এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মন কি বাতঃ এক দেশদ্রোহীর জবানবন্দী

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৭০৩৮ বার পঠিত
  • (এই লেখার মূল অডিয়েন্স গুরুর জনতা নয়, মূলত গুরুর বাইরের জনতাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা। ব্লগের লেখা, এখানেও তুলে দিলাম। বিশেষ ধন্যবাদ রৌহিনকে, আর শাক্যজিৎকে)

    (১)

    লেখা শুরু করার আগে ডিসক্লেইমার দিয়ে রাখা ভালো, যা দিনকাল চলছে। কে কখন কোথা থেকে সিডিশন চার্জ ফার্জ লাগিয়ে দেবে, জানা তো নেই, দিল্লি ঘেঁষে বাস করি, বহুকালের চেনাশনা বন্ধুরাও আজকে কেমন কিছু ইস্যুতে পোলস অ্যাপার্ট হয়ে যাচ্ছে, ঘরের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছি – আর পিছু হঠবারও জায়গা নেই। পাকিস্তানে যাবার হুমকি বেশ কয়েকবার পেয়ে গেছি, দেশদ্রোহী তো বাই ডিফল্ট হয়েই গেছি কানহাইয়াকে সমর্থন জানিয়ে – তাই ডিসক্লেমার দিয়ে রাখা ভালো।

    ডিসক্লেমারঃ

    ১) আমি ভারতীয় নাগরিক, আজন্ম। তবে আমৃত্যু থাকব কিনা, সেটা এখনই বলতে পারছি না।
    ২) দেশপ্রেম বলতে আপনারা যা বোঝেন, আমার মধ্যে তা নেই, কিস্যু নেই। আর্মিতে যোগদান করারও ইচ্ছে নেই, ভারতীয় আর্মিকে মহান ভাবি-টাবি না, দেশকে আমার মা-ও ভাবি না, আমার একটাই মা, দ্যাশের বাড়িতে আছেন।
    ৩) দেশপ্রেমী নয় মানেই যাঁরা দেশদ্রোহী ভেবে ফ্যালেন, তাঁদেরও সবিনয় নিবেদন, না, ভারত নামক দেশের বিরুদ্ধে যাবার কোনও রকমের বাসনা আমার নেই। ভারতের বরবাদীও চাই না। হ্যাভিং সেইড দ্যাট, এগুলোও জানিয়ে রাখি, আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেই, বাংলাদেশের নিপাত চাই না, সিরিয়া, ইরাক বা আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি বা আমেরিকা – কারুরই বরবাদী চাই না।
    ৪) ভারতের সংবিধানে, ওয়েল, ভরসা আছে, তবে “বিশ্বাস” নেই। এমনিতেই আমি নাস্তিক মানুষ, বিশ্বাস ফিশ্বাস শুনলে কেমন ঠাকুর দেবতা মনে হয়, আর সেগুলোতে আমার প্রভূত ঝাঁট জ্বলে। সংবিধানকে ভগবান মনে করি না। সংবিধানে ভরসা আছে, যদিও পুরোটা পড়া নেই, তবে এটুকু জানি সংবিধানে আমার সুরক্ষার জন্য একটা লাইনও লেখা নেই। সব ধর্মের প্রতি সমান নজর দেবার কথা আছে, জাত-ধর্মের বেসিসে বিভেদ না করার কথা বলা আছে, কিন্তু ধর্মহীন জাতহীন নাস্তিকদের জন্য ওই বইতে কিছুই লেখা নেই। লেখা নেই সমকামীদের ব্যক্তিগত যৌন অধিকারের কথা, লেখা নেই আরও অনেক কিছুই, তবু ভরসা আছে, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, সুষ্ঠুভাবে আজও চলছে – যে ফর্মেই হোক না কেন, সংবিধানে ভর করেই চলছে। সংবিধানটা কমপ্লিট নয়, আজও অ্যামেন্ডমেন্ট চলছে। একদিন কমপ্লিট হবেই, আশা রাখি।
    ৫) ইন্টিগ্রিটির কেসটা একটু ঘাঁটা আছে, যদি বলেন কাশ্মীরকে দেশের ইন্টিগ্রাল পার্ট বলে মনে করি কিনা, তা হলে একটু তোতলাবো, কারণ কাশ্মীরকে আমি সত্যিই ভারত কর্তৃক জোর করে ধরে রাখা একটা স্বাধীনতাকামী ভূখণ্ড বলে মনে করি, এখন ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট, তার একটা বড় অংশ ভারত রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত, সেটাকে আমি সম্মান করি, কিন্তু এই যে অধিকাংশ কাশ্মিরী নিজেদের ভারতীয় মনে করেন না, তাঁরা আজাদী চান – ভারত, পাকিস্তান দু দেশের থেকেই আজাদী, তাঁদের সে ভাবনাকেও আমি সম্মান করি। আমি নিজে কাশ্মীরিদের আজাদীর জন্যে হাতে কালাশনিকভ তুলে নেব না, স্লোগান দেব না, এ ওঁদের লড়াই ওঁরাই ঠিক করবেন হিংসার পথে আজাদী হাসিল করবেন না অন্য পথে, তবে এক কথায় যদি ধরেন, বলব, কাশ্মীরিদের কাছে হিংসা ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা রাখে নি আমাদের ভারতীয় রাষ্ট্র, ভারতীয় জাতীয়তাবাদ এবং সর্বোপরি, ভারতীয় সেনাবাহিনি।
    ৬) জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতকে সম্মান করি, তবে সিনেমাহল-এ জাতীয় সঙ্গীত বাজলে বসে থাকি, উঠে দাঁড়াই না।
    ৭) জন্মেছিলাম একেবারে ন্যাংটো একটা শিশু হয়ে। ভারতেই জন্মাবো, বাঙালি হয়েই জন্মাবো, হিন্দু ব্রাহ্মণ ভরদ্বাজ গোত্র মেনেই জন্মাবো – এমন কোনও প্ল্যান ছিল না। সব আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে জন্মের পরে। কথা বলতে পারতাম না কিনা তখনও, তাই আমার মতামত কেউ নেয় নি। তাই এগুলোকে আমি স্রেফ ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট হিসেবেই বয়ে চলি, এর জন্য আলাদা করে কোনও গর্ব বা ঘেন্না অনুভব করি না। হ্যাঁ, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে আমি আমার পরিচয় থেকে হিন্দু ব্রাহ্মণ ভরদ্বাজ অ্যাট্রিবিউটগুলো সরিয়ে দিয়েছি। না, অনুষ্ঠান করে নয়, নিঃশব্দেই সরিয়েছি। ধর্ম জাত গোত্র আমি প্রাণের ভেতর থেকে ঘেন্না করি। যারা গোরুকে মা বলে মনে করেন এবং গুজরাত দাঙ্গাকে জাস্টিফাই করার নিরন্তর চেষ্টা করেন, আর যারা শুওরের মাংসকে “হারাম” বলে মনে করেন আর ইসলাম বাদে বাকি ধর্মকে “ইনফিরিয়র” বলে মনে করেন – দুই দলকেই আমি সমান অপছন্দ করি। ইনসিডেন্টালি, আমি গরু শুওর, দু রকমের মাংসই খাই।

    এবার প্রসঙ্গে যাই।

    (২)

    শুরুতে একটা গল্প শোনাই বরং। চেনা গল্প, অনেকেই জানেন। তাও শোনাই। আমার দেশ, মেরা ভারতের মহানতার গল্প।

    ১৯৪৭ সালের পরে ভারতের পূর্বদিকের একটা অংশ পূর্ব পাকিস্তান নামে জন্ম নেয়। মূলভূমি, পশ্চিম পাকিস্তান থেকেই অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সামলানো হত, এবং যেহেতু পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক নীতি পূব পাকিস্তান মানত না, তাই পশ্চিম পাকিস্তান সেখানে অকহতব্য দমন-পীড়ন চালাতো। পূব পাকিস্তান বলল, আমরা নিজেদের পাকিস্তানের অংশ মানি না, আমরা স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চাই। পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচার আরও বেড়ে গেল পূব পাকিস্তানের ওপর। বেছে বেছে বুদ্ধিজীবিদের খুন, হিন্দু মুসলমান তোয়াক্কা না করে। মেয়েদের ধর্ষণ করছে, পুরুষদের অমানবিক পীড়ন, কিংবা স্রেফ গুলি চালিয়ে খুন। রাস্তায়, খালে বিলে, নদীতে, ধানের ক্ষেতে জমে গেল লাশের পাহাড়। পূব পাকিস্তানে লুকিয়ে চুরিয়ে গঠিত হল মুক্তিযোদ্ধা বাহিনি।

    অবশ্য, তার মানে এই নয় যে পূব পাকিস্তানি মাত্রেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু অনেকেই সিমপ্যাথাইজার ছিল তাদের। তেমনি কেউ কেউ রাজাকার বা খানসেনাদের সিমপ্যাথাইজারও ছিল।

    যুদ্ধ শুরু হল। দু তরফেই প্রচুর লোক মরছে, মারছে। সহজ টার্গেট হচ্ছে শিশুরা, মেয়েরা। এই সময়ে, বড়দা আমেরিকার স্ট্রং আপত্তি সত্ত্বেও একটা বিদেশী দেশ, ভারত তার নাম, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতের সেনা পাঠালেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার জন্য। রক্ত আরও, আরও ঝরল, অবশেষে পশ্চিম পাকিস্তান পিছু হঠল, আত্মসমর্পণ করল, পূব পাকিস্তানের ওপর থেকে নিজেদের দাবি তুলে নিল। জন্ম নিল স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। উনিশশো একাত্তর সাল।

    … কেমন গব্বে বুক ফুলে যায় না, পড়লে? মেরা ভারত মহান, মনে হয় না?

    এবার একই গল্পে, দেশের নামগুলো একটু পাল্টে দিই, কেমন? পূব পাকিস্তানের নাম দিলাম কাশ্মীর, পশ্চিম পাকিস্তানের নাম দিলাম ভারত, আর ভারতের নাম দিলাম পাকিস্তান। গল্পটা একই রইল, শেষের দিকটা বাদে, কারণ যুদ্ধ চলছে। শেষ হয় নি আজও।

    সেই পূব পাকিস্তানের, থুড়ি, কাশ্মীরের, কিছু চ্যাংড়া ছেলে, পশ্চিম পাকিস্তানের – আই মিন, ভারতের মূলভূমিতে এসে বলছে “ইন্ডিয়া কি বরবাদি”। পূর্ব পাকিস্তানের লোকগুলো যেমন বলত, পশ্চিম পাকিস্তান নিপাত যাক। অবশ্য, পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে বলতে সাহস পায় নি কেউই। তা, এখনকার গল্পে, ভারতের মূলভূমিতেও এর আগে এইভাবে কেউ ভারত নিপাত যাক বলে স্লোগান দেয় নি, ও স্লোগান আকছার শোনা যায় কাশ্মীরের রাস্তায় ঘাটে বাগানে শিকারায়।

    তাই বলে, কাশ্মীর কি ভারতের মূলভূমি নয়, নাকি? কাশ্মীরে বলা মানেই তো ভারতে বসে বলা। এত সাহস হয় কী করে?

    অনেকটা এ রকমই ভাবতাম আমিও, জানেন। তখনও জানতাম না কাশ্মীরের ইতিহাস। ওপর ওপর শুধু জানতাম কাশ্মীরের আমজনতা না ভারত, না পাকিস্তান, কারুর সাথেই যেতে চায় নি, ওরা আলাদা একটা দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এমন সুন্দরী রূপসী একটা রাজ্য, তাকে কি অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখা যায়? না দাবি ছেড়ে দেওয়া যায়? নীল জল, সাদা পাহাড়, সবুজ গালিচায় মোড়া এই ভূস্বর্গ তো যে কারুর কাছেই লোভনীয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তাই আক্রমণ চলেছে কাশ্মীর উপত্যকার ওপর। কখনও পঞ্জাব, কখনও ইংরেজ, কখনও আফগান উপজাতি।

    ভারত দেশ স্বাধীন হবার পর জনমত উপেক্ষা করে রাজা হরি সিং কাশ্মীরকে ভারতের সাথে যুক্ত করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। লোকে বলে, হরি সিং-কে রাজি করানো হয়েছিল, কিছু বিশেষ উপায়ে, যেটাকে “স্ব-ইচ্ছা” কোনওমতেই বলা যায় না। আসলে পাকিস্তান তখন তাল ঠুকছিল কাশ্মীরকে তাদের অংশ বানাবার জন্য। ছোট্ট দেশ কাশ্মীরের ক্ষমতা ছিল না পাকিস্তানকে প্রতিহত করার। রাজা হরি সিং ভারতের সাহায্য চান – ঠিক যেভাবে পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের সাহায্য চেয়েছিল। কিন্তু, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে কাজ ভারত করে নি, সেই কাজ ভারত করল কাশ্মীরের জন্য। বলল, সাহায্য করতে পারি, যদি তোমরা ভারতের অংশ হও।

    সুন্দরী কাশ্মীর, পাকিস্তান তোমাকে হরণ করে নিজের হারেমে রাখবে, সে আমি আটকাতে পারি, যদি তুমি স্বেচ্ছায় আমার হারেমে আসতে রাজি হও।

    “স্বেচ্ছায়” রাজি হওয়া ছাড়া হরি সিং-এর কাছে আর কোনও অপশন ছিল না। তিনি রাজি হন।

    দুই জায়গার জন্য দু রকমের নীতি নিয়েছিল নবগঠিত ভারত। একদিকে হায়দ্রাবাদ, অন্যদিকে কাশ্মীর। দুদিকের গল্প পুরো দু রকম ছিল। হায়দ্রাবাদের লোকজন ভারতে যুক্ত হতে ইচ্ছুক ছিল, ইচ্ছুক ছিলেন না শুধু হায়দ্রাবাদের নিজাম। সেখানে তাই জনমতকে প্রাধান্য দিয়ে হায়দ্রাবাদকে ভারতের অংশ বানিয়ে নেওয়া হয়।

    যাই হোক, কথা হচ্ছিল কাশ্মীর নিয়ে। কাশ্মীরকে ভারত এইভাবে নিয়ে নেওয়ায় পাকিস্তান রেগে যায়, তারাও ভূখণ্ড দখল করতে এগিয়ে আসে, কিছু অংশ দখল করেও নেয় যা আজও পিওকে, বা পাকিস্তান অক্যুপায়েড কাশ্মীর নামে রয়েছে পাকিস্তানের হাতে। এবং সেই জমি নিয়ে বিবাদ চলেছে দশকের পর দশক ধরে, সেই বিবাদিত জমির মধ্যে রয়েছে আমাদের সিয়াচেন হিমবাহও, যা পাকিস্তান দাবি করে তাদের, ভারত দাবি করে তাদের। আপাতত দীর্ঘকাল এই অঞ্চলের কব্জা নিয়ে রেখেছে ভারত, বিশ্বের উচ্চতম ব্যাটলগ্রাউন্ড, সবচেয়ে ডেঞ্জারাসও বটে, কারণ যুদ্ধ চলুক বা না চলুক, এই সিয়াচেনের বেস ক্যাম্প ভারতীয় সেনাবাহিনিকে স্টেডি “শহীদের” সাপ্লাই দেয়। এত কঠিন সেখানে বেঁচে থাকা, প্রতি বছরই কিছু না কিছু সৈনিক সেখানে মারা যান প্রকৃতির হাতে, এ বছরের গোড়াতে সেই রকমেরই এক বিশাল অ্যাভালাঞ্চে দশ ভারতীয় সৈনিক শহীদ হলেন, হনমন্তাপ্পা যাঁদের একজন, বরফের নিচে ছ দিন জীবিত ছিলেন, শেষে দিল্লির সেনা হাসপাতালে এসে জীবনের যুদ্ধে হার মানলেন।

    প্রসঙ্গান্তরে চলে যাচ্ছি আবার। কাশ্মীর ভ্যালিতে চলে আসি। তো, কাশ্মীর ভ্যালির লোকজন যেহেতু ভারতের অংশ হয়ে খুশি হয় নি, মাঝে মাঝেই তারা মিছিল বের করত বাদামি বাগে, লাল চকে। হাম কেয়া চাহতে হ্যায়? আজাদী। শান্তিপূর্ণ মিছিল।

    (৩)

    ধুনো দেওয়া শুরু করল পাকিস্তান। নে শালা, আমরা যখন খেতে পারছি না, এমন হুড়কো দেব, ভারতও শান্তিতে কাশ্মীরকে চাখতে পারবে না। জঙ্গী সাপ্লাই শুরু হল। শুরু হল ধর্মের মোড়কে জঙ্গী বানানোর কাজ। আজাদীর লড়াইয়ের ট্রেনিং নেবার স্বপ্ন চোখে নিয়ে অনেকেই কাঁটাতার পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে চলে গেল পাকিস্তান অক্যুপায়েড কাশ্মীরে। সেখানে জিহাদি ট্রেনিং নিল, সাথে মাথায় ভরে নিল একগুচ্ছ নোংরা ইসলামিক জিহাদি চিন্তাভাবনা। তার মধ্যে একটা হচ্ছে – ভারত হিন্দুদের দেশ। ওরা তোমাদের জোর করে দখল করে রেখেছে, তাই হিন্দুস্তান আর হিন্দু – দুইই তোমাদের শত্রু।

    না, সব মুসলমান কিন্তু এই স্বপ্ন দ্যাখে নি। বেশির ভাগ অংশই শান্তিতে কাশ্মীর ভ্যালিতে থাকত। পড়াশুনা করত, চাকরি করত, ব্যবসা করত। কিছু মুসলিম যুবক এই জিহাদের স্বপ্নে মশগুল হল। ট্রেনিং নিয়ে আবার ফিরে এল ভারতের কাশ্মীরে। আর ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদ লড়তে গেলে সহজ টার্গেট কে? কে আবার! আর্মি। মিলিটারি। ভারতীয় সেনা। চোরাগোপ্তা আক্রমণ চলতে লাগল।

    পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে চলতে লাগল। বাড়তে লাগল অবিশ্বাস। কে সন্ত্রাসবাদী, আর কে নয়, তা বাছবিচার করার মত ধৈর্য বা মেধা ভারত সরকার বা ভারতীয় সেনা, কারুর কাছেই ছিল না। অবশ্য, সদিচ্ছা ছিল না বললেও হয়। প্রায়ই চলতে লাগল মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে দশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়েসী মুসলমান নামধারী লোকেদের বের করে সারা দিন ধরে আইডেন্টিফিকেশন প্যারেড। একটা জালে ঢাকা ভ্যানের সামনে নিয়ে যাওয়া হত সবাইকে এক এক করে, ভ্যানে বসে থাকত একজন “ইনফর্মার” যে পোটেনশিয়াল সন্ত্রাসবাদীকে চিনত। যে মুসলমানটিকে দেখে সে গাড়ির ভেতর থেকে হর্ন বাজাবে, তাকে ভারতীয় সেনা তুলে নিয়ে যাবে তাদের নিজস্ব আপ্যায়নখানায়। তার পরে আপ্যায়ন। যতক্ষণ না কথা বেরোচ্ছে। সত্যি হোক, মিথ্যে হোক, তাকে বলতেই হবে সে জিহাদি ট্রেনিং নিতে গেছিল। সে নয় তো তার দাদা, তার ভাই, তার চাচা। নইলে মার। রুলের গুঁতো। শরীরের অঙ্গে, রন্ধ্রে ঢুকত সেনার মার।

    সত্যিকারের সন্ত্রাসবাদী কি ধরা পড়ত না এ সব করে? হ্যাঁ পড়ত। তারা আর ফিরত না সেই আপ্যায়নখানা থেকে। দুদিন পরে তার গুলিবিদ্ধ দেহ পাওয়া যেত কাশ্মীরের রাস্তায় কিংবা শহরের বাইরে, বরফের ধারে। মহল্লার লোকেরা ভয়ে ভয়ে তুলে আনত সেই বিপথগামী তরুণের শবদেহ, কবর দিত চিনার গাছের তলায়, আর সেই কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আরও একদল তরুণ দাঁতে দাঁত চেপে শপথ নিত, এর বদলা নেবই।

    আর যারা সত্যি সন্ত্রাসবাদী নয়? স্রেফ “স্বীকারোক্তি”র কারণে যাদের সেনার অত্যাচার সইতে হত?

    আসুন, আলাপ করিয়ে দিই হুসেনের সাথে।

    দক্ষিণ কাশ্মীরের প্রত্যন্ত গ্রামের এক ভীতু মানুষ, হুসেন । শান্ত চোখ, সঙ্কুচিত ভঙ্গিতে বসে থাকে ডাক্তারখানায়। হুসেনের ধারণা সে ইমপোটেন্ট হয়ে গেছে। তার ডাক্তার ভাইয়ের ভাষায়, ‘হুসেনের আর দাঁড়ায় না’। হুসেন বিয়ে করতে চায় না, কারোর সাথে মিশতে চায় না। নিজের ছোট্ট দোকান-ঘরের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে কাটিয়ে দেয় সারাদিন। হুসেন এক একলা ভাঙ্গাচোরা মানুষ।

    ১৯৯০ সালে যখন কাশ্মীরে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের ডাক ওঠে হুসেন তখন কলেজে পড়ে। তেরোজন বন্ধুর সাথে হুসেন রওনা দিয়েছিল এল ও সি পেরিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের দিকে ‘ট্রেনিং’ নিতে। কুপওয়ারা থেকে একটু দূরে বিএসএফ তাদের ট্রাক থামায় এবং অ্যারেস্ট করে কাছের আধা-সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালবেলা ইন্টেরোগেশন রুমে নিয়ে আসা হয় তাদের। জোর করে উলঙ্গ করিয়ে দুই হাতে তামার তার বেঁধে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতে থাকে। হুসেনের গলা ফাটিয়ে ঠিকরে আসতে চায় বমি, কিন্তু করতে পারে না কারণ মুখে গোঁজা ছিল তুলোর বল। রক্ত লালা এবং বমিতে সেই বল ভিজে গেলে ফেলে দিয়ে নতুন বল ঢোকানো হচ্ছিল। এরপর হুসেনের পুরুষাঙ্গের ভেতর তার ঢুকিয়ে দেওয়া হয় জোর করে। শক পেতে পেতে মনে হয় ছিঁড়ে যাবে পুরুষাঙ্গ। হুসেন পরে বুঝেছিল, এগুলো শুধুই কথা বার করার জন্য নয়। কারণ সকলেই একটা না একটা সময় মুখ খোলে, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মুখ খুলতে বাধ্য হয়। ইন্ডিয়ান আর্মিও জানে সেটা। তারা দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে এই টর্চার চালায় নিছক স্যাডিস্ট আনন্দ পাবার জন্যেই।

    অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হুসেন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল একসময়। তাকে জাগিয়ে তুলে আবার শক দেওয়া হয়। হুসেন প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে, কিন্তু হিসির বদলে রক্ত বেরিয়ে আসে। ফুলে ওঠে অন্ডকোষ। বিপদ বুঝে আর্মি হাসপাতালে ট্রান্সফার করে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর আবার অত্যাচার। দুই বছর বাদে হুসেন যখন ছাড়া পায় তখন তার পুরুষাংগ আর শক্ত হয়না। বাড়ি ফিরে আসার পর গুটিয়ে যায় সে। বাড়ির লোক বিয়ে করার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকে, একসময় সে জানায় যে সে বিয়ে করতে পারবে না, কারণ তার “দাঁড়ায় না”। কোনও ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না লজ্জায়। গোটা সময় কাটায় গ্রামের মসজিদে। হুসেন ধর্মপ্রাণ এক মুসলিম হয়ে যেতে শুরু করে, যাকে অনায়াসে ভারতীয় মিডিয়া দাগিয়ে দিতে পারে ধর্মান্ধ মৌলবাদী নামে।

    শুধু পুরুষ? শুধু কাশ্মীরি তরুণরাই ভারতীয় আর্মির আক্রমণের শিকার হত? মেয়েরা? রশিদ আর মুবিনার কথা শুনুন।

    কূপওয়াড়া থেকে বিয়ে করে নতুন স্বামী রশিদের সঙ্গে বরযাত্রী-ভরা বাসে করে ফিরছিল মুবিনা। পথে বিএসএফ বাস দাঁড় করায়। মুবিনাদের বাস আসার আগে জঙ্গীদের একটা জিপ গিয়েছিল সেই রাস্তা দিয়ে এবং সেখান থেকে বিএসএফ-এর উদ্দেশ্যে কয়েকটা গুলি ছোঁড়া হয়েছিল শূন্যে। কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু সেই জিপকে ধরা যায়নি। এই অক্ষমতার জ্বালা কীভাবে মেটাবে বিএসএফ? তাই পরের বাসটিকে থামানো হয়, যাতে ছিল বরযাত্রী সমেত নবদম্পতিরা। তাদের ভয়ার্ত চোখের সামনে বন্দুক উঁচিয়ে নববধূ মুবিনাকে বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় বিএসএফ। সারারাত ধরে চলে তার ওপর গণধর্ষণ। জঙ্গীদের জিপ মিস করার পরে তাদের অপমানিত দেশপ্রেম এ ছাড়া তো শান্তি পেত না।

    মুবিনা আজও বেঁচে আছে। রশিদও আছে। আপনারা জানেন, কাশ্মীরিদের বিয়ে একটা দারুণ মনমাতানো অনুষ্ঠান? ভারতের অন্যান্য প্রদেশের বিয়ের অনুষ্ঠানের মত অনেকটা, তবে একটু আলাদা। মেহেন্দী, মেয়েদের গান, নাচ, আর তুমুল খাওয়াদাওয়া না হলে বিয়ে সম্পূর্ণই হয় না কাশ্মীরিদের।

    মুবিনার ঘটনার পরে কাশ্মীরে আর কখনও সন্ধ্যের পরে কারুর বিয়ের অনুষ্ঠান হয় নি। এখন দিনের বেলাই সমস্ত অনুষ্ঠান সেরে দিনের আলো থাকতে থাকতে ফিরে আসা হয়।

    শুনুন গুলজারের কথা। ক্লাস টু্য়েলভের ছাত্র গুলজার নিছক মজা করার জন্য স্কুলের এক জুনিয়ারকে একটু র‍্যাগ করেছিল। সে জানত না যে, সেই ছেলেটি এক ইন্ডিয়ান আর্মি অফিসিয়ালের পুত্র। আর্মি গুলজারের বাড়িতে এসে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং হাত পা বেঁধে কাছের এক গোডাউনে ঢুকিয়ে মাইন ফাটিয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল তার শরীর। অফিসিয়াল ডকুমেন্টে লেখা হয়েছিল, গুলজার এক বিপজ্জনক জঙ্গী যার মাইন ভুল করে হাতে ফেটে গেছিল।

    আর শুনতে চান? পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র একটা ভূখণ্ডের ওপর নিজের অধিকার বজায় রাখতে গিয়ে কী কী করতে পারে? আমাকে দিয়ে আর না-ই লেখালেন। পড়ে ফেলুন একটা বই। একটা নয়, বরং বলব, পর পর দুটো বই পড়তে। এই ঘটনাগুলো সেখান থেকেই তোলা। পড়ুন, বাশারাত পীর-এর লেখা The Curfewed Night, আর তার পরে পড়ুন রাহুল পণ্ডিতার লেখা Our Moon Has Blood Clots। কাশ্মীরকে জানতে হলে, সেখানকার মানুষের সেন্টিমেন্ট বুঝতে হলে এই বইদুটো পড়া ছাড়া গতি নেই। আরও কয়েকটা বই আর দুটো সিনেমা রেকমেন্ড করতে পারতাম, কিন্তু, আপাতত দুটোই থাক, পড়ে উৎসাহ পেলে আপনি নিজেই খুঁজে নিতে পারবেন বাকিগুলো।

    একটা ভূখণ্ডের জনজাতির ওপর নিয়মিত চলা সেনাবাহিনির এই রকমের অসহ্য অত্যাচার, কতদিন সইতে পারে, মানুষ? নিরপরাধ মানুষ, স্বাধীনতাকামী মানুষ রোজ মরছে, ধর্ষিত হচ্ছে একটা দেশের সেনাবাহিনির হাতে, আপনি এর পরেও আশা করবেন তারা সাম্যের গান গাইবে? তারা ভারতের ইন্টিগ্রিটির প্রতি সম্মান জানাবে? কাশ্মীর ভুলে যান, আপনার গ্রামে, আপনার শহরে, ভারতের যে কোনও অঞ্চলে কোনও বিশেষ জনজাতির ওপর দশকের পর দশক ধরে এই জিনিস চলতে থাকলে আপনি কতদিন মেনে নেবেন?

    কাশ্মীরিরা তাও মানিয়ে নিচ্ছিল। সহ্যের বাঁধ ভাঙল ১৯৯০ সালে। আজাদী চেয়ে হেঁটে যাওয়া একটা শান্তিপূর্ণ মিছিল যখন ঝিলম নদীর ওপর একটা ব্রিজ পেরোচ্ছিল, তখন বিনা প্ররোচনায় দুদিক থেকে রাস্তা আটকে সেই মিছিলের ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছোঁড়ে ভারতীয় সেনা। কয়েকশো কাশ্মীরি, নিরস্ত্র কাশ্মীরি মারা যান। স্বাধীনতা চাইবার অপরাধে।

    সন্ধ্যের অন্ধকারে আর্মির ট্রাক এসে তুলে নিচ্ছিল মৃতদেহগুলো। হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হবে। মৃতদের স্তুপে আর বন্দুক উদ্যত করে রাখার দরকার হয় না। আধা অন্ধকার সেই মর্গের সামনে যখন ট্রাক এসে থামে, তখন মৃতদেহের স্তুপ থেকে সুড়ুৎ করে গড়িয়ে নামে এক ছায়ামূর্তি, একটা দশ বারো বছরের বাচ্চা ছেলে, শবের নিচে চাপা পড়ে ছিল সে সারাদিন। “আমি বেঁচে আছি, আমি বেঁচে আছি” বলে চেঁচাতে চেঁচাতে রক্তমাখা সেই বালক দৌড়ে নিমেষে হারিয়ে যায় হাসপাতাল মর্গের বাইরের অন্ধকারে। সেনাবাহিনির বন্দুক তার নাগাল পায় নি।

    আগুনে ঘি পড়ে এর পরে। অশান্ত হয়ে ওঠে সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকা। আগে ছুটকোছাটকা যেত, এর পর থেকে দলে দলে মুসলিম তরুণ যুবক কাঁটাতার পেরিয়ে যোগ দেওয়া শুরু করল পাকিস্তানের দিকের জিহাদি ক্যাম্পে, উদ্দেশ্য, কাশ্মীরকে আজাদ করা। না, ভুল বুঝবেন না, পাকিস্তানে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন কখনওই দেখে নি কাশ্মীর। তারা শুধু আজাদী চেয়েছে। পাকিস্তান তাদের ট্রেনিং দিয়েছে, অস্ত্র রসদ জুগিয়ে গেছে স্রেফ কাশ্মীরকে ফিরে পাবার আশায়, ভারতের শান্তি বিঘ্নিত করার প্রচেষ্টায়, আর কাশ্মীরিরা পাকিস্তানের থেকে এই সাহায্য নিয়ে চলেছে, শুধু, শুধুমাত্র কাশ্মীরকে স্বাধীন করার চেষ্টায়।

    ভারতীয় সেনার এই বর্বর অত্যাচারের ফলে, জম্মু কাশ্মীর লিবাআরেশন ফ্রন্টের নেতা ইয়াসিন মালিকের মনে জেগে ওঠে ভেদবুদ্ধি। যেহেতু বেশির ভাগ অত্যাচারই হত মুসলিমদের ওপর, সে হেতু কাশ্মীর ভ্যালিতে বসবাস করা এক বিপুল সংখ্যক হিন্দু, যাঁদের “পণ্ডিত” বলা হয়, তাঁদের ভারতীয়দের সাথে সমার্থক করে ফেলার রাজনীতি শুরু হল কাশ্মীরে। কাশ্মীর, শুধু মুসলমানদের। জিহাদি মুসলমানদের। হিন্দুস্তান হিন্দুদের, অতএব হিন্দু পণ্ডিতদের খেদাও।

    পুরো নব্বইয়ের দশক ধরে শুরু হয় উলটো অত্যাচার। এবার পণ্ডিতদের ওপর। শুরু হয় মাস এক্সোডাস। পন্ডিত সম্প্রদায়, যারা এতদিন পাশাপাশি বাস করে এসেছে কাশ্মীরি মুসলমানদের সাথে, একে অপরের সুখদূঃখের শরিক হয়েছে, এর পরবে ওর নেমন্তন্ন এসেছে, ওর পার্বণে এ প্রসাদ খেয়ে গেছে, তারা রাতারাতি উৎখাত হতে শুরু করে কাশ্মীর ভ্যালি থেকে, নিজেদের সারাজীবনের সঞ্চয়, জমি, বাড়ি, বাগান ফেলে। কেউ কেউ সাহস করে থেকে যেতে চেয়েছিলেন, প্রতিবেশিদের ওপর ভরসা করে। কাশ্মীরি সন্ত্রাসবাদীর দল রাতে হানা দিত তাদের বাড়ি। মেয়েদের ভাগ্যে জুটত – যে কোনও যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের ভাগ্যে যা জোটে, তাইই, ছেলেদের মেরে ফেলা হত। শিশু, কিশোর, তরুণ, বুড়ো – কেউ বাদ পড়ত না তাদের হিংসার আওতা থেকে। কারণ, ওরা পণ্ডিত।

    এক সত্তরোর্ধ্ব, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপকের কাহিনি পাবেন রাহুলের বইতে। শুধু সংস্কৃত নয়, আরবি এবং অন্যান্য ইসলামিক লিটারেচারে ছিল তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য। তিনি ছিলেন একজন হিন্দু পণ্ডিত। নিজের টাউন শুধু নয়, আশপাশের গাঁয়ের হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে তাঁকে শ্রদ্ধা করত। ভালোবাসত। তিনি তাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় ভরসা রেখেছিলেন। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তা সহ্য হয় নি। এক রাতে তারা আসে। বৃদ্ধকে বলা হয় ঘরের সমস্ত মূল্যবান জিনিস একটা সুটকেসে ভরে নিতে। এর পরে তাঁর কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে সেই ভারী সুটকেস তাঁকে দিয়ে বইয়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে যায় জঙ্গীরা। বৃদ্ধের বড় ছেলে স্বেচ্ছায় বাবার সাথে যেতে চান, জঙ্গীরা তাকেও নিয়ে যায়।

    পরের দিন দুজনেরই গুলিবিদ্ধ ছিন্নভিন্ন লাশ পাওয়া যায়। বৃদ্ধ অধ্যাপকের কপালে, জঙ্গীরা ঠুকে ঠুকে গেঁথে দিয়েছিল একটা পেরেক। করোটির মধ্যে।

    আমরা, যারা ভারতের নিশ্চিত নিরাপদ নাগরিক জীবন কাটাই, তারা বুঝতেও পারব না, ঠিক কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে, যাচ্ছে, কাশ্মীর। একদিকে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নৃশংস কার্যকলাপ, অন্যদিকে তাকে থামাতে না পেরে নিরীহ কাশ্মীরিদের ওপরে ভারতীয় সেনা আর বিএসএফের অমানুষিক অত্যাচার, আর দুই যুযুধান পক্ষের মাঝে পড়ে হাজারে হাজারে অসহায় সম্বলহীন কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীর ছেড়ে আশ্রয় নেওয়া জম্মুতে, দিল্লিতে, পাঞ্জাবে, চণ্ডীগড়ে।

    যে ভারত তার অখণ্ডতায় এত গর্ব রাখে, যে মিডিয়া হাজারটা সামাজিক সমস্যা নিয়ে এত উদ্বেগ দেখায়, দীর্ঘ এক দশক ধরে চলে আসা এই এক্সোডাসের প্রতি এতটুকুও সহানুভূতি দেখায় নি। অবশ্য, নব্বইয়ের দশকে এত মিডিয়া ছিল না, আমরা মূলত দূরদর্শন দেখতাম। পণ্ডিতদের এক্সোডাস থামাবার জন্য কোনও চেষ্টা হয় নি, কাশ্মীরের সমস্যা সমাধান করার জন্য আলোচনার থেকে সবসময়েই সেনাবাহিনির বন্দুকের ওপর বেশি ভরসা রেখেছে ভারত সরকার।

    আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দলের অন্যতম অ্যাজেন্ডা ছিল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কাশ্মীর ভ্যালিতে পুনর্বাসন দেওয়া। কিন্তু সে কাজ আজও শুরু করা যায় নি।

    (৪)

    কিন্তু ধান ভানতে বসে, এত বড় শিবের গীত কেন গেয়ে বসলাম আমি? কাশ্মীরের ইতিহাস তো আমার লেখার কথা ছিল না!

    লিখতে হল এই কারণে, কারণ, কাশ্মীরের এই বৃহত্তর প্রেক্ষাপটটা না জানলে বোঝা সম্ভব নয়, কোন আইডিওলজি, কোন আদর্শ থেকে আফজল গুরুরা আসে, জন্ম নেয়, ঢুকে পড়ে আমাদের নিরাপদ রাষ্ট্রের ঘেরাটোপের ভেতর। এই সোশাল নেটওয়ার্কেই, আমার পরিচিত বন্ধু, প্রিয় লোকজন, তাঁরাও দেশপ্রেম আর দেশদ্রোহের দ্বন্দ্বে উত্তাল গত এক সপ্তাহ ধরে। সমস্ত ঘটনাপ্রবাহে সম্যক মন না দিয়ে, পূর্বাপর ইতিহাস না জেনে, না পড়ে, কিছু মনগড়া ধারণা আর কিছু মিডিয়ার খাওয়ানো খবরের ভিত্তিতে তাঁরা তৈরি করছেন তাঁদের নিজস্ব মতবাদ। মতাদর্শ বলাই ভালো। খুব কনভিনিয়েন্টলি ঘেঁটে দেওয়া হচ্ছে প্রতিবাদ, প্রতিবাদের কনটেক্সট, এবং চলছে বাজারে সহজলভ্য কিছু স্টিকার নিয়ে এর ওর গায়ে সেঁটে দেওয়ার প্রক্রিয়া। তুই দেশদ্রোহী। তুমি দেশপ্রেমিক নও। আপনি আফজল গুরুকে সাপোর্ট করছেন। আপনি ভারতের অখণ্ডতায় বিশ্বাস করছেন না। কানহাইয়া কুমারকে তো পিটিয়ে মেরে ফেলা উচিত, পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত, শালা বলে কিনা পাকিস্তান জিন্দাবাদ! বলে কিনা ইন্ডিয়া কি বরবাদী! শালা আমাদের ট্যাক্সের টাকায় পড়বে আর দেশের নামে গদ্দারি করবে?

    মারো সালে কো।
    পিটো সালে কো।
    ফাঁসি পে লটকা দো চুতিয়া কো।
    ভারতমাতা কী জয়!
    বন্দে মাতরম্‌।

    আফজল গুরু। দেশের শত্রু। পার্লামেন্ট অ্যাটাকের মূল অভিযুক্ত।

    আপনারা অনেকে দেখেছেন নিশ্চয়ই, ছোটবেলায় বাড়িতে মুরগি পোষা হত? কয়লার ঘরে, উঠোনে মুরগিটা খেলে বেড়াত বাড়ির লোকের সজাগ দৃষ্টির আওতার মধ্যে? তারপর কোনও এক রবিবারে, বা বিশেষ কোনও উপলক্ষ্যে, সেই মুরগিটাকে কাটত আপনারই বাড়ির কেউ। দুপুরে রাতে সেদিন গরগরে মাংসের ঝোল। মনে পড়ে? নস্টালজিয়া?

    গ্রামে মফসসলে আজও মুরগি পোষা হয়, এই কারণে। ভারতীয় সেনাও মুরগী পোষে। তাদের নাম, কাশ্মীরি সন্ত্রাসবাদী। আতঙ্কবাদী। অলগাওবাদী। যে সমস্ত সন্ত্রাসবাদী হিংসার পথ ছেড়ে সেনার কাছে আত্মসমর্পণ করত, বা এখনও করে - সেনা তাদের পুনর্বাসন দেয়, ঘরে ফিরিয়ে দেয়, অবশ্যই তাদের ওপর সজাগ দৃষ্টি রেখে। হিংসার পথ ছেড়ে এসে তারা ঘর বাঁধে, সাদাসিধে গৃহস্থ জীবন। শুধু আর্মির কাছে নিয়মিত হাজিরাটা দিয়ে যেতে হয়, মাঝে মাঝে ইনফর্মার বা আইডেন্টিফায়ারের কাজও করতে হয়, তাতে প্রাক্তন সহযোদ্ধাদের হাতে খুন হবার চান্স আরও বেড়ে যায়, তাই সেনাবাহিনি তাদের আইডেন্টিটি গোপন রাখে খুব সাবধানতার সঙ্গে।

    কিন্তু, এত কাজ কি শস্তায় হয় নাকি? দেখাশোনা করার একটা পারিশ্রমিক নেই? প্রায়শই সেনাবাহিনির অফিসার হানা দেন হিংসার পথ ছেড়ে আসা সেই কাশ্মীরির কাছে, টাকা বা অন্য "কাইন্ড" দাবি করেন। ধার করে, ঘরের জিনিস বেচে, বন্ধু বা অন্য কারুর থেকে ধার করে, সেনা অফিসারের টাকার খাঁই মেটানোর চেষ্টা করে অসহায় সেইসব প্রাক্তন জঙ্গী। যে অপরাধ একবার সে করে ফেলেছে, তার প্রায়শ্চিত্ত করে যায় সে সারা জীবন ধরে। বদলে পায় জীবনের নিরাপত্তা। কাশ্মীর ছেড়ে যাবারও হুকুম থাকে না তার।

    একটা গল্প বলি। গল্প হলেও সত্যি ঘটনা। ভেবেছিলাম একটা উপন্যাসে একটা চরিত্রকে সাজাবো এইভাবে, কিন্তু সময়ের দাবিতে গল্পটা এখানেই বলে ফেলি।

    ২০১২ সালে সপরিবারে যখন লাদাখ শ্রীনগর ঘুরে এসেছিলাম, তার পরে সিকিনীর অফিসের আরও দু একজন কাশ্মীর, লাদাখ ইত্যাদি বেড়াতে যান। এমনি একজন কাশ্মীর ঘুরে এসে কাহিনিটি জানিয়েছিলেন। ... তাঁরাও ডিফেন্স মিনিস্ট্রির এমপ্লয়ি, তাই যাওয়া, থাকা, বেড়ানো, সমস্ত ব্যবস্থাই করেছিলেন আর্মির হাত ধরে। বেড়ানোর মধ্যে এক-দুদিন ছিল গুলমার্গে ঘোরা। যে আর্মি অফিসার তাঁদের গুলমার্গ ঘোরার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি লোকাল একটি কাশ্মীরি ছেলেকে তাদের অ্যাসাইন করে দেন গাইড হিসেবে - এ-ই আপনাদের ঘুরিয়ে দেখাবে।

    তা, সে ঘুরিয়ে দেখায়, কিন্তু কেন জানি, তার চাউনি, কথা বলার স্টাইল - খুব স্বাভাবিক লাগছিল না ঘুরতে যাওয়া সেই ভদ্রমহিলার। চোখ যেন জ্বলছে কীসের আগুনে, এই রকমভাবে আমাকে বলেছিলেন উনি। সে ছেলে তাঁদের নিয়ে গন্ডোলা রাইড করায়, ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে ঘুরিয়ে দেখায় গুলমার্গের আনাচ কানাচ। এমনি একটা সরু পায়ে চলা রাস্তা দেখিয়ে সে জানায়, এই রাস্তা ধরে সোজা হাঁটলে, পাহাড় পেরোলেই পাকিস্তান যাওয়া যায়। পাকিস্তান থেকে জঙ্গীরা এই রাস্তা ধরেই আসে।

    ভদ্রমহিলা ক্যাজুয়ালিই জিজ্ঞেস করেন, তুমি দেখেছো পাকিস্তানি জঙ্গীদের?

    ছেলেটি উত্তর দেয়, হ্যাঁ দেখেছি। ওরা আমাদের গ্রামে এসেছিল, বেশ কয়েকজনকে খুন করে গেছিল আমার চোখের সামনে।

    - তা তোমার আর্মির সাথে এমন জানাশোনা, জানাও নি? আবার এলে কী করবে?

    নিমেষে বদলে গেছিল ছেলেটির মুখ, একমুখ আগুন নিয়ে শুধু বলেছিল, আর্মি কো নেহি চাহিয়ে, আমি একলাই ওদের মেরে ফেলতে পারি।

    কী রকম যেন আন্দাজ করে ভদ্রমহিলা আর কথা বাড়ান নি। সন্ধ্যেবেলা আর্মি গেস্টহাউসে সেই অফিসার আসেন ডিউটির শেষে। ছেলেটি তার আগেই চলে গেছে তার বাড়ি। অফিসার এই মহিলাকে জিজ্ঞেস করেন, কেমন ঘুরলেন আজকে?

    মহিলাটি জানান, ভালোই। খুব সুন্দর জায়গা গুলমার্গ।

    - আর ছেলেটি? ঠিকঠাক ঘুরিয়েছে তো?

    এইবারে আর চেপে রাখতে না পেরে তাঁর মনের অস্বস্তির কথা অফিসারটিকে জানান ভদ্রমহিলা। অফিসার মন দিয়ে শোনেন, এবং মুচকি হেসে বলেন, ভয় নেই, ওর টিকি বাঁধা রয়েছে আমাদের হাতে। ও একজন আত্মসমর্পণ করা কাশ্মীরি জঙ্গী। এখন আর্মির আন্ডারে গাইডের কাজ করে।

    ...

    আফজল গুরু ছিল, এই রকমই একজন আত্মসমর্পণ করা সন্ত্রাসবাদী। "সন্ত্রাসবাদী" বললাম বটে, কিন্তু বিশ্বাস করুন, আফজল জীবনে কোনওদিন কোনও "সন্ত্রাস" করে নি। কাশ্মীরের সেই উত্তপ্ত অবস্থার মধ্যে কী ভাবে আফজলেরা জন্ম নেয়, আপনাদের বলেছি, এই আফজলও সেইভাবেই কাশ্মীরকে আজাদ করার তাগিদে সীমা পেরিয়ে চলে যায় পাকিস্তান, জিহাদি ট্রেনিং নিতে। কিন্তু এক মাসের মধ্যে তার ভুল ভাঙে, ট্রেনিং-এ যে হিংসার শিক্ষা তাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সে মন থেকে মেনে নিতে পারে নি। পালিয়ে আসে জিহাদি ক্যাম্প থেকে। আবার ভারতের কাশ্মীরে - এবার সে ধরা পড়ে ভারতীয় সেনার হাতে এবং আত্মসমর্পণ করে তার পুরো ঘটনা আত্মোপলব্ধি জানায়। আর্মি মুচকি হেসে তাকে পুনর্বাসন দেয়, সুন্দর স্বাস্থ্যবান একটি মুরগি পাওয়া গেছে।

    কিন্তু একবার "আতঙ্কবাদী" তকমা লেগে গেলে তো নিশ্চিন্ত জীবন আর কাটানো যায় না। নানা কারণে অছিলায় আর্মি অফিসার আসত, অন্যান্য মুরগিদের সাথে তাকে উত্যক্ত করার জন্য। খুশি করতে না পারলে যে আরও বড় লাঞ্ছনা থাকে, কপালে। খুশি করতে না পারার অপরাধে, চোখে চোখে রাখার সাত বছর পরেও আফজলকে নিজেদের হেফাজতে নেয় এসটিএফ। ছ মাস লেগেছিল এক লক্ষ টাকা জোগাড় করতে, আফজলের পরিবারের। মুক্তির জন্য ওই দামটাই ধার্য করেছিল ভারতের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। ছ মাস বাদে আফজল মুক্তি পায়। নজরদারী চলতেই থাকে তার ওপর।

    দু দিন আগেই রৌহিনের লেখা আমার ব্লগে তুলেছি, এখানে পড়ে নিতে পারবেন তার পরে কী কী ভাবে আফজলকে জড়িয়ে ফেলা হয় সংসদ ভবন আক্রমণের একজন চক্রী হিসেবে। নতুন করে আর সেগুলো লেখার দরকার নেই। কেস চলে, আফজল সমেত তিনজনের ফাঁসির আদেশ হয় প্রথমে। আফজল, শওকত, গিলানী। শওকতের সাজা পরে কমে পাঁচ বছরের সশ্রম জেল হয়। গিলানী বেকসুর মুক্তি পান।

    তিনজনকার বিরুদ্ধেই একই চার্জ ছিল। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কিন্তু কোনওটাই প্রমাণ করা যায় নি। তা হলে কী হবে? শওকত আর গিলানীকে না হয় রেহাই দেওয়া গেল, তাই বলে আফজলকেও রেহাই দিতে হবে? মুরগিটাকে দশ এগারো বছর ধরে পোষা হয়েছে, এখনও যদি দেশপ্রেমের মশলা দিয়ে মাংসের ঝোল না বানানো যায়, তবে আর মুরগি পোষা কী জন্য? বাকি দুজনের না হয় "টেররিস্ট" ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, কিন্তু আফজলের তো আছে, অন্তত আর্মির খাতায়? না হয় সে কোনও টেরর করে নি এর আগে, কিন্তু পাকিস্তানে গেছিল তো? এক মাস জিহাদি ট্রেনিং নিয়েছিল তো? একেও যদি ছেড়ে দিতে হয় - আরোপ একটাও কোর্টে সাব্যস্ত করা যায় নি বলে, তা হলে দেশের হইবে কী? দেশভর্তি জাতীয়তাবাদী নাগরিক কী ভাববেন? জনমানসে এর কী প্রতিক্রিয়া পড়বে? পার্লামেন্ট অ্যাটাক হয়েছিল ২০০১ সালে, দেশে তখন বিজেপি-এনডিএ সরকারের জমানা। আর বিচার চলতে চলতে এখন ইউপিএ সরকারের রাজত্ব। বিজেপি যদিও কান্দাহার কাণ্ডের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে এক জঙ্গীকে জেল থেকে মুক্ত করে পৌঁছে দিয়ে এসেছিল আফগানিস্তানে, তাই বলে এখন ইউপিএ আফজলকে ছেড়ে দিলে কি বিজেপি ক্ষমা করবে? ক্ষমা করবে, আসমুদ্রহিমাচল দেশবাসীর জাতীয়তাবোধ?

    অতএব, নাথিং লেস দ্যান ফাঁসি। সুপ্রিম কোর্টের ফাইনাল জাজমেন্টে লেখা হয়, নিখুঁত নিশ্ছিদ্র প্রমাণের থেকেও জোর দেওয়া হয় "জাতির বিবেকের" ওপর। সংসদের ওপর আক্রমণ, দেশের গণতন্ত্রের সৌধের ওপর আক্রমণ। “Afzal is characterised as a “menace to the society”, whose “life should become extinct” to satisfy “the collective conscience of the society.”

    বিস্তারিত লিখব না, সমস্তই রৌহিনের লেখাটায় দেওয়া আছে, একবার পড়ে ফেলতে পারেন। যে সমস্ত তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করে এই কেস দাঁড় করানো হয়েছিল, সেই সমস্ত তথ্যপ্রমাণই ধসে যায় একে একে। গিলানী নির্দোষ প্রতিপন্ন হন, কিন্তু একই লজিকে আফজলকে কম দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। তাই, কনসেনসাস বিল্ডিং। মতাদর্শ নির্মাণের রাস্তা নেয় সরকার। আজ তক টিভিতে চলে আসে আফজলের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি। কেউ জানে না, জানতে চায়ও না, কী অবস্থায় আফজলকে দিয়ে এই ইন্টারভিউটা শুট করানো হয়েছিল। কারুর মনে প্রশ্ন আসে না, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া একজন আসামী কী করে টিভি স্টুডিওতে বসে শান্ত মুখে ইন্টারভিউ দিতে পারে, ভারতে কেন, পুরো পৃথিবীতে এমন ঘটনা আগে ঘটেছে কিনা।

    জানার দরকার হয় না। দেশপ্রেম, দেশভক্তির কাছে যুক্তি, প্রমাণ - এরা সবসময়েই নতজানু। আফজলের তাই ফাঁসি হয়ে যায়। তাই নিয়ে প্রতিবাদ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। আফজলের জন্য ওয়েবসাইট চলছে, আফজলের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে লেখালিখি করে আসছেন এন ডি পাঞ্চোলি - লিখেছেন বিশিষ্ট রাজনীতি-ইতিহাসবিদ নির্মলাংশু মুখার্জি, লিখেছেন নামকরা কলামনিস্ট শুদ্ধব্রত সেনগুপ্ত, আফজলের বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন আরও অনেকে। দেশপ্রেমিকরা সে সব পড়বেন না - দেশের নেতারা সে সব নস্যাৎ করে দেবেন, বেঁচে থাকবে শুধু একটা দুটো স্বর। আফজলকে সাপোর্ট করে কী সাহসে? বলে কিনা, আফজল হম শর্মিন্দা হ্যায়, তেরে কাতিল জিন্দা হ্যায়? এ কি সরাসরি দেশদ্রোহিতা নয়? সুপ্রিম কোর্টকেও প্রশ্ন করে ফেয়ার জাজমেন্ট নিয়ে? দেশের আইনে আস্থা রাখে না?

    ভয় করে। কানহাইয়া জেএনইউ-র ছাত্র, তার জন্য হাজার হাজার লোক পথে নামতে পারে, আমার জন্য কেউ নামবে না পথে, আমি জানি। তবু বলতে চাই, এই একটি কেসে নয়, সুপ্রিম কোর্ট একাধিক কেসে আমার ভরসা হারিয়েছে - মজবুত তথ্যপ্রমাণের থেকে "সমাজের ভাবাবেগ"কে প্রাধান্য দিয়েছে জাজমেন্ট দেবার সময়ে। যদিও, আমিও যে সমাজের একজন, আমার ভাবাবেগ কী - সেটা জানার চেষ্টা করে নি কোর্ট। অ্যাজিউম করে নিয়েছে মেজরিট এই চায়, অতএব এই শাস্তি হোক। আবার ভরসা জুগিয়েছেও অনেক ক্ষেত্রে। এই যেমন কদিন আগে, কানহাইয়াকে পাটিয়ালা হাউস কোর্ট চত্বরে পেটানোর খবর পাওয়া মাত্র সুপ্রিম কোর্ট বরিষ্ঠ উকিলদের দল পাঠিয়ে দিয়েছিল সেখানে, পরিস্থিতি সামলানোর জন্য। এখানেই তো ভরসা পাই, এই তো গণতন্ত্রের ভরসা।

    সুপ্রিম কোর্ট তো ভগবান নয়।, কিছু মানুষই তো চালান। মানুষের কি ভুল হয় না? হয়। সে ভুল যদি আমার চোখে পড়ে, আমি বলব না? সেটা বলা মানে সুপ্রিম কোর্টকে অপমান করা? দেশদ্রোহিতা? সমীকরণ এত সোজা? আফজলের ফাঁসির বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিবাদকে দাগিয়ে দেওয়া হয় "দেশদ্রোহীকে সমর্থন", "আফজলকে সমর্থন"? জঘন্যভাবে এডিট করা কিছু ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে তুলে নিয়ে যায় কানহাইয়া কুমারকে? আনন্দবাজার তার স্বভাবসিদ্ধ উইচহান্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিলেন বানিয়ে দেয় জুবি সাহা আর তার দলকে? মিডিয়া ট্রায়াল ঢুকে পড়ে আমাদের ঘরের মধ্যে?

    (৫)

    যে কদিন এই লেখার কথা ভেবেছি, যে কদিন এই লেখা লিখেছি, ততদিনে জল গড়িয়েছে অনেকটা। লেখার খাতা খুলেছিলাম কানহাইয়াকে নিয়ে কিছু লিখব বলে, কিন্তু ওর জন্যই কিছু লেখা হল না। না হোক। কানহাইয়াকে নিয়ে অনেকেই লিখছে। আজ, উনিশে ফেব্রুয়ারি অনেকেই জেনে গেছে, কীভাবে ফেক ভিডিও ফুটেজের জন্য কানহাইয়াকে গ্রেফতার হতে হয়েছে, মার খেতে হয়েছে আদালত চত্বরে আইনজীবিদের হাতে। আর টিভি মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, সোশাল মিডিয়াতে তো তার ট্রায়াল চলছেই অনবরত, ফাঁসির নিচে কোনও কথাই ভাবতে রাজি নন দেশভক্ত জনগণ।

    এত কিছু পড়ে ফেলার পর, এখন কি মনে হচ্ছে না, হে দেশপ্রেমিক, যে আপনাদের প্রতিক্রিয়াটা খুব হাঁটুকাঁপা প্রতিক্রিয়া হয়ে গেছিল? নী-জার্ক রিয়্যাকশন? দেশপ্রেমের একটাই সংজ্ঞা হয়? সোলি সোরাবজি পর্যন্ত বলেছেন, কানহাইয়া "বলেছে" বলে যে কথা চালানো হচ্ছে, তা যদি কানহাইয়া বলেও থাকে, তাতে সিডিশন হয় না। বড়জোর একবার বকে দেওয়া যেতে পারে, সেটা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষই করে দিতে পারত। পুলিশের দরকার একেবারেই ছিল না। আপনারা, দেশপ্রেমিকরা, সোলি সোরাবজির থেকেও কি বেশি বোঝেন, আইন?

    তাই বলি, স্যার, ম্যাডাম, ভাবুন। ভাবা প্র্যাকটিস করুন। যাহা চোখের সামনে দেখা যায়, তাহাই পরম সত্য নয়। সত্যেরও রকমারি রঙ হয়, পূর্বাপর হয়। আর রাষ্ট্রশক্তির আগ্রাসনকে চিনতে শিখুন, তার প্রতিবাদ করতে শিখুন। এর আগেও আরেকটা লেখাতে আমি একটা কবিতা লিখে দিয়েছিলাম, আজ আবার সেটা পুনরুক্ত করি -

    First they came for the Socialists, and I did not speak out—
    Because I was not a Socialist.

    Then they came for the Trade Unionists, and I did not speak out—
    Because I was not a Trade Unionist.

    Then they came for the Jews, and I did not speak out—
    Because I was not a Jew.

    Then they came for me—and there was no one left to speak for me.

    [প্রথমে ওরা এসেছিল সোস্যালিস্টদের খুঁজে বের করতে, আমি কিছু বলি নি –
    কারণ, আমি তো সোস্যালিস্ট নই।

    তারপরে ওরা এল ট্রেড ইউনিয়নিস্টদের খুঁজতে, আমি কিছু বলি নি –
    কারণ, আমি তো ট্রেড ইউনিয়নিস্ট নই।

    তার পরে ওরা এল ইহুদীদের খুঁজে বের করতে, আমি কিচ্ছুটি বলি নি –
    কারণ, আমি তো ইহুদী নই।

    আজ ওরা এসেছে আমাকে ধরতে, আজ আমার হয়ে কথা বলবার জন্য আর কেউ নেই। ]

    মনে রাখবেন, দাদারা, দিদিরা, যদি এই আগ্রাসন সময়মত চিনতে না পারেন, তা হলে যেদিন আপনার সময় আসবে, কেউ থাকবে না আপনার পাশে। সারা দেশ, সারা জাতি আপনার ফাঁসি চাইবে। তবে আমি যদি বেঁচে থাকি, আমি লিখব আপনার জন্য, আমি আবার হাঁটব রাজধানীর রাস্তায়, যেমন কাল হেঁটেছিলাম।

    (৬)

    শেষ করব, আরেকটা ছোট গল্প দিয়ে।

    দুটো দেশ, ক আর খ। ক-এর অধিকারে আছে খ। খ-দেশের লোকজন অনেকেই এই অধিগ্রহণে অখুশি। তারা ক-এর সমালোচনা করে, প্রকাশ্যে। যদিও তেমন কোনও দমন-পীড়ন চলে না, কালচারাল কনফ্লিক্টও নেই, জোর করে ক-এর খ-বিরোধী নীতি খ-এর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার গল্প নেই, তবু - স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়।

    অখুশি খ-বাসীদের দাবি প্রবল হয়ে উঠল। আমরা ক-এর থেকে আলাদা হতে চাই। আশ্চর্য, কেউ তাদের দেশবিরোধী আইনে জেলে পুরল না। যারা ক-পন্থী, তাঁরা মুচকি হাসলেন ঠিকই, কিন্তু খ-পন্থীদের মুখে রুমাল বেঁধে দিলেন না। কেউ বললেন না, ফাঁসি চাই। কেউ বললেন না, যে দেশের মাটিতে খাও, সেই দেশের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠাও? এক্ষুনি গ-দেশে চলে যাও। ক-বিরোধীদের ক বা খ, কোথাওই জায়গা নেই।

    শেষে ঠিক হল ভোট হবে। দেখা যাক, কে জেতে। খ আলাদা দেশ হবে, নাকি ক-এর অংশ হয়েই থাকবে?

    ভোট হল। খ-পন্থীরা হেরে গেল। খ তাই আলাদা দেশ হল না, ক-এর সাথেই রয়ে গেল। খ-পন্থী এবং ক-পন্থীরা পরস্পরের সাথে হ্যান্ডশেক করলেন, এবং দাবি থেকে সরে আসলেন। একটিও মারপিট হল না, দাঙ্গা হল না।

    রূপকথা নয়। ক দেশটির নাম ইংলন্ড, খ দেশটির নাম আয়ারল্যান্ড।

    গ দেশের নাম জানি না, ওটা কাল্পনিক।
    ********************************************************************************************
    (আবারও, এই লেখার মূল অডিয়েন্স গুরুর জনতা নয়। মূলত আগের দুটো পর্বের শেষে লোকজনের প্রশ্নোত্তরপর্ব কমপাইল করে আরেকটা পর্ব লিখে ফেললাম। হুচি আর টিমের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা।

    অনেককিছুই হয় তো ভুল লিখেছি, আমার জ্ঞান খুবই সীমিত। চোখে পড়লে জানিয়ে দেবেন)

    সোশাল মিডিয়ার এই একটা মহান শক্তি, দু পক্ষের মাঝখান থেকে টেবিলটাকে পুরোপুরি ভ্যানিশ করে দেয়। ইন্টার‍্যাকশন, জনসংযোগ এর আগে এত ভালো করে কেউ করতে পারত না। আর ঠিক সেই কারণেই আমি কখনও সুনীল গাঙ্গুলি, আনন্দ পাবলিশার্স, দূরদর্শন কিংবা আনন্দবাজার পত্রিকাকে ভালো মনে নিতে পারি নি, কারণ এই সব মাধ্যমগুলির সঙ্গে আমরা পরিচিত হয়েছি বা হয়ে থাকি, কেবল একতরফা ভাবে, এঁরা লেখেন, পাবলিশ করেন, দেখান; আর আমরা, দর্শক, শ্রোতা, পড়ুয়া যারা, তারা সবসময়েই থাকি রিসিভিং এন্ডে। ইন্টার‍্যাক্ট করা বা কথোপকথনে যাবার কোনও সহজ সরল চটজলদি উপায় আমরা কখনও পাই নি।

    সোশাল মিডিয়া, ব্লগিং এই সীমাবদ্ধতাকে উড়িয়ে দিয়েছে বহুকাল। এখন আমরা পছন্দের লেখক, গায়ক, শিল্পী, রাজনীতিক, বা অন্য কোনও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হই মায়াপাতায়, ফলো করি, ফ্রেন্ড লিস্টে অ্যাড করি, দেয়ালে গিয়ে কমেন্ট করি, এবং সময়মত নিজের মতামতের উত্তরও পাই। এই যে মাঝখানের টেবিলটা আর থাকে না, আমরা সবাই এক জায়গায়, একটাই শতরঞ্চির ওপর বসে আড্ডা বা তক্কাতক্কি করার অনুভূতিটা নিতে পারি, এই জিনিসটা আমার খুব ভালো লাগে।

    মন কি বাত যখন লিখতে বসেছিলাম – ঠিক কিছু লিখব ভেবে লিখতে বসি নি। সেই দিনটা, সেই দিনগুলো আমাকে ধরে ঘাড় ধরে কিছু লিখিয়ে নিয়েছিল। প্রায় একটা ঘোরের মধ্যে বসে লিখে ফেলেছিলাম অনেককিছু। সত্যিই মনের কথা লিখেছিলাম। এই ব্লগ সাইটটা আমি চালাচ্ছি এক বছরের কিছু কম সময় হল। এর আগে এইভাবে আমার কোনও লেখাতে এত বেশি রেসপন্স আসতে দেখি নি, এত বেশি কমেন্ট পড়তে দেখি নি। স্ট্যাটিসটিক্স দেখে বুঝলাম, শুধু ফেসবুকেই দু হাজার বারের বেশি শেয়ার হয়েছে আমার লেখাটা। আমি আবেগে প্রায় গদগদ হয়ে যাচ্ছিলাম, এই সময়ে কে যেন এসে আমার কানে কানে বলে গেল, আপনার লেখাটা কিন্তু কিছু ভুলভাল লোক শেয়ার করে “অ্যান্টি-ইন্ডিয়া সেন্টিমেন্ট” ছড়ানোর চেষ্টাও করছে।

    … আমার চোখদুটো গোল্লা-গোল্লা হয়ে গেল, গায়ের রোম খাড়া হয়ে গেল। বলে কী কত্তা? ভারতবিরোধী এলিমেন্ট পাওয়া গেছে আমার লেখায়? তা হবে। মানে যে কোনও জিনিসেরই দুটো পিঠ তো থাকেই – এই যেমন দেখুন, দুই পর্বে লেখা আমার মন কি বাত-এর নিচে প্রচুর কমেন্ট পড়েছে। কেউ লিখেছেন – এক্কেবারে একমত, কেউ কিন্তু-কিন্তু করে আমার লেখার তথ্যসূত্র হিসেবে আরও ক্রেডিবল ইনফর্মেশনের দাবি করেছেন, কেউ সরাসরি জানিয়েছেন আমার মতের সঙ্গে তিনি বা তাঁরা একেবারেই একমত নন, আবার কেউ কেউ সুন্দর ভাষায় আমাকে গালমন্দ করে মনের জ্বালা মিটিয়ে গেছেন।

    আমি মাত্র একটি কমেন্ট অ্যাপ্রুভ করি নি, কারণ সেটি ডুপ্লিকেট কমেন্ট ছিল – মানে একজন একই বক্তব্য লিখে দুবার পোস্ট করে দিয়েছিলেন, তাই একটি আমি সরিয়ে দিয়েছি। বাকি কমেন্টগুলো আমি রেখে দিয়েছি এবং যথাসাধ্য উত্তর দেবারও চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি জানি সে উত্তর যথেষ্ট নয়। এই পর্বটা তাই আমি লিখতে বসছি আমার সাধ্যমত ক্ষমতামত সকলের সমস্ত বক্তব্যের উত্তর দেবার উদ্দেশ্যে।

    মার্চ মাসের তিন তারিখের সেই ভাষণে – যা ইতিমধ্যেই দুনিয়া জুড়ে ভাইরাল হয়ে গেছে, কানহাইয়া বলেছিল – প্রধানমন্ত্রীজি মন কি বাত বলেন ঠিকই, কিন্তু শোনেন না। ঠিকই বলেছে কানহাইয়া, কারণ আমার এই লেখার শুরুতেই যেটা বলেছি, রেডিও সেই ধরণের প্রিমিটিভ যন্ত্র, যা শুধু “ব্রডকাস্ট” করতে পারে একতরফা, দুই তরফের ইন্টার‍্যাকশনের পরিধি – যা সোশাল নেটওয়ার্ক দিতে পারে, সেটা রেডিও পারে না। তাই শুধু প্রধানমন্ত্রীজি কেন, রেডিওতে পারফর্ম করা সকলেই নিজের বক্তব্য গান কবিতা খবর কলাকৃতি – “বলেন”, “শোনবার” অবকাশ সেখানে নেই।

    আজ এইখানে আমি আপনাদের মন কি বাত শুনে তার ওপর আলাপচারিতা করব, তার ওপর আবার আপনারা কমেন্ট দেবেন, কেউ বলবেন ভালো, কেউ বলবেন একপেশে, কেউ আমার বা আমার মা-বোনের নাম তুলে খিস্তি দেবেন, যদি সেগুলো একত্রে দাবি করে আবার একটা পর্ব লেখার, তা হলে আবার আমি লিখতে বসব।

    কিন্তু সরাসরি আলাপচারিতায় যাবার আগে আমি আরও কিছু কথা বলতে চাই, যা আমার মনে হয়েছে, আগের পর্বদুটিতেই বলা উচিত ছিল, কিন্তু তাড়াহুড়োয় বলে উঠতে পারি নি।

    আমার আগের লেখায় ইন্ডিয়ান আর্মির অনেক অত্যাচারের গল্প আমি শুনিয়েছি, যাতে এমন একটা ধারণা জন্মাতে পারে, আর্মির মত খারাপ বোধ হয় আর কিছু হয় না। অনেকেই সেই ধারণা নিয়ে আমার লেখার নিচে কমেন্ট করেছেন, আমি স্বীকার করছি, আমার বোঝাবার ভুল। আমি সেইটাকে বরং আগে একবার শুধরে নেবার চেষ্টা করি।

    শুধু ভারতে নয়, বিভিন্ন দেশেই লোকে প্রথাগত পড়াশুনো শেষ করে বিভিন্ন পেশা বেছে নেয় – ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, শিক্ষক, ব্যবসা, মিলিটারি, পুলিশ, রাজনীতি। ভালো খারাপ সব পেশাতেই আছে, তাই তো? হাজারটা শকুন মরলে একটা উকিল জন্মায়, আমাদের বাংলাভাষারই প্রবাদ। এ লোকটা ডাক্তার না কশাই – আমরাই বলি। প্রথম দেখা দিনদুপুরে পুলিশ ঘুষ খায় – আমরাই গেয়েছি কলেজবেলায়। তো, মিলিটারির বেলায় এসে আমরা থমকে যাই কেন? একেবারে দুর্নীতিহীন ধোয়া তুলসীপাতা দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এমন মনে করি কেন?

    কারণ, মিলিটারি বা আর্মিকে স্পেশালি এইভাবে লার্জার দ্যান সেলফ প্রজেক্ট করা হয় জনমানসে। রাষ্ট্র এইটা করে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে। শুধু ভারত রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর যে যে দেশ মিলিটারি পোষে তারাই তাদের আর্মিকে একটা গ্লোরিফায়েড স্টেজে রাখে। কিন্তু ঐ গ্লোরিটাই সব নয়, সেটা বুঝে নেওয়াটাও দায়িত্বপরায়ণ নাগরিকের কর্তব্য। আগের পর্বগুলোতে আমি শুধুমাত্র কাশ্মীরে ভারতীয় আর্মির কীর্তিকলাপ বলেছি, আমি বলি নি মণিপুরে ভারতীয় আর্মি কী করেছে। কারণ সেটা লেখা আমার লেখার পরিসরে আসে না, কিন্তু আজকে আর্মি নিয়ে আলোচনা করতে বসে, আমার মনে হয় এটাও লেখা উচিত। আমাদের অনেকেই শর্মিলা বললে বুঝি সইফ আলি খানের মা। আমরা ইরম শর্মিলা চানুর নাম সবাই শুনি নি। শুনলেও, সদ্য শুনেছি, এই সোশাল মিডিয়া, বিকল্প মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তের পরে – গত দু তিন বছরের মধ্যে শুনেছি। মেয়েটি সুদীর্ঘ পনেরো বছর ধরে অনশন চালিয়ে আসছে আজ। মাঝে মাঝেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে, হাসপাতালে জোর করে নাসারন্ধ্রের মধ্যে দিয়ে খাবারের টিউব ঢুকিয়ে দেয়, আবার মাঝেমধ্যে তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাকে মুখ দিয়ে খাওয়াতে পারে নি রাষ্ট্রযন্ত্র, রাষ্ট্রের সেনাবাহিনি।

    শর্মিলার প্রতিবাদ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সেনাবাহিনির বিরুদ্ধে। সেনাবাহিনির বিশেষ ক্ষমতা, আফস্পা – তার বিরুদ্ধে। এই আফস্পা – আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল প্রোটেকশন অ্যাক্ট, দেশের “নিরাপত্তা”র নামে চালু আছে মণিপুরে আর কাশ্মীরে। বিনা প্রমাণে সেনা যে কাউকে তুলে নিয়ে যেতে পারে, অত্যাচার করতে পারে, গুলি করতে পারে, কোনও বিচার বা প্রমাণের দরকার নেই এই আইনের বলে। দেশের নিরাপত্তার জন্য এটা জরুরি। সেই নিরাপত্তার স্বার্থে যে কত কাশ্মীরি তরুণ পঙ্গু হয়ে গেছে চিরদিনের মত, কত কাশ্মীরি তরুণী যে ধর্ষিত হয়েছে সেনার হাতে, তার আজ আর কোনও নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। এ রকমই একজন ছিল থাংজম মনোরমা। মণিপুরের জঙ্গীগোষ্ঠী পিএলএ-র সাথে যুক্ত আছে, এই সন্দেহে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় মনোরমাকে – তার ঘর থেকে। পরদিন পাশের ক্ষেতে তার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ পাওয়া যায়, স্কার্টে এবং যৌনাঙ্গে পাওয়া যায় বীর্য। ভারতীয় সেনার একটা অংশ – আসাম রাইফেলস্‌-এর জওয়ানরা তাকে ধর্ষণ করেছিল মেরে ফেলার আগে। আফস্পা-র “বিশেষ” ক্ষমতাবলে।

    ২০০৪ সালের ঘটনা। ততদিনে শর্মিলার অনশন চার বছরে পড়তে চলেছে। তার চেয়ে বড় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মণিপুরের মহিলারা। নগ্ন হয়ে তাঁরা প্রতিবাদ জানান আসাম রাইফেলসের সদর দফতরের সামনে। সারা পৃথিবী সেদিন জেনেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনির রূপ। আপনারা অনেকেই হয় তো সে ছবি দেখেছেন।

    কিন্তু এটাই কি ভারতীয় সেনাবাহিনির একমাত্র রূপ?

    না। সেনাবাহিনি একটা দেশের মানুষের জন্য কী করতে পারে, কতটা করতে পারে, সেটা দেখতে পাই আমরা যখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উদ্ধারকার্যের জন্য সেনা নামানো হয়। কাশ্মীরে সেনার যে অত্যাচারের গল্প আমি আপনাদের এতদিন ধরে শুনিয়ে এসেছি, সেখানে কাশ্মীর বলতে আমি শুধুমাত্র কাশ্মীর ভ্যালির কথা বলেছি। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটা মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। জম্মু, কাশ্মীর উপত্যকা এবং লাদাখ অঞ্চল। আমি দুবার লাদাখ ঘুরে এসেছি, তার মধ্যে একবার ভারতীয় সেনাবাহিনির আতিথ্যে। সেনা সেখানে যে কীভাবে স্থানীয় লোকেদের সাথে মিলেমিশে কাজ করে, তাদের সাহায্য করে, দেখলে অসাধারণ লাগে। লে-তে খারদুংলা পাসের কথা জানেন হয় তো আপনারা। সেই খারদুং লা পাস পেরোলে শিওক নদী বরাবর উপত্যকাটির নাম নুব্রা উপত্যকা। এই শিওক নদী এঁকেবেঁকে পরে ঢুকে গেছে পাকিস্তানে। লাদাখ উপত্যকার এই অংশটা হিমালয়ে নয়, এটা অবস্থিত কারাকোরাম রেঞ্জে। এর একটা বড় অংশ এক সময়ে পাকিস্তানের অধীনে ছিল। পরে ভারতের অংশ হয়। শীতকালে যখন খারদুংলা বন্ধ হয়ে যায়, তখন এখানকার মানুষজনকে বাঁচিয়ে রাখে সেনা। স্থানীয় লোকজনের ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা, ক্ষেতের ফসল কেটে লে বা শ্রীনগরে বিক্রি করে টাকা এনে দেওয়া, শীতের সময়ে স্থানীয় বাচ্চাদের জন্য হীটার-লাগানো হস্টেল রুম, সেখানে আজও অনেক মানুষ বেঁচে আছেন যাঁরা জন্মেছিলেন পাকিস্তানি হয়ে, এখন তাঁরা ভারতের নাগরিক। পাগলের মত তাঁরা ভালোবাসেন ভারতকে, ভারতীয় সেনাকে। দুর্গম এই সব অঞ্চলে মূলত স্থানীয়রাই সেনার হয়ে ইনফর্মারের কাজ করে দেয় স্বেচ্ছায়, পাকিস্তানের দিক থেকে কোনও ইনফিলট্রেশনের সম্ভাবনা তারাই রুখে দেয় অনেকাংশে।

    এই নুব্রা ভ্যালি থেকেই একটা রাস্তা চলে যায় ডানদিকে, সিয়াচেন বেস ক্যাম্প। তার কাছাকাছি গিয়ে আমি ঘুরে এসেছিলাম। সেনাবাহিনির কর্নেল থেকে ডাক্তার থেকে সাধারণ সিপাহী, বিভিন্ন সময়ে তাদের সাথে আমি কথা বলেছি। লাদাখ, সেখানকার লোক আর সেখানকার সেনাবাহিনিকে নিয়ে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে যেতে পারি – আমার দু দুখানা ট্র্যাভেলগও আছে এই ব্লগেই।

    তো, মূল ব্যাপারটা কী দাঁড়াল? ভারতীয় সেনাবাহিনি ভগবানের অংশ না শয়তানের দল?

    কোনওটাই না। অথবা দুটোই। ঠিক যেমন ভালো ডাক্তার হয়, খারাপ ডাক্তার হয়, ভালো শিক্ষক হয় আবার খারাপ শিক্ষক হয়, পুলিশ উকিল ব্যবসায়ী – সব প্রফেশনেই যেমন ভালো বা খারাপ দুইই থাকে, ভারতীয় সেনাও তাই। এরা মহানও নয়, শয়তানও নয়। কিংবা দুটোরই একটা সমসত্ত্ব মিশ্রণ। এই সময়ে, কানহাইয়া জেলে যাওয়া থেকে ছাড়া পাবার পর পর্যন্ত – প্রচুর দেশপ্রেমিকের উষ্মায় ভেসে আসছে একটা কমন ফ্রেজ, সে কমন ফ্রেজ শোনা গেছে এমনকি দিল্লি হাইকোর্টের ধর্মাবতার শ্রীমতি প্রতিভারানীর বয়ানেও – ভারতীয় সেনা কী মহান, সেনা সীমান্তে দাঁড়িয়ে দিনরাত পাহারা দিচ্ছে বলেই না তোমরা জেএনইউতে বসে দেশবিরোধী স্লোগান দিতে পারছো! একবার ওদের মহত্ব, ওদের আত্মত্যাগের কথা ভাবো, ভাবো একবার শহীদ হনুমন্তাপ্পার স্ত্রী এই সব দেশবিরোধী স্লোগান শুনে কতটা দুঃখ পাচ্ছেন। তোমাদের যদি এক্ষুনি ঘেঁটি ধরে সিয়াচেনে ছেড়ে আসা হয়, ওখানে অক্সিজেন এত কম যে সেখানে তোমরা একঘন্টাও সারভাইভ করতে পারবে না।

    আরও শোনা যাচ্ছে, শিক্ষার কী প্রয়োজন? অল্পশিক্ষিত জওয়ানরা ওখানে দাঁড়িয়ে দেশের জন্য জান কুরবান করে দিচ্ছেন, আর পিএইচডি করা শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা এখানে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে দেশের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলছেন। এ যদি দেশদ্রোহিতা না হয়, তা হলে দেশদ্রোহিতা কী?

    শ্রীমতি প্রতিভারানীকে সবিনয়ে জানাই, আপনি আইন সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছেন, আপনি আইনজ্ঞ, আপনার জাজমেন্ট আইনের পরিসরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে মনে হয় আরেকটু বেশি অ্যাপ্রিশিয়েশন পেতেন আপনি। লাদাখ বা সিয়াচেন বা সেনাবাহিনির দেশপ্রেম আপনার ডোমেনের বিষয় নয়, খামোকা কেন সে সব নিয়ে জাজমেন্টে লিখে নিজেকে হাস্যাস্পদ করে তুললেন? শ্রীমতি প্রতিভারানী, হুট করে কাউকে সিয়াচেনের টপে নিয়ে গেলে কেউই এক ঘন্টা বা দু ঘন্টার বেশি সারভাইভ করতে পারে না, আপনিও না, আমিও না, কানহাইয়াও না, এমনকি সেনাবাহিনির একটি জওয়ানও না। এর জন্য ট্রেনিং দেওয়া হয়, অ্যাক্লাইমেটাইজেশন বলে একটা ব্যাপার আছে, সেইটা করতে হয়, ধাপে ধাপে তাকে হাই অলটিটিউডের সাথে সইয়ে নেওয়া হয়, তার পরে তাকে সিয়াচেন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। এটা সেনাবাহিনির কোনও একস্ট্রা তাকত নয়, এই ট্রেনিং পেলে যে কেউই সিয়াচেনে তিন মাস সারভাইভ করে যেতে পারে। আজ্ঞে হ্যাঁ, এত ট্রেনিং-এর পরেও সিয়াচেনে তিন মাসের বেশি কাউকে রাখা হয় না। ট্রেনিং পেলে আমিও সারভাইভ করে যাবো, এবং আনন্দের সঙ্গে আমি আজও এই ট্রেনিং নিয়ে সিয়াচেনে তিন মাস কাটিয়ে আসতে ইচ্ছুক। এর সাথে দেশপ্রেমের কুনও সম্পকো নাই ম্যাডাম। আগেই বলেছি, বেশ কিছু বিভিন্ন র‍্যাঙ্কের সেনাবাহিনির লোকের সাথে আমি কথা বলেছি, ম্যাডাম, বুকভরা দেশপ্রেম নিয়ে বিশেষ কেউ সেনাবাহিনিতে চাকরি করে না। তারা, চাকরি করে বলে চাকরি করে। যেমন আপনি চাকরি করেন হাইকোর্টে, আমি করি অন্যত্র, তেমনি ওরাও এই কাজগুলোর পরিবর্তে মাইনে পায়, সিএসডি ক্যান্টিন থেকে সাবসিডাইজড র‍্যাশন পায়। পার্ট অফ জব হিসেবেই ওদেরকে সীমান্ত পাহারা দিতে হয়, মৃত্যুকে যে কোনও সময়ে ওয়েলকাম জানানো তাদের চাকরিরই অঙ্গ, সেটা জেনেই লোকে সেনাবাহিনিতে ভর্তি হয়, ডিউটি করে আর দিন গোনে – কবে ছুটি পেলে “দেশে” যেতে পারবে, ঘরের লোকজনের মুখ দেখতে পারবে। দিনের পর দিন একই ডিউটি দিতে ওরা “বোর” ফীল করে। লাদাখের অপরিসীম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ওদের টানে না। আমি যখন কর্ণেলকে বললাম, আমি আবার আসব, এবার দিল্লি থেকে বাইক চালিয়ে – কর্ণেল আঁতকে উঠে বললেন, ওরেবাবা, শুনেছি অনেক পাগল আসে এখানে বাইক চালিয়ে – আমি ওইসব অ্যাডভেঞ্চারে একেবারে নেই। আমাকে ওসব টানে না। চাকরির প্রয়োজনে থাকতে হয়, তাই আছি – চেষ্টা করছি যাতে দিল্লিতে বা চণ্ডীগড়ে একটা পোস্টিং পেয়ে যাই।

    মানে মোদ্দা কথা হচ্ছে, মনে এই অ্যাডভেঞ্চার স্পিরিটটা থাকলে আর সঠিক ট্রেনিং পেলে আমি আপনি রামাশ্যামাযদু যে কেউ ওই অলটিটিউডে গিয়ে সারভাইভ করতে পারে, এতে সেনাবাহিনির আলাদা বিশেষ কোনও ক্রেডিট নেই। সেনার তরফে এই ট্রেনিং দেওয়া হয়, তাই সেনার লোকজন ওখানে সারভাইভ করতে পারে। এটুকুই।

    কথায় কথায় দেশপ্রেম আর দেশদ্রোহিতার বিতর্কে সেনাবাহিনির আত্মত্যাগের প্রসঙ্গ টেনে এনে যাঁরা তাঁদের মহান প্রমাণ করতে সর্বদাই ব্যগ্র, তাঁদের জন্য এটুকুই – সেনাবাহিনির চাকরি আর পাঁচটা চাকরির মতই চাকরি। বাড়তি মহান টহান কিস্যু নয়, ওটা রাষ্ট্রের তৈরি করা একটা ফাঁপানো বেলুন। যে লোকটা মহারাষ্ট্রে মধ্যপ্রদেশে চাষ করে ফসল ফলাচ্ছে আর ঠিকমত দাম না পেয়ে কীটনাশক খেয়ে সপরিবারে আত্মহত্যা করছে, যে লোকটা হাই টেনশন ইলেক্ট্রিকের পোলে উঠে লাইনের ফল্ট সারাচ্ছে, যে লোকটা ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমে ফুসফুসে টেনে নিচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস, যে লোকটা স্রেফ দু পায়ে দড়ি বেঁধে হাঁইহাঁই করে নারকোলগাছে উঠে যাচ্ছে, নারকোল পেড়ে দিচ্ছে আপনি বিক্রি করবেন বলে – এরা সকলেই কিন্তু “দেশের” জন্যই কাজ করছে এবং এদের প্রত্যেকের কাজে জড়িয়ে রয়েছে সাঙ্ঘাতিক জীবনের ঝুঁকি, এক বিন্দু ভুল হলে মৃত্যু। কিন্তু এদের মহান বলে ভাবতে শেখানো হয় না। কারণ দেশপ্রেম এমন একটা জিনিস, যেটা দেখাতে গেলে আমাদের সামনে একটা “শত্রু” খাড়া করতে হয় সামনে – সীমাপারের শত্রু, অন্যদেশের দুশমন। এই লোকগুলোর সামনে তো কোনও শত্রু নেই, দুশমন নেই – তাই এদের মহান বলা যায় না। অথচ সকলেই এই ঝুঁকিগুলো নেয় পয়সার বিনিময়ে, সুবিধের বিনিময়ে। সেনার জওয়ান থেকে নারকোল গাছে ওঠা লোকটা – সক্কলে। ফ্রি সার্ভিস কেউ দিচ্ছে না স্যার।

    ইন্ডিয়ান আর্মিকে তাই, “মহান” হিসেবে প্রজেক্ট করতে, আমি অপারগ। তাই বাকি তর্কগুলোর মধ্যে আমি ঢুকছি না।

    কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ এবং অনির্বাণ ভটাচার্যের সমর্থনে যাঁরা কথা বলছেন, লেখালিখি করছেন, তাঁদের মধ্যে, স্পষ্টত, দুটো ভাগ রয়েছে। একদল বলছেন, কানহাইয়া তো দেশদ্রোহমূলক কোনও স্লোগান দেয়ই নি, ওকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল ইত্যাদি। এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে এইটা স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে যে, দেশদ্রোহমূলক স্লোগান দিলে হয় তো কানহাইয়াকে গ্রেফতার করাটা জাস্টিফায়েড হত, পাটিয়ালা হাউজ কোর্টে কিছু উকিলবেশী গুণ্ডা দ্বারা তার মার খাওয়াটারও একটা সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যেত। এবং উমর খালিদ যে হেতু প্রকারান্তরে স্বীকার করেই নিয়েছে যে সে সেই “দেশদ্রোহমূলক” স্লোগানের সাথে যুক্ত ছিল, তাই সিডিশনের চার্জ তার ওপর লাগাটা অযৌক্তিক কিছু নয়।

    অন্যদলের বক্তব্য আরেকটু এক্সট্রিম। তাঁরা বলছেন, স্লোগান দিয়েছে বেশ করেছে। আমরা সমর্থন করি না সেই সব স্লোগান, কিন্তু এটাও মানি না যে শুধু স্লোগান দেবার জন্য কাউকে গ্রেফতার করা যেতে পারে, সিডিশনের চার্জ লাগানো যেতে পারে। এটা অনৈতিক, সংবিধান প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী, ইন ফ্যাক্ট সিডিশন অ্যাক্টটাই একটা ভুলভাল অ্যাক্ট, অবিলম্বে এটা তুলে দেওয়া হোক।

    আমাদের মধ্যে অনেকেই দেশকে ভালোবাসার প্রসঙ্গ উঠলে অ্যাকেবারে মুক্তকচ্ছ হয়ে যান, যুক্তিতক্কের একেবারে ধার ধারেন না। এক দুজন দেশপ্রেমিক, যাঁরা এমনিতে দলিতদের ঠিক অমানুষ মনে না করলেও “ভদ্রলোকের” মর্যাদা দিতে চান না, তাঁরাও খুব ইমোটিকন সহ বলতে লাগলেন, হুঁহুঁ বাবা, আম্বেদকর স্বয়ং এই জিনিসটি সংবিধানে রেখেছিলেন, সে কি এমনি এমনি? কে বলেছে দেশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলে সেটা দেশদ্রোহ হয় না? জেল তো তুচ্ছ ব্যাপার, এদের ফাঁসি হওয়া উচিত। স্লোগান তো পরের ব্যাপার, দেশকে টুকরো করার কথা ভাবলেও ফাঁসি হওয়া উচিত বলে জানালেন ফেসবুকে তর্ক চালানো আরেকজন।

    এঁদের অনেকেই জানেন না, এই সিডিশন অ্যাক্ট বা দেশদ্রোহমূলক আইন – এটি ভারতীয় সংবিধানে নেই। এটি আসলে ইন্ডিয়ান পেনাল কোড বা আইপিসি-র অন্তর্গত, যা মূলত ব্রিটিশ জমানায় বানানো হয়েছিল এবং তার খুব একটা পরিবর্তন হয় নি আজও।

    আলোচনায় যাবার আগে, আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক, কী এই সিডিশন অ্যাক্ট। গুগল করলেই পাওয়া যায়, তবুও আমি লিখে দিই।

    Section 124A (Sedition) as it read in the 1860 original version of the Indian Penal Code:

    Whoever, by words, either spoken or written, or by signs, or by visible representation, or otherwise, brings or attempts to bring into hatred or contempt, or excites or attempts to excite disaffection towards [Her Majesty or](1) the Government established by law in [British India](2), [British Burma](3) shall be punished with [Transportation for life or any shorter term](4), to which fin…e may be added, or with imprisonment which may extend to three years, to which fine may be added, or with fine.

    ১৮৬০ সালের আইন, একটু অদল বদল করে চলছে আজও। 1 আর 3 সরিয়ে দিন, 2-কে রিপ্লেস করুন ইন্ডিয়া দিয়ে, আর 4-কে রিপ্লেস করুন লাইফ ইমপ্রিজনমেন্ট দিয়ে। এসে যাবে আজকের সিডিশন অ্যাক্ট। এই আইন ব্রিটিশরা বানিয়েছিল ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে ভারতকে শাসন করার জন্য। ক্ষুদিরামের ফাঁসি, ভগৎ সিং সুখদেব রাজগুরুর ফাঁসি, গান্ধীর কারাবাস, নেতাজি সুভাষ বোসের গৃহবন্দী দশা বা তার আগের কারাবাস, ইত্যাদি সমস্তই করা হয়েছিল এই সিডিশন অ্যাক্ট দ্বারা। বৃটিশ আমলে এই আইনে এমন অনেকে অভিযুক্ত হয়েছেন যাঁদের আমরা পরবর্তীকালে দেশনায়ক হিসেবে সম্মান করেছি। বৃটিশ আমলের সব জিনিসই খারাপ এমন কথা আমি বলি না। কিন্তু মজার ব্যাপার, যাঁরা এই আইন দেখিয়ে টপাটপ লোকজনকে জেলে পুরতে চাইছেন তাঁরাই কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব করেন, পশ্চিমা প্রভাবকে সন্দেহের চোখে দেখেন। তাঁদের আমি শুধু এটাই মনে করিয়ে দিতে চাই সেকশন 124A ভারতীয় সংস্কৃতি নয়, এটা একান্তই পশ্চিমা আমদানী।

    আর আজ এই আইনকে নিজের মত ব্যবহার করছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রদ্রোহিতাকে সুচারুভাবে “দেশদ্রোহিতা” হিসেবে প্রজেক্ট করে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে উমর খালিদকে, অনির্বাণকে, কানহাইয়াকে। রাষ্ট্র আর দেশের মধ্যে যে একটা মোটা দাগের পার্থক্য আছে, সেটাকে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে সীমাপারের সেনাবাহিনির আত্মত্যাগের কাহিনি শুনিয়ে। রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোকে সরাসরি দেগে দেওয়া হচ্ছে “দেশদ্রোহিতা” নামে। যে কোনও সিদ্ধান্তের সঙ্গে মতানৈক্য হবার যে স্বাধীনতা, যা আসলে বাকস্বাধীনতারই একটা রূপ, ইংরেজিতে যাকে বলে ডিসেন্ট (Dissent), তাকে গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে রাষ্ট্রের মদতে।

    সংস্কৃতির কথা যখন উঠলই তখন একবার ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন নিয়ে প্রাচীন ভারত কি ভাবত দেখে নেওয়া যাক। আমার বন্ধু শুচিস্মিতার কাছে আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ এই অংশটুকু মনে করিয়ে দিতে আমাকে সাহায্য করার জন্য।

    .....................................

    "ছোটবেলায় সহায়ক পাঠে উপনিষদের গল্প, পুরাণের গল্প আমার খুব প্রিয় ছিল। এই বইগুলোতেই আমি যম ও নচিকেতার গল্প পড়ি, উদ্দালক ও শ্বেতকেতুর গল্প পড়ি, গার্গী ও যাজ্ঞবল্ক্যের গল্প পড়ি। এগুলো সবই প্রশ্নোত্তরের গল্প। নচিকেতা যমের কাছে মৃত্যুর স্বরূপ জানতে চাইছেন। শ্বেতকেতু আত্মার স্বরূপ জানতে চাইছেন। গার্গী ব্রহ্মের স্বরূপ জানতে চাইছেন। ভারতের সংস্কৃতি চিরকালই প্রশ্ন করার অধিকারকে মান্যতা দিয়েছে। মহাভারত সকলেই পড়েছেন। না পড়ে থাকলেও বি আর চোপড়ার টিভি সিরিয়াল তো অবশ্যই দেখেছেন। সেখানেও দ্রৌপদী ভরা রাজসভায় যুধিষ্ঠিরকে ভর্ত্সনা করছেন। যুধিষ্ঠির রাজা হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সেই নিন্দা সহ্য করতে হয়েছে। যুদ্ধের শেষে সন্তানহীনা গান্ধারী কৃষ্ণকে নির্বংশ হওয়ার অভিশাপ দিয়েছেন। যদিও তিনি জানতেন কৃষ্ণ ভগবানের অংশ, তবু অভিশাপ দেওয়া আটকায় নি। কৃষ্ণও মাথা পেতে সেই অভিশাপ নিয়েছেন। পদমর্যাদায় খাটো হলেই বিনাপ্রশ্নে সব অন্যায় মেনে নিতে হবে ভারতীয় সংস্কৃতি একথা বলে না। ভারতীয় সংস্কৃতি বরং শেখায় অন্যায় যুদ্ধের শেষে অর্জুনের হাত থেকেও গান্ডীব খসে যায়, ভগবানও সবংশে ধ্বংস হন।

    নির্বংশ হওয়াকে কি হিন্দী অনুবাদে “বরবাদী” বলা চলে? জেএনইউতে সেরকমই কিছু শোনা যাচ্ছিল না? "

    .................................................

    ন্যাশনালিজম, জাতীয়তাবাদ আসলে পশ্চিমা সংস্কৃতির অবদান। ইওরোপ থেকে আগত। সেখানে ছোট ছোট একেকটা নেশন তাদের জাতীয়তাবাদকে নিজ নিজ পদ্ধতিতে রক্ষা করত। ভারত তো ইওরোপিয়ান কোনও নেশন নয়, বরং ভারতের বহুত্ববাদের কথা বিবেচনা করে বলা যায়, ভারত হল নেশন অফ নেশনস। নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান। এই যে বিবিধতা, এই যে বৈচিত্র্য, এর মধ্যেই কিন্তু রয়েছে “নানা মত”-এর কথাও। ভিন্নমতকে সহ্য করার ক্ষমতার ওপরেই টিকে থাকবে এর বহুত্ব, এর বৈচিত্র্য। রাষ্ট্র যত বেশি গলা টিপে ধরার চেষ্টা করবে এই ভিন্নমতের, তত বেশি বিভেদকামী শক্তি মাথাচাড়া দেবে, শান্তির পথ ছেড়ে অন্য পথ বেছে নেবে। দমননীতি শর্ট টার্মে সফল হয়, লং টার্মে সফল হয় না। কাশ্মীর, মণিপুর তার একেকটা জলজ্যান্ত উদাহরণ।

    দেশ ছেড়ে বিদেশের দিকে তাকানো যাক। আগের পর্বে আমি ইংলন্ড আর স্কটল্যান্ডের গল্প লিখেছিলাম, এমনকি আমেরিকাতেও বিভিন্ন সময়ে দেশবিরোধী স্লোগান শোনা গেছে, আমেরিকার জাতীয় পতাকা পোড়ানো হয়েছে আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের যুদ্ধবাজ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে, এবং সমস্ত দেশের মত এই দেশেও এই বিপ্লবে আগ্রণী হয়েছিল ছাত্ররাই। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে, বা হালফিলের ইরাক যুদ্ধের সময়ে।

    একটি লোককেও গ্রেফতার করা হয় নি, একজনের নামেও সিডিশনের চার্জ লাগানো হয় নি, একজনকেও ফাঁসি দেওয়া হয় নি। আমেরিকা বহুত্ববাদে বিশ্বাসী, মতপার্থক্যে বিশ্বাসী, যতক্ষণ না কেউ আমেরিকার বরবাদী চেয়ে সত্যি সত্যি হাতে অস্ত্র তুলে না নিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমেরিকা তার নাগরিকদের বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী।

    আবার দেশের দিকে তাকানো যাক। তামিলনাড়ুর কুডানকুলামে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চলছিল গত দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। স্থানীয় লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এর বিরোধিতা করে আসছিল বিভিন্ন কারণে, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান নষ্ট হবে। উন্নয়নকামী দেশপ্রেমিক ভারতীয়রা অবশ্য তাদের এই প্রতিবাদকে মান্যতা দেয় না, তাদের মনে করে উন্নয়নের পরিপন্থী, কিছু দুষ্টু এনজিও-র সাথে হাত মিলিয়ে তারা দেশের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

    ভারত সরকারও সেই পথেই ভাবেন। পারমাণবিক বিদ্যুৎ চুল্লি বসানোর যে সব সেফটি নর্মস মেনে চলতে হয়, তা মানা হচ্ছে না বলে প্রতিবাদকারী জনতা এবং এনজিও-দের ওপরে রাষ্ট্র নামিয়ে এনেছিল দেশদ্রোহের ডাণ্ডা। আজ পর্যন্ত কমবেশি আট হাজারের ওপর মানুষ দেশদ্রোহের দায়ে সেখানে অভিযুক্ত।

    তো, সেই অন্যদলের যা বক্তব্য, সেইটুকু বক্তব্য আমারও – স্লোগান দেওয়াটা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয়, আমি একমত হতে না-ই পারি, তবে তার জন্য স্লোগান দেওয়া লোকগুলোকে একবার বকে দিলেই যথেষ্ট হত, সীমান্ত পাহারা দেওয়া সেনাবাহিনির দোহাই দিয়ে সিডিশনের কেস লাগানো একেবারেই আইন নিয়ে ছেলেখেলার সামিল, আর সেই ছেলেখেলাকে এখন জাস্টিফিকেশন দিতে গিয়ে একের পর এক নেতামন্ত্রীর দল আরও আরোও কুযুক্তি, কুতর্কের অবতারণা করে চলেছেন।

    (২)

    প্রশ্নোত্তর পর্বে আসি। বেশির ভাগ প্রশ্নেরই উত্তর আমি কমেন্টের নিচেই দিয়েছিলাম, তাও একবার দেখে নিই কিছু বাকি রয়ে গেল কিনা।

    snapitam লিখেছেন – একটা প্রশ্ন করার ছিল! ভারতীয় সৈন্য দের ধৈর্য বা সদিচ্ছা ছিলনা বললেন। কোনো রাষ্ট্রই কি আজ অব্ধি তাদের বোড়ে দের এই দুটো অস্ত্রর প্রয়োগ শেখায়? শিখিয়েছে এযাবৎ?
    ভীষন প্রাসঙ্গিক লেখা – Kasmir Crushible বইটা ও পড়ে দেখতে পারেন…

    তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। কাশ্মীর নিয়ে বইটার রেফারেন্স দেবার জন্য। আমি কাশ্মীর নিয়ে এখনও পড়ছি, যত পড়ছি তত জানছি। আগের পর্বে দুটো বইয়ের নাম দিয়েছিলাম, আপনি তৃতীয় বইয়ের নাম দিলেন, আমি আরেকটা বইয়ের নাম দিচ্ছি – কাশ্মীরঃ রুটস অফ কনফ্লিক্ট, পাথস টু পীস – সুমন্ত্র বোসের লেখা, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রকাশন।

    বাবু চৌধুরি প্রশ্ন করেছেন, মুসলিমরাই কেন সন্ত্রাসবাদের রাস্তা বেছে নিল? এত যে হাজার হাজার কাশ্মীরি পণ্ডিত ঘরছাড়া হয়েছেন, কই তাঁরা তো অস্ত্র তুলে নেন নি আজও?

    অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু উত্তরটা আমার জানা নেই। কোন কমিউনিটি কখন কোন পরিস্থিতিতে হিংসার পথ বেছে নেবে, সেটা বলা মুশকিল। কাশ্মীর ভ্যালির মুসলিমরা হিংসার জন্য প্রত্যক্ষ মদত পেয়েছিল পাকিস্তানের থেকে, ট্রেনিং পেয়েছিল, গোলাবারুদ পেয়েছিল। সেটা একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু একমাত্র কারণ নয়।

    চাকরিক্ষেত্রে সংরক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন কমিউনিটির লোকজন আন্দোলন করছেন। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন রাষ্ট্রের কাছে। গুজরাতে পটেল সম্প্রদায়। হরিয়ানায় জাট। একদল হিংসার পথ নেয় নি। তাদের নেতা হার্দিক পটেল এখন জেলে বন্দী। অন্যদিকে হরিয়ানার অবস্থা দেখুন। এক সপ্তাহের ভায়োলেন্সে কত হাজার কোটি টাকার জাতীয় সম্পত্তির বিনাশ, কত লোকের রোজগার চলে গেল, বাড়ি পুড়ে গেল, ব্যবসা পুড়ে গেল, জীবন চলে গেল, গণধর্ষণেরও খবর শোনা যাচ্ছে, যদিও প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

    কমিউনিটি, মব, কখন সহিংস হয়ে ওঠে, কতক্ষণ অহিংস থাকে, এ বড় জটিল ক্যালকুলেশন। দশ রকমের কারণ থাকে সে সবের পেছনে। এই মানসিকতাকে কোনও বিশেষ ধর্ম বা কমিউনিটির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলা তাই মুর্খামির পরিচয়। উনিশশো চুরাশি সালে যে পাইকারি হারে শিখহত্যা হয়েছিল, হত্যাকারেদের বেশির ভাগই ছিল হিন্দু। বাবরি মসজিদ ভাঙার জন্য ৫ই ডিসেম্বর ১৯৯২ যে সুবিশাল জনতা জড়ো হয়েছিল অযোধ্যায় অস্ত্র হাতে, তারা কেউই কাশ্মীরি মুসলমান বা জাট কমিউনিটি হিসেবে পরিচিত ছিল না।

    সোহেল লিখেছেন – তাই কি এঁরা এখন চাইছেন কাশ্মীরের স্বাধীনতা? তাই পাকিস্তানের নারা নিচ্ছে?

    সোহেল, আপনি ভুল করেছেন, কাশ্মীরের স্বাধীনতা চেয়ে চলেছে একদল লোক, কাশ্মীরে, দিল্লিতেও। ভারতের বরবাদীর স্লোগানও উঠেছে। কিন্তু কেউ পাকিস্তানের নামে “নারা” লাগায় নি। অন্তত আমি যেটুকু জানি। আর তার পরেও বলব, পাকিস্তানের নারা লাগালে তাকে একবার বকে দেওয়াই এনাফ। এত ঘেন্নার দৃষ্টিতে দেখার তো কোনও দরকার নেই! আমি যদি বলি ফ্রান্স জিন্দাবাদ বা সিঙ্গাপুর জিন্দাবাদ বা অস্ট্রেলিয়া জিন্দাবাদ, আপনার খুব খারাপ লাগবে কি? তা হলে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বললে এত খারাপ লাগার কী আছে? বললে কী এসে যায়?

    সুমন সরকার যা লিখেছেন তা বাছা বাছা গালাগালিতে ভর্তি। তাই উত্তর না দিয়েই আমি স্কিপ করে যাচ্ছি।

    নীলাঞ্জন দাম লিখেছেন, তা হলে সমাধানটা কী? সব্বাই তো খারাপ, আর্মি খারাপ, পলিটিশিয়ানরা খারাপ – সমাধানটা যদি বলে দিতেন।

    দামি প্রশ্ন। আসলে সমাধান আমার হাতে নেই। সমাধানসূত্র লিখব বলে আমি এ লেখা লিখিও নি। আসলে, সমাধান কোনও একজনের হাতে নেই – সমাধানের কথা চিন্তা করতে গেলে সবার আগে সমস্যাটাকে বুঝতে হবে। আমি সমস্যাটা বোঝাবার চেষ্টা করেছি মাত্র। তাও আমি প্রায় কিছুই বুঝিয়ে উঠতে পারি নি। কাশ্মীর সমস্যার পরিধি এত বিশাল আর এত গভীর, একটা দুটো মেড-ইজি ব্লগে এর আলোচনা করা সত্যিই সম্ভব নয়। আমার এক বন্ধু শুধু কাশ্মীর সমস্যার ওপর বাংলা ভাষায় একটা চমৎকার লেখা লিখে চলেছেন – এইখানে (http://www.guruchandali.com/blog/2016/02/22/1456129285257.html), উৎসাহীরা পড়ে ফেলতে পারেন। সহজ সরল ভাবে লেখা। আমি আর্মি খারাপ বা পলিটিশিয়ানরা খারাপ – এইটা প্রমাণ করতে চাই নি। আসলে আর্মি মানেই লার্জার দ্যান লাইফ একটা ভগবানসম মূর্তি যারা অতন্দ্র পাহারায় রক্ষা করে চলেছে দেশের সীমান্ত – তাই তাদের দেশভক্তি দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত, এই মিথটা আমি ভাঙতে চেয়েছি। ভালো খারাপ মিলিয়ে মিশিয়েই ইন্ডিয়ান আর্মি। দুনিয়ার যে কোনও দেশের আর্মিই তাই। বাড়তি মহান ভাবার জাস্ট কোনও দরকার নেই, গ্রাউন্ড রিয়েলিটি থেকে সমস্যাটার পর্যালোচনা করাটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল।

    “রয়” লিখেছেন, আপনি তিব্বত নিয়ে কিছু লিখলেন না দেখে হতাশ হলাম। আর কাশ্মীর থেকে এসে দিল্লিতে শুধু অ্যান্টিন্যাশনাল কথা নয়, অনেকেই সন্ত্রাসবাদী কাজও করছে, তাতে ভারত নামক দেশের অনেক সাধারণ মানুষ মারাও যাচ্ছেন, আগেও গেছেন। সরকার তো সাধারণ মানুষের প্রাণহানি চাইবে না তাই কিছু অতিবিপ্লবীকে ফাঁসি দিতেই হয়।

    রয়, আমি সে অর্থে ইজরায়েল নিয়ে কিছু লিখি নি, নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার সমস্যা নিয়ে কিছু লিখি নি, অনেক কিছু নিয়েই লিখি নি। তিব্বত নিয়ে লেখার পরিসর এখানে ছিল না। কাশ্মীর নিয়ে এত বড় আলোচনা করে চলেছি শুধুমাত্র আফজল গুরুদের জন্মের বৃত্তান্তটা বোঝার জন্য, বোঝাবার জন্য। আর কাশ্মীর মানে, শুধুমাত্র কাশ্মীর ভ্যালির কথা হচ্ছে। জম্মু নয়, লাদাখও নয়।

    আর আপনি আমার কথারই প্রতিধ্বনি করছেন। সন্ত্রাসবাদের আমি ঘোর বিরোধী। সকলেই তাই। যে বা যারা বন্দুক হাতে সন্ত্রাস চালায় এ দেশে, ইন ফ্যাক্ট যে কোনও দেশে, তাদের বন্দুক নিয়েই মোকাবিলা করতে হয়। মারতে হয়, ধরা পড়লে ফাঁসিও দিতে হয়। তাই নিয়ে আপনার সাথে আমার কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু শাস্তিপ্রক্রিয়া আসে অপরাধ প্রমাণিত হবার পরে। ভারতের আইন এমনকি আজমল কাসভের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবার আগে তার ফাঁসি দেয় নি। এবং তাই নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্নও তোলে নি।

    আফজল গুরুর কেসটা একটা পয়েন্ট অফ ডিবেট হয়ে আছে অনেকদিন ধরে। সরাসরি কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি সংসদ হামলায় তার জড়িত থাকার। জামাকাপড় খুলে উলঙ্গ করে রেখে, নিজের মূত্র নিজেকে খেতে বাধ্য করিয়ে, আরও নানাবিধ অত্যাচারের পরে আফজলকে দিয়ে স্বীকার করানো হয় পুলিশের হেফাজতে যে সে “যুক্ত ছিল”। পরে আদালতে সে বার বার অস্বীকার করে এবং বলে যে তাকে অত্যাচার করে এই স্বীকারোক্তি লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে – কিন্তু আদালতে সেকথা পাত্তা পায় নি। জাতীয়তাবাদের বোধ সময়বিশেষে ন্যায়াধীশদেরও অন্ধ করে দেয়। তাই সরাসরি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও স্রেফ “জাতির বিবেক”-কে সন্তুষ্ট রাখার জন্য আফজলের ফাঁসি হয়। ফাঁসির চিঠি আফজলের পরিবারকে পাঠানো হয় ফাঁসির কয়েক ঘণ্টা আগে, আফজলের স্ত্রী সে চিঠি পান যখন, তখন আফজলের ফাঁসি হয়ে গেছে। আফজলের মৃতদেহ তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় নি, তিহাড় জেলেই সমাধিস্থ করা হয়েছে।

    আগেও বলেছি, আবারও বলছি, জেএনইউয়ের সেদিনের প্রতিবাদের মূল বিষয়টাই ছিল এইটা। জুডিশিয়াল কিলিং অফ আফজল। এবং এই প্রতিবাদের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণভাবে একমত। এটা একটা জুডিশিয়াল কিলিং, যতই না সে কিলিং সুপ্রিম কোর্টের হাতে হোক। সুপ্রিম কোর্টও কোনও ভগবান নয়, কিছু মানুষই চালায়। সন্দেহাতীতভাবে অপরাধ প্রমাণিত হবার পরে যুক্তিপূর্ণভাবে তার ফাঁসি হলে কারুরই কিছু বলার অবকাশ থাকত না, কিন্তু এই বিচারপদ্ধতিটাই একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন রেখে দিয়েছে আজও। ইন্টারনেটে সার্চ করলে এর ওপরে অনেক লেখা পাবেন, দেশি বিদেশী নামকরা স্কলারদের লেখা। এটা শুধু মুর্খ আমার বা জেএনইউয়ের বাচ্চাদের দৃষ্টিভঙ্গীমাত্র নয়।

    shanmed লিখেছেন, “অনেকে বলছে কাশ্মীরকে স্বা—– ধীনতা দিতে হবে। তা দাও না– অসুবিধা কি আছে? এমনিতে কাশ্মীরের পশ্চিমদিকে সিয়াচেন- কার্গিল অন্যদিকে তিব্বত-চায়না। ইন্ডাস্ট্রি তেমন কিছু নেই। এখন সেনা রাখতে, রেশন দিতে কোটি – কোটি টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। আলাদা দেশ হলে তখন আমরা চড়া দামে জিনিস বেচব — ওদের। খাবারদাবার – মোটর গাড়ি , পোশাক, তেল, গ্যাস — সব কিছুই আমরা বেচব ওদের। আমাদের স্যাটেলাইট গুলো ওরা ব্যবহার করবে আর ভাড়া গুনবে। অনেক বিদেশি মুদ্রা আয় হবে।”

    তাঁকে আমি সেখানেই উত্তর দিয়েছি, আর বেশি কিছু লেখার প্রয়োজন নেই। shanmedএর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে আমার, এবং সুন্দর মনোগ্রাহী আলোচনা, আপনারা প্রথম পর্বের নিচে মতামত সেকশনে গিয়ে পড়ে আসতে পারেন। যদিও শেষটা মধুর হয় নি। একই রেটোরিক এসে গেছে, বাংলাদেশে যে এত মুসলিম এই করেছে, সেখানে হিন্দুরা নির্যাতিত, তাই নিয়ে কেন কিছু লিখলেন না – ইত্যাদি।

    আমার তরফে এটুকুই, দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশেই সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচার করে। তাদের রক্ষা করে রাষ্ট্র। আমি এই প্রবন্ধ ঠিক হিন্দুর ওপর মুসলিম বা মুসলিমের ওপর হিন্দুর অত্যাচার নিয়ে লিখছি না। ধর্মের নামে হানাহানি যুগ যুগ ধরে দুনিয়ার সর্বত্র হয়ে এসেছে। ভারতে, পাকিস্তানে, বাংলাদেশে, বার্মায়, শ্রীলঙ্কায় – তার থেকে আলাদা কিছু হচ্ছে না। সেগুলো নিয়ে অবশ্যই কড়া নিন্দে হওয়া দরকার, আলোচনা হওয়া দরকার – ইন ফ্যাক্ট আমি ঘোর নিন্দা জানাই এই পরিকল্পত এথনিক ক্লিনসিং-এর পদ্ধতির, কিন্তু আবারও – সেটা এই লেখার পরিসরে আসে না। আমরা পরে অন্য কোনও লেখায় সেটা নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

    এর পরে সন্দীপের বক্তব্য, তার জবাবও আমি সেখানেই দিয়ে দিয়েছি। অতনু-র বক্তব্যেও তাই।

    আদৃতা কর লিখেছেন – তবে কি কাশ্মীরের স্বাধীনতা পাবার জন্য ভারতের বরবাদীকে সমর্থন করতে হবে? … আপনার জানা উচিত, যে কাশ্মীর শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, স্ট্র্যাটেজিক কারণেও ভারতের কাছে ইমপর্ট্যান্ট, … আজকে যদি কাশ্মীরকে স্বাধীনতা দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে কি পাকিস্তান আর চীন বসে থাকবে? তখনও কিন্তু তাদেরকে সাহায্য করার জন্য ইন্ডিয়াকেই এগিয়ে আসতে হবে।

    আরও কিছু লিখেছেন, পুরোটা বাংরেজিতে লেখা, তাই টুকতে অসুবিধা হচ্ছে, তবে আমার মনে হয় তাঁর বেশির ভাগ প্রশ্নের জবাব আমি এই লেখায় দিয়ে দিয়েছি। আবারও বলি – ভারতের বরবাদী আমি সমর্থন করি না, কেউই করে না। কিন্তু যে বা যারা করেছে তাদেরকে দেশদ্রোহের দায়ে জেলে ঢোকানোও আমি সমর্থন করি না। কাশ্মীর স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনের কারণে ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই, কিন্তু সেটা কাশ্মীরের মানুষকে বাদ দিয়ে হওয়া সম্ভব ছিল না। কাশ্মীরের মানুষ কিন্তু শুরু থেকেই এমন হস্টাইল ছিল না ভারতের ওপর। ওপরে একটা লিঙ্ক দিয়েছি, আমার বন্ধু কাশ্মীর নিয়ে লিখছেন, সেইটা একবার পড়ে নিতে অনুরোধ করি। কিন্তু ভারত, কাশ্মীরিদের সঙ্গে নিয়ে অন্তর্ভূক্তির পথে না গিয়ে নিজের সেনাবাহিনির পেশিশক্তি আর বন্দুকের নলের ওপর বেশি জোর রাখতে গেল, সমস্যার শুরু সেইখানে হল, এটাই আমি বলতে চেয়েছি।

    এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, না, কাশ্মীরকে ধরে রেখেও বিশেষ কিছু লাভ হচ্ছে না, হাজারে হাজারে হনুমন্তাপ্পার মত জওয়ান মারা যাচ্ছে সত্যিকারের কোনও শত্রুর সাথে যুদ্ধ না করেই, অন্যদিকে কাশ্মীরকে ছেড়ে দিয়েও ভারতের ক্ষতি বই লাভ হবে না। সমস্যা অনেক গভীরে চলে গেছে, এই ক্ষত সারানো এখন প্রায় অসম্ভব বলেই আমি মনে করি। তাই আমাদের এই কাশ্মীরে সেনার উপস্থিতি আর একইসঙ্গে ভারতবিরোধী স্লোগান, এই দুটোর মধ্যে ব্যালান্স রেখেই চলতে হবে, যতদিন না এর থেকে বেটার কোনও সল্যুশন পাওয়া যায়।

    arijitakacool লিখেছেন, দেশের একপ্রান্তে অত্যাচারিত মানুষের স্বাধীনতা কামনায় দেশের রাজধানীতে (সাধারণ নাগরিকদের রক্ত-জল করা উপার্জনের টাকা থেকে সাবসিডি পাওয়া) ছাত্রদলের মুখ থেকে “ভারত কি বরবাদী, পাকিস্তান জিন্দাবাদ বা ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে” শুনেও শান্ত থাকব বা সহানুভূতি দেখাবো – এ আশা করেন কি করে? এ তো হুমকি ছাড়া কিছুই নয় – ছাত্ররাজনীতি না জঙ্গি-সংগঠন? আপনার কথা মানতে হলে তো সমস্ত জঙ্গি সংগঠন উত্থানের ইতিহাস পড়তে হয় – আর তাদের সমর্থন করতে হয়। পার্লামেন্ট-এ হামলা করা আফজল গুরু “শহীদ”? ভাবুন তো – আপনার পাশের বাড়ির স্বামী তার স্ত্রীর ওপর অকথ্য অত্যাচার করে; আর আপনি শান্তশিষ্ট মানুষ্, তার প্রতিবাদ করেন না। দুদিন পর কিছু লোক এসে সেই স্বামীর দোষের জন্য পুরো পাড়া জ্বালিয়ে দেব – এই হুমকি দিয়ে চলে যায়। তার জন্য আপনি তাদের পক্ষ নেবেন, না পুলিশকে ফোন করবেন?
    যে দেশের ওপর আপনার সেন্টিমেন্ট কাজ করেনা, যে দেশের অস্তিত্ব কেবল আপনার কাছে মাটি আর জল বলে মনে হয়, সেই দেশের নাগরিকত্বের সমস্ত রকম সুযোগসুবিধা ছাড়তে পারবেন কি? ছাড়তে আসলে হবে না – ভারত সহনশীল দেশ বলেই আপনার মত বা জে.এন.ইউ এর ছাত্রসম্প্রদায়ের মত লোকজন এই কথা বলে পার পেয়ে যান। পাকিস্তান হোক, কি বিশ্বের যে কোনো দেশ হোক, এই রকম কাজ করলে কি হাল হতে পারে সেটা একটু চোখকান খোলা রাখলেই জানা যায়।
    আমাদের সত্যি কিচ্ছু বলার থাকত না – যদি এই সব কথা বিজেপি-র বিরুদ্ধে হত। আমাদের সত্যি কিছু বলার থাকত না – যদি আফজল গুরুর সন্ত্রাসবাদ না থাকত। হুমকি দিয়েছে মানেই কি সত্যি ভারত টুকরো করবে – এরকম হালকা ভাবেও তাই নিতে পারছি না – সরি। “এক আফজল মারোগে, হাজার আফজল নিকলেগা?” মারতে হয়, অত্যাচারী সেনাদের বিরুদ্ধে স্টেপ নিন। সাধারণ মানুষ তথা দেশের বিরুদ্ধে হুমকি কেন? আমি সন্ত্রাসবাদী মেন্টালিটি বললেই দোষ? বাহবা আঁতেল।

    জঙ্গি-সংগঠন নয়, নিতান্তই ছাত্র-রাজনীতি। যদিও এখন জানা গেছে যে যারা স্লোগানগুলো দিয়েছে তারা জেএনইউয়ের ছাত্র ছিল না। আপনার বক্তব্য অনেকটাই আবেগঘন, তাই আপনি লেখেন “পার্লামেন্টে হামলা করা আফজল গুরু”। হয় লেখাটা পড়েন নি, নয় আবেগের বশে লিখেছেন। পাশের বাড়ির ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স বা বাইরের লোকের পাড়া জ্বালিয়ে দেবার হুমকি শুনে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি নিশ্চয়ই পুলিশের কাছে যাবো, কিন্তু আমি যদি পাড়ার কমিশনার হই তা হলে আগে চাইব পুলিশ না ডেকে ব্যাপারটা আভ্যন্তরীনভাবে মেটানোর। জেএনইউয়ের ভিসি পুলিশ না ডেকে ব্যাপারটা মেটাতে পারতেন।

    সেন্টিমেন্টের কথা যেটা বললেন, সেটা পুরোপুরি ঠিক নয়, সেন্টিমেন্ট একটা আছে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেন্টিমেন্টের বশে দেশ বা রাষ্ট্র কোনও ভুল করলে আমি সেটা নিয়ে প্রতিবাদ জানাবো না। এটা শুধু দেশ নয়, আমার বাবামায়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। “দেশের নাগরিকত্বর সমস্ত রকম সুযোগসুবিধা ছাড়তে পারবেন কি?” নিশ্চয়ই পারব। বেটার অপশন পেলে আরামসে এ দেশ ছেড়ে চলে যাবো, ইন ফ্যাক্ট শয়ে শয়ে লোকজন বিদেশে গিয়ে সেটল করে, গ্রিন কার্ড পেয়ে সে দেশের নাগরিক বনে যায়। দেশে ফেরার চেষ্টাও করে না। দেশের নাগরিকত্ব পাই, সুযোগ সুবিধা পাই (তাও ঘুষ না দিয়ে নয়) – তার মানে এই নয় যে দেশ ভুল কাজ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব না। সেটা দাসখত লিখে দেবার সামিল।

    আফজল গুরুর সন্ত্রাসবাদ কতটা ছিল, কী ছিল, সেটা আরেকবার পড়ুন। তার পরে আবার আলোচনায় বসা যাবে।

    শাফিনূর লিখেছেন কাশ্মীর থেকে – “কাশ্মীরে আছি গত দুবছর ধরে। কি পরিমাণ ভয়মিশ্রিত ঘৃণা বুকে একটা জনগোষ্ঠী তাদের দিন রাত কাটায় তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। ৯০ এর ঘটনাগুলোর কারণে কাশ্মীরের এমন কোন পরিবার পাওয়া যাবে না, যারা তাদের স্বজন হারায়নি।”

    trijit28613 যা লিখেছেন তার মূল নির্যাস আরেক রেটোরিক। “পাকিস্তানে গিয়ে বলতে পারবেন?”

    গত বছর যখন সুপ্রিম কোর্টের এক ক্রিমিনাল লইয়ার আমার ওপর খুব রেগে আমাকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তিনিও এই এক কথাই বলেছিলেন। ছোটবেলায় আমাদের বিজ্ঞান স্যারও এই কথা বলতেন, পাড়ার মোড়ে চার্চের একটা লোক যিশুর মহিমাকীর্তন করা লিফলেট বিনামূল্যে বিলি করত জনতাকে – সেই প্রসঙ্গ তুলে উনি বলেছিলেন, পাকিস্তানে গিয়ে এ রকম করতে পারত? সেই ১৯৮৯ সালে।

    না স্যার। পাকিস্তানে গিয়ে এমন করা বা বলা একপ্রকার অসম্ভব। কেন জানেন? দুটো দেশের গঠনগত কাঠামোটাই আলাদা। পাকিস্তান দেশটা ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি। সিডিশনের থেকেও মারাত্মক একটা আইন আছে সে দেশে, ব্লাসফেমি আইন। জেল টেল তো তুচ্ছ, ওখানে ব্লাসফেমি আইনে লোককে ফাঁসি দেওয়া হয়, গুলি করে মারা হয়, আরেকটু পশ্চিম দিকে গেলে সেখানে পাথর ছুঁড়ে ছুঁড়ে হত্যা করা হয়। সেটাকে তো আমরা আদর্শ সভ্যতা বলি না! ভারত একটা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ, এখানে সকলের ধর্মাচরণ এবং ধর্মপ্রচারের সমান অধিকার আছে, কোনও ধর্মকে এখানকার সংবিধান আলাদা প্রাধান্য দেয় না। ভারতের তুলনা ঐসব ধর্মভিত্তিক দেশের সাথে হবে কেন? গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার অভাবে জন্মের লগ্ন থেকে পাকিস্তান বা বাংলাদেশ কীভাবে ভেতর ও বাইরে থেকে দীর্ণ হচ্ছে ধর্মের ভেক ধরা শয়তানদের হাতে, সেটা জানেন নিশ্চয়ই? কতবার সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, আর কতবার নির্বাচিত সরকার এসেছে? কত শিশু, নিষ্পাপ মানুষ মারা গেছে ধর্মের ফাটানো বোমার আঘাতে? দেশ হিসেবে অসফল সেগুলো, পরধর্ম-অসহিষ্ণু, ভারত কেন সে রকম হবার চেষ্টা করবে? পাকিস্তানে এ সব বলা বা করা সম্ভব নয় বলেই তো ভারতে করছি। কিন্তু আমেরিকায় সম্ভব। ইউকে-তে সম্ভব।

    আবার ভাবি, একেবারেই কি সম্ভব নয়, পাকিস্তানে? … কদিন আগে, এই জেএনইউ ঘটনার প্রেক্ষিতেই একটা চিঠির স্ক্যানড কপি পেলাম কবিতা কৃষ্ণণের ফেসবুক পোস্টে – পাকিস্তানের এক ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা সলিডারিটি জানিয়েছে জেএনইউর ছাত্রছাত্রীদের। লিখেছে, আমাদের দেশেও – আমরা যখনই দেশের বা সরকারের কোনও ভুল বা দোষ পয়েন্ট-আউট করি, আমাদের দাগিয়ে দেওয়া হয় অ্যান্টি-পাকিস্তানি, প্রো-ইন্ডিয়ান হিসেবে। আমাদেরও দেশদ্রোহী বলা হয়।

    ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে, স্বাধীনতার সত্তর বছরের মাথায় এটাই তা হলে আমরা অ্যাচিভ করলাম? পাকিস্তানের সাথে অ্যাট পার হওয়া?

    সুপ্রদীপ লিখেছেন – “কোনও রকম সমাধান ছাড়া, যারা সমস্যাকে খুঁচিয়ে তোলে তারা তো সমাজের সুস্থ জীবনটাকে আরও অস্বাভাবিক করে দেয়। আপনার লেখা এবং মতামত দুইই পড়লাম। কাশ্মীরে যা হয় তা কোনও শিক্ষিত মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আমিও মানি না। কিন্তু এর সমাধানটা কী? এফবি ছেড়ে বাইরের দুনিয়াতে আসুন। একটা সুষ্ঠু সমাধান বলুন। তবে গিয়ে কমপ্লিট বলতে পারব আপনার লেখাকে।”

    সুপ্রদীপ, কমপ্লিট লেখা লিখেছি, এমন দাবি আমি করি নি। আর এফবির বাইরেও একটা বড় দুনিয়া আছে আমার। সমাধান আমার জানা নেই, আর সমাধান বাতলে দেবার দায়িত্বও আমার নয়। এই দেশকে, এই সরকারকে সমাধান বের করতে হবে। আমার কাজ শুধু এটুকু বলা – যে পথে কাশ্মীর সমস্যাকে হ্যান্ডল করা হয়ে চলেছে গত আড়াই তিন দশক ধরে – সেটা এফেক্টিভ পথ নয়, তাতে সমস্যা বাড়ছে বই কমছে না, লোকে অর্ধ ইতিহাস চর্চা করছে এবং নী-জার্ক রিয়্যাকশনে যাকে তাকে দেশদ্রোহী চিহ্নিত করে তার ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠছে। এমন গণহারে রক্তপিপাসু হয়ে ওঠা, কোনও জাতির পক্ষেই শুভ নয়।

    সুপ্রদীপ আরও লিখেছেন – “… কথা হল এই যে বিপ্লব এটাতে আপনার দাবি “ইন্ডিয়া কি বরবাদী” বা “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” না হয়ে ইন্ডিয়ান আর্মির বিরুদ্ধে বা তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত নয় কি? মানছি এক দিনে এই আওয়াজ ওঠে নি। কোন সেন্টিমেন্ট থেকে এই আওয়াজ আসে সেটা না অনুভব করলেও করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তার জন্য যে পথে আপনি বা আপনারা হাঁটা শুরু করেছেন সেটা কি আদৌ গঠনমূলক? কাশ্মীরকে আজাদি দেওয়া মানে ইন্টারন্যাশ্নাল মার্কেটে কাশ্মীর এবং ইন্ডিয়ার পরবর্তী অবস্থা কী হবে তার পরিণাম ভেবেছেন? ইন্ডিয়ান আর্মি বা গভর্নমেন্ট ভুল করেছে বলেই আপনিও ভুল স্লোগান তুলে বিদ্রোহ করলে টেররিস্ট আর আপনার মধ্যে ডিফারেন্সটা কী?”

    – প্রথমেই জানাই, এটা “আমার দাবি” নয়। কতিপয় ছেলেপুলের দাবি এবং এই দাবির সঙ্গে আমি একমত নই। আমাদের আশির দশকে নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা, আর কাশ্মীরিদের আশি বা নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠার মধ্যে এতটাই তফাত – যে আমরা কল্পনাও করতে পারব না সত্যিই, কোন সেন্টিমেন্ট থেকে এই আওয়াজ আসে। এই বিপ্লব তাই আমার নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনওদিনই তাদের সেন্টিমেন্টের সাথে একাত্ম হতে পারব না। কিছু পড়েছি, আরও পড়ছি ও পড়ার চেষ্টা করছি। যত পড়ছি ভয়ে আতঙ্কে শিউরে উঠছি। দমনের কোন পর্যায়ে গিয়ে একটা জনগোষ্ঠী এই বিচ্ছিন্নতার আওয়াজ তোলে – সত্যিই আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।

    এই বিপ্লব তাই আমার নয়। এই বিপ্লব একান্তভাবেই কাশ্মীরিদের। আমি শুধু এর বিরোধিতা করতে পারি, বা সহানুভূতি জানাতে পারি। তারা কীভাবে তাদের বিপ্লবের আগুনকে ব্যবহার করবে, সেটা তাদের বললেই ভালো হয়। আমি কোনও পথেই হাঁটি নি তাদের সাথে। সে যোগ্যতাই আমার নেই। গঠনমূলক পথ নয়, সে আমি জানি। তবে কে বলতে পারে ধ্বংসের মধ্যেও গঠনের ভিত তৈরি হয় না?

    শেষ কথাটা প্রসঙ্গে, আগেও বলেছি, আবার বলছি, স্লোগান তোলা মানেই বিদ্রোহ করা নয়। এখানেই টেররিস্টের সাথে “আমার” তফাত। আমার মানে, যারা স্লোগান দিয়েছে, তাদের। স্লোগান আজ নয়, বহুকাল ধরে কাশ্মীরের রাস্তাঘাটে প্রতি অল্টারনেট দিনে দেওয়া হয়ে চলেছে। কী পরিমাণ ঘৃণা নিয়ে কাশ্মীরিরা সেখানে বাস করে, সে আমি কিছুটা দেখেছি। টেররিস্ট হচ্ছে সে, যে টেরর বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিপ্লব করে। স্লোগান দিলে কেউ টেররিস্ট হয়ে যায় না। হাজারবার বলেছি, আবার বলছি, স্লোগান দেওয়াকে একজন ভারতীয় হিসেবে নিন্দা জানাচ্ছি, কিন্তু স্লোগান দেওয়ার অপরাধে কাউকে সিডিশন চার্জে জেলে পোরারও নিন্দা জানাচ্ছি। এই স্লোগান দেবার জন্য যদি কাউকে জেলে পুরতে হয়, তা হলে আজ কাশ্মীর ভ্যালির দুই তৃতীয়াংশ তরুণ জেলের ভেতরে থাকত।

    এর পরে greetingsworldblog-এর কমেন্ট, নতুন কিছু নেই, একই বক্তব্য – আমি বাড়িয়ে লিখেছি সেনার অত্যাচারের কাহিনি। কারুর মনে হবার ওপরে আমার হাত নেই, তাই এর আর উত্তর দিলাম না। বইগুলো পড়ে ফেলবেন সময় পেলে। যদি মনে হয় বাড়িয়ে লেখা আছে, লেখকদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমি সেই বই থেকেই আংশিক অনুবাদ করেছি। ইনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সাথে কাশ্মীর সমস্যার তুলনা করা সম্ভব নয়। আমি একমত, তুলনীয় নয়। প্রত্যেকটা সমস্যাই নেচারগতভাবে আলাদা। জিও-পলিটিকাল ফ্যাক্টরগুলো আলাদা। উনি কিছু সিনেমার নাম জানতে চেয়েছেন। এখন বই যতটা প্রামাণ্য হয়, সিনেমা তো ততটা প্রামাণ্য হয় না, সিনেমা মূলত বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়। তবে হায়দার দেখতে পারেন, কিছুটা বাশারাতের বইয়ের সঙ্গে মিল পাবেন। কিছুটা, পুরোটা নয়।

    অগ্নিমিত্র বিশ্বাস লিখেছেন – “আপনার আলোচনায় কয়েকটা তত্ত্বগত আর তথ্যগত অনিচ্ছাকৃত ভুল আছে বলে আমার বিশ্বাস, আমি ভুল করলে শুধরে দেবেন। আর আমার কথায় সারবস্তু আছে মানলে আমায় জানাবেন।

    প্রথমত, আপনি বাংলাদেশ এর সৃষ্টি নিয়ে সাঁটে যা বলেছেন তা নিখুঁত কিন্তু যখন সেই একই গল্প আবার বলছেন, এবার কুশীলব বদল করে, তাতে আমার একটু আপত্তি আছে. কারণ, আমি যদ্দূর জানি, পূর্ব পাকিস্তান কে দখল করার প্ল্যান করে ভারত মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেনি. করেছিল – যতদূর জানি এবং বুঝতে পারি, আপামর জনতার কাছে বোধগম্য নেহাত-ই মানবিক কারণে এবং তৎকালীন ভারত সরকার-এর কাছে গ্রহণযোগ্য এবং তখনকার সময়োপযোগী রাজনৈতিক কারণে. আর আমি তাতে বিশাল ভুল কিছু দেখতে পাইনি. কাশ্মীর-এর প্রতি পাকিস্তান-এর এহেন গঠনমূলক সদিচ্ছা আছে বা ছিল বলে প্রমাণ পাইনি. নেইও.
    দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ-এর মুক্তিযুদ্ধে ভারত-কে ঐ এক-ই কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের ধার্মিক সুড়সুড়ি দেওয়া বিষবৃক্ষের পাতা শোঁকাতে হয়নি – কারণ যে লোহা-গলানো যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ-এর মুক্তিযুদ্ধ পরিণত হয়েছে তাতে তার লক্ষ্য এতো সাবালক যে ঐ ছেঁদো ধার্মিক সুড়সুড়ি-র পিছনের অভিসন্ধি খুব সহজেই বুঝে যেত এবং বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিত. সর্বোপরি ভারতের সেই উদ্দেশ্য ছিল-ও না. অতএব আপনার একই নাটকের অন্য চরিত্রায়ণ a bit flawed বলেই আমার বিশ্বাস.

    তৃতীয়ত, কাশ্মীর-এর সাধারণ মানুষ ভারত-এর অংশ হয়ে কি কারণে খুশি ছিলেন না তা স্পষ্ট নয়, বা কি কারণে চাননি ভারত – এর অংশ হতে. আমি যতদূর জানি ভারতের কাশ্মীর-এর প্রতি বৈষম্যমূলক এবং চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব ছিল না. কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অংশ হলে কোন রাজ্য যেটুকু আভ্যন্তরীণ সার্ব্বভৌমত্ব পায় বা যতটা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ মানে (সব-ই একটা অত্যন্ত matured সংবিধান মেনে) সেইটুকুই কাশ্মীর পেত. আর তার বদলে তার নাগরিকদের জন্যে নিত পরিপূর্ণ ভাবে সভ্য ও স্বাধীন জীবনযাপনের অধিকার।

    চতুর্থত, কাশ্মীর এর সাধারণ মানুষ রাজা হরি সিংহের ওপর নির্ভর না করে নিজেরা কোন উপায়ে পাকিস্তান – এর উদ্যত আক্রমণ প্রতিহত করতে পারতেন কি? যেরকম মুজিবর করেছিলেন? আজাদ কাশ্মীর শুনতে ভালো কিন্তু practically তা কি হবে তা সবাই জানে।”

    অনেকটা একমত। আমিও তো তাই বলি। প্রথমত, না, ভারত বাংলাদেশকে আত্মসাৎ করবার উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশকে সাহায্য করে নি, কিন্তু সেই ভারতই আত্মসাৎ করবার উদ্দেশ্যে কাশ্মীরকে সাহায্য করেছিল। এটাকেই আমি বলেছি দ্বিমুখী নীতি।

    দ্বিতীয়ত অংশের সাথেও আমি একমত। ধর্মের সুড়সুড়ি বাংলাদেশে আসে নি, বরং ঐ ধর্মের সুড়সুড়ি এবং ধর্মের মাধ্যমে উর্দুভাষাকে বাঙালিদের ওপর চাপিয়ে দেবার প্রতিবাদেই মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল এত সাবালক। প্রেক্ষিত আলাদা, অবশ্যই আলাদা। কিন্তু আমি যেটা দেখাতে চেয়েছি সেটা হচ্ছে, ভারত দেশটি একই ধরণের কাজ দুই জায়গায় করেছে দুই সময়ে – দুই আলাদা উদ্দেশ্যে। লজিকের নীতি অনুযায়ী একটিকে মহান কাজ ধরলে অন্যটি অমহান হতে বাধ্য।

    তৃতীয়ত অংশের উত্তরে জানাবো সেই ওপরে দেওয়া লিঙ্কটা পড়ে নিতে – কেন অখুশি ছিল। না, বৈষম্য ছিল না। সেটা আগেও লিখেছি, স্কটল্যান্ডের ওপরেও ইংলন্ড কোনও বৈষম্যমূলক আচরণ করে নি বা করে না। তবু, স্বাধীনতা হল, স্বাধীনতা। উনিশশো সাতচল্লিশ সালের আগে তো ভারত বলে কোনও “দেশ” ছিল না, ছিল কতগুলো প্রিন্সলি স্টেটের সমাহার, যেগুলো ইংরেজরা কব্জা করে রেখেছিল। তো, ভারত “দেশ” হিসেবে যখন আত্মপ্রকাশ করল, কাশ্মীরি জনজাতি মনে করল তাদের এতকালের সার্বভৌমত্বের ওপর থাবা বসাচ্ছে ভারত। মানে, এতদিন ইংরেজের অধীন ছিলাম, আজ ভারতের “অধীন” হলাম। সেই গাধার গল্প। মালিক দুঃখ করে গাধাকে বললেন, ওরা আসছে, আমাকে বন্দী করে নেবে, তোমাকেও নিয়ে যাবে ওরা। গাধা বলল, তাতে আমার কী? অ্যাদ্দিন আপনার অধীনে মোট বইতাম, এখন ওদের অধীনে মোট বইব। একই তো হল।

    না, এ কথা বুন্দেলখণ্ড, অবধ, হায়দ্রাবাদ, মাইসোর ইত্যাদি প্রিন্সলি স্টেটের জনতা ভাবে নি, কাশ্মীরিরাই ভেবেছিল। কেন ভেবেছিল, তার সুদীর্ঘ প্রেক্ষাপট আছে, আমি আবার বলব লিঙ্কটা থেকে পড়ে ফেলতে কাশ্মীরের গল্প।

    অগ্নিমিত্র, আপনার কথামত সেদিন বইগুলোর লিস্ট পাঠাতে পারি নি, তবে আজ ওপরে একটা বইয়ের নাম দিয়েছি, আরেকটা বইয়ের নাম দিচ্ছি, আমি নিজেও পড়ি নি অবশ্য, তবে এক বন্ধুর রেকমেন্ডেশন। কাশ্মীরঃ দ্য বাজপেয়ি ইয়ার্র্স, এ এস দুলাত। সিনেমার নাম জানতে চাইবেন না, সিনেমা দিয়ে ঠিক ইতিহাস চেনা যায় না।

    প্রসেনজিত লিখেছেন – “কাশ্মীরের মানুষও কি আদৌ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চান? আমার মনে হয় যে চান না। বরঞ্চ কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় পাকিস্তান, আইএসআই আর তাদের পোষা কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। আর এদের তালে তাল মিলিয়েই কিছু রাজনৈতিক দল ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে। এই প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ের কারণ স্বল্প নাকি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক পরিকল্পনা সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু সাধারণ বিচারবুদ্ধি বলে যে আদৌ যদি তারা কাশ্মীরিদের সমস্যার সমাধানে উৎসাহী হন তা হলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়ালেই চাপ সৃষ্টি করুন। কাশ্মীরের জন্য আলাদা সাংবিধানিক সুবিধে তুলে দেওয়ার কথা বলুন। কাশ্মীর যাতে মূলধারার ভারতের সঙ্গে মিশে যেতে পারে সে ব্যাপারেই সরব হোন।

    প্রশ্ন উঠবেই যে, কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গেই আসতে হবে কেন? পাকিস্তানের সঙ্গে নয় কেন বা আজাদ কাশ্মীর নয় কেন? পাকিস্তানের সঙ্গে গেলে কী হবে তা আমরা ভাল করেই জানি। আর আজাদ কাশ্মীর যে আদৌ আজাদ কাশ্মীর থাকবে না তা-ও সবাই জানি। ওটা প্রথমে আজাদ কাশ্মীর থেকে পাক নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর হবে, তার পর পাক অধিকৃত কাশ্মীর হবে আর শেষে আর একটি পাক প্রদেশ হবে। সুতরাং আজাদ কাশ্মীর চাওয়া আর কাশ্মীরকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া একই ব্যাপার।

    আর এইখানেই আমার আপত্তি। আজাদ কাশ্মীরের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে নমো নমো করে সমালোচনা করেই বাড়তি উদ্যমে অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের আজাদির দাবি তোলা এক মারাত্মক বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবের জন্ম দেবে সন্দেহ নেই। কাল দেশের অন্যান্য অংশেও আওয়াজ উঠতে পারে আজাদির। চিন্তা করার সময় এসেছে বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে ফ্রিডম/আজাদি কথাটার অপভ্রংশ যেন তৈরি না হয়ে যায়।

    ছাত্রসমাজের হয়তো এই দায় নেই। প্রতিষ্ঠান বিরোধী মনোভাবকে উস্কে দিয়ে কিছু পোড়খাওয়া রাজনৈতিক দল হয়তো বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির হাত শক্ত করছে, কিন্তু তাকে মোকাবিলা করতে গিয়ে অপরপক্ষ জাতীয়তাবাদ আর দেশপ্রেমকে ‘পলিটিক্যাল রেটরিক’-এ নামিয়ে আনছেন। সামগ্রিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিচার করলে এটাও চিন্তার বিষয় বৈকি।

    তবে দেশপ্রেম কিংবা জাতীয়তাবাদ নিয়ে মতানৈক্য থাকতেই পারে, বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে দেশের সমালোচনার অধিকার’ও আছে, কিন্তু ভারত তেরা টুকরে হোঙ্গে স্লোগানের পাশাপাশি, আজাদির স্লোগান মিশিয়ে দেওয়াকে কখনওই গঠনমূলক বলা চলে না, বরং তা যথেষ্ট ইন্ধনমূলক।

    পুনশ্চ: বাবার হোটেলে খাচ্ছি বলে বাবাকে সম্মান করতে হবে, এ রকম মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। মা জন্ম দিয়েছে বলেই অকৃত্রিম মাতৃভক্ত হতে হবে এরকম দাবও কেউ করে না। কিন্তু ভাবার চেষ্টা করছি, মা-বাবা জন্ম দিয়েই ডাস্টবিনে ফেলে রেখে চলে গেলে কী হত? সার্ত্র, কাফকা পড়া বাঙালির ইন্টেলেকচুয়ালিটির নিরিখে যুক্তিটা যাত্রাপালার মতো শোনাল বটে, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বাস্তব আর পিলে চমকে দেওয়া চিন্তাভাবনার তফাৎটা এখানেই।”

    প্রসেনজিত, আপনার মনে হওয়ার ওপর আমার হাত নেই। তবে আমি বলব সত্যি কথা বুঝতে হলে কাশ্মীরে যান, গিয়ে থাকুন ওখানে কয়েক মাস। এর বেশি সত্যি আমার কিছু বলার নেই। আর কী হইলে কী হইত, এই আলোচনায় মনে হয় না কোনও লাভ আছে। যা হয়ে আছে, সেইটুকুকে হাইলাইট করেছি আমি। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই না কাশ্মীর পাকিস্তানে চলে যাক, সম্ভবত বেশির ভাগ কাশ্মীরিও তা চান না, তারা চান আলাদা একটা দেশ।

    আজাদীর দাবি দীর্ঘদিন ধরে উঠছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কাশ্মীরে। আসামে। নাগাল্যান্ডে। কুচবিহারে। দার্জিলিং-এ। বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব, সন্দেহ নেই। কিন্তু গণতন্ত্র এটুকু স্বাধীনতা আমাদের দেয়। সরকার আলাপ আলোচনা চালাচ্ছে, খেয়াল করে দেখুন, কাউকে কিন্তু নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় নি আজাদী চাইবার দাবিতে।

    বাকি বক্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার লিখেছি, তাই আর লিখছি না। লেখা দরকার, মা বাবা জন্ম দিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে রেখে চলে গেলে কী হত। আমি জানি না আপনি বাবা কিনা, আমি বাবা। কোনও মা বাবাই চায় না তার সন্তানকে অসহায় অবস্থায় পরিত্যাগ করে যেতে। এটা ঠিক মায়ামমতাপ্রেম দিয়ে ডিফাইন করবার জিনিস নয়, তার থেকেও বড়, যেটা হচ্ছে, অপত্যস্নেহ। আর স্নেহ সবসময়েই নিম্নগামী। বায়োলজিকাল কারণেই মা বাবা সন্তানের দেখভাল করে। সন্তান বড় হয়ে মা বাবাকে সম্মান করবে, মা বাবার সমস্ত অন্যায় মেনে নেব, এই এক্সপেক্ট্বশন থেকে কেউই সন্তানের প্রতিপালন করে না। হ্যাঁ, ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট থেকেসন্তান চেষ্টা করে মা বাবাকে প্রোটেক্ট করার কোনও সম্ভাব্য অনিষ্ট হওয়া থেকে। অনেকেই মা বাবার অন্যায়কে মেনে নেন এই “প্রতিদান”এর চাপে পড়ে। আমি ঠিক সেই স্কুলের ছাত্র নই। ডাস্টবিনে ফেলে চলে গেলে আমি মরে যেতাম, এত কথা লিখবার সুযোগ হত না, কিন্তু ডাস্টবিনে আমাকে ফেলে না দিয়ে বড় করেছেন বলেই যে আমি কৃতজ্ঞতার ভারে নুয়ে থাকব আজীবন – সেটা ভাবাটা আমার পক্ষে চাপ।

    শেষ করব দার্শনিকের (Darshnik)কমেন্টের উত্তর দিয়ে।

    সুন্দর লেখা ভাই। তবে কয়েকটা জিনিস পড়ে খারাপ লাগলো। ভাবলাম, আপনাকে জানাই…
    ১. আপনি আর্মি কে মহান ভাবেন না…কিন্তু শুধু কাশ্মির-এর ঘটনা গুলোই দেখলেন? তারা দেশ কে (বা দেশের রাজনৈতিক অস্তিত্ব) রক্ষা করছে – তার জন্য তাদের প্রতি আপনার কোনো শ্রদ্ধা নেই? তারা যে দিনের পর দিন মৃত্যুর তোয়াক্কা না করে সীমান্তে দেশ কে পাহারা দিচ্ছে তার জন্য কোনো কৃতজ্ঞতা নেই? হতে পারে তারা মাইনে পান, কিন্তু সেটা তো তাদের প্রাপ্য, তাই না?
    ২. আফজল গুরু প্রাক্তন সন্ত্রাসবাদী। ঠিক আছে, সেই পরিচয় তো বহন করতেই হবে ভাই। পৃথিবীর কোনো দেশেই কোনো অপরাধীদের পুরোপুরি ভুলে যাবার বিধান দেয় না। সে ছিচকে চোর হোক বা খুনি সন্ত্রাসবাদী| আর আফজল গুরু দোষী হোক বা না হোক, সেটার জন্য, ভারত এর ধংস না হলেও চলে…
    ৩. বাংলাদেশ কে ভারত সাহায্য করেছিল বলে গালি পাড়ছেন। ভালো…তার চেয়ে ভালো হত ওটা পাকিস্তানের ই থাকত…তাহলে আর কাশ্মীরি রা যুক্তি দেখিয়ে চিল্লাতে পারত না…হবে হয়ত। National Interest বলে কিছু জিনিস আছে যেখানে নিজের সিকিউরিটি এর জন্য কিছু স্টেপ নিতে হয়, যেটা সাধারণ চোখে বারো অদ্ভূত লাগে…ভেবে নিন – ওটাও ইন্দিরা গান্ধীর সেরকম এ একটা সিদ্ধান্ত ছিল।
    ৪. এবারে একটা পার্সোনাল প্রবলেম বলি শুনুন – কেউ USA লেখা T-Shirt পড়লে আমার খারাপ লাগে না – কিন্তু কেউ পাকিস্তান লেখা T-Shirt পরে ঘুরলে ঠিক হাজাম হয় না…কেন জানেন? ওই দেশ তা বা দেশের সরকার আমার দেশের অসংখ্য অফিস ফেরত মানুষ কে বোমা মেরে খুন করেছে…একবার নয়…বার বার…বহুবার…ওই T-Shirt টা দেখলেই মুম্বাই ব্লাস্ট, দিল্লি ব্লাস্ট, ২৬/১১ – সব মনে পড়ে যায়…আপনি যেমন বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে যাবার পরে জাত ধর্মের উপরে খেপে গেছিলেন, আমার ও ঠিক সেই রকম খ্যাপামি চেপে বসে…ভাববেন না যে আমি বাবরি মসজিদ ধংস সমর্থন করি…একেবারেই নয়…কিন্তু আমি একটা মন্দির বা মসজিদ ভাঙলে সেরকম দুঃখ পাই না…যত টা পাই মানুষ মারা গেলে…বিশেষত সেটা ভারতের হলে আরও বেশি…
    আরেক টা ব্যাপার…আমার মনে হয়, ভারত দেশ টা এখনো বেশ সহিষ্ণু…নাহলে, বলুন তো, আজহারউদ্দিন দেশের পার্লামেন্ট এ বসে সংবিধান সংশোধন করে? আর আমেরিকার কথা বলছেন? এই আমেরিকা তেই একটা ঘড়ি বানানোর জন্য একটা বাচ্চা কে ১২ ঘন্টা জেরা করা হয়েছিল…৯/১১ এর পরবর্তী সময়ে ব্লগ লেখার জন্য কত ফ্যামিলি কে দেশ ছাড়া হতে হয়েছিল সেটাও তো জানেন…কাজেই, তুলনা করাটা ঠিক হবে না…

    আমার উত্তরঃ
    ১। আশা করি এতক্ষণে আমার উত্তর পেয়ে গেছেন। আমি আর্মিকে মহান ভাবি না, আর পাঁচটা চাকরির মতই আরেকটা চাকরি করা লোকজনের সমষ্টি ভাবি। ভগবানও নয়, শয়তানও নয়। শ্রদ্ধা ব্যাপারটা খুব রিলেটিভ। আমার সবার জন্যেই শ্রদ্ধা আছে, যার যতটুকু প্রাপ্য। ওই আর্মি যাতে একটানা খাবার পায় – যাতে সে একটানা সীমান্ত পাহারা দিয়ে যেতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে এ দেশের চাষীরা। আমার তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু প্রতি বছর অনেক চাষী ন্যূনতম খাওয়া জোটানোর পয়সা জোটাতে না পেরে আত্মহত্যা করে, কেউ তাদের মহান বলে না, কেউ তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় না, সরকার ডিফেন্সে বছর বছর বাজেট বাড়ায় কিন্তু ঐ কৃষকদের ঋণ মকুব করে না।

    কৃতজ্ঞতা আলাদা করে কিছু নেই ভাই। মাইনের বিনিময়ে অনেকে অনেক কাজ করেন, এবং অনেক কাজেই মৃত্যুর তোয়াক্কা না করেই কাজ করতে হয়, শুধু আর্মিই একা নয়। কৃতজ্ঞ হলে সবার প্রতিই হওয়া উচিত। খালি আর্মির জন্য কৃতজ্ঞতার ঝুলি উপুড় করে দেব কেন?

    ২। আফজল গুরু “প্রাক্তন সন্ত্রাসবাদী” পরিচয় বহন করেই তো চলছিল। আর একমত, আফজল দোষী হোক বা না হোক তার জন্য ভারতের ধ্বংস না হলেও চলে – ভারত ধ্বংস হয় নি তো! দিব্যি আছে। স্লোগান দিলেই ভারত যদি ধ্বংস হয়ে যেত, তা হলে ভারতের অখণ্ডতায় আমারই সন্দেহ হত।

    ৩। বাংলাদেশকে ভারত সাহায্য করেছিল বলে আমি গালি পাড়ি নি তো! আমি অন্য কিছুও চাই নি। আমি তো একটা তুলনা করেছিলাম, ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের।

    ৪। পাকিস্তানের টি শার্ট দেখলে আপনার হজম হয় না। কারণ, ওই দেশটা আমার দেশের অনেক লোককে মেরেছে। – দেশ কি মারে? সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম হয় না, দেশ হয় না। আপনি তো খবর পড়েন, খবরের চ্যানেল দ্যাখেন। জানেন তো, সন্ত্রাসবাদের শিকার ওই দেশটিও? কত শিশু কিশোর শিক্ষক সাধারণ মানুষ সেখানে নিয়মিত মারা যাচ্ছে এই সন্ত্রাসের ফলে? … পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কিন্তু সত্যিই ইন্ডিয়াকে অতটা ঘেন্না করে না। এই ঘেন্নাটা তৈরি করা হয় মৌলবী ধর্মগুরু এবং মিলিটারি লেভেলে। তাতে জড়ানো হয় আজমল কাসভের মত কিছু নিরক্ষর ছেলেপুলেকে। জিহাদী ট্রেনিং দিয়ে এ দেশে পাঠায় তারা। আনরেস্ট তৈরি করে। সেই আনরেস্টের বলি হয় এদেশের মানুষ, ও দেশের মানুষও। কিন্তু পাকিস্তানের আমজনতা, শিক্ষিত চাকুরিজীবি মধ্যবিতের দল, তারা ঠিক আপনার আমার মতই। আপনি ইন্ডিয়ান জানলে আপনাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে, ঘরে দাওয়াতে ডাকবে। খাবারের দাম নিতে চাইবে না। এরাই কিন্তু পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু। এরা ঝগড়া চায় না, চায় কালচারাল এক্সচেঞ্জ। এরা ধর্মের চোখরাঙানি চায় না, চায় মুক্ত হাওয়া।

    একবার ভেবে দেখুন।

    ৫। ভারত সহিষ্ণু কি অসহিষ্ণু – সেটা একটা রিলেটিভ ব্যাপার। আপনার অভিজ্ঞতামত ভারত সহিষ্ণু। আমেরিকা অসহিষ্ণু। আমার অভিজ্ঞতা একটু অন্য রকম। ইনটলারেন্স নিয়ে আমার কয়েক মাসের পুরনো একটা ব্লগ আছে, একটু পড়ে দেখতে অনুরোধ করি।

    …........................................................

    প্রতিবাদ হওয়া দরকার। স্লোগানের যে ভাবে প্রতিবাদ উঠেছে দেশজুড়ে, তার এক শতাংশ প্রতিবাদ দেখা যায় নি কানহাইয়ার ওপর উকিলদের আক্রমণের, সাংবাদিকদের ওপর উকিলদের আক্রমণের। গৃহমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ মিথ্যে কথা বলেছেন মিডিয়াকে, ভুয়ো টুইট দেখিয়ে যে, সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সঈদ জেএনইউকে সলিডারিটি জানিয়েছেন। অর্ণব গোস্বামীর টাইমস নাউ, সুভাষ চন্দ্র-র জি নিউজ দিনের পর দিন ডক্টর্ড ভিডিও দেখিয়ে নির্লজ্জের মত চিৎকার করে মিথ্যেকে সত্যি প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে গেছেন। স্মৃতি ইরানী সংসদের অধিবেশনে বসে রোহিত ভেমুলার ব্যাপারে মিথ্যে কথা বলে গেছেন। বিচারক প্রতিভারানী অর্ধশিক্ষিতের মত জাজমেন্ট দিয়েছেন কানহাইয়ার জামানতের সময়ে, ওটা যে বিচারের নামে প্রহসন, সেটা বোঝার জন্য আইন খুব ভালো না বুঝলেও চলে।

    প্রতিবাদ আসুক এইগুলোর জন্য। প্রশ্ন করা হোক ক্ষমতায় আসীন লোকগুলোকে। আজকের ভিড়ে সেই শিশুটিকে দেখতে পাওয়া খুব দরকার, যে একবার সমবেত প্রশংসাবাক্যের মধ্যে গলা তুলে জিজ্ঞেস করবে, “রাজা, তোর কাপড় কোথায়?”

    শেষ করি এখানেই। আরও প্রশ্ন উঠলে আবারও আলোচনায় বসব, সময়সুযোগমত। সবাইকার নাম নিই নি, কারণ কিছু কমেন্টের উত্তর আমি আগেই দিয়ে দিয়েছি।

    ও হ্যাঁ, গালাগালির মধ্যে কে যেন আমাকে কমিউনিস্ট বলছিলেন। আজ্ঞে, কমিউনিস্ট কীভাবে চেনে আমার জানা নেই, তবে যদি বলেন যে কোনও কমিউনিস্ট দলের সাথে আমার যোগসাজস আছে – না, নেই। আমি কোনও রকমের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নই। তবে আমাকে কেউ কমিউনিস্ট বললে আমি বিনয়ে অবনত হয়ে যাব, কারণ এ আমার কাছে বিরাট সম্মানের ব্যাপার, আর যদ্দূর জানি, সে সম্মানের যোগ্য আমি নই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৭০৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 108.228.61.183 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:২০57248
  • সিকির লেখা নিয়ে কয়েকটা জায়গায় প্রশ্ন/দ্বিমত থাকছে। সেগুলো যখন যেরকম পারছি একটু লিখি। এগুলো নিয়ে কথা হওয়া দরকার কারণ এই জায়গা গুলো নিয়ে প্রশ্ন আসবে।

    প্রথমত, কাশ্মীর উপত্যকায় হিন্দু পডিতদের ওপর মুসলিম অত্যাচারের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। তা একেবারেই ইয়াসিন মালিকের শুরু করা কিছু নয়। হিন্দু মুসলমানের যে সম্প্রীতির বাতাবরণ ছিলো একসময়, তা ফোর্টিন্থ সেন্চুরির কাছকাছি আস্তে আস্তে ঘা খেতে থাকে, যখন সিংহাসনে সুলতান সিকন্দর। তারপর অনেকদিন ধরে আস্তে আস্তে অবিশ্বাসের আবহাওয়া তৈরী হয়েছে। সিকন্দর ছিলেন সুন্নি। এরপর কিছুদিনের শান্ত থাকার পরে তখতে আসে শিয়া সম্প্রদায়, এবং যুগপৎ হিন্দু পন্ডিত ও সুন্নি অত্যাচারিত হয়। ১৫৮৯ সালে মুঘলরা দখল নেয় এবং আওরঙ্গজেবের আমলে ভালোরকম অত্যাচার হয়, তার তীব্রতা ১৬৭১ সালে এতই বেড়েছিলো যে পন্ডিতরা গুরু তেগ বাহাদুরের কাছে সাহায্য চান। ১৭৫২ সালে আফগানরা আসে এবং প্রায় সত্তর বছর ধরে অত্যাচার চলে। এই সময় থেকেই মাস কনভার্শন শুরু হয়, আর মাইগ্রেশন তো বহুদিন ধরেই চলছিলো, কখনও কখনও অনেকে ফিরেও আসছিলেন। ১৮১৯ সাল নাগাদ ডোগরা ডাইনাস্টি শাসন করতে শুরু করে কাশ্মীর, এবং এই সময় মুসলমানদের ওপর অত্যাচার হয়, যদিও পন্ডিতা আনপেইড লেবারের কথা বলছেন, ভায়োলেন্স নিয়ে নীরব। ১৯৩১ সালে এই বিক্ষুব্ধ মুসলমা কশাই ডোগরা রাজাকে মেরে দেয়, এবং দাঙ্গা হয়। মুসলমানেরা মিছিল করে হিন্দু দোকান ও ঘরবাড়িতে আগুন দেয়, পেটায় ও কয়েকজনকে খুন করে। ১৯৪৭ সাল এলো, যখন হরি সিং ছিলেন রাজা (শেষ ডোগরা রাজা)। তিনি ভারত ও পাকিস্তান কারুর সাথেই যেতে চান নি। কিন্তু ১৯৪৭ এর অক্টোবর মানে পাকিস্তার আর্মি ও টাইবাল লিডাররা কাশ্মীর আক্রমণ করে এবং শেষ মুহূর্তে ভারতীয় আর্মি গিয়ে হামলাকারীদের হটিয়ে দেয়, এই শর্তে যে কাশ্মীর ভারতের অংশ হবে।

    এখানেই শেষ না। ১৯৪৮ সালে নেহরুর (যিনি আবার কাশ্মীরী পন্ডিত, এবং মাইগ্রেট করতে বাধ্য হওয়া পরিবারের ছেলে) সাথে শেখ আবদুল্লার প্যাক্ট হয় এবং কাশ্মীরে শান্তি স্থাপনের অঙ্গীকার আসে। কিন্তু আবদুল্লা শান্তির বদলে পন্ডিতদের ওপরে নতুন করে অত্যাচার চালান। ইন্টারেস্টিংলি, আবদুল্লার পরিবারও একদা পন্ডিত, অধুনা মুসলমান এবং হরি সিং এর রাইভ্যাল, মাস কনভার্শনের ফল। তো যাই হোক, এই সময় নতুন করে এক্সোডাস, কনভার্শন ইত্যাদি হয়। মানে কিনা প্যাটার্ন একই, যেই সিংহাসনে যাক, বেশিরভাগ সময় পন্ডিতেরা এবং কখনও তাদের সাথে মুসলমানেরাও অত্যাচারিত হয়েছে।

    সুতরাং দেখাই যাচ্ছে যে ১৯৯০ এর সেনা ভায়োলেন্সের আগেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ হিংসার ঘটনা ঘটে। বাশারাত পীর এবং রাহুল পন্ডিতার বইতে বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে, এবং একই সঙ্গে এক আধটা অনুল্লেখিতও। এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে ভারত স্বাধীন হওয়ার অনেক আগে থেকেই কাশ্মীরে হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতি অদৃশ্য ছিলো। আশির দশকে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিয়ে হলে দাঙ্গা হয়েছে।

    এই কথাগুলো না বললে ছবিটা অস্পষ্ট থাকে। এই ঘটনাক্রম এমনিতেই যথেষ্ট নাটকীয় ও ট্র্যাজিক। কাশ্মীর কেন আজাদি চায় এইটা যদি মানুষকে বোঝাতে হয়, তাহলে এই জায়গাগুলো বাদ দিলে সন্দেহ বাড়বে, এবং বিশেষ করে যাদের জন্য এই লেখা প্রকাশিত হচ্ছে, তারা একটু পড়াশুনো করলেই এই পাবে এবং নতুন উদ্যমে আক্রমণ করবে।

    হরি সিং এর কাছে কি কি অপশন ছিলো সেটা তো গুরুত্বপূর্ণ বটেই কিন্তু তার চেয়েও বড়ো কথা কাশ্মীরের জনমত কি চেয়েছিলো সেটা খুব গোলমেলে প্রশ্ন। "জনমত অগ্রাহ্য করে" এটা বলা একেবারেই যায়না। কারণ জনমত কাদের? মাস এক্সোডাসের ইতিহাস এত পুরোনো যে দিল্লি পঞ্জাব ইউপি সব জায়গা থেকে কাশ্মীরবাসী খুঁজে খুঁজে জনমত নিলে হয়ত খানিকটা সুবিচার করা হয়। তাছাড়া পাকিস্তানের এজেন্ডা অগ্রাহ্য করে কাশ্মীরের ইতিহাস পড়া যায়না, ভারতীয় আর্মির সমালোচনাও করা যায়না। যদি আনবায়াসড হই, তাহলে দুটোই লেখা ছাড়া গতি দেখিনা। দাঙ্গা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাব থাকলে সেটা আমাদের শুভবুদ্ধি দিয়ে অস্পষ্ট করে দেওয়া উচিত না, একদিন না একদিন এগুলো কেউ না কেউ তুলে আনবেই। তাই অঙ্কুরেই এগুলো অ্যাড্রেস করে এগিয়ে যাওয়া বেটার।
  • Tim | 108.228.61.183 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৪০57249
  • এবার ইয়াসিন মালিকের কথা অল্প করে। ১৯৯০ সাল নাগাদ হঠাৎ করে ইয়াসিন মালিকের ভেদবুদ্ধি জেগে উঠেছিলো এইটা ঠিক নয়। ১৯৮৬ সালেও ইয়াসিন মালিক সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কাজ করছিলো ইউসুফ শাহের হয়ে। ভোটগণনা শুরু হওয়ার পর যখন ইউসুফ শাহ বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে, হঠাৎ করে গুলাম মহিউদ্দিন শাহকে জয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হয়। ইউসুফ এবং ইয়াসিন গণনার রাতেই অ্যারেস্টেড হয়। ১৯৮৭ সাল অবধি জেলে থেকে,তারপর বেরিয়ে দুজনেই পিওকে চলে যায়, ট্রেনিং নেয় এবং ফিরে এসে জেকেএলেফ যোগ দিয়ে হিংসা শুরু করে।
    এই ইলেকশনটা ইয়াসিন মালিকের জঙ্গী হওয়ার প্ল্যাটফর্ম। কে অ্যাকচুয়ালি জিতছিলো বলা মুশকিল, কারণ প্রবল রিগিং বুথক্যাপচারিং ইত্যাদি হয়েছিলো, কিন্তু দিনের শেষে কংগ্রেস-ন্যাশনাল কনফারেন্স অ্যালায়েন্স সব সিট পায় এবং মন্ত্রীসভা বানায়।
  • Tim | 108.228.61.183 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫১57250
  • এই বিষয়ে সুমন্ত্র বোসের Kashmir: roots of conflict paths to peace বইটাও বেশ ভালো। এখানে পরিষ্কার বলা আছে কেন ১৯৯০ সাল নাগাদ আজাদ কাশ্মীর এর দাবি প্রবল হয়, প্রধাণতঃ স্থানীয় মানুষই এতে সামিল হন (আগে পাকিস্তানের লোক দরকার পড়ছিলো)। অবশ্যই টেক হেল্প তখনও হিজবুল মুজাহিদিনই সাপ্লাই করতো, ট্রেনিং ইত্যাদি। কিন্তু এইটা একটা টার্নিং পয়েন্ট।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৩57251
  • টিম কাঁপাইসে।
    দুটো জিনিস, প্রথমত ঐতিহাসিকভাবে কাশ্মীরে রিলিজিয়াস কনফ্লিক্ট ছিল, কমবেশি, তার একটা মূল কারণ কাশ্মীরের ভৌগোলিক অবস্থান।
    স্বাধীনতা পরবর্তী কাশ্মীরের যে সমস্যা তার আলোচনায়, তিনটে জিনিস থাকতেই হবে - পাকিস্তানের ভূমিকা (বাইরে থেকে জঙ্গী আক্রমনে সহযোগিতার অভিযোগ), এক্সোডাস অফ কাশ্মিরি পন্ডিত্‌স, ভারতীয় সেনার ভূমিকা (কাশ্মিরিদের ওপর অত্যাচার)। পাকিস্তান/ভারতসেনার ভূমিকাটা 'অভিযোগ' বলে লিখলাম, কারণ দুই পক্ষই এটা অস্বীকার করবে।
  • pi | 192.66.18.85 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১১57252
  • এই নিন। মোস্ট-ওয়ান্টেড দেশদ্রোহীর বক্তৃতা। একটু আগে, জেনেউ ক্যাম্পাস থেকে।

  • | 24.97.206.217 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১১57253
  • আহ টিমি প্রচুর ধন্যবাদ।
    এইজন্যই বলছিলাম মেড-ঈজি টাইপে আমার একটু সমস্যা হয়। এরকম অনেক খুচরো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ জিনিষ বাদ যায়।

    এরকমই আরেকটা জায়গা যেখানে সিকি বলছে ৭১ এর যুদ্ধে জয়লাভের পর গর্ব হওয়ার কথা। তো ৭১ এর যুদ্ধের আগে ৬২তে চীনের কাছে ভারত পুরো ল্যাজেঘোবরে হয়। চীন জাস্ট দয়া করে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছিল। অরুণাচল অঞ্চলের কিছু জায়গায় নাকি চীনের সেনারা রীতিমত খেতে চাষ করে গুছিয়ে গাছিয়ে দিয়ে চলে গেছিল। এটা নবনীতা দেবসেনের ট্রাকবাহনে ম্যাকমাহনেতে আছে যদ্দুর মনে হচ্ছে। এছাড়াও মেজর দালভি'র হিমালয়ান ব্লান্ডার (এইটা আমি পড়িনি এখনও। জাস্ট রিভিউ পড়েছি) এ ডিটেল আছে ভারতীয়দের গাধামির। তো যাইহোক ৬২র পরে ৬৫ তেও ভারত পাকিস্তান একটা যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা হয় এবং সেটাতেও খুব উল্লেখযোগ্য জয় ভারত পায় নি। এর ফলে ৭১ এর জয় ভারতীয় সৈন্যবাহিনী ও দেশবাসী দুয়ের পক্ষেই গুরুত্বপূর্ণ। আরও খেয়াল রাখতে হবে এই ৭০-৭১ পিরিয়ডে আমেরিকায় নিক্সন কিসিঞ্জার জুটি চীনের কাছে ঘেঁষার জন্য ও সোভিয়েতকে ঠ্যাকানোর জন্য পাকিস্তানকে অনবরত অস্ত্র সাপ্লাই করে যাচ্ছিল। কিছু ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে গোপন করে নি-কি জুটির অস্ত্র সরবরাহ চলছিল। পরে নিক্সন ওয়াটারগেটে ফাঁসায় অবস্থা কিছু কিঞ্চিৎ বদলায়। কিছু ডি-ক্লাসিফায়েড দকুমেন্ট থেকে দেখা যাচ্ছে যে নিক্সন কিসিঞ্জার ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতের গণতত্ন্ত্রের ধারণাটার ওপরে খুবই ক্ষেপা ছিল, কারণ তাদের মতে এতে করে ভারত খুব সহজেই সোভিয়েত তথা কম্যুনিজমের খপ্পরে গিয়ে পড়বে। তাদের প্রক্সি ওয়্যারের জন্য একটা বড় বেস দরকার। একই সাথে চুপিচুপি ইয়াহিয়া খানের সাহায্যে এরা চীনের সাথে একটা এমিকেবল ডীল চুড়ান্ত করে।
    এই পরিস্থিতিতে ভারতের ৭১ এর জয় সত্যিই বেশ বে-এ-এশ বড় ঘটনা। এটা ভারতের সার্বভৌমত্বের ধারণারও খানিকটা জয় বটে।
  • dd | 116.51.31.172 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৭57254
  • তবে এদানী কাশ্মিরী পন্ডিতদের কথাও ওঠে। আগে হিলেলিদের কাছে এই স্বদেশে নির্বাসিতদের কথা একেবারেই ব্রাত্য ছিলো। এখন এই নিয়ে লেখালেখি হয় আর সেটা আদৌ "হিন্দু ব্রিগেডের" মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা ভালো হয়েছে।
  • pi | 192.66.18.85 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫২57255
  • এটা থাকলো। পারলে দেখবেন। অনেকদিন আগে দেখা ছিল, পারভেজ হুডভয় নিজে স্ক্রিন করতে এসেছিলেন। তখনই শুনিয়েছিলেন আরো অভিজ্ঞতার কথা।



    কাশ্মীর সমস্যার হিস্ট্রি, ভারত-পাকিস্তানের স্ট্যাণ্ড নিয়ে বেশ আনবায়াসড বক্তব্য মনে হয়েছিল।

    আর উনি পাকিস্তানী হলেও, পাকিস্তানের প্রচুর সমালোচনা করে থাকেন।
  • সিকি | 192.69.250.130 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:২৩57256
  • পড়ছি। আসলে, সমস্ত বই সমস্ত লিটারেচার আমারও পড়া নেই। অনেকেরই পড়া নেই। পাই কিছু জানে, টিম কিছু জানে, হুচি কিছু জানে, ডিডিদা কিছু জানে।

    এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এবং সেই প্রশ্নগুলো নিয়ে কমপাইল করে পরের পর্ব নামাতে হবে, সেখানে এই তথ্যগুলো সব তুলব। মেড ইজি কোনও সমাধান নয় আমিও জানি, কিন্তু কী করব, স্বল্প পরিসরে এই উন্মাদনার কাউন্টার করতে গেলে তো আপাতত কিছু মেড ইজি ছাড়তেই হয়।

    টিমকে বিশাল ধন্যবাদ। রাহুল পণ্ডিতা পড়েছি বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল, এত ডিটেলে মনে ছিল না, তুই লিখলি বলে মনে পড়ল আবার। এগুলো পরের পর্বে ঢোকাবো।

    দ-কেও ধন্যবাদ, পাইকেও। আরও লেখো, যা জানো।

    কিছু লোকের বক্তব্য সেই ধর্মের লাইনেই চলে যাচ্ছে - আপনি কাশ্মীর নিয়ে লিখছেন, কই বাংলাদেশের থেকে যে হিন্দুদের এক্সোডাস চলছে তাই নিয়ে তো কিছু লিখছেন না। হোয়্যার ওয়্যার ইউ হোয়েন মোডে চলে যাচ্ছে বেশ কিছু প্রশ্ন।

    সবচেয়ে কনসার্নের বিষয় হল, একজন হাল্কা করে জানিয়েছেন - এই লেখা বাংলাদেশের কিছু মৌলবাদী এলিমেন্ট শেয়ার করে নাকি ভারতবিরোধী প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। আমার লেখার এত ক্ষমতা ছিল, আমি নিজেই জেনে হুব্বা হয়ে গেছি।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:৩২57257
  • অ্যাকচুয়েলি কাশ্মীরের সাথে বাংলাদেশ যতটা সম্ভব কভার করা দরকার বলে আমার ব্যক্তিগত মত সিকি। বাংলাদেশ দিনে দিনে যা দাঁড়াচ্ছে তাতে ঐ ইতিহাস, মানের ঠিক ইতিহাসটা জানা খুব জরুরী। দেখো বাশারাত পীরের বইতে যে জামাত-ঈ-ইসলামীকে আমরা দেখি সে কিন্তু অনেকটা আলাদা বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশে মাঝখানে জিয়াউর রহমান বা এরশাদের আমলের জামাত আবার কাশ্মীরের জামাতকে ইনফ্লুয়েন্স করেছে।
  • lcm | 176.137.242.110 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:৫০57291
  • একক/সিঁফো লিখেছে।
    সিকি-র কলম সাবলীল, স্বচ্ছ। এই ধরনের লেখাগুলোয় একটু ব্যক্তিগত আবেগ কমিয়ে দিলেই ব্যস। ইন ফ্যাক্ট, ঐ যে দিল্লির মিছিলের ধারাবিববরণী - ওটা দারুণ হয়েছে, ওতে এক জায়্গায় অনেক পতাকার ভিড়ে জাতীয় পতাকা দেখার আলাদা অনুভূতি সিকি দারুণভাবে ব্যক্ত করেছে।
    কিছুদিন আগে সৈকত আর কারা যেন সেই ধনঞ্জয়-এর বিচার নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখে, সেটি কিন্তু পড়ে মনে হয় নি লেখক অলরেডি একট সাইড নিয়ে নিয়েছেন। সাইড নিলে কোনো ক্ষতি নেই, আসলে প্রোপাগান্ডামূলক লেখা আজকাল এত বেশি যে ক্লান্ত লাগে, যে কোনো পক্ষেরও হোক।
    গুরুর লেখাগুলো একটূ রিলিফ সেখানে। ডিডিদা যেভাবে দ্বিতীউ বিশ্বযুদ্ধের বর্ননা দিয়েছেন সেটা একটা উদাহারণ, বেশির ভাগ যুদ্ধের লেখাতেই যুদ্ধ কেন বাজে, সাম্রাজ্যবাদ কেন বাজে তাই নিয়ে লম্বা লেকচার থাকে, কিন্তু ডিডিদা মেদহীন।
  • hu | 78.63.145.192 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:১৭57258
  • পাইয়ের দেওয়া ভিডিওটা দেখলাম। সবাইকে রেকো করছি দেখার জন্য। এবং আবারও প্রশ্নটা ঘুরেফিরে দাঁড়াচ্ছে কাশ্মীরের আজাদির ভবিষ্যৎ কি? সিকি ওর ব্লগে লিখেছে সাধারণ কাশ্মিরী ভারত-পাকিস্তান কাউকেই চায় না, তারা নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র চায়। হতে পারে সেটা ঠিক। কিন্তু সেটা যদি কোনদিন হয়ও তাহলেও কাশ্মীরের মত ছোট রাষ্ট্রের পক্ষে টিকে থাকা বেশ কঠিন। পার্টিশনের পর ভারতে যোগ দেওয়ার আগে কাশ্মীর কিন্তু একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র ছিল। সেই সময় পাকিস্তানের আক্রমণকে প্রতিহত করতে রাজা হরি সিং এবং কাশ্মীরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী শেখ আবদুল্লা ভারতের সাহায্য নেন এবং ভারত কাশ্মীরের অন্তর্ভুক্তির বিনিময়ে সাহায্য করতে রাজি হয়। কাজেই ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি হবে কি না সন্দেহ থাকে। এই প্রসঙ্গে মনে প্রশ্ন আসে, পাক অকুপায়েড কাশ্মীরের ব্যাপারে কাশ্মীরিরা কি ভাবছেন? এই ভিডিওটার শেষের দিকে আরো একটা প্রশ্ন তোলা হয়েছে - কাশ্মীর যদি আলাদা রাষ্ট্র হয় তাহলে সেটি ইসলামিক রাষ্ট্র হতে চাইবে কিনা এবং সেক্ষেত্রে কাশ্মীরের হিন্দু, শিখ ও বৌদ্ধ মাইনরিটির কি হবে? সবকটা প্রশ্নই খুব জরুরী এবং এই সমস্যার কোন এক কথায় সমাধান আছে বলেও মনে হয় না। যে প্রচন্ড অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরী হয়েছে তা একদিনে সরবে না। টিম যেটার উল্লেখ করেছে - আশীর দশকের শেষের দিকে হঠাৎ করে সন্ত্রাসবাদের উত্থান কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় - অন্যায় ভাবে ইলেকশন ভন্ডুল করার ফসল। আর তারপর একটা অন্যায়ের বদলা নিতে গিয়ে আরেকটা অন্যায় করা এবং তারপর আবার। অতীতকে জোর করে ভুলে যাওয়া ছাড়া আর কোন সমাধান আছে কি?
  • d | 144.159.168.72 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:২৭57259
  • বাশারাত পীরের বইয়ে আরেকটা ঘটনা ছিল। ওনার বাবা মায়ের গাড়ী মইন দিয়ে উড়ানোর ছক করেছিল জঙ্গীরা। কারণ এক জঙ্গীর বাশারাতের সরকারী চাকুরে বাবার সাথে স্কোর সেটল করবার ছিল তাই। ঘটনাক্রমে যে পাইপের মধ্যে মইন রাখা হয়েছিল তার একদিক ব্লকড থাকায় গাড়ী পুরোটা উড়ে যায় নি এবং বিস্ফোরণের ইমপ্যাক্ট অনেক কম হয়। এরপরে পীরের বাবা মা গ্রামের বাড়ী ছেড়ে চলে আসেন।

    এই ঘটনাটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় জঙ্গী কোনও সমসত্ত্ব বস্তু নয়। ভারতবিরোধী আন্দোলনের আড়ালেও দিব্বি পার্সোনাল স্কোর সেটলিঙের খেলা চলে। এই ধরণের ঘটনাগুলো যথেষ্ট সামনে আসা উচিৎ। ভারতীয় সৈন্যের অত্যাচার যেমন সত্যি, আজাদ কাশ্মীরের দাবী যেমন সত্যি তেমনি এই ঘটনাগুলোও সত্যি। এগুলো সবকটা দিক সমান গুরুত্বের দাবী রাখে।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:২৭57260
  • *মাইন
  • S | 108.127.145.201 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:৪৪57261
  • ভালো ভিডিও। তবে সময়ের জন্যে বোধয় কিছু কিছু ডিটেল্স বাদ গেছে।

    কাশ্মীর আলাদা হলে সেখানে ভারত পাক ছাড়াও অন্য দেশগুলো-ও অনেক কারাণে ইউজ করতে চাইবে। কাশ্মীর সরকারকে টাকা দিয়ে একটা মিলিটারি বেস বানাতে পারলে অনেক্গুলো দেশের উপরে চাপ সৃষ্টি করা যাবে।

    ভারত পাকিস্তানের কেউই এই সমস্যার সমাধান চায়্না। পলিটিশিয়ানদের কাছে এইটা একটা খুব ভালো টকিঙ্গ পয়েন্ট। মিলিটারিদের কাছে নিজেদের ইম্পর্টেন্স রাখার যায়্গা। লোকেদের কাছে দেশপ্রেমের (বা ধর্মের নামে) ইমোশান জাগিয়ে রাখার জায়্গা। কাশ্মীর যত না পলিটিকাল বা স্ট্র্যাটেজিক ইস্যু তার থেকেও বেশি ধর্মীয় ইস্যুতে পরিনাত করার চেষ্টা চলেছে দুই দেশেই (উপরের ভিডিওটাতেও তাই দেখা যায়)। এছাড়া রয়েছে এতোগুলো যুদ্ধ ও এতোদিনের (দুই কমিউনিটির উপরেই) চলে আসা অত্যাচারের ইতিহাস। যুক্তি আসবে শেষে যদি রফা করতেই হোলো তাহলে এতোদিন ধরে এতো লোকের জান গেলো কেন? ইত্যাদি।

    এইবারে ইন্ডিয়ার পয়েন্ট থেকে লিখছি। কাশ্মীর ইন্ডিয়ার কাছে স্ট্র্যাটেজিকালি খুব ইম্পর্ট্যান্ট। ভারতের মুল ভুখন্ডকে পাকিস্তানের থেকে দুরে রাখে; অনেকটা বাফার টাইপের। তাই কাশ্মীর কে ইন্ডিয়া ছেড়ে দেবে এমন ভাবার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। কারণ কালকে যদি কাশ্মীর পাকিস্তানের সাথে যোগ দেয় বা পাকিস্তানের/ চীনের সেনাকে বেস খুলতে দেয়, সেইটা ইন্ডিয়ার নাভিশ্বাস তুলে দেবে। অন্যদিকে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে গেলে (পড়ুন পুরোপুরি ভাবে ভারতের শান্তিপুর্ণ একটি অঙ্গরাজ্য করতে গেলে) কাশ্মীরের লোকেদের সাপোর্ট দরকার হবেই। আর তার জন্যে দরকার প্রচুর (মানে প্রচুউউউর) ইনভেস্টমেন্ট। স্কুল, কলেজ, ট্রান্সপোর্টেশন, রাস্তা, ব্রিজ, কিছু কল কারখানা, ভালো হাসপাতাল, সস্তায় লোন, জল, বিজলি, অন্যন্য পরিষেবা ইত্যাদি। এবং সদিচ্ছা (মানে লঙ্গ টার্ম কমিটমেন্ট আর কম্প্যাশন)। ইন্ডিয়ান গভঃ যখনই সেখানে ইনভেস্টমেন্ট করতে যাবে প্রচুর বিরোধিতার সম্মুখীন হবেই, কিছু ধংসাত্বক ঘটনা ঘটবে। কিন্তু তাতে পিছিয়ে এলে চলবে না, বরংচ চাই আরো উদ্যোগে কাজ করা (জানি খুব ভাষণ দেওয়ার মতন শোনাচ্ছে)। আর চাই কাশ্মীরের লোকেদেরকে শত্রু না মনে করে তাদের সম্স্যাগুলো বোঝা আর সঠিক কাজ করে সেই সমস্যার সমাধান। ইন্ডিয়ান আর্মির বদনাম সর্বত্র। সেটাকে কন্ট্রোল করতে হবে। এই ধরণের কমিটমেন্ট না থাকলে এই সমস্যা সমস্যাই থেকে যাবে। আর যেকোনো সমাধান ইন্ডিয়ার পক্ষে আরো প্রব্লেম ক্রিয়েট কারবে।
  • Tim | 108.228.61.183 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৫:৫৫57262
  • ঠিক, বস্তুত, হামে কেয়া চাহিয়ে, আজাদী বলতে কাশ্মীরীরা যে আজাদীর কথা বলে তা আমরা ১৯৪৭ সাল থেকে অল্পবিস্তর ভোগ করে আসছি। কিন্তু কাশ্মীর সেই ফিউডাল শাসনেই রয়ে গেছে, মুখ বদলেছে মাত্র। তাই প্রচুউউর ইনভেস্টমেন্ট এবং যথার্থ অঙ্গরাজ্য হিসেবে যে ট্রিটমেন্ট অন্যরা দাবি করে তা না দিতে পারলে বাকি সবই ধান্দাবাজি।

    আরেকটু লেখার ইচ্ছে আছে ব্লগে। দেখি কদ্দুর কি হয়।
  • investment | 125.112.74.130 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:২৩57263
  • http://indiatoday.intoday.in/story/jammu-and-kashmir-most-pampered-state-in-india/1/218463.html
    Since the beginning of militancy in 1990, the state has managed to get the lion's share of Central resources - over Rs 35,571.3 crore in grants and assistance.
    In 2001-2, for instance, Jammu and Kashmir got Rs 4,577 crore from the Centre or over 10 per cent of the assistance to states. It has got more than any other state every year since 1995. Add to this projects in the state worth over Rs 25,000 crore being funded by the Centre.
    A Kashmiri gets eight times more money from the Centre than citizens from other states. While per capita Central assistance to other states moved from Rs 576.24 in 1992-93 to Rs 1,137 in 2000-1, that of the Kashmiri spiralled from Rs 3,197 to Rs 8,092.
  • b | 135.20.82.164 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:২৬57264
  • জম্মু কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এইসব রাজ্যগুলি কিছুটা আজাদী তো ভোগ করেই (ধারা ৩৭০/৩৭১ ইত্যাদি)। জম্মু-কাশ্মীর হয়ত একটু বেশি। কারণ সেখানে আলাদা সংবিধান আছে।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:২৭57265
  • কাশ্মীর তো ভারতের অঙ্গরাজ্য, সব ঠিকঠাক চলছিল তো। ১৯৮০ সালে বেড়াতে গেলাম। শ্রীনগরে সিনেমা হলে মিঠুনের সিনেমা - ম্যাটিনি হাউস ফুল, শিকারা চালক কাশ্মীরি বালক - হাতে দাঁড় নিয়ে আই অ্যাম এ ডিস্কো ড্যান্সার গাইছে, শোনমার্গে চায়ের দোকানে দোকানদারের সাথে শশী কাপুরের ছবি টাঙানো, ডাল লেকে হাউস বোটের মাথায় পতপত্‌ করে উড়ছে তেরঙা, দু এক জায়গায় গিজগিজ করছে বাঙালী টুরিস্ট - একদম ভারতের অন্য রাজ্যের মতন, বিলকুল ভারত। কলকাতায় শীতের মুখে আসত কাশ্মীরি যুবক বাহারি শাল নিয়ে - মাসকাবারি হিসেবে বাকীতে বিক্রি করত। ফুটবল খেলতে কাশ্মীরে যেত মোহনবাগান, কাশ্মীরি খেলোয়াড় কলকাতায় বড় ক্লাবে খেলতে আসত। সেই কাশ্মীর - ২৫ টি অঙ্গরাজ্যের এক রাজ্য কাশ্মীর। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর। তারপর যে কোথা হইতে কি হইয়া গেল।
    কিছুদিন আগে সিকির লেখা পড়ে মনে হল কাশ্মীরে রাস্তাঘাট ইনফ্রাস্ট্রাকচার খুব খারাপ না। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এসব হয়েছে তো।
    প্রবলেম ইজ নট এগজ্যাক্টলি দ্যাট। বাট প্রবলেম হ্যাজ।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:২৯57266
  • আমার মতে, ঐ ১৯৮৬-র ইলেকশনটি রিগিং করে জেতা একটি ওয়াটারশেড।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:৩০57267
  • ব,
    ঠিক। জম্মু-কাশ্মীর একটু বেশি। ইনভেস্টমেন্ট যেটা লিখেছে পার ক্যাপিটা অ্যাসিস্ট্যান্স হিসেবে, প্রায় চারগুণ বেশি।
  • ranjan roy | 24.96.63.216 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৬:৪৬57292
  • একক,
    আমি একদম একমত। কিন্তু লেখাটা সিকির , তাই অনুবাদের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা নিতে পারি নে।
  • সিকি | 126.50.59.180 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:১৮57268
  • উটি ব নয়, b। দুজন আলাদা।

    কাশ্মীরের মূল রাস্তাঘাট ইনফ্রা খারাপ না। সেটা অনেকটাই সেনার উপস্থিতির কারণে। আমি যা গেছি সেটা মূলত কাশ্মীরের মূল হাইওয়ে, এন এইচ ওয়ান, যা দিল্লিকে লাদাখের সাথে জোড়ে। প্রায় পুরো রাস্তাটাই আর্মি সাপ্লাইয়ের জন্য সর্বক্ষণ সারভেলিয়েন্সে থাকে।

    তার সঙ্গে একটা স্ট্রে ইনসিডেন্টও লিখেছিলাম। শিকারায় করে মাটন শিক কাবাব বেচা কাশ্মীরি যুবক এক উত্তরপ্রদেশীয় দম্পতিকে বলেছিল, ইয়ে তুমকো নেহি বেচেঙ্গে। ইয়ে তুম ভিখারি ইন্ডিয়ান লোগোঁ কে লিয়ে নেহি।

    এটাও বাস্তব। দু হাজার পনেরোর কাশ্মীরে।
  • dc | 132.164.36.106 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:২৩57269
  • কাশ্মীর প্রসঙ্গে আমার মত অনেকটা S এর মতো। তবে আমি বলবো কাশ্মীরের স্ট্র্যাটেজিক ইমপর্ট্যান্স এতো বেশী কারন ওখানে তিনটে দেশ নিজেদের খেলা খেলছে - ভারত, পাকিস্তান আর চীন। এই তিন দেশেরই মিলিটারি একে অন্যকে যেমন পারছে বাঁশ দিচ্ছে, প্রতিটা দেশ অন্য দুটো দেশের বিরুদ্ধে দাবার চাল দিয়ে চলেছে। কিছুদিন আগে চীন পাকিস্তানকে ধমকেছিল ওদের উইঘুর প্রভিন্সে ইসলামিক টেরোরিজম এক্সপোর্ট করার জন্য, আবার অন্য সময়ে পাক-চীন দোস্তি দেখার মতো। কাজেই কাশ্মীরে কেউই কাউকে জমি ছাড়বে বলে মনে হয়না, আজাদি বা এমনকি গণভোট তো অনেক দূরের কথা। কাশ্মীরিরা নিজেরা কি চায় (যদি আদৌ এরকম কোন মেজরিটি মতামত থাকে তো) সেটাও কোন দেশের কাছেই ফ্যাক্টর না। তিনটে দেশই জানে যে ওখানটা দ্খল করতে পারবে সে বাকি দুটো দেশের থেকে জিওপলিটিকালি সুবিধেজনক অব্স্থায় পৌঁছে যাবে। আইডিয়ালি কাশ্মীরের জনমতকে সম্মান দেওয়াই উচিত (আদৌ এরকম কোন হোমোজিনিয়াস মতামত যদি থাকে তো), কিন্তু বাস্তবে মনে হয়না আগামি পঞ্চাশ বছরেও এখনকার স্ট্যাটাস ক্যুও একটুও পাল্টাবে বলে। চীন, পাকিস্তান আর ভারত কাশ্মীরের যেসব জায়গা দখল করে রেখেছে সেই জায়গাগুলো এরকমই ধরে রাখবে।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:২৪57270
  • সিকি,
    হ্যাঁ, ঐ ঘটনাটার কথা তুমি লিখেছিলে, মনে আছে। খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম পড়ে। ১৯৫০-১৯৮৫ এমন ছিল না। গত ২৫ বছরে কাশ্মির হ্যাজ চেঞ্জ্‌ড্‌।
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৭:২৯57271
  • ইংরিজি b জানি তো, বোতিন নয়।
  • S | 108.127.145.201 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:১৯57272
  • জিডিপি পার ক্যাপিটাঃ
    http://statisticstimes.com/economy/gdp-capita-of-indian-states.php

    নমিনাল জিডিপিঃ


    লিটারেসি রেটঃ
    https://en.wikipedia.org/wiki/Indian_states_ranking_by_literacy_rate

    তিনটে কথা মাথায় রাখতে হবে। পাহাড়ে এবং ঠান্ডার জায়্গায় কস্ট অব লিভিঙ্গ সাধারণতঃ অনেক বেশি হয়। জেনকের পপুলেশন অনেক কম, ফলে সেখানে পার ক্যাপিটা একটু বেশিই লাগবে। আর কাশ্মীর মানেই জেনকে না। জেনকের মধ্যে জম্মু আছে, কাশ্মীর ভ্যালি আছে, লাদাখ রিজিয়ন আছে।

    আর যেটা সিকিবাবু লিখেছেনঃ অনুদানের একটা বড় অংশ চলে যায় আর্মির প্রয়োজনে। রাস্তা, ব্রিজ বানাতে। সেগুলো কতটা সাধারণ লোকেদের কথা ভেবে করা হয়েছে বা কাজে লাগছে সেইতা দেখার।

    ইকনমি/ ইনভ্স্টমেন্ট সাধারণতঃ কনফ্লিক্ট মিটিয়ে দেয়। একটা শুনেছিলাম "ল অব ডাবল গোল্ডেন আর্চেস"। সাধারণ কাশ্মীরিরা যদি দেখেন যে ভারতের সাথে থেকে যত উপার্জন করছি, আলাদা হলে তার থেকে অনেক কম করবো - তাহলে অনেকেই আজাদী চাইবেনা/ দরকার হবেনা। যে কারনে মনে হয় কাশ্মীর পাকিস্তানের সাথেও যেতে চাইবেনা এখন। কিন্তু সেইটাই সব নয়। শান্তিপুর্ণ ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেক্শন, আর্মির অত্যচার বন্ধ করা (এই বিষয়ে দেখেছি সাধারণ ভারতীয়দের খুব কম আইডিয়া আছে), এবং অবশ্যই কাশ্মীরি যুবকদের প্রতিরক্ষা। নইলে লাখ কোটি টাকা ঢেলেও কিস্যু হবেনা। তাই দুটই চাই।

    কাশ্মীরের ইন্সার্জেনশির কতগুলো এলিমেন্টস আছে। সত্যি আজাদী চায় - শান্তিপুর্ণ ভাবে। কেউ কেউ গদি চায়। পাকিস্তানের মদত পুষ্ট আছে কেউ কেউ। কেউ কেউ ভারতের উপরে বিতশ্রদ্ধ। তবে একটা কথা তো ঠিকই যে জেনকে (বিশেষতঃ কাস্মীর ভ্যালি) ভারতের একমাত্র মুসলমান প্রধান রাজ্য (তদুপুরি পাকিস্তানের গা ঘেঁষা)। ফলে তার ট্রিটমেন্ট অন্যরকম হবেই।
  • Tim | 108.228.61.183 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:২৭57273
  • ঐ বিতর্কিত ইলেকশনে ভারতের কাছে সেই সুযোগ এসেছিলো, যখন আলাদা অ্যাজেন্ডার অনেক দল এক ছাতার তলায় এসেছিলো। ভারত সরকার ভোটটা মেনে নিলে কি হতো বলা কঠীন। হয়ত কালক্রমে পুরোটাই এক্সট্রিমিস্টদের খনি হয়ে যেত, হয়ত নয়।
  • Tim | 108.228.61.183 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:২৯57274
  • যাই হোক, এখন ঘুমোই। এখান সেখান থেকে যা পড়ছি ব্লগে লিখে রাখলাম, নোটের কাজ করবে পরে। আরো অ্যাড করে দেব, অনেক পড়া বাকি।
  • সিকি | 126.50.59.180 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৮:৪২57275
  • টিমকে গুচ্ছ গুচ্ছ থ্যাঙ্কস।

    হ্যাঁ, পুরো লেখায় কাশ্মীর বলতে আমি শুধুমাত্র কাশ্মীর ভ্যালির কথা বলেছি। জেনকে নয়। জেনকে জম্মু, কাশ্মীর ভ্যালি এবং লাদাখ রিজিয়ন এই তিনটে আলাদা আলাদা টেরিটরি নিয়ে, এবং তিনটের ডেমোগ্রাফি একেবারে তিন ধরণের। তিন জায়গায় আর্মির প্রেজেন্স, তাদের ব্যবহার-অ্যাটিট্যুডও তিন ধরণের, এবং ঐ পুরো জেনকে অনুদানের যে যে অংশ যে যে টেরিটরি পায়, সেখানে সেখানে খরচের নেচারও তিন রকমের।

    কাশ্মীর সমস্যা মুখ্যত কাশ্মীর ভ্যালি এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলকে নিয়েই। বাকি এলাকা নিয়ে নয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন