এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • মাচার গান

    Rana
    গান | ০৮ নভেম্বর ২০১৫ | ৩৬৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Rana | 127.194.193.85 | ০৮ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:৩৮688220
  • বছর চারেক আগে, তখন আমি চাকরির খাতিরে ভারতবর্ষের অন্য কোন রাজ্যের অন্য কোন শহরে থিতু। আর থিতু মানে বেশ খুঁটি গেড়েই বসেছি। ওখানকার সবথেকে বড়ো বাঙালী অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য ( সেবার বোধ হয়, সহকারী সাংস্ক্‌তিক সম্পাদক গোছের একটা ফুটকিও ছিল ) আর ঢেঁকির স্বর্গে গিয়ে ধান ভানার মতো ওখানেও লোকজন জোগাড় করে, চুটিয়ে বাংলা ব্যান্ড তৈরী করে গান বাজনা করছি। এই রকম একটা সময়ে, দূর্গা পুজোর ষষ্ঠীর দিনে ভদ্রলোক এলেন।

    অমাদের সেই ছোট্ট শহরের একদম মাঝামাঝি জায়্গায়, যাকে সাধারনত বলে 'পুরোনো শহর' (Old City) আর যার সম্পর্কে সাধারন নগরবাসীর বিশেষ জানাই নেই (যেমতি অজ্ঞান ভদ্র সল্টলেকবাসী, বড়োবাজারির আলয় বিষয়ে) সেই রকম জায়গায় নাকি শহরের সবথেকে প্রাচীনতম দূর্গাপুজোটি হয় আর তার প্রবর্ত্তক নাকি শহরের স্বর্ণকারগন। "সোনারদের পাড়া' নামে পরিচিত এলাকাটিতে নাকি প্রায় নব্বই শতাংশ বাঙালী স্বর্ণকারের বাস এবং পুরুষাণুক্রমে তাঁরা এখানে আছেন। এমন নয় যে নতুন কেউ নেই, কিন্তু অনেকেই প্রায় দু তিন পুরুষ ধরে প্রবাসী। কাজেই তাঁদের মধ্যে বাঙালীত্বের থেকে ওদেশের প্রভাবই বেশি।

    তো ওপাড়ার ছেলে ছোকড়ারা, বিশেষত যারা নতুন এসেছে, তারা নাকি বায়না ধরেছে, 'এবার পুজোয় বাংলা ব্যান্ড হোক' । তাই ভদ্রলোক এসেছেন আমাদের কাছে। আমাদের বললেন, 'আসলে, নচিকেতাই আসবে বলেছিল, কিন্তু শেষ মুহুর্তে নাকি কি সব ঝামেলা হয়ে গেছে'। একটু যদি আমরা নবমীটা উতরে দিই। সেবার আমাদের সপ্তমী অষ্টমী দুটো শো ছিল, ও এন জি সি তে আর আমাদের ক্লাবে, নবমীটাও প্রোগ্রামে নষ্ট করার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না।ভদ্রলোককে যাকে বলে একটা হোস্টাইল বিড দেওয়া হল, আর আমাদের খুব আশ্চর্য্য করে ভদ্রলোক এক কথাতে রাজী হয়ে গেলেন।

    পরে শুনেছিলাম, ঐ পুজোটিও নাকি সেখানকার সবথেকে খরুচে পুজো। তাবড় তাবড় ক্লাব বা কর্পোরেটের পুজোগুলি পর্য্যন্ত যেখানে পাঁচ টাকা থেকে পাঁচ টাকা বারো আনা মজুরি দিতে বারোশো বার দর-দস্তুর করতো, সেখানে এদের ভদ্রতা ছিল সর্বজনোবিদিত। আমাকে যিনি এ কথাটা বলে ছিলেন, তিনি এর পরে ডান চোখ মটকে, মুখ বেঁকিয়ে , ফিসফিস করে, যেন সি বি আই কে ছোটা রাজনের হদিস দেওয়া হচ্ছে, তেমনি করে, বলেছিলেন, 'ব্যবসার টাকা, কাঁচা পয়সা'।

    যাই হোক নবমীর দিন, একটা অ্যাত্তো বড়ো জাইলো ভাড়া করে , ড্রাম, গীটার, কিবোর্ড ইত্যাদি নিয়ে আমরা পৌছলাম সেই পুজোর মন্ডপে।

    **** চলবে
  • Rana | 131.241.218.132 | ২০ নভেম্বর ২০১৫ ২৩:৩৪688231
  • পরের দু ঘন্টার ইতিহাস খুব একটা সম্মানজনক নয়। বরং, অসম্মানজনিত বললেও বেশ কিছুটা কম বলা হয়। মাচা কাকে বলে, সেই প্রথম বার দেখা।ভেবে ছিলাম, প্রবাসী বাঙ্গালীসকল, বারান্দায় রোদ্দুর বা সোহাগ চাঁদবদনী ধনির সাথে সাথে ঊর্দ্ধবাহু হয়ে ন্‌ত্য করবে, কিন্তু সকলি গরলি ভেল। প্রথম অনুরোধ এলো প্রথম গান শেষ করার পরেই। নচিকেতা... আ আ আ। সিলেবাসে নেই বলে কাটিয়ে দিলাম। পরের অনুরোধ, হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ।

    মূল কথাটা তা নয়, মূল কথাটা হলো, এই যে মাচা, এর একটা আলাদা, সম্পূর্ণ আলাদা ক্লাস আছে। এর দর্শক, এর গায়ক গায়িকা বা যন্ত্রীরা সকলে সেই আলাদা ক্লাসে বেশ স্বচ্ছন্দে খেলে বেড়ান। বাইরের প্লেয়ারের পক্ষে খেলা চাপ হয়ে যায়। ঠিক যেমন, তুমুল গতির অস্ট্রেলিয় পিচে ভারতীয় টিম এবারে টেস্টে গোবেড়েন হয়ে এসেছে, তেমনি।

    কিছুদিন আগে দেখলাম রূপঙ্কর এরকম একটা মাচার শোতে এসেছিল। আমি কিছুটা রাতের দিকে এক বন্ধুর সাথে হেঁটে হেঁটে ভাট মারতে মারতে চলেছি, হঠাৎ দেখি একটা জায়্গাতে গান বাজনা হচ্ছে, আর লোকজন তুমুল নাচছে। তাও নাকি গান হচ্ছে, গভীরে যাও। গিয়ে দেখি রূপঙ্কর গাইছে। প্রায় শেষই হয়ে এসেছিল।তো বাবু দু একটা গানের পরে বল্লেন, এবারে শেষ গান। বলে বৌদিমনির কাগজওয়ালা ধরল। লোকজন যথারীতি নেচে কুঁদে একাকার। কিন্তু তার পরে আর নামতে দেবেনা, বলে, সবে তো চারটে নাচের গান গাইলেন, আর কটা গান, আমরা আরো নাচবো। রূপঙ্কর দুটো আনকা খেলে কাটার প্ল্যানে ছিল। কিন্তু তাতে কি হয়? জনগনের তখন নাচের নেশাতে পেয়ে গেছে। শেষে দেখি, রূপঙ্কর বলছে, দেখুন, এভবে তো হয় না। এটা তো গা জোয়ারি হচ্ছে।আমাকে যেতে দিন নইলে এই পাশেই বারাসাত থানা, এক্ষুনি ফোন করতে বাধ্য হব। এতক্ষণে উদ্যোক্তাদের টনক নড়্ল আর রফা হল, ঠিক আছে, আর একটা গান গেয়ে যেতে দেওয়া হবে। কিন্তু ততক্ষণে রূপঙ্করের নাচের গানের কোটা শেষ। শেষে কি একটা সাধারণ লয়ের গান একটু তাল বাড়িয়ে করে বাবু শেষ করলেন।
  • Rana | 131.241.218.132 | ২৩ নভেম্বর ২০১৫ ২৩:০৯688242
  • আমাদের ছোটবেলাতে দেখা মাচা আর এখনকার মাচার মধ্যে বিস্তর ফারাক। আমার ছোটবেলা, মানে আশির দশকের শেষ থেকে শুরু। মনে আছে, তখন মাচাতে চলছিল 'কন্ঠী' রাজ। কিশোর কন্ঠী, আশা কন্ঠী, লতা কন্ঠী, মান্না কন্ঠী ইত্যাদি প্রভ্‌তি। আমাদের তল্লাটে এক ভদ্রলোক ছিলেন সন্ধ্যা কন্ঠী, এবং বেশ ভালো গাইতেন।

    মাচার যন্ত্রগুলিও পাল্টে গেছে। সেই সময় সাধারন মাচাতে দেখতাম, হারমোনিয়াম, তবলা, পারকাশন (এফেক্টসও বলা হয় - ম্যারকাস, ট্যাম্বুরিন, মন্দিরা, উডব্লক এইসব থাকে), স্প্যানিশ গীটার, বেহালা আর কোথাও কোথাও অ্যাকোর্ডিয়ান।

    এই অ্যাকোর্ডিয়ান যন্ত্রটি সেই সময়ের বাংলা গানে যে সুদ্‌ঢ় ছাপ রেখে গেছে, তা অনস্বীকার্য্য। সলিল চৌধুরি বা মান্না দের গানে গানে দিকপালরা এই যন্ত্রটিতে সঙ্গত করে গেছেন। কিছুদিন আগে শুনছিলাম সুধীন দাশগুপ্তের "নাম রেখেছি বনলতা"। তার শুরুর অ্যাকোর্ডিয়ান সোলোটি বাজাতে এখনো অনেক যন্ত্রীর,যাকে বলে, আক্ষরিক অর্থে গাঁ* ফেটে যাবে। কিছুদিন আগে বেবি দার (প্রতাপ রায়, যারা নাম শোনেন নি, তাদের উদ্দেশ্যে জানাই, মান্না দের সব রেকর্ডিং আর লাইভে বেবিদার মনোপলি ছিল) একটা অনুষ্ঠানে দেখতে গিয়েছিলাম। এই বয়স আর অসুস্থ শরীর নিয়েও যা বাজালেন, মাথা নিজে নিজেই নেমে আসে। সিন্থেসাইজার এসে এই সব সুন্দর যন্ত্রগুলিকে তেপান্তরে নির্বাসন দিয়েছে।
  • Rana | 131.241.218.132 | ২৩ নভেম্বর ২০১৫ ২৩:৩১688253
  • আর দুটো যন্ত্রও খুব দেখা যেত, কঙ্গো বা বঙ্গো আর ট্রিপল। দুটোই হ্যান্ড পারকাসন, একটা তিনটের সেট একটা দুটোর। ট্রিপলকে অনেকে আদর করে ট্রেবল বলেও ডাকতো মনে আছে। আর কঙ্গো আর বঙ্গোতে বিশেষ ফারাক নেই। দুটোই দুটোর সেট, শুধু কঙ্গোর উচ্চতা আর ফাঁদ বঙ্গোর থেকে বেশি।

    গান হতো মূলত পুরনো বাংলা বা হিন্দি গান। হিন্দি হলে ফিল্মি, আর বাংলা হলে আধুনিক বা ফিল্মি। সেই আদ্যিকালের গান গুলিকে যে কেন এখনো আধুনিক গান বলা হয়, এটা আমার কাছে একটা মস্ত প্রশ্ন। কফি হাউস, জীবন খাতার প্রতি পাতায়, জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় পহেলি, তখন তোমার একুশ বছর বোধহয়, বঁধুয়া আমার চোখে জল এনেছে এগুলি হট কেকের মতো জনগন নিত। খুব কষ্ট করে মনে করতে পারছিনা, কেউ জীবনে কি পাবোনা গাইছে। এই গানটা বোধ হয় বিভিন্ন ব্যান্ড ও উঠতি ব্যান্ড্গুলি গেয়ে গেয়ে নতুন করে মাচার জন্য বিখ্যাত করে দিয়েছে। তেমনি মনে পড়ছেনা, রানার বা প্রান্তরের গান কেউ গাইছে, বা অদ্ভুত ভাবে সুরের এই ঝর ঝর ঝরনা বা আকাশ এতো মেঘলা কেউ গাইছে। স্টলওয়ার্টদের কন্ঠীরা সাধারনত সতীনাথ, মানবেন্দ্র, নির্মলা, উৎপলাদের এড়িয়েই চলতেন। তবে এসব ইতিহাসের কথা, স্টেজের নীচ থেকে হাফ্প্যান্ট পড়ে দেখা। আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা শুরু আরো অনেক পরে। তার মাঝখানে আর একটা ফেজ আছে।
  • Abhyu | 85.137.13.237 | ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৫:১৪688264
  • লিখুন। পড়ছি। ভালো লাগছে।
  • | 183.17.193.253 | ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৬:৩১688275
  • ঐ কন্ঠীদের রমরমার যুগেও শীতকালে বিভিন্ন জলসায় বড় শিল্পীরা গান গাইতে আসতেন।খেলার মাঠের মধ্যে প্যান্ডেল বেঁধে সে সব অনুষ্ঠান হত। টিকিটের দাম ভালো ই হত।মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোদের এই সব জলসায় পাওয়া যেত। ঐ একইসময় অন্যদিকে মাচার শিল্পীরা উঠে আসছিলেন। টিকিটের বালাই নেই,ক্লাবের যে কোনো অনুষ্ঠানের পর একটা মাচা বেঁধে দশটা নাগাদ শুরু হত সেই সব অনুষ্ঠান। কদিন আগে থেকে রিক্সায় মাইক /চোঙা ফুঁকে প্রচার চলতো। মিস জোজো, গৌতম ঘোষ,মাস্টার আনন্দ এরা ছিলেন সুপার স্টার। মাঝরাতে এসে গান ধরতেন। বাড়ি থেকে এইসব দেখতে যাবার প্রশ্নই ছিলো না, রাত নিঝুম হলে দূর থেকে ইয়ে দিল না হোতা বেচারা ভেসে আসতো। শুনতে শুনতে মার মুন্ডুপাত করতামঃ(
    কুমার শানু বিরাট বড় স্টার হয়ে ওঠার আগে মাচাতে গান গাইতেন। তবে মাচার আরেক বিরাট মাইলস্টোন ছিলেন ঊষা উৎপাত( বড়রা তাই বলতো) ইনি বেশ বিখ্যাত হয়েও মাচায় গান গাইতেন। পরের দিকে মাচা ক্রমশ নানা বিজ্ঞাপনের সৌজন্য পেতে শুরু করে। ব্যানার , বোর্ড দিয়ে মাচার চারদিক ঘিরে পয়সা ভালো ই জোগাড় হতে থাকে। বম্বের ঝড়তিপড়তি শিল্পীদের অনেককেই মাচায় গাইতে শুরু করেন। আমি শেষ দেখেছি সুরেশ ওয়াদকারকে। ওর বিখ্যাত তুমসে মিলকে গেয়েছিলেন মনে আছে। এখন আর আমাদের ওখানে মাচা হয় না। বিভিন্ন মঞ্চে গান ইত্যাদি শুরুর আগে নানা রাজনীতিবিদ সেজেগুজে অল্প বক্তৃতা দেন। দুবছর আগে দেবশংকর হালদারের 'ফুড়ুৎ' দেখতে গিয়ে শুনি,মদ-অন প্রঃ অতিথি!

    ওঃ, বলতে ভুলে গেলাম, বেশ কজন মান্নাকন্ঠী ছিলেন। এরা মাচায় গান গাইতেন। কজন ছিলেন, যারা বিভিন্ন শিল্পীর বাংলা গান গাইতেন।- লেখক হয়তো তখন জন্মান নিঃ)
  • তাপস | 126.203.210.66 | ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ১০:৪২688281
  • আনন্দ-ইন্দ্রাণী। আহা, সেই সব দিন-রাত্রি।
  • Manish | 127.200.84.190 | ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ১৩:১৭688282
  • ভালো লাগছে
  • Rana | 131.241.218.132 | ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ২৩:৪০688283
  • মকে ধন্যবাদ। যাঁদের নাম নিয়েছেন, তাঁরা মোটামুটি মাচার স্তম্ভ ছিলেন। গৌতম ঘোষের গান নাকি কিশোর কুমারের থেকে খুব একটা কমতি ছিলো না, বরং কিছু কিছু গানে নাকি গৌতম ঘোষ কিশোর কুমারকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন কখনো কখনো।

    ঊষাদিকে কিন্তু আমি কখনো কন্ঠীদের সাথে মাচা করতে দেখিনি। অবশ্য এটা সত্যি কথা যে একটা সময় ঊষাদি প্রচুর শো করতেন। তবে তার বেশির ভাগ থাকতো অন্য কোন ঘটনার সাথে জড়িয়ে। যেমন, ফুটবল লীগের সমাপ্তি বা ক্লাবের বস্ত্র বিতরণ উৎসব। আসলে ঊষাদির আইডেন্টিটি ঐ সময়ে ঐ ধরনের গান গুলিতে অনেকটাই ইউনিক ছিল। তবে রসিক যাঁরা ঊষাদির গানের সাথে কার্লটন কিটোর বাজনা শুনেছেন (কেরিয়ারের শুরুতে নাকি নিয়মিত ট্রিংকাসে শোনা যেত), তাঁরা জানেন পশ্চিমবঙ্গে জ্যাজের অত ভালো কম্বিনেশন এখনো আর আসেনি। খুব কপালগুনে একবার শুনে ফেলেছি তা, নিতান্ত ঘরোয়া, with lots of improvisation, অসাধারন সে যুগলবন্দী।

    চুমকি ঝুমকি - যদিও গানে নয়, খুব বিখ্যাত ছিল মাচাতে নাচের জন্য। মার কাছে শুনেছি, পাড়ার মাচাতে মা এদের নাচ দেখেছে কলেজে পড়ার সময়ে। চুমকি বড় হয়ে শ্রীমতি দেবশ্রী রায় নামে পরিচিত হ'ন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। মায়ের সেই মাচাতেই শুনেছিলাম পূর্ণদাস বাউল এসেছিলেন আর গান গাওয়ার আগে বলেছিলেন, 'আজ আমি বেশি গাইতে পারবো না, আমার পায়ে ব্যথা।'
  • শ্রী সদা | 113.16.71.15 | ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ২৩:৫০688221
  • ভালো থ্রেড। ফলো করছি ঃ)
    এবার কোলকাতায় গিয়ে প্রথম এই কন্ঠী-র গান শোনার এক্সপি হলো।
    কালীপুজোর পরের দিন আমাদের পাড়ায় ফাংশান হয়েছিল, বাড়ি বসেই শুনছিলাম মাইকে কুমার শানুর গান হচ্ছে, আর যে গাইছে গলাটা অবিকল আশিকী এর সময়ের কুমার শানুর মতো। যন্ত্রানুষঙ্গও একদম ক্যাসেটে যা শুনেছি অবিকল এক। প্রথমে ভেবেছিলাম ক্যাসেট চালিয়েছে, তারপর মাঝে দর্শকদের উদ্দেশ্যে কথাবার্তা শুনে বুঝলাম লাইভ চলছে।
  • Abhyu | 138.192.7.51 | ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ২৩:৫৪688222
  • 'পায়ে ব্যথা' টা একঘর হয়েছে! তবে বাউল গান তো, দাঁড়াতে/নাচতে তো হবেই।
  • + | 175.246.93.79 | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৭:৪৭688223
  • মাচার নাচে বিখ্যাত ছিল কুট্টি। তখন এতোটাই ছোট ছিলাম যে ওর নাম ধাম জানিনা। কিন্তু মঞ্চে এসে মাঝে মাঝে কমিক রিলিফ দিয়ে যেত নেচে। গৌতম ঘোষ-জোজো (যখন রোগা ছিল) কেও প্রথম দেখেছি মাচার অনুষ্ঠানেই।

    রুপঙ্করের কথা প্রথমে এসেছে তাই মনে পড়ল। সেই সময় কুমারটুলিতে এক অনুষ্ঠানে রুপঙ্করকে দেখেছিলাম, তখনো রুপঙ্কর হয়ে ওঠেনি, পিছনে বাগচী বলত। মান্না-কিশোর এইসব গাওয়ার পর বেচারা একটা নিজের গান গাওয়ার পার্মিশন পেয়েছিল, ধরেওছিল "যখন আসবে তুমি ঝড় হয়ে", কিন্তু গানের মাঝ রাস্তায় কি একটা মারপিট শুরু হল দর্শকদের মধ্যে, প্রোগ্রাম বন্ধ। বহু বছর বাদে গানটা আবার এফএমে শুনে মনে পড়েছিল।
  • + | 175.246.93.79 | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৭:৪৮688224
  • ওটা বোধয় "জানি আসবে তুমি ঝড় হয়ে" হবে।। সে থাক।
  • কল্লোল | 125.248.76.233 | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৯:৫১688225
  • মাচার মান্না।
    কলকাতায় মাচার মান্না ছিলেন গুটিকতক। একজন অমলেশ দলুই, অন্যজন স্বরাজ রায়। দুজনেই সিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের(মানবেন্দ্রর কাকা, জটিলেশ্বরের দাদা) ছাত্র। দুজনের মধ্যে স্বরাজ কন্ঠ্কুশলতায় অনেক এগিয়ে ছিলেন। ওঁকে তখন অনেক অনুষ্ঠানেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো বাংলার মান্না বলে। ওনার ট্রাম্প কার্ড ছিলো লাগা চুনরীমে দাগ। তবে ওনার পরিবেশন ছিলো খুব বুদ্ধিদীপ্ত। যদিও মান্নার গানই গাইতেন, কিন্তু লাগা চুনরীমে দাগ গাওয়ার পরই প্রায় কোন ছেদ না দিয়ে মধুবনমে রাধিকা ধরতেন। দুটি গানেই সরগম দিয়ে তান করতেন একদম হুবহু রেকর্ডের মতো। সত্যিই তৈরী গলা ছিলো। ফলে খুব জমে যেতো আসর। আর শেষ করতেন চুনরী সাম্হাল গোরী দিয়ে। লোকে নেচেকুঁদে একশা হতো। কিন্তু ঐ গানের ইয়ুডলিংটিও নামাতেন নিখুঁত। এগুলো ১৯৬৬-৭০এর কথা। ৬৮ না ৬৯এ দুটি শ্যামা সঙ্গীত রেকর্ড করেন। আমি ১৯৮৮তে ওনার গান শেষ শুনেছি আমার পাড়ার মাচায়। তারপর কোথায় হারিয়ে যান।
    কেউ কি খোঁজ দিতে পারেন? ভদ্রলোক সম্ভবতঃ সোনারপুরে থাকতেন। এখন প্রায় ৭০এর কাছাকাছি বয়স হবে।

    মাচার শিল্পী বল্লে আর দুজনের নাম না করলে পাপ হবে, দুজন বল্লাম বটে কিন্তু আসলে তিনজন - মিন্টু দাশগুপ্ত আর দুই বেচারা।
    ওহো মীরা-বুবাই ও আছেন। রফি-লতা/আশা/সুমন গাইতেন। মীরা দৃষ্টিহীন ছিলেন।

    আর ছিলো অর্কেস্ট্রা। মুলকীর অ্যাকর্ডিয়ানে চলতি সব হিট গানে নাচা একটা অবশ্য কর্তব্য ছিলো।

    কোন কারনে সে সময় হেমম্ত বা শ্যামলকন্ঠী ততো দেখিনি/শুনিনি।
  • pi | 24.139.209.3 | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১০:৪৪688226
  • ভাল লাগছে ।

    কিন্তু জানিনা, হয়তো বুঝতে ভুল করছি, সুরেশ ওয়াদেকরকে কি মুম্বইয়ের ঝটতিপটতি শিল্পী বলা হল ? না হলে, ইগনোর। হলে কিছুটা দ্বিমত /প্রশ্ন রইলো। কারণ উনি কম গান গাইলেও সিলেক্টেড গান ই ওঁকে দিয়ে গাওয়ানো হত, এরকম শুনেছিলাম। আর সেগুলো একাধারে হিট ও রসিকজনের সমাদর প্রাপ্ত। মানে ঝটতিপটতির দলে সেভাবে ফেলা যাবে কি ?
  • Rana | 127.194.195.59 | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ১৯:৩৭688227
  • মাচা প্রথম ধাক্কাটা খায় নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। মানে যখন, নতুন ধরনের বাংলা গানের শিল্পীরা একে একে উঠে আসতে শুরু করেন। সুমন, নচিকেতা, অজ্ঞন ছাড়াও এই সময় বা তার সামান্য কিছু আগে দিয়ে, শ্রীকান্ত আচার্য্যের নীল ধ্রুবতারা আর ইন্দ্রনীল সেনের বলাকা সিরিজ বেশ বিখ্যাত হয়। অন্য গায়ক গায়িকারাও টুকটাক পরিচিত হতে থাকেন, বাংলা আধুনিক গানের ছবিটা একটু একটু করে পাল্টাতে থাকে।তপন সিংহ, কাজী কামাল নাসের, কিছু দিন পরে রূপঙ্কর, রাঘব, লোপামুদ্রা, পিলু ভট্টাচার্য্যরা এসে যাবেন। লোকগীতিতে যদিও একটা বরাবরই নিয়মিত শিল্পীর আসা যাওয়া ছিল। উৎপলেন্দু, তার পরে স্বপনদা, সনজিৎ মন্ড্ল, স্বাগত এদের প্রচারের আলোতে নিয়মিত আগমন, নির্গমণ ঘটেছে। আর তার পরে আসবে বাংলা ব্যান্ড।

    এই আসা-যাওয়াটা কিন্তু বরাবরই ছিল। আশির দশকেও, বনশ্রী সেনগুপ্ত, আরতি মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লারা চুটিয়ে গেয়ে গেছেন। শ্র্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো যথেষ্ট ভালো গান। কিন্তু দুটো-তিনটে মূল জায়গাতে বড়ো তফাৎ এসে গেল।

    যন্ত্রাণুসঙ্গঃ খুব কম কিন্তু প্রাসঙ্গিক যন্ত্র নিয়ে স্টেজে উঠে অনুষ্ঠান করা। সুমন একা অনুষ্ঠান করতেন দুটো সিন্থেসাইজার আর একটা গীটার নিয়ে। একবারের জন্যও মনে হতো না কিছু কম বাজছে। সুতরাং, এত দিন ধরে চলে আসা স্টেজ সেট আপকে রাতারাতি প্রশ্নের মুখে পড়ে যেতে হ'ল। প্রোথিতযশা শিল্পীরাই কিছুটা বেকায়্দাতে পড়ে গেলেন, মাচা তো অনেকটাই দুধ ভাত। এই সেদিনও কার একটা ইন্টারভ্যু'তে দেখছিলাম, তিনি বলছিলেন, সেই সময় একটা সাংঘাতিক অর্কেস্ট্রেশান হত। একটা বিশাল স্ট্রিং সেকশন, ব্রাস সেকশন তো থাকতই, বিশেষ বিশেষ যন্ত্রের জন্য বিশেষ বিশেষ পিস তৈরী করা হত। ওবো, ক্ল্যারিয়ানেট, অ্যাকোর্ডিয়ান, পিকোলো সব গিয়ে ঢুকলো সিন্থেসাইজারের পেটে। ফলস্বরূপ, ঐ সব যন্ত্রীদের ভাত মারা গেল, আর আজকাল অথেন্টিক ওবোর পিস যদি কেউ কোথাও ঢোকাতে চান, তাকে যন্ত্রী ইম্পোর্ট করতে হয়।

    উপস্থাপনাঃ পাল্টে গেল। বসে বসে গান গাওয়া থেকে চলে এল দাঁড়িয়ে গান গাওয়া। যদিও বম্বের শিল্পীরা দাঁড়িয়েই গাইতেন। ছিয়াশি-সাতাশিতে লতা আশা অমিত কুমারের অনুষ্ঠান দেখেছি যুবভারতীতে। একদিকে বিশাল অর্কেস্ট্রা, এক ভদ্রলোক হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন, আর তার পাশে দাঁড়িয়ে লতা গাইছেন। কিন্তু, হেমন্ত, শ্যামল, সন্ধ্যা, মান্না প্রমুখ বসেই গাওয়া পছন্দ করতেন। মাচাতেও তাই 'ফলো' হত। সবথেকে বড় কথা, দর্শকদের সাথে শিল্পীর যোগাযোগে একটা আমূল পরিবর্তন এল।শিল্পী স্টেজ থেকে দর্শকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন, গানের আগে গানের বিষয়ে বলতে শুরু করলেন। স্কুলের শেষ দিকে দেখেছি, কানোরিয়া জুট মিলের গেটে গাইছেন প্রতুল আর গলা মেলাচ্ছে সমস্ত মানুষ। তাদের মধ্যে সাড়ে চোদ্দ আনাই মজদুর। সবে মিলে উপস্থাপনাতে একটা, যাকে বলে, প্যারাডাইম শিফ্ট এল।
  • Rana | 127.194.204.61 | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ২২:৪৫688228
  • গানের ধরনঃ অনেকটা অন্য গতে বইতে লাগল। অনেকটা বেশি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রভাব গানের চলনে বা কথায় দেখা গেল। আগে ছিল না, তা নয়। কিন্তু সমস্তটাকে একটা দেশীয় রূপ দারুণ ভাবে দেওয়া হত, যাতে গান গুলির একটা মাস অ্যাপীল থাকত। খুব সোজা উদাহরণ, 'মেরা নাম চিন চিন চু'র শুরুতে যে টিপিক্যাল ব্লুজ ওয়াকিং বাস বাজে, তা একেবারেই এদেশীয় নয়। অথচ গানটা শুনে মনেই হয় না, বিদেশী প্যাটার্ণে কিছু বাজছে। গানের মাঝখানের রিদম ভ্যারিয়েশনও মুখ বদলাতে সাহায্য করে। নতুন গানগুলিতে ঠিক এতোটা রাখ-ঢাক রইল না, অর্থাৎ পাশ্চাত্যের ইম্প্রোভাইজেসনসগুলি রেখেই দেওয়া হল, মূলত দেশীয় সাঙ্গীতিক গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে, নতুন সুরের ধারা হিসেবে গানগুলিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। নচিকেতার গান, যেমন একেবারেই এদেশীয়, সেখানে অনেকাংশেই নেওয়া হয়েছে যন্ত্রানুসঙ্গের সহায়তা। আর নচিকেতা প্রথম দিকে বাংলা র‌্যাপও গাইত ভ্যারিয়েশন আনার জন্য।
  • pi | 24.139.209.3 | ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ০৯:৫৪688229
  • 'অনেকটা বেশি পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রভাব গানের চলনে বা কথায় দেখা গেল। আগে ছিল না, তা নয়। কিন্তু সমস্তটাকে একটা দেশীয় রূপ দারুণ ভাবে দেওয়া হত, যাতে গান গুলির একটা মাস অ্যাপীল থাকত। '

    এটা ইন্টারেস্টিং ।
  • Manish | 127.200.92.146 | ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ১০:১৩688230
  • চুমকি না রুমকি আর ঝুমকি আর সাথে krishna Chakraborty র গান।

    Amrik Singh Arora কে ভুলে গেলে চলবে।
  • কল্লোল | 125.248.76.233 | ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ১০:২৭688232
  • মনীষ। ঠিক। অমৃক সিং এর সাথে মুন্নার (মহম্মদ আজিজ) নামও যাবে।
  • Rana | 131.241.218.132 | ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:৩৫688233
  • তো এই রকম একটা পরিবর্তনের যুগে মাচা একটু ঘেঁটে গেল। একে তো প্রচুর নতুন শিল্পী উঠে আসছে, যাদের নামে টিকিট বিক্রি করা যায় আর পারিশ্রমিকও তেমন খুব একটা বেশি নয়, আর তার মধ্যে গানের ধরন-ধারণও পাল্টে যাচ্ছে। বড় জলসাগুলিতে সুমন, নচি, শ্রীকান্ত, ইন্দ্রনীলদের আনাগোনা বেড়ে গেল। লোকজন আজকাল নতুন নতুন গান শুনতেই বেশি পছন্দ করে, উপরন্তু এদের উপস্থাপনা আর যন্ত্রানুসঙ্গও অনেকটা ঠাসবুনোট পুরনো মাচার শিল্পীদের তুলনাতে, সব মিলে মাচার শিল্পীদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নিম্নচাপ দেখা গেল।

    লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যে মাচার যে সব মহারথীদের নাম আপনারা উপরে করেছেন, তাঁরা কিন্তু সবাই এই নব্বই পূর্ব সময়ে। বাজারে নতুন বাংলা গানের ধারা এসে গিয়ে কন্ঠী কালচারকে প্রায় ডুবিয়ে দেয়। নতুন করে কন্ঠী ওঠাও বন্ধ হয়ে যায়, কারণ, যাঁরা কন্ঠীর অ্যাস্পিরেশনে ছিলেন, তাঁরা নিজেদের গানের ধারাকে আধুনিক গানে বা ব্যান্ডের দিকে ক্রমশ নিয়ে যেতে চালু করেন, কিছুটা কনসাস হয়ে, আর বেশিটাই অবচেতনে।

    কনসাস হয়ে নিজেদের গানের ধারা যাঁরা পাল্টাতে চালু করেন, তাঁদের মধ্যে সব থেকে বেশি সফল বোধ হয় জোজো। গৌতম ঘোষও মিতা চ্যাটার্জীর সাথে জুড়ি বেঁধে বেশ সফল হয়ে ওঠেন। কিন্তু সাধারন ভাবে, মাচার শিল্পীরা, আর যাঁরা একদমই 'মাচারই শিল্পী', জলসার নয়, তাঁদের কাছে এই সময়টা খুব একটা ভালো ছিলো না।

    আমাদের এলাকার বেশ ভালো ভালো কয়েক জন গায়ক, এই সময়ে অনুষ্ঠান না পেয়ে পেয়ে গান প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। কেউ কেউ সুমন বা নচিকেতার গান গেয়ে অনুষ্ঠান জমানোর চেষ্টা করতেন। বলা বাহুল্য পারতেন না আর তার মূল কারন হল, হারমোনিয়াম তবলা নিয়ে ও সব গান ঠিক দাঁড়ায় না। মাচার অডিয়েন্স সাধারনত খুব একটা সহিষ্ণু হয় না, তারা এই সব গানের রিকোয়েস্ট করত বটে, কিন্তু এই রকম গান শুনে দ্বিগুন ক্ষেপে গালাগালি জুড়ত। আর গায়ক বা গায়িকা ট্র্যাক পাল্টে নিজের ফিল্ডে খেলতে চাইলেও প্রচুর আওয়াজ পড়ত যে গত তিরিশ বছর ধরে তো এটাই গাইছেন। নতুন গান, নতুন যন্ত্র আর নতুন ভাবে দর্শকদের সামনে পরিবেশনা ক্রমে অনিবার্য্য হয়ে উঠেছিল। আর এই রকম সময়েই আসতে শুরু করে বাংলা ব্যান্ড।
  • কল্লোল | 111.63.207.255 | ০২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৬:৪০688234
  • রানা, একটা ব্যাপার বলো। সেসময় দুজন খুব জনপ্রিয় হলেন, ইন্দ্রনীল আর শ্রীকান্ত। দুজনেই পুরোনো বাংলা গান গাইতেন। বলা হলো রিমিক্স। কিন্তু জলসায় এরা দুজনেই হারমোনিয়াম বাজিয়েই গাইতেন। তবে হ্যাঁ, একেবারে হারমোনিয়াম-তবলা নয়। গিটার-কিবোর্ড-অক্টোপ্যাড সহ। এটাই কি তফাৎ করে দিলো, মাচার মান্না-হেমন্ত-শ্যামলদের থেকে?
  • Rana | 131.241.218.132 | ০২ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:৩৯688235
  • কল্লোলদা,

    আমার মনে হয়, শ্রীকান্ত বা ইন্দ্রনীলের এই গানগুলির সাথে মাচার খুব একটা বিরোধ ছিলো না। বরং, এই হাওয়াটা মাচার অনুকূলেই ছিল।

    সমস্যাটা মূলত ছিল অন্য ধারার সুর নিয়ে। ধরুন, রূপঙ্করের 'আনমনে আমাকে ভাবো' বা লোপামুদ্রার 'অন্য হাওয়ার অন্য গান' বা প্রতীকের অ্যালবামগুলি যখন হিট করতে শুরু করল। আমি যদি সুমন, নচি, অঞ্জন, মৌসুমি ভৌমিক, প্রতুল প্রমুখ তথাকথিত জীবনমুখি গানের শিল্পীদের বাদও দিয়ে দিই, তা হলেও আধুনিক বাংলা গানে একটা নতুন হাওয়া এসেছিল। শ্রীকান্ত দুটো তিনটে 'নীল ধ্রূবতারা' র মতো রিমিক্স করার পরেই করল ব্‌ষ্টি তোমাকে দিলাম। এই অ্যালবামটা শ্রীকান্তর একটা মাইলস্টোন। আজ নীল ধ্রূবতারার চেয়ে বেশি লোক শ্রীকান্তকে চেনে এই গানগুলির জন্য। ইন্দ্রনীল সেন ছ-ছটি দুরের বলাকা প্রসব করার পরেও আজ আর কেউ খুব একটা তাকে গানে চেনে না, বরং নামেই চেনে। আর এটাও অবশ্য সত্যি যে, শ্রীকান্ত ইন্দ্রনীলের থেকে অনেক অনেক ভালো গেয়ে থাকে। কিন্তু শুধু নীল ধ্রূবতারার উপরে ভরসা করলে চলত কি?

    একানব্বইয়ে সুমন আসার পরে, আগামী পাঁচ বছরে লোকের কান অন্য ধারার গানে অনেকটাই মানিয়ে যাবে, পুরোনো সুরগুলি মনে হবে বড়ই পুরোনো। ধরুন সাতাশিতে বাপিদার সুরে বেরোয় গুরুদক্ষিণা আর একানব্বইয়ে বেরোয় তোমাকে চাই। আজকের সাঙ্গীতিক পটভূমিতে দাঁড়িয়ে দুটো গানের মধ্যে যে মোটে চার বছরের তফাত, তা কি ভাবা যায়? গুরুদক্ষিণার গান শুনলে আজ মনে হয় সত্তরের দশক আর তোমাকে চাই যেন এই সেদিনের গান। অন্তত আমার তো সেরকমই লাগে।

    কতটা পরিষ্কার হল, জানি না। তবে, পরের কিস্তি গুলিতে বাংলা ব্যান্ড, আর মাচার সঙ্গীতায়োজনের বিবর্তন কিছুটা ধরার চেষ্টা করব।
  • TB | 118.171.130.186 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:৫৮688236
  • কিন্তু প্রতুল তো চিরকালই দাঁড়িয়ে গেয়েছেন, মানে আজ কত শো বছর ধরে যেন ...
  • ঈশান | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৫:১৯688237
  • এইটা বেটার এক্সপ্ল্যানেশন হল যন্ত্রানুসঙ্গের চেয়ে। কারণ অক্টাপ্যাড, গিটার, কি-বোর্ড আমার জ্ঞান হওয়া থেকেই মাচায় বাজছে শুনে আসছি। যাঁরা বাজাতেন, তাঁরা ব্যাপ্পক বাজাতেনও। তার মানে চর্চাটা অনেকদিনের।
  • ঈশান | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৫:২০688238
  • দাঁড়ানো-বসা নিয়ে কিছু বলেছে নাকি? খেয়াল করলাম না তো।
  • কল্লোল | 125.248.76.233 | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ১২:১৩688239
  • প্রতুল ও প্রতুলের ধারায় যারা গাইতেন, তারা চিরকাল দাঁড়িয়েই গাইতেন। ওটা একটা অন্য জঁর - মোটাদাগে যাকে গণসঙ্গীত বলা হতো। এইসব গান, তা বৃন্দগান বা একক - দাঁড়িয়েই গাওয়ার চল ছিলো সম্ভবতঃ আইপিটিএর ৪০এর দশক থেকেই। ৬০এর যুব উৎসব থেকে আমার দেখা, সেখানে হেমাঙ্গদা থেকে পরেশ ধর বা ইউথ কয়্যার কি মন্টুবাবু, খালেদদা, নির্মলেন্দু দাঁড়িয়েই গাইতেন। পরবর্তীকালে এই ধারার - গণবিষান, অরণি, সমতান, অঙ্কুর - এরাও দাঁড়িয়েই গাইতো

    মহীন থেকে অন্যধারার গানও দাঁড়িয়ে গাওয়া শুরু হয়। মহীন, নগর ফিলোমেল, নাগরিক - এরা দাঁড়িয়েই গাইতো। তবে এরা কেউ ৯১এর সুমনের মতো মূলধারায় গ্রহীত হন নি।
  • ঈশান | ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:২৮688240
  • আমিও চিরকালই দাঁড়িয়েই গান গেয়েছি। কারণ এখন বাথটব আমার পছন্দ না। আর আগে তো বাথটব চোখেই দেখিনি, দাঁড়ানো কম্পালসারিই ছিল।
  • Rana | 131.241.218.132 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৫ ২৩:২৯688241
  • এবম্বিধ বিবিধ আলোড়নের মাঝে মাচা বেশ ধন্দে পড়ে যায়। মাচার দর্শক দ্যাখে, ব্যান্ড ব্যাপারটা তাদের ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না। ঐ জগঝম্প তারা খুব একটা ভালো ভাবে নেয় না। ভুমির বারান্দায় রোদ্দুর বা কায়ার তোকে লিয়ে নাইচতে যাবো গোছের কিছু কিছু গান দাগ কাটলেও, সামগ্রিক ভাবে বাংলা ব্যান্ডের কোনো অবদানই মাচা সুলভ নয়। রূপম এখনো প্রায়ই বলে, যখন গান গাওয়া শুরু করেছি, পাব্লিক কান ধরে স্টেজ থেকে নামিয়ে দিয়েছে, অকথ্য গালাগাল করেছে আর আজ তারাই আমার গান শুনে পাগল হয়ে যায়। এই কথাটা আমার অর্ধ্যসত্য মনে হয়। প্রথম পার্টটা একদম ঠিক, কিন্তু আমার প্রশ্ন দ্বিতীয় অংশে। তারা কি আজও রূপমের গান শোনে বা সেই সব জায়গার অনুষ্ঠানও কি এখন রূপম করে। যদি করে থাকে তবে হয়তো ব্র্যান্ড ভ্যালুর জন্য পাব্লিক চেপে যাবে, কিন্তু যা তাদের রুচির সাথে মেলে না তা তাদের ভালো লাগবে কি?

    অন্য দিকে, সুমন নচি অজ্ঞন লোপা এদের গানের একটা সিগনেচার তৈরী হয়ে গেছে। এদের গানগুলি ঠিক এদের ছাড়া জমে না। যে কারনে এখনো এদের গানের কোনো ট্রিবিউট হলো না। মানে মান্না দের গান যেমন অন্যেও গেয়ে রেকর্ডও করেছেন, তেমনি হলো না। মাচা এদের গান গাইতে চেষ্টা করলো, কিন্তু জনগন এটাও নিল না আর পুরোনো বাংলা গানে ফেরার দিকেও খুব একটা উৎসাহ দেখাল না। সবে মিলে একটা ত্রিশঙ্কু অবস্থা, যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, সে রকম পরিস্থিতি তৈরী হলো।

    তবে বর্তমানে মাচা সে অবস্থা কাটিয়ে উঠেছে। এখন টিপিক্যাল মাচার গানে খেলে বেড়াচ্ছে জিত গাঙ্গুলী ও মূল ধারার বাংলা সিনেমার সঙ্গীত পরিচালকদের সুর। তার সাথে টুনির মা বা দয়াল বাবা বা নান্টু ঘটক বা যতই ঘুড়ি ওড়াও রাতে জাতীয় গান। মাচা ফিরে পেয়েছে তার গতিময়তা, শিল্পীরা পেয়েছেন সুর, দর্শক পেয়েছে ছন্দ। সমালোচকদের মুখে নুড়ো জ্বেলে মাচার জয়রথ প্রবল গতিতে অগ্রগত।

    এর পরে মাচার অর্থনীতি আর শিল্পীদের মধ্যে বর্ণাশ্রম নিয়ে লিখবো।
  • | 183.17.193.253 | ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৮:৪৯688243
  • মাচার সুফল বলো বা কুফল, খোলা মাঠে মঞ্চে দাঁড়িয়ে গান গাওয়ার ধারা পঃ বঃ তে ওরাই এনেছে।( গণসঙ্গীত কে আমি মাচার বাইরে রাখছি) খোলা মাঠে অসংখ্য লোক( ছেলেরাই মূলত) দাঁড়িয়ে গান শুনছে এইটাও মাচার অবদান( টিকিট নেই)।আমি নব্বইএর কথা বলতে পারি, সুমনের সেরা ফর্মে সুমনকে খোলা মাঠে গাইতে শুনেছি। প্রথা ভেঙে সারারাত্তির ব্যাপী গানের অনুষ্ঠান( শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের কথা বলছি না)ওরাই শুরু করেছিলো- গানের নতুন ধারা কিছু তৈরী করতে না হলেও,অনেক কিছুতেই মাচা ট্রেন্ডসেটার।

    আর মাচা র অনুষ্ঠান কি এখনো গভীররাতে শুরু হয়? মহিলা দর্শকের সংখ্যা কি বেড়েছে? এখন মাচা বিখ্যাত শিল্পী কারা?@Rana
    লং লিভ মাচাঃ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন