এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বসন্ত এসে গেছে ...

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ মার্চ ২০১৭ | ৪২৫৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • গল্পটা ঠিক গুরমেহরকে নিয়ে শুরু হয় নি। শুরু হয়েছে তার দুদিন আগে, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রামজাস কলেজে দুদিনব্যাপী ডিবেটের অনুষ্ঠান ছিল, বিষয় ছিল প্রতিবাদের সংস্কৃতি। তো, সেই ডিবেটের দ্বিতীয় দিনে আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার, উমর খালিদ।

    এই অবধি পড়েই নিশ্চয়ই আন্দাজ করে নিয়েছেন কেন অচল সিকি আবার এক বছর বাদে বসে গেছে মন কি বাত লিখতে? বিচ্ছিন্নতাবাদী, রাষ্ট্রবিরোধী, আফজল গুরুর সমর্থক, “ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে” বলে স্লোগান দেওয়া “ভামপন্থী” উমর খালিদকে সেদিন বলতে না দেওয়ায় সিকি নিশ্চয়ই প্রচণ্ড ব্যথিত? নিশ্চয়ই ফ্রিডম অফ স্পীচ নিয়ে সাতকাণ্ড লিখতে বসেছে আজ?

    নাঃ, সেই রকমের ব্যথা পাবার মত কিছু হয় নি। তেমন কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে আমি আজ লিখতে বসি নি। বিজেপি যে আদর্শে দীক্ষিত রাজনৈতিক দল, তাদের জাতীয়তাবাদের ধারাপাত মহারাষ্ট্রের একটি বিশেষ শহরে যে দলটি দ্বারা রচিত হয়, তাদেরই ছাত্র সংগঠন এবিভিপি যে এর চেয়ে কোনও উন্নত প্রক্রিয়ায় ভিন্নস্বরকে চুপ করিয়ে দিতে শেখে নি, সে আমরা আজ থেকে নয়, অনেক অনেক আগে থেকে জেনে এসেছি। এর চেয়ে উন্নত শিক্ষা এদের নেই, তাই এ বিষয়ে বিশেষ কিছু না বলাই ভালো। মুশকিল হয়ে গেল মাঝখান থেকে গুরমেহর কৌরের একটি ছোট পোস্টার হাতে ছবি বাজারে প্রকাশিত হয়ে যাওয়ায়। এবিভিপির সুশিক্ষিত ছাত্রদের হাতে মার খেয়ে তখন দিল্লি ইউনিভার্সিটির একাধিক ছাত্রছাত্রী জখম, একজন অধ্যাপককে মাটিতে ফেলে পেটে লাথি মারা হয়েছে, তিনি এখন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, ইন্টারনাল ইনজুরি নিয়ে – বেশ একটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে ফেলা গেছে, আর কোনও শালা এই শুওরের বাচ্চা কমিউনিস্ট দেশদ্রোহীদের রামজাস কলেজে দ্বিতীয়বার আনার কথা ভুলেও ভাববে না, সেই সময়ে কিনা – মাত্র কুড়ি বছর বয়স্ক একটা মেয়ে হাতে একটা পোস্টার নিয়ে ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিল – যাতে লেখা, এবিভিপি, আমি তোমাদের ভয় পাই না, আমি একা নই – সারা ভারতের ছাত্রছাত্রী আমার সাথে আছে? ভাবা যায়?

    মানে, এবিভিপি বা আরএসএস – এমনিতেই অত্যধিক মাত্রায় ফিউডাল মনোবৃত্তির দল, মনুবাদকে মাথায় নিয়ে চলে, এদের দলের মেয়েরাও আদর্শ ভারতীয় নারীর সংস্কৃতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেন, যার পরিণতি হিসেবে আমরা পাই ইয়েল কলেজ থেকে পাশ করে মন্ত্রী হওয়া দুর্গাভক্ত শ্রীমতি স্মৃতি ইরানী জাতীয় রুচিশীল সংস্কৃতিবান মহিলাদের, সেখানে একটি কচি খুকি, হুট্‌ করে বলে বসল কিনা, নট অ্যাফ্রেড অফ এবিভিপি? এমনি কোনও মেয়ে বললে হয় তো ভারতমাতার নামে জয়ধ্বনির নিচে চাপা পড়িয়ে দেওয়া যেত আওয়াজটা, কিন্তু এই মেয়েটি আবার এমনি যে-সে মেয়ে নয় – রীতিমত শহিদের বেটি। এর বাবা, মনদীপ সিং ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধের শহীদ। ও, ও, সরি, সরি, মাপ করবেন, ভারত সরকার “শহীদ” শব্দটি সরকারিভাবে গ্রাহ্য করে না। মৃত সৈন্য মনদীপ সিং।

    ভাবছেন, ইয়ার্কি মারছি? আজ্ঞে না, ইয়ার্কি নয়, খাঁটি সত্যি কথা। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনির কোনও কর্মী, কোনও রকমের অ্যাকশনে যদি মারা যান, তাঁকে সরকারের তরফ থেকে “শহীদ” আখ্যা দেবার কোনও অবকাশই নেই – মাত্র তিন মাস আগে লোকসভায় দাঁড়িয়ে এই তথ্যটি দিয়েছেন, আর কেউ নয়, স্বয়ং গৃহরাজ্যমন্ত্রী কিরেন রিজিজু।

    "The ministry of defence has informed that the word ‘martyr’ is not used in reference to any of the casualties in Indian armed forces. Similarly, no such term is used in reference to the central armed police forces and Assam Rifles personnel who are killed in action or on any operation."

    ৬ই ডিসেম্বর, ২০১৬, লোকসভায় দাঁড়িয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে এই বক্তব্য রাখেন মাননীয় মন্ত্রী শ্রী কিরেন রিজিজু, যা লোকসভার রেকর্ডে রাখা রয়েছে। তো, সেই হিসেবে কারগিল যুদ্ধে “মৃত” সৈনিক মনদীপের কন্যা গুরমেহরের এই বয়ান ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে ন্যাশনালিজমের ঠিকাদারদের, কারণ এতদিন অবিসংবাদিতভাবে তারা নিজেরাই মনে করত সেনাবাহিনির গর্ব আর দেশের সম্মান রক্ষা করার একমাত্র হর্তাকর্তাবিধাতা, ন্যাশনালিজমের দেশব্যাপী একমাত্র ঠিকাদার, সেখানে একজন মৃত সৈনিকের মেয়ে কিনা, দেখা যাচ্ছে, আরেকটা ভিডিও দিয়ে রেখেছে সোশাল নেটওয়ার্কে – যাতে সে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড তুলে দেখাচ্ছে, তাতে লেখা অনেক কিছু, তার মধ্যে লেখা ইংরেজিতে ন’টি শব্দ – বাংলা করলে দাঁড়ায়, পাকিস্তান আমার বাবাকে মারে নি। মেরেছে যুদ্ধ।

    আর যায় কোথায়! কলেজ ক্যাম্পাসে এবিভিপির নিজেদের জাতীয়তাবাদী লজ্জা নিবারণের একমাত্র ডুমুরপত্র ছিল এই “ভারতীয় সেনা, শহীদ হবার জন্য বর্ডারে দাঁড়িয়ে রাত জাগছে” রেটোরিক, সেইটাও কিনা ছিনিয়ে নিয়ে গেল জালন্ধরের এক তরুণী, তাও আশপাশের রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মরসুমে? অতএব, নামিয়ে দাও নিজেদের পুষে রাখা আইটি সেল, যারা ইদানিং “আইএসআই” স্বীকৃতি পেয়েছে – জানেন নিশ্চয়ই? এ আইএসআই ভারতীয় মানক ব্যুরো নয়, পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সাথে যোগসাজস পাওয়া গেছে বিজেপির আইটি সেলের কর্মীদের, পরপর ধরা পড়েছে তারা।

    ভিডিওটি নতুন নয়। এটি প্রথম ফেসবুকে দেওয়া হয় গত বছর এপ্রিল মাসে, Voice of Ram পেজ থেকে, যেটি চালায় রাম সুব্রহ্মনিয়ম নামে এক যুবক। কিছুদিন আগে পর্যন্ত তার পেজের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে শান্তির বার্তার আদানপ্রদান করা। সেই পিসকিপিং প্রসেসের মধ্যে দিয়েই এসেছিল গুরমেহরের এই ভিডিওটি। আমি যে হেতু শুরু থেকেই এই পেজটির ফলোয়ার, তাই ভিডিওটি তখনই আমার চোখে পড়েছিল, দেখেছিলাম, শেয়ার করেছিলাম নিজের ফেসবুক ওয়ালে, ভালো লেগেছিল বেশ। একটা মেয়ে তার নিজের জীবনদর্শনের পরিবর্তনের কথা বলছে নীরবে, যা কিনা অনেকটা আমারও মনের কথা। গত বছর মন কি বাত বাড়তি পর্বে আমি হুবহু এক কথাই লিখেছিলাম, দেশ কি মারে? দেশ মারে না। যে আতঙ্কবাদ, উগ্রপন্থার দোষে দোষী বানানো হচ্ছে পাকিস্তানকে, সেই উগ্রপন্থার বলি কি তারা নিজেরা নয়? কম রক্ত ঝরে সে দেশে? নেহাত দেশটার নাম পাকিস্তান, তাই ফেসবুকে “মার্কড সেফ” খেলা জমে ওঠে না, “জে সুইস করাচী” ট্যাগলাইনে ভরে ওঠে না ফেসবুকের প্রোফাইল। মারে কিছু স্বার্থান্বেষী যুদ্ধবাজ রাজনীতিবিদরা, তাদের বীরত্ব দেখানোর তাগিদে, দেশের মধ্যে “জাতীয়তাবাদ”এর সুড়সুড়ি দিয়ে দেশের লোককে ক্ষেপিয়ে তোলার তাগিদে। সেনসেশন তৈরি করা হয় দেশভক্তির নামে, দু দেশেই, ঘৃণা ম্যানুফ্যাকচার করা হয়, তার পরিণতি হিসেবে এক দিক মদত দেয় উগ্রপন্থায়, অন্যদিক বছর বছর তার সামরিক অস্ত্রসম্ভার বাড়িয়ে চলে। যুদ্ধ হলেও সেনা মরে, যুদ্ধ না হলেও মরে। দু দিকেই।

    সে কথা থাক। হচ্ছিল গুরমেহরের কথা। প্রায় ছ মাস আগের একটি ভিডিও, যাতে উনিশ বছুরে তরুণীটি বলছে, দু বছর বয়েসে বাবাকে হারিয়েছি, বাবা কী জিনিস জানতে পারি নি। খুব রাগ হত, পাকিস্তান আমার বাবাকে মেরেছে – মনে করতাম। আমার যখন ছ বছর বয়েস, একটা ছুরি নিয়ে এক বোরখা পরা মহিলাকে মারতে গেছিলাম, মনে করেছিলাম আমার বাবার মৃত্যুর জন্য সে-ই দায়ী। তার পরে মা আমাকে বোঝায়। এখন বুঝি, পাকিস্তান মারে নি আমার বাবাকে, মেরেছে যুদ্ধ। চাইলে এই সমস্ত যুদ্ধ এড়ানো যেত, এড়ানো যায়। আমি এখন তাই শান্তির পক্ষে কথা বলি। যদি শত্রুতা ভুলে আমেরিকা আর জাপান বন্ধু হতে পারে, দু দুটো বিশ্বযুদ্ধের তিক্ত স্মৃতি ভুলে গিয়ে জার্মানি আর ফ্রান্স বন্ধু হতে পারে, তা হলে আমরা কেন পারব না?

    কেউ বিশেষ দ্যাখে নি। জাতীয়তাবাদী ভক্তের দলের চোখ এড়িয়ে গেছিল এই ভিডিওটা। কোনও শোরগোল ওঠে নি তখন, অথচ, “অ্যান্টিন্যাশনাল” শব্দটাকে কয়েন করে তখন দিল্লি সমেত গোটা দেশ উত্তাল। বেশ কয়েক মাস আগে ছাড়া পেয়েছে কানহাইয়া, উমর খালিদ, অনির্বাণ, তাদের বিরুদ্ধে সিডিশনের একটি চার্জও প্রমাণ করা যায় নি, তাতেও ভক্তদের হুঙ্কার থামানো যায় নি, এদিকে উরিতে তখন ঘটে গেছে সন্ত্রাসবাদী হামলা, কাশ্মীরে নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে মারা গেছে বুরহান ওয়ানি, মাত্র দেড় মাস আগে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ ঘোরালো ছিল।

    কিন্তু গুরমেহরকে কেউ চিনত না তখন। সমস্ত ফোকাস তখনও ছিল জেএনইউয়ের দিকে, তাই কে গুরমেহর, কী উদ্দেশ্যে তার ভিডিও বানানো হয়েছে, কেউই খোঁজ রাখে নি। আমি নিজেও ভুলে গেছিলাম নামটা। মনে পড়ল যখন এই কদিন আগে, টানা তিনদিন সভ্য জগত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পরে আমি আবার নেট কানেকশনের জগতে ফিরে এসে পুরনো ফেসবুকের স্টেটাস পড়তে শুরু করলাম, ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি। ততদিনে এবিভিপি তাদের অতিপ্রিয় মনুস্মৃতির বাতলানো পথে মেয়েটিকে “ঠোস জওয়াব” দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। শুনলাম গ্রাফিক চিত্রসহ তার কাছে মেসেজ গেছে, কী ভাবে তাকে রেপ করা হবে। এত বড় সাহস, যে তার শহীদ বাবা শুধু নয়, দেশের যাবতীয় আর্মি জওয়ানদের অপমান করে? বলে কিনা এবিভিপিকে ভয় করে না, এবিভিপির বিরুদ্ধে কথা বলে? ততদিনে ভক্তের দল খুঁজে পেয়ে গেছে সেই ছ’মাসের পুরনো ভিডিও, তার আগেপিছের কোনও কথা নিয়ে তো ট্রোল করা চলে না, তাই বেছে নেওয়া হল ন’টি শব্দ, পাকিস্তান ডিড নট কিল মাই ড্যাড, ওয়ার কিলড হিম। ট্রোলের বন্যা বয়ে গেছে, “রসিক” হিসেবে টুইটারে খ্যাত ক্রিকেটার বীরেন্দ্র সেহওয়াগ তাঁর রসবোধের পরিচয় দিয়ে দিয়েছেন টুইটারে, সেটিকে রসিকতা মনে করে শেয়ার করে ফেলেছেন আর এক বলিউডের অভিনেতা। কিরেন রিজিজু বড় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তখন, মেয়েটির মন কে বিষাক্ত করল, শালা লেফটিস্টগুলো করেছে নিশ্চয়ই, নইলে কেন বীর শহীদ সেনানীদের এই মেয়েটি অপমান করবে? লক্ষ্য করুন, সেই কিরেন রিজিজু, যিনি তিন মাস আগেই লোকসভায় দাঁড়িয়ে অন রেকর্ড বলেছেন, “শহীদ” শব্দটি মৃত ভারতীয় সেনাদের ক্ষেত্রে ভারত সরকার অনুমোদন করে না।

    আক্রমণের লক্ষ্য যখন একটি মেয়ে, তখন তো আক্রমণ করা অনেক সহজ হয়ে দাঁড়ায়। খানকি মাগী বল্‌, ওর শরীরের বাঁকের বিশদ বর্ণনা দে, জড়িয়ে দে ওর নাম র‍্যান্ডম কোনও একটা ছেলের সাথে, তা সে যে বয়েসের হোক না কেন, ধর্ষণের হুমকি দে, এতে যা সুখ পাওয়া যায়, সে সুখ তো অন্য কিছুতে মেলে না।

    গুরমেহর আজ পরিচিত মুখ, চাপে পড়ে গুরমেহরের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে বাধ্য হয়েছে দিল্লি পুলিশ, তার পরেও সে দিল্লি ছেড়ে আপাতত চলে গেছে পঞ্জাবে নিজের বাড়িতে।

    আমরা, যারা তত-পরিচিত-নই সাধারণ মানুষরা, যারা একই রকম ভাবে সোশাল নেটওয়ার্ক সাইটে বিচরণ করি, তাদের সুরক্ষার ভার কে নেয়?

    গুরমেহরের খুব কাছাকাছি ধরণের একটা ঘটনা ঘটে গেল আমারই পরিচিত সার্কলে। দু বছর আগে এক ব্যক্তি রামকৃষ্ণ-সারদামণি-বিবেকানন্দ-নিবেদিতার সম্ভাব্য যৌনজীবন নিয়ে একটা পোস্ট করেছিল ফেসবুকের একটা ক্লোজড গ্রুপে। যদিও ঠিক মুখরোচক কেচ্ছা বানানোর উদ্দেশ্যে সেটা সে লেখে নি, বরং সেই ধরণের কিছু লেখাপত্তর নিয়ে বাজারে ইতিমধ্যেই দু তিনটে বই আছে, কিন্তু ভক্ত তো ভক্ত। পূজ্য ভগবানের যৌনজীবন নিয়ে কাটাছেঁড়া তাঁরা মেনে নেবেন কেন? এই কলকাতা শহরেই অনেকদিন আগে বাংলা দৈনিকের রবিবাসরীয়র শয়ে হয়ে কপি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল, কারণ সেখানে সেই সপ্তাহের বিষয় ছিল নেতাজির বিয়ে এবং এমিলিয়া শেঙ্কলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় থেকে পরিণয়ের কাহিনি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, যিনি নাকি মরেন নাই, ঘরেও ফেরেন নাই, তিনি বিবাহ করিতে পারেন, এইটা হজম করবার মত পাচনশক্তি তখনকার ভক্তদের ছিল না। নেতাজি যেমন বিয়ে করতে পারেন না, তেমনি লেনিনের নিতম্ব থাকতে পারে না (কোনও এক সিনেমায় লেনিনের চরিত্রটির পেছনদিক নগ্ন অবস্থায় দেখানো হয়েছিল, তাতে লেনিনভক্তরা খচে গেছিল বেদম), রামকৃষ্ণ বা সারদামণিরও যৌনজীবন থাকতে পারে না।

    কিন্তু কেউ যদি ভুল করে লিখে ফেলে সেই সব নিয়ে? নব্বইয়ের দশকে কাগজ পোড়ানো হয়েছিল, কিন্তু এখন তো সোশাল মিডিয়ার যুগ। হরদম সেখানে বসছে ক্যাঙারু কোর্ট, নেমিং অ্যান্ড শেমিংএর আসর, আর কোনও পুরনোই এখানে পুরনো হয় না। কোনও এক ভক্তের চোখে পড়ে সেই দু বছর আগের পোস্টটি, তিনি সেটির স্ক্রিনশট নিয়ে হিংস্রভাবে শেয়ার করতে শুরু করেন, এবং এক দিনের মধ্যে শুধু ফেসবুক নয়, আরও বিভিন্ন সোশাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মে সেই স্ক্রিনশট ভাইরাল করে দেওয়া হয়। ফলে, বিভিন্ন ধরণের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত ভক্তের দল ছেলেটির মুণ্ডু চাইতে শুরু করে, কেউ অতি সাবধানে তার বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর খুঁজতে শুরু করে, এবং আক্রমণের লক্ষ্য অচিরে খুঁজে নেয় সম্ভাব্য মহিলা টার্গেটদের। তার স্ত্রী, তার মা, তার বোনকে নিয়ে মুখরোচক যৌনগন্ধী কমেন্ট চারদিকে ছড়াতে তো শুরু করেই, ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছিলাম, এ সমস্তকিছুই হয় প্রথমে গণহারে রিপোর্ট করে তার প্রোফাইল সাময়িকভাবে ডিঅ্যাক্টিভেট করানোর পরে, যখন ছেলেটির নিজের তরফে ডিফেন্ড করবার মত কোনও প্ল্যাটফর্মই আর নেই। এর পরে আক্রমণ শুরু হয় যে গ্রুপে দু বছর আগে কমেন্টটি পোস্ট হয়েছিল, সেই গ্রুপের সঞ্চালিকার ওপর। যেহেতু তিনি লিঙ্গচিহ্নে মেয়ে, অতএব, আক্রমণের পদ্ধতিটা স্বাভাবিকভাবেই সহজ হয়ে যায়। রেপ থ্রেট থেকে শুরু করে এমন সুন্দর পানু ছড়া বানিয়ে বাজারে ছাড়া হয়, যাতে আরো আরো বেশিমাত্রার লোক মজা লুটতে পারে। ভার্চুয়ালি একটা মেয়েকে যতরকম ভাবে বুলি করা সম্ভব, সবই করা হল। আর এইসব ছড়া-কবিতা, কোনও অর্ধশিক্ষিত গোঁয়ারগোবিন্দের লেখা নয়, রীতিমত উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির যৌথ রচনার ফসল।

    ভক্তি, অন্ধই হয়। যে জিনিস তর্কের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে, এমনকি দরকার হলে শালীন বাদানুবাদের মাধ্যমেও নিষ্পত্তি করে ফেলা যায়, ভক্তেরা সেখানে ব্যবহার করে লাঠি, ইঁট, বেল্ট, আর ভার্চুয়াল ট্রোল ব্রিগেড। ছোট করে বলতে গেলে, ভায়োলেন্স। আলোচনায় লাগে যুক্তির প্রয়োগ, ভক্তি তো যুক্তির পথে হাঁটে না।

    এমন কি, এ নিয়ে সরব হবার পরে এ-ও শোনা গেছে, ইঁট ছুঁড়লে তো ভাই পাটকেল খেতেই হবে। অমন নোংরা একটা জিনিস লিখলে তো ব্যাকল্যাশের জন্য তৈরি থাকতেই হবে। ভক্তদের সেন্টিমেন্টকে আক্রমণও করবে, তারপরে পালটা গালাগাল বা রেপ থ্রেট বা ডেথ থ্রেট খেলে বা তোমার নামে পানু ছড়া লিখে শেয়ার করলে তুমি আঁচল আঙুলে পাকিয়ে নাকে কাঁদবে, দুটো তো একসাথে চলে না বাপু!

    তাই হবে হয় তো। বাক্‌স্বাধীনতা, ফ্রিডম অফ স্পীচ বলে একটা শব্দবন্ধ আছে বলে জানি, কিন্তু কোনখানে, কতদূরে তার সীমারেখা, কখন সেটা বাক্‌স্বাধীনতা আর কখন সেটা অ্যাবিউজ, কে তা নির্ধারণ করবে? মানুষের ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধির ওপরেই সেসব নির্ভর করে বলে জানি, তবে আজকালকার দিনে বিচারবুদ্ধিরও এত বেশিমাত্রার ভ্যারিয়েশন দেখা যায়, মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে অবাক হতেও ভুলে যাই।

    ছেলেটির লেখাটি আপত্তিকর ছিল, মেনে নিলাম। সে যা লিখেছিল, সেটা রামকৃষ্ণ-সারদামণি-বিবেকানন্দ ভক্তদের আহত করার পক্ষে যথেষ্ট ছিল, এবং সেটার প্রতিবাদ প্রতিবাদের ভাষাতেই করা যেতে পারত। ইন ফ্যাক্ট, ছেলেটি পরে জানিয়েছিল, সে কেন লিখেছিল সেই লেখাটি – ফেসবুকের সেই গ্রুপে কিছু উগ্র সদস্য মহম্মদকে নিয়ে যৌনগন্ধী কটূক্তি করে চলেছিল। এই ছেলেটি তাতে আপত্তি জানালেও তাতে লাভ হয় নি, ছেলেটি তাতে জানায় যে এতে মুসলমানদের সরাসরি অনুভূতিতে আঘাত হানা হচ্ছে। তাতেও সেই মহম্মদ-ব্যাশিং তো কমেই না, বরং চলতে থাকে। তাদের একটা শিক্ষা দেবার জন্য ছেলেটি তখন এই লেখাটি লেখে, রামকৃষ্ণ-সারদামণিকে নিয়ে, এইটা বোঝাবার জন্য যে তাদের সম্মাননীয়, আরাধ্য কাউকে নিয়ে কটূক্তি করলে সেটা কতটা আঘাত হানতে পারে অনুভূতিতে। এবং, আবারও, লেখাটি কাল্পনিক কিছু ছিল না, বাজারচলতি দু তিনটি বইয়ে এই নিয়ে বিস্তারিত চর্চাও আছে। বইগুলি খোলাবাজারেই কিনতে পাওয়া যায়।

    কিন্তু ভক্তরা তো ক্রিটিসিজম পড়েন না – তাঁরা ভক্তিমার্গেই বিচরণ করেন। অতএব, যা হবার তাই হল। প্রথমে ছেলেটির বলার প্ল্যাটফর্ম কেড়ে নেওয়া হল, তারপরে শুরু হল তার পরিবারের লোকজনকে জুড়ে স্ল্যান্ডারিং, এর পরে লেখাটি “পোস্ট হতে দেওয়ার” অপরাধে সঞ্চালিকার নামে সিরিজের পর সিরিজ আদিরসাত্মক চুটকি, ছড়া। কে না জানে, এই পদ্ধতিতে একটা মেয়েকে যত সহজে “কাত” করে দেওয়া যায়, যে অনির্বচনীয় ধর্ষকাম মর্ষকাম অনুভূত হয়, তেমনটি আর কোনও কিছুতে হয় না!

    ভার্চুয়াল দুনিয়ায় দিল্লি পুলিশও নেই, আর কিরেন রিজিজু বা অরবিন্দ কেজরিওয়ালও বাংলা পড়েন বলে শুনি নি – ফলে এ রকম হাজার হাজার সাইবার বুলিয়িংএর ঘটনা ঘটে যেতেই থাকে লোকচক্ষুর আড়ালে।
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
    যাক গে। হচ্ছিল গুরমেহরের কথা, আর ছাত্রদের প্রোটেস্ট মার্চের কথা। আমি তখন একলা বেরিয়ে পড়েছিলাম আমার বাইক নিয়ে, বরফের দেশে। ফেরার পথে, ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি, যখন ফোনের নেটওয়ার্ক পেলাম, জানলাম কী কী হয়ে গেছে রামজস কলেজে, জানলাম কী কী ভাবে ছ’মাসের পুরনো পোস্ট তুলে এনে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে গুরমেহরকে, এমনকি এর পরেও নিজেদের দেশভক্তির প্রমাণ দেখাতে এক মেগা সাইজের জাতীয় পতাকা মাথার ওপর বিছিয়ে ধরে এবিভিপি এক প্রস্থ মিছিলও করে ফেলেছে ইউনিভার্সিটির নর্থ ক্যাম্পাসে। এবিভিপির হাতে আক্রান্ত শিক্ষক, প্রশান্ত চক্রবর্তী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁর শরীরের ভেতরে ক্ষত তৈরি হয়েছে ছাত্রদের লাথি খেয়ে। প্রতিবাদে দিল্লি ইউনিভার্সিটির সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা পথে নামবে ২৮শে ফেব্রুয়ারি। জমায়েত হবে এসজিটিবি খালসা কলেজের সামনে।

    আমি বাড়ি পৌঁছবো ২৭ তারিখ রাতে। একদিন বাড়তি ছুটিও রয়েছে হাতে। অতএব, যেতেই হবে।

    সাড়ে বারোটায় ছিল জমায়েতের সময়, তাও পৌঁছতে পৌঁছতে পৌনে দুটো বেজেই গেল। বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রো স্টেশন থেকে বেরোবার পরে পরেই পুলিশের আধিক্য ছিল চোখে পড়ার মত। ছাত্র মার্গ, যেটা বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ক্যাম্পাসের মুখ্য এন্ট্রান্স, সেখানে প্রতিটা মোড়ে মোড়ে মোটা মোটা ভেস্ট পরা দিল্লি পুলিশ, সমস্ত রাস্তা ব্যারিকেড দেওয়া, কোনও গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, অবশ্য পায়ে হেঁটে চলে যাওয়াই যাচ্ছে। চারদিকে অল্পবয়েসী ছেলেমেয়েদের ভিড়, অভিমুখ এক দিকেই।

    পরিচিত যে জনের থেকে মিছিলের খবর পেয়েছিলাম, তাকে ফোন করে জানলাম খালসা কলেজ থেকে মিছিল এগিয়ে এসেছে, এই মুহূর্তে তারা আছে রামজস কলেজের সামনে।

    রামজস পর্যন্তও এগোতে হল না, দেখা হয়ে গেল মিছিলের সঙ্গে। সে এক দৃশ্য বটে, দেখামাত্র বঙ্কিম হয়ে বলতে ইচ্ছে করে – এ যৌবনজলতরঙ্গ রোধিবে কে? হাজারে হাজারে ছাত্রছাত্রী একজোট হয়ে স্লোগান দিচ্ছে, এবিভিপি গো ব্যাক, গো ব্যাক গো ব্যাক। খানিক এগোতেই পরের ঝাঁকের মুখে হইহই করে এই মরশুমের নতুন স্লোগান – আরে এবিভিপি, কাহে so creepy? দিল্লির ছাত্রছাত্রীদের মিছিলের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য, যেটা সাধারণত পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মিছিলে দেখা যায় না – সেটা হচ্ছে ডফলি। এক একটা ঝাঁক একটা ডফলি নিয়ে তাতে তাল তোলে, আর সেই তালে তালে চলতে থাকে স্লোগান। তার সাথে চলে হাততালি। হাতের তালে তালে কয়েক হাজার তরুণ তরুণীর একটা সমুদ্র তখন ছাত্র মার্গে আছড়াচ্ছে, গর্জাচ্ছে। তারই মাঝে অন্যরকমের তাল, কান পেতে শুনলাম সেই ঝাঁকে কোরাস চলছে – দেখনা কিতনা তাকত আজ বাজু-এ-কাত্‌ল মেঁ হ্যায়, সরফরোশি কি তমন্না অব্‌ হমারি দিল মে হ্যায়।









    দুদিন আগে এই রাস্তা দিয়েই লম্বা একটা জাতীয় পতাকা নিয়ে এবিভিপির মিছিল বেরিয়েছিল, নিজেদের ন্যাশনালিজম প্রমাণ করতে। কতজন ছিল সেই মিছিলে? জানি না, আমি ছিলাম না সেদিন, তবে আজকের ভিড়ের সাথে নিশ্চয় তুলনীয় নয় সেই মিছিল। আজ ধারেকাছে নেই কোনও এবিভিপির ছাত্র? …

    রাস্তা জুড়ে মিছিল চলেছে, দুপাশে মোটা দড়ি নিয়ে কর্ডন করে সাথে সাথে চলেছে দিল্লি পুলিশের দল, আমি ছিলাম বাঁদিকের ফুটপাথে, সেখানে অন্যান্য সাধারণ মানুষজনের সাথে আমিও ছিলাম, পাশ থেকে মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও তুলছিলাম, হঠাৎ শুনতে পেলাম আমার পেছনদিক থেকে গুটিকয় ছেলে বেশ আবেগের সঙ্গে স্লোগান লাগাচ্ছে, বন্দে মাতরম, ভারত মাতা কি জয়।

    স্লোগানটা আমি একা শুনতে পাই নি, আমার পাশ দিয়ে মিছিলের যে অংশটা চলে যাচ্ছিল, তারাও শুনতে পেয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তালির রিদমটা জোরদার হয়ে গেল – আরে এবিভিপি, কাহে সো ক্রিপি? আরে এবিভিপি, কাহে সো ক্রিপি?

    ভারতমাতার সন্তানেরা একেবারে ফুস্‌ হয়ে গেল। মিছিল এগোতে থাকল, আমরা ঢুকলাম আর্টস ফ্যাকাল্টির চত্ত্বরে। সেখানে তখন মেলা বসে গেছে। হাজারে হাজারে ছাত্রছাত্রী। মাথা গুণে শেষ করা যাচ্ছে না। চত্বরের মাঝে বিবেকানন্দের মূর্তির নিচে তখন চলছে বক্তৃতা। বক্তব্য রাখছেন যাঁরা, তাঁদের কাউকেই আমি চিনি না, তার মধ্যে একজনকে চিনলাম, তিনি দিল্লি ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর (DUTA) প্রেসিডেন্ট নন্দিতা নারায়ণ। হাসতে হাসতে বলছিলেন, এই এবিভিপির ছাত্ররা, এরাও তো আমার ছাত্রই, সন্তানতুল্য, বলতে বাধ্য হচ্ছি, এদের ইম্যাজিনেশন পাওয়ার বড় কম। এরা দেশপ্রেমী আর দেশদ্রোহীর বাইরে কিছুই বোঝে না, যে কোনও বিষয় নিয়ে এদের সামনে আনলে এরা সেটাকে এই দুভাবেই বিচার করার চেষ্টা করে, এর বাইরে এরা কিছুই বোঝে না, বুঝতে চায় না।

    আরেকটি ছেলে, বোধ হয় আইসা বা অন্য কোনও দলের সম্পাদক, সুন্দর মার্জিত বক্তব্যে জানিয়ে গেল তার প্রতিবাদ, বার বার বলল, ওরা মারপিটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে, কিন্তু আমরা মারপিটে যাবো না, আমরা ওদের বার বার আলোচনায় ডাকব, ওরা আমাদের আলোচনায় অংশ নিতে বাধা দিলেও আমরা ওদের আলোচনায় অংশ নিতে ডাকব। আর সবার আগে আমরা সব্বাই মিলে ওদের জানিয়ে দেব, এবিভিপি, যতই গায়ে হাত তোলো, আমরা তোমাদের ভ-য় পা-ই না। মুহূর্তে কয়েক হাজার জনতার ঠোঁট নড়ে উঠল একসাথে –

    নহী ডর কিসি কা আজ
    নহী ডর কিসি কা আজ
    নহী ডর কিসি কা আজ, এক দিন –
    ও হো, মন মে হ্যায় বিশ্বাস
    পুরা হ্যায় বিশ্বাস,
    হম হোঙ্গে কামিয়াব, এক দিন।













    আস্তে আস্তে কিছু চেনা মুখের দেখা পাচ্ছি এবারে। শুদ্ধব্রতদার সাথে আগে ফোনে কথা হয়েছে, ভার্চুয়ালি আমরা যুক্ত, সামনাসামনি আলাপ হয় নি কখনও, আজ ছোট করে আলাপচারিতাটা সেরে নিলাম। সামনে দেখলাম শেহলা এসেছে, কানহাইয়া এসেছে, উমর খালিদকে দেখতে পেলাম না যদিও, বিবেকানন্দ মূর্তির নিচে তখন বক্তৃতা শুরু করেছেন যোগেন্দ্র যাদব। এই মানুষটি যখন কথা বলেন, মুগ্ধ হয়ে শুনতে হয়।

    কী বললেন উনি? আমি আর কী বলব? নিজেই শুনে নিন।



    এর পরে বললেন ডি রাজা, সীতারাম ইয়েচুরি, সমস্ত তো শোনার সময় হয়ে উঠল না – শেহলার বক্তৃতাও শোনার ইচ্ছে ছিল, শুনে আসা গেল না – আমার ফেরার সময় হয়ে এল, আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। ধীরে ধীরে পিছিয়ে এলাম। ভিড় তখন ছড়িয়ে গেছে আর্টস ফ্যাকাল্টির চত্বরে। বেশির ভাগ জনতাই তখনও বক্তৃতা শুনছে, কিন্তু ইতিউতি ছেলেমেয়েরা গোল হয়ে বসে গান ধরেছে –

    অ্যায় শ্‌শালা –
    আভি আভি হুয়া য়কীঁ,
    কী আগ হ্যায় মুঝ মে কহিঁ
    হুয়ি সুবহ্‌, ম্যায় জল্‌ গয়া
    সুরজ কো ম্যায় নিগল গয়া
    রু-ব-রু রোশনি …

    আরেক দল তখন রঙীন চক বিলি করছে ছেলেমেয়েদের মধ্যে, আর ছেলেমেয়েরা তাদের মনের কথা উজাড় করে লিখছে চত্বরের মেঝেতে। আর খুশিতে মাথা নাড়াচ্ছে রঙীন ফুলের দল।














    ফিরে আসার পরে খবর পেলাম, জমায়েত ভাঙার পরে আইসার দুজন ছাত্রকে গেটের বাইরে একলা পেয়ে বেদম পিটিয়েছে এবিভিপির দুই কীর্তিমান। প্রশান্ত আর বিনায়ক। পুলিশের সামনেই। পুলিশ অবশ্য হস্তক্ষেপ করায় বেঁচে যায় ছেলেদুটি। এবিভিপির এই দুই গুণ্ডাকে পুলিশ আপাতত গ্রেফতার করেছে, আর নিজেদের মুখ বাঁচাতে এবিভিপি তাদের পার্টি থেকে বহিষ্কৃত করেছে আজ।

    দিনের শেষে, এমন একটা ঢেউয়ের সাক্ষী হতে পেরে নিজেরই খুব ভালো লাগছিল। আমি নিজেই গুণগুণিয়ে গান গাইছিলাম, আমার খুব প্রিয় গান –

    স্লোগান দিতে গিয়ে, আমি ভিড়ে গেলাম দলে,
    গলায় তেমন সুর খেলে না,
    হোক বেসুরো পর্দা বদল,
    তবুও আমি সবার সাথে মিলিয়ে দিলেম গলা –
    ঘুচিয়ে দিয়ে একলষেঁড়ে চলা।
    জুটলো যত আমার মত
    ঘরের খেয়ে বনের ধারে মোষ তাড়ানোর উল্টো স্বভাব
    মোষ তাড়ানো সহজ নাকি?
    মোষের শিংয়ে মৃত্যু বাঁধা
    তবুও কারা লাল নিশানে
    উশ্‌কে তাকে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ে
    স্লোগান।


















    +++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++

    গতকাল (৪ঠা মার্চ) দিল্লিতে এরই সূত্র ধরে হয়ে গেল আরেকটি প্রতিবাদ মিছিল। মান্ডি হাউস থেকে পার্লামেন্ট স্ট্রিট পর্যন্ত, সিটিজেন্স প্রোটেস্ট মার্চ।

    বেশি লেখার তো কিছু নেই, ছবিগুলোই সব কথা বলে দেবে। বেঙ্কাইয়া নাইডু সেদিন বলছিলেন না, এইবারে "আজাদী" বললেই সিডিশনের চার্জ লাগিয়ে দেবেন? ... কাল পার্লামেন্ট স্ট্রীটের সমস্ত পিচ রাস্তা ছাত্রছাত্রীরা ভরিয়ে দিয়েছিল আজাদীর স্লোগানে, রঙবেরঙের চক দিয়ে। যেদিকে তাকাও, খালি লেখা "আজাদী", "আজাদী", "আজাদী"।





























































































    এর সাথে শেহলা রশিদের গান, উমর খালিদের বক্তৃতা, সীতারাম ইয়েচুরি, নিখোঁজ নাজীবের মা - আর সেদিন দিল্লি ইউনি-তে যারা এবিভিপির হাতে আর পুলিশের হাতে মার খেয়েছিল তাদের স্পিচ, সব মিলিয়ে রইল এই কোলাজ।


















    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ মার্চ ২০১৭ | ৪২৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Du | 182.58.110.143 (*) | ০২ মার্চ ২০১৭ ০৫:৪৪60918
  • বাহ! ধন্যবাদ সিকিকে ভরসার এক দিনে আমাদের জন্য এত সুন্দর ভাবে তুলে দেবার জন্য।
  • i | 213.158.53.235 (*) | ০২ মার্চ ২০১৭ ০৬:২৮60919
  • অনেক অনেক ধন্যবাদ সিকি। পরে আবার লিখছি।
  • pi | 57.29.131.128 (*) | ০২ মার্চ ২০১৭ ০৭:০৬60920
  • সত্যিই সিকিকে অনেক ধন্যবাদ। আর হিংসেও। এই মিছিলে পা মেলাতে পারা সত্যিই নিজের জন্য পাওনা।
  • সিকি | 132.177.117.25 (*) | ০২ মার্চ ২০১৭ ১১:৫৫60916
  • .
  • d | 144.159.168.72 (*) | ০২ মার্চ ২০১৭ ১২:৪২60917
  • ওয়াহ! চমৎকার।
  • বিপ্লব রহমান | 53.243.207.145 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০২:১৪60935
  • "আরো বসন্ত, বহু বসন্ত, তোমার নামে আসুক
    তুমি তো সূর্য অস্তবিহীন চির জাগরূক..."

    ধন্যবাদ সিকি। জনতার সংগ্রাম চলবেই...
  • nandita | 57.15.1.78 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০২:৪৮60921
  • কিন্তু এই লেখায় সেই কদর্য লেখাটাকে প্রচ্ছন্ন ডিফেন্ড করার যুক্তি পেলাম না।
    1) নাম উহ্য না রেখে পরিচয় গুলো দিন।শাক্যজিতের সেই বিবেকানন্দ,নিবেদিতা ও সারদামাকে জড়িয়ে যৌনগন্ধী আলোচনা অত্যন্ত কুরুচিকর মনে হয়েছে।সেই কদর্য পোস্ট কিন্তু রামকৃষ্ণ সারদামার যৌনজীবন নিয়ে ছিলোনা,ছিল থ্রিসামের ইঙ্গিত ,স্পেড কে স্পেড বলার সৎ সাহস রাখুন।যারা গুরুচন্ডালি ফেসবুক ফোরামে সেই দু বছর পুরোনো কাদা ছোড়াছুড়ি তে অংশ নেয় নি তাদের চোখেও কিন্তু দুতরফের পোস্ট আপত্তিজনক ও মৌলবাদী। অতিসরলিকরণ করবেন না, রামকৃষ্ণ ভক্ত মানেই কিন্তু হিন্দু মৌলবাদী নয়,তারা যত মত তত পথে বিশ্বাসী।
    2)ভারতীয় সংবিধান বাকস্বাধীনতার সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে,প্রফেট বা পরমহংস কারুর সম্পর্কেই কদর্য যৌন বক্তব্য অপরাধ,উভয় পক্ষের শাস্তি হওয়া উচিত। ওই পোস্ট গুলোকে ব্ল্যাসফেমি তো বটেই হেটস্পীচ ও বলা যেতে পারে।অপরাধ দুবছর পুরোনো হলেও অপরাধ। আর অ্যাকশন এর প্রতিক্রিয়ায় রিঅ্যাকশন অজুহাত টায় বড্ডো গোধরা জাতীয় কটু গন্ধ।
    3)বই তে আছে বললে কি হয় ,কোন বই তে শাক্যজিৎ কল্পিত থ্রিসামের বর্ণনা আছে নাম ও পৃষ্ঠা সহ দেখতে পারবেন? একদিকে মেয়েদের সফ্ট টার্গেট বলে যৌন কুৎসায় বিরোধিতা করব আবার দুই ঐতিহাসিক নারী চরিত্রের সাথে আরেক ঐতিহাসিক পুরুষ চরিত্রর একসঙ্গে কাজ করাকে থ্রিসাম ও লেসবিয়ান সম্পর্ক বলে দাগিয়ে দেব (কোনো প্রমান ছাড়াই) পরস্পরবিরোধী কদর্য এই স্ট্যান্ড।
    4)যারা সেই কলঙ্কিত তর্কে অংশ নেয়নি ,আপনাদের উদ্দেশ্যে পাল্টা কুৎসা করেনি কিন্তু ভাবাবেগে আঘাত পেয়েছে তারা কিন্তু সরে যাবেই আপনাদের মিছিলে পা মেলানো থেকে। যারা মহামানবদের কুৎসা করে তারা কোন বটবৃক্ষ উদ্যানের ছায়ায় আশ্রিত জানিনা , কিন্তু নিরপেক্ষ সেকুলার আম বাঙালি বিচার চাইলে রাজ্য প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলেই বিশ্বাস।
  • dc | 132.174.99.216 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০২:৫৮60922
  • "নিরপেক্ষ সেকুলার আম বাঙালি" - এটা আবার কি বস্তু?

    আপনি যে বর্ণনাগুলো দিলেন তাতে "ভাবাবেগে আঘাত" লাগার মতো কিছু তো মনে হলো না। কারুর কিছু মনে হয়েছে, লিখেছে। তাতে এতো "ভাবাবেগে আঘাত" লাগার কি হলো?
  • pi | 57.29.128.33 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:০০60923
  • নন্দিতা ম্যাডাম, দু বছর আগের পোস্টে আমি অংশ নিয়েছিলাম কি নিদেনপক্ষে লাইকও দিয়েছিলাম, এরকম কিছু দেখাতে পারবেন কি ?
    আর ফেসবুকে কি নন্দিতা নামেই আছেন ? নন্দিতা কী ? নাম ধাম দিতে বলছেন যখন নিজেরটাও দিন। তাহলে কিছু পোস্ট দেখাই আপনাকে।
  • dc | 132.174.99.216 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:০৯60924
  • ছোটবেলার থেকে মহায়ন শুনে শুনে বড়ো হয়েছি। এই "ভাবাবেগে আঘাত" নামে জিনিষটাই কখনো মাথায় আসেনি। আজকাল অবশ্য সারা দেশ জুড়ে সবার "ভাবাবেগে আঘাত"এর হিড়িক পড়ে গেছে।
  • সিকি | 132.177.192.150 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩৬60936
  • উত্তর -

    $$$কে - আমি তো আলাদা করে কিছু লিখি নি, দুটো ব্যাপারকে মিলিয়েমিশিয়েই একটা লেখা নমিয়েছি, তাই কোনওটা থেকে কোনওটাকে আলাদা করে রাখার দরকার কী?

    আমি একবারও শাক্যর "হয়ে" কিছু লিখি নি। বার বার বলছি, আমি কাউকে ডিফেন্ড করছি না। কালিস চাইল্ড আমি পড়ি নি, সেটা আগেই লিখেছি, তাই শাক্য সেখান থেকে কতটা নিয়েছে আমি জানি না, সেটা শাক্যই বলতে পারবে। যদি জানা যায় যে শাক্য আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে থ্রিসাম ইত্যাদি অ্যাঙ্গল এনেছে, কিছু আপত্তিকর কথাবার্তা বিনা প্রভোকেশনে লিখেছে যা কালিস চাইল্ডে লেখা নেই, তা হলে শাক্যর লেখাকে জোরদার আক্রমণ করা হোক। লেখাকে আক্রমণ হোক, লেখকের স্ত্রী শাশুড়ী বান্ধবীকে নিয়ে পানু রচনা করে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়াটা লেখার জবাব নয়। আমার ফোকাস এই জায়গাটুকুতেই।

    "এটা যেহেতু ফেসবুক নয়, এখানে শাক্যর হয়ে কারোর লেখার দরকার মনে হয় নেই।" - এটা বোধ হয় দিল্লি ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ওয়েবপেজও নয়, আমিও ডিইউ-এর ছাত্র বা প্রাক্তন ছাত্র - কোনওটাই নই। ডিইউ-এর কেউ এসে মিছিলের ধারাবিবরণী দিয়ে গেলেই তা হলে ভালো হত নিশ্চয়ই?
    ~~~~~~~~~
    পাঠককেঃ একই কথা। লেখার কনটেন্ট নিয়ে আমার কোনও বক্তব্য নেই। আমি যেমন শুনেছি, তেমন লিখেছি, সেটা আপত্তিকর মনে হলে, কদর্য মনে হলে, দরকারমতো আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হোক, প্রতিবাদযোগ্য হলে প্রতিবাদ হোক।

    "গোলপোস্ট সরিয়ে তো লাভ নেই - নন্দিতা দেবী একবার ও "সেক্স" "থ্রিসাম" খুব খারাপ জিনিস লিখেছেন বুঝি ? ওনার প্রশ্নটা কিন্তু এই মিছিল টপিক নিয়ে লেখায় কেন হঠাৎ গুরুতে একটা unsubstantiated থ্রিসাম পোস্ট কে টানতে হলো ?"

    গোলপোস্ট সরাই নি। লেখাটার মূল উপজীব্যই ছিল এই সেক্সুয়াল স্ল্যান্ডারিং-এর ট্রেন্ড। মতে না মিললে, একজনের বক্তব্য অন্যজনের আপত্তিকর লাগলে - আপত্তির কারণ ব্যক্তিটি মেয়ে হলে তাকেই, আর ছেলে হলে তার মা, বোন, স্ত্রী বা বান্ধবী - তাকে রেপ থ্রেট দেওয়াটা লেজিটিমেট হয়ে যায়, তার শরীর নিয়ে ভালগার বর্ণনা লিখে ফেসবুক হোয়াটস্যাপে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। ঠিক এই জায়গাটাতে এসে আমার মনে হয়, কোথায় যেন গুরমেহর আর ঈপ্সিতা/শাক্যর পরিজনদের কেসগুলো একটা কমন জায়গাতে এসে মিশে যায়। মিছিলের বর্ণনাটা তো বাড়তি, ফাউ। গুরমেহরকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে দিতে হয়েছে, দিলি পুলিশের রিলাকট্যান্ট প্রটেকশন ছেড়ে তাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে জালন্ধরে নিজের বাড়িতে। আমার তো দু দিকের "প্রতিক্রিয়া"গুলোই এক ধাঁচের লেগেছে। সেইটুকুই আমি বলতে চেয়েছি। লেখাটার টপিক শুধুই মিছিলের বর্ণনা ছিল না।

    "নন্দিতাদেবী কে আমি চিনি না,কিন্তু ওনার লেখায় কিন্তু ওনাকে চাড্ডি ইত্যাদি মনে হয়নি " - না। আমারও মনে হয় নি। ভালো করে আরেকবার পড়ে দেখুন, আমি নন্দিতাকে কোথাও চাড্ডি বলে মেনশনও করি নি বা সে রকম ইঙ্গিতও করি নি।

    মানুষ বদলায়। তার ম্যাচিওরিটি লেভেল বদলাতে থাকে সময়ের সাথে সাথে। দু বছর অনেকটা সময়। আজ যদি আমি বলি, আমি আর জ্ঞানত কাউকে "চাড্ডি" বলি না, আপনারা হাসবেন, ফেসবুক থেকে গুরুচণ্ডা৯র পাতা থেকে একাধিক উদাহরণ টেনে এনে দেখাবেন, এই তো আমি চাড্ডি বলেছি।

    হ্যাঁ, ঐ লেখা বা পোস্টগুলো যেমন সঠিক, তেমনি এটাও সঠিক যে "এখন" আমি আর জ্ঞানত কাউকে চাড্ডি বলি না, বলার মত কারণ থাকলেও। এটা আমার বদলের প্রক্রিয়া বলতে পারেন। তাই আমার দু বছর আগেকার, অন্তত দশ মাস আগের পোস্ট দিয়েও কেউ যদি আজকের আমাকে চেনার চেষ্টা করেন, তা হলে ভুল করবেন। আমি বদলাচ্ছি।

    আলোচনা চলুক।
  • nandita | 57.15.5.157 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৪:১৩60937
  • ঈপ্সিতাকে যৌনগন্ধী আক্রমণের প্রতিবাদ জানাই ও পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দি।
    বেশি তো পড়িনি ,তাই বইয়ের নাম পৃষ্ঠা চেয়েছিলাম,কেজানে কালিস চাইল্ড বইটার কোনো গুরু স্পেশাল এডিসন আছে কিনা।
    কলেজে বন্ধু সার্কেলে মহায়ণ সবাই শুনেছে-শাব্দিক গ্রাফিতি ময় পানু।কিন্তু শমীকের জানা উচিত অপরিচিত মহিলাকে ওপেন ফোরামে "মহায়ণ শুনেছেন নিশ্চয়ই?" বললে সেটাও কিন্তু আপত্তিকর ও এগ্রেসিভ।প্রিভেনশন অফ সেক্সুয়াল হারাসমেন্ট (POSH) গাইডলাইন রিভিসিট করা ভালো।
    যাইহোক আপামর রামকৃষ্ণ ভক্তরা কিরকম যতমত ততপথে বিশ্বাসী তার স্বরূপ উদ্ঘাটনের জন্যে ধন্যবাদ।আপনাদের মিছিলে সত্যিই আমাদের প্রয়োজন নেই।
  • সিকি | 132.177.192.150 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৪:২০60938
  • আমার আর সত্যিই কিছু বলার নেই। :)

    ভালো থাকবেন।
  • Robu | 55.248.37.247 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৪:৩৭60939
  • মানে গুরমেহের-এর মিছিলে নন্দিতার থাকার দরকার নেই শাক্য ভুলভাল খাজা লেখা লিখেছে বলে? নাকি সেই মিছিল আর সেই লেখা নিয়ে একসাথে সিকি লিখেছে বলে?
  • সিকি | 132.177.192.150 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৪:৪০60925
  • নন্দিতা,

    লেখাটা পড়ে যদি মনে হয়, আমি লেখাটাকে "প্রচ্ছন্নভাবে" "ডিফেন্ড" করছি - তা হলে হয় তো আর কিছুই বলার থাকে না। আমি বরং সেখান থেকেই ক্লিয়ার করার চেষ্টা করি।

    না, আমি শাক্যজিতের লেখাটাকে ডিফেন্ড করছি না, করার দায়ও নেই। প্রথমত, যে গ্রুপে লেখাটি দু বছর আগে বেরিয়েছিল, আমি সেই গ্রুপে নেই। দ্বিতীয়ত, লেখাটা যখন পোস্ট হয়, আমি জানতেও পারি নি, আমি পড়িও নি। গত দু বছরেও জানতে পারি নি। জেনেছি, গণহারে রিপোর্টেড হবার কারণে শাক্যর প্রোফাইল ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে যাবার পরে।

    লেখাটা কদর্য কিনা, সেটা পার্সন টু পার্সন ভ্যারি করে। এই যেমন, কারুর কাছে "কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী" কদর্য লাগে তো কারুর কাছে "মন্দির ওহীঁ বনায়েঙ্গে" কদর্য লাগে - এটা যার যার ব্যক্তিগত পার্সেপশনের ব্যাপার।

    শাক্যর লেখাটা অ্যাটাকিং ছিল, সেটাতে আমি একমত। এবং লেখাটা সম্পূর্ণ তার নিজের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়, সেটা যদি এতদিনে না জেনে থাকেন, তা হলে বলব আপনি শুধুই সিলেক্টিভ পোস্ট পড়েন, অথবা আপনি সোশাল মিডিয়াতে (পড়ুন, ফেসবুকে) নেই।

    "Kali's Child: The Mystical and The Erotic in the Life and Teachings of Ramkrishna" - লেখক Jeffrey J. Kripal। বইটি আজকের নয়। ১৯৯৫ সালে শিকাগো ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে বইটি বেরিয়েছিল। শাক্যর পোস্ট সেই বইয়ের এক্সার্প্ট। এখন, পাতার সংখ্যা টংখ্যা আমি বলতে পারব না, কারণ বইটি আমার হাতের কাছে নেই - এটা শাক্যই বলতে পারবে, যদি চায় তো।

    ফিরে আসি কদর্যতার প্রসঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ বৌদিবাজ ছিলেন, নতুন বৌঠানের সাথে একলা ঘরে হুলিয়ে সেক্স করতেন, বা ধরুন পাবলো পিকাসো নিয়মিত নারীসঙ্গ করতেন, বা ধরুন, অমর্ত্য সেনের "লিবিডো" এত বেশি যে পর পর চারটে বিয়ে করে ফেলেছেন - এসব কথা তো শুনতে শুনতেই পেরিয়ে এসেছি এতটা কাল। কিশোর অপরিণত বয়েসে ঝটকা লাগত, কদর্য লাগত, পরে দেখেছিলাম, মানুষ এসব বলেই থাকে, তাতে রবীন্দ্রনাথ বা পিকাসো বা অমর্ত্য - কারুরই মাহাত্ম্য কমে যায় নি। গান্ধী নগ্ন নারীদের সাথে শুয়ে নাকি নিজের সংযম পরীক্ষা করতেন, তাতে করে গান্ধীর গান্ধী হওয়া আটকায় নি। আমরা কদর্যতার পরিমাপ করছিই "সেক্স" "থ্রিসাম" খুউউব খারাপ জিনিস এই প্রিঅকুপায়েড নোশন থেকে।

    রামকৃষ্ণর ভক্তরা যে কী রকম "যত মত তত পথ"এ বিশ্বাসী তার বেশ ভূরি ভূরি উদাহরণ এই কদিনে পেয়েছি - লক্ষ্য করে দেখবেন, পোস্টটির লেখক হিসেবে শাক্যর ওপর অনেক রকমের ভার্বাল আক্রমণ হয়েছে, সেটা স্বাভাবিক, আমি তাকেও ডিফেন্ড করতে চাইছি না, শাক্য যা লিখেছে, সেই লেখার দায় তারই। আমার লেখাটা অ্যাগ্রেসিভ লেগেছে, এইমাত্র। কিন্তু শাক্যর ওপর আক্রমণের সাইড এফেক্ট হিসেবে কাদের কাদের লক্ষ্য করা হয়েছে?

    এই নিয়ে মোটামুটি ভোকাল হয়েছিল পাই, ইশান, আর আমি নিজে। অন্য দিকেও অনেকে ভোকাল হয়েছে, যারা শাক্যর বিপক্ষে বলেছে। এর মধ্যে ইশান বা আমাকে নিয়ে কিন্তু পানু গদ্য ছড়া লেখা হয় নি, হয়েছে পাই-কে নিয়ে, সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের চুটকি এবং থ্রেট কিন্তু আমাকে ইশানকে বা শাক্যকে দেওয়া হয় নি, হয়েছে শাক্যর স্ত্রী এবং শাশুড়িকে। লিঙ্গচিহ্নে যাঁরা মহিলা।

    আমার প্রতিবাদ এই ট্রেন্ডটার বিরুদ্ধে। শাক্যর লেখা নিয়ে আমার একটা কথাও বলার নেই। লেখা যদি খারাপ লাগে, লেখার মাধ্যমে সেই লেখাটাকে কাউন্টার করা হত, আমাদের কারুর কোনও বক্তব্য থাকত না। কিন্তু প্রোফাইল উড়িয়ে দিয়ে তার আশেপাশের মহিলাদের নিয়ে যে রুচিশীলতার নমুনা দেখিয়ে গেছেন এই কদিনে রামকৃষ্ণ ভক্তের দল, আমার ব্যক্তিগতভাবে সেইটা বেশি কদর্য লেগেছে। আর তার সাফাই হিসেবে যে বা যাঁরা বলেছেন - এই রকমের লেখা লিখলে তো ব্যাকল্যাশের জন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে, বা ঢিল ছুঁড়লে তো পাটকেল খেতেই হবে - আমার সেইটাকে "ডিফেন্ড" করা মনে হয়েছে এই সব নোংরামোর।

    শাক্যর পোস্ট যদি বাকস্বাধীনতার সীমা লঙ্ঘন করে থাকে, তা হলে পুলিশে কমপ্লেন করা হোক। আইন খতিয়ে দেখুক সেটা। জেফ্রি কৃপালের বই আদালতে তোলা হোক। কিন্তু আজ পর্যন্ত না শাক্যর নামে, না জেফ্রি কৃপালের বইয়ের নামে, একটা অভিযোগও জমা পড়ে নি ভারতের কোনও পুলিশ স্টেশনে।

    সমরেশ বসুর বই আদালতে তোলা হয়েছিল। তসলিমার বই আদালতে তোলা হয়েছিল। এমন কিছু আনপ্রিসিডেন্টেড ঘটনা তো নয় -

    আর ব্যাকল্যাশের জন্য তৈরি থাকা? দু বছর আগেকার একটা পোস্ট - যেটা আদতে একটা আলোচনার কন্টিনিউয়েশনে এসেছে বলে শুনেছি (শুনেছি, কারণ আমি ঐ গ্রুপের সদস্য নই), সেইটার ব্যাকল্যাশ দু বছর পরে কেউ এনে আছড়ে ফেলবে, এটা একটু বাড়াবাড়ি লেভেলের অপেক্ষা হয়ে গেল না? দু বছর মানে কিন্তু অনেকগুলো দিন।

    কারুর যদি মনে হয় মহম্মদ এবং রামকৃষ্ণকে নিয়ে লেখা এইসব পোস্ট (বা, বই) অপরাধ, সরাসরি আইনের কাছে অভিযোগ করুন, নইলে, এটাও অপরাধ, ওটাও অপরাধ, দুটোরই সমান নিন্দে করছি - বলাটা, সিম্পল ডিপ্লোম্যাসি। সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজি, এমনকি রামায়ণ মহাভারতের সমস্ত ক্যারেক্টার (মহায়ণ শুনেছেন নিশ্চয়ই?) -দের তরফেও আদালতে মামলা করা হোক। আমি পরিণতি দেখতে চাই।

    আমি যে টুকু লিখছি এখানে, সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা থেকে লিখছি, কোনও মিছিল আমি সংগঠিত করছি না, যে সেখানে পা মেলানো লোকের সংখ্যা নিয়ে আমি চিন্তিত হব। ভিন্নমত থাকতেই পারে। লেখা কদর্য মনে হলে, আবারও বলছি, জোর গলায় প্রতিবাদ হোক, শাক্যর কলমের বা কীবোর্ডের গুষ্টির তুষ্টি করা হোক, কিন্তু তার প্রোফাইল, তার স্ত্রী, তার শাশুড়ি বা পাইকে ছাড় দেওয়া হোক। পাই কোনও কদর্য লেখা লিখলেও আমার সেই একই বক্তব্য - লেখার চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করা হোক, লেখকের নয়, তার লিঙ্গপরিচয়ের নয়।

    যে ব্যক্তি মহম্মদকে নিয়ে সো-কলড কদর্য খিল্লি করেছিল, কেউই কিন্তু সেই লেখকের চারপাশের মহিলাদের নিয়ে এমনতরো স্ল্যান্ডারিং করে নি, শাক্যও করে নি। ও লেখার পাল্টা লেখা দিয়েছিল। মহম্মদকে নিয়েও অনেক ক্রিটিসিজমে ভর্তি বই আছে, সিনেমা আছে, যিনি লিখেছেন, তিনিও হয় তো রেফারেন্স দিতে পারেন, না পারলে তাঁর লেখাকে ছিন্নভিন্ন করা হোক আরেকটি কাউন্টার লেখা দিয়ে।

    মজার বিষয়, যখন মহম্মদকে পিডোফাইল ইত্যাদি বলা হচ্ছিল, তখন কিন্তু এই "যত মত তত পথ"এর অনুসারীরা বসে গুছিয়ে মজা নিচ্ছিলেন, একমাত্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল শাক্য।
  • সিকি | 132.177.192.150 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৪:৪৯60926
  • তর্কের খণ্ডন করার অন্যান্য রাস্তা প্রসঙ্গে -

    জেফ্রি কৃপালের বইয়ের কাউন্টার বই এটি। আমি এটাও পড়ে দেখি নি, বইটা আমার কাছে নেই। তবে যাঁরা এঁদের মহামানব ইত্যাদি মনে করেন, তাঁরা পড়ে দেখতে পারেন - চিন্তার রসদ পাবেন।

    Interpreting Ramkrishna: Kali's Child Revisited - স্বামী ত্যাগানন্দ, প্রব্রাজিকা ব্রজপ্রাণা, উইথ আ ফোরওয়ার্ড ফ্রম Huston Smith।

    বেদান্ত প্রেস।
    http://www.interpretingramakrishna.com/
  • dc | 132.174.99.216 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৪:৫৮60927
  • এই "মহামানব" বস্তুটা কি সেটাও কখনো বুঝিনি। "দেশপ্রেম", "মহামানব", "দেশের জন্য শহীদ" ইত্যাদি কথাগুলো পড়লেই হাসি পেতে শুরু করে।
  • $$$ | 69.160.210.3 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৫:৪৩60928
  • এই ব্যাপারটা থেকে শাক্যর ব্যাপারটাকে আলাদা রাখুক সিকি। ব্যক্তিগত মতামত। এটা যেহেতু ফেসবুক নয়, এখানে শাক্যর হয়ে কারোর লেখার দরকার মনে হয় নেই। সেটা এখানে শাক্য নিজেই করতে পারে। কালিস চাইল্ডে সারদা বা নিবেদিতা সংক্রান্ত কিছু নেই। ত্যাগানন্দের লেখা জেফ্রি কৃপালের গোটা বইয়ের রিফিউট। শোনা কথা বা ভাসাভাসা ধারণা ওলা জিনিস নিয়ে কথা না বলে নিজে যেটা ঠিকঠাক জানে, দেখেছে বুঝেছে সেটাতে ফোকাস করাই ভালো মনে হয়। আলোচনাটা সংহত থাকবে। নইলে অবিলম্বে এটা শাক্যর লেখা বিষয়ে হাইজ্যাকড হতে পারে।
  • পাঠক | 190.179.142.19 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৬:৪৯60929
  • প্রথমে বলি পাইকে কটূক্তি করা হয়ে থাকলে ওনার পুলিশে অভিযোগ জানানো উচিত , সার্বিক তদন্ত হয়ে দোষীদের শাস্তি হয় উচিত ।
    নিজে গুরুচন্ডালির ফেসবুক ফোরাম এ নেই , সেই থ্রেড কখনো পড়িনি , কিন্তু নন্দিতা দেবীর পোস্ট ও তার রিঅ্যাকশন পড়ে মনে কিছু প্রশ্ন এলো -
    কালিস চাইল্ড বই তে থ্রিসাম ঐতিহাসিক প্রমান আছে সিওর তো ? রামকৃষ্ণর যৌনজীবন ,সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন বা বিবেকানন্দ নিবেদিতার প্রেম ছিল কিনা সেটা নিয়ে কথিত পোস্ট নয় কেমন।নিবেদিতা বা সারদা ও মহিলা চরিত্র সে যতই মৃত হন , তাদের জড়িয়ে সেক্সুয়াল ইঙ্গিত টুকুও কি প্রতিবাদযোগ্য নয় ? গান্ধীর এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ ,রবি - বৌঠান ঘনিষ্ঠতা বা নেতাজির বিয়ে এগুলো তো ইতিহাসে লিপিবদ্ধ । আর চাড্ডি তো নই তাই রামায়ণ , মহাভারতকে মহাকাব্য,চরিত্র গুলোকে কাল্পনিক চরিত্র বলেই জানি। কালেজি ফক্কুড়ি মহায়ণের সাথে থ্রিসাম পোস্ট equate করা অতিসরলীকরণ নয় কি ?
    আমার কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যেটা হয়তো নন্দিতা দেবীর লেখনীতে ধরা পড়েনি - এক বা একাধিক পুরুষ আর নারী ( যারা ব্যক্তিগত জীবনে স্বআরোপিত সেলীবাসী মেনটেন করতে পারে না ও পারে ) অনেকদিন একত্রে কাজ করলে সেখানে যৌন সম্পর্ক খুঁজতেই হবে ?
    "আমরা কদর্যতার পরিমাপ করছিই "সেক্স" "থ্রিসাম" খুউউব খারাপ জিনিস এই প্রিঅকুপায়েড নোশন থেকে।" - গোলপোস্ট সরিয়ে তো লাভ নেই - নন্দিতা দেবী একবার ও "সেক্স" "থ্রিসাম" খুব খারাপ জিনিস লিখেছেন বুঝি ? ওনার প্রশ্নটা কিন্তু এই মিছিল টপিক নিয়ে লেখায় কেন হঠাৎ গুরুতে একটা unsubstantiated থ্রিসাম পোস্ট কে টানতে হলো ?
    "লেখাটা কদর্য কিনা, সেটা পার্সন টু পার্সন ভ্যারি করে।" - আজ্ঞে না , আইনে বাকস্বাধীনতার সীমা নির্দেশ করা আছে । ব্ল্যাসফেমি অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ হে ,সে যত পুরোনোই হোক ।
    নন্দিতাদেবী কে আমি চিনি না,কিন্তু ওনার লেখায় কিন্তু ওনাকে চাড্ডি ইত্যাদি মনে হয়নি ,যেমন - "অ্যাকশন এর প্রতিক্রিয়ায় রিঅ্যাকশন অজুহাত টায় বড্ডো গোধরা জাতীয় কটু গন্ধ"।
    কানহাইয়ার একটা কথা পছন্দ হয়েছিল "রাম রাম " আর "জয় শ্রী রাম" এর পার্থক্য আছে ।নবি বা রামকৃষ্ণ আবেগে কালি ছিটিয়ে মুষ্টিমেয় হয়তো যুদ্ধজয়ের স্বাদ পান , কিন্তু নিজেদেরকে আরো নিজেদের তৈরী বুদ্বুদে আটকে ফেলেন ,বৃহত্তর পরিসরে অনেক বেশি মানুষকে এলিনিয়েট করে দেন ।
    এবার আপনারা নন্দিতার বা আমার পোস্ট নিয়ে পরিচয় খুঁজতে বসবেন নাকি কোনো ইঙ্গিত করবেন সেটা আপনাদের রুচি ।
  • umesh | 72.254.195.217 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৭:১০60930
  • আমি সিকির লেখা বেশ পছন্দ করি, কিন্তু এই লেখাটা পড়ে আমার মনেও কিছু প্রশ্ন এসেছিলো।
    কিন্তু দেখলাম পাঠক মহাশয় আগেই লিখে ফেলেছেন।
  • i | 213.158.53.235 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৯:১৮60940
  • পরে লিখব বলেছিলাম। সব ভিডিও ক্লিপ দেখে, সম্পূর্ণ পড়ে উঠতে দুদিন দেরি হয়ে গেল। সিকিকে আবারও ধন্যবাদ এই প্রতিবেদনের জন্য। লেখায় ছবিতে চমৎকার এসেছে সেদিনের মিছিল।
    গুরমেহেরের প্রসঙ্গে তথা সোশাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা সাইবার বুলিয়িং প্রসঙ্গেই লেখক যে অন্য যে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন, সেটি এই লেখার অভিমুখকে অসম্ভব তীক্ষ্ণ করতেই পারত। মেয়েদের ওপর আক্রমণের সুনির্দিষ্ট ধাঁচ বা ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে ক্যাঙারু কোর্ট বা নেমিং শেমিংএর ওপর ফোকাসটা যদি থাকত।ফোকাস থাকতে পারত প্রতিবাদের ভাষা , প্রতিবাদের ধরণ নিয়েও। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফোকাসটা কিছুটা নড়ে গেছে এই লেখার প্রথমার্দ্ধে।। আমার সেইরকমই মনে হ'ল।
    তবু আবারও এই প্রতিবেদনের জন্য সিকিকে অশেষ ধন্যবাদ।
  • Pinaki | 95.229.73.124 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৯:৫১60941
  • ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি বিবেকানন্দ মাথায় বীর্য উঠে মারা গেছিলেন। বা ঐযে নেতাজী, গান্ধী, বিবেকানন্দ আর রামকৃষ্ণকে নিয়ে জোকটা। যেখানে প্রত্যেকের সবচেয়ে পপুলারলি এভেলেবল দাঁড়ানোর পশ্চারকে মাথায় রেখে ডায়লগ বানানো হয়েছিল। প্রথমে নেতাজী বলবেন (দিল্লী চলোর পশ্চারে) - "ঐ দেখা যায় সোনাগাছি"। তারপর গান্ধী বলবেন (ডান্ডি অভিযানের ছবি কল্পনা করুন) - "ধর তো লাঠি *দে আসি"।।।।ইত্যাদি ইত্যাদি। তো এসব নিয়ে চিরকালই এমনকি চূড়ান্ত বিবেকানন্দ ভক্তরাও হাহাহিহি করতো। কোনোদিন কারুর 'ভাবাবেগে' আঘাত লাগতে দেখিনি। ইদানীং এত ভাবাবেগে আঘাত লাগার সাথে সারা দেশে বিজেপির উত্থানের সম্পর্ক আছে বলেই মনে হয়।
  • chagol | 174.100.41.2 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ০৯:৫৮60931
  • পাঠকের বক্তব্যে বড় করে ক।
  • i | 213.158.53.235 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ১০:০২60942
  • যখন অন লাইন রয়েছি আর আমার পোস্টের পরেই পিণাকীর পোস্ট পড়ল তখন এইটুকু বলে যাই এই ধরণের মন্তব্য/ জোক আমার চিরকালই অসম্ভব কুরুচিকর মনে হয়। সিকির মূল লেখা নিয়েই কথা হোক। যদিও আর তা হবার নয় বলেই মনে হচ্ছে।

    খুব কম লিখি কম আসি এই জন্যই।

    টা টা।
  • cb | 208.240.130.75 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ১০:০৬60943
  • বা হয়্ত যে জিনিষগুলি মুখে মুখে বক্তার বাচনভঙ্গিতে কৌতুক সৃষ্টি করত, সেগুলি হার্ড কোল্ড ছাপার অক্ষরে দেখে এবং দেখিয়ে লোক ক্ষ্যাপানোটা অনেক সোজা হয়ে গেছে - লোকে যেগুলি চুপিচুপি শুনে এসেছে পুরাকালে এখন সেই ধরণের জিনিষ ছাপার অক্ষরে দেখে আরো জোরে অতীত অস্বীকার করতে চাইছে।

    ইয়ং ছেলেপিলেরা নিশ্চয় এগুলি বলতে বলতে হেসে ফেলে এখনো - আশা করি। :)
  • amit | 149.218.12.174 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ১০:০৭60944
  • নন্দিতা ও পাঠক কে বড়ো করে ক।
  • cb | 208.240.130.75 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ১০:০৮60945
  • এই রে আগের পোস্টটা পিনাকী বাবুর পোস্টের পরে যেত
  • রোবু | 213.132.214.86 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ১০:৫৩60932
  • সিকির লেখাটা ভালো হয়েছে।
  • amit | 149.218.12.174 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ১১:৩২60946
  • ফেবুতে যাওয়া হয়না, সুতরাং মূল লেখাটি পড়ার সুযোগ হয়নি।।যদি কারোকে অশ্লীল ভাবে ইঙ্গিত করে গালাগালি দেওয়াহয়ে থাকে, সেটা নিয়ে পুলিশ এর কাছে যাওয়া হয়েছে কি ? আর একটা হেট স্পিচ এর প্রতিবাদ এ আর একটা হেট স্পিচ লেখা ঠিক কোন যুক্তিতে জাস্টিফাই করা হচ্ছে ?

    যতই বলা হোক, কোনো লেখাকে ডিফেন্ড করা হচ্ছে না, মূল লেখাটির সুর কি তাই বলে ? সেটা পড়ে তো মনে হয়, কোনো প্রফেট বা কোনো ধর্মের মাথা বা প্রচারকদের দের গালাগালি দিলে সেরকম ক্ষতি নেই, কিন্তু সেটা নিজের লেভেল এ নেমে এলেই যত সমস্যা। যাই হোক, এই খেউর মধ্যে বেশি ঢোকার ইচ্ছে নেই, আমার দিক থেকে ইতি টানলাম।
  • a | 132.177.37.124 (*) | ০৩ মার্চ ২০১৭ ১১:৪০60933
  • পাঠক এর সাথে সহমত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন