এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  শনিবারবেলা

  • প্রোফেসর বক্সের সাবধানবাণী – ভূ-পর্যটকের ভুল অথবা টলেমি ও কে সি পালের পৃথিবী

    যদুবাবু
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৩১৬৯ বার পঠিত | রেটিং ৪.৭ (৩ জন)
  • কৈফিয়ত: যদুবাবুর টিউশনি অনেকদিন বন্ধ ছিলো। বিভিন্ন তালেগোলে এবং পঞ্চভূতের ফাঁদে পড়ে তিনি কাতরাচ্ছিলেন – অকাদেমিক মাত্রেই জানেন এ ভূতেদের উৎপাত বা আবদার যাই বলুন মোটামুটি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। তবুও, সেই তাঁদের শ্রীচরণে নিবেদনমিদং করে এসেছি আরেক কিস্তি নিয়ে।
    আজকের বিষয় - পার্সিমনি।



    ‘All models are wrong, but some are useful!’

    রাশিবিজ্ঞানের জগতে হাতে গোনা কয়েকটি যে সহজ অথচ গভীর উক্তি আছে, তার মধ্যে বোধ করি সবথেকে জনপ্রিয় জর্জ বক্সের এই কথাটিই। উক্তিটি অবশ্য কিছুটা ঘষেমেজে পালটে গেছে সময়ের সাথে; আসল উক্তিটি যদ্দূর জানা যায়, ১৯৭৬ সালে জর্নল অফ আমেরিকান স্ট্যাটিস্টিক্যাল এসোসিয়েশনের একটি পেপারের একটি উপদেশ:
    “Since all models are wrong the scientist must be alert to what is importantly wrong. It is inappropriate to be concerned about mice when there are tigers abroad.” (Section. “Worrying selectively”)

    সব জনপ্রিয় উক্তির বেলাতেই যা হয়, হয় ছেঁটেকেটে আসলটুকু বাদ দিয়ে, না হলে কথাটাকেই পালটে দিয়ে, লোকে ব্যবহার করেছে দেদার। তবে তার থেকেও বিপজ্জনক কাজ করেছেন আরেকদল – অনেক কসরৎ করে জটিল একটি মডেল ফিট করে সেইটেকেই ধরে নিয়েছেন ধ্রুবসত্য। সাইন-বোর্ড টাঙিয়েছেন দোকানের বাইরে, “ফলিবেই ফলিবে”।
    তবে কে না জানে, ইতিহাস চক্রবৎ পরিবর্তন্তে – plus ça change, plus c’est la même chose – যতই পালটায়, ততই সেই এক-ই থেকে যায়। আজকের যদুবাবুর টিউশনে তাই সেইসব ভুল রাস্তা ধরে একটু পেছনপানে হাঁটা।

    যদিও জর্জ বক্স-ই যে প্রথম এই কথাটা ভেবেছিলেন, সেটাও বলা শক্ত। ১৯৭৬-এর বক্সের লেখা পেপারের আগেও অনেক দার্শনিক, বিজ্ঞানী, এমনকি শিল্পীর কল্পনাতেও ঠিক এই এক-ই কথা ঘুরে ফিরে এসেছে। এই যেমন জিনিয়াস গণিতজ্ঞ-পদার্থবিজ্ঞানী-পলিম্যাথ জন ভন নিউম্যান বলেছিলেন, “truth... is much too complicated to allow anything but approximations…” সত্য যে কঠিন!

    সত্যিই তো, আমাদের বোধের অতীত জটিল – আমাদের চারপাশের প্রকৃতি, তার মধ্যে জীবজন্তু, গাছপালা, মানুষ, এদের মধ্যে অনন্তকাল ধরে চলতে থাকা বিবর্তনের পায়ের ছাপ, সমাজের কাঠামো, জীবনের লেনদেনের হিসাব, এমনকি এর বহু বহু দূরের গ্রহ-নক্ষত্র-ও। সেই অনন্ত জটিল রহস্যের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ কল্পনা করেছে মূল সূত্রের কথা; তার সীমিত কল্পনার নাগালের বাইরের জিনিস আস্তে আস্তে ধরা দিয়েছে সেই সূত্র ধরেই। আমাদের জ্ঞানের আদান-প্রদান, আমাদের যন্ত্রপাতি, আর আমাদের গণন-ক্ষমতা যেমন উন্নত হয়েছে – সেইসব চেষ্টা, সেইসব কল্পনারও আস্তে আস্তে উন্নতি হয়েছে।

    ‘মডেল’ কাকে বলে – সেই সংজ্ঞায় না গিয়েও তাই একটু ভাবলেই বোঝা যায়, সেই একেবারে ছোট্টবেলা থেকেই আমরা মডেল কাকে বলে জানি। নিজের ছোটবেলায় রঙিন বই মনে পড়ছে – ফ্র্যাঙ্ক স্কুলের আধুনিক পৃথিবীর মানচিত্র, কী সুন্দর পৃথিবীর ম্যাপ – ডানদিকে এশিয়া, বায়েঁ আম্রিকা, পাতার মাঝবরাবর বিশাল আফ্রিকা ইত্যাদি। ম্যাপ-পয়েন্টিং খেলছি পাতাজোড়া বিশাল পৃথিবীর উপর।
    যদি আরও একটু তলিয়ে ভাবি, তাহলে দেখতে পাব – এই পাতাজোড়া ম্যাপ-ও আসলে একটা মডেল বই তো কিছু নয়, হয়তো আমার পাড়ার মোড়ের মাঠ নেই, বা হয়তো কোথাও কোনো উপকূলের তটরেখার কিছু বাঁক মিসিং, কিন্তু ঐ দেখে যে ধারণা হয় – এই বিশ্বের কোনখানে কে আর “কোনদেশে রাত হচ্ছে ফিকে”, মোটের উপরে তা ভুল নয়। বক্সের ভাষায়, দিব্যি ‘ইউজফুল’!

    কিন্তু যদি ফিরে যাই ক্রিস্টোফো কলম্বো-র (অর্থাৎ ক্রিস্টোফার কলম্বাস) সময়ে, তাহলে দেখব তার সময়কার পৃথিবীর ম্যাপ, অর্থাৎ মডেল – একেবারেই ডাহা ভুল, আর সেইটিই বোধহয় ইউরোপিয়ান ইতিহাসের সবথেকে যুগান্তকারী ভুল।

    কলম্বাস অবশ্যই তাঁর সমসাময়িক মানুষদের মতই ভাবতেন, পৃথিবী সুন্দর একটা গোলক – তবে সেটা খুব একটা কিছু বড় ভুল না। বড় ভুলের প্রথমটি এই, যে তাঁর মডেলের পৃথিবী বাস্তবের থেকে বেশ কিছুটা ছোট, কলম্বাসের ধারণার পৃথিবী-পরিসীমা, মাঝ-বরাবর দেখলে, প্রায় ৩০,০০০ কিমি, যেটি আসলে প্রায় ৪০,০০০ কিমি! এতে দুটো গণ্ডগোল হল – প্রথমত, ৪০,০০০ কিমি ধরলে ইউরোপ থেকে পশ্চিমপানে গিয়ে এশিয়া পৌঁছনো সম্ভব হত না, হয়তো কলম্বাস যাত্রাই শুরু করতেন না, আর দ্বিতীয়ত, দূরকে প্রতীতি হল নিকট – মাত্র ৩০,০০০ কিমি ধরলে সত্যিই এশিয়া এমন কিছু দূরে নয় – এই এখনকার ক্যালিফোর্ণিয়ার সামান্য পশ্চিমেই, কাজেই, ‘এই তো একটুখানি’।

    অর্থাৎ, কলম্বাসের অভিযানের, বা বলা যায় প্রেডিকশনের, ভিত্তি তাঁর কল্পনার ক্ষুদ্রতর পৃথিবী (“স্মল ওয়ার্ল্ড”), কিন্তু আমাদের সত্যিকারের পৃথিবী তার চাইতে অনেকটাই বড়ো, লার্জ ওয়ার্ল্ড। কাজেই তাঁর পূর্বাভাষ যে মিলবে না – এ আর আশ্চর্য কী? কিন্তু কলম্বাসের ভাগ্য (এবং অ্যামেরিকার আদি-অধিবাসীদের চরমতম দুর্ভাগ্য) যে ওঁর ভুল-ই ওঁকে নিয়ে এল নতুন এক পৃথিবীতে – ইস্ট ইন্ডিজে। কলম্বাসের সময়কার ম্যাপের একটি ছবি দিলাম নীচে। সত্যিই যদি পৃথিবী সেইরকম হত, তাহলে ইওরোপ আর এশিয়ার মাঝে শুধুই মহাসমুদ্রের জল ছাড়া কিছুই চোখে পড়ত না কলম্বাসের, আর তার থেকেও আনন্দের কথা, মাঝ রাস্তায় খাবার-দাবার ফুরিয়ে সলিল-সমাধি হত মধ্যযুগের বর্বরতম ঔপনিবেশিক লুটেরার দলের।



    মার্টিন বেহ্যাইমের ১৪৯২-এর ভূগোলক


    কলম্বাসের এই ক্ষুদ্রতর আর বৃহত্তর বিশ্বের ফারাক-ই, আমাদের পরিভাষায়, ‘মডেল’ আর ‘রিয়েলিটি’ বা বাস্তবের ফারাক। প্রায় সব স্ট্যাটিস্টিক্যাল মডেল-এর এই দুটো বৈশিষ্ট্য – একটি স্মল ওয়ার্ল্ড – যার উপর ভিত্তি করে মডেলটি তয়ের হয়েছে, আর লার্জ ওয়ার্ল্ড – যাতে সেই মডেলটিকে কাজে লাগিয়ে আমরা বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেব, উপদেশ দেব – ইত্যাদি, প্রভৃতি।

    বক্সের উক্তিটি আরেকবার দেখে নিই। উনি বলেছেন, “Since all models are wrong the scientist must be alert to what is importantly wrong. It is inappropriate to be concerned about mice when there are tigers abroad”!
    কলম্বাসের মডেল যেমন আগাগোড়াই ভুল, কিন্তু – পৃথিবীর মাপ অনেক কম বলে ধরে নেওয়া কিংবা একটা গোটা মহাদেশের অস্তিত্ব না জানা – বেশি ভুল, আর – পৃথিবী কতটা বিশুদ্ধ গোলাকৃতি – সেইটা অত কিছু ভুল নয়। প্রথমটি যেন বক্স-বাবুর বাঘ, আর দ্বিতীয়টি ইঁদুর।

    আবার, যেমন ফ্র্যাঙ্ক স্কুলের সেই মানচিত্রের বইয়ের ম্যাপ-ও ভুল। বস্তুত, ফ্র্যাঙ্ক বা অন্যান্য সব স্কুলের সব ম্যাপ-ই ‘ভুল’, এবং ঠিক ঠিক করে বললে, গোটা পৃথিবীর একমাত্র নির্ভুল কাঁটায়-কাঁটায় মিলে যাওয়া ম্যাপ তো আসলে পৃথিবী নিজে-ই। যেই তাকে ছোটোখাটো করে স্কেল-ডাউন করে এঁকেছেন, অমনি টুক করে ঢুকে গেছে ভুল। কিন্তু তার মানে এই নয়, যে সেই ম্যাপ ফালতু – সেই দেখেই না দিগবিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছি, দেশান্তরি হচ্ছি প্রতিদিন আর মানবসভ্যতা হুড়ুমতালে এগোচ্ছে।

    ম্যাপ যে আসলে মডেল, সেই কল্পনা কিন্তু বিজ্ঞানীদের একার নয়, শিল্পী-সাহিত্যিকদের-ও। আমার অন্যতম প্রিয় সাহিত্যিক, হোর্হে লুই বোর্হেসের লেখায় (On Exactitude in Science) অদ্ভুত সুন্দরভাবে ধরা আছে এই চিন্তাটাই:
    “… In that Empire, the Art of Cartography attained such Perfection that the map of a single Province occupied the entirety of a City, and the map of the Empire, the entirety of a Province. In time, those Unconscionable Maps no longer satisfied, and the Cartographers Guilds struck a Map of the Empire whose size was that of the Empire, and which coincided point for point with it. The following Generations, who were not so fond of the Study of Cartography as their Forebears had been, saw that that vast Map was Useless, and not without some Pitilessness was it, that they delivered it up to the Inclemencies of Sun and Winters. In the Deserts of the West, still today, there are Tattered Ruins of that Map, inhabited by Animals and Beggars; in all the Land there is no other Relic of the Disciplines of Geography.”
    — Suarez Miranda, Viajes devarones prudentes, Libro IV,Cap. XLV, Lerida, 1658
    বোর্হেসের গল্পের নীতিবাক্য-ও সেই এক-ই – একটি অঞ্চলের পারফেক্ট ম্যাপ সেই অঞ্চলটিই নিজে – অতএব সেই ‘পারফেক্ট’ ম্যাপটি কোনোই কাজের নয়। সেইরকম একটি ‘পারফেক্ট’ মডেল চেষ্টা করবে অনন্তকাল ধরে প্রত্যেকটি ডেটা পয়েন্টে নির্ভুলভাবে খাপে-খাপ করতে, ফলত, তয়ের হবে একটি সীমাহীন জটিল মডেলের, এবং তাই দিয়ে না হোমে না যজ্ঞে কিছুই কাজ হবে না কারুর। কার্যকরী মডেল, অতএব বাই ডেফিনিশন, জটিল সিস্টেমের একটি সরলীকৃত ছবি, এবং বাই ডেফিনিশন, সে ছবি এক চিলতে হলেও – ‘ভুল’।

    বক্স নিজে সেই স্মরণীয় উক্তিটি করার বছর দুয়েক পরেই একটি ওয়ার্কশপে আরেকটু যেন বুঝিয়ে বলেছিলেন আসল উক্তিটির মর্মার্থ। সেইটি পড়লেই মনে পড়ে যাবে ক্লাস সেভেন কি এইটের ভৌতবিজ্ঞান বই – বাংলা মিডিয়ামের বন্ধুদের মনে পড়বে ৫ নম্বরের ‘টীকা’ – আদর্শ গ্যাস ও বাস্তব গ্যাসের তফাৎ লিখ। পরিচ্ছেদটি এইরকম:
    “Now it would be very remarkable if any system existing in the real world could be exactly represented by any simple model. However, cunningly chosen parsimonious models often do provide remarkably useful approximations. For example, the law PV = RT relating pressure P, volume V and temperature T of an ‘ideal’ gas via a constant R is not exactly true for any real gas, but it frequently provides a useful approximation and furthermore its structure is informative since it springs from a physical view of the behavior of gas molecules.
    For such a model there is no need to ask the question ‘Is the model true?’. If ‘truth’ is to be the ‘whole truth’, the answer must be ‘No’. The only question of interest is ‘Is the model illuminating and useful?’ ”


    খেয়াল করে দেখুন বাক্যবন্ধটি, “cunningly chosen parsimonious models”, পার্সিমোনিয়াস মানে কেমন? শেষ করব সেই নিয়েই আর একটা গল্প বলে। আগেরটা পৃথিবীর ম্যাপ, এবারে আরো বাইরে বহির্বিশ্বের!

    আবার মনে করুন সেই ছোট্টবেলার ভূগোল বই – সৌরজগতের ছবি আঁকা। প্লুটো তখন-ও লাইনের শেষে টিমটিম করে দাঁড়িয়ে আছে, আর বাকিরা আগে-পিছে উঁকি মারতে মারতে ঘুরে চলেছে – আমাদের দেখা সৌরজগতের প্রথম ‘মডেল’ এবং বলাই বাহুল্য, সেটিও খুঁটিয়ে দেখলে ‘ভুল’-ই। তবে এক্কেবারে ডাহা ভুল নয়, অন্তত সূর্য তো মধ্যিখানে, তাই না?

    একটা সময় তা-ও ছিল না, যেমন ধরুন টলেমি আর কোপারনিকাস – টলেমি-র মডেল ‘জিওসেন্ট্রিক’ আর কোপারনিকাসের ‘হেলিওসেন্ট্রিক’। ‘জিওসেন্ট্রিক’ অর্থাৎ পৃথিবীর চারদিকে সূর্য বা অন্য গ্রহ প্রদক্ষিণ করে এমন কথা এখন বাচ্চারাও শুনলে হাসবে। আর বড়দের মধ্যে? সেই এক বিখ্যাত কন্সপিরেসি-থোরিস্ট কে-সি-পাল ছাড়া আর কেউ এ কথা বিশ্বাস করবেন, এমন ভাবনা-ই অসম্ভব, কিন্তু টলেমি নেহাত বোকা বা গোঁড়া মানুষ ছিলেন না। ছিলেন একজন জিনিয়াস!

    টলেমির সেই মডেলের একটি ছবি নীচে দিলাম। সূর্যের কক্ষপথ বাইরের বিশাল বৃত্ত, আর তার ভেতরের কক্ষপথটি দেখুন – ঐটেই শুক্রগ্রহ – আমাদের শুকতারা। শুকতারার কক্ষপথের কেন্দ্রে একটি বৃত্ত – deferent – আর একটি ছোট্ট বৃত্ত – epicycle, শুকতারা সেই এপিসাইকেলে ঘুরতে ঘুরতে ঐ ডেফারেন্ট ধরে যেন চারদিকে ঘুরছে। টলেমির মডেলের সেই এপিসাইকেল আর ডেফারেন্টের প্রয়োজন ছিল – কারণ শুক্র আর বুধ – এই দুই গ্রহের ঘূর্ণন অন্যদের উল্টোদিকে, মানে শুক্রগ্রহের উপর জমে থাকা মেঘ একদিন কেটে গিয়ে রোদ উঠলে একজন ভেনুশিয়ান দিব্যি দেখবেন সূর্য পশ্চিমে উঠে, পূর্বে অস্ত গেল। এই রেট্রোগ্রেড মোশন ব্যাখ্যা করতে – বিভিন্ন বৃত্ত, বৃত্তের উপরে বৃত্ত – ইত্যাদির অবতারণা। কিন্তু টলেমি এইখানেই ছাড়েননি, প্রত্যেকটি গ্রহের গতি আরো নিখুঁতভাবে নির্ণয় করতে আরো কিছু এপিসাইকেল আঁকার দরকার ছিল – এদের নাম eccentrics আর equants! সেই ১৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে বসে কোনোরকম কম্পিউটার বা যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই, টলেমির মডেল যে আশ্চর্য প্রিসিশনে পৌঁছতে পেরেছিল – তা ভাবলে ব্যোম্‌কে যেতে হয় বইকি! এখন আমরা জানি – ঐ এপিসাইকেলের পিঠে এক্সেন্ট্রিক – এ শুনতে যতই বিদঘুটে লাগুক, আসলে সেই এনশিয়েন্ট গ্রীকরা যেটা আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন – সেটা একরকমের ফ্যুরিয়ার সিরিজ – কক্ষপথের মত পিরিওডিক ফাংশনকে সাইন-কোসাইন ইত্যাদি দিয়ে অ্যাপ্রক্সিমেট করার একটা দারুণ উপায়।

    হ্যাঁ, টলেমির মডেল দেখে আপনি আকাশে হাউই অথবা মঙ্গলযান ছাড়লে সে কোথায় গিয়ে পড়বে দেবা ন জানন্তি, কিন্তু ঐ মডেল দেখে রাতের আকাশে কোথায় কী আছে দেখলে বিশাল কিছু ভুল হবে, এমন না। সেই জন্যেই, প্রায় হাজার বছরের-ও বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত হয়েছে শুধু তা-ই না, সেই সময়কার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে-র মডেল-টিও প্রায় টলেমির মতন-ই – তিনি ভাবতেন, সূর্য পৃথিবীকে আর বাকি সব গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।

    টলেমির মৃত্যু ১৭০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ, আর নিকোলাস কোপারনিকাসের জন্ম ১৪৭৩ খ্রীষ্টাব্দ – কলম্বাসের যাত্রাশুরুর বছর কুড়ি আগে। কোপারনিকাস বলেছিলেন জিওসেন্ট্রিক মডেলকে বদলে হেলিওসেন্ট্রিক মডেল ব্যবহার করা উচিত, কারণ তা বেশি ‘সঙ্গতিপূর্ণ’ (harmonious), যে মতবাদে বিশ্বাস করে কয়েক দশক পরেই চার্চের রোষের মুখে পড়বেন গ্যালিলিও। সে গপ্পো সবার জানা।




    কী ভেবেছিলেন কোপারনিকাস? খুব সরল করে বললে, পৃথিবীর বদলে যদি রেফারেন্স ফ্রেমটাকে ফিট করি সূর্যের গায়ে, তাহলে যে ছবিটা দেখা যাবে, সেইটেই কোপারনিকাসের মডেল – সেই-ই আমাদের ছোটবেলার বইয়ের ছবি। মাঝে সূর্য – চারপাশে গ্রহের কক্ষপথ।
    মজার কথা হচ্ছে এই, যে টলেমি আর কোপারনিকাসের মডেল যতই মূল ধারণাতেই আলাদা হোক, দুটোর যে কোনো একটা মডেল বিশ্বাস করলে যে পর্যবেক্ষণগুলো পাওয়া যাবে, সেইগুলো রীতিমত কাছাকাছি, অর্থাৎ এরা observationally equivalent। আর কোপারনিকাসের মডেলেও এপিসাইকেল ছিল, ডেফারেন্ট ছিল, জটিল বৃত্তের-উপর-বৃত্ত-ভেতরে-বৃত্ত ইত্যাদি-প্রভৃতি, তার উপরে কোপারনিকাসের মডেল মানুষকে বিশ্বাস করতে বলল – পৃথিবী প্রচণ্ড বেগে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে – যেটা বলাই বাহুল্য, পৃথিবীর উপরে দাঁড়িয়ে অনুমান করা অসম্ভব। সাধারণ মানুষ অথবা চার্চ যে হেলিওসেন্ট্রিক মডেল-কে সঙ্গে সঙ্গে আপন করে নেননি, সে ভাবা অসম্ভব নয়।

    কোপারনিকাস কিন্তু শুধু ‘হারমনি’ নামে বায়বীয় কোনো ধারণার উপর ভিত্তি করে বলেননি যে তার হেলিওসেন্ট্রিক মডেলটিই বেশি উপযুক্ত। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, “We thus follow nature, who producing nothing in vain or superfluous often prefers to endow one cause with many effects” – প্রকৃতি-তে অনর্থক জটিলতা-র জায়গা নেই, আর ওঁর হেলিওসেন্ট্রিক মডেল জিওসেন্ট্রিকের সমতুল্য পূর্বাভাষ দিতে পারে, অনেক কম-সংখ্যক এপিসাইকেল-ডেফারেণ্ট ব্যবহার করে, অর্থাৎ অনেক সহজতর একটি মডেল দিয়ে। প্রকৃতি, অতএব, এইটিই বেশি পছন্দ করবেন, এবং এই-ই বক্সের ভাষায় সেই “cunningly chosen parsimonious model”

    দর্শন বা বিজ্ঞানের ভাষায় এই যুক্তি বা প্রিন্সিপলটির একটি নাম আছে, উইলিয়াম অফ ওকহ্যামের নামে ‘ওকহ্যাম’স রেজর’ (Ockham’s razor) – “Models with fewer assumptions are to be preferred” … টলেমি আর কোপারনিকাসের বেলায় এই রেজর-ই বলে দিচ্ছে কী করা উচিত – দুটো মডেলেই যেহেতু উত্তর দিচ্ছে কাছাকাছি, তাই যেটি বেশি সরল, সেইটি মেনে চলা উচিত। বলাই বাহুল্য, ওকহ্যাম বলছেন না – এদের কোনোটিই ঠিক কি না – খালি বলছেন, দুটোর মধ্যে কোনটা একটু বেশি ভালো।

    কিন্তু যদি উত্তর বা জটিলতা (কমপ্লেক্সিটি) কোনোটাই না মেলে? সে উত্তর ওকহ্যাম দিয়ে যাননি। তবে, তাতে ভয়ের কিছু নেই, আধুনিক রাশিবিজ্ঞানের একটা বিশাল অংশের কাজ এই সমস্ত প্রশ্নের নিরন্তর উত্তরের তালাশ, আর এর পরের বা তার পরের কোনো এক সংখ্যায় যদুবাবুই বলে দেবেন দুই-একটি সূত্র।

    তবে তার আগে, পরের সংখ্যায় বলব আরেকটি গল্প, মডেল একেবারেই ভুল হওয়ার অথবা না জেনেবুঝে রাশিবিজ্ঞানের একেবারেই ভুল প্রয়োগের করুণ পরিণতি – যে ট্রাজেডির নাম মহাকাশযান চ্যালেঞ্জারের দুর্ঘটনা।




    কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ বোর্হেসের গল্পটি আমার পিএইচডি অ্যাডভাইজার, জয়ন্ত কুমার ঘোষের কাছে শোনা। রাশিবিজ্ঞান ছাড়াও, সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসার জন্যেও ওঁর কাছে আজন্ম ঋণী থাকবো। আর বাকি গল্পগুলোর জন্য রিচার্ড ম্যাকএলরাথের 'স্ট্যাটিসটিক্যাল রিথিঙ্কিং' বইটির কাছে ঋণী। আর লেখার সাথে সুন্দর থাম্বনেইল-টি তৈরী করে দিয়েছে বন্ধু সুনন্দ পাত্র।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৩১৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ১২:৪১503203
  • খুব ভালো লেখা হয়েছে। খুব সুন্দর। পড়ে আনন্দ পেলাম।

    বাই দ্য ওয়ে, আমি ক্লাসে চ্যালেঞ্জারের "obviously a major malfunction" পড়িয়ে তবে জেনারেলাইজড লিনিয়ার মডেলে ঢুকি :)
  • যদুবাবু | ২৯ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:২৫503228
  • অভ্যুদাঃ থ্যাঙ্ক ইউ! :) আমিও এই দু সপ্তাহ পরেই লজিস্টিক রিগ্রেশন পড়াবো, তার আগে চ্যালেঞ্জারের গল্পটা বলে শুরু করবো। 
  • হিজি-বিজ-বিজ  | 2603:8000:b101:f400:4489:8453:c9ff:433e | ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ০২:২১503265
  • উফফ!! অনেকদিন অপেক্ষার পর যদুবাবু পেলাম। আছা প্রথমে ৩০ হাজার তা কি ৩০০০ হবে?
  • হিজি-বিজ-বিজ | 2603:8000:b101:f400:4489:8453:c9ff:433e | ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ০২:২৫503266
  • ওহহ! না, আমি বুঝতে ভুল করেছি। 
  • যদুবাবু | ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:১১503269
  • @হিজি-বিজ-বিজঃ থ্যাঙ্কু থ্যাংকু !! আমার-ও পরিসীমা লিখতে গিয়ে একটু হাত খচখচ করছিলো, আবার এক জনকে জিগ্যেস করলাম হ্যাঁরে circumference মানে পরিসীমা-ই তো? তবে আমি খুব-ই থেঁতো করে একটু ওভার-সিমপ্লিফাই করে ফেলেছি। আসল গপ্পোটা একটা গোটা লেখা ডিজার্ভ করে - এই নিন একটু টেক্সট ও সোর্সঃ 

    "In making his own calculation, however, Columbus preferred the values given by the medieval Persian geographer, Abu al Abbas Ahmad ibn Muhammad ibn Kathir al-Farghani (a.k.a. Alfraganus): one degree (at the equator) is equal to 56.67 miles. That was Columbus’s first error, which he compounded with a second: he assumed that the Persian was using the 4856-foot Roman mile; in fact, Alfraganus meant the 7091-foot Arabic mile. (This is, of course, the sort of confusion of units that sent the Mars Climate Orbiter into its terminal swan dive in September 1999.) 

    Taken together, the two miscalculations effectively reduced the planetary waistline to 16,305 nautical miles, down from the actual 21,600 or so, an error of 25 percent."

    (১ নটিক্যাল মাইল = ১.৮৫২ কিমি => ১৬,৩০৫ নটিক্যাল মাইল = ৩০,১৯৭ কিমি) 

    সোর্সঃ https://spectrum.ieee.org/columbuss-geographical-miscalculations
     
  • প্যালারাম | ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:০২503278
  • পার্সিমোনির প্রশ্ন ওঠার ঠিক আগে, ওই যে অহরহ শোনা যায় না, "এত প্যারামিটার! এতে তো হাতি ফিট হয়ে যাবে হে!" (আম্মো শুনেছি) - এও যে এক খেয়ালী চিন্তার বিষয় - সেটা জেনেছিলাম প্রথম বার্নহ্যাম-অ্যান্ডারসনের বইটা পড়ে। আরও পরে এই লেখা থেকে জানতে পারি, ঠিক কতগুলো প্যারামিটারে যে হাতি ফিট হয়, তা নিয়ে আমার ফিল্ডের মহীরূহরাও সামান্য সময় খরচ করেছিলেন।
    এ' প্রসঙ্গে এই ডেমন্সট্রেশনটা কাল এখানে দেবো ভেবেও খুঁজে পাইনি বলে কমেন্টাতে পারিনি... আজ পেয়েছি।

    লেখা নিয়ে কী আর বলি... বড়ই ভাল লেখো হে... 
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ৩০ জানুয়ারি ২০২২ ১৩:১৪503280
  •  
     
    আমি জানতাম না, থ্যাংকু।
  • যদুবাবু | ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৫০503326
  • @প্যালারাম: আরে এটা তো দারুণ জিনিষ দেখাল। আমি নিউম্যানের উক্তিটা জানতাম, তবে এই ব্লগটা খুব সুন্দর লিখেছেন। খালি ওই একটা হাইপার লিংক (মহলানবিস) কাজ করলো না। ওইটা পেলে পড়তাম। ৩০ কি করে বের করলো কৌতূহল হচ্ছে। 
     
    Mathematica র অ্যাপ টা খুব মজা লেগেছে। আমি ১৫ অব্দি বাড়িয়ে দেখলাম দিব্যি হাতি হাতি লাগছে, এইটা R এ বানাতে পারলে ভাবছি বাচ্চাকাচ্চা দের দেখাবো ক্লাসে। 
     
    আর ধন্যবাদ দিয়ে ফর্মালিটি করলাম না তোমার সাথে। কিন্তু এইরকম গপ্পো আর anecdote নিয়ে তোমার একটা লেখা চাইই চাই। 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ১১:২৭503332
  • আমার ইচ্ছে করছে এই রকম কিছু গাব জ্বাল দিতে -
    কবিতা কোন এক বা একধিক বক্তব্য/বিষয়কে বোঝানোর একটি মডেলীয় প্রয়াস। অবশ্যই সে কাজটা নিখুঁতভাবে করতে ব‍্যর্থ হয়। কিন্তু যে কবিতা যতটা মিতব্যয়ীতায়/মিতভাষে লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে, সে ততটা তুখোড় কবিতা হয়ে ওঠে।
    লেখা পড়ে আশানুরূপভাবে মন খুশি হয়ে উঠল, এদিকে ঘুম পেয়ে গেছে কিন্তু ঘুমোলেই আরেকটা দিন গায়েব এই সব টানা-হ‍্যাঁচড়ায় মগজের ভারসাম‍্যে গোল পাকিয়ে এবংবিধ বাচালতা ঘটে গেল।
     
  • যদুবাবু | ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৩৬503354
  • @অমিতাভ-দাঃ থ্যাংক ইউ!
    আর খুব সুন্দর বলেছেন, পার্সিমোনি ও মিতব্যয়িতা হয়তো এক-ই কারণে ভালো লাগে ... আমাদের এক স্যার প্রায়-ই ক্লাসে এসে বলতেন, নেচার লাভস সিমপ্লিসিটি/পার্সিমোনি - সে আপনি ব্রেনের নিউরোনের কানেকশনে দেখুন, বা ফাইলোজেনেটিক ট্রি-র গঠনে না খুব একটা জটিল প্রবলেম নিয়ে ভাবতে হঠাৎ একটা অন্তর্দৃষ্টি / ইনসাইট পাওয়ার মুহূর্তে। একটু কল্পনার বিস্তার করলে ভাবতে ভালো লাগে যে হয়তো এই যাবতীয় হিউম্যান এণ্টারপ্রাইজ, সে বিজ্ঞান বলুন বা কাব্য বা আঁকা - আসলে আমাদের বোধের অতীত, অনির্ণেয় সেই 'কিছু একটা'র মধ্যে একটা বোধগম্য, সহজ কাঠামো খোঁজার চেষ্টা। 
    তবে পার্থক্য সম্ভবতঃ এই যে একটা হয়তো সবসময়েই বাস্তবতার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, অন্যটায় সে রকম কোনো রেস্ট্রিকশন নেই। পিকাসোর একটা লেখায় ছিলো, "We all know that art is not truth. Art is a lie that makes us realize truth, at least the truth that is given us to understand. The artist must know the manner whereby to convince others of the truthfulness of his lies."  

     
  • b | 117.194.209.169 | ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ২০:১১503358
  • কৌরব না কাদের একটা ওয়েবসাইট খুলে দেখেছিলাম, ওনারা বলছেন কবিতা হল একটি টেন্সর প্রডাক্ট । তারপরে হাতির শুঁড়ের মতো কিছু চিহ্ন আর গোল্লার মধ্যে গুণ ।  সেই দেখে বুঝেছিনু, কবিতা আমার জন্যে নয় .
  • যদুবাবু | ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ২০:২৯503359
  • আরিব্বাস! সে লিঙ্ক নিশ্চয়ই কালের গর্ভে সেঁদিয়ে গ্যাছে, তবে পেলে একবার দেখতাম। 

    সেই একবার বিনয় মজুমদারের একটা কি কবিতা আমার জুনিয়র পড়িইয়েছিলো, তাতে একটা লাইন ছেলো "মৃতদেহ x √-1 পায়ের নীচে" -- সেই থেকে কমপ্লেক্স অ্যানালিসসি দেখলেই বেদম ভয় করে। ওঁর কবিতা দেখলেও। 
     
    তবে কি কবিতার চক্করে না পড়ে একদিকে থেকে বেঁচে-ই গেছেন, আর অমরত্ব তুচ্ছ করতে হবে না। laugh 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ২১:০৫503369
  • যদুবাবু | ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:৩৬
    আরও ঋদ্ধ হলাম। সেই সাথে আবারও বুঝ হল যে কেন আমার কোন নতুন বক্তব্য নেই - সব ভালো ভালো কথা, মানে আমি যা যা বলতে চাই, অন‍্যরা আগেই বলে দিয়েছেন আর সেসব রেকর্ডও করা হয়ে রয়েছে। :)
     
    তবে, তার পরের দুই মন্তব্য পড়ে যে পরিমাণ হেসেছি সেটাতে অবশ্য মন্তব্য করে ভালোই করেছি গোছের একটা আহ্লাদ হল। :)
  • যদুবাবু | ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ২১:৩৪503376
  • @b: "আঁতকে উঠে হাত-পা ছুঁড়ে চক্ষু করে গোল" অবস্থা হলো ঐটা পড়ে। উরিব্বাস কী জিনিষ। আর আমি লেখার পরে শিশিবোতল-ইত্যাদি বিনয় কর্ব্ব না। 

    @অমিতাভ-দাঃ না না সে কি কথা? আসলে তো পুরোটাই বেলা এগারোটার পার্কিং লট। গিয়ে দেখলেন সব স্পেস ভর্ত্তি, আগেই কোনো মহামানুষ এসে অতিকায় একটি জাহাজ ভিড়িয়ে রেখেছেন। অতএব একমাত্র করণীয় ওইখানেই দু-তিন চক্কর কাটা, কেউ না কেউ বেরোবেন-ই বেরোবেন। 
  • অন্বেষা  | 128.163.7.152 | ৩১ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৪৭503386
  • জে ডি দা মেশিন লার্নিং এর লোকজন তোমায় ক্যানসেল করে দিল বলে  cheeky 
     
  • যদুবাবু | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:১৬503387
  • অন্বেষাঃ হ্যাঁ ঐ ML-ফোরকাস্টের বাড়াবাড়ি দেখে লোকে টুইট করতে শুরু করেছিলো, "all models are wrong, but some are dangerous" ... আমি তো তাও সেসব বলিনি। আর মায়াও হয়, বিশ্বজোড়া লোক আজ এপিডেমিওলজিস্ট, কাল ইকোনমিস্ট, পরশু ভাইরোলজিস্ট হয়ে গেলেন, এরাই বা কি দোষ করলেন? 
     
    ক্যান্সেল তো নির্ঘাত করবে, তবে তাদের কি আর গুরু-তে যাতায়াত আছে? তার থেকেও বড়ো কথা তারা কি এই এতো বড়ো লেখা পড়ে, আবার তলায় এসে কমেন্ট করবে? এলে অবশ্য ঐ অ্যান্টি-ভ্যাক্সদের দিকে লেলিয়ে দেবো। আনস্টপেবল ফোর্স আর ইমমুভেবল অবজেক্টের লড়াই হবে একটা। 
     
     
  • Ranjan Roy | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:৫০503444
  • আমার মত গোলা লোকও এই লেখাটার মূল কথাটা খানিকটা ( আপেক্ষিক ভাবে, সরি! ভুল ভাবে ) বুঝতে পারল। তাতে আপাততঃ আমার কাজ চলে যাবে।ঃ))
     
     লেনিনের 'মেটিরিয়ালিজম অ্যান্ড এম্পিরিও ক্রিটিসিজম" এর সদা পরিবর্তনশীল দুনিয়ার  বড় ছবিকে  আপেক্ষিক ভাবে ধরার চেষ্টা ও তার সীমাবদ্ধতার কথা মনে পড়ল। আর পিকাসোর কোটের শেষ পংক্তিটি দারুণ লেগেছে।
    পরের ক্লাসের অপেক্ষায়।
  • যদুবাবু | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২০:৫৭503450
  • @রঞ্জন-দাঃ আমাদের ভোকাবুলারি-তে "গোলা" মানে অসাধারণ, আরিব্বাস, একঘর, ঘ্যামা ইত্যাদি। এবং আপনি সেই হিসেবে সত্যি গোলা ভালো লোক, এবং আমার গোলা পছন্দের-ও বটে। :) 

    স্বীকার করতে দুঃখ হলেও, আমি তাও আমার সোশিওলজিস্ট গিন্নীর এবং পুরোনো একটা 'এক্ষণ' ম্যাগাজিনের সংখ্যার কল্যাণে মার্ক্সিস্ট ফিলোজফি একটু আলোচনা শুনেছি বা পড়েছি, কিন্তু  'মেটিরিয়ালিজম অ্যান্ড এম্পিরিও ক্রিটিসিজম' সিলেবাসের বহু বাইরে। আর ফিলোজফি অফ সায়েন্স নিয়ে আগ্রহ থাকলেও, জ্ঞান শূন্য। কিন্তু এই লেখাটা লিখতে গিয়েই পড়েছি যে ঐ বক্স-বাবুর উক্তির প্রথম ভাগটা এপিস্টেমোলজিক্যাল নিহিলিজম-এ বিশ্বাসী লোকে কোট করেন, কিন্তু সেটা একেবারেই ঠিক-ঠিক প্রয়োগ হয় না আর কি। 

    আমার এক বন্ধুকে জিগ্যেস করেছিলাম, ভারতীয় দর্শনের কোনো শাখায় এইরকম ভাবনা এসেছে কি না। সে যা বলেছে হুবহু টুকে দিলাম, কারণ আমি নিজে প্রায় কিছুই জানি না ... "বৌদ্ধদের প্রায় সমস্ত মতেই সত্য অনিরূপণীয় এমন থাকলেও যোগাচার বা মাধ্যমিক মত। এখানে বলা আছে যে জগৎ শুধুমাত্র আমরা যা জ্ঞাত হই সাইকলজিকালি। সে আসলে কেমন আমরা বুঝব না কখনোই।
    আর বেদান্তে সত্যের ডেফিনিশন বেশ মজাদার। নেতি নেতির পথ। এও নয় ও নয় করতে করতে সবশেষে সত্য। কিন্তু তখন জ্ঞাতা ও জ্ঞেয় এক। ফলত সত্য কেমন তা বলবে কে?" 
     
     
  • যদুবাবু | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:০৬503464
  • অমিতাভ দা, পড়িনি কবিতাটা। একটু লিংক বা কপি পাস্তা করে দেবেন সময় পেলে? 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:১১503467
  • আমি অনুবাদ পড়েছি। বাড়ি গিয়ে সেই বইটা খুঁজে বার ক‍রতে হবে।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০০:১৭503478
  • স্মৃতি আমার সাথে আর আমি স্মৃতির সাথে প্রতারণা করেই চলি।
     
    কবিতাটা আসলে সূর্য নিয়ে। তবে শেষ লাইনটা য় গেলে বুঝবেন কেন আমার গোল পাকিয়ে গিয়েছিল।
     
    Brief reflection on the sun by 
    Miroslav Holub

    Thanks to the systematic work of our meteorologists,
    and altogether thanks to the general labour effort,
    we have all been witnesses of many solstices,
          solar eclipses and even
          sunrises.
    But we have never seen the sun.
    It's like this: we have seen the sun
          through the trees, the sun above the Tatra
         National Park, the sun beyond a rough road,
         the sun drenching Hasek's village of Lipnice,
    but not the sun,
    Just-the-Sun.
    Just-the-Sun, of course, is unbearable.
    Only the sun related to trees, shadows,
         hills, Lipnice and the Highway Department is a sun for people.
    The Just-the-Sun hangs like a fist over the ocean,
           over the desert or over the airliner,
           it doesn't cast shadows, it doesn't flicker from movement,
           and is so unique it almost isn't at all.
    And it's just the same with truth.

    · Translation by Ewald Osers

     
  • &/ | 151.141.85.8 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০২:৫২503487
  • বারে বারে আসছি আর যাচ্ছি, ঘুরে ফিরে চলে যাচ্ছি কিন্তু সাহস করে 'কবিতা  টেন্সর' এর লিংকটা ক্লিকাতে পারছি না।  smiley
  • যদুবাবু | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৪৫503490
  • অমিতাভদা: অজস্র ধন্যবাদ। দারুণ লাগলো কবিতাটা।জমিয়ে রাখলাম। আর এটা তো একেবারেই একই চিন্তা সূত্র, তাই না? 
     
    একটা বিদেশী/ইংরেজি কবিতা শেয়ারের টই হলে বড়ো ভালো হতো। আগে কেউ করেছেন হয়তো কে জানে? 
     
    &/: আরে খুলে ফেলুন, ভয় না পেয়ে, সে এক দারুণ জিনিষ। আর দ্বার বন্ধ করে দিয়ে টেনসরকে রুখতে পারবেন না, সে ঈশ্বর এবং ধুলোর মতোই omnipresent। 
  • &/ | 151.141.85.8 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:৫৪503491
  • "কৌরবের মন্দুরায় লক্ষ অশ্বক্ষুরে
    খর শব্দ উঠিছে বাজিয়া", বাপরে খুললেই কুরুক্ষেত্র মহাসমর। ঃ-)
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:৩৮503521
  • @যদুবাবু
    আমি মার্কিন কবিতার অনুবাদ করবার ঝোঁকে একবার একটা টই শুরু করেছিলাম হ-পা ব্লগে। ১ম কবিতাটি নিয়ে কিছুটা গপ্প-গাছা হয়েছিল। আমার পরে আরো সাতজন ঐ কবিতাটি অনুবাদ করলেন। আমি এরপর আরো দু খান কবিতা ওখানে তুলেছিলাম। কিন্তু পাঠকদের আড্ডা দেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে গিয়েছিল। আমারো উৎসাহ হারিয়ে গেল।
  • anwesha goswami | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:৩৬503790
  • @যদুবাবু 
     
    অত চাপ নিলে তো 'nuance' নামক একটা জিনিস ব্যবহার করতে হবে। তার চেয়ে অনেক সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ক্যানসেল কালচার। devil
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন