এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অনেক সাহসে সর্ষে

    de
    অন্যান্য | ২০ জুন ২০১২ | ১০৭০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ন্যাড়া | 132.172.171.14 | ০৩ জুলাই ২০১২ ২০:৪৪558978
  • সব ভাল ভ্রমণকাহিনীই আসলে শেষ পর্যন্ত মানুষের গল্প। দে-দির গল্পটাও তাই।
  • kk | 117.3.243.18 | ০৩ জুলাই ২০১২ ২১:১৬558979
  • ইশ, বাচ্চা মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে। ওর সহ্যশক্তি দেখে অবাক হয়ে গেলাম! এখন ভালো আছে তো? দে, তোমার লেখাও খুব সুন্দর, ছবি গুলোও। খুব ভালো লাগলো পড়ে।
  • jhumjhumi | 127.194.249.112 | ০৩ জুলাই ২০১২ ২২:০২558980
  • দে দি, কিছু বলার নেই। তোমার ঐটুকু মেয়ের অসাধারণ সহ্যশক্তি দেখে অবাক হয়ে গেলাম।আশা করি সে এখন ভালো আছে। ভালো থেকো।
  • Tirthang | 150.247.79.36 | ০৪ জুলাই ২০১২ ০১:১৩558981
  • দাদার কীর্তির তাপস পালের মত সব্বার হাততালি দেওয়া শেষ হয়ে যাবার পরে হাততালি দিয়ে গেলাম। ভীষণ ভালো লাগল। দে-র লেখা আগে পড়িনি; আরও এমন চমৎকার লেখা পাওয়ার দাবি জানিয়ে রাখলাম।
  • kd | 69.93.203.190 | ০৪ জুলাই ২০১২ ০৪:৪৩558982
  • দেবযানী, পরের বছর যখন আবার ওখানে যাবে, মুনিয়াকে বোলো ওর "আঁখো দেখা হাল" যেন এখানে রিপোর্ট করে - যে ভাষায় লিখে কমফর্টেবল তাতেই, উইদাউট ট্র্যানস্লেশন। বলবে এটা কলকাতায় ওর এক দাদু আছে, তার স্পেশাল রিকোয়েস্ট।
  • mita | 106.255.105.27 | ০৪ জুলাই ২০১২ ০৭:২৪558983
  • দে, খুব ভালো লাগলো পড়ে। মেয়েকে অনেক আদর দিও আর আমার তরফ থেকে Hat's off বোলো। আশাকরি এখন সে ভালো আছে।
  • de | 213.199.33.2 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১২:১৩558984
  • এবার আমার সব্বাইকে লেখার পালা –

    সবার আগে কেডিদা –

    আমি অবশ্যই বলবো মুনিয়াকে ওর দাদুর কথা! যদিও লেখাটা বাংলায় এতোটা হয়তো পারবে না -- ঃ)), তবে ইংরাজীতে লিখবে!
    অনেক অনেক ধন্যবাদ কেডিদা!

    মিতাদি,

    নিশ্চয়ই বলে দেবো মুনিয়াকে ঃ))--

    হুচি, আমার এই গল্পের আরেকটা নামকরণও করা যায় – মধুসূদন দাদাদের গপ্পো ঃ)

    নীনাদি, দমদি, সিকি, বিবি, জিপসি, প্পন, পাই, পিপি, টিম, বড়াই, রিমি, ম’, কিকি, ঐশিক, সিংজী, শ্রাবণী, ছোটাই, ব’, এল ও এল, ন্যাড়াবাবু(অনেক দিন পর আপনাকে দেখলাম), কেকে, ঝুমঝুমি, তীর্থংবাবু আর মিতাদি সব্বাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ – আমায় যে কিভাবে ভরিয়ে দিলে তোমরা/আপনারা!! ঃ))
  • নেতাই | 131.241.98.225 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১২:১৫558985
  • আমিও পড়েছি। কিছু বলিনি বলে এমন নয় যে পড়িনি।
  • rajdeep | 230.227.106.153 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১২:১৮558986
  • সাহসিকতার সর্ষে

    আবার ঘুরে এসো লাদাখ .,,, আবার শুনতে চাই
  • Abhyu | 168.227.33.167 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১৪:৩৫558988
  • বিলবাও শহরটা খুব সুন্দর। এই ব্রিজটায় ঘুরে এলাম কাল


    ব্রিজের মাথায় উঠে হেঁটে নদীটা পের হলাম, ফেরার সময় ঐ দড়িতে টাঙানো ভেলায় চেপে। এখানে বিস্তারিত পাবেন (নিজেও তুলেছি ছবি, কিন্তু, ঐ আপ্লোড করা ...
    http://homepage.ntlworld.com/angela.wood850/Flying%20Bridges/Transporter%20Bridge%20Files/Transporter%20Bridges.htm>
  • Abhyu | 168.227.33.167 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১৪:৪৩558990
  • http://en.wikipedia.org/wiki/University_of_the_Basque_Country
    এই একটা ইউনিভার্সিটি যেখানে কাফেটারিয়াতে লাঞ্চের সময় হুলিয়ে ইসে বিক্রি হয় :)
    শহরটা খাবারের জন্যে বিখ্যাত। প্রোচ্চুর টাপাস বার - ল্যাম্ব গ্রিল করা হচ্ছে...
  • | 24.99.78.171 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১৬:২২558991
  • এগুলো এখনে কেন?
  • sinfaut | 131.241.218.132 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১৭:২৫558992
  • দেদির লেখা পড়লাম। একটু চোখে জলও এলো।
  • Abhyu | 168.227.0.251 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১৮:১৬558993
  • সর্ষের জেনারেল টই আছে? এককালে থাকত তো - এখন কি প্রত্যেককে আলাদা আলাদা টই খুলে লিখতে হয়?
  • প্পন | 214.138.240.254 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১৮:৫৯558995
  • বেড়াতে যাবার প্ল্যান গোছের টইও তো আছে।

    এই টইটাকে ছাড় দেওয়া হোক।
  • SS | 109.120.125.223 | ০৪ জুলাই ২০১২ ১৯:২৯558996
  • দে'র লেখাও দুর্দান্ত লাগলো।

    ওইটুকু মেয়ের সহ্যশক্তি দেখে অবাক হয়ে গেলাম। পাহাড়ি জায়গায় বার্স্ট করা অ্যাপেন্ডিক্স নিয়ে চুপচাপ থাকতে মনে হয় বড়রাও পারবে না। উইশ করলাম, পরের বারের ট্রিপে যেন সুস্থভাবে ঘুরতে পারেন এবং এখানে আরও একবার সক্কলকে ভার্চুয়ালি ঘোরাতে পারেন।
  • de | 130.62.192.107 | ২২ অক্টোবর ২০১৩ ২১:০৯558999
  • ভাবছিলাম নতুন টই খুলে সর্ষে লিখি। কিন্তু যাঁরা আগেরবারের এই টইটা পড়েছিলেন, তাঁরা জানেন, এই পায়ের তলায় লাদাখি সর্ষের সুড়সুড়িটা গত বছর থেকেই জ্বালিয়ে মারছে আমায়। সঙ্গে কন্যাটিও তেমনই। গতবারের ওই অভিজ্ঞতার পরে সাধারণভাবেই সবাই বলবে -- বাপরে! ওসব জায়গায় গিয়ে দরকার নেই -- বেড়াতে গিয়ে রিল্যাক্স করে আরাম করো না বাপু, কি দরকার সেধে ঝামেলা নেওয়ার! কন্যার বাপের তেমনই মত। সেই সঙ্গে আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভানুধ্যায়ী, বাবা-মা সক্কলের মতে ওইসব অলক্ষুণে জায়গার দিকে যাওয়ার চেষ্টাও করা উচিত নয়। মোটামুটি ভদ্রস্থ, ঠিক-ঠাক জায়গায় ঘোরো না রে বাপু। দেখলে না, মেয়েটার কিরকম শরীর খারাপ হোলো -- (এবং নিজেদের মধ্যে মা-মেয়ে নিয়ে আলোচনায়) মায়েদের আক্কেল-জ্ঞান এতো কম হয় কখনো দেখিনি, কিছু একটা কান্ডজ্ঞান নেই!! তা তা আমার কান্ডজ্ঞান নিয়ে এরকম মতামত আমি ছোট থেকে অনেক শুনেছি -- ওতে আমার কিছু হয় না- কিন্তু এখন দেখি কন্যাও লোকের মতামত বিশেষ গায়ে মাখে না। আমারই বদসঙ্গের কারণেই হবে ঃ)
    সর্ষের আর কি দোষ -- সুড়সুড়িতেই তার কাজ শেষ, সে তো আর আমার কথা ভাববে না! ইদিকে কয়েকখান কনফারেন্সের ধাক্কায় বেড়ানোর প্ল্যান প্রায় চৌপট হওয়ার মুখে। এপ্রিলের শেষমেষ, ইদিকে জুন অব্দি স্কুলে গরমের ছুটি -- তারপরে স্কুল খুলে যাবে। গতবার শ্রীনগর - লে রুট দেখা হয়ে গেছে, তাই এইবারে আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলাম লে-মানালি বাই রোড আসবো। তবে এই সমস্ত প্ল্যানই মনে ছকে রাখা। বাড়িতে বললে, বাড়ির ভদ্রলোক আগেই বলবেন -- আমার দ্বারা অতো হুজ্জুত হবে না -- তোমরা যাও! বেড়াতে গিয়ে মোটেই তিনি ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট পছন্দ করেন না। সোজা প্লেন থেকে নেমে হোটেল, রিল্যাক্সিং আর তারপরে আবার প্লেনে চড়ে ফেরত আসা -- এইটে হলেই সবচেয়ে পছন্দের জিনিস! তাই সমুদ্রতটে ভ্রমণই প্রেফারেবল্! ইদিকে কন্যা এবং তার মা যাবতীয় হুজ্জুত পছন্দ করে, পাহাড়ী অঞ্চল সবচেয়ে পছন্দের, কোথাও বেড়াতে গেলে ঘরে বসে থাকতেই চায় না। বেড়ানোর কথা উঠলেই তাই ভদ্রলোক ভয়ে ভয়ে থাকেন।
    তো যে কথা হচ্ছিলো -- দিনক্ষণ ঠিক করে উঠতে উঠতেই এপ্রিল মাস এসে গেলো। ভেবেছিলাম কন্যার সামার ভেকেশন থাকতে থাকতে ঘুরে আসা যাবে, কিন্তু খবর নিয়ে জানা গেলো জুনের দ্বিতীয়-তৃতীয় সপ্তাহের আগে লে-মানালি রোড খুলবে না। এছাড়াও আমার একবার কন্যাসহ কয়েকটা কনফারেন্স আর ডিসকাশন মিটিংয়ের পিত্তিরক্ষা করে ফিরে আসতে আসতেই জুনের দ্বিতীয় হপ্তা গড়িয়ে যাবে। সেইমতো কথাবার্তা চালু করলাম। সিকির সাথে বেশ কিছুবার মেল চালাচালি করে অনেক তথ্য পাওয়া গেলো। প্রথমে যে ট্রাভেল-এজেন্টকে লিখলাম, সে সমস্ত কিছু মিলিয়ে প্রায় এক লাখ কুড়ির কাছাকাছি দরপত্র দিয়ে পত্রপাঠ বাতিল হলো। ঠিক করলাম সমস্ত হোটেলে নিজেই বুকিং করবো আর গাড়ির বন্দোবস্ত আলাদা করে। সিকিদের গাড়ির ড্রাইভার দোর্জির সাথে কথা বললাম।
    মোটামুটি এইরকম আইটিনেরারি রেখেছিলাম -- লিখে দিলাম এখানে। কেউ বেড়াতে যেতে চাইলে একটা আইডিয়া হবে।
    ১) ২০শে জুন -- রাত্তিরের ফ্লাইটে দিল্লী। লেট নাইট ফ্লাইট, দেড়টা নাগাদ দিল্লীতে পৌঁছয়। টার্মিনাল চেঞ্জ করলে ঘন্টা দেড়েক লাগে। গো এয়ারের একটা ফ্লাইট আছে ভোর পাঁচটায়। সেটা ধরলে ভোর-ভোর সাতটার মধ্যে লে পৌঁছবো।
    ২) ২১ শে -- সকালটা হোটেলে পৌঁছে বিশ্রাম। প্লেন ঘুমানো। একটু লেট লাঞ্চ সেরে তিনটে থেকে লোকাল ভিজিট।
    ৩) ২২ শে -- ওই দিনটা আলচি মনাস্ট্রি, নিম্মু গাঁও এইসব দেখেটেখে লে শহরের আশেপাশে আরো কিছু দ্রষ্টব্য স্থান দেখার জন্য রাখা হোলো।
    ৪) ২৩শে -- খার্দুংলা টপ হয়ে নুব্রা ভ্যালির দিকে যাওয়া। আমরা পানামিক হয়ে নুব্রাতে আসবো। ওইদিন রাতে ডিস্কিটে থাকবো।
    ৫) ২৪ শে -- ডিস্কিট থেকে হুন্ডার হয়ে তুর্তুক। ওখানেই ক্যাম্পে থাকা হবে।
    ৬) ২৫শে -- তুর্তুক থেকে লে ফেরত আসা
    ৭) ২৬শে -- ছাংলা টপ হয়ে প্যাংগং। ওখানেই ক্যাম্পে রাত্রিযাপন।
    ৮) ২৭শে -প্যাংগং থেকে লে।
    ৯) ২৮শে -- লে থেকে সো-মোরিরি, সো-কার। পথে সারচুর ক্যাম্পে রাত্রিবাস।
    ১০) ২৯ শে-- সারচু থেকে মানালি।
    ১১) ৩০ শে -- মানালি তে থাকবো।
    ১২) ৩১ শে -- মানালি থেকে মান্ডি।
    ১৩) ১ লা জুলাই-- মান্ডি থেকে চন্ডিগড়।
    ১৪) ২ রা -- চন্ডিগড় থেকে প্যাভিলিয়নে ফেরত!
    এইমতো প্ল্যান-ট্যান করে টিকিট বুকিং শুরু করে চক্ষু চড়কগাছ। ভারতী হাওয়ার দিল্লী টু লে পুরো বুকড ওই সময়ে। মে'র এন্ডে ফাঁকা আছে কিন্তু ওই সময় আমার কন্যাসহ বিদেশযাত্রার প্ল্যান। তাছাড়া এই সময় ছাড়া লে-মানালি রোড খুলবে না। গো-এয়ারে অবশ্য ফাঁকা আছে, কিন্তু গো এয়ারে গেলে এলটি সি নেওয়া যাবে না। হোমটাউন জার্নিকে ভারত ভ্রমণে কনভার্ট করলে একমাত্র তখনই অন্য এয়ারলাইন্স নেওয়া যায়। অগত্যা শুধু বম্বে টু চন্ডিগড় এলটিসি পাওয়া গেলো। এই গো এয়ারের ফ্লাইট বুক করেও একটা নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। সেটা বলছি পরে। এয়ার টিকিট বুক করার পর সবচেয়ে শক্ত কাজ -- মেয়ের স্কুলে এবং পড়ার জায়গায় ছুটি আদায়। সব টীচাররাই জানতে চান এতো বড় সামার ভেকেশানটা বাদ দিয়ে স্কুল খোলার সাথে সাথে দু হপ্তা ছুটি নিয়ে ঘুরতে যাবার কারণটা কি ? কারণ হিসেবে রোড খুলচে না বলায় তাঁরা যে চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন, কলিযুগ হয়ে অব্দি ধরণীর আর সে পাওয়ার নেই, নইলে কি হোতো বলা যায় না! তার মধ্যে যে ই শোনে সেই "ফিরসে!!" বলে মুখটাকে বিস্ময়বোধক চিহ্ন বানিয়ে তাকিয়ে থাকে। যার ফলে কয়েকদিন বাদে যখন বসকে বলতে গেছি ছুটির জন্য -- ইনার্শিয়ায় বলে ফেল্লাম -- "লে জা রহি হুঁ ঘুম্নে, (পজ দিয়ে) ফির্সে!" ইদিকে মাথা থেকে বেরিয়ে গেচে যে আগের বারের কথা ওনাকে কিছু বলা হয়নি, কারণ তখন উনি ছুটিতে ছিলেন। অগত্যা "ফির্সে"র মানে আবার ওনাকে বুঝিয়ে বলতে হোলো!

    তো এইভাবে একের পর এক হার্ডল পেরিয়ে যাবার দিন এসে পড়লো। তার দিন তিনেক আগেই আমি আর মেয়ে ফিরেচি -- বাড়িটা পুরো কুরুক্ষেত্রের মতো হয়ে আছে। সেই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে খুঁটে খুঁটে জিনিসপত্র গোছগাছ করতে না করতেই যাবার দিন এসে গেলো। কুড়ি তারিখের রাত্তিরের ফ্লাইট ধরে দিল্লী পৌঁছলাম। সিকির কাছে তার আগেই জেনে নিয়েছিলাম টি ওয়ান থেকে টি থ্রী কেমন করে চেঞ্জ করতে হয় । সত্যি বলতে কি, রাত্তির দেড়টার সময়ে ফাঁকা দিল্লীর রাস্তায় বাসে করে যেতে একটু কেমন কেমন লাগছিলো। এয়ারপোর্টের বাস, নিয়মমতো বোর্ডিং পাস না থাকলে তাতে চড়তে পারা উচিত না -- অথচ দিব্বি মোড়ে মোড়ে লোক উঠচে, তাদের চেহারাপত্তর বা দৃষ্টি কোনটাই তেমন ভদ্রগোছের নয়। তবে মিনিট কুড়ির মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। তখন ঘড়িতে প্রায় দুটো। চারটে কুড়ি নাগাদ গো-এয়ারের বোর্ডিং শুরু। টার্মিনাল চেঞ্জ করতে হোলো বলে মালপত্রও সব সঙ্গেই। গো -এয়ারের বোর্ডিং পাস করাতে গেছি। যে ভদ্রলোক কাউন্টারে বসে আছেন তিনি বল্লেন "উইন্ডো সিট অর আইল সিট কে পয়্সা দে দিজিয়ে"! আমরা বেশ থতমত খেয়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করছি -- তখন তিনি খোলসা করে বল্লেন, গো এয়ারে উইন্ডো সিটের জন্য দেড়শো আর আইল সিটের জন্য একশো টাকা করে দিতে হয়। আপনারা তিন জনে একই রো তে যদি বসতে চান, সেক্ষেত্রে টোট্যাল সাড়ে তিনশো টাকা দিতে হবে। শুনে অদ্ভুত লাগলেও অতো রাত্তিরে আর কথা বাড়ালাম না। উইন্ডো সিট তো নিতেই হবে -- কারণ পুরো হিমালয়ান রেঞ্জের অপূর্ব ভিউ পাওয়া যায় বলে শুনেছি। আগেরবারে শ্রীনগর হয়ে লে গেছিলাম তাই এটা দেখা হয়নি। সুতরাং টাকাপত্তর মিটিয়ে সিকিওরিটি চেক পার হয়ে আমরা তিনমূর্ত্তি তিনটে চেয়ারে বসে ঢোলা শুরু করলাম!
    খানিকক্ষণ পরে বোর্ডিংয়ের অ্যানাউন্সমেন্ট হয়ে গেলো -- গুটি গুটি পায়ে বাইরে বেরিয়ে ফ্লাইটে চড়ার জন্য বাস ধরলাম। তখন ঘড়িতে সাড়ে চারটে, বাইরের আকাশে মেঘ থাকায় পুব আকাশের রং ফিকে হওয়াটা ততো স্পষ্ট নয়। টার্মিনাল থ্রী এয়ারপোর্টটা পুরানো মতো, টি-ওয়ানের মতো ঝকঝকে নয়। কন্যা আর তার পিতা প্লেনে চড়েই ঘুমোবার তাল করচে দেখে আমি জানালার সিটটা নিলাম। দিল্লী থেকে লে যাঁরা ভবিষ্যতে আসবেন তাঁরা যদি পারেন এই ভোরের ফ্লাইটটা নেবেন--ঘন্টাদেড়েকের জার্নি, মিনিট কুড়ির মাথায় একটা ঘোষণা হয় যে এখন আমরা গাড়োয়াল হিমালয়ের ওপর দিয়ে যাচ্ছি, নীচের পিক গুলোর মধ্যে নন্দাদেবী, ত্রিশুল ইঃ আসবে। সদ্য ওঠা সূর্য্যের লাল আলোয় জানলা দিয়ে নীচে তাকিয়ে ঢেউয়ের সারির মতো বরফে ঢাকা পাহাড়ের সারি ঝলমল করে উঠবে। দুনিয়ার বাকি সব কিছু মিথ্যে বলে বোধ হবে। কোনদিকে জানলার সিট পেলে ভিউ সবচে' ভালো হয় নেটে তা নিয়েও অনেক ঝগড়া আছে। কেউ বলে বাঁ দিকে, কেউ ডানদিকে। আমরা ডানদিকেরটা পেয়েছিলাম। এর পরে চালকের কেবিন থেকে একের পার এক ঘোষণা আসতে থাকবে "ওই দেখা যায় নাঙ্গা পর্বত, দূরের ভিউ ভালো থাকলে কেটু দেখা যাওয়া যেতে পারে, ওটা নুন-কুন ইঃ" -- আমার অশিক্ষিত এবং অনভ্যস্ত চোখ অবশ্য তাদের কোনটাই আলাদা করে চিনতে পারে না -- শুধু দেখতে থাকে, আদিগন্ত বিস্তৃত সাদা সাদা সুমুদ্দুরের ঢেউ। কোথাও মেঘের ছায়া পড়েছে তাদের ওপর, কোথাও বা ঝলমলে আলো এসে পড়েছে, কোথাও চারপাশের পাহাড়ে ঘেরা একটা হ্রদ, কোথাও নদী এঁকেবে`কে বেরিয়ে এসেছে। ঘুম ভেঙ্গে কন্যাও এবার চোখ বড় বড় করে দেখেছে -- সীট বেল্টের বালাই না রেখে দুজনেই আমরা জানালার গায়ে নাক ঠেসে ধরে দেখতে থাকি। ছবি তোলারও চেষ্টা করেছিলাম -- কিন্তু ততক্ষণে সূর্য্যের আলো ঝলক আসতে শুরু করেছে জানালায় -- ফটো ভালো হচ্ছিলো না।
    খানিক্ক্ষণ এমনি চলার পর নামার বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকে প্লেনের পথের উচ্চতা হঠাৎ করে কমে যায় তখন জানালার পাশেই যেন পাহাড়ের চুড়াগুলো এগিয়ে আসতে থাকে, নেড়া পাহাড়, কোথাও স্থানীয় জলাশয় বা নদী ঘিরে সবুজের সমারোহ। ছবির মতো দৃশ্যপট পেরিয়ে যেতে থাকি -- তারপরে দূরে দেখা যায় এয়ারপোর্ট! ল্যান্ডিং করার আগেই জানিয়ে দেওয়া হোলো এয়ারবেসের ছবি তোলা নিষেধ। কেননা আর্মি রানওয়ে আর আর্মি এয়ারবেসও একই জায়গায়-- পাশে দেখলাম বেশ কয়েকটা ফাইটার প্লেন, মিগ ইঃ দাঁড়িয়ে আছে। নীচে নেমে দেখলাম এখানে জওয়ানরা বেশ হাসি-হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। গতবারে কাশ্মীরে দেখা কঠিন মুখ গুলো মনে পড়ে গেলো।

    পুঁচকে একটা এয়ারপোর্ট, ততোধিক পুঁচকে কনভেয়ার বেল্ট, দেয়ালে সারি সারি লেখা -- অল্টিচুড সিকনেসে কি কি করতে হয়। এক জায়গায় দেখলাম "বেশী জল খাবেন না, তাহলে অসুবিধে বেশী হতে পারে" -- খানিকদূর এগিয়েই "মাঝে মাঝেই জল খান, দিনে দু-আড়াই লিটার -- তাতে প্রবলেম কম হবে"! বোঝা গেলো জলের ব্যাপারে জনতা কনফিউজড! সে যাই হোক -- আমরা ডায়ামক্স নিয়েই এসেছি, সিকির পরামর্শ মেনে। মালপত্র নিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি প্ল্যাকার্ড নিয়ে দোরজে দাঁড়িয়ে আছে। সানগ্লাস পরা মুখে একগাল হাসি, আর প্রত্যেক কথাই শুরু হয় "ক্যা হ্যায় কি ম্যাম” দিয়ে! গাড়িতে উঠে বসা হোলো। অফ হোয়াইট ইনোভা। কিন্তু ততক্ষণে গাড়ির আগে, পিছে, ডাইনে, বাঁয়ে আরো পোচ্চুর গাড়ি খাড়া হয়ে গেছে। সমতলের ড্রাইভার দেখে অভ্যস্ত আমি ভাবছি, কেলো করেচে, এইবার না চেঁচামেচি শুরু হয়! কিন্তু দেখলাম দোর্জে ধৈর্য্য ধরে সামনের ভিড়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে, যেখানে সব ড্রাইভারেরা দাঁড়িয়ে আছে রিসিভ করার জন্য, সেখানে খুঁজতে লাগলো আমাদের চক্রব্যুহে ঘিরে ফেলা গাড়ির ড্রাইভারদের। তারাও দিব্বি সওয়ারী রিসিভ না করেই একগাল হাসতে হাসতে চলে এলো -- গাড়ি সরিয়ে পথ করে দিলো আমাদের বেরোনোর। দোর্জে আমাদের নিয়ে চললো সিটি প্যালেসের দিকে -- আমাদের হোটেল।
    লে' তে আসার আগেই আমার ফ্যামিলি ডিম্যান্ড ছিলো সিটি প্যালেসেই থাকা! আরো অনেক কম দামে হোটেলও পাওয়া যায় -- কিন্তু গতবারের থেকেই "অটলালা" নিয়াজ আহমেদ আর তার কর্মচারীদের সঙ্গে আমাদের দারুণ দোস্তি হয়ে গেছিলো। ওদের বলেও গেছিলাম, লে আসলে ওদের এখানেই উঠবো। তো সেই হোটেলে এসে পৌঁছানোর পরে গলায় সিল্কের খাদা দিয়ে একটা বরণ টাইপ কিছু করা হোলো আর সামনের সবুজ লনে আপেল আর অ্যাপ্রিকট গাছের তলায় রোদ্দুরে পিঠ পেতে বসতে দিলো। আজকে সকালবেলাটা আমাদের পুরো রেস্ট। বিকেলে দোর্জে এসে লে-প্যালেস, শান্তিস্তুপা, মার্কেট ইঃ দেখতে নিয়ে যাবে। বড় কেটলীতে সুগন্ধি চা আর লোক্যাল কুকীজ দিয়ে গেলো -- তারিয়ে তারিয়ে খেতে খেতে চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। গতবারে এসেছিলাম এপ্রিলে, চারপাশ ন্যাড়া উইলো আর অ্যাপ্রিকট গাছে ভরা ছিলো, কোন গাছে পাতা ছিলো না। সেইসঙ্গে হু হু করে ঠান্ডা হাওয়া, নীল আকাশে দুরের পাহাড়চুড়োগুলো বরফে ঢাকা ছিলো। এবার জুনের শেষ -- সামার শুরু হয়ে গেছে। রোদ্দুরে বসলে ঠান্ডা থাকলেও সোয়েটার মোটেও লাগছে না। পাহাড়্চুড়োয় বরফ কম, ওপরের দিকে একটুখানি টপিংয়ের মতো লেগে আছে -- আর সেইসঙ্গে চারপাশ অপূর্ব সবুজে ভরে গেছে। ন্যাড়া পাহাড়ের সঙ্গে এই সবুজের কনট্রাস্ট তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেই সময় কেটে যায়। চারপাশ অদ্ভূত নিস্তব্ধ। এখানে মার্কেটের মধ্যেও হল্লা-চেঁচামেচি প্রায় হয় না -- সেখানে হোটেলের চারপাশে জনবসতিও তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় কোন আওয়াজ নেই। এর মধ্যেই আমাদের মালপত্র ওপরে নিয়ে গেছে। আজকে নীচের তলাগুলো পুরো ভর্তি, তাই তিনতলায় ঘর দিয়েছে। লে তে এইটা একটু অসুবিধার -- প্রত্যেক বার সিঁড়ি চড়তে জান বেরিয়ে যায়।
    এই হোটেলের ডাইনিং রুমটা নীচে। ব্রেকফাস্ট এবং ডিনার সহ বুক করা হয়েছে। আজকের দিন ছাড়া লাঞ্চ বাইরেই খাওয়া হবে। ঘোরাফেরার মাঝে সময় পাওয়া যাবে না হোটেলে ফেরার। প্রথম দিনে একটু অসুবিধে হলেও, ডায়ামক্স খাইনি আমরা। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় সটান হলাম। বাকি দুজন অবিলম্বে নাক ডাকাতে আরম্ভ করলো -- আমার আবার অসময়ে কিছুতেই ঘুম আসে না। খানিকক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে উঠে জানালার ধারে গিয়ে বসলাম। দূরে তাকালে একটা মাটি কুপিয়ে ফেলে রাখা জমি, জমির একধারে একটা লাদাখি স্টাইল চাষির বাড়ি, পাথর আর সিমেন্ট জাতীয় কিছুতে তৈরী - বাড়ির চারপাশের দেওয়ালে একটা সাদা-কালো লোমশ কুকুর ঘুরে ঘুরে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। উঠোনে কালো জোব্বা পড়া একজন মহিলা কাঠকুটো সার দিয়ে রাখছেন। খানিকক্ষণ পরে কুকুরটাকে ডেকে নিয়ে ঘরের ভেতরে চলে গেলেন। ল্যন্ডস্কেপ আবার জনশূন্য। পাহাড়ের চুড়োয় শান্তিস্তুপা, ওইরকমই বলে লোকজন। ভিজিবিলিটি এতো ভালো আর পলিউশন ফ্রী যে স্তুপের ওপরের লাল-নীল পতাকাগুলো অব্দি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।একটা কালো পাখী, বড় ল্যাজওলা, তারে বসে দোল খাচ্ছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন লাঞ্চের টাইম হয়ে গেছে টেরই পাইনি। নীচে ডাইনিং হলে গিয়ে বাফে থেকে ভেজ লাঞ্চ খাওয়া হলো। পনির মসালা, রুটি, ডাল, জিরা রাইস, মিক্সড ভেজ। নন-ভেজ শুধু রাত্তিরে মেলে। এমনিতেও এখানে দেখছি, কেমন একটা টেস্টলেস লাগে। খুব ভালো খাবারেও যেন স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ দেখতে ভালোই লাগছে, খিদেও পাচ্ছে। পরের ক'দিনে মসলাদার খাবারের চাইতে প্লেন স্যুপ, বয়েলড ভেজিটেবল বা মোমো-চাওমিন-থুকপা জাতীয় কম মসলা আলা খাবারই বেশী ভালো লাগছিলো। লাঞ্চে তাই খেতাম। সিটি প্যালেসে অবশ্য রোজ বেশ মসলাদার খাবারই বানাতো। সেইজন্য হোটেল খাবার সহ বুক না করাই ভালো। অপশন বেশী থাকে। খেয়েদেয়ে উঠে আবার একটু লনে ঘোরা হোলো। আপেল, অ্যাপ্রিকটের ফল ধরেছে, তবে এখনো সবুজ। আরো মাসখানেক নেবে পাকতে।

    এবার ওপরে গিয়ে রেডী হওয়ার পালা। রেডী হয়ে ক্যামেরা বাগিয়ে নেমে পড়লাম। দোর্জে এসে গেছে। প্রথমে যাবো শান্তিস্তুপ। এইখানটায় গতবার আমি একবার ঘুরে গেছিলাম। এবার মেয়েকে সাথে নিয়ে যাবো বড় ইচ্ছা ছিলো।পাহাড়ের একদম চুড়োয় বসে বুদ্ধঠাকুর তাকিয়ে আছেন লে শহরের দিকে।নীচের মনাস্ট্রিতে প্রার্থনা শুরু হয়েছে, বড় ঢোল বাজাচ্ছেন দুই লামা। চারপাশের নিস্তব্ধতায় সেই ঢোলের আওয়াজের প্রতিদ্ধনি শোনা যাচ্ছে। চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখে অনেক ছবি-টবি তুলে নেমে আসলাম। একদম ওপরে উঠতে পুরো হাঁপ ধরে যাচ্ছিলো। এরপরে গাড়ি রওনা দিলো লে প্যালেসের দিকে। এখানে সমস্ত মনাস্ট্রি, প্যালেস ইত্যাদী যা আছে সবই উঁচু উঁচু পাহাড়ের চুড়োয়। বেশ অনেকখানি উঠে হাঁপাতে হাঁপাতে পূণ্যি অর্জন -- সস্তায় কিছু নাই! অক্সিজেনের ঘনত্ব বাতাসে কম বলে এই খাড়া খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠাটা অতীব কষ্টকর হয় বটে তবে ওঠার পর স্বর্গীয় প্যানোরামা দেখে সে কষ্টটা মিটে যায়। এক একটা মনাস্ট্রি, প্যালেস ইত্যাদী থেকে নতুন নতুন ভাবে আবিষ্কার করা যায় এই জায়গাটাকে। তাই আমি আমার কন্যা এক একটা মনাস্ট্রি এলেই হাঁপিয়ে ঝাঁপিয়ে ওপরে উঠেছি। কন্যার পিতা অতো কষ্টে রাজী নন, তিনি গাড়ির ভিতরেই থাকতেন মোস্টলি!

    লে প্যালেস প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরানো, সপ্তদশ শতকে তৈরী। আগে রাজ-পরিবার এখানে থাকতো। পাহাড়ের ওপরে আরো ন'তলা উঁচু। ওপর থেকে জান্স্কার, স্টোক কাংড়ি এই সব রেঞ্জগুলো স্পষ্ট দেখা যায়। এই প্রাসাদের ভগ্নস্তুপ থেকে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া একটা ভালো মিউজিয়াম বানিয়েছে। সেখানে মৈত্রেয় বুদ্ধের নানা রূপের মূর্তি, তিব্বতি থাংকা এইসব দিয়ে সাজানো। মিউজিয়ামটা অন্ধকার মতো, ভিতরে ক্যামেরা নিয়ে ঢোকা যাবে কিন্তু ফ্ল্যাশ ব্যবহার করা বারণ। বিদেশী ট্যুরিস্টরা বেশ নানা কায়দায় ছবি তুলছে দেখা গেলো। লে তে প্রচুর বিদেশী বেড়াতে আসেন, সেফটি সম্বন্ধীয় চিন্তা কম বলেই বোধহয়। প্যালেসে ভিতরটায় অসংখ্য সরু সরু গলি, অন্ধকার জায়্গা, বেশ রহস্যময় অবস্থায় থাকতেন আগেকার রাজা রানীরা। প্যালেস দেখে নেমে এসে আমরা গেলাম বাজারে -- টুপী ফেলে এসেছি বাড়িতে তিনজনেরই। শেষ মুহুর্ত্তের তাড়াহুড়োয় খাটের ওপরে ফেলে রেখেই চলে এসেছি। টুপী কিনতে হবে। এছাড়া অক্সিজেনের ছোট সিলিন্ডার কিনতে পাওয়া যায়, ৩৭৫ টাকা দাম, দশ লিটার অক্সিজেন কমপ্রেস করে রাখা আছে। বেশ রুম ফ্রেশনারের কায়্দায় স্প্রে করা যায়। সেটাও একটা কিনলাম। সারিবাঁধা রাস্তার দুধারে দোকান। অ্যান্টিক কালেকশনের স্বর্গ। অপূর্ব সব মূর্তি, মুখোশ, পাথরের গয়্না -- ম্যালাকাইট, স্যান্ড স্টোন আর আরো সব অসংখ্য নাম না জানা পাথরের গয়না পত্রের সমাহার। দরদাম করে যারা কিনতে পারে তারা এখানে দারুণ সব জেম স্টোন জুয়েলারী কিনতে পারবে। খানিকদূর এগিয়ে কম্বলের আর কার্পেটের মার্কেট। সাতশো-আটশো টাকায় কি ভালো কম্বল বিক্ক্রি হচ্ছে। বম্বেতে ঠান্ডা পড়ে না, তাছাড়া ফেরার পথে অনেক জান্রির প্ল্যান, তাই আর বেশী কেনাকাটায় গেলাম না। খানিকদূর এগিয়ে ড্রাই ফ্রুটসের মার্কেট। খোবানি (অ্যাপ্রিকট), আমন্ড ইত্যাদী আরো নানা ধরণের ড্রাই ফ্রুটস বস্তার মুখ খুলে বিক্রি হচ্ছে, কালো কালো মোটা মাছিতে বস্তার মুখগুলো ঢেকে রেখেছে। এছড়াও বেশ টাটকা সবজির বাজার। পেপসির বোতলে করে ইয়াকের দুধ বিক্রি হচ্ছে, মাটি লাগা আলু, কড়াইশুঁটি, অন্যরকম দেখতে পালংশাক। তিব্বতী লুঙ্গি পড়া মেয়েরা সেসব দরদাম করে কিনছেন। পিছনে গাবলু-গুবলু গালের দোকানীর ছোট্ট বাচ্চারা বসে আছে। আমার কোন জায়গায় ঘুরতে গেলে সেখানকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘুরতে খুব ভালো লাগে। ছোট ছোট জিনিস দেখে, ছুঁয়ে, ঘ্রাণ নিয়ে অনুভব করতে বড়ো আনন্দ। সন্ধে হতে অনেক দেরী হয় এখানে, পরিষ্কার আকাশ -- সন্ধে সাতটাতেও সূর্যের আলো। প্রায় আটটা অব্দি ঘুরে দোর্জের গাড়ীতে করে ফেরত এলাম।
    হোটেলে ফেরত এসে ভাবলাম আর তিনতলায় উঠবো না, একেবারে খেয়েদেয়েই যাই। সিঁড়ি চড়তে গেলেই নিজেদের সারমেয় গোষ্ঠীর লতাপাতায় সম্পর্কিত মনে হচ্ছে। ডাইনিং রুমে সারি সারি সাজানো পাত্র, তাতে গরম রুটি, ডাল, মিক্সড ভেজ, পনির, চিকেন মসালা, শাহী টুকরা ইত্যাদী। কিন্তু কেন জানিনা খেতে মোটে ইচ্ছে হচ্ছে না। অল্প অল্প একটু করে নিয়ে খেলাম । মেয়ে স্যুপ খেলো আর ডাল রুটী। চারপাশে যাঁরা খেতে বসেছেন তাদের দিকে তাকালে মোটামুটি দুটো গ্রুপ -- একদল ঠিকঠাক, যাঁরা এখনো নুব্রা ইত্যাদী যাননি, বা এ এম এসএর অ্যাটাক হয়নি। তাঁরা মোটামুটি হাসিমুখে খাওয়াদাওয়া সারছেন। আরেকদল, মুখ গোমড়া, পেট বা মাথা পাকড়ে বসে আছেন, এ এম এস-আক্রান্ত! তাদের চারিদিক থেকে যতলোক আছে, সবাই নিজেদের জ্ঞানের ঝুলি উজার করে দিচ্ছে -- জল খান, তেল মালিশ্করুন, উর্দ্ধপদ-হেঁটমুন্ড হয়ে থাকুন -- এইসব! আমাদের টেবিলে যিনি খেতে বসেছিলেন, খারদুংলার ওপরের ক্যাফেটেরিয়ার চা খেয়ে তাঁর ফ্যামিলির সবাই ডায়েরিয়ায় শয্যাশায়ী -- ভদ্রলোক একাই খাড়া আছেন। এইসব শুনছি, আর ফিঙ্গার ক্রস করে বসে আছি, জানি রুমে ফিরে আবার সুকান্তকে মোটিভেট করতে জান কয়লা হয়ে যাবে!
    রুমে ফিরে এসে একটু ক্ষুদিরাম, বীর সাভারকর, নেতাজী ইত্যাদী নিয়ে একটি নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম, পাশের বেড থেকে নাক ডাকার আওয়াজে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

    ভোরটা এখানে খুব সুন্দর হবে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। আমার কোথাও বেড়াতে গেলে বেশ ভোরেই ঘুম ভাঙ্গে। শুয়ে শুয়েই দূরের মাঠ পেরিয়ে সাদা পাহাড়চুড়ো দেখা যাচ্ছে। তখনো আলো ফোটেনি, ডার্ক ভায়োলেট রং আকাশের গায়ে। ধীরে ধীরে সেই রং ফিকে হয়ে ম্যাজেন্টা থেকে লালের দিকে গেলো। চুড়োর বরফেরা সব ঝলমল করতে থাকলো। আজকের দিন শুরু!

    আজকে প্রথমেই এস এন এম হসপিটাল থেকে শুরু করবো। কাল নুব্রা যাওয়ার প্ল্যান। সবার অক্সিজেন লেভেল চেক করতে হবে। তারপরে যাবো আলচি মনাস্ট্রি।এই হোটেলে ব্রেকফাস্টেও বাফে। পোহা, মসালা টোস্ট (পাঁউরুটির ওপরে সুজির উপ্মা দিয়ে সেঁকা, বাজে খেতে), পুরি-সবজি, আরো কি কি সব আছে, আর ঘন দুধের পোচ্চুর মিষ্টি দেওয়া চা। ব্রেকফাস্ট সারতে সারতে দেখলাম দোরজে গাড়ি নিয়ে হাজির। আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স, মেয়ের স্কুল আইডি আর সুকান্তর পাসপোর্টের জেরক্স কপি দিয়ে দিলাম ওর হাতে, আইডি প্রুফ হিসেবে লাগবে কাল খারদুংলা যাবার জন্য।
    প্রথমেই সোনম নরবু হাসপাতাল। পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, সার্ভিসে ভারতে আমার দেখা সেরা হাসপাতাল এটি। এবারেও তার অন্যথা হোলো না। এতো স্মুথ ফাংশানিং সমতলের কোন হাসপাতালে কক্ষনো হবে না। ক্যাজুয়ালটিতে গিয়ে স্লিপ লিখিয়ে এনে ডাক্তারের কাছে এলাম। সেখানে দেখলাম অত্যন্ত গরীব লোকেদের ভিড়। মূলতঃ সমতলের প্রচুর শ্রমিক এখানে রাস্তা তৈরী বা সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে আসেন। তাঁরা এই আবহাওয়ায় অভ্যস্ত না হবার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ট্যুরিস্টও অনেকেই আসেন, এ এম এস অ্যাটাকের কারণে --
    বেশীক্ষণ দাঁড়াতে হলো না, খুব শিগ্গিরি ডাক্তারবাবু দেখে টেখে নিয়ে বল্লেন, আমাদের অক্সিজেন লেভেল ৯১-৯২ আছে, মেয়ের ৮৫ মতন। চেষ্টা করতে হবে মেয়ের লেভেলটা যেন আর না কমে। ডায়ামক্স খেতে শুরু করাই ভালো। তবে সালফার ড্রাগে অ্যালার্জি থাকলে খাওয়া যাবে না। এছাড়া আর কোন সাইড এফেক্ট নেই। এই সব শুনে টুনে আমি আর মেয়ে ডায়ামক্স খাওয়া শুরু করে দিলাম, হসপিটালেই জলের বোতল খুলে। সুকান্ত খেলো না, ওর কোন অসুবিধে হচ্ছে না। যাঁরা ভবিষ্যতে লে বেড়াতে আসবেন তাঁদের প্রতি আমার অ্যাডভাইস -- সালফার ড্রাগে অ্যালার্জ্জী আছে কিনা আগে থেকে একটু টেস্ট করিয়ে আসা ভালো, তাহলে ডায়ামক্স খাওয়ার আগে বেশী ভাবতে হয় না। ডায়ামক্স খাওয়ার পরে হাঁপ ধরে যাওয়ার কষ্টটা অনেক কম হয়। এনার্জিও বেশী পাওয়া যায়।
    মিনিট পনেরোর মধ্যে কাজ শেষ -- গাড়িতে চড়ে বসলাম। আলচি যাবো এইবারে। আমার লামায়ুরু যাবারও খুব ইচ্ছে ছিলো কিন্তু তাহলে আজকের দিনটা ওখানে থাকতে হবে। কাল খারদুংলা যাওয়া যাবে না।
    আলচি যাওয়ার পথে পড়লো ম্যাগনেটিক হিল। এটা নিয়ে আগে সিকি আর আমি লিখেছিলাম -- নিউট্রাল গিয়ারে রাখা গাড়ি ঢালু পথ বেয়ে ওপরে উঠে যায়, খুব ধীরে অবশ্য। দোর্জে বল্লো, এখানে অনেক সময় ড্রাইভারেরা ট্যুরিস্ট চমকানোর জন্য আসলে যে গাড়ির খুবই ধীরে ওঠার কথা, তাকে স্পীড বাড়িয়ে ম্যাগনেটিক হিল এফেক্ট বলে দেখায়। এইসব শুনে আমি ঝুঁকে পড়ে দেখলাম, অ্যাক্সিলারেটর থেকে পা সরানো আছে কিনা! চারপাশের রুক্ষ পাহাড়ে অজস্র মিনারালের ছড়াছড়ি, তাই সবুজ, বেগুনী, লাল -- নানা রঙের রামধনু যেন পাহাড়ের গায়ে গায়ে। শুনলাম লাদাখে খুব রিসেন্টলি প্রচুর পরিমাণে ইউরেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভগবান না করুন, কিন্তু খনন হলে কি যে অবস্থা দাঁড়াবে এই জায়গার, ভাবতেও শিউরে উঠি!

    আলচি গ্রাম মডেল গ্রাম হিসেবে রাষ্ট্রপতির পদক পেয়েছে। লে থেকে প্রায় ষাট- পঁয়ষট্টি কিলোমিটার। পৌঁছতে ঘন্টা দেড়েক লাগে। মাঝখানে ছবির মতো নিম্মু গ্রাম। পৃথিবীতে স্বর্গ থাকলে সে জায়গাটা এর ক্লোজেস্ট অ্যাপ্রক্সিমেশন! প্রচুর সবুজ গাছ্পালা, ন্যাড়া পাহাড়, ধানখেত, পাশে বয়ে চলা ইন্দাস! আলচি পৌঁছতে গেলে লে-শ্রীনগর রোডের একটা ডাইভার্সন ধরতে হয়। ওখানে রাস্তাটা প্রচন্ড খারাপ আর ধুলোয় ভরা। এতক্ষণ ইন্দাস আসছিলো বাঁ দিকে এবার একটা লম্বা ব্রিজ পেরিয়ে ওদিকে চলে গেলাম। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আলচি!
    তিব্বতের রাজা বজ্রযানী বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য সারা লে-লাদাখ জোনে সতেরো না আঠেরো জনকে নিযুক্ত করেছিলেন। ঠান্ডায় আর প্রতিকূল পরিবেশে সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে তাঁদের মধ্যে মাত্র দুজন বেঁচে ছিলেন। এই দুজনের একজন লামা রিংচেন জাংবো। দশম শতকে তিনি এই আলচি মনাস্ট্রি স্থাপন করেছিলেন। লে'র ওল্ডেস্ট মনাস্ট্রি। মনস্ট্রিতে ঢোকার সরু গলির চারপাশে অনেক অ্যান্টিক দোকান, সায়েব-মেমেরা খুব দর-কষাকষি করে কেনাকাটি করছে। একটু এগিয়েই সারি সারি জপযন্ত্র। তারপরেই প্রধান স্তুপ। মাটি আর পাথরে তৈরী তিন তলা বাড়ি।
    জুতো খুলে রেখে নীচু হয়ে প্রবেশ -- ভেতরের অন্ধকারে চোখ সয়ে এলে দেখা যাবে সেন্টারে বোধিসত্ত্বের বিশাল মূর্তি, প্রায় তেরো-চোদ্দ ফিট লম্বা, ওপরে কোণায় কোণায় বিরোচনেরা উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। একপাশে মঞ্জুশ্রীর আর অন্যপাশে অবলোকিতেশ্বরেরও ওই হাইটেরই মূর্ত্তি। অনেক পুরানো সেটা বোঝা যায়, রং গুলো চটে এসেছে। ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ করলেও ফ্ল্যাশ দেওয়া নিষিদ্ধ।

    সকালে বেরনোর সময় বেশ ঠান্ডা লাগছিলো, এতক্ষণে একেবারে ঝক্ঝকে রোদ্দুর। আকাশের দিকে তাকালে চোখ ঝলসে যাচ্ছে। প্রচন্ড গরমও। মূল মনাস্ট্রির পাশে আরো দুটো ছোট ছোট টেম্পল -- সেসব দেখে সবাই পুরো মনাস্ট্রি প্রদক্ষিণ করছে। এখানে বুদ্ধদেবের মূর্তি বা জপযন্ত্র ঘোরানো ইত্যাদী সবই একটি নির্দ্দিষ্ট দিকে (সম্ভবতঃ অ্যান্টিক্লকওয়াইজ) প্রদক্ষিণ করার ডিরেকশন দেওয়া আছে। এতো গরমে গাড়িতে চলেই যাবো ভাবছিলাম। কি মনে হোলো, ভাবলাম দেখেই আসি রাস্তাটা -- গ্রামের ভেতরটাও একটু দেখা হয়ে যাবে। বেশ অনেক খানি উঁচু নিচু রাস্তা জুড়ে হাঁটতে হাঁটতে দম বেরনোর জোগাড়। খানিকক্ষণ পরে একটা সরু গলি দিয়ে এসে একটা দরজা। দরজা দিয়ে বেরিয়েই বাক্স্তব্ধ! সবুজ জলে ভরা ইন্দাস কুল কুল করে বয়ে যাচ্ছে পাহাড়, ক্ষেত এসবের মধ্যে দিয়ে। পুরো তুলিতে আঁকা ছবি। ওই রাস্তায় তখনো কেউ আসেনি। তাই বেশ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছবি তোলা গেলো। ইন্দাসে গোটা রাস্তায় বেশ মেটে রঙের জল এখন। গতবার এপ্রিলে এসে ঠিক এইরকম সবুজ জল দেখেছিলাম। তাই মনটা খুঁতখুঁত করছিলো। এখানে নদীর জলটা দেখে বেশ ভালো লাগলো।
    এরপরে ফেরার পালা। সকালে আলচি আসার পথে আরো দুটো জায়গা দেখে এসেছিলাম। একটা জান্স্কার আর ইন্দাসের সঙ্গম পয়েন্ট আর আরেকটা হল অফ ফেম নামে একটা আর্মি মিউজিয়াম। আমি যুদ্ধু মোটে পছন্দ করিনা। তাই কোন অস্ত্রে কিভাবে পাকিস্তানি সেনা বা চীনের সেনা ঘায়েল হয়েছিলো সেটা দেখে বিশেষ ইন্টারেস্টেড হইনি। সঙ্গম পয়েন্টটা আসার সময় ওপর থেকেই দেখেছিলাম, ফেরার পথে একটা ধুলোর পাউডার মাখা রাস্তা ধরে নীচে নামা হোলো। লোকে খুব র‌্যাফটিং, সুইমিং ইত্যাদী করছে। আমরা খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে গাড়িতে ফেরত এলাম। ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা প্রায় দুটো ছুঁয়েছে -- পেটের মধ্যে ছুঁচোর হুড়োহুড়ি। কিন্তু যাওয়ার পথে গুরুদোয়ারা পাত্থর সাহিব দেখার জন্য একটু দাঁড়ানো হোলো। এখানে গুরু নানককে পাথর ছুঁড়ে মারতে গিয়ে এক দৈত্য ফসিল হয়ে গেছিলো -- সেই বিশাল পাথর দেখা হোলো। মিছরি আর কিসমিস প্রসাদ পেলাম। তখন গুরুদোয়ারায় ডাল-রুটি লাঞ্চ দিচ্ছে। সুকান্ত খেলো, আমি আর মেয়ে হোটেলে ফিরে গিয়েই খাবো ভাবলাম। বাইরে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়ে এক বিপত্তি -- টায়ার পাংচার!
    দোর্জে গেলো টায়ার সারাতে -- আমরা গুরদোয়ারার সামনের চেয়ারে বসে রইলাম। খানিক্ক্ষণ পরে দেখি একজন হোমড়াচোমড়া সেনা অফিসার ওনার ফ্যামিলি নিয়ে আসছেন -- পিছনে বশম্বদ ভৃত্যের মতো সাধারণ সৈনিকেরা এটা ওটা সাথে করে নিয়ে আসছে। অফিসার তেনার ফ্যামিলি নিয়ে গুরদোয়ারার ভেতরে চলে গেলেন, বাকী সৈনিকেরা আমাদের পাশের চেয়ারে বসে হাঁপাতে হাঁপাতে আমাদের সাথে গপ্পো করতে লাগলো। ওনাদের বেশীর ভাগেরই প্রথম পোস্টিং এখানে হয় আর ওনাদের ভাষায় -- এক সাল মে পাঁচ সাল উমর কম হো যাতা হ্যায়! খুব দুঃখ করে বললেন রুখা-সুখা জায়গা, অক্টোবরের শেষ থেকেই প্রচন্ড ঠান্ডায় বাইরে বেরনো বন্ধ হয়ে যায়। জনশূন্য প্রান্তরে করার আর কিছু থাকে না। ওনারা তাই পরের পোস্টিংয়ের দিন গোনেন। তবে এই সামারে বড় সায়েবের বৌ বাচ্চারা আসে -- ওদের ঘোরাতে নিয়ে যেতে হয়, সেই সঙ্গে নিজেদেরও একটু ঘোরা হয়। এইসব গল্প হতে হতে দোর্জে এসে ডাক দিলো। গাড়ি রেডি -- লাঞ্চ করতে যেতে হবে। গাড়ি খারাপ হয়ে লাঞ্চের টাইমও অনেক পিছিয়ে গেলো। আমাদেরকে "টিবেটান কিচেন" নামে একটা রেঁস্তোরায় ছেড়ে দোর্জে লাঞ্চ করতে বাড়ি গেলো।টিবেটান কিচেনে পৌঁছে দেখি ঘড়ির কাঁটা প্রায় তিনটে ছুঁয়ে ফেলেছে। তখনও রেস্তোঁরা বেশ ভর্তি, ট্যুরিস্ট প্লেস বলে লোকে লেট-লাঞ্চই করে -- অর্ডার দিয়ে টেবিলে বসলাম। চিকেন মোমো, থুকপা আর স্টার ফ্রায়েড ভেজিটেবল এগ চাওমিন।
  • kumu | 133.63.112.188 | ২২ অক্টোবর ২০১৩ ২৩:৪৩559000
  • অসাধারণ, অনবদ্য লেখা।দের আয়ে পর দুরস্ত আয়ে---
  • সিকি | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ০০:২১559001
  • আরে আরে, রোক্‌কে রোক্‌কে, একসাথে এতখানি দিতে কে বলেছে?

    ধীরে ধীরে দাও। দের আয়ে, দুরস্ত আয়ে। :)

    তবে ইয়ে, "টার্মিনাল থ্রী এয়ারপোর্টটা পুরানো মতো, টি-ওয়ানের মতো ঝকঝকে নয়" ... এটা বোধ হয় উল্টোটা লিখতে চেয়েছিলে।

    আর উইন্ডো সীট আইল সীটের জন্য গোএয়ারের পয়সা চাইবার গপ্পো পড়ে আমি হাঁ। এতবার পেলেনে চাপলাম, এমনটি কখনও শুনি নি।
  • সিকি | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ০১:০৯559002
  • দে, শুরু যখন করেছো, অবশ্যই শেষ করবে সময় নিয়ে টিয়ে, তবে আগের বারে কাবলিদার করা আবদার আমারও। মুনিয়ার ভার্সন চাই। বাংলায় হোক বা ইংরেজিতে।

    আর ছবি দিতে থাকো।
  • de | 130.62.165.159 | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ০৮:১৪559003
  • ছবি তো লিং দিলাম ওপরে -- এইটুকুই লেখা হয়েছে -- তাই ভাবলাম দিয়েই দিই একসাথে। অল্প করে দিলে ভালো হয়? তাহলে তাই দেবো এরপর থেকে।

    তবে, মুনিয়া কবে লিখতে পারবে বলা মুশ্কিল। নানা ক্লাসের ধাক্কায় কাবু! তবে ওর তোলা ছবিগুলো আলাদা করে দেবো। সেগুলোয় নানা কায়দা করে তুলেচে -- এখানকার ফটো বিশেষজ্ঞরা ভালো বলতে পারবে --
  • de | 130.62.165.159 | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ০৮:১৬559004
  • কুমুদি, সবে দেড়দিন কভার করেচি -- এর পরে আর ধৈর্য্য থাকলে হয়! ঃ)
  • | 127.194.88.212 | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ১২:২৪559005
  • দেবু, জমে উঠেছে। চালিয়ে যাও। ঃ)
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ১৬:১৭559006
  • দে দি দারুন!!!!!!!! পোচ্চুর হিংসে দিলুম !!!!!!!!!!!
  • সিকি | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ২২:১০559007
  • পরের পর্ব কই??
  • sosen | 125.241.66.94 | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ২২:১৩559008
  • এর মধ্যে মধ্যে ছবি দাও। ছবিগুলো ভালো হয়েছে তো-কি হিংসে!
  • nina | 22.149.39.84 | ২৩ অক্টোবর ২০১৩ ২২:৩৮559010
  • কই রে দেবু----তাপ্পর
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন