এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অনেক সাহসে সর্ষে

    de
    অন্যান্য | ২০ জুন ২০১২ | ১০৭২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • de | 130.62.183.64 | ০৪ নভেম্বর ২০১৩ ২২:২৪559045
  • ডিস্কিটে আমরা থাকবো মিঃ নোরবের গেস্ট হাউসে। এনার ঠিকানা আর কনট্যাক্ট পেয়েছিলাম সিকির কাছ থেকে। আদ্যোপান্ত অমায়িক ভদ্রলোক। ছেলে-মেয়ে দিল্লীতে থেকে পড়াশোনা করে। দুজনেই পড়াশোনায় খুব ভালো। ওনার গিন্নী মাঝে মাঝে এখানে আর দিল্লী করে কাটান। আর আছে দাজু। দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা। সে ই সব চালায়। গেস্ট হাউসের বুকিং, মেন্টেন্যান্স আর রান্নাবান্না। আরো দুই কিশোরের সাহায্যে সে ই এই পুরো ব্যাপারটা দেখে। নোরবে তুর্তুকে একটি স্কুলের হেড মাস্টার। শুধু শনি-রবি এখানে এসে থাকেন। বাকি সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতে থাকেন তুর্তুকে। এসে পৌঁছবার পরে একটা নীচু মতো পাথুরে সুরঙ্গ পেরিয়ে এসে ওনার সিয়াচেন গেস্ট হাউসে এসে পৌঁছতে হয়। ওই সুরঙ্গটা অনেক দিনের পুরানো, তাই স্ট্রাকচারটা রেখে দিয়েছেন। গেস্ট-হাউসটা খুব সস্তা। খাবার দাবার সমেত বারোশো টাকা। টিভি ছাড়া রুম নিলে আরো সস্তা হয়। আমরা দোতলার রুম নিলাম। দাজু আমাদের পুরো বাড়ির লোকের মতো খাতির করছে আসার পর থেকে। কতবার করে যে চা, জলের বোতল ইত্যাদী নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসছে।

    সারাদিনের ক্লান্তির পর প্রায় পাঁচটা নাগাদ আমরা নোরবের গেস্ট হাউসে পৌঁছেছিলাম। দাজুর আনা লেমন টি আর বিস্কুট খেয়ে ভাবলাম একটু গড়িয়ে নি বিছানায়। শুতে না শুতে চোখ জুড়িয়ে এলো। ঘুম ভেঙ্গে দেখি প্রায় সাড়ে ছটা বাজে। এখানে সন্ধে হয় দেরীতে। তখনো বেশ আলো চারিদিকে। নীচে নেমে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম নোরবের বাগান। সামনে গোলাপের বাগান, আরো নানা ফুল ফুটে আছে। পিছনে কিচেন গার্ডেনে পেঁয়াজকলি, পালংশাক। সেই বাগান পেরিয়ে বটল ব্রাশের ঝাড় হয়ে আছে। কিছু ছেলে একরকমের সাদা কাঠ দিয়ে চেয়ার-টেয়ার বানাচ্ছে। এর মধ্যে নোরবে এসে গেলেন। অনেক গপ্পো হোলো। গেস্ট হাউসে আমরা বাদ দিয়ে বাকি ঘরগুলোতে ইউ কে আর অস্ট্রেলিয়ার জনতা। নোরবের ছেলে আর মেয়ে দুজনের ট্রফি, ফ্যামিলি ফটোগ্রাফ সব ঘরে নিয়ে গিয়ে দেখালেন। স্ত্রী এখানে নেই বলে খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন। নাহলে আলাপ হয়ে যেতো। সারা দুপুর বেলাটা এখানে পাওয়ার ছিলো না। আমরা দিব্বি দরজা খুলে রেখেই ঘুমিয়েছিলাম। সন্ধে হয়ে আসছে। বেশ মশা আর পোকা মাকড় আছে দেখলাম। এখনো পাওয়ার না এলে কি হবে সেটা ভাবতে ভাবতেই পাওয়ার চলে এলো। আমরা ডিস্কিটের মেন মার্কেটের দিকে একটু ঘুরতে যাবো বলে সুড়ঙ্গ পেরিয়ে বেরিয়েছি, এমন সময় হই হই করে ধুলো উড়িয়ে জনা দশেকের বাইকবাহিনী এসে উপস্থিত। 'বিস্বাস্দা, ঢুকে রেটটা দেখুন আগে' শুনে বুইলাম বাঙালী লাদাখ জয়ে বেরিয়েছে! আমরা বাজারে ঘুরতে বেরোলাম হেঁটে। খুবই ছোট লোক্যাল বাজার, তেমন দেখার কিছু নেই। আর বড্ড ধুলো। তাই তাড়াতাড়ি ফেরত এলাম।


    আমাদের ঘরের সামনে খোলা ছাদ। সেখানে বসে দেখলে আকাশ ছুঁয়ে ফেলা পাহাড়ের শ্রেণী আর এক উঁচু পাহাড়ের মাথায় বসে থাকা বুদ্ধঠাকুর। চেয়ার টেনে সেই ছাদের ওপরেই বসলাম। খানিক পরে বুদ্ধঠাকুরের আড়াল থেকে চাঁদ উঠলো। পরিষ্কার আকাশ জুড়ে অগুণতি তারার মেলা। কতক্ষণ এভাবে বসে ছিলাম খেয়াল নেই। দাজু এসে ডাকলো -- খানা লাগাঁউ? কালকে সকালে বেরনো আছে। সম্মতি জানিয়ে নীচে এলাম।

    নীচে এসে খেতে বসলাম। গদীর ওপর বসে সামনে ছোট ছোট জলচৌকি টেনে খাওয়ার ব্যবস্থা। ভেজ খাবার - ডাল, রুটী, সবজি, রাইস। এছাড়া দাজু যা যা বানিয়েছে, পনির মসালা, ভিন্ডি ফ্রাই এইসবকিছুই ছোট ছোট বাটি করে খালি এগিয়ে দেয় আর বলে "থোড়া টেস্ট করকে দেখিয়ে"। একসময় ওকে থামাতে হোলো। আর খেতে পারবো না, তুমি বরং এখানে বোসো। একটু গল্প করি। আমাদের সঙ্গে আরো দুই আর্মি অফিসার খাচ্ছিলেন। সুমুরের আর্মি ক্যাম্পে যাওয়ার আগে এটাই একমাত্র ঠিকঠাক খাবার জায়গা। দাজু খুব ভালো রান্না করে। এতদিন ধরে কিছুই খেতে ভালো লাগছিলো না। এখানে এসে স্বাদকোরক যেন আবার রিচার্জড হয়ে গেলো। আর্মির দুজনের সঙ্গেও আলাপ হোলো। কিছুদিন আগেই এখানে চীনা সেনা ঢুকে এসেছিলো কাছের গ্রামে, তাই নিয়ে টেনশনে ছিলেন। সেসব গল্পও হলো। দাজু ভালো রান্না শিখেছে, চাইনিজ, পঞ্জাবী সব বানাতে পারে। নিজের একটা হোটেল খোলার সখ ওর। গত বছর দশেক হোলো দার্জিলিংয়ের বাইরে। ওখানে যেতে আর ভালো লাগে না। কাজ-কাম নেই, খালি পলিটিক্স! লে বা এই অঞ্চলে যে ক'জন দার্জিলিং বাসিন্দা গোর্খা বা নেপালীর সঙ্গে আলাপ হোলো গোর্খাল্যান্ড নিয়ে তাঁদের কারোরই বিশেষ কোন মাথাব্যথা দেখলাম না। দাজু এখন নোরবের গেস্ট হাউসটা পুরোই চালায়। ওর আশা নোরবের ছেলে-মেয়ে বড়ো হয়ে গেলে যদি দিল্লীর দিকে সেটল করে যান, তখন হয়তো এই গেস্ট হাউস ও নিজেই কিনে নেবে। ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট আশার গপ্পো!


    যেখানেই বেড়াতে যাই এই সাধারণ মানুষগুলোর কাছ থেকে পাওয়া আন্তরিকতা ভুলতে পারিনা। দেশের প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় ছড়িয়ে আছে এরা। এদের জন্যই এতো অনিয়ম-বেনিয়ম থাকা সত্ত্বেও এতো সুন্দর আমাদের এই দেশটা!

    পরদিন সকালে অনেক ভোরে ঘুম ভাঙলো। মনাস্ট্রি থেকে গংয়ের আওয়াজ আসছে। কতো পাখি ডাকছে। আজ তুরতুকে যেতে হবে। এখান থেকে প্রায় নব্বই কিলোমিটার। এছাড়া ডিস্কিট মনাস্ট্রি দেখবো। ব্যাকট্রিয়ান ডাবল-হাম্প ক্যামেল ট্রিপ নেবো। তাই সকাল সকালই বেরোতে হবে। নীচে নেমে দেখি দাজু ব্রেকফাস্ট সাজাচ্ছে। কাল অনেক রাত্রি অব্দি দেখেছি কিচেনে আলো জ্বলছে। কখন ঘুমোয় কে জানে! কাল সকালে ব্রেকফাস্টে ডিমসেদ্ধ চাই বলেছিলাম। সেই নিয়ে দাজু বিব্রত একটু। আমারই খেয়াল ছিলো না -- এতো উচ্চতায় ডিম-সেদ্ধ করা মুশকিল হবে! তাড়াতাড়ি বল্লাম ওমলেটেও চলবে। গরম গরম হাতরুটি, জিরে ফোড়নের আলু চচ্চড়ি আর ওমলেট। একদম ঘরের খাবারের মতো লাগলো। খেয়েদেয়ে বেরোতে যাবার সময় অনেক বার করে আবার আসার আমন্ত্রণ জানালো দাজু।
  • সিকি | ০৪ নভেম্বর ২০১৩ ২২:৩৩559046
  • বড় মনে পড়ে ওঁদের কথা।


    নোরবে এবং শ্রীমতি নোরবে।


    ডিস্কিটের এই বুদ্ধমূর্তি তৈরি হয়েছিল নোরবেরই তত্ত্বাবধানে।


    ডিস্কিটের বাজার। সেদিন বন্ধ ছিল।
  • সিকি | ০৪ নভেম্বর ২০১৩ ২২:৩৫559047
  • নোরবের রান্নাঘর কাম ডাইনিং হল।

  • de | 130.62.183.64 | ০৪ নভেম্বর ২০১৩ ২২:৩৯559048
  • এখন প্রথমে আমরা যাবো ডিস্কিট গোম্পায়। মৈত্রেয় বুদ্ধের বিশাল মূর্তি অনেক দূর থেকে দেখা যায়। শিয়ক নদীর দিকে তাকিয়ে পাকিস্তানের দিকে মুখ করে হাসিমাখা প্রশান্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। এর থেকেও প্রায় শ তিনেক সিঁড়ি ওপরে উঠে গোম্পা। প্রচুর বিদেশীর ভিড়। ত্রয়োদশ শতকে তিব্বতী বুদ্ধ ধর্মের এক বিশেষ ধারার (এল্লো হত) প্রচারক এই গোম্পা স্থাপন করেন। তিনশো সিঁড়ি উঠতে উঠতে একেবারে দম বেরিয়ে যায়।




    ওঠার সময় একজন বড়লামা কয়েকজন সায়েব লামাকে সঙ্গে করে উঠছিলেন। উনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন -- " কেমন লাগছে লাদাখ? আগে আমাদের এখানে এতো ট্যুরিস্ট আসতো না। থ্রী ইডিয়ট মুভিটার পর থেকে ট্যুরিস্ট আসা খুব বেড়ে গিয়েছে। " আমরাও লাদাখের খুব প্রশংসা করতে চাইছিলাম। কিন্তু হাঁপানোর চোটে প্রশংসা ততো জবরদস্ত হচ্ছিলো না! গোম্পার ভিতরটা থাংকা দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো। তবে ফটো তোলা বারণ। সুকান্ত হাঁপিয়ে টাপিয়ে একশা হয়ে গিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। আমি আর মেয়ে গোম্পার থেকে একটু দূরে একটা কালীমাতা মন্দির দেখতে গেলাম। মন্দিরের ভিতরটা অন্ধকার। এককোণে একটা লম্ফ জ্বলছে। ভিতরে ভয়ালদর্শনা কালীমাতার মূর্তি। সাদা রঙের। পাশে আরো সমস্ত ভূত-প্রেত-দেব-দেবী সব দাঁত-নোখ বার করে দাঁড়িয়ে আছেন। লাল পোশাকের একজন লামা এসে আমাদের গপ্পো শোনালেন। মন্দিরের জাগ্রত দেবীর গপ্পো। এক রাজাকে তার সভাসদেরা অনেক করে বারণ করা সত্বেও তিনি এই মন্দির আর গোম্পা অক্রমণ করেছিলেন। মন্দিরে ঢোকার সময় সৈন্যেরা কেউ রাজী না হওয়ায় রাজা তাদের সাহস বাড়ানোর জন্য একা সেই মন্দিরে ঢোকেন। অনেকক্ষণ পরেও রাজা বেরিয়ে না আসায় সৈন্যেরা অস্ত্র ছাড়া ভেতরে ঢুকে দেখে রাজার দেহ কালীমাতার কোলে। এই অব্দি বলে সেই লামা আমাদের একদম কালীমায়ের কাছে নিয়ে যান। লম্ফের আবছা আলোয় দেবীমূর্তির কোলে একটা কালো হয়ে যাওয়া নরকরোটী আর দুটো লম্বা লম্বা কংকালের হাত দেখা গেলো। ওই পরিবেশে এর থেকে বেশী দেখার আমার সখ - সাধ কোনটাই আর ছিলো না। এখন সাইজটা ভাবলে মনে হচ্ছে করোটিটা বাচ্চারই হবে বোধহয়! আমাদের উনি নকুলদানা প্রসাদ দিলেন। গোম্পার ওপর থেকে পুরো নুব্রা ভ্যালির দারুণ দৃশ্য দেখা যায়।


    এখানকার লোক্যাল কাক গুলো একদম অন্যরকম দেখতে। পুরো কালো, কমলা রঙের ঠোঁট আর পা।


    নুব্রা ভ্যালিকে অর্চার্ড অব লাদাখ বলে। চারিপাশের ধূসর প্রকৃতির মধ্যে একটুকরো সবুজ। গোম্পা থেকে নেমে এইবার যাওয়া হবে হুন্ডারের মরুভূমিতে ব্যাকট্রিয়ান ক্যামেল দেখতে।


    ব্যাকট্রিয়ান ক্যামেল সম্বন্ধে পড়ে খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিলো। প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে গরম সমস্ত রকম তাপ এরা সহ্য করতে পারে। দুটো কুঁজ আছে এদের। একেকবারে পঞ্চাশ-ষাট লিটার অব্দি জল খেতে পারে। প্রধানতঃ তৃণভোজী, তবে প্রয়োজনে যে কোন রকম কিছু খেতে পারে। হুন্ডারের কোল্ড ডেজার্টে কিছু পোষা ব্যাকট্রিয়ান ক্যামেলকে দিয়ে সাফারি করায় স্থানীয় লোকেরা। মুলতঃ মুসলিমরাই ক্যামেল সাফারি করায়। বৌদ্ধরা এই সাফারি পছন্দ করে না। অবশ্য উটগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ভালো করে খাওয়া দাওয়া পেলে এদের হাম্প দুটোই খাড়া থাকার কথা। খাবারের অভাবে একদিকে হেলে থাকে হাম্প। অধিকাংশ ক্যামেলেরই হেলে পড়া হাম্প। তার মধ্যে বিশাল বিশাল চেহারার নারী পুরুষ নিয়ে একের পর এক সাফারি। বিদেশীরা অনেকেই এই সাফারি নিচ্ছে দেখলাম। আমি ক্যামেলে চড়িনি। মেয়ে একবার বসে থাকা ক্যামেলের পিঠে চড়লো। একটা ফটো নিলাম। সুকান্ত ক্যামেল সাফারি করতে গেলো। প্রচন্ড ঝাঁ ঝাঁ করা রোদ্দুরের মধ্যে দিয়ে!


  • de | 130.62.183.64 | ০৪ নভেম্বর ২০১৩ ২২:৪২559049
  • হ্যাঁ, নোরবে বলেছিলেন -- ডিস্কিটকে ট্যুরিজম প্রোমোট করতে এই বুদ্ধমূর্তি বানিয়েছিলেন ওঁরা।
  • aishik | 52.107.175.156 | ০৪ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:৩৫559050
  • দে দি খুব ভালো লাগছে।
    ঐশিক
  • রোবু | 213.147.88.10 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ০০:৩১559051
  • ভাল্লাগছে।
  • 4z | 152.176.84.188 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ০০:৪৭559052
  • মানস ভ্রমণ। দেদি থ্যাংকু
  • π | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ০২:১৪559053
  • দেদির কল্যাণে দিব্বি ঘোরা হয়ে যাচ্ছে !
  • শঙ্খ | 169.53.78.140 | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:২৭559055
  • খুব সুন্দর লেখা। ছবিগুলোও মানানসই, ঝকঝকে।
  • সিকি | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ১৬:০৭559056
  • হেঁইয়ো করে তুলে দিলাম, যাতে লোকে (দে) মনে না করে আমি ভুলে গেছি।
  • pipi | 139.74.191.152 | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ২০:৫৬559057
  • দে-দি, পাবলিক রেস্টরুমের অবস্থা যখন এত্তটাই খারাপ তো টুরিস্টরা বিশেষত বিদেশী রা কিভাবে ম্যানেজ করে??
  • | ১১ নভেম্বর ২০১৩ ২১:১০559058
  • ঝরঝরে নির্মেদ বিবরণ। চমৎকার লাগছে পড়তে।
  • siki | 132.177.173.163 | ১২ নভেম্বর ২০১৩ ২১:০৩559059
  • ইসকো নিচে নামনে নেহি দুঙ্গা। ও দে ...
  • de | 130.62.168.212 | ১২ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:০৭559060
  • মরুভূমিতে খানিক তেতেপুড়ে গাড়িতে এসে বসলে পরে গাড়ি ছুটলো তুরতুকের পথে। খুব ঘেমে নেয়ে হদ্দ হয়ে গেছিলাম, মনে হোলো গাড়িতে উঠেই চুপ করে চোখ বুজে থাকবো। কিন্তু এই রাস্তায় চোখ বোজার জো আছে? প্রত্যেক বাঁকে বাঁকে নতুন সারপ্রাইজ সাজিয়ে রাস্তা বসে আছে। অপরূপ সমস্ত দৃশ্যপট চোখের সামনে সাজানো হচ্ছে আবার পলক ফেলতে না ফেলতে পরের স্লাইড হাজির! তুরতুকের পরেই পাকিস্তান বর্ডার। শেষ ভারতীয় গ্রাম, যেখানে ট্যুরিস্টরা আসতে পারে।



    রাস্তা প্রায় জনশূন্য। জনপদও খুব রেয়ার এই রাস্তায়। খালি কোথাও কোথাও রাস্তা সারানোর কাজ করার লোকজন একসাথে বসে আছে। কিছু মহিলা দলবেঁধে একসাথে চলছেন। দোর্জে বল্লো এই রাস্তায় একটিই বাস চলে। সকালবেলা ডিস্কিট হয়ে তুর্তুক যায় আর সন্ধেবেলা ফেরত আসে। এর মাঝে কিছু দরকার হলে আর্মির ট্রাক নয়তো পদব্রজ ভরসা! লে এবং তার আশেপাশের গ্রামগুলোর মানুষজন আদ্যোপান্ত নির্ভরশীল আর্মির ওপরে। বহুবার এমন দেখেছি ট্রাক ভর্তি বাচ্চারা জওয়ানদের সাথে হাসতে হাসতে স্কুলে যাচ্ছে। কয়েকশো কিলোমিটারের দূরত্বে শ্রীনগরের মানুষজন আর আর্মির পারস্পরিক ব্যবহারের সঙ্গে আকাশপাতাল ফারাকের এই রহস্যটা ঠিক বোধগম্য হয়নি আমার। সাধারণ মানুষজন দুজায়গাতেই বেশ গরীব, কিন্তু শ্রীনগরে যেন কেমন একটা হাঁ করে থাকা বুভুক্ষু দারিদ্র। যেখানে যাও, যা করো সবসময়েই মানুষজন হাত পেতে আছে। একই কাজের জন্য প্রত্যেকে আলাদা আলাদা বকশিস প্রত্যাশা করে। সেখানে লে তে বকশিস পেলে এতো প্রয়োজনাতিরিক্ত খুশী হয়, যে মনটা ভরে যায়।

    তুর্তুকে লাদাখ আর কারাকোরাম এই দুটো রেঞ্জ ক্রস করে। একাত্তরের আগে এই গ্রাম বাল্টিস্তানের ভেতরে ছিলো। একাত্তরের যুদ্ধশেষে তুরতুক সহ আরো পাঁচটি গ্রাম ভারত দখল করে নেয় পাকিস্তানের থেকে। তারপর থেকে ২০১০ অব্দি এই গ্রাম ট্যুরিস্টদের অগম্য ছিলো। এখনো এখানে বিদেশী ট্যুরিস্টদের স্পেশাল ইনার লাইন পারমিট লাগে। তুর্তুক পৌঁছবার অনেক আগে থেকে আবার লোকালয় শুরু হয়ে যায়। সেরকমই এক লোকালয়ে স্কুলের সামনে দিয়ে গাড়ি যাবার সময় এক ঝাঁক কুচো প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে গাড়ির জানালায়। মুখে "তফি, ফোতো" -- বোঝা গেলো টফি এবং ফটোর বিনিময় প্রথায় এরা অভ্যস্ত! টফি ছিলো না, বিস্কিটের প্যাকেট ছিলো। তাই ভাগ করে দিলাম ওদের মধ্যে। তারপরে ফটো তুললাম। অনেকেই বেশ কনসাস, ক্যামেরার ফটো এসে দেখে গেলো। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখলাম, যেকোন ট্যুরিস্ট ভেহিকল এলেই "তফি, ফোতো" চলছে! আগামী ট্যুরিস্টরা টফি নিয়ে যেতে ভুলবেন না!


    তুর্তুকের থাকার জায়গার সন্ধানও সিকির কাছ থেকে পেয়েছিলাম। ইন ফ্যাক্ট, আমার প্রথম প্ল্যানে শুধু তুর্তুক ঘুরে সেদিনই চলে আসার কথা ছিলো। ওখানে ক্যাম্প ছাড়া আর থাকার কোনো অপশন নেই বলে ডিস্কিটে এসে থাকবো ভেবেছিলাম। ক্যাম্পে টয়লেট ইত্যাদীর ব্যবস্থা কেমন হবে সেই ভেবে একটু দোনোমোনা ছিলো। সিকিই ইন্সিস্ট করেছিলো এখানে ক্যাম্পে থাকার কথা বলে। সেজন্য সিকিকে এইখানে একটা বড়ো ধন্যবাদ দিয়ে রাখি! তুর্তুক সত্যিই -"আহা, কি দেখিলাম! জন্মজন্মান্তরেও ভুলিবো না!" বলিয়ে নেয়! একটা ছোট্ট গ্রাম, হাজার চারেক গ্রামবাসী, মাঝখান দিয়ে কারাকোরাম রেঞ্জের গ্লেসিয়ার গলা জলে ভরা একটা কুলকুল করে বয়ে চলা নদী গ্রামখানাকে দুভাগে ভাগ করেছে। গ্রামের এক ভাগ থেকে আরেক ভাগে যেতে হলে একটা প্রচন্ড খাড়া পাথুরে দেওয়াল টপকাতে হয়। জিভ বার করে করে সেইটে করে ফেল্লে স্বর্গের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়!

    তুর্তুকে আমরা ছিলাম আতাউল্লা খানের "তুর্তুক হলিডে" ক্যাম্পে। এই ক্যাম্পটা অসম্ভব ভালো। ভবিষ্যতে সব্বাইকে যাওয়ার জন্য রেকো করলাম। আতাউল্লাহ এক অসাধারণ মানুষ। আমাদের গাড়ি এসে ক্যাম্পের মধ্যে ঢোকার সাথে সাথে আমার ক্যাম্প সংলগ্ন জায়গাটাকে এতো পছন্দ হয়ে গেলো! চারপাশে বিভিন্ন রকম গাছপালায় ঘেরা -- গাছভর্তি চেরি, ব্ল্যাকবেরি, মটরের খেত, ফুলের গাছ। বড়ো বড়ো পপলারের গাছ পুরো ক্যাম্প এরিয়াটাকে ঘিরে রেখেছে। মাঝে মাঝে ছোট ছোট টেন্ট, জিপ টেনে আটকানো যায়। ভেতরে সুন্দর খাট, টেবল, আবার ড্রেসিং টেবল। পরিষ্কার, ঝক্ঝকে টয়লেট। খুব ভালো মেন্টেন্যান্স! প্রত্যেকটা ক্যাম্পের সামনে ছোট্ট একটা ব্যালকনি আর তাতে দুটো করে ইজিচেয়ার। আমরা এসে পৌঁছবার সাথে সাথে খুব ভালো চা এলো। তারপরে আতাউল্লাহ এসে বল্লো, যে আমাদের তো সব টেন্টে লোক নেই। আপনাদের তো থ্রী বেড দরকার। রাত্তিরে আপনারা পাশের ক্যাম্পটা ব্যবহার করতে পারেন। ভালোই হোলো। রাত্তিরে সুকান্ত ওটায় গিয়ে শুতে পারবে। আমরা চা টা খেয়ে একটু ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। আতাউল্লাহ বারবার করে এসে চেরী, ব্ল্যাকবেরী এইসব নিজেরা তুলেই খেতে বলছে। সুকান্ত গাছ থেকেই সোজা মুখে চালান দি্চ্ছে। আমি বারণ করতে গেলে গ্রামের ছেলেদের ইমিউনিটি এবং শহরের লোকেদের পুওর হেল্থ এর তুলনামূলক বিচার নিয়ে একটা সুদীর্ঘ লেকচার শুরু হতে যাচ্ছিলো। লাঞ্চ এসে পড়ায় বেঁচে গেলাম! মেয়েকে শুধু বলে দিলাম, যাই খাও -- গাছ থেকে তুলে জলে ধুয়ে তারপরে খেও। আমিও তাই করবো।

    জলের ব্যাপারেও তাই। আমি আর মেয়ে তো মিনারাল ওয়াটার ছাড়া খাবো না। আতাউল্লাহ ঝরনার জল এনে কলসি ভরে রেখেছে। সে নাকি খুব টেস্টি। আমরা ছাড়া ক্যাম্পে আরো কিছু প্যাকেজ ট্যুরের লোকজন আছে। তাদের মধ্যে তিন-চারটে জৈন ফ্যামিলি আছে। আর একজন মারাঠী এন আর আই। নাম এস পুরানিক। ওর‌্যাকলে আছেন। ছোট ছেলেকে নিয়ে একমাসের ভারত ভ্রমণে বেরিয়েছেন। ইউ এস এর সিটিজেন। জৈনরা ঐ কলসী ভরা জল খাচ্ছে দেখে সুকান্তও খুব উৎসাহ করে ওই জলই খেলো। আমি আবার দু একবার গাঁই-গুঁই করে চুপ করে গেলাম। জৈনরা থাকার জন্যই কিনা জানিনা, আমাদেরও বলা হোলো, এই ক্যাম্পের খাওয়া-দাওয়া পুরো ভেজ। তবে রান্না ভালো, ডাল, সবজী, রুটি, ভাত, পনির আর ফল। খাবার দিতে এসেছিলো একটা অল্প-বয়েসী ছেলে। আতাউল্লাহ হিন্দীও খুব ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলে। এদের আসল ভাষা বাল্টিক প্রজাতির ভাষা বাল্টিস্তানি। খাওয়া শেষ হলে পরে যখন ছেলেটি জিজ্ঞেস করতে এলো কেমন খেলেন -- আমরা বল্লাম এখানে এতো ভালো ব্যবস্থা আমরা এক্সপেক্টই করিনি। মুচকি হেসে ছেলেটি বল্লো " অলওয়েজ এক্সপেক্ট দ্য আনএক্সপেক্টেড!!" তারপরে আরো কিছু কথা বিশুদ্ধ, অ্যাকসেন্টেড ইংলিশে। আমার কেমন মনে হচ্ছিলো এ ছেলে এখানে থাকে না। জিজ্ঞেস করলে বল্লো, সে আতাউল্লাহর ছোট ভাই, ব্যাঙ্গালোরে এঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। ছুটিতে বাড়ি এসে দাদাকে একটু হেল্প করছে ক্যাম্প চালাতে।


    লাঞ্চের পর আতাউল্লঅহ আমাদের, জৈনদের আর পুরানিক ফ্যামিলিকে নিয়ে গ্রাম ঘোরাতে বার হোলো। গ্রাম দেখতে গেলে প্রথমেই সেই পাথরের দেওয়াল বেয়ে উঠতে হবে। খুব খাড়াই একটা রাস্তায় খরগোসের মতো তুরুক তুরুক করে উঠে যাচ্ছে আতাউল্লাহ।ইদিকে আমরা সকালে অলরেডি কয়েকশো সিঁড়ি চড়ে এসেছি ডিস্কিটে। পা যেন আর চলছে না। কয়েক পা উঠছি আর চারপাশে তাকিয়ে দেখছি, নদী, মাঠ, গম-জওয়ার-রাজমা-মটর-সর্ষের ক্ষেত শুদ্ধু পুরো উপত্যকা ধীরে ধীরে হেসে উঠছে চোখের সামনে। পড়ন্ত সূর্য্যের আলোয় ঝকমক করছে সব। পিছনে লাদাখ আর কারাকোরাম রেঞ্জের ক্রসিং স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যেন বিরাট বড় ক্যানভাসে খুব মন দিয়ে কেউ ছবি এঁকে রেখেছে। এক এক স্টেপ ওপরে উঠলে সেই ছবির ঢাকনা একটু করে খুলে যাচ্ছে। কষ্ট করে ওপরে ওঠার পারিশ্রমিক! হয়তো বেশী কাব্য করে ফেললাম লিখতে গিয়ে, কিন্তু এতোদিন বাদেও ওপরে উঠে ধীরে ধীরে সব দেখতে পাওয়া মনে করতে গিয়ে একইরকম লাগছে! খানিক দূর উঠে কয়েক গজ একটু সমতল জায়গা। করেকজন স্কুলফেরত কিশোরীরা বসে আছে সেই চাতালের ধারের পাথর গুলোর ওপর। এইখানে আমি মেয়ে সমেত একটু দাঁড়ালাম।

    যেতে যেতে আতাউল্লাহের মাসীর সঙ্গে দেখা। মাসির সাথে আতাউল্লাহ র ছবি!
    ক্যাম্প থেকে বেরোবার সময় জৈনদের হিসেব-নিকেশ কানে আসছিলো। আজকাল যেখানেই বেড়াতে যাও, জৈনরা চোখে পড়বেই। এরা বেশ ঘোরে। কিন্তু যেখানেই যায় কাউন্টিং ছাড়তে পারে না। এখানেও শুনলাম, হিসেব হচ্ছে, "আপ হামে ক্যা ক্যা দিখায়েঙ্গে? ক্যা ক্যা খিলায়েঙ্গে?" বেড়াতে বেড়িয়েও পুরো রাস্তাটা দেখলাম, ক্যাঁচোর -ম্যাঁচোর করে শুধু কাউন্টিং করে গেলো, যা যা দেখার হিসেব হয়েছে, দামী ক্যামেরা বাগিয়ে সব জায়গায় একবার খচাত খচাত করার পরেই অ্যাবাউট টার্ন! এতো সুন্দর জায়গা, চুপচাপ ফিল করার কোন চেষ্টা নেই! আমি প্রথমেই গেস করেছিলাম এরকম হবে। তাই আতাউল্লাহকে বলে রেখেছিলাম, যে আমি তো আজ প্রথম তোমার গ্রামে এলাম, ভালো করে দেখতে চাই! আমি একটু আস্তে আস্তে আসবো। তুমি তোমার অন্য অতিথিদের নিয়ে এগিয়ে যেও।
    আতাউল্লাহ শুধু সে কথা রেখেছিলো তাই নয় - সে একবার জৈনদের একটা জিনিস দেখিয়ে দৌড়ে দৌড়ে আবার আমার কাছে এসে গল্প করে যাচ্ছিলো। অনেক কিছু এক্সপ্লেন করেও বুঝিয়ে দিচ্ছিলো। ভয়ঙ্কর এনার্জেটিক ভদ্রলোক! এতো দৌড়াদৌড়িতেও এতোটুকুও বিরক্তি নেই। গোলাপী গালওয়ালা মুখটা সবসময় হাসিতে ভরা। খানিক বাদে দেখা গেলো পুরো দলটায় দুটো টিম, একটায় পুরানিক আর আমরা, তাদেরও একটু ডিটেলে দেখার আগ্রহ। আর সামনে জৈনরা! এই দুই দলের মাঝে পেন্ডুলাম আতাউল্লাহ!

    দুই রেঞ্জের ক্রসিং!

    চাতালে বসে থাকা কিশোরীরা ভারী হাসিখুশী। তারা প্রথমে আমার কাছে জানতে চায় - তুমি কি পড়ো না শাদী হয়ে গেছে? শাদী হয়ে গেছে শুনে ভাঙ্গা হিন্দীতে আবার প্রশ্ন - কিতনে বাচ্চে হ্যায়? আমার একটিমাত্র বাচ্চাকে ডেকে এনে তাদের দেখালাম! বাচ্চার মুখে ততক্ষণে এতো সুন্দর জায়গা দেখে বিশেষণের ছড়াছড়ি! কোনমতে হ্যালো বলেই সে ছুটে পালালো! তারপরে আরো কিছু গপ্পে গপ্পে তারা আমি শাদীর পরে নোকরী করি শুনে, বেশ গোল গোল চোখ করলো। ক্লাস নাইন-টেনের মেয়ে সব। আরো ওপরে উঠে যাবার সময় তাদের টা টা করে বলে এলাম -- তোমরাও পড়াশুনো শেষ কোরো, নোকরী কোরো! এমন কথা তারা বোধহয় এই প্রথম শুনলো, তাই হেসে গড়িয়ে পড়লো সব!
    আরো খানিক ওপরে ওঠার পরে সমতল পাওয়া গেলো। নানারকমের সবজির খেতের মধ্যে দিয়ে বাঁধানো আলপথ ধরে চলতে লাগলাম। বিভিন্ন বিনসের প্রজাপতির মতো ফুল হয়ে রয়েছে। আতাউল্লাহ সব চিনিয়ে চিনিয়ে দিচ্ছিলো। ফুলকপি, বাঁধাকপির ক্ষেত, সব সবজি, গমের, জওয়ারের লম্বা লম্বা শীষ ভরা ক্ষেত এইসব দেখে মেয়ে প্রচন্ড খুশী। "মা এইখানে কিন্তু আবার আসবো হ্যাঁ? পরের ভেকেশানটা এখানেই স্পেন্ড করবো --" এইসব নানা জল্পনা চলছে! এরই মধ্যে একটা সাদা সাদা ছোট ফুলওলা গাছ তুলে এনে আতাউল্লাহ দেখালো। এই ফুল শুকিয়ে আটা হয়, সেই আটার রোটী কাল সকালের ব্রেকফাস্টে ও আমাদের খাওয়াবে। এটা একটা হার্ব - ফুলটার নাম তিসির। হার্ট রিলেটেড কোন প্রবলেম নাকি থাকে না রেগুলার এই রোটী খেলে! এইরকম নানা কথা বলতে বলতে সমতলের রাস্তা পেরিয়ে আবার উঁচু নীচু পাহাড়ী গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়ি আমরা। এখানকার বাড়িগুলো পর পর পাথর সাজিয়ে দাঁড় করানো - ওপরে কাঠের ছাত। পাথরের মাঝে মাঝে কোন সিমেন্ট জাতীয় কিছু নেই। বাড়ি দেখে আতাউল্লাহ কে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে ভূমিকম্প হয় কিনা? বাড়ির স্ট্রাকচার দেখে প্রথমে ওটাই মনে হয়েছিলো। অবশ্য আতাউল্লাহ জন্মে ভূমিকম্প দেখেনি। ছোট ছোট পাহাড়ী স্টেপের ওপর বাড়িগুলো দাঁড় করানো। প্রত্যেকে বাড়ির পাশ দিয়ে পরিষ্কার জল প্রচন্ড স্রোতে নালার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। কোন কোন বাচ্চা মেয়েকে সেই জলে কাপড় ধুতে দেখলাম। কেউ বা ক্ষেত থেকে তুলে আনা সবজি জলে ধুয়ে থালায় সাজিয়ে রাখছে। এইরকম ছোট ছোট নালা পুরো গ্রামটাকে ঘিরে রেখেছে। এছাড়া মাঝে মাঝেই গুড়ের মতো মিষ্টি ব্ল্যাকবেরির গাছ। বাচ্চারা পেড়ে খাচ্ছে। একটা ঘরের নীচ দিয়ে যেতে গিয়ে দেখি একটা ভেড়া ছাত থেকে মুখ বাড়িয়ে ব্ল্যাকবেরি খাচ্ছে! আর এখানকার বাচ্চাগুলো যে কি মিষ্টি দেখতে! তেমনি মিষ্টি ব্যবহার। মেয়ে ছবি তুলতে গেলে ওদের কোন আপত্তি নেই -- আমাকে ক্যামেরা বাগাতে দেখলেই লজ্জা পেয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে!



    গ্রামের লোকজনও ভীষণ মিশুকে -- তখন বিকেল গড়িয়ে যায় যায়, লোকজন কাজ সেরে ফেরার পথে সবাই একবার করে জানতে চায়, কোথায় থাকি আমরা? কেমন লাগলো তুর্তুক? সবে ট্যুরিজম শুরু হয়েছে বলেই হয়তো এখনো এতো নির্মল আছে এখানকার পরিবেশ। মানুষজনও এতো ভালো। পরে গেলে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা পেতে হবে হয়তো!
    খানিকদূর যাবার পর এখানকার একমাত্র স্কুলটা চোখে পড়লো। নোরবে হয়তো এই স্কুলেরই মাস্টারমশাই। স্কুলের এক দিকের দেওয়ালে লেখা "লেঅভে তো সের্ভে"। একটু খটকা লাগলে পর দেখলাম অন্য দিকের এন্তের তো লেঅর্ন লেখাটা গাছের আড়ালে ঢাকা পড়েছিলো বলে দেখতে পাইনি! আরো একটু দূরে কয়েকজন পঞ্জাবী সর্দারজি আর হিমাচলী মিলে ক্রিকেট খেলছে। এরা সবাই স্কুলের মাস্টারজি, আর্মির লোকজন, কালেক্টরেরেটের লোকজন - কয়েকজন গ্রামবাসীও আছে। দিব্বি মজাসে ক্রিকেট চলছে। স্টেপে স্টেপে উঠে যাওয়া পাহাড়গুলোতে চেস্টনাট, আমন্ড, অ্যাপ্রিকট, আপেল, ওয়ালনাটের গাছের ছড়াছড়ি। চারিদিকে ঝিম ধরে থাকা একটা মিষ্টি গন্ধ। বাতাসে তুলোর মতো একটা কি যেন ভেসে বেরাচ্ছে সর্বত্র। ওগুলো পপলারের ফল ফেটে কটন বেরিয়েছে। তুর্তুক থেকে K২ মাত্র ১০০ কিমি।পাহাড়ের ওপরে একটা বিশেষ জায়গা থেকে K২ দেখা যায়। আতাউল্লাহ আমাদের সেই জায়গাটাতেই নিয়ে এলো। ভিজিবিলিটি ভালো থাকায় দেখতেও পাওয়া গেলো K২।

    তারপর চড়াই-উতরাই ভেঙ্গে যেখানে নিয়ে এলো আমাদের, সেখানে এসে আমার চক্ষু চরকগাছ! পাহাড়ের একটা বিশেষ অঞ্চল জুড়ে ছোট ছোট গুহা মতো, প্রত্যেকটা গুহার মুখে হাতে বানানো কাঠের দরজা, তাতে তালা দেওয়া আছে। এই পুরো এরিয়াটা এই গ্রামের স্টোরেজ। কোন অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক মেকানিজমে এই প্রত্যেকটা গুহার ভেতরে একটা নির্দিষ্ট তাপমানের বাতাস বয়। যার ফলে গরম কালে এগুলো ফ্রীজের কাজ করে আর শীতকালে সাধারণ তাপমান বজায় থাকে। প্রত্যেক গ্রামবাসীর অধিকার আছে এই ফ্রিজ ব্যবহারের। সবজি, ফল, অ্যাপ্রিকট - এইসব এরা স্টোর করে যায় এখানে। আমি একটা দরজার ফাঁকে হাত রেখে দেখলাম, ভিতর থেকে সুন্দর ঠান্ডা হাওয়া বেরোচ্ছে, ঠিক আসল ফ্রিজের মতন। আতাউল্লাহ আরো বল্লো, এখানে কোন চাষের জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার হয় না। কারণ সামান্যতম রাসায়নিকেও অ্যাপ্রিকট প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অ্যাপ্রিকট এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল। ভারতের দূরতম প্রান্তের গ্রামীণ টেকনোলজি আর সাধারণ জ্ঞান দেখে শ্রদ্ধায় মাথা আপনি নুয়ে আসে। কোন বানানো প্রচেষ্টার দরকার হয় না!
    ফ্রীজ দেখে আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে আরো কিছু পরীবালাদের দেখা পাওয়া গেলো। হাতে ক্যামেরা দেখেই ফটো তোলার দাবী! একটা বড়ো ঝর্না নীচে নেমে এসে নদী হয়েছে। গ্লেসিয়ার গলা জল। তার ওপরে একটা সবুজ দড়ির সেতু। সেই সেতু পেরিয়ে এদিকে এসে আমাদের বেড়ানো আজকের মতো কমপ্লিট। সন্ধে নামছে। জৈনরা সূর্য্য ডোবার আগে নাকি ডিনার খায়। আতাউল্লাহ তাই খুব ছোটাছুটি লাগিয়ে দিলো। আমরা অনেক লেটে খাই। এতো সন্ধেয় খেলে রাত্তিরে খিদে পেয়ে যাবে!

    ক্যাম্পে ঢুকতে না ঢুকতেই গরম চা এসে গেছিলো। একটা বিশাল ফ্লাস্কে চা আর তার সামনে অনেক রকম বিস্কিট, এটা যেকোন সময়েই রাখা থাকছে। আমি একটু বারে বারে চা খেতে ভালোবাসি। এই ব্যবস্থা তাই আমার খুব পছন্দ। কোন কাপের গুনতি নেই। চা-বিস্কিট খেয়ে চুপ করে বসে আছি, এমন সময় জৈন টিমের লোক এসে বল্লো আমরা বসে না থেকে "রিন্চেন দ্বার" দেখতে যাবো ভাবছি! তা ভাবো, আমায় কিসে দরকার? মানে আপনাদের ড্রাইভারকে যদি একটু বলেন। আমাদের ড্রাইভারকে খুঁজে পাচ্ছি না! আমি পড়লাম ফাঁপরে। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে এসে দোর্জে বিশ্রাম করছে। এখন আমার ওকে রিকোয়েস্ট করতে মন চাইছে না। তাছাড়া, পাহাড়ী এলাকায় এই প্রায় রাত্তিরে গাড়ি চালাতে যদি রাজি না হয়! তাই বল্লাম, আপনারা বলেন, দ্যাখেন ও কি বলে! দোর্জে চালাক ছেলে, এদের কাছে যেতে দেখেই সে দূর থেকে "আপকা ড্রাইভারকো ঢুন্ডকে লাতা হুঁ " বলে সট্কালো। গুজ্জুরা খুব বিরক্তি দেখিয়ে তাদের ড্রাইভার খুঁজতে বেরলো। মেয়ে মটরখেত থেকে মটর তুলছে আর খাচ্ছে। এতো মিষ্টি মটর, তাও আবার নিজের হাতে প্লাক করে খাওয়া-- তার উত্তেজনা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে!

    অন্ধকার হওয়ার সাথে সাথে আকাশে লাখো লাখো তারা স্পষ্ট হয়েছে। ক্যাম্পের সামনে চেয়ারে বসে সেইদিকে তাকিয়ে রইলাম চুপচাপ। জায়গার গুণেই একের পর এক গান আসতে লাগলো মনে! কি অপরূপ শান্তি চারপাশ জুড়ে।

    এখানে রাত্রি আটটা থেকে দশটা অবধি বিদ্যুৎ থাকে। খাওয়াদাওয়া ওরি মধ্যে সারতে হবে। সাড়ে ন'টায় খাওয়া সেরে এসে সুকান্ত ঘুমোতে চলে গেলো অন্য টেন্টটায়। চারিপাশের ঝুপসি অন্ধকারে ডেক চেয়ারে বসে চাদর মুড়ি দিয়ে আমি আর মেয়ে বসে গান গাইলাম, গল্প করলাম অনেক রাত্তির অব্দি। শুতে যেতেই ইচ্ছে করছিলো না। এমন রাত্তির কি রোজ রোজ আসে?
  • de | 130.62.168.212 | ১২ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:১০559061
  • যাঁরা ধৈর্য্য ধরে পড়ছেন সকলকে থ্যাংকু!

    পিপি,

    পাথরের আড়ালে! রেস্টরুম এরা মোটে ইউজ করে না!
  • I | 24.99.139.184 | ১২ নভেম্বর ২০১৩ ২৩:৫৫559062
  • দিব্য লাগছে। চলুক।
  • pipi | 139.74.191.152 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ০১:০৩559063
  • পাথরের আড়ালে ছোট বাইরে করা যায় মানলাম কিন্তু বড় বাইরে পেলে?? আর লোক্যাল লোকজন নাহয় রেস্টরুম ইউজ করে না কিন্তু টুরিস্টরা? বিদেশীরা? তারাও ঐ??
    নাহ! আমার লাদাখ যাত্রা কপালে নাই তার মানেঃ-(
  • ঐশিক | 213.200.33.67 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১০:৩৮559064
  • দে দি বেশ ভালো লাগছে
  • hu | 188.91.253.11 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১০:৪৯559066
  • বড় বাইরে পাবে কেন? সকালে উঠে ওটু খেয়ে নিলেই তো হয়। আমি তো দেশের লম্বা ট্রেনজার্নিতে সর্বদা তাই করে থাকি।

    দেদি, লেখা খুব ভালো হচ্ছে।
  • ন্যাড়া | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১০:৫২559067
  • ওটু কী? কতক্ষণ আগে খেতে হয়?
  • san | 69.144.58.33 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১১:১১559068
  • ট্রেনে তো টয়লেট থাকে :-o হুচি কি লম্বা /ওভারনাইট বাসজার্নি মিন কচ্ছে ?
  • সিকি | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১১:৫৩559069
  • ওরে পিপি, ঐসব নিয়ে চিন্তা করিস না। পুরো রুটে কোথাও না কোথাও আর্মি ক্যাম্প পাবি। তাদের টয়লেট ইউজ করে নিলেই হবে।

    আহা, তুর্তুক, তুর্তুক। স্বর্গের মত জায়গা। ঐ আতাউল্লার সাথে আমাদেরও দেখা হয়েছিল। দে খেয়াল করেছিলে কিনা জানি না, তুর্তুকের কিন্তু কোনও দোকান নেই। পুরো আর্মি সাপ্লাইয়ের ওপর নির্ভরশীল। আর লোকাল কাল্টিভেশন।

    দে ছিল এই ক্যাম্পেঃ


    গম আর ডালের ক্ষেত


    তুর্তুকের সবুজ ক্ষেত।


    তুর্তুক যাবার পথে ঐ তফি-ফোতো বাচ্চাদের সঙ্গে আমাদেরও আলাপ হয়েছিল। ছোট্ট ছোট্ট মুণ্ডুগুলো দুলিয়ে অস্ফুটে "জুলে, জুলে" তারপরেই তফি-ফোতোর দাবি। আমাদের কাছে টফি ছিল না বলে বেজায় অপ্রস্তুত হয়েছিলাম।

    লাদাখযাত্রীদের জন্য এটি একটি টিপ, সমস্ত জার্নিপথে পকেটে প্লেন্টি অফ টফি চকলেট রাখবেন। লোকাল বাচ্চারা এসব উপহার পেলে খুব খুব খুশি হয়। বছরে এই তিন চার মাস ছাড়া ওরা বাইরের পৃথিবীর কাউকে দেখতে পায় না। তাই এত খুশি হয় ট্যুরিস্ট আসলে।
  • sosen | 24.139.199.11 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১২:০১559070
  • কোনদিনই হয়ত যাওয়া হবে না-
    খুব ভালো লাগলো দে-দি! বহুদিন এরকম ঝরঝরে ট্রাভেলগ পড়িনি।
  • সিকি | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১২:০৩559071
  • যাওয়া কেন হবে না? আমাকেই তো আরো দুবার যেতে হবে। ২০১৪ তো হচ্ছে না, ২০১৫তে টার্গেট সেট করছি।
  • সিকি | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১২:০৩559072
  • দেন ২০১৬-র শীতে, নয় তো ২০১৭র শীতে। চাদর ট্রেক।
  • Tim | 188.91.253.11 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১২:৪৬559073
  • একি ন্যাড়াদা ওটু জানেনা? আধঘন্টাটাক সময় পেলেই হয়ে যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। ডেলিকেট কন্ডিশনে আরেকটু সময় হাতে নিও।
  • kumu | 133.63.112.93 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১২:৫২559074
  • গলস্টোন অপারেশন হয়ে থাকলেও ওটু কাজ দেবে? রেডোটিল?
  • kabya | 59.249.108.38 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১৩:০৪559075
  • wow

    কি সুন্দর ক্যাম্প। কি সুন্ন্দর জায়গা।

    দে দি কি সুন্দর লেখা হচ্ছে। ছবির মতো জেনো সব দেখতে পাচ্ছি আর যাবার ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠছে।
  • de | 69.185.236.52 | ১৩ নভেম্বর ২০১৩ ১৩:৪৬559077
  • টাইপো --

    enter to learn, leave to serve, বাংলিয়ে গেছে লেখায়!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন