এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বৃহন্নলা, ছিন্ন করো ছদ্মবেশ’

    Debabrata Chakrabarty লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৬ আগস্ট ২০১৬ | ২০২৬০ বার পঠিত
  • ৪৫ বছর ধরে তিনি নিখোঁজ । ১৯৭১এর ৫-৬ আগস্টে ময়দানে যদিও কেউ নাকি তার রক্তাক্ত দেহ পরে থাকতে দেখেছিল ,মাথা কেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল ম্যানহোলে প্রমাণ লোপের চেষ্টায় । অধ্যাপক দেবী প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি (শেল্টার) থেকে ৭১-এর চৌঠা অগস্ট রাত সাড়ে-এগারোটা নাগাদ সরোজ দত্তকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল রুণু-দেবী-তারাপদ’রা সেই থেকে পুলিশের খাতায় অথবা সরকারী মতে দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি এখনো নিখোঁজ । তিনি সেই কতিপয় বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম যার তীক্ষ্ণ অনন্য স্বর শাসকদের কাছে আতঙ্ক -ভেঙ্গে চুরমার করে মধ্যবিত্তের সযত্নে সাজানো মিথ। আমাদের দার্শনিক ইমারত ভেঙে চুরমার করে দেবার কারিগর সরোজ দত্ত । যিনি সমর সেনের ‘In Defense of Decadents’ প্রগতিশীলতার মোড়কে ধেয়ে আসা প্রচ্ছন্ন ফ্যাসিবাদী এলিওটিজমকে চিহ্নিত করেন ১৯৩৯এ । ১৯৬৯ সেই শানিত সরোজ দত্ত যুক্তি সাজান ভারতে একই সাথে বিদ্যাসাগর , রামমোহন এর মত ব্রিটিশ শাসকের অনুগত ব্যক্তিত্ব’র সাথে মঙ্গল পাণ্ডের মূর্তি ,বীরসার মুর্তি স্থাপিত হতে পারেনা । সিপাহি বিদ্রোহের অর্থাৎ ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের মূর্তি স্থাপন করতে হলে সেই বিদ্রোহের সমর্থকদের মূর্তি ভাঙা দরকার।

    সরোজ দত্তর নৈতিক প্রশ্রয়ে বা তাত্ত্বিক আস্কারায় নকশাল তরুণরা যে কালাপাহাড়ি তাণ্ডব চালিয়েছিল, তার ফলেই অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকের তথাকথিত মনীষীদের ধুপ-ধুনো জ্বালিয়ে পুজো করার বদলে যথার্থ মূল্যায়নের আগ্রহ শিক্ষিত বাঙালি সমাজে তৈরি হয়। সেই সঙ্গে সমগ্র বঙ্গীয় রেনেসাঁ বা নবজাগৃতির পুনর্মূল্যায়নের তাগিদও সৃষ্টি হতে থাকে। বিনয় ঘোষের মতো নিষ্ঠাবান গবেষক এই মূল্যায়নের কাজে হাতও দেন এবং নবজাগরণ সম্পর্কে তাঁর আগের ধারণা সম্পূর্ণ বর্জন করেন। আর রণজিৎ গুহের নেতৃত্বে যে নিম্নবর্গীয় ইতিহাস রচনার ধারা সূচিত হয়, তার প্রেরণা সমসাময়িক ইতিহাসে ওই নকশাল রাজনীতিরই চ্যালেঞ্জ। সরোজ দত্ত যার পথিকৃত ।

    সরোজ দত্ত ১৩২১ বঙ্গাব্দের ২১ ফাল্গুন বাংলাদেশের নড়াইল জেলার দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম হৃদয়কৃষ্ণ দত্ত, মা কিরণবালা দত্ত। নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর ১৯৩০ সালে কলকাতায় আসেন স্কটিশ চার্চ কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়তে। ওই একই কলেজ থেকে ১৯৩৬ সালে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাঠক্রমে ভর্তি হন। তার গোড়ার দিকের ঘটনাবলী আর দশটা লোকের মতোই! জন্মেছেন, পড়েছেন, পাশ করেছেন , চাকরি করেছেন, সংশয়েও ভুগেছেন। কিন্তু আর দশজনের মতো সেই তমসার তামাশায় তিনি জীবনটাকে বিলীন হতে দেননি! ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন সমাজ ও রাষ্ট্র নির্ধারিত বৃত্ত- ‘হেসে ওঠে দস্যু কবি অক্রোধের ক্লীবলজ্জা ছেড়ে, তামসীর তৃপ্তির দিন সাঙ্গ হলো তমসার তীরে’!

    কলেজে থাকতেই কমিউনিস্ট পার্টির গণসংগঠনে যুক্ত হন, জেল খাটেন। তবে শিল্প-সাহিত্যের সঙ্গে তার ওঠবসটা নিয়মিতই ছিল। ১৯৩৮ সালে এমএ পাস করার পর যোগদান করেন প্রগতি লেখক সঙ্ঘে। এই সময় থেকেই সরোজ দত্তর কবিতা প্রকাশ হতে শুরু করে। ১৯৩৯ সালে সহ-সম্পাদক হিসাবে যোগ দেন অমৃতবাজার পত্রিকায়। পরে কর্মী-ধর্মঘটে যোগ দিয়ে চাকরি খোয়ালে ‘পরিচয়’ ও ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় সম্পাদনার কাজে যুক্ত হন। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে সিপিআইএম তৈরি হলে তিনি শেষোক্ত সংগঠনে যোগ দেন এবং দলীয় মুখপত্র ‘দেশহিতৈষী’র সম্পাদকমণ্ডলীতে যুক্ত হন। ‘শশাঙ্ক’ ছদ্মনামে তাঁর আগ্নেয় লেখাপত্র প্রকাশিত হতে থাকে। অতঃপর নকশালবাড়ি, দেশহিতৈষী থেকে দেশব্রতী এবং চারু মজুমদারের নেতৃত্বে সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা রূপে তাঁর বিকাশ। সরোজ দত্ত ক্রমে বামপন্থী বুদ্ধিজীবী থেকে উত্তীর্ণ হন বিপ্লবী বুদ্ধিজীবীতে, শেষে কমিউনিস্ট বিপ্লবীতে।

    কবি-ইন্টেলেকচুয়াল-সাংবাদিক সরোজ দত্ত-কে পুলিশ কেন খুন করল, এটা অনেকেই ভেবে পান না। কানু সান্যাল বা সন্তোষ রাণা-রা তো সরাসরি যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছিলেন, তার পরেও তো তাদের বাঁচিয়ে রেখেছিল রাষ্ট্র। কিন্তু সরোজ দত্তর বেলায় কেন…? কেননা সরোজ দত্ত জানতেন যে বিপ্লব একটা প্যারাডাইম শিফ্ট, এবং চূড়ান্ত পর্বে সেটা মননে। সহস্র বছরের ফিউডাল সাংস্কৃতিক হেজিমনি (আধিপত্য)-কে ভেঙে নতুন পাল্টা জনতার হেজিমনি গড়ার পথেই এগোচ্ছিলেন তিনি। সরোজ দত্ত ভয়ঙ্কর ,তার কলম জীবিত থাকলে শাসকের উলঙ্গ শরীর ঢাকার আর উপায় থাকেনা , বুদ্ধিজীবীর উপায় থাকেনা হ্যা হ্যা করে পুরস্কার মঞ্চে ওঠার । আর হয়ত তাই তার চলার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হল।

    সরোজ দত্ত শহীদ হওয়ার পর চারু মজুমদার ঘোষণা করেছিলেন: “কমরেড সরোজ দত্ত পার্টির নেতা ছিলেন এবং নেতার মতই তিনি বীরের মৃত্যু বরণ করেছেন।” হ্যাঁ, সরোজ দত্ত নেতা ছিলেন, এমন একজন নেতা যিনি স্ত্রী’র মুখে সাবধানে থাকার পরামর্শ শুনে উত্তর দিয়েছিলেন: “এইডা কি কইলা বেলা! যুদ্ধে কি শুধু বাহিনী মরব! আরে দুই একডা সেনাপতিরও তো জান যাইব!” নির্মম ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা।

    এই আগস্ট মাসেই ফ্রাঙ্কোর ফ্যাসিস্ত বাহিনীর হাতে লোরকা খুন হয়েছিলেন কিন্তু আজকের স্পেন সেই ১৯৩৬ এর ইতিহাস খুঁড়ে বার করছে আর অন্যদিকে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ (!) ও বাম আন্দোলনের অন্যতম দূর্গ এ ভারত বা এ বাংলায় শহীদ সরোজ দত্ত ও তাঁর নিহত ও শহীদ সাথীদের ইতিহাসকে জনসমক্ষে হাজির করতে বিচারালয়ের ‘ন্যায়াধীশরা’ রাজি হননি। রাষ্ট্রের ও সরকারের কর্ণধারদের কথা তো ওঠেই না। সত্যকে চাপা দিতেই ‘ভদ্রলোকেরা’ বেশি ব্যস্ত ! আর সেই ..........

    বর্তমান বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ~ সরোজ দত্ত

    তোমার বুদ্ধির সুধা, সুরা হল আঁধারে পচিয়া।
    হে অগ্নি পানিয়ে!! নিত্য জ্বলে তব ঘৃণ্য পাকস্থলি;
    কৌমার্য করিতে রক্ষা, আত্মরতি সম্বল তোমার,
    তোমার দুর্বল কন্ঠে স্বেচ্ছাবন্দী পাখির কাকলি,
    প্রাণশক্তি প্রাণহীণ, ধরিয়াছ প্রাণঘাতী নেশা,
    চরণে কাঁদিছে কায়া, ছায়া ভাবি হাসো উপহাসে,
    করেছ গতির রক্তে পঙ্গুতার প্রশস্তি রচনা,
    বিচ্ছেদ ভুলিতে চাহ বিরহের নিবীর্য বিলাপে।
    প্রসবের ব্যর্থতায় অভিমানী শৌখিন শাখার
    স্বার্থপর আত্মনাশ, বনস্পতি করিবেনা ক্ষমা,
    তৃষ্ঞায় শ্বসিছে তরু শিকড়ের শুন্য ভাণ্ড হাতে।
    সংবর এ ক্লীব কান্না! দেখনি কি মৃত্তিকা নির্মমা?
    রাজদণ্ড বহি ফিরে, শ্লথছন্দে রচিয়া বিলাপ,
    যে চাহে অলকা, তার নির্বাসন যোগ্য অভিশাপ।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৬ আগস্ট ২০১৬ | ২০২৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.76.175 (*) | ০৭ আগস্ট ২০১৬ ১১:১৪55534
  • অরণ্য ঃ- মূর্তি ভাঙ্গার রাজনীতি কেবল আক্ষরিক অর্থে মূর্তি ভাঙ্গা নয় - সেই নিয়ে অনেক বিতর্ক বর্তমান , অন্য কোন সময়ে । আমি বরং একটি অন্য স্মৃতি উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করি - আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই সমর সেন এবং সরোজ দত্তের বিতর্কের কথা । ১৯৩৮ সালে নিখিল ভারত প্রগতি সম্মেলনে কবি সমর সেন সাহিত্য (বিশেষ করে কবিতা) কিভাবে বিপ্লবে সাহায্য করতে পারে বা কবিতা ও প্রলেতারিয়েত বিপ্লবের সর্ম্পক নিয়ে একটা ইংরেজী প্রবন্ধ পড়েন যেটা পরে নিউ ইন্ডিয়ান লিটারেচারে ছাপা হয় " In Defence of the ‘Decadents’

    সরোজ দত্ত ‘অতি আধুনিক বাংলা কবিতা’ শিরোনামে তার তীব্র সমালোচনা লেখেন ‘অগ্রণী’ পত্রিকায়, সমর সেন তার জবাব দেন ছাপা হয় একই পত্রিকায় এবং একইসাথে সরোজকুমার দত্তের একটা দীর্ঘ ‘প্রত্যুত্তর’ও। সমর সেন সেই প্রত্যুত্তরের আর কোন জবাব করেন নি ; কিন্তু অনেক পরে, ১৯৭৭ সনে ‘উড়ো খৈ’-এ এই বির্তক নিয়ে মতামত রাখেন । সেই সময়ের বিতর্ক সমর সেনের মনে কতটা গভীর প্রভাব ফেলেছিল তার প্রমাণ ৫ দশক পরে উড়ো খৈ থেকে -----------

    [সমর সেন এর আত্মজীবনী ‘উড়ো খৈ’ থেকে…]

    " সরোজবাবুর সঙ্গে শেষ দেখা কবে হয়েছিল? খুব সম্ভব তিরিশের দশকের শেষে, দিল্লি যাবার আগে? একটি বন্ধু সবিস্ময়ে মনে করিয়ে দিলেন, ১৯৬৬-র জানুয়ারিতে একটি বৌভাতের নিমন্ত্রণে সরোজ দত্তের সঙ্গে আমার গল্পগুজব হয়, খেতে বসেছিলাম পাশাপাশি। মনে না থাকাটা অহমিকার দরুন নয়, ক্ষীণ স্মৃতিশক্তি প্রায়ই অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। অনেকদিন অদেখা প্রিয় বান্ধবীদের মুখ পর্যন্ত অস্পষ্ট ধূসর হয়ে আসছে।

    একটি বাংলা পত্রিকায় [নতুন পরিবেশ, শারদীয় ১৩৮৪] সেদিন সরোজ দত্তের কলমের তীব্র ধার আবার অনুভব করলাম। অতি আধুনিক বাংলা কবিতা বিষয়ে একটি প্রবন্ধের সমালোচনা, ১৯৪০-এ লেখা। সরোজবাবুর সংক্ষিপ্তসার ও তাঁর ভাষা অনুযায়ী আলোচ্য প্রবন্ধের বক্তব্য হ’ল: “(১) ধনতন্ত্রী সমাজে যে প্রগতি স্তব্ধ হইয়াচে বিপ্লবোত্তর সাম্যবাদী সমাজে সেই প্রগতি অব্যাহত চলিবে, অতএব প্রবন্ধকার আশাবাদী ও প্রগতিতে বিশ্বাসী; (২) ধ্বংসোন্মুখ ধনতন্ত্রী সমাজ ‘ডেকাডেন্ট’ অতএব এ সমাজে সত্য, শিব ও সুন্দরের সাধনা অসম্ভব এবং ‘ডেকাডেন্টস’ সাহিত্যই একমাত্র আন্তরিক সাহিত্য। এই আন্তরিকতার জন্য ডেকাডেন্টস হইয়াও তাঁহাদের সাহিত্যে বৈপ্লিবক শক্তিমত্তা বর্তমান। নজীর ইংরেজ কবি টি.এস.এলিয়ট–এর কাব্য; (৩) ধনতন্ত্রী সভ্যতার বর্তমান অবস্থার অন্তঃসারশূন্যতার যে-কোনোরূপ অভিব্যক্তিই বৈপ্লবিক শক্তি; (৪) কিষাণ-মজদুর লালঝান্ডা-ব্যারিকেড সংঘর্ষ লইয়া নাকি তাঁহাদের উত্তেজক সাহিত্য রচনার নির্দেশ বা ফরমাইস দেওয়া হইতেছে এবং ঐ সকল বস্তুর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তাঁহাদের না থাকায় রোমাণ্টিক হইবার ভয়ে ঐ নির্দেশ বা ফরমাইস তাঁহারা পালন করতে পারিতেছেন না।”

    সংক্ষিপ্তসার দেবার পর সরোজ দত্ত জোরালো ভাষায় বলেন যে:

    “ধনতন্ত্রী সভ্যতার বর্তমান অন্তঃসারশূন্যতার যে কোনোরূপ অভিব্যক্তিই বৈপ্লবিক শক্তি নহে, লিভিং, প্যাশনেট ও সেন্সেটিভ মনে এই অন্তঃসারশূন্যতার প্রতিক্রিয়াই প্রতিফলিত হয় বিপ্লবী সাহিত্যে, আন্তরিকতার খড়্গাঘাতে নিষ্ক্রিয় মস্তিষ্কবিলাস সেখানে মহূর্তে ভূলুণ্ঠিত হইয়া পড়ে। তাই একদা যখন রোমাঁ রোলাঁ গান্ধী-রামকৃষ্ণে বিশ্বাসী ছিলেন তখনও তাঁহার সাহিত্য বিপ্লবী সাহিত্য ছিল, প্রাক-বলশেভিক গোর্কীর সাহিত্যের বৈপ্লবিকতাকে বলশেভিকরা অস্বীকার করিতে পারেন নাই, অহিংস টলস্টয়ের সাহিত্য সর্ম্পকে লেনিনের প্রশাংসোচ্ছ্বাস তো বহুবিদিত। …মন যেখানে জাগ্রত ও জীবন্ত, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও প্রবাহমান পারিপার্শ্বিকতার আঘাতে সাহিত্যের উদ্দেশ্য ও ভাবাদর্শ সেখানে আন্তরিকতায় উদ্বেল এবং ক্রমবিবর্তনের পথে সত্য উপলদ্ধির অভিমুখে গতিমান। এই সত্য উপলদ্ধির পথে পরিবর্তনশীল ভাবাদর্শের প্রতিটি মুহূর্ত বৈপ্লবিক বেদনায়, উৎকণ্ঠায়, আর্তক্রন্দনে নিবিড়। ডেকাডেন্স-এর প্রতিটি বন্ধনরজ্জু ছেদনের সঙ্গে সঙ্গে তাই তাহার আর্ট হইতে যন্ত্রণায় আর্তনাদ ধ্বনিত হইয়া উঠে। শেষরজ্জু ছিন্ন হইবার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তাহার শান্তি নাই। এই অশান্তি, উদ্বেগ ও আর্তনাদ, মহাভুজঙ্গের নির্মোক পরিহারের এই প্রতিটি মুহূর্ত বৈপ্লবিক… ইহা নিষ্ক্রিয় মস্তিকজীবীর বিলাপ-বিলাস নহে।”

    সরোজ দত্তের বক্তব্য বলিষ্ঠ। উপসংহারে তিনি কবি-প্রবন্ধকারকে নির্বোধ, প্রবঞ্চক ইত্যাদি বলেছেন।

    বহুদিন পরে লেখাটি পড়ে মনে হ’ল সরোজ দত্ত ঠিক লিখেছিলেন। তিরিশের দশকের অনেক লেখক বোধহয় বিপ্লবীর অভিনয় করে বাহবার চেষ্টায় করতেন, তাঁদের আসল চেহারা সরোজ দত্ত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন।

    কিন্তু পরের দু-তিনটি পৃষ্টায় আক্রান্ত প্রবন্ধকারের জবাব পড়ে মনে হ’ল, ব্যাপারটা অত সহজ নয়। প্রবন্ধকার বলেছেন যে নিজেকে কখনো ‘বিপ্লবী’ বলেননি। তার কবিতায় যে টাইপের জীবন এবং আত্মপরিক্রমার কথা আছে, সে টাইপ বিপ্লবী নয়, মুমূর্ষ শ্রেণীর প্রতীক। অবক্ষয় এদের আকর্ষণ করে তার কারণ বোধহয় এই যে উদীয়মান কোন শ্রেণীর প্রাণশক্তি এদের নেই, বরং পাতিবুর্জোয়ার গভীরে এদের শিকড় ইত্যাদি। অবক্ষয় বিষয়ে সচেতনতা এক ধরণের শক্তি, কিন্তু এমন একটা সময় আসছে যখন সেই শক্তিটুকু দিয়ে চলবে না, তখন মন স্থির করতে হবে। যে কবি তাঁর ব্যক্তিসত্তা অটুট রাখতে পেরেছেন গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগ দিলে তাঁর উপকার নিশ্চয় হবে। আর… “He who is bent on living in a little cell, will be dying with a little patience.” প্রবন্ধকারের জবাবটা বালখিল্যসুলভ নয়, যদিও কোথাও একটা ফাঁকি রয়ে গিয়েছে। সরোজবাবুর প্রত্যুত্তরটা কিন্তু অনেকটা উকিলসুলভ। যেমন, কবিপ্রবন্ধকার যে পত্রিকার সাথে যুক্ত সেই পত্রিকায় তাঁকে এবং অন্যদের মাঝে মাঝে বিপ্লবী বলা হয়েছে: প্রবন্ধকারের কবিতায় বিপ্লবী সুলভ উক্তি আছে অতএব বিপ্লবী শব্দটি আরোপ করা অযৌক্তিক হয়নি ইত্যাদি; সে সময়কার মনোভাব বিষয়ে সরোজ দত্ত যা লিখেছিলেন তা উপভোগ্য – ” এখনও তাঁহারা আলগোছে গণস্পর্শ বাঁচাইয়া, ‘dozen or so’ হাত ধরাধরি করিয়া কিছুকাল আত্মপরিক্রমায় অতিবাহিত করিবেন, তারপর গণ-আন্দোলন আরম্ভ হইলে…তাঁহারা রাতারাতি স্বগতোক্তি পরিত্যাগ করিয়া গণ-কবি হইয়া বসিবেন। ” তবু নির্বোধ প্রবঞ্চক কথাগুলি অস্বস্তিকর ঠেকল, কেননা প্রবন্ধটি আমার লেখা ১৯৩৮ সালে; এম.এ. পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বৃত্তি পেয়ে তখন জীবনটা মন্দ কাটছিল না।

    তারপরে অনেক কাল অতিবাহিত হয়েছে। সাহিত্য বিষয়ে বির্তক নানা রূপ নিয়েছে, চল্লিশ দশকের শেষাশেষি রবীন্দ্রনাথকে ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করার প্রস্তাব উঠেছে, তারপর গান্ধী রবীন্দ্রনাথ আবার কম্যুনিস্টদের অনুরাগ আকর্ষণ করেছেন, নকশালপন্থীরা আবার তাঁদের বর্জন করেছেন। তিরিশ দশকের বেশ কিছু লেখক এখন বিগত। গণ-আন্দোলনে যোগ দিলেও অনেকে লেখক হিসেবে মহান হতে পারেননি; পার্টির ভাবাদর্শ অনেক সময় বাঁদর নাচ নাচিয়েছে। এর জন্য দায়ী অবশ্য গণ-আন্দোলন নয়, ‘লাইন’ বেঠিক হলে আন্দোলনে যোগ দিয়েও ব্যর্থতা আসে। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের মতো শক্তিমান লেখক পার্টির প্রভাবে কোনো মহারচনা করতে পেরেছিলেন? তাঁর বিচ্ছিন্ন ডায়েরিতে একটা অবিশ্বাসের ভাব তো স্পষ্ট হয়ে উঠে। তিরিশের দশকে ও পরে কবিদের মধ্যে সহজ ও বলিষ্ঠ ভাষায় লেখেন সুভাষ, সুকান্ত, পার্টির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু মাও থেকে মেয়াওতে সুভাষের উত্তরণ যুগান্তকারী কিছু একটা হয়নি এবং সুকান্ত বেঁচে থাকলে মস্কোমুখী সি.পি.আই-এর জালে আটকে পড়ার যথেষ্ঠ ভয় ছিল। সি.পি.এম.-এ অবশ্য সাহিত্যিক ও বিলেতফেরতের সংখ্যা অনেক কম, সাংসারিক বিবিধ ক্ষেত্রে সি.পি.আই.-এর মতো সি.পি.এম তাই গুছিয়ে নিতে বড়ো একটা পারেনি।

    তিরিশের দশকের শেষে নবীন কবিদের ভাষা স্বচ্ছ হওয়াতে আশার কারণ ছিল। তার আগে কবিদের অনেকেই ইংরেজির ছাত্র ও পরে অধ্যাপক হওয়াতে পেশার দোষে বড়ো বেশি পাউন্ড-ইয়েটস-এলিয়ট-অডেন চর্চা করতেন, কবিতার ভাষা ও ভাবভঙ্গি সাধারণ পাঠকের বোধগম্য হতো না। কিন্তু কিছুদিন কিছু কবির সহজ ভাষার পর ব্যাপারটা আবার গোলমেলে হয়ে গেল, খুব সম্ভব অনেকটা জীবনানন্দ দাসের ক্রমশ প্রসারিত প্রভাবের ফলে। জীবনানন্দের অসাধারণ শক্তি যাঁদের নেই তাঁদের সান্ধ্য ভাষা হজম করা কঠিন। তাঁরা গণ-আন্দোলনে গেলে দেশের দশের সুবিধা হবে না।"

    বামনদের জগতে এখন আর সাহিত্য বিতর্ক নেই বিতর্কের ঝাঁজ নেই সমর সেন বা সরোজ বাবুর তীব্র বিদ্রোহ নেই -কেমন যেন ন্যাতানো দেশলাই ।
  • dc | 181.49.209.169 (*) | ০৭ আগস্ট ২০১৬ ১২:৩১55535
  • বাপ্পো সেই ১৯৪০ সাল থেকেই বিপ্লব আসছে? আমি সেই ছোটবেলার থেকে শুনে আসছি বিপ্লব আসছে, কিন্তু সে যে পঞ্চাশ বছর ধরে আসছে সেটা জানতাম না। বিপ্লব দীর্ঘজীবি হউক :d
  • sm | 53.251.91.253 (*) | ০৭ আগস্ট ২০১৬ ১২:৪৮55536
  • এখনো এই পিছন পাকা নকশাল দের নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে? এরা জনগণের কি উবগারে এসেছে;সেটা অবিশ্যি গবেষণার বস্তু হতে পারে।
  • b | 24.139.196.6 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০১:০৯55569
  • পেইছি।
    লেখক অমল ঘোষ।

    প্রগ্রেসিভ স্টাডি গ্রুপ।
    ১৯৭৯ প্রকাশন
    মূল্যঃ ১৩ টাকা।

    মূলতঃ বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ ( বিনয় ঘোষ), দুন্দুভি পত্রিকায় প্রকাশিত " বৃটিশের বাণিজ্যতরী ও বিদ্যাসাগর" , সরোজবাবু ও চারুবাবুর বিভিন্ন লেখার রিজয়েন্ডার।
  • b | 24.139.196.6 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০১:১৮55570
  • আর ইয়ে, সরোজ দত্ত কবি হিসেবে , মাইরি বলছি, কল্লোলযুগের মেজোমাপের কবিদের থেকে খুব একটা তফাতে নেই।
  • Porte chaile paoya jay? | 55.250.56.22 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৩:০৭55571
  • অনুবাদ কি কি করেছিলেন কোনো তালিকা আছে? পূর্ণাঙ্গ বা অসম্পূর্ণ? দেবব্রতবাবু? কবিতা ও প্রবন্ধের কোনো সংকলন বা সমগ্র?
  • রৌহিন | 113.214.137.131 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৫:০৬55572
  • রঞ্জনদার লেখাটার জন্য অপেক্ষা করে রইলাম। এই পুরো আলোচনাটা পড়তে পড়তে একটা কথাই মনে হচ্ছিল বারবার - যতিচিহ্ন বলে কিছু হয় না। প্রতিদিন নতুন করে শিখি আর ভাবতে বসি - আগের ভাবনাগুলো কোথায় ভেসে যায়। একক, দেবব্রতদা - আপনাদেরকেও ধন্যবাদ - আলোচনাটা এই পর্য্যায়ে নিয়ে যাবার জন্য।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.216 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৫:৩৯55573
  • Porte chaile paoya jay? বাবু /বিবি
    সরোজ দত্ত অনুবাদ করেছেন রম্যা রল্যাঁর আত্মজীবনী ‘ শিল্পীর নবজন্ম ‘ ,তুর্গেনিভ ,ব্রেখট ,প্যাট্রিস লুমুম্বা , তলস্তয় , ক্রুপ্সকায়া ,মাওয়ের কবিতা , মায়াকোভস্কি ইত্যাদি

    ১ । “মরণে মেলেনি ছুটি / সরোজ দত্ত ঃ- সৃষ্টি ও সংকল্পে “ সম্পাদনা সুখেন্দু সরকার - শহীদ সরোজ দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটি এই বইটিতে কিছু অনুদিত এবং স্বরচিত কবিতা ,প্রবন্ধ , স্মৃতিচারণ বর্তমান ।
    ২। সরোজ দত্ত -কবিতা সংগ্রহ শহীদ সরোজ দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটি
    ( এই দুটি বই কলকাতা কফি হাউসের তৃতীয় তলায় ‘ বই চিত্রে “ পাবেন )

    ৩। সরোজ দত্ত রচনাবলী (তাও সম্পূর্ণ নয় ) শহীদ সরোজ দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটি প্রকাশ করেছিল বর্তমানে আউট অফ প্রিন্ট ।
    ৪। এবং জলার্ক প্রকাশ করেছিল সরোজ দত্ত বিষয়ে লেখার সংকলন বর্তমানে আউট অফ প্রিন্ট ।
    ( কলকাতায় থাকলে দিন সাতেক সময় দিলে ফটো কপি দেওয়া সম্ভব )
    এছাড়া দেশব্রতী দেখতে পারেন ( পুরানো সংখ্যা )

    অনলাইনে সরোজ দত্তর কবিতা এবং বিখ্যাত কিছু অনুদিত কবিতা পড়তে গেলে দেখুন ঃ- http://www.milansagar.com

    মায়াকভস্কির ‘Our March(1917)’ সরোজ দত্ত’র করা বঙ্গানুবাদ (অক্টোবর ১৯১৭)
    কাঁপে রাজপথ বিদ্রোহী পদভারে
    চরণে দলিত দম্ভের চূড়া যত-
    আমরা চলেছি উদ্দাম জলধারা
    মহাপ্রলয়ের মহাঝঞ্ঝার মত।

    অশ্বের মত ছুটে চলে দিনগুলি
    বছরবিলীন বিষাদ-আঁধার মাঝে-
    গতির দেবতা চাবুকে চালায় রথ,
    আমাদের বুক দামামার মত বাজে।

    কার পতাকায় আছে এত গাঢ় লাল?
    কে পারে বিঁধিতে বুলেটে মোদের প্রাণ?
    নেই আমাদের রাইফেল নেই সোনা;
    কিবা এসে যায়? কন্ঠে রয়েছে গান।
    সবুজ আগুনে প্রান্তর জ্বলে ওঠে,

    ফেটে পড়ে দিন আলোর আঘাত লেগে-
    রামধনু, তুমি বাঁকাও তোমার ধনু
    তুরঙ্গদল উধাও ঝড়ের বেগে।
    লক্ষ তারায় বিক্ষত নভপট,
    কিবা আসে যায়? কে থামায় এই গান?
    জানি একদিন এ আকাশ নেব জিনে
    নরজীবনেই স্বর্গে জিনিব স্থান।

    গাও গান গাও পান করো প্রাণভরে।
    রক্তে নাচুক বহ্নি চমৎকার-
    তুমুল ছন্দে স্পন্দিত হোক বুক
    কঠিন বর্মে উঠুক ঝনাৎকার।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.91.216 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৫:৫৩55574
  • Porte chaile paoya jay? এইটা মনে হচ্ছে সঠিক লিংক হবে ,না হলে খুঁজে বেড়াতে হবে http://www.milansagar.com/kobi/saroj_dutta/kobi-sarojdutta.html
  • ranjan roy | 127.222.23.49 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৬:২১55562
  • দেবব্রত,
    মাইরি, এটা অনেক বড় গুরু দায়িত্ব। আমার কাঁধ বোধহয় এত বড় বোঝা নেওয়ার পক্ষে---!
    কিন্তু মনে ইচ্ছে আছে তাই পুরনো কিছ ডকু সংগ্রহ করেছি, করে চলেছি। ধরুন, সিপিএম এর ভেতরে চিন্তা-১, চিন্তা-২, সূর্য সেন, সুবিনয় রায়--ইত্যাদি মতাদর্শগত ডকু--যা সিপিএম এর জন্মলগ্ন থেকে শুরু হয়েছিল। আমি তখন স্কুলের বাচ্চা, বড়দের কাছে নামগুলো শুনতাম খালি।

    আর এটা একা একজনের পক্ষে অসম্ভব। তবু কাউকে শুরু করতেই হবে। করতে হবে আলাদা করে ন
    নক্শাল আন্দোলন নয়, আজ গোটা বাম আন্দোলনের সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে।

    আমি একটু ছ্যাবলা আড্ডাবাজ টাইপের।ঃ((
    তবে আপাততঃ গুরুতে লেখা দুটো উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে অপ্রত্যক্ষ ভাবে আমার চিন্তা এসেছে। একটা দুবছর আগে শেষ হয়েছে ( ৯০ দশক থেকে আজকের কোন একটি গ্রুপকে ধ্রুবপদ করে)। আরেকটা চলছে, এটা বড় করে হবে। অনন্ত সিং এর MMG থাকবে। এটা নিয়ে কেউ বিশেষ কিছু লিখেছেন বলে জানি না। মেরি টাইলরের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ বাদ দিলে।
    আপাততঃ তাড়াহুড়ো না করে এইগুলো শেষ করে তবে আগামী বছর ওতে হাত দিলে ভাল হবে।

    অন সেকন্ড থটঃ
    আর দিল্লি পৌঁছে আমি একটা কয়েক পাতার লেখা লিখে এখানে পেস্ট করে দেব। কিছু প্রস্থানবিন্দু উল্লেখ করে।
    উদ্দেশ্য একটা বিতর্ক শুরু করা। সবাই নকশাল-মাওব্যথী হোন না হোন। একটা নো-হোল্ড বারড বিতর্ক হোক না! তাতে কল্লোলের বাকুনিন দর্শন ও থাকুক। এককের অঁতেপ্রেনার প্রেক্ষিতও ওয়েলকাম!
    হেব্বি হবে। উষ্মার পারদ চড়তেই পারে। পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব নয়।
    কিন্তু আমার করবদ্ধ অনুরোধ রইল যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত খোঁচাখুঁচি এড়িয়ে তথ্য ও যুক্তির পালটা তথ্য ও যুক্তি দিয়ে আলোচনা হোক।
    দাঁড়ান, আগামী শুক্কুরবার নাগাদ শুরু করছি।
    জয় গুরু!
  • ranjan roy | 127.222.23.49 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৬:৪৫55563
  • একক,
    আমি শুধু আলোচনা শুরু করতে পারি। কারণ এটা কে টেনে নিয়ে যাবার ক্ষমতা/পড়াশুনো আমার নেই।

    কবিতাঃ
    তখন সিপিএম এর নন্দ্ন গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠিত কবি কমলেশ সান্যাল, সমীর রায়, শ্যামসুন্দর মিত্র।
    শৈবাল পরবর্তী সময়ে গদ্যলেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেও সেইসব দিনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নির্মল ব্রহ্মচারী, আজিজুল হক , বীরেশ,প্রলয়েশদের সঙ্গে ভালো ছাত্রনেতা হিসেবেই বেশি পরিচিত।
    ওঁর নন্দনে কবিতা বেরোত।
    একটা লাইনঃ
    "বিপ্লবের কথাবার্তা অস্পষ্ট চকিত"।
    আদৌ পঞ্চাশের দশকের বাম কবিতার ঐতিহ্যের বাইরে নয়, ভাবাও হয় নি।
    আর তখন সিপিআইয়ের সঙ্গে যুক্ত কবিরা , ধরুন রাম বসু, যুগান্তর চক্রবর্তী, মঙ্গলাচরণ, তুষার চট্ট--এঁরা যা লিখছিলেন তার সঙ্গে নতুন জন্মানো সিপিএম এর কবিরা মাত্র শুরু করেছেন।
    বিষ্ণু দে, প্রেমেন্দ্র মিত্র, দিনেশ দাশদের মত সিদ্ধিপ্রাপ্তদের কথা ছেড়েই দিলাম।
    { সরি একক। অফিসে কাজ এসে গেছে। কাল দুপুরে দিল্লি পৌঁছে সন্ধ্যেয় তোমাকে লিখব]।
    আমার একটা বক্তব্য হল মাওয়ের কবিতার গন্ডায় গন্ডায় অক্ষম অনুবাদ (আমিও একটা করেছিলাম--খুব খারাপ ধরণের) সেই সময়ের নকশাল কবিতার সর্বনাশ করেছে। আর লেনিনের কবিতার অরুণ মিত্রের চমৎকার অনুবাদ এর সঙ্গে লেনিনের উক্তি--" ভালো গদ্য লেখার থেকে না ভালো-না মন্দ- কবিতা লেখা সোজা।ঃ))
    ব্যাপারটা বিষ্ণুদের করা মাওএর চমৎকার অনুবাদ পড়লেই বোঝা যাবে।
    ব্যতিক্রম সমীর রায়। ওঁর কবিতায় প্রকরণে বক্তব্যে প্রথা ভাঙার সাহস ও স্বাদ পেয়েছিলাম। বাকি দিল্লি ফিরে,}
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.125.47 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৮:০৭55564
  • মাওয়ের অনুবাদ বিষ্ণু দে এবং সরোজ দত্ত উভয়েই করেছিলেন , সাথে মায়াকভস্কি -আপনি যদি দুটি অনুবাদ পাশা পাশি রেখে একটা তুলনামূলক আলোচনা করেন । @রঞ্জন দা
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৮:৪৯55575
  • নকশালঃ বাংলার বীর

    খতরনাক পাবলিক, কিঞ্চিৎ নাক-উঁচুও বটে। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না বলে মাথা কিনেছেন। মাস্টারদা-ক্ষুদিরামের পর বাঙালির বোমাবাজির ফ্যান্টাসিকে এঁরাই বাস্তব করেছিলেন, সেই ব্যর্থ বিপ্লবের খোশবাই খেলিয়ে এখনও চলছে। এ জাতির সবচেয়ে দরদের বস্তুঃ 'সাকসেসফুল শহিদ', সে ইমেজে এঁরা বলে বলে ফার্স্ট। 'যত মত তত পথ' মন্ত্রের সাধকঃ মাও, চে, হো, লেনিন, স্তালিন, কানু, চারু, এবং মাও-লেনিন, চে-স্তালিন, চে-মাও, কানু-স্তালিন-শিবদাস-হো-হা, সহস্র পার্মুটেশন-কম্বিনেশনে ব্র্যাকেট রচনা করেই অ্যামিবার মতো সংগঠন ভাগ হয়ে যায়। আমাদের সবচেয়ে বিস্ফোরক এক্সপার্ট। পাশের গ্রহে ঝামেলা বাধাতে চাইলে আজই আমদানি করুন। হাই ডিসকাউন্ট।

    - চন্দ্রিল ভট্টাচার্য
  • ranjan roy | 127.198.12.229 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৮:৫৪55565
  • উরিত্তারা!
    দিল্লিতে তো কিছুই পাব না। যদি অনলাইনে কোন ভাবে ওই দুজনের অনুবাদ পাওয়া যায় বা স্ক্যানড্‌ কপি-- নিশ্চয়ই করব। অন্ততঃ পাঁচটি কবিতা ধরে ধরে করব, সার্বিক কমেন্ট ছাড়াও। বেশ উত্তেজিত বোধ করছি। কবিতা লিখতে পারি নে।
    কি্ন্তু আলোচনা করতে মুখিয়ে আছি।
    যদিও সেগুলো এ পাড়ার শিবাংশু/ইন্দ্রাণী (সিডনি) বা বাংলা লাইভ পাড়ার অরিন্দম চক্রবর্তীর সাথে পাতে দেওয়ার যোগ্য হয় না। অথবা এ পাড়ার সিকির কবিতা নিয়ে আলোচনাও খুব ভাল।
    কিন্তু আমি অন্ততঃ বিতর্কটা শুরু করাতে পারি, (হীরাভ'র মতঃ))। তাই বা কম কি?
  • b | 135.20.82.164 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ০৯:০৯55566
  • আমি এল্কটা বই পড়েছিলাম, এই মুহূর্তে বাড়িতে আছে। বইটার নাম ঃ মূর্তি ভাঙার আন্দোলন ও রামমোহন বিদ্যাসাগর। বলাবাহুল্য, নকশালীদের বই। অ্যান্টি সরোজ দত্ত ও বিনয় ঘোষ ফ্যাকশন।

    সেখানে উদ্ধৃতি তুলে তুলে দেখানো আছে কিভাবে বিনয়বাবু বিদ্যাসাগরকে মিসকোট করেছেন। অনেকটা এরকমঃ বিদ্যাসাগরের লেখা বাংলার ইতিহাসে এক জায়গাতে আছে 'ক্লাইভ ধূর্ত, শঠ ,যোদ্ধা ও কর্মঠ ছিলেন'। সেখানে বিনয়বাবু লিখলেন , বিদ্দেসাগরকে কোট করে, "বিদ্যাসাগর লিখেছেন, 'ক্লাইভ যোদ্ধা ও কর্মঠ ছিলেন।'"
  • 0 | 132.176.27.175 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ১২:২২55567
  • রঞ্জনদা, 'সে অগ্নি পানীয়' মনে হয় হবেনা। এই কবিতাটা আগেও গুরুতেই তিন'বার দেওয়া হয়েছিল। সেই সব্খানেও চেক করলাম। 'হে অগ্নিপানিয় !!' এইভাবেই আছে।
    মনে হয় সমসাময়িক বুদ্ধিজীবীদের পচে যাওয়া গ্রেম্যাটার থেকে তৈরী স্বার্থচিন্তার পানীয়কে অ্যাড্রেস করা হয়েছে :-)
  • 0 | 132.176.27.175 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৬ ১২:২৬55568
  • ধুৎ টাইপো :-( ** পানীয়ে, পানিয়ে
  • ranjan roy | 132.180.196.247 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ০২:১৬55581
  • @ একক,
    দেখ, নকশাল আন্দোলনের আগে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক বাম আন্দোলনের সাংস্কৃতিক যোগদান নিয়ে।
    কারণ, নক্শাল আন্দোলন কোন আকাশ থেকে পরা স্বয়ম্ভু আন্দোলন নয়; বরং বৃহত্তর বাম আন্দোলনের তেলেঙ্গানা/তেভাগার পথ ধরেই আসা। এর সঙ্গে জুড়েছে অনুশীলন/যুগান্তর দলের কার্যপদ্ধতির রেশ।
    তাই কবিতা/নাটক/গান নিয়ে একটু বলি। আমার মত ছাপোষা বাঙালী এই তিনটেতেই একটু আচ্ছন্ন থাকে। চিত্রকলা কেমন যেন আমাদের জন্যে নয়। গগন ঠাকুর বিনোদবিহারী, যামিনী রায় অবদি ঠিক আছে।কিন্তু ক্যালকাটা পেইন্টার্স, নিখিলেশ সুনীলের ছবি, বিজন চৌধুরী দেখে নিই। অবশ্যই বিকাশ ভট্টাচার্য। কিন্তু আরা/সুজা/গণেশ পাইন/ মানিদা এঁদের দেখে আনন্দ পাওয়া জন্যে যে একোয়ার্ড টেস্ট লাগে সেটা আমার এবং আমার মত অধিকাংশের নেই।
    ভ্যান্তারা ছেড়ে মূল বক্তব্যে আসি।
    কবিতা
    ======
    রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করবার তাগিদে কলম ধরা কল্লোল গোষ্ঠী বিষয়ে ট্রিটমেন্টে খানিক বৈচিত্র্য আনলেও ছন্দে, শৈলীতে ও কবিতায় যে একটা "অনুভবের এক্স" লাগে ( যার অভাবে কালীমাতাও সেক্স হয়ে যান)--সে ব্যাপারে আদৌ রবীন্দ্রনাথকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন কি না সন্দেহ আছে। অচিন্ত্য ও প্রথম দিকের বুদ্ধদেব বেশ রাবীন্দ্রিক। প্রেমেন্দ্র মিত্রের ও বুদ্ধদেব বসুর শেষের দিকের কিছু কবিতায় এর উত্তরণ আছে।
    রবীন্দ্রনাথের "ধন্য ধন্য হে রাজমন্ত্রী চরণে তোমার নমস্কার" এর সঙ্গে বুদ্ধদেবের একই আখ্যান নিয়ে লেখা "একটি মরচে পরা পেরেকের গান" দেখলেই তফাৎটা স্পষ্ট। কিন্তু এগিয়ে বোধহয় প্রেমেন্দ্রই, ব্যক্তিগত মত।
    উনি "আমি কবি যত কামারের,---- ইতরের" কবিতায় প্ফর্মে আধুনিক মেজাজ এনেছেন , কিন্তু রবীন্দ্রনাথের " সত্যমূল্য না দিয়েই সাহিত্যের খ্যাতি করা চুরি" বা " মাঝে মাঝে গেছি বটে ওপাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে"র গভীর সত্যকথনকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন নি।
    ব্যতিক্রমী মেজাজের সুধীন্দ্রনাথের কবিতায় যে বিদগ্ধ চতুর নাগরিক মনন পাই শাশ্বতী, উটপাখি বা সেই প্রবাদ প্রতিম লাইন-- মানুষের মর্মে মর্মে করিছে বিরাজ নরকের কীট-- যাকে বুদ্ধদেব বলছেন নাস্তিকতার নান্দীপাঠ --এর সার্থক উত্তরসূরী বোধহয় ব্সমর সেন; নাগরিক চেতনায়, ভাষায়, রূপকল্পে।
    বিপ্লব এনেছেন জীবনানন্দ ---ভাষায়, ভাবনায়, রূপকল্পে এবং বিষয়ে। এর সঙ্গে বলতে চাইব সঞ্জয় ভট্টাচার্য্যের কথা।
    "বিকেল সূর্যের দিকে ঠিক যেন ভোরে পাওয়া মন,
    আমি এক মহিলাকে দেখছি এখন।"
    বা, " রাত্রিতে জেগে ওঠে যে সাগর, অন্ধকারের সাগর, তুমি তাতে স্নান করে এস নীলিমা।"
    বাম কবিতার জন্ম নজরুলের হাতে (আমার মতে)।
    "গাহি সাম্যের গান" ,
    " এই ধরণীর ধূলিমাখা তব অসহায় সন্তান",
    " প্রার্থনা কর যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস"-- ইত্যাদি।
    বা লা ইন্টারন্যাশনালের অনুবাদ।
    সরোজ দত্তের কবিতায় নজরুলের প্রভাব স্পষ্ট-- বক্তব্যের ঝাঁজে, সোজাসুজি বলার বাগভঙ্গিমায়। পৌরাণিক রূপকল্পের ব্যবহারে।
    খেয়াল করুন" বৃহন্নলা, ছিন্ন করো ছদ্মবেশ"
    বা "আজিকে অর্জুন শিরে উদ্যত নটীর অভিশাপ"।
    কাজেই সরোজ দত্তের কবিতার শৈল্পিক মূল্যায়নে আমি ওপরে b এর বক্তব্যের সঙ্গে একমত না হয়ে পারছি নে।
    মূল বাম আন্দোলনের কবিদের থেকে প্রথাভাঙ্গল সুভাষ মুখোর হাতে। কিশোর সুকান্ত ভীষণভাবে রাবীন্দ্রিক। কবিতায় কম্যুনিস্ট আন্দোলনে ইডিয়ম সত্ত্বেও।
    সুভাষ যেমন
    "জাপ পুষ্পকে জ্বলে ক্যান্টন, জ্বলে হ্যাংচাও, কমরেড আজ বজ্রকঠিন বন্ধুতা চাও?
    লাল নিশানের নীচে উল্লাসী মুক্তির ডাক,
    রাইফেল আজ শত্রুপাতের সম্মান পাক", লিখেছেন বা 'মিছিলের মুখ" বা "মে দিবসের গান"; তেমনি আছে "ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত" বা "পাগল বাবর আলির চোখের মত ঘোলা আকাশ"। রাম বসু,বিমলচন্দ্র ঘোষ ( "ক্ষুধাকে তোমরা বেআইনী করেছ") যোগ্য সঙ্গত করেছেন।
    কিন্তু গোলাম কুদ্দুস "ইলা মিত্র ফুচিকের বোন, ইলা মিত্র স্তালিননন্দিনী" সরোজ দত্তের কবিতাকেই মনে করান।
    ( দোকান থেকে ফিরে বাকিটা, আজ লেখায় পেয়েছেঃ))।
  • Porte chaile paoya jay? | 55.250.56.22 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ০২:৩০55576
  • ১) লেনিনের স্মৃতি - নাদেদ্‌ঝা স্ক্রুপস্কায়া (NBA)
    ২) নানা লেখা - ম্যাক্সিম গোর্কি (NBA)
    ৩) বসন্ত প্লাবন - ইভান তুর্গেনিভ (ইস্টার্ন ট্রেডিং কোম্পানি)

    এই তিনটে ছাড়া কোনো অনুবাদ গ্রন্থের কথা জানেন কি?

    স্মৃতিরক্ষা কমিটির যোগাযোগের নাম্বার দেওয়া যায়?

    অগ্রণীতে বেশ কিছু লেখালেখি ছিল আশা করা যায়। প্রবন্ধ বা এই চিঠি-চাপাটির চাপান-উতোর নিশ্চয়ই বইতে গেছে, কিন্তু অগ্রণী থেকে বাকি লেখাপত্র সংকলিত হয়েছে? কারণ অগ্রণীর সমস্ত সংখ্যা এখনো কোথাও পাওয়া যায় নি বলেই জানি।
  • ranjan roy | 132.180.196.247 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ০৩:৩১55582
  • সিপিএম জমানায় নন্দনের কবিরা অনেকেই সুভাষ মুখো ও সুকান্তের অক্ষম অনুকরণের বেশি এগোতে পারেন নি। পুর্ণেন্দু পত্রীর মধ্যে সম্ভাবনা ছিল, বেশ কিছু ভালো কবিতা লিখলেন। কিন্তু আর বাম শিবিরে রইলেন না।
    একটি নমুনাঃ
    সম্ভবতঃ ১৯৬৯ এ দ্বিতীয়বার যুক্তফ্রন্ট সরকার ভাঙার পরিস্থিতে লেখাঃ
    'আকাশে বাতাসে বিষম দ্বন্দ্ব
    কে আগে কাড়বে যুথীর গন্ধ,
    কার হাতে বড় নখ?
    স্বর্গে মর্তে যে যার গর্তে
    যুথীকে গলার মালায় পরতে
    ভীষণ উত্তেজক।
    মেঘের ভঙ্গী গোঁয়ার মহিষ,
    রোদ রাগী ঘোড়া সূর্য সহিস
    ব্জ্র বানায় বোমা।
    বিদ্যুৎ চায় বিদীর্ণ মাটি,
    গাছে গাছে খাড়া সড়কি ও লাঠি
    নদী গিরিবন ভয়ে অচেতন
    থ্রম্বোসিসের কোমা।

    আকাশে বাতাসে ভীষণ যুদ্ধ,
    যে যার উপরে ভীষণ ক্রুদ্ধ,
    কার হাতে বড় গ্রাস।
    কেবল যুথীই জানে না সঠিক,
    কে তার পরমাশ্চর্য প্রেমিক,
    চোখে জল বুকে ত্রাস।'

    বাম রাজনীতির অবগাহনে বাংলা কবিতার পালাবদলের ঐতিহ্যে বোধহয় এখন শংখ ঘোষই শেষ কথা।
    নকশাল আন্দোলন বাংলা কবিতার মূল ধারায় বিশেষ কোন অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারেনি বলেই আমার মনে হয়। যেমন চিত্রবাণীর সেই বেলজিয়াম ফাদার ( গাস্তঁ রোবের) বলেছিলেন-- পলিটিক্যাল বক্তব্য ও শ্লোগান থাকলে সেই সিনেমা একটি পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিটি হতে পারে, কিন্তু পলিটিক্যাল সিনেমা নয়।
    তারপর বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন কেন মূল গল্পের থেকে স্বাধীনতা নেওয়া অপু ট্রিলজি একটি রাজনৈতিক ফিল্ম। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় চারুলতাও তাই।
    মনে হয় কবিতা বা যে কোন শিল্পের ক্ষেত্রেই ওই উক্তিটি একটি মানক।
    তাই নকশাল আন্দোলন নবারুণের "এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না" ছাড়া কোন ভাল কবিতা বা অন্দোলনের জন্ম দিতে পারে নি।
    ১৯৬৭-৬৮ এ চেকোশ্লোভাকিয়ায় রুশী ট্যাংক ঢুকল।
    কেউ লিখলেন--" প্রতিবিপ্লবের মধ্যে প্রতিবিপ্লব"।
    পূজো সংখ্যা দেশব্রতীতে কবিতা বেরোলঃ
    "শোধনবাদের দুই কুকুরে ঝগড়া করে চেকে,
    মুখোশ দিয়ে মুখটারে আর যায় না ঢাকা রেখে,
    কে যে সতী, কে অসতী যাচ্ছে না তা বোঝা,
    মার্কিন আর বৃটেনে তার চলছে সাক্ষী খোঁজা।
    কে যে আগে প্রেম দিয়েছে কে দিয়েছে দেহ,
    তাই নিয়ে আজ সতী পাড়ায় এ ওকে সন্দেহ।
    সতীপাড়ায় কী করে আর মুখ দেখাব দিদি!
    চেকভূমিতে পাঠিয়েছি তাই সৈন্য প্রতিনিধি।
    পাঠিয়েছি ট্যাংক-বোমা আর আর্সেনিকের শিশি,
    মিটলে খেউড় সব সতীতে ঘষব দাঁতে মিশি।।

    এই কবিতা বা ছড়া শুধু তাৎকালিক রাজনৈতিক প্রয়োজন মিটিয়েছে বলেই মনে হয়।
    অথচ প্রথম দিকে কিছু কবিতা সম্ভাবনা জাগিয়েছিল।
    গোর্কির"সং অফ স্টর্মি পেট্রেল" এর প্রভাবে ব্রজেন দাশগুপ্ত লিখেছিলেন--
    সমুদ্রে জোয়ার এল
    তুমি সিন্ধুপারগামী ঝড়ের পাখি।
    -------
    বলত তোমায় কোথায় রাখি?
    ইচ্ছে হয় ভেঙে ফেলি যক্ষপুরী-----"।
    আবার প্রৌঢ় প্রাক্তন তেভাগার সংগ্রামী সন্তোষ যখন লেখেনঃ
    " শিলিগুড়ি শিলনোড়া ভাঙিল দাঁতের গোড়া,
    প্রমোদ প্রমাদ গুণি ছাড়েন হুংকার,
    -- গর্দানা লইয়া আয় সান্তাল ব্যাটার!
    কে দিল হুকুম তোরে কে দিল হুকুম,
    বিপ্লবের পাকসাট তুই কি বুঝিস?
    পাকায়ে ফেলিনু চুল, আমাদের হবে ভুল?
    মুখস্থ বলিতে পারি লেনিন-স্তালিন,
    অংক কষে বলে দিই কী হবে কখন,
    কুকথা বলিস তুই -- ঠ্যালাখানা বোঝ বাছাধন!

    চিতা জ্বলছে চিতা জ্বলছে
    কার্তিক সর্দারের সোমত্থ মেয়েটার চিতা জ্বলছে--।
    ওগো, তোমরা একটু তাড়াতাড়ি কর,
    অনেকটা পথ উজিয়ে যেতে হবে যে!"
    তখনও মনে হয় সেই তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে কবিতার বলি চড়ানো।

    আগেই বলেছি অরুণ মিত্র লেনিনের লেখা একটি কবিতার অনুবাদ ( সে এক ঝোড়ো বছর, ঝঞ্ঝা ছেয়ে ফেলল চারদিক।) এর মুখবন্ধে বলেছিলেন যে লেনিন বন্ধুদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে কবিতাটি লিখেছিলেন এটা দেখাতে যে 'ভালো গদ্যের চেয়ে না-ভালো-না-মন্দ কবিতা লেখা অনেক সহজ।'
    নকশাল আমলের অধিকাংশ কবিতাই এই ফ্রেমে বাঁধা।
    রাম বসুর অনুবাদে হো চি-মিনের প্রিজন ডায়েরির কবিতাগুলোর মত এখানে কিছুই সৃষ্টি হয় নি।
    কমলেশ সেনের কথা ছেড়েই দিলাম। আমার প্রিয় অধ্যাপক অমিয়ভূষণ চক্রবর্তীর অনুবাদে মাওয়ের লং মার্চ কবিতাটির হাল দেখুনঃ
    আমাদের এই লালফৌজের কিছুই ছিল না ভয়,
    লং মার্চের বাধা ও বিপদ করবই মোরা জয়,
    যে কাজ মোদের করণীয় তার অংশ বই তো নয়।
    -------------
    পাঁচ-পাঁচটা পর্বতমালা সামনে রয়েছে খাড়া,
    ঝোড়ো সমুদ্রে ঢেউয়ের মতন উঁচিয়ে শিখরচূড়া।
    ছড়ানো লম্বা লোহার শেকল খাদ পার হই টাটু নদীর,
    মুঠোর ভেতর কি ঠান্ডা লোহা,
    তবু পৌঁছই অপর তীর।
    চলার আবেগে সব করি জয় যেন সামান্য ঢেউ,
    ভয়ে পেছোয় না কেউ,
    রুক্ষ পাহাড়ি প্রাচীর উমাং ডিঙিয়ে যাই,
    কতশত গিরিপথে চলি তার অন্ত নাই।"

    এটা পড়ে হতাশ হয়েছিলাম-- কী করে পাবলো নেরুদা মাওয়ের কবিতায় এশিয়ার মহত্ত্বের ছবি দেখতে পেয়েছিলেন!
    কিন্তু বহ পরে বিষ্ণু দে'র অনুবাদ পরে বুঝলাম-- সত্যিই মার্ক্সিস্ট আইকনদের মধ্যে মাওই কবি।
    হাতের কাছে নেই, থাকলে দেখা যেত বিষ্ণু দে সফল হয়েছেন কারণ উনি মান্দারিন ভাষার কাব্য পরম্পরা ও ছন্দ ধরে সেই স্ট্রাকচারে অনুবাদগুলো করেছেন। অন্যেরা সেসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সোজাসুজি শব্দার্থ ধরে ধরে বাংলা কবিতার স্ট্রাকচারে নামিয়েছেন-- ফলে যা হবার!
    তাই আমরা পড়ি কুনলুন, চাংশা কবিতাগুলি আর ভাবি কবিতা লেখা কি সহজ!
    " এই তো আমি খেয়ে উঠলাম চাংশা নদীর জল আর উচাংয়ের মাছ,
    এই পাহাড় দেখেই ঋষি বলেছিলেন--"।
    ইত্যাদি।
    [একক,
    তুমি একটা সোজাসাপটা প্রশ্ন করেছিলে--আমি এক অযুত নিযুত কাহন বকবক করলাম, যেটা অদরকারী। বুড়োর বকবকানি ভেবে হেসে ছেড়ে দিও।]
  • Ekak | 53.224.129.40 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ০৪:৫০55583
  • এইযে আপনি উদ্ধৃত করলেন এবং লিখলেন যে :

    "পলিটিক্যাল বক্তব্য ও শ্লোগান থাকলে সেই সিনেমা একটি পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিটি হতে পারে, কিন্তু পলিটিক্যাল সিনেমা নয়।
    তারপর বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন কেন মূল গল্পের থেকে স্বাধীনতা নেওয়া অপু ট্রিলজি একটি রাজনৈতিক ফিল্ম। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় চারুলতাও তাই।
    মনে হয় কবিতা বা যে কোন শিল্পের ক্ষেত্রেই ওই উক্তিটি একটি মানক।"

    এইটাই বারংবার বলতে চাইছি । যে শিল্পের ভাষায় কুলি-মজুর আনা বা রবীন্দ্র বদলে মাওয়ের মূর্তি রাজনীতি নয় । রাজনীতি যখন সফলভাবে শিল্প কে আক্রমণ করে তখন সেটা শিল্পের রাজনীতির জন্ম দেয়। যেটা আমরা পাশ্চাত্যে বারংবার দেখতে পাই । সেটা ওদের মতোই পাথরের ভাস্কর্য্য হতে হবে তার মানে নেই , লোকায়ত শিল্প থেকে উঠে আসা কুঁড়েঘরের দেয়ালের গ্রাফিত্তিও হতে পারে । কিন্তু সত্যি বলতে এইটা পাইনি বাংলায়। না রুরাল না অর্বাণে । আমি দেখেছি বাঙালিরা মারামারি করছে দেয়ালে কার রাজনৈতিক বাণী থাকবে তাই নিয়ে । কিন্তু কোনোদিন দেখিনি একদল শিল্পী উন্মাদের মতো শহরের দেয়াল ভরিয়ে দিচ্ছে শৈল্পিক গ্রাফিত্তি দিয়ে যা স্ট্রাকচারালি এটাক করছে আমাদের ফিউডাল নান্দনিকতার বোধকে । এইসব দেখে দেখেই বাংলায় সাংস্কৃতিক বিপ্লব -ভাঙার আহ্বান শুনলেই কেমন সোনার পাথরবাটি মনে হয় ।

    যাইহোক , কোনো অপিনিওনে পৌঁছবো না হুট্ করে । আপনি বিশদে লিখছেন । আরও লেখা আশা করছি ।
  • b | 24.139.196.6 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ০৫:০৮55584
  • রঞ্জনদা,
    "বি,
    । আপনি দেশে ফিরলে জেরক্স করে নেব। আমার চাই।"

    আমি না, ইয়ে, দেশেই থাকি। আপনার ঠিকানা / ই মেল আই ডি জানাবেন। ১৮ তারিখের পরে পাঠাবার চ্যাষ্টা করুম।
  • ranjan roy | 132.180.196.247 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ০৬:২৭55585
  • বি,
    আমি থাকি বাঁশদ্রোণীতে; কিন্তু আপাততঃ কালীপূজো অব্দি মেয়ের আশ্রয়ে দিল্লির অলকনন্দায়।
    আই ডিঃ [email protected]
    কিন্তু আপনি কি সেই বি ন'ন যাঁর অভিষিক্তা বা তার পাশে ফ্ল্যাট আছে, কিন্তু কর্মসুবাদে আম্রিকায়। এবং মাঝে মাঝে গুরুর পাতায় ছোট ছোট দারুণ সব লেখা লিখতেন?
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.103.90 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ১০:০১55577
  • @Porte chaile paoya jay? লিখছেন স্মৃতিরক্ষা কমিটির যোগাযোগের নাম্বার দেওয়া যায়? , নিশ্চয়ই দেওয়া যায় , এবিষয়ে সরোজ দত্তের পুত্র বাপ্পা বাবু সবথেকে বিশ্বস্ত সূত্র তার টেলিফোন নাম্বারও দেওয়া যায় - আপনি আমার মেল অ্যাড্রেস [email protected] এ মেল করতে পারেন অথবা ইনবক্স ।
  • ranjan roy | 132.180.196.247 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ১২:৩৪55578
  • বি এর সঙ্গে অনেকটাই একমত।

    আরে, অমল ঘোষ বিলাসপুরের বিখ্যাত ঘোষ পরিবারের( আটজন কৃতি ভাইয়ের একান্নবর্তে পরিবার ছিল )একজন, কয়েক বছর আগে প্রয়াত।
    সেই পরিবারের ডঃ পুর্ণেন্দু ঘোষ তেভাগার রাঙা ডাক্তার। মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে সুন্দরবনের জঙ্গলে কৃষকদের প্রাথমিক এইড ও স্বাস্থ্য বিষয়ে শর্ট কোর্স শিখিয়ে পার্টির মেডিকেল কোর গড়ে তুলেছিলেন। কংসারি হালদার, অশোক বোস ( বিদ্যুৎ) এর জুনিয়র সহযোগী ছিলেন।
    নকশাল আমলে অমল ঘোষ সহ তিনভাই জেলে যান। বিলাসপুরে কম ফি নিয়ে গরীবদের চিকিৎসা/ সার্জারি সব করতেন। নাটক অভিনয় করাতেন।
    কাছের গাঁয়ে আট আনায় কার্ড করিয়ে চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেছিলেন। হাড়ের ক্যনসারে মারা যান, স্ত্রীর চোখ নিজের হাতে তুলে একজনকে দিয়েছিলেন।

    সেতু সাহিত্য পরিষদ ও সেতু সাহিত্য পত্রিকা শুরু করেছিলেন। ওঁর বাংলায় লেখা ৪০/- দামের প্রিভেন্টিভ মেডিসিন এর বই আমার কাছে অনেক দিন ছিল। এখন নেই।
    অমল ঘোষ নিয়মিত সেতু প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর যতদুর মনে পড়ছে চেরাবান্দারাজুর কবিতা বাংলায় অনুবাদ করে বিক্রির টাকা চেরাবান্দারাজুর বিধবাকে পাঠিয়েছিলেন।
    বি,
    এখন ওই বই বিলাসপুরেও পাওয়া যাবে না। কারণ পরের প্রজন্ম আগ্রহী নয়। ওঁর ছেলে বেণুও প্রয়াত।
    কিন্তু ভাল ডকু। প্লীজ ধরে রাখুন। আপনি দেশে ফিরলে জেরক্স করে নেব। আমার চাই।

    সরোজ দত্তের ওপরের তিনটে ছাড়া শিল্পীর নবজন্ম ( রোমাঁ রোলাঁর I will not rest এর বাংলা) পড়েছি।
    সরোজের কবিতার আঙ্গিক অবশ্যই কল্লোল যুগের কথা মনে করায়।
    আচ্ছা, মার্ক্স এর কবিতা, স্তালিনের কবিতা, চারুবাবুর লেখা গান (মুক্ত হবে প্রিয় মাতৃভূমি) এগুলো কি খুব ভালো কবিতা? জনগণ কী বলেন?
    একজনকে কি multi-tasker হতেই হবে?
    এঁরা কবিতা লেখা ছাড়া যা করেগেছেন সেটুকু কি যথেষ্ট নয়?
  • ranjan roy | 132.180.196.247 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ১২:৩৯55579
  • হ্যাঁ, গোর্কীর "নানা লেখা"র অনুবাদটি আমার ছোটবেলাতেও ভালই বিক্রি হত। তুর্গেনেভের অনুবাদও। সাংবাদিক ও অনুবাদক হিসেবে সরোজ দত্ত অনেকেরই শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন।

    কবিতায় সত্যজিৎ কে নিয়ে তির্যক মন্তব্য আছেঃ
    "বড়ুয়া বানায় ছবি
    ------
    এ কোন মাণিক
    চরুকে করেছে পারু পরম কৌশলে?"
    এ রকম কিছু একটা।
    তবে দোলের কবিতা মন্দ লাগে নি।
    হাতের কাছে নেই।
    দেবব্রত একটু বেগার খাটবেন নাকি?ঃ))
  • Ekak | 53.224.129.60 (*) | ০৯ আগস্ট ২০১৬ ১২:৫১55580
  • আবার ফোকাসের বাইরে :):)

    ওনারা বারংবার সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দাবি করেন । ওনারা বলেন ফিউডাল সংস্কৃতি , রামমোহন -রবীন্দ্রনাথ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা । সেই কারণেই প্রশ্ন আসে যে ওনারা ঠিক কী নতুন জিনিস দিতে পেরেছেন আর্ট এর জগতে । সে কবিতা হোক বা স্কাল্পচার বা মিউসিক । হতেই পারেন কেও "ভালো" কবি । সেট রবিবাবু থেকে মোহিতলাল ও "ভালো " কবি । কিন্তু এখানে ভালো-মন্দের বিচার আদৌ হচ্ছে কী ? বিচার হচ্ছে একটা দাবির যাথার্থ্যের যে আর্ট এর জগতে আগের সবকিছু নস্যাৎ করে নতুন কী যোগ করলেন সরোজ প্রমুখ নকশাল কবিরা ?? বা নকশাল পেইন্টার রা । বা নকশাল স্কাল্পটোৰ রা । যদি থেকে থাকেন ।

    এর মধ্যে মাল্টি টাস্কার -কবিতা না লিখলে কী হয়েছে এসব প্রশ্ন আসে কোদ্দিয়ে ?? আপনার চোখের দুপাশে ঘোড়ার ঠুলি পড়াতে হবে :):) খালি ইদিক উদিক দিয়ে ফোকাসের বাইরে চলে যান :(:(
  • h | 213.132.214.87 (*) | ১০ আগস্ট ২০১৬ ০১:২৩55611
  • সরকার কে ভেতর থেকে চাপ দিলেই হবে।
  • h | 213.132.214.87 (*) | ১০ আগস্ট ২০১৬ ০১:২৮55612
  • এবং বাইরে থেকে। ইসরাত জাহান কেস এ তো কেস করা গেছে। আর অনেক কথা বেরিয়েও যাছে।
  • dc | 132.164.232.95 (*) | ১০ আগস্ট ২০১৬ ০১:৩২55613
  • সরকারকে চাপে রাখা অবশ্যই দরকার। যেকোন ডেমোক্রেসির শর্তই হলো সরকারকে চাপে রাখা, যার জন্য আন্দোলন, নানারকম মিডিয়াতে নানান আলোচনা হওয়া অতি অবশ্য দরকার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন