এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সিউড়ি-কীর্নাহার-হেতমপুর-ফারাক্কা-বিডনস্ট্রীটের গল্প

    Abhyu
    অন্যান্য | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ৯২৮০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Atoz | 161.141.84.164 | ০১ মার্চ ২০১৪ ২৩:৫০626908
  • তেলোভেলোর মাঠ।
    আমার খুব দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেসব মনে হয় আর নেই, হায়।
  • i | 134.171.11.139 | ০২ মার্চ ২০১৪ ০৬:৪২626909
  • এই মাঠের নিজস্ব বাঘ থাকার কথা। অন্ততঃ প্রাপ্য হয়।
  • pi | 24.96.38.146 | ০২ মার্চ ২০১৪ ০৮:৫৬626910
  • ব্যাঙদির জাদুমাঠ ঃ)
  • byaang | 132.167.93.248 | ০৪ মার্চ ২০১৪ ১৮:০৮626911
  • সব্বার এত ভালো লাগায় আমি একদম অভিভূত। সোজা কথায় খুব খুব অবাক হয়েছি, খুব খুব খুশি হয়েছি।
    অভ্যু আর রেশমিকে থ্যাংকু, কবিতাগুলো ঠিকঠাক মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। আর ঝিকিও ঠিক বলেছে, কোলকাতা থেকে মাইথন যাওয়ার পথে মোটেই দুমকা বা দুবরাজপুর পড়ে না। মাইথন থেকে মাসাঞ্জোর আসার পথে পড়ে।
    আর হুতো যেমনটা বলল, সেরকম কয়েকটা ঘর সিউড়ি শহরে ছিল, সেই সব ঘরে হলুদ আলো জ্বলত বটে, তবু মনে হত সেই ঘরে অন্ধকারের জোরই বেশি। চোখ বন্ধ করলেই স্বাগতামাসিদের সেরকম ঘরটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই ঘরের কথাও পরে কখনও লিখব হয়তো। না লিখলেই বা কি!
    আর হ্যাঁ অপুমামাদের গল্পে একটা মারাত্মক ভুল হয়েছে। আমার তপুমামার কথা লেখা হয় নি। আর ওদের বোন শীলামাসি আর শিখামাসির কথা।
    আর আমার সেই মাঠটাকে ভালোবেসে ফেলার জন্য সব্বাইকে অনেক অনেক থ্যাংকু।
  • | ০৪ মার্চ ২০১৪ ১৮:২১626912
  • যাদের কথা লেখা হয়্নি, তাদের কথা এবারে লিখে ফেলা হোক।
  • | ০৪ মার্চ ২০১৪ ১৮:২২626913
  • যাদের কথা লেখা হয়নি, তাদের কথা এবারে লিখে ফেলা হোক।
  • byaang | 132.166.91.44 | ০৪ মার্চ ২০১৪ ১৯:৩৮626914
  • মাঠটা আমাকে ছেড়ে থাকতে পারত না। কিন্তু আমি তো সব সময় মাঠটার সঙ্গে থাকতে পারতাম না। বাড়িতে যে দিদা থাকত, বড়মামা, ভালোমাসি, ছোটোমাসি, ছোটোমামা, দাদাজিও থাকত। দাদাজি মানে মায়ের ঠাকুদ্দা। আমাকে তো ওদের সঙ্গেও থাকতে হত। মাঠ কিন্তু অতশত বুঝতে চাইত না, সবসময় আমাকে ডাকতে থাকত।

    সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে অপেক্ষা করতাম কখন দিদা লক্ষ্মী খিলের দাদা বড় খিলকে নামিয়ে দেবে। বলি নি বুঝি, দিদা যখন ঘুম থেকে উঠত, তখন যে আমিও দিদার সঙ্গে উঠে পড়তাম। ঘরের বাইরে এসে দেখি আকাশে তখনও একটা দুটো তারা, কখনো কখনো ছোট্ট সাদা একটা ঘষা চাঁদ। দিদার মতন অত আগে আর কেউ উঠতে পারত না। দিদা ফার্স্ট, আমি সেকেন্ড। ভালোমাসি আর ছোটোমাসি থার্ড হবে। আমি জানি। কিন্তু ওরা থার্ড হওয়ার আগেই আমাকে ফিরে আসতে হবে। নয়তো আমাকে না নিয়েই ওরা পিছনের বাগান থেকে ফুল তুলে আনবে। দিদা ঘুম থেকে উঠে কুয়ো থেকে জল তুলে আগে তো বাথরুমে যেত, আর আমি উঠোনের শেষে রঙ্গনগাছটার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নয়নতারাফুলগুলো কতটা সাদা আছে দেখে নিতাম। একটু বাদেই তো ওরা গোলাপি হতে শুরু করবে।

    দিদা না আসা অব্দি, বড় খিলটাকে আমি নড়াতেও পারতাম না। তার এম্নি গায়ের জোর ছিল। যেই না দিদা এসে বড় খিল নামাত,আমি অম্নি বারান্দা থেকে এক ছুটে উঠোন পেরিয়ে লক্ষ্মী খিল খুলে মাঠে। দিদাও দরজার বাইরে এসে পাঁচিলের গায়ে লাগানো মাধবীলতার থেকে ফুল তুলতে তুলতে বলত, "বেশি দূরে যেও না যেন মেমসাহেব, কাছে কাছেই থেকো, কেমন? তোমার মা উঠে টের পেয়ে গেলে কিন্তু আস্ত রাখবে না তোমাকে। দরজার কাছেই থেকো।"

    আমি ততক্ষণে অর্ধেন্দুমামাদের বাড়ি ছাড়িয়ে, বাবলিমাসিদের বাড়ি ছাড়িয়ে বাবলা-টুবলাদের বাড়ি অব্দি পৌঁছে গেছি। আর আকাশের তারাগুলো-ও আকাশের পিছনে কোথায় যেন লুকিয়ে পড়েছে। সুয্যি ওঠে নি, কিন্তু অন্য কে যেন একটা মাঠটার উপর আলো করে দিয়েছে। সেই আলোয় সব্বার বাড়ি দেখা যাচ্ছে, গাছগুলো-ও। বাবলা-টুবলাদের বাড়ি তখনই যাব কি, ওরা তো তখনো ঘুম থেকেই ওঠে নি। আমি তো যাচ্ছি মাঠের ডানদিকের কোনাটা যেখানে শেষ হয়ে ডিএসএ গ্রাউন্ড শুরু হচ্ছে তার কাছাকাছি। সুয্যির সঙ্গে রেস। সে ঝিকিমিকি করার আগেই আমাকে মাঠটার অনেকটা পেরোতে হবে যে, নয়তো পুলিশদের প্যারেড দেখব কী করে? আর পুলিশদের প্যারেড শুরু হওয়ার আগে যে মাঠের পিছন দিয়ে একটা রেলগাড়ি যাবে আর একটা মালগাড়ি যাবে, তাদের যাওয়াই বা দেখব কী করে? মনিমাসিদের বাড়ি , মায়ের শেফালিমাসিমার বাড়ি, টুটুমামাদের বাড়ি ছাড়িয়ে তবে একটু দম নিই, এখান থেকে রেলগাড়ি পষ্ট দেখা যাবে।

    মালগাড়িটাও যেই চলে যায় পিছনে একটা ডিমের কুসুমের মতন সুয্যি রেখে, বুঝতে পারি দিনটা এবার শেষ হতে শুরু করল। মনটা খারাপ হতে হতেও পুরোপুরি হতে পারে না, ততক্ষণে ইউনিফর্ম পরে হাতে বন্দুক নিয়ে আবার কয়েকজন হাতে ড্রাম নিয়ে আর বাঁশি নিয়ে এসে পড়েছে। ওরা যে এবার প্যারেড করবে। ড্রাম বাজিয়ে আর বাঁশি বাজিয়ে। ওদের মধ্যে একজন আছে, সে খুব কুঁড়ে। নিজে কিচ্ছুটি করে না। খালি "বাঁয়ে মুড়, পিছে মুড়, আগে চল" এসব বলে চেঁচায়। আমি টুটুমামাদের বাড়ির সামনে গুলঞ্চ গাছটার পাশে দাঁড়িয়ে নির্নিমেষে গিলতে থাকি সেই পাগল করে দেওয়া দৃশ্য, রোমাঞ্চে গায়ে কাঁটা দেয়, শীত করে। নিজেই নিজের হাতে দেখি ছোট্ট ছোট্ট কাঁটা ফুটছে। আর পুলিশরা প্যারেড করতে করতে দেখে এক উমনোঝুমনো মেয়ে অবাক চোখে হাঁ করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। এই সব কিছু দেখে গুলঞ্চ গাছটা ভারি খুশি হয়ে টুপটাপ কত ফুল ফেলে দেয় আমার গায়ে, মাথায়। ও আসলে পুলিশদের প্যারেড দেখে হাততালি দেয়, সে তো আমি বুঝতে পারি। গুলঞ্চ গাছটা সাহস দেওয়ায় আমি একটু সাহসে ভর করে পুলিশদের জিজ্ঞেস করি, "তোমরা আজ গুলি প্র্যাকটিস করবে না? একটু তাড়াতাড়ি কর না?" পুলিশরা নিজেদের মধ্যে কীসব বলে যেন হাসে। আমার কথার উত্তর দেয় না। কেন দেয় না, আমি জানি। দাদাজি বলেছে। প্যারেড করার সময়ে বাইরের লোকের সঙ্গে কথা বলা মানা। নিজেকে বলি, আমিও একদিন পুলিশ হব, ওদের সঙ্গে প্যারেড করব, বাইরের লোকের কথার উত্তর দেব না।
    এদিকে কী হয়েছে, কয়েকজন ম্যাজিক জানা পুলিশ করেছে কি, দুটো কাঠের পায়ার উপরে চৌকো বোর্ড লাগানো, তাতে গোল গোল আঁকা বড় বড় এইসব স্ট্যান্ড এনে পর পর সাজিয়ে দিয়েছে। কখন আনল, কখন সাজাল, আমি দেখতে পাই নি কিন্তু। বলেছি না সিউড়ির লোকরা ম্যাজিক জানে, সিউড়ির পুলিশরাও জানে।

    পুলিশরা এবার গুলি চালানো প্র্যাকটিস করে। আর সুয্যিমামাও ততক্ষণে রেললাইনের পিছন থেকে সরতে সরতে , টিলা পেরিয়ে (মানে আমার শুশুনিয়া পাহাড় পেরিয়ে) আমার মাথার উপর এসে গেছে। একটু একটু গরম লাগে। পুলিশরা কেউ মাঝখানের ছোট্টো গোলটায় গুলি লাগাতে পরে না। বাইরের সবচেয়ে বড় গোলটায় সবচেয়ে বেশি গুলির দাগ। আমি জানি ওরা কেন ছোটো গোলটায় লাগাতে পারে না। সুয্যিটা বড্ড বেশি ঝকমক করছে তো ওদের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। ওরা কিন্তু বেশিক্ষণ প্র্যাকটিস করে না। বড় বড় বাক্সে গুলি গুণে গুণে রেখে, বন্দুক গুণে গুণে রেখে, বাক্স বন্ধ করে , সেই গোল আঁকা স্ট্যান্ড্গুলো খুলে সব কিছু কাঁধে করে চলে যায়। মাঠের উল্টোদিকেই তো ওদের কোয়ার্টার, নাম পুলিশ লাইন। ওদের নিজেদের একটা হাসপাতালও আছে। সেটার নাম পুলিশ হাসপাতাল। বাবা পুলিশ হলে ভালো হত, আমি তাহলে পাশের সদর হাসপাতালে না জন্মে, পুলিশ হাসপাতালে জন্মাতাম। আমার কোনো বন্ধু কক্ষনো পুলিশ হাসপালে জন্মায় নি। আমি একা জন্মাতাম। কী মজা হত! কিন্তু এই পুলিশদের কোনো চেষ্টা নেই। ওরা যতক্ষণ না ছোট গোলটায় লাগাতে পারাছে, ততক্ষণ চেষ্টা করতে পারত। কিন্তু একটুতেই থেমে গেল। মা বলে , পুরোপুরি চেষ্টা না করে কখনো থামতে নেই।

    এই রে পুলিশরা তো চলে গেল। ঐ তো বড়মামাও সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে, তার মনে ছোটোমাসি আর ভালোমাসিও তো বাগানে চলে গেছে এতক্ষণে। হে ঠাকুর, আমার পাগুলো একটু লম্বা লম্বা করে দাও না? আর মা? মাকে আরো অনেকক্ষণ ঘুম পাড়িয়ে রাখো, নয়তো আমাকে আর বাগানে গিয়ে ফুল তুলতে দেবে না।

    বাড়ি পৌঁছে দেখি, দাদাজি বসে আছে বারান্দার রানি চেয়ারটায়, পাশের রাজা চেয়ারটায় কক্ষনো বসে না কেউ। ওটা বড়, শক্তপোক্ত কালো রঙের। চড়াইপাখির পিঠের মতন রঙের রানি চেয়ারটার মতন আলগা , নড়বড়ে নয়। কিন্তু তবু বসে না। কেন বসে না, আমি জানি। নেতাজি সুভাষ বোস যখন এসেছিলেন দাদাজির কাছে, তখন ঐ রাজা চেয়ারটায় বসেছিলেন, তাই দাদাজি ওটায় বসে না। শুধু দাদুভাই যখন আসে সিউড়িতে, তখন দাদুভাই আর দাদাজি পাশাপাশি রাজা চেয়ার আর রাণি চেয়ারে বসে। দাদুভাই তো সিউড়িতে থাকে না। দাদুভাই তো হাজারিবাগে চাকরি করে। দাদুভাইয়ের বাড়ির জানলা যেখানে শেষ হয়, সেখান থেকে শুরু হয় জঙ্গল। সেই যে আমি ইস্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে যখন মায়ের সঙ্গে দাদুভাইয়ের কাছে গেলাম, তখন ঋজু আমাকে ঐ জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে কাঠপিঁপড়ে ভর্তি জামগাছে তুলে দিয়ে নিজে বাড়ি চলে গেছিল, সেই জঙ্গল। দিদা দাদাজিকে চা দেয়। আমাকে দুধ খেতে বলে। দাদাজি আমাকে বলে সরস্বতী ঠাকুরকে প্রণাম করে বই খুলে বসতে। কিন্তু আমি কুয়োপাড়ে পা ধুতে ধুতে বোঝার চেষ্টা করি ছোটোমাসি আর ভালোমাসির ছাড়া জামা চান ঘরের বাথরুমের বালতিতে ভেজানো আছে কিনা। যদি থাকে, তার মানে ওরা পুজোর ফুল তুলতে বাগানে চলে গেছে। হ্যাঁ আছে তো। কক্ষনো আমার জন্য দাঁড়ায় না। "দিদা, আমি বাগান থেকে এসে দুধ খাব, হ্যাঁ? মাকে বোলো না যেন।" দিদা হাসিমুখে রান্নাঘরে ঢুকে যায়। কিচ্ছু বলে না। কেন বলে না আমি জানি। বললেই যদি মা শুনতে পেয়ে উঠে যায়, আমাকে বাগানে যেতে না দেয়, তাই।
  • kumu | 133.63.144.144 | ০৪ মার্চ ২০১৪ ১৯:৪৭626915
  • একটা বিচ্ছিরি দিন খুবখুব্সুন্দর হয়্র গেল এইটা পড়ে।
  • sosen | 111.220.13.23 | ০৪ মার্চ ২০১৪ ১৯:৫৯626916
  • তারপর তারপর তারপর!!!
  • byaang | 132.166.91.44 | ০৪ মার্চ ২০১৪ ২০:১৭626706
  • বাগানে গিয়ে দেখি, ছোটোমাসি আর ভালোমাসি ততক্ষণে কামিনীফুলগুলো সব তুলে ফেলেছে, বেলিফুলও। এমনকি টগরও রাখে নি আমার জন্য। গন্ধরাজও তুলে ফেলেছে। গন্ধরাজ ফুল ওরা রাখবে নাকি আমার জন্য! ঐ দ্যাখো, ওরা বাগানের শেষটায় প্রায় পৌঁছে গেছে। গোলাপি জবাও তুলে ফেলেছে, হলুদ জবাও। আমার জন্য শুধু লাল জবা রেখেছে। জানে, আমার বেলিফুল তুলতে সবচেয়ে ভালো লাগে, তবু রাখবে না। কেন রাখো নি জিজ্ঞেস করলে, অম্নি ভালোমাসি বলবে, "তুমি কেন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফের নি? সকালবেলায় অতক্ষণ মাঠে থাকতে হয়? রোজ রোজ পুলিশদের প্যারেড অত কি দেখার আছে?"
    আমি দৌড়ে গিয়ে লাল জবাগুলো তুলতে না তুলতেই ছোটোমাসি পাঁচিলের উপর ফুলের সাজি রেখে পাঁচিলে ঠেস দিয়ে রতনমাসির সঙ্গে গল্প করতে শুরু করে দিয়েছে। রতনমাসি আর মিলিমাসিও তো রতনমাসিদের বাগানের ফুল তুলছিল। আর রতনমাসির দাদু ইজি চেয়ারে বসে বই পড়ছে। আমিও ছোটোমাসির পাশে গিয়ে ছোট্ট ছোট্ট লাফ দিয়ে রতনমাসিদের পাশের বাড়িতে লিপি ফুল তুলছে কিনা দেখার চেষ্টা করি। লিপি ফুল তুললে বেশ হয়, আমিও ছোটোমাসির মতন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে লিপির সঙ্গে গল্প করতে পারি। আমাকে লাফ দিতে দেখে রতনমাসি আর মিলিমাসি ততক্ষণে নিজেদের বাড়ির গেট খুলে আমাদের পাঁচিলের কাছে এসে গেছে। জানি এসেই আমার গাল টিপবে আর আমার জামার রং কী, জিজ্ঞেস করবে, আর আমি উত্তর দিলেই হাসবে। কেন হাসে , বুঝি না।

    ছোটোমাসিকে রতনমাসি জিজ্ঞেস করে, "ওমা তোদের বাগানে এত মিষ্টি গন্ধ কিসের রে? কেমন নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে।" এতক্ষণে আমার খেয়াল হয়, তাই তো একটা খুব সুন্দর গন্ধ। ছোটোমাসি আর ভালোমাসি রতনমাসিদের আমাদের বাগানের ভিতরে আসতে বলে, এসে নিজের চোখেই দেখে যেতে বলে কীসের গন্ধ। রতনমাসি আর মিলিমাসি পাঁচিল ডিঙিয়ে আমাদের বাগানে ঢুকেই চেঁচাতে আরম্ভ করে "ওমা তোদের ল্যাভেন্ডারে ফুল এসেছে, কী ভালো গন্ধ রে! ইস আমাদের ল্যাভেন্ডারে এখনো ফুল এল না কেন বল তো? একসঙ্গেই তো নিয়ে এলাম ল্যাভেন্ডারগুলো।" রতনমাসি ল্যাভেন্ডারের গায়ে খুব ধীরে ধীরে আদর করে হাত বোলাতে থাকে। মিলিমাসিও। মিলিমাসি নিজের আঙুলগুলো আবার নিজের নাকের কাছে এনে গন্ধ শোঁকে। একবার করে হাত বুলোয়, একবার করে গন্ধ শোঁকে। নিজের আঙ্গুলগুলোয় ল্যাভেন্ডারের গন্ধ মেখে নিচ্ছে। এখন বাড়ি গিয়ে হাত ধোবে না, জানি আমি। ওরা আরো কীসব গল্প করতে থাকে। পড়ার গল্প, দিদিমণিদের গল্প। গল্প আর থামেই না ওদের। আমার আরটি গার্লস ইস্কুলের গল্প শুনতে ভালো লাগে না। ওদের দিদিমণিরা খুব রাগী রাগী। বরং ছোটোমামাদের জেলা স্কুলের স্যাররা খুব মজার। তাদের কতজনকে তো আমি চিনিও। আমাকে আদর করে। সাইকেল চাপিয়ে ঘোরায়। ওরা কথা বলে যেতেই থাকে। এদিকে আমি দেখি একটা মৌটুসি পাখি এসে হলুদ কলাবতীতে ঠোঁট ঢুকিয়ে মধু খাচ্ছে। আর সাদাকালো দোয়েলটা টগরগাছের গোড়া থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে গন্ধরাজের গোড়ার কাছে যাচ্ছে, আবার টগরগাছের কাছে ফিরে আসছে। শিউলিগাছের নীচে কয়েকটা চড়াই ধুলোয় গড়াগড়ি দিচ্ছে। তার মানে আজ বৃষ্টি হবে। মা বলেছে, চড়াইরা যখন ধুলোয় স্নান করে সেদিন বৃষ্টি আসবে। এখন আমি অনেক পাখি চিনতে পারি, অনেক গাছও। শুধু মা, ছোটমাসি, ভালোমাসিদের মতন পাতা দেখে গাছের নাম বলতে পারি না, কিন্তু ফুল দেখে বলতে পারি। বাগানের পিছনে ডিআই আপিসের ছাদের পাঁচিলে আবার সেই কুবোপাখিটা এসেছে। ওর বড্ড সাহস, ডিআই আপিসের সিঁড়িতে ঘুমিয়ে থাকা হুলোটা ওকে দেখলেই লাফিয়ে ধরার চেষ্টা করে, তবু কুবোর ডিআই আপিসের ছাদেই আসা চাই। ঐ তো হুলোটা আসছে, অম্নি কুবোটাও ঝুপ করে উড়ে এসে দিদার বাগানের মেজো আমগাছটার পাতার আড়ালে লুকিয়ে যায়।
    এইসব দেখতে দেখতে ভুলেই যাই বাকি আর সব কিছুর কথায়। হঠাৎ মায়ের গল শুনতে পাই, মাও কখন ঘুম থেকে উঠে বাগানে এসে রতনমাসিদের সঙ্গে গল্প করতে আরম্ভ করে দিয়েছে। এটা তো মায়ের বাপের বাড়ি, তাই মা এখানে এসে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে। আর কোনো কাজ করে না এখানে এসে। খালি এবাড়ি, ওবাড়ি দেখা করতে যায়। এমন সময় দিদা ঘরের ভিতর থেকে ডাক দেয়, "মুন্নি, বেলা কত হল, খেয়াল আছে?" মুন্নি তো ভালোমাসির ডাক নাম। ভালোমাসি এখন গিয়ে দিদার সঙ্গে রুটি বেলতে বসবে।
  • | ০৪ মার্চ ২০১৪ ২০:৪৭626707
  • ইশ ইশ ইশ আমারও ল্যাভেন্ডার গাছে ফুল ফোটে নি আর পরের বর্ষায় জল উঠতেই মরেই গেল গাচটা। :-(

    তাপ্পর???
  • sosen | 111.220.13.23 | ০৪ মার্চ ২০১৪ ২০:৫৭626708
  • আমার আবার ধারণা ছিল ল্যাভেন্ডার কেবলমাত্র ইয়ার্ডলি তৈরী করে, ওসব কোনো গাছে ফোটে না। বড় টর হয়ে গিয়ে তারপর ল্যাভেন্ডার নাম ফুল দেখে তো অবাক।
  • rabaahuta | 172.136.192.1 | ০৪ মার্চ ২০১৪ ২৩:০৩626709
  • কি অসম্ভব ভালো লাগছে পড়তে। নিষ্কলুষ, গ্লানিহীন ভোর, এইসব বড় বড় শব্দ বলতে ইচ্ছে করছে।
  • Lama | 113.242.198.6 | ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫৪626710
  • গালফোলা কোলা ব্যাং, পালতোলা রাঙা ছাতা
    মেঠো ব্যাং, গেছো ব্যাং, ছেঁড়া ছাতা, ভাঙা ছাতা।
    সবুজ রং জবড়জং জরির ছাতা সোনা ব্যাং
    টোক্কা-আঁটা ফোকলা ছাতা কোঁকড়া মাথা কোনা ব্যাং।।

    মোগাম্বো খুশ হুয়া
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৬:০০626711
  • খুব সুন্দর হচ্ছে।
  • jhiki | 233.255.225.77 | ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৭:৩৫626712
  • খুব সুন্দর, মায়াবী।
  • hu | 188.91.253.21 | ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৯:১০626713
  • কি সুন্দর ভোর!
  • সুকান্ত ঘোষ | ০৫ মার্চ ২০১৪ ১৭:২৯626714
  • খুবই সুন্দর হচ্ছে লেখা - দারুণ লাগছে।
  • kk | 81.236.62.176 | ০৫ মার্চ ২০১৪ ২১:৪৩626715
  • খুব ভালো লাগছে পড়তে।
  • ইনাসি | 212.142.74.230 | ০৯ মার্চ ২০১৪ ২০:২৪626717
  • ব্যাঙ
    লীলা মজুমদার আপনার নিকটাত্মীয় সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু সম্পর্কটা ঠিক কি ছিল?
  • ঐশিক | 133.252.160.213 | ১০ মার্চ ২০১৪ ১৬:৩৪626718
  • দারুন ব্যাং দি !!!!!!!
  • Blank | 180.153.65.102 | ১০ মার্চ ২০১৪ ১৯:৫৪626719
  • খুব ভালো হচ্ছে ব্যাঙ দি।
  • byaang | 132.166.153.124 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ০২:০৮626720
  • ভালোমাসি রুটি বেলা হলেই কলেজে যাওয়ার জন্য স্নান করতে দৌড়াবে। এদিকে ছোটোমাসি ততক্ষণে রেডিওতে কোলকাতা ক চালিয়ে দিয়েছে। দিদা কুটনো কোটে, ছোটোমাসি সব ঘরের বিছানা তোলে, মশারি ভাঁজ করে, চাদরগুলো ঝেড়ে সমান করে পাতে। ছোটোমামা বাইরের ঘরে বসে পড়া করে। ছোটোমামা পড়তে বসলে আমাকেও পড়তেই হবে। আমিও হাতের লেখা করতে বসি। নিজের হাতের লেখা দেখতে নিজের একটুও ভালো লাগে না। লেখাগুলো কেমন খোঁচা, খোঁচা, তিরিক্ষি, ঝগড়ুটে! এরকম লেখা আমি চাই না। আমি চাই মাসিমণির মতন ছোট্ট ছোট্ট হীরের নাকছাবির মতন লেখা। আমি লম্বাঘরে মাসিমণির রচনা খাতা দেখেছি। কী লম্বা লম্বা রচনা লিখে রেখেছে মাসিমণি, পাতার পর পাতা। শুধু হাতের লেখার জন্যই পড়তে ইচ্ছা করে, নয়তো অত বড় লেখা আমি পড়ি না। লম্বাঘর কী? লম্বাঘর হচ্ছে আমাদের বাড়ির শেষ ঘরটা। সেটা একটেরে লম্বা, সে ঘরে শুধু একটাই ছোট্ট জানলা। ঐ ঘরটায় আমার খুব থাকতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কেউ আমাকে ঐ ঘরে দেখলেই বকে বার করে দেয়। ঐ ঘরটা দিয়ে কত কিছু দেখা যায়। পাপড়িমাসিদের বাড়ি, রেড ক্রস ইস্কুল, বেঁটে পুরোহিতের হলুদ চাদর পরে ফুল চুরি করা। লম্বাঘরের একদম শেষে দিদার একটা ট্রাঙ্ক রাখা আছে। ট্রাঙ্ক তো না, সিন্দুক। সেই সিন্দুকটার ভিতরে কেউ একটা ঘুমিয়ে আছে আমি জানি। ঘুমিয়ে আছে নাকি মরে গেছে? কে আমি জানি না, কিন্তু কোনো একটা মেয়ে, যার পিঠের মাঝখান অব্দি লম্বা খোলা চুল। হয়তো ভিতরে ঢুকেছিল, আর বেরোতে পারে নি। নয়তো কেউ ওকে শাস্তি দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমারও ইচ্ছে করে ওটার ভিতরে ঢুকে মেয়েটার পাশে শুয়ে থাকি। কিন্তু ওটার ঢাকনাটার উপরে থাকে একটা শতরঞ্চির ঢাকা। তার উপরে গেরুয়ারঙের চাদর। গেরুয়া রঙ আমার বিচ্ছিরি লাগে, কিন্তু ওরকম বলতে নেই। গেরুয়া রঙ তো রবীন্দ্রনাথের প্রিয় রঙ। ট্রাঙ্কটার ভিতরে না ঢুকতে পারি, অন্তত ওটার উপরে তো চেপে বসতে পারি! কেমন একটা ছোট্ট পাহাড়। শুধু আমার নিজের একার। কিন্তু ঐ যে আমি লম্বাঘরের তাকের খাতাবইতে হাত দিই, তাই কেউ চায় না, আমি ঐঘরে থাকি। মাসিমণির রচনাখাতায় হাত দিয়েছিলাম বলে মা আমাকে কত বকেছিল। অন্যের খাতা পড়তে নেই। সব কিছু শুধু নেই আর নেই। মাসিমণিকে দেখতে ইচ্ছে করে, মাসিমণির কোলে শুতে ইচ্ছে করে, কিন্তু মাসিমণির কথা বলতে নেই, কাউকে জিজ্ঞেসও করতে নেই। দিদার তাহলে খুব কষ্ট হয়। মাসিমণি তো দুর্গাপুরে ইন্জিনরিং না কী যেন পড়তে গেছে। অনেকদিন দিদাকে চিঠি লেখে না তো, তাই দিদার সামনে মাসিমণির কথা বললে দিদাকে কষ্ট দেওয়া হয়। তাই বলতে নেই। মাসিমণিকে না দেখে কষ্ট হয়, সেকথাও বলতে নেই। মাসিমণির জন্য খুব ভয় করে, পুলিশরা মাসিমনিকে মারছে না তো! দুর্গাপুরের পুলিশরা নিশ্চয়ই কোলকাতার পুলিশদের মত খারাপ না। টুকটুকি আমাকে বলেছে, কোলকাতার পুলিশরা লোকদের দৌড়ে যেতে বলে, লোকরা যখন খোলা মাঠে দৌড়ায়, তখন পুলিশরা গুলি করে দেয় তাদের। কিন্তু সেসব তো কোলকাতার মাঠে হয়, আমাদের সিউড়ির মাঠের পুলিশরা ভালো, তারা ওরকম নয়। আর দুর্গাপুরে মাঠ নেই অত বড়, থাকলে আমি জানতাম।
    সিউড়ির মাঠটা আবার আমাকে ডাকে, ডাকতেই থাকে। কিন্তু এখন যাওয়া যাবে না। এখনও আমার দশ পাতা হাতের লেখা শেষ হয় নি। এরপরে কুড়িটা যোগ, কুড়িটা বিয়োগ। অ্যাই মাঠ! একটু দাঁড়া! এখন না, ভালো(মাসি) আগে বেরোক, তারপর। দিদা খেতে ডাকে, এতক্ষণে খাওয়ার জায়্গার জাফরি দিয়ে নক্সাকাটা রোদ্দুর এসে পড়ে দিদার শাড়িতে। খাওয়ার জায়গার সিলিংয়ের একটু নীচেই, যেখানে দুইদেওয়ালের ইলেকট্রিকের মোটামোটা তিনটে তারের লাইন এসে মিলে যায়, সেই কোনাটায় থাকে একটা ছেলে চড়াই। সে এবার গাঝাড়া দিয়ে বেরিয়ে যায় ফুড়ুৎ করে। ছোটোমামা, ছোটোমাসি, ভালোমাসি তিনজনেই স্নান সেরে খেতে বসে গেছে। গরম ভাত, আলুসেদ্ধ, ডাল। রুটি খাবে দাদাজি, বড়মামা আর আমি। আর ভালো টিফিনে নিয়ে যাবে। ছোটোমামা, ছোটোমাসিও নিয়ে যাবে। আমার শুকনো শুকনো রুটি লাল চিনি দিয়ে খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু মা আমাকে তা খেতে দেবে না। দুধে রুটি ছিঁড়ে দেবে, আমাকে সেটা খেতে হবে। প্রাণপণে ঠাকুরকে ডাকি। ঠাকুর ভালোর ভাতটা তাড়াতাড়ি শেষ করিয়ে দাও, ভালো শাড়ি পরে দরজার বাইরে বেরোলেই আমিও ভালোকে টা টা করতে বেরোতে পারি, তাহলে আর দুধরুটি খেতে হবে না। ছোটোমামা হি হি করে হাসে আমার দুধরুটি শেষ হচ্ছে না দেখে। বাজে ছেলে একটা। কোনো কাজ করে না, পড়ার নাম করে সারা সকাল নষ্ট করে। ছোটোমাসি, ভালোমাসি কত ভোরবেলায় ওঠে, সকালবেলায় কত কাজ করে। তারপরেও ওরা কত ভালো রেজাল্ট করে। ভালোর মতন অত সুন্দর আলপনা দিতেও আর কেউ পারে না। ঐ জন্য তো ভালোকে সবাই ভালোবাসে। যেই না ভালো খেয়ে উঠে থালার উপর ডালের খালি বাটি চাপিয়ে কলতলায় নামাতে যায়, আমিও তৈরি হতে থাকি ভালোর হাত ধোয়া হয়ে গেলেই ছুটে দরজার কাছে চলে যাব বলে। ভালোর টিফিনবাক্স খুলে দেখে নিই, রুটিগুলো দুইভাঁজে মুড়ে রাখা আছে কিনা। আলুমরিচ বেশি করে আছে কিনা। আমিও ভালোর মতন কলেজে যাব একদিন। এরকম করে শাড়ি পড়ব, ভালো যেমন সোনালি রঙের ছোট্ট সেফটিপিন দিয়ে আঁচল পিন করে, আমিও করব। আমারও লম্বা বিনুনি হবে ভালোর মতন। আর কলেজ স্কুলের থেকে ঢের ঢের ভালো জায়গা। সেখানে হাতের লেখা করতে হয় না। ক্যালকুলাস করতে হয়। ভালো করে, আমি দেখেছি। আনন্দমেলার প্রফেসর ক্যালকুলাসই তো ওটা পড়ায়। ভালো যেই ব্যাগে বঙ্গলিপির খাতা ঢুকিয়ে উঠোন পেরোয়, আমিও দৌড়াই, ভালোর পিছন পিছন। এখন যদি মা বা দিদা আমাকে আটকাতে আসে, আমি উঠোনে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদব, কেউ থামাতে পারবে না, তাই মা আর দিদা এখন আমাকে কিছু বলে না। দুধরুটি শেষ না হলেও কিছু বলে না। ভালো দরজার বাইরে পা রাখলে, আমি অম্নি তিনটে মাধবীলতার ফুল ছিঁড়ে, একটার ভিতরে আরেকটার ডাঁটি ঢুকিয়ে একটা চুড়ি বানিয়ে ভালোকে পরিয়ে দিই, ফুলের চুড়ি। ভালোদের কলেজে পড়া যায় চুড়ি, কেউ কিচ্ছু বলে না। এটা আমার আর ভালোর একটা খেলা। ভালো যতক্ষণ না মাঠ পেরিয়ে, তারপর রাস্তা পার হয়ে একটা কালো বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যাবে, আমি ততক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে থাকব। আবার বিকেলে যখন ভালো ফিরবে, মানে ফেরার সময় হবে, তখনও আমি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকব। রাস্তা পেরিয়ে একটা কালো বিন্দু মাঠে এসে ঢুকবে। তারপর সেই বিন্দুটা একটা রঙীন শাড়ি হয়ে যাবে, তার কাঁধে ব্যাগ। আর হাতে সেই মাধবীলতার চুড়ি, মাধবীলতার ফুল তিনটে নেতিয়ে গেছে, কিন্তু ভালো হাত থেকে খোলে নি। ভালো মাঠ পেরিয়ে আমার কাছকাছি এলেই আমি ভালোর ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে টিফিনবাক্সটা খুলব। খোলার আগে অব্দি আমি ঠিক জানি, ভিতরে থাকবে অনেকটা আলুমরিচ আর একটা রুটি। ভালো দুটি রুটির একটা খেয়েছে, আরেকটা আমার জন্য রেখে দিয়েছে। রাখবেই, তবু টিফিনবক্স খোলার সময়ে আমার টেনশন হবে, যদি না থাকে, যদি ভালো একদিন আমার জন্য না রাখে! কিন্তু এখন তো সকালবেলা এখন তো ভালো কলেজ যাচ্ছে। যাওয়ার আগে আমার মাথায় গালে হাত বুলিয়ে ভালো বলে, "পরী মেয়ে, লক্ষ্মী হয়ে থাকবে কিন্তু। দুষ্টুমি কোরো না যেন। আর সারা দুপুর ধরে রোদ্দুরে মাঠে ঘুরো না যেন। এমন কিছু কোরো না যাতে মায়ের কাছে মার খেতে হয়। লক্ষ্মী পরী হয়ে থেকো। দুষ্টু পরীদের কেউ ভালোবাসে না। আমি যাই কেমন?"
    ভালো মাঠ পেরিয়ে যায়, আমিও ভালোর সঙ্গে খানিকটা এগিয়ে যাই, মাঠের ভিতর খানিকটা। মাঠটা আমাকে সাপটে নেয়। সাপটে নেয়, কেমন করে বুঝতে পারি? ঐ যে মাঠের হাওয়াগুলো আমাকে দেখেই দৌড়ে এসেই আমাকে ধাক্কা মেরে আমাকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে নেয়। এখন আমি বাড়িতে ঢুকব না। একটু পরেই তো মাঠ পেরিয়ে আসবে একজন। আমি তার আসা দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকব। সে যতক্ষণ না আসে আমি দাঁড়িয়ে থাকব। কোলকাতার গোরাকাকুর বাড়ির একটা বইয়ে তার ছবি আছে। তাকে দেখতে অন্যরকম, বইয়ের ছবিটার মতন তার মুখ নয়, কিন্তু তবু দুলিয়া বলে সেই বইটায় তার ছবি আছে। তার নাম বাদলিদিদা। তার মুখটাতেও অনেক গল্প লেখা আছে।
  • Abhyu | 179.237.46.178 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪২626721
  • ভালো হচ্ছে, একটু ছোটো ছোটো প্যারা করে লেখো, পড়তে আরো সুবিধে হবে।
  • hu | 12.133.60.75 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৮:৩৭626722
  • অপূর্ব!
  • Tim | 12.133.60.75 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৮:৪৭626723
  • সকালটা সুন্দর হয়ে গেল। খুব সুন্দর ছবি।
  • jhiki | 149.194.243.234 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৮:৫৯626725
  • পড়ছি...
  • nina | 78.37.233.36 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৮:৫৯626724
  • ওম্মা বেঙ্গি ----
    মুঠো মুঠো রঙীন ছবি----
    একসঙ্গে পড়ে মনটা রামধনু হয়ে গেল রে-----
    চলুক চলুক ফালুর ফুলুর বেঙ্গির সোনার তুলি---
  • sosen | 125.244.225.202 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৯:৩৫626726
  • রাস্তা পেরিয়ে একটা কালো বিন্দু মাঠে এসে ঢুকবে। তারপর সেই বিন্দুটা একটা রঙীন শাড়ি হয়ে যাবে, তার কাঁধে ব্যাগ----

    আঃ, ব্যাং দি। এমনি লেখা কি শক্ত, কি ভালো ।
    প্যারা করো একটু, আমিও কই
  • kumu | 133.63.144.162 | ১৫ মার্চ ২০১৪ ১০:০২626728
  • খুব খুব নরমগরম কাঁথার মত আরাম দেয়া লেখা।পরের জন্মে আমার যেন একটা ভালোমাসী হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন