এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  নববর্ষ

  • রেকর্ড নম্বর সহ অকৃতকার্য

    সৈকত বন্দোপাধ্যায়
    ইস্পেশাল | নববর্ষ | ১৫ এপ্রিল ২০২২ | ৭৩৯০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৬ জন)

  • বাংলা নাকি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ছে। নিউ-ইয়র্ক সিটিতে গত নির্বাচনে কিছু জায়গায় ভোটে বাংলা ব্যালট হয়েছে। বার্নি স্যান্ডার্স অনলাইন প্রচার করেছেন বাংলায়। লন্ডনে হোয়াইট চ্যাপেল স্টেশনের নাম লেখা হচ্ছে বাংলায়। রোম শহরে নাকি ইংরিজির চেয়ে বাংলা বেশি লোকে বলে। চারদিকে তাকালেই এইসব বিশ্বজয়ের খবর-টবর পাওয়া যায়। আরও হয়তো কিছু পাওয়া যেতে পারে, যা আমি জানিনা। এর সবই ঠিক। কিন্তু কথা হল, ভালো হোক বা মন্দ, এর সব দায়ই বস্তুত বাংলাদেশের। ভারতীয় বাঙালির নয়, ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের তো নয় বটেই। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র একটিমাত্র ভাষাকে ভারতীয় ভাষা হিসেবে বহির্বিশ্বে তুলে ধরে, তার নাম হিন্দি। ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইট কেবলমাত্র দুটি ভাষায়, ইংরিজি এবং হিন্দি। ভারতীয় বিমানসংস্থা এয়ার-ইন্ডিয়া বিদেশে (এবং দেশেও) ঘোষণা করে কেবলমাত্র হিন্দি এবং ইংরিজিতে। বহির্বিশ্বে ভারতের পরিচয় হিন্দিভাষী দেশ হিসেবে। আর বাংলার যেটুকু পরিচিতি, সেটা বাংলাদেশের ভাষা হিসেবে। সঙ্গে ফুটনোটে খুব ছোটো-ছোটো করে লেখা থাকে, "ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলেও এই ভাষাটি বলা হয়ে থাকে"। বাংলার পরিচিতি বলতে ওইটুকুই।

    ভারতীয় বাঙালিও এ নিয়ে বিশেষ চিন্তিত না। একরকম ভাবে স্বীকৃতই হয়ে গেছে, যে, ব্যাপারটা এরকমই হবে। এরকমই হবার কথা। ইংরিজিতে আছে ঘ্যাম, হিন্দি হল রাজভাষা -- এখন সেটাকে ওই নামেই ডাকা হচ্ছে, আর বাংলার কী আছে? কিস্যু না। বাঙালি যদিও হিন্দি সিনেমা গুছিয়ে দেখে, কিন্তু "মেরে পাস মা হ্যায়" -- এই ডায়লগ যে নেহাৎই ফালতু, এর যে কোনো বৌদ্ধিক বা আবেগগত আবেদন নেই, সেটা সে নিজেও বিলক্ষণ বোঝে। হ্যাঁ, দুর্গাপুজো, পয়লা বৈশাখ, আর বঙ্গোৎসব-টব হয়, যেমন গ্রামে-গঞ্জে হয় চড়ক আর গাজন, কিন্তু সেসব নেহাৎই স্থানীয় কারবার। তার বাইরে, ভারতীয় বাঙালি অন্য ভারতীয়ের সঙ্গে স্বেচ্ছায় এগিয়ে গিয়ে কথা বলে হিন্দিতে। বাঙালির দ্বিতীয় প্রজন্ম ক্রমশ বাংলাটা ভুলে যাচ্ছে। শুধু বিদেশে বা ভিন রাজ্যেই না, খোদ কলকাতা শহরেও। কিন্তু এসব নিয়ে বলতে গেলে বাঙালি নিজেই হাঁ হাঁ করে উঠবে। তারা সর্বভারতীয় হচ্ছে, আন্তর্জাতিক হচ্ছে। আরও কী-কী হচ্ছে, ঈশ্বরই জানেন। সেখানে এসব ছোটো মনের পরিচয় দেওয়াটা ঠিক না।

    যদিও, যুক্তি দিয়ে জিনিসটা বোঝা দুষ্কর। বাঙালি যদি দিল্লি কিংবা নিউ-ইয়র্কে গিয়ে হিন্দি কিংবা ইংরিজি ভাষী হয়ে ওঠে, সেটাই যদি দস্তুর হয়, তবে বাংলায় এসে অন্যভাষীদের বঙ্গভাষী হয়ে ওঠারই কথা। আবার অন্যভাষীরা বাংলায় এসে যদি নিজের ভাষা বজায় রাখে, বা রাখতে পারে, অন্যত্র বাঙালিদেরও তেমনই হবার কথা। এর কোনোটাই হয়না। ভারতীয় বাঙালির কাছে এর কোনো ব্যাখ্যাও নেই। সম্ভবত অস্বস্তিকর বলেই। আর সেই জন্য প্রশ্নটা তোলাই ট্যাবু। তুললে কঠিন-কঠিন ইংরিজি গালি বর্ষিত হতে পারে।

    আর এটা ট্যাবু বলেই বাকি প্রশ্নগুলোও ওঠেনা। ভারতবর্ষের বাইরে ছাড়ুন, আপনি যদি দিল্লি থেকে অন্তর্দেশীয় উড়ানে কলকাতা যান, সেখানে ঘোষণা শুনবেন হিন্দি এবং ইংরিজিতে। তারপর যদি ট্যাক্সিতে ওঠেন, এবং ট্যাক্সিওয়ালা এফএম চালায়, শুনবেন, সব গানই হিন্দি গান। যদি বিনোদনের জন্য সিনেমা দেখতে যান, তো দেখবেন, বেশিরভাগ সময়েই মাল্টিপ্লেক্সে একটিও বাংলা সিনেমা নেই। যদি বাংলার গর্ব বইমেলায় যান, শুনবেন, সব ঘোষণা হচ্ছে তিনটি ভাষায়, ইংরিজি, হিন্দি এবং বাংলা। একে ইংরিজিতে বলে ইনক্লুসিভনেস, বাংলায় বলে সকলকে আপন করে নেওয়া। তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু আপন যদি করতেই হয়, তো স্রেফ হিন্দি কেন। পাশের পাড়ার ভোজপুরি, অসমীয়া, উড়িয়া, তেলুগু কী দোষ করল? প্রশ্ন করলে, আবারও কোনো উত্তর পাবেননা। কারণ এটাও ট্যাবুরই অংশ।

    যেটা ট্যাবু নয়, সেটা হল সংবাদ চ্যানেল। দিনের যেকোনো সময় যেকোনো সংবাদ চ্যানেল খুলুন, দেখবেন, চাট্টি লোক, পুরুষ বা মহিলা, একত্রে বিশুদ্ধ বাংলায় তারস্বরে চিৎকার করছে। সেটাকে আমজনতা বলে ঝগড়া, ওঁরা বলেন রাজনৈতিক বিতর্ক। তা,গোলাপকে যে নামেই ডাকুন, বার্তাটা পরিষ্কার। বাংলায় কাজ হয়না, সিনেমা হয়না, গান হয়না, শিল্প-সংস্কৃতি কিস্যু হয়না। ভাষাটা কেবলমাত্র একটা জিনিসের জন্যই উপযুক্ত, তা হল ঝগড়া। ওইটুকুই করা যায়। সেইজন্যই বাংলা সিরিয়ালে দেখবেন, তেড়ে ষড়যন্ত্র। সবাই সবার সঙ্গে ঝগড়া করে চলেছে। বাংলা ভাষায়। ওইটাই যাবতীয় সিরিয়ালের থিম। কিন্তু যেই গান চালাতে হল, হিন্দি গান চালিয়ে দিল। কারণ ঝগড়া ব্যতীত বাংলায় হয়টা কী।

    বাংলা লেখালিখির বাজারও তথৈবচ। ঝগড়ার বদলে 'জনপ্রিয়' লেখালিখি বেছে নিয়েছে এমন বিষয়কে, যা, ওইরকমই উচ্চমার্গীয়। স্বপনকুমার একটা সময় কচি বাচ্চারা পড়ত, বড়রা তা নিয়ে ঠাট্টাতামাশা করত। ফেলুদার গোটা উপাখ্যানই তো বাংলা রহস্যরোমাঞ্চকে খিল্লি করে লেখা। আর এখন থ্রিলার নাম দিয়ে বড়দের জন্য প্রথমসারির সাময়িকীতে ছাপা হয় সেইসব গপ্পো বা উপন্যাস, যেখানে অনায়াসে অ্যাটম বোমা পিঠে নিয়ে সীমানা টপকিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে চলে যায় ভিলেন। গল্পের গরু ইনস্যাটে ওঠে, যমালয়ে চলে যায় জীবন্ত মানুষ। সে নিয়ে ঠাট্টা করলে গণপিটুনি খেতে হতে পারে। একটা সময় যেসব ইতিহাসনির্ভর লেখা, বা ধরুন রহস্যভেদী উপন্যাস স্রেফ কিশোরপাঠ্য পদবাচ্য ছিল, সেসবই এখন চশমা এঁটে পড়ছেন বিদগ্ধরা। সেখানে শাড়ি-ব্লাউজ পরে ঘুরছেন অষ্টাদশ শতকের মহিলা, সম্রাট আকবরের গাড়োয়ান দেশলাই জ্বেলে বিড়ি ধরাচ্ছেন, কিন্তু কাউকে কিছু বলার উপায় নেই। তার উপর আছে ভূতপ্রেত আর তন্ত্রমন্ত্র। এর সবই আগে হত। যেমন ঝগড়াও হত আগে, কিন্তু টিভি চ্যানেলে সেটাকে বিতর্ক বলে চালানো হতনা। সেরকম এগুলোকেও সিরিয়াস সাহিত্য হিসেবে কখনও চালানো হয়নি। এখন হয়। বাংলা ভাষায় ঝগড়া ছাড়াও তৃতীয় শ্রেণীর নভেলও লেখা হয় বটে।

    এ সবই একটা ভাষার অনাড়ম্বরে চুপচাপ উঠে যাবার প্রাথমিক লক্ষণ। তাতে কোনো সমস্যা নেই। পৃথিবীতে কত ভাষাই উঠে গেছে। ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে বাংলা ভাষাটা উঠে গেলেই বা কী। কিন্তু সমস্যা হল, এসবের পরে, বাঙালি আবার নিজেই নাক কুঁচকে বলে, বাংলায় ভালো সিনেমা হচ্ছেনা। ভালো লেখা হচ্ছেনা। আগে কত ভালো হত। আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য কত সুমহান, আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, ইত্যাদি। খুব ভুল কিছু বলে তা নয়। টালিগঞ্জে এখন যাঁরা রাজত্ব করছেন, যাঁরা নাগাড়ে স্ক্রিপ্ট লিখে চলেছেন, যাঁরা প্রসব করে চলেছেন গপ্পো-উপন্যাস-কবিতা, তাঁরা এমনিতে, কে জানে, হয়তো শক্তিমান মানুষ, কিন্তু কর্মকান্ড দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। সর্বত্র, নিচু থেকে নিচুতর স্তরে যাবার প্রতিযোগিতা। কিন্তু কথা হল, একটা ভাষা এবং তৎসংলগ্ন সংস্কৃতি উঠে যাবার উপক্রম হলে, এরকমই হবে। যে পারবে নৌকো ছেড়ে বোম্বে পালাবে। বাদবাকি সবকিছু তলানিতে এসে ঠেকবে। এর সবটাই কিছু লোকের দায় নয়। তাঁরা একার উদ্যোগে ভাষাটা তুলে দেবার উপক্রম করেননি। করেছি আমরা সবাই মিলে। আমরা পরের প্রজন্মকে ভাষা শেখাইনি। আমরা শহরের রেডিও থেকে বাংলা গান উঠে যাওয়ায়, পলকটিও ফেলিনি। আমরা মাল্টিপ্লেক্স থেকে বাংলা সিনেমা উঠে যাবার পরে, লাইন দিয়েছি হিন্দি সিনেমা দেখতে। আমরা বহুভাষিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে বাকস্তব্ধ থেকেছি। আমরা বাংলা ভাষাকে সামাজিক অথবা রাজনৈতিক কার্যক্রমের অংশ করে তো তুলিইনি, বরং তুলতে চাওয়াকে ট্যাবু বানিয়ে রেখেছি। এর দায় স্রেফ সিনেমাওয়ালাদের নয়, গদ্যলিখিয়েদের নয়, আমাদের সব্বার। আমরা সব্বাই ফেল করেছি। আজ থেকে দুশো বছর পরে, ভারত ভূখণ্ডে মরে যাওয়া বাংলা ভাষার ইতিহাস লিখতে হলে, আমাদের প্রজন্ম সম্পর্কে একটা কথাই লেখা থাকবে -- "রেকর্ড নম্বর সহ অকৃতকার্য"। চতুর্দিকে আঙুল তোলার আগে, বিশ্বের অন্যতম চিন্তাশীল জাতি হিসেবে, এইটা আমাদের মেনে নেওয়াই ভালো।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ১৫ এপ্রিল ২০২২ | ৭৩৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • lcm | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২২:৩৮506572
  • ... বছরে খান আঠেরো-কুড়ি বাংলা বই পড়া ...

    কিন্তু লোকে বই কেনে তো। নাকি, বাংলা বই বিক্রি কি কমে যাচ্ছে। জানি না। নাকি, লোকে বই কিনছে কিন্তু পড়ছে না।
  • এলেবেলে | 2402:3a80:1153:66d3:815:5a74:705:733 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২২:৩৯506573
  • আরে দেবারতি মুখোপাধ্যায়ক চেনেন না? সে এক মহা ইয়ে! একটা উপন্যাসের নাম অঘোরে ঘুমিয়ে শিব। যে শিবকে অঘোরে ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারে, সে না জানি আর কী কী করতে পারে!
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::324:19e9 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২২:৪১506574
  • আপনাদের দেখার পরেও বাংলা ইন্ডাস্ট্রি লসে চলেছে বহু বছর। প্যান্ডামিকের সময় তো একদম ভয়াবহ অবস্থা। এখন বাংলায় কাজ করবে এরকম সেরকম কেউ আর ভাবেনা। লোকজন সোজা বম্বে গিয়ে নিজের ট্যালেন্ট স্কিল বেচে।

    খাজা সব ইন্ডাস্ট্রিই। কোয়ালিটির ক্ষেত্রে অন্য সাকসেসফুল ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সেরকম পার্থক্য দেখিনা বাংলা সিনেমার। একমাত্র বাজেট ছাড়া। হলিউডের উইল স্মিথের ফিল্মোগ্রাফি দেখুন। বলিউডে থ্রী ইডিয়টসও নাকি দারুন সিনেমা। সেদিন তেলুগু সিনেমার একটা ফানি সিন দেখছিলামঃ নায়ক নায়িকার পশ্চাতে হাত দিয়েছেন; সেটা দেখে নাকি হাসতে হবে।

    দুপুর ঠাকুরপোর বা ঐধরনের কন্টেন্টের হিসাবটা একটু অন্য।
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::298:91e9 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২২:৪৪506575
  • আজে বাজে সিনেমা করে কয়েক কোটি টাকা পায় বলেই নওয়াজ ভাই একটাকায় মান্টো করতে রাজী হন। সেসব না জানলে বা বুঝলে আর আলোচনা করে কোনও লাভ নেই। ঐ প্রবন্ধই সার হবে। এখন তাও হাতে পেনসিল আছে। এরপর সেটাও থাকবেনা।
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২২:৫৭506576
  • কি জ্বালা, ল্যাদোশদা ভাট পড়ে না? দেবারতি মুখোপাধ্যায় হলেন সেই জন যাঁকে নিয়ে হুতো লিখেছিল যে কেউ একটা মিম বানিয়েছিল বলে উনি নাকি পুলিশকেস, তারপর ওর অফিসে HRকে কমপ্লেন, মামলা মকদ্দমা ইত্যাদি করে হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আর সেই সূত্রে মাঝরাতে মেসেঞ্জারে মেসেজ করার ঔচিত্য নিয়ে আমি জানতে চাইলাম, মনে পড়ছে?

    অঘোরঠাকুর যেমন থাকুন না কেন তাঁর লেখিকা ঘোর বাস্তব।
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:০১506577
  • অঘোরবাবুর বইটা নিয়ে রিভিউ পড়লাম দু একটা। এইটা সবচে পছন্দ হল।
     
    গঠনমূলক বি দ্রঃ হিস্ট্রি পছন্দ না করলে, এই সিরিজ ভালো লাগার সম্ভাবনা কম।
    অগঠনমূলক বি দ্রঃ এই সিরিজ পড়লে, বিবাহ করতে ইচ্ছা হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট।
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::4c1:df51 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:০৮506580
  • "লং টার্মে বিজনেস সাফল্য পেতে চাইলে প্রথমে ইচ্ছে করে খাজা সিনেমা বানাতে হবে।"

    জানতাম না যে লসাগুদা সিনেমা বানানোর কাজেও যুক্ত। মাল্টাই ট্যালেন্টেড লোক তো মশাই আপনি। ইচ্ছে করে বাংলা খাজা সিনেমা "দেখতে" বলা হচ্ছে। কারণ অন্য ভাষার খাজা সিনেমা কিন্তু লোকজন দেখছে, বাংলার লোকেও দেখছে অন্য ভাষার খাজা সিনেমা।
  • r2h | 2405:201:8005:9947:e92b:3c3:afba:1ddc | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:১৬506581
  • হুঁ। খাজা সিনেমা বানাতে হবে তেমন কোন দাবি নেই। কিন্তু বাংলা ভালো সিনেমার শূন্যস্থান পলিসি, স্ট্র‌্যাটেজি, বাজেটের জোরে হিন্দি ভোজপুরি তেলুগু খাজা সিনেমা পূরণ করবে, এ কোন কাজে কথা না।

    মানে, লসাগুদা হয়তো বাংলা সিনেমা ভালো না বলে কুরোসাওয়া দেখছে, তাতে কিছু বলার নেই। কিন্তু তার বদলে রাজামৌলি দেখলে তো দুটো কথা চলেই আসে।
  • এলেবেলে | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২০506582
  • দেখুন মশাইরা, ওই আপনাদের মতো টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত রুচিশীল কন্টেন্ট-খুঁজিয়েরা বাংলা সিনেমার কোনও কম্মে কস্মিনকালেও লাগেননি। বেদের মেয়ে জোসনা সুপারহিট হয়েছিল গ্রামগঞ্জ আর সোঁদরবনের দর্শকের আনুকূল্যে। বাবা তারকনাথ, অন্যায় অবিচার, শত্রু - সব একই কেস। তা সে সব জায়গায় আস্ত সিনেমা হলটাই উঠে গেছে। এখন মাল্টিপ্লেক্স আপনাদের পোঁছে না। দয়াধর্ম করে অড টাইমে এক-আধটা বাংলা সিনেমা কালেভদ্রে চালালে আপনারা বর্তে যান। 
     
    কিন্তু ওই মাল্টিপ্লেক্স যখন হচ্ছিল আর সিঙ্গল স্ক্রিন থিয়েটার যখন উঠে যাচ্ছিল, তখন লুঙি পরিহিত বিড়ি ফোঁকা দর্শকদের আপনারা হুলিয়ে প্যাঁক মেরেছিলেন। এদিকে সরকার বাংলা সিনেমা মিনিমাম এত সপ্তাহ চালাতেই হবে বলে কোনও ঘোষণা-টোষণা আজ পর্যন্ত করেনি। সেই দর্শক এখন গুছিয়ে স্টার জলসা দেখে। আমও গেছে, ছালাও গেছে। তাতে কন্টেন্ট খাজা না এ ওয়ান - সে নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করুন গে পাতার পর পাতা।
  • lcm | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২১506583
  • ভাট তো এক মহা জগাখিচুড়িক্ষেত্র, অত খেয়াল থাকে না। যাই হোক, এই প্রসঙ্গে জানা গেল যে দেবারতি মুখার্জির বই এখন বেস্ট সেলার।

    বড়েসের বক্তব্য, ইয়ে মানে ... বাংলা সিনেমার উপকার করার জন্য প্রথমে তেড়ে বাজে বাংলা সিনেমা দেখতে হবে। নাহ! থাক। চাপ হয়ে যাবে।
  • দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২১506584
  • এলেবেলে | 2402:3a80:1153:66d3:815:5a74:705:733 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২২:২৯506568
    আজ কোথায় যেন একটা টপ টেন এর লিস্ট বেরিয়েছে। তাতে সর্বাধিক বিক্রিত সাহিত্যিকের নাম দেবারতি মুখোপাধ্যায়।

    পুরো লিস্টের লিংক টা পাওয়া যাবে ?
  • lcm | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২৩506585
  • কিন্তু বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার মতন ভাল সিনেমা তো আর হচ্চে না। হলেই দেখব।
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২৬506586
  •  আমি এখানে দেখলাম
     
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২৬506587
  •  আমি এখানে দেখলাম
     
  • এলেবেলে | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২৭506588
  • ওই জোৎস্নাতেই তো গণ্ডগোলটা পাকিয়ে ফেললেন! পারবেন পথের পাঁচালি লিখতে?
     
    কৃত্তিবাস সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:২৯506589
  • এটার উত্তর পেলাম না।
    এত এত খাজাখাজাতরখাজাতমসিরিয়ালসমুদ্র  পেরিয়ে নতুন ভোরের সূর্য এনে দেওয়া এক দুটো বাংলা সিরিয়ালের নামও যদি বলেন।
    ---
    অত্যন্ত খাজা খাজা সিরিয়াল, হইচইয়ের দুপুর ঠাকুরপো মার্কা কন্টেন্ট তো দারুণ হিট করে, ভিউ আর বিজ্ঞাপনের ছরড়া,  সিরিয়ালকারীরা সুপারহিট সেলিব্রিটি, আজ সকালে রাজনীতি শুরু করে বা না করে বিকালে ভোটে দাঁড়ালেও রেকর্ড ব্যবধানে জয় হয়, তো তাতে করে বাংলা সিরিয়াল বা হইচইয়ের সিরিজের কন্টেন্টের কী কী উন্নতি সাধন হয়েছে?  
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৩০506590
  • এটা কি সেই নতুন কৃত্তিবাস  যেখানে নতুন ইতি গজ স্টাইলে লেখা হয়েছিল? 
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::e8:daf6 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৩১506591
  • যাক তাহলে প্রমাণ পাওয়া গেলো যে বাংলা সিনেমা নাকি খাজা তাই দেখা যায় না। তাহলে হিন্দি, তেলেগু কেন এগিয়ে গেলো সেই নিয়ে চেঁচিয়ে লাভ নেই।

    এইখানে ২০১১ থেকে ২০১৯এ বলিউডের সবথেকে হিট তিনটে সিনেমার লিস্ট দিলাম। (এই সিনেমাগুলোর আদ্ধেক সিনেমা দেখার জন্য প্রডিউসারের উচিত দর্শকদের টাকা দেওয়া।)

    ২০১৯ঃ ওয়ার, কবির সিং, ঊড়ি।
    ২০১৮ঃ সন্জু, পদ্মাবত, সিম্বা
    ২০১৭ঃ বাহুবলি ২, টাইগার জিন্দা হ্যায়, গোলমাল এগেইন
    ২০১৬ঃ দঙ্গল, সুলতান, এমেস ধোনি
    ২০১৫ঃ বজরঙ্গী ভাইজান, প্রেম রতন ধন পায়ো, বজরঙ্গী মস্তানি
    ২০১৪ঃ পিকে, কিক, হ্যাপি নিউ ইয়ার
    ২০১৩ঃ ধুম ৩, ক্রিশ ৩, চেন্নই এক্সপ্রেস
    ২০১২ঃ এক থা টাইগার, দবাঙ্গ ২, রাউডি রাঠোর
    ২০১১ঃ বডিগার্ড, রেডী, রা.ওয়ান

    এইখানে লিস্টি পেয়ে যাবেন।
    https://www.addatoday.com/2012/11/bollywood-year-wise-top-grossers-1990.html
  • r2h | 2405:201:8005:9947:e92b:3c3:afba:1ddc | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৩৪506592
  • আমাদের পাড়ায় পদ্মশ্রী সিঙ্গল স্ক্রিন এখনো টিমটিম করে টিঁকে আছে, আমার প্রিয় হল, যে কোনদিন আইনক্স থেকে বেশি পছন্দ। কিন্তু বেশিদিন টিঁকবে বলে মনে হয় না।

    আর, দোষও দেওয়া যায় না। অল্পবয়সী স্মার্ট ছেলে মেয়েরা, যাদের পকেটে যথেষ্ট রেস্ত আছে, মাসে একটা সিনেমা দেখলে আলো ঝলমলে আরামদায়ক সিট কেতাদুরস্ত জায়গাতেই যেতে চাইবে। ভুবন তথা বাংলাবাজারের ভার তো তাদের কেউ দেয়নি।

    তো, গোলমেলে ব্যাপার।
  • এলেবেলে | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৩৫506593
  • এটি প্রতিভাসীয় কৃত্তিবাস। বাঙালি যে ফজলি ফুরিয়ে গেলে ফজলিতর আমের বায়নাক্কা করে এবং মোট্টে আতার নাম উচ্চারণ করে না, তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
     
    বাঙালির সমোস্কিতিও ওই ফজলিতর, তার আতা হওয়ার ইচ্ছাটাই চলে গেছে।
  • এলেবেলে | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৩৮506594
  • তবে টিকবেতে একস্ট্রা চন্নোবিন্নু দিলেও তা টিকবে না!!!
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৩৮506595
  • ধুর, বড়এস কে প্রশ্ন করছি এক, উত্তর দিচ্ছেন আরেক!  ঃ( 
  • S | 2405:8100:8000:5ca1::326:78e7 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৪০506596
  • পাই, ঐ খাজা বাংলা সিরিয়ালগুলো লোকে দেখছে বলেই এখনও ওগুলো চলছে। এখনও বাংলা এন্টারটেইনমেন্ট বলে একটা ইন্ডাস্ট্রি আছে। লোকে যদি ওসব দেখাও বন্ধ করে দেয়, তখন সেখানে হিন্দি খাজা সিরিয়াল জায়্গা নেবে, বা অন্য ভাষার খাজা সিরিয়াল ডাব করে চালানো হবে।
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৪২506598
  • ওহ,  প্রতিভাসীয়? তাহলে ঠিকই আছে।
     
    ভাল কথা,,এই টপারদের একজনের লেখার সন্ধান পেলাম। পাব্লিক ফিগারের পেজ থেকে। হাজার + লাইক আছে।
     
    পিসির শ্বশুরবাড়িতে বহু বছরের প্রতিষ্ঠিত এই মনসা মন্দির। দাদু, অর্থাৎ পিসেমশাইয়ের বাবা বলেন তিনিও নাকি জন্মের পর থেকেই দেখে আসছেন এই মনসা পুজো। আর এই পুজোর এক অন্যতম অলংকার হল ঠাকুরের সোনার সাপ। সারা বছর এই সাপ রাখা থাকে পিসিদের বাড়ির সিন্দুকে। শুধু এই পুজোর সময়েই বের করা হয় সেটা। পুজোর দু’দিন মায়ের মূর্তির গায়ে থাকে এই সোনার সাপ, তারপর আবার সেটি যথাস্থানে, অর্থাৎ সিন্দুকে রেখে দেওয়া হয়। বরাবর চলে আসছে এই রীতি। পিসেমশাইয়ের বাবা-মায়ের ঘরে পেল্লায় সাইজের এক সিন্দুকে রাখা থাকে এই সাপ। 

    কাল পুজো, আজ তাই বিকেলবেলা ঠাকুমা, মানে পিসির শাশুড়িমা বের করতে গেছিলেন সাপটা সিন্দুক থেকে। কিন্তু সিন্দুক খুলেই চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়েন তিনি। সিন্দুকের মধ্যে যে পিতলের থালার ওপর সাপটা বসানো থাকত, সেই থালাটা ফাঁকা। অর্থাৎ সাপ নেই সিন্দুকে! 

    খবরটা বাইরে বেরোনোর সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেছে চিৎকার চেঁচামেচি, কান্নাকাটি। সকলে একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে ঠাকুমাকে। আসলে সিন্দুকের চাবি যে ঠাকুমার আঁচলেই বাঁধা থাকত! আর ওই সিন্দুকে সাপ ছাড়া থাকত কিছু পুরোনো রূপর কয়েন, যেগুলো দাদু পয়লা বৈশাখের সময় বের করেন হলুদ-সিঁদুর মাখানোর জন্যে।  সেইদিনই পুজোর পর আবার যথাস্থানে ফিরে যায় তাঁরা। বছরের এই দু’টি বিশেষ দিন ছাড়া সিন্দুক খোলাই হয় না প্রায় বলতে গেলে। চাবিও সবসময় ঠাকুমার আঁচলেই বাঁধা ছিল। এই বছর পয়লা বৈশাখের দিন যখন সিন্দুক খোলা হয়েছিল, তখনও নাগরাজ ছিলেন যথাস্থানে। তাহলে কবে যে ওই সাপ তাঁর সিংহাসন ছেড়ে চলে গেল, কেউ বুঝতে পারছে না। 

    ঠাকুমা তো সেই তখন থেকে একনাগাড়ে কেঁদেই চলেছেন। তাঁর ধারণা এবার মা মনসার কোপে বড় কোনো বিপদ ঘনিয়ে আসতে চলেছে বাড়িতে। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও বুঝতে পারছেন না কি করবেন। এমন একটা জিনিস হারিয়েছে, সেটা অন্যান্য জায়গায় খুঁজলেও পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। উদ্দেশ্যহীন চেঁচামেচিতে তাই প্রথমে ভরে উঠেছিল বাড়ি। আর তখনই ঘুম ভেঙ্গে যায় জ্যোতিষ্কদের। ও এমনিতে দুপুরে ঘুমোয় না, কিন্তু ক্লান্তি আর ভরপেট খাওয়া অনুঘটকের কাজ করেছিল। গাঢ় ঘুমিয়ে পড়েছিল জ্যোতিষ্ক আর রাজর্ষি দু’জনেই। 

    চেঁচামেচিতে যখন ওদের ঘুম ভাঙ্গল, প্রথমটায় বুঝতে পারেনি কি হচ্ছে। বাড়িতে পুজো উপলক্ষ্যে অনেক আত্মীয়স্বজন এসে গেছেন, এমনিতেই গমগম করছিল বাড়িটা। তারওপর এতজনের চেঁচামেচিতে কেউ কারোর কথা আর বুঝতে পারছে না। 

    ‘কার এত বড় সাহস হবে বল তো ওই জিনিসে হাত ছোঁয়ানোর!’ ‘এত লোভ! পাপের ভয় নেই?’ ‘চাবি তো সবসময় মায়ের কাছেই থাকে, সিন্দুকটা খুলল কখন!’ – এরকম হাজারো টুকরো কথা ভেসে আসছিল ওদের কানে। কি করবে বুঝতে না পেরে ওরা সোজা চলে এসেছিল পিসির ঘরে। কিন্তু পিসি তখন ঘরে ছিল না। ঘর থেকে বেরোতেই বারান্দায় দেখা হয়েছিল পিসির বড় জায়ের মেয়ে কাজলদির সাথে। কাজলদির নভেম্বরে বিয়ে। বাড়িতে সারাক্ষণ ওইসব নিয়েই আলোচনা চলছে আজকাল। বিয়ের আগে এটা ওর শেষ মনসা পুজো। আর সেখানে এরকম একটা দুর্ঘটনা ঘটায় মুখ কালো করে ঘুরছিল মেয়েটা। জ্যোতিষ্করা তখনও বুঝতে পারেনি ঠিক কি হয়েছে। কাজলদিকে সামনে পেয়ে ওকেই ধরেছিল ওরা, 

    ‘কাজলদি, কি হয়েছে গো? সবাই এরকম কান্নাকাটি, চেঁচামেচি করছে কেন?’ 

    কাজলদি ওদের বলেছিল পুরো ব্যাপারটা। এমনকি এও বলেছিল যে সাপটা না পাওয়া গেলে পুজো কি করে হবে সেই নিয়েও সংশয় তৈরী হয়েছে। 

    যে কোনো ঘটনারই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়। তারপর আস্তে আস্তে ধামাচাপা পড়তে শুরু করে সেটা। সময় মানুষের মৃত্যুশোক ভুলিয়ে দেয়, আর এক্ষেত্রে তো একটা মূল্যবান জিনিস চুরি গেছে। জ্যোতিষ্করাও জানত যে পুজো নিশয়ই বন্ধ হবে না। পুজোয় সেই আনন্দটা না থাকতে পারে, তবে এতদিনের একটা পুজো কি আর বন্ধ হতে পারে! 

    সন্ধেবেলায় এলেন বাড়ির কুলপুরোহিত। ঠাম্মার ঘরে বসে শুনলেন পুরো ঘটনা। সিন্দুকটা তখনো খোলা। সিন্দুকের মধ্যে থেকে রূপোর পয়সাগুলো কিন্তু কিচ্ছু এদিক-ওদিক হয়নি। দাদু গুনে দেখেছেন, সব ঠিক আছে। 

    পুরোহিতমশাই সিন্দুকের সামনে গিয়ে একবার খুঁটিয়ে দেখলেন থালাটা ভাল করে, যার ওপর সাপটা রাখা ছিল। তারপর গম্ভীরমুখে এসে বসলেন চেয়ারের ওপর। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মাথা নেড়ে বললেন, 

    ‘আমার কিন্তু মনে হচ্ছে না এটা চুরির ঘটনা বলে’। 

    চমকে উঠলেন ঘরে উপস্থিত প্রত্যেকে। মানে? কি বলতে চাইছেন উনি? 

    ‘ঠিক বুঝলাম না ঠাকুরমশাই আপনি কি বলতে চাইছেন?’ – বললেন পিসেমশাই। 

    ‘দ্যাখো বাবা, আমার দেখে যা মনে হল, মা নিজের ইচ্ছেয় ছেড়ে চলে গেছেন। তোমরাই বলছ চাবি সবসময় বৌদির আঁচলে বাঁধা থাকে। আর তাছাড়া বাড়িতে বাইরের লোকও কেউ আসেনি তেমন। তাহলে কে এমন একটা দুঃসাহসিক কাজ করবে বলতে পারো? এই সাপ এখানে আছে প্রায় সত্তর বছর। আমি যা শুনেছি, কাকাবাবু, মানে তোমাদের স্বর্গীয় ঠাকুর্দা এটি বানিয়ে দিয়েছিলেন মাকে। তোমাদের বাবার ছেলেবেলায় একবার খুব কঠিন এক অসুখ হয়েছিল। কোনো ডাক্তার-বদ্যি সারাতে পারেনি। তখন কাকাবাবু মায়ের কাছে মানত করেন যে ছেলে সুস্থ হলে তিনি সোনার সাপ গড়িয়ে দেবেন মাকে। আর সেই কথা রাখতেই এই সাপ আসে বাড়িতে। আমার আগে আমার বাবাও মায়ের পুজো করে গেছেন ওই সাপ সমেত। এবার তুমিই বলোতো, হঠাৎ করে কার এমন সাহস হবে আসন থেকে মা মনসার বাহনকে সরানোর? না বাবা, আমার মনে হচ্ছে মা নিজেই তাঁর বাহনকে সরিয়ে নিতে চেয়েছেন, তাই চলে গেছেন, এখানে তোমার আমার কিছু করার নেই’ – থামলেন ঠাকুরমশাই। 

    এতক্ষন ধরে চুপ করে ঠাকুরমশাইয়ের কথা শুনছিলেন ঠাকুমা। শেষ হতেই আবার কেঁদে ওঠেন। 

    ‘মায়ের পুজো তাহলে কি হবে ঠাকুরমশাই?’ – মুখে আঁচল চেপে জিজ্ঞেস করেন উনি। 

    ‘পুজো যেমন হওয়ার হবে। আমি ওই জায়গায় একটা মাটির সাপ নিয়ে আসব কাল, কোনো চিন্তা নেই। আরে বাবা, সত্তর বছর আগেও তো পুজো হত। তারপর মা চেয়েছিলেন অলংকার, তাই দিয়েছিলে। এখন মা চাইছেন না, তাই সরিয়ে নিয়েছেন। এতে এত ভাবনা কি আছে?’ 

    ‘এত বড় অনাচার হল, পাপ হল, আমাদের পরিবারের কোনো ক্ষতি হবে না তো ঠাকুরমশাই?’ – আবার জিজ্ঞেস করেন ঠাকুমা। 

    ‘দেখুন বৌদি, এই লাভ ক্ষতি শব্দগুলো বড় আপেক্ষিক। এই যে বন্যায় গ্রামগুলো ভেসে গেল, এত মানুষ খেতে পাচ্ছে না, এরা কার কি ক্ষতি করেছিল বলুন তো? অতএব এইসব ভাববেন না। ভক্তিভরে মায়ের পুজো করুন যেমন করছেন, সব ভাল হবে। আমি কাল সকাল সকাল চলে আসব’। 

    চা-বিস্কুট খেয়ে চলে গেলেন ঠাকুরমশাই। আস্তে আস্তে উঠে আবার সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন পুজোর ব্যবস্থায়, কিন্তু কারোর মধ্যে যেন সকালের সেই আনন্দটা আর নেই। দাদু সকলকে ডেকে বললেন, 

    ‘মন খারাপ কোরো না, যার যাওয়ার সে যাবে। তুমি বা আমি তাকে আটকে রাখতে পারব না। সবাই শান্ত মনে মায়ের পুজো করো’। 

    জ্যোতিষ্ক আর রাজর্ষি ওদের যে ঘরটা দেওয়া হয়েছে, সেখানে ফিরে এল। ওদেরও মনখারাপ। রাজর্ষি একসময় বলল, 

    ‘আমি ছোটবেলায় যখন আসতাম মনসা পুজোতে, তখন দেখেছি ওই সাপটা। কি মোটা ভাবতে পারবি না। দূর থেকে দেখেছি আমি, কিন্তু এখনও মনে আছে। প্রচুর সোনা ছিল ওতে’। 

    ‘আমার না কেন জানিনা মনে হচ্ছে সাপটা চুরিই হয়েছে, আর সম্ভবত কয়েকদিনের মধ্যেই হয়েছে’ – হঠাত বলল জ্যোতিষ্ক। 

    ‘এই প্লিজ ভাই, তুই এখন চুরির কিনারা করতে বসিস না। তোর যা মনে হচ্ছে মনেই রেখে দে। ঠাকুরমশাই যাই বলুক, চুরি হয়েছে সেটা সবাই বুঝতে পারছে। একটা সোনার সাপ নিজে নিজে সিন্দুক থেকে বেরিয়ে চলে যাবে – এমন আজগুবি গল্প আজকের দিনে কেউ বিশ্বাস করবে না। কিন্তু ঠাকুরমশাই তো বংশ পরম্পরায় এ বাড়িতে পুজো করছেন, তাই ওনাকে কেউ ঘাঁটায় না বিশেষ। উনি যা বলছেন সবাই মেনে নিয়েছে। কিন্তু সবাই জানে এটা চুরি। আর এ বাড়ির লোকই যদি এটা ঘাঁটাতে না চায়, তুই আমি কে এসব বলার? প্লিজ জ্যোতিষ্ক, এসবের মধ্যে ঢুকিস না। আমি কাকিমাকে কথা দিয়ে এসেছি’ – কাতর গলায় শেষ কথাগুলো বলে রাজর্ষি। 

    ‘উফফ রাজর্ষি, তুই সবসময় এত ভয় পাস কেন বলতো? আমি কি বলেছি যে আমি কিছু করছি? আমি শুধু তোকে বললাম যে এটা চুরি। মানে কেউ সাপটা বের করে নিয়েছেন। আর সেটা করার সময় একটা চিহ্নও রেখে গেছেন, যার মাধ্যমে বোঝা যায় যে সাপটা নিজে থেকে চলে যায়নি’। 

    ‘কি চিহ্ন?’ – হঠাৎ বেশ কৌতূহলী হয়ে ওঠে রাজর্ষি। 

    ‘এখন কেন হ্যাঁ? বলব না যাহ্‌। যদি সত্যিই আমি ব্যাপারটা নিয়ে কিছু করি, তখন বলব। তার আগে আমাকে একটাও প্রশ্ন করবি না’।

    *******স্বর্ণসর্প সন্ধানে*******
    ****চতুর্জালে জ্যোতিষ্ক**** 

    বইটি বাড়িতে বসে পেতে হোয়াটস্যাপ করুন :9830463981/ 8100268975

    জ্যোতিষ্কর পরবর্তী অ্যাডভেঞ্চারের বই 'শহর পেরিয়ে জ্যোতিষ্ক' ও 'চতুর্জালে জ্যোতিষ্ক' একসঙ্গে অর্ডার করুন আর পেয়ে যান একসঙ্গে বাড়িতে বসে
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৪৩506599
  • কিন্তু আপনার তত্ত্ব তো খাজা থেকেই রাজা আসবে। রাজা কই? 
  • π | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৪৪506600
  • এককালে,  শুরুর যুগে যখন যথেষ্ট ভাল কন্টেন্টের সিরিয়াল হত আর তারও অনেক আগে কমার্শিয়াল সিনেমাও, তার জন্য কত খাজার পাঁক ঘাঁটতে হয়েছিল? 
     
    আপনার এই তত্ত্বের জাস্ট কোন প্রমাণ পাচ্ছিনা! 
  • r2h | 2405:201:8005:9947:e92b:3c3:afba:1ddc | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৪৬506601
    • এলেবেলে | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৩৮506594
    • তবে টিকবেতে একস্ট্রা চন্নোবিন্নু দিলেও তা টিকবে না!!! 
  • এলেবেলে | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৪৬506602
  • এখন বাংলা সাইত্যে তিনটে জঁর - ভূত, গোয়েন্দা আর থ্রিলার। বাকি কিছু নাই। আর চিরকিশোর থাকতে চাওয়া বাঙালিদের জন্য দাদা সিরিজ তো আছেই। নামিয়ে নিলেই হল। নন ফিকশন? ফুস।
  • dc | 2401:4900:2328:c9e4:906c:87d9:547f:6ab6 | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৪৬506603
  • S এর দেওয়া হিন্দি সিনেমার লিস্টে একটাও সিনেমা দেখিনি। কিন্তু আমার না দেখার তোয়াক্কা না করেই হিন্দিতে অখাদ্য সিনেমা বানিয়েই চলেছে :-(
  • r2h | 2405:201:8005:9947:e92b:3c3:afba:1ddc | ১৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:৪৬506604
  • উফ, ইমোজিটা আসেনি

    :{
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন