এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অনেক সাহসে সর্ষে

    de
    অন্যান্য | ২০ জুন ২০১২ | ১০৭২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • de | 130.62.181.29 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ ২৩:৫২559078
  • তুললাম এটাকে
  • de | 130.62.181.29 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ ২৩:৫৪559079
  • আতাউল্লাহকে দেখছিলাম পাশের দোতলা কাঠের তৈরী রান্নাঘরে সব গুছিয়ে তুলে রাখছে। তখন দশটা বেজে গেছে। কাজেই লন্ঠন ভরসা। সব গুছিয়ে-টুছিয়ে সাফ-সুতরো করে তুলে রেখে, আতাউল্লাহ উঠোন ঝাড়ু দিতে বেরিয়ে আমাদের দেখতে পেলো। ঝাড়ু হাতেই এসে বসে পড়লো সামনে। কেমন লাগলো আমাদের গ্রাম? আমি আর কি বলি! আমার বিশেষণের ভাঁড়ার কাজের সময় দরজা বন্ধ করে বরাবর - শুধু বল্লাম, এতো সুন্দর গ্রাম আমি কখনো আগে দেখিনি! বসে বসে আতাউল্লাহ গ্রাম সম্বন্ধে অনেক কিছু বললো - এখানে ওরা পুরোপুরি আর্মির ওপরেই নির্ভরশীল। আর্মির খুবই প্রশংসা করলো। যেকোন দরকারে, বিশেষতঃ মেডিক্যাল দরকারে আর্মি সবসময় পাশে থাকে। একথাও বললো, আর্মির যত না আমাদের দরকার, তার থেকে অনেক বেশী সাধারণ মানুষের জন্য আর্মি দরকারী! সারাক্ষণ সর্বত্র আর্মিকে গালি খাওয়া দেখতে অভ্যস্ত নেট-বিচরণকারী আমি আবারও বুঝি - অ্যাবসলিউট খারাপ বলে দুনিয়ায় কিছু হয় না! আতাউল্লাহ একাত্তরের যুদ্ধের সময় ওদের গ্রাম হস্তান্তরের কথা বল্লো। একটা গল্পও বল্লো, যেটা প্রচলিত রূপকথাও হতে পারে। দুই বোনে মিলে ভেড়ার পাল নিয়ে গ্রামের প্রান্তে ঘাসজমিতে চড়াতে গেছিলো।একটা ছোট ভেড়া কোনভাবে হারিয়ে যাওয়ায় এক বোন তাকে খুঁজতে খুঁজতে দূরে চলে যায়। এই সময়ে ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপচার করে নেয় এদিকের এলাকা। যার ফলে দুই বোন চিরকালের জন্য আলাদা হয়ে যায়। আরো বহুদিন পরে বিবাহিত দুই বোনের দেখা হয় এমনিভাবেই ভেড়া চড়াতে গিয়ে - বর্ডারের দুই দিকে! শুনতে একটু বলিউডি মার্কা লাগলেও সেই রাত্তিরে অন্যরকম লেগেছিলো, যখন শুধু পপলারের পাতা নড়ার সরসর আওয়াজ ছাড়া আর কোন জাগতিক শব্দ কানে আসছিলো না!

    পরের দিন সকাল সকাল বেরোনো - একেবারে একটানা তুর্তুক, ডিস্কিট , খারদুংলা হয়ে লে তে ফেরত যাবো। অনেকখানি রাস্তা। সকাল বেলা আতাউল্লাহ আজ তিসিরের রোটী বানিয়েছে - প্যানকেকের মতো। ঘন দইয়ের রায়তা আর গুড়ের মতো মিষ্টি ব্ল্যাকবেরি সাথে। খুব ভোরে উঠে গাছে চড়ে সে ব্ল্যাকবেরি পেড়ে এনেছে। আগের দিন পেড়ে রাখলে যদি ফ্রেশ না থাকে! জৈনরা আমাদের অনেক আগে বেরিয়ে গেছে। পুরানিক আর আমরা খেতে বসে গল্প-গুজব হলো। খাওয়ার পরে আতাউল্লাহ আমাদের আরো একবার গ্রাম দেখতে নিয়ে যাবার কথা বলছিলো। কিন্তু অনেকটা পথ যেতে হবার তাড়া থাকায় অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যাওয়া হোলো না!

    হেড়ার ব্ল্যাকবেরী খাওয়া –
    হ্ত্ত্প্সঃ//ল্হ৪।গূগ্লেউসেোন্তেন্ত।োম/-ক২৩জ্জাদহ্গ/ঊও৩৮প-ঈ/আআআআআআআআড৫/৭প্টাণক্ঢ/৬৯২-হ৫১৯-নো/১০০্‌৩২১৪।জ্প্গ
    তফি-ফোতো

    তুর্তুকের বাড়ি

    ফেরার পথ

    তুর্তুকের ফ্রিজ


    বেরিয়ে প্রথমে আমরা পাকিস্তান বর্ডারের একদম কাছে রিঞ্চেন দ্বার দেখতে গেলাম। তেমন কিছুই দেখার নেই - একখান বড়ো তোরণের ওপরে ওই নামটা লেখা। খানকতক মিলিটারি চেকপোস্ট। খুবই সাদামাটা বর্ডার!
    আসার সময়ে আতাউল্লাহ বারবার বলে দিয়েছিলো, দোস্তদের এখানে আসার কথা বলতে। গুরুর সকলকে বলে দিলাম - সবাই যেও তুর্তুক! বিল মেটানোর পর আতাউল্লাহ আমাদের টফি আর চকোলেট দিয়েছিলো। ফেরার পথে আবার সেই স্কুলের সামনে এসে 'তফি, ফোতো' দের খুঁজলাম। কিন্তু আর পেলাম না! কি জানি কোথায় গেলো!
  • de | 130.62.181.29 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১৩ ২৩:৫৭559080
  • ভেড়ার ব্ল্যাকবেরী খাওয়া –
  • de | 130.62.181.29 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০০:০০559081
  • সুন্দর রাস্তায় আবার চলা শুরু। এবার অবশ্য লে তে ফেরার একটু তাড়া রয়েছে। কাল সকালেই আবার লম্বা জার্নি - প্যাংগং! সে রাস্তায় পড়বে চাংলা পাস। সেইদিন রাত্তিরে একসঙ্গে অতোখানি পথ পাড়ি দিয়ে আমরা সকলেই খুব ক্লান্ত হয়েছিলাম। খাওয়া-শোয়া-ঘুম সবই যেন একটা ঘোরের মধ্যে হোলো।

    সকালে বেরোতে হবে সাড়ে আটটা, ন'টার মধ্যে। পরদিন সকালে খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো বমি করার আওয়াজে! সুকান্ত! ভোর থেকে সকালের মধ্যে ডায়েরিয়া ধরণের কিছু শুরু হলো। আমি অবশ্য আগেই আশঙ্কা করেছিলাম। পাহাড়ী এলাকার ঝর্ণার জল, না ধোয়া ফল - এসবেরই এফেক্ট হবে। শরীর খারাপ হওয়ার সাথে সাথে মনের জোরও কমতে থাকলো - "এজন্যই এসব জায়গায় আসতে চাই না, আমি প্লেন ধরে বাড়ি যাবো", এইসব! এদিকে প্যাংগংয়ে ওয়াটারমার্কের ক্যাম্প বুক করে রেখেছি। বাকি সমস্ত জার্নির পেমেন্টও আগেই করে দিতে হয়েছে। কোনমতে মেয়েকে ব্রেকফাস্ট করিয়ে গাড়ি আসার পর আবার হসপিট্যাল। সেখানে ডাক্তার দেখে বল্লেন, ও কিছু না, সামান্য ডায়েরিয়া হয়েছে, ওষুধ দিচ্ছি, ধরে যাবে। যান ভালো করে প্যাংগং দেখে আসুন।
    লে এসে প্যাংগং না দেখার মানে হয় না! ডাক্তারের বুস্টার ডোজে কিছুটা চাঙ্গা হলো মনে হয়। সকাল আটটার পরে বমি-টমিও ধরেই গেছে। সুতরাং দুগ্গা বলে রওনা দিলাম। মনটা অবশ্য খচ্খচ্ করতে থাকলো। আমি খুব ভালো করে জানি যে আবার যদি শরীর খারাপ হয়, তাহলে কিছুতেই আর ওকে বাড়িমুখো হওয়া থেকে বিরত করা যাবে না। যাক্গে, প্যাংগং দেখে তো আসি, তারপরে দেখা যাবে! যাবার পথে শে প্যালেস আর ড্রুক হোয়াইট লোটাস স্কুল দেখা হবে।
    শে প্যালেস আর মনাস্ট্রি ১৬৫৫ সালে তৈরী। লাদাখের তিব্বতী রাজাদের গরমের ছুটি কাটানোর জায়গা। এখানে সবচেয়ে বড়ো বুদ্ধের মূর্তি আছে, তামার মূর্তি, সোনার পাতে মোড়া। মূর্তিটা বসে আছে একতলায়, আর তার মাথাটা এক্কেবারে পাহাড়চুড়োয় মনাস্ট্রির টপ ফ্লোরে! মূর্তির নাম দেখলাম লেখা আছে, শাক্যমুনি বুধ। ওই মূর্তির চারিদিকে প্রদক্ষিণ করতে হয়। একজন লামা আমাদের দেখে এসে জিজ্ঞেস করলেন কোথা থেকে এসেছি। বম্বে শুনে বললেন - সে তো খুব বড়লোকের জায়গা!

    <
    <
    <
  • de | 130.62.181.29 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০০:০৩559082








  • পরের গন্তব্যস্থল ড্রুক হোয়াইট লোটাস স্কুল। থ্রী ইডিয়টসের জন্য বিখ্যাত হয়েছে যে স্কুল। স্কুলে ঢুকে দেখলাম ট্যুরিস্টদের ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে শিক্ষিকারা সব ঘুরিয়ে দেখাবেন। তখন দিনের বেলা - স্কুল চলছে। তাই যেদিকে ক্লাস চলছে সেই বিল্ডিংগুলোর মধ্যে ঢোকা যাবে না। বাকি প্লে-গ্রাউন্ড, লাইব্রেরী, প্রার্থনার জায়গা, থ্রী ইডিয়টসের সেই বিখ্যাত দেওয়াল -এইসব দেখিয়ে অফিস রুমে নিয়ে আসা হলো ট্যুরিস্টদের। সেখানে নানা রকম মেমেন্টো আর ডোনেশন বক্স। পুরোপুরিই ডোনেশনের ওপর নির্ভর এই ছোট্ট স্কুলটা।



  • de | 130.62.181.29 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০০:০৬559083
  • এই পুরো সময়ের জন্য সুকান্ত একবারের জন্যও গাড়ি থেকে নামেনি। প্যাংগং গিয়ে কি হবে সেটা ভাবতে ভাবতে গাড়িতে চড়ে বসলাম। চাংলা পাস আসতে বেশী সময় নিলো না। চাংলা পাসে পৌঁছতে না পৌঁছতে তুষারপাত শুরু হলো। এই ক'দিন আবহাওয়া অসম্ভব ভালো থাকলেও আজকে বৃষ্টির প্রেডিকশন ছিলো, সেটা আগেই দেখে নিয়েছিলাম। এর পরেও আবহাওয়া খারাপই থাকবে। পরশু আমাদের লে-মানালি রোডে যাত্রা শুরু, তাই ওয়েদার নিয়ে একটু দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। পাসের ওপরে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম দূরের রেঞ্জগুলো আর দেখা যাচ্ছে না। কালো মেঘে ঢেকে গেছে। আর আমাদের চারপাশটাও বেশ মেঘে ঢেকে গেছে। চাংলায় প্যাংগং যাবার পাস দেখাতে হয় লাইনে দাঁড়িয়ে। দোর্জে সেই কাজে গেলো। আমরা চাংলার ওপরে ওয়াশরুম-নরক আরেকবার দর্শন করে এলাম। লে তে এতো পর্য্যটক আসে, সরকারের এতো টাকা রেভিনিউ আয় হয়। তার অতি সামান্য পারসেন্টেজ খরচা করেই তো মোটামুটি ভদ্রস্থ একটা ওয়াশরুম মেনটেন করা যায় এই জায়গাগুলোয়। আমাদের বেসিক সেন্সেই গন্ডগোল!






    লে থেকে প্যাংগং প্রায় দুশো পনেরো কিমি। রাস্তাটা মোটের ওপর ভালো, খারদুংলার থেকে বেটার। লে থেকে কারু এসে প্যাংগংয়ের রাস্তার শুরু। এই কারু থেকেই মানালি যাবার রাস্তা শুরু। প্যাংগংকে স্থানীয় ভাষায় বলে প্যাংগং সো। সো মানে তিব্বতী ভাষায় লেক। প্যাংগং যাবার রাস্তায় একধরনের বড় কাঠবেড়ালী গোছের প্রাণী দেখা যায়। এরা হিমালয়ান গ্রাউন্ড স্কুইরেলের এক জাতভাই। গোল্ডেন বেলি মারমট।সাইজে কাঠবেড়ালীর তিনগুণ! লে-মানালি রোডের দুপাশের ঘাসজমিতেও এদের মাঝে মাঝেই দেখা যায়। নিরিমিষ্যি আহার! ঘাসপাতা, বেরী, ফল-পাকুড়। এদানীংকালে ট্যুরিস্টদের কল্যাণে বাদাম বা বিস্কুটও খেয়ে থাকেন। অবশ্য এদের কিছু খাওয়ানো মানা আছে। বাইরের খাবারে প্রবলেম হওয়াটাই স্বাভাবিক। মারমটকে খাওয়াতে হবে বলে আগের দিন থেকেই তেলছাড়া বেকড্ বিস্কিট কিনে এনে রেখেছিলাম। রাস্তার পাশে এক মারমট ভদ্রলোককে দেখতে পেয়ে বিস্কিট বার করে নামতে নামতেই তিনি হাওয়া! খানিকদূর যেতে না যেতেই আরেক মারমট ফ্যামিলির সঙ্গে দেখা। একজন গত্তে বসে আছেন আর একজন বাইরে বেরিয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন। আমায় এগোতে দেখে পালালেও কন্যাকে দেখে পালালো না। দিব্বি বসে মিটমিট করে চাইতে লাগলো। বিস্কিট দিলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলো, ছবির পোজ দিলো। তাপ্পর আরেকটা গাড়ি এসে থেকে ধুপধাপ আওয়াজ করে জনতা দৌড়ে আসছে দেখে হুস্ করে গত্তে সেঁধিয়ে গেলো। সবাই মিলে সেই গত্তের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে চুক্চুক্, আঃ আঃ, আজা বিস্কিট লে লে - এই সব চলতে দেখে আমরা গাড়িতে গিয়ে বসলাম।




    আরো কিছুদূর গিয়ে অনেক প্যাংগং লেক দেখা গেলো - উঁচু উঁচু পাহাড়ের ঠিক মাঝখানটাতে যেন নীল একটুকরো সিল্কের কাপড় বিছানো। গাড়ি থেকে নেমে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু সুকান্তর শরীর ভালো লাগছে না। তাই গাড়ি নিয়ে সোজা প্যাংগংয়ের দিকে রওনা হওয়া গেলো। আস্তে আস্তে সিল্কের কাপড়্টা বড়ো, আরো বড়ো হতে লাগলো। এই লেকটা লাদাখের একমাত্র সল্ট ওয়াটার লেক। শীতকালে এসব জায়গায় এতো ঠান্ডা পরে, যে সল্ট ওয়াটার হওয়া সত্ত্বেও পুরো লেকটা জমে যায়। তবে তখন এসব ক্যাম্প ইত্যাদী বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন আরো নীচে নেমে যায়। প্রায় ছশো স্ক্যোয়ার কিমি জুড়ে প্যাংগং। এই লেকটার ষাট শতাংশের বেশী রয়েছে তিব্বতে। চোদ্দ হাজার দুশো ফিটের ওপরে হওয়ার জন্য চারপাশের হু হু করে আসা ঠান্ডা হাওয়া যেন কেটে কেটে বসে যাচ্ছে শরীরে। আসতে আসতেই দেখলাম অনেকেরই অক্সিজেনের প্রবলম শুরু হওয়ার জন্য মাথা তুলতে পারছেন না। সুকান্তর মুখটাও দেখলাম গম্ভীর হয়ে রয়েছে। শরীর যে মোটেই সাথ দিচ্ছে না সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। লেকের কাছে এগোতে এগোতে একটা পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে শ্যুটিং পয়েন্ট দেখা হোলো। দোর্জে বল্লো এখানে প্রচুর বলিউডি ফিল্মের শ্যুটিং হয়েছে। একটায় নাকি অনুষ্কা শর্মা একটা পাথরের ওপর থেকে প্যাংগংয়ে ঝাঁপ দেয়। দোর্জে খুব অবাক -- কিকরে পাথরটা এলো? লেকের মাঝে তো অমনি কোন পাথর নেই? আরো খানিকদূর এগনোর পর একটা বাঁক নিয়েছে লেক। সেখানে এই গরমকালে অনেক পরিযায়ী পাখির মেলা। ব্রাহ্মণী হাঁস বলে একধরনের হাঁস দেখলাম যার পেটের দিকের পালক গুলো পুরো সোনালী। বাকী ডানাটা সাদা কালো। অনেক দূর থেকে ছবি তুললাম বলে অতো ডিটেল আর বোঝা যাচ্ছে না আমার সাধারণ ছবিতে। দেখতে দেখতে ওয়াটারমার্কের ক্যাম্প এসে গেলো। সারি সারি ক্যাম্প দাঁড়িয়ে রয়েচে। সামনে একটা করে ছোট্ট ব্যালকনি, অ্যাটাচড বাথ উইথ টয়লেট টিস্যু - ব্যবস্থাপনা দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। পৌঁছতে প্রায় সাড়ে তিনটে বেজে গেলো। ততক্ষণে লাঞ্চের বন্দোবস্ত গুটিয়ে ফেলা হয়েছে। সুকান্তর শরীর ভালো লাগছে না, তাই ও কিছু খাবে না। আমার আর মেয়ের পেটে মারমটেরা দৌড়োদৌড়ি করছে। সুতরাং ক্যাম্প থেকে নীচের দিকে নেমে ডাইনিংয়ের টেন্টের দিকে গেলাম।

    খাবারের বন্দোবস্তের কথা জিজ্ঞেস করায় ওখানকার ছেলেরা বল্লো বাইরে চেয়ার টেনে বসুন, চা আর গরম পকোড়া ভেজে দিচ্ছি। তাই সই! একটু বসতে না বসতেই গরম গরম মিক্সড পকোড়া এসে গেলো, তাতে আলু, গোবি, পেঁয়াজ, লংকা কিছুই বাদ নেই। খিদের মুখে তা অমৃত লাগলো আমাদের। ক্যাম্পে ফিরতে না ফিরতেই সুকান্ত ঘোষণা করলো - আমার আর ভালো লাগছে না এই জার্নি, রোজ সকালবেলার এই ধকল আর নিতে ভাল্লাগছে না। বেড়াতে এসে এতো হুজ্জতের কোন মানে হয়? আমি কালই ফেরত যাবো। এখনই দোর্জেকে নিয়ে কাছের একটা ফোন বুথে যাবো। সেখান থেকে বম্বেতে ফোন করে টিকিট আনিয়ে নেবো। তোমরাও চলো সাথে। এর পরে আবার সো মোরিরি, সো কার আবার মানালি অব্দি জার্নি। পারবে না মেয়ে নিয়ে এতো ধকল নিতে।আমি একটু, সামান্য একটুই, শকড্ হলাম! সমস্ত জার্নির পয়সা এবং সমস্ত হোটেল আমি আগে থেকেই বুক করে রেখেছি। সেগুলো সমস্তই বেশ ভালো হোটেল, যাতে মেয়ে এবং তার বাবার কোন কষ্ট না হয়। এখন জার্নি ক্যানসেল করলে সেসব রিফান্ড পাওয়া মুশ্কিল। পয়সার মায়া যদি ছেড়েও দিই, এতো দূরে যখন চাই হুট্ বল্লেই তো আর আসা যায় না। কতদিনের প্ল্যানিং! এই অবস্থায় আমার কন্যা মুখ খুল্লেন - তোমার শরীর তো ভালো লাগছে না বাবা, তুমি তাহলে ফেরত যাও -- আমি আর মা এই জার্নিটা কমপ্লিট করি। আমার এবার নাইন্থ্, পরের বছরগুলোতে আমিও এতো ব্যস্ত থাকবো, আমার আর আসা হবে না তাহলে আরো অনেকদিন। আর সমস্ত জার্নি তো প্রায় কমপ্লিট, শুধু মানালি পৌঁছনোই যা বাকি। ওটুকু আমরা পারবো। বাবা আমতা আমতা করে বলতে গেলো - কিন্তু এতোটা রাস্তা শুধু দুজন মেয়ে মিলে যাওয়াটা ঠিক হবে না। তাতে মেয়ে খুব ধীরে সুস্থে বাবাকে বোঝালো - দেখো এখনই যদি কোন বিপদ আসে, তুমি আছো বলে কি কিছু এক্স্ট্রা করতে পারবে, যেটা আমরা দুজনে পারবো না? সুতরাং, তোমার শরীরে কুলাচ্ছে না, তুমি ফেরত যাও, আমরা যতক্ষণ পারছি, চেষ্টা করি।

    মেয়ে আর বাপে এইমত কথা হচ্ছে, আমি ততক্ষণে ক্যালকুলেট করছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু দুজনে ট্রাভেল করলে সত্যিই একটু ঝুঁকি হয়ে যায়। কিন্তু সুকান্ত একবার ফেরত গেলে আবার এখানে আসবে সেই চান্স মোটেও নেই। আমি আসার সময় পেপার স্প্রে টা নিয়ে এসেছি, কিন্তু কাল লে তে ফিরে গিয়ে আরো কিছু বন্দোবস্ত করতে হবে, সাময়িক অস্ত্রের!

    প্রায় পাঁচটা বাজে তখন, সুকান্ত গাড়ি নিয়ে টিকিট বুক করতে বেরলো, আমি আর মেয়ে ক্যামেরা হাতে লেকের দিকে রওনা দিলাম। লেকের পিছনের পাহাড়ে সূর্য্যাস্তের শেডিং দেখবো। চারপাশে তখন কেমন একটা ঝিম ধরা সময়। পরিযায়ী পাখিরা দূরে কোথাও একটা উড়ে যাচ্ছে, বোধহয় সন্ধে হবে বলেই। আচ্ছা, এখানে তো কোন বড় গাছও নেই চারপাশে, তাহলে এরা ঘুমোয় কোথায়? বাসাই বা কই? লোকজন চারিপাশে বেশ অল্প, ক্যাম্পটা একটু উঁচুতে, সেখান থেকে আমরা আস্তে আস্তে নীচে নামতে লাগলাম। অল্পেই বেশ হাঁফ ধরে যাচ্ছে। তার মধ্যে বেশ ঠান্ডা হাওয়া। ঝকঝক করছে নীল আকাশ। তার মধ্যে আদিগন্ত নীল জল। নীলের এতো অপূর্ব শেড আমি এর আগে কখনো দেখিনি। এখানে আসার আগে একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আজকের ওয়েদার প্রেডিকশনে, এবং এরপর থেকে প্রায় রোজই এখানে মেঘলা আবহাওয়ার পূর্বাভাস। তাহলে নীল আকাশ আর লেকের নীল জল দেখা হবে না, এই ভেবেই ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু আজকের চারিপাশ দেখে আর ছবি তুলে খুব শান্তি হোলো। নীচে এসে লেকের ধারে চুপটি করে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকি। কত রংয়ের খেলা চারিপাশে। ক্যামেরায় সে রং ধরা পড়ে না। মনের ক্যামেরা খোলা রাখলে মাঝে মাঝেই সেই সব রংয়েরা উঁকি দিয়ে যাচ্ছে!
    এমন সময় হাঁফাতে হাঁপাতে দুই মূর্ত্তির আবির্ভাব। ভদ্রমহিলার হাতে একটি ক্যামেরা, পিছনে তল্পিবাহক ক্যামেরার স্ট্যান্ড, লেন্সের ব্যাগ, লেন্স ইত্যাদী নিয়ে ল্যাজে গোবরে হয়ে আসছেন। এসে পৌঁছনোর পরে নানা ইন্স্ট্রাকশন! "হ্যাঁ, এইখানে স্ট্যান্ড খাড়া কর, কোন লেন্সে ভালো আসবে বল্তো? ওই অমুক-তমুক টা বার কর্, হ্যাঁ, এইবার ফিট কর -- নাঃ, ভালো আসছে না -- এবার তমুক-ওমুকটা বার কর। কি??? আনিসনি? এতো বার করে বল্লাম, তোকে দিয়ে একটাও যদি কাজের কাজ হয় -- যা শিগ্গিরি নিয়ে আয়! তল্পিবাহকটি হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড় মারলেন! আমরাও আরো একটু দূরের দিকে সরে এলাম। এতো ক্যাঁচম্যাঁচে জায়গাটার নির্জনতার সাড়ে সব্বোনাশ হয়ে যায়। আজকাল যেখানেই যাই এই ক্যামেরা-বাহিনীর কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। যেকোন দৃশ্যের নির্জনতার গাম্ভীর্য্যকে মূহুর্ত্তে খানখান করে দেওয়ার ক্ষমতা ধরেন এঁরা। অতো কষ্ট করে ক্যামেরার লেন্সের পিছন থেকে এতো অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আমার মন ভরে না। আসল ক্যামেরাটাই শাটার বন্ধ করা থাকে!
  • সিকি | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০০:১১559084
  • আহা। এর জন্যেই বোধ হয় জেগে ছিলাম।
  • সিকি | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০০:১৮559085
  • খুব রিস্ক নিয়েছিলে, খারদুংলা থেকে ফিরেই পরের দিনই চাংলা পাসে যাবার। উচিত হয় নি। মাঝে একদিন গ্যাপ রাখার কথা কি আমি বলি নি? মাঝে একদিন লোকাল সাইটসিয়িং করে নিলে পারতে।
  • de | 69.185.236.51 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:৪০559086
  • মেয়ের স্কুলে আর তার বাবার আপিসে বেশী দেরী হয়ে যাচ্ছিলো -- মাঝখানের স্টপ-গ্যাপ রাখলে পরের উইকেন্ডে বম্বে পৌঁছনো গেলে তবেই সোম্বার থেকে মেয়ে স্কুলে যেতে পারবে -- এই সব হ্যানা-ত্যানা ক্যালকুলেশন ছিলো। আমার কিন্তু তেমন কিছু হেকটিক লাগে নি। কিছু তো করছি না, গাড়িতে বসেই তো যাওয়া!

    এর পরের জার্নি সবই আমি আর কন্যাই করেছি -- সুকান্ত তার পরের দিনই ফেরত এসেছিলো। তবে ও পুরোটা কভার করতে পারবে না এ আশঙ্কা আমার শুরু থেকেই ছিলো ঃ)
  • সিকি | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:৪৪559088
  • একেই বলে বুলাবা। বুলাবা না এলে ভ্যাষ্ণোদেবী দর্শন করতে যাওয়া যায় না বলে যেমন মনে করে ভক্তরা, লদাখেরও তেমনি বুলাবা আসে। বুলাবা না এলে লাদাখ দর্শন করা যায় না।

    আগে বাঢ়ো।
  • kumu | 133.63.144.141 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ১২:০৭559089
  • আহা বেচারার শরীরে দেয় নি তাই ফিরে গেছে।ঠিক আছে।
  • hu | 188.91.253.11 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৩:২৫559090
  • খুব সুন্দর লেখা
  • সিকি | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৩:২৯559091
  • শেষ নিশ্চয়ই হয়ে যায় নি? দম বন্ধ করে বসে আছি।
  • de | 69.185.236.51 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৩:৪২559092
  • শেষ হয়নি -- এর পরে আমাদের মা-মেয়ের অ্যাডভেঞ্চার আছে ঃ) তবে আরেকটু সময় লাগবে লিখতে-
  • JAW | 175.12.252.211 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৪:২৭559093
  • অপূর্ব লাগছে। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়লাম। আগে দেখিনি এইটা। ভাল করে আবার পড়তে হবে। ছবিগুলো বড় স্নিগ্ধ ।
  • de | 130.62.185.56 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ২০:২৪559094
  • প্যাংগংয়ের জল খুব পরিষ্কার স্বচ্ছ। টলটলে জলে ছোট ছোট ঢেউ উঠছে আর সেই ঢেউয়ের ধাক্কায় তলার ছোট নুড়ি-পাথর গুলো মুড়মুড়িয়ে উঠছে। কান পেতে এই আওয়াজটা শুনতে বেশ লাগে। লেকের অন্য পাড়ের পাহাড়ের ওপরে রঙের খেলা শুরু হয়ে গেছে। পাহাড়ের ওপরের গ্লেসিয়ারের বরফ ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাচ্ছে, হলুদ, কমলা, লাল -- লাল আলোটুকু ধীরে ধীরে বেগুনি হয়ে এসে চারপাশের আকাশে সেই রঙ মাখিয়ে দিয়ে সূয্যিমামা পাটে গেলেন। তারপরে আরো কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলাম। একটা ছোট বাছুর একটু দূরে বাঁধা ছিলো, সে ক্রমাগত ডাকছে। বোধ্হয় তার ঘরে যাবার সময় হয়েছে।

    সন্ধে নামার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়ার জোর বাড়ছে। পাহাড়ের ছোট ছোট পাথরের দেওয়াল পেরিয়ে নীচে নেমে লেকের একদম পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। লেকের জলে হাত দিতেই যেন হাত জমে গেলো - বরফের মতো ঠান্ডা জল! এবার ওপরে উঠে ক্যাম্পের দিকে এগোতে লাগলাম। অনেক হাঁপিয়ে টাপিয়ে ক্যাম্পে পৌঁছলাম। রাতের খাবার ন'টার মধ্যেই শেষ করার ইন্স্ট্রাকশন রয়েছে। তার পরেই আলো নিভে যাবে। আবার সকাল না হওয়া অব্দি অন্ধকার। এসে দেখলাম টিকিট বুক করে সুকান্ত এসে গিয়েছে। তখন প্রায় আটটা বাজে। খুব টায়ার্ড লাগছে। খেয়েদেয়ে এসেই শুয়ে পড়তে হবে। খাবারের টেন্টের দিকে এগোলাম তিনজনে মিলে। গিয়ে দেখি খাবার দাবারের এলাহি বন্দোবস্ত। এগ কারি ছাড়া বাকি সবই অবশ্য ভেজ। তবুও চোদ্দ হাজার ফিটের ওপরে খাওয়া দাওয়ার এমন এলাহি বন্দোবস্ত পাওয়া - জাস্ট ভাবা যায় না! তবে আশে-পাশের টেবলে তেমন এনজয় করে খাবার লোক কমই দেখলাম। বেশীর ভাগেরই মাথা টেবিলের ওপরে - এ এম এসাক্রান্ত! অনেকে ঠান্ডাতেও কাবু। আমরাও ক্লান্ত ছিলাম। তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে এসে টেন্টের মধ্যে ঢুকলাম।

    ডাইনিং টেন্ট থেকে নিজেদের টেন্টে ফিরে আসতে আসতে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি চাঁদটা ধীরে ধীরে ঘন কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস ফলতে আরম্ভ করেছে। কাল থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা। ভাগ্যিস আজ এসেছিলাম। প্যাংগংয়ের অমন নীল জল দেখা হতো না নয়তো। ফিরতে ফিরতে ঠান্ডায় নাক-টাক নীল হয়ে গেলো। হু হু করে হাওয়া দিচ্ছে। টেন্টে ঢুকে কোনমতে কোট খুলেই বিছানায় সোজা কম্বলের নীচে। কাল সকালে ভোরে উঠতে পারলে সূর্য্যোদয় দেখা যাবে - গ্লেসিয়ারের ওপর প্রথম আলো এসে পড়বে। তারপরে পাহাড়ে আর সবশেষে লেকে। তবে আকাশের যা অবস্থা দেখলাম তাতে সেসব দেখতে পেলে হয়!

    পরদিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে বাথরুমে গিয়ে কল খুলতেই হাতে যেন ছ্যাঁকা খেলাম। এখানে তো আর গিজার নেই! সাংঘাতিক ঠান্ডা জল! কোনমতে মুখ টুখ ধুতে গিয়ে দাঁতে ঠকঠকানি লেগে গেলো। তারপরে কোট টুপী পড়ে, ক্যামেরা নিয়ে টেন্টের জিপ ভালো করে বাইরে থেকে টেনে দিয়ে বাইরে গেলাম। ডাইনিং টেন্টের সামনে একটা ওপেন টেন্টে বসে চা খেতে খেতে সূর্য্যোদয় দেখার বন্দোবস্ত। ব্যবস্থাপনায় তাক লেগে যায় আমার। স্থানীয় কিছু মানুষ সবসময় দৌড়োদৌড়ি লাগিয়ে রেখেছেন ট্যুরিস্টদের সর্বময় সুখসুবিধার জোগাড়ে। সেখানে তখন একটি পুণের মারাঠী ফ্যামিলি বসে বসে চা খাচ্ছিলেন। এক কাপ চা হাতে নিয়ে আমি আরেকটু এগিয়ে লেকের দিকে নামলাম। মোটামুটি ফাঁকা দেখে একটা জায়গায় দাঁড়ালাম। ঘড়িতে তখন সাড়ে পাঁচটা মতো। সূর্য্যোদয় পাঁচটা পঁয়তাল্লিশ নাগাদ হওয়ার কথা। পূবের আকাশ রাঙা হয়ে এসেছে। অনেক দূরে তাকালে দেখা যাচ্ছে পরিযায়ী পাখিদের ঝাঁক আস্তে আস্তে এসে জড়ো হচ্ছে লেকের ধারের বালুচরে। খুবই ধীরে ধীরে - নৈঃশব্দ ভঙ্গ করা যাবে না, এমন যেন চুক্তি আছে ওদের সঙ্গে!

    আস্তে আস্তে গ্লেসিয়ারের ওপরটা লাল রঙের হয়ে গেলো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি, অদ্ভূত কুঁড়েমি গ্রাস করছে, হাত তুলে ফটো নেওয়ার কথা মনে আছে, কিন্তু নিতে ইচ্ছে করছে না! গ্লেসিয়ার থেকে সত্যি সত্যি পাহাড়ের ওপরের স্নো পিক গুলো লাল-কমলা মেশানো হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে আলোর গতিপথ এতো সুন্দর করে চোখে ধরা পড়ে - ধীরে ধীরে আলোর সিঁড়ি নামছে পাহাড়ের গা বেয়ে! তবে লেকের ওপরে এসে পড়ার ঠিক আগের মূহুর্ত্তে কালো মেঘ এসে সব ঢেকে দিলো -- একটু খারাপ লাগলো! তবে এই ঠিক আছে! পাওনা-গন্ডায় একটু ফাঁক থাকা ভালো! তাতে ভবিষ্যতের আশা বজায় থাকে!

    চুপচাপ আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসি। সেই মারাঠী ফ্যামিলি তাঁদের দুই কন্যা আর এক জামাতা সহ ঘুরতে বেরিয়েছেন। জামাতা ও কন্যা ডেন্টিস্ট। ওনাদেরও গিন্নী আর ছোটমেয়ে অসুস্থ। ওনারা আসার পথে মানালি -লে বাই রোড এসেছেন। একথায় সেকথায় ওনাদের বললাম, কালকে আমার হাজব্যান্ড বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন, আমি একটু দোটানায় আছি, ছোট মেয়ে নিয়ে অতোটা পথ পাড়ি দেওয়া ঠিক হবে কিনা। ওনারা খুবই উৎসাহ দিলেন। প্রায় জনশূন্য রাস্তা - তবে মধ্যের যেকোন ছোট জনপদের মানুষজন বড়ো ভালো - কোন চিন্তা নেই, আপনি নিশ্চিন্তে চলে যান! সকালবেলার সূর্য্যের আলোয় মানুষগুলির দেওয়া ভরসা বড়ো ভালো লেগেছিলো -- আনকনভেনশনাল!
    ফিরে এসে মেয়েকে আর সুকান্তকে ডেকে তুললাম, তাড়াতাড়ি না বেরোলে লে ফিরতে দেরী হয়ে যাবে। পথের মধ্যে বৃষ্টি নামলে রাস্তায় ধস নামার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করে বেরোতে হবে। মেয়ে একটু অনুযোগ করলো - কেন সানরাইজ দেখতে ডাকলাম না। আসলে ওরা এতো টায়ার্ড হয়ে আছে দেখেই আর ডাকিনি। এতোটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর কালকেও আবার কয়েকশো মাইল যেতে হবে। মেয়ে সুস্থ না থাকলে এই ঝুঁকিটা নেওয়ার সাহস করবো কি করে! দুজনকে রেডি করে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে ফেললাম। তারপরে ব্রেকফাস্টের জন্য আবার ডাইনিং টেন্টে গেলাম। ব্রেকফাস্টেও নানারকম বন্দোবস্ত। প্রায় দশ - পনেরো রকমের আইটেম, পুরি-ছোলে, ব্রেড, জ্যাম, ওমলেট, ফল, দুধ, ডিমসেদ্ধ, কর্নফ্লেকস, মুয়েসলি - এইসব। ভালো করে খেয়েদেয়ে রেডি হলাম। রাস্তায় সম্ভবত থামবো না আর - একবারে লে তে গিয়েই আবার খাওয়াদাওয়া হবে।

    সুকান্তরও একটু মনখারাপ -- কালকে চলে যাবে বেচারা। তবে আমি ঠান্ডামাথায় ভেবে দেখলাম, শরীর খারাপ নিয়ে অতোদূর ট্রাভেল করতে ও জাস্ট পারবে না! জোর করলে ব্যাংয়ের ছুঁচো গেলার অবস্থা হবে। তার থেকে ও ফিরে যাক। লে তে ফিরে আমি আমার দুই হেল্পিং হ্যান্ডকে ফোন করে দেবো। তাদের তো ছুটি দিয়ে এসেছিলাম আমরা না ফেরা অবধি!

    ফিরে এসে রেডি হচ্ছি বেরবো বলে এমন সময় একটি স্থানীয় ছোটখাটো মেয়ে এসে বল্লো, আপনারা তো লে অব্দি যাচ্ছেন, আমায় একটু লিফট দেবেন, আমি ওখানে কাজ করি, ছুটিতে বাড়ি এসেছিলাম। দোর্জের গাড়িটা বড়ো - তাই রাজী হয়ে গেলাম, তবে দোর্জেকে জিজ্ঞেস করতে হবে। গাড়ীটা দূরে দেখা যাচ্ছে। কাছে যেতে একগাল হেসে দোর্জে নিজেই এগিয়ে এলো - ম্যাডাম, আমার এক বন্ধু এখানে থাকে, লে তে কাজ করে, আপনাদের অসুবিধে না থাকলে ও একটু পিছনে বসে যাবে? আমিও ওই মেয়েটির কথা বল্লাম। পিছনের সীট থেকে জিনিসপত্র আমাদের সামনে নিয়ে এলাম। পিছনে ওনারা দুজন বসে গেলেন।
    ফেরার পথে আরেকবার এসে সেই পরিযায়ী পাখিদের চরে এসে গাড়ি দাঁড় করিয়ে নামলাম। কালকের নীল-জল-হলুদ বালুচর আজ স্লেট রঙের জল আর মেটে রঙের বালুতে একটু বিষণ্ণ দেখাচ্ছে। পাখীরা ওড়াউড়ি করছে, দূরের পাহাড়ের গায়ে মেঘের ফাঁক দিয়ে একটা অদ্ভুত আলো এসে পড়েছে, যেন স্বপ্ন দেখছি। ঘোর ভাঙলো দোর্জের ডাকে, এসে গাড়িতে বসলাম। ফেরার পথে তেমন বলার কিছু নেই আর। সঙ্গের ভদ্রমহিলা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বমি-টমি করে - ওনাকে পিছনে শুইয়ে শেষে গাড়ি চালাতে হয়েছিলো দোর্জেকে। সুকান্তর শরীর ভালো নেই বলে আর সঙ্গের ভদ্রমহিলাও সুস্থ বোধ করছিলেন না, তাই ফেরার পথে আমাদের থিকসে আর হেমিস দেখার প্ল্যান বাতিল করতে হলো। ঠিক হ্যায় - নেক্সট টাইম দেখবো!

    লে তে ঢোকার সাথে সাথেই কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেলো। ভদ্রমহিলাকে ওনার গন্তব্যস্থলে নামিয়ে আমরা হোটেলে পৌঁছলাম। দোর্জের সাথে একটু কথা বলা বাকি - ওকে বললাম, দেখো আমরা দুজন শুধু কাল মানালি যাবো। আমার কত্তা ফেরত যাচ্ছেন। তুমি বাপু একটু বুঝেশুনে চালিও। এই কথা শুনে সে বল্লো, ম্যাডাম - আমিও বলবো ভাবছিলাম। আজ সকালে মানালি থেকে আমার একবন্ধু গাড়ি নিয়ে এসেছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী - ইনোভা একটু নীচু গাড়ি, এই গাড়ি নিয়ে অতো খারাপ পাথর বের করা রাস্তায় গেলে অসুবিধে হতে পারে। তাই আমি অলরেডি আমার আরেক বন্ধুকে বলে রেখেছি - ওর নাম জিগমেত, ওর কাছে উঁচু জিপ আছে। ও আপনাদের নিয়ে যাবে। কোন চিন্তা নেই! আমি পড়লাম একটু ফাঁপরে। দোর্জেকে কয়েকদিন ধরে দেখছি, ভদ্র ছেলে - প্লাস সিকির রেকো আছে! চিনিনা-জানিনা এই জিগমেত আবার কেমন হবে কে জানে!

    এই দুশ্চিন্তার কথা দোর্জেকে বলায় সে একগাল হেসে বল্লো- আপি কোই ফিকর মত করো ম্যাডাম - মেরা বহত পুরানা দোস্ত হ্যায়, মানালি তক পঁহুচানে কা গ্রান্টী ম্যয় দেতা হুঁ -- জলে ঝাঁপ দিয়ে আর চিন্তা করে কি হবে! এই ভেবে আমিও আর কথা না বাড়িয়ে হোটেলে উঠে গেলাম। তখন প্রায় দুটো বাজে। হাত-পা ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু বাজারে বেরোলাম লাঞ্চ করতে। বেশ খানিকটা হাঁটার পর জার্মান বেকারী। ওখানে খুব ভালো সিজলার পাওয়া যায়। বাঁধাকপির পাতার নৌকোয় করে চিকেন সিজলার এলো, সাথে সবজি আর ভাত। খেয়েদেয়ে এককাপ করে কফি খেয়ে এদের বেকারি সেকশনটায় গেলাম। খুব ভালো কুকিজ রাখে এরা। আমরা কিছু কুকিজ কিনে নিলাম। ক্যাশিউ কুকিজটা খুব ভালো আর ক্রিসপি। ওটা বেশ খানিকটা কালকের জার্নির জন্য কিনে নিলাম। সঙ্গে কয়েকটা মাফিন। তারপরে সামনের দোকানপাট গুলো একটু ঘুরতে লাগলাম। লে তে অদ্যই শেষ রজনী। লম্বা জার্নির উপযুক্ত শুকনো খাবার বাদাম, ড্রাই ফ্রুটস, চানা এইসবও কিনলাম। তারপরে স্থানীয় বাজারে কয়েকটা স্কার্ফ, একটা বুদ্ধিস্ট গংয়ের মতো জিনিস, আর ছোটখাটো পাথরের জুয়েলারি কিনলাম। স্টোন জুয়েলারি, টারকোয়েজ, স্যান্ডস্টোন, মালাকাইট অস---ম্ভব কম দামে বিক্রি হচ্ছে। আমার স্টোন জুয়েলারী খুব পছন্দ। দরদাম করে দারুণ কম দামে লোক্যাল মহিলাদের কাছ থেকে কিছু জুয়েলারী কিনলাম। ভাবা যায় না -- টারকোয়েজের পুরো সেটটার দাম নিলো মাত্র পাঁচশো টাকা! একই পাথর আমি মানালীতে একটা হাল্কা-পুল্কা সেটের দর কয়েক হাজার বলতে শুনেছি। এইসব কিনেকেটে টিবেটান রিফিউজি মার্কেটে ঢুকলাম অস্তরের সন্ধানে। শুধু পেপার স্প্রে তে হবে না। সেখানে নানা রকম কুকরী, তরোয়াল, বর্শার ছড়াছড়ি। অজস্র এরকম রিফিউজি মার্কেট ছড়িয়ে আছে গোটা লে জুড়ে। অ্যান্টিক বা কিউরিও কালেকশনের স্বর্গ প্রত্যেকটা। এমনিই ঘুরে দেখে সময় কাটানো যায়। মুখোশ আছে অন্ততঃ কয়েকশো রকমের। সে যাই হোক, আমার এখন পকেটে একটু টান রেখে চলতে হবে, অনেকটা জার্নি বাকি আছে। খুঁজতে খুঁজতে একজায়গায় দেখলাম প্রায় আট ইঞ্চির নানা কারুকাজ করা ইয়াকের শিংয়ের খাপ আর তার মধ্যে ইঞ্চি সাতেকের ধারালো কুকরী! দেখেই কেমন রক্ত গরম হয়ে গেলো। বাইরে তখন আবার ঝমঝমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দোকানদার মেয়েটি কেমন করুণ মুখে বল্লো -- আজ সকাল থেকে খারাপ ওয়েদারে বিক্রিবাটা নেই আপনিই প্রথম খদ্দের। আটশো টাকা দিলেই দিয়ে দেবো -- এটার আসল দাম পনেরোশো! আমি কপাল ঠুকে বললাম চারশোয় হবে? করুণ হেসে বল্লো -- তাই দিন! আজ আর বিক্রিবাটা হবে না, এবার আমিও উঠবো! আমার কি মনে হোলো -- পাঁচশো বার করেই দিলাম মেয়েটির হাতে। কি জানি - বেশী কম করছি হয়তো দামটা! সে অনেক থ্যাংকু ট্যাংকু বলে ভালো করে প্যাক করে দিলো জিনিসটা।
    হাতে নিতেই হেব্বি সাহস এলো মনে! গটগটিয়ে হেঁটে বাইরে এলাম। ঝমঝমে বৃষ্টিতে ছাতা খুলে একটা ট্যাক্সি ধরে ফেরত এলাম হোটেলে।

    হোটেলে ফিরে বিল পেমেন্ট করতে গিয়ে দেখলাম ওদের মেশিনে আইসিআইসিআইয়ের কার্ড সোয়াইপ করা যাচ্ছে না। অগত্যা মেয়ে আর সুকান্তকে রুমে পৌঁছিয়ে আমি নিয়াজ আহমেদ, অটলালার সঙ্গে আবার গাড়ি নিয়ে চললাম মার্কেটে। নিয়াজ আবার আসার নেমন্ত করলো -- আমাকে বল্লো চলুন আপনাকে শপিং করতে হেল্প করি - আমার চেনা ভালো দোকান আছে। আমি বল্লাম - এবারের মতো শপিং শেষ, পরের বার এসে তোমার সাথেই শপিংয়ে বেরবো! নিয়াজ খুব খুশী! ফিরে এসে কর্মচারীদের টিপস দেবার সময়ে ওরা জিজ্ঞেস করলো মানালী, চন্ডিগড় এসব জায়গায় কোথায় হোটেল বুক করেছি। মানালী আর মান্ডিতে হোটেল বুক করা ছিলো। চন্ডিগড়ে তখনো করিনি। সেই শুনে হোটেলের রিসেপশনিস্ট পীতাম্বর সিং বল্লো -- আমার ভাইয়ের খুব ভালো হোটেল আছে চন্ডিগড়ে, বুক করে দিচ্ছি, আপনি ওখানে গিয়ে পেমেন্ট করে দেবেন। এই বলে সে ফোন টোন করে বুক করে দিলো হোটেল। আমি ভাবলাম - দেখা যাক, চন্ডিগড়ে গিয়ে যদি দেখি হোটেল খারাপ, তখন চেঞ্জ করলেই হবে।সাধারণতঃ বাড়ানো হাত ধরতে আমি দ্বিধা করি না - তবে তার ভালো -খারাপ দুই এফেক্টই আছে!

    পরের দিন আবার বড়ো পথচলা! তাই খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ প্যাকিংয়ে লাগলাম! শরীর যেন আর চলছিলো না! তারপরে একটু টেনশনও হচ্ছিলো - এতো লম্বা পথ দেড়জন মহিলায় পাড়ি দেওয়া। তবে পিছিয়ে গেলে মেয়ে শিখবে - "একা চলতে গেলে ভয় পেতে হয় - সঙ্গে একজন পুরুষ না থাকলে একা পথ চলা যায় না!" এইসব ভেবেই পিছোইনি - আর নতুন পথে চলার আনন্দ বা রোমাঞ্চ তো সবসময়েই সঙ্গী থাকে! সুকান্তকে তাই আশ্বস্ত করলাম - দেখো কোন ভয় নেই, এটা যদিও খুব ছোট আর সামান্য একটা ব্যাপার, তাও এই ছোট-ছোট স্টেপ গুলো থেকেই বাচ্চারা শেখে। পথে বেরিয়ে পড়লে পিছোবো না - এইটা যেন মেয়ে শেখে! খুব করুণ মুখেই বেচারা মেনে নিলো। কাল আমরা বেরোনোর আগেই ওকে বেরিয়ে পড়তে হবে। সাতটা নাগাদ ও বেরোবে আর আটটায় আমরা! তাই এবার ঘুমিয়ে পড়ার পালা। ঘুমোবার আগে আরেকবার টুক করে বারান্দাটা ঘুরে এলাম। দূরের পাহাড়গুলো বেশ মেঘে ঢাকা - কালকেও ওয়েদার খারাপই থাকবে! বেশ জোরে হাওয়া দিচ্ছে, লম্বা পপলার গাছগুলো দুলছে, সামনে আপেল আর অ্যাপ্রিকটের কেয়ারিতেও সর্সর্ আওয়াজ। এছাড়া পুরোপুরি নিস্তব্ধ পরিবেশ। খানিকক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বুকভরে টেনে নিলাম লে'র বাতাস। কি জানি, আবার কবে আসবো! লে আমার চিরকালের ভীষণ প্রিয় একটা জায়গা হয়ে রয়ে যাবে।

    লিখতে ভুলে গেছিলাম সেই ডাক্তারবাবুর কথা। সোনম নরবু হসপিট্যালে গতবার আমার মেয়ে যাঁর তত্ত্বাবধানে ভর্ত্তি ছিলো। এবার এসেই ছোট একটা থ্যাংক-য়ু কার্ড আর কিছু চকোলেট নিয়ে ওনার সঙ্গে দেখা করতে গেছিলাম। ডাক্তার-বাবু ভিজিটিং আওয়ারের পর লে'র একটা জায়গায় রোগী দেখেন। দোর্জেকে বলতেই বল্লো - ওনাকে এখানে সবাই চেনে! কিন্তু যেখানে উনি রোগী দেখেন সেই জায়গাটা তো আপনাদের পছন্দ হবে না! - আমদের হাতে সময় কম, আবার আরেকবার আসার সময় নেই। তাই দোর্জেকে বলেছিলাম - তুমি নিয়ে চলো, আমরা ওনার সঙ্গে দেখা না করে যেতে চাই না! ডাক্তার-বাবুর ডিসপেন্সারি অত্যন্ত ছোট গলি দিয়ে এগিয়ে গিয়ে প্রচন্ড ঘিঞ্জি একটা বাজারের মতো জায়গায়, ছোট্ট একটা ঘরে। রোগীর ভিড় উপ্চে পড়ছে। রোগীদের দেখলেই মলুম হয় তাঁরা অত্যন্ত গরীব! এটা দাতব্য চিকিৎসালয়। লাইন দিয়ে দাঁড়াবার সময় নেই, তাই লোকজনকে রিকোয়েস্ট করলাম, যদি একটু অনুমতি দেন, আমরা ওনার সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলেই চলে আসবো! লোকজন সানন্দেই পথ ছেড়ে দিলো। ভেতরে ঢুকে দেখি, পাশাপাশি লাগানো দুটো ছোট্ট মতো বেডে দুই রোগী শুয়ে কাতরাচ্ছে, পাশে বেঞ্চে তাঁদের আত্মীয় - পরিজন উদ্বিগ্ন, নার্সের হাতে একটা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ উঁচু করে ধরা আর ডাক্তার বাবু গম্ভীর মুখে প্রেসার মাপছেন! পুরো ঘেঁটে ঘ' অবস্থা! ডাক্তারবাবুর মুখে একটা মাস্ক। শুধু দুটো চোখ বের করে তিনি জিজ্ঞাসু মুখে আমদের দিকে একবার তাকালেন। আমি তখন ভাবছি, কোথা দিয়ে শুরু করি? এই সময় আমার আড়াল দিয়ে মেয়ের বাড়ানো মুখ উনি দেখতে পেলেন, মুখে হাসি ফুটলো, মাস্কের ভেতর দিয়েই জিজ্ঞেস করলেন - আভি ক্যাইসা হায়? ঠিক হো গয়া অ্যাপেন্ডিক্স? - আমি হাঁ করে রইলাম - বাকি কথা-বার্তা মেয়েই এগিয়ে সেরে ফেল্লো - কার্ড -টার্ড ওনার হাতে ধরিয়ে ঠিক চার মিনিট ছাপ্পান্ন সেকেন্ডের মাথায় আমরা ডিস্পেন্সারির বাইরে!
  • de | 130.62.185.56 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ২০:৪১559095
  • বেশী সময় নিচ্ছি - সবার পড়ার ধৈর্য্যই হয়তো থাকবে না ঃ) - কিন্তু আমি কিচ্ছুটি বাদ্দেবো না!

    প্যাংগংয়ের ছবি -

    হলদে বালুচর -








    ব্রাহ্মনী হাঁস, যদিও ভালো ওঠে নি-
  • de | 130.62.185.56 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ২০:৫১559096
  • উল্টো দিকের পাহাড় -





    পাহাড়ের ওপর থেকে প্যাংগংয়ের ক্যাম্প-



    <

    <

    <
  • de | 130.62.185.56 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ২১:০৩559099
  • সূর্য্যাস্ত-




    ডাইনিং টেন্ট আর ওপেন টেন্ট -


    সূয্যি উদয়






    পরিযায়ীরা -





    শ্যুটিং পয়েন্ট


    <
  • সিকি | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ২১:২১559101
  • অহো, অহো।

    দে, পর পর ইংরেজিতে লিংক দিলে আর ক্লোজিং ব্র্যাকেটগুলো প্রত্যেকটার আগেপিছে দিও না। শুধু প্রথম লিংকের শুরুতে ব্র্যাকেট দিয়ে শুরু করো, আর শেষ লিংকের শেষে ক্লোজিং ব্র্যাকেট দাও।
  • | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ২১:৩৬559102
  • উঃ দেবযানীকে একটা খটাশ করে কামরাদারি টাইপের সেলাম। পথে বেরিয়ে কক্ষণো পিছিয়ে আসতে নেই। একেবারে ঠিক কথা। আর শপিং ডিটেইলসের জন্য একটা টাইট হাগ।
  • de | 130.62.185.56 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ২১:৩৯559104
  • এই ফটোটা আসছে না কিছুতেই -

  • de | 130.62.182.209 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ২২:৫০559105
  • দমদি, থ্যাংকু ঃ)
  • siki | 135.19.34.86 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ১৫:০৬559106
  • দে-র গল্প শেষ পর্যন্ত পড়ার তর সইছে না। দে, এইবারে একটু হাত চালিয়ে। কাল পরশু উইকেন্ড আছে।
  • সিকি | 135.19.34.86 | ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ ১৩:৫৪559107
  • দে, তুলে দিলাম।
  • de | 24.96.167.165 | ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ১৩:১৫559108
  • নিজেরই কি'রম লজ্জা মতো করছে লিখতে -- তা ও লিখেছি যখন দিয়েই দি' -

    =================================

    পরের দিন বেশ ভোরবেলা উঠে রেডি হয়ে প্রচুর সাবধানবাণী উচ্চারণ করে সুকান্ত বেরিয়ে গেলো। আমিও উঠে পরে বেরনোর তৈয়ারী করতে লাগলাম। ব্যাগপত্তর গুছিয়ে চা খেয়ে স্নান সেরে এসে মেয়েকে তুললাম। ভালো করে স্নান সারাটা জরুরী, কারণ মানালী পৌঁছনোর আগে সম্ভবত ভদ্রস্থ ওয়াশরুম মিলবে না। ব্রেকফাস্ট সেরে বেরোতে বেরোতে প্রায় সওয়া আটটা বেজে গেলো। হোটেলের সবাইকে টা টা করে জিগমেতের সঙ্গে আলাপ করতে এলাম। একখান ছাই রঙা জাইলো নিয়ে ভাবলেশহীন মুখে সানগ্লাস চোখে সে দাঁড়িয়ে আছে। কথা এগোতে গিয়ে বুঝলাম তাঁর মুখে হাসির লেশমাত্রও কখনো ফোটে না। বাক্যের মধ্যে শুধু দুটি -- “হাঁ, ম্যাম” আর “নো ম্যাম”! হাসিখুশী, গোপ্পে দোর্জের পুরো কনট্রাস্ট তার বন্ধু। দোর্জেকেই বলে দিলাম – বাপু, কথা-টথা শুনবে তো তোমার বন্ধু? সে একগাল হেসে আবার ফিক্র না করার মন্ত্র শুনিয়ে গেলো! বেরোবার সময় লে তে বেশ রোদ্দুর ছিলো, তাও কোট ইত্যাদী হাতের কাছেই রাখলাম। যাবার পথে ঠান্ডা হবে খুব, অনেক গুলো পাস আছে। সেরকমই পড়ে এসেছি। আর সাথে রেখেছিলাম যাবতীয় শুকনো খাবারের প্যাকেট। এই রাস্তায় পেট ভরে খেয়ে পথ চলা মুশকিল, মাঝে সাঝে মুখ চালাতে চালাতে যাওয়া বেশী ভালো। মেয়ে খুব এক্সাইটেড, “মাম্মা, শুধু আমাদের দুজনের অ্যাডভেঞ্চার! কি দারুণ ব্যাপার বলো তো!” আমি একটু একটু হাসছি, মানালী পৌঁছনোর আগে হাসিও যেন জোরে আসছে না! লে ছেড়ে বেরনোর আগে একটা দোকানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দু-বাক্স জলের বোতল কিনলাম, প্রায় তিরিশ লিটার মতো! জিগমেত মনে হলো খুব অবাক হয়েছে, তবে মুখে বাক্যি নেই। এই জলের বোতল কেনার ডিসিশানটা যে পরে কত কাজে দিয়েছে, সে কথায় আসছি পরে।
    লে থেকে বেরিয়ে কারু এসে গেলো খুব তাড়াতাড়ি। এই কারুতেই প্যাংগং যাবার পাস নিতে হয়। আমাদেরো লে-মানালী রোডে যাওয়ার পারমিট দেখাতে হবে এখানেই। আমরা গাড়ীর পাহাড়ায় রইলাম। জিগ্মেত গেলো পারমিট দেখাতে। কারুতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই বেশ কালো করে মেঘ করে এলো, আমরা টুক করে গাড়ীর মধ্যে চলে এলাম। আজ প্রথমে আমরা যাবো সো মোরিরি। সেখান থেকে সো কার হয়ে সারচু। এই ট্রিপটা অ্যাবরাপ্টলি লম্বা হয়েছে একটু। আমি সো কারে একদিন থাকার কথা বলেছিলাম। সুকান্ত কিছুতেই রাজী হয় নি, আপিসে বেশীদিন ছুটি হয়ে যাবে বলে! পরে এই রাস্তা কভার করতে গিয়ে মেয়ে বল্লো – ভাগ্যিস বাবা চলে গেছে, নাহলে খুব শরীর খারাপ হতো এই রাস্তায়, কিছুতেই পারতো না! - আসলে কারু হয়ে, উপসী পেরিয়ে আরো কিছুদূর রাস্তা বলে কিছু একটা আছে। তারপরে আর রোড নেই সেই অর্থে! সো মোরিরি বা সো কার যাওয়ার রাস্তার বেশীর ভাগটাই এমন রাস্তাহীন রাস্তায় এলোমেলো পাথরের ওপর দিয়ে বা কখনো বালি আর ঘাস মেশানো জমির ওপর দিয়ে চলেছে জিপ। আর ঝাঁকুনি যা দেয়, তাতে চোদ্দজন্মের আগের অন্নপ্রাশনের কথা মনে করিয়ে দেয়! জিপ থেকে নামার পর সব জয়েন্টগুলোয় হাত বুলিয়ে একবার দেখে নিতে হয়, সবগুলো ঠিকঠাক জায়গায় আছে কিনা!
    দেখতে দেখতে উপসী পেরিয়ে গেলাম। আমার তখনো ধারণা যে আমরা টাংলাংলার (সেকন্ড হায়েস্ট মোটরেবল পাস) ওপর দিয়েই যাবো। উপসীর পরে আমার হিসেব মতো রুমসে আসার কথা। কিন্তু এলো হিমিয়া, কেরি আর তারপরে চুমথাং। ম্যাপ হাতে নিয়ে বুজলাম, ও আমাদের টাংলাংলার প্যারালাল রোড দিয়ে একটু ঘুরপথে পাসটা এড়িয়ে যাচ্ছে। তখন আমার সঙ্গে জিগমেতের যে বাক্যালাপ (আমার দিক থেকে) ভার্সাস শব্দালাপ (জিগমেতের দিক থেকে) সেটা খানিকটা এই রকম –

    জিগমেত, আমারা কি টাংলাংলা হয়ে যাবো না?

    নো, ম্যাম!

    কিন্তু, আসার আগে তো দোর্জের সাথে কথা হয়েছিলো যে মানালী যাবার দিন আমরা টাংলাংলা হয়েই যাবো!

    হাঁ, ম্যাম!

    তবে কি হলো? ওই রাস্তা দিয়ে গেলাম না কেন আমরা?

    হাঁ ম্যাম!

    এই অব্দি হাঁ-নায়ের বাজনা শুনে আমার একটু অধৈর্য্য লাগছিলো। ইদিকে রাস্তার এক পাশে প্রচন্ড স্রোত-অলা ঘোলা জলের ইন্দাসের পাশে গাড়ী দাঁড় করিয়ে জিগ্মেত হাত তুলে আমাদের টাংলাংলা দেখালো। মুখে কোন বাক্যি নেই। আমি দেখলাম পাহাড়ের ওপরে খানিক দূর দেখা যাচ্ছে, বরফের অঞ্চল শুরু হওয়ার পর থেকেই কালো মেঘ আর ধোঁয়ায় ঢেকে আছে গোটা জায়গাটা। বুঝলাম, সম্ভবত ওপরে প্রবল তুষারপাতের কারণে ও রাস্তা যাবার অযোগ্য।

    আবার কৌতূহলী জিজ্ঞাসা –
    উপরে কি রাস্তা খারাপ? আমরা এই রাস্তায় কেনো যাচ্ছি?

    অনেক কষ্টে একটা শব্দ –
    “বর্ফ, ম্যাম!”

    দুচ্ছাই! কথা চালানোই ভার! পরে দোর্জে ফোন করলে ওকে জিগিয়ে জেনেছিলাম, ওই রাস্তা সেদিন প্রবল তুষারপাতের কারণে বন্ধ ছিলো!

    আরো খানিকক্ষণ যায়, রাস্তার ধারের দৃশ্য ধীরে ধীরে বড়ো সুন্দর আর বৈচিত্রময় হয়ে উঠছে। উঁচু উঁচু পাহাড়, মাঝে ইন্দাসের পাশের সবুজ ক্ষেত, বুনো গোলাপের ঝাড়, ঘাসজমিতে খেলে বেড়ানো অজস্র মারমট! তারা দূর থেকে গাড়ির আওয়াজ পেলেই একছুট্টে গত্তের মধ্যে সেঁধিয়ে শুধু মুখটুকু বার করে পুঁতির মতো চোখ মেলে চেয়ে থাকে! এইসব দেখেটেখে টাংলাংলা না যাওয়ার দুঃখ বেশীক্ষণ থাকলো না! দেখতে দেখতে চুমথাং এসে গেলো। সো মোরিরি যাবার আগে একটু বড় গ্রাম। আজ কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদ্দুর। এখানে গাড়ি থামিয়ে জিগমেত জ্যাকেট আনতে গেলো, এতোক্ষণ একটা হাফহাতা-টি-শার্ট পড়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো। আরো গাড়ির টুলবক্স না কি সব নিতে হবে। তখন বেলা প্রায় সাড়ে - বারোটা। আমরা এখন হ্যাবিচুয়েটেড, আর ওয়াশরুম যাওয়ার ভুল করিনা। বড় পাথরের আড়াল খুঁজি খালি! অবশ্য এটাও ঠিক লিখলাম না, ওয়াশরুম অব্দি যাই, কিন্তু ভিতরে ঢুকতে পারিনা!

    গাড়িতে ফিরে এসে দেখলাম, জিগমেত এসে গিয়েছে। আবার চলা শুরু, টফি-চকলেট-চানা খেতে খেতে। প্ল্যানিং হলো সো-কার অব্দি পৌঁছে তারপরে লাঞ্চ করবো। খানিকদূর গিয়েই মাহি ব্রীজ। ইন্দাস ক্রস করে ওপারে যেতে হবে। এতোক্ষণ তবু রাস্তায় কালো রঙের পিচের মতো কিছু একটা কখনো ছিলো মনে হয়, কিন্তু এরপরেই আর রাস্তা বলে কিছু নেই! হয় বালি আর পাথরের নুড়ি ভরা পায়ে চলা পথ, নয়তো পাথুরে ঘাসজমি। এরই মধ্যে দিয়ে নাচতে নাচতে আমরা এগোতে থাকি! অদ্ভূত নির্জনতা চারিদিকে, গোটা পথে আমি একজনও মানুষ দেখি নি, কোন গাড়ি নয়, পাখীগুলোও যেন ডাকে না। শুধু ছোট পাহাড়ী নালায় ইয়াকের দল জল খাচ্ছে বা নালার ধারের ঘাসজমিতে চরছে। তারাও তো বিশেষ নড়াচড়া করে না – শুধু মারমট দেখতে পেলে তবেই মনে হচ্ছে গোটা জায়গাটায় প্রাণের স্পন্দন বলে কিছু আছে। এর মাঝে একটা ছোট্ট পুঁচকে পাস পেরিয়ে এলাম। নাম শাং লা। অবশ্য এদিককার কোন পাসই ষোল-হাজার ফিটের কম নয়। সো মোরিরি লেকটাই তো পনেরো হাজার ফিটের ওপরে। প্যাংগংয়ের মতো এই লেক আর সো কারও ব্রাকিশ লেক বা লবণাক্ত জলের লেক। জিগমেত এমনিতে কথা বলে না, তবে ছবি তোলার জন্য গাড়ি দাঁড় করাতে বল্লে দিব্যি “হাঁ ম্যাম” বলে দাঁড়িয়ে যায়। অনেক দূর থেকে প্যাংগংয়ের মতো করেই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে সো মোরিরি দেখা যায়।
    আমরা যখন লেকের ধারে পৌঁছলাম, তখন আমরা দুজন আর জিগমেত ছাড়া গোটা চত্বরে আর কোন জনপ্রাণী নেই, কোন আওয়াজ নেই। ঝিম ধরানো স্তব্ধতা। চারপাশে বালির মধ্যে ঘন সবুজ রঙের একধরণের কাঁটাঝোপ। চারপাশের বালি হাওয়ায় উড়ে গিয়ে শুধু কাঁটা ঝোপের জায়গাটা উঁচুমতো হয়ে আছে। তার ফলে পুরো জায়গা জুড়ে একটা ঢেউ খেলানো স্ট্রাকচার। যেন বালির সমুদ্রে সবুজ সবুজ মাথা আলা ঢেউ। গাড়ি থেকে যখন নামলাম, তখন প্রায় দেড়টা বাজে। দুশো দশ কিমি পাড়ি দেওয়া হয়ে গেলো! একটু ঘুরে ঘুরে দেখলাম। পরিষ্কার টলটলে জল। হাওয়ায় ছোট ছোট ঢেউ উঠছে। অনেক দূরে হাঁস জাতীয় কিছু পাখি দেখা যাচ্ছে। লেকের অন্য পাড়ে কিছু বুনো গাধার মতো কিছু চড়াছিলো – পরে পড়েছিলাম ওগুলো জংলী গাধা, তিব্বত থেকে আসে। ওদের কিয়াং বলে! এতো ঠান্ডায় বোধয় মাছ থাকে না লেকে। লেকের ধারে গিয়ে একটা দাঁতাল কোন জীবের কংকাল দেখতে পেলাম – জলের মধ্যে পড়ে আছে। আহা এখানেই যদি সারাদিন কেটে যেতো! জিগমেত সেই একই রকম ভাবলেশহীন মুখ করে গাড়িতে বসে আছে। জায়গাটা এতো নির্জন, ঘুরতে গিয়ে গাড়িটাকে চোখের আড়ালও করতে পারছি না। ক্যামেরা ছাড়া আমাদের সবরকম মালপত্র গাড়িতেই। যদি গাড়ি চালিয়ে ও চলে যায়, তাহলে সারারাত এখানে এমনিই পড়ে থাকতে হবে! যদিও এখানে এসব হয় না, তবুও চোখ বুজে আমি কখনো বিশ্বাস করি না! সামনে কোন টেন্ট ইত্যাদী কিছুই চোখে পড়ছে না। আসলে সো মোরিরির টেন্টগুলো এখান থেকে আরো অনেকটা দূরে। এইসব অর্থহীন ভাবনা একদিকে মনের মধ্যে আসছে, আবার অন্যদিকে মেয়ের ছুটোছুটি দেখছি, চারিপাশের প্রকৃতি দেখছি আর ভাবনাগুলো মুছে মুছে যাচ্ছে! এতো সুন্দর জায়্গাও যে হয় পৃথিবীতে! খানিকক্ষণ ঘুরে ফিরে মনের সুখে ছবি তুলে আবার গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। এখান থেকে আবার মাহি ব্রিজের একটু পরে পুগা অব্দি একই রাস্তায় ফেরত যাবো, তারপরে পুগা থেকে সো কারের রাস্তা শুরু। সো কার আর সো মোরিরি দুটো লেক থেকেই আগে এখানকার এক যাযাবর উপজাতির লোকেরা লবণ বানিয়ে তা তিব্বতে এক্সপোর্ট করতো। এই চাংপা উপজাতির লোকেদের এখনো সোমোরিরি থেকে সো কার যাবার রাস্তায় তাঁবুর পাশে দেখতে পাওয়া যায়। এরা মুলতঃ পশুচারণ করে। তাঁবুগুলো খুব নীচু, ঢোকার জায়গাটা প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ঢোকার মতন। ইয়াকের কম্বলে তৈরী তাঁবু। তবে শীতকালে এরা থাকে কি করে কেজানে? সো কার খুব এক্স্ট্রীম তাপমানের জন্য খ্যাত। শীতে -৪০ থেকে গরমে +৪০ র মধ্যে তাপমান ভ্যারী করে। ওই ঠান্ডায় মাটির ওপরে শুধু এই তাঁবুতে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কি থাকতে পারে মানুষে? সো কারের রাস্তা আরো খারাপ। বড়ো বড়ো পাথর বেরিয়ে থাকা রাস্তায় গাড়ি প্রায়ই বাম্প করে উঠছে। জিগ্মেত বেশ রাফ চালায় – তবে হয়তো ওর দোষ নয়, এই রাস্তায় ওমনি করে না চালালে হয়তো যাওয়াই যাবে না! আমার তো ভয় লাগছিলো যে গাড়ি খারাপ হয়ে না যায়। এই জনশূন্য প্রান্তরে বাইরে রাত কাটাতে হলে মারা পড়বো! এতোটা রাস্তায় কোথাও কোন ওয়াশরুম নেই, বলতেও পারছি না গাড়ি দাঁড় করাতে। আশায় আশায় আছি সো কারে নিশ্চয়ই কিছু থাকবে। খাওয়া দাওয়া সেখানেই সারার প্ল্যান যখন। প্রায় পঁয়তাল্লিশ কিমি রাস্তা, যার মধ্যে একখান পাসও আছে, নামটা অতি বিদঘুটে, পোলাকোনোকা লা। এর আগে চুমথাং অব্দি আসতে গিয়ে দেখছিলাম, যেখানেই হট স্প্রিং আছে, সেসব যায়গাতেই কোনমতে একটা সিমেন্টের পাঁচিল তুলে ঘর বানিয়ে স্নান করার ব্যবস্থা করে রেখেছে স্থানীয়রা। ফরেনারদের কাছ থেকে পয়সা পাওয়া যায় কিছু। ইন্ডিয়ান কারোকে ওখানে ঢুকতে দেখিনি। আর এইসব রাস্তায় দুপাশের প্রান্তরে এরকম অজস্র হট স্প্রিং! ফুটন্ত জল কোথাও পাথরের ফাঁক দিয়ে, কোথাও বা এমনি মাটি ফুঁড়ে ফোয়ারার মতো উঠছে। দাবীদারবিহীন প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্য। সো কারের একটু আগে একটা ছোট্ট লেক, নামটাও অদ্ভূত, স্টার্টসাপুক সো। তারপরে সো কার শুরু, দেখা যাচ্ছে। ঘড়িতে তখন বেলা তিনটে। পেটে ছুঁচোয় ডন আর ব্লাডারে সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস! পথের পাশে একটা, কেবল একটাই পাকা ঘর-আলা রেস্তোরাঁ। চারপাশে আরো কয়েকটা ঘর উঠছে। মিস্তিরিরা কাজ করছে। বোঝা গেলো ছোটখাটো পথনিবাস গড়ে উঠছে। খাবারের অর্ডার দিতে গিয়ে দেখা গেলো শুধু চাওমিন আর স্যুপি নুডল আছে। দু প্লেট স্যুপি নুডলের অর্ডার দিলাম আমরা। জিগমেত তিব্বতি ভাষায় কিসব অর্ডার দিলো, বুঝলাম না! অর্ডার দেওয়ার পরে ওয়াশরুম খোঁজার পালা। পুরো প্লেন ল্যান্ড, বড় পাথরের কোন সীন নেই! রেস্তোরাঁর মালিককে জিগাতে একটা ভাঙ্গাচোরা নির্মিয়মাণ রুম দেখালো যার কোন দরজা নেই! যাবো কি করে! ভাগ্যক্রমে প্রচুর ধুলোভরা কিছু কম্বল একপাশে পড়ে ছিলো। অন্য সময় হলে ওতে হাতও দিতাম না! এখন তারই একটা তুলে নিয়ে দরজার ফ্রেমের দুপাশ দিয়ে কাপড় মেলার মতো করে টানিয়ে দিলাম। প্রচুর ধুলো উড়তে লাগলো। এদিকে প্রচন্ড হাওয়ায় সে কম্বল উড়েই চলে যায় প্রায়। মেয়ে গেলে আমি, আর আমার সময় মেয়ে – দুজনে মিলে প্রাণপণে ধুলো খেয়ে সেই কম্বল চেপে ধরে কোনমতে হালকা হওয়া গেলো! হাত ধোয়ার কোন বন্দোবস্ত নেই, সাবনের কথা দূরেই থাক! খুব ক্ষিদে পেয়েছিলো, এসে দুজনে মিলে স্যুপি নুডলই অতি তৃপ্তি করে খেলাম। জিগ্মেতের খাওয়াও শেষ – গাড়ির ধুলোটুলো মুছে রেডি। ঘড়িতে তখন প্রায় চারটে। সারচু পৌঁছতে হবে। সেখানকার বেস ক্যাম্পে আজকের রাত্রিবাস! ম্যাপে দেখছি এখান থেকে সারচু প্রায় একশো তিরিশ কিমি। আমার একটু চিন্তা হচ্ছিলো। পাহাড়ী জায়গায় ঝুপ করে সন্ধে নামে। রাত্রিতে এই রাস্তায় গাড়ি কেম্নে চলবে?

    একটু নিশ্চিন্ত হতে জিগ্মেত কে জিগালাম – এখনো তো একশো তিরিশ কিমি, পৌঁছতে কি রাত্তির হয়ে যাবে?

    “হাঁ ম্যাম!”

    অগত্যা আর জিজ্ঞেস করার ঝামেলায় না গিয়ে গাড়িতে চড়ে বসলাম। এখন সো কারের সামনে গিয়ে নেমে একটু ঘুরে সারচু। সো মোরিরি বা প্যাংগংয়ের তুলনায় সো কার কিছুই না। তবে দেখার মতো হলো এর চারপাশের পাহাড়ের বিস্তার। যতদূর চোখ যায় ঢেউ খেলানো পাহাড়ের সারি। চারপাশে কোথাও শুকনো ঘাসের জমি, কোথাও লবণ জমে শুকিয়ে আছে, কোথাও আবার বালুচরের মতো। কয়েকটা ঘোড়া চড়ে বেড়াচ্ছে। বুড়ো ঘোড়াদের এইখানে ছেড়ে দিয়ে যায়! নিস্তব্ধ, শূন্য চরাচরে গাড়িখানা কেমন অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। ইস! এখানে ক্যাম্পে থাকা গেলে সত্যি বড়ো ভালো হোতো!

    সারচুর পথ শুরু হয়। তখনো ভালোই রোদ চারপাশে। এতোক্ষণেও আর কোন ট্যুরিস্ট গাড়ি দেখিনি আমরা। এবার পুরো জনশূন্য রাস্তায় কয়েকজন ঝান্ডা উঁচিয়ে বাইক-বাহিনী দেখা যেতে থাকে। প্রচন্ড গতিতে তারা আমাদের ছাড়িয়ে বেড়িয়ে যায়। এই রাস্তায় কিছু কিছু স্ট্রেচ বেশ ভালো। পাং এর পরে দুটো পাস আসে। লাচুলাংলা আর নাকিলা। বাইরে রোদ্দুর হলে কি হবে – কনকনে হাওয়ায় হাড় অব্দি কেঁপে যাচ্ছে। আর সেই অনুপাতে ধুলো। বাইরের পাহাড়ে অসাধারণ সব ইরোসন স্ট্রাকচার। যেন কোন ভাস্কর অসীম ধৈর্য্যে বসে ছেনি-হাতুড়ী ঠুকে ঠুকে বানিয়েছে। তার মধ্যে রোদ্দুর পড়ে আলো –ছায়ার খেলা। জিগমেত কথা কম বললে কি হবে! যখনই ফটো তোলার জন্য থামতে বলেছি, হাঁ ম্যাম বলে থেমে গেছে। একটুও অবাধ্য হয়নি! কেবলমাত্র একবার ছাড়া। সারচুর পথে লাচুলুংলার একটু আগে তখন আমরা!
    সূর্য্য নীচের দিকে ঢলে পড়ায় রাস্তায় তখন আলো-ছায়ার খেলা। কোথাও পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুর চোখ ঝলসে দিচ্ছে কিন্তু মোটের উপর গাড়ি চায়ার মধ্যে দিয়েই চলছে। এর মধ্যে সারচু থেকে লে র দিকে আসা একটা গাড়ির তেল প্রায় তলানির দিকে বলে তারা আমাদের গাড়ি থামিয়ে কাছাকাছি তেলের পাম্পের কথা জিজ্ঞেস করলো। জিগমেত দেখলাম ভাঙ্গা হিন্দীতে অতি কষ্টে কাছাকাছি কোন গ্রামের ডিরেকশন দিলো, গ্রামবাসীরা ব্ল্যাকে পেট্রোল বেচলেও বেচতে পারে। এর খানিকটা পরেই উঁচু পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে একটু খাপ্চা-খাপ্চা সবুজ এব্ড়ো-খেব্ড়ো সমতল জমি বেরিয়ে এলো। চারপাশে সূর্য্যাস্ত হওয়ার আগের নরম রোদ্দুর। নীল আকাশ। হঠাৎ দূর থেকে চোখে পড়লো, সমতলটা যেখানে দূরের পাহাড়ের সঙ্গে মিলেছে সেইখান থেকে একজন ঝলমলে জামা পড়া অশ্বারোহী টগবগিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে আসছে। আমি মুভি মোডে দুয়েকটা ছবি নিলাম। দূর থেকে গোটা দৃশ্যটা দেখতে এতো ভালো লাগছিলো যে মনে হোলো গাড়িটা থামলে আরেকটু ভালো উঠবে ছবিটা। জিগমেতকে তাই বললাম - থোড়া রুকিয়ে, এক ফোটো লেনা হ্যায়। সেই অশ্বারোহী তখন আরো কাছে এসে পড়েছে আর ঘোড়ার ওপর থেকেই আমাদের দেখে হাসছে আর হাত নাড়ছে! কিন্তু কি আশ্চর্য্য! জিগমেত বল্লো " নো ম্যাম!" ওর ওই নো টায় কিছু একটা ছিলো - আমি আর তাই দ্বিতীয়বার অনুরোধ করলাম না! এই ঘটনাটার পর থেকে আমার পুরো জার্নিতে আর কখনো জিগমেতকে একবারের জন্যও অবিশ্বাস হয়নি! এর দুদিন আমরা দুজনেই ওর গাড়ির পিছনের সীটে দিব্বি ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও অনেকদূর গেছি - গাড়িতে একসাথে সবাই ঘুমিয়ে আমরা ককখনো পড়িনা!

    এর পরে লাচুলাংলা এসে গেলো - সেই রঙিন পতাকা দিয়ে আর একের পর এক পাথর সাজিয়ে রাখা। অতো হাওয়া সত্ত্বেও অমন অসমান আকারের পাথরগুলো পড়ে যায় না কেন সেটাও আশ্চর্য্যের! এর পরে নাকিলা আরো তেরো কিমি। নাকিলা আর তার পরের আরো কিছু দূর অব্দি রাস্তা খুবই ভালো। সাপের মতো এঁকেবেঁকে মসৃণ রাস্তা। নাকিলা পৌঁছেই কেমন ঝুপ করে অন্ধকার হয়ে গেলো। এই অব্দি রাস্তায় কয়েকজন সাইকেল আরোহীর সাথেও দেখা হোলো। সবাই বিদেশী। নাকিলার খানিকটা দূর থেকেই ইন্দাসের কোন একটা উপনদী সাথে সাথে চলে। অন্ধকার হওয়ার পরে আর মাইলস্টোনগুলো দেখা যাচ্ছে না। ফলে বোঝাও যাচ্ছে না সারচু আর কতো দূর। রাস্তা আবার খারাপ হয়ে গেছে। প্রচন্ড লাফাচ্ছে গাড়ী। ম্যাপ অনুযায়ী সারচু নাকীলা থেকে বিয়াল্লিশ কিমি। কিন্তু এতো খারাপ রাস্তায় বেশী জোরে গাড়ি চালানো যায় না। গাড়ীর হেডলাইট ছাড়া আর কোন আলো নেই রাস্তায়। অমাবস্যার রাত্রি হবে এটা- আকাশে তখনো কিছু সাদা রং। কিন্তু আস্তে আস্তে কালো হয়ে আসা আকাশের গায়ে টুনি বালবের মতো একে একে তারা ফুটে উঠছে। ইস! বম্বেতে আমাদের বিল্ডিংয়ের ছাদে কখনোই অন্ধকার পাইনা। যখনই টেলিস্কোপ ফিট করি ছাদে, চারপাশের স্ক্যাটারড আলো প্রচুর সমস্যা করে। এখানে যদি টেলিস্কোপটা আনা যেতো! কি নীরব, নিশ্ছিদ্র অন্ধকার নামছে গোটা উপত্যকা জুড়ে। কোথাও কোন শব্দ নেই, আলো নেই। আমরাও কথা বলছি না। শুধু গাড়ি চলার আওয়াজ।

    নদীর ধারে ধারের পাথুরে জমির ইরোসন স্ট্রাকচার গুলো অন্ধকারে কেমন দৈত্যের মতন দেখাচ্ছে। এতক্ষণ সাথে সাথে চলতে থাকা নদী ঝুপ করে নীচে নেমে গেছে, জল দেখা যাচ্ছে না। খালি আকাশ ছোঁয়া পাহাড়, ফাঁকে ফাঁকে তারাভরা আকাশ, কালো কালো নানা আকারের নদীর ধারের দৈত্যেরা - এর মধ্যে দিয়েই গাড়ি চলেছে। পেটে ছুঁচোয় ডন দিচ্ছে। তার ক্যাশিউ কুকিজের প্যাকেটটা বার করলাম। ও মা! দিব্বি গোটা গোটা কুকীজ পুরো গুঁড়ো গুঁড়োয় পরিণত! এতো ঝাঁকুনির চোটে! কি আর করা। বাকী খাবার দাবার খুঁজতে গেলে এখন অন্ধকারে হাতড়াতে হবে। ওই গুঁড়োই খানিকটা করে খেলাম দুজনে। আরো খানিক দূর গিয়ে শুনি - জিগমেতের মুখ থেকে পিচিক পিচিক করে আওয়াজ বার হচ্ছে! মুখ তো দেখা যাচ্ছে না! বুঝলাম কিছু মুশকিলে পড়েছে। গাড়িটাও ঝাঁকুনির পরিবর্তে একবার এদিকে আর একবার ওদিকে হেলে পড়ছে। সামনে তাকিয়ে রাস্তার অবস্থা দেখে পুরো আন্তারা ফাঁচকলিয়ে যাবার মতো অবস্থা হোলো।
    অসংখ্য নুড়ি, বড় বড় পাথরে ভরা রাস্তা - জলে কাদায় ভর্ত্তি। নীচে গভীর খাদ, মাঝে সাঝে উল্টোদিকের গাড়ি এলে সেই খাদের দিকে গাড়ি চেপে যাচ্ছে। এই পুরো ব্যাপারটাই ঘটছে ঘন অন্ধকারে। মোবাইল বার করে টাইম দেখার কথাও যেন ভুলে গেছি। বেশী চিন্তা করা কোনদিনই ধাতে নেই, তাই জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দূরের আকাশ দেখতে লাগলাম। খানিক দূর এইভাবে চলার পর সারচুর আগের ক্যাম্প সরপ -এর কাছে পৌঁছনো গেলো। সেখানে কিছু দোকান-পাট আর পুলিশ ফাঁড়ি। গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিগমেত পুলিশ ফাঁড়িতে পাস দেখাতে গেলো। কি বিদ্ঘুটে জায়গা রে বাবা। কেউই কি ঘুরতে আসে না? পুলিশ ক্যাম্পে অব্দি তাঁবুর বাইরে একটাও পুলুশ নাই। বসে বসে পা ধরে গিয়েছে ভেবে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতে যেতেই ঠান্ডা হাওয়ায় হাড় অব্দি কেঁপে গেলো। কোট বার করতে হবে। সোয়েটার পড়াই ছিলো দুজনের। তার ওপর কোট - টুপী চাপিয়ে বসলাম। বাইরে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। কোথাও কোন আলো নেই। এদিকে জিগমেত আর আসে না। কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে কে জানে!
    যেন অনন্তকাল পরে তাঁবু থেকে জিগমেত বেরিয়ে এলো। এই প্রচন্ড ঠান্ডায়ও একখান হাফাতা টী-শার্ট ছাড়া গায়ে কিছু নেই। শীতে হি হি অব্দি করছে না! নির্বিকার মুখে গাড়িতে এসে বসলো। সার্চুতে ঢুকেও অবশ্য শান্তি হোলো না। ওয়াটারমার্কের ক্যাম্প কোথায় আছে, সে আর কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না। রাস্তায় কেউ নেই, দোকানপাটও সব বন্ধ - জিজ্ঞেস করারও কেউ নেই। অনেক ঘুরে টুরে বার করা গেলো সেই ক্যাম্প। তখন আটটা বাজে। ক্যাম্পে গাড়ি ঢুকতেই কিছু লোক দৌড়ে এলো। এতোক্ষণ পরে জনপ্রাণী দেখে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। পেমেন্ট রিসিপ্ট ওদের হাতে দিতেই আপিসে গিয়ে দৌড়ে দেখিয়ে টেন্টের নাম্বার নিয়ে এলো। চারপাশে বরফে ঢাকা পাহাড়, একটু দূরে নদী, ওপরে তারাভরা আকাশ আর মঝের জমিতে সারি সারি টেন্টের ফাঁক দিয়ে একটু একটু আলো বেরিয়ে আসছে। কি ভালো যে লাগছিলো এতোক্ষণের পরে!
    যারা মাল নামাতে এসেছিলো তাদের বল্লাম শুধু গাড়ি থেকে একটা জলের ক্রেট নামাতে। আর ব্যাকপ্যাক তো আমাদের পিঠেই। একরাত্রিবাস এখানে। এছাড়াও যা ঠান্ডা তাতে চেঞ্জের প্রশ্নই ওঠে না। তাঁবুতে পৌঁছে দিয়ে তারা বলে গেলো, ম্যাডাম একটু তাড়াতাড়ি করবেন। ন'টার পরে সমস্ত টেন্টের আলো নিভে যাবে। এখানে শুধু সাতটা থেকে ন'টা জেনারেটর চলে। দিব্বি ছিমছাম টেন্ট - কোন বাহুল্য নাই। শুধু ক্যাম্প খাট আর কম্বল। ঘরের এককোণে ব্যাকপ্যাক রেখেই টয়লেট। দিব্বি টিস্যু পেপার আলা পরিষ্কার কমোড - পরিষ্কার বেসিন। শুধু বেসিন খুলতেই - নো ওয়াটার। বাইরে বেরিয়ে জিগাতে তারা আধ বালতি ধোঁয়া ওঠা গরম ঘোলা জল দিয়ে গেলো। জলের চেহারা দেখে হাত ধোয়ার কথা মনেই হয় না। পাইপের জল এতো ঠান্ডায় জমে বরফ - তাই বেসিনে জল আসছে না।
    সাথে নিয়ে আসা মিনারাল ওয়াটারের ক্রেট তখন কাজে দিলো। অবশ্য জল প্রচন্ড ঠান্ডা। হাত জমে যাচ্ছে। কোনমতে হাতে মুখে একটু জল দিয়ে ডাইনিং টেন্টের দিকে চললাম। কন্যা আর আমি - দুজনেই তখন অসম্ভব ক্লান্ত। টিমটিমে আলো জ্বলা ডাইনিং টেন্ট। খাবার সব ভেজ। কিন্তু সবই খুব গরম। চাইনিজও ছিলো - ওই চাওমিন, মাঞ্চুরিয়ান জাতীয়। আমরা যদিও ডাল-রাইস-রাজমা এইসবের ওপরেই থাকলাম। শেষপাতে ক্ষীর। যাঁরা বসে খাচ্ছেন তাঁদের বেশীর ভাগটাই ফরেনার। বাকী কয়েকটা বাঙালী ছেলে গলা ফাটিয়ে কোন দেয়ালে সুসু করার গপ্পো, প্লাস আরো কিছু ইস্পেশাল গপ্পো করছে - খুব নিশ্চিন্তে, জানেই কোন বাঙালী নেই এখানে! আমি এসব দেখে মেয়ের সঙ্গে হিন্দীতেই অল্প কিছু বাক্যালাপ চালালাম। মেয়েকে বুঝিয়ে বলতে হয়না! ও ইশারা বোঝে!
    খাওয়া দাওয়া সেরে বাইরে এসে এতো হাড় কাঁপানো হাওয়ার মধ্যেও খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। কি সুন্দর তারার চাঁদোয়া মাথার ওপর!! চারিপাশে চুপচাপ - অসম্ভব ভালো লাগছিলো। সারা গায়ে বেশ ব্যথা করছে। টানা অতো ঝাঁকুনি সহ্য করা সারা দিন ধরে! জিপ টেনে তাঁবু খুলে ঢুকে পড়লাম। তবে জোড়া কম্বল-টানা বিছানায় ঢুকতে গিয়েই শক খেলাম। ক্ষী ঠান্ডা!! কিরকম ড্যাম্পড ভিজে ভিজে ভাব। কোট-টোট পরেই শুয়ে পড়েছি তবুও হাড় অব্দি কেঁপে যাচ্ছিলো। এর পরেই লাইট নিভে গেলো। বাইরে খুব হাওয়া দিচ্ছে, পুরো টেন্টটা যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে। আর খচ্মচ্ করে আওয়াজ হচ্ছে টেন্টের দরজা আর জয়েন্টগুলোতে। যদি কেউ ঢুকে পড়ে!
    আমার কুকরী, পেপার স্প্রে সবকিছু ব্যাকপ্যাকে - সেটা বেশ খানিকটা দূরে ঘরের কোণে। ইদিকে ঠান্ডার চোটে হাতও বার করতে পারছি না - ব্যাকপ্যাকটা আনতে প্রচন্ড মর‌্যাল কারেজ দরকার, যেটা কিছুতেই সংগ্রহ করতে পারছিলাম না! ও মা! বাইরে থেকে জিপ খোলার আওয়াজ - ওরে বাবারে! একটা কালো গোল মুন্ডু - আর হাতে ও দুটো কি? থান ইঁট? মাথায় মারবে নাকি?

    মুন্ডুর থেকে নাকি আবাজ আসে - ম্যাঁডাম!! সোঁ গয়ে ক্যা?

    কে বাপ? একটা গলা খাঁকরি দিলাম। ক্যা হ্যায় জি?

    ম্যাডাম, ইয়ে দো হট ওয়াটার ব্যাগ লেকর আয়া থা! নেহী তো রাতকো সোনেমে তকলিফ হোগা!

    বেশ হাঁফ ছেড়ে হাত বাড়িয়ে নিয়ে নি হট ওয়াটার ব্যাগদুটো। থ্যাংকু বলার আগেই গোলমুখ বাইরে থেকে জিপ টেনে হাওয়া! কন্যা তো বিছানায় কাত হওয়র সঙ্গে সঙ্গেই অন্য জগতে, একটা হট ওয়াটার ব্যাগ ওর কাছাকাছি দিয়ে অন্যটা আঁকড়ে ধরে আমিও ঘুমের দেশে পা বাড়ালাম। বাইরে হাওয়ার মাতামাতি, টেন্টের নড়ানড়ি - কিছুতেই আর জাগিয়ে রাখতে পারলো না! মাথা অব্দি কম্বলে মুড়ি দিতেই - পরের দিনের সকাল জানালায় কড়া নাড়ে! সাদা রঙের টেন্ট বেশ গোলাপী রঙা হয়ে যায় ভোরবেলায়। বাইরে বেরোতেই ঠান্ডার দাপটের সাথে সাথে জায়গাটার পটে আঁকা সৌন্দর্য্য বাক্যহীন করে রাখে। চারিপাশ যে এত্তো সুন্দর, তা কালকে অন্ধকারে মোটেই বোঝা যায়নি। অলরেডি ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। বাইরে বেরোতে দেখেই - একটা চেনা গলা - ম্যাডাম, গরম পানি দে দুঁ? চায় চাহিয়ে? কালকে রাত্তিরের কথা মনে পড়ে গেলো, গলাঅর স্বর শুনেই গোলমুখের মালিককে চিনতে পারলাম। গরম পানি দিতে বললাম। চা পরে এসেই খাবো। আর কাল রাত্তিরে হটব্যাগের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। যা ঠান্ডা ছিলো, ওটা না হলে ঘুমোতে খুব কষ্ট হোতো।
    লাজুক হেসে গোলমুখ বললো - ম্যাডাম, আপ বঙ্গালসে হ্যায় না? ম্যায়ভি দার্জিলিং কা রহনেওয়ালে হুঁ। সালমে ছে মাহিনা ইধর আ যাতা হুঁ কামকে লিয়ে। উধার আভি কামধান্দা আচ্ছা নেহী হ্যায় না!

    তারপর বল্লো, কাল রাত্তিরেই ও আমাদের লক্ষ্য করেছে- দুই মহিলায় ঘুরতে বেরিয়েছে! তাই রাত্তিরে হটব্যাগ দিতে এসেছিলো যাতে কষ্ট না হয়। এছাড়া এখানে আর কোন ভয় নেই! কথা বলতে বলতেই গরম জল এসে গেলো, ঘোলা, ধোঁয়া ওঠা জল। নিয়ে নিলাম। মুখ ধোয়া ইত্যাদী সঙ্গের ভালো জলে সেরে নিয়ে হাত ধোয়ার জন্য গরম জলটা রাখলাম। অবশ্য ধোঁয়া উঠলে কি হবে! সে জল প্রায় ঠান্ডাই! কাজকম্মো সেরে, ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি মেয়ে ক্যামেরা নিয়ে বাইরে বেরিয়েছে। বাইরে বেরিয়ে সে ও অভিভূত! কি সুন্দর জায়গা! কিন্তু এত্তো ঠান্ডা! আমার নাক বন্ধ হয়ে গেছে মাম্মা! ঠেলেঠুলে তাকেও টয়লেটে পাঠিয়ে মোটামুটি গোছগাছ সেরে ফেললাম। তারপরে দুজনে মিলে আবার ডাইনিং টেন্ট। সেখানে আলু পরোটা আর ছোলে। মেয়ের আবার সকাল বেলা এখানে ওসব খেতে ইচ্ছে করছে না। সেই দার্জ্জিলিংয়ের ভাইয়াকে বলতেই ওমলেট, টোস্ট আর চায়ের বন্দোবস্ত হয়ে গেলো। ভদ্রলোক এতো এফিসিয়েন্টলি কয়েকজন হেল্পিং হ্যান্ড নিয়ে ক্যাম্পটা চালাচ্ছেন, জাস্ট ভাবা যায় না! দার্জ্জিলিংয়ের অজস্র মানুষ এখানে পাহাড়ে পাহাড়ে হোটেলগুলোতে ছড়িয়ে আছেন। খুব ভালো কাজ করছেন। নিজের রাজ্য এই মানুষগুলোকে পেলে আজ দার্জ্জিলিং কতো ভালো ট্যুরিস্ট স্পট হোতো!

    ডাইনিং টেন্ট থেকে বাইরে বেরোতেই - জিগমেত, সেই হাফাতা টী শার্টে - "গুডমর্নিং, ম্যাম!" ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ি এবার। এখানথেকে বত্রিশ কিমি গেলে এই রাস্তার সবচেয়ে উঁচু পাস - বরলাচা লা। তারপরে আসবে সুরজ তাল। চারপাশের প্রকৃতির রুক্ষ শুষ্ক ভাব কেটে গিয়ে ধীরে ধীরে সবুজ হয়ে ওঠাটা স্পষ্ট বোঝা যায়। রাস্তার দুপাশে ছোট ছোট ক্যালেনডুলার হলুদ ফুল। এখানে আস্তে আস্তে ঝরনার দেখা পাওয়া যায়। বিভিন্ন আকারের আর জলস্রোতের ঝরনা বা জলপ্রপাত পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে। আরো কিছুদূর যাওয়ার পরে পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট গাছ দেখা যেতে লাগলো। পাহাড়গুলোও পুরো সবুজ হতে লাগলো। লে টু মানালী রোডে ধীরে ধীরে পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির পরিবর্তন এতো সুন্দর করে ধরা পড়ে - প্রকৃতির শেখানো ভূগোল বইয়ের পাতা যেন। ফিরে আসার পর, মেয়ের জিওগ্রাফি আর সায়েন্স বইয়ের অজস্র রেফারেন্সে শুধু এই পথের উল্লেখ করলেই ওকে বোঝানো খুব সহজ হয়ে যআয়!
    বরলাচা লার একটু আগে অসংখ্য ভেড়ার পাল উল্টোদিক থেকে পথ আটকালো। সাদা বরফের ওপরে সাদা ভেড়া আর কালো-সাদা ছাগলের পাল। দেখতে যা লাগছিলো! বরলাচা লা তে আমি গাড়ি থেকে বীরদর্পে নেমে বরফের ওপরে এগোতে গিয়েই ধপাস! কি ভাগ্যি, ক্যামেরাটা পড়ে যায়নি। পড়ে গিয়ে চারিদিকে তাকাতেই দেখি কন্যা আর জিগমেত হি হি করে হাসছে!! কয়েকখান ছবি তুলে আবার যাত্রা শুরু। সুরজ তাল। সবুজ রঙের জল। চারপাশের পাহাড়ের জল গড়িয়ে এসে পড়ে এই হ্রদের সৃষ্টি। সুরজ তাল পেরিয়ে আরো কিছুদূর আসতে না আসতেই গাড়ির নীচে হঠাৎ ঢকাং ঢকাং আওয়াজ শুরু হলো। রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে জিগমেত ঢুকে গেলো গাড়ির নীচে। দুই চাকার মাঝখানে যে মেটালের স্ট্রং স্ট্রাইপ থাকে সেটা ভেঙ্গেছে! ওর কাছে মোটা দড়ি আছে তাই দিয়ে ভালো করে বেঁধে দিলো। এখান থেকে মোটামুটি কাছাকাছি জনপদ জিস্পা। কিন্তু সেখানে গাড়ি সারানো যাবে না। কেলং অব্দি যেতে হবে তার জন্য। সেটা প্রায় চল্লিশ কিমি। এখনো অব্দি যে গতিতে গাড়ি চলছিলো, তাতে মনে হচ্ছিলো তিনটে কি বড়জোর চারটের মধ্যে মানালি পৌঁছে যাবো। কিন্তু এখন হিসেবটা একটু উল্টেপাল্টে গেলো। দড়ি দিয়ে বাঁধার পর গাড়ি খানিকদূর যাচ্ছে খুব অল্প স্পীডে আর তারপরেই ঢিংকাচিকা শুরু হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই জিগমেত নেমে গাড়ির নীচে ঢুকে আবার বেঁধে আসছে দড়ি। কিন্তু এই রাস্তায় মাঝে মাঝেই রাস্তার ওপর দিয়েই ঝরনা বা জলপ্রপাতের মতো জলস্রোত যেতে থাকে। একএকটা এরকম জায়গা আসছে, আর দড়ির বাঁধন আবার আলগা হয়ে আসছে। আমারও মেন্টাল ক্যালকুলেশন চালু হয়ে গেছে। জিগমেতের কথায় আমি কিছুই বুঝিনি যে গাড়ির কি হয়েছে - আদৌ সারানো যাবে কিনা! যদি আজ রাতে মানালি না পৌঁছতে পারি, তাহলে থাকার মতো মোটামুটি ভদ্রস্থ জনপদ হলো হয় জিস্পা নয় কেলং। কেলং এখান থেকে এখনো সাঁইত্রিশ কিমি। এই জিস্পা অব্দি আসতে গিয়েই বেচারী জিগমেতকে অন্ততঃ পাঁচবার গাড়ির নীচে ঢুকতে হয়েছে। ওর যদি আর ধৈর্য্য না থাকে? তাহলে কেলং পৌঁছনোর আগে কোথায় থাকতে হবে, সে সম্বন্ধে আমার ডেটাবেস ততো স্ট্রং নয়। সেই লে থেকে বেরনোর পর এখানে এখনো অব্দি টাওয়ার নেই। কেলং পৌঁছনোর পর কানেক্টিভিটি থাকবে, সেরকমই শুনে এসেছিলাম। জিস্পায় বেশ কিছু সুন্দর ক্যাম্প, হোটেল ইত্যাদী আছে। জায়গাটা পুরো সবুজ, প্রচুর ক্ষেত আছে বিয়াসের দুপাশ জুড়ে। অনেকেই সারচুতে না থেকে জিস্পাতে থাকে। আমারও সবার জন্য রেকমেন্ডেশন জিস্পাতেই থাকা - লম্বা পথের জার্নিতে একটু আরামও হবে। সারচু একটু এক্স্ট্রীম। তবে মানালী টু লে যাবার লোকেরাই বেশী থাকে জিস্পা তে। জিগমেত যখন গাড়ি সারাচ্ছিলো, তখন আমরা একটু চারপাশে ঘুরে এলাম। ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলাম - গাড়ি যাবে তো? নাহলে তুমি কেলং অব্দি গিয়ে গাড়ি সারিয়ে আনতে পারো - আমরা না হয় আজ জিস্পায় থেকে যাবো। কিন্তু জিগমেত দেখলাম প্রচুর কনফিডেন্ট। গাড়ি যাবেই! ঠিক হ্যায় - আবার চড়ে বসা, আর প্রত্যেক বার ঝর্নার পর ঢিংকাচিকা আর গাড়ির তলায় ঢুকে দড়ি বাঁধা। এইভাবে দেখতে দেখতে কেলং এসে গেলো।
    কেলংয়ে এসে গাড়ি সারানোর দোকানে এসে দেখা গেলো, মালিক নেই। কয়েক কিমি এগিয়ে কোন গাড়ি বিকল পড়ে আছে, লোকজন এসে মালিককে নিয়ে গেছে। তখন প্রায় বারোটা বাজে ঘড়িতে। আরো একটু এগিয়ে কেলংয়েই আরো একটা দোকান পাওয়া গেলো - বিক্রিবাটা তেমন কিছু নেই দেখে দোকান খোলা রেখেই মালিক বাড়ি ঘুরে আসতে গেছে। পাশের দোকানী মালিকের ঘরের রাস্তা বাতলে দিলো। এখন জিগমেত কয়েক কিমি হেঁটে তাকে ডাকতে যাবে। তার আগে গাড়ি সারানোর চ্যানেলে গাড়িটা তুলে যাবে। পাহাড়ের খাদের পাশে একটা চাতাল, সেখানেই দোকান। আমরা দিব্বি গাড়ির মধ্যে বসে আছি। ও মা, গাড়ি দেখি একটা সরু ফুটপাথের মতো চ্যানেলের ওপর দিয়ে নেওয়া হলো। কি করে যে ওই চ্যানেলটার ওপর নিলো! একচুল ইদিক-উদিক হলেই হাজার হাজার ফিটের নীচে। আমাদের নামতেও বলেনি তাই গাড়ির মধ্যে সিঁটিয়ে রয়েছি। খানিক পরে দেখি গাড়ির বাঁদিকের দরজা খুলে সিট টপকে জিগমেত নামলো। আমি ডানদিকে তাকিয়ে দেখলাম, অনেক নীচে নদী চক্চক্ করছে! হাঁচড়িয়ে পাঁচড়িয়ে বাঁ দিক দিয়ে নামলাম। জিগমেতের কথায় যা বুঝলাম - ও মেকানিককে ডেকে এনে গাড়ি সারানোর বন্দোবস্ত করবে, ততক্ষণে আমরা যেন লাঞ্চ সেরে নি। ভালো কথা! কেলং খুব সুন্দর পাহাড়ী শহর। হিমাচলে ঢুকে গেছি, তাই টাওয়ারও আছে। আকাশ-ছোঁয়া সবুজ পাহাড়, জলপ্রপাত, রাস্তার দুধারে পাহাড়ী বুনো ফুল, আপেলের মতো গালের শিশু কোলে নিয়ে বা পিঠে ঝুড়িতে বসিয়ে হাস্যমুখী মায়েরা হেঁটে যাচ্ছে - পুরো ছবির মতো সব দৃশ্য! পাহাড়ের পাশ দিয়ে চড়ে উঠে খাবার রেস্তোঁরা খুঁজতে লাগলাম।
  • এমেম | 127.194.248.75 | ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ১৩:২৯559111
  • শেষ থেকে শুরু করলাম। খুব খুব ইন্টারেস্টিং করে লিখছেন দেবযানী।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন