এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ভোট পর্যালোচনা- ২০১৯, পশ্চিমবঙ্গ

    সোমনাথ রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৯ মে ২০১৯ | ১৬৪৯৯ বার পঠিত
  • ক) ঐতিহাসিক ভুল


    আমরা যে পরিমন্ডলে বড়ো হয়েছি, সেখানে এমন একটি দল আছে, যাকে আমরা বেশ কিছুদিন গিলতেও পারি না এবং ওগড়াতেও পারিনা। সেই দলটি ঐতিহাসিক ভুল করে থাকে। প্রধানমন্ত্রিত্ব বিতর্ক থেকে নাগেরবাজার প্যাক্ট বিভিন্ন নিদর্শন তার। তবে দলের মাথারা আত্মসমালোচনা করেন। নিজের সমালোচনা নিজে করার একটা সুবিধের দিক হল তাঁদের অন্যের সমালোচনা স্বীকার  করতে হয় না। ফলে এই দলটির ব্যাপারে আমাদের আর কিছু তেমন এখন বিশেষ লিখে লাভ নেই। তাও শুরুতে গণেশপুজোর মতন রাখা রইল। বাকি উপাচারে এতদাধিপতয়ে শ্রীবিষ্ণবের মতন ফুল দেব মাঝে মাঝে।


    খ) সংঘ নাকি সংগঠন


    যেহেতু আলোচনা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আর এই বক্তব্য লোকসভা ভোটের শোকসভায় পাঠের জন্য পাঠানো হচ্ছে, ফলতঃ সুরতহালে কী এল জানতে চাইব বৈ কী! প্রথমে দেখার এই ১৮র ৪২ কি সংঘের কেরামতিতে হতে পারে? সংঘ পরিবার, হিন্দুত্ববাদী এই গোষ্ঠীটি বাংলায় বহুবছর ক্রিয়াশীল, বাকি ভারতের মতন। তবে মধ্যিখানে বাম আন্দোলনের ঘনঘটায় এদের টার্গেট অডিয়েন্স অন্য রেখায় প্রতিসৃত হয়েছিল। কিন্তু কলকাতাকেন্দ্রিকতা থেকে অফ ফোকাস বিভিন্ন অংশে গোকুলে বেড়েছে অবশ্যই। আর, দুম করে ভোটে জেতার থেকে বেশি কিছু তাদের লক্ষ্য থাকায় সামাজিক কাজকর্মে অংশীদার হওয়ার কাজ চালিয়ে গেছে। বিশ্বায়নের আগে আমরা মণিমেলা দেখেছি, বিজ্ঞান জাঠা দেখেছি, এমন কী পাড়ার ক্লাবগুলোর সক্রিয়তা দেখেছি। এখন সেই জায়গায় পোটেনশিয়াল অর্গানাইজাররা অর্কুট-ফেসবুক-টিন্ডার-হোয়াটস অ্যাপ করেন। ফলে সামাজিক পরিসরে সংগঠন ডুবে গেছে, সংঘের আলো উজ্জ্বল হয়েছে। হালে সরস্বতী বিদ্যামন্দির লোকের চোখে টোখে পড়ছে, কিন্তু সক্রিয়তা এক মাত্রায় বহুবছর ধরে থেকেছে। এই দিয়ে ভোটে জেতার সবটা হয়েছে মনে হয় না, কিন্তু কিছুটা হয় নি এমন নিশ্চয়ই নয়। সঙ্ঘারামে নিশ্চিতভাবে সংগঠনের ভিতপুজো হয়েছে। তাহলে বাকি থাকে সংগঠন। একটি সংগঠন ভালো চললে তার ভোট বাড়ে। বিশেষতঃ নতুন খেলতে নামা দল জেতে আর পুরোনো দল হারে ডিফেন্স-মিডফিল্ড-ফরওয়ার্ডের অর্গানাইজেশনের তারতম্য ঘটিয়েই। তার মানে ২ থেকে ১৮য় হেভি অফেন্স। ৩৪ থেকে ২২ এ ডিফেন্স ঝুলেছে, যতই ভোটভাগ বাড়ুক টাড়ুক না কেন। বল পজেশন তখনই কাজের যখন তা গোলে বাড়ে।  মনে রাখা দরকার, আমরা ২৩৫, ওরা ৩০ এর ভোটেও ৩৫% এর বেশি ভোট ওদের ভাগে ছিল।  ভোটকে সিটে পরিণত করার মধ্যে সাংগঠনিক কেরামতি থাকে।


    সিপিএমের ভাগে ২ থেকে শূন্য নিয়ে বেশি কিছু বলব না। তবে প্রকৃতি শূন্যস্থান পূরণ করে বলে শিশুবিজ্ঞানে লেখা ছিল। এটুকু খেয়াল করা অবশ্য যেতেই পারে যে ২০০৯এ বামশক্তি যে ১৬টি আসনে জিতেছিল, তার ১১টি এবার বিজেপির ভাগে পড়েছে। উল্টোদিকে দেখি  ২০০৯এ পাওয়া আসন, যা বিজেপি তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে ২০১৯এ, তা হল হুগলি, ব্যারাকপুর, বনগাঁ আর রানাঘাট। এর মধ্যে ব্যারাকপুর আসনটা দ্রষ্টব্য, সেখানে তৃণমূলের সংগঠনের মূল লোকটি বিজেপিতে গিয়ে জিতেছেন। বনগাঁ আর রানাঘাটে নাগরিকত্ব বিলের ইস্যু ছিল, যা নিয়ে আমরা পরের পর্বগুলিতে আলোচনা করছি। ফলে বিজেপির ভোট এবং আসন দুইই বেড়ে যাওয়া, স্থানীয় সরকারে ক্ষমতাসীন দলের নাকের ডগা থেকে মার্জিনাল ভোটে একাধিক লোকসভা আসন বের করা, প্রার্থী প্রচার করতে পারেন নি, এমন জায়গাতেও ফল উলটে দেওয়া- এইসবই সাংগঠনিক কৃতিত্ব হিসেবে দেখা উচিত।


    গ) আইটি সেলের ভাইটি


    তিনি আমাদের হোয়্যাটস অ্যাপ করে গেছেন। আমরা প্রথমে পড়ি নি, তারপর খুলে দেখেছি মমতা ব্যানার্জির কার্টুন, তারপর স্কুলমেটদের গ্রুপে ফরওয়ার্ড করেছি। তারপর একদিন ট্রেনের তাসের আড্ডায় বিশরপাড়ার রবি বলেছে মেটিয়াবুরুজে অপহরণ নিয়ে একটা হেভি প্রতিবেদন এসেছে, সব কাগজ চেপে যাচ্ছে। বলেছি ফরওয়ার্ড করে দে তো। এই ভাবে বিছন থেকে দই জমেছে। কিছুক্ষণ আগে, আমার অফিসের এক সুইপার দেখলাম আরেকজনকে তার ফোন থেকে রাজনৈতিক খবর পড়ে শোনাচ্ছেন। দ্বিতীয়জনের কাছে স্মার্টফোন নেই মনে হল। তো হোয়াটস অ্যাপের ফরওয়ার্ড আমরা কাকে পাঠাচ্ছি আর কার থেকেই বা পাচ্ছি? কার থেকে নয়? পিসতুতো দিদি-সহকর্মী-মুদির দোকানমেট-স্কুলের বন্ধু ইত্যাদি, প্রভৃতি। আমাদের চেনা লোকজনই এগুলো পাঠাচ্ছে, যাদের রাজনৈতিক আনুগত্য-টত্যও নেই, মিডিয়াওলাদের মতন খবর বেচে খাবার জোটানোর দায় নেই। টিভিতে এক বিশেষ-অজ্ঞ এসে গাঁক গাঁক করে বলে গ্যালো- এন আর সি হওয়ায় নাকি আসামে হিন্দুরাই ক্যাম্পে ঢুকছে, তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে নিশ্চয়ই তৃণমূলের কমিটিতে আছে, আমি হোয়াটস অ্যাপ পেয়েছি সীমান্ত থেকে যে সব লস্কররা ঢুকে আশেপাশের বস্তিতে থাকছে, এন আর সি হলে তাদের চুন চুনকে তিহার জেলে পোড়া হবে। আমার ভায়রা আমাকে পাঠিয়েছে, সে তৃণমূল বা বিজেপি নয় বরং বামমনস্ক। এইভাবে সাইবার স্পেসে, আমাদের নিজস্ব আলাপচারিতায় এমন এক সংগঠন গড়ে উঠেছে যেখানে নম্বর দিলে বিজেপি ৯৫ তৃণমূল -২০ আর মমতা ব্যানার্জির মিম বানিয়ে সিপিএম সেখানেও বিজেপির খাতায় বাকি ৫ নম্বর উঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, কথা হল হোয়াটস অ্যাপ কার থেকে পাই? কাকে পাঠাই? আইটির ভাইটি কে বা কারা আমি জানিনা, কিন্তু তাঁর কাজ ভাইরাল হয়ে আমার কাছে আসে আমার চেনাশুনো লোকের থেকেই, পাঠাই ও তাদেরকেই। চেনাশুনো লোক আমাদের জন্য তারাই যাদের সাথে দেখাশোনা হয়। আশেপাশের লোক, এই শহর বা গঞ্জের, নইলে ট্রেনে একটা দুটো স্টেশন, বাসে কুড়ি মিনিট দূরে থাকে এরকম। ফলে এক ভৌগোলিক পরিসরে এই সাইবার স্পেস ক্রিয়ারত থাকে। হোয়্যাটস অ্যাপের সাংগঠনিক ক্ষমতাও ভৌগোলিক। মাটিতে চলা সংগঠন তার কর্মীদের হাত ধরে বুথ-ওয়ার্ড-পঞ্চায়েত-ব্লক ধরে গড়ে ওঠে, শক্তিশালী হয়, শক্তি ক্ষয়ও করে। মেসেঞ্জার-হোয়্যাটস অ্যাপের স্মার্ট সংগঠন, স্থানীয় কর্মীর ভূমি ঊর্ধ্বে ভোটের প্রচার চালিয়ে গেছে সেই ভৌগোলিক পরিসরেই, মূলতঃ।


    ঘ) ভৌগোলিক ঠিক




    চিত্র ১- বিধানসভা ভিত্তিক এগিয়ে থাকার হিসেব (লাল- বিজেপি, নীল- তৃণমূল)


    চিত্র ১ -এ রাজ্যের লোকসভা ভোটের ফল রাখা রইল।  একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে, তার মূল কারণ বিধানসভা কেন্দ্রে কে এগিয়ে সেই হিসেব ধরে এই ম্যাপপয়েন্টিং করা হয়েছে। এছাড়া কংগ্রেসের এগিয়ে থাকা বা  কংগ্রেস সিগিনিফিকেন্ট এই এলাকাগুলি আমরা ম্যাপে সাদা রেখে গেছি ধরিনি ( নির্দিষ্ট করে- মালদার দুটো লোকসভা আর বহরমপুর), আর মূল ম্যাপে গা ঘেঁষাঘেঁষি ব্যারাকপুর আর হুগলি কেন্দ্রের বিধানসভাগুলি ভালো করে বোঝা যাচ্ছিল না (এই অঞ্চল জনগনত্বে পৃথিবীর সামনের সারিতে)। মোটের ওপর নীল রঙে তৃণমূলের জেতা আর লাল রঙে বিজেপির জেতা বিধানসভা দেওয়া আছে। যেটা দেখার, উত্তরবঙ্গে দুটো আর দক্ষিণবঙ্গে দুটো নীল প্যাচ ছাড়া, বাকি সমস্ত লাল বা নীল দাগ দলাবেঁধে আছে , মানে বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধরে হয় টানা বিজেপি এগিয়ে, নতুবা তৃণমূল। এই চারটে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া জায়গা নিয়ে আমরা পরে কথা বলব।


    কিন্তু মূল ট্রেন্ড যেটা বিজেপি যেখানে এগোচ্ছে সেখানে আশেপাশের বেশ বড়ো অঞ্চল ধরে বিজেপি এগোচ্ছে, অঞ্চলগুলো এত বড়ো যে তার মধ্যে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠী শহর-গ্রাম ইত্যাদি পড়ছে, মানে ধরুন দেড়খানা বা তিনখানা জেলা ধরে একটা বিজেপি জেতা পরিসর। আবার তৃণমূলও তাই। এই জেতার পরিসরটা একাধিক লোকসভাকে কাটছে। ধরুন ব্যারাকপুরের মধ্যে আমডাঙা তৃণমূল এগিয়ে তার পাশে খড়দা, অশোকনগর, বারাসত অন্য লোকসভাতে হলেও তৃণমূল জিতছে। দমদম আর বারাসতের দুটো বিজেপি বিধানসভা যথাক্রমে রাজারহাট গোপালপুর আর বিধাননগর- গায়ে গায়ে। আবার ঘাটালের ডেবরাতে বিজেপি এগিয়ে তার পাশেই তো পাঁশকুড়া পশ্চিম আর মেদিনীপুর বিজেপির থাকছে। এই ধারাটা গোটা রাজ্য জুড়েই প্রায়। এর উত্তর অধীর চৌধুরীর পকেট দিয়ে হয়। সেখানে কংগ্রেসের খুব ভালো ভোট সব বিধানসভায়, সাতটার চারটেতে এগিয়ে, বাকিগুলোতেও এত ভালো যে কংগ্রেসের ভোট বলে মনেই হয় না, আর তার কারণ কংগ্রেসের অসাধারণ সংগঠন আছে ঐ অঞ্চলে। অধীরবাবুর নিজস্ব সংগঠন। অর্থাৎ, সংগঠন, যা অঞ্চল ভেদে শক্তিশালী হয়, তা যেখানে প্রতিপক্ষের তুলনায় মজবুত, সেখানে মোদি হাওয়া, সারদা দুর্নীতি, টাকা খাটানো সব তুচ্ছ করে জয় এনেছে। নইলে পুরো দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জুড়ে তৃণমূল সব বিধানসভায় এগিয়ে, আর সারদায় ক্ষতি তো ঐ জেলাতে প্রচুর। দক্ষিণ চব্বিশে তৃণমূলের এমন সংগঠন যে ডিএ পেকমিশন ব্যর্থতার পরেও ডায়মন্ড হারবারে পোস্টাল ব্যালটে তৃণমূল এগিয়ে থাকে! তৃণমূল যেখানে ভালো রকম পিছিয়ে সেখানে ১০ বছর আগের ভোটেও সেই অবস্থায় ছিল। বাঁকুড়ায় ২০০৯এ ৩৬% ভোট ছিল, মেদিনীপুরে ৪২%। এখনও কিমাশ্চর্য তাই হয়ে গেছে। অনুরূপ হিসেব বালুরঘাট, বিষ্ণুপুর কিম্বা আসানসোলেও। বামপন্থীদের সংগঠন প্রবলতর ছিল ২০০৯-এ (তখন ভাঙন শুরু হয়ে গেছে), এখন একদমই অনুরূপ প্রাবল্য বিজেপির। তৃণমূলের সংগঠন যেখানে ২০১১র পরে গড়ে উঠেছে সেখানে সেখানে সেটি দুর্বল এবং বিজেপি সম্ভবতঃ পূর্বতন শক্তিশালী অন্য একটি সংগঠনের কাঠামো ধরে এগিয়েছে। ফলে সেখানে তৃণমূলের ভোট ২০০৯-এর হিসেবে প্রায় আটকে আছে এবং বিজেপির ভোট ২০০৯-এ বামদলের ভোটের সমান হয়ে গেছে। আর, আগে যা বলেছি, ২০০৯-এ বামশক্তির জেতা লোকসভা আসনের ১৫র ১১ টিতে এবার বিজেপি জিতেছে। বাকি ৪টি আসন যা তৃণমূল এবার পেয়েছে সেগুলি হল- আরামবাগ (১০০০+ ভোটে কোনও ক্রমে জেতা), পূর্ববর্ধমান, ঘাটাল ও বোলপুর।  তৃণমূলের সংগঠন বীরভূমে অনুব্রত মন্ডলের হাতে শক্তিশালী হয়েছে। ঘাটালে নির্ণায়ক হয়েছে কেশপুর বিধানসভা, ৭৮০০০ ভোটে এগিয়ে দিয়ে। কেশপুরে তৃণমূলের সংগঠন নিয়ে আমরা গত দুদশক ধরে শুনে আসছি। তাছাড়া সংগঠন তো শুধু একটা ব্লকে আটকে থাকে না, আশেপাশের ব্লকেও ছড়ায়। তাই, আশেপাশের বিধানসভাতেও যথাক্রমে লাল বা নীল রঙ ধরছে।


    এই যে বিন্যাসটা, যেখানে তৃণমূল এগিয়ে সেটা এবং তার আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নীল আর যেখানে বিজেপি এগিয়ে, আশেপাশের অঞ্চল লাল, যাদের জ্যামিতির পরিভাষায় হয়ত বা ম্যানিফোল্ড হিসেবে দেখা যাবে, সেটা এই নির্বাচনের মূল ধারা। একটা মাপক হিসেবে এখানে ভোটে জেতাকে ধরা হয়েছে, শুধু জেতা হারা দিয়ে অবশ্য সবটা ব্যাখ্যা হয় না। কিন্তু, লক্ষ্যণীয় বিষয় যেখানে একটি ম্যানিফোল্ডের সীমানা আর আরেকটি শুরু, তার কাছাকাছি দিয়ে একদলের ভোট শেয়ার কমে আসছে আরেকজনের বাড়ছে এরকম। অর্থাৎ একটা ভূমিগত বিন্যাসের ধারা মেনে ভোট ভাগ হচ্ছে, বিশেষতঃ বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে। লোকসভা কেন্দ্রের বদলে বিধানসভা কেন্দ্রের নিরিখে ম্যাপ দেওয়া এইটা বুঝতেই যে এই ম্যানিফোল্ড-গুলি স্থানীয় সাংগঠনিক শক্তির হেরফেরে ভোটের ফলাফলের পরিণতির ইংগিতই দিচ্ছে। আমাদের হাতে বুথ ভিত্তিক তথ্য নেই, কেউ পেলে করে দেখতে পারেন সেইখানেও এই বিন্যাস দেখা যাচ্ছে কী না!


    ঙ) মিথ-মিথ্যে-মিথোজীবিতা


    বলা হচ্ছে এস সি ও এস টি রা তৃণমূলের দিক থেকে সরে গেছে। আমরা মালদা মুর্শিদাবাদ বাদে ৬৪টির মত এস সি সংরক্ষিত বিধানসসভা দেখলাম, তার ৩১টিতে তৃণমূল এগিয়ে।  যে এস সি বিধানসভাগুলি বনগাঁ রানাঘাট বা আলিপুরদুয়ারে গায়ে গায়ে লেগে আছে, সেইগুলির প্রায় সবকটিতেই বিজেপি এগিয়ে। তার আশেপাশের অসংরক্ষিত বিধানসভার ট্রেন্ড রঙ ও কিন্তু অনুরূপ। আবার যে সংরক্ষিত আসনগুলি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়, তার সবগুলিতে তৃণমূল এগিয়ে। অর্থাৎ তপশিলি জাতিভুক্ত মানুষের আধিক্য সংশ্লিষ্ট বিধানসভাগুলিতে আলাদা করে ফলের তারতম্য ঘটাচ্ছে না, এবং সারা বাংলা জুড়ে তপশিলি জাতির আলাদা করে বিজেপিকে বেছে নেওয়ার সাধারণ কোনও রীতি এই ভোটে উঠে আসেনি। তবে, একথা অনস্বীকার্য যে রাণাঘাট আর বনগাঁয় বেশিরভাগ বিধানসভাই তপশিলি সংরক্ষিত। এবং গত দুটি লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে বিপুল সমর্থনের পরে এইখানকার মানুষ এবার বিপুলভাবে বিজেপির সঙ্গে গিয়েছেন। তার পিছনে একটা বড় ফ্যাক্টর অবশ্যই নাগরিকত্ব বিলের প্রতিশ্রুতি। আসামের এর আর সি-র উদাহরণ হাতের সামনে থাকলেও সেখানে বিজেপির প্রচারকে কাউন্টার করতে পারে নি বাকি দলগুলি। এছাড়াও আগে আলোচনা করা সংগঠনের শক্তির তারতম্যের ব্যাপারটা এসেই যাবে। রাণাঘাটের কৃষ্ণগঞ্জে একটি বিধানসভা উপনির্বাচন হয়েছিল এইবারই। সেখানে পূর্বের তৃণমূল এম এল এ-কে হত্যা করা হয়, সন্দেহের তীর বিজেপির দিকে থাকে। প্রায় সমস্ত প্রিসিডেন্স সরিয়ে রেখে সেই আসনে বিজেপি জেতে! দলিত এম এল এ হত্যা যেখানে জাতীয় রাজনীতিতে নির্ধারক পয়েন্ট হতে পারত, সেখানে সেই আসনের উপনির্বাচনেই সেই এম এল এ-র দল হেরে যায়, এ সাংগঠনিক বিচ্যুতি ছাড়া হতেই পারে না।


    যাই হোক, আমাদের চিত্র-১ এ চারটে পকেট আছে, যা তৃণমূলের দিকে থাকা বিধানসভা, চারদিক থেকে বিজেপি দিয়ে ঘেরা। উত্তরবঙ্গে সিতাই ও রাজগঞ্জ, দুটোই এস সি। দক্ষিণে মানবাজার ও বিনপুর, দুটিই এস টি। এর কাছাকাছি দুটো বিজেপির জেতা এস টি বিধানসভা রায়পুর ও রানিবাঁধ, যেখানে তৃণমূলের পিছিয়ে থাকা এবং সিপিএমের প্রাপ্ত ভোটের হিসেব মিলে যায়।


    এবার, তপশিলি উপজাতি সংরক্ষিত সিটের হিসেব যদি দেখি- ১৫ টির ৩ টি তৃণমূল পেয়েছে। অর্থাৎ এখানে একটা শক্তিশালী ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে যে তপশিলি উপজাতির মানুষজন বিজেপিকে বেছে নিচ্ছেন। তবে এর মধ্যে লক্ষ্যণীয়, ঐ পূর্বোল্লিখিত দুটি পকেট বাদ দিয়ে আর যে এস টি আসনে  তৃণমূল এগিয়েছে, সেই সন্দেশখালির আশেপাশের সব আসনই কিন্তু তৃণমূলের। আবার বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রামের এস টি আসনগুলির আশেপাশে সব আসন প্রায় বিজেপির। তবে, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে তপশিলি উপজাতির মানুষ তো আর শুধু সংশ্লিষ্ট বিধানসভাতেই থাকেন না, আশেপাশে ছড়িয়ে থাকেন আর তাঁদের ভোট অঞ্চলের অন্যান্য বিধানসভাতেও প্রভাব ফেলেছে।


    এইখানে একটা মিথোজীবিতার তত্ত্ব আনা যায়। মানুষ একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রদায়, পেশা ব্যতিরেকে একে অন্যের সঙ্গে আদানপ্রদান করে। আমার প্রতিবেশী কী ভাবছে, বাজারের সবজিওলা কী বলছেন, ছেলের গৃহশিক্ষক কী চাইছেন এইসব আমার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। আর, এই হাইপোথিসিসকে আমরা রাখছি আরেকটা হাইপোথিসিসের প্রতিতুলনায়। সেটা হল যে- মুসলিম ভোট প্রায় সর্বাংশে তৃণমূলে গেছে এবং সেইটাই তৃণমূলকে যেটুকু অক্সিজেন দেওয়ার দিয়েছে। বাংলার মুসলিম জনশতাংশ সবচেয়ে বেশি, দুটি জেলায়- মালদা আর মুর্শিদাবাদ। জনবসতির ৫০% এর বেশি মুসলমান। তার মধ্যে মালদায় একটিও আসন তৃণমূল পায় নি, মুর্শিদাবাদে তিনটির দুটি আসন পেয়েছে। আরও একটি মুসলিম সংখ্যাগুরু জেলা উত্তর দিনাজপুর। এখানে মুসলিম ৪৯% এর বেশি। এই জেলার ৯টি বিধানসভার ৫ টিতে তৃণমূল এগিয়ে, চারটিতে বিজেপি। এবং কোনও আসনেই ৪৯% এর কাছাকাছি ভোট তৃণমূলের নেই বরং কয়েকটি আসনে কংগ্রেস-সিপিএম ভালো ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ, মুসলিমরা সংখ্যাগুরু এমন অঞ্চলে তৃণমূলকে তাঁরা সম্প্রদায় বেঁধে ভোট দিয়েছেন এরকম মোটেই নয়। এরপরে যে দুটি জেলায় মুসলিম বসতি বেশি, মানে ১/৩ এর বেশি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা এবং বীরভূম, দুটিতেই লোকসভার সব আসন তৃণমূলের, বিধানসভার প্রায় সব আসনও। দক্ষিণ চব্বিশের প্রায় সমস্ত বিধানসভায় ৫০% এর বেশি ভোট তৃণমূলের, কোথাও কোথাও তা ৭০-৮০ ছুঁয়েছে। এর মধ্যে তপশিলি জাতি অধ্যুষিত বিশাল এলাকাও রয়েছে। সিপিএম কংগ্রেসের ভোট অনেক কম, এস ইউ সি আইয়ের গড় যে দুটি কেন্দ্র, সেখানে উল্লেখযোগ্য ভাবে বিজেপির ভোট বেশ কিছুটা বেশি। বীরভূমেরও বহু কেন্দ্রে ৫০%এর বেশি ভোট তৃণমূলের। অর্থাৎ এই সমস্ত কেন্দ্রে ভোটের সোজা ধর্মীয় বিভাজন হয় নি, মুসলিম ভোট তৃণমূল আর হিন্দু ভোট বিজেপি এমন ভাবে ভোট ভাঙে নি। বরং উলটো ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে সেখানে ২০-২৫% মুসলমান, যেমন বর্ধমান হাওড়ার বিধানসভাগুলি, তার অনেকগুলিতে তৃণমূলের ভোট বেশ ভালো এসেছে, ৫০%এর কাছাকাছি। আবার উত্তরবঙ্গে ঐধরণের মুসলমান বিন্যাসে তৃণমূলের ভোট অত ভালো হয়ও নি। উত্তর চব্বিশ ও নদীয়ায় মিশ্র ফল, বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে যেখানে তৃণমূলের ভোট ভালো, সেখানে তপশিলিপ্রধান আসনেও তৃণমূল অনেকটা এগিয়ে। আবার সেটা হচ্ছে না বলে উত্তর চব্বিশ পরগণা ও নদীয়ার কিছু এলাকায় ফল ততটা ভালো হচ্ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১০% মুসলিম, সেখানে একটি আসন তৃণমূল পাচ্ছে। একদমই পাচ্ছে না বাঁকুড়া পুরুলিয়া দার্জিলিং এ, সেখানে মুসলিম জনশতাংশ দশের নিচে।


    বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা মুসলিমদের কাছে ভালো নয়, এখন অবধি এটা প্রতিষ্ঠিত। ফলে মুসলিম ভোট বিজেপির বিরুদ্ধেই যাওয়ার সম্ভাবনা। যে অঞ্চলে মুসলিমরা সংখ্যাগুরু, তাঁরা একাধিক দলকে বিজেপির বিরুদ্ধে বেছে নিচ্ছেন। যে অঞ্চলে সংখ্যালঘু কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছেন, সেখানে সম্ভবতঃ তৃণমূলকে বেছে নিচ্ছেন এবং মুসলিমদের বিজেপিজনিত আশংকা একভাবে তাঁদের প্রতিবেশী হিন্দুকে প্রভাবিত করছে, তাঁদের ভোট একতরফা বিজেপিতে যাচ্ছে না। বরং তৃণমূল আরও কিছুটা এগিয়ে যাচ্ছে। তপশিলি জাতির ভোটেও সেই প্রভাব আসছে। ব্যতিক্রম মতুয়া অঞ্চলগুলি, সেখানে নাগরিকত্ব ইস্যুতে তপশিলি ভোট একধারে বিজেপিতে গিয়েছে, হিন্দু-মুসলিম মিথোজীবিতার তত্ত্ব টেঁকে নি। যেখানে মুসলিম নেই, সেখানে বিজেপির মুসলিম-বিরোধিতার অভিযোগ তার ভোট হিন্দুদের কাছেও কমায় নি, কারণ হিন্দু জনগণ প্রতিবেশীর সহমর্মী হতে পারে নি।


    এর উল্টোদিকে আসছে তৃণমূলের মুসলিম তোষণ, ইমামভাতা প্রভৃতি 'পশ্চাদপট' জনগণের মধ্যে তার ভোট বাড়িয়েছে, কদিন বাদে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হবে রাজ্যে। মুসলিম ধর্মীয় রাজনৈতিক দল এসে এই ভোট নিয়ে তৃণমূলকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেবে এই সব বক্তব্য। বিজেপির পাশাপাশি বাম-লিবারেলরাও যার প্রচারে নেমেছেন। কমরেড নরেন্দ্র মোদী তো বলেইছেন, মানুষ দুধরণের- যাঁরা ওনাকে সমর্থন করেছেন আর যাঁরা ওনাকে সমর্থন করবেন। কিন্তু ধর্মীয় ভোট বিভাজনের জনপ্রিয় হয়ে ওঠা তত্ত্ব ১০-৩৫% মুসলিম জনবহুল এলাকায় বহুলাংশে তৃণমূলের ৫০% বা তার বেশি ভোটের হিসেব মেলায় না। হিন্দু-মুসমিল সম্পর্ককে শুধুমাত্র বৈরিতার আলোয় দেখলে হিসেবে অনেকটা ফাঁক থেকে যাবে।


    চ) নটেগাছ


    নোটের গাছি ছাগলে খেয়েছিল কিন্তু তা সত্তেও দেশব্যাপী বিরোধী হাতে পেনসিলও প্রায় রইল না। আরবান এলিট নোটাবিপ্লবীরাও উড়ে গেলেন মোদি হাওয়ায় আর গ্রামে বন্দরে তো কথাই নেই। পশ্চিমবঙ্গে আরও অনেক কিছুর সাথে ঝামরে পরল সেই হাওয়া। কিছু রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টালো। একমাত্র যে সব জায়গায় (দাগ দিয়ে আবার বলা, জায়গা, অঞ্চল, ভৌগোলিক বিভাজন) তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী, হাওয়া বাঁক নিল সেখানে এসে। চলে গেল সেইসব জায়গায়, যেখানে তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী নয়, নতুন এবং বামপন্থীদের সংগঠন যেখানে কদিন আগেও শক্তিশালী ছিল। এর পাশাপাশি এল সংঘের হাতে গড়ে ওঠে বিজেপির সংগঠন, যা আদিবাসী অঞ্চলে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বিজেপির সংগঠন সম্ভবতঃ বাম সংগঠনের জীর্ণানি বাসাংসিতে পুনঃ প্রাণিত হল। এই লেখাটির সংশোধনপর্বে বন্ধুরা বললেন তৃণমূলের দুর্নীতি, অগণতন্ত্র, বিরোধীদের উপর অত্যাচার এই বিষয়গুলি পর্যালোচনা করতে। কিন্তু, আমরা দেখতে পাচ্ছি, সারদা উপদ্রুত দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় একাধারে তৃণমূল জিতছে, অনুব্রত মন্ডলের পাঁচনবাড়ির হুমকি সত্তেও বীরভূমে জিতছে, আবার উন্নয়ন হয়েছে লোকে মেনে নিলেও ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়ায় হারছে। মুকুল রায়ের হাত ধরে মমতার সরকারের থেকে অধিক উন্নয়ন হবে, সৌমিত্র খাঁ বা অর্জুন সিংহ দল বদলানোয় তাঁদের পারফরমেন্স পালটে যাবে, এ মনে হয় সাধারণ ভোটাররা বিশ্বাস করেন না। তবে যেখানে বিজেপির সংগঠন বেশি সক্রিয় হয়েছে সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত ভোটবাক্সে পড়ার বন্দোবস্ত করা গেছে। অন্যত্র, যেখানে তৃণমূল শক্তিশালী, স্থানীয় মানূষের অভাব অভিযোগকে ভোটে নির্ণায়ক হতে দেয় নি। এ কথা অনস্বীকার্য, ছোট স্তরের নেতার দুর্নীতি অত্যাচার সারদা বা রাফালের থেকে কম প্রভাব ফেলে না মানুষের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে, কিন্তু সংগঠনের স্ট্রাকচারটি ক্রিয়াশীল থাকলে, সেইগুলিকে অ্যাড্রেস করা বা তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ হয়ে যায়।


    তাই, ধর্ম নয়, মতাদর্শ নয়, উন্নয়নও নয়,  ম্যাচ শেষে দেখা গেল জিতল সংগঠনই, কারণ ভোট হয়ে যায় না, ভোট করানো হয়- যুদ্ধের মতনই।


    ছ) কী করিতে হইবে


    আমাদের কথা কেউ শোনে না। তাও এত কিছু লেখার পর একটু উপদেশ-সার ও লিখে যাই। এমনিই তৃণমূলকে আজকাল সকলেই বলে যাচ্ছে কী কী করা উচিত। আমরা বরং বলব, তৃণমূলের কী করিতে হইবে না! যেটা ২০০৯ এ সিপিএম করেছিল, সেইটা না করলেই মনে হয় হবে। স্থানীয় স্তরে সংগঠনকে ধরে রাখা আর মজবুত করা ছাড়া আর খুব কিছু করার নেই। আত্মসমালোচনার বদলে অন্যের সমালোচনা বিচার করে সেই অনুসারে কাজ করা, স্থানীয় রাজনীতির সুবিধা ভেবে রাজ্য রাজনীতি চালানো, ইত্যাদি। সব দোষ নিচুতলার কর্মীদের একাংশের নামে না চালিয়ে, নিচুতলার কর্মীদের পাশে উঁচুতলার দাঁড়ানো। কিছু নেতা বিজেপিতে যাবে, কিছু জেলেও হয়তো বা যাবে। কিন্তু অঞ্চল ধরে রাখার কাজে সরকারের সাহায্য এক্সটেন্ড করতেই হবে, অন্ততঃ ২০২১ অবধি। একচুয়ালি  মমতা ব্যানার্জি সরকারের বদলে পার্টিতে মন বেশি দিলে ভালোই হবে। ভোট শুধু সরকারি প্রকল্প দিয়ে আসে না। ডিএ মাইনর ইস্যু, তবে সরকারি চাকরিতে, স্কুল কলেজে নিয়োগ দরকার। সংগঠনের সার ওখানে জমে।


    আর বিজেপিকে? ২০০৯ এর পর তৃণমূল যা করেছিল, তাই। লোকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প ইত্যাদি পাওয়ানো। বাংলা থেকে মন্ত্রী। বুদ্ধিজীবীদের চাকরি দেওয়া থাকলে কিছু উটকো ঝামেলা কম হয়, সেইসব।


    আমাদের? গ্যালারি আসলে খেলারই অঙ্গ। ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট কাটিয়ে খোরাক নিন। সব কিছুই আসলে ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন। আর, নাহলে মাঠে নেমে ইস্যুভিত্তিক লড়াই করুন, কিম্বা আইটি সেলের মতন ব্যক্তিগত মেসেজ ভাইরাল করার উপায় করুন। আমার মতন আত্মপ্রসাদ পেতে চাইলে আলাদা কথা, নতুবা ফেসবুকে বেশি লিখবেন না, ও কেউ সিরিয়াসলি নেয় না।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৯ মে ২০১৯ | ১৬৪৯৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.44 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ০১:২৯78221
  • "কেউ তার প্রতিবাদ করেনি, সত্যাসত্য মানুষের সামনে নিয়ে আসার প্রয়োজনও বোধ করেনি।"

    এটা করার দায়িত্ব ছিল শাসক দলের। সাচার কমিটির রিপোর্ট বেরনোর পর তারাও কোনও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসুচী নেয়নি, বরং সংখ্যালঘু ভোটকে স্রেফ নিজেদের সম্পত্তি ভেবেছে। তাদের মতাদর্শগত দৈন্য প্রকট থেকে প্রকটতর হওয়ার কারণে তারাও ত্বহা সিদ্দিকির চরণধোয়া জল আর 'বড়মা'-র আশীর্বাদ পেয়েই ভোট বৈতরণী উদ্ধারের কথা ভেবেছে। কারণ? কারণ 'কঠোর বিকল্পের পরিশ্রম নেই'। সুযোগসন্ধানী বিরোধী দলটি শাসক দলের অনেক আগেই এই পরিশ্রমহীন বিকল্পের সন্ধান পেয়ে যাওয়াতেই আজ এই দূরবস্থা। এ জিনিস অবশ্যম্ভাবী ছিল। লেখক যথার্থ লিখেছেন 'প্রকৃতি শূন্যস্থান পূরণ করে বলে শিশুবিজ্ঞানে লেখা ছিল'।
  • র২হ | 232312.172.562312.80 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ০৪:২৩78217
  • এটা তুলে দিই।
  • এলেবেলে | 230123.142.0189.79 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ০৫:১৭78218
  • চোদ্দ গণ্ডা ক্যালরব্যালরের মধ্যে অত্যন্ত যুক্তিনিষ্ঠ, শীলিত পর্যবেক্ষণ। যেহেতু আমি রানাঘাট লোকসভার ভোটার এবং ওই রানাঘাটেই ভোট পরিচালনা করতে গিয়েছিলাম, তাই আলাদা করে ওই প্রসঙ্গে বলি।

    রানাঘাটে সহানুভূতি ভোট কুড়োতে তৃণমূল দাঁড় করায় নিহত সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রী রুপালী বিশ্বাসকে যিনি দেড় বছরের শিশুপুত্রটিকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচার করেন। সত্যজিৎ বিশ্বাস সম্পর্কে হাঁসখালি বিধানসভার লোকদেরই প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল, সামান্য টালির চাল থেকে আলিশান তেতলা বাড়ির সহসা 'উন্নয়ন' অনেকেই ভালোভাবে নেননি। অন্য বিধানসভাগুলোতে সত্যজিৎ বিশ্বাস কোনও ফ্যাক্টরই নন তিনো সমর্থক ছাড়া। তাঁকে খুনে যে তাঁর দলীয় কর্মীরা জড়িত ছিলেন না তা হলফ করে বলা যায় না। নির্বাচনের ফল বেরোতেই গৌরী দত্তের সভাপতির পদ থেকে অপসারণ এমনি এমনি হয়নি।

    অন্যদিকে বিজেপির প্রথম প্রার্থী ছিলেন ডা. মুকুটমণি অধিকারী। সরকার তাঁকে চাকরি থেকে পদত্যাগের অনুমতি না দেওয়ায় একদম শেষ মুহূর্তে প্রার্থী হন জগন্নাথ সরকার। প্রচুর দেওয়ালে পুরনো প্রার্থীর নাম ছিল, সেসব মোছার সময়ও পাওয়া যায়নি। কিন্তু মানুষ তাঁকেই ঢেলে ভোট দিয়েছে।

    এখানে শুধু মতুয়াদের ব্যাপারটাই প্রাধান্য পায়নি। নদীয়ার এই অঞ্চলে আছেন অজস্র উদ্বাস্তু। তাঁরা প্রথমে ছিলেন সিপিএমে, পরে হাওয়া বুঝে তৃণমূলে। তাঁদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি হয়ে গেছে এতদিনে। এইবারে মেরুকরণের সুবাদে এতদিন চেপে রাখা সুপ্ত মুসলমান বিদ্বেষ উপ্ত হয়ে উঠেছে। সঙ্গে মাথায় সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে 'মুসলমান তোষণ'। সঙ্গে যোগ হয়েছে পঞ্চায়েতে ভোট না দিতে পারার ক্ষোভ। ফলে ২০১৪র লোকসভায় যেখানে তৃণ ৪৪- বাম ২৯-বিজেপি ১৭-কং ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল; ২০১৯এ তা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩৭-৭-৫৩-২ শতাংশে।
  • পারমিতা | 2345.110.9004512.34 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ১০:৪৩78219
  • পঞ্চায়েত ভোট একটা চালিকা শক্তি হয়েছে। আমার পরিচিত এক মহিলাকে যা অত্যাচার করা হয়েছে ভোটে দাঁড়াতে গিয়ে , কিন্তু নমিনেশন ফাইল করতেই দেয়নি। এগুলো সাধারণ মানুষ ভালো ভাবে নেয়নি।
  • PT | 340123.110.234523.22 (*) | ৩০ মে ২০১৯ ১০:৫৪78220
  • "সঙ্গে মাথায় সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে 'মুসলমান তোষণ'।"

    মাথায় সুকৌশলে অপ্রমাণিত তথ্য ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রথাটি প্রায় দেড় দশক ধরে চালু হয়েছে পব-তে। কেউ তার প্রতিবাদ করেনি, সত্যাসত্য মানুষের সামনে নিয়ে আসার প্রয়োজনও বোধ করেনি।
    এবার সেই কৌশলটিকে তিনোদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে এই যা তফাৎ।
  • PT | 340123.110.234523.22 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০১:১৪78224
  • সম্ভব্তঃ ৪৭ এ যারা এসেছিল তাদের তৃতীয় প্রজন্ম আর সত্তরের দশকে এসে থাকলে দ্বিতীয় প্রজন্ম। এরা যে জমি পেয়েছে বাপ-ঠাকুরদাদের কাছ থেকে সেগুলো এখন সোনা। আর অনেকেই প্রথমে তিনো হয়ে এখন বিজেপিতে পা বাড়িয়েছে।
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.19 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০২:৫১78225
  • এটা

    প্রথমত এলেবেলে নদীয়া নিয়ে লিখেছে, যাদবপুর নিয়ে নয়। দ্বিতীয়ত যাদবপুর লোকসভার অধীনে যে বিধানসভাগুলো আছে সেখানকার সংখ্যালঘু মানুষরা উদ্বাস্তু নন। তৃতীয়ত খোদ যাদবপুর অঞ্চলে মুসলিম ভাইচারা এতই বিখ্যাত যে সেখানে মুসলিম ছাত্র বা ছাত্রীকে নাম ভাঁড়িয়ে পিজি বা মেসে থাকতে হয় এবং বাড়ি ভাড়া মেলা প্রায় নামুমকিন। কাজেই অযথা বিদ্বেষ বিষ ছড়িয়ে লাভ নেই।

    স্বাধীনতার অব্যবহিত আগে বা পরে যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন তাঁদের মুসলমান বিদ্বেষ প্রায় নেই বা থাকলেও খুব কম। যাঁরা ইতিহাসটা জানেন-টানেন তাঁরা অন্তত দেশভাগের জন্য যে নেতারা দায়ী ছিলেন, সাধারণ মানুষ নন - এই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন।

    বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর যাঁরা এসেছেন তাঁদের মধ্যে মুসলমান বিদ্বেষ যথেষ্ট তীব্র। অস্বীকার করে লাভ নেই। যদিও সেই মুসলমান ছিল খান সেনার দল, বাংলাদেশের মুসলমান নন।

    নদীয়ার ডেমোগ্রাফি সম্পূর্ণ আলাদা। গেদে লোকাল চেপে রানাঘাটে জড়ো হন ওপার বাংলার মানুষ। প্রথমে আসেন একা। তারপর সাময়িক আশ্রয় নেন এপারে থিতু হওয়া কোনও আত্মীয়র বাড়িতে। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া গোদা বাংলায় অবৈধ অনুপ্রবেশ। তারপর নেতা ধরে বার্থ সার্টিফিকেট-কাস্ট সার্টিফিকেট-ভোটার-আধার-প্যান-রেশন কার্ড সব করে নেওয়া। এবার আস্তে আস্তে পরিবারের অন্য লোকজন। ততদিনে জমিটমি কেনা সারা। অতঃপর ওদেশের পাট চুকিয়ে এদেশের স্থায়ী বাসিন্দা। এই শ্রেণির লোকের মুসলমান বিদ্বেষ মারাত্মক।
  • r2h | 127812.61.9001212.221 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৩:১৩78227
  • এলেবেলে'র বলা "...স্বাধীনতার অব্যবহিত আগে বা পরে যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন তাঁদের মুসলমান বিদ্বেষ প্রায় নেই বা থাকলেও খুব কম। যাঁরা ইতিহাসটা জানেন-টানেন তাঁরা অন্তত দেশভাগের জন্য যে নেতারা দায়ী ছিলেন, সাধারণ মানুষ নন - এই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন" মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত নই।

    কিন্তু এঁদেরই দ্বিতীয় প্রজন্মের বিদ্বেষ দেখে ভির্মি লাগে। এঁরা অনেকেই বিজেপির ধোপাখানা থেকে মগজ ধুইয়ে এনেছেন।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৩:৪২78228
  • "সম্ভব্তঃ ৪৭ এ যারা এসেছিল তাদের তৃতীয় প্রজন্ম"
    মানে আমি? আমাদের বাড়িতে আমি কোনোদিনও সাম্প্রদায়িক কথা শুনিনি।
  • dc | 232312.178.1256.161 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৩:৫৬78229
  • আমিও শুনিনি। বাড়িতে বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে এখনও শুনিনা, যদিও দুয়েকজন বিজেপি সিম্প্যাথাইজার হয়ে গেছে।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৪:০৮78230
  • তাহলে কি দাঁড়ালো? বামেরা ৭% ভোট পেয়েছে। তাহলে পবে ৭% ঘটি?
  • রঞ্জন | 238912.69.015612.5 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৪:১৫78231
  • ্ধেৎ, আমার রাবণের গুষ্টি যাদবপুর এবং দক্ষিণ কোলকাতা্য হুলিয়ে সিপইএমকে ভোট দিয়েছে, জেতার চান্স কম, জেনেই।
    সব সেকন্ড জেনারেশনের বাঙাল , তিনজন ফার্স্ট জেনারেশন। এক জুনিয়র ভাই বিজেপিকে।
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.19 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৫:১৩78232
  • 'তাহলে কি দাঁড়ালো? বামেরা ৭% ভোট পেয়েছে। তাহলে পবে ৭% ঘটি?' দ্যাকো কাণ্ড! বামেরা গড়ে ভোট পেয়েছে ওই সাত শতাংশ মতো। আর ঘটি ভোট তো একদা কংগ্রেসের একচেটিয়া ছিল, উদ্বাস্তু ভোট ছিল সিপিএমের একচেটিয়া। তাতে ঘটিরা সিপিএমকে ভোট দিয়েছে তা বোঝা গেল ক্যামনে?
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৫:৩৩78233
  • "ঘটি ভোট তো একদা কংগ্রেসের একচেটিয়া ছিল, উদ্বাস্তু ভোট ছিল সিপিএমের একচেটিয়া।"

    তাহলে গত ইলেকশনে তিনোরা কাদের ভোট পেয়েছিল? আর বামেরা কাদের ভোট পেয়েছিল?
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.19 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৫:৩৯78234
  • 'একদা' লেখা ছিল। এবং এ-ও লেখা হয়েছিল 'নদীয়ার এই অঞ্চলে আছেন অজস্র উদ্বাস্তু। তাঁরা প্রথমে ছিলেন সিপিএমে, পরে হাওয়া বুঝে তৃণমূলে।' আর গত ইলেকশন বলতে কি ২০১৪র লোকসভা? যদি তাই বুঝিয়ে থাকেন তবে বলি সেবার তো মেরুকরণ হয়নি।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৫:৪৪78235
  • 'একদা' টা কবে?
    আমি জানতে চাইছি যে ২০১৪র ইলেশনে বা ২০১৬র ইলেকশনে বাঙাল ভোট কোথায় পড়েছিলো? আর ঘটিদের ভোট কোথায় পড়েছিলো?

    বাঙাল ভোট যদি তিনোতে চলে গিয়েই থাকে আর সেখান থেকে বিজেপিতে গিয়ে থাকে, তাহলে এবারে তিনোদের ভোট কমে যাওয়ার কথা। এতোকান্ড করে শেষে এই অ্যানালিসিস। উফ্ফ।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৫:৪৭78236
  • এখানকার অ্যানালিসিস অনুযায়ীঃ

    বাঙাল ভোট যখন বামে যেতো ঘটি ভোট তখন কংএ যেতো।
    বাঙাল ভোট যখন তিনোতে যেতো ঘটি ভোট তখন বামে যেতো।
    বাঙাল ভোট যখন বামে ফিরে এলো (২০১৪-২০১৬) ঘটি ভোট তখন তিনোতে চলে গেলো।
    বাঙাল ভোট এবারে বিজেপিতে গেছে আর ঘটি ভোট তিনোতে রয়ে গেছে।

    আপনাদের পলিটিকাল অকিউমেন বোঝা গেছে।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৫:৫৬78237
  • যাদবপুরে এতো উদ্বাস্তু থাকা সত্ত্বেও ওখানেই বামেরা কিছু ভোট পেয়েছে।
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.19 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৬:০৬78238
  • বাঙাল ভোট-ঘটি ভোট যদি সত্যি সত্যি ভোটের নির্ণায়ক শক্তি হত এতকাল তবে তা বিশ্লেষণ করতে হলে 'ঘটি' অঞ্চল চিহ্নিত করে করতে গেলে হাতে পেনসিল বই অন্য কিছু থাকার কথা নয়। কারণ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে 'ঘটি' নেই কিন্তু সিপিএম সেখানে হুলিয়ে জিতেছে, পরে তৃণমূল এবং এবার বিজেপি।

    এবারও এত গোদাভাবে হয়নি, তবে যেটা হয়েছে সেটা ' মেরুকরণের সুবাদে এতদিন চেপে রাখা সুপ্ত মুসলমান বিদ্বেষ উপ্ত' হওয়া।

    'পলিটিক্যাল অ্যাকিউমেন' বোঝা বা না বোঝা বাদ দিয়ে সেটা যদি বিশ্লেষণ করেন।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৬:০৭78239
  • এই পাতায় (আগেও দুয়েক জায়্গায় দেখেছি) যে পরিমাণ বাঙাল ঘৃণা দেখছি, বিজেপির আইটি সেলও সেকথা ভেবে উঠতে পারেনি।
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.19 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৬:১০78240
  • এইবারে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আমি 'ঘটি' নই এবং আমার 'বাঙাল' বিদ্বেষও নেই যদি খাঁটি ঘটি অঞ্চলে থাকি। আবারও অনুরোধ করছি 'মেরুকরণের সুবাদে এতদিন চেপে রাখা সুপ্ত মুসলমান বিদ্বেষ উপ্ত' হওয়ার ব্যাপারটা 'পলিটিক্যাল অ্যাকিউমেন' বোঝা বা না বোঝা বাদ দিয়ে যদি বিশ্লেষণ করেন।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৬:১৮78241
  • বিশ্লেষণঃ
    লোকেরা (বাঙাল-ঘটি মিলিয়ে মিশিয়ে) কঙ্গের অত্যাচারে অসহ্য হয়ে বামেদের ভোট দিতো।
    তারপরে বামেদের অত্যাচারে অসহ্য হয়ে তিনোতে ভোট দিতেছিলো।
    এবারে তিনোর অত্যাচারে অসহ্য হয়ে বিজেপিতে (বাম দুর্বল) ভোট দিয়েছে।
    আমার ধারনা বামেরা একটু শক্তিশালী হলেই সেই ভোট আবার ফিরে আসবে। ২০১৬তে বাম+কঙ্গকে না জেতানোর জন্য অনেকেই হাত কামড়াচ্ছে।

    মাইনরিটি ভোটের একটা বড় অংশ কঙ্গ পেতো (মালদা-মুর্শিদাবাদ-দিনাজপুর) কারণ ওখানে ওদের অর্গানাইজেশন শক্তিশালী ছিল। এখনো পায়। কিছুটা তিনোতে গেছে, অর্গ বদলেছে বলে। তাছাড়া দক্ষিন বঙ্গে বামেরা তো পেতই। বামেদের জমিনীতি নিয়ে অসন্তোষ হওয়ার ফলে সেই ভোটের একটা বড় অংশ তিনোতে গেছে। তাছাড়া তাদের একাংশের মতে এখন বামেদের দিলে দিদি এমনিতেই বিজেপির সাথে হাত মিলিয়ে ফেলবে, কিন্তু বামেদের না দিলেও বামেরা বিজেপির দিকে কখনই যাবেনা।
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.19 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৬:২২78242
  • যাদবপুর লোকসভায় বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে --- বারুইপুর পূর্ব, বারুইপুর পশ্চিম, সোনারপুর দক্ষিণ, সোনারপুর উত্তর, ভাঙর, যাদবপুর এবং টালিগঞ্জ। এখানে এবার সিপিএমের ভোট পার্সেন্টেজ ২১। সবাই 'উদ্বাস্তু' ভোটার বুঝি?
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.19 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৬:২৭78243
  • 'আমার ধারনা বামেরা একটু শক্তিশালী হলেই সেই ভোট আবার ফিরে আসবে'
    এটা বিশ্লেষণ না অ্যাসাম্পশন?

    এবং এইটা - 'তাছাড়া তাদের একাংশের মতে এখন বামেদের দিলে দিদি এমনিতেই বিজেপির সাথে হাত মিলিয়ে ফেলবে, কিন্তু বামেদের না দিলেও বামেরা বিজেপির দিকে কখনই যাবেনা।'?

    আমি লিখেছি --- 'বাঙাল ভোট-ঘটি ভোট যদি সত্যি সত্যি ভোটের নির্ণায়ক শক্তি হত এতকাল তবে তা বিশ্লেষণ করতে হলে 'ঘটি' অঞ্চল চিহ্নিত করে করতে গেলে হাতে পেনসিল বই অন্য কিছু থাকার কথা নয়। কারণ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে 'ঘটি' নেই কিন্তু সিপিএম সেখানে হুলিয়ে জিতেছে, পরে তৃণমূল এবং এবার বিজেপি।' তা ওই 'বিশ্লেষণ'-এর তুলনায় কোথায় আলাদা? কতটা আলাদা?
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৬:৩৫78244
  • ঐজন্যই তো লিখেছি "আমার ধারনা"। পরেরটা শুনেছি - অ্যানেকডোতাল এভিডেন্স। তবে খুবই যুক্তিযুক্ত মনে হয়।

    আপনার এই নতুন কথাটা তো আগের ঘটি-বাঙাল আলাদা ভোট দেয় টাইপেরই কথাবার্তার থেকে আলাদা।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৬:৩৯78245
  • যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে (এখানে আপনারা লিখেছেন যে সেখানকার উদ্বাস্তু অন্চল থেকে নাকি মুসলমান বিদ্বেষ ঝরে ঝরে পড়ছে) ২০১৬তে বামেরা যেতে কি করে? আর বিজেপিই বা এতো কম ভোট পায় কি করে? সারা রাজ্যে ১৮% আর এখানে ৭%এর কম? আর এই তিন বছরেই যদি একেবারে সব বদলে গিয়ে থাকে, জানিনা সারা জীবন বাম পলিটিক্স করা লোকেদের কিকরে একদিনে সাম্প্রদায়িক করে ফেলা যায়, তাহলে তিনোর ভোট ২০১৪র তুলনায় এক লক্ষ বাড়লো কি করে?

    ঐ দেশ থেকে লোকেরা ৭০ বছর আগে এসেছে। এতোদিন কিছু হলোনা। হঠাৎ ৭০ বছর পরে (যারা এসেছিলো তাদের বেশিরভাগই নেই) তাদের পরের এবং মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি তারও পরের জেনারেশন সাম্প্রদায়িক হয়ে গেলো।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৬:৪৪78246
  • আপনি যদি অন্য টইতে আমার বিশ্লেষণ গুলো মন দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে দেখবেন ডেটা থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে নতুন ভোটাররা প্রায় পুরোপুরি ভাবে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে।

    নতুন ভোটারদের মধ্যে ঘটি-বাঙাল-মাইনরিটি সবাই আছে। সংখ্যাগুলো দেখে আমার সন্দেহ যে কিছু নতুন জেনারেশন মাইনরিটি ভোটও বিজেপিতে পড়েছে। এক যদি না মেশিনে সমস্যা থেকে থাকে।

    আপনাদের সাম্প্রদায়িকতার থিয়োরি ধরলেও মিলে যায়। এদের কাছেই হোয়াটসাপ, ফেসবুক, টুইটার আছে। আইটিসেলের পক্ষে এদেরকে আক্রমণ করা সহজ। তাছাড়া পুলওয়ামা-বালাকোট-ইন্ডিয়া শাইনিংও এদের কাছে বেশি প্রিয় হওয়ার কথা।
  • এলেবেলে | 230123.142.67900.19 (*) | ০১ জুন ২০১৯ ০৭:১৩78247
  • খারাপ লাগে কখন জানেন? যখন কেউ একটা মন্তব্য বা একটা বাক্যকে ধ্রুব সত্য ধরে সেই ব্যক্তিকে জরিপ করার চেষ্টা করেন। আমি একটা জেনারেল ট্রেন্ডের কথা বলেছি মাত্র, একমাত্র ট্রেন্ড ওটা হতে পারে? হওয়া সম্ভব? উদ্বাস্তুদের নিয়ে কংগ্রেসের উদাসীনতা তাঁদের ওই দলের প্রতি ক্ষোভ তৈরি করে, এই শূন্যস্থানটা ভরাট করতে মনোযোগী হয় বামেরা। সিনসিয়ারলি এবং সিরিয়াসলি, শুধু ভোটের কথা ভেবে নয়। সে বাম আর এ বামে আকাশ পাতাল ফারাক। কিন্তু তাদের কাজকর্মেও মানুষ যদি বিরক্ত হয় তবে কি তাঁরা বামেদের কাছে চিরকাল মুচলেকা দিয়ে রেখেছেন? স্বাভাবিকভাবে সেই ভোট গেছে অন্যত্র। আমার কোনও কথাই 'নতুন' কথা নয়। আমিও নির্বাচনী টইগুলোতে অংশ নিচ্ছি সেই ৩০ এপ্রিল থেকে। যেটা 'নতুন' সেটা হচ্ছে একটা ঘোষণা - আমি 'ঘটি' নই এবং আমার 'বাঙাল' বিদ্বেষও নেই যদিও খাঁটি ঘটি অঞ্চলে থাকি।

    যাদবপুর বিধানসভা অঞ্চলের কথা লিখিইনি, তবে বিজয়গড় থেকে বাঘা যতীন এলাকায় কতজন মুসলমান থাকেন তার সামান্য ক্ষেত্রসমীক্ষা করতে পারেন। তাছাড়া 'খোদ যাদবপুর অঞ্চলে মুসলিম ভাইচারা এতই বিখ্যাত যে সেখানে মুসলিম ছাত্র বা ছাত্রীকে নাম ভাঁড়িয়ে পিজি বা মেসে থাকতে হয় এবং বাড়ি ভাড়া মেলা প্রায় নামুমকিন' ব্যাপারটা আমার মস্তিষ্কপ্রসূত নয়। এ নিয়ে কাগজে প্রচুর প্রতিবেদন বেরিয়েছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন