এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • মৃণাল সেন : এক উপেক্ষিত চলচ্চিত্রকার

    এবড়োখেবড়ো লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৪ আগস্ট ২০১৯ | ৪১০১ বার পঠিত
  • [আজ বের্টোল্ট ব্রেশট-এর মৃত্যুদিন। ভারতীয় চলচ্চিত্রে যিনি সার্থকভাবে প্রয়োগ করেছিলেন ব্রেশটিয় আঙ্গিক, সেই মৃণাল সেনকে নিয়ে একটি সামান্য লেখা।]

    ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কীভাবে যেন পরিচালক ত্রয়ী সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল এক বিন্দুতে এসে মিলিত হন। ১৯৫৫-তে মুক্তি পাচ্ছে ‘পথের পাঁচালী’; একই বছরে মৃণাল করছেন তাঁর প্রথম ছবি ‘রাতভোর’; আর ভারতীয় সিনেমার প্রকৃত পথপ্রদর্শক হিসাবে যাঁর সম্মানিত হওয়ার কথা সেই ঋত্বিকের ১৯৫২ সালে তৈরি ‘নাগরিক’-এ অভিনয় করছেন গীতা সোম যিনি পরের বছরে ঘরনি হবেন মৃণালের।

    উনিশশো তেইশে মৃণাল সেনের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে। সেখানকার সজল-শ্যামল প্রকৃতিকে চিরবিদায় জানিয়ে ১৯৪০-এ তিনি কলকাতায় আসছেন সায়েন্স নিয়ে পড়তে। কলকাতার বৃহত্তর জগতের সঙ্গে ক্রমশ পরিচিত হচ্ছেন মৃণাল। কলেজে পড়তে পড়তেই সহসা খোঁজ পাচ্ছেন ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি (বর্তমানে ন্যাশনাল লাইব্রেরি)-র। সেখানে সকাল ন’টা থেকে সন্ধে ছ’টা অবধি কোনও বাছবিচার না করে গোগ্রাসে গিলছেন সাহিত্য-দর্শন-রাজনীতি-চলচ্চিত্র-সমাজতত্ত্ব-নৃতত্ত্ব-নন্দনতত্ত্বর ওপর লেখা যাবতীয় বইপত্তর। আর তার সঙ্গে তাঁর নিজের কথায় সিনেমা দেখছেন ‘চা খাওয়ার মতো করে’। এই সময়েই কালীঘাট দমকলের কাছে হেমবাবুর চায়ের দোকান ‘প্যারাডাইস ক্যাফে’-তে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন ঋত্বিক-তাপস সেন-হৃষিকেশ-সলিল-বংশী চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে। চোখে তখন সিনেমা করার স্বপ্ন ক্রমেই দানা বাঁধছে।

    ততদিনে বামপন্থায় আকৃষ্ট মৃণালকে নাড়িয়ে দিচ্ছে তেভাগা-তেলেঙ্গানা। একটা লজ্‌ঝড়ে ক্যামেরা জোগাড় করে চলে যাচ্ছেন কাকদ্বীপে ছবি করতে — যেখানে চিত্রনাট্য মৃণালের, সংগীত পরিচালনায় সলিল, পরিচালনায় ঋত্বিক আর হৃষিকেশ। কিন্তু সে ছবি শেষ না করতে পারার যন্ত্রণায় চিত্রনাট্য পুড়িয়ে দিচ্ছেন মৃণাল, পরবর্তীকালে যে কাজের জন্য আফশোস করতে দেখব তাঁকে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে চাকরির তীব্র মন্দার বাজারে উপার্জনের চেষ্টা তাঁকে কোনও কাজেই থিতু হতে দিচ্ছে না। তাই কখনও প্রুফ রিডার, কখনও ইংরেজির প্রাইভেট টিউটর, কখনও অনুবাদক, কখনও মেডিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ-এর কাজ ছাড়ছেন তিনি। আর সিনেমা করার আগেই ১৯৫৩-য় প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর আজীবন ভালোলাগার মানুষটিকে নিয়ে প্রথম বই ‘চার্লি চ্যাপলিন’।

    আমরা এক নিঃশ্বাসে যতই সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল উচ্চারণ করি না কেন, ভারতীয় চলচ্চিত্রের তিন মহীরূহই কিন্তু পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা ঘরানার। খোদ সত্যজিৎ তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে লিখেছেন ‘They started at about the same time as I did, Ritwik and Mrinal’। কিন্তু এ কথাও বলেছেন পাশাপাশি ‘They were making films very different from mine, very different, but very powerful, I think’। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সমালোচক ধীমান দাশগুপ্ত ‘গণশিল্পী ঋত্বিককুমার ঘটক বনাম ঋত্বিক : নিঃসঙ্গ স্রষ্টা’ প্রবন্ধে চমৎকারভাবে ধরেছেন এই তিন দিকপাল শিল্পীর আন্তঃসম্পর্ককে। তাঁর মতে, “সত্যজিৎ সমন্বিত, সুষম, শীলিত, কমনীয়। ঋত্বিক মন্থর, তীব্র, শিথিল, অনমনীয়। অন্যদিকে মৃণাল দ্রুত, তীক্ষ্ণ, তৎপর ও নমনীয়।” আর মৃণাল নিজে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন — “I am not a Kurosawa, I am not a Satyajit Ray, I am not a Godard, who believe in drawing sketches. I can’t do that. I can’t draw a single line. My films are a kind of thesis।”

    সিনেমা পরিচালনা করতে গিয়ে ধ্রুপদী সাহিত্যকে নিজের ছবির আশ্রয় করতে চাননি তিনি। বরং সাহায্য নিয়েছেন কখনও আশীষ বর্মণ (‘পুনশ্চ’, ‘আকাশকুসুম’, ‘ইন্টারভিউ’, ‘পদাতিক’); কখনও অমলেন্দু চক্রবর্তী (‘একদিন প্রতিদিন’, ‘আকালের সন্ধানে’); কখনও বা মহাদেবী ভার্মা (‘নীল আকাশের নীচে’), কালিন্দীচরণ পানিগ্রাহী (‘মাটির মনিষ’) কিংবা মুন্সী প্রেমচন্দর (‘মৃগয়া’)। কাহিনি বৈচিত্র্যের মতোই ছবির ভাষার ক্ষেত্রেও একটি বা দু’টি ভাষায় চলচ্চিত্র বানিয়ে তিনি নিজেকে বন্দি করে রাখেননি। তাঁর আটচল্লিশ বছরের (১৯৫৫-২০০২) শিল্পজীবনে যে ২৮টি কাহিনিচিত্র নির্মাণ করেছেন মৃণাল, সেখানে তিনি বাংলা বাদেও বানিয়েছেন একটি ওড়িয়া, একটি তেলুগু এবং ছ’টি হিন্দি ছবি – যথাক্রমে ‘মাটির মনিষ’, ‘ওকা উরি কথা’, ‘ভুবন সোম’, ‘এক আধুরি কহানি’, ‘মৃগয়া’, ‘খণ্ডহর’, ‘জেনেসিস’ এবং ‘একদিন অচানক’। এ থেকে এটা স্পষ্ট যে মৃণাল আজীবন বিশ্বাস করেছেন চলচ্চিত্রের নির্দিষ্ট কোনও ভাষা হয় না, চলচ্চিত্র সাহিত্যের ওপর নির্ভরশীল না হওয়া সম্পূর্ণ আলাদা একটি শিল্পমাধ্যম।

    যদিও আমরা লক্ষ্য করি যে, ‘আকাশকুসুম’ থেকেই বাঁকবদল শুরু হচ্ছে পরিচালক মৃণালের, কিন্তু ভারতীয় চলচ্চিত্রের জগতে তাঁকে স্থায়ী আসন এনে দিচ্ছে ১৯৬৯ সালের ছবি ‘ভুবন সোম’। মৃণাল তাঁর ‘চলচ্চিত্র ভূত বর্তমান ভবিষ্যৎ’ গ্রন্থে লিখেছেন, “... বাংলা চলচ্চিত্র সম্পর্কে যে সংকটের কথা বলা হয় অর্থাৎ আর্থিক সংকট অর্থাৎ যে সংকট আসে জনপ্রিয়তার অভাব থেকে – সেই সংকট কাটাতে গেলে প্রথমেই যা করণীয় তা হল — ১) কম পয়সায় ছবি তোলা অর্থাৎ স্টার সিস্টেমকে বর্জন করা এবং অকারণ, অহেতুক, অসংগত জাঁকজমক বর্জন করা; ২) চলচ্চিত্রের বাজারের পরিধি বাড়ানো অর্থাৎ আঞ্চলিক গণ্ডি ডিঙিয়ে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা।” ‘ভুবন সোম’ যেন এই তত্ত্বের সার্থক বাস্তব প্রয়োগ। এই ছবি অনেক দিক দিয়েই নতুন — মৃণাল, উৎপল দত্ত এবং শেখর চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম হিন্দি ছবি; সুহাসিনী মুলের এ ছবিতেই প্রথম অভিনয়; কে কে মহাজনের প্রথম কাহিনিচিত্রে সিনেমাটোগ্রাফি; সংগীতকার বিজয় রাঘব রাও-এর প্রথম সংগীত পরিচালনা এবং অমিতাভ বচ্চনের প্রথম ভয়েস ওভার। মাত্র দেড় লাখ টাকায় বানানো, বনফুলের গল্পটার একটা আট পাতার খসড়াকে চিত্রনাট্য হিসাবে বিবেচনা করে গোটা সিনেমাটায় যে অনবদ্য ভাষ্য বুনে দেন মৃণাল, তা তাঁকে ভারতীয় সমান্তরাল সিনেমার পথিকৃতের সম্মান এনে দেয় অনায়াসে। দর্শক মুহূর্তের মধ্যে উপলব্ধি করেন যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভুবন সোম এত সোচ্চার ছিল, সেই দুর্নীতি গোটা ভারতে বজায় থাকবে বহাল তবিয়তেই।

    ‘ভুবন সোম’-এর ঠিক পরের বছর থেকেই সত্তরের উত্তাল কলকাতাকে সেলুলয়েডের ক্যানভাসে বন্দি করতে সত্যজিতের অপু-ত্রয়ী (পথের পাঁচালি-অপরাজিত-অপুর সংসার); ঋত্বিকের উদ্বাস্তু-ত্রয়ী (মেঘে ঢাকা তারা-কোমলগান্ধার-সুবর্ণরেখা)-র পর আমরা পেতে শুরু করি মৃণালের রাজনৈতিক-ত্রয়ী 'ইন্টারভিউ’-‘কলকাতা ৭১’-‘পদাতিক’। মৃণালের নিজের কথায়, “ ... এমনই একটা বিশ্বাস থেকে ’৬০-’৭০ দশকের সন্ধিক্ষণে নকশাল আন্দোলনকে দেখেছি, তা নিয়ে ভেবেছি, জড়িয়ে পড়েছি। এ-দেখার মধ্যে বেহিসেবিপনা ছিল, এ ভাবনার ভিতরে বেপরোয়া ভাবনা ছিল, এভাবে জড়িয়ে পড়ায় অনেকটাই আবেগ যুক্ত ছিল। কিন্তু এসবের মধ্যে আর কোনো হিসেব ছিল না, নির্লিপ্ত শীতল পর্যবেক্ষণ ছিল না, ছক কষার কোনো চেষ্টা ছিল না। নকশাল আন্দোলনকে সামনে রেখে কোনো অঙ্কটঙ্ক কষে ইন্টারভিউ, কলকাতা ৭১, কিংবা পদাতিক বানাইনি। ওই অস্থির সময়টার তাপ যখন যেভাবে মনের ওপর ছাপ ফেলেছে, সেভাবেই একের পর এক ছবিগুলো করে গেছি।” বস্তুতপক্ষে নকশালবাড়ির রাজনীতি নিয়ে এমন সংবেদনশীল আখ্যানের চারপাশ সত্যজিৎ সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছেন, ঋত্বিকও যুক্তি-তক্কোতে যেভাবে ধরেছেন তাতে তাত্ত্বিক কচকচানি থাকলেও হৃদস্পন্দন কোথাও যেন অনুপস্থিত থেকেছে। কিন্তু মৃণাল তাঁর সমস্ত আক্রোশ-যন্ত্রণা-সহমর্মিতা-সমবেদনা উজাড় করে দিয়েছেন এই তিনটি ছবিতে।

    এর পরেও যেন তিনি তৃপ্ত হতে পারেননি। তাই বাকি কথাগুলো বলার জন্য বেছে নিয়েছেন ‘কোরাস’-কে, যে ছবিতে সিনেমার ফর্ম নিয়ে অমন তীব্র দুমড়ানো-মোচড়ানো পরিচালকত্রয়ীর মধ্যে একমাত্র মৃণালই করেছেন। এক সাক্ষাৎকারে ছবির মূল ভাবনাকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এইভাবে :“ ‘কোরাস’ আমাদের ছবিতে শেষ পর্যন্ত এসে দাঁড়ায় একটি ব্যাপক অর্থে — বিশাল মানুষের এক বিশাল ইচ্ছা — বিস্তর মানুষ, অনেক কথা, বহু লড়াই, সব যখন একীভূত হয়ে যায়, একটা সাংগীতিক মুহূর্তের সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ একটা collective আবেগ বা ইচ্ছা — তারই নাম ‘কোরাস’।” এই চারটি ছবিই মৃণালকে নিঃসন্দেহে প্রথম ভারতীয় রাজনৈতিক চলচ্চিত্রকার হিসাবে আমাদের কাছে তুলে ধরে।

    মৃণাল বরাবরই আঙ্গিকসচেতন পরিচালক। ছবির বিষয়বস্তুকে আরও তীক্ষ্ণ, আরও জোরালো করতে গিয়ে বিভিন্ন ছবিতে তিনি আঙ্গিকের যে সচেতন প্রয়োগ ঘটিয়েছেন তার উল্লেখ যতই করা হোক না কেন তা অসমাপ্ত থাকতে বাধ্য। মৃণাল নিজে জানিয়েছেন, “যেভাবে এতকাল বলা হয়েছে, সেইভাবে যদি না বলে অন্যভাবে বলা যায় তাহলে বলার চেহারাটাও পাল্টে যায়। বলা তো হয়ে গেছে প্রচুর কথা এবং সে কথাগুলোই তো আমরা বারবার বলছি। তাই চলতি লিনিয়ার স্ট্রাকচারের বাইরে যেতেও মন চায় প্রায়ই।” তাই আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করি — ‘আকাশকুসুম’-এ ফ্রিজ শটের ব্যবহার; ‘ভুবন সোম’-এ মাস্ক শটের ব্যবহার করে গল্পটা মুহূর্তের জন্য থামিয়ে দিয়ে ভুবন সোমের ভেতরের কথাগুলো বলিয়ে নেওয়া; ‘ভুবন সোম’-এই একজন আমলার বন্দিদশা ও তার চরিত্রটির যান্ত্রিকতা দেখাতে গিয়ে ছবির শুরুতে অ্যানিমেশনের ব্যবহার, ‘মৃগয়া’-তে ডুংরিকে (অভিনয়ে মমতাশঙ্কর) ধরে নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তটায় কোনও শারীরিক টানাহ্যাঁচড়া না দেখিয়ে স্রেফ তার পালকিতে ওঠা- দরজা বন্ধ হওয়া-এবং সর্দারের (অভিনয়ে অনুপকুমার) কর্কশ কণ্ঠস্বরের সাউন্ড এফেক্টের দুর্দান্ত ব্যবহার; ‘কোরাস’-এ ইমেজের ফাঁকে সাদা স্ক্রিন, ‘কলকাতা ৭১’-এ ট্রলিতে না চাপিয়ে হাতে ধরে ক্যামেরা চালানো; ‘একদিন প্রতিদিন’-এ সাংবাদিকতার ঢঙে ন্যারেশন কিংবা ‘কলকাতা ৭১’-এই ব্রেশটিয় পদ্ধতি অনুসারে আলাদা আলাদা এপিসোডে ন্যারেটিভের অখণ্ড প্যাটার্নকে ভেঙে ফেলা ইত্যাদি।

    এই আঙ্গিকসচেতন মৃণাল তাঁর আঙ্গিকের সম্ভবত সার্থকতম প্রয়োগটি করেন ‘আকালের সন্ধানে’ ছবিতে, যেখানে একবারের জন্যও চিরাচরিত ফ্ল্যাশব্যাক পদ্ধতির সাহায্য না নিয়ে অসাধারণ দক্ষতায় ৪৩-এর মনুষ্যসৃষ্ট আকালকে তিনি মিলিয়ে দেন ১৯৮০-র বর্তমান মন্বন্তরের সঙ্গে। কেবলমাত্র কাহিনির বিনির্মাণের মাধ্যমে তিনি অতীত ও বর্তমান সময়কালের স্থান পরিবর্তন করে দেন এই চলচ্চিত্রে। বুঝিয়ে দেন আসলে ৪৩ আর ৮০-র মধ্যে ফারাক কিছুই নেই। তাই সিনেমার স্মিতা (অভিনয়ে স্মিতা পাতিল) কখন যেন রূপান্তরিত হয়ে যান বাস্তবের দুর্গায় (অভিনয়ে শ্রীলা মজুমদার)। তাঁর কলকাতা-ত্রয়ী যদি হয়ে থাকে নকশালবাড়ির থিসিস, তাহলে অনায়াসে এই ছবিকে চিহ্নিত করা যেতে পারে মৃণালের আকালের থিসিস হিসাবে।

    আসলে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে মৃণাল কখনও বিশুদ্ধতাবাদীদের মতো আড়ষ্টতায় ভোগেননি। তিনি বিশ্বাস করেছেন যে, একটি সংবাদপত্রের কেবলমাত্র হেডলাইন থেকেও ছবি বানানো যেতে পারে। চলচ্চিত্র যে একটি বিশুদ্ধ মাধ্যম নয়, বরং সেখানে মুনশিয়ানার সঙ্গে অন্য মাধ্যমের নানা জিনিস ব্যবহার করা হলে তা যে সার্থক চলচ্চিত্রও হয়ে উঠতে পারে – সে ব্যাপারে নিঃসন্দিহান ছিলেন তিনি। তাই মৃণালের মতো আর কোনও ভারতীয় পরিচালকের ছবিতে এত বিভিন্ন, বিবিধ ও বিচিত্র বিষয়ের সংঘাত ও সহাবস্থান ঘটেনি। তাঁর সিনেমা তৈরিতে তিনি চলচ্চিত্র ছাড়াও অন্যান্য মাধ্যম থেকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেছেন চিত্রকলা, আলোকচিত্র, বিজ্ঞাপন, ফিল্ম তৈরির ছবি, বেতারানুষ্ঠান, সংবাদপত্রের বিবৃতি ও শিরোনাম, পোস্টার, হোর্ডিং, ডামি, স্ট্যাচু ইত্যাদি নানাবিধ জিনিস। আবার সিনেমারই প্রয়োজনে চলচ্চিত্রের মূল কাহিনিটিকে প্রয়োজন মতো ভেঙেচুরে নিয়ে তাঁর ছবিকে দিয়েছেন এক অব্যর্থ পটভূমি। ‘ভুবন সোম’-এর মূল কাহিনির সাহেবগঞ্জকে তিনি বদলে দেন সৌরাষ্ট্রের মায়াবী জগতে; ‘ওকা উরি কথা’-য় প্রেমচন্দের ‘কাফন’-এর উত্তরপ্রদেশের কঠিন শীতের রূঢ়তাকে তিনি প্রতিস্থাপন করেন দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা দিয়ে; আবার প্রেমেন্দ্র মিত্র-র ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ থেকে যখন ‘খণ্ডহর’ করেন তিনি, তখন সুভাষকে মাছধরা বাঙালি থেকে পাল্টে দেন স্টিল ফটোগ্রাফারে। ছবির শেষ ভাগে তাই দেখি খণ্ডহরের যামিনী সুভাষের কাছে নেহাতই একটা মুহূর্ত মাত্র, একটা ছবি তোলার সাবজেক্ট বিশেষ, যা শেষ হয়ে গেলে যামিনী সম্পর্কে সুভাষের অপরিসীম নির্লিপ্তি চমৎকারভাবে প্রস্ফুটিত হয়।

    কলকাতা ট্রিলজি পর্বে যে রাগী মৃণালকে, যে সোচ্চার মৃণালকে আমরা দেখি; ১৯৮০তে এসে সেই একই মৃণাল রাষ্ট্রের দিকে আর অভিযোগের তর্জনী তোলেন না। বরং তাঁর মধ্যমা-অনামিকা-কনিষ্ঠার অভিমুখ ঘুরিয়ে দেন নিজের দিকে, মধ্যবিত্ত মৃণালের দিকে। বারবার আমাদের চুল ধরে টেনে এনে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেন, নগ্ন করে দেন মধ্যবিত্তের অসহায়তা-দোদুল্যমানতা-স্বার্থপরতা-নির্লজ্জতা-শঠতা-নির্লিপ্ততাকে। এইবার তিনি বানান তাঁর মধ্যবিত্ত ট্রিলজি ‘একদিন প্রতিদিন’-‘চালচিত্র’-‘খারিজ’। এই সব ছবিতে মৃণাল শান্ত, পরিণত, নিরুচ্চার অথচ দর্শকের সঙ্গে সংযোগের কাজটি করে চলেন ঋষিসুলভ নিরাসক্তি নিয়ে। এই ছবিগুলোতে তিনি একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গোটা ছবির সংকটটাকে ধরেন; সকাল থেকে সন্ধে, বা সন্ধে থেকে পরদিন সকাল বা এই সকাল থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত। আর রেকারেন্ট মোটিফের মতো ফিরে ফিরে আসে একটা পলেস্তারা-খসা, স্যাঁতস্যাঁতে পাকা বাড়ি যা হয়তো ওই বাড়িটির বাসিন্দাদের ভেতরের চেহারাটার রূপক।

    ‘একদিন প্রতিদিন’ ছবিতে চিনুর বাড়িতে এসে চলন্ত ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে একটি মেয়ের আত্মহত্যার চেষ্টার খবর দেয় পুলিশ। মেয়েটির খোঁজে এন আর এস হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ডে হাজির হন অসংখ্য অভিভাবক — যাঁদের ওইদিনই কারও নাতনি, কারও কন্যা কিংবা কারও বোন রাতে বাড়িতে ফেরেনি। মেয়েটি হাসপাতালে মারা গেলে তাঁর মৃতদেহ শনাক্ত করতে একে একে এগিয়ে যান ওই অভিভাবকরা। মেয়েটি যে তাঁদের পরিচিত নয় তা বুঝতে পেরে স্বস্তির শ্বাস ফেলে হাসপাতাল চত্বর ছাড়তে থাকেন তাঁরা। অবশেষে শেষ ব্যক্তি হিসাবে মেয়েটির দাদা চিনতে পারেন তাঁর বোনের মৃতদেহ। কিন্তু কী আশ্চর্য, সেই নিদারুণ কষ্টের মধ্যে তিনি অনুভব করেন তাঁর আশেপাশে কোনও সমব্যথী নেই - তিনি সম্পূর্ণ একা। আবার ‘খারিজ’ ছবিতে দেখা যায় একটি শিশুকে গৃহকর্মের কাজে লাগানো গৃহস্বামী অঞ্জন (অভিনয়ে অঞ্জন দত্ত) যতই বলুন না কেন ‘ও আমাদের বাড়ির লোকের মতোই ছিল’, দর্শক কিন্তু নিশ্চিতভাবেই বুঝে ফেলেন পালান ছিল নিপাট অবহেলার পাত্র। এতটাই অবহেলা যে, তাঁরা পালানের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন ঘুলঘুলিহীন রান্নাঘরটি যেখানে উপযুক্ত অক্সিজেন ঢুকতেই পারে না।

    বরাবর বাঙালির মধ্যবিত্তের অসার স্বপ্নের বা স্বপ্নভঙ্গের কাহিনিকার ছিলেন বলেই বোধ হয় বাঙালি দর্শকের অধিকাংশের কাছে কখনওই খুব ‘কাছের মানুষ’ কিংবা ‘পছন্দের পরিচালক’ হয়ে উঠতে পারেননি মৃণাল সেন। বরং চিরকালই তাঁকে ভাবা হয়েছে সত্যজিৎ-ঋত্বিকের মধ্যবর্তী হাইফেন চিহ্ন হিসাবে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক-প্রাবন্ধিক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন :‘দুর্ভাগ্য, নাকি ভাগ্যই বলব, মৃণাল সেনের, তিনি কোনো দিন বাঙালির দেবকুলে স্থান পাননি’। এ মূল্যায়ন বর্ণে বর্ণে সত্যি। অথচ মৃণাল নিজ গুণেই মৃণাল, সত্যজিৎ-ঋত্বিকের তুমুল উপস্থিতি অগ্রাহ্য করেই মৃণাল। তাঁকে যদি চিনতে না পারি আমরা তবে সে দায় আমাদের,আমাদের চলচ্চিত্রবোধের। তাই সত্যজিৎ-ঋত্বিকের সঙ্গে কেবলমাত্র মৃণালের নামোচ্চারণ করলেই আমাদের দায় মেটে না, মৃণাল প্রকৃতপক্ষে তার চেয়ে অনেক বেশি আলোচনার জন্য দায়বদ্ধ করেন আমাদের।

    এই মরা পৃথিবীতে এখনও মায়াবী আলো ছড়ানোর অপার ক্ষমতাশালী মৃণাল,আপনাকে আনত কুর্নিশ।

    ঋণ :
    ১. প্রলয় শূর (সম্পাদিত), ‘মৃণাল সেন’, বাণীশিল্প, কলকাতা, ১৯৮৭
    ২. ধীমান দাশগুপ্ত, ‘সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণাল ও অন্যান্য’, এবং মুশায়েরা, কলকাতা, ২০০৭
    ৩. মৃণাল সেন, ‘চলচ্চিত্র ভূত বর্তমান ভবিষ্যৎ’, সপ্তর্ষি, কলকাতা, ২০১৩
    ৪. শিলাদিত্য সেন, ‘মৃণাল সেনের ফিল্মযাত্রা’, প্রতিক্ষণ, কলকাতা, ২০১৫

    (লেখাটি চারু মজুমদার জন্ম-শতবর্ষ উপলক্ষে প্রকাশিত 'নবান্ন', ত্রিংশতি বর্ষ, বর্ষা সংখায় প্রকাশিত ও ঈষৎ পরিমার্জিত)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৪ আগস্ট ২০১৯ | ৪১০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • এবড়োখেবড়ো | 236712.158.676712.124 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৯ ০৪:৪২49346
  • এখানে থাকল মৃণাল পরিচালিত কয়েকটি বিখ্যাত ছবির লিংক।

    ১. ভুবন সোম


    ২. পদাতিক


    ৩. কোরাস


    ৪. মৃগয়া


    ৫. আকালের সন্ধানে


    ৬. চালচিত্র


    ৭. খণ্ডহর
  • Atoz | 890112.162.893423.160 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৯ ০৬:০৪49347
  • ভুবন সোম আমি কত্তদিন থেকে খুঁজছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ। বনফুল রচনাবলি থেকে উপন্যাসটা পড়া আছে, সিনেমাটা কেমন হল সেটাই দেখতে চাই। অনেক ধন্যবাদ।
  • অর্জুন | 236712.158.566712.143 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৯ ০৭:২২49348
  • যাকে বলে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। এই মৃণালানুসন্ধানের খুব প্রয়োজন ছিল বিশেষ করে আমরা যারা পরবর্তীকালে তাঁর ব্যক্তিত্বকে খুব পছন্দ করলেও সেভাবে পছন্দ করিনি বা পাত্তা দিইনি তার চলচ্চিত্রকে। তাই অনেক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন আপনার এই লেখাটি পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যে।

    তার ছবিগুলো দেখে এই লেখায় নয় ফিরে আসব আবার।
  • অর্জুন | 236712.158.566712.123 (*) | ১৬ আগস্ট ২০১৯ ০৮:০৯49349
  • আজ ঘটনাচক্রে অনেক দূর থেকে ফিরতে হল। ফেরার সময় ট্র্যাফিক দেখে 'একদিন, প্রতিদিন' ছবিটার কথা মনে পড়ে গেল। আজ সকলেই দেরীতে বাড়ি পৌঁছেছে। তবে এখন মোবাইল, ইন্টারনেটের জন্যে 'একদিন, প্রতিদিন' র মত ঘটনা খুব কম ঘটে। বদলেছে সময় আর নিশ্চয় বদলেছে সমাজ।
  • কুশান গুপ্ত | 237812.69.563412.165 (*) | ১৭ আগস্ট ২০১৯ ০৮:১২49350
  • যথোচিত মূল্যায়ন। একদম সঠিক জায়গায় আলো ফেলেছেন। ধন্যবাদ।
  • | 237812.68.454512.144 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০২:০২49351
  • এই আলোচনা টায় বিশেষ কিসু নাই, মানে এমনি সুলিখিত , তথ্য নির্ভর ইত্যাদি, কিন্তু নতুন কিসু নাই।
  • # | 237812.69.453412.176 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০২:০৩49359
  • "বিদেশিরাও তাঁকে নিয়ে গোটা একটা বই লেখার কথা ভেবেছেন তেমনটা জানি না। "

    খুব অবাক লাগল এই লেখা তৈরি হওয়ার সময় কি এই সাইটটা ছিল না? http://mrinalsen.org/

    ১) Chasing the Truth

    LanguageEnglish
    AuthorJohn W. Hood
    PublisherSeagull Books
    First Published1993

    ২) Ten Days in Calcutta - A Portrait of Mrinal Sen

    LanguageEnglish
    AuthorReinhard Hauff
    PublisherSeagull Books
    First Published1987

    ৩) Mrinal Sen

    LanguageItalian
    AuthorDavide Ferrario
    PublisherBergamo Film Meeting
    First Published1983

    "আমার যেটা মনে হয়, ওনার ন্যারেটিভ ফিচার ফিল্ম বানানোর স্কিল ছিল না "
    - গোদার সম্পর্কেও কি একই কথা ?
  • সিএস | 236712.158.786712.149 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৩:৪৬49352
  • এ লেখা ভাল লাগে নাই। চুম্বকে মৃণাল সেন হয়েছে, কিন্তু কথা হল কেন পড়ব এ লেখা, যখন উল্লিখিত বইগুলোর কথা জানাই আছে।
  • এবড়োখেবড়ো | 237812.69.563412.69 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৪:৫১49360
  • @#, আপনাকে কী বলে ধন্যবাদ দেব জানি না। সত্যিই আজ অবধি এই সাইটের খোঁজ আমার জানা ছিল না। চেষ্টা করব বইগুলো কিনে ফেলার। হয়তো পরবর্তী লেখাটায় কাজে দেবে। আপনার সন্ধানে যদি মৃণালকে নিয়ে আরও এইরকম লেখাপত্তর থাকে তবে এখানে দিয়ে যাবেন। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব সেগুলো সংগ্রহ করার।
  • এবড়োখেবড়ো | 236712.158.786712.23 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৫:৩০49353
  • @কুশান, পড়ার জন্য ধন্যবাদ। মন্তব্য করার জন্যও।

    @খ এবং @সিএস, আপনাদের মতো সতর্ক পাঠকদেরই আমার মতো না-লেখকদের প্রয়োজন। আসলে লেখাটা একটা অবিচুয়ারি গোছের যদিও উল্লিখিত বইগুলোতেই যে সব কিছু লেখা আছে এমনটা নয়। ইচ্ছে থাকল পরবর্তীতে মৃণালের জোরের জায়গা যথা তাঁর আঙ্গিক সচেতনতা, তাঁর ফিল্মের ব্যাকরণকে ভেঙেচুরে ফেলার প্রয়াস ইত্যাদি নিয়ে তাঁর কতগুলো ছবি ধরে ধরে আলোচনা করার। আপনাদের দুজনকেই ধন্যবাদ, পরবর্তীতে মৃণালকে নিয়ে লেখার কথা ভাবানোর জন্য।
  • | 236712.158.566712.141 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৬:০১49354
  • শিয়োর। অপেক্ষায় থাকবো, মৃণাল সেন কে 'যথেষ্ট সম্মান পান নি' এসব মনে করার কোন কারণ আছে বলে মনে করি না, কিন্তু হি ক্লিয়ারলি ইজ আ গ্রেট আর্টিস্ট। আপনি এমন কিসু লিখুন যেটা মৃনাল সেন এর কাজ সম্পর্কে কেউ লেখেনি, বা স্বল্পালোচিত। আমার যেটা মনে হয়, ওনার ন্যারেটিভ ফিচার ফিল্ম বানানোর স্কিল ছিল না (মানে ওনার স্কেলে, আমার স্কেলে নাঃ-))) ) , কিন্তু ওনার অসামান্য ডকুমেন্টেশন এর স্কিল ছিল, অথচ ধরুন বিবিসি ডকুমেন্টারি র যেটা নিটোল স্ট্রাকচার, তার ন্যারেশন সেটা তাঁর পোষাতো না। আমার মনে হয় ওঁর আরেকটু বয়স কম হলে, উনি শুধু ই বিজ্ঞাপনের ফিল্ম করতেন বা মিউজিক ভিডিও করতেন বা স্পেশাল পারপস সোশাল হিস্টরি ফিল্ম বানাতেন, বা হয়তো শুধু ইন্টারভিউ নিতেন জার্নালিজম এ চলে আসতেন, ফিকশনাল আর্ট ছাড়তে সাহিত্য প্রেমী হিসেবে কষ্ট পেতেন, কিন্তু পোলিটিকাল কমিটমেন্ট ওনাকে এখানেই ঠেলে দিত। কিন্তু যা করেন নি, তাই দিয়ে তো আর ইভ্যালুয়েশন হয় না, য করেছেন তাই দিয়ে হয়।

  • এবড়োখেবড়ো | 237812.69.563412.111 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৬:১৫49355
  • @খ, আমি কিন্তু মনে করি চলচ্চিত্রকার হিসাবে মৃণাল উপেক্ষিতই। মেনস্ট্রিম মিডিয়াতে তাঁকে নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র হয় না, তাঁর সম্পর্কিত বইয়ের সংখ্যা যথেষ্ট কম, বিদেশিরাও তাঁকে নিয়ে গোটা একটা বই লেখার কথা ভেবেছেন তেমনটা জানি না। কিন্তু এই যে আপনি বললেন যে ওঁর 'ন্যারেটিভ ফিচার ফিল্ম বানানোর স্কিল ছিল না' সেটা কিসের ভিত্তিতে বলছেন? ফিচার ফিল্মের পরিচিত ন্যারেটিভ সবাইকে একই ভাবে মেনে চলতে হবে কেন? নায়কও একদিনের ছবি, একদিন প্রতিদিনও তাই। নায়ক কিন্তু আর কিছু বলতে পারে না, গপ্পের ওখানেই ইতি। একদিন প্রতিদিন সেখানে আমাদের দেখিয়ে দেয় যে এই একদিন প্রত্যেকের জীবনেই আসতে পারে।

    আপনি যদি এ ব্যাপারে সামান্য বিশদে বলেন।
  • # | 236712.158.786712.163 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৭:১০49361
  • এই সাইট থেকে ফিল্মোগ্রাফি আর বিবলিওগ্রাফিটা বাংলায় করা যাবে আশা করি।

    আনন্দলোক ১২ জানুয়ারী ২০১৯ ---- মৃনাল সেন স্পেশাল ইস্যু
    কৃত্তিবাস ফেব্রিয়ারি ২০১৯ ---- মৃনাল সেন স্পেশাল ইস্যু
    দেশ ১৭ জানুয়ারি ১৯১৯
    মে ২০১৯ প্রতিদিন এর রোববার মৃনাল সেন স্পেশাল ইস্যু
    চিত্রভাষ ১৯৭২ (কলকাতা '৭১ বিশেষ সংখ্যা)
    চৌরঙ্গী মৃণাল সেন সংখ্যা মাঘ ১৪২৫
    শিল্প-সাহিত্য মৃণাল সেন সংখ্যা জুন ২০১৮ (সম্পা- অনিন্দ্য সৌরভ)
    অনন্যা (রোজকার অনন্যা) মৃণাল সেন বিশেষ সংখ্যা

    বিশেষ সংখ্যা বা ক্রোড়পত্র আরো অনেক আছে। পুরনো চিত্রভাষ, চিত্রবীক্ষণ, সিনে সোসাইটির ম্যাগাজিন, স্যাস, ইত্যাদি। "on মৃনাল সেন" বিবলিওগ্রাফি টাও প্রবন্ধ ধরে ধরে করে ফেলা হোক।

    পুরস্কারের লিস্টটা সাইটে এখনো তোলেনি দেখছি। "কারাগার্গা" থেকে একটা লিস্ট কপি করে দিলাম "করপাতালিক' এর বানানো। উইকির সাথে মিলিয়ে বাড়িয়ে নিতে পারেন দরকারমতো।

    এ সমস্তই বাংলা ভাষায় করা হবে বলে আশা করেছিলাম। ইংরেজি কপি পেস্ট করার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু এসবই রেফারেন্স। এর বাইরে ব্যক্তি আপনাকে মৃণাল সেন যেখানে আলাদা করে হন্ট করেন, ভালো লাগান, ব্যতিক্রম হিসেবে অন্যদের তুলনায় অনন্য হয়ে যান যেখানে, সেই জায়গা গুলো জানতে চাইব, সেইসব নিয়েই আলোচনা চাইব। অর্থাৎ কেতাবী অবিচুয়ারি যেখানে শেষ হয়, তার পর থেকে শুরু হোক আপনার পরবর্তী আলোচনা।

    Awards and Honours

    Film Festival Awards

    Punascha (over again), 1961
    Regional Certificate of Merit, President' Award, India, 1961

    Akash Kusum (Up in the Clouds), 1965
    Silver Medal, President's Awards, India, 1965

    Matir Manisha(Two Brothers), 1966
    Silver Medal, President's Awards, India, 1966

    Moving Perspective(documentary), 1967
    International Film Festival, Pnom Penh, 1968, Silver Trophy

    Bhuvan Some, 1969
    Gold Medal, President's Award, India 1969
    Best Director, President's Award, India, 1969
    Best Actor (Utpal Dutt), President's Award, India, 1969
    International Festival of Cinematographic Art, Venice, 1969
    Director's Fortnight, Cannes, 1970

    Interview, 1970
    Critics' Award and special Mention of Festival Directorate, Sri Lanka Film Festival, 1972
    Best Actor (Ranjit Mullick), Karlovy Vary Film Festival, 1973

    Ek Adhuri Kahani(An Unfinished Story), 1971
    Special Award, Mannheim Film Festival, 1971

    Calcutta 71 (1972)
    Silver Medal, President's Award, India 1972
    Silver Medal, Best Photography ( K.K.Mahajan), President's Award, India, 1972
    International Festival of Cinematographic Art, Venice, 1972

    Padatik(Urban Guerilla), 1973
    Best Script, President's Award, India, 1973
    Director's Fortnight, Cannes, 1973

    Chorus, 1974
    Golden Lotus, President's Award, India, 1975
    Silver Lotus (Music), President's Award, India, 1975
    Silver Medal, Moscow Film Festival, 1975
    FIPRESCI Award, Berlin Film Festival, 1975

    Mrigaya(The Royal Hunt), 1976
    Golden Lotus, President's Award, India, 1976
    Silver Lotus, Best Actor (Mithun Chakrabarty), President's Award, 1976

    Oka Oori Katha (The Outsider), 1977
    Silver Lotus, President's Award, India, 1977
    Director's Fortnight, Cannes, 1978
    Special Jury Award, Karlovy Vary Film Festival, 1978
    Special Award, Carthage Film Festival, 1978
    London Film Festival, 1978

    Parashuram(Man with an Axe), 1978
    Silver Lotus, President's Award, India, 1978
    Silver Lotus, Best Actor (Arun Mukherjee), President's Award, India, 1978
    Silver Medal, Moscow Film Festival, 1979
    London Film Festival, 1979

    Ek din Pratidin (Ande Quiet Rolls the Day), 1979
    Silver Lotus, President's Award, India, 1979
    Best Director, President's Award, India, 1979
    Best Editing, President's Award, India, 1979
    International FIlm Festival, Cannes, 1980
    London Film Festival, 1980
    New York Film Festival, 1980

    Akaler Sandhane (In Search of Famine), 1980
    Silver Bear, Berlin Film Festival, 1981
    London Film Festival, 1981
    Golden Lotus, President's Award, India, 1981
    Best Director, President's Award, India, 1981
    Best Script, President's Award, India, 1981
    best Editing, President's Award, India, 1981

    Chalchitra (Kaleidoscope), 1981
    International Festival of Cinematography Art, Venice, 1982
    London Film Festival, 1982

    Kharij (The Case is Closed), 1982
    Silver Lotus, President's Award, India, 1982
    Best Editing, President's Award, India, 1982
    Best Art Direction, President's Award, India, 1982
    Second Best Film, President's Award, India, 1982
    Special Jury Award, Cannes Film Festival, 1983
    London Film Festival, 1983
    Golden Spike Award, Valladoid Film Festival, 1983
    Bronze Hugo, Chicago Film Festival, 1983

    Khandahar (The Ruins), 1983
    Best Director, President's Award, India, 1984
    Best Actress (Shabana Azmi), President's Award, India, 1984
    Best Editor, President's Award, India, 1984
    Gold Hugo, Chicago Film Festival, 1984
    Silver Award, Montreal Film Festival, 1984
    International Film Festival, Cannes, 1984
    London Film Festival, 1984

    Genesis, 1986
    International Film Festival, Cannes, 1986
    London Film Festival, 1986

    Ekdin Achanak (Suddenly One Day), 1989
    Best Supporting Actress (Uttara Baokar), President's Award, India, 1989
    International Festival of Cinematographic Art, Venice, 1989
    London Film Festival, 1989

    Mahaprithivi (World Within, World Without), 1991
    International Festival of New Cinema, Berlin, 1991

    Aamaar Bhuvan (My Land), 2002
    Best Director, Cairo International Film Festival, 2002
    Best Actress (Nandita Das), Cairo International Film Festival, 2002

    State honours
    In 1981, the Government of India awarded him with the Padma Bhushan.

    In 2005, the Dadasaheb Phalke Award, the highest honor given to an Indian filmmaker was awarded to him by the Government of India.

    He was made an Honorary Member of the Indian Parliament from 1998 to 2003.

    President Jacques Chirac, the President of France awarded him the Commandeur de Ordre des Arts et des Lettres (Commander of the Order of Arts and Letters), the highest civilian honour conferred by that country, in recognition of significant contributions to the arts, literature, or the propagation of these fields.

    In 2000, President Vladimir Putin of the Russian federation honored him with the Order of Friendship.
  • | 236712.158.566712.247 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৮:১৪49357
  • এবাবা আপনাকে লেখা তে গিয়ে আমি কেস খেয়ে যাচ্ছি
  • | 236712.158.566712.247 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ০৮:১৪49356
  • এবাবা আপনাকে লেখা তে গিয়ে আমি কেস খেয়ে যাচ্ছি
  • অর্জুন | 236712.158.786712.23 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ১১:২৪49358
  • 'কিন্তু যা করেন নি, তাই দিয়ে তো আর ইভ্যালুয়েশন হয় না, য করেছেন তাই দিয়ে হয়।'

    দারুণ কথা । যেটা করেননি সেটা নিয়ে অ্যানালিসিস কি ভাবে হয়!
  • ন্যাড়া | 237812.68.343412.35 (*) | ১৮ আগস্ট ২০১৯ ১১:৫৭49364
  • অমলকান্তি যেমন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল, তেমনই মৃণাল সেন গদার হতে চেয়েছিলেন।

    লেখাটা সম্বন্ধে খনুর সঙ্গে আমি একমত। খনুর সঙ্গে খুব একমত হলাম আর এক ব্যাপারে যে মৃণাল সেন মূলত লিনিয়ার ন্যারেটিভ (ধরে নিচ্ছি খনু ন্যারেটিভ বলতে লিনিয়ার ন্যারেটিভই বুঝিয়েছে) বানানোর ব্যাপারে স্কিলড। ভারতের এবং সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ওপর দিকের একজনই হবেন। ভুবন সোম, মৃগয়া থেকে খন্ডহর, খারিজ, চালচিত্র - সবই একজন কম্পিটেন্ট স্টোরি-টেলিং-এর চিহ্ন। মৃণালের শুরুই 'নীল আকাশের নীচে'-র স্টোরি-টেলিং দিয়ে। আকাশকুসুমও আরেক কম্পিটেন্ট স্টোরি টেলিং। অথচ মৃণাল 'নীল আকাশের নীচে' ডিস-ওন করেন। কোথাও তার উল্লেখ করেন না। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এই নিয়ে আপশোসও করেছেন - হেমন্ত প্রোডিউসার ছিলেন। আজ থেকে বছর পনেরো আগে মৃণাল সেনের ইংরিজি অটোবায়োগ্রাফি পড়েছিলাম। নাম ভুলে গেছি, বেশ মোটাসোটা হার্ডকভার বই ছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার সেখানে খারিজ বা চালচিত্রর কোন উল্লেখই উনি করেননি। এই জন্যেই মনে হয় উনি হয়ত স্টোরি-টেলার হিসেবে পরিচিত হতে চাননি।

    কলকাতা ট্রিলজি - অর্থাৎ কলকাতা ৭১, কোরাস আর ইন্টারভিউ থেকে মৃণাল ফর্ম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে গেলেন। যাকে লেখক ব্রেখটিয়ান ফর্ম বলেছেন। ব্রেখটের অ্যালিয়েনেশন থিওরি ও এপিক থিয়েটার সম্বন্ধে যেটুকু জানি তাতে মৃণালের এই কাজের সবটাকে ব্রেখটিয়ান বলতে বাধলেও, কিন্তু কিছু এলিমেন্ট নিঃসন্দেহে আছে। কিন্তু ঋত্বিক যেরকম নিজের র' ইমোশানকে চলচ্চিত্রের ভাষা দিয়ে দর্শকদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পারতেন (ছৌ নাচ, মাদার কাল্টের ব্যবহার) মৃণালের সেই ক্ষমতা ছিলনা। সুখের কথা, মৃণাল বুঝে বা না বুঝে (বুঝেই, আশা করি) ওইসব ফর্মের কারিকুরি ছেড়ে লিয়ার ন্যারেটিভে ফিরে এসে পরপর কতকগুলো ভাবনা-জাগান ছবি করেছিলেন। 'আকালের সন্ধানে' ও 'একদিন প্রতিদিন' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 'বাবুরা এয়েছেন আকালের সন্ধানে, আকাল তো আমাদের সর্বাঙ্গে' ধরণের কিছু চিজি ডায়লগ উপেক্ষা করলে মৃণাল দেখিয়েছিলেন চিন্তাউদ্রেককারী ছবি করতে গেলে এন্টারটেনমেন্ট থেকে খুব দূরে সরে যেতে হয় বা গল্প বলা থেকে সরে যেতে হয়, এমনটা নয়।

    কিন্তু ন্যারেটার হিসেবে মৃণাল কখনই সত্যজিতের মানে যেতে পারেননি। তুলনাটাও একটু কষ্টকল্পিত, কারণ সত্যজিতে স্টোরি-টেলার হিসেবে ভারতে সবার থেকে কয়েক হাত উঁচু হয়ে রয়েছেন যে শুধু তা নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সত্যজিত, দা স্টোরি-টেলার খুবই শ্রদ্ধেয় ছিলেন। সত্যজিতের চিত্রনাট্য, সত্যজিতের চলচ্চিত্রের ভাষার ব্যবহার, সত্যজিতের ইকনমি অফ ওয়ার্ড আর ইকনমি অফ অ্যাকশন - এসব মৃণালের তুলনায় অনেক উচ্চাঙ্গের। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল সত্যজিতের ভিশুয়াল আর্টিস্টের স্কিল, যাতে তিনি প্রথাগতভাবে তালিমপ্রাপ্ত। তার ফলে ঋত্বিককেও স্বীকার করতে হয়েছে, "লম্বুর মতন ক্যামেরা বসাতে আর কেউ পারেনা"। সেখানে মৃণালকে নির্ভর করতে হয়েছে অন্য সিনেম্যাটোগ্রাফারের ওপর। তাঁরা সকলেই আন্তর্জাতিক মানের, কিন্তু ডিরেকটরের ভাবনা অন্যকে বোঝানর প্রক্রিয়ায় কিছু তো নষ্ট হয়ই। সত্যজিতের সঙ্গেও সুব্রত মিত্রর মতন লোক কাজ করলেও, সত্যজিত মূলতঃ তাঁদের আলোর কাজের ওপর বেশি নির্ভর করতেন। একটু দাঁড়িইয়ে যাবার পর তো নিজেই অধিকাংশ সময়ে ক্যামেরা অপারেট করতেন।

    এইসব বলার একটাই কারণ - সত্যজিত-ঋত্বিক-মৃণাল এক ব্র্যাকেটে উচ্চারণ করা হলেও তাদের ক্ষমতার আর সৃষ্টির তারতম্য এতটাই বেশি ছিল যে তা দীর্ঘদিন ধরে ভুল ধারণা দিয়ে এসেছে। বিশেষতঃ মৃণাল সেন-সম্বন্ধে।

    খুব ভেবেচিন্তে হলনা - কিন্তু এই বলার ছিল।
  • lcm | 237812.68.343412.179 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০১:২৬49365
  • পুওর ম্যান্‌স্‌ গদার
  • © | 124512.101.780112.23 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০২:৩৬49366
  • খ লিখলেন "ওনার ন্যারেটিভ ফিচার ফিল্ম বানানোর স্কিল ছিল না .... কিন্তু ওনার অসামান্য ডকুমেন্টেশন এর স্কিল ছিল"
    ন্যাড়া সেটা পড়ে লিখলেন "খনুর সঙ্গে খুব একমত হলাম আর এক ব্যাপারে যে মৃণাল সেন মূলত লিনিয়ার ন্যারেটিভ ... বানানোর ব্যাপারে স্কিলড। ভারতের এবং সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ওপর দিকের একজনই হবেন। "

    এ মানে দিন রাত ইত্যাদি ... মতটাই গুলিয়ে গেল।
  • ন্যাড়া | 236712.158.565623.153 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০২:৫০49367
  • আমিই খনুর মতটা হবুল পড়েছিলাম, ধরিয়ে দেবার জন্যে ধন্যবাদ। আমার মতটা একই আছে, খালি খনুর সঙ্গে এ ব্যাপারে আর একমত হওয়া গেলনা।
  • এবরোখেবড়ো | 236712.158.676712.162 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৪:৩৬49374
  • আসলে আমি একটু রাতের দিকে সাইটে আসি। তাই এই সামান্য লেখা নিয়ে এত এত আলোচনা এতক্ষণে নজরে পড়ল। প্রায় সবাইকে আমার মতো করে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

    @ন্যাড়া, মানে যাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় ছিল, তিনি অনেকটা লিখেছেন। তাঁর ভাবনাকে সম্মান করেও বলি তাঁর আলোচনা আমার অত্যন্ত গতানুগতিক লেগেছে। কেন গতানুগতিক? বলি এক এক করে।

    উনি লিখেছেন --- ১) খনুর সঙ্গে খুব একমত হলাম আর এক ব্যাপারে যে মৃণাল সেন মূলত লিনিয়ার ন্যারেটিভ (ধরে নিচ্ছি খনু ন্যারেটিভ বলতে লিনিয়ার ন্যারেটিভই বুঝিয়েছে) বানানোর ব্যাপারে স্কিলড। ... ভুবন সোম, মৃগয়া থেকে খন্ডহর, খারিজ, চালচিত্র - সবই একজন কম্পিটেন্ট স্টোরি-টেলিং-এর চিহ্ন।

    আমি তা একদমই মনে করি না। এবং আশ্চর্য ব্যাপার মৃণালের প্রশংসা মানেই গপ্পো বলা এবং নিন্দা মানেই গপ্পো না বলা এবং আঙ্গিকের অতি ব্যবহার। মৃণাল তো ইচ্ছাপূরণও বানিয়েছেন কিন্তু তাই বলে কি আমরা ওই ছবিটাকে আলোচনায় রাখি? মৃণাল যেখানে ন্যারেটিভ ভাঙছেন, কিংবা অজস্র ন্যারেটিভ দিয়ে একটা অখণ্ড ন্যারেটিভ নির্মাণ করছেন সেখানেই তাঁর মুনশিয়ানা। সে কলকাতা ৭১ হোক বা কোরাস।

    ২) কলকাতা ট্রিলজি - অর্থাৎ কলকাতা ৭১, কোরাস আর ইন্টারভিউ থেকে মৃণাল ফর্ম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে গেলেন। --- এইটা মৃণালের অতি গতানুগতিক সমালোচনা। প্রথমত তথ্যের খাতিরে বলি, মৃণালের কলকাতা ট্রিলজি হচ্ছে ইন্টারভিউ-কলকাতা ৭১-পদাতিক। দ্বিতীয়ত মোটেই ওই পর্ব থেকে মৃণাল ফর্ম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা শুরু করেননি। করেছেন ঢের আগে মানে সেই নীল আকাশের নীচে থেকেই। আমরা দেখি মৃণালের কোনও ছবিতেই ডিজলভ বা মিক্স ইনের ব্যবহার নেই। বদলে আছে শার্প কাট। কোরাস কি শুধুই ফর্ম? তার কনটেন্ট নেই? আছে, তীব্রভাবে আছে। অথচ গুগাবাবা বা হীরক রাজার দেশের সেট নিয়ে যত বাক্য বয়িত হয়, তার সিকিভাগও বরাদ্দ হয় না কোরাসের ইনডোর নিয়ে। আকালের সন্ধানেতেও তাই।

    ৩) তার ফলে ঋত্বিককেও স্বীকার করতে হয়েছে, "লম্বুর মতন ক্যামেরা বসাতে আর কেউ পারেনা"। --- এইটা অতিশয়োক্তি বললে কম বলা হয়। মানে লম্বুর ছবিতে একটাই পোস্ট, বাকি সব ল্যাম্পপোস্টের মতো শোনায় আর কি! ওই ঋত্বিক যে অভিযানের ক্যামেরা বসানো নিয়ে তীব্র বিরক্তি প্রকাশ করে হল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন সেসব ডকুমেন্টেড।

    ব্যাপারটা আসলে আমার কাছে ঋত্বিক-মৃণাল-সত্যজিৎ এই ক্রমে আসে। সবার তা ভালো না-ও লাগতে পারে।
  • এবড়োখেবড়ো | 236712.158.676712.162 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৪:৩৯49375
  • @এলসিএম আমার অনেক আগেই যা যা লিখে ফেলেছেন তার অনেকটাই আমার কথা। আলাদা করে ধন্যবাদ দিচ্ছি না। শুধু ব্রেশটিয় আঙ্গিক বোঝাতে গিয়ে চমৎকারভাবে উনি যেভাবে ইন্টারভিউয়ের দৃশ্যটা উদাহরণ হিসাবে দিয়েছেন তার কলাকৌশলটা শিখে নিতে চাইছি। পরবর্তীতে ছবি ধরে ধরে মৃণালের স্বকীয়তা দেখানোর জন্য যা আমার কাজে লাগবে।
  • এবড়োখেবড়ো | 236712.158.566712.141 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৪:৫২49376
  • @খুকখুক, এডিটিং নিয়ে সত্যজিৎ-মৃণালের তুলনামূলক আলোচনা চেয়েছেন যদিও সাক্ষীগোপাল হিসাবে অমিতাভকে ধরে তিনি সত্যজিৎকেই এগিয়ে রেখেছেন। এক্ষেত্রেও ওই লম্বুর ছবিতে একটাই পোস্ট, বাকি সব ল্যাম্পপোস্টের সিনড্রোম পরিদৃশ্যমান!

    দুলাল দত্ত প্রথমাবধি সত্যজিতের ছবির সম্পাদনা করেছেন, মৃণালের ছবির বেশিটাই করেছেন গঙ্গাধর নস্কর। বাঙালি নস্করবাবুর নাম শুনেছে কিনা সন্দেহ যদিও তিনি একদিন প্রতিদিন এবং আকালের সন্ধানের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্পাদনার পুরষ্কার পেয়েছেন।

    মৃণাল নিজে সম্পাদনার টেবিলে বহু ইমপ্রোভাইজেশন করেছেন। কলকাতা ৭১ বা চালচিত্র দেখলে বোঝা যাবে তিনি শহর কলকাতার মুডকে ধরেছেন অসংখ্য খণ্ডচিত্রের মাধ্যমে। এই কোলাজ মৃণালের ছবিকে বিশেষত্ব দিয়েছে। আরেকটা ব্যাপারও লক্ষণীয়, কলকাতার বা অন্য কোনও জায়গার মিছিলের ছবিতে ফ্রেম বেঁকেছে, নিটোল হয়নি, ক্যামেরা হাতে ধরে তোলা হয়েছে এবং অবিকল একই রাখা হয়েছে সম্পাদনার পরেও। এটাও কিন্তু যথেষ্ট সাহসের পরিচায়ক। সিনেমা যে এভাবেও তোলা যেতে পারে সেটা ভাবায় বইকি। বা ভুবন সোমে গরুর গাড়ি যখন জোরে ছুটছে তখন দ্রুতগতির ট্রেনের আওয়াজ অথবা পদাতিকে শাওয়ার চালিয়ে স্নান করার সময় বোমার শব্দ -এগুলোও কিন্তু ভারতীয় চলচ্চিত্রে নতুনই।

    সত্যজিতের সব কিছুই খেরোর খাতায় লিপিবদ্ধ, একচুল এদিক ওদিক হওয়ার জো নেই, মৃণাল-ঋত্বিকের খেরোর খাতা তাঁদের মস্তিষ্কে।
  • এবড়োখেবড়ো | 237812.69.563412.69 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৫:০৪49377
  • @#, আপনাকে এর আগেও বলেছি আপনি টেকনিক্যাল ব্যাপারে যতটা চোস্ত, আমি ঠিক ততটাই ল্যাদারুস। অনেক ধন্যবাদ মৃণাল সম্পর্কিত লেখাপত্তরগুলো এক জায়গায় রাখার জন্য, আরও কিছু লেখার সন্ধান দেওয়ার জন্য। চলচ্চিত্রপঞ্জী বানানোই যায়, তবে যেহেতু @কেসি আমার লেখায় উল্লিখিত সমস্ত বইই পড়েছেন, তাই তাঁকে অনুরোধ করব শিলাদিত্য সেন-এর বইটা থেকে সেটা টাইপ করে দেওয়ার।

    পুরস্কার নিয়ে আপনি যা যা লিখেছেন সেটা বাদে সামান্য সংযোজন করি এখানে।

    ১)পুনশ্চ - ১৯৬১ - তৃতীয় শ্রেষ্ট কাহিনিচিত্রের জাতীয় পুরস্কার
    ২) আকাশকুসুম - ১৯৬৫ - শ্রেষ্ঠ বাংলা কাহিনিচিত্রের জাতীয় পুরস্কার
    ৩) মাটির মনিষ - ১৯৬৬ - শ্রেষ্ঠ ওড়িয়া কাহিনিচিত্রের জাতীয় পুরস্কার
    ৪) ইন্টারভিউ - ১৯৭০ - শ্রীলঙ্কা চলচ্চিত্র উৎসবে ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ড
    ৫) একদিন অচানক - ১৯৮৯ - শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেত্রী (উত্তরা বাওকর)-র জাতীয় পুরস্কার
  • lcm | 236712.158.565623.39 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৬:০৩49368
  • মৃণাল সেন পরীক্ষামূলক সিনেমা বানাতেন, এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্ম, যাকে বলে আঁভা গার্দ সিনেমা, বিশের দশকে যার শুরু।
    এই যেমন ধরুন, সিনেমার অডিয়েন্স, মানে যাকে বলে ফোর্থ ওয়াল - চতুর্থ দেওয়াল, সেই দেওয়ালের ওপারে যারা আছেন, মানে দর্শকরা, তাদের সঙ্গে কমুনিকেট করা। সিনেমা প্রদর্শন ক্ষেত্রকে একটি চতুর্ভূজ আকারের ঘর হিসেবে দেখলে, তার একটি দেওয়ালে পর্দায় সিনেমা দেখানো হয়, আর দুই পাশে দুই দেওয়াল, শেষের চতুর্থ দেওয়াল হলেন দর্শক। তো সিনেমা যখন ফোর্থ ওয়ালের সঙ্গে কথা বলে, এই যেমন, 'ইন্টারভিউ' (১৯৭০) এর দৃশ্যটি দেখুন -

    এখানে রঞ্জিত মল্লিক হঠাৎই সিনেমার দর্শকদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে আরম্ভ করেন - (যার সারমর্ম হল) মৃণাল সেন নামের একজন পরিচালক একটি ফিল্ম বানাচ্ছেন যাতে আমি কাজ করছি, পরিচালক আমাকে বলেছেন যে এই সিনেমার জন্য বিশেষ কিছু করতে হবে না, আমি ঠিক সেই অর্থে অভিনেতা নই, আমি রোজ যা করি তাই করব, ক্যামেরাম্যান তাই রেকর্ড করবেন, যেমন আজ একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবো, এবং মৃণাল সেন বলেছেন - ঠিক আছে ওটা নিয়েই সিনেমা হবে ---- এই বিবরণ রঞ্জিত মল্লিক দর্শকদের উদ্দেশ্য করে বলছেন (ক্যামেরা দিকে তাকিয়ে ক্লোজ-আপ শট)। এই সিনেমায় শেষের দিকের একটি দৃশ্যে রঞ্জিত মল্লিক দর্শকদের কে জিগ্গেস করছেন - আমার যদি কিছু জমানো টাকা থাকত, দু-চারটে এক্সট্রা স্যুট-টাই থাকত, তাহলে কি এই চাকরিটা আমি পেতাম না, আপনারা বলুন?
    এই যে টেকনিক এটি এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্মমেকাররা ব্যবহার করেছেন। এই যেমন গদার-এর পেরো লে ফু থেকে -

    এখানে লোকটি মেয়েটির সঙ্গে গাড়ি চালাতে চালাতে কথা বলছেন, ক্যামেরা(/দর্শক) পিছন থেকে তাদের কথা শুনছে, হঠাৎ লোকটি পিছন ফিরে ক্যামেরা উদ্দেশ্যে বলে - দেখো এই মেয়েটি মনে করেন এসব করলে নাকি ফান্‌(মজা) হবে। মেয়েটি ঘাবড়ে গিয়ে জিগ্গেস করে - তুমি কার সঙ্গে কথা বলছ। লোকটি বলে, দর্শকদের উদ্দেশ্যে।

    এছাড়া এক্সপেরিমেন্টাল ফিল্ম মেকাররা যেসব টেকনিক ব্যবহার করতেন তার অনেক কিছুই - যেমন, জাম্প-কাট শট, বা ছবির ফ্রেম হঠাৎ ফ্রিজ করে দেওয়া - এই সব কিছু মৃণাল ব্যবহার করেছেন। একটি বইতে পড়েছিলাম, উনি কে কে মহাজন (ওনার বেশির ভাগ ছবির ক্যামেরাম্যান) কে বলছেন - যা পাচ্ছ সব শুট করে নাও, কোনো স্টক ফেলে দিও না, পরে আমি দেখব কি করা যায়। এটা খানিকটা ডকুমেন্টারি স্টাইল।

    তো, কথা হল, সিনেমার ন্যারেটিভ সব ফিল্ম মেকারেরই থাকে, মানে দে ন্যারেট সামথিং। লিনিয়ার ন্যারেটিভ - মানে এডিটিং এ পর পর সিকোয়েন্সিয়ালি ঘটনাবলী সাজানো, বা, নন-লিনিয়ার মানে যেখানে একাধিক সময়ের ভিন্ন ঘটনাবলী এনে টুকরোগুলোকে এমনভাবে সাজানো হবে যাতে একটা ন্যারেটিভ তৈরি হয় - এগুলি ছিল। কিন্তু মৃণাল প্রায় অবসেস্‌ড্‌ হয়ে পড়েছিলেন ইনকনক্লুসিভ ন্যারেটিভ, মানে যেখানে কাহিনীর(/সিনেমার) শেষ বলে কিছু নেই। হয়ত এই কারণেই উনি কখানো ডিটেকটিভ স্টোরি নিয়ে সিনেমা করেন নি - মানে যেখানে সিনেমা শেষ হল কোনো রহস্য সমাধান নিয়ে নয়, বরং অনেক অপশন দর্শকের পকেটে গুঁজে দিয়ে। মৃণাল চাইতেন তার সিনেমা দেখে দর্শক একটু, সামান্যতম হলেও, একটু ভাবুক। সিনেমার মিডিয়ামকে পিওর আর্ট ফর্মের মধ্যে রেখেও সমাজ ব্যবস্থার দর্পণ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, নিউজ মিডিয়া নয়, ডকুমেন্টারিও নয়, সিনেমার ন্যারেটিভ এর মধ্যে দিয়ে সমসাময়িক সমাজ ও সময়ের প্রতিফলন। খুব বেশি এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমার একটা প্রবলেম হল, আল্টিমেটলি ফাইনাল প্রোডাক্টটি কি দাঁড়াল সেটি বোঝা যায় না, সিনেমার নন-টেকনিক্যাল দর্শক যারা এই বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বা পদ্ধতিগত পরীক্ষানিরীক্ষা ধরতে পারছেন না, তাদের কাছে ফাইনাল প্রোডক্টটি সামান্য দুর্বোধ্য হয়ে উঠতে পারে। মৃণালের কিছু সিনেমা এই ফাঁদে পড়ে গেছে।
  • (?) | 237812.68.233412.70 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৬:১৯49369
  • “হবুল” পড়াও কি কোনও অপ্রচলিত পারিবারিক বাংলা? ন্যাড়ার থেকে অনেক নতুন শব্দ শিখছি। ধন্যবাদ
  • ন্যাড়া | 237812.68.9008912.204 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৬:৪৫49370
  • ইউ আর ওয়েলকাম। মাথায় থানইঁট-দের শেখানো সামাজিক কর্তব্য।
  • agantuk | 237812.68.234512.4 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৯ ০৮:৩২49378
  • ন্যাড়াবাবুর জন্য একটা ছোট সংশোধনঃ মৃণালের আসল শুরু কিন্তু ১৯৫৫য়, ছবি বিশ্বাস/সাবিত্রী/উত্তম কুমার অভিনীত 'রাত ভোর' দিয়ে, যেটিকে পরিচালক সারা জীবন ধরে আরো প্রবলভাবে ডিস-ওন করে এসেছেন।

    ২০১১তে রঞ্জন দাসগুপ্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মৃণাল বলেনঃ I never consider it to be my first break as a director. It was not at all a memorable film of mine by any standards. I have forgotten “Raat Bhor” and do not want to preserve any memories of the film.

    যদিও, ন্যাড়াবাবু যেমন বলেছেন, 'নীল আকাশের নিচে' নিয়েও মৃণাল সন্তুষ্ট ছিলেন না। সত্তরের দশকে Cineaste পত্রিকার গ্যারি ক্রাউডারকে বলেনঃ I think it’s too sentimental and I wouldn’t want to be remembered for that film.

    আর একটা কথাঃ গদার, ব্রেশট নিয়ে আলোচনা ভাল। কিন্তু আমরা হামেশাই চোখ মেলে ঘরের দু'পা বাইরের শিশির বিন্দু দেখতে ভুলে যাই। মৃণাল কিন্তু রঞ্জন দাসগুপ্তকে এও বলেছিলেনঃ Tapan Sinha was also improving as a director film by film around that period and I literally cried after watching his “Khanaker Atithi” in the late '60s, an unforgettable cinematic creation. I admired the works of Rajen Tarafdar, Ajay Kar and Asit Sen, who contributed substantially for the development of Bengali cinema.
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন