এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বিশ্বাস অবিশ্বাস ধর্ম অধর্ম --- কিছু এলোমেলো ব্যক্তিগত কথন

    লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৩৭৮২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • আমার শৈশবের অনেকখানি আর কৈশোর ছিল ভারী একলামত| আমি যখন আট নয় বছরের মেয়ে, তখনই আমাকে প্রায় পূর্ণবয়স্ক মানুষ হিসেবে গণ্য করা হত| প্রায় বললাম, কারণ পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত আমার মতামত গ্রাহ্য করা হত না, কিন্তু কাজকর্মে, আচার আচরণে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত ব্যবহার আশা করা হত| আমি বুঝতে শুরু করেছিলাম ভাইয়ের আগে জন্মানোয় আমাদের প্রাচুর্য্যের সময়ের পুরোটা, আট বছর ধরে আমি ভোগ করেছি, কিন্তু ভাই মাত্র দুই বছর ----- তাই এখন আর আমার কিছুই প্রাপ্য নয়|

    নয় বছর বয়সেই আমার পাড়ার মাঠে খেলাধুলো একদম বন্ধ করে দেওয়া হয়, আমাকে বিকেলে বাড়ী থেকে বেরোতেই দেওয়া হত না, 'বড় হয়ে গেছি' এই অজুহাতে আমার বিকেলের খেলাধুলো বন্ধ হয়| আমার মামাবাড়ী আবার খুব ধার্মিক টাইপেরও ছিল| প্রতিদিন দুইবেলা নিত্যপুজো ছাড়াও প্রতি মাসে পুর্নিমার দিন সত্যনারায়ণ পুজো, দোল, জন্মাষ্টমী, বেশ কয়েকটা সংক্রান্তি, অরণ্যষষ্ঠী (যেটাকে জামাইষষ্ঠী বলে), ইতুপুজো হত| আর হত মাটির মূর্তি কিনে এনে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো আর সরস্বতীপুজো| এইসব পুজোর পরে আমাদের চরণামৃত নিতে ডাকত| এইখানে একটা মজা হত| আমি যদি আগেও পৌঁছে যেতাম তবু কিন্তু আমাকে কখনই আগে চরণামৃত বা প্রসাদ দিত না দিদা| ভাই আগে এলে ভাইকে দেবে, তারপর অপেক্ষা করবে কখন মামাতোদিদি আসবে, ওকে দিয়ে তারপর আমাকে| আর যদি মামাতোদিদি আগে পৌঁছয় তাহলে ওকে, তারপর ভাইকে তারপর সবশেষে আমাকে|

    তো এইসব দেখে দেখে আমি ক্রমশঃ ঠাকুরবিমূখ হয়ে উঠছিলাম| এদিকে আমার মা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে 'বৈধব্য' পালন করতেন, কতটা স্বেচ্ছায় আর কতটা কোনও এক অনির্দেশ্য পাপের ভয়ে তা সম্ভবতঃ উনি নিজেও তলিয়ে ভাবেন নি কোনওদিন| প্রতিদিন একবেলা আতপচালের ভাত আর মাসে দুটো একাদশীতে অন্নবর্জিত আহার মা'র পেটে সহ্য হত না, নানা গোলমাল লেগেই থাকত কিন্তু তাও নিয়মের পরিবর্তন হত না| বাড়ীতে বেড়াতে আসা সহানুভুতিশীল আত্মীয় প্রতিবেশীদের কেউ কেউ আবার মা'কে আমাদের জন্য মাছ মাংস রান্না না করবার সুপরামর্শ দিতেন --- 'বিধবা মানুষ তুমি কেন আবার আমিষ ঘাঁটবে?' মা যখন জানাতেন যে আমাদের এই বাড়বৃদ্ধির বয়সে মাছমাংস দরকার, তখন এঁরা বলতেন 'মেয়ে তো বড় হয়ে গেছে, দুদিন বাদে শ্বশুরবাড়ী যাবে, ওকেই দাও ওগুলো রান্না করতে|' এইসময় দিদার একেবারে বাঁধা মন্তব্য ছিল 'হুঁঃ রান্না! সারাদিন বই মুহ বইস্যা থাকে, মেয়েরে শ্বশুরবাড়ীর সামনের দরজা দিয়া ঢুকাইয়া পাছদরজা দিয়া বাইর কইর্যাত দিবনে|' অতঃপর আগন্তুকরা এবং উপস্থিত আত্মীয়রা মিলে নয় দশ বছরের 'বুড়োধাড়ি' আমার বিবেক জাগ্রত করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন| এতেকরে ঠাকুর বাকুরের সাথে সাথেই আমি ক্রমশঃ রান্নাবান্নার প্রতিও বিতৃষ্ণ হয়ে উঠছিলাম| কিন্তু সে অন্য গল্প, এখন থাক|

    তো, বুড়োধাড়ি আমি রান্না করতে না এগিয়ে গেলে এই সব ঠাকুরেরা নাকি দেখে দেখে পাপ দেবে, মা আমাদের মত সেদ্ধ চালের ভাত খেলেও ঠাকুর পাপ দেবে| আবার ঠাকুর সম্পর্কে বা বড়দের কোনও কাজ সম্পর্কে বেশী প্রশ্ন করলেও ঠাকুর পাপ দেবে| সেই পাপের ফল কখনও যদি পরীক্ষায় খুব খারাপ নম্বর হয় তো কখনও তা বাবার নেই হয়ে যাওয়া,কখনও বা তা আরও অনুচ্চার্য্য অনির্দেশ্য কোনও ভয়| এদিকে ভয়ডর আমার প্রথম থেকেই বেশ কমসম আর সেটা বড়রা জানেও| আমার মায়ের নিয়ম ছিল সন্ধ্যের বাতি জ্বলার আগে ঘরে ঢুকতে হবে| আমার খুব ছোটবেলায়্ আমরা কটকে থাকতাম| সেখানে একবার বিকেলে খেলে ফিরতে দেরী হওয়ায় মা আমাকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়| সেই ঘরে মা'র ঠাকুরের ছোট ছোট ছবি, মুর্তি থাকত আর থাকত এটাসেটা সংসারের নানান জিনিষ, বাবার কিছু কাগজপত্র ইত্যাদি| তো, মা'র পরিকল্পনা ছিল আমি কান্নাকাটি করলে ভবিষ্যতে আর দেরী না করার কড়ারে খুলে দেবে| আমি নাকি কান্নাকাটি না করে নিশ্চিন্তে আসন থেকে তুলে ঠাকুর আর ঠাকুরের ছোট্ট ছোট্ট থালা গেলাস জানলা দিয়ে নীচে ফেলছিলাম| আমাদের বাড়ীর পেছনদিকটায় ছিল সুন্নি মুন্নিদের ঘর| একটা উঠোনের চারিদিকে গোলকরে পরপর কিছু ঘর, ৫-৬টা পরিবার থাকত| আমার এসব কিছুই মনে নেই, শুধু আবছা মনে পড়ে থালা গেলাসগুলো নীচের উঠোনে পড়ে একটা সুন্দর ঠননন ঠননন আওয়াজ হচ্ছিল| সুন্নিরা মেথর ছিল, তাই নাকি ভয়ে ঠাকুরের মুর্তি বা ছবিতে হাত না দিয়ে হাঁউমাউকরে চেঁচিয়ে মা'কে ডাকে| তা আমার বছর তিনেক বয়সের এই কালাপাহাড়সদৃশ কর্মটা এইসময় বারেবারে সবাই মা'কে মনে করিয়ে দিয়ে সাবধান করে দেয় যে আমার পাপের পরিমাণের একটা নিয়মিত চেক-ব্যালেন্স দরকার; নচেৎ নিজে তো পাপে ডুববোই সঙ্গে সঙ্গে মা আর ভাইকেও ডোবাবো|

    তো এইসব দেখেশুনে আমার ঠাকুর বাকুরে অভক্তি, বিতৃষ্ণা বাড়তে থাকে| অন্যত্র সেকথা লিখেওছি, এখানে আরেকবার টুকে দিই| ক্লাস নাইনে আমাদের সহায়ক পাঠ হিসেবে বাংলায় একটা গল্প আর একটা কবিতার বই ছিল, 'গল্পসংকলন' আর 'কবিতাসংকলন'| কবিতাসংকলনেই পড়ি 'চাঁদ সদাগর' কবিতাটা| এই কবিতাটা আমার একেবারে মাথায় গেঁথে যায়| আমার বাড়ীর খাতায় নীল আর কালো কালির কলম দিয়ে বড় বড় করে লিখে রাখি ----
    'শিখাইলে এই সত্য, তুচ্ছ নয় মনুষ্যত্ব, দেব নয় মানুষই অমর
    মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে করে দেবমহিমা নির্ভর'

    চন্নামিত্তি ও প্রসাদ বিতরণের ধরণ দেখে যে বিতৃষ্ণা শুরু হয়েছিল, মায়ের বৈধব্যপালন যার ভিৎ তৈরী করেছিল এই কবিতা তাকে শক্তপোক্ত চারটে দেওয়াল দেয়| তাই এরপরে অতি তুচ্ছ কারণে বড়মামা প্রচন্ড বকে এবং মা বলে 'ঠাকুরকে ডাক যাতে মানুষ হতে পারিস, অনেক বড় হতে পারিস' আমি প্রবল বিতৃষ্ণা ও বিরক্তিতে ভাবি ঠাকুর আবার কী! ঠাকুর ফাকুর সব বাজে কথা| এরপরে যখন দিদাও ছুতোনাতায় গল্প করা নিয়ে বকতে থাকে, পড়াশোনা না করা নিয়ে ব্কতে থাকে, তখন আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি, একদিন সুযোগ পেয়েও যাই| দিদাকে নিয়ে ব্ড়মামা, মাইমা আর মা মেজমামার বাড়ী তখন আমি দোতলার ঠাকুরঘরে এসে ঢুকি, ভেতর থেকে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছোট খাট্ থেকে নামিয়ে আনি রামকৃষ্ণ, সারদামণি, অন্নদা ঠাকুর, কালীঠাকুর, গনেশঠাকুরের ছবি| দেয়াল থেকে পেড়ে আনি কৃষ্ণরাধার ছবি --- তারপর একটা একটা করে ছবির ওপরে উঠে দাঁড়াই, ছবির কাচ যাতে ভেঙে না যায় তাই ঐ ঠাকুরদের বিছানার তোষক নিয়ে ফটোর ওপরে রেখে তার ওপরে দাঁড়াই --- তোষক সরিয়ে ফর মুখগুলোতে পা ঘষি --- সব ফটো জায়গামত রেখে ধার থেকে টেনে আনি লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মূর্তি --- এই দুটো ঠাকুরের মূর্তি এনে পুজো হয়, ভোগ দেওয়া হয় আর পুজোর পরের দিন আগের বছরের ঠাকুরের বিসর্জন দেওয়া হয়| এই মূর্তিগুলোর ওপরে দাঁড়ানো যায় না, তাই পা দিয়ে ওদের শাড়ি ডলে দিই, লক্ষ্মী সরস্বতীর মুখে ঘষে ঘষে পায়ের পাতা মুছি --- পায়ের আঙুল দিয়ে মূর্তির মাথার চুলগুলো রগড়ে দিই --- তারপর আবার উঠিয়ে বসিয়ে দিয়ে আসি --- আর মনে মনে বলে আসি যে ঠাকুরের দোহাই দিয়ে দিদারা এত অন্যায় করে, অন্যায় মিথ্যে বলে সেই ঠাকুরকে পা দিয়ে ডলে রগড়ে দিলাম --- ওদের দেখানো 'ঠাকুর দেখবেন ওপর থেকে' এই ভয় আমি মানি না| আমি বহন করি না, কোনওদিন করবও না ওদের উত্তরাধিকার|

    সরস্বতীপুজোর সময় অঞ্জলী দিতে হয় বাড়ীতে একবার আবার স্কুলে গিয়েও| বাড়ীতে আমি চেষ্টা করি না দেওয়ার, কিন্তু হয় না| মা জোর করে ধমক দিয়ে হাত বা চুল ধরে টেনে অঞ্জলী দেওয়াতে নিয়ে আসে, কিছুতেই মুখ দিয়ে বেরোয় না 'না আমি অঞ্জলী দেব না', বরং মুখ বুজে ফুল বেলপাতা হাতে নিই --- একটাও মন্ত্র উচ্চারণ করি না বরং মনে মনে আওড়াই 'মানুষই দেবতা গড়ে তাহারই কৃপার পরে করে দেব মহিমা নির্ভর' ---- আবার ফুল বেলপাতা ছুঁড়েও দিই মূর্তির পায়ের দিকে| মনে মনে যা তীব্রভাবে অস্বীকার করে চলি মুখে কিছুতেই তার প্রকাশ হয় না বরং দিব্বি সকলের মন পছন্দ কাজগুলো আপাতভাবে চালু থাকে --- মনে মনে বলি এই ঠাকুরটা আসলে কেউ নয় কিচ্ছু নয় আমরা ফুল বেলপাতা দিচ্ছি তাই --- কিন্তু তাহলে বাকীদের বলে দিচ্ছি না কেন? মা বকবে? মারবে? বাড়ী থেকে বের করে দিয়ে বলবে 'জিজির বাড়ী চলে যা' --- হ্যাঁ বলতেও পারে ---- তাহলে আপাতত এসব না বলাই ভাল --- যখন স্বাধীন হয়ে যাব, চাকরি করব তখন বলব -- তখন কেউ কিছু বলতে পারবে না -- কিছু বললেও তখন আর আমার কিচ্ছু যাবে আসবে না --- অতএব মনের মধ্যে তৈরী হয়ে ওঠে সুযোগের অপেক্ষায় থেকে আপাতত মিথ্যে ভান করে নেওয়া একটা চতুর মন --- নিজের এই মনটাকে আমি নিজেও ঠিক পুরোটা বুঝে উঠতে পারি কি না কে জানে! এই মন আমাকে দিয়ে চন্নামিত্তি নিয়ে মাথায় ঠেকানোর মত একটা ভঙ্গী করায় --- আমি দুধ-ঘী-মধুর সুস্বাদু তরল জিভ দিয়ে সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে হাতটা পায়ের তলায় মুছে ফেলি| নিজের মনে অবিরাম দ্বন্দ্ব চলতে থাকে, সকলের চোখের আড়ালে এ আমার কেমন প্রতিবাদ? এ তো ভন্ডামি --- মন বলে হ্যাঁ ভন্ডামিই তো, ইস্কুলে ইরাদি যখন বলেছিল 'তোমায় তো মা দেখিয়ে দেন ট্র্যানশ্লেসান' ত্খনও তো বলে ওঠো নি 'না না মা তো কিচ্ছু পড়া দেখায় না আমাকে' সেইটে ভন্ডামি ছিল না? আমি বলি আহা তখন ঐটে বললে মা তো ভীষণ রাগ করত, মন বলে আর এইটে বললে বুঝি ক্যাডবারি কিনে দেবে? আরও অনেক বেশী রাগ করবে| আমি বলি কিন্তু সত্যি যদি সরস্বতী জ্যান্ত হয়ে কম নম্বর পাইয়ে দেয়? মন বলে তাহলে তো বুঝেই যাবে আমরা মানুষরা বানাই না, আর ঠাকুররা রাগ করলে নম্বর কম হয়| আমি ব্যাজার হয়ে বলি তখন বুঝে কি ঘন্টা হবে আমার? মন খুশী হয়ে বলে বলে ধ্যুৎ চল তো আজ তো আর পড়াশোনা নেই, কেউ খোঁজ করবে না, এখন চুপিচুপি ওপরে গিয়ে প্রসাদ আর নবকল্লোলের ছবিগুলো দেখি বরং|

    তো, এইসব দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে স্কুল পাশ করে কলেজে ঢুকি আর আরো বেশী করে লোকজনের 'ঠাকুর ঠাকুর' দেখে দ্বিধা কেটে যেতে থাকে, নিজের প্রত্যয়ে স্থির হয়ে উঠতে থাকি| বাড়ীর ধমক, মায়ের হাতের থাপ্পড়, কিল কিছুই আর আমাকে কোনও ঠাকুরের সামনে মাথা নত করাতে, প্রণাম করাতে পারে নি| এইসব বকাবকির মধ্যে এইটুকু লাভ হয়েছে মা মাসে দুবার একাদশী করাটা বন্ধ করেছে আর আতপ চাল খাওয়াটাও| সাদা ব্লাউজ ছেড়ে অল্প কিছুদিন রঙীন ব্লাউজ, শাড়ীর পাড়ের সাথে রং মিলিয়ে, তাও পরতে শুরু করে| কিন্তু ঐটুকুই, ওর চেয়ে বেশী আর কিছু পরিবর্তন করাতে পারি নি, মাছ মাংস খাওয়াতে পারি নি| দীর্ঘ ১৫ - ১৬ বছরের অনভ্যাসে মা'র ততদিনে মাছে গন্ধ লাগে| দিদা, মা, অন্য আত্মীয় পরিচিতরা বলেছে সেরকম সেরকম বিপদে পড়লে ঠিক ঠাকুরকে ডাকবি| নাঃ ডাকি নি| বি এসসি অনার্সে উপর্যুপরি ফেল করে শুরু থেকে আবার শুরু করতে হয়েছে, চাকরী, একটা ভদ্রস্থ আয় হয় এমন চাকরীর জন্য দীর্ঘদিন লড়তে হয়েছে, মন্দার সময় চাকরী থেকে ছাঁটাই হয়ে গেছি ---- কিন্তু তবু কোনওদিন ঠাকুরবাকুরে বিশ্বাস আসে নি আর| এইসব লড়াইয়ের গল্প বলতে গেলে মস্ত উপন্যাস হয়ে যাবে ---- গাড়ী কিনে শোরুম থেকে আনতে গিয়ে দেখেছিলাম শোরুমের লোকজন একটা মোটা গাঁদার মালা, আস্ত নারকেল আর মিষ্টির বাক্স নিয়ে রেডী 'পুজা চড়হানেকে লিয়ে'| তা মালা আর নারকেল ফেরত দিয়ে মিষ্টিটা ওঁদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ায় অল্পবয়সী ছেলেমেয়েগুলো কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত কিঞ্চিৎ খুশী, কিন্তু ভারী অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন একটু বয়স্ক হোমরা চোমরাগণ| একই ব্যপার বাড়ী কিনে পুজো, গৃহপ্রবেশ, হাউস ওয়ার্মিং পার্টি কিচ্ছুটি না করায়| কিন্তু নাঃ আমার মা দিদাদের উত্তরাধিকার আমি আর বহন করি না|

    কথা হল এই অস্বীকার না করার জন্য আমার ওপরে যতটা সম্ভব মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু একেবারে প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয় নি| এতদূর যে যায় নি, সে কি নিতান্তই আমি অর্থনৈতিকভাবে এবং সর্বোতভাবে স্বাধীন বলে? না কি লোকজন আসলে অতটা গুরুত্ব দেয় নি, নিজেরা যে যেমন আছে বিশ্বাস আর গোঁড়ামি নিয়ে তেমনি থেকেই গেছে বলে? আমার অবিশ্বাস কাউকে বদলাতে বাধ্য করে নি, অন্য কারো জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলার তেমন সম্ভাবনা নেই বলেই কি আমার অবিশ্বাস আমি চর্চা করে যেতে পারি? পদাবলী কীর্তনকে পাঁঠাবলী কীর্তন বলে অভিহিত করেছি, দুই একবার থানায়ও ফোন করেছি আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে, কিন্তু কখনও জনমত সংগঠনের চেষ্টা করি নি এই শব্দ দানবের বিরুদ্ধে| বোঝানোর চেষ্টা করি নি ছোট ছোট বাচ্চাদের কানের কি ভীষণ ক্ষতি হয় এই বছরে তিরিশবার বিভিন্ন পুজোর সমাইক অত্যাচারে| যারা চেষ্টা করেছেন অন্যকে বোঝানোর, লিখেছেন অন্ধত্বের বিরুদ্ধে তাঁদের প্রাণ দিতে হচ্ছে একে একে| মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা নরেন্দ্র দাভোলকর খুন হয়েছেন ২০১৩র আগস্টে, ২০১৫র ফেব্রুয়ারীতে খুন হয়েছেন অভিজিৎ রায়, খুন হয়েছেন তার পরে পরে আরো অনেকে| বিভিন্ন খুনের জাস্টিফিকেশান হিসেবে এসেছে তথাকথিত নাস্তিকতার অভিযোগ| আর অন্যদিকে উদ্দাম হয়ে উঠেছে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের দাপাদাপি| একদিকে গোটা ভারত জুড়ে দাপাচ্ছে ব্রাহ্মণ্য ও উচ্চবর্ণের হিন্দুত্ব আর একদিকে প্রায় অর্ধেক পৃথিবী জুড়ে দাপাচ্ছে শারিয়া আইনের প্রবর্তনে উন্মুখ সালাফিজম|

    এই অদ্ভুত কালো দুঃসময়ে জোর গলায় বলবার সময় এসেছে আমি মানিনা আপনাদের এই ধর্ম ও তার উগ্র প্রচার| আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে প্রকাশ্যে উগ্র ধর্মাচরণ প্রবর্তনে বাধা দেব| আমি আপনার ঘরে ঢুকে দেখতে যাব না আপনার ফ্রীজে বা ভাঁড়ারঘরের মিটসেফে গরু কিম্বা শুয়োরের মাংস রাখা আছে কিনা, ঘরের কোণায় ঠাকুরের পট আছে নাকি নামাজের ব্যবস্থা --- কিন্তু প্রকাশ্যে চৌমাথার ওপরে আপনি এই নিয়ম প্রবর্তন করতে চাইলে আমি বাধা দেব| আমি বিচার চাই সবকটি হত্যাকান্ডের --- বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাকে মনে করিয়ে দেব যে বিচার হয় নি, আমি বিচার চাই| না ফাঁসি চাই না, বিচার চাই|
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | ৩৭৮২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১০:২১57358
  • হোঁ বাবা, এইটেই হল আসল কথা। ঃ-)
  • সৌম্য | 132.178.252.251 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১০:৫০57359
  • ধর্ম নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। একটু সরে গিয়ে একটা অভিজ্ঞতা বলই।

    ছোটবেলা থেকেই দেখেছি মা জোরে হাঁটতে পারেন না। মনে আছে সেই সময় দুর্গাপূজা দেখতে গেলে বাবা হাঁটতেন অনেক আগে। আর মা আর আমি পেছনে- হাঁট ধরে। আগে একটু রাগও করতাম। মা কি একটু পা চালিয়ে হাঁটতে পারেন না? বাবাই বা এতো হনহন করে হাঁটেন কেন? একসাথে হাতলে কত আনন্দ লাগে। একটু বোধশোধ হলে বুঝতে পারলাম সে যুগে বউয়ের পাসে হাঁটাই প্রায় পাবলিক ডিসপ্লে অফ আফেক্সন ছিল। তাঁর পর থেকে ও নিয়ে মাথা ঘামাই নি।

    কিন্তু মার আস্তে হাঁটার অভ্যাস কেন হয়েছিল, সেই রহস্যটা কখন খোলসা হয়নি। এই সেদিন মা কে জিজ্ঞেস করলাম, "সত্যি করে বলত। প্রথম থেকে এত আস্তে হাঁট কেন?" মা হেসেই উড়িয়ে দিলেন প্রথমে। তাঁর পর কেমন যেন হয়ে গেলেন। বললেন "আরে ছোটবেলা থেকে দাদা বলত- এত দৌড় করার কি আছে? মেয়েরা এত ছটফট করে নাকি? চলন দেখে তো মেয়েছেলে বলেই বোঝা যায় না। তাই অভ্যাস হয়ে গেল। ও কিছু না।"

    আমি অনেকক্ষণ কথা বলিনি তারপর। না, আমি নারী বাদী না- বিপ্লবীও না। ভাল ছেলে - বই মুখস্ত করে ভাল নম্বর পাবার চেষ্টাই সারা জীবন অসফল ভাবে করে এসেছি। মাও তাই চাইতেন। কোন দিন আর কিছু চাননি। কিন্তু ভয় লাগে, আমিও তো পুরুষ। যেন কোনদিন আমি কারও চলার গতিকে এভাবে আটকে না দিই।
  • সৌম্য | 132.178.252.251 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১০:৫৩57360
  • বলিহারি বাংলা সফটওয়ার। লিখছি হাঁটলে- লিখছে হাতলে। ধুত্তেরি।
  • hu | 140.160.143.215 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:০৩57361
  • আরে দুদ্দুর! ইশকুলের পরীক্ষাতেও লোকে ঠাকুরের বিভূতি নিয়ে আসে। সে খাতা তো আর ঠোঙা হওয়ার ভয় নেই। আমরা মফস্বলের ছেলেমেয়েরা হেঁটে ইশকুলে গেছি। বাসট্রাম আটকে পৌঁছতে পারবো না এমন ভয়ও নেই। তবুও ঠাকুরের ফুল। তা বাপু, সে ফুলের ওপর যখন এত ভরসা তখন সারাটা বছর পড়াশোনা করার দরকার কি? অসুখপত্তর হলে ওষুধেরই বা প্রয়োজন কি? বিশ্বাস হতে হলে হোক ছবি বিশ্বাস। স্বপ্নে দেখল পুত্রবধু দেবী, তো সে দেবী। নাতির চিকিৎসা করালো না, দেবীর কোলে তুলে দিল। এই সব ধরি মাছ, না ছুঁই পানি বিশ্বাসে এমনকি কোন মহৎ ট্র্যাজেডীও হয় না।
  • aranya | 154.160.226.92 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:২০57362
  • 'হাড় হারামজাদা শয়তান মানুষে মারধোর গন্ডগোল গালাগালি যুদ্ধ ইত্যাদি করে যাবে, আটকে রাখবে, ঠাটিয়ে চড় দিয়ে গাল ফাটাবে, কাপড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে'

    - আতোজ, মানুষ কিন্তু ভাল কাজ-ও কিছু করে :-)
  • aranya | 154.160.226.92 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:২৩57363
  • হু, এটা একটা সাপোর্ট সিস্টেম।
    বিপদে আপদে ( স্কুল কলেজের পরীক্ষা-কেও একপ্রকার বিপদ হিসাবে দেখা যেতে পরে :-) ) ভগবান সাহায্য করবেন ভাবলে সাহস, শক্তি ইঃ পাওয়া যায় বলে শুনি
  • Atoz | 161.141.84.108 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:২৯57364
  • হুঁ অরণ্যদা, সেইজন্যেই তো বলছি। মানুষই হীরো, মানুষই ভীলেন। অত্যন্ত ভালো কাজ থেকে শুরু করে সাধারণ ভালো ভালো কাজ মানুষেই করে আবার অল্প স্বল্প খারাপ থেকে শুরু করে অত্যন্ত ভয়ানক কাজও মানুষেই করে।
    তবে ঐ যে, "নাচায় পুতুল যথা দক্ষ বাজীকর", ঐ বাজীকরটি লাগে। মানুষের পোটেনশিয়াল বিশাল, কিন্তু কোনো কিছুই কি মানুষ সহজে করে? নানাভাবে নানা কায়দা কৌশলে তাকে জাগাতে হয়। সে আলোয় জাগবে না অন্ধকারে জাগবে, অনেক্ক্ষেত্রেই নির্ভর করে পরিস্থিতির উপরে, সময়ের উপরে, পরিবেশের উপরে।
  • aranya | 154.160.226.92 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:৩৩57365
  • 'আলোয় জাগবে না অন্ধকারে জাগবে' - বাঃ, ভাল লিখেছ এটা
  • Atoz | 161.141.84.108 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:৩৭57366
  • সৌম্যের কথাটা শুনে নানা স্মৃতি মনে পড়ল। স্বামীস্ত্রী পাশাপাশি হাঁটা ব্যাপারটাও ট্যাবু ছিল, নাহলে পাব্লিক ডিসপ্লে ঘটে যেত। ঃ-)
    আরো নানা ব্যাপার ছিল, স্ত্রীমহাশয়াকে আঁচল টেনে ডানদিক ঢেকে রাখতে হবে(বাঁদিকের কাঁধে তো পিন আপ করাই আছে), স্বামীমহাশয়কে দীর্ঘতর হতে হবে(এক দম্পতির দু'জনেই সমান লম্বা ছিলেন, তাই একসাথে বেরোতে হলে স্ত্রী ভদ্রমহিলা কোনোদিন হিলতোলা জুতো পরতে পারেন নি, আর স্বামী ভদ্রলোককে মাথায় শ্যাম্পু করে চুল উঁচু রাখতে হতো আর উঁচু বুট পরতে হতো )

    ঃ-)
  • aranya | 154.160.226.92 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:৫১57367
  • দিন পাল্টাচ্ছে। আমার এক বন্ধু দম্পতি - স্ত্রী ইঞ্চি দুয়েক লম্বা, হিল পরে হাঁটে, আরও লম্বা লাগে, স্বামী-র কোন অভিযোগ নেই
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১১:৫৯57368
  • আমার দেখা এক দম্পতির মধ্যে আবার স্ত্রী মহিলার দুঃখের সীমা ছিল না, কোথায় স্বামী হবেন রূপবান, রাজপুত্রের মতন চেহারা, লম্বা,ফর্সা, মাথায় ঠাসা চুল! তা না তিনি পেলেন এক কালোকোলো সাধারণ চেহারা হাফ টাকমাথা স্বামী! লোকে কত বোঝায় আরে, রাজপুত্রের মতন চেহারা লাল্টুমার্কা ছেলেদের থাকে, তারা মাকালফল, ওপরচালাক, তাদের চেহারা দেখে ভুলতে নেই, কিন্তু কোথায় কী! ভদ্রমহিলার দুঃখ যায় না। ভদ্রমহিলার ছেলে শেষে একদিন থাকতে না পেরে বলে দেয়, "রাজপুত্রের মতন না হোক, বাবার চেহারাটা কি রাজার মতন নয়? "
    ঃ-)
    সত্যিই তো, খেটেখুটে রাজ্যজয় করে কালোকোলো টাকমথা রাজাও তো হতে পারে!!! ঃ-)
  • মনোজ ভট্টাচার্য | 55.64.227.183 (*) | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ১২:১৬57338
  • যখন সময় এসেছে - তীব্র হাতুড়ি হানার এই অসভ্য বর্বর ধর্মবিশ্বাসে ও সিস্টেমে - ঠিক তখনই আপনার এই লেখাটা অনেক অনেক সাহায্য করবে - দুর্বল-চিত্ত মানুষদের বুঝতে ! - আপনার লেখাটা আমাকে মনে পড়িয়ে দিল সুবর্ণলতাকে । কিন্তু সেটা তো মহিলা-স্বাধীনতা ! আজকের এই যে অসভ্য বর্বরোচিত আচরন - মৃত্যু পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাচ্ছে সাধারন মানুষদের - আগে এর তো প্রতিবাদ দরকার !

    আপনার সাবলীল লেখা - সাধারনভাবে বেশিরভাগ বাঙ্গালি - হিন্দু ও মুসলমান মেয়েদের জীবন । তাদের অজ্ঞাতসারেই তাদের বিবেক চুরি হচ্ছে । তার স্বাধীনতা বিকিয়ে যাচ্ছে অন্যের বকলমে ! - জোর করে তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংসার প্রতিপালন ও প্রজনন !

    এবার তো এই সিস্টেম থমকে দেওয়ার সময় এসেছে ! আপনার সাহসকে কুর্নিশ জানাই !

    'শিখাইলে এই সত্য, তুচ্ছ নয় মনুষ্যত্ব, দেব নয় মানুষই অমর
    মানুষই দেবতা গড়ে, তাহারই কৃপার পরে করে দেবমহিমা নির্ভর'

    এই কথাটাই একবার বোঝাতে গেছিলাম এক গোঁরা জুইশ কে ! - খুব চটেছিল আমার ওপর ! কারন আমাদের সমাজের মতোই আর এক ধর্মপ্রাণ ইহুদি !

    মনোজ
  • | 24.96.164.138 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৪57374
  • যাঁরা ঠাকুর বাকুর মুর্তিফুর্তি ভারী নিরীহ মানুষই আসলে পাজী বা আপনার আত্মীয়বন্ধুরা আসলে পাজী বলছেন ---- বেশ পরিস্কার করে বলে দিই তাঁরা আসলে কার্য্য কারণ গুলিয়ে ঘন্ট করছেন।

    আর টিমি,
    আত্মীয় বন্ধু বলে বলবে না আবার কি হে? পয়সাকড়ি গয়নাগাঁটির ঠিকঠাক ভাগ না পেলেই তো ঠাকুর বাকুর আত্মীয়স্বজান সবেরই গুষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়ে লোকজন। তখন কিন্তু আত্মীয় বলে রেয়াৎ করে না।
  • S | 108.127.145.201 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৩:১১57375
  • অ্যাটোজ, অত করে যখন দেখে মনে হয় ঠিক ঠাক গেস করতেই পারে। বা কনফিডেন্টলি ভুল করে।
  • r2h | 215.174.22.20 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৩57388
  • সৌম্য on 01 March 2016 04:20:40 IST 'র মন্তব্য খুব ভালো লাগলো।
  • T | 165.69.198.67 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৫57376
  • দ দি ভালো লাগল।
  • sm | 53.251.91.253 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৪:০১57377
  • এক ভদ্রলোকের একটি ফুলের বাগান ছিল। এক রাম ছাগল এসে প্রতিদিন বেড়া টপকানোর চেষ্টা করে; আর বেড়া কিছুটা কিছুটা করে ভেঙ্গে যায়।ভদ্রলোক কে প্রতিদিন বেড়া সারাই করতে হয়; আর মনে মনে ভাবেন বেড়াটা আর একটু মজবুত হলে ভালো হতো । একদিন রাগের চোটে হাতুড়ি দিয়ে পুরো বেড়া টাই ভেঙ্গে ফেললেন।
    রামছাগলও তার আত্মীয় স্বজন নিয়ে এসে পুরো বাগান সাফ করে দিল!
    সব সমস্যার সমাধান।
  • Tim | 108.228.61.183 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৫57378
  • দমদিকে,

    আহা, আত্মীয় আর পরমাত্মীয়ের মধ্যে গুলালে চলবে কেন? নিজের চেয়ে বেশি আত্মীয় আর কে? সবই প্রায়োরিটির ব্যাপার।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৪:১৪57379
  • হ্যাঁ টিমি, সবই প্রায়োরিটির ব্যপার তো বটেই। তবে ঐ ঠাকুর বাকুরগুলোকে যারা মনে মনে ভয় ভক্তি করে তারাই আত্মীয়দের অন্য অন্যায়ের বেলা মুখ বুজে থাকে কারণ ঐ ঠাকুর বাকুরের 'পাপ দেবার' ভয়। নিজের আঁতে লাগলে তখন অন্য হিসেব।
    ঐ ঠাকুর বাকুরের ভয়টা না থাকলে বা চারিদিক থেকে ভয়ের আবরণ সৃষ্টির চেষ্টা না হলে হয়ত ঐ রিলেটেড অন্যায়গুলোতেও মুখ খুলত।

    আর একটা জিনিষ দেখো এই ঠাকুর বাকুরের ফাঁক দিয়ে বাচ্চাদের কেমন ধান্দাবাজি শেখানো হয় -- "ঠাকুর নমো করো ঠাকুর নমো করো। পাশের ডেস্কে বসা ছেলেটা কাল আসে নি? ওহ তোমার কি দরকার ওকে পড়া বলে দেবর, যাক না ক্লাস টিচারের কাছে'

    ছোট থেকেই প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে এইটে মাথায় গেঁথে দেবার চেষ্টা হয় যে ক্লাসের বন্ধুর সাথে চীট করো বা তকে কোনওরকম সাহায্য কোরো না যেভাবে পারো নাম্বার বেশী আনো ওদিকে চাট্টি এখানে ওখানে মাথা ঠুকলেই সব জায়েজ হয়ে যাবে।
  • Tim | 108.228.61.183 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৪:২০57380
  • ভারতের "কম্পিটিশনের" গোড়ার কথাই তো তাই, আমি ভালো হই না হই, অন্যেরা যেন আমার চেয়ে খারাপ হয়। এইজন্য ছোট থেকে সবার জন্য দলগত খেলাধুলো খুব দরকার, তাইলে বাচ্চারা জিততে ও হারতে দুইই শেখে। ঃ-)

    তা এসব বলে কি হবে?
  • aranya | 154.160.226.94 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৪:৪১57389
  • 'ধার্মিক কে নাস্তিক দিয়ে রিপ্লেস করলেও এরকম বুলি করতে থাকা মানুষের অভাব হতো কি?'

    - অবশ্যই অভাব হত না। শুধু বুলি করা কেন, প্রচুর অত্যাচার, গণহত্যা ইঃ হয়েছে, ধর্মের অজুহাত ছাড়াই - নাজি জার্মানিতে, পল পট-এর কম্বোডিয়ায়, স্তালিন-এর রাশিয়ায়
  • | 24.97.33.71 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৪:৫৯57390
  • আরও যাঁরা যাঁরা পড়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ।

    সৌম্যর কথিত ঘটনাটা --- এরকম কত যে আছে। ধর্মের সাথে ডায়রে'ক্ট জড়িত নয়ও বটে আবার 'শাস্ত্র' নামক একটা সমজাতীয় বস্তুর সাথে জড়িতও বটে। শাস্ত্রে আছে মেয়েদের অমুকটা করতে নেই, শাস্ত্রে আছে তমুকটা করতে নেই ইত্যাদি।

    সে'কে বলার ছিল যে না ওরকম কোনও ঐকিক নিয়ম ইত্যাদি করা হয় নি তো। কিছু সত্য ঘটনা বলা হয়েছে যেখানে ধর্ম ও আচারকে মাধ্যম হিসেবে রেখে করে যাওয়া হয়েছে এখনও কোথাও কোথাও হয় যতদূর জানি।
    কিন্তু নাস্তিক্য বা নিরীশ্বরবাদীতাকে সামনে রেখে এমন কোনও ঘটনা আমি জানি না। অমুক তমুক নাস্তিক নয় তাই সে হত্যাযোগ্য এমনও কোনও ফতোয়া এখনও দেখি নি। কোনও ব্যক্তি নাস্তিক হয়ত খুব হিংস্র বা সমাজবিরোধী। কিন্তু তার জন্য নাস্তিক্য ঢাল হয়ে দাঁড়ায় না যেটা ধর্ম ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই এদের এমন ওয়ান ট্যু ওয়ান ম্যাপিং করে তুলনা হয় না বলেই আমি মনে করি।
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৫:৩১57391
  • হ্যাঁ, মানে আমি ঠিক গুছিয়ে লিখতে পারিনা। তবে ধর্মাচরণের দোষে শাস্তি পেয়েছে নাস্তিক রেজিমের কাছে - এমন ঘটনাও ঘটেছে। দুই দিকেই কট্টরপন্থা হিংসা ডেকে আনে। নাস্তিক ধার্মিক সবাই পাশাপাশি সহিষ্ঞুতার সঙ্গে একে অপরকে টলারেট করে বাঁচতে পারলে সমস্যা গুলো এড়ানো যায়। আমি আমার বিশ্বাস নিয়ে বাঁচি, ও ওর বিশ্বাস নিয়ে বাঁচুক। কেউ কাউকে ঝামেলা করব না, এমনি করলেই তো মিটে যায়। তাও লোকে নিজের মতটা অন্যের ওপর চাপাতে চায়। তা সে ধর্ম হোক, কি নাস্তিক্য। ব্যক্তিগতভাবে আমি কারো ধর্মবিশ্বাসে/নাস্তিকতায় হস্তক্ষেপ পছন্দ করি না। দু পক্ষই বলবে, আমারটা ভালো আমারটা ভালো। যতক্ষণ কারো ক্ষতি না করছে, ততক্ষণ ঠিকই তো আছে। তবে দুষ্ট লোকের অজুহাতের অভাব হয় না। নিষ্ঠুরতার জাস্টিফিকেশনে কেউ ধর্মের দোহাই দেবে, কেউ নাস্তিকতার। দিনের শেষে সে নিজে ঠিকই জানে যে শয়তানি করবার জন্য তার জাস্ট একটা অজুহাত দরকার ছিল। সে একটাতে কনভিনিয়েন্টলি বেছে নিয়েছে।
  • SS | 160.148.14.4 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৫:৪০57392
  • সোভিয়েত ইউনিয়নে কামিউনিষ্ট সরকার দ্বারা জুইশদের পার্সিকিউশনের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এমনকি স্যাবাথ পর্জন্ত ব্যান করে দেওয়া হয়েছিল।
  • SS | 160.148.14.4 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৫:৪১57393
  • পর্যন্ত
  • b | 135.20.82.164 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৫:৫৪57381
  • বক্তব্যঃ
    ধরুন লক্ষ্মী বা দুর্গা বা শিব বা এক্স ওয়াই জেড সত্যি সত্যি খাবার খেতে শুরু করলো। মানে দৃষ্টি ভোগ না, আর্ধেকটা চোঁ-ও-ও শব্দ করে মূর্তিতে ঢুকে যায়। দেখতুম লোকের ভক্তি কোথায় থাকে।
  • SS | 160.148.14.4 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৬:২৭57394
  • জুইশদের কথা লিখে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের কথা মনে হল। তই একবার চেক করে নিলাম। বলশেভিক বিপ্লবের পর রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের অসংখ্য প্রিস্টকে হত্যা করা হয়েছিল। লেনিন, স্ট্যালিন, ক্রুশ্চেভ সবার আমলেই সিস্টেমিক ভাবে ক্রিশ্চানদের পার্সিকিউট করা হত।
  • ranjan roy | 24.99.219.123 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৬:৩০57395
  • অথবা পড়ুন চীনের বুদ্ধিস্ট মেয়েটির ( বাবা পিএলএ কম্যান্ডার, দিদিমা অমিতাভ বুদ্ধের ভক্ত) আখ্যান। "থাউজ্যান্ড মাইলস আন্ডার এ ক্লাউডলেস স্কাই"। কমিউনিস্ট দুনিয়ায় বুদ্ধিস্টদের পার্সিকিউশনের কথা।
  • দেবব্রত | 212.142.91.213 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৭:৪২57396
  • বস্তুত সেকুলারিসম এবং জাতীয়তাবাদের( এটিও নব্য ধর্ম ) নামে পৃথিবীতে যত মানুষের হত্যা হয়েছে প্রথাগত ধর্ম তার তুলনায় নস্যি । মিলিটারি এথিস্ট ,জাতীয়তাবাদ এবং সেকুলারিসম যেহেতু ধর্মের রকমফের তাই ধর্মের মতই আধিপত্যবাদি । ট্রাইব জমানায় নিয়ম ছিল পরাজিত ট্রাইব জয়ী ট্রাইবদের ধর্ম বা আচরণ মেনে নেবে -প্রতিবাদের অর্থ মৃত্যু । তাই স্তালিনের রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ ,হোমো সেক্সুয়াল দমন , চীনের ফাউলং গং এবং তিব্বতি বৌদ্ধ এবং জেফারসনের ইন্ডিয়ান হত্যা বৃহৎ অর্থে এপিঠ অর ওপিঠ ।
  • ঊমেশ | 118.171.128.168 (*) | ০১ মার্চ ২০১৬ ০৭:৪৭57382
  • দ, খুব ভালো লাগলো লেখাটা পড়ে।

    এমন একটা লেখা যেটা নিজের জীবনের সাথেও মেলানো যায়।

    আমার আবার ছোটোবেলা ধর্ম অবিশ্বাসে কোনো সমস্যা হয়নি, মা কোনোদিন জোর করেনি পুজা-আর্চা করা বা অন্জলি দেওয়া নিয়ে। আমার নামে নাকি মা নিজেই অন্জলি দিয়ে দিত/এখনো নাকি দেয়।

    বরং বিয়ের পর আমাকে বেশ অসুবিধাতে পড়তে হয়। বউ বেশ ভালো রকমের আস্তিক আর আমি ভালো রকমের নাস্তিক। শুরুতে বউ এর অনুরোধে (নতুন বউ বলে কথা) অনেক সময় পুজা তে পাশে বসতে হতো, মন্দিরে যেতে হতো। বেশ অসুবিধা হতো।
    কিন্তু বউ একটু পুরোনো হতেই আমার নিজের রুপে ফিরে এলাম। একটু জোর করার চেষ্টা করতো, ঝগড়া হতো, কিন্তু ভবি ভোলার নয়।

    লাস্ট দু-তিন বছর দেখছি বউ অনেকটা ধর্মের দিক থেকে সরে এসেছে। গোড়ামি টা অনেকটাই গেছে। সবথেকে বড়ো কথা মেয়েকে মোটেই ধর্ম-কর্ম পুজো-টুজো নিয়ে কিছু বলে না। মেয়েও ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন