একক আর অন্য যারা বললেন ক্রোনোলজি সমঝাতে, তাদের কথা ভেবে আরও কিছুটা লিখব ভাবছি :-)
সায়েন্স ফিকশান কিন্তু বহু শতক ধরেই লেখা হচ্ছে, এমনকি পন্ডিতরা তো এর অরিজিন এর খোঁজে আরও পিছিয়ে যেতে চান। তবে আমার মতে একটা চলনসই ডেফিনিশান হতে পারে, অন্তত এখনকার দিনে, যে গল্পে বিজ্ঞান এর কচকচি বেশী, বা সায়েন্স আর টেকনোলজি অন্যতম ক্যারেকটার না হলেও প্রধান প্রপগুলোর মধ্যে, তাকেই বলবো সায়েন্স ফিকশান। আর কাছাকাছি আরেকরকম গল্প আছে যাকে বলে ফ্যান্টাসি, যার মধ্যে ম্যাজিকের বা মিথিকাল রিয়েলিটির প্রাধান্য বেশী। যেমন টলকিয়েনের লর্ড অফ দ্য রিংস বা মিডল আর্থ সাগা, সি এস লুইসের নার্নিয়া সাগা। অনেক সময়ে মার্কেটিং এর তাগিদে সাই ফাই আর ফ্যান্টাসি এক করে দেখানোর চেষ্টা হলেও, আমার মতে এই দুটো একেবারেই আলাদা জঁরা। অবশ্য ক্রসওভারও আছে, যেমন ফিলিপ পুলম্যান এর নর্দার্ন লাইটস সিরিজ, তবুও সাই ফাই আমার মতে একেবারেই স্বতন্ত্র।
তো আমার মতে সাই ফাই বলতে এখন যা বুঝি, সেটা প্রথম ধারাবাহিকভাবে লেখা শুরু করেন জুলস ভার্ন আর এইচ জি ওয়েলস। টাইম মেশিন, টুয়েন্টি থাউস্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি, ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস ইত্যাদির মতো জনপ্রিয় গল্প কমই লেখা হয়েছে, আর এই দুজন যেভাবে সেই সময়ের পপুলার ইম্যাজিনেশান ক্যাপচার করেছিলেন, আর পপুলার কালচার ইনফ্লুয়েন্স করেছিলেন, সেরকম খুব কম লেখকই করতে পেরেছিলেন। এখন এঁদের লেখা একেবারেই শিশুপাঠ্য মনে হয়, কিন্তু দুজনকেই বোধায় ফাউন্ডিং ফাদার্স অফ মডার্ন সায়েন্স ফিকশান বলা যায়। তবে আর্থার কোনান ডয়েলেরও দুয়েকটা লেখা আমার ছোটবেলায় সমান ভালো লেগেছিল যেগুলো সাই ফাই ক্যাটেগোরিতে ফেলা যায়, যেমন হরর অফ দ্য হাইটস।
ভার্ন আর ওয়েলস এর পরেই যার নাম মনে আসে, তিনি আইজ্যাক অ্যাসিমভ। অ্যাসিমভ প্রলিফিক লেখক ছিলেন, ফিকশান আর নন-ফিকশান দুই ক্যাটেগোরিতেই অজস্র লিখেছেন। কিন্তু ওনার রোবট আর ফাউন্ডেশান সিরিজ, বলা যায়, মডার্ন সাই ফাই এর সূচনা করে। যেটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, অ্যাসিমভ স্পেস অপেরা জঁরা পপুলারাইজ করেন, যার ভিত্তি হলো গ্র্যান্ড স্কেল, গ্যালাকটিক এম্পায়ার ইত্যাদির প্রাধান্য। অ্যাসিমভের গল্পগুলোর আরেকটা মজা আছে, এগুলোর বেশীর ভাগ এই গ্যালাকটিক এম্পায়ার এর সূত্রে বাঁধা। মানে ধরুন কারেন্টস অফ স্পেস পড়ছেন, হঠাত দেখবেন এটার কোন একটা ঘটনা অন্য কোন একটা গল্পে খুব ইনডাইরেক্টলি রেফার করা হয়েছে। অর্থাত অ্যাসিমভের সমস্ত সাই ফাই ছোটগল্প, নভেলা, উপন্যাস, সিরিজ ইত্যাদি পড়ে ফেললে মনে হবে আগামী কুড়ি হাজার বছরের ইতিহাস এর পাতা উল্টে নানান ছোট বড় ঘটনার সাক্ষী হলাম, যা একটা আলাদা ফিলিং।
তবে স্পেস অপেরা শুধু অ্যাসিমভই নয়, অন্য কয়েক জন সমসাময়িক লেখকের হাত ধরেও প্রভূত জনপ্রিয় হয়, যেমন রবার্ট হাইনলাইন, রে ব্র্যাডবেরি, Frederick Pohl, উর্সুলা লে গুইন, আর প্রথম দিকের আর্থার সি ক্লার্ক। বিশেষ করে রবার্ট হাইনলাইনএর নাম করবো, যিনি অ্যাসিমভের থেকে কোন দিক থেকেই কম ছিলেন না - গল্পের কোয়ালিটি আর কোয়ান্টিটিতেই হোক, কি পপুলারিটিতেই হোক, কি ওভারল ইনফ্লুয়েন্সেই হোক। অ্যাসিমভের যদি ফাউন্ডেশান সিরিজ থাকে তো হাইনলাইনছিল স্টারশিপ ট্রুপারস সিরিজ, সমান পপুলার আর ইনফ্লুয়েন্শিয়াল।
এঁর সবাই মিলে ১৯৫০ অবধি যা লেখালেখি করেছেন তাকে বলা হয় গোল্ডেন এজ অফ সাই ফাই।