এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সীসা হো ইয়া দিল হো

    অবন্তিকা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৫ জুন ২০১৫ | ২৭৬১ বার পঠিত
  • শিরোনামটা ঝাড়া l জনৈক ফেসবুকিয়ার দেওয়াল থেকে l ম্যাগিতে অত্যধিক সীসা ও আজিনামোতো ব্যবহারের ফলে যে তুলকালাম চলছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, বলা বাহুল্য তার প্রতিক্রিয়া l এর চেয়ে অ্যাপ্ট আর কিছু এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না l

    এক বছর হল ম্যাগি খাওয়া বন্ধ করেছি l বন্ধ মানে বন্ধই l স্টমাকের অবস্থা বেশ কিছুদিন যাবৎ শোচনীয় l মানে, অ্যাপ্যারেন্টলি আমাকে দেখে পেটমোটা মনে হলেও আদতে আমি বেশ পেটরোগা লোক, আর পাঁচটা বাঙালির মতই l কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সাপের পাঁচ পা (মা উবাচ) দেখে ফেলার দরুণ রোজ রোজ বাড়ি থেকে ফলমূল বা রুটি-চচ্চড়ি টিফিন নিয়ে যাওয়াটা একপ্রকার বিলাসিতা মনে করতাম l আসলে তো বনমালীদার ক্যান্টিনে দলবল মিলে চলত ডুবো তেলে ভাজা পেঁয়াজি, আলুর চপ, বা বেগুনি সহযোগে ফিস্টি l মাঝে মাঝে বৃষ্টি পড়লে বেশ সামন্ততান্ত্রিক মেজাজে- হে বন্ম্যালীইইইই, আলু কা পরাঠা বানাও জলদি- বলে হাঁক পাড়ত কোনো না কোনো স্যার l ময়দা অবশিষ্ট থাকলে আমরাও দু’এক পিস সাঁটিয়ে দিতাম l আমাদের কলেজ-ক্যান্টিনটা সরাসরি সরকারি হাসপাতালের আওতাভুক্ত ছিল না l বনমালীদা দশ বছরের জন্য লিজ নিয়েছিল l ফলে খাবারের দাম যে আহামরি সস্তা ছিল তা নয় l ক্লাসের শেষে সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বনমালীদার বউ আমাদের জনা চারেকের দলটাকে আসতে দেখলেই বলত- না না আজ অন্যকিছু হবে না, এই চারজনের জন্য আমি আবার লুচি ভাজতে পারব না l যেন একান্নবর্তী পরিবারের বড় পিসিমা কচিকাঁচাদের আবদারে নেহাতই অতিষ্ট হয়ে গজগজ করে চলেছে ! আমাদের হট্টগোল শুনে বনমালীদা তাদের ছাউনি দেওয়া এক চিলতে শোয়ার জায়গা থেকে হাই তুলতে তুলতে বেরিয়ে আসত l ওহ তোমরা ! পেঁয়াজি ভেজি দিলি হবা নি? আমরা বলতাম- হবে হবে, শুধু জম্পেশ করে মুড়ি মেখে দিও সঙ্গে l ওড়িয়া বংশদ্ভুত বনমালী পরামাণিক ইয়াব্বড় ভুঁড়িতে হাত বোলাতে বোলাতে হাহা করে হাসত l হাউসস্টাফশিপের সময় ফের কলেজ-হাসপাতাল চত্বরে এলাম l মধ্যে এক বছর প্রায় কোনো যোগাযোগ ছিল না এদের কারও সাথে l এসে দেখলাম বনমালীদারা চলে গেছে l এসেছে সুব্রত l তার বিরাট বড় একটা ফ্রিজ আছে l সেখানে কোল্ডড্রিংকের বড় বড় বোতল থাকে l ক্যান্টিনটাও বেশ সাজিয়েছে যত্ন করে l অসময়ে টিফিন চাইলে সুব্রত সবাইকে ম্যাগি বানিয়ে দেয় l প্যাকেটের ম্যাগি, কৌটোর ম্যাগি, যার যা চাই l আমাদের ওই পেটুক-পার্টি আর কখনওই ঢেলে-সাজানো ক্যান্টিনে বসে সাহস করে ‘বাড়ির খাবারের আবদার’ করে উঠতে পারেনি l

    তা কি দিয়ে শুরু করেছিলাম যেন? আমি এখন আর ম্যাগি খাই না l আরে এখন খাই না বলে কি কখনও খেতাম না? আমাদের বাড়িতে ম্যাগি একটু ম্লেচ্ছই ছিল, স্বীকার করছি l দুমিনিটে যা রান্না করা যায়, তা ঠিক পাতে দেওয়ার মতো না বলে বাবা মনে করত l তাই মা ওটাকে বাঙালির চাউমিন স্টাইলে বানাত l অর্থাৎ সঙ্গে বিবিধ সবজি (মাঝে মাঝে কুচোনো পটল, কুমড়ো, এসবও পড়ত, প্লিজ হাসবেন না), ডিম অথবা চিকেন l ‘নিরামিষ’ ম্যাগি বানালে মা নামানোর আগে আধ চামচ মাখন ফেলে দিত l আর সেটা গলে গিয়ে যে স্বর্গীয় ব্যাপারটা দাঁড়াত তা ভাষায় প্রকাশ করা দুঃসাধ্য l স্কুল থেকে ফিরে হপ্তায় একদিন আমার ওই অভিনব ম্যাগিটা চাইই চাই l খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট জেশ্চারও ছিল l সবুজ স্কার্ট- সাদা শার্ট- চুলে ঝুঁটি বাঁধা (পরে সেটা বিনুনী হয়েছিল অবিশ্যি)- পায়ে একপাটি মোজা- সামনে টিনটিন- হাতে ম্যাগি l মানে টিনটিনের জায়গায় হাঁদাভোঁদা হলেই কিন্তু ম্যাগি তার স্বকীয়তা হারাতে পারত, এমনকি একপাটি মোজা দুপাটি হলেও l দাদা আমার আধ ঘন্টা পরে স্কুল থেকে আসত l ঢুকেই দেখত আমি টিনটিনে বিহ্বল, আর সেই সুযোগে এক খাবলা ম্যাগি তুলে নিয়ে ধাঁ l গোটা স্কুলজীবনে এ ঘটনার ব্যত্যয় ঘটেনি l

    ২০০৪ সাল l আমি মাস ছয়েক হল কলেজে ঢুকেছি l দাদার আমেরিকা যাওয়ার তোড়জোড় চলছে জোর কদমে l একটা পাল্টে যাওয়া বিকেলেবেলা l সেদিনই ভিসা কনফার্ম হয়েছে ওর l আমি ক্লাস করে ফিরতে, মা ভেতরের ঘর থেকে বলল ক্যাসারোলে ম্যাগি রাখা আছে l যাদবপুরের স্টুডেন্টরা গিটার ব্যাপারটাকে সংক্রামিত রোগের মতো আপন করে নেয় l যথারীতি দাদাও ফার্স্ট ইয়ারে ভাঁড় ভেঙে গিটার কিনেছিল l এখন গান কম, আর ‘প্রিংপ্রিং’ (এটা বাবার অভিধান থেকে আমদানিকৃত) বেশি হচ্ছে l আমি একটা বড়সর বোওলে ম্যাগি নিয়ে চেয়ারে বসে ঠ্যাং দোলাচ্ছি l দাদা বিদেশ যাবে বলে পরিবারে বেশ কিছুদিন ধরেই ফিসফাস শুরু হয়েছিল- যে, এই যাচ্ছে আর ফিরবে না, কেউ কেউ বলছিল- না না বাবা মার প্রতি কি একটা দায়িত্ববোধ নেই ! আমার কিছুই মনে হচ্ছিল না l ইচ্ছে হলে ফিরবে না ইচ্ছে হলে নয় ! মাত্র তো বাইশ ঘন্টার মামলা ! বরং বছর বছর এলে কত পুতুল আসবে, চকোলেট আসবে ! হঠাৎ কী মনে করে দাদা একটা অন্যরকম সুর বাজাতে শুরু করল l রবীন্দ্রসঙ্গীত l আরে এটা তখুব চেনা গান ! আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে/ ভোরের আলো মেঘের ফাঁকে ফাঁকে... উপলব্ধি হতেই হু হু করে কান্না পেল l দাদা কিংকর্তব্যবিমূঢ ! ওকি রে তুই কাঁদছিস কেন ! আমি বোকার মতো বললাম- কই আজ তো আমার থেকে ম্যাগি নিলি না ! দাদা বলল- তাই বলে তুই কাঁদবি !

    কলি ওর বোনকে ছেড়ে মেদিনীপুর থেকে কোলকাতায় এসেছিল l কলি মানে কল্যাণ l আমার থেকে এক মাসের বড়, দু ইঞ্চি বেঁটে, অন্তত দশ কেজি কম ওজন, আর মাথায় বিস্তর টাক l কলেজে ওইই বোধ হয় আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল l দুজনের একটা কমন ব্যথার জায়গা ছিল আমাদের l কেটে যাওয়া কৈশোর প্রেম l কলি থাকত কলেজস্কোয়ারের একটা বয়েজ হোস্টেলে l আমরা প্রায়শ শ্যামবাজার থেকে ৫ নম্বর ট্রাম ধরে কলেজস্ট্রিট যেতাম l রাস্তায় কলি আমাকে ‘হাতি যায় উড়ে সারা আকাশ জুড়ে’-র মতো কুত্সিত অথবা ‘বৃষ্টি পড়ে ঘাসে ট্রামলাইনের পাশে’- জাতীয় মন কেমন করা ছড়া শোনাত l আমরা ইতিউতি ঘুরতাম, বই দেখতাম, প্যারামাউন্টে একটা ডাব শরবত (ওটাই সবচেয়ে দামি ছিল, অগত্যা...) নিয়ে দুজনে ভাগাভাগি করে খেতাম l তারপর কোনোদিন কলি আমাকে সেন্ট্রাল এভিনিউ অবধি ছাড়তে আসত ফের, বা বেশিরভাগ সময় হোস্টেলে ঢুকে যেত, আর আমি বাস বা মেট্রোয় চড়ে বসতাম l থার্ড সেমেস্টারের অব্যবহিত আগে কলি লাইব্রেরি থেকে ‘রাত ভর বৃষ্টি’ তুলল l এক রাতে শেষ করে আমার হাতে চালান l সামনে পরীক্ষা l নিকুচি করেছে l এক রাতে আমারও শেষ l এ বই পড়তে পড়তে থামা যায় না l পরদিন কলেজে কেউ কারো সাথে কথা বলছি না l ব্রেকে বেরিয়ে পড়লাম l একটা ভিড় ট্রামে উঠে কলেজস্কোয়ার l মা টিফিনে ম্যাগি বানিয়ে দিয়েছিল l ভাগ করে খাবো ভেবে কাঠবেড়ালি আঁকা বাক্সটা খুলে পাশে রেখেছিলাম l আসলে আমরা জলের দিকে তাকিয়ে বসেছিলাম দুজনেই l আর মাথার ভেতর গিজগিজ করছিল বুদ্ধদেব বসু l

    সেদিন এক বয়জ্যেষ্ঠ বন্ধু বলছিল- তিরিশের পর মানুষের অতীত তৈরি হতে শুরু করে, বুঝতে পারবি নিজে l আমি ভাবছিলাম- পার্ট অফ ‘এজ থার্টি ট্রানজিশন’ l দেড় হপ্তা বাদে তিরিশ হয়ে যাবে l ফেসবুকে ম্যাগির পোস্ট দেখতে দেখতে এই এত্তকিছু মনে পড়ে গেল দুম করে l অতীত... হালকা হালকা, রিনরিনে, একটা মন খারাপের মতো অতীত... না?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৫ জুন ২০১৫ | ২৭৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • | 183.17.193.253 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ০১:১১67138
  • দিব্যি হয়েছে।

    আমি সেই হতভাগ্যদের একজন,যাদের মেজোবেলায় বাড়িতে ম্যাগির প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলো।এদিকে ম্যাগির ঢাউশ দুটো প্যাকেট পড়ে আছে। এখন দিল রাখি না সীসা রাখি?:(
  • 0 | 132.163.15.93 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ০১:২৭67139
  • ম্যাগিতে কুচোনো মাশরুম, বীন্‌স্‌, কিমা আর অল্পেট্টু টম-চি সস্‌ দিয়ে 'হগ্গের দ্যাব্‌তাদেরও ইংসে অইবো' গোছের একটা অমৃতসম ব্যাপার হয়
  • | 24.96.7.236 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ০৩:৪১67140
  • খুব ভালো লাগলো অবন্তিকা।
  • abantika | 122.79.35.196 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ০৪:৪১67141
  • ম্যাগি ফ্লেভার্ড চা! যা তা তো! :p আর আমাদের প্রজন্মের অনেকেরই কিন্তু বিবাহিত জীবনও ম্যাগিময়. টেস্ট মেকারটা বরাবর এড়িয়ে গেছি বলে আপিস থেকে ফিরে বাড়াবাড়ি রকম খিদে পেলে দেড়খানা ম্যাগি স্রেফ নুন মরিচ আর চিজ বা মাখন সহযোগে সেদ্ধ করেই গপপ :) সঙ্গে সসেজ কুচিয়ে দেওয়ার অপশন থাকলে তো জাস্ট কথা হত না!
  • san | 11.39.35.95 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ০৬:১০67142
  • ম্যাগির এপিটাফ :-D
    ভাল্লাগল !
  • সে | 188.83.87.102 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ০৬:৩৩67143
  • ম্যাগির অফিসের পাশের বাড়ীটায় কয়েকমাস নিয়মিত যেতাম। ম্যাগি খাইনি যদিও।

    অফিসের সামনে রেললাইন। রেলস্টেশন। টানা এক কি দেড় বছর এই রেল স্টেশন, ম্যাগির অফিস/কারখানা, এসব ছিলো একটা ল্যান্ডমার্ক। ঐ রেল স্টেশনে যেই আমার ট্রেনটা এসে পৌঁছে যেত ভোরে, একটুক্ষণ থামত। জানলা দিয়ে ম্যাগির অফিস দেখতাম, কাস্টমসের লোকেদের আনাগোনা, একটু পরেই ট্রেন ছেড়ে দিতো উল্টো ডিরেকশানে। বেষ্পতি কি শুক্রবারে সন্ধ্যে হয়ে যেত ম্যাগীর বিল্ডিং এর সামনে পৌঁছতে পৌঁছতে। ওখানে পৌঁছনো মানেই মনে আনন্দ। আর দেরি নেই ঘরে ফেরার। রেললাইনের থেকে একটু হেঁটে একটা মৃত আগ্নেয়গিরি। এইটে।

    অবিশ্যি এখানে ম্যাগি বলে না। মাগী বলে। নেস্‌লে প্রোডাক্ট। একেকজনের একেকরকম স্মৃতি মাগী নিয়ে।
    লেখাটা খুব সুন্দর হয়েছে জানিয়ে রাখলাম।
  • Salil Biswas | 120.224.195.96 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ০৭:০৪67132
  • খুব ভালো লাগলো।
  • a x | 60.171.26.111 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ০৮:৪৭67133
  • কি সুন্দর লেখা - ছোট ছোট জিনিসের সাথে কত কি জড়িয়ে মড়িয়ে থাকে।
  • | 11.39.12.169 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ০৯:১০67134
  • ভাĺলেগেছে।
    আমÀর ম্যাগী নিয়ে তেমন কোনো স্মৃতি নেই যদিও কিন্তু এটা ভাল্লাগলো খুব।
  • - | 109.133.152.163 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ১০:৪২67144
  • মাগী (বাং) নিয়ে স্মৃতি নেই, এ হয় নাকি? ঃ-)
  • avi | 113.24.86.57 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ১০:৪৩67135
  • হোস্টেল মানেই ম্যাগি।আমাদের তিন তলার হোস্টেল ক্যান্টিনে ঢুকে যেই নিমাইদাকে জিজ্ঞেস করতাম, কি খাবার আছে, নিমাইদা এক বুক শ্বাস নিয়ে গড়গড়িয়ে যেত, " কি নেই বাবু! ডিম রুটি কলা মিষ্টি ম্যাগি--"। শেষেরটাই ছিল অসময়ের বন্ধু। প্লেন, ডিম দিয়ে, পেঁয়াজ ছড়ানো, সস দেওয়া -- কত ভ্যারাইটি। রুমে মুনি একটা ছোট্ট ইমার্শন হিটার কিনলো। পরে আম্মো। প্রথম কম্বাইনড রান্না - ম্যাগি।
    পরে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করতে আবার যখন থাকছি, প্রথমে একা এক ঘর নিয়ে, খাবার পরীক্ষা সব ছিল ম্যাগিকেন্দ্রিক।আমার কাজিন এল একবার। রাতে হেলদি খাবার খাবে। সামান্য ম্যাগির সাথে এন্তার গাজর পেঁয়াজ এবং আরো রকমারি দিয়ে এক থুকপা-প্রতিম খাদ্য তৈরি হল। প্রচুর মোটিভেশন ছাড়া গলাধঃকরণ চাপ।
    এমনকি এখনো, এই একমাস আগেও।ওপিডি জাস্ট শেষ হয়েছে, এখুনি সেমিনার শুরু হবে। চট করে কিছু খেয়ে আসি। শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রীটের গায়ে দাদুর চায়ের স্টল। "তাড়াতাড়ি দুটো ম্যাগি বানাবেন, ডিম দিয়ে, একটা ঝুরিভাজা, অন্যটা ওমলেট।"
    আহা।
    তখন, 'ময়দানে ভরা ঘাস ছিল,/ প্রিয়রঞ্জন দাশ ছিল,/ তবু বাইচুং বুঝেছিল- / মোহন বাঁশিতে বাঁশ ছিল।'
  • শ্রী সদা | 113.19.212.22 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ১১:৫০67136
  • আমার ম্যাগীর অভ্যাস তৈরী হয় কোলকাতায় সেক্টর ফাইভে চাগ্রী করতে গিয়ে। দুপুরে বাড়ি থেকে আনা লাঞ্চ করলেও সন্ধ্যের দিকে খিদে খিদে লাগতো। টুক করে আপিস থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে রাস্তার ওপারে ফুটপাথের রেলিং এর ফাঁক দিয়ে ঢুকে "লালটু, একটা ফিল্টার উইলস দাও আর একটা ডাবল ম্যাগী - ডিম দিয়ে" বলে পাথরের স্ল্যাব দিয়ে বানানো ধাপিতে পেছন ঠেকানো। সিগারেট শেষ হতে হতে ম্যাগী এসে যেত। ম্যাগীর কড়াইটা বোধয় লালটু কখনো মাজতো না, কিন্তু সেদিকে না তাকাতে শিখে গেছিলাম। কাগজের প্লেটের নীচে একটা থালা দিয়ে দিত লালটু, আর প্লাস্টিকের চামচ। চামচে জড়িয়ে ম্যাগি মুখে চালান করতে করতেই বেশীরভাগ সময় আরো জনতা জুটে যেত। চা-সিগারেট-কেক এর অর্ডার দিয়ে বিকেলের আড্ডা জমে উঠতো ঐ ফুটপাথের চালার নীচে। ইনফিনিটির উপরতলার কাচের দেওয়ালে রিফ্লেক্ট করে শেষ সূর্যের আলো এসে পড়তো সেক্টর ফাইভের রাস্তায়।
  • dc | 132.164.16.165 (*) | ০৬ জুন ২০১৫ ১২:৪৫67137
  • ম্যাগির থেকে উপকারী খাবার এই জীবনে দেখলাম না। চাকরি জীবনের একটা বড়ো অংশে রাত দশটা এগারোটার আগে বাড়ি ফিরতে পারতাম না, বাড়ি ফিরে দু প্যাকেট ম্যগি আর একটা চিজ স্লাইস দিয়ে নিশ্চিন্তে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়তাম। একটা রুমে ভাড়া থাকতাম, কিচেন ছিলনা। একটা স্টোভ কিনেছিলাম, আর কেটলি আর গ্লাস। প্রথমদিকে কেটলিটাতে ম্যাগি বানিয়ে খেয়ে নিতাম। রোববার করে চা বানাতাম, তাতেও ম্যাগির টেস্ট লেগে থাকত। বিশেষ প্রিয় ছিল আটা ম্যাগি, ওটা বেরোবার পর থেকে এমনি ম্যাগি খুব একটা খাইনি। অনেক সময়ে ডিমসেদ্ধ করে ম্যাগিটার মধ্যে দিয়ে দিতাম। পরে আরো দুয়েকটা প্যান ইত্যাদি কিনেছিলাম, তখন ডিমের পোচ বানিয়ে ম্যাগির ওপর ছেড়ে পুরোটা খেতাম। আর ছুরি কেনার পর থেকে চিজ কিউব দিয়ে খেতে শুরু করলাম। সত্যি, ম্যাগি না হলে ব্যাচেলার লাইফ যে কিভাবে কাটাতাম কেজানে!
  • সুকি | 129.160.188.215 (*) | ০৭ জুন ২০১৫ ০১:০৯67146
  • ভালো লাগল লেখা -

    আরো জেনে ভালো লাগল যে ২০০৪-২০০৫ সাল নাগাদও ‘রাত ভর বৃষ্টি’ পড়ে তরুণ-তরুণী আন্দোলিত হয়েছে। আমি ভাবতাম যে এই সব বইয়ের দিন শেষ হয়ে গেছে অনেকদিন হল!
  • Aniket | 122.79.38.155 (*) | ০৭ জুন ২০১৫ ০৫:৪৮67147
  • ভারি সুন্দর লেখা, মন ছুঁয়ে যায়।
  • Pobitro | 127.194.3.167 (*) | ০৭ জুন ২০১৫ ০৬:৫৩67152
  • দারুন হয়েছে ঃ)
  • kabir | 125.118.180.31 (*) | ০৭ জুন ২০১৫ ০৭:১০67148
  • Aaj sokale uthe abr ghumiye porechilm. Bristir jhaptai ghum vhanglo. Ipsita'r share theke apnar lekha ta porlam.. din ta onno vabe suru holo. Khuub valo hyeche... maggie er motoi molayem..
  • শিবাংশু | 127.197.241.255 (*) | ০৭ জুন ২০১৫ ০৮:১৬67149
  • আমি ম্যাগি প্রজন্মের ন'ই। কখনও খাইনি। তবু লেখাটা স্পর্শ করলো....
  • abantika | 126.202.222.247 (*) | ০৭ জুন ২০১৫ ০৯:১৯67150
  • সে আপনি কোথায় থাকেন? আমি যাবোওওওওওও! এইসব জায়গায় ঠাকুর দেব্তা পাওয়া ফাওয়া যায়!
  • i | 134.169.135.239 (*) | ০৭ জুন ২০১৫ ১০:১২67153
  • অবন্তিকার যে কটি লেখা পড়েছি -সবকটিই অতীব সুখপাঠ্য, লেখার ফ্লো দুর্দান্ত। এই লেখাটিও তাই।
    আর লেখা পড়ে পাঠকেরও স্মৃতিচারণ-লেখাটির এই তো সব থেকে বড় প্রাপ্তি...
  • se | 87.59.50.27 (*) | ০৭ জুন ২০১৫ ১১:৩৭67151
  • অবন্তিকা, এই ম্যাগীর অফিসটা জার্মানীতে, আমি থাকি একটু দূরে সুইটজার্ল্যান্ডে। চলে আসুন সপরিবারে। সাদর আমন্ত্রন জানালাম। ঠাকুর দেবতা আছে কিনা জানিনা। খুঁজতে হবে মনে হচ্ছে।
  • aranya | 83.197.98.233 (*) | ০৭ জুন ২০১৫ ১২:৪৫67145
  • সুন্দর লেখা
  • Soumyadeep Bandyopadhyay | 127.194.106.39 (*) | ০৮ জুন ২০১৫ ০২:৪৭67160
  • পুরো ম্যাগাত্মক হইসে
  • অভ্র | 151.0.13.229 (*) | ০৮ জুন ২০১৫ ০৪:৫১67161
  • এরকম গুছিয়ে (বা অগুছিয়ে) লিখলে ফেলে আসা জীবনটাকে কত কাব্যময় মনে হয়। কিন্তু জীবনটা তো জাস্ট নরমাল ওয়েতে চলে,সেখানে সবকিছু এরকম সুন্দর নাটকীয় স্ক্রীপ্টেড ফ র্মে থাকেনা। আসলে বর্ত মানটাকে যখন অতিবাহিত করা হয় তখন সেটার "মেমরিক শিরশিরানি"টা ফিল করা যায়না, পরে ওগুলকেই আহামরি বা এরকম "রিনরিনে" লাগে...্
  • কল্লোল | 111.63.80.58 (*) | ০৮ জুন ২০১৫ ০৬:১৬67154
  • আর একটা টই খুলতে ইচ্ছে হলো না। তাই এখানেই দিলাম।
    বাংলা কাগজগুলোতে ম্যাগীস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। মুল সুরটা - কতো ভেজাল, রং করা তরকারী, ইউরিয়াভাজা মুড়ি তো খাচ্ছি, ম্যাগী কি দোষ করলো।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ০৮ জুন ২০১৫ ০৬:২৮67155
  • ম্যাগি নুড্‌লস্‌ তো ছিল নেমব্র্যান্ড, অনেকে চাউমিন বা নুড্‌ল্‌স্‌ বলতই না - ম্যাগি নামেই চিনত। ঐ, ডকুমেন্ট জেরক্স করে আনার মতন।
  • dc | 132.164.234.24 (*) | ০৮ জুন ২০১৫ ০৬:৪৫67156
  • এই কথাটাই বাড়ির লোকজনদের বুঝিয়ে পারছি না - যেখানে আমাদের সমস্ত খাবার থেকে জল, বাতাস সবেতে দূষণ, সেখানে হঠাৎ ম্যাগি নুডলসের পেছনে পড়া কেন বাবা? সকালে উঠে চা পাউরুটি কলা থেকে শুরু করে দুপুরে রুটি সব্জি, রাতে ভাত, সমস্ত খাবারে তো বিষাক্ত জিনিষে ভর্তি! দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, কোল্ড ড্রিংকস, চিপস, আইসক্রিম, চকোলেট, কিসে ভেজাল নেই? এদিকে বাড়িতে ফর্মান জারি হয়েছে ম্যাগি নুডল খাওয়া চলবে না! জিগ্যেস করলাম, তাহলে ম্যাগির সস, পাস্তা, মশলার কিউব, এগুলো চলবে? কোন উত্তর পেলাম না ঃ-(
  • - | 109.133.152.163 (*) | ০৮ জুন ২০১৫ ১০:১০67162
  • সীসারই ভালো নাম অভ্র, না?
  • PM | 116.78.62.160 (*) | ০৮ জুন ২০১৫ ১১:২৭67157
  • হঠাৎ ম্যাগীর পেছনে লাগা আর একটি ভারতীয় নামকরা কোম্পানীর ম্যাগীর প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যন্ড লন্চ করা ---- এই দুটো ঘটনা কোয়েন্সাইড করায় একটু অস্বস্থি হচ্ছে। ম্যাগি মার্কেট থেকে রিকল করায় ঐ প্রতিদ্বন্দ্বী সংম্স্থার বাজারের শেয়ার বাড়ানোর মোক্ষম সুযোগ করে দিয়েছে। কদিন আগেও এরা একটা নুডল্সের ব্রান্ড নেম নিয়ে কোর্টে শিং নাড়িয়ে মারামারি করছিলো। নেসলের এই নতুন বে-ইজ্জতিতে কর্পোরেট রাইভালারীর কোনো ভুমীকা আছে কিনা কে জানে? ম্যাগির ৭৫ % মারকেট শেয়ার কমানোর জন্য এর থেকে ভালো সুযোগ আর হয় না।

    যদিও এক্ষেত্রে ঘটনাক্রম উপভোক্তাদের উপকার-ই করেছে তাতে সন্দেহ নেই।
  • dc | 132.164.234.24 (*) | ০৮ জুন ২০১৫ ১১:৪৭67158
  • অন্যান্য ব্র্যান্ড আর প্রোডাক্টও পরীক্ষা করতে শুরু করেছে। সত্যি সত্যি যদি কোয়ালিটি কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে তাহলে তো অবশ্য খুবই ভালো, প্রায় রামরাজ্যে থাকার মতো ব্যাপার হবে।

    http://m.ndtv.com/india-news/maggi-controversy-fssai-orders-testing-of-other-fast-food-brands-769727
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন