এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • বাংলা গান ও সুমন

    ন্যাড়া
    গান | ২৫ আগস্ট ২০১২ | ৮৪৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • hu | 22.34.246.72 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ০০:২৩569038
  • সিকি বড় মফস্বলে থেকেছে, আমি ছোট মফস্বলে ঃ-)
  • Rit | 213.110.243.21 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ০৭:০১569049
  • গ্রামে সুমন ছিলেন না। মফঃসলে হয়ত ছিলেন।
  • | 127.194.98.146 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ০৮:৪৩569060
  • আমি ও মফঃস্বল। খানিক টা সাড়া ছিল বলেই মনে হচ্ছে।
  • kc | 204.126.37.78 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১০:০৯569071
  • আহা!! তোমরা যারে মফস্বল কইছ সেটা হল গিয়ে শহরতলী। যতদূর অবধি টেলিফোং কোড ০৩৩, ততদূর অবধি হল শহরতলী। যতদূর অবধি সবুজ ইলেক্টিরি ট্রেন যেত, ততদূর অবধি কলকাতার বদ গন্ধ, ততদূর অবধি শহরতলী। তা এইসব জায়গায় সুমন সাড়া ফেলেছিলেন খুব।

    কিন্তু, ন্যাড়াদার লেখাটা ভাল লাগলনা না বলে জমলনা ই বলব। ন্যাড়াদা সঙ্গীতের আলোচোনা করতে গিয়ে কবিতার পাঠ দিতে লাগল বলে মনে হল। কবিতার বাইরে বেরোলে যে এই গানে কোনও নতুন রকম তালের রকমফেরের দেখা নাই। সুরও বিশেষ কিছু মন ছুঁয়ে যাওয়া নয়!! বেশীর ভাগ গানেই নাই। তাই সুমনের গান হুঁহুঁ, দাদাদা করে গাওয়া যায়না। নচির কিছু গানের কিন্তু সুর ভাঁজা যায়। তারপর এই সুর চিনতে গেলে, ভাল লাগাতে হলে, আবার কিছু অন্য দেশের গান শোনার অব্যেস রাখতে হবে। তাই এইগান আমাদের আসল মফস্বলে বা তার আশেপাশে বেশী একটা চলেনি। সুমনকে আমার একটা নতুন জঁরার কথকঠাকুর মনে হয়েছে, যিনি একা একাই স্টেজ ম্যানেজ করতে পারেন। চেনা বৃত্তের মধ্যে থাকলে স্টেজ ফাটিয়ে দিতে পারেন।

    তা এটা যদি গান / সঙ্গীত হয়, হল। কিন্তু সুমনের গান অন্য কেউ বিশেষ একটা গায়না। যুগান্ত সৃস্টিকারী কিছু হলে গাইত বটে। আমার মফস্বলী কানে এটাকে একটা সময়ের ক্রেজ বলেই মনে হয়েছে।

    ডিঃ ব্যক্তিগত মতামত।
  • kd | 69.93.242.33 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১২:২৫569082
  • কলি, তুমি কি আমায় একটা ইমেল করবে subroto জিমেলে? তোমার ইমেল ঠিকানা আমার কাছে নেই বা হারিয়ে ফেলেছি। সৌরভ মুখোপাধ্যায় ([email protected]) তোমার ফোন নম্বর বা ইমেল অ্যাড্রেস চেয়েছেন - আমি বলেছি আমি তোমায় লিখবো ওনার সঙ্গে ডিরেক্টলি কম্যুনিকেট করতে।

    যদ্দুর মনে হ'লো তোমার কাগুজে গুরুতে সুমনকে নিয়ে একটা লেখার ব্যাপারে।

    আপনারা কেউ ভাটে বা কোন টইতে কলিকে দেখতে পেলে একটু জানিয়ে দেবেন আমার এই পোস্টটার কথা।
  • sinfaut | 131.241.218.132 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৫:২০569093
  • হুঁহুঁ করতে না পারলে গান নয় এ কেমন ঢপের কথা? আখের বা তুলোর ক্ষেতে হুঁহুঁ করে গান গাইবে নীগ্রো দাস না আ আ করে চরম ক্রোধের সাথে হতাশার সাথে গাইবে? সব গান কি তানপুরা তবলা বাগিয়ে সুখের সময় হয়?
  • aka | 85.76.118.96 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৫:৩০569104
  • আমাদের মফস্বলে আমি এবং আমার দুইজন বন্ধু ছাড়া আর কেউ সুমন শুনত না। নচিকেতা দারুণ পপুলার ছিল। ঋষি বঙ্কিমের ফেস্টে নচিকেতার গান শুনে, স্টেজ পারফরম্যান্স শুনে তো মেয়েগুলো অবধি নচি ফ্যান হয়ে গিয়েছিল।
  • kc | 204.126.37.78 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৫:৪৫569105
  • হুঁহুঁ কত্তে না পারলে বেশীর ভাগ লোকের কাছেই তো সেটা গান নয় রে দাদা। সে ৫% লোকেরা যাই বলুক, সেটা গান নয়, অন্যকিছু।
  • de | 190.149.51.68 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৭:২৩569106
  • কতো দিন পর ন্যাড়াবাবু লিখছেন --
    ভাগ্যিস "কুড়ি কুড়ি--" এসেছিলো!
    খুব ভালো লাগছে পড়তে, লেখা চলুক!
  • বলরাম হাড়ি | 94.235.73.164 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৭:৩১569108
  • বিশ বছর ধরে অনেকেই হুঁহুঁ করে সুমনের গান গাই- তোমাকে চাই, হাল ছেড়ো না, পাগল থেকে শুরু করে মেঘদূত, জাতিস্মর ইত্যাদি। গাওয়া যাবে না কেন? প্রচুর বন্দিশ বা রাগপ্রধানই হুঁহুঁ করে কেউ গাইতে পারবেন না। সেগুলো কি গান নয়?
  • bb | 127.195.162.211 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৭:৫১569109
  • সেতো আমি চেষ্টা করে কোন গানই গাইতে পারি না, তা বলে সেগুলো গান নয়?
    তবে কেসি যেমন বললেন - সুমনের গানে হয়ত এমন একটা আবেদ্ন আছে যা শহুরে মানুষকে বেশী আবেদ্ন করে।
    আসলে আমরা যারা কোলকাতায় মানুষ, ন'-মাসে ছমাসে একবার গ্রামে যেতাম - তাও সে গ্রাম হয়্ত উত্তরে বারাসত বা দক্ষিণে সোনারপুর (উত্তর কোলকেতার লোকেদের জন্য অব্শ্য ঢাকরেই গ্রাম), তাদের কাছে সুমন শুধু গান নয় একটা সময়কে পরিবেশন করেন তার সমস্ত আনুষাঙ্গিক সহ। এছাড়া ন্যাড়া যা বলেছেন - আমরা ৮০এর দশকে ভাল বাংলা গান আর পেলাম কই (দয়া করে বাপীদা আর অজয় দাসের কথা বলবেন না)।
    তাই '৯০এর শুরুতে সুমন য্খন একাধারে স্মার্ট কথা, মনের মত বাজনা আর একটা অন্য রকমের উপস্থাপনা নিয়ে এলেন, যে একাধারে, গায়ক, বাদ্ক আর সুত্রধার, তাই আমরা সবাই কম বেশী তাকে নিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেই মুগ্ধতা কাটতে অনেক সময় লেগেছিল।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৮:২০569110
  • " নিজের শ্রোতাকুলের বাউন্ডারি কন্ডিশন ঠিক করে নিলেন এইভাবে " - ন্যাড়াদা যে রকম বললেন। সুমন নিজেও তো বলেছেন "আমি নাগরিক কবিয়াল।" আমার মনে হয় বর্তমানের স্তরীভূত বাঙালি সমাজে একজন এর পক্ষে সার্বজনীন আবেদন সম্পন্ন গান লেখা বেশ কঠিন কাজ।
    আমি-ও মফস্বলের মানুষ। তোমাকে চাই যখন বের হয় আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি। আমি শুনতে পাই আমার কলেজ-এ পড়া পাড়াতুত দাদা দিদি দের থেকে এবং তখনই বেশ অন্য রকম লেগেছিল। ভক্ত হতেও বেশি সময় লাগেনি। তবে এটুকু বলতে পারি মফস্বল এর দিকে কচি নেতা-র ভক্ত অনেক বেশি। এবং কলকেতা সহরেও তাই-ই। অন্তত তাই ছিল বেশ কিছু দিন। মন্ডপে pandel এ জাতিস্মর বাজত না। নীলাঞ্জনা ই বাজত। তাই দিয়ে বা হু হু করতে পারা দিয়ে বিচার চলে না। আমি অবিশ্যি একটু কম জানি।
  • নচিভক্ত | 69.160.210.2 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৮:৩৩569111
  • ন্যাড়াদা কি গানের কথা নিয়ে আরেকটু কন্টিনিউ করবেন? বিশেষতঃ ন্যাকা পদ্যের ক্রিয়াপদ ব্যবহার - ( ফিরে যায় ও যায় ফিরে ধরণের), পদ্যগন্ধী তৎসম ব্যবহার - (চরন, নয়ন, ভুবন, আঁখি) ইত্যাদি বর্জন নিয়ে , বাক্যের গঠনে গদ্য-স্ট্র্যাকচার নিয়ে ? খানিক অচ্যুতিসম্ভব ছন্দ নিয়েও হোক, যা অবধারিত সুরকে ডিকটেট করে। ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি লেভেলে যেতে থাকা রেফারেন্স গানে আসতে থাকা নিয়ে তো কিছু হয়েইছে, আরেকটু স্পষ্টভাবে? গানের চেনা ফর্ম - মুখরা-স্থায়ী-সঞ্চারি-অন্তরা এর ভাঙা নিয়ে?
  • cb | 127.194.67.248 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৯:২০569112
  • মুগ্ধতা কাটানোর দরকারই বা কি? সুমনের অনেক গান এখনো মুগ্ধ করে, একটা সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
  • ন্যাড়া | 132.178.221.223 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ১৯:৫৩569113
  • সেই সঙ্গে এও স্থির হয়ে গেল যে মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত বাঙালির সঙ্গীতজগতে সুমনের জায়গা একদম পাক্কা |
    এর আগে এই সাইলেন্ট মেজরিটির ভাষায় বিশেষ কেউ গান গাইতে পারেননি | এদের চিরটা কাল অন্যের ধার করা ভাষায়
    গান গেয়ে যেতে হয়েছে | যখন তারা নিজেদের মধ্যে সন্দীপনের "ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী" হাতবদল করছে গানের জন্যে তখনও কিন্তু
    তাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে "এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়"-এর কাছে | (ঠিক এই গানের উদাহরণ সুমন ব্যবহার করেছেন তাঁর
    এক লেখায় |) অর্থাৎ এরা প্রেমও করছে, সন্ধ্যের সৌন্দর্য নিয়ে হয়তো আলোচনাও করছে - কিন্তু তার ভাষা অন্য |
    সেই ভাষা কেউ মূলধারার গানে ধরলেন না | মূলধারার গান বলছি এই জন্যে যে প্রান্তিক গানে এই ভাষা এসেছে |
    একদম হাতে গরম উদাহরণ সুমনেরই "নাগরিক" দল | সে তো আশির দশকেই বাজারে এসেছে | কিন্তু প্রান্তিক হয়ে
    থাকার জন্যে সে কিন্তু এই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছতেই পারেনি বা পৌঁছলেও ঠিকমতন জায়গা পায়নি |

    তার মানে কি এ কথা বলা যায় না যে সুমনের সুমন হয়ে ওঠার পেছনে বাজারের একটা অবদান আছে ? সেটা যদি মেনে নিই,
    তাহলে আর একটু এগিয়ে হয়তো এ কথাও বলতে পারি কোন কোন প্রান্তিক শিল্পী যদি ঠিকমতন বাজার ব্যবহার করতে পারতেন
    তাহলে সুমনের আগেই হয়তো এরকম গান বাংলা গানের মূলধারায় এসে যেতে পারত |

    এর আর একটা সম্ভাবনা আছে | সেটা হল, প্রত্যেক সৃষ্টিরই একটা নিজস্ব সময় আছে | সে তুমি যত যুগন্ধরই হও না কেন, সময়
    ঠিক না হলে তোমার সৃষ্টির সেরকম কদর হবে না | মোৎজার্টের আমলে মোৎজার্টের থেকে সেলিয়ারি নাকি অনেক বেশি জনপ্রিয়
    ছিলেন | অত দূর কেন, এই তো নব্বইয়ের মাঝামাঝি 'আবার বছর কুড়ি পর" বেরোনর পরে শোনা গেল মহীনের ঘোড়াগুলি
    নাকি বাংলা ব্যান্ডের স্রষ্টা | তখন তাদের কত খ্যাতি | কিন্তু সবই মরণোত্তর | আসল সময়ে তাদের শ্রোতাদের প্রত্যাখ্যান পেয়ে
    চুপিচুপি একা-একা মরে যেতে হয়েছিল |

    তাহলে কি আসলে সুমন নয়, বাংলা গান পাল্টাল সময় ?

    * * * *

    সুমনের প্রথম অ্যালবাম বেরোনর পরে "এ কী গান !" এই তাচ্ছিল্যের সঙ্গে এ-ও শুনতে হয়েছে এ গানে মিউজিক্যালিটি কম | সেটার
    মানে কী - এই প্রশ্নের জবাবে জানা গেছে যে এ গান মনে মনে গুণগুণ করা যায় না | এর উত্তরে হয়তো বলা যেত, তাহলে তো বাখ-এর
    ফিউগ বা চাইকভস্কির ১৮১২ ওভারচারেও মিউজিক্যালিটি কম | কিন্তু এসব জামাই-ঠকানো তর্কে না গিয়ে আমরা বরং ভাবি তাহলে এটাই
    কি সুমনের নতুনত্ব ?

    রবীন্দ্রনাথ যদিও আমাদের সঙ্গীতকে "নির্জন এককের গান" বলেছেন, নাগরিক সঙ্গীত সব দেশেই মজলিশি সঙ্গীত - আমাদের দেশেও |
    অপরের বিনোদনের জন্যেই এর সৃষ্টি | ধর্মসঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত বরং দেশে দেশে নির্জন এককের গান | যে গান গেয়ে একলা মাঝি
    নৌকো টানে বা পাহাড়ে মেষপালক ভেড়া চরায়, সে গানই নির্জন এককের গান | সে গান কাউকে শোননোর জন্যে তৈরি হয়না | সেই
    লোকসঙ্গীত সুরের দিক থেকে অনেক সময়েই একঘেঁয়ে - কথা দিয়ে আবেগপ্রকাশই তার উদ্দেশ্য | বৈচিত্র্য আনার জন্যে গায়ক নিজেই
    কোন যন্ত্র - অধিকাংশ সময়েই তারযন্ত্র - দিয়ে সুর ধরে রাখে - কোথাও গিটার, কোথাও দোতারা, কোথাও ব্যাঞ্জো | এই গানই যখন
    সফিস্টিকেটেড হতে আরম্ভ করল বিদেশে, বহুস্বরের আমেজ আনতে গিটার বা ব্যাঞ্জো তখন কর্ড দিতে লাগল |

    সুমনের নাগরিক লোকগান এই জঁর সঙ্গীত - বিশেষতঃ ওনার গিটারের গানগুলো | প্রথম অ্যালবামের "কখনও সময় আসে" বা
    "হাল ছেড়ো না বন্ধু" একেবারে সেই রবীন্দ্রনাথের বলা "নির্জন এককের গান" | কাজেই এ গানগুলো সেই জঁর প্রেক্ষিতে দেখতে
    হবে | একে যদি আমরা মজলিশি গানের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে ভুল হবে |

    গানের গঠনের দিক থেকেও এই গানের অনেকগুলিই ব্যালাডের স্ট্রাকচার | বা আমাদের খাঁটি বাংলার ঐতিহ্য থেকে ধার নিলে
    বলতে হয়, পাঁচালির গঠন | প্রতি পংক্তিতে সুরের পুনরাবৃত্তি | আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে, সুমনের মতন একজন আধুনিক
    সুরকার হয়তো প্রতি দ্বিতীয় পংক্তিতে সুরের চলনে সামান্য পরিবর্তন আনলেন | এই গঠনের ফল হল অব্যর্থ | শ্রোতারা গানের
    কথা থেকে মন সরাতে পারলেন না | সুমনের আগের অনেক তাবড় সঙ্গীতকার কিন্তু এই ভুলটা করেছেন | একেবারে মনকাড়া
    সুর দিয়ে শ্রোতাকে হয়তো মজিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু গানের কথার মধ্যে দিয়ে যা বলতে চেয়েছিলেন, শ্রোতার মন কিন্তু সেখান থেকে
    সরে গেছে | এক্ষুণি মনে পড়ছে সলিল চৌধুরীর "ও বৌ-কথা-কও বলে পাখি আর ডাকিস না" আর "প্রজাপতি প্রজাপতি" গানদুটোর
    কথা | দুটো গানই কথার দিক থেকে ব্যতিক্রমী | কিন্তু সলিলের অসাধারণ সুরের চলনে দর্শক ভেসে যান সুরে, কথা একেবারেই
    গৌণ হয়ে যায় সেখানে | ফলে গানের কথা তার প্রার্থিত প্রতিঘাত সৃষ্টি করতে পারে না | আর এখানে সুমন সলিলের ওপর জিতে
    যান গীতিকার হিসেবে, হয়তো গানের কারিগর হিসেবেও |

    এর থেকে এটাও বলা যায় মজলিশি সঙ্গীতে সঙ্গীত প্রধান, লোকগানে কথা প্রধান | ভেবে দেখার বিষয় রবীন্দ্রনাথ যখন বঙ্গভঙ্গের সময়ে
    তাঁর বিখ্যাত স্বদেশ পর্যায়ের গানগুলো রচনা করেছেন, যখন কথা দিয়ে নিজের গন্ডির বাইরে বৃহত্তর জনসমাজে গানকে পৌঁছে দেবার
    প্রয়োজন হয়েছে, গান দিয়ে একেবারে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার দরকার হয়েছে, তিনি বেছে নিয়েছেন লোকসঙ্গীতের সুর,
    লোকসঙ্গীতের আঙ্গিক | সুমনও তাঁর কথাপ্রধান গানের জন্যে লোকসঙ্গীতের আঙ্গিকই বেছে নিলেন - হয়তো সে লোকসঙ্গীত
    আমাদের দেশজ লোকসঙ্গীত নয় - কিন্তু তাতে কী ? উদ্দেশ্য তো সিদ্ধ হল |
  • pi | 82.83.74.139 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ২০:০৮569114
  • কেশীদা, গুনগুন করতে না পারলেও সেটি শিল্পীর গলাতেই বারেবারে শুনতে চাইছি, ব শোনার পরে মনে তার রেশ থেকে যাচ্ছে সেই গানকে সার্থক, যুগান্তকারী গানের পর্যায়ে ফেলবো না ? বেশিরভাগ সার্থক, যুগান্তকারী গান শ্রোতা গুনগুনাতে পারে, আর সুমনের প্রায় কোন গানই পারে না, আপনার কথা অনুযায়ী বা তর্কের খাতিরে যদিই তা মেনেও নেই, তাহলেও সুমনের গানকে ব্যতিক্রমী সার্থক, যুগান্তকারী গান বলতে বাধা কীসের ? অন্যভাবেও সার্থক হওয়া যায়, দেখিয়ে দিলেন, এভাবেও তো ভাবা যায়। আমি অন্ততঃ এভাবে ভাবতে চাইবো।
  • DB | 125.253.130.25 | ২৯ আগস্ট ২০১২ ১২:১৫569115
  • সাধারণ ভাবে আধুনিক “জীবন মুখীগান” তো বোটেই এমনকি সুমনের গান সম্পর্কেও আমার মনে একটা ধন্দ আছে।গান বাজনার ব্যপারে লোকে আমাকে কিছুটা রক্ষনশীল বলেই মনে করে তবু একটা চিন্তা আমার পিছু ছাড়েনা।লোকে গান শোনে কেন – কি তারা প্রত্যাশা করে তার কাছে?আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বোধের নিরিখে মনে হয় গানের কথার মাধ্যমে প্রতিবিম্বিত আমাদের চারপাশের বস্তু জগৎএর সঙ্গে সুরের abstraction এর সংযোগ ঘটলে আমাদের বস্তু জগতের অভিজ্ঞ্তালব্ধ অনুভবগুলিতে এক বিশেষ গতিবেগ সঞ্চারিত হয় যার শক্তিতে গান শ্রোতাকে তার নানন ক্ষুদ্রতা মলিনতা ভরা প্রাত্যহিকতার মাধ্যাকর্ষণ অতিক্রম করে আনন্দলোকে পৌঁছে দেয়।শ্রোতার বুদ্ধিবৃত্তি ও আবেগ শুধু যে পরিতৃপ্ত হয় তাই নয় সে নতুন জীবনবোধ অর্জন করে।
    এই তত্বের আলোতে সুমনের গানকে বিচার করতে গিয়েই আমি পড়েছি ধাঁধায়।
    সুমনের গানের দর্পনে আধুনিক যুগের নাগরিক জীবনের যে জন্ত্রনা,যে সব ছোটো ছোটো অপ্রাপ্তির বেদনার কথা ধরা পড়েছে, জীবনের নানান ক্ষুদ্রতা, মনন হীন আচারসর্বস্বতার প্রতি তাঁর শাণিত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ অদ্যন্ত ঝকঝকে স্মার্ট – ভাশায় ও ভঙ্গীতে ধ্বনিত হয়েছে সুরের অনুষঙ্গ পেয়ে সুমনের গান কি আমাদের জীবনের যাবতীয় যন্ত্রনা,ক্ষুদ্রতা মলিনতার ইত্যাদি কে কোন সাম্গ্রিকতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিস্থাপিত করেছে নাকি ধুলোমাটির বস্তু জগতের পঙ্কিল আবর্তেই পাক খাওয়াচ্ছে। তাঁর “হালছেড়োনা বন্ধু” উচ্চারণ কি সত্যই আমাদের কোন উন্নততর জীবন বোধের স্বপ্ন দেখায় নাকি তা শুধু সোচ্চার স্লোগান মাত্র !আপাত দৃষ্টিতে সুমন নিজেই তো হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন।
  • lcm | 34.4.162.218 | ২৯ আগস্ট ২০১২ ১২:৪০569116
  • প্রথম সুমনের গানের বিষয়ে শুনি ৯৪ নাগাদ, এদেশে। সিডি/ক্যাসেট অত সুলভ ছিল না তখনও। পরে ৯৫/৯৬ এ আরো কিছু গান শুনি। সুদীপ্ত চাটুজ্জে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম বানান সুমন চাটুজ্জের ওপর, তাই নিয়ে সক-কালচার-বেঙ্গলি ফোরামে কিছু লেখালেখি হয়।
    সুমন নিয়ে কোনো ধন্দ নাই। বাংলায় নাগরিক লোকগান, এর আগে কেউ গেয়ে থাকলেও শুনি নি। সুমনের গানে সুর বা মেলোডি-র ভূমিকা পরোক্ষ, কথা ছাপিয়ে যায় সুরকে।
    যা কইলাম, সবই IMHO ।
  • sinfaut | 131.241.218.132 | ২৯ আগস্ট ২০১২ ১৩:৫২569117
  • কথাওলা গানে আমার ব্যক্তিগত মতামত কথা সামান্য হলেও সুরকে ছাপিয়ে যাওয়া উচিত, নয়ত সুরের আবর্তে কথা হারিয়ে যায়।
  • lcm | 34.4.162.218 | ২৯ আগস্ট ২০১২ ১৩:৫৯569119
  • ঠিক। নইলে ন্যাড়া যেরকম উদাহরণ দিয়েছে, সুরের দাপটে কথা হারিয়ে গেছে।
    আর একটা ব্যাপার হল, বাংলা আধুনিক গানে (লোকগীতি বাদে) - একজন শিল্পী একসাথে গান লিখছেন, সুর করছেন এবং গাইছেন, গীটারও বাজাচ্ছেন - সব একা - এমন ধারা খুব প্রচলিত ছিল না। সুমন বাংলা আধুনিক গানে এ জিনিস এনেছেন আবার বলি, ওর আগে কেউ করে থাকতে পারেন, সেভাবে শুনি নি।
  • ন্যাড়া | 132.179.75.177 | ২৯ আগস্ট ২০১২ ১৯:০৬569120
  • এবার আসুন গানের গঠনে আসা যাক | গঠন বলতে বলছি গানের কথা, ভাব, চলন ইত্যাদি কিভাবে
    সাজানো হয়েছে | এখানে একটু বাংলা গানের ইতিহাস ঝালিয়ে নিই | আলোচনার সুবিধে হবে |
    আমি-আপনি আজ যে গান শুনি সে একেবারেই নাগরিক সঙ্গীত | লোকসঙ্গীতও যা কানে আসে, সেও শহুরে
    মানুষদের ভাল লাগার মতন করে তৈরী করা | তাও গঠনগত দিক থেকে লোকসঙ্গীতের কাঠামো এখনও
    অনেকটাই অপরিবর্তিত আছে | লোকগানে সাধারনতঃ প্রথমে দু লাইনের ধুয়া দিয়ে গানের ধরতাই
    দেওয়া হয় | তারপর তিন স্তবকে বিস্তার করা হয় | স্তবক সাধারণতঃ চার-পাঁচ পংক্তি লম্বা | লালন
    শাহর এই গানটা ধরা যাক -

    (ধরতাই)
    আমার বাড়ির কাছে আর্শিনগর, সেথা একজন পড়শি বসত করে |
    আমি একদিনও না দেখিলাম তারে |

    (প্রথম স্তবক)
    গেরাম বেড়ে অগাধ পানি |
    তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে |
    বাঞ্ছা করি দেখতে যাব |
    কেমনে দিব পাড়ি?

    (দ্বিতীয় স্তবক)
    কী কব পড়শির কথা -
    তার হস্তপদস্কন্ধমাথা নাই রে |
    ক্ষণেক ভাসে শূণ্যের উপর
    ক্ষণেক ভাসে নীরে |

    (তৃতীয় স্তবক)
    পড়শি যদি আমায় ছুঁতো
    আমার যমযাতনা সকল যেত ঘুচে |
    সে আর লালন এক থানে রয়
    (তাদের) লক্ষযোজন ফাঁক রে |

    লালন শাহ বা অন্যান্য অনেক লোক রচয়িতাই এই গঠনে গান তৈরী করেছেন | লোকগানের একটা
    বৈশিষ্ট্য হল গানে ভনিতা দেওয়া - মানে রচয়িতার নাম, গানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া | এও একরকম
    চালু ব্যবস্থা বলা যায় যে যে সব লোকগানে ভনিতা থাকে, সেখানে শেষ স্তবকে ভনিতা
    ঢোকানো হয় |

    এবার হাছন রাজার একটা গান দেখা যাক -

    (ধরতাই)
    লোকে বলে, বলে রে ঘরবাড়ি ভালা নাই আমার |
    কী ঘর বানাইমু আমি শূণ্যের মাঝার |
    (প্রথম স্তবক)
    ভাল কইরা ঘর বানাইয়া
    কয়দিন থাকমু আর -
    আয়না দিয়া চাইয়া দেখি
    পাকনা চুল আমার |

    (দ্বিতীয় স্তবক)
    এই ভাবিয়া হাছন রাজায়
    ঘরদুয়ার না বান্ধে |
    কোথায় নিয়া রাখবা আল্লায়
    তার লাগিয়া কান্দে |

    (তৃতীয় স্তবক)
    আগে যদি জানত হাছন
    বাঁচব কয়তো দিন |
    বানাইত দালানকোঠা
    করিয়া রঙীন |

    এ গানও গঠনগত দিক দিয়ে আগেরটারই মতন, কিন্তু এখানে প্রথম স্তবক থেকেই ভনিতা এসেছে |
    সেদিক দিয়ে হাছনরাজার গান ব্যতিক্রম | আবার ভটিয়ালিতে কিম্বা ভাওয়াইয়ায় ভনিতা ব্যবহার
    করা হয়না | অধিকাংশ লোকগানেই ভনিতার ব্যবহার নেই | তা সে যাকগে | বাংলা লোকগান এতই
    ব্যাপ্ত আর সাঙ্গীতিকভাবে পুষ্ট, যে লোকগানের আলোচনা এই পরিসরে ঢোকানো অসম্ভব |
    আমি যে কথা বলতে চেয়েছিলাম তা হল এই ২-৪-৪-৪ ধরণের গঠন আমরা আবার দেখব
    নাগরিক গানে ফিরে আসবে |

    কিন্তু বাংলা নাগরিক গানের শুরু যদি ধরি নিধুবাবুর গান থেকে, তাহলে দেখা যাক কিভাবে
    বাংলা গানের গঠন বদলেছে | একথা এখন সবাই জানে নিধুবাবু পশ্চিমের শোরি মিঞার টপ্পার
    অনুসরণে বাংলা গান তৈরী করলেন | এই গানগুলোর গঠনে কিন্তু সেরকম কোন বিশেষ ফর্মালিটি
    দেখা যায়না | ফ্রি-ফ্লোইং একটা ব্যাপার | একই ব্যাপার নিধুর সমসাময়িক বা একটু পরের
    গানবাঁধিয়েদের ক্ষেত্রেও |

    ব্যাপারটা বদলাল রবীন্দ্রনাথ গান লিখতে শুরু করার পরে | ঠাকুরবাড়িতে ধ্রুপদের কদর ছিল |
    রবীন্দ্রনাথ নিজেও ধ্রুপদ শিখেছেন | কাজেই তিনি যখন গান লিখতে শুরু করছেন, তখন ধ্রুপদের
    অনুবাদের পাশাপাশি নিজের গানেও ধ্রুপদের চারতুকের গঠন অবলম্বন করলেন | ধ্রুপদের গঠন খুব
    কড়া - আস্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী, আভোগ - এই চারটি ভাগ | রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই ধ্রুপদে থেমে
    থাকেন নি | ফর্ম নিয়ে নানারকম খেলাধুলো, পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছে | অন্য গান থেকে যখন
    সুর বা প্যাটার্ন ধার নিয়েছেন, তখন সেই ধরণের গানের গঠন ব্যবহার করেছেন | স্বদেশ পর্যায়ের
    গানে লোকসঙ্গীতের সুর নিয়ে যে গান বেঁধেছেন, তাতে অনেকক্ষেত্রেই ব্যালাডের ফর্ম ব্যবহার
    করেছেন | কীর্তনের ঢঙের গানে আখর দিয়ে গান বেঁধেছেন | কিন্তু এসব সত্বেও, যখন নিজের সুরে
    নিজের মেজাজে গান লিখছেন, তখন বারবার ধ্রুপদের গঠনে ফিরে গেছেন |
    ধ্রুপদ গঠনে রবীন্দ্রনাথের একটা গান দেখা যাক | এ গান কিন্তু ধ্রুপদাঙ্গের নয় -

    (আস্থায়ী)
    সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর |
    আমার মধ্যে তোমার শোভা এমন সুমধুর |
    (অন্তরা)
    কত বর্ণে কত গন্ধে
    কত গানে, কত ছন্দে
    অরূপ তোমার গানের লীলায় জাগে হৃদয়পুর |
    আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ এমন সুমধুর |

    (সঞ্চারী)
    তোমায় আমায় মিলন হলে সকলই যায় ভুলে |
    বিশ্বসাগর ঢেউ খেলায়ে ওঠে তখন দুলে |

    (আভোগ)
    তোমার আলোয় নাই তো ছায়া
    আমার মাঝে পায় সে কায়া |
    হয় সে আমার অশ্রুজলে সুন্দরবিধুর |
    আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ এমন সুমধুর |

    এই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে | আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগের একটি গান দেখুন | রাহুল দেব
    বর্মনের সুর | ধরে নিচ্ছি গানের গঠনও তাঁরই বাছাই | সেই ধ্রুপদী চারতুক | অ্যারেঞ্জমেন্টে
    অবশ্য ফিউশন |

    (আস্থায়ী)
    যেতে দাও আমায় ডেকোনা |
    কবে কী আমি বলেছি, মনে রেখ না |
    কিছু বলবে কি?
    না না না, পিছু ডেকোনা |

    (অন্তরা)
    তুমি ভরে নিও বাঁশি ওগো সুর থেকে সুরে
    নয় চলে যাব আমি শুধু দূর থেকে দূরে |
    এই তাসেরই ঘর বেঁধে, তুমি ভেঙে দিওনা |

    (সঞ্চারী)
    কাঁচেরই ঝাড়বাতি, নেভে সময় হলে |
    প্রেম কি মোমের আলো, জ্বালায় শুধু জ্বলে?

    (আভোগ)
    প্রদীপেরই শিখায় পুড়ে মরুক প্রজাপতি
    হায় এমনি করে আসে শুধু লাভ থেকে ক্ষতি |
    এই হিসাবেরই খাতা, আর খুলে দেখোনা |

    এবার থেকে আজ থেকে বছর পনেরোর আগের সুমনের একটা গান | বাংলা লোকায়ত সুরভিত্তিক
    গান, কিন্তু গঠনে ধ্রুপদের চারতুক -

    (আস্থায়ী)
    খাতা দেখে গান গেওনা, উল্টে পাতা যেতেও পারে |
    খাতাটাতা উল্টে গেলে হোঁচট খাবে বারেবারে |

    (অন্তরা)
    হাওয়া দেয় যখন-তখন, হানা দেয় হঠাৎ তুফান,
    পাতাটাতা উল্টে গেলে, সামনে পাবে ভুল কোন গান |
    এ গানের মুন্ডু তখন বসবে অন্য গানের ঘাড়ে |
    খাতা দেখে গান গেওনা, উল্টে পাতা যেতেও পারে |

    (সঞ্চারী)
    যুগটাই দমকা হাওয়ার, হাওয়া দেয় হঠাৎ তেড়ে |
    বলা কি যায় হে কখন ধাক্কাবে ঝড় যুগের ফেরে!

    (আভোগ)
    মাথাতেই সামলে রেখ স্মৃতি আর গানের কথা |
    বিপদে পড়বে না আর আসলে ঝোড়ো অস্থিরতা |
    চেনা গান জ্বালবে আলো, পথ দেখাবে অন্ধকারে |
    খাতা দেখে গান গেওনা, উল্টে পাতা যেতেও পারে |

    এমনকি আজকের গানেও এই ধ্রুপদী গঠন খুঁজে পাওয়া যাবে | এরপরে যে গঠনের গান বোধহয়
    সবথেকে বেশি প্রচলিত তা হল লোকসঙ্গীতের অনুপ্রেরণায় ২-৪-৪-৪ ছকের গান | রবীন্দ্রনাথ বাংলা
    লোকায়ত সুরে যেসব গান বেধেছেন, তার অনেকই এই গঠনের | যেমন 'হরিনাম দিয়ে জগৎ
    মাতালে'র সুরে -

    যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে |
    একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো, একলা চলো রে |

    যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,
    যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়--
    তবে পরান খুলে
    ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে |

    যদি সবাই ফিরে যায়, ওরে ওরে ও অভাগা,
    যদি গহন পথে যাবার কালে কেউ ফিরে না চায়--
    তবে পথের কাঁটা
    ও তুই রক্তমাখা চরণতলে একলা দলো রে |

    যদি আলো না ধরে, ওরে ওরে ও অভাগা,
    যদি ঝড়-বাদলে অঁআধার রাতে দুয়ার দেয় ঘরে--
    তবে বজ্ঞ্রানলে আপন
    বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা চলো রে |

    খুব একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার হল যে, হিন্দি ছবির অধিকাংশ গানের গঠন এই ২-৪-৪-৪, যা মনে হয়
    লোকগান থেকেই এসেছে | এবং হিন্দি ছবির গানের অনুকরণে বাংলা গানও এই গঠন অনুসরণ করেছে |
    অর্থাৎ আজকালকার বাংলা গানের ২-৪-৪-৪ গঠন এসেছে লোকসঙ্গীত
    থেকে রবীন্দ্রনাথ হয়ে, আবার আরেকভাবে একটু ঘুরপথে হিন্দি ছবির জগৎ ঘুরে | বিশেষতঃ
    বাংলা ছবির গানে |
  • কল্লোল | 125.184.64.110 | ২৯ আগস্ট ২০১২ ২৩:১৫569121
  • ন্যাড়া। তোকে অজস্র ধন্যবাদ। শিখছি, কেমন করে গান নিয়ে কথা বলতে হয়। তোর সাথে বহু ক্ষেত্রে একমত নই। কিন্তু গান নিয়ে লেখার যদি কোন মার্কা থাকে তো এটাই সেটা।
    তোর লেখা শেষ হলে আমি আমার প্রতিবাদ জানাবো, আমার মতন করেই (তোর মতো করে লেখার সাধ্যি আমার নেই)। লিখতে থাক। আরও লেখ। খুব খুব খুব ভালো লাগছে।
    তোকে ফোনে এসব ভালো লাগা জানাতেই পারতাম। কিন্তু মনে হলো - এই মুগ্ধতা প্রকাশ্যেই স্বীকার করা উচিৎ, তাই......
  • ranjan roy | 24.97.47.7 | ৩০ আগস্ট ২০১২ ০৭:০৪569122
  • কল্লোলকে ক।
    ন্যাড়াবাবু নিজের ফিল্ডে নেমেছেন। যেন একজন মাস্টার ব্যাট্স্‌ম্যানের স্ট্রোক প্লে এবং নিজের ইনিংসকে সুন্দর গৃহিণীপনায় সাজিয়ে নেয়া দেখছি। মুগ্ধতাই আমার অভিঘাত।
    বাসুদা,
    আমার কেমন মনে হচ্ছে এখানে আপনার-আমার প্রজন্মের মাইন্ডসেট ভীষণ ভাবে কাজ করছে। আমি অনেকাংশে একমত। সুমনের লিরিক আমার কানে দুর্বল লাগে, কোথাও কোথাও তাৎক্ষণিক ও অগভীর। তুলনায় সলিল চৌধুরির লিরিক সাবলীল লাগে।
    আমার কাছে কথা সুরের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পেলে মনে হয় গানটা মাঠে মারা গেল। চাই সুর অ্যাব্স্ট্রাক্ট এক মুড তৈরি করে তার মাধ্যমে কমিউনিকেট করুক, কথা দিয়ে নয়। তাই নজরুলের চেয়ে অতুলপ্রসাদ , এবং তার চেয়ে রবীন্দ্রনাথ, সুর ও কথার আশ্চর্য্য মেলবন্ধনের জন্যে আমাদের বেশি প্রিয়।
    আবার ভাবি, এটা আমাদের সময়ের প্রেজুডিস নয় তো?
    আমরা হয়তো গানের কথা ও সুরের স্ট্রাকচার এবং দর্শন বলতে একধরণের বাঁধা ছকের মধ্যে থাকতেই ভালবাসি।
    আমার মেয়েদের কানে রবীন্দ্রসংগীত ভীষণ একঘেয়ে ও প্যানপেনে লাগে। ওরা আবার ব্যালাড ধর্মী ইংরেজি গান ও ভীষণ শোরগোলে ভরা রক মিউজিকের ভক্ত।
    আমার মনে হয় সময়ের একটা গড় রুচি-চিন্তা আছে। সেটাকে বাদ দিয়ে কেউই সফল হতে পারেন না। সময়ের চেয়ে আগে বলেই "মহীনের ঘোড়াগুলির" অকালমৃত্যু ঘটল। আবার সময়ের কারণে "ক্যাকটাস" দলটি করে খাচ্ছে। যদিও আমার ধারণা বেশকিছুদিন মহীনের ঘোড়াগুলি ও সুমন লোকে ফিরে ফিরে শুনবে। ক্যাকটাস মুছে যাবে।
    আমি তাই মন দিয়ে শুনি চল্লিশ না পেরোনো গুরু ও চন্ডালদের পছন্দ ও অপছন্দ, সাঙ্গীতিক কারণসমুহ।
    আপনার সঙ্গে সঙ্গীত আলোচনার কোন যোগ্যতা আমার নেই। এগুলো লাউড-থিংকিং বলেই ধরে নেবেন।
  • Abhyu | 107.81.103.172 | ৩০ আগস্ট ২০১২ ০৮:০২569123
  • ন্যাড়াদা খুব ভালো হচ্ছে।
  • lcm | 34.4.162.218 | ৩০ আগস্ট ২০১২ ০৮:১৮569124
  • ন্যাড়া হল গুরু-র সুধীর চক্কোবোর্তি
  • ss | 24.139.97.75 | ৩০ আগস্ট ২০১২ ০৯:০৯569125
  • অসাধারণ । নজর রইলো এই পাতায় । ন্যাড়াদা কে ধন্যবাদ । বাকিদের সঙ্গত ও মনোগ্রাহী ।
  • DB | 125.250.160.5 | ৩০ আগস্ট ২০১২ ১১:৪০569126
  • রঞ্জন
    আপনার সঙ্গে আমি একেবারে একমত।একজন পেশাদার শিল্পী অবশ্যই জন রুচিকে মন্যতা দেবেন এবং সেই মত গান বাঁধবেন ,গাইবেন।সেটা তাঁর পেশাগত বাধ্যবাধকতা।কিন্তু শ্রোতা হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের এক একটা নিজস্ব ভালোলাগা মন্দ লাগা থাকেই।সুমনের অনেক গান আমাকে গভীর ভাবে স্পর্ষ করেছে - তিনি বৃদ্ধ হলেন বনস্পতির ছায়া দিলেন .... গানটির কথা এখনি মনে পড়ল। তেমনি চেনা দুঃখ চেনা সুখ গানটির সুরের নাটকীয় চলন অসম্ভব আকর্ষনীয় লাগে।অতয়েব আপনার আমাকে বুড়োদের দলে ফেলে দেবার "সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত" মানছিনা মানবনা ।
    একটা ভালো জিনিষ হাতে পেয়ে তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা দিক দিয়ে দেখবনা এমন তো হতে পরেনা।সুমনের গান নিয়ে অমার লেখাগুলি সেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখা মাত্র।
  • কল্লোল | 230.226.209.2 | ৩০ আগস্ট ২০১২ ১৭:০৪569127
  • ন্যাড়ারে। আবার ফিরে ফিরে পড়ছিলাম। খুব ভালো লাগছে।
    কিন্তু, তুই বল্লি ভাটিয়ালী আর ভাওয়াইয়াতে ভনিতা নেই। ভাওয়াইয়াতে মনে পড়ছে না, কিন্তু ভাটিয়ালীতে তো আছে। কান্দিয়া আকুল হইলাম ভব নদীর পাড়ে - এই গানটিতে আছে তো। শেষ স্তবক - অধম ঈদমে বলে / আমার কি আছে কপালে। ঈদম শাহের গান। অবশ্য এটা সুরের স্ট্রাকচারে ভাটিয়ালি, কিন্তু ফকিরি গান বলে উল্লেখিত হয়।
  • ন্যাড়া | 213.110.238.17 | ৩০ আগস্ট ২০১২ ১৭:৩১569128
  • কল্লোলদা, এটা একটু গোলমেলে ব্যাপার। সত্যি করে, যদি একেবারে লোকসঙ্গীতের সংজ্ঞা দেখ - তাহলে একটা প্রধান সংজ্ঞা হল with unknown authorship। তো সেটা মেনে নিলে ভনিতাওলা কোন গানই লোকগানের আওতায় পড়ে না। অন্যদিকে বাউল-ফকিরি গানে ভনিতা আসে - সে লালন শাহ থেকে শুরু সদ্য পরলোকগত বাউল আব্দুল করিম অব্দি। এখন তাঁরা ভাটিয়ালি-ভাওয়াইয়া সুরে-ফর্মে-কন্টেন্টে হয়্তো গান বেঁধেছেন, এবং তাতে ভনিতাও জুড়েছেন। এই করে ব্যাপারটা তালেগোলে হয়ে গেছে - গানের দিক দিয়ে নয়, পন্ডিতির দিক দিয়ে। কাজেই ও নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামিও না। আমার বিশ্বাস গানে (বা যে কোন ক্রিয়েটিভ আর্ট ফর্মেই) যেই কোন নিয়ম, রুল বা কনভেনশনের কথা বলা হয়, সেগুলোকে মোটমুটি ধরে নেওয়াই উচিত, কারণ সবেরই ব্যতিক্রম থাকবে।

    এই সঙ্গে যারা উৎসাহ দিয়েছেন, সবাইকে ধন্যবাদ। আমি টই-তে এটা লিখছি তার প্রধান কারণ যাতে অলোচনাটা ইন্টার‌্যাক্টিভ হয়। এমন তো নয় যে আমি জ্ঞানের পাহাড় হয়ে বসে আছি,এ ল্খাটা বেসিকালি থিংকিং অ্যালাউড! লোকে যদি তাদের দু-চার পয়সা দেয়, সমালোচনা করে, ভুল ধরিয়ে দেয় তাহলে আমিও শিখি, অন্যেও শেখে - লেখার মানে হয়। নইলে ব্যাপারটা ক্লাসরুম হয়ে যায়। কাজেই লেখা শেষ হওয়া অব্দি অপেক্ষা করবেন না। কল্লোলদা যা বলার আছে বলে ফেল। হয়তো সব কথা আমি অ্যাড্রেস করতে পারব না - জানিনা বলে বা মেনে নিচ্ছি বলে বা সে ব্যাপারে বলার কিছু নেই বলে। কিন্তু বাকিরা পার্টিসিপেট করলে অলোচনা করতে ভালো লাগে। তা না হলে উৎসাহের ফানুশের হাওয়া বেরিয়ে যাবে শিগ্গিরই।
  • ... | 69.160.210.2 | ৩০ আগস্ট ২০১২ ১৮:০০569130
  • শিবাংশুদাকে কেউ ডাক না দিলে ফুটকাটার লোক হিসেবে কল্লোলদা আর দীপংকরদা একটু একা পড়ে যাচ্ছেন। চক্রবর্তী বাবু তো ভাটে তাঁর প্রিয়তম বিষয় ছেড়ে এখন আর এদিকে ঘেঁষছেন না। গান নিয়ে ন্যাড়াদার সাথে কথা বলার মত আর কে আছে?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন