এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অচলায়তনের দেয়ালের ফোকর ও ভালবাসা

    ranjan roy
    অন্যান্য | ১৩ জুন ২০১৬ | ১২২৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • d | 144.159.168.72 | ২২ জুলাই ২০১৬ ১৭:১৩708362
  • পড়ছি
  • উজবুক | 55.117.200.52 | ২২ জুলাই ২০১৬ ২০:২০708363
  • বিষয়টি এতই ব্যতিক্রমী,বা ইহা একটি শিক্ষনীয় কাহানী। তবে অনেক বিমুগ্ধ গুরুজন প্রতীক্ষারত। হাত চালান। জয় গুরু।
  • ranjan roy | 132.162.125.198 | ২৪ জুলাই ২০১৬ ০৬:২৯708364
  • ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখি অবাক কান্ড; তালা খোলা কিন্তু আলো নেভানো, আর সমস্ত বিছানায় মশারি টাঙিয়ে ভালো করে গোঁজা। আমার বিছানায় মশারি কে টাঙিয়েছে?
    কাছে গিয়ে দেখি ভেতরে কেউ শুয়ে রয়েছে। রাগে পিত্তি জ্বলে গেল। আমার বিছানায় কেউ আয়েস করে ঘুমুচ্ছে কিন্তু আমিই জানি না! এ তো সেই ট্রেসপাস না কি যেন বলে! আবার ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে!
    --অ্যাই কে রে! কোন শালা ঢুকেছিস ? বেরিয়ে আয়!
    প্রথমে কোন সাড়া নেই। কিন্তু নাক ডাকার শব্দ থেমে গেল। কী ব্যাপার?
    লাইটের সুইচ টিপে দিই, আরও চড়া গলায় বলি-- বেরিয়ে আয় বলছি। ন্যাকামি হচ্ছে?
    এবার ঘোঁৎ করে শব্দ করে মশারির কোনা তুলে বেরিয়ে এল এক মাঝবয়েসি মুশকো জোয়ান--বেশ মহিষাসুর মহিষাসুর চেহারা। আদুল গা, লুঙ্গির ঢিলে কষি বাঁধতে বাঁধতে কাঁচাঘুম ভাঙা রক্তচোখে তাকিয়ে বলল--কে র‌্যা? বাপের বয়সি লুককে তুই-তোকারি করছ, শালা -সুমুন্দি বলছ? এক চড়ে তোমার---!
    ওরে বাবারে! পুরো বাক্য শোনার আগেই টেনে ছুট লাগাই। এক শ্বাসে সোজা ডাইনিং হল। পরিবেশন শুরু হয়েছে। একটা পিঁড়িতে বসে পড়েছি। আজ আর থালা ধোয়ার ঝামেলা নেই। এই কদিনের জন্যে বেশ কিছু শালপাতা আনানো হয়েছে, একটা টেনে নিলেই হল।
    আজকে খিচুড়ি আর আলুভাজা। গোগ্রাসে খাই। তারপর হাতটাত ধুয়ে বন্ধুদের খোঁজ।
    --উঃ, যা ভয় পেয়েছি না! ঘর খুলেছে কে? আর ওই সব মহিষাসুর লোকজন? আমি আর আজ রাত্তিরে আমার ঘরে যাচ্ছি না।
    সবাই হেসে ওঠে। প্রশান্ত খ্যা-খ্যা করে হাসে। বলে--পোদো নিঘ্‌ঘাৎ মহিষবাথানের কোন মোষকে খেপিয়েছে।
    -- মানে?
    --শোন, ওরা হল আমাদের ক্লাসের গোলকপতির বাবা-কাকা- মা-কাকিমার দল । কোলকাতার কাছেই মহিষবাথান বলে একটা গাঁ থেকে এসেছে। ওদের মাছের ভেড়ি।
    -- তা আমাদের বিছানায় ঢুকেছে কেন? আর তালা খুলল কী করে? আমাদের না জানিয়ে?
    -- সবটা শোন না! ওরা ঠিক করেছেন যে রাত্তিরটা এখানেই থাকবেন, সকালে ফিরে যাবেন। তাই গোলক অমিয়দাকে ধরল। তুই আগে চাবি নিয়ে গেলি। কিন্তু ঘরে ফিরিস নি। তখন আমরা অমিয়দাকে দিয়ে অফিস থেকে ডুপ্লিকেট চাবি আনিয়ে ঘর খুলেছি। পর পর দুটো ঘর ছেড়েছি। একটায় গোলকের বাবা-কাকারা , আর অন্যটায় মা--কাকিমারা।
    আমার রাগ যায় না। এসব কে ঠিক করেছে?
    আমাদের গুরু অমিয়দা হেসে বলে-- আমি। রাগিস না, মাত্তর একটা রাত্তির।
    --আর আমরা কি সারারাত্তির নিল-ডাউন হয়ে থাকব , না মুরগী হয়ে?
    আবার একপ্রস্থ হাসি।
    বিপ্লব বলে-- গুরুর উপর ভরসা রাখ তবে তো ভবদরিয়া পার হবে। আরে গুরু রামকানাই মহারাজকে বলে আজকের জন্যে স্পেশাল পারমিশন আদায় করেছে--আমরা ছোট ছাদে শোব।
    মনটা খুশি খুশি হয়ে যায়। ছোট ছাদ? মানে আমাদের লুকিয়ে সিগ্রেট খাওয়ার ঠেক? নাঃ গুরুর প্রতিভা আছে।
    আমরা বেশির ভাগ নতুন ধোঁয়া খাওয়া শিখেছি। মিন্ট দেওয়া 'কুল' দিয়ে শুরু করে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে ধরা পরার ভয় কাটিয়ে পাসিং শো, রেড অ্যান্ড হোয়াইট, লেক্স, সিজার পেরিয়ে এখন পানামায় স্থিতু হয়েছি। গুরু ও প্রশান্ত চার্মিনারে। ঘরে পাখা নেই, তাই একটা গুমোট থাকে।
    ছাদে অনেক জায়গা। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বা পাশাপাশি চাদর পেতে শুয়েছি আমরা দশজন। আমি ও বিপ্লব একটু কোণার দিকে। ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। সবার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একজন দুজন এখনও সিগ্রেটের শেষ টানগুলো দিচ্ছে। কেউ কেশে উঠল।
    বিপ্লব আমার দিকে গড়িয়ে আসে।
    --তুই তখন চাবি নিয়ে ঘরে যাবি বলে উঠে গেলি। কিন্তু ঘরে যাস নি। কোথায় গেছলি?
    --- স্ক্রীনের কাছে থামের আড়ালে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছিলাম।
    --তো আমাকে বলে যাস নি কেন? তুই তো বললি ঘরে যাবি।
    -- আগে ভাবি নি তো! এমন ঘুম পেয়ে গেল যে--।
    -- হটাৎ করে ঘুম পেয়ে গেল? তাই আর ঘরে গেলি না?
    --এমন করে পুলিশি জেরা করছিস কেন মিতা?
    -- আমি পুলিশের কুকুর বলে।
    -- সে তো আমিও।
    -- না লাকি; তুই আর সেই লাকি নেই।
    --মানে?
    --মানে পরিষ্কার। লাকি সত্যি কথা বলছে না। মিতার থেকে সত্যিটা লুকোচ্ছে।
    -- কী বলতে চাস তুই?
    -- ভাল করেই জানিস কী বলতে চাই। তুই ওই ছেনাল মাগী অনিকেতের সঙ্গে সাঁট করে ওখানে গেছলি। ঘুমুচ্ছিলি না; ওকে কোলে বসিয়ে চুমু খাচ্ছিলি।
    -- মিথ্যে কথা!
    -- আমি নিজের চোখে দেখেছি। অমিয়দা চাবির জন্যে তোকে খুঁজতে আমাকে পাঠাল। আমি একে তাকে জিগ্যেস করতে করতে স্ক্রীনের কাছে গিয়ে তোদের থেকে ফিরে এসে অমিয়দাকে বললাম ওকে কোথাও দেখছি না। আমি তোকে ধোঁকা দিই নি। কিন্তু তুই--?
    --বিশ্বাস কর; আমি সত্যি কথা বলছি। ও এসে আমার কোলে বসেছিল। আর আমি চুমো খাইনি।
    ও হিসহিসিয়ে ওঠে।
    -- আচ্ছা? অনিকেত জানত যে প্রদ্যুম্নদা কোথায় কোন যমুনাতীরে কোন কদম্বগাছের নীচে হেলান দিয়ে বসে আছেন?
    আমি চুপ করে যাই। কী বলব? কেমন করে সত্যিটা বোঝাব? পাশ ফিরে একটা পানামা ধরাই।
    সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। গোটা ছাদ নিস্তব্ধ। কারো কারো মৃদু নাকডাকার আওয়াজ। আকাশে চাঁদ অনেক নীচে নেমে এসেছে। কোথাও একটা দুটো পাখি চাপাস্বরে ডেকে উঠছে। আমার ঘুম আসছে না, কিন্তু চোখ জ্বালা করছে।
    বিপ্লব পাশ ফিরে কনুইয়ের উপর ভর করে আমার বুকের উপর ঝুঁকে পড়ে।
    --- তোর এত চুমু খাওয়ার শখ তো আমাকে বলিস নি কেন লাকি? কেন ওই ঘেয়ো কুকুরটার জন্যে ছোঁক ছোঁক করছিস?
    কিছু বোঝার আগেই ওর ঠোঁট আমার ঠোঁটে চেপে বসে। সিগ্রেটের তিক্ত কষায় স্বাদ আর একটা অন্যরকম গন্ধ মুখের লালা মিলে মিশে যায়। একটু পরে আমাকে ছেড়ে দেয়।
    -- আর কাউকে যদি কখনও চুমো খেয়েছিস তো তোর একদিন কি আমার একদিন। যা , এবার ঘুমো। কাল প্রেয়ারে যাব না।
  • ranjan roy | 132.162.125.198 | ২৪ জুলাই ২০১৬ ২৩:২৩708365
  • ১০)
    রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক কবিতা, কম্যুনিস্ট পার্টি ও ইন্দ্রপতন
    ---------------------------------------------------------------
    কিছু নিয়ম বদলে গিয়েছে। আগে দুবেলাই ঘরে বসে পড়াশুনো দেখতেন আশ্রমিক টিচারেরা। এখন একবেলা পড়াবেন বাইরে থেকে এসে প্রফেশনাল টিউটররা। এমনি ভাবে পেয়েছিলাম সমীরদা বা কুঠিঘাট রোডের ভব রায়কে।
    উনি শেখালেন কবিতা আবৃত্তি, উৎসাহ দিতেন কবিতা লিখতে বা দেওয়াল পত্রিকা বের করতে। আর আমার সঙ্গে কথা হত কম্যুনিস্ট পার্টি নিয়ে।
    আমি দেখলাম ষাটের দশকের কম্যুনিস্টরা ভীষণ ভাবে রাবীন্দ্রিক,প্রায় শানিনিকেতনীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেন। এঁরা মাঝে মাধ্যে শান্তিনিকেতনে যান। জীবনানন্দেরও ভক্ত, মাথায় অবিন্যস্ত বাবরি চুল ও দাড়ি কাটতে অনীহা। পরনে খদ্দরের গেরুয়া পাঞ্জাবী ও সাদা পায়জামা, কাঁধে একটি শান্তিনিকেতনী ঝোলা। এদের চেহারায় ক্রোধের থেকেও কেমন একটা উদাসী বাউল ভাব। যেন 'আমি রব নিস্ফলের হতাশের দলে'।
    উনি আমাকে পড়ালেন "শেষের কবিতা"। আমার দারুণ লাগল। মনে হল তাহলে একসঙ্গে দুজনকেও ভালবাসা যায়। কেটি মিত্র ঘরের পুকুর আর লাবণ্য পুরীর সমুদ্র--বাঃ!
    আর একটা জীববানন্দের কবিতা নিয়ে প্রবন্ধ। তাতে এজরা পাউন্ড, পল ভালেরি ও এলিয়ট নামগুলো শুনলাম--কি্স্যু বুঝলাম না। ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও অন্য কবিদের নিয়ে কিছু কবিতা ছিল। কোন একজনের কথা ছিল যে বনে বাদাড়ে পাহাড়ে জঙ্গলে নাদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ায় --কিন্তু প্রকৃতির রহস্য তার কাছে ধরা দেয় না।একটা অনুবাদ কবিতার লাইনে চোখ আটকে গেল--" তোমারে চুম্বন করি মুর্চ্ছাহত ইন্দ্রিয়সকল। ঊর্ধগামী অঙ্গ মোর---"।
    হে ঈশ্বর! কবিদের কি মাথাখারাপ? কাউকে ভালবেসে চুমু খেলে ইন্দ্রিয়ে পক্ষাঘাত হয়? মানুষ গ্যাসবেলুনের মত হাওয়ায় ভেসে বেড়ায়? নাঃ, আমি অমন চুমু খেতে চাইনে।

    ভবদার সঙ্গে এলেন এক ভদ্রলোক -- আমাদের রবীন্দ্রজয়ন্তীর জন্যে গান শেখাতে "আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে" আর " এখন আর দেরি নয়, ধর গো তোরা"।
    উনি আমাদের রামকানাই মহারাজের সান্নিধ্যে নিয়মিত আসা লিন্টুদির ভাই। একবার স্পেশাল গেটপাস বানিয়ে ওঁরা আমাকে নিয়ে গেলেন লিন্টুদির বাড়িতে। লিন্টুদির পরিশীলিত পোশাক , চেহরায় আভিজাত্যের সঙ্গে ওঁদের বাড়ির কোন মিল নেই। উনি বাড়িতে ছিলেন না। তবে আমরা গেছলাম ওঁদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত বাবার সঙ্গে দেখা করতে।
    বরানগরের কলোনী এলাকায় টালির চালের দুখানা ঘর। উঁচু চৌকাঠ। পায়ার তলায় ইঁট পেতে উঁচু করা চৌকির উপরে মলিন চাদরে ঢাকা বিছানায় শুয়ে আছেন এক বৃদ্ধ, উঠে বসতে পারেন না। কোমর পড়ে গেছে। গেঞ্জিটি রোজ বদলানো হয় না। পরনের লুঙ্গিটিও ও তথৈবচ। অবিন্যস্ত সাদা চুল ও চার পাঁচদিনের না কামানো দাড়ি। সব মিলিয়ে মনটা কেমন দমে যায়। উনি নাকি আমাদের স্কুলের কোন একসময়ে হেডমাস্টার ছিলেন।
    কিন্তু একটু পরেই আমরা ভুলে গেলাম যে উনি অসুস্থ, চলৎশক্তিহীন। সকাল নটা-দশটার রোদ্দূর এসে পড়েছে চৌকাঠে। আর সেইখানে এবং রাস্তায় মোড়া টেনে বসে আছে পাড়ার কয়েকটি তরুণ। তারা নাকি এঁর বন্ধু! এরা বিভিন্ন পত্রিকা থেকে পড়ে শোনাচ্ছে নানাখবর। উনি মন দিয়ে শুনে মহাউৎসাহে মেতে উঠছেন তর্কে। উনি নিজের বিছানায় পাশে রেখেছেন একটি দৈনিক--"স্বাধীনতা"।
    আমার অবাক রাখল ওনার খেলা নিয়ে আবেগ দেখে। বাইটন কাপ, সন্তোষ ট্রফি হয়ে তর্ক শুরু হল এবছর বেঙ্গলের সম্ভাব্য হকি ইলেভেন নিয়ে। ইস্টবেঙ্গল থেকে কাকে নেওয়া হবে আর কাকে কাস্টমস থেকে। ইনামূর রহমান কোথায় খেলবে, লেফ্ট ইন কে বেটার ইত্যাদি। নতুন প্রজন্ম মন দিয়ে শুনছে বৃদ্ধের আর্গুমেন্ট এবং সমানে সমানে তর্ক করছে।
    আমার মনটা ভালো হয়ে গেল।আশ্রমে ফিরে বন্ধুদের কাছে সাতকাহন করে ওঁদের বাড়ির গল্প বললাম।
    বিকেলে আমাকে মলয় বাড়ুরি বলল--তোর সঙ্গে কথা আছে।
    -- কী কেস?
    -- আমি আশ্রম ছেড়ে দিচ্ছি। এখন কাউকে বলবি না।
    -- সে কী! কেন?
    -- বিকেলে ঘরে একা থাকিস। আমি আসব, ক্থা হবে।

    মনটা খারাপ হয়ে গেল। মলয় বাড়ুরি হস্টেল ছেড়ে দেবে?
    গোবরডাঙার ছেলে। বাবাকে হারিয়েছে। দিদি চাকরি করে পড়াচ্ছে। বাড়িতে কিছু ধানীজমি আছে।
    টানা চোখের লম্বা হিলহিলে ছেলেটাকে দেখে সমীরদা বলেছিলেন--ওকে দেখ, ঠিক যেন সহজপাঠে নন্দলাল বসুর আঁকা ছবি। ও আমাকে খুব পছন্দ করত; আমার সঙ্গ চাইত । সেকথা বলেওছিল। কিন্তু আমার সারাদিন বিপ্লবের সঙ্গে লেপটে থাকা দেখে একটু সরে গিয়েছিল। খালি সময়ে রামকানাই মহারাজের গল্পদাদুর আসরে নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার দলে ভিড়ে গেল। এই নিয়ে কখনও সখনও খেপিয়েছি--কিন্তু কখনও রাগ করে নি। জবাব দেয় নি, শুধু হেসেছে। ও হটাৎ আশ্রম ছাড়তে চাইছে কেন?
  • ranjan roy | 192.69.124.80 | ৩০ জুলাই ২০১৬ ১৯:০৩708366
  • সে যাক গে। বিকেলে সবাই ফুটবল পেটাতে গেল। পরনে সেই কোমরে ইলাস্টিক লাগানো ছাতার কাপড়ে তৈরি কালো খেলার প্যান্ট। আমি শরীর ভালো নেই বলে ঘরের দরজা ভেজিয়ে আধশোয়া হয়ে সদ্য লাইব্রেরি থেকে আনা 'শার্লক হোমস ফিরে এলেন' পড়তে লাগলাম। মিনিট পনের পরেই দরজায় টোকা। বেশ হোমস্‌ স্টাইলে 'কাম ইন্‌" বলার আগেই মলয় দ্রুত পায়ে ঘরে ঢুকে দরজায় ছিটকিনি তুলে দিল। হাঁপাচ্ছে, চারদিকে তাকিয়ে নিশ্চিন্ত হবার ভাব করছে। তারপর ঘরের কোণের কুঁজো থেকে জল গড়িয়ে ঢক ঢক করে এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেলে আমার বিছানার কোণে বসে আবার বড় বড় শ্বাস টানতে লাগল।
    কিছু বলছে না। আমি তাকিয়ে আছি। ও চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।
    -- কী রে! কিছু বল।
    --কী বলব?
    -- মানে? তুইইতো আমাকে কীসব বলবি বলে ঘরে একা থাকতে বললি। এখন ন্যাকামি করছিস কেন?
    ও তবু চুপ। অন্ধকার হয়ে আসছে। একটু পরে খেলা শেষের ঘন্টা পড়বে। সবাই কলতলায় হাত-পা ধুয়ে ঘরে আসবে। জামাকাপড় বদলাবে, প্রেয়ারে যাওয়ার জন্যে তৈরি হবে। তো?
    --ফালতু আমার বিকেলটা নষ্ট করলি। ঠিক আছে, তুই তোর ঘরে যা। আমি বইটা একটু পড়ে নিই। কাল ফেরত দেব।
    -- না প্রদ্যুম্ন; এ কথাটা তোকে ছাড়া আর কাউকে বলতে পারব না। তাই আজ বলতেই হবে। জানতে চাস কেন হস্টেল ছাড়ছি? আমার মন ভেঙে গেছে। এখানে এই ছাদের নীচে আর একটা দিনও থাকতে চাই নে। দিদিকে সব বলেছি। দিদি বলেছে কোন রকমে দুটো মাস কাটিয়ে অ্যানুয়াল পরীক্ষাটা দিতে। তারপর দিদি আমাকে ছাড়িয়ে নেবে। আর হস্টেলে দেবে না। বাড়ির কাছে গোবরডাঙার গর্মেন্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবে।
    --আরে আগে কী হয়েছে সেটা বলবি তো? কেন মন ভেঙে গেছে? তুইও শেষে কারও প্রেমে পড়লি নাকি?
    -- ধেৎ! তুই বল সবচেয়ে বেশি আমি শ্রদ্ধা করতাম কাকে? ভালবাসতাম কাকে?
    -- রামকানাইদাকে, আমাদের মেজ মহারাজকে।
    --ঠিক; সেই শ্রদ্ধার জায়গাটা একেবারে--!
    --আরে কাঁদছিস কেন? দাঁড়া , আর এক গেলাস জলে এনে দিচ্ছি। তারপর বল। আর তারাতাড়ি কর। অন্যেরা এসে পড়বে।
    একটু ধাতস্থ হয়ে ও বলতে শুরু করল।
    -- গত গরমের ছুটি। তোরা সবাই বাড়ি চলে গেছিস। হস্টেল খাঁ খাঁ করছে। আছি মাত্র তিনজন। দুজন ফ্রিতে পড়ে। এখানেই থাকে। বাকি ছিলাম আমি। দিদি অফিস থেকে ছুটি পায় নি। তাই রোববারের দুপুরে নিতে এল।ট্যাক্সিতে স্যুটকেস, বেডিং তোলা হয়ে গেছে। আমি প্রতিবারের মত দোতলায় উঠেছি রামকানাইদাকে যাবার আগে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করব বলে। উঠে দেখি দরজা জানালা বন্ধ। দুটো ঘরেরই। ঘুমিয়ে পড়েছেন? কী করি? দেখা না করেই চলে যাব? তা কী করে হয়? এর পর তো একমাস গ্যাপ। শেষে একটা জানলার খড়খড়িতে একটু হালকা চাপ দিলাম। অল্প খুলল। আধো অন্ধকার ঘরে চোখটা সইয়ে নিতে কয়েক সেকন্ড লাগল। তারপর যা দেখলাম আমি---।
    --কী দেখলি? শীগ্গির বল।
    -- দেখি লিন্টুদি ওঁর বিছানাতে কেলিয়ে পড়ে আছেন। আর রামকানাইদা খালি গায়ে একটা আন্ডারওয়ার পরে এঘর থেকে ওঘর করছেন। তারপর উনি অন্য ঘরটা থেকে চুমুক দিয়ে শরবত মত কিছু খেয়ে এঘরে হড়বড় করে এলেন। আর লিন্টুদির দুপায়ের--।
    --কী বলছিস কী? এরকম হতে পারে না।
    -- অন্য কেউ বললে আমিও বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু নিজের চোখে দেখা। নিজেকে খুব জোরে চিমটি কাটলাম। সত্যি দেখছি?
    তারপর নীচে এসে গাড়িতে বসলাম। সারারাস্তা একটাও কথা বললাম না। দিদি জানতে চাই কী হয়েছে। বাড়ি পৌঁছে কিছু খেলাম না। রাত্তিরে দিদি জোর করলে বলেছি। আজ তোকে বললাম। ছুটি থেকে ফিরে আর একদিনও ওঁকে প্রণাম করতে যাই নি। সামনেও যাই নি। উনি ডেকে পাঠিয়েছেন, তবুও না।
    আমি কী বলব বুঝতে পারছি না।
    দরজায় ধাক্কা পড়ল। গুরুর গলা-- কী রে! আলো জ্বালাস নি! দরজায় ছিটকিনি ? কী কেস?
  • ranjan roy | 192.69.124.80 | ৩১ জুলাই ২০১৬ ২০:৫৯708367
  • ১১)
    মলয়ের সেই গোপন কথা কাউকে বলতে পারিনি। কিন্তু জলবিছুটির মত জ্বালা ধরিয়ে দিল যে! এসব যদি সত্যি হয় তো মাস চারেক আগের ব্যাপার। এতবড় ঘটনা, কিন্তু কোথাও তো কিছু টের পাওয়া যাচ্ছে না। আকাশও ভেঙে পড়েনি। ধরণী দ্বিধা হয় নি। সব আগের মতই চলছে। কাল সন্ধ্যেতেও লিন্টুদিকে দেখলাম। স্বাভাবিক ভাবভঙ্গী। কোথায় মলয়ের সেই বর্ণনা-- লিন্টুদি বিছানায় কেলিয়ে পড়ে আছেন! খাওয়ার আগে রামকানাইদার ঘরে গানের আওয়াজ শুনে গিয়ে জাজিমের এককোণে বসে পড়লাম।
    তানপুরা ধরেছেন বরানগরের এক প্রৌঢ় খেয়ালিয়া। ওনার মুখ যেন সপাট তান করতে করতে একদিকে একটু বেঁকে গেছে।
    রামকানাইদা স্কেল চেঞ্জিং হারমোনিয়মে সা-পা টিপে গান মালকোষে ধরেছেনঃ
    " তারা মুজ্বল পশিল ধরা পর
    সুন্দর হৃদয় প্রকাশি।
    রত্নগর্ভা নারী রত্ন প্রসবিল--
    হা- আ-আ-০০০০০০!"
    আমাকে ইশারায় খঞ্জনী তুলে নিতে বলে হাতে তাল দেখিয়ে দিতে লাগলেন-- তিন তাল। অসুবিধে নেই। চৌতালের গানগুলোয় বড় মনোযোগ লাগে।
    এর পর ভজন-- পগ ঘুংঘরুবন্দ মীরা নাচি রে! আবার মালকোষ এবং সেই তিনতাল। কিন্তু যেই ওই লাইনটা এল--জহর ক্যা প্যালা রাণাজী ভেজা পিবত মীরা হাঁসি রে!-- উনি এর মধ্যে একটু তানকর্তব করে নিলেন। খেয়ালিয়া ভদ্রলোক তানপুরা ছাড়তে ছাড়তে কেয়াবাৎ বলে উঠলেন।
    খাওয়ার ঘন্টা পড়লে উঠে যাচ্ছিলাম। উনি ডেকে বললেন-- শোন ব্যাটা! প্রথম গানটা কার লেখা জানিস? স্বয়ং গিরিশ ঘোষের। বিবেকানন্দের উদ্দেশে। পরে আমার থেকে তুলে নিস।
    খাওয়ার ঘরে যাচ্ছিলাম একটা ঘোরের মধ্যে দিয়ে। না, এই লোক অমন হতে পারে না। হিসেব মিলছে না।
    ঠিক করলাম কাল ভবদার সঙ্গে লিন্টুদির বাড়ি যাব, ওঁর সঙ্গে যাচ্ছি বললে গেট পাস হয়ে যাবে।
    খেয়ে দিয়ে বিছানায় এসে শার্লক হোমস খুলেছি কি গুরুর ডাক পড়ল। কথা আছে।
  • ranjan roy | 192.69.2.15 | ০১ আগস্ট ২০১৬ ০০:২৪708368
  • গিয়ে দেখি ভাল গ্যাঞ্জাম। আমাদের বন্ধুরা ছাড়াও উঁচুক্লাসের কয়েকজন রয়েছে।
    এদের মধ্যে মিথিলেশদা, অসীমদা আর সেই বিখ্যাত স্বামী-স্ত্রী জোড়া রাজুদা-বিমানদাও রয়েছে। গুরু এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল-- যে কজন এসেছে তাই যথেষ্ট; অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। অসীম, বল কী বলতে চাস্‌?
    --বলার কী আছে? তোরা দিন দিন ঢ্যামনা হয়ে যাচ্ছিস। খেয়াল আছে যে রাত্তিরে খাওয়ার পর যে ঘরে ঘরে দুধ দেওয়া হত সেটা বন্ধ হয়ে গেছে?
    -- ঠিক বন্ধ হয়ে যায় নি। হস্টেলের চাকরের পক্ষে আর ঘরে ঘরে গিয়ে 'কে দুধ খাবে' বলে সুর করে হাঁক দিয়ে বাটি বাটিতে দুধ ঢেলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
    -- কেন?
    --- পঞ্চা আর আপর্তি কে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই।
    -- তাতে কী? নতুন লোক রেখে নিলেই হয়।
    --- তাই তো বলছি, যখন লোক পাওয়া যাবে , তখন ফের শুরু হবে।
    -- অমিয় , তোর চ্যালাটাকে চুপ করতে বল। ওরে পোদো, দুধ কী আমাদের দানছত্তর করে দেওয়া হয়? এর জন্যে আমাদের বাবা-কাকারা মাসে মাসে ছ'টাকা করে চার্জ দিচ্ছেন না? সে টাকা কোথায় যাচ্ছে
    -- কোথায় যাচ্ছে মানে? দুধের জন্যে নেওয়া টাকা দুধ কিনতে যাচ্ছে।
    -- অ! তা সেই দুধ কে খাচ্ছে?
    -- আমরাই খাচ্ছিলাম, এখন কেউ না।। নতুন লোক লাগাতে পারলেই ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে।
    -- তুই দেখছি মহাক্যালানে! শোন, না জেনে বকবক করিস না। ওই টাকা দিয়ে টবিন রোডে জমি কিনে বাড়ি তৈরি হচ্ছে।
    আমি তোতলাতে থাকি।
    -- কী বলছেন? কার বাড়ি?
    --কার আবার তোদের রামকানাইদার। স্বামী শান্তিনাথানন্দের।
    আমার মাথায় আগুন জ্বলে যায়। অনেক সহ্য করেছি। আর নয়।
    -- মুখ সামলে অসীমদা! রামকানাই মহারাজের ব্যাপারে ভাল ভাবে কথা বলবেন। সন্ন্যাসী মানুষ। উনি বাড়ি
    --বানাতে যাবেন কার জন্যে?
    মিথিলেশদা আমার গালে ঠাঁটিয়ে চড় মারে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। বন্ধুরা টেনে তোলে। আমাদের চোখ জ্বলে ওঠে। প্রশান্ত বলে-- পোদোকে মারলেন কেন?
    -- সিনিয়রদের মুখ সামলে বলেছে! আস্পদ্দা কম নয়! নিজের মুখ সামলাক।
    এবার গুরু অমিয়দা এসে মাঝখানে দাঁড়ায়।
    --ব্যস্‌ ব্যস্‌! আর না। পোদো তো খালি জিগ্যেস করেছে সন্ন্যাসী মানুষ খামোখা বাড়ি বানাতে যাবেন কেন?
    -- ও না জেনে বালের মত কথা বলছে! আমাদের কাছে খবর আছে যে রামকানাই মহারাজ শীগ্গিরই গেরুয়া ছেড়ে সংসার ধর্মে ফিরে যাবেন।
    আমাদের বাক্যি হরে গেল। এ ও কী সম্ভব? একবার গেরুয়া ধরলে সেটা ছেড়ে আবার সংসারে ফেরা যায়?
    অমিয়দা বলল--যায় , কিন্তু এ নিয়ে আর কথা না। বরং ভাবা শুরু কর--কোনটা ঠিক হবে? এই দুধ বন্ধ হওয়া নিয়ে গার্জেনদের কাছে কমপ্লেইন করব? না কি রামকানাই মহারাজের কাছে গিয়ে বলব -- দুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমাদের ছেলেরা পালা করে দুধ দেওয়ার ডিউটি করবে। ঘরে ঘরে নয়, খাওয়ার পরে ডাইনিং হলে। যার দুধ খাওয়ার সে নিজে হলে এসে গেলাসে করে নিয়ে যাবে।
    এই নিয়ে কথা শুরু হতে দেখা গেল অধিকাংশের মতে প্রথম অপশনটা বড্ড তাড়াহুড়ো হয়ে যাবে। দ্বিতীয়টা বরং--।
    এমন সময় দোতলা থেকে একটা পরিত্রাহি চিৎকার। আবার ! আবার! আবার! সেই হাড়হিম করা আওয়াজ মিলিয়ে যাবার আগেই ক্লাস এইটের সুজিত দৌড়তে দৌড়তে এল।
    -- আপনারা প্লীজ শিগ্গির দোতলায় চলুন। ক্লাস নাইনের রমেন সিনিয়র বিমলদার বীচি টিপে ধরেছে, কেউ ছাড়াতে পারছে না। বিমলদা মরে যাবে।
  • d | 144.159.168.72 | ০১ আগস্ট ২০১৬ ১১:৫৬708369
  • তারপর?
  • সে | 198.155.168.109 | ০১ আগস্ট ২০১৬ ১২:২৫708370
  • এতদিন জমিয়ে রেখেছিলাম পড়ব বলে। পড়ে হাঁ হয়ে গেছি। জাস্ট টু মাচ। বিশ্বাস হতে চায় না।
  • ranjan roy | 192.69.2.15 | ০১ আগস্ট ২০১৬ ১৬:০৫708372
  • দোতলায় ১১ নম্বর ঘরের সামনে বিমলদা শুয়ে আছে; যন্ত্রণায় বিকৃত মুখ। কিন্তু মুখের রং কেমন একটা অস্বাভাবিক ধরণের নীল।
    আর রমেন পাশেই মাটিতে বসে আছে; গুম হয়ে, কোন কথার উত্তর দিচ্ছে না।
    অন্যদের থ্কে সারমর্ম যা বোঝা গেলঃ
    আজকে ওই ঘরের টিউটোরিয়লে স্যার আসেন নি। ছেলেরা নিজেদের মধ্যে বইখুলে পড়াশুনো আড্ডা এইসব চালিয়ে যাচ্ছিল যথারীতি। নাইন সায়েন্সের জ্যোতির্ময় সন্ধ্যা মুখার্জির লেটেস্ট গান একটা চিরুনির সঙ্গে কাগজ জড়িয়ে বাঁশির মত আওয়াজ বের করে বাজাচ্ছিল।
    এমন সময় বিমলদা এসে ঢোকে। কী হচ্ছে জিগ্যেস করে আড্ডায় বসে যায়। জ্যোতির্ময়কে খেপাতে থাকে। তারপর ভালমানুষ মত অমলকে বলে জ্যোতির প্যান্টটা টেনে খুলে দিতে! অমল রাজি না হলে ওকে মারবে বলে ভয় দেখায়। সবাই জানে বিমলদা বেলগাছিয়ার কোন ক্লাবের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন। ওর লেফট হুক খেলে নাকি লেফ্ট চোয়ালের সব কটা দাঁত পড়ে যায়। বেলগাছিয়ায় রনি বলে এক মাস্তানের নাকি ওই দশা হয়েছিল। আশ্রমে সবাই বিমলদাকে ভয় পায়। কেউ লাগতে যায় না।
    অমল ভয়ে ভয়ে জ্যোতির প্যান্টে হাত দিতেই জ্যোতি সপাটে ওকে একটা চড় মারে। তখন বিমলদা গিয়ে ওর হাত দুটো টেনে ধরে রাখে আর অমলকে বলে--ওর প্যান্টটা খোল, কোন ভয় নেই।
    রমেন উঠে দাঁড়ায়।
    --বিমলদা, আপনি এখান থেকে যান। এক্ষুণি! নইলে আমি চেঁচাবো।
    বিমলদা তেড়ে যাচ্ছিল, কিন্তু খাবার ঘন্টা বেজে ওঠায় লফড়া কেঁচে গেল।

    খাওয়াদাওয়া চুকলে বিমলদা আবার ওদের ঘরে এল। এসেই রমেনের কলার চেপে বারান্দায় নিয়ে এসে দেয়ালে ঠেসে ধরল।
    --কী রে! তখন খুব রোয়াব দেখাচ্ছিলি। কী ভেবেছিস কি তুই! সিনিয়রদের ঘর থেকে গেট আউট বলিস। এত সাহস!
    --- আপনি সিনিয়রদের মত থাকুন না! কেন জোর করে ওর প্যান্ট খোলাচ্ছিলেন?
    --- তাতে তোর কী? আমার ব্যাপার আমি বুঝব; তুই কি ওর গার্জেন?
    --- আমি ওর রুমমেট। এটা আমার ব্যাপার। যে নিজে থেকে আপনার কোলে এসে বসে তার সঙ্গে এসব করুন গে যান।
    --- কার কথা বলছিস?
    -- আপনি ঠিকই বুঝতে পারছেন।
    ভীড় জমে গেছল। সবার সামনে রমেনের এমন ধারা কথায় বিমলদা হতভম্ব। কেউ কেউ মুচকে হাসছে। আর সহ্য হয়?
    --শুয়োরের বাচ্চা!
    --অ্যাই, বাপ-মা তুলবেন না বলছি; ভাল হবে না।
    বিমলদার এক ঘুঁষিতে রমেনের মাথা পেছনের দেওয়ালে ঠুকে গেল। টেনশন বাড়ছে। কিন্তু এরপরে যা ঘটল সেটা কেউ আন্দাজ করতে পারেনি।
    রমেন একবার মাথা ঝাঁকাল। তারপর বিমলদার বাঁহাতের পাঞ্চ মুখে লাগার আগে চট করে নীচু হল। সেটা গিয়ে লাগল সোজা দেয়ালে আর বিমলদা যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠল। কিন্তু সেই কঁকিয়ে ওঠা একটা ওঁক্‌ আওয়াজে না থেমে লম্বা মীড়ের মত গড়িয়ে যেতে লাগল।
    রমেন হাঁটু গেড়ে বসে বিমলদার অন্ডকোষ টিপে ধরে মুচড়ে দিচ্ছে।
    দৌড়ে এসেছে অন্যান্যরা।
    -ছাড় ছাড়্‌, বিমল মরে যাবে যে!

    সেই রাত্রেই বিমলদাকে কাশীপুর মিউনিসিপ্যাল হসপিটালে ভর্তি করতে হল। ওর পেচ্ছাপ বন্ধ হয়ে গেছল। আর পরের দিন রামকানাই মহারাজ রমেনকে একমাসের জন্যে সাসপেন্ড করে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। ওর অপরাধ -- সিনিয়র ছাত্র বিমলের গায়ে হাত তোলা, গুন্ডামি যা ফ্যাটাল কেস হতে পারত।
    আমাদের কয়েকজনের গিয়ে অনুরোধ, এবং পুরো ঘটনাটা বলা কোন কাজেই এল না।
  • d | 144.159.168.72 | ০১ আগস্ট ২০১৬ ১৬:১২708373
  • :-X
  • ranjan roy | 192.69.2.15 | ০১ আগস্ট ২০১৬ ২৩:২৩708374
  • ১২)
    কিস্যু ভাল লাগছে না। রমেন একমাসের জন্যে বাড়ি গেছে। ওর বাড়ি বিহারে, বাবা কোন ব্যাংকে কাজ করেন। ও আমাদের থেকে একবছরের বড়। অংকটা বেশ স্ট্রং। মুকেশ ও রফির গানগুলো ভাল গাইত। হিন্দি উচ্চারণ একেবারে অরিজিনাল গায়কদের মত।
    ওর গলায় "দিল তড়প তড়প কে কহতা" আর " আসলি ক্যা হ্যায়, নকলি ক্যা হ্যায়" আমাদের নিজস্ব অর্কেস্ট্রায় হিট গান ছিল।
    ও ছিল ভারি আমুদে ।
    অন্য একজন মেয়েলি আওয়াজে লতার বা আশার হিট দু'কলি গাইত। আর রমেন বিছানার চাদর কুঁচিয়ে ঘাঘরার মত করে নিয়ে একটি গামছা ওড়নার মত করে মুখে একটা বোকা বোকা হাসি নিয়ে আমাদের আশা পারেখ বা বৈজয়ন্তীমালা হয়ে নেচে নেচে বেড়াত। লাফিয়ে খাট বা চেয়ারে উঠত অথবা ডাঁই করে রাখা বিছানার উপর।
    আমরা দেখতে পেতাম নায়িকা পাহাড়ের চুড়ো থেকে তরতর করে নীচে নেমে নদীর পাড়ে গাছের ডাল ধরে নাচছে , অথবা লজ্জা লজ্জা মুখ করে আলিঙ্গন উদ্যত নায়কের হাতের ফাঁক দিয়ে গলে বেরিয়ে যাচ্ছে। হাততালি! হাততালি!
    সেবার এমনি একটি নাচের সময় চটপট হাততালির মাঝখানে কেউ উঠে বাথরুম যাবে বলে দরজা খুলেছে কি অনিল মহারাজ চট করে ঢুকে পড়লেন। কেউ খেয়াল করেনি।
    নর্তকী রমেন কে দেখে উনি হাসবেন না কাঁদবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। আমরা তিনজন দরজার দিকে ঘষটে গিয়ে ওনার পেছন দিয়ে কাট; উনি অবাক বিস্ময়ে শুধু রমেনকে দেখে যাচ্ছেন।
    অমন রমণীয় বেশভূষা! ও কোথায় পালাবে? নিরুপায় রমেন সোজা দুহাতে মুখ ঢেকে বিছানায় ডাইভ মারল। শত বকুনিতেও মুখ তুলে তাকালো না।
    সেই রমেন এখন সাসপেন্ডেড? ক্লাস মিস করছে! আমরা তো ক্লাসে যাচ্ছি, নোটস্‌ নিচ্ছি। সায়েন্সের ছেলেরা ল্যাব অ্যাটেন্ড করছে, রমেন ও তো সায়েন্সের। অ্যানুয়াল পরীক্ষার বেশি দেরি নেই। ভগবান আছে না নেই?
    রামকানাইদাকে আর একবার বলে ওর সাসপেনশনের মেয়াদ কমিয়ে দেওয়া যায় না? বলে দেখি?
    রোববার দিন কলতলায়, আমরা বলতাম তেরো কলের পার্ক, কয়েকজন মিলে কাপড় কাচছি। আমি বললাম-- এই শালার আশ্রমে আমাদের কিছু হবে না। এখানে খালি অয়েলিং চলে। যে যত--!
    কোথা থেকে ছুটে এসেছেন প্রাইভেট বাস অনিল মহারাজ।
    -- কী বললি পোদো? কী বললি? অয়েলিং চাই, অয়েলিং না হলে কিচু হয় না? তুইও কি রমেনের মত সাততাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে চাস?
    আচমকা যেন একটা আপাত নিরীহ বল হটাৎ স্যুইং করে আমার বেল উড়িয়ে দিয়েছে। আমার মুখে উত্তর জোগাল না। এইসময় বিপ্লবের মাথায় প্রেরণা দেবী অধিষ্ঠান করলেন।
    -- না মহারাজ, ও অয়েলিং বলেনি। আপনি ভুল শুনেছেন। ও বলছিল--ডিসিপ্লিন চাই, ডিসিপ্লিন না হলে এখানে কিছু হবে না।
    -- কী? ডিসিপ্লিন? আমি যেন অয়েলিং শুনলাম।
    ততক্ষণে আমরা গানের ধ্রুবপদ ধরে ফেলেছি।
    -- ডিসিপ্লিন অনিলদা, ডিসিপ্লিন! আরও কড়া ডিসিপ্লিন চাই। আপনি ভুল শুনেছেন।
    অনিলদা অন্যমনস্ক হয়ে কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেলেন।
    --মিতা, এক প্যাকেট পানামা! আমার তরফ থেকে। খুব বাঁচান বাঁচিয়েছিস! ভগবান আছেন!
    সেদিন রাত্তিরে আমার জিদ চেপে গেল। কালকে ম্যাথস এর ক্লাস টেস্টে ভাল নম্বর পেতে হবে। আর্টসের ছেলে হয়েও হায়ার ম্যাথ্স কম্বিনেশন নেওয়ায় সবাই খ্যাপায়। বলে--গরীবের ঘোড়া রোগ! অতই যদি অংকের শখ তো সায়েন্স নিলি না কেন? পোঁদে নেই ইন্দি, ভজরে গোবিন্দি!
    নাইনে উঠে জ্যামিতি এত কঠিন লাগছে কেন? পাইথাগোরাস অবদি ঠিক ছিল। কিন্তু অ্যাপোলোনীয়াস থিওরেম? অর্থোগোনাল প্রোজেক্শন? আর ট্রিগোনোমেট্রির হাইট অ্যান্ড ডিস্ট্যান্স? কোনটা যে অ্যাঙ্গেল অফ এলিভেশন আর কোনটা ডিপ্রেসন এর শেষ দেখে ছাড়ব। সবাই শুয়ে পড়লে বারান্দায় আলোর তলায় একটা মাদুর নিয়ে বসে পড়লাম। দূরে কোথায় বৃষ্টি নেমেছে, ব্যাঙ ডাকছে। জোলো হাওয়ায় গা জুড়িয়ে যাচ্ছে।
    রাত দুটো নাগাদ সবাই কব্জায় এল। অ্যাপোলীনিয়্স আর গ্রীক রইলেন না, আমার পাড়ার কাকু হয়ে গেলেন। আনন্দে ঘুম এল না --বৃষ্টি নেমেছে ঝেঁপে। খানিকক্ষণ পরে আশ্রমের পানাপুকুর উপচে ঘরের সামনের পাকা নালায় জলের মধ্যে মাছ ভেসে বেড়াতে লাগল। ধরলে কেমন হয়? খাতাপত্তর তুলে রেখে ঘর থেকে গামছা নিয়ে নালায় নাবলাম। খলসে কইগুলো ধরেও রাখতে পারলাম না। পিছলে বেরিয়ে গেল। ধরা পড়ল গোটা কয়েক চ্যাং মাছ। কিন্তু রাখি কোথায়? ফের ঘরে গিয়ে ঘরমোছার বালতি নিয়ে এলাম। দরজায় ঠুং ঠাং শব্দে কারও ঘুম ভাঙল বোধহয়। কুছ পরোয়া নেই।
    বালতিতে গামছায় বাঁধা মাছগুলো ছেড়ে দিয়ে আবার জাল পাতছি এমন সময় পিঠে কারও হাত। ভীষণ চমকে ঘুরে দেখি বিপ্লব।
    --এসব কী হচ্ছে রে লাকি! বুঝেছি, কাল অংকে ভাল করবি। এখন শুতে চল। এই চ্যাং মাছগুলো নালায় ফেলে দে। ওগুলো কেউ খায় না। আর বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর বাঁধালে তোর অংক পরীক্ষার হাতে হ্যারিকেন হয়ে যাবে।
    --ঘুম আসছে না মিতা।
    -- আমার বিছানায় চল। তোকে ঘুম পাড়িয়ে দেব।
    নাঃ, ভগবান আছেন।
  • Manish | 127.214.50.174 | ০২ আগস্ট ২০১৬ ১৫:৩৫708375
  • হ্যা, ভগবান আছেন। আর সাথে আছি আমরা।
  • anag | 208.182.52.26 | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ১৩:৩৮708376
  • পরের পর্ব কবে?

    লেখকের একটা উপন্যাস-ও চলছিল না? সেটাও বেশ ছিল - ওটা কি শেষ হয়ে গেছে?
  • ranjan roy | 127.222.23.72 | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ১৭:১৮708377
  • দুটোই চলছে। কাল থেকে রায়্পুর ছত্তিশগড়ে আছি। আজ রাত থেকে শুরু করব।
  • ranjan roy | 24.96.161.80 | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ২২:৪৪708378
  • সত্যিই ভগবান আছেন নইলে এমন হয়!
    আজ সক্কালে এক ভদ্রলোক যুগান্তর পত্রিকা হাতে করে আশ্রমে এলেন। যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কে?
    -- মানে? আমরা ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকারের নাম জানি, ওইসব মোগল-মারাঠা ক্যালাকেলির ইতিহাস; তাই তো?
    --- হ্যাঁ, কাকু। সেই যে আফজল খাঁ, মানে বাঘনখ?
    --ধেৎ, আমি কি তোমাদের জেনারেল নলেজের পরীক্ষক? এই দেখ, বন্যপ্রাণী পোষা নিয়ে বাংলা রচনা প্রতিযোগিতায় বরানগর মিশনের ক্লাস নাইনের যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সারা বাংলা প্রথম হয়েছে আর ৫০০/- সরকারের থেকে প্রাইজ পেয়েছে।
    --- দেখি, দেখি, তাই তো! অ্যাই যদু, শীগ্গির আয়। তোর নাম বেরিয়েছে যুগান্তরে।
    -- অনেক ধন্যবাদ কাকু!
    -- না, না; ভাই তুমি আমাদের বরানগরের আর স্কুলের নাম উজ্বল করেছ। তোমাকে অভিনন্দন। আমি পাশের গলিতে থাকি। খবরটা পড়ে মনে হল ছেলেটিকে দেখে আসি। ভগবান তোমার মঙ্গল করুন।
    উনি চলে যেতেই বিপ্লব ঝাঁপিয়ে এল।
    -- কী রে যদু? ওই সরকারী 'এসে' প্রতিযোগিতায় লেখাটা তুই নিজে লিখেছিলি? বুকে হাত দিয়ে বল তো?
    গুরু অমিয়দা এগিয়ে এল। কী কেস রে?
    -- এই 'এসে' টা কে লিখেছে?
    --- কোন এসেটা?
    --এই যে, যুগান্তর দেখ। সরকারের ফরেস্ট ডিপার্টমেট দ্বারা আয়োজিত " কোন বন্য প্রাণী তুমি পুষতে চাও" শীর্ষক বঙ্গের প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বরাহনগর স্কুলের শ্রীমান যদুনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গের সমস্ত স্কুলের মধ্যে বাংলা রচনায় প্রথম হইয়াছে। শ্রীমানের পছন্দের পোষ্য জন্তুটির নাম বাঘ। শালা, যোদো, তুই বাঘ পুষবি? বল, কে লিখে দিয়েছিল? সবার সামনে বল।
    প্রশান্ত বলল-- এ নিয়ে এত ক্যান্টার করার কী মানে? ওর বাবা-কাকা বা ওর স্যার যেই লিখে দিক পত্রিকায় ওর নাম বেরিয়েছে, স্কুলের নাম বেরিয়েছে; ব্যস্‌। ও আমাদের খাইয়ে দিক।
    সবাই সায় দিল।
    কিন্তু বিপ্লবের চোখ য্দুর মুখের থেকে সরছে না। যদু চোখ নামিয়ে নিল।
    অমিয়দা বলল-- কী ব্যাপার রে? বিপ্লব , তুই ওর পোঁদে লাগছিস কেন?
    বিপ্লব দেঁতো হেসে বলল--ওই বলুক কেন লেগে রয়েছি।
    যদু কিছু বলছে না।
    গুরু কিছু আঁচ করে বলল-- বেশ, এত যখন হড়কাচ্ছিস তো তুইই বল। ফালতুকার সাসপেন্স সাত সকালে কোন মানে হয়?
    --- আমার সামনে য্দু আমাদের প্রদ্যুম্নকে বলে রচনা লিখে দিতে। প্রদ্যুম্ন বলে যে দেবে কিন্তু এক শর্তে--যদুকে লাইব্রেরি থেকে খুঁজে বাঘের ওপর দুটো সলিড কোটেশন, বাংলায় ও ইংরেজিতে , নিয়ে আসতে হবে। যদু পরের দিন নিয়ে এল। একটা টাইগার টাইগার বার্নিং ব্রাইট, আর একটা হিংস্র ব্যাঘ্র অটবীর--।
    তিনদিনের মাথায় পোদো যোদোকে ৬০০ শব্দের একটা এসে লিখে দিল। আমার সামনে--বল্লে হবে।
    সবার চোখ আমার দিকে ঘুরল।
    -যদু কাঁদো কাঁদো হয়ে আমার হাত চেপে ধরল। ভাই প্রদ্যুম্ন, প্লীজ তোরা কজন বন্ধু ছাড়া আর কেউ যেন না জানে! প্লীজ, বাবা জানে যে আমিই লিখেছি। গতকালই আমাদের বাড়িতে সরকারি ডাকে চিঠি এসেছে। বাবা কত খুশি হয়েছে! তুই তো আবৃত্তি করিস, নাতক ক্রে প্রাইজ পাস। আমি যে কিছুই পারি না। বাবা কত খুশি হয়েছে। টাকাটা হাতে আসুক। তোদের কজনকে আমি শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড়ের পাঞ্জাবী হোটেলের কাটলেট খাইয়ে দেব।
    সবাই চেঁচিয়ে ওঠে-- থ্রি চিয়ার্স ফর যোদো-পোদো!
    চিৎকারের চোটে ওয়ার্ডেন শিশিরদা ছুটে এলেন।
    --- সবকটাকে দিনের বেলায় তারা দেখিয়ে ছাড়ব। হয়েছেটা কী?
    -- শিশিরদা, আমাদের যোদো প্রাইজ পেয়েছে।
    -- কিসের প্রাইজ? কিসের কম্পিটিশন?
    --- পোদো হওয়ার প্রাইজ, মানে পাদের কম্পিটিশন!
    শিশিরদা চড় উঁচিয়ে অমিয়দাকে তেড়ে গেলেন।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ২২:৪৮708379
  • হিহি
  • ranjan roy | 24.96.161.80 | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ২৩:২৮708380
  • ১৩)
    ভগবান আছেন, ঠাকুর আছেন, ঠাকুরের আশীর্বাদ আছে।
    তাই পনেরদিনের মাথায় রমেন আশ্রমে ফিরে এল। রামকানাই মহারাজ ওকে মাপ করে দিয়েছেন। আমাদের আনন্দ ধরে কে?
    ক'দিন ধরে বেশি রাত অব্দি আড্ডা, টিচারদের নিয়ে মিমিক্রি, রমেনের সাসপেন্শন পিরিয়ডে দেখা তিনটে সিনেমার গল্প আর বৈজয়ন্তীমালার 'ক্যা করু রাম মুঝে বুঢ্ঢা মিল গয়া' নাচের নকল করার অক্ষম চেষ্টা সব মিলে সকালে ঘুম আর ভাঙছিল না। সবাই প্রেয়ারে গেল,আমরা মশারির ভেতরে। তিনজন ধরা পরে গেলাম। ডাক পড়ল অফিস ঘরে। আমি বিপ্লব আর প্রশান্ত।
    গুটি গুটি পায়ে দুটো বিল্ডিং পেরিয়ে যেতে যেতে ডিফেন্স স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা হল।
    প্ল্যান-এঃ সত্যি কথা বলা; স্বীকার করা যে আড্ডা এবং সিনেমাঘেঁষা অশ্লীল নাচগানের ফলে ঘুম থেকে উঠতে পারিনি।
    --ক্যানসেল; এটা স্বীকার করা মানে বাড়ি ফিরে যাওয়া, ঠিক রমেনের মত।
    প্ল্যান-বিঃ আমাদের কেউ ডেকে দেয় নি।
    --- চলবে না; ঘন্টা বেজেছে। আবার ডাকা কিসের? বাকি ছেলেদের কে ডেকেছে?
    প্ল্যান -সিঃ
    --- কোন ডিফেন্স নয়; কথার উত্তর না দেওয়া। প্রশ্ন করলে মাথা না তুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা। শাস্তি ঘোষণা হলে কেঁদে ফেলে ক্ষমা চাওয়া আর একটা চান্স দিতে অনুরোধ করা। তাতে কয়েকদিন খেলা বন্ধ হতে পারে, প্রেয়ার হলে তিনদিন মেজে মোছার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, মায় বাগানের আগাছা সাফ করা। কিন্তু ঠিকমত ঠাকুরের নাম নিয়ে চোখের জল ফেলে অনুতপ্ত হলে সাসপেনশন হবার চান্স নেই বল্লেই চলে।
    অগত্যা; এই চলুক।
    কিন্তু রমেনের জিভে আজ দুষ্ট সরস্বতী ভর করেছেন।
    -- শোন; এটা সেই আমাদের বইয়ের কমলাকান্তের দপ্তরের কুক্কুর জাতীয় পলিটিক্স হল। ছ্যাঃ ছ্যাঃ; আমরা করব বৃষজাতীয় পলিটিক্স। অফেন্সে খেলব, ডিফেন্সে নয়।
    -- সে আবার কী?
    -- আরে আমার মাথায় একটা মারকাটারি প্ল্যান এসেছে। যদি ঠিকমত খেলতে পারিস-- বিপ্লব পারবি, এই পোদো হাঁদাটাকে নিয়েই ভয়।
    বিপ্লব দাঁড়িয়ে পরে। আরে সবাই পারবে, তুই আমাদের ঠিক করে বুঝিয়ে দে কী কী করতে হবে।

    ফিস্‌ফিস্‌ ফিস্‌ফিস্‌। হি-হি-ই-হি-হি-ই-ই।
    এবার সবাই গম্ভীর। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। মারকাটারি প্ল্যানই বটে!
    অফিসে অনিল মহারাজ টেবিলের সামনে নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে। আমাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলেন বোঝা যাচ্ছিল। তবু তিন মূর্তিকে দেখে গম্ভীর মুখ করে একটা রাইটিং প্যাড টেনে নিয়ে কিসব আঁকিবুকি কাটতে লাগলেন।
    -- তোমাদের কিছু বলার আছে?
    আমরা চুপ।
    -- বলে ফেল; সত্যি কথা বলবে। তাতেই শাস্তি কিছু কম হতে পারে।
    সন্নাটা সন্নাটা।
    -- মুখ বুজে থেকে কোন লাভ হবে না। গত মাসেও তোমরা প্রেয়ারে একদিন ফাঁকি দিয়েছিলে। আশ্রমের নিয়ম সবার জন্যেই সমান।
    ঠিক আছে। তোমাদের আজ বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আমি তোমাদের গার্জেনের নামে চিঠি লিখে দিচ্ছি। তোমরা ভোরে প্রেয়ারে আসতে চাও না। কাজেই বাড়ি যাচ্ছ। এরপর তোমাদের গার্জেনরা যা ভাল বুঝবেন।
    --- না মহারাজ।
    --- মানে? তোমাদের শাস্তি দেওয়া যাবে না? তোমরা এতই--?
    রাগে অনিলদার কথা আটকে যায়।
    এবার বিপ্লব মুখ খোলে।
    -- তা বলছি না মহারাজ। আমরা দোষ করেছি, শাস্তি দিন, এটা আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু চিঠিতে সঠিক কারণটা লিখবেন।
    -- সঠিক কারণ?
    -- প্রেয়ারে না এসে ঘরে পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছ; এর আবার সঠিক বেঠিক কী? প্রদ্যুম্ন উসখুস করছ কেন?
    -- আসলে মহারাজ আমরা প্রেয়ারে আসতে চাইছিলাম, প্রেয়ার খুব ভাল লাগে। কিন্তু ঠিক ভোরের বেলায় নাইটফল হয়ে গেল।
    --নাইট ফল?
    অনিল মহারাজ ভিরমি খেলেন।
    -- হ্যাঁ, মহারাজ। ওই খারাপ স্বপ্ন দেখে।
    -- মানে প্যান্ট ভিজে গিয়ে আমরা অশুদ্ধ হয়ে গেছি তো! স্নানটান করে শুদ্ধ না হয়ে কি করে প্রার্থনায় যাব? তাই। এবার যা শাস্তি দেবেন। খালি সঠিক কারণ লিখে দেবেন।
    -- আচ্ছা, আচ্ছা! আমি এখনই গেটপাস লিখে দিচ্ছি। ৯ টা নাগাদ মিউনিসিপ্যাল হসপিটালে চলে যাও। আমার চিঠি নিয়ে মধুসূদন ডাক্তারবাবুকে দেখাও। পয়সা লাগবে না।

    ভগবান আছেন। আমাদের উপর ঠাকুরের কৃপা আছে।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ০৪ আগস্ট ২০১৬ ২৩:৩৩708381
  • যাচ্ছেতাই। এটা পুস্তকাকারে বেরোক!
  • | ০৫ আগস্ট ২০১৬ ১১:৩৭708383
  • তারপর?
  • ranjan roy | 127.198.23.3 | ০৫ আগস্ট ২০১৬ ১৬:৫৩708384
  • সবাই গেল চান-টান করে স্কুলে ;আমরা তিনমূর্তি নর্থ ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল হাসপাতালে। সবুজ পর্দা ঘেরা চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা। চিকিৎসার জন্যে আসা অল্পবয়েসের মেয়েদের দিকে ঝারি কষা, আর তারপরে এক এক করে ডাকতারের মুখোমুখি হওয়া; শেষে নাচতে নাচতে হস্টেলে ফেরা-- আজকে স্কুল যেতে হবে না।
    সবকটা চ্যাংড়া বিকেলে খেলতে না গিয়ে আমার ঘরে জড়ো হল, অগ্রণী অবশ্যই গুরু অমিয়দা।
    আমাদের এক এক করে বলতে হল ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে সওয়াল জবাব। কী আশ্চর্য! আমাদের সবার জন্যে ওঁদের আলাদা আলাদ প্রেসক্রিপশন। বিপ্লবকে বলা হল--রাত্তিরে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বে, আমাকে দেরি করে আর রমেনকে বলা হল ঘুমোনোর আগে বিবেকানন্দের লেখা থেকে একটা অধ্যায় পাঠ করে শুতে যেতে!
    সবাই কনফিউজড্‌ বল্লে কম বলা হয়।
    গুরু উবাচ-- তোরা ভেবেছিস ডাকতারদের ঝুটমুট গল্প বলে বোকা বানিয়েছিস। আসলে ডাক্তাররা তোদের মত গাধাদের বোকা বানিয়েছে। এমন ট্রানস্পারেন্ট লাই!
    গুরু আবার চটে গেলে ইংরেজি বলে।
    তাই বললাম--চটছ কেন?
    -- চটব না? তোরা সব বালের গল্প শুনিয়ে একদিন স্কুল থেকে ফোকটের ছুটি এনজয় করবি আর আমরা?
    কী আশ্চর্য! গুরুর ডানহাত আমাকে মানে বাঁহাতকে সাপোর্ট করে বলে উঠল-- বালের গল্প কেন? ওর জোরে সাসপেনশন থেকে বেঁচে গেল, এ কি কম কথা? রমেন যদি পরপর দু'বার সাসপেন্ড হত তো?
    -- কী আর হত, আমাদের ফ্রি-তে বৈজয়ন্তীমালার নাচ দেখা বন্ধ হয়ে যেত আর ওই হারামজাদা বিমল! ও আরও ছোট ছোট ছেলেদের রেপ করত। কমসেকম রমেনের বীচি টিপে দেওয়ায় কিছুদিন সমঝে চলবে।
    সমবেত হো-হো-হি-হি-র মধ্যে রমেন হাত তুলল।
    -- কী কেস, রমেন?
    --আমি একটা কথা বলতে চাই।
    -- বল না বাল! কে তোর মুখ চেপে রেখেছে?
    -- আমরা বায়োলজির ব্যাপারে অনেক কিছু ভুলভাল জানি।
    বৈষ্ণব ছেলেটি বলল-- যথা?
    --যথা নম্বর-এক; আমরা জানতাম আশি ফোঁটা রক্ত থেকে একফোঁটা রস হয়। তাই নাইট ফল হলে আমাদের এত দুর্বল লাগে, ঘুম পায়। এই কথাটা ডাক্তারবাবুকে বলতে উনি হো- হো করে হেসে ফেললেন।
    --সে কী রে! তুই এইসব মধুসূদন ডাক্তারকে জিগ্যেস করলি? তোর ধাক আছে মাইরি! আর কী কী ভুল জানি।
    --- আরে অনেকে বলে না যে বীর্যপাত হলে শক্তিক্ষয় হয়। আর বীর্য স্টক করলে বাড়তে বাড়তে গিয়ে ব্রহ্মতালুতে ঠেকলে ব্রহ্মজ্ঞান হয়! তাই বরানগরে গঙ্গার ঘাটে স্নান করতে গিয়ে স্বামীজির বীর্যপাত হলে উনি হাতে নিয়ে খেয়ে ফেলেছিলেন যাতে স্টক না কমে? সেটার ভ্যালিডিটি চেক করলাম। একেবারে লিটমাস টেস্ট, সোজা ডাক্তারবাবুকে।
    --- তোকে তোর বাপ-মা কী খেয়ে পয়দা করেছিল রে?
    রমেনের মুখের রঙ বদলাচ্ছিল।
    কিন্তু গুরু ঠিক সময়ে ফাউলের বাঁশি বাজাল। বলল--এই ব্যাপারে কেউ কারও বাপ-মা তুলবে না।
    প্রশান্ত বলার চেষ্টা করল-- বাপমা- রা বেশ ভারী। আমরা ছোট ছোট ছেলে, কী করে তুলব?
    --- ধূস্‌ শালা! ডাক্তার কী বললেন সেটা বল না!
    --- ডাক্তার পাশের চেম্বার থেকে আরও দুজন স্টেথো গলায় কাকুকে ডেকে আনলেন। ওরা বড় বড় চোখ করে আমদের দেখে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। শেষে একজন টাকমাথা সিরিয়াস মুখ করে বলল-- শোন ছেলে। এসব বাজে গল্প; উদ্ভট কল্পনা। এসব বিশ্বাস কর না। আগামী বছর বায়োলজির বই পড়ে নিয়ো। কী করে সীমেন শুক্রাণু তৈরি হয় সব জানতে পারবে।
    --- তাহলে ফল হলে খাওয়া ভুল? স্বামীজি?
    -- অবশ্যি ভুল; কক্ষণো খাঅবে না। আর স্বামীজি অনেক শিক্ষিত ছিলেন। এসব গেঁয়ো অজ্ঞ লোকের তৈরি ফালতু গল্প। উনি এ'ধরণের কিছুই করেন নি।
    -- ও কে! তোর গল্প শেষ তো? আর কেউ ডাক্তারবাবুদের কিছু জিজ্ঞেস করেছে? কী রে বিপ্লব?
  • ranjan roy | 24.97.140.92 | ০৬ আগস্ট ২০১৬ ০০:১৩708385
  • -- না মানে আমি ডাক্তারবাবুকে জিগ্যেস করলাম মাস্টারবেশন করলে পাপ হয় কি না?
    -- উরি ত্তারা!
    -- উনি চশমা খুলে আবার পড়লেন, তারপর আমাকে মাস্টারবেশনের স্পেলিং জিগ্যেস করলেন।
    --- সে কী?
    --- হ্যাঁ রে! আরও জানতে চাইলেন যে এর বাংলা প্রতিশব্দটি জানি কি না? কোন ডিক্শনারি আর কোথায় প্রথম শুনেছি।
    --- কী ডাক্তার মাইরি!
    --- অ্যাই, তোরা চুপ কর তো! ডাক্তার কী বললেন তাই বল--পাপ হয় কি হয় না?
    -- বললেন-- পাপ-পুণ্যের ব্যাপরটা ওনার ডিপার্টমেন্ট না; বরং মহারাজদের জিগ্যেস করলেই ভাল হয়। তবে খামোকা বেশি বেশি এই চক্করে পড়লে ক্লান্তি আসবে, পড়াশুনো থেকে মন চলে যাবে। আর কোন শারীরিক ক্ষতি হয় না।

    আমরা খানিকক্ষণ চুপ।
    অমিয়দা এবার মুখ খুলল-- আর পোদো! আমার বাঁ-হাত, তুই কিছু এমনি প্রশ্ন করিস নি?
    --গুরু, ভাবছিলাম করব, কিন্তু করি নি।
    -- বলে ফেল কী সেই প্রশ্ন যাহা জিগাইতে শ্রীমান পোদো শেষ মুহূর্তে নার্ভাস হইয়াছেন।
    --গুরু, ভাবছিলাম মধূডাক্তারকে জিগ্যেস করব যে নাইট ফল-টল কি খালি ছেলেদেরই হয়?
    প্রশান্ত ও নিখিলেশ আমার মাথায় তবলা বাজিয়ে দিল। এই না হলে গুরুর বাঁ-হাত! এমন আতাক্যালানে প্রশ্ন আর কার মাথায় আসবে? ভাগ্যিস মুখ বন্ধই রেখেছিলি।
    -- লাইনে আয়। এইসব সাসপেনশন, রমেনের বিমলকে মারা, হ্যানোত্যানো-তে আমার অরিজিনাল প্রোজেক্ট ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। রাতপাহারা আর হোমোকেস দেখলে ধোলাই দেওয়া-- আবার শুরু করা যায় কি না? তোরা কি বলিস?
    নিখিলেশ বলল-- গুরু, ছেড়ে দাও। সামনে একটাই প্রোজেক্ট--অ্যানুয়াল পরীক্ষা , এখন ওইসব ছাড়। তারপর তো সবাই বাড়ি ফিরে যাবে। নতুন বছরে আবর দেখা যাবে।
    বিশু বলল-- এর মধ্যে কোনটা প্রেম আর কোনটা কাম, সেটা কী করে আলাদা করা যাবে? মানে ওই আত্মেন্দ্রিয়- প্রীতি আর কৃষ্ণেন্দ্রিয়--প্রীতি?
    প্রশান্ত-- সোজা কথা। যেখানে একপক্ষের জোরজবরদস্তি--সেটা আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি। সেরকম কমপ্লেন পেলে আমি ধরে ক্যালাবো এবং সোজা রামকানাই মহারাজের অফিসে নিয়ে যাবো। উনি করুন সাপেন্ড!
    -- সবই হল। এবার পোদো লাস্ট ডায়লগ দে।
    --গুরু, এইসব আত্মেন্দ্রিয়-কৃষ্ণেন্দ্রিয় বাতেলা ছাড়ান দাও। একটু ভাব, এসব চুলকুনি খালি আমাদের
  • ranjan roy | 24.97.108.111 | ০৬ আগস্ট ২০১৬ ০৮:৪১708386
  • খালি আমাদের হয় কেন? কই, আমাদের সঙ্গে যে ডে-স্কলার ছেলেগুলো পড়ে তাদের এই রোগ হয় না কেন? হুঁ হুঁ বাবা! এবার স্পিকটি নট্‌!
    --তুই কী বলতে চাস?
    -- আচ্ছা, ছুটিতে যে বাড়ি যাও, পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মার, তাদের কারও এইসব নিয়ে মাথাব্যথা দেখেছ?
    --- না; তা তো দেখি নি। তবে?
    --- ওরা কী নিয়ে কথা বলে?
    -- কেন, ফুটবল , সিনেমা, কেরিয়র-- আমাদের মতই।
    -- আর?
    -- মানে? আর কী? ওঃ, প্রেম, লাইন মারা; আমাদের মতই।
    -- কাদের সঙ্গে প্রেম? কাদের লাইন মারে?
    -- কাদের আবার কুসুমকলিদের। ডবকা ছুঁড়িদের।
    -- ঠিক ঠিক। আমরা কাদের লাইন মারি? কাদের প্রেমে পড়ি?
    -- ভাগ শালা! কারও প্রেমে পড়ি নি। কাউকেই লাইন মারি না।
    -- বেশ, তুমি হলে নিত্যগোপাল। কিন্তু যারা প্রেমে পড়েছে? যারা লাইন মারছে? বা প্রেমে পরার জন্যে ছোঁক ছোঁক করে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
    প্রশান্ত হেসে ফেলে। এখানে মেয়ে কোথায়? তাই যা পাওয়া যায়।
    রমেন বলে--আমাদের বিহারেও লৌন্ডা নাচা হয়। ওদের সঙ্গে প্রেম হয়। একটু মেয়েলি ছেলেদের মাল বলা হয়।
    অমিয়দা ভীষণ রেগে যায়।
    -- শোন, এসব ফালতু ক্যাওড়ামি। যে কয়েকটা ছেলে কারও সঙ্গে কিছু করছে বা যাদের ইয়ারকি করে স্বামী-স্ত্রী বলা হচ্ছে ওদের হাতে নয়, আঙুলে গোণা যায়। তাই দিয়ে তুই আশ্রমের সবাইকে মাপবি?
    -- রেগে যেও না। একটু ভাব। তোমার পাড়াতেও কটা ছেলে মেয়ে প্রেম করে? করতে চায়, সুযোগ পায় না। পাড়ায় একটা মেয়ের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে গেলেই কিচাইন হবে। দুজনের বাড়িতে রিপোর্ট যাবে। ঠ্যাঙানি খাবে। রোমিও জুলিয়েট হাতে গোণাই যায়। আমি মাইন্ড সেট এর কথা বলছি। বলতে চাইছি এই ছেলেগুলো এই আশ্রমে না থেকে বাড়িতে বাবা-মা, ভাইবোনের সঙ্গে বড় হলে পাড়ার স্কুলে পড়লে কি এমন করে ছেলেদের প্রেমে পড়ত না তোমার ওইসব হোমো চক্করে নোংরামি করে বেড়াত?
    নিখিলেশ ফিচেল হাসে। ওরে আমার ধর্মাবতার যুধিষ্ঠির রে! এদিকে ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না, ওদিকে জ্ঞান দিচ্ছে! ' নেকী মাগী তোর কয় ছেলে? বড়টাকে নিয়ে নয় ছেলে'।
    আমরা হেসে গড়িয়ে পড়ি। এ আবার কী! কোত্থেকে ক্যাচ করলি?
    --আরে পাড়ার এক দজ্জাল বুড়ির ঝগড়া থেকে। কান পেতে শুনলে যা সব মণিমুক্তো কানে আসে না। কিন্তু কথা ঘোরাস না, নিজের কথা বল।
    -- তুইই বল, কী বলতে চাস?
    -- আমার বাবা ঢাক ঢাক গুড় গুড় নেই। তুই যে এতবড় লেকচার ঝাড়লি তা তো আর বিপ্লবের ব্যাপারটা কী? আপনি আচরি ধর্ম!
    বিপ্লবের মুখ রাগে থমথম করে। বিশু আর রমেনের মুখে ফিচেল হাসি। অমিয়দা যেন ঘুম থেকে জেগে ওঠে। আমার দিকে কড়া চোখে তাকায়।
    --কী ব্যাপার রে?
    -- না মাইরি! সত্যি বলছি।
    -- কীসের না মাইরি?
    -- মানে আমাদের মধ্যে শুধু দোস্তি, খুব দোস্তি মানছি; কিন্তু আর কিছু না।
    -- না হলেই ভাল। হলে কি্ন্তু দুজনেই ধোলাই খাবি। ফিফটি-ফিফটি! আমার গ্রুপে আমি এসব সহ্য করব না। অন্যেরা যা করছে করুক গে।
    সবাই উঠে পড়ে।
    যেতে যেতে বিশু আমাদের শুনিয়ে শুনিয়ে গুনগুন করে--" রজকিনী প্রেম নিকষিত হেম কামগন্ধ নাহি তায়,
    রজকিনী রূপ কিশোরী স্বরূপ দ্বিজ চন্ডীদাসে কয়"।
  • Ranjan Roy | ১০ আগস্ট ২০১৬ ১৯:৫৫708387
  • ১৪)
    গত সপ্তাহে একটা ঝড় বয়ে গেছে, শীতকালের ঝড়, শিলাবৃষ্টি সহ। তার জেরে ভেঙে পড়েছে আমাদের পুকুরপাড়ের নারকোল গাছগুলো। ভেঙে গেছে বাগানের পাঁচিল, নুইয়ে পড়েছে করবী আর কলকে ফুলের ডাল।
    কী করে বোঝাব এই ঝড়ের তান্ডবকে! আসলে এই ঝড় গেছে শুধু আমাদের আশ্রমের উপর দিয়েই। তার দাপটে আমরা আশ্রমিক বালকের দল হতভম্ব। মাথায় উঠেছে ডিসেম্বরের অ্যানুয়াল পরীক্ষা। কেমন অনাথ অনাথ লাগছে, আসলে আমাদের আশ্রমের প্রাণপুরুষ রামকানাইদা চলে গেছেন। চলে গেছেন গেরুয়াবস্ত্র ত্যাগ করে,ফেলে গেছেন তানপুরা , হারমনিয়াম, গানের বই আর নিজের হাতে তৈরি ব্যান্ডপার্টি ও কালীকীর্তনের দলকে।
    না; উনি চলে যেতে চান নি। কিন্তু চলে যেতে হল। বাধ্য হয়ে। মিশনের হেডকোয়ার্টার ওঁকে মার্চিং অর্ডার দিয়েছে--বরাবরের মত। ওঁদেরও হয়ত উপায় ছিল না।
    না, আমাদের মতামত কেউ জানতে চায় নি, প্রশ্নই ওঠে না। আমরা যে নেহাৎই অপোগন্ড। তাই ঝড় ঘনিয়ে আসছিল বুঝতে পারি নি। ব্যারোমিটারের পারদ নীচে নেমে যাচ্ছে--খেয়াল করি নি।
    বড়দের থেকে শুনে আর আশ্রমের বিভিন্ন ঠেকে গুজব মিলিয়ে একটা ছায়া ছায়া কাহিনী দানা বাঁধছিল।
    কিছুদিন ধরে ইলেভেন ক্লাসের ছেলেদের সঙ্গে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ঝামেলা চলছিল। সূত্রপাত সেই বিনা নোটিশে দুধ বন্ধ করে দেওয়া আর মাছের টুকরোর সাইজ ছোট হয়ে যাওয়া।
    এ নিয়ে কম্প্লেইন, তর্কাতর্কি এইসব। তেমন গা করি নি। কিছু সিনিয়র ছেলে বিদ্রোহ করে প্রেয়ারে যাওয়া বন্ধ করে দেয়।
    গত মঙ্গলবারে রামকানাইদা ওদের সকালবেলায় অফিসে ডেকে পাঠিয়ে ওদের এবম্বিধ ব্যবহারের কৈফিয়ৎ চান। ওদের মতে একজন উল্টে মাসে মাসে ছ'টাকা দেওয়া সত্ত্বেও কেন দুধ দেওয়া হচ্ছে না সে নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তোলে।
    এ হেন দুঃসাহসে স্তম্ভিত রামকানাইদা মেজাজ হারিয়ে তক্ষুণি ওদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়ে চিঠি লিখতে শুরু করেন। কিন্তু সেই সময় হেড কোয়ার্টার থেকে ফোন আসায় উনি ফোন ধরতে পাশের কামরায় যান।
    আসামীদের মধ্যে ছিল আমার ঘরের এক্স-ক্যাপ্টেন রাজকুমারদা। ওরা ভয় পেয়ে গেছল আর সমঝোতার রাস্তা পাওয়া যায় কি না সেই নিয়ে ফুসুর ফুসুর করছিল। রাজকুমারদার চোখে পড়ে যায় রাইটিং প্যাডের নীচের থেকে উড়ে গিয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া একটি কাগজের টুকরো।
    সেটাকে যত্ন করে তুলে পেপারওয়েট চাপা দিয়ে রাখতে যাবে এমন সময় চোখ গেল কাগজের মধ্যে রামকানাইদার সুন্দর গোটা গোটা করে লেখা চিঠিটির দিকে। একনজর পড়েই সেটা রাজুদা পকেটে পুরে ফেলল আর সাথীদের বলল--ভগবান আছেন! উনি আমাদের ব্রহ্মাস্ত্র জুগিয়েছেন। ভয় পাস না।
    তারপর ওরা মহারাজের সমস্ত বকাঝকা মাথা নীচু করে চুপচাপ শুনল। শাস্তি ঘোষণা করে রামকানাই মহারাজ শেষ চেষ্টা করলেন। ওদের বললেন যে একদিন সময় দিলাম। ভেবে দেখ। কাল যদি তোমরা সবাই মিলে একটি কাগজে লিখে দাও যে তোমরা তোমাদের অসভ্য ব্যবহারের জন্যে অনুতপ্ত আর নিজেদের শুধরে নেবে তাহলে আমি ঘরে চিঠি দেব না। তোমরা হোস্টেলে থেকেই অ্যানুয়াল পরীক্ষা দিতে পারবে।
    ওরা মাথা হেলিয়ে সায় দিল। ঘরে ফিরে গেল। তারপর দরজা বন্ধ করে সেই কাগজের টুকরোটার হাতে লিখে পাঁচ-পাঁচটা কপি করতে বসল।
    কী ছিল সেই চিরকুটে? আমার গুরু যা জানিয়ে ছিল-- সেটা ছিল লিন্টুদিকে লেখা রামকানাইদার প্রেমপত্র। তাতে উনি সম্বোধন করছেন 'আমার রাণী' বলে। আর নিজেকে লিখছেন 'তোমার রাজা'। তাতে উনি কবুল করছেন টবিন রোডের বাড়ি তৈরির ও ভবিষ্যতে এই আশ্রম ছেড়ে ওখানে গিয়ে ওঠার পরিকল্পনার কথা।
    ওরা ক্ষমা চাইল না, বাড়ি ফিরে গেল না, উল্টে সেই কপি মিশনের হেডকোয়ার্টারে রেজিস্ট্রি করে পাঠিয়ে দিল। আর এক কপি দিল আশ্রমের এগজিকিউটিভ কমিটির রামকানাইদার বিরোধী গ্রুপের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে। আর নিজেরা তিনটে কপি তিনজনের কাছে রাখল।
    কমিটি ওদের চাপ দিল অরিজিনাল জমা করতে। কিন্তু ওদের একজনের উকিল বাবার পরামর্শে ওরা সেটা করতে অস্বীকার করল। শুধু দুজনকে সামনে বসে অরিজিনালের সঙ্গে কপি মিলিয়ে দেখতে দিল।
    -- কেন এমন করলে?
    --পোদো, তোর মাথায় গোবর। অরিজিনাল দিলে আমরা সবকটা মহারাজের ও আশ্রমের মিথ্যে মিথ্যে বদনাম করার অপরাধে রাস্টিকেট হয়ে যেতাম যে!
    সাতদিন। ওই সাত-সাতটা দিন ছিল ঝড়ের, ভূমিকম্পের। ধীরে ধীরে খবরটা টিচাররাও জেনে গেছেন। সবাই দম বন্ধ করে আছে। কী হ্হয়! কী হয়! অনেকেই ফেন্সিংএ বসে। কোন পক্ষ নিচ্ছেন না।
    এই অসম লড়াইয়ে কে মাটি নেবে?
    রামকানাইদা প্রেয়ার হলে আসছেন না। অফিসেই ব্যস্ত। অনেক অচেনা লোকজন আসছে। মিটিং এর পরে মিটিং।
    রোববার রাত্তিরে অনিল মহারাজ ডাইনিং হলে ঘোষণা করলেন-- তোমাদের রামকানাইদা কাল চলে যাচ্ছেন। সকালে জলখাবারের পরে সবাই ওঁর ঘরে গিয়ে দেখা করে প্রণাম করে নিও।
    অনেক রাত অবদি গুলতানি চলল। সিনিয়রদের মুখে বিজয়ের হাসি। নানান ইয়ার্কি, ঠাট্টা, আগামী মহারাজ কে আসছেন, তিনি কেমন হবেন --এই নিয়ে নানা গুজব। সবাই ভাবছি কাল গিয়ে ওঁর সঙ্গে দেখা করার কথা। ঘুম হল না।
    সকাল হল। প্রেয়ার যেন শেষ হতে চায় না। আজ আর ড্রিল হল না। জলখাবারের জন্যে ডাইনিং হলে যেতে গিয়ে দেখি বাইরের বারান্দায় নোটিস বোর্ডের কাছে বাচ্চাদের ভীড়। ঘাড়ের উপর দিয়ে উঁকি মেরে দেখি ওই নোটিস বোর্ডে একটা বড় কাগজ আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া। তাতে রামকানাইদার হাতের লেখায় গোটা গোটা করে লেখাঃ
    " ক্ষমা কর, ধৈর্য্য ধর, হউক সুন্দরতর তোমাদের মন,
    মৃত্যু নয়, ধ্বংস নয়, নহে বিচ্ছেদের ভয়, শুধু সমাপন।
    ------ আরও কতগুলো লাইন।
    আমি আর পড়তে পারছি না। সব ঝাপসা দেখাচ্ছে।
    { প্রথম ভাগ সমাপ্ত}
  • d | 144.159.168.72 | ১১ আগস্ট ২০১৬ ১০:০৩708388
  • রঞ্জনদা,

    এটা বই হলে প্রকাশক পাওয়া সম্ভবতঃ বেশ কঠিন হবে। তবু যদি স্পনসরার খোঁজেন কখনও, আমাকে একটু জানাবেন।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.168.109 | ১১ আগস্ট ২০১৬ ১১:১২708389
  • মামলা মোকদ্দমার চান্সও আছে।
    তবে, এই ধরণের ঘটনাগুলো অপ্রত্যাশিতও নয়, বিশেষ করে চাইল্ড মোলেস্টেশনের কেস তো হোলি ক্যাথলিক চার্চে ভুরিভুরি এবং ক্রমশঃ সে ব্যাপারে জনগন মুখ খুলছে। সেটা ছাড়াও এমনি প্রেম ভালবাসা সেক্স ইত্যাদিও ফোর্সড ব্রহ্মচর্য সিস্টেমেও থাকবে। থাকবেই। ভক্তিরসের মোড়ক দিলেও ঢাকা যায় না।
  • Abhyu | 57.32.123.73 | ১১ আগস্ট ২০১৬ ১১:৪৩708390
  • হ্যাঁ মিশনের কুচ্ছো করে বই ছাপানো খুব সহজ হবে না। পিঁপড়ে বলে ধর্তব্যের মধ্যে নয় বলে ছেড়ে দিতেও পারে কিন্তু কিছুই বলা যায় না।
  • Ranjan Roy | ১১ আগস্ট ২০১৬ ১৩:৫০708391
  • একটা কথা। এখানে কিন্তু মিশনের হেড কোয়ার্টার যথেষ্ট দায়িত্ব নিয়েই অ্যাকশন নিয়েছিলেন। যদিও আমরা রামকানাইদার ফ্যান ছিলাম। আর উনি পরে বেরিয়ে গিয়ে আলাদা আশ্রম খুলেছিলেন, সাদা কাপড় পড়তেন। ইদানীং খবর পেলাম যে গত হয়েছেন।
    আর লেখাটার উদ্দেশ্য কিন্তু মিশনের কুচ্ছো করা নয়।
    বরং সমপ্রেমের সিন্ড্রোমটি নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখা, কাছ থেকে।মিশনের স্কুল লেভেলের হোস্টেলের প্রেক্ষিত ইনসিডেন্টাল। আমার যে ষাটোর্ধ্ব বন্ধুদের কথায় এটা এতবছর পরে লিখতে রাজি হয়েছিল তারা সবাই মিশনের ভক্ত, এই বয়সেও। একজন ঠাকুরের জন্মদিনে নিউ ইয়র্কের বাঙালী সমাজে একল অভিনয় বা গিরিশ ঘোষের লেখা থেকে পাঠ করে। অন্য দুজন বিবেকানন্দ যেখানে উঠতেন প্রতিবছর সেই বাড়িগুলোতে দেখতে বা কেউ বেড়াতে গেলে দেখাতে নিয়ে যান।
    এই কয়বছর আগেই আমি বরানগর মিশনে সেই বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সরস্বতী পূজোর দিন গিয়ে আমাদের বদলে যাওয়া পরিবেশ, প্রেয়ার হল সব দেখে এসেছি।
    দ্বিতীয় ভাগ এ দেখা যাবে সেই সমপ্রেমের কথা, সেখানে মিশনের কোন ভূমিকা নেই। সেই পরিবেশ ছাড়া। আর আমাদের মত বেয়াড়া ছেলেপুলেদের বেয়াড়া করেই আঁকা হবে কোন মহান করে নয়।
    আর দ্য ভিঞ্চি কোড এর ব্যাপারে কেরালা এবং অন্য কোথাও ক্রিশ্চান সমাজের প্রতিবাদ সত্ত্বেও পোপ স্বয়ং বইটিকে 'ফিকশন" আখ্যা দিয়ে তাচ্ছিল্য করে এড়িয়ে গেছেন। মিশনের কর্তৃপক্ষ সেটুকু দেখাবেন আশা রাখি।
    অধিকাংশ নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। কখনও ছাপানোর সুযোগ হলে বাকি গুলোর এবং স্থান সবই বদলে দেব।
    মূল অর্ডারের বাইরে বাংলার বর্ডারে একটি ছোট আশ্রমের ঘটনা করে দেখাব। এবং এটাকেও ফিকশন মনে করলেই হয়।
  • | 213.132.214.85 | ১১ আগস্ট ২০১৬ ১৪:২৮708392
  • রঞ্জন দা, এটা কি পুরো সত্যি ঘটনা নাকি "আপন মনের মাধুরী " আছে খানিক টা? ঃ))
  • d | 144.159.168.72 | ১১ আগস্ট ২০১৬ ১৫:০০708394
  • লিখুন রঞ্জনদা। ঐ যে বলে রাখলাম কখনও স্পনসরারের কথা মনে হলে আমাকে স্মরণ করবেন।

    আপনি চিনবেন না, অনেক পুরানো একজন বোজো দ্য ক্লাউন সেই বোজোর কাছে কিছু নরেন্দ্রপুরের গপ্পো শুনেছিলাম। আর আমাদের কোন্নগরের একটি বাচ্চা ছেলে অনেক বছর আগে তাকে অন্য একটা হোস্টেল থেকে হসপিটালে ভর্তি করতে হয়েছিল রেক্টামে সেকেন্ড ডিগ্রি পারফোরেশান নিয়ে। ছেলেটি ট্রমাটাইজড ছিল দীর্ঘকাল। অসভ্য কৌতুহলী মানুষজন প্রতিবেশীর কৌতহলে অতিষ্ঠ হয়েই হয়ত পরিবারটি বাড়ী বিক্রী করে এলাকা ছেড়ে চলে যায়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন