে আর্মির ক্যাম্প, সেখানে গিয়ে দেখলাম মোটেই আমাদের জন্য থালা সাজিয়ে কেউ অপেক্ষা করছিল না। গিয়ে অর্ডার দিয়ে খেতে হয়, অনেকেই খাচ্ছে, ওটা আর্মি পরিচালিত একটা রেস্টুরেন্ট। কী পাওয়া যায়? ম্যাগি, আর রুটি-ভাত-ডাল। ডাল মানে, রাজমা। কোনো প্রশ্নই আসে না রাজমা দিয়ে ভাত রুটি খাবার, আমি তাই ম্যাগির অর্ডার দিলাম। ম্যাগি শেষ করে খিদে মিটল না, সিকিনী বলল, একটু ভাত খেয়ে নে যেভাবে হোক।

    শেষমেশ ম্যাগির ঝোল দিয়ে মেখে খানিক ভাত খেয়ে খিদে মিটল। বোধ হয় ম্যাগি দিয়ে পাকিয়ে দুটো রুটিও খেয়েছিলাম।

    খেয়ে দেয়ে চারটে নাগাদ স্টার্ট করলাম তাং শে-র দিকে। সূর্যাস্ত হতে তখনো চার ঘণ্টা দেরি। বেরোবার সময় দেখি লেকের ঠিক বর্ডারে একটা ছোট দেওয়াল, সেখানে লেখা আছেঃ

    New Delhi
    1200 KM

    Happy Journey.

    এর পর? তাং শে ফিরে এক চমৎকার গেস্টহাউসে আমাদের রাত্রিবাস হল। কেয়ারটেকার একজন সুবেদার নায়েক না কী যেন সুন্দর রুটি আর তরকারি বানিয়ে দিল রাতে, সন্ধ্যেয় চা করে দিল, আর চাওয়া মাত্রই গরম জলের বালতি ভরে ভরে এনে দিল।

    সামনে একটা ছোট্ট ওয়াটারবডি মত। সুবেদারবাবু তার ওপারের সমতল জায়গাটা দেখিয়ে বললেন, শীতে এখানে আইস হকি খেলা হয়। টুর্নামেন্ট করা হয় আর্মির তরফে। মাইনাস চল্লিশ ডিগ্রি টেম্পারেচার হয়।

    গেস্টহাউস আর আশেপাশের ছবি তুলব কাল সকালে, তাই আজ আর পিকাসায় তুললাম না। আজ শুধু প্যাংগং-এর ছবি দেখুন, আর লে যাবার প্ল্যান করুন।

    ছবি ৪৪৫ থেকে শুরু।
  • সিকি | 132.177.186.162 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:০৩558422
  • কাবলিদা ঠিক। প্যংগং উচ্চতম লেক নয়। ওটা গুরুদোংমার।

    শঙ্খ, চমরি গাই, বুনো পাহাড়ী ঘোড়া আর পাহাড়ী গাধা আমরা এন্তার দেখেছি পুরো ট্রিপে। ওগুলো তাই আর আলাদা করে লিখলাম না।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:১৭558423
  • "যদিও এত উত্তরে সূর্য অস্ত যায় অনেক অনেক দেরিতে"

    এটা কেমন ব্যাপার ?? আমি তো পুর্ব-পশ্চিমের গল্প জানতাম
  • সিকি | 132.177.186.162 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:২৩558425
  • গান্ধী, বেসিক ভূগোলের নিয়ম। কর্কটক্রান্তি থেকে যত উত্তরে যাবি, সেখানে দিনের দৈর্ঘ্য গরমকালে বাড়তে থাকে, আর রাতের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। উত্তরমেরুর কাছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে ভোর তিনটে থেকে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত সূর্যের আলো থাকে। উত্তর মেরুতে থাকে ছয় মাস দিন।

    একুশে মার্চ আর তেইশে সেপ্টেম্বর পৃথিবীর সর্বত্র দিন রাত সমান সমান। তেইশে সেপ্টেম্বরের পরে উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে, দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে, আর দক্ষিণ মেরুতে শুরু হয় ছয় মাস দিন। দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গ্রীষ্ম, উত্তরে শীত।
  • প্পন | 122.133.206.25 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:২৩558424
  • সিকি, সো মোরিরি যাওয়া হল না? আপাতত উইকে এই দুটো ছবি দেখে আমি পুরো হুব্বা!





    কৈ বাত নেহি। ইনশাল্লাহ দেখা হয়েই যাবে, একদিন না একদিন। ঃ)
  • সিকি | 132.177.186.162 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:২৫558428
  • পূর্ব পশ্চিমের বেসিসে কখনো সূর্যাস্তের সময় বাড়ে কমে না, সময়টা আলাদা আলাদা হয় কারণ পৃথিবীর আহ্নিক গতি। তাই বিভিন্ন দেশের স্ট্যান্ডার্ড টাইম আলাদা আলাদা হয়।

    প্পন, না, সোমোরিরি হয় নি। নেক্সট টাইম :)

    তবে কহানি আভি ভি বাকি হ্যায়। সাথ মে রহিয়ে।

    কাল লিখব আবার যদিও।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:২৫558427
  • অ্যাল । ভুলে মেরেছি। ভুগোলে পাশ করেছিলাম তো !!
  • pi | 82.83.87.188 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:২৫558426
  • দিন ছোট বড় তো উত্তর দক্ষিণেই। দেশের মাঝবরাবর স্ট্যান্ডার্ড টাইম ঠিক হয় বলে পূঃ পঃ এ সূজ্জি ডোবে ঘড়ির টাইম হিসেবে আগে পরে। কিন্তু দিনের দৈর্ঘ্য তো এক। এক অক্ষাংশ হলে।
  • প্পন | 122.133.206.25 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:২৬558430
  • গান্ধী, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কান্ট্রিতে সামারে সূর্যাস্ত হয় না কেন? ওই একই কারণ এইখানে।

    পূর্ব আর পশ্চিম তো স্ট্যান্ডার্ড টাইমের লঙ্গিটুড কোন শহরের উপর দিয়ে গেছে তার উপর নির্ভর করে। ল্যাটিটুডের কেসটা আলাদা।
  • গান্ধী | 213.110.243.22 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:২৮558431
  • !! ওটা কি ছবি !! ২ন্ডটা ??? আমি যাবো ২০১৪য়
  • সিকি | 132.177.186.162 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:৩০558433
  • আমার ছবিগুলোও একটু দ্যাখো বস!
  • প্পন | 122.133.206.25 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:৩০558432
  • গান্ধী, আমিও অনেকক্ষণ ধরে ভাবছিলাম এ হাতে আঁকা ছবি না হয়ে যায়ই না।
  • প্পন | 122.133.206.25 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:৩২558434
  • হ্যাঁ, দেখছি। জমিয়ে রেখেছি। উইকেন্ডে আরাম করে দেখব। দে-র অ্যালবামও পুরোটা দেখা হয়নি। ঃ)
  • সিকি | 132.177.186.162 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:৩৩558435
  • সত্যি হাতে আঁকা মনে হয় ...
  • প্পন | 122.133.206.25 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০০:৩৪558436
  • ২ন্ড ছবিটায় একটু হাওয়া ছিল। নইলে আরো অসামশালা হত।
  • bhabuk | 22.130.4.244 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০১:১১558437
  • একটু ফুট কাটি । মারমট দের বিস্কুট খাওয়ানো ভালো আইডিয়া নয়। বিস্কুট ওদের স্বাভাবিক খাবার নয় - আর ট্যুরিস্ট দে'র থেকে রেডিমেড খাবার পেতে পেতে খুঁটে খেতে ভুলে যায় - আর না খেতে পেয়ে মারা পড়ে। সব বন্যপ্রাণীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । গত মাসে রকিজ এ গিয়ে দেখলাম - সব জায়্গায় পরিস্কার ক'রে লেখা ।
  • rimi | 85.76.118.96 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০১:২৮558438
  • ইসস সত্যি সিকির জন্যে আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। এই রকম একটা জায়গায় ঐরকম একটা সূর্যাস্ত দেখতে না পারার জন্যে। প্রার্থনা করি সিকি যেন দু বছর পরে আবার আসে এই খানে মনের মতন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে।

    এই একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল আমরা যখন লক্ষ্ণৌ বেড়াতে গেছিলাম মাধ্যমিকের পরে। বড়ে ইমামবাড়ার ভুলভুলাইয়ায় গাইড বলেছিল আমাদের ছেড়ে দেবে, আমরা এক ঘন্টার মধ্যেও বেরোনোর রাস্তা খুঁজে না পেলে সে আমাদের বের করে আনবে। কি দুঃখের বিষয়, আমার বন্ধুর মা (যিনি অলমোস্ট হুবহু চৌহানের বৌ আর মেয়ের মতন সারাক্ষণ অসুস্থ থাকতেন) মাথাব্যথায় এমন কাতর হলেন যে আমাদের ফিরে আসতে হল। আমি আর আমার বোন কত অনুনয় করেছিলাম, দশটা মিনিট অন্তত আমাদের ঘুরতে দেবার জন্যে, কিন্তু বাপ মায়েরা এক ধমকে চুপ করিয়ে দিলেন। সেই দুঃখ আজও যায় নি। লক্ষ্ণৌতেও এখনো পর্যন্ত আর যাওয়া হয় নি। ঐ ট্রিপ থেকেই জানি, বিভিন্ন ইন্টারেস্টের লোকজন নিয়ে বেড়াতে গেলে চরম সমস্যা।
  • pi | 82.83.87.188 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০১:৩৩558439
  • সত্যি, সিকির জন্য খারাপ লাগল। আমার সাথে এমনি হলে বোধ্হায় বলেই দিতুম, যে পারো চলে যাও, আমি নড়ছি নে।

    যাহোক, রাজমার বদলে ম্যাগি খেয়ে ভালো করেছ। নইলে আরো খারাপ লাগত।
  • sch | 125.184.76.231 | ০৭ জুলাই ২০১২ ০২:১১558441
  • অনেক অভিনন্দন শমীক। একটা না -পসন্দ ট্রিপ হলে লোকে সেটা নিয়ে গোঁজ হয়ে থাকে, মন খারাপ করে। কিন্তু আপনি গোটা জিনিসটাকে যেরকম উপভোগ্য ভাবে উপস্থাপনা করেছেন তাতে আর কি বলি। কোনোদিন দেখা হলে পায়ের ধূলো নিয়ে নেব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন