এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কাব্য

  • আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - দ্বিতীয় পর্ব

    কুশান গুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    কাব্য | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ৭৬১৪ বার পঠিত
  • প্রথম পর্ব
    কবিতার উপযোগিতা নিয়ে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন

    অনেকে একথা বলছেন যে আজকের জীবনে কবিতার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। অনেকে বলছেন কবিতার কোনো ভূমিকাই নেই আর, কবিতা আজ সম্পূর্ণই অপ্রাসঙ্গিক। কেউ বা অভিযোগ করেন সমসময়ের সঠিক চেহারা কবিতাতে নেই। আজকের কবিতা ও কবিরা, সেহেতু, ব্যর্থ। কিন্তু, প্রশ্ন এসে গেল, কবিতার কি কোনো সামাজিক দরকার নেই? কবিতার সামাজিক উপযোগিতা নিয়ে লিখতে আমি সার্বিকভাবে অক্ষম হলেও দু-চারটি জরুরী প্রশ্ন উত্থাপন করি। এর উত্তর দেওয়ার দায় কারুর খুব একটা নাই থাকতে পারে, এইসব প্রসঙ্গ চাইলে ফেলেও দিতে পারেন, তবু লিখছি:

    ১) কি কারণে একটি কবিতা লিখেই জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন? কি এমন বিস্ফোরক বস্তু ছিল তাতে যে একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত চাকরি হারাতে পারেন? তিনি তো ততদিন অবধি খুব একটা কেউকেটা কবি ছিলেন না।
    ২) কি কারণে হাংরির তদ্যবধি নাম না জানা কবিদের পেছনে রাষ্ট্র পুলিশ লেলিয়ে দেয়? ব্যাপার মামলা ও কোর্ট অবধি গড়ায়। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গিন্সবার্গ আবু সাইদ আয়ুবকে চিঠি লিখে জানান, আপনারা প্রতিবাদ করুন।
    ৩)কেনই বা আজকের জনপ্রিয় এক কবির একটি কবিতা নিয়ে তাঁর বিরূদ্ধেও মামলা হয়, হামলার ভয় দেখায় উগ্র ও অন্ধ সাম্প্ৰদায়িক লোকজন? ফেসবুক উত্তাল হয়ে ওঠে? ব্যাপার এতদূর গড়ায় যে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
    ৪) কেন একটি নকশালপ্রভাবিত ছাত্র সংগঠন লেনিন দিবসে সুভাষ মুখোপাধ্যায় নামক এক কবির কোটেশন তাদের পোস্টারে দেয়? মনে রাখতে হবে ইউনিয়নে থাকার কমপালশন এবং ভোট পাওয়ার দায় তাদের রয়েছে। উক্ত কবির বিরুদ্ধে জয়দেব বসু ‘ঘেন্না’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
    ৫) কেন আমরা বই না দেখে জনপ্রিয় গদ্যও কোট করতে পারিনা, অথচ, এমনকি অনেক আধুনিক কবিতা নির্ভুল গড়গড় করে অনেকেই বলে যেতে থাকেন?
    ৬) মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ব্যানারে কেন জীবনানন্দের একটি অরাজনৈতিক কবিতা, যার তেমন এক রাজনৈতিক ঝাঁঝ নেই, শ্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত করেছিল?রূপসী বাংলার উক্ত ব্যবহৃত কবিতাটি:
    'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি...'
    ৭) কিভাবে বেস্ট সেলার 'মাধুকরী' উপন্যাসে জনপ্রিয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ এতগুলি সমকালীন বাংলা কবিতার অংশ তুলে ধরলেন? যদি সমকালীন বাংলা কবিতা সম্পর্কে পাঠক এতই বিমুখ তাহলে এই বই বাজারে কাটলো কি করে? মার্কেট রিস্ক ছিল না?
    ৮) কেন ‘ফিরে এসো চাকা’র ‘একটি উজ্জ্বল মাছ’ সৃজিত তাঁর একটি থ্রিলারধর্মী ছবিতে ব্যবহার করলেন? ওই ছবি কি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল?
    ৯) 'দেখতে ভালো মাখতে খারাপ' একটি সাবানের বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইন। এই লাইন কতটা গদ্য, কতটা কবিতা?
    ১০) পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না' গদ্যের না কবিতার, কিসের কাছাকাছি?
    ১১) চন্দ্রবিন্দুর গান প্রসঙ্গেও একই প্রশ্ন। এগুলি বিক্রয়যোগ্য সঙ্গীত হলেও কিছু উত্তরাধুনিক কবিতার এলিমেন্ট কি নেই?
    ১২) নীহার রঞ্জন রায়ের আকরগ্রন্থ 'বাঙালির ইতিহাসে' কি কোনো কবিতা বা কবির উল্লেখ নেই?

    এইসব প্রশ্নগুলির উত্তর নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও নিজের আবছা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। কিন্তু, প্রশ্নগুলিতে কবি ও কবিতার ব্যবহারিক ও বাস্তবসম্মত দিকগুলিই রাখলাম।সংবিগ্ন পাঠককূল, সম্ভাব্য উত্তরগুলি নিয়ে একটু ভাবুন। সামাজিক জীবনে কবিতার উপযোগিতা ও প্রাসঙ্গিকতা হিসেবে হয়তো এগুলি বিবেচিত হতে পারে।

    ~~~~~~

    চর্যা কি আজও প্রাসঙ্গিক? স্থানাঙ্ক যদি হয়, কালাঙ্ক বলে কিছু হয় না?

    প্রথমে যে প্রসঙ্গ তুলেছিলাম সেই প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কি উপায়ে কবিতা তৈরী হয় কেউ কি আদৌ জানে? মনে পড়ছে, সত্তরের কোন এক সালে, সম্ভবত ১৯৭৮(ভুল হতে পারে), 'অমৃত' নামক পত্রিকায়, সমকালীন দশ বারোজন কবিকে কবিতাসংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। কয়েকটা প্রশ্ন স্মৃতি থেকেই লিখছি।
    ১) কেন লেখেন?
    ২) কবিতায় শব্দের গুরুত্ব কি?
    ৩) কিভাবে লেখেন?
    ৪) সমকালীন কোন কোন কবি আপনাকে প্রভাবিত করেন?
    ৫) আপনি কি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ?

    বলাই বাহুল্য, বিভিন্ন কবির উত্তর বিভিন্ন ধরনের ছিল। এটাই স্বাভাবিক, কেননা শিল্প বা সাহিত্যে কোনোদিনই স্থির সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল ও অনুচিত। তাছাড়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির উত্তর এমনকি পদার্থবিদ্যার সামান্য উত্তরপত্রে যদি আলাদা হয়, তাহলে কবিতাতে আরো বেশি হওয়ারই কথা।কবির তালিকায় জয় গোস্বামী, রণজিৎ দাশ, বীতশোক ভট্টাচার্য, অনন্য রায়, তুষার চৌধুরী প্রমুখ ছিলেন। এটুকু মনে আছে যে জয় গোস্বামী ও বীতশোকের উত্তরগুলি ছিল বেশ দীর্ঘ। রণজিৎ দাশের উত্তর ছিল এতটাই সংক্ষিপ্ত যে মনে হবে যেন অবজেক্টিভ প্রশ্নের উত্তর লিখছেন। মনে পড়ছে রনজিতের 'কেন লেখেন' এর জবাবে লেখেন এই ধরণের এক লাইনের উত্তর:'আমার লিখনপ্রতিভা ও লিখনঅভ্যাস আছে তাই লিখি।' রণজিৎ জীবনানন্দ হলে 'হৃদয়ের মধ্যে রয়েছে এক বোধ, তারে আমি পারিনা এড়াতে'-হয়তো বা বলতেন। কিন্তু, পাঠক, ভেবে দেখুন, রণজিতের কথা ও জীবনানন্দের কথা কি এক নয়?

    'সমকালীন কোন কোন কবি আপনাকে প্রভাবিত করেন?' এই প্রশ্নের উত্তরে বীতশোক সম্ভবত উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি কালের বিভাজন মানেন না এবং চর্যার কবিরা তাঁকে খুবই প্রভাবিত করেন। প্রসঙ্গত, বীতশোকের তরুণ বয়সের এক দুঃসাহসিক কাজ ছিল, 'হাজার বছরের বাংলা কবিতা' বলে এক সম্পাদিত গ্রন্থ, যা সম্ভবত অধুনালুপ্ত। এখানে একটি তথ্য দিয়ে রাখি। তরুণ কবি সোমনাথ রায়ের ২০১২ তে প্রকাশিত 'ঘেন্নাপিত্তি'তে ও চর্যার কবিতাপ্রয়াস পাচ্ছি। লক্ষ্য করুন সোমনাথের এই প্রয়াস:
    মূল পদঃ কাহ্নুপাদানাম্
    চর্যাপদ-১০ (রাগ দেশাখ)

    নগরবাহিরি রে ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ।
    ছোই ছোই জাহ সো বাহ্মনাড়িয়া॥
    আলো ডোম্বি তোএ সম করিব মা সাঙ্গ।
    নিঘিন কাহ্ন কাপালি জোই লাংগ॥
    এক সো পদুমা চৌষঠ্‌ঠী পাখুড়ী।
    তহিঁ চড়ি নাচঅ ডোম্বী বাপুড়ী॥
    হা লো ডোম্বি তো পুছমি সদভাবে।
    আইসসি জাসি ডোম্বি কাহরি নাবেঁ॥
    তান্তি বিকণঅ ডোম্বি অবরনা চাংগেড়া।
    তোহোর অন্তরে ছাড়ি নড়পেড়া॥
    তু লো ডোম্বী হাঁউ কপালী।
    তোহোর অন্তরে মোএ ঘেণিলি হাড়ের মালী॥
    সরবর ভাঞ্জিঅ ডোম্বী খাঅ মোলাণ।
    মারমি ডোম্বি লেমি পরাণ॥

    প্রেম (কাহ্নপার পদ থেকে)

    প্রেমের আশ্চর্য বাড়ি সব হিসেবের থেকে দূরে
    জাতিভেদে বিত্তভেদে সবাই কখনও আসে ঘুরে
    এইবারে, দ্যাখ প্রেম আমিও দেখতে যাব তোকে
    ঘৃণাজয়ী যোগী আমি, লজ্জা ছেড়েছি নির্মোকে-
    সৃষ্টির রহস্যমূলে রতিকলা কামনার ঘোর
    সেইখানে লীলাময়ী প্রেম তোর নাচের আসর
    আমিও মোহিত হই, বিনম্রে রাখি জিজ্ঞাসা
    অজানার কোন পথে আশ্চর্য এই যাওয়া-আসা?
    যে সুতোয় বেঁধে দিস অদৃশ্য আলোর উজানে
    রঙের নেশায় মজে ভুলে গেছি বাকি সব মানে
    সেই পথে পথ হেঁটে পথ ভুলে আমি কাপালিক
    কামনাও হারিয়েছে এই শব, হাড়ের অধিক-
    শুকায় করুণাধারা, খায় প্রেম জীবনের সার
    সেই প্রেম খাব আমি সৃষ্টিচক্র করে ছারখার।

    কাহ্নু আজ বেঁচে থাকলে এই দেখে খুশি হতেন যে হাজার বছর পরে তাঁর কবিতা কিভাবে, কোন এক আশ্চর্য শুশ্রূষায় বেঁচে আছে। হরপ্রসাদও হয়ত অখুশি হতেন না।রবীন্দ্রনাথের 'আজি হতে শতবর্ষ পরে' এই কবিতা কি কোনো আশাবাদ না কি এক ধরণের অমরত্বের প্রত্যাশা? এই সেই অমরত্বের প্রত্যাশা যাকে সুনীল কবিতার তাচ্ছিল্য দিয়েই নেগেট করেন।কবীর সুমন 'মুখে মুখে ফেরা গানে', বেহুলার ইমেজ দিয়ে জানান যে বৈধব্য বাংলার রীতিই নয়। মনে প্রশ্ন ও সংশয় আসে, লখিন্দর কেন 'কালকেউটের' ছোবলে মারা গেলেন।লখিন্দরের মৃত্যু তো কালনাগিনীর কামড় বলেই তো ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি। প্ৰশ্ন পায়, উত্তরও তো জানাই, তবু, মাঝে মাঝে মনে হয় একটু স্তব্ধতার গান শুনি। সুমনের গান কি গান না কবিতা? পল সাইমন কি গায়ক না কবি? ববি ডিলান কি নোবেল পেলেন কবিতার কারণে? তাহলে সুমনকে আমাদের দেশ, আমাদের বাংলা কেন সাহিত্যে পুরস্কার দিতে পারে না।

    কিন্তু, চর্যার স্রষ্টারা কি আজকের সোমনাথের এই ভাষা বুঝে ফেলতেন? হালকা আন্দাজে বলছি, তাঁরা কি জানতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক এক দেশ রয়েছে, যেখানে বসে হয়তো এই কবিতা লিখছেন এক গবেষক তরুণ কবি সোমনাথ।

    হাজার বছর আগের কবিরা এমনকি আজকের ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট দেওয়া কবিদের সঙ্গেই যেন কিভাবে এক অলীক আত্মীয়তায় রয়েছেন। তাই , কাহ্নু, কৃত্তিবাস, জয়, বিনয় , সুনীল, মৃদুল, জয়দেব(বসু), সোমনাথ যেন নিরবচ্ছিন্ন কালপ্রবাহে একই সূত্রে বাঁধা, কিন্তু তাদের দেশ একই।সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রে।মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতায় সত্যজিৎ রায়ের কথা। মনে পড়ে গেল বিভূতি ভূষণ। অপুর হাতে ধরা গ্লোব, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতা আবৃত্তি করে অপু এই পুরস্কার জিতেছিল। সুদুরের পিয়াসী, কৌতূহলী, অপু এই গ্লোব সবসময় হাতে রাখত, সত্যজিতের ‘অপরাজিত’ সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু এও মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ: ' সত্যেন করতেন কিছু/যদি না ছুটতেন ছন্দের পিছু পিছু'।

    ভাষার ধরণ ভিন্ন কবিতে কবিতে, স্থানে আর কালে। যদি স্থানাঙ্ক বলে কিছু হয়, কালাঙ্ক বলে কি কিছু হয়? চর্যার প্রসঙ্গ আবার উত্থাপন করে বলি বীতশোক তাঁর একটি নিবন্ধে লিখেছেন যে চর্যার যুগে কবি বলে কোনো আলাদা পেশাদার ছিলেন না। চর্যার কবিরা জাল বুনতেন, চাষ করতেন, শিকার টিকার করতেন, এমনকি ফাঁসিও দিতেন।এই নিবন্ধ লেখা হয়েছিল আনুমানিক আশির দশকে। বীতশোকের পরবর্তী যুক্তি, আজকের আশির দশকে একই রকম প্রবণতা। অর্থাৎ, কবি বলে এখন আলাদা কেউ নেই। অধ্যাপক কবি, ব্যবসায়ীও কবি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্ৰমুখও কবি। যদি এই হাইপোথিসিসে কিছু সারবত্তা থাকে, তাহলে কি ২০১৮ এ একথা সত্য নয়? ২০০০ সন থেকে কি বিশ্বে, ভারতে, তথা বাংলায় কোনো গুণগত উল্লমফন হয়নি ভাবনায়, ভাষায়, ভঙ্গিতে?আজকের কবিতার ভাষা বোঝাতে বেছে নিলাম আপাতত একটি নাম, সায়ন কর ভৌমিক, তুলছি কবিতার অংশ, যেখান থেকে ব্যক্তি সায়নকে খুঁজুন, দেখুন স্থান ও কালকেও:
    'আজকাল সব ছন্নছাড়া হয়ে গেছে, রক্তচাপ, ক্ষুধামান্দ্য, সংসার, এমনকী যৌন সততা পর্যন্ত, রাতে ঘুম নাই, বাটামের ভয় আছে না?
    কিন্তু সে যাই হোক; এইসব শূন্য দশক, একের শতক এইসবই কিন্তু গাপ হয়ে ছিল নব্বইয়ের ভাঁজে।
    দহরম মহরম ছিল বাপু, তাহাদের সাথে। সাতে পাঁচেই ছিল সব, নয়ে ছয়ে, বাহান্ন তিপান্নতেও ছিল সব বাইপাসের ধারে ভুট্টাপোড়ার সাথে দুইটি ছিলিম।'

    যদি পড়তে পড়তে অনভ্যস্ত পাঠক অবিরত ধাক্কা খান, তবে পড়ুন পরের অংশটি:
    'টরেটক্কা সংকেত পাঠাই, পদ্য লিখি এখানে ওখানে
    ইউক্যালিপটাসের পাতা, ভেজাল দিই, এদিক ওদিক, একপাতায় ছাপিয়ে দিই টরেটক্কা,
    ক্যাপ্টেন স্পার্ক হলে ধরে ফেলতো ঠিক, বুঝে নিত সন্ধে নামার ঝোঁকে
    জনবহুল সাইকেলরিক্সাসঙ্কুল পথের কোনাখামচি ঘেঁষা
    ভুলভাল কোড।'

    এখানে পড়তে পড়তে প্রশ্ন আসতে পারে যৌন সততা আবার কি জিনিস? বাইপাস এই শব্দটি কবে থেকে কলকাতায় ঢুকে পড়ল তা ধরতে নির্ণায়ক কি এই কবিতা? 'ছিলিম', 'বাটামের ভয়', 'ভুলভাল' এগুলি তো চালু আড্ডার শব্দ যা আমরাও বলেছি। কিন্তু এই কবিতার প্যাটার্ন কি শক্তি, জয়, মৃদুল, জয়দেব থেকে কি অন্যরকম নয়?
    কোড বললে তা কতটা সফটওয়ার কোড? মনে পড়তে পারে কি ড্যান ব্রাউন? তাছাড়া সেমিওটিক্স বা চিহ্নবিদ্যা দিয়ে তৈরি 'মিনিং মেকিং' প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে? কি এখানে 'কোড'? মনে পড়তে পারে 'অথর ইজ ডেড' র প্রকল্প? ব্যানাল এই শব্দটি কবিতায় লেখা সঙ্গত? পাঠক কি কবির কবিতা ধরতে পারছে না? ধরার জন্য কি ক্যাপ্টেন স্পার্ক হতে হয়? কবি কি শক্তির পুরনো কিসসা আনলেন : পাঠককে এগিয়ে আসতে হয়, হৃদয় দিয়ে, দরদ দিয়ে, মগজ দিয়ে?কবি-পাঠকের সহাবস্থান কি এইসব কথায় রয়েছে? তাছাড়া শূন্য দশকের নির্মাণে কি নব্বইয়ের ভূমিকা ছিল?

    ~~~~~~

    কামিনী রায়ের কবিতা কি রবি ঠাকুর লিখতে পারতেন? যশোধরার কবিতা কি পুরুষ কবি লিখতে সক্ষম?

    ফেমিনিজমের অতিচর্চিত পুরনো কচকচানিতে না গিয়ে বলি সেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে যখন দেশ তথা ভারত, বাংলা আসলে ব্রিটিশ ভারত বা ব্রিটিশ বাংলা, ততদিন থেকে কামিনী রায় সহ একাধিক কবি তাঁদের কবিতা লিখছেন। এবং কামিনী রায়ের, 'পাছে লোকে কিছু বলে' আজও সমান প্রাসঙ্গিক না হলে এক ধরণের দ্বিধাগ্রস্ততা আজও কেন মহিলা কবির গলায়? পুরুষ বা নারী বিভাজন যদি নাই থাকে তাহলে কিভাবে তৃতীয় লিঙ্গ বলে একটা ব্যাপার থাকবে?
    তবুও মেয়েদের ঋতুকালীন প্রসঙ্গ আজ অনেক অকপট। তাই তাঁরা সেদিনের দ্রৌপদীর রূপা গাঙ্গুলির মত মেক আপ চড়িয়ে বস্ত্রহরণের সময় কনফিউজড স্বামীর হঠকারিতার জন্য কৃষ্ণকে বা নীতিশ ভরদ্বাজকে ডাকবেন না। কালকের দ্রৌপদী আজকের মহাশ্বেতার রক্তাক্ত দোপদী মেঝেন হয়ে এগিয়ে বলছেন: কাউন্টার কর, কাউন্টার কর। আজকের মহিলাদের কবিতার সুর বরং লিরিকস্বভাব হারিয়ে ফেলছে, আবার পুরুষ কোনো কবি ছন্দের ঝোঁক এত বেশি লিরিক লিখছেন যে তাতে যেন ধার ও ভার কমে যাচ্ছে।
    আজকের মেয়েদের দায়িত্ব নিতে অনেক বেশি হয়, অথচ তারা পুরোনো ট্রাডিশনের সিঁদুর মুছে ফেলছেন, কেমন একটা ছন্নছাড়া ভাব যেন তাদের, এমন এক পুরুষতান্ত্রিক অভিযোগ বাড়ছে। কেমন হয় তাঁদের কবিতা, যারা ফর্ম ফিলাপে বাধ্যত বা স্বতঃস্ফূর্ত কিনা জানিনা, জেন্ডারের জায়গায় F এ টিক দেন ?
    'মায়ামমতায় ভরা এ সংসারে এসে
    তুমি তো করেছ শুধু তুমুল অশান্তি, মাগো, বাড়ি যাও, বাড়ি যাও,
    আমাকে বলেছে সব প্রতিবেশী, পাড়াপড়শি , এমনকি নিজের ছেলেটিও।
    আমাকে বলেছে আমি অলক্ষ্মী পিচেশ।
    কেন বা বলবে না বল, আমি তো খেয়েছি সিগারেট আর আমি তো সন্ধে পার করে
    বাড়িতে ফিরেছি, কোন সন্ধেবাতি, হুলুধ্বনি, শঙ্খের বাতাস
    আমাদের বাড়িতে বহেনি।
    তারপর এসেছে বন্ধু, কবিদের দল, মধ্যরাতে আড্ডা দিতে
    ছেলে অন্য ঘরে বসে পড়া করছে, দোর দিয়ে, সেও তো জেনেছে
    তার মা অদ্ভুত, খাপছাড়া, কোন সাধারণ সতীলক্ষ্মী নয়।
    সবাই বলেছে তুমি বাড়ি যাও বাড়ি যাও, তার জন্য ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছি নিজের।
    শুধু যেই নিজের আনন্দ আমি রাখতে গেলাম সেই ঘটে
    ঘটটি গড়িয়ে পড়ল।
    স্বামী ও সংসার কোন কথাই বলল না। ছেলেও এবার চুপচাপ।
    আমি কি আমার সুখ নিজে নিজে রচনা করব , গো?
    আমি কি আমার ফ্ল্যাট একা একা সাজিয়ে ফেলেছি?
    আমার উনুনে আজ একজনের রান্না হবে নাকি?
    এই দুঃখে এই কষ্টে, আমি ঘট গুঁড়িয়ে ভেঙেছি...
    তারপর অলক্ষ্মী মায়ের মত একা একা ফিরে এসে ঘরে
    আমি সন্ধ্যা অবদি ঘুমাই, আর চুল খুলে বেপাড়ায় ঘুরি...
    অশান্তি বানাই আমি, মুখে মুখে ছড়া কাটি সমস্ত বিকেল...
    আর, আমি সারা পথ নিজের এ পদচিহ্ন ছড়িয়ে এসেছি... মনোদোষে।
    নিজের শরীর খান খান করে আমি আজ রোগজীর্ণ একজোড়া জ্বরতপ্ত চোখ...
    তৃতীয় নয়ন কই, সে তো ছিল, কুলুঙ্গিতে তোলা, আজ নামিয়ে পরে নি?'

    যশোধরা রায়চৌধুরী লিখছেন এই কবিতা। ফেসবুকে শেয়ার করলেন অপর এক কবি, যিনিও নারী। শেয়ারের দিন হলো এ বছরের লক্ষীপুজো। এর বেশি কিছু বলা এক ধরনের অর্বাচীনতা হয়ে যেতে পারে। পাঠক, পড়ুন। আপনিও পড়ুন, হে পাঠিকা।
    শুধু বলি এই কবিতায় কতটা রক্তক্ষরণ, দ্বিধায় দীর্নতাই বা কতটা? সনাক্ত করুন। কামিনী রায়ের 'পাছে লোকে কিছু বলে' কবিতার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি। কামিনী রায়ের সংশয়- প্রকল্পের চেয়ে কি যশোধরার সংশয়ের ধরণ কিছু আলাদা? কোথায় বা তা ভিন্ন? পাঠক, পড়ুন, সনাক্ত করুন। অল্পই তুলে দিচ্ছি কামিনী রায়:
    'করিতে পারি না কাজ
    সদা ভয় সদা লাজ
    সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,
    আড়ালে আড়ালে থাকি নীরবে আপনা ঢাকি
    সম্মুখে চরণ নাহি চলে
    কাঁদে প্রাণ যবে, আঁখি-সযতনে শুষ্ক রাখি
    নির্মল নয়নের জলে
    পাছে লোকে কিছু বলে'

    এই দুটি কবিতা থেকে কান্না সনাক্ত করা যায় , ধরা যায় দুই সময়ের দুই কবির সংশয় ও সমস্যার যন্ত্রণা, যা প্রসূত কবিতায়। নারীর নিজস্ব অধিকার নিয়ে সমাজ কতদূর এগিয়েছে, এই প্রশ্নও এসে যেতে পারে।

    এবারে মিতুল দত্তের কবিতায় চোখ রাখি, পেয়ে যেতে পারি অন্য এক ঝোঁক:

    'সন্ধিবয়সের দিকে মুখ ছিল, করুণার দিকে
    কাকলির দিকে আর ক্ষুধিত পাষাণে লেখা আলোর অপেরা, আলো
    মিছরির ছুরির মতো আলো তার স্বভাবে ঢুকেছে
    শরীরের খানাখন্দে, যুবক, জ্বালানি আর গান
    উনুনে দিয়েছি আমি, তালপাতা খোঁপায় পরে শুয়ে আছি
    পিঁড়িতে সাজিয়ে সাদা, হে সাদা, হে শ্বেতপত্র, আমি তার রবিবাসরের
    সম্রাজ্ঞী-কেচ্ছার পাশে পাত্র চাই পাত্রী চাই ভরিয়ে তুলেছি
    আমি সেই চৈতন্যহারানো বিষ্ণুপ্রিয়া হতে চেয়ে
    হয়ে গেছি সূর্পনখা, নাক কেটে গুরুদন্ডবৎ
    মিশেছি তোমার খুরে, গোক্ষুর আমার
    তোমার মাথায় চড়ে ত্রিকাল দেখাব ভাবি আর
    ত্রিকাল আমাকে দেখে, আমি যেন সঙ, দর্জিপাড়া
    মর্জিনা নাচিয়ে যেন ঝুমঝুমি বাজাব'

    এখানে ‘ক্ষুধিত পাষাণে’র উল্লেখ কি সেই নারীচরিত্রের ওপর পুরুষ কর্তৃত্বের আভাস? সূর্পনখা, বিষ্ণুপ্রিয়া, মর্জিনা সবকটি নারীর উল্লেখের মধ্যে কি কোনো মিল আছে, যেগুলি এক ধরনের কষ্ট ও বঞ্চনার ইঙ্গিত দেয়? কাকলী ও করুণাও তো কোনো নারীরই নাম। নির্মাণ কৌশলে হয়ত বা মনে পড়তে পারে ইউরোপিয়ান বা ভারতীয় চলচ্চিত্র, যেখানে সমস্ত চরিত্রই নারী। তাছাড়া দর্জিপাড়া সমকালীন প্রান্তিক নারীর দিকেই যেন দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই কবিতার সঙ্গে নাটকের কোনো যোগ আছে? সন্ধিবয়েস কি বয়ঃসন্ধি নাকি তা আড়ি-ভাবের কবিতা। পুরুষচরিত্র-বিবর্জিত এই কবিতা কি এক সচেতন নির্মাণ নয়?

    ~~~~~~

    কবিতায় ধরা পড়ে সমকাল, ইতিহাস, প্রযুক্তি, অর্থনীতিও
    কবিতা থেকে কবিকে চেনা যায়,সমকাল অদ্ভূত ধরা পড়ে। একটি সাম্প্রতিক কবিতা পড়ুন:
    'অবশেষে বোতামের অক্ষরে অক্ষরে উপগ্রহ যোগ যদি যায় খুলে
    আমরা পৌঁছতে চেয়েছি চাঁদে-মধ্যরাত্রির সিকি ভাগ মাশুলে।
    নিতান্ত মামুলি কথা, তবু অনর্থক নয়, সীমিত সামর্থটুকু
    নিঙড়ে বরাতমাফিক কথার ক্ষরিত সুখ সামান্য আশয়
    পার করে দেয় তার পরদিন থেকে আরও কিছু চন্দ্রহীন তট।
    কেউ বুঝি আড়ি পেতেছিল সেইখানে? কেউ বুঝি লিখেছিল পট?
    সে-ই বুঝি পথ জুড়েছিল, বটঝুরি দোল দিয়ে দেওয়াল গেঁথেছে?'
    সুমন মান্নার ‘ফোনঘর’ এই কবিতায় যেন ফিরে আসছে ফেলে আসা এসটিডি যুগ, যা এখন গল্পের ও কবিতার বিষয়। উপগ্রহ যোগ আসলে স্যাটেলাইট মনে হয়, যা আজকের যোগাযোগের এক আবশ্যিক শর্ত। সিকি ভাগ মাশুল বললে মনে পড়ে কোনো এক রাত এগারোটার পরের তড়িৎদার বুথ, যেখানে উদ্বেগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রেমিক ও প্রেমিকা। এখানে উল্লেখ্য, প্রেম করতে রাষ্ট্রীয় মাশুল লাগে, কবি জানিয়ে দিলেন। উদ্বিগ্ন প্রেমিক- প্রেমিকাকূল, উদ্বেগের কারণ লম্বা কিউ এবং সমস্ত লাইন ব্যস্ত। মনে পড়ে অল লাইনস আর বিজি, যা আজকের দিনেও মাঝে মাঝে শোনা যায়। সুমন যেন এক অজানা বান্ধবীর কথা বলছেন। সেই বান্ধবীর জন্য যেন মন খারাপ। তাই শেষ লাইনটি এরকম বিষণ্ণ : ' মাঝে মাঝে তাকে মনে পড়ে'। সুমন এক মারাত্মক কথা জানাচ্ছেন : ' নিতান্ত মামুলি কথা, তবু তা সাধারণ নয়'। মনে পড়ে বুদ্ধদেব বসুর লাইন: যা কিছু ব্যক্তিগত, তাই পবিত্র।


    ক্রমশঃ
    প্রথম পর্ব | তৃতীয় পর্ব
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কাব্য | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ৭৬১৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রতিভা | 342323.233.1267.221 (*) | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৩79506
  • একেবারে সমকালীন কবিদের টেনে এনে কৌশিক যা লিখলেন তা স্তম্ভিত করল। শুধু ভালো বললে এ লেখার মূল্যায়ন হয় না। একেবারে অন্যরকম ভালো। যোগ্য ব্যক্তির আলোচনার জন্য অপেক্ষা করে রইলাম।
  • Tim | 89900.253.8956.205 (*) | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫২79507
  • "অনেকে একথা বলছেন যে আজকের জীবনে কবিতার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। অনেকে বলছেন কবিতার কোনো ভূমিকাই নেই আর, কবিতা আজ সম্পূর্ণই অপ্রাসঙ্গিক। কেউ বা অভিযোগ করেন সমসময়ের সঠিক চেহারা কবিতাতে নেই। আজকের কবিতা ও কবিরা, সেহেতু, ব্যর্থ। "

    এই "অনেকে" রা কারা? কোথায় এসব লেখা/বলা হয়েছে? কেন সেগুলো দিয়ে এই লেখার প্রেমিসেস তৈরী করতে হবে?

    যেকোন আলোচনা শুরুর ভূমিকায় একথা বলে নিতে হয় যে কেন এই প্রসঙ্গের অবতারণা। সেখানেই ঠিক হয়ে যায় টার্গেট পাঠক কারা। কবিতা কেন পড়বো থেকে শুরু করে সমকালীন কবিদের লেখা কিস্যু হচ্ছে না এই সমস্তই সেখানে আসতে পারে, এমনকি আসা খুব প্রয়োজন বললেও অত্যুক্তি হয়না, কিন্তু গোড়ার কথায় অস্পষ্টতা রেখে সেটা করা চলেনা। লেখক নিজেই লিখেছেন

    ১। "কবিতার সামাজিক উপযোগিতা নিয়ে লিখতে আমি সার্বিকভাবে অক্ষম"
    ২।"এইসব প্রশ্নগুলির উত্তর নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও নিজের আবছা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি।"

    এরপরে বেশ কিছু প্রশ্ন লেখক দিলেন। সেই প্রশ্নগুলো লেখক করছেন উপরোক্ত "অনেকে"দের। এবং বাকি লেখাটা দাঁড়িয়ে আছে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নিয়ে। কাজেই আশাকরি বুঝতে অসুবিধে হওয়ার নয় কেন "অনেকে"দের কথা জানাটা জরুরি।

    দীর্ঘ প্রথম পর্ব পড়ার পর মনে হয়েছিলো লেখক স্পষ্ট না ঠিক কোথায় পৌঁছতে চান। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই আবারো হোঁচট খাচ্ছি। কবিতা এখনও প্রাসঙ্গিক কিনা বা সমকালীন কবিদের লেখায় কীভাবে সমাজ ইত্যাদি ফুটে উঠছে এগুলোয় যাওয়ার আগে লেখকের প্রয়োজন এটা স্পষ্ট করে বোঝানো যে এই আলোচনার উদ্দেশ্য কী? আপাতত বিভিন্ন কবিদের কবিতার অংশ তুলে এনে এই কথাটাই ঘুরেফিরে বলা হচ্ছে যে মানবজীবনে কবিতার প্রভাব রয়েছে। এই জিনিস "কবিতাটির তাৎপর্য্য লিখ" টাইপের প্রশ্নের উত্তর ইশকুলেই আমরা শিখেছি।

    কবিতার বিবর্তন নিয়ে আগ্রহী হিসেবে আমার মনে হয়, বাংলা কবিতার সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে দিনের পর দিন সেটা নিয়ে অস্পষ্ট আলোচনা করা। কবিতা পড়ার অভ্যাস বা কবিতা ভালো লাগলেই তাই বিশ্লেষণ করতে বসার মধ্যে বিপদ আছে, কারণ অন্যান্য বিষয়ের মত কবিতা ব্যবচ্ছেদ এবং তা নিয়ে প্রবন্ধ লেখাও একটা ট্রেনিংসাপেক্ষ জিনিস। ঠিকভাবে না করলে যাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে খুব একটা জানেননা তাঁদের মনে হতে বাধ্য, যে কবিতার নিশ্চয়ই তেমন কোন স্পষ্ট ব্যাকরণ নেই। নিশ্চয়ই কবিতা জিনিসটা যেমনতেমন করে চর্চা করা যায়। বাস্তব কিন্তু এর ঠিক বিপরীত।

    কুশানবাবুর দুই পর্বের লেখায় সেই অস্পষ্টতা এবং কোথাও কোথাও এক ধরণের ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ বিষয়টি সম্পর্কে এরকম ভুল ধারনা তৈরী করতে পারে। আশা করবো লেখক এই বিষয়টা নিয়ে একটু ভাববেন।
  • Tim | 89900.253.8956.205 (*) | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:২৮79508
  • আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি। এরকম হতেই পারে যে লেখক একটা লেখার মধ্যে দিয়েই জানতে চাইছেন, এবং বেশ কিছুদিন লেখার পর ব্যাপারটা একটা নতুন রূপ পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে খুব ভালো হয় যদি টই খুলে এরকম একটা লেখা দেওয়া হয়। টইতে পুরো আলোচনাটা হয়ে গেলে (বা অনেকটা এগিয়ে গেলে) তার সংহত রূপ ব্লগে নিয়ে এসে রাখলে কেমন হয় সেটাও ভেবে দেখতে অনুরোধ করি।
  • সুকি | 348912.82.2323.227 (*) | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৩79509
  • আমি টিমের প্রথম পোষ্টের সাথে একমত। দু-তিন বার পড়লাম, কিন্তু অস্পষ্টতা কাটল না - জানি না সেটা আমার অক্ষমতা কিনা।

    ঠিক বুঝতে পারছি না লেখার গতিপথ - মানে লেখক ঠিক কোন দিক থেকে কবিতা বিশ্লেষণ করতে চাইছেন সেটা যেন তেমন পরিষ্কার নয় আমার মতে। লেখক বারোটি 'জরুরী' প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। লেখকের কাছে অবশ্যই জরুরী মনে হতে পারে - কিন্তু সাধারনের জন্য কেন জরুরী সেটা একটু বিশ্লেষণ করলে আরও ভালো হত। বিশেষত যেখানে তিনি প্রশ্ন তুলেছেনঃ

    ১০) পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না' গদ্যের না কবিতার, কিসের কাছাকাছি?

    এটা কি সিরিয়াস প্রশ্ন নাকি কেবল চমকের জন্য ব্যবহৃত? মানে আমার মতে প্রশ্ন হতেই পারে, কিন্তু 'জরুরী' প্রশ্ন? তাও আবার কবিতার সিরিয়াস আলোচনায়!

    ১১) চন্দ্রবিন্দুর গান প্রসঙ্গেও একই প্রশ্ন। এগুলি বিক্রয়যোগ্য সঙ্গীত হলেও কিছু উত্তরাধুনিক কবিতার এলিমেন্ট কি নেই?

    ভালো প্রশ্ন, কিন্তু চন্দ্রবিন্দু শুধু কেন - একটা সময়ের (১৯৯১-৯২!) পর দেখা যাবে অনেক অনেক গানে উত্তরাধুনিক কবিতার এলিমেন্ট আছে। আমার তো মনে হয়, হয়ত সেই সুমন থেকে শুরুঃ

    "তুই হেসে উঠলেই সূর্য লজ্জা পায়, আলোর মুকুটখানা তোকেই পড়াতে চায় --
    তুই হেসে উঠলেই জাকির হোসেন, তবলা বাজানো ছেড়ে পায়রা পোষেন"

    আর ইদানিং অনুপমের গানের কথা তো উত্তরাধুনিক কবিতার এলিমেন্টের ছড়াছড়ি - অনুপম গানের জগতে বিখ্যাত হবার বেশ আগে থেকেই কবিতা লিখত এবং তা উত্তরাধুনিক এলিমেন্টে ভরপুর -
  • অনিরুদ্ধ সরকার | 670112.210.450112.146 (*) | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪২79510
  • ভাই অসাধারন গবেষণা এবং প্রণাম তোমার সাধনা কে।
    প্রথম বারোটি প্রশ্নর সঙ্গে আরো একটি যোগ করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
    "কবিতা কি ভাবে রাজনীতির এবং রং বদলানোর হাতিয়ার হয়ে ওঠে?"
    এই প্রসঙ্গে এক 'অবোধ' কবির কথা মনে পড়ে যায়, যিনি 'সরকার ' হয়ে যখন যে সরকারে থাকে তাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন এবং তাঁর লেখনীর রং ও বদলে যায়
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৫৫79511
  • "একটি কবিতা লিখে জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন" ---এটার বিষয়ে রেফারেন্স চাই। কোন্‌ কবিতা? কোন্‌ চাকরি? কেন চাকরি গেল? আদৌ এরকম কিছু হয়েছিল কি নাকি এটা পুরোটাই মিথ?
  • b | 4512.139.6790012.6 (*) | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৪79512
  • পুরোটা মিথ নয়, তবে জীবনানন্দ "একটি" কবিতা লিখে চাকরি খোয়ালেন" একটু অতিকথন।
    সিটি কলেজে পড়াতেন। রামমোহন হোস্টেলে সরস্বতী পূজো করা নিয়ে ঝামেলা হয় (ব্রাহ্মদের কলেজ), তার ফলে সুভাষ বোস আদির অন্দোলনে সিটি কলেজে ছাত্র কমে যায়, মাস্টারদের বেতন দেওয়া দুর্ঘট হয়ে পড়ে। কোপ পড়ে কিছু কিছু ডিসপোজেবল মাস্টারের ঘাড়ে, তার মধ্যে জীবনানন্দ ছিলেন।

    রেফারেন্স আপাতত হাতের কাছে নাই। তবে ভালো কোনো লাইব্রেরী থেকে ক্লিন্টন সীলি-র a poet apart বইটায় দেখতে পারেন।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:২১79513
  • আরে অর্থনৈতিক কারণে ছাঁটাই ! কবিতার কারণে তো না! কারণ হয়তো ওঁর সঙ্গে আরো অনেকের ছাঁটাই হয়েছিল।
    "উড়ো খই গোবিন্দায় নমো" করে কবিতার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেয়ার কী মানে? আর কবিতার উপরে দায় যদি চাপেই, তাহলে কোন্‌ কবিতা? কী ছিল সেই কবিতায় যে তার জন্য চাকরি যাবে?
  • b | 562312.20.2389.164 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৪৫79514
  • কোনো কবিতাই নয়, কারণ কবিতা লেখার অপরাধে ওনার চাকরি যায় নি। সুতরাং সেই কবিতায় কিছুই ছিলো না যার জন্যে চাকরি যেতে পারে।
    মানে অনেকটা এরকম

    https://imgur.com/a/ZpbnJpE
  • কুশান গুপ্ত | 340112.215.3456.105 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১৪79518
  • গুরুচণ্ডালীর বন্ধুরা, আমার লেখাকে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

    আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আমার লেখাটি মন দিয়ে পড়ার জন্য। যারা নিরাশ হলেন, তাদের জন্য সমূহ ব্যর্থতা মাথা পেতে নিলাম। কয়েকটি কথা বলা সঙ্গত, তবু এ ঠিক জবাবদিহি নয়।

    আমার এই লেখাটি তুলনায় দীর্ঘ। গুরুতে পাঠানোর পর মনোনীত হওয়ার পরে গুরুর থেকে জানানো হয় এটি তিনটি পর্বে বেরুলে ভাল, কারণ একেবারে দীর্ঘ নিবন্ধ ওয়েবে পড়া ক্লান্তিকর হতে পারে। আদতে এটি একটি সম্পূর্ণ নিবন্ধ। তৃতীয় পর্ব অবধি ধৈর্য যখন রাখা গেল না, ব্যর্থতা মাথা পেতেই নিতে হয়।

    কবিতা বিষয়ে সাধারণ দুচারটি কথা হলেও ঠিক উদ্দেশ্যহীন বা আবছা রচনা লেখার উদ্দেশ্য ছিল না। বাংলা কবিতা কোথাও তার স্বভাব অব্যাহত রেখেছে, আত্মগোপনের পাশাপাশি সোচ্চার আত্মপ্রকাশ, তার বৈচিত্র্য ধরতে চেয়েছিলাম। হয়ত পারিনি।

    পাশাপাশি চর্যা থেকে আজকের কবিতায় কোনও মিল, কোনও প্রবাহ আছে কি? এটাও বুঝতে চেয়েছি। স্থানাঙ্ক, কালাঙ্ক সম্বন্ধে কিছু উপলব্ধ হয় কি? কবিকে কোথায় খুঁজব? কবিতা থেকেই তাঁকে খোঁজা কি সম্ভব? তৃতীয় পর্ব এখনো আসে নি। বাকি কিছু ‘আবছা’, দিশাহীন, অস্পষ্ট কথা থাকবে।

    কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রশ্নে আসি।
    Tim: “এই "অনেকে" রা কারা? কোথায় এসব লেখা/বলা হয়েছে?”
    “কাজেই আশাকরি বুঝতে অসুবিধে হওয়ার নয় কেন "অনেকে"দের কথা জানাটা জরুরি।“

    অনেকে বলতে যেটা সাধারন ভাবে perception বোঝায়। যদি বলি, অনেকেই বলেন আজকের রাজনীতি নৈতিকতা-বিবর্জিত, তাহলে সেটা perception বোঝাতেই ব্যবহৃত মাত্র।
    অনেকের মতামত অনেকের সমীক্ষা নিয়েই করা উচিত। তবু, সমীক্ষা ছাড়াই এক ধরণের জন-চেতনা তৈরি হয়। তবু, বর্তমানের এক প্রথিতযশা কবি তথা সাহিত্যিক তাঁর প্রকাশিত একটি কবিতার বইতে সাম্প্রতিক কবিতা নিয়ে ব্লার্ব-এ কি লিখছেন একটু দেখে নিই:

    “কবিতা আর কেউ পড়ে না। তাই কবিতা লেখা হেভি নিরাপদ। ফাঁকা ফ্ল্যাটে বসে নিজের নাক খোঁটার মতো আনন্দময় ও স্বাধীনতা-জমজমে। এক থেকে পঁচাত্তর অবধি নামতা লিখে কবিতা বলে চালালেও কেউ কিচ্ছু বলবে না। তাই কবিতা লেখার শ্রেষ্ঠ সময় এটাই। কবির অবশ্য আর ফোঁটামাত্র গ্ল্যামার নেই, দর, আদর নেই। কবিতা লেখা প্রায় বন্ধ বাড়িতে একা নাক খোঁটার মতোই অতৎপর ও গ্লানিময়।“
    কবির নাম চন্দ্রিল ভট্টাচার্য। গুরুচণ্ডালি প্রকাশিত ‘এক ব্যাগ নব্বইয়ের’ অন্তর্গত।
    তা, এখানে চন্দ্রিল সম্ভবত কবিতা সম্পর্কে general perception এর কথা বলেছেন।

    Tim-“এরপরে বেশ কিছু প্রশ্ন লেখক দিলেন। সেই প্রশ্নগুলো লেখক করছেন উপরোক্ত "অনেকে"দের। এবং বাকি লেখাটা দাঁড়িয়ে আছে সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া নিয়ে। কাজেই আশাকরি বুঝতে অসুবিধে হওয়ার নয় কেন "অনেকে"দের কথা জানাটা জরুরি।“

    “সেই প্রশ্নগুলো লেখক করছেন উপরোক্ত "অনেকে"দের।“-Tim, আপনার এই অনুমান স্বকল্পিত। আমার এই প্রশ্ন সমস্ত পাঠকদের, যাঁদের কাছে একটা অনেক-সম্বলিত general perception রয়েছে, অন্যদিকে আমার পাল্টা প্রশ্নও রয়েছে।

    Tim-“যেকোন আলোচনা শুরুর ভূমিকায় একথা বলে নিতে হয় যে কেন এই প্রসঙ্গের অবতারণা। সেখানেই ঠিক হয়ে যায় টার্গেট পাঠক কারা। কবিতা কেন পড়বো থেকে শুরু করে সমকালীন কবিদের লেখা কিস্যু হচ্ছে না এই সমস্তই সেখানে আসতে পারে, এমনকি আসা খুব প্রয়োজন বললেও অত্যুক্তি হয়না, কিন্তু গোড়ার কথায় অস্পষ্টতা রেখে সেটা করা চলেনা।“

    আপনার এই প্রকল্পে আমি আংশিক সহমত। সেই ত্রুটি এই রচনায় ছিল।

    “কবিতা পড়ার অভ্যাস বা কবিতা ভালো লাগলেই তাই বিশ্লেষণ করতে বসার মধ্যে বিপদ আছে, কারণ অন্যান্য বিষয়ের মত কবিতা ব্যবচ্ছেদ এবং তা নিয়ে প্রবন্ধ লেখাও একটা ট্রেনিংসাপেক্ষ জিনিস। ঠিকভাবে না করলে যাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে খুব একটা জানেননা তাঁদের মনে হতে বাধ্য, যে কবিতার নিশ্চয়ই তেমন কোন স্পষ্ট ব্যাকরণ নেই। নিশ্চয়ই কবিতা জিনিসটা যেমনতেমন করে চর্চা করা যায়। বাস্তব কিন্তু এর ঠিক বিপরীত।“

    ‘ট্রেনিংসাপেক্ষ জিনিস’ তো বটেই। তবে কবিতার পাঠ, নিবিড় পাঠে আমি আস্থাশীল। এই নিয়ে চর্চা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথাগত কবিতার-ট্রেনিং, কোচ, ইন্সটিটিউট খুঁজে পাইনি। দ্রোণাচার্য নেই। কবিতা পড়ি। কবিতা বিষয়ক নিবন্ধ পড়ি। দেশী, বিদেশী পত্রপত্রিকা পড়ি। আলাপ আলোচনা করি সুযোগ পেলে।
    অনুশীলন করি। চর্চা করি।আত্মস্থ করার চেষ্টা করি।

    Tim-ঠিকভাবে না করলে যাঁরা বিষয়টি সম্পর্কে খুব একটা জানেননা তাঁদের মনে হতে বাধ্য, যে কবিতার নিশ্চয়ই তেমন কোন স্পষ্ট ব্যাকরণ নেই।

    তবু, শেষ কথাটায় আপনি ভুল। কবিতার স্পষ্ট কোনও ব্যাকরণ নেই।কবিতা আলোচনার নানান দৃষ্টিকোণ ও অভিমুখ সম্ভব। এই ব্যাকরণবিহনে কবিতার হাসজারু আর হাতিমি নিয়েই দিব্য আছি।

    “কুশানবাবুর দুই পর্বের লেখায় সেই অস্পষ্টতা এবং কোথাও কোথাও এক ধরণের ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ বিষয়টি সম্পর্কে এরকম ভুল ধারনা তৈরী করতে পারে। আশা করবো লেখক এই বিষয়টা নিয়ে একটু ভাববেন।“

    নিশ্চয় ভাবব।

    সুকি- “মানে আমার মতে প্রশ্ন হতেই পারে, কিন্তু 'জরুরী' প্রশ্ন? তাও আবার কবিতার সিরিয়াস আলোচনায়!”

    পুলক বন্দ্যো সিরিয়াস আলোচনায় ঢুকতে অনীহা কেন? আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন, আবু সয়ীদ আইয়ুব সম্পাদিত সিরিয়াস ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’য় এই কবিতাটি স্থান পেল কী করে?
    ‘শুনেছ কি বলে গেল সীতারাম বন্দ্যো?
    আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ?”
    কিভাবে স্থান পেলেন অন্নদাশংকর?

    Atoz- "একটি কবিতা লিখে জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন" ---এটার বিষয়ে রেফারেন্স চাই। কোন্ কবিতা? কোন্ চাকরি? কেন চাকরি গেল? আদৌ এরকম কিছু হয়েছিল কি নাকি এটা পুরোটাই মিথ?

    রেফারেন্স:
    বুদ্ধদেব বসু-প্রবন্ধ সংকলন

    ‘জীবনানন্দ স্মরণে’-অংশ
    “ আজ নতুন করে স্মরণ করা প্রয়োজন যে জীবনানন্দ, তাঁর কবিজীবনের আরম্ভ থেকে মধ্যভাগ পর্যন্ত, অসূয়াপন্ন নিন্দার দ্বারা এমনভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন যে তারই জন্য কোনো এক সময়ে তাঁর জীবিকার ক্ষেত্রেও বিঘ্ন ঘটেছিলো।এ-কথাটা আর অপ্রকাশ্য নেই যে ‘পরিচয়ে’ প্রকাশের পরে ‘ক্যাম্পে’ কবিতাটির সম্বন্ধে ‘অশ্লীলতার’ নির্বোধ এবং দুর্বোধ্য অভিযোগ এমনভাবে রাষ্ট্র হয়েছিলো যে কলকাতার কোনো-এক কলেজের শুচিবায়ুগ্রস্ত অধ্যক্ষ তাঁকে অধ্যাপনা থেকে অপসারিত ক’রে দেন।“

    এই রেফারেন্স থেকে ‘ক্যাম্পে’ কবিতার রেফারেন্স পাচ্ছি।

    প্রসঙ্গত মনীন্দ্র গুপ্তের গদ্যসঙ্গ্রহে জীবনানন্দ বিষয়ক প্রবন্ধে জানাচ্ছেন, তাঁর উপন্যাসগুলি কিভাবে সন(সাল) মেনে আত্মজৈবনিক। জীবনানন্দের সব উপন্যাস সম্বন্ধেই কথাটি খাটে।

    জীবনানন্দের উপন্যাস থেকে তুলে দিচ্ছি পরের রেফারেন্সঃ
    উপন্যাস- চৌত্রিশ বছর (প্রকাশ-প্রতিক্ষণ)

    “মহিমবাবূ একটা তুলতে তুলতে বললেন-কাজেই- হাইটা শেষ ক’রে বললেন ’-কাজেই , তা ছাড়া, তুমি এ-কলেজে কয়েক বছর কাজ করেছিলে, তোমার কথাটা বিবেচনা না করাও সংস্কারে বাধে- ঠিক করেছিলাম তোমাকে রাখব-
    অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে শৈল বললে- ঠিক করেছিলেন?
    -হ্যাঁ
    -এখন?
    - কিন্তু, তুমি একটা কবিতা লিখেছিলে?
    -কবে?
    -এই কিছুদিন আগে। কবিতাটার নাম-
    ওঃ ‘ক্যাম্পে’; হ্যাঁ, লিখেছিলাম-
    -আমরা জানতাম না যে তুমি আবার লেখ-টেখ; আমাদের কাছে যা রিপোর্ট আসছিল= আমরা খবরের কাগজ ফাগজ, এসব কিছু পড়ি না কিনা- জুনিয়ার স্টাফের কাছ থেকে সমস্ত খবর পাই- অনেকটা ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের মতো-“
    **************
    পেচ্ছাপ করে এসে মহিম বাবূ বললেন – আমাদের ইংরেজী-স্টাফের একজন জুনিয়র লেকচারার কী একটা পত্রিকা নিয়ে এল- তোমার কবিতাটা খুলে প্রিন্সিপ্যালের হাটে দিল; প্রায় দু-আড়াই পৃষ্ঠার কবিতা-তবুও প্রিন্সিপ্যাল ধৈর্য ধরে, আমাদের সবায়ের সামনে কবিতাটা বার-দুই জোরে জোরে পড়লেন- দুএকটা স্ল্যাঙের মানেও আমরা বুঝি নি- কিন্তু তিনি বুঝিয়ে দিলেন- তারপর কবিতাটি বন্ধ করে বললেন, না, এতে, চলবে না।

    Atoz-“আরে অর্থনৈতিক কারণে ছাঁটাই ! কবিতার কারণে তো না! কারণ হয়তো ওঁর সঙ্গে আরো অনেকের ছাঁটাই হয়েছিল।
    "উড়ো খই গোবিন্দায় নমো" করে কবিতার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেয়ার কী মানে? আর কবিতার উপরে দায় যদি চাপেই, তাহলে কোন্ কবিতা? কী ছিল সেই কবিতায় যে তার জন্য চাকরি যাবে?”

    Atoz,ওপরের দুটি রেফারেন্স কি বার্তা দেয়? একটু ভেবে দেখবেন। নিছক অর্থনৈতিক? কবিতার ঘাড়েই দায় কি চাপছে না?

    ভাল থাকুন সবাই।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২২79519
  • "ক্যাম্পে" কবিতাটা আমি পড়েছি। তাতে অশ্লীল কী ছিল যার জন্য চাকরি যাবার মতন গুরুতর কিছু ঘটতে পারে? আর, এরকম একজন বললেন আর চাকরি চলে গেল, এ কি মগের মুল্লুক নাকি? চ্যালেঞ্জ করা যেত না? কর্মীর সুরক্ষা বলে কিছু ছিল না?
    (এর আগে যিনি শিশিরসিক্ত শস্যমঞ্জরীর স্তন এর কথা বললেন, ওটা "ক্যাম্পে" কবিতায় ছিল না।)
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২৬79520
  • এই যে দিয়ে দিলাম "ক্যাম্পে"।

    ক্যাম্পে
    - জীবনানন্দ দাশ

    এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি;
    সারারাত দখিনা বাতাসে
    আকাশের চাঁদের আলোয়
    এক ঘাইহরিণীর ডাকে শুনি –
    কাহারে সে ডাকে!

    কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
    বনের ভিতরে আজ শিকারীরা আসিয়াছে,
    আমিও তাদের ঘ্রাণ পাই যেন,
    এইখানে বিছানায় শুয়ে শুয়ে
    ঘুম আর আসে নাকো
    বসন্তের রাতে।

    চারি পাশে বনের বিস্ময়,
    চৈত্রের বাতাস,
    জোছনার শরীরের স্বাদ যেন্‌!
    ঘাইমৃগী সারারাত ডাকে;
    কোথাও অনেক বনে — যেইখানে জোছনা আর নাই
    পুরুষহিরণ সব শুনিতেছে শব্দ তার;
    তাহারা পেতেছে টের
    আসিতেছে তার দিকে।
    আজ এই বিস্ময়ের রাতে
    তাহাদের প্রেমের সময় আসিয়াছে;
    তাহাদের হৃদয়ের বোন
    বনের আড়াল থেকে তাহাদের ডাকিতেছে
    জোছনায় –
    পিপাসার সন্ত্বনায় — অঘ্রাণে — আস্বাদে!
    কোথাও বাঘের পাড়া বনে আজ নাই আর যেন!
    মৃগদের বুকে আজ কোনো স্পষ্ট ভয় নাই,
    সন্দেহের আবছায়া নাই কিছু;
    কেবন পিপাসা আছে,
    রোমহর্ষ আছে।

    মৃগীর মুখের রূপে হয়তো চিতারও বুকে জেগেছে বিস্ময়!
    লালসা — আকাঙক্ষা — সাধ — প্রেম স্বপ্ন স্ফুট হয়ে উঠিতেছে সব দিকে
    আজ এই বসন্তের রাতে;
    এই খানে আমার নক্‌টার্ন –়

    একে একে হরিণেরা আসিতেছে গভীর বনের পথ ছেড়ে,
    সকল জলের শব্দ পিছে ফেলে অন্য এক আশ্বাসের খোঁজে
    দাঁতের — নখের কথা ভূলে গিয়ে তাদের বোনের কাছে অই
    সুন্দরী গাছের নীচে — জোছনায়!
    মানুষ যেমন করে ঘ্রাণ পেয়ে আসে তার নোনা মেয়েমানুষের কাছে
    হরিণেরা আসিতেছে।

    – তাদের পেতেছি আমি টের
    অনেক পায়ের শব্দ শোনা যায়,
    ঘাইমৃগী ডাকিতেছে জোছনায়।
    ঘুমাতে পারি না আর;
    শুয়ে শুয়ে থেকে
    বন্দুকের শব্দ শুনি;
    চাঁদের আলোয় ঘাইহরিণি আবার ডাকে;
    এইখানে পড়ে থেকে একা একা
    আমার হৃদয়ে এক অবসাদ জমে ওঠে
    বন্দুকের শব্দ শুনে শুনে
    হরিণীর ডাক শুনে শুনে।

    কাল মৃগী আসিবে ফিরিয়া;
    সকালে — আলোয় তারে দেখা যাবে –
    পাশে তার মৃত সব প্রেমিকেরা পড়ে আছে।
    মানুষেরা শিখায়ে দিয়েছে তারে এই সব।

    আমার খাবার ডিশে হরিণের মাংসের ঘ্রাণ আমি পাব,
    মাংস খাওয়া হল তবু শেষ?
    কেন শেষ হবে?
    কেন এই মৃগদের কথা ভেবে ব্যথা পেতে হবে
    তাদের মতন নই আমিও কি?
    কোনো এক বসন্তের রাতে
    জীবনের কোনো এক বিস্ময়ের রাতে
    আমারেও ডাকে নি কি কেউ এসে জোছনায় — দখিনা বাতাসে
    অই ঘাইহরিণীর মতো?

    আমার হৃদয় — এক পুরুষহরিণ –
    পৃথিবীর সব হিংসা ভুলে গিয়ে
    চিতার চোখের ভয় — চমকের কথা সব পিছে ফেলে রেখে
    তোমারে কি চায় নাই ধরা দিতে?
    আমার বুকের প্রেম ঐ মৃত মৃগদের মতো
    যখন ধূলায় রক্তে মিশে গেছে
    এই হরিণীর মতো তুমি বেঁচেছিল নাকি
    জীবনের বিস্ময়ের রাতে
    কোনো এক বসন্তের রাতে?

    তুমিও কাহার কাছে শিখেছিলে!
    মৃত পশুদের মতো আমাদের মাংস লয়ে আমারও পড়ে থাকি;
    বিয়োগের — বিয়োগের — মরণের মুখে এসে পড়ে সব
    ঐ মৃত মৃগদের মতো –
    প্রেমের সাহস সাধ স্বপ্ন বেঁচে থেকে ব্যথা পাই, ঘৃণা মৃত্যু পাই;
    পাই না কি?
    দোনলার শব্দ শুনি।
    ঘাইমৃগী ডেকে যায়,
    আমার হৃদয়ে ঘুম আসে নাকো
    একা একা শুয়ে থেকে;
    বন্দুকের শব্দ তবু চুপে চুপে ভুলে যেতে হয়।
    ক্যম্পের বিছানায় রাত তার অন্য এক কথা বলে;
    যাহাদের দোনলার মুখে আজ হরিণেরা মরে যায়
    হরিণের মাংস হাড় স্বাদ তৃপ্তি নিয়ে এল যাহাদের ডিশে
    তাহারাও তোমার মতন –
    ক্যাম্পের বিছানায় শুয়ে থেকে শুকাতেছে তাদের ও হৃদয়
    কথা ভেবে — কথা ভেবে — ভেবে।

    এই ব্যথা এই প্রেম সব দিকে রয়ে গেছে –
    কোথাও ফড়িঙে — কীটে, মানুষের বুকের ভিতরে,
    আমাদের সবের জীবনে।
    বসন্তের জোছনায় অই মৃত মৃগদের মতো
    আমরা সবাই।
  • r2h | 232312.171.670112.90 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩২79521
  • 'এরকম একজন বললেন আর চাকরি চলে গেল, এ কি মগের মুল্লুক নাকি? চ্যালেঞ্জ করা যেত না? কর্মীর সুরক্ষা বলে কিছু ছিল না?'

    এটা নিয়ে সন্দেহ আছে? আশ্চর্য হলাম। কর্মী সুরক্ষা ইত্যাদি তো সেদিনের কথা।

    প্রাইভেট সেক্টরে এখনো বা এমন কী, দুটো অ্যাপ্রাইজালের ব্যাপার।
  • r2h | 232312.171.670112.90 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩৬79523
  • মানে এটা তো প্রচলিত মতই। এটা নিয়ে অবাক হতে দেখেই অবাক লাগছে। প্রতিষ্ঠিত নয়, কিন্তু প্রচলিত, সরস্বতী পূজা/ ব্রাহ্ম প্রভাব এটা তো পরে এল, সৈকত যেমন বলেছেন।
    আজ অশ্লীল লাগছেনা, সেই সময়ের রুচিতে পিটপিটে ভিক্টোরিয়ান ব্রাহ্ম অধ্যক্ষের লেগেছিল, এতেও অবাক হওয়ার কিছু দেখিনা।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪১79524
  • কিন্তু সিটি কলেজের চাকরি যাবার ঘটনা ১৯২৭ সালের, ক্যাম্পে কবিতাটা লেখা হয় ১৯৩১ সালে। কালানৌচিত্য ঘটছে।
  • r2h | 232312.171.670112.90 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪৩79525
  • হ্যাঁ, সন তারিখ দেখলে সিটি কলেজের ব্যাপারটা দাঁড়ায় না কোন মতেই।
  • সৈকত | 340112.99.675612.98 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪৮79515
  • উঁহু, কবিতার প্রসঙ্গ তো ছিলই। অচিন্ত্যকুমার 'কল্লোল যুগ' বইতে চাকরি যাওয়ার কথা লেখার পর থেকেই। 'ঝরা পালক' বইয়ের একটি কবিতা, যেখানে একটি বাক্যে, শস্যশীর্ষকে স্ফূটোন্মুখ স্তনের সাথে তুলনা করা হয়েছিল, কারণ ছিল এটিই, অচিন্ত্যকুমার সেইরকমই লিখেছিলেন। সরস্বতী পূজো, ছাত্রদের ছেড়ে যাওয়ার সাথে ঘটনাটি যুক্ত হোল তো মনে হয়, ডিটেলসগুলো ভূমেন গুহ লেখার পরে; আমি অন্তত সেখানেই পড়ি।
  • r2h | 232312.171.670112.90 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৭79526
  • তবে বুদ্ধদেব বসু, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ড সুকুমার রায়, কে যেন একজন প্রাক্তন সহকর্মী নাম ভুলে গেলাম - এত লোক অশ্লীলতা অভিযোগে চাকরী যাওয়ার ব্যাপারটা লিখেছেন তাই ধন্দ থেকে যায়।
  • এলেবেলে | 2345.110.565623.113 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:০১79527
  • ক্যাম্পে লেখার জন্য জীবনানন্দ চাকরি খুইয়েছিলেন জাতীয় একটি ধারণা অনেক দিন যাবত চালু আছে। এ্রটির বিরোধিতা করেছিলেন সুনীল, উদ্বৃত্ত অধ্যাপক হওয়ার কারণেই তাঁর চাকরিটি গিয়েছিল এমন বলেছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে কাল 'বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত' থেকে রেফারেন্স দেওয়ার চেষ্টা করব।
  • এলেবেলে | 2345.110.565623.113 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:০৩79528
  • *যাবৎ
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:০৫79529
  • আগাম ধন্যবাদ, এলেবেলে। আপনাকেই এখানে দরকার ছিল। রেফারেন্সের অপেক্ষায় রইলাম।
  • কুশান | 238912.66.568912.250 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:১১79530
  • 'চৌত্রিশ বছর' উপন্যাসটি 1932 সালে রচিত। 1927 এ সিটি কলেজের চাকরি যায়। বই উল্টে দেখলাম, এখন আলোচনার পর এই উপন্যাস উল্টে আবার দেখছি এই অংশ:
    -ইংরেজির লেকচারারশিপটার জন্য তুমি চেষ্টা করো না-

    -চেষ্টা মানে?

    -আপাতত, একটা এপ্লিকেশন করো-

    -করেছি

    -করে ফেলেছ এর মধ্যে?

    শৈল বললে-কিন্তু, ইচ্ছে করে না ওখানে আর কাজে যেতে

    -কেন?

    -আমি ঐ কলেজেই তো আগে কাজ করতাম, জানো?

    -হ্যাঁ

    -ওরা আমাকে কেন ছাড়িয়ে দিয়েছিল, তা জানো?

    -কেন?

    -অশ্লীল কবিতা লিখেছিলাম ব'লে-

    চৌত্রিশ বছর থেকে আগের অংশটি যেটুকু উদ্ধৃত করেছি সেগুলো অনেক পরের পাতায়। সেখানে 'ক্যাম্পে' কবিতাটির রেফারেন্স আছে। এই অংশে কবিতাটির নাম নেই।
  • b | 4512.139.6790012.6 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:১৮79516
  • কিন্তু ঠিক "কবিতা লেখার অপরাধে" কি চাকরি গেছিলো? উৎপল বসুর গেছিলো অশ্লীল কবিতা লেখার ডাইরেক্ট চার্জে। জীবনানন্দের ক্ষেত্রে ওটা সাফিশিয়েন্ট নয়, অন্য অনেকগুলো ফ্যাক্টরও ছিল।

    অচিন্ত্যকুমারের কল্লোল যুগ ঠিক প্রামাণ্য বলে মনে করি না, ভদ্রলোক মনের সুখে নিজের পিঠ চাপড়েছেন।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:২১79531
  • ক্যাম্পে কবিতাটাই তো লেখা এবং প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩১ সালে। তার জন্য ১৯২৭ সালে কীভাবে চাকরি যেতে পারে? এ যেন অপরাধ করার চার বছর আগেই ধরে জেলে দিয়ে দেবার মতন কেস! ঃ-)
  • কুশান | 238912.66.568912.250 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:৪০79532
  • Ato আগের অংশটি পড়ুন।
    উনি(জীবনানন্দ) বলছেন অশ্লীল কবিতা লেখার জন্য চাকরি গেছে।
    1927 এ চাকরি গেছে।
    কবে বলছেন? 1932 এর উপন্যাসে।
    1932 এর উপন্যাসে ই ক্যাম্পের উল্লেখ আছে। সেটি আগের অংশে রয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে 'ক্যাম্পে' কবিতাটি বছর খানেক আগে লিখেছেন। অর্থাৎ দুটি মিলিয়ে পড়লে বোঝা যাচ্ছে ক্যাম্পের জন্য চাকরি যায় নি। অন্য কোনো 'অশ্লীল' কবিতার জন্য গেছে।

    'ক্যাম্পে' র রেফারেন্স দিচ্ছেন বু.ব যে নিবন্ধ তিনি 1952 স
    অনেক পরে লিখেছেন।
    1932 র উপন্যাস এটি অত্যন্ত strong reference. স্বয়ং জীবনানন্দ রচিত এটি যদি প্রামাণ্য রেফারেন্স না হয় তাহলে নিরূপমাকে মরিয়া প্রমাণ করতে হয় তিনি মরেন নাই।

    আর স্বয়ং জীবনানন্দ এই উপন্যাস প্রকাশ করেন নি। এটি প্রতিক্ষণ প্রকাশিত বছর দশেক আগেকার। কিছু আগেরও হতে পারে।
    এটিকে প্রামাণ্য না ধরা হলে জর্জ বিশ্বাসের ব্রাত্যজনকেই বা প্রামাণ্য ধরি কী করে?
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:৪৯79533
  • আরে বাবা ওটা তো উপন্যাস, আত্মজীবনী বলে তো দাবী করেন নি তিনি!
    এখন আমরা যদি কৃত্তিবাসকে রামচন্দ্র বলে চেপে ধরি, তাহলে কী করে হয়? ঃ-)
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:৫২79534
  • আর বারে বারে ঘেঁটে যাচ্ছে তো এইজন্যই।
    "ক্যাম্পে"র জন্য গেছে নাকি যায় নি? এইটাই তো ঘেঁটে যাচ্ছে। ক্যাম্পের জন্য যদি না যায়, যদি অন্য কোনো "অশ্লীল কবিতার জন্য যায়, তাহলে সেটি কোন্‌ কবিতা?
  • সৈকত | 340112.99.675612.98 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:০১79517
  • ঠিকই, আগে মনে করা হত কবিতা লেখার জন্যই জে দাসের চাকরি গেছিল, এখন সেটা মনে করা হয়্না; পুরোপুরি ঠিক নয়। ভূমেন গুহর বক্তব্য ছিল মনে হয়, কবিতা লেখার জন্য জে দাস, কর্তৃপক্ষের ভাল নজরে ছিলেন না, তারপর কলেজের ঝামেলা যুক্ত হয়ে অন্যান্যদের সাথে চাকরিটি যায়। আর উৎপলকুমার বসুর ক্ষেত্রে ব্যাপরটা সরাসরিই। কলেজে গিয়ে চুপচাপ পড়িয়ে চলে আসতেন, কেউ জানতই না যে উনি কবিতা লেখেন, কিন্তু কবিতাটি বেরোবার পরে (পোপের সমাধি ?) চাকরিটি যায়; সেই কবিতায় মনে হয় বোনের প্রতি প্রেমাকাঙ্খা প্রকাশ পেয়েছিল।

    'কল্লোল যুগ' কতখানি পিঠ চাপড়ানো জানিনা, কিন্তু কত যে কবি-লেখকের নাম পাওয়া যায় - ঐ বইটি আর কল্লোল যুগের গল্প সংগ্রহ - এই দুইটি বই ছাড়া আর মনে হয় কোথাও তাঁদের উল্লেখ নেই !!
  • Tim | 89900.253.8956.205 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৮79535
  • ওপরের আলোচনা বা অনুসন্ধান ফলো করছি।

    @ কুশান,

    ধন্যবাদ উত্তর দেওয়ার জন্য। "অনেকে" জায়গাটা সাধারণ পারসেপশন হিসেবে লিখেছেন বুঝলাম। চন্দ্রিলের উদাহরণ দিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে বলি, চন্দ্রিল সাম্প্রতিক অতীতে কিছু সুইপিং স্টেটমেন্ট দিয়েছেন, কখনও বাংলাভাষার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তো কখনও বাঙালীর স্বভাবচরিত্র নিয়ে। সেগুলোর অনেকগুলোই অতিসরলীকরণ। লেখার শুরুতেই যদি "চন্দ্রিল ভট্টাচর্য্যের মত কোন কোন কবি মনে করেন..." বলে দেওয়া যেত তাহলে এই কনফিউশন খানিকটা এড়ানো যেত হয়ত।

    পরের অংশ নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিলো, "সংবিগ্ন পাঠককুল" কারা?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন