এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কাব্য

  • আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - দ্বিতীয় পর্ব

    কুশান গুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    কাব্য | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ৭৬২১ বার পঠিত
  • প্রথম পর্ব
    কবিতার উপযোগিতা নিয়ে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন

    অনেকে একথা বলছেন যে আজকের জীবনে কবিতার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। অনেকে বলছেন কবিতার কোনো ভূমিকাই নেই আর, কবিতা আজ সম্পূর্ণই অপ্রাসঙ্গিক। কেউ বা অভিযোগ করেন সমসময়ের সঠিক চেহারা কবিতাতে নেই। আজকের কবিতা ও কবিরা, সেহেতু, ব্যর্থ। কিন্তু, প্রশ্ন এসে গেল, কবিতার কি কোনো সামাজিক দরকার নেই? কবিতার সামাজিক উপযোগিতা নিয়ে লিখতে আমি সার্বিকভাবে অক্ষম হলেও দু-চারটি জরুরী প্রশ্ন উত্থাপন করি। এর উত্তর দেওয়ার দায় কারুর খুব একটা নাই থাকতে পারে, এইসব প্রসঙ্গ চাইলে ফেলেও দিতে পারেন, তবু লিখছি:

    ১) কি কারণে একটি কবিতা লিখেই জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন? কি এমন বিস্ফোরক বস্তু ছিল তাতে যে একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত চাকরি হারাতে পারেন? তিনি তো ততদিন অবধি খুব একটা কেউকেটা কবি ছিলেন না।
    ২) কি কারণে হাংরির তদ্যবধি নাম না জানা কবিদের পেছনে রাষ্ট্র পুলিশ লেলিয়ে দেয়? ব্যাপার মামলা ও কোর্ট অবধি গড়ায়। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গিন্সবার্গ আবু সাইদ আয়ুবকে চিঠি লিখে জানান, আপনারা প্রতিবাদ করুন।
    ৩)কেনই বা আজকের জনপ্রিয় এক কবির একটি কবিতা নিয়ে তাঁর বিরূদ্ধেও মামলা হয়, হামলার ভয় দেখায় উগ্র ও অন্ধ সাম্প্ৰদায়িক লোকজন? ফেসবুক উত্তাল হয়ে ওঠে? ব্যাপার এতদূর গড়ায় যে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
    ৪) কেন একটি নকশালপ্রভাবিত ছাত্র সংগঠন লেনিন দিবসে সুভাষ মুখোপাধ্যায় নামক এক কবির কোটেশন তাদের পোস্টারে দেয়? মনে রাখতে হবে ইউনিয়নে থাকার কমপালশন এবং ভোট পাওয়ার দায় তাদের রয়েছে। উক্ত কবির বিরুদ্ধে জয়দেব বসু ‘ঘেন্না’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
    ৫) কেন আমরা বই না দেখে জনপ্রিয় গদ্যও কোট করতে পারিনা, অথচ, এমনকি অনেক আধুনিক কবিতা নির্ভুল গড়গড় করে অনেকেই বলে যেতে থাকেন?
    ৬) মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ব্যানারে কেন জীবনানন্দের একটি অরাজনৈতিক কবিতা, যার তেমন এক রাজনৈতিক ঝাঁঝ নেই, শ্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত করেছিল?রূপসী বাংলার উক্ত ব্যবহৃত কবিতাটি:
    'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি...'
    ৭) কিভাবে বেস্ট সেলার 'মাধুকরী' উপন্যাসে জনপ্রিয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ এতগুলি সমকালীন বাংলা কবিতার অংশ তুলে ধরলেন? যদি সমকালীন বাংলা কবিতা সম্পর্কে পাঠক এতই বিমুখ তাহলে এই বই বাজারে কাটলো কি করে? মার্কেট রিস্ক ছিল না?
    ৮) কেন ‘ফিরে এসো চাকা’র ‘একটি উজ্জ্বল মাছ’ সৃজিত তাঁর একটি থ্রিলারধর্মী ছবিতে ব্যবহার করলেন? ওই ছবি কি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল?
    ৯) 'দেখতে ভালো মাখতে খারাপ' একটি সাবানের বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইন। এই লাইন কতটা গদ্য, কতটা কবিতা?
    ১০) পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না' গদ্যের না কবিতার, কিসের কাছাকাছি?
    ১১) চন্দ্রবিন্দুর গান প্রসঙ্গেও একই প্রশ্ন। এগুলি বিক্রয়যোগ্য সঙ্গীত হলেও কিছু উত্তরাধুনিক কবিতার এলিমেন্ট কি নেই?
    ১২) নীহার রঞ্জন রায়ের আকরগ্রন্থ 'বাঙালির ইতিহাসে' কি কোনো কবিতা বা কবির উল্লেখ নেই?

    এইসব প্রশ্নগুলির উত্তর নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও নিজের আবছা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। কিন্তু, প্রশ্নগুলিতে কবি ও কবিতার ব্যবহারিক ও বাস্তবসম্মত দিকগুলিই রাখলাম।সংবিগ্ন পাঠককূল, সম্ভাব্য উত্তরগুলি নিয়ে একটু ভাবুন। সামাজিক জীবনে কবিতার উপযোগিতা ও প্রাসঙ্গিকতা হিসেবে হয়তো এগুলি বিবেচিত হতে পারে।

    ~~~~~~

    চর্যা কি আজও প্রাসঙ্গিক? স্থানাঙ্ক যদি হয়, কালাঙ্ক বলে কিছু হয় না?

    প্রথমে যে প্রসঙ্গ তুলেছিলাম সেই প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কি উপায়ে কবিতা তৈরী হয় কেউ কি আদৌ জানে? মনে পড়ছে, সত্তরের কোন এক সালে, সম্ভবত ১৯৭৮(ভুল হতে পারে), 'অমৃত' নামক পত্রিকায়, সমকালীন দশ বারোজন কবিকে কবিতাসংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। কয়েকটা প্রশ্ন স্মৃতি থেকেই লিখছি।
    ১) কেন লেখেন?
    ২) কবিতায় শব্দের গুরুত্ব কি?
    ৩) কিভাবে লেখেন?
    ৪) সমকালীন কোন কোন কবি আপনাকে প্রভাবিত করেন?
    ৫) আপনি কি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ?

    বলাই বাহুল্য, বিভিন্ন কবির উত্তর বিভিন্ন ধরনের ছিল। এটাই স্বাভাবিক, কেননা শিল্প বা সাহিত্যে কোনোদিনই স্থির সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল ও অনুচিত। তাছাড়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির উত্তর এমনকি পদার্থবিদ্যার সামান্য উত্তরপত্রে যদি আলাদা হয়, তাহলে কবিতাতে আরো বেশি হওয়ারই কথা।কবির তালিকায় জয় গোস্বামী, রণজিৎ দাশ, বীতশোক ভট্টাচার্য, অনন্য রায়, তুষার চৌধুরী প্রমুখ ছিলেন। এটুকু মনে আছে যে জয় গোস্বামী ও বীতশোকের উত্তরগুলি ছিল বেশ দীর্ঘ। রণজিৎ দাশের উত্তর ছিল এতটাই সংক্ষিপ্ত যে মনে হবে যেন অবজেক্টিভ প্রশ্নের উত্তর লিখছেন। মনে পড়ছে রনজিতের 'কেন লেখেন' এর জবাবে লেখেন এই ধরণের এক লাইনের উত্তর:'আমার লিখনপ্রতিভা ও লিখনঅভ্যাস আছে তাই লিখি।' রণজিৎ জীবনানন্দ হলে 'হৃদয়ের মধ্যে রয়েছে এক বোধ, তারে আমি পারিনা এড়াতে'-হয়তো বা বলতেন। কিন্তু, পাঠক, ভেবে দেখুন, রণজিতের কথা ও জীবনানন্দের কথা কি এক নয়?

    'সমকালীন কোন কোন কবি আপনাকে প্রভাবিত করেন?' এই প্রশ্নের উত্তরে বীতশোক সম্ভবত উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি কালের বিভাজন মানেন না এবং চর্যার কবিরা তাঁকে খুবই প্রভাবিত করেন। প্রসঙ্গত, বীতশোকের তরুণ বয়সের এক দুঃসাহসিক কাজ ছিল, 'হাজার বছরের বাংলা কবিতা' বলে এক সম্পাদিত গ্রন্থ, যা সম্ভবত অধুনালুপ্ত। এখানে একটি তথ্য দিয়ে রাখি। তরুণ কবি সোমনাথ রায়ের ২০১২ তে প্রকাশিত 'ঘেন্নাপিত্তি'তে ও চর্যার কবিতাপ্রয়াস পাচ্ছি। লক্ষ্য করুন সোমনাথের এই প্রয়াস:
    মূল পদঃ কাহ্নুপাদানাম্
    চর্যাপদ-১০ (রাগ দেশাখ)

    নগরবাহিরি রে ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ।
    ছোই ছোই জাহ সো বাহ্মনাড়িয়া॥
    আলো ডোম্বি তোএ সম করিব মা সাঙ্গ।
    নিঘিন কাহ্ন কাপালি জোই লাংগ॥
    এক সো পদুমা চৌষঠ্‌ঠী পাখুড়ী।
    তহিঁ চড়ি নাচঅ ডোম্বী বাপুড়ী॥
    হা লো ডোম্বি তো পুছমি সদভাবে।
    আইসসি জাসি ডোম্বি কাহরি নাবেঁ॥
    তান্তি বিকণঅ ডোম্বি অবরনা চাংগেড়া।
    তোহোর অন্তরে ছাড়ি নড়পেড়া॥
    তু লো ডোম্বী হাঁউ কপালী।
    তোহোর অন্তরে মোএ ঘেণিলি হাড়ের মালী॥
    সরবর ভাঞ্জিঅ ডোম্বী খাঅ মোলাণ।
    মারমি ডোম্বি লেমি পরাণ॥

    প্রেম (কাহ্নপার পদ থেকে)

    প্রেমের আশ্চর্য বাড়ি সব হিসেবের থেকে দূরে
    জাতিভেদে বিত্তভেদে সবাই কখনও আসে ঘুরে
    এইবারে, দ্যাখ প্রেম আমিও দেখতে যাব তোকে
    ঘৃণাজয়ী যোগী আমি, লজ্জা ছেড়েছি নির্মোকে-
    সৃষ্টির রহস্যমূলে রতিকলা কামনার ঘোর
    সেইখানে লীলাময়ী প্রেম তোর নাচের আসর
    আমিও মোহিত হই, বিনম্রে রাখি জিজ্ঞাসা
    অজানার কোন পথে আশ্চর্য এই যাওয়া-আসা?
    যে সুতোয় বেঁধে দিস অদৃশ্য আলোর উজানে
    রঙের নেশায় মজে ভুলে গেছি বাকি সব মানে
    সেই পথে পথ হেঁটে পথ ভুলে আমি কাপালিক
    কামনাও হারিয়েছে এই শব, হাড়ের অধিক-
    শুকায় করুণাধারা, খায় প্রেম জীবনের সার
    সেই প্রেম খাব আমি সৃষ্টিচক্র করে ছারখার।

    কাহ্নু আজ বেঁচে থাকলে এই দেখে খুশি হতেন যে হাজার বছর পরে তাঁর কবিতা কিভাবে, কোন এক আশ্চর্য শুশ্রূষায় বেঁচে আছে। হরপ্রসাদও হয়ত অখুশি হতেন না।রবীন্দ্রনাথের 'আজি হতে শতবর্ষ পরে' এই কবিতা কি কোনো আশাবাদ না কি এক ধরণের অমরত্বের প্রত্যাশা? এই সেই অমরত্বের প্রত্যাশা যাকে সুনীল কবিতার তাচ্ছিল্য দিয়েই নেগেট করেন।কবীর সুমন 'মুখে মুখে ফেরা গানে', বেহুলার ইমেজ দিয়ে জানান যে বৈধব্য বাংলার রীতিই নয়। মনে প্রশ্ন ও সংশয় আসে, লখিন্দর কেন 'কালকেউটের' ছোবলে মারা গেলেন।লখিন্দরের মৃত্যু তো কালনাগিনীর কামড় বলেই তো ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি। প্ৰশ্ন পায়, উত্তরও তো জানাই, তবু, মাঝে মাঝে মনে হয় একটু স্তব্ধতার গান শুনি। সুমনের গান কি গান না কবিতা? পল সাইমন কি গায়ক না কবি? ববি ডিলান কি নোবেল পেলেন কবিতার কারণে? তাহলে সুমনকে আমাদের দেশ, আমাদের বাংলা কেন সাহিত্যে পুরস্কার দিতে পারে না।

    কিন্তু, চর্যার স্রষ্টারা কি আজকের সোমনাথের এই ভাষা বুঝে ফেলতেন? হালকা আন্দাজে বলছি, তাঁরা কি জানতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক এক দেশ রয়েছে, যেখানে বসে হয়তো এই কবিতা লিখছেন এক গবেষক তরুণ কবি সোমনাথ।

    হাজার বছর আগের কবিরা এমনকি আজকের ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট দেওয়া কবিদের সঙ্গেই যেন কিভাবে এক অলীক আত্মীয়তায় রয়েছেন। তাই , কাহ্নু, কৃত্তিবাস, জয়, বিনয় , সুনীল, মৃদুল, জয়দেব(বসু), সোমনাথ যেন নিরবচ্ছিন্ন কালপ্রবাহে একই সূত্রে বাঁধা, কিন্তু তাদের দেশ একই।সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রে।মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতায় সত্যজিৎ রায়ের কথা। মনে পড়ে গেল বিভূতি ভূষণ। অপুর হাতে ধরা গ্লোব, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতা আবৃত্তি করে অপু এই পুরস্কার জিতেছিল। সুদুরের পিয়াসী, কৌতূহলী, অপু এই গ্লোব সবসময় হাতে রাখত, সত্যজিতের ‘অপরাজিত’ সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু এও মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ: ' সত্যেন করতেন কিছু/যদি না ছুটতেন ছন্দের পিছু পিছু'।

    ভাষার ধরণ ভিন্ন কবিতে কবিতে, স্থানে আর কালে। যদি স্থানাঙ্ক বলে কিছু হয়, কালাঙ্ক বলে কি কিছু হয়? চর্যার প্রসঙ্গ আবার উত্থাপন করে বলি বীতশোক তাঁর একটি নিবন্ধে লিখেছেন যে চর্যার যুগে কবি বলে কোনো আলাদা পেশাদার ছিলেন না। চর্যার কবিরা জাল বুনতেন, চাষ করতেন, শিকার টিকার করতেন, এমনকি ফাঁসিও দিতেন।এই নিবন্ধ লেখা হয়েছিল আনুমানিক আশির দশকে। বীতশোকের পরবর্তী যুক্তি, আজকের আশির দশকে একই রকম প্রবণতা। অর্থাৎ, কবি বলে এখন আলাদা কেউ নেই। অধ্যাপক কবি, ব্যবসায়ীও কবি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্ৰমুখও কবি। যদি এই হাইপোথিসিসে কিছু সারবত্তা থাকে, তাহলে কি ২০১৮ এ একথা সত্য নয়? ২০০০ সন থেকে কি বিশ্বে, ভারতে, তথা বাংলায় কোনো গুণগত উল্লমফন হয়নি ভাবনায়, ভাষায়, ভঙ্গিতে?আজকের কবিতার ভাষা বোঝাতে বেছে নিলাম আপাতত একটি নাম, সায়ন কর ভৌমিক, তুলছি কবিতার অংশ, যেখান থেকে ব্যক্তি সায়নকে খুঁজুন, দেখুন স্থান ও কালকেও:
    'আজকাল সব ছন্নছাড়া হয়ে গেছে, রক্তচাপ, ক্ষুধামান্দ্য, সংসার, এমনকী যৌন সততা পর্যন্ত, রাতে ঘুম নাই, বাটামের ভয় আছে না?
    কিন্তু সে যাই হোক; এইসব শূন্য দশক, একের শতক এইসবই কিন্তু গাপ হয়ে ছিল নব্বইয়ের ভাঁজে।
    দহরম মহরম ছিল বাপু, তাহাদের সাথে। সাতে পাঁচেই ছিল সব, নয়ে ছয়ে, বাহান্ন তিপান্নতেও ছিল সব বাইপাসের ধারে ভুট্টাপোড়ার সাথে দুইটি ছিলিম।'

    যদি পড়তে পড়তে অনভ্যস্ত পাঠক অবিরত ধাক্কা খান, তবে পড়ুন পরের অংশটি:
    'টরেটক্কা সংকেত পাঠাই, পদ্য লিখি এখানে ওখানে
    ইউক্যালিপটাসের পাতা, ভেজাল দিই, এদিক ওদিক, একপাতায় ছাপিয়ে দিই টরেটক্কা,
    ক্যাপ্টেন স্পার্ক হলে ধরে ফেলতো ঠিক, বুঝে নিত সন্ধে নামার ঝোঁকে
    জনবহুল সাইকেলরিক্সাসঙ্কুল পথের কোনাখামচি ঘেঁষা
    ভুলভাল কোড।'

    এখানে পড়তে পড়তে প্রশ্ন আসতে পারে যৌন সততা আবার কি জিনিস? বাইপাস এই শব্দটি কবে থেকে কলকাতায় ঢুকে পড়ল তা ধরতে নির্ণায়ক কি এই কবিতা? 'ছিলিম', 'বাটামের ভয়', 'ভুলভাল' এগুলি তো চালু আড্ডার শব্দ যা আমরাও বলেছি। কিন্তু এই কবিতার প্যাটার্ন কি শক্তি, জয়, মৃদুল, জয়দেব থেকে কি অন্যরকম নয়?
    কোড বললে তা কতটা সফটওয়ার কোড? মনে পড়তে পারে কি ড্যান ব্রাউন? তাছাড়া সেমিওটিক্স বা চিহ্নবিদ্যা দিয়ে তৈরি 'মিনিং মেকিং' প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে? কি এখানে 'কোড'? মনে পড়তে পারে 'অথর ইজ ডেড' র প্রকল্প? ব্যানাল এই শব্দটি কবিতায় লেখা সঙ্গত? পাঠক কি কবির কবিতা ধরতে পারছে না? ধরার জন্য কি ক্যাপ্টেন স্পার্ক হতে হয়? কবি কি শক্তির পুরনো কিসসা আনলেন : পাঠককে এগিয়ে আসতে হয়, হৃদয় দিয়ে, দরদ দিয়ে, মগজ দিয়ে?কবি-পাঠকের সহাবস্থান কি এইসব কথায় রয়েছে? তাছাড়া শূন্য দশকের নির্মাণে কি নব্বইয়ের ভূমিকা ছিল?

    ~~~~~~

    কামিনী রায়ের কবিতা কি রবি ঠাকুর লিখতে পারতেন? যশোধরার কবিতা কি পুরুষ কবি লিখতে সক্ষম?

    ফেমিনিজমের অতিচর্চিত পুরনো কচকচানিতে না গিয়ে বলি সেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে যখন দেশ তথা ভারত, বাংলা আসলে ব্রিটিশ ভারত বা ব্রিটিশ বাংলা, ততদিন থেকে কামিনী রায় সহ একাধিক কবি তাঁদের কবিতা লিখছেন। এবং কামিনী রায়ের, 'পাছে লোকে কিছু বলে' আজও সমান প্রাসঙ্গিক না হলে এক ধরণের দ্বিধাগ্রস্ততা আজও কেন মহিলা কবির গলায়? পুরুষ বা নারী বিভাজন যদি নাই থাকে তাহলে কিভাবে তৃতীয় লিঙ্গ বলে একটা ব্যাপার থাকবে?
    তবুও মেয়েদের ঋতুকালীন প্রসঙ্গ আজ অনেক অকপট। তাই তাঁরা সেদিনের দ্রৌপদীর রূপা গাঙ্গুলির মত মেক আপ চড়িয়ে বস্ত্রহরণের সময় কনফিউজড স্বামীর হঠকারিতার জন্য কৃষ্ণকে বা নীতিশ ভরদ্বাজকে ডাকবেন না। কালকের দ্রৌপদী আজকের মহাশ্বেতার রক্তাক্ত দোপদী মেঝেন হয়ে এগিয়ে বলছেন: কাউন্টার কর, কাউন্টার কর। আজকের মহিলাদের কবিতার সুর বরং লিরিকস্বভাব হারিয়ে ফেলছে, আবার পুরুষ কোনো কবি ছন্দের ঝোঁক এত বেশি লিরিক লিখছেন যে তাতে যেন ধার ও ভার কমে যাচ্ছে।
    আজকের মেয়েদের দায়িত্ব নিতে অনেক বেশি হয়, অথচ তারা পুরোনো ট্রাডিশনের সিঁদুর মুছে ফেলছেন, কেমন একটা ছন্নছাড়া ভাব যেন তাদের, এমন এক পুরুষতান্ত্রিক অভিযোগ বাড়ছে। কেমন হয় তাঁদের কবিতা, যারা ফর্ম ফিলাপে বাধ্যত বা স্বতঃস্ফূর্ত কিনা জানিনা, জেন্ডারের জায়গায় F এ টিক দেন ?
    'মায়ামমতায় ভরা এ সংসারে এসে
    তুমি তো করেছ শুধু তুমুল অশান্তি, মাগো, বাড়ি যাও, বাড়ি যাও,
    আমাকে বলেছে সব প্রতিবেশী, পাড়াপড়শি , এমনকি নিজের ছেলেটিও।
    আমাকে বলেছে আমি অলক্ষ্মী পিচেশ।
    কেন বা বলবে না বল, আমি তো খেয়েছি সিগারেট আর আমি তো সন্ধে পার করে
    বাড়িতে ফিরেছি, কোন সন্ধেবাতি, হুলুধ্বনি, শঙ্খের বাতাস
    আমাদের বাড়িতে বহেনি।
    তারপর এসেছে বন্ধু, কবিদের দল, মধ্যরাতে আড্ডা দিতে
    ছেলে অন্য ঘরে বসে পড়া করছে, দোর দিয়ে, সেও তো জেনেছে
    তার মা অদ্ভুত, খাপছাড়া, কোন সাধারণ সতীলক্ষ্মী নয়।
    সবাই বলেছে তুমি বাড়ি যাও বাড়ি যাও, তার জন্য ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছি নিজের।
    শুধু যেই নিজের আনন্দ আমি রাখতে গেলাম সেই ঘটে
    ঘটটি গড়িয়ে পড়ল।
    স্বামী ও সংসার কোন কথাই বলল না। ছেলেও এবার চুপচাপ।
    আমি কি আমার সুখ নিজে নিজে রচনা করব , গো?
    আমি কি আমার ফ্ল্যাট একা একা সাজিয়ে ফেলেছি?
    আমার উনুনে আজ একজনের রান্না হবে নাকি?
    এই দুঃখে এই কষ্টে, আমি ঘট গুঁড়িয়ে ভেঙেছি...
    তারপর অলক্ষ্মী মায়ের মত একা একা ফিরে এসে ঘরে
    আমি সন্ধ্যা অবদি ঘুমাই, আর চুল খুলে বেপাড়ায় ঘুরি...
    অশান্তি বানাই আমি, মুখে মুখে ছড়া কাটি সমস্ত বিকেল...
    আর, আমি সারা পথ নিজের এ পদচিহ্ন ছড়িয়ে এসেছি... মনোদোষে।
    নিজের শরীর খান খান করে আমি আজ রোগজীর্ণ একজোড়া জ্বরতপ্ত চোখ...
    তৃতীয় নয়ন কই, সে তো ছিল, কুলুঙ্গিতে তোলা, আজ নামিয়ে পরে নি?'

    যশোধরা রায়চৌধুরী লিখছেন এই কবিতা। ফেসবুকে শেয়ার করলেন অপর এক কবি, যিনিও নারী। শেয়ারের দিন হলো এ বছরের লক্ষীপুজো। এর বেশি কিছু বলা এক ধরনের অর্বাচীনতা হয়ে যেতে পারে। পাঠক, পড়ুন। আপনিও পড়ুন, হে পাঠিকা।
    শুধু বলি এই কবিতায় কতটা রক্তক্ষরণ, দ্বিধায় দীর্নতাই বা কতটা? সনাক্ত করুন। কামিনী রায়ের 'পাছে লোকে কিছু বলে' কবিতার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি। কামিনী রায়ের সংশয়- প্রকল্পের চেয়ে কি যশোধরার সংশয়ের ধরণ কিছু আলাদা? কোথায় বা তা ভিন্ন? পাঠক, পড়ুন, সনাক্ত করুন। অল্পই তুলে দিচ্ছি কামিনী রায়:
    'করিতে পারি না কাজ
    সদা ভয় সদা লাজ
    সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,
    আড়ালে আড়ালে থাকি নীরবে আপনা ঢাকি
    সম্মুখে চরণ নাহি চলে
    কাঁদে প্রাণ যবে, আঁখি-সযতনে শুষ্ক রাখি
    নির্মল নয়নের জলে
    পাছে লোকে কিছু বলে'

    এই দুটি কবিতা থেকে কান্না সনাক্ত করা যায় , ধরা যায় দুই সময়ের দুই কবির সংশয় ও সমস্যার যন্ত্রণা, যা প্রসূত কবিতায়। নারীর নিজস্ব অধিকার নিয়ে সমাজ কতদূর এগিয়েছে, এই প্রশ্নও এসে যেতে পারে।

    এবারে মিতুল দত্তের কবিতায় চোখ রাখি, পেয়ে যেতে পারি অন্য এক ঝোঁক:

    'সন্ধিবয়সের দিকে মুখ ছিল, করুণার দিকে
    কাকলির দিকে আর ক্ষুধিত পাষাণে লেখা আলোর অপেরা, আলো
    মিছরির ছুরির মতো আলো তার স্বভাবে ঢুকেছে
    শরীরের খানাখন্দে, যুবক, জ্বালানি আর গান
    উনুনে দিয়েছি আমি, তালপাতা খোঁপায় পরে শুয়ে আছি
    পিঁড়িতে সাজিয়ে সাদা, হে সাদা, হে শ্বেতপত্র, আমি তার রবিবাসরের
    সম্রাজ্ঞী-কেচ্ছার পাশে পাত্র চাই পাত্রী চাই ভরিয়ে তুলেছি
    আমি সেই চৈতন্যহারানো বিষ্ণুপ্রিয়া হতে চেয়ে
    হয়ে গেছি সূর্পনখা, নাক কেটে গুরুদন্ডবৎ
    মিশেছি তোমার খুরে, গোক্ষুর আমার
    তোমার মাথায় চড়ে ত্রিকাল দেখাব ভাবি আর
    ত্রিকাল আমাকে দেখে, আমি যেন সঙ, দর্জিপাড়া
    মর্জিনা নাচিয়ে যেন ঝুমঝুমি বাজাব'

    এখানে ‘ক্ষুধিত পাষাণে’র উল্লেখ কি সেই নারীচরিত্রের ওপর পুরুষ কর্তৃত্বের আভাস? সূর্পনখা, বিষ্ণুপ্রিয়া, মর্জিনা সবকটি নারীর উল্লেখের মধ্যে কি কোনো মিল আছে, যেগুলি এক ধরনের কষ্ট ও বঞ্চনার ইঙ্গিত দেয়? কাকলী ও করুণাও তো কোনো নারীরই নাম। নির্মাণ কৌশলে হয়ত বা মনে পড়তে পারে ইউরোপিয়ান বা ভারতীয় চলচ্চিত্র, যেখানে সমস্ত চরিত্রই নারী। তাছাড়া দর্জিপাড়া সমকালীন প্রান্তিক নারীর দিকেই যেন দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই কবিতার সঙ্গে নাটকের কোনো যোগ আছে? সন্ধিবয়েস কি বয়ঃসন্ধি নাকি তা আড়ি-ভাবের কবিতা। পুরুষচরিত্র-বিবর্জিত এই কবিতা কি এক সচেতন নির্মাণ নয়?

    ~~~~~~

    কবিতায় ধরা পড়ে সমকাল, ইতিহাস, প্রযুক্তি, অর্থনীতিও
    কবিতা থেকে কবিকে চেনা যায়,সমকাল অদ্ভূত ধরা পড়ে। একটি সাম্প্রতিক কবিতা পড়ুন:
    'অবশেষে বোতামের অক্ষরে অক্ষরে উপগ্রহ যোগ যদি যায় খুলে
    আমরা পৌঁছতে চেয়েছি চাঁদে-মধ্যরাত্রির সিকি ভাগ মাশুলে।
    নিতান্ত মামুলি কথা, তবু অনর্থক নয়, সীমিত সামর্থটুকু
    নিঙড়ে বরাতমাফিক কথার ক্ষরিত সুখ সামান্য আশয়
    পার করে দেয় তার পরদিন থেকে আরও কিছু চন্দ্রহীন তট।
    কেউ বুঝি আড়ি পেতেছিল সেইখানে? কেউ বুঝি লিখেছিল পট?
    সে-ই বুঝি পথ জুড়েছিল, বটঝুরি দোল দিয়ে দেওয়াল গেঁথেছে?'
    সুমন মান্নার ‘ফোনঘর’ এই কবিতায় যেন ফিরে আসছে ফেলে আসা এসটিডি যুগ, যা এখন গল্পের ও কবিতার বিষয়। উপগ্রহ যোগ আসলে স্যাটেলাইট মনে হয়, যা আজকের যোগাযোগের এক আবশ্যিক শর্ত। সিকি ভাগ মাশুল বললে মনে পড়ে কোনো এক রাত এগারোটার পরের তড়িৎদার বুথ, যেখানে উদ্বেগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রেমিক ও প্রেমিকা। এখানে উল্লেখ্য, প্রেম করতে রাষ্ট্রীয় মাশুল লাগে, কবি জানিয়ে দিলেন। উদ্বিগ্ন প্রেমিক- প্রেমিকাকূল, উদ্বেগের কারণ লম্বা কিউ এবং সমস্ত লাইন ব্যস্ত। মনে পড়ে অল লাইনস আর বিজি, যা আজকের দিনেও মাঝে মাঝে শোনা যায়। সুমন যেন এক অজানা বান্ধবীর কথা বলছেন। সেই বান্ধবীর জন্য যেন মন খারাপ। তাই শেষ লাইনটি এরকম বিষণ্ণ : ' মাঝে মাঝে তাকে মনে পড়ে'। সুমন এক মারাত্মক কথা জানাচ্ছেন : ' নিতান্ত মামুলি কথা, তবু তা সাধারণ নয়'। মনে পড়ে বুদ্ধদেব বসুর লাইন: যা কিছু ব্যক্তিগত, তাই পবিত্র।


    ক্রমশঃ
    প্রথম পর্ব | তৃতীয় পর্ব
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কাব্য | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ৭৬২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কুশান | 238912.66.9008912.34 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৫79571
  • অসামান্য, এলেবেলে। পুরোটা রয়ে-সয়ে পড়ব।
  • কুশান | 238912.66.9008912.34 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৬79572
  • @এলেবেলে
    শেষ আর্টিকল টি কি মঞ্জুভাষে র লেখা?
  • এলেবেলে | 2345.110.233423.106 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৩79573
  • @কুশান, হ্যাঁ। মঞ্জুভাষ রবীন্দ্রভারতীতে জীবনানন্দ পড়িয়েছেন। ওঁর লেখা একটি অসামান্য বই 'আধুনিক বাংলা কবিতায় ইয়োরোপীয় প্রভাব' আমি কিনেছিলাম প্রায় তিরিশ বছর আগে। জীবনানন্দ-ইয়েটস মিথকে অস্বীকার করা সেই লেখাতেই প্রথম জীবনানন্দ-বোদলেয়ারের সামীপ্য বুঝতে পারি। যদি সম্ভব হয়, ঊক্ত বইটিও নাড়াচাড়া করতে পারেন একবার।
  • কুশান | 238912.66.898912.106 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৫79564
  • Atoz-"একবার ভাবুন, রেফারেন্স টেফারেন্স বিহীনভাবে তুমুল কন্ফিডেন্সে এইসব ছুঁড়ে তো যাচ্ছেনই বহু লোক! যারা শুনছেন, তাঁরা অনেকেই জাস্ট মেনে নেবেন, কারণ সময় বা আগ্রহ হয়তো নেই সত্যাসত্য বিচারের। বা জাস্ট এটা মানতে তাঁদের ভালো লাগবে বলে মেনে নেবেন। বা নিজেদের কিছু যায় আসে না বলে মেনে নেবেন। কেউ চটকদার বলে মেনে নেবেন।

    এইসব জিনিসেরই প্যারালেল তো ঐ তাজমহল তেজো মহালয়া, রাবণের চব্বিশ বিমান, বিদ্যাসাগরের ঠাকুমার আমলে হাজারে হাজারে শিক্ষিতা মহিলা---এসব জিনিস তো একদিনে তৈরী না, বহু লোক এগুলো প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে ছড়াতে সাহায্য করেন।"

    আমি আমার লেখা ইচ্ছে করেই রেফারেন্স কণ্টকিত করিনি। Atoz রেফারেন্স চাওয়ার পরে বুদ্ধদেব বসুর 'প্রবন্ধ সংগ্রহ" থেকে সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স দিয়েছি। দেবীপ্রসাদের লেখা বইটি আমার পড়া ছিল না। মনে হয় না এই আলোচনায় যারা অংশ নিচ্ছেন কারুরই পড়া ছিল বলে। একটা জরুরী প্ৰশ্ন, 'এইসব ছুঁড়ে যাচ্ছেন যে বহু লোক', তাঁর মধ্যে তো তাহলে জীবনানন্দের ঘনিষ্ঠ ও সমকালীন বুদ্ধদেব বসুও পড়েন। যদি এই অভিযোগে আমি অভিযুক্ত হই, তবে স্বনামধন্য প্রাবন্ধিক বুদ্ধদেবও তো একই দোষে দোষী। আগে তাঁর প্রবন্ধ থেকে :'ভুল তথ্য' দায়িত্ব নিয়ে প্রচারের জন্য সেই প্রবন্ধ থেকে উক্ত অংশ বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

    বুদ্ধদেবের উক্ত আর্টিকলটি প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ প্রয়ান সংখ্যায়। শুনেছি 'কবিতা' পত্রিকার সেই সংখ্যা পুনর্মুদ্রণ করছে কোনো প্রকাশনা। এখন, সেই প্রবন্ধ পড়ে কেউ যদি কোনো কিছু লেখেন, তাহলে তো তিনি 'রাবনের চব্বিশ বিমান' ছড়ানোর দোষে অভিযুক্ত হবেন।

    Atoz আমাকে অভিযুক্ত করেছেন যে আমি এই নিবন্ধের নামে "রাবণের চব্বিশ বিমান, বিদ্যাসাগরের ঠাকুমার আমলে হাজারে হাজারে শিক্ষিতা মহিলা---এসব জিনিস তো একদিনে তৈরী না, বহু লোক এগুলো প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে ছড়াতে সাহায্য" করছি। আমার নিবন্ধের পয়েন্টগুলো এই ধরনের গর্হিত অপচেষ্টায় নিয়োজিত জেনে কৌতুক পেলাম। বিচারের ভার পাঠকের উপর রইল।

    আমি একটি প্রশ্ন বারবার রাখার চেষ্টা করেছি যে জীবনানন্দের 1932 এ লিখিত উপন্যাসে বারবার তিনি নিজে কেন লিখছেন যে অশ্লীল কবিতা লেখার জন্যই তাঁর চাকরি গেছে। এই প্রসঙ্গ আমি 'চৌত্রিশ বছর' উপন্যাসে উদ্ধৃতি দিয়ে দেখিয়েছি। পুরোটাই কি তাহলে উপন্যাসের খাতিরে একশো শতাংশ বানানো? শৈল চরিত্রের বয়েস, কলকাতায় অবস্থান, সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী, চাকরিবিহীন অসহায় অবস্থা, সবই যেন সেই সময়ের জীবনানন্দের সঙ্গে মিলে যায়।
  • সৈকত | 340112.99.675612.98 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৪79565
  • @এলেবেলে, দেবীপ্রসাদ কী ওনার লেখাটায় 'ছাঁটাই' শব্দটি উল্লেখ করেছিলেন ? আমার কাছে যে ১৯৯৬ র সংস্করণ, সেখানে চোখে পড়েনি, হয়ত ভাল করে লক্ষ্য করিনি অথবা পরের সংস্করণে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। (যা দাঁড়াচ্ছে, একটা শব্দের ব্যবহার, এই গোয়েন্দা গল্পের ক্ষেত্রে অনেক কিছু !!) তবে এটা ঠিকই, দেবীপ্রসাদ চেষ্টা করেছিলেন কবিতা লেখার জন্যই চাকরি গেছিল এই মিথ'টি ভাঙার, প্রায় দু'পাতা জুড়ে বিস্তৃত বর্ণনা আছে এই সংক্রান্ত তথ্য ও কলেজের পুজোকেন্দ্রিক ঝামেলার, বইটার ভূমিকা লেখাটিতে।

    সাজানোর চেষ্টা করলে এরকম হয়ঃ

    ১। দেবীপ্রসাদ উল্লেখ করেছিলেন, অচিন্ত্যকুমারের 'কল্লোল যুগ'-এ লেখা বাক্যের, অনুমান করেছিলেন যে অচিন্ত্যকুমারের হয়ত মনে ছিল 'পিপাসার গান' কবিতাটির কথা যেখানে 'ফসলের স্তন' শব্দদুটি ব্যবহার হয়েছিল। 'অবসরের গান' কবিতাটির কথাও এনেছিলেন যেখানে একই রকমের ইমেজ ছিল কিন্তু কবিতাটি লেখা হয়েছিল চাকরি যাওয়ার পরে।

    ২। বু.ব-র লেখার উল্লেখ এসেছে যেখানে 'ক্যাম্পে' কবিতাটির উল্লেখ ছিল। এও দেবীপ্রসাদ লিখেছেন যে বু.ব পরবর্তীতে একটি নাটকও লেখেন ঐ ঘটনাকে নিয়ে, যার পরে ওনাকে 'অন্য তথ্য' জানোনো হলে বু.ব লেখেন (কোথায় লিখেচিলেন সেটা স্পষ্ট নয়, দেবীপ্রসাদকে চিঠিতে নাকি অন্য কোন প্রবন্ধ/লেখায়?) যে 'যতদূর মনে পড়ে' জীবনানন্দই ওনাকে বলেছিলেন ঘাইহরিণী লেখার পরে প্রাক্তন অধ্যাপকদের দ্বারা তাঁর তিরস্কৃত হওয়ার কথা।

    ৩। সুকুমার সেন-র লেখার উল্লেখ করে, দেবীপ্রসাদ এরপর একটি চিঠি থেকে তথ্য ব্যবহার করেন ওনার ভূমিকায়। চিঠিতি 'দেশ' পত্রিকায় বেরিয়েছিল, ১৯৬১ নাগাদ, প্রেরক সজোতেন্দ্রনাথ (?) রায় নামে একজনের যিনি সিটি কলেজে ঐ সময়ে চাকরি করতেন, হেরম্বচন্দ্র মৈত্রর আমলে। ফলে পুরো ঘটনাই কাছ থেকে দেখা। বক্তব্য ছিল, সরস্বতী পুজোকে কেন্দ্র করে ঝামেলা এবং কলেজের অবস্থা খারাপ হওয়ার ফলে কিছু অধ্যাপকের চাকরি যায়। জীবনানন্দ ইংরেজি মাস্টারদের মধ্যে কনিষ্ঠতম বলে উনিও এর মধ্যে পড়ে যান। ব্যপারটা ছিল দুঃখজনক, চিঠি প্রেরকের মন্তব্য এবং এটাও যে কবিতা লেখার জন্য চাকরি যায়নি।

    ৪। আমার মনে হয়েছে, মিথটিকে ভাঙার জন্য দেবীপ্রসাদের মূল সূত্র এই চিঠিতে, অন্তত বইটির ভূমিকাটি পড়ে। কিন্তু আমি আবার ভূমেন গুহ-র লেখার উল্লেখ করি দু'দিন আগে, কিন্তু কোন সে লেখা আমার পুরো মনে নেই। এখন ভেবে দেখি, ভূমেন গুহ মোটামুটি একটা মাঝামাঝি অব্স্থান নিয়েছিলেন, অচিন্ত্য/বুব/সুকুমার সেন আর দেবীপ্রসাদের বক্তব্যের মাঝামাঝি - একদিকে ছিল কলেজ কর্তৃপক্ষর অখুশি ভাব, অন্যদিকে দেবীপ্রসাদের তথ্য অনুযায়ী কলেজের ঝামেলা - দুটো মিলিয়েই জীবনানন্দের ওপর কোপ পড়ে, এরকম একটা বক্তব্য।

    ৫। আরও কিছু কথা থাকে। 'পিপাসার গান' কবিতাটি ছাপা হয়েছিল 'ধূসর পান্ডুলিপি'-তে, বইটি ছাপা হয়েছিল ১৯৩৬-এ কিন্তু সেই বইতে কবিতাটি গেছে বলেই, কবিতাটি এই প্রসঙ্গে ব্যবহার করা যাবে না সেরকম নয়, কারণ কবিতাটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে ১৯২৭ সাল নাগাদ। উল্টোদিকে , 'অবসরের গান' কবিতাটিও ঐ বইতে, কিন্তু সেটা পত্রিকায় বেরোচ্ছে ১৯৩১ নাগাদ, ফলে এই কবিতাটি যুক্তির আওতায় আসছে না। জীবনানন্দের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি অনেক সময়েই প্রবলেম্যাটিক, বইয়ে ছাপা দিয়ে কবিতার কাল নির্ণয়; অন্ধকার কবিতাটি তো মনে লেখার প্রায় ১৫-১৭ বছর পরে বইতে ঢুকেছিল।

    ৬। দেবীপ্রসাদের বইতে ওনার ভূমিকাটা কিঞ্চিত সমস্যাকর। যেখানে তথ্যের ফাঁক পেয়েছেন, সেখানে জীবানন্দের গদ্য থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সেই ফাঁক ভরিয়েছেন। সেই একই যুক্তিতে, 'চৌত্রিশ বছর' উপন্যাসকে ব্যবহার করলে (কুশান যেমন করেছেন), তাহলে চাকরি হারানো সংক্রান্ত সত্য নির্ণয় আরও একটু কঠিন হয়ে দাঁড়াত - গদ্য/কবিতা/স্মৃতি মিলিয়ে ঘটনাপরম্পরাকে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে।

    ৭। আমি যখন অচিন্ত্যকুমারের লেখা প্রসঙ্গে 'ঝরা পালক' বইটার কথা লিখেছিলাম, যখন কিনা অচিন্ত্যকুমার ওনার লেখাটিকে স্পষ্ট করে কোনো বিশেষ কবিতার উল্লেখ করেননি, উপরন্তু 'শুনেছি' শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন , অর্থাৎ উনি শুনেছিলেন যে কবিতা লেখার জন্যই জীবনানন্দের চাকরি গেছিল। এই শোনাটা কি জীবনান্দের থেকে শোনা যেমন বুব শুনেছিলেন অথবা বুব-র কাছ থেকে ওনার শোনা অথবা কল্লোলের বন্ধুবান্ধবদের থেকে ? আমার ধারণা ছিল অচিন্ত্যকুমার ঝরা পালক বইয়ের 'সেদিন এ ধরণী' কবিতাটিকে ইঙ্গিত করছেন, কারণ ঐ একই রকমের ইমেজের ব্যবহার - রসসিক্ত স্তনের - সেইটি এই কবিতাটিতেও ছিল। কিন্তু এই কবিতাটির দিকে ইঙ্গিত কী আমার নিজেরই সিদ্ধান্ত নাকি সেটাও কোথাও পড়েছিলাম ?

    ৮। ছাত্রদের সরস্বতী পুজো করার ইচ্ছে, ব্রাক্ষ কলেজ কর্তৃপক্ষের সেটা না মেনে নেওয়া, রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য, সুভাষ বোসের জড়িয়ে পড়া, ছাত্রদের ছেড়ে যাওয়া যার ফলে কলেজের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়া আর অধ্যপকদের কাজ হারানো - ইন্টারেস্টিং সময় আর ঘট্নাসকল, এর সাথে তরুণ কবিদের নতুন কবিতা লেখার চেষ্টা, অন্য ইমেজের ব্যবহার, যার ফলে কবিতায় কি থাকবে বা থাকবে না তার দ্বন্দ, সব মিলিয়ে এই ঘটনাটি নিয়েই মনে হয় বাঙালীর কুড়ি-তিরিশের দশকের সমাজ-ইতিহাস লেখা যায়।
  • সৈকত | 340112.99.675612.98 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৩79566
  • আরও একটু কথা।

    এলেবেলে, দেবীপ্রসাদের যে বই বা লেখাকে ব্যবহার করছেন, আমি সেখান থেকে লিখিনি। দেবীপ্রসাদের ভূমিকার কথা লিখছি যেটা, সেটা আছে ওনার সম্পাদিত জীবনানন্দের কবিতা সমগ্র-তে। ফলে ১৯৯৬-র সংস্করণ বা সেখানে কী শব্দ ছিল, সেই নিয়ে এলেবেলেকে করা আমার প্রশ্নের উত্তর না দিলেও চলবে । ঃ-)

    বাকী ব্যাপারগুলো ঠিকই আছে। এও ভেবে দেখলাম, দেবীপ্রসাদ যেমন 'পিপাসার গান' কবিতাটিকে অনুমান করেছিলেন, আমারও তেমন 'সেদিন এ ধরণী'-কে অনুমান করতে আঁট্কানোর কথা নয় !!
  • কুশান | 238912.66.458912.178 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১২79574
  • ~ লিখলেন: "তো, এক, কবিতা লেখার অপরাধে কর্তৃপক্ষের সুনজরে না থেকে দুঃসময়ে চাকরি খোয়ানোর লিস্টে প্রথমে নাম থাকা, আর এক কবিতা লেখার অপরাধে হলেও হতে পারত চাকরিটি শেষমেষ না পাওয়া এই নিয়েই তার ও অন্যদের ক্ষোভ কবিতা লেখেন বলে চাকরি পাচ্ছেন না - তথা কবিতা লেখেন বলে চাকরি যাচ্ছে এইরকম পারসেপসন।"-

    এই সম্ভাবনা কেউ উড়িয়ে দিলে দিক, এর বাস্তবতা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। জীবনানন্দের এই পারসেপশনের জ্বলন্ত সাক্ষ্য দিচ্ছে 'চৌত্রিশ বছর'-উপন্যাস। কালকের বিতর্কের পর এই উপন্যাস দ্বিতীয়বার আবার পড়া গেল।

    1927-এ সিটি কলেজে চাকরী থেকে 'বিতাড়িত'। প্রশ্ন আসছে, কী কারণ দর্শিয়েছিল কর্তৃপক্ষ? নিছক অর্থনৈতিক কারণ? সেই চিঠির কপি কি আছে কারুর কাছে?

    এলেবেলের এই অংশ:

    "তিনি লিখছেন - " 'আত্মঘাতী ক্লান্তি' এবং 'বিজ্ঞানদৃষ্টির অভাব' এই দুটি অভিযোগই জীবনানন্দকে বিচলিত করেছিল"

    এই দুটি স্পেসিফিক অভিযোগ নিয়ে আরেকটু বিশদে বলুন। এই অভিযোগ কারা আনেন?

    'ক্যাম্পে'-প্রসঙ্গ আবার এসে পড়ল। Atoz wiki থেকে 'ক্যাম্পে' কোট করে তেমন কোনো ' মিশিপাখা-ছিপি বোতল ভাঙা' পাননি, এবং 'এমা, কই, কিছু অশ্লীল পেলাম না তো' গোছের অপার বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তবে, এলেবেলের পাঠানো সজনীকান্তের নিবন্ধ পড়লাম। তা অন্য কথা বলছে। শ্লীল-অশ্লীল প্রসঙ্গ সমাজবদ্ধ ব্যক্তির একান্ত পারসেপশন-নির্ভর এবং কখনো কখনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যে অশ্লীলতা Atoz 2018 তে পাচ্ছেন না, তা সজনীবাবু প্রায় একশো বছর আগে অনায়াসে পেতে পারেন। Atoz টাইমের এডভান্টেজ পাচ্ছেন মাত্র। আমি আপনিও পাচ্ছি।

    এর পরে Atoz এর একটি বক্তব্য বিস্ময়ের উদ্রেক করে। সেটি হলো:

    '"ক্যাম্পে" কবিতাটা আমি পড়েছি। তাতে অশ্লীল কী ছিল যার জন্য চাকরি যাবার মতন গুরুতর কিছু ঘটতে পারে? আর, এরকম একজন বললেন আর চাকরি চলে গেল, এ কি মগের মুল্লুক নাকি? চ্যালেঞ্জ করা যেত না?"

    Atoz, একভাবে দেখলে 2018 ও এক ধরনের মগের মুল্লুক। আমরা কেউ (সামাজিকভাবে) নিরাপদ  নই। অন্তত, আমার চারপাশ দেখে তাই মনে হয়। সে প্রসঙ্গ নাহয় থাক। প্রশ্ন হল, 1927 সাল কতটা মগের মুল্লুক ছিল? 'চ্যালেঞ্জ করা যেত' কি? যদি চাকরি জীবনানন্দের যায়, তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কারণ কর্তৃপক্ষ কি দেখিয়েছিল?  যে তথ্য 'সৈকত' এবং 'এলেবেলে' দিয়েছেন সিটি কলেজের ঘটনা সম্বলিত অবশ্যই তার প্রামাণ্য ভিত্তি আছে। তাকে আমি আদৌ লঘু করে দেখছি না।দেবীপ্রসাদের বইটিও পড়ার ইচ্ছের চেয়ে বেশি আবশ্যিকতা আছে। প্রশ্ন আসছে, কেন জীবনানন্দ বরখাস্ত হলেন? যুক্তি দেবেন, আরো কেউ কেউ ছিলেন। কিন্তু, ততদিনে তো, আপনাদের ডিসকাশন থেকেই আসছে, 4 থেকে 6 বছর চাকরি হয়ে গেছে। অর্থাৎ, তিনি স্থায়ী কর্মী।

    প্রশ্ন,  নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কি? এখানে আমি অন্য ডিসকোর্স এর জন্য আবার উক্ত উপন্যাসটি র একাংশ তুলে দিচ্ছি। আমি এখানে সৈকতের একটি প্রকল্প অমান্য করছি: "দেবীপ্রসাদের বইতে ওনার ভূমিকাটা কিঞ্চিত সমস্যাকর। যেখানে তথ্যের ফাঁক পেয়েছেন, সেখানে জীবানন্দের গদ্য থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে সেই ফাঁক ভরিয়েছেন। সেই একই যুক্তিতে, 'চৌত্রিশ বছর' উপন্যাসকে ব্যবহার করলে (কুশান যেমন করেছেন), তাহলে চাকরি হারানো সংক্রান্ত সত্য নির্ণয় আরও একটু কঠিন হয়ে দাঁড়াত - গদ্য/কবিতা/স্মৃতি মিলিয়ে ঘটনাপরম্পরাকে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে।"

    কেন করছি? পাল্টা বয়ান, ওই Atoz এর কাঙ্খিত 'চ্যালেঞ্জের' জায়গাটা তৈরি করার জন্য।  এছাড়া জীবনানন্দের অন্য কোনো রাস্তা ছিল না বলেই আমার অনুমান। এই ডিসকোর্স পাওয়া যাবে আত্মজৈবনিক উপন্যাসেই, যা চার বছর চাকরি যাওয়ার পর সময়কালে রচিত, এবং যেখানে স্পেসিফিক কথা আছে; এ নিছক সুররিয়াল ফ্যান্টাসি ভাবলে ভুল করা হবে। যেখানে দেখা যাচ্ছে শৈলর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে, শৈল কলকাতায় মেসে থেকে আপ্রাণ চাকরি খুঁজছে, টিউশন করে পেট চালাচ্ছে, ইনসিওরেন্স এর ব্যবসা করবে বলে ভাবছে, পেটের চিন্তা, হাতে পয়সা নেই, অথচ কবিতা তার রক্তে। এই সামগ্রিক চেহারার একটা বিশ্বাসযোগ্য রূপ এই উপন্যাস। এতে সত্য ক্ষুণ্ণ হয় না।বিকৃত ও হয়না। বরং, আমার মতে, সত্যের হয়ত আরো কাছাকাছি যাওয়া যায়।

    দ্যাখা যাক এই অংশ:

    বলদেববাবু বললেন- কাজেই, তোমার বইটা দেখলে ভালো হত আমার-

    শৈল বললে-আপনি পড়তেন?

    -হ্যাঁ

    -কীসের জন্য?

    -আমার মনে হয়, এমন কিছু লেখ নি তুমি, যার জন্য কাজটা তোমার অমন ক'রে খোয়া যাওয়া উচিত ছিল-

    শৈল বললে-আমার বই প'ড়ে সে আপনি এদের সামনে প্রমাণ করবেন?

    -কেন পারব না? আমার বরাবরই মনে হয়, প্রফেসারি না ক'রে হাইকোর্টে বসলেই আমার ভালো হত-

    -কিন্তু এ-কলেজের কাউন্সিল হাইকোর্ট নয়-

    -এখানে বিচার চলে না?

    -বিচার করবার কোনও প্রবৃত্তিই এদের নেই-

    -কী ক'রে বলো সে-কথা?

    -আমার বেলায়ই দেখুন-না-কেন-

    -কী দেখতে বলো?

    শৈল বললে-মেনে নিলাম, এদের রুচিতে আমি আঘাত করেছি-কিন্তু, বিচার করবার ইচ্ছে যদি এদের থাকত, তা হলে, একটা চিট পাঠিয়ে আমাকে তাড়াত ওরা?

    -একটা চিট পাঠিয়েছিল বুঝি?

    -হ্যাঁ

    -কখন?

    -যখন আমি মাইনে নিয়ে কলেজের থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম-

    বলদেববাবু একটু নীরব থেকে বললেন-তুমি মনে কর, এটা উচিত হয়নি?

    -উচিত-অনুচিতের কথা ঢের দূরে প'ড়ে থাকে-কোনও কোর্টেরও ধারা এ-রকম নয়; সেখানেও আসামির জন্য উকিলের ব্যবস্থা থাকে, তার নিজের কৈফিয়ত শোনা হয়, সাক্ষীসাবুদের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হয়-

    বলদেববাবু বললেন-আমি সে-মিটিঙে ছিলাম বটে, কিন্তু, বয়েস হয়ে গেছে, ডাইবিটিসে ধরেছে-সব সময় ফলো করতে পারি না; চিন্তা একটু কম করলেই ভালো-আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্রামের দরকার। হয়তো তখন পেচ্ছাপ করতেও বেরিয়েছিলাম।

    শৈল বললে-ওদের কলেজে আমি ছ'বছর কাজ করলাম-তখন আমার গভর্নমেন্টের কাজের বয়স ছিল-কত জায়গায় কত সুযোগ ছিল-কিন্তু,  নিজের দেশের লোকের কাজ করব ব'লে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা আমি প্রত্যাখ্যান করলাম-অথচ, ওরা আমাকে তাড়িয়ে দেবার সময় আমাকে একবার ডাকলও না, আমার কী বলবার আছে-না-আছে, গ্রাহ্যও করল না-একজন দপ্তরির হাত দিয়ে চিট পাঠাবার ব্যাপারটা নিকেশ ক'রে দিলে। এটা কি বিচার?

    বলদেববাবু চুপ ক'রে ছিলেন।

    শৈল বললে-কোনও অফিস ইন্সটটিউশন অথবা কলেজেও এ-রকম হয় না। ছ'বছরের যার কাজ, সে সব জায়গায়ই প্রায় পার্মানেন্ট স্টাফের মেম্বার হয়ে গিয়েছে। কিংবা, যদি তা না-ও হয়-তাকে ছ'মাসের চাকুরের মতো কি কখনও কি মনে করতে পারা যায়? কিংবা, তার সঙ্গে তেমন ধরনের ব্যবহার করতে হয় কি কখনও? সে যদি কোনও অপরাধও করে, তবে, তাকে কাছে ডেকে নিতে হয়-নিজের বক্তব্য জানাতে হয়-তার বক্তব্য শুনতে হয়-তার ভাবগতিক সাহিত্য আর্ট, সমস্তই, যদি অথরিটির অসহ্য বোধ হয়, তবে, সে-চাকরিজীবীকে ডেকে বলতে হয়-এ আমরা অপছন্দ করি, এ-সব আমাদের ভালো লাগে না-সে যদি বলে, আপনাদের না ভালো লাগলেও আমি করবোই, দরকার হলে কাজ ছেড়ে দিয়েই করব- তখন তাকে ছেড়ে দিলে আগাগোড়া জিনিসটা মঙ্গল না হোক, মধুর না হোক, সঙ্গতির ও বিচারের পরিচয় দেয় তো-

    আমি কেন এই অংশ দিচ্ছি? এই লেখায় জীবনানন্দ নিজের ক্ষোভ বা ঝাল মেটাননি, চাকুরীক্ষেত্রে নিয়মসঙ্গত পদ্ধতি ও ন্যায়, জাস্টিসের কথা বলেছেন। এই স্পর্ধিত বয়ান পাশাপাশি রাখতেই হবে। কারণ, ভিকটিমের বক্তব্য এখানে স্পেসিফিক যুক্তিসঙ্গত ভাবে ধরা পড়ছে। আমি যতগুলি উদ্ধৃতি এখনো অবধি দিয়েছি, সেগুলির তথ্য, তৎকালীন চাকরি যাওয়ার ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে হলে আপনাদের গোটা উপন্যাসটি পড়তে অনুরোধ করি। এখানে Atoz কথিত "কৃত্তিবাসকে রামচন্দ্র বলে চেপে ধরার" ন্যূনতম সুযোগ জীবনানন্দ পাঠককে দেন নি। প্রতিটি তথ্য, সন, বয়েস, ভৌগোলিক অবস্থান নির্ভুল, এবং সিংগেল এজেন্ডা, চাকরি নেই,  চাকরি কেন গেল এবং অন্ন চিন্তা।এসবই বাস্তবের রূঢ় মাটিতে প্রোথিত। এমনকি অন্যান্য তথ্য যথা, টিউশনি করছেন, বিমার চাকরিতে যুক্ত হওয়ার খোঁজ নিচ্ছেন এইসব প্রসঙ্গ ভুরি ভুরি রয়েছে। এই তথ্য গুলি আপনাদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সংগতিপূর্ণ।

    মজার ব্যাপার হলো এই উপন্যাসের প্রকাশ 2006 এ। আমি এটি পড়ি 2010 নাগাদ।অর্থাৎ, এই উপন্যাসের কথা বু.ব, অচিন্ত্য কুমার বা অন্যান্যরা কি জানতেন? তাহলে ভিন্ন ভিন্ন সোর্স থেকে একই মিথ প্রচারিত হলো কেন? সকলে মিলে প্ল্যান করে আমাদের মিসগাইড করলেন? এর বস্তুগত ভিত্তি কি ছিল না? এসব সম্পূর্ণ সারবত্তাহীন?

    যদি ধরি অভিযুক্ত অশ্লীলতা,  নতুন ফর্মের কবিতা লেখার কারণে ও আরো কিছু মুদ্রাদোষের কারণে জীবনানন্দ কর্তৃপক্ষের বিরূপতার শিকার, নতুন চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধাও পেয়েছেন, সেক্ষেত্রে অতিরঞ্জন/মিথ কতটা আর বাস্তবতা কতটা, এই প্রশ্ন এখনো থেকে গেল।

    সৈকতের একটি মন্তব্য ইন্টারেস্টিং এবং উল্লেখের ও মনোযোগের দাবি রাখে:

    "ছাত্রদের ছেড়ে যাওয়া যার ফলে কলেজের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়া আর অধ্যপকদের কাজ হারানো - ইন্টারেস্টিং সময় আর ঘট্নাসকল, এর সাথে তরুণ কবিদের নতুন কবিতা লেখার চেষ্টা, অন্য ইমেজের ব্যবহার, যার ফলে কবিতায় কি থাকবে বা থাকবে না তার দ্বন্দ, সব মিলিয়ে এই ঘটনাটি নিয়েই মনে হয় বাঙালীর কুড়ি-তিরিশের দশকের সমাজ-ইতিহাস লেখা যায়।"

    লেখা যায়। নিঃসন্দেহে লেখার মত বিষয়।তবে তাতে দ্রুত তুড়ি বাজিয়ে সব কিছু সলভ তথা 'ফয়সালা' করার ধৈর্যহীনতা ছেড়ে এবং অন্যকে অকারণ accuse করার প্রথাগত জনপ্রিয় approach পরিহার করে, সম্পূর্ণ ডিসকোর্স তথা বয়ান তৈরি করার তাগিদ থাকাই বাঞ্ছনীয়।

    কেননা জীবনের তথা সত্যের বয়ান সবসময় এতটা সাদা কালো নয়।

    আরো কিছু আবছা পয়েন্ট ঘুরছে। পরে লিখব।

    সুকির কথার পরিপ্রেক্ষিতে।
  • ~ | 90056.160.011223.3 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪৮79567
  • আমি থিওরি দিলে তো আবার আপনেরা রে রে করে তেড়ে আসবেন। তবু বলেই যাই, সিটি কলেজে ৬ বছর কাজ করার পর চাকরি গেছিল। খারাপ লাগারই কথা। তার পরে বাকি দুটো কলেজে চাকরি নিয়েও পোষায় নি। আড়াই মাস আর ৪ মাস মাত্র টানতে পারলেন। হবেই। কোথায় বাগেরহাট, কোথায় দিল্লী আর কোথায় সাহিত্যচর্চার পিঠস্থান কলকাতার বুকে সিটি কলেজ। তো আবার সেই কলেজেই চাকরির চেষ্টা করতে গেছিলেন। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৫ এই দীর্ঘ বেকারত্বের সময়ে। কিন্তু তখন তখনই ক্যাম্পে লেখার অভিঘাতে সেই সম্ভাবনাটির মারা যায়। সেইটা এসেই গল্প করেছিলেন বুব বা বন্ধুজনের কাছে - যে সিটি কলেজে চাকরিটা হল না, কেন আবার! 'ক্যাম্পে' লেখার জন্য। তো, এক, কবিতা লেখার অপরাধে কর্তৃপক্ষের সুনজরে না থেকে দুঃসময়ে চাকরি খোয়ানোর লিস্টে প্রথমে নাম থাকা, আর এক কবিতা লেখার অপরাধে হলেও হতে পারত চাকরিটি শেষমেষ না পাওয়া এই নিয়েই তার ও অন্যদের ক্ষোভ কবিতা লেখেন বলে চাকরি পাচ্ছেন না - তথা কবিতা লেখেন বলে চাকরি যাচ্ছে এইরকম পারসেপসন।

    তো আদৌ কি ভাল শিক্ষক ছিলেন? পড়ানোয় মন ছিল, না জীবন ও সংসার প্রতিপালনের জন্য বাধ্য হয়ে চাকরি করতেন - যেক্ষেত্রে ডেডিকেশনের অভাব প্রকটভাবেই চোখে পড়ত সবার। সেক্ষেত্রে কবিতা লেখার অছিলাতেই বোধহয় তাকে আর ফিরিয়ে নিতে চায়নি ম্যানেজমেন্ট। সিটি কলেজ তখন কোএড তো? এইসব কবিতা যে মাস্টারমশাই লেখেন তিনি ... ইত্যাদি।

    আমাদের অনেকের সাথেই এমনটা হয়, হয়েছে, হতে পারে (কবিতা না, নিজস্ব প্যাশনের কাজে অফিস টাইম ডেডিকেট করার জন্যে)
  • Tim | 013412.126.562323.237 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:০৪79575
  • এলেবেলে কে ধন্যবাদ বই থেকে স্ক্যানের জন্য। খুব ভালো লেখা। মঞ্জুভাষ মিত্র-র 'কবিতার কারুকার্য ও জীবনানন্দ দাশ' বইটি কোথা থেকে প্রকাশিত একটু জানাবেন?
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:০০79576
  • তর্কের খাতিরে নাহয় ধরেই নিলাম উপন্যাসই প্রামাণ্য দলিল। কিন্তু এতটা উপন্যাসাংশ কোট করেও কি মূল পোস্টের এই বক্তব্যটার মীমাংসা হল যে,
    "১) কি কারণে একটি কবিতা লিখেই জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন? কি এমন বিস্ফোরক বস্তু ছিল তাতে যে একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত চাকরি হারাতে পারেন? তিনি তো ততদিন অবধি খুব একটা কেউকেটা কবি ছিলেন না।
    "
    ?????
    এই "একটি কবিতা" টি কোন্‌ কবিতা? তার মধ্যে কী বিস্ফোরক বস্তু ছিল?
  • zz | 893412.51.674523.147 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:০৩79577
  • "আজ এই বিস্ময়ের রাতে

    তাহাদের প্রেমের সময় আসিয়াছে;

    তাহাদের হৃদয়ের বোন

    বনের আড়াল থেকে তাহাদের ডাকিতেছে

    জোছনায় –

    পিপাসার সন্ত্বনায় — অঘ্রাণে — আস্বাদে!" (ক্যাম্পে, জীবনানন্দ)

    'হৃদয়ের বোন' নিয়ে সজনীকান্ত অশ্লীলতার অভিযোগ
    আনেন বোনেরা ভায়েদের প্রেম করতে ডাকছে বলে। কিন্তু জীবনানন্দ বলেছিলেন ওটা শেলীর 'soul's sister' -এর আক্ষরিক অনুবাদ। এই ব্যাপার।
  • কুশান | 342323.191.2356.2 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:০৫79578
  • Atoz, কন্টেক্সটবিহীন টেক্সট পড়া বা একটি মাত্র লাইনকে তুলে আনাও এক ধরনের সুবিধাজনক অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়। আগে দ্যাখা যাক আমি কি বলেছি এবং যে অস্পষ্টতার জন্য Tim আমাকে কিছুটা অভিযুক্ত করেছেন:

    "কবিতার সামাজিক উপযোগিতা নিয়ে লিখতে আমি সার্বিকভাবে অক্ষম হলেও দু-চারটি জরুরী প্রশ্ন উত্থাপন করি। এর উত্তর দেওয়ার দায় কারুর খুব একটা নাই থাকতে পারে, এইসব প্রসঙ্গ চাইলে ফেলেও দিতে পারেন, তবু লিখছি:"

    এর পর প্রশ্নগুলি রাখা হয়েছে। সব উত্তর আমার জানা নেই। উত্তর দেওয়ার ভার আমি পাঠককেই দিতে বলেছি। আপনি একই প্রশ্ন রিপিট করছেন। এর উত্তরে আমি আমার যা যা বক্তব্য রেখেছি সবটুকু মন দিয়ে পড়ার অনুরোধ জানাই। এর পরেও আমার বলবার থাকবে কিছু, অন্যদেরও থাকবে এই প্রত্যাশা রাখি। সেটাও কন্টেক্সট ও ক্রম মেনে।

    প্রশ্নটি ভ্যালিড কি ইনভ্যালিড সেই প্রশ্ন আপাতত তুলে রাখছি।
  • কুশান | 342323.191.2356.2 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:২২79579
  • "তর্কের খাতিরে নাহয় ধরেই নিলাম উপন্যাসই প্রামাণ্য দলিল। কিন্তু এতটা উপন্যাসাংশ কোট করেও কি মূল পোস্টের এই বক্তব্যটার মীমাংসা হল যে,
    "১) কি কারণে একটি কবিতা লিখেই জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন? কি এমন বিস্ফোরক বস্তু ছিল তাতে যে একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত চাকরি হারাতে পারেন? তিনি তো ততদিন অবধি খুব একটা কেউকেটা কবি ছিলেন না।"

    Atoz তর্কের খাতিরে আপনাকে 'ধরে নিতে' বলছি না যে উপন্যাসই প্রামাণ্য দলিল। অর্থাৎ, আমি চাই না আপনি আমাকে সহজ ও লোপ্পা ফুলটস ফেলুন। এক্ষেত্রেও আমার স্পেসিফিক রেফারেন্স রয়েছে।

    এতক্ষণ আমি একটি উপন্যাস থেকেই প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দিয়েছি এবং আমার ধারণা জানিয়েছি। তা সত্যকে বিকৃত করার উদ্দেশ্য নয় এবং 'রাবণের চব্বিশ বিমান, বিদ্যাসাগরের ঠাকুমার আমলে হাজারে হাজারে শিক্ষিতা মহিলা'-এমত মিথ তৈরির অপচেষ্টা নিয়ে আমি এই নিবন্ধ লিখি নি। Tim কিছু সঙ্গত প্রশ্ন তুলেছেন, সুকিও, কিছুটা উত্তর দিয়েছি, বাকিটা পরে দেওয়ার চেষ্টা করব।

    Atoz এর এই অংশ আবার উদ্ধৃত করছি:

    "একবার ভাবুন, রেফারেন্স টেফারেন্স বিহীনভাবে তুমুল কন্ফিডেন্সে এইসব ছুঁড়ে তো যাচ্ছেনই বহু লোক! যারা শুনছেন, তাঁরা অনেকেই জাস্ট মেনে নেবেন, কারণ সময় বা আগ্রহ হয়তো নেই সত্যাসত্য বিচারের। বা জাস্ট এটা মানতে তাঁদের ভালো লাগবে বলে মেনে নেবেন। "

    আবারও বলছি এই নিবন্ধে কোনো রেফারেন্স বা পাদটিকা দিইনি। কিন্তু, প্রতিটি লাইন দায়িত্ব নিয়ে লেখা। 'সময় ও আগ্রহ' সকলের আছে ধরে নিয়েই  সত্যাসত্য বিচারের পালা চলছে। কিন্তু, Atoz ,আপনি খেলা চলাকালীন শেষ হুইসল মারার রেফারি হয়ে ভুবনের ভার নিয়ে ফেলছেন দেখে আশ্চর্য হচ্ছি। 'তুমুল' না হলেও একটা 'কনফিডেন্স' তো যে কোনো কাজে লাগে এবং তা আমার মাত্রাজ্ঞান অনুযায়ী রয়েছে। এইজন্যই বারবার প্রত্যেকের পয়েন্টগুলো শুনে আলোচনায় প্রবৃত্ত হচ্ছি।

    আগের অংশে আমি জানিয়েছি যে সৈকতের এই প্রকল্প মানতে নারাজ যে, জীবনানন্দের গদ্য কোট করা এক্ষেত্রে সত্য নিরূপণে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। আত্মজীবনীমূলক গদ্যের গুরুত্ব, গবেষকদের কাছে, অপরিসীম, সাধারণ পাঠকের কাছেও তা সত্যের কাছে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলেই মনে হয়।

    আমি জীবনানন্দের প্রায় সবকটি উপন্যাস পড়েছি, 1995 থেকে শুরু করি। কোনো কোনোটি  একাধিক বার। পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করি প্রতিটি উপন্যাসের ধরন আত্মজৈবনিক এবং কেন্দ্রীয় চরিত্রের বয়েস, অবস্থান ও অন্যান্য অনুষঙ্গ মিলে যায় যেন।

    কেন বলছি এ-কথা, যে আত্মজৈবনিক উপন্যাস ব্যক্তিত্ব মূল্যায়নে এবং ইতিহাস নির্ণয়ে সহায়ক? এখানে রেফার করছি মণীন্দ্র গুপ্তের 'গদ্য সংগ্রহের' অন্তর্গত 'কারুবাসনা ও সেইসব দিন' প্রবন্ধ টি। প্রথমদিকে মণীন্দ্র গুপ্ত কি লিখছেন দেখা যাক:

    " কারুবাসনার নায়ক হেম আর জীবনানন্দ অভিন্ন একথা বলা যাবে না, প্রমাণও করা যাবে না। কিন্তু তাদের জীবনের ঘটনা, মনের বেদনা, স্পৃহা ও নৈরাশ্য ওভারল্যাপ করে তাদের সাদৃশ্য অবশ্যই দেখানো যাবে। সেই সঙ্গে, আমার অনুরূপ দেশকালের অভিজ্ঞতা থাকলে, সেটুকুও যোগ করে দেব। এবং এই পন্থায় জীবনানন্দকে অনেক স্পষ্ট স্বচ্ছ ও জীবন্তভাবে আমরা দেখতে পাব।

    হেম জীবনানন্দেরই সৃষ্টি, তাঁর নিজেরই আদলে। এবার মিলিয়ে দেখা যাক তাঁদের বায়োডেটা। জীবনানন্দের জন্ম 1899 সালে। 1933 এ কারুবাসনা লেখার সময় তাঁরও বয়স 34 বছর। জীবনানন্দ এম এ পাশ করেন 1921 সালে। অর্থাৎ হেমের বছরেই, 12 বছর আগে। জীবনানন্দের বিয়ে মে 1930। হেমও বিয়ে করেছে 3 বছর হল, অর্থাৎ সেই 1930 সালেই। জীবনানন্দের কন্যা মঞ্জুশ্রীর জন্ম ফেব্রুয়ারি 1931, অর্থাৎ এই 1933 এর আগস্টে সে 2 বছর 7 মাসেরটি হল। এদিকে হেমের মেয়ে খুকুরানীর বয়সও এখন আড়াই বছর। হেম বলছে ' বিয়ের আগে দু-তিনটে কলেজে অস্থায়ী কাজ করেছি। মিলিয়ে দেখছি বিয়ের আগে জীবনানন্দ সিটি কলেজে (1922-28), বাগের হাট কলেজে মাস তিনেক(1929) এবং দিল্লির রামযশ কলেজে কয়েক মাস(1929-30) অধ্যাপনা করেছেন। হেমের মতই বিয়েটা পর থেকে তিনি বেকার"
    এতটা শ্রী গুপ্তের কোট।

    এই অংশটিতে মনীন্দ্রের এই অংশে জোর দিচ্ছি: "এবং এই পন্থায় জীবনানন্দকে অনেক স্পষ্ট স্বচ্ছ ও জীবন্তভাবে আমরা দেখতে পাব।"

    আমার অভিমতও তাই এবং এখান থেকে আমি 'চৌত্রিশ বছর' থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ কোট করেছি। সত্যকে আড়াল করা নয়, আরো স্বচ্ছ ভাবে দেখাই আমার অভিপ্রায়।

    আসছি উক্ত প্রবন্ধের পরের অংশে:

    " বেকারিই বোধহয় এই বইটির সবচেয়ে বড় বাস্তব সমস্যা। সারা বই জুড়ে নানাভাবে এই কথা। একেবারে শেষেও দেখছি, বৃদ্ধ অর্থবান জনৈক যদুনাথবাবু গায়ে পড়ে হেমকে পরামর্শ দিচ্ছেন: 'তোমাদের দেখে বড় দুঃখ হয় আমার; এই তো বি এ পাশ করেছে, বি এ না এম এ? এম এ? বেশ, বেশ, তা হলে তো গাজন আরো চমৎকার-কুড়িয়ে বাড়িয়ে বয়সও, তোমার বাবা বললেন, চৌত্রিশ। বিয়ে করেছ, সন্তান রয়েছে অথচ একটা মুটের যা সম্বল তাও তোমার নেই।' হেমের নয়, যদুবাবু যেন জীবনানন্দরই বায়োডেটা আওড়ালেন।"

    লক্ষ্য করুন মনীন্দ্রের বক্তব্য: 'হেমের নয়, যদুবাবু যেন জীবনানন্দেরই বায়োডেটা আওড়ালেন।'
  • কুশান | 342323.191.2356.2 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:২২79580
  • "তর্কের খাতিরে নাহয় ধরেই নিলাম উপন্যাসই প্রামাণ্য দলিল। কিন্তু এতটা উপন্যাসাংশ কোট করেও কি মূল পোস্টের এই বক্তব্যটার মীমাংসা হল যে,
    "১) কি কারণে একটি কবিতা লিখেই জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন? কি এমন বিস্ফোরক বস্তু ছিল তাতে যে একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত চাকরি হারাতে পারেন? তিনি তো ততদিন অবধি খুব একটা কেউকেটা কবি ছিলেন না।"

    Atoz তর্কের খাতিরে আপনাকে 'ধরে নিতে' বলছি না যে উপন্যাসই প্রামাণ্য দলিল। অর্থাৎ, আমি চাই না আপনি আমাকে সহজ ও লোপ্পা ফুলটস ফেলুন। এক্ষেত্রেও আমার স্পেসিফিক রেফারেন্স রয়েছে।

    এতক্ষণ আমি একটি উপন্যাস থেকেই প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দিয়েছি এবং আমার ধারণা জানিয়েছি। তা সত্যকে বিকৃত করার উদ্দেশ্য নয় এবং 'রাবণের চব্বিশ বিমান, বিদ্যাসাগরের ঠাকুমার আমলে হাজারে হাজারে শিক্ষিতা মহিলা'-এমত মিথ তৈরির অপচেষ্টা নিয়ে আমি এই নিবন্ধ লিখি নি। Tim কিছু সঙ্গত প্রশ্ন তুলেছেন, সুকিও, কিছুটা উত্তর দিয়েছি, বাকিটা পরে দেওয়ার চেষ্টা করব।

    Atoz এর এই অংশ আবার উদ্ধৃত করছি:

    "একবার ভাবুন, রেফারেন্স টেফারেন্স বিহীনভাবে তুমুল কন্ফিডেন্সে এইসব ছুঁড়ে তো যাচ্ছেনই বহু লোক! যারা শুনছেন, তাঁরা অনেকেই জাস্ট মেনে নেবেন, কারণ সময় বা আগ্রহ হয়তো নেই সত্যাসত্য বিচারের। বা জাস্ট এটা মানতে তাঁদের ভালো লাগবে বলে মেনে নেবেন। "

    আবারও বলছি এই নিবন্ধে কোনো রেফারেন্স বা পাদটিকা দিইনি। কিন্তু, প্রতিটি লাইন দায়িত্ব নিয়ে লেখা। 'সময় ও আগ্রহ' সকলের আছে ধরে নিয়েই  সত্যাসত্য বিচারের পালা চলছে। কিন্তু, Atoz ,আপনি খেলা চলাকালীন শেষ হুইসল মারার রেফারি হয়ে ভুবনের ভার নিয়ে ফেলছেন দেখে আশ্চর্য হচ্ছি। 'তুমুল' না হলেও একটা 'কনফিডেন্স' তো যে কোনো কাজে লাগে এবং তা আমার মাত্রাজ্ঞান অনুযায়ী রয়েছে। এইজন্যই বারবার প্রত্যেকের পয়েন্টগুলো শুনে আলোচনায় প্রবৃত্ত হচ্ছি।

    আগের অংশে আমি জানিয়েছি যে সৈকতের এই প্রকল্প মানতে নারাজ যে, জীবনানন্দের গদ্য কোট করা এক্ষেত্রে সত্য নিরূপণে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। আত্মজীবনীমূলক গদ্যের গুরুত্ব, গবেষকদের কাছে, অপরিসীম, সাধারণ পাঠকের কাছেও তা সত্যের কাছে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলেই মনে হয়।

    আমি জীবনানন্দের প্রায় সবকটি উপন্যাস পড়েছি, 1995 থেকে শুরু করি। কোনো কোনোটি  একাধিক বার। পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করি প্রতিটি উপন্যাসের ধরন আত্মজৈবনিক এবং কেন্দ্রীয় চরিত্রের বয়েস, অবস্থান ও অন্যান্য অনুষঙ্গ মিলে যায় যেন।

    কেন বলছি এ-কথা, যে আত্মজৈবনিক উপন্যাস ব্যক্তিত্ব মূল্যায়নে এবং ইতিহাস নির্ণয়ে সহায়ক? এখানে রেফার করছি মণীন্দ্র গুপ্তের 'গদ্য সংগ্রহের' অন্তর্গত 'কারুবাসনা ও সেইসব দিন' প্রবন্ধ টি। প্রথমদিকে মণীন্দ্র গুপ্ত কি লিখছেন দেখা যাক:

    " কারুবাসনার নায়ক হেম আর জীবনানন্দ অভিন্ন একথা বলা যাবে না, প্রমাণও করা যাবে না। কিন্তু তাদের জীবনের ঘটনা, মনের বেদনা, স্পৃহা ও নৈরাশ্য ওভারল্যাপ করে তাদের সাদৃশ্য অবশ্যই দেখানো যাবে। সেই সঙ্গে, আমার অনুরূপ দেশকালের অভিজ্ঞতা থাকলে, সেটুকুও যোগ করে দেব। এবং এই পন্থায় জীবনানন্দকে অনেক স্পষ্ট স্বচ্ছ ও জীবন্তভাবে আমরা দেখতে পাব।

    হেম জীবনানন্দেরই সৃষ্টি, তাঁর নিজেরই আদলে। এবার মিলিয়ে দেখা যাক তাঁদের বায়োডেটা। জীবনানন্দের জন্ম 1899 সালে। 1933 এ কারুবাসনা লেখার সময় তাঁরও বয়স 34 বছর। জীবনানন্দ এম এ পাশ করেন 1921 সালে। অর্থাৎ হেমের বছরেই, 12 বছর আগে। জীবনানন্দের বিয়ে মে 1930। হেমও বিয়ে করেছে 3 বছর হল, অর্থাৎ সেই 1930 সালেই। জীবনানন্দের কন্যা মঞ্জুশ্রীর জন্ম ফেব্রুয়ারি 1931, অর্থাৎ এই 1933 এর আগস্টে সে 2 বছর 7 মাসেরটি হল। এদিকে হেমের মেয়ে খুকুরানীর বয়সও এখন আড়াই বছর। হেম বলছে ' বিয়ের আগে দু-তিনটে কলেজে অস্থায়ী কাজ করেছি। মিলিয়ে দেখছি বিয়ের আগে জীবনানন্দ সিটি কলেজে (1922-28), বাগের হাট কলেজে মাস তিনেক(1929) এবং দিল্লির রামযশ কলেজে কয়েক মাস(1929-30) অধ্যাপনা করেছেন। হেমের মতই বিয়েটা পর থেকে তিনি বেকার"
    এতটা শ্রী গুপ্তের কোট।

    এই অংশটিতে মনীন্দ্রের এই অংশে জোর দিচ্ছি: "এবং এই পন্থায় জীবনানন্দকে অনেক স্পষ্ট স্বচ্ছ ও জীবন্তভাবে আমরা দেখতে পাব।"

    আমার অভিমতও তাই এবং এখান থেকে আমি 'চৌত্রিশ বছর' থেকে প্রাসঙ্গিক অংশ কোট করেছি। সত্যকে আড়াল করা নয়, আরো স্বচ্ছ ভাবে দেখাই আমার অভিপ্রায়।

    আসছি উক্ত প্রবন্ধের পরের অংশে:

    " বেকারিই বোধহয় এই বইটির সবচেয়ে বড় বাস্তব সমস্যা। সারা বই জুড়ে নানাভাবে এই কথা। একেবারে শেষেও দেখছি, বৃদ্ধ অর্থবান জনৈক যদুনাথবাবু গায়ে পড়ে হেমকে পরামর্শ দিচ্ছেন: 'তোমাদের দেখে বড় দুঃখ হয় আমার; এই তো বি এ পাশ করেছে, বি এ না এম এ? এম এ? বেশ, বেশ, তা হলে তো গাজন আরো চমৎকার-কুড়িয়ে বাড়িয়ে বয়সও, তোমার বাবা বললেন, চৌত্রিশ। বিয়ে করেছ, সন্তান রয়েছে অথচ একটা মুটের যা সম্বল তাও তোমার নেই।' হেমের নয়, যদুবাবু যেন জীবনানন্দরই বায়োডেটা আওড়ালেন।"

    লক্ষ্য করুন মনীন্দ্রের বক্তব্য: 'হেমের নয়, যদুবাবু যেন জীবনানন্দেরই বায়োডেটা আওড়ালেন।'
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:১৯79563
  • আরে এলেবেলে, মূল পোস্টটার শুরুর দিকেই তো বেদম কনফিডেন্সের সঙ্গে বলা হয়েছে,
    "
    ১) কি কারণে একটি কবিতা লিখেই জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন? কি এমন বিস্ফোরক বস্তু ছিল তাতে যে একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত চাকরি হারাতে পারেন? তিনি তো ততদিন অবধি খুব একটা কেউকেটা কবি ছিলেন না।
    "
    একবার ভাবুন, রেফারেন্স টেফারেন্স বিহীনভাবে তুমুল কন্ফিডেন্সে এইসব ছুঁড়ে তো যাচ্ছেনই বহু লোক! যারা শুনছেন, তাঁরা অনেকেই জাস্ট মেনে নেবেন, কারণ সময় বা আগ্রহ হয়তো নেই সত্যাসত্য বিচারের। বা জাস্ট এটা মানতে তাঁদের ভালো লাগবে বলে মেনে নেবেন। বা নিজেদের কিছু যায় আসে না বলে মেনে নেবেন। কেউ চটকদার বলে মেনে নেবেন।

    এইসব জিনিসেরই প্যারালেল তো ঐ তাজমহল তেজো মহালয়া, রাবণের চব্বিশ বিমান, বিদ্যাসাগরের ঠাকুমার আমলে হাজারে হাজারে শিক্ষিতা মহিলা---এসব জিনিস তো একদিনে তৈরী না, বহু লোক এগুলো প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে ছড়াতে সাহায্য করেন।
  • jibon | 670112.193.9003412.171 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৮79582
  • সকলেই তর্কের বেসিক ভদ্রতাটুকু মেনে চলছেন এই Atoz ছাড়া। Atoz অদ্ভুত অভদ্রভঙ্গীতে কথা বলেন দেখি। স্কুল কলেজে ডিবেটের চল ছিল না বোদয়।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৬79583
  • যা কইসেন কত্তা! কী বুদ্ধি আফনের ! jibon বাবু মহাশয়। ঃ-)
    কিন্তু আতোজ তর্ক তো করছে না, জাস্ট একটা প্রশ্নের সোজাসুজি মীমাংসা চাইছে মাত্র।
    কিন্তু তার কোনো সোজাসুজি উত্তর তো এতসব পোস্টের পরেও এল না!
  • কুশান | 342323.191.2356.2 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২১79584
  • Atoz "এত গোল গোল ঘোরার কী আছে? আমার প্রশ্ন অতি সিম্পল।"

    এখানে কেউ গোল গোল ঘুরছে না। প্রসঙ্গ থেকে খুব অপ্রসঙ্গে কেউই যায় নি।
    সবিনয়ে বলি, একটু টেক্সট পড়তে শিখুন। 1 থেকে 9 যে প্রশ্নাবলী ছিল তা MCQ টাইপ নয়।

    1 এর প্রশ্নটি কী ছিল?

    ) কি কারণে একটি কবিতা লিখেই জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন? কি এমন বিস্ফোরক বস্তু ছিল তাতে যে একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত চাকরি হারাতে পারেন? তিনি তো ততদিন অবধি খুব একটা কেউকেটা কবি ছিলেন না।
    "

    আমরা 'কারণ' টি নিয়ে বেশি চিন্তিত। এ ব্যাপারে এলেবেলে, সৈকত, ~, সুকি ও অন্যান্যরা যে বক্তব্য রেখেছেন তাঁরাও কারণ টিকে সনাক্ত করতে চেয়েছেন। আমিও তাই চাইছি।

    আপনি আপনার সুবিধার্থে প্রশ্নটি এইরকম চাইছেন:

    'কোন একটি কবিতা লিখে জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন?'

    এটা আমার টেক্সটের প্রশ্ন না। এই প্ৰশ্ন আপনার মত আপনি সাজিয়েছেন। আবারও বলছি, নিহিত কারণ টি খুঁজতে চাইছি।

    আপনি 'একটি কবিতা' চাইছেন। এটি পেয়ে গেলে/ না পেলে আপনি খুশী । আমি এত টুকু উত্তর চাইছি না। এই উত্তর একটা ইনফর্মেশন মাত্র।

    এই প্রসঙ্গে, আবারও বলছি, যে উত্তরগুলো, যে রেফারেন্স আমি দিয়েছি, তা রিপিট করব না।

    আপনি প্রথমে আত্মজৈবনিক উপন্যাসের বাস্তবতা স্বীকার করতে চাননি। পরে ' তর্কের খাতিরে' মেনে নিয়েছেন। আমি যুক্তিসহকারে এবং রেফারেন্স দিয়ে দেখাতে চেয়েছি এর বাস্তবতা আছে।

    আবারও বলছি, এই সমস্ত প্রশ্নের ডেফিনিট ও MCQ টাইপ উত্তর চাওয়া আমার নিবন্ধের উদ্দেশ্য না। কিছু প্রশ্ন পাঠকের পাশাপাশি নিজেকেও। বুঝতে ও জানতে চাইছি।
    সেখানে কবিতার ভূমিকা কতটা সেটা জানা আসল উদ্দেশ্য। শুধু ইনফরমেশন এ এক ধরনের সত্য থাকে, তবে তা নতুন কোনো সত্যের উপলব্ধি দেয় কি?

    আপনি সাদা/কালোর বাইনারি উত্তর খুঁজছেন। আমাদের উদ্দেশ্য অন্য।
  • কুশান | 342323.176.7856.64 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫৩79592
  • Tim, এলেবেলে, সৈকতের রেফারেন্স ও অর্থনৈতিক কারণ ও ব্রাহ্ম কলেজের সঙ্কটজনিত কারণ, যেটা প্রামাণ্য, সেটা আদৌ ফেলছি না। বরং সেই পয়েন্টটি পুরোমাত্রায় কগনিজেন্সে নিয়ে ডিসকোর্স চালু রাখছি। একান্ত অনুসন্ধান, সত্য অনুধাবন এবং সময়টাকে বুঝতে চাওয়া।

    আমি ~ বর্ণিত সম্ভাবনাগুলি, যেটা উনি বলেছেন, 'আমি তো থিওরি দিলেই আপনারা রে রে করে তেড়ে আসবেন' সেই পারসেপশনের প্রশ্নে অনেকটাই সহমত। এরই অনুষঙ্গ ধরে তপন রায়চৌধুরীর 'বাঙালনামা' থেকে পরবর্তী অংশ তুলে দিচ্ছি। তা থেকে জীবনানন্দের সম্বন্ধে তৎকালীন সাধারণ মানুষের পারসেপশন বুঝতে সাহায্য করবে। (পৃষ্ঠা 84)

    "শুধু একটি মানুষের মূল্য বরিশালবাসী তাঁর জীবৎকালে বুঝতে পারেনি। মানুষটির নাম জীবনানন্দ দাশ। ওঁর কবিতার সমঝদার বরিশাল শহরে বেশি কেউ ছিল না। বরং 'শনিবারের চিঠির' প্রতিধ্বনি করে ঠাট্টা-বিদ্রূপই বেশি শোনা যেত। মানুষটি নিতান্তই সঙ্গীহীন ছিলেন। রূপহীন কবির চলাফেরা ছিল গ্রাম্যতা-দোষে দুষ্ট। উনি একা একা নদীর পাড়ে হাঁটতে যেতেন। ওঁর পেছন পেছন কিছু বখাটে ছেলে ওঁকে ভেঙ্গিয়ে ভেঙ্গিয়ে হাঁটত। কলেজেও উনি একা বসে থাকতেন, কারুর সঙ্গে বিশেষ কথা বলতে দেখা যেত না। ওঁর স্ত্রী রাজনৈতিক কাজে বিশেষভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁকে যেদিন পুলিশ গ্রেফতার করে সেদিন কবি হাউহাউ করে কেঁদেছিলেন। এ নিয়ে হাসাহাসির অন্ত ছিল না। 'বনলতা সেনে'-র কবির ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাজেডি ওঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত গদ্য রচনায় ফুটে উঠেছে। ওঁর কবিতা বুঝতে পারতাম না। কিন্তু মানুষটার জন্য কষ্ট হত।"

    এই লেখা পড়ে কি মনে হয়? জীবনানন্দ শাস্তির জন্য একটু বেশি ভালনারেবল ছিলেন? যে ধরণের মানুষকে শাস্তির জন্য অনায়াসে বেছে নেওয়া চলে? যাঁর তেমন সামাজিক জোর নেই? মুরুব্বির জোর নেই। খুঁটির জোর নেই। যাকে যা খুশি করা চলে? যিনি হাসাহাসির পাত্র, যাদের আমরা সো কলড 'মুরগি' বলি? মুরগি না বলিপ্রদত্ত পাঁঠা, সেই প্রশ্নও এসে যায়।

    এখানেও শ্রী রায়চৌধুরী জীবনানন্দের গদ্য রচনা, যা মৃত্যুর পর প্রকাশিত, তার ট্র্যাজেডি তে জোর দিচ্ছেন। আমি আগেই বলেছি মণীন্দ্র গুপ্ত 'কারুবাসনা' উদ্ধৃত করে জীবনানন্দের জীবন স্বচ্ছভাবে বুঝতে চেয়েছেন। আমি একই পদ্ধতিতে 'চৌত্রিশ বছর' উপন্যাসের প্রাসঙ্গিক অংশ আগেই কোট করেছি। বুঝতে চেয়ে। জীবনানন্দ আর কী করতে পারতেন? তিনি জাস্টিস চেয়েছিলেন। উপন্যাস দুবার পড়ে মনে হচ্ছে সম্পাদক ভূমেনবাবু এই উপন্যাসের নাম 'চৌত্রিশ বছর' রেখে ঠিক করেননি। বরং রাখা যেত, ' আমার কৈফিয়ৎ'। 'এলেবেলে' সজনীবাবুর আর্টিকল পড়ালেন। অশ্লীলতার ব্যাপারটা আরো খোলসা হলো। জীবনানন্দের 'ক্যাম্পে'র নিজস্ব বক্তব্য/ডিফেন্স পড়ালেন। আমি আপনাদের জীবনানন্দের বয়ানের কিছু অংশ পড়িয়েছি। পুরোটাই চাকরি যাওয়া সংক্রান্ত, কবিতা লেখা সংক্রান্ত, অশ্লীলতার অভিযোগ সংক্রান্ত। কোথাও সত্যকে আড়াল করা নেই। নিজের ক্ষোভ নয়, বিকৃতি নয়, জাস্টিস, এবং এই জাস্টিস 'পোয়েটিক জাস্টিস' হতে পারত। কোনো রোম্যান্টিকতা নয়, ষোল আনা বাস্তব। কতটা সত্যের অনুসারী? আরো এক অংশ:

    " উমেশ বললে- সে-সব সাহিত্যিক জীবনের কথা থাক, কিন্তু, তুমি কোনও দিনও যখন তাদের এমন কথা বললে না যে, আপনাদের ভালো লাগে, বা না লাগে, আমি একটুও গ্রাহ্য করি না- আমার যা লেখার, আমি লিখবই, আপনাদের যা খুশি করুন-এমন কথা, তোমার সেই কলেজের দিনগুলোর ভেতর, কোনও দিনও যখন বলো নি তুমি, তাদের তখন আচমকা এমনি কবিতা-লেখার অজুহাতে সরিয়ে দেওয়া, এ কী তাদের বিবেচনাহীন হঠকারিতা নয়-অত্যন্ত চরিত্রহীনতা নয়!

    -সে থাক-

    -তোমাকে তাদের কাছে ডেকে নেওয়া উচিত ছিল- তোমাকে ভেবে দেখবার অবসর দেওয়া উচিত ছিল-তাদের বক্তব্য তোমাকে জানানো উচিত ছিল-তোমাকে ভেবে দেখবার অবসর দেওয়া উচিত ছিল-তোমারই বা কী বলবার আছে, সমস্ত, শোনা উচিত ছিল তাদের-

    -তা খুব ঠিক উমেশ; কিন্তু, আমাকেই শুধু বিদায় দেয় নি তারা-যারা আট বছর, দশ বছর, এমন-কী বারো-চোদ্দো বছর, ওই কলেজে পড়াচ্ছিল, তাদেরও অনেককে বিদায় দেওয়া হয়েছে-

    উমেশ ঘাড় হেঁট করে নিঃসাড় হয়ে ব'সে রইল-

    পরে বললে-তারা এখন কী করছে?

    -জানি না

    - কোনো খোঁজ পাওনা তাদের?

    -না

    -কেউই এদের বড়োলোক নয় নিশ্চয়ই?

    - না, উমেশ, আমার মতোনই পেটের চিন্তায় সকলেই তারা অস্থির-তারাও খুব গরিব-

    -এত বছর ধ'রে যখন কাজ করছিল, তখন স্ত্রী-ছেলেপিলেও ঢের ছিল নিশ্চয়ই তাদের- অনেক দায়িত্বেও জড়িয়ে পড়েছিল।

    -তা হয়েছিল, উমেশ-তা হয়েছিল উমেশ-

    -কে জানে, ভগবান কেমন ক'রে তাদের দিন চালাচ্ছেন!

    -ভগবানের কথা বোলো না-"

    কী উঠে আসছে? জীবনানন্দ সত্যকে সারকামভেন্ট করেননি। তিনি অকপটে জানাচ্ছেন এমন তথ্য যে, তৎকালীন কলেজের অনেকেরই চাকরি যায়। আমি যে-তথ্য রাখলাম তাতে আপনাদের বর্ণিত ব্রাহ্ম কলেজের আভ্যন্তরীণ সংকটের কারণটি সুদৃঢ় হয়। কিন্তু, ভিকটিমের বয়ান, প্রতিপ্রশ্ন, জাস্টিসের খোঁজ ইত্যাকার প্রসঙ্গ এসেই পড়ে। এসে পড়ে জীবনানন্দের সিঙ্গল পয়েন্ট এজেন্ডা, চাকরী ন্যায়সঙ্গতভাবে যায় নি।

    আমি চাই সত্যের পথে যাওয়ার জন্য পাল্টা প্রকল্পের পরিসর। কুরোশাওয়ার বর্ণিত মেথডলজি।

    Tim আপনি নিবন্ধের 1, 2 ও 3 নম্বর প্রশ্ন নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন সেখানেও ফিরব পরবর্তী সময়ে। একটু সময় চাইছি।
  • এলেবেলে | 2345.110.891223.0 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:০৮79593
  • সব কিছু বাদ দিয়ে এই টই ক্রমশ 'ক্যাম্পে' কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। তাতে অনেক নতুন কিছু উঠে আসছে ঠিকই কিন্তু লেখাটার বিষয়বস্তুও যেন কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ছে ওই 'ক্যাম্পে' কে কেন্দ্র করেই।

    যাই হোক, @সৈকত অচিন্ত্য সেনগুপ্তর লেখাটি উল্লেখ করলেও তা কোথায় পড়েছেন মনে করতে পারেননি। অচিন্ত্য পূর্বাশা-র জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৬ সংখ্যায় 'কল্লোল যুগ' প্রবন্ধে এ সম্পর্কে যা লেখেন তা হুবহু এইরকম - সিটি কলেজে লেকচারারের কাজ করত জীবনানন্দ। কবিতায় শস্যশীর্ষে স্তনশ্যামমুখ কল্পনা করেছিল বলে 'শুনেছি' সে কর্তৃপক্ষের কোপে পড়ে। অশ্লীলতার অপবাদ তার চাকরিটি কেড়ে নেয়।

    @Tim মঞ্জুভাষবাবুর বইটি পাবেন প্রতিভাস-এ।

    @কুশান 'আত্মঘাতী ক্লান্তি'-র প্রসঙ্গ এখানে পাবেন

    তবে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং জীবনানন্দ-সহোদরা সুচরিতা দাশ 'ক্যাম্পে' লেখার জন্য জীবনানন্দের চাকরি যাওয়ার ব্যাপারটি আদৌ সমর্থন করেননি।

    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    সুচরিতা দাশ

    সুনীল ও সুচরিতার লেখাদুটি ছাপা হয়েছিল ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯৮ দেশ-এর 'জীবনানন্দ ২' সংখ্যায়।
  • কুশান | 342323.191.2356.2 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:২০79585
  • Tim এর এই প্রশ্ন এখানে প্রাসঙ্গিক হয়ে  পড়লো।

    "কিন্তু গোড়ার কথায় অস্পষ্টতা রেখে সেটা করা চলেনা। লেখক নিজেই লিখেছেন"

    । "কবিতার সামাজিক উপযোগিতা নিয়ে লিখতে আমি সার্বিকভাবে অক্ষম"
    ২।"এইসব প্রশ্নগুলির উত্তর নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও নিজের আবছা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি।"

    কুশানবাবুর দুই পর্বের লেখায় সেই অস্পষ্টতা এবং কোথাও কোথাও এক ধরণের ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ বিষয়টি সম্পর্কে এরকম ভুল ধারনা তৈরী করতে পারে। আশা করবো লেখক এই বিষয়টা নিয়ে একটু ভাববেন।"

    Tim এই প্রশ্নগুলির উত্তর সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা আমার ছিল না। অস্পষ্ট, আবছা প্রতিক্রিয়া দিতে পারতাম। দিইনি। আপনাদের জন্য স্পেস রেখেছি। এই কন্টেক্সটে আমার মতামত/প্রতিক্রিয়া গুলি রেখেছি রেফারেন্স সহ। প্রথম প্রশ্নটি নিয়ে নানারকম মতামত থেকে একটা ছবি এতক্ষণে তৈরি হচ্ছে। আমি একটা সার্বিক উত্তর চাইছিলাম। ভিন্ন মতামতের ভিত্তিতে একটা সত্য।

    Tim আরো জানিয়েছেন:

    "এরকম হতেই পারে যে লেখক একটা লেখার মধ্যে দিয়েই জানতে চাইছেন, এবং বেশ কিছুদিন লেখার পর ব্যাপারটা একটা নতুন রূপ পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে খুব ভালো হয় যদি টই খুলে এরকম একটা লেখা দেওয়া হয়। টইতে পুরো আলোচনাটা হয়ে গেলে (বা অনেকটা এগিয়ে গেলে) তার সংহত রূপ ব্লগে নিয়ে এসে রাখলে কেমন হয় সেটাও ভেবে দেখতে অনুরোধ করি।"

    Tim, আমার নিবন্ধটি ছিল প্রায় 22 পাতার। যা গুরু তিন পর্বে প্রকাশ করছে। আলাদা টই তে রাখলে এতটা জায়গা দিতে আরো অসুবিধে হত। কিন্তু, এখানে একটি প্রশ্নকে ঘিরেই আমরা নানান মূল্যবান মতামত, পারসেপশন পাচ্ছি, যেখান থেকে হয়ত কিছু উঠে আসে।
  • সুকি | 785612.49.013423.190 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩২79586
  • জানি না প্রাসঙ্গিক কিনা, বেশ কিছুদিন আগে আমি আমার কবিতা ভাবনা নিয়ে একটা লেখা শুরু করেছিলাম। শেয়ার করলাম লিঙ্কটাঃ

    http://www.guruchandali.com/blog/2015/08/16/1439721661341.html?author=sukanta.ghosh.184
  • Tim | 89900.253.8956.205 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৬79587
  • আলোচনা খুব দ্রুত এগোচ্ছে, পড়ছি।

    ১-৩ অবধি যে প্রশ্নগুলো কুশানবাবু রেখেছেন সেগুলো নিয়ে কিছু কথা আছে।

    ইতিমধ্যে ১ নং প্রশ্নের অনুসন্ধানে অনেক তথ্য উঠে এসেছে, কিন্তু এখনও এটা প্রতিষ্ঠিত নয় যে কবিতা লেখার কারণেই একজন কবির চাকরি গেছিলো। ~ এর থিওরিটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। এবার, ১ নং প্রশ্নের ভ্যালিডিটিই নির্ভর করে আদৌ জীবনানন্দের চাকরি কবিতা লেখার জন্য গেছিলো কিনা এই তথ্যের ওপর (কোন কবিতা গুরুত্বপূর্ণ নয়)। পরের দুটো প্রশ্ন টুকে রাখি সুবিধের জন্যে।

    "২) কি কারণে হাংরির তদ্যবধি নাম না জানা কবিদের পেছনে রাষ্ট্র পুলিশ লেলিয়ে দেয়? ব্যাপার মামলা ও কোর্ট অবধি গড়ায়। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গিন্সবার্গ আবু সাইদ আয়ুবকে চিঠি লিখে জানান, আপনারা প্রতিবাদ করুন।
    ৩)কেনই বা আজকের জনপ্রিয় এক কবির একটি কবিতা নিয়ে তাঁর বিরূদ্ধেও মামলা হয়, হামলার ভয় দেখায় উগ্র ও অন্ধ সাম্প্ৰদায়িক লোকজন? ফেসবুক উত্তাল হয়ে ওঠে? ব্যাপার এতদূর গড়ায় যে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস প্রয়োজন হয়ে পড়ে।"

    ১-৩ সবকটা প্রশ্নই আসলে সমকালীন শালীনতার যে মাপকাঠি তার সমস্যা। এমনও নয় যে এই শালীনতার ধারণায় সবাই সাবস্ক্রাইব করছেন, কিন্তু কোন একটি গোষ্ঠীর কাছে কবিতাগুলি অশ্লীল মনে হয়েছে। এর মধ্যে ১ নিয়ে কলেজের কোন নথি আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত বেনিফিট অফ ডাউট দিতে হবে, উপায় নেই। ধরে নিতে হবে যে কবিতা লেখার জন্য নয়, "অকাব্যিক" কোন কারণে চাকরি গেছিলো।
    ২ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই।
    ৩ নং প্রশ্ন সম্ভবত শ্রীজাতর কবিতা নিয়ে আর এস এসের তান্ডব সম্পর্কিত।

    ২ ও ৩ একেবারেই কবিতার সমস্যা না। বেশিরভাগ পাঠকেরও সমস্যা তো নয়ই। কারণ কবিতাপ্রেমীদের কতজন আর লাঠি নিয়ে কবি ঠ্যাঙাতে যেয়ে উঠতে পারবেন। একটা যে ছোট অংশ আছেন, তাঁরা ফোনে উস্কানি দিয়ে তেল মেখে নাইতে চলে যাবেন, তাদের কবিতা পাঠকের সেটের বাইরে রাখা যেতে পারে।

    এগুলো মূলত রাষ্ট্রের সমস্যা। ফর্ম যাই হোক, কোন একটা গোষ্ঠী কোন অজুহাতেই একজনের মুখ বন্ধ করতে পারেনা। এবার সেই ফর্ম কবিতা থেকে কার্টুন যাই হোক না কেন। আমাদের দেশে সমস্ত কিছুতেই একদল লোক জুটে যায় যারা হইচই গোলমাল ভাঙচুর করতে বেজায় ভালোবাসে। তো, এরকম কোন একটা দঙ্গল পাকিয়ে ঝামেলা গজিয়ে উঠলেই স্টেট প্র্যাগম্যাটিক হয়ে যায়। একটা নিস্তেজ কবিকে রাগিয়ে যদি একশোটা রাগী গুন্ডাকে শান্ত করা যায় তাহলে তারা সেটাই করে। কাজেই কারণটি রাজনৈতিক। যে একশোজন গুন্ডা কবিকে ত্রিশূলে বিদ্ধ করতে আসছে তাদের যদি সেই সময় কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকতো (যাতে তাদের ইন্টারেস্ট আছে) তাহলে এসবের লোক মেলা ভার হতো। কিন্তু তা হবে না, কাজেই এরকম বারবার হতেই থাকবে।

    ১ এ ফিরে আসি। একটা ইন্টারেস্টিং কথা হলো, সিটি কলেজের কেসেও কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যাটাই মূল কারণ। অন্তত ছাত্রদের চলে যাওয়াটাই আমার বড়ো সমস্যা বলে মনে হয়েছে। সেখানেও কর্তৃপক্ষ সেই ব্যাপারে কিছু না করে শর্টকাট নিতে চাইলেই একমাত্র শিক্ষকের চাকরি যায়।
  • কুশান | 342323.191.2356.2 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৮79588
  • সুকি, অনেকটাই পড়লাম। এ-লেখা মনোযোগের দাবি রাখে। আবার পড়ব, সময় করে। প্রচুর রেফারেন্স দিয়েছেন। সেগুলিও দেখব।

    তবে, সুকি, আপনার আর্টিকল দিয়েই 'পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়' সংক্রান্ত আপনার রিজার্ভেশন ভেঙে দেওয়ার একটা প্রয়াস নেব, ভাবছি।

    আপনার লেখা আবার পড়ে সাইটেই কমেন্ট দেব। লেখাটি মৌলিক, সন্দেহ নেই। আরো লিখুন।
  • কুশান | 342323.191.2356.2 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:২০79589
  • Tim, আপনি 'বেনিফিট অফ ডাউট' দেবেন জেনে আশ্বস্ত হলাম। অর্থাৎ, আপনি Atoz এর মত ক্লীন বোল্ড দাবি করে আমাকে মাঠের বাইরে বের করে দেননি।

    তাহলে অন্তত বোঝা যাচ্ছে এটা এল বি ডব্লিউ এর মত জটিল কেস। কিংবা দুরূহ রান আউটের মত।

    ~ এর হাইপোথিসিস, আপনার মত, আমারও মনে ধরেছে।

    তবে আমার কমপ্লিট ডিসকোর্স এ ডাউট রাখার জায়গা রেখেছি। আরো রাখব। আপনি যাকে ইচ্ছে বেনিফিট দিন, আপনার নিজের যুক্তি, বুদ্ধি ও বিশ্বাস মিলিয়ে। আমি যে কোনো সহৃদয় ও যৌক্তিক আলোচনায় আস্থাবান।
  • Tim | 013412.126.562323.237 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:২৫79594
  • ধন্যবাদ এলেবেলে। টুকে রাখলাম।
  • Tim | 89900.253.8956.205 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৪৩79590
  • বালাই ষাট, আউট কেন হবেন। খেলে যান।ঃ-)
  • ~ | 781212.194.6790012.110 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৪৬79595
  • প্রাসঙ্গিক যখন পড়েই দেখেন - (সৈকত চট্টো প্রদত্ত প্রতিবিম্ব দ্বিতীয় পর্যায় ২ (২০০১) গৌতম মিত্র কৃত টীকা (ভূমেন্দ্র গুহও রয়েছেন সাথে)







  • কুশান | 342323.176.7856.184 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:০২79596
  • কেউটে বেরুল তো এতক্ষণে!!!

    ~ কে মশাই আপনি? আপনাকে তো কালটিভেট করতে হচ্ছে!!

    আমার যে ডিসকোর্স নিয়ে গত তিনদিন লড়ে যাচ্ছি তার পক্ষেও কিছু বেরুল।

    তাহলে দাঁড়াল কী?? 'ডাউট' বাড়ল না কমল?

    Tim, কি বলেন?

    আমি তো আগেই বলেছি কেসটা বেশ 'জটিল'।
  • /\ | 90056.160.011223.3 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫১79591
  • জীবনানন্দের লেখা চিঠির কালেকশন কাছে আছে? বুব কে লেখা চিঠি যেখানে সিটি কলেজের চাকরি বিষয়ে বলছেন, মাত্র ১০০ জন ছাত্র পড়ে, ব্রাহ্ম পরিবেশ, রজনীবাবুর রেফারেন্স ইত্যাদি লিখছেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন