এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • নন্দীগ্রামের সেই রাত

    সৌমিত্র বসু, সম্পাদক, অন্যস্বর
    আলোচনা | বিবিধ | ১৭ মার্চ ২০০৭ | ১৩৫৬২ বার পঠিত | রেটিং ১ (১ জন)
  • গুরুর সমস্ত লেখার মতোই, এর মতামতও লেখকের নিজস্ব, গুরুচণ্ডা৯র নয়। নন্দীগ্রামে পুলিশি নির্যাতনের অব্যবহিত পরে এই লেখাটি প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনটি যিনি লিখেছিলেন তিনি যে সূত্রের উপরে নির্ভর করেছিলেন, তাদের বয়ানে অতিকথন থাকা সম্ভব। যাঁরা পড়ছেন, তাঁরা সেটুকু মাথায় রেখেই পড়ুন।
    এটা সেই রাতের ঘটনা। ১৪ই মার্চ রাত। দিনের বেলার "অপারেশন নন্দীগ্রাম" শেষ হবার পর রাতে সিপিএম স্থানীয়ভাবে একটি বারো ঘন্টার বন্‌ধ ডাকে। এই রকম একটি প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে লোকজন এমনিতেই সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঢুকে পড়ে, সেখানে এরকম একটি বন্‌ধ ডাকার অর্থ কি? দিনের আলোয় প্রথম পর্বের পুলিশি আক্রমণের পর, যখন খবর আসছিল, ৬০ জনের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে, মানুষের মৃত্যুতে আমরা শিহরিত, আতঙ্কিত হচ্ছিলাম, তখনও জানা ছিলনা, এই গণহত্যার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পর্বটি এখনও বাকি থেকে গেছে। ঠিক তখনই, মহাকরণে আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিব এই দ্বিতীয় এবং ভয়ঙ্করতম পর্বটির পরিকল্পনা করছিলেন। সেই পরিকল্পনাকে কাজে পরিণত করতে বন্‌ধ এবং রাতের অন্ধকারের প্রয়োজন ছিল তো বটেই।

    রাত নামছিল নন্দীগ্রামে আর মৃত্যু নিয়ে সংখ্যার খেলা ততক্ষণে যথেষ্ট ধূম্রজাল সৃষ্টি করে ফেলেছিল। সেই ধূম্রজাল পরেও কাটেনি। দৈনিক স্টেটসম্যান জানাচ্ছে ৩১ জন মৃত, বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলি জানাচ্ছে ১৮ জন মারা গেছেন। তারা টিভির গৌরাঙ্গ, যাকে পুলিশ দিনের বেলায় আটক করে সিপিএম বাহিনীর হাতে তুলে দেয়, এবং প্রকাশ্য টিভিতে যাঁকে সিপিএম বাহিনীর হাতে আক্রান্ত হতে শোনা গেছে, তিনি তাঁর "অফ-দা-রেকর্ড" বক্তব্যে মৃতের সংখ্যা ১০০+, এবং অন-দা-রেকর্ড বক্তব্যে "অগুন্তি" বলে জানাচ্ছেন। তারা টিভির সংবাদদাতা সুব্রত, মমতার সঙ্গে ছিলেন, তিনি জানাচ্ছেন, মৃতের সংখ্যা "অসংখ্য", কারণ কারোর পক্ষেই সঠিক সংখ্যা জানা বা বলা সম্ভব নয়। মহান রাজ্য সরকার এবং তার মুখপাত্র শ্রী ভোরা জানাচ্ছেন, মৃতের সংখ্যা ৬। এই সংখ্যাটাই তাঁকে জানানো হয়েছে, এবং তিনি প্রেসকে পরে আরও জানাবেন।

    সংখ্যা, এভাবেই কমছিল বাড়ছিল, যেন মানুষ নয়, সংখ্যার খেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে নন্দীগ্রামে বন্‌ধ ও সন্ধ্যা নেমেছিল যথাসময়ে। তারা টিভির সুব্রত এবং গৌরাঙ্গ ঘটনাস্থলে ছিলেন। রাতের সেই ভয়ঙ্করতম ঘটনার তারা প্রত্যক্ষদর্শী। এই বিবরণ মূলত: তাদেরই বিবরণ। ঘটনার বর্ণনার আগে সেই প্রত্যক্ষদর্শীর মুখ থেকে শুনে নেওয়া যাক, সেই সেন্সরশিপের কথা, যা, সে নিজেই নিজের উপর আরোপ করেছে। "আমি যা দেখেছি, আমার যা বলা উচিত, আমি মিডিয়াকে সেসব বলছিনা, কারণ মানুষ বা আমাদের দর্শকরা সেসব বিশ্বাস করবে না। মানুষের বিশ্বাসের একটা সীমা আছে, লোকে আমাকে পাগল বলবে। আমি যা দেখেছি, শুনেছি, যার মধ্যে দিয়ে গেছি, নিজেই নিজেকে সেসব বিশ্বাস করাতে পারছিনা। দু:স্বপ্নের রাতের মতো যদি যা দেখেছি, শুনেছি, সেগুলো সত্যিই যদি প্রলাপ হত... "

    গৌরাঙ্গ এবং সুব্রত জানাচ্ছেন, না, থ্রেট বা মারধোরের কারণে নয়, সেই রাতে তাঁরা যা দেখেছেন, তার পর হোটেলের ঘরে ফিরে তাঁদের সত্যিই অনেকবার বমি করতে হয়েছে।

    "ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেল্‌স আর কম্যান্ডোদের নিয়ে সিপিএম বাহিনী প্রত্যেকটা পাড়ায়, প্রত্যেকটা গ্রামে ঢোকে। পুরুষদের টেনে বার করে আনা হয়। ওরা কাউকে আটক করছিল না। কোনো বন্দী নেই, কোনো সাক্ষী নেই, ওরা গুলি করছিল, পেটে বেয়নেট ঢুকিয়ে নাড়িভুঁড়ি বার করে আনছিল, শরীরগুলো ভাসিয়ে দিচ্ছিল খালে, সেখান থেকে মোহনা আর সমুদ্রে। তারপর কমবয়সী মেয়েদের টেনে আনা হচ্ছিল, তাদেরকে ফাঁকা জায়গায় একসঙ্গে জড়ো করা হয়, ক্রমাগত ধর্ষণ করে চলা হয়, যতক্ষণ না একেকজন কোলাপ্স করে যায়, তারপর, একদম আক্ষরিক অর্থে, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিঁড়ে আনা হয়, কাউকে কাউকে একদম টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়, তারপর হলদি নদী কিংবা তালপটি খালে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। এসবের কোনো সাক্ষী টিকে নেই। থাকলেই বা কি,যদি কেউ বেঁচেও থাকে, মেদিনীপুরের কোন মেয়েই বা নিজের উপরে অত্যাচারের গল্প ফলাও করে বলবে, আর বললে বিশ্বাসই বা করবে কে? তাছাড়া কেউ বললে তাকেও তো একই জিনিস করে খুন করা হবে।

    এইসব শেষ হবার পর, সিপিএম আর পুলিশ তারপর গোটা এলাকা লাল ব্যানার আর পতাকা দিয়ে ঢেকে দিচ্ছিল। মানে, এলাকা এখন নিরাপদ আর শুধু তাদের রাজত্বই চলবে। যারা গ্রাম থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল, তারা প্রায় সবাই ধরা পড়ে গ্রামের কিনারায় বা আশেপাশে। তাদের কি হয়েছে, কেউ জানেনা। আমরা শুধু তাদের কথাই শুনতে পেয়েছি, যারা মাঠ আর জঙ্গল পেরিয়ে পালাতে পেরেছে। সেটাও খুব কঠিন। এখন মাঠ শুকনো। ফসল কাটা হয়ে গেছে। মাঠের উপর দিয়ে গেলে যে কেউ দেখতে পাবে।

    অসংখ্য ধর্ষণ হয়েছে। সরকারি ভাবে ধর্ষণের সংখ্যা ৬, কারণ, এই কজনই নিজেদের গল্প বলার জন্য টিকে আছে। এরা সবাই মধ্যবয়সী, সেই কারণেই হয়তো কেটে কুচিকুচি হবার হাত থেকে কোনোভাবে বেঁচে গেছে। গ্রামের পর গ্রামে এই জিনিস চলেছে। রাত পেরিয়ে সকালেও চলেছে। সমস্ত সাংবাদিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দৈনিক স্টেটসম্যানের সাংবাদিক সুকুমার মিত্র বুলেটবৃষ্টির মধ্যে কোনোরকমে পালিয়েছেন। ওনাকে নাম ধরে, বিশেষ করে খোঁজা হচ্ছিল, কোনো কায়দায় উনি পালাতে পেরেছেন। আক্রমণকারীরা এতো হিংস্র, যে স্থানীয় কোনো লোক কারো কাছে মুখ খুলতে চাইছে না। ভয়কে একটা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আতঙ্ককে ব্যবহার করা হচ্ছে সামাজিক সেন্সরশিপের একটা পদ্ধতি হিসাবে।

    পাশেই হরিপুর সাবডিভিশান। যেটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য চিহ্নিত। সেখানেও প্রতিবাদ হয়েছে। সেখানকার লোকেরা মূলত: মাছ ধরে। তাদের মাছ ধরা এখন বন্ধ করতে হয়েছে দুটো কারণে। এক, খাঁড়ি আর সমুদ্র মৃতদেহে ভরে আছে। দুই, আরও খারাপ যেটা, হাঙর, কুমীর আর ঘড়িয়ালরা তাজা রক্তের লোভে সুন্দরবন থেকে এইদিকে চলে আসছে। এরা মানুষের শরীর তো খাচ্ছেই, সঙ্গে সমস্ত মাছও খেয়ে নেবে এরকম একটা আশঙ্কা। মাছ ধরতে গেলে জালে কুমীর আর হাঙর উঠে আসছে। এরকম চলতে থাকলে হরিপুরের মানুষ আগামী সপ্তাহখানেক কাজ করতে পারবেনা। স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস, হরিপুরকে শিক্ষা দেবার জন্য এটা প্রশাসন আর সিপিএমের পূর্বপরিকল্পিত। হরিপুরে কেন্দ্রীয় দল, এমনকি আরও বড়ো পুলিশ বাহিনী ঘুরে গেছে। নন্দীগ্রাম আর হরিপুরকে একসাথে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

    মৃতদেহের কোনো চিহ্ন কখনও পাওয়া যাবেনা,ধর্ষণের কোনো প্রমাণ থাকবেনা, এটাই এখন ওদের মডেল। সত্যিই কতজন মারা গেছে জানা যাবে তিন মাস পরে, তাও যদি এলাকায় শান্তি ফিরে আসে, যদি বাসিন্দারা আদৌ ফিরে আসতে পারে, যদি তারপর নিখোঁজ মানুষজনের সংখ্যা গোণা হয়। কিন্তু সিপিএম এখন এই এলাকাগুলোকে "মুক্ত", "স্বাধীন" করেছে, এর পরে মনে হয়না এলাকাছাড়াদের ফিরে আসতে দেওয়া হবে, আর এদের সম্পত্তি দিয়ে দেওয়া হবে কেশপুর গড়বেতা থেকে সিপিএমের যে লোকজন এসেছে, তাদেরকে। নন্দীগ্রাম আর হরিপুরকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নিরাপদ এলাকা বানিয়ে তারপর পুরোটা গুটিয়ে ফেলা হবে।''

    এই সেই গল্প, যা দেশভাগের গল্পের চেয়েও ভয়াবহ। সাংবাদিকরা সবাই এই সব জানেন, কিন্তু কেউই বলতে এগিয়ে আসবেননা। বললে তাদেরকে খুঁজে বার করা হবে, এবং লোপাট করে দেওয়া হবে। যে সমস্ত সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীরা বিপক্ষে গেছেন, তাঁদের ভয় দেখানো তো শুরু হয়েই গেছে।

    আমাদেরই তাই লিখতে হবে বিকল্প ইতিহাস। অন্য কোনো বিকল্প নেই। আমি জানিনা, কে কতটা বিশ্বাস করলেন, তবে নাম-ধাম-সূত্র সবই দেওয়া রইল আগ্রহী মানুষ, ইতিহাসকার এবং ভবিষ্যতের জন্য। যদি কেউ চান, তিনি যাচাই করতে পারেন। খুঁড়ে বার করতে পারেন। এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প আছে কিনা আমার জানা নেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৭ মার্চ ২০০৭ | ১৩৫৬২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kumir chana | 193.116.235.59 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ১৬:০৬517387
  • তো ডেথ কাউন্ট এর রাফ আন্দাজ পাওয়া গেলো শেষ অব্দি ? হিরোশিমা র পরেই থাকবে মনে হয়। 
  • :-) | 2620:7:6001::159 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ১৭:৪৫517388
  • আরে  সিবিবাবু  যে। অমিতচাড্ডির সাথে খানাদানা চলছে ভাল?
  • Ps Mukherjee | 2405:201:8001:7d3c:c943:6ae6:7d15:61bc | ১৫ মার্চ ২০২৩ ১০:০৯517414
  • নয়া উদারবাদের দালালরা এই ধরনের লেখা লিখে ঠিক কত টাকা, কার কাছ থেকে দালালি হিসেবে পেতে, এ সব‍ই একদিন ইতিহাসের আস্তাকুঁড় খুঁড়ে আগামী প্রজন্ম নিশ্চ‌য়‌ই বার করবে। 
  • Amit | 121.200.237.26 | ১৫ মার্চ ২০২৩ ১০:২৮517415
  • ১৭:৪৫ কে:  
    হ্যা রে। জব্বর চলছে। এই তো কদিন আগেই তোর বাবার বিয়েতে খেয়ে এলাম। 
  • দীপ | 2402:3a80:196f:c47a:f68a:4df4:5e9:3069 | ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৬:০৪517423
  • নন্দীগ্রাম দিবস ও কিছু কথা
    --- প্রসূন আচার্য 
     
    আজ ১৪ মার্চ। নন্দীগ্রাম দিবস। 
    ২০০৭ সালের এই দিন নন্দীগ্রামে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ বাহিনীর সংঘর্ষে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। তারমধ্যে ১২ জন পুলিশের গুলিতে। ২ জন অন্য ভাবে। এই ঘটনা রাজ্যের পালা বদলের ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট। বাকি কথা পরে অন্য ভাবে বলবো। 
     
    রাজ্যের সাধারণ মানুষ, কিছু সৎ ও ভালো তৃণমূল নেতা- কর্মী এবং উল্টোদিকে চোর, জোচ্চোর, ডাকাত, তোলা বাজ , জেল খাটা , দুর্নীতিগ্রস্থ তৃণমূলী উভয় পক্ষকেই দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম। কারণ দ্বিতীয় পক্ষ দিনটির কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে শুধু কাটমানি, অবৈধ কামাই, ব্যাংক ব্যালেন্স, সম্পদ তৈরি, বিদেশে টাকা পাচার, নারী সঙ্গ, পাড়ায় পাড়ায় দাদাগিরিকেই জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছে। 
     
    বর্তমানে নেত্রী ও ভাইপোর চারপাশে ঘুরঘুর করা রাজনৈতিক দালাল, ফড়ে, কবি, লেখক, শিল্পী, সিনেমা পরিচালক, সাংবাদিক, IAS, IPS , WBCS অফিসারদের একটি তৃতীয় শ্রেণীও আছে। এই তৃতীয় শ্রেণীভুক্তরা ওই দিন পক্ষান্তরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের পাশে ছিলেন। এমনকি তারমধ্যে অনেকে আবার প্রকাশ্যেই এই গুলি চলনাকে সমর্থন করেছিলেন। এঁদের কেউ বর্তমানে দলের মুখপাত্র। কেউ সাংস্কৃতিক শাখা দেখেন। কেউ আবার শ্রমিক সংগঠনের মাথায় বসেছেন ! দুই জন আবার মন্ত্রীও হয়েছেন!
     
    সত্যি সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ! 
     
    যে সব পুলিশ অফিসাররা ওই দিনের ঘটনায় যুক্ত ছিলেন, তাঁদের শাস্তি হওয়া তো দূরের কথা, পরবর্তী কালে তাঁরা ভালো প্রমোশন ও পোস্টিং পেয়েছেন। যে অসীম গিরি নন্দীগ্রামের প্রতিটি সভা শুরুর আগে গাইতেন, মানুষকে উজ্জীবিত করতেন, তৃণমূল তাঁকে কবেই ভুলে গিয়েছে!
     
    আসলে এটাই হয়। এটাই বোধহয় মানুষ নামক নেমকহারাম জীবটির ধর্ম।
     
    ১৪ মার্চের সেই মর্মান্তিক ঘটনার পরে মেদিনীপুর জেলার একজন তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক হিসেবে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা নিঃসন্দেহে মনে রাখার মত। বিশেষ করে তিনি যেভাবে নন্দীগ্রামের সাধারণ মানুষ এবং মমতা ব্যানার্জির পাশে একটানা দাঁড়িয়েছিলেন। অর্থ ও লোকবল নিয়ে সাহায্য করেছিলেন।
     
    ঠিক যেমন রঞ্জিত - সহ মাওবাদীদেরও এই আন্দোলনে ভূমিকা ছিল। রঞ্জিত, কিষানজি - সহ মাওবাদীরাও একটানা মমতার পাশে ছিলেন। যদিও মমতা ক্ষমতায় আসার পরেই শাসকের গুলিতে কিষেন এর দেহ ঝাঁঝরা হয়ে যায়। তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ছত্রধর মহাতোর বিধবা বৌদি সুচিত্রা মাহাতো (রাষ্ট্রের যৌথ বাহিনীর হাতে খুন হওয়া শশধর মাহাতোর বউ) তৃণমূল সরকারের কাছে অন্য ভাবে পুরস্কৃত হন। বর্তমানে সুচিত্রা আবার বিয়ে করে এক তৃণমূলী পঞ্চায়েত নেতার বউ।
     
    যাই হোক, একটা কথা কিন্তু মনে রাখতে হবে। নন্দীগ্রামের এই ঘটনার আগে ও পরে বিজেপি বা RSS এর কোনও ভূমিকাই ছিল না। 
     
    রাম মন্দির তৈরি বা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি ছাড়া বিজেপি বা তাদের জন্মদাতা RSS সাধারণ মানুষের স্বার্থে আজ অব্দি কোনও আন্দোলন করেনি। স্বাধীনতার আগেও না। পরেও না। 
     
    ব্রিটিশ আমলে যেমন RSS এবং বিজেপির পিতা হিসেবে পরিচিত বিনায়ক সাভারকার মুচলেকা দিয়ে আন্দামান জেল থেকে ছাড়া পেয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে নিজেকে শতহস্ত দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। পরবর্তী কালে তিনি ইংরেজদের হয়ে দালালি করতেন এবং পেনশন নিতেন। ঠিক তেমনি ২০০৭-২০০৮ সালে বিজেপি নেতারাও নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে শতহস্ত দূরে ছিলেন। 
     
    তাই তাঁরা যদি এই নন্দীগ্রাম দিবস পালনে কোনও ভূমিকা নেয়, বা নিজেরা নন্দীগ্রাম আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন বলে দাবি করেন, তাহলে সেটা হবে ইতিহাসের ঘোরতর কলঙ্ক। এর সর্বাত্মক বিরোধিতা করতে হবে। কারণ, ইতিহাসকে বিকৃত করা এবং সেটা করতে গিয়ে বার বার মিথ্যে কথা বলাই ফ্যাসিস্টদের কাজ। অতীতে জার্মানি , ইতালিতে হয়েছে। এখন ভারতে হচ্ছে।
     
    যাঁরা দেশকে ভালবাসেন; দেশের মাটি, বাতাস, পাহাড়, জঙ্গল, জমি, মানুষকে ভালবাসেন, তাঁদের একই সঙ্গে দুর্নীতি এবং ফ্যাসিবাদ এই দুয়ের বিরুদ্ধেই লড়তে হবে। তবেই আগামী প্রজন্ম আপনাকে মনে রাখবে। না হলে ভবিষৎ প্রজন্ম কোনও দিন আপনাকে ক্ষমা করবে না।
     
    C@ Prasun Acharya
  • দীপ | 2402:3a80:196f:c47a:f68a:4df4:5e9:3069 | ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৭:১৮517424
  • দীপ | 2402:3a80:196f:c47a:f68a:4df4:5e9:3069 | ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৭:১৯517425
  • দীপ | 2402:3a80:196f:c47a:f68a:4df4:5e9:3069 | ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৭:৪১517426
  • *নন্দীগ্রাম - ১৪ই মার্চ*
    বিশিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বজিৎ মিত্রের কলমে সেদিনের নন্দীগ্রামের 'হাড়হিম করা'
    অভিজ্ঞতা!
     
    ২০০৭ সালে এই দিনে চলেছিল পুলিশের গুলি। ১৪ জন অকুস্থলেই মারা যান, ৩ জন নিখোঁজ হন। তাদেরও মৃত বলেই স্থির করা হয় পরে। এর আগে ৩রা জানুয়ারি গুলিতে মারা যান কজন। কারণ? ২০০৬এর ডিসেম্বর মাসে গাছের ওপর লটকে দেওয়া লক্ষ্মণ শেঠের একটি বিজ্ঞপ্তি - ৪২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নন্দীগ্রাম ব্লকটি খালি করে দিতে হবে, জনবসতির দরকার নেই ওখানে, বিনিময়ে তৈরী হবে কুখ্যাত কালো-তালিকা-আলো-করা ইন্দোনেশিয়ার সালিম গোষ্ঠীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সেই ছিল থেকে আতঙ্কের শুরু। লক্ষ্মণ শেঠের মাফিয়াবৃত্তির পরিচয় নন্দীগ্রাম ভালোই জানত কিনা। প্রতিরোধ গড়ে উঠল। অবরোধ হল। রাস্তা কাটা হল, যাতে শাসকের প্রবেশ সহজসাধ্য না হয়। তো, ১৪ই মার্চ পুলিশ আর পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ভাড়া-করা হার্মাদেরা খেজুরির দিক থেকে মাইকিং শুরু করল সকাল সকাল - আমরা ঢুকব, আপনারা সরে যান। সরে যাওয়ার প্রশ্ন উঠেছিল, কারণ আগাম খবর ঠিকই পেয়েছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। তাই গড়চক্রবেড়্যা, ভাঙাবেড়া আর গোকুলনগরে তখন মানুষের সরব উপস্থিতি। কীর্তন আর আজানের সুর। মানুষ ভুতার মোড় থেকে ১ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বসে আছে। মেদিনীপুরের মাটি, চিরকালই বড় শক্ত ঘাঁটি। ব্রিটিশও তার নমুনা দেখেছে। কিন্তু নিজের দেশের প্রশাসনও ঢুকতে গিয়ে দেখল, এত মানুষ পেরিয়ে যাবে কি করে তারা? গুলি চলল তাই, মানুষ ছত্রভঙ্গ হল। কেউ লুকিয়ে পড়ল পাশের জঙ্গলে, কেউ ঝাঁপ দিল নদীতে, কারো হাতপা ভাঙল, আর ১৪ জন তো চলে গেলেন অপ্রতিরোধের দেশে। নরকের অত্যাচার আরম্ভ করল হার্মাদেরা। অবাধ স্বাধীনতায় খেজুরির নব সামন্তর দল গ্রামের মেয়েদের ওপর করল পাশবিকতা। আমি স্বচক্ষে দেখেছি, অকুস্থলে হার্মাদদের জন্যে অজস্র খাবারের প্যাকেট, কিশোরীর ছেঁড়া জামা, রক্তের দাগ, যা বালি দিয়ে মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।
     
    ১৯শে মার্চ MSC নামের এক ডাক্তার-নার্সের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে এই অধম নন্দীগ্রাম যায়। অ্যাপ্রন প'রে।উদ্দেশ্য ছিল ডকুমেন্টেশন। একটি হ্যান্ডি ক্যাম এই দীনের অধীনে থাকার সৌজন্যে যাত্রায় তার এই সংযোজন। সে যাক, হাতে টানা ভ্যানে চলতে চলতে পথে অজস্র প্রশ্নের সামনে পড়তে হয় আমাদের। দেখি, গভীর করে রাস্তা কাটা রয়েছে। নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছে দেখি উপচে পড়ছে ভিড়। জঙ্গল, আদাড়পাদাড় আর অবশ্যই গ্রাম থেকে মানুষ এসেছে চিকিৎসা নিতে। বেশীরভাগেরই হাতপায়ে চোট-আঘাত, মুখে আতঙ্ক। এদিকে, এক মধ্যবয়েসী মুসলিম মহিলার সঙ্গে গোপন আলাপে আমাদের নার্স উন্নতিদি উদ্ধার করলেন এক ভীষণ তথ্য। মহিলার গুহ্যদ্বার দিয়ে বন্দুকের নল ঢোকানো হয়েছিল। আর রাধারাণী আড়ির কথা তো আমরা জানিই। এসব কাজ পুলিশ করেনি। কোনো সভ্য সমাজে এ কর্ম করে থাকে গুন্ডারা। এক্ষেত্রে হার্মাদেরা। আরো কয়েকটা ঘটনা আমার ঝোলায় আছে, কিন্তু তাদের উল্লেখে পাঠকের বিড়ম্বনা বাড়াব না আর। প্রশ্ন হল, প্রশাসন আর হার্মাদেরা পশ্চাদপসরণ করল কেন? ফিরে গেল কেন খেজুরি? আমার ধারণা, খবর দাউদাউ করে ছড়িয়ে পড়েছিল নগরে গ্রামে। কলকাতা টিভি ইটিভির কল্যাণে। ডাকাতদের লজ্জা হল। শাসকদল তখনকার মতো পিছু হঠল।
     
    তো, তিনদিনের মধ্যে অধম তার তৎকালীন কর্মস্থল থেকে ৪০ হাজার টাকা দান হিসেবে গ্রহণ করল। ৪ হাজার কেজি চালের ব্যবস্থা হল অবরুদ্ধ মানুষজনের জন্যে। সেই সময়ই যোগাযোগ হল ভূমি উচ্ছেদ কমিটির সম্পাদক নন্দ পাত্রের সঙ্গে। তা, নন্দদার ব্যবস্থাপনায় ২৩শে মার্চ অধম আর পেন্টার শুভেন চাল বিতরণে চলল নন্দীগ্রাম। গোকুলনগরে দেখা গেল, সকাল সাড়ে দশটায় গুলি চলছে এপার ওপারে। আইন ইত্যাদিকে গুলি মেরে। কথা বলে মিটিয়ে নেওয়ার পরিস্থিতি তখন আর ছিল না। অবিশ্বাস ততক্ষণে ছেয়ে গেছে মানুষের মনে। যে বামফ্রন্ট অপারেশন বর্গা করেছে, অজস্র ভূমিহীনকে দিয়েছে জমি, তারাই কিনা কেড়ে নিতে চাইছে মানুষের বসতবাড়ি, খেসারির ক্ষেত, মন্দির-মসজিদ, ইস্কুল।
     
    এর পরেও অনেকবারই অধম গেছে নন্দীগ্রাম। দেখেছে শাঁখের ডাকে মানুষের জড়ো হওয়ার আশ্চর্য জনসংযোগ, মেয়েদের সহ্য করার ক্ষমতা আর নন্দদার ফুটিফাটা হাসি। সব মিলিয়ে - লড়াই। যদিও অধমের অবদান এই লড়াইয়ে সামান্যই, তবু কলকাতায় সে আয়োজন করেছিল এক গীতি-আলেখ্যের। নন্দীগ্রাম ছিল তার বিষয়। সঙ্গী ছিল পেন্টার শুভেন আর রাণী প্রথমা।
     
    সৌজন্যে - বিশ্বজিৎ মিত্র
  • দীপ | 2402:3a80:196f:c47a:f68a:4df4:5e9:3069 | ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫০517427
  • কোথাও কিচ্ছু হয়নি! সব বিরোধীদের চক্রান্ত! 
    মহাশ্বেতা দেবী, শঙ্খ ঘোষ, শাঁওলি মিত্র, জয় গোস্বামী; সবাই টাকা খেয়ে অপপ্রচার করত! 
    এদিকে পোষ্য সারমেয়কুল ফেসবুকে খাপ বসিয়েছে!
  • | 2406:7400:63:e1f7::102 | ১৫ মার্চ ২০২৩ ১৯:০৪517431
  • যত বুড়ো ভাম সিপিএম আর তাদের বাচ্চা গুলো আছে সবকটা কে ধরে পেছুনে একটা ​​​​​​​করে ​​​​​​​লালপতাকা ​​​​​​​গুঁজে ​​​​​​​দেওয়া ​​​​​​​দরকার ​​​​​​​|
    এখন এই লালুবাচ্চা গুলো আবার ভালো ভালো কথা বলছে |
  • সুতীর্থ চ্যাটার্জি | 2409:4060:211c:f97d:201a:cbbc:66ff:ece3 | ১৬ মার্চ ২০২৩ ০৫:৩২517451
  • এইভাবেই কি হলদি নদীর নিরামিষাশী কুমীর গুলো,মাংস খেতে শিখল??
  • দীপ | 42.110.166.129 | ১৬ মার্চ ২০২৩ ১১:৫০517461
  • দীপ | 42.110.166.129 | ১৬ মার্চ ২০২৩ ১১:৫১517462
  • ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ বামফ্রন্ট সরকারের পুলিশ গুলি করে। ২০০৭ সালের ১৬ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি এস এস নিঝ্ঝর ও বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের এক যৌথ বেঞ্চ ঘোষণা করেন,
     
    “ ১৪ মার্চ, ২০০৭ তারিখে পুলিশ বিভাগ নন্দীগ্রামে যে গুলিচালনার ঘটনা ঘটিয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও আইনের কোনো ধারা অনুসারে বিধিবদ্ধ নয়।... সার্বভৌম প্রতিবাদের ক্ষেত্রে পুলিশের এই কাজকে ছত্রছায়া দান বা যথাযথ বলে বিবেচনা করা চলে না।... এই কাজ অপরাধী কার্যক্রম বিধির কোনো ধারা বা ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন অথবা ১৯৪৩ সালের পুলিশ রেগুলেশন দ্বারা সমর্থিত নয়।... আমরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এই মর্মে নির্দেশ দিচ্ছি ১৪ মার্চ, ২০০৭ রারিখে পুলিশের গুলিচালনায় মৃতের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গকে প্রতিক্ষেত্রে অবিলম্বে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিক।... আমরা রাজ্য সরকারকে এই ঘটনায় ব্যক্তিদেরও অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি এবং সেই ক্ষতিপূরণের অর্থমূল্য এক লক্ষ টাকার কম হওয়া উচিত নয়।... এছাড়াও আমরা রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিচ্ছি, যাঁরা এই ঘটনায় ধর্ষিতা হয়েছেন তাঁদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করে প্রত্যেককে দুই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার।
     
     উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায় - - 
    "প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয় নন্দীগ্রামে বিইউপিসি-র প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য। ৩০০০ পুলিশ সমন্বিত এক বিশাল বাহিনীর অভিযান চালানো হয়। সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশের ইউনিফর্মে সজ্জিত একদল সশস্ত্র ও প্রশিক্ষিত সিপিআইএম ক্যাডার।যদিও অভিযানের সংবাদ জানাজানি হওয়ায় বিইউপিসি-ও প্রায় ২০০০ গ্রামবাসীকে একত্রিত করে প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলে। যাদের সম্মুখভাগে রাখা হয় মহিলা ও শিশুদের। এই প্রতিরোধ বাহিনীর উপর পুলিশ গুলি চালালে অন্তত পক্ষে চোদ্দো জনের মৃত্যু হয়।"
     
    "এই গণহত্যা সংগঠনের অব্যবহিত পরেই চিকিৎসকদের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তমলুকের জেলা হাসপাতাল ও পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল পরিদর্শন করে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রস্তুত করেন।"
     
    "সিপিআইএম-এর ক্যাডাররা গ্রামে ঢোকার পথে “চেকপোস্ট” বসিয়ে সাংবাদিকদের গতি রুদ্ধ করেন। অল্প কয়েকজন সাংবাদিকই মূল ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পেরেছিলেন। একটি নিউজ চ্যানেলের দুই সাংবাদিককে সাময়িকভাবে অপহরণও করা হয়।"
     
    "ঘটনার ভয়াবহতায় সমগ্র রাজ্য স্তম্ভিত হয়ে যায়। তৃণমূল কংগ্রেস পঞ্চাশজন মৃত বলে দাবি করে। বামফ্রন্টের অন্যতম শরিক রেভোলিউশনারি সোশালিস্ট পার্টি সদস্য তথা পুর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীও জানান ৫০টি দেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে কত জন মারা গিয়েছেন তা বলা যাচ্ছে না।এর প্রতিক্রিয়ায় অঞ্চলের মানুষ সিপিআইএম সমর্থকদের ও তাদের পরিবারবর্গকে এলাকা থেকে বের করে দিয়ে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিতে থাকে। ১৪ মার্চের সংঘর্ষের এক সপ্তাহ পর দ্য হিন্দু পত্রিকার হিসেব অনুযায়ী দেখা যায় ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ভয়ে প্রায় ৩৫০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থী শিবিরে।"
     
    "সিপিআইএম অবশ্য হিংসা ছড়ানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ বিরোধী সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটিকেই দায়ী করে। তারা অভিযোগ করে কমিটি শরণার্থী শিবিরে আক্রমণ চালানোয় তিন জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং একটি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। 
    প্রবীন সিপিআইএম নেতা ও প্রাক্তন বামফ্রন্ট অর্থমন্ত্রী ডক্টর অশোক মিত্র সরকার ও তার দলের সমালোচনা করে বলেন যে নন্দীগ্রামের ঘটনা নিয়ে মুখ বন্ধ রাখলে আমৃত্যু তিনি বিবেকের কাছে অপরাধবোধে বিদ্ধ হবেন। তিনি বলেন, সিপিআইএম নেতৃবৃন্দ লোভে অন্ধ হয়ে গেছেন। আর পার্টিও পরিণত হয়েছে সমাজবিরোধীদের দ্বারা চালিত তোষামোদকারী ও ভাঁড়েদের খোলা মাঠে।"
     
    "বিশিষ্ট ঔপন্যাসিক তথা মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বন্ধু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যে শিল্পায়নের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে বর্বরোচিত বলে মনে করেন। সমাজসেবী মেধা পাটকর ২০০৬ সালের ৭ ডিসেম্বরেই জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে নন্দীগ্রাম ঘুরে যান। পরে ১৪ মার্চের গণহত্যার পর অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হন। তাদের মধ্যে ছিলেন ম্যাগসেসে ও জ্ঞানপীঠ পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী, বুকার পুরস্কার জয়ী সাহিত্যিক অরুন্ধতী রায়, চিত্র-পরিচালক ও অভিনেত্রী অপর্ণা সেন, নাট্যব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র ও বিভাস চক্রবর্তী, চিত্রকর শুভাপ্রসন্ন, সংগীতশিল্পী কবীর সুমন প্রমুখ।"
     
    "এরপরে সিপিআইএম সর্বসমক্ষে ঘোষণা করে, নন্দীগ্রামে অধিবাসীদের সম্মতি ছাড়া জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। প্রস্তাবিত সেজটির রূপায়নও এই পুলিশ অভিযানের ফলে স্থগিত করে দেওয়া হয়। যদিও স্থানীয়, জেলা ও রাজ্য প্রশাসন বলতে থাকে যে নন্দীগ্রামেই প্রস্তাবিত প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে। পুর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীও সিপিআইএম-এর বিরোধিতা করে বলেন, সেই দল নন্দীগ্রামে প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেজ স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে।"
  • | 106.76.231.119 | ১৬ মার্চ ২০২৩ ১২:৫৬517464
  • এখন আবার বরাহ নন্দন সিপিএম গুলো গর্ত থেকে মুখ বের করে উপরচালাক টাইপ কমেন্ট করে যাচ্ছে | এদের বেশিরভাগ আজকাল বিজেপি কে ভোট দেয় | এদের শুওর বললে শুওর এর অপমান | 
     
  • :)) | 2405:8100:8000:5ca1::16:619a | ১৬ মার্চ ২০২৩ ১৪:১৬517468
  • তুই তো এখনো নিজের পোঁদ থেকেই মুখটা বের করতে পারিস নি laughlaugh
  • | 106.76.231.105 | ১৬ মার্চ ২০২৩ ১৪:২৮517469
  • এসে গিয়েছে বুড়ো লালুর ছোট বাচ্চা | 
  • দীপ | 42.110.146.120 | ২১ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫১517720
  • আসলে উদ্ধত শাসক ভেবেছিল ১৪৪ ধারা জারি করে চারপাশ পুলিশ দিয়ে ঘিরে সবকিছু দখল করে নেবে, সব প্রতিরোধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবে।
    কিন্তু হিসেবে একটু ভুল হয়ে যায়। বেশ কিছু সাংবাদিক ওখানে সাধারণ কৃষিজীবি মানুষের ছদ্মবেশে লুকিয়ে ছিলেন।‌ তাঁরা খবর ও ভিডিও রেকর্ডিং চ্যানেলে পাঠিয়ে দিতে থাকেন। ফলে সারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ স্তম্ভিত হয়ে দেখতে থাকে একটি বামপন্থী দল (!!!) নির্বিচারে সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালাচ্ছে! এখানেই সুকুমার 
    মিত্রের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
    ফলে শাসক শেষপর্যন্ত পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়।
  • দীপ | 42.110.146.120 | ২১ মার্চ ২০২৩ ১৭:৫৬517721
  • তবে আমরা এটাও জানি, ঐ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কোনো শাস্তি হবেনা!  আর ঐ পুলিশ অফিসাররা এখন বর্তমান শাসকের অনুগত ভৃত্য! এদের মধ্্যযষয
    এদের মধ্যে অনেকের পদোন্নতি হয়েছে! 
    অত‌এব শাস্তির আশা সুদূরপরাহত!
  • দীপ | 42.110.146.120 | ২১ মার্চ ২০২৩ ১৮:০৬517722
  • এখন একটা গপ্প চালাবার চেষ্টা চলছে। কেউ কিছু জানতো না, এমনি এমনি গুলি চলেছে! 
    মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব; কেউ কিছু জানতো না, এমনি এমনি গুলি চলে গেছে! 
    এতো পুরো দস্যু মোহনের গল্প! 
     
    এরপরও রাজনৈতিক নেতারা বড়ো বড়ো কথা বলে! আর ততোধিক নির্লজ্জ দুকান কাটা স্তাবকেরা এদের হয়ে সাফাই গাইতে আসে!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন