এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অনেক সাহসে সর্ষে

    de
    অন্যান্য | ২০ জুন ২০১২ | ১০৭২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • jhumjhumi | 127.194.244.170 | ৩০ জুন ২০১২ ০০:১২558945
  • জাস্ট অসাধারণ! আমার তো এখন যাওয়া হবে না, ছানাপোনা দুটো বড় না হওয়া পর্যন্ত,কিন্তু তোমাদের ভ্রমণ কাহিনী পড়ে কি ভীষণ যে যেতে ইচ্ছে করছে!!
  • Nina | 22.149.39.84 | ৩০ জুন ২০১২ ০১:০৭558946
  • দেবু
    সেই মনে আছে থ্রি ইডিয়েটস এ ---করিনার চোখ ঘুরিয়ে বলা--বাপরে তোমরা সব কি খাও--মনে হয় মিসাইল--খাখড়া--থেপলা
    ঃ-)))

    আমরা মানলী দিয়ে গিয়েছিলাম তাই রোহতাং পাসটা মনে আছে---তোর এই লেখা পড় একবার কাশ্মীরের দিক দিয়েও যাবার ইচ্ছে রইল--তবে দিন দিন বয়েস্টা কেন যে বেড়ে যায় ঃ( কতটা কি পেরে উঠব কে জানে--তবু ----

    ছবিগুলো বাড়ী গিয়েই দেখব----দারুণ লাগছে তোর চোখ দিয়ে দেখতে---
  • kiki | 69.93.242.141 | ৩০ জুন ২০১২ ১৪:২১558947
  • দের মেয়েটা কি মিষ্টি দেখতে হয়েছে। তোমার আর সিকির টই পড়ে মনটা উদাস হয়ে যাচ্ছে গো। ভাই দুবছর কাশ্মীর পোষ্টিং থাকলো তাও যাওয়া হলো না।ঃ(
  • de | 213.197.30.2 | ০২ জুলাই ২০১২ ১৬:৫১558948
  • হুচি, ঝুমঝুমি আর কিকি,

    বেরিয়ে পড়ো এখনই! ছোট বাচ্চা নিয়েও অনেককেই যেতে দেখলাম! কিচ্ছু হবে না!

    নীনাদি,

    আমরা পরের বার মনালির দিক দিয়েই যাবো! অন্তত এখন সেরকমই প্ল্যান!
  • de | 213.197.30.2 | ০২ জুলাই ২০১২ ১৭:০৫558949
  • সুকান্তর পাহাড়ী অঞ্চলে গাড়ীতে চড়লেই মোশন সিকনেস হয় (সেজন্যই আসতে চায়নি বেচারা গাড়িতে) -- ওর শরীরটা একটু খারাপ লাগছিলো অনেকক্ষণ থেকেই। দুপাশে যতক্ষণ কিছু দেখা যাচ্ছে শরীরের দিক থেকে মন ফিরিয়ে নেওয়া যায় -- রাত্রির অন্ধ্কারে আর গাড়ীর ঐ প্রচ্ন্ড ঝাঁকুনিতে সেই সুযোগটা নেই। ওর বমি শুরু হয়ে গেলো। এটা নিয়ে ততোটা চিন্তায় পড়িনি কারণ এরকম ওর অনেকবার হয়েছে। কার্গিল তখনো ঘন্টা দুয়েকের পথ। হঠাৎ করে মেয়ে বল্লো ওরও বমি পাচ্ছে -- এতোখানি রাস্তা -- সারাদিন সেভাবে কিছু খাওয়া হয়নি, তাই হয়তো ওরও এরকম হচ্ছে। গাড়ি থামিয়ে ওকে রাস্তার ধারে বমি করানো হলো। তারপর থেকেই ও প্রচন্ড পেটে ব্যথার কমপ্লেন করতে থাকলো। আগেই বল্লাম বেড়াতে গেলে ও পুরো বিন্দাস টাইপ -- কখনো কোনকিছু নিয়ে কমপ্লেন করা ওর ধাতে নেই। তাই একটু চিন্তা হতে লাগলো।

    কোনমতে মেয়েকে সামলে যখন কার্গিলে গাড়ি ঢুকলো আর হোটেল ডি জোজিলার সামনে দাঁড়ালো তখন রাত সাড়ে দশটা। চারপাশে শুধু উঁচু উঁচু পাহাড় থম মেরে অন্ধকারের প্রাচীরের মতো খাড়া হয়ে আছে। এতো রাত্রে হোটেলে কি কিছু পাওয়া যাবে? কোনমতে মালপত্র ঘরে তোলা হলে, ঘরের মধ্যে ঢুকে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো -- খুব সুন্দর সাজানো ঘর। টয়লেটে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে আসা হলো। মেয়ে তখন কিছু বলছে না -- ও এমনিতেই খুব চাপা, তবে মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে অসোয়াস্তিটা রয়েছে।

    দিব্বি গরম গরম খাবার পাওয়া গেলো -- কি নেই! বাটার রোটী, ডাল মাখানি, ফুলকপির তরকারি, পনির মসালা, ভাত, চিকেন কারী, রায়তা। প্রত্যেকটা খাবার বেশ গরম! আমরা আসছি জেনে ওরা খাবার তৈরী করে রেখেছিলো। খাওয়া-দাওয়া সেরে ওপরে গিয়ে একটু বসা হয়েছে। এমন সময় মেয়ের আবার বমি হয়ে গেলো। আমরা ভাবলম ঠিক আছে, সারাদিনের জার্নিতে এমনিতেই ও ক্লান্ত -- আর খাওয়া নিয়ে জোরাজুরি না করে শুয়ে পড়াই উচিত হবে হয়তো। রাত্তিরে আলো নিভিয়ে শোয়ার পরও বোঝা গেলো ওর অসোয়াস্তিটা রয়েছে।

    পরদিন সকালে ন'টায় বেরনোর কথা, সেইরকমই ব্রেকফাস্টের কথা বলে রাখা ছিলো -- মেয়ের সারা রাত্তিরেই খুব ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুম হয়েছে। সকালে উঠে জিজ্ঞেস করতে বললো, পেটে খুব ব্যথা হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা রেডি হয়ে নিলাম, কার্গিল ফিল্ড হসপিটাল কাছেই, জাভেদ ভাইও আমাদের সঙ্গে গাড়ি নিয়ে পৌঁছে দিলো। ভিতরে ঢুকে এক লাদাখি ডক্টর এবং নার্স -- অত্যন্ত ভদ্র ভালো মানুষ -- ওকে পরীক্ষা করে দেখলেন। বমি হয়েছিলো কাল রাত্তিরে আর পেটব্যথা পেটের সাব-হেপাটিক রিজিয়নে, এছাড়া আর কোন সিম্পটম নেই। ডক্টর বল্লেন সম্ভবত কোন ইন্ফেকশন হয়েছে, তাই নরফ্লক্স, পেটে ব্যথার জন্য বাস্কোপান আর ওআরএস খাওয়াতে বল্লেন। সম্ভবত বমি হয়ে ডিহাইড্রেশান আর তার থেকেই মাসল ক্রাম্প! একটু ড্রিপ চালানোর কথা বলায় মেয়ে আর তার বাবা কেউই রাজী হলো না। ডাক্তার এবং নার্সেরা সবাই ভীষণ ভালো, হাসিমুখে আমাদের নিশ্চিন্ত করলেন বুঝিয়ে সুজিয়ে। আমরাও ফিরে এসে লটবহর নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। ডাক্তার দেখাতে গিয়ে একটু দেরী হয়ে গেলো বলে সুকান্ত ব্রেকফাস্ট করে নিলেও আমার আর করা হলো না! তাই দেখে হোটেলের একজন ডাইনিং এর কর্মচারী আমাকে চাপাটি প্যাক করে দিলো বাটার লাগিয়ে। আমি একটু অভিভূত! পথে বেরিয়ে এইরকম সাহায্য আমি বহুবার বহুজনের কাছ থেকে পেয়েছি। মানুষ যে সত্যি কতো ভালো হয়, কত সহানুভূতিশীল হয় তা মেট্রো সিটিতে বাস করে অধৈর্য্য আমরা যেন ভুলেই গেছি!

    দিনের আলোয় ঝকঝক করছে দূরের সাদা পাহাড়ের চূড়া, মূলতঃ রুক্ষ প্রকৃতি -- ন্যাড়া উইলো আর সাদা ফুলে ভরা আপ্রিকট, সবুজের চিন্হ খুব কম। তখনো ওখানে শীতেরই শেষ দিক। কার্গিল পেরিয়ে বাটালিক। লাডাখ রেঞ্জ আর কারাকোরাম রেঞ্জের মাঝামাঝি। এখানকার বাড়ি গুলো বেশ অন্যরকম -- শুধু এখানেই নয় এই পুরো পথে লে অবধি যত বাড়িঘর দেখেছি, দুয়েকটা বাদ দিয়ে তার প্রত্যেকটা পরিবেশের রং, রূপ আর চরিত্রের সাথে যেন এক্কেবারে খাপ খেয়ে গেছে। তাই পুরো পথটা দেখলে মনে হয় যেন কোন দক্ষ শিল্পী রং তুলি নিয়ে বসে অত্যন্ত যত্নে এঁকেছেন, কোথাও এতো টুকু তাল কাটে নি। বাইরের এই অপরিসীম সৌন্দর্য্য থাকা সত্বেও মনটা ভারী হয়ে আছে -- কারণ মেয়ের পেট-ব্যাথা কমছে না। আমরা চিন্তিত, অনেকটাই লজ্জিতও বটে -- সহযাত্রীরা কি মনে করছেন তাই ভেবে। সুকান্ত কোনদিনই কারো সঙ্গে ট্রাভেল করে না -- একেবারে নৈব নৈব চ -- বেড়াতে এসে সবাই এতো দৌড়াদৌড়ি করতে চায় না বলে! এবার সেই সুকান্ত আর মেয়ে দুজনেই অসুস্থ বোধ করছে। সুকান্ত পরের দিকে খানিকটা সামলে গেলেও -- মেয়ে সুস্থ হচ্ছে না। চোখের সামনে বাচ্চাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে দেখা এক প্রবল মানসিক চাপ, এতো অসহায় লাগে তখন -- বিশেষতঃ এমন একটা জনমানবহীন জায়গায়। মিনিমাম চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হলেও ইমেডিয়েটলি লে তে যাওয়া আবশ্যক -- এইটা পুরোপুরি বুঝতে পারছি -- আবার সহযাত্রীদের কথা চিন্তা করে তাদের আনন্দে বাধা হয়ে দাঁড়াতেও পারছি না। অ্যাস ইউজুয়াল, তারা মাঝে মাঝেই গাড়ি থামিয়ে ফটো তুলতে তুলতে আর ডিলে করতে করতে যাচ্ছে। এদিকে আমার মেয়ের মুখ দেখে রীতিমতো টেনশন হচ্ছে। বারো বছর বয়েস ওর। এইরকম অসহায় ওর মুখটা আমি আগে কখনো দেখিনি। ও নিজেও এতো লজ্জা পাচ্ছে যে ওর জন্য আমরা বা অন্যেরা এনজয় করতে পারছে না এইটা ভেবে।

    এরই মধ্যে একের পর এক ল্যান্ডস্কেপ আসছে আর চলে যাচ্ছে -- আমি একহাতে মেয়েকে আগলাচ্ছি আর অন্য হাতে ফটো তুলে গেছি। সুকান্তও যেহেতু অসুস্থ -- ও ড্রাইভারের পাশের সিটে কোনওক্রমে বসে আছে। এখন ভাবলে মনে হচ্ছে -- সত্যি কি নিষ্ঠুর আমি, মেয়ে ওইরকম অসুস্থ আর আমি কিনা ফটো তুলছিলাম! কিন্তু বাইরে একবারও তাকালেই হাত ক্যামেরার দিকে চলে যাচ্ছিলোই, রিফ্লেক্স অ্যাকশনে! খুনখারাপী নীল আকশের গায়ে প্রথমে "ফিফটি শেড্স অব গ্রে" আর তারপরে সাদা বরফে ঢাকা রেঞ্জ। আমার গ্রের এতোরকম শেড দেখে সত্যি সত্যি জেমসের ঐ বইটার টাইটেলই মনে পড়ে যাচ্ছিলো! সঙ্গে সঙ্গে এইখানে চলছে সবুজ জলের ইন্দাস!

    এইভাবে চলতে চলতে লামায়ুরু আর আলচি যাওয়ার পথ পেরিয়ে আসি। আমাদের সহযাত্রীদের কিছু জন এখানেই একটা গাড়ী নিয়ে আলচি চলে যায়। আমরা গতকাল ওদের সঙ্গে যাবো ভেবে রেখেছিলাম। কিন্তু আজকে পরিস্থিতি সব ওলটপালট করে দিলো। ইতিমধ্যে দু-বার বাস্কোপান দেওয়া হয়েছে মেয়েকে। হাই-অল্টিট্যুড সিকনেসের যে এটা কোন চেনা সিম্প্টম নয়, সেটা এমনকি আমাদের ড্রাইভারও বুঝতে পারলো। তবে এখানে অবশ্যই সহযাত্রীদের কথা উল্লেখ করতেই হবে -- আমি প্রায় নিশ্চিত যে খুব কম বাঙালী ফ্যামিলি এই অ্যাডজাস্টমেন্ট করবে! পুরো জার্নিতে মেয়েকে নিয়ে আমাকে একবারও পিছনে বসতে হয়নি -- ঝাঁকুনি লাগলে ওর ব্যথা হচ্ছে দেখে ওরা আমাদের মাঝের সিট ছেড়ে দিয়েছিলো। সুকান্তকেও কনটিনুয়াস সামনের সিট ছেড়ে দিয়েছে। গাড়ির পিছনের সিটে ওরা পালা করে বসছিলো! শুধু ধন্যবাদ জ্ঞাপন যথেষ্ট নয় এই ফ্যামিলিটির জন্য!

    আমরা নিজেরা বেশ অধৈর্য্য হয়ে উঠছিলাম -- জার্নি যেন আর শেষ হয় না। মেয়ের কথা চিন্তা করেই লাঞ্চের জন্য দাঁড়ানো হলো না। ওকে খালি ওআরএস দেওয়া হচ্ছিলো। আমাদের খাবার প্রশ্নই ওঠে না। সারাদিন পথ চলে অবশেষে প্রায় সন্ধে ছটার আশেপাশে লে এসে পৌঁছাই আমরা! ডাইরেক্ট হসপিটাল যাওয়ার কথা বলতে মেয়ে বেঁকে বসলো -- ওর বক্তব্য-- আমাকে প্লিজ একটু হোটেলে গিয়ে রেস্ট নিতে দাও! আমি ঠিক হয়ে যাবো। যেহেতু এতোদিন অব্দি সামান্য জ্বর-সর্দি ছড়া ওর কখনো কিছু হয়নি -- ডাক্তার দেখাতে ওর প্রবল অনীহা, ইঞ্জেকশন আর ড্রিপে ভয় আর হসপিট্যালে অ্যাডমিট হওয়া নিয়েও অসম্ভব অনিচ্ছা! মেয়ের বাবারও একই বক্তব্য! সুতরাং আমার কথা খাটলো না!
  • de | 190.149.51.68 | ০২ জুলাই ২০১২ ১৭:২৩558950
  • হোটেল সিটি প্যালেস -- অপূর্ব সুন্দর ছিলো হোটেলটা আর সেইসঙ্গে তার সমস্ত মানুষগুলো। পরের বার গেলে ওদের ওখানেই থাকবো -- বলে এসেছি ওদের। পুরো হোটেলের সব্বাই এতো কনসার্ন্ড হয়ে গেছিলো আমার মেয়েকে নিয়ে -- হট ওয়াটার ব্যাগ দেওয়া, খাবার গরম জল দেওয়া, পাতলা খিচুড়ি বানিয়ে দেওয়া -- অনেকবার করে ডাকলেও এতোটুকু বিরক্তি ছিলো না। আমি সারা জীবনে কখনো ভুলবো না এদের!

    সেদিন পৌঁছে রেস্ট নেওয়া হলো -- হোটেলের খাবারই ঘরে আনিয়ে নেওয়া হলো। ভেজ খাবার -- আলু পরোটা, সবজী, ডাল এইসব। কাল সকালে আমাদের লোক্যাল ট্যুর -- মেয়ে তখনো কিছু বলছে না। তবে মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে, অবস্থা বিশেষ সুবিধার নয়। পরের দিন সকালে লোক্যাল ডাক্তার কে কল করা হলো -- ব্যথা তখন একটু কম -- উনিও কার্গিলের ডাক্তারের মতো নরফ্লক্স ইত্যাদীতেই ভরসা রাখলেন। যেহেতু ব্যথটা সাব-হেপাটিক রিজিয়নে এবং জন্ডিসের কোন সিম্প্টম নেই -- ইন্টেস্টিনাল ইনফেকশন বলেই মনে করছিলেন ডাক্তারেরা।

    সেদিন লাঞ্চের পরে, আমি ভাবলাম একটু বাইরে ঘুরে আসি। মেয়ে আর সুকান্ত ঘুমাচ্ছে। যদি সব প্ল্যান ঠিকঠাক চলে তাহলে কাল নুব্রা গিয়ে স্টে করার প্ল্যান আর তার পরে প্যাগং । বাকি ট্রিপ গুলো , আসতে দুটো দিন নষ্ট হওয়ার কারণে হবে না। এমনিতেও লোক্যাল ট্যুরও হবে না। কি কি দেখার আছে, আর কি কি দেখবো, এই নিয়ে আমরা তিনজনও মোটামুটি প্ল্যানিং করেছিলাম। তবে এখন পরিস্থিতি যা তাতে সেই প্ল্যান নিয়ে বেশী না ভাবাই ভালো! আমি বাইরে যাচ্ছি দেখে সুকান্ত বল্লো তাহলে জিমি কে (আমাদের ট্যুর অপারেটর) ফোন করি, অল্প-স্বল্প লোক্যাল ট্যুর করেই এসো তুমি। সেইমতো জিগমিত নামে একটি স্থানীয় ছেলে ইনোভা নিয়ে এলো। আমি একটু টুকটাক জিনিসপত্র কিনবো (বিস্কিট, হরলিক্স জাতীয়) আর দু-তিনটে জায়গা দেখেই চলে আসবো। একটু হাঁপ ধরছিলো সিঁড়িভাঙ্গা ইত্যাদী করতে গিয়ে -- কিন্তু মোটের উপর অক্সিজেন ট্রাবল আমাদের কারোরই তেমন হয়নি!

    বেরিয়েই জিগমিত ভাই নিয়ে গেলো সঙ্গম দেখতে -- জান্স্কার আর ইন্দাস যেখানে এসে মিলেছে। দুটো নদীর জলের কালার-ডিফারেন্স সুন্দর বোঝা যায় -- ঠিক যেন গঙ্গা-যমুনা বা ভাগীরথি-জলঙ্গীর মতোই। সেটা দেখে ফেরার মথে ম্যাগনেটিক হিল। ম্যাগনেটাইটের পরিমাণ চারপাশের রিজিয়ানে খুব বেশী থাকার জন্য -- এখানে গাড়ে বেশী স্পীডে চলতে পারে না, হেলিকপ্টার উড়তে পারে না আর নিউট্রাল গিয়ারে রাখা গাড়ি স্লোপের চড়াইয়ের পথে (গড়িয়ে নীচে নামাটার চাইতে এটা আমার বেশী ইন্টারেস্টিং লেগেছে) ধীরে ধীরে উঠে যায়। ফেরার পথে গুর-দোয়ারাও দেখা হলো। তারপরে বাজার সেড়ে চলে আসতে যাবো -- জিগমিত আমাকে বল্লো, ম্যাডাম, আপনার হোটেলের খুব কাছেই শান্তিস্তুপ, ওর ওপর থেকে লে সিটি না দেখলে লে দেখাটা অধূরা রয়ে যায়। কালকে থেকে তো আপনি বাইরেই ঘুরবেন, ফিরে এসে আর এটা দেখার সময় হবে না! কি আর করবো ঘরে ফিরে গিয়ে -- ওরাও তো ঘুমাচ্ছে -- এইসব সাত পাঁচ ভেবে শান্তিস্তুপেই গেলাম। এখানে বুদ্ধমূর্তির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দলাই লামা। পাহাড়ের মাথায় স্তুপ। খানিকদূর নিয়ে গাড়ী ছেড়ে দিলো। আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা উঠতে হয়। খানিকটা ওপরে উঠতেই হাঁপ ধরা ভাব টের পাওয়া যায়। (আমরা কেউই অবশ্য ডায়ামক্স খাইনি -- পড়ে এসেছিলাম যে প্রয়োজন হলে খেতে হবে -- ঐ অবধি! ) চারপাশের ছোট ছোট প্রার্থনা ঘর, ছোট লামাদের থাকার জায়গা, মনাস্ট্রির লাইব্রেরি এইসব দেখে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাই এক্কেবারে টপে। অতো উঁচু থেকে লে শহর খেলনার মতো লাগে -- একদিকে বেশ কালো মেঘ করে এসেছে। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। তারপরে ধীরে ধীরে নেমে এসে গাড়িতে বসলাম। চারিপাশে তখন গংয়ের আওয়াজ -- সান্ধ্য প্রার্থনা শুরু হয়েছে।

    পরদিন সকালে উঠে নুব্রা যাওয়ার প্ল্যান। সেইমতো সকালে উঠে মেয়েকে তুলতে যেতেই দেখলাম ওর বেশ জ্বর এসেছে। পেটে খুব ব্যথাটাও আছে। তড়িঘড়ি ফোন করে নুব্রা যাওয়ার প্ল্যান ক্যানসেল করা হলো। ঠিক হলো জিগমিত কে সারাদিনের জন্যই বুক করে নেওয়া হবে। প্রথমে মেয়েকে নিয়ে যাবো হসপিটাল, সেখানে প্রথমে ডাক্তার দেখিয়ে সুকান্ত যাবে এয়ারপোর্টে। আমাদের দিল্লীতেও দু'দিন থাকার প্ল্যান ছিলো, সেটা ক্যানসেল করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বম্বে ফিরতে হবে। কোনমতে ব্রেকফাস্ট করে রওনা হলাম হসপিট্যালের দিকে।

    ক্যাজুয়ালটিতে ঢুকে প্রথম একজন ডাক্তার দেখলেন -- তারপরে উনি খবর পাঠালেন, সার্জিক্যাল সেকশনে। সার্জন এলেন এর পর। খুব ফাস্ট অ্যাকশন। হাত দিয়ে পেট টিপেটুপে উনি বল্লেন "অ্যাকিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিস"! আমরা তখন হাঁ! কোন প্রায়র ইন্ডিকেশান নেই -- কোনদিন কোন পেটব্যথার কমপ্লেন যে করেনি, কনস্টিপেশন ইত্যদী যে সমস্ত কারণ প্রাথমিক ভাবে থাকার কথা তা-ও তো ওর নেই। তাহলে এরকম আকাশ থেকে হঠৎ করে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয় নাকি? এছাড়াও ব্যথাটা তো সাব-হেপাটিক রিজিয়ানে, রাইট লোয়ার অ্যাবডোমেনেই তো অ্যাপেনডিক্স থাকে বলে শুনেছি! এইসব ছাতামাথা ভেবে চলেছি। ডাক্তারবাবু অবশ্য খুব জোরের সঙ্গেই বললেন, অ্যাপেনডিক্স ইনফেকশন যেকোন ইন্টারনাল ইনফেকশনের জন্যই হতে পারে। তক্ষুনি অ্যাডমিট করে নিলেন। খুব তাড়াতাড়ি, ডাক্তারবাবু নিজেই আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে এলেন ইউএসজি করাতে। তাতে অবশ্য অ্যাপেনদিক্সের সাইজ 0.6 সেমিই দেখালো। সে যাই হোক, সার্জিক্যাল ওপিডিতে মেয়ের অ্যাডমিশন হয়ে গেলো। এর পরের দু'দিন ক্রমাগত ড্রিপ আর স্ট্রং অ্যান্টিবায়োটিক চললো। অতো ঠান্ডায় জিরোর কাছাকছি তাপমাত্রার আই-ভি-এফ কনটিনুয়াসলি নেওয়ার জন্য মেয়ের দু' হাত ফুলে গেলো। ব্যথাটা ধীরে ধীরে কমছে বোঝা যাচ্ছিলো।

    এই হসপিটাল তার সমস্ত স্টাফদের নিয়ে এখনো অবধি আমার দেখা সেরা হসপিটাল। আমরা নাহয় ট্যুরিস্ট, কিন্তু আমাদের বেডের চারপাশে যেসব পেশেন্টরা ছিলেন, বেশীর ভাগই অত্যন্ত কঠোর দৈহিক পরিশ্রম করা খেটে খাওয়া মানুষজন -- তাঁদের সাথেও ডাক্তার আর সিস্টারদের সে যে কি অসামান্য ব্যবহার -- তা বলে বোঝানো যাবে না। সার্জিক্যালের ঐ একজনই সিনিয়ার ডাক্তার -- তিনি সারাদিন ধরে অপারেশন করছেন আর পর মুহূর্ত্তেই একবার করে এসে সার ওয়ার্ডে চক্কর মেরে যাচ্ছেন -- কারো সাথে হাসি-ঠাট্টা, কারোর গাল টিপে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আর চারিপশের মানুষজন? তারাও যে কি ভালোবেসে কি ভরসা দিয়ে ঘিরে রেখেছিলো ঐ দুটো দিন, আমি জীবনে ভুলতে পারবো না! সরকারী হাসপাতলে এমন ট্রীটমেন্টও যে হতে পারে জাস্ট ভাবা যায় না! পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হাসপতাল -- আমি কয়েকটা ছবিও জুড়ে দিয়েছি আমার অ্যালবামে। এক তিব্বতী লেডির সঙ্গে আলাপ হয়েছিলো, ওনার ভাই আর আমার মেয়ে একই সময় ক্যাজুয়ালটিতে ভর্তি হয়েছিলো -- একই সিম্পটম নিয়ে। পরে ওনার ভাইয়ের সার্জারি হয়েছিলো। উনি প্রত্যেক বেলা নিয়ম করে এসে আমরা খেয়েছি কিনা, মেয়ে কেমন আছে এইসব খোঁজ নিয়ে যেতেন। দরকার ছাড়া মানুষের সাথে না মেশা আমরা, শহুরে, স্বার্থপর, অসহিষ্ণু আমাদের যেন চোখে আঙুল দিয়ে এরা দেখিয়ে দিলো যে তেমন কিছু একটা ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার ছাড়া শুধু ভালোবাসা, সদিচ্ছা আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে দিয়েই একটা লে'র মতো পৃথিবী বানানো যায়!

    চারপাশে আরো যারা পেশেন্ট ছিলেন তাদের মধ্যে কমবয়েসীদের প্রায় ৬০% এর ওপরে দেখলাম অ্যাপেনডিক্স অপারেটেড। বোধহয় এই অসুখটা খুব কমন এখানে। তবে লাডাখিদের ফ্যামিলি অ্যাটাচমেন্ট সাংঘাতিক। কোন রোগী একা নেই, সবারই বাড়ি থেকে কেউ না কেউ সারাক্ষণ সঙ্গে আছে। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক লাঞ্চ বা ডিনারের টাইমে বাড়ি থেকে বড়ো বড়ো টিফিন কেরিয়ারে করে খাবার নিয়ে এসে বাড়ির অনেক লোকেরা একসাথেই খাওয়া-দাওয়া করতেন। এতোটুকু নোংরা না করেই। রাত্তিরবেলা দেখি বড় বড় বোঁচকা পিঠে নিয়ে লোক আসছে। পরে বোঝা গেলো কম্বল-বিছানা নিয়ে রোগীর বাড়ির লোক আসছে। বেডের পাশে মাটিতে বিছানা করে শোবে। সবাই যে কি হাসিখুশী! মেয়েকে অবশ্য দু'দিন কিছুই খেতে দিলো না ওর‌্যালি। বাকি কদিন হসপিটালেই রইলো মেয়ে। এর মধ্যে অজস্র ইনজেক্শন, ড্রিপ হ্যান-ত্যানা!

    রবিবার ছিলো বুদ্ধ পূর্নিমা। লে'র প্রায় সত্তর সতাংশ বৌদ্ধ। বাকিদের মধ্যে প্রায় কুড়ি শতাংশ মুসলিম আর বাকী হিন্দু বা খ্রীস্টান ইত্যদী। বুদ্ধ পূর্নিমার দিন স্থানীয় অনেক অর্গ্যানাইজেশনের সদস্যরা সারাদিন হসপিটালে রইলো, রোগীদের সাথে কথা বল্লো, খাবারের প্যাকেট দিলো! বড়লামা এসে সবার সাথে কথা বল্লেন, মেয়ের মাথায় হাত রেখে আশীব্বাদ করে লালসুতো-নীলসুতো দিয়ে তৈরী করা সুতোর মাদুলি বেঁধে দিয়ে গেলেন। আমাদের সাথে অনেক কথা বল্লেন। অনেকের সাথে আলাপ হলো যারা বম্বে বা লুরুতে গিয়ে পড়াশোনা করেছে, তারপরে আবার লে'তেই ফিরে এসেছে। তেমনই একটি ছেলে কি সুন্দর করে বল্লো, আমাদের এই জায়্গাটাতো ঠিক সমতলের মতো নয়, এখানে একে অন্যকে সাহায্য না করলে বাঁচা যায় না। আমরা তাই চেষ্টা করি যে-ই ডাকুক সাহায্যের হাতটুকু যেন বাড়িয়ে দিতে পারি!

    সবাই অনেক ফোন নাম্বারও দিয়ে গেলো -- সেই সঙ্গে ডাকলেই আসার আশ্বাস! জিমি আমাদের ট্যুর অপারেটার, এসে বলে গেলো ফোন করে দিলেই জিগমিত চলে আসবে। কোন রকম অসুবিধায় যেন ওদেরও জানাই। মাঝে একবার পালা করে আমি বা সুকান্ত হোটেলে যেতাম -- হোটেলের ডাইনিংয়ের লোকেরা দেখতে পেলেই হলো, যত্ন করে খাইয়ে তবেই ছাড়বে। আমি তবু কিছু খাওয়াদাওয়া করেছি -- সুকান্ত প্রায় কিছুই মুখে দেয়নি মেয়ের এই অবস্থা দেখে।

    অবশেষে রোব্বার রাত্তিরে মেয়েকে নিয়ে হোটেলে ফিরলাম। ডাক্তারবাবু ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে অবশ্য করেই বম্বে ফিরে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখানোর কথা লিখে দিলেন। ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে রোগীর ডেস্ক্রিপশন লেখা থাকে না? improved, recovered ইত্যাদী! তাতে একটা ক্যাটিগরি দেখি "লামা"। মেয়ে ডাক্তারকে জিগিয়ে জানলো যদি কোন রোগী হাসপাতাল থেকে ভাগলবা হয়ে যায় তাকে ঐ "লামা" ক্যাটিগরি তে ফেলা হয়। সেই থেকে বাড়িতে ফিরে এসে অব্দি আমরাও কেউ পালিয়েছে শুনলেই বলছি "লামা হয়ে গেছে"! ঃ))

    বুদ্ধপূর্নিমার রাত, চাঁদের আলোয় ভেসে যওয়া চরাচর! মেয়ে ঘুমোচ্ছে ঘরে। বাইরে খুব ঠান্ডা, তাও চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকি! কিছুই ঘোরা হলো না এবার এখানে, একেবারে কিচ্ছুই দেখলাম না প্রায় -- তবুও যেন অনেকখানি পাওয়ায় মনটা ভরে আছে। মানুষের জন্য মানুষ এমনিভাবে ভাবতে পারে, এতো যত্ন করতে পারে একজন সম্পূর্ণ অজানা মানুষকে, এতো কনসার্ন্ড হতে পারে সেই বিশ্বাসটাই কেমন হারিয়ে গেছিলো। লে ছিলো, আছে আর থাকবেও এমনি বহুকাল ধরে -- একইরকম পরিশুদ্ধ। পরের বছরই তাই অবারো ফিরে যাবার প্ল্যান সেখানে!

    যারা লে'র গল্প শুনবেন বলে বসেছিলেন তাঁদের সবাইকে হয়তো নিরাশ করলাম -- পরের বারের জন্য তুলে রাখলাম সেই গল্প -- এবারের লে'র কথা শুধুই ধন্যবাদ জ্ঞাপন সেই কিছু নাম জানা, বেশীর ভাগই অজানা মানুষজনের উদ্দেশ্যে!
  • de | 190.149.51.68 | ০২ জুলাই ২০১২ ১৭:২৯558951
  • (উ)পরিসংহারেঃ

    এর পরে এখানে ফিরে এসে বম্বে তে আমরা আপিসের হাসপাতালে যোগাযোগ করি, প্রায় সমস্ত ডাক্তারই এক কথায় উড়িয়ে দেন লে'র ডাক্তারের ডায়াগনেসিসকে। কেউ বলেন গ্যাস্ট্রাইটিস কেউ বা অন্যকিছু। 2-nd মে তে ব্যথা শুরু হয়ে বারো তারিখ অব্দি (মাঝে লে'র ট্রীটমেন্ট ছাড়া) গ্যাসের ওষুধ ছাড়া আর কোন ওষুধই দেওয়া হয় না ওকে। ধীরে ধীরে মেয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে। অথচ ইউ-এস-জি তে কিছুই পাওয়া যায় না! আমরা বার বার বলা সত্তেও শহরের বড় বড় হাসপাতালের ডাক্তাররা লে'র ডাক্তারবাবুর রিপোর্টটা একবারও ভালো করে পড়ে দেখেন না! শেষে বারো তারিখে বাধ্য হয়ে আমরা গিয়ে একেবারে সার্জিক্যাল আর পিডিয়াট্রিকের হেডের সঙ্গে দেখা করি। সেদিন মেয়ের অবস্থা দেখে ওরা সাথে সাথে অ্যাডমিশন করায় আর সি-টি-স্ক্যান করতে পাঠায়। তাতে জানা যায় যে গত প্রায় দিন দশেক ধরে পারফোরেটেড অ্যাপেন্ডিক্স নিয়ে ঘুরছে ও। ওর অ্যাপেনডিক্স 12'O clock পজিশনে থাকার কারণে, ইউ এস জি তে কিছু ধরা পড়েনি। তারমানে কার্গিলের সেই রাত্তিরেই ওর অ্যাপেনডিক্স ফেটেছিলো! এই যন্ত্রণা ও এতো দিন ধরে সহ্য করেছে! সঙ্গে সঙ্গে ওখান থেকেই সোজা ওকে আই সি ইউ তে নিয়ে গেলো আর সঙ্গে সঙ্গেই অপারেশান।

    অপারেশানের পড়ে ডাকতার জানালেন, অ্যাপেনডিক্স পাওয়াই যায়নি, সম্ভবত ওটা অ্যাবসেসে ডিজলভ হয়ে গেছে। তার সঙ্গে এতোদিন ধরে ইনফেকশনে এক্সপোজড থাকার কারণে ওর অরগ্যানগুলো একদিকে জট পাকিয়ে সিলড হয়ে গেছে আর কোলনের ওয়ালেরও অনেকটাই থিকেনিং হয়েছে। অপারেশানের পরেও প্রায় দিন দশেক ওকে অ্যাবসেস ড্রেনেজের চ্যানেল নিয়ে ঘুরতে হয়েছে। এতো অসহ্য যন্ত্রণা যে ও কি করে এতোদিন ধরে সহ্য করলো ডাক্তারবাবুরা অনেকবার এই নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আমাদের কাছে। এই রোগের বর্ণনাটা হয়তো লেখার দরকার ছিলো না, কিন্তু তবুও সব বাবা মায়েদের কথা ভেবে লিখে রাখলাম। লাডাখের ডাক্তারবাবুর ডায়াগনেসিস পুরো সঠিক ছিলো -- ওনার নামটা শেষ মুহূর্ত্তে জেনেছিলাম -- ডঃ কেসর -- উনি বলেছিলেন -- অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা পেটের মাঝামাঝি দিয়ে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে ডানদিকে সরে যায়। কনভেনশনাল পজিশনে অ্যাপেনডিক্স না থাকার জন্যই আমার মেয়েটা এতি কষ্ট পেলো!

    লে'র বন্নোনা না রোগের বন্নোনা! আমার মেয়ে বলেছে "লেটে লে'তে গিয়ে লেটে (শুয়ে) থাকার গপ্পো" ঃ))
  • | 24.96.121.110 | ০২ জুলাই ২০১২ ১৮:১৫558952
  • কুদোস!!
  • hu | 22.34.246.72 | ০২ জুলাই ২০১২ ১৮:২৫558953
  • দে-দি, মেয়ে এখন সম্পূর্ন সুস্থ আশা করি। বেড়াতে গিয়ে এমন আশাতীত সাহায্য পাওয়ার অভিজ্ঞতা আমারও অনুরূপ। তোমার লেখা পড়তে পড়তে কুসকোতে দুই অসুস্থ বন্ধুকে নিয়ে আমার সেই দিনটার কথা মনে পড়ছিল। যে হোটেলে ছিলাম সেখানকার লোকজন তো বটেই, এমনকি রাস্তার মানুষ, সাধারন দোকান, ফার্মসি - সবার থেকে যে সাহায্য পেয়েছি তা কখনও ভোলার নয়। বলেছিলাম না, মধুসূদনদাদারা পথেঘাটে ছড়িয়ে আছে ঃ-)
  • Nina | 22.149.39.84 | ০২ জুলাই ২০১২ ১৯:৫০558955
  • দেবু
    আহরে--মেয়েটা বড় কষ্ট পেল--তবে এখন স্ম্পূর্ণ সুস্থ --ব্যাস তাহলেই হল।
    লে যাবার আর অএকটা সুযোগ তৈরি হল --এটাই ব্রাইট সাইড আর আজকের দুনিয়ায় সুন্দর জায়গা শুধু নয়--সুন্দর মানুষজনদের দেখা পেলি--গল্পের এই ভাগটা তাই আরও সুন্দর--
    সবার ওপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই!!

    ( হি ই হি ফিফটি শেডস অফ গ্রে পড়লি?--তিন নাম্বারটা পড়ে ফেলার পর পুরোটা বোঝা যায়)
  • সিকি | 132.177.187.171 | ০২ জুলাই ২০১২ ২০:৪৪558956
  • দে-র জন্য টুপি খুললাম। আপাতত আর কী লিখব বুঝতে পারছি না।
  • সিকি | 132.177.187.171 | ০২ জুলাই ২০১২ ২০:৪৫558957
  • দে-কন্যার জন্যেও।
  • bb | 127.195.168.173 | ০২ জুলাই ২০১২ ২১:০৫558958
  • দে- আপনার মেয়েকে জানালাম অনেক শুভেচ্ছা আর ভালবাসা। আর লেহের সেই ডাক্তারকে জানাই শ্রদ্ধা, এদের জন্যেই পৃথিবী এখনো এত সুন্দর।
  • জিপসি | 192.156.117.51 | ০২ জুলাই ২০১২ ২২:৫১558959
  • ফাটাফাটি!!!
  • প্পন | 122.133.206.25 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০০:১৫558960
  • দে-র লেখাটা পুরোটা পড়ে মনটা কী প্রশান্ত হয়ে গেল। দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ সবকিছু পার হয়ে পথের শেষে দেখি অপেক্ষা করে আছে বুদ্ধপূর্ণিমার রাত, চাঁদের আলোয় ভেসে যাওয়া চরাচর।

    পৃথিবীটা এত সুন্দর! বড় সুন্দর!
  • pi | 81.206.11.78 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০০:২৯558961
  • এই পড়লাম। কী আর বলি।
  • pipi | 139.74.191.52 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০০:৩০558962
  • অমিও পড়ে কি বলব ভেবে পাচ্ছি না! দে-দি, মেয়ে সুস্থ তো এখন?
  • Tim | 208.82.17.147 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০০:৪৩558963
  • কৌশানীতে দুদিন ধরে স্যালাইন চলেছিলো মায়ের। কোন ডাক্তার ছিলোনা, স্থানীয় কম্পাউন্ডারবাবু ওষুধ দিয়েছিলেন। সেই ওষুধেই আস্তে আস্তে উঠে বসে পরে বদ্রীনাথ-কেদারনাথ যেতে পেরেছিলো।
    দে-দির লেখা পড়ে এইসব স্মৃতি ভিড় করে এলো। মেয়ে এখন সুস্থ জেনে ভালো লাগছে। ভালো থেকো সবাই। আর পরের বার লে ঘুরে এসে জমাটি গল্প লিখবে এই অপেক্ষায় রইলাম।
  • I | 24.99.167.196 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০১:০০558964
  • দে! বড় ভালো, বড় ভালো!
    আর কিছু বলতে পারলাম না।
  • rimi | 85.76.118.96 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০১:১৮558966
  • সত্যি, বড় ভালো লাগল সব মিলিয়ে।
    বাচ্চা মেয়েটা এখন ভালো আছে তো?
  • | 60.82.180.165 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০২:২৩558967
  • খুব ভালো লাগলো।
    সাহসী ছা আর মাবাবাকে অনেক অভিনন্দন!
  • kiki | 69.93.193.81 | ০৩ জুলাই ২০১২ ০৭:২৭558968
  • ঃ)

    আমিও মিঠুর মতই বলে যাই, সাহসী ও গুনী মেয়ে আর তার সাহসী ও গুনী মাকে অভিনন্দন।

    সত্যি মন ভালো হয়ে গেলো।
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১০:০৭558969
  • দেদী, আশা করি আপনার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে এতদিনে, সামনের বছর আবার ঘুরে আসুন লে, আমাদের জন্য ছবি তুলতে ভুলবেন না।মন সাংঘাতিক ভালো করে দেওয়া লেখা।
  • Toba Tek Singh | 131.241.218.132 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১০:১১558970
  • ব্রাভো
  • শ্রাবণী | 134.124.244.107 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১০:৪৫558971
  • দে, সামনের বছর নিশ্চয়ই ভালো করে ঘুরবে লে.....মুনিয়া খুব ব্রেভ গার্ল....আমি জানিনা এভাবে জেনারেলাইজ করা যায় কিনা কিন্তু আমাদের এতকালের অভিজ্ঞতা বলে পাহাড়ী লোকেরা মানুষ হিসেবে সমতলের থেকে অনেক অনেক উন্নত হয় অন্তত মানবিক দিক দিয়ে.....সেটা হয়ত ঐ যে বলেছে ওরকম জায়গায় থাকলে বাঁচার জন্যে একে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন....এটা আমরা প্রতিবারে পাহাড় ঘুরে এসে বলি...
  • i | 147.157.8.253 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১০:৫২558972
  • পড়লাম।
    মেয়ে কেমন আছে?
    ভালো থেকো।
  • kd | 69.93.195.172 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১২:০৩558973
  • দেবযানী, তোমার মেয়ের সহ্যশক্তি অতুলনীয়। তোমাকেও প্রশংসা করি - চোখের সামনে মেয়ে অত কষ্ট পাচ্ছে দেখেও মাথা ঠান্ডা রাখতে পেরেছো।

    মুনিয়া, তুমি আমার প্রাণভরা আশীর্বাদ নিও। জীবনে যা করবে তাতে সফল হও।
  • de | 213.199.33.2 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১৩:৪০558974
  • এবার সত্যি সত্যি চোখে জল এসে গেলো সবার এতো ভালোবাসা, শুভেচ্ছা আর আশীর্ব্বাদে ঃ)) -- মুনিয়া ভালো আছে এখন, স্কুলে যাচ্ছে! আমাদের অজস্র ধন্যবাদ যাঁরা পড়লেন আর এই কয়েকটা দিন ধরে উৎসাহ দিয়ে লেখালেন আমায়!

    সব্বাইকে লে যাওয়ার জন্য বলি -- ও জায়গাটা না দেখলে কিছু অদেখা থেকে যায় জীবনে!

    কার্গিল আর লে'র কিছু ছবি -- কার্গিলের লিংটা বোধহয় আগেই দিয়েছিলাম, এখানে ছবিগুলোর একটু কনট্রাস্ট চেঞ্জ করেছি --

    কার্গিল -- https://plus.google.com/photos/104319172682511520305/albums/5755298530776341505?authkey=CK-lkquxwZWZigE

    লে -- https://plus.google.com/photos/104319172682511520305/albums/5755299938168671425?authkey=CPiSiNf17caT3gE
  • | 212.90.98.4 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১৪:৫৭558975
  • দেবু, খুব ভালো লেখা । সুখপাঠ্য। আমরা সেপ্টে প্ল্যান করছি। এই লেখা টা খুব হেল্পাবে।
  • LOL | 131.241.218.132 | ০৩ জুলাই ২০১২ ১৫:৫৬558977
  • দে, আমার শুকনো চোখের একটা সমোস্যা আছে,চোখে জল আনার যন্যে একটা ড্রপ দিতে হয়, আজ আর তার দরকার হোলো না - ভালো থাকবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন