এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বেদ-উপনিষদ এবং ইত্যাদি

    Somnath
    অন্যান্য | ২৯ জুন ২০০৬ | ১৩৪২৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • J | 160.62.4.10 | ১৩ জুলাই ২০০৬ ১৯:১৪634805
  • বেদ এইরকম? ছি:!
  • dd | 202.122.18.241 | ১৩ জুলাই ২০০৬ ২০:০৬634806
  • প্রথমটি বেদ (উপনিষদ)দ্বিতীয়টি কোরান আর তৃতীয়টি ওল্ড টেস্টামেন্ট।
  • dri | 199.106.103.254 | ১৪ জুলাই ২০০৬ ০২:১১634807
  • না:, বেদ পড়তেই হবে। তবে একটা ব্যাপার বুঝলাম না ডিডি। আপনি দেবের এত সরল ব্যাখ্যা পাচ্ছেন কিকরে বলুন তো। সোমনাথ যে অংশটুকু দিয়েছে তাতে তো দাঁত ফোটানো যাচ্ছে না। আপনার বেদ মেড ইজিটি ডিটেল দিন তো।
  • omnath | 59.145.225.101 | ১৪ জুলাই ২০০৬ ০৯:৫৩634808
  • দীপ্তেন্দার ব্যাখ্যায় চোখ বন্ধ করে ভরোসা করা যায়, শুধু মাঝে মাঝে "রাজমহিষী উবাচ" গোছের নিজস্ব ইন্টারপ্রিটেশন মেখে থাকে। আর কিছুতেই রেফারেন্স দেন না। ছয়খান গোদা গোদা বই খুঁজে সব বের করা সম্ভব? নইলে আমি ভেবেছিলাম দীপ্তেন্দা যে যে শ্লোক লিয়ে আলোচনা করবেন সেগুনো আমি বই থেকে টুকে লিখে দেব। তা কোথায় কি?
    তারোপর তো এখন আপিস ই সেঁকে দিচ্ছে আমায়। :-(
  • dd | 202.122.18.241 | ১৪ জুলাই ২০০৬ ১৪:১৯634809
  • আ:। উ:।

    ব্যাদেয় যা আছে - বৃহদারণ্যক উপনিষদ - ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ ব্রাহ্মন। (এইডা কিছুডা এ পাতায় টুকে দিবি রে ?)

    কুরানে যা আছে - সুরা নিসা, (৪ নং) ৬ রুকু ৩৪ আয়াত।এমন আয়াত আরো আছে।

    ওল্ড টেস্টামেন্টটা আবার ঘাঁটতে হবে। ইচ্ছা নেই। পাতার পর পাতা এমত আইন। কাকে ছেড়ে কাকে কোট করবি বল ?

    রাজমহিষী টা আমার ইনটারপ্রেটেশন নয় রে দাদা। মাহীধর ছাড়াও ভাষ্য আছে। আছে নিরুক্ত। এখন আর রেফারেন্স মনে নাই। খুঁজবার ইচ্ছাও নাই।
  • dd | 202.122.18.241 | ১৪ জুলাই ২০০৬ ১৪:২৮634810
  • দ্রি

    আমি বলি ? বৈদিক (মানে শংকরাচার্য্য যে ১১ টি র অনুবাদ করেছিলেন) উপনিষদ আর যজুর্বেদ পড়ুন। খুব মজার। বাকী গুলো বেজায় বোর।

    সরমা ছিলো স্বর্গের কুক্কুরী, তার দুই ছেলে -নাম মনে নাই। তাদের নাকি চাড্ডে করে চোখ। এবার বলুন কোনডা এয়ার্কি।

    (১) দত্যি দানো রাক্ষস খোক্ষস পক্ষীরাজ ঘোড়ার জগৎ। রূপকথা। সবের ই কি আর আর ব্যাখ্যা আছে ?

    (২) কুকুর মানে শ্ব অর্থাৎ শ্বন কিনা ভুমা। অব্যয় আকাশ পুরুষকে চতুর্বেদের চাক্ষুষ দৃশ্যমান। ... ইত্যাদি

    (৩) সাহেবেরা স্বীকার করবে না। তারা হিংশুটে। তাদের চামচারাও নয়। অথচ পষ্ট প্রমান তখন ভেটিরিনারী সাইন্স কি উন্নত ছ্যালো। কুকুরেরে চশমা পরায়। এগবার আইডিয়া করুন।
  • Somnath | 59.145.225.101 | ১৫ জুলাই ২০০৬ ১৭:৫৪634811
  • দীপ্তেন্দা, এটা এখানে দেব না বাংলা চটি তে দেব? যাক বললে যখন, চোখ বন্ধ করে এখানেই দিয়ে দিই। ;-)
    আর ইয়ে, ""( ....... )"" এর মধ্যের কথাবার্তা অনুবাদকের।

    বৃহদারন্যক উপনিষদ : ষষ্ঠ অধ্যায় : চতুর্থ ব্রাহ্মণ
    ==========================
    পৃথিবীই চরাচর প্রাণিবর্গের সার; পৃথিবীর সার জল, জলের সারাংশ ওষধিসমূহ, ওষধির সার পুষ্প, পুষ্পের সার ফল; পুরুষ ফলের সার এবং শুক্র পুরুষের নির্যাস। ১। প্রজাপতি চিন্তা করিলেন - আমি এই মানববীজের জন্য আধার সৃষ্টি করি {অস্মৈ (ইহার জন্য) প্রতিষ্ঠাম (আধার) কল্পয়ানি (সৃষ্টি করি) }। তখন তিনি স্ত্রী সৃষ্টি করলেন। স্ত্রী সৃষ্টি করিয়া তাহাকে নিচে রাখিয়া তিনি [মিথুন কর্মরূপ ] উপাসনা করিয়াছিলেন। তাই (এখনও) স্ত্রীকে নিচে রাখিয়াই উপাসনা করিবে। প্রজাপতি নিজের স্পন্দনশীল প্রস্তরকঠিন পুরুষাঙ্গটি (স্ত্রী অঙ্গে) পাঠাইয়াছিলেন। এই ভাবেই তিনি স্ত্রীর সঙ্গে সংসর্গ করিয়াছিলেন। ২। (মন্তব্য: এই কর্মে বাজপেয় যজ্ঞের দৃষ্টি আরোপ করা হইয়াছে। প্রজাপতির কঠিনতা যুক্ত অঙ্গ সোমনিষ্পেষণের পাষাণখণ্ড। এই তুলনা পরবর্তী মন্ত্রেও বর্তমান)

    স্ত্রীর উপস্থকে বেদি, লোমসমূহকে কুশ,চর্মকে চর্ম এবং মুষ্কদ্বয়কে (উভয় পার্শ্বস্থ স্থূল মাংসখন্ডকে ) অধিষবণদ্বয় (সোমপেষণের পাষাণ খন্ডদ্বয়) বলিয়া চিন্তা করিবে। বাজপেয় যজ্ঞকারী যে লোক বা ফল পায়, যথোপযুক্ত জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিও সেইরকম ফললাভ করে। যে ইহা জানিয়া অধোপহাস (মৈথুনকর্ম) করে সে স্ত্রীগণের সুকৃতি (পুণ্য) অর্জন করে। আর ইহা না জানিয়া যে অধোপহাস করে স্ত্রীগণ তাহার সুকৃতি ঢাকিয়া রাখে। ৩। এই বিষয়টি (বাজপেয় যজ্ঞানুষ্ঠানরূপ অধোপহাস) জানিয়াই উদ্দালক আরুণি, মুদ্‌গলপুত্র নাক এবং কুমার হারিত বলিয়াছিলেন, "এমন অনেক নামে মাত্র ব্রাহ্মণ আছে যাহারা এই তত্ব না জানিয়া রতিক্রিয়া সম্পন্ন করার ফলে বিকলেন্দ্রিয় ও পুণ্যহীন হইয়া ইহলোক ত্যাগ করে।" {মর্যা: (মরণশীল) ব্রাহ্মণায়ন: (ব্রাহ্মণ নামধারী কিন্তু ব্রাহ্মণোচিত গুনহীন) নিরিন্দ্রিয়া: বিসুকৃত: (বি+সুকৃৎ, সিকৃতিবিহীন) } জাগ্রত ও নিদ্রিত অবস্থায় উহাদের বহু পরিমাণ শুক্র স্খলন হয়। ৪। নির্গত শুক্র স্পর্শ করিয়া সে তখন এই মন্ত্র জপ করিবে - "আজ আমার যে শুক্র পৃথিবীতে স্খলিত হইল অথবা যে শুক্র ওষধি ও জলে নির্গত হইয়াছে, তাহা আমি গ্রহণ করিতেছি।" এই মন্ত্র পাঠের পর অনামিকা ও অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা সেই শুক্র গ্রহণ করিয়া পুনরায় বলিবে - "নির্গত শুক্ররূপ ইন্দ্রিয় পুনরায় আমাতে ফিরিয়া আসুক এবং দেহকান্তি, সৌভাগ্য ও তেজ আমাতে প্রত্যাবর্তন করুক। অগ্নিতে আশ্রিত দেবগণ পুনরায় এই শুক্রকে যথাস্থানে স্থাপন করুন। " এই মন্ত্র উচ্চারণের পর সেই শুক্র স্তনদয় বা ভ্রুদ্বয়ের মধ্যে ঘষিয়া দিবে। ৫।

    যদি কেহ জলমধ্যে নিজের ছায়া দেখে তবে এই মন্ত্র জপ করিবে - দেবতারা আমায় তেজ, শক্তি, যশ, ধন ও সুকৃতি দান করুন। যে স্ত্রী ঋতুকালীন মলিনবাস পরিত্যাগ করিয়াছে, সে স্ত্রীগণের মধ্যে লক্ষ্মীরূপা। (সেই পুরুষ) মলিনবাস পরিত্যক্তা সেই যশস্বিনী স্ত্রীর নিকট যইয়া তাহাকে আহ্বান করিবে। ৬। যদি সেই স্ত্রী এই পুরুষকে কামনা না যোগায় তবে সে সেই স্ত্রীলোককে উপহারাদি দ্বারা বশীভূত করিবে। তাহাতেও যদি সে পুরুষের কামনা চরিতার্থ না করে তবে সেই স্ত্রীকে সে হাত বা লাঠি দ্বারা আঘাত করিয়া বলিবে - "আমি ইন্দ্রিয়রূপ যশদ্বারা তোমার যশ গ্রহণ করিতেছি।" এই বলিয়া তাহাকে বশীভূত করিবে। ইহাতে সেই স্ত্রী যশোহীনা হইবে। ৭। যদি সেই স্ত্রী উক্ত পুরুষকে কামনা দান করে, তবে সে বলিবে - "আমি ইন্দ্রিয়রূপ যশ দ্বারা তোমাতে যশ অর্পণ করিতেছি" ইহার ফলে উভয়েই যশস্বী হয়। ৮। { ( ৭ এ, ক্যালাক্যালির ব্যপারটা প্রাঞ্জল করে দেওয়া যাক,) এনাম্‌ যষ্ট্যা (যষ্টিদ্বারা) বা পাণিনা (হস্তদ্বারা) বা উপহত্যা (প্রহার করিয়া) অতিক্রামেৎ (অভিভূত করিবে) - ইন্দ্রিয়েণ (ইন্দ্রিয়-শক্তিদ্বারা) যশসা (আমার যশদ্বারা) তে যশ: (তোমার যশকে) আদদে (গ্রহণ করি) ইতি। অযশা: এব ভবতি। এখানে যশ শব্দটার ব্যবহার লক্ষ্য করো। স্‌প্লেন্ডিড।}

    যে (পুরুষ) ইচ্ছা করে যে স্ত্রী তাহাকে কামনা দান করুক, সে সেই স্ত্রীতে আপনার ইন্দ্রিয় সংযোগ করিয়া, তাহার মুখে মুখ মিলাইয়া ও তাহার উপস্থ স্পর্শ করিয়া এই মন্ত্র জপ করিবে - তুমি (শুক্র) আমার প্রত্যেক অঙ্গ হইতে সম্ভূত হও, হৃদয় হইতে জন্মাও, তুমি আমার সর্বাঙ্গের রস, তুমি ইহাকে (স্ত্রীকে) বিষবাণবিদ্ধা মৃগীর ন্যায় বশীভূত করিয়া আমাকে আনন্দে মত্ত কর। ৯। যদি সে কামনা করে যে স্ত্রী যেন গর্ভধারণ না করে, তবে সেই স্ত্রীতে ইন্দ্রিয় সংযোগ করিয়া মুখে মুখ মিলাইয়া, প্রথমে নি:শ্বাস ত্যাগ করিয়া, পরে প্রশ্বাস গ্রহণ করিয়া বলিবে - "আমার ইন্দ্রিয়দ্বারা ও শুক্র দ্বারা আমি তোমা হইতে শুক্র পুনর্গ্রহণ করিতেছি। " তাহা হইলে সেই স্ত্রীলোকের গর্ভসঞ্চার হয় না। ১০। আর যদি পুরুষ চায় যে স্ত্রী গর্ভধারণ করুক, তবে পূর্ববৎ ইন্দ্রিয় সংযোগ করিয়া মুখে মুখ মিলাইয়া, প্রথমে প্রশ্বাস গ্রহণ করিয়া পরে নি:শ্বাস ত্যাগ করিয়া, বলিবে - "আমার ইন্দ্রিয়দ্বারা ও শুক্র দ্বারা আমি তোমাতে শুক্র রক্ষা করিতেছি।" । ১১। যদি কাহারও স্ত্রীর উপপতি থাকে এবং সে যদি সেই উপপতির অনিষ্ট করিতে চায় তবে কাঁচা মৃৎপাত্রে আগুন রাখিয়া তাহাতে বিপরীতভাবে শরকুশ বিছাইবে। পরে কুশাগ্রভাগ ঘৃতে সিক্ত করিয়া অগ্নিতে বিপরীতক্রমে উপপতির নাম উচ্চারণ করিয়া এইভাবে আহুতি দিবে - "তুমি আমার (স্ত্রীরূপ) প্রজ্বলিত অগ্নিতে আহুতি দিয়াছ,তোমার প্রাণ ও অপানকে আমি গ্রহণ করিতেছি। তুমি আমার প্রজ্বলিত অগ্নিতে আহুতি দিয়াছ, তোমার সন্তান ও পশু আমি গ্রহণ করিতেছি। তুমি আমার প্রজ্বলিত অগ্নিতে আহুতি দিয়াছ, তোমার ইষ্ট ও সুকৃতি আমি গ্রহণ করিতেছি। তুমি আমার প্রজ্বলিত অগ্নিতে আহুতি দিয়াছ, তোমার আশা ও আকাঙ্খা আমি গ্রহণ করিতেছি। " এরূপ জ্ঞানসম্পন্ন ব্রাহ্মণ যাহাকে অভিশাপ দেন, সেই ,লোক ইন্দ্রিয়শক্তিরহিত ও সুকৃতিহীন হইয়া ইহলোক ত্যাগ করে। সুতরাং এইরূপ ব্রাহ্মণের স্ত্রীর সহিত উপহাস করিতে যাইও না (দুষ্কর্ম তো দূরের কথা) এইরূপ জ্ঞানী ব্যক্তিও শত্রু হইতে পারেন । ১২।
    {ব্র্যাকেটে যা লেখা সব অনুবাদকের সংযোজন, তবে ""উপহাস"" শব্দটার পরে যে লেজুড় তিনি জুড়েছেন অর্থ বোঝাবার জন্যে সেটা খুব বোকা বোকা ঠেকল, তাই লিখলুম, একটু আগেই ""অধোপহাস"" নিয়ে গুচ্ছ ভ্যান্তারা হয়ে গেছে। তাই ""উপহাস"" মানে যে মস্করা নয়, পাঠক ইতিমধ্যে পাতি বুঝতে পেরে গেছে। ""দুষ্কর্ম""!! গা জ্বলে গেল মাইরি।}

    জায়ার ঋতুকাল উপস্থিত হইলে সে তিন দিন অচ্ছিন্নবাস পরিয়া কংসপাত্রে পান করিবে। কোনো শূদ্র বা শূদ্রী যেন উহাকে স্পর্শ না করে। তিন রাত্রির পর তাহাকে স্নান করাইয়া ধান ভাঙাইবার কাজে লাগাইবে। ১৩। (মন্তব্য : কংসেন - পাঠ্যান্তর : কংসে+ন (অর্থাৎ কংসপাত্রে নহে))

    যদি কেহ চায় - আমার গৌরবর্ণ পুত্র হউক, এক বেদ অধ্যায়ন করুক এবং পুর্ণায়ু লাভ করুক - তবে তাহারা দুইজন (স্বামী-স্ত্রী) পায়স রাঁধিয়া তাহাতে ঘি দিয়া খাইবে। (তাহা হইলে তাহারা ঐ রকম সন্তান) উৎপাদন করিতে পারিবে। ১৪। যদি কেহ চায় - আমার পিঙ্গল চক্ষুযুক্ত ও কপিলবর্ণ সন্তান হউক, সে দুই বেদ অধ্যায়ন করুক এবং পুর্ণায়ু লাভ করুক - তবে তাহারা (স্বামী-স্ত্রী) দুই জন দধি দিয়া চরু রাঁধিয়া তাহাতে ঘি মিশাইয়া খাইবে। (তাহা হইলে তাহারা ঐ রকম সন্তান) উৎপাদন করিতে পারিবে। ১৫। যদি কেহ চায় - আমার রক্তচক্ষু ও শ্যামবর্ণ পুত্র হউক, সে তিন বেদ অধ্যায়ন করুক এবং পুর্ণায়ু লাভ করুক - তবে তাহারা (স্বামী-স্ত্রী) দুইজন জলে সিদ্ধ অন্ন ঘি মিশাইয়া খাইবে। (তাহা হইলে তাহারা ঐ রকম সন্তান) উৎপাদন করিতে পারিবে। ১৬। যদি কেহ চায় - আমার বিদুষী কন্যা {সংস্কৃতটাও দিয়ে রাখি - দুহিতা মে পণ্ডিতা জায়েত} জন্মলাভ করুক এবং সে পুর্ণায়ু হউক - তবে তাহারা (স্বামী-স্ত্রী) দুইজন তিলমিশ্রিত অন্ন রন্ধন করিয়া তাহাতে ঘি মিশাইয়া খাইবে। (তাহা হইলে তাহারা ঐ রকম কন্যা ) উৎপাদন করিতে পারিবে। ১৭। (মন্তব্য: এই মন্ত্র হইতে প্রমাণিত হইতেছে যে এই যুগে নারীদিগকে বিদ্যাশিক্ষা দেওয়া হইত।)

    যে চায় আমার এমন এক পুত্র হউক যে পন্ডিত, প্রখ্যাত, সভাসদ ও সুভাষ হইবে, সর্ববেদ অধ্যায়ন করিবে, এবং পূর্ণায়ু হইবে - তবে তাহারা স্বামী স্ত্রী উভয়ে মাংসমিশ্রিত অন্ন রন্ধন করিয়া তাহাতে ঘি মিশাইয়া খাইবে। এই মাংস তরুণ বা বয়স্ক বৃষের হইলে (তাহারা ঐ রকম সন্তান) জন্ম দিতে পারিবে। ১৮। (মন্তব্য: এই যুগে গোমাংস নিষিদ্ধ ছিল না {..... ইত্যাদি। সবাই জানে। আবার টুকছি না})
    তারপর প্রত্যুষের দিকে স্থালীপাকের নিয়মানুসারে আজ্য সংস্কার করিয়া স্থালীপাক হইতে অল্প অল্প করিয়া হোমদ্রব্য লইয়া - অগ্নিতে আহুতি দিয়া (এবং এই মন্ত্র উচ্চারণ করিবে) - "অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা ! অনুমতির উদ্দেশে স্বাহা ! সত্যপ্রসবিতা সবিতৃদেবের উদ্দেশে স্বাহা!" (এই প্রকারে) আহুতি দিয়া পাত্রের অবশিষ্ট অংশটি ভক্ষণ করিবে। নিজে ভক্ষণ করিয়া ভুক্তাবশেষ স্ত্রীকে দিবে। তারপর দুই হাত ধুইয়া জল দিয়া জলপাত্র পূর্ণ করিবে এবং সেই জলে স্ত্রীকে তিন বার সিক্ত করিবে। পরে এই মন্ত্র উচ্চারণ করিবে - "হে বিশ্ববসু, তুমি এখান হইতে উঠিয়া অন্য কোথাও যাও; অন্য কোন যুবতীকে, পতিসহ অন্য কোন জায়াকে, কামনা কর। ১৯। (মন্তব্য: পত্যা সহ - কেহ কেহ এই অংশকে দুইটি বাক্যরূপে গ্রহণ করেন। সমগ্র অংশের অর্থ এই - হে বিশ্ববসু, উত্থিত হইয়া অন্যত্র গমন করে অন্য কোন যুবতীকে কামনা কর। পতিসহ ( এই নারী বর্তমান) । ভাবার্থ এই - এই রমনী পতিলাভ করিয়াছে, সুতরাং তুমি ইহাকে কামনা করিয়ো না, তুমি অন্য কোন যুবতীর নিকট যাও।)
    তারপর সে সেই নারীর নিকট যাইয়া বলিবে -আমি "অম" (প্রাণ), তুমি "সা"(বাক্‌)। তুমি "সা", আমি "অম"। আমি সাম তুমি ঋক্‌। আমি দ্যৌ, তুমি পৃথিবী। এস আমরা দুই জনে চেষ্টা করি যেন আমাদের পুত্র-সন্তান লাভ হয়। ২০। "হে আকাশ ও পৃথিবী তোমার পৃথক হও।" - এই মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া সে স্ত্রীর উরুদ্বয় বিযুক্ত করে। তারপর আপন ইন্দ্রিয় তাহাতে প্রবেশ করাইয়া মুখে মুখ মিলিত করিয়া তিনবার অনুলোমক্রমে তাহার আপাদমস্তক মার্জনা করে। অত:পর মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া বলে -"বিষ্ণু তোমাকে গর্ভধারণ-সমর্থ করুন, প্রজাপতি (তোমার আত্মায় থাকিয়া) শুক্র সিঞ্চন করুক, ধাত্রী (তোমার আত্মায় থাকিয়া) গর্ভধারণ করুন। হে সিনীবলী (অমাদেবী), তুমি গর্ভধারণ কর। হে পৃথুষ্টুকা, তুমি গর্ভধারণ কর। হে পদ্মমালাধারী অশ্বিনীদ্বয় , তোমরা গর্ভধারণ কর।" । ২১। অশ্বিনীদ্বয় যে দুইটি হিরণ্ময় অরণি দ্বারা মন্থন করেন, আমি দশম মাসে পুত্র প্রসবের জন্য তোমার সেই গর্ভ তাহাতে আহুতি দিতেছি। পৃথিবী যেমন অগ্নিগর্ভা, আকাশ যেমন সূর্যদ্বারা গর্ভবতী, দিকসকল যেমন বায়ুদ্বারা গর্ভিনী, তেমনি আমি তোমাতে গর্ভাধান করি। ২২। (পরে সুখপ্রসবের জন্য) আসন্নপ্রসবা স্ত্রীর উপর জল সিঞ্চন করিয়া বলিবে - বায়ু যেমন পুষ্করিনীকে সকল দিকে আন্দোলিত করে, সেই রকম তোমার গর্ভ সর্বত্র সচল হইয়া জরায়ুসহ নির্গত হউক। ইন্দ্রের (গর্ভের) জন্য একটি আবরণ যুক্ত পথ প্রস্তুত আছে। হে ইন্দ্র (প্রাণ) , সেই পথ ধরিয়া তুমি গর্ভ ও গর্ভ নি:সরণ সময়ের মাংসপেশীর সহিত বাহির হইয়া আস। ২৩। (মন্তব্য: এই মন্ত্রটি সামান্য পরিবর্তিত আকারে ঋগ্বেদ (৫।৭৮।৭) হইতে গৃহিত। ঋগ্বেদের ৫।৭৮।৮ অংশও প্রসব মন্ত্র)।

    পুত্র জন্মাইলে (পিতা ) অগ্নি জ্বালিয়া তাকে কোলে নেন এবং কাঁসার পাত্রে পৃষদাজ্য (অর্থাৎ দধি মিশ্রিত ঘৃত) রাখিয়া তাহা অল্পে অল্পে আহুতি দিতে দিতে এই মন্ত্র উচ্চারণ করেন - "আমি এই পুত্ররূপে নিজের গৃহে বাড়িয়া যেন সহস্র (মানুষ ও পশুকে) পোষ্য করিতে পারি। ইহার বংশে সন্তান ও পশু যেন অবিচ্ছিন্ন থাকে। স্বাহা। (পুত্র) আমাতে যে প্রাণ আছে, তাহা আমি মনদ্বারা তোমাতে আহুতি দিতেছি। স্বাহা। আমি অল্প বা অধিক যাহা কিছু করিয়াছি শ্রেষ্ঠ যজ্ঞকারী অগ্নি তাহা জানিয়া আমাদের হোমকর্মকে সুসম্পাদিত ও সুহুত করুন। ২৪। তারপর (পিতা) তাহার দক্ষিণ কানে মুখ লাগাইয়া তিন বার "বাক্‌" "বাক্‌" উচ্চারণ করে। তারপর দধি মধু ও ঘৃত মিশাইয়া তাহা সোনার চমসদ্বারা, কিন্তু সেই চমস মুখের মধ্যে প্রবেশ না করাইয়া, (শিশুকে) পান করায় এবং এই মন্ত্র উচ্চারণ করে - "আমি তোমার জন্য ভূ: ভুব: ও স্ব:-লোক তোমাতে স্থাপন করিতেছি"। ২৫। তারপর এই বলিয়া তাহার নামকরণ করে - "তুমি বেদ"। ইহাই তাহার সেই গুহ্য নাম। ২৬।

    তারপর মাতাকে সন্তান দিয়া স্তন্যপান করিতে দেয় (এবং বলে) - সরস্বতী তোমার যে স্তন হইতে নিত্য দুগ্‌ধ নি:সৃত হয়, যাহা আনন্দদায়ক, রত্নে পূর্ণ, ধনশালী, সুদাতা এবং যাহাদ্বারা তুমি সকল বরণীয় বস্তুকে পোষণ কর - তোমার সেই স্তন ইহাতে (অর্থাৎ আমার ভার্যার স্তনে) প্রবেশ করাও। ২৭। (মন্তব্য: এই মন্ত্র পরিবর্তিত আকারে ঋগ্বেদ ১।১৬৪।৪৯ হইতে গৃহিত)।

    তারপর মাতাকে সম্বোধন করিয়া বলিবে - "তুমি ইলা মৈত্রাবরুণী। বীরা, তুমি বীর পুত্র প্রসব করিয়াছ; তুমি আমাদিগকে বীর করিয়াছ -তুমি বীরবতী হও। " এই শিশুর বিষয়ে লোকে এইরূপ বলে, "তুমি পিতাকে অতিক্রম করিয়াছ (অর্থাৎ পিতা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হইয়াছ), তুমি পিতামহকে অতিক্রম করিয়াছ। যে এইরকম জ্ঞানী ব্রাহ্মণের পুত্ররূপে জন্মায় সে শ্রী যশ ও ব্রহ্মতেজ সম্পন্ন হইয়া চরম উৎকর্ষ লাভ করে।

    {এরপর ২-১২, ২১-২৩ প্রভৃতি অংশের অনুবাদ আগে কেন দেওয়া হয়নি, এবং এগুলো অশ্লীল, কেন তবু উপনিষদে, ইত্যাদি প্রভৃতি প্রচুর ধানাই পানাই আছে। সে সবই অনুবাদকের প্যানপ্যানানি। আজ আর টাইপ করতে পারছি না। কারও জানতে ইচ্ছে করলে জানাবে, পরে আবার টোকা যাবে।

    আর ডিসক্লেইমার, এসব পড়ে টড়ে যদি কেউ লজ্জা টজ্জা পেয়ে থাকে তো ডিডি কে বল। আমি অনুজ্ঞাপালন করলাম মাত্র। ;-)

    হ্যাঁ ব্যাখ্যা ট্যাখ্যা নিয়ে লড়া যেতেই পারে। জানিয়ে রাখা যাক এই উপনিষদটি সমগ্রটাই যে একই সময়ে সংকলিত হয়েছে তা নয় - এই মর্মে শুরুতে অনুবাদক দিসক্লেমার দিয়ে রেখেছেন, কারণ গোটা উপনিষদে তিনবার আচার্যদের বংশপরিচয় দেওয়া আছে এবং তিনটে একই রকম নয়। }

  • ar | 151.203.204.167 | ১৫ জুলাই ২০০৬ ২০:২২634812
  • dd

    আপনার কাজটা সহজ করে দি।

    Deuteronomy 22:28-29
  • tan | 131.95.121.251 | ১৭ জুলাই ২০০৬ ০০:২৩634813
  • ডিউটেরোনোমি চ্যাপ্টার ২২ এর ভার্স ২৮ আর ২৯ :"If a man is caught in the act of raping a young woman who is not engaged,he must pay fifty pieces of silver to her father.Then he must marry the young woman because he violated her, and he will never be allowed to divorce her."
  • tan | 131.95.121.251 | ১৭ জুলাই ২০০৬ ০০:৩০634815
  • আচ্ছা বৃহদারণ্যকের এত যে নিয়মনিষ্ঠে, ছেলে হলেই শুধু?
    ছেলে হলে মুখে মধু দিয়ে মন্তরতন্তর বলে এত যে কান্ডাকান্ড, আর মেয়ে হলে বুঝি মুখে নিমপাতা দিয়ে দুধের কটোরায় বাচ্চাটার মুখ ডুবিয়ে মন্ত্র বলতো,"হে ইলা,তুমি স্বর্গ হইতে আসিয়াছো,স্বর্গেই ফিরিয়া যাও।তোমার ভ্রাতাদের পৃথিবীতে প্রেরণ করো।"
    আর সত্যি বলতে কি এই পায়েসে ঘী দিয়ে খাওয়া অবাঙালী বামুনেরাই ক্রমে ছাতু করে ফেল্লো দুনিয়া! কি ঢ্যাপসা ঢ্যাপসা রে বাবা!
  • Su | 59.93.242.213 | ১৭ জুলাই ২০০৬ ০১:২০634816
  • বাপ্পো! আচ্ছা, বেদ কখনও বাংলায় তর্জমা হয়নি? নিদেনপক্ষে ইংরেজিতে?
    সু
  • tan | 131.95.121.251 | ১৭ জুলাই ২০০৬ ০১:২২634817
  • হয়েছে,সেখান থেকেই সোমনাথ দিচ্ছে।বাংলা অনুবাদ,হরফ প্রকাশনীর।
    ইংরেজীর খবর ইংরেজীওলাদের জিগান।
  • Su | 59.93.211.254 | ১৭ জুলাই ২০০৬ ১০:৪৭634818
  • ধ্যাৎ, ওটা আবার বাংলা নাকি? আমি বাংলা বাংলার কথা বলছি।
    সু
  • Somnath | 59.145.225.101 | ১৮ জুলাই ২০০৬ ১০:১৩634819
  • শুক্লযজুর্বেদ। সেই প্রথমদিন যা তুলেছিলাম, সেই তেইশ অধ্যয়ের পর চব্বিশ অধ্যায়। টীকাটুকু আগে পড়ে নেওয়া যাক -
    "এ অধ্যায়ে মোট ছ'শ নটি পশুর উল্লেখ আছে। তার মধ্যে দু'শ ষাটটি বন্য পশুর নাম আছে। এর মধ্যে বহু পশু, পক্ষী ও দেবতা বর্তমানে অপরিচিত। পশু পক্ষীগুলোর হয় এখন অন্য নাম হয়েছে, অথবা কালক্রমে তারা লুপ্ত হয়ে গেছে। .............."

    চারটে মাত্র মন্ত্র তুলব। সবই মোটামুটি একইরকম।
    প্রজাপতির উদ্দেশে অশ্ব ও শৃঙ্গহীন গবয় যুক্ত করছি। এরূপ অগ্নিদেবতার উদ্দেশে অশ্বের ললাটের কাছে গলদেশে শ্যামবর্ণ বিশিষ্ট অজ, হনুর নিম্নে সরস্বতীর উদ্দেশে মেষ, অধোভাগে অশ্বিদ্বয়ের উদ্দেশে শুষ্কবর্ণ দুটি অজ, শুক্লকৃষ্ণ রোমজাত পশু সোম ও পূষা দেবতার, শ্বেত পশু সূর্য দেবতার, কৃষ্ণ পশু যম দেবতার, পুচ্ছভাগে বহু লোমবিশিষ্ট পশুদ্বয় ত্বষ্টার, শ্বেতবর্ণ পশু বায়ুদেবতার, শোভন কর্মযুক্ত ইন্দ্রের গর্ভঘাতিনী খর্বাকৃতি পশুবন্ধন করছি। ১। রক্তবর্ণ ধুম্রবর্ণ মিশ্ররক্ত ও কুল সদৃশ রক্তবর্ণ পশু সোমদেবতার উদ্দেশে যুক্ত করছি। এরূপ কপিলবর্ণ,অরুণবর্ণ মিশ্র কপিল, শুকপক্ষীর মতো কপিলবর্ণ বরুণ দেবতার, কৃষ্ণবর্ণের ছিদ্রবিশিষ্ট,একপাশে কৃষ্ণ ছিদ্র, সর্বত্র কৃষ্ণ ছিদ্র বিশিষ্ট পশু সাবিত্রীর, সামনের পায়ে সাদা বর্ণবিশিষ্ট, এক পার্শ্বে পায়ে সাদা বর্ণ, সমস্ত বাহু সাদাবর্ণ বিশিষ্ট পশু বৃহস্পতি দেবতার, শরীর বিচিত্র বর্ণ যুক্ত, সূক্ষ্ম বিচিত্র বিন্দু যুক্ত, স্থূল বিচিত্র বিন্দু যুক্ত স্ত্রীপশুগুলি মিত্র ও বরুণ দেবতার উদ্দেশে যুক্ত করছি। ২।

    { অনুবাদটা অবশ্যই আমার খুব একটা পছন্দ নয়, কারণটা প্রথম মন্ত্রের সাথে মিলিয়ে দেখলেই বুঝবে -
    অশ্বস্তূপরো গোমৃগস্তে প্রাজাপত্যা: কৃষ্ণগ্রীব আগ্নেয়ো ররাটে পুরস্তাৎ সারস্বতী মেষ্যধস্তাদ্ধন্বোরাশ্বিনাবধোরামৌ বাহ্বো: সৌমাপৌষ্ণ: শ্যামো নাভ্যাং সৌর্যযামৌ শ্বেতশ্চ কৃষ্ণশ্চ পার্শ্বয়োস্‌ত্বাষ্ট্রৌ লোমশসক্‌থৌ সক্‌থ্যোর্বায়ব্য: শ্বেত: পুচ্ছ ইন্দ্রায় স্বপস্যায় বেহদ্বৈষ্ণবো বামন:।। ১।।

    আরো মজার আগের অধ্যায় যেখানে শেষ সেখান থেকেই এটা শুরু। অথচ সেই ঘোড়া পাতি বাদ দিয়ে বাকি গুচ্ছ পশুপাখি উচ্ছুগ্গো চলছে। এখানে মনে রাখার, দেবতা অর্থে সাধারণত: ঠাকুর নয়, বিষয় বোঝানো হত বলে আগে টীকাকারের দাবি আছে। কারণ এমন অনেক শ্লোকে যে বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে সেই বিষয়কে ঐ শ্লোকের দেবতা বলা হয়েছে।
    পরের দিকে এই একই রকম পশু অনেককে উৎসর্গ করার মতো ক¾ট্রাডিকশন একটু কম। তবে ঐ "একটু"ই। }

    তিনটি পুরুষ হস্তী প্রজাপতির উদ্দেশে, তিনটি প্লুষি আরণ্য পশু বাক্যের উদ্দেশে, তিনটি মশক চক্ষুর উদ্দেশে, তিনটি ভৃঙ্গ শ্রোত্রের উদ্দেশে যুক্ত করছি। ২৯।

    চব্বিশ অধ্যায় শেষ হচ্ছে ৪০ নং শ্লোকে -

    একটি খঙ্গমৃগ বিশ্বদেবতার উদ্দেশে, একটি কাল-রং এর কুকুর, একটি লম্বকর্ণ গর্দ্দভ ও তুরুক্ষু রাক্ষসদের, শূকর ইন্দ্রের, সিংহ মরুৎদেবতার, একটি কৃকলাস, পিপ্পকা পক্ষিণী ও একটি পক্ষী শরব্যা দেবতার এবং একটি পৃষত মৃগ সমস্ত দেবগণের উদ্দেশে যুক্ত করছি।

    { একটু অবাক লাগে। এইভাবে এমনকি গুচ্ছ হাতিটাতি নির্ঘাৎ বলিদেওয়া হত না। এসব ভার্চুয়াল উৎসর্গ বলেই মনে হয়। তনু হয়তো অয়াস্ট্রোনমিক্যাল বডিসমূহের ডিস্ট্রিবিউশনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চাইবে।
    ২৫ অধ্যায়। অথ ভিকিদা কথিত, ঘোড়াটাকে মেরে ফেলে কি করা হবে স্বরলিপি বনানো হবে কিনা ইত্যাদি । ঘোড়াটার এক একটা অংশ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে উৎসর্গ করা হচ্ছে - }

    অশ্বের দন্তের দ্বারা শাদ দেবতার তুষ্টিসাধন করছি। এরূপ দন্তমূলের দ্বারা অবকা দেবতার, দন্তপীঠের দ্বারা মৃৎদেবতা, দন্তদ্বয়ের দ্বারা তেগা দেবতার,জিহ্বার অগ্রভাগের দ্বারা সরস্বতী দেবতার, জিহ্বার দ্বারা উৎসাদ দেবতা, তালুর দ্বারা অবক্রুন্দ দেবতার, হনুর দ্বারা বাজদেবের, মুখের দ্বারা জল দেবতার, কোষ দ্বারা বৃষণদেবের, শ্মস্রুর য়ারা আদিত্যগণের, ভ্রুদ্বারা পথদেবের, পক্ষ্মপংক্তিদ্বয়ের দ্বারা দ্যাবাপৃথিবী দেবতার, কনীনকদ্বয় দ্বারা বিদ্যুৎদেবতার প্রীতিসাধন করছি। শুক্ল ও কৃষ্ণদেবতার উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি দিচ্ছি। নেত্রের উপরিভাগের লোমের দ্বারা পার দেবতার, নেত্রের নিম্নভাগের লোমদ্বারা অবার দেবতার, অবার দেবতা পক্ষ্ম, ইক্ষুগুলি পারদেবতা, তাদের আমি তুষ্ট করছি। ১।

    { সংস্কৃতে খুঁজলাম,কিন্তু আমার সামান্য জ্ঞানে হয়, অশ্ব, বাজি কিছুই পেলাম না, তাই বলতে পারছিনা এগুলো যে ঘোড়ারই অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তা কি করে বোঝা গেল।
    এরপরে যা দাঁড়াচ্ছে, অশ্বের প্রাণবায়ু, অপানবায়ু, নিম্ন ও উপরের ওষ্ঠ, উপর ও নিম্নের দেহকান্তি, মস্তক, মস্তকের মজ্জা, মস্তিষ্ক, কনীনক, কর্ণ, কর্ণের ছিদ্র, কণ্ঠের অধোভাগ, কণ্ঠের শুষ্ক অংশ, গ্রীবার পিছন দিকের নাড়ি, মস্তক, জর্জর মস্তক, গমন কালে যে অঙ্গগুলো শব্দ করে, শিখা, কাঁধের লোম, কর্মরত কাঁধ, পাখীর মতো গমন, খুর, স্থূল গুল্‌ফ, তার নাড়ী, জঙ্ঘা, বাহু, জাম্বীর ফলের মতো আকারবিশিষ্ট জানুর মধ্যভাগ, অতি রুচীপ্রদ জানুদ্বয়, করদ্বয়, স্কন্ধদ্বয়, স্কন্ধের গ্রন্থিদ্বয়, ডানদিকের ও বাঁ দিকের একটা একটা করে তেরো-তেরো ছাব্বিশখানা অস্থি, ডান ও বাম পাশ - এসব দিয়ে এক একজন দেবতার নাম করে করে প্রীতি সাধন করতে মাত্র ৫ টি শ্লোক খরচ করেছে।
    তারপর, অশ্বের স্কন্ধ প্রদেশ, পুচ্ছের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় অস্থি, নিতম্ব, কটি, উরু, উরুর সন্ধিভাগ, নিতম্বের অধোভাগ, নিতম্বের আবর্তন ভাগ, স্থূল অত্র, গুহ্যস্থল, তার অপর ভাগ, অন্ত্রের মাংসভাগ, মুত্রস্থলী, অন্ড, লিঙ্গভাগ, বীর্য, পিন্ড, গুহ্যস্থলের তৃতীয় ভাগ, বিষ্ঠা পিন্ড, অশ্বের ক্রোড়দেশ, বলকর অঙ্গ, স্কন্ধ ও কুক্ষির সন্ধিস্থল, লিঙ্গাগ্রভাগ, হৃদয়ের মাংস, হৃদয়ের আচ্ছাদক অন্ত্র, উদরের মাংস, হৃদয়ের উভয় পার্শ্বের অস্থি, মুখ্য কুক্ষিস্থ মাংস, প্লাশ নাড়ী, প্লীহা, যকৃৎ, হৃদয় নাড়ী, অন্নবাহী নাড়ী, জঠরের দক্ষিণ ভাগ, উদর, ভষ্ম, নাভি, বীর্য, পক্ব অন্নরস, বসা বিন্দু, শরীরের উষ্ণভাগ, বসা, আশ্রু, রক্ত, অপর অংশ, রূপ, ও চর্ম দিয়ে আবার গুচ্ছ দেবতার নাম ধরে ধরে প্রীতিসাধন করে স্বাহা মন্ত্রে ঘৃতাহুতি দেওয়া হয়েছে। মাত্র চারটে শ্লোকেই এ সব খতম। তারপর - }

    হিরণ্যগর্ভ প্রজাপতি প্রাণী সকলের উৎপত্তির পূর্বে স্বয়ং শরীরধারী ছিলেন, তিনি জাতমাত্র সমস্ত জগতের ঈশ্বর। তিনি দ্যুলোক, ভূলোক ও অন্তরিক্ষলোক ধারণ করে আছেন। সে প্রজাপতি দেবতার উদ্দেশে আমরা হবি প্রদাণ করছি। ১০।

    যিনি স্বমহিমায় প্রাণ ও নিমেষ সম্পন্ন জগতের একমাত্র রাজা, যিনি দ্বিপদ ও চতুষ্পদ বিশিষ্ট প্রাণীসকলের নিয়ামক, সে প্রজাপতি দেবের উদ্দেশে আমরা হবি প্রদাণ করছি। ১১। হিমালয় প্রভৃতি পর্বত, নদীর সাথে সমুদ্র, পূর্বাদি দিকসকল, ও জগতের পালনকারী বাহুদ্বয় যার মহিমা, সে প্রজাপতি দেবের উদ্দেশে আমরা হবি প্রদাণ করছি। ১২। যিনি উপাসকগণের আত্মদ ও বলদাতা, সকল মানুষ ও দেবগণ যার শাসনে চলে, যার জ্ঞান মুক্তির হেতু এবং অজ্ঞান সংসারের কারণ,সে প্রজাপতি দেবের উদ্দেশে আমরা হবি প্রদাণ করছি। ১৩। সে কল্যানকর যজ্ঞগুলি আমাদের কাছে আসুক, যা সকল দিক দিয়ে নির্বিঘ্ন ও অজ্ঞাত ফলের প্রাপক, যাতে অনলস দেবগণ সর্বদা উন্নতির জন্য প্রতিদিন আমাদের রক্ষক হন। ১৪। সরলগামী দেবগণের সুমতি ও দান আমাদের হোক। তাদের কাছ থেকে দান পেয়ে আমরা তাদের সখ্য লাভ করব। সে দেবগণ আমাদের আয়ু বর্ধন করুক। ১৫।

    চ্যুতিরহিত ভগ, অদিতি, দক্ষ প্রজাপতি, অর্যমা, বরুণ, সোম ও অশ্বিদ্বয়ের প্রাচীণ বেদবাক্য আমরা আহ্বান করছি। সুভগা সরস্বতী আমাদের সুখ বিধান করুন। ১৬। পবন আমাদের ঔষধরূপ সুখকর মঙ্গল দিক, জগতের নির্মাত্রী পৃথিবী ও পালক দ্যুলোক আমাদের মঙ্গল করুক, সোম অভিষবকারী প্রস্তরগুলি আমাদের সুখকর হোক। হে অশ্বিদ্বয়, ধারক তোমরা দুজন আমাদের সে প্রার্থনা শোন। ১৭। স্থাবর জঙ্গমের পালক, বুদ্ধির সন্তোষকারক সে সেজন্য রুদ্রদেবের রক্ষার জন্য আমরা আহ্বান করছি। যাতে আমাদের বুদ্ধি ও কল্যান হয়, ধনরক্ষক, পুত্রাদির পালক, অন্যের অহিংসক পৃষাদেবের আহ্বান করছি। ১৮। শ্রুতকীর্তি ইন্দ্র আমাদের অনশ্বর কল্যাণ দিক। বিশ্ববেদা পূষা আমাদের শুভ করুক। অপ্রতিহত-পক্ষ গুরুড় আমাদের হিতসাধন করুক। { আমার মনে হয় গরুড় হবে কিন্তু সংস্কৃতে? স্বস্তি নস্তার্ক্ষ্যো অরিষ্টনেমি:। বোঝো ! :-০ } দেবগুরু বৃহস্পতি আমাদের মঙ্গল করুক। ১৯। পৃষতি নামক অশ্বযুক্ত, পৃশ্নিমাত, কল্যাণপ্রাপক, যজ্ঞগৃহে গমনশীল, অগ্নিজিহ্ব, সর্বজ্ঞ, সূর্যচক্ষু, মরুদ্‌গণ ও অপর দেবতারা অন্নের জন্য আমাদের এ যজ্ঞে আসুক। ২০।

    হে দেবগণ, কান দিয়ে যেন আমরা অনুকুল কথা শুনি, হে যজমানরক্ষক, চোখ দিয়ে আমরা যেন মঙ্গল দেখি এবং সুদৃঢ় অঙ্গ ও শরীর দিয়ে স্তব করে আমরা যেন দেবতার উপাসনাযোগ্য জীবনলাভ করি। ২১। হে দেবগণ, তোমরা শত বছর আমাদের কাছে থাক, যখন আমাদের শরীর জরাক্রান্ত হবে ও পুত্রগণ পিতা হবে (অর্থাৎ আমাদের পৌত্র হবে); এর মধ্যে আমাদের গমনশীল আয়ুর হিংসা করো না। ২২। { দেখেছো অনুবাদের মজা? পৌত্রী বলে নি কিন্তু। অথচ মূল শ্লোকে এই লিঙ্গবৈষম্য এড়িয়ে গেছে। } স্বর্গ, অন্তরিক্ষ, মাতা, পিতা, পুত্র, সকল দেবতা, মানুষ, জাত ও অজাত সকলে মহা ভাগ্যযুক্ত হোক। ২৩। আমরা যজ্ঞে দেবগণের সাথে সূর্য থেকে জাত অশ্বের চরিত্র বর্ণনা করেছি, তাতে মিত্র, বরুণ, অর্যমা, বায়ু, ইন্দ্র, প্রজাপতি ও মরুদ্‌গণ যেন আমাদের নিন্দা না করে। ২৪। বিপ্রগণ যজ্ঞে যখন স্নানের দ্বারা সংস্কৃত ও স্বর্ণমনি প্রভৃতির দ্বারা আচ্ছাদিত অশ্বের মুখের নিকট খাদ্য আনে, তখন পূর্বদিকে বদ্ধ, ইন্দ্র ও পূষাদেবতার প্রিয়, নানাবর্ণ বিশিষ্ট ছাগ দুটি তা খাবার জন্য আসে। ২৫।
    (টীকা : ২৩। এ কণ্ডিকার ব্যাখ্যা ভাষ্যে দুভাবে করা হয়েছে। স্বর্ণাদি সকল কিছুই অদিতি অর্থাৎ সর্বত্র অদিতির অধিষ্ঠাতৃত্ব স্বীকার করেছেন। দ্বিতীয় অদিতি শব্দের অদীন, মহাভাগ্যযুক্ত অর্থ। মূলের খন্ড খণ্ড কথার একসঙ্গে অনুবাদ করা হয়েছে। ২৪। ভাষ্যকার মহীধর বলেন - দেবতাগণ আমাদের স্তুতিযোগ্য, কিন্তু অশ্বাদি ভির্যগ জাতীয়েরা নহে। যেখানে তাদের স্তুতি করা হয়েছে, সেখানে অশ্বাদিরূপে দেবতাদের স্তুতি করা হয়েছে। )

    সকল দেবতাস্বরূপ অগ্নির ভোগ্য এ ছাগকে যখন বেগশালী অশ্বের নিকট আনা হয়,তখন প্রজাপতি শোভন কীর্তির জন্য দেবতার প্রীতি-সম্পাদক পূর্বে দেয় এ ছাগের প্রীতি করে থাকেন। ২৬। যখন ঋত্বিকগণ হবি-যোগ্য, যজ্ঞকালে দেবযান পথগামী অশ্বকে তিনবার অগ্নির কাছে আনে, তখন অগ্নির ভোগ্য এ ছাগ যজ্ঞের কথা দেবতাদের কাছে জানাবার জন্য অগ্রগামী হয়। ২৭। হোতা, অধ্বর্যু , প্রতিপ্রস্থাতা, অগ্নির প্রজ্বালক, প্রস্তরের গ্রহণকারী, স্তুতিকারী ও ব্রহ্মা এ শোভন অশ্বমেধ যজ্ঞ ঘৃত, দুগ্‌ধ, দধি প্রভৃতির দ্বারা পূর্ণ করুক। ২৮। যারা যূপের জন্য বৃক্ষ ছেদন করেছে, যারা তা বহন করেছে, যারা যূপের অগ্রভাগের দেয় কাঠ সুন্দর করেছে, যারা যারা অশ্বের জন্য পাকের কাষ্ঠভাণ্ডাদি এনেছে, তাদের উদ্যম আমাদের যজ্ঞ অসম্পন্ন করুক। ২৯। মনের মতো ফল আমরা পেয়েছি, দেবতাদের মনোরথ পূর্ণ করার জন্য সে অশ্ব আসুক, দেবগণের পুষ্টির জন্য আমরা যে অশ্ব বেঁধেছি, মেধাবী ঋষিগণ তার অনুমোদন করুক। ৩০।

    বেগশীল এ অশ্বের গ্রীবা, পাদ, মস্তক, কটি বা অন্য স্থানের যে বন্ধন রজ্জু এবং এর মুখে প্রদত্ত যে তৃণ, হে অশ্ব, সে সকল দেবতার উপযোগী হোক। ৩১। এ অশ্বের যে মাংস-টুকরা মক্ষিকা খেয়েছে, যা ছেদন অস্ত্রে বা ছেদনকারীর হাত ও নখে যুক্ত হয়েছে, হে অশ্ব, সে সকল দেবতার উপযোগী হোক। ৩২। অপক্ব মাংসের যে সামান্য অংশ আছে, ছেদনকারী তা সুপক্ব করে দেবতার উপযোগী করুক। ৩৩। হে অশ্ব, অগ্নির দ্বারা পচ্যমান তোমার শরীরের রস ভূমি বা তৃণলগ্ন না হোক, তা দেবতার উপযোগী হোক। ৩৪। যারা এ অশ্বের পাক দেখেছে, "পাক হয়েছে, অগ্নি থেকে নামাও" - এ কথা যারা বলেছে, যারা এ অশ্বমেধ যজ্ঞের হুতশিষ্ট মাংস ভিক্ষা করেছে, তাদের উদ্যম আমাদের যজ্ঞ সফল করুক। ৩৫।

    স্থালীতে পাকের পরীক্ষা, পক্বরসের সেচন পত্র, চরুর আচ্ছাদন পাত্র প্রভৃতি অশ্বের অলংকার স্বরূপ। ৩৬। অল্প ধূমযুক্ত অগ্নি শব্দ না করুক,তপ্ত স্থালী কম্পিত না হোক। প্রযাজগণের ইষ্ট, পর্যগ্নিকৃত, যাগ করছি বলে কথিত ও বষট্‌কারের দ্বারা সংস্কৃত অশ্ব দেবতারা গ্রহণ করুক। ৩৭। এ যাজ্ঞীয় অশ্বের নিষ্ক্রমণ, উপবেশন, পাদবন্ধন স্থান, ভক্ষিত তৃণাদি সকল কিছুই দেবতার উপযোগী হোক। ৩৮। অশ্বের আচ্ছাদক বস্ত্র, স্বর্ণাদি অলঙ্কার, শির-বন্ধন, পাদ-বন্ধন, - এসকল ঋত্বিকগণ দেবতার উদ্দেশে অর্পণ করে । ৩৯। অশ্বচালক পা ও কশা দিয়ে শব্দকারী অশ্বের যে তাড়না করেছে, স্রুক দিয়ে যেমন হবি ক্ষালন করে, সেরূপ এ যজ্ঞে মন্ত্রের দ্বারা আমি তা ক্ষালন করছি। ৪০।

    দেবপ্রিয় অশ্বের চতুস্ত্রিংশ স্থানে অস্ত্রের দ্বারা ছিন্ন গাত্রগুলি হে ঋত্বিকগণ, তোমরা জ্ঞানের দ্বারা অছিদ্র কর ও প্রতি অবয়বের নাম উল্লেখ করে ছন্ন কর। ৪১। কালস্বরূপ প্রজাপতি এ অশ্বের ছেদনকর্তা এবং দ্যাবাপৃথিবীর অভিমানী দেবদ্বয় এর নিয়ন্তা। হে অশ্ব তোমার শরীরের যে যে মাংসপিণ্ড ছিন্ন করেছি বসন্তাদি যজ্ঞকালে সেগুলি আহুতি দিচ্ছি। ৪২। হে অশ্ব, দেবলোকে গমনকারী তোমার দেহ-বিয়োগ জনিত ব্যথা না হোক। শস্ত্র তোমার শরীর ছিন্ন করে দেবতাদের দিক। লুব্ধক অকুশল ছেদনকারী শাস্ত্রোক্ত বিধি ছাড়া তোমার গাত্র ছিন্ন না করুক। ৪৩। হে অশ্ব, তুমি অন্যের মতো হিংসিত হয়ে মর নাই, তুমি দেবযান পথে দেবতাদের কাছে যাচ্ছ। ইন্দ্রের অশ্বদ্বয়, বরুণের পৃষতি নামক বাহনদ্বয় ও অশ্বিদ্বয়ের বাহনদ্বয় দেবভাব প্রাপ্ত তোমাকে বহন করবে। ৪৪। দেবত্বপ্রাপ্ত অশ্ব আমাদের শোভন গাভীসমূহ, অশ্বসমূহ, পুরুষার্থসাধক পুত্র ও সকলের পোষণযোগ্য ধন দিক, আমাদের নিষ্পাপ করুক; দৈন্যরহিত হবিষ্মান অশ্ব আমাদের ক্ষত থেকে ত্রাণ করুক। ৪৫।

    এ প্রাণীসকল আমরা বশীভূত করব; সগণ ইন্দ্র, বিশ্বদেবগণ, আদিত্যগণ ও মরুদ্‌গণ আমাদের হিত করুক। আদিত্যগণের সাথে ইন্দ্র আমাদের যজ্ঞ শরীর ও পুত্রাদির সাধন করুক। (অর্থাৎ আমরা নীরোগ ও সুপুত্রযুক্ত হয়ে যজ্ঞ সম্পন্ন করব)। ৪৬। হে অগ্নিদেব, তুমি আমাদের পালক, মঙ্গলদায়ক ও গৃহের হিতসাধক হও। জনগণের আশ্রয়দাতা ও ধনদ বলে প্রসিদ্ধ অগ্নিদেব আমাদের যজ্ঞস্থলে এসে অতি দীপ্তিপ্রদ ধন দিক। হে দীপ্ত অগ্নি, তুমি সকলকে দীপ্ত কর, আমাদের সুখের জন্য তোমার মৈত্রী কামনা করি। ৪৭।

    --------------২৫ অধ্যায় সমাপ্ত ----------------- ;-)
  • kd | 59.93.244.173 | ১৫ অক্টোবর ২০০৬ ১২:৫০634820
  • আমি আমার মামাতো ভাই রণজিৎ এর লিখিত ও "মানবমন' পত্রিকায় (বইমেলা সংখ্যা, ২০০৬ - ৪৫তম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা) প্রকাশিত প্রবন্ধ "অনীশ্বরতার সন্ধানে - প্রসঙ্গ: ভারতীয় দর্শন" এখানে টুকতে শুরু করছি - রণজিৎএর অনুমোদন আছে।

    প্রসঙ্গত:, 'মানবমন' ত্রৈমাসিক পত্রিকাটি বেশ ভাল, মনোবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের ওপর লেখা প্রকাশ করে - কাগজ ও ছাপাও বেশ ভাল।

    সম্পাদক যদি মনে করেন এটি অন্য কোন threadএ দেওয়া উচিত, জানাবেন, সেখানেই লিখব।
  • i | 202.128.112.253 | ১৫ অক্টোবর ২০০৬ ১৩:১০634821
  • কেডি,

    মানবমন পত্রিকা কি পাভলভ ইন্সটিট্যুট থেকে প্রকাশিত? ডক্টর ধীরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এককালে সম্পাদক ছিলেন?
  • Ranajit Sarkhel | 59.93.244.173 | ১৫ অক্টোবর ২০০৬ ১৩:১৮634822
  • প্রাক কথা

    প্রচলিত ধারণায় ঈশ্বরবাদী দর্শন রূপেই ভারতীয় দর্শনের পরিচিতি। কিন্তু এর একটি অনীশ্বরবাদী সত্তাও যে বর্তমান, সে সম্পর্কে আমরা একান্তই উদাসীন। প্রাচীন কাল থেকেই এই অনীশ্বর দর্শনগুলি বেদপন্থীদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। হিন্দুযুগ থেকে শুরু হয় দর্শনগুলিকে আত্মসাৎ করে নেওয়ার প্রক্রিয়া, মধ্যযুগে এগুলি পুরোপুরি হিন্দুধর্মের অঙ্গীভূত হয়ে যায় - দর্শনগুলির স্বাধীন সত্তার কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। দু:খের কথা এই যে, এই বিষয়টির ওপর মৌলিক গবেষণা বাংলা ভাষায় খুব একটা হয়নি। অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয় এ বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করেছিলেন। পরবর্তীকালে দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় এই বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করেছেন - তার ফসল 'লোকায়ত দর্শন', ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে' ইত্যাদি গ্রন্থ, তাঁর কাছে আমরা ঋণী। কিন্তু ভারতীয় অনীশ্বর দর্শনের পূর্ণাঙ্গ কোন ইতিহাস এ যাবৎ লেখা হয়েছে বলে জানা নেই - তাই এই প্রয়াস। যুক্তি-তর্কের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই দর্শনের জটিল ও কুটিল আবর্তে প্রবেশ করতে হয়েছে বটে, কিন্তু দর্শনব্যাখ্যা নয় - ভারতীয় অনীশ্বর দর্শনের ইতিহাস রচনাই এ লেখার মূল উদ্দেশ্য।
  • Ranajit Sarkhel | 59.93.244.173 | ১৫ অক্টোবর ২০০৬ ১৪:৪৮634823
  • ভূমিকা

    ভারতীয় দর্শন মূলত: দুটি ভাগে বিভক্ত - আস্তিক দর্শন ও নাস্তিক দর্শন। আস্তিক দর্শন সংখায় ছ'টি: সাংখ্য, যোগ, বৈশেষিক, ন্যায়, পূর্ব মীমাংসা বা মীমাংসা, উত্তর মীমাংসা বা বেদান্ত। নাস্তিক দর্শনের সংখ্যা তিন: লোকায়ত, বৌদ্ধ ও জৈন। এই আস্তিক দর্শনগুলিই ভারতীয় ঐতিহ্যে ষড়দর্শন নামে খ্যাত। আস্তিক ও নাস্তিক অর্থে সাধারণত: ঈশ্বরে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস বোঝায়, কিন্তি ভারতীয় ঐতিহ্যে তা নয়। এক্ষেত্রে আস্তিক-অর্থে বেদ-বিশ্বাসী, নাস্তিক অর্থে বেদ-বিরোধী। পন্দিত চন্দ্রকান্ত তর্কালন্‌কারের মতে(1): "কেহ কেহ মনে করেন যে, যাঁহারা ঈশ্বর মানেন না, তাঁহারাই নাস্তিক। ইহা ঠিক নহে। কেননা তাহা হইলে মীমাংসাচার্য এবং সাংখ্যাচার্য নাস্তিক বলিয়া অভিহিত হইতে পারেন। কেননা তাঁহারা ঈশ্বর মানেন না। অধিকন্তু ঈশ্বর নাই ইহা প্রচলিত সাংখ্যদর্শনে যুক্তি দ্বারা প্রতিপন্ন করা হইয়াছে। যাঁহারা ঈশ্বর মানেন না, গীতাতে ভগবান তাঁহাদিগকে অসুরীসম্পদ্‌যুক্ত বা আসুর বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন, নাস্তিক বলেন নাই। মীমাংসাচার্য এবং সাংখ্যাচার্য ঈশ্বর মানেন না বটে, কিন্তু উভয়েই বেদের প্রামান্য স্বীকার করিয়াছেন। এই জন্য তাঁহারা নিরতিশয় আস্তিক বলিয়া প্রসিদ্ধ। পৌরাণিকেরা মীমাংসা ও সাংখ্য উভয় দর্শনেরেই যথেষ্ট প্রশংসা করিয়াছেন, তাঁহারা বলিয়াছেন যে, জৈমিনি(মীমাংসাচার্য) বেদের পারদর্শী, তাঁর দর্শনের কোন অংশ বেদবিরুদ্ধ নহে। সাংখ্যজ্ঞানের তুল্য জ্ঞান নাই। সাংখ্য জ্ঞান অত্যুৎকৃষ্ট জ্ঞান এ বিষয়ে সংশয় করা অনুচিত। এতদ্‌নুসারে বিবেচনা করিলে প্রতীত হইবে যে, যাঁহারা বেদ মানেন তাঁহারা আস্তিক, যাঁহারা বেদ মানেন না তাঁহারা নাস্তিক। আস্তিক ও নাস্তিকের এইরূপ লক্ষণ হইলে বৌদ্ধ দর্শন প্রভৃতিও নাস্তিক দর্শন বলিয়া গণ্য হইতে পারে। কেননা চার্বাক দর্শনের ন্যায় বৌদ্ধাদি দর্শনেও বেদের প্রমাণ্য অঙ্গীকৃত হয় নাই।" চন্দ্রকান্ত তর্কালন্‌কারের এই মত সামগ্রিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে ভারতীয় দর্শনের একটি অনীশ্বরবাদী সত্তা আছে এবং তা শুধুমাত্র নাস্তিক ঐতিহ্যেই নয়, আস্তিক ঐতিহ্যেও বর্তমান। (ক্রমশ:)

    1. ফেলোশিপের লেক্‌চার - মহামহোপাধ্যায় চন্দ্রকান্ত তর্কালন্‌কার (প্রথম বর্ষ - তৃতীয় লেক্‌চার) পৃ ১১১
  • kd | 59.93.244.173 | ১৫ অক্টোবর ২০০৬ ১৪:৫১634824
  • আই, ঠিক।
  • kd | 59.93.255.203 | ১৬ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:২৪634826
  • ভূমিকা contd..

    অক্ষয়্‌কুমার দত্ত মহাশয়ের মতে (2) ''এই ষড়দর্শনের মধ্যে প্রায় কোন দর্শনকারই জগতের স্বত: সৃষ্টিকর্তা স্বীকার করেন নাই। কপিল কৃত সাংখ্য তো সুস্পষ্ট নাস্তিকতাবাদ, পতঞ্জলি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অঙ্গীকার করেন বটে, কিন্তু বিশ্বস্রষ্টা না বলিয়া বিশ্ব-নির্মাতামাত্র বলিয়া গিয়াছেন। গৌতম ও কণাদের মতানুসারে জড় পরমানু নিত্য; কাহারও কর্তৃক সৃষ্ট হয় নাই। প্রাচীন মীমাংসাপন্ডিতেরা তো ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্পষ্টই অস্বীকার করিয়াছেন। বেদান্তের মতে জগৎ সৃষ্টই হয় নাই। বিশ্বব্যাপার ভ্রমমাত্র, ইহাতে আর সৃষ্টিকর্তার সম্ভাবনা কি? প্রথমে কিছু ছিল না, কেবল একমাত্র অদ্বিতীয় পরমেশ্বরই বিদ্যমান ছিলেন, তিনিই পশ্চাৎ সমুদায় জগৎ সৃজন করেন, যাঁহারা কেবল ইহাকেই আস্তিকবাদ বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন, তাঁহাদের মতে প্রায় সমুদায় ষড়দর্শনকে নাস্তিকতা প্রতিপাদক বলিয়া উল্লেখ করিতে হয়। উল্লিখিত ষড়দর্শনের প্রতি অনেকানেক আস্তিক্য-বুদ্ধি ভক্তিমান লোকের বিশেষরূপ শ্রদ্ধা আছে। ঐ ছয়ের মধ্যে অধিকাংশই নাস্তিকতাবাদ ও কোনো কোনোটির মতে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব স্বীকৃত হয় নাই, এ কথা শুনিলে তাঁহারা চমৎকৃত হইয়া উঠিবেন বোধ হয়।'' ভারতীয় দর্শনের আদি রূপটির মধ্যেই এই অনীশ্বরবাদের বীজটি নিহিত, পরবর্তীকালে ধর্মীয় প্রভাবে তা আবরিত হয়ে পড়ে। এই আবরণটি উন্মুক্ত করে দর্শনের অনীশ্বরবাদি সত্তাটির শণাক্তকরণই এই রচনার উদ্দেশ্য।

    ভারতীয় এই দর্শনগুলি কমদিনের নয় - এর সবগুলিরই অভ্যুদয়কাল খ্রিষ্টপূর্ব আমলে। প্রাচীনতম সেই যুগে কিসের সংঘাতে এতগুলি দর্শন সৃষ্টি হয়েছিল এই জম্বুদ্বীপে, তার কিনারা মেলা ভার। কিন্তু দু:খের কথা এই যে দর্শনগুলি সৃষ্ট হল, বিকশিত হল, কিন্তু স্বাধীন ধারায় বয়ে যেতে পারল না - ধর্ম এসে দাঁড়াল অন্তরায় হয়ে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ধর্মীয় গন্ডি দ্বারা আবদ্ধ হয়ে পড়ার ফলে দর্শনগুলির স্বাধীন সত্তা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং দর্শনগুলির অভ্যন্তরে ঈশ্বরবাদের সংক্রমণ ঘটে। তাই ভারতীয় দর্শনে ঈশ্বরবাদেরই জয়-জয়কার। এই ভূল থেকে মুক্তি পেতে হলে ভারতীয় দর্শনের মূল সত্তাটির শণাক্তকরণ আজ জরুরি।

    এই লেখায় উপরি-উক্ত দর্শনগুলির মধ্যে নাস্তিক দর্শনভুক্ত সবগুলি এবং আস্তিক দর্শনভুক্ত বেদান্ত বা উত্তর মীমাংসা বাদে বাকীগুলি সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। বেদান্ত, বিশেষ করে শঙ্করের মায়াবাদ উপসংহার অংশে আলোচিত। এছাড়াও বেদ, উপনিষদ ও তন্ত্রকে এই বিষয়ের অঙ্গীভূত করা হয়েছে। ঋক্‌বেদ থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক কালানুক্রমে দর্শনগুলি বিচার করার প্রচেষ্টা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখা দরকার - এই লেখায় 'বিজ্ঞান' কথাটি বারংবার প্রয়োগ করা হয়েছে, তা কিন্তু আজকের অর্থে ঠিক পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান নয়। যে দার্শনিক ভাবনা আধুনিক বিজ্ঞানের পথিকৃৎ বা যে দার্শনিক যুক্তির মধ্যে বিজ্ঞানের আদি রূপটি লুকিয়ে আছে, তাকেই বিজ্ঞান অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।

    2. ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়, অক্ষয়কুমার দত্ত (করুণা প্রকাশনী, দ্বিতীয় সংস্করণ - দ্বিতীয় ভাগ) পৃ ৫৪
  • kd | 59.93.255.203 | ১৬ অক্টোবর ২০০৬ ২০:১৪634827
  • ঋক্‌বেদ

    পৃথিবীর প্রাচীনতম লিখিত সাহিত্য 'ঋক্‌বেদ'। এর সংকলনের সময়কাল খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ শতকের পরে নয়, বেশীর ভাগ পন্ডিত এই মতই পোষণ করে থাকেন। প্রাচীনকালে বৈদিক ভাবধারীরা প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে অর্চনা করতেন, ধীরে ধীরে এই শক্তিগুলি দেবতায় রূপান্তরিত হয়। ঋক্‌বেদে মূলত: এই বহুদেবত্ববাদই প্রতিষ্ঠিত, দার্শনিক ভাবনাও কম, অনীশ্বরতার তো কথাই নেই। কিন্তু দশম মন্ডলের ১২৯তম সূক্তে একটি ইঙ্গিত আছে। সূক্তটি 'নাসদীয় সূক্ত' নামে খ্যাত। সূক্তটির উদ্ধৃতি(3):
    ''1. সেকালে যা নেই তাও ছিল না, যা আছে তাও ছিল না। পৃথিবীও ছিল না, অতি দূরবিস্তার আকাশও ছিল না। দূর্গম ও গম্ভীর জল কি তখন ছিল?
    2. তখন মৃত্যুও ছিল না। অমরত্বও ছিল না, রাত্রি ও দিনের প্রভেদ ছিল না। তিনি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না।
    3. সর্বপ্রথমে অন্ধকার দ্বারা অন্ধকার আবৃত ছিল। সমস্তই চিহ্নবর্জিত ও চতুর্দিকে জলময় ছিল। তপস্যার প্রভাবে এক বস্তু জন্মিলেন।
    4. সর্বপ্রথমে মনের উপর কামের আবির্ভাব হল, তা হতে সর্বপ্রথম উৎপত্তির কারণ নির্গত হল।
    5. রেতোষা পুরুষেরা উদ্ভব হলেন।
    6. কেই বা প্রকৃত জানে? কেই বা বর্ণনা করবে? কোথা হতে জন্মিল? কোথা হতে এ সকল নানা সৃষ্টি হল? দেবতারা এ সমস্ত নানা সৃষ্টির পর হয়েছেন।
    7. কোথা হতে যে হল তা কেই বা জানে? এভাবে নানা সৃষ্টি যে কোথা হতে হল, কার থেকে হল, কেউ সৃষ্টি করেছেন, কি করেন নি, তা তিনিই জানেন, যিনি এর প্রভুস্বরূপ পরমধামে আছেন। অথবা তিনিও না জানতে পারেন।''
    সূক্তটির ছয় নম্বর ঋক্‌এ বর্ণিত 'কেই বা প্রকৃত জানে' - এই প্রশ্নে সূক্তকার যুক্তিযুক্তভাবে জিজ্ঞাসু। সাত নম্বর ঋক্‌এ 'কেউ সৃষ্টি করেছেন কি করেন নি, তা তিনিই(পরমপ্রভু) জানেন অথবা তিনিও না জানতে পারেন' - এক্ষেত্রে সূক্তকার পরমপ্রভুর সর্বজ্ঞতার প্রতি সন্ধিহান, অর্থাৎ ঈশ্বরের সর্বশক্তিমান সত্তাটিকে এই সূত্রে সরাসরিভাবে না হলেও, নিদেনপক্ষে অস্বীকারই করা হয়েছে বলা যেতে পারে। সুতরাং এই সূক্তটিকে অনীশ্বরবাদের ইঙ্গিত হিসেবে গ্রহণ না করলেও, যুক্তিনিষ্ঠ বিজ্ঞানজিজ্ঞাসার প্রাচীনতম একটি নজীর রূপে স্বীকার করা যেতে পারে।

    3. ঋক্‌বেদ-সংহিতা (দ্বিতীয় খন্ড, হরফ প্রকাশনী, প্রথম প্রকাশ), রমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদ অবলম্বনে, পৃ ৬৪০
  • Ranajit Sarkhel | 59.93.195.184 | ২৪ অক্টোবর ২০০৬ ০০:২৭634828
  • সাংখ্য দর্শন

    সাংখ্য দর্শনের আদি রূপটি একান্তই নিরীশ্বর। মহর্ষি কপিল সাংখ্য মতের প্রবর্তক। তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন। সাংখ্যপ্রবচন সূত্রে বলা হয়েছে(4)। সূত্র ১/৯২: ''ঈশ্বরাসিদ্ধে' ঈশ্বর অসিদ্ধ।'' সূত্র ১/৯৩: ''ঈশ্বর মুক্ত কি বদ্ধ? দুইই অসম্ভব। অতএব তাদৃশ ঈশ্বর অসিদ্ধ।'' সূত্র ১/৯৪: ''তিনি মুক্ত হইলে সৃষ্টি প্রয়োজক রাগাদি(ইচ্ছাদি) অভাবে স্রষ্টা হইতে পারেন না, আবার বদ্ধ হইলে আমাদিগের ন্যায় অসর্বজ্ঞ হইয়া পড়েন, তাহাতে ঈশ্বরের সৃষ্টিক্রিয়ায় অসামর্থ্য আসিয়া পড়ে। সুতরাং কিছুই বলা যায় না। অথচ বদ্ধ মুক্ত বিভিন্ন পুরুষও অসম্মত। এরূপ স্থলে ঈশ্বর অসিদ্ধ বলাই ভাল।'' সুতরাং সাংখ্য দর্শনে ঈশ্বরকে সরাসরিভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।
    এখন প্রশ্ন, এই রচনায় বেদের পরেই সাংখ্যকে স্থান দেওয়া হল কেন? বেদের পরেই উপনিষদের স্থান, এতাই তো প্রচলিত স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত। এর উত্তর স্বরূপ বলা যেতে পারে - সাংখ্যকে এই উপমহাদেশের আদি দর্শন এবং এর প্রণেতা কপিলকে আদি বিদ্বান বলা হয়ে থাকে। উপনিষদে সাংখ্যের উল্লেখ শুধু নয়, কপিল ঋষির নাম পর্যন্ত উল্লিখিত আছে(5)। ''যিনি নিত্য জীবগনের মধ্যে নিত্য, চেতনবর্গের মধ্যে চেতন, যিনি এক হইয়াও অনেকের কাম্যবস্তুসমূহের বিধান করেন, সেই সর্বকারন ও সাংখ্যযোগ দ্বারা প্রাপ্ত দেবতাকে অবগত হইয়া সাধক অবিদ্যাদি সমস্ত বন্ধন হইতে মুক্ত হন।'' এখানে সাংখ্যের স্পষ্ট উল্লেখ বর্তমান। আবার শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৫/২-এ বলা হয়েছে, ''ঋষিং প্রসূতং কপিলং ষস্তমগ্রে জ্ঞানৈবির্ভতি জায়মানচ্ঞ পশোৎ(6)।'' - ''যিনি প্রসূত কপিল ঋষিকে প্রথমে জ্ঞান দ্বারা পোষণ করেন(7)।'' এখানে কপিলের নামের উল্লেখ রয়েছে। এ সাক্ষ্য থেকে সাংখ্যকে উপনিষদের পূর্বে রচিত বলে মনে করা যেতে পারে, তাই এ সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনার প্রয়োজন। বস্তুত প্রাচীন পুথিঁপত্রে সাংখ্য দর্শনের প্রভাব এমনই ব্যাপক ও বিশাল যে, সাংখ্য মতের নেপথ্যে অত্যন্ত সুদীর্ঘ যুগের কোন ঐতিহ্যের কথা স্বীকার করতেই হবে। তাই সাংখ্যমতের বিচারে প্রবিষ্ট হওয়ার আগে এর প্রাচীনতার বিষয় আলোচনায় প্রবিষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

    (4) সাংখ্য প্রবচন সূত্র (ষষ্ট সংস্করণ, বসুমতী সাহিত্য মন্দির): উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অনূদিত, পৃ ৪৮
    (5) শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ (৬/১৩): উপনিষদ (হরফ প্রকাশনী অখন্ড সংস্কর্ণ, ১৯৮৬) পৃ ৩৯৯
    (6) ------ ঐ ------ পৃ ৩৮৯
    (7) উপাসক: পৃ ৯
  • tan | 131.95.121.123 | ২৫ মে ২০০৭ ২৩:৪৭634829
  • আচ্ছা,এই দর্শন বহুদিন উপরপাতায় আসে না,এই আলোচনা এত শীতল হয়ে গেলো কেন? ভালোই তো তখন চলছিলো।
    আরো কিছু মূল টেক্সট থেকে দিন না বইগুলো হাতের কাছে থাকলে?
  • dd | 10.10.1.253, 61.246.241.130 | ২৬ মে ২০০৭ ২০:৪১634830
  • যেমন ধরুন ডিসকভারি অব ইন্ডিয়াতে একটা পাসিং রেফারেন্স রয়েছে আরবী দার্শনিক আবু নাসের ফারাবি নিয়ে। অবাঙমানসগোচর ব্রহ্মের মতন আল্লহকেও উনি all merciful ইত্যাদি বলতে চান নি। যুক্তি দিয়েছিলেন কোনো গুনের আধার (সেটি যতোই না কেন শুনতে বা মানতে ভালো লাগুক) বর্ননায় আল্লহ /ব্রহ্মকে বলতে গেলে এটাও বলা যায় যে আল্লাহর দাড়ি আছে।

    উপনিষদের ব্রহ্মের সাথে খুব মিল। আরেকজন মাভেরিক আরব দার্শনিক ইবন রুশ্‌দ। ঐ অষ্টম নবম শতব্দীতেই। এর পরেই বোধহয় ইসলামের আর বেসরকারী কোনো প্রবক্তা হয় নি।

    পৌরহিত্যের দৌরাত্মে যেমন হিন্দুধর্ম হয়ে গেলো অচলায়তন।

    আর আমাদের ঈশেনের লেখা পড়ে মনে হয় নিশ্চয়ই ও ন্যায়শাস্ত্র বিশদে পড়েছে। কি দারুন তার্কিক।
  • shyamal | 24.117.233.39 | ০৬ অক্টোবর ২০০৯ ২১:২৫634831
  • যতদূর জানি হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর গুণাতীত। যদিও হিন্দু ধর্মের ছাতার নিচে অজস্র পরস্পরবিরোধী মত রয়েছে। যাই হোক এই গুণ মানে property, trait, quality। তার মানে দাড়ি তো দূরে থাক, ঈশ্বর পুরুষ বা নারী নয় ( খ্রীষ্টানদের গড বড় হাতের হি) , তার কোন property নেই, যেমন কোন ওজন নেই। অথচ অপার ক্ষমতা রয়েছে। ঈশ্বর পাটনীকে বলেছিলেন না, কোন গুণ নাই তার কপালে আগুন।

    যাই হোক আমার একটি প্রশ্ন হল, নান্য পন্থা বিদ্যতে অয়নায়, এইটা কি রবীন্দ্রনাথেরই লেখা নাকি কোন উপনিষদে আছে আর উনি শুধু সুর দিয়েছিলেন? গুগল সার্চ করে কিছু পেলাম না।
  • Blank | 59.93.194.197 | ০৬ অক্টোবর ২০০৯ ২১:৪০634832
  • বেদামেহতং পুরুষংমহান্ত মাদিত্যবর্নং তমসা পরস্তাত।
    ত্বমেব বিদ্বিতাতি মৃতুমেতি, নান্য পন্থ্যা বিদ্যতে অয়নায়।।

    (স্মৃতি থেকে লেখা, বানান ভুল ছারাও সামান্য ভুল চুক হতে পারে)। উপনিষদ
  • san | 123.201.53.4 | ০৬ অক্টোবর ২০০৯ ২৩:৪১634833
  • খুঁজেপেতে এইটা পেলাম। ১৭ নং এ দেখুন , নান্য পন্থা অয়নায় বিদ্যতে।

    http://www.ramanuja.org/purusha/sukta-5.html
  • shyamal | 24.117.233.39 | ০৭ অক্টোবর ২০০৯ ০০:২৫634834
  • ব্ল্যাঙ্ক আর স্যান দুজনকেই ধন্যবাদ। তবে স্যানের রেফারেন্সে দেখলাম বলা আছে, নান্য: পন্থা বিদ্যতে অয়নায়, এই লাইনটি অনেক উপনিষদে রয়েছে।

    আমি শুনেছি বনানী ঘোষের কন্ঠে একটি স্তোত্র যার মধ্যে এটি আছে কিন্তু শুরু হচ্ছে শৃন্যন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা: দিয়ে।

    এখানে শুনতে পারেন http://tinyurl.com/y9gpvr3
  • Blank | 59.93.194.197 | ০৭ অক্টোবর ২০০৯ ০০:২৬634835
  • এটা না রে স্যান। আমার লাইন দুটো মনে আছে, বানান গুলো নয়।

    পরম ব্রহ্ম কে জেনেই একমাত্র মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পারে সাধক। মুক্তি প্রাপ্তির অন্য রাস্তা নেই।
  • Blank | 59.93.194.197 | ০৭ অক্টোবর ২০০৯ ০০:২৭634837
  • হ্যা কথাটা বহু জায়গায় আছে বটে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন