এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কুলদা রায়ের গল্প : দি জায়ান্ট গ্রেপ

    Kulada Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ | ৪৩০৫ বার পঠিত
  • এখানে ইন্ডিয়ান গ্রোসারিতে মাঝে মাঝে লাউ পাওয়া যায়। তবে রান্ধুনি নামের মৌরি মসলা পাওয়া যায় না। রান্ধুনী ছাড়া লাউয়ের আসল স্বাদ আসে না। এটা নিয়ে আমার ক্ষোভ থাকলেও আমার স্ত্রীর ক্ষোভ অন্যত্র। তার দরকার কচি লাউ পাতা। লাউ পাতায় কই মাছ ভাতে সিদ্ধ করে খাবে। এটা শিখেছে আমার মায়ের কাছ থেকে। এর তুল্য সুস্বাদু খাবার এ জগতে নেই।

    ফ্রজেন কই মাছ দেশ থেকে গ্রোসারিতে আসে। কিন্তু কচি লাউ পাতা পাওয়া যায় না।

    আমার প্রতিবেশি উল্লাহ সাহেব করিতকর্মা লোক। তিনি বললেন, চিন্তা করবেন না। যোগাড় হয়ে যাবে।

    তখন ফেব্রুয়ারি মাস। মাঝে মাঝে তুষার ঝরে। এরকম একদিন উল্লাহ সাহেব এলেন। বললেন, কচি লাউ পাতা যোগাড় হয়েছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছি।

    এই তুষারপাতের মধ্যে লাউ পাতা পাওয়ার কথা নয়। মনে হল মস্করা করছেন। হাসি মুখে তিনি জানালেন, মোটেই মস্করা নয়। ফ্লোরিডা থেকে এনেছেন। সেখানকার আবহাওয়া বাংলাদেশের মত। শুধু লাউ নয় পান সুপারিও জন্মে।

    কথা সত্যি। কিন্তু উল্লাহ ভাইয়ের হাত খালি। কোনো ব্যাগ নেই। লাউ পাতাও নেই। আমাকে অবাক হতে দেখে তিনি পকেট থেকে ছোট একটা প্যাকেট বের করলেন। সেখানে কচি লাউ পাতা থাকার কথা নয়। থাকলে থাকতে পারে শুকনো লাউ পাতার গুড়ো। লাউ পাতার গুঁড়ো কেউ খেয়েছে বলে কোনোকালে শুনিনি।

    উল্লাহ ভাই আবারও শব্দ করে হাসলেন। প্যাকেটটা খুললেন। তার ভেতর থেকে বের হল লাউ পাতার গুড়ো নয়-- কয়েকটা বিঁচি লাউয়ের বিচি।

    --বিঁচি দিয়ে কি করব?

    --বিঁচি মাটিতে লাগিয়ে দিন। গাছ হবে। তিনি জবাব দিলেন।

    এপার্টমেন্টে লাউ গাছ লাগানোর কোনো সুযোগ নেই। টবে মরিচ গাছ করা যায়। স্বল্পমূলী ফুলগাছও হয়। আমার দিক থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে উল্লাহ সাহেব লাউ বিঁচি নিয়ে পার্কিং লটে চলে গেলেন।

    আমাদের পার্কিং লটের পুরোটাই কংক্রিটের পাকা করা। বেড়া ঘেষে কিছুটা মাটি আছে। কিছু বুনো লতা পাতা হয়। সেখানে উল্লাহ সাহেব লাউ বীজগুলো পুতে দিলেন।

    তখন মার্চ মাস শেষ হতে চলেছে। দ্রুত ঘাস গজাতে শুরু করেছে। একদিন উল্লাহ সাহেব ডেকে নিয়ে দেখলেন, ঘাসের মধ্যে লাউ চারা গজিয়েছে। বললেন, একটু যত্ন আত্তি করুন। শুধু পাতা নয়, লাউও পাবেন।

    গোটা তিনেক চারা। গোড়ার ঘাস পরিষ্কার করে দিলাম। বিল্ডিং এর সিকিউরিটি গার্ডকে অনুরোধ করা হল যেন কেউ চারা তিনটিকে তুলে না ফেলে।

    সিকিউরিটির নাম বেনী। স্প্যানিস। বুড়ো হয়েছে। মাঝে মাঝে টলে। জিজ্ঞেস করল, এ গাছে কি ফুল ধরে?

    বললাম, নিশ্চয়ই ধরে। পুরুষ ফুল ধরে। আলাদা করে স্ত্রী ফুলও ধরে। এটা আমাদের দেশের বিখ্যাত লাউ গাছ।

    বেনী শুনে খুব খুশি। বলল, তাহলে চিন্তা করো না। গাছগুলোর খুব যত্ন করব।

    বেনী এই বিল্ডিংয়েই থাকে। তার কোনো স্ত্রী পরিবার নেই। উল্লাহ সাহেব তাকে চোখ টিপে বলল, শুধু ফুল না, বেনী। আনাজও পাবা। খাইতে খুব স্বাদ।

    আনাজ শব্দটি বাংলায় বলায় তার মানে বেনী বুঝতে পারলো না। সে নিয়ম করে গাছে জল দিতে লাগল। নতুন পাতা ছাড়ল। ডগা বের হল। ডগডগিয়ে বেড়ে উঠল। নতুন গজানো আকশিগুলো হাওয়ায় দুলতে লাগল। তার জন্য মাঁচা চাই। বেড়ার সঙ্গে লাঠি গেড়ে সুন্দর মাঁচাও তৈরি হল। বেনীই সব করল। নিয়ম করে গোড়ার মাটি খুঁচে দিল। হোম ডিপো থেকে সার মাটি দিতেও বাদ রাখল না। লাউ গাছের এরকম নধর কান্তি চেহারা দেখা যায় কেবলমাত্র বরিশালের গ্রাম-গাঁয়ে।

    এপার্টমেন্ট বিল্ডিংএ এলা বার্টন নামে এক বুড়ি থাকে। একা। তার বয়সের গাছ পাথর নেই। একজন সরকারি হোম এটেনডেন্ট তার দেখভাল করে। চোখে ভালো করে দেখতে পায় না।। কানে কম শোনে।

    বুড়ি এলা বার্টন বলল, এ রকম আঙুরগাছ তার হানিমুনের সময়ে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ায় দেখেছে। তার তুল্য মিষ্টি আঙুর এ জীবনে আর দেখেনি।

    শুনে বেনী এলাকে বলল, এটা আঙুরলতা নয়। এটা ইন্ডিয়ান ফুলের গাছ।

    বুড়ি সেটা মানতে নারাজ। ঘর থেকে ছবির এলোবাম নিয়ে এলো। একটা ছবি বের করে দেখালো। এক গ্রাম্য চার্চের পাশে নবীন দম্পতি পাশাপাশি দাঁড়ানো। হাসি হাসি মুখ। পুরুষটির মাথায় কাউবয় টুপি। সাদা কালো ছবি। পুরনো বলে ছবিটির সব কিছু স্পষ্ট বোঝা যায় না। সেখানে আঙুরলতার চিহ্ন নেই। বুড়ি বলল, আঙুর লতা ঠিক ওদের পিছনেই আছে। সেদিন মেয়েটি একটি গানও গেয়েছিল। গানটি নাতালি উড দিস প্রপারটি ইজ কনডেমড মুভিতে ঠোঁট মিলিয়েছিল।

    বেনীর কাছে একটু ক্ষমা চেয়ে এলা বার্টন গানটির এক কলি গেয়েও উঠল--
    Wish me a rainbow.

    বুড়ি আরও জানালো, গানটির পুরোটাই তার মনে আছে। এই গাছে যখন আঙুর ধরবে তখন গানটি গেয়ে শোনাবে।

    আঙুর ধরার কথা শুনে বেনীর মেজাজ বিগড়ে গেল। বুড়িকে আঘাত দিতে চায় না বলে বিড়বিড় করে জানালো, এ গাছে কোনো আঙুর ধরুক সেটা সে চায় না। গ্রোসারিতে কি আঙুর পাওয়া যায় না? লাগলে সে কিনে আনতে পারে।

    বেনীর কথা শুনতে পায়নি বুড়ি। ঘরে ফিরে যাওয়ার আগে বলল,এই ছবিতে নবদম্পতিটি হল সে আর তার স্বামী রিচার্ড বার্টন। ছবিটা সত্তর বছর আগে তোলা। একটু লজ্জা মিশ্রিত গলায় আস্তে করে বলল, রিচার্ডের চোখ ছিল ধুসর রঙের। স্বপ্নময়। এতো ভালো চোখ পৃথিবীতে আর কোনো পুরুষের নেই।

    দিন দিন গাছটি পল্লবিত হয়ে ওঠে। হাওয়ায় পাতা দোলে। আমার স্ত্রী কই মাছ কিনে আনে। জিরে বাটার জন্য এক ভারতীয় পরিবারের কাছ থেকে শিল-পাটাও খুঁজে আনল। তাতে মরিচ বাটবে। জোগাড় করল খাঁটি সরিষার তেল। ষাইটা ধানের চাল পাওয়া গেল না। বাঁশমতি চাল কিনে আনা হল। তবে লাউ পাতা তুলে আনতে গেলে বেনী একটু কেশে বলল, নো ম্যাম, এখনো কুঁড়ি আসেনি। কুঁড়ি আসুক। তারপর ফুল আসবে। সে পর্যন্ত তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।

    বুড়ি এলা বার্টন টুকটুক করে নেমে এসে বলল, সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ায় হানিমুনের সময় আঙুর বাগানে হাড়ের গুড়ো দিতে দেখেছিল। তার স্বামী বার্টন বলেছিল, হাড়ের গুড়ায় ফসফরাস আছে। ফসফরাস গাছে ফুল ফোটাতে সাহায্য করে।

    বার্টনদের পরিবার ক্যালিফোর্নিয়ার প্রখ্যাত আঙুর-পরিবার। বেশ কয়েকটি নতুন জাতের আঙুরলতা তারা বের করেছিল।

    বেনী পরদিন হোমডিপো থেকে হাড়ের গুড়া ওরফে বোনমিল নিয়ে এলো। খুব ভালো করে গাছের গোড়ায় মিশিয়ে দিল।

    বুড়ি খুব খুশি হয়ে বলল, শুধু সার দিলেই হবে না। আঙুরলতাকে গান শোনাত বার্টনরা। বুড়ি একটা রেকর্ড প্লেয়ার নিয়ে এলো। সেখানে সং অফ সলোমনের একটি গান আছে। বুড়ি বাজিয়ে শোনাল--

    O my dove, in the clefts of the rock, In the secret place of the steep pathway,
    Let me see your form, Let me hear your voice;

    অয়ি মম কপোতি! তুমি শৈলের ফাটলে, ভূধরের গুপ্ত স্থানে তুমি রহিয়াছ,
    আমাকে তোমার রূপ দেখিতে দেও, তোমার স্বর শুনিতে দেও,
    কেননা তোমার স্বর মিষ্ট ও তোমার রূপ মনোহর।

    এই গানের কম্পোজিশন করেছে পল বিন হেইম। গেয়েছে মেরি ক্লেরে হেরমন। বুড়ি বলল,এই গানটিতে আঙুরলতার কথাও আছে। এই গানের লং প্লে রেকর্ড আনার জন্য তার স্বামী বার্টন অর্ডার দিয়েছিল মিউনিকের বিখ্যাত মিউজিক স্টোরে। তার ধারণা ছিল, নিয়মিত এই গানটি আঙুর বাগানে বাজালে আঙুর ফুল থেকে বিরাটকায় আঙুর ফল জায়ান্ট গ্রেপ ধরবে। এর তুল্য আঙুর পৃথিবীতে কখনো ধরেনি। তাদের পরিবারের পূর্বপুরুষের ধারণা--কেউ না কেউ জায়েন্ট গ্রেপ জাত জন্মাতে পারবে। এ বিষয়ে অষ্টম পরদাদা মিঃ আলেক্সান্ডার বার্টনের একটি আগাম অভিনন্দন-বার্তাও রৌপ্য ফলকে লিখিত আছে। তিনি লিখেছেন--ধন্য সেই বার্টন যাহাতে পবিত্র গ্রেপ ফল মহিমান্বিত হইবে। সালটি লেখা আছে ১৭০২ খ্রিস্টাব্দ।

    এলা আরও যোগ করল, রিচার্ডের কী করে যেন ধারণা হয়েছিল, সে-ই জায়েন্ট গ্রেপ উদ্ভাবন করতে পারবে। সে না পারলে অন্য কোনো বার্টন পারবে না। এটা নিয়ে তার এক ধরনের খ্যাপামিও ছিল। এটা ছাড়া আর কিছু চিন্তা করত না। তাকেও মোটেই সময় দিত না। সারাক্ষণ আঙুর বাগানে পড়ে থাকত। এলা বার্টন বলল, আঙুর গাছকে তার সহ্য হত না। আঙুর গাছকে তার অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নারী মনে হত যে তার স্বামীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছে।

    এসব শুনতে বেনীর কোনো আগ্রহ নেই। সুযোগ পেলেই মেয়েমানুষরা বেশি বেশি কথা বলে। এ কারণে সে কোনো মেয়েমানুষের ছায়াও মাড়ায়নি সারাজীবনে। প্রসঙ্গ ঘোরাতে বেনী একটু উচ্চস্বরে বুড়িকে জিজ্ঞেস করল, তাইলে কি গাছের ফুলের আকারও কি বড় হবে?

    বুড়ি মাথা হেলিয়ে বলল, নিশ্চয়ই বড় হবে। ফুল বড় না হলে ফল বড় হয় কী প্রকারে?

    পরদিন বেনী সং অফ সলোমনের গানের সিডি কিনে আনল ম্যানহাটন থেকে। কুঁড়ি মেলবার আগে থেকে প্রতি ভোরে আকাশ ফর্শা হতে শুরু করলে সিডিটি বাজানো শুরু করল। অদ্ভুত কাঁপা কাঁপা গলার সঙ্গে পিয়ানো বাজাচ্ছে বিখ্যাত পিয়ানো বাদক হেউটা বেট আরি। এলা বুড়ি জানালা খুলে একবার দেখল। তারপর পার্কিং লটে আঙুল মাঁচার কাছে এসে কুঁড়ি থেকে ফুল দেখার চেষ্টা করল। ভোরের হাল্কা হাওয়ায় গাছের সবুজ পাতা অল্প অল্প নড়ছে। বলল, যে সময়ে তার স্বামী বার্টন গানটির রেকর্ডের অর্ডার দিয়েছিল সে সময়টাতে মিউনিক থেকে কোনো অর্ডার সাউথ ক্যালিফোর্নিয়াতে পাঠানো সম্ভব নয় বলে ডাক-বিভাগ জানালো।

    --তাহলে? বুড়িকে জিজ্ঞেস করলাম।

    বুড়ি ক্লান্তি বোধ করছিল। কোনো উত্তর না দিয়ে ধীরে ধীরে ঘরে চলে গেল। তার জানালাটির একপাল্লা খুলে মুখ বের করল। এক ক্লান্তিকর স্বরে বলল,বার্টন কাউবয় টুপিটা পরে মিউনিকে চলে গেল। রেকর্ডটা তার আনা চাই। জায়ান্ট গ্রেপ ধরানো চাইই।

    মিউনিকে যাওয়ার সময় বলে গেল, গানটি নিয়ে এলে গাছে জায়ান্ট গ্রেপ ধরবেই। তারপর তার কাজ শেষ। এলাকে নিয়ে সারাজীবন হানিমুন করে কাটাবে।

    সাদা সাদা লাউ ফুল ফুটল কয়েকদিনের মধ্যেই। বুড়ি ফুলের আকার দেখে মুগ্ধ। বলল, দেখছো না, সং অফ সোলেমানের গুণ। বার্টন ঠিক ধরেছিল। বড় বড় ফুল থেকেই বড় জাতের আঙুর ধরবে।

    আমার স্ত্রীর তর সইছিল না। সে লাউ পাতা তুলতে এসেছিল। বুড়ির উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলল, এগুলো পুরুষ ফুল। পুরুষ ফুল থেকে ফল ধরবে না।

    বুড়ি শুনে মন খারাপ করল। জিজ্ঞেস করল, ও মেয়ে, স্ত্রী ফুল ধরবে তো?

    --অবশ্যই ধরবে। চিন্তা করো না।

    --কিন্তু চিনব কী করে?

    --স্ত্রী ফুলের পাঁপড়িমণ্ডলের নিচে কুঁড়ি ফলও থাকবে। এই কুঁড়ি-ফল দেখেই চিনতে পারবে।

    এবার বুড়ির মনটা ভালো হয়ে গেল। তার ধারণা-- ভারতীয়রা কখনো মিছে কথা বলে না। বলল, তাহলে তুমি আজ পাতা তুলো না। আগে স্ত্রী-ফুল আসুক।

    স্ত্রী-ফুলও এসে গেল। প্রথমে খুব ছোট। কয়েকদিনের মধ্যেই গোড়ায় বর্তুলাকার লাউ কুড়ি দেখা দিল। বুড়ি খুব কষ্ট করে দেখে বলল, কুঁড়িগুলো দেখতে সাধারণ আঙুরের চেয়ে বড়। পরিণত হলে জায়ান্ট গ্রেপ হবে।

    বুড়ি এলা বার্টন এই দিনগুলোতে ভোর হওয়ার অনেক আগে থাকতেই নিজের ঘরে উচ্চ ভলিউমে সং অফ সলোমন রেকর্ডটা বাজাতে শুরু করে। বেনী তার আগেই উঠে যায়। গাছের চারিদিকে ঝাড়পোচ দিয়ে একটি পবিত্র ভাব ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু সমস্যা হল, কুড়িগুলো সামান্য বেড়েই পঁচে যায়। বুড়ির হতাশা বাড়ে। তার মনে হয় কোনো পাপের ফলে ফলগুলো পচে যাচ্ছে। কুঁড়ি ফল পঁচে গেলে জায়েন্ট আঙুর হবে কী প্রকারে?

    জানালার কাছে বসে প্রার্থনা করে। বুড়ির গাল বেয়ে জল পড়ে।

    আমার স্ত্রীর হাত ধরে বুড়ি শোনালো, মিউনিক থেকে সং অফ সলোমন রেকর্ডটা এলেও রিচার্ড বার্টন ফিরে আসেনি। তার সন্ধানই পাওয়া যায়নি। জাহাজটির যেদিন ডকইয়ার্ড ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেদিনটিতে কোনো জাহাজ ছাড়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। শোনা যায় হিটলারের বাহিনী জাহাজ থেকে সব মানুষকে নামিয়ে নিয়ে গিয়েছিল কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে। বুড়ি চোখ মুছতে মুছতে বলল, পরে বার্টনের জামা-কাপড়, কাউবয় টুপিটা আর সং অফ সলোমনের রেকর্ডটি ডাকে আসে।

    বুড়ি এলা বার্টনের কাছ থেকে জানা গেল,মিঃ বার্টন ফিরে না আসায় এলাকে তার বাবা-মা আবার বিয়ে করতে পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু এলা সেকথা শোনেনি। একা থেকেছে। সজ্ঞানে কোনো পাপ করেনি। বিশ্বাস করেছে, জায়ান্ট গ্রেপ কোন এদিন ফলবে। বার্টনের বাসনা পূর্ণ হবে।

    সেটা শুনে বললাম, কোনো পাপে নয়,ডেকাস সিলিয়েটাসের আক্রমণে ফল নষ্ট হচ্ছে।

    শুনে বেনী খুব খেপে গেল। ডেকাস সিলিয়েটাসকে মারতে বন্দুক আনতে ছুটল।

    তাকে ফিরিয়ে এনে বললাম, ডেকাস সিলিয়েটাস কোনো জন্তু জানোয়ার নয়। এটা এক ধরনের বোলতা পোকা। তারা কচি ফলে নরম ত্বকে ডিম পেড়ে যাচ্ছে। সেজন্য ফলগুলোপঁচে নষ্ট হচ্ছে। বেনী জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি হবে?

    কুঁড়ি-ফল ছোট পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিলাম। কয়েকদিনের মধ্যে ফলগুলো বাড়তে শুরু করল। আমার স্ত্রী কই মাছের পাশাপাশি কুচো চিংড়ি দিয়ে লাউ রাধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল।

    মাঁচায় বেশ কয়েকটা লাউ ধরেছে। আর ফুলও ফুটে আছে বেশ কিছু। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই একটা টেনিশ বলের আকার ধরল। তখনই বুড়ি প্রেসকে খবর দিতে চাইলো। তাকে বোঝালাম, ফলের আকার আরও অনেক বড় হবে।

    শুনে বুড়ি বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়ল। বলতে লাগল, বার্টনের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।

    এর মধ্যে বুড়ি অসুস্থ হয়ে গেল। লং আইল্যান্ড জুইস হাসপাতালে তাকে নেওয়া হল। তার বাঁচা মরা নিয়ে সংশয় দেখা দিল। তার বুকে নতুন করে পেস লাগানো হল। এ যাত্রায় বুড়ি সেরেও উঠল। সপ্তাহ দুই পরে জানা গেল বুড়ি রবিবার বাড়ি আসবে। এ উপলক্ষে বিল্ডিংয়ের ভাড়াটেরা একটি উৎসবের আয়োজন করল। সে অনুসারে পার্কিং লটে বারবিকিউ হবে। কচি লাউপাতা দিয়ে কইমাছ। আর চিংড়ি দিয়ে লাউয়ের কারি রান্না হবে। এটা করবে আমার স্ত্রী। গাছে ঝুলন্ত লাউয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বুড়ি এলা বার্টন বিস্ময়কর বড় জাতের আঙুরের ছবি তুলবে।

    এ উপলক্ষে পার্কিং লটকে খুব সুন্দর করে সাজানো হল। নানা রংয়ের মরিচ বাতি বসানো হল। ভাড়া করে আনা হল কয়েকটি বারবিকিউ কয়লার চুলা। আর লাউ রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা। উৎসবের পোষাক কিনতে মেয়েরা ছুটলো মেসি স্টোরে। শুধু বেনীকে দেখা গেল, নিশ্চুপ। একটু গম্ভীর। চোখ লাল। একটু বেশি পান করে ফেলেছে।

    এলা বার্টন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে বিকাল চারটায়। তাছাড়া ছুটির দিন বলে বিল্ডিংয়েরর সবাই আয়েশ করে বেশ বেলা অব্দি ঘুমালো। কেউ উঠল দশটায়। কেউ বারোটায়। কেউ বা উঠল একটায়। আমার স্ত্রীর ভোর ভোরই ওঠার অভ্যাস । উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করে। আজ হাঁটাহাঁটি বাদ দিয়ে পড়িমড়ি করে ছুটে এলো। একটি দুঃসংবাদ শোনাল। বলল, বুড়ো বেনী নেই।

    আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, মারা গেছে?

    --না। চলে গেছে।

    চলে গেছে। মরে যায়নি। আতঙ্কটা কেটে গেল। বেনী বুড়ো হয়েছে। অনেক আগেই অবসর নেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিল। নেওয়াই দরকার। তবু মনটা একটু খচখচ করে উঠল। আজ না গেলেই পারত। আমাদের লাউ উৎসব করে যেতে পারত। বুড়ি এলা বার্টন খুশি হত।

    তবে বেনী একটি চিঠি রেখে গেছে। লিখেছে, পার্কিং লটের ওই জায়গাটিতে ডিয়েন্ড্রা হাজ মরে পড়েছিল। তার শিরা থেকে ওই মাটিতে সব রক্ত ঝরে পড়েছিল। ওইখানে যে ফুল গাছ হয়েছে তা ডিয়েন্ড্রারই রক্ত মাংস আত্মা। ফুলগুলো তার অনুপম ভালোবাসা। ফুলগুলো দেখে আমার নতুন করে ভালোবাসার ইচ্ছে জেগেছিল। কিন্তু গাছটির পাতা এবং লাউ নামের ফল রেঁধে খাওয়ার অর্থ ডিয়েন্ড্রাকে খেয়ে ফেলারই উৎসব। এটা এই বয়সে অসহনীয়। তাই লাউ গাছটি তুলে নিয়ে চলে গেলাম। ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।

    পার্কিং লটে গিয়ে দেখা গেল, লাউগাছের জায়গাটি সাফসুতেরো। মাঁচা শুদ্ধ কোনো লাউগাছ এখানে ছিল তার কোনো চিহ্ন পর্যন্ত নেই। আমার স্ত্রী একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। পাতা দিয়ে কইমাছ আর চিংড়ি রাধার সুযোগ আর থাকল না বুঝে বড় শোক পেল।

    বিল্ডিংয়ের সুপারভাইজার একটু হেসে বলল, বেনী একটা পাগল। ডিয়েন্ড্রা হাজ নামে কেউ এই বিল্ডিংএ কখনো ছিল না। কেউ হাতের শিরা কেটে এখানে মারাও যায়নি। বুড়ো বেনী মাতাল হয়ে গালগল্প বানিয়েছে। চিন্তা করো না। সব কিছু ঠিকঠাক মতো হবে।

    বিকেল চারটার মধ্যেই পার্কিং লটে বিল্ডিংয়ের লোকজন নানা রঙের পোষাক পরে এলো। সঙ্গে নিয়ে এলো সুস্বাদু সব খাবার। একটা সঙ্গীত দলও এসেছে। তারা মৃদুমন্দ হাওয়ায় বাদন শুরু করল।

    বুড়ি এলা বার্টনের গাড়িটা এলো সাড়ে পাঁচটায়। হাসি হাসি মুখ করে বের হল। বেশ শীর্ণকায় হয়ে পড়েছে।

    যেখানে লাউগাছটি ছিল সেখানে তাকাল। খুব কষ্ট করে গাছটি দেখার দেখার চেষ্টা করল। দেখতে না পেয়ে তার মুখ শুকিয়ে গেল। সুপারভাইজার বুঝতে পেরে তার কানের কাছে মুখ রেখে বলল, দুষ্টু শিয়ালগুলো গাছটিকে ছিড়ে ফেলেছে।

    বুড়ি চমকে জিজ্ঞেস করল, কোন শেয়ালগুলো?

    --সং অফ সলোমনের শেয়ালগুলো। বলে সুপারভাইজার বাইবেল থেকে সং অফ সলোমনের দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে পড়ে শোনাল,

    "Catch the foxes for us, The little foxes that are ruining the vineyards,
    While our vineyards are in blossom.

    (তোমরা আমাদের নিমিত্ত সেই শৃগাল-দিগকে, ক্ষুদ্র শৃগালদিগকে ধর,
    যাহারা দ্রাক্ষার উদ্যান সকল নষ্ট করে;
    কারণ আমাদের দ্রাক্ষার উদ্যান সকল মুকুলিত হইয়াছে।)

    বাইবেলকে অবিশ্বাস করার আর উপায় নেই। বুড়ি শুধু জিজ্ঞেস করল, তাহলে গাছের সেই জায়ান্ট গ্রেপগুলো?

    সুপারভাইজার টুপিটা কাত করে বললেন, আছে।

    --কোথায়?

    এর উত্তর দেওয়ার দরকার হল না। বিল্ডিংয়ের সব ছোট ছোট ছেলেমেয়ে একটি ট্রলি টেবিল ঠেলে নিয়ে এলো। তার উপরে একটা বড়সড় লাউ। লাউয়ের গায়ে পেস্ট্রি দিয়ে লেখা ‘হ্যাপি সেভেন্টিথ হানিমুন’।

    বুড়ি দেখল কি দেখল না বোঝা গেল না। শুধু চোখ বুজল। বিড়বিড় করে বলল, স্বর্গে গিয়ে সে মিস্টার রিচার্ড বার্টনকে তার এই জায়ান্ট গ্রেপ জন্মানোর খবরটি দিতে পারবে। আর তাকে ফাঁকি দিতে পারবে না। শুধু তাকেই সময় দেবে।

    আমার স্ত্রী লাউ পাতার শোক ভুলে গেল। যন্ত্রীরা জোরে জোরে বাদন করতে শুরু করল। সবাই গলা ছেড়ে গাইতে লাগল--
    Wish me a rainbow and wish me the stars
    All this you can give me
    Wherever you are

    And dreams for my pillow
    And stars for my eyes
    And a masquerade ball
    Where our love wins first prize।

    গানের মধ্যে দিয়েই জায়ান্ট গ্রেপ কাটা হল। সবাই স্বীকার করল, এতো সুস্বাদু কেক তারা আগে কখনো খায়নি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ | ৪৩০৫ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • সে | 204.230.159.240 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০১:১২66998
  • পড়তে গিয়ে ট্রাম থেকে নামতে ভুলে গেছি। এখন আবার উল্টোদিকের ট্রাম ধরতে হবে।
  • কান্তি | 113.57.239.207 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০১:১৪66999
  • মরমী ভাষায় বোনা কাল-স্রোতে ভাসা খণ্ড- কাহিনী। শেষ লাইনটি অনায়াস- অনবদ্য।
  • dd | 116.51.225.141 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৩৪67000
  • আরে,অ্যাদ্দিন কোথায় ছিলেন ?আমি তো প্রায়ই ভাবতাম কী হোলো। লেখাটেখা দেখছি না ক্যানো।
  • Abhyu | 85.137.13.237 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৫:১৩67001
  • দুর্দান্ত
  • তাপস | 190.215.94.152 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৮:৩৩66992
  • গুরুদেব।
  • vikram | 153.239.7.7 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১১:১৭66993
  • অসাধারন
  • 0 | 132.163.51.76 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১১:২৫66994
  • কি আর বলবো! এতো উদাসীন নিস্পৃহ অথচ মরমী মায়ায় ভরা কলম! মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায়না।
  • Byaang | 132.172.200.69 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১২:৫৩66995
  • কুলদা রায়ের লেখা পড়লে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকতে হয়। মুগ্ধতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না। অদ্ভুত জাদুকলম।

    কয়েকটি বানানে চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার চোখে লাগল।
  • pi | 74.233.173.193 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১২:৫৫66996
  • অসম্ভব সুন্দর।
  • de | 24.139.119.172 (*) | ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ১২:৫৫66997
  • খুব ভালো - যেমন হয়ে থাকে আর কি!
  • sosen | 184.64.4.97 (*) | ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০০67005
  • অনেকদিন পরে কুলদাবাবুর একটা অন্যরকম গল্প পড়লাম-ইদানীং সব গল্প একইরকম লাগছিল। সুন্দর।
  • বাবুরাম সাপুড়ে | 127.194.236.90 (*) | ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৬:০৬67002
  • বেশ লেখা
  • I | 192.66.6.69 (*) | ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৬:৫৬67006
  • আহা ! আহা!
  • san | 11.39.40.35 (*) | ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ০৭:০৯67003
  • চমৎকার !
  • Blank | 213.132.214.84 (*) | ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ১২:৪১67004
  • খুব ভালো
  • h | 127.194.239.4 (*) | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৩৬67010
  • পার্সোনালি আমার একটা কথা মনে হয়। আমি অভিবাসী লেখক হিসেবে কুলদা রায় কে চিনহিত করতে চাই না, উনি নিজের চিন্হ নিজে বেছে নেবেন। বড় লেখক এলেম আছে বাছার অধিকার আছে। কিন্তু তবু একটা কথা পরিষ্কার বলা ভালো। মোটামুতি ইংরেজি তে লেখা ভারতীয় সাহিত্য র থেকে অভিবাসী ভারতীয়ের লেখা আলাদা হতে শুরু করে, নাইপল এর লেখা থেকে। রাশদি অনেক বড় লেখক হলেও, তাঁকে প্রথম সুনাম দিচ্ছে ভারতীয় বিষয় বা প্রেক্ষিত। মানে বড় প্রচার যেগুলো পাচ্ছে।

    ফারুখ ধোন্দির অসামান্য গল্প গুলো তে অভিবাসী ভারতীয় অভিজ্ঞতা আসছে কিছুটা। আর দুর্দান্ত হয়ে উঠছে কুরেশি র লেখা গুলো। ইংরেজি তেই লেখা হচ্ছে। গুজরাটী বা পাঞ্জাবী সাহিত্য সে ভাষাতেই লেখা, বিদেশী গুজরাটী রা বা পাঞ্জাবী রা সিন্ধি রা লিখছেন, খবর বেশি রাখা হয় নি। কিন্তু বাংলা সাহিত্য এই জার্নির মধে দিয়ে যায় নি। এইটা এখন হচ্ছে। বাংলায় গল্প লেখা হবে, বিদেশের মানুষ বিষয় প্রেক্ষিত, অভিবাসী বাঙালী ও অন্যান্য অভিবাসী দের নিয়েই হবে, আর সারা পৃথিবীর বাঙালীরা পড়বেন। এইটা প্রচন্ড আনন্দের ব্যাপার। ই-মশাই ইন্দ্রাণীদি একটা গল্প লিখেছিল, তাতে কয়েকজন কোলিগ এর গল্প ছিল, খুব ভালো লেগেছিল। কুলদা রায়ের এই লেখা সিগ্নিফিকান্ট।

    এই জার্নি আফ্রিকান বা লাতিন সাহিত্যে হয়েছে। ইউরোপীয় সাহিত্যে তো হয়েইছিএ, মানে কলোনীর চেনা জালের বাইরেও হয়েছে। কোর্তাজার এর স্রেষ্ঠ উপন্যাস হপস্কচ শুরু হচ্ছে প্যারিসে, শেষ যদিও হচ্ছে না, বোলানোর অনেক উপন্যাস ই শুরু হচ্ছে শেষ হচ্ছে, স্পেনে আর বেলগিয়াম এ। মনিকা আলি এটা করছেন। এইটা খুব সুন্দর একটা ব্যাপার আমার সাহিত্যে হচ্ছে, নিকুচি করেছে ভূমিপুত্র সংবেদন এর। ভূমি যদি ভাষা থেকে দূরে যায়, ভাষা কেন বসে থাকবে। যেখানে যাবে সেখানে ছবি আঁকবে, গান শোনাবে। কোন কথা হবে না।

    জয় হোক।

    এই যে বাঙ্লাদেশে চাকরি নাই, বলে কত লোক বাইরে, এরা কি শুধু দেশের কথা লিখবে, যেখানে থাকে সেক্খানকার কথাও লিখবে, সেখানকার মানুষ নিয়া লিখবে। এইরকম করে তারেক ও লিখবে আসা করা যায়, ধর আয়ারল্যান্ডের একমাত্র তরুন বাঙালী কবি বিক্রম এইরকম লিখবে, তখন বেশ একটা যোগাযোগ হবে। সারা পৃথিবীর বাঙালী শালা মাণিক পড়বে , বংকিম পড়বে, আবার বিক্রম , তারেক, কুলদা দা এদের লেখাও পড়বে। খুব সুন্দর হবে কেসটা। এটা খুব ই একসাইটিং।
  • h | 127.194.239.4 (*) | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৪০67011
  • কুরেইশি র বাবাকে নিয়ে একটা লেখা আছে, তাতে এই বিষয় টা আরো সুন্দর ভাবে আলোচনা আছে পড়ে দেখতে পারেন। আর তারিক আলি র লেখাতেও এই বিষয় কিছু আছে, তবে ইংরেজি তে লেখা তো, পুরো শর্ত পূরণ হচ্ছে না। সেইদিন আমার খুব আনন্দ হবে,ধর এক দেড়শ বছর পরে এই সব লেখা পড়ার জন্য লোকে বাংলা শিখবে। সেটা বেশ ভালো হবে।
  • h | 127.194.239.4 (*) | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৪২67012
  • কলোনীর চেনা জাল বলতে বলছি যে , ধরুন ইডিশ ভাষার সাহিত্য ইউরোপের বাইরেও প্রচুর হয়েছে, কিন্তু বিষয় ধরুন আমেরিকা।
  • kumu | 132.161.79.173 (*) | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৩৪67007
  • খুব সেনসিটিভ গল্প।বুড়ী এলা ও বেনীর চরিত্র অনেক দরদ নিয়ে ফুটে উঠেছে।
  • তাপস | 11.39.36.76 (*) | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:০৫67013
  • নিকুচি করেছে ভূমিপুত্র সংবেদন এর। ভূমি যদি ভাষা থেকে দূরে যায়, ভাষা কেন বসে থাকবে। যেখানে যাবে সেখানে ছবি আঁকবে, গান শোনাবে। কোন কথা হবে না।

    এইটা পুরো সমর্থন
  • robu | 11.39.137.30 (*) | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০৫:০৮67008
  • বড্ড ভাল।
  • | 53.250.80.89 (*) | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ১১:১৯67009
  • অনবদ্য!
  • kk | 182.56.13.41 (*) | ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:২৭67015
  • বড় ভালো লেখেন আপনি কুলদা রায়। বড় ভালো।
  • h | 127.194.241.133 (*) | ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৫:৪০67016
  • সুকি তাপস থ্যাংক ইউ।

    প্রশ্ন তাইলে তিনটেঃ
    একটা হল অভিবাসীর একটা চোখ তো ট্রাভেলার এর। তো ফ্লিটিং এক্সপিরিয়েন্স এর থেকে অথেন্টিক এক্সপিরিয়েন্স এ কোনো উত্তরন হবে কিনা , হওয়ার দর্কার আছে কিনা। নাকি ছোটো ছোটো এক্সপিরিয়েন্স এর একটা সমাহার ই যথেষ্ট। এই প্রশ্নটা আমার প্রথম মনে হয়, প্রমোদেয়া অনন্থ টোয়ের পড়ার সময়। আমার মনে হয়েছিল, প্রচন্ড হনেস্টি, নিজের দেশের মানুষের প্রতি অসম্ভব নরম ভালোবাসা, এইটা ছাড়া আর কি আছে তাঁর লেখায়। লোকায়ত দর্শন এক ধরণের আছে, যেটা দৈনন্দিন থেকে গড়ে ওঠা, জেলে গিয়েও যা মরে নি। তীব্র ক্রোধ বা প্রসারিত দর্শন তো কোনোটাই পাচ্ছি না। নাকি এই আশা করাটাই অন্যায়, প্রতি নভেল কেই একটা বড় দার্শনিক আদর্শ নিয়ে তৈরী হতে হবে তার অর্থ কি? নাকি প্রতি নভেল, দেশ কাল এর মাত্রা ছাড়াবে, অর্থাৎ অন্য দেশের রিডার এর কাছে অর্থবহ হয়ে উঠবে এটাই বা কেমন দাবী। তো এই সব নিয়ে ভাবতে ভাবতে, এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই, যে মানুষ যত ট্রাভেল করে, ভাষা বা ভূমি তত করে না। নিবাস যদিও করে। ল্যাঙ্গুয়েজ মাই ওনলি কান্ট্রি এটা খুব কম লোক বোলতে পারেন। আর আন্তর্জাতিক পাঠকের প্রতি সকলের নজর ও থাকে না। সেটা হয়তো এক ধরণের হনেস্টি। কিন্তু আমার মনে হয়, মানুষ যদি তার নিজের ভাষার সাহিত্যের বিষয় কে প্রসারিত না করে কে করবে? তাই এই সব আগডুম ভাবা।
    দ্বিতীয়টা হল, রুটলেসনেস তা ভ্যালিড লিটেরারি ভ্যান্টেজ পয়েন্ট হিসেবে উঠে আসছে কিন্তু ঊনবিংশ শতকের শেষ থেকে বিংশ শতকে, যখন রেকর্ডেড ট্রাভেল বাড়ছে, ফোর্স্ডব বা চোজেন ইমিগ্রেশন বাড়ছে। ধর জিউইশ সাহিতেয়, এবং এক ধরণের আর্বান সাহিত্যে এই রুটলেস অ্যানোনিমিটি ই সেলিব্রেটেড হতে আরম্ভ করছে। এতা রাজনইতিক ঐতিহাসিক কারণে আমাদের সাহিত্যে হয় নি। হয়তো পরে হবে।
    তৃতীয় টা হলঃ একটা লেখার জন্য একজন লেখক বিখ্যাত হওয়ার আগে একটা সলতে পাকানোর পালা থাকে। আমার যেটা জানতে ইচ্ছে করে, এই প্রচার প্রসার হওয়ার আগে লোকে বিষয়ের তাড়নায় কিসু লিখেছে কিনা। ধরণ অন্নদশংকর এর সত্যাসত্য, বিদেশে বাঙালী ইন্টেলেকচুয়াল, কি ভাবছে সেই নিয়ে লেখা, কিন্তু সে তো ছত্র র দেখা, অভিবাসীর দেখা তো কিছুটা আলাদা হবে। বাঙালীরা তো ইনটারনেট এর অনেক আগে থেকে বিদেশে যাচ্ছে, তো তখন কি নিয়ে লিখতো। নাকি বাংলা ভাষার সাহিত্য পদবাচ্য হতে গেলে অভিবাসীর অভিজ্ঞাতা লেখা যায় কিনা সেই নিয়ে কোন সন্দেহের একটা জায়গা ছিল। নাকি নস্তালজিয়া সেফ বেট বলে সেই নিয়ে পূজাঅ সুভেনির ভরানো হয়েছে। নাকি পন্চাশের দশকের বাঙালীর ভাগলপুর দেওঘর নিয়ে গল্পের মত কিছু কেস হয়েছে। তো আমি সেই মোমেন্টের অপেক্ষায়, যখন বনফুল এর গল্প আচম্কা ধোড়াই চরিত মানস হয়ে উঠবে, অভিবাসীর জগত থেকেই উঠবে। সেইটাঅ হয়তো কুলদা দা, ইন্দ্রাণী দি, বিক্রম দের হাত থেকেই হবে। না হলে ক্ষতি নেই, তবে হতে পারে।
  • h | 127.194.241.133 (*) | ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৫:৪৩67017
  • তারেক এর নাম টা ঐ তালিকায় যাবে। আমার সীমিত অভিজ্ঞতায় হি ইজ মোস্ট ওয়ান্ডারফুলি ট্যালেন্টেড।
  • সুকি | 129.160.188.16 (*) | ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ১২:০৬67014
  • h (হনুদা!)-এর সাথে এই বিষয়ে একমত যে ভাষার বসে থাকা উচিত নয়। যেখানে যাবে সেখানকার মত করে, সেখানকার মানুষ ও পরিবেশ নিয়েই বাঙালী লিখুক না! সে এক দারুণ পাওয়া হবে।

    আমি আগেও এখানে লিখেছি, এবং নিজে মনে করি যে কুলদা বাবুর মত শক্তিশালী গল্প লেখার কলম অন্তত আমার বাঙলা সাহিত্যে এই মুহুর্তে খুব বেশী চোখে পড়ে নি। ইদানিং আমার মনে হত কুলদা বাবুর অনেক গল্পই প্রায় এক ধরণের হয়ে যাচ্ছে - সেই হিসাবে এই গল্পটি অন্য ধরণের। তবে কিনা ভ্যারিয়েশন আনতে হবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয় নি - যিনি বিরিয়ানী ভালো পাকান, তাঁকে 'ভালো পেষ্ট্রী শেফ নয়' বলে সমালোচনার কোন মানে হয় না। আসলে কুলদা এতো ভালো লেখেন যে, হনুদার মত আমারও পড়তে ইচ্ছে করে এই উপরের গল্পের মত গল্প - তাই দাবী থেকে যাক।

    তবে কিনা জানার বাইরেও তো কত কিছু থেকে যায় - কত লেখা চোখে আসে না। যদি শুধু গল্পের কথা হয় তাহলে বলতে পারব না - কিন্তু কবিতাও যদি এর মধ্যে ঢুকে যায় আলোচনায়, তাহলে বলব "অভিবাসী ভারতীয় অভিজ্ঞতা" নতুন কিছু নয়। ইন্টারনেট প্রসারের সাথে সাথে আজ থেকে প্রায় ১২-১৩ বছর আগে থেকে কবিতায় অভিবাসী বাঙালী অভিজ্ঞতা পড়তে আমি (এবং আরো অনেকে অভস্ত্য)। সেই সব কবির কথা আর কয় জন জানে। তাই বলব লেখার থেকেও বড় প্রবলেম হচ্ছে সেই লেখার প্রসার।
  • তাপস | 11.39.36.55 (*) | ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ০৬:১৯67023
  • হানুকে একটা প্রশ্ন ছিল। ফ্লিটিং এক্সপিরিয়েন্স ইটসেল্ফ কি অথেন্টিক এক্সপিরিয়েন্স নয়! তুমি কী ভাবে অথেন্টিককে আলাদা করছ? তোমার মধ্যের কোন প্রি কন্সিভড নোশন থেকে? সেটা কী?
  • h | 127.194.228.178 (*) | ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ০৭:০১67024
  • জানি শ্লা ধরবেঃ--))))))) কি বোর্ড এ ফিরে বোলবো বলার চেষ্টা করবো
  • কল্লোল | 125.248.76.233 (*) | ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ০৮:১৪67018
  • বড় চমৎকার লেখা।
  • d | 24.97.38.64 (*) | ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ০৮:২৫67019
  • গল্পটা দুর্দান্ত, সে আর কি নতুন কথা বলব!

    কথা হল অভিবাসী সাহিত্য নিয়ে বলতে গেলে হনুকে বলার এই যে তুমি বোধহয় হিমু ওরফে মাহবুব আজাদ পড়ো নি। হিমুকে আমার সবচেয়ে ট্যালেন্টেড মনে হয় ওর বিভিন্ন ধরণের লেখা, বিভিন্ন দিকের লেখার জন্য।
    দাঁড়াও তোমাকে পড়াতে হবে। কিন্তু ছোটাই লিখেছিল হিমুর প্রথম বইটা নিয়ে। গুচতেই আছে।

    দ্বিতীয় কথা হল তারেকের একটা ঈংরিজি প্রবন্ধ পড়লাম কদিন আগে কোনও একটা অস্ট্রেলিয়ান ডেইলিতে। কিন্তু ছোকরা বোধহয় গল্প লেখা বেমালুম ছেড়ে দিয়েছে।

    আর শেষ কথা হল তুমি যে আনন্দ করবার জন্য আরো দেড়শো বছর বেঁচে থাকবে ... এটা দেখে .. এ মনে যাকে বলে খুপি আনন্দের কত।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন