এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • নারী-ধর্ষণ সম্পর্কে দু’চার কথা যা আমরা জানি অথবা জানিনা

    অবন্তিকা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৭ আগস্ট ২০১৫ | ৮১৭৯ বার পঠিত
  • [কেন 'নারী-ধর্ষণ' তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাই প্রথমেই শিরোনাম সম্পর্কে আত্মপক্ষ সমর্থনে বলে রাখি, যেহেতু ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি ধর্ষণ ব্যাপারটা জেন্ডার-নিউট্রাল একটা ইস্যু, যেহেতু ভারতে ধর্ষণের সংজ্ঞার আরও আরও পরিমার্জন কাম্য বলে মনে করি, আর এই লেখাটা কেবলমাত্র মহিলাদের ধর্ষণ প্রসঙ্গেই একটা ওভারভিউ, তাই এ হেন নাম l
    লেখাটা প্রাথমিকভাবে লিখেছিলাম মার্চ মাসে, রাণাঘাট কাণ্ড ও সুজেটের মৃত্যুর অব্যবহিত পর l একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের কারণে শেষমেষ হয়নি l তারপর বেশ কিছুদিন যাবৎ লেখাটা জাস্ট পড়েই ছিল l জয়ন্ত দা পত্রিকার জন্য লেখা চাইলে বলি, ধর্ষণ সম্পর্কিত একটা লেখা হাতে আছে, কিন্তু সেটা স্বাস্থ্যের বৃত্তের জন্য কতটা উপযুক্ত হবে জানিনা l অরুণার মৃত্যু ও আরও সামান্য কয়েকটি তথ্যের সংযোজন করে, ওনাকে পাঠাই l উনি কয়েকদিনের মধ্যে জানান লেখাটা অগস্ট ইস্যুর কভার স্টোরি করতে চান l
    কারো কারো পক্ষে যেহেতু পত্রিকার কপি সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই জয়ন্ত দার অনুমতিক্রমে লেখাটা ব্লগে দিলাম l উপরন্তু সাইটের মানুষজনের মনোজ্ঞ মতামত পেলে নিজের জানার পরিধিও, বলা বাহুল্য, ব্যপ্ত হবে l
    লেখাটার জন্য গুরুচন্ডা৯-র 'প্রসঙ্গ ধর্ষণ' বই থেকে কয়েকটি তথ্য নিয়েছিলাম, তাই এই সুযোগে সৈকতদা আর ঈপ্সিতাকেও ধন্যযোগ l ]



    সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটের জনপ্রিয় গ্রুপে একখানা সুতো খোলা হয়েছিল l একটি নগণ্য সমীক্ষা l জানতে চাওয়া হয়েছিল- গ্রুপের মহিলা সদস্যরা গত ২০১৪ সালের ৩৬৫ দিনে ঠিক কতবার ইভটিজিং-এর মুখোমুখি হয়েছেন l রাস্তায়, অফিসে, বাজারে, কলেজে, পাবলিক ট্রান্সপোর্টেবিবিধ নোংরা মন্তব্য, খারাপ দৃষ্টিবা গায়ে হাত- এ সমস্তই মাথায় রেখে স্রেফ একটা সংখ্যার উল্লেখ l বলা বাহুল্য, উত্তরগুলো ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো l মহিলাদের কাছ থেকে জবাব আসছিল- ‘অসংখ্যবার, গোনা সম্ভব নয়’, ‘মানেটা কী? মোর দ্যান হান্ড্রেড টাইমস আই গেস!’, ‘প্রায় প্রত্যেকদিনই কিছু না কিছু’- জাতীয় l এবং পুরুষরা কেউ বিস্মিত হচ্ছিল, কেউ বিশ্লেষণ করতে চাইছিল এরকমটা কেন, আর কেউ কেউ জানতে চাইছিল খারাপ দৃষ্টি - ভালো দৃষ্টির তফাৎ করা যায় কীভাবে l না l সত্যিই এমন কোনো মানদণ্ড নেই বটে l পুরো ব্যাপারটাই ভুক্তভোগীর অনুমান বা দৃষ্টিভঙ্গী-নির্ভর l প্রসঙ্গত, একটা গল্প মনে পড়ে গিয়েছিল l বলি...২০০৮ সালে, আমেরিকান উড়ানে ২১ বছর বয়সী এক তরুণী ঘুমোতে ঘুমোতে যাচ্ছিল l ঘুম ভাঙার পর লক্ষ্য করল, জনৈক পুরুষ সহযাত্রী তার দিকে হাসি হাসি মুখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে l মেয়েটি সন্দিগ্ধ হলো ও আবিষ্কার করল ওই পুরুষটি তার দিকে তাকিয়ে হস্তমৈথুন করছে l পরিশেষে মেয়েটির চুলে বীর্যপাতও করে ফেলল l এরোপ্লেনটি নামার সাথে সাথে ভিকটিম পুলিশ ডেকেছিল, ও পরবর্তীকালে ক্ষতিপূরণও চেয়েছিল l তরুণী জানিয়েছিল, সহযাত্রীর দৃষ্টিযে ‘স্বাভাবিক’ ছিল না, সেটা প্রথম থেকেই আন্দাজ করছিল সে l ঘটনা সামান্য হোক বা সাজানো, ভিড় বাসে বৃদ্ধের করস্পর্শ স্নেহসূচক নাকি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ, এ তারাই বোঝে যারা অহরহ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার l মহিলার প্রোফাইল পিকচারে অন্তর্বাসের দৃষ্টিগোচরতা নিয়ে অবলীলায় মন্তব্য করাও তো একপ্রকার ইভটিজিং-ই, সে কমেন্টকর্তা ‘মজা করেই’ লিখে ফেলুক অথবা ‘ভুল করে’ ! মহিলাদের প্রতি এইসব ছোটোখাটো যৌন হেনস্থাই কিন্তু বড় বড় আকার নিতে সক্ষম l এমনকি ধর্ষণ করতে বা ধর্ষণে ইন্ধন যোগাতেও l

    এ দেশে ক্রমে ক্রমে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত ধর্ষণের সংজ্ঞা অপরাধীদের সাজা দেওয়ার পথকে প্রশস্ত করছে ঠিকই, কিন্তু সার্বিকভাবে ঘটনার বাহুল্যকে কমাতে পারছে কি? কী বলছে স্ট্যাটিসটিক্স? কী কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? স্রেফ আর স্রেফ সংখ্যাতত্ত্ব? সম্প্রতিআন্তর্জালে ভাইরাল হয়ে যাওয়া, লেসলি উডউইন-এর তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া’জ ডটার’-এর সূত্রে নির্ভয়া কাণ্ডে অভিযুক্ত মুকেশ সিং-এর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়ে পড়ল l নির্ভয়া ও তার পুরুষসঙ্গী ১৬ই ডিসেম্বর ২০১২-র রাতে যে মিনি বাসটিতে ওঠে, মুকেশ তার চালক ছিল l ধরা পড়ার পর প্রাথমিকভাবে সে অভিযোগ অস্বীকার করে, কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষায় তার বয়ান মিথ্যে প্রমাণিত হয় l বক্তব্যে মুকেশ জানায়,“ধর্ষিত হওয়ার সময় মেয়েটির উচিত ছিল না পাল্টা প্রতিরোধ জানানো l বরং মুখ বুজে থাকা ও ধর্ষণ করতে দেওয়া উচিত ছিল l তাহলেই তাকে ‘করে’ ছেড়ে দেওয়া হতো আর ওই ছেলেটাকে (সঙ্গী) শুধুমাত্র মারধর করা হতো l এক হাতে তো তালি বাজে না, সবসময় দুটো হাতই লাগে l একজন ভদ্র মেয়ে কখনও রাত্তির ন’টার সময় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় না lযেকোনো ধর্ষণকাণ্ডে ছেলেটির (ধর্ষকের) চেয়ে মেয়েটির (ধর্ষিতের) দায় অনেক বেশি থাকে l ছেলে আর মেয়ে কখনও সমান হয়না l ঘরের কাজকর্ম, পরিবারের দেখভাল এইসব মেয়েদের কাজ, রাত্তিরবেলা ডিস্কোয় যাওয়া, বার-এ যাওয়া, খারাপ কাজ করে বেড়ানো বা বাজে পোশাক পরা নয় l আসলে মাত্র ২০ শতাংশ মহিলাই ভালো হয় যারা এগুলো করে না l (ধর্ষকের) ফাঁসির আদেশ হলে পুরো পরিস্থিতিটা মেয়েদের পক্ষে আরো খারাপ হতে পারে l আগে ধর্ষণ করার সময় বলা হতো- আরে ছেড়ে দে, এ কাউকে বলবে না; এখন ধর্ষণ করার পর ছেলেরা, মানে যারা দুষ্কৃতী গোছের, ধরা পড়ার ভয়ে মেয়েটাকে খুন-ই করবে l মেয়েগুলো মরে যাবে…” (সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ) l মুকেশের বক্তব্য সমাজের চেহারাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে দিল l বোঝা গেল, বিভিন্ন সামাজিক স্তরে আর্থ-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিত নির্বিশেষে, মানুষ (মানে পুরুষ, এমনকি নারীও) এই জাতীয় অশিক্ষার শিকার, যা ধর্ষণ ঘটায় এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধর্ষণকে প্রশ্রয় দেয় l

    কাকে দিয়েছি রাজার পার্ট !!!
    ....................................
    ১) ১৬ই ডিসেম্বর ২০১২-র দিল্লি-গণধর্ষণ প্রসঙ্গে ডিফেন্স-এর উকিল এ.পি.সিং:
    যদি আমার নিজের মেয়েবা বোন বিয়ের আগে যৌনতা করত এবং মাঝরাতে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত আমি তাকে ফার্মহাউসে নিয়ে গিয়ে গায়ে পেট্রল ঢেলে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতাম l এইরকম ঘটনা ঘটতেই দিতাম না l সমস্ত অভিভাবকেরই এরকম মানসিকতা থাকা উচিত l
    ২) বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ:
    আমাদের (হিন্দুদের) উচিত মুসলিম মহিলাদের মৃতদেহ কবর থেকে তুলে তাদের ধর্ষণ করা l
    ৩) উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুলায়াম সিং যাদব:
    ছেলেরা তো ছেলে l ওমন ভুল করে থাকে l আরে বন্ধুত্ব চলে গেলেই মেয়েরা ছেলেদের ওপর ধর্ষণের অভিযোগ আনে !
    ৪) মুম্বই-এর পুলিশ কমিশনর সত্যপাল সিং:
    পঠনপাঠনের মধ্যে সেক্স এডুকেশন ঢোকানোর ফলে দেশে মহিলাদের প্রতি অপরাধ বাড়ছে l
    ৫) পুরীর শঙ্করাচার্য:
    এককালে ভাইবোনেরা একসাথে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানো সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে খারাপ কিছু ঘটত না l এখন মানুষের আবেগ, আদর্শ সবকিছুই বদলে গেছে l আমাদের সংস্কৃতি আমাদের শেখায় মহিলাদের সম্মান করতে- যে নারীরা আমাদের মা, বোন l এমন ভয়ানক ঘটনা (দিল্লিকাণ্ড) নিশ্চয় একদিনে ঘটে না l মানুষ উন্নয়ন ও আধুনিকতার নামে সভ্যতা-সংস্কৃতির সংকীর্ণ রেখাটিকে অতিক্রম করে বলেই ঘটে l
    ৬) মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বাবুলাল গৌর:
    পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মহিলারা জিন্স-টিশার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়, পুরুষদের সাথে নাচানাচি করে, মদ খায়- সেটা তাদের কালচার l ওসব ওই দেশে চলে, এ দেশে নয় l এখানে এখানকার রীতিনীতি মেনে চলাই ভালো l
    ৭) গোয়ার এমএলএ বিষ্ণু বাঘ:
    যদি মডেলরাও এসে পার্লামেন্টে যোগ দিতে থাকে তাহলে তো গোটা পার্লামেন্ট-এই ফ্যাশন শো বসে যাবে ! মালাইকা অরোরা, রাখি সাওন্ত-এর মতো ফ্যাশন দুনিয়ার মহিলারা ভোটে জিতে পার্লামেন্টে ঢুকে পড়লে দেশে দাঙ্গাও বেঁধে যেতে পারে l
    ৮) সমাজবাদী পার্টির এমএলএ আবু আজমি:
    অবিবাহিত নারী পুরুষদের মধ্যে যৌন সম্পর্ককে আইনত অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত l আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে গ্রামীণ ভারতে শহুরে দেশের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা অনেক কম ঘটত l
    ৯) স্বঘোষিত ঈশ্বরের দূত আশারাম বাপু:
    শুধুমাত্র পাঁচছ’জনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই l ধর্ষিতা ও ধর্ষণকারী উভয়েই সমান অপরাধী l আক্রান্ত হওয়ার আগে মেয়েটির উচিত ছিল ধর্ষণকারীদের ভাই বলে ডাকা এবং করুণাভিক্ষা করা l এটা তার সম্মান ও জীবনকে রক্ষা করতে পারত l এক হাতে কি তালি বাজে ? বাজে না বোধ হয় l
    ১০) জামাত-ই-ইসলামি-হিন্দ:
    কো-এডুকেশন সিস্টেম বন্ধ হওয়া উচিত এবং মেয়েদের জন্য পৃথকভাবে সমস্ত স্তরে শিক্ষার সুযোগ তৈরী হওয়া উচিত l শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের পরিশীলিত পোশাক চালু করা উচিত l
    ১১) বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রেসিডেন্ট অশোক সিংহল:
    ব্রিটিশ আমলের আগে মহিলাদের সতীত্ব অটুট থাকত l এই মডেলদের জন্যই এখন তা বিঘ্নিত হয়ে গেছে l
    ১২) ছত্তিশগড় মহিলা কমিশনের চেয়ার-পারসন বিভা রাও:
    মহিলারা শরীর প্রদর্শনের মাধ্যমে পুরুষদের অপ্রীতিকর ক্রিয়াকলাপে প্রলুব্ধ করে l মেয়েরা বুঝতে পারছে না কি ধরণের বার্তা তারা সমাজের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে l
    ১৩) বিএসপি নেতা রাজপাল সৈনি:
    মহিলা ও শিশুদের হাতে ফোন দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই l ফোন তাদের মনকে বিক্ষিপ্ত করে l আমার মা, স্ত্রী, বোন সকলেই তো ফোন ছাড়া দিব্যি কাটিয়েছে l
    ১৪) খাপ পঞ্চায়েত নেতা জিতেন্দ্র ছাতার:
    দারিদ্র্য, নেশাগ্রস্ততা বা যুব সমাজের খারাপ মেলামেশা ধর্ষণের মূল কারণ l তবে চাউমিন খেলেও হরমোনের সমস্যা দেখা দেয় যা ধর্ষণের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ l
    ১৫) হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েত সদস্য সুবে সিং:
    আমার মনে হয় মহিলাদের ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করে নেওয়া উচিত যাতে স্বামীরা তাদের যৌন চাহিদা মেটাতে পারে l এর ফলে তাদের আর অন্য পুরুষের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না l এভাবেই ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব l
    ১৬) কংগ্রেসের এমপি সঞ্জয় নিরুপম, স্মৃতি ইরানীর উদ্দেশে:
    কাল পর্যন্ত পয়সার জন্য টিভিতে নাচ দেখাত, আর আজ ভোট বিশ্লেষক হয়ে গেল!
    ১৭) বিজেপি নেত্রী হেমা মালিনী, মহিলাদের উদ্দেশে:
    যেখানে ইচ্ছে হয় বেরিয়ে পড়বেন না l যেকোনো কিছু ঘটে যেতে পারে l আক্রান্ত হতে পারেন l ভগবান কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে বাঁচাতে এসেছিলেন l কিন্তু আমরা তো ততখানি আধ্যাত্মিক নই যে ঈশ্বর আমাদেও বাঁচাবেন !
    ১৮) সিপিএম-এর এমপি অনিল বসু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি:
    তৃণমূলের ভোটের খরচের জন্য উনি কোন্ ভাতারের কাছ থেকে ২৪ কোটি টাকা নিয়েছিলেন?
    ১৯) তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী কাকলি ঘোষদস্তিদার:
    পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা। এটা ধর্ষণের কোনও ঘটনাই নয়। ওই মহিলার ও তাঁর খদ্দেরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জের l
    ২০) বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনত অপরাধ স্বীকারের মাধম্যে বিল-টিকে সংশোধনের জন্য ডিএমকে-র এমপি কানিমোজির চিঠির উত্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হরিভাই পারাথিভাই চৌধুরীর বক্তব্য:
    অশিক্ষা, বিবিধ সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও অন্যান্য নানাবিধ কারণে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসাবে স্বীকার করা সম্ভব নয়, কারণে ভারতীয় প্রেক্ষিতে বিবাহ একটি পুণ্য বিষয় l

    হ্যাপি নিউ ইয়ার
    .....................
    চলতি বছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারি বহু প্রতীক্ষিত রাজীব দাস হত্যা মামলার ফল ঘোষণা হলো l দিদি রিঙ্কু দাস-কে শ্লীলতাহানি, বেআইনি অস্ত্র রাখা, এবং দিদিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা ষোলোবছর বয়সী রাজীবকে গুণে গুণে সতেরো বার ছুরির আঘাতে খুন করার অপরাধে মিঠুন দাস, বিশ্বনাথ চ্যাটার্জী ও মনোজিত বিশ্বাস-কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিল আদালত, মূল ঘটনার ঠিক চার বছর পর l কেস রিপোর্টেড না হওয়ার ফলে বা হলেও প্রমাণের অভাবে কিংবা প্রশাসনিক ঔদাসীন্যের কারণে পুরো ব্যাপারটাই ধামা চাপা পড়ে যাওয়ায় ধর্ষকদের একটা বড় অংশের কলার তুলে ঘুরে বেড়ানোর আধিক্যে, এ হেন দু’চারটে দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত যে কিছুটা হলেও আমাদের পুনরুজ্জীবিত করে তা নিয়ে সন্দেহ নেই l তবে একটা কেসের সুরাহা হতে না হতেই ঘটে যায় আরো একগুচ্ছ ঘটনা l
    বছর পড়তে না পড়তে গোটা দেশ জুড়ে আরো কিছু ধর্ষণের খবর l ১)২৬শে ফেব্রুয়ারি এআইআইএমএস-এর জনৈক ডাক্তারের বিরুদ্ধে দক্ষিণ দিল্লিতে পঁচিশ বছর বয়সী সিকিম নিবাসী একটি মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল l২)উত্তর প্রদেশের মোতিপুরওয়া গ্রামে ১৬ বছরের একটি দলিত-কন্যার ধর্ষিত মৃতদেহ পাওয়া গেল গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় l ভিকটিমের বাবার অনুমান, ওই গ্রামেরই দুজন যুবক তার মেয়েকে ধর্ষণ ও খুন করে l ৩)মহারাষ্ট্রের লোনাভালার একটি রিসর্টে সাত বছরের শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গেল, মেয়েটি নিখোঁজ থাকার দুদিন পর l আংশিক অন্ধত্বে আক্রান্ত এই শিশুটি গিয়েছিল আত্মীয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণে l তাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয় l ৪)উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফরনগরে একইসাথে দুই শিশুকন্যাকে (পরস্পর তুতো বোন) ধর্ষণ করে পাড়ারই এক বছর পঞ্চাশেকের প্রৌঢ l৫)কোলকাতায় বিজেপি-র পার্টি অফিসে একটি পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সতেরো বছর বয়সী জনৈক যুবককে l৬)হরিয়ানার রোহতক গ্রামের গণধর্ষণ কাণ্ড- একটি আঠাশ বছর বয়সী মেয়ে তিন দিন নিখোঁজ থাকার পর তার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায় যখন তার দুটো হাত, বেশ কিছু অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ ও শরীরের বাঁদিকটা পশুতে খেয়ে গেছে l মেয়েটিরদেহে লাঠি ও পাথর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল, প্রবল মারধর করে অচেতনও করে দেওয়া হয়েছিল l এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আটজন যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং নবম ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে l৭)দিল্লির নিজামুদ্দিনে একটি স্কুলের বত্রিশ বছর বয়সী এক ফিজিকাল ইন্সট্রাকটর ছয় বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ l ৮)পুরুলিয়ার জনৈক স্কুল-বাস ড্রাইভারকে,চার বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় l৯)জয়পুরে উনিশ বছর বয়সী একটি জাপানি মহিলা পর্যটককে ধর্ষণ করে চব্বিশ বছরের যুবক l অপরাধ স্বীকার করার পর সাতজন বন্ধুর সহায়তায় সে শহর ছেড়ে পালায় l অবশেষে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ এবং দোষীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় l ১০)মালদা জেলার কালিয়াচকে ন’ বছরের একটি শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে খুন করে তেত্রিশ বছরের যুবক l১১)মার্চ মাসের মধ্যরাতে রানাঘাটের একটি কনভেন্ট স্কুলে বাহাত্তর বছরের জনৈক সিস্টারকে গণধর্ষণ করা হয় l ঘটনায় আরো তিনজন সিস্টার দুষ্কৃতীদের দ্বারা গুরুতর আহত হয়েছিল l রানাঘাটের কাণ্ডের দিনেই, এন্সেফেলাইটিস-এ মারা গেল লড়াকু মেয়ে সুজেট জর্ডন, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পার্ক স্ট্রিটে ঘটে যাওয়া বহুচর্চিত ও বিতর্কিত গণধর্ষণ কাণ্ডের সেই ভিকটিম, দুই শিশুকন্যা ও অসমাপ্ত ‘কেস’-কে পিছনে রেখে l ১২) সম্প্রতি, মে মাসে, আর জি কর হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই মাঝরাতে ২৪ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে হাসপাতালে কর্তব্যরত দুজন লিফ্টম্যান l
    ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মুহূর্তে, দেশে প্রতিদিন গড়ে বিরানব্বই থেকে তিরানব্বই জন মহিলা ধর্ষিত হয়ে চলেছে l এবং চুরানব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তি(/রা) ভিকটিমের পূর্বপরিচিত l

    ধর্ষণ ও ধন-তন্ত্র
    ...................
    ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো ১৯৭১ সাল থেকে ধর্ষণের খতিয়ান নথিভুক্ত করতে শুরু করে l জানা যাচ্ছে, সে বছর রিপোর্টেড রেপ কেসের সংখ্যা ছিল ২৪৮৭ l আইপিসি-৩৭৬ ধারায় ২০১৩ সালে দেশের সবকটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে রিপোর্টেড রেপ কেসের সংখ্যা ৩৩৭০৭l২০১২-র রিপোর্টেড রেপ কেসের সাপেক্ষে এই সংখ্যা ৩৫.২ শতাংশ বেশি !আবার গত ১০ বছরের খতিয়ান দেখলে জানা যায়, ২০০৩ থেকে ২০১৩-এ রিপোর্টেড রেপ কেসের শতাংশের হার বেড়েছে ৯১.৮ ! এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা যায়, এক- সত্যিই ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, দুই- ধর্ষণের হার যা ছিল তাই আছে, কিন্তু মহিলাদের মধ্যে সামাজিক প্রতিবন্ধকতা বা সোশাল স্টিগমা-গুলোকে অতিক্রম করে অপরাধীদেরদের প্রতি অভিযোগ জানানোর প্রবণতা বাড়ছে l ‘স্লাট শেমিং এন্ড ভিকটিম ব্লেমিং’, মানে ঘটনা যাই ঘটে থাকুক না কেন আসলে তো মেয়েটি মাঝরাত্তিরে একা বেরিয়েছিল, আসলে তো মহিলার পোশাক বড্ডবেশি খোলামেলা ছিল কিংবা আসলে তো ও মেয়ে নয় মেয়েছেলে- এইসব মিথ ভেঙে প্রতিবাদ জানাতে সক্ষম হচ্ছে বহু মহিলাই l ২০১৩ সালে দেশে রিপোর্টেড ইনসেস্ট রেপ কেসের সংখ্যা ছিল ৫৩৬ ও আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪৮ l ইনসেস্ট রেপের ক্ষেত্রেও আশির দশকে বাড়ির ছোট বৌমাকে শাশুড়ি যেমনটা বোঝাতে সমর্থ হতেন- আহা নিজেরই তো শশুরমশাই, অমন হয়ে থাকে, তুমি বাপু পাঁচকান কোরো না- মেয়েরা কিছুটা হলেও এখন ক্রমে ক্রমে উপেক্ষা করতে চাইছে বা পারছে এইসব পরোক্ষ হুমকিকে l তবে,একটা ধর্ষণ ঘটে যাওয়ার পর ধর্ষকের শাস্তি যতটা জরুরি, ততটাই গুরুত্বপূর্ণধর্ষণের উৎসগুলোকে খুঁড়ে বার করা l ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাবাসেরভয় দেখিয়ে ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার ঘটনা আটকানোর থেকে অধিক কার্যকরী সার্বিক সচেতনতার বোধ তৈরি করা l বহু ক্ষেত্রেই ছোটবেলা থেকে মেয়ে ও ছেলেদের পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা শুরু করানোর বা আলাদা পরিবেশে বড় করার ফলে শিশুমনে একটা অদ্ভুত ধারণা পুষ্ট হতে থাকে যে মেয়েরা ভিনগ্রহের জীব l তাদের প্রত্যঙ্গের বেড়ে ও গড়ে ওঠা ছেলেদের থেকে বিলকুল আলাদা এবং আশ্চর্য এক রহস্যের জালে আবৃত l বয়ঃসন্ধিতে সেই কৌতুহল আরো চরমে পৌঁছয় l বাড়ির কিশোরটি যুবতী বুয়ার পাতিয়ালায় রক্তের ছিটে দেখে বিচলিত ও সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠে l অধিকাংশ মধ্য-চিত্তের পরিবারেই তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে কেউ বোঝাতে আসে না, এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা, ঠিক যেমনটা ওই নাইট ফলস-ও l বোঝালে, অপরাধবোধ ও অপরাধের প্রবণতা কমত বৈ বাড়ত না l নারী-পুরুষ-ভিন্নলিঙ্গ বহিরঙ্গে পৃথক, শারীরবৃত্তীয় কারণে আলাদা, সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতে সেসব ডিসক্রিমিনেশন-কে অতিক্রম করা উচিত, এই বোধটা মানবিক বিকাশের এক্কেবারে শুরু থেকে কোথাও মাথার ভেতর রোপণ করা দরকার l প্রশ্ন উঠতেই পারে, মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামে কোএডুকেশন কালচার এবং অত্যাবশ্যক সেক্স এডুকেশনএকটি ষোলো বছরের মেয়েকে স্কুলমুখী করে তোলার পক্ষে পরিপন্থী হয়ে উঠবে না কি? বলা বাহুল্য এ পরিবর্তনও একদিনে ঘটবে না l কিন্তু সর্বাগ্রে তো প্রতীত হতে হবে শিক্ষার কান্ডারীদেরও, যারা বদলটা আনতে পারবে !
    ২০১৩-র রিপোর্টে, রিপোর্টেড রেপ কেসের সংখ্যা ৩৩৭০৭ হলেও ভিকটিমের সংখ্যা কিন্তু ৩৩৭৬৪ l এই পরিসংখ্যানকে বয়সের নিরিখে ভাগ করে দেখা গেছে: ১০ বছর বয়স পর্যন্ত ধর্ষিত নারীর সংখ্যা ১৫৮৪, ১০-এর বেশি বয়স থেকে ১৪ বছরের মধ্যে ২৮৪৩, ১৪-র বেশি বয়স থেকে ১৮ পর্যন্ত ৮৮৭৭, ১৮-র অধিক থেকে ৩০ অবধি ১৫৫৫৬, ৩০-এর বেশি থেকে ৫০ পর্যন্ত ৪৬৪৮, ৫০-এর ঊর্ধে ২৫৬ l স্পষ্টতই ১৮ থেকে ৩০ এই বয়সকালকে রিপোর্টের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ভালনারেবল ধরা যেতে পারে l কারণটা বোধ করি এই যে, ভারতীয় (অপ)সংস্কৃতিতে যৌবনের কনসেপ্ট মূলত এই বয়সের পরিসরে সীমাবদ্ধ l গয়নার বিজ্ঞাপনে কচি মেয়েটি যেমন মায়ের চুড়ি হাতে গলিয়ে রমণী হয়ে উঠতে চায়, তেমনই মধ্যবয়সী নারীকে সাবান মাখিয়ে বয়স কমানোর চেষ্টা চালানো হয় এবং স্তাবকের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসে- আপকো দেখকে তো উমর কা পাতা হি নহি চলতা ! একটা বড় সংখ্যক মূল ধারার ঝিনচ্যাক দিশি ছবিতে নায়িকার বয়স কিচ্ছুতেই তেইশের বেশি হয়না l গোটা বিপণনের দুনিয়া যৌবন বেচতে বদ্ধপরিকর l এবং যারা খাচ্ছেতাদের কাছে ‘পূর্ণযৌবনা’ নারীকে সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য হিসেবে পরিবেশন করার অদম্য প্রয়াস l ফলত এরাই ‘টার্গেট’ l আর উন্নয়নশীল দেশে পূর্বোল্লিখিত কনসেপ্ট-এর সাথে ভার্জিনিটি-র পাঞ্চ মিশিয়ে দিলে ১৪ থেকে ১৮-র ভীতিপ্রদ সংখ্যার ব্যাখ্যাটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে ওঠে l ১৬ই ডিসেম্বর ২০১২-র দিল্লি কাণ্ড সমাজের পক্ষে একটা কালো দিক হলেও ধর্ষণের সংজ্ঞায় তা কিছুটা আলো দেখাতে পারলো l এই ঘটনার অব্যবহিত পরে সরকারের পক্ষ থেকে নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত জাস্টিস যে.এস ভার্মা-র তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তে ২০১৩ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি আইপিসি-৩৭৫ ধারায় বেশ কিছুটা (উত্তর)আধুনিকতার ছোয়াঁচ লাগলো lআমরা জানলাম, ধর্ষণ শব্দটা শুধুমাত্র যোনি ও লিঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখার বিষয় নয় l আরো কিছু বয়সসীমা ও শর্তের তারতম্য ঘটানো হলো পরিমার্জিত সংজ্ঞায় l তবে ম্যারাইটাল রেপ এখানেও অপরাধ হিসেবে গণ্য হলো না l ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো-র ২০১২-র রিপোর্টে আমরা দেখেছি দেশে মোট ১০৬৫২৭ জন মহিলা গৃহনির্যাতন (আইপিসি ৪৯৮ এ)-র শিকার l এখানে পশ্চিমবঙ্গের স্থান দ্বিতীয়তে অর্থাৎ ত্রিপুরার পরেই l যেখানে ডোমেসটিক ভায়োলেন্স-এর পরিসংখ্যান এ হেন, সেখানে বৈবাহিক ধর্ষণের সংখ্যাও যে বিপুল হবে তা সহজেই অনুমেয় l
    যৌনাচারে নারীটি নিয়ন্ত্রিত হবে তার পুরুষটির দ্বারা, এই মিথ-এর কারণেই বোধ করি ম্যারিটাল রেপ-কে শুধুমাত্র ‘রাফ সেক্স’ হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার একটা কালচার আগেও ছিল এবং এখনও আছে l নাহলে রাষ্ট্র দ্বারা নির্ধারিত পুরুষতান্ত্রিক পরিবার-পরিকাঠামোর সুখী সুখী ইমেজ ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ার অবশ্যম্ভাবী সম্ভাবনাথেকে যায় l ১৯৭৫ সালে কেমব্রিজ ডকুমেন্টারি ফিল্মস-এর জন্য মার্গারেট লাজারাস ও রেনার উন্ডারলিচ ‘রেপ কালচার’ নামে একটি তথ্যচিত্র বানান যেখানে নারী ও পুরুষ উভয়কেইধর্ষণ করার যে প্রবণতা তাকে ‘স্বাভাবিক’ বলার বিরুদ্ধে অভিমত প্রকাশ করা হয় l ছবিটা ধর্ষণের ধারণাকে প্রথম সংজ্ঞায়িত করার স্বীকৃতি পায় lপ্রসঙ্গত মনে পড়ে যাচ্ছে এর ঠিক ত্রিশ বছর পরে, ২০০৫ সালে ভারতে মুক্তিপ্রাপ্ত‘মাতৃভূমি’ ছবিটির কথাও যা একইসাথে ফিমেল ফিটিসাইড, ডাওরি, ম্যারাইটাল রেপ, ইনসেস্ট রেপ ও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিল l মোদ্দা কথাটা হলো উৎস যাই হোক না কেন, আর্থসামাজিক সমস্যা, জাতিবিদ্বেষ, লিঙ্গবৈষম্য, ধর্মীয় ভেদভাব, হোমোফোবিয়া, যুদ্ধ পরিস্থিতি, পর্নোগ্রাফি, মানসিক বিকার ইত্যাদি প্রভৃতি, মূল লক্ষ্য কিন্তুআঘাত করার মধ্যে দিয়ে ক্ষমতাপ্রদর্শন l পাওয়ার এক্সারশন l বীরভোগ্যা পৃথিবী ও রূপমুগ্ধা নারী- এই কনসেপ্ট থেকে যেমন একজন বলশালী রাজা ভূমি দখল করার পর জমিতে তলোয়ার পুঁতে জাহির করতো ওই পরিসরের ওপর তার কতৃত্ব, একজন পুরুষও নারীর মুখ, যোনি, পায়ু অথবা শরীরের যেকোনো ছিদ্রে লিঙ্গ বা অন্যকোনো বস্তুর প্রবেশ ঘটিয়ে তার ক্ষমতাকে প্রদর্শন করায় l পেনিট্রেশন- মাটি হোক বা রমণী, গ্রোথিত করার মাধ্যমে তার ওপর ক্ষমতাশীলের অধিকারপ্রয়োগ l অথচ শুধু ধর্ষণ কেন, আমরা যাকে স্বাভাবিক যৌনাচার বলে জানি, সেখানেও এই পুরুষতন্ত্র ও ক্ষমতাপ্রদর্শনের রাজনীতি l কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নততর গবেষণা জানায়, নারীর অরগ্যাজম ‘কেবলমাত্র’ পেনিট্রেশন কেন্দ্রিক- এটাও স্রেফ একটা মিথ !
    সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে যে একক ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের সাথে সাথে গণধর্ষণের ঘটনাও অনেক বেশি ঘটছে lগবেষণা বলছে এর পেছনে কারণগুলো মূলত যৌনতার অধিকারপ্রয়োগ, বিনোদন ও শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা l একজন পুরুষ এককভাবে ধর্ষণ করাকালীন যতখানি বলপ্রয়োগ করতে সক্ষম, দলবদ্ধ অবস্থায় তার আঘাত করার ক্ষমতা বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যায় l গণধর্ষণের ক্ষেত্রে সাধারণত তিনজন বা তার বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়সে তরুণ l বলা বাহুল্য, এ বিষয়টি অনেক বেশি হিংসাত্মক এবং যৌন অত্যাচারের পাশাপাশি অযৌন অত্যাচারও করা হয় ভিকটিমকে l যুদ্ধ বা দাঙ্গার পরিস্থিতিতে মহিলাদের গণধর্ষণের মাধ্যমে ভিকটিম ও তার কম্যুনিটিকে ভয় দেখানোর জন্য ব্যাপক হারে গণধর্ষণের প্রবণতা দেখা গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে l তবে সাধারণভাবে, যুবসমাজের বেকারত্ব আর নেশাগ্রস্ততাকে গণধর্ষণের বড় কারণ বলে দাবি করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা l আর যারা গণধর্ষিত হচ্ছে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিম্ন মধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের সদস্য l কেননা সামাজিক কারণেই তাদের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ও সাহস বহুলাংশে কম l আমাদের দেশে এখনও আলাদা করে গণধর্ষণের রেকর্ড সংগ্রহ করা হয়না l হলে দেখা যাবে সার্বিক পরিস্থিতির মতোই গণধর্ষণের ঘটনাও ক্রমবর্ধমান l

    না-ফুরোনো গল্পগুলো
    ............................
    বড় বেদনার বোধও ক্রমে ঝাপসা হয়ে আসে l মেয়েটির স্বজনেরা, এমনকি সে নিজেও শরীর-মনের ক্ষতগুলোর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে l আর আমরা যারা খবর কাগজের পাতায় ঘটনার বিবরণ পড়লাম, দু’চারদিন ভেতরে ভেতরে কোথাও আগুনটুকু জ্বলল, তারাও দ্রুত ফিরে যেতে চাই পরিচিত স্বাভাবিকতায় l টানা বিয়াল্লিশটা বছর ভেজিটেটিভ স্টেটে অরুণা শানবাগ পড়ে ছিল হাসপাতালের বিছানাতে l ১৯৭৩ সালের ২৭শে নভেম্বর সোহনলাল বাল্মীকি নামে সরকারি হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী পঁচিশ বছর বয়সী একটি নার্সকে গলায় কুকুরের চেন বেঁধে সোডোমি অর্থাৎ পায়ুছিদ্র দিয়ে ধর্ষণ করে l সেই নার্স, মানে অরুণার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, ব্রেন স্টেম ও সারভাইকাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কর্টিকাল ব্লাইন্ডনেস ঘটে l সোহনলালের কেবল সাত বছরের হাজতবাস হয় ‘ডাকাতি ও খুনের চেষ্টার অপরাধে’, কেননা আইপিসি-৩৭৬ অনুযায়ী সোডোমি-র মাধ্যমে ধর্ষণকে তখন ধর্ষণ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হতো না l গত ১৮ই মে ২০১৫ তে, অরুণা ‘মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’ lযদিও তার অস্তিত্বের, চেতনার, মৃত্যু ঘটেছিল বহু বছর আগেই l
    বিহারের দেওঘর থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে পারারিয়া গ্রামে এক রাতে উনিশজন আদিবাসী মহিলা ধর্ষিত হয় l নিমিয়া, রাধিয়া, দারিয়া, সুমিয়া ও ভগবতিয়া, পারারিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে (১৯৮৮) মাত্র এই পাঁচজন ছিল অভিযোগকারী l যে ষোলো জনের বিরুদ্ধে কোর্টে যায় এই মহিলারা, তারা সকলেই ছিল পুলিশকর্মী, চৌকিদার ও হোমগার্ড l ধর্ষণের সাথে সাথে মারধর ও তাদের বাড়িতে লুঠতরাজও চলে l অভিযোগ দায়ের করা সত্বেও ধর্ষিতদের যথাযথ মেডিকেল পরীক্ষা হয়না l সরকারি পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় l এবং পরবর্তীকালে ওই পাঁচজন মহিলাকে প্রতারক হিসেবে সাব্যস্ত করা হয় l বলা হয়, মিথ্যাচারের জন্য এরা যেকোনো কিছু করতে পারে কারণ হাজার টাকা এদের কাছে সত্যিই অনেক l
    ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গায় অসংখ্য মুসলিম মহিলাকে ধর্ষণ করা হয় যার হিসাব কেউ দেয়নি আজ পর্যন্ত l
    ২০০৩ সালে একজন আঠাশ বছর বয়সী সুইস ডিপ্লোম্যাট-কে তার নিজের গাড়িতে ধর্ষণ করা হয় l ধর্ষিত তার বিবৃতিতে বলে- ধর্ষকদের একজন অনর্গল ইংরিজিতে কথা বলে যাচ্ছিল l এমনকি তাকে প্রশ্ন করছিল সুইজারল্যান্ড সম্পর্কে, আর সম্ভবত ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে তাকে জ্ঞানও দিচ্ছিল !
    মণিপুরের বত্রিশ বছর বয়সী মেয়ে মনোরমাকে আসামের সৈন্যরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহীদের’ সঙ্গে যোগাযোগের অপরাধে l কয়েক ঘন্টা পর তার বিক্ষত শরীর পাওয়া যায় l মনোরমার তলপেট ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল অসংখ্য বুলেটের আঘাতে l সালটা ২০০৪ l
    ২০০৯ সালে ভারত-শাসিত কাশ্মীরের সোপিয়ান টাউনে দুটি তরুণীকে গণধর্ষণ করে হত্যা করা হয় l প্রতিবাদে টানা সাতচল্লিশ দিন সশস্ত্র আন্দোলন ও ধর্মঘট চলে l
    মাওবাদীদের সংবাদপ্রেরক সন্দেহে ২০১১-র অক্টোবর পর্যন্ত সোনি সোরি-কে ছত্তিসগড়ের জেলে আটকে রাখা হয় l জেল থেকে বেরোনোর পর সোনি সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানায়, বন্দী থাকাকালীন তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছিল ও তার যোনিপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল পাথর l
    ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশের একটি থানার ভেতরে সোনম নামে চোদ্দ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয় l
    ২০১৩ সালে কলকাতা থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে কামদুনি গ্রামে কুড়ি বছর বয়সী কলেজ পড়ুয়াকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয় l ন’জন অভিযুক্তের মধ্যে আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ l আপাতত তদন্দের ভার সিবিআই-এর হাতে l ভিকটিমের পরিবার ও বন্ধুরা বিচারের অপেক্ষায় l
    এমন আরো একগুচ্ছ জানা অজানা ঘটনা নিয়ত ঘটে চলেছে চারপাশে l তার কতগুলো কেস রিপোর্টেড হচ্ছে? ঠিক কতগুলো ঘটনার মীমাংসা হচ্ছে? কতজন অভিযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে? ‘তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ’–এর চক্করে একাধিক প্রমাণ লোপাট হয়ে যাবে l উচ্চবংশের ছেলে দলিতের মেয়েকে ধর্ষণ করে না- এমন হাস্যকর কিছু যুক্তি সাজিয়ে বেমালুম ছাড়া পেয়ে যাবে ধর্ষক l অমুক যখন শাস্তি পেল না তখন আমাদেরই বা কে কী করবে- এমন মনোবল নিয়ে ধর্ষণে উদ্যত হবে আরো আরো পুরুষ l ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে ভিকটিম ও তার পরিবারের l কোনো কোনো ধর্ষিত অর্থের বিনিময়ে কন্যাসন্তানের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতে চাইবে l অন্তত এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় সেই চাওয়াটুকু জাস্টিফায়েড l আর যাদের হাতে ভুবনের ভার, দেখাই যাচ্ছে,নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাদের একটা বড় অংশ চরম পুরুষতান্ত্রিকতা, ক্ষেত্রবিশেষে চূড়ান্ত অশিক্ষার শিকার l রিপোর্টের ভিত্তিতে সামাজিক অবক্ষয়ের কাটাছেঁড়া চলবে, চলবে সামাজিক অবক্ষয়ের ভিত্তিতে রিপোর্টের কাটাছেঁড়াও l বয়স উনিশ লিখে যে পনেরো বছরের মেয়েটিকে শহর কোলকাতা থেকে মাত্র তিরিশ কিলোমিটার দূরে বিয়ে দিয়ে দিল তার মা-বাবা, ইনসেস্ট রেপের খতিয়ানে তার বয়স কিন্তু রইলো উনিশই l ১৮ থেকে ৩০-এর এই লম্বা ঘরটিকে কেন ১৮ থেকে ২৪ এবং >২৪ থেকে ৩০–এ ভাগ করা হলো না, প্রশ্ন থেকে যাবে l জানা হবে না, আঠেরো বছরের কমবয়সী একটি ছেলে যদি গণধর্ষণে সামিল হয় এবং পূর্ণাঙ্গ ধর্ষণে সক্ষম হয় তাহলে শাস্তি ঘোষণার সময় তাকে কেন দেখা হবে একজন নাবালক হিসেবেই? এক্ষণে প্রশ্ন উঠবে সাবালকত্বের মাপকাঠি, ভোটাধিকার, মদ্যপান, বিবাহের বয়স এবং রাষ্ট্র কতৃক নির্ধারিত অন্যান্য নানাবিধ মাইলস্টোন নিয়েও l বরং আজ থাক l উত্তর খোঁজা যাবে অন্য কোথাও... অন্য কোনোখানে...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৭ আগস্ট ২০১৫ | ৮১৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ঈশান | 202.43.65.245 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:৫৭68162
  • একেবারেই বেশি ফোকাস করছিনা। ব্যক্তি আপনার ব্যক্তি রামকে দেওয়া পরামর্শ নিয়ে তো কোনো সমস্যা নেই। 'ইন জেনারাল আমাদের সমাজে' জিনিসটাকে যেভাবে প্রোজেক্ট করা হচ্ছে, সেটা নিয়েই আপত্তি। একজন গড়পড়তা মেয়ের শারীরিক শক্তি দশদিনের কি একমাসের ক্যাম্পে একটি গড়পড়তা ছেলের শক্তি বা সক্ষমতার চেয়ে বাড়বেনা, এটা সবাই জানে। যারা শারীরিক কসরতে আগ্রহী সেই ১০০০ এর মধ্যে ১ জনের বাড়লেও বাড়তে পারে। তাহলে "ইহাও আত্মরক্ষার উপায়" বলারই বা মানে কি, যেখনে ১০০০ এর মধ্যে ৯৯৯ জনই এই ভাবে আত্মরক্ষা করতে পারবেনা? একটু ভেবে দেখলে দেখবেন, মানে একটাই, পাল্টা ভায়োলেন্সকে জাস্টিফাই করা। যেটা আর "আত্মরক্ষা"য় থাকবেনা, বাপ-দাদা-পাড়ার লোকের ন্যায়বিচারে পৌঁছে যাবে। এবং এই হল সেই মব, যারা যারা চান্স পেলে কোনো মহিলার গায়ে হাত দিতে ভুলবেনা, আবার "আমার পাড়ার মেয়ের গায়ে হাত দিয়েছিস?" বলে ঠ্যাঙাতেও যাদের আটকাবেনা।

    এর কোনোটাই আকাশকুসুম কল্পনা নয়। দিল্লি একটা কেস স্টাডি, যেখানে এই ঘটনাগুলো ঘটেছে, তাই দিল্লি নিয়ে এত কথা। একটা বড়ো লেখা লিখতে পারলে ভালো হত, কিন্তু সে বোধহয় হবেনা এখন। কিন্তু মোদ্দা বিষয় একটাই, সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইটা সেটারই হাতিয়ার হয়ে যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। সেটা ঠিক চেনাও যাচ্ছে না সবসময়।
  • সে | 94.75.173.148 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:৩০68163
  • ডাইভার্জ যখন হয়েছেই, আরেকটু ডাইভার্জ করে কটা কথা বলি।
    মেয়েরা যেকালে লেখাপড়া শিখতে চেয়েছিলো, তখনও একদল তার বিরোধীতা করেছে। মেয়েরা কি বেটাছেলেদের মতো নেকাপড়া শিখে রাস্তায় বেরিয়ে রোজগার করবে? নেকাপড়া শিখে হবেটা কী? মেয়েদের মাথায় কি বেটাছেলেদের মতো বুদ্ধি আছে? পারবে পাশ করতে? নেকাপড়া শিখলে বেদবা হয়। ম্যেছেলেরা নেকাপড়া শিখে রোজগারে বেরোলে বেটাছেলেরা কি করবে? মাগের আঁচলের তলায় বসে থাকবে? মেয়েরা চাকরির দুনিয়ায় যখন ক্রমে বেশি সংখ্যায় আসতে শুরু করেছে, তখন আবার অন্য বুলি ছিলো। মেয়েরা চাকরি করলে, ছেলেরা চাকরি পাবে কীকরে? বা অন্যরকম বুলি। মেয়েরা কি কাজ পারবে? ছেলেদের মতন কোয়ালিটি, পরিশ্রম, এসমস্ত হবে? এই সমস্যা থাকা সত্ত্বেও মেয়েরা পিছিয়ে নেই।
    যে যুগে লেখাপড়া শিখতে দেবার বিরুদ্ধে ছিলো সমাজ, সেই যুগকে অতিক্রম করেছে মেয়েরা। তাও দুনিয়ায় অশিক্ষা রয়েছে, কিন্তু শিক্ষা এখন অধিকারের মধ্যেই পড়ে। কিছু বোকোহারাম আইসিস কট্টরপ্ন্থী বাদ দিলে।
    আবার বিশ ত্রিশ চল্লিশ বছর আগে যারা মেয়েদের চাকরি করা নিয়ে, বাইরে রোজগার করতে বেরোনো নিয়ে গেল গেল করত, তারা কিন্তু নারীশিক্ষার বিরোধী নন। শিক্ষা থাকুক, কিন্তু রোজগার নয়। শখ করে পড়াশুনো করবে। নিজের ইচ্ছেমত। শেখার কি শেষ আছে? কিন্তু চাকরি করতে বেরোবে কেন? এই সমস্ত মনে হয়। ঐ সময়েও এইসমস্ত মানসিকতার মানুষদের দেখেছি, খুব সমান সমান অধিকারের কথা বলতেন। সমান শিক্ষা, এইসমস্ত।
    এরও পরে আরেকটা স্টেজ দেখেছি, মেয়েরা রোজহার করবে কিন্তু সংসারের প্রধান ব্রেড আর্নার হবে না। নিজের হাতখরচ, টুকিটাকি জিনিস, শাড়ী, এইসব কিনবে, সময় কাটানোর জন্যে চাকরি করছে করুক। সেরকম এখনও আছে কিছু সংখ্যায়, সব দেশেই, সব সমাজেই।
    মেয়েরা সব সময়ই পিছিয়ে। যা কিছু করতে চাইবে গেল গেল রব। লেখাপড়া শিখবার বাধা ছিলো একটা যুগে, তারপরে চাকরিতে বাধা, কখনো মেইন ব্রেড আর্নার হবার পথে বাধা, সমস্ত যুগেই প্রপার যুক্তি দিয়ে এগুলোতে ডিসকারেজ করাবার জন্যে প্রাজ্ঞ লোকের অভাব হয় নি।
  • :( | 127.194.195.169 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:৩৮68164
  • একালে আত্মরক্ষাশিক্ষার ক্ষেত্রে একেবারে সেম সেম জিনিস দেখা যাচ্ছে। একজন গড়পড়তা মেয়ের শারীরিক শক্তি দশদিনের কি একমাসের ক্যাম্পে একটি গড়পড়তা ছেলের শক্তি বা সক্ষমতার চেয়ে বাড়বেনা, এটা সবাই জানে। এইরকম যুক্তি ঐ আগের আগের যুগের যুক্তি-উদাহরণগুলোর থেকে খুব বেশি দূরের নয়।
  • :( | 127.194.195.169 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:৪৫68165
  • পাল্টা ভায়োলেন্স জাস্টিফায়েডই তো। ইন্ডিয়ান পিনাল কোডেই আক্রান্তের আঘাতের অধিকার স্বীকৃত। আমার পাছায় হাত বুলালে আমি সেফটিপিন ফুঁটিয়ে দেবো, আমূল। সিম্পুল। আপনি বলবেন আমার তার বদলে আইনের কাছে দরবার করা উচিত। যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা উচিত, সেসবও করতে পারি বিচার ব্যবস্থা আরেকটু সদর্থক হয়ে উঠলে, কিন্তু তখনও, সেফটিপিন ফুঁটাতে ছাড়বো না। পাল্টা ভায়োলেন্সে আক্রান্তের অধিকার রয়েছে।
  • ঈশান | 202.43.65.245 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:৫৩68166
  • বেশ তো, ছেলে ও মেয়েদের একই ক্যাটেগরিতে কুস্তিতে নামানোর দাবী তুলুন (অলিম্পিকে এবং পাড়ার খেলায়), লেডিজ কম্পার্টমেন্ট বাতিল করার দাবী তুলুন, ফিজিকাল ইকুয়ালিটির দাবী তুলুন, শারীরিক সক্ষমতার দাবীর চূড়ান্ত হয়ে যাক। :-)

    আর দ্বিতীয় পয়েন্টটা যথার্থ ভাবেই একটা জিনিস ডেমস্ট্রেট করেছেন। সেটা হল ভারতীয় মবের মেন্টালিটি। সেটাতেই আমার আপত্তি।
  • :( | 127.194.195.169 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:৫৮68167
  • কি আর করা যাবে, আক্রান্তের সাথে মবের মেন্টালিটি কোনো ক্ষেত্রে মিল দেখ গেলে ও হো, এতো মব করে, অমি করবো না, অমি তো মব নই - এহেন আচরণ ও এক্সপ্ক্তেড নয়।
  • ঈশান | 202.43.65.245 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৭:৫৯68168
  • আপনি আক্রান্ত হলে বলতাম না। আক্রান্ত সত্যি ই যা খুশি করতে পারে। কিন্তু আপনি বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করে কী করবেন লিখছেন, তাই আপনি আক্রান্ত নন, জনসমষ্টির ঔচিত্যবোধেরই প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন। :-)
  • সে | 94.75.173.148 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৮:০১68169
  • আত্মরক্ষা করতে শেখাটা শুধু রেপের কারণেই নয়। ঘরে ঘরে যে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হয়, সেখানেও মুখ বুজে মার খাবার শিক্ষা পেয়ে এসেছে মেয়েরা। রুখে দাঁড়ানোর জন্যে, শুধু মুখের কথা নয়, বাধা দেবার শক্তিও দরকার।
    কোনোরকম সেল্ফ ডিফেন্স না জানা মেয়েকে শারীরিক অত্যাচার করা অনেক সহজ।
    অন্যদিকে একটা মেয়ে যদি আত্মরক্ষার কৌশল জানে, সে লড়বে। আক্রমনকারীকে সাময়িক পরাস্ত করে পালাতে পারার একটা স্কোপ থাকছে।
    কিন্তু আত্মসমর্পন করে রেপ হতে দেওয়াটা সমর্থন করি না। তখন তো যৌথ সম্মতিক্রমে সেক্স হয়েছে বলেও চালিয়ে দিয়ে আইনের ফাঁক দিয়ে আততায়ী পালিয়ে যেতে পারে। যথেষ্ঠ বাধা দিয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই কেন? আর্গুমেন্ট, কাউন্টার আর্গুমেন্ট, তার বিরুদ্ধে আরো আর্গুমেন্ট, চলবে।
    মেয়েরা আত্মরক্ষা শিখুক, এর বিরুদ্ধে এত যুক্তি দেখে সেই পুরোনো যুগের পুনরাবৃত্তিই মনে পড়ে। যুগে যুগে এই বাধা দেবার যুক্তিগুলো শুধু সময় সাপেক্ষে মডিফায়েড হতে থাকে। মেয়েরা কোনো কিছু শিখতে গেলেই বাধা। এটা শিখে কী হবে? কী লাভ? তুমি কি ছেলেদের সমান সমান মনে করো নিজেকে? এইটেই বারবার মনে করিয়ে দেওয়া।
    সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে কী করবে? রোজগার করে কী করবে? লেখাপড়া শিখে কী করবে? বাড়ীর বাইরে বেরিয়ে কী করবে? প্রত্যেকবার নতুন নতুন যুক্তি দিয়ে আটকানো হয় মেয়েদের।
    পড়তে কেন শিখবে? বাড়ীতে কি পড়ালেখা করা আর কেউ নেই?
    রোজগার কেন করবে? তোমার কি টাকার দরকার? এই নাও দিচ্ছি, তাই বলে তুমি মেয়ে হয়ে রোজগারে বেরিও না। তোমার টাকার দরকার হলে চেয়ে নিও, বা তোমর যাতে অভাব না হয়, তা দেখবার জন্যে অভিবাবক আছে। কিংবা, টাকা রোজগার করছ করো, কিন্তু মেইন ব্রেড আর্নার হোয়ো না। শখের রোজগার করো। আত্মরক্ষা শিখছো কেন? বেশ শখ করে শেখো, কতটুকুই বা পেরে উঠবে। তোমায় রক্ষা করতে লোক আছে। কিন্তু আত্মরক্ষা শিখে তুমি যে অন্য কারোকে বিপদ থেকে রক্ষা করতেও এগিয়ে যেতে পারবে, সেসব আমরা ভাবছি না। সমাজে তোমার স্থান নীচে, তুমি ছোটো। তোমার আশা আকাঙ্খা ইচ্ছে শক্তি সমস্তই ছোটো ছোটো থাকুক। যেটুকু আমরা অ্যালাউ করব সেটুকু করো, সেটুকু শেখো। ভুলে যেও না, তুমি মেয়ে, তোমার পেশীতে টেস্টোস্টেরনের শক্তি নেই। নিজের অউকাৎ বুঝে চলবে।
  • সে | 94.75.173.148 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৮:১১68170
  • তবে সুখের কথা এটাই যে প্রচুর কন্যা সন্তানের বাপ মায়েরা এখন এই সেল্ফ ডিফেন্সের ব্যাপারটা পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখছেন। কন্যাকে এই সমস্ত কোর্স করতে পাঠাচ্ছেন। এর পেছনে প্যাট্রিয়ার্খি কাজ করছে কিনা জানা নেই, কিন্তু কন্যাসন্তানের জনকজননীদের মধ্যে সেল্ফ ডিফেন্স শেখানোর ঝোঁক আছে। সেটা নিজের সন্তানকে রক্ষা করবার জন্যেই।
  • ঈশান | 202.43.65.245 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৮:১৩68171
  • ওই যে বললাম, ছেলে ও মেয়েদের একই ক্যাটেগরিতে কুস্তিতে নামানোর দাবী তুলুন (অলিম্পিকে এবং পাড়ার খেলায়), লেডিজ কম্পার্টমেন্ট বাতিল করার দাবী তুলুন, ফিজিকাল ইকুয়ালিটির দাবী তুলুন, শারীরিক সক্ষমতার দাবীর চূড়ান্ত হয়ে যাক। ঃ-)

    সেটা কখনই করবেন না, কারণ, জানেন, যে বস্তুটা অ্যাবসার্ড। ইকুয়ালিটির দাবীতে শারীরিক শক্তির ইকুয়ালিটিও যে অন্তর্ভুক্ত এটা প্রথম শুনলাম। হতে পারে আমি ঈশ্বর গুপ্ত টাইপের পিছিয়ে পড়া লোক।
  • সে | 94.75.173.148 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৮:২২68172
  • না। আক্রান্ত সত্যি ই যা খুশি করতে পারে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পারে না। হেনস্থাকারী যা খুশি করে চলে যায়। আক্রান্ত সবসময় তাৎক্ষণিক বাধা দিতে পারে না। বাসে ট্রামে বা রাস্তায় যারা যৌন হেনস্থা করা, তারে এসবে পটু। এত দ্রুততার সঙ্গে তারা এগুলো ঘটায় যে, তখন আক্রান্ত তাৎক্ষণিক পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে না। এটা ঘটনা। কিন্তু তার আগে থেকে ট্রেনিং নেওয়া থাকলে, সে সেটা পারবে।
    পাছায় হাত বুলোলে তৎক্ষণাৎ সেফটিপিন ফোটায় না কেউ। বারে বারে এরকম করলে, তখন হয়ত মেয়েটি প্রস্তুত হয়, তার পরেরবার পাছায় হাত বোলালে তখন সেফটিপিন ফোটায়। কিন্তু অনেকেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে, লজ্জায় এবং ভয়ে। কী করবে জানে না। এই ভয় ও লজ্জা এসমস্ত কাটিয়ে তোলার জন্যেও আত্মরক্ষার ট্রেনিং এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের শিক্ষা।
  • সে | 94.75.173.148 (*) | ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৮:৩৪68173
  • ইকুয়াল কোথায় আমরা? আমাদের স্থান অনেকটাই নীচে। বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, শারীরিক শক্তিতে, আর্থিক সামর্থে, সব কিছুতেই আমরা অনেক অনেক পিছিয়ে। কোনো কালে সমান হতে পারবো বলেও মনে হয় না। যে কোনো স্ট্যাটিসটিক্স দেখুন। বায়োলজিক্যালি দেখবেন একখুনি গ্রাফ এঁকে বুঝিয়ে দেওয়া আছে আমাদের বুদ্ধিমত্তা কম, ব্রেণ কম, পেশিশক্তি কম। সব তো সত্য কথা। তবু আমরা সমানাধিকার পাবার দাবি করি। উচিৎ নয়, তবু করি। জীবনবিজ্ঞানের সমস্ত পাঠেই দেখবেন আমরা কম কম। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম, রক্ত কনিকা কম, আরো অনেক কিছু কম। কাঁচা বায়োলজি।
    তবু আমরা চেষ্টা করি সমান সমান হবার। যতটা বেশি সুবিধে নেওয়া যায়।
    ছেলেরা খিস্তি দিলে, বা স্ল্যাং ব্যবহার করলে তাকে কিছু বলা হয় না, কিন্তু আমার শরীরে দুটি স্তন ও একটি যোনি থাকবার কারণে সেই স্ল্যাং আমি ব্যবহার করতে পারবো না। করলেই প্রতিবাদ হবে। এতো স্বাভাবিক ব্যাপার। মেয়েদের মুখে খিস্তি স্ল্যাং শোভা পায় না। আমরা মেনে নিয়েছি। সবসময় মনে থাকে না। তখন আত্মরক্ষাটাইপের ব্যাপারগুলো নিয়ে মাথা ঘামাই। তারপরে জানেনই তো, মেয়েরা ইমোশনাল প্রাণী (বায়োলজি হতে পারে, ঠিক্করে বলতে পারব না), হুট কর সেই তকমা লাগিয়ে দিলেই বাকি সব যুক্তিতক্কের উত্তর দেবার দায় থাকে, সবটা খুব হাসি খিল্লির ব্যাপার হয়ে যায়। সবই মেনে নিয়েছি, কিন্তু ভুলো মন, সবসময় মনে থাকে না।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০৭68188
  • কিন্তু এটাকে আলাদা করে 'মেয়েদের' শক্তি হিসেবে কেন দেখছেন? আত্মরক্ষার কৌশল শেখার অ্যাডভান্টেজ বা শক্তি তো একটাই, বিপদের সময়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারা। এটা হতেই পারে যে যে ছেলেটি রেপ করতে উদ্যত হয়েছে সে ক্যারাটে জানে। কিন্তু সেটা তো সে নিজের তাগিদেই আলাদা ভাবে শিখেছে, যেটা আপনিও বললেন। মেয়েরা ক্যারাটে শিখছে, তাই আমিও ক্যারাটে শিখি, তাহলে আমি হেনস্থা করতে পারবো, এরকম মনোভাব সত্যিই হবে বলে আপনার মনে হয়?

    "আজ যারা মেয়েদের নিয়ে অর্গানাইজ করছে কয়েক বছর পর যদি দেখা যায় সেই প্রোগ্রাম যথষ্ট সফল নয় তখন সেটা ছেলেদের জন্যও প্রসারিত করবে না তাও বলা যায় না"

    সফল না হওয়ার মানে যথেষ্ট সংখ্যক মেয়ে সেই প্রোগ্রামে জয়েন করেনি, অর্থাৎ মেয়েদের আত্মরক্ষার জন্য ক্যারাটে-পেপার স্প্রের পরামর্শ যারা দিয়েছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে তো চুকেই গেল, তখন তো আর এতোসব তর্কই উঠবে না। আগে যে কজন ছেলে ক্যারাটে শিখত তখনও সে কজনই শিখবে।
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০২:২০68189
  • লিখতে অসুইধে হচ্চে, একটা জিনিস পড়েছিলাম, দিএ জই খালি। তৃতীয় প্যারাতা ভাল করে পড়বেন।

    Rahul Agarwal, chief karate instructor at the Seido Karate Institute, said that apart from the occasional spike in interest after incidents such as the Nirbhaya case, the rate of enrollment has remained flat during the 12 years he has taught self-defence.
    Agarwal is not the only instructor to see interest fluctuate with headlines.

    “The spike happened at the level of enquiries because there was just so much talk in the media. That generated paranoia of sorts. But the actual conversion rate was extremely low,” said Anuj Sharma, chief combat training instructor at the Safdurjung center of Invictus, a self-defence and fitness institute. Its Delhi centre sees up to 40 new enrollments per month. At 10 new members every month, membership at their Gurgaon centre southwest of Delhi is far less.

    What’s more, male students significantly outnumber women at such institutes. Ishita Matharu, an instructor at Krav Maga India, puts the ratio at “never above three women” per every 10 men. Abha, a self-defence trainer based in Noida, a large suburb southeast of Delhi, said several men turned up at the centre to get trained in martial arts. They said that the high rate of crime puts the onus of protecting “mothers, sisters and female colleagues” on them.
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০২:২৬68174
  • বাঃ, সকাল সকাল বেশ লাগলো ঃ)
    শিক্ষা, চাকরির সমানাধিকার, মানে যেগুলো ছেলেরাও জন্মের পর পেতে পারে বলে সমানাধিকার বলে মেয়েদেরও পাওয়ার কথা আসে, সেখানে জন্মসূত্রে শারীরিক ক্ষমতা কম থাকলে সেটাও নাকি সমান করতেই হবে, তবে সেটা শিক্ষা, চাকরি করার সমানাধিকারের সাথে সমতুল্য হবে ! ঃ)
    মেয়েদের ছেলেদের মত সব কিছুতে সমান অধিকার থাকা মানে তাইলে মেয়েদের ছেলেদের মত হওয়া !!
    এবার মেয়েরা কেন শারীরিক ভাবে পুরো ছেলেদের মত নয়, সমান নয়, সেটা না হওয়া পিছিয়ে থাকা কিনা এই নিয়েও নিশ্চয় 'যুক্তি' আসবে ঃ)

    তবে সিরিয়াসলি, এই পুরুষের সমান শারীরিক শক্তি, ক্ষমতা না ধরা মেয়ে আসলে পিছিয়ে পড়া মেয়ে, শারীরিক শক্তি এমপাওয়ারমেন্ট, এই ভাবনাগুলো সিরিয়াসলি রিগ্রেসিভ, পিতৃতান্ত্রিক ধারণা মনে হয়।
  • pi | 24.139.209.3 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০২:২৭68175
  • গাল ধেয়ে আসার জন্য প্রস্তুত রইলাম ঃ)
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৩৫68190
  • মেয়েদের এনরোলমেন্ট কম হলে এতো সব তর্ক করার দরকারই তো আর থাকছে না। আত্মরক্ষার কৌশল শেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনেক মেয়েই সেটা গ্রহন করেননি কোননাকোন কারনে। চুকে গেল।

    তবে আমি নিজে যেটা দেখছি সেটা হল দুয়েকটা স্কুল কলেজে আগের থেকে মেয়েদের এনরোলমেন্ট একটু বেড়েছে। আত্মীয়দের মধ্যেও দুয়েকজন ক্যারাটে শেখা বা শেখানোর ব্যাপারে উৎসাহ দেখান। তবে এগুলো সবই আমার পার্সোনাল অ্যানেকডোট, আমি ভুল হতেও পারি।

    তৃতীয় প্যারার লাস্ট লাইনটা গা গুলানো। দিল্লিতে প্যাট্রিয়ার্কাল ব্যাপারটা একটু বেশী মনে হয়েছে, অন্য শহরে হয়তো এরকম মনোভাব নিয়ে সবাই জয়েন নাও করতে পারেন।

    ওপরের ব্লগে Asees Chaddha নামের একটি মেয়েকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে দেখলাম। পড়তে ভাল্লাগলো।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৪৪68176
  • "ওই যে বললাম, ছেলে ও মেয়েদের একই ক্যাটেগরিতে কুস্তিতে নামানোর দাবী তুলুন (অলিম্পিকে এবং পাড়ার খেলায়), লেডিজ কম্পার্টমেন্ট বাতিল করার দাবী তুলুন, ফিজিকাল ইকুয়ালিটির দাবী তুলুন, শারীরিক সক্ষমতার দাবীর চূড়ান্ত হয়ে যাক। ঃ-)"

    এটা এরকম আর্গুমেন্টঃ আপনি গে ম্যারেজের দাবী তুলেছেন? তাহলে তো ইনসেস্টের দাবীও তুলুন, বহুবিবাহের দাবীও তুলুন, বেশ্চিয়ালিটির দাবীও তুলুন!

    মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখার পরামর্শ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে নানান সরকারি ও বেসরকারি স্তরে। সেটার বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে বারবার নিয়ে আসছেন সেই কথাগুলো যেগুলো বলা হচ্ছেনা। আগেরদিনও দেখলাম ঃ-)

    "একজন গড়পড়তা মেয়ের শারীরিক শক্তি দশদিনের কি একমাসের ক্যাম্পে একটি গড়পড়তা ছেলের শক্তি বা সক্ষমতার চেয়ে বাড়বেনা, এটা সবাই জানে।"

    ঠিক লিখেছেন, দশদিন কি একমাসের ক্যাম্পে এরকম হবেনা। তাই মোটামুটি ছ মাস থেকে এক বছরের কোর্স করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোন ট্রেনিং ইনস্টিটুটে গেলে ওরাও এই কথাই বলবে। আর ট্রেনিংএ এটাতেও জোর দেওয়া হয় যাতে গড়পড়তা ছেলের থেকে শক্তি না বাড়িয়েও একটি গড়পড়তা মেয়ে বিপদের মুহূর্তে আত্মরক্ষা করতে পারে। দিল্লি পুলিশের ক্যাম্পেও অবশ্য এই দিকটার কথা আছে - দরকারে ব্যাগ, ছাতা, ওড়না যেকোন কিছুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা শেখানো।

    "তাহলে "ইহাও আত্মরক্ষার উপায়" বলারই বা মানে কি, যেখনে ১০০০ এর মধ্যে ৯৯৯ জনই এই ভাবে আত্মরক্ষা করতে পারবেনা?"

    যারা আত্মরক্ষার কৌশল শিখবেন তাদের মধ্যে অনেকই অনেক সময়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন। অবশ্যই সবাই সবসময়ে পারবেন না। ১০০০ এর মধ্যে ৯৯৯ টা আপনার মনগড়া।

    "একটু ভেবে দেখলে দেখবেন, মানে একটাই, পাল্টা ভায়োলেন্সকে জাস্টিফাই করা। যেটা আর "আত্মরক্ষা"য় থাকবেনা, বাপ-দাদা-পাড়ার লোকের ন্যায়বিচারে পৌঁছে যাবে।"

    একটু ভেবে দেখুন, ভুল বলছেন। পাল্টা ভায়োলেন্সকে কোনভাবেই জাস্টিফাই করা হচ্ছে না, আত্মরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। একটি মেয়ে যখন আক্রান্ত তখন সে কি করবে সেই শিক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে ভায়োলেন্সকে কিভাবে জাস্টিফায় করা হয় বুঝলাম না, যদিনা অবশ্য এরকম মনে করেন যে আক্রান্ত হলেও মেয়েটি মুখ বুঝে সব সহ্য করে নেবে।

    আর বাপ-দাদার কথা বারবার টেনে আনছেন কেন বুঝতে পারছিনা। আত্মরক্ষার শিক্ষা মেয়েটিকে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বাপ-দাদার কি ভূমিকা?
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০২:৫৪68177
  • "তবে সিরিয়াসলি, এই পুরুষের সমান শারীরিক শক্তি, ক্ষমতা না ধরা মেয়ে আসলে পিছিয়ে পড়া মেয়ে, শারীরিক শক্তি এমপাওয়ারমেন্ট, এই ভাবনাগুলো সিরিয়াসলি রিগ্রেসিভ, পিতৃতান্ত্রিক ধারণা মনে হয়।"

    এটা আমারও মনে হয়। ছেলেদের আর মেয়েদের কিছু ডিফারেন্স তো আছেই, সেগুলো অস্বীকার করারও দরকার নেই।

    কিন্তু সেই ডিফারেন্সের জন্য মেয়েদের সামাজিক্ভাবে দাবিয়ে রাখারও দরকার নেই। মেয়েরা শারীরিক ভাবে ছেলেদের সমান শক্তিধর না হয়েও সমান অধিকার পেতে পারে। সমান মর্যাদার দাবী করতে পারে।

    হয়তো ইকুয়ালিটি আর ইকুইটির মধ্যে গুলিয়ে যাচ্ছে। ইকুয়ালিটি সবসময়ে হয়্না, কিছু ক্ষেত্রে সেটা হয়তো মিনিংলেস। কিন্তু সোশ্যাল ইকুইটি অবশ্যই কাম্য। জেন্ডার ইকুইটি সম্ভব যদিবা নাও হয়, জেন্ডার ইকুইটি অবশ্যই কাম্য।

    "আপনি সরকারি-বেসরকারি নানান স্তরে মেয়েদের আত্মরক্ষা শেখার পরামর্শ দেওয়ার পক্ষে? তাহলে ছেলে ও মেয়েদের একই ক্যাটেগরিতে কুস্তিতে নামানোর দাবী তুলুন (অলিম্পিকে এবং পাড়ার খেলায়), লেডিজ কম্পার্টমেন্ট বাতিল করার দাবী তুলুন, ফিজিকাল ইকুয়ালিটির দাবী তুলুন, শারীরিক সক্ষমতার দাবীর চূড়ান্ত হয়ে যাক।"

    এইভাবে এক্সটেন্ড করতে গিয়ে এখানে গেন্ডার ইকুয়ালিটি আর জেন্ডার ইকুইটি গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:০০68178
  • "না। আক্রান্ত সত্যি ই যা খুশি করতে পারে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পারে না। হেনস্থাকারী যা খুশি করে চলে যায়। আক্রান্ত সবসময় তাৎক্ষণিক বাধা দিতে পারে না। বাসে ট্রামে বা রাস্তায় যারা যৌন হেনস্থা করা, তারে এসবে পটু। এত দ্রুততার সঙ্গে তারা এগুলো ঘটায় যে, তখন আক্রান্ত তাৎক্ষণিক পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে না। এটা ঘটনা। কিন্তু তার আগে থেকে ট্রেনিং নেওয়া থাকলে, সে সেটা পারবে।
    পাছায় হাত বুলোলে তৎক্ষণাৎ সেফটিপিন ফোটায় না কেউ। বারে বারে এরকম করলে, তখন হয়ত মেয়েটি প্রস্তুত হয়, তার পরেরবার পাছায় হাত বোলালে তখন সেফটিপিন ফোটায়। কিন্তু অনেকেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে, লজ্জায় এবং ভয়ে। কী করবে জানে না। এই ভয় ও লজ্জা এসমস্ত কাটিয়ে তোলার জন্যেও আত্মরক্ষার ট্রেনিং এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের শিক্ষা।"

    একমত। তবুও এটুকু বলার আছে, আত্মরক্ষার কৌশল শেখা প্যানসিয়া হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে না। সব মেয়ের জন্য সব ক্ষেত্রে এটা কাজে দেবে তাও বলা হচ্ছে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে কিছু সময়ে অবশ্যই কাজে দেবে।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:০১68179
  • *জেন্ডার ইকুয়ালিটি সম্ভব যদিবা নাও হয়, জেন্ডার ইকুইটি অবশ্যই কাম্য।
  • Ekak | 113.6.157.186 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:০৯68191
  • এই তর্ক টায় ঢুকবনা । প্রচন্ড গোল -গোল । একটাই জিনিস মজার , এই যে দুপক্ষই একমত হয়েছেন যে মেয়েদের কমব্যাট -এবিলিটি ছেলেদের চে কম , এটা কিভাবে হলেন ? মানে সমান ঘনফল এর একজোড়া ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বাকি সব প্যারামিটার স্টাটিক থাকলে ছেলেটির মাসল বেশি হয় । কিন্তু তা দিয়ে এটা আদৌ প্রমান হয়না যে মেয়েদের ক্যালানোর ক্ষমতা কিছু কম । আমি মেয়েদের সঙ্গে মারপিট করেছি , চুল টানা -বেবিয়ানা নয় ,সিরিয়াস মারপিট ,ভুটান-এ কিক বক্সিং ক্লাসে । কিচ্ছু কম নেই বরং একই ট্রেনিং এর মধ্যে দিয়ে আসা ছেলে ও মেয়ের মধ্যে মেয়েরা বেশি ক্ষিপ্র উল্টোদিকে ছেলেদের ব্লান্ট হিটিং পাওয়ার বেশি । এটা একটা বিশাল বড় জগতজোড়া পলিটিক্স যে মেয়েদের বিশ্বাস করানো যে তাদের মারপিট করার ক্ষমতা "আলটিমেটলি " কম । এরকম আলটিমেট কিছু হয়না । সেটা তে দেখছি দুপক্ষই দিব্য সাবস্ক্রাইব করে বসে আছেন :|
  • aranya | 83.197.98.233 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৩68180
  • ', আত্মরক্ষার কৌশল শেখা প্যানসিয়া হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে না। সব মেয়ের জন্য সব ক্ষেত্রে এটা কাজে দেবে তাও বলা হচ্ছে না। '

    - গুড পয়েন্ট

    'আর বাপ-দাদার কথা বারবার টেনে আনছেন কেন বুঝতে পারছিনা। আত্মরক্ষার শিক্ষা মেয়েটিকে দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বাপ-দাদার কি ভূমিকা?"

    - এ প্রশ্ন-টা আমারও
  • pi | 74.233.173.198 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৪68181
  • 'মেয়েরা শারীরিক ভাবে ছেলেদের সমান শক্তিধর না হয়েও সমান অধিকার পেতে পারে। সমান মর্যাদার দাবী করতে পারে।'্‌্‌একদম।এনিয়ে কোন দ্বিমত নেই।
  • ঈশান | 202.43.65.245 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২০68192
  • এই জগৎজোড়া পলিটিক্সের বিরুদ্ধে লড়ার উপায় তো বাতলালাম। শুধু একটা কিকবক্সিং ক্লাসের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে তো হবেনা, অলিম্পিক্স এশিয়ান গেমস, জাতীয়, রাজ্য, এবং স্থানীয় ইভেন্টে, অন্তত কুস্তি ও বক্সিং এ মেয়েদের ও ছেলেদের আলাদা ক্যাটেগরি রাখার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন। লেডিজ কম্পার্টমেন্ট তুলে দেবার দাবী রাখুন। আরও ভালো হয় বিশ্ব হেভিওয়েট/লাইটওয়েট পেশাদার বক্সিং এ ছেলেদের ও মেয়েদের একসঙ্গে লড়িয়ে দিয়ে একটা ইভেন্ট করলে। গড়পড়তা মেয়েরা কমব্যাট এবিলিটিতে কিচ্ছু পিছিয়ে নেই, তার একটা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা দরকার তো। নইলে আর পাল্টা পলিটিক্স কিসের
  • ঈশান | 214.54.36.245 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৭68193
  • আর আলাদা করে গা গুলোনোর কি আছে জানিনা। পুরো ট্রেন্ডটা দেখলে আমার এমনিতেই গা গুলোয়। কেউ কেউ ভাবছেন, বা ভাবতে পারেন, যে তাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের আত্মরক্ষার কলাকৌশল শিখতে বলছেন বলে আমি তাঁদের দোষী ঠাউরাচ্ছি। বা পিতৃতান্ত্রিক বলছি। একেবারেই তা নয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে, বা মাইক্রো লেভেলে এগুলো একেবারেই দোষবহ কিছু না। সমস্যাটা হচ্ছে সামাজিকভাবে বিষয়টা যেভাবে প্রোজেক্টেড হচ্ছে। ওই ট্রেনার সেটাকে খুব সুন্দর ভাবে সামারাইজ করেছেন। "Ishita Matharu, an instructor at Krav Maga India, puts the ratio at “never above three women” per every 10 men. Abha, a self-defence trainer based in Noida, a large suburb southeast of Delhi, said several men turned up at the centre to get trained in martial arts. They said that the high rate of crime puts the onus of protecting “mothers, sisters and female colleagues” on them."

    সামাজিকভাবে মেয়েদের আত্মরক্ষাটা দুধুভাতু ব্যাপার, দশদিনের ট্রেনিং ক্যাম্পেই সমাপ্ত। পরের ধাপে আসে আসল জিনিস। "কমিউনিটি দ্বারা মেয়েদের রক্ষা"। পুলিশ সেই কর্মের সাহায্যকারী মাত্র। এই তো পুরো যুক্তিপরম্পরা। এতে মেয়েদের "স্বাধীন" হয়ে ওঠার কোনো গপ্পোই নেই।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩২68194
  • এই যাঃ! আমি কিন্তু একেবারেই সাবস্ক্রাইব করিনি যে মেয়েদের কমব্যাট-এবিলিটি ছেলেদের থেকে কম! এটায় সাবস্ক্রাইব করলে তো ক্যারাটে শেখার পরামর্শই দিতাম না! ক্যারাটে বা কোন মার্শাল আর্টে প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয় যে কিছু কৌশল জানা থাকলে তুমি তোমার থেকে ওজনে ভারী বিপক্ষকেও ওভারকাম করতে পারো।

    এছাড়াও এখানে যেমন কেউ কেউ বলেছেন, কোন একটা ফিজিকাল ট্রেনিং এ অন্তর্ভুক্ত হলে প্রাথমিক জড়তাটা কাটে। কোন একটা ঘটনা ঘটলে রিয়াক্ট করতে পারে। এটা একটা বিরাট বড়ো শিক্ষা। আমাদের দেশে, হয়তো পৃথিবীর অনেক দেশেই জন্মের পর থেকে মেয়েদের মগজে একটাই জিনিষ ঢোকানো হতে থাকে - তুমি মেয়ে, তুমি ছেলেদের থেকে সব বিষয়ে পিছিয়ে, অন্যায় হলেও তুমি মুখ বুজে সহ্য করবে, কারুর গায়ে হাত তুলবে না, পিছিয়ে আসবে। এই জড়তাটা কাটাতেও ক্যারাটে বা অন্য কোন ফিজিকাল ট্রেনিংএর ক্লাস সাহায্য করে।

    "এটা একটা বিশাল বড় জগতজোড়া পলিটিক্স যে মেয়েদের বিশ্বাস করানো যে তাদের মারপিট করার ক্ষমতা "আলটিমেটলি " কম । "

    পুরো একমত। এই সোশ্যাল মাইন্ডসেটটা কাটানোর দরকার।

    আগে একবার লিখেছি যে গড়পড়তা একটি মেয়ে গড়পড়তা একটি ছেলের থেকে কম শক্তি ধরে। এটা মোটামুটি আমার ধারনা, সেজন্যই লিখেছি, কোন স্টাডিতে যদি দেখানো হয়ে থাকে এরকম না, তাহলে অবশ্যই ভুল স্বীকার করে নেব। তবে শারীরিক শক্তি কম বা বেশী হলেও সেটা ম্যাটার করেনা, কারন মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিপক্ষের আক্রমন প্রতিহত করা। এমনকি যেকোন ভালো ক্যারাটে কোর্সে মেয়েদের এটাও শেখানো হয় যে যদি তুমি একেবারে একা নির্জন যায়্গায় বিপদে পড়েছো, আর কোনভাবে হয়তো তোমার অ্যাটাকারকে প্রাথমিকভাবে রুখে দিয়েছো, তো সেখানে দাঁড়িয়ে থেকোনা, দৌড়ে পালাও। আত্মরক্ষার মূল উদ্দেশ্য নিজেকে বাঁচানো, আক্রমন করা না।
  • Ekak | 113.6.157.186 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৮68195
  • প্রবলেম টা মাথায় । এসব জুডো -কারাটে ইত্যাদি শিখে আদৌ কেও চ্যাম্পিয়ন হবে এটা বিশ্বাস করিনা । বরং হটকারিতা বাড়বে । ঈশেন যেটা বলল । কিন্তু ঠিক যে কারণে ঈশ্য়েন ভয় পাহ্চ্ছেন আমি সেইকারণেই সামান্য আশার আলো দেখছি , যে হটকারিতার বশ এও যদি এদিক ওদিক মেয়েরা ছেলদের ক্যালাতে শুরু করে এবং একটা হাওয়া উঠে যায় যে রাস্তায় আওয়াজ দিলে চড়-চাপাটি খেতে হচ্ছে তাহলে সেটা ওই মাথার ভেতর পোষা ভুত টাকে তাড়াতে সাহায্য করবে । নাথিং এলস । নাথিং মোর । জাস্ট জলের ধারে নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দেওয়া যে দ্যাখ তোর্ ও নখ দাঁত আছে । এরপর সে নেকড়ে হবে না উদবেড়াল তার ব্যাপার ।

    এখন হতেই পারে মারতে গিয়ে উল্টে ব্যাপক মারধর খেয়ে মেয়েরা প্রথম দফায় আরও চুপসে গ্যালো । কিন্তু সবাই চুপ্সবে না । কেও ঠিক আবার পাল্টা ক্যালাবে । আস্তে আস্তে সেক্সুয়াল ক্রাইম থেকে সরে এসে জেনেরাল ক্রাইম এ কনভার্ট করবে মোর এন্ড মোর কেস , ডিটেকটিবিলিটি বাড়বে । ছেলেরাও যদি শেখে ? আর্মস রাখে ? উল্টে মেয়েরাও রাখে ? রাখুক না ! বাগ গুলো এটলিস্ট ভিসিবল রেঞ্জ এ আসছে তো । সারাবছর প্রতিদিন বাস-ট্রেনে শরীরে অনভিপ্রেত খোঁচা খাওয়া ভালো নাকি যদি দেখেন পাঁচ রাস্তার মোড়ে ছেলে-মেয়ে ওপেন আর্মস ফাইট হচ্ছে সেটা ভালো ? অবস্যই দ্বিতীয় টা । কারণ প্রথম টা ভিসিবল ই না বাকিদের কাছে , আরো হাজার বছর চললেও ও বাগ ডিটেক্ট হবেনা ,ভেতরে ভেতরে যন্ত্রণা দেবে । দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ভিসিবল রেঞ্জ এ আসবে , কন্ট্রোল মেকানিসম চাপাতে পারবেন । সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে । যা হবে এক্সট্রিম কেস হবে । এনিওয়ে ,এটা আমার দৃষ্টিভঙ্গী । ব্যক্তিগত সুরক্ষার প্রশ্নে রাষ্ট্র এনেব্লার হবে না প্রভাইডার এটা একেবারেই সাদা-কালো চয়েস নয় ,কাজেই কোনো দিক নেওয়া সম্ভব না । দুটোই থাকুক ।
  • ঈশান | 214.54.36.245 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৩68196
  • এই ছেলে ও মেয়েদের ফাইটিং, লড়িয়ে দেওয়া, এ তো এই মাতৃভূমি লোকালের কেসে খানিকটা দেখা গেলই। এতে করে নিত্যযাত্রী মেয়েদের কনফিডেন্স বেড়েছে, নাকি কুঁকড়ে যাবার কারণে আরও বেশি পুলিশ প্রোটেকশন দরকার হয়েছে, এবং সেগ্রিগেশন বেড়েছে?

    এর পরের স্তরে জুদো ক্যারাটে এবং তার পরের স্তরে আর্মস নিয়ে সম্ভাব্য ফাইটের কথা ভাবতে শিহরিত হচ্ছি। যুগসঞ্চিত বঞ্চনাকে যদি কেউ ক্যারাটে লড়ে মিটিয়ে ফেলার খোয়াব দেখেন তো তাঁর ভালো লাগতেই পারে, আমার লাগছেনা।
  • /\ | 152.4.206.228 (*) | ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৪৪68197
  • "এসব জুডো -কারাটে ইত্যাদি শিখে আদৌ কেও চ্যাম্পিয়ন হবে এটা বিশ্বাস করিনা "

    বিশ্বাস না করে ঠিক করেন। বেশীরভাগ মেয়েই জুডো ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য শেখেননা। Asees Chaddha যেমন বলেছেন, আত্মরক্ষার তাগিদে শেখেন।

    "একটা হাওয়া উঠে যায় যে রাস্তায় আওয়াজ দিলে চড়-চাপাটি খেতে হচ্ছে তাহলে সেটা ওই মাথার ভেতর পোষা ভুত টাকে তাড়াতে সাহায্য করবে । নাথিং এলস । নাথিং মোর ।"

    ওয়েল সেড!

    "এখন হতেই পারে মারতে গিয়ে উল্টে ব্যাপক মারধর খেয়ে মেয়েরা প্রথম দফায় আরও চুপসে গ্যালো । কিন্তু সবাই চুপ্সবে না । কেও ঠিক আবার পাল্টা ক্যালাবে ।"

    ভেরি ওয়েল সেড!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন