এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • বেদবিরোধী গীতার বৈদিকায়ন এবং রামায়ণের অতীতযাত্রা

    মাহবুব লীলেন লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৫ জুন ২০১৭ | ৪৩৫৮ বার পঠিত
  • ভারতীয় পুরাণ ঘাঁইটা ইতিহাস খুঁজতে যাওয়ার সব থিকা বড়ো ঝামেলাটা হইল এইসব পুরাণের রচয়িতা ঋষি কিংবা কবিদের অন্য কোন বিষয়ে কোন জ্ঞান আছিল আর কোন বিষয়ে আছিল না সেইটা নিশ্চিত না হইলেও একটা বিষয় পরিষ্কার যে তাগো মধ্যে বিন্দুমাত্র সময়-সংখ্যা কিংবা ইতিহাস জ্ঞানের কোনো অস্তিত্ব আছিল না; অথবা অদরকারি মনে কইরা তারা এই তিনটা জিনিসের লগে বাচ্চাপোলাপানের মতো খেলানেলা কইরা গেছেন। সময় মাপতে গিয়া তারা ষাইট বচ্ছর আর ষাইট হাজার বচ্ছরে যেমন কোনো ফারাক করেন নাই; তেমনি সৈন্যসংখ্যা একশোরে একশো কোটি কইতেও আপত্তির কিছু দেখেন নাই। একইভাবে নতুন কবিরা যখন সাহিত্য রচনা করছেন কিংবা পুরানা সাহিত্য সম্পাদনা করছেন তখনো কিন্তু আশপাশের ঐতিহাসিক উপাদানগুলারে বাদ দিয়া কোন কালের সেই কল্পিত ঐতিহ্যর লোকস্মৃতি ঢাইলা সাজাইছেন নিজের পুস্তকের সমাজ বাস্তবতা। যার লাইগা দুই হাজার বছর আগের আর পরের সাহিত্যে সমাজ বাস্তবতা মূলত কপিপেস্ট ছাড়া কিছু না...

    ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইতিহাস চর্চার মূল কনসেপ্টাই হইল কাল্পনিক এক সমৃদ্ধ অতীতের কাবিক্য চিত্রকল্প নির্মাণ। অনেকটা শাহ আবদুল করিমের গানের মতো- আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম-এর নস্টালজিয়া অথবা জীবনানন্দের মতো কোনো এক শ্রাবস্তির কারুকার্য কল্পনা কইরা তাব্দা খাইয়া বইসা থাকা। সকলেই মনে করে আগের দিনগুলা আছিল বড়োই দারুণ। মূলত এইটা একটা নতুনত্বভীতি আর বুড়ামির প্রতীক। এর লাইগা সকলেই খালি কল্পিত এক আগিলা দিনের সাধনা করে; আর কবিরা সেইটা নতুন কইরা রচনা কইরা আবার প্রচারও করেন নতুনের মতো। কল্পিত রঙিন অতীত নির্মাণের এই বাজে অভ্যাসটা এখনো আছে আমাগো সংস্কৃতির মাঝে। বর্তমান সময়ে রচিত আমাগো গানগুলায় এখনো নদীর পাড়ে বইসা রাখাল বাঁশি বাজায় আর মেয়েরা কলসি নিয়া পানি তুলতে নদীঘাটে যায়। অথচ গত তিন দশক ধইরা যেমন রাখাল পেশাটাই বাংলাদেশ থাইকা নাই হইয়া গেছে আর চল্লিশ বছর ধইরা বাংলাদেশের মানুষ নদীর পানি খাওয়া বন্ধ কইরা দিছে সেইটার কোনো সংবাদ নাই এইসব লোক সাহিত্যের পাতায়....

    পুরাণগুলার মইদ্যে যে টুকটাক ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায় সেইগুলা পাওয়া যায় মূলত সাহিত্যে ছড়ানো ঘিন্নার বাক্য কিংবা লেখকের মূর্খতার ফাক ধইরা। রামায়ণে যখন রামের মুখ থাইকা জাবালিরে বৌদ্ধ কইয়া গালি শুনি তখন আমাদের বুইঝা নিতে হয় যে যেই সমাজে বইসা রামায়ণ লেখা হইছে সেই সমাজে তখন বৌদ্ধ বিপ্লবের ঠেলায় হিন্দু ধর্ম বিপন্ন। আবার বিশ্বামিত্রের লগে যুদ্ধ করতে গিয়া যখন বশিষ্ঠের কামধেনুরে যবন সৈন্য উৎপাদন করতে দেখি তখন আমাদের ধইরা নিতে হয় যে মহাভারতের এই বশিষ্ঠ-বিশ্বামিত্র যুদ্ধটা হয় হইছে ভারতে গ্রিকদের আগমণের পর না হয় যারা এই গপ্পটা মহাভারত-রামায়ণে ঢুকাইছেন তারা ভারতে গ্রিক অভিবাসনের পরের মানুষ। অথচ ঘটনার বর্ণনাগুলা কিন্তু সেই আদি কাল্পনিক। বশিষ্ঠ সেইখানে যেমন তার আদি কাল্পনিক অলৌকিকত্ব নিয়া বইসা আছেন তেমনি তার কামধেনুও কাল্পনিক; তার অস্ত্রপাতিও কাল্পনিকতার কপি পেস্ট...

    মহাভারতে কুরুযুদ্ধ হউক বা না হউক; যুদ্ধ শেষে পাণ্ডবপক্ষ জিতুক বা কুরুপক্ষ জিতুক; যুধিষ্ঠিরের কিন্তু ঐতিহাসিকতা আছে। আর সেই ঐতিহাসিকতার হিসাবে যুধিষ্ঠির ভারতে লোহার ব্যবহার শুরু হইবার আগের যুগের মানুষ। অথচ যুধিষ্ঠিররে ঘিরা কবিরা যে কুরুযুদ্ধ রচনা করছেন তাতে পুরা লোহার খনি ঢাইলা দিছেন। পুরা কুরুযুদ্ধখানই লোহার অস্ত্রে ঝনঝন। অথচ যুধিষ্ঠিরের সমসাময়িক মানুষ মইরা গেছে লোহা আবিষ্কাররে বহুত বহুত যুগ আগে; কিন্তু সেই হিসাবটা আছিল না কবিগো মাথায়...

    ভারত অঞ্চলে পয়লা শকাব্দ ক্যালেন্ডারট বহিরাগত কুশানদের দান। আর্যগো কোনো ক্যালেন্ডার জ্ঞান আছিল না। বছর মাস এবং সপ্তা গণনার কোনো ধারণা আছিল না তাগো। সপ্তার সাত দিনের নাম জানত না তারা। কিন্তু সংখ্যা আর গণিতের ধারণা ভারতে বহুত প্রাচীন। তাইলে আর্যগো সাহিত্যে সংখ্যায়ও অত ঘাপলা কেন?

    এইটার একটা কারণ হইতে পারে যে; আর্যভট্ট সংখ্যা এবং গণিতের যে হিসাব দিয়া বিজ্ঞান চর্চা করতেন কিংবা বরাহমিহির অপবিজ্ঞান চর্চা করতেন; সেইগুলা মূলত সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে আছিল। মানে শতকিয়া সাধারণ লোকজন জানত না। সাধারণ লোকজনের হিসাবের মাধ্যম আছিল গণ্ডাকিয়া; যেইটা মূলত হাত পায়ের আঙুলের সর্বোচ্চ চাইর কি পাঁচ গুণিতকের হিসাব; দশক বা শতকের না; হালি-কুড়ি-গণ্ডা-পণ...

    সুকুমারী ভট্টাচার্যের কথা যদি মানি তবে স্বীকার কইরা নিতে হয় যে পুরাণ লেখক বা সম্পাদক কেউই উচ্চ শিক্ষিত মানুষ আছিলেন না; এরা বরং মূর্খ শ্রেণির দুর্বল লেখকই আছিলেন। বিভিন্ন স্থানীয় সামন্তগো পৃষ্ঠপোষকতায় সেই সামন্তের পূর্ব পুরুষের ইতিহাস রচনা করতে গিয়া কিংবা সেই সামন্তের বিধি বিধানরে ধর্মশাস্ত্রর চেহারা দিতে গিয়া নিজস্ব মূর্খতা আর দুবর্লতা নিয়াই তারা এইসব পুরাণ রচনা কইরা গেছেন। এবং তারা নিজেরাও নিজেদের অতই নগণ্য আর ক্ষুদ্র মনে করতেন যে কোনো রচনাতেই নিজের নাম পর্যন্ত দিতেন না; নিজের রচনাগুলারে আগের কোনো বিখ্যাত লেখকের নামে চালায়া দিতেন। পুরাণগুলারে ভজঘট করার লাইগা মূলত দায়ী এইসব দায়িত্বহীন আর অস্তিত্বহীন পেশাদার লেখকের দল। এদের না আছিল ভূগোল জ্ঞান; না সংখ্যা; না ইতিহাস। এগোর থাকার মধ্যে আছিল শুধুই দুর্বলভাবে কিছু একটা কল্পনা করা আর স্থানীয় সামন্তরে খুশি করার ক্ষমতা...

    রামায়ণের ঘটনা ঘটছে মহাভারতের পরে; এই কথাটা প্রচলিত যুক্তি আর পৌরাণিক বিশ্বাসের সরাসরি বিরুদ্ধে যায়। প্রচলিত যুক্তি আর বিশ্বাসরে এক্কেবারে উড়ায়া না দিয়া রমিলা থাপার একটা শর্ত জুইড়া দিছেন। তিনি কন- যদি রামায়ণের ঘটনারে মহাভারতের আগে বইলা মাইনা নিতে হয় হয় তবে কিন্তু ধইরা নিতে হবে যে রাম-রাবণের যুদ্ধ আছিল গাঙ্গেয় উপত্যকার কৃষিজীবী আর বিন্ধ্য অঞ্চলের আদিবাসী শিকারী মানুষের যুদ্ধ। পরে কেউ এইটারে আরো দক্ষিণে সরায়া লঙ্কা জুইড়া দিছে। মানে রমিলা থাপারের এই শর্ত মাইনা রামায়ণরে মহাভারতের আগে কইতে গেলে পয়লাই রামায়ণ থাইকা অত ঘটনার লঙ্কাখানই বাদ দিয়া দিতে হয়। আর পণ্ডিতগো কথামতো রামায়ণের আদি রচনাকাল খিপূ ৪র্থ শতক ধইরা নিলে লেখক বাল্মিকী আর তার পোলার বয়েসি রামরে কোনোভাবেই গৌতম বুদ্ধের পরের যুগের মানুষ ছাড়া অন্য কিছু ভাবা অসম্ভব...

    বাল্মিকীরে চতুর্থ শতাব্দির মানুষ ধইরা নিবার পক্ষে আরো বহুত যুক্তি আছে। এর পয়লাটা হইল রামায়ণের ভাষা। রামায়ণের ভাষা যে আধুনিক সেইটার বিষয়ে বহুত আলোচনা আছে। কারো কারো মতে খিপূ ৪র্থ শতকে পাণিনি যে সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণ সংগঠিত করছিলেন; রামায়ণ রচিত হইছে সেই ব্যাকরণ মাইনা। মানে বাল্মিকী পাণিনির পরের মানুষ; যেইটার লগে আবার মিলা যায় বিপ্লব মাজীর দাবি- বাল্মিকী কালিদাসেরও পরের কবি...

    অন্য অনেকের মতো কেদারনাথ মজুমদারও কন- রামায়ণের ভাষা মহাভারতের থাইকা অনেক আধুনিক। ছন্দগুলাও আধুনিক। রামায়ণের অনুষ্টুপ ছন্দ বয়সে প্রাচীন হইলেও রামায়ণে ব্যবহৃত অনুষ্টুপ আধুনিক ফর্মে গাথা। এই কথা বলার লগে লগে কেদারনাথ মজুমদার বাল্মিকীর আদি কবিত্বের দাবি এক টোকায় উড়ায়া দেন। এক্কেবারে সোজা বাংলায় কইয়া দেন যে বাল্মিকী আদি কবি নহেন। শিকারিতে পক্ষি মাইরা ফালানোয় যে শ্লোকটা তিনার মুখ থাইকা বইর হইছিল; যেইটারে কওয়া হয় আদি কবিতা। সেইটার ছন্দ বিশ্লেষণ কইরা কেদারনাথ সোজা কন- যে ধরনের অনুষ্টুপ ছন্দে ওই শ্লোকটা লেখা; সেই ছন্দে ঋগবেদ ভরপুর। অনুষ্টুপ ছন্দটা বাল্মিকীর আবিষ্কার; এইটাও ফালতু কথা। তাছাড়া বিষ্ণু পুরাণ রামায়ণের পরে হইলেও সেইখানে কিন্তু কেউ বাল্মিকীরে আদি কবি না কইয়া ব্রহ্মারে কইতেছে আদি কবি। সুতরাং বাল্মিকীর আদি কবিত্ব সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য না...

    এই কয়েকটা যুক্তি দিয়া কিন্তু রামায়ণরে মহাভারতের আগে দাবি করার সবগুলা দাবি উড়ায়া দেয়া সম্ভব না। বিষয়গুলা ডিম আগে না মুরগি আগের মতো জট পাকায়া আছে দুইটা পুস্তকে। খোদ রামায়ণের ভিতরেই এমন কিছু উপাদান আছে যেইগুলারে যুক্তিতে গেলে অবশ্যই প্রাচীন উপাদান কইতে হয়...

    প্রায় একশো বছর আগে ১৯২৭ সালে অমানবিক পরিশ্রমের গবেষণা কইরা কেদারনাথ মজুমদার রামায়ণের সমাজ নামে একটা বই প্রকাশ করেন ময়মনসিংহ থাইকা। রামায়ণ সোসাইটিরে ধইরা ধইরা সহজ ভাষায় এত ভালো বিশ্লেষণ খুব কমই পাইছি আমি। কেদারনাথ রামায়ণরে মহাভারতের পরের ঘটনা কইতে রাজি না। তিনি বরং মহাভারতরেই রামায়ণের পরের ঘটনা বলেন। তিনি বৈদিক ঘটনার উত্তরাধিকারগুলারে আলোচনা করার লাইগা ঋষি যুগ আর লৌকিক যুগ নামে ক্যালেন্ডাররে দুইটা ভাগে ভাগ করেন। তার ভাগ অনুযায়ী খিপূ ১০০০ সালের আগের সময় ঋষি যুগ আর খিপূ ১০০০ সালের পরের ঘটনা; তার মতে ভারতে গ্রিকদের আগমনের পরের সময়কালরে তিনি বলেন লৌকিক যুগ। তো রামায়ণের সময়কাল আলোচনা করতে গিয়া তিনি রামায়ণের মইদ্যে ঋষি আর লৌকিক দুই যুগের উপাদান নিয়াই আলোচনা করেন। তিনি যদিও রামায়ণের নতুন ঘটনা চিহ্নিত কইরা বলেন যে সেইগুলা পরে প্রক্ষিপ্ত; মানে আদি কাণ্ড আর উত্তরকাণ্ড যখন যোগ হয় তখনকার সংযোজন। তবুও তার তালিকা দুইটা নিরপেক্ষভাবেই খুব সমৃদ্ধ...

    তিনি রামায়ণরে মহাভারতের আগে কইতে গিয়া যেইসব যুক্তি দেখান তার মধ্যে তিনি কন যে রাম হইলেন ভারতে লিপি বা লেখা প্রচলিত হইবার যুগের আগের মানুষ। রামায়ণে রামের লেখাপড়া শিক্ষার কোনো বিবরণ নাই। অথচ বুদ্ধদেবের শিশুকালে তার পড়ালেখা শিখার বিবরণ আমরা পাই। অবশ্য মহাভারতেও কারো লেখাপড়া শিখার কোনো উদাহরণ নাই। তিনি বলেন যে রামায়ণে লৌকিক দেবতা; মানে বাল্মিকী রামায়ণে ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব কিংবা আরো পরের নারী দেবীরা নাই; রামায়ণে আছে খালি বেদের ৩৩ দেবতার কথা। রামায়ণে লিঙ্গপুজা মূর্তিপুজা নাই। রাময়ণে ৪ বেদের কথা নাই; আছে ৩টা বেদের কথা। মানে রামায়ণের পরে লৌকিক যুগে তৈরি হওয়া অথর্ববেদের কথা রামায়ণে নাই। তিনার আরেকটা যুক্তি হইল রামায়ণকালে সপ্তা এবং বারের নাম এবং মাসের গণনা পদ্ধতি চালু হয় নাই। ধাতুর রাসায়নিক বা যৌগ ব্যবহার শুরু হয় নাই তখনো। রামায়ণে লঙ্কার গাদা গাদা স্বর্ণের বিষয়ে তিনি সন্দেহ করেন। তিনি কন হয় সেইকালে কবিরা স্বর্ণ বস্তুটাই চিনত না। কারণ তারা যদি স্বর্ণ চিনত তাইলে হনুমান পুরা লঙ্কা পুড়াইয়া দিবার পরে আবার অক্ষত স্বর্ণ লঙ্কার বর্ণনা দিত না। স্বর্ণ চিনলে তারা নিশ্চয়ই জানত যে আগুনে পুড়লে স্বর্ণের কী অবস্থা হয়। এর থাইকা তিনি সিদ্ধান্ত করেন যে হয় সেইযুগে অন্যকিছুরে কবিরা স্বর্ণ কইত; যেইটা আগুনে পুড়লেও গলে না বা বদলায় না; অথবা খাপছাড়াভাবে এইগুলা পরে কেউ ঢুকাইয়া দিছে লঙ্কায়। অবশ্য এর লগে তিনি এইটাও বলেন যে বর্তমান রামায়ণে রাবণের যে দানবীয় চেহারা আমরা দেখি; সেইটা আদৌ বাল্মিকী রামায়ণের রাবণ না। বাল্মিকী রামায়ণের রাবণ এক সাধারণ রাজা...

    কেদারনাথ বলেন রামায়ণ সমাজে মেয়েরা সিঁন্দুর পরত না। সকলেই বেদ পড়তে পারত। তখন পর্যন্ত কাচ আর পারদের সংমিশ্রণে আয়না প্রস্তুতি শুরু হয় নাই। কোনো ধরনের মুদ্রা আবিষ্কার হয় নাই এবং সমাজে গোত্রপ্রথা চালু হয় নাই...

    রামায়ণ সমাজে গোত্র প্রথা চালু হয় নাই এই কথাটার লগে কিন্তু আমার ব্যক্তিগত দ্বিমত যেমন আছে তেমনি সুকুমারী ভট্টাচার্যের গবেষণাও এই বিষয়ে দ্বিমত করে। রামায়ণের সময়কালে বরং ব্রাহ্মণ শূদ্র ক্ষত্রিয় এইগুলা বড়োই প্রকট আছিল...

    রামায়ণের প্রাচীনত্বের পক্ষে তিনার আরো যেইসব যুক্তি আছে তার মইদ্যে আছে- কৈকেয়ীরে রাজা দশরথ বর দিতে চাইলে তিনি সব দেবতারে ডাইকা সাক্ষী মানলেন কিন্তু ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবের মতো কোনো দেবতারে ডাকেন না। তেমনি পোলার বিদায়ের সময় মা কৌশল্যা যে দেবতাগো নাম ধইরা পোলারে রক্ষা করার লাইগা প্রার্থনা করেন সেইখানেও তিনি বহু দেবতা এমনকি বনের পশু পাখির পর্যন্ত শরণাপন্ন হইলেও কিন্তু ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবের মতো পৌরাণিক দেবতার নাম নিবার ধারে কাছেও যান না। রামের বিদায়ের সময় কৌশল্যার বিষ্ণু পূজার একটা বিবরণ বর্তমান রামায়ণগুলায় আছে; কেদারনাথ সরাসরি এইটারে প্রক্ষিপ্ত কইয়া ফালায়া দেন। কেদারনাথ পরিস্কার বইলা দেন যে বুদ্ধদেব যখন হিন্দুর চিন্তায় অবতার তালিকার মইদ্যে ঢোকেন; সেই সময়েই মূলত রামও অবতারের মর্যাদা পান। বৌদ্ধ যুগের পূর্বে রাম বা বৌদ্ধ কেউই হিন্দু সাহিত্যে অবতার বইলা গৃহীত হন নাই; মানে কেদারনাথের হিসাব আর ভবানীপ্রসাদ সাহুর হিসাব প্রায় একই; আর্যগো দাক্ষিণাত্য বিজয়ের কাছাকাছি সময়...

    রামায়ণের প্রাচীনত্বের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়া কেদারনাথ কন যে রামায়ণ সমাজে কোনো ঈশ্বর কনসেপ্টএর অস্তিত্ব নাই। যেইটা বেদেও আছিল না। হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর কনসেপ্টটা মূলত রাজা প্রবাহণের উপনিষদভিত্তিক ব্রহ্মতত্ত্বরে ধইরা গীতায় দানা পাকাইছে। এইটা তুলনামূলক নতুন জিনিস। তাছাড়া রামায়ণে আমরা দেখি রাজা জনক নিজে মন্ত্র পইড়া নিজের মাইয়ার বিবাহ সম্পন্ন করতেছেন। এইটা আগের যুগের নিদর্শন; পরবর্তী যুগে এইসব কাম চইলা গেছিল বামুনগো হাতে...

    চতুরাশ্রম কনসেপ্টের একটা অংশ হইল বাণপ্রস্থ। যেইটা বৌদ্ধ বিপ্লব পরবর্তী একটা সংযোজন। মহাভারতে আমরা এই বাণপ্রস্থের দেখা পাই; যা কোনোভাবেই কিন্তু রামায়ণে নাই। তবে এইটাও ঠিক যে সব নিয়ম একই লগে সব অঞ্চলে চালু হয় নাই বা মানা হয় নাই; হইতও না। মহাভারত আর রাময়ণের রচনাকাল খালি আলাদা না; বরং মানুষগুলার ঐহিত্যও আর ব্যকগ্রাউন্ডও আলাদা। কোনোভাবেই বলা যাবে না যে মহাভারতের সামাজিক নীতি আর রামায়ণের সামাজিক রীতি এক...

    কেদারনাথ নিজে রামায়ণরে মহাভারতের আগের ঘটনা হিসাবে সমর্থন করলেও যেইসকল উপাদানের কারণে রামায়ণরে মহাভারতের পরের ঘটনা বইলা সন্দেহ হয় সেইগুলারও একটা বিশাল তালিকা করেন। যেইগুলার মইদ্যে তিনি এইটাও উল্লেখ করেন যে রামায়ণের বিবাহ পদ্ধতি অনেক আধুনিক। মহাভারতে উত্তরার বিবাহের লগে রাম সীতার বিবাহের কিছু মিল আছে। এর বাইরে মহাভারতে বেদ নির্দিষ্ট প্রাচীন পদ্ধতির দেবর-ভাসুর দ্বারা ভাইবৌর গর্ভে সন্তান উৎপাদন এবং এক নারীর একাধিক স্বামী দুইটাই আছে; যা কি না রামায়ণ সমাজে নাই...

    বাল্মিকীরে আদি কবি হিসাবে চিহ্নিত করারটা বেশ ঝাপসা বিষয়। কোনোভাবেই মিলে না যে বাল্মিকী আদি কবি। হইলে হইতে পারে রামায়ণের উত্তর কবি; যিনি রামায়ণ এডিট করছেন তিনি রামায়ণ বা পৌলস্তবধ কাব্যের প্রথম রচনাকার বুঝাইতে গিয়া বাল্মিকীরে রামায়ণের আদি কবি কইছেন। যেইটা পরে সংক্ষিপ্ত হইয়া খালি আদি কবি হিসাবে টিকা আছে এখন....

    রামায়ণ বহুত এডিট হইছে। হইতে হইতে রামায়ণে অবতারবাদ ঢুকছে। ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব ঢুকছে। নারায়ণ পূজার কথা ঢুকছে। লক্ষ্মী মূর্তির বর্ণনা আছে। মনুস্মৃতি আর গৌতম বুদ্ধের কথা ঢুকছে। রাশিচক্র এমনকি মাসের নামও ঢুকছে রামায়ণে। নাম খোদাই করা আংটির কথাও আছে। সমুদ্র বিদ্যার বর্ণনা আছে। বৌদ্ধ যুগের শ্রমণী বা ভিক্ষুণিগো কথাও আছে...

    আরো অনেকের মতো এইগুলাও কেদারনাথ তালিকাবদ্ধ করেন। তবে এইগুলা যে আরোপিত আর বহুত পরে ঢোকানো জিনিস সেই বিষয়ে তর্ক করার কোনো যুক্তি নাই। রামায়ণ আর মহাভারত যত আধুনিকই হউক না কেন এইগুলা যে লৌকিক ধর্ম শুরু হইবার পরে কিংবা সংস্কৃত লিপি আবিষ্কর হইবার পরে রচিত হয় নাই সেইটা নিশ্চিত। তবে রামায়ণে বৌদ্ধ বিরোধীতার ঢং দেইখা একটা কথা ফালায়া দেয়া যায় না যে; হইলে হইতে পারে বৌদ্ধ বিপ্লবে হিন্দু ধর্মরে দুরবস্থা থাইকা উদ্ধারের যে সকল প্রচেষ্টা নেয়া হইছিল; তারই একটা ধাপ হইল রামরে অবতার বানানোর লগে লগে এই রামায়ণ রচনা...

    রামায়ণের ভাষা মহাভারতের ভাষা থাইকা বহুত আধুনিক। এই একটা বিশ্লেষণ থাইকাই মহাভারতরে রামায়ণ থাইকা পুরানা বইলা ধইরা নেয়া যাইতে পারে; যদি না আরো কিছু ফ্যাক্টর এইখানে হিসাবে আনা হয়। কথা হইল সংস্কৃত ভাষার কোনো লিখিত রূপ আছিল না বহুত শতাব্দি। মাত্র খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে পাওয়া যায় প্রাচীনতম ভারতীয় লিখিত ভাষার ইতিহাস। তবে সেইটা সংস্কৃত না; পালি ভাষার লিখিত ফর্ম ব্রাহ্মী লিপি; যেইটা দিয়া বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার হইছে; মৌখিকভাবে আবার লিখিতভাবেও। তামিল ব্রাহুই ভাষার লিখিত ইতিহাসও প্রায় সমান। কিন্তু সংস্কৃত ভাষার দেব নাগরী আসে আরো পরে। মূলত বৌদ্ধ ধর্মের লিখিত রূপ দেইখাই সংস্কৃত সাহিত্য কিংবা যোগাযোগে লিখিত ফর্ম ব্যবহার করার লাইগা শুরু হয় দেব নাগরী বা সংস্কৃতের লিখিত ফর্মের যাত্রা। যার মূল কিন্তু গুপ্তযুগের গুপ্ত লিপি। মানে গুপ্ত লিপি থাইকাই উৎপত্তি হইছে সংস্কৃতের লিখিত ফর্ম দেব নাগরির। আর সেইটা পয়লা দিকে আবোল তাবোল চলার পর সংস্কৃতের ব্যবহারিক ব্যকরণ সংগঠিত করেন পাণিনি তার ব্যাকরণে। এর পর থাইকাই মূলত সংস্কৃত একটা সংগঠিত ভাষা...

    কথা হইল সংস্কৃত লিপি আবিষ্কার এবং পাণিতি দ্বারা সংগঠিত হইবার পরেই এই গুপ্ত যুগে লিখিত হইতে থাকে প্রাচীন সব পুস্তকবাবলী; ঋকবেদ থাইকা শুরু কইরা সর্ব সাম্প্রতিক পুরাণ উপখ্যান পর্যন্ত...

    এই যুক্তিটারে স্বীকার কইরা রামায়ণের প্রাচীনত্বের পক্ষের লোকজন বলেন- যে রামায়ণ লিখিত হইবার সময় লেখকরা ভাষা বদলাইয়া নতুন নতুন সাম্প্রতিক শব্দবন্ধ ব্যবহার করায় রামায়ণ প্রাচীন হইবার পরেও এর ভাষা নবীন হইয়া গেছে। কিন্তু কথা হইল এই একই সময়ের লেখকরা তো একই সময়ে বইসা স্মৃতি থাইকা ঋকবেদসহ সকল বেদ এবং মহাভারতেরও লিখিত রূপ দিছেন। সেইখানে তো তারা সাম্প্রতিক নতুন শব্দ দিয়া ঋকবেদের ভাষাও পাণিনির ব্যাকারণ অনুযায়ী কইরা দেন নাই। তাইলে শুধু রামায়ণের ক্ষেত্রে এইটা ঘটল কেমনে?

    রামায়ণও তো তারা লিখছেন স্মৃতি থাইকা। অবশ্যই কিছু কিছু বাক্য শব্দ তারা বদলাইছেন; কিন্তু এক্কেবারে পুরা কাহিনিটা তারা নতুন ভাষায় অনুবাদ করছেন তা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য না। সবচে বড়ো কথা রামায়ণ তো একজন কবির একটা কাব্য; মহাভারতের মতো জনজাতির আখ্যানও না; বেশিরভাগ গদ্যও না; যেইখানে যার ইচ্ছা সে কাহিনি ঢুকাইতে পারে। একটা সম্পূর্ণ কাহিনি কাব্যে নতুন শব্দ ঢোকানো অত সহজ না। পুরা নতুন অনুবাদ তো দূরের কথা। আমার হিসাবে লিখিত রূপ পাইবার সময় রামায়ণ নতুন ভাষায় লিখিত হইছে এইটা একটা খোড়া যুক্তি। মূলত এইটা রচিতই হইছে বহুত পরের সংস্কৃত ভাষায়...

    দ্বিতীয় আরেকটা বিষয়; মহাভারতের মূল কাহিনিতেই একটা বিষয় পরিস্কার যে মহাভারতকার দ্বৈপায়ন লিখতে পারতেন না। তার কোনো শিষ্যর লেখার ইতিহাসও নাই। বহুদিন মুখে মুখে চলার পর মহাভারতের লিখিত রূপ দিবার লাইগা তাগোরে গিয়া আদিবাসী গণেশরে তেলাইতে হইছে। শেষ পর্যন্ত যে গণেশরে আগে সিদ্ধি-নাশক কওয়া হইত তারে দেবতার স্থান দিয়া; সিদ্ধিদাতা উপাধি দিয়া; সকলের আগে তার পূজা করার নিশ্চয়তা দিয়া মহাভারত লেখানো হইছে। কিন্তু রামায়ণে দেখেন; শিকারি পক্ষী মারায় বাল্মিকী দুঃখু পাইয়া কাব্য করলেন আর লগে লগে তার শিষ্য ভরদ্বাজ তা লেইখা ফালাইলেন। তার মানে রামায়ণ রচনার যুগে বাল্মিকী এবং তার শিষ্যগো মাঝে লেখার চর্চা আছিল; সময় হিসাবে যেইটা কোনোভাবেই খ্রিস্টিয় তৃতীয় শতকের আগে না। গুপ্ত যুগেই। এবং মহাভারতে লিপিকার গণেশ দেবতা হইছেন এই গুপ্তযুগেই; এই সময়েই মহাভারতে ঢুকছে গণেশ আখ্যান। শিবপুত্র টুত্রের কাহিনি এই সময়কারই। অবশ্য শিবও মহাদেব বেশি আগে হন নাই...

    কেদারনাথ একটা কঠিন প্রশ্ন করেন- রাবণ কি বৌদ্ধ আছিল? রামের অভিযানটা কি মূলত আছিল বৌদ্ধ খেদানোর উদ্যোগ?

    এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়া না গেলেও এইটা ভোলা সম্ভব না যে বৌদ্ধ রামায়ণ কাহিনি অনুযায়ী রাবণ কিন্তু বৌদ্ধ। আবার বিশ্বামিত্রের লগে গিয়া তাড়কা তাড়ানো থাইকা রাবণ হত্যা; রামের সব কামের লগেই কিন্তু আদিবাসী আর স্থানীয় মানুষ তাড়ানো-খেদানোর পাশাপাশি সাম্রাজ্য বিস্তার কিংবা শাসন পোক্ত করার একটা বিষয় কিন্তু রামায়ণের আগাগোড়া জুইড়াই অতিশয় প্রকট...

    কেদারনাথের বইটা অসাধারণ। তিনি উপাদানগুলা তুইলা ধইরা তিনার মতামত দিছেন। একমাত্র রামায়ণে গরু খাওয়ার ইসু ছাড়া কোথাও কোনো কিছুরে তিনি টুইস্ট করেন নাই তার পুস্তকে...

    কেদারনাথের অসাধারণ বিশ্লেষণের বাইরেও আরো কিছু উপাদান শেষ পর্যন্ত মহাভারতরেই প্রাচীনত্বের দিকে নিয়া যায়। মহাভারতে বৈদিক দেবতারা তাগো বৈদিক চরিত্র নিয়াই প্রায় সবাই উপস্থিত; মানে মাইনসের লগে মারামারি করা- এর তার বৌর ঘরে ঢুইকা যাওয়া কিংবা মাইর খাইয়া নতি স্বীকার করা; বৈদিক দেবতাগো এইসব চরিত্রই কিন্তু মাহভারতে উপস্থিত। রামায়ণে কিন্তু তিনাগো তেত্রিশজনের কথা শোনা গেলেও বড়োই নিস্ক্রিয় তারা। মেঘনাদের হাতে কোনো এক কালে ইন্দ্রের মাইর খাওয়া ছাড়া বৈদিক দেবতাগো সক্রিয় সংশ্লিষ্টতার কোনো সংবাদ নাই রামায়ণে। মানে তিনারা তখন রিটায়ার বা পরিত্যক্ত হইয়া গেছেন প্রায়। মহাভারতে কিন্তু বৈদিক দেবতাগো থাইকা শৈব ঘরানায় ট্রানকিজশনের একটা ট্র্যাক পাওয়া যায়। মহাভারতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড়ো দেবতা হইলেন শিব। বৈষ্ণব সেইখানে শুরু হইছে মাত্র। অন্যদিকে রামায়ণ প্রায় পুরা বৈষ্ণব...

    মহাভারতের যুগে মানুষের গুহাতে বাস করার প্রচলনও আছিল। যেইটা অনেক প্রাচীনতার সন্ধান দেয়। বিদুর বারণাবতে একটা মিস্ত্রি পাঠায় পাণ্ডবগো লাইগা গুহা খুইড়া ঘর বানাইবার লাইগা। গুহা খুইড়া ঘর বানাইবার এক্সপার্ট মিস্ত্রির অস্তিত্ব যেই যুগে আছিল সেই যুগে নিশ্চয়ই গুহার মইদ্যে বসবাসের প্রচলনও আছিল। পোশাক আশাকের দিকেও মহাভারত অনেক প্রাচীন। পাণ্ডবরা যখন বনে যায় তখন ছাল বাকলা পইরাই গেছিল। এবং বনবাসের সময় ছাল বাকলাই পরছিল। কিন্তু রাম বনে যাইবার সময় সীতার অতি রাজকীয় পোশাক ছাড়াও রাম লক্ষ্মণ যে দরিদ্র পোশাক পইরা গেছে; সেইটাও কিন্তু তাঁতে বোনা সুতার কাপড়। আরো সোজা কইরা কইলে কইতে হয় রাম লক্ষ্মণের পরনের পোশাকটা আছিল বৌদ্ধ চির অজীন। মহাভারতের সময় কাপড়ের প্রচলন নিঃসন্দেহে আছিল; কিন্তু একই সাথে পশুর চামড়া বা গাছের ছাল পরার অভ্যাস বা প্রচলনও আছিল নিশ্চিত। একটা জায়গায় এমনো দেখা যায় যে গাছের ছাল তুইলা অর্জুন পোশাক বুনতাছে। মানে জীবনের পয়লা চৌদ্দ পনেরো বছর বনে কাটানো পাণ্ডবরা গাছের ছাল পরাও জানতো ঠিকমতো। আশপাশে এইটার প্রচলন না থাকলে কিন্তু অত সহজে তা বানাইয়া পরতে পারার কথা না...

    মহাভারতে রাজপুত্ররা প্রাচীন গদাযুদ্ধ মল্লযুদ্ধই শিখত; রামায়ণে গদার উল্লেখ নাই। তীর ধনুকের ব্যবহারই বেশি। মহাভারতে চতুবর্ণ আছিল না। কিন্তু রামায়ণে পরিষ্কার। ভীম রাক্ষস বিবাহ করে। কুন্তীসহ পাণ্ডবেরা সকলের ঘরে খায়। কুমারের বাড়ি থাকে। নিজেগোরে ব্রাহ্মণও পরিচয় দেয়; কিন্তু রামায়ণ সমাজে বর্ণ বিভাজনটা পরিষ্কার। রাম কিন্তু বালি কিংবা বিভীষণের ঘরে কিছুই মুখে দেয় না। শূদ্র রাজা গুহকের দেওয়া খাবার নিজে মুখে না দিয়া ঘোড়ারে খাওয়ায়। আবার বেদ পড়ার অপরাধে শূদ্র শম্ভুকরে মাইরা ফালায়। মানে রাম পুরাই চতুবর্ণী রাজা...

    হরপ্পায় পাথরের দালান ছিল; খ্রিপূ ২৫০০ সালে। আর্য প্রভাবিত ভারতীয়রা যখন আবার স্থাপনা বানাইতে শুরু করে তখন সেটা অলরেডি খ্রিপূ ২৫০। তবে সেইটা শুরু হয় কাঠের দালান দিয়া। পাথর না। ভারতে আর্যগো হাতে পয়লাবারের মতো পাথরের দালান বানানো শুরু হয় গুপ্ত যুগে; ৩৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। তাইলে রাবণের বাড়িতে অত দালান আসে কেমনে?

    মহাভারতে কোনো স্থাপনার কথা কিন্তু আছিল না। রামায়ণে ইটের দালানের কথা আছে কিন্তু পুরা মহাভারতে কোনো বাস্তুশিল্পের উদাহারণ নাই। পুরোচন বারণাবতে সম্রাজ্ঞী  আর যুবরাজের লাইগা যে ঘরটা বানায় সেইটা কিন্তু কিন্তু বাঁশ-বেত শনের ঘর। অন্যদিকে রামায়ণে স্থপতিরা বেশ উপস্থিত। ইটের ব্যবহারও আছে। দালানও আছে। তবে লঙ্কায় ইটের দালান আছিল বইলা মনে হয় না। লঙ্কার সবগুলা বাড়িঘর প্রাচীরই আছিল সাধারণভাবে দাহ্য; মানে কাঠ বাঁশের স্থাপনা। যদিও রাবণের দশটা গুণ বা দক্ষতার মইদ্যে একটা আছিল বাস্তুশিল্প বা আজকের যুগের স্থাপত্যশিল্প...

    ময় দানব নামে মাত্র একজন স্থপতির কথা মহাভারতে শোনা যায়; কাব্যিক বর্ণনায় ময় দানবের তৈরি ইন্দ্রপ্রস্থের প্রাসাদ অনেক বিশাল আর উজ্জ্বল বইলা মনে হইলেও আসলে কিন্তু তা না। কারণ যুধিষ্ঠির সম্রাট হইবার পরে কিন্তু এই প্রসাদে থাকে নাই। আবার বলা হয় দুর্যোধন এই প্রাসদ দেইখা হিংসায় জ¦ইলা গেছিল; অথচ পাশা খেইলা জিতার পর কিন্তু প্রাসাদটা দিয়া দিছে দ্রোণাচার্যরে। ইন্দ্রপ্রস্থের দালান যদি অতই আকর্ষণীয় হইত তবে কিন্তু তা দুর্যোধন রাখত; না হইলে যুধিষ্ঠির নিজেই রাখত। কিন্তু তা হইল না...

    এক নারীর একাধিক স্বামী- আনুষ্ঠানিকতা বর্জিত বিবাহ- বরের বাড়ি পাত্রী আইনা বিবাহ; এইগুলা যেমন পুরানা প্রথা তেমনি সন্তানের মায়ের নামে পরিচিতি বহুত প্রাচীন প্রথা। এইগুলা সবই মহাভারত সোসাইটির উপাদান। মহাভারত সোসাইটিতে লোকজনরে আমরা মাত্র বাপের নামে পরিচিত হইতে শুরু হওয়া দেখি। এবং সেইখানে বলতে গেলে মাত্র একজন মানুষই বাপের নামে পরিচিত। তিনি কৃষ্ণ। কৃষ্ণরে মহাভারতে কোথাও তার মায়ের নামে ডাকা হয় নাই। পাণ্ডবগো বাপের নামে ডাকা হইলেও বহুবার আমরা কৌন্তেয়- মাদ্রেয় কথাগুলা শুনি। মানে দুইটাই প্রচলিত আছিল। অন্যদিকে ভীষ্ম পুরাই গাঙ্গেয়। কিন্তু রামায়ণ বড়ো বেশি বাপকেন্দ্রিক। বাপের নামে সন্তানের পরিচয় তুলনামূলক বহুত আধুনিক বিষয়। মূলত নারীর সারা জীবন এক স্বামীর লগে থাকার বিধান প্রচলিত হইবার পরেই বাপের নামে পরিচিতিটা প্রতিষ্ঠিত হয়। বলা হয় ঋষি উদ্দালক আরুণি; যিনি পাঞ্চাল রাজা প্রবাহণের শিষ্য হইয়া ব্রহ্মের তত্ত্ব প্রচার করছিলেন; তার ক্ষেত্রজ পুত্র শ্বেতকেতুই হইলেন নারীদের এক স্বামীর অধীন করার পয়লা প্রচেষ্টাকারী। পরে সেইটারে মোটামুটি পাকাপোক্ত করেন অঙ্গিরা বংশের আন্ধা ঋষি দীর্ঘতমা...

    রামায়ণে নারীর এক স্বামী- আড়ম্বরপূর্ণ বিবাহ অনুষ্ঠান- পাত্রীর বাড়িতে বিবাহ এই সকলই আছে সন্তানের পিতার নামে পরিচিত হইবার লগে লগে। পাশাপাশি মরার লগে শবানুগমন জিনিসটা আর্য সমাজে আছিলই না; মহাভারতেও নাই। শবানুগমণের মতো এই নতুন সিস্টেমটাও কিন্তু রামায়ণ সমাজে আছে... 

    বলা হয় বেদ আগে বামুন ছাড়া শূদ্র আর নারীগো লাইগা নিষিদ্ধ আছিল। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী তার মহাভারতের ছয় প্রবীণ গ্রন্থে কন যে দ্বৈপায়নই পয়লা ব্যক্তি যে নারী আর শূদ্রগো লাইগা বেদ উন্মুক্ত কইরা দেন। রামায়ণে আমরা অনার্য বংশজাত বালির স্ত্রী তারারে বেদ পাঠ করতে দেখি। এই হিসাবে তো অবশ্যই এগোরে দ্বৈপায়ন পরবর্তী মানুষ বইলা ধইরা নিতে হয়। আবার রামের শেষ দিকে খালি বেদ পড়ার অপরাধে রাজা রামরে আমরা দেখি এক শূদ্রবংশজাত শম্ভুকের মাথা কাইট্টা ফালইতে। তবে কি বেদ শূদ্রগো লাইগা আবার নিষিদ্ধ হইছিল রামের হাত ধইরা?

    চতুর্বেদ কথাটা দ্বৈপায়ন থাইকা শুরু। বলা হয় অগোছালো বেদের মন্ত্রগুলারে তিনি চাইর ভাগে ভাগ করেন বিষয় অনুযায়ী। যদিও বেদগুলার মইদ্যে প্রচুর রিপিটেশন আছে আর অথর্ব বেদরে ঠিক অন্য তিনটা বেদের সম পর্যায়ে ধরা হয় না। তবুও আমরা রামায়ণে কিন্তু বিভাজিত বেদের রেফারেন্সই শুনি। অন্তত তিন বেদ সেইখানে পরিষ্কারভাবে উল্লিখিত। আখ্যানমতে দ্বৈপায়নের পুত্র শুকদেবই হইলেন দুনিয়ার পয়লা চতুর্বেদী মানুষ। বাকি যারা ত্রিবেদী বা চতুর্বেদী তারা সকলেই হয় শুকদেবের শিষ্য না হয় তস্য শিষ্য। কিন্তু রামায়ণে আমরা দেখি সুগ্রীবের মাইয়ার জামাই আর মন্ত্রী হনুমান একজন ত্রিবেদী বা চতুর্বেদী পর্যায়ের মানুষ। যদিও হনুমানের শিক্ষা বিষয় রামায়ণে পরিষ্কার নাই; তবু এই অনার্য মানুষটার মুখে নির্ভুল সংস্কৃত আর বৈদিক বিষয়ের উল্লেখ শুনে রাম পর্যন্ত লক্ষ্মণের কাছে বিস্ময়ে হনুমানের বিদ্যার প্রশংসা করেন। সারা রামায়ণে আমরা রামরে কি অন্য কারো গুণের প্রশংসা করতে শুনি? মনে হয় না...

    কেউ কেউ মহাভারতে কুরুপক্ষে যুদ্ধ করা বৃহদ্বলরে রামের উত্তর পুরুষ কইয়া যুক্তি দেখান যে মহাভারত রামায়ণের পরে। কারো যুক্তিতে রামপুত্র কুশের ধারায় বৃহদ্বল রামের ১৫তম আর কারো তালিকায় ২৮তম উত্তর পুরুষ। কিন্তু রামায়ণের সমাজ বইয়ের লেখক কেদারনাথ মজুমদার পরিষ্কার কইয়া দেন যে লব কিংবা কুশ আদৌ রামের কেউ না; পুত্র তো দূরের কথা। মূলত উত্তরকাণ্ড যারা লেখছে; তারাই রামায়ণ গানের কথক লব আর কুশেরে রামের পুত্র বানায়া দিছে। মানে লব আর কুশ সম্পর্কে সেই ছোটবেলার গ্রামের ধাধা আরকি- ছেলের যখন জন্ম হলো মা ছিল না ঘরে।জন্মদাতা জন্ম দিলো না জন্ম দিলো পরে…

    মানে লব আর কুশের জন্ম বাপেও দেয় নাই; মায়েও না; জন্ম দিছে কবিরা। মূলত রাম আর সীতা নিঃসন্তানই ছিলেন। বৃহদ্বল কাশির রাজা আছিল ঠিক। বৃহদ্বলরে বোধহয় নিজেগো বংশ গৌরব বাড়াইবার লাইগা কেউ মহাভারতে ঢুকাইছে পরে। কারণ তখনকার দিনে রাজা বাদশাগো নিজের বংশ গৌরব বাড়াইবার লাইগা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পূর্ব পুরুষরে ঢোকাইয়া মাইরা ফালানো থাইকা সহজ কোনো পদ্ধতি আছিল না। বৃহদ্বলের লগে আসলে রামায়ণ মহাভারতের আগে-পরের কোনো সম্পর্ক নাই...

    একইভাবে বিশ্বামিত্র-মেনকার মাইয়া শকুন্তলার স্বামী রাজা দুষ্মন্তর পোলা ভরত হইল মহাভারতের শান্তুনু কিংবা কুরু বংশের পূর্ব পুরুষ; এইটা দিয়া রামায়ণরে আগের ঘটনা কইতে যাওয়া একটা ফালতু বিষয়। কারণ বেদে রাজা সুদাসের পুরোহিতের চাকরি হারায়া সুদাসের রাজ্য দখল করার লাইগা যে বিশ্বামিত্র আক্রমণ কইরা বসছিলেন তিনি যেমন বিশ্বামিত্র; তেমনি ঋগবেদের গায়ত্রী বা সাবিত্রী মন্ত্রসহ বহুত শ্লোক; বিশেষত তৃতীয় মণ্ডল এর রচয়িতাও বিশ্বামিত্র; আবার গৌতম বুদ্ধের জীবনী ললিত বিস্তারেও কিন্তু দেখা যায় যে তিনি যার কাছে লেখাপড়া শিখছেন তার নামও বিশ্বামিত্র। ঋগবেদে বিশ্বামিত্রের চাকরি খাইয়া রাজা সুদাসের পুরোহিতের চাকরি যে বশিষ্ঠ নিছিলেন তিনি হইলেন মিত্রবরুণের ঔরসে উর্বসীর পোলা বশিষ্ঠ। আর রামায়ণের বশিষ্ঠের বাপের নাম ব্রহ্মা। অন্যদিকে মহাভারতের বশিষ্ঠ কিন্তু বিশ্বামিত্রের লগে যুদ্ধে নির্বংশ হইয়া যান; তার পোলার গর্ভবতী স্ত্রীর গর্ভে একমাত্র বংশ টিকা থাকে পরাশর; যে কি না দ্বৈপায়নের পিতা। অন্যদিকে রামায়ণের বশিষ্ঠের পোলা রীতিমতো এক চ্যাংড়া পুরোহিত; যে রাম বনবাসে যাইবার আগে তার সমস্ত দান খয়রাতের তদারকি করে...

    বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠ এইগুলা মূলত গোষ্ঠী নাম; আইজকার যুগের চৌধুরী কিংবা ব্যানার্জিগো মতো। ঋগবেদে যত জায়গায় এইসব ঋষির নাম আছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু তা বহু বচনে আছে; মানে বশিষ্ঠগণ বিশ্বামিত্রগণ আর যজুর্বেদে ভৃগুগণ অঙ্গিরাগণ এই রকম। মানে ঋগবেদের কালেই এরা বংশ বা গোষ্ঠী হিসাবে পরিচিত আছিলেন। সুতরাং এইসব ঋষি পুরোহিতগো নাম দিয়া ইতিহাস বাইর করার কোনোই সুযোগ নাই। এবং তা অর্থহীনও...

    একইভাবে রামায়ণে জন্মেজয় আর পরীক্ষিতের উল্লেখ আছে; পরীক্ষিৎ হইল অর্জুনের নাতি; এইরকম রেফারেন্স দিয়া আসলে রামায়ণ মহাভারত আলোচনা করার সুযোগ নাই। কারণ একই নামের ব্যক্তি হাজারে হাজার থাকে। বর্তমানে খুজলেও কয়েক লক্ষ রাম আর কৃষ্ণ পাওয়া যাবে দুনিয়ায়...

    গীতায় কিন্তু বেশ কয়েকটা শ্লোকে বেদ বিরোধীতা বা বেদনিন্দা আছে। মহাভারতেও আছে বেদবিরোধীতা এবং বেদনিন্দা। তো বঙ্কিমচন্দ্র তার ভগবৎগীতায় গীতার সেই বেদবিরোধী শ্লোকগুলার মইদ্যে ৪২-৪৬ তিনটা বেদ বিরোধী শ্লোকরে বহুত ঘুরাই প্যাচাইয়া মুচড়াইয়াও বেদের পক্ষে আনতে না পাইরা বেশ চমৎকার একটা কথা কইছেন অপারগ হইয়া। সেইটা হইল-

    “ভারতবর্ষ এই উনবিংশ শতাব্দিতে বেদ শাসিত। আজিও বেদের যে প্রতাপ, ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের তাহার সহস্রাশের এক অংশ নাই। সেই প্রাচীনকালে বেদের আবার ইহার সহস্রগুণ প্রতাপ ছিল। সাংখ্যপ্রবচনকার ঈশ্বর মানেন না- ঈশ্বর নাই, এ কথা তিনি মুক্তকণ্ঠে বলিতে সাহস করিয়াছেন, তিনিও বেদ অমান্য করিতে শাহস করেন না- পুনঃ পুনঃ বেদের দোহাই দিতে বাধ্য হইয়াছেন। “শ্রীকৃষ্ণ মুক্তকণ্ঠে বলিতেছেন, এই বেদবাদীরা মূঢ়, বিলাসী; ইহারা ঈশ্বর আরাধনার অযোগ্য”...

    এর পরেও তিনি বহুত পৃষ্ঠা খর্চার করছেন জোর কইরা এই শ্লোগুলারে বেদের লগে লাইনআপ করতে। কিন্তু তিনি একটা কথা পরিষ্কার কইরা কইয়া দিছেন যে গীতায় যে বেদ বিরোধীতা আছে সেইটা পণ্ডিতেরা কিন্তু চাইপা গেছেন জানের ডরে; কিলের ভয়ে। হিন্দু ধর্মে ঈশ্বর না মানলে সমস্যা নাই কিন্তু বেদ না মানলে বহুত ঝামেলা...

    তিনটা শ্লোকরে বেদের পক্ষে আনার বহু চেষ্টা করার পর আবার ৫৩ শ্লোকে গিয়া বঙ্কিম পড়েন আবার বিপদে। আবারো বহুত প্যাচাল পাড়েন এইগুলারে বেদের পক্ষে আনতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবার অপারগ হইয়া ফট কইরা বইলা দেন- 

    “এখন বেদে কিছু প্রয়োজন নাই, এমন কথা, আমরা ঊনবিংশ শতাব্দির ইংরেজ শিষ্য, আমরা না হয় সাহস করিয়া বলিতে পারি, কিন্তু শঙ্করাচার্য্য কি শ্রীধর স্বামী এমন কথা কি বলিতে পারিতেন?... প্রাচীন ভারতবর্ষীয়েরা বেদকেই একটা ঈশ্বররূপে খাড়া করিয়া তুলিয়াছেন। কপিল ঈশ্বর পরিত্যাগ করিতে পারিয়াছিলেন, কিন্তু বেদ পরিত্যাগ করিতে পারেন নাই। বৃহস্পতি বা শাক্যসিংহ প্রভৃতি যাঁহারা বেদ পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, তাঁহারা হিন্দু-সমাজচ্যুত হইয়াছিলেন। অতএব শঙ্করাচার্য্য, কি শ্রীধর স্বামী হইতে এমন উক্তি কখন সম্ভব না যে, ব্রহ্মজ্ঞানী হউক বা যেই হউক, কাহারো পক্ষে বেদ নিষ্প্রয়োজনীয়। কাজেই তাঁহাদিগকে এমন একটা অর্থ করিতে হইয়াছে যে, তাহাতে বুঝায় যে, ব্রহ্মজ্ঞানেও যা, বেদেও তা, একই ফল। তাহা হইলে বেদের মর্যাদা বহাল রহিল।”…

    এক্কেবারে পরিষ্কার। শঙ্কাচার্য কিংবা শ্রীধরের মতো মানুষেরা সাহস কইরা কইতে পারেন নাই যে গীতায় বেদনিন্দা বা বেদ বিরোধিতা আছে। তাগো ডর আছিল; সমাজচ্যুত হইয়া একঘরে হইবার। ডর আছিল মাইর খাইবার। যেমন ঘটছিল বৃহস্পতি বা শাক্যসিংহের বেলায়...

    তো কেদারনাথ মজুমদার পুরা রামায়ণখান দুর্ধর্ষভাবে বিশ্লেষণ কইরা সাইরা একটু মিন মিন কইরা যুক্তি দেখান যে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে রামের গোসব যজ্ঞের কথা আছে কিন্তু গরু খাওয়ার কথা তো পাই নাই। মনে হয় এইটা বঙ্কিমের সেই বিশ্লেষণের ধাচেই পড়ে। আমরা বুঝতে পারি কেদারনাথ কেন সেইটা পাশ কাইটা যান বা কমজোর গলায় কন- না তো। নাই তো। গোসব যজ্ঞের কথা আছে কিন্তু গরুর মাংস দিয়া মাখাইয়া ভাত খাইবার কথা তো নাই। যাউকগা। রামায়ণ সমাজে গরু খাওয়ার প্রচলন তো আছিলই উল্টা গরুর মাংসটাই আছিল শ্রেষ্ঠ মাংস বইলা গণ্য। গরু খাওয়া বন্ধ হয় মূলত বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে…

    রামায়ণ সমাজে গরু খাওয়া হইত না; গোসব যজ্ঞ কইরা মূলত মধু দিয়া রান্না করা গরুর মাংস গাঙে ফালায় দেয়া হইত দেবতাগো খাইবার লাইগা; এইসব কথা কেউ কইলে অন্যদিকে ধইরা নিতে হইব যে তিনি বা তিনারা রামের বয়স বুদ্ধদেবের থাইকা কমাইয়া নিয়া আসছেন। আর রামায়ণরেও কইরা দিতে চাইছেন বৌদ্ধ উত্তর সাহিত্য...


    তথ্যসমর্থন:

    কাহিনিসূত্র: প্রচলিত বাল্মিকী-প্রাদেশিক-আঞ্চলিক এবং উপজাতি রামায়ণ আখ্যান। কালীপ্রসন্ন মহাভারত। রাজশেখর বসুর সংক্ষিপ্ত মহাভারত ও রামায়ণ। প্রচলিত বেদ উপনিষদ এবং পুরাণ সংগ্রহ;

    যুক্তিসূত্র: রামায়ণের সমাজ- কেদারনাথ মজুমদার। ভারতবর্ষের ইতিহাস-রোমিলা থাপার। বাল্মিকীর রাম ও রামায়ণ, মহাভারতের ভারতযুদ্ধ এবং কৃষ্ণ-নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী। বাল্মিকী রামায়ণে রাম আদিবাসী রামায়ণে রাম- বিপ্লব মাজী। ভারতের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, মহাভারত ও সিন্ধু সভ্যতা, ভারতের বিবাহের ইতিহাস- অতুল সুর। প্রবন্ধ সংগ্রহ- সুকুমারী ভট্টাচার্য। ধর্মের উৎস সন্ধানে- ভবানীপ্রসাদ সাহু। কৃষ্ণ চরিত্র, শ্রীমদভগবদগীতা- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মহাভারতের কথা- বুদ্ধদেব বসু। মহাভারতের মূল কাহিনি ও বিবিধ প্রসঙ্গ- শিশির কুমার সেন। ধর্ম ও প্রগতি- জয়ন্তানুজ বন্দোপাধ্যায়।

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৫ জুন ২০১৭ | ৪৩৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • | 116.193.226.238 (*) | ০৫ জুন ২০১৭ ০৩:১১82489
  • আরিব্বাস লীলেনস্যার তো পুরো ফাটাইলাইসেন। মাথাটা বোঁ করে ঘুরে গেল।

    রাম আর বুদ্ধ সমসাময়িক বা রামই আসলে বুদ্ধ এরকম থীমে একটা থ্রিলার পড়ছিলাম কিছুদিন আগে "বিন্দুবিসর্গ' নামে।

    কেদারনাথ মজুমদার আর অতুল সুর এর বইদুটোর প্রকাশকের নাম পাওয়া যাবে?

    দময়ন্তী
  • সিকি | 116.222.76.180 (*) | ০৫ জুন ২০১৭ ০৩:৫৫82490
  • এটা পুরো ফাটাফাটি লেখা।

    একটা বিষয়ে দ্বিমত।

    "মহাভারতে কোনো স্থাপনার কথা কিন্তু আছিল না। রামায়ণে ইটের দালানের কথা আছে কিন্তু পুরা মহাভারতে কোনো বাস্তুশিল্পের উদাহারণ নাই। পুরোচন বারণাবতে সম্রাজ্ঞী আর যুবরাজের লাইগা যে ঘরটা বানায় সেইটা কিন্তু কিন্তু বাঁশ-বেত শনের ঘর।"

    প্রথমত, মহাভারতে স্থাপনার কথা আছে, যেটা মাহবুব পরের প্যারাতেই লিখেছেন, ইন্দ্রপ্রস্থের কথা। এবং খুব আবছা একটা রেফারেন্স পেয়েছিলাম কোথাও একটা - তাই দেখে দুর্যোধন ঈর্ষান্বিত হয়ে আরেকটি প্রাসাদ বানান, স্বর্ণপ্রস্থ নামে, যেটি আজকের দিনের হরিয়ানার "সোনেপত"।

    তবে ডালরিম্পল স্যার বেশ যুক্তিটুক্তি দেখিয়ে বুঝিয়েছিলেন, ঐ ইন্দ্রপ্রস্থের স্ফটিকের প্রাসাদ, নিতান্তই গল্পকথা, এবং পরে ঢোকানো হয়েছে। মহাভারত যে সময়ের গল্প, সেই সময়ে মানুষ মূলত গুহা, বা পাহাড় কেটে বানানো গুহা, বা পাথর দিয়ে কোনওরকমে বানানো ঘরে থাকত। স্ফটিক তখনকার লোকজন চিনতই না।

    দ্বিতীয়ত, পুরোচন যে ঘরটি তৈরি করেছিল, সেটি বাঁশ, বেত, শন ছাড়াও আরেকটি জিনিস দিয়ে তৈরি হয়েছিল - গালা। লাক্ষা। যে কারণে ঘরটির নাম ছিল জতুগৃহ। এখন, এটাও পরে অ্যাড করা কিনা, তখনকার মানুষ গালার ব্যবহার জানত কিনা, জানা নেই।
  • avi | 57.11.4.234 (*) | ০৫ জুন ২০১৭ ০৫:৪০82491
  • একটানে পড়ে ফেললাম। তুমুল জিনিস। প্রশ্নের জন্য আরেকবার পড়তে হবে।
  • avi | 57.11.15.53 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ০১:০০82506
  • বিভীষণ লিখতে ভুলে গেসলাম। তাঁকে নিয়ে আরেকটা আলাদা গল্পও ছিল।
  • মাহবুব লীলেন | 108.204.89.231 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ০১:২৬82493
  • @দময়ন্তী
    আমার নিজের মগজ কামড়াচ্ছে রামায়ণের গল্প বাদ দিয়ে হাড্ডি কংকাল নিয়ে কয়েক বছর ধরে এই ঠনঠনানিতে
    তবে কয়েক পর্বে বিষয়টা ড্রাফট হয়ে গেছে; এখন একটু যাচাই ঝালাই হয়ে গেলে এইটা পাশে রেখে 'সহজিয়া রামায়ণ'টা লিখে ফেলতে পারব। আর কেউ রেফারেন্স চাইলে ছুড়ে দিতে পারব এইসব হাড্ডি কংকাল

    আপনের ইমেইলটা আমারে ফেসবুকে টুকে দেন; পুরা বইটগুলা আপনাকে পাঠায়ে দেবো। প্রকাশকের নাম দেখার জন্য আর্কাইভ খোলার চেয়ে বই দেবার জন্য আর্কাইভ খোলা কম পরিশ্রমের। তবে কেদারনাথ নিজে প্রকাশনা খুলে বইটা প্রকাশ করেছিলেন। সম্ভবত নাম ছিল রামায়ণ সোসাইটি

    @ সিকি
    মহাভারতের সময় দালনা কোঠা ছিল না; এইটাই ঠিক। আর বাঁশ বেতের ঘর পোড়াতে আলাদা গালার দরকার হয় না। সবচে বড়ো কথা ওই বাড়িতে পাণ্ডবরা প্রায় বছরখানেক ছিল ঘর পোড়ার আগে। পরে দালান কোঠা যারা সাপ্লাই দিছেন তারাই দালানে আগুন লাগানোর জন্য এইসব গালাটালা সাপ্লাই দিছেন; একমত আপনার কথা সাথে
    'অভাজনের মহাভারত' নামে আমার মহাভারতটা প্রকাশিত। বছর আড়াই হয়। ওইটার ভণিতায় মহাভারতীয় ভজঘটগুলার একটা ফিরিস্তি আছে। এই লেখটা মূলত 'সহজিয়া রামায়ণ' এর ভণিতার খসড়া; সকলের মতামত নিয়ে আরেকটু ঝালাই করার জন্য এইখানে লটকায়া দিলাম আরকি

    @কল্লোল
    আপনার দ্বিমতকে আমি শুধু সম্মান দিতে পারি। কিন্তু দ্বিমতের সাথে দ্বিমত করতে রাজি না
    কারণ আমার হিসাবে পুরাণ নিয়ে শত শত 'ভিন্নমত' হতে পারে কিন্তু মূলত দ্বিমতের সুযোগ নাই। কারণ যুক্তিগুলার বেশিরভাগই প্রামণিক বিষয়ের উপর না; সাহিত্য গবেষণা নির্ভর

    সরস্বতী নদীর রেফারেন্স দিয়ে অনেকেই যুক্তি দেখান; রমিলা থাপারও এই রেফারেন্স টেনে আনছেন।

    তবে মূল বিষয়টা হলো খ্রিপূ ১৫০০ সালের আগে ভারতে বৈদিক বলে কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। ফলে পেছন দিকে বেশি দূর যাওয়ার সুযোগ নাই
  • h | 184.79.160.147 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ০২:৪৮82494
  • লেখাটা হিলারিয়াস, এটা কি আগে কোথাও পড়েছি, (দমু?)
  • কল্লোল | 233.186.133.156 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ০৪:১৫82495
  • মাহবুব মশয়,
    এখানে তো আসিই তক্কো করার কারনে। তাতে যদি কিঞ্চিত সমৃদ্ধ হই। আর রামায়ণ-মহাভারত নিয়ে তক্কো হবে না তো কি নিয়ে হবে!
    আমার কয়েকটা আপত্তি একটু সাজিয়ে দেই -
    ১) একটা বিষয় পরিষ্কার যে তাগো মধ্যে বিন্দুমাত্র সময়-সংখ্যা কিংবা ইতিহাস জ্ঞানের কোনো অস্তিত্ব আছিল না; -
    যে সময়ে এই কাব্যগুলি গাথা হয়েছিলো তখন ইতিহাসচেতনা গোছের কোন শব্দ মানুষের জ্ঞানসীমার বাইরে ছিলো। ইতিহাসচেতনা অর্থাৎ অতীতে যা ঘটেছে তার "বস্তুনিষ্ঠ" বয়ান - এই চেতনাটিই মনুষ্য জাতের ধারনার বাইরে ছিলো। এসব জ্ঞান শিল্পবিপ্লবোত্তর ইউরোপীয়্দের সাথে এই উপমহাদেশে পদার্পন করে। তাই বঙ্কিমের খেদোক্তি - বাঙ্গা৯র ইতিহাস নাই।
    তখনও শূণ্যের ধারনা আসে নি, তাই শত, সহস্র, অর্বুদ, কোটি ইত্যাদিতে গোলানো খুব সাধারণ বিষয়। তার উপর পরবর্তিকালে চারণেরা বা তারও পরে কবিরা গৌরবার্থে সংখ্যা বাড়িয়ে গেছেন। এতো আজও হয়। আমরা তো আজও বলি অমুক যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, কেউ কেউ তো বিশ্বাস করেন নেতাজী বেঁচে আছেন। এ তো হয়ই।
    ২) ভারতীয় সংস্কৃতিতে ইতিহাস চর্চার মূল কনসেপ্টাই হইল কাল্পনিক এক সমৃদ্ধ অতীতের কাবিক্য চিত্রকল্প নির্মাণ। অনেকটা শাহ আবদুল করিমের গানের মতো- আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম-এর নস্টালজিয়া অথবা জীবনানন্দের মতো কোনো এক শ্রাবস্তির কারুকার্য কল্পনা কইরা তাব্দা খাইয়া বইসা থাকা। সকলেই মনে করে আগের দিনগুলা আছিল বড়োই দারুণ। মূলত এইটা একটা নতুনত্বভীতি আর বুড়ামির প্রতীক। এর লাইগা সকলেই খালি কল্পিত এক আগিলা দিনের সাধনা করে; আর কবিরা সেইটা নতুন কইরা রচনা কইরা আবার প্রচারও করেন নতুনের মতো। কল্পিত রঙিন অতীত নির্মাণের এই বাজে অভ্যাসটা এখনো আছে আমাগো সংস্কৃতির মাঝে। -
    প্রথম বাক্যটিতে আপত্তি আগের বিষয়েই পরিস্কার করে দিয়েছি। রামায়ণ বা মহাভারতের গাথাগুলি ইতিহাস রচনার জন্য তৈরী হয় নাই। রচয়িতাদের সে দায়ও ছিলো না। তাদের কাছে রামায়ণ-মহাভারত বিষ্ণুর নানান অবতারের কীর্তিকলাপ বর্ণনার বেশী কোন গুরুত্ব নাই।
    অতীত বিলাস - এটি মানুষের একটি বহু পুরানো অভ্যাস, যা আজও রয়ে গেছে এবং থাকবেও। আমরা কোনদিন কোন সময়েই বর্তমানকে সর্বাঙ্গসুন্দর বলে মানি না। কারণ খুব সহজ - তা সর্বাঙ্গসুন্দর নয়। সাধারণ মানুষকে সুদূর অতীতে এবং এখনও প্রচুর দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ফলে যে অতীত সে দেখেনি সেই অতীতই তার কাছে স্বর্গসুখের মূর্ত প্রতীক। তাই তো আদম-ইভের গল্প, সত্যযুগের গল্প, স্বর্গএর গল্প যেখানে - নাইকো দুঃখ আধিব্যাধি, প্রবঞ্চনা, নাইকো চুরি - মানুষ সর্বকালে সর্বসময়ে, সর্বদেশে এই অতীতবিলাস দেখিয়ে এসেছে ও ভবিষ্যতেও আসবে।
    ৩)সুকুমারী ভট্টাচার্যের কথা যদি মানি তবে স্বীকার কইরা নিতে হয় যে পুরাণ লেখক বা সম্পাদক কেউই উচ্চ শিক্ষিত মানুষ আছিলেন না; এরা বরং মূর্খ শ্রেণির দুর্বল লেখকই আছিলেন। বিভিন্ন স্থানীয় সামন্তগো পৃষ্ঠপোষকতায় সেই সামন্তের পূর্ব পুরুষের ইতিহাস রচনা করতে গিয়া কিংবা সেই সামন্তের বিধি বিধানরে ধর্মশাস্ত্রর চেহারা দিতে গিয়া নিজস্ব মূর্খতা আর দুবর্লতা নিয়াই তারা এইসব পুরাণ রচনা কইরা গেছেন। এবং তারা নিজেরাও নিজেদের অতই নগণ্য আর ক্ষুদ্র মনে করতেন যে কোনো রচনাতেই নিজের নাম পর্যন্ত দিতেন না; নিজের রচনাগুলারে আগের কোনো বিখ্যাত লেখকের নামে চালায়া দিতেন। পুরাণগুলারে ভজঘট করার লাইগা মূলত দায়ী এইসব দায়িত্বহীন আর অস্তিত্বহীন পেশাদার লেখকের দল। এদের না আছিল ভূগোল জ্ঞান; না সংখ্যা; না ইতিহাস। এগোর থাকার মধ্যে আছিল শুধুই দুর্বলভাবে কিছু একটা কল্পনা করা আর স্থানীয় সামন্তরে খুশি করার ক্ষমতা -
    এটা অংশিক সত্য। মহাভারত বা রামায়ণ কেউ এককভাবে তৈরী করেনি এমনকি এটা কোন একটি বিশেষ কালের গল্প হয়েই থেমে থাকেনি এবং এই দুটি আখ্যানই কোন অবিচ্ছেদ্য আখ্যান নয়, এগুলি বহু আখ্যানের সমষ্টি যা পরবর্তিকালে কেউ কেউ একসুতোয় গাঁথতে চেয়েছেন।
    সেই রচয়িতাদের মূর্খ বলাটা যিনি বলছেন তার নিজেরই মূর্খতার পরিচয় - তা সে তিনি যদি সুকুমারী ভট্টাচার্য হন তবুও। আমি হয়তো একটু বেশী রুক্ষ্ম হলাম, তবু সেই রুক্ষ্মতার দায় নিতে আমি প্রস্তুত।
    এ প্রসঙ্গে মহাভারতের একটি আখ্যান বলি।
    তরুণ কৃষ্ণদ্বৈপায়ণ পিতা পরাশরের আশ্রমে বিদ্যাভাস করেন অন্য আরও অনেকের সাথে। তার সাথে পরাশরের তর্ক বেধে যায় - মূর্খের সংজ্ঞা নিয়ে। কৃষ্ণের মতে কেউ মূর্খ নয়। হতেই পারে না। একমাত্র মৃত মানুষ মূর্খ, তার জ্ঞান নাই। তা না হলে যে মানুষটি জীবিত, সে বেঁচে থাকার জন্য কিছু না কিছু করেই - সেটাই তার জ্ঞান। অতএব জীবিত মানুষমাত্রেই জ্ঞানী।

    সামন্তদের খুশী করতে কবিরা চারণেরা বহুগাথা রচনা করেছেন, তারা অনেক সময়ে রামায়ণ বা মহাভারতের বংশে নিজের পৃষ্ঠপোষককে ঢূকিয়ে নিয়েছেন - এমনটি হয়েইছে।
    আপাততঃ এটুকুই।
  • মাহবুব লীলেন | 48.103.23.231 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ০৪:২৬82507
  • @ কল্লোল
    এক কথায় তো পুরাটা বইলা দিলেন " রামায়ণ বা মহাভারতের গাথাগুলি ইতিহাস রচনার জন্য তৈরী হয় নাই। রচয়িতাদের সে দায়ও ছিলো না।"
    কিন্তু মাইনসে তো আমাদের সাংবাদিকের ফাইভ ডাব্লু নিয়া গুতাইয়া একছার কইরা রাখে। এর লাইগা এর লাইগা কিঞ্চিত ইতিহাসের হাড্ডি কংকাল নিয়া ঠোকাঠুকি।

    তবে আপনের পড়াশোনা আমার কামে লাগব নিশ্চিত; খটকার কতগুলা জায়গায় সরাসরি আপেনেরে প্রশ্ন পাঠায়া দেবো

    রাবণ আর্য কি না:
    রাবণ রামায়ণের 'হনুমান' বা বাস্তবের মুণ্ডারি জাতির মানুষ। আর যদি এই রাবণ আদি পুলস্ত থাইকা রূপান্তরিত হইয়া তাকে থাকে তবে রাবণ বাল্মিকীর মতোই ভিল জাতির মানুষ (সকইল সম্ভাবনা; ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট চাইযেন না)

    রাবণের দশ বিদ্যার একটা স্থাপত্যবিদ্যা হলেও স্থাপত্যের কাঠামো পাই নাই কোথাও

    রাবণের লেখা একটা বই আছে 'রাবণ সংহিতা' সেইটাও জোগাড় করতে পারি নাই

    @ অভিষেক
    কেদারনাথের কথা দিয়েই একখান কথা কই। তিনার বইয়ে এক জায়গায় এরকম একটা কথা আছে "শুনিয়াছি 'অমুক' রামায়ণের ওপর লিখিত ৩৫ হাজার টীকা গ্রন্থের একখানা তালিকা করিয়াছিলেন"

    সুতরাং আমি বলি; পুস্তকও বাড়িতেছে; দ্বিমত বাড়িয়া কোটিমত হইতেছে

    ভিন্নমত করি না আপনার বক্তব্যের সাথে

    @ de
    আমি এখন পর্যন্ত ১০৮জন ইন্দ্রের তালিকা পাইছি। কে কোন সময় ইন্দ্র আছিলেন সেইটা বাইর কইরা দিব কন?

    @ সিকি
    নাহ। বিন্ধ্য অঞ্চল বামুনদের দখল করা অঞ্চল। সম্ভবত এই অভিযানটার সূচনা হইচিল অগস্ত্য মুনির হাত ধইরা। রামায়ণ এই অঞ্চলরেই ঘটনা। মহাভারত যুগে আর্যরা এইদিকে আসে নাই

    @ hindu

    হ। আমরা বাইচা থাকি আপনেগো দয়ায়। কথা সইত্য। তা দয়া কইরা যখন বাচাইয়াই রাখলেন তখন আরেকদিকে ঠেইলা মারতে চান ক্যান?
    আপনেরা নিজেরা মারামারি কইরাই তো বচ্ছরে বহুত লাশ উৎপাদন করেন; আমার একটা স্টকে না ঢুকাইলে কি কম হয়ে যাবে?
  • অভিষেক | 52.110.189.18 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ০৬:৪৭82496
  • গীতার সাংখ্যযোগ অধ্যায়ে বেদের কর্মকান্ডের বাহুল্যতার নিন্দা সুস্পষ্ট। বুদ্ধ যে যুগের ফসল তার আগমন বা সমসাময়িকতার ধবনিও য্যানো শোনা যায়। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাপাঠ রেফার করবো।
    রামকথার বহু ভারসান নিয়ে সুকুমার সেনের এক অতি উপাদেয় নিবন্ধ আছে।খোটানি,তিব্বতি, উত্তর,দক্ষিণ ভারত,কাশ্মীরি নানা ভারসানে গপ্পের দিগন্ত নানা প্রকার।কোথাও আবার রাবণ সীতার পিতা, তো কোথাও রাম সীতা ভাই বোন। সুকুমার বাবু এমনকি আইরিশ কিছু অতিকথার মধ্যেও প্রচ্ছন্ন রামকথার আভাস দেখিয়েছেন।
    নানা পাঠে,সব রেফারেন্স মনেও নেই, যা মনে হয়েছে তা হলো রামকথা এক অতি প্রাচীন লৌকিক রটনা/ঘটনার কবিপ্রকাশ। নানা ভূখন্ড জড়িয়ে এর সুর বয়ে গ্যাছে নানা জাতির ভাষায়। হয়ত এর আদিগঠনের সময়ে ভাষার ভিন্নতা এমত ছিলোনা এই সব বহুভাষিকদের মধ্যে।
    বাল্মীকি রামায়ণ বলে আমরা যা পাই তাতে পোস্ট পাণিনীয় ছাপ অবশ্য পাই।কাব্যের বহু লক্ষণ এর আধুনিকতা জানায়। তবু এর মধ্যে থেকে গ্যাছে রূপকথার আদিকল্পগুলোও। গাছ পাথর দিয়ে লড়াই। জাঙ্গুলে ভূখন্ডে লড়াই হলে কবি তার নায়কের সাথে জুড়বেন জঙ্গলের সবচেয়ে প্রকাশমান পশু পাখিদের এতে আর আশ্চর্য কী! রাম বিষ্ণুকল্প বলে সে পাখীও গরুড়কল্প হয়েই যাবে। বানরসেনার মধ্যে আমি মোটেই আদিবাসী জনজাতি খুঁজিনা তাই। রাবণের মধ্যেও খুঁজিনা দক্ষিণি দ্রাবিড়িয়ানা। রাবণ কিন্তু ব্রাহ্মণ এবং খেয়াল করলে দেখবেন লঙ্কায় হনুমান ব্রহ্মরাক্ষসদের বেদপাঠ করতেও শুনেছেন। এ য্যানো কবিকল্পনায় এক প্যারালাল সভ্যতা, ব্রাহ্মণ্যধারার একদম কপি,নেহাত জীবেরা আরও ফেরোশাস। দক্ষিণসমুদ্র হলো অচেনা জায়গা তাই লঙ্কা প্রতিষ্ঠা হলো ওইপানে।
    রাবণের দাদার বাড়ি অলকায়।লঙ্কা য্যানো অলকার এক কপি। এমনকি ধবনিসাম্যতাও অদ্ভুত!
    রামায়ণের গল্প সত্যি য্যানো ব্রহ্মবর্তের একদম বাইরে থেকে আসা! বৈদিক মোটিফ যাতে মহাভারত গিজগিজ করছে তা বেজায় এবসেন্ট। বরং পুরাতন রূপকথার ওপরে সাংখ্যের তিনগুণই বলুন( সত্ত্ব বিভীষণ, রজ: রাবণ, তামস কুম্ভকর্ণ) বা বর্ণবাচক রামরাজ্য বা জাবালিকে ঠেসা দেওয়াই বলুন এ সবই বড় চোখে ঠাহর দেওয়া স্থুল কালিক প্রলেপ মাত্র।
    অন্যদিকে মহাভারতে সেই আদিবৈদিক দেবসম্ভুত চরিত্র মায় দেবাসুরের মারপিটও পুনঃচিত্রিত। পান্ডব কৌরবদের মতন দেব অসুররাও কিন্তু একই আদিপিতাসঞ্জাত কন্সেপ্ট।
    দময়ন্তীদি বিন্দুবিসর্গের নাম করেছেন।কলিম-রবিবাবুদের থিয়োরির ওপরে বেস করে লেখা এই উপন্যাস। অত্যন্ত উপাদেয় হওয়ার কথা।তবে কলিমবাবুর থিয়োরি অনেক কিছু ভাবার নতুন করে অবকাশ দিলেও বড়ই কল্পনাপ্রবণ এবং এট টাইমস ফার ফেচেড।অতএব ওই নিয়ে বেশ খানিক্টা স্কেপ্টিক।
    ছোটোমুখে অনেক কথা বলে ফ্যালা গ্যালো।মাহবুবদাকে প্রশ্ন- কেদার মজুমদারের এই বই পড়তে আগ্রহী থাকলাম।ইবই জুটতে পারে কি দাদা?
  • | 52.106.13.197 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ০৬:৫৮82497
  • হনু, না এটা নয়। তবে অভাজনের মহাভারত এর পর্বগুলোর লিঙ্ক আর রামায়নের দুই একটা লিঙ্ক শেয়ার করেছি আগে। সেগুলো পড়েছ মনে হয়।
  • কল্লোল | 233.186.107.247 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ০৬:৫৯82498
  • ৪) রামায়ণের ঘটনা ঘটছে মহাভারতের পরে; এই কথাটা প্রচলিত যুক্তি আর পৌরাণিক বিশ্বাসের সরাসরি বিরুদ্ধে যায়।
    ঠিক। রামায়ণ মহাভারতের আগের ঘটনা। একটা প্রমাণ মহাভারতে (কালীপ্রসন্নের অনুবাদে) আদি পর্বে রামায়ণের গল্প আছে। গোটাটাই সংক্ষিপ্ত আকারে। কিন্তু রামায়ণে কোথাও মহাভারতের কোন আখ্যানের উল্লেখ নাই।
    ৫)বাল্মিকীরে চতুর্থ শতাব্দির মানুষ ধইরা নিবার পক্ষে আরো বহুত যুক্তি আছে। এর পয়লাটা হইল রামায়ণের ভাষা।
    রামায়ণের যে ভাষাটি আমরা পাই সেটি লিখিত রামায়ণের ভাষা সেটি বাল্মিকীর রচনা নয়, হওয়া সম্ভবও নয়। আর বাল্মিকী এককভাবে রামায়ণের রচয়িতাও নন। রামায়ণ-মহাভারত কেউই এককভাবে রচনা করেন নি। প্রাচীনকাল থেকে শত শত চারণ এই গাথাগুলো গেয়ে এসেছেন, কখনো একসাথে কখনো আলাদা আলাদাভাবে। ফলে এতে নানান যুগের ভাষা চলে এসেছে। পরে যখন লেখা হচ্ছে, তখন সে যুগের ভাষাতেই লেখা হয়েছে।
    ৬) ভারতে আর্যগো হাতে পয়লাবারের মতো পাথরের দালান বানানো শুরু হয় গুপ্ত যুগে; ৩৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। তাইলে রাবণের বাড়িতে অত দালান আসে কেমনে?
    রাবণ তো আর আর্য না। ভারতের আদিবাসীরা নগর বানাতে জানতো। তার প্রমান শুধু মহেঞ্জোদারো-হরপ্পাই নয় সরস্বতী নদীর কূল ধরে গড়ে ওঠা আরও অনেক শহর যা এখন পাওয়া যাচ্ছে।
    এ ব্যাপারে একটা বই বেশ তথ্যপূর্ণ - লুপ্ত সরস্বতী মণিরত্ন মুখোপাধ্যায়, সিগনেট প্রেস ২০১৩।
  • de | 24.139.119.171 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ১০:৫১82499
  • ভালো লেখা -

    "মহাভারতে বৈদিক দেবতারা তাগো বৈদিক চরিত্র নিয়াই প্রায় সবাই উপস্থিত; মানে মাইনসের লগে মারামারি করা- এর তার বৌর ঘরে ঢুইকা যাওয়া কিংবা মাইর খাইয়া নতি স্বীকার করা; বৈদিক দেবতাগো এইসব চরিত্রই কিন্তু মাহভারতে উপস্থিত। রামায়ণে কিন্তু তিনাগো তেত্রিশজনের কথা শোনা গেলেও বড়োই নিস্ক্রিয় তারা। মেঘনাদের হাতে কোনো এক কালে ইন্দ্রের মাইর খাওয়া ছাড়া বৈদিক দেবতাগো সক্রিয় সংশ্লিষ্টতার কোনো সংবাদ নাই রামায়ণে। মানে তিনারা তখন রিটায়ার বা পরিত্যক্ত হইয়া গেছেন প্রায়। মহাভারতে কিন্তু বৈদিক দেবতাগো থাইকা শৈব ঘরানায় ট্রানকিজশনের একটা ট্র্যাক পাওয়া যায়। মহাভারতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত বড়ো দেবতা হইলেন শিব। বৈষ্ণব সেইখানে শুরু হইছে মাত্র। অন্যদিকে রামায়ণ প্রায় পুরা বৈষ্ণব।।"

    রামায়ণে অহল্যা-ইন্দ্র উপাখ্যানও আছে - এছাড়া বরুণ দেবও বোধহয় আছেন - সমুদ্রদেবতার রূপে - সেতু বাঁধার আগে রাম যাঁর ধ্যানে বসেছিলেন -
  • de | 24.139.119.171 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ১১:০৪82500
  • মহাভারতে একবার ভীম আর হনুমানের দেখা হওয়ার গল্প আছে - ভীম যেখানে হনুমানকে টেনে সরাতে পারে না রাস্তা থেকে - দুজনেই পবননন্দন! এখানে পবনেরও উল্লেখ আছে রামায়নে -

    এই গল্পটাতে হনুমানকে ভীমের বড় বলেই ধরে নেওয়া হয়- হনুমানকেও অমর বলা হয় - এটাও কি প্রক্ষিপ্ত?

    বিভীষণও আরেকজন অমর - মনে পড়ছে না - ওনাকে কি মহাভারতে দেখা গেছিলো কখনো?
  • সিকি | 158.168.96.23 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ১১:১০82501
  • মহাভারতের গল্প বোধ হয় বিন্ধ্য পার হয় নি কখনও।
  • hindu | 165.136.184.8 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ১১:২৪82502
  • মহাভারত বলে এইসব ভুলভাল লিখেও বেঁচে গেলেন। একটু সাহস থাকলে কোরান নিয়ে একটু হয়ে যাক ?
  • de | 69.185.236.54 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ১১:৩৮82503
  • মহাভারত, রামায়ণ পুরাণের গপ্পোগাথা - তার সঙ্গে কোরানের তফাত আছে তো -
  • কল্লোল | 233.186.90.253 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ১২:০৩82504
  • অন্য অমর অশ্বত্থমা। কোরাণ নিয়ে এই ধরনের আলোচনা হতেই পারেনা। কোরান পুরোটাই কি করতে হবে, আর কি করতে হবে না।
    সেগুলো নিয়ে কথা হতেই পারে, হয়ও। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত, রেহনুমা আহমেদ সম্পাদিত ইসলামের পুণর্পঠন।
  • কল্লোল | 233.186.253.214 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ১২:৪৬82492
  • দুখিত। সব ব্যাপারে একমত হলাম না। রামায়ণ আর মহভারত "লেখা" হয় সম্ভবতঃ গুপ্তযুগে। ফলে লিখিত রামায়ণ আর মহাভারত ৩২০ থেকে ৫০০ খ্রিষ্টাব্দে গড়ে ওঠে। ফলে অন্ততঃ দুই/আড়াই হাজার বছর ধরে এই কাহিনীগুলি আলাদা আলাদাভাবে গান হিসাবে গাওয়া হতো। তখন বহু যোগ বিয়োগ ঘটেছে।
    তবে মাতৃপিতৃতন্রের বিষয় নিয়ে কোশাম্বির ভালো লেখা আছে মিথস অ্যান্ড রিয়েলিটিতে।
    মহাভারতে ও রামায়নে ইন্দ্রপ্রস্থ আর অযোদ্ধার যে বিবরণ আছে তা গুপ্ত যুগের স্থাপত্যকেই মনে করায়। একমাত্র কিছুটা বোঝা যায় রামায়ণে লংকার বিবরণে যে বিস্ময় আছে তাতে। বোঝা যায় যে অনার্যদের মতো নগর প্রযুক্তি আর্যদের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার ছিলো।
    মহাভারত ও রামায়ণের কালে সরস্বতী নদী শুকিয়ে গেছে। ফলে এই গাথাগুলো নিশ্চই খ্রীঃপূঃ তিন হাজারের পরের ঘটনা। মহেঞ্জোদরো হরপ্পারও পরের ঘটনা।
  • avi | 57.11.15.53 (*) | ০৬ জুন ২০১৭ ১২:৫৯82505
  • অমর সাতজন তো। বলি, হনুমান, ব্যাস, পরশুরাম, কৃপ, অশ্বত্থামা। এযুগের পরশুরাম এই সাতজনকে দেখা করিয়ে একখানা মিটিংও করিয়ে দিয়েছিলেন।
  • মাহবুব লীলেন | 48.103.23.231 (*) | ০৭ জুন ২০১৭ ০১:২৬82512
  • @ কল্লোল
    মইরা যাইবার কোনো ইচ্ছা নাই। ছোট মাইনসের আগলাইয়া রাখার মতো একটাই সম্পদ; সেইটা হইল জান।

    ০২
    'সম্ভাবনাগুলো খোলা রাখুন,জাজমেন্টালল হবেন না।' একশোভাগ সমর্থন
    মূলত নিজে গল্পের লাইনআপটা কোন দিকে করছি তার লাইগা কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়ত উপসংহারের মতো হইয়া গেছে কথাগুলা
    নাইলে রামায়ণ চরিত্রগুলার ঐতিহাসিক প্রামাণিকতার দায় আমারও নাই
    আমি বরং এই ক্ষেত্রে বুদ্ধদেব বসুর কথা মানতে রাজি- যেইগুলা এখন আছে সেইগুলা অত প্যাচাইল্লা বইলাই বারবার পড়ি আর তর্ক করি। আদিকালে এইসব পুস্তক যে রকমের আছিল বইলা শোনা যায়; সেইরকম এখনো থাকলে আমি পড়তাম কি না সন্দেহ আছে...

    @Utpal Mitra
    কিছু বই পাঠাতে পারব আর কিছুর সন্ধান দিতে পারব আশা করি
  • কল্লোল | 233.176.83.185 (*) | ০৭ জুন ২০১৭ ০৩:৫৮82509
  • আপনেরা নিজেরা মারামারি কইরাই তো বচ্ছরে বহুত লাশ উৎপাদন করেন; আমার একটা স্টকে না ঢুকাইলে কি কম হয়ে যাবে?
    - আহা, বাইচ্চা থাহেন। এসবের পাত্তা না দিয়াই ভাল।
  • কল্লোল | 233.176.83.185 (*) | ০৭ জুন ২০১৭ ০৩:৫৮82508
  • আপনেরা নিজেরা মারামারি কইরাই তো বচ্ছরে বহুত লাশ উৎপাদন করেন; আমার একটা স্টকে না ঢুকাইলে কি কম হয়ে যাবে?
    - আহা, বাইচ্চা থাহেন। এসবের পাত্তা না দিয়াই ভাল।
  • কল্লোল | 233.176.83.185 (*) | ০৭ জুন ২০১৭ ০৪:১৬82510
  • এক কথায় তো পুরাটা বইলা দিলেন " রামায়ণ বা মহাভারতের গাথাগুলি ইতিহাস রচনার জন্য তৈরী হয় নাই। রচয়িতাদের সে দায়ও ছিলো না।"
    কিন্তু মাইনসে তো আমাদের সাংবাদিকের ফাইভ ডাব্লু নিয়া গুতাইয়া একছার কইরা রাখে। এর লাইগা এর লাইগা কিঞ্চিত ইতিহাসের হাড্ডি কংকাল নিয়া ঠোকাঠুকি।
    - সে তো চিরকালই থাকবে। তা বলে তো জানার চেষ্টা থামবে না। আমার একটাই অনুরোধ, সম্ভাবনাগুলো খোলা রাখুন,জাজমেন্টালল হবেন না।
  • Utpal Mitra | 212.191.212.178 (*) | ০৭ জুন ২০১৭ ০৭:২৫82511
  • khub bhalo laglo.aamar email [email protected] jodi pathan

    utpal mitra
  • পৃথা | 181.78.160.245 (*) | ০৯ জুন ২০১৭ ০৬:৪১82513
  • খুব বিশ্লেষণ মূলক লেখা,অনেক কিছু নতুন করে ভাবার মত। আর সম্পূর্ণ আঞ্চলিক ভাষায় লেখার চেষ্টা প্রশঙশনীয়।
  • দেবাশিস | 57.15.11.182 (*) | ১০ জুন ২০১৭ ০৩:১৭82514
  • শত সহস্র ভুলে ভরা একটা লেখা, এটাকে যারা ভালো লেখা বলছেন তারা রামায়ণ বা মহাভারত পড়েছেন কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যেমন ধরুন রাবন শিব এর বড় ভক্ত ছিলেন, শিবের বরপ্রাপ্তও বটে, রাম বিষ্ণুর লৌকিক অবতার, উনি কোথায় পেলেন যে রামায়ণ এ ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর এর উল্লেখ নেই? রামায়ণ এ অস্ত্রশস্ত্র ধাতব ছিল, কিন্তু লোহাই যে ছিল সেটা উনি কোথায় পেলেন? আমি চটজলদি খানিকটা পরেই আরো হাফ ডজন ভুল পেয়েছি, পুরোটা পড়ার আর অভিরুচি নেই।
  • | 116.193.214.155 (*) | ১০ জুন ২০১৭ ০৩:৫৬82515
  • চটজলদি চোখবুলিয়ে যাওয়া পাঠকদের জন্য এই লেখা নয় তো। ;) রেফারেন্স কোথায় কী পেয়েছেন সেসব তথ্যাদি নীচে দেওয়া আছে। তার জন্য একটু খাটাখাটনি করে পড়াশোনা করতে হবে। সেই বইগুলোও পড়তে টড়তে হবে :-) ওসব অনেক পরিশ্রম। :-))
    এছাড়াও কোনও টেক্সটের পাঠ, অল্টারনেট পাঠ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও কিঞ্চিৎ ব্যুৎপত্তি দরকার আর কি।
  • তাতিন | 213.110.242.21 (*) | ১২ জুন ২০১৭ ০৬:৪০82516
  • ভালো লেখা।
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ১৮ জুন ২০১৭ ০৫:১৬82517
  • এটায় আরো আলোচনা হলে ভালো লাগবে।
  • মাহবুব লীলেন | 108.204.89.231 (*) | ১৯ জুন ২০১৭ ০৩:০৬82518
  • @দেবাশিস
    ধন্যবাদ না পড়ে ভুল ধরার জন্য।

    অন্য সকলরে ধন্যবাদ পড়ে আলোচনা করার জন্য

    -লীলেন
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন