এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • বিজ্ঞান ও অপবিজ্ঞানঃ গবেষণার সাতকাহন

    Ritwik Kumar Layek লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ১২ জুলাই ২০১৫ | ৭২২৭ বার পঠিত
  • বৈজ্ঞানিক গবেষণা সম্পর্কে আমাদের বাঙালীদের কিছু মিথ দিয়ে শুরু করা যাক। আমাদের চোখে বৈজ্ঞানিক মানে একজন রকস্টার, একজন আত্মকেন্দ্রিক উন্নাসিক ম্যাজিসিয়ান। গল্পে, কমিক্সে তাই যখন বিজ্ঞানীর চরিত্র আসে, সে আর পাঁচটা লোকের মত নয়। পুলিশের ডিটেকটিভের সাথে শার্লক হোমসের যা তফাৎ, একজন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানের শিক্ষকের সাথে প্রফেসর ক্যালকুলাস, ফিলিয়াস ফগ, বা প্রফেসর শঙ্কুর তফাৎ তার চেয়ে অনেক বেশী। এরা ঠিক মাটির মানুষ নয়।
    এরা নাহয় কল্পবিজ্ঞানের বিজ্ঞানী। কিন্তু আমরা যখন ফাইনম্যানের কথা পড়ছি, বা ডারউইন, নিউটনদের কথা পড়ছি, আমরা ভাবি এনারা সব এমনিতেই জিনিয়াস। আপেল গাছের তলায় বসে, জাহাজে চড়ে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে বা বারে মদ খেতে খেতে এদের মাথায় আইডিয়া ক্লিক করে যায়। আর সেটা লিখে দিলেই এনার জগৎবিখ্যাত।
    এখান থেকেই আসে দুটো ভুল ধারনা। একঃ বিজ্ঞানের গবেষণার সাফল্য শুধু গ্রে সেল থেকে আসে, যার আই কিউ যত বেশী তার সাফল্য তত বেশী। আর দুইঃ তথাকথিত পড়াশুনার কোন দাম নেই। ওতে জিনিয়াসদের সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু হয় না। জিনিয়াসরা অন্যের কাজ কেন পড়ে দেখবে। তারা সবসময় আউট অফ দা বক্স ইনোভেশন করবেন আর তাতেই পৃথিবী বদলে যাবে।
    আমার ডিপার্টমেন্টের দু একজন সিনিয়র প্রফেসরও এই ধারনা পোষন করেন যে বেশী অন্যের কাজ পড়লে বায়াসড হয়ে যাবে, ঐ পৃথিবী উল্টে দেওয়া গবেষণা আর হবে না। বরং শুধু ভাবো আর ভাবা প্র্যাকটিস করো। ব্রেনটা অন্যের কাজের ভিড়ে ভর্তি না করে নিজের আইডিয়া নিয়েই সারা দিন ভাবো। বিজ্ঞানের কাজে সামান্য উন্নতি করে লাভ নেই। যুগান্তকারী কি করবে সেটা ভাবো ইত্যাদি, প্রভৃতি।
    এবার বাস্তবের মাটিতে আসা যাক। একটু মন দিয়ে ভাবা যাক এই যুক্তির ফ্যালাসি। পড়াশুনা ছাড়াই যুগান্ত কিভাবে সম্ভব? বিজ্ঞানের গবেষণা কি একটা ডিসক্রীট ঘটনা যা লাফিয়ে লাফিয়ে এক যুগান্ত থেকে আরেক যুগান্তে এগোবে?
    *************************************
    বাস্তব টা হল সেটা একেবারেই নয়। বিজ্ঞানের ধাপগুলো একটু লক্ষ্য করা যাক। সেটা হলঃ Assumption, Observation, Hypothesis, Experiment, Analysis-Validation, Theory। এই ধাপগুলোর কোথাও কোনও প্রবলেম হলেই আবার আগের ধাপে ফিরে যেতে হয়। আর থিওরী তৈরী হয়ে গেলে সেটা পরের যুগের অ্যাজাম্পশন হয়ে যায়। আজ আমরা ভাবতেও পারবো না যে এককালে তড়িৎ ও চৌম্বক বল যে এক জাতীয় সেটা ভাবা যেতো না। আবার কোনও এক্সপেরিমেন্টের ফল বা কোনও নতুন অবজার্ভেশন পুরোন থিওরীকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে পারে বা বদলে দিতে পারে। এখন দেখার এই ধাপগুলোর কোথায় গবেষকদের কি ভূমিকা।
    ১। Assumptionঃ এটা হল সেইসব সিদ্ধান্ত যা আমরা একটা গবেষনা শুরুর সময় সত্যি বলে ধরে নি। আমি একটা ডায়োড নিয়ে সার্কিট বানাতে গেলে ধরে নি, ডায়োড টা একদিকে কারেন্ট ফ্লো করতে দেবে, অন্যদিকে দেবে না। এই ধাপটার জন্য দরকার প্রচুর পড়াশুনা। বিজ্ঞানের সফল থিওরী গুলো না জানলে নতুন গবেষণা সম্ভব নয়। এই গভীর পড়াশুনা থেকেই আইডিয়া আসে, আইডিয়া ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক থেকে নয়।
    ২। Observationঃ এটা কিছুটা লাকের উপর নির্ভর করে। হয় প্রাকৃতিক ঘটনা লক্ষ্য করা, বা অন্যের করা পরীক্ষার ফল, বা অন্যের কাজের বাখ্যা। ডিটেকটিভের চোখ লাগে এই ধাপে। একটা নতুন পেপার পড়তে গিয়ে তার ভুল বার করাও একটা observation, যা গবেষণার অন্যতম প্রধান ধাপ। এই দেখার চোখ না থাকলে শুধু পড়ে গেলেও সফল গবেষণা হয় না। কোথাও একটা খটকা বা অসঙ্গতি থাকতেই হবে পরের ধাপে যাওয়ার জন্য। উদাহরনঃ আলোর তরঙ্গ ধর্মের থিওরীকে অ্যাজাম্পশন হিসেবে ধরলে Intereference বা Diffraction এর বাখ্যা ঠিকই পাওয়া যায়। কিন্তু Photoelectric Effect এর ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব হয় না। তখন নতুন থিওরীর প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
    ৩। Hypothesisঃ আগের ধাপে পাওয়া নতুন থিওরীর প্রয়োজন থেকেই আসে হাইপোথিসিস। হাইপোথিসিস একটা নতুন গানিতিক তত্ত্ব নিয়ে আসে যা থেকে ঐ পূর্বোক্ত অসঙ্গতির যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়া গেলেও যেতে পারে। এই হাইপোথিসিস তৈরী করা একটা সিন্থেসিস এর সমস্যা। এর জন্য শুধু পড়াশুনা বা অসঙ্গতি দেখার চোখ থাকলেই হবে না। দরকার কিছুটা সাহসের, কিছুটা প্যাটার্ন খোঁজার ক্ষমতার। অভ্যেস ছাড়া এই ধাপটা পেরোনো সম্ভব নয়। তাই সবচেয়ে বেশী প্র্যাকটিস বোধ হয় দরকার এই ধাপটার জন্য। মোটামুটি সমস্ত সমস্যাতেই এই হাইপোথিসিস বানানো একটা ill-posed inverse problem। অনেক হাইপোথিসিস থেকেই পূর্বোক্ত অসঙ্গতির ব্যাখ্যা সম্ভব। তাই ঠিক হাইপোথিসিস বানানো মানেই গবেষণাতে অনেকটা সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
    Experimentঃ হাইপোথিসিস ঠিক না ভুল বোঝার উপার এই পরীক্ষার ধাপ। এটা দুভাবে হয়। একটা Logical thought experiment আর একটা Physiscal experiment। অনেক হাইপোথিসিস যুগের অনেক আগে আসে, তখন ঐ লজিক্যাল থট এক্সপেরিমেন্ট ছাড়া আর উপায় থাকে না। গাণিতিক সমস্যাগুলোর অনেকগুলো এই ধরনের। তবে প্রাকৃতিক পরীক্ষার হল একতা হাইপোথিসিস এর আসল প্রমান।
    Analysis-Validationঃ পরীক্ষার ফল এলে তার বিশ্লেষনে দরকার গাণিতিক দক্ষতা। অসঙ্গতি যেমন দূর করা দরকার, তেমনি দরকার অ্যাজাম্পশনের সাথে মিল খুঁজে পাওয়ার। এটাও এমন একটা স্কিল যেটা অভ্যেসের সাথে তৈরী হয়। ফল প্রেডিকশনের সাথে মিলে গেলে ভ্যালিডেশন। আর না মিললে আবার নতুন হাইপোথিসিস বা পরীক্ষাপদ্ধতির পুনর্বিন্যাস।
    Theoryঃ ফল মিলে গেলে সেটা হবে থিওরী।

    ********************************
    বিজ্ঞান এই ধাপে ধাপে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বলেই বিজ্ঞান এতো আকর্ষণীয়। ম্যাজিকের মত কিছু হয় না। কঠোর পরিশ্রমের পর বিজ্ঞান সামান্য এগোয়। তারজন্য যিনি গবেষক তাঁর এই প্রতিটা ধাপের আলাদা প্রস্তুতির প্রয়োজন। আর মুহূর্তমধ্যে বিখ্যাত হবার চিন্তা মাথায় আনাও চলবে না। সেই লোভ এসে গেলে বিজ্ঞান অপবিজ্ঞানে পরিনত হবে। সেই কন্ট্রোভার্সিয়াল বিষয়ে একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা প্রয়োজন। প্রাক্তন ইউরোপীয় গবেষণার মডেল-যুক্তরাষ্ট্রীয় মডেল-ইন্দোচীনের মডেল নিয়ে একটু ভাবা দরকার। আর গবেষণাপত্র বা পেপার ছাপানো র বিভিন্ন দিক নিয়েও একটু বিশদে বলা প্রয়োজন।
    একটা পেপার হল উপরে লেখা গবেষণার ধাপগুলোর লিখিতরূপ। এই ডকুমেন্টেশন না থাকলে বিজ্ঞানের অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে যাবে। একজনের কাজ অন্যজনকে জানানোর জন্যই এই পেপার লেখা ও ছাপানো প্রয়োজন। আর এটা আজ স্বতঃসিদ্ধ যে পেপার না ছাপানো অবধি একটা সফল কাজের ওনারশিপ একজন বিজ্ঞানীর কাছে আসে না। তাই সবাই এই পেপার ছাপানোর জন্য কমপিট করা শুরু করে। প্রফেসর বা বিজ্ঞানীর সাফল্যের পরিমাপও হয় অনেকটা এই পেপার থেকে। কিন্তু জ্ঞানসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে একজন হবু বিজ্ঞানীর এই রোটি-কাপড়া-মকানের ব্যবস্থার নিমিত্ত পেপার লেখার শ্রেষ্ঠ স্ট্র্যাটেজি কি হবে? গবেষণাই বা কিভাবে করা যাবে?

    ***********************************

    ধরা যাক, আমি একজন নতুন গবেষক। আমার কিছু বিষয়ে দক্ষতা আছে। ধরা যাক সেগুলো হল কিছুটা Control Theory আর কিছুটা Genetics। এগুলো কিছুটা জানি কারন বই পড়েছি ও ক্লাস করেছি। এখন আমি যদি ভাবি এই দুটো ডোমেনের কোনও একটাতে আমি রিসার্চ করতে চাই। এই ভাবনার পিছনে কি কি ভবিষ্যতের চিন্তা কাজ করে? যেমন আমি একজন বড় বিজ্ঞানী হয়ে যাবো, কনফারেন্সে দেশ বিদেশ ঘুরতে পারবো, সবাই আমার পেপার রেফার করবে। এটা হল লোভের পথ। এতে দেশ বিদেশে ঘোরাটা সফল হলেও হতে পারে, কিন্তু বাকি দুটোর সম্ভাবনা প্রায় নেই। তাহলে গবেষণা কখন করব?
    গবেষণা তখনই করব যখন আমি দেখবো যে আমি ঐ বিষয়টা এতোটা ভালোবেসে ফেলেছি যে ঐ বিষয় ছাড়া আমার আর কিছুই ভালো লাগে না। আর ঐ বড় বিজ্ঞানী হবার স্বপ্ন একদম নেই, শুধু বিষয়টা জানলেই খুশী। যদি হাতের কাছে ব্যোমকেশ বক্সী থাকা সত্ত্বেও আমি একটা পেপার টেনে নি অবসর সময়ে পড়ার জন্য তখন বুঝবো এবার এগোনো যেতে পারে।
    তারপর শুরু হবে ঐ ডোমেনের পেপার পড়া। পেপার পড়া অনেকটা জিগস পাজলের মত। মানে ধরা যাক ডোমেনটা একটা পাজল। প্রতিটা পেপার একটা পিস। আমাকে প্রতিটা পিস দেখতে হবে আর অন্য পিসের সাথে মেলাতে হবে যে কোনটা কোথায় জুড়ছে। তারপর একসময় দেখবো ছবিটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হচ্ছে। একদিন একটা নতুন পেপার পড়তে শুরু করে দেখবো তার রেফারেন্স গুলো আমার আগেই পড়া হয়ে গেছে। আমি ওগুলো সব জানি, এমনকি নতুন পেপারে কি থাকতে পারে তার ধারনাও একটা তৈরী হচ্ছে, তখন বুঝবো ঐ প্রথম ধাপটা আমি প্রায় পেরোতে চলেছি। যেটা এতক্ষন লিখলাম সেটা কিন্তু মডারেট লেভেলে করতেও ১-২-৫ বছর লাগতে পারে। আর নিয়মিত পড়লে তবেই হবে। নোট নেওয়াটাও আবশ্যক। নইলে ঐ জিগশ মেলানো মুস্কিল।। ওহো, আমি কিন্তু ধরে নিয়েছি ঐ বিষয়ের টেক্সট বইগুলো আমার আগেই পড়া। এই পেপারে পড়ে ডোমেনটা বোঝার যে টেম্পোরাল লার্নিং কার্ভ, সেটা সিগময়ডাল। শুরুর দিকে প্রায় লার্নিং হয় না বললেই চলে, তারপর একটা লিনিয়ার ফেজ পেরিয়ে এক্সপোনেন্সিয়াল হয়ে শেষে স্যাচুরেট করে। তারপর শুরু হয় পেপার গুলো পড়ার দ্বিতীয় পর্ব। এবার ডিটেকটিভের চোখ নিয়ে। প্রথম পড়া শেখার জন্য। পেপারের লেখককে বিশ্বাস করে। দ্বিতীয়বার পড়াটা ক্রিটিসাইজ করার জন্য, ভুল বের করার জন্য। আমার নিজের জন্য একটা নতুন জিগশ পিস তৈরী করার জন্য, যেটা ঐ সুন্দর ছবিতে সেট হয়ে যাবে। তার জন্য পুরোনো কোনো পিস কে নষ্ট করতে হবে, বা ছবিটা বড় করতে হবে। এই দ্বিতীয় পড়াটা খুব আকর্ষনীয়। অনেক কম বোঝা পেপার পুরো বোঝা যায় এবারে। আর অনেক পেপার ডিসকার্ড হয়ে যায় খারাপ কোয়ালিটির জন্য।
    এই উপররে গল্পটা ভালো, যদি পেপারের সংখ্যা কম হয়। মানে ধর ১০০ পিসের পাজল। কিন্তু ১০,০০০ পিসের পাজল হলে সারা জীবন কেটে যাবে, শেষ হবে না পেপার পড়া। তার অর্থ সব পেপার পড়া চলবে না। এই বেছে নেবার কাজটা একদিনে শেখা যায় না।পড়তে পড়তেই এই টেকনিকটা রপ্ত হয়। তবে ডোমেনের মধ্যে নিজেকে একটু বেঁধে রাখতেই হবে। ম্যাথেম্যাটিক্যাল বায়োলজি পড়তে পড়তে কেও হঠাৎ পিওর ম্যাথ পড়তে শুরু করলে সে পথ হারাবেই। জিনিয়াসরাও একসাথে ১০ টা টপিক করতে পারেন না। থমাস কৈলাথ ও এক একটা দশক নিয়েছিলেন এক একটা বিষয়ে। তাই ফোকাস খুব গুরুত্বপূর্ন।
    পেপারের সংখ্যা কমানোর আর একটা উপার হল রিভিউ পেপার দিয়ে শুরু করা। ডোমেনের সেরা বিজ্ঞানীরা মোটামুটি প্রতি দশকে একটা করে পেপার লেখেন ঐ ডোমেনের এযাবৎ কাজ নিয়ে। সহজ ভাষায় লেখা এই পেপারগুলো বোঝাও সহজ, অঙ্ক থাকে কম আর গবেষণার ফ্লো টা বোঝা যায়। তারপর ঐ পেপারের রেফারেন্স ধরে এগোলে ক্রনোলজিক্যালি এগোনো যায়। তবে ভালো প্রফেসরের পেপার বেছে নিতে হবে। পরমহংসের মত। পেপার সমুদ্রে দুধের চেয়ে জলের পরিমান বেশী। ঐ ডোমেনের ভালো প্রফেসর ও গ্রুপের নাম, ভালো জার্নালের নাম হাতের কাছে নোট করে রাখা একটা প্রাথমিক প্র্যাকটিস।
    (ক্রমশঃ)

    দ্বিতীয় পর্বঃ
    ****************************
    পড়া মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেলে শুরু হয় কাজের উপযুক্ত একটা প্রবলেম খুঁজে বার করা। যেহেতু আমরা কেও হাইজেনবার্গ বা টেরেন্স টাও বা পেরেলম্যান নই, তাই ঐ শতাব্দীর কঠিনতম সমস্যাগুলোর দিকে না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। PhD র জন্য দরকার এমন একটা প্রবলেম, যেটার উপর সঠিকভাবে গবেষণা হয় নি, লিটারেচারে ঠিকঠাক কোনও কাজ নেই, কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে করা গেলেও যেতে পারে। আর PhD র জন্য সময় মোটামুটি ৪-৫ বছর পাওয়া যায়, যার লিটারেচার সার্ভেতেই চলে যাবে ২ বছর। সুতরাং আরো ২ বছরের মধ্যে কাজটা দাঁড় করাতে হবে ও পাবলিশ করতে হবে।
    এই কম সময়ের জন্য PhD তে খুব ভালো কাজ করা একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। পেপারের রিভিউ ও রিরিভিউ যেহেতু ১ বছরের কাছাকাছি নিয়ে নেয়, তাই যা করার ১ বছরের মধ্যেই করতে হবে।
    এই সিচিয়েশনে দাঁড়িয়ে PhD ছাত্র ভুলে যায় ঐ বৈজ্ঞানিক গবেষণার সিকোয়েন্সটার কথা। যেন তেন প্রকারেন উৎরে দিয়ে কাজটা নিয়ে পাবলিসিটি করতে হবে। কনফারেন্সে যেতে হবে। পড়াশুনা ঠিকঠাক হয়ে থাকলেও ঐ হাইপোথিসিস বানানো সমস্যাজনক হয়ে পড়ে। আর পড়াশুনা কম হলে বা না হলে বলাই বাহুল্য।
    এবার আসা যাক গবেষণার বিভিন্ন মডেলগুলোয়।

    ১। ইউরোপঃ রেনেশাঁ র পর ইউরোপ হয়ে উঠেছিল বিশ্বের মুক্তচিন্তার আঁতুড়ঘর। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে যে নতুন করে বিজ্ঞানকে চেনার কাজ শুরু হয় তা পূর্ণতা পায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধে। টেলিস্কোপ-মাইক্রোস্কোপ তৈরী হয়, একের পর এক আসেন গ্যালিলিও-নিউটন-ডেকার্তে-জেমস ওয়াট-ডারউইন-মেন্ডেল-মেন্ডেলিভ-ফ্যারাডে-ম্যাক্সওয়েল-প্লাংক। নাম বলে শেষ করা যাবে না। একের পর এক কাজ হতে থাকে। ইউনিভার্সিটি গুলো এই জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। এই মুক্তচিন্তার মডেল ছিল প্রাচীর গ্রীসের আদলে। সবাই একটা কাজ নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করতেন। পেপারের লোভের চেয়ে একটা ভালো কাজ শেষ করা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই মডেলের এপিটোম ছিল ঊনবিংশ শতকের কেম্ব্রিজ আর বিংশ শতকের গোটিঙ্গেন। দুটো বিশ্বযুদ্ধ এই গবেষণার যুগটা যেন হঠাৎ করে শেষ করে দেয়। অনেক বিজ্ঞানী দেশত্যাগ করেন। ইউরোপে আমি থাকিনি, চোখে দেখা অভিজ্ঞতা নেই, তবে শুনেছি ইউরোপে প্রফেসর একটা খুব উঁচু পদ। সবাই প্রফেসর হয় না। অনেকেই রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট এমনকি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবেই রিটায়ার করেন।

    ২। যুক্তরাষ্ট্রঃ বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে বিশ্বের সেরা হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে জার্মানী-ইংল্যান্ড-রাশিয়া-ইতালী-ফ্রান্সের চেয়ে অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষম যুক্তরাষ্ট্রে সেরা বৈজ্ঞানিকরা গিয়ে হাজির হন। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশগুলির সেরা ছাত্রদেরও পছন্দের জায়গা হয় MIT, Stanford, Yale, Princeton ইত্যাদি ইত্যাদি। স্বাভাবিকভাবেই গড়ে ওঠে এক রিসার্চের এক অ্যামেরিকান মডেল, যা পূর্বসূরী ইওরোপীয়ান মডেল থেকে আলাদা। এই সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রত্যেক প্রফেসরই একজন রাজা। গনতন্ত্রের ও স্বাধীনতার এই নতুন স্থানে প্রফেসররা হয়ে উঠলেন উচ্চাকাঙ্খী। সাকসেস ও আসতে শুরু করল। এঞ্জিনিয়ারিং এর অভুতপূর্ব উন্নতি হল। মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, ফিউশন বোমা তৈরী হচ্ছে, কমিউনিকেশনে বিপ্লব আসছে। কোনও এক জ্যাক কিলবি তৈরী করছেন IC। কোনও এক ভন নয়মানের কাজের উপর তৈরী হয়ে যাচ্ছে কম্পিউটার। শ্যানন, কালমান রা তৈরী করছেন ইনফরমেশন থিওরী। বিজ্ঞানের নতুন দিক খুলে যাচ্ছে। আমেরিকার এই নতুন কালচার কিন্তু ক্যাভেন্ডিস ল্যাব বা গোটিঙ্গেনের থেকে আলাদা। গবেষকরা পড়তে চলেছেন এক ভয়ংকর কম্পিটিশনের মধ্যে, যার শেষরূপ হবে publish or perish। আমার ৫ বছরের অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি এই নতুন মডেলে কোলাবোরেশন হয় কম্প্লিমেন্টারী ডোমেনের প্রফেসরদের মধ্যে। আর অনেক প্রফেসরই একা সূর্য্য হয়ে আলো দেওয়া শুরু করেন। একক পেপারের বন্যা শুরু হয়। জার্নাল চলে আসে অনেক গুন বেশী। বিজ্ঞানের সিরিয়াস জার্নাল গুলো জার্মানের পরিবর্তে আবার ইংলিশ ভাষায় হতে শুরু করে। আর শুরু হয় গবেষণার প্রোডাক্টের মার্কেটিং। প্রাইভেট এন্টারপ্রাইস আসে টাকা ঢালতে। প্রফেসরদের ভাবা ও পড়ার সময় কমতে শুরু করে। শিক্ষক ও গবেষকের সাথে আসল ডেজিগনেশন হয়ে ওঠে ম্যানেজার।

    ইন্দো-চীনঃ একসময় ইউরোপের মডেলে কাজ শুরু করেও এখন দ্রুত অ্যামেরিকার মডেলে যেতে চাইছে আমাদের এই দুই দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। কিন্তু অ্যামেরিকার গতি চীন রপ্ত করতে পারলেও আমরা পিছিয়ে পড়ছি।
    ********************************************
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১২ জুলাই ২০১৫ | ৭২২৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • সুমন | 81.89.244.110 (*) | ১২ জুলাই ২০১৫ ১১:৪০69249
  • বেশ গোছানো লেখা। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
  • সুশ্রুত সরখেল | 212.54.102.201 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:২৬69264
  • কংক্রীট টার্মসে হাইসেনবার্গ ঠিক কি করেছিলেন?
  • ranjan roy | 192.68.32.110 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:২৯69265
  • সোশ্যাল সায়েন্সে আর ফিজিক্যাল সায়েন্সের বেসিক তফাৎটা হল যে দ্বিতীয়টিতে যেমন ল্যাবে একটি হাইপোথিসিসকে আইসোলেট করে একইরকম কন্ডিশনে বার বার পরীক্ষা করে ভেরিফাই করবার সুযোগ থাকে, প্রথ্মটায় তা থাকে না।
    কারণ প্রথমটার বেসিক এনটিটি হল মানুষ বা মানুষের সমাজ।
    তাই সেটায় হাইপোথেসিসের ভেরিফিকেশন অনেক বড় সময় ধরে অনেক বেশি ডেটার বেসিসে করতে হয়। তার জোর বেশি মূলতঃ হাইপোথেসিসের লজিক্যাল স্ট্রাকচারের ভেরিফিকেশন নিয়ে। এজন্যেই আজকাল ইকনমিক্সের রিসার্চে অ্যাডভান্স ম্যাথমেটিক্সের প্রয়োগ ও রিগর অত্যন্ত বেশি। অমর্ত্য সেনকে ও হাভার্ডে গিয়ে ম্যাথস এর স্পেশাল কোর্স করতে হয়েছিল, অধ্যাপক অবস্থাতেই।ঃ)))
    জন ন্যাশের গেম থিওরির প্রয়োগ ইকনমিক্সে কী ব্যাপক ভাবে হয় তা নিয়ে অন্য একটি টইয়ে কেউ লিখেছেন। স্ট্যাটিসটিক্যাল টুলস, নর্মাল কার্ভ ফিটিং এর কথা বা লিনিয়ার প্রোগ্রামিং, ডিফারেন্শিয়াল এবং ডিফারেন্স ইকোয়েশনের প্রয়োগের কথা ছেড়েই দিলাম।
    ২) অবশ্যই এর রিগার ফিজিক্স বা কেমিস্ট্রির মত নয়, তাই বলে ঢপের সায়েন্স! নাঃ, কথা না বাড়ানোই ভালো।
    ৩) আর নোবেল সায়েন্সের প্রাথমিক উইলে যে ইকনমিক্স ছিল না, ওটা এবং আরও গোটা কয়েক পরের সংযোজন সেটা বাচ্চাও জানে। কিন্তু চলতি কথায় ওটাকেও নোবেল প্রাইজই বলা হয়।
    ৪) আর সাহিত্য বা শান্তির পুরস্কারকে কেউ বিজ্ঞানের কোন একটি শাখার জন্যে বলে উদ্ভট দাবি কেউ করে না। তা বলে সোশ্যাল সায়েন্স হল ঢপের!
    ঋদ্ধ হলাম।
  • সুশ্রুত সরখেল | 212.54.102.201 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৯69266
  • হিগস বোসনের জন্য নোবেল কবে পেল দেখেছেন? ওটা হল ফিজিক্স। অঙ্কের ডিগবাজি নয়। গেম থিওরির প্রয়োগ ইকনমিক্সে হয়না গেমথিওরির গোড়াপত্তনই হয়েছিল ইকনমিক বিহেভিয়র বোঝার জন্য। https://en.m.wikipedia.org/wiki/Theory_of_Games_and_Economic_Behavior

    mathematical physics আর physics এর ফারাক বুঝলে বুঝতেন ইকনমিক্স কেন ঢপের বিজ্ঞান।
  • সুশ্রুত সরখেল | 212.54.102.201 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০২:০৫69267
  • কড়া ডোজের অঙ্ক ব্যবহার করলে সেটা অঙ্ক হয় অর্থনীতি নয়।
  • ranjan roy | 192.68.32.110 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০২:১১69268
  • ওরে বাব্বা এত রেগে গেছেন কেন?ঃ)))

    "হার মেনেছি মিটেছে ভয় তোমার জয় তো আমারই জয়"!

    দূর মশাই! ফিজিক্সই বুঝি না তো ওর সঙ্গে ম্যাথমেটিক্যাল ফিজিক্সের তফাৎ!
  • PM | 53.251.91.138 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৬69269
  • এই দ্যাকো , সরখেল স্যার আমার পরীক্ষা নিচ্ছেন ঃ)
  • Ritwik Kumar Layek | 213.110.246.230 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৪:২৫69250
  • প্রচুর টাইপো রয়ে গেছে। সরি।
  • Ekak | 24.99.33.103 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৪:৪৯69270
  • আহা বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনায় ইকনমিক্স এলোই বা কোদ্দিয়ে ? :(
  • ranjan roy | 192.68.32.110 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৫:০৯69251
  • আরে ছাড়ুন মশাই টাইপো! দারুণ লিখেছেন।

    পরের পর্বের প্রতীক্ষায়।
    আপনাকে "লাইনচ্যুত" করতে চাই নে। তবু সসংকোচে জিগ্যেস করেই ফেলি। আমি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ছাত্র নই, তাই তার গবেষণার 'রিগার' বুঝতে আগ্রহী। কিন্তু কিছু ব্যাপার তো সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার সঙ্গেও কমন হবে, তাই সাহস করে জানতে চাইছিঃ
    কোন একটা হাইপোথিসিস বা থিওরি সম্ভবতঃ দুরকম কারণে ভুল সিদ্ধান্তে আসতে পারে।
    এক, অ্যাসাম্পশানে ভুল। মানে, অ্যাসামপ্শানগুলো বাস্তব রিয়েলিটিকে রিফ্লেক্ট করছে না। অর্থাৎ, প্র্যাকটিক্যাল এক্সপেরিমেন্টে তফাৎ ধরা পড়ছে।
    দুই, অ্যাসাম্পশন ঠিক, কিন্তু লজিকটা ভুল। ফলে ভুল কনক্লুশন।
    অর্থাৎ, কোন একটি হাইপোথিসিসকে চারপায়ে দাঁড়াতে হলে তার অ্যাসাম্পশান গুলো সঠিক/ রিয়েলিস্টিক হতে হবে আর তার ওপর দাঁড় করানো লজিক্যাল স্ট্রাকচারটিও সঠিক হতে হবে।
    আমি যা ভেবেছি বা বুঝেছি তার লিমিটেশনটাও দয়া করে বলে দেবেন।
  • anirban | 146.152.15.57 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৫:১৫69271
  • বাহ। ভালো লাগল। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
  • Ritwik Kumar Layek | 213.110.243.22 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৫:২১69252
  • একদম। সমাজবিজ্ঞানের সাথে মূল তফাত যদ্দুর মনে হয় ঐ ম্যাথেম্যাটিক্যাল রিগরে আর সত্যের ধারনায়।
    তবে বাকি ফ্লো টা একই রকম। আর দুটোতেই প্রচুর পড়াশুনা প্রয়োজন।
    আমি সমাজবিজ্ঞান জানি না। তাই প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নিয়েই লিখছি।
  • সুশ্রুত সরখেল | 212.54.102.201 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৬:৩৩69253
  • আলোচনা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানেই রাখুন। ইকোনোমিক্স হল ঢপের বিজ্ঞান ও এসবের ঊর্দ্ধে।
  • PM | 11.187.176.33 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৬:৪৪69254
  • ঋত্বিক-বাবু, খুব ভালো লেখা। আপনি যা লিখেছেন সেটাই গবেষণার SOP কিন্তু আপনার কি মনে হয় না আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটি, হাইসেনবার্গের থিওরি ( ২৪ বছর বয়সে বিজ্ঞানের গতিপথ বদলে দেওয়া) এসবের পেছনে সাধারন SOP র বাইরেও একটা X ফ্যাকটার আছে? আমার মনে হয় সমসামায়িক কাজের যে প্যাটার্ন তাতে এদের কাজ কেমন যেনো প্রক্ষিপ্ত, গ্রাফের অনেক বাইরে। এদের কাজকে নরমাল কঠোর পরিশ্রমের SOP দিয়ে এক্সপ্লেন করা খুব মুস্কিল বলেই মনে হয়।
  • Ritwik Kumar Layek | 213.110.243.22 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৭:০১69255
  • আসলে না। X-factor টা ঐ হাইপোথিসিসে। আমাদের সত্যেন বোসের কাজও তাই। বাকি পড়াশুনা ও অ্যানালিসিস টা প্রচুর করেছেন আইনস্টাইন ও হাইজেনবার্গ দুজনই (ও বাকি সবাই)। আমরা শুধু বিগ সাকসেস গুলো জানি। ওনাদের ফেলিওর গুলোর হিসেব রাখি না।
  • ranjan roy | 192.68.32.110 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৭:০৭69256
  • নিঃসন্দেহে! অমর্ত্য সেন ঢপের বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন।
  • সুশ্রুত সরখেল | 212.54.102.201 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৭:৩৫69257
  • নোবেল তার উইলে ওরকম কোন প্রাইজের কথা বলেননি। আর পুরষ্কার দিলেই যদি তা বিজ্ঞান হত বা ঢপত্ব হ্রাস পেত তাহলে শান্তির নোবেল নিয়েও মাথা ঘামাতে হয়।
  • PM | 37.97.111.3 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৮:২৪69258
  • ঋত্বিকবাবু, শুধু আলোচনার জন্যই লিখছি-

    হাইসেনবার্গ ফিসিক্স`/অংক পড়েন ২০২০-২৩ সাল পর্য্যন্ত যখন ওনার বয়স ছিলো ১৯-২১ বছর। ২৩ বছর বয়সে ওনার যুগান্তকারী পেপারটা বার করেন কোয়ান্টাম মেকনিক্সের ওপোর । সেটি আর ২৫ বছর বয়সী প্রকাশিত অনিশ্চয়তা সুত্রের পেপার বিজ্ঞানের দুনিয়াকে আপসাইড ডাউন করে দেয়।

    ১৯ বছর বয়েসে ফিসিক্স পড়া শুরু করে কি এমন পড়ে ফেললেন যে ২৩ বছরে ঐ কান্ড করে ফেললেন ? এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে ঐ ৪-৫ বছরের মধ্যে বয়সের মধ্যে উনি সোমার্ফিল্ড, পাউলি, প্ল্যান্ক , ম্যাক্স বর্ন মায় বোরের সাথেও কাজ করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তবু অকল্পনীয় মেধাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু প্রসেসকে গুরুত্ব দিলে বোধ হয় আমরা ভুলই করবো। ( কর্পোরেটেও দেখেছি যে যারা মূলতঃ আউট অফ দা বক্স চিন্তা ভাবনা করেন, তাদের প্রসেস দিয়ে বাঁধার চেষ্টা অনেক ক্ষেত্রেই কাউন্টার প্রোডাক্টিভ হয়)

    তবে 99.999 শতাংশ বিজ্ঞানী আর প্রেফেসনালদের সাফল্যের ক্ষেত্রে আপনার বর্নীত প্রসেসের গুরুত্ব অপরিসীম।
  • Ritwik Kumar Layek | 213.110.243.23 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৮:৩৯69272
  • আর একটু দিলাম।
    নিচে খানিকটা ফাঁকা জায়গা চলে এসেছে। ওটা কিকরে ডিলিট করা যাবে?
  • শিবাংশু | 127.248.129.136 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৮:৪০69259
  • উত্তম... আগে কহো আর....
  • Ritwik Kumar Layek | 213.110.246.230 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৮:৫১69260
  • PM,
    হয়ত আপনি ঠিকই বলছেন। হাইজেনবার্গ, ডি ব্রগলি, ব্র্যাগ থেকে টেরেন্স টাও এরকম লোকজন অনেক আছেন তো নিশ্চয়ই। কোনও প্রসেস হয়ত এদের ক্ষেত্রে খাটে না। তবে পড়াশুনাটা কিন্তু এরাও করেন। হাঁ অনেক বেশী বোঝার ক্ষমতা এঁদের। তাই সময় টা কম লাগে।
    টেরেন্স টাও ম্যাথ অলিম্পিয়াড এ পদক পান ১০ বছরে। ১৫ তে মাস্টার্স, ২১ এ প্রিন্সটনে PhD, ২৪ এ UCLA তে ফুল প্রফেসর আর ৩০ এ ফিল্ডস মেডাল। কিন্তু ওনার পেপার খুললে বোঝা যায় পড়াশুনার রেঞ্জ টা।
    তবে আমি বিগ পিকচারটা নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি। আর করতে চাইছি তাদের নিয়ে যারা ঐ জিনিয়াসদের দেখিয়ে নিজেরা বোগাস সায়েন্স করেন।
  • Ishan | 214.54.36.245 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ০৮:৫২69273
  • অ্যাডমিন হয়ে ডিলিট করতে হবে। সে করে দেওয়া যাবে। আপনি লিখুন।
  • PM | 11.187.199.184 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ১০:২৯69261
  • কোথায় একটা পড়েছিলাম মনে করতে পারছি না-- ২৩ বছর বয়সে লেখা হাইসেনবার্গের MSc থিসিসের ওপোরেই ওনাকে MSc, PhD আর তার ৭ বছর বাদে নোবেল দেওয়া হয়েছিলো!!! ঃ)।

    আরো অদ্ভুত ব্যাপার , ২৫ বছর বয়সের মধ্যে অভাবনীয় কান্ড ঘটিয়ে দেওয়া এই বিজ্ঞানীর ২৫ পরবর্ত্তী কন্ট্রিবিউসন কিন্তু সামান্য।

    যাক গে , টইকে বিপথগামী করবো না। ঋত্ত্বিকের লেখার পরের পর্টের জন্য অপেক্ষা করি
  • PM | 11.187.199.184 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ১০:৩৭69262
  • আরেকটি শোনা কথা লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না-
    CUর BSc Economics part 2 তে ৫০ নম্বরের একটা এসে লিখতে দেওয়া হয় যেখানে ক্রিয়েটিভিটি দেখাবার সুযোগ থাকে। অমর্ত্য সেন যে এসেটি লিখেছিলেন সেটি নাকি ওনার প্রেসির শিক্ষক ঘসামাজা করে পাবলিশ করে দিয়েছিলেন। ঐটাই নাকি অমর্ত্য সেনের প্রথম ফরমাল পেপার ।

    সত্যি কিনা জানি না ঃ)
  • Ritwik Kumar Layek | 213.110.246.23 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৫ ১২:৪৮69263
  • PM,
    সেটা তো হতেই পারে। উৎসাহ কমে যাওয়া হতে পারে, জার্মান বোমা না বানানোর ইচ্ছে হতে পারে। জিনিয়াসের ইচ্ছে।
    এযুগের আর এক জিনিয়াসের নাম বলি। গ্রিগরি পেরেলম্যান। ১৯৬৬ তে জন্ম। লেনিনগ্রাদে পড়াশুনা, গবেষণা রিম্যানিয়ান জিওমেট্রি ও টোপোলজি নিয়ে। ভদ্রলোক ১৯৯৬ এ ইউরোপিয়ান ম্যাথেম্যাটিক্যাল সোসাইটির পুরস্কার, ২০০৬ এ ফিল্ডস মেডাল আর ২০১০ এ মিলেনিয়াম পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেন। ক্লে ইনস্টিটিউটের সাত টা মিলেনিয়াম প্রবলেমের এখনও অবধি একটার সমাধান বের হয়েছে। পয়েনকেয়ার কনজেকচার। সমাধান করেছেন পেরেলম্যান। সবাই মেনেও নিয়েছে ওনার পেপার। কিন্তু উনি সেটা নিয়ে কোনও প্রচার চান নি। প্রাইজ নিতেও যান নি সেজন্য। ওনার বিখ্যাত উক্তিঃ I'm not interested in money or fame; I don't want to be on display like an animal in a zoo. ভদ্রলোক ২০০৫ এ চাকরী ছেড়ে দিয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে গেছেন। ওনার নাকি এখন অঙ্ক করতে কষ্ট হচ্ছে। এ জীবনে আর অঙ্ক করতে চান না। তবে কনস্পিরেসী থিওরিস্ট দের দাবী উনি রাশিয়ার কোনও ফার্ম হাউসে বসে বসে পরের প্রবলেম গুলো সলভ করছেনঃ যেমন নেভিয়ার স্টোকস ইকোয়েশন বা রিম্যান হাইপোথিসিস।
    যাকগে এবার আসল গল্পে ফিরছি।
  • Ritwik Kumar Layek | 213.110.247.221 (*) | ১৪ জুলাই ২০১৫ ০৭:১৩69274
  • রাশিয়ান-জাপানি বিজ্ঞান নিয়ে একটু পড়াশুনা করে লিখবো। এখনও অবধি ইচ্ছে করেই লিখিনি।
  • Abhijit Majumder | 113.21.127.60 (*) | ১৪ জুলাই ২০১৫ ০৭:২৫69275
  • বাহ। দারুন লেখা। আমার নিজের জন্য তো বটেই ইংলিশ-এ লেখা হলে আমার স্টুডেন্ট দের ও পড়তে দিতাম। খুব ভালো
  • S | 139.115.2.75 (*) | ১৪ জুলাই ২০১৫ ০৭:৩২69276
  • সেকেন্ড পার্ট তো সোশাল সায়েন্স হয়ে গেলো।
  • Ritwik Kumar Layek | 213.110.243.21 (*) | ১৪ জুলাই ২০১৫ ০৯:০০69277
  • একটু ধৈর্য্য প্লিজ। ঃ)
    বাংলায় বিজ্ঞান লেখা কি সহজ নাকি?
  • S | 139.115.2.75 (*) | ১৪ জুলাই ২০১৫ ০৯:০২69278
  • না আমার তো সোশাল সায়েন্স পছন্দ। তাই ঐ পোর্শানটা বেশি ভালো লেগেছে।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন