এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • কার্ফিউড নাইট: আগ্নেয়গিরির শিখরে পিকনিক

    শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য্য লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৩ আগস্ট ২০১৫ | ৬৭৪১ বার পঠিত
  • দক্ষিণ কাশ্মীরের প্রত্যন্ত গ্রামের এক ভীতু মানুষ, হুসেন । শান্ত চোখ, সংকুচিত ভংগীতে বসেছিল ডাক্তারখানায়। হুসেনের ধারণা সে ইমপোটেন্ট হয়ে গেছে। তার ডাক্তার ভাইয়ের ভাষায়, ‘হুসেনের আর দাঁড়ায় না’। হুসেন বিয়ে করতে চায় না, কারোর সাথে মিশতে চায় না। নিজের ছোট্ট দোকান-ঘরের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে কাটিয়ে দেয় সারাদিন। হুসেন এক একলা ভাঙ্গাচোরা মানুষ। 


    ১৯৯০ সালে যখন কাশ্মীরে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের ডাক ওঠে হুসেন তখন কলেজে পড়ে। তেরোজন বন্ধুর সাথে হুসেন রওনা দিয়েছিল এল ও সি পেরিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের দিকে ‘ট্রেনিং’ নিতে। কুপওয়ারা থেকে একটু দূরে বিএসএফ তাদের ট্রাক থামায় এবং অ্যারেস্ট করে কাছের আধা-সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালবেলা ইন্টেরোগেশন রুমে নিয়ে আসা হয় তাদের। জোর করে উলংগ করিয়ে দুই হাতে তামার তার বেঁধে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হতে থাকে। হুসেনের গলা ফাটিয়ে ঠিকরে আসতে চায় বমি, কিন্তু করতে পারে না কারণ মুখে গোঁজা ছিল তুলোর বল। রক্ত লালা এবং বমিতে সেই বল ভিজে গেলে ফেলে দিয়ে নতুন বল ঢোকানো হচ্ছিল। এরপর হুসেনের পুরুষাংগের ভেতর তার ঢুকিয়ে দেওয়া হয় জোর করে। শক পেতে পেতে মনে হয় ছিঁড়ে যাবে পুরুষাংগ। হুসেন পরে বুঝেছিল, এগুলো শুধুই কথা বার করার জন্য নয়। কারণ সকলেই একটা না একটা সময় মুখ খোলে, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মুখ খুলতে বাধ্য হয়। ইন্ডিয়ান আর্মিও জানে সেটা। তারা দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে এই টর্চার চালায় নিছক স্যাডিস্ট আনন্দ পাবার জন্যেই। 


    অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হুসেন অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল একসময়। তাকে জাগিয়ে তুলে আবার শক দেওয়া হয়। হুসেন প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলে, কিন্তু হিসির বদলে রক্ত বেরিয়ে আসে। ফুলে ওঠে অন্ডকোষ। বিপদ বুঝে আর্মি হাসপাতালে ট্রান্সফার করে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর আবার অত্যাচার। দুই বছর বাদে হুসেন যখন ছাড়া পায় তখন তার পুরুষাংগ আর শক্ত হয়না। বাড়ি ফিরে আসার পর গুটিয়ে যায় সে। বাড়ির লোক বিয়ে করার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকে, একসময় সে জানায় যে সে বিয়ে করতে পারবে না, কারণ তার “দাঁড়ায় না”। কোনও ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না লজ্জায়। গোটা সময় কাটায় গ্রামের মসজিদে। হুসেন ধর্মপ্রাণ এক মুসলিম হয়ে যেতে শুরু করে, যাকে অনায়াসে ভারতীয় মিডিয়া দাগিয়ে দিতে পারে ধর্মান্ধ মৌলবাদী নামে।


    হুসেন কোনও কাল্পনিক চরিত্র নয়। বসারাত পীরের লেখা কার্ফিউড নাইট-এর পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে এমন অসংখ্য হুসেনের সাক্ষাতকার, যারা কাশ্মীরে ইন্ডিয়ান আর্মীর অত্যাচারে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। এই বই ডকুমেন্ট করেছে মুবিনা আর রশিদের কথা। বিয়ের রাতেই বিএসএফ বাস থেকে নামিয়ে মুবিনাকে গণধর্ষণ করেছিল। অপরাধ? মুবিনাদের বাস আসার আগে জঙ্গীদের একটা জিপ গিয়েছিল সেই রাস্তা দিয়ে এবং সেখান থেকে বি এস এফ-এর উদ্দেশ্যে কয়েকটা গুলি ছোঁড়া হয়েছিল শুন্যে। কেউ হতাহত হয়নি। কিন্তু সেই জিপকে ধরা যায়নি। এই রাগে পরের বাস থামিয়ে এক নববিবাহিতা মেয়েকে নামিয়ে সারারাত ধরে গণধর্ষণ না করলে সামরিক বাহিনীর দেশপ্রেমী-দর্পিত পুরুষাংগ শান্ত হত না। এই বই ডকুমেন্ট করেছে গুলজারের কথাও। ক্লাস টু্যেল্ভের ছাত্র গুলজার নিছক মজা করার জন্য স্কুলের এক জুনিয়ারকে একটু র‍্যাগ করেছিল। জানত না যে সেই ছেলেটি এক ইন্ডিয়ান আর্মি অফিসিয়ালের পুত্র। আর্মি গুলজারের বাড়িতে এসে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং হাত পা বেঁধে কাছের এক গোডাউনে ঢুকিয়ে মাইন ফাটিয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল তার শরীর। অফিসিয়াল ডকুমেন্টে লেখা হয়েছিল গুলজার এক বিপজ্জনক জংগী যার মাইন ভুল করে হাতে ফেটে গেছিল। আছে ১৭ বছরের শফির কথাও। শফি এবং তার ভাইকে ইন্ডিয়ান আর্মি একদিন রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর শফির পেটে মাইন বেঁধে পাঠিয়ে দেয় কাছের এক বাড়িতে যেখানে নাকি জংগীরা লুকিয়ে ছিল। শফির মা সেকথা শুনে ছুটতে ছুটতে সেখানে গিয়ে দেখেন শফির ছোটভাই বিলালের পেটেও মাইন বাঁধার তোড়জোড় চলছে। আর্মির সঙ্গে হাতাহাতি করে বিলালকে ছাড়িয়ে আনা গিয়েছিল। কিন্তু শফিকে ফেরানো যায়নি। তার ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহের সবকটা অংশ খুঁজেও পাওয়া যায়নি কবর দেওয়ার জন্য।


    বইটা পড়তে পড়তে গা গুলিয়ে ওঠে। অসুস্থ লাগে। কয়েক দশক ধরে দেশের ঐক্যের নাম করে ইন্ডিয়ান আর্মি যে জাস্ট সাম্রাজ্যবাদী অ্যাগ্রেসন চালাচ্ছে গোটা কাশ্মীর ভূখণ্ডে তার জীবন্ত ডকুমেন্টেশন এই বই-এর পাতায় পাতায়। লেখক নিজে জীবনের প্রথম ১৮ বছর কাটিয়েছেন কাশ্মীরে। জংগী হতে হতেও হননি। কিন্তু স্পষ্ট ভাবে দেখিয়েছেন কেন হাজার হাজার ছেলেপুলে এল ও সি ডিংগিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে গিয়ে ‘ট্রেনিং’ নিয়ে আসে। খুব সঠিকভাবে বসরাত দেখিয়েছেন যে কাশ্মীরের মানুষ কোনও কালেই নিজেদের ভারতের অংশ ভাবেনি। শারজার সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে যেখানে জাভেদ মিঁয়াদাদ শেষ বলে ছয় মেরে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলেন, রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার পর উল্লাসে ফেটে পড়েছিল প্রায় গোটা কাশ্মীর। ব্যাপারটা পাকিস্তানকে সমর্থন নয়। বরং যে ভারতের বিপক্ষে খেলবে তাকেই সমর্থন। দশকের পর দশক ধরে দেশপ্রেম এবং জাতীয় সংহতির নাম করে এই ভূখণ্ডে দাপিয়ে গিয়েছে ভারতীয় রাজনীতি। ভারতীয় সেনা এবং আধা-সামরিক বাহিনী, খুন-ধর্ষণ-নিখোঁজ-এর বীভৎস মজায় ভারতবাসীকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে এই সারসত্যটা যে কাশ্মীর ঐতিহাসিকভাবে ভারতের অংশ কখনোই ছিল না। বরং আজাদ কাশ্মীরের দাবীর থেকে আর কোনও মহত্তম দাবী এই সময়ে দাঁড়িয়ে সম্ভব নয়। সেই জাতীয়তাবাদী আগ্রাসনের  বিপরীতে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ ছুঁড়ে দিতে পেরেছিল শুধুই নীরব অসমর্থন। আর তাই ১৯৮৭ সালে নির্বাচনের নামে যখন প্রহসন করে ভারতীয় সরকার, তার বিপরীতে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে উঠে আসে ইয়াসিন মালিকের জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট। ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে স্বাধীনতাকামী শান্তিপূর্ণ মিছিলে নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে যখন আর্মি শতাধিক মানুষ মারে, তার উত্তরে হাজার হাজার ছেলে লাইন অফ কন্ট্রোল পেরিয়ে ‘জিহাদী ট্রেনিং’ নিতে চলে যায় এবং ফিরে এসে বীরের সংবর্ধনা পায় সাধারণ্যের কাছে। কাশ্মীরের বাস্তব এটাই। ভারতীয় দেশপ্রেমিকদের বুটের তলায় মাথা তুলবে বিচ্ছিন্নতাবাদের গর্জন।


    কিন্তু বসারাতের এই বই শুধুই বিচ্ছিন্নতাবাদী বা সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের গল্প নয়। বরং গত কয়েক দশক ধরে আগ্নেয়গিরির শিখরে বসে পিকনিক করছে যে ভূখণ্ড, এই বই তার এলিজি। বাসারাত জানেন পক্ষ নিতে হয়। ফেন্স-সিটার মানবতাবাদীদের মতন তিনি মহত্বের সুঊচ্চ প্রাসাদের চূড়ায় বসে দিক-নির্দেশ করে দেন না। বলেন না যে আর্মী এবং জংগী দুই পক্ষই সমান খারাপ। বসারাত এই ঐতিহাসিক সত্যের সঙ্গে অবগত যে নিরপেক্ষ অবস্থান আসলে দিল্লীতে বসে থাকা নিও-হিন্দুত্ববাদী শাইনিংদের চামচা রাজনীতির হাত-ই শক্ত করে। ভারতীয় মিডিয়া রাজনীতি ব্যাবসায়ী গোষ্ঠির সবচেয়ে পছন্দের অবস্থান এই নিরপেক্ষতা, যার আড়ালে স্ট্যাটাসকুয়োর বৈধতা প্রতিষ্ঠা করা সহজ হয়ে যায়। বসারাত স্পষ্টত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষ নিয়েছেন। বারবার দেখিয়ে দিয়েছেন কেন ঐতিহাসিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে আজাদ কাশ্মীরের দাবীতে যুবক যুবতীরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। কেন সেই অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়াটা এই সময়ের একমাত্র দাবী। কেন পাপা-টু নামের ইন্ডিয়ান আর্মির টর্চার সেলে মার খেতে খেতে বুকের কলজে ফাটিয়ে ফেলার জবাব দিতে হাতে হাতে বদল হয় কালাশনিকভ। কেন ইয়াসিন মালিককে একটার পর একটা মিথ্যে কেসে জেলখানার মধ্যে বছরের পর বছর পচিয়ে মারার বদলা নিতে শ্রীনগরের রাস্তা ফেটে পড়ে জনবিক্ষোভে। এই বই-এর অসাধারণত্ব এখানেই যে বসারাত পক্ষ নেন বারবার। আর সেই পক্ষ-নির্বাচনে তাঁর কোনো ভুল হয় না।


    কিন্তু এতটা লেখার পর মনে হল কিছুই বলা হল না। এই বই-এর যে পার্সনাল টাচ, যে মানবিক কাহিনীগুলো, সেগুলো কিছুই ধরা গেল না। বসারাত যখন বর্ণণা করেন যে হাতের কালাশনিকভ একপাশে সরিয়ে জংগীরা নেমে পড়ে স্কুলের ছেলেপুলের সাথে ক্রিকেট খেলতে, দুম করে মনে হয়, আরে এ তো আমাদের নক্সাল ছেলেদের গল্প, যারা নিজেদের মধ্যে এলাকা দখলের লড়াই কয়েক মিনিটের জন্য থামিয়ে দিত যখন পাড়ার বল্টুর ঠাকুমা রাস্তা পার হতেন। বসারাত গল্প করেছেন সেই সব স্থানীয় জংগী নেতাদের যারা দেখা হলে প্রথমেই জানতে চাইত যে বাচ্চাটা লেখাপড়া ঠিকমতন করছে না কি শুধুই এই ভারত-পাকিস্তান করে করে বখে যাচ্ছে। বসারাত স্কুলে পড়ার সময় এক জে কে এল এফ-এর স্থানীয় কমান্ডারের কাছে বারবার আবদার করতেন যে তাঁকে দলে নিতে হবে। সেই কমান্ডার তাঁদের গ্রামের-ই ছেলে, প্রথমে ধমক ধামক দিত “অ্যাই পড়াশোনা কর, এসব করতে হবে না” ইত্যাদি বলে। তাতেও কাজ হয়নি দেখে সটান গিয়ে বসারাতের দাদুর কাছে গিয়ে নালিশ করে আসে। সেই জংগী ছিল দাদু যে স্কুলের হেডমাস্টার, তার ছাত্র। মাস্টারমশাই-এর নাতি উচ্ছন্নে যাচ্ছে, বসে দেখা যায় নাকি?


    তাই সবকিছুর পরেও এই বই সেই মানুষদের গল্প বলে, সেই ভূখণ্ডের গল্প বলে, আধিপত্যবাদের নিষ্পেষণে গুঁড়িয়ে যেতে যেতেও যা তুমুল জীবনের উদযাপনে বাঁচতে চায়। গ্রামের স্থানীয় মসজিদে গিয়ে সৌদির ক্যাম্প থেকে ফেরা কট্টর ইসলামিস্ট ছোকরা যখন চোখ-মুখ পাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা’ (শ্রেষ্ঠ কে?) তার উত্তরে কেউ ‘আল্লাহু আকবর’ চেঁচিয়ে ওঠে না, বরং একে অন্যের মুখ চাওয়া-চায়ী করে। চেঁচাবে কি করে? আরবি জানলে তো! ছেলেপুলের কাছে তুমুল প্যাঁক খেয়ে চোখমুখ লাল করে সেই ইসলামিস্ট বুঝিয়ে দেয় যা এই স্লোগানের উত্তরে আল্লাহু আকবর বলাটাই নিয়ম। তারপর আব্বার চেঁচিয়ে ওঠে ‘কবীরন কবীরা”। দুই একজন মিনমিন করে বলে ওঠে ‘আল্লাহু আকবর’। প্রোগ্রাম সুপারফ্লপ হবার পর এক বছর ধরে সেই ছোকরা আওয়াজ খেতে থাকে গ্রামের অন্য ছেলেপুলের কাছে। ততদিনে কিন্তু ধর্মের হাত ধরে রেজিস্টান্স পৌঁছে গেছে কাশ্মীরের ঘরে ঘরে। পণ্ডিতদের মাস এক্সোডাস ঘটে গেছে, শ্রীনগরের রাস্তা উজিয়ে উঠছে আজাদ কাশ্মীরের দাবীতে, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে নিখোঁজ এবং ঘরছাড়া। কিন্তু জীবন যেখানে যেটুকু চেটেপুটে নেবার, নেবেই। আগ্নেয়গিরির চূড়ায় বসে পিকনিক করার নাম-ই কাশ্মীর, বারবার মনে করিয়ে দেয় এই বই।


    বসারাত চাইলেই ইন্ডিয়ান মিডিয়ার ব্লু-আইড বয় হতে পারতেন যদি জংগী এবং আর্মির সমান নিন্দেমন্দ করে সাধারণ মানুষের কথা বলতেন। যেটা বসারাত ভোলেননি, কিন্তু আমরা ভুলে যাই, যে কাশ্মীরে জংগী আর সাধারণ মানুষের কোনও তফাত নেই। তাই কোনও এক মায়াময় হিমেল রাতে এক সাধারণ ওষুধের দোকানদার বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে জংগী ক্যাম্পে চলে যায়। সে এবং তার মতন আরো অসংখ্য মানুষ জানত যে এর অন্তে টর্চার এবং মৃত্যু নিশ্চিত। হয়ত বধু শুয়েছিল পাশে, হয়ত শিশুটিও ছিল, তবুও তাকে নন-কনফর্মিস্ট বানিয়ে ছাড়ল এক অমোঘ মরণফাঁদ। তবুও সিনেমায় যেমন হয়, শেষ দৃশ্যে হাতের কালাশনিকভ ত্যাগ করে সে সোজা হেঁটে যাবে না কিছুতেই। মরতে মরতেও আঁকড়ে ধরে থাকবে অস্ত্র। কাশ্মীর মানে এই নন-কনফর্মিস্ট ভূখণ্ডের গল্প। অসামান্য এ বই, ভোডাফোন ক্রসওয়ার্ড পুরষ্কার পাবার পরেও খুব জানা কারণেই ইন্ডিয়ান মিডিয়াতে বেশি আলোচনায় আসবে না। বুট পরা শ্রীরামচন্দ্রের পদদ্ধনিতে কেঁপে ওঠা আজকের ভারতবর্ষে দাঁড়িয়ে এই বই ফ্লপ হতে বাধ্য। তবে নন-কনফর্মিস্টরা পড়বেন। এটুকু আশা রইল। যেমন উট শুকনো কুয়ো থেকেও জলপান করে বলার পরেও গদার মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে উট জলপান করতে বাধ্য নয়, তাঁর নিজের মতন করে, খেয়াল-খুশি অনুযায়ী...


    ==============

    Curfewed Night: Basharat Peer; Random House (2010)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৩ আগস্ট ২০১৫ | ৬৭৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • খ্যা খ্যা | 125.112.74.130 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৫:১৯86784
  • "ভালো বাঙলা লিখতে পারলে, জীবনানন্দের কোটেশন ইত্যাদি জানলে যে হাফ পড়েই বইয়ের রিভিউ লেখা যায়, হাতে কলমে (কিম্বা হাতে কি-বোর্ডে) তার প্রমাণ দেবার জন্যে"- b কে ধন্যযোগ আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর জন্যে ।
  • ranjan roy | 24.97.238.154 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৩১86803
  • না, ৩৬গড়ে। কোলকাতায় নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ফিরব। পা পুরো ঠিক হয় নি, তাই। ততদিন দিল্লি ও ৩৬গড়।
  • de | 69.185.236.51 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৩৪86785
  • বইটা আমিও কিনবো ঠিক করেছি -

    বি এর শেষ প্যারা পড়ে বেশ হতাশ হলাম - চারিপাশের প্রিটেনশানের মধ্যে আরো একখানি অ্যাড হোলো!
  • | 24.99.216.53 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৪৯86786
  • আমিও যোগাড় করে পড়তে শুরু করেছি। শুরু করে কিছুদুর এগিয়ে জাস্ট ভাবছিলাম যে রিভিউটা কেমন আর্ধেক তুলে নিয়ে লেখা, তা ভাবলাম পুরোটা পড়ে দেখি। বি-এর মন্তব্য পড়ে বুঝলাম :-)
  • dd | 113.227.96.64 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৬:০৮86787
  • বইটা আগেই পড়েছি। বি যেরকম মন্তব্য করলেন হুবহু সেটাই মনে হয়েছে।

    বশারত আদৌ কোথাও কাশ্মীরের ঘটে যাওয়া ঘটনাকে এক তরফাও বলেন নি বা এটাকে মুসলমান দের উপরে হিন্দুর অত্যাচার (খাকী রামচন্দ্র)বলবার চেষ্টাও করেন নি।

    কি দুর্ভাগ্যজনক রিভিউ।
  • Sakyajit Bhattacharya | 233.176.138.25 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৬:২০86804
  • কোন দিক দিয়ে মনে হল বইটা হাফ পরে লেখা? কি চাপ !

    যে ছেলেটি চেঁচিয়েছিল কবীরন কবীরা সে সৌদী থেকে ফিরেছিল। প্রথম চ্যাপ্টারের শেষ প্যারাগ্রাফ দেখুন।

    আর হ্যাঁ বসারাত পণ্ডিতদের ক্যাম্পে গিয়েও খুঁজে খুঁজে বার করেছেন চেনা বন্ধু বা টিচারকে। কিন্তু পণ্ডিতদের নিয়ে তো এই রিভিউতে একটা কথাও বলিনি, বলিনি যে বসারাত তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নন। গোটা বইটা পড়লে লেখকের সিম্প্যাথী কোন দিকে সেটা বোঝা কি খুব-ই শক্ত হয়ে যায়?

    না কি আজাদ কাশ্মীর চাওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে গায়ে জ্বালা ধরল?

    ইপ্সিতাদি, লিখে রাখো । নানান ঝামেলায় ব্যস্ত হয়ে আছি। পরে দেখে উত্তর দেব।
  • de | 24.139.119.174 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৬:২২86788
  • আমাজনে বইটার তিন রকম দাম দেখছি - কোনটা আসল বই কেউ জানে? তিনটেই বসারাত পীরের লেখা এই বইটাই দেখাচ্ছে!
  • Sakyajit Bhattacharya | 233.176.138.25 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৬:২৫86805
  • আর বসারাত কোথাও বলেননি এটা মুসলিমদের ওপর হিন্দুদের অত্যাচার। আমিও কোথাও লিখিনি। আপন মনের মাধুরী কে মেশাচ্ছে ঠিক বুঝছি না।

    স্বাধীন হতে চাওয়া একটা জাতিগোষ্ঠির ওপর একটা বড় রাষ্ট্রের দমন, এর বাইরে বিশেষ কিছু লিখহেছি বলে মনে পড়ছে না।

    খুব-ই দুর্ভাগ্যজনক রিঅ্যাকশন
  • 0 | 188.162.193.233 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৬:২৫86789
  • দাদারা দিদির অতো দোষ ধর্বেন্না। বুঝতেই তো পারছেন আপন মনের মাধুরি কেস, খাগড়াগড় থেকে আইসিস ছড়িয়ে এক্কেরে ছত্তিরিশ।
  • Sakyajit Bhattacharya | 233.176.138.25 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৩৫86806
  • আর রাহুল পন্ডিত, না । রাহুল পন্ডিতা। বইটা অসম্ভব বায়াসড। পড়ে দেখুন, বুঝবেন। ইন্ডিয়ান মিডিয়া প্রচুর নেচেছিল পন্ডিতার বইতা নিয়ে।

    বসারাতের বইটার সাথে সাথে আর একখানা বই রেফার করছি। মীর্জা ওয়াহিদের লেখা উপন্যাস, দ্য কোলাবরেটর। আর অবশ্যই সঞ্জয় কাক-এর ডকুমেন্টারি জশ্ন-এ-আজাদি টা দেখে নেবেন। (এই ডকুটা আমারো দেখা হয়নি, কিন্তু সকলের মুখে শুনেছি কার্ফিউড নাইট পরার পর এই ডকুটা না দেখলে অসম্পূর্ণ থাকে। আমিও দেখব বাড়ি ফিরেই)
  • | 24.99.6.118 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৬:৪৭86790
  • আমাজনে বোধহয় হার্ড কভার, পেপারব্যাক আর কিন্ডলের অপশানে তিনটে দাম দেখায়।

    সফট কপি মানে ইপাব বা মোবি পড়তে চাইলে বোলো দে, পাঠিয়ে দেব।
  • সে | 94.75.173.148 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ০৭:৩৬86807
  • আমার কিন্তু এই রিভিউটা পড়তে খুব ভালো লেগেছে, হয়ত কাশ্মীরের মানুষজনের সঙ্গে আলাপ বন্ধুত্ব আছে বলেই।
  • 0 | 132.163.65.82 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৫ ১২:৫২86792
  • ওপরের [Comment from 0 on 13 August 2015 11:55:10 IST 188.162.193.233 (*)] পোস্টটি আমি লিখিনি।
  • 0 | 132.163.77.140 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০১:৩১86834
  • বইয়ে মালিক সৈয়দের হাতে আঁকা একটা সুন্দর কাশ্মীরের ম্যাপ আছে।

  • 0 | 132.163.77.140 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০১:৪৩86835
  • অনলাইনে বেশ কিছুটা ফ্রি'তে পড়া যাচ্ছে।
    নীচের লিংকের পেজের বাঁদিকে - ফ্রন্ট্‌কভারের ছবির তলায় Google Previewর লিংকে ক্লিকালেই বই আসবে।
    http://www.ebookmall.com/ebook/curfewed-night
  • সিকি | 233.176.128.27 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০১:৫৭86836
  • বই তো এমনিই পাওয়া যাচ্ছে।
  • সিকি | 233.176.128.27 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০১:৫৭86837
  • বই তো এমনিই পাওয়া যাচ্ছে।
  • শিবাংশু | 127.197.239.166 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০২:০৪86838
  • অর্পণ,

    মুঘল সাম্রাজ্যের পতন থেকেই এদেশীয় অশরাফ মুসলিমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন। শেষ চেষ্টা সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার ফলে এটা নিশ্চিত হয়ে যায় এদেশে মুসলিম শাসকের দিন শেষ হয়েছে। দেশীয় মুসলিম নৃপতিদের মধ্যে হায়দরাবাদের নিজাম এবং জুনাগড়ের নওয়াব আগে থেকেই ইংরেজের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। তাই তাঁরা নিরাপদ থেকে গেলেন। কিন্তু বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানের মুসলিম নৃপতিরা ইংরেজের হাতে অত্যন্ত অবমাননার শিকার হলেন। সংখ্যার দিক দিয়ে মুসলিমরা এদেশে চিরকালই লঘু ছিলেন। ইংরেজ আমলে গরিমার দিক দিয়েও লঘু হয়ে গেলেন। এই সময় থেকেই তাঁদের মধ্যে নানা রকম ভাবে সুরক্ষার অভাব দেখা দিতে শুরু করে। নতুন রাজার আমলে সংখ্যাগুরু 'হিন্দু'রা দ্রুত ইংরিজি শিক্ষা ও য়ুরোপীয় মডেলে 'নবজাগরণে'র সুযোগটি আত্তীকরণ করেন। কিন্তু অশরাফ মুসলিম'রা ভাবতে থাকেন ভুঁইফোড় ফিরিঙ্গি শিক্ষার থেকে তাঁদের নিজস্ব শিক্ষা সংস্কৃতি অনেক উঁচু স্তরের। তাই যৎসামান্য ভবিষ্যৎদ্রষ্টা মুসলিমরা ব্যতিরেকে বাকিরা ফিরিঙ্গিদের শিক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করলেন। এইখান থেকেই এদেশের জাতীয় মূলস্রোত থেকে তাঁরা দূরত্ব অনুভব করতে শুরু করেন। এ ছাড়াও অশরাফশ্রেণী নিজের সন্তানদের দুধেভাতে রেখে ফিরিঙ্গি শিক্ষা দিয়ে বড়ো করলেন আর নিম্নবর্গের মুসলিমদের সাবেক হাদিস-শরিয়তি ব্যবস্থার মধ্যে বদ্ধ করে রেখে দিলেন। 'হিন্দু'রা সব মুসলিমকেই অত্যাচারী তুর্কিদের উত্তরসূরি ভেবে দূরে থাকতো। যদিও সত্যটি ছিলো একেবারে অন্যরকম। আর অশরাফ মুসলিমদের প্ররোচনায় নিম্নবর্গের মুসলিমরা ভাবতে ভালোবাসতো তাদের শিকড় রয়েছে আরবে বা তুর্কিস্তানে। মামুদ ঘজনির প্রেতাত্মা যে তাঁদের পূর্বসূরি নয় এই কথাটা বলার মতো চারিত্র্য এক আধজন 'মুসলিম' ছাড়া এদেশে আর কারো ছিলোনা। সব সময় তাঁদের বোঝানো হতো বদমাশ ফিরিঙ্গি বনিয়াদের জালিয়াতির ফলে মুসলিমরা এদেশে রাজত্ব হারিয়েছে। অতএব তাদের কোনও কিছু গ্রহণযোগ্য নয়। এই মানসিকতার জন্যই অপদার্থ সিরাজও মহান রাজা হিসেবে স্বীকৃত হয়ে যায়। ঊনবিংশ শতকে 'হিন্দু'দের নানা রোল মডেল তৈরি হয়ে যায়। তাঁদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও দিশাটি ভবিষ্যতের দিকে ছিলো। মুসলিমরা এই সুযোগ নিতে পারেননি। তাঁরা ইংরিজি ইশকুল থেকে মুখ ফিরিয়ে মদ্রাসার 'পুণ্য' শিক্ষাকে ধরে রেখে দিলেন। এদেশে 'ইসলামফোবিয়া' আগে থেকেই ছিলো। এবার 'হিন্দুফোবিয়া'র ভাইরাস বাড়তে লাগলো বন্ধহীনভাবে। এক আধটা জলালুদ্দিন আকবর বা রাজা রামমোহন কোনও কাজে আসলেন না।

    তাপস,
    আমারও ধারণা 'ইসলামোফোবিয়া'র জন্য ইংরেজ দায়ী নয়। কারণ তারা আসা অবধি দেখছে এদেশে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস। প্রায় জঙ্গি পর্যায়ে বিরোধিতা রয়েছে। পলাশির যুদ্ধটা তো হয়েই ছিলো 'হিন্দু' বণিক ও সামন্তশ্রেণী এবং মুসলিম শাসকদের মধ্যে। নয়তো ক্লাইভের ক্ষমতা কি ঐ যৎসামান্য যুদ্ধক্ষমতা নিয়ে সিরাজ'কে মাৎ দেয়।
  • b | 24.139.196.6 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০২:০৫86808
  • @ax, গার্ডিয়ান, ড্যালরিম্পল ইত্যাদির রিভিউ পড়লাম। কিন্তু হাতের কাছে বইটা থাকতে মনে হল সময় নষ্ট!

    @ সে, একমত, শাক্যর রিভিউ পড়তে আমারো খুব ভালো লেগেছে। বাঙলা যে এতো ভালো ভাবে লেখা যায় জানা ছিলো না।

    একেই বলে ঘোর কলি। কোথায় আমরা বই লিখবো, তা না,বইয়ের রিভিউয়ের রিভিউ লিখতে হচ্চে তার বদলে।
  • সিকি | 132.177.128.177 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০২:৩৮86809
  • রঞ্জনদা, পরের উইকেন্ডে আমি থাকছি না দিল্লিতে, ফিরে এসে যোগাযোগ করব অগস্টের শেষে।
  • তাপস | 122.79.38.160 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৪:১৬86810
  • অদ্ভুত হয়ত নয়, তবু আশ্চর্য লাগে, কী ভাবে বেড়ে চলেছে ইস্লামোফোবিয়া! কত রকম প্রকরণ তার, কত নানা রঙের মুখ এবং মুখোশ! স্বীকার করতেও ডর হয়! মুখ ফিরিয়ে থাকি বিদ্বেষী মনন দেখলে। চিনতে চাই না। আজ আবার লেখার মনে হল, আসলে এই উপমহাদেশে হিন্দু মুসলমান কখনওই ভাই ভাই শান্তির নীড়ের মতন ছিল না। সম্প্রদায়গত ভেদ তাদের লড়িয়েছে, বা লড়িয়ে দেওয়ার সবচেয়ে খাস উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। কাজে লাগানো হয়েছেও বলা যেতে পারে। সে অন্য কথা। কিন্তু এই বিভেদের আর সংঘাতের ইতিহাস ভুলে গিয়ে, কিছু রূপকথা পরিবেশন করলেই, উপমহাদেশের নাগরিক মন থেকে ভেদাচার আটকানো যাবেনা। যায় যে নি, সে তো নিত্য প্রতীয়মান হচ্ছে। যথা এখানেও।
  • সিকি | 132.177.128.177 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৩১86811
  • প্রশ্নটাই সেখানে। কেন? কেন শিখোফোবিয়া, বৌদ্ধফোবিয়া জৈনফোবিয়া সেভাবে তৈরি হল না? কেন ইসলামোফোবিয়া পারসিস্ট করে গেল, ভারতে, ভারতের বাইরে? কেন লোকে ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসকে এক করে দেখছে - ক্রিশ্চিয়ানিটি বা অন্য ধর্মের সাথে এক করে দেখতে পারছে না?
  • তাপস | 122.79.38.160 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৪১86812
  • সিকি, ইসলামের সাথে সন্ত্রাসকে এক করে দেখানোর ফেনোমেনা সাম্প্রতিক। ভেদের ব্যাপারটা আরো পুরোন। সেই যখন নাকি, রেলপথ আসেনি উপমহাদেশে, চাষ, মাছধরা, এইসব ছিল জীবিকা, সেই সময়ে। আমি তখনকার কথা বলতে চেয়েছি।
  • Sakyajit Bhattacharya | 233.176.135.101 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৪৯86813
  • তার কারণ ক্রিশ্চিয়ানিটির মতন ইসলাম-ও এক্সপ্যানশনিস্ট। হিন্দুত্ববাদ বা বৌদ্ধ ধর্ম-র সেই তাগিদ ছিল না মনে হয়। ফলে সংঘাত তো লাগবেই। ক্রুশেডের ইতিহাসে অবশ্য দেখেছি অন্য ফ্যাক্টর-ও ছিল। বাইজান্টাইন এবং/আর গোটা ইস্তানবুলীয় সভ্যতার বাজার ধরার হিসেব নিকেশ।

    তবে একটা কথা মাথায় রাখুন। আপনি না চাইলেও আপনার মধ্যে সেক্সিজম, কাস্টিজম, ইস্লামোফোবিয়া ঢুকে যাবেই। কয়েক হাজার বছরের জমানো বিদ্বেষ আপনি চাইলেই মুছে দিতে পারেন না। তাই সেলফ ডিনায়াল মোডে থাকবেন না। কখনো অস্বীকার করবেন না যে আপনিও রেসিস্ট, সেক্সিস্ট, ক্লাসিস্ট, কাস্টিস্ট এবং ইস্লামোফোবিক। যদি নিজের ভেতরের অন্ধকার কাটাতে হয় তাহলে ডিনায়াল মোড থেকে বেরনো আগে দরকার। নাহলে আপনি জানবেন-ও না কখন আপনি ঠিক সেগুলোই হয়ে গেছেন যেগুলোকে আপনি ঘেণ্ণা করেন।

    ওপরের কথাগুলো ভাররত রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দেশকে ভালবাসুন, কিন্তু স্বাধীনতাকামী ভূখন্ডগুলোর অ্যাসিপিরেশন যেভাবে গায়ের জোরে দাবিয়ে রাখা হয়েছে সেগুলো নিয়ে ডিনায়াল মোডে থাকবেন না।

    মনে রাখবেন, আপনি যখন স্বপ্নে বিভোর, কোল্ড ক্রীম তখন আপনার ত্বকের গভীরে কাজ করে। আপনি যখন সুপ্ত অচেতন শোষক কীট আপনার সর্বাংগ কুরে কুরে খেয়ে ফেলে। আমরা যখন আকাশের আনন্দে মগ্ন ফ্যাসীজম তখন নিঃশব্দে প্রবেশ করে
  • 0 | 132.163.85.78 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৫:০৩86839
  • শিবাংশুদা লিখেছেন, "...অশরাফ মুসলিম'রা ভাবতে থাকেন ভুঁইফোড় ফিরিঙ্গি শিক্ষার থেকে তাঁদের নিজস্ব শিক্ষা সংস্কৃতি অনেক উঁচু স্তরের..."

    একটা প্রশ্ন আছে, শিবাংশুদার জন্যে।

    এরকম ভাবতে থাকার মূল কারণ কি?
    নীচের উদ্ধৃতি কি সম্ভাব্য কারণের মধ্যে পড়ে?

    "...বদমাশ ফিরিঙ্গি বনিয়াদের জালিয়াতির ফলে মুসলিমরা এদেশে রাজত্ব হারিয়েছে। অতএব তাদের কোনও কিছু গ্রহণযোগ্য নয়।..."
  • সিকি | 132.177.128.177 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৫:০৯86814
  • উফ, সবকিছুকেই এক্সট্রিমে নিয়ে গিয়ে না ভাবলে চলে না।

    দেখুন, আমি ইসলামোফোবিক বটে, অস্বীকার করি না, সেটা সত্যি, কিন্তু একমাত্র সত্যি নয়। আমি ধর্মফোবিক। ধর্মে আমি নিরাসক্ত নই - ধর্মাচরণ জিনিসটাতেই আমার অপরিসীম অস্বস্তি এবং অপছন্দ আছে, ইসলাম তার একটা পার্ট। সমস্ত ধর্মতেই আমার সমান অভক্তি - সেই পয়েন্ট থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছি। স্বপ্নে টপ্নে বিভোর নই।
  • Sakyajit Bhattacharya | 233.176.135.101 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৫:১১86815
  • আম্মার মনে হয় সমস্যাটা হল আমাদের রাষ্ট্রনির্মিতির কনসেপ্ট পুরো খাপে খাপ ইউরোপীয়ান যুক্তিবাদের মডেল ফলো করে এসেছে। সেই মডেলে, যদি থমাস ক্রমওইয়েলের রাষ্ট্রচিন্তা দেখি, বা ফ্রেঞ্চ রেভলিউশনের পর নতুন রাষ্ট্রীয় কন্সেপ্ট, বা মাতসিনির দেশপ্রেম এবং জাতীয় সংহতি, সেখানে ক্ষণ্ডের থেকে পূর্ণ বেশি ইম্পর্টান্ট। সেটের কল্যাণের জন্য সাবসেটকে স্যাক্রিফাইস করতে হবে, যার দার্শনিক কাঠামোটাও নিউটনিয়ান/দেকার্তিয়ান মেকানিক্স/যুক্তিবিদ্যা থেকে আসছে। ভারতরাষ্ট্রের নির্মাতারা প্রবলভাবে ইউরোপীয়ান বিপ্লব, কল্যাণমূলক রাষ্ট্র এসব চিন্তায় আচ্ছন্ন ছিলেন। সমগ্রের স্বার্থে অংশকে দাবিয়ে রাখা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল বলে মনে হয় না। কিন্তু সমস্যাটা হল, স্বাধীন বাজারের যে অর্থনীতি এনলাইটেনমেন্টের শুদ্ধ যুক্তিকে প্রমাণ করেছে, সেই অর্থনীতিই যুক্তির শুদ্ধতাকে ধ্বংস করেছে। ধনতন্ত্রের নিজস্ব নিয়মেই এনলাইতেনমেন্ট রূপান্তরিত হয়েছে সাম্রাজ্যবাদে আর আমাদের মতন তৃতীয় বিশ্বে সেই সাম্ম্রাজ্যবাদ প্রকাশ পাচ্ছে বড় রাষ্ট্রের দাদাগিরিতে। কলোনীতে যে যুক্তির শৃংখলায় সাম্রাজ্যবাদী লুন্ঠন সমর্থিত হয় সেই যুক্তির শৃংখলাতেই একসময় ফ্যাসীজম-ও ভিন্ডিকেটেড হয়ে যায়। যে যুক্তিতে ব্ল্যাক-পীপলদের সাদা সাম্রাজ্যের সামনে নতজানু করে রাখা হয় সেই এক-ই যুক্তিতে ইহুদীদের নির্বিচারে আউশভিৎশেও পাঠানো যায়। তাই এটা কোনো অবাক হবার ব্যাপার আর নয় যে কয়েক দশকের উপেক্ষা আর খণ্ডীকরণের পর ভারতকে আবার প্লেবিসাইটের কথা ভাবতে হয় ২০১০-এর পরপরেই যখন এজ অফ রীজনের সীমাবদ্ধতা ধরা পড়ে গেছে, গণি লোনের ভূত সাউথ ব্লককে তাড়া করে বেড়াচ্ছে
  • Sakyajit Bhattacharya | 233.176.135.101 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৫:২০86816
  • হুঁ, কিন্তু এই ধর্ম নিয়ে অস্বস্তি-অ কিন্তু এথিজমের নামে ব্যবহৃত হতে পারে নিউ-কন দের হাতে।

    যাজ্ঞে, এই নিয়ে আমি বলার কেউ নই। আমি মাকু এবং জামাতের অ্যালায়েন্সের পক্ষে। যেখানে যেমনভাবে পারা যায় হিন্দুত্ববাদীদের কাঠি করাটাই কাজ বলে মনে করি। ফলে আমার কথাবার্তা বায়াসড হতে বাধ্য
  • kc | 198.71.193.202 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৩৭86817
  • সে ঠিক আছে। কিন্তু কোনও কিছু বলতে গেলে এত নেম ড্রপিং এর ক্ষী প্রয়োজন? রেফঃ 10:41:55
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন