এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আর্য-সমস্যাঃ পর্ব ১

    Swarnendu Sil লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১২ অক্টোবর ২০১৬ | ১৩৯৬৩ বার পঠিত
  • শুরুর কথাঃ

    অনেকদিন থেকেই নানা আলোচনায়, কথাবার্তায় তথাকথিত Aryan debate নিয়ে কিছু লেখার কথা উঠে আসছিল... বিষয়টা এমনিতেই বিশাল এবং মাল্টিডিসিপ্লিনারি... তার ওপর হনুমানদের চিৎকারে আমাদের মত সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা কনফিউশন-ধোঁয়াশা তৈরি করছে খানিক... সেই জায়গা থেকেই বিষয়টাকে ধরার চেষ্টা... মূল লক্ষ শুধু এখনকার অ্যাকাডেমিক কন্সেন্সাস বলাই নয়, বরং সেগুলোর যুক্তিগুলোও বোঝা... এবং এর জন্যে স্বাভাবিকভাবেই হিস্টোরিয়ানদের অ্যাকাউন্ট এর ওপর নির্ভর না করে প্রাইমারি ফিল্ডগুলোর এক্সপার্টদের, যেমন ফিললজিস্ট, লিঙ্গুইস্ট, আর্কিওলজিস্ট এর বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে পরিস্থিতিটা সমঝে নেওয়া--- এইটাই করাই উদ্দেশ্য। এই প্রসঙ্গে সাধারণভাবেই 'ইন্দো-ইউরোপিয়ান' দের কথা বারে বারে আসবে, যদিও আমাদের উদ্দেশ্য মূলত ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকবে যতটুকু ভারতীয় উপমহাদেশের কন্টেক্সট এ 'আর্য' দের জন্য জরুরি।

    হনুমানদলের বক্তব্য নিয়ে আলাদাভাবে মাথা ঘামাব না, কারণ সে দলে বেশিরভাগই স্বার্থসিদ্ধির ধান্দায় থাকা জালিয়াত বা পলিটিক্যালি অ্যাজেন্ডা-ওয়ালা লোক, এবং in any case, তাদের কারোরই অ্যাকাডেমিক ক্রেডিবিলিটি ও অথরিটির ছিটেফোঁটাও নেই, অন্তত যাদের অ্যাকাউন্টের ওপর আমি নির্ভর করব তাদের তুলনায়... কিন্তু তাদের মূল দাবীগুলো এবং সেগুলোর সম্ভাব্যতা-অসম্ভাব্যতা আমরা খতিয়ে দেখব।
    ---------------------------------------------------------------------------------------------------------

    'আর্য' কারা?

    প্রথমেই পরিষ্কার করে নেওয়া ভাল যে এই প্রশ্নের উত্তর সরল নয়... উনিশ শতকের স্কলারশিপ তো বটেই ( যার মধ্যে বহু রেসিয়াল বায়াস, হোয়াইট সুপ্রিম্যাসিস্ট প্রেজুডিস ছিল যা অনস্বীকার্য ), বিংশ শতকের শেষ ভাগের স্কলারশিপও ( যা আমার মনে হয়েছে এইরকম অভিযোগের উর্ধ্বেই বলা চলে সাধারণভাবে, কেন বলছি আমরা দেখব ) এই প্রশ্নের উত্তর গুলিয়ে নানান ঝামেলায় পড়েছে। তাই আমরা আগেই সেইটা পরিষ্কার করে নেব।

    ১) লিঙ্গুইস্টিক 'আর্য'ঃ

    অবশ্যই এটাই সবচেয়ে কংক্রিট উত্তর...কারণ প্রাইমারিলি এই শব্দটি একটা লিঙ্গুইস্টিক ক্যাটেগরিই... আরও বিশদে বলব... কিন্তু আপাতত এইটুকু বলা যায় যে গোটা ইউরেশিয়ায় যে অসংখ্য ভাষা আজকের দিনে প্রচলিত, এবং আরও যে সমস্ত হারিয়ে যাওয়া ভাষার কথা হিস্টোরিকাল রেকর্ডে বা আর্কিওলজিকাল রেকর্ডে পাওয়া গেছে তাদের অনেকগুলোর মধ্যেই একটা নিবিড়, নিকট সম্পর্ক আছে... এরকম মনে করার যুক্তিতে আমরা আসব...আপাতত এটা ধরে নিন কিছুক্ষণের জন্য... সেই নিবিড় সম্পর্কের ভিত্তিতে এই ভাষাগুলোকে বেশ কয়েকটা ভাষাগোষ্ঠীতে ভাগ করা হয়... একই গোষ্ঠীর মধ্যের ভাষাগুলোর নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক খুবই কাছের, তুলনায় দুটো আলাদা ভাষাগোষ্ঠীর দুটো ভাষার মধ্যে সম্পর্ক সাধারণভাবে তুলনায় দুরের...

    অনেকটা জীবজগতকে যেভাবে ভাগ করা হয় সেইরকমই... উপমাটা একটু বেশীই সুপ্রযুক্ত আসলে... ইভোল্যুশনারি দূরত্বের নিরিখে জীবজগতকে ভাগ করার সাথে এই ভাগের সাদৃশ্য খুবই বেশী... অর্থাৎ, দুটো ভাষা পরস্পরের বেশী কাছে মানে, জীবজগতের মত এখানেও, সময়ে পিছিয়ে গেলে দেখব যে তারা আসলে একটা কমন ভাষা থেকে উদ্ভূত... অর্থাৎ এও ইভোল্যশনারি ব্রাঞ্চিং ট্রি ... যাই হোক, তা এইরকম ভাষাগোষ্ঠীগুলোর একটাকে বলা হয় 'ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠী' ( সংক্ষেপে IE ) ... এবং সময়ে পিছিয়ে যেতে যেতে একসময় আমরা পৌঁছব সেই ভাষাটাও যা এই ভাষাগোষ্ঠীর সবকটা ভাষার লাস্ট কমন অ্যানসেস্টর... সেই ভাষাটাকে বলা হয় 'প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান' ( সংক্ষেপে PIE ) ... প্রোটো এইজন্যে যে সেই ভাষাটা লিঙ্গুইস্টিক্যালি রিকন্সট্রাক্টেড, আমাদের জানা কোন ভাষা নয়... ভাষা ফসিল রেখে যায় না, তাই জীবজগতের ইভল্যুশনের মত এই প্রোটো ফর্মের ভাষাকে একদিন খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ এই প্রোটো ফর্ম যখনই থেকে থাকুক না কেন, তখন মানুষ লিখতে শেখেনি। আবার ভাষা ফসিল রেখে যায়ও বটে, তার সন্তান ভাষাগুলোর মধ্যে, হিস্টোরিকাল লিঙ্গুইস্টিক্স আজকের ভাষায় সেই হারানো ভাষার ফসিল খোঁজার বিজ্ঞান।

    তা সে যাই হোক, তো এই ভাষাটি যখন বেঁচে ছিল, তখন সেই ভাষায় যারা কথা বলত তাদেরকে বলা হয় প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাভাষী মানুষ ( সংক্ষেপে PIE speakers )। এবার একটা ভাষা খুব পুরনো সময়ে খুব বড় ভৌগোলিক অঞ্চল জুড়ে থাকতে পারে না, কারণ আঞ্চলিক ভ্যারিয়েশনই বাড়তে বাড়তে এক সময় দুটো আলাদা ডায়ালেক্ট পরস্পর দুর্বোধ্য হয়ে যাবে... অর্থাৎ আলাদা ভাষা হয়ে যাবে বস্তুত ( এখানে উপমাটার একটা খামতি, স্পিসিস বাউন্ডারির তুলনায় ভাষার বাইউন্ডারি অনেক বেশী ফাঁকফোকর-ওয়ালা জিনিস, যদিও শিয়াল আর কুকুরের স্পিসিস বাউন্ডারিতে যে ফাঁকফোকর প্রায়ই হয় আমরা অনেকেই অভিজ্ঞতায় জানি ) । খুব বড় বলতে ঠিক কতটা এটা নির্দিষ্ট করে বলা শক্ত, কিন্তু এতটা বড় হওয়ার সম্ভাবনা কম যাতে এই ভাষাভাষী মানুষদের জীবনযাপন পদ্ধতি, বিশ্বাস, টেকনোলজি -- অর্থাৎ এক কথায় culture, material culture, এসব খুব আলাদা আলাদা হওয়ার পক্ষে। তাই PIE speaker দের culture একরকম কাছাকাছি ছিল, যাকে আমরা একটাই culture বলে ধরতে পারি... আর সেই culture কে আমরা বলব PIE culture। আবার জেনেটিকালিও এই মানুষগুলোর নিকট সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট... তাই একই কালচার ও জেনেটিকালিও নিকট সম্পর্কিত, অর্থাৎ তাদের এথনিসিটি একই... তারা একটাই এথনিক গ্রুপ, এইটা মনে করার যথেষ্ট যুক্তি আছে... সেটাকে আমরা PIE ethnic group ( এককালে রেসিয়াল বায়াসে PIE race ও বলা হয়েছে ) বলতে পারতাম ( এবং বলা উচিৎ ) কিন্তু যেহেতু আমরা ধরে নিচ্ছি যে PIE ethnic group ও PIE speakers একই সেট, তাই আর বলব না। কিন্তু খেয়াল রাখুন এইটা ধরে নেওয়াই... তাদের ডিফাইন করছি কমন ভাষা দিয়েই, আর কিছু দিয়ে নয়। একই ভাষায় কথা বলে মানেই একই কালচার বা একই এথনিক গ্রুপ কোনটাই না হতে পারে... PIE র মত বহু পুরনো ভাষার ক্ষেত্রে এইটা ধরে নেওয়ায় খুব সমস্যা না থাকারই কথা, কিন্তু পরবর্তিকালে এর থেকে উদ্ভূত ভাষাগুলোর ক্ষেত্রে সেইটা খাটবে এমন কোন মানে নেই... বিশেষ সন্তান ভাষাগুলো যদি এক বিশাল ভৌগোলিক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষ সেই সমস্ত অঞ্চলে যদি আগে থাকতেই অন্য ভাষা, কালচাল, এথনিক গ্রুপ সবই থেকে থাকে তাহলে এই হোমোজেনিয়াস ব্যাপারটা ক্রমশ আস্তে আস্তে হেটেরোজেনিয়াস হয়ে যাবে... এবং এথনিক গ্রুপের মুভমেন্ট ও ছড়িয়ে পড়া , কালচারটার ছড়িয়ে পড়া এবং ভাষাটার ছড়িয়ে পড়া এই তিনটে তাদের নিজেদের ডায়নামিকস এ হবে, হয়ে সেই গতিপথগুলো আর সবসময়ের জন্য এক নাও থাকতে পারে।

    এবার ভারতীয় উপমহাদেশে IE ভাষাগোষ্ঠীর অনেকগুলোই অনেকগুলো ভাষা আজ বিদ্যমান ( বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া ইত্যাদি, আবার তামিল IE নয় ), বেশ কয়েকটা আজ নেই কিন্তু জানা আছে ( Vedic Sanskrit, Classical Sanskrit ইত্যাদি ) । এই সবকটার একটা latest common ancestor আছে... এবং সেই ভাষাটাও নিশ্চয়ই PIE র সন্তান ভাষাগুলোর একটা... সেই ভাষাটাকে আমরা বলব ইন্দো-আর্য ( Indo-Aryan, সংক্ষেপে IA, অনেকসময় Old Indic বলেও এই ভাষাটাকে বোঝানো হয় ) ... সেই ভাষাভাষী মানুষদের আমরা বলব আর্য ( বস্তুত সঠিক টার্মটা হল ইন্দো-আর্য, কিন্তু হিটলার এর পরে ইউরোপে চট করে কেউ নিজেদের আর্য বলেনি অনেকদিন, Neo-Nazi রা আবার বলছে যদিও, তাই শুধু আর্য বললে ইন্দো-আর্যই বোঝানো হয় আজকাল )।
    খেয়াল করুন এক্ষেত্রে আর কালচার বা এথনিসিটির কথা আদৌ বলছিনা, তাই 'আর্য' দের এই ডেফিনিশনকে আমরা নাম দিয়েছি 'লিঙ্গুইস্টিক আর্য' ।

    এর পরে আমরা যাব আর একটা সম্ভাব্য উত্তরে, ' কালচারাল আর্য' ।

    [ আপনাদের ভাল লাগলে চলবে, নইলে চলবে না হয়ত ]
    আর্য সমস্যাঃ পর্ব ২
    (পর্ব ১ এর পর )

    কালচারাল আর্যঃ

    দ্বিতীয় সম্ভাব্য উত্তরটা হতে পারে আর্যদের ডিফাইন করা একটা কালচার ( মানে কিছু স্পেসিফিক কালচারাল বৈশিষ্ট্য) দিয়ে। কিন্তু এইটা কি আমরা প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান কালচার দিয়ে করতে পারি? মানে সেই থেকে ডিরাইভড কোন একটা কালচারকে আর্য কালচার বলব, এটা কি পারি?
    এতে দুটো মুশকিল, এক হল প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান কালচার সম্পর্কে আমরা আদৌ জানব কিকরে? ভাষাটার অস্তিত্ব লজিকালি ডিরাইভ করেছি ( এখনো করিনি, আপাতত ধরে নিতে বলেছিলাম, আরও কিছুক্ষণ ধরে থাকুন ), কিন্তু আদৌ সেটা একটাই কালচার এইটাই একটা অ্যাসাম্পশন, তারপর ভাষা যেভাবে যেভাবে ব্রাঞ্চ করেছে, কালচারও সেরকম ভাবে ছড়িয়েছে, ব্রাঞ্চ করেছে, পালটেছে এরকম ভেবে নেওয়ার কোন যুক্তি সত্যিই নেই... ভাষা তার নিজের নিয়মেই সময়ের সাথে সাথে পালটায়, ডায়ালেক্টিকাল ভ্যারিয়েশন বাড়তে থাকে ও বাড়তে বাড়তে নতুন ভাষা জন্ম নেয়, কালচার মোটেও এরকম নয়- দীর্ঘ সময় ধরে তা প্রায় একই থেকে যেতে পারে, আবার নতুন কোন উদ্ভাবন বা আবিষ্কারে দুম করে প্রায় আমূল পালটে যেতে পারে। তাই কালচারের অমন ব্রাঞ্চিং ট্রি ভাবার কোন যুক্তি নেই।
    দ্বিতীয় মুশকিল হল প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাভাষী মানুষরা লিখতে জানত না ( সময়টা যাইই হোক, এটুকু নিশ্চিত যে তখন পৃথিবীতে কেউই লিখতে জানত না )। তাই যদি তাদের একটাই কালচার থেকেও থাকে আর সেই কালচারের নানান এলিমেন্ট তাদের সন্তান ভাষাগুলোয় কথা বলা মানুষদের কালচারে থাকেও, তাহলেও সরাসরি সেটা কি জানার উপায় আমাদের নেই ( একদম নেই তা নয়, কিন্তু লিঙ্গুইস্টিক রিকন্সট্রাকশনকে যদি নির্ভরযোগ্য হতে হয়, তাহলে সেই উপায়টা সেই অনুপাতেই খুব অল্প তথ্য যোগাবে, এইটায় আমরা পরে ফিরে আসব ), তাই আমাদের জানা কোন কালচার দিয়ে শুরু করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই।

    এরকম কালচার কোনগুলো? সেরকম কিছু পেতে একেবারে আজকের দিনে আসতে হলে খুবই সমস্যা, কারণ আজকে এই ভাষাগোষ্ঠীর জ্যান্ত ভাষাগুলোয় কথা বলা মানুষদের মধ্যে কালচারাল ভ্যারিয়েশন বিপুল। ভাগ্যক্রমে আমাদের এইরকম দুটো ( বস্তুত একটা ) কালচার জানা আছে, যদিও অপ্রত্যক্ষভাবে।

    ঋগ্বেদ (RigVeda) আর আভেস্তা(Avesta) এই দুটো টেক্সট আমাদের হাতে আছে। ঋগ্বেদ রচনা বৈদিক সংস্কৃতে, (Vedic Sanskrit) ( বস্তুত তারও খানিক পুরনো ফর্মে, যাকে অনেকে ঋগবৈদিক সংস্কৃত ও বলেন ), আভেস্তা যে ভাষায় রচনা তার নাম আভেস্তান (Avestan), ওল্ড ইরানীয়ান ও বলা হয়। দুটো টেক্সটই দীর্ঘদিন মুখে মুখে সংরক্ষিত হয়েছে, লিখিত আকারে এসেছে অনেক পরে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এদেরকে খুব ভালভাবেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। বস্তুত ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋগ্বেদের যে লিখিত টেক্সট পাওয়া গেছে তাদের নিজেদের মধ্যে মিল অবাক করার মত। আসলে ছন্দ থাকার কারণে মনে রাখার সুবিধে আর পবিত্র টেক্সট হওয়ার জন্যে খুব যত্ন নিয়ে নিখুঁতভাবেই এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়েছে। প্রসঙ্গত রামায়ণ ও মহাভারত, এরাও যদিও পবিত্র টেক্সট, কিন্তু এদের ট্রান্সমিশনের পদ্ধতি ছিল চারণকবি ট্র্যাডিশন, যা গ্রীক ইলিয়ড-ওডিসির ক্ষেত্রেও আমরা দেখি... যার ফলে সারা ভারতীয় উপমহাদেশে রামায়ণ ও মহাভারতের দুয়েরই বহু বহু আলাদা সংস্করণ পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে থেকে কোনটায় কতটা মূল টেক্সট তা বার করা বেশ কঠিন ব্যাপার, কিন্তু বেদ এর সব সংস্করণ প্রায় হুবহু এক। এটা আরোই অবাক করার মত এইজন্যেই যে বেদ যখন শেষত লিখিত হয়েছে তার বহু বহু আগে বৈদিক সংস্কৃত ভাষা হিসেবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আভেস্তার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অ্যাাকিউরেসি সামান্য কম হলেও কতকটা তাইই। আবার ঋগ্বেদের ভাষা আর আভেস্তান এতই কাছাকাছি যে দুটো একই ভাষার সামান্য আলাদা ডায়ালেক্ট বলে মনে হয়। তা এই দুটো টেক্সট থেকে যারা এই টেক্সট রচনা করেছে তাদের কালচার সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য বার করা সম্ভব। যদিও তাতে মুশকিল কম নয়, কারণ দুটো টেক্সট এর কোনটাই আদৌ সচেতনভাবে ইতিহাস লেখার জন্য লেখা নয়, এমনকি কোন ন্যারেটিভ ও নেই, কিছু গল্প-ঘটনা বা আদৌ কোন কিছুই বলতে চাওয়া হচ্ছে এমন নয়, শুধুই ছন্ডোবদ্ধ কবিতার কম্পাইলেশন, যেগুলো রিচুয়ালিস্টিকালি গাওয়া হত, এবং ভাষাটাও মৃত, তাই এ থেকে অর্থ বার করা কঠিনই। সেই চর্চার পোশাকি নাম ফিলোলজি।

    তা সে যাই হোক, ফিলোলজিস্টরা এই টেক্সট দুটো থেকে এই মানুষগুলোর ধর্মবিশ্বাস-জীবনযাপন-সমাজব্যবস্থা, অনেকক্ষেত্রে আশেপাশের ভূগোল, এইসবের একটা ছবি আমাদের দিতে পারেন। সেই কালচার যাদের মধ্যে ছিল বা যারা মেনে চলত তাদেরকেও আমরা আর্য বলতে পারি... তাদের ভাষা, অন্তত বেদ যারা রচনা করেছিল তাদের ভাষা বৈদিক সংস্কৃত ছিল বলাই বাহুল্য,কিন্তু আবারো জনগোষ্ঠীটাকে আমরা ডিফাইন করছি এক্ষেত্রে কালচার দিয়েই শুধু, তাই এদেরকে বলব আমরা কালচারাল আর্য। খেয়াল করুন এই একই কালচার নিয়ে যদি আরও পুরনো জনগোষ্ঠী থেকে থাকে, যাদের ভাষা হয়ত আরও পুরনো কিছু, বৈদিক সংস্কৃত নয়, তারাও এই ডেফিনিশনে আর্য। এইরকম কোন ডেফিনিশন যে আদৌ কাজের, সেটার জন্য এই কালচারটাকে উপমহাদেশে নতুন কিছু হতে হবে, অর্থাৎ এমন কিছু থাকতে হবে যা উপমহাদেশে এর আগে দেখা যায়নি ( খেয়াল করুন এর মানে কিন্তু কোথাও এইটা ইমপ্লাই করা হচ্ছে না যে এটা উপমহাদেশের বাইরে থেকে আসা কিছুই হতে হবে, চাষবাস প্রথম যেখানে আবিষ্কার হয়, সেখানেও কৃষিকাজ তার আগে ছিল না )। আমরা পরে দেখব যে ঋগ্বেদে যে কালচারের ছবি পাচ্ছি, তা উপমহাদেশের আর্কিওলজিকাল রেকর্ডে একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকেই আমরা পাচ্ছি, যা তার আগেরগুলোর থেকে বেশ আলাদা, আবার তাও সর্বত্র একই সাথে নয়, বরং প্রথম আবির্ভাবের পর তা ধীরে ধীরে উপমহাদেশের উত্তরপশ্চিম ক্রমশ পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণে ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ আলাদা কালচার হিসেবে এটাকে ট্রেস করা সম্ভব।

    জেনেটিক আর্যঃ
    লিখলাম বটে জেনেটিক, হয়ত লেখা উচিৎ ছিল ফেনোটাইপিক আর্য, কারণ এখন আর একটা যে সম্ভাবনার কথা বলব, সেটায় আমরা আর্য ডিফাইন করতে চাইব কিছু বিশেষ ফেনোটাইপ দিয়ে। সেটা করতে গেলে এদেরকে ফেনোটাইপের হিসেবে বাকিদের থেকে যথেষ্ট আলাদা হতে হবে। গায়ের রঙ, চুলের ও চোখের মণির রঙ, মুখের, খুলির বা শরীরে হাড়ের গঠনের ফারাক ইত্যাদি কিছু না কিছু। এরকম হঠাৎ হতেই বা যাবে কেন? একটা কারণ, এবং বস্তুত একমাত্র যুক্তিগ্রাহ্য কারণ এইটুকুই যে ইউরেশিয়ায় এই ভাষাগোষ্ঠীর ভাষা একদিকে চীনের তারিম অববাহিকা থেকে পশ্চিম ইউরোপের অতলান্তিকের উপকূল অবধি ছড়িয়ে ছিল এই কিছুদিন আগে অবধিও ( তারিম অববাহিকার ভাষাটি, তোখারিয়ান Tocharian অবলুপ্ত, যদিও হিস্টোরিকাল রেকর্ড পাওয়া গেছে, ষষ্ঠ-অস্টম খ্রিষ্টীয় শতাব্দীর ), আর এই বিশাল ভূখণ্ডে আজকের অধিবাসীদের মধ্যে এসবের পার্থক্য প্রচুর। বাকি কারণ আসলে কিছু নেই, সেগুলো বস্তুত রেসিয়াল সুপ্রিম্যাসির প্রেজুডিস, ঔপনিবেশিক প্রভু-ইগো থেকে জন্মানো দম্ভ। তাই সেসব বিস্তারিত লেখার কিছু নেই।

    এখন এই তিন রকম ডেফিনিশনের আর্যদের মধ্যে আমরা কাকে খুঁজছি? এই রেসিয়াল প্রেজুডিসের জন্যই গোটা উনিশ শতক এবং তার সামান্য আগে ও পরে, একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে স্কলারদের বেশিরভাগ অংশ এবং সাধারণ মানুষও এই ধারণা নিয়ে থেকেছে যে তিনটেই ইক্যুইভ্যালেন্ট, কারণ তাদের মাথায় যে ছবিটা ছিল তা হল নীল চোখের, সোনালী চুলের, সাদা চামড়ার ককেশয়েড চেহারার কিছু মানুষ, তারাই এই ভাষা বলত ও এই যাযাবর-পশুপালক কালচার, যাতে তারা আগুন, বৃষ্টি, হাওয়া এইসব প্রাকৃতিক শক্তির পুজো করত... তারাই ইউরেশিয়ার কোন এক জায়গা থেকে ছড়িয়ে পড়ে ও সারা ইউরেশিয়া দখল করে তাদের ভাষা ও কালচার কায়েম করে। সেই ন্যক্ক্বরজনক ধারণা বিদায় নিয়েছে স্কলারদের কন্সেন্সাস থেকে ধীরে ধীরে, কিন্তু ইতিমধ্যে আবারো পলিটিকাল অ্যাজেন্ডা থাকা কিছু লোক ( লোকই লিখলাম কারণ এদের মধ্যে ক্রেডিবল স্কলার বস্তুত নেই ) এই উনিশ শতকের এই রেসিয়াল প্রেজুডিসের কুমিরছানা দেখিয়েই ঠিক উলটো ছবিটা বলতে চায়, যে এই ভাষা বলা লোকগুলো ভারতীয় উপমহাদেশের আদি অধিবাসী ও ভারত থেকে বেরিয়ে তারা সারা ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে ও তাদের ভাষা ও কালচার কায়েম করেছে। খেয়াল করে দেখুন এই দুই মতের প্রচুর মিল, দুটোই ভাবে এই তিনটে ইক্যুইভ্যালেন্ট, দুটোই এমনকি এই তিনটের উত্তর ও প্রায় একই দেয়, এমনকি চামড়ার রঙ অবধি, শুধু চোখ আর চুলের রঙ ছাড়া, ( কারণ ভারতে নীল চোখ সোনালী চুলের ব্রাহ্মণ হ্যারিকেন নিয়ে বেরিয়েও মিলবে না ), দুটো মতই ভাবে সামরিকভাবে বলীয়ান ও কালচারালি 'উন্নত' এক জনগোষ্ঠী সারা ইউরেশিয়া বস্তুত দখল করেছে ভাবে, শুধু 'ইনভেশন' এর গতিপথটা উলটো।

    আমরা এই লেখায় আগের লেখা ওই তিন রকমের আর্যদেরই খুঁজব, আজকের স্কলারশিপ এর পথ ধরে। দেখব যে এই তিন রকমের ডেফিনিশনের উত্তর খুবই আলাদা আসবে এটাই আশা করা স্বাভাবিক, এবং এই তিন ধরণের আর্যদের স্ট্রিক্ট সেন্সে ইন্টারসেকশন হয় নেই নইলে থেকে থাকলেও বেশ ছোট্ট একটা জনসংখ্যা, আর সেই খোঁজার পথে এই দুরকম ন্যক্ক্বরজনক মতের পক্ষের যুক্তিগুলোকে ভাঙতে ভাঙতে যাব।

    সব প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই মেলেনি, কোন জীবন্ত জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে কখনোই মেলেও না, কিন্তু এই ক্লেদাক্ত মতগুলোকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলার পক্ষে আমরা এখনি যথেষ্ট জানি।

    [ চলবে-র আশা বাড়ছে ]
    আর্য সমস্যাঃ পর্ব ৩
    (পর্ব ২ এর পর )

    লিঙ্গুইস্টিক্স: হিস্টোরিকাল লিঙ্গুইস্টিক্স ও কম্পারেটিভ লিঙ্গুইস্টিক্স
    ----------------------------------------------------------------

    এইবারে আমরা ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাগোষ্ঠী ব্যাপারটা কি সেইটা খতিয়ে দেখব, সত্যিই তারা কিভাবে কাছাকাছি, তারা সবাই একটাই ভাষার সন্তান-সন্ততি ভাষা এইটা মনে করারই বা কি যুক্তি, এবং সেই ভাষাটার সম্পর্কে আমরা আদৌ কিছু জানতে পারি কিনা, পারলে কিভাবে পারি সেইসব। তার সঙ্গে এইটাও দেখব যে এই যুক্তিগুলো কতটা জোরালো আর নির্ভরযোগ্য। নির্ভরযোগ্যতার প্রশ্নটা বেশী করেই উঠে আসবে তার কারণ দুটো, একটা হল আজকের যারা আউট অফ ইন্ডিয়া (OIT) থিওরির (?) সমর্থক তাদের বেশিরভাগই হয় লিঙ্গুইস্টিক সাক্ষ্যপ্রমাণকে সিউডো-সায়েন্স বলে নস্যাৎ করতে চান, আর নয়ত আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তাদের মতের স্বপক্ষে 'লিঙ্গুইস্টিক' সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করেন। তাই লিঙ্গুইস্টিক্স যে আর পাঁচটা সায়েন্স এর মতই, যা সঠিকভাবে চর্চা করতে শিখতে লাগে, দুটো ভাষায় দুটো শব্দ খানিক একরকম দেখতে লাগলেই যে তারা সম্পর্কিত, এমন বালখিল্য ব্যাপার নয়, সেইটা সম্পর্কে আমাদের নিঃসন্দেহ হয়ে নেওয়া জরুরী, নইলে এগোবার কোন মানে থাকবে না। আর একটা কারণ, এই যে কিছুদিন আগে পর্যন্তও এমনকি অনেক আর্কিওলজিস্টদের মধ্যেই এমন একটা ধারণা ছিল, যে লিঙ্গুইস্টিক্স 'আপন মনের মাধুরী মেশানো' জিনিসই, তা আদৌ ঐতিহাসিক বাস্তবতা সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে এমন নয়।
    আমাদের এই আর্য খোঁজার পথে সবচেয়ে বেশী আলো ফেলবে লিঙ্গুইস্টিক্সই, বিশেষ প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান ব্যাপারটাই একটা লিঙ্গুইস্টিক্স কন্সট্রাক্ট, তাই সে আলোয় যা দেখব তা বাস্তব না মরীচিকা জিগ্যেস করার অধিকার আমাদের একশবার আছে।

    সেইটাই আমরা দেখব এখন, আর তাতে আপাতত সারসংক্ষেপ করব জিম ম্যালোরির বই থেকে(১)।
    আমরা শুরু করব একটা লিস্ট দিয়ে, অনেকগুলো ভাষায়, যেগুলোকে ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা বলা হয়, সেগুলোয় ঈশ্বর বা গড এর প্রতিশব্দগুলো দিয়ে...

    Latin Italian Spanish French Germanic English Dutch Swedish Slavic Russian Polish Czech Greek
    deus dio dio dieu gott god god gud bog bog bog buh theos

    শুধুই ইউরোপের ভাষা দিলাম, এবং এই লিস্টের কারণ এইরকমই লিস্ট থেকে সপ্তদশ শতকে Joseph Scaliger এর মনে হয়েছিল যে ইউরোপীয় ভাষাগুলোর মধ্যে এইরকম একটা গ্রুপিং আছে... আপনাদেরও কি মনে হচ্ছে না যে ল্যাটিন, ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ আর ইতালিয়ান কোনভাবে কাছাকাছি, আবার জার্মান,ইংলিশ,ডাচ, সুইডিশ কাছাকাছি, আর রাশিয়ান, পোলিশ, চেক কাছাকাছি? মনে রাখবেন এখানে আমি একটা শব্দ দিয়ে উদাহরণ দিলাম মাত্র... এইরকম অজস্র শব্দের ক্ষেত্রে এইরকম অত্যাশ্চর্য মিল দেখা যায়। Scaglier ও তাইই ভেবেছিলেন ও বলেছিলেন। কিন্তু কম্পারেটিভ লিঙ্গুইস্টিক্স তখন ভ্রুণাবস্থায় বস্তুত (এইটা নজর করাই সেই ভ্রুণ বলা চলে), যা Scaglier স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি হয়ত যে শুধু যে একই গ্রুপের ভাষাগুলোর মধ্যে নিকট সম্পর্ক আছে তাই নয়, এই আলাদা আলাদা গ্রুপগুলোর মধ্যেও নিকট সম্পর্ক আছে, শুধু সেই সম্পর্ক অল্প একটু কম কাছের, এইমাত্র। এরপর আরও বহু ভাষার গ্রুপের কথা জানা যায় ও যোগ হতে থাকে ( কারণ এই কাজটার পরে লওকে এইরকম মিল খুঁজতে থাকে, বিভিন্ন ভাষায়), তাতে ইউরোপ ছেড়ে এশিয়ার ভাষাও আসতে থাকে।

    বেশী এগোবার আগে অনেকগুলো ভাষায় ( সবকটাই ইন্দো-ইউরোপিয়ান) সংখ্যাগুলোকে দেখা যাক... নিচের ছবিটাও ম্যালোরির বই থেকে (১)


    হয়ত আপনাদের মনে হতে পারে এই মিল নেহাত কাকতালীয়, তাই ইন্দো-ইউরোপিয়ান বলা হয় না এমন কয়েকটা ভাষার সংখ্যাও দেখব, হয়ত তাদেরও এমন মিল আছে... দেখা যাক। আবারো ছবির সূত্র (১)।



    কি মনে হচ্ছে? যদিও প্রশ্ন শুধু শব্দের মিলের নয়, গ্রামাটিকাল স্ট্রাকচারের, শব্দ বা ক্রিয়াপদের রুট এর, কনজুগেশনের ( মানে ওই শব্দরূপ,ধাতুরূপ এর) এবং এরকম আরও অনেক কিছুর... আদৌ এই কনজুগেশন বস্তুটাই এইভাবে একটা ভাষায় থাকা জরুরী নয়, কিন্তু এই সবকটায় আছে। আর তাদের মিল দেখতে চান? ল্যাটিন ও সংস্কৃতে, যারা দুই ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা ঠিকই, কিন্তু কখনোই এই দুই ভাষাভাষীরা পরস্পরের কাছাকাছি ছিল বলে আদৌ জানা নেই, তাইতে আগুন আর তার বিভিন্ন রূপ:



    এগুলো নিশ্চয়ই একটা ব্যাখ্যা দাবী করে, নেহাত কাকতালীয় হওয়া বস্তুত অসম্ভব। সেইটাই ওই ব্রাঞ্চিং ট্রি ভাবার যুক্তি। যুক্তিটা আর একবার ঈশ্বরের প্রতিশব্দগুলোয় ফিরে গিয়ে ঝালিয়ে নি। একই গ্রুপের ভাষার মিল খুবই স্পষ্ট, কিন্তু দুটো আলাদা গ্রুপের? সেখানে তো বিশেষ মিল নেই, তাহলে কেন বলছি তারাও সম্পর্কিত? আপনি বলতেই পারেন যে এক একটা গ্রুপ একটা প্রাচীন ভাষা থেকে এসেছে মানলাম, কিন্তু সেই প্রাচীন ভাষাগুলো আরও প্রাচীন আরও একটা ভাষার সন্তানসন্ততি ভাবছি কেন? এবং আগেই বললাম, Scaliger ই এমনটা ভাবেন নি মোটেও। আচ্ছা আপাতত যুক্তির খাতিরে ধরুন যদি তাইই হয়ে থাকে, তাহলে আমরা কি এক্সপেক্ট করতে পারি? ধ্বনিগুলো ধরে ভাবি আর আপাতত শুধু প্রথম ধ্বনিটা নিয়ে ভাবব। সেই 'দিদিমা' ভাষাটার এই শব্দটার প্রথম ধ্বনি একটা থাকতে হবে, সেটা কি আমরা জানি না, কিন্তু কিছু একটা তো বটেই। এইবারে সেই ধ্বনিটা ল্যাটিন গ্রুপ এ d হয়েছে, জার্মানিক গ্রুপে g হয়েছে, স্লাভিক গ্রুপে b হয়েছে আর গ্রীক এর গ্রুপে th ( ইংরাজিতে দুটো হলেও গ্রীকে এটা একটাই, আমাদের ত্রিকোণমিতির থীটা) হয়েছে। এইবারে যদি আরও বহু বহু শব্দে দেখি যে যেখানে ল্যাটিন গ্রুপ এ d, ঠিক সেখানেই জার্মানিক গ্রুপে g, স্লাভিক গ্রুপে b আর গ্রীক গ্রুপে th, তাহলে নিশ্চয়ই সেইটা দিদিমা ভাষা একটা ছিল মনে করার পক্ষে বেশ জোরালো যুক্তি? আরও একটা বিষয়ও জরুরী, খেয়াল রাখবেন যে এক্যুয়েশনটা এইটা নয় যে ল্যাটিন d মানেই জার্মানে g, সেইটা কিন্তু নাই হতে পারে, কারণ দিদিমা ভাষাটার একটা ধ্বনিই ল্যাটিন এ d হয় তা হয়ত নয়, কিন্তু দিদিমা ভাষার ওই বিশেষ ধ্বনিটা যেখানে যেখানে থাকবে, সেই সমস্ত শব্দের ক্ষেত্রে ল্যাটিন গ্রুপ এ d, জার্মানিক গ্রুপে g, স্লাভিক গ্রুপে b আর গ্রীক গ্রুপে th দেখতে পাওয়া উচিৎ। ঠিক সেইটাই দেখতে পাই, আর উদাহরণ বাড়াব না, কিন্তু একদম কাঁটায় কাঁটায় মিলিয়ে ঠিক এইরকমই হয়, আর তাও একটা-দুটো ধ্বনির ক্ষেত্রে নয়, সাউন্ড বাই সাউন্ড প্রায় সব সাউন্ড-এ। খুব সামান্য ব্যতিক্রম আছে, সেগুলোও কেন এমন হয়েছে সেগুলোরও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা আছে, এমনকি কতগুলো ভাষার ক্ষেত্রে সেই ব্যতিক্রমী ব্যাপার ঘটেছে দেখে এমনকি এইটাও বলা সম্ভব যে সেই শব্দটার বংশপঞ্জির কোন প্রজন্মে ব্যতিক্রমটা এসেছে, মা না দিদিমা না বুড়ো-দিদিমা!

    এইটাকে লিঙ্গুইস্টিক্স এ বলে ল অফ সাউন্ড করেস্পন্ডেন্স, একদম এক্যুয়েশনের মত। আজকের যেকোন দুটো ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা নিন, আপনি যদি ব্রাঞ্চিং ট্রি তে তাদের দুজনের মধ্যে পথটা জানেন আর প্রত্যেকটা ধাপে চেঞ্জ এর ল-গুলো জানেন, তাহলে যেকোন একটা ভাষার একটা শব্দ জানলে অন্য ভাষায় সেই শব্দের সম্পর্কিত শব্দটা ( এদের বলে কগনেট cognate, অর্থাৎ dios আর gott পরস্পরের কগনেট) বলে দিতে পারবেন। এখানে একটু মিথ্যে বলা হল, সবসময় পারবেন না, যদি যে শব্দটা বেছেছেন সেটার ইন্দো-ইউরোপিয় etymology থাকে আর অন্যটায় তার কগনেট আদৌ থেকে থাকে তবেই পারবেন। কিন্তু সেইটাই স্বাভাবিক, কারণ কালের নিয়মে ভাষা ডায়ালেক্টিকাল ভ্যারিয়েশন বাড়তে বাড়তে ব্রাঞ্চ আউট করে অন্য ভাষা হয় এইটা ঠিক, কিন্তু ভাষার পাল্টাতে থাকার একমাত্র পথ শুধু ডায়ালেক্টিকাল উচ্চারণের ভ্যারিয়েশন এমন নয়, অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ আসে অনেক সময় ( তাদেরকে বলে লোনওয়ার্ড, আলপিন বাংলায় যেমন পর্তুগীজ অ্যালফিনেট থেকে ধার কিম্বা টেবিল-চেয়ার যেমন স্পষ্টতই ইংলিশ থেকে বাংলায় ধার), অনেক শব্দ অব্যবহারে বাদ পড়ে যায়। বস্তুত এগুলো আদৌ আমাদের দুর্ভাগ্য না, সৌভাগ্যই বরং, কারণ দুই এ মিলে ব্যাপারটা যা দাঁড়ায় তাতে একগুলো খতিয়ে দেখে ভাষাটার ইতিহাস সম্পর্কে বহু কিছু জানা যায়। যেমন ধরুন লোনওয়ার্ড থেকে জানা যায় সে সেই দুই ভাষার ভাষাভাষী মানুষেরা পরস্পরের সংস্পর্শে এসেছিল। যাই হোক, মোদ্দা বিষয়টা হল যে শুধু মিল থাকলে চলবে না আদৌ, বরং আপাতভাবে মিল না থাকলেও চলবে, কিন্তু এই সম্পর্কস্থাপনের ক্ষেত্রে মূল বিষয় হল সেগুলোর এই নিয়মমানা, ছকে বাঁধা ব্যাপারটা, এবং এটা শুধু সাউন্ড এর ক্ষেত্রে নয়, গ্রামাটিকাল স্ট্রাকচার, এমনকি রুট কেমন দেখতে হবে, মানে তাদের গঠন, সিনট্যাক্স-- সবকিছুর ক্ষেত্রেই। সবেতেই এক্যুয়েশন থাকতে হবে, একটা-দুটো ক্ষেত্রে নয়, প্রায় সবক্ষেত্রে, এমনকি ব্যতিক্রমগুলোরও কখন ব্যতিক্রম হবে তারও নিয়ম, ইক্যুয়েশন থাকবে।

    এই পদ্ধতিতেই ভাষাগুলোর গ্রুপিং ও তাদের ব্রাঞ্চিং ট্রি টা বার করা হয়। নিচে মেজর ব্রাঞ্চগুলোর ব্রাঞ্চিং এর একটা ছবি দিলাম, Gamkrelidze-Ivanov এর, ছবিটা (১) থেকে।



    আচ্ছা ব্রাঞ্চিং এর অভিমুখটা কিকরে বোঝা যায়? মানে ল্যাটিন আর ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ যে সম্পর্কিত বুঝলাম, কিন্তু ল্যাটিন ই যে মা আর বাকিরা ছানাপোনা বুঝব কিকরে? এইক্ষেত্রে সেটা নাহয় জানি ইতিহাস থেকে, কিন্তু লিঙ্গুইস্টিক্স সেটা ইন্ডিপেন্ডেন্টলি বার করতে পারলে তবেই না যে ইতিহাস জানিনা সেখানেও ব্যবহার করতে পারব? লিঙ্গুস্টিক্স তা বার করতে পারে ( প্রসঙ্গত যে কটা কেস অন্যভাবে জানি সেই সবকটা একদম ঠিক বার করে)--- কিভাবে পারে? খানিকটা আগেই বলেছি... ধরুন আবার ঈশ্বরের প্রতিশব্দগুলোয় উদাহরণ হিসেবে ফেরত গিয়ে বললে, যদি ল্যাটিন -eus থেকে সবসময় ইতালিয়ান ও স্প্যানিশ এ -io হয় আর ফ্রেঞ্চ এ -ieu হয়, অথচ যদি দেখা যায় স্প্যানিশ এর -io র জায়গায় সবসময় ল্যাটিন এ মোটেই -eus আর ইতালিয়ান এ -io আর ফ্রেঞ্চ এ -ieu হয় না, তাহলে স্পষ্টই বলা যায় যে স্প্যানিশ মা এবং বাকিরা ছানাপোনা, এই এক্যুয়েশনটা ঠিক নয়। কিন্তু এ ছাড়াও আরও একটা ব্যাপার আছে, যা দিয়ে শুধু মা-মেয়েই নয়, দিদি-বোন ও বলা যায়, মানে দুটো ভাষার মধ্যে কে বড়, অর্থাৎ পুরনো বলা যায়। কিভাবে? পরিবর্তনগুলোকে দেখে, কারণ পরিবর্তন সবসময় হয় উচ্চারণ করা শক্ত এমন কিছু থেকে উচ্চারণ করা সোজা এমন দিকে... উল্টোটা কখনো হয় না। সেটার কারণ খুব সহজবোধ্য, এমনকি জ্যান্ত ভাষার পরিবর্তনও এইরকমই। তাই দুটো ভাষার মধ্যে যে বেশী 'ইভল্ভড' সে বয়সে ছোট। তাতে উচ্চারণের সুবিধার্থে করা 'ইনোভেশন' বেশী। একই কথা গ্রামারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য খানিকটা, সংস্কৃত গ্রামার আর বাংলা গ্রামার ভাবলেই বোঝা যাবে।

    পরের পর্বে আমরা দেখব যে লিঙ্গুইস্টিক্স রিকন্সট্রাকশন কিভাবে করে, অর্থাৎ কিভাবে হারিয়ে যাওয়া পুরনো ভাষাকে সেই ভাষার আজকের সন্তান-সন্ততির মধ্যে রেখে যাওয়া ছাপ থেকে উদ্ধার করা হয়।

    [ চলবেই, গাছে যখন তুলেছেন মই কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখালেও এখুনি নামব না ]

    ----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
    ১] Mallory, J. P. "In search of the Indo-European: Language, Archaelogy and Myth", Thames and Hudson, 1991


    আর্য সমস্যাঃ পর্ব ৪
    (পর্ব ৩ এর পর)

    লিঙ্গুইস্টিক রিকন্সট্রাকশন
    ---------------------------------------

    এইবারে আমরা দেখব যে কিভাবে ছানাপোনা ভাষাগুলোর শব্দগুলো থেকে একটা হারিয়ে যাওয়া ভাষা রিকন্সট্রাক্ট করা হয়। সেই পদ্ধতিটা কতদূর নির্ভরযোগ্য সেটাও বুঝে নিতে চাইব। উদাহরণ হিসেবে আমরা নেব ১০০ সংখ্যাটার শব্দগুলো, দেখব এই থেকে PIE র ১০০ র জন্য শব্দটা বার করা যায় কিনা।

    ফোনেটিক রিকন্সট্রাকশন (phonetic reconstruction)
    -----------------------------------------------------------
    এই অংশটায় আমরা সারসংক্ষেপ করব (২) থেকে।
    আমরা সুবিধের জন্য চারটে ব্রাঞ্চের শব্দ দিয়ে শুরু করব, ইটালিক ব্রাঞ্চের ল্যাটিন এ শব্দটা centum (উচ্চারণটা কেন্টাম), বাল্টিক ব্রাঞ্চে লিথুয়ানিয়ান এ s̆imtas ( প্রথম সাউন্ডটার উচ্চারণ শ এর মত), জার্মানিক ব্রাঞ্চের গথিক এ hunda ( যা ওল্ড ইংলিশে hunda হয়ে আজকের hundred এ পৌঁছেছে ) আর ইন্দো-ইরানিয়ান ব্রাঞ্চে আভেস্তান এ satɘm ( প্রথম ধ্বনিটা স, কিন্তু বৈদিক ও ক্লাসিকাল সংস্কৃতে শতম, মানে প্রথম ধ্বনি শ) । ল্যাটিন এর কেন্টাম এর ক ধ্বনিটা ব্যাখ্যা করতে গেলে PIE তে ক ধ্বনিটাই থাকতে হবে, কারণ বাল্টিক আর ইন্দো-ইরানিয়ান এর স বা শ ধ্বনিটা প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানের ক থেকে আসতে পারে, কিন্তু উল্টোটা হতে পারে না, কারণ ক একটা hard sound, স বা শ হচ্ছে soft sound। ভাওয়েল সাউন্ডের আগের হার্ড সাউন্ড সফট সাউন্ড হলে উচ্চারণের সুবিধে ( নিজেরা চেষ্টা করে দেখলেই বুঝবেন), তাই ক পরবর্তীকালে স বা শ হতে পারে, কিন্তু উল্টোটা নয়। আবার প্রথম হার্ড কন্সোন্যান্ট এর palatalization আর sibilation ( মানে ক এর জায়গার স টার শ হওয়া ) এটা লিথুয়ানিয়ান আর ওল্ড ইন্ডিক এ এক্সপেক্টেড, কারণ এই দুটো ভাষায় এই চেঞ্জটা সর্বত্র। কিন্তু hund এর কি হল? এই জিনিসটার পোশাকি নাম গ্রিমস ল (Grimm's law), শুধু k নয়, আরও ৮খানা কন্সোন্যান্ট সাউন্ড এর ক্ষেত্রেই প্রোটো-জার্মানিক এ কন্সোন্যান্টটা পালটে যায় । যেমন ল্যাটিন caput ( মানে মাথা, head ) > ওল্ড ইংলিশ hafud ( যা থেকে head আসবে পরে আজকের ইংলিশ এ), আবার প ও ফ হয়ে যায়, যেমন ল্যাটিন pater ( মানে বাবা, পিতা র সাথে সম্পর্কটা খেয়াল করুন) > ওল্ড ইংলিশ fater ( আজকের ইংলিশ এ father)। আবারো বলি, এই চেঞ্জগুলো একটা-দুটো শব্দের ক্ষেত্রে নয়, গোটা ভোক্যাবুলারিতে সবকটা এমন সিচুয়েশনে হতে হবে কিন্তু, তবেই চলবে। অর্থাৎ প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান এ প্রথম ধ্বনিটা ছিল k, ক । এইভাবেই একটার পর একটা সাউন্ড ধরে ধরে রিকন্সট্রাকশন করা হয়। আমি আর এগবো না এই লিঙ্গুইস্টিক কচকচিতে, উৎসাহীরা (২) এর দ্বিতীয় চ্যাপ্টার দেখতে পারেন, যেখানে এইটারই আরও দুটো সাউন্ড এর রিকন্সট্রাকশন বোঝানো আছে, মানে *kˈm̩- অবধি ( আগে * মানে রিকন্সট্রাক্টেড ফর্ম), পুরো শব্দটা *kˈm̩tom

    তা এইভাবে রিকন্সট্রাকশন করে করে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান শব্দগুলো কি আমরা জানতে পারি। এরকম কত শব্দ রিকন্সট্রাক্ট করা গেছে? হাজার হাজার। বস্তুত PIE শব্দের ডিকশনারি বানানো হয়েছে। একটা জিনিস এখানে খেয়াল করে দেখার, যে যদি কোন শব্দের রিকন্সট্রাকশন নিয়ে সন্দেহ থাকে, তাহলে রিকন্সট্রাকশন নেই বলে ধরা হয়, এমন বহু উদাহরণ আছে যেখানে লিঙ্গুইস্টরা মনে করেন দুটো শব্দ রিলেটেড, রিকন্সট্রাক্টেড শব্দটার জন্য ক্যান্ডিডেট ও আছে, কিন্তু একটাই নিশ্চিত করে বলা এখনো অবধি যাচ্ছে না বলে রিকন্সট্রাক্টেড শব্দ নেই। অর্থাৎ, এই প্রসেসটা বেশ খানিকটা কনজারভেটিভ, যাতে উদ্দেশ্য হচ্ছে কয়েকটা শব্দ কম রিকন্সট্রাক্ট করতে পারি ক্ষতি নেই, কিন্তু যেকটা পারি সেগুলো যেন নির্ভরযোগ্য হয়।

    ঠিক কতদূর নির্ভরযোগ্য? লিঙ্গুইস্টরা ফ্রেঞ্চ,ইতালিয়ান ও স্প্যানিশ এর মা ভাষাটাকে রিকন্সট্র্যাক্ট করে ( ল্যাটিন সম্পর্কে কোন তথ্য কোথাও ব্যবহার না করে ) সেইটা ল্যাটিন এর সাথে মিলিয়ে দেখেছেন,যা মিল তাতে ফিজিসিস্টরাও খুশি হবেন।
    আবার বহু প্রোটো-জার্মানিক, প্রোটো-স্লাভিক রিকন্সট্রাক্টেড শব্দ, যা একসময় রিকন্সট্রাকশন ছিল শুধু, পরবর্তিকালে আর্কিওলজিস্টদের খুঁজে পাওয়া ডকুমেন্ট এ লেখা অবস্থায় পাওয়া গেছে, বহুক্ষেত্রে রিকন্সট্রাকশনের কয়েক দশক পরে ডকুমেন্টগুলো আবিষ্কার হয়েছে।
    আর শেষ উদাহরণটা ব্যক্তিগতভাবে আমার ম্যাজিক মনে হয়, যে ম্যাজিক একটা সায়েন্সই দেখাতে পারে শুধু। আগেই লিখেছি যে ব্যতিক্রম যদি আদৌ থাকে সেগুলোরও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা ও নিয়ম চাই, এইরকম কিছু সাউন্ড চেঞ্জের ক্ষেত্রে কিছু গোলমাল ব্যাখ্যা করার জন্য ১৮৭৯ তে সসুর ( Saussure) Laryngeal theory প্রপোজ করেন। কি এই থিওরি? তিনি বলেছিলেন যে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান এ কিছু ল্যারিঞ্জিয়াল সাউন্ড ছিল, যেগুলো পরবর্তিকালের ভাষাগুলোয় আর লেখাও হয় না, উচ্চারণ ও হয় না, কিন্তু PIE sound পালটে কি হবে সেইটাকে অ্যাফেক্ট করে। মানে কোন একটা প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান এর ধ্বনি তার সন্তান ভাষাগুলোয় যা হওয়ার কথা, সেইটা হচ্ছে না মানে ( বা কারণ) আসল PIE শব্দটায় ওই ধ্বনিটার পরে একটা ল্যারিঞ্জিয়াল ধ্বনি ছিল, এইভাবে ওই গোলমালগুলো ব্যাখ্যা করেন উনি। এইটা অবশ্যই নেহাত একটা কনজেকচার হিসেবেই থেকে যায়। এরপর উনিশ শতকের প্রথমে হিটাইট দের শিলালিপি আবিষ্কার হয়, তাতে কিছু অদ্ভুত অক্ষর খুঁজে পাওয়া যায়, যে অক্ষরগুলোর উচ্চারণ কি, অক্ষরগুলো কি কিছুই বেশ কিছুদিন বোঝা যায়নি। তারপর অবশেষে Jerzy Kurylowicz ১৯৩৫ এ দেখান যে ওই অক্ষরগুলো এক্স্যাক্টলি সসুরের কনজেকচারড ল্যারিঙ্গিয়ালগুলোর জায়গায় আছে।[*] একই রকমভাবে PIE তে labiovelar *kʷ- ধ্বনির অস্তিত্ব প্রেডিক্ট করা হয়েছিল, পরে লিনিয়ার বি (Linear B) লিপিতে লেখা শিলালিপি ক্রীট দ্বিপে খুঁজে পাওয়া যাওয়ার পর সেইটাকে লিখিত অবস্থায় পাওয়া যায়।

    যাই হোক, তাহলে এই রিকন্সট্রাকশনদের ওপরে আমরা ভরসা করতে পারি, কিন্তু এই ভরসার একটা দাম আমাদের দিতে হয়েছে। ভাষা নিজেও, ভাষার ভোক্যাবুলারি দিয়ে সেই ভাষায় কথা বলা মানুষগুলো সম্পর্কে তথ্য যোগায়, যেমন পরিবার সংক্রান্ত শব্দগুলো থেকে বুঝতে পারতে পারি তাদের পরিবারের স্ট্রাকচার কেমন ছিল, বা যদি তাদের ভাষায় ধান, গম এর প্রতিশব্দ থাকে তাহলে তারা এই জিনিসগুলো কি সেটা জানত, যেমন চাকার প্রতিশব্দ থাকার অর্থ চাকা বস্তুটা জানত, এইরকমভাবে।
    কিন্তু এত সাবধানী রিকন্সট্রাকশনের অসুবিধে হল এই যে বহু শব্দ আমরা সেফ রিকন্সট্রাকশন নেই বলে বাদ দিয়ে দিয়েছি, তাই আসল ভাষাটা কেমন ছিল সে সম্পর্কে অনেক তথ্য হারিয়ে যাবে। যেমন রিকন্সট্রাক্টেড প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান এ দরজার জন্য শব্দ আছে, কিন্তু দেওয়ালের জন্য নেই, বৃষ্টির জন্য শব্দ আছে, কিন্তু নদীর জন্য নেই, পায়ের পাতার জন্য শব্দ আছে, পা এর জন্য নেই। একটু পরেই আমরা যাব এই রিকন্সট্রাক্টেড ভাষা থেকে তথ্য বার করে আনার কাজে, তখন এইটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আর নেগেটিভ কনক্লুশনের ব্যাপারে সাবধানী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, absence of evidence is not evidence of absence।

    তার আগে এই ফোনেটিক রিকন্সট্রাকশন দিয়ে আর কি কি বলতে পারা যায়, সেইটা একবার দেখে নেব।

    প্রথমত, এ থেকে ব্রাঞ্চিং ট্রি টা বলতে পারি, খুব নিখুঁতভাবে নয়, এক্স্যাক্ট ডিটেইলস, একটা-দুটো ভাষার জায়গা ঠিক কোন ব্রাঞ্চে হওয়া উচিৎ তাই নিয়ে এখনো বিতর্ক (স্বাস্থ্যকর) রয়েছে, কিন্তু
    এইরকম ট্রি ভাবার যুক্তি কিম্বা ট্রি এর বড় বড় ডালপালাগুলো নিয়ে খুব একটা কোন সন্দেহ নেই, আগে দেওয়া Gamkrelidze-Ivanov এর ট্রিটা ওইরকমই একটা, শুধু বড় ডালপালার ট্রি। যদিও সেই ট্রী-টাই সবচেয়ে নতুন ট্রি এরকম নয়, তাতে নানান সংশোধন করা হয়েছে।

    দ্বিতীয়ত, ব্রাঞ্চিং নোডগুলোর রিলেটিভ ক্রনোলজি--- এক একটা ব্রাঞ্চ ধরে ধরে সেই ব্রাঞ্চ থেকে বেরনো ডালপালাগুলোর কোনটা আগে বেরিয়েছে, কোনটা পরে। খেয়াল রাখবেন যে এভাবে দুটো আলাদা ব্রাঞ্চের স্প্লিটিং এর রিলেটিভ ক্রনোলজি বার করতে পারা যায় না, মানে ধরুন ইটালো-কেল্টিক PIE থেকে আগে বেরিয়েছে, ইন্দো-ইরানিয়ান পরে বেরিয়েছে এটা বলা যায়, আবার ইটালো-কেল্টিক প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান থেকে বেরিয়ে আসার পরে ভাগ হয়ে ইটালিক আর কেল্টিক হয়েছে বলতে পারি, ইন্দো-ইরানিয়ান PIE থেকে বেরিয়ে আসার পর ওল্ড ইন্ডিক আর ওল্ড ইরানীয়ান এ ভাগ হয়েছে বলতে পারি, কিন্তু ইটালো-কেল্টিক ভাগ হয়ে ইটালিক আর কেল্টিক হওয়াটা আগে হয়েছে না ইন্দো-ইরানিয়ান ভাগ হয়ে ওল্ড ইন্ডিক আর ওল্ড ইরানীয়ান হওয়াটা আগে হয়েছে, এইটা শুধু লিঙ্গুইস্টিক্স দিয়ে বলা যায়না, কারণ এই দুটো আলাদা আলাদা ব্রাঞ্চের স্প্লিটিং ইভেন্ট।[**]
    আর একটা বিষয়, লিঙ্গুইস্টিক্স শুধু রিলেটিভ ক্রনোলজিই বলতে পারে, মানে কোনটা আগে, কোনটা পরে, অ্যাবসল্যুট ক্রনোলজি, মানে ঠিক কখন, সেইটা বলতে পারে না। তার জন্যে আর্কিওলজির সাহায্য চাই, তাই সেটায় আমরা পরে আসব। আপাতত আর একটা ট্রি দিলাম নিচে, (২) থেকে, Ringe-Warnow-Taylor (2002) এর ট্রি। এতে অবশ্য ডেট ও আছে, কিন্তু আপাতত সেইটা ইগনোর করে শুধু রিলেটিভ ক্রনোলজিটা দেখুন।



    Gamkrelidze-Ivanov থেকে কিছু তফাত আছে, যেমন তোখারো-ইটালো-কেল্টিক বলে কিছু ছিল বলে ভাবা হয় না আর, তোখারিয়ান আগে বেরিয়ে গেছিল এবং তারপর ইটালো-কেল্টিক বেরোয় এইরকমই ভাবা হয়, আর জার্মানিক ঠিক কখন বেরিয়েছিল, সেই নিয়েও বিতর্ক আছে। কিন্তু মোদ্দা বিষয়টা বুঝতে আশা করি অসুবিধে হবে না।

    এই ১০০ র উদাহরণ-টা নেওয়ার আর একটা কারণ আছে । এই যে প্রথম হার্ড সাউন্ড এর প্যালাটালাইজেশন ( ক এর স হওয়া ) এর ভিত্তিতে ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাগোষ্ঠীকে দুটো ভাগে ভাগ করা হয়, কেন্টাম গ্রুপ ও সতেম গ্রুপ ( centum-satem division )। এদের নাম দেওয়া হয়েছিল যথাক্রমে Western IE ও Eastern IE, কারণ তখন যে কটা ভাষার কথা জানা ছিল, তাতে কেন্টাম ভাষারা পশ্চিমে আর পুবে সতেম ভাষারা ছিল। তারপর তোখারিয়ান আবিষ্কার হয়, যা কেন্টাম গ্রুপের ভাষা, অথচ পাওয়া গেল অনেক পুবে, ইস্টার্ন ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাদের দিকে, চীনের তারিম অববাহিকায়। নিচের ছবিতে এই ভাষাগুলোর ব্যপ্তি কেমন ছিল তার একটা ছবি দিলাম, (১) থেকে। এই ছবির অনেক কিছুই জানা, হিস্টোরিকাল বা আর্কিওলজিকাল রেকর্ড থেকে, কিন্তু সবটা নয়, যেমন ইন্দো-ইরানিয়ান এর ওই বিশাল ব্যাপ্তি কনজেকচার বলা চলে, তার স্বপক্ষে যুক্তিতে আমরা পরে আসব। আপাতত ছবিটা শুধু ধারণা পাওয়ার জন্যে, এমনটাই সত্যি এমন কিছু বলার বা ভাবার জন্যে নয়।



    কেন্টাম ভাষাগুলোর আলাদা হয়ে যাওয়ার সময়টা তুলনায় পুরনো হতেই হবে, কারণ ভাষায় কোন ধ্বনি পাল্টাতেও পারে, নাও পারে- কিন্তু আদৌ পালটালে সেটা কখনোই অসুবিধেজনক উচ্চারণের দিকে পাল্টায় না, আগেই বলেছি। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখুন, এই পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম তাতে কিন্তু আউট অফ ইন্ডিয়া থিওরি এখুনি নস্যাৎ করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়, কারণ ইউরোপে কোথাও প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান স্পীকার রা থাকত, সেইখান থেকে এক এক করে ব্রাঞ্চ আউট করেছে এটাও যেমন ঘটে থাকতে পারে, তেমনি উপমহাদেশেই তারা থাকত, বাকি ভাষাগুলো ব্রাঞ্চ আউট করে চলে গেছে, আর থেকে যাওয়া ভাষাটা ইভল্ভ করেছে দুটোই সম্ভব, এখনো অবধি যা যা দেখলাম তাইতে।

    এরপরে আমরা যাব আর এক রকমের রিকন্সট্রাকশনে।

    [ চলবে ]

    --------------------------------------------------------------------------------------------------------------
    [*] আমার নিজের এইটা পড়ে নেপচুনের আবিষ্কারের কথা মনে পড়েছিল। ইউরেনাস এর কক্ষপথ নিউটনের থিওরির প্রেডিকশনের সাথে না মেলায় গোলমালটা ব্যাখ্যা করতে নেপচুনের অস্তিত্ব ও কক্ষপথ প্রেডিক্ট করা হয় ও তারপর নেপচুনকে সেইখানে খুঁজে পাওয়া যায়।

    [**] সেইটাও একসময় বলার চেষ্টা হয়েছিল লিঙ্গুইস্টিক্স দিয়ে, একটা ব্রাঞ্চে পরপর দুটো স্প্লিটিং এর মধ্যে সময়টা এস্টিমেট করার চেষ্টা করে। যুক্তিটা ছিল যে একটা ভাষা সময়ের সাথে সাথে মোটামুটি ইউনিফর্ম রেট এ চেঞ্জ করে, তাই দুটো ভাষার মধ্যে চেঞ্জ এর 'পরিমাণ' দেখে সময়ের তফাত এস্টিমেট করা যাবে। এই থিওরির নাম glottochronology। অল্পদিনেই এটা বাতিল করে দেওয়া হয়, কারণ খুব তাড়াতাড়িই বোঝা গেছিল যে ভাষা আদৌ অমন ইউনিফর্ম রেট এ চেঞ্জ করে না, আর ওই মোট চেঞ্জ এর 'পরিমাণ' মাপারও একটা কোন কিছু থাকবে এর কোন যুক্তি নেই। ভাষা চেঞ্জ হয়, চেঞ্জ দেখাও যায়, কি কি চেঞ্জ হল লিস্টও করা যায়, কিন্তু মোট চেঞ্জকে কোন একটা ভাবে কোয়ান্টিফাই করার কোন অর্থ নেই।

    ১] Mallory, J. P. "In search of the Indo-Europeans: Language, Archaelogy and Myth", Thames and Hudson, 1991
    ২] Anthony, D. W. "The Horse The Wheel and Language: How Bronze-Age Riders from the Eurasian Steppes shaped the modern world", Princeton University Press, 2007


    আর্য সমস্যাঃ পর্ব ৫
    ( পর্ব ৪ এর পর)

    সেম্যান্টিক রিকনস্ট্রাকশন (semantic reconstruction)
    --------------------------------------------------------------------------------

    কম্পারেটিভ ফোনোলজি দিয়ে নাহয় হারিয়ে যাওয়া ভাষার শব্দগুলো, অন্তত তার উচ্চারণ কেমন ছিল সে নাহয় বার করতে পারলাম, কিন্তু ভাষার শব্দগুলো থেকে সেই ভাষাভাষী মানুষগুলোর সম্পর্কে জানতে সেই শব্দগুলোর মানে কি ছিল সেইটাও জানা জরুরী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ভাষায় শব্দের মানেও পালটায়, একই শব্দ অন্য কিছু বোঝাতে ব্যবহৃত হতে থাকে। তাই আজকের সন্তান ভাষাগুলোয় কগনেট দের মানে জানলেই যে হারিয়ে যাওয়া ভাষাটার শব্দটার মানে জানতে পারব তার নিশ্চয়তা কি?

    নিশ্চয়তা বস্তুত সত্যিই কম, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা মোটামুটি কনফিডেন্ট হতে পারি। এই হারানো মানে উদ্ধারের কাজটারই নাম সেম্যান্টিক রিকনস্ট্রাকশন । আমরা খতিয়ে দেখব যে কি কি পরিস্থিতিতে আমাদের এটা করতে পারার আশা আছে। আবারো মূলত (২) অনুসরণ করব।

    প্রথম উদাহরণ নেওয়া যাক *kˈm̩tom কেই। সন্তান শব্দগুলো সবকটাই ১০০ সংখ্যাটাকে বোঝায়। এইটাও কি তাইই বোঝাতো? সাধারণত সংখ্যা, গায়ের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এইসমস্ত কিছুর জন্যে শব্দ বেসিক ভোক্যাবুলারির পার্ট এবং খুবই চেঞ্জ-রেসিস্ট্যান্ট। এগুলো সহজে বদলায় না। তায় কোন সন্তান ভাষাতেই এইটার সন্তান শব্দগুলো আদৌ অন্য কিছু বোঝায় নি, তাই এই শব্দটাও প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান এ ১০০ ই বোঝাতো এটা মনে করা খুব অযৌক্তিক নয়। আরও একটা যুক্তি আছে। এই শব্দটা খুব সম্ভবত *dekˈm̩tom এর সংক্ষিপ্ত রূপ, *dekˈm̩ হচ্ছে ১০ এর শব্দগুলো থেকে ফোনেটিকালি রিকনস্ট্রাক্টেড শব্দটা, অর্থাৎ সেই অর্থে মানেটা দাঁড়ায় দশ সংক্রান্ত কিছু, দশের কোন গুণিতক-- তাই এইটার মানে ১০০ ই ছিল এটা মোটামুটি সেফ।[*] কিন্তু এইটুকুতেই পরিষ্কার যে সেম্যান্টিক রিকনস্ট্রাকশন অনেক জটিল ব্যাপার, কারণ এখানে ফোনেটিক রিকনস্ট্রাকশনের একটা বিশাল সুবিধে নেই এবং থাকতে পারে না। ফোনেটিক রিকনস্ট্রাকশনে রিকনস্ট্রাকশনটা ঠিক কিনা চেক করার অ্যাসিড টেস্ট হচ্ছে যা যা চেঞ্জ ধরে নিতে হচ্ছে সেইগুলো সর্বত্র হচ্ছে কিনা-- ব্যতিক্রম যদি থাকে সেগুলো ও একই রকম ওয়াইডলি অ্যাপ্লিকেবল রুল দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে কিনা। কিন্তু মানে তো প্রতিটা শব্দের আলাদা, তাই মানে পাল্টালেও সেটা অন্য জায়গাতেও একই ভাবে পাল্টাচ্ছে কিনা দেখে নেওয়ার সুযোগ নেই।

    তা সত্ত্বেও আমাদের এই মিলিয়ে নেওয়ার জন্য একটা জিনিস আছে, যার পোশাকি নাম সেম্যান্টিক ফিল্ড (semantic field), মানে একটা শব্দ আর তার মানে শুধু নয়, সেই শব্দের সাথে সম্পর্কিত শব্দার্থগুলো। সেইটা কিভাবে ব্যবহার করা যায় আমরা দেখব এইবার। আবারো, এই অংশটা মূলত (২) থেকে নেওয়া।

    আমরা এবারে উদাহরণ হিসেবে নেব *kʷékʷlos ( বা *kʷékʷlós )। শব্দটার কি মানে ছিল? আমরা শব্দটা পেয়েছি ফোনেটিক রিকনস্ট্রাকশন করে, ৫টা ব্রাঞ্চের ৮ টা ভাষায় থাকা কগনেটগুলো থেকে।
    সেগুলো হচ্ছে : Old Norse:: hvēl (মানে wheel); Old English:: hweohl (মানে wheel); Middle Dutch:: wiel (মানে wheel); Avestan:: c̆axtra (মানে wheel) ; Old Indic::cakrá (মানে wheel, Sun disc, উচ্চারণটা চক্র, বাঙালীর অচেনা লাগার কারণ নেই ); Greek:: kuklos( মানে circle, singular form এ ) আর kukla (মানে wheels, plural form এ ) ; Tocharian A::kukal (মানে wagon); Tocharian B:: kokale (মানে wagon)।

    প্রসঙ্গত ওপরের দুটো জার্মানিক ভাষায়, Old Norse আর Old English এ k সাউন্ড-এর h হয়ে যাওয়াটা খেয়াল করুন ( আবারো গ্রিমস ল), আর ওল্ড ইংলিশ থেকে আজকের ইংলিশ এ w আর h এর জায়গা পাল্টানোটা দেখুন ( উচ্চারণ এ বিশেষ তফাত হয়না তাতে), মিডল ডাচ যদিও জার্মানিক, কিন্তু একটু পরের ভাষা , তাই ওল্ড ডাচ এ প্রথমে থাকার কথা যে h টার, সেইটা w র সাথে জায়গা পাল্টে তারপর h টা উবে গেছে। আর k যে ইন্দো-ইরানিয়ান এ s হয়নি, c অর্থাৎ চ এর সাউন্ড হয়েছে তার কারণ k এর পরের ধ্বনিটা, পুরোটা *kʷ- , যার উচ্চারণ ক্ব-এর মত, তাই পরের ধ্বনিটা ঠিক টিপিকাল ভাওয়েল সাউন্ড নয়।

    যাই হোক, এক্ষেত্রে দেখুন মানে সর্বত্র এক থাকে নি। গ্রীকে প্লুরাল এ অনেকগুলো চাকা বোঝালেও সিঙ্গুলার ফর্মে বৃত্ত বোঝায়, আর তোখারিয়ান এ ও তোখারিয়ান বি তে ওয়াগন, মানে দুদিকে চাকা-ওয়ালা ঘোড়া, গরু, ষাঁড়, গাধা এইরকম কোন জন্তুর টানা গাড়ী বোঝায়। ওয়াগন বোঝাতে তার সবচেয়ে জরুরী পার্ট, অর্থাৎ চাকার জন্য প্রচলিত শব্দ ব্যবহার করার সম্ভাবনা চাকা বোঝাতে ওয়াগনের জন্য শব্দটাকে ব্যবহার করার সম্ভাবনার থেকে বেশী, সেইটা একটা যুক্তি। কিন্তু মূল শব্দটি যে চাকাই বোঝাতো তার জন্যে আরও খানিকটা জোরালো যুক্তি আমরা পাব যদি এই চাকা, গাড়ি সংক্রান্ত গোটা সেম্যান্টিক ফিল্ডটাকে দেখি। নিচে ছবিতে সেগুলোই দেওয়া আছে, (২) থেকে নেওয়া।



    পুরো ছবিটার বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাব না, এটা চাকার জন্য শব্দটা ছাড়াও চাকার জন্য আর একটা শব্দ ( ল্যাটিন এ দুটোর কগনেট মানেই চাকা, যদিও ওল্ড ইন্ডিক এ আগেরটাই চক্র ও দ্বিতীয়টা রথ, প্রসঙ্গত সেই ল্যাটিন রুট রোটা ই আজকের ইংলিশ এর ক্রিয়াপদ to rotate, এর রুট ), অ্যাক্সল, হারনেস পোল ( মানে যে ডাণ্ডাটা দিয়ে গাড়ী টানার প্রাণীটাকে গাড়ির সাথে জোড়া থাকে ) আর চড়া ( গাড়িতে, পরবর্তীকালে হয়ত বা ঘোড়ায় চড়া ও, ওল্ড ইন্ডিক এ বহতি, যা বহন করা থেকে শুরু করে বাহন, সবেরই রুট ) বোঝাতে পারে এই শব্দগুলো দেওয়া আছে।

    সেম্যান্টিক রিকনস্ট্রাকশন আদৌ নন-এক্সপার্টদের জন্য নয়, আমি নিজেও অনধিকারী, তাই এই নিয়ে আর গভীরে না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু মূল যুক্তিটা কঠিন নয়। একটা বিচ্ছিন্ন শব্দের মানে কি সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রায়শই ভীষণ শক্ত, কিন্তু যদি যা মানে আন্দাজ করা হচ্ছে তার সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দার্থগুলোর জন্যও শব্দ রিকনস্ট্রাক্ট করতে পারি, অর্থাৎ একটা শব্দের জায়গায় যদি একটা গোটা সেম্যান্টিক ফিল্ড রিকনস্ট্রাক্ট করতে পারি, তাহলে আমাদের রিকনস্ট্রাক্টেড মানেটার ওপরে খানিক নিশ্চিন্তে ভরসা করা যায়, কারণ শব্দের মানে জিনিসটা কোন ভাষাতেই বিচ্ছিন্নভাবে থাকে না। শব্দ মানে পায় বস্তুত অন্যান্য শব্দের মানেগুলোর সাথে আন্তসম্পর্ক দিয়েই।

    কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই সেম্যান্টিক রিকনস্ট্রাকশনে এরকম সেম্যান্টিক ফিল্ড এর সুবিধে আমরা পাব না। যেমন ধরা যাক, কোন একটা বিশেষ গাছের জন্য শব্দ। প্রথমত, এরকম কোন শব্দার্থের জন্য প্রাসঙ্গিক সেম্যান্টিক ফিল্ড আদৌ কোনটা? যদি গাছ জিনিসটাকে প্রাসঙ্গিক সেম্যান্টিক ফিল্ড ধরি, সেটায় কাজের কাজ কিছুই হবে না, দুটোই এক ধরণের গাছ এছাড়া বট আর শাল এর অন্য কোন সম্পর্ক আছে ভেবে বার করা কঠিন, আর কোন একটা ভাষায় এই দুটোর জন্যে শব্দের কোন সম্পর্ক আদৌ থাকতে হবে এমন ও নয়। মূলত লিঙ্গুইস্টিক মেথডের কনক্লুশন নিয়ে সবচেয়ে বিতর্কের জায়গা ঠিক এইটাই। আমরা অত্যন্ত সাবধানী হতে পারি, কিন্তু তাতে আমাদের তথ্য তত কম হবে, আবার তথ্যভাণ্ডার বাড়ানোর মানে বহু ক্ষেত্রেই মানেটা ঠিক কি একেবারে নিশ্চিত নই, তবু যে মানেটা ধরেছি সেটা অবশ্যই একটা সম্ভাবনা, এইটুকুর স্বস্তিমাত্র। কিরকম কঠিন হতে পারে পরিস্থিতি সেইটা বোঝাতে একটা উদাহরণ দি--
    *bhaǵos শব্দটা নিশ্চিত ছিল প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান এ, কিন্তু মানে কি? বিভিন্ন ভাষায় কগনেটগুলো দেখলে জার্মানিক এ (ওল্ড নর্স এ) bok আর ল্যাটিন এ fagus,
    মানে বীচ (beech), আবার স্লাভিক এ (রাশিয়ান এ) buzina বোঝায় এল্ডার (elder), আর অ্যালবানিয়ান এ bunge আর ডোরিক গ্রীক এ phagos এর মানে ওক (oak)! অথচ এই তথ্যগুলো নিশ্চিতভাবে জানতে পারলে আমাদের বহু সমস্যাই সমাধান হয়ে যেত, পরে বিস্তারিত দেখব আমরা।

    লোনওয়ার্ড ( loanword ) ও সাবস্ট্রেট ( substrate )
    --------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
    একটা ভাষা তার গোটা শব্দভাণ্ডার উত্তরাধিকার সূত্রে মা-ভাষাটা থেকে পায় এমন নয়। একটা জ্যান্ত ভাষা বহু ক্ষেত্রে নতুন শব্দ বানিয়ে নেয়, আবার বহু ক্ষেত্রে অন্য ভাষা থেকে শব্দ ধার করে। এই ধার করা শব্দই হচ্ছে লোনওয়ার্ড। আবার একটা ভাষা অন্য ভাষা থেকে সবসময় শুধু শব্দ ধার করে এমন নয়, উচ্চারণের ভঙ্গি থেকে গ্রামারের নিয়ম, অনেক কিছুই ধার করতে পারে ও করে। এর মধ্যে একটা বিশেষ ধরণের 'ধার করা' আমাদের পরের আলোচনায় কাজে লাগবে, তাই সেইটা চট করে দেখে নেব একটু।
    ধরা যাক একটা ভৌগোলিক অঞ্চলে যেখানে একটা ভাষা চালু আছে সেখানে আর একটা নতুন ভাষা এল, সাধারণত যেভাবে এটা হয় সেটা হল নতুন ভাষাটায় কথা বলা কিছু লোক ওই অঞ্চলে মাইগ্রেট করল। প্রথমে অনেকটা সময় দুটো ভাষাই থেকে যাবে, আগেরটা যেমন ছিল তেমন, নতুনটা ডায়াস্পোরিক জনগোষ্ঠীটায়। কিছু প্রজন্ম পরে নতুন ভাষাটা স্থানীয় ভাষাটাকে আস্তে আস্তে রিপ্লেস করে দিতে পারে, যদি কোন কারণ এ নতুন ভাষাটার সামাজিক সম্মান-প্রতিপত্তি বেশী হয়। তখন স্থানীয় অধিবাসীরাও ওই মাইগ্র্যান্টদের ভাষায় কথা বলতে থাকবে, কিন্তু স্থানীয় ভাষাটার নানান প্রভাব, শব্দ নতুন ভাষাটায় মিশে যাবে। এরকম পরিস্থিতিতে স্থানীয় ভাষাটা নতুন ভাষাটায় সাবস্ট্রেট হিসেবে ঢুকে পড়েছে বলা হয়।

    এই লোনওয়ার্ড, সাবস্ট্রেট এগুলো বোঝা যায় কিকরে? বোঝা সবসময় খুব সহজ এমন নয়, তবু এটাইমোলজি (etymology), রুট স্ট্রাকচার এসব দেখে লোনওয়ার্ড আর সাবস্ট্রেট প্রভাবের ক্ষেত্রে লোনওয়ার্ড, কম্পারেটিভ গ্রামার (comparative grammar), মর্ফোলজি (morphology), সিনট্যাক্স (syntax), এইসব দেখে সাধারণত কোন একটা কিছু যে ভাষাটায় অন্য কোথাও থেকে আমদানি, সেইটা বোঝা যায়। যদিও কোন ভাষা থেকে আমদানি সেইটা বার করা প্রায়শই অনেক বেশী কঠিন, বহু ক্ষেত্রে যায় ও না, বিশেষ করে যদি যে ভাষা থেকে আমদানি সেইটা হারিয়ে গিয়ে থাকে।

    পরে ঋগ্বেদের ভাষা প্রসঙ্গে এই লোনওয়ার্ড, সাবস্ট্রেট প্রসঙ্গে আমরা আবার ফিরে আসব। আপাতত এইটুকু যে ফিনো-উগ্রিক (Finno-Ugric) নামে আর একটা ভাষাগোষ্ঠী আছে, সামোয়েডিক (Samoyedic) ভাষাগুলো বাদে আজকে টিকে থাকা সবকটা উরালিক (Uralic) ভাষা যার অন্তর্গত। যেমন হাঙ্গারিয়ান (Hungarian), ফিনিশ (Finnish), এস্তোনিয়ান (Estonian) ইত্যাদি। আজকে হাঙ্গারিয়ান (হাঙ্গারিতে প্রচলিত) বাদে বাকি সবকটাই হয় রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে, নয়তো উত্তর ও উত্তর-পুর্ব স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় বলা হয়, ইউরেশিয়ার বেশ উত্তরে। প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান এর মত একই ভাবে সেই ভাষাগোষ্ঠীটার লাস্ট কমন অ্যানসেস্টর ভাষাটা, প্রোটো-ফিনো-উগ্রিক (PFU) এ বেশ ভাল পরিমাণ এ লোনওয়ার্ড আছে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান থেকে। অর্থাৎ, এই দুটো ভাষা যখন জ্যান্ত ছিল, তারা পরস্পরের সংস্পর্শে এসেছিল বেশ কিছুটা সময় ধরে। তাই প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান স্পিকাররা প্রোটো-ফিনো-উগ্রিক স্পিকারদের কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করত, সেই এলাকাটা যেখানেই হয়ে থাকুক না কেন।

    এরপরে আমরা যাব প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান স্পিকারদের খুঁজতে। অন্তত লিঙ্গুইস্টিক আর্যদের জানতে-বুঝতে গেলে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের বুঝতেই হবে। আর প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান স্পিকাররা একটা প্রাগৈতিহাসিক জনগোষ্ঠী, তাই তারা যখন একই ভাষায় কথা বলত, তখন তাদের কালচার ও মোটামুটি একটা সমসত্ত্ব কিছু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই তাদের সেই কালচার কেমন ছিল আর কোথায় ছিল জানতে পারলে আর্য কি বা কারা প্রশ্নটার উত্তর পাওয়া সহজ হতে পারে।

    প্রাগৈতিহাসিক জনগোষ্ঠীর কালচারের চিহ্ন খুঁজে বার করে আর্কিওলজি। কিন্তু আর্কিওলজিস্টরা যা খুঁড়ে বার করেন তা থেকে লিখতে জানত না এমন একটা জনগোষ্ঠী কি ভাষায় কথা বলত জানা যায় না। তাই আর্কিওলজির আলোচনায় যাওয়ার আগে যদি ভাষাটা থেকে আমরা কালচারটা সম্পর্কে কিছু জানতে পারি, তবেই প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান দের চিহ্ন আদৌ খুঁজে পেলেও সেগুলোকে আমরা চিনতে পারব।
    এরপরে আমরা দেখব ভাষা সেই ভাষাভাষী মানুষগুলোর কালচার সম্পর্কে কিভাবে তথ্য যোগায়, আর এক্ষেত্রে কি কি তথ্য আমরা জানতে পারব ভাষাটা থেকে।

    [ চলবে ]
    --------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
    [*] প্রসঙ্গত, এই থেকে এটাও জানা যায় যে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান রাও আমাদেরই মত দশমিক পদ্ধতিতে ভাবত, মানে দশের গুনিতকে। এটাকে আবার 'দশমিক সংখ্যা' আবিষ্কারের সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। রোমান সংখ্যার চিহ্নগুলোকে ভাবুন, ভাবলেই বুঝবেন যে তারাও দশের গুনিতকেই ভাবত, কিন্তু সংখ্যার চিহ্নগুলো দশমিক পদ্ধতিতে লেখা নয়। সেই লেখাটা যে কতবড় আবিষ্কার, সেইটা রোমান সংখ্যার চিহ্নগুলোর জন্যে দুটো সংখ্যাকে গুণ করার একটা নিয়ম বানাবার চেষ্টা করলেই বুঝবেন। যোগবিয়োগের নিয়ম বানাতে গেলেই বুঝবেন, গুণ এরটা সম্ভবত করেই উঠতে পারবেন না, সেই নিয়ম তারপর মনে রাখা ও ব্যবহার করা তো দুরের ব্যাপার।

    ২] Anthony, D. W. "The Horse The Wheel and Language: How Bronze-Age Riders from the Eurasian Steppes shaped the modern world", Princeton University Press, 2007


    আর্য সমস্যাঃ পর্ব ৬
    ( পর্ব ৫ এর পর )

    প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান হোমল্যান্ড : জলবায়ু, ভূগোল, ফ্লোরা ও ফনা ( PIE Homeland: Climate, geography, flora and fauna )
    -------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

    এইবারে আমরা দেখব যে এই রিকনস্ট্রাক্টেড প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাটা থেকে আমরা কি কি দেখতে পাই, সেই ভাষাভাষী মানুষগুলোর চারপাশের পরিবেশটা সম্পর্কে, গাছপালা, জন্তুজানোয়ার, আবহাওয়া, ভূগোল এইসব সম্পর্কে। মূলত ম্যালোরির বই (১) ( খানিকটা (২) ও ) অনুসরণে। আপাতত খুব স্ট্রিঞ্জেন্ট রিকনস্ট্রাকশনের দাবী করব না, কিন্তু মাথায় রাখব সব শব্দ একই রকম সেফ নয়।

    ভূগোলঃঃ

    বিস্তৃত সমতল জায়গা মানে প্লেনস (Plains) (*h₂egras, এই থেকে গথিক এ akrs, যা থেকে ইংলিশ acre, একর, জমির মাপের ইউনিট। এইরকম মানে পালটে যাওয়ার জন্যই সেম্যান্টিক রিকনস্ট্রাকশন এত কঠিন, এইটা যদিও সেফ, কারণ মানে পালটাচ্ছে বেশ পরের দিকে ),

    পাহাড় ( *gʷer-, সংস্কৃত গিরি এই থেকে ),

    নদী (আগেই লিখেছি শব্দটার রিকনস্ট্রাকশন খুব সেফ নয়, কারণ একাধিক ক্যান্ডিডেট , হয় *h₂ekʷeh₂- অথবা *h₂ep- ),

    লেক (*h₂eǵʰero- , কিন্তু ইন্দো-ইরানিয়ান, তোখারিয়ান, আনাতোলিয়ান এ কগনেট নেই, ইউরোপিয়ান ব্রাঞ্চগুলোয় আছে )

    আর
    সমুদ্র ( *mori, প্রচণ্ড গোলমেলে, এইটার মানে সত্যিই সমুদ্র বোঝাতো না জলা জায়গা না লেক, তা কেউই কোনভাবে নিশ্চিত নয়) ।

    আবহাওয়াঃঃ ঠাণ্ডা (kiklós), গরম (kḷtos) , তুষার (snow, *sneygʷʰ-, প্রায় সব ব্রাঞ্চ এ কগনেট আছে )।

    ঋতুঃঃ শীত (*ǵʰey-), গ্রীষ্ম (*sem- ), বসন্ত (*wésr̥)।

    এইবারে যাব ফ্লোরা আর ফনাতে। কিন্তু এখানে একটা বিচিত্র সমস্যা দেখব। বহু শব্দের প্রায় প্রত্যেকটা ইউরোপিয়ান ব্রাঞ্চে কগনেট আছে অথচ এশিয়াটিক ব্রাঞ্চগুলোয় নেই। কারণটাও কঠিন নয়, এইসব গাছ বা জানোয়ার উপমহাদেশে কিম্বা ইরানের মালভূমিতে হয় নেই নইলে দুর্লভ। তাই মূল ভাষায় ছিল, অব্যবহারে হারিয়ে গেছে এইটা ভাবার যুক্তি আছে। এইখানেই আমরা প্রথম একটা যুক্তি দেখব যে PIE Homeland উপমহাদেশের বাইরে হওয়ার স্বপক্ষে। কিন্তু একই ভাবে বলা যেতে পারে না কি যে ইউরোপীয় ব্রাঞ্চগুলোতে শব্দগুলো বানিয়ে নেওয়া হয়েছে, মূল ভাষায় ছিল না? না পারে না। কেন পারে না সেইটা বোঝার জন্যই আমাদের আগের ওই ট্রি-টা কাজ লাগবে। ব্রাঞ্চিংগুলো আবার দেখুন, দেখবেন এমন কোন সময় ছিল না যখন এশিয়াটিক ব্রাঞ্চগুলো সব আলাদা হয়ে গেছে ও বাদবাকি ইউরোপীয় ব্রাঞ্চের ভাষাগুলো একসাথে আছে। তাই শব্দ বানিয়ে নিয়েছে ভাবতে গেলে ভাবতে হয় একাধিক ইউরোপীয় ব্রাঞ্চ আলাদা আলাদাভাবে একই জিনিসকে বোঝাতে পরস্পর সম্পর্কিত শব্দ বানিয়েছে, সবসময়ই আলাদা আলাদা ভাবে একই রুট শব্দ বেছে নিয়েছে, এমনকি বহু ক্ষেত্রে প্রিফিক্স- সাফিক্সগুলো অবধি, যা একদমই অবাস্তব ( একটা বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া, সেইটায় এখুনি আসব )। তাছাড়া শব্দগুলোও বানিয়ে নেওয়া শব্দের মত নয়। এইটার মানে কি? মানেটায় আমরা পড়ে ফিরে আসব, উপমহাদেশের পশুপাখির আলোচনায়। তখন দেখব যে কেন সেই শব্দগুলোই উলটে বানিয়ে নেওয়া শব্দ হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী।

    দেখে নি কি কি গাছ তাদের ভাষায় ছিল।
    birch, willow, elm, ash, oak, beech, juniper, poplar, apple, maple, alder, hazel, nut, linden, hornbeam আর cherry।
    এদের মধ্যে birch ( সংস্কৃত ভুর্জ, bhūrja ) সবেতেই আছে মোটামুটি, বাকিগুলো ইউরোপিয়ান ব্রাঞ্চগুলোয়, যদিও নিশ্চয়তার কম-বেশী আছে। এখান আরও একটা জিনিস খেয়াল করার যে অন্তত একটা শব্দ ( birch এর বাকলটা কাজে লাগত বলেই হয়ত, আর গাছটাও উপমহাদেশে আছে, বাকিগুলোর যে কটা স্বাভাবিকভাবে ছিল সেগুলোয় হিমালয়ের পার্বত্য জঙ্গলে, সমতলভূমিতে নয়, পাঞ্জাবের নদী উপত্যকাতেও নয় ) এদিকেও এসেছে, উইলোর শব্দটার কগনেট আছে, কিন্তু অন্য মানে। সংস্কৃতে শব্দটা বেতস (vetasa), মানে বাঙালীর অপরিচিত নয়, বেত, হয়ত বা কঞ্চিও। এই মানেটা পাল্টানোরও একটা সুন্দর ব্যাখ্যা আছে। উইলোর ডাল দিয়ে ঝুড়ি, চুবড়ি জাতীয় জিনিস ইউরোপে বহুদিন ধরে তৈরি হয়ে আসছে, আর বেত দিয়ে ঠিক সেই কাজটাই উপমহাদেশেও দীর্ঘদিন হয়ে আসছে। তাই একটা মাইগ্র্যান্ট ভাষার পক্ষে, যে গাছটাকে বোঝাতে ব্যবহার হত সেইটা আর না পাওয়া গেলে সেই কাজ এ ওই অঞ্চলে যে গাছটা ব্যবহার হয় সেইটা বোঝাতে ওই শব্দটা ব্যবহার করা খুবই স্বাভাবিক। উইলোর আসল শব্দটা বেতই বোঝাতো আর পরে বাকিরা এর ঠিক উল্টোটা করেছে হতে পারে না? সেটা যে একদম অসম্ভব তা নয়, কারণ সেম্যান্টিক রিকনস্ট্রাকশন, আগেই বলেছি, অত নিশ্চিত জিনিস নয়। কিন্তু অনেকগুলো আলাদা আলাদা জায়গায় যাওয়া মাইগ্র্যান্ট পপুলেশন আলাদা আলাদাভাবে সবাই ই এটা করেছে এবং একটা দলও উইলো গাছটার জন্যে কোন স্থানীয় শব্দ ধার নেয়নি ( বেত আর উইলো, দু ক্ষেত্রেই তাই দিয়ে ঝুড়ি বানানো যায় এই তথ্যটা অনেক আগে থেকে সেই জায়গাগুলোয় জানা, তাই আগের স্থানীয় শব্দ থাকতে বাধ্য দু ক্ষেত্রেই ) এইটার থেকে উপমহাদেশে আসা একটা দল, স্থানীয় শব্দ ধার নেওয়ার বদলে উইলোর শব্দটা ব্যবহার করেছে এটার সম্ভাবনা অনেক বেশী নয় কি?

    কিন্তু এই গাছগুলোর নাম থেকে উপমহাদেশ না হওয়ার যুক্তির বাইরে খুব বেশী লাভ হয়নি। কারণ ইউরেশিয়ার যে অঞ্চলে এখনকার টিকে থাকা ভাষাগুলো ছড়িয়ে তার থেকে খুব সামান্য জায়গাই বাদ গেল এই গাছের লিস্ট দিয়ে। প্রায় গোটা ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়ায়, জঙ্গল থাকলেই, আরও উত্তরে রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় তো বটেই, এই সবকটা গাছই সহজলভ্য। এত গাছের নাম থেকে কি এইটা ভাবা যায় যে তারা যেখানে থাকত তার আশেপাশে অন্তত জঙ্গল ছিল? তাহলে অন্তত ফাঁকা তৃণভূমি, অর্থাৎ ওপেন স্টেপ (open steppes) বাদ দিতে পারতাম। পন্টিক স্টেপ (Pontic Steppe) বাদে ( যার কাছেই ফরেস্ট স্টেপ (forest steppe) ও সাইবেরিয়ার তাইগা (Taiga) বনভূমি ) ওপেন স্টেপের বহু এলাকায় কোন বড় গাছপালা আদৌ নেই। নিচে একটা ছবি দিলাম, উইকিপিডিয়া থেকে।



    'আর্য' রা পশুপালক, যাযাবর উপজাতি এই তথ্য এত বহুল প্রচলিত যে তা প্রায় মিথিকাল স্ট্যাটাস পেয়েছে, আমরা দেখব যে সেটা অনেকাংশে সত্যিও। কিন্তু মজার ব্যাপার দেখুন, লিঙ্গুইস্টিক্স এর তথ্য আমাদের বলছে ইউরেশিয়ার সবচেয়ে বড় খোলা তৃণভূমি, ইউরেশিয়ান ওপেন স্টেপ, পশুচারণের আদর্শ জায়গাকে এদের আদি বাসস্থানের সম্ভাব্য লিস্ট থেকে বাদ দিতে। [*]

    সত্যিই বাদ দিতে পারি কিনা সেটা দেখার আর একটা উপায় বনের প্রাণীদের জন্য শব্দ।
    otter, beaver, wolf, bear, lynx, elk, red deer, hare, hedgehog, mouse এবং খুব সম্ভবত roe deer ও।
    অর্থাৎ নিঃসন্দেহে ওপেন স্টেপ, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্যএশিয়ার নানান মরুভূমি অঞ্চল, এসব বাদ দেওয়া যায়। নদীর জন্য শব্দ ছিল ভাবারও একটা যুক্তি otter ও beaver।
    আবারো, এই শব্দগুলোর অনেকগুলোরই ইন্দো-আর্য এ কগনেট নেই। আবারো wolf, bear, mouse ইত্যাদি যে কটা উপমহাদেশেও পাওয়া যায় সেইগুলোর আছে। বিভার এর টা মজার, কগনেট আছে, সেটা নেউল বা বেজি বোঝায়। এটাকেও উইলো আর বেতস এর মত ভেবে নেওয়া সম্ভব, কারণ বেজি যদিও আদৌ জলের প্রাণী নয়, কিন্তু কিছু প্রজাতির বেজি দেখতে বিভার এর কাছাকাছি। তাই উপমহাদেশে হোমল্যান্ড এর বিরুদ্ধে যুক্তি জোরালোই হত, Witzel (৩) তাই করেওছেন। কিন্তু আমি এইক্ষেত্রে ওনার সাথে একমত হতে পারিনি। কারণটা বোঝাতে Witzel এর যুক্তিটা আগে দি।



    বেশ বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি, বিশেষ শব্দটা বিভার অর্থেই এমনকি ইরানীয়ান এ অবধি ব্যবহার হয়েছে। আর এইরকম যুক্তি একটু আগেই বেতের ক্ষেত্রে লিখেছি। তাহলে আপত্তি কি? আপত্তি আসলে যে শব্দটা বড় বেশী ডেসক্রিপটিভ। শব্দটার একটা অর্থ সবজায়গাতেই থেকেছে ব্রাউন, খয়েরী। যা বিভার এর এবং বেজির, দুইয়েরই গায়ের রঙ। তাই একই শব্দ দুটো আলাদা আলাদা প্রাণীকে বোঝাতে আলাদা আলাদা ব্রাঞ্চে আলাদাভাবে ব্যবহার করার সম্ভাবনা কমের আপত্তিটা আর টেঁকে না এক্ষেত্রে। আগেই লিখেছিলাম, যে এইটা হওয়ার সম্ভাবনা কম, কিন্তু একটা বিশেষ ক্ষেত্র বাদে। সেই বিশেষ ক্ষেত্রটা এইটাই যখন শব্দগুলো বস্তুত বর্ণনামূলক। যুক্তিটা আমার নয়, ম্যালোরি (১) ঠিক এই যুক্তিটাই দিয়েছেন পাখিদের নামের শব্দগুলোর ক্ষেত্রে, আমার নিজের মনে হয়েছে সেই যুক্তিটা এই উদাহরণ এও প্রযোজ্য। তাই Witzel -এর বিভার-এর যুক্তিতে আপত্তি-টা আমারই আপত্তি, এবং নিতান্তই পাঠক হিসেবে আপত্তি, স্কলারলি কন্সেন্সাস বা এক্সপার্টদের মতামত নয়।

    পাখিদের নাম থেকে খুব কিছু জানতে বুঝতে পারার আশা কম এমনিতেও, কারণ ইউরেশিয়ায় ভৌগোলিক অঞ্চলে সীমাবদ্ধ পাখি কমই। তার ওপরে ম্যালোরির যুক্তিটা এই যে বেশিরভাগ পাখির নাম বস্তুত পাখির ডাকটার নকল বস্তুত। যেমন সংস্কৃত kokila-, গ্রীক kokkyx, ল্যাটিন cuculus, লিথুয়ালিয়ান kukuoti, মিডল আইরিশ cuach, ইংলিশ cuckoo ---এ থেকে সম্ভাব্য প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান *kuku, সবই এতই বেশী করে কোকিলের ডাকের মত শুনতে, যে সত্যিই আদি ভাষায় শব্দটা ছিল, নাকি প্রত্যেকটা ভাষা আলাদা আলাদাভাবেই ডাকটা শুনে শব্দগুলো বানিয়েছে এইটা নিশ্চিত করে বলার কোন যুক্তিগ্রাহ্য পথ নেই। একই যুক্তি মুরগী, পেঁচা, মোহনচূড়া আর কাকের ক্ষেত্রেও। কিছু তথ্য অবশ্য এই যুক্তির বাইরে। ঈগল এবং সম্ভবত অন্যান্য বড় শিকারী পাখি, হাঁস, সারস ও রাজহাঁসের জন্য শব্দ ছিল মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই। অর্থাৎ আবারো জলাভূমি অঞ্চল যে কাছাকাছি ছিল সেটা বোঝা যায়।

    অথচ জল বলতেই মাছের কথা মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু মাছেদের জন্য শব্দ শুধু বেশ কম তাইই নয়, সবকটাই রীতিমত বিতর্কিত। সবচেয়ে বেশী চর্চিত অবশ্যই স্যামন মাছের ( Salmon, বৈজ্ঞানিক নাম Salmon Salar) জন্য শব্দ, কারণ মাছটার ভৌগোলিক অঞ্চল বেশ নিখুঁতভাবে চিহ্নিত, উত্তর অতলান্তিকের মাছ। তাই ইউরেশিয়ার সম্ভাব্য জায়গা বলতে বাল্টিক সমুদ্র ও উত্তর সাগরে পড়া নদীগুলো হতে পারে শুধু। দুর্ভাগ্যক্রমে শব্দটা খুব সম্ভবত স্যামন ট্রাউট-কে (Salmon Trout বা Trout বা Brown Trout, বৈজ্ঞানিক নাম Salmo trutta) বোঝাত, যা বহু জায়গায় পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত বৈদিক এ শব্দটার কগনেট টা গালা বোঝাত, আর ক্লাসিকাল সংস্কৃতে লক্ষ, মানে এক লাখ। এ নিয়ে Witzel এর আর্গুমেন্ট নিচে দিলাম, কিন্তু আবারো এরকম নড়বড়ে রিকনস্ট্রাকশনে অতিরিক্ত বিশ্বাস করার খুব কারণ নেই।



    ইল (eel) নিয়েও চর্চা হয়েছে, কারণ ভাবা হয়েছিল ইল পন্টিক-ক্যাস্পিয়ান (Pontic-Caspian) অঞ্চলের নদীতে পাওয়া যায় না। কিন্তু ইল-এর শব্দের মানের রিকনস্ট্রাকশনও নড়বড়ে, আর ওই অঞ্চলেও নদীতে পাওয়া যায় আসলে।

    মৌমাছি আর মধু-র জন্য শব্দ নিশ্চিতভাবে ছিল, বোলতার জন্য শব্দও। উরাল পর্বতের পুবে, সাইবেরিয়ার জঙ্গলে বা কাজাখস্তানের স্টেপস এও বন্য মৌমাছি নেটিভ স্পিসিস নয় [**], তাই মধুর জন্য শব্দটার বহুল ব্যবহার ( শুধু মধু হিসেবেই নয়, মদ হিসেবেও ) এই অঞ্চলটাকেও খারিজ করে দেবে। সব মিলিয়ে ফ্লোরা-ফনা ও জলবায়ুর শব্দগুলো বলছে যে সেগুলো ইউরেশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে, যেখানে লেক বা নদী আছে, খানিক জঙ্গল আছে, বরফ পরার মত শীত ও পড়ে আবার গরম এর শব্দ থাকার মত কিছুটা গরম ও পড়ে, এইরকম জায়গার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ওপেন স্টেপস, মরুভূমি অঞ্চল, সাইবেরিয়ার বনভূমি বা কাজাখস্তানের স্টেপ বাদ দেওয়ার যুক্তি আছে, আবার ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল ( জলপাই, সাইপ্রাস এর মত গাছের জন্য শব্দ নেই ), উপমহাদেশ, ইরানের মালভূমি বাদ দেওয়ারও খানিক যুক্তি আছে ( এই অঞ্চলের প্রাণী বা গাছপালার জন্য শব্দ নেই )। আগেই বলেছি এই শব্দ নেই তাই বাদ এই যুক্তি নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে, তাই আমরা আপাতত সেগুলোর ওপর বেশী জওর দেব না। পরে আমরা দেখব যে এই শব্দ নেই এর যুক্তিগুলো আর একটু বেশী জোরালো করা যায়।

    শেষত, ঘোড়ার জন্য শব্দ অবশ্যই আছে। সেটা বনের প্রাণীতে না লেখার কারণ হল আমাদের জানা সবকটা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাতেই শব্দটা পোষা ঘোড়াই বোঝাত। তবু কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছেন যে তা সত্ত্বেও আদি ভাষায় শব্দটা বুনো ঘোড়াও বুঝিয়ে থাকতে পারে। তাতে নিকট প্রাচ্য, মধ্য প্রাচ্য, ইরানের মালভূমি ও উপমহাদেশ বাদ গেল নিশ্চিন্তে, কারণ এই জায়গাগুলোয় বুনো ঘোড়া আদৌ ছিল না ( খুব বেশী হলে কিছু জায়গায়, যেমন মধ্যপ্রাচ্যের উত্তরে, নেহাত মধ্য এশিয়া থেকে মাঝেমধ্যে চলে আসা ছুটকো ঘোড়ার পাল দেখে থাকতে পারে, সেগুলো সেই প্রাণীটার জন্যে একটা শব্দ তৈরি হয়ে সেটা বহুল প্রচলিত হওয়ার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় )।

    এরপরে আমরা যাব পশুপালন আর চাষবাস, টেকনোলজি সংক্রান্ত শব্দে। এতক্ষণের শব্দগুলো শুধু জায়গা চিহ্নিত করার কাজে লাগার সম্ভাবনা, কিন্তু এই শব্দগুলো সময় ও চিহ্নিত করবে। কারণ চাষবাস ও পশুপালন মোটামুটি ১১,০০০ বছর আগে নিকট প্রাচ্যের লেভান্ত এ শুরু হয় ( কাছাকাছি সময়ে চীনে আর একটা সেন্টার এও শুরু হয়, স্পিসিসগুলো অন্য, যেমন ধান চীনে শুরু হয় চাষ, লেভান্ত এ যব, গম এইরকম ), সেটা আর্কিওলজি থেকে জানি। এমনকি সব প্রাণী, সব ফসলের স্পিসিস একই সময়ে ডোমেস্টিকেটেড হয়নি, সব জায়গায় সবগুলো প্রচলিত ও ছিল না, তাই এ থেকে পাওয়া তথ্য অনেক স্পেসিফিক হবে।

    [চলবে]
    ----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

    [*] আমরা দেখব যে এই অঞ্চল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এই পুরো গল্পে-- কেন্দ্রীয় চরিত্রও বলা চলে এমনকি। কিন্তু উপন্যাস কিম্বা নাটকের মতই এই গল্পেও কেন্দ্রীয় চরিত্র-র এন্ট্রি একটু দেরিতে।

    [**] তথ্যসূত্র (২), কিন্তু Anthony র এই তথ্য আমি ক্রস-ভেরিফাই করিনি। তাই যদি তথ্যটা ভুল হয়, রেফারেন্স জানেন বা পান অতি অবশ্যই আপনারা জানাবেন।

    ১] Mallory, J. P. "In search of the Indo-Europeans: Language, Archaelogy and Myth", Thames and Hudson, 1991
    ২] Anthony, D. W. "The Horse The Wheel and Language: How Bronze-Age Riders from the Eurasian Steppes shaped the modern world", Princeton University Press, 2007
    ৩] Witzl, M. "Autochthonous Aryans? The Evidence from Old Indian and Iranian Texts ", ELECTRONIC JOURNAL OF VEDIC STUDIES (EJVS), Vol. 7 (2001), issue 3 (May 25).


    আর্য সমস্যাঃ পর্ব ৭
    ( পর্ব ৬ এর পর )

    প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান হোমল্যান্ড : ভাষা যা বলে জীবনযাপন সম্পর্কে; ( PIE Homeland: linguistic evidence )
    ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

    ( মূলত (১) ও (২) অনুসরণে )

    পশুপালনঃঃ

    গবাদি পশু সবচেয়ে ব্যাপক। গরু, ষাঁড় ও বলদ, তিনটের জন্য আলাদা আলাদা শব্দ খুব নিশ্চিন্তে রিকনস্ট্রাক্ট করা যায়। মাখনের জন্য শব্দ ছিল, আরও কিছু শব্দ যেগুলো নানারকম দুগ্ধজাত জিনিস বোঝাত, ঠিক কি সেগুলো নিশ্চিত নয় সবসময়, হয়ত বা নানা ধরণের চীজ জাতীয় জিনিস। মাংস, মজ্জা আর গবাদি পশুর পাল বোঝানোর জন্যও শব্দ ছিল। জোয়াল ও লাঙ্গলের জন্য শব্দ, আর সেগুলোর ব্যবহারগুলো থেকে বোঝা যায় যে সম্ভবত ষাঁড় বা বলদে লাঙ্গল টানত। এমনকি ওয়াগন, বা গাড়ীও খুব সম্ভবত প্রথমে ষাঁড়েই টানত। কেল্টিক, ইটালিক ও ইন্দো-ইরানিয়ান ব্রাঞ্চে গবাদি পশু লুঠ করার (cattle raiding) জন্য শব্দ আছে যারা কগনেট, আর সংস্কৃত ও গ্রীক এ কগনেট এক্সপ্রেশন আছে যার অর্থ "একশ গরু বলি"(sacrifice of one hundred cows)।

    দুগ্ধজাত জিনিসের শব্দ অবশ্য ছাগল বা ভেড়া থেকেও হতে পারে। যদিও ছাগল এর রিকনস্ট্রাকশন একটু সমস্যার, যেহেতু অল্প কয়েকটা ভাষায় আছে, তাই মূল শব্দের বহু ক্যান্ডিডেট আছে, এমনকি মূল ভাষায় আদৌ ছিলই নিশ্চিত করে বলা শক্ত। হয়ত ছাগল তুলনামুলকভাবে কম গুরুত্বের ছিল প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের কাছে, সেটা খুবই সম্ভব। কিন্তু তারা প্রাণীটা একেবারে জানত না এটা অসমম্ভব, বিশেষ ভেড়া যেখানে বেশ ভাল করেই জানত। তাই ছাগলের একটা শব্দ থেকে থাকা খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু কোনটা আমরা জানি না।

    ভেড়া প্রাণীটাকে বেশ ভালভাবে জানত এবং পশম সংক্রান্ত ভোক্যাবুলারি বহুল প্রচলিত। মদ্দা ভেড়া, ভেড়ি, ভেড়ার ছানা ও সাধারণভাবে ভেড়া বোঝানোর শব্দ ছিল। পশমের (wool) এর জন্য শব্দ ছিল, ভেড়ার পশম ছাঁটার (shearing of wool) জন্য শব্দ ছিল। আরও একটা শব্দ যা পশমের শব্দটার সাথে সম্পর্কিত কিন্তু সম্ভবত ফেল্ট বোঝাত তারও কগনেট আছে অনেকগুলো ইউরোপীয় ব্রাঞ্চে। বোনা (weaving) বোঝনোর শব্দ ছিল। এটাও আর্কিওলজিকালি খুব জরুরী মার্কার, কারণ বুনো 'ভেড়া' থেকে যা পশম পাওয়া যায় তা বোনার পক্ষে খুব একটা উপযুক্ত না, আজকের পশম-ওয়ালা ভেড়া মানুষের সিলেক্টিভ ব্রিডিং এর ফসল। পোষ মানান সম্ভব এমন গরু, ঘোড়া ও তাইই, বস্তুত সব ডোমেস্টিকেটেড পশুই - কিন্তু সিলেক্টিভ ব্রিডিং এ অপেক্ষাকৃত শান্ত, পোষ মানবে এমন ভ্যারাইটি ডেভেলপ করার থেকে প্রাণীটার ফিজিক্যাল ক্যারেক্টারিস্টিক চেঞ্জ করা বেশী শক্ত, তাই ভেড়া ডোমেস্টিকেটেড হয়েছে সামান্য পরে, উল থেকে কাপড় বোনা ও তাই।

    কুকুর এর জন্য শব্দ আছে এবং শব্দটা মর্ফোলজিকালি বেশ পুরনো। সেটাই স্বাভাবিক কারণ কুকুর সব জায়গাতেই প্রথম ডোমেস্টিকেটেড প্রাণী। সেইজন্যেই এই তথ্যটা খুব কাজের কিছু না।

    শুওরের জন্য শব্দ ছিল ( PIE *su-, ল্যাটিন sus, জার্মানিক এ আজকের ইংলিশ এ swine, ইন্ডিক এ su- , যা থেকে সংস্কৃত শুকর বা বাংলা শুওর ), কিন্তু সেটা বুনো শুওর বোঝাত না পোষা শুওর সেইটা ঝামেলার। আবার ইউরোপিয়ান ব্রাঞ্চগুলোর একটা শব্দ আছে *pórḱos ( যা থেকে আজকের ইংলিশ এ pork ), যা নিঃসন্দেহে পোষা শুওরের সাথে সম্পর্কিত। এত চুলচেরা বিচারের দরকারের কারণ যে শুওর এমনই একটা জন্তু যা পোষা স্থায়ী কৃষিজীবীদের পক্ষে সম্ভব, যাযাবর উপজাতিদের পক্ষে নয়, শুওরের পাল আদৌ গরু-ছাগল-ভেড়ার পাল এর মত চরানো যায় না এফেক্টিভলি। যাই হোক, *su- এর কগনেট গুলো সবদিকেই পোষা শুওর ই বোঝাত, তাই প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানরা পোষা শুওর জানত বলেই মনে হয়, নিজেরা পুষুক বা নাই পুষুক।

    ঘোড়া ভীষণ ভালভাবে চিনত এবং ভীষণ সিগ্নিফিক্যান্ট প্রাণী তাদের কালচারে। প্রায় সব ভাষার কগনেট আছে, এত বেশী ভাষায় কগনেট থাকা শব্দ বিশেষ নেই। Hieroglyphic Luwian asuwa ; Latin equus ; Tocharian yuk/yakwe ; Gaulish epos ; Ancient Greek hippos ; Sanskrit aśva ( অশ্ব) ; Avestan asva- ; Lithuanian ašva ( এটার মানে আবার মেয়ে ঘোড়া, mare) ; Old Prussian aswinan ; Kamviri ušpa ; English eoh/-- ; German ehwaz/-- ; Gothic aiƕtundi ; Old Norse iór ; Kurdish hesp ; Hittite aśuwas; Old Armenian էշ ‎(ēš) ; Welsh ebol ; Irish ech/each ; Thracian esvas ; Lycian esbe- ; Phrygian es' ; Persian aspa/asb ; Ossetian jæfs/æfsæ ; Venetic ekvon ; Pashto aas । সবকটাতেই পোষা ঘোড়াই বোঝাত। তাছাড়া ঘোড়াই একমাত্র প্রাণী যার জন্য শব্দটার রুট দিয়ে মানুষের নাম হয়েছে, পরের ভাষাগুলোর প্রায় গোটা রেঞ্জ জুড়ে। Indic aśva-cakra; Old Persian vist-aspa; Greek hipp-arkhos আর philip-ippos ; Gaulish epo-pennus ; Old English eo-maer। এমনকি দেবতাদের নাম হয়েছে-- সেটাও রেঞ্জের প্রায় দুই এক্সট্রিম প্রান্তের ভাষায়, ইন্ডিক এ Asvins ( অশ্বীন, অশ্বিনীকুমারদ্বয় এর নাম ) আর গলিশ দেবী Epona। তাই তারা হয় ডোমেস্টিকেটেড ঘোড়া জানত অথবা, যদি আদি শব্দটা বুনো ঘোড়া বুঝিয়ে থাকে, তাহলে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানরাই ঘোড়া ডোমেস্টিকেট করে এটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক ব্যাখ্যা। আবার ঘোড়া আর্কিওলজিকালি ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায় গোটা দক্ষিণ ইউরোপ, বলকান অঞ্চল, নিকট প্রাচ্য, ইরান, ভারতীয় উপমহাদেশে বুনো ঘোড়া আদৌ ছিল না। ডোমেস্টিকেটেড ঘোড়ারও দেখা মিলছে বেশ পরের দিকে।

    কৃষি, ধাতু, টেকনোলজিঃঃ

    এবার আমরা একটু সংক্ষেপে বলব। কৃষি সম্পর্কিত শব্দের মধ্যে লাঙ্গল, জোয়াল অবশ্যই জানত। খাদ্যশস্য (grain) বোঝানোর শব্দ ছিল, যদিও আলাদা করে কোন খাদ্যশস্যের নামের সেফ রিকনস্ট্রাকশন নেই। নুড়ির (খল-নুড়ির নুড়ি, pestle) জন্য শব্দ ছিল, গুঁড়ো করার (grinding) জন্যও। পশম বোনার (weaving) জন্য শব্দের কথা আগেই বলেছি, এছাড়াও সেলাই করা (sewing) ও সুতো বোনার (spinning) শব্দ ছিল। সুতো বোনা লিখলাম, কিন্তু স্পিনিং শব্দটার মানে কিন্তু শুধু তুলো থেকে সুতো কাটা নয়, পশম থেকে উল বানানোও বোঝায়, এবং এই শব্দটা সেই অর্থেই, তুলো তারা আদৌ জানত এমন কোন প্রমাণ নেই । কাপড় ( আবারো, তুলোর নয়), মাটির পাত্র জানত, ধাতুর মধ্যে তামার জন্য অবশ্যই শব্দ ছিল, যদিও বহু ক্ষেত্রে কগনেটগুলো পরে অন্য ধাতুও বুঝিয়েছে। যেমন বৈদিক অয়স ayas, তামার রিকনস্ট্রাক্টেড শব্দটা থেকে ডিরাইভড কগনেট, কিন্তু বোঝাতো ধাতু, ব্রোঞ্জ; আবার সেই একই শব্দ সংস্কৃতে ধাতু, লোহা । বৈদিক এ কিন্তু আদৌ লোহা বোঝাত না, ঋগ্বেদের পুরনো অংশগুলো লোহা জিনিসটা আদৌ জানে না, একটু পরের রচনা অংশগুলোয় খুব সামান্য রেফারেন্স, পরের বেদগুলোয় বাড়তে থেকেছে, কিন্তু লোহার শব্দটা ছিল কৃষ্ণ অয়স। ব্রোঞ্জ এর জন্য শব্দ ছিল বলেই মনে করা হয়, কিন্তু খুব সেফ নয়, বিশেষ টিন এর জন্য শব্দ পাওয়া যায়নি। এখানে ব্রোঞ্জ সম্পর্কে একটুখানি বলা দরকার। ব্রোঞ্জ তামার একটা অ্যালয় বা শঙ্কর ধাতু। তামা বাদে প্রধান উপাদান হচ্ছে টিন। তামার সাথে আর্সেনিক মিশিয়ে ট্রু ব্রোঞ্জ বা টিন ব্রোঞ্জ এর কাছাকাছি আর একটা অ্যালয় সম্ভব, যেটাকে অনেকেই আর্সেনিক ব্রোঞ্জ বলেন। আমরা এই লেখায় ব্রোঞ্জ বলতে টিন ব্রোঞ্জই বুঝব। সোনা আর রুপোর শব্দগুলো আবারো, বড্ড বেশী ডেসক্রিপটিভ। উজ্জ্বল বা হলুদ থেকে সোনার জন্য শব্দটা আর রুপোর জন্যে শব্দটা সাদা থেকে। তাই এগুলোর জন্যে সত্যিই শব্দ ছিল না হলুদ আর সাদা র জন্য শব্দগুলো থেকে পরের বানিয়ে নেওয়া তা বোঝার বিশেষ উপায় নেই। চাকা ও পশুতে টানা গাড়ী, অর্থাৎ ওয়াগন (wagon) বেশ ভালভাবে জানত আগেই লিখেছি। অস্ত্র-শস্ত্র সম্পর্কে অনেক থিওরি থাকলেও খুব সেফ রিকনস্ট্রাকশন নেই।

    পরিবার,সমাজ,ধর্মবিশ্বাসঃঃ

    পরিবার-ব্যবস্থা, সমাজ-ব্যবস্থা ও ধর্মবিশ্বাস নিয়ে অনেক কিছু জানা যায়, কিন্তু সেগুলো আর্কিওলজির পক্ষে খুব কাজের কিছু নয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। তাই অতি সংক্ষেপে, প্যাট্রিলিনিয়াল পরিবার-ব্যবস্থা ছিল, অর্থাৎ রক্তের সম্পর্ক ধরা হত বাবার দিক থেকে, প্যাট্রিয়ার্কাল সমাজব্যবস্থা ছিল। পরিবারের প্রধান পুরুষ হতেন এবং গোষ্ঠী (clan), উপজাতি ( tribe) , গোষ্ঠীপতি ( clan-leader, tribe leader) বোঝানোর শব্দ ছিল। প্রসঙ্গত ট্রাইবের শব্দটা থেকেই ইন্দো-ইরানিয়ান এ আর্য হয়েছে, তাই ইন্দো-ইরানিয়ানদের কাছে প্রথমে শব্দটা শুধু তাদের ট্রাইব বোঝাত এটা মনে করার যুক্তি আছে, যদিও একই 'ট্রাইব' বলতে তারা কি বুঝত সেটা আমরা জানি না। গোষ্ঠীপতিরা পুরুষ হতেন। আগুন, ঝড়, আকাশ, বৃষ্টি এইসব প্রাকৃতিক শোকটিকে পুরুষ দেবতা হিসেবে পুজো করা হত, পুজোয় পশুবলির প্রচলন ছিল। বহু ক্ষেত্রে সম্পত্তি বা ঐশ্বর্য বোঝানোর শব্দটা গবাদি পশুর পাল এর শব্দটা থেকে ডিরাইভড, যাতে মনে হয় যার যত বেশী গরু (বা ছাগল-ভেড়া) তার তত সম্পত্তি, এইভাবেই দেখা হত--- যা পশুপালন-ভিত্তিক অর্থনীতির লক্ষণ।

    কখন?
    --------

    এই সব থেকে প্রাথমিকভাবে এই ভাষাটা কোন সময় এক্সিস্ট করত সে বিষয়ে মোটামুটি ভালোই ধারনা করা সম্ভব। প্রথমত চাষবাস জানত ( বা চাষবাস জানত এরকম লোকদের জানত), মাটির পাত্র জানত, তাই সময়কালটা যেখানেই হোক, সেখানকার নিওলিথিক এর পরের। আবার আমরা আগেই দেখেছি তামার জন্য শব্দ আছে, অর্থাৎ প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান কালচার একটা এনিওলিথিক (eneolithic, মানে copper age culture) কালচার, যারা পোষা ঘোড়া জানত, চাকা ও চাকাওয়ালা গাড়ী জানত ও পশুপালন অর্থনীতির প্রধান ফ্যাক্টর ছিল।

    এই সবকটা একসাথে করে আর্কিওলজিকাল রেকর্ডে খুঁজলে ৪০০০ খ্রীঃ পূর্বাব্দের আগে কিছু পাওয়া যায়নি, তাই ভবিষ্যতে নতুন কিছু খুঁড়ে খুঁজে পাওয়ার জন্য ৫০০ বছর ছাড় রেখে দাঁড়ায় ৪৫০০ খ্রীঃ পূঃ, অর্থাৎ খ্রীঃ পূঃ পঞ্চম সহস্রাব্দ। এ থেকে আমরা আরও নিশ্চিন্ত হতে পারলাম যে গাছপালা, বনের প্রাণী, ভূগোল সংক্রান্ত আমাদের সিদ্ধান্তগুলোও নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা চলবে, কারণ ইউরেশিয়ার প্রাকৃতিক ভূগোলে কোন বড়সড় পরিবর্তন এই সময় থেকে আজ অবধি ঘটেনি। আবার অন্যদিকের সময়সীমা বার করা আরও সহজ, কারণ ১৭০০-১৮০০ খ্রীঃ পূঃ তে আমরা কিউনিফর্ম স্ক্রিপ্ট এ লেখা হিটাইট (Hittites) দের শিলালিপি পাচ্ছি, Anitta text, অর্থাৎ ততদিনে ভাষাটা ভাগ হয়ে গেছে, তাই বাই ডেফিনিশন, অবিভক্ত প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাটার অস্তিত্ব ছিল আরও আগে। বস্তুত হিটাইট ভাষাটার শব্দ আগের আক্কাডিয়ান ভাষার (akkadian, একটা semitic ভাষা, ইন্দো-ইউরোপিয়ান নয় ) শিলালিপিতেও লোনওয়ার্ড হিসেবে, মানুষের নাম হিসেবে পাওয়া গেছে, তাই মোটামুটি ভাবা হয় হিটাইট ভাষাটা ২০০০ খ্রীঃ পূঃ থেকেই রয়েছে।

    এইবারে আমরা যাব আর্কিওলজিতে, এদেরকে খুঁজে পেতে। আপাতত বিভিন্ন সময় এদের আদি বাসভূমি বা হোমল্যান্ড নিয়ে যে সমস্ত মতগুলো মোটামুটি আধুনিক সময়ে ( এখানে ১৯৬০ এর পর থেকে) স্কলারলি আলোচনায় এসেছে বা থেকেছে সেগুলোর একটা ছবি দেওয়া যাক ( (১) থেকে)।



    ভাষা ও আর্কিওলজি
    --------------------------------------------------------------------------
    --------------------------------------------------------------------------

    আর্কিওলজির আলোচনায় আমরা যাব পরের পর্বে, কিন্তু তার আগে একটা জরুরী প্রশ্নের মীমাংসা করে যাওয়া দরকার। আমরা যে আর্কিওলজিকাল রেকর্ডে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের খুঁজব, খোঁজার যুক্তিটা কি? ভাষা আর মেটেরিয়াল কালচার কি আদৌ কোরিলেটেড? একটাই মেটেরিয়াল কালচার মানে কি একটাই ভাষা হতে হবে? (২) এ Anthony খুবই চমৎকার একটা যুক্তি দিচ্ছেন।

    সমস্যাটা হল আজকের অ্যানথ্রোপলজি জানে যে ব্যাপারটা আদৌ এরকম নয়। আজকের দুনিয়াতেই, বেশিরভাগ ট্রাইবাল অঞ্চলে, মেটেরিয়াল কালচারের ভ্যারিয়েশন যত তার চেয়ে ভাষার ভ্যারিয়েশন অনেক বেশী। তাই মডার্ণ নেশন স্টেট এর উদ্ভবের বহু আগে, প্রাগৈতিহাসিক ট্রাইবাল পপুলেশনে সেটাই দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। উল্টোটা অবশ্য খুবই রেয়ার। একই ভাষায় কথা বলে অথচ মেটেরিয়াল কালচার বেশ আলাদা এইটা আজকের কম্যুইনিকেশন এর যুগের আগে আশা করার কোন কারণ নেই। অর্থাৎ প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের একটা মেটেরিয়াল কালচার এইটা ভাবার মধ্যে সমস্যার কিছু নেই, সমস্যাটা এইটা যে ওই মেটেরিয়াল কালচারটা যাদেরই ছিল তাদের সবারই ভাষাটা প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান, এইটা বলাটা। সেটা নাই হতে পারে। আর যদি না হয়, তাহলে আর্কিওলজিকাল রেকর্ডে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানরা চিহ্নিত করার কোন উপায় থাকবে না।

    একটা ক্ষেত্রে অবশ্য ভাষা আর মেটেরিয়াল কালচার কোরিলেটেড হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশী। পারসিস্টেন্ট এথনো-লিঙ্গুইস্টিক ফ্রন্টিয়ার (persistent ethno-linguistic frontier) এর ক্ষেত্রে। অ্যানথ্রোপলজি ও আর্কিওলজিতে এইটা একটা টেকনিকাল শব্দ, কিন্তু জিনিসটা কি? বাউন্ডারি কথাটার অর্থ ভৌগোলিকদের কাছে একরকম, যেখানে মানেটা নেহাতই সীমানা বোঝায়। কিন্তু অ্যানথ্রোপলজি তে বাউন্ডারি (boundary) মানে এমন একটা সীমানা যাতে সীমানার এপারে-ওপারে মানুষের চলাচল হয় নেই নয়ত খুবই কম-- যেমন কোন ভৌগোলিক অবস্টাকল, পেরনো শক্ত এমন কোন পর্বতমালা এইসব দিয়ে তৈরি সীমানা সবচেয়ে ভাল উদাহরণ। আর মানুষের চলাচলে বাধা বিশেষ নেই, কিন্তু সীমানার দুপাশে দুটো আলাদা মেটেরিয়াল কালচার, এরকম সীমানাকে বলে ফ্রন্টিয়ার (frontier)।

    দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের আগে পর্যন্ত, আর্কিওলজির ইতিহাসে একটা সাধারণ প্রবণতা ছিল যে মেটেরিয়াল কালচারকে জনগোষ্ঠীর সাথে আইডেন্টিফাই করার। অর্থাৎ আলাদা মেটেরিয়াল কালচার মানেই আলাদা লোক, কোন জায়গায় নতুন মেটেরিয়াল কালচার দেখা যাচ্ছে মানেই সেইটা সেই অঞ্চলে ইন্ট্রুসিভ কিছু এরকম ভেবে নেওয়ার; অর্থাৎ কালচারাল ফ্রন্টিয়ার এর ওপরে বড় বেশীই গুরুত্ব আরোপ করার। আস্তে আস্তে আর্কিওলজিকাল মেথড এর উন্নতির সাথে সাথে বোঝা যেতে থাকে যে এইটা অর্থহীন। মেটেরিয়াল কালচার পালটানোর বহু ইন্টার্নাল কারণ থাকে, কালচারের বিবর্তনের নিজের ডায়নামিক্স থাকে। পটারির ডেকোরেশনের স্টাইল, যা ফ্যাশনের মত এমনিই খুব বেশিদিন এক থাকে না-- সেসব পালটায় তো বটেই। এমনকি তুলনামূলকভাবে যেগুলো মেটেরিয়াল কালচারের অনেক ফান্ডামেন্টাল জিনিস, যেমন পটারির ম্যানুফাকচারিং মেথড, সেসবও পালটায়। বাইরে থেকে অন্য কোন জনগোষ্ঠী এলে তবেই পাল্টায় এমন নয়। এই ভাবনাচিন্তার পরিবর্তন আর আগের ভাবনার প্রতি রিয়াকশন এতটাই যে আজকে আর্কিওলজির ছাত্রছাত্রীরা জীবনের প্রথম আর্কিওলজির বইতেই পড়ে - "Pots are not people."

    সাধারণভাবে আজকের আর্কিওলজি মনে করে যে কালচারাল ফ্রন্টিয়ার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, কিন্তু সাধারণভাবে তা আগে যা মনে করা হত তার থেকে অনেক কম রিজিড, অনেক ক্ষণস্থায়ী একটা জিনিস। ফ্রন্টিয়ার এর এপারে-ওপারে কালচারের ডিফিউশন ঘটে, মানুষের তো বটেই। ফ্রন্টিয়ার এগোয়, পেছোয়, পালটায়, মুছে গিয়ে নতুন নতুন ফ্রন্টিয়ার তৈরি হয়- মডার্ণ নেশন-স্টেট এর বর্ডার ( border) এর আগে এইগুলোয় স্বাভাবিক প্রসেস, এমনকি এই প্রসেস আজ ও চলে, বর্ডারের তোয়াক্কা না করেই। একই নেশন-স্টেট এর বর্ডারের মধ্যেই বহু বহু কালচারাল ফ্রন্টিয়ার থাকতে পারে ও থাকে, আবার বহু কালচারাল ফ্রন্টিয়ারই বর্ডারের সীমানা ছাপিয়ে উপচে পড়ে। আজকের পশ্চিমবাংলার ই পশ্চিমের কালচারাল ফ্রন্টিয়ার অনেক বেশী শার্প, যেদিকে কোন আন্তর্জাতিক সীমান্ত নেই, অথচ পুবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থাকা সত্ত্বেও কালচারাল ফ্রন্টিয়ার আদৌ থাকলেও খুবই অস্পষ্ট, আর্কিওলজিকাল রেকর্ডে ভবিষ্যৎ কোন ফ্রন্টিয়ার খুঁজে পাবে এ ভরসা কমই।

    কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু ক্ষেত্রে তুলনামুলকভাবে অনেকদিন থেকে যাওয়া কালচারাল ফ্রন্টিয়ার দেখা যায় । কিভাবে? দুপাশের কালচারগুলো কি পালটায় না? পালটায়, অবশ্যই পালটায়। কিন্তু যেটা পার্সিস্টেন্ট সেটা হল দুপাশে কালচারাল তফাতের বোধটা, আমরা-ওরা বিভাজনের ভাবনাটা। সেই বোধটার জন্যই দুপাশেই কালচার নিজের নিজের ডায়নামিক্সে পাল্টালেও কালচারাল ডিফারেন্সিয়ালটা বজায় থাকে বহু বহু দিন ধরে, কারণ এই ডিফারেন্সিয়ালটা দিয়েই দুপাশের মানুষগুলো নিজেদের কালচারাল আইডেন্টিটি ভাবে, বোঝে ও অনুভব করে। তাই দুপাশের কালচার স্থায়ী না হলেও ফ্রন্টিয়ারটা স্থায়ী হতে পারে এই সেন্সে-- এদেরকেই আর্কিওলজিতে পার্সিস্টেন্ট ফ্রন্টিয়ার (persistent frontier) বলে। (২) এ নানান উদাহরণ আছে, উদাহরণগুলোর শেষের কমেন্টটা কোট করার লোভ সামলানো শক্ত।

    "In each of these cases cultural norms changed; house designs, decorative aesthetics, and religious rituals were not frozen in a single form on either
    side. It was the [persistent opposition of bundles of customs] that defined the frontier rather than anyone artifact type." ( ব্র্যাকেটের মধ্যের অংশ emphasized, italics এ লেখা )।

    উদাহরণগুলোর মধ্যে একটা নিজেও দেখেছি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় - ফ্রেঞ্চ স্পিকিং সুইটজারল্যান্ড আর জার্মান স্পিকিং সুইটজারল্যান্ড এর মধ্যে কালচারাল ডিফারেন্স। ট্রেনে যেতে যেতে বাড়ির ধাঁচগুলো পালটে যাওয়া দেখেই ফ্রন্টিয়ার পেরিয়ে এলাম দিব্যি বোঝা যায় এখনো। অথচ দুপাশে মানুষগুলো আজকে একেবারেই মিলেমিশে গেছে, ফ্রেঞ্চ পার্ট এ জার্মান ফ্যামিলি নেম কিম্বা উলটোটার কোন অভাব নেই, কিন্তু মানুষগুলোর মনে আমরা-ওরা র ধারনাটা আজও আছে, দুপক্ষই অন্য পক্ষের নানা কিছু নিয়ে ব্যঙ্গ করেই থাকে প্রায়শই। আবার এইরকম ফ্রন্টিয়ার কিন্তু আদৌ ভৌগোলিকভাবে স্থায়ী হতে হবে এমন নয়, সেগুলো নড়ে-চড়ে। মূল ব্যাপারটা, আবারো, ওই persistent opposition of bundles of customs। ইন্টারেস্টিং বিষয়টা হল এইরকম বেশিরভাগ পার্সিস্টেন্ট ফ্রন্টিয়ারের ক্ষেত্রেই, ভাষা কালচারের সাথে কোরিলেটেড, অর্থাৎ দুদিকে ভাষাটাও আলাদা। তাই পার্সিস্টেন্ট ফ্রন্টিয়ার মানেই সেইটা এথনো-লিঙ্গুইস্টিক ফ্রন্টিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশী। এখানে এথনিসিটি কালচার অর্থে, জেনেটিক অর্থে নয়, কারণ ফ্রন্টিয়ার এর এপারে-ওপারে মানুষের চলাচল হতেই থাকে। কিন্তু এক পারের মানুষ অন্যপারে গিয়ে বসতি করলেও সে নতুন পারের কালচার এই অভ্যস্ত হয়, সেইরকমভাবেই বাড়ী বানায় ইত্যাদি, নইলে সে তার পক্ষে ওই পারে থাকাই শক্ত হত প্রায় সব ক্ষেত্রেই। তাই দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের চলাচলে দুপারের পপুলেশন এ শুরুতে কোন জেনেটিক ডিফারেন্স থাকলেও তা হোমোজেনাইজড হয়ে যায়, কিন্তু ফ্রন্টিয়ারটা টিকে থাকে। একটা বিশেষ ক্ষেত্রে কালচারই মানুষের চলাচলে আংশিক বাধা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন ত্রয়োদশ শতকের পড়ে দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে কেল্টিক ব্রাঞ্চের ওয়েলস-স্পিকার ও জার্মানিক ব্রাঞ্চের ইংলিশ-স্পিকারদের মধ্যে একটা এথনো-লিঙ্গুইস্টিক ফ্রন্টিয়ার ছিল। দুদিকের প্রথা অনুযায়ী দুদিকের পুরুষরা কখনোই অন্য পারে বিয়ে করত না, যদিও মেয়েরা করতে পারত ও করত। এর ফলে দুদিকের মানুষগুলোর জেনেটিক ডিফারেন্স সম্পুর্ণ হোমোজেনাইজড হয়ে যেতে পারেনি। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ (mitochondrial DNA), যা শুধু মা-এর দিক থেকে অ্যানসেস্ট্রী বার করতে পারে, তাইতে আমরা একটা হোমোজেনাইজড পপুলেশন পাব, কিন্তু ওয়াই-ক্রোমোসোমের ডিএনএ ( Y-chromosomal DNA) তে, যাতে আবার শুধুই বাবার দিক থেকে অ্যানসেস্ট্রী বার করা যায়, জেনেটিক ডিফারেন্সটার চিহ্ন থেকে যাবে। এই ব্যাপারটা পরে আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে, আমরা তখন আবার ফেরত আসব এইটায়।

    অর্থাৎ আমরা যদি প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের সম্ভাব্য বাসস্থান যে জায়গাটাকে ভাবব, সেইখানে যদি এমন কোন দীর্ঘদিন টিকে থাকা পার্সিস্টেন্ট ফ্রন্টিয়ার খুঁজে পাই, যার একদিকে আমরা এমন একটা কালচার পেলাম যেটা আমাদের ভাষাটা থেকে কালচারটার সম্পর্কে যা জানি তাই দিয়ে কালচারটাকে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান বলতে পারি, তাহলে আমরা সত্যিই সেই লোকগুলোকেই খুঁজে পেয়েছই মনে করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকবে। তার ওপর, যদি আমরা তার সাথে কেন ও কিভাবে এই কালচারটা তৈরি হল আর কিভাবেই বা সেই ভাষার সন্তান ভাষাগুলো ইউরেশিয়ার বিশাল অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ল তার ও খানিক ব্যাখ্যা দিতে পারি আর্কিওলজিকাল রেকর্ড থেকে, তাহলে আমাদের আরোই নিশ্চিন্ত হওয়ার কথা। ঠিক সেইগুলোই আমরা খতিয়ে দেখব এখন।

    [চলবে]
    -----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

    ১] Mallory, J. P. "In search of the Indo-Europeans: Language, Archaelogy and Myth", Thames and Hudson, 1991
    ২] Anthony, D. W. "The Horse The Wheel and Language: How Bronze-Age Riders from the Eurasian Steppes shaped the modern world", Princeton University Press, 2007


    আর্য সমস্যাঃ পর্ব ৮
    ( পর্ব ৭ এর পর )

    আর্কিওলজিতে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানরা
    ---------------------------------------------------------

    এইবারে আমরা একটা গল্প পড়ব, গল্প মানে অবশ্য নেহাত গালগল্প নয় - একটা সম্ভাব্য গল্প। প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানরা কারা? কোথায় থাকত? কোথা থেকে, কিভাবেই বা এল তাদের কালচার? কিভাবে আর কেনই বা ইউরেশিয়ার একটা বিশাল অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ল তাদের ভাষার সন্তান ভাষারা- এইসব ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য একটা গল্প। তার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে দেখতে যাব কিভাবে এই গল্পটা তৈরি হল, গল্পটা সম্ভাব্য মনে করার কারণগুলোই বা কি? কেনই বা এই গল্পটাই এখনো অবধি আমরা যা জানি সেগুলো সবগুলোর ব্যাখ্যা দিতে পারার মত একটা গল্প যা আমাদের হাতে আছে। ( নিচের অংশ মূলত (১) অনুসরণে )।

    প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের শুরু
    --------------------------------------

    আমাদের গল্প অবশ্য শুরু হবে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের সময়েরও আগে থেকে, মোটামুটি খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ সহস্রাব্দে, কৃষ্ণ সাগরের (Black sea) উত্তরে, আজকের ইউক্রেনে। অঞ্চলটায় বেশ কিছু নদী আজও আছে, আমাদের গল্প যে সময়ের তখনো ছিল। আগে চট করে সেই অঞ্চলটার একটা ম্যাপ দেখে নেব। (উইকিপিডিয়ার পন্টিক-ক্যাস্পিয়ান স্টেপ এর ম্যাপ থেকে আমার বানানো)


    কৃষ্ণ সাগরের বাঁ দিক থেকে, মানে পশ্চিম উপকুল থেকে এক এক করে ড্যানিয়ুব, নীস্টার, বাগ, নীপার, ডনে, ডন, দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে কুবান ও আরও পশ্চিমে ক্যাস্পিয়ান এ পড়ছে ভলগা।
    প্রথমত এই অঞ্চলটার প্রাকৃতিক ভূগোলটা আমরা ভাষাটা থেকে এতক্ষণ যা যা জেনেছি তার সাথে খাপ খায়, এই অঞ্চলটার নাম পন্টিক-ক্যাস্পিয়ান স্টেপ। স্টেপ বা তৃণভূমি এই জায়গাটা ঠিকই, কিন্তু ওপেন স্টেপ এর মত ন্যাড়া মাইলের পর মাইল শুধু ঘাসজমি নয়, মাঝে এতগুলো নদী-অববাহিকা আছে, সামান্য উত্তরেই ফরেস্ট স্টেপ, আরও উত্তর-পূর্বে তাইগা বনভূমি। নিচের ছবিতে যেটা টেম্পারেট ফরেস্ট বা নাতিশীতোষ্ণ বনভূমি হিসেবে দেখানো, সেইটাই ফরেস্ট স্টেপ। (ছবি উইকিপিডিয়ার)



    দ্বিতীয়ত, এই অঞ্চলে এই সময়ে আমরা দেখতে পাব একটা মোটামুটিভাবে দীর্ঘস্থায়ী একটা পার্সিস্টেন্ট ফ্রন্টিয়ার, যে ফ্রন্টিয়ারটার একপাশের কালচার ( আসলে কালচারগুলোর ) কে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান কালচার এর শুরুর আগের সলতে পাকানো বলে ভাবা একদম অযৌক্তিক নয়।

    কিন্তু শুরুরও একটা শুরু থাকে, তাই খুব সংক্ষেপে দেখে নেব যে এই সময়ের আগে এই অঞ্চলে কি ছিল। মোটামুটি ৯০০০ খ্রীঃ পূঃ তে উত্তরের মেরু হিমবাহ আরও উত্তরে পিছিয়ে গিয়ে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভূগোলটা মোটামুটিভাবে আজকে যা দেখি সেই অবস্থায় আসে, এই ঘটনার পোশাকী নাম হলোসিন গ্লেসিয়াল রিট্রিট (Holocone Glacial retreat), সাধারণ ভাষায় 'শেষ তুষার যুগ' (last ice age)-এর শেষ।[*] এই অঞ্চলে মোটামুটি তার পর থেকেই শুরু হয়ে ৬০০০ খ্রীঃ পূঃ পর্যন্ত গোটা কুড়ি আলাদা আলাদা মেসোলিথিক (মধ্য প্রস্তর যুগ) কালচারের নিদর্শন পাওয়া গেছে, সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ টা আর্কিওলজিকাল সাইটে। এই মেসোলিথিক কালচারগুলো সবকটাই নদীর ধারে কিম্বা এখন শুকিয়ে যাওয়া লেক এর ধারে, সবগুলোতেই ইকোনমি হান্টিং-গ্যাদারিং-ফিশিং। এর মধ্যে দশটা মধ্য প্রস্তর যুগের শুরুর দিকের (early mesolithic), অর্থাৎ খ্রীঃ পূঃ নবম থেকে সপ্তম সহস্রাব্দের, বাকি দশটা মধ্য প্রস্তর যুগের শেষ ভাগের (late mesolithic), খ্রীঃ পূঃ সপ্তম ও ষষ্ঠ সহস্রাব্দের। যদিও খেয়াল রাখা দরকার এই ভাগ শুধুই সময়কাল ধরে। আর্কিওলজিতে যুগ শব্দটা নিয়ে গোলমালের অবকাশ আছে, তাই এইখানটা খানিক পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার।

    আর্কিওলজিতে যুগ ভাগের প্রধান উপায় হচ্ছে টেকনোলজি, বিশেষত নিওলিথিকের আগে পর্যন্ত স্টোন টুল টেকনোলজি একটা খুবই জরুরী মার্কার। নিওলিথিকে সেরকমই জরুরী মার্কার বলা চলে পটারি কে, অর্থাৎ মাটির পাত্র বা জিনিস তৈরির টেকনোলজি, এনিওলিথিকে মেটালার্জি, এইরকম। অর্থাৎ যত নতুন নতুন টেকনোলজি আবিষ্কার হতে ও ছড়িয়ে পড়তে থেকেছে সেগুলো সবগুলোই জরুরী সেই সেই যুগগুলোর ক্ষেত্রে, প্রধানত সেগুলো দিয়েই যুগ ভাগ করা হয়। মেসোলিথিক যুগের সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মাইক্রোলিথিক টেকনোলজি।

    প্যালিওলিথিক[**] এ পাথরের টুল তৈরি হত একটা বড় বা মাঝারি পাথর, নদীখাতের নুড়ি বেশ ভাল উদাহরণ, নিয়ে সেটাকে ঠুকে ঠুকে গা থেকে চোকলা তুলে তুলে ধারালো ফেস তৈরি করে। এই চোকলা তলার প্রসেসটাকে বলে ফ্লেকিং (flaking)। অর্থাৎ টুল হিসেবে ব্যবহার হত চোকলা ওঠা বড় পাথরটা, সেটাকে বলা হয় কোর (core), চোকলাগুলো ব্যবহার হত না। কিন্তু মাইক্রোলিথ হচ্ছে ভীষণ ছোট পাথরের ব্লেড , সাইজে ১ সেন্টিমিটার মত। সেগুলো আসলে ওই ওঠা চোকলাগুলোকেই আরও ঠুকে বা ঘষে ধারালো বানিয়ে (এটাকে বলে retouching) তৈরি হত। এত ছোট পাথরের ধারালো ব্লেড বানানো বেশ এলেমের ব্যাপার, এগুলো এফেক্টিভলি ব্যবহার করতেও অনেকটা উন্নত টেকনোলজি লাগে, কারণ এত ছোট ব্লেডকে কিছুর গায়ে জুড়ে তবেই ব্যবহার করা চলে। আজকের দিনের করাতের গায়ের দাঁতের কথা ভাবুন, করাতের গায়ে সারি দিয়ে বসানো থাকলে ভীষণ কাজের জিনিস, কিন্তু একটা দাঁত ভেঙ্গে হাতে দেওয়া হলে তাই দিয়ে প্রায় কিছুই করা যাবে না। এই মাইক্রোলিথ দুরকম -- ল্যামিনার মাইক্রোলিথ, যা বস্তুত ছোট্ট ধারালো পাথরের পাত মত, কোন শেপ থাকত না আলাদা করে, তুলনামুলকভাবে অনুন্নত টেকনোলজি যা আর্লি মেসোলিথিকে দেখা যায় আর পরের উন্নত টেকনোলজি জিওমেট্রিক মাইক্রোলিথ, নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এদের নানান রকম শেপ এ তৈরি করা হত, কখনো স্ট্রেট এজ, কখনো তিনকোনা। এই জিওমেট্রিক মাইক্রোলিথ তিরের ডগায়, হারপুন বা বল্লমের এর গায়ে, চিজেল এর আগায় বসানো হত। এতে সবরকম টুলই অনেক হাল্কা হওয়া সম্ভব হল। যেমন ধরুণ আগে কাঠের লম্বা লাঠির মাথায় চোকলা তুলে দুটো ফেস বার করা, আগাটা ছুঁচোলো করা পাথর আটকে বর্শা তৈরি হত, সেইগুলো অনেক ভারী। সেইজন্যেই সম্ভবত ছোঁড়া যেত না, খোঁচা মারতে ব্যবহার হত শুধু। এখন বল্লমের আগাটাও কাঠের বা হাড়ের তৈরি করা সম্ভব হল, শুধু তার গায়ে মাইক্রোলিথ বসিয়ে নিলেই হল। সব মিলিয়ে এইটা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার বস্তুত, আর এটাই মেসোলিথিক এর সনাক্তকরণ চিহ্ন। অন্যদিকে ম্যাক্রোলিথিক টেকনোলজি মানে মাইক্রোলিথ ব্যবহার শুরু হয়নি, ম্যাক্রো-মাইক্রোলিথিক মানে মাইক্রোলিথ ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু শুধুই মাইক্রোলিথ ব্যবহার হচ্ছে বা প্রচুর পরিমাণে নানারকম মাইক্রোলিথ ব্যবহার হচ্ছে এরকম নয়।

    এবারে আর্কিওলজিতে যুগ নিয়ে ঝামেলাটায় ফিরে আসি। গোলমালটা এই যে সাধারণভাবে এই টেকনোলজির পর্যায় দিয়ে যুগ ভাগ করা হয় মোটামুটি বড় এলাকা জুড়ে। যেমন ধরুণ, এই পন্টিক-ক্যাস্পিয়ান স্টেপের কথাই যদি ধরি, বা সাধারণভাবে গোটা পূর্ব ইউরোপেই মেসোলিথিক টেকনোলজি আসছে মোটামুটি ওই খ্রীঃ পূঃ নবম সহস্রাব্দ থেকে, কিন্তু তার মানে মোটেই এটা নয় যে এই সময়ের পরে ওই জায়গার সব কালচারই মেসোলিথিক। সময়কাল অনুযায়ী পূর্ব ইউরোপের মেসোলিথিকে কোন একটা কালচার থাকতেই পারে যে কালচারটার টেকনোলজি হয়ত আপার প্যালিওলিথিক (upper paleolithic, পুরাতন প্রস্তর যুগের শেষ ভাগ)। একই কথা প্রযোজ্য যুগগুলোর সাবডিভিশন সম্পর্কেও, অর্থাৎ খ্রীঃ পূঃ ষষ্ঠ সহস্রাব্দের পন্টিক স্টেপের কোন কালচারে টেকনোলজি আর্লি মেসোলিথিক হতেই পারে, যদিও সময়কাল অনুযায়ী কালচারটা ওখানের [***] লেট মেসোলিথিকের।

    বস্তুত এরকম বাস্তবিকই দেখাও যায়। পন্টিক-ক্যাস্পিয়ানেই অপেক্ষাকৃত দক্ষিণের কালচারগুলো সবই প্রথম থেকেই, মানে ৯০০০ খ্রীঃ পূঃ থেকেই শুধুই মাইক্রোলিথিক টেকনোলজি ব্যবহার করছে, বেশ আগে থেকেই জিওমেট্রিক মাইক্রোলিথ বানাচ্ছে। আবার উত্তরের কালচারগুলো প্রায় এই গোটা সময়কাল জুড়েই ম্যাক্রো-মাইক্রোলিথিক টেকনোলজি ব্যবহার করছে, যা আরও 'প্রিমিটিভ'। অর্থাৎ এই অঞ্চলে পাথরের টুলের টেকনোলজি দিয়ে একটা কালচারাল ফ্রন্টিয়ার দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণের কালচারগুলো সাধারণভাবে পশ্চিম ইউরোপের অ্যাজিলিয়ান-তার্দেনোয়াসিয়ান (Azilian-Tardenoisian) কালচারের মত, অন্যদিকে উত্তরের কালচারগুলো পোল্যান্ড ও বাল্টিক অঞ্চলের সুইডেরিয়ান-কুণ্ডা (Swiderian-Kunda) কালচারের মত। যদিও এই ফ্রন্টিয়ারের দুদিকের কালচারই প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান হওয়া অসম্ভব, কারণ কেউই আদৌ চাষবাস, পশুপালন কোনটাই জানত না।

    উত্তরে-দক্ষিণে সব জায়গাতেই কবর দিত, কবরে শব শোয়ানো থাকত পাশ ফিরে, কবরে গেরিমাটি (ochre, একরকমের খনিজ রঙ, yellow ochre রঙের নাম যে খনিজ থেকে) ব্যবহার হত কখনো কখনো। কিন্তু মোটামুটিভাবে দক্ষিণের কালচারে পাওয়া শবের শরীরের গঠন ভূমধ্যসাগরীয় (gracile mediterranean), মানে হাড় কম চওড়া, মানুষগুলো গড়ে কম লম্বা। উত্তরের কালচারের কবরে মানুষগুলোর গঠন নর্ডিক (nordic) টাইপের, বেশ লম্বা, হাড় চওড়া, রোবাস্ট ক্রো-ম্যাঁনিও (robust cro-magnon) ধরণের, কবরে যে ধরণটা দেখতে পাওয়ার দক্ষিণতম সীমানাটা ক্রমশ দক্ষিণে সরে আসছে, বেশ শেষের দিকে দক্ষিণের কালচারগুলোতেও এই ধরণের গঠনের মানুষের কবর পাওয়া যাচ্ছে। [****] যা থেকে আরও একবার দেখা যায় যে কালচারাল ফ্রন্টিয়ার মানুষের চলাচলের স্বাপেক্ষে খুবই সচ্ছিদ্র (porous, leaky) হতে পারে। আবার একই সাথে এই তথ্য 'আর্য'-দের তো বটেই, এমনকি প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান দেরও কোন বিশুদ্ধ নর্ডিক শরীরের গঠনের সাথে মেলানোর আশার মুখে ছাই দেবে, কারণ প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান কালচার জন্মাবার আগে থেকেই এই অঞ্চলে মানুষগুলোর শরীরের গঠনের স্বাপেক্ষে কোন বিশুদ্ধতা যে আদৌ ছিল না সেইটা দেখা গেল।

    আর দেরি না করে এইবারে আমরা ঠিক এর পরের আর একটা ফ্রন্টিয়ারটাকে দেখব, যেটা বেশ দীর্ঘস্থায়ী এবং খুব সম্ভবত প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান কালচারের মাতৃগর্ভ। আগে একটা ছবি দেখে নি, (১) থেকে।



    নিওলিথিক রেভল্যুশন
    --------------------------

    এই ছবির বাঁদিকে ক্রিস ও লিনিয়ার ওয়্যার কালচার, ক্রিস একটু আগের, ৫৮০০ খ্রীঃ পূঃ থেকে, আর ৫৫০০ খ্রীঃ পূঃ নাগাদ এই অঞ্চলে দুটো কালচার অনেকটা মিলেমিশে যাচ্ছে, সেই কালচারদুটো খুব স্পষ্টতই নিওলিথিক কালচার প্যাকেজ এর এক্সপ্যানশনের ফসল।

    নিওলিথিক কালচার প্যাকেজ এক্সপ্যানশন মানে কি? মেসোলিথিকের যেমন সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্য মাইক্রোলিথ, নিওলিথিকের তেমন বৈশিষ্ট্য চাষবাস, পশুপালন এবং তার সাথে সম্পর্কিত একগাদা টেকনোলজিকাল আবিষ্কার- যেমন পটারি, অর্থাৎ মাটির পাত্র তৈরি একটা উদাহরণ, যদিও আরও বহু আবিষ্কার চাষবাস আর পশুপালনের সাথে সম্পর্কিত। বস্তুত চাষবাস ও পশুপালন আবিষ্কার হওয়া, যা মানুষের টেকনোলজি ব্যবহারের ইতিহাসে একটা বিপ্লব, সেটাকে বলে নিওলিথিক রেভল্যুশন। আবার এই সম্পর্কিত টেকনোলজি সব একদম একই সাথে আবিষ্কার হয়নি। এই সম্পর্কিত টেকনোলজিগুলোকে একসাথে সেকেন্ডারি প্রোডাক্ট রেভল্যুশন বলে। কোন কোন আর্কিওলজিস্ট নিওলিথিক রেভল্যুশন বলতে সেকেন্ডারি প্রোডাক্ট রেভল্যুশন সমেত গোটাটাকে বোঝান, কেউ কেউ শুধু চাষবাস ও পশুপালনকে নিওলিথিক রেভল্যুশন বলে আলাদা করেন - তাই টার্মিনোলজি সবসময় কনসিস্টেন্ট নয়।

    সে যাই হোক, এই চাষবাস ও পশুপালন, মানুষের ইতিহাসে অন্তত এগারটা জায়গায় আলাদা আলাদাভাবে আবিষ্কার হয়েছে [****]। আমাদের এই আলোচনায় প্রাসঙ্গিক সেন্টারটা হচ্ছে নিকট প্রাচ্যের আনাতোলিয়া (আজকের টার্কী বা তুরস্ক), লেভান্ত ( টার্কীর ঠিক দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরের উপকূল অঞ্চল ( আজকের সিরিয়া, লেবানন, ইজরায়েল, প্যালেস্তাইন ও জর্ডন) বা ব্যাপকভাবে ফার্টাইল ক্রেসেন্ট এ ।

    এই অঞ্চলে ৯৫০০ খ্রীঃ পূঃ এর মধ্যে ৮টা ফাইন্ডার ক্রপ (founder crop) চাষ শুরু হয়ে যায়। এগুলো হচ্ছে দুরকম গম, emmer and einkorn what ; যব , hulled barley; মসুর ডাল, lentill; কড়াইশুঁটি, pea; ছোলা chichpea; তিসি, flax; আর bitter vetch, একরকম ডাল জাতীয় শস্য। আর্কিওলজিস্টরা সবাইই নিশ্চিত যে এই অঞ্চল থেকেই চাষবাস ও পশুপালন ইউরোপে ছড়ায়। ইউরোপে প্রথম কৃষিজীবী জনগোষ্ঠী পাওয়া যাচ্ছে ৬৫০০ খ্রীঃ পূঃ এ, গ্রীসে, সেকেন্ডারি প্রোডাক্ট রেভল্যুশনের টেকনোলজি ও পটারি সমেত। সেখান থেকে ধীরে ধীরে উত্তর এ ড্যানিয়ুব উপত্যকায় ও কার্পেথিয়ান বেসিনে ও উত্তরপশ্চিমে সারা পশ্চিম ইউরোপে ছড়ায়। ৬০০০ খ্রীঃ পূঃ নাগাদ ড্যানিয়ুব উপত্যকায় কৃষিজীবী সমাজ দেখা যাচ্ছে। বলকান ও পন্টিক-ক্যাস্পিয়ান স্টেপে ছড়ায় সবচেয়ে দেরিতে, আমরা এখন ঠিক সেই ফ্রন্টিয়ারটাকেই দেখছি।

    কৃষিজীবী বনাম শিকারি
    ---------------------------------

    ওপরের ম্যালোরির বইয়ের ছবির ডানদিকে সুর্স্কো-নীপার আর পরবর্ত্তীকালের নীপার-ডনে কালচার প্রাথমিকভাবে হান্টিং-গ্যাদারিং-ফিশিং ইকোনমি, যেখানে আস্তে আস্তে ক্রমশ পশুপালন ছড়াচ্ছে, কিন্তু বেশ দেরিতে, প্রথম পশুপালনের চিহ্ন ৫২০০ খ্রীঃ পূঃ এর আগে নয় কিছুতেই, এবং তখনো সম্পূর্ণ কৃষিজীবী হয়ে যায়নি কালচারগুলো। আরও যত পুবে যাওয়া যায়, তত পশুপালন আসছে দেরিতে, অর্থাৎ পশুপালন যে পশ্চিম থেকে আস্তে আস্তে পুবেও অ্যাডপ্টেড হচ্ছে সেটা স্পষ্ট। পটারির চিহ্নও মিলছে, কিন্তু প্রথমদিকে পটারির তলা পয়েন্টেড, ক্রিস কিম্বা লিনিয়ার ওয়্যার কালচারের মত ফ্ল্যাট নয়। তাই মনে করার কারণ আছে যে এই পটারির উৎস অন্য কোথাও। সময়ের হিসেবেও পটারি বেশ আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছে, ৫৮০০ খ্রীঃ পূঃ এ পটারি আছে সুর্স্কো-নীপার কালচারে, যখন কালচারটা নিশ্চিতভাবেই হান্টার-গ্যাদারার, পশুপালনের কোন চিহ্ন আদৌ নেই এবং পরের ৬০০ বছরেও নেই, নীপার-ডনে স্টেজ ২ এ প্রথম আসবে। আমরা দেখব পরে যে এই পটারির উৎস আরও পুবে।

    ছবির মাঝে বাগ-নীস্টার কালচারটাই ফ্রন্টিয়ার জোন। এখানে শুরুর দিকে হান্টিং-গ্যাদারিং-ফিশিং ইকোনমি, তারপর পশুপালন ও কৃষি অ্যাডপ্ট করা এবং শেষের দিকে পশ্চিমের কৃষিজীবী কালচারগুলোর সাথে ইন্টেন্সিভ যোগাযোগের চিহ্ন স্পষ্ট। অর্থাৎ একদিকে কৃষিজীবী আর দিকে শিকারি জনগোষ্ঠী, এই ফ্রন্টিয়ার ৫৮০০ খ্রীঃ পূঃ এ বাগ-নীস্টার কালচারের শুরুর দিকে বাগ-নীস্টার কালচারের পশ্চিমে, আর তারপর ক্রমশ পুবে সরতে সরতে শেষের দিকে, অর্থাৎ ৫২০০ খ্রীঃ পূঃ এ বাগ-নীস্টার কালচারের পুবে। এরপর আমরা দেখব পশ্চিম থেকে আসা নিওলিথিক টেকনোলজি আর পুব থেকে আসা নিওলিথিক পটারির এই ফ্রন্টিয়ার টিকে থাকবে আরও হাজার বছর, যখন এই ফ্রন্টিয়ার এর পুবের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে, যা ক্যাস্পিয়ান পার করে মধ্য এশিয়ার স্টেপ পর্যন্ত একটা কালচার আবির্ভূত হবে, আর পুব থেকে আসা পটারির সাথে ক্রমশ যোগ হবে দক্ষিণ পূর্ব থেকে আসা মেটালার্জি। পশ্চিমের পোষা গরু আর পুবের পোষা ঘোড়া মিলেমিশে জন্ম দেবে এমন একটা কালচারের যেটা প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান কালচার হওয়ার সম্ভাবনার দৌড়ে আমাদের সেরা বাজি।

    [চলবে]
    ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

    [*] আইস এজ বলতে জিওলজিতে একটা বড় পিরিয়ডকে বোঝায়, যে সময়টায় পৃথিবীতে অন্তত একটা কন্টিনেন্টাল আইস শীট কন্টিন্যুয়াসলি আছে। এর মধ্যে তুলনামূলক বেশী ঠাণ্ডা সময়গুলোকে glacial period আর তুলনামূলক কম ঠাণ্ডা সময়গুলোকে interglacial period বলে। গ্লেসিয়াল পিরিয়ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ঠাণ্ডা সময়গুলোকে glacial maxima বলে। যেহেতু Quaternary র শুরু থেকে, মানে আজ থেকে ২৫,৮০,০০০ বছর আগে থেকে আজ অবধি অন্তত অ্যান্টার্কটিকার আইস শীট কন্টিন্যুয়াসলি থেকেছে তাই টেকনিক্যালি আমরা তখন থেকে আজ অবধি একটাই আইস এজ এর মধ্যে। মানে এখনো আমরা একটা আইস এজ এর মধ্যেই আছি। হলোসিন গ্লেসিয়াল রিট্রীট তাই আদৌ লাস্ট আইস এজ নয়, সেটা নেহাতই আমাদের আইস এজ এর এখনো অবধি শেষ গ্লেসিয়াল পিরিয়ডের শেষ, যার পর থেকে শুরু হওয়া ইন্টারগ্লেসিয়াল পিরিয়ডটার মধ্যে আমরা এখন আছি।

    [**] মানুষের ইতিহাসে প্যালিওলিথিক ই একমাত্র যুগ যেটা নিয়ে কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হয় যে শুধু মানুষ, মানে হোমো স্যাপিয়েন্স কে নিয়ে কথা হচ্ছে না। বস্তুত হোমো স্যাপিয়েন্স আসছে middle paleolithic এ, lower paleolithic এ মানুষ আদৌ নেই। পাথরের টুল বানানোর এই পদ্ধতিটার বয়স শুধু আমাদের স্পিসিসের বয়সের চেয়ে বেশী তাইই নয়, আমাদের জেনাসএর বয়সের চেয়েও অনেক বেশী। প্রথম পাথরের টুল যা খুঁজে পাওয়া গেছে তার বয়স ৩৩ লক্ষ বছর, প্রথম হোমো জেনাস এর ফসিলের বয়স ২৮ লক্ষ বছর আর হোমো স্যাপিয়েন্স স্পিসিসটার আবির্ভাব মাত্র ২ লক্ষ বছর আগে।

    [***] এই 'ওখানের' শব্দটা জরুরী। বিভিন্ন জায়গায় মেসোলিথিক যুগ এর সময়কাল খুবই আলাদা হতে পারে। এইটা যেকোন যুগের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তফাত কতটা হতে পারে এই মেসোলিথিকের উদাহরণেই দেখা যাক, পন্টিক-ক্যাস্পিয়ান স্টেপ এর মেসোলিথিক এর শুরু ৯০০০ খ্রীঃ পূঃ এ, যখন লেভান্তে নিওলিথিকের বয়স অন্তত ৫০০ বছর, যে নিওলিথিক পন্টিক-ক্যাস্পিয়ান স্টেপ এ আসবে ৫২০০ খ্রীঃ পূঃ এ, ৪০০০ বছর পরে। আরও এক্সট্রিম উদাহরণ হল ভারতীয় উপমহাদেশে মেসোলিথিকের শুরু আজ থেকে ৩৫০০০ বছর আগে। হ্যাঁ, শূন্য ভুল করে বেশী লিখিনি, পঁয়ত্রিশ হাজার বছর আগেই।

    [****] এগুলোকে centers of origin of agriculture বলে। উৎসাহীরা উইকিপিডিয়াতেই আরও অনেক তথ্য পাবেন এই নিয়ে।

    ১] Mallory, J. P. "In search of the Indo-Europeans: Language, Archaelogy and Myth", Thames and Hudson, 1991


    আর্য সমস্যাঃ পর্ব ৯
    ( পর্ব ৮ এর পর )

    সমাপতনের ইতিহাস
    ----------------------------------------------------------

    খ্রীঃ পূঃ ৫২০০ থেকেই মোটামুটিভাবে এই ফ্রন্টিয়ারের পূব-পশ্চিমের দুই কালচারই দ্রুত পালটাতে শুরু করে এবং কালচারগুলোর বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়। এর মধ্যে পুবের কালচারে দেখতে পাবো বেশ কিছু নতুন জিনিস। পুবের কালচারের অন্যরকম পটারি আগেই ছিল, পয়েন্টেড বেস পটারি, তার উৎস আরও উত্তর-পূর্বে রাশিয়ার ভল্গা অববাহিকায়, এইবারে ক্রমশ সেই জায়গা থেকেই পুবের কালচারে এসে পৌঁছবে আর একটা নতুন জিনিস -- গৃহপালিত ঘোড়া। আবার দক্ষিণ-পশ্চিমে বলকান অঞ্চল থেকে এসে পৌছবে আর এক গুরুত্বপূর্ণ নতুন জিনিস- তামা। একই সাথে ফ্রন্টিয়ার টপকে পশ্চিম থেকে পুবে ছড়াবে গৃহপালিত গবাদি পশু। প্রায় হাজার বছর ধরে ফ্রন্টিয়ারের দুদিকের কালচারের নানান রকম পরিবর্তনের শেষে আমরা দেখব শেষত এই ফ্রন্টিয়ার ভেঙ্গে পড়ে ডানিয়ুব অববাহিকার পুব থেকে স্টেপ পর্যন্ত মোটামুটি ব্যাপক অর্থে একটাই কালচার আত্মপ্রকাশ করবে, যমনায়া (Yamnaya) কালচার বা কালচারাল হরাইজন, যা হয় ইতিমধ্যেই ইন্দো-ইউরোপিয়ান বা হওয়ার পথে।

    ফ্রন্টিয়ারের পুবের কালচারে গরু, ঘোড়া ও তামার মেলবন্ধনটার জন্যই এই কালচারগুলো প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় কালচার হওয়ার পক্ষে আমাদের সেরা বাজি লিখেছিলাম। ঠিক কিভাবে ও কেন এই মেলবন্ধনটা সম্ভব হল দেখার আগে আমরা আর একবার সংক্ষেপে দেখে নি কেন এই বিশেষ সমাপতনে আমাদের আগ্রহ। আগেই আমরা দেখেছি যে গৃহপালিত ঘোড়া ও গরু দুইই খুবই পরিচিত শব্দ প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় শব্দভাণ্ডারে। বস্তুত এইটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের কালচারে তার আরও অনেক বেশী নিশ্চিত প্রমাণ আছে। বেদ ও আভেস্তান এ তাদের সমাজব্যবস্থার যে ছবি ফুটে উঠেছে তাতে ঘোড়া ও গরু দুইয়েরই উল্লেখ এত ব্যাপক এবং এমন পরিপ্রেক্ষিতে যাতে এই দুই প্রাণীকে কিভাবে দেখত এই মানুষগুলো তাই নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই। এমনকি ভারতীয় কনটেক্সটে এই দেখা টিকে থেকেছে দীর্ঘদিন। বহু পরের টেক্সট মহাভারতেও গো-ধন কেই সম্পত্তির পরিমাপ হিসেবে ভাবা হচ্ছে, গরুদান করা বিত্তবানদের রিচুয়াল, এমনকি রাজারাও সৈন্য সাজিয়ে গরু লুঠ করতে যুদ্ধে যাচ্ছেন (পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের শেষের যুদ্ধ বাধে দুর্যোধন বিরাট রাজার গোধন লুঠ করতে আসায়, বৃহন্নলাবেশী অর্জুন সেই বাহিনীর মহড়া নেয়)। ঘোড়াও মহাভারতের যুগ পর্যন্ত একই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, অশ্বচালনা, রথচালনা শুধুই যে সমাজে সম্মানীয় দক্ষতা তাই নয়, ঘোড়ার চিকিৎসক হওয়াও সম্মানীয় বিষয় (দুই অশ্বিনীকুমার তাইই ছিলেন, আস্তাবল রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে সহদেবের দক্ষতা উচ্চ-প্রশংসিত), অশ্বমেধ যজ্ঞ শুধু সামাজিক বা ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক রিচুয়ালও। তামার প্রশ্ন আর একটু কঠিন, কারণ তামা ধাতুটা নিশ্চিতভাবেই প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয়রা জানত, কিন্তু মূল প্রশ্নটা হচ্ছে লোহাও চিনত কিনা। কারণ লোহা চিনত- এই সিদ্ধান্তের অর্থ দাঁড়াবে তাম্রযুগ বা এনিওলিথিক (eneolithic) কালচারে না খুঁজে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় দের খোঁজা উচিৎ লৌহযুগের কালচারগুলোর মধ্যে। আগেই দেখেছি ঋগবেদে লোহার উল্লেখ প্রায় নেই, আগে রচিত বলে যে অংশগুলোকে মনে করা হয় (অবশ্যই অন্য যুক্তির জন্য, লোহার উল্লেখ নেই বলেই আগের ভাবলে যুক্তি সার্কুলার হত মাত্র ) সেগুলোয় একেবারেই নেই, যেটুকু আছে তাতে ধাতুটাকে বলা হচ্ছে 'কৃষ্ণ অয়স', যার অর্থ কালো ধাতু বা মতান্তরে কালো ব্রোঞ্জ (পরবর্তিকালে অয়স মানেই লোহা, কিন্তু বেদের সময়ের অন্তত শুরুর দিকে যে অর্থটা এইটা ছিল না সেটা কৃষ্ণ অয়স শব্দেই পরিষ্কার। কিন্তু সেসময় অয়স শব্দের মানে শুধুই ধাতু, নাকি বিশেষভাবে ব্রোঞ্জ সেইটা খুব একটা নিশ্চিত নয়)। তাই লোহা বেদের সময়ের শুরুর দিকে অন্তত একেবারে অপরিচিত না হলেও অত্যন্ত পরিচিত ধাতু না হওয়ারই সম্ভাবনা। তাই প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় কালচার এনিওলিথিক কালচার মনে করার যথেষ্ট যুক্তি আছে। একই সাথে এই তিনটে জিনিসের ব্যাপক উপস্থিতি একরকম আমাদের সৌভাগ্যই, কারণ কপার মেটালার্জি আবিষ্কার, হর্স ডোমেস্টিকেশন ও ক্যাটল ডোমেস্টিকেশন এই তিনটে জিনিসকেই আলাদা আলাদাভাবে আর্কিওলজিকাল রেকর্ডে নির্ভরযোগ্যভাবে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আর সেই আর্কিওলজিই আমাদের বলছে যে তিনটে ঘটনা ঘটেছে বেশ দুরের তিনটে আলাদা আলাদা জায়গায় এবং সেই জায়গাগুলো থেকে কখন কোন পথে বাকি অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়েছে সেটাও খুঁজে বার করা সম্ভব। আমাদের খুঁজে পাওয়া কালচারগুলোর মধ্যে খুব বেশী কালচার এমন নেই যাদের কালচার এ এই তিনটেই ছিল বলে জানা আছে, তাই প্রাগৈতিহাসিক একটা ভাষাগোষ্ঠীকে আর্কিওলজিকাল রেকর্ডে খোঁজার কাজ এমনিতে যতটা কঠিন হওয়ার কথা, এই বিশেষ ক্ষেত্রে আমরা তার চেয়ে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায়। বস্তুত আমরা দেখব যে আর্কিওলজিকাল রেকর্ড আসলে আশাতীত ভাল, কারণ তা গরু-ঘোড়া-তামার মেলবন্ধন ছাড়াও আরও জোরালো যুক্তি দেবে আমাদের, ইন্দো-ইউরোপীয় সমাজের গঠন ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে আমরা যা জানি পরবর্ত্তিকালের টেক্সচুয়াল সাক্ষ্য থেকে, তারও নিদর্শন দেখতে পাব।

    দীর্ঘস্থায়ী ফ্রন্টিয়ারের আর্কিওলজি :: ৫২০০ খ্রীঃ পূঃ - ৪২০০ খ্রীঃ পূঃ
    --------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

    আমরা আগেই দেখেছি যে কৃষিজীবী বনাম শিকারীদের কালচারাল ফ্রন্টিয়ার পুবে সরতে সরতে খ্রীঃ পূঃ ৫২০০ নাগাদ এসে পড়ে ভোউগোলিকভাবে বাগ-নীস্টার কালচারের পুবে। এইবারে আমরা দেখব কিভাবে এই ফ্রন্টিয়ার মোটামুটিভাবে একই ভৌগোলিক জায়গায় থেকে গেছিল পরের হাজার বছর। শুধু তাইই নয়, তার সাথেই আমরা দেখব কিভাবে এই ফ্রন্টিয়ার ক্রমশই আরও বেশী high-contrast sharp ফ্রন্টিয়ার হয়ে ওঠে, অর্থাৎ দুপাশের কালচারের পার্থক্য আরও আরও সুস্পষ্ট হতে থাকে। এই হাজার বছরে ফ্রন্টিয়ারের দুপাশের কালচার আর্কিওলজির টেকনিকাল অর্থে একাধিক কালচার, তাদের একাধিক নামও আছে। আমরা সেই সব টেকনিকাল কচকচি এড়িয়েই চলব মোটামুটি, আমাদের মূল আগ্রহ দুপাশের কালচারের পার্থক্যে, তবু উৎসাহীদের জন্য প্রধান কালচারগুলোর আর্কিওলজিতে টেকনিকাল নামগুলো থাকুক, ফ্রন্টিয়ারের পশ্চিমের প্রধান কালচার Cucuteni-Trypillia (বা Cucuteni-Tripolye), পুবের কালচার প্রথমের দিকে Dneiper-Donet ২ এবং পরে Sredny Stog (মাঝামাঝি সময়ে আরও কিছু কালচার আছে, তালিকা দীর্ঘ করছি না)।

    Cucuteni-Trypillia কালচার পুরোদস্তুর কৃষিজীবী, ফ্রন্টিয়ারের পশ্চিমের কালচার আগেই কৃষিজীবী ছিল, এখন আরও উন্নত পর্যায়ের কৃষিজীবী সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছে এই কালচারে। প্রচুর পরিমাণে গায়ে কারুকাজ করা মৃৎপাত্র, গায়ের ডিসাইনে বক্ররেখাভিত্তিক মোটিফ প্রধানত, মাটির তৈরি ছোট আকারের নারীমূর্তি (female figurines) এইসব পাওয়া যাচ্ছে। মাটির তৈরি নারীমূর্তি মোটামুটিভাবে লেভান্তে কৃষিকাজ আবিষ্কারের সময় থেকেই কৃষির সাথে জড়িয়ে, খুব সম্ভবত উর্বরতার দেবী বা প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হত এবং যেভাবে লেভান্ত থেকে কৃষিকাজ ছড়িয়েছে একই সাথে এই নারীমূর্তিও ছড়িয়েছে, নিওলিথিক ধর্মবিশ্বাসের প্যাকেজ হিসেবেই, এমনকি অনেক পরের (এবং অনেক দুরের) হরপ্পা কালচার অবধি। [*] আর একটা জরুরী বৈশিষ্ট্য এই কালচারে দেখা যায়, এই কালচারের বাড়ী। সাধারণভাবে এই কালচারে মানুষের বসতিতে একাধিক বাড়ী একসাথে, যেগুলো প্রায়শই মোটামুটি শক্তপোক্ত দেওয়াল বা বেড়া দিয়ে ঘেরা। বাড়ী তৈরির পদ্ধতিও আরও পশ্চিমের ডানিয়ুব উপত্যকায় কৃষিজীবী গ্রামগুলোর মতই, বাড়ীর দেওয়াল তোলার আগে বাড়ির মাটির মেঝে আগুনে পুড়িয়ে নেওয়া হত। বাড়ীতে উনুন (kiln বা oven) ব্যবহার হত, জঙ্গল কেটে বেশ বড় বড় জমিতে চাষবাসের চিহ্ন এবং খাদ্যশস্য ও পালিত পশুর মাংস ব্যবহারের চিহ্নও ব্যাপক। তামার জিনিসপত্র প্রথমদিকে অল্প ও পরে ক্রমশ বাড়তে থেকেছে, যার উৎস বলকান অঞ্চল, অর্থাৎ আরও পশ্চিমে।

    অন্যদিকে ফ্রন্টিয়ারের পুবে আমরা দেখতে পাচ্ছি একটা অদ্ভুত ঘটনা, কৃষিজীবী সভ্যতা এই কালচারাল ফ্রন্টিয়ারটা পেরিয়ে পুবে আদৌ আসেনি (খাদ্যশস্য দেখা যাচ্ছে খ্রীঃ পূঃ ৪৫০০ এ, তাও খুব অল্প), কিন্তু কৃষিজীবী সভ্যতার কিছু জিনিস পুবে গেছে, যেমন পশুপালন। গবাদি পশু পালন শুরু হয়েছে, অথচ গবাদি পশুর মাংসের সাথে সাথেই বন্য প্রাণীর হাড় বহুল পরিমাণে পাওয়া গেছে, মানুষের দেহাবশেষ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেছে কারণ পুবের কালচারে কবর দেওয়া শুরু হয়েছে ব্যাপকভাবে (পশ্চিমে যা অনুপস্থিত), সেইসব মানুষের দেহাবশেষের হাড়ের নাইট্রোজেন আইসোটোপ বিশ্লেষণ করে এটাও জানা যায় যে প্রোটিন ডায়েটের একটা বড় অংশ ছিল মাছ (প্রসঙ্গত মাছ পালন বা pisciculture তখনো সারা পৃথিবীতেই কয়েক হাজার বছর ভবিষ্যতের গর্ভে, তাই এগুলো অবশ্যই নদী বা সমুদ্র থেকে ধরা মাছ)। অর্থাৎ এই কালচারগুলো প্রাথমিকভাবে শিকারি, যারা গবাদি পশু পালনটা রপ্ত করেছে (হয়ত অসময়ে মাংসের যোগান অব্যাহত রাখতে)। কোন নারীমূর্তি নেই, বাড়ী ও আদৌ স্থায়ী ঘরবাড়ির মত নয়, অস্থায়ী ক্যাম্প জাতীয়, কোন বেড়া বা দেওয়াল নেই। উনুনের জায়গায় খোলা আগুন ব্যবহার করা হত আর পটারির ধরণও আলাদা, তা পশ্চিমের মত নয়, বরং পয়েন্টেড বেস পটারি এবং ডিসাইন মোটিফও আলাদা, পশ্চিমের বক্ররেখাভিত্তিক ডিসাইনের জায়গায় অনেক বেশী জ্যামিতিক আনুভূমিক বা উল্লম্ব রেখার ব্যবহার। অর্থাৎ সাধারণভাবে ফ্রন্টিয়ারের পুবের কালচার শিকারি-ই রয়ে গেল, কৃষি যৎসামান্য, পশুপালন কৃষির তুলনায় ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে কিন্তু তা মাছ ও বন্যপ্রাণী শিকারকে সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপিত করে দেয়নি।

    পটারির উৎস নিয়ে বিতর্ক এখনো রয়েছে। যেহেতু পয়েন্টেড বেস পটারি এই অঞ্চলে আগেও ছিল মেসোলিথিক থেকেই, তাই বেশ কিছু আর্কিওলজিস্টের মতে পটারি স্টাইলে শুধুই সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় পটারির বিবর্তনই মাত্র, এর 'উৎস' খোঁজার অর্থ নেই। সেটা সঠিক ধরে নিলেই এইটা অস্বীকার করা সম্ভব নয় যে মেসোলিথিক থেকেই এইরকম পটারি (আপাতত কার্বন ডেট অনুযায়ী সামান্য আগের সময় থেকে, যদিও তা নিশ্ছিদ্র কিছু না, কারণ এইসমস্ত কার্বন ডেট প্রচণ্ড নির্ভরযোগ্য কিছু না) আরও অনেক উত্তর-পূর্বে ভল্গা উপত্যকাতেও পাওয়া যাচ্ছে। তাই এই পটারির 'উৎস' যদি ভল্গা উপত্যকায় নাও ও হয়, তা হলেও অন্তত এইটুকু নিশ্চিত যে ফ্রন্টিয়ারের পশ্চিমে যথেষ্ট উন্নতমানের পটারি থাকা সত্ত্বেও পুবের কালচারের পটারির টেকনোলজি ও ডিসাইন মোটিফ, কোনটাই সেগুলোর মত নয়, বরং অনেক উত্তর-পূর্বের ভল্গা উপত্যকার ফরেস্ট স্টেপ কালচারের মতই। আবার ভল্গা উপত্যকার ফরেস্ট স্টেপ কালচার, যা নিশ্চিতভাবেই শিকারজীবী কালচার, মোটামুটি এই সময়েই সেখানে গবাদি পশু পালন শুরু হচ্ছে, যদিও শুওর পালনের চিহ্ন নেই। আর একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসও ভল্গা উপত্যকায় পাওয়া যাচ্ছে এবং ক্রমশ পশ্চিমে ছড়িয়ে ফ্রন্টিয়ারের পুবের কালচারেও পাওয়া যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে গৃহপালিত ঘোড়া। ঘোড়ার ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই ভল্গা উপত্যকাই উৎস, তাই নিয়ে খুব বিতর্কও নেই, কারণ বুনো ঘোড়া মেসোলিথিক থেকেই ভল্গা অঞ্চলে শিকার করা হচ্ছে, মাংসের যোগানের জন্যই ঘোড়া প্রতিপালনও সেখানেই শুরু হয় এও একরকম নিশ্চিত। মানুষের বসতির ধরণও ফরেস্ট স্টেপ এও অস্থায়ী ধরণের এবং ব্যাপকভাবে কবর দেওয়ার প্রচলনও ছিল। কবরে গেরিমাটির ব্যবহার, কবরে মৃতদেহকে হাঁটু মুড়ে একপাশে ফিরে শোয়ানো ইত্যাদি বহু বহু কালচারগত সাদৃশ্য খুবই স্পষ্ট। একটু পরের দিকে অনেক কাছে দক্ষিণ-পূর্বে, কৃষ্ণ সাগর ও ক্যাস্পিয়ান সাগরের মাঝের অঞ্চলে কিছু কালচার পাওয়া যাচ্ছে, তারাও মূলত ফ্রন্টিয়ারের পুবের কালচারের মতই।

    অর্থাৎ স্পষ্টতই, একদিকে যেমন নিওলিথিক কালচারাল প্যাকেজ এই ফ্রন্টিয়ার টপকে পুবে আসেনি, তেমনি পুবে একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে (ফ্রন্টিয়ার পেরিয়ে পুবে এসেই নীপার-ডনে অববাহিকার কালচার, আরও পুবে ও দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগর ও ক্যাপ্পিয়ান সাগরের মাঝের অঞ্চল, অনেকটা উত্তর-পূর্বে ভল্গা উপত্যকা পর্যন্ত) একটা বিশেষ কালচার আত্মপ্রকাশ করে ও হাজার বছর ধরে বিকাশলাভ করতে থাকে। এরা শিকারজীবী, কৃষিকাজ হয় আদৌ নেই বা যৎসামান্য, গবাদি পশুপালন ও সাধারণভাবে পশুপালন পশ্চিম থেকে পুবে ছড়িয়েছে, আবার ঘোড়া পালন করা ছড়িয়েছে পুব থেকে পশ্চিমে। তামার ব্যবহার পশ্চিমে বলকান অঞ্চল থেকে ফ্রন্টিয়ার পেরিয়ে ভল্গা অঞ্চল অবধি পৌঁছচ্ছে, আবার পয়েন্টেড বেস পটারি ভল্গা অঞ্চল থেকে পশ্চিমে ছড়িয়ে কালচারাল ফ্রন্টিয়ারে এসে থেমে যাচ্ছে।

    পুব-পশ্চিমে আরও একটা তফাত খুব স্পষ্ট, ধর্মবিশ্বাসের তফাত। পশ্চিমে মাতৃপুজক কৃষিজীবী সমাজ, উর্বরতার প্রতীক নারীমূর্তি বহুল প্রচলিত, মানুষকে কবর দেওয়ার প্রথা প্রচলিত নয়। পুবে নারীমূর্তি অনুপস্থিত, মানুষকে কবর দেওয়া হচ্ছে ব্যাপকভাবে, কবরে গেরিমাটির ব্যবহার, ক্রমশ সেইসব অগভীর কবরের উপরে মাটি বা পাথর দিয়ে ঢিবি তৈরি (যার আর্কিওলজিতে নাম কুরগান Kurgan, এইরকম কবরকে বলা হয় kurgan burial) এবং সেই ঢিবির আশেপাশে গোল করে পাথর সাজিয়ে রাখার রিচুয়ালও প্রচলিত হচ্ছে। আর এই কবর থেকেই দেখা যায় আরও একটা জিনিস সময়ের সাথে সাথে পুবের কালচারগুলোয় আত্মপ্রকাশ করছে, সমাজে ক্ষমতার বৈষম্য। প্রথমদিকে কবরে শুধুই মৃতদেহ থাকত, বহুক্ষেত্রে কবরগুলোও গণ-কবর, একাধিক মানুষকে একই কবরে গোর দেওয়া হচ্ছে। পরের দিকে এইরকম গণ-কবর বা কম্যুনাল পিট ও রয়েছে, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে একজনকেই গোর দেওয়া হচ্ছে একটা কবরে। আরও পরে এইরকম কবরে পাওয়া যাচ্ছে মৃতদেহ ছাড়াও অন্যান্য জিনিস বা grave goods। সাধারণভাবে হাড় বা ঝিনুকের তৈরি গয়না, এমনকি অস্ত্রশস্ত্রও। সমাজে ক্ষমতাবানদের কবর দেওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে এইরকম অন্যান্য মূল্যবান জিনিস (তখনকার সমাজের হিসেবে মূল্যবান) দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষদের তখনো কম্যুনাল পিট এ একসাথে অনেককে গোর দেওয়া হচ্ছে। ক্রমশ সময়ের সাথে সাথে এই বৈষম্য বাড়ছে। ক্ষমতাবানদের কবরে পাওয়া যাচ্ছে গরু, ভেড়া, ছাগল, ঘোড়া এইসবের খুলি বা একটা পা, যা দেখে আন্দাজ করা যায় যে মৃত্যুর রিচুয়ালের সাথে অনেক লোক ডেকে ভোজ খাওয়ানোর প্রথা এসেছে (যেমন আজও শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে করা হয়) এবং সেই ভোজের জন্যে হত্যা করা পশুর মাথা কবরেই ফেলে দেওয়ার প্রথা চালু হয়েছে।

    ক্যাস্পিয়ান সাগর ও কৃষ্ণ সাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলের পরবর্তিকালের কালচারে sacrificial alter, মানে যজ্ঞ বেদী ও পাওয়া যাচ্ছে, যাতে আগুন জ্বালিয়ে পশু বলি দেওয়া ও বলির পশুর দেহের কিছুটা অংশ দেবতার উদ্দশ্যে অর্ঘ্য দেওয়া হত।

    ফ্রন্টিয়ারের পুবের কালচারের এই বৈশিষ্ট্যগুলো শুধুই যে ভবিষ্যতে ইন্দো-ইউরোপীয় কালচার সম্পর্কে আমরা যা জানি তার সাথে মেলে তাইই নয়, একসাথে এই সবকটা এলিমেন্ট বেশ বিশেষ একটা কম্বিনেশনই, যা আর্কিওলজিতে আমাদের খুঁজে পাওয়া কালচারগুলোর মধ্যে আর কোথাওই দেখা যায়নি।

    [চলবে]

    -------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
    ----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

    [*] মারিয়া গিম্বুতা বস্তুত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর ইউরোপে ছড়িয়ে পড়াকে কৃষিজীবী, শান্তিপ্রিয়, মাতৃতান্ত্রিক, মাতৃপুজক ও অনেক বেশী সাম্যবাদী সমাজের অধিবাসীদের উপরে আগ্রাসী, বস্তুত লুঠেরা 'কুরগান' উপজাতিদের, যাদের সমাজ আদ্যন্ত পিতৃতান্ত্রিক ও তারা বস্তুত যাযাবর পশুপালক, আক্রমণের ফল বা অভিঘাত হিসেবেই দেখেছেন। প্রসঙ্গত পশ্চিম-মধ্য এশিয়ার ওপেন স্টেপকে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের আদি বাসভূমি হিসেবে তিনিই প্রথম চিহ্নিত করেন। 'কুরগান বারিয়াল', যা মাটিতে মানুষকে কবর দেওয়ার এক বিশেষ পদ্ধতি, সাধারণত মাটিতে কবরের গর্ত হত অগভীর, তার উপরে মাটিচাপা দিয়ে মাটির উপরে মাটি ও পাথর দিয়ে একটা ঢিবি করে দেওয়া হত, সেটারই নাম কুরগান--- একে ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের সাথে সংযুক্তও করার মত ও প্রথম উনিই প্রস্তাব করেন।
    পরবর্তিকালে কৃষিজীবী নিওলিথিক কালচার মাত্রেই শান্তিপ্রিয় ও মাতৃতান্ত্রিক এ ধারণা প্রমাণাভাবে বাতিল হয়। ( প্রসঙ্গত একই কথা প্রযোজ্য হরপ্পা কালচারের ক্ষেত্রেও, তা নিশ্চিতভাবেই নিওলিথিক কৃষিজীবী কালচারের উত্তরাধিকার, মাতৃপুজক সমাজও, কিন্তু তা মাতৃতান্ত্রিক আদৌ ছিল কিনা জানা নেই, শান্তিপ্রিয় কিম্বা সাম্যবাদী কিনা তাও না, যদিও হরপ্পার ক্ষেত্রে মাটি খুঁড়ে পাওয়া শহরগুলোয় বাড়ীগুলো সবই কমবেশি একই মাপের। আলাদা করে বড় বা বিলাসবহুল বাড়ী, যা শ্রেণীবিভক্ত সমাজ ও সমাজে সম্পদের বৈষম্যর পরিচায়ক, তা আদৌ নেই।)

    এ ব্যাপারে পরবর্তিকালে গিম্বুতার মতকে কেন্দ্র করে একটা বড় সংখ্যক এক্সপার্টরা ( যারা সবাই পুরুষ) যা বলেছেন বা লিখেছেন, সেগুলো আমার ব্যক্তিগত মতে বেশ আপত্তিকর। সেসবের মূল প্রতিপাদ্য এই যে মারিয়া গিম্বুতা 'ফেমিনিস্ট আর্কিওলজি' লিখতে চেয়েছিলেন, যা হাস্যকর ও স্বাভাবিকভাবেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। হ্যাঁ, এইটা ঠিকই যে গিম্বুতা পিতৃতন্ত্র বনাম মাতৃতন্ত্, এভাবেই দেখেছিলেন ও লিখেছিলেন। কিন্তু কৃষিজীবী সমাজের সাথে মাতৃপুজক সমাজের সম্পর্ক, আবার অন্যদিকে কুরগান বারিয়ালের সাথে ইন্দো-ইউরোপিয়ানদের সম্পর্ক এই দুইয়ের প্রতিই প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করা স্কলার (এই দুটোই ঠিক, এবং এখনকার স্কলারশিপের অনেকটার ভিত্তিভূমি এই দুই তত্ত্ব) যদি মাতৃতান্ত্রিক, শান্তিপ্রিয়, সাম্যবাদী এইগুলো বলতে চাওয়ায় ভুল করেও থাকেন, আমার নিজের মনে হয় যে গিম্বুতা নিজে মহিলা না হলে এটাকে সম্ভবত একজন নিঃসন্দেহে প্রথম সারির স্কলারের নিছক একটা ভুল হিসেবেই দেখা হত, 'ফেমিনিস্ট বাড়াবাড়ি'-র মুখ থুবড়ে পড়া হিসেবে নয়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১২ অক্টোবর ২০১৬ | ১৩৯৬৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বয়স - Swarnendu Sil
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:২৫59177
  • ওপরে একটা বাজে টাইপো থেকে গেল।

    "একই কথা প্রযোজ্য "ইন্দো ইউরোপীয় এবং ইন্দো আর্য খুব বেশী হলে একটা ভাষা গোষ্ঠী এবং সাংস্কৃতিক পরিচয়। তাকে জাতির সাথে কখনোই গোলানো যায়না।" --- এর মানেও ভাষাটা বা সংস্কৃতিটা উপমহাদেশে বহিরাগত এটাও নয়, আবার জাতির সাথে গোলানো যায় না মানেই এই আসার সাথে কোন জিন-ফ্লো জড়িয়ে নেই এইটাও না। "

    এখানে "... এর মানেও ভাষাটা বা সংস্কৃতিটা উপমহাদেশে বহিরাগত নয় এটাও নয়... " হবে।
  • রোবু | 213.132.214.84 (*) | ১৯ অক্টোবর ২০১৬ ১২:২৭59173
  • মন দিয়ে পড়ছি স্বর্ণেন্দু।
  • Soumyadeep Bandyopadhyay | 122.133.223.2 (*) | ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:১২59178
  • স্বর্ণেন্দুর উত্তর নিওলিথিক দূর্গা থ্রেড এ দিলাম
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৩59181
  • avi,

    সরি ওটা আমারই লেখার দোষে। প্রত্যেকটাই এরকম রেফারেন্স ই খ্রীষ্ট পূর্ব ষষ্ঠ সহস্রাব্দ থেকে ১৫০০ খ্রীষ্ট পূর্ব এর পরিস্থিতির রেস্পেক্ট এ। কেন এই সময়কালটা সেটা আরও স্পেসিফিক হবে পরের পর্বেই।

    আর বরাবর একই ছিল না ঠিকই, কিন্তু এই সময়টায় ইউরেশিয়ার প্যালিও-জিওগ্রাফিতে বড়সড় কিছু পাল্টায়নি। ওপেন স্টেপ আর ফরেস্ট স্টেপ এর বাউন্ডারি, তাইগা আর স্টেপ এর বাউন্ডারি এসব সামান্য এগিয়েছে, পিছিয়েছে, লেভান্ত এ পিরিয়ডিকালি অ্যারিড পিরিয়ড এসেছে, বৃষ্টিপাতের ভ্যারিয়েশন পাল্টেছে, কিন্তু সেগুলো হতেই থাকে, পিরিয়ডিক চেঞ্জ আর মেজর কিছুও নয়।

    হলোসিনের শেষ ৮০০০ বছর ইউরেশিয়ার ন্যাচারাল জিওগ্রাফি মোটামুটি একই আছে।

    খুবই ভাল পয়েন্ট। অনেক ধন্যবাদ। আমার এক্সপ্লিসিটলি লেখা উচিৎ ছিল।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৮59182
  • আর এই প্যালিওজিওগ্রাফি জানার পদ্ধতিগুলো খুবই নির্ভরযোগ্য।

    জিওলজি, প্যালিয়েন্টোলজি, পোলেন ম্যাপিং, প্যালিওবোটানি, ম্যামালিয়ান প্যালিও জুওলজি এইসব।
  • Rit | 213.110.242.23 (*) | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০২:১৭59183
  • ভূগোলের পরিবর্তন ইতিহাসের পরিবর্তনের থেকে ধীরে হয়। সাহারা কতদিন আগে জঙ্গল ছিল যেন? তিরিশ হাজার বছর?
  • রৌহিন | 233.223.132.73 (*) | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩১59184
  • পড়তে পড়তে অভির প্রশ্নটা আমার মনেও এসেছিল - কিন্তু তারপরেই মনে পড়ল - ওই রিত যেটা বলেছেন - আমরা যে ইতিহাস আলোচনা করছি তা বড়জোর ১০ থেকে ১৫ হাজার বছরের পুরনো থেকে ৭-৮ হাজার বছর অবধি - সে সময়ে খুব মেজর কোন ভৌগোলিক চেঞ্জ তো হয়নি। মানুষ তো নেহাৎই অর্বাচীন জীব
  • Rit | 213.110.242.20 (*) | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:২৪59185
  • তবে স্বর্ণেন্দুর স্প্যান টা দেখেই অবাক লাগে। ইঞ্জিনিয়ারিং, অংক হয়ে এখন ইন্ডোলজি। চলুক চলুক।

    এটা একটা বই হওয়া উচিত।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ১০:২৬59179
  • পর্ব ৬ দিলাম।
  • avi | 233.191.54.150 (*) | ২২ অক্টোবর ২০১৬ ১২:১০59180
  • পড়ছি। কিন্তু এই ভৌগোলিক স্থানবিচারে একটা গোল হচ্ছে। এই যে ভাবা হচ্ছে, অমুক জায়গায় অমুক বৈশিষ্ট্য, প্লেন, স্তেপস, মরুভূমি, জঙ্গল বা বিভিন্ন ফ্লোরা ফনা - এসব কি বরাবর একই ছিল? আগে হয়তো ঘন জঙ্গল ছিল, এখন তা স্তেপস বা ডেজার্ট এমন হওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। এর বেসিসে কি সিদ্ধান্তে আসা যায়?
  • avi | 37.63.188.16 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:১৬59186
  • আচ্ছা আচ্ছা, টাইম স্কেলে একটু গুলিয়ে গিয়েছিল। অনেক কিছু অনেক সহজে জানছি। চলুক।
  • রৌহিন | 113.214.138.112 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:১৮59189
  • স্বর্ণেন্দু, ক। দুটো বক্তব্যেরই সন্তোষজনক জবাব এবং সেই প্রসঙ্গে আরো কিছু আলোচনা পেলাম। চলুক - ভালো লাগছে আর কবারই বা বলব। শিখছি টাও বলা হয়ে গেছে
  • রৌহিন | 113.214.138.112 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:৩৬59190
  • ও হ্যাঁ - লাস্ট আইস এজ দশ হাজার বছর আগেই - সেটা ভুলে মেরে দিলাম কি করে? হলোসিন গ্লেসিয়াল রিট্রিট নিয়ে আমিই ফেবুগুরুতে একটা আলোচনা চালিয়েছিলাম মনে পড়ল। উফফফ
  • রৌহিন | 113.214.136.110 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৪৪59187
  • পড়তে পড়তে একটা কথা ভাবলাম - "খুব বেশী হলে কিছু জায়গায়, যেমন মধ্যপ্রাচ্যের উত্তরে, নেহাত মধ্য এশিয়া থেকে মাঝেমধ্যে চলে আসা ছুটকো ঘোড়ার পাল দেখে থাকতে পারে, সেগুলো সেই প্রাণীটার জন্যে একটা শব্দ তৈরি হয়ে সেটা বহুল প্রচলিত হওয়ার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়" - এক্ষেত্রে একটা সম্ভাবনা থাকে - কোন অজানা বা অল্প দেখা প্রাণীকে নিয়ে ফোক-লোর প্রচলিত হওয়া - সেক্ষেত্রে অপরিচিত প্রানী হলেও তার নামটা বহুল প্রচলিত হতে পারে - এমন কি যে সব জায়গায় আদৌ সেটাকে দেখা যায় না সেখানেও - নয় কি? যেভাবে রক পাখির নাম প্রচলিত - বা পক্ষীরাজ। ফোক লোরের ভূমিকা এই রিকন্সটাকশনে কতটা বা কিভাবে আসে আমি জানিনা - একটু আলোকপাত করা যায়?
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৩ অক্টোবর ২০১৬ ১২:২১59188
  • রৌহিন,

    শেষের আগের কমেন্ট প্রসঙ্গে --- না টাইম ফ্রেমটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, সেইজন্যেই avi কে "খুবই ভাল পয়েন্ট। অনেক ধন্যবাদ। আমার এক্সপ্লিসিটলি লেখা উচিৎ ছিল।" লিখলাম, নিছক সৌজন্যের খাতিরে নয়।

    আপনি যে টাইম স্কেল টা বললেন সেইটা হলেই সমস্যা হত... মানে ১০০০০- ১৫০০০ বছরের পুরনো হলে খুবই সমস্যা দেখা দিত, কারণ ইউরেশিয়ার উত্তর থেকে গ্লেসিয়ার পিছিয়েছে কমবেশি ১০,০০০ বছর আগে ( উৎসাহীরা Holocene Glacial retreat দিয়ে সার্চ করে দেখতে পারেন, সাধারণ ভাষায় লাস্ট আইস এজ এর শেষ ) । অর্থাৎ সেই সময় ইউরেশিয়ার উত্তরের বিশাল অঞ্চল, যা আগে গ্লেসিয়ারের তলায় ছিল, সেগুলো উন্মুক্ত হয় এবং অঞ্চলভিত্তিক ক্লাইমেট এর ওপর নির্ভর করে সেখানে স্টেপ গ্রাসল্যান্ড কিম্বা জঙ্গল গড়ে ওঠে। সেইটা একটা রীতিমত মেজর চেঞ্জ ইউরেশিয়ার ন্যাচারাল জিওগ্রাফি তে।

    তার পর থেকে আর বিশেষ কিছু পাল্টায়নি। তাই আমাদের সময়কালটা যে ৮০০০ বিসির ওদিকে নয়, সেইটা সত্যিই ক্রুসিয়াল তথ্য। কিন্তু আমারা নেক্সট পর্বেই দেখব যে সময়টা সেফলি সিক্সথ মিলেনিয়াম বিসি তে, অর্থাৎ হলোসিন রিট্রিট এর ২০০০ বছর পরের ঘটনা, তারপর থেকে আজ অবধি ক্লাইমেট এর যা ভ্যারিয়েশন তা মানুষের জন্য অনেক সময়ই ইম্পর্ট্যান্ট। নানা জায়গায় বৃষ্টি কমে আসতে থাকা, তাই কৃষি-প্রধান সেটলমেন্ট গুলো অন্য জায়গায় সরে যাওয়া, এসব ঘটেছে ( যেমন সিন্ধু অববাহিকা, আরও অনেক উদাহরণ আছে )। কিন্তু ন্যাচারাল জিওগ্রাফিতে বড়সড় চেঞ্জ ঘটায়নি।

    আর ফোকলোর প্রসঙ্গে, হতে পারে হয়ত। লিঙ্গুইস্টিকালি বলা সম্ভব না, কারণ ইন্ডিভিজুয়াল শব্দের আদি মানে কি ছিল তাই নিয়েই নাকানি-চোবানি, তাই ফোকলোর রিকনস্ট্রাক্ট করার প্রশ্নই নেই। এমনিও ওই অংশটা লেখা খানিক সাবধানী হয়ে। বস্তুত বুনো ঘোড়া নেটিভ স্পিসিস নয় এরকম জায়গাগুলোর সাথে ইউরেশিয়ায় যেখানে ঘোড়া ছিল সেগুলোর বাউন্ডারি প্রায়শই জিওগ্রাফিকাল অবস্টাকল। যেমন ধরুন উপমহাদেশের ক্ষেত্রে হিন্দুকুশ। কোন একটা বুনো ঘোড়ার পাল খামকা মধ্য এশিয়ার স্টেপ ছেড়ে যদি যা এতদূর আসেও, খামকা তারা খাইবার পাস পার হবে কেন? আর অনেকগুলো সেঞ্চুরির মধ্যে একটা-দুটো যদি বা আদৌ হয় ও, সেযুগে হিউম্যান সেটলমেন্ট আজকের মত ডেন্স নয়। বিশাল এলাকায় ১০ টা কুঁড়েঘরের লোক থাকত। এরকম কোন লোকের পক্ষে সেই রেয়ার ঘোড়ার পাল দেখে ফেলা ও মিথিকাল স্ট্যাটাস পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যাই হোক, এমনিতেও আমাদের ক্ষেত্রে এত সূক্ষ্ম তফাত করার দরকার ও পড়বে না।

    আদি ভাষাটা যদি আদৌ বুনো ঘোড়া বুঝিয়েও থাকে, তাহলেও সেটা প্রচণ্ড পরিচিত প্রাণী। কারণ ঘোড়ার জন্য শব্দটার রুট দিয়ে লোকের নাম হচ্ছে। আর তার ব্রাঞ্চগুলোকে প্রথম যেখানে যেখানে পাচ্ছি তারা সব্বাই পোষা ঘোড়া শুধু জানত নয়, ভীষণ ভালভাবে জানত। বৈদিক এ অশ্বীন মানে horse trainer। তাই আদি প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান রা ওরকম হাফ মিথিকাল ফোকলোর হিসেবে জানত, এটা বস্তুত অসম্ভব, কারণ তাহলে আবারো প্রত্যেকটা ব্রাঞ্চিং এ আলাদা আলাদা ভাষার লোকগুলোকে ডোমেস্টিকেটেড হর্স জানত এমন পপুলেশনের সংস্পর্শে আসতে হবে, প্রতিক্ষেত্রেই সেই পপুলেশনের ( বা পপুলেশনগুলোর ) ঘোড়া সংক্রান্ত শব্দ ধার না নিয়ে নিজেদের আদি মিথিকাল অ্যানিম্যাল এর শব্দটা পোষা ঘোড়া বোঝাতে ব্যবহার করতে হবে, এবং তাদের থেকে হর্স ডোমেস্টিকেশন ও হর্সরাইডিং শিখে নিয়ে তারপর নিজেদের নিজেদের জায়গায় ( মানে যেখানে আমরা তাদের হিস্টোরিকাল রেকর্ডে পাচ্ছি ) সেখানে অ্যাপিয়ার করতে হবে। হাইপথেসিসটা অপ্রয়োজনীয় বেশী জটিল মনে হচ্ছে না? তার চেয়ে প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান রা ঘোড়া চিনত ও রোজ দেখতে পেত, তারাই ঘোড়া ডোমেস্টিকেট করে, এইটা অনেক সহজ হাইপথেসিস, যা আমাদের এভিডেন্স কে অনেক এফিসিয়েন্টলি ও একোনমিকালি ব্যাখ্যা করতে পারে।

    রিত- কে,
    তোমার শেষ কমেন্ট এর প্রথম লাইনটার মত লাইন লেখা বন্ধ কর, আমার পক্ষে চূড়ান্ত এমব্যারাসিং।
    আর তিরিশহাজার বছর আগে সাহারা গ্রাসল্যান্ড ছিল। পিরিয়ডিকালি একদম মরুভূমি ও অ্যারিড বা সেমি-অ্যারিড গ্রাসল্যান্ড এই দুটোর মধ্যে ওসিলেট করেছে।
    কিন্তু ঘন জঙ্গল পেতে গেলে আর হাজার বছরের ইউনিট এ হবে না, এমনকি লক্ষ বছরের অর্ডার এও না।
    একটা বহুল প্রচলিত মত হচ্ছে ঘন জঙ্গল ছিল শেষ ২-৩ মিলিয়ন বছর আগে ( ২০-৩০ লক্ষ বছর আগে ) । যদিও অন্য পেপারও আছে যা দেখিয়েছে যে মরুভূমি হতে থাকার প্রসেস ৭০ লক্ষ বছর আগে শুরু হয়েছিল, অর্থাৎ শেষ ঘন জঙ্গল ছিল আরও আগে।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ২৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:৪৯59191
  • এইটে গোলা হচ্চে।
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:৩৭59192
  • পাঠক-পাঠিকারা হতাশ হয়ে পড়েননি তো?
    আজ আর একটা পর্ব দেব... বোরিং লাগলে, অযথা লম্বা বা ফেনানো মনে হলে অবশ্যই জানাবেন কিন্তু। কোন জায়গার যুক্তি বোঝা না গেলে বা লেখা অপরিষ্কার লাগলে তো বটেই।
  • রোবু | 213.132.214.86 (*) | ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ১০:১৫59193
  • খুবই মন দিয়ে পড়ছি। চালিয়ে যান।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:১৫59194
  • না না পড়ছি তো।, মন দিয়ে পড়ছি। বিশেষ কিছু বলার নেই তাই বলছি না।
  • রৌহিন | 113.42.127.230 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:৩৭59198
  • পর্ব ৭ ও যথারীতি দুরন্ত। আর পি এম কে ক
  • a | 69.102.49.166 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:৪৮59195
  • এইটা পড়ার জন্যেই একবার Kঅতে ঘুরে যাই। চলিয়ে খেলুন
  • PM | 37.97.99.171 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৯:০০59196
  • আরে উত্তাল লেখা চলছে তো !!!

    আপনি একদম আপনার মতো লিখুন। লেখা শেষ করে বই বার করার আগে পাঠকদের মতামত নেবেন, যদি তার ভ্হিত্তিতে মনে হয় যে কোথাও পরিবর্ত্তন দরকার তো করবেন।

    কিন্তু আপতত ঃ শুধু লেখা আর পাঠকের প্রশ্নের উত্তর ঃ)
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ১০:০৩59197
  • পর্ব ৭ দিলাম
  • anirban | 92.13.194.31 (*) | ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৮:৫৫59199
  • ডুবে গিয়েছিল, তুলে দিলাম। এটাকে ডোবানো যাবে না। ঃ)
  • Robu | 11.39.56.126 (*) | ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৫:২৪59200
  • কালিপুজোর ছুটি নিলেন স্বর্ণেন্দু?
  • রৌহিন | 113.214.138.106 (*) | ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:১৯59201
  • অষ্টম গর্ভের জাতকের পথ চেয়ে বসে আছি যে
  • avi | 113.220.208.74 (*) | ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:৩১59202
  • আজ দেখলাম ইউটিউবে ফর্মেশন অব হিমালয় নামে একটা পুঁচকে ক্লিপের তলায় একজন লিখেছেন, ভারত মোটেই বাইরে থেকে ভেসে এসে নেপালের তলায় ধাক্কা দেয় নি, ভারত বরাবর ওখানেই ছিল। সুপ্রাচীন আর্য সভ্যতা ইঃ। আরেকজন জোরসে এসে চীনকে ধাক্কা দেওয়ার ব্যাপারে বেশ উল্লাস প্রকাশ করেছেন।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:৫৬59203
  • হেইঁয়ো হেইয়ো, জোরসে মারো, হেঁইয়ো । মানে ধাক্কা। কন্টিনেন্টাল প্লেটে প্লেটে। ঃ-)
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৬:৫৮59204
  • এই ঈ ঈ ঈ ঈ, মিশটেক।
    কন্টিনেটাল না, কন্টিনেন্টাল না, টেকটনিক। ঃ-)
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৭:১২59205
  • সব্বাইকে,
    এখানে কিছু না লিখে হাওয়া হয়ে যাওয়ার জন্যে সরি চাইছি।
    রোবুই ঠিক ধরেছেন... আদার হাফের সাথে কালীপূজো কাটাতে শহরের বাইরে ছিলাম বৃহস্পতিবার থেকে, আজ রাতে অষ্টম পর্ব দেব... মানে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করব। একান্তই না হলে কালকে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন