এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সর্ষেঃ অন্যভাবে, অন্যরকম লাদাখ

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১২ জুন ২০১৫ | ২৪৩৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২১ জুন ২০১৫ ০৯:৫১678654
  • কুতুয়াটা ক্কি সুন্দর!
  • সিকি | ২২ জুন ২০১৫ ২২:০০678655
  • দুলকি চালে খাড়াই নেই-পথ ধরে একটু একটু করে উঠতে লাগলাম লে প্যালেসের দিকে। দলের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক আমি, সেটা বিলক্ষণ টের পাচ্ছিলাম উঠতে গিয়ে। দম বেরিয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছি। তিন চার ধাপ উঠছি, আর পাথরের ওপর বসে হ্যা-হ্যা করে হাঁপাচ্ছি। আমাকে সঙ্গ দিতে গিয়ে বাকিদেরও দাঁড়াতে হচ্ছে। তার জন্য অবশ্য বিরক্ত হচ্ছে না কেউই, গুছিয়ে ফটো তুলে যাচ্ছে, আর শ্রীমতি প্রিয়াঙ্কা নানা বিভঙ্গে তার বয়ফ্রেন্ডের ক্যামেরার জন্য পোজ দিয়ে যাচ্ছেন, আমরাও ক্যামেরায় তার একটু আধটু নিচ্ছি আর কি।

    এইভাবে ধীরেসুস্থে উঠলাম প্যালেসের মুখে। টিকিট কেটেই প্রথমে জল চাইলাম। পর পর দু গ্লাস জল খেয়ে প্রাণ ঠাণ্ডা হল। অতঃপর লে প্যালেস দর্শন। নতুন কিছু দেখার তো নেই, আমার আগে সবই দেখা, অতএব বাকিদের গাইড হিসেবে কাজ করলাম খানিক। মাঝে মাঝেই অরিজিতের নম্বর ডায়াল করে যাচ্ছি, সে তখনও আউট অফ রিচ, মানে নুব্রাতেই আটকে আছে এখনও।

    সেই রাস্তা বেয়েই নিচে নামলাম, নিচে নামাটা মোটেই কষ্টকর নয়, তারপরে লে মার্কেটে গিয়ে পেটপুরে লাঞ্চ সারলাম। কী সাঙ্ঘাতিক খিদে যে পেয়ে গেছিল! লাঞ্চ সেরে উঠতে উঠতেই প্রায় তিনটে বেজে গেল। মানে আজ আর স্পিটুক মনাস্ট্রি হবে না, শুধু শান্তিস্তুপ দেখা যাবে।

    শ্রীমতি প্রিয়াঙ্কা এমনিতে খুবই ভালো মেয়ে, কেবল মথুরায় বাড়ি তো - যা-ই খাবার দেখেন, দুবার করে কনফার্ম করে নেন - ইয়ে ভ্যাজ হ্যায় না? লাস্টে একবাটি দই চেয়ে সেটা দেখিয়েও জিজ্ঞেস করে নিল - ইয়ে ভ্যাজ হ্যায় না? মাইরি, দই কীভাবে নন ভেজ হয়, সে আর আমার জানা হল না।

    সে না হয় হল, কিন্তু কালকের কী প্ল্যান? কাল যে আমাদের খারদুং লা পেরিয়ে নুব্রা যাবার কথা। যেতে পারব কি পারব না? আকাশ ভর্তি কালো কালো মেঘ! ভুল সময়ে এসে পড়লাম মনে হচ্ছে, জুন মাসে লে-র আবহাওয়া তো এমন হবার কথা নয়! এত বৃষ্টি হবে লে-তে, কে জানত? মনে হচ্ছে না আমাদের যাবার আগে মানালির রুটও খুলবে বলে। হয় শ্রীনগর রুটেই ফিরতে হবে, নয় তো গতি এক্সপ্রেস জাতীয় কিছু একটাতে বাইকটা জমা করে দিল্লি পাঠানোর ব্যবস্থা করে আমাকে ফ্লাইটে ফিরতে হবে। শ্রীনগর দিয়ে ওই রুটে দ্বিতীয়বার ফেরা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। নাইটমেয়ারিশ ব্যাপার হবে তা হলে সেটা।

    পাঁচজনে মিলে ঠিক করলাম, খারদুং লা যদি কাল না খোলে, তা হলে কালকের দিনটা নষ্ট হবে। সেটা না করে কাল বরং চাং লা পাস পেরিয়ে প্যাংগং লেক চলে যাওয়া যাক। ওটা ঘুরে আসতে দুদিন লাগবে। প্রথম দিন প্যাংগং পৌঁছবো। পরের দিন মারসিমিক লা করে চাং লা পেরিয়ে আবার লে-তে ফেরত। দুদিন বাদে নিশ্চয়ই খারদুং লা খুলে যাবে। বৃষ্টি এখানে নর্মালি হয় না, এক দুদিন হচ্ছে, থেমে যাবে ঠিক।

    গেস্ট হাউস থেকে বাইক বের করে এর পর শান্তিস্তুপ যাত্রা। লে-র সেই গলিগুলোর মধ্যে দিয়ে মাত্র তিন বছর আগে হেঁটে ঘুরেছি। আজ আবার বাইকে করে ঘুরতে গিয়ে কেমন একটা জাতিস্মর জাতিস্মর ফীলিং হচ্ছিল। সব চেনা চেনা গলি, চেনা দোকানপাট। এইখানে পর পর তিনটে টি-শার্টের দোকান ছিল, ওইটা সেই কিউরিও শপটা, এখান থেকে বাঁদিকে গেলেই একটা ঘ্যামা খাবার জায়গা আছে - এইসব পেরিয়ে উঠলাম শান্তিস্তুপে। লে মার্কেট থেকে তিন চার কিলোমিটার দূরে।

    নতুন কিছু এখানেও দেখার নেই, তবে শান্তিস্তুপ সংলগ্ন ছোট্ট মনাস্ট্রিটিতে তখন একজন বৌদ্ধ মঙ্ক এক ঝিমধরানো দারুন সুরে ত্রিপিটক বা ওই জাতীয় কিছু পড়ে চলেছিলেন। এইটা এইবারের একটা দারুণ পাওনা - খানিক ভিডিও রেকর্ডিং করে নিলাম।



    হেডফোন লাগিয়ে শুনবেন, নইলে ড্রামের আওয়াজে আলাদা করে মন্ত্রোচ্চারণ শুনতে পাবেন না।

    এবার কিছু ছবি দিই -

    শান্তিস্তুপ থেকে সামনের খারদুং লা টপ -


    শান্তিস্তূপ - আকাশ মেঘে ঢাকা।






















    এর পর খানিক মার্কেটে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি, টিবেটান রিফিউজি মার্কেটে গিয়ে ফটোগ্রাফি, তারপরে মনে পড়া যে আমাকে আবার একটা জেরিক্যান কিনতে হবে। পরদিন প্যাংগং যাওয়া এবং আসা, চারশোর ওপর কিলোমিটার, শুধু ট্যাঙ্কারের পেট্রলে হবে না, বাড়তি লাগবেই।












    শক্তপোক্ত দেখে একটা ক্যান কেনা হল প্লাস্টিকের, একটা বানজি কর্ডও কিনলাম, যদি কাজে লাগে। এমনিতে কাল আর গন্ধমাদন নিয়ে বেরোব না, বাড়তি ব্যাগটাতে যা-যা লাগবে না আগামী দু রাতের জন্য, সেগুলো ভরে মিসেস লিন্ডার গেস্ট হাউসে রেখে যাব, আমার সঙ্গে যাবে শুধু ভায়াটেরা ক্ল, তাকে শক্ত করে বাঁধবার প্রভিশন ব্যাগেই আছে, ওটা নিয়ে চিন্তা নেই। সুমিতের অ্যাভেঞ্জারে আমার পেট্রল জেরিক্যানের জন্য একটু জায়গাও হয়ে গেল, আমাকে নিজেকে আর ওটা ক্যারি করতে হবে না।



    কেনাকাটা সেরে একটা রেস্টুর‍্যান্টে ঢুকে আবার গলা পর্যন্ত খাওয়া। মনে শুধু একটা খুঁতখুঁত। মানালি তো হবে না বলেই মনে হচ্ছে, বাইকের ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হল না। যাক, ফিরে এসেই করতে হবে। আর যাই হোক, ওই শ্রীনগর রুটে আমি দ্বিতীয়বার ফিরছি না।

    রেস্ট নেবার নামে সারাদিন ঘুরে টুরে আমরা সকলেই তখন হা-ক্লান্ত। সুমিত আর গুরদীপ তো খাবার টেবিলে বসেই একে অন্যের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।



    সাড়ে দশটায় হোটেলে ফিরে লাগেজ গুছিয়ে এক ঘুম দেব প্ল্যান করছি, দরজায় টকটক।

    খুলে দেখি, বিবেক - সিকিস্যার, আপনার কাছে এক্সট্রা ডায়ামক্স আছে? আমাদের স্ট্রিপটা শেষ হয়ে গেছে।

    শেষ হয়ে গেছে? কতগুলো খেয়েছো? কবে থেকে খাচ্ছো?

    না, খাচ্ছি পরশু থেকে, তো, কাল তো চাং লা পাস পেরোতে হবে, স্টকে আর একটাই পড়ে আছে, আপনি যদি একটা দেন তো ...

    দিলাম, আমার কাছে পনেরোটার মধ্যে তেরোটাই পড়ে আছে। বললাম, এইভাবে এত ডায়ামক্স কিন্তু দরকার নেই। শরীর এমনিতেই অ্যাক্লাইমেটাইজড হয়ে আছে এখন, আর ডায়ামক্স না খেলেও চলবে।

    আলো নেভানোর আগে একবার অরিজিতের ফোনে ট্রাই করলাম, এখনও নট রিচেবল। মানে খারদুং লা খোলে নি। কাল পরশু আমি নিজে নেটওয়ার্কের বাইরে থাকব, তাই হোয়াটস্যাপে দু একজনকে বললাম অরিজিতকে লাগাতার ট্রাই করে যেতে কাল পরশু। কী হল কে জানে।

    সাড়ে এগারোটায় ফাইনালি বিছানায় শুতে পারলাম। শোয়ামাত্র ঘুম।
  • ন্যাড়া | 109.72.224.255 | ২৩ জুন ২০১৫ ০৫:৫৫678656
  • উফ্‌, কী ভ্রমণ-গরিমা রে বাবা! প্লাস ল্যালা-গরিমা ও বাইক-গরিমা তো আছেই!
  • সুকি | 168.161.176.18 | ২৩ জুন ২০১৫ ০৭:৪৯678657
  • আগে লেখা হয় নি, কিন্তু এই থ্রেডটি খুবই ভালো হয়েছে। লেখার কথা বাদই দিলাম, কিন্তু এই যে একাকী বেরিয়ে পড়া, এটাই আমার কাছে বিশাল সাহসের একটি ব্যাপার। আমি তো জি পি এস ছাড়া ড্রাইভ করতেই ভয় পাই!

    একটা বই হবার সম্ভাবনা ও মাল মশালা তো র‍য়েছেই। চালিয়ে যাও -
  • de | 69.185.236.54 | ২৩ জুন ২০১৫ ১৩:৩১678658
  • দারুণ হচ্ছে সিকি -

    শান্তিস্তুপের ছবিতে সবাই অমন চিপকে ফ্ল্যাট হয়ে গেলো ক্যামনে? কাঁচের ভেতর থেকে তোলা?
  • সিকি | ২৩ জুন ২০১৫ ১৩:৫৪678659
  • হ্যাঁ, ওটা কাঁচের রিফ্লেকশন।

    আসলে এই বিল্ডিংটার সামনে দাঁড়িয়ে তোলা, শান্তিস্তুপের পেছনদিকে বোধ হয় একটা কাফেটেরিয়া বানানো হচ্ছে।



    সুকি, থ্যাঙ্কু। আমার কাছে ব্যাপারটা একটু উল্টো। আমার কাছে এই দৈনন্দিন জীবনের সোম-মঙ্গল-বুধ-বেস্পতি-শুক্রবারগুলো কাটানোই এত বেশি সাহসের ব্যাপার - যে তার থেকে অচেনা রাস্তায় বেরিয়ে পড়া অনেক বেশি সোজা। আর এ রাস্তা তো খুব অচেনাও নয় আমার। গত তিন চার বছর ধরে প্রচুর পড়েছি, প্রচুর ছবি দেখেছি, ভার্চুয়ালি আমি পুরো রাস্তাটা চিনতাম। আর জিপিএসের কথা বলছো? ও তো সেখানে লাগে যেখানে অনেক রাস্তার মধ্যে একটা বেছে নিতে হয়। দিল্লি থেকে লে যাবার একটাই সোজা পথ - দু চারটে এদিক ওদিক ছাড়া। জিপিএস তো আমিও প্রথমে ফলো করছিলাম, ঐ মোবাইল মাউন্টটা যে প্রথমদিনই ভেঙে বেরিয়ে গেল।
  • Manish | 127.242.168.250 | ২৩ জুন ২০১৫ ১৬:২৬678660
  • শমীক, একা বাইকে করে বেড়াতে যাওয়ার জন্য extra ধক চাই।
  • সিকি | ২৩ জুন ২০১৫ ১৬:৪০678661
  • তা হবে। তবে সত্যি বলছি দাদা, নিজের ভেতর থেকে কখনও সেই রকমের বাড়তি ধকের দরকার অনুভব করি নি। আমায় যাঁরা সামনে থেকে দেখেছেন, তাঁরা জানেন আমি খুব একটা বিশাল ধকওলা পাবলিক নই। খুব লিমিটেড রিস্ক নিই।

    গল্পে আরও অনেক টার্ন আছে এর পরে। আরেকটু এগোই তা হলে বুঝবেন এই ধকের ক্যালকুলেশন না করে রাস্তায় বেরোলে পদে পদে কী কী চিত্তির হয়।
  • Manish | 127.214.40.247 | ২৪ জুন ২০১৫ ১০:৩৪678662
  • শমীক আগে বাড়ো,
  • de | 24.139.119.171 | ২৪ জুন ২০১৫ ১৩:০৬678664
  • তাপ্পর কি হোলো?
  • সিকি | ২৪ জুন ২০১৫ ১৩:১৮678665
  • আজ রাতে :)
  • ranjan roy | 132.180.170.196 | ২৪ জুন ২০১৫ ১৪:৪৭678666
  • অপেক্ষায় আছি, রোজই।
  • a x | 60.171.26.111 | ২৪ জুন ২০১৫ ১৫:০৭678667
  • আমি খালি অপেক্ষায় আছি সিকিনীর সাথে যখন ঝারপিটটা হবে, তারজন্য।
  • সিকি | ২৪ জুন ২০১৫ ১৫:১৪678668
  • না না, সিকিনীর সাথে কোনও ঝাড়পিট হয় নি। রঞ্জনদা সাক্ষী :)
  • | 77.98.72.126 | ২৪ জুন ২০১৫ ১৫:১৬678669
  • আফনারা এমন কেন? খালি ঝাড়পিট? ঃ))
  • সিকি | ২৫ জুন ২০১৫ ০০:২৪678670
  • ৪ জুন ২০১৫ - ষষ্ঠ দিন

    গায়ের ব্যথা ট্যথা সব মরে গেছে, লে-র হাওয়ার এমনই গুণ। সক্কাল সক্কাল উঠে পড়লাম। বাড়তি লাগেজ সব হোটেলে জমা রেখে একটা করে লাগেজ নিজের নিজের বাইকের পেছনে বেঁধে নিলাম। আমার পেট্রলের ক্যান সুমিতের জিম্মায়। লে-তে সবার বাইক এবং পেট্রলের ক্যান ভর্তি করে রওনা দেব প্যাংগং-এর উদ্দেশ্যে। ও হ্যাঁ বলা হয় নি, আগের দিন ওই বানজি কর্ড আর পেট্রলের ক্যান কেনার সাথে সাথে মার্কেটের এক কোণে একটা আর্মি শপ থেকে একজোড়া করে গ্লাভস কিনেছি সবাই, যা নাকি মাইনাস কুড়ি ডিগ্রি পর্যন্ত হাতকে প্রটেক্ট করে। সত্যি বেশ মোটাসোটা গ্লাভস। আমার করোল বাগ থেকে কেনা স্টাডস-এর গ্লাভস মোটেই প্রোটেকশন দেয় নি ফোটুলা টপে স্নো-ফলের সময়ে। হাত জমে একাক্কার হয়ে গেছিল।

    যাই হোক, সোয়া সাতটায় সব্বাই রেডি। বেরিয়ে পড়া গেল। দুটি বুলেট, একটি অ্যাভেঞ্জার এবং একটি পালসার বেরিয়ে পড়ল কারুর উদ্দেশ্যে। ম্যাপ দেখুন, বুঝতে পারবেন রুটটা। কারু, সাক্তি, চাং লা, ডুর্বুক, তাং শে হয়ে লুকুং থেকে শুরু হচ্ছে প্যাংগং। আর লুকুং-এর একটু আগে ফোবরাং গ্রাম দিয়ে মারসিমিক লা যাবার রাস্তা।



    প্রথমে লে-তে পেট্রল ভরা। সবাই একে একে ভরলাম বাইকের ট্যাঙ্ক আর পেট্রলের ক্যান। এগোতে যাবো দাম মিটিয়ে - আচমকা কানে এল বিবেকের আর্তনাদ, ওহ শিট্‌, আমার পেট্রলের ক্যান ফুটো হয়ে গেছে।



    পেছনে তাকিয়ে দেখি বিবেকের বাইকের নিচেটা পেট্রলে ভিজে গেছে - কিছু না হোক হাফ লিটার পেট্রল বেরিয়ে গেছে। হাত বুলিয়ে ফুটোটা লোকেট করা গেল, দশ লিটারের ক্যান। এইবারে বন্ধ হবে কী করে?

    গুরদীপ বের করল একটা সেলোটেপের রিল। তার সাথে বেরলো এক ধরণের গ্লু, মেনলি সাইকেলের টিউবের পাংচার বন্ধ করা হয় যে গ্লু দিয়ে। মুচিরাও সম্ভবত এই গ্লু ইউজ করে। তাই দিয়ে চেষ্টা করা হল খানিক। কিন্তু রবারের ফুটো আটকানোর গ্লু দিয়ে কি পলিথিনের ফুটো বন্ধ করা যায়? যায় না। তাও ওই গ্লু আর সেলোটেপ খানিক মাখামাখি করে মনে হল একটু কমেছে পেট্রলের আউটফ্লো। গোটা ক্যানটাকে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে মুড়ে আবার কেরিয়ারে বেঁধে সাড়ে আটটা নাগাদ যাত্রা শুরু হল।

    মাখনের মত রাস্তা পেরোতে থাকলাম। গাছে ছাওয়া বুলেভার্ড, কখনও ন্যাড়া দিগন্তবিস্তৃত জমির মাঝখান দিয়ে চমৎকার রাস্তা - তার মাঝে পেরিয়ে গেল শে প্যালেস, ঠিকশে মনাস্ট্রি - সে যাক, ও সব ফেরার পথে দেখা হবে। ইন ফ্যাক্ট, আমার সবই দেখা।

    সাড়ে নটায় কারু পৌঁছলাম। সামনে সাইনবোর্ডে লেখা - প্যাংগং লেক - ১১৩ কিমি।



    সাইনবোর্ডের ঠিক পেছনে ড্রুক রেস্টুরেন্টে বসে পড়লাম সকালের খাবার খেতে। যতটা পারি পেট ভরিয়ে নিই।



    রেস্টুরেন্টের একটু সামনেই রাস্তা বাইফার্কেট করে গেছে। বাঁদিকের রাস্তা আমাদের নিয়ে যাবে প্যাংগং। সব চেনা। সব।



    খেতে খেতেই কে যেন বলল, আপনাদের কারুর পেট্রলের ক্যান থেকে পেট্রল লিক হচ্ছে। তড়িঘড়ি বেরিয়ে দেখি, সেই বিবেকের দশ লিটার থেকে তখনও চুঁইয়ে পড়ছে পেট্রল। এদিক সেদিক দোকানে খোঁজ করে গোটা তিনেক এক লিটারের খালি জলের বোতল জোগাড় করা গেল। তিন লিটার পেট্রল বের করে নেওয়া গেল, কিন্তু এখনও আরও পাঁচ লিটার মত রয়েছে। দেখা যাক, একটু এগিয়ে সবাই না হয় নিজের নিজের বাইকের ট্যাঙ্কে আবার একটু একটু করে পেট্রল ঢেলে নেবে। লে থেকে মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার এসেছি, এক লিটার করে পেট্রল তো সবারই কমেছে।

    কিছু বিস্কিটের কার্টন যোগাড় করে তাই দিয়ে নিজেদের ক্যানগুলোকে গার্ড করে নিল সুমিত আর গুরদীপ, বাই চান্স কোনওভাবে যেন লোহার ফ্রেমে ধাক্কা লেগে তাদের ক্যান (আমারও একটা ক্যান) ফুটো না হয়ে যায়।

    জোগাড়যন্তর করে এগনো হল। একটু এগোতেই পুলিশ পোস্ট - সেখানে ফর্ম ভরে জমা দিতে হল। একটা ফর্মেই সবার নাম লিখে জমা করে দেওয়া যায়। তারপরে এগনো। সাক্তি পেরিয়ে জিংরাল বলে একটা আর্মি পোস্ট আছে - আগের বারে চৌহানের পাল্লায় পড়ে এখানে সবাই ব্রেকফাস্ট করেছিলাম। ক্রমশ জিংরালও এসে গেল। সেই আর্মি ক্যাম্প, সেই রাস্তা, আর সেই অলটিটিউড মার্কিং স্টোন।



    চারপাশ থেকে বরফমাখা পাহাড়েরা উঁকি মারছে। চাং লা পাস এখান থেকে মাত্র তেরো কিলোমিটার। পিকগুলো দেখলে মনে হয় - কেউ যেন খাবলা খাবলা নুন ঢেলে দিয়েছে ওপর থেকে।





    জিংরালে দশ মিনিটের বিশ্রাম নিয়ে আবার এগিয়ে চললাম - কিন্তু খানিক এগিয়েই দাঁড়াতে হল। সামনে গাড়ির লাইন। ধস নেমেছে, ব্রো রাস্তা সাফ করছে। টু হুইলার হবার এই এক সুবিধে - জ্যাম থাকলেও পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাবার মত রাস্তা থাকে। অতএব, গোটা তিরিশ গাড়ির পাশ দিয়ে খাদের ধার বরাবর অনায়াসে এগিয়ে চললাম আমরা - থামলাম একেবারে সেইখানে গিয়ে, যেখান থেকে রাস্তা আটকানো। সামনে থেকে দেখতে পেলাম বুলডোজার দিয়ে রাস্তা সাফ করা (ছবি তুলি নি যদিও)। খানিক বাদেই রাস্তা খুলে গেল। আমরা এগোতে শুরু করলাম। ক্রমশ অল্প খারাপ রাস্তা, তারপরে বেশ খারাপ, তারপরে অসম্ভব খারাপ রাস্তা - তার সঙ্গে ব্রেথটেকিং সব ভিউ, দু পাশে বরফের দেওয়াল, তার মাঝখান দিয়ে চলেছি - আমার বাইক এইবারে মনে হল একটু কাহিল হচ্ছে - খালি খালি স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ফার্স্ট গিয়ারে চালাচ্ছি, তাও মনে হচ্ছে টানতে অসুবিধে হচ্ছে।

    হাই অলটিটিউডে এটা হয়, স্বাভাবিক ব্যাপার, আসলে গাড়ির ইগনিশনের জন্য যেটুকু অক্সিজেন দরকার, সেটাও ওখানে পাওয়া যায় না, তাই স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। আবার খানিক পরে স্টার্ট দিলেই চলে। বাকিরা তাদের বুলেট আর অ্যাভেঞ্জার নিয়ে কখন এগিয়ে গেছে টের পাই নি, আমি ধীরেসুস্থে চলতে লাগলাম, উঁচুনিচু মোটাপাতলা পাথরের ওপর দিয়ে। মাঝে কখনও রাস্তাই নেই, জল বয়ে চলেছে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে। এইখানে সেই আমোঘ উপদেশ কাজে আছে, ক্লাচ পে নেহি, গিয়ার পে চালাও। ক্লাচ লাগালেই অ্যাক্সিলারেটর কমাতে হবে, আর সেটা কমালেই এক্সহস্টে জল ঢুকে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবার প্রভূত চান্স। যদিও পালসার ২০০ এনএস-এর এক্সহস্ট আন্ডারবেলি, এতে জল ঢুকে বন্ধ হবার চান্স নেই, তবুও সাবধানের মার নেই, সরাসরি ফার্স্ট গিয়ারে রেখে গাড়ি এগোতে লাগলাম, গোঁ গোঁ করে নিজের প্রচন্ড অপছন্দ জানিয়ে বাইক এগোতে লাগল।

    আর তারপরেই সেই দৃশ্য খানিক বাদে। শেষ মোড়টা ঘুরতেই, একটা ছড়ানো চাতাল, ওয়েলকাম টু মাইটি চাং লা লেখা সেই গম্বুজ। জয়গুরু, বাইক চালিয়ে শেষে চাংলা পাসও জয় করে ফেললাম।



    লাভবার্ডস -


    চাং লা থেকে সামনের দৃশ্য -






    আর এই আমার সেলফি -


    অ্যাক্কেবারে টেররিস্ট-কাটিং


    চাংলা টপে তখন হট্টমেলা বসে গেছে। গাদাগুচ্ছের টুরিস্টের গাড়ি, বাঙালি আর গুজরাতিতে ভরপুর, তারই মধ্যে আমাদের দেখে কোনও কোনও উৎসাহী পার্টি, দাদা একবার আপনার বুলেটের সামনে পোজ দেব? একবার আপনার পালসারে চেপে ফটো তুলব? আপনারা দিল্লি থেকে এসেছেন? ...

    সকলের বায়না মিটিয়ে পনেরো কুড়ি মিনিট বাদে আমরা এগোলাম। এর চেয়ে বেশিক্ষণ এই উচ্চতায় থাকা বিপজ্জনক। তার ওপরে আকাশ ভর্তি মেঘ, হাল্কা করে স্নো-ফল শুরু হয়েছে। এইবারে ডিসেন্ড শুরু হল।





    মোটামুটি স্নো-লাইনটা পার করে নিচে নেমে একটু দাঁড়ালাম। রেনকোট জড়িয়ে নিলাম। আজ আর হাতে কোনও কষ্ট হচ্ছে না, নতুন গ্লাভস সত্যি কাজের জিনিস। আর তেমনি জিনিস এই পালসার। আপহিলসে উঠতে যতটা কষ্ট পায়, ডাউনহিলসে সে একেবারে বাঘের বাচ্চার মত দৌড়য়।বুলেট অ্যাভেঞ্জারকে পেছনে ফেলে আমি এগিয়ে গেলাম। বেশ অনেকটা এগোবার পরে মনে হল ভিউ ফাইন্ডারে আমি পেছনে কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। কী হল? কত পিছিয়ে পড়ল সবাই?

    খানিক এগিয়ে দেখি একটা ছোট্ট তাঁবু ঘেরা ধাবা। সেইখানে তখন এক বিশাল গুজরাতি ফ্যামিলি খাওয়াদাওয়া করছিল, আর ফোটো লিউ ছু, গাড়ি মা আউ ছু করে বিশ্রম্ভালাপ করছিল। সামনে একটা টেম্পো ট্র্যাভেলার দাঁড়িয়ে। আমিও সেখানে দাঁড়িয়ে গেলাম।

    দাঁড়িয়ে আছি তো দাঁড়িয়েই আছি, কারুর কোনও পাত্তা নেই। এখানে ফোনের কোনও নেটওয়ার্ক নেই যে কল করব। দশ মিনিট, পনেরো মিনিট, কুড়ি মিনিট, বেশ কিছু গাড়ি বাইক বেরিয়ে গেল আমার সামনে দিয়ে - গুরদীপ-সুমিত-বিবেক-প্রিয়াঙ্কার কোনও পাত্তা নেই।

    এইবারে একটু টেনশন হল। কী করা উচিত? অপেক্ষা করব? এগিয়ে যাবো? নাকি পিছিয়ে গিয়ে দেখব? চাং লা থেকে মাত্র পঁচিশ কিলোমিটার এসেছি। কারুর কি কোনও অ্যাক্সিডেন্ট হল? অন্য কিছু ঘটল?

    আধঘণ্টা পেরিয়ে যাবার পরে দূরে দেখা গেল তিনটে চেনা বিন্দু। সেগুলো বড় হতে বুঝলাম তারা দুটি বুলেট এবং একটি অ্যাভেঞ্জার। আমার চেনা। সবাই এসে আমাকে দেখে দাঁড়াল। ... কী ব্যাপার? এত দেরি?

    জানা গেল, বিবেকের তো বটেই, আমার পেট্রল ক্যানেও ফুটো হয়েছে, পেট্রল লিক করছে। তাই সবাই মিলে নিজের নিজের বাইকের ট্যাঙ্কে তেল ভরে ওই ক্যানটাকে খালি করেছে। আরও একটু তেল ছিল, সেটা আমার বাইকে ঢালা হল। হায় কপাল। লম্বা জার্নিতে শুরুতেই পনেরো লিটারের ক্যান বরবাদ। আশা করি ফিরতে অসুবিধে হবে না। তেল সব মিলিয়ে হয় তো দেড় দু লিটার নষ্ট হয়েছে।

    ধাবাতেই সবাই মিলে খানিক খেয়ে নিলাম, দুপুর তখন দুটো বাজে। আড়াইটের সময়ে আবার শুরু। এইবারে সবাই একসঙ্গে।

    তাং শে-তে আবার চেকপোস্ট - সেখানে আবার ফর্ম ভরে জমা দিতে হল। এর পরেই ফ্ল্যাট রাস্তা শুরু, পাহাড় শেষ, আর আশেপাশে মারমট দেখতে পাবার চান্সও আছে এর পর। চোখকান খোলা রেখে এগনো শুরু করলাম আবার।

    নাঃ, এ যাত্রায় আমরা মারমট দেখতে পাই নি। তবে ঘোড়া দেখেচি অনেক, জংলি ঘোড়া।




    আরও খানিক এগোতে এল সেই পয়েন্ট, যেখান থেকে প্যাংগং লেক-এর প্রথম ভিউ দেখতে পাওয়া যায়। সকাল থেকে একটানা চালিয়ে সবাই টায়ার্ড, তাই একটু হাত পা ছাড়িয়ে নেবার জন্য দাঁড়ালাম সবাই। কিঞ্চিত ফটোসেশন হল -









    মথুরাবাসিনী ভ্যাজ-খুকি আমার কাছ থেকে নীল সানগ্লাসটা চেয়ে নিয়ে চড়ে বসলেন আমার বাইকে।,


    তাঁর বয়ফ্রেন্ডও -


    এইসব সেরে আবার এগনো হল। প্যাংগং লেক আর মাত্র পাঁচ কিলোমিটার।

    খানিক এগোতেই দেখি একটা শুকনো নদীখাত, তার ওপর সুন্দর একটা ব্রিজ। ব্রিজ পেরিয়ে এগোতে গিয়ে দেখি নদীর বালি উঠে এসে ছড়িয়ে রয়েছে রাস্তার ওপর। বালির ওপরে বাইক চালানো বেশ রিস্কি, তবে দু চারবার বালির সামনে এসে স্লো করে চালিয়ে দেখলাম বালির লেয়ার এমন কিছু মোটা নয়, জাস্ট রাস্তার ওপর ছড়িয়ে রয়েছে, স্পিডে বাইক চালালে কোনও অসুবিধে নেই।

    কনফিডেন্সটিই কাল হল। খানিক দূরেই আবার রাস্তার ওপর বালি, বালির লেয়ার অগভীর মনে করে এগোতে যেতেই বাইক সমেত স্কিড করে পড়লাম বাঁদিকে। নাহ, লাগে নি, কিন্তু বেকায়দায় আমার একটা পা আটকে গেছে বাইকের তলায়, এখন একপায়ে আমার পক্ষে বাইক তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। সাহায্য লাগবেই।

    বাকিরা একটু পেছনে ছিল। তারা এসে পৌঁছনো পর্যন্ত আমি ওই পা-চাপা অবস্থাতেই রাস্তায় পড়ে রইলাম - হার্ডলি দেড় মিনিট। তারা এসে আমার বাইক তুলে আমাকে উদ্ধার করল। লাগে নি একটুও, কিন্তু দাঁড়াবার পরে খেয়াল করলাম, আমার বাঁ-পায়ের নী-গার্ডটা ফেটে দু টুকরো হয়ে গেছে। ... অর্থাৎ, নী-গার্ডের জন্য আমার পা বেঁচে গেছে, আমি টেরও পাই নি। নী গার্ড না থাকলে আমার মালাইচাকিটা ফাটত।

    একবারের চেষ্টাতেই বাইক স্টারট নিয়ে নিল, একটু এগোবার পরে - কী খেয়াল হল, আবার গাড়ি স্লো করলাম। গলায় ক্যামেরা ছিল ঝোলানো, সেটা ঠিক আছে তো? দেখা হয় নি। ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে দেখলাম, ঠিকই আছে, কেবল লেন্স ক্যাপটা হাওয়া। কখন খুলে পড়ে গেছে ধাক্কায়, টের পাই নি। লেন্সটা এক্সপোজড নয়, সামনে একটা ইউভি প্রটেক্টর আছে, এই যা রক্ষে।

    অতঃপর প্যাংগং লেকে পৌঁছে যাওয়া, সেই বিখ্যাত মাইলস্টোনের ছবি নেওয়া, এবং আরও খানিক এগিয়ে টেন্ট বুকিং। খাওয়া দাওয়া সমেত এক হাজার টাকা। খাওয়া মানে রাতের ডিনার আর সকালের ব্রেকফাস্ট।





    কিন্তু প্যাংগং-এর কোনও রঙ নেই। সেই বিখ্যাত নীল রঙ নেই কোথাও। হবে কী করে? আকাশ ভর্তি তো মেঘ। প্যাংগং-এর জলের রঙ তাই জাস্ট জলের মতন।















    এই আমাদের টেন্ট -




    একটি প্যানোরামা -


    এবং, দিনের আলো নিভে যাবার আগে, প্যাংগং-এর শেষ ছবি।


    সূর্য ডুবে যাবার সাথে সাথে জাঁকিয়ে নামল ঠাণ্ডা। দু প্রস্থ চা খেলাম, তাতেও কাঁপুনি থামে না। দুদিন আগে পূর্ণিমা গেছে, ভেবেছিলাম রাতের বেলায় চাঁদের আলোর রিফ্লেকশনের ছবি তুলব। কিন্তু ক্ষমতায় কুলোল না। গ্লাভস পরে ক্যামেরা কন্ট্রোল করা যায় না, আর খালি হাত বাইরে বেরনোমাত্র জমে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে এক্টামাত্র ছবি তুললাম, আকাশেও ভর্তি মেঘ, চাঁদ বেশিক্ষণ দেখাও গেল না।



    নটা নাগাদ রাতের খাওয়া সেরে লেপের তলায় ঢুকে তোফা ঘুম। অবশ্য, ডায়ামক্স খেতে ভুলি নি। কাল সকালে মারসিমিক লা যেতে হবে। কী কোজি হয় এই টেন্টগুলো। সুমিতের বীভৎস নাক ডাকা বাদ দিলে ঘুমটা মন্দ হল না। গায়ে হাতে পায়ে আর কোনও ব্যথা নেই, মানে আমি সিজনড হয়ে গেছি এইবারে।
  • Paallin | 102.233.71.50 | ২৫ জুন ২০১৫ ১৪:৩৩678671
  • আমি অসহ্য একটা ন্যাকা এবং বোকা একটা লোক। ফেসবুকে সিকি-র ব্লগ আপডেট এর জন্যে হাঁ করে বসেছিলাম। এইখানে এদ্দিনে আগাগোড়া বেশ পড়ে এবং দেখে ফেল্লাম। চমৎকার হচ্চে , তোর ধক (আর ঐ ক্যামোফ্লেজ পেন্টুলুন) দেখে সিরিয়াসলি ইমপ্রেস্ড।

    **ভাঁইঁয়াঁ ইয়ে ভ্যাজ কিঁ নন-ভ্যাজ** বন্ধু আমারো ক পীস আছে।
  • সিকি | ২৫ জুন ২০১৫ ১৫:৩৮678672
  • তোর এই স্বীকারোক্তিতে আম্মো সিরিয়াসলি ইমপ্রেসড। :)
  • kiki | 53.230.133.179 | ২৫ জুন ২০১৫ ১৯:২২678673
  • আমিও ফেবুর দিকে তাকিয়ে বসে ছিলুম। যাহোক, আজ এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলেচি। অসাম, লেখা, ঘোরা, ফটুক সব কিছু। আর দু বছর দাঁতে দাঁত চিপে কাটিয়ে দিয়ে ট্রাভেলার হয়ে যাবো। পাক্কা।
  • সিকি | ২৫ জুন ২০১৫ ২০:৩২678675
  • এ কী রে! লোকে ভাবল কী করে আমি গুরুতে না লিখে খালি ফেবু তে লিখব? ফেবু মানে ওয়ার্ডপ্রেসে তো আমি এখান থেকেই কপি পেস্ট কতে অ্যাডাচ্ছি।
  • সিকি | ২৬ জুন ২০১৫ ০৯:৩৯678676
  • ৫ই জুন ২০১৫ - সপ্তম দিন

    এক সপ্তাহ হয়ে গেল বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। অবশ্য এখন আর দিন-তারিখের হিসেব নেই। প্রকৃতির মধ্যে রেস লাগাতে লাগাতে আমার যেন মানসিকতাটাই এখন অন্য রকমের হয়ে গেছে। সকাল ঠিক সাড়ে ছটায় বিবেক এসে আমাদের তাঁবুতে উঁকি দিল। সিকিস্যার, আকাশ অনেকটা ক্লিয়ার হয়েছে, চলুন, ছবি তুলে আসি।

    লেপ থেকে মুণ্ডু বাড়িয়ে বুঝলাম, ঠাণ্ডাটা এখনও বেশ হাড়কাঁপানোই আছে। অতএব, চুলোয় যাক ছবি, আমাকে আরেকটু শুতে দাও। এমনিতেই সারারাত সুমিতের নাকডাকায় ঘুম অনেকবার ব্যাহত হয়েছে।

    কোই বাত নেহি, আমিই ছবি তুলতে যাই, বলে বেরিয়ে যেতে গিয়েও পেছন ফিরে এল বিবেক - সিকিস্যার, কাল আপনি যে ডায়ামক্সটা দিয়েছিলেন, সেটা কি একটু হাই ডোজ ছিল, নাকি? সারারাত মেরা দিল অ্যায়সে ধড়কনে লাগা, কি ঠিক সে সো নেহি পায়া। ... মনে মনে বললাম, লোকে নতুন বিয়ে করা বউকে নিয়ে তাঁবুর মধ্যে রাতে শুলে সারারাত ঘুমোতে পারে না, হার্টবীট বেড়ে যায়, আর এ তো তোমার বিয়ে না-করা প্রেমিকা, দিলের আর দোষ কি, ডায়ামক্সকে দোষ দিলে হবা? প্রিয়াঙ্কারও নিশ্চয়ই ঘুম হয় নি?

    না স্যার (আমি কিনা ওদের সবার চেয়ে সিনিয়র, তাই আমাকে সর্বদা ওরা স্যর স্যর করে ডাকছিল - উত্তর ভারতীয় কলচর), হম দোনো কে দিল বহোত তেজ দওড় রহা থা।

    আহা রে, বড় বাচ্চা ছেলে, কোনটা বলতে হয়, কোনটা বলতে নেই, এখনও শেখে নি। মিষ্টি হেসে আমি পাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।

    ঘুম আবার ভাঙল কারুর কথা বলার আওয়াজে। দেখি একটা ছেলে, গুরদীপের সাথে গপ্পো করছে তাঁবুতে ঢুকে। এ ছেলেটিকে আমি কাল দেখেছি লে-র পেট্রল পাম্পে। বিবেকের ক্যান যখন ফুটো হয়ে গেছিল, তখন এ-ও সাহায্য করেছিল সেলোটেপ লাগাতে। গুরদীপের পূর্বপরিচিত, নয়ডার ছেলে। সে আলাদা গ্রুপের সাথে কালই প্যাংগং এসে পৌঁছেছে। আজ ওদেরও মারসিমিক লা যাবার কথা - সেই গল্পই হচ্ছে। ... কিন্তু বলে কি এ?



    সকালেই নাকি বেরিয়ে পড়েছিল ওদের গ্রুপ, মারসিমিক লা-র উদ্দেশ্যে। ফোবরাং পার হতেই একটা আর্মি চেক পোস্ট আছে, সেইখানে কোনও এক আর্মি জেনারেল ওদের আটকে উত্তাল ঝেড়েছে - তোদের তো প্যাংগং যাবার কথা, এখানে কীভাবে এলি তোরা? ওরা যতই লে থেকে আনা পারমিট দেখায়, আর্মির পাবলিক কোনও কথাই শোনে না - এর আগে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না। দরকার হলে তাং শে যাও, সেখানে আরেক ডিসি বসেন, তাঁকে অনুরোধ করে দ্যাখো, তিনি যদি পারমিশন দেন তা হলে আমরা ভেবে দেখতে পারি। - মানে সোজা কথায়, যেতে নাহি দিব।

    ওরা দু চারবার আর্গু করে, জাস্ট গত বছরেই তো লোকে মারসিমিক লা গেছে, সজল শেঠ গেছেন। - জেনারেল সাহেব কথাই শোনেন নি - গত বছর যা হয়েছে হয়েছে, গত বছরের শেষদিক থেকেই ওখানে সিভিলিয়ানদের যাওয়া মানা করে দেওয়া হয়েছে, বেশির ভাগটাই রাস্তা নেই, প্রচুর গাড়ি অ্যাডভেঞ্চার করতে গিয়ে ব্রেকডাউন হয়ে যায়, তারপরে আর্মিকেই দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে উদ্ধার করে আনতে হয়, না, মারসিমিক লা তে কোনওভাবেই যেতে দেওয়া হবে না, বেশি কথা বাড়ালে ঝামেলা বাড়বে, ভালো ছেলের মত যে রাস্তায় এসেছো, সে রাস্তাতেই ব্যাক করে যাও।

    অতএব, ওরা ব্যাক করে আবার প্যাংগং-এ এসেছে, এবং গুরদীপের পূর্বপরিচিত হবার কারণে গুরদীপকে এই স্টেটাস আপডেটটি দিতে এসেছে।

    সদ্য ঘুম থেকে উঠে এই গল্প শুনে আমরা তিনজনে হতভম্বের মত এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কী করা যায় এইবারে?

    প্রথমে ঠিক হল, আমরাও এগোই, যদি আর্মি আটকায় তো ফিরে আসব। কিন্তু পরক্ষণেই আইডিয়া ক্যানসেল করতে হল, যদি আটকায়, তা হলে একটা টাইম তো নষ্ট হবেই, অলরেডি এখন আটটা বাজে, প্লাস পেট্রলও নষ্ট হবে। আমাদের যে রেটে পেট্রল নষ্ট হয়েছে, এখন আর রিস্ক নিয়ে নতুন ভেঞ্চার করতে যাওয়া পোষাবে না।

    মারসিমিক লা ক্যানসেল হল। তা হলে প্ল্যান বি? চাং লা পাস দিয়ে গিয়ে লে ফেরত? হোয়াট অ্যাবাউট সামথিং এলস? ... ম্যাপ খুলে বসা হল।



    তাং শে থেকে একটু দূরেই ডুর্বুক, যেখান দিয়ে আমরা এসেছি। ডুর্বুক থেকে ডানদিকে একটা রাস্তা গেছে, শিওক, আগম হয়ে খালসার হয়ে ডিস্কিটে, মানে নুব্রা ভ্যালিতে। মাঝে অবশ্য আটচল্লিশ কিলোমিটার খারাপ রাস্তা আছে, তা সে না হয় দেখা যাবে। গুরদীপের সেই বন্ধু বলল, সে নাকি আগে একবার ওই রাস্তা দিয়ে গেছে, এমন কিছু খারাপ রাস্তাও নয়। প্যাংগং থেকে মোট একশো ষাট কিলোমিটার ডিস্কিট, এই রাস্তায়। আমাদের বাইকে আর বাকি ক্যানে যা তেল আছে, তাই দিয়ে অনায়াসে চলে যাওয়া যাবে, খুব দরকার হলে ডিস্কিটে দেখছি পেট্রল পাম্প আছে, সেখানে আবার রি-ফুয়েল করিয়ে নেওয়া যাবে। খারদুং লা খুলেছে কি খোলে নি শিওর নই - এই রাস্তায় গেলে অন্তত একটা দিন সেভ করা তো যাবে। নুব্রাও ঘোরা হয়ে যাবে। তারপরে খারদুং লা খোলা পেলে আবার এই রুটেই ফিরে এসে চাং লা হয়ে লে ফেরা যাবে।

    সবাই রাজি?

    ডান?

    ডান।

    বাইরে বেরিয়ে দেখি আকাশে সাদা মেঘ, নীল আকাশ প্রায় দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে, প্যাংগং-এরও সে রঙ এবারে নেই। আগের বারে যে জিনিস দেখে গেছিলাম, সেটা এইবারে পুরোটাই মিস হল। আমরা কি ভুল সময়ে এসে পড়েছি?

    এদিকে বিবেক আবার তার বুলেটকে নিয়ে পড়েছে ফ্যাসাদে। নাকি তেল লিক করছে, কোথায় কোন ভালভ কেটে গেছে, ট্যাঙ্কার থেকে নিচের দিক দিয়ে গলগলিয়ে তেল বেরোচ্ছে। বিবেক আমায় এসে জিজ্ঞেস করল, সিকিস্যার, বুলেটে তেলের ফ্লো বন্ধ করার কোনও নব আছে?



    কেলো করেছে। আমি বুলেটের ব-ও জানি না। আমার বাইকে আছে, নর্মাল যে কোনও বাইকে থাকে জানি। বুলেটে থাকে কিনা জানি না তো। তাও খুঁজেখাঁজে দেখলাম, কোথাও এমন নব চোখে পড়ল না। ধুর ধুর, বাজে বাইক। এদিকে তেলের লিকেজ বন্ধ হচ্ছে না। এ তো মুশকিল, এইভাবে তেল নষ্ট হলে তো পুরো ট্রিপ চৌপাট হয়ে যাবে। সুমিত ভালভের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে দিল, তেল বন্ধ হল, কিন্তু আঙুল বের করতেই আবার তেল বেরোচ্ছে। কী ঝাম!

    তারপর, খানিক বাদেই তেলের ফ্লো বন্ধ হয়ে গেল। নিজে নিজেই। কেসটা কী হল? খানিক আর অ্যান্ড ডি করে যা বোঝা গেল, জেরিক্যান থেকে আজ সকালে বিবেক বাকি তেল নিজের বাইকের ট্যাঙ্কারে গলা অবধি ভরেছিল। আমাকেও দিয়েছে, আমিও ভরে নিয়েছি। বুলেটের ট্যাঙ্কারের একটা থ্রেসহোল্ড লিমিট থাকে, তার ওপরে তেল চলে গেলে নিজে নিজেই বাইরে বেরিয়ে যায়, যতক্ষণ না আবার সেই থ্রেসহোল্ড পয়েন্টে চলে আসে তেলের লেভেল, অনেকটা ওয়াশিং মেশিনের বাকেট ভরার মত। তো, সেই বাড়তি তেল বেরিয়ে যেতেই সব ঠিকঠাক। স্টার্ট দিতেই দিব্যি স্টার্ট নিল, এক চক্কর ঘুরেও এল, কোনও অসুবিধে নেই। একটু এগিয়ে দাঁড় করাল, না, আর কোথাও কোনও তেল লিক হচ্ছে না, কোনও ভালভ কাটে নি, আল ইজ ওয়েল।





    সকাল নটা। ব্রেকফাস্ট হয়ে গেছে, ব্রেড অমলেট, আলু পরোটা আর চা-কফি। আমাদের টেন্টটা প্যাংগং-এর একেবারে শুরুতে। সিজন জাস্ট শুরু হয়েছে বলে এখনও ভিড় নেই, আগের বারে এইখানে মেলা বসে যেতে দেখেছিলাম। আমরা এগিয়ে গেছিলাম আরও বেশ খানিকটা দূরে, থ্রি ইডিয়টস পয়েন্ট বলে খ্যাত যে জায়গাটা। দূরে দেখা যাচ্ছে, সেখানে লেক অনেকটা চওড়া, আর লেকের মধ্যে খানিকটা ল্যান্ড রয়েছে, বাইক নিয়ে চলে যাওয়া যায়। আশা করি ওখানে জলের বেটার রঙ পাওয়া যাবে।

    এগোলাম। আমার মনে ছিল, খানিকটা রাস্তা দিয়ে যাবার পরে খানিকটা অফরোডিং, বোল্ডারের ওপর দিয়ে চালিয়েছিল দোরজি। সেই পয়েন্টটা বুঝতে না পেরে আমি বেশ খানিকটা আগে চলে গেছিলাম, এইখানে রাস্তা আবার পাহাড়ের ওপরে উঠছে। সামান্য ওপরে উঠে বুঝতে পারলাম ভুল রাস্তায় এসেছি, ওপর থেকে এখন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কোথা থেকে ডিট্যুর নিতে হয়, একটা কোয়ালিস ঢুকল ওই পথে। টায়ারের দাগ মোটামুটি স্পষ্ট, বোল্ডারের ওপরে।

    নেমে এলাম আবার। এইবারে বোল্ডারে চালানো। এখন আমি বুঝে গেছি এই রকমের রাস্তায় কী ভাবে চালাতে হয়। ফার্স্ট গিয়ারে রেখে ফুট-রেস্টে নয়, দু পাশে পা ঝুলিয়ে রেখে যেতে হয়, যাতে কোনওভাবে বাইক টাল খেলেই মাটিতে পা দিয়ে ব্যালেন্স রাখা যায়। দু একবার এমন সিচুয়েশন হলও, কিন্তু এখন আমি বেশ অভিজ্ঞ।

    বেশ অনেকটা বোল্ডারের ওপর দিয়ে যাবার পরে নুড়িপাথর, ক্রমশ সেটা হয়ে গেল ফাইন ঝুরঝুরে বালি, ভিজে এবং শুকনো। সেই শেডটা পার হয়ে গেলাম, যেখানে আগের বারে চৌহানকন্যা মুখ গোমড়া করে বসে ছিল।



    কী যে কঠিন এই বালির ওপরে বাইক চালানো, সবাই জানেন। চার চাকা হলে ফোর হুইল ড্রাইভ মাস্ট, তার ওপর দিয়ে টলমল করতে করতে এসে পৌঁছলাম সেই ল্যান্ডের শেষ টিপে - এখন আমার চারদিকে প্যাংগং লেক।





    ফটোসেশন, ফটোসেশন এবং ফটোসেশন।













    চারপাশে বরফের পাহাড়।











    সুমিত জলে নেমে দেখতে চাইল, জল আসলে কতটা ঠাণ্ডা।



    ইতিমধ্যে সেখানে আবার জুটে গেছেন দু তিনটি দিল্লির এবং গুজরাটের টুরিস্ট পার্টি। আমাদের হাতে ক্যামেরা দিয়ে অনুরোধ, তাঁদের ছবি তুলে দিতে হবে। সুতরাং তাঁদের দিয়েও আমাদের গ্রুপ ফটো তুলিয়ে নেওয়া হল। তার পরে শুরু হল বাইক নিয়ে সেই টিপিকাল অনুরোধ। আপকে বুলেট কে সাথ ...

    আমি আমার বাইক নিয়ে এগিয়ে আসছিলাম, বালির ওপর দিয়ে টলমল করতে করতে, খপ করে ধরলেন এক দিল্লিওয়ালা - আপ দিল্লি সে আ রহে হো? ক্যায়সে আয়ে? কিতনে দিনোঁ মে আয়ে? ক্যায়সে জাওগে? থকান নেহি আতা? দিক্কৎ নেহি হোতি? ... এর পরেই, আপকে বাইক কে সাথ এক ফোটো ...

    বাইক রীতিমত স্ট্যান্ডে লাগিয়ে তিনি তার ওপরে চড়ে ফটো তুললেন, হায়, এখানেই যদি শেষ হত, এর পরে মেরি ওয়াইফ, এর পরে মেরা বেটা, মেরি বড়ি বেটি, মেরি ভাবী, উনকা বেটা, উসকা কাজিন - সে এক রাবণের গুষ্টি। সবাই আলাদা আলাদা করে বাইকের হ্যান্ডেল ধরে বা বাইকে চড়ে পোজ দিয়ে ফটো তুলে ক্ষান্ত হল - আমি মুক্তি পেলাম।

    অতঃপর আবার সেই বালি, তারপরে পাথরের ওপর দিয়ে মেন রাস্তায় ফেরা, এবং এগিয়ে চলা। চৌত্রিশ কিলোমিটার দূরে তাং শে।

    প্যাংগং থেকে যখন স্টার্ট করলাম, তখনই প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। একশো ষাট কিলোমিটার, সন্ধ্যের মধ্যে হবে কি হবে না? আগে রাস্তা কেমন, কতটা খারাপ, জানি না। আর সময় নষ্ট করা চলবে না। যতক্ষণ ভালো রাস্তা আছে, উড়িয়ে নিয়ে চলো।

    প্যাংগং-এর মুখেই যে আর্মি চেক পোস্ট, সেইখানে আজ প্রচন্ড ভিড়। একগাদা বাচ্চাকাচ্চা স্কুলের ইউনিফর্ম পরে রাস্তার এক সাইডে বসে, অন্য সাইডে আর্মির সমাবেশ, একজন কী যেন বক্তৃতা দিচ্ছেন স্থানীয় ভাষায়। গাম্বাট বিশাল একটা জাতীয় পতাকা উড়ছে সামনে।



    আমাদের দেখে একজন ইশারা করে বললেন পেরিয়ে যেতে। পেরিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম, সুমিত জিজ্ঞেস করে এল, আজ পাঁচই জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। তাই আর্মির উদ্যোগে স্থানীয় স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে পরিবেশ সচেতনতা দিবস পালন হচ্ছে।

    ঠিক এক ঘন্টায় তাং শে চেকপোস্টে পৌঁছে গেলাম। এখান থেকে ন কিলোমিটার আগে ডুর্বুক, সেখান থেকে ডাইভার্সন।

    নয় লেখা আছে বটে, তবে ছ কিলোমিটারের মাথায় আমরা পৌঁছে গেলাম সেই ডাইভার্সনে। পরিষ্কার লেখা, ডানদিকে শিওক, আগম। এইটাই আমাদের আজকের রুট। সামনে মিলিটারি জিপে এক ফৌজি বসে ছিল, তাকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েই দেখি বুকে ব্যাজে লেখা শোভন বসাক। বাঙালি?

    একগাল হেসে আলাপ পরিচয় হল। জিজ্ঞেস করলাম, রাস্তা কেমন? শোভন বললেন, শিওক অবধি তো ভালো রাস্তা - তার পরে একটু আধটু খারাপ আছে, তবে বাইক চলে যাবে।

    টা-টা-বাই বাই করে আমরা শিওকের রাস্তা ধরলাম।

    (আবার আজ রাতের জন্য বাকিটা ঝুলিয়ে রাখলাম)
  • - | 109.133.152.163 | ২৬ জুন ২০১৫ ০৯:৫৬678677
  • স্নানের বন্দোবস্ত আর ফ্রিকোয়েন্সি কেমন?
  • - | 109.133.152.163 | ২৬ জুন ২০১৫ ০৯:৫৭678678
  • এখানেও বাইক আর শোভন আছে দেখে ভালো লাগছে ঃ-)
  • kumu | 132.161.78.184 | ২৬ জুন ২০১৫ ১০:০১678679
  • অনবদ্য, অপরূপ ইত্যাদি।
    শুধু একটি কথা-ফোন থেকে ফটুক খুলতে এত্ত সময় লাগে যে সব ছবি দেখতে গেলে সিকির ২০১৭ এর ট্যুরের ছবি দেয়া শুরু হয়ে যাবে।।
  • সিকি | ২৬ জুন ২০১৫ ১০:৪৪678680
  • এইটা সেভ করে রাখুন। এটা আমার গুগল ফোটো অ্যালবাম। পরে সময় করে কম্পিউটার থেকে দেখে নেবেন।

    https://photos.google.com/album/AF1QipNShiuPUYs9c4cYnreWeYD5aEjzC1y-Bs_Ka8pa

    ষষ্ঠ আর সপ্তম দিনে চান হয় নি এখনও পর্যন্ত।
  • de | 69.185.236.53 | ২৬ জুন ২০১৫ ১১:২৬678681
  • দারুণ লাগছে - প্যাংগং কে একদম অন্যরকম সুন্দর লাগছে -
  • সিকি | ২৬ জুন ২০১৫ ১৮:৫৮678682
  • একটা চিন্তা মাথায় ঘুরছিল। গতকাল থেকে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ নেই। হিসেবমত আজ আমাদের বিকেলে লে-তে ফেরার কথা ছিল, সেখানে পৌঁছে সিকিনী এবং বাবাকে ফোন করে আপডেট দেবার ছিল - না হলে ওরা চিন্তা করবে। কিন্তু এখন যদি আমরা ডিট্যুর করে নুব্রা ভ্যালি চলে যাই, তা হলে তো মুশকিল, ওখানে তো আমার ফোন কাজ করবে না, ডিস্কিট হুন্ডারে শুধু বিএসএনএল চলে। পৌঁছেই একটা ফোন বুথ খুঁজে বাড়িতে কথা বলে নিতে হবে, নইলে অনর্থক টেনশন।

    যাই হোক, ডুর্বুক থেকে বাঁক নিয়ে আমরা শিওকের রাস্তা ধরলাম। শিওক নদী এইখান থেকে আমাদের সাথে সাথে চলবে নুব্রা, সেখান থেকে তুর্তুক হয়ে এই নদী পাকিস্তানে ঢুকে যাচ্ছে। তো, নদীর ধার বরাবরই রাস্তা, সেই রাস্তায় প্রথম গ্রাম নদীর নামে - শিওক। মসৃণ রাস্তা, রানওয়ের মত, দেখতে দেখতে আমরা সবাই শিওক পৌঁছে গেলাম। হাল্কা রেস্ট।

    এই সময়ে দেখি উল্টোদিক থেকে একটা বাইকার টিম আসছে। সেই টিম, যাদের সাথে মুলবেক আর নামিক লা-তে দেখা হয়েছিল। এরা আসছে নুব্রা থেকে। দাঁড়িয়ে খানিক সৌজন্য বিনিময় হল। রাস্তা কেমন? প্রথম বুলেটের লোকটা একগাল হেসে বলল - অ-সাম্‌। ... তার পরে একটু থেমে বলল, জীবনে যত অফরোডিং-এর অপূর্ণ সাধ আছে, সব মিটে যাবে এই রাস্তায় গেলে। একটু বাদেই দেখবে রাস্তা বলে কিছু নেই, আমরা তো এই প্রথম ভালো রাস্তা পেলাম। শুধু নুড়ি, পাথর, কাঁকর আর বোল্ডার। রাস্তা আন্দাজ করে নিতে হবে। নদের পাশ ধরে ধরে চলে যেও, তা হলেই পৌঁছে যাবে আগম হয়ে খালসার। চেষ্টা কোরো টায়ারের দাগ আন্দাজ করে চলতে, তা হলে পথ হারাবে না, নইলে পথ হারিয়ে ফেলার যে কোনও রকমের প্রব্যাবিলিটি আছে সামনে।

    শুনে তো আমার হয়ে গেছে। বলে কী? সবাইকে বললাম, সাথ ছেড়ো না, সবাই নিজের নিজের ভিউ ফাইন্ডারে পেছনের জনকে নজর রাখতে রাখতে এগিও।

    বুলেট টিমকে বিদায় জানিয়ে আমরা এগোলাম। কিন্তু কোথায় খারাপ রাস্তা? রাস্তা তো বেশ ভালোই, সুন্দর পিচরাস্তা। জায়গায় জায়গায় সাইনেজ দেওয়া, মাইলস্টোন বসানো, দিব্যি দেখছি লেখা আছে আগম ৩৯ কিলোমিটার দূরে।

    কিন্তু ভুল ভাঙল। আরও দু তিন কিলোমিটার যাবার পরেই দেখলাম হঠাৎ করে রাস্তাটা উধাও হয়ে গেছে। সামনে নুড়িপাথর বিছানো রাস্তা, যদিও রাস্তা বলে চেনা যায়। ও হরি, এই তা হলে অফরোডিং? এর চেয়ে খারাপ রাস্তা তো আমরা চাং লা পাসে পেয়েছি। চাং লা টপের আগে পিছে পাঁচ পাঁচ দশ কিলোমিটার তো ভয়ঙ্কর রাস্তা ছিল।

    কয়েক কিলোমিটার যাবার পরে আবার পিচরাস্তা শুরু। আবার সাইনেজ, সামনে টার্ন, আগম আর ৩৪ কিলোমিটার। এবং, খানিক বাদে আবার রাস্তা ভ্যানিস - সো-কলড অফরোডিং। আবার কয়েক কিলোমিটার বাদে পিচরাস্তা - যদিও এইবারের পিচ রাস্তা আগের মত মসৃণ নয়, মনে হল অন্তত সাত বছর আগে এখানে লাস্ট পিচ পড়েছে।

    একটা বুনো ফুলের ঝাড়ে ঢাকা অঞ্চল পেরিয়ে এলাম। চারদিক গোলাপি রঙের ফুলে ভরে আছে, তার মাঝখান দিয়ে চলেছি, চারপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়, ত্রিসীমানায় কেউ কোত্থাও নেই, শুধু চারটে বাইক চলেছে, আর ডানদিকে বয়ে চলেছে নীলচে সবুক শিওক নদী।

    হঠাৎ একটা জায়গায় এসে ব্রেক মারতে হল। রাস্তা হঠাৎ শেষ হয়ে গেছে, সামনে মোটা মোটা বোল্ডার, নুড়িপাথর। বাঁদিক ঘেঁষে একটা রাস্তা মনে হল ওপর দিকে গেছে, ডানদিকে অস্পষ্ট কিছু গাড়ি চলার দাগ, নিচের দিকে নেমে একটা জলে ঢাকা অঞ্চল, সে দিকে চলে গেছে। কোনটা রাস্তা?

    পিছিয়ে এলাম খানিক। ঠাহর করে মনে হল, ডানদিকের রাস্তাটাতেই গাড়ি চলার ছাপ বেশি, বাঁদিকের রাস্তাটা খানিক ওপরে উঠেই শেষ হয়ে গেছে। সামনের জলে ঢাকা অঞ্চলটা ছোট, তার পরেও নুড়িপাথরের মধ্যে গাড়ি চলেছে - বোঝা যাচ্ছে। অতএব, চলো সবাই।

    এইবারে বুঝলাম অফরোডিং কাকে বলে। যত এগোচ্ছি, নুড়ি পাথরের সাইজ ক্রমশ বড় হচ্ছে। বোল্ডার। তবু তার মধ্যেই কিছু কিছু নুড়ি বোল্ডার দেবে যাওয়া - বোঝা যাছে এইগুলোর ওপর দিয়ে গাড়ি চলেছে। বাইক এত লাফাচ্ছে, খুব ধীরে ধীরে সেকেন্ড গিয়ারে রেখে চালাতে হচ্ছে।

    কতক্ষণ এভাবে চলেছি, জানি না - হঠাৎ আবার থামতে হল। সামনে বোল্ডার বিছানো জমিটা যেন ঢেউ খেলিয়ে ওপরের দিকে উঠে গেছে হঠাৎ করে, এমনভাবে ঢেউ খেলানো, সামনে দাঁড়িয়ে হাঁটুসমান উঁচু জমি দেখা যাচ্ছে। বাইপাস করার কোনও উপায় নেই। এইবারে?

    পাঁচজনেই দাঁড়ালাম। সুমিত বলল, কুছ পরোয়া নেই, এক এক করে বাইক পার হবে, প্রথমে বিবেক যাক, আমি পেছন থেকে ধাক্কা দেব।

    বিবেক ফার্স্ট গিয়ারে গাড়ি নিল, সুমিত আর গুরদীপ দুজনে মিলে দুদিক থেকে পেছনে ধরে ঠেলা দিল - যাতে ব্যালেন্স বিগড়ে গেলেও পড়ে না যায়। গোঁ-গাঁ আওয়াজ করে উঁচু জমিতে চড়ে গেল বিবেকের বুলেট।

    এর পর সুমিত পেরলো একইভাবে। এইবারে আমার পালা।

    আমার বাইকটিই সবচেয়ে কমজোরি। দুশো সিসি, পারবে কি? তাও - না পেরে তো উপায় নেই, অন্য রাস্তাও নেই, ফার্স্ট গিয়ারে রাখলাম গাড়ি, একটু আড়াআড়ি করে ওপরের দিকে ফোর্স দিলাম, পেছনে গুরদীপ ঠেলা দিল - আমার দু পা দুদিকে মাটিতে লাগানো। দুবারের চেষ্টা, বাইক ওপরে চলে এল।

    লাস্টে এল গুরদীপ, ওকে আমরা সাহায্য করলাম। এইবারে, প্রথমবারের জন্য অনুভব করলাম, একা আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে কী ভুল করেছিলাম। ভাগ্যিস, ভাগ্যিস এত ভালো একটা গ্রুপের সাথে দেখা হয়ে গেছিল।





    এর পর? রাস্তা কোনদিকে? ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম, দূ-রে আবার হাল্কা পিচ ঢালা রাস্তা দেখা যাচ্ছে। মানে আমাদের ওখানে পৌঁছতে হবে।



    অতএব, এগনো গেল - এইভাবে। সান্দা, দেখছিস?



    আকাশে তখন আবার কুণ্ডলী পাকিয়ে কালো মেঘ জমছে। নেমে আসছে পাহাড়ের ওপর। আমরা আবার মোটামুটি একটা আইডেন্টিফায়েবল রাস্তা দিয়ে চালাচ্ছি, পাশেই নীলচে শিওক নদী।





    রাস্তা কখনও সমতলভূমির ওপর দিয়ে, দূরে দূরে পাহাড়, কখনও পাহাড়ের গায়ে পাক খেতে খেতে ওপরে ওঠা বা নিচে নামা। সুবিশাল সব পাথর ঝুলে আছে মাথার ওপরে, দেখলেই মনে হয়, এই বুঝি পড়ে যাবে, তাদের নিচ দিয়ে চলা, এ অ্যাডভেঞ্চার অতুলনীয় - ভুলতে সময় লাগবে।

    কতটা জানি না, অনেক অনেকটা যাবার পরে সামনে বিবেক হাত দেখিয়ে আমাকে থামতে বলল। পেছনে সুমিত আর গুরদীপকে দেখা যাচ্ছে না। আমার তো একেই একটা ভিউ ফাইন্ডার নেই, বাঁদিকেরটা দিয়ে ভালো দেখা যায় না, খেয়াল করি নি পেছনে কখন তারা ভ্যানিশ হয়ে গেছে।

    একটা পাথরের আড়ালে দাঁড়ালাম, নিশ্চয়ই পেছনে রয়ে গেছে, আসবে। এখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়।

    হাওয়ার তেজ বাড়ছে। ছুরির মত বিঁধছে প্রায়, নেহাত সর্বাঙ্গ ঢাকা তাই কোনও অসুবিধে হচ্ছে না, কিন্তু হাওয়ার ঝাপটায় দাঁড় করানো বাইক পর্যন্ত কাঁপছে। আকাশের মেঘ প্রায় আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে। ওরা এখনও আসছে না কেন?

    অন্তত পনেরো মিনিট অপেক্ষা করার পরে দূ-রে, অনেক দূরে দুটো ডট দেখা গেল, ব্লিঙ্কিং লাইট সমেত। (আমাদের কোড আমরা শুরুতেই ফিক্স করে নিয়েছিলাম, চলব যখন, ব্লিঙ্কার বা একদিকের ইন্ডিকেটর অন করে চলব। আর তিনটে লম্বা পরপর হর্ন মানে - থামতে হবে)

    সুমিত আর গুরদীপ এল আরও পাঁচ মিনিট পরে, সত্যিই অনেকটা দূরে ছিল। খানিক অফরোডিং করতে গিয়ে বালির গাদায় পড়ে উলটে গেছিল সুমিতের বুলেট। তাই আসতে দেরি হল।

    গাড়ি আবার স্টার্ট দিতে যাবো, খেয়াল হল, সিটের ওপর গ্লাভসদুটো খুলে রেখেছিলাম, সেগুলো কই? ... সর্বনাশ করেছে, কোথাও আটকে রাখি নি, খোলা রেখেছিলাম, এত তেজ হাওয়া বইছে, নিশ্চয়ই উড়ে বেরিয়ে গেছে। হিমস্রোত নামল একটা - শিড়দাঁড়া বেয়ে। এত দাম দিয়ে কেনা মাইনাস কুড়ি ডিগ্রির গ্লাভস ... এখন আমি আগে যাব কী করে? এক্ষুনি তো বৃষ্টি কিংবা স্নো-ফল শুরু হবে। কেলো করেছে।

    সুমিতই একটু এগিয়ে আবিষ্কার করল আমার গ্লাভস। খাদের কিনারায় একটু নিচে একটা, আর তারও আরো বেশ খানিকটা নিচে আরেকটা ঝুলছে, দুটো আলাদা আলাদা পাথরের খাঁজে। এমন পজিশনে, চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তুলে আনার উপায় নেই।

    হাওয়ার তেজ তখন আরো বাড়ছে, মেঘ আমাদের প্রায় ওপরে এসে পড়েছে। সুমিত বলল, চিন্তা করবেন না - আমার কাছে এক্সট্রা গ্লাভস আছে একজোড়া, ওগুলো পরে চলুন।

    আর কোনও উপায়ও নেই, আমার নিজের এক্সট্রা গ্লাভস, যেটা দিল্লি থেকে এনেছিলাম, সে তো লে-তে হোটেলের লাগেজের সাথে রেখে এসেছি।

    এমন সময় গুরদীপ বলল, সিকিস্যার, আপনার গ্লাভস আমি নিয়ে আসছি, আপনি একদম চিন্তা করবেন না।

    দৈববাণীর মত শোনাল কথাটা। বলে কি ছোকরা? পাগল হল নাকি? সুমিত বিবেক আমি সবাই মিলে ওকে বারণ করলাম, কিন্তু ও অ্যাডামেন্ট, আপলোগ ফিকর মত করো, ম্যায় লে আতা হুঁ। ... পিঠ থেকে ব্যাগটা খুলে আমার হাতে দিল, তারপরে রাস্তার ধার দিয়ে নিচের প্রথম পাথরে পা রাখল।

    আমার হৃৎপিণ্ড তখন গলায় উঠে এসেছে। কোনও সাপোর্ট নেই, কিছু নেই, ও নামছে কী করে?

    কিন্তু গুরদীপ মনে হল ট্রেনড। কীভাবে সেই পাথর থেকে পরের পাথরে, সেখান থেকে নিচের পাথরে হাত পা সব ব্যালান্স করে রেখে, নেমে নেমে একটা একটা করে আমার দুটো গ্লাভসই উদ্ধার করে, একইভাবে উঠল ওপরে।

    প্রথমে সুমিত, তারপরে আমি, তারপরে বিবেক জড়িয়ে ধরলাম ওকে। গুরু, কী করেছো? ছবি তুলব কী, নিজের চোখকে তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। গুরদীপ, জাস্ট কিছুই হয় নি, এই রকম একটা ভাবে হেসে বলল, কোই বড়ি বাত নেহি, আমি মাউন্টেনিয়ারিং-এর ট্রেনিং নিয়েছিলাম কিছুদিন। এইটুকু নামাওঠা তো আমার কাছে সাধারণ ব্যাপার।

    আমি তখন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, কী বলব কিছু বুঝতে না পেরে ওর হাতদুটো চেপে ধরলাম। জাস্ট দুটো গ্লাভসের জন্য এত বড় ঝুঁকি নিতে পারে কেউ! একটা সম্পূর্ণ অপরিচিত লোকের জন্য। দুদিনের আলাপ, দুদিন বাদেই আবার যে যার বাড়ি চলে যাব, আর কোনও দিনও দেখা হবে কিনা ঠিক নেই - আমি পারতাম?

    পারতাম না। নিঃশব্দে গ্লাভস পরে - ফের স্টার্ট করলাম।

    সেই একই রকমের বাম্পি রোড, আলো কমে আসছে। পৌনে পাঁচটা মত বাজে। হাওয়ায় ভিজে ভাব এসেছে, মানে সামনে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে।

    এইখানে আমার গ্লাভস উড়ে পড়েছিল সামনের খাদে।








    চলতে চলতে, তখন আর দূরত্ব বা সময়ের ঠিকঠিকানা নেই, জাস্ট ক্লাচ-গিয়ার অ্যাক্সিলেটরে হাত রেখে চলেছি তো চলেছি, হঠাৎ করে - সামনে ফ্যান্টাস্টিক রাস্তা, একেবারে ঝকঝকে। একটা দুটো বাড়ি, মানে কুঁড়েঘর টাইপের, আর খানিক এগোতেই দেখি মাইলস্টোনে লেখা খালসার ২০ কিলোমিটার। ... তার মানে আমরা প্রায় এগারো কিলোমিটার আগেই আগম পেরিয়ে এসেছি? আগমে তার মানে কেউ থাকে না।

    জয় গুরু। এইবারে ভালো রাস্তা, কিন্তু বৃষ্টি শুরু হবার আগে কি খালসার পৌঁছতে পারব? খালসার থেকে আবার আমার চেনা রাস্তা।

    কিন্তু না - তুমুল বেগে ছুটে এসে মেঘ আমাদের ধরে ফেলল, এইভাবে -


    তড়িঘড়ি গাড়ি থামিয়ে রেনকোট পরতে পরতেই ভিজে গেলাম প্রায়। না, এখানে স্নো-ফল নয়, আমরা এখন নুব্রা ভ্যালির কাছে এসে গেছি, এখানে অলটিটিউড অনেক কম। দশ হাজার মিটার। রীতিমত বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমরা এগোলাম।

    খালসার তখন তেরো কিলোমিটার।

    খালসার পৌঁছলাম সোয়া ছটায়। প্রথম যে খাবার দোকানটা দেখলাম, সেখানে ঢুকে পড়লাম। সারাদিন খাওয়া হয় নি। রুটি, পনীরের তরকারি, ডাল আর ভাত - তাই দিয়ে হামলে পড়ে খেলাম সবাই। দোকানের ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, এখানে ফোন বুথ আছে? ছেলেটা জিজ্ঞেস করল, কোথায় ফোন করবেন? বললাম, বাড়িতে, দিল্লিতে।

    ছেলেটা নিজের ফোন বাড়িয়ে দিল। বিএসএনএল, ফুল সিগন্যাল। সবাই একে একে বাড়িতে ফোন করলাম। লে-র হোটেলে মিসেস লিন্ডাকেও ফোন করলাম, যে আজ ফিরছি না, আমরা নুব্রা চলে এসেছি। লাগেজ যেন রেখে দেন। উনি তো এসবের সাথে অভ্যস্ত। বললেন, কোনও টেনশন নেই, আরাম সে এসো, লাগেজ সব ঠিক আছে।

    প্রায় গোটাসাতেক ফোন হল। ও হ্যাঁ, বুনানকেও ফোন করে কনফার্ম করলাম যে অরিজিৎ ফিরেছে ঠিকঠাক।

    ছেলেটা এক পয়সাও নিল না ফোনের জন্য। শুধু খাবারের দাম নিল। বৃষ্টি ততক্ষণে একটু ধরেছে। আমরা বেরোলাম। ডিস্কিট এখান থেকে বাইশ কিলোমিটার, আর আরও সাত কিলোমিটার দূরে হুন্ডার। আমি আগের বারে ডিস্কিটে ছিলাম, কিন্তু বাকিরা বলল, হুন্ডারে থাকবে, ওখান থেকে স্যান্ড ডিউনস কাছে পড়বে। আমি আপত্তি করলাম না - এইবারে হুন্ডারেও থাকা হয়ে যাবে। অসুবিধা কী আছে।

    প্রায় সাড়ে সাতটার সময়ে ডিস্কিট পেরোলাম। সেই চেনা মার্কেট, মার্কেট পেরোতেই একটা পেট্রল পাম্পের কঙ্কাল, মানে কিছু মেশিন আছে, কিন্তু ছাউনি নেই, লোক নেই, মেশিনগুলোও সম্ভবত জং ধরা।

    তারপরে আরও এগোনো - ডানদিকে দেখা গেল স্যান্ড ডিউনস, কেউ কোত্থাও নেই, সব বৃষ্টি ধোয়া।

    হুন্ডারে ঢুকলাম তখন রাত আটটা, চারদিক অন্ধকার, শুধু আমাদের বাইকের হেডলাইট জ্বলছে। প্রথমে একটা টেন্ট অ্যাকোমোডেশন। দাম শুনে ছিটকে গেলাম, বলে চার হাজার টাকা। কমে করে দেব - সাড়ে তিন হাজার।

    ফোটো শালা। হুন্ডারে কি অ্যাকোমোডেশন কম পড়িয়াছে? আরও এগনো যাক।

    অনেকটা এগিয়ে, একটা মারুতির দেখা পেলাম, স্থানীয় লোকজন কোথায় যাচ্ছিল, তাদেরই একজন গাড়ি থেকে নেমে টর্চ দেখিয়ে আমাকে একটা গেস্টহাউসে নিয়ে গেল। নির্জন এলাকার মাঝে পাথর বিছানো রাস্তা, একটা দোতলা গেস্টহাউস। রুম দেখে তোফা পছন্দ হয়ে গেল, এক হাজার টাকা করে। রাতের খাওয়া সমেত। আর কী চাই?

    ফিরে এসে সবাইকে ডেকে নিলাম, হইহই করে লাগেজ খুলে ঘরের দখল নিলাম। অ্যাটেন্ডেন্টের হিন্দি শুনেই সন্দেহ হল - ভাই তুমি কি নেপালি?

    হাঁজি শাআব। নেপাল শে হুঁ শাআব।

    নাম নিশ্চয়ই বাহাদুর?

    একগাল হেসে সে বলল, জী শাআব। মিত বাহাদুর।

    তার পর? তার পর আর কি। ফ্রেশ হয়ে মিত বাহাদুরের আপ্যায়নে টিপিকাল লাদাখি স্টাইলে লাদাখি কিচেনে বসে গরম গরম রুটি - আলুর তরকারি, ডাল ভাত আর অমলেট।

    এমন ঘুমোলাম যে রাতে সুমিত নাক ডেকেছিল কিনা, টের পাই নি।
  • - | 109.133.152.163 | ২৬ জুন ২০১৫ ২০:৫৯678683
  • দীর্ঘ দিল্লিবাসের ফল -- সিকির বাংলায় হিন্দির ছায়া "এত দাম দিয়ে কেনা গ্লাভস ... এখন আমি আগে যাব কী করে?" এই "আগে বঢ়্না" এক্ষপ্রেশনটি বাংলায় হয় না ঃ-)
    যে মুষ্টিমেয় ক'জন নির্ভুল বানানে শুদ্ধ বাংলা লেখেন, সিকি তাঁদের অন্যতম; তাই মজা করার সুযোগটা হাতছাড়া করলাম না।
  • sinfaut | 71.1.39.90 | ২৬ জুন ২০১৫ ২২:২৯678684
  • শুধু দশ হাজার মিটারটা বড্ড উঁচু হয়ে গেল।
  • Div0 | 132.167.223.213 | ২৬ জুন ২০১৫ ২২:৩৩678686
  • তা ছাড়াও সিকি 'অ্যাক্সিলেটর' তো বলেইছে, প্লাস গীয়ারে 'হাত' রেখেও অফরোডিং করেছে :P

    দ্যাট অ্যাপার্ট, আমি আমার পুরনো বাণীর প্রতি এখনও অনড়, অবিচল। অসা ট্রিপ। ধক অ্যাপ্লাই করা সার্থক। যদি না বাইক গতি'র কার্গোতে চাপিয়ে দিল্লি না ফিরে থাকিস। 0199c1.jpg - এই ছবিটা অনেকক্ষণ দেখলাম। অজ্জিনালটা পাঠাস। তোর গুগল ড্রাইভ অ্যাকসেস করতে পারলাম না (পারমিশন দিস নি প্রব্যাবলি)।

    পুনশ্চঃ আমার আরএস২০০ দু'হাজার কিমি কমপ্লিট করলো। তবে এই রাস্তা আমি দু'শ সিসিতে যাচ্ছি না। তার উপর এরকম ফুল ফেয়ারিং বডির গাড়ি নিয়ে। জাস্ট খুলে যাবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন