এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সর্ষেঃ অন্যভাবে, অন্যরকম লাদাখ

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১২ জুন ২০১৫ | ২৪৩০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিকি | ১২ জুন ২০১৫ ১১:৪৯678629
  • টইটা খুলে রাখলাম, তবে আজ শুরু করব না। ছবিপত্তর ঝাড়াই বাছাই করতে হবে।
  • সিকি | ১৩ জুন ২০১৫ ১০:০৩678740
  • আপাতত স্নো ফলের ভিডিও দেখুন। ফোটুলা টপে, কারগিল থেকে লে আসার রাস্তায় ...

  • dc | 132.164.26.83 | ১৩ জুন ২০১৫ ১০:১৪678810
  • লিখতে থাকুন ঃ-)
  • সিকি | ১৩ জুন ২০১৫ ২১:০৯678821
  • মর্মে যবে মত্ত আশা
    সর্পসম ফোঁসে
    অদৃষ্টের বন্ধনেতে
    দাপিয়া বৃথা রোষে
    তখনো ভালোমানুষ সেজে
    বাঁধানো হুঁকা যতনে মেজে
    মলিন তাস সজোরে ভেঁজে
    খেলিতে হবে কষে!
    অন্নপায়ী বঙ্গবাসী
    স্তন্যপায়ী জীব
    জন-দশেকে জটলা করি
    তক্তপোষে ব'সে।

    ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো,
    পোষ-মানা এ প্রাণ
    বোতাম-আঁটা জামার নীচে
    শান্তিতে শয়ান।
    দেখা হলেই মিষ্ট অতি
    মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
    অসল দেহ ক্লিষ্টগতি--
    গৃহের প্রতি টান।
    তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু
    নিদ্রারসে ভরা,
    মাথায় ছোটো বহরে বড়ো
    বাঙালি সন্তান।

    ইহার চেয়ে হতেম যদি
    আরব বেদুয়িন!
    চরণতলে বিশাল মরু
    দিগন্তে বিলীন।
    ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি,
    জীবনস্রোত আকাশে ঢালি
    হৃদয়তলে বহ্নি জ্বালি
    চলেছি নিশিদিন।
    বর্শা হাতে, ভর্‌সা প্রাণে,
    সদাই নিরুদ্দেশ
    মরুর ঝড় যেমন বহে
    সকল বাধাহীন।

    =========================

    খুবই কেনু কেনু স্টার্টিং হয়ে গেল হয় তো - কিন্তু জার্নিটা শুরু করার আগে এই কবিতাটা যে কতবার মনে মনে আবৃত্তি করেছি, তার ইয়ত্তা নেই। লেখা শুরু করতে গিয়েও তাই প্রথমেই মনে হল এইটা ক'লাইন লিখি।

    বহুদিনের লালিত আশা ছিল, সে তো এখানকার সবাইই জানে। সেই ২০১২তে যখন চৌহানের সঙ্গে সপরিবারে লে-দর্শন করে এসেছি, তখন থেকে মনে আশা, একদিন আসব আবার, মোটরসাইকেল চালিয়ে। যতরকমভাবে যত জায়গা থেকে ট্রাভেলগ পাওয়া যায়, সব পড়ে ফেলেছিলাম। যা যা জানা দরকার সমস্ত জেনেছিলাম। ২০১৪তে একটা সুযোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু অফিস এবং ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণে তা আর হয়ে ওঠে নি। আমিও বিশেষ জোর দিই নি, কারণ ২০১৩র ডিসেম্বরে, শুধুমাত্র লাদাখ যাবার জন্যেই কিনেছিলাম নতুন বাইক - পালসার 200NS। সেটা তখনও ফ্রি সার্ভিসিংয়ের পিরিয়ডের মধ্যে ছিল, তাই গতবছরে আর রিস্ক নিই নি।

    এ বছরে যখন ফেরুয়ারি মাস যাই যাই করছে, তখন থেকেই মনে আবার চাগাড় দিয়ে উঠল সেই ইচ্ছে, বেরোতেই হবে। অফিসে প্রচণ্ড খারাপ সময় যাচ্ছিল, ছুটি পাবো কিনা, পেলেও আদৌ যাওয়া হবে কিনা - এ নিয়ে দোলাচল ছিল প্রায় শেষদিন পর্যন্ত।

    বেরোতে গেলে কারুর সঙ্গে টিম আপ করতে হয়, তারও ছুটিছাটার ব্যাপার থাকে, কিছু জিনিসপত্র কেনাকাটার ব্যাপার থাকে, খুব দোলাচলে ভুগছিলাম শেষদিকটা। অসম্ভব রেস্টলেস লাগছিল - এবারেও কি হাত ফসকে বেরিয়ে যাবে সুযোগটা?

    এপ্রিল মাসের বাইশ তারিখে আমার রিলিজ হল প্রজেক্ট থেকে, সাথে সাথে একগাদা লোক ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার প্রোফাইলের ওপর, আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন হয় আর কি, কেউ আমায় পাঠাতে চায় লন্ডনে, কেউ বেলজিয়ামে, কেউ জোহানেসবার্গে, তো কেউ ভুবনেশ্বরে। থিতু হয়ে ঝেড়েবেছে একটা অ্যাকাউন্টে মনোনিবেশ করতে করতেই হয়ে গেল মে মাসের পনেরো তারিখ। আমার বেরোবার ছিল ছয়ই জুন সকালে। তা হলে কি হবে না? নতুন প্রজেক্টে জয়েন করেই সাথে সাথে দু সপ্তাহের ছুটি নিতে চাইলে লোকে জাস্ট ক্যালাবে। তাও খুব ঠাণ্ডা মাথায় অ্যাকাউন্টের লোকজনের সাথে নেগোশিয়েশন চালাতে থাকলাম, সাথে সাথে পার্টনারও খুঁজতে থাকলাম।

    অ্যাকাউন্ট ম্যানেজারটি প্রায় আমারই বয়েসী, আমার বেড়াবার প্ল্যানের কথা শুনে নিজেই খুব দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল - আরে ইয়ার, এ তো দারুণ প্ল্যান বানিয়েছো, আমি ইন্ডিয়াতে থাকলে আমিও তোমার সাথে বেরিয়ে পড়তাম।

    বললাম - বস, এটা আমার ড্রিম ট্রিপ, তুমি যদি না করো - আমি কিছু মনে করব না, কিন্তু ঐ আর কি, স্বপ্নটা রয়ে যাবে - আজ নেহি তো ফির কভি। দ্যাখো কি করা যায়।

    ম্যানেজার বলল, ঠিক আছে, তুমি ছুটি অ্যাপ্লাই করো, আমি কথা বলে রাখছি - তবে প্ল্যানটা একটু এদিক ওদিক করা যায় কি? একটু তাড়াতাড়ি ফিরে আসা যায়?

    বললাম, ট্রিপ পুরো দু সপ্তাহেরই লাগবে, পুরোটাই মোটরসাইকেলে যাওয়া আসা কিনা, তবে তুমি চাইলে ছয়ই জুনের বদলে আমি এক সপ্তাহ আগে বেরোতে পারি - তিরিশে মে, আর ফিরে আসতে পারি এক সপ্তাহ আগে, বারোই জুন। তারপরে আমি তোমার অ্যাকাউন্টের জন্য বলিপ্রদত্ত।

    তাই সই। ইতিমধ্যে আমি তর সইতে না পেরে একটু একটু করে কিনে নিয়েছি এলবো গার্ড, নী গার্ড, চেন লুব্রিক্যান্টের ক্যান, বালাক্লাভা। করোল বাগে গিয়ে গাড়িতে ফিট করিয়ে নিয়েছি মোবাইল চার্জার আর মোবাইল মাউন্ট - জিপিএস দেখার জন্য।

    বিসিএম ট্যুরিং সাইটটা ফলো করি। সেখানেই লে লাদাখ ২০১৫ প্ল্যানার বলে একটা টই চলছিল, লোকে পার্টনার খোঁজাখুঁজি করছিল - সেইখানে আলাপ হল এক সর্দারের সঙ্গে, সুখদীপ সিং। সে তিরিশে মে-ই শুরু করছে। প্রথমে মোবাইল নাম্বার বিনিময়, তারপরে হোয়াটস্যাপ, তারপরে ঠিক হল আগামি শনিবার (২৩শে মে) আমরা একই সময়ে যাবো আমাদের গাড়ি সার্ভিসিং করাতে, সেইখানেই চাক্ষুস মোলাকাত হবে, প্ল্যান নিয়ে আলোচনা হবে। সুখদীপের বাড়ি আমার বাড়ির কাছাকাছিই।

    বাইশে মে ছুটি অ্যাপ্লাই করে আনন্দ নিকেতনে গিয়ে কিনে আনলাম পালসার এনএসের জন্য স্যাডল ব্যাগ - ভায়াটেরা ক্ল (http://www.viaterra.in/Products/VIATERRA-Bags-Motorcycle-Touring/ViaTerra/ViaTerra-Claw---Tail-bag-Rear-Luggage-System/pid-3556749.aspx)।

    তেইশে মে বাজাজের সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে দেখি - ও মা, এ তো সর্দার নয় - সেমি সর্দার। মানে শিখ অবশ্যই, তবে বাঁধাকপিবিহীন। হুবহু আমারই রঙের পালসার এনএস -আর সর্বাঙ্গে বিভিন্ন স্টিকার মারা - বিভিন্ন কোম্পানির ইঞ্জিন অয়েলের, গীয়ার লুব্রিক্যান্টের, টায়ার কোম্পানির। ছোকরা কাজ করে সেন্ট্রাল এক্সাইজে, সেন্ট্রাল এক্সাইজ থেকে নাকি এর আগে কেউই বাইক নিয়ে লাদাখ যায় নি, এ-ই প্রথম, তাই সেন্ট্রাল এক্সাইজ ডিপার্টমেন্ট থেকে এর পুরো জার্নি স্পনসর করবে। আর ওর নাকি কে থাকে আম্বালায় বা চণ্ডীগড়ে - প্রায়ই দিনেরাতে সে নাকি দিল্লি থেকে আম্বালা যায় আসে, সুতরাং লং জার্নিতে সে খুবই অভ্যস্ত।

    শুনে আমি একটু নার্ভাস হয়ে পড়লাম, আমার তো একেবারেই কোনও লং জার্নির অভ্যেস নেই। ম্যাক্সিমাম গেছি গাজিয়াবাদ থেকে গুরগাঁও আর ব্যাক। পঞ্চাশ পঞ্চাশ একশো কিলোমিটার। তো, সুখদীপ আমাকে অভয় দিয়ে বলল, আরে ও সব নিয়ে চিন্তা কোরো না, রাস্তায় নামলে দেখবে এমনিই দেখতে দেখতে শয়ে শয়ে কিলোমিটার পেরিয়ে যাবে। আমি সমস্ত কিট নিয়ে নিচ্ছি, পাংচার কিট, হ্যান্ডপাম্প, হ্যান ত্যান, তুমি শুধু ক্লাচ কেবল, ক্লাচ প্লেট, চেন লিউব (লুব্রিক্যান্ট) নিয়ে রেখো তা হলেই হবে। আমি ইঞ্জিন অয়েলও ক্যারি করব, আমি জানি কীভাবে অয়েল ঢালে, কীভাবে পাংচার সারায় - তুমি একেবারে চিন্তা কোরো না।

    চিন্তা না করে কি থাকা যায়? বাইক চালাতে ভালোবাসি, কিন্তু বাইক সারাবার বেসিক জানি না। এমন একজন সাথে থাকবে, এটা অবশ্যই অনেক বড় ভরসার কথা।

    ছাব্বিশে মে ছুটি অ্যাপ্রুভ হল। আর আমায় পায় কে? সুখদীপকে হোয়টস্যাপে মেসেজ করলাম। সুখদীপ স্টার্ট করছে উনত্রিশ তারিখে। ও যাবে আম্বালায় আগের রাতে। আমাকে পরদিন আম্বালা পৌঁছতে হবে একা একা, সেখান থেকে সুখদীপ আমার সাথে যাবে। আম্বালা থেকে যাবো জম্মু। দিল্লি থেকে পাক্কা ছশো কিলোমিটার। শেষরাতে বেরোতে হবে, যাতে দিনে দিনে জম্মু পৌঁছতে পারি, আর উত্তর ভারতের গরমটাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্রস করে যাওয়া যায়।

    সুখদীপ জানাল ওরও ছুটি কাল পরশুর মধ্যেই অ্যাপ্রুভ হয়ে যাবে, যে হেতু ওর গাড়ি অলরেডি চল্লিশ হাজার কিলোমিটার চলে ফেলেছে, তাই ও টায়ার বদলে নেবে। পিরেলির টায়ার লাগাবে। ও হ্যাঁ, ওর কাছে গুচ্ছ গুচ্ছ বানজি কর্ড আছে, আমাকে কিনতে হবে না, আম্বালা অবধি কোনওরকমে চলে এলেই ও আমার লাগেজপত্র বানজি দিয়ে ভালোভাবে বাইকের সাথে বেঁধে দেবে।

    সাতাশে মে, সক্কালবেলায় ভাবলাম একটু রাস্তাটা চিনে আসি। সাড়ে সাতটায় বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। ড্রাই রানেরও বাচ্চা ভার্সন। গীতা কলোনি পেরিয়ে কাশ্মীরি গেট পেরিয়ে মজনু-কা-টিলাপেরিয়ে সঞ্জয় গান্ধী ট্রান্সপোর্ট নগর পেরিয়ে আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ফিরলাম। বাইকে মাউন্টে বাঁধা মোবাইল, সেখান থেকে চার্জারে চার্জ নিচ্ছে ঠিকঠাক, হেডফোন কানে গোঁজা, সুন্দর গেলাম, ফিরে এলাম। চল্লিশ চল্লিশ আশি কিলোমিটার। ঠিক আছে - এইটুকু চলতে পারলে ছশো কিলোমিটার আর কতটুকু, দেখতে দেখতে পেরিয়ে যাবো।

    সন্ধ্যেবেলায় সুখদীপকে মেসেজ করলাম, নতুন টায়ার কী লাগালে, ছবি পাঠাও। সুখদীপ রিপ্লাই করল, বস একটা সমস্যা হয়েছে। অফিস থেকে না, আমার জার্নি স্পনসর করছে না, তাই লিভও ক্যানসেল করে দিয়েছে।

    আমার তো মাথায় হাত। ছোকরা বলে কী! বললাম, তুমি কথা বলো অফিসে, স্পনসর না হয় না-ই করল, তুমি নিজের খরচায় তো যেতে পারো, লিভটা অন্তত অ্যাপ্রুভ করে দিক।

    সুখদীপ বলল, হ্যাঁ, ডিরেক্টর ডেকেছে উনত্রিশ তারিখে, এসপার ওসপার যা হবার সেদিনই হবে।

    উনত্রিশ তারিখ। মানে যেদিন সন্ধ্যেয় ওর আম্বালা যাবার কথা, আমার বেরোবার ঠিক একদিন আগে। হাতে মাত্র দুদিন। ওর কথা যদি ডিরেক্টর না শোনে তো কী হবে? আমার তো ছুটি অ্যাপ্রুভ হয়ে গেছে, আমি কোনওভাবেই আর এই ছুটি ক্যানসেল করাতে পারব না, করাতে চাইবও না। তা হলে কি একাই বেরোতে হবে?

    উনত্রিশ তারিখ সন্ধ্যেবেলায় খবর এল। ডিরেক্টর কোনও কথাই শোনেন নি, তার লিভ বা স্পনসরশিপ - কোনওটাই স্যাংশন হয় নি। অতএব, সে যেতে পারবে না। সিকি একা।

    হাতে আর চব্বিশ ঘন্টাও নেই। সিকিনীকে এখন এসব কথা বলবার কোনও মানেই হয় না, ভয় টয় পেয়ে একাক্কার হয়ে যাবে, আমার যাওয়া না চৌপাট হয়ে যায়।

    ঘরের দরজা বন্ধ করে খানিক চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। আমাকে কাল একা বেরোতে হবে, একা, কোনও ব্যাকআপ ছাড়া। বাইক বিগড়োলে সারাবার মত একটা জিনিস আমার কাছে নেই, পুরো খালি হাতে বেরোব। ভরসা আছে, এ রাস্তায় সঙ্গী মিলে যায়, মিলে যাবে ফর শিওর। কিন্তু কবে কখন কোথায় মিলবে, জানা নেই। তবু, যা থাকে কপালে, রাস্তা তখন আমায় চুম্বকের মতন টানছে, আমাকে রাস্তায় নামতে হবেই, এতটুকুও বাধা আসতে পারে এমন কিছু আমি টলারেট করতে রাজি নই। সর্দার যাক জাহান্নমে।

    তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ভোর চারটেয় উঠতে হবে।
  • byaang | 132.178.249.192 | ১৩ জুন ২০১৫ ২১:৩০678832
  • ফাইনালি, পড়ার মত একটা টই।

    চলতে থাকুক। মন দিয়ে পড়ছি।
  • sch | 233.223.130.179 | ১৩ জুন ২০১৫ ২২:১৩678843
  • তারপর ????

    (ওই জন্যেই তো রাহূল বাবা ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন - যখন সমস্যায় পড়বে একয়া সিদ্ধান্ত নিতে হয় )
  • dd | 116.51.137.154 | ১৩ জুন ২০১৫ ২২:৫৩678854
  • বেং আর আমি, দুজনেই পড়ছি।
  • T | 24.139.128.21 | ১৩ জুন ২০১৫ ২৩:১৪678865
  • কীইই রে বাবা, কতক্ষণ লাগে লিখতে!
  • সিকি | ১৩ জুন ২০১৫ ২৩:১৮678876
  • শুরু হল এক ল্যাদাড়ুশ ক্যাবলাকান্ত পাবলিকের একলা লাদাখ অভিযান। জীবনে যে কোনওদিন একটানা একশো কিলোমিটার গাড়ি চালায় নি, সে প্রথমবার লং ড্রাইভে নেমে একদিনে ছশো কিলোমিটার পাড়ি জমাবার কথা ভাবছে। এ কি সম্ভব?

    চারটেতে অ্যালার্ম দেওয়া ছিল, ঘুম খুবই পাতলা ছিল, সাথে সাথে উঠে অ্যালার্ম বন্ধ করলাম। ঘুমন্ত সিকিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হল। ওকে বলি নি, আমি আসলে একা যাচ্ছি। সুখদীপের নম্বর কাল রাতে ওকে দিয়ে রেখেছি, জানি যে একবার ফোন করলেই জেনে যাবে যে সুখদীপ আমার সাথে যায় নি - তবুও নিজে থেকে ওকে বলতে পারি নি।

    পাশের ঘরে গিয়ে জামাকাপড় পরলাম। হাঁটুগার্ড কনুইগার্ড পরলাম একা একা। ব্যাগ গোছানোই ছিল। বাকি সমস্তকিছু প্রিপারেশনবিহীন। দুটি ব্যাগ হয়েছে, একটি ভায়াটেরা ক্ল, অন্যটি একটি বাঙলি লাগেজ ব্যাগ, আর বাঁধবার জন্য খানিক লম্বা নাইলন দড়ি। সে দিয়ে কতটা কি লাগেজ বাঁধা যাবে, কে জানে।

    রেডি হয়ে সিকিনীকে ডাকলাম। নিচে গিয়ে বাইক বের করলাম। লাগাতে গিয়ে বুঝলাম, পালসার এনএসের জন্য স্পেশালি তৈরি ভায়াটেরা ব্যাগও আসলে আমি লাগাতে জানি না। দড়িদড়াক্লিপআংটা সবই আছে, কিন্তু কখনও ট্রাই করে দেখি নি এটা আমার বাইক্র পেছনের সিটে কীভাবে লাগায়। বিস্তর চেষ্টা করে মনে হল ফিক্স করেছি, এইবারে তার ওপরে দ্বিতীয় ব্যাগ, নাইলনের দড়ি দিয়ে কোনওরকমে বাঁধলাম। বিস্তর ঘাম ঝরিয়ে অবশেষে মনে হল বেঁধেছি। দড়িটা একটু ছোটই হল, কিন্তু টিকে যাবে মনে হল।

    পথের দেবতা তখন বুঝি অলক্ষ্যে হাসিয়াছিলেন। সিকিনীকে টা-টা করে আমি লাগেজবোঝাই বাইক নিয়ে এগোলাম।

    আমাদের সোসাইটিটা বেশ বড়সড়। মেন গেট অবধিও পৌঁছই নি, মনে হল ব্যালেন্সের গড়বড় হচ্ছে। দাঁড়ালাম। ঠিক তাই - ওপরের ব্যাগটা হেলে গেছে ডানদিকে। বেশ টাইট করেই তো বেঁধেছিলাম নাইলনের দড়ি দিয়ে, কিন্তু কীভাবে যেন দড়ির গোড়ার দিকটাই ঢিলে হয়ে গেছে। অগত্যা, আবার পুরো দড়ি খুলে নতুনভাবে আবার কষে বাঁধলাম।

    একটি প্লাস্টিকের জেরিক্যানে পাঁচ লিটার পেট্রলও নিয়েছিলাম, যদি রাস্তায় দরকারে লাগে - লাগে মানে, লাগবে তো বটেই। তার হ্যান্ডেলের মধ্যে দিয়ে দড়ি গলিয়ে কষে ব্যাগ, স্যাডল ব্যাগ সমস্ত টাইট করে বেঁধেছেঁদে অবশেষে যখন সোসইটির মেন গেট পেরোলাম, ঘড়িতে তখন পাঁচটা বাজছে। পূবের আকাশ একটু একটু করে ফর্সা হবো-হবো করছে।

    অচল সিকির যাত্রা শুরু হল।

    (এরপর কাল)
  • সিকি | ১৩ জুন ২০১৫ ২৩:২৫678630
  • আরও এগোবার আগে হাল্কা করে লিখে দিই - পালসার টুহান্ড্রেড এনএস, বাজাজের একটি মহারত্ন বাইক। ইতিমধ্যেই লিখে দিয়েছি, আমি কোনও প্রিপারেশন কোনও ব্যাকআপ ছাড়া রাস্তায় নেমেছিলাম - প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার কি তার বেশি রাস্তা এবং নেই-রাস্তায় চলেছি, সঙ্গে ছিল শুধু একটা চেন লুব্রিক্যান্ট স্প্রে, আর একটা স্পেয়ার ক্লাচ কেবল। তাও সেটা কীভাবে লাগায় আমি আজও জানি না। কিন্তু অদ্ভূত সুন্দর বাইক, গোটা ট্রিপে একটি সেকেন্ডের জন্য আমাকে বুঝতে দেয় নি তার যত্নের অভাব। সমানে এক রকমের মাইলেজ দিয়ে গেছে, সমতলে, পাহাড়ে, নদীর মধ্যিখানে। একবার পাংচার হলে আমি পথে বসতাম, কিচ্ছুটি করার থাকত না, কিন্তু কিছু হয় নি। যতটা খারাপ হতে পারে রাস্তাঘাট তার থেকেও খারাপ পথে চালিয়েছি, কিলোমিটারের পর কিলোমিটার - কিচ্ছু হয় নি। পুরো ট্রিপে চারবার গাড়ি উল্টেছে, দুবার আমাকে নিয়ে চলন্ত অবস্থায়, এতটুকু পারফর্মেন্সে ঘাটতি পড়ে নি, যেমন চলত, সোজা হয়ে তেমনি চলেছে আবার। আমার অত্যন্ত প্রিয় মোটরসাইকেলটাকে এই ট্র্যাভেলগ উৎসর্গ করছি।
  • সিকি | ১৩ জুন ২০১৫ ২৩:২৬678641
  • এই আমার বাইক।

  • শঙ্খ | 127.194.233.150 | ১৩ জুন ২০১৫ ২৩:৪৫678652
  • পড়ছি পড়ছি... একটু হাত চালিয়ে...
  • দানবকৃষ্ণ | 114.179.72.200 | ১৩ জুন ২০১৫ ২৩:৪৭678663
  • অমিও পড়ছি। জ্জিও।
  • i | 134.169.135.239 | ১৪ জুন ২০১৫ ০২:৩৬678674
  • পড়ছি।
  • Paramita | 109.72.224.255 | ১৪ জুন ২০১৫ ০৪:৪৭678685
  • তাড়াতাড়ি।
  • a x | 60.171.26.111 | ১৪ জুন ২০১৫ ০৫:২৫678696
  • এমনকি আমারও দারুণ লাগছে পড়তে! বিশেষ করে এই একা অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়া সিকিকে চিনিনা বলেই।
  • dc | 132.164.196.228 | ১৪ জুন ২০১৫ ০৬:৩৪678707
  • অসাধারন লেখা। আরো ভাল্লাগছে এইজন্য যে বাইকে করে লং জার্নি করতে কখনো সাহস পাইনি। সিকির লেখা পড়ে মনে হচ্ছে আমিও যদি বেড়িয়ে পড়তে পারি!
  • 4z | 79.157.80.175 | ১৪ জুন ২০১৫ ০৬:৩৯678718
  • সিকি ছাতার চাকরি ছেড়ে ফুল টাইম লেহ লাদাখ গাইড হয়ে যাক।
  • সিকি | ১৪ জুন ২০১৫ ০৯:৩৪678729
  • গুরুচন্ডালিতে লেখার একটা মহান অসুবিধে হচ্ছে, পোস্ট হয়ে যাওয়া লেখা এডিট করা যায় না। তবু সিউডো এডিট করতেই হবে, আরও একজনকার কথা না বললে শুরুর প্রস্তুতির কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

    গেছোদাদা। গুরুর একজন নীপা, আগে পাঠানকোটে পোস্টেড ছিলেন, লে লাদাখ এলাকা খুব ভালো করে চেনেন চাকরিসূত্রে, আপাতত চাকরিসূত্রেই দিল্লিতে পোস্টেড। গেছোদাদার কাছ থেকে বেশ কয়েকবার রুট সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞানার্জন করেছি, এক এক দিনে কতটা দূরত্ব কভার করলে সেটা ডুয়েবল হয়, এই নিয়েও আইডিয়া বাড়িয়েছি। আসলে শুধু দূরত্বটা দেখলেই তো হয় না - সময়টাও তো একটা বড় ফ্যাক্টর। মে জুন মাসের দিনের বেলায় উত্তর ভারতের তাপমাত্রা সম্বন্ধে যাঁদের আইডিয়া আছে, তাঁরা জানেন কতটা কষ্টকর, কতটা বিপজ্জনক এই লম্বা রাস্তা দিনের বেলায় পাড়ি দেওয়া। যতক্ষণ না জম্মু পেরনো যাচ্ছে, ততক্ষণ এই নিদারুণ হিটওয়েভের হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই, তাই দূরত্ব, সময় আর শারীরিক পরিস্থিতি - এই তিনের একটা কম্বিনেশন বানিয়ে রুট প্ল্যান করতে হয়।

    জার্নির প্ল্যান হিসেবে আমাকে সুখদীপ বলেছিল - ও টেন্ট ক্যারি করছে, ডাবল স্লিপিং ম্যাট ক্যারি করছে, আমি যদি পারি, তবে একটা স্লিপিং ব্যাগ অ্যারেঞ্জ করতে পারি নিজের জন্য, তা হলে জমে যাবে।

    বেশ ভালো কথা। এর আগের বারে দ্রাসে আমার স্লিপিং ব্যাগে শোবার অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সে বড় আরামের ঘুম হয়। তো, এখন আর এখানে ভালো স্লিপিং ব্যাগ ঝেড়েবেছে কোথায় কিনব? গেছোদাদার শরণাপন্ন হতেই সমাধান মিলল, গেছোদাদার নিজেরই একটা স্লিপিং ব্যাগ আছে, সেটা আমি ধার নিতে পারি লে-যাত্রার জন্য।

    হয়ে গেল মুশকিল আসান। একদিন টুক করে গেছোদাদার অফিসে গিয়ে নিয়ে এলাম স্লিপিং ব্যাগ।

    সে ব্যাগ পড়ে রইল আমার কম্পিউটার টেবিলের নিচে। সুখদীপের ছুটি ক্যানসেল, টেন্ট যাচ্ছে না, স্লিপিং ম্যাট যাচ্ছে না - আমি আর স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে গিয়ে কী করব? ব্যাগটা এইবার গেছোদাদাকে ফেরত দিতে হবে।

    (এইবার আগে বাড়া যাক, তবে ধীরেসুস্থে)
  • আশিস | 111.221.135.71 | ১৪ জুন ২০১৫ ০৯:৫৬678741
  • উফফ, চরম থ্রেড। লে-লাদাখ টা আমারও ড্রিম জার্নি। দেখি কবে নামাতে পারি। লেখাটা চলুক, এটা থেকে রোমাঞ্চ আর ইনফো দুটোই পাচ্ছি!
  • san | 11.39.35.235 | ১৪ জুন ২০১৫ ১৩:০৫678752
  • যেমন রোমাঞ্চকর তেমনি মোটিভেটিং। শিগ্গিরি আগে বাড়ো।
  • সিকি | ১৪ জুন ২০১৫ ১৩:৪৫678763
  • আপনারা জানে ভি দো ইয়ারোঁ সিনেমাটা দেখেছেন নিশ্চয়ই? মৃতদেহ হিসেবে সতীশ শাহের সেই অসাধারণ অভিনয় সিনেমা জুড়ে? একবার এর গায়ে, একবার ওর গায়ে হেলে হেলে পড়ে যাচ্ছে, আর নাসিরুদ্দীন আর তার সঙ্গী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে রোলার স্কেটস পরা সেই মৃতদেহকে খাড়া রাখবার? সেই রকম এক সতীশ শাহকে পেছনে বেঁধে ব্রাহ্মমুহূর্তে শুরু হল আমার যাত্রা।

    প্রথম দিনের লক্ষ্য, দিনের শেষে জম্মু পৌঁছতে হবে। দিল্লি থেকে দুরত্ব - ছশো কিলোমিটার। সূর্য ওঠে নি এখনও, উঠব উঠব করছে। বাইক গড়াতেই হাল্কা ঠাণ্ডা হাওয়া গায়ে এসে লাগল। মনটা হাল্কা হয়ে গেল। চেনা রাস্তাগুলো আস্তে আস্তে পার হতে থাকলাম। আনন্দ বিহার, হসনপুর ডিপো, করকরডুমা, গীতা কলোনি ছাড়িয়ে লালকেল্লার পাঁচিলের কাছে এসে পড়লাম। এইখান থেকে মোটামুটি হাইওয়ে শুরু হচ্ছে। বেশ খানিকটা এগিয়ে মুকারবা চক, সেইখানে ডানদিকে টার্ন নিলে সো-জা জম্মুর রাস্তা, দিল্লির শেষ প্রান্ত হিসেবে সঞ্জয় গান্ধী ট্র্যান্সপোর্ট নগর, আর আলিপুর বিদায় জানাবে, তারপরেই ঢুকে যাব হরিয়ানায়া।

    মুকারবা চকের একটু আগেই আবার মনে হল বাইক টলমল করছে। দাঁড় করিয়ে পেছনে ফিরে দেখি, ঠিক তাই, সতীশ শাহের মৃতদেহ ডানদিকে হেলে পড়েছে, সাইডের পকেট থেকে পাঁচ লিটারের পেট্রলের জেরিক্যানটা বিপজ্জনকভাবে উঁকি মারছে - একদিকের নাইলনের দড়ি কীভাবে যেন লুজ হয়ে ঢলঢল করছে। ... এ তো মহা আপদ! এইভাবে আমি পঞ্চাশ কিলোমিটারও আসি নি, এতদিনের রোড ট্রিপ সামলাবো কী করে? নাহ্‌, দোকান পেলে আগে ভালো দেখে নাইলনের দড়ি অথবা বানজি কর্ড কিনতেই হবে। কিন্তু এই সুবিশাল হাইওয়েতে আমি হার্ডওয়্যারের দোকান পাবো কোথায়? আম্বালা? লুধিয়ানা? জালন্ধর? জম্মু?

    খুব ভালো করে আবার চেপেচুপে বাঁধলাম, কিন্তু বুঝতে পারলাম এইভাবে হবে না। দড়ি কম পড়েছে, আমার আরও বেশি দড়ি কিনে রাখা উচিত ছিল। শুধু ওপরের ব্যাগই না, নিচের ভায়াটেরা ব্যাগও ঢলঢল করছে, আমি ওটাকেও আটকাতে পারি নি ঠিক করে। এইভাবে বাইক চালানো খুবই সমস্যার। তবু চালাতে তো হবেই। আবার শুরু করলাম যাত্রা।

    মুকারবা চকে একটা সুবিশাল ফ্লাইওভার আছে, সেইখানে উঠলাম যখন, তখন ফ্লাইওভারের অন্যদিক থেকে সূর্যও উঠল। দিল্লিতে তো নীল আকাশ দেখা যায় না। সাদা ফ্যাকাশে বিবর্ণ আকাশের প্রান্ত থেকে টুক করে লাফিয়ে উঠে পড়ল কমলা রঙের বিশাল সূর্য। তিরিশে মে-র দিন শুরু হল। দেখতে দেখতে ঢুকে গেলাম সোনেপত। (কথিত আছে, পাণ্ডবদের ইন্দ্রপ্রস্থ থেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে দুর্যোধন এইখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বর্ণপ্রস্থ। সেই স্বর্ণপ্রস্থই আজকের সোনেপত) এর পরে মুর্থাল। সামালখা। একে একে শহরগুলো পেরিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাইক মোটামুটি স্টেবল চলছে দেখে আমি আর নাইলন দড়ির খোঁজ করি নি - আর বানজি কর্ড তো স্পেসিফিক দোকান ছাড়া পাওয়া সম্ভবই নয়, সে দোকান হাইওয়ের ধারে মিলবে না।

    সাড়ে নটার সময়ে আম্বালা পেরোলাম। দুশো কিলোমিটার। পেট্রল পাম্পের ধারে একটা ছোট্ট দোকানে দাঁড়ালাম। বাড়িতে খবর দিলাম। শুধু এটুকু জানালাম না যে, এইখান থেকে সুখদীপ পা-জির আমার সঙ্গ নেবার ছিল, সে আর নেই। বাকি রাস্তাটাও আমাকে একাই যেতে হবে।

    ছোট্ট দোকান, কোন জায়গা এটা জিজ্ঞেস করতে বলল এটা আম্বালার পরে একটা কী যেন ছোট জায়গা, এখান থেকে জালন্ধর প্রায় দুশো কিলোমিটার, লুধিয়ানা আর নব্বই কিলোমিটার দূরে। ... ব্রেড ওমলেট পাওয়া যাবে? - জিজ্ঞেস করাতে লোকটা খুব লজ্জা পেয়ে জিভ টিভ কেটে বলল, এটা বৈষ্ণো ঢাবা, এখানে ডিম রাখা হয় না। কী পাওয়া যাবে তবে? পরোটা। আলু পরাঠা।

    তাই দাও, সঙ্গে এক গ্লাস চা। জঘন্য একটি আলু পরোটা চা দিয়ে কোনওরকমে ঠেসেঠুসে খেলাম। ব্যাগের সাইড পকেট থেকে কাপড়ের গ্লাভস বের করে পরলাম। গরম বাড়তে শুরু করেছে। একটা জলের বোতল কিনে, তার অর্ধেক এক নিশ্বাসে শেষ করে বাকিটা পিঠের ব্যাগে পুরে উঠলাম। বাইকে দেখাচ্ছে সকাল থেকে দুশো তিরিশ কিলোমিটার পেরিয়ে এসেছি আমি।

    ক্রমশ লোকবসতি কমতে লাগল। রাস্তা অসাধারণ। কখনও চার লেনের রানওয়ে, কখনও মোটামুটি ভালো, মাঝে এক সময়ে তো একশো পর্যন্ত স্পিড তুলে দিলাম, তার পরে নিজেই ভয় পেয়ে কমিয়ে আনলাম, বাইকের পেছনটা যেন দুলছে। বাইক থামিয়ে দেখলাম, হ্যাঁ, সতীশ শাহের মৃতদেহ আবার হেলে পড়েছেন, এইবারে বাঁদিকে। যেহেতু বাইকের সাইডস্ট্যান্ডটাও থাকে বাঁদিকে, বাইক তাই বাঁদিকে হেলিয়ে রাখাই যাচ্ছে না, ওজনের চোটে উলটে পড়ে আচ্ছে সাইডস্ট্যান্ড দুমড়ে।

    এ তো মহাজ্বালা!কোনওরকমে ধরাধরি করে বাইকটাকে দাঁড় করালাম। পুরো দড়ি আবার খুললাম, টানতে গিয়ে হাতের নুনছাল উঠে গেল, রক্ত বেরোচ্ছে, ব্যান্ড এইড আছে অবশ্য, তবে হাতের কাছে নেই, ব্যাগ খুলতে হবে। ... থাক, গ্লাভসের ভেতরেই তো থাকবে আঙুল।

    যে ভাবেই হোক, বাঁধাছাঁদা আবার সারলাম। মনের মধ্যে ভয় ঢুকছে, পৌঁছতে পারব তো সন্ধ্যের মধ্যে জম্মু? তিনশো কিলোমিটার এসেছি। লুধিয়ানা এখনও পঁচিশ কিলোমিটার দূরে, জালন্ধর আরও একশো দশ। কোমর টাটিয়ে যাচ্ছে, গলার ভেতর থেকে জিভের ডগা পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ। ব্যাগ থেকে বোতল বের করে শেষ পর্যন্ত জল খেলাম, মাথার ওপরে গনগনে রোদের তেজ। জল পেটে ঢুকল, কিন্তু জিভ-গলা সাথে সাথে শুকিয়ে কাঠ। এমন শুকিয়ে, যে জিভ নাড়াতে পর্যন্ত পারছি না। বাইসেপের কাছে অল্প ব্যথা করছে, তা বাইক একনাগাড়ে চালাবার জন্য যতটা না, তার থেকে বেশি এই বারবার লাগেজ বাঁধবার জন্যে। কেন যে এত লাগেজ নিয়ে বেরোতে গেলাম! অবশ্য এর থেকে কম করতামই বা কী করে? তাও তো বাইকের কিট কিছুই নিই নি সাথে, স্লিপিং ব্যাগও নিই নি।

    মনে হয় এইবারে ঠিকঠাক বেঁধেছি, বাইক আর হেলছে না। আস্তে আস্তে স্পিড বাড়ালাম, পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, চুয়াত্তর। মসৃণ রাস্তা।

    লুধিয়ানা এসে গেল। শিখদের বোধ হয় আজ কিছু কার্নিভাল আছে, জায়গায় জায়গায় গামা গামা বক্স বাজিয়ে তারা ঠাণ্ডা শরবত খাওয়াচ্ছে পথচলতি গাড়ি, বাইক, ট্রাক ড্রাইভারদের, প্যাসেঞ্জারদের। দুতিনবার থামলাম। জলের বোতল তো কখন শেষ। ওই শরবৎ খেয়েই আবার একটু আধটু তেষ্টা মেটালাম। লুধিয়ানা শহরের মধ্যে রাস্তার অবস্থা ভয়ংকর। তার সাথে জ্যাম। ওপরে আগুন ঢালছে সূর্য। কোথাও এতটুকু ছায়া নেই, দাঁড়াবার জায়গা নেই। বেলা সাড়ে বারোটা। চোখে ধাঁধা দেখছি তেষ্টার চোটে।

    শহর ছাড়াতে রাস্তার অবস্থা একটু ভালো হল। ট্রাফিকও কমল। বাঁ দিকে দেখি ফেলে দেওয়া গাড়ির কঙ্কাল দিয়ে বানানো একটা বিশাল রোবট। রোবটের পেছনে একটা বিল্ডিং - লাভলি প্রোফেশনাল ইউনিভার্সিটি। টিভিতে এদের খুব বিজ্ঞাপন দেখি।

    হঠাৎ, মনে হল, আমার পেছনে বাঁধা লাগেজ থেকে কী যেন একটা ছিটকে গিয়ে রাস্তায় পড়ল, অনেক দূর থেকে দুড়ুম করে একটা আওয়াজ এল। ঝটিতি ব্রেক কষলাম। হায় কপাল, তাড়াহুড়োয় বাঁধতে গিয়ে শেষবারে ব্যাগ বেঁধেছি, পেট্রলের জেরিক্যানটা বাঁধা হয় নি, ব্যাগের সাইড পকেট থেকে গতিজাড্যে উড়ে বেরিয়ে গেছে পাঁচ লিটারের পেট্রল ভর্তি ক্যান। লম্বা সফরে অতি মহার্ঘ জিনিস।

    দূরে রাস্তার মাঝখানে পড়ে আছে প্লাস্টিকের ক্যানটা। গাড়ি থামালাম। নেমে পেছনে দৌড়ে গিয়ে আনতে যাবো, মূর্তিমান যমদূতের মত উদয় হল একটা মুশকো ট্রাক। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে ট্রাকের সামনের চাকায় পিষে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে গেল প্লাস্টিকের ক্যান, রাস্তা ভিজে গেল পেট্রলে। আমি সামনে দাঁড়িয়ে জাস্ট দেখলাম। কিচ্ছু করার ছিল না।

    শেষ। সিকি, তুমি আস্ত একটা ফেলিওর। জল নেই, স্পেয়ার টুল নেই, এখন বাড়তি পেট্রলও নেই। লাগেজ টলোমলো, খালিখালি ডানদিক নয় বাঁদিকে হেলে যাচ্ছে, এই প্রস্তুতি তুমি নিয়েছো তিন বছর ধরে? ল্যাদাড়ুশ সিকি, ক্যাবলাকাত্তিক সিকি - তুমি দ্যাখো, জালন্ধর পর্যন্ত পৌছতে পারো কিনা।

    বাইকে উঠে বসলাম। কোথাও ছায়া নেই। গাছপালা আছে বটে, তবে হাইওয়ে থেকে বেশ দূরে দূরে, বাইক নিয়ে ওখানে যাওয়া যাবে না। আগে কোথাও ছায়া পেলে সাইড হতে হবে। হ্যান্ডেল ধরতে গিয়ে দেখি - হাতের আঙুলগুলো আপনাআপনি বেঁকে যাচ্ছে, আমি চেষ্টা করেও তাদের সোজা করতে পারছি না। শিরায় টান। এ সিম্পটম আমার বেশ চেনা, ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ। ... রোদের মধ্যেই খানিক দাঁড়ালাম। গ্লাভস খুললাম অতিকষ্টে। হাত ঝাঁকাতে শুরু করলাম। খানিক পর মনে হল, হাত স্বাভাবিক হয়েছে। দুচারবার মুঠো করলাম, খুললাম। আবার স্টার্ট দিলাম বাইকে। রাস্তায় আরও দু চারটে শিখ সমাবেশ চোখে পড়ল, শরবত বিলি করছে। খেলাম। যতই খাচ্ছি, কোনও উপকার হচ্ছে না। জিভ আরও বেশি মোটা হয়ে যাচ্ছে, গলার ভেতর পর্যন্ত শুকিয়ে কাঠ।

    শেষ ঘটনাটা ঘটল লুধিয়ানা আর জালন্ধরের মাঝামাঝি কোনও এক জায়গায়। রাস্তাটা একটু ভাঙাচোরা ছিল। সামনে মাউন্টে লাগানো মোবাইল, সেখান থেকে হেডফোন এসে ঢুকেছে হেলমেটের মধ্যে দিয়ে আমার কানে, হঠাৎ তাতে লাগল একাটা হ্যাঁচকা টান, আর আমি দেখলাম, সত্তরের স্পিডে চলছি আমি, সামনে থেকে মোবাইল সমেত মাউন্ট উধাও, হেলমেটের ভেতর থেকে ক্যাবলার মত ঝুলছে হেডফোনের তার। সাথে সাথে ব্রেক মারলাম। পেছনে ট্রাকের সারি, এবং মাঝখানে রাস্তার ওপরে পড়ে আছে মোবাইল।

    পাগলের মত হাত দেখাতে দেখাতে দৌড়লাম। পেট্রল গেছে যাক, মোবাইল গেলে ছবি হয়ে যাবো।

    ট্রাক থামল, চাকার প্রায় সামনে থেকে মোবাইল উদ্ধার করলাম। অক্ষত। ট্রাকওলা কটি বাছাবাছা খিস্তি দিয়ে এগিয়ে গেল। ধীরে ধীরে ফিরে এলাম বাইকের কাছে। মাথা ঘুরছে। হাতের শিরাগুলো আরো টেনে ধরছে। পারবো কি পারবো না?
  • তাপস দাশ | ১৪ জুন ২০১৫ ১৪:০২678774
  • এক ঘণ্টা হয়ে গেল - কৈ?
  • T | 24.139.128.21 | ১৪ জুন ২০১৫ ১৪:১৩678785
  • চরম চরম।
  • pi | 233.176.3.168 | ১৪ জুন ২০১৫ ১৪:১৬678796
  • যে সিকিকে চিনতাম, সে খুব গোছানো, আগে ভাগে খুব সুন্দর করে পরিকল্পনা করা, নিয়ম কানুন মানা সিকি, অন্তত কিছু কিছু বিষয়ে। নিজে সেগুলো একেবারে পারিনা বা করতে ভালো লাগেনা বলে সেটা নিয়ে কিছুটা আইডেন্টিফাই না করতে পারা জনিত অস্বস্তি থাকতো, কিছুটা একরকম করে শ্রদ্ধাও। তো, এই সিকি বেশ অচেনা। কিন্তু ছড়াতে ছড়াতে বেড়ানো ব্যাপারটা খুব ই চেনা। এই চেনা অচেনা ব্যাপারগুলো এমনি উল্টে পাল্টে যাওয়াটা খুব এনজয় করছি পড়তে পড়তে। ভ্রমণ কাহিনি আমি খুব ভালোবাসি এমনটা না, এটা পড়ছি অন্যভাবে অন্যরকম লাদাখ না, অন্যভাবে অন্যরকম সিকি হিসেবে ঃ)
  • সিকি | ১৪ জুন ২০১৫ ১৪:৩৮678806
  • :)

    প্র্যাকটিকাল কাণ্ডজ্ঞানের অভাব, পাই। এই যদি সন্দা থাকত এখন, চাট্টি গালাগাল দিয়ে বলত, হতভাগা, নাইলন দড়ি দিয়ে কখনও লাগেজ বাঁধে না, নাইলনের দড়ি সবসময়েই হড়কে পিছলে যায়, বানজি কর্ড জিনিসটা সেইজন্যেই ইউজ করা হয়। সান্দার এক্সপিরিয়েন্স আছে, আমি তো জীবনে এর আগে কোনওদিন বাইকে লাগেজ বেঁধে বেরোইই নি।

    যাক, এইবারে একটা ছবি দিই। প্রথম দিনে, লাগেজ নিয়ে এত ব্যতিব্যস্ত ছিলাম, ক্যামেরা বের করা সম্ভবই হয় নি। মোবাইলে তোলা রাস্তার ছবি।



    এটা অবশ্য অনেক পরের দিকে তোলা ছবি, ছায়ার দৈর্ঘ্য দেখেই বুঝতে পারছেন এটা বিকেলের দিকে তোলা।
  • Arpan | 125.118.151.86 | ১৪ জুন ২০১৫ ১৪:৫৮678807
  • কিন্তু সিকি বাঞ্জি কর্ড কেনেনি কেন? আমাজন বা স্ন্যাপডিলে অর্ডার দিলেই তো বাড়িতে এসে দিয়ে যায়।
  • Arpan | 125.118.151.86 | ১৪ জুন ২০১৫ ১৪:৫৯678808
  • মানে এইটা কেন দরকার জানা ছিল না?
  • সিকি | ১৪ জুন ২০১৫ ১৫:১৬678809
  • আবারও, কাণ্ডজ্ঞানের অভাবের ফলে আমি নাইলন দড়িকে বানজি কর্ডের অল্টারনেটিভ ভেবে নিয়েছিলাম। সুখদীপ বলেছিল দড়িদড়া দিয়ে লাগেজ বেঁধে আম্বালা চলে এসো, আমার কাছে প্লেন্টি অফ বানজি কর্ড রয়েছে, তোমাকে আলাদা করে কিনতে হবে না। শুক্রবার সন্ধ্যেয় যখন সে জানালো সে যেতে পারছে না, তখন আমার পক্ষে আর দোকানে গিয়ে বানজি কেনা সম্ভব ছিল না। সুখদীপ রাত সাড়ে দশটায় আমাকে হোয়াটস্যাপে মেসেজ করছে, তোমার বাড়ি কোথায় বলো, আমি নিজে তোমাকে বাড়িতে বানজি পৌঁছে দিয়ে আসছি। আমি ওকে মানা করেছিলাম - সুখদীপের বাড়ি যদিও আমার বাড়ির কাছেই, তবু ও এলে সিকিনী জেনে যেত যে আমি আলটিমেটলি একা যাচ্চ্ছি, আমার যাওয়া কেঁচে যেতে পারত। শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তে তাই নাইলন দড়ির ওপরে ভরসা করে বেরিয়ে পড়েছিলাম, এতটা ট্রাবল দেবে ভাবি নি।

    ডিঃ - ফিরে এসে সিকিনীকে সমস্ত ঘটনা আনুপূর্বিক জানিয়েছি, এখন আর ওর কিছুই অজানা নয় :)
  • | 24.96.80.213 | ১৪ জুন ২০১৫ ১৮:৪৯678811
  • দারুন লাগছে সিকি।সঙ্গে আছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন