এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ভাতের থালায় লুকিয়ে আছে সাদা শয়তান

    Gautam Mistri লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ মে ২০১৬ | ২০৯৭৯ বার পঠিত
  • ইংরেজী ভাষায় একটা প্রবচন আছে – “The whiter the bread, the sooner you’re dead”, অর্থাৎ রুটি (প্রকারান্তরে ভাত) যত সাদা হবে আপনি তত তাড়াতাড়ি মারা যাবেন। ভাত সাদা হবে নাতো কি লাল হবে? ভ্রূ কুচকে গেলেও প্রস্তাবটা তেমনই। কিছু কিছু দেশে লাল ভাতের কদর সাদা ভাতের চেয়ে বেশী। চীনদেশে ও থাইল্যান্ডে লালভাতের চাহিদা আছে। শ্রীলঙ্কায় পাঁচতাড়া হোটেলেও ভাত চাইলে লালভাতই পাওয়া যাবে। অন্যান্য তৃণভোজী প্রানীরা ঘাসপাতা বেছে খেলেও শস্যদানা এযাবৎ আস্তই খেয়ে এসেছে, এখনও তাই খায়। বেশী বুদ্ধিমান প্রানী হিসেবে মানুষ প্রথম কি করেছিলো জানা নেই। কালের বিবর্তনে মানুষ ক্রমশঃ ঘাস জাতীয় গাছের বীজ অর্থাৎ ধান ও গমের খোসা ছাড়িয়ে খাবারের স্বাদ পেয়ে গেল। এতে যদিও খাবার চিবানো আর হজম করা সহজ হল আর শস্যবীজের খোসার মধ্যে থাকা তেল জাতীয় পদার্থের বর্জনের ফলে শস্যবীজের অধিক সময়ের জন্য সংরক্ষনের সুবিধা হয়ে গেল। তেল জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত শস্যদানার গুঁড়ো হাওয়ার সংস্পর্শে এলে বেশীদিন অবিকৃত থাকে না। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত প্রযুক্তির অধিকারী মানুষের খাবারের টেবিলে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশই শস্যবীজের দখলে। প্রাতরাশের রুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, স্যান্ডউইচ বা গ্রামবাংলার পান্তা; মধ্যাহ্নভোজের ভাত বা রুটি, বিকালের জলখাবারের মুড়ি, বাদাম, চপ, কাটলেট, পিৎজা, পাস্তা আর রাতের খাবারের রুটি বা ভাত — এই গুলোই খাবারের প্রধান অংশ। সঙ্গের পদগুলো বৈচিত্র্যময় হলেও পরিমাণের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাধান্য পায় না।ভাত বা রুটি আমাদের প্রধান খাবার; যদিও পৃথিবীর কোন কোন জনগোষ্ঠীর খাবারের থালায় মাঝেমধ্যে প্রধান খাদ্য হিসেবে আলুর দেখা মেলে। তা সে চালই হোক বা গমই হোক, ঘাস জাতীয় শস্যদানার অবিকৃত গঠন একই রকম।

    বর্তমানে প্রচলিত ধান থেকে চাল বানানোর মেশিনে ধানের বাইরের খোসা (ব্রান) আর মধ্যবর্তী অংকুর বা বীজযুক্ত আবরণ (জার্ম) ছাড়িয়ে ভেতরের সাদা (এন্ডোস্পার্ম) অংশটি ব্যবহারের জন্য আলাদা করা হয়। চাল ও আটার সওদাগরেরা প্রায় ২৫ ধরণের রাসায়নিকের সন্ধান জানেন যার দ্বারা এরপরে একে আরও চকচকে, লোভনীয় ও সুস্বাদু বানানো হয়। ধান গাছের নিজের বংশবৃদ্ধির জৈবিক প্রয়োজনের অংকুরটি হল মাঝের “জার্ম” অংশটি। তাকে রক্ষা করার জন্য ও অঙ্কুরোদগমের সময় প্রয়োজনীয় ভিটামিন যোগায় বাইরের খোসাটি। ভেতরের সাদা যে অংশটি আমরা চাল হিসাবে বেছে নিই সেটা মামুলি ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ বর্জিত জটিল শর্করা। চালের তুষে বাইরের খোসা আর মাঝের প্রাক- অঙ্কুর (জার্ম) থাকে। ভবিষ্যতের শিশু উদ্ভিদটির বীজের (মূলতঃ প্রোটিন) পুষ্টির প্রয়োজনীয় সংকেতওয়ালা জিন এই মধ্যেকার আবরণে থাকে।বাইরের খোসায় থাকে প্রতিরক্ষার বর্ম হিসাবে ফাইবার, ভিটামিন আর প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। মধ্যেকার এন্ডোস্পার্ম অংশ, যেটাকে আলাদা করে পরিশোধিত চাল অথবা সাদা আটা আর ময়দা খাবার জন্য ব্যবহার করা হয় সেটা নিছক শর্করা। বীজ থেকে জন্মানোর পরে সদ্য অঙ্কুরিত উদ্ভিদটির পাতা সৃষ্টির আগে পর্যন্ত (অর্থাৎ যখন নবঅঙ্কুরিত উদ্ভিদটি সালোকসংশ্লেষের বা photosysthesis মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুতের জন্য অপরিণত) উদ্ভিদের শর্করার প্রয়োজন মেটায় ভেতরের এন্ডোস্পার্ম অংশটি।

    শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট অপেক্ষাকৃত সস্তা আর আসক্তি উদ্রেককারী খাবার। তাই সহজে আমাদের খাবারে বড় অংশের অংশীদার হয়ে পড়ে। যত চকচকে সুদৃশ্য লম্বাদানার পালিশ করা পরিশোধিত চালের ভাত হবে, পেট ভরানোর জন্য তত বেশী পরিমানের ভাতের প্রয়োজন হবে আর তাড়াতাড়ি হজম হয়ে আবার খিদে পাবে। শর্করা জাতীয় খাবারে আসক্তি আমাদের অগোচরে ঘটে যায়। মিষ্টির দোকানের প্রতি আকর্ষন একরকমের প্রাদুর্ভাবের মত আমাদের আগ্রাস করেছে যদিও এটা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি নয়। ঘটনাচক্রে শর্করা জাতীয় খাবারের প্রতি এই আসক্তি সচেতন পশ্চিমী দুনিয়ার প্রতিপত্তিবান নাগরিকদের চেয়ে আমাদের মত গরিব দেশগুলোর (ধনী দরিদ্র সবার) মধ্যে বেশী পরিমানে দেখা দেয়। গত শতাব্দীর আটের দশকের জনপ্রিয় হলিউডের চলচিত্র “প্রেটি উওম্যান”-এর একটা দৃশ্যের কথা প্রাসঙ্গিক। বিলাসবহুল হোটেলের পেন্টহাউসের প্রাতরাশের টেবিলে ধনী নায়ক গরীব নায়িকার সামনে সযত্নে চয়ন করে রাখা ফল, বেরি আর সসেজ-স্যালামি পুর্ণ দুটো থালা পেশ করলেন। প্রিয় নায়কের ভালোবাসা মেশানো সুষম খাবারের প্রাতরাশের থালা ঠেলে ফেলে,নায়িকা দূরে রাখা ঝুড়ি থেকে ময়দা-মাখন-মিষ্টির সংমিশ্রণে তৈরী মিষ্টি পাউরুটি তুলে নিলেন।

    আমাদের মত গরিব গুর্মোর দেশে “ভিক্ষার চাল কাড়া না আকাড়া” এই ধরণের তর্কের অবকাশ আছে। সস্তার খাবার হিসাবে শর্করা আমাদের প্রয়োজন, মুস্কিল হয় এতে আসক্তি জন্মে গেলে। শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার জন্য খাদ্যে অন্যান্য খাদ্যাংশের মত নির্দিষ্ট পরিমাণে শর্করাও প্রয়োজন। খিদে পেলে খাবারের বন্দোবস্ত তো করতেই হয়। মনে রাখতে হবে, আগের কিস্তির খাবার কেবল পেট (পাকস্থলি) থেকে জায়গা খালি করে রক্তে মিশেছে। ফলেই খিদে পেয়েছে। আগেকার খাবারের যে অংশটি তখনও খরচ করা যায়নি, কেবল রক্তে ভেসে বেড়াচ্ছে, সেটা যাবে কোথায়? খাবারে শর্করার আধিক্যে প্রথমে অব্যবহৃত শর্করা সীমিত পরিমাণে যকৃতে (লিভার) গ্লাইকোজেন হিসাবে জমা হয়। যকৃতের ধারণ ক্ষমতা পূর্ণ হয়ে গেলে, অব্যবহৃত শর্করা চর্বি হিসাবে শরীরের অপ্রিয় জায়গা গুলোতে জমা হতে থাকে। তাই পেট ভরাতে হবে এমন খাবার দিয়ে, যেটা পেটে অনেকক্ষণ থাকবে, দেরীতে হজম হবে ও দেরীতে খিদে পাবে, ইতিমধ্যে চর্বি হিসাবে জমা হবার জন্য দাঁড়ানো গ্লুকোজের লাইন লম্বা করবে না।

    পুনরাবৃত্তির দোষ এড়ানোর জন্য শর্করার গ্লুকোজে পরিণত হবার হার (গ্লাইসেমিক ইনডেক্স) আর গ্লুকোজে পরিণত হবার পরিমাণ (গ্লাইসেমিক লোড)-এর বিস্তারিত আলোচনা এড়ালাম। শ্বেতশুভ্র পঞ্চবিষের প্রথম পর্বে (চিনি যখন বিষ) এর আলোচনা পাওয়া যাবে। আমাদের খাবারের ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শর্করা জাতীয় খাবার থেকে বেছে নিতে হবে, আর সেই শর্করা হবে তন্তু (ফাইবার), ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ জটিল শর্করা। আস্ত শস্যদানা সেই প্রয়োজন ভালোভাবেই মেটায়।যে কারণে চিনি দুষ্ট, সেই কারণে সাদা, চকচকে, সরু, লম্বা সুগন্ধিত পরিশোধিত চালও সমমাত্রায় ক্ষতিকারক। সোজা কথায় বলতে, মূলতঃ দুটি কারণে মেশিনে ছাটা চকচকে সাদা চালের ভাত, ময়দা আর বাজারে উপলব্ধ সব রকমের বেকিং করা খাবার (পাউরুটি, কেক, কেক, বিস্কুট, কুকিজ, প্যাটিস, সিঙ্গারা, নিমকি ইত্যাদি) বর্জনীয়। প্রথমতঃ এসব খাদ্যের মূল উপাদান শস্যদানার বাইরের আবরণের ফাইবার (তন্তু) ও ঠিক তার নীচের অংশের (বীজ বা র্জাম) ভিটামিন ফেলে দেওয়া হয়েছে, পড়ে রয়েছে কেবল শর্করা (empty calorie)। দ্বিতীয়তঃ, খাবারে যত পরিশোধিত শর্করা থাকবে সেটা তত তাড়াতাড়ি হজম হবে অর্থাৎ গ্লুকোজে পরিণত হবে, রক্তে চিনির মাত্রা তত তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে (উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের জন্য) তন্তুবিহীন হবার জন্য অধিক পরিমাণে শরীরে গ্লুকোজ জমতে থাকবে (উচ্চ গ্লাইসেমিক লোডের জন্য)। অব্যবহৃত গ্লুকোজ চর্বিতে পরিণত হতে থাকে, পরে দীর্ঘ সময়ের অভুক্ত থাকাকালীন সময়ে শক্তি যোগানোর জন্য। কিন্তু সেই অভুক্ত অবস্থার অবকাশ আর ইহ জীবনে আর হয়ে ওঠে না।

    এক বা দুই পুরুষ আগেও খাবারের থালায় ঢেঁকিছাঁটা চাল থাকতো, প্রাতরাশে চিড়ে, মুড়ি, থাকতো। বরিশালের বালাম চালের কথা শুনেছেন? লালচে ঢেঁকিছাঁটা বালাম চালের খ্যাতি আছে। ঘরোয়া এবং নিকট প্রতিবেশী দেশের সেই খাদ্যসংস্কৃতি অবহেলা করে দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা পশ্চিমী খাবারের বাছাই করা ক্ষতিকারক খাবারগুলো গ্রহণ করেছি। স্বাস্থ্যহানিকর বিস্কুট, পাউরুটি ও অজস্র বেকিং করা খাবার, চটজলদি খাবার, মেশিনে ছাঁটা সুদর্শন সুঘ্রাণযুক্ত চালের ভাত আমাদের খাবারের মূখ্য অংশ। ইদানিং কালে যে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের বাড়বাড়ন্তের কথা শোনা যাচ্ছে তার প্রধাণ কারন বিকৃত খাদ্যাভ্যাস। আঠারোশো খ্রিস্টাব্দে বিদেশে যন্ত্রচালিত ধান ও গম ভাঙা কলের আবিষ্কার হয়েছিলো। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে সেই প্রযুক্তি আমাদের গ্রাস করে আমাদের খাদ্যাভ্যাস পালটে দিয়ে। বংশ পরম্পরায় আমাদের রোগ সৃষ্টিকারী জিনের পরিবর্তন করে আমাদেরকে দুনিয়ার সবচেয়ে হৃদরোগের ও ডায়াবেটিসের মত মারণ রোগের উপযোগী করে তুলেছে। আরও কারণ আছে, তবে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা মূখ্য। আমরা পেটে যা ঢোকাচ্ছি, তাই দিয়েই তৈরী হচ্ছে আমাদের পার্থিব এই শরীর। কখনো কখনো পরিশোধিত শস্যদানা বা তার থেকে প্রস্তুত খাদ্যবস্তুতে অতিরিক্ত ভিটামিনের অন্তর্ভুক্তির (enriched, fortified) কথা বলা হয়ে থাকে। সেটা পরিমাণে প্রাকৃতিক পরিমাণের চেয়ে কম ও মানের দিক দিয়ে সেগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের।এখন বাজার ব্রাউন পাউরুটিতে ছেয়ে গেছে, তারমধ্যে অধিকাংশই কেবল রঙ করা সাদা পাউরুটি মাত্র।

    তাহলে উপায় কি?
    গম জাতীয় শস্যদানা থেকে প্রস্তুত আটার ক্ষেত্রে পূর্ণদানা থেকে প্রস্তুত খাবার, রুটি ইত্যাদি ব্যবহারে অসুবিধা নেই। কেবল বাদামি রঙ দেখে পূর্ণদানার পাউরুটি চেনা যাবে না, প্যাকেটের ওপরে “whole grain” লেখা আছে কিনা দেখে নিতে হবে। কৃত্রিম উপায়ে পালিশ করা নয়, মোটা দানা লালচে চালের ভাতই শ্রেয়। পেট ভরানোর জন্য এই চালের ভাত পরিমাণে কম লাগে বলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। সুস্বাদু, সুদর্শন আর সুগন্ধিত নয় এই সব কারন ছাড়াও পূর্ণদানার শস্য থেকে তৈরী খাবার বেশী চিবোতে হয় বলেও অনেকের এটা অপছন্দ। মনে রাখতে হবে, এটা এগুলোর গুণ হিসাবে দেখা উচিত। বেশী চিবোনোর জন্য খেতে সময় বেশী লাগলে আমাদের ভক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রক মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস সক্ষমভাবে কাজ করতে পারে। ওজন বশে রাখায় এটা বেশ কাজে আসে। তন্তুসমৃদ্ধ আস্তদানার গমের আটা ও মোটা লালচে চালের ভাত অনেকক্ষণ পাকস্থলীতে থেকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বহুক্ষন ধরে শক্তি যোগাতে থাকে, কৃত্রিমভাবে তাড়াতাড়ি খিদে পায় না। সঙ্গে অঙ্কুরিত ছোলা এবং ডাল (সবুজ খোসাওয়ালা মুগ, বিনস) জাতীয় খাবার থাকলে ভালো হয়। পরিভাষায় একে লেগুমস (legums) বলা হয়ে থাকে। এতে যথেষ্ট তন্তু ও প্রোটিন থাকে। পূর্ণদানার শস্যবীজকে আমরা ভালো শর্করা বলব। ভালো শর্করায় অতিরিক্ত গুণ হিসাবে পাওয়া যাবে রোগপ্রতিরোধকারী এন্টিঅক্সিডেন্টস, “ই” ও “বি” শ্রেণীর ভিটামিন ও স্বাস্থ্যকর বহুশৃঙ্খলের অসম্পৃক্ত স্নেহ জাতীয় খাদ্যাংশ (polyunsaturated fatty acid)।

    পরিশোধিত শস্যদানা থেকে প্রস্তুত প্রক্রিয়াকৃত খাবারে (যেমন পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, কুকিজ, চানাচুর, পাস্তা, নূডলস, পিৎজা ইত্যাদি) তন্তু ও ভিটামিনবিহীন শর্করা থাকে সেটা আমাদের শরীরে চিনির মত কাজ করে। এই ধরনের চাল বা আটা / ময়দা থেকে প্রস্তুত করা খাবার রক্তে সুগারের ও ট্রাইগ্লিসারাইডের (এক ধরনের রক্তে প্রবাহমান স্নেহ জাতীয় পদার্থ) মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ও পেটে চর্বি জমতে থাকে। এর সাথে সাথে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায় আর ওজন বেড়ে যাবার জন্য হাঁটু ও অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ বা অতিমাত্রায় প্রকট ধরণের নিরাময়ের অযোগ্য বাতের রোগ (osteo-arthritis) সৃষ্টি করে। বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম ডেভিসের মতে পরিশোধিত শস্যদানা একটি নিখুঁত মধুমাখা বিষ, যেটা নেশা ধরায় আর তিল তিল করে নিশ্চিতভাবে হৃদরোগ আর ডায়াবেটিসের মত অনিরাময়যোগ্য রোগের দিকে ঠেলে দেয়। সাদা পাউরুটির দুটি স্লাইস ছ’চামচ চিনি আর একটা চকলেটের বারের চেয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা বেশী পরিমাণে বাড়ানোর ক্ষমতা ধরে।

    আমাদের প্রপিতামহগণ হলদে সোনালি গমের আটা আর লাল মোটাদানার ভাতে ক্ষুন্নিবৃত্তি করে স্বাস্থ্যখাতে নিয়ন্ত্রিত খাতে বেশ বেঁচে বর্তে ছিলেন। বিগত পঞ্চাশ বছরে জিনের ওপর খোদকারী করে উচ্চফলনশীল খর্বাকৃতি শস্যের বিপ্লবের মাধ্যমে স্বল্পসময়ে অনেক বেশী করে শস্যদানা উৎপাদন করে শস্যভান্ডার গড়ে তুলেছি। ফলে অদূর ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা এড়ানো গেছে। অধিক ফলনশীল শষ্যের স্বাস্থ্যের উপর নিরাপত্তার নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা করা হয়নি। নতুন ধরণের এই গমে “পরিবর্তিত ধরণের গ্লায়াডিন (gliadin)” নামে একধরনের প্রোটিন থাকে যেটা গম জাতীয় খাবারের গ্লুটেন (gluten)-এর সমগোত্রীয়”। গ্লুটেন এন্টেরোপ্যাথি নামে একধরনের আন্ত্রিক রোগ ছাড়াও গ্লায়াডিন আমাদের মস্তিষ্কে আফিং (morphine) জাতীয় রাসায়নিকে রূপান্তরিত হয়ে “ভালো লাগা” (feel good effect) ধরনের নেশা ধরায় ও খিদে বাড়ায়। দেখা গেছে, পরিশোধিত সাদা আটা ও ময়দার খাবার দিয়ে পেট ভরাতে হলে দৈনিক প্রায় ৪০০ কিলোক্যালোরি বেশী খাওয়া হয়ে যায়।২০০৪ সালের এক গবেষণায় (Ludwig 2004, Lancet), লাল আটার চেয়ে সাদা আটায় ইঁদুরদের পেটে ৭১ শতাংশ বেশী চর্বি জমে যায়।

    দীর্ঘমেয়াদী ভাবে সাদা শস্যদানা খাওয়ার জন্য খাবার অব্যবহিত পরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা উচ্চমাত্রায় পৌঁছে যায়।এমতাবস্থায় রক্তের বিশেষ কিছু প্রোটিনের সাথে শর্করার বিক্রিয়ায় (glycation) “এডভান্সড গ্লাইকেসন প্রোডাক্টস (AGP)” তৈরী হয়ে যায়। এডভান্সড গ্লাইকেসন প্রোডাক্টস রক্তনালীর প্রদাহের (inflammation) এক অন্যতম কারণ। অধুনা প্রকট হয়ে আত্মপ্রকাশ করা বিভিন্ন হৃদরোগ ও সেরিব্রাল স্ট্রোকের কারণ হিসাবে পরিশোধিত শস্যদানা একটা প্রধান নিয়ন্ত্রক। এই ধরনের শ্বেতসার (শর্করা, কার্বোহাইড্রেট) খাবার ফলে উদ্ভুত উচ্চ মাত্রার রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রন করার জন্য অধিক মাত্রায় ইনসুলিনের ডাক পড়ে। দীর্ঘসময় অতিমাত্রায় ইনসুলিনের প্রভাবে শরীরের কোষসমূহে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমতে থাকে (insulin resistance)। এর অবধারিত ফল হিসাবে পেটে এক বিশেষ ধরনের ক্ষতিকারক সক্রিয় চর্বি জমতে শুরু করে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হল এর অন্তিম পরিণতি।

    আমাদের খাবারের মূখ্যভাগ হিসাবে অপরিশোধিত শস্যদানার ফাইবার বা তন্তু রক্তে চিনির মাত্রা আস্তে আস্তে বাড়ানোর সুফল ছাড়াও আরও উপকার করে। মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে। ঝাড়ুদারের ভূমিকা পালন করার মত পৌষ্টিক তন্ত্রের রোগজীবানু ও অন্যান্য ময়লা সাফ করে। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়। অন্ত্র থেকে রক্তে কোলেষ্টেরলের মিশ্রণ কমায়। অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগের প্রকোপ হ্রাস করে। শস্যদানা সমৃদ্ধ খাবার রক্তে অম্লতা বাড়িয়ে দেয়, যেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য হাড়ের থেকে ক্যালসিয়ামের ডাক পড়ে। হাড়ের ক্যালসিয়াম কমে গেলে হাড় ভেঙ্গে যাবার প্রবনতা বেড়ে যায়।

    খাবারের শস্যদানার নির্বাচনের সময় তার সঙ্গে অংকুরিত ডাল ও ছোলা জাতীয় খাবার (স্প্রাউট, লেগুম) অন্তর্ভুক্ত করলে বিশেষ লাভ হবে। এতে প্রয়োজনীয় ফাইবারের সাথে সাথে ভিটামিন ও বেশ খানিকটা প্রোটিনও পাওয়া যাবে। প্রাকৃতিক ভিটামিন কৃত্রিম রাসায়নিক উপায়ে প্রস্তুত ভিটামিনের চেয়ে বেশী কাজে আসে। অংকুরিত শস্যদানার শর্করা খাবারের থালায়ই মলটোজে পরিণত হয়ে হজমের প্রথম ধাপ পেরিয়ে থাকে। বদ হজমের সম্ভাবনা নির্মূল করে। খাবারে শস্যদানার সাথে কাঁচা বাদাম জাতীয় খাবার মিশিয়ে খাবার প্রস্তুত করলে বিশেষ উপকার হয়। এতে রক্তে চিনির মাত্রা কমে ও উপকারী অসম্পৃক্ত ফ্যাট পাওয়া যায়, যেটা রক্তের ক্ষতিকারক লঘু ঘনত্বের কোলেস্টেরল কমায়।

    খাবারে শস্যদানা মুখ্য অংশ অধিকার করে থাকলেও এর অপরিহার্যতা সব বৈজ্ঞানিকগন স্বীকার করেন না। কৃষি-প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আগে আদিম মানুষ শস্যদানা ছাড়াই জীবিকা নির্বাহ করত। শস্যদানার এই বিকৃত রূপে অভ্যস্ত হবার পিছনে ব্যবসায়িক ষড়যন্ত্র আছে। পরিশোধিত শস্যদানায় মধ্যেকার জার্মের অংশ না থাকার জন্য গুদামে আর খাবারের দোকানের আলমারিতে বহুদিন পর্যন্ত শস্যদানা সংরক্ষন করা যায়। আসলে আমরা শস্যদানা ছাড়াই বেশ সুস্থ থাকতে পারি। সেটা বড় বিপ্লব। যতক্ষন না সেটা সম্ভব হচ্ছে, শস্যদানার পরিমাণ কমানো ও তার গুনমান পরিবর্তন করা জরুরি। রান্নাঘরে এই বিপ্লব করতে পারলে আমাদের শরীর আমাদের প্রচেষ্টা কে অনেক ধন্যবাদ দেবে। “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”-প্রবচন টা ভুলে ভরা। কোন মা যেন এটা বিশ্বাস না করে। ইস, আমার স্কুল জীবনে আমাকে যদি এ সব কথা বিশ্বাস জাগানোর মত করে কেউ বলতো!

    একনজরে
    পূর্ণদানার শস্যবীজের উপকারিতাঃ
    ১। ত্রিশ শতাংশ সেরিব্রাল স্ট্রোকের সম্ভাবনা কম।
    ২। পঁচিশ শতাংশ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা কম।
    ৩। ত্রিশ শতাংশ হৃদরোগের সম্ভাবনা কম।
    ৪। স্থূলতা হ্রাস।
    ৫। হাঁপানির প্রকোপ কম।
    ৬। বিভিন্ন প্রদাহজনিত (inflammatory disease) রোগের বোঝা কম।
    ৭। রক্তচাপ বশে রাখা সম্ভব।
    ৮। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে চিরতরে মুক্তি।
    ৯। বৃহদান্ত্রের ক্যান্সারের সম্ভাবনা কম।
    ১০। সুস্থসবল দাঁত ও মাড়ি।

    যে কারণে পরিশোধিত শস্যদানা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে
    ১। তন্তু বা ফাইবার ও ভিটামিন বর্জিত
    ২। সাদা আটা ও ময়দায় ক্ষতিকারক গ্লুটেন ও গ্লায়াডিনের উপস্থিতি
    ৩। সুদৃশ্য ও সুগন্ধযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিকের ও ব্লিচিং পদার্থের ব্যবহার
    ৪। উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও উচ্চ গ্লাইসেমিক লোডের বৈশিষ্টের জন্য খাবার সাথে সাথে দ্রুত ও উচ্চমাত্রায় রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি। এর ফলে প্রথমের দিকে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি ও পড়ে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা হ্রাস।

    পরিশোধিত শস্যদানার বিকল্পঃ
    ১। পূর্ণদানার গমের আটা
    ২। বাদামি পাউরুটি, বহুরকমের শস্যদানা (multi-grain) থেকে প্রস্তুত (মাখন বা ভোজ্যতেল বিহীন) (নরম রং করা বাজার ছেয়ে যাওয়া ব্রাউন ব্রেড নয়)
    ৩। অপেক্ষাকৃত মোটাদানা ও লালচে চালের ভাত (কৃত্রিম উপায়ে পালিশ না করা)
    ৪। চিড়ে, মোটা চালের মুড়ি
    ৫। অংকুরিত ছোলা ও খোসাসহ ডাল
    ৬। ভুট্টা, বাজরা, জোয়ার, ওট

    গৌতম মিস্ত্রী, কোলকাতা, ২৮শে মে, ২৯১৬
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ মে ২০১৬ | ২০৯৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:১৮53817
  • গড় আয়ু হু হু করে বেড়ে গেল সাদা চাল খেয়েই।
  • দেবব্রত | 212.142.76.183 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:৩৪53818
  • আজ্ঞে গ্রিন রেভোলিউসন ফিলিপিন্স স্টাইল
    " On its 56th anniversary, IRRI still a failure

    In the wake of ‘El Nino Massacre’ in North Cotabato
    IRRI’s 2nd Green Revolution a failure, Filipino farmers still hungry and poor

    Los Baños, Laguna – On IRRI’s 56th anniversary, farmer-scientist group MASIPAG called on the institution to immediately shut down its operations in the Philippines as it failed miserably to address the impacts of climate change resulting to deeper hunger and poverty. " ৫৬ বছর ধরে গ্রিন রেভলিউসনের টুপি দেওয়ার পর পশ্চাতে লাথ
    " Last Friday, farmers coming from North Cotabato and nearby provinces in Mindanao held a barricade in Kidapawan City to call for rice subsidy as most of the farms were affected by the drought brought about by El Nino. Instead of addressing the farmers concerns, the protest was met by gunfire, with three farmers confirmed dead and scores of farmers, and possibly women and children, wounded." চাল চাইতে এলে গুলি খাওয়ার সবে শুরু ।

    “IRRI for 56 years fave failed the Filipinos! For many decades it has lured the farmers in using modern but high-input rice varieties that will supposedly ease the hunger of farmers. It did not even contented itself with its first Green Revolution, it is now promoting a Second Green Revolution purpotedly to address the effects of climate change on rice. But none of these grandiose projects has really lifted the lives and livelihood of the farmers. The Filipino farmers are still among the poorest and hungry among Asia” said Dr Chito Medina, national Coordinator of farmer-scientist group MASIPAG." কি হাল গ্রিন রেভলিউসনের

    " MASIPAG calls for the immediate closure of IRRI stating that the first Green Revolution wreaked havoc among the Filipino farmers. Thru the Green Revolution, farmers incurred huge amouts of debts as IRRI shifted the farmers sustainable agriculture practices into dependency to expensive external inputs such as modern seeds and chemical fertilisers." এটাই তো মডেল একবার পাঞ্জাবের দিকে নজর দেবেন অনন্ত দেনায় ডুবে আছে কৃষক ঐ গ্রিন রেভলিউসনের টুপি ।

    " The small farmers were left behind, as huge agrochemical TNCs and local businessmen gained and reaped the profit from the sale of seeds and other off-farm inputs such as chemical fertilizers and pesticides. " নইলে পুঁজিবাদ বাঁচে কি উপায়ে ?
    " With the Green Revolution, the farmers became entrapped with the high-cost and chemical-intensive agriculture system made worse by the abuse of loan sharks and huge rice cartels. In the end, the farmers who have been feeding the nation are food and financially poor." ইহাই গ্রিন রেভলিউসনের ভবিতব্য ।

    “Erosion of rice genetic diversity was drastic, with rice varieties in Philippines totaling to more than 4,000 were wiped-out and replaced by a few high-input varieties with narrow genetic bases. Rice varieties that have been part of the Filipino culture, whose traits that we as a country may benefit in this worsening climate, are now secured and controlled by IRRI. They are the ones who are profiting and gaining from our rice varieties” আমাদের দেশেও তাই ওই পাঁচ ছ রকমের উচ্চ ফলনশীল ধানের স্বার্থে বাকি সব জলাঞ্জলি - বিজ্ঞান বলে কথা ।

    The Green Revolution also affected the soil’s capacity to regenerate. “In the advent of the Green Revolution our healthy soil, which is the foundation of our food production, is becoming sterile as farmers are trying to raise yield by putting more and more fertilizers. Now the soil is acidic and very much degraded. We have to apply more and more fertilizers just to achieve the yield that we need in order to recover from our expenses” added Seguiro. Studies have also shown that the use of fertilizers, such as urea, greatly contributed to the release of greenhouse gases (GHG) contributing to global warming." এই হচ্ছে গ্রিন রেভলিউসন সার্বজনিক স্টাইল - আত্মহত্যার শর্টকাট ।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ০৭:৩৭53819
  • গেটেড কমিউনিটিতে ১৪ তলার ওপরের বসবাস কারি টার্গেট অডিএন্স দের সমাধান তো আছে! - ওই যে lcm লিখছেন, green revolution. :P

    যাই হোক lcm কে লিখে যাই, দেখুন আগের IR8 নিয়ে আলোচনাতেও আপনার এই মত দেখেছি, তাই এই নিয়ে তর্ক করে সময় নষ্ট করতে ব্যক্তিগতভাবে আমি নারাজ, একই কারণে confirmed চাড্ডিদের সাথে ইতিহাস আলোচনা করি না।

    আপনি green revolution এর বিজ্ঞাপন করে যান...
    আমরাও ঠেকানোর চেষ্টা করে যাই... কেন করে যাব তার কারণ অবশ্য আপনিই লিখে দিয়েছেন
    "কি করা যাবে, মানুষ বেশিদিন বাঁচতে চাইবে।"
  • Gautam Mistri | 212.142.76.113 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১০:২৪53768
  • এত সহজ ভাষায় আপনি স্বাস্হ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলি নিয়ে লিখছেন সেগুলি যদি গুরুচন্ডালী -র তরফ থেকে বই-এর আকারে প্রকাশিত হয় তবে আমার মতো পাঠকদের প্রভূত উপকার হয় ়
  • Gautam Mistri | 11.39.36.115 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১০:৩৪53769
  • উপরের মন্তব্যটি আমার নয়। কেমন করে হল জানি না। এই নিবন্ধটি ছাপার আকারে প্রকাশ করার জন্য আমি উৎস মানুষের কাছে ঋনী।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১০:৩৬53770
  • লেখাটা নিয়ে আলোচনার প্রচুর জায়গা, খুব দরকারিও... লেখাটাও, নানান পয়েন্ট তোলার জন্য, আবার আলোচনাও আসতে হবে, লেখাটার বহু বহু লিমিটেশনের জন্যই...

    ১) "পরিশোধিত শস্যদানা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে" নিয়ে অবশ্যই একেবারেই একমত... যে কেউই হবেন...
    কিন্তু প্রশ্নটা অন্য... আমাদের মত গরিব দেশে বাজারে পাওয়া 'whole grain' ট্যাগওয়ালা খাবার, যাদের দাম তুলনামুলকভাবে বেশী, সেইটার সমর্থন করা নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে, বিদেশেও এইরকম খাবারের দাম বেশী... মানে একটু বুঝিয়ে বলি... বাজায়ের এই ট্যাগওয়ালা খাবারও ব্যবসায়িক ষড়যন্ত্রই... নাহলে এইরকম খাবার এর দাম বেশী না হয়ে কম হওয়ার কথা, কারণ উৎপাদন খরচ এতে অনেক কম...

    বস্তুত, কৃষির অ্যাগ্রো-বিসনেস এ পরিণত হওয়া রুখতে হবে... এর উলটোদিকে দাঁড়াতে হবে... GM- crop থেকে processed food, এর বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে শুধু 'আচ্ছা বেশ স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ যখন তখন আর সামর্থ্য যখন আছে তখন whole-grain product কিনে খাই', এতে স্বচ্ছল মধ্যবিত্তর স্বাস্থ্য হয়ত টিকবে, কিন্তু এইভাবে "সবার জন্য স্বাস্থ্য" রূপকথাই থেকে যাবে...

    ২) "খাবারে শস্যদানা মুখ্য অংশ অধিকার করে থাকলেও এর অপরিহার্যতা সব বৈজ্ঞানিকগন স্বীকার করেন না। কৃষি-প্রযুক্তি উদ্ভাবনের আগে আদিম মানুষ শস্যদানা ছাড়াই জীবিকা নির্বাহ করত।" ---- এই জায়গাটা আজকের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য-পুষ্টি-খাদ্য রাজনীতির পরিসরে সরাসরি ইমপ্লিকেশন তুলনায় কম হলেও দার্শনিক ভ্রান্তিটা নিয়ে সচেতন হওয়া দরকার... একই কথা খাটে "যদিও এটা আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি নয়। " জাতীয় বাক্যের ব্যবহারের ক্ষেত্রে... "সহজাত" প্রবৃত্তি কথাটা, "প্রাকৃতিক" শব্দের মতই ভারী গোলমেলে শব্দ, প্রথমত 'প্রকৃতি' একটা অপরিবর্তিত ও অপরিবর্তনীয় 'জিনিস' নয়, প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল ও প্রতিটি জীব ( এবং অজৈব উপাদানরাও ) প্রতিনিয়ত 'তাকে' পরিবর্তিত করে চলেছে ও চলতে বাধ্য... এই 'প্রাকৃতিক' শব্দটার একটা নির্দিষ্ট রাজনীতি আছে, যা সরাসরি হোমোফোবিয়া, জেন্ডার ভায়োলেন্স, জেন্ডার্ড ভায়োলেন্স, জেন্ডার ডিস্ক্রিমিনেশন, হিংস্রভাবে প্রতিযোগিতামূলক সমাজ ও সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল ডারউইনিজমকে সমর্থন করে ও সেই সমর্থনের মতাদর্শগত ভিত্তি যোগান দেয়।

    আর "আদিম মানুষ শস্যদানা ছাড়াই জীবিকা নির্বাহ করত।" বলছেন হৃদরোগের চিকিৎসক গৌতমবাবু, এতে বেশ অবাক হলাম, কারণ সেই আদিম মানুষদের ডায়েট এর বড়সড় অংশ জুড়ে থাকত red meat...
    আমি ব্যক্তিগতভাবে red meat এর বিরোধী নই, কিন্তু আমার ধারণা গৌতমবাবু তাইই হবেন... তাই ওনার কাছ থেকে এই বাক্যবন্ধটা self-defeating.

    আপাতত এই।
    পুনশ্চ : আদিম মানুষ বা প্রায়-মানুষ বা তাদের পুর্বজ দের সাথে 'প্রাকৃতিক' এর যুক্তিটা যোগ করলে, গাছ না বেয়ে দুপায়ে হাঁটাও 'সহজাত' নয় ( anatomically modern humans দের সহজাত ই অবশ্য এইটা, কিন্তু earlier hominid দের নয় ), আর মানুষের agriculture, horticulture, animal husbandry, fishing, weaving, pottery কিচ্ছুই 'সহজাত' নয়, আর এই যুক্তি আর একটু ঠেললে symbolic thought, language এসবও নয় ( আমার কথা নয়, সত্যিই এরকম school of thought আছে, anarcho-primitivism, যা আমার মতে misguided ও তার সাথে anarchism এর ও কোন সম্পর্ক নেই ) ।
  • Gautam Mistri | 11.39.36.115 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১১:১৭53771
  • সহজাত অভ্যাসে অভ্যস্ত হবার জন্য কতটা পেছোতে হবে সেটা নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে। তবে কিছুটা পেছন পানে দেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। বক্তব্যে কিছুটা সিম্বলিক শব্দ প্রয়োগ ইচ্ছাকৃত ভাবেই করা হয়েছে। সেটা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য, বক্তব্যের সুর স্পষ্ট করার জন্য। খাদ্য সংস্কৃতি একটি অমীমাংসিত রহস্য। ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন খাদ্যরুচি। এরই মধ্যে যৎসামান্য রহস্যের সমাধান সূত্রের আভাস পাওয়া গেছে মাত্র। গরু ছাগলের এই সমস্যা নেই। তাদের জীবনের পরিমাণ ও মান বাড়ানোর তাগিদ ও উপায় নেই। মানুষকে জেনে নিতে হয় কোন খাবার তার পক্ষে মঙ্গলময়।
  • দেবব্রত | 212.142.125.67 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১১:৩৪53772
  • আদিম মানুসের খাদ্য তালিকায় মিট ( রেড ছাড়াও ) থাকলেও সেই সমস্ত মিটের কোনটাই প্রসেসড মিট ছিলোনা , সাথে সাথে তেল , চিনিও ছিলোনা হয়ত নুনও অতি সামান্য ছিল । নদীর মাছ , বুনো ফল , আখরোট ইত্যাদি বাদাম খাদ্য তালিকায় ছিল বলে জানি । তার সাথে ছিল শিকার ধরার জন্য 'সাডেন বার্স্ট ' দৌড়ানো , হাঁটা , যথেষ্ট বিশ্রাম । সুতরাং সেই প্যালিও ডায়েট যদি কিছুটা প্যালিও জীবন শৈলী সমেত আজকেও চালানো যায় -প্রায় আইডিয়াল ।

    আর এখনো ভারতের বিপুল পরিমাণ গ্রামবাসী রাগি /বাজরা /ভুট্টা /জোয়ার /চিঁড়ে /মুড়ি ইত্যাদি তাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেই রেখেছে -সমস্যা আমাদের মত শহরবাসী'র যেখানে আধুনিক হতে গিয়ে খাদ্যাভ্যাস তালগোল পাকিয়েছে , গৌতম দা'র লেখাটার টার্গেট অডিএন্স মনে হয় আমাদের মত শহরবাসী ।
  • dc | 120.227.240.249 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১১:৪৩53773
  • তাহলে কাল থেকে শিকার ধরে কাঁচা মাংস চিবিয়ে খাওয়া শুরু হোক।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১১:৫৩53774
  • আমি লেখার টার্গেট অডিয়েন্স বুঝিনি এমন নয়, আমার আপত্তি দুটো... আমার পয়সা আছে তাই whole-grain product কিনে খেতে পারির পিঠ বাঁচানো রাজনীতিতে সমস্যাটা মিটবে না, প্রকাশ্য ও সঙ্ঘবদ্ধ বিরোধিতা ছাড়া আরো বাড়বে।
    আর 'সহজাত' শব্দের রাজনীতি নিয়ে আগেই লিখেছি।

    আপনি যা লিখলেন তাই নিয়ে আপত্তি বিস্তারিত লিখতে হবে। আপাতত সংক্ষেপে লিখে যাই " সেই প্যালিও ডায়েট" বলে একটা কোন জিনিস নেই। ওইটা good old days of hunter-gatherer-forager societies এর একটা ফিকশন। যেমন আপনিই মাছের কথা লিখলেন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এর খুব গুরুত্বপূর্ণ সোর্স, অথচ fishing কিন্তু বেশ late invention.
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১১:৫৬53775
  • dc,
    কিচ্ছু না করে একেবারে কাঁচা মাংস চিবিয়ে মানুষ কোনদিনই খেত না, মানুষের দাঁত তার উপযুক্ত নয়।
  • dc | 120.227.240.249 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:০০53776
  • স্বর্ণেন্দু, আচ্ছা। আসলে আমি ভাবলাম কাল থেকেই সবাই প্যালিও জীবন শৈলী শুরু করে দিক আর প্যালিও ডায়েট খেতে শুরু করুক, মানে দৌড়ে গিয়ে শিকার ধরে একেবারে পেটে চালান আর কি।
  • Ekak | 53.224.129.41 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:০৮53777
  • সর্বদা একটা কুকারে মাংস রাখা থাকবে হীট মোড এ দিয়ে । খিদে পেলেই খাও । ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার । বোর লাগলে মাছ খাও বেক করে । আরও বোর লাগলে এট্টু ফল টল চিবিয়ে মুখ পাল্টালে । তবে ফল ঠিক চিবোনোর পর গিলে নেবার জিনিস না । থু করে ফেলে দেওয়াই কাম্য । রোজ প্রচুর মাংস ও হুসকি খাওয়ার ভালো দিক হলো দাঁত গুলো একদম ঝকঝকে থাকে , মুখে গন্ধ হয়না আর ঝিমঝিম করে ঘুম্পায়না ।
  • dc | 120.227.240.249 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:১১53778
  • আরে ছিছি পেলিও মানুষ কুকারে মাংস খেত নাকি? কুকারে মাংস বানালে পেলিও জীবন শৈলী হলো না।
  • দেবব্রত | 212.142.125.142 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:১২53779
  • রাজনীতি তো আছেই , ক্রমশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির রাজনীতি , প্রসেসড মিট থেকে মেলামাইন যুক্ত দুধের রাজনীতি , ব্রেস্ট ফিদিং এর বদলে বেবিফুডের রাজনীতি এবং আধুনিক অর্গানিক ফুড 'গ্রিন ক্যাপিটালিজম ' এর রাজনীতি - ১০ টাকা কিলো রাগি , কর্ণাটকের বিপুল অঞ্চলের স্ট্যপেল ফুড এখন প্যাকেটবন্দি করে ১০০/- কিলো দরে মলে পাওয়া যায় , আর এই মধ্যবিত্ত চাহিদায় ,টুকরো স্বাস্থ্য কেনার তাগিদে গ্রামের সস্তার রাগি শহরে চালান হয় ।

    গুড ওল্ড ডেস হান্টার গ্যাদারার সোসাইটি বিষয়ে মোহ নেই তবে সেই ডায়েটের অস্তিত্ব এবং উপকারিতা বিষয়ে সন্দেহও নেই । আজকে বাস্তব কিনা সে কথা ভিন্ন । মাছ ধরে খাওয়া বা ঠিক কবে খাদ্য তালিকায় প্রবেশ করল এই বিষয়ে সঠিক তথ্য আমার কাছে নেই তাই লেট ইনভেন্সন বা সমসাময়িক বলতে অপারগ ।
  • দেবব্রত | 212.142.125.142 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:১৮53780
  • সম্বর চটকে ভাত আর মাঝে মাঝে কার্ড রাইস উত্তম ,সেখানে মাংস আসছে কোত্থেকে ? দৌড়ান পোষাবেনা !
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:২০53781
  • খাদ্যাভ্যাসের আলোচনা ভীষণ জরুরী বিষয়, 'আধুনিক' খাদ্যাভ্যাস যেদিকে যাচ্ছে তা nothing less than suicidal. কিন্তু সেই আলোচনা good old days এর romantic fiction টা সরিয়ে না রেখে করা যাবে না, সেগুলো আলোচনায় আসবেই, নিজেদের দাবীতেই, idolize বা fictionalize করা শুধু অপ্রয়োজনীয় নয়, ক্ষতিকর। idolizing romanticism এর শেষ নেই, গৌতমবাবু থেমেছেন ঢেঁকিছাঁটা চাল এ, দেবব্রতবাবু খাদ্যশস্য নেই স্টেজ এ ...
    এইটা দুজনেরই মতের দার্শনিক ভ্রান্তির দিকটা, আর common জোরের দিক এইটা যে আমাদের খাদ্যাভ্যাস যা হয়েছে ও হচ্ছে আরো, তার সাথে সেঁকো বিষ খাওয়ার তফাত শুধু এইটুকুতে যে দ্বিতীয়টা less certain way to embrace agonizing death and in any case, even when it does lead to that, at least shortens the agony.

    সেই পয়েন্টটা ওনাদের খিল্লি করে মিথ্যে হয়ে যাবে না dc বাবু।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:২৭53782
  • upper paleolithic এর আগে fishing এর কথা কেউই দাবী করেননি, সেও sporadic বা কিছু জায়গায়...
    widespread fishing generally exclusively neolithic invention মনে করা হয়।
  • dc | 120.227.240.249 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:২৮53783
  • কেন, সম্বরের পর চেট্টিনাড চিকেন পদও থাকে তো! সে একেবারে ঝালেঝোলেতেলে সাংঘাতিক কান্ড! :d
  • dc | 120.227.240.249 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:৩৪53784
  • স্বর্ণেন্দু, আসলে খিল্লি করেছি ঐ পেলিও জীবন শৈলীটুকুই। আসলে গুরুতে আসার আগে জানতামও না এইসব বিকট বিকট ধ্যানধারনা নিয়ে আজও আলোচনা হতে পারে। পেলিও জীবন শৈলী, বিদ্যুত উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া, পবর মানুষের ছাগলত্ব প্রাপ্তি - চতুর্দিকে মণিমুক্তো ছড়ানো।

    এনিওয়ে।

    "খাদ্যাভ্যাসের আলোচনা ভীষণ জরুরী বিষয়, 'আধুনিক' খাদ্যাভ্যাস যেদিকে যাচ্ছে তা nothing less than suicidal।"

    একমত। তবে লাল চাল বা ব্রাউন রাইস কিন্তু দক্ষিন ভারতে এখনো অনেকে খায়, চালের দোকানগুলোতেও পাওয়া যায়। ডাক্তাররাও ব্রাউন রাইস খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই চালগুলোর দাম কম, খেতে অতি সুস্বাদু।
  • দেবব্রত | 212.142.125.142 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:৪০53785
  • খিল্লি করা খারাপ কিছু নয় ,অন্তত চুপ করে মহাজ্ঞানী থাকার চেয়ে ভালো । তবে যুক্তি সঙ্গত হোলে ভালো হয় নতুবা বক্তব্য কিছু নেই বলে ধরে নিতে হয় -অথবা স্রোতে গা ভাসানো । আপনি রেড মিটের কথা বললেন সেই প্রসঙ্গে প্যালিও যে মিট খেতেন বটে তবে তেল /চিনি ছিলোনা বা নুন হয়ত সামান্য । আর তার সাথে আমাদের গ্রামাঞ্চলের ডায়েটে রাগি /জোয়ার /চিঁড়ে মুড়ির অবস্থানের উল্লেখ -সুতরাং দেবব্রত বাবু খাদ্যশস্য নেই এই স্টেজে তা বোধহয় সম্পূর্ণ ঠিক নয় @sswarnendu
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৮ মে ২০১৬ ১২:৪৩53786
  • exclusively red meat based diet তো pre-neolithic, তাই খাদ্যশস্য নেই এই স্টেজের কথা বললাম।
  • dc | 132.174.185.54 (*) | ২৯ মে ২০১৬ ০২:৫৭53820
  • গ্রিন রিভোলিউশান নিয়ে কিছু তথ্য উইকি থেকে টুকলামঃ

    ১। ভারতে ১৯৬০এ চাল উৎপাদন ২ ট্ন/হেক্টার থেকে বেড়ে ১৯৯০এ ৬ টন/হেক্টার হয়। ফলে চালের দাম ১৯৭০ এ $৫৫০/টন থেকে কমে ২০০০ এ $২০০/টন হয়।

    ২। এর ফলে ভারতে ১৯৬০-৭০ এ মাস ফ্যামিন এড়ানো সম্ভব হয়। গ্রিন রিভোলিউয়্শান না হলে ঐ সময়ে ভারতে লক্ষ লক্ষ লোক অনাহারে মারা যেত।

    ৩। গ্রিন রিভোলিউশনের পর পার ক্যাপিটা ক্যালোরি ইনটেক দিনে ২৫% বেড়েছে। পৃথিবী জুড়ে গ্রেন প্রোডাকশন বেড়েছে ১৬০%।

    ৪। গ্রিন রিভোলিউশান না হলে সমপরিমান খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে বহু ইকোসিস্টেমকে ধংস করতে হতো। গ্রিন রিভোলিউশানের ফলে ১৮ থেকে ২৭ মিলিয়ন হেক্টর বাঁচানো গেছে, না হলে এই পরিমান জমিতে কৃষিকাজ করতে হতো। এর ফলে অন্তত ২ মিলিয়ন হেক্টর বন জঙ্গল সাফ হয়ে যেত।
  • dc | 132.174.185.54 (*) | ২৯ মে ২০১৬ ০২:৫৯53821
  • তবে আমার মনে হয় আজকের পৃথিবীতে খাদ্য সুরক্ষার পেছনে দুটো টেকনজিকাল ডেভেলপমনেট প্রায় একইরকম রোল প্লে করছেঃ গ্রিন রিভোলিউশান আর সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্ট। এই দুটো এখন একে অপরের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
  • dc | 132.174.185.54 (*) | ২৯ মে ২০১৬ ০৩:২৯53822
  • ইন ফ্যাক্ট ভারতবর্ষে কৃষিক্ষেত্রে যদি ডিপ সাপ্লাই চেন গড়ে তোলা যায় তাহলে খাদ্য সুরক্ষার প্রশ্নে আমরা আরো কিছুটা এগিয়ে যাবো। মাঝে মাঝে পেপারে বেরোয় যে প্রচুর পরিমানে চাল গম ইত্যাদি সরকারি গুদামঘরে পচছে, এটার সুরাহা হবে।

    সারা দেশের প্রতিটি চাষীর ঘরে ঘরে ফার্ম ইনপুটস, আর তার ঘর/মাঠ থেকে ফার্ম আউটপুট্স নিয়ে যাওয়া/আসার মতো আর সেগুলো সারা দেশে রিডিস্ট্রিবিয়্শান করার মতো সাপ্লাই চেন বানাতে হবে। তবে এটা ঠিক যে এই কাজ অল্প অল্প করে এগোচ্ছে, লজিস্টিকস, ওঅ্যারহাউসিং, রাউটিং ডিসিশান ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি এলিমেন্টগুলো আসতে আসতে আগের ুলনায় ডেভেলপ করছে। লক্ষ লক্ষ টন পচে যাবার মতো ঘটনা বোধায় আগামী দশ বছরে অনেকটা কমে আসবে।
  • আজিজুলদা | 198.138.9.41 (*) | ২৯ মে ২০১৬ ০৪:২৮53823
  • ভাতের থালায় চড়েই শয়তানদের শিং ওপড়াতে হবে ^X^
  • dc | 132.174.185.54 (*) | ২৯ মে ২০১৬ ০৪:৩৯53824
  • :d
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৯ মে ২০১৬ ০৪:৫০53825
  • স্বর্ণেন্দু,
    বোঝো! বিজ্ঞাপণ, সময় নষ্ট, ইতিহাস, চাড্ডি, তর্ক... এসব আবার কোথা থেকে এনে ফেললে। আরে বাবা, রেশনে দু সপ্তাহ চাল না এলে, কি হাল হয় সে তো জানো। সে হাল যেন কারো না হয় - গ্রিন অর ব্লু।

    দেবব্রত,
    ৭০-৮০ ব্ছর আগে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল, তা এখন আর প্রযোজ্য নয় - এমন হতেই পারে। বা, সেগুলোর বেটার ইমপ্লিমেন্টেশন হতে পারত। কিন্তু তখন তো আর ফিজিব্‌ল অল্টারনেটিভ কোনো উপায় ছিল না।
    ডিসি যে উদাহারণ দিয়েছে, এমন অনেক ফেমিন তো আটকানো গেছে।

    সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের খাবার কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে গবেষণা চলছে দুনিয়া জুড়ে, আবার কোনো বৈজ্ঞানিক রিভোলিউশন হবে।

    এই যে এখানে গৌতমববু এত নিঃখুতভাবে আলোচনা করছেন - ব্যাড কার্ব, গুড কার্ব - ডিটেইল্‌সে - এও এক রিভোলিউশন।

    জয় বিজ্ঞানের জয়।
    জয় টেকনলজির জয়।
  • dc | 132.174.185.54 (*) | ২৯ মে ২০১৬ ০৫:০৫53826
  • যেকোন পদ্ধতি বা যেকোন টেকনোলজির ভালো খারাপ দুদিকই থাকে। তার কারন যেকোন টেকনোলজি চেঞ্জ আনে - বদলে দেয়। এই ভুল আর ঠিকগুলো থেকে আমরা শিক্ষা নিই, নতুন টেকনোলজি ইনট্রোডিউস করি, নতুন ভুল করি, আবার শিক্ষা নিই। এই আর কি।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২৯ মে ২০১৬ ০৫:১২53861
  • দেবব্রত,
    আহা, এ তো ইতিহাস নয়, প্লেন অংক। ধরো, ১৯৫০ সালে ১০০ একর জমিতে ২ টন চাল হত। এবার গ্রিন রিভোলিউশনের ফলে ১০০ একর জমিতে ৬ টন চাল হল। এটা না হলে, ঐ ৬ টন চালের জন্য ৩০০ একর জমি লাগত। জঙ্গলে ভাগ পড়ত।

    ঐ যে জঙ্গলটুকু আজ আছে, ওটাও থাকত না, যদি না অল্প জমিতে বেশি ফলনের ব্যবস্থা করা যেত।
    যাই হোক, তবু তো গ্রিন রিভোলিউশনের জন্যে কিছুটা জঙ্গল রক্ষা হয়েছে।

    আচ্ছা, কনফার্মড চাড্ডি ব্যাপারটা কি? মানে যাদের সঙ্গে তোমার মতের ১০০% মিল হচ্ছে না তারা এইরকম কিছু। কিন্তু ধরো, কোনো বিষয়ে তোমার সঙ্গে আমার পুরো মতের মিল হল না, আবার কোনো বিষয়ে হল। আমার তো সবার সঙ্গেই জেনারেলি তাই হয়। সেটা তে অসুবিধে কি। একটু তো শুনতে হবে অন্য মত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন