এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • শেখ মুজিবের উপর খ্যাপা কেনো চিনাপন্থীরা?

    কুলদা রায়
    অন্যান্য | ২৩ নভেম্বর ২০১২ | ৬৭৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:২৪576789
  • সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী

    বাংলাদেশের স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যেই সবচেয়ে বড় ঘটনা হিসেবে সামনে আসে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী।

    ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়। যার নাম দেয়া হয় বাকশাল।

    স্বাধীনতার কয়েক বছরের মধ্যেই এ ধরনের ব্যবস্থা চালু করা অনেকেই বিস্মিত করেছিল।

    এদের একজন মইনুল হোসেন৻ যেদিন সংসদে এ বিল পাশ হয় সেদিনের বর্ণনা দিয়ে মি: হোসেন বলছিলেন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা সেদিন খুবই বিষণ্ন ছিলেন।

    সেই সময়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এস এ মালেক বলছেন, চতুর্থ সংশোধনীকে তৎকালীন সময়ের বাস্তবতা এর্ব শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে বিচার করা উচিত৻

    http://www.bbc.co.uk/bengali/multimedia/2011/12/111230_sm_bd40_4thamend.shtml
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:২৫576790
  • আজ ২৫শে জানুয়ারী কালো দিবস, গনতন্ত্র হত্যা দিবস
    লিখেছেন: চন্দন
    ___________________________________
    পঁচিশে জানুয়ারি এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৭৫ সালের এই দিনটিতে জাতীয় সংসদের মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী অধিবেশনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ইচ্ছা ও নির্দেশে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করা হয়েছিল।

    এই সংশোধনীর মাধ্যমে প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতির স্থলে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব স্বয়ং প্রেসিডেন্ট হন এবং সকল রাজনৈতিক দল বাতিল করে সারাদেশে একটিমাত্র দল রাখার বিধান করা হয়। চতুর্থ সংশোধনীর ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব ২৪ ফেব্রুয়ারি একমাত্র দল বাকশাল গঠন করেন এবং তার নির্দেশে তাকেই চেয়ারম্যান করে ১১৫ সদস্যবিশিষ্ট বাকশালের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয় ৬ জুন। প্রেসিডেন্ট এবং বাকশাল চেয়ারম্যান শেখ মুজিবের নির্দেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত চারটি দৈনিক পত্রিকা ছাড়া দেশের সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ হয়ে যায় ১৬ জুন।

    ১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার ভারত থেকে ঢাকায় ফিরে আসে। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান তখন পাকিস্তানে বন্দী। শেখ মুজিব মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। সেই সময় থেকেই দেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়নের জন্য চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। বাংলাদেশে সংসদীয় ব্যবস্থা কায়েম হবে, না প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার প্রচলিত হবে, সে সময় বিষয়টি নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। এসব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয় ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ' জারি করার মাধ্যমে। সেই আদেশের পঞ্চম অনুচ্ছেদে বর্ণিত ছিল বাংলাদেশে ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা থাকিবে'। ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদে ছিল ‘রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তাহার সমস্ত কার্য করিবেন'। ৭ম অনুচ্ছেদে ছিল ‘রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের আস্থাভাজন একজন পরিষদ সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন। অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীগণ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন'। সেই আদেশের অষ্টম অনুচ্ছেদে ছিল যে, ‘নতুন সংবিধান প্রবর্তিত হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের একজন নাগরিককে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করিবেন'।

    বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান রচনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ' (রাষ্ট্রপতির ২২ নং আদেশ) নামক সেই আদেশটির গুরুত্ব অনেক। এই আদেশ অনুসারে ১৯৭০ সালে নির্বাচনে বাংলাদেশ থেকে যে সকল জনপ্রতিনিধি তদানীন্তন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের নিয়েই গণপরিষদ গঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল ৪৩০ সদস্যবিশিষ্ট গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধানটি বিল আকারে পেশ করেন। ৪ নবেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক তা গৃহীত হয়। ১৬ ডিসেম্বর থেকে সংবিধান কার্যকর হয় এবং সে দিনই গণপরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়।

    ১৫৩ অনুচ্ছেদ বিশিষ্ট এই সংবিধান ১১টি ভাগে বিভক্ত। ১৯৭২ সালের এই সংবিধান ছিল জাতির সবচেয়ে বড় পাওয়া। স্বাধীনতা প্রাপ্তির ১৫ মাসের মধ্যে সংবিধানের অধীনে জাতীয় সংসদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ১৪টি দল অংশ নিয়েছিল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯২টি আসন পেয়েছিল। একটি আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন তদানীন্তন জাতীয় লীগ প্রধান মরহুম আতাউর রহমান খান, জাসদেরও একজন সদস্য সে সময় বিজয়ী হয়েছিলেন। বাকী সবাই ছিলেন স্বতন্ত্র সদস্য। তবে সেদিন সেই নির্বাচনের স্বরূপ যারা দেখেছেন তাদের অনেকেই হতবাক ও আশংকিত হয়েছিলেন। হতবাক হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের ‘আচরণ' দেখে।

    যে আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দিতে পেরেছে তারা কিভাবে নির্বাচনে অগণতান্ত্রিক আচরণ করতে পারে আর আশংকিত হয়েছিলেন এজন্য যে, এমন আচরণকারী একটি দলের হাতে ভবিষ্যতে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপদ থাকবে কি না। প্রথম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আচরণ সম্পর্কে যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেই আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। এই দিনই জাতীয় সংসদে সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী গৃহীত হয়। সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীর দ্বারা সংবিধানের ২৬, ৩৩, ৬৩, ৭২ ও ১৪২ নং অনুচ্ছেদগুলো সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ ও কালাকানুন প্রণয়নের যেসব বাধা সংবিধানে সন্নিবেশিত ছিল তা দূর করা হয়।

    ২৬ নং অনুচ্ছেদটি সংশোধনের উদ্দেশ্য ছিল সংবিধানে কালাকানুন সংযোজনের ব্যবস্থা করা আর ৩৩ নং অনুচ্ছেদটি সংশোধন করা হয়েছিল জাতীয় সংসদকে নিবর্তনমূলক আটকের বিধান সম্বলিত আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করার জন্য। এছাড়া দেশের জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা সরকারকে দেয়া হয় এই সংশোধনীর মাধ্যমে। গণতন্ত্র মৌলিক অধিকার হরণের প্রক্রিয়া মুজিব আমলে এভাবে সূচিত হয়েছিল।

    একের পর এক ব্যর্থতার কারণে ১৯৭৪-এর শেষাশেষি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের হাত থেকে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে থাকে, দেশব্যাপী উগ্র বামপন্থীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সরকারের তাঁবেদার ‘রক্ষীবাহিনী'র অত্যাচারে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। চতুর্দিকে এক নৈরাজ্যকর অবস্থা। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় উত্তরণের লক্ষ্যে দেশের শিল্পকারখানা সরকারের হাতে নিয়ে নেয়ার চরম অব্যবস্থায় উৎপাদন বন্ধ। গোটা অর্থনীতি তখন ধসে পড়তে শুরু করেছে। এই চরম অবস্থায় সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছিল।

    আর এই সময়ই অর্থাৎ ১৯৭৪ সালেই দেখা দিয়েছিল ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষ। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয় এবং সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ তা মারাত্মক রূপ ধারণ করে। তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা এবং দলীয় লোকজনের লুটপাট এই দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ ছিল।

    পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি রোধের জন্য সরকার সে বছরের ডিসেম্বর মাসে জরুরি অবস্থা জারি করে। এই জরুরি অবস্থা জারির প্রধান লক্ষ্য কিন্তু শুধু ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করা নয়, বরং রাজনৈতিক বিরোধীদের শায়েস্তা করা ও সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা। যাতে সরকারের চরম ব্যর্থতার কথা সংবাদপত্রে প্রকাশ না পায়। জরুরি অবস্থা জারির আরও একটা গোপন কারণ ছিল। যেটা সরকার তখন গোপন রেখেছিল।

    আর সেই গোপন লক্ষ্যটি ছিল একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েমের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা। যাতে নয়া একদলীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করতে না পারে। যারা প্রতিবাদ করবে তাদের যাতে জরুরি অবস্থার অজুহাতে ধরা যায়। ১৯৭৫ সালের সূচনার ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে মাত্র কয়েক মিনিটে সংবিধানের কুখ্যাত ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল গঠন করা হয়। এর অধীনে এক অদ্ভূত প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি চালু করা হয়, যে ব্যবস্থার অধীনে প্রেসিডেন্ট দেশের সর্বময় কর্তা হয়ে পড়েন এবং তিনি যাতে আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকতে পারেন, তার ব্যবস্থা ছিল তাতে। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ বেঁধে দেয়া হয়নি।

    ৪র্থ সংশোধনী পাসের পর ২৪ ফেব্রুয়ারি তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব এক ঘোষণায় তথাকথিত জাতীয় দল বাকশাল গঠন করেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনেই যেখানে ১৪টি দল অংশ নিয়েছিল, সেখানে আওয়ামী লীগের ‘বি' টিম হিসেবে কথিত সিপিবি ও ন্যাপকে নিয়ে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। সে ঘোষণায় অন্যান্য দলকে পরবর্তী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে বাকশালে যোগদানের আহবান জানানো হয়। এরপর ৬ জুন শেখ মুজিবকে বাকশালের সভাপতি এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে সেক্রেটারি জেনারেল করে দলের ১১৫ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। ১৬ জুন দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে মাত্র ৪টি সংবাদপত্র দলীয় ও সরকারের নিজস্ব প্রচারের জন্য বাঁচিয়ে রাখা হয়।

    তারপর ২৩ জুন শেখ মুজিব গোটা প্রশাসনকে দলীয়করণের লক্ষ্যে তথাকথিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে ৬১টি জেলায় বিভক্ত করেন এবং পরে সেখানে দলীয় লোকদের জেলা গবর্নর হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েমের সময় সংবিধান সংশোধন করে দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করেছিল তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার।

    ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে সংবিধান প্রবর্তিত হবার সময় কিন্তু বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ থেকে ১১৬ পর্যন্ত মোট ২২টি অনুচ্ছেদ হচ্ছে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত। সংবিধান প্রবর্তনের সময় কোনো সমস্যা ছিল না। কেবলমাত্র সংকট ছিল জেলাসহ অন্যান্য পর্যায়ে ফৌজদারী আদালতসমূহে যারা বিচারক ছিলেন তাদের নিয়ে। তারা একদিকে যেমন প্রশাসনের সাথে জড়িত তেমনি একই সাথে ফৌজদারী আদালতে বিচারক। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি যখন আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করে গণতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোকে ধ্বংস করেছিল, মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য সকল সংবাদপত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, দেশে একটি রেজিমেন্টের সোসাইটি গড়ার জন্য আওয়ামী লীগ বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেছিল, সংবিধানের কুখ্যাত ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অন্যান্য বিষয়সহ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করার জন্য সংবিধানের ৯৫ থেকে ১১৬ অনুচ্ছেদের বিভিন্ন স্থানে সংশোধনী সন্নিবেশিত করা হয়েছিল।

    ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কিভাবে নস্যাৎ করা হয়েছিল তার উদাহরণ দিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংশ্লিষ্ট ধারা নিয়েই কেবল আলোচনা করা হবে। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ৯৫ অনুচ্ছেদে ছিল, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন'। ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয় এভাবে, ‘‘প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন’’। ইতোপূর্বে প্রেসিডেন্টের একক এখতিয়ার ছিল কেবলমাত্র প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দান করার। অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ছিল সীমিত। কিন্তু ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের নিয়োগ দানের ব্যাপারে প্রেসিডেন্টকে নিরংকুশ ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। অনুরূপভাবে ৯৮ অনুচ্ছেদে প্রধান বিচারপতিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয় তা এই চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে খর্ব করা হয়েছিল। ৪র্থ সংশোধনী পূর্ববর্তী এই ধারার সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিভাগের বিচারক সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হলে প্রেসিডেন্টকে প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে তা করতে হতো। ৪র্থ সংশোধনীর দ্বারা প্রধান বিচারপতির সে ক্ষমতা রহিত করে তা এককভাবে প্রেসিডেন্টের হাতে অর্পণ করা হয়েছিল।

    ১০৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অধঃস্তন ট্রাইব্যুনালের উপর হাইকোর্ট বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রহিত করা হয়েছিল। ৪র্থ সংশোধনীর পূর্বে ১১৫ অনুচ্ছেদ মোতাবেক বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ দানের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টকে সুপ্রিমকোর্টের সুপারিশের উপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু ৪র্থ সংশোধনীর পর এক্ষেত্রে পুরো কর্তৃত্ব ন্যস্ত করা হয়েছিল প্রেসিডেন্টের কাছে। ৪র্থ সংশোধনীর পূর্বে ১১৬ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের বদলী, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরসহ শৃংখলা বিধানের দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের উপর ছিল। কিন্তু ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা খর্ব করে এ ব্যাপারে একক কর্তৃত্ব তুলে দেয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্টের হাতে।

    ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কর্তৃত্ব কেড়ে নিয়েছিল এবং বিচার বিভাগকে প্রশাসন বিভাগের অধীনে নিয়ে গিয়েছিল। যে বিশেষ পরিস্থিতিতে যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তার জন্য আসলে দায়ী ছিল সর্বব্যাপী দুর্নীতি, কালোবাজারী ও চোরাচালানসহ প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা, সরকারের উদ্যোগে পরিচালিত নির্যাতন ও হত্যাকান্ড এবং সেই সঙ্গে ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।

    কিন্তু সময়ের দাবি অনুযায়ী পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর পথে না গিয়ে ক্ষমতাদর্পী প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব রাজনৈতিক আন্দোলন ও সরকার বিরোধিতার পথরোধ করার অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর সারাদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মধ্যদিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল এবং বাকশাল ও একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এর চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল। সমগ্র এই প্রক্রিয়া ও কর্মকান্ডের একমাত্র উদ্যোক্তা, নিয়ন্ত্রক ও লাভবান ব্যক্তি ছিলেন শেখ মুজিব, সর্বময় ক্ষমতাও কেন্দ্রীভূত হয়েছিল তার একার হাতে।

    বহুদলীয় বা ‘জাতীয় প্লাটফর্ম' বলা হলেও বাকশাল যে আওয়ামী লীগেরই নামান্তর মাত্র ছিল, সে কথার প্রমাণ মেলে বাকশালে বিলীন হয়ে যাওয়া অন্য দু'টি দল ন্যাপ (মোজাফফর) এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি'র নেতৃবৃন্দের শোচনীয় পরিণতি থেকে। ১৯৭৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গঠিত ‘ত্রিদলীয় ঐক্যজোট'-এর শরীক এই দল দু'টি থেকে মাত্র ৬ জনকে বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেয়া হয়েছিল এবং ১১৫ সদস্যের সর্বোচ্চ কার্যনির্বাহী কমিটিতে কিংবা পাঁচটি অঙ্গ সংগঠনের কোনোটির নেতৃত্বেই সুযোগ পাননি মনিসিংহ এবং মোজাফফর আহমেদের মতো সিপিবির নেতারা। এসব অবস্থানে কেবল মুজিব অনুসারীদেরই প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ও কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন এবং সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দান থেকে বাকশাল ও রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে একক ও সর্বময় ক্ষমতা ছিল বাকশাল চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবের হাতে এবং তিনি এমন একজন চেয়ারম্যান ছিলেন যাকে নির্বাচনের কোনো বিধান বা পন্থারই উল্লেখ ছিল না গঠনতন্ত্রে।

    অর্থাৎ পরোক্ষভাবে একথাই ঘোষিত হয়েছিল যে, শেখ মুজিব আজীবন বাকশালের চেয়ারম্যান এবং দেশের প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকবেন। তার কখনও মৃত্যু ঘটবে কিংবা তার অনুপস্থিতিতে অন্য কাউকে চেয়ারম্যান বানানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে, এই অনুমানও বাকশাল গঠনকালে করা হয়নি।

    http://prothom-aloblog.com/posts/16/85876
  • PT | 213.110.243.23 | ২৫ ডিসেম্বর ২০১২ ২০:২৯576791
  • এই লেখাটি প্রসঙ্গে এক পাঠকের প্রশ্নঃ " বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০ বছরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ছিল ৮ বছর। বাদবাকিদের টাকশালির নমুনা কি এই হত দরিদ্র বাংলা?"

    আর বাংলাদেশের দূর্নীতি প্রসঙ্গে লেখক চন্দনের সাফাইঃ "বাংলাদেশ পরবর্তীতে যে ভাবে দূর্নীতিতে বিশ্বে বার বার প্রথম হয়েছে তার বিশাল চর্চাঅ তো শুরু হয়েছিল মুজিবের আমল থেকেই"!!!!!!-ঃ))))

    তিনোরা বিপদে পড়লে ঠিক এইভাবেই "৩৪ বছরের অপশাসন" বাক্যবন্ধটি ব্যবহার করে না?
  • কুলদা রায় | 34.90.91.2 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১২ ০৬:০২576792
  • শেখ মুজিব যে সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা বন্ধ করেছিলেন--
    বাকিরা কী করেছিলেন? জিয়া, এরশাদ, খালেদা?
    চীনাপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কী অবস্থা হবে?
    শেখ মুজিবের পতনের জন্য সামরিক আভ্যুত্থান দরকার হল কেন? জনগণ তার পতনের দ্বায়িত্ব নিল না কেন?
  • কল্লোল | 125.184.99.118 | ২৬ ডিসেম্বর ২০১২ ০৬:২৭576793
  • কুলদা। এই যুক্তিগুলো আসলে উল্টো কাজ করে।
    আপনি লিখছেন -
    "শেখ মুজিব যে সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা বন্ধ করেছিলেন--
    বাকিরা কী করেছিলেন? জিয়া, এরশাদ, খালেদা?
    চীনাপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কী অবস্থা হবে?"

    বাকিরা মানে জিয়া, এর্শাদ ও খালেদা একই কাজ করেছিলেন। অর্থাৎ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করেছিলেন। মুজিবও তাইই করেছিলেন। তাহলে আর তর্ক কিসের। আপনি তো মেনেই নিলেন মুজিবও এদেরই মতো ছিলেন। চীনাপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করবে। মুজিবই তাইই করেছেন। তাহলে আপনার যুক্তি অনুযায়ী মুজিবও চীনাপন্থীই ছিলেন।

    এটা অনেকটা ধরা পড়া চোরের যুক্তি - নেতারাও তো চুরি করে। আমি করলেই দোষ।

    "শেখ মুজিবের পতনের জন্য সামরিক আভ্যুত্থান দরকার হল কেন? জনগণ তার পতনের দ্বায়িত্ব নিল না কেন?"

    উল্টোটা হলো না কেন? সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জনগন মরহুম মুজিবের পাশে দাঁড়ালো না কেন?
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২২ মার্চ ২০১৩ ২০:২০576794
  • অথবা বেড়ালের লেজটি উঁচু করে ধরে মাথাটি নীচের দিকে উল্টো করে দিলে দাঁড়ায়:

    তুমি অধম বলিয়া আমি আরো অধম হইবো না কেন? :পি
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২২ মার্চ ২০১৩ ২০:২৪576795
  • শেখ মুজিবুর রহমান
    আহমদ ছফা

    [ দুই বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজ ভাবনাকে এক মলাটের মধ্যে তুলে ধরার বাসনায় কবি গৌতম চৌধুরী গত শতকের ৯০ দশকে কলকাতা থেকে ‘যুক্তাক্ষর’ নামে একটি কাগজ বের করেছিলেন। প্রথম সংখ্যা বেরোয় আগস্ট ১৯৯৪ সালে। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার বাংলাভাষীদের লেখা একই মলাটে পেশ করা। ওর মধ্য দিয়ে পরস্পরকে চেনা ও জানা ছিল প্রাথমিক একটি উদ্দেশ্য। কিন্তু আরও বড় আশা ছিল সীমান্তের দুই দিকেই উপমহাদেশের ইতিহাস ও তার ফলাফলকে নির্মোহ দৃষ্টি দিয়ে বিচার করবার চর্চা প্রশস্ত করা এবং তার ইতিবাচক ফল হিশাবে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি সমাজ ইতিহাস ভাবনা ইত্যাদির মধ্যে তা আত্মস্থ করা। অল্প কয়েকটি সংখ্যা বেরিয়েছিল, তবুও স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখা উপহার দিয়েছিল ‘যুক্তাক্ষর’। তার মধ্যে রয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান সম্বন্ধে আহমদ ছফার এই লেখা। গৌতম চৌধুরীর সৌজন্যে ‘চিন্তা’-র পাঠকদের জন্য লেখাটি এখানে পেশ করা হোল। লেখাটি বেরিয়েছিল মে ১৯৯৬ সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনি হিসাবে।]

    শেখ মুজিবুর রহমান।। আহমদ ছফা
    ________________________________________________
    "খুব সম্ভবত শেখ মুজিব একজন করুণ বীর, তাঁর চরিত্র অবলম্বন করে ভবিষ্যতে সার্থক বিয়োগান্ত নাটক লেখা হবে-কিন্তু তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে বাংলার ইতিহাসের মুক্তি ঘটানো যাবে না।"
    কথা উঠেছে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে। এক দল বলছেন,শেখ মুজিব সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম বাঙালি, অন্তত বাংলার শ্রেষ্ঠতম সন্তানদের একজন। তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘জাতির পিতা’ এবং বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত মহানায়ক। তাঁরই সংগ্রামের উত্তাপ উপমহাদেশের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলটিতে হাজার হাজার বছরের পরবশ্যতার সমূহ গ্লানি মুছিয়ে দিয়ে একটি নবীন রাষ্ট্র সম্ভাবিত করেছে।

    অন্যরা বলছেন না। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার জাতীয় ইতিহাসের একজন মস্তবড় ‘ভিলেন’ বা ‘খলনায়ক’। তিনি বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। মুক্তি এবং স্বাধীনতার নামে তিনি বাংলার জনগণকে তাড়িত করে হতাশা এবং অন্ধকারের গোলকধাঁধার মধ্যে ছুঁড়ে দিয়েছেন।

    নায়ক পুরুষ, বীর এবং ভিলেন এই দুটি প্রবল মত অদ্যাবধি শেখ মুজিবের নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হয়ে সর্বত্র ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। প্রকৃতপ্রস্তাবে শেখ মুজিবুর রহমান কী ছিলেন? বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা বীর? না কি মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে প্রতারণাকারী বাগাড়ম্বর সর্বস্ব ক্ষমতাদর্পী একজন মানুষ? বাংলার ইতিহাসে শেখ মুজিব কোন ভূমিকাটি পালন করে গেছেন?

    শেখ মুজিবুর রহমান কী ছিলেন? বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা বীর? না কি মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে প্রতারণাকারী বাগাড়ম্বর সর্বস্ব ক্ষমতাদর্পী একজন মানুষ? না কি, শেখ মুজিব ইতিহাসের সেসব ঘৃণিত ভিলেনদের একজন, যারা জনগণকে মুক্তি এবং স্বাধীনতার নামে জাগায় বটে, কিন্তু সামনে যাওয়ার নাম করে পেছনের দিকে চালনা করে।

    আচ্ছা, শেখ মুজিব কি বাঙালি জাতি, বাংলারে জনগণের কাছে একজন মহান শহিদ? যিনি সপরিবারে ঘৃণ্য গুপ্তঘাতকের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন বটে, কিন্তু বাংলার ইতিহাস পরম আদরে এই মহান সন্তানের রুধির-রঞ্জিত স্মৃতি লাল নিশানের মতো উর্ধ্বে তুলে নিরবধিকাল এই জাতির সামনে চলার প্রেরণার উৎসস্থল হয়ে বিরাজ করবে? জাতির সংকট মুহূর্তে বিমূর্ততার অন্তরাল ভেদ করে তেজীয়ান প্রাণবান মুজিব আবির্ভূত হয়ে করাঙ্গুল প্রসারিত করে সংকট ত্রাণের পথ নির্দেশ করবেন?

    না কি, শেখ মুজিব ইতিহাসের সেসব ঘৃণিত ভিলেনদের একজন, যারা জনগণকে মুক্তি এবং স্বাধীনতার নামে জাগায় বটে, কিন্তু সামনে যাওয়ার নাম করে পেছনের দিকে চালনা করে। একটা সময় পর্যন্ত জনগণ ভিলেনদের কথা শোনে, তাদের নির্দেশ শিরোধার্য করে মেনে নেয়। কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারে শয়তানের প্রলোভনে মুগ্ধ হয়ে ফুল-ফসলে ঘেরা সবুজ উপকূলের আশায় পা বাড়িয়ে ভ্রান্ত স্বপ্নের ছলনায় ভ্রান্ত গন্তব্যে এসে উপনীত হয়েছে; তাদের আশা করার , বাসা করার, ভরসা করার কিছুই নেই, আছে শুধু পথ চলার ক্লান্তি, অনিশ্চয়তার হতাশা এবং প্রখর মরুভূমিতে মরীচিকার নিত্যনতুন ছলনা। তখন তারা তাদের ভাগ্যকে ধিক্কার দেয়, অভিশম্পাতের বাণী উচ্চারণ করে বহুরূপী সঙ নেতার নামে, যার ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা এবং উচ্চকাংখার পতাকাকে নিরীহ শান্তিপ্রিয় খেটে খাওয়া জনগণ তাদের মুক্তি সনদ বলে ভুল করেছিল। শেখ মুজিবও কি একজন তেমন মানুষ? লক্ষ প্রদীদ জ্বালা স্তুতি নিনাদিত উৎসব মঞ্চের বেদীতলে সপরিবারে যাঁর মৃতদেহ ঢাকা পড়ে রইলে রাজপথে শোকের মাতম উঠল না, ক্রন্দন ধ্বনি আকাশে গিয়ে বিঁধল না, কোথাও বিদ্রোহ-বিক্ষোভের ঢেউ জলস্তম্ভের মতো ফুলে ফুলে জেগে উঠল না। এ কেমন মৃত্যু, এ কেমন পরিণতি শেখ মুজিবের সুদীর্ঘ কর্মময় জীবনের! সব চুপচাপ নিস্তব্ধ! তাহলে কি ধরে নিতে হবে বাংলাদেশের মানুষ যারা তাঁর কথায় হাত ওঠাত, দর্শন মাত্রই জয়ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করত, তাঁর এমন করুণ এমন ভয়ঙ্কর মৃত্যু দেখেও, ‘বাঁচা গেল’ বলে স্বস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। ইতহাসের অন্যান্য প্রতারক ভিলেনদের ভাগ্যে সচরাচর যা ঘটে থাকে, শেখ মুজিবের ভাগ্যেও তাই কি ঘটেছে?

    একটি সদুত্তর প্রয়োজন। কী ছিলেন মুজিব? বীর? প্রতারক? অনমনীয় একগুঁয়ে উচ্চাকাংখী, চরম ক্ষমতালোভী একজন একনায়ক? একটা জবাব টেনে বের করে আনতে না পারলে বাংলার ভাবী ইতিহাসের পরিরেখাটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে না। বারংবার শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ভূমিকাটি অনির্ণীত থেকে যাচ্ছে বলেই বাংলার, বাঙালি জাতির, ইতিহাসের পরিক্রমণ পথটি ক্রমাগত ঝাপসা, অস্পষ্ট এবং কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে উঠছে। এই ঐতিহাসিক অলাতচক্র যার মধ্যে দিনের আলোতে সবাই পথ হারায়, রাতে রাতকানা হয়ে থাকে। তবে ভেতর থেকে কেটে চিরে সামনে চলার পাথেয় স্বরূপ একটা অবলম্বন অবশ্যই খাড়া করতে হবে।

    শুধু শেখ মুজিব নয়, উনিশশো একাত্তর সালে যে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়ে গেছে এবং যার গর্ভ থেকে বর্তমানের স্বাধীন বাংলাদেশে ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তার চরিত্রটিও নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং শেখ মুজিবুর রহমান এ দুটো যমজ শব্দ, একটা আরেকটার পরিপূরক এবং দুটো মিলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বল -প্রোজ্জ্বল এক অচিন্ত্যপূর্ব কালান্তরের সূচনা করেছে। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে দুর্বার গণআন্দোলনটি সৃজিত হয়েছিল তার লক্ষ্যের অস্পষ্টতা, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, এ সমস্ত বিষয়ে কারও দ্বিমত থাকার নয়। তদুপরি স্বায়ওশাসনের আন্দোলন রাতারাতি স্বাধীনতার সংগ্রামে রূপলাভ ক’রে এশিয়ার একটি সেরা দুর্ধর্ষ বাহিনীর বিপক্ষে বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগণকে বলির পাঁঠার মতো দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। শেখ মুজিব এবং তাঁর দল আওয়ামি লিগ কারোরই এই প্রচণ্ড-পরিস্থিতির মোকাবেলা করার ক্ষমতা ছিল না। ফল যা হবার হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিরোধ যুদ্ধ এবং মুক্তিসংগ্রাম পায়ে হেঁটে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় যাঞ্চা করতে গেল আর তেজোদ্দীপ্ত মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে চলে গেলেন। এ হল নিরেট সত্য কথা। যদি আর কিন্তু দিয়ে ইতিহাস রচিত হয় না। যা ঘটেছে তাই-ই ইতিহাস।

    শেখ মুজিবুর রহমান মধ্যশ্রেণীভুক্ত মানুষ-মধ্যশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করাই হল তাঁর আনুপূর্বিক রাজনৈতিক জীবনের সারকথা। এই মুক্তিসংগ্রামের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে, জাতীয় আকাংখার নিরিখে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা বা শিক্ষা কোনটাই তাঁর ছিল না। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের মাটি থেকে নির্বাসিত হয়ে ভারতে আশ্রয় ভিক্ষা করতে গেল।

    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জড়িয়ে পড়া, সোভিয়েত রাশিয়ার সক্রিয় অংশগ্রহণ, ভারত-পকিস্তান যুদ্ধ এবং যুদ্ধে পাকিস্তানের চূড়ান্ত পরাজয়ের কারণে বর্তমান বাংলাদেশের অভ্যুদয় -- এসকল সত্য যদি সবাই অম্লান বদনে বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারে, তাহলে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এ পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের যে একটি ভূমিকা ছিল সেটুকু মেনে নিতে বাধাটা কোথায়? বাংলাদেশের জন্মপ্রক্রিয়ায় ভারত তার স্বার্থ ছিল বলেই ধাত্রীর কাজ করেছে, একথা মথ্যে নয়। কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশটি ইতিহাসের কোন পর্যায়ে এক ধরনের না এক ধরনের স্বার্থ ছাড়া অন্য দেশের প্রতি সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করেছে? ভারত পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য আওয়ামি লিগকে সব রকমের সাহায্য সহযোগিতা দিয়েছে এবং রাশিয়া তার দুনিয়া জোড়া সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অটুট রাখার জন্য পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তো স্বাধীনতা চেয়েছিল এবং স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য সকল শ্রেণীর জনগণ মরনপণ করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উনিশশো একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামে বাংলাদেশের নানা শ্রেণীর মানুষ নানান দৃষ্টিকোণ থেকে যেভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, ক্ষয়িক্ষতি স্বীকার করেছে, বাংলার ইতিহাসের কোনও পর্যায়ে এমন সর্বাত্মক সার্বজনীন জাতীয় যুদ্ধ এবং গণযুদ্ধের সন্ধান কেউ দিতে পারবেন কি?

    মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে-বাংলাদেশ জন্মগ্রহণ করেছে তাকে মেনে নিতে কারও আপত্তি নেই। এমনকি যে সকল শ্রেণী,গোষ্ঠী ও স্বার্থবাদীচক্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছে, তাদের বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নিতে বাধছে না। কিন্তু মুজিবের অস্তিবাচক ভূমিকাটুকু মেনে নিতে তাতের ঘোর আপত্তি। এ এক মর্বিড মানসিকতা। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অভিযাত্রার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক না থাকার যে লজ্জা, যে গ্লানি, সেটুকু রাখার অপকৌশল হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাপ্য মর্যাদা দিতে তারা অক্ষম।

    অবশ্য কথা উঠতে পারে, উঠতে পারে কেন অবশ্যই উঠবে--বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশের অগ্রযাত্রায় এক পর্যায় সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন শেখ মুজিব। যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি মধ্যশ্রেণী গড়ে না উঠেছে ততদিন শেখ মুজিব পশ্চিমা পাকিস্তানি ধনিকদের লেজুড়বৃত্তি করেছেন, বাঙালি স্বার্থের বিরোধিতা করতেও কুণ্ঠিত হননি। অনেককাল পর্যন্ত ধনিকদের মতাদর্শই তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিল। তাঁর মতো ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির এমন একনিষ্ঠ সেবক তৎকালীন পূর্বপাস্তিানে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যেত কি না সন্দেহ আছে। তিনি তখনই বাঙালি জাতিয়বাদের প্রশ্নটি নিয়ে মাঠে নেমেছেন যখন এদেশে একটি মধ্যশ্রেণী সৃষ্টি হয়ে গেছে। পশ্চিমাদের দ্বারা ক্রমাগত নিগৃহীত হয়ে এই শ্রেণীটি যখন সোচ্চার হতে শিখেছে, সেই সময়েই শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর দল আওয়ামি লিগকে মধ্যশ্রেণীর প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হিসেবে দাঁড় করান। সুতরাং শেখ মুজিবের বাঙালি জাতীয়তাবাদ জাতীয় মধ্যশ্রেণীর জাতীয়তবাদ। যেটি সমাজের শেষিত শ্রেণী নয়। ক্ষুদে শোষক শ্রেণী, বড় শোষক সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সংযোগ তার প্রত্যক্ষ নয়। পাকিস্তনি শোসকদের মাধ্যমেই তার লেনদেন চলছিল। অর্থনৈতিক এবং শ্রেণী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলতেই হবে সাম্রাজ্যবাদী শোষকদের সঙ্গে একটা প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপন করাই ছিল বাঙালি মধ্যশ্যেণীর মূল অভীষ্ট।

    শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের মাধ্যশ্রেণীর দাবিদাওয়ার মোড়ক, যা চিহ্নিত হয়েছিল ‘বাঙলি জাতীয়তাবা’দ নামে, তাই নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন এবং অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে গোটা বাংলাদেশের জনমত তাঁর সপক্ষে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। এটা একমাত্র বক্তব্য নয় -- বারো হাত কাঁকুড়ের তের হাত বীচির মতো, তার পেছনে আরও বক্তব্য রয়েছে। গোড়া থেকেই আওয়ামি লিগের রাজনীতি মূলত পুঁজিবাদী রাজনীতি এবং স্পষ্ট ও প্রকাশ্যভাবে সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা করাই ছিল আওয়ামি লিগ দলটির অন্যতম বৈশিষ্টসমূহের একটি।

    বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশের অগ্রযাত্রায় এক পর্যায় সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন শেখ মুজিব। যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি মধ্যশ্রেণী গড়ে না উঠেছে ততদিন শেখ মুজিব পশ্চিমা পাকিস্তানি ধনিকদের লেজুড়বৃত্তি করেছেন, বাঙালি স্বার্থের বিরোধিতা করতেও কুণ্ঠিত হননি। অনেককাল পর্যন্ত ধনিকদের মতাদর্শই তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিল। তাঁর মতো ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির এমন একনিষ্ঠ সেবক তৎকালীন পূর্বপাস্তিানে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যেত কি না সন্দেহ আছে।

    যেসকল বামপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলার স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা বলত, দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা উচ্চারণ করত, আওয়ামী লিগ বারবার তাদের বিরোধিতা করেই এসেছে। পাকিস্তানের ইঙ্গমর্কিন সামরিক জোটে অংশগ্রহণের প্রশ্নে সুহরাওয়ার্দি এবং মওলানা ভাসানিকে কেন্দ্র করে সেই যে আওয়ামি লিগ, আওয়মি লিগ এবং ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টি নাম নিয়ে দ্বিখণ্ডিত হল, তারপর থেকে বলতে গেলে উনশশো আটষট্টি উনসত্তর সাল পর্যন্তও আওয়ামি লিগ সমাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে এসেছে। এমকি ছয়দফা যখন বাংলাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে তখনও আওয়ামি লিগ সমাজতন্ত্রের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করছে।

    তৎকালীন পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যেসকল বামপন্থী রাজনৈতিক দল প্রথমেই আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তাঁদের চূড়ান্ত ব্যর্থতা শেখ মুজিবুর রহমানের অভূতপূর্ব সাফল্যের অন্যতম কারণ বললে খুব বেশি বলা হবে না। তাঁরা জাতিসত্তার মুক্তির প্রশ্নটি উচ্চরণ করেছিলেন বটে, কিন্তু জাতি যখন ভেতর থেকে জাগ্রত হয়ে দাবি আদায়ের পথে প্রচণ্ড বেগে অগ্রসর হচ্ছিল, তাঁরা কোনও হাল ধরতে পারেননি। এই পরিস্থিতির সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করেছেন শেখ মুজিব এবং তাঁর দল আওয়ামি লিগ। এটা কেন ঘটল, কেমন করে ঘটল, অনেকে অনেক কথা বলবেন। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের দ্বিধাবিভক্তি,বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে তা্র প্রতিক্রিয়া –এক অংশের মস্কোর প্রতি অনবচ্ছিন্ন আনুগত্য এবং অন্য অংশের পিকিংয়ের নির্লজ্জ লেজুড়বৃত্তি-এসব বিষয় অবশ্যই ধর্তব্যের মধ্যে আসবে। তাছাড়া পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ, সেই যুদ্ধে মস্কোর মধ্যস্থতা এবং তার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান মিলিয়ে এশিয়ায় চীন-বিরোধী একটা ব্লক তৈরি করার সোভিয়েত অভিপ্রায় এবং অন্যদিকে যুদ্ধে সরাসরি চীনের পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন, চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক, মওলানা ভাসানি এবং চীনপন্থী কমিউনিষ্ট পার্টির আয়ুব খানের প্রতি দুর্বলতা, তাছাড়া পশ্চিম বাংলার নকশাল নেতা চারু মজুমদারের সন্ত্রাসবাদী রাজনীতির মড়কের মতো প্রভাব, বামপন্থী দলগুলোকে জাতিসত্তার মুক্তির দাবি থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়েছিল। সত্য বটে উনিশশো সত্তরের নির্বাচনের প্রাক্কালে ন্যাপ এবং কমিউনিষ্ট পার্টির মস্কো সমর্থক অংশ জাতিসত্তার মুক্তির দাবিতে আওয়ামি লিগের সঙ্গে একমত পোষণ করে মাঠে নেমেছিলেন, কিন্তু , তখন অনেক বিলম্ব ঘটে গেছে। নির্বাচনের সময় থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পর্যন্ত এমন কি তার পরেও শেখ মুজিবুর রহমান যতদিন জীবিত ছিলেন, আওয়ামি লিগের তল্পিবহন করে মস্কোর নামে জয়ধ্বনি উচ্চরণ করা ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে সত্যিকার অর্থে পালনীয় কোনও ভূমিকা তাদের ছিল না। বড় তরফের কাছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অম্লান বদনে আত্মসমর্পণ –এ্কে যথার্থ যুক্তফ্রন্ট বলা যাবে কি না তা সত্যি সত্যি বিতর্কের বিষয়।র

    সে যাই হোক, বামপন্থী রাজনীতির অন্যান্য অংশসমূহ সেই যে জাতীয় রাজনীতির প্রধান স্রোতধারা থেকে, মূল শিকড় থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছিল, সেই খাতে অদ্যাবধি আর ফিরে আসতে পারেননি। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতীয় মধ্যশ্রেণীর রাজনৈতিক প্রতিনিধি। তিনি তাঁর দৃষ্টিকোণ থেকে, তাঁর নিজস্ব শ্রেণীটির স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে মুক্তিসংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। এই জাতীয় মাধ্যশ্রেণীটি দুধের সরের মতো সবেমাত্র ভাসতে সুরু করেছে। আপন মেরুদণ্ডের ওপর থিতু হয়ে দাঁড়াবার ক্ষমতা তার নেই। মধ্যশ্রেণীর দাবির সঙ্গে জাতীয় মুক্তির প্রশ্নে বাংলাদেশের শোষিত মানুষের দাবি সমসূত্রে এসে মেশার ফলে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন নতুন বেগ এবং আবেগ সঞ্চয় করে রাতারাতি জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের রূপ পরিগ্রহ করে। বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর মানুষ অগ্নিতে পতঙ্গের মতো এই মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ব্যাপ্তি এবং গভীরতার দিক দিয়ে বিচার করলে উনিশশো একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের মতো ঘটনা বাংলার আবহমান ইতিহাসে আর দ্বীতিয়টি নেই ।

    শেখ মুজিবুর রহমান মধ্যশ্রেণীভুক্ত মানুষ-মধ্যশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করাই হল তাঁর আনুপূর্বিক রাজনৈতিক জীবনের সারকথা। এই মুক্তিসংগ্রামের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে, জাতীয় আকাংখার নিরিখে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা বা শিক্ষা কোনটাই তাঁর ছিল না। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের মাটি থেকে নির্বাসিত হয়ে ভারতে আশ্রয় ভিক্ষা করতে গেল।

    শেখ মুজিবুর রহমানের দোদুল্যমান নেতৃত্ব এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যে ভারতের যুদ্ধে পরিণত হল, এর জন্য অনেকে শেখ মুজিবকে দায়ী করেন এবং তাঁকে জাতীয় বেঈমান ইত্যাদিও আখ্যা দিয়ে থাকেন।

    এ তো হল চিত্রের এক দিক। অপর দিকে দৃষ্টিপাত করলে কী দেখতে পাই? শেখ মুজিবের সুবিধাবাদী দোদুল্যমান নেতৃত্ব নেগেট করতে পারার মতো বিকল্প নেতৃত্বের অস্তিত্বে সেদিন বাংলাদেশে কোথায়? শেখ মুজিবুর রহমানের দোদুল্যমান নেতৃত্ব এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যে ভারতের যুদ্ধে পরিণত হল, এর জন্য অনেকে শেখ মুজিকে দায়ী করেন এবং তাঁকে জাতীয় বেঈমান ইত্যাদিও আখ্যা দিয়ে থাকেন। কিন্তু একটার পর একটা ভুলের মাধ্যমে আওয়ামি লিগের বিকল্প নেতৃত্ব নির্মাণের সুযোগ হেলায় অপব্যায় করে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে সাক্ষীগোপালের ভূমিকা পালন করেছেন কিংবা স্থলবিশেষে জাতির শক্রদের সাথে হাত মিলিয়েছেন, তাঁরাই বা জাতির প্রতি এমন কি বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছেন? শেখ মুজিব কী ভূমিকা পালন করেছে, অন্য দশটা রাজনৈতিক দল এবং নেতা কী ভূমিকা পালন করেছেন সেই মানদণ্ডেই তা নির্ণয় করতে হবে। সেদিন যদি শেখ মুজিব তাঁর শ্রেণীগত ভূমিকাটি পালন না করতেন তাহলে কি খুব ভালো করতেন?

    একট প্রশ্ন অবশ্যই জিজ্ঞাস্য। শেখ মুজিব সময়ের সন্তান, না সময়ের পিতা? সেই সময়ের বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক বাস্তবতা বিরাজ করছিল তাতে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা প্রয়োগ করে তিনি তার কতদূর গুণগত পরিবর্তন সাধন করতে পেরেছিলেন? না কি সময়ের স্রোতে বাহিত হয়ে কেবলমাত্র তাঁর ভাবমূর্তিটাই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর রূপে ক্রমাগত অভ্রভেদী হয়ে উঠেছিল। এ প্রশ্নে আমাদের স্পষ্ট উত্তর, শেখ মুজিব সময়ের সন্তান, সময়ের পিতা নন। সেসময়ে বাংলাদেশের সামন্তবাদী মুসলিম লিগ রাজনীতির ক্ষীণতম প্রভাবটুকু আর অবশিষ্ট নেই। বামপন্থী রাজনীতি দিশেহারা, বিপথগামী, শতধা বিচ্ছিন্ন এবং পক্ষাঘাত রোগে আ্ক্রান্ত। মাঠে শেখ মুজিব ছাড়া আর কেউ নেই। আর জাতির অন্তরের মুক্তিপিপাসা সমুদ্রের কটাল জোয়ারের তরঙ্গের মতো ফেটে ফেটে পড়ছে। শেখ মুজিবুর রহমান সেইসময় জাতিকে অঙ্গুলি হেলনে ডাইনে বাঁয়ে সামনে পেছনে যেদিকে ইচ্ছা পরিচালিত করতে পারতেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভয়াবহ প্লাবনে গোটা দেশ ভেসে যাচ্ছে।

    কিন্তু এ কোন বাঙালি জাতীয়তাবাদ? মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্বের ভিত পচে গলে একাকার, ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার শেষ শেকড়টাও উপড়ে ফেলে দশ কোটি মানুষের সামনে যে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা মূর্তিমান হয়ে দেখা দিয়েছে তাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ বললে ভুল করা হয়না। কিন্তু একটি লাগসই ব্যাখ্যা প্রয়োজন। উনিশশো সাতচল্লিশ সালে হিন্দু জাতীয়তা এবং মুসলিম জাতীয়তার ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও ভারতীয় রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা স্বীকার করেননি যে হিন্দু জাতীয়তাই হল ভারত রাষ্ট্রের ভিত্তি। মুসলিম জাতীয়তার ভিত ভেঙে বাংলাদেশে যখন নতুনতর জাতীয় সংগ্রাম দাবানলের মতো জ্বলে উঠতে শুরু করেছে তখন ভারতের ক্ষমতাসীন শাসক কংগ্রসের তাত্ত্বিকের বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভুল সংশোধন হিসাবে ব্যাখ্যা করতে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মতামত আওয়ামি লিগের চিন্তাধারাকে যে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। জাতীয় সংগ্রাম যখন তুঙ্গে সেইসময় মুজিবের ভক্তরা তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ আখ্যা দিচ্ছেন, নতুন ধরনের মুজিব কোট, মুজিব টুপি চালু করছেন। বঙ্গবন্ধু শব্দটির সঙ্গে দেশবন্ধুর একটি সাদৃশ্য অতি সহজে চোখে পড়ে। মুজিব কোটের সঙ্গে জওহরলাল নেহরু ব্যবহৃত জ্যাকেট এবং মুজিব টুপির সঙ্গে সুভাষবসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের টুপির ঈষৎ পরিবর্তিত মিল দেখলে অতি সহজেই বোধাগম্য হয় যে-সকল প্রতীক ব্রিটিশ বিরোধী সংগামে ভারতীয় কংগ্রেস অনুসৃত ভারতীয় জাতীয়তার স্মারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোই সামান্য পরিবর্তিত চেহারায় বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে নতুনভাবে জেগে উঠতে শুরু করেছে। এমন কি শেখ মুজিবুর রহমানের অহিংস অসহযোগ আন্দোলনটির কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে আবার মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের নব-উত্থান লক্ষ করে অনেক ভারতীয়ই উল্লসিত হয়ে উঠেছিলেন, এ কারণে যে কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন অনতিবিলম্বে তা পূর্ণ হতে যাচ্ছে। পাকিস্তান ভেঙ্গে পড়ছে এবং খণ্ডিত ভারত আবার জোড়া লেগে অখণ্ড রূপে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। উনিশশো একাত্তর সালের বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্বের রূপটি দর্শন করে ভারতের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর এ মনোভাব জাগ্রত হওয়া একটুও অস্বাভাবিক নয় যে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে ভারতের সঙ্গে মিলেমিশে না যাক, অন্তত ভারতের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে। সে কারণে অনেকেই শেখ মুজিবুর রহমানকে মহাত্মা গান্ধীর মানসপুত্র বলে অভিহিত করতে কুণ্ঠিত হননি।

    বঙ্গবন্ধু শব্দটির সঙ্গে দেশবন্ধুর একটি সাদৃশ্য অতি সহজে চোখে পড়ে। মুজিব কোটের সঙ্গে জওহরলাল নেহরু ব্যবহৃত জ্যাকেট এবং মুজিব টুপির সঙ্গে সুভাষবসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের টুপির ঈষৎ পরিবর্তিত মিল দেখলে অতি সহজেই বোধাগম্য হয় যে-সকল প্রতীক ব্রিটিশ বিরোধী সংগামে ভারতীয় কংগ্রেস অনুসৃত ভারতীয় জাতীয়তার স্মারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলোই সামান্য পরিবর্তিত চেহারায় বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে নতুনভাবে জেগে উঠতে শুরু করেছে।

    অথচ বাংলাদেশে উনিশশো বাহান্ন সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে উনিশশো আটাষট্টি-উনসত্তরের স্বাধিকার আন্দোলন এবং উনিশশো একাত্তরের মুক্তিসংগ্রাম পর্যন্ত সংগ্রামের ধারাটি এবং ভারতের অবহেলিত রাজ্যগুলোতে তার যে প্রভাব পড়েছে, বিশ্লেষণ করে দেখলে ভারতের শোষিত অঞ্চল এবং জনগোষ্ঠীর শোষণমুক্তির সংগ্রামের সঙ্গে একটা সাযুজ্য, একটা মিল, একটিা প্রবহমানতা অনায়াসে আবিস্কার করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা আন্দোলনের কথা ধরা যেতে পারে। এ আন্দোলনের অব্যবহিত পরেই হিন্দি ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তামিল ভাষাভাষী অঞ্চলে এবং সংস্কৃতির অবাধ বিকাশের দাবিতে আন্দোলন এবং বিক্ষোভ সংঘটিত হয়। পরবতীকালে অন্যান্য ভাষাভাষী অঞ্চলেও কমবেশি এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ভারতের রাজ্যসমূহের অনেকগুলোতে যে নতুন করে স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ এবং তুমুল গণসংগ্রাম ভারতীয় ইউনিয়নের ঐক্যের ভিতটিকে একরকম কাঁপিয়ে তুলেছে তার স্বরূপটি উপলব্ধি করলেই বাংলাদেশের জাতীয় সংগ্রামের চরিত্রটি অনাইয়াসে উদঘাটন করা সম্ভব হবে। আসলে ভারতবর্ষ হিন্দু-মুসলমান দু’জাতির দেশ নয়। ভারত বহু জাতি, বহু ভাষা, বহু সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের দেশ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিদায়কালে অবহেলিত অঞ্চল, জনগোষ্ঠী এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ ভারতীয় হিন্দু-মুসলমান বুর্জোয়া শ্রেণীর চাপে সোচ্চার এবং মারমুখী হয়ে উঠতে পারেনি। অবহেলিত অঞ্চল এবং জনগোষ্ঠীর মানুষেরা সংগঠিত হয়ে বুর্জোয়া নেতৃত্বের কোনও চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি এবং আপোষে হিন্দু এবং মুসলিম বুর্জোয়া শ্রেণী দেশবিভাগের ঐক্যমতে পৌছায়। মোটামুটি হিসেবে দশকোটি মুসলমান এবং ত্রিশকোটি হিন্দু ধরে নিয়ে ভারতবর্ষকে বিভক্ত করা হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির বেলায় দু’অঞ্চলের ভৌগোলিক দূরত্ব এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। শুধু মুসলমান পরিচয়টাকেই একমাত্র পরিচয় বলে ধরা হয়েছে। তেমনি হিন্দু পরিচয়ের ক্ষেত্রেও অনেকগুলো পর্বতপ্রমাণ বৈষম্যকে ধর্তব্যের বিষয় বলেই গণ্য করা হয়নি। হিন্দুদের মধ্যে বর্ণহিন্দু এবং হরিজন রয়েছে। তাদের মধ্যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক যে ব্যবধান, যে দূরত্ব যে বৈষম্য বিরাজমান তা হিন্দু-মুসলমানের দূরেত্বের চাইতে কম নয়। এ ছাড়াও রয়েছে আদিবাসী এবং শিখ। এক সম্প্রদায় কর্তৃক অন্য সম্প্রদায়ের এক অঞ্চল কর্তৃক অন্য অঞ্চলের শোষণ এবং এক জাতিগোষ্ঠী কর্তৃক অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির নিপীড়ন সমানে চলে আসছে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেরে ভারত বহু জাতি , বহু ভাষা এবং বহু সংস্কৃতির দেশ। এখানে সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া কিংবা চীনের মতো একটা বিপ্লব ঘটে গেলে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এই দ্বন্দ্বসমূহের হয়তো নির্বাসন করা সম্ভব হত। ভারতের হিন্দু-মুসলমান বুর্জোয়া তাদের শ্রেণীগত কারণে একটা বিপ্লবের পথরোধ করার উদ্দেশ্যেই ভারত বিভাগকে কবুল করে নিয়েছিল।

    ঐতিহাসিকভাবে ভারত উপমহাদেশের সমস্ত অঞ্চল দীর্ঘকাল একসঙ্গে অবস্থান করার কারণে রাষ্ট্রীয় সীমানা আলাদা হওয়া সত্ত্বেও একের প্রভাব অন্যের উপর পড়তে বাধ্য। এখন আসা যাক বাংলাদেশের জাতীয় সংগ্রামের স্বরূপটি নিরূপণের প্রশ্নে। ভারত বহুভাষিক, বহুজাতিক দেশ। বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সেই সত্যকে আরও প্রোজ্জ্বল এবং আরও বাস্তবভাবে তুলে ধরেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে বাংলাদেশের সামনে কতিপয় সুযোগ ছিল। তাই প্রথম চোটেই সে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেড়েছে। অপরপক্ষে ভারতের রাজ্যসমূহের সে সুযোগ ছিল না। ক্রমাগত যতই দিন এগিয়ে যাচ্ছে এই দ্বন্দ্বসমূহ একসার অগ্নিগিরির মতো একটা পর একটা জ্বলে উঠতে আরম্ভ করছে। ভারতীয় রাজনীতি কেন্দ্রমুখী এবং কেন্দ্রবেরোধী এই দুটি ধারা মূলত গোষ্ঠীবিশেষের শোষণ এবং তার বিরুদ্ধে শোষিত অঞ্চল এবং গণগোষ্ঠীসমূহের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ মিলেই গড়ে উঠেছে। শোষিত জাতিসত্তাসমূহের জাতীয়তার দাবি রাষ্ট্রের সহায়তা আরোপিত ভারতীয় জাতীয়তার জগদ্দল পাথরের তলায় চাপা পড়ে রয়েছে। অতি সাম্প্রতিককালে তা পাঞ্জাব, আসাম, কাশ্মীর, মিজেরাম এবং নাগাল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে প্রবল ঝঞ্ঝার বেগ নিয়ে জাগ্রত হয়ে উঠতে আরম্ভ করেছে।

    বাংলাদেশের জাতীয়তার যে সংগ্রাম, শ্রেণী দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যাবে ভারতে নির্যাতিত জাতিসমূহের সংগ্রামের সঙ্গে তার অনেক বেশি সাযুজ্য। তাই বাংলাদেশের জাতীয়তাকে কিছুতেই মুহাম্মদ আলি জিন্নহর দ্বিজাততত্ত্বের ভুল সংশোধন বলা যাবে না। বরঞ্চ একথা বলাই যুক্তি সঙ্গত যে বাংলাদেশের জাতীয়তার সংগ্রাম ভারতর্ষের বহুজাতীয়তার সংগ্রামের পূর্বাভাস মাত্র। বাঙালি জাতীয়তার এই দুটি পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যে শেখ মুজিব প্রথমটাকেই মেনে নিয়েছিলেন,অর্থাৎ তিনি এবং তাঁর দল রাজনীতির ভিত্তি স্বরূপ দ্বিজাতিতত্ত্বের ব্যর্থতাকেই আসল অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। অত্যাচার নির্যাতন এবং অবদমনের কংসকারায় ভারতীয় রাজ্যসমূহের জাতীয়তার যে নতুন অভিধা তৈরি হচ্ছিল, তার সবটুকু দৃষ্টিগোচর নয়। প্রব্ল প্রক্ষোভে কোথাও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে, কোথাও একেবারে ভ্রণাবস্থায় সংগুপ্ত রয়েছে। বাংলাদেশ নিজের মুক্তির সংগ্রাম করতে গিয়ে এই জাতিসত্তাসমূহের সংগ্রামে নেতৃত্ব দান করেছেন -- এই সত্য মুজিব কিংবা আওয়ামি লিগ কখনও উপলব্ধি করেননি। ব্রিটিশ বিরোধী টুটাফাটা ভারতীয় কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদকেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের উপজীব্য বলে ধরে নিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের মধ্যশ্রেণী যাদের অধিকাংশই শুরুতে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের পর্যন্ত বিরোধিতা করেছিল তারাই শেখ মুজিবের চারপাশের জুটে সমস্ত পরিবেশটাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।

    শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতীয়তার আসল প্রেক্ষিতটাই নির্ণয় করেননি। গোটা জাতি যখন চূড়ান্ত সংগ্রাম কাঁধে নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত তিনি জনগণকে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য তৈরি না করে তাদেরকে একটার পর একটা তামাশার মধ্যে ঠেলে দিয়ে অনাবশ্যক সময় হরণ করেছেন। আর ইত্যবসরে পাকিস্তানিরা জাহাজে প্লেন বোঝাই করে পশ্চিমাঞ্চল থেকে সৈন্য এবং মারণাস্ত্র এনে সেনা ছাউনিগুলি বোঝাই করে ফেলেছে। সেই সম্ভাবনায়ময় সময়ের কোনও সুযোগ তিনি গ্রহণ করতে পারেননি। কারণ তাঁর ভয় ছিল, করতে গেলে মধ্যশ্রেণীর নেতৃত্ব কাচের ঘরের মতো চুরমার হয়ে ভেঙে পড়বে। তথাপি জনমতের প্রবল ঝড়ের ঠেলায় তাঁকে স্বাধীনতার নামটি উচ্চারণ করতে হয়েছিল। ব্যাস ওইটুকুই। বস্তুত বাঙালি সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতাঞ্জলি নয়, সোনার তরী নয়, ‘আর দাবায়ে রাখাবার পারবা না’। সহস্রাধিক বছরের পরাধীন জীবনের অস্তিত্বের প্রতি সসাসরি অম্বীকৃতি জানিয়ে এই উচ্চারণের মাধ্যমে গোটা জাতির চিত্তলোকে তিনি এমন একটা অনমনীয় আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি করেছিলেন যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরাট এক প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এই গৌরব শেখ মুজিবকে অবশ্যই দিতে হবে।

    যা বলছিলাম, শেখ মুজিব সময়ের সন্তান, পিতা নন। ঘটনার গতি তাঁকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিল, তিনি ঘটনাস্রোত নিয়ন্ত্রণ করে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পানে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। সময় শেখ মুজিবকে সৃষ্টি করেছে। অভিনব সম্ভাবনা সম্পন্ন সময়ের স্রষ্টা তিনি নন। তাঁর জাতীয়তার বোধ অতীতের, ভবিষ্যতের নয়। অতীতচারী জাতীয়তার মোহে আবিষ্ট শেখ মুজিব মধ্যযুগীয় নাইটের মতো বীরত্ব সহকারে পাকিস্তানের কারাগারে চলে গেলেন। প্রতিরোধ সংগ্রামে লণ্ড ভণ্ড ছত্রখা হয়ে পড়ল। আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিল। ভারত সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চরিত্র সম্পূর্ণ পালটে যায়। শেখ মুজিবুর রহমানের দোদুল্যমান এই নেতৃত্ব জাতিকে সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জনের পুরোপুরি গৌরব থেকে চিরকালের জন্য বঞ্চিত করছে এবং ভারতের সহায়তায় স্বাধীনতা অর্জনের মাশুল অনেকদিন পর্যন্ত শোধ করতে হল বাংলাদেশকে।

    বাংলাদেশের জাতীয়তার যে সংগ্রাম, শ্রেণী দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেখা যাবে ভারতে নির্যাতিত জাতিসমূহের সংগ্রামের সঙ্গে তার অনেক বেশি সাযুজ্য। তাই বাংলাদেশের জাতীয়তাকে কিছুতেই মুহাম্মদ আলি জিন্নহর দ্বিজাততত্ত্বের ভুল সংশোধন বলা যাবে না। বরঞ্চ একথা বলাই যুক্তি সঙ্গত যে বাংলাদেশের জাতীয়তার সংগ্রাম ভারতর্ষের বহুজাতীয়তার সংগ্রামের পূর্বাভাস মাত্র। বাঙালি জাতীয়তার এই দুটি পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যে শেখ মুজিব প্রথমটাকেই মেনে নিয়েছিলেন,অর্থাৎ তিনি এবং তাঁর দল রাজনীতির ভিত্তি স্বরূপ দ্বিজাতিতত্ত্বের ব্যর্থতাকেই আসল অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

    বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম যে ভারতের নিজস্ব যুদ্ধে পরিণত হল তার পেছনে যে কারণটি সক্রিয় তা হল শেখ মুজিবের নেতৃত্বধীন মধ্যশ্রেণীভুক্ত আওয়ামি লিগের শ্রেণীচরিত্র। বঙ্গোপসাগরের সুনীল জলধিতল মন্থিত করে নতুন ভূখণ্ড জেগে ওঠার মতো প্রতিরোধের প্রবল আকাংখা নিয়ে বাংলাদেশের নিচের দিকের সামাজিক স্তরসমূহ ঠেলে উপরদিকে উঠে এসেছে। এই জাগরিত জনসংখ্যা এই নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা দর্শন করে শেখ মুজিব আশান্বিত হওয়ার চেয়ে অধিক আতঙ্কিতই হয়েছিলেন। কারণ শেখ মুজিব তাঁর শ্রেণীর দম কতদূর, লক্ষ কোথায়, এদের নিয়ে কতখানি যেতে পারবে,ন জানতেন। এই সংকটপূর্ণ সময়ে একচুল এদিক ওদিক হলে কাচের তৈজসপত্রের মতো নেতৃত্ব যে খানখান হয়ে ভেঙে পড়বে তিনি সে বিষয় বিলক্ষণ অবগত ছিলেন। নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা অর্থাৎ যুদ্ধ করবার সংকল্প নিয়ে জেগে ওঠা জাতিকে যুদ্ধ করার প্রস্তুতির দিকে চালিত না করে, তিনি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা পথ বেছে নিলেন। আলোচনার ছল করে ইয়াহিয়া খান পাকিস্তান থেকে নৌপথে, আকাশপথে সৈন্য এনে ব্যারাক ভর্তি করে চরম মুহূর্তটির অপেক্ষা করছেন। পঁচিশে মার্চে রাত্রে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিস্তব্ধ নগরীর নিরস্ত্র জনগণের উপর যখন ঝাঁপিয়ে পড়ল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খাওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল কী? তথাপি বাংলাদেশের জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রাম নির্মূল করা পাকিস্তনি সেনাবাহিনীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। জনগণ, হাতের কাছে যা পেয়েছে, তাই দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছে। কামান, বন্দুক, স্যাভার জেটের সামনে বলতে গেলে খালি হাতে কতদূর! খুনি, জল্লাদ ইয়াহিয়া বাহিনীর হাতে মারের পর মার খেয়ে উলঙ্গ অসহায় অবস্থায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারতের মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।

    শেখ মুজিব কিংবা আওয়ামি লিগের যুদ্ধ করার কোনও পূর্ব-পরিকল্পনা থাকলে,ভারত থেকে আগেভাগে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র আনিয়ে রাখতেন। বাংলাদেশের একটা অঞ্চল যদি মুক্তিসেনাদের দখলে থাকত এবং সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধ চালানো হত, আমাদের মুক্তিসংগ্রামের চরিত্রটি সম্পূর্ণ পালটে যেতে পারত। আমাদের মুক্তিসেনাদের সাহসের অভাব ছিল না, আত্মত্যাগের বেলায় তারা পরন্মুখ হননি। কিন্তু অভাব ছিল অস্ত্রের। একমাত্র উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের মোকাবিলায় টিকতে না পেরে আমাদের প্রতিরোধ সংগ্রাম বারবার পিছু হটে শেষ যাত্রার ভারতে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছে। ভারতে আশ্রয় নেওয়ার কারণে বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম সম্বন্ধে পাকিস্তানিদের ভ্রান্ত প্রচারণা আন্তর্জাতিক মহলে অনেক সংশয় সৃষ্টি করেছে। বলতে হবে শেখ মুজিব এবং আওয়ামি লিগ নেতৃত্ব ইচ্ছে করে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলেন অথবা একটি সশস্ত্র জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোনও পরিপূর্ণ ধারণাই তাঁদের ছিল না। আশা করি সকলে একমত হবেন বিমান এবং ট্যাংক ধ্বংসী কিছু অস্ত্রসহ শুরুতে অন্তত দু’তিনটি জেলায় ঘাঁটি গেড়ে বসা যেত, বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে ওই যুদ্ধ সম্পন্ন করা যেত। পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধটা সরাসরি বাঙালিদের সঙ্গে বাংলাদেশের মাটিতে হলে বাংলাদেশি জনগণের মনেও ভিন্নরকম প্রতিক্রিয়া হত। মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের আগ্রাসী যুদ্ধ মনে করে অনেক দেশপ্রেমিক নাগরিক এ যুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। সেটি ঘটতে পারত না।

    ‘গলদ আমাদের চরিত্রের মধ্যে, গ্রহ-নক্ষত্র সে জন্যে দায়ী নয়।’ শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যাপারে পর্যালোচনার কালে শেক্সপীয়র উল্লেখিত পাঙক্তিটি খুবই সারগর্ভ এবং তাৎপর্যবহ বলে প্রতীয়মান হবে। মানুষ জীবন দিয়েই তো সবকিছু করে। তার কোনও কর্মই জীবন থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন নয়। শেখ সাহেব তাঁর নিজের সম্পর্কে কিছু লিখেননি বা অন্য কেউই এ পর্যন্ত অনুসন্ধান বা গবেষণা ইত্যাদির সাহায্যে তাঁর জীবনকথা রচনা করেননি। তাঁর ওপর আজতক যেসমস্ত পুস্তক আমাদের দেশে প্রকাশিত হয়েছে তাতে তাঁর মানস গঠনের চরিত্র কেউ তুলে ধরেননি। শেখ মুজিবের পোশাকি জীবন এবং তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের খতিয়ান হয়ত পাওয়া যাবে, কিন্তু ব্যক্তি মুজিবকে সেখানে থেকে খুঁজে বের করা অনেকটা খড়ের গাদায় সূচের তালাশ করার মতই দুরূহ ব্যাপার।

    যে যাই হোক, শেখ সাহেবের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ঘটে কলকাতা শহরে। ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ থেকে আনুমানিক ত্রিশের দশকের একেবারে শেষ এবং চল্লিশের দশকের শুরুর দিকে তিনি ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র হিসেবে কলকাতা শহরে আসেন। তখন অবিভক্ত বাংলায় শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হকের মুখ্যমন্ত্রীত্বের কাল। মুসলিম লিগের দাবিতে পাকিস্তান আন্দোলনের হাওয়া জোরেসোরে বইতে শুরু করেছে। কংগ্রেস রাজনীতি গান্ধী এবং সুভাষ বসুর মতাদর্শগত পার্থক্যকে কেন্দ্র করে দুই মেরুতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যুবক মুজিবের কলকাতা আগমনের অনতিকাল পূর্বে সুভাষ বুসু জাপান-জার্মনির সহায়তায় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতবর্ষ স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে দেশ থেকে অন্তর্ধান করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ফরওয়ার্ড ব্লক জাতীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয়। কমিউনিষ্ট পার্টি কলে মিলে কারখানায়, কৃষক সমাজে এবং প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অনেকখানি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শেখ মুজিবের মতো আত্মপ্রত্যয় সম্পন্ন গতিশীল একজন যুবক কলকাতা শহরে এসে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি অঙ্গিকার ক’রে মুসলিম লিগে নাম লেখালেন। তখনকার পরিবেশ পরিস্থিতির বিচারে এটাই হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু মুজিবের পরবর্তী কর্মকাণ্ড বিবেচনার মধ্যে ধরলে তা খানিকটা বিস্মিত করে। হুমায়ুন কবিরও ফরিদপুর জেলার মানুষ। তৎকালীন মুসলিম ছাত্রসমাজে তিনি ছিলেন একটা দৃষ্টান্ত। হুমায়ুন কবির কংগ্রেস রাজনীতিতে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। তৎকালীন পূর্ববাংলার কৃষক সমাজ থেকে আগত কমরেড মুজফফর আহমদ কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেছেনে। তাঁর (মুজিবের) রাজনৈতিক জীবনের সূচনাপর্বে এ দু’জনের কেউই তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি। মুজিবের মতো একজন প্রাণবান তোজাদ্দীপ্ত যুবক অতি সহজে নেতাজি সুভাষ বসুর ফরোয়ার্ড ব্লকে যোগদান করতেন পারতেন, এটা আশা করা মোটেই অন্যায় নয়। কিন্তু তিনি মুসলিম লিগের রাজনীতিকে কবুল করলেন। বাংলার মুসলিম লিগের মধ্যে আবার তিনটি উপদল। একটির নেতৃত্ব চ্ছিল খাজা নাজিমুদ্দিন। সামন্ত ভূস্বামী গোষ্ঠীর লোকেরাই ছিল এই উপদলের সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক। অন্য অংশের নেতৃত্বে ছিলেন আবুল হাসিম। রাজনীতি সচেতন, বামপন্থী চিন্তাচেতনায় প্রভাবিত মুসলিম ছাত্র এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণী এই অংশের ঘোরতর সমর্থক ছিল। এই দুটি ছাড়া তৃতীয় উপদলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন হো্সেন শহিদ সুহরাওয়ার্দি। শেখ সাহেব সুহ্‌রাওয়ার্দি সাহেবের উপদলে গিয়ে জুটলেন। সুহরাওয়ার্দি সাহেব সাহেব শহর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন ডাকসাইটে লড়াকু কর্মীবাহিনী সহযোগে আধুনিক রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তেলার প্রয়োজনীয়তা সর্বপ্রথম অনুভব করে সেরকম সংগঠন গড়ে তুলতে প্রবৃত্ত হলেন। তাঁর কাছে উদ্দেশ্যই হল প্রধান, উপায় নির্ধারণের বেলায় তাঁর মধ্যে নৈতিকতা বোধের বিশেষ বালাই ছিল না বলে মনে করার কারণে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের সময় শহিদ সুহরাওয়ার্দি দাঙ্গাকারীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।

    হুমায়ুন কবির কংগ্রেস রাজনীতিতে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। তৎকালীন পূর্ববাংলার কৃষক সমাজ থেকে আগত কমরেড মুজফফর আহমদ কমিউনিস্ট রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেছেনে। তাঁর (মুজিবের) রাজনৈতিক জীবনের সূচনাপর্বে এ দু’জনের কেউই তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেননি। মুজিবের মতো একজন প্রাণবান তোজাদ্দীপ্ত যুবক অতি সহজে নেতাজি সুভাষ বসুর ফরোয়ার্ড ব্লকে যোগদান করতেন পারতেন, এটা আশা করা মোটেই অন্যায় নয়। কিন্তু তিনি মুসলিম লিগের রাজনীতিকে কবুল করলেন।

    এইসময় হোসেন সুহরাওয়ার্দির সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় ঘটা এবং তাঁর একজন বিশ্বস্ত কর্মীতে পরিণত হওয়া, সবকিছুকে কাকতালীয় ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোন উপায় নেই। পারস্পরিক প্রয়োজনের ভিত্তিতেই এই ধরনের গুরু শিষ্যের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সুহরাওয়ার্দির শিষ্যত্ব গ্রহণ শেখ মুজিবের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। রাজনীতির প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির ধরনটার মূল পরিচয়ও এতে পাওয়া যাবে। তাঁর উচ্চকাংখা ছিল, দৃঢ়তা ছিল, আর ছিল তীব্র গতিশীলতা। কোনও পর্যায়ে রাজনৈতিক আদর্শবাদ তাঁর জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করেনি। বুদ্ধি মেধা, প্রতিভা কিংবা দূরদর্শিতা কখনও তাঁর মধ্যে অধিক দেখা যায়নি। রাজনীতি বলতে ক্ষমতা, ক্ষমতা দখলের উপায় – এটুকু তালিম তিনি শহিদ সুহরাওয়ার্দি সাহেবের কাছ থেকে ভালোভাবে পেয়েছিলেন। চোখের সামনে যা দেখা যায়, যা স্পর্শ করা, তার বাইরে কোনও কিছুকে তলিয়ে দেখার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা এবং অনমনীয় ইচ্ছাশক্তি এ দুটোই ছিল শেখ মুজিবের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য । জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এ দুটো পরিহার করতে পারেননি। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘পলিটিক্স অব এক্সিজেনসি’; তিনি গোটা জীবনভর সেই ধরনের রাজনীতিই করে গেছেন। সুযোগ যখন তাঁকে যতদূর নিয়ে গেছে, তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে পরবর্তী সুযোগের অপেক্ষা করেছেন। মওলানা ভাসানি এবং হোসেন শহিদ সুহ্‌রাওয়ার্দির মধ্যে যখন ইঙ্গ-মার্কিন জোটে যোগদান এবং স্বাধীন জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে বিভেদ দেখা দেয়­শেখ মুজিব অবলীলায় সুহ্‌রাওয়ার্দিকে সমর্থন দিয়েছেন এবং ইঙ্গ-মার্কিন জোটের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। আবার যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে সুহ্‌রাওয়ার্দি সরকারের অনুসৃত নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে, তার জবাবে সুহ্‌রাওয়ার্দি বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানকে শতকরা আটানব্বই ভাগ স্বায়ত্বশাসন এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। সেদিন শেখ মুজিব তাঁর নেতার বিরুদ্ধে বলার মতো কিছুই খুঁজে পাননি বরং সুহ্‌রাওয়ার্দি যা বলেছেন তাকে ধ্রুবসত্য ধরে নিয়ে তাঁর নির্দেশ মেনে কাজ করে গেছেন। এটা সত্যি খুব আশ্চর্যের যে, যে-মানুষটিকে বাঙালির ‘জাতির পিতা’ বলে অভিহিত করা হয় সে একই মানুষ উনিশশো পঁয়ষট্টি সনের পূর্বে কখনও বাংলাদেশের রাজনৈতিক গন্তব্য নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামিয়েছেন, এমন কোনও প্রমাণ বড় একটা পাওয়া যায় না। এমনকি সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানকে যারা পূর্বা বাংলা বলত, তাদেরকে, পাকিস্তান ভিত্তিক দক্ষিণপন্থী অন্যান্য দলের মতো, বিদেশের বিশেষ করে ভারত-রাশিয়ার চর বলে সম্বোধন করতে তিনি বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হননি।

    উনিশশো পঁয়ষট্টি সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের সংখ্যাধিক জনগণ মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করে যে, তাদের আসল বিপদের সময় পাকিস্তান সত্যি সত্যি পাশে এসে দাঁড়াতে সক্ষম নয়। অখণ্ড পাকিস্তানের প্রতি জনগণের যেটুকু নাড়ির যোগ ছিল তার আবেদন একেবারে অবদমিত হয়ে যায়। সেই সময়ে বাঙালি মধ্যশ্রেণীর রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামি লিগ ‘ছয় দফা’ দাবি নিয়ে জনগণের সামনে এসে হাজির হয়। এটা উল্লেখ করা নিষ্প্র্যোজন যে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ছয় দফ দাবি ব্যাপক সাড়ার সঞ্চার করে এবং এই আন্দোলনের মাধ্যমেই শেখ মুজিবুর রহমানের নতুন ভাবমূর্তি জাগ্রত হয়। এই সময়ও একটা কথা সত্যি যে আওয়ামি লিগ বা আওয়ামি লিগের অঙ্গ সংঠনসমূহ বিশ্বাসে, আচরণে ছিল চূড়ান্তভাবে সমাজতন্ত্র বিরোধী। উনিশশোসত্তরের নির্বাচনের পর ছাত্ররা যখন তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে রাজনীতি স্পিরিট এবং বাহন দুইইহয়ে দাঁড়ায় এবং এগারো দফা কর্মসূচী প্রণয়ন করে, বাধ্য হয়ে আওয়ামি লিগ হাইকমান্ডকে এক ধরনের আপোষমূলক মনোভাব পোষণ করতে হয়। ছয় দফার সংকীর্ণ মধ্যশ্রেণীভিত্তিক রাজনীতি এবং এগারো দফার অধিকতর প্রগতিশীল রাজনীতি একই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলাদা আলাদা খাতে প্রবাহিত হতে থাকে। তেল-জলের মতো দুটি মিশ খায়নি। মুক্তিযুদ্ধ যদি সত্যকার মুক্তিযুদ্ধ হয়ে উঠতে পারত, এই রাজনীতির মধ্যে সংশ্লেষ সাধিত হয়ে বৃহত্তর একটা জাতীয় জঙ্গি-ঐক্যের ভিত রচনা করতে পারত। কিন্তু পঁচিশে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আক্রমণ করে বসল। শেখ মুজিব কারারুদ্ধ হলেন, আওয়ামি লিগ নেতৃত্ব ভারতে পলায়ন করল, প্রতিরোধ আন্দোলন চুরমার হয়ে গেল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারতের নিজস্ব যুদ্ধ হয়ে দাঁড়াল। ভারত আওয়ামি লিগকে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন করার অভিপ্রায়ে যুদ্ধে নেমে পড়ল। কারণ বিলম্বে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের চরিত্র পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। পেছন থেকে রাশিয়া এসে জুটল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পরাজিত হল। আর উনিশশো একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হল।

    শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে এলেন। যে ‘উইল টু পাওয়ার’ তিনি অন্তরে লালন করেছেন, সেই আশ্চর্য ক্ষমতামনস্কতা তাঁকে বাংলাদেশের সর্বময় কর্তৃত্বের আসনে বসাল। কিন্তু এ কোন বাংলাদেশ? চারিদিকে ধ্বংসের স্তূপ। বাতাসে রোদন ধ্বনি, হত্যা, লুটপাট সমানে চলছে। আওয়ামি লিগের লোকেরা শবভূক শকুনের মতো চক্কর দিয়ে বেড়াচ্ছে। কী করবেন শেখ মুজিব? তাঁর কী করার আছে? যে অনমনীয় আকাঙ্ক্ষার আগুন তাঁকে ঠেলে এতদূরে নিয়ে এসেছে, সেই আকাংখাই তাঁকে পাকে পাকে বেঁধে ফেলেছে। পুরাতন বাংলাদেশ নেই, পুরাতন মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁর পেছনে নেই। তাঁকে ঘোষণা দিতে হল, তিনি সমাজতন্ত্র করবেন। আওয়ামি লিগের লোকজন কথা নেড়ে সায় দিল। তিনি দল ভেঙ্গে একদল করলেন। ইতহাসের ঘূর্ণাবর্তে অসহায় বন্দী শেখ মুজিব নিজেও ভালো করে জানতেন না, তিনি কী করতে যাচ্ছেন। পেছনে তিনি ফেরত যেতে পারবেন না, সামনে উত্তাল সমুদ্র, সাঁতার দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাঁর থাকলেও অভ্যেস নেই। তাঁর লোকজন যারা এতদূর তাঁর সঙ্গে এসেছেন, আর যেতে রাজি হবে না। ভেতর থেকে কোনও ভরসা না পেয়ে তিনি বাইরের দিকে তাকাতে আরম্ভ করেছেন। মস্কোপন্থী দলগুলো বুদ্ধিপরামর্শ এবং মন্ত্রণা দিতে এল। শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবনের রাজনীতিতে যা করেননি তাই করতে বাধ্য হলেন। মস্কোর কাছে আত্মসমর্পণ করলেন। তিনি মনে করছেন রশি তাঁর হাতে আছে, কেননা এখনও মানুষ তাঁকে দর্শন মাত্রই জয়ধ্বনি করে, তাঁর কথায় হাত ওঠায়। উষ্ণহৃদয় মুজিব চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী হয়েও বিরোধী দলের নেতার মতো বক্তৃতা দিতে পারেন। এবং হয়তো মনে করেন, এখনও পর্যন্ত ভুখানাঙ্গা মানুষের মনে কণ্ঠস্বরের যাদুমন্ত্রে আশার আলো জ্বালিয়ে তুলতে পারেন। ক্ষমতার উঁচুমঞ্চে অবস্থান করে এখনও মনে করেন বাংলাদেশের জন্য তিনি অনিবার্য। এদিকে ঘটনার নিজস্ব নিয়মে ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। গোটা জীবন ঘটনাটা ঘটে যেতে দিয়ে তিনি অপেক্ষা করেছেন এবং প্রতিবারই ভাগ্য তাঁর প্রতি প্রসন্ন হাসি হেসেছে।

    কিন্তু তিনি না পারলেন পুরনো পুঁজিবাদী অবস্থায় ফিরে যেতে, না পারলেন একটা প্রগতিশীল অর্থনীতির ভিত প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি পাকিস্তানিদের বিচার করতে পারলেন না যেমন, স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিও তেমন রূঢ় হতে পারলেন না। আবার আপন দলের মানুষ এমনকি আপন পরিবারের লোকজনদেরও স্বেচ্ছাচারিতা নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হলেন। ত্রিশ লাখ, না ধরে নিলাম দশ লাখ মানুষের রক্তের দরিয়ার ওপারে দাঁড়িয়ে প্রচণ্ড প্রচণ্ড হুংকার দেওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারছেন না। লুটপাট অত্যাচার নির্যাতন খুন গুমখুন সমানে চলছে। ঘটনাস্রোত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যতই হস্ত প্রসরিত করেন ততই আউলা হয়ে পড়ে। জনগণ তাঁর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে হ্যামলিনের যাদুকরের মতো পেছনে অনুসরণ করেছে। তাঁকে অনুসরণ করার অভ্যেস জনগণের বহুদিনের, ভেড়ার পালের মতো তাদের তাড়িত করার স্বভাবটিও তাঁর বহু পুরনো। তাই তিনি তখনও মনে করতেন তিনি বাংলার মানুষকে ভালোবাসেন, আর বাংলার মানুষও তাঁকে ভালোবাসেন। এরই মধ্যে অন্তিম ঘটনানাটি দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে আসছে। অবশেষে দেখা গেল চৌদ্দই আগষ্টের রাত্রে সপরিবারে গুলিবিদ্ধ মুজিবের দীর্ঘদেহী শরীর চাপচাপ জমাট বাঁধা রক্তের মধ্যে পড়ে আছে নিস্তব্ধ নিথর। হায় রে শেখ মুজিব, তোমার জন্য অশ্রু তোমার জন্য বেদনা।

    উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে কী বলব? শেখ মুজিব কি একজন বীর? না। একজন ভিলেন? তাও না। বীরত্বের উপাদান তাঁর মধ্যে ছিল, কিন্তু ইতিহাসের আসল প্রেক্ষিতের সঙ্গে তার মিল ঘটেনি। তাই তিনি একজন প্রকৃত বীর হয়ে উঠতে পারেননি। খুব সম্ভবত শেখ মুজিব একজন করুণ বীর, তাঁর চরিত্র অবলম্বন করে ভবিষ্যতে সার্থক বিয়োগান্ত নাটক লেখা হবে-কিন্তু তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে বাংলার ইতিহাসের মুক্তি ঘটানো যাবে না।

    (প্রথম প্রকাশিত, গৌতম চৌধুরী সম্পাদিত 'যুক্তাক্ষর' (মে ১৯৯৬)
    http://www.chintaa.com/index.php/chinta/showAerticle/163/bangla
  • pi | 78.48.231.217 | ২৩ মার্চ ২০১৩ ১৯:৩৩576796
  • Name: আবুল খায়ের

    IP Address : 123.11.74.236 (*) Date:03 Dec 2012 -- 09:03 PM

    "১৯৭২ এ সংবিধান রচনার কালে ঐতিহাসিক মুজিবীয় ["তোরা সব বাঙালি হইয়া যা"] উক্তিটি স্মরণ করা যাক।"
    এটি একটি ডাহা মিথ্যা। ১৯৭২-এর ১০ই এপ্রিল থেকে একই বছরের ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ গণপরিষদের কোন অধিবেশনেই কথিত এই উক্তিটি মুজিব করেন নি।

    বিপ্লব রহমান, এটা নিয়ে কী বক্তব্য ?
  • PT | 213.110.243.23 | ২৩ মার্চ ২০১৩ ২০:৩৭576797
  • এই তথাকথিত "চীনাপন্থী"-দের কত শতাংশ বাংলাদেশী সমর্থন করে যে এদের বক্তব্যকে এত প্রাধান্য দিতে হবে? নাকি বাংলাদেশে নেতা কিছু কম পড়ায় কোন না কোন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মুজিবকেই গাল দিয়ে যেতে হবে?
  • রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য | 125.187.33.4 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১১:৫৮576799
  • সব আলোচনা গুলো আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে পড়ে বোঝার চেষ্টা করছি । একটা খুঁতখুঁতি থেকেই গেল । শেখ মুজিবের ডাকে যে ভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সাধারণ লোক ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেটা আরও সব তা বড় বড় লোকেদের ডাকে হল না কেন?
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৫:৪৯576800
  • # পাই,

    "১৯৭২ এ সংবিধান রচনার কালে ঐতিহাসিক মুজিবীয় ["তোরা সব বাঙালি হইয়া যা"] উক্তিটি স্মরণ করা যাক।"

    এই থ্রেডের একদম ওপরে বিপ্লব রহমান এর আদ্যপান্ত জবাব সে সময়ই দিয়েছে। সামান্য নজর করলেই দেখতে পেতেন।

    আবুল খায়ের ভক্তিবাদের জেরে ওই বক্তব্যটির আগাপাশতলা বুঝতে হয় অক্ষম, না হয় এ তার মতিভ্রম; কেননা এর পর তাকে দেখা যায় যুক্তির্তকের বাইরে খিস্তি-খায়ের রূপে আবির্ভূত হতে। তখনই তিনি সিকিসহ অনেকের সমালোচনার মুখে পড়ে টইপত্র ত্যাগ করেন। বিষয়টি সে সময়ই মিমাংসিত।

    তখন আবুল খায়েরকে বিপ্লব রহমান যা বলেছে, তা-ই কপি-পেস্ট করে নীচে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে মাত্র দুটি অনুপয়েন্ট:

    ০১. লক্ষ্যনীয়, উদ্ধৃত চিহ্নের ভেতর বাক্যটিতে কোথাও এটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের "গণপরিষদের অধিবেশনে দেওয়া উক্তি" বলা হয়নি। বলা হয়েছে, "১৯৭২ এ সংবিধান রচনার কালে"। অর্থাৎ মুজিব উক্তির কালটি সংবিধান রচনার সময়ের এবং সালটি ইংরেজী বর্ষ ১৯৭২ মাত্র। ০২. কিন্তু আমাদের মুজিবভক্ত আবুল খায়ের চাতুরিপনায় মুজিবীয় ঐতিহাসিক উক্তিটি "গণপরিষদের অধিবেশনে দেওয়া উক্তি" বলে চালিয়ে দেন; শুরুতেই আয়রনি আরোপ করেন "এটি একটি ডাহা মিথ্যা।"

    যা হোক। এবার কপিপেস্টকৃত বিপ্লব রহমানের বিপরীত বয়ান পুনর্বার:

    ...................................................................................................................

    ["১৯৭২ এ সংবিধান রচনার কালে ঐতিহাসিক মুজিবীয় ["তোরা সব বাঙালি হইয়া যা"] উক্তিটি স্মরণ করা যাক।"
    এটি একটি ডাহা মিথ্যা। ১৯৭২-এর ১০ই এপ্রিল থেকে একই বছরের ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ গণপরিষদের কোন অধিবেশনেই কথিত এই উক্তিটি মুজিব করেন নি। বরং গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান প্রদানে বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত বঙ্গবন্ধু মুজিবের বক্তৃতার প্রশংসা করে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার একাধিক বক্তৃতা করেন। সেসব বক্তৃতাবলী গণপরিষদের প্রসিডিংসে আছে। এখানে যা বলা হচ্ছে তা স্রেফ মিথ্যাচার।"] -- আবুল খায়ের।
    _______

    "১৯৭০ সালে তিনি [এমএন লারমা] পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর, স্বাধীনতার বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের কাছে 'পাহাড়ে আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসনের' চার দফা দাবি তুলে ধরেন। সে সময় শেখ মুজিব ঘৃণাভরে এই দাবি উপেক্ষা করেন। একই বছর ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশের সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভাষাগত সংখ্যালঘু পাহাড়িদের 'বাঙালি' বাঙালি হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে তিনি গণপরিষদ অধিবেশন বর্জন করেন। এ সময় এমএন লারমা তার ভাষণে বলেছিলেন:

    'বাংলাদেশের কোটি কোটি জনগণের সঙ্গে আমরা জড়িত। সবদিক দিয়েই আমরা একসঙ্গে বাস করছি। কিন্তু আমি একজন চাকমা। আমার বাপ, দাদা, চৌদ্দ পুরুষ, কেউ বলেন নাই, আমি বাঙালি!…'

    বাংলাদেশ নামক বাংলা ভাষাভাষীর রাষ্ট্রর জন্মলগ্নেই এমএন লারমা বুঝেছিলেন, আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন ছাড়া ভাষাগত সংখ্যালঘু পাহাড়ি আদিবাসীর মুক্তি নেই। তাই তিনি সেই ’৭৩ সালেই স্বতন্ত্র সাংসদ ও জনসংহতি সমিতির আহ্বায়ক হিসেবে সংসদ অধিবেশনে তুলে ধরেছিলেন পাঁচ দফা দাবি নামা। এগুলো হচ্ছে:

    '… ক. আমরা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সমেত পৃথক অঞ্চল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পেতে চাই। খ. আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার থাকবে, এ রকম শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন চাই। গ. আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষিত হবে, এমন শাসন ব্যবস্থা আমরা পেতে চাই। ঘ. আমাদের জমি স্বত্ব জুম চাষের জমি ও কর্ষণ যোগ্য সমতল জমির স্বত্ব সংরক্ষিত হয়, এমন শাস ব্যবস্থা আমরা পেতে চাই। ঙ. বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে যেনো কেহ বসতি স্থাপন করতে না পারে, তজ্জন্য শাসনতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার প্রবর্তন চাই।…'

    এ সব দাবিনামার স্বপক্ষে এমএন লারমা সংসদের তার ভাষণে বলেছিলেন:

    '…আমাদের দাবি ন্যায় সঙ্গত দাবি। বছরকে বছরকে ধরে ইহা একটি অবহেলিত শাসিত অঞ্চল ছিলো। এখন আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ পার্বত্য চট্টগ্রামকে পৃথক শাসিত অঞ্চল, অর্থাৎ আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসিত অঞ্চলে বাস্তবে পেতে চাই।…'

    কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, এমএন লারমার দাবি সে সময় চরম অবজ্ঞা করে শেখ মুজিব সরকার।"

    দ্রষ্টব্য: গেরিলা নেতা এমএন লারমা http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=7209
  • b | 135.20.82.166 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৫:৫৮576801
  • কিন্তু ঐ উক্তিটি মুজিব কখন ও কোথায় করেছিলেন? কোনো জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে?
  • pi | 78.48.231.217 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৬:৪৯576802
  • এম এন লারমা ওঁর প্রশংসা করেননি, সংবিধানে বাঙালী বলে আখ্যায়ির হবার বিরুদ্ধে দাবি তুলেছিলেন, সে তো আগে পড়েছি, কনভিন্সড ও । সেই নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। মুজিব কখন কোথায় ( সংবিধান রচনা কালে বলেন, এটা একটু ভেগ লেগেছে) ঐ কথাটা বলেন, জানতে চেয়েছি। আর সেটার সপক্ষে কোন ডকুমেন্ট আছে কিনা। থাকলে সেটা পড়তে চাই।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৭:০১576803
  • # পাই,

    "১৯৭২ এ সংবিধান রচনার কালে ঐতিহাসিক মুজিবীয় ["তোরা সব বাঙালি হইয়া যা"] উক্তিটি স্মরণ করা যাক।"

    পুনশ্চ:

    ০১. এ পর্যায়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে শেখ মুজিব ওই ঐতিহাসিক চরম উগ্র জাতীয়তাবাদী উক্তিটি [যার শেকড় মূলত মৌলবাদ ও ফ্যাসিবাদে গাঁথা] কোথায় করেছিলেন?

    এর পরিপ্রেক্ষিত ওপরে উদ্ধৃত মুক্তমনার নোটের অংশের শুরুতেই সংক্ষেপে দেওয়া আছে।

    "১৯৭০ সালে তিনি [এমএন লারমা] পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর, স্বাধীনতার বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের কাছে 'পাহাড়ে আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসনের' চার দফা দাবি তুলে ধরেন। সে সময় শেখ মুজিব ঘৃণাভরে এই দাবি উপেক্ষা করেন।"

    ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এমএন লারমা, উপেন্দ্রলাল চাকমাসহ পাহাড়ি জনপ্রতিনিধি ও বুদ্ধিজীবীরা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করে ওই ''পাহাড়ে আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসনের' চার দফা দাবি তুলে ধরেন"। কিন্তু সে সময় প্রধামন্ত্রী ঘৃণাভরে এই দাবি প্রত্যাখান করে বলেন, ["তোরা সব বাঙালি হইয়া যা"]। বিশিষ্ট আদিবাসী গবেষক ও প্রকৃতিবিদ ফিলিপ গাইনের " The Chittagong Hill Tracts: Life and Nature at Risk " নামক গ্রন্থসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক অসংখ্য গবেষণা গ্রন্থে এ ঘটনার সবিস্তার উল্লেখ আছে।

    http://www.sehd.org/publications/adivasis-and-forests/31-chittagong-hill-tracts-life-nature-at-risk

    কোনও কোনও গ্রন্থে শুধু তাই-ই নয়, এমনও বলা হয়েছে যে, সে সময় শেখ মুজিব প্রতিনিধি দলের মুখের ওপর ফাইল ছুঁড়ে ফেলেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন, "লারমা [এমএন], বেশী বাড়াবাড়ি কইরো না। পার্বত্য চট্টগ্রামে এক কোটি বাঙালি ঢুকাইয়া দিমু!" [তখন বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যাই ছিলো প্রায় সাড়ে সাত কোটি।]

    এছাড়া ১৯৭৪ সালে "বাঙালি" জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সংবিধান রচিত হওয়ার পর শেখ মুজিব চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ উদ্বোধনের পর রাঙামাটির জনসভায় দেওয়া ভাষণে স্পষ্ট বলেছিলেন, "আমি উপজাতিদের [বাঙালি] জাতিতে প্রমোশন দিলাম!" সে সময়ের পত্র-পত্রিকায় এ ঘটনার সবিস্তার বর্ণনা আছে।

    প্রসঙ্গক্রমে বলা ভালো, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুত নির্মাণকালে একদফা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় এক লাখ পাহাড়ি মানুষকে বাস্তভিটা হারিয়ে সর্বশান্ত হতে হয়েছে। জীবন বাঁচাতে হাজারে হাজারে তারা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন ত্রিপুরা, মিজোরাম, অরুণাচল ও বার্মায় [এখন মায়ানমার]। আর মাত্র এক দশক পরেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এক দফা গণহত্যা, গণধর্ষন ও জ্বালাও-পোড়াও-সহিংসতার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই খোদ নিজেদের স্বাধীন দেশেই পাহাড়িদের জাতীয় অস্তিত্বের ওপর অমন আঘাত!

    ভাষাগত সংখ্যালঘু/ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি/আদিবাসী/উপজাতিদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি রাষ্ট্র প্রধান এবং সংবিধান কর্তৃক ওই রকমভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালে এমএন লারমার নেতৃত্ব জনসংহতি সমিতি ও ১৯৭৩ সালে সমিতির সামরিক শাখা [গেরিলা গ্রুপ] শান্তি বাহিনী গঠন, ১৯৭৪ সাল থেকে শুরু করে টানা দুই দশকেরও বেশী সময় সেনা বাহিনী-শান্তি বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র বন্দুক যুদ্ধ, পাহাড়ি জনপদে অন্তত ১৩টি বড় ধরনের গণহত্যা, প্রায় এক যুগ ধরে ভারতের ত্রিপুরায় প্রায় ৭০ হাজার পাহাড়িদের শরণার্থীর গ্লানিময় জীবন বেছে নিতে বাধ্য হওয়া, প্রায় ২৫ হাজার পাহাড়ি-বাঙালির [আনুমানিক] জীবনের বিনিময়ে ১৯৯৭ সালে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর, চুক্তির আওতায় শান্তি বাহিনীর অস্ত্র সমর্পন ও গেরিলা গ্রুপের বিলুপ্তি, ত্রিপুরা থেকে পাহাড়ি শরণার্থী প্রত্যাবর্তন এবং শান্তিচুক্তিটি আদৌ গত ১৬ বছরেও হাসিনা-খালেদা-মইন/ফখরুদ্দীন-হাসিনার সরকারের যথাযথ বাস্তবায়নে দীর্ঘ অনীহা এবং ভূমি সমস্যার সমাধান না হওয়ায় পার্বত্য সমস্যা জটিল থেকে ক্রমশ: জটিলতর হচ্ছে।

    দ্রষ্টব্য: পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৫ বছর: প্রধান শর্ত ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি অন্ধকারেই

    http://www.kalerkantho.com/index.php?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1079&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=3&archiev=yes&arch_date=02-12-2012
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৭:২৬576804
  • "Name: PT

    IP Address : 213.110.243.23 (*) Date:23 Mar 2013 -- 08:37 PM

    এই তথাকথিত "চীনাপন্থী"-দের কত শতাংশ বাংলাদেশী সমর্থন করে যে এদের বক্তব্যকে এত প্রাধান্য দিতে হবে? নাকি বাংলাদেশে নেতা কিছু কম পড়ায় কোন না কোন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মুজিবকেই গাল দিয়ে যেতে হবে?"

    _________________________

    #PT

    নানান থ্রেডে আপনার কুলদা-নন্দীয় উপস্থিতি বিনোদনমূলক। তবে আপনি একটি কথা ঠিকই বলেছেন, বাংলাদেশে "চীনাপণ্থী"দের অস্তিত্ব প্রায় নাই-ই, এইসব হীন কীটদের সমর্থনের প্রশ্নই তো আসে না। ; তাহলে আছে কী? আছে "চীনাপন্থী" ভীতি; একে আমরা আদর করে "চাইনিজ ফোবিয়া" বলতে পারি। :পি

    এই ফোবিয়াট আবার এতোই ছোঁয়াচে যে, এর প্রভাবে অনেকেই এর স্বাক্ষর বিভিন্ন টইয়ে রেখে চলেছেন; আপনি তো কোন ছাড়! এই ফোবিয়ার প্রভাবেই চলতি টইয়েই আমাদের ছোটগল্পকার রায় বাবু তো শীবের গীত গাইতে বসে একবার বিপ্লব রহমানের বাপকেও টেনে ধরেছিলেন!!

    কিন্তু আপনার এই কথাটি মানা গেল না যে, বাংলাদেশে নেতার কোন অভাব নেই। মুজিব মাপের নেতা আকাল তো ব্যপক প্রকট! তাই "কোন না কোন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে মুজিবকেই গাল" দেওয়ার মতো এমন নির্মলানন্দ আর কোথায় আছে ভাই? :ডি
  • pi | 78.48.231.217 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৭:৩০576805
  • আচ্ছা, ধন্যবাদ।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৭:৫২576806
  • # রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য,

    উঁহু...খুব মন দিয়ে পড়েছেন, বলতে পারছি না। চলতি টইয়ে ড. আহমদ শরীফ. আহমদ ছফা, হুমায়ুন আজাদসহ নানা বিশিষ্টজনের অনলাইনে প্রাপ্ত বক্তব্য-বিশ্লেষনে এর জবাব বহুবার দেওয়া হয়েছে। ...ইতিহাসের এই গুরুতর বাঁকটির প্রশ্নোত্তর এককথায় হয় না। তবু আপনার জন্য অধমের শর্টহ্যান্ডে লেখা কয়েকটি পয়েন্ট পুনর্বার:

    ___________

    ০১. ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে ১৯৭১ এর মহান জনযুদ্ধটি মুক্তিযুদ্ধই ছিলো, এটি ছিলো ছাত্র-শিক্ষক-জনতা-সাধারণ মানুষ সকলের মুক্তির সংগ্রাম, মোটেও কেবলমাত্র স্বাধীনতার সংগ্রাম বা একখণ্ড দেশপ্রাপ্তির লড়াই তো নয়ই [এ কারণেই আদিবাসীরাও বাঙালির পাশাপাশি এতে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেন, স্বাধীন দেশে সব রকমের মুক্তির স্বপ্ন দেখেন তারাও, যদিও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তাদের সে স্বপ্ন নির্মমভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, 'তোরা সব বাঙালি হইয়া যা' ], শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ পূর্ব বাংলার মানুষের স্পিরিটটুকু ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়, বাঙালি ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধে শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন প্রায় কিংবদন্তীতুল্য নেতা, বঙ্গবন্ধু [এতে নিজস্বপন্থায় বিপ্লবকাঙ্খায় সরাসরি অংশ নিয়ে অবদান রাখে কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন দল ও উপদল, এমকি সিরাজ সিকদার, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে তাদের সকলকেই মুজিব-জিয়া স্বৈর শাসনে নির্মমভাবে খুন হতে দেখা যায়, উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রপাগান্ডায় তারা থাকেন উপেক্ষিত এবং 'কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?'], সাতের দশকে অগ্নিগর্ভ পূর্ব বাংলায় শেখ মুজিব ও বাংলাদেশ এক পর্যায়ে সমর্থক হয়ে পড়ে [স্বাধীনতার পর সেই মোহ চূর্ণ হয় অচিরেই, বঙ্গবন্ধু শেষ পর্যন্ত আর বঙ্গের বন্ধু থাকেননি, নায়ক থেকে খলনায়কে তার উত্তোরণ ঘটে দ্রুত, সহযোগি ভক্তকূল তাকে সামনে রেখে সব রকম দেশবিরোধীতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও লুঠপাটে মত্ত হয়], যদিও মুক্তিযুদ্ধের নিয়ামক এই শক্তিটি এর আগে ১৯৪৭-এ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় জোর ভূমিকা রেখেছে।

    সে সময় একমাত্র বাংলা এবং পাঞ্জাব প্রদেশেই মুসলিম লীগ সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জোরেই মুসলিম লীগ পাকিস্তানের সম্বাবনা ভারতবর্ষের বাদবাকি মুসলমানদের দেখাতে সাহস করে। তখন শেখ মুজিবও সেই আন্দোলনেরই বলিষ্ঠকর্মি ছিলেন [এবং মওলানা ভাষানী]। শেখ মুজিব তখন মুসলিম লীগের রক্ষণশীল সোহরাওয়ার্দী গ্রুপের কর্মি ছিলেন। সোহরাওয়ার্দীদের বিরুদ্ধে ছিলেন আবুল হাশিমের মতো প্রগতিশীল তরুণ নেতা। বাংলার অখণ্ডতা ঠেকাতে আবুল হাশিম-শরত বোস প্রমুখের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় ১৯৪৭-এর পর আবুল হাশিম রাজনীতিই ছেড়ে দেন। কিন্তু শেখ মুজিব টিকে থাকেন। হাশিমপন্থীরা গোপনে কমিউনিস্টদের সমর্থন দিতে থাকে আওয়ামী লীগের ভেতর। তার বাইরে স্বতন্ত্র ছাত্র-যুব সংগঠনও করতেন তারা, সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যও ছিলোন।

    ০২. পাক উপনিবেশটি ক্রমেই পূর্ব বাংলার হাতে-পায়ে শেকল হয়ে এঁটে বসে। পাকিস্তানে প্রথমত আঘাত হানেন তারাই, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে, এর আগে হাজং বিদ্রোহের সশস্ত্র লড়াইয়ে। ১৯৫২-র পরপরই কমিউনিষ্টরা স্পষ্ট বুঝেছিলেন পাক শাসনে মুক্তি নেই, নইলে কৃষক-শ্রমিক স্বরাজও সম্ভব নয়, বাংলাকে স্বাধীন না করলে রাষ্ট্র বিপ্লবও সম্ভব নয়। ভাষা আন্দোলনের অগ্রসর কর্মি — ভাষা মতিন, অলি আহাদদের পরের কার্যক্রম দেখলে সেটা মনে হয়।

    ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট গঠন করে বাঙালিদের সব দল এক হয়ে মুসলিম লীগকে শেকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে দেশ স্বাধীনের শর্ত তৈরী করে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নযাত্রা শুরু এরই আগেই হয়। তখন স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দুটি স্পষ্ট ধারা সমান্তরাল চলতে শুরু করে। একদিকে কমিউনিষ্ট প্রভাবিত ছাত্ররা সশস্ত্র গণযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাকে স্বাধীন করতে চান, আরেকদিকে জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থায় সাংবিধানিক পথে পূর্ণ স্বাত্তশাসনের মাধ্যমে অখণ্ড পাকিস্তানের জায়গায় ফেডারেল পাকিস্তানের স্বপ্ন। শেষোক্ত এই ধারাটিই ২১ দফার প্রবক্তা।

    কিন্তু পাক সরকার ২১ দফা মানতে প্রবলভাবে অস্বীকার করে, মাওলানা ভাসানী ১৯৫৬-তে ঘোষণা করেন, এ রকম হলে বাঙালিরা আলাদা রাস্তা ধরবে, এক সঙ্গে থাকবে না। সোহরাওয়ার্দীর প্রধান অনুসারী শেখ মুজিব তার নেতার পথেই থাকেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্র্দী মত দেন, ৯৮ ভাগ স্বাধীনতা তো দেওয়াই হয়েছে।

    ০৩. আইয়ুব শাহী কমিউনিস্ট কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলে তাদের একটি বড় অংশ মওলানা ভাষানীর সমর্থক হয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে থাকেন। কাগমারি সম্মেলনে দলে দলে বিপ্লবী কমিউস্টরা যোগ দেন ['পাকিস্তান, ওয়ালাইকুম আস সালামালাইকুম']। আমেরিকার সঙ্গে সামরিক চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ভাগ হয়। মুসলিম কাম মার্কিন কাম পাকিস্তানপন্থীদের নেতা থাকেন সোহরাওয়ার্দী ও মুজিব। ভাষানী ন্যাপ গঠন করে পৃথক হন।

    আওয়ামী লীগের ভেতরের কমিউনিস্টপন্থীরা তখন মস্কো-চীন দুই গ্রুপে ভাগ হয়। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকায় এর আগেই কমিউনিস্টদের অপর অংশটি আওয়ামী লীগে ঢুকেছিলো। মস্কোওয়ালারা চলে যায় মুজিবের সঙ্গে আর চীনারা ভাষানীর সঙ্গে।

    ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়াদী গ্রেফতার হলে ৩১ জানুয়ারি ৪ টি ছাত্র সংগঠন মধুর ক্যান্টিনে যৌথভাবে বসে। সভা থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। সকল আন্দোলন কর্মসূচিকে সংগঠিতভাবে রূপ দেওয়ার জন্য ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ পাকিস্তান স্টুডেন্ট ফোরাম নামে সাধারণ ছাত্রদের একটি মোর্চা গঠন করে। এরই মধ্যে একদল জঙ্গি ছাত্র বেঙ্গল লিবারেশন ফোর্স নামে একটি বাহিনী তৈরি করে। ছাত্ররা তখনই বুঝেছিলো, তাদের লড়তে হবে আইয়ুব শাহীর সেনাদের সঙ্গেই। স্বাধীনতার দুই পথের পার্থক্য তখন আরো স্পষ্ট হয়।

    ০৪. উপমহাদেশ ও বিশ্ব রাজনীতিতে ১৯৬৫-৬৬ সালে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। পূর্ব বাংলার অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একমাত্র বাঙালিরাই বীরের মতো লড়ে পাকিস্তানের সন্মান অক্ষুন্ন রাখে। কিন্তু তারা দেখতে পায়, যুদ্ধে পূর্ব বাংলা অরক্ষিত ছিলো। সেটি বাঙালির বৈষম্যকে প্রকট করে। প্রণীত হয় ছয় দফা। যার প্রণোদনা এসেছিলো বামপন্থি শিক্ষক নাজমুল করিমের বই থেকে।

    লক্ষনীয়, যে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সে দ্বিজাতিত্ত্বওয়ালারাই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলো, পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের দুই অংশের জনগণ সমান নয়। এ থেকে আওয়ামী লীগ বামপন্থীদের প্রেরণায় তৈরি করলো বাঙালিদের আরেক দ্বিজাতিত্ত্ব, পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ এক জাতি নন! সে সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবসহ ৩৪জন সশস্ত্র অভুত্থানের পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেফতার হন, তারা তা অস্বীকার করেন। পূর্ব বাংলা ক্ষুব্ধ থেকে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল মুজিব জেলে ছিলেন।

    অন্যদিকে, ১৯৬৬ সালে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক বিপ্লববের ঢেউ সারা বিশ্বে আছড়ে পড়ে। গেরিলা যুদ্ধের মহানায়ক মাওসেতুং প্রদর্শিত সশস্ত্র বিপ্লবের ঢেউ আলোড়ণ তোলে ভারত ও পূর্ব বাংলায় [ 'মোর গাঁয়েরও সীমানায়/পাহাড়ের ওপারে/নিথীশ রাত্রির প্রতিধ্বনী শুনি/নতুন দিনের যেনো/পদধ্বনী শুনি', ভূপেন হাজারিকা]। ভিয়েতনাম ও কিউবার সশস্ত্র গেরিলা বিপ্লবী সংগ্রামও কমিউনিস্টদের উজ্জীবীত করে ['তোমার নাম, আমার নাম/ভিয়েতনাম! ভিয়েতনাম!']

    আরো পরে ভারতের নকশাল বাড়ি আন্দোলনের নেতা চারু মজুদারের ‘শ্রেণী শত্রু খতমের লাইন’ও এপারের কমিউনিস্ট আন্দোলনকে প্রভাবিত করে ['৭০ দশককে মুক্তির দশকে পরিনত করুন']। এরই পথ ধরে পরে বিপ্লবকাঙ্খি চীনপন্থী কমিউনিস্টরা নিজ নিজ নেতা ও তত্ত্বের সমর্থনে সশস্ত্র হতে শুরু করেন [এবং সিরাজ সিকদার]।

    [দ্রষ্টব্য: সিরাজ সিকদার: অন্য আলোয় দেখা http://www.unmochon.net/node/639 ]

    এদিকে আগরতলা ষড়যন্ত্রের ক্ষোভের পথ ধরে আসে ১৯৬৯ এর গণঅভুত্থান। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার যুথবদ্ধ যে জঙ্গি আন্দোলন সে সময় হয়, তা-ই রচনা করে ১৯৭১ এর জনযুদ্ধের পটভূমি।

    ০৫. আরো লক্ষ্যনীয়, ১৯৫২ সালের পর তখনও শেখ মুজিব সংগ্রামের কেন্দ্রে ছিলেন না, প্রধান নেতাও ছিলেন না। ভাষানী, তোয়াহা এবং ছাত্রনেতারাই আন্দোলন চালিয়ে যান। তারা সেনা নিবাস ঘেরাও করে শেখ মুজিবকে মুক্ত করেন। কিন্তু শেখ মুজিব আবারো তার অতি চেনা নির্বাচনের পথেই হাঁটলেন। তখন তার জন্য সেটিই ছিলো স্বাভাবিক ও সহজ। কারণ তিনি বিপ্লবী ছিলেন না, ভাষানী মতের তো নয়ই। ১৯৭০ এর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন ন্যাপ-ভাষানী এবং প্রায় সকল কমিউনিস্ট পার্টি বর্জন করে। ভাষানীর শ্লোগান ছিলো: ভোটের আগে ভাতা চাই। কমিউনিস্ট শ্লোগান ছিলো: ভোটের বাক্সে লাথি মারো, সমাজতন্ত্র কায়েম করো। বামপন্থীদের একটা বড় অংশ এবং ছাত্ররা মিলে তখনই স্বাধীন পূর্ব বাংলার কর্মসূচি ঘোষণা করে [এবং সিরাজ শিকদার]। তারা বাহিনী গঠনের কাজে মন দেন; মুজিবের প্রস্তুতি ছিলো নির্বাচন কেন্দ্রীক।

    ভাসানী ও চীনাপন্থীরাও নির্বাচন বাদ দিয়ে জনযুদ্ধ তথা মুক্তিযুদ্ধের জমিন তৈরিতে ব্যস্ত হন। সে সময়, ভাষানী বা মুজিব, কে কার থেকে বেশী জনপ্রিয় তা বোঝা ছিলো মুশকিল। তবে তখন শহর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে কমিউনিষ্টদের সাংগঠনিকভিত্তি ছিলো দৃঢ়। কোনো জোর প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোটে শেখ মুজিব নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন।

    নির্বাচনের কয়েকদিন আগেই উপকূলীয় অঞ্চলে বিরাট ঘূর্ণিঝড়ে কয় লাখ মানুষ মারা যায়। ভাসানী সেখানে ত্রাণ দিয়ে এসে পত্রিকায় বিবৃতি দিলেন, ‘ওরা কেউ আসেনি’ [পাক সরকার]। নির্বাচনোত্তর ক্ষমতা মুজিবের কাছে হস্তান্তর করতে পাক-সরকার কালক্ষেপন করতে থাকে। আসলে তারা সময় নিচ্ছিলো সামরিক প্রস্তুতির। ভেতরে ভেতরে প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ভাষানীর জনসমর্থনও বাড়তে থাকে ['ভোটের বাক্সে লাথি মারো']।

    ০৬. ১৯৭১ এর ৩ জানুয়ারি, নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি আবার রমনা রেসকোর্স ময়দানে গণআবেদন তৈরি করতে সক্ষম হয়। এদিন সেখানে আইনসভার সকল পূর্ব পাকিস্তানী সদস্যদের সভা ডাকেন শেখ মুজিব। তিনি তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান, তারা আওয়ামী লীগের ছয় দফা ও সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবিনামার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন।

    ১৯৭১ এর ফেব্রুয়ারি- মার্চের ঘটনাবলি স্বাক্ষ্য দেয়, ফেডারেল পাকিস্তানের সম্ভাবনা বাস্তবে আর সম্ভব নয়। কিন্তু তখনো পাকিস্তানের মধ্যে ছয় দফার বাস্তবায়নের কাঁঠালের আমস্বত্তটি মুজিবের কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়নি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনাতেই অনঢ় ছিলেন। কারণ কারণ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি ছিলো তার অগাধ আস্থা, নির্বাচনী রায় এবং জনগণের সমর্থনে এরচেয়ে বেশী তার কাছে আশা করাও বাতুলতা [মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন]।

    তবে বাস্তবতার কঠিন জমিনে শিগগিরই তিনি নেমে আসেন। ১৯৭১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইয়াহিয়া ঘোষণা করেন, জাতীয় পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে ৩ মার্চ, ঢাকায়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ভুট্টো ঘোষণা দেন, ছয় দফা জনিত সৃষ্টি জটিলতার অবসান না হলে তার দল জাতীয় পরিষদের সভায় যোগ দেবে না। ২১ ফেব্রুয়ারি মুজিব কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আবারও ছয় দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন আদায়ে তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

    এ পর্যায়ে পাক চক্রান্ত আরো প্রকাশ্য হয়। ইয়াহিয়া মন্ত্রীসভা ভেঙে দিয়ে জেনারেলদের বৈঠক করে নিজস্ব কায়দার সঙ্কট সমাধান করতে উদ্যোগ নেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি মুজিব সাংবাদিকদের বলেন, অধিকার আদায় ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় পুর্ব পাকিস্তান দরকার হলে লড়াই করবে। ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সকল সদস্যের কাছে ঢাকা অধিবেশনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু পরের দিন ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দেন।

    এ হেন খবরে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। লাখ লাখ ছাত্র-জনতা ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলস্থলে জড়ো হন। তারা সেখানে দাঁড়িয়ে দাবি তোলেন, শেখ মুজিব যেনো এখনই জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেন। তারা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করে।

    এদিকে, ছাত্রনেতারা সংগ্রামের প্রস্তুতির জন্য ‘স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে। এর নেতা ছিলেন নুরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আসম আব্দুর রব এবং রুহুল কুদ্দুস মাখন [খলিফা চতুষ্টয়]। তারা স্বাধীনতার সংগ্রামে যৌথভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

    ১৯৭১ সালের মার্চে এই প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রস্তুতি প্রধান ধারা হয়ে ওঠে [অবশ্যই মুজিবও তার 'নিয়মতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন' দাবি থেকে ক্রমেই সরে আসেন, তবে এই মোহভঙ্গ হতে একটি গণহত্যার প্রয়োজন পড়ে এবং আত্নসমর্পন]। এই দাবির শক্তি ও জনসমর্থন সাংবিধানিক নিয়মতান্ত্রিকপন্থী তো ছিলোই না, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধই ছিলো এর একমাত্র লক্ষ্য। ২ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে ছিলো স্বতষ্ফূর্ত হরতাল। ঢাকা এবং এর আশেপাশের এলাকা থেকে অগনিত মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমবেত হন। সেখানে ছাত্র-জনতা জাতীয় স্বাধীনতার ধ্বনী তোলে এবং স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা দৃঢ় সিদ্ধান্তে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র পরিষদের ভিপি, ছাত্রলীগ নেতা আসম আব্দুর রব বিপুল করতালি ও গগনবিদারী জয়োধ্বনী ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন [পতাকার নকশাবিদ শিবনারায়ন দাস]।

    ০৭. এ ভাবেই জনগণের নিরঙ্কুশ সমর্থন ইত্যাদির পরও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ শেষ হয়ে যায়। দেশ এগিয়ে চলে ইতিহাসের নির্ধারিত পথে– রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামে। পরের ঘটনাবলীও তাই অনিবার্যভাবে সেই সংঘাতের দিকেই ধাবিত হয়। শেষে ২৫ মার্চ রাতে জাতি মুখোমুখি হয় সামরিক জান্তার ভয়াল আক্রমনের [ওই সন্ধ্যাতেও মুজিব গোল টেবিল বৈঠক চালিয়ে গেছেন, সমঝোতার পথ]।

    স্পষ্টতই তিনি ভুল পথে হেঁটেছিলেন, ওই সান্ধ্য-বৈঠক সে প্রমানই বহন করেন। মুজিব ব্যাখ্যা মতে, তিনি ভারতের কাছে যেতে চাননি [কিন্তু যেতে কী হয়নি, যেতে কী হতো না?] এবং তিনি লোকক্ষয় এড়াতে বৈঠক অব্যহত রেখেছিলেন [ কিন্তু গণহত্যা কী এড়ানো গেছে? বরং পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে লোকক্ষয় আরো কত হতো, প্রতিরোধ লড়াইটি হতো অনেক জোরদার]।

    ৭ মার্চ মুজিব গণসমূদ্রে উচ্চারণ করেছিলেন সেই অস্মরণীয় কাব্য ‘এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’। কিন্তু লক্ষ্যনীয়, ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো/ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ো’ ছাড়া যুদ্ধের জন্য মুজিব অনুসারীদের তখনো কোনো প্রস্তুতিই ছিলো না।

    নির্মোহ বিচারে ৭ মার্চের ভাষণের কাব্যময় আবেগকে মুজিব নিজেই ধারণ করেননি [মার্চের আগে তো নয়ই]। ‘যার যা কিছূ আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’ হুংকারের পর দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তিনি জনতার হাতে লাঠি ধরিয়ে দিয়েছেন! স্বাধীনতা সংগ্রামের এমন নেতার এ হেন নজির বিশ্বজোড়া মেলা দায়ই বটে। বিশ্বের আর কোনো নেতা যুদ্ধ ঘোষণা করে আত্মসমর্পণের জন্য ঘরে বসে থেকেছেন? নাকি তখনো তিনি পাক- প্রধামন্ত্রীত্বের খোয়াবে বিভোর ছিলেন? গুঢ় বাস্তবতা এই যে, মুজিব তখনো মার্কিনের বন্ধু ছিলেন, তাদের কাছেই সমাধান চাইছিলেন [দ্র. সম্প্রতি প্রকাশিত সিআইএ-এর নথি]। মুজিব সারা জীবন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন, আলোচনা ও নির্বাচন করে এসে জনযুদ্ধের দাবি মেটাতে না পেরে কারাবরণ করেন। তার অনুসারী আওয়ামী নেতারা জাতিকে অরক্ষিত রেখে যে যেভাবে পারেন ভারতে চলে গেলেন।

    মুক্তিকামী জাতি দেশেই থেকে সমাজকে বাঁচিয়ে রেখেছে, সন্তানদের পাঠিয়েছে রণাঙ্গনে। গণহত্যার পর গণহত্যা, ধর্ষনের পর ধর্ষন, জ্বলে-পুড়ে খাঁক হতে হতে পুরো জাতি তার জাতীয় নেতাকে ছাড়াই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে [যদিও লক্ষন রণনীতিতে মুক্তিযুদ্ধটি এবং স্বাধীনতার সংগ্রামটি হয়েছে শেখ মুজিবের নামেই, এর নেতৃত্বে থাকে আওয়ামীলীগ।]

    [দ্রষ্টব্য: শেখ মুজিব- আহমেদ শরীফের ডায়েরী থেকে- http://www.amarblog.com/raselpervez/posts/76302]

    ০৮, [পুনর্বার, অতএব সংক্ষেপে] আমরা যারা প্রজন্ম ৭১, তারা অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই-পত্র পড়ে, চলচ্চিত্র দেখে, স্বাধীন বাংলা বেতারের গান শুনে, জহির রায়হান, তারেক মাসুদ, জাহানারা ইমাম, অ্যান্থনী মাসকেরেনহাস তো বটেই..[এমন কি ড. আহমদ শরীফ এবং সিরাজ সিকদার]…ইত্যাদিতে মুক্তিযুদ্ধের সব ঘটনা প্রবাহ বুঝতে চেষ্টা করি।

    অনুধাবন করার চেষ্টা করি, বাঙালির গৌরবের শ্রেষ্ঠ ইতিহাসের ঘটনাটিকে অনুধাবনের জন্য এবং যুদ্ধোত্তোর বাংলাদেশ। …এই পঠন-পাঠনটিও অব্যহত থাকে এবং বিতর্ক তো বটেই।

    তবে ইতিহাসের ঘটনাবলিকে [ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিব তো বটেই] বোধহয় নির্মোহভাবেই দেখা ভালো। এখানে আবেগতাড়িত হয়ে ভাব-বুদ্বুদে মজে গিয়ে দেবোত্ব আরোপ করার যৌক্তিকতা দেখি না। মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত এই পাঠটিকেই বরং বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া কর্তৃব্যজ্ঞান করি; কারণ শেষ পর্যন্ত এটি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধই ছিলো, নিছক স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিলো না। এখানেই মুক্তি সংগ্রামের জনযুদ্ধটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে; যা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও নানা মাত্রায় [চেতনা ও বিনির্মানে] অব্যহত রাখার দাবি রাখে।

    এর সূচনা সাতের দশকে বাম ভাবাদর্শে সশস্ত্র পন্থায় হয়েছিলো, ১৯৭১ এ স্বাধীনতা একটি চূড়ান্তপর্ব মাত্র, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধটি শেষ হয়ে যায়নি, এটি অব্যহতভাবে এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম ও চেতনাটিকে অব্যহত রাখা জরুরি; যদিও শেখ মুজিব এবং আওয়ামী অনুসারীরা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে এটিকে বরাবরই স্বাধীনতার সংগ্রামেই আটকে রাখতে চেয়েছে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামটিকে তারা শেষ পর্যন্ত [এবং কি নিষ্ঠুরভাবে পরের সব কয়েকটি অধ্যায়ে] জিইয়ে রাখতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়। বাকশালী একনায়কতন্ত্র/ফ্যাসিজমের বিষবৃক্ষ মুজিব দর্শনের ঔরসজাত এই সীমাবদ্ধতারই ফল। অবশ্য আটার কলের কাছে আখের রস চেয়ে লাভ কী?

    দেখতে পাই, মুক্তিযুদ্ধকে নিজস্বপন্থায় সে সময় যেসব কমিউনিস্ট পার্টি এগিয়ে নিতে চেয়েছিল [অধিকাংশই দক্ষিনপন্থা এবং চরমপন্থার ঝোঁকের কারণে শেষ পর্যন্ত হঠকারিতার চোরাবালিতে আটকে যায়, নকশালী কায়দায় আত্নঘাতিতায় নিক্ষিপ্ত হয়], পুরো সাতের দশক ধরে মওলানা ভাসানী তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়/সমর্থন দিলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন, অতি গুঢ় বাস্তবতা অনুভব করেই [আবার পাইপগান/এতো বেশী গরম হয়ে আসে যে/ক্রমশ এর ব্যবহার কমে আসছে]।

    ____________

    তাই আমাদের দেখার চোখটি যেনো সাদাকালো হয়, পরিশেষে এ আহ্বান জানাই। বিতর্ক চলুক।
  • PT | 213.110.246.230 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৮:১৪576807
  • বিপ
    আপনার বিনোদনের কারণ হয়েছি জেনে আনন্দ পেলাম। আর আপনার উত্তর পাওয়ারও যোগ্য জেনে নিজেকে ধন্য মনে করছি। কিন্তু প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনাকে মহাভারত লিখতে হয় কেন কে জানে!! আর যেভাবে প্রশ্নের উত্তর দেন তাতে আরও গোটা দশেক প্রশ্নের উদয় ঘটে। তাই ভেবে কুল পাচ্ছি না-যে বাংলাদেশে চীনাপন্থীরা "নাই" সেখানে এই "চাইনিস-ফোবিয়া" কোথা হইতে আসিল!

    ব্র্যাত্য-র রুদ্ধসঙ্গীত নাটকে দেবব্রত বিশ্বাসের মুখ দিয়ে সিপিএমকে বেশ কষিয়ে গাল দেওয়া যাচ্ছিল না। সেইজন্য ঋত্বিক ঘটকের মুখ দিয়ে ৩০/৪০ মিনিট ধরে প্রমোদ-জ্যোতির সঙ্গে তক্ক করানো হল। এও কোন নাটকের ছক নয়্ত? মানে উদ্দেশ্য হচ্ছে মুজিবকে গাল দেওয়া-কাজেই কল্পিত ফোবিয়ার সাহায্য নিয়ে চাইনিসপন্থীদের মুখ দিয়ে গাল দেওয়ানো হচ্ছে!!
  • PT | 213.110.246.230 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৮:১৯576808
  • ওহ! লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল কোন ঐতিহাসিক বিষয়কে "সাদাকালো"-র চোখ দিয়ে দেখলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। কেননা প্রায় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সাদা এবং কালোর মাঝখানে ছাই-এর বিভিন্ন ঘনত্বের সময়-মানুষ-ঘটনা ইত্যাদি থাকে। কি জানি ভুল জানতাম বোধহয়।
  • চান্দু মিঁঞা | 127.217.174.67 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৮:৩৩576810
  • কিন্তু শাহবাগের কি হইল?
  • শিহাব হায়দার মুন (সপ্তক) | 183.34.218.177 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৮:৩৯576811
  • প্রসঙ্গ যখন শেখ মুজিবুর রহমান

    ১৯৭১ এর ১৬ই ডিসেম্বর পূর্বপাকিস্তান বাংলাদেশ হয়ে যায় নয় মাসের মুক্তি যুদ্ধের মাধ্যমে। শেখ মুজিব ফিরলেন ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ এ।মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নায়ক যেমন শেখ মুজিব তেমনিভাবে মুক্তিযোদ্ধা সব বাঙ্গালি,কিছু দালাল,রাজাকার বাদে। । সরকার গঠন করা হয়েছিল ১৯৭০ এ আওয়ামীলীগের যে সদস্যরা নির্বাচনে সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের নিয়ে।অনেকে মনে করেন স্বাধীন দেশে একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনই ছিল যুক্তিযুক্ত। এটা আসলে খুব সরলীকরণ একটি ভাবনা। সর্বদলীয় সরকারের পথে হাটতে গেলে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের কি হবে?। সর্বদলীয় সরকারের কথা বলা যতটা সহজ করাটা কি তত সহজ ছিল তখনকার পরিস্থিতিতে,?। সদ্যস্বাধীন বাঙ্গালীর আকাঙ্ক্ষা তখন আকাশচুম্বী। শুধু সাধারণ মানুষের নয় ,রাজনীতিবিদেরও। এর প্রমাণ পাওয়া যায় পরের রাজনীতির ধারাবাহিকতায়। নূতন দেশের নূতন সেনাবাহিনী ছিল একই খোঁয়াড় অর্থাৎ পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী থেকে আগত অফিসাররা যাদের মধ্যে কেউ কেউ আইয়ুবের মত এশিয়ার দ্যা গল হবার স্বপ্ন দেখতেন এবং সে প্রয়াস প্রকাশ পায় মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই। আবার অন্যদিকে যুদ্ধের শেষের দিকে যেরকম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল তা নিয়ন্ত্রণ করার মত শক্তিও তাজউদ্দীনের মন্ত্রীসভার ছিল না,কাজেই তাজউদ্দীনকে সরকার প্রধান করার কথা যারা বলেন তারা স্বপ্নের কথা বলেন যা বাস্তব বিবর্জিত। মানুষ তখন শেখ মুজিব ছাড়া কারো কথা শুনতে রাজী ছিল না। সব স্তররে মানুষ মুজিবের জন্য রোজা পর্যন্ত রেখেছিল।
    যেকোনো যুদ্ধের মাশুল দিতে হয় তদুপরি তা যদি হয় অসম যুদ্ধ তাহলে ত কথাই নেই। একটি শক্তিশালী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছিল বাঙালী, পাকিস্তানিরা অপারেশন সার্চ লাইট শুরুই করেছিল হত্যা আর ধ্বংসের শপথ নিয়ে। প্রাণহানি ত ছিলই এর পাশাপাশি ছিল স্থাপনা ধংশ। আসলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রায় পুরটাই ধংশ করে দেয় পাকিস্তানিরা। বাংলাদেশে তখন যে অনটন ছিল সারা পৃথিবী থেকে ত্রাণ আসলেও তা ঠেকানো যেত না।কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরপুরি ধংশ হয়ে গিয়েছিল। বন্ধ কলকারখানা চালু করা ছিল দুষ্কর,কারিগরি দক্ষ মানুষের অভাব ছিল প্রকট, এমনকি ব্যাংক চালানর মত দক্ষ ব্যাংকার ছিল না। জাতিসংঘ বাংলাদেশের সাহায্যের জন্য “আন রড” নামক প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে আসে। ডুবে থাকা জাহাজ তোলার জন্য ভারত এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এগিয়ে আসে । ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বেশীরভাগ রেলসেতু, ফরাসী এবং জাপানী ইঞ্জিনিয়াররা মিল গুলো চালু করার দায়িত্ব নেন।
    প্রশাসনের শুরুতেই প্রশাসনে অনেক লোক ঢুকে পরে যাদের অতীত কার্যকলাপ ছিল সন্দেহজনক, যেমন খন্দকার মোশতাক, এই লোক প্রবাসী সরকারে থাকা কালীন সময়েই জাতির সাথে বেঈমানি করার চেষ্টা করেছিল। সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় শফিউল্লাহকে যিনি ছিলেন অপেক্ষাকৃত দুর্বল মনের মানুষ। কিন্তু ওসমানী শফিউল্লার নাম প্রস্তাব করেছিলেন,যদিও জিয়াউর রহমান ছিলেন সিনিয়র বয়সে কিন্তু ব্যাচ-মেট। জিয়াকে পরে ডেপুটি চীফ অব স্টাফ পদে নিয়োগ দেয়া হয় । পরে ১৯৭৪ এ শফিউল্লার মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে তা বৃদ্ধি করা হয় । এখানে উল্লেখযোগ্য যে যেকোনো সরকারী সংস্থায় এরকম হতেই পারে। যেমন জিয়া পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছিলেন পাঁচ বছর। তাই জিয়াকে পরে বার্মাতেও আটাচি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার কথা চিন্তা ভাবনা করা হয়েছিল। কিন্তু জিয়া রাজী ছিলেন না জেনে তা আর কার্যকর করা হয়নি। জিয়াকে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য সামনে রেখে সেনাবাহিনীর প্রধান পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল এটা মনে করার কারণ নেই। পরবর্তীতে বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং কোর থেকেও সেনাবাহিনীর প্রধান নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এ কথা বলার কারণ এই যে ,অনেকে মনে করেন জিয়া কে প্রধান না করায় তিনি মুজিব হত্যায় সায় দিয়েছিলেন। করা হলেও যা হয়েছিল তাই হত।কারণ জিয়ার পূর্বের এবং পরের কার্যক্রম তাই প্রমাণ করে। কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়া প্রথম বার নিজেকে দেশের “হেড অব দ্যা স্টেট “ ঘোষণা করেছিলেন, এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষে উল্লেখ করেন নাই,এটা সবাই জানে। এ ছাড়া জিয়াকে বীরবিক্রম উপাধিও দেয়া হয় নাই,কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় তার জেড ফোরসের অধীনে কামাল পুর যুদ্ধ একটি ব্যর্থ অভিযান যেখানে একসাথে সরবোচ্চ প্রানহানী ঘটে মুক্তিযুদ্ধে ,মনে করা হয় জিয়ার যুদ্ধ পরিচালনায় অদক্ষতাই এজন্য দায়ী। খালেদ মশাররফ এবং কর্নেল তাহের মুক্তিদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মুখ সমরে যুদ্ধ করলেও জিয়া শুধুমাত্র যে পেছনেই থাকতেন তা নয় যুদ্ধ ক্ষেত্রেই উপস্থিত থাকতেন না।
    যাইহোক যুগোস্লাভিয়ার মার্শাল টিটর দূত ১৯৭২ এর জানুয়ারি মাসেই মুজিবকে সতর্ক করেছিলেন অনেক ব্যাপারে। ৭৪ এ ফিডেল ক্যাস্ট্রো ও জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে মুজিবকে এসব ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। যেকোনো যুদ্ধের পর দেশে অস্থিরতা ,অভাব দেখা দেবে এটা ব্যতিক্রম কিছু না। সদ্য জন্মপ্রাপ্ত বাংলাদেশও ব্যতিক্রম ছিল না। এরমাঝে শুরু হয় চোরাকারবারি,বাজার চলে যায় মজুতদারিদের হাতে। ভারতে চালান হয়ে যেত বাংলাদেশের পাট এবং উন্নত মানের চাল। এরমাঝে শুরু হয় চোরাকারবারি,বাজার চলে যায় মজুতদারিদের হাতে। ভারতে চালান হয়ে যেত বাংলাদেশের পাট এবং উন্নত মানের চাল। ৭২ এর ৬ই এপ্রিল মুজিব এরকম ১৬জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে দুর্নীতির অভিযোগে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার করেন। সেপ্টেম্বর মাসে বহিষ্কার করেন আরও ১৯ জনকে। বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধানকেও পদচ্যুত করেন। যেমন ওয়াসার চেয়ারম্যান। দক্ষ লোকের অভাব ত ছিলই,আর বাঙালী স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার সাথে সাথে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল, যেমনটি হয়েছিল ব্রিটিশদের সময় জমিদারি পাবার জন্য , পাকিস্তান আমলে সামরিক জান্তাদের নেক দৃষ্টি পাবার জন্য,নতুন ধনিক গোষ্ঠী গজিয়ে উঠতে লাগলো কাল টাকার পাহাড় গড়ার মাধ্যমে। মুজিব বললেন, সবাই পায় স্বর্ণের খনি ,আমি পেয়েছি চোরের খনি। মানুষ ব্যথিত হোল। এর উপর ছিল আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দন্ধ , ছাত্রলীগ দু ভাগে ভাগ হয়ে যায় শুধুমাত্র ভাগ বাটওয়ার আর ক্ষমতার কাড়নে। যে ছাত্র সমাজ ছিল স্বাধীনতার অগ্রপথিক তারাই স্বাধীনতার সাথে সাথে ভাগ বাটওয়ারের কারবারে জড়িয়ে পরে। মুজিবের সবচেয়ে প্রিয় ছিল এই ছাত্ররা। ছাত্রলীগ ছারাও সব ছাত্রকেই তিনি প্রাণের চেয়েও ভালবাসতেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায়, ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং রাশেদ খান মেননের বক্তব্যে। ছাত্র নেতাদের অনেকে পণ্য আমদানি অথবা বণ্টনের লাইসেন্স আদায় করতেন কিন্তু নিজেরা ব্যবসা না করে তা চরা দামে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিতেন। ফলে পণ্যের মূল্য বেড়ে যেত যা ভোক্তার কাঁধে গিয়ে পড়ত। এই লাইসেস্নস ব্যবসা নিয়েই ছাত্রলীগ ভেঙ্গে যায় যখন আ ষ ম আব্দুর রব ৭২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুজিব বিরোধী জনসভা করেন পল্টন ময়দানে। এসবই যে ছিল ধান্দাবাজি তা আ ষ ম রবের পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনই তার প্রমাণ। ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে যাওয়া গোষ্ঠী গঠন করে জাসদ নামক নতুন দল যার নেতৃত্বে ছিলেন,আ ষ ম রব,সিরাজুল আলম খান,সাজাহান সিরাজ প্রমুখ,এদের সমাজতন্ত্রের কোন জ্ঞান বা প্রস্তুতি ছিল বলে শোনা যায় না। তবে তারা সমাজতন্ত্রের কথা বলে যেতে থাকে। জাসদ তার ক্যাডার গণবাহিনী তৈরি করে। এই গণবাহিনী এতটাই নৃশংস ছিল যে ৭৩ সালে গণবাহিনীর হাতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৫০টির মত থানা লুট হয়। ৭৪ সাল নাগাদ গনবাহিনির হাতে প্রায় ৪ হাজার আওয়ামীলীগ কর্মী এবং ৫ জন নেতা নিহত হয়। জাসদের বা গনবাহিনির হাতে ছিল যুদ্ধের সময়কার অস্র যা তারা জমা দেয়নি।্যেণ বাঙালী হোড়ী লুটের রাজত্ব পেয়েছে। হাজার বছরের নিষ্পেষিত বাঙালী প্রথম সুযোগেই ধনী হবার নেংটি দৌড়ে সামিল হয়েছিল কি ছাত্র,কি সৈনিক,কি ব্যবসায়ী, আর কি কেরানী। রক্ষী বাহীনি করাটা ছিল ক্ষমতা পোক্ত করার হাতিয়ার এটা অনেকেই মনে করেন,আবার এই রক্ষিবাহিনি ই গনবাহিনিকে দমিয়ে রেখেছিল কিন্তু রক্ষী বাহিনী যে অযাচিত অনেক ক্ষমতার অপব্যভহার করে অত্যাচার অনাচার করেছিল তা সর্বজন বিদিত। আবার একথাও ঠিক যে রক্ষীবাহিনী না থাকলে গনবাহিনিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেনাবাহিনী তলব করতে হত যা ছিল আরও ভয়ঙ্কর। এছাড়াও ছিল আন্ডার গ্রাউন্ড বাহী নি বা দল যেমন সর্বহারা দল , সিরাজ শিকদারের ,এরা ৭১ এর পশ্চিমবঙ্গের নকশাল বাড়ী আন্দোলনের মত বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, শ্রেণী শত্রু খতমের নামে নিরীহ মানুষ হত্যা ছিল এদের নিত্যনৈমত্যিক কাজ,যা আজও তারা করে,তবে এখন শ্রেফ ডাকাতি করে বলে শোনা যায়।
    ৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে অর্থাৎ ঠিক এক বছরের মাথায় দেশের সংবিধান অনুমোদন দেয়া হয় এবং তার পরের বছর অর্থাৎ ৭৩ এর ৭ই মার্চ নির্বাচন দেয়া হয়। যে ৭ই মার্চে মুজিব ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন ৭১ এ। আওয়ামীলীগ ই জয়ী হয়েছিল। আর সেসময় বিরোধী দল এমন কোন শক্তিশালী দল হিসেবে দাড়াতেও পারে নাই। এই নির্বাচন এ আওয়ামীলীগ কম হক বেশী হোক সিট পেয়ে যে জয়ী হত তাতে কোন সন্দেহ নেই।
    দুর্ভিক্ষের দামামা ৭২ সাল থেকেই অনুভূত হয়েছিল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষে ২ কোটির মত মানুষ মারা যেতে পারে বলেও পূর্বাভাষ দিয়েছিল অনেকে। ৭৪ এর আগস্ট থেকেই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। জাতিসংঘের আহ্বানে অনেক দেশ এগিয়ে আসে বাংলাদেশের সাহায্যে। কিন্তু আমেরিকা প্রতিশ্রুত দুটি সাহায্য জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে যায় মাঝ সাগর থেকে,অজুহাত ছিল বাংলাদেশ কিউবায় পাট রপ্তানি করেছিল।। এছাড়া ছিল মজুদদারি। দুর্ভিক্ষ হতে পারে জাতিসংঘ আগেই বলেছিল,কিন্তু ২ কোটি মানুষ মারা যায়নি, সরকার ৫৮৬২ টি লঙ্গরখানা খলে।তারপরেও মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যায়নি। সরকারী হিসেবেই সাতাশ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। সরকারের পক্ষ থেকে দুর্ভিক্ষের তথ্য লুকানোর কোন প্রচেষ্টা ছিল না,বরং মুজিব বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে খোলামেলা ভাবেই স্বীকার করেন দুর্ভিক্ষের কথা।
    ভারতের সাথে বাংলাদেশের মিত্রতা বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে এসময় আবার সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে। হিন্দুদের প্রতি বাঙালী মুসলমানদের অবিশ্বাস অনেক পুরনো। যুদ্ধের সময় ভারতের প্রতি যে বন্ধুত্ব মনোভাব গড়ে উঠেছিল তা আবার সংকটে পরে যায়। মানুষ ভারতকে দোষারোপ করতে থাকে। চোরাচালানই এখানে মুখ্য হয়ে উঠে। এছাড়া ছিল কিছু প্রোপাগান্ডা অনেকেই মনে করতেন ভারত বাংলাদেশ কে করদ রাজ্যে পরিণত করবে,এটা শুধুন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভারতে যে পাট পাচার হচ্ছিল ব্যাপকভাবে,যারা পাচার করত তারা বাংলাদেশের মানুষ,কিন্তু জনগণ ভারতকেই দায়ী করতে থাকে। এছাড়া পাকিস্তান আমলে শত্রু সম্পত্তি আইনের কাড়নে যারা হিন্দুদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখল করেছিল তারা অর্থাৎ ধনিক কিছু মানুষ আতঙ্কিত ছিল এই ভেবে যে ভারতের হিন্দুরা হয়ত আবার ফিরে আসবে এবং তাদের হারানো সম্পত্তি ফেরত নেবে। মোট কথা ভারত ভীতির কারণ ছিল কিনা তা বড় কথা নয় কিন্তু ভীতি ছিল সেটা সত্যি।
    এসব ছারাও আন্তর্জাতিক কিছু কারণও ছিল। ১৯৭৩ সালে আরব ইসরায়েল যুদ্ধ হয়, এ যুদ্ধের পর আরব দেশগুলো তেলের দাম বারিয়ে দেয় তাদের ওপেক এর মাধ্যমে। গরীব আরব দেশগুলো রাতারাতি ধনী হয়ে যায়। এই টাকা আরব দেশগুলো অন্যান্য মুসলিম দেশে ছিটে ফটা দেয়া শুরু করে তাদের পক্ষে প্রোপাগান্ডা করার জন্য যেমন রাজতন্ত্রের পক্ষে প্রচারণা করা। এসব ভারত বিরোধী প্রচারণা তুঙ্গে নিতে থাকে।অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার অভাবের মাঝে মানুষ ভারত বিদ্বেষী প্রোপাগান্ডা বিশ্বাস করতে থাকে হতাশা থেকেই। আজও ৪০ বছর পর সেই প্রোপাগান্ডা সত্যি হয়নি,ভারত বাংলাদেশেকে করদ রাজ্যে পরিণত করে নাই,সম্ভব ও নয়। অহেতুক কাল্পনিক এই ভয় ভারত – বাংলাদেশের সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলা ছাড়া কিছুই করতে পারে নাই। পরবর্তীতে সেই আইয়ুবের মতই এই প্রোপাগান্ডা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সামরিক জান্তারা রাজনীতি করেছে।
    ২৪ শে জানুয়ারি দালাল আইন প্রণীত হয়…অবস্থা ছিল নাজুক… যেমন বাগেরহাট এলাকার শান্তিবাহিনীর সংগঠক ছিলেন আতাহার আলী কিন্তু তার ছেলে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম খেতাবধারী, বীর সন্তানের কাড়নে বাবা পাঁড় পেয়ে যায়। এছাড়াও অনেক পরিবারের একজন সদস্যকে শান্তি কমিটিতে রেখে অন্যরা তাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। এতসবের পরেও সাধারণ ক্ষমার জন্য সরকারের উপর চাপ ছিল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে। ভাসানি নিজেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা না করা হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলেন।
    এতকিছুর পরেও ধর্ষণ ,অগ্নিসংযোগ কারীদের ক্ষমা করা হয় নাই।সিমলা চুক্তি করা ছাড়া সেসময় উপায় ছিল না। পাকিস্তানে আটক বাঙ্গালিদের মুক্তির জন্য বা ফিরিয়ে আনার জন্য তা করা ঠিকই ছিল। কিন্তু সেই চুক্তিতে ছিল পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিতদের বিচার করবে,তারা তা করে নাই। আর এটাও সত্যি সব অপরাধের ক্ষমা করা হয় নাই। সাধারণ ক্ষমার আওতায় ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ , খুন এর সাথে জড়িতদের ক্ষমা করা হয় নাই, অন্তত যারা দেশীয় দোসর তাদের কথা কিছুই বলা হয় নাই,অর্থাৎ দেশীয় দোসরদের বিচার দেশের আইনে হবে।
    মুজিব হত্যার নীল নক্সা করা হয়েছিল। যারা মনে করেন যে হঠাৎ কয়েকজন বিপথগামী সৈনিক মাথা গরম করে মুজিবকে হত্যা করেছিল তারা আসলে বোকার স্বর্গেই বাস করে। পরে ত এটা জানাই গিয়েছে জিয়া জানতেন সেই ২০ শে মার্চ থেকেই ফারুকের কোথায় জিয়ার উত্তর ছিল,”তোমরা করলে করতে পার,আমি যোগ দিব না” সেনাবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ডের এর চেয়ে বড় সমর্থন আর কি লাগে?। এর পরেও যারা বলেন জিয়া জানতেন না তারা জানতে চানও না। মুজিব এবারো আক্রান্ত হবার পর পালানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেন নাই। যথারীতি পাইপ হাতেই তিনি বেরিয়ে আসেন,তার প্রশান্ত ভাব দেখে মেজর মহি-উদ্দিন পর্যন্ত ভরকে গিয়েছিল, মহি-উদ্দিন শুধু বলতে পেরেছিল,”,”স্যার আপনি আসেন” , মুজিবের উত্তর ছিল” তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?” সাথে সাথে মেজর হুদা এবং নুর গুলি চালায়(এগুলো এখন সবাই জানে,বিচার চলাকালীন সময়ে যা বেরিয়ে এসেছে এবং প্রথম আলোর প্রতিবেদন)। মুজিবের হত্যার বর্ণনা এবং তার দাফন কাফনের বর্ণনা দেয়ার মানসিকতা বা ইচ্ছা আমার নাই। কিন্তু হত্যা করা হয়েছিল পুরো পরিবারকে নৃশংস ভাবে। একই পরিবারে সবাইকে কিশোর রাসেল সহ সবাইকে । কেন?,কেউ জানে না।
    মুজিব হত্যার আগে পরে কিছু গুজব ছড়ানো হয় যা কিনা আজ পর্যন্ত কেউ প্রমাণ করতে পারেনি,তাই এগুলোকে গুজব ছাড়া কি ই বা বলা যায়?। যেমন ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের সময় বাসন্তী নামক এক যুবতীর জালে জড়ানো ছবি পত্রিকায় ছাপানো হয় ,যাতে বুঝানো হয় বাসন্তীর কাপড় কেনার সামর্থ্য ছিল না, অনেক পরে প্রমাণিত হয় সেই বাসন্তী কুড়িগ্রামের ,মানসিক ভারসাম্যহীন এই হতভাগী আজও আছে ,যার নামে কুড়িগ্রামে বাসন্তীর চর নামে গ্রামেরও নামকরণ করা হয়েছে।
    এরপর আছে শেখ মনি অর্থাৎ মুজিবের ভাগ্নের কথা। মনি নাকি চরম অত্যাচারী ছিল। শেখ মনি মুজিবের নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনীতিতে আসেনি। শেখ মনি ছিল ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু র সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিব বাহিনীর অন্যতম সংগঠক,সম্মুখ সমরের যোদ্ধা। তার ভুল বা অন্যায় থাকতে পারে কিন্তু সে নিজের যোগ্যতায় উঠে এসেছিল,জেল-জুলুম ভোগ করেছে অনেক শেখ মনি।
    মুজিবের ছেলে শেখ কামাল এর কথা বলা হয়েছিল সে নাকি ব্যাংক ডাকাতি করেছিল!! আজ পর্যন্ত কোনভাবেই তা প্রমাণ করা যায়নি,আর বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতি করা যায় কিনা তাও কেউ ভেবে দেখেনি,করা গেলেও প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্টের ছেলে তা করতে যাবে কেন ?,সে কি বাসায় বসে টাকা পেতে পারে না?। শেখ কামাল নাকি জোর করে সুলতানাকে বিয়ে করেছিল,অথচ আজ চল্লিশ বছরেও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নাই। শেখ কামাল নাকি মেজর ডালিমের স্ত্রী কে হাইজ্যাক করেছিল!!। মেজর ডালিমের লেখা বই “ যা দেখেছি,যা বুঝেছি,যা করেছি” তে এ ঘটনার বর্ণনা আছে যেখানে শেখ কামাল এর কথা কোথাও একবারের জন্যও উল্লেখ নাই। ডালিমের স্ত্রী শেখ রেহানার বান্ধবী ছিলেন এবং ডালিম এবং তার স্ত্রী সবসময় মুজিবের বাসায় যেতেন । শেখ কামাল ভালো সেতার বাদক ছিলেন,ছায়া নটে তিনি নিয়মিত বাজাতেন। কামাল মুক্তিযুদ্ধে ওসমানীর এ,ডি,সি ছিলেন,গুজব আছে তিনি নাকি ঢাকাতেই ছিলেন। এসব গুজব মূলত জাসদের তৎকালীন পত্রিকা গণকন্ঠ প্রকাশ করত। মুজিব এসব জেনেও কিছু বলতেন না,কারণ সিরাজুল আলম খানকে তিনি খুব স্নেহ করতেন। শেখ কামাল এর দোষ থাকতেই পারে,কিন্তু তিনি যা করেন নাই তা তার ওপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায়। শেখ জামাল মুজিবের ছোট ছেলেকে যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিট যুগোস্লাভিয়ায় নিয়ে যান সামরিক একাডেমীতে প্রশিক্ষণের জন্য ,পরে সেখানে ভাষা গত সমস্যা হবার কাড়নে জামাল ইংল্যান্ড থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। গুজব ছিল জামাল কে সেনাবাহিনীর প্রধান বানানই নাকি মুজিবের লক্ষ্য ছিল। বাঙালিকে বনের বাঘে না মনের বাঘে পেয়ে বসেছিল।
    বরং সত্যি-কথা বললে যা বলতে হয় তা হচ্ছে, আওয়ামীলীগের ছিল দেশ জোড়া সংগঠন ,তৃনমূল পর্যায়ে,কাজেই মাস্তানিই হোক আর লুটপাটই হোক তা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এটা ছিল ক্ষমতা পাওয়া বাঙালীর পুঁজিপতি হবার ইঁদুর দৌড়ের প্রাথমিক লক্ষণ।
    বাকশাল!!, এই বাকশাল ই নাকি মুজিবের হত্যার কারণ?। কি ছিল এই বাকশালে?। এসময়ে ৭৫ এ দেশের অবস্থা ভালো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ভালো ছিল। ঢাকা শহরের মধ্যবিত্তের ব্যয় সূচক ৪৫৮.৫০(জানুয়ারি) থেকে ৪১৬.৯(এপ্রিল) এবং খাদ্যমুল্য সূচক একই সময় এ ৫৪৬.৩ থেকে ৪৫১.০ তে হ্রাস পায়। ভালো আবহাওয়ার কাড়নে ফসল ভালো হয়। দ্রব্যমূল্য কমতে থাকে। ১ লা সেপ্টেম্বর থেকে বাকশাল চালু হবার কথা ছিল ১৯৭৫ এর। চালু হবার আগেই মুজিব হত্যা হন। বাকশাল চালুই হয়নি।অথচ বাকশালের জুজুর ভয়ে আজও মানুষ অস্থির!!।এই হোল বাঙালী। বাকশাল একনায়কতন্ত্র দিত নাকি মুক্তি দিত সেটা বিচার করবে কে?,কিভাবে?। ক্ষমতার জন্য কি মুজিব রাজনীতি করতেন?। তার রাজনীতি র জীবন ত তা বলে না। ক্ষমতার জন্য রাজনীতি তিনি কোথায় করলেন?। বরং পঞ্চাশের দশকে মুজিব প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, আওয়ামিলিগের ওয়ারকিং কমিটির সভায় অলি আহাদ প্রস্তাব আনেন যারা মন্ত্রিত্বে আছেন তাদের দলীয় পদ ছারতে হবে। সব মন্ত্রী দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে মন্ত্রিত্ব ধরে রাখেন, আব্দুস সবুর খান ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মুখ্য মন্ত্রি,দলিয় পদ থেকে ত্তনি পদত্যাগ করেন। মুজিব পদত্যাগ করেন মন্ত্রিত্ব থেকে,দলীয় পদে বহাল রাখেন নিজেকে। তখন মুজিব তরুন। ক্ষমতার লোভ কোথায়!
    সেনাবাহিনীকে মুজিব অবহেলা করেছিলেন বলে প্রোপ্যাগান্ডা আছে। অথচ স্বাধীনতার পরপরই যুগোস্লাভিয়াতে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে ক্ষুদ্র এবং ভারী অস্র সংগ্রহ করা হয়।ভারতের অনুদান ৩০ কটি টাকায় কেনা হয় কাপড় এবং অন্যান্য সামগ্রী। রাশিয়া থেকে আনা হয় মিগ বিমান, হেলিকপ্টার , পরিবহন বিমান। সে সময় মিগ ২১ ই ছিল এই উপমহাদেশের সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধ বিমান যা দিয়েছিল রাশিয়া,ভারত ভাল চোখে দেখে নাই এসব। মিশর মুজিবকে বিশেষ শুভেচ্ছা সরূপ দেয় ট্যাংক। অফিসারদের উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য মুজিবের সময় থেকেই অফিসারদের বিদেশে পাঠান শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে সেনাবাহিনীর জন্য আধুনিক বেতার যন্ত্র কেনা হয়। পাকিস্তান থেকে ফেরত ৩০ হাজার এর অধিক অফিসার এবং জোয়ান কে সেনাবাহিনীতে পুনঃ নিয়োগ দেয়া হয় যা অনেকে ভাল চোখে দেখে নাই,অনেক অফিসার এর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মত ও দিয়েছিল, কিন্তু বন্দী থাকা এসব লোকদের ই বা কি দোষ ছিল?। অবশ্য এদের অনেকেই পাকিস্তানের প্রতি অনুগত ছিল যা পরে প্রমাণিত হয়েছে।
    কথিত আছে সন্তু লারমার নেতৃত্বে পাহাড়ি ভায়েরা তাদের সমস্যা নিয়ে মুজিবের সাথে আলাপ করতে গেলে মুজিব বলেছিলেন “ তোরা সব বাঙালি হয়ে যা”... যদি বললে থাকেন ভুল করেছিলেন। বড় ভুল। তবে পাহাড়িদের সবচেয়ে বড় নেতা ত্রিদিব রায় সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে গনহত্যায় সাহায্য কয়েছিলেন। হতে পারে এটির প্রভাব ছিল। কিন্তু বলে থাকলে এটি তার বড় ভুল ছিল।পরে পাহাড়ে অনেক রক্ত ঝরেছে। তিনি বেঁচে থাকলে তা ঝরত কিনা সন্দেহ আছে।
    কমিউনিজমের ক্ষেত্রে মার্ক্স সর্বহারার নেতৃত্বের কথা বললেও লেনিন তা পাশ কাটিয়ে বলেন সর্বহারা নেতৃত্ব দিতে পারে না তারা শিক্ষিত বা সভ্য না,নেতৃত্ব দেবে শিক্ষিত মানুষ । লেনিন দল এর উপরে মানুষকে বিবেচনা করেছিলেন কিনা তা স্পষ্ট না হলেও স্টালিন যে দলকে বড় করে দেখেছিলেন এটা নিশ্চিত। স্টালিন খুন খারাবীতে নাম কামিয়েছিলেন,ইউক্রেনে দুর্ভিক্ষ করার পরিকল্পনাও করেছিলেন। মাও যে দেং বা মাও সেতুং কমিউনিজমের পথ ধরে চলা শুরু করলেও দুই দশকের মধ্যেই এলিট শ্রেণীর হাতেই ক্ষমতা চলে যায়। মাও করেন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের , এই বিপ্লবে যে পরিমান মানুষ খুন করেছিল তার তুলনা শুধু নাৎসি হত্যার সাথেই তুলনা করা যায়। খেমারুরজ মাত্র চার বছরে ২০ লাখ এর মত মানুষ খুন করে। স্টালিন ৩০ বছরে ১৫/২০ লাখ খুন করেছিলেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শুরু হওয়া নকশাল আন্দোলনের একই অবস্থা ছিল,শ্রেণী শত্রু খতমের নামে মানুষ খুন। এর থেকেই অনুপ্রাণিত ছিলেন সিরাজ শিকদার। কমিউনিস্ট আন্দোলন এ মেধাবী জনগোষ্ঠীর সমাবেশ হলেও এ অঞ্চলে তা কখনই জনপ্রিয়তা পায়নি।
    ১৯৪৮ সালে মনি সিংহ এর নেতৃত্বে পূর্বপাকিস্তানে শসস্র আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে সরকারের প্রোপাগান্ডা এত বেশী ছিল যে প্রকাশ্যে পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টি কখনই কাজ করতে পারেনি। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি মনি সিং এর নেতৃত্বে হাজং এলাকায়, ইলা মিত্রের নেতৃত্বে রাজশাহীতে নাচোলে এবং খুলনা,নড়াইল প্রভৃতি এলাকায় কৃষক আন্দোলন ঘটে। জনগণের মনে কমিউনিস্ট পার্টি কখনই তেমন দাগ কাটতে পারেনি। হতে পারে তাদের শসস্র কর্মকাণ্ড মানুষ ভাল চোখে দেখেনি অথবা দেশের মানুষ কমিউনিজম নাস্তিকের কাজ বলেই মনে করেছিল। কাল মার্ক্সের আর কিছু প্রচার না হলেও, “ ধর্ম হোল আফিম,যা মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে” এই বানী র প্রচার ছিল খুব বেশী।মুজিব যা করতে চেয়েছিলেন তা করাটা তিনি ডিসারভ করতেন কিনা?। বাকশাল করার যোগ্যতা কি তার ছিল?, তাকে ত কেউ ম্যান্ডেট দেয়নি। মুজিব ম্যান্ডেট নিয়ে কি তার জীবনে কিছু করেছিলেন?।ছয় দফা কিভাবে দিয়েছিলেন তিনি?।কিভাবে আওয়ামী মুসলিম লীগকে আওয়ামীলীগে পরিণত করেছিলেন?। নিজে । সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে। কেউ পাশে ছিল না।
    মুজিবের উচিৎ ছিল ক্ষমতা না নিয়ে তাজউদ্দীনকে দেয়া এবং গান্ধীর মত ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা… এ বক্তব্য অনেকের । কিন্তু সেটা সেই সময়ের প্রেক্ষিতে কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল?। আদৌ সম্ভব ছিল কি না বাঁ যদি তাজউদ্দীনকে ক্ষমতা দেয়া হতই তাহলেই বাঁ কি হত?। অবস্থা কি খুব ভালো হত?। পাকিস্তানীরা ব্রিটিশদের মত স্বেচ্ছায় এদেশ ছেড়ে যায়নি। নেহেরু এবং জিন্নাহ বাংলাদেশের মত যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পাননি। বরং ভারত স্বাধীন হবার পরও মাউন্টব্যাটেন দুই বছর ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন!!। তাজউদ্দীনের কি সেই ক্ষমতা ছিল সারাবিশ্ব থেকে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের জন্য সাহায্য আনা?। কে চিনত তাজউদ্দীনকে?। সারা বিশ্বের মানুষ চিনত শুধু একজন মানুষকে আর তিনি ছিলেন মুজিব। গান্ধী তার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচীর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের পর্যায়ে নামতে গিয়ে নেতা নয় বরং ধর্মগুরুতে পরিণত হয়েছিলেন আর তাছাড়া গান্ধী কংগ্রেসের সাধারণ সদস্যপদও গ্রহণ করেননি কখনো। ভারতেরও বিদেশের সাহায্যেরও প্রয়োজন ছিল না তখন । বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর জাতিসংঘ সহ অনেকেই ধারনা করেছিল বাংলাদেশে দুই কোটির মত মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যেতে পারে। কিন্তু মারা গিয়েছিল তিরিশ হাজার এর মত। ভারতের সৈন্য প্রত্যাহার সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ই ছিল যা মুজিব ছাড়া কেউ করতে পারতেন না। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান বাঁ বর্তমান বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ আগেও হয়েছিল ১৯৫৫ সালে।
    আসলে মুজিব হত্যার পেছনে বাঁ হত্যাকে যুক্তিযুক্ত করার একটি চেষ্টা ছিল এবং আছে। কিন্তু কেন?। এর বড় কাড়ন হতে পারে মুজিব হত্যার পর মানুষ ৭ই মার্চের মত রাস্তায় নামেনি। মানুষ কি মুজিব হত্যায় সস্তি পেয়েছিল?। এটা বিচার করা এখনকার পরিস্থিতিতে খুব কঠিন কিছু না। মানুষের সামনে বাঙালি শাসকের কোন উদাহরণ আগে আর ছিল না। যদি ধরি বাংলার শেষ নবাব সিরাজুদ্দউলার কথা। কি হয়েছিল সিরাজ হত্যার পর ?। মুর্শিদাবাদের রাস্তায় মানুষ আনন্দ মিছিল বের করেছিল ,মিস্টি বিতরন করা হয়েছিল ঘড়ে ঘড়ে । আজ আমাদের কাছে সিরাজের যে অবস্থান সে অবস্থানে সেদিন ছিল মীরজাফর আর মীরজাফরের আজকে যা অবস্থান তা ছিল সিরাজের। বর্তমান সিরাজের অবস্থানে আসতে সময় লেগেছে শতবর্ষ। মুসলমানদের কাছে খুব প্রিয় তাদের নবী মোহাম্মদের নাতিরা হাসান এবং হোসেন এবং তাদের পিতা আলী। এই আলী কে হত্যার পর এজিদের পিতা মাবিয়া ক্ষমতা গ্রহণ করার পর তার বংশের দুশ বছরের শাসনামলে প্রতি শুক্রবারে জুম্মায় আলীর বিরুদ্ধে খুতবা দেয়া বাধ্যতামূলক ছিল। আলীকে বর্তমান অবস্থায় অর্থাৎ মোহররমের পর্যায়ে আসতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল। তবে বাঙালি র আরও অনেক বেশী সময় লাগতে পারে যেকোনো বিষয়ে মূলে ফিরতে।
    বাংলাদেশের মানুষ এখন ও বুঝে না ,বুঝতে চায়ও না। ১৯৭৫ এর ১৫ই ই আগস্টের পর থেকে যা ইতিহাস , মুজিব এর কি সাধ্য ছিল এর চেয়ে খারাপ কিছু করার?। যে সিরাজ শিকদারের কথা বলা হয় তোতাপাখির মত অমন হাজার হাজার সিরাজ শিকদারকে হত্যা করেছে জিয়া, কাড়ন সর্বহারার নামে নকশাল বাড়ী আন্দোলনের মত নীরিহ মানুষ খুন করায় মত্ত হয়েছিল সিরাজ শিকদাররা। পরে এরাই আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি তৈরি করে ডাকাতিতে লিপ্ত হয়েছিল। মুজিবের কাছে মানুষের চাহিদা ছিল দেবতার মত। মুজিব কেন ছেলেদের বিয়েতে বেলি ফুলের মালার বদলে স্বর্ণের মালা দিল?, মুজিব প্রধান মন্ত্রী হলেন, প্রেসিডেন্ট হলেন আমরা কি পেলাম?। এই পাওয়া আর না পাওয়ার অভিমান থেকে বাঙালি আর বেরুতে পারে নাই। মুজিব কি পেল?। হতভাগ্য মুজিবের যে কি দুর্মতি হয়েছিল বাঙালিকে স্বাধীন করতে গেল! ৬ দফার ২ দফার সাথেই আপোষ করলে মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। এই বিশ্বাসঘাতক জাতির প্রধানমন্ত্রী হবার তার দরকার কি ছিল?। সমালোচনার ঊর্ধ্বে কেউ না,কিন্তু সত্যি কথা আমরা বলি না কেন?। বাঙালি কি স্বাধীনতা পাবার যোগ্য ছিল?। অন্তত গান্ধী যে ভারতের স্বাধীনতা এত তারাতারি চান নাই এটা এখন স্পষ্ট । বাঙালির যা নৃতাত্ত্বিক ইতিহাস পাওয়া যায় তা থেকে মনে ত হয়না যে মুজিবের চেয়ে ভালো মানুষ বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করে স্বাধীনতা এনে দিতে পারত। কারো বন্দনা নয়, ব্যাক্তি পূজা নয় সত্য আমরা যতদিন না বলব ততদিন আমরা পঙ্গু জাতিই রয়ে যাব।মিথ্যার বেসাতি করে কোন জাতি এ পৃথিবীতে মাথা তুলে দাড়াতে পারে নাই। যারা বলে, অতীত ঘেঁটে লাভ নেই ভবিষ্যতের দিকে তাকাও তারা ভুলে যান যে বর্তমান বলে কিছু নেই, যা এই মুহূর্তে বর্তমান তা ই পরের মুহূর্তে অতীত। বর্তমানে কি পেলাম এই মাতম যারা করে তারা কিছুই পাবে না।কোথাও “বঙ্গবন্ধু” ব্যবহার করিনি, মুজিব ব্যবহার করেছি। যদি মন না চায় বঙ্গবন্ধু বলবেন না, যে লোকটি সারাজীবন আপোষহীন থেকে গেছেন তাকে দয়া করে করুণা দেখাতে যাবেন না, তাহলে আমরাই করুণার পাত্র হব, যেমনটি হচ্ছে বর্তমান সরকার। শুধুমাত্র যদি একজন আপোষহীন বাঙালি হিসেবেই আমরা তাকে বিবেচনা করি তাহলেও তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র যেহেতু সফলতা এনে দিতে পারেন নাই তাই তিনি এ আলোচনায় অপ্রাসঙ্গিক।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৮:৪৫576812
  • #PT,

    আপনার শেষবাক্যে এ ক ম ত। এতোদিন শুধু ভুল জেনে আসেননি, মহাভারত মাপের-গলদপূর্ণ জ্ঞানে এইটুকু বোধও গুলে খেয়েছেন, যাদের ফোবিয়া নেই [চাইনিজ] তারা ইতিহাসের গুরুতর মিমাংসা উনগল্পে/ছোটগল্পে দেন না। এমন কি প্রয়োজনে মহাগ্রন্থই ফাঁদেন। এ কারণেই নাদানদের মুখে ছাইদিয়ে [ধুসর বর্ণ] অনেক সময়ই এন্টি থিসিস/সিন থিসিসের পৃষ্ঠার সংখ্যা থিসিস/এন্টি থিসিসকেও ছাড়িয়ে যায়।

    আর বিপ্লব রহমানের নোটপত্র পড়ার তো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তিনি ঘোষণা দিয়েই "সাইবারস্পেসেরগুচ্ছঅপচয়" করেন। এতে কারো আপত্তি
    থাকলে তাতে তার কি ছু ই আ সে যা য় না। :পি

    পুনঃপুনঃ বিনোদনদানে আপ্নেরে ধইন্যা। ঃ)))))

    দৌড়াক।
  • চান্দু মিঁঞা | 127.217.174.67 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৮:৪৯576813
  • বাঃ ভেতরে বেশ

    ("কমিউনিজমের ক্ষেত্রে মার্ক্স সর্বহারার নেতৃত্বের কথা বললেও লেনিন তা পাশ কাটিয়ে বলেন সর্বহারা নেতৃত্ব দিতে পারে না তারা শিক্ষিত বা সভ্য না,নেতৃত্ব দেবে শিক্ষিত মানুষ । লেনিন দল এর উপরে মানুষকে বিবেচনা করেছিলেন কিনা তা স্পষ্ট না হলেও স্টালিন যে দলকে বড় করে দেখেছিলেন এটা নিশ্চিত। স্টালিন খুন খারাবীতে নাম কামিয়েছিলেন,ইউক্রেনে দুর্ভিক্ষ করার পরিকল্পনাও করেছিলেন। মাও যে দেং বা মাও সেতুং কমিউনিজমের পথ ধরে চলা শুরু করলেও দুই দশকের মধ্যেই এলিট শ্রেণীর হাতেই ক্ষমতা চলে যায়। মাও করেন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের , এই বিপ্লবে যে পরিমান মানুষ খুন করেছিল তার তুলনা শুধু নাৎসি হত্যার সাথেই তুলনা করা যায়। খেমারুরজ মাত্র চার বছরে ২০ লাখ এর মত মানুষ খুন করে। স্টালিন ৩০ বছরে ১৫/২০ লাখ খুন করেছিলেন।")

    মিশিয়ে দিয়েছেন তো!
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৮:৫৫576814
  • # চান্দু মিঞাঁ,

    সংযোজনের জন্য ধন্যবাদ। আপনার দেওয়া নোটের এই অংশটি খুব চকমপ্রদ:

    ["হতভাগ্য মুজিবের যে কি দুর্মতি হয়েছিল বাঙালিকে স্বাধীন করতে গেল! ৬ দফার ২ দফার সাথেই আপোষ করলে মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। এই বিশ্বাসঘাতক জাতির প্রধানমন্ত্রী হবার তার দরকার কি ছিল?। সমালোচনার ঊর্ধ্বে কেউ না,কিন্তু সত্যি কথা আমরা বলি না কেন?। বাঙালি কি স্বাধীনতা পাবার যোগ্য ছিল?।"]

    স্বাধীনতা তাহলে "বঙ্গবন্ধু"রই দয়ার দান? "শহীদ জিয়ার" নয়?

    হা হা প গে কে ধ... =))

    নোটটি আন্তর্জাল সংস্করণ হলে লিংক দিলে ভালো হয়।

    শাহবাগের মৃত্যু নেই। এটি এক চেতনার ভিসুভিয়াস। [খুব খেয়াল করে]
  • শিহাব হায়দার মুন (সপ্তক) | 183.34.218.177 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৮:৫৫576815
  • ডঃ আহমেদ শরিফের মুজিব বিষয়ে বক্তব্য সবসময় ই নেতিবাচক ছিল বদ্রুদ্দিন উমরের মত। আমি আহমেদ শরিফের লেখার রেফারেন্স নেই,কিন্তু এই আহমেদ শরিফ ও ত ব্লাক মেইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়য়ে শিক্ষক হয়েছিলেন। আহমেদ শরিফের চাচা আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদের বিশাল এক পুঁথি সংগ্রহ ছিল যা বিশ্ববিদ্যালয়য় করতিপক্ষ তাদের গ্রন্থাগারে দান করবার জন্য করিম সাহেবকে অনুরুধ করলে জনাব করিম শর্ত দেন তার ভাতিজা আহমেদ শরিফকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। এতবড় একজন গবেষক এর ও এই অবস্থা, মুজিবের সমালোচনায় খড়্গ হস্ত কেন?। আর সর্দার ফজলুল করিম একজন ঝানু বাম্পন্থি, আব্দুর রাজ্জাক সহ অন্য কোন প্রথিতযশা বাঙালি ব্যাক্তি কে ত সমালোচনা মুখর হতে দেখলেও প্রশংসায় পঞ্চমুখ ও হতে দেখেছি। হীনমন্যতা নিয়ে সত্যি বলা যায় না।
  • শিহাব হায়দার মুন (সপ্তক) | 183.34.218.177 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৯:০০576816
  • আমার মূল নোটটি প্রজন্ম ব্লগে "পথ হারা এক জাতির ইতিকথা " নামে প্রকাশ হয়েছিল http://projonmoblog.com/soptok/413.html ( সপ্তক নামে) ,এটি তার সংক্ষিপ্ত এবং কিছু পরিবর্তিত রূপ।
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৯:১৭576817
  • # শিহাব হায়দার মুন (সপ্তক),

    আপনার সবিনয় উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে তর্কে যাবো না। শুধু এইটুকু বলবো, ড. আহমদ শরীফ, সরদার ফজলুর করিম প্রভৃতি বিশিষ্ট
    মনীষি সম্পর্কে মনগড়া গালগল্পে অন্য কাউকে নয়, আপনি নিজেকেই ছোট করছেন। ধন্যবাদ।
  • চান্দু মিঁঞা | 127.217.174.67 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ১৯:২৭576818
  • বিপ্লব যে উত্তেজনার বশে অন্য কারু কথার দায় আমার ঘাড়ে চাপালেন তা কি ঠিক হল? ভদ্রতাবোধ এই পরিপ্রেক্ষিতে বোধ হয় কিছু দাবী করে।
  • PT | 213.110.243.23 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ২০:২৬576819
  • কেউ দয়া করে বিপ-র আমাকে লেখা উত্তরটির বাংলা অনুবাদ করে দেবেন? তাহলে একটু মোটা বুদ্ধিতে বুঝে আনন্দ পাই।
  • pi | 78.48.231.217 | ২৪ মার্চ ২০১৩ ২০:৩৩576821
  • অফ টপিক, আপনার বারবার বিপ সম্বোধন দেখে মনে হল, আপনি কি বিপ পাল আর বিপ্লব রহমানে গুলিয়ে ফেলেননি তো ?

    আর টপিকে, বিপ্লব রহমান আর হায়দর মুনের নোটগুলো পাশাপাশি পড়ে অনেক কিছু গুলিয়ে গেল ঃ(
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন