এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ভাতের থালায় লুকিয়ে আছে সাদা শয়তান

    Gautam Mistri লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ মে ২০১৬ | ২১৪৩২ বার পঠিত
  • ইংরেজী ভাষায় একটা প্রবচন আছে – “The whiter the bread, the sooner you’re dead”, অর্থাৎ রুটি (প্রকারান্তরে ভাত) যত সাদা হবে আপনি তত তাড়াতাড়ি মারা যাবেন। ভাত সাদা হবে নাতো কি লাল হবে? ভ্রূ কুচকে গেলেও প্রস্তাবটা তেমনই। কিছু কিছু দেশে লাল ভাতের কদর সাদা ভাতের চেয়ে বেশী। চীনদেশে ও থাইল্যান্ডে লালভাতের চাহিদা আছে। শ্রীলঙ্কায় পাঁচতাড়া হোটেলেও ভাত চাইলে লালভাতই পাওয়া যাবে। অন্যান্য তৃণভোজী প্রানীরা ঘাসপাতা বেছে খেলেও শস্যদানা এযাবৎ আস্তই খেয়ে এসেছে, এখনও তাই খায়। বেশী বুদ্ধিমান প্রানী হিসেবে মানুষ প্রথম কি করেছিলো জানা নেই। কালের বিবর্তনে মানুষ ক্রমশঃ ঘাস জাতীয় গাছের বীজ অর্থাৎ ধান ও গমের খোসা ছাড়িয়ে খাবারের স্বাদ পেয়ে গেল। এতে যদিও খাবার চিবানো আর হজম করা সহজ হল আর শস্যবীজের খোসার মধ্যে থাকা তেল জাতীয় পদার্থের বর্জনের ফলে শস্যবীজের অধিক সময়ের জন্য সংরক্ষনের সুবিধা হয়ে গেল। তেল জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত শস্যদানার গুঁড়ো হাওয়ার সংস্পর্শে এলে বেশীদিন অবিকৃত থাকে না। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী মানুষের খাবারের টেবিলে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশই শস্যবীজের দখলে। প্রাতরাশের রুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, স্যান্ডউইচ বা গ্রামবাংলার পান্তা; মধ্যাহ্নভোজের ভাত বা রুটি, বিকালের জলখাবারের মুড়ি, বাদাম, চপ, কাটলেট, পিৎজা, পাস্তা আর রাতের খাবারের রুটি বা ভাত — এই গুলোই খাবারের প্রধান অংশ। সঙ্গের পদগুলো বৈচিত্র্যময় হলেও পরিমাণের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাধান্য পায় না।ভাত বা রুটি আমাদের প্রধান খাবার; যদিও পৃথিবীর কোন কোন জনগোষ্ঠীর খাবারের থালায় মাঝেমধ্যে প্রধান খাদ্য হিসেবে আলুর দেখা মেলে। তা সে চালই হোক বা গমই হোক, ঘাস জাতীয় শস্যদানার অবিকৃত গঠন একই রকম।

    বর্তমানে প্রচলিত ধান থেকে চাল বানানোর মেশিনে ধানের বাইরের খোসা (ব্রান) আর মধ্যবর্তী অংকুর বা বীজযুক্ত আবরণ (জার্ম) ছাড়িয়ে ভেতরের সাদা (এন্ডোস্পার্ম) অংশটি ব্যবহারের জন্য আলাদা করা হয়। চাল ও আটার সওদাগরেরা প্রায় ২৫ ধরণের রাসায়নিকের সন্ধান জানেন যার দ্বারা এরপরে একে আরও চকচকে, লোভনীয় ও সুস্বাদু বানানো হয়। ধান গাছের নিজের বংশবৃদ্ধির জৈবিক প্রয়োজনের অংকুরটি হল মাঝের “জার্ম” অংশটি। তাকে রক্ষা করার জন্য ও অঙ্কুরোদগমের সময় প্রয়োজনীয় ভিটামিন যোগায় বাইরের খোসাটি। ভেতরের সাদা যে অংশটি আমরা চাল হিসাবে বেছে নিই সেটা মামুলি ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ বর্জিত জটিল শর্করা। চালের তুষে বাইরের খোসা আর মাঝের প্রাক- অঙ্কুর (জার্ম) থাকে। ভবিষ্যতের শিশু উদ্ভিদটির বীজের (মূলতঃ প্রোটিন) পুষ্টির প্রয়োজনীয় সংকেতওয়ালা জিন এই মধ্যেকার আবরণে থাকে।বাইরের খোসায় থাকে প্রতিরক্ষার বর্ম হিসাবে ফাইবার, ভিটামিন আর প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। মধ্যেকার এন্ডোস্পার্ম অংশ, যেটাকে আলাদা করে পরিশোধিত চাল অথবা সাদা আটা আর ময়দা খাবার জন্য ব্যবহার করা হয় সেটা নিছক শর্করা। বীজ থেকে জন্মানোর পরে সদ্য অঙ্কুরিত উদ্ভিদটির পাতা সৃষ্টির আগে পর্যন্ত (অর্থাৎ যখন নবঅঙ্কুরিত উদ্ভিদটি সালোকসংশ্লেষের বা photosysthesis মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুতের জন্য অপরিণত) উদ্ভিদের শর্করার প্রয়োজন মেটায় ভেতরের এন্ডোস্পার্ম অংশটি।

    শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট অপেক্ষাকৃত সস্তা আর আসক্তি উদ্রেককারী খাবার। তাই সহজে আমাদের খাবারে বড় অংশের অংশীদার হয়ে পড়ে। যত চকচকে সুদৃশ্য লম্বাদানার পালিশ করা পরিশোধিত চালের ভাত হবে, পেট ভরানোর জন্য তত বেশী পরিমানের ভাতের প্রয়োজন হবে আর তাড়াতাড়ি হজম হয়ে আবার খিদে পাবে। শর্করা জাতীয় খাবারে আসক্তি আমাদের অগোচরে ঘটে যায়। মিষ্টির দোকানের প্রতি আকর্ষন একরকমের প্রাদুর্ভাবের মত আমাদের আগ্রাস করেছে যদিও এটা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি নয়। ঘটনাচক্রে শর্করা জাতীয় খাবারের প্রতি এই আসক্তি সচেতন পশ্চিমী দুনিয়ার প্রতিপত্তিবান নাগরিকদের চেয়ে আমাদের মত গরিব দেশগুলোর (ধনী দরিদ্র সবার) মধ্যে বেশী পরিমানে দেখা দেয়। গত শতাব্দীর আটের দশকের জনপ্রিয় হলিউডের চলচিত্র “প্রেটি উওম্যান”-এর একটা দৃশ্যের কথা প্রাসঙ্গিক। বিলাসবহুল হোটেলের পেন্টহাউসের প্রাতরাশের টেবিলে ধনী নায়ক গরীব নায়িকার সামনে সযত্নে চয়ন করে রাখা ফল, বেরি আর সসেজ-স্যালামি পুর্ণ দুটো থালা পেশ করলেন। প্রিয় নায়কের ভালোবাসা মেশানো সুষম খাবারের প্রাতরাশের থালা ঠেলে ফেলে,নায়িকা দূরে রাখা ঝুড়ি থেকে ময়দা-মাখন-মিষ্টির সংমিশ্রণে তৈরী মিষ্টি পাউরুটি তুলে নিলেন।

    আমাদের মত গরিব গুর্মোর দেশে “ভিক্ষার চাল কাড়া না আকাড়া” এই ধরণের তর্কের অবকাশ আছে। সস্তার খাবার হিসাবে শর্করা আমাদের প্রয়োজন, মুস্কিল হয় এতে আসক্তি জন্মে গেলে। শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার জন্য খাদ্যে অন্যান্য খাদ্যাংশের মত নির্দিষ্ট পরিমাণে শর্করাও প্রয়োজন। খিদে পেলে খাবারের বন্দোবস্ত তো করতেই হয়। মনে রাখতে হবে, আগের কিস্তির খাবার কেবল পেট (পাকস্থলি) থেকে জায়গা খালি করে রক্তে মিশেছে। ফলেই খিদে পেয়েছে। আগেকার খাবারের যে অংশটি তখনও খরচ করা যায়নি, কেবল রক্তে ভেসে বেড়াচ্ছে, সেটা যাবে কোথায়? খাবারে শর্করার আধিক্যে প্রথমে অব্যবহৃত শর্করা সীমিত পরিমাণে যকৃতে (লিভার) গ্লাইকোজেন হিসাবে জমা হয়। যকৃতের ধারণ ক্ষমতা পূর্ণ হয়ে গেলে, অব্যবহৃত শর্করা চর্বি হিসাবে শরীরের অপ্রিয় জায়গা গুলোতে জমা হতে থাকে। তাই পেট ভরাতে হবে এমন খাবার দিয়ে, যেটা পেটে অনেকক্ষণ থাকবে, দেরীতে হজম হবে ও দেরীতে খিদে পাবে, ইতিমধ্যে চর্বি হিসাবে জমা হবার জন্য দাঁড়ানো গ্লুকোজের লাইন লম্বা করবে না।

    পুনরাবৃত্তির দোষ এড়ানোর জন্য শর্করার গ্লুকোজে পরিণত হবার হার (গ্লাইসেমিক ইনডেক্স) আর গ্লুকোজে পরিণত হবার পরিমাণ (গ্লাইসেমিক লোড)-এর বিস্তারিত আলোচনা এড়ালাম। শ্বেতশুভ্র পঞ্চবিষের প্রথম পর্বে (চিনি যখন বিষ) এর আলোচনা পাওয়া যাবে। আমাদের খাবারের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শর্করা জাতীয় খাবার থেকে বেছে নিতে হবে, আর সেই শর্করা হবে তন্তু (ফাইবার), ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ জটিল শর্করা। আস্ত শস্যদানা সেই প্রয়োজন ভালোভাবেই মেটায়।যে কারণে চিনি দুষ্ট, সেই কারণে সাদা, চকচকে, সরু, লম্বা সুগন্ধিত পরিশোধিত চালও সমমাত্রায় ক্ষতিকারক। সোজা কথায় বলতে, মূলতঃ দুটি কারণে মেশিনে ছাটা চকচকে সাদা চালের ভাত, ময়দা আর বাজারে উপলব্ধ সব রকমের বেকিং করা খাবার (পাউরুটি, কেক, কেক, বিস্কুট, কুকিজ, প্যাটিস, সিঙ্গারা, নিমকি ইত্যাদি) বর্জনীয়। প্রথমতঃ এসব খাদ্যের মূল উপাদান শস্যদানার বাইরের আবরণের ফাইবার (তন্তু) ও ঠিক তার নীচের অংশের (বীজ বা র্জাম) ভিটামিন ফেলে দেওয়া হয়েছে, পড়ে রয়েছে কেবল শর্করা (empty calorie)। দ্বিতীয়তঃ, খাবারে যত পরিশোধিত শর্করা থাকবে সেটা তত তাড়াতাড়ি হজম হবে অর্থাৎ গ্লুকোজে পরিণত হবে, রক্তে চিনির মাত্রা তত তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে (উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের জন্য) তন্তুবিহীন হবার জন্য অধিক পরিমাণে শরীরে গ্লুকোজ জমতে থাকবে (উচ্চ গ্লাইসেমিক লোডের জন্য)। অব্যবহৃত গ্লুকোজ চর্বিতে পরিণত হতে থাকে, পরে দীর্ঘ সময়ের অভুক্ত থাকাকালীন সময়ে শক্তি যোগানোর জন্য। কিন্তু সেই অভুক্ত অবস্থার অবকাশ আর ইহ জীবনে আর হয়ে ওঠে না।

    এক বা দুই পুরুষ আগেও খাবারের থালায় ঢেঁকিছাঁটা চাল থাকতো, প্রাতরাশে চিড়ে, মুড়ি, থাকতো। বরিশালের বালাম চালের কথা শুনেছেন? লালচে ঢেঁকিছাঁটা বালাম চালের খ্যাতি আছে। ঘরোয়া এবং নিকট প্রতিবেশী দেশের সেই খাদ্যসংস্কৃতি অবহেলা করে দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা পশ্চিমী খাবারের বাছাই করা ক্ষতিকারক খাবারগুলো গ্রহণ করেছি। স্বাস্থ্যহানিকর বিস্কুট, পাউরুটি ও অজস্র বেকিং করা খাবার, চটজলদি খাবার, মেশিনে ছাঁটা সুদর্শন সুঘ্রাণযুক্ত চালের ভাত আমাদের খাবারের মূখ্য অংশ। ইদানিং কালে যে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের বাড়বাড়ন্তের কথা শোনা যাচ্ছে তার প্রধাণ কারন বিকৃত খাদ্যাভ্যাস। আঠারোশো খ্রিস্টাব্দে বিদেশে যন্ত্রচালিত ধান ও গম ভাঙা কলের আবিষ্কার হয়েছিলো। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে সেই প্রযুক্তি আমাদের গ্রাস করে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পালটে দিয়ে। বংশ পরম্পরায় আমাদের রোগ সৃষ্টিকারী জিনের পরিবর্তন করে আমাদেরকে দুনিয়ার সবচেয়ে হৃদরোগের ও ডায়াবেটিসের মত মারণ রোগের উপযোগী করে তুলেছে। আরও কারণ আছে, তবে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা মূখ্য। আমরা পেটে যা ঢোকাচ্ছি, তাই দিয়েই তৈরী হচ্ছে আমাদের পার্থিব এই শরীর। কখনো কখনো পরিশোধিত শস্যদানা বা তার থেকে প্রস্তুত খাদ্যবস্তুতে অতিরিক্ত ভিটামিনের অন্তর্ভুক্তির (enriched, fortified) কথা বলা হয়ে থাকে। সেটা পরিমাণে প্রাকৃতিক পরিমাণের চেয়ে কম ও মানের দিক দিয়ে সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের।এখন বাজার ব্রাউন পাউরুটিতে ছেয়ে গেছে, তারমধ্যে অধিকাংশই কেবল রঙ করা সাদা পাউরুটি মাত্র।

    তাহলে উপায় কি?
    গম জাতীয় শস্যদানা থেকে প্রস্তুত আটার ক্ষেত্রে পূর্ণদানা থেকে প্রস্তুত খাবার, রুটি ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নেই। কেবল বাদামি রঙ দেখে পূর্ণদানার পাউরুটি চেনা যাবে না, প্যাকেটের ওপরে “whole grain” লেখা আছে কিনা দেখে নিতে হবে। কৃত্রিম উপায়ে পালিশ করা নয়, মোটা দানা লালচে চালের ভাতই শ্রেয়। পেট ভরানোর জন্য এই চালের ভাত পরিমাণে কম লাগে বলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। সুস্বাদু, সুদর্শন আর সুগন্ধিত নয় এই সব কারন ছাড়াও পূর্ণদানার শস্য থেকে তৈরী খাবার বেশী চিবোতে হয় বলেও অনেকের এটা অপছন্দ। মনে রাখতে হবে, এটা এগুলোর গুণ হিসাবে দেখা উচিত। বেশী চিবোনোর জন্য খেতে সময় বেশী লাগলে আমাদের ভক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রক মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস সক্ষমভাবে কাজ করতে পারে। ওজন বশে রাখায় এটা বেশ কাজে আসে। তন্তুসমৃদ্ধ আস্তদানার গমের আটা ও মোটা লালচে চালের ভাত অনেকক্ষণ পাকস্থলীতে থেকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বহুক্ষন ধরে শক্তি যোগাতে থাকে, কৃত্রিমভাবে তাড়াতাড়ি খিদে পায় না। সঙ্গে অঙ্কুরিত ছোলা এবং ডাল (সবুজ খোসাওয়ালা মুগ, বিনস) জাতীয় খাবার থাকলে ভালো হয়। পরিভাষায় একে লেগুমস (legums) বলা হয়ে থাকে। এতে যথেষ্ট তন্তু ও প্রোটিন থাকে। পূর্ণদানার শস্যবীজকে আমরা ভালো শর্করা বলব। ভালো শর্করায় অতিরিক্ত গুণ হিসাবে পাওয়া যাবে রোগপ্রতিরোধকারী এন্টিঅক্সিডেন্টস, “ই” ও “বি” শ্রেণীর ভিটামিন ও স্বাস্থ্যকর বহুশৃঙ্খলের অসম্পৃক্ত স্নেহ জাতীয় খাদ্যাংশ (polyunsaturated fatty acid)।

    পরিশোধিত শস্যদানা থেকে প্রস্তুত প্রক্রিয়াকৃত খাবারে (যেমন পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, কুকিজ, চানাচুর, পাস্তা, নূডলস, পিৎজা ইত্যাদি) তন্তু ও ভিটামিনবিহীন শর্করা থাকে সেটা আমাদের শরীরে চিনির মত কাজ করে। এই ধরনের চাল বা আটা / ময়দা থেকে প্রস্তুত করা খাবার রক্তে সুগারের ও ট্রাইগ্লিসারাইডের (এক ধরনের রক্তে প্রবাহমান স্নেহ জাতীয় পদার্থ) মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ও পেটে চর্বি জমতে থাকে। এর সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায় আর ওজন বেড়ে যাবার জন্য হাঁটু ও অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ বা অতিমাত্রায় প্রকট ধরণের নিরাময়ের অযোগ্য বাতের রোগ (osteo-arthritis) সৃষ্টি করে। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম ডেভিসের মতে পরিশোধিত শস্যদানা একটি নিখুঁত মধুমাখা বিষ, যেটা নেশা ধরায় আর তিল তিল করে নিশ্চিতভাবে হৃদরোগ আর ডায়াবেটিসের মত অনিরাময়যোগ্য রোগের দিকে ঠেলে দেয়। সাদা পাউরুটির দুটি স্লাইস ছ’চামচ চিনি আর একটা চকলেটের বারের চেয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা বেশী পরিমাণে বাড়ানোর ক্ষমতা ধরে।

    আমাদের প্রপিতামহগণ হলদে সোনালি গমের আটা আর লাল মোটাদানার ভাতে ক্ষুন্নিবৃত্তি করে স্বাস্থ্যখাতে নিয়ন্ত্রিত খাতে বেশ বেঁচে বর্তে ছিলেন। বিগত পঞ্চাশ বছরে জিনের ওপর খোদকারী করে উচ্চফলনশীল খর্বাকৃতি শস্যের বিপ্লবের মাধ্যমে স্বল্পসময়ে অনেক বেশী করে শস্যদানা উৎপাদন করে শস্যভান্ডার গড়ে তুলেছি। ফলে অদূর ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা এড়ানো গেছে। অধিক ফলনশীল শষ্যের স্বাস্থ্যের উপর নিরাপত্তার নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা করা হয়নি। নতুন ধরণের এই গমে “পরিবর্তিত ধরণের গ্লায়াডিন (gliadin)” নামে একধরনের প্রোটিন থাকে যেটা গম জাতীয় খাবারের গ্লুটেন (gluten)-এর সমগোত্রীয়”। গ্লুটেন এন্টেরোপ্যাথি নামে একধরনের আন্ত্রিক রোগ ছাড়াও গ্লায়াডিন আমাদের মস্তিষ্কে আফিং (morphine) জাতীয় রাসায়নিকে রূপান্তরিত হয়ে “ভালো লাগা” (feel good effect) ধরনের নেশা ধরায় ও খিদে বাড়ায়। দেখা গেছে, পরিশোধিত সাদা আটা ও ময়দার খাবার দিয়ে পেট ভরাতে হলে দৈনিক প্রায় ৪০০ কিলোক্যালোরি বেশী খাওয়া হয়ে যায়।২০০৪ সালের এক গবেষণায় (Ludwig 2004, Lancet), লাল আটার চেয়ে সাদা আটায় ইঁদুরদের পেটে ৭১ শতাংশ বেশী চর্বি জমে যায়।

    দীর্ঘমেয়াদী ভাবে সাদা শস্যদানা খাওয়ার জন্য খাবার অব্যবহিত পরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা উচ্চমাত্রায় পৌঁছে যায়।এমতাবস্থায় রক্তের বিশেষ কিছু প্রোটিনের সাথে শর্করার বিক্রিয়ায় (glycation) “এডভান্সড গ্লাইকেসন প্রোডাক্টস (AGP)” তৈরী হয়ে যায়। এডভান্সড গ্লাইকেসন প্রোডাক্টস রক্তনালীর প্রদাহের (inflammation) এক অন্যতম কারণ। অধুনা প্রকট হয়ে আত্মপ্রকাশ করা বিভিন্ন হৃদরোগ ও সেরিব্রাল স্ট্রোকের কারণ হিসাবে পরিশোধিত শস্যদানা একটা প্রধান নিয়ন্ত্রক। এই ধরনের শ্বেতসার (শর্করা, কার্বোহাইড্রেট) খাবার ফলে উদ্ভুত উচ্চ মাত্রার রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন করার জন্য অধিক মাত্রায় ইনসুলিনের ডাক পড়ে। দীর্ঘসময় অতিমাত্রায় ইনসুলিনের প্রভাবে শরীরের কোষসমূহে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে (insulin resistance)। এর অবধারিত ফল হিসাবে পেটে এক বিশেষ ধরনের ক্ষতিকারক সক্রিয় চর্বি জমতে শুরু করে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হল এর অন্তিম পরিণতি।

    আমাদের খাবারের মূখ্যভাগ হিসাবে অপরিশোধিত শস্যদানার ফাইবার বা তন্তু রক্তে চিনির মাত্রা আস্তে আস্তে বাড়ানোর সুফল ছাড়াও আরও উপকার করে। মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে। ঝাড়ুদারের ভূমিকা পালন করার মত পৌষ্টিক তন্ত্রের রোগজীবানু ও অন্যান্য ময়লা সাফ করে। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়। অন্ত্র থেকে রক্তে কোলেষ্টেরলের মিশ্রণ কমায়। অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগের প্রকোপ হ্রাস করে। শস্যদানা সমৃদ্ধ খাবার রক্তে অম্লতা বাড়িয়ে দেয়, যেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য হাড়ের থেকে ক্যালসিয়ামের ডাক পড়ে। হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে গেলে হাড় ভেঙ্গে যাবার প্রবনতা বেড়ে যায়।

    খাবারের শস্যদানার নির্বাচনের সময় তার সঙ্গে অংকুরিত ডাল ও ছোলা জাতীয় খাবার (স্প্রাউট, লেগুম) অন্তর্ভুক্ত করলে বিশেষ লাভ হবে। এতে প্রয়োজনীয় ফাইবারের সাথে সাথে ভিটামিন ও বেশ খানিকটা প্রোটিনও পাওয়া যাবে। প্রাকৃতিক ভিটামিন কৃত্রিম রাসায়নিক উপায়ে প্রস্তুত ভিটামিনের চেয়ে বেশী কাজে আসে। অংকুরিত শস্যদানার শর্করা খাবারের থালায়ই মলটোজে পরিণত হয়ে হজমের প্রথম ধাপ পেরিয়ে থাকে। বদ হজমের সম্ভাবনা নির্মূল করে। খাবারে শস্যদানার সাথে কাঁচা বাদাম জাতীয় খাবার মিশিয়ে খাবার প্রস্তুত করলে বিশেষ উপকার হয়। এতে রক্তে চিনির মাত্রা কমে ও উপকারী অসম্পৃক্ত ফ্যাট পাওয়া যায়, যেটা রক্তের ক্ষতিকারক লঘু ঘনত্বের কোলেস্টেরল কমায়।

    খাবারে শস্যদানা মুখ্য অংশ অধিকার করে থাকলেও এর অপরিহার্যতা সব বৈজ্ঞানিকগন স্বীকার করেন না। কৃষি-প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আগে আদিম মানুষ শস্যদানা ছাড়াই জীবিকা নির্বাহ করত। শস্যদানার এই বিকৃত রূপে অভ্যস্ত হবার পিছনে ব্যবসায়িক ষড়যন্ত্র আছে। পরিশোধিত শস্যদানায় মধ্যেকার জার্মের অংশ না থাকার জন্য গুদামে আর খাবারের দোকানের আলমারিতে বহুদিন পর্যন্ত শস্যদানা সংরক্ষন করা যায়। আসলে আমরা শস্যদানা ছাড়াই বেশ সুস্থ থাকতে পারি। সেটা বড় বিপ্লব। যতক্ষন না সেটা সম্ভব হচ্ছে, শস্যদানার পরিমাণ কমানো ও তার গুনমান পরিবর্তন করা জরুরি। রান্নাঘরে এই বিপ্লব করতে পারলে আমাদের শরীর আমাদের প্রচেষ্টা কে অনেক ধন্যবাদ দেবে। “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”-প্রবচন টা ভুলে ভরা। কোন মা যেন এটা বিশ্বাস না করে। ইস, আমার স্কুল জীবনে আমাকে যদি এ সব কথা বিশ্বাস জাগানোর মত করে কেউ বলতো!

    একনজরে
    পূর্ণদানার শস্যবীজের উপকারিতাঃ
    ১। ত্রিশ শতাংশ সেরিব্রাল স্ট্রোকের সম্ভাবনা কম।
    ২। পঁচিশ শতাংশ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কম।
    ৩। ত্রিশ শতাংশ হৃদরোগের সম্ভাবনা কম।
    ৪। স্থূলতা হ্রাস।
    ৫। হাঁপানির প্রকোপ কম।
    ৬। বিভিন্ন প্রদাহজনিত (inflammatory disease) রোগের বোঝা কম।
    ৭। রক্তচাপ বশে রাখা সম্ভব।
    ৮। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চিরতরে মুক্তি।
    ৯। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কম।
    ১০। সুস্থসবল দাঁত ও মাড়ি।

    যে কারণে পরিশোধিত শস্যদানা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে
    ১। তন্তু বা ফাইবার ও ভিটামিন বর্জিত
    ২। সাদা আটা ও ময়দায় ক্ষতিকারক গ্লুটেন ও গ্লায়াডিনের উপস্থিতি
    ৩। সুদৃশ্য ও সুগন্ধযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিকের ও ব্লিচিং পদার্থের ব্যবহার
    ৪। উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও উচ্চ গ্লাইসেমিক লোডের বৈশিষ্টের জন্য খাবার সাথে সাথে দ্রুত ও উচ্চমাত্রায় রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি। এর ফলে প্রথমের দিকে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি ও পড়ে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস।

    পরিশোধিত শস্যদানার বিকল্পঃ
    ১। পূর্ণদানার গমের আটা
    ২। বাদামি পাউরুটি, বহুরকমের শস্যদানা (multi-grain) থেকে প্রস্তুত (মাখন বা ভোজ্যতেল বিহীন) (নরম রং করা বাজার ছেয়ে যাওয়া ব্রাউন ব্রেড নয়)
    ৩। অপেক্ষাকৃত মোটাদানা ও লালচে চালের ভাত (কৃত্রিম উপায়ে পালিশ না করা)
    ৪। চিড়ে, মোটা চালের মুড়ি
    ৫। অংকুরিত ছোলা ও খোসাসহ ডাল
    ৬। ভুট্টা, বাজরা, জোয়ার, ওট

    গৌতম মিস্ত্রী, কোলকাতা, ২৮শে মে, ২৯১৬
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ মে ২০১৬ | ২১৪৩২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০২:৩০53787
  • খুব ভাল হয়েছে লেখাটা।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০২:৪৮53788
  • সাদা ভাত, সাদা আটা - মানুষ যে এতে অ্যাডাপ্ট করেছে, তার মূল কারণ এগুলো তুলনামূলকভাবে বেহ্সি সুস্বাদু। একবার সুস্বাদু খাবারের আস্বাদন পেয়ে গেলে তখন মানুষ...
  • dc | 120.227.240.249 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৩:৩০53789
  • আজকাল বোধায় বেশীরভাগ খাবারে এক্স্ট্রা নুন বা চিনি দেয় বেশী সুস্বাদু করে তোলার জন, তাই না? এটা আরেকটা বিরাট বড়ো প্রব্লেম।
  • anirban | 50.140.35.187 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৩:৩২53790
  • লেখাটা খুবই ভালো লাগলো। স্বর্ণেন্দুর সঙ্গে একমত হয়েও আমার মনে হয় এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখা, এই ধরণের লেখাগুলো আরো বেশি আসা দরকার।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৪:০৮53791
  • anirban,
    'হয়েও' কেন? স্বর্ণেন্দুও একমত যে এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় লেখা।
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৪:৩৩53792
  • গ্রীন ক্যাপিটালিজম নিয়ে কথা হোক। তবে গৌতমদা তো ভালোই অবহিত এসব নিয়ে। লাল চাল খাওয়া রীতিমতন প্রোমোট করেন। ত্রিপুরার কোথায় ঢেঁকিছাঁটা চাল পাবো, সে খবরও গৌতমদার থেকেই পাওয়া। ঃ)
    আর এগুলোর দামও মনে হয় ঐ গ্রীন ক্যাপিটালিজম গোত্রের নয়।

    এদিকে এগুলোকে সরকার থেকে প্রোমোট করলে পারে তো। দুটাকার চাল ঢেঁকিছাটা চাল হোক।

    আই সি ডিএস, মিড ডে মিলের খিচুড়ি বা অন্য সাপ্লিমেন্টগুলো কেন এরকম চাল দিয়ে হবেনা ?

    লো কস্ট ডায়েট বানানোয় আমি তো ঠিক করেছি এইরকম চাল রাখবো। দেখি হয় কিনা। কিন্তু এটা নিয়ে তো লার্জস্কেলে সচেতনতা দরকার। মুভমেন্ট দরকার। দুটাকার চাল 'ভিক্ষা' দেওয়া এত ব্যঙ্গ বিদ্রূপ না ক'রে এগুলোর পিছনে যদি লোকজন একটু সময় দিত !
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৪:৪০53793
  • শুধুই গ্রীন ক্যাপিটালিজম? গ্রীন অ্যানার্কিজম, অ্যানার্কো-প্রিমিটিভিজম এগুলো ও আসুক।
  • dc | 120.227.240.249 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৪:৪২53794
  • আর তার পর ক্লোজড ইকনমিক মডেল।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৪:৪৫53795
  • বোঝো! এত গ্রীন নিয়ে কথা হবে, আর গ্রীন রিভোলিউশন নিয়ে কথা হবে না - কোটি কোটি মানুষের ক্ষিধে সামলালো...
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৪:৫০53796
  • dc,
    আপনার এই চুটকি মন্তব্যতে যে জিনিসগুলো নিয়ে পৃথিবীতে বহু কিছু লেখা হয়েছে, হয় ও হবে, বহু বিতর্ক চলেছে, চলে ও চলবে সেইগুলো discredited হয়ে যাবে না কিন্তু। বিরুদ্ধ যুক্তি দিন না, ফুট কেটে কি লাভ?
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৪:৫২53797
  • lcm,
    গ্রীন রিভোলিউশন গ্রীন ক্যাপিটালিজম এর subsection তো! :)
  • dc | 120.227.240.249 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৫:০৫53798
  • এই যাঃ! স্বর্ণেন্দু, ক্লোজড ইকনমিটা সিরিয়াসলি বল্লাম, চুটকি না! ক্লোজড ইকনমিতে কিভাবে ট্রানসিশন করা যায় সে নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা হচ্ছে তো!
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৫:০৯53799
  • Green Capitalism: ... is the view that capital exists in nature as "natural capital" (ecosystems that have ecological yield) on which all wealth depends, and therefore, market-based government policy instruments (such as cap and trade systems) should be used to resolve environmental problems...

    Green Revolution: ... refers to a set of research, development, and technology transfer initiatives occurring between the 1930s and the late 1960s, that increased agricultural production worldwide, particularly in the developing world...
  • dc | 120.227.240.249 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৫:১৬53800
  • পুরোটা লেখা উচিত ছিলঃ সার্কুলার ক্লোজড লুপ ইকনমি। কনফিউশান হয়ে থাকলে দুঃখিত।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৫:১৯53801
  • মোদ্দা কথা, "গ্রিন রিভোলিউশন" এর 'গ্রিন' অংশটির ব্যাখ্যা কিন্তু অন্য। এটি ঠিক প্রকৃতি এবং পরিবেশ সংক্রান্ত কিছু নয়।

    'গ্রিন রিভোলিউশন' টার্মটি নোবেল জয়ী নর্মান বোর্লাগ -এর দেওয়া (যাকে বলা হয় The Man Who Saved A Billion Lives)।

    এই নামকরনের ব্যাখা বোর্লাগ-এর ভাষ্যে -
    "These and other developments in the field of agriculture contain the makings of a new revolution. It is not a violent Red Revolution like that of the Soviets, nor is it a White Revolution like that of the Shah of Iran. I call it the Green Revolution."
  • দেবব্রত | 212.142.76.183 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৫:৫৮53802
  • ২ টাকা কেজি চাল ঢেঁকি ছাঁটা দেওয়া সম্ভবত অর্থনৈতিক ভাবে ভায়াবেল নয় । ঢেঁকি পার দিয়ে মোটামুটি দু জন মহিলার পরিশ্রমে সারা দিনে ১৫-২০ কেজি খুব বেশী হোলে ধান কোটা যায় । একজন মহিলার পারিশ্রমিক ১৫০/- দিন ধরলে ২০ কেজি ঢেঁকি ছাঁটা চাল পেতে প্রতি কেজি পিছু পারিশ্রমিক ১৫/- । তাই বাঙলার প্রত্যন্ত গ্রামেও ঢেঁকি উঠে গেছে - । কেবল মাত্র পিঠে পুলির পার্বণের সময় বাড়ির প্রয়োজনে ঢেঁকি পাতা হয় । তবে কিছু সংস্থা ( গ্রিন এন্তারপ্রেনেওর ) গ্রামের মহিলাদের দিয়ে শহরের মধ্যবিত্ত বাবুদের জন্য , গৌতমদা'র টার্গেট অডিএন্স দের জন্য ঢেঁকি ছাঁটা চাল বানাচ্ছেন -তাদের রাসবিহারীতে , অবনি রিভার সাইড মলে দোকান আছে কিন্তু প্রতি কেজি ২০ /২৫ টাকা এক্সট্রা । তার থেকে সস্তায় কেউ যদি পশ্চিমবঙ্গে ঢেঁকি ছাঁটা চাল দিচ্ছি বলে দাবী করে তাহলে তা মেশিনে ছাঁটা এক পালিশ দেওয়া । ঢেঁকি ছাঁটা নয় ।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৬:০০53803
  • lcm,
    আমি মোটামুটি নিশ্চিত এই অর্থে অন্তত দেবব্রত গ্রীন ক্যাপিটালিজম শব্দটি ব্যবহার করেননি, আমিও করিনি

    আপনার আপত্তি থাকলে আমি capitalism going green জাতীয় শব্দ ব্যবহার করতে পারি।
    আর "green revolution" "increased agricultural production worldwide, particularly in the developing world..." :D :D :D

    ভাগ্যিস wiki আসার আগে কলোনীগুলো স্বাধীন হয়ে গেল, নইলে colonialism লিখলে হয়ত বেরত refers to a set of missionary, administrative, development and technology transfer initiative that civilized and improved the standard of living for the then savage, barbarian, native, niggar population of the world, particularly in developing countries...

    :D :D :D
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৬:০৮53804
  • হা হা।
    কিন্তু স্ট্যাটিসটক্যালি কথাটা তো সত্যি, কয়েক দশকে ফিলিপিন্‌স্‌-এ চালের উৎপাদন ডাবল হয়ে গেল।
  • দেবব্রত | 212.142.76.183 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৬:১৮53805
  • আজ্ঞে বর্তমানে ফিলিপিন্স এ চাল চাইলে গুলি পাচ্ছে ।

    " The Philippines, being the world’s top importer of rice, is directly affected by the global crisis. Every year, the Philippines imports around 15% of its rice supply (equivalent to 2.2 Million tons of rice), most of which comes from Vietnam and Thailand. But why does an agricultural nation like the Philippines import rice? ঐযে গ্রিন revolution
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৬:২৪53806
  • ১৯৬০ এর থেকে২০১৬ - ফিলিপিন্‌স-এর পপুলেশন ৪০০% বেড়েছে।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৬:২৫53807
  • গ্রিন রিভোলিউশন-এর বিরুদ্ধে ছিল হার্ডকোর সাদা গ্রুপ। তাদের বক্তব্য যাদের খাবার উৎপাদন কম, তারা দুর্ভিক্ষে মরে যাবে, যাবে তো যাবে। ডারউইন বলে গেছেন....
  • দেবব্রত | 212.142.76.183 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৬:৪২53808
  • আজ্ঞে না মামলাটা এক কথায় সারা যাচ্ছেনা " The average growth rate during the years 1990-2000 was 2.34% for the population while the increase in rice yield, was around 1.6%. Clearly, if such trends continue, it would be hard for the Philippines to lessen its dependence on rice imports"

    মুল সমস্যা এইটা " It has been shown in some studies that a 1 degree Celsius increase in temperature in the overall climate leads to 15% less agricultural yield. This poses a much serious problem in the Philippines where agricultural lands lack abundant water sources. Other things to be considered are natural calamities such as flood and drought which also contribute to lesser food crop yield." তার সাথে এল নিনো এফেক্টের কারনে ফিলিপিন্স এর শস্য উৎপাদনের হার ক্রমশ নিন্মগামি - এল নিনো এফেক্ট ফিলিপিন্স এ স্থায়িত্ব পেতে চলেছে - পৃথিবীর গড় উত্তাপ ইতিমধ্যে ০,৭৬ ডিগ্রী ক বেড়ে গেছে কিনা ।
  • Prativa Sarker | 11.39.38.153 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৬:৪৯53809
  • লেখাটা প্রচন্ড জরুরী। কিন্তু দেরী হয়ে যাচ্ছে।
    বাচ্চাগুলো জাঙ্ক ছাড়া খেতেই চায় না আর মা বাপরাও মুখ ঢেকে রাখেন বিজ্ঞাপনে। যে খাদ্য এত ক্ষতিকারক তার রঙচঙ মাখা প্রচারে এত শিক্ষিত লোক বিভ্রান্ত হন কি করে ?
    প্রচুর প্রচার চাই।
    আর ওই স্বাদ বর্ণ গন্ধের কথা যেটা প্রথমেই বলা হলো তার মায়া কাটানোও খুব কঠিন কিন্তু। ঢেঁকিছাঁটা মোটা চাল খাবার চেষ্টা করে দেখেছি, অনভ্যস্ত জিভে অখাদ্য লেগেছে ।

    লেখাটা অনেক প্রশ্ন জাগালো, উত্তর দিল কম। সেটাও অবশ্য কম কিছু নয়।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:০০53810
  • ফিলিপিন্‌স ১৯৫০ জনসংখ্যা ১৯,২৪৬,৬১১
    ফিপিপিন্‌স ২০১৬ জনসংখ্যা ১০০,৬৯৯,৩৯৫

    জনসংখ্যা পাঁচগুণ বেড়েছে।
    চাল উৎপাদন পাঁচগুণ বাড়ে নি।

    তাই, চাল আমদানি।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:০৪53812
  • *প্রচুর মানুষ
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:০৪53811
  • এবার আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, যে গ্রিন রিভোলিউশন না হলে, ফিলিপিন্‌স-এ অনাহারে অর্ধেক প্রচুর মারা যেত, লাইফ এক্সপেক্টেন্সি ঐ ৪৫-৫০ বছরে আটকে থাকত - কিনুত, এখন কি করা যাবে, গ্রিন রিভোলিউশন হয়েছে, মানুষ চাল পেয়েছে, বেশিদিন বেঁচেছে, জনসংখ্যা বেড়েছে। কি আর করা যাবে।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:০৬53813
  • সারা পৃথিবীর মানুষের লাইফ এক্সপেক্টেন্সি বেড়েছে - কম/বেশি আছে, কিন্তু গড় আয়ু বেড়েছে। গ্রিন রিভোলিউশন প্রচুর খাবার উৎপাদন করেছে। কি আর করা যাবে, মানুষ বেশিদিন তো বাঁচতে চাইবে।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:১০53814
  • এই যে, ১৯৫০ থেকে মানুষের গড় আয়ি কীভাবে বেড়েছে।
    চায়্না, ইন্ডিয়া লক্ষ্য করুন।
    কি করা যাবে, মানুষ বেশিদিন বাঁচতে চাইবে।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:১১53815
  • উপ্‌স্‌ টাইপো
  • দেবব্রত | 212.142.76.183 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:১২53816
  • পাই আপনি কি দামে ঢেঁকি ছাঁটা চাল পান আমার জানা নেই তবে আজকে যদি কোলকাতায় সত্যই ঢেঁকি ছাঁটা চাল পেতে হয় তার দাম ঐ " গ্রীন ক্যাপিটালিজম" গোত্রেরই হবে - প্রতি কেজি ঢেঁকি ছাঁটা চালের পারিশ্রমিক গড়ে ১৫/- তার সাথে লাভ যোগ করে ২০/- প্রতি কিলো বেশী দামে ঢেঁকি ছাঁটা চাল পাওয়া যেতে পারে । বাজারে ভালো খাওয়ার যোগ্য চাল ২৪টাকা কিলো বর্তমান সুতরাং' শহুরে উচ্চ মধ্যবিত্তের পক্ষেই বর্তমানে এই বিলাসিতা সম্ভব ( ভালবেসে কেউ ঢেঁকি কুটে দিলে স্বতন্ত্র ) । সমস্যা সমাধানের ' গ্রিন ' পিঠ বাঁচানো প্রয়াস ।

    " আমার পয়সা আছে তাই whole-grain product কিনে খেতে পারির পিঠ বাঁচানো রাজনীতিতে সমস্যাটা মিটবে না " @ স্বর্ণেন্দু বিশেষজ্ঞরা whole-grain product ভালো এইটুকুই বলতে পারেন ,সিগারেট খেলে ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে এই টুকুই বলতে পারেন - এবং তারা এইটুকুই বলেন , সীমিত সমাধানের প্রয়াস । কিন্তু তারা বাতাসে Pm 2,5এর অস্বাভাবিক উপস্থিতির কারনে যে লাং ক্যানসারের হার আকাশছোঁয়া এবং কেন Pm ২,৫ আকাশছোঁয়া সেই সমস্যার সমাধানের কথা বলেন না । আর আমরা গেটেড কমিউনিটিতে ১৪ তলার ওপরের বসবাস কারি টার্গেট অডিএন্স সেই সমাধান শুনতেও চাইনা । ব্রেশ ব্রেশ !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন