এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • হিন্দী আগ্রাসনের প্রেক্ষিতঃ দেশ, রাষ্ট্র ও ভাষা

    Samrat Amin লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ জুন ২০১৯ | ১৯৭০৯ বার পঠিত
  • ফেব্রুয়ারী মাস প্রেমের মাস, ভাষারও মাস । শুধুই প্রেমের কুহুতান নয়, "অমর একুশে" ডাক দেয় এ মাসেই । আমার ভায়ের রক্তে রেঙে লাল হয়েছে ঢাকার রাজপথ, অমর একুশেই । হোক না পদ্মার ওপারের গল্প, তবুও বরকতরা তো আমারই ভাই, আমারই রক্ত । যে ভাষার জন্য তাদের আন্দোলন সেটা আমারই মায়ের ভাষা, যে সংস্কৃতির জন্য তাদের লড়াই সেটা আমারই সংস্কৃতি । অনেক লম্বা সে প্রেক্ষাপট । স্বাধীনতা-উত্তর দূর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্র (পশ্চিম পাকিস্তান) চেয়েছিল "পূর্ব পাকিস্তানের" উপর সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখতে । উর্দু ভাষা ও উর্দু কেন্দ্রিক সংস্কৃতি বাংলা ও বাঙালী সমাজজীবনে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল ক্ষমতালোলুপ পাকিস্তান রাষ্ট্র । রাষ্ট্রভাষা হিসাবে উর্দুকে মেনে নেয় নি বরকত রফিকের মতো স্বাধীনচেতা নির্ভিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন তরতাজা যুককেরা । সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে রক্ত দিয়ে । সেদিনের প্রতিরোধ যদি ঢাল হয়ে রুখে না দাঁড়াত তাহলে উর্দু ভাষা ও সাংস্কৃতির খোলসে রাষ্ট্রীয় থাবা বাংলাদেশকে পিষে দিত ।

    রাষ্ট্রের (State) সঙ্গে দেশের (Nation) এ লড়াই চিরন্তন । এমন হাজারো লড়াইয়ের সাক্ষ্য বহন করে ইতিহাস । আন্তর্জাতিক রাজনীতির ইতিহাস ভূগোল ঘাঁটলে ছত্রে ছত্রে পাবেন দৃষ্টান্ত । এমনকি মানচিত্র থেকে আমাদের ভারত নামক রাষ্ট্রও বাদ নেই । যখন বলা হয় "বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য", তখন ভারতবর্ষের মধ্যেই অজস্র খন্ড ভারতের জাতিগত ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব স্বীকার করে নেওয়া হয় । বহু ভাষাভাষীর মিলনমেলা এই ভারতবর্ষ, যা কোনভাবেই একমাত্রিক বা একস্তরীয় নয় । যেমন বাংলা, তামিল, মারাঠী বা অন্য জাতি রাষ্ট্রীয় অখন্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ঐকান্তিকভাবে নিজ নিজ জাতিগত ও সাংস্কৃতিক পরিচিতি নিয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে, ভারতবর্ষের নীতিগত দর্শন এটাই । কিন্তু বহুমাত্রিক ভারতবর্ষকে যদি একটি বিশেষ ভাষা ও সংস্কৃতির ছাঁচে ঢেলে একবগগা দেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই ক্ষমতাবান রাষ্ট্র, তখনই নেমে আসে বিপদ, জাতির অস্তিত্বের সংকট ।

    বাঙালী হিসাবে আমরা এই বিপদের সম্মুখীন । আর বিপদের অভিসম্পাত যদি রাষ্ট্রীয় মদতে নেমে আসে তবে আরও চিন্তার বিষয় । তাই সময়ের দাবি রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট হিন্দি আগ্রাসন রুখে দেওয়ার । আপনি যখন দেখছেন যে আপনার এলাকার রাস্তার মাইলষ্টোনের লেখা গুলো হঠাৎ বাংলা থেকে হিন্দিতে বদলে যাচ্ছে, যখন দেখছেন নোটবন্দীর পর ৫০০ টাকার নোটে হঠাৎ দেবনাগরি হরফের ব্যবহার শুর হচ্ছে, যখন দেখছেন আপনার এলাকার কেন্দ্রীয় সরকারী দপ্তর বা ব্যাঙ্কিং সেক্টরে হিন্দীভাষীদের দাপাদাপি শুরু হচ্ছে, যখন দেখছেন "জয় মা কালী"র থেকে "জয় শ্রীরাম" বেশি বার উচ্চারিত হচ্ছে, যখন দেখছেন শাক্তদেবির আরাধনার বদলে "রাম নবমী" নিয়ে বেশি হইচই হচ্ছে, যখন দেখছেন সুফীবাদের উদার আধ্যাত্মিকতা পিষে যাচ্ছে ওয়াহাবি-সালাফি কট্টরপন্থায়, যখন দেখছেন কেন্দ্রীয় সরকারী চাকরির পরীক্ষায় ইংরেজীর সঙ্গে হিন্দি ভাষায় প্রশ্নপত্র প্রদানের রীতি শুরু হচ্ছে, যখন দেখছেন বাংলার শহর কোলকাতা বা আসানসোলে হিন্দি ভাষায় কথোপকথনের একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠছে, যখন দেখছেন আপনার এলাকার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে হিন্দি আছে কিন্তু আপনার ভাষা বাংলা নেই, তখন বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না অন্য একটি ভাষাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি মানে হিন্দি বাংলার ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে ।

    চোখ কান খোলা থাকলে হিন্দি আগ্রাসনের পদচিহ্ন ঠাওর করা যায় । অনেকে ভাবতে পারেন, হিন্দি তো ভারতের "রাষ্ট্রভাষা" তাই এগুলো নিয়ে আপত্তি তোলার কিছু নেই । এই ভুল ভাবনাটা একটা বড় অংশের বাঙালীর মাথায় আছে । হিন্দি কোনকালেই ভারতের রাষ্ট্রভাষা ছিল না, আজও নেই। তাহলে এই ভাষাটিকে আমরা "রাষ্ট্রভাষা" জ্ঞান করতে লাগলাম কবে থেকে ? হ্যাঁ, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অবশ্যই আছে । স্বাধীনতার পূর্বে হিন্দিভাষী নেতানেতৃরা হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন, পারেন নি । কারন এর বিপরীতে যুযুধান ছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর ভাষ্য । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য হিন্দি হিন্দুদের ভাষা ও উর্দু মুসলিমদের ভাষা এই বিভেদবোধ ইংরেজরাই তৈরি করেছিল । ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে হিন্দু ছাত্রদের দেবনাগরী হরফে হিন্দি ভাষায় আর মুসলিম ছাত্রদের ফারসী হরফে উর্দু ভাষায় রিডিং মেটেরিয়ালস দেওয়া হত । কারনটা খুবই স্পষ্ট, বিভেদের প্রাচীর তৈরি করা । যাই হোক, দ্বন্দ নিস্পত্তির জন্য কিছু ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী নেতা এই দুই ভাষার মিশ্রণে "হিন্দুস্তানী" নামক এক ভাষাকে "রাষ্টভাষা" হিসাবে প্রমোট করার চেষ্টা করেন । এই ভাষায় বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাষ্ট্রিতে দু-তিনটে সিনেমাও রয়েছে বলে শোনা যায় । কিন্তু বলিউডকে ব্যবহার করেও ভাষাটি কল্কে পায় নি । এর অন্য একটি কারন হল দেশ ভাগের পর উর্দুকে পাকিস্তান রাষ্ট্র হাইজ্যাক করে নিয়ে চলে গেল, হিন্দীর জন্য পড়ে রইল ফাঁকা মাঠ । অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেল হিন্দুস্তানী ।
    ভারত স্বাধীন হওয়ার পর হিন্দিভাষী নেতানেতৃরা ভেবেছিলেন অনায়াসেই হিন্দিকে অহিন্দিভাষীদের উপর চাপিয়ে দিতে পারবেন । দেশের সংবিধান রচিত হওয়ার পর হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা বানানোর তোড়জোড় শুরু হল । কিন্তু কয়েকটা মাত্র রাজ্যের প্রাদেশিক ভাষাকে "রাষ্ট্রভাষা" বানাতে গেলে গোটা দেশের নিরিখে সমাজ ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষা হতে হবে, কিন্তু উত্তর ভারত ছাড়া হিন্দির ব্যবহার ছিল না । তাছাড়া দক্ষিন ভারতের দ্রাবিড়ীয় ভাষাগোষ্ঠীর মানুষদের প্রতিবাদের ভাষ্য ছিল যথেষ্ট কড়া । তাঁরা নিজস্ব ভাষার পাশাপাশি ইংরাজিতে সড়গড় ছিল, কিন্তু হিন্দি তাদের অপছন্দের ভাষা । এমতাবস্থায় দরকার ছিল ভারতের বিভিন্ন জাতি ভাষা পরিচিতির মানুষদের সমাজ ও ব্যবহারিক জীবনে হিন্দিকে ছড়িয়ে দেওয়া। অলিখিতভাবে হিন্দিকে ভারতের "লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা" বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হল, তার জন্য নির্ধারিত হল ১৫ বছর সময়।

    পাকিস্তান রাষ্ট্র বলপূর্বক বাংলাদেশের উপর উর্দু চাপানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্ত ভারত রাষ্ট্র সেই একই কাজ শুরু করেছিল জনসাধারনের অনুমতিক্রমে এবং এই অনুমুতি ছিল আইডিওলজিক্যাল এবং ম্যানিপুলেটেড । মানে চয়েস দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অপশন একটাই, এরকম একটা ব্যপার । রাষ্ট্র জানত যে জোরপূর্বক অহিন্দিভাষীদের হিন্দি গেলানো যাবে না, আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে গেলাতে হবে । পপুলার মিডিয়া হিসাবে বোম্বে ফিল্ম বিনোদন জগতকে তোল্লায় দেওয়ার কাজ শুরু হল। ১৯৪০ থেকে ১৯৬০ এই সময়টা বোম্বে ফিল্ম জগতের স্বর্ণযুগ । মারাঠাদের রাজ্যে মারাঠাদের শহর বোম্বেতে একটি হিন্দিভাষাকেন্দ্রিক বিনোদন জগৎ এভাবে ফুলেফেঁপে উঠল কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এটা আমাদের অনেক আগেই ভাবা উচিৎ ছিল । এটা ঠিক যে এসম্পর্কীয় কোন প্রমানস্বরুপ তথ্য নেই কিন্তু ব্যক ক্যালকুলেশন করলে অঙ্কটা খাপে খাপ মিলে যায় ।

    অল ইন্ডিয়া রেডিওতে হিন্দি ভাষায় সম্প্রচার, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির হিন্দিতে দেওয়া বয়ান, কেবল হিন্দিতে লেখা দেশাত্মবোধক গানগুলো জাতীয় ক্ষেত্রে প্রমোট করা, হিন্দিতে জাতীয় ধ্বনী, বাংলায় লেখা জাতীয় সঙ্গীতের হিন্দিকরন সবই হিন্দিকে "লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা" বানানোর যে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা তারই অঙ্গ । "কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংগঠন" গঠনের প্রসঙ্গটাও আনা যায় । এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হাজারের উপর কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়, মাধ্যম ইংরাজি, এবং দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে কেবল হিন্দি, অন্য ভাষার জায়গা নেই । মানে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়টা আপনার নিজের এলাকায় হলেও বাংলা ভাষা চর্চা সেখানে নাজায়েজ । কিন্তু এতসব কিছু করেও রাষ্ট্র সংবিধান প্রণয়নের ১৫ বছর হতে চললেও অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে নি । তড়িঘড়ি ১৯৬৩ তে সংসদে "অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট" পাস হয় । হিন্দি এবং ইংরাজীকে দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং সরকারিভাবে নীতি গৃহিত হয় যে বিদেশী ভাষা ইংরেজির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে পুরোপুরিভাবে হিন্দি কায়েম করা হবে । এই দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে হিন্দির স্বীকৃতিটাই আমাদের ভ্রান্ত ধারনায় জারিত হয়ে "রাষ্ট্রভাষা" হয়ে গেছে । ১৯৬৫ তে এই আইন লাগু হলে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে তামিল নাড়ুর কলেজপড়ুয়ারা, অনেকে আত্মাহুতি দেন । হিন্দির দালালি তারা মেনে নেয় নি। এমন নাছোড়বান্দা আন্দোলন তাদের ভাষিক জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ।

    এহেন প্রতিবাদের জেরে কিছুটা পিছু হটে রাষ্ট্র । তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী ঘোষনা দেন যে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন যতদিন চাইবে ততদিন ইংরাজি দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে টিকে থাকবে । কিন্তু আদতে পর্দার আড়ালে অহিন্দিভাষীদের উপর হিন্দি চাপানোর নীতি থেকে সরেনি রাষ্ট্র । তার জলন্ত প্রমান ১৯৬৮ সালের "ত্রিভাষা সুত্র" নীতি । এই নীতি অনুযায়ী বিদ্যালয় পরিসরে আঞ্চলিক ক্ষেত্রে নিজ ভাষা, জাতীয় ক্ষেত্রে হিন্দি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইংরাজি ভাষা, সর্বমোট তিনটি ভাষা শেখা বাধ্যতামূলক । এই নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরুপ ব্যঙ্গ করে তামিল নাড়ুর তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী সিএন আন্নাদুরাই বললেন --- " জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে দুটি আলাদা আলাদা ভাষার জন্য তদবির করার অর্থ হল দেওয়ালে বেড়াল বার করার জন্য একটা বড় ফুটো রাখা আছে, তবুও আবার ইঁদুরের জন্য আর একটা ছোট ফুটো করা হল, কিন্তু বেড়ালের জন্য রাখা বড় ফুটোতেই তো দুটো কাজ হয়, তাহলে আবার ছোট ফুটো করা কেন ?" ত্রিভাষা সুত্রকে এভাবেই তামিল ও তেলেগু মানুষজন ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিল ।

    অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন দেশীয় ভাষা হিন্দির থেকেও কি বিদেশী ভাষা ইংরাজী আপন যে তার জন্য ওকালতি করতে হবে ? কিন্তু প্রশ্নটা "আপন-পর" এর নয়, যৌক্তিক বুদ্ধির । কেউ মানুক আর না মানুক, ইংরাজি এখন গ্লোবাল ল্যাঙ্গুয়েজ, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিরুদ্ধশূন্য অপ্রতিদ্বন্দ্বী "লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা" । এটা বিগত দুই শতকের প্রায় বিশ্বজোড়া ঔপোনিবেশিক ইংরেজ শাসনের ফসল । তাই বাস্তববোধ বলে ভারতের কোন ভাষাকেই এই পর্যায়ে উন্নীত করা প্রায় অসম্ভব । ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্য বহগুনে সমৃদ্ধ, বিশ্বজোড়া কদর । কম্পিউটার ইন্টারনেটের যুগে ভাষাটি না শিখতে চাওয়া মানে প্রভূত সাহিত্যরস এবং বিজ্ঞানভিত্তিক ও সমাজতাত্ত্বিক বৃহৎ জ্ঞানভান্ডার থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা । কিন্তু হিন্দির সেই লেভেলের ষ্টেটাস নেই, তুলনায় বাংলা ভাষার মাধূর্য এবং শব্দনির্মান ক্ষমতা ও গঠন কাঠামো হিন্দির থেকে উন্নত । বাংলা সাহিত্যেও হিন্দি সাহিত্যের থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে । আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইংরাজি শেখাটা যখন আবশ্যিকতা, তখন জাতীয় স্তরে ভাষাটি থেকে গেলে অতিরিক্ত একটি অপ্রয়োজনীয় ভাষা শিক্ষার চাপ থাকে না। অন্যদিকে জাতির জাতীয় ও সাংস্কৃতিক সত্ত্বাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তার নিজের মায়ের ভাষা তো থাকছেই ।

    পরিশেষে একটা কথা বলার । কোন ব্যাক্তিবিশেষ হিন্দিভাষীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের জায়গা থেকে নয়, বরং হিন্দি আগ্রাসন সম্পর্কিত বাঙালী জাতির সচেতনতা ও সেটাকে শুধু ঠেকানোর কথা বলেছি । হিন্দিও একটা জনগোষ্ঠীর মায়ের ভাষা, হিন্দিকে ঘিরেও একটা অংশের মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে । এই জায়গাতে ভাষার চরিত্রটি নিরীহ । কিন্তু সাংস্কৃতিক আধিপত্য কায়েমের জন্য রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হলে সেই নিরীহ ভাষাটিই হিংস্র হয়ে যায় । যাকে তাত্ত্বিকরা "ভাষাসন্ত্রাস" বলেন । ভাষা নদীর মতো । সময়ের সাথে সাথে নিজের চলার পথে অনেক কিছুকে নিজের করে নেয় । কিন্তু জোর করে সে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে চাইলে ফল মারাত্মক । তেমনি ভাষা একটি জাতির সংস্কৃতির আধার । ভাষার উপর কোপ পড়লে সাংস্কৃতিক শোষনের পথ প্রশস্থ হয় । শোষিত হতে হতে একসময় দেখা যাবে বাংলা ও বাঙালীয়ানার অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যাবে । বিশ্ব-সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বাংলার কোন জায়গায় থাকবে না । বহির্দেশের মানুষ "ভারত" বলতে শুধু বুঝবে হিন্দি ভাষা, হিন্দি সাহিত্যে আর গো-বলয়ী চালচলন । বাংলা আর বাংলার সংস্কৃতি এভাবে খাবি খাবে, আর আমরা চোখের সামনে দেখব ? মেনে নেব ? এটা মেনে নেওয়া যায় ?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ জুন ২০১৯ | ১৯৭০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 232312.174.012312.51 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৫:১৮49049
  • কপিরাইট নিয়ে S যা বলেছেন সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমার একান্তই ব্যক্তিগত মত হলো কপিরাইট নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত আর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কপিরাইটের স্কোপ আরও সংকুচিত করা উচিত। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কপিরাইট মানিনা, বরং পাইরেসি সাপোর্ট করি। তবে এটা একেবারেই আমার ব্যক্তিগত মত, বাকি পৃথিবী মোটামুটিভাবে কপিরাইট মেনে চলে এটা স্বীকার করে নিতেও আমার দ্বিধা নেই।

    এবার হিন্দি গানে চুরির প্রসঙ্গ। ছোটবেলার থেকেই আমরা সবাই জানি যে হিন্দি গানে চুরি করা হয়, প্রথমে বাপ্পি লাহিড়ি আর অনু মালিকের কথা শোনা যেত, তারপর কলেজে পড়ার সময়ে শুধু হেঁজিপেজিরাই নয়, জানলাম আরডি, এসডি, নৌশাদ, রভি, মদন মোহন ইত্যাদি লেজেন্ডারি কম্পোসাররাও চুরি করতেন। আর প্রায় একই সময়ে জানতে পারলাম এনারা তো কোন ছাড়, এমনকি লেড জেপ, ব্ল্যাক সাবাথ, ডোর্স রাও চুরি করেছে। জিম মরিসন চুরি করেছে। যদিও এলেবেলে একটা পয়েন্ট খুব ভালো তুলেছেন, যে চুরিরও অনেক রকমফের হয়, "ইনস্পায়ার্ড" থেকে সরাসরি লিফ্ট। তো সেই বিতর্কে না গিয়ে গান চুরি নিয়ে আমার মত হলো, যে গান আমার শুনতে ভাল্লাগে সেই গান শুনি। গাঁজার ঘোরে লেড জেপের কাশ্মীর আর ডোর্স এর রাইডার্স অন দ্য স্টর্ম শুনতে শুনতে মনে হয় স্বর্গে পৌঁছে গেছি, আর চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে চালিয়ে যে কতোবার ঝগড়া থামিয়েছি তা গুনে শেষ করতে পারবো না। এই গানগুলো চুরি হলেই বা কি, না হলেই বা কি। এগুলো বানানো না হলে আর এগুলো শুনতে না পেলে এই জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যেত।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৫:২৩49050
  • "বরং পাইরেসি সাপোর্ট করি।"

    একটা সদ্য ইন্জিনিয়ারিং পাশ করা গরীব ঘরের ছেলে একটা সফ্টওয়ার বানালো। একটা বিশাল বড় কোম্পানি সেই সফ্টওয়ার চুরি করে নিজেদের নামে চালিয়ে প্রচুর টাকা কামালো। সমর্থন করেন?
  • dc | 232312.174.012312.51 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৫:২৬49052
  • S প্লিজ এরকম লজিক চপিং করবেন না। আপনার থেকে আশা করি না ঃ-)
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৫:২৬49051
  • স্বর্গভ্রমণ গাঁজার ঘোরে না গানের সুরে?

    যে গান ভালো লাগে না তাও আমি শুনি, মাঝপথে এলিভেটর থামিয়ে নেমে যাওয়া তো যায় না।
  • dc | 232312.174.012312.51 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৫:২৭49053
  • এলসিএমদা দুটোই :d

    যে গান ভাল্লাগে না তার ধারে কাছেও থাকি না।
  • sm | 2345.110.892312.233 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৫:৩৩49054
  • উঁহু, বড় এস এর বক্তব্য মানতে পারলাম না।উনি আর ডি র লাইফ টাইম এচিভমেন্ট পুরস্কার এর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।বলেছেন 50 টা হলেও চুরি,একটা হলেও চুরি।অর্থাৎ আর ডি হলো চোর।
    সেই অর্থে ডিলান ও চোর।আপনি যাঁদের নাম করলেন,তাঁরা ডাকাইত।
    ইউটিউব খুললে বিদেশী গানে প্রচুর চুরির উদাহরন পাবেন।
    রাগাশ্রয়ী গান গুলো ও চুরি।ফোক থেকে যতো মিউজিক কম্পোজ হয়েছে,দেশে ও বিদেশে, সব চুরি।
    এরপরে একটা কথা আসছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলে সাতখুন মাপ।অর্থাৎ রঘু ডাকাতের বাড়িতে চিঠি দিয়ে ডাকাতির মতো ব্যাপার আর কি!
    বাই দা বাই, কে অরিজিনাল সেটা ঠিক করা তো খুঁড়ে গুপ্তধন পাবার মতন ব্যাপার।
    ধরুন চুরালিয়া হ্যায় নিয়ে এতো বিতর্ক।
    এটা কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে?
    মানে ইফ ইটস টিউইসডে যদি হয়,অরিজিনাল স্কোর কার?ইংলিশ,ডাচ নাকী জানা নেই।
  • | 2345.107.4589.42 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৫:৩৫49055
  • এ ব্লগটা তো প্পুরো নাইট্যশালা হয়ে দাঁড়িয়েছে!
    অহো
  • dc | 232312.174.012312.51 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৫:৪৭49056
  • "উনি আর ডি র লাইফ টাইম এচিভমেন্ট পুরস্কার এর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন"

    "এরপরে একটা কথা আসছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার"

    এই দুটোই ইমপর্ট্যান্ট প্রশ্ন, উপেক্ষা করার মতো না। অন্তত কৃতজ্ঞতা স্বীকার বা বলে নেওয়া যে এখান থেকে ইনস্পায়ার্ড হয়েছি, এটা তো করাই যায়।
  • dc | 232312.174.012312.51 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৫:৫২49057
  • দ দি মাইরি বলছি আমার হিন্দি আগ্রাসন নিয়ে কিস্যু বলার নেই। আমি শুধু একটা ছোট পোস্ট করেছিলাম যে গানের দিক দিয়ে হিন্দি সিনেমার গোল্ডেন পিরিয়ড মোটামুটি আশির দশকের শেষ অবধি চলেছিল। ভেবেছিলাম যে বাকিরা ওটুকু ইগনোর করবে আর আমিও এই টইতে আর কোন পোস্ট করবোনা। কিন্তু অন্যরা সেটা নিয়েই আলোচনা শুরু করে দিল, আর T একটা ভিডিও পোস্ট করার পর আমিও ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করে দিলাম :d গান ছাড়া আর কিছু নিয়েই পোস্ট করিনি কারন এইসব ভাষা টাষা নিয়ে আমি একেবারেই নিউট্রাল।
  • sm | 2345.110.892312.233 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৬:০৯49059
  • ওপরের লিংকটার 6 নম্বর পয়েন্ট টা পড়ুন।আর ডি পুরোপুরি অনেস্ট ছিলেন,কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার ব্যাপারে।
    সে যাকগে,কৃতজ্ঞতা স্বীকার না করলেই বা কি হয়?
    অন্তত সুর কমজিশনের ক্ষেত্রে।
    দু একটা নোট বদলে দিলেই যেখানে কোন ঝামেলা নেই।
  • dc | 232312.174.012312.51 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৬:১৫49060
  • শুধু আর ডি নয়, নৌশাদ ইত্যাদিরাও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলে বা সোর্স অ্যাকনলেজ করলে ভালোই হতো। অবশ্য হয়তো করেছেন কোথাও, সে সময়ে তো এতো ইন্টারভিউও হতো না। জানিনা।
  • | 2345.107.4589.42 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৬:৩২49061
  • ডিসি, হাহাহাহাহাহা
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.186 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৬:৪৬49065
  • কী ব্যাপার? বারো ঘন্টা পার অথচ হা হা, হ্যা হ্যা কিচুই নেই? অজিত রায়ের থাপ্পড়টা জোরে পড়ল নাকি? গুরুই প্রকাশ করেছে, এ বছরের বইমেলায় গুরুর স্টল থেকেই কেনা। তাতে খোদ গুরুজনেরাই কাত?
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.198 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৬:৫৬49062
  • আচ্ছা টই কী নিয়ে ছিল? আগ্রাসন। খুব ভালো কথা। কিন্তু সেখানে কেমন আগ্রাসন দেখা গেল? আসুন দেখি।

    টইটির শুরুতেই ডিসি তাঁর হিন্দি গান সম্পর্কে নিজস্ব নিরীহ ভালোলাগা ব্যক্ত করেছিলেন। সে প্রসঙ্গে প্রথমেই তোলা হল 'চুরি'র প্রসঙ্গ। বেশ চলছিল তাইনানা কাইনানা করে। এবারে এলেবেলে তার আর ডি সম্পর্কে ভালোলাগার কথা বলল, সে ক্লাস নাইন থেকে তাঁর ফ্যান তা-ও বলল ওই প্রসঙ্গটা আসায়। এর আগে যদিও সে মূল বিষয়ে পাঁচ-পাঁচখানা প্রশ্ন করে ফেলেছে। এইবারে টই পুরো ঘুরে গেল। কেন সে আর ডি-কে পচুন্দ করবে! নিপাট আগ্রাসন।

    যেহেতু আমি বা আমরা ওসব গানকে 'কুচ্ছিত' বলে দাগিয়ে দিয়েছি তাই কারও ওসব কুচ্ছিত জিনিস ভালোলাগা চলবে নাকো। সে প্রসঙ্গে আসল চুরি। যেন এ পৃথিবীতে একমাত্র কেষ্টব্যাটাই চোর আর বাকিরা ধোয়া তুলসিপাতা। এখন এলেবেলে দেবব্রত-সুবিনয় শোনে (সিডিতে শোনে, আজ অবধি সে এমপিথ্রি কেনেনি) আবার আর ডি-মদনমোহনেও তার অসম্ভব দুর্বলতা। সে এই চুরির কিছু তাত্ত্বিক কথা বলতে গেল। আর ডি-র চুরির সাথে সাযুজ্যপূর্ণ নয় শুধু, তামাম পৃথিবীর ক্রিয়েটিভ আর্টের সঙ্গেও তা সংযুক্ত। খেতাব জুটল 'আঁতেল'-এর। মানে আমি বা আমরা আঁতলামি করি ঠিক আছে, ওটা জায়েজ, কিন্তু তুনি কে হে হরিদাস পাল 'আঁতলামি' করার! নিপাট আগ্রাসন, আরও একবার।

    এইবারে এলেবেলে বোঝানোর চেষ্টা করল আজকালের যা জমানা তাতে কপিরাইটের ব্যাপারটাই উঠে যাওয়ার মুখে। লোকে বই-সিনেমা-গান-নাটক সবই মুঠোফোনের দৌলতে বিনি মাগনায় পেয়ে পেয়ে এত অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে সে ওই ব্যাপারটা যে অনৈতিক তা ভুলে যেতে বসেছে। তখন আসল নিখাদ হোয়াটঅ্যাবাউটারি। আমি ব্লগ লিখি কিনা, কপিরাইট আইন ভঙ্গ করলে লেখক-গায়কদের দুক্কু বুঝি কিনা, আমার লেখাপত্তর (!) বিনি পয়সায় অন্যকে দিয়ে দেব কিনা ইত্যাদি প্রভৃতি। নিপাট আগ্রাসন, এবারও।

    অথচ টইয়ের একদম প্রথম দিকে ভাষাশিক্ষার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার সুবাদে সে কতগুলো প্রশ্ন রেখেছিল। সেগুলো ছিল এইরকম ---

    03 June 2019 23:13:37 IST 230123.142.67900.244 (*) #
    হিন্দি আগ্রাসন খুব খারাপ জিনিস, আরও খারাপ ভাষা সাম্রাজ্যবাদ। কিন্তু আমার গুটিকয়েক কোশ্নো আছে।

    ১. যাঁরা হিন্দি আগ্রাসন নিয়ে সতত সরব (হওয়া অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়) তাঁরা বাংলা আগ্রাসন নিয়ে নীরব থাকেন কেন? সমস্ত পাঠ্যপুস্তকে যে মান্য বাংলার চল আছে সে ভাষা ক'জনের মুখের ভাষা সারা বাংলায়? পুরুলিয়া-কোচবিহার-মেদিনীপুর-দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত নাকি বাংলার সমস্ত মানুষ সুনীতি চাটুজ্যে কথিত নবদ্বীপ-শান্তিপুরের ভাষায় কথা বলেন?
    ২. এই যে অসংখ্য মানুষ যাঁদের মান্য বাংলাটা প্রায় দ্বিতীয় ভাষার সমতুল তাঁদের কী হবে? তাঁরা তো আসলে তিনটে এবং সপ্তম-অষ্টমে চারটে ভাষা শিখতে বাধ্য হন। এই ন্যারেটিভটা অনালোচিত থাকে কেন?
    ৩. ভাষার সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ভাষা সম্প্রদায়। কেন পাঠ্যপুস্তকগুলোতে একটি মাত্র সম্প্রদায়ের রমরমা (লেখক থেকে ব্যক্তিনাম সব কিছু) এবং বাংলার বাকি সম্প্রদায়ের মানুষ প্রায় অচ্ছুত?
    ৪. বাংলায় বাংলা মাধ্যম স্কুল ছাড়াও আছে হিন্দি-উর্দু-নেপালি-সাঁওতালি মাধ্যম স্কুল যেখানে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা নেওয়ার কোনও সুযোগই নেই সরকারিভাবে। তা অনালোচিত থাকে কেন? সেটা ভাষা আগ্রাসন নয়? সেই আগ্রাসনের জন্য রাজ্য সরকার দায়ী নয়?
    ৫. এ ছাড়াও বাংলায় মাতৃভাষা হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে তামিল, উড়িয়া, অসমিয়া ইত্যাদি ভাষার। খড়গপুর এলাকার কসমোপলিটান ভাষাচিত্র কেন উপেক্ষিত? কেন তাকে আমরা আমাদের ভাষা আগ্রাসন হিসেবে চিহ্নিত করব না?

    কেন্দ্র অবশ্যই দোষী, কিন্তু অভিযোগের তর্জনী অন্যের দিকে তুলতে গেলে মধ্যমা-অনামিকা-কনিষ্ঠার অভিমুখ তো নিজের দিকেই থাকে। তার কী হবে?

    বলা বাহুল্য, হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের ন্যারেটিভটা চাড্ডি তাড়ানোর যে আনন্দ দেয়, খোদ পশ্চিমবঙ্গে সরকারের ভাষা আগ্রাসনের বিষয়টা অর্থাৎ কাউন্টার ন্যারেটিভটা 'চাড্ডি বিতাড়কদের' ঠিক ততটাই অস্বস্তির মুখে ফেলে। মানে আগ্রাসন সেটাই যেটাকে আমি বা আমরা আগ্রাসন মনে করছি, এর যে পাল্টা ভাষ্যও আছে তা বাপু মানবও না, উত্তরও দোবো না! নিপাট আগ্রাসন, বারবার।
  • ভ্যাবাচ্যাকা | 891212.185.5678.71 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৭:৪৭49063
  • "হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের ন্যারেটিভটা চাড্ডি তাড়ানোর যে আনন্দ দেয়, খোদ পশ্চিমবঙ্গে সরকারের ভাষা আগ্রাসনের বিষয়টা অর্থাৎ কাউন্টার ন্যারেটিভটা 'চাড্ডি বিতাড়কদের' ঠিক ততটাই অস্বস্তির মুখে ফেলে। মানে আগ্রাসন সেটাই যেটাকে আমি বা আমরা আগ্রাসন মনে করছি, এর যে পাল্টা ভাষ্যও আছে তা বাপু মানবও না, উত্তরও দোবো না! নিপাট আগ্রাসন, বারবার।"
    সেলাম সহজ করে লেখার জন্যে। কঠিন সত্যি । আমরা কলকাতার বিদ্বজ্জন বাঙালি রা স্বীকার করিনা আমরাও আগ্রাসনবাদী । উড়ে , মেড়ো ছেড়ে দিন আমরা মেদিনীপুরের সহকর্মীকে টুম্পা , দার্জিলিং এর সহপাঠীকে চিঙ্কি
    বলি ।
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.198 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৮:০৩49064
  • অন্য টইতে লেখা অজিত রায়ের সপাট থাপ্পড়টা এখানেও থাক শখের 'আগ্রাসন'বাদীদের জন্য।

    শ্রদ্ধেয় অজিত রায় 'বাংলা স্ল্যাং সমুচয় ঠিকুজিকুষ্ঠি' গ্রন্থে অত্যন্ত সঙ্গত প্রশ্ন তুলেছেন --- 'কেন কেবলমাত্র একটি শহরের সাহিত্যকেই 'শ্রেষ্ঠ' বলে দেগে দেয়া হবে? আর, যাঁরা দেগে দিচ্ছেন তাঁরা প্রত্যেকে কলকাতাবাসী ব্যক্তি অথবা ব্যবসায়ী সংস্থা। তাঁরা স্বঘোষিত পণ্ডিতপ্রবর তথা সবজান্তা, কেন্দ্রে বসে জ্ঞান বিতরণ করে প্রান্তবাসীদের মূর্খ ও সেকেন্ড ক্লাশ খাড়া করার এই চক্রান্ত অনেকাংশে ভারতবর্ষ তথা আফ্রিকায় বৃটিশ উপনিবেশীদের ভূমিকার কথা স্মরণ করায়। ... একই ভাষাগোষ্ঠীর লোক সবাই সমান হওয়া সত্ত্বেও রংদারি ফলায় কলকাতার স্বঘোষিত কর্তাবাবারা'।

    বলা বাহুল্য, এই দুরন্ত পর্যবেক্ষণ শুধু সাহিত্যক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, ভাষাক্ষেত্রেও প্রসারিত। অথচ এই ভাষা আগ্রাসন নিয়ে বাঙালি নিয়ত নীরব থাকতে ভালোবাসে।
  • :) | 781212.194.450123.42 (*) | ০৫ জুন ২০১৯ ০৮:২৭49066
  • অজিত রায় আর একটু বেটার কনটেন্ট লিখতে পারলে ওনার বক্তব্যে আর একটু গুরুত্ব দেওয়া যেত। কিন্তু ভদ্রলোকের মুন্সীয়ানা হরেক কিসিমের শব্দ ব্যবহারের বেশি আর এগোতে পারেনি দুর্ভাগ্যবশত। তার মধ্যেই দীর্ঘ সময় ধরে লিম্যা করে গেলে যা হয়, স্তাবকবৃন্দের ল্যাজতালি মুখরিত ইগোস্ফূরণ। তা, জ্ঞান বিতরণ করার সময় উনিওতো সবজান্তা স্বঘোষিত পণ্ডিতপ্রবর হয়েই রংদারি ফলান, না কি? কলকাতার বাইরের বিশিষ্ট সাহিত্যিকদের লিস্ট করতে উনি নিজেই যথেষ্ট পারবেন, অমিয়ভূষণ, অভিজিৎ সেন, উদয়ন ঘোষ থেকে গোনাগাঁথা শুরু করলে। তেমন কোনো লিস্টি তিনি করে উঠেছেন কি? নাকি শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের তালিকায় নিজেকে ছাড়া আর বিশেষ কাউকে দেখতে পাননি কলকাতার বাইরে?
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.203 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০১:৪৭49080
  • বড়েস

    না, উপেক্ষা করা হয়েছে এমনটা বলা হয়নি। কেদারনাথ থেকে বিমল কর অবধি লেখকদের 'আউটসাইডার বোধে গ্রস্ত' বলা হয়েছে এবং 'স্বীকৃতজনিত আতঙ্ক'-এর কারণে তাঁরা 'নিজেদের লেখায় কলকাতামুখী ভাবকল্প ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারেননি' এইরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

    অন্যদিকে মলয় রায়চৌধুরী থেকে অনিল ঘড়াই (লেখক আরও লম্বা তালিকা দিয়েছেন) পর্যন্ত লেখকদের বহির্বঙ্গ বা বি-গ্রুপের সাহিত্যিক হিসাবে চিহ্নিত করার জবরদস্তিকে তিনি নিন্দে করেছেন এবং তাঁরা যে 'নিছক বহির্বঙ্গের নয়, বাংলা ভাষার পক্ষেই গর্ব ও শ্লাঘার বিষয়' সে ব্যাপারে মত জানিয়েছেন।

    কাজেই এখানে উপেক্ষা ব্যাপারটা নয়, মূল জোরটা গিয়ে পড়েছে কারা এ-গ্রুপের সাহিত্যিক হতে গিয়ে আউটসাইডার এবং কাদের জোর করে বি-গ্রুপের সাহিত্যিক হিসাবে চিহ্নিত করার অপপ্রয়াস জারি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।

    চিনে ফেলা-না চিনে ফেলা দিয়ে মূল বক্তব্যের যখন কিছুই আসে-যায় না তখন ও প্রসঙ্গ মূলতুবি থাক। আর 'মুখ ফসকে বলে ফেলা'টাও কারণ এলেবেলে যখন বাপজম্মে ব্লগ লেখেই না।

    কী অসম্ভব সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স! সারা টইতে শুধু হা হা, হ্যা হ্যা করেই 'গুরুজন' হওয়ার সাধ!! কে না জানে গণ্ডার সুড়সুড়ি দিলে তিনদিন পরে হ্যাহ্যা করে!!!

    রঞ্জনবাবু

    অতশত জানিনে। সুনীতিবাবু ও ওডিবিএল --- "The speech of the upper classes in the western part of the Delta and in Eastern Radha gave the literary language to Bengal, and now the educated colloquial of this tract, especially of the cities of Nadiya and Calcutta, has become the standard one for Bengali, having come to the position of which educated Southern English now occupies in Great Britain and Ireland".

    বিশুদ্ধ, পরিশীলিত বাংলার বিরুদ্ধেই আমার প্রতিবাদ। মানে এই ধারণার বিরুদ্ধে।
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০২:০৭49067
  • আবার অজিত রায় কেন। আর এত উত্তেজনাই বা কেন। বাংলা ভাষার কিছু ক্ষেত্রে আধিপত্য তো আছে। সেটা মূলত কথনরীতির আধিপত্য। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বললাম। অন্য ভাষা বা উপভাষার উপরে আধিপত্য সীমিত। (বাংলাদেশ ধরলে বাড়বে, কিন্তু হিন্দির সঙ্গে তুলনা ভারতীয় প্রেক্ষিতে বলে ওটা বাদ দিলাম। )

    এই কথনরীতির আধিপত্যটা ঠিক কলকাতার কথনরীতির প্রভুত্ব নয়। কথনরীতিটা তো নদীয়ার। শান্তিপুরি। কলকাতার আদি উচ্চারণকে ঠাট্টা করে কচ্চে-খাচ্চে-যাচ্চে, আর স্যামবাজারের সসিবাবু বলা হত। সে রীতিই উঠে গেছে। ঢাকার শীলিত সমাজও শান্তিপুরি বলেন। ফলে কথনরীতির কিছ্হু আধিপত্য থাকলেও সেটা কলকাতার কথনরীতির আধিপত্য নয়।

    কলকাতার আধিপত্য অন্য জায়গায়। সেটা রাজধানীর। মেদিনিপুরের লোকেদের টুম্পা বলা, মফঃস্বলের উপর ছড়ি ঘোরানো, এ তো আছেই। কিন্তু সেটা আঞ্চলিকতার উপর আধিপত্য। বড়জোর কথরীতির উপর আধিপত্য। অন্যের ভাষার উপর না।

    হিন্দির মাত্রাটাই আলাদা। সেটি সরাসরি অন্যের ভাষার উপর আধিপত্য। অন্যের ভাষার উপর আধিপত্যের প্রসঙ্গে তুলনা করলে হিন্দি বনাম বাংলা হাতি বনাম পিঁপড়ের মতো হবে। ইনফ্যাক্ট কালকেই গ্রুপে এই নিয়ে একটা পোস্ট করলাম। নিচে দিয়ে দিচ্ছি।
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০২:১২49068


  • যে চিত্রটি দিয়েছি সঙ্গে, সেটি ২০১১র জনগণনা থেকে নেওয়া। কেটে ছেঁটে সাইজে আনা, লাল দাগ দেওয়া, এগুলি আমার কীর্তি। সংখ্যাগুলি সবই জনগণনার। একটি ভাষা এবং তার নিচের তথাকথিত 'উপভাষা' গুলি এখানে তালিকা করা আছে, যে তথাকথিত 'উপভাষা'গুলিকে একটি ভাষা গ্রাস করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ মিথ্যে না। তা, কে কতটা গ্রাস করেছে সংখ্যা দিয়েই দেখা যাক, যা সঙ্গের ছবিতে আছে।

    ছবিটি দেখলেই দেখবেন, কম্পোজিশনটি বিসদৃশ। ডানদিকে প্রায় কিছুই নেই। বাঁ দিকটি তালগাছের মতো লম্বা। এই পিঁপড়ে বনাম তালগাছ তুলনাটিই, একদম লেখচিত্রের মাপে বাংলা বনাম হিন্দির আগ্রাসনের মাপের তুলনা।

    ভারতবর্ষে বাংলাভাষীর সংখ্যা মোট ১০ কোটির মতো। উপভাষার সংখ্যা ৩। সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ যে উপভাষাটি বলেন, তা রাজবংশী। বলেন প্রায় ৫ লাখ লোক। উপভাষা গুলিকে বাদ দিলে বাংলাভাষীর সংখ্যা প্রায় ১০ কোটিই থেকে যায়। বিশেষ কমেনা। কথা হল, বাংলা ভাষা কি রাজবংশীর উপর আধিপত্য বিস্তার করেনি? করেছে। কতজনের উপর করেছে? সংখ্যা কত? ৫ লক্ষ। প্রকৃত বাংলাভাষীর তুলনায় এঁরা কতটা? সমস্ত উপভাষা যোগ করে মোটামুটি ১%।

    এবার হিন্দির দিকে দেখুন। সর্বমোট হিন্দিভাষী, যেটা উপরে লেখা আছে, তার সংখ্যা বলা আছে ৫২ কোটি। উপভাষার সংখ্যা? অকল্পনীয় হলেও সত্যি, প্রায় ৬০। এর মধ্যে রাজস্থানী, হরিয়ানভি, মাগধী, ভোজপুরি, সব ঢুকে আছে, যা আদতে আলাদা ভাষা। এর মধ্যে প্রকৃত হিন্দিভাষীর সংখ্যা কত? ৩২ কোটি। বাকি যারা সরাসরি আগ্রাসনের শিকার, তাঁদের সংখ্যা কত? ২০ কোটি। এবং সঙ্গে মৈথিলী যোগ করলে সেটা মোটামুটি ২২ কোটিতে দাঁড়ায়। প্রকৃত হিন্দিভাষীর তুলনায় কতজন অহিন্দিভাষীর উপর আগ্রাসন করা হয়েছে? প্রায় ৭০%।

    অভিলাষ মাপ চাইছিলেন। এই হল সেই মাপ। সৌম্য ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধতা করছিলেন। একটি ভাষা আরও প্রায় ৬০ টি ভাষাকে দখল করেছে। নিজের ভাষাভাষীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ সমান লোকের মাতৃভাষা কেড়ে নিয়েছে। সর্বভারতীয় স্তরে ভাষা চাপিয়ে দেবার বিরুদ্ধে কথাবার্তা তো সেই ভাষাটি থেকেই শুরু করা উচিত, তাই না? তাও তো এর মধ্যে বলিউড দিয়ে প্রভাব বিস্তার করার কথা ধরাই হয়নি।

    তা, এই চাপিয়ে দেওয়া একদম জলের মতো সহজ। এবং ভাষাটি এখানেই থামেনি। সে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে সরকারি রাষ্ট্রযান্ত্রের মদতে। তাকে আটকানোর উপায় কী, যে এখানে নিজের ভাষাকে নিরাপত্তা দেওয়া ছাড়া? কোনো ভাষা চাপিয়ে দেওয়া চলবেনা, কেবল হিন্দি ভাষা চাপানো চলবে এ তো হয়না।

    প্রসঙ্গত, এ কোনো জাতিগত বিদ্বেষের ব্যাপার নয়। সাধারণ হিন্দি ভাষীরা এই কান্ডের ভিলেন নন। বস্তুত যাদের আমরা হিন্দিভাষী বলে জানি, তাঁরা অনেকেই এর শিকার। যেমন ধরুন, বামপন্থী পোস্টার বয় কানহাইয়া কুমার, যিনি বিহারি টানে হিন্দি বলেন। যদিও তাঁর এলাকার ভাষা মৈথিলী। হিন্দি সম্প্রসারণবাদ কানহাইয়ারও ভাষা কেড়ে নিয়েছে। আমাদের নেবেনা তার গ্যারান্টি কী?

    (কনটেক্সটটা একটু খাপছাড়া হয়ে গেল, কিন্তু আবার লেখার মানে নেই)
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০২:১৭49081
  • আয়নায় মুখ দেখতে তো বারন করছিনা। বস্তুত আগ্রাসন তো একভাবে হয়না। যাদের উপর এটা ঘটছে, তাদের দিক থেকেও আগ্রাসনের একটা বৈধতাও তৈরি করা হয়। এটাই প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়ার একদিকে থাকে 'বিশ্বজনীনতা'কে আপন করে নেবার ব্যাকুলতা, অন্যদিকে 'আমরা পারিনা'র হাহাকার। মৈথিলি থেকে ব্রজভাষা, সর্বত্র অবলুপ্তপ্রায় ভাষাভাষীদের মধ্যে এই হাহাকার দেখবেন। 'আমরা পারিনি', 'আমাদের আত্মশক্তির অভাব', ইত্যাদি। যশোধরা বা শিবাংশুদা গুরুতেই যে লেখাটি লিখেছেন, তাতে এই হাহাকারের সুরটিই স্পষ্ট।

    তা, 'আমাদের আত্মশক্তির অভাব' নিশ্চয়ই আছে। সেটায় পরে আসছি। কিন্তু সেটাকেই প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করলে ভুল হয়। খুব সহজ উদাহরণ দিই, সত্তর বছর ধরে বোম্বের পেশিশক্তির সামনে আস্ত গোটা দুই প্রজন্মকে ফেলে দেবার পর, তারা কেন প্রাণের গান হিসেবে বাংলাকে ভালোবাসলনা, এ প্রশ্ন তুললে তাদের প্রতি অবিচারই হবে। তাদের সামনে অন্য কোনো চয়েস দেওয়াই হয়নি। এটাই আধিপত্য।

    এবার, প্রশ্ন উঠবে, যশোধরা যেমন তুলেছেন, আগ্রাসন ছিল, তবুও দক্ষিণীরা কিন্তু তা অটকাতে পেরেছে, বিশেষ করে তামিলরা, আমরা কেন পারলামনা। আমাদের 'আত্মশক্তি'তে কোনো খামতি আছে বা ছিল? এটা নিশ্চয়ই আলোচনার বিষয়। ভাবাই উচিত। কিন্তু এই আলোচনার সময় দক্ষিণীদের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য, যেমন রক্ষণশীলতা ও মাথায় রাখা উচিত। উচ্চবর্ণের তামিল পরিবার সাধারণভাবে তার পিতৃতান্ত্রিক যৌথ কাঠামোকে এখনও ধরে রেখেছে। সেটাই তার 'নিজস্ব সংস্কৃতি'র আধার, যেটা এখনও অটুট। তা, এটাই কি তবে রাস্তা যা আমরা অনুসরণ করিনি? সেসব আলোচনা উঠবে, করতেও হবে।
  • dd | 670112.51.0123.201 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৩৪49069
  • ঃ) মহায়ের "স্তাবকবৃন্দের ল্যাজতালি মুখরিত" বাক্যবন্ধটি আমার খুবি দারুন লেগেছে।

    এবারে আমার বিভিন্ন ল্যাখায় ল্যাজতালি কথাটি স্বচ্ছন্দে ইউজ করবো - কোনো কপিরাইটের তোয়াক্কা না করেই।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৩৭49070
  • খড়িবোলি মোটে ৫০,০০০?
  • রঞ্জন | 238912.69.348912.140 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৪৪49082
  • ঈশানের কথা ভাবাচ্ছে।
    অবশ্যই কোলকাতার বর্তমান কালচারে কেউ চাইবে না পিতৃতান্ত্রিক যৌথ কাঠামো এবং রক্ষণশীলতাকে ধরে রাখতে। আর চাইলেও সম্ভব নয় , তার বাস্তব ভিত্তিই নড়ে গেছে অনেকদিন।
    ২ কিন্তু "সত্তর বছর ধরে বোম্বের পেশিশক্তির সামনে আস্ত গোটা দুই প্রজন্মকে ফেলে দেবার পর, তারা কেন প্রাণের গান হিসেবে বাংলাকে ভালোবাসলনা, এ প্রশ্ন তুললে তাদের প্রতি অবিচারই হবে। তাদের সামনে অন্য কোনো চয়েস দেওয়াই হয়নি। এটাই আধিপত্য।"
    -- আমার প্রশ্নঃ চয়েস দিল না কে?
    শুধু বম্বে সিনেমার গান কেন, বর্তমান প্রজন্ম যতটা বাংলা ব্যান্ডের গানে সাড়া দেয় ততটা অন্য কোন গানে দেয় কি?
    আমাদের সময়ে সত্যি চয়েস কম ছিল।
    আকাশবাণী ছিল গানের রুচি তৈরির প্রধান মাধ্যম। আধুনিক বাংলা গানের জায়গাটা কি ব্যান্ডের গান নিয়েছে?।
    ৩ সত্তরের দশকে হিন্দি সিনেমার সামনে বাংলা সিনেমা হেরে যাচ্ছে, পটল তুলছে বলে খুব হৈহল্লা হল, অনেকগুলো হলের সামনে পিকেটিং হল, কিছু হল কিছুদিনের জন্যে বন্ধ রইল।
    এসবের নেতৃত্ব দিলেন "বাংলা চলচ্চিত্র সংরক্ষণ সমিতি''।
    তার কিছু ইম্প্যাক্ট বোধহয় হয়েছিল। আমি ভাল জানিনে, অন্যেরা বলতে পারবেন।
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৪৮49083
  • হিন্দি ইংরিজি সিনেমার উপরে ২০০% ট্যাক্সো চাপালে, আর হিন্দি/ইংরিজি 'জাতীয় চ্যানেল' এর সম্প্রচারের উপরে সমপরিমান সারচার্জ টার্জ কিছু একটা চাপালে, এমনিই প্রাণের ভাষা বাংলা হয়ে যাবে। তারপর যত খুশি আদানপ্রদান হোক না। আমরা সবাই উর্দু শায়েরি পড়ব। কোনো অসুবিধে নেই। :-)
  • sm | 2345.110.893412.8 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৫৩49084
  • আপনার কি মনে হয়?কোনটা বাংলা স্ট্যান্ডার্ড ভাষা ধরা হবে? আই মিন,নদীয়া -শান্তিপুর,বাঁকুড়া -পুরুলিয়া,নাকি কলকাততিয়া?
    কোন একটা ভাষা বা ডাইলেক্টকে তো সম্প্রচার করার ভাষা বা স্বীকৃত কথ্য ভাষা মান্যতা দিতে হবে নাকি?
    বাংলা দেশে যেমন সিলেটি,ঢাকাই, বরিশালী,চাটগাঁই ,ইত্যাদি অনেক রকম ডায়ালেক্ট থাকলেও ঢাকাই কে বেশি ব্যবহার করা হয়।
    আর একটা প্রশ্ন রেখেছিলেন,বিশ্বনাথন এর উদাহরণ দিয়ে পব তে তামিল মাধ্যমের স্কুলে কেন বাংলা অপশন নেই।এটা মনে হয় একটা সামান্য টেকনিক্যাল প্রবলেম।বেশি বেশি জনতা বাংলা সেকন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ রাখতে চাইলে নিশ্চয় শিক্ষা দপ্তর পারমিশন দেবে।
  • রঞ্জন | 238912.69.348912.140 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৫৮49085
  • উর্দু শায়েরি পড়া যেতেই পারে । প্রীতীশ নন্দী লোরকা মূল ভাষায় পড়বেন বলে পার্কাসার্কাস থেকে গোলপার্কের ইন্সটিট্যুট যেতেন।
    কিন্তু হিন্দি কবিতার সঙ্গে উর্দু শায়েরির সম্পর্ক বেশ দূরের।
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.203 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০৩:১৬49086
  • আসলে যেটা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে সেটা হচ্ছে ইংরেজি আগ্রাসন। কেন এড়ানো হচ্ছে? সিম্পল। ওটা শিখতেই হবে, পারলে মায়ের পেট থেকে পড়েই। এই এলিট মানসিকতা এতটাই জাঁকিয়ে বসেছে যে যাঁদের প্রথম ভাষা বাংলা নয়, তাঁরা দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাধ্যতামূলকভাবে ইংরেজি ছাড়া অন্য কিছু নিতেই পারে না। নেবেই বা কেন? লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে তো একটা ব্যাপার আছে। বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি হবে আর অন্য মাধ্যমের বাংলা - এ তো হতে পারে না। তাই 'বেশি বেশি জনতা বাংলা সেকন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ রাখতে চাইলে নিশ্চয় শিক্ষা দপ্তর পারমিশন দেবে'-টা নিখাদ কষ্টকল্পনা।

    দেখুন এখানে যাঁরা আলোচনা করছেন তাঁদের প্রত্যেককে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে বারবার বলছি বোর্ড এবং কাউন্সিলের ভাষানীতি সম্পর্কে আমার মতো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্ভবত অন্য কারও নেই। কাজেই অজিত রায় বা যশোধরা রায়চৌধুরী বা শিবাংশুবাবু আগ্রাসনের ব্যাপারটা প্রপারলি অ্যাড্রেস করতে পারছেন না। এর শিকড় অনেক গভীরে।

    স্ট্যান্ডার্ড ভাষা ধরা বা না-ধরা তো আমার মতের ওপর নির্ভরশীল নয়, ওটা বাবুদের সুবিধার্থে অনেক আগেই করা হয়ে গেছে। আমি নাকেও কাঁদছি না, হাহুতাশও করছি না। আমার চিন্তার মূল জায়গা, মানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের জায়গা, ওই ৯২ শতাংশ 'হেটো-মেঠো'দের ওপর দীর্ঘদিন চলে আসা খোদ বাংলা সরকারের আগ্রাসন নিয়ে। এটা তাঁদের অধিকারের লড়াই। যতদিন না সেই লড়াই জেতা যাচ্ছে ততদিন অন্তত আমি ওই ৮ শতাংশ 'এলিট'-এর আগ্রাসনের আশঙ্কা নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নই। আমার বাচ্চারা ছোটলোক, আমার মতোই, কাজেই আমার দাবি ছোটলোকদের দাবি, তাদের পক্ষের দাবি।
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.203 (*) | ০৬ জুন ২০১৯ ০৩:২৮49087
  • আবারও ব্যাখ্যা করছি। আমি একটা মফস্‌সল শহরে থাকি যেখানে কোনও হিন্দি মাধ্যম স্কুল থাকা তো দূরের কথা, হিন্দিকে প্রথম ভাষা হিসাবে নেওয়ার অপশন অবধি নেই। তো সেই শহরে মেথরেরা আছেন, মোটবাহকেরা আছেন, চর্মশিল্পীরা আছেন, ধুনুরিরা আছেন, আখের গুড় ব্যবসায়ীরা আছেন যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয় এবং যাঁরা বাড়িতে বাংলা বলেন না। এখন এদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে প্রথম ভাষা বাংলা এবং দ্বিতীয় ভাষা ইংরেজি। মানে ক্লাস ওয়ান থেকে তাঁদের সন্তানদের বাধ্যতামূলকভাবে তিনটে ভাষা শিখতে হচ্ছে যা অত্যন্ত অবৈজ্ঞানিক। কিন্তু সেই ভাষা আগ্রাসন নিয়ে আমাদের কোনও হেলদোল কোথাও চোখে পড়েছে? পড়বে না। কারণ তাঁরা 'ছোটলোক'। বিদ্যাসাগরের আমল থেকেই শিক্ষার প্রাঙ্গণ থেকে ছোটলোক দূরীকরণ অভিযান চলছে রমরম করে। আর আমরা হিন্দি আগ্রাসন নিয়ে কেঁদে ভাসাচ্ছি। ছ্যাঃ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন