এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সর্ষেঃ অন্যভাবে, অন্যরকম লাদাখ

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১২ জুন ২০১৫ | ২৪২৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kumu | 132.161.63.64 | ১৭ জুন ২০১৫ ২৩:২৮678878
  • ২০১৭ অগাস্ট???
  • kumu | 132.161.63.64 | ১৭ জুন ২০১৫ ২৩:৩১678879
  • হ্যাঁ সেই আলুপটলের ডালনাতে বড়ি,জিরেবাটা দিয়ে ঝোলে কনভার্ট করে দিলুম।
  • সিকি | ১৮ জুন ২০১৫ ০০:৫৫678880
  • ১লা জুন ২০১৫ - তৃতীয় দিন

    ঘুম ভাঙলেও আজ আর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। প্রথম দিন ছশো, দ্বিতীয়দিন তিনশো কিলোমিটারের পর আজ চাপটা কম। আজকের টার্গেট দুশো কিলোমিটার। কারগিল। যদি জোজিলা পাস খোলা থাকে, তা হলে আরামসে হয়ে যাবে। তবে, খুব সত্যি কথা বলতে - প্রথমদিনে যে জোশটা ছিল, আজ আর সেই জোশ নেই। বাইকের ভিউ ফাইন্ডার ভেঙে গেছে কাল, লাগেজ নিয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছি। প্রপার লে-তে না পৌঁছনো পর্যন্ত বানজি কর্ডের সন্ধান পাওয়া যাবে না। আর লে এখনও চারশো কিলোমিটার। চারশো পঁচিশ। একলা একলা তৃতীয় দিনেও টেনাসিটি ধরে রাখাটা এইবারে একটু অসম্ভবই মনে হচ্ছে। সারাদিনে, দিনের শেষে কারুর সাথে কোনও কথা বলার নেই। এখনও লে-যাত্রী কোনও বাইকার দেখতে পেলাম না। অবশ্য, শ্রীনগর পর্যন্ত দেখতে পাওয়াও মুশকিল, ম্যাক্সিমাম জেনারেল টুরিস্ট এই পর্যন্ত আসে সারা ভারত থেকে। লে-র যাত্রীদের আলাদা করে দেখতে পাওয়া যাবে সোনমার্গ ছাড়াবার পরেই।

    পার্কিং লট থেকে বাইক নিয়ে এলাম। একবার সুইচ টিপতেই গর্জন করে উঠল - বাইক পুরো ফিট। আমারই গা-গতরে ব্যথা। আবার টেনে-টেনে নাইলন দড়ি দিয়ে সেই বাঁধনপর্ব সারলাম। সিকিনীকে একটা ফোন করে প্রায় নটা নাগাদ যাত্রা শুরু করলাম। এখনও খিদে পায় নি, সোনমার্গ এখান থেকে আশি কিলোমিটার, একেবারে সেইখানে পৌঁছে খাওয়া দাওয়া করব।

    আগের বারে শ্রীনগর থেকেই বাই রোড জার্নি শুরু করেছিলাম। একবার এন এইচ ওয়ানটা ধরে ফেলতে পারলেই আর কোনওদিকে বাঁকাবাঁকি নেই, সোজা লে। কিন্তু, সেই ন্যাশনাল হাইওয়েতে পৌঁছব কী করে? কাল রাতে অনেককে জিজ্ঞেস করে অনেকটা ডাইভার্সন নিয়ে লাল চকে এসে পৌঁছেছিলাম। বেরোতে গেলে কোথা দিয়ে বেরোব? প্রথমে এক লোকাল কাশ্মীরিকে জিজ্ঞেস করলাম। সে একটা রাস্তা দেখাল। সেইখান দিয়ে অনেকটা যাবার পরে মনে হল আবার জিজ্ঞেস করা দরকার। রাস্তার মোড়ে এক মিলিটারি দাঁড়িয়ে ছিল, তাকে জিজ্ঞেস করলাম। এইভাবে খানিক জিজ্ঞেস করে করে এগোতে এগোতে মনে হল, এভাবে হচ্ছে না, একেকজন একেক দিকের রাস্তা বলছে। মোবাইল মাউন্টও আর নেই যে জিপিএস দেখে দিক ঠিক করব। কী আর করা, পকেটে মোবাইল রেখে জিপিএস অন করে কানে হেডফোন গুঁজলাম। তারপরে ইনস্ট্রাকশন ফলো করতে করতে একটা চকে এসে পৌঁছলাম, চকের মাঝে একটা সাইনেজে লেখা গান্ডেরবাল, আর হজরতবাল। দুদিকে দুটো অ্যারো চিহ্ন দেওয়া।

    খ্যাক করে হাসি পেয়ে গেল - গন্ডার আর হজরত, দুজনকারই বাল এরা বেশ যত্ন করে সাজিয়ে রেখেছে। যাই হোক, আমাকে নিতে হবে গান্ডেরবালের রাস্তা। সেই রাস্তা নিয়ে আরও এক দুজনকে জিজ্ঞেস করে কনফার্মড হলাম যে এই রাস্তাটাই সোনমার্গে যায়। চোদ্দ পনেরো কিলোমিটার যাবার পরে মনে হল হাইওয়ে তো দূর, আমি মনে হচ্ছে একটা গ্রামে ঢুকে পড়েছি, সরু রাস্তা, ভাঙাচোরা, গাছপালা খুব বেশিবেশি। এমন তো হবার কথা নয়! আবার থামলাম, আবার জিজ্ঞেস করে জানলাম, পাঁচ কিলোমিটার পেছনে একটা কাট ছিল, সেখান থেকে ডানদিক নিতে হত। নাকি সাইনেজ ছিল, আমি মিস করে গেছি।

    ইতিমধ্যে ঝাঁকুনি খেয়ে আমার সতীশ শাহ আবার লুজ হয়ে গেছেন। আবার দড়ি খুলে আবার বাঁধলাম। এখন আমি ফ্রাস্ট্রেশনের সীমা পার করে এসেছি। লোকজনের উৎসুক চাহনি আর গায়ে মাখি না। বাঁধা শেষ করে আবার ফেরত, এবং হ্যাঁ, পাঁচ কিলোমিটার পিছিয়ে সেই মোড় এবং সেখানে দিকনির্দেশ এইবারে খুঁজে পেলাম। ব্যস, খানিক এগোতেই ন্যাশনাল হাইওয়ের সাইন দেখতে পেয়ে গেলাম।



    এইবারে আর কোনওদিকে মোড়া নেই, সোজা সোনমার্গ। আঁকাবাঁকা সুন্দর রাস্তা চলেছে, ইন ফ্যাক্ট আগেই যেটা বোঝা উচিত ছিল, সকাল থেকে দলে দলে টুরিস্টবোঝাই গাড়ি চলেছে সোনমার্গের দিকে, যে কোনও একটা ট্যাক্সিকে গান্ডেরবাল থেকে ফলো করলেই হয়ে যেত। যাই হোক, আস্তে আস্তে উচ্চতা বাড়ছে, হাল্কা হাল্কা পাহাড় শুরু হচ্ছে আবার, আমি ঠাণ্ডা আরামদায়ক হাওয়া কাটতে কাটতে এগিয়ে চলেছি। তিন বছর আগেও এই রাস্তায় এসেছি, মনে পড়ছিল পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটার কথা, এবারে দেখি সেই নদী জমে বরফ হয়ে আছে ওপরের দিকে, আর নিচের দিকে গর্জন করে ছুটে চলেছে শ্রীনগরের দিকে।



    বেলা বারোটায় সোনমার্গ পৌঁছলাম। সেই ঘোড়া নিয়ে ঘোড়াওলাদের ভিড়, মন্দাকিনী গ্লেসিয়ার নিয়ে যাবার জন্য। তাদের পেরিয়ে আরেকটু এগোলাম। ডানদিকে একটা হোটেল ছিল, যেখানে বৃষ্টিতে তুমুল ভিজে এসে আমরা গরম স্যুপ খেয়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছিলাম আগের বারে। ... সেই হোটেলটা লোকেট করতে পারলাম না আর, অনেক কনস্ট্রাকশন হয়ে গেছে রাস্তার দুপাশে। আর মিলিটারিদের সংখ্যাধিক্য।

    মূল ভিড়টা পেরিয়ে একটু এগিয়ে বেশ কয়েকটা খাবার জায়গা। সারি সারি মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে আছে, বুলেট, অ্যাভেঞ্জার, পেছনে সাইডে লাগেজ বাঁধা। লে-র যাত্রী। আমিও দাঁড়ালাম। দোকানে ঢুকে ধোসা আর কফি অর্ডার করলাম। আসলে দ্বিতীয় অল্টারনেটিভ ছিল আলু পরাঠা, কিন্তু আমি যাত্রাপথে এই তেল চুপচুপে উত্তরভারতীয় আলু-পরাঠা সযত্নে অ্যাভয়েড করে চলি, মসালা ধোসা তাচ্চেয়ে অনেক সেফ বেট।

    খাবার আসতে আসতে সিকিনীকে হোয়াটস্যাপে মেসেজ করলাম, এর পরে জোজিলায় ঢুকব, নেটওয়ার্ক থাকবে না, নেটওয়ার্ক এলেই আমি ফোন করে দেব, যেন চিন্তা না করে। বাড়িতে বাবাকেও ফোন করে নিজের খবরাখবর দিলাম। এর পরে সিগন্যাল মিলবে সে-ই কারগিলে।

    আকাশে ভর্তি মেঘ, টিপিটিপি বৃষ্টি পড়ছে, তবে তার জন্য বাইরে বসা আটকাচ্ছে না। আমার সামনের টেবিলেই দুজন বসে মন দিয়ে মসালা ধোসা খাচ্ছে, একটি টিপিকাল তামিল, কুচকুচে কালো, ঝাঁটার মত গোঁফ, অন্যজন নর্থ ইন্ডিয়ানদের মতই দেখতে। পুরো দস্তুর রাইডারের পোশাক পরনে, নীগার্ড এলবো গার্ড লাগানো, মাথায় ফেট্টি - তামিলের মাথায় হলুদ রঙের, অন্যজনের মাথায় মাল্টিকালার।

    জয়গুরু, এইবারে মনে হচ্ছে সাথী জুটে যাবে। ওদের খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, আমি এগিয়ে যেচে আলাপ করলাম, গোয়িং টু লে? দুজনেই সমস্বরে বলল, ইয়েস ইয়েস, অতঃপর হিন্দিতে, আপ ভি দিল্লি সে আ রাহে হো?

    আপ ভি? মানে এরাও দিল্লি থেকে? হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরাও দিল্লি থেকে। তামিল টাইপের ছেলেটি এইবারে জিজ্ঞেস করল, তো বস আজ কা কেয়া ঠিকানা রাকখা হ্যায় - কারগিল?

    আরেব্বাস, তামিল তো বেশ চোস্ত হিন্দি বলে! এতটুকু টান নেই! বললাম, হ্যাঁ, কারগিলই টার্গেট। অতঃপর কিছু খেজুর।

    - তোমরা দুজনই বেরিয়েছো?
    - হ্যাঁ, তুমি একাই বেরিয়েছো?
    -হ্যাঁ, চলো তা হলে একসাথেই যাওয়া যাবে।
    - হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা তো এইবারে এগবো, তুমিও খেয়ে নিয়ে এগোও। যদি জোজিলা বন্ধ থাকে তো মুখেই দেখা হয়ে যাবে, নয় তো দ্রাস বা কারগিলে দেখা হবে।
    - তোমাদের ফোন নাম্বারটা ...
    তামিল এগিয়ে এল, নিজের ফোন নাম্বার দিল, জিজ্ঞেস করলাম, কী নামে সেভ করব?
    - গুরদীপ। গুরদীপ সিং।



    অ্যাঁ, এ তামিল নয়? সর্দার??? ... মুখে কিছু বললাম না, আমিও আমার ফোন নম্বর দিলাম, নাম বললাম। নাম বলামাত্র পেছন থেকে, "এই যে বাবা, তুমি কি লাদাখ যাচ্ছো?"

    পেছনে তাকিয়ে দেখি এক বয়স্ক বাঙালি ভদ্রলোক, পরিবার সমেত পেছনে দাঁড়িয়ে, পদবিটি শুনে বাঙালি বলে ঠাউরেছেন আমাকে। "তুমি কি ভাই কলকাতা থেকে আসছো?" "ও, দিল্লিতেই থাকো?" "তুমি দিল্লি থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে এসচো?" "একা এসচো?" "একা একা এতটা যেতে পারবে?"

    স্পেল শেষ হতে হতে গুরদীপ আর তার বন্ধু বাইক স্টার্ট করে ভো কাট্টা। আমার থালায় অর্ধেক ধোসা তখনও পড়ে। বন্ধুর নাম জানা হল না।

    *** *** ***

    খাওয়া শেষ করে বাইকে স্টার্ট দিলাম। এইবারে জোজিলা পাস। এখান থেকে দ্রাস ষাট কিলোমিটার। মাঝামাঝি পড়বে জোজিলা।

    খানিক পরেই ভালো রাস্তার শেষ, ভাঙাচোরা রাস্তা শুরু। ধীরে ধীরে ওপরে ওঠা, সামনে পেছনে মিলিটারি ট্রাকের কনভয়। তাদের কাটিয়ে কাটিয়ে এগনো, হঠাৎ বোল্ডারে চাকা পড়ে লাফিয়ে উঠতেই পেছনে হাত রেখে অনুভব করা, সতীশ শাহের ডেডবডি কতটা হেলে পড়েছে, আরও কিছুদূর চালানো যাবে নাকি এখনই দাঁড়াতে হবে। দুপাশে ইতস্তত বরফ, তারপরেই জোজিলা পাস এসে গেল। সেই চেনা টাইল বসানো রাস্তা, দুদিকে বরফের দেওয়াল।







    কিন্তু জোজিলার বরফ আর আগের মত দুধসাদা নেই। বিরক্তিকর টুরিস্টের দল এখন জোজিলা অবধি চলে এসেছে, তাদের সঙ্গে এসেছে স্লেজ, ম্যাগি, চা-কফি, ধোসা, ফটোগ্রাফার। বরফে কালচে কালচে ছোপ।



    বেশ খানিকটা যাবার পরে জোজিলা শেষ হল, কোথাও আটকাবার কোনও সীন নেই, তবে মাঝে কয়েকটা স্ট্রেচ পার হতে গিয়ে চাপ হয়েছিল। রাস্তার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে বরফগলা জল। জলের নিচে এবড়োখেবড়ো বোল্ডার। সে জল কোথাও সামান্য, কোথাও গভীর। একবারও ক্লাচ না টিপে সোজা ফার্স্ট গিয়ারে গাড়ি বের করতে হবে, ব্যালেন্স ঠিক রেখে। তৈরি ছিলাম না, জুতো ভিজল, মোজাও ভিজল, তবে পেরিয়ে গেলাম।

    জোজিলা এমন কিছু উঁচুতে নয়, মাত্রই এগারো হাজার ফিট, তবু কীভাবে যেন এখানে বরফ জমে, অথচ এর থেকেও উঁচু পাস আছে পরে, সেখানে বরফ জমে না। যাই হোক, নির্বিঘ্নে পেরিয়ে গেলাম, এইবারে ডিসেন্ড। সেই একই রকমের ভাঙাচোরা রাস্তা। অনেকটা যাবার পরে মনে হল এইবারে আবার লাগেজ নতুন করে না বাঁধলেই নয়, দড়ির প্রতিটা পাক আলগা হয়ে এসেছে।

    এক নির্জন জায়গায় দাঁড়ালাম। দড়ি খুলে ব্যাগ গুছিয়ে তার ওপরে রেনকভার চাপাতে জান বেরিয়ে গেল, পলিথিন শীট বাগে আনতে পারছি না, এত তীব্র বরফিলা হাওয়া চলছে। আমাকে শুদ্ধু উড়িয়ে নিয়ে যায় আর কি। দুটো গাড়ি স্লো হয়ে গেল আমার কসরত দেখে, তবে ইন্টারফিয়ার করল না। এর পরে এসে দাঁড়াল একটা হন্ডা সিবিআর বাইক। রাইডারের মাথায় হেলমেট, হেলমেটের ওপরে গো-প্রো লাগানো।



    সে এসে শুধলো, ইউ নীড এনি হেল্প?

    বাবা, জিগেস করেছো, এতেই বর্তে গেছি, এ হেল্প করা তোমার কম্মো নয়। ওকে হেসে বললাম, না না, ঠিক আছে, আমি জাস্ট লাগেজ বাঁধছি।

    -শিওর তো? আমি তা হলে এগোই?

    - শিওর। এগোও।

    অনেক কসরত করে আবার বাঁধা হল, বেশ খানিকটা এগিয়ে পাহাড় শেষ হল, ফ্ল্যাটল্যান্ড। রাস্তাও একটু ভালো হল। খানিক এগিয়ে দেখি সেই দুই মূর্তি, গুরদীপ আর তার সঙ্গী রাস্তার ধারে বাইক রেখে ফটোগ্রাফি করছে। সামনে চরছে একপাল ভেড়া।

    তাদের দেখে আমিও একগাল হাসলাম, আমাকে দেখে তারাও একগাল হাসল। এইবারে সঙ্গীর নাম জানলাম। সুমিত শর্মা। চালাচ্ছে অ্যাভেঞ্জার, আর গুরদীপ চালাচ্ছে বুলেট। একটি আড়াইশো একটি পাঁচশো সিসি। আমার দুশো সিসির পালসারের ক্ষমতা কী তাদের সঙ্গে দৌড়য়?



    অতএব তাদের সাথে আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম, রাস্তায় একবার দেখা পেয়েছি, আর ছাড়ান নেই। ক্যামেরা বের করে আমিও তাক করতে লাগলাম ভেড়ার পালকে।









    খানিক পরে আমরা একসাথেই শুরু করলাম। গুমরি বলে একটা চেকপোস্ট এল, সেখানে আমাদের সব্বাইকে নিজের নাম, গাড়ির নাম আর ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর রেকর্ড করতে হল। তারপরে আবার শুরু হল খারাপ রাস্তা। সুমিত আর গুরদীপের বুলেট আর অ্যাভেঞ্জার লাফাতে লাফাতে অদৃশ্য হয়ে গেল সামনে, আমি পেছনে টলমলায়মান লাগেজের পাহাড় নিয়ে ল্যাগব্যাগ করতে করতে এগোলাম। প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার সেই খারাপ রাস্তা যখন শেষ হল, দেখি সামনেই আমার সেই পরিচিত বোর্ড, ওয়েলকাম টু দ্রাস। তিন বছর আগে দেখে গেছিলাম।



    সামনেই বাঁদিকে একটা স্টেট ব্যাঙ্কের এটিএম। সামনে বেশ কয়েকটা বাইক দাঁড় করানো, ওর মধ্যেই দুটো মনে হল গুরদীপ আর সুমিতের, কিন্তু আশেপাশে তাদের দেখতে পেলাম না। মোবাইলে এখানে নেটওয়ার্ক নেই, দ্রাসে শুধু বিএসএনএল চলে। তাই ভাবলাম একটু এগিয়েই যাই, সাত কিলোমিটার দূরেই কারগিল ওয়ার মেমোরিয়াল, সেখানে ওরা নিশ্চয়ই দাঁড়াবে, ওটা ফাঁকা জায়গা, স্পট করা সুবিধে হবে।

    মেমোরিয়ালে পৌঁছলাম, না ওরা আসে নি। ভেতরে গিয়ে দুটো ক্লিক নিলাম। তারপরে বেরিয়ে আসতেই দেখি সেই হেলমেটে গো-প্রো লাগানো ছেলেটি এসে দাঁড়িয়েছে। ওকে বললাম, যাও দেখে এসো, আমি বাইরে আছি। তুমি নিশ্চিন্তে লাগেজ ছেড়ে যাও।

    ছেলেটির নাম জীবন, পুনের ছেলে, চাকরি করে চেন্নাইতে। ট্রেনে করে বাইক এনেছে চণ্ডীগড়, সেখান থেকে চালিয়ে আসছে। ...জীবন গেল ওয়ার মেমোরিয়াল দেখতে, আমি বাইক পাহারা দিতে দিতে এদিক ওদিক দেখতে লাগলাম।

    খানিক বাদেই এসে পৌঁছলো গুরদীপ আর সুমিত, ওরা নাকি দ্রাসে আমাকে খুব ডাকাডাকি করেছিল এটিএমের সামনে, আমি শুনতে পাই নি। ওদেরও বললাম, যাও দেখে এসো, আমার তো অলরেডি দেখা, আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি।

    ওরাও ভেতরে গেল। বুলেটে করে আরও দুটো টীম এসে দাঁড়াল। মিড ফিফটিজে দু জোড়া দম্পতি। আলাপ করলাম, মথুরা থেকে বাইক চালিয়ে এসেছেন এক দম্পতি, অন্য দম্পতি এসেছেন চণ্ডীগড় থেকে।



    ততক্ষণে গুরদীপ, সুমিত, জীবন সবাই চলে এসেছে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খানিক আলাপ পরিচিতি হল, গুরদীপ একগাল হেসে বলল, আপনি সিকিস্যার, আপনার নাম না বলা পর্যন্ত আপনাকে আমি হিমাচলি বা কাশ্মীরি ভেবেছিলাম। আপনাকে দেখে তো বাঙালি বলে মনেই হয় না! আমিও হে-হে করে বললাম বাপু তোমার ওই ঝাঁটার মত গোঁপ আর হামলে পড়ে ধোসা খাওয়া দেখে আমিও তো তোমাকে তামিল ভেবেছিলাম। নাম শুনে বুঝলাম সর্দার।

    মোদ্দা কথা হল, আমি ওদের প্রথমেই বলেছি লে লাদাখ আমার ঘোরা আছে, তাই ওরাও খুব ইচ্ছুক ছিল আমার সাথে পেয়ার আপ করবার, এদিকে আমিও একা চলে চলে হেজে যাচ্ছিলাম, আমারও খুব ইচ্ছে ছিল ওদের সাথে জুড়ে যাবার। তো, কারগিল ওয়ার মেমোরিয়ালের সামনে এসে সবাই নিজের নিজের মনোবাসনা ব্যক্ত করে হাল্কা হল। এরা সবাই প্রথমবারের জন্য লাদাখ এসেছে, এদিকে আমার তো দ্বিতীয়বার, রাস্তা পুরো চেনা।

    সাড়ে ছটা নাগাদ স্টার্ট করলাম সবাই মিলে। এইবারে সবাই একসাথে যাবে কারগিল পর্যন্ত। আর ষাট কিলোমিটার। সে এক দেখার মত দৃশ্য। সামনে একটি দুশো সিসির পালসার চলেছে, পেছনে লাইন লাগিয়ে তিনটি বুলেট, একটি অ্যাভেঞ্জার এবং একটি হন্ডা সিবিআর।

    আটটা নাগাদ কারগিল ঢুকলাম। আবার একটা পুলিশ পোস্টে গিয়ে এন্ট্রি করতে হল সবাইকে, সামনেই একটা হোটেলে মথুরা আর চণ্ডীগড়ের দম্পতি চেক ইন করে গেলেন। আমরা একটু এগিয়ে কারগিল শহরের শেষমাথায় অন্য একটা হোটেল খুঁজে নিলাম। এটা জানস্কার রোডের ভেতর, এই রাস্তা দিয়ে জানস্কার ভ্যালি যাওয়া যায়।

    (আরেকটু বাকি রইল, কাল সকালে শেষ করব)
  • তাপস | 126.203.153.65 | ১৮ জুন ২০১৫ ০১:২০678881
  • নানা, শেষ হয়ে গেলে কী করে হবে? এতো তাড়াতাড়ি?
  • dc | 132.164.231.248 | ১৮ জুন ২০১৫ ০৭:৫৫678882
  • ইশ শেষে কিনা ভূস্বর্গ কাশ্মীরে গিয়েও মাসাল্লা দোসৈ? :p
  • সিকি | ১৮ জুন ২০১৫ ০৮:২৪678883
  • দোসাই। হা হা হা। তবে সোনমার্গের ধোসার মসলায় খালি বাঁধাকপি ছিল - খেতে পারি নি।
  • সিকি | ১৮ জুন ২০১৫ ০৯:১৪678884
  • রুম পছন্দ করে লাগেজ খুলতে বেরোলাম। আজ অন্তত আর একা থাকার চাপ নেই। আমি আর জীবন একটা রুম শেয়ার করব, ওদিকে সুমিত আর গুরদীপ আরেকটা রুম নিল। রুমও বেশ শস্তা - আটশো টাকা মাত্র। সুন্দর ঘর, এক রাতের থাকার জন্য বেশ ভালো। গরম জলও আছে। রাত প্রায় পৌনে নটা বাজছে।

    দড়িদড়া সবে খুলেছি কি খুলি নি, সিকিনীর ফোন। কারগিলে এয়ারটেল আছে, তাই নেটওয়ার্কও আছে। সে তো খুব হাঁউমাউ করে আমাকে ঝাড়ল, আমি কেন দ্রাসে খবর দিই নি পৌঁছে। ... খবর দেব কেমন করে? দ্রাসে তো বিএসএনএল ছাড়া নেটওয়ার্কই নেই! তা হলে আমি হোয়াটসঅ্যাপে লিখেছিলাম কেন দ্রাসে পৌঁছে খবর দেব? দুপুর দেড়টায় সোনমার্গ ছেড়ে দ্রাস পৌঁছতে তো এতক্ষণ লাগার কথা নয়, এদিকে আমার ফোন নট রিচেবল, সুখদীপের নম্বরও ছেড়ে আসি নি (বাড়িতে এখনও জানে আমি সুখদীপের সাথে চলেছি), প্রচণ্ড চিন্তা করছিল সবাই।

    আমি লিখেছি দ্রাসে পৌঁছে কল করব? মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে দেখি, এ বাবা, তাড়াহুড়োয় দুপুরে কারগিল লিখতে গিয়ে ভুল করে দ্রাস লিখে ফেলেছি, তাই থেকে বিপত্তির সূত্রপাত। যাই হোক, ভেরিভেরি সরি মশলা খাবি ইত্যাদি বলে সিকিনীকে শান্ত করে ওকে এইবারে গুরদীপের নম্বরটা দিয়ে দিলাম, দরকার হলে এই নম্বরে যেন ফোন করে। এটাও বললাম, রাস্তায় আরও কয়েকজনের সাথে আলাপ হয়েছে, আমরা একসাথেই লে-র দিকে এগোচ্ছি।

    কারগিলে নেটওয়ার্ক আছে বটে, তবে খুব একটা ভালো চলে না। খানিক বাদেই ফোন থেকে ইনকামিং আউটগোয়িং বন্ধ হয়ে গেল, কল করাও যায় না, কল আসেও না। জীবন - যার সাথে আজ রুম শেয়ার করছি, সে এসেছে একটি প্রিপেড নাম্বার নিয়ে, সে তো এখানে কাজ করবে না, সে কেমন ফ্যাকাশে মুখে বলল, আমাকে তো কেউ বলে দেয় নি এখানে শুধু পোস্টপেড চলে। কী আর বলব, এ তো বেসিক নলেজ, কাশ্মীরে প্রিপেড রোমিং হয় না। দেখলাম, ফোন না গেলেও এসেমেস যাচ্ছে, আসছেও। রাতের দিকে আরেকবার সিকিনীর সাথে কথা বলে নিলাম, সুখদীপের কেসটা বলি নি অবশ্য, ওটা লে থেকে ঘুরে এসেই একেবারে বলেছি, জীবনের সাথেও ওর বাড়ির লোকের কথা বলিয়ে দিলাম। বাচ্চা ছেলে। একলা একলাই বেরিয়েছে, একলাই ঘুরবে। কাল আমরা লে পৌঁছব, পরের একদিন রেস্ট নেব, জীবন নাকি পরদিনই খারদুং লা বিজয়ে বেরোবে, রেস্ট নেবে না। অনেক বারণ করলাম, কে শোনে - ওর এক কথা, আমার ছুটি কম। তা বাপু এত কম ছুটি নিয়ে আসা কেন!

    অরিজিতকেও এসেমেস করে দিলাম, নির্বিঘ্নে জোজিলা পাস পেরিয়ে এসেছি, অরিজিত সাথে সাথে রিপ্লাই করল, ওরা লে-তে আছে, কাল বেরোচ্ছে খারদুং লা পেরিয়ে নুব্রা যাবার জন্য। ... কিন্তু কাল দোসরা জুন তো লে পৌঁছে আমার অরিজিতের সাথে দেখা করার ছিল! কাল ও কী করে নুব্রা যায়? ওদের কি প্ল্যান চেঞ্জ হয়েছে?

    যাই হোক, খাবারটিও বেশ জম্পেশ ছিল, জীবন নন-ভেজ, দুজনে মিলে চিকেন কালিয়া আর গরম গরম রুটি খেয়ে গরম জলে চান টান সেরে ভোঁসভোঁসিয়ে ঘুম দিলাম।

    এক হাজার কিলোমিটার একা একা চলার পরে দেখলাম একা চলাটা মোট্টেও উপভোগ্য নয়। ঠিক হাজার কিলোমিটারের মাথায় সঙ্গীদের পেয়েছি। জীবন দুদিন বাদেই আলাদা হয়ে যাবে, কাল সকালে গুরদীপ আর সুমিতের সাথে বসে প্ল্যান ছকতে হবে। দরকার হলে আমার প্ল্যান সেই মত মডিফাই করিয়ে নেওয়া যাবে।

    আমি যতক্ষণ ঘুমোচ্ছি, আপনারা ভিডিও দেখুন।



    আর দেখুন তো একে চিনতে পারেন কিনা!



    চতুর্থ দিনের গল্প আজ রাতে। লে আর মাত্র দুশো পঁচিশ কিলোমিটার।
  • Manish | 127.200.93.117 | ১৮ জুন ২০১৫ ১০:৫৫678885
  • উনি নিশ্চয় কাশ্মিরি অথবা হিমাচলি। বেড়ে হচ্ছে।
  • কল্লোল | 135.16.17.194 | ১৮ জুন ২০১৫ ১১:১৯678886
  • উরিঃ ন্না। লীল গগোলস। ফাটিয়ে তো!!
  • শঙ্খ | 127.194.255.115 | ১৮ জুন ২০১৫ ১২:২৫678631
  • টম ক্রুজ :-D
  • নির | 116.194.93.24 | ১৮ জুন ২০১৫ ১৬:৩৭678632
  • গগলসগরিমা ফেটে পড়ছে একেবারে
  • সিকি | ১৮ জুন ২০১৫ ১৭:০২678633
  • আর মিলিটারিপ্যান্টুলগরিমা? ক্যামেরাগরিমা? ওদিকে h তো আরো একটা গরিমা যোগ করেছে ফেসবুকে। কোথায় যে রাখি এত গরিমা।
  • sch | 132.160.114.140 | ১৮ জুন ২০১৫ ১৭:৪২678634
  • বেশ টিনটিনের মতো লাগছে সিকিকে
  • de | 24.96.231.124 | ১৮ জুন ২০১৫ ২১:১৩678635
  • উরিন্না - ক্ষী হ্যান্ডু লাগচে দেখতে! ঃ)

    সিকি বেশ ক্লীন শেভ করে ফোটো তুলেচে - অভিযাত্রীর চে' হীরো লাগচে বেশী ঃ)
  • সিকি | ১৯ জুন ২০১৫ ০০:১৪678636
  • ২রা জুন ২০১৫ - চতুর্থ দিন

    আজ, ফর আ চেঞ্জ, আর একা নই। আমরা এখন চারজন। সুমিত আর গুরদীপের সাহায্য নিয়ে আজ শুরু থেকেই একেবারে শক্তপোক্ত করে লাগেজ বেঁধে ফেললাম বাইকের পেছনে। ভালো করে ঝাঁকিয়ে হেলিয়ে দেখে নিলাম, কোনওভাবেই আর লুজ হয়ে যাবার সম্ভাবনা নেই। নটা সোয়া নটা নাগাদ সবাই রেডি হয়ে বাইকে স্টার্ট দিলাম। একটু এগোলেই পেট্রল পাম্প, সেইখানে সবাই ট্যাঙ্ক ফুল করবে, তারপরে এগোবে।

    কিন্তু, কী অদ্ভূত ব্যাপার, একসাথেই তো পেট্রল পাম্পে ঢুকেছিলাম! তেল ভরার পরে আর সুমিত গুরদীপকে দেখতে পাচ্ছিনা কেন? সামনে শুধু জীবন ওর সাদা-কমলা হন্ডা সিবিআর বাইক নিয়ে। বাকি দুজন বেপাত্তা। ওরা কি আগে এগিয়ে গেল? নাকি পেছনে?

    কোথাও দেখতে পেলাম না। অগত্যা আমরা দুজনেই এগোতে থাকলাম। জীবন বলল, ওর এগোবার তাড়া নেই, ও ধীরেসুস্থে ফটো তুলতে তুলতে এগোবে, আমি যেন আমার মত এগিয়ে যাই।

    অতএব, আমি আবার একা। তাও বললাম, পরে চল্লিশ কিলোমিটার আগে মুলবেক আছে, সেইখানে আমি দাঁড়াব, ও যেন ওইখানে দাঁড়ায়, যদি আমার আগে এগিয়ে যায় তো।

    এগোলাম। কারগিল পেরোতেই আবার ভাঙাচোরা খতরনাক রাস্তা শুরু হল, প্রায় দশ কিলোমিটার সেই নেই-রাস্তায় চলার পরে আবার ভালো রাস্তা পেলাম মুলবেকের বারো কিলোমিটার আগে। একদম মসৃণ রাস্তা। রানওয়ের মত। মুলবেক পোঁছে দাঁড়ালাম। এখন আর ফোন কাজ করবে না। খানিক দাঁড়াই।





    দূর থেকে হেডলাইট জ্বালিয়ে একটা বুলেটের দল এসে বেরিয়ে গেল। না, জীবন এদের মধ্যে নেই।





    আরও খানিক ওয়েট করার পর জীবন এল, কিন্তু সুমিত-গুরদীপের কোনও পাত্তাই নেই। আবার খানিক একসাথে চলা শুরু করলাম, আবার ও কোথাও ছবি তোলার জন্য স্লো হয়ে গেল, আমি এগিয়ে গেলাম, বললাম, আমি নামিক লা-তে ওর জন্য ওয়েট করব।



    আগের বারেও দেখেছি, তাই এইবারে অতটা চমকপ্রদ লাগল না, ক্ষণে ক্ষণে রুক্ষ পাহাএর রিলিফ বদলাচ্ছে। কখনও গেরুয়া, কখনও গোলাপি, কখনও সবুজ, বিভিন্ন কালারের পাথর এসে দেখা দিয়ে যাচ্ছে সামনে, আশেপাশে।















    খানিক বাদে পৌঁছে গেলাম নামিক লা। দেখি একটু আগে বেরিয়ে যাওয়া বুলেটের দল সেখানে দাঁড়িয়ে ফটোগ্রাফি করছে। আর একটা ফ্যামিলি রয়েছে, গুজরাত থেকে এসেছে একটা ইনোভা চালিয়ে। তাদেরই একজনকে দিয়ে আমি আমার একটা ফটো তোলালাম।



    তারপরে আবার জীবন চলে এল। সে-ও নিজের এবং চারপাশের ফটো তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।



    আমার অনুরোধে আমার একটা বিজাতীয় ছবিও তুলে দিল - চিনতে না পারলে কিছু করার নেই, এটা আমিই।



    এই সবের মাঝে হঠাৎ দেখি একদিকের আকাশে কুণ্ডলী পাকিয়ে আসছে ঘন কালো মেঘ। আর এমন তার ফানেল আকারের শেপ, ঠিক যেন মনে হচ্ছে, পাহাড়টা ওই মেঘটাকে নিজের দিকে চুম্বকের মত টানছে। কিন্তু, মনে হল পাহাড়টা বোধ হয় কারগিলের দিকে, আমরা পেছনে ফেলে এসেছি। সামনেটা পরিষ্কার।



    কিন্তু পাহাড়ী রাস্তার মজাই এই, এই মুহূর্তে যেটা মনে হচ্ছে পেছনে, একটা টার্ন ঘুরলেই সেইটা সামনে চলে আসে, ক্রমশ পাকদণ্ডী দিয়ে এগোতে এগোতে অবশেষে এইটুকুই বুঝলাম, সামনে বা পেছনে নয়, মেঘটা পুরো আকাশ ছাইছে, অবিলম্বে বৃষ্টি শুরু হবে।





    হলও তাই। আস্তে আস্তে মেঘ আমাদের ঘিরে ফেলল, বেশ ঘন মেঘ। তারপরে টেম্পারেচার হঠাৎ করে নেমে গেল, তারপরে শুরু হল বৃষ্টি। না না, বৃষ্টি নয়, তুষারপাত। স্নো-ফল। ... সমতলের জনতা, স্নো-ফল ব্যাপারটা শুরুর দিকে বেশ রোমান্টিক লাগে, আমারও লাগছিল, ব্যাগের ওপর বিন্দু বিন্দু পড়ছে তাজা স্নো-ফ্লেকস, এর একটা ছবি না তুলে থাকা যায়?



    কিন্তু রোমান্টিসিজম বেশিক্ষণ থাকল না। তুষারপাতের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালানো মোটেও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। একটু এগোতেই বুঝতে পারলাম, করোল বাগ থেকে কেনা স্পেশাল গ্লাভসের ভেতরে আমার আঙুলগুলো জমে গেছে, তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে প্রতিটা আঙুলের ডগায়, এদিকে হেলমেটের সামনের কাচে বাইরের দিকে ছিটে লেগে লেগে জমা হচ্ছে বরফ, একটু বাদে বাদেই সামনেটা অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ভেতরেও নাক থেকে বেরনো নিশ্বাসের জলীয় বাষ্প কাচের ভেতরে জমে আরও ঝাপসা করে দিচ্ছে। গ্লাভসে করে কাচের বাইরেটা সাফ করছি, গ্লাভস সাদা হয়ে যাচ্ছে বরফের চাঙড়ে, চলন্ত অবস্থাতেই পায়ের ওপর হাত থাবড়ে গ্লাভস থেকে বরফ ঝরাচ্ছি, আবার খানিক বাদে একই অবস্থা, কাচ ঝাপসা, আবার গ্লাভসে করে বরফ সরানো ...

    ন্যাড়া পাহাড়। কোথাও এতটুকু শেড নেই যেখানে দাঁড়ানো যায়। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াতে গেলে নির্ঘাত মরে যাবো। যেভাবেই হোক, এগোতেই হবে, এগোতেই হবে। ফোটুলা টপ এখনও পঁচিশ কিলোমিটার।

    ওইভাবেই এগোলাম, ফোটুলা টপ তখন তুষারপাতে সাদা, কেউ কোত্থাও নেই, সামনের রাস্তা দেখা যাচ্ছে না, জোরে বাইকও চালানো যাচ্ছে না, হাত জমে বরফ, সাঙ্ঘাতিক যন্ত্রণা হচ্ছে আঙুলে, এইবারে বোধ হয় ফ্রস্ট বাইটই হয়ে গেল।

    প্রায় দেড় ঘণ্টা ধীরে ধীরে চলেছিলাম ওই অবস্থায়। ফোটুলা টপ থেকে খানিক নামবার পরে হঠাৎই দেখি রাস্তার ধারে একটা ছোট্ট পাকা শেড বানানো। আর কোনওদিকে চিন্তা নয়, বাইক পার্ক করলাম। আমি দৌড়ে গিয়ে উঠলাম শেডের নিচে। হাত এত অসাড় যে গ্লাভস খুলতে পারছি না। গ্লাভস কোনওরকমে খুললাম তো বাইকের চাবি পকেটে ঢোকাতে পারছি না। পাগলের মত হাত ঘষতে শুরু করলাম। তুষারপাতের তেজ তখন বাড়ছে। চারদিকে দু চারটে মিলিটারি ট্রাকের আসাযাওয়া ছাড়া, আর কেউ কোত্থাও নেই। কিছু দেখাই যাচ্ছে না।

    হেলমেট খুলে দেখলাম, হেলমেটের কাচ নিয়ে ব্যস্ত থাকার ফলে নিজের দিকেই তাকাই নি। আমার রেনকোটের সামনের দিকটা পুরো সাদা হয়ে আছে। আলতো চাপড় মারতে ঝুরঝুর করে বরফ খসে পড়ল। হাতে এইবারে একটু সাড় ফিরেছে। ক্যামেরা হাতে নিলাম।


    শেডের সামনে দাঁড় করানো আমার বাইক।


    চারপাশের অবস্থা।

    আর এই সেই স্নো-ফলের ভিডিও -


    বেশ খানিকক্ষণ, প্রায় আধঘণ্টা ওয়েট করবার পরে মনে হল স্নোফলের তেজ একটু কমেছে। আস্তে আস্তে বেরোলাম, লামায়ুরু এখান থেকে আর দশ কিলোমিটার। ওখানে দোকান পেলে চা খাবো।

    কিন্তু বাইকে স্টার্ট দিয়ে একটু এগনোমাত্র আবার তেড়ে স্নো-ফল শুরু হল, তখন আর পিছিয়ে গিয়ে ওই শেডের ফেরার উপায় নেই। অগত্যা আবার হাত জমে যাওয়া, আবার হেলমেটের কাচে বরফ জমে যাওয়া - তাই নিয়ে খানিক এগোতেই হঠাৎ সামনের পাহাড় থেকে সূর্য উঁকি দিল, আর স্নো-ফল থেমে গেল ম্যাজিকের মত। আর তার খানিক পরেই সামনে দেখি একটা ছোট্ট একলা চায়ের দোকান।

    ভেতরে কেউ নেই। কোই হ্যায়? বলে হাঁক পাড়তে একটা হাসিখুশি লাদাখি ছেলে চলে এল কোথা থেকে, বললাম, চা বানাও, আর আমাকে একটু কিচেনে যেতে দাও, হাত সেঁকতে হবে।

    ছেলেটা ভালো। চা বানাতে বানাতে আমার জন্য অন্য একটা বার্নার জ্বালিয়ে দিল। প্রায় দশ মিনিটের চেষ্টায় হাতে সাড় এল, শরীর গরম হল। চা খেলাম। চা শেষ হতেই দেখি জীবনও সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, আমার বাইক দেখে। ও-ও হাত সেঁকল, চা খেল। আরেকটু বসা গেল। তিনটে বাজে তখন। আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার।

    সাড়ে তিনটেয় স্টারট করলাম। লামায়ুরু এখান থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার। আগের বারে লামায়ুরু মনাস্ট্রি দেখা হয় নি।

    মেন রোড থেকে বাঁদিকে ছোট্ট একটা পথ গেছে লামায়ুরুর দরজা পর্যন্ত। গেলাম। দেখলাম। কেন জানি না, খুব সাঙ্ঘাতিক ইমপ্রেসিভ কিছু লাগল না। এর থেকে লে-র মনাস্ট্রিগুলো অনেক বেশি সুন্দর।

    তাও কিছু ফটো তুললাম।








    লামায়ুরু থেকে সামনের পাহাড় - মুনল্যান্ড।











    আর - ছবি তোলার জন্য এদের পেলাম।







    লামায়ুরু থেকে বেরিয়ে মেন রোডে এগোলাম। এখানে বেশ কয়েকটা খাবারের জায়গা আর হোমস্টে অপশন আছে। এগোতে যেতেই মনে হল, এই দোকানটার সামনে যে দুটো বাইক দাঁড় করানো আছে, এদুটো সুমিত আর গুরদীপের না? ... উঁকি মারতেই দেখি দুই মূর্তি বসে ম্যাগি খাচ্ছে। আমাকে দেখেই হইহই করে উঠল। ওরাও আমাকে পেট্রল পাম্পে কীভাবে যেন হারিয়ে ফেলেছিল। যাই হোক, দুই থেকে আবার আমরা চার হলাম। ঠিক হল, এইবারে আর কেউ কাউকে ছেড়ে বেশি এগোবে না, চারজনেই একসঙ্গে এগবো।

    সাড়ে চারটে বাজে। আবার এগনো গেল। এর পরে পাহাড়ের রঙ পুরো অপার্থিব, মনে হবে যেন পৃথিবীতে নেই, চাঁদে এসে পৌঁছেছি। এই অঞ্চলের নাম তাই, মুনল্যান্ড।







    এখনও আশি কিলোমিটার দূরে নিমু। বাকিরা প্রথম আসছে, তাই আমারই দায়িত্ব ওদের সিন্ধু আর জানস্কারের কনফ্লুয়েন্স দেখিয়ে দেবার। তাই একসাথেই এগোলাম এইবারে।

    এই পথে প্রতি মোড়ে এত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, দেখতে দেখতে দূরত্ব পেরিয়ে যায়, কখনও বোর হতে হয় না। তাও যদি নিতান্তই কেউ বোর হয়ে যায়, তাকে চাঙ্গা করার জন্য আছে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে ব্রো-র নোটিসগুলো, যেমন মনোগ্রাহী, তেমনি উইটি। পাহাড়ি রাস্তায় যে-ই গেছেন, তিনিই জানেন এইসব নোটিস সম্বন্ধে। ইফ ম্যারেড, ডাইভোর্স স্পিড। বি জেন্টল অন মাই কার্ভস। হোল্ড ইওর নার্ভস অন মাই কার্ভস, ফাস্ট ওন্ট লাস্ট, ইত্যাদি প্রভৃতি।











    এই সব দেখতে দেখতে বিকেলের দিকে নিমু পৌঁছলাম। কিন্তু নিমু আসার আগে সেই জায়গাটা আসে, ফ্ল্যাট লান্ড, তার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সো-জা রাস্তা।



    আগেরবারে তো গাড়িতে চেপে হুশ করে বেরিয়ে গেছিলাম। এইবারে তাই ফটোসেশন না করলেই নয়।









    নিমুতে তো, আপনারা জানেনই লোকে কী দেখতে যায়। আমরাও দেখলাম। আমার আগেই দেখা, আবার দেখলাম।



    তারপর ম্যাগনেটিক হিল। জীবন বাড় খেয়ে খানিক অফরোডিং করে এল পাশের পাহাড়ে।





    এবং তারপরে আবার বৃষ্টি। সঙ্গে কনকনে হাওয়া। আকাশ ভর্তি মেঘ। এর মধ্যেই এসে গেল গুরুদ্বারা পাত্থর সাহিব।





    গুরদীপ তো সর্দার, সে তো যাবেই। আমার তখন ঠাণ্ডায় জবুথবু দশা। সারাদিনে খাওয়াও জোটেনি, একটু ম্যাগি আর চা খেয়েছি শুধু লামায়ুরুতে। পেটের ভেতর ঘোলাচ্ছে। নিজের ওপর কন্ট্রোল রাখতে পারছি না, ঠকঠকিয়ে কাঁপছি। ওদের বললাম, যাও দেখে এসো, আমি বাইরে বসে লাগেজ পাহারা দিচ্ছি। আমার তো দেখা আছে। ...আসলে জুতো খোলার ইচ্ছে ছিল না।

    ওরা মন দিয়ে গুরুদ্বারা দেখল, প্রসাদ খেল, আমি সামনে চেয়ারে বসে ঠকঠকিয়ে কেঁপে গেলাম। অসম্ভব ঠাণ্ডা। জুন মাসের লে-তে যেটা হাইলি আনলাইকলি। এই সময়ের ওয়েদার সাধারণত আরামদায়ক থাকে।

    সাড়ে সাতটায় ওরা বেরিয়ে এল। লে সিটি আর পঁচিশ কিলোমিটার। টিপিটিপি বৃষ্টি পড়ছে, হাড়ের ভেতর অবধি কেঁপে যাচ্ছে শীতে, তবু যেতে হবেই।

    কীভাবে যে রাস্তাটা চালিয়েছিলাম, মনে নেই, কেবল মনে আছে, এক সময়ে লে শহরে ঢুকলাম। তখন হোটেল খোঁজার পালা।

    (বাকিটা আবার কাল সক্কাল সক্কাল, কেমন?)
  • | ১৯ জুন ২০১৫ ০৭:২৮678638
  • বাইক কী করে পাকদন্ডী ধরে চলে? বাইক কি ছাগল?
  • | ১৯ জুন ২০১৫ ০৭:২৮678637
  • বাইক কী করে পাকদন্ডী ধরে চলে? বাইক কি ছাগল?
  • dd | 116.51.131.87 | ১৯ জুন ২০১৫ ০৮:১৩678639
  • বাইকটা মাথায় করে নিয়ে পাকদন্ডী বেয়ে উঠতে হয়।

    অনেক করিচি। সেই ছোটোব্যালায়।
  • সিকি | ১৯ জুন ২০১৫ ০৮:৩০678640
  • :)))
  • সিকি | ১৯ জুন ২০১৫ ০৮:৫৭678642
  • এই তো কদিন আগের ঘটনা, তবু মনে হচ্ছে যেন কতদিন আগে ঘুরে এসেছি। সময় কীভাবে পেরিয়ে যায়। টুকরোটাকরা ঘটনা মনে পড়ছে, যেমন, লামায়ুরুর কাছে যেই স্নো-ফল থেমে গেল, অমনি দেখলাম স্নো-ফ্লেকগুলো সব ব্যাগ থেকে ঝরে গিয়ে ব্যাগ ফর্সা হয়ে গেল, ব্যাগ এতটুকুও ভেজে নি। না ভিজেছিল আমার রেনগীয়ার। বরফ ঝরতেই সব শুকনো। এ এক্সপিরিয়েন্সও নতুন।

    লামায়ুরু থেকে আমাদের সঙ্গ নিয়েছিল আরেকটা ইয়ং কাপল। তারাও দিল্লি থেকেই এসেছে, মিড টুয়েন্টিজের একটা ছেলে আর একটা মেয়ে, বুলেটে করে এসেছে। লামায়ুরু থেকে তারাও আমাদের সাথে সাথেই এল।

    ....................................

    আমার এই দ্বিতীয় আগমন লে-তে। ঢোকামাত্র এমন একটা এক্সট্যাসি ফীলিং হল - আমি পেরেছি, আমি সত্যি সত্যি চোদ্দশো কিলোমিটার বাইক চালিয়ে আমার স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি, লে-তে এসে পৌঁছেছি - আনন্দের চোটে শীত কমে গেল।

    লে শহরে পৌঁছনো মাত্র বৃষ্টি থেমে গেল, কিন্তু ঢুকলাম অন্ধকার শহরের মধ্যে। চাংস্পা - জায়গাটার নাম মনে ছিল, পল গেস্ট হাউসে ছিলাম আগের বারে, শস্তায় সুন্দর থাকার ব্যবস্থা ছিল, মিসেস লিন্ডা ছিলেন তার হাসিখুশি ওনার। খুঁজে খুঁজে চাংস্পা এলাকায় পৌঁছে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের সেই বিল্ডিংটা খুঁজে বের করতেই সব ছবির মত মনে পড়ে গেল, তিন বছরে কিছুই বদলায় নি। দু মিনিটের মধ্যে গেস্ট হাউস খুঁজে বের করে ফেললাম, মিসেস লিন্ডা গেটেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার সর্বাঙ্গ ঢাকা রেনগীয়ারে, মাথায় হেলমেট, তার ভেতরে বালাক্লাভা, চিনতে পারার কথাও নয়, তবু বললাম, তিন বছর আগে এসে আপনার হোটেলেই ছিলাম।

    উনি একই রকমের হাসিখুশি রয়ে গেছেন, ছোট ছোট চোখদুটোকে আরও ছোট করে হেসে বললেন, কিন্তু আমার কাছে জাস্ট দুটোই রুম আছে।

    আমরা এখন ছয় - আমি, জীবন, গুরদীপ, সুমিত, আর ঐ দুটি কাপল - ওদের নাম বিবেক আর প্রিয়াঙ্কা - জেনেছিলাম পরের দিন। চারজনকার জন্য দুটি রুম তো হয়ে যাবে, কিন্তু বিবেক-প্রিয়াঙ্কার জন্য?

    মিসেস লিন্ডাই মোমবাতি নিয়ে সামনের বিল্ডিংয়ের দরজা ধাক্কালেন ওপরে গিয়ে, সঙ্গে আমিও গেলাম। সেটা আরেকটা হোটেল। প্রবল ঝড়বৃষ্টির জন্য কোথায় কোন পোল পড়ে গেছে, লে-তে আজ কারেন্ট আসবে না। মিসেস লিন্ডার হোটেলে ব্যাকআপ আছে, কিন্তু এই হোটেলে মোমবাতিই ভরসা। তা হোক, এক রাতের জন্য তাইই সই। কাপল সেইখানেই একটা ঘর নিল, আর মিসেস লিন্ডা যা দর বলেছিলেন তার থেকে একশো টাকা করে কমিয়ে দিলেন আমাদের জন্য। হোটেলের পার্কিংয়ে বাইকগুলো রাখার জায়গা হয়ে গেল, আর আবিষ্কার করলাম, তিন বছর আগে এসে আমি-সিকিনী-সাঁঝ দোতলার যে রুমটায় ছিলাম, ঠিক সেই রুমটাই বরাদ্দ হল আমাদের জন্য। জীবন আর আমি এক ঘরে, সুমিত গুরদীপ অন্য ঘরে, বিবেক প্রিয়াঙ্কা পাশের হোটেলে।

    মিসেস লিন্ডা বললেন - এত রাতে গরম জল পাবে অবশ্য, আমার জেনারেটর আছে, আমি গীজার চালিয়ে দিচ্ছি, কিন্তু কেউ চান কোরো না। শরীর খারাপ হয়ে যাবে। তোমরা কাল সকালে চান কোরো, এখন জাস্ট ফ্রেশ হয়ে খেয়ে এসো। লে মার্কেট এমনিতে আটটায় বন্ধ হয়ে যায় তবে খাবার জয়েন্টগুলো রাত দশটা সাড়ে দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে। কাল রেস্ট নাও, খারদুংলা টপ এখন বন্ধ, হেভি স্নো-ফল হয়েছে। তিনদিন লাগবে ঠিক হতে।

    বলে কী? অরিজিৎরা নুব্রা পৌঁছতে পেরেছিল তো? তাড়াতাড়ি অরিজিতের ফোন ডায়াল করলাম, লাগল না, তার মানে নুব্রা পৌঁছে গেছে। লে-তে থাকলে ফোন চালু থাকত। তাও কনফার্মড খবর না পেলে মন খুঁতখুঁত করে।

    ফ্রেশ হয়ে খেতে বেরোলাম যখন, তখনই প্রায় রাত দশটা বাজতে চলেছে। বাইরে বেরিয়ে টের পেলাম ঠাণ্ডা কাকে বলে। সেদিন বোধ হয় পূর্ণিমা, মেঘ ছিঁড়ে আকাশে উঠেছে বিশাল সাইজের একখানা চাঁদ, যেমনি তার আয়তন তেমনি তার ঔজ্জল্য, চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, অন্ধকার শহরকে ঘিরে চারপাশের বরফের চূড়াগুলো সেই আলোয় ঝিকমিক করছে রূপোর মতন, ক্যামেরার সাধ্যি কী, সেই ছবি তোলে। শুধু দেখে মুগ্ধ হতে হয়। তাপমাত্রা সম্ভবত শূন্যর কাছাকাছি, হাতে মুখে কামড়ে ধরছে ঠাণ্ডা, তার মধ্যে গরম গরম হানি চিলি পট্যাটো আর চিকেন হাক্কা নুডল। আহা, অমৃত।

    কাল রেস্ট। খেয়ে উঠে এদের সাথে প্ল্যান ছকতে হবে। জীবন তো কাল বেরোবেই। খারদুংলা বন্ধ থাক বা খোলা, ও খারদুংলা যাবেই যাবে। ওকে আটকানো যাবে না। কাল থেকে আমরা পাঁচজন।

    *****************************************************

    সুমিতের প্রথম প্রশ্ন - মারসিমিক লা যাবে?

    মানে? আরে আমিও তো সেই একই প্ল্যান ছকে বেরিয়েছি। আর্গুয়েবলি, খারদুংলা এখন আর হায়েস্ট মোটরেবল রোড নয়। প্যাংগং লেকের কাছে একটা পাস আছে, মারসিমিক লা, সেটা খারদুংলার থেকেও তিনশো মিটার উঁচুতে। রাস্তা তৈরি হয় নি, পুরোটাই অফরোডিং, কিন্তু গতবছর এবং তার আগের বছর অনেকেই করে এসেছে। অতএব, ওটা তো আমাদের করতেই হবে।

    এমনিতে লে-র সাইটসিয়িংগুলোর জন্য এখন আর আইএলপি (ইনার লাইন পারমিট) নিতে হয় না, ওটা ২০১২ থেকে বন্ধ হয়ে গেছে, তবে মারসিমিক লা-র জন্য নিতে হবে। কাল তাই ডিসি অফিস যাবো, ওটার পারমিট বানিয়ে লে প্যালেস শান্তিস্তূপ আর স্পিটুক মনাস্ট্রি দেখব। পরশু যদি খারদুং লা না খোলে তা হলে আমরা প্যাংগং লেকের দিকে এগোব। ফিরে আসতে আসতে নিশ্চয় খারদুংলা খুলে যাবে।

    ভরপেটে একটা করে ডায়ামক্স গিলে ভরপুর ঘুম।
  • info | 125.112.74.130 | ১৯ জুন ২০১৫ ১৫:১০678643
  • মারসমিক লা ১৮৬৪০ ফিট ২০০৫ থেকেই লে থেকে পারমিট নিয়ে যেতে দেয় ।
  • de | 131.245.157.93 | ১৯ জুন ২০১৫ ১৯:৫১678644
  • আঃ! কি আরাম হচ্ছে পড়তে - যেন আমিই ঘুরছি। ফোটুলা টপে স্নো ফল তোলার জন্য রাস্তার ধারে বাইক দাঁড় করিয়ে অতোটা উঠলে? নীচে ওটা তোমার বাইক?

    আলচি গেলে না? - আলচির পিছন দিয়ে ইন্দাসের একদম কাছে নেমে যাওয়া যায়। আর গ্রামের মধ্যে একটু ঢুকে গেলে অপূর্ব সব দৃশ্য।
  • Ishan | 202.43.65.245 | ১৯ জুন ২০১৫ ২১:১২678645
  • লেটে চলছি, এই আজকে খানিক পড়লাম। কিন্তু বেসিক কোচ্চেনগুলো দেখলাম কেউ ই করেননি। ১। সিকি খামোখা দিল্লি থেকে লাদাখ গেল কেন? কটা ন্যাড়া পাহাড় ছাড়া আর কিছু তো দেখছিনা। ২। গেলই বা যদি বাইকে চড়ে গেল কেন? ঠান্ডার মধ্যে বাইক চালালে নিমুনিয়া হতে পারে, এটা কি সিকিকে কেউ বলেনি?
  • সিকি | ১৯ জুন ২০১৫ ২১:৪৮678646
  • ইশান আর মানুষ হল না :)

    দে, আলচি যাই নি। কেন যাই নি জানি না, মেনলি লামায়ুরু দেখে মন ভরে নি দেখে আলচিতে আর দাঁড়াতে ইচ্ছে করে নি।

    আর ইন্দাস তো আগের বারে আমি প্রাণ ভরে দেখেছি, মনে নেই, ইন্দাসের ধারে মিলিটারি ব্রেকফাস্ট খেয়ে এসেছিলাম?

    দেখি নি এবারে অনেক কিছুই, স্পিটুক মনাস্ট্রি, শে প্যালেস, ঠিকশে মনাস্ট্রি এগুলোও দেখি নি। সবই তো দেখা, ডেস্টিনেশন তো নয়, চলতে থাকাটাই মূল উদ্দেশ্য ছিল আমার।

    আর স্নো-ফলের সময়ে ওটা খুব উঁচুতে উঠি নি। সামান্য উঁচু প্ল্যাটফর্মে একটা শেড ছিল, সেখান থেকে তোলা। হ্যাঁ ওটা আমারই বাইক।
  • dd | 113.227.96.147 | ১৯ জুন ২০১৫ ২২:১২678647
  • পড়তে ভাল্লাগছে সে আর বলার কী আছে?

    কিন্তু বাইকে করে একাকী লে' না যাবার আনন্দটাও খুব পাচ্ছি, ভাগ্গিস এরম কোনো সখ নেই আমার।

    আর এটাও সবাই জানে, সক্কলে । তাও ও দু একজন বাকী থাকলে জেনে নিন।

    অল্পো কিছুদিন আগেও লে মোটেই পপুলার ছিলো না। কিন্তু ঐ শারুখ খান সিনেমা কল্লেন? DDLJ। সেই থেকেই লে'র রমরমা। শারুখদার গান ছিলো না " লে যায়েংগে,লে যায়েংগে"। ব্যাস। হয়ে গ্যালো।
  • সিকি | ১৯ জুন ২০১৫ ২২:১৪678648
  • :)

    তারপরেই দিল সে সিনেমায় শারুখ খান সত্যিই লে গেছিল। আমীর তো সেদিনের ছোগরা।
  • Nina | 83.193.157.237 | ২০ জুন ২০১৫ ০৩:৫০678649
  • আরিব্বাস্স্স্স!! সিকি কি করছিস ঃ-০ চোখ কপালে উঠে আটকে গেছে আমার --পৃথ্বীরাজ চৌহান হয়ে গেছিস --আবার পড়ব গোড়া থেকে ---ছবিগুলো ও দুরন্ত --ইস তোকে চিনি বলে কি গব্ব যে হচ্ছে কি বলি---জ্জীও কাকা জ্জীও!!
  • nina | 83.193.157.237 | ২০ জুন ২০১৫ ০৩:৫২678650
  • হা হা হা হা
    ডি ডি র লে যায়েঙ্গে লে যায়েঙ্গে - পড়ে কুলকুল করে হাসছি---ডি ডি তুসি গ্রেট হো
  • সিকি | ২০ জুন ২০১৫ ১৭:১৯678651
  • নীনাদি কী সব বলছে, নজ্জায় নাল হয়ে যাচ্ছি।

    কাল সময় পাই নি, আজও পাব কিনা জানি না, পারলে আজ রাতে আবার আপডেট দেব।
  • সিকি | ২১ জুন ২০১৫ ০৯:৪৪678653
  • ৩রা জুন ২০১৫ - পঞ্চম দিন

    ভোর ভোর ঘুম ভাঙিয়ে দিল জীবন। নাই, নাই, নাই যে বাকি সময় তাহার। অ্যাক্লাইমেটাইজেশনের, রেস্ট নেবার কোনও সময় নেই তার, ছুটি কম, তাকে আজ যেতেই হবে খারদুং লা জয় করতে। একা একাই। ... কিন্তু খারদুং লা এখন বন্ধ আছে না? কাল তো শুনলাম মারাত্মক স্নো-ফল হয়েছে, ট্র্যাফিক মুভমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে!

    তাতে কিছু করার নেই জীবনের। ওকে এগোতেই হবে, যেখানে আটকাবে, সেখান থেকে ফিরে আসবে, নয় তো অপেক্ষা করবে সেখানেই, যদি খুলে যায় বেলার দিকে। তাও বললাম, এখানে পুলিশ বা মিলিটারি - যাকে সামনে পাবে, খোঁজ নিতে নিতে যাও। আমার ফোন নাম্বার দিলাম, কোনও দরকার পড়লে যেন অতি অবশ্যই ফোন করে নেয়।

    মিষ্টি হেসে বিদায় নিল জীবন। একদিনের রুম রেন্টের শেয়ার মিটিয়ে সে তার ব্যাগ প্যাক করে নিচে চলে গেল। জীবনের সাথে আমার সেই শেষ দেখা। কে জানে, সে খারদুং লা যেতে পেরেছিল কিনা।

    একটা জিনিস খেয়াল করলাম, আজ পঞ্চম দিনে এসে, আমার গায়ে ব্যথা ট্যথা প্রায় মরে গেছে, হ্যাঁ, ফ্যাটিগ একটা আছে, আরও খানিকক্ষণ রেস্ট নিলে হয়, সবে তো সকাল সাতটা বাজে। আবার লেপের তলায় সেঁধিয়ে গেলাম।

    আলটিমেটলি নটায় উঠলাম। ফ্রেশ হলাম। নিচে গিয়ে সুমিতদের রুমে নক করে দেখি ওরাও রেডি হয়ে গেছে। পাশে একটা রুম খালি হয়েছে, অতএব বিবেক-প্রিয়াঙ্কাও পাশের হোটেল ছেড়ে এইখানেই চেক ইন করে নিয়েছে। সবাই রেডি হয়েছে কিংবা হচ্ছে। কী প্ল্যান আজকের?

    আজ অ্যাপারেন্টলি রেস্ট দিবস। বিশেষ কোনও কাজ নেই, তবে একবার ডিসি অফিস যেতে হবে। না, চেনা রুটের পারমিট নেবার জন্য নয়। ২০১২ থেকে নুব্রা, প্যাংগং - এসবের জন্য ইনার লাইন পারমিটের কনসেপ্ট বাতিল হয়ে গেছে ভারতীয়দের জন্য, ওসব এখন কেবল বিদেশিদের জন্য লাগে। আমাদের পারমিট নিতে হবে, মারসিমিক লা-র জন্য। ওটা এখনও লেস এক্সপ্লোরড, প্যাংগং লেকের কাছে একটা রুট ডাইভার্সন আছে - ফোবরাং গ্রামের মধ্যে দিয়ে। সেইখান দিয়ে মারসিমিক লার দিকে এগোতে হয়।

    এখানে এই সব অদ্ভূত অদ্ভূত মজা হয়, কোথায় যে বরফ হয় আর কোথায় হয় না - তার কোনও লজিক নেই। এই যেমন, জোজিলা পাস সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে, অথচ তার চেয়ে উঁচুতে নামিক লা বা ফোটু লা টপে বরফ পড়ে না। তেমনি খারদুং লা বরফে ঢাকা, অথচ তার চেয়ে তিনশো মিটার উঁচুতে এই মারসিমিক লা পাসে বরফ পড়ে না। শুধু রাস্তা বলে কিছু নেই সে পথে। পথে পথে পাথর ছড়ানো। পুরোটাই অফরোডিং। গতবছর সজল শেঠের ব্লগ পড়ার পর থেকে মনে মনে বদ্ধপরিকর হয়ে রয়েছি মারসিমিক লা যেতেই হবে। এদিকে সুমিত আর গুরদীপেরও একই ইচ্ছে, ওরা অবশ্য সজল শেঠের ব্লগ পড়ে নি, ওরা ডেভিল অন হুইলস ফলো করে, সেখানে অন্য কারুর ব্লগ ফলো করেছে এবং ওদেরও লক্ষ্য ওই - মারসিমিক লা। তার জন্য পারমিট নিতে হবে।

    মোটামুটি এগারোটা নাগাদ সবাই রেডি হয়ে বেরোলাম। সামনেই জার্মান বেকারি, সেইখানে ঢুকে সব্বাই পেট পুরে খেলাম, পরস্পরকে জানাচেনার প্রাথমিক পর্বটা ওখানেই সারা হল। সুমিত উত্তরাখণ্ডের ছেলে, কাজ করে গুরগাঁওতে, গুরদীপের বাড়ি আম্বালায়, অফিস নয়ডায়। এদের দুজনকে দেখলে মনে হয় হরিহর আত্মা - কে বলবে এদের আলাপ হয়েছে জাস্ট ফেব্রুয়ারি মাসে। সুমিত একা একা চলেছিল চিটকুল (হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌর জেলার একটি গ্রাম, চীন সীমান্তের কাছে ভারতের শেষতম জনবসতি), সেইখানে রাস্তায় আলাপ, এই যেমন পরশুদিন ওদের সাথে আমার আলাপ হয়েছে। সুমিত প্যাশনেট বাইকার এবং ফটোগ্রাফার, মেনলি স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে ওর ঝোঁক, দেশবিদেশকারেন্টঅ্যাফেয়ার্স সবকিছু সম্বন্ধেই খুব ইন্টারেস্টেড - কেবল একটি বিষয় বাদে।

    মেয়ে। তিনি মাত্র আঠাশ বছর বয়েসী, বিয়ে করবেন না মনস্থ করেছেন, ফটোগ্রাফি, বাইকিং এবং দেশবিদেশে ঘুরে জীবন কাটাবেন ঠিক করেছেন। অবশ্য মেয়ে দেখলে আড়ষ্ট হয়ে যায়, এমন টাইপের জনতাও নয়। ফ্রি-মাইন্ডের জনতা - ব্যাগেজহীন।

    গুরদীপ সংসারি মানুষ, একটি বউ এবং একটি ছানা আছে। বাইকিং এবং ফোটোগ্রাফি তারও নেশা, সেইভাবেই সে-ও চিটকুল যাচ্ছিল - সেখানে সুমিতের সাথে ওর আলাপ। চিটকুল ছাড়াও অবশ্য দুজনেই আরও অনেক জায়গা বাইকে করে ঘুরেছে। গুরদীপ তো লাহুল-স্পিতি ভ্যালিও ঘুরে এসেছে। দলের মধ্যে একমাত্র ক্যাবলা আমিই।

    বিবেক আর প্রিয়াঙ্কা - দাবি করল কাজ করে একটি আইটি কোম্পানিতে, তবে ওদের পুরো কালটিভেট করে যা মনে হল, ওরা বিপিও-তে আছে, আইটি-তে নেই। ইন্দিরাপুরমের ছেলে এবং মথুরার মেয়ে, ওদের বিয়ে হয় নি এখনও, তবে হবে শিগগিরই। আপাতত দুজনে বেরিয়ে পড়েছে লে ভ্রমণে। এই বয়েসে যা হয় আর কি - আমরা তিনটি ব্যাচেলর ও সিউডো ব্যাচেলর, সে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে এসে না পারছে পুরোপুরি আমাদের সাথে মিশতে, না পারছে গার্লফ্রেন্ডকে পুরোপুরি সময় দিতে। মেয়েটি অবশ্য খুবই স্মার্ট, একবারের জন্যও দ্বিধা করে নি দলে ভিড়ে যেতে, বরং বিবেকের মধ্যেই একটু কিন্তু-কিন্তু ভাব ছিল প্রথম দিকে।

    গন্তব্য, প্রথমে ডিসি অফিস। মানে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরেট অফিস। ওখান থেকেই পারমিট নিতে হয়। বেশি দূর নয়, মার্কেটের শেষ প্রান্তে পোলো গ্রাউন্ড, সেই গ্রাউন্ডের সামনেই ডিসি অফিস।

    হেঁটে হেঁটে এগোলাম সবাই মিলে। এদিক সেদিক ছবি তুলতে তুলতে। আকাশ ঘোলাটে। জুন মাসের লে-তে যে সুনীল আকাশ দেখা যাবার কথা, সে আকাশ উধাও। রাশি রাশি মেঘ।



    দূরে দেখা যাচ্ছে লে প্যালেস।



    সকলেই বলছে, এ বড় আনইউজুয়াল ওয়েদার। জুন মাসে এমন ওয়েদার হয় না লে-তে। খারদুং লা বন্ধ। জীবন যে কোথায় গেল কে জানে! নিজের ফোন নম্বরও দিয়ে যায় নি।

    আমিও ত তাইই জানি, এমন ওয়েদার হয় না লে-তে। লাদাখ বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। বৃষ্টি এখানে হয় না, তাই যখন সারা ভারত প্রার্থনা করে ভগবানের কাছে, আল্লা ম্যাঘ দে, পানি দে বলে, লাদাখিরা প্রার্থনা করে, ঠাকুর, গ্লেসিয়ার থেকে জলের সাপ্লাই অব্যাহত রেখো। ওরা কখনও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে না। লে-তে বেশির ভাগ বাড়িই পাথরের ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে বানানো। এইখানে তেড়ে বৃষ্টি হলে কী হয় সে আমরা দেখেছি ২০১০ সালে। ফ্ল্যাশ ফ্লাডে লে শহর প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছিল।

    পারমিট নেওয়াটা জাস্ট একটা মেকানিকাল প্রসেস, কিছুক্ষণের মধ্যেই পারমিট এসে গেল হাতে, ওরাই বলে দিল, বাকি জায়গা যাবার জন্য এক ধরণের ফর্ম হয়, যে কোনও জেরক্সের দোকানে পাওয়া যায়, ওই ফর্ম জায়গায় জায়গায় চেকপোস্টে ভরে জমা দিতে হয়। পারমিটের বদলে এখন ফর্ম চলে।

    অতঃপর যাওয়া লে প্যালেসে। ইতিমধ্যেই হোটেল থেকে এতটা দূর চলে এসেছি যে হোটেলে ফিরে মোটরসাইকেল নিতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। স্থানীয় লোকেরাই বলল, এই পোলো গ্রাউন্ডের পেছন দিয়ে ওই গলিপথ ধরে এগিয়ে যান, এটা সোজা লে প্যালেস গেছে - খুব বেশি দূর নয়।

    পাহাড়ী লোকেদের "কাছেই"-এর মানে যে আমাদের থেকে আলাদা, সে সম্বন্ধে আমার বিস্তর জ্ঞান আছে। তবু পাঁচজনে মিলে এগোলাম সে রাস্তা দিয়ে। এর বাড়ির উঠোন, তার বাড়ির গোয়াল - সব মিলিয়ে সে এক সুন্দর এক্সপিরিয়েন্স। পায়ে হেঁটে অফরোডিং। মাঝে এক শিংওলা চমরী গাই আমাদের অলস চোখে মেপে নিল - এইখানে আমাকে বাকিদের লীড করতে হল - বাকিরা গরু দেখে ভয় পাচ্ছিল কিনা।

    ছবি দেখুন। সমস্ত ছবি অবশ্য আমার নিজের তোলা নয়। অনেকগুলো সুমিতের ক্যামেরা থেকে নেওয়া।



































































    আপাতত এইটুকু। আবার রাতে বসব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে প্রতিক্রিয়া দিন