এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  সমাজ

  • শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতর নারীভাবনা এবং কিছু সরলমতি জিজ্ঞাসা­­­­­­­­­­­­­­­­ 

    Sandipan Majumder লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সমাজ | ০১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩৩৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • উত্তরে থাকো মৌন
    কেন তুমি ভাবো
    এ আকুতি শুধু যৌন? (উত্তরে থাকো মৌন : বিষ্ণু দে)

    [ এই লেখা রামকৃষ্ণ কথামৃতের ভক্তদের জন্য নয়। তাঁরা দয়া করে এই লেখাটি পড়বেন না। কারণ এই লেখা সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে উৎসারিত। সেই একই কারণে এই লেখা রামকৃষ্ণ দর্শনের প্রতি অকারণ বিদ্বেষবশত কোনো কুৎসামূলক লেখাও নয়। কারণ বর্তমান লেখক মনে করেন যে রামকৃষ্ণদেবের মত সরলহৃদয়, সুরসিক, তত্বজ্ঞানী এবং বিরাট ব্যক্তিত্বের অধিকারী ধর্মপ্রচারক বাংলায় চৈতন্যদেবের পর খুব বেশি আসেন নি। বিশেষত পরধর্ম সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য বাংলার মাটি থেকে উঠে আসা ঔদার্যের পরাকাষ্ঠা। তবে রামকৃষ্ণদেবের ‘কামিনীকাঞ্চন ত্যাগ’ তত্ব নিয়ে আমার বহু প্রশ্ন চিরকাল ছিল। সময়ের সঙ্গে সেই সংশয়ের অবসান তো হয়ই নি, আরো বেড়েছে বরং। এখন ভক্তকুলের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর চাওয়া বৃথা। কারণ রে রে করে তেড়ে আসা ছাড়া বা অধিকারীভেদের কথা বলে প্রশ্নের পথ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাঁদের কাছে যুক্তিসমৃদ্ধ তর্ক কিছু পাই নি। তাই এক অর্থে এই লেখা শুধুমাত্র সেই মানুষদের জন্য, যাঁরা আমার মত সাধারণ, অতি সাধারণ জিজ্ঞাসু। ]

    শ্রীরামকৃষ্ণর কথায় “কামিনী-কাঞ্চনই মায়া। ওর ভিতর অনেকদিন থাকলে হুঁশ চলে যায় — মনে হয় বেশ আছি।’’ (শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত, অখণ্ড সংস্করণ, উদবোধন কার্যালয়, ২০১৬, পৃষ্ঠা ৭৪)।

    প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে কামিনী শব্দটি। বাংলায় নারীকে বোঝানোর জন্য যত শব্দ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে যৌন অনুষঙ্গ সম্বলিত দুটি শব্দ হচ্ছে কামিনী আর রমণী। দ্বিতীয় শব্দটি সরাসরি রমণ বা যৌনকর্ম থেকে উদ্ভুত, প্রথম শব্দটি কামনা থেকে। অর্থাৎ কামিনী শব্দটি সরাসরি নারীর একটি ‘Sexed Identity’ তৈরী করে।

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে কামিনীর প্রতি কাম কার জন্মায়? পুরুষমানুষেরই তো (সমকামী হলে নারীদেরও জন্মাতে পারে কিন্তু সে প্রসঙ্গে আমি যাচ্ছি না এখন)? তাহলে নারীরা ঈশ্বরলাভের ইচ্ছা হলে কী করবেন (রামকৃষ্ণ মিশনের নারী ভক্তের সংখ্যা তো নেহাত কম নয়)? কারণ একসঙ্গে কামিনী-কাঞ্চন বললেও কামিনীই যে দোষের উৎস, মূল কারণ সেটা রামকৃষ্ণদেব স্পষ্ট করেই বলেছেন, “কামিনী-কাঞ্চনে জীবকে বদ্ধ করে। জীবের স্বাধীনতা যায়। কামিনী থেকেই কাঞ্চনের দরকার। তার জন্য পরের দাসত্ব। স্বাধীনতা চলে যায়। তোমার মনের মত কাজ করতে পার না।’’

    আসলে ‘সংসার করা’ বা বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে এই সরল যুক্তির কারণেই রামকৃষ্ণদেব সন্দেহ করতেন। সামাজিক ইতিহাস দিয়ে এই বিষয়টিকে ব্যখ্যা করার চেষ্টা ঐতিহাসিক সুমিত সরকার করেছিলেন তাঁর ‘কলিযুগ, চাকরি ও ভক্তি’ নামক প্রবন্ধে (Writing Social History, OUP, Page 282)।

    স্বামী যদি ঈশ্বরসাধনায় মগ্ন হয়ে সাংসারিক কর্তব্যে অবহেলা করে সেক্ষেত্রে স্ত্রীর অনুযোগ করারও অধিকার নেই।
    মণি (শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতি) ­­-- স্ত্রী যদি বলে, আমায় দেখছ না, আমি আত্মহত্যা করব; তাহলে কি হবে?
    শ্রীরামকৃষ্ণ (গম্ভীর স্বরে) — অমন স্ত্রী ত্যাগ করবে, যে ঈশ্বরের পথে বিঘ্ন করে। আত্মহত্যাই করুক আর যাই করুক। যে ঈশ্বরের পথে বিঘ্ন দেয়, সে অবিদ্যা স্ত্রী। (২০১৬, ঐ, পৃঃ ৭৪)
    রামকৃষ্ণদেব বলেন নি যে স্ত্রী যদি ঈশ্বরলাভের ইচ্ছায় সংসার বা স্বামীপুত্রকে অবহেলা করে, মীরাবাইএর মত, সেক্ষেত্রে কী হবে। তাই বলে রামকৃষ্ণদেব কী নারীদের ঘৃণা করতে বলছেন?

    একজন ভক্ত – মহাশয়! মেয়েমানুষকে কি ঘৃণা করব?
    শ্রীরামকৃষ্ণ — যিনি ঈশ্বরলাভ করেছেন তিনি কামিনীকে আর অন্য চোখে দেখেন না যে ভয় হবে। তিনি ঠিক দেখেন যে মেয়েরা মা ব্রহ্মময়ীর অংশ, আর মা বলে তাই সকলকে পূজা করেন। (২০১৬, ঐ, পৃঃ ১১৮)

    এখন তাহলে দাঁড়াল যে নারীর দুটি রূপ, প্রথম যে রূপটি সর্বসাধারণ্যে, এমনকি সাধুসন্তদেরও বিবেচ্য সেটা কামিনী রূপ। এই রূপ থেকে ‘ভয়’ পাওয়ার আছে। সাধুসন্তদের তো আরো বিশেষ করে আছে যেটা রামকৃষ্ণ কথামৃত জুড়েই পাওয়া যায়। তাহলে কোটিকে গোটিক পরমহংসপ্রতিম মানুষ, যিনি ঈশ্বরলাভ করেছেন, তিনিই একমাত্র নারীকে কামিনী রূপে না দেখে মা ব্রহ্মময়ীর অংশ রূপে দেখতে পারেন। তবে সেই দশায় কয়জন পৌঁছোতে পারেন সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব তৈরী করে দিয়েছেন —
    শ্রীরামকৃষ্ণ — স্ত্রীলোক গায়ে ঠেকলে অসুখ হয়, যেখানে ঠেকে সেখানটা ঝনঝন করে, যেন শিঙি মাছের কাঁটা বিঁধলো। (২০১৬, ঐ, পৃঃ ১০৫০)।

    এবার যেটা বিবেচ্য হওয়া উচিত, অর্থাৎ মেয়েরা কোন পরিচিতিতে বাঁচবে তারা নিজেরাই সেটা ঠিক করবে। অন্তত ২০২২ সালে, সেটাই হওয়া উচিত। তারা যে অন্তত কামিনী এবং ব্রহ্মময়ীর অংশ (অন্যত্র ভগবতীর অংশ বলে উল্লিখিত) – শুধু এই দুটি পরিচয়েই বাঁচবে না সেটা নিশ্চিত। তার আর কিছু কারণ যদি নাও থাকে, সিম্পলি সেভাবে বাঁচা সম্ভব নয় বলে, উচিত নয় বলে।

    কামিনী বর্জনের উদ্দেশ্য হল কাম বর্জন। ভক্তের লক্ষণ হিসেবে রামকৃষ্ণদেব বলছেন, “ঠিক ভক্ত জিতেন্দ্রিয় হয়,কামজয়ী হয়। গোপীদের কাম হত না’’ (২০১৬, ঐ, পৃঃ ২১৩)। উনি অন্যত্র বলছেন, “যত স্ত্রীলোক, সকলে শক্তিরূপা। সেই আদ্যাশক্তিই স্ত্রী হয়ে, স্ত্রীরূপ ধরে রয়েছেন’’ (পৃঃ ৩২৪)। রামকৃষ্ণদেব মাতৃভাবকেই শুদ্ধভাব বলতেন। অথচ দেখা যাচ্ছে যে স্ত্রীলোক সম্পর্কে আতঙ্ক থেকে তিনি নিজেও মুক্ত ছিলেন না। তাই এই মাতৃভাব কামভাবের বিরুদ্ধে তাঁর স্বরচিত বর্ম বলেই মনে হয়। তাই মাতৃভাব সত্বেও তিনি মেয়েমানুষ সম্পর্কে বলেন “ভগবতীর অংশ। কিন্তু পুরুষের পক্ষে — সাধুর পক্ষে — ভক্তের পক্ষে – ত্যাজ্য ’’ (পৃঃ ৬২৩)। সকলের কাছেই যদি ত্যাজ্য হতে হয় তাহলে ভগবতীর অংশ হয়ে বেচারীদের লাভ কী সে প্রশ্ন উঠতে পারে।

    এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামনা কম থাকা বা না থাকা মানেই কাম কম থাকা নয়, যেমন সমকামীদের ব্যাপারটা। ঈশ্বরলাভের প্রশ্নটি আমার অধিকারের বাইরে, কিন্তু মানুষ হিসেবে উৎকর্ষ লাভের জন্য বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কাম বেশি বা কম থাকাতে কি কিছু নির্ভর করে? এমনকি অনেক মানুষ পৃথিবীতে আছেন যাঁরা এমনিতে সুস্থ, স্বাভাবিক কিন্তু কামপ্রবৃত্তি প্রায় নেই। ইংল্যাণ্ড, আমেরিকা এবং কানাডাতে এই মানুষেরা সামনে আসছেন এবং তাঁরা ‘The Asexual Visibility and Education Network (AVEN)’ গড়ে তুলেছেন। ওঁদের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট লেখা রয়েছে ‘অযৌনতা কোনো রোগ নয়। এর সমাধান বা চিকিৎসা খোঁজার কোনো দরকার নেই’ (Against Health, Zonathan M Metzel and Anna Kirkland, Editors, Page 157)। সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের যৌনপ্রাচুর্য থাকতেই হবে, আমেরিকান সংস্কৃতি এবং বাণিজ্যিক চিকিৎসাশাস্ত্র যেটা শেখাতে চেষ্টা করে সেই পরিচিত ধারাপাত উলটে দিয়ে এরা শেখান মানুষের যৌনতার বহুবর্ণিলতাকে। আমরা যাকে যৌন কামনা বলি তার অনুপস্থিতিও সেই বর্ণালির মধ্যেই পড়ে, কোনো অস্বাভাবিকতার তকমা ছাড়াই। এর সঙ্গে ভালো মানুষ হয়ে ওঠার, নৈতিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। ঈশ্বরলাভের প্রচেষ্টার সম্পর্ক আছে কিনা সেটা ভক্তরা ভাল বলতে পারবেন, তবে এই সরলমতি প্রশ্নগুলির মধ্যে তার উত্তর নিশ্চয়ই লুকিয়ে নেই।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০১ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • যোষিতা | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ০০:২৪514291
  • ভালো লেখা।
  • হতাশ | 103.76.82.32 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১১:২৫514293
  • এত আনফোকাসড ইনকোহেরেন্ট লেখা সন্দীপনদার থেকে সাম্প্রতিক অতীতে পাইনি। ্মনে হল শুধু AVEN এর ইনফোটুকু পেয়ে সেটা নিয়ে লেখা তৈরি করতে গিয়ে প্রেমাইস হিসেবে কোথা থেকে লেখাটা ধরবে ভেবে চিন্তে রাকৃ টেনে এনেছ। কোনো "সরলমতি" প্রশ্নই তার আগের লাইনগুলোয় পুট করা টেক্সচুয়াল এভিডেন্সের সাথে রিলেটেড নয়। সমকামী - বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কম কামসম্পন্ন মানুষ -  কামপ্রবৃত্তিবিহীন মানুষ এদের রিলেট করার লজিকই এস্টাবলিশড হল না, লাইনগুলো জাস্ট কিছু লেখার জন্য লেখা হয়ে রইল। ভালো মানুষ হয়ে ওঠার, নৈতিকতার সাথে মানুষ হিসেবে উৎকর্ষ লাভের সাথে ঈশ্বরলাভের প্রচেষ্টার জন্য দেওয়া ইনস্ট্রাকশনসমূহকে কনফিউজ করার লজিকও বোধগম্য নয়। প্রশ্নগুলোও আসলে রেটোরিক, কিন্তু সেগুলো উল্লিখিত কোনো ডিকটামকেই চ্যালেঞ্জ করছে না, বস্তুত প্রতিটাই স্ট্যাগার্ড কনজেকচার হয়ে রয়েছে। 
    প্রথম প্রশ্ন - "নারীরা ঈশ্বরলাভের ইচ্ছা হলে কী করবেন" ? আবার লি্খেছ "ঈশ্বরলাভের প্রশ্নটি আমার অধিকারের বাইরে"। আবার দ্বিতীয় প্রশ্ন - "স্ত্রী যদি ঈশ্বরলাভের ইচ্ছায় সংসার বা স্বামীপুত্রকে অবহেলা করে, মীরাবাইএর মত, সেক্ষেত্রে কী হবে?" - রামকৃষ্ণদেব বলেন নি (এ দুটি প্রশ্নের কোনোটির প্রসঙ্গেই, নারীদের করণীয় সম্পর্কে, অন্তত কোটেড টেক্সটগুলিতে তো নয়ই। বলবেনই বা কেন, কথামৃত থোড়াই নারীদের দেওয়া জ্ঞান/বাণী-র সংকলন!) তার পরের লাইন - "তাই বলে রামকৃষ্ণদেব কী নারীদের ঘৃণা করতে বলছেন?" গোলপোস্ট দেখাই যাচ্ছে না, শুধু নানা দিকে শট মারা চলছে। কনক্লুশন এল - "মেয়েরা কোন পরিচিতিতে বাঁচবে তারা নিজেরাই সেটা ঠিক করবে।" কেউ বারণ করেছে কি? "অন্তত ২০২২ সালে" - এদিকে কলমযুদ্ধ চলছে তার ১১২ কি ১২৫ বছর আগের বলা চাট্টি কথা নিয়ে, যখন গোটা কলকাতা বস্তুত পতিতালয়ে পরিণত হয়েছিল (- এটার রেফারেন্স আছে, এক্ষুণি মনে নেই, সেসময়ের একটা রিপোর্টে বলা ছিল এটা - কাছাকাছি সময়, যখন বঙ্কিম "বাবু" লিখছেন)। 
    তৃতীয় প্রশ্ন - "পুরুষের পক্ষে — সাধুর পক্ষে — ভক্তের পক্ষে – ত্যাজ্য । সকলের কাছেই যদি ত্যাজ্য হতে হয় তাহলে ভগবতীর অংশ হয়ে বেচারীদের লাভ কী"? পরিষ্কার সম্পূর্ণ ডিসজয়েন্ট নন-ইন্টারসেক্টিং সেট নিয়ে আলোচনা করে প্রশ্ন করা হচ্ছে ইন্টারসেকশন অংশটির জন্য। ভক্ত বা ঈশ্বরলাভাকাঙ্ক্ষী পুরুষ A আর যে নারীর ‘Sexed Identity' কামিনী B এদের  A\cap B কেন নেই এই আকুতিতেই পুরো প্রবন্ধের শ্রম বৃথা গেল। যারা ঈশ্বরলাভ করতে চান না, আর  যথেষ্ট কাম উদ্‌যাপন করে বা না-করে সুখে-শান্তিতে বা তার অভাবে সংসার বা জীবন যাপন করছেন তাদের অস্তিত্ব একেবারে নেই ধরে নিয়েই যাবতীয় আক্ষেপ (যেহেতু এদের জন্য কোনো রাকৃবাণী কোট করা নেই) করেই লেখাটা জলে গেল।
    আবার "মানুষ হিসেবে উৎকর্ষ লাভের জন্য বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কাম বেশি বা কম থাকাতে কি কিছু নির্ভর করে? এমনকি অনেক মানুষ পৃথিবীতে আছেন যাঁরা এমনিতে সুস্থ, স্বাভাবিক কিন্তু কামপ্রবৃত্তি প্রায় নেই।" এখানে গোটা লেখার লজিকটাকেই কনট্রাডিক্ট করা হল। যদি বলতে চাওয়া হয় রাকৃ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কাম কম থাকাকে মানবিক ঔৎকর্ষের মান্য সূচক চলতে চেয়েছেন (আসলে কিন্তু তা নয়, ঈশ্বরলাভের পন্থা হিসেবে বলা) এবং সেদিকে লোকজনকে প্রোমোট করেছেন, তাহলে Asexual-রা রাকৃ মতে উৎকৃষ্ট মানুষই হলেন। বাকি প্যারাগ্রাফে Asexuality কে সাপোর্ট করে যেটুকু লেখা হয়েছে, তার জন্য অন্তত অ্যান্টি-রাকৃ অবস্থান নেওয়ার দরকারই ছিল না। 
    এত কিছু লিখতাম না, কিন্তু সন্দীপনদা একজন প্রিয় মানুষ, অন্তত সিনেফিল হিসেবে বা অপর-সূত্রে, তাইই .........
  • Sandipan Majumder | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:০৪514294
  • @হতাশ, মানুষ যখন ক্যানোনিকাল কিছুর বিরুদ্ধে  বীতরাগ প্রকাশ করে তখন কিছুটা  ইনকোহেরেন্টই হয় বোধহয়। তবে কোটেশন রূপী যে মণিমুক্তোমালা এখানে দিয়েছি, সেগুলি সবচেয়ে ভালো ভাবে অনুভব  করতে পারবেন, আমার ধারণা, সংবেদী মহিলারা। দুবছর  আগে আমার টাইমলাইনে যখন এটি লিখেছিলাম, তখন তাই দেখেছিলাম। মূল প্রেমাইস, পাল্টানোর কোনো কারণ দেখছি না। এত বড় রিয়্যাকশন পাওয়ার পরও।
  • হতাশ | 103.76.82.32 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৫৬514295
  • টাইমলাইনের মোট মহিলা-মন্তব্য তো ছিল শুধু দুজনের। স্বাতী রায় আর অর্পিতা গুহ। 
     
    স্বাতীদি, সিস্টার নিবেদিতা গার্লস স্কুলের ছাত্রী, লিখেছিলেন - 
    "রামকৃষ্ণ কথামৃত পড়েছি অনেকদিন আগে। ভাল করে মনে নেই। তবে আমার প্রশ্ন জাগে, বৌ টিকে নিয়ে। একদিকে বিয়ে মানে জন্ম জন্মান্তরের সম্পর্ক বলে আজন্ম লালিত সংস্কার, অন্য দিকে স্বামীর মাতৃভাবে পুজো। জীবনে যৌন আনন্দ না পেয়ে যৌবন কাটানো। নহবতে গা জুড়ানোর জন্য যখন তখন গঙ্গা স্নানের পথ ও বন্ধ। শুধু ভোররাতে ই তা সম্ভব। যখন বুড়ো খোকারা তাকে আবেগ গদগদ স্বরে মা বলে ডাকতেন সত্যিই কি তার মন জুড়াত? কি অবদমিত জীবন! স্বামী আর ভক্ত রা মিলে তাকে জ্যান্তে পাথর বানিয়ে দিল !" 
    এবং 
    "বড় হওয়ার পর থেকে আমার শ্রীমতি সারদা চট্টোপাধ্যায়ের ছবি দেখলে বডড কষ্ট হয়। সারদা মঠের অগণিত ভক্ত যে চোখে শুধু ই করুণা দেখেন, আমার কেন জানি না সে চোখ দেখলেই জালে আটকানো হরিণ মনে হয়।" 
     
    -- স্পষ্টতই তিনি "কোটেশন রূপী যে মণিমুক্তোমালা " সংক্রান্ত কিছুই বলেন নি।
     
    আর অর্পিতাদি লিখেছিলেন, "মনে অনেক প্রশ্ন ওঠে আপনার এই লেখা পড়লে । প্রচলিত ধ্যানধারণা বিরুদ্ধ কিন্তু যুক্তি যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য" 
    -- এটাও ঠিক সেভাবে ... 
     
    দুবছর আগে এই রিয়্যাকশন দেখেছিলে - তাইই বললে? angel
     
    যাই হোক, রচনাবলী থেকে স্ট্রে কোটেশন সংকলন করে, একজন লোকের নাম বলো ইনক্লুডিং রবীন্দ্রনাথ বা একটা বইয়ের নাম বলো, ইনক্লুডিং এনি ধর্মগ্রন্থ, যেখান থেকে চাইলে মিসোজিনি খুঁজে নেওয়া যাবে না। নরসিংহ সীল টীল এসব কোটেশন সংকলন করেই বেঁচে আছেন। মুক্তমনা সাইট-এ গেলেই এর লম্বা লিস্টি পাবে। রঞ্জনদাও এরকম একটা লম্বা লিস্ট হ্যান্ডি রাখেন। 
     
    সে যাই হোক, আমার বক্তব্য জাস্ট তোমার এই লেখাটা নিয়ে। টেকস্ট ফর্মেশন বা কনস্ট্রাকশন-এর স্বাভাবিক ও মিনিমাম লজিকাল কনসিস্টেন্সির সমস্যা চোখে লাগল পড়তে গিয়ে। ্মানে কোটেশন নিয়ে বক্তব্য নেই, কনক্লুশনেও বক্তব্য নেই কিন্তু যে কোটেশন ব্যবহার করে যা কনক্লুড করার চেষ্টা হচ্ছে তাতে সমস্যা লাগছে। দুটো জিনিস ছাড়া ছাড়া হয়ে গেছে।
  • Sandipan Majumder | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:২৫514296
  • @হতাশ, আমার জানা হোলো না, মানবিক ঔৎকর্ষ লাভ না করে ঈশ্বরলাভের পথে অগ্রসর হওয়া যায় কি করে? যে মানবিক ঔৎকর্ষলাভের সঙ্গে কাম প্রবৃত্তি বেশি বা কম থাকার কোনো সম্পর্ক নেই, সেটা সাধনার অংশ হয় কি করে?  AVEN এর উদাহরণ এমনি দিই নি। জন্মগতভাবে অ্যাসেকশুয়াল হওয়াটা বায়োলজিকাল ব্যাপার, সেটা ঈশ্বরের পথে এগিয়ে থাকার সহায়ক নাকি?  রামকৃষ্ণ নিজেও তাই হতে পারেন। কিন্তু ঈশ্বর লাভের জন্য বাকিদের চেষ্টা করে সেই অ্যাসেক্সুয়ালিটি অর্জন করতে হবে, তার জন্য সাধনা করতে হবে, সেটা কিরকম কনট্রাডিকটরি হয়ে যায় না? 
    মিসোজিনি অতদিন আগের একজন ধর্মপ্রচারকের বাণীতে থাকবে এটা স্বতঃসিদ্ধপ্রায়, কিন্তু সেই বাণী নিয়ে আবালবৃদ্ধবণিতার মুগ্ধ আবেশ লজ্জাজনক।
  • q | 2405:8100:8000:5ca1::96:f515 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৪৯514299
  • চমৎকার লেখা। ভগবানকে পাবার সঙ্গে সেক্সের কি সম্পর্ক? বুদ্ধদেবের তো ছেলে ছিল। রামকৃষ্ণ দুটিকে গুলিয়ে ফেলেছেন। অনেকে যেমন পিডোফিলদের খারাপ মানুষ ভাবে, আসলে এটি তো সাইকোলজিকাল ট্রেট। সমস্তই নিজেদের প্রারব্ধ অনুযায়ী হচ্ছে, আলাদা করে এটি খারাপ ওটি ভাল বলার কিছু নেই।
  • হতাশ | 103.76.82.32 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:০৪514300
  • আমি তো ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি না তাই ঈশ্বরলাভের পথে অগ্রসর হতে মানবিক ঔৎকর্ষ কোন কোন প্যারামিটার-এ কতটুকু করে লাগে বলতে পারি না। প্যারামিটার বলতে ধরা যাক 
    (১) অন্য মানুষের প্রতি মনোভাব - 
     ..(১ ক) ধনী বা দরিদ্রের প্রতি তথা অর্থনৈতিক 
     ..(১ খ) ভিন্নধর্মের মানুষের প্রতি
     ..(১ গ) নিজ ধর্মের ভিন্ন জাতি-বর্ণের মানুষের প্রতি
     ..(১ঘ) ভিন্ন লিঙ্গের প্রতি
     ..(১ ঙ) ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতার মানুষের প্রতি ইত্যাদি 
    (২) অন্য জীবের প্রতি মনোভাব, তার মধ্যে (ক) (খ) (গ) (ঘ) যা সম্ভব সেসব 
    (৩) নিজের প্রবৃত্তির উপর কন্ট্রোল, রিপু ইত্যাদি 
    (৪) নিজের চোদ্দটা ইন্দ্রিয়ের প্রতি কন্ট্রোল জ্ঞানেন্দ্রিয় কর্মেন্দ্রিয় অন্তরেন্দ্রিয় ইত্যাদি
    এই লিস্টি আর বাড়ালাম না জানি  না বলেই। আপত্তি শুধু ক্রাফটের ক্ষেত্রে। গোটা লেখার সব উদাহরণ ঈশ্বরলাভ করতে হলে কী করিতে হইবে সে সংক্রান্ত অথচ স্বীকার করা হচ্ছে "ঈশ্বরলাভের প্রশ্নটি আমার অধিকারের বাইরে" বা এর সঙ্গে "ঈশ্বরলাভের প্রচেষ্টার সম্পর্ক আছে কিনা সেটা" আমি নয় "ভক্তরা ভাল বলতে পারবেন"। তাহলে আর গোটা লেখাটা ধরে রাখার ভিত কিছু থাকে কি? যারা ঈশ্বরলাভ করতে চায় না তাদের কিছু উপদেশ দেওয়া হয়েছে কি?
     
    এবার ভিন্নলিঙ্গের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি-কে একটা প্যারামিটার ধরলে তাতে সে-ঔৎকর্ষ একজন কামুক "যোনিকীট" পুরুষ-এর বেশি না যে পুরুষ নারীকে আদ্যাশক্তির অংশ ভেবে মাতৃরূপে শ্রদ্ধা করে তার বেশি - এ নিয়ে রজনীশ বা রামকৃষ্ণ ভিন্নমত হলেও আমার বলার কিছু নেই। অ্যাসেক্সুয়ালিটি না প্রবল কামলালসা কোনটা ঈশ্বরের পথে এগিয়ে থাকার সহায়ক তাও জানিনা, যেহেতু ঈশ্বর জিনিসটাই জানিনা। তবে যে লোক রাতের পর রাত বেশ্যাগমন করাকেই জীবনের পরম আনন্দ ভেবেছে নারীর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গির তুলনায় যে নিজের স্ত্রীকে দেবীজ্ঞানে পূজো করতে পারে - মনুষ্যত্বের বা নৈতিকতার কোরিলেশন তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বা মানসিকতার নিরিখে কোনো ফারাক ফেলে কিনা বোঝা খুবই কঠিন কি? লোকজন রিপু-র কথা বলে। রিপু জয় করার কথা বলে। প্রথম রিপু-ই কাম। সেটা তাহলে জয় করতে হবে বলেই তো মনে হয়। কারও ক্রোধ বেশি কারও কম। প্রকৃতিগতভাবে বা জন্মগতভাবে। লোভ কম বা বেশি। ইত্যাদি। এবার কিছু মানুষের জন্মগতভাবে লোভ কম আছে বলে ইন প্রিন্সিপল মানুষকে নির্লোভ হওয়ার সাধনা করতে হবে না প্রবল লোভী হয়েই সে আধ্যাত্মিকতার চরমে পৌঁছবে এতে কন্ট্রাডিকশনের কী আছে সত্যই বুঝিনি। সহজ বুদ্ধিতে তো লোভ জয় করার কথাই বুঝি।
     
    রবীন্দ্রনাথ সন্দীপন (চট্টো) ফুকো দেরিদা কামু কাফকা মার্কস এঙ্গেলস বা জয়েস মার্কেজ বেদ গীতা কোরান বাইবেল - যে কোনওটা নিয়েই আবালবৃদ্ধবণিতার মুগ্ধ আবেশ লজ্জাজনক সন্দেহ নেই। 
  • হজবরল | 77.68.26.238 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:১২514301
  • এখানে একটা পয়েন্ট সবাই এড়িয়ে যায়। আদতে কি শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত বইটার কথাগুলো রামকৃষ্ণের নিজের নাকি শ্রীম (মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত) তার নিজের কথাগুলো রামকৃষ্ণের কথা বলে চালিয়েছেন? মনে রাখতে হবে মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত একজন গৃহী ভক্ত ছিলেন, তিনি বিবেকানন্দ বা বাকিদের মতন সন্ন্যাসী ছিলেন না। তার বিয়ে ছেলেমেয়ে সবই হয়েছিল। আমার মনে হয় বিবেকানন্দ বেঁচে থাকলে শ্ৰীম এই বই ছাপানোর সাহস পেতেন না, বইটা বেরিয়েছিল বিবেকানন্দ প্রয়াত হবার পর। 
     
    এটা নতুন কোনো ব্যাপার নয়। একই কায়দায় কনস্টান্টাইন নিউ টেস্টামেন্ট লিখে আসল খ্রীষ্টকে মুছে ফেলেছেন। গৃহী ভক্তরা না থাকলে আর মোটা মোটা ডোনেশন কে দেবে ?
  • এলেবেলে | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৩৫514302
    • হজবরল | 77.68.26.238 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:১২514301
    • আমার মনে হয় বিবেকানন্দ বেঁচে থাকলে শ্ৰীম এই বই ছাপানোর সাহস পেতেন না, বইটা বেরিয়েছিল বিবেকানন্দ প্রয়াত হবার পর। 
    এটা পুরোটা ঠিক নয় কারণ শ্রীম-র কথামৃতই যে রামকৃষ্ণ-জীবনীর ভবিষ্যৎ মাপকাঠি হবে সে সূচনা করে গিয়েছিলেন খোদ বিবেকানন্দ। ১৮৯৭ সালের ১২ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডি থেকে লেখা প্রথম ও ওই বছরেরই ২৪ নভেম্বর দেরাদুন থেকে লিখিত দ্বিতীয় পত্রে শ্রীম-র দু’খণ্ডে লেখা ‘Gospel of Sri Ramakrishna’-র ভূয়সী প্রশংসা করেন বিবেকানন্দ। দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি এমনও লেখেন যে --- আমি যে বইটি কতটা উপভোগ করেছি, তা ভাষায় প্রকাশ করবার নয়। ... এখন আমি বুঝতে পারছি যে, কেন আমাদের মধ্যে আর কেউ এর আগে তাঁর জীবনী লিখতে চেষ্টা করেনি। এই বিরাট কাজ আপনার জন্যই পড়ে ছিল। তিনি নিশ্চয়ই আপনার সঙ্গে আছেন।
     
    দ্বিতীয়ত, কথামৃতের ইংরেজি অনুবাদ ‘Gospel of Sri Ramakrishna’ প্রকাশিত হওয়ার পর দার্শনিক ও পণ্ডিত মহেশচন্দ্র ঘোষ তাঁর গ্রন্থ সমালোচনায় বাংলা ও ইংরেজি পাঠের বৈসাদৃশ্যই শুধু তুলে ধরেননি, এই কথামৃত যে শ্রীম-র, রামকৃষ্ণের নয় তাও প্রতিপন্ন করেছিলেন। ১৯৩০ সালের মডার্ন রিভিউ-এর ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় সেই সমালোচনাটি পাওয়া যাবে।
     
    তৃতীয়ত, সুমিত সরকার লিখেছেন --- বিবেকানন্দ... ‘দরিদ্র-নারায়ণ’-এর সেবার লক্ষ্যে সংগঠিত লোকহিতৈষণার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেন : ফলত প্রামাণ্য জীবনীতে শম্ভু মল্লিকের সঙ্গে কথাবার্তার বিবরণ সম্পূর্ণ বর্জিত হয়। লীলাপ্রসঙ্গ, ১ম, পৃ.৩৭০-৩, শম্ভু মল্লিকের সঙ্গে রামকৃষ্ণের যোগাযোগের দীর্ঘ বিবরণ থাকলেও কথামৃত-এ ছ-বার উদ্ধৃত কথোপকথন পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়েছে।
     
    রবীন্দ্রনাথও বানোয়াট কথামৃত নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ করে লিখেছিলেন --- পরমহংসদেবের কথোপকথনের যে বিবরণ আমি পড়েচি তার কোনো কোনো অংশ মনে হল বিদেশী সাধকদের কথা থেকে সংগৃহীত
  • হতাশ | 103.76.82.32 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫২514303
  • আরেকটা পয়েন্টও সবাই এড়িয়ে যায়। একটা কামাসক্ত মিসোজিনিস্ট "বাবু" কলকাতার সেইসময়কার শিক্ষা-দীক্ষা-মানসিকতার, বলা উচিত সামাজিক গণমানসিকতার, লোকেদের সামনা সামনি পেয়ে যার যেমন নেচার তাকে তেমনভাবে বলা কথা, যা সেই মুহূর্তে প্রশ্নকর্তার মানসিক অবস্থা ও কথোপকথনের পরিস্থিতির নিরিখে কাউন্টার করে বক্তার ট্রিটমেন্ট, ইনস্ট্যান্ট এবং এক্সটেম্পোর, তা কখনই লিখে বই করে একশ বছর পরের পৃথিবীর মানুষের শিক্ষাদীক্ষারুচীমননের জন্য সংরক্ষণ করে রেখে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পলিটিকাল কারেক্টনেস বজায় রেখে ভেবেচিন্তে বলা কথাবার্তা নয়। লিখিত স্ক্রিপচারের সতর্কতা বজায় রেখে হোমোজিনিয়াস বা ডাইভার্স আবালবৃদ্ধবণিতা পাঠক-পাঠিকা তথা  অডিয়েন্সের উদ্দেশ্যেও "লিখিত" নয়। এতে অন্তর্ভুক্ত দশ পনের বছর ব্যাপী কথা সংকলনের পারস্পরিক কনসিস্টেন্সি যদি কিছু থাকে, কোনো সেন্ট্রাল থট যদি আনঅ্যাডালটেরেটেড রয়েছে বলে আইডেন্টিফাই করা যায়, তা বক্তার এক্সেলেন্স যদি না হয় তো লেখকের নির্মাণ হওয়াই স্বাভাবিক। বর্জনটুকুও তাইই। ঐতিহাসিকতা, সামাজিক প্রেক্ষাপট, উদ্দিষ্ট শ্রোতা এসবকিছু বাদে স্রেফ টেক্সট থেকে লাইন তুলে তুলে এক দেড়শো বছর পরের মূল্যবোধ আর সামাজিক পার্স্পেকটিভের হ্যালোজেনে ফেলে জাজ করতে বসলে হাতে শুধু কীবোর্ডই থাকে। একথা সব রচনার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হলেও কথামৃত যেহেতু দৈনন্দিন ইনফর্মাল আড্ডার কথাবার্তার স্পিকার-আন-ইনটেন্ডেড কোলেশন, তার জন্য আরো বেশি প্রযোজ্য।
  • হজবরল | 103.251.167.10 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫৬514304
  • এলেবেলে,  'কেন আমাদের মধ্যে আর কেউ এর আগে তাঁর জীবনী লিখতে চেষ্টা করেনি' -  ঠিক এই প্রশ্নটা আমার মনেও এসেছিল। বিবেকানন্দ তো লেখাপড়ায় তুখোড় ছিলেন, নিজের দর্শনের সমস্ত বক্তব্য গুছিয়ে বইতে লিখে গেছেন। অথচ তার গুরুর বক্তব্য গুছিয়ে কিছু লিখলেন না ?  এই চিঠিটার কথা জানতাম না, এটার মানে হতে পারে শেষদিকে এসে বিবেকানন্দ বুঝেছিলেন যে লোকটা বাড়িতে একগাদা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কেন বৃষ্টি হচ্ছেনা, ফসল হচ্ছেনা তার জন্য বুক চাপড়াচ্ছে, তাকে জ্ঞানযোগ থেকে পড়ে শোনালে সে কিছুই বুঝবে না, তলিয়ে বুঝতে চাওয়ার সময় তার কাছে নেই।  তাকে ভোলাবার জন্য চুটকি আর হালকা জ্ঞানের প্রয়োজন। 
     
    দিনের শেষে মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্পের থেকে শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত আলাদা নয়। gospel শব্দটার মধ্যেই তো মনের মাধুরী মিশে আছে। 
  • এলেবেলে | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:০৮514305
  • না, এর আগেও অনেকে রামকৃষ্ণের জীবনী লিখেছিলেন। রামকৃষ্ণের গৃহী ভক্ত রামচন্দ্র দত্ত লিখেছিলেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনবৃত্তান্ত (১২৯৭)। সত্যচরণ মিত্র রচনা করেন ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস : জীবনী ও উপদেশ' (১৩০৪)। কিন্তু এসব লেখা বিবেকানন্দের পছন্দ হয়নি। বিশেষত রামচন্দ্র দত্তের জীবনী পড়ে ক্রুদ্ধ বিবেকানন্দ ১৮৯৪-এর ৩০ নভেম্বর আলাসিঙ্গাকে এ বিষয়ে চিঠিও লেখেন। তারপরেই ওদিকে ম্যাক্সমুলার আর এদিকে শ্রীমকে দিয়ে তাঁর পছন্দমাফিক জীবনী লেখানোর প্রয়াস শুরু করেন। ম্যাক্সমুলারের ক্ষেত্রে ততটা সফল না হলেও শ্রীমর ক্ষেত্রে পুরোপুরি সফল হয়েছিলেন।
  • এলেবেলে | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:১১514306
  • আর কথামৃত আদৌ দৈনন্দিন ইনফর্মাল আড্ডার কথাবার্তার স্পিকার-আন-ইনটেন্ডেড কোলেশন নয়। বঙ্কিম গবেষক গোপালচন্দ্র রায় এই নিয়ে বহু কথা লিখেছেন।
  • হজবরল | 185.220.101.7 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:২৩514307
  • হ্যাঁ, অন্যকে লিখতে বলছেন কিন্তু নিজে কিছুই লিখছেন না। উনি চেয়েছিলেন নিজের স্বতন্ত্র আইডেন্টিটি গড়ে তুলতে। লোকে যেন তাকে বিবেকানন্দ বলেই আলাদাভাবে চেনে, শুধু রামকৃষ্ণের ছায়ায় থাকা একজন শিষ্য হিসেবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে রাকৃমি বেদান্ত দর্শন না কথামৃত কাকে পয়সাওলা গৃহীদের কাছে বেশি প্রোমোট করবে? অবশ্যই কথামৃত। 
  • Sandipan Majumder | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৪০514308
  • আমি এলেবেলের বক্তব্যর সঙ্গে  একমত।  রামকৃষ্ণ  কথামৃত জুড়ে যা আমরা পড়ি সেটাই রামকৃষ্ণের দর্শন এবং সেটা কনসিসটেন্ট। আমাকে হতাশ বলুক  ঈশ্বর লাভ করতে  গেলে রিপুদমনের নামে নারীবিদ্বেষী  বক্তব্য সর্বক্ষণ রেখে যাওয়ার  পর ( তেঁতুল  হুজুরের  ধাঁচে) নারীকে ( নারীর  ধারণাকে) জগজ্জননী হিসেবে পুজো করা কতটা বৈধতা  পায়?
  • হতাশ | 103.76.82.32 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৫৫514309
  • নারী নামক কোনো হোমোজিনিয়াস এনটিটির কথা তো নাই। বিদ্যা-অবিদ্যা আছে। যেমন মানুষ বলতে অসৎ চোর খুনি আছে সৎ সাধু সন্ত ও আছে। বই জুড়ে অসৎ মানুষকে গালি দিলে সৎ মানুষকে প্রেইস করা যাবে না? তাইলে সেটা মানুষ নামক হোমোজিনিয়াস এনটিটিটার পক্ষে ইনকনসিস্টেন্ট অ্যাপ্রোচ হয়ে যাবে? যুক্তি জিনিসটাকে তো চাঁদে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেখছি।
     
    রামকৃষ্ণ  কথামৃত জুড়ে যা আমরা পড়ি সেটাই রামকৃষ্ণের দর্শন - এলেবেলের বক্তব্য এর ঠিক উল্টো। laugh
  • Sandipan Majumder | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩৯514313
  • বিদ্যা অবিদ্যা  আছে আরো অন্য প্রসঙ্গে। ঈশ্বরের  জ্ঞান ছাড়া বাকি সবই অবিদ্যা  ওর মতে। ভালো করে পড়ো।নারী হোমোজিনিয়াস  আইডেন্টিটি  নয় তো। সেটা উনি বুঝতেন? বড়জোর  একটা ডাইকোটমি তৈরি  করতে  পেরেছেন। 
  • হতাশ | 103.76.82.32 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৫৯514314
  • "যে ঈশ্বরের পথে বিঘ্ন দেয়, সে অবিদ্যা স্ত্রী।"  - তুমিই কোট করেছ। আবার অন্য প্রসঙ্গ কী!
    ভালো-মন্দ / বিদ্যা-অবিদ্যা / কাঞ্চনাসক্ত কামিনী - ভগবতীর অংশ মাতৃসক্তি / সৎ-অসৎ ---- ডাইকোটমি যাই হোক, একটার প্রতি বিদ্বেষী বক্তব্য রাখার সাথে অন্যটিকে পুজো করার কনট্রাডিকশন কোথায়? 
    উনি কি বুঝতেন আমি কী করে জানব? ব্রহ্মজ্ঞ হলে সকল জীবকেই ব্রহ্মজ্ঞান করতেন হয়তো।  অদ্বৈতবাদী হলে তো ভেদ-জ্ঞান করার কথা না। এবার কাকে কী করতে বলছেন কাকে কী উপদেশ দিচ্ছেন সেটা অন্য কথা। যার জন্য যেটা অ্যাপ্ট তাই বলছেন। তা দিয়ে ওঁকে মাপব কী করে?
  • Sandipan Majumder | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:০৭514315
  • যার জন্য যেটা অ্যাপ্টের মধ্যে কমন ফিচার ' কামিনীকাঞ্চনত্যাগ,আর গৃহী হলে নেহাত ক্ষমাঘেন্না  করে দু একটা  ছেলেমেয়ে হয়ে যাওয়ার  পর যৌনসম্পর্ক  রহিত হয়ে ( ভাই বোনের মত,ওঁর  ভাষায়)
    থাকা। কাঞ্চনাসক্ত কামিনী  আবার কোথায় পেলে? সংসর্গ পরিহার করার জন্য ওঁর  দর্শনে কামিনী  হওয়াই যথেষ্ট।মানে নারী হলেই হল। এর বেশি কিছু নেই।
  • এলেবেলে | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:১০514316
    • হতাশ | 103.76.82.32 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৫৫514309
    • রামকৃষ্ণ  কথামৃত জুড়ে যা আমরা পড়ি সেটাই রামকৃষ্ণের দর্শন - এলেবেলের বক্তব্য এর ঠিক উল্টো। laugh
     
    একেবারে একশো শতাংশ ঠিক কথা। আমি তো বলেইছি যে কথামৃত আসলে একটি সুপরিকল্পিত নির্মাণ। এই নির্মাণ বিবেকানন্দের হাতে। 
     
    আবার কথামৃতয় রামকৃষ্ণ-বঙ্কিম সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে যে রামকৃষ্ণ বলেন --- 'দয়া! পরোপকার! তোমার সাধ্য কি যে তুমি পরোপকার কর? মানুষের এতো নপর-চপর কিন্তু যখন ঘুমোয়, তখন যদি কেউ দাঁড়িয়ে মুখে মুতে দেয়, তো টের পায় না, মুখ ভেসে যায়। তখন অহংকার, অভিমান, দর্প কোথায় যায়?' তার মানে তাঁর কাছে পরোপকার হচ্ছে বিষয়চিন্তা যা বিষবৎ পরিত্যাজ্য। অথচ সেই পরোপকারই রাকৃমির ইউএসপি হয়ে ওঠে।
     
    ঠিক একই ভাবে কথামৃতের কোথাও একবারের জন্যও রামকৃষ্ণকে 'শিবজ্ঞানে জীব সেবা' উপদেশ দিতে দেখা যায় না। অথচ ১৯১৯ সালে সারদানন্দ তাঁর ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ’-এর পঞ্চম ভাগে এই বাক্যটি রামকৃষ্ণের মুখে বসিয়ে দেন। অনেকে এটাকেই মিশনের মূলমন্ত্র ভাবেন। 
     
    কাজেই কথামৃত থেকে রামকৃষ্ণের (এবং মিশনেরও) দর্শন খুঁজে বের করা খুব চাপের!
  • হতাশ | 103.76.82.32 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:১১514317
  • কামিনী থেকেই কাঞ্চনের দরকার। তুমি কোট করেছ।
    হ্যাঁ যারা ঈশ্বরলাভ করতে চায় তাদের জন্য এটাই অ্যাপ্ট। তো?
  • এলেবেলে | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:১২514318
  • কিন্তু কথামৃত যে আদৌ দৈনন্দিন ইনফর্মাল আড্ডার কথাবার্তার স্পিকার-আন-ইনটেন্ডেড কোলেশন নয় - এটা নিয়ে হতাশ কিছু লিখলেন না তো!
  • Sandipan Majumder | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৩১514322
  • এতক্ষণ  তো বললে যার জন্য যেটা অ্যাপ্ট সেটাই বলেছেন।  এখন বলছো ঈশ্বরলাভ করতে  গেলে ওটাই অ্যাপ্ট। তার মানে ঘুরিয়ে  ফিরিয়ে  ওটাই বলে গেছেন। ঈশ্বরলাভ করতে গেলে নারীবিদ্বেষের  চাষ করা অ্যাপ্ট?  না করে হয় না? রবীন্দ্রনাথ  তো ' কামিনীকাঞ্চনত্যাগ' তত্বটা শুনলেই রেগে যেতেন৷ ওঁর  ঈশ্বরলাভের প্রচেষ্টা  বুঝি অ্যাপ্ট নয়? 
  • হতাশ | 103.76.82.32 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২০:৫৫514324
  • আপনার বক্তব্যটা সন্দীপনদা সম্পূর্ণ ভুল বুঝেছে - এটুকুই বলেছিলাম।
     
    'দয়া! পরোপকার! তোমার সাধ্য কি যে তুমি পরোপকার কর? মানুষের এতো নপর-চপর কিন্তু যখন ঘুমোয়, তখন যদি কেউ দাঁড়িয়ে মুখে মুতে দেয়, তো টের পায় না, মুখ ভেসে যায়। তখন অহংকার, অভিমান, দর্প কোথায় যায়?' তার মানে তাঁর কাছে পরোপকার হচ্ছে বিষয়চিন্তা যা বিষবৎ পরিত্যাজ্য। 
    --- এই "মানে"টা কীভাবে বোঝা গেল? ইন্টারপ্রিটেশন নিজস্ব হলে সে নিয়ে পরবর্তী কথোপকথন এগোয় না। আগে বহুবার পয়েন্ট আউট করা হয়েছে আপনি যা পড়েন আর তার যা ইন্টারপ্রিট করেন দুটো মেলানো অন্য লোকের পক্ষে মুশকিল। 
     
    রাকৃমির ইউএসপি  "পরোপকার" না "সেবা" এটা কে কনফার্ম করল? 
     
    আমি যা বুঝলাম একই ব্রহ্মের অংশ দুটো মানুষ হলে একজন সে যতই আদানী আম্বানি হোক পথের ভিখিরিটিকেও দয়া করা বা পরোপকার করার কনসেপ্টের মধ্যে তার যেটুকু অহং জড়িয়ে থাকে সেটাকেই গালি দেওয়া হল। অন্য মানুষের সেবা করতে পারো বড়জোর, শিবজ্ঞানে - সেটাই বক্তব্য।
     
    গোপালচন্দ্র রায় - বঙ্কিমচন্দ্র (জীবন ও সাহিত্য) - সংযোজন : রামকৃষ্ণ পরমহংস ও বঙ্কিমচন্দ্র - পৃ. ৩৮ থেকে ৭০ এই পড়ে উঠলাম। কথামৃত রামকৃষ্ণের হুবহু কথা না বিবেকানন্দ অনুসারী স্কুলের রামকৃষ্ণ ইমেজ নির্মাণের প্রজেক্টের অঙ্গ - এ নিয়ে আপনি আর সন্দীপনদা আগে একটা ঐকমত্যে আসুন, তারপর সেখানে ঢোকা যাবে। আমি এখানে মুল লেখাটার ক্রাফটের সমস্যা নিয়ে বলছিলাম শুধু।
    ------------------------------------------------
     
    নারীবিদ্বেষ আবার কোথা থেকে এল? অবিদ্যা-নারী থেকে দূরে থাকতে বলা তো! নিজেই ডাইকোটমি বলে নিজেই হোমোজেনাইজ করে জেনারেলাইজ করছ!
     
    যারা ঈশ্বরলাভ করতে চায় তাদের যা করতে বলা হয়েছে যারা তা চায় না তারা সেইসব কথা শুনে চলবে কেন বা সেই নিয়ে এত কনসার্ন কেন - লেখাটার বেসিক প্রেমাইস হিসেবে এটাই ক্লিয়ার নয়।
     
    রবীন্দ্রনাথ, রজনীশ, বালক ব্রহ্মচারী, অনুকূল ঠাকুর কি শাক্ত বা বৌদ্ধমতের তান্ত্রিক-টান্ত্রিক সবার নিজস্ব মত আর বক্তব্য আছে। রবীন্দ্রনাথ থেকে মিসোজিনি কোট করে দিতে হবে?
  • এলেবেলে | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:০৮514328
  • "ইন্টারপ্রিটেশন নিজস্ব হলে সে নিয়ে পরবর্তী কথোপকথন এগোয় না।"
     
    ঠিকই, কিন্তু একই কথার যখন বারংবার পুনরাবৃত্তি হয় তখন তার ইন্টারপ্রিটেশনটা আর নিজস্ব থাকে না। এই কারণেই শিবজ্ঞানে জীবসেবা রামকৃষ্ণের মুখে বসাতে হয়, একই কারণে লীলাপ্রসঙ্গে শম্ভু মল্লিকের সঙ্গে রামকৃষ্ণের যোগাযোগের বিবরণ কথামৃতে ঘ্যাচাং হয়ে যায়।
     
    পরোপকার বলুন কিংবা সেবা - এই নিয়ে মিশনের ভক্তরা চিরকালই উলুতপুলুত হন। কাজেই একেবারে বুঝব না পণ না করলে সেটা যে মিশনের ইউএসপি - সেটা বোঝা কষ্টকর নয়।
     
    সন্দীপনবাবুকে আমি চিনি না, আমার প্রথম মন্তব্য হজবরল-র মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ছিল। আমি আমার কথা বলেছি। তাই বলে সন্দীপনবাবুকে কথামৃত নিয়ে আমার সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছতেই হবে - এমন কোনও শর্তের কথা আমার জানা ছিল না।
  • Sandipan Majumder | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:১১514329
  • আমাদের ঐতিহ্যে যৌনতার খোলামেলা উদযাপন ছিল। একই সঙ্গে অবদমন ও যে ছিলনা তা নয়। কামসূত্র এবং মনুসংহিতা দুটিই আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। আমাদের ধর্মের ইতিহাসেও এই দুই ধারারই প্রতিফলন দেখা যায়। আবার সবসময় একে অবদমন না বলে দ্বৈতাভাস বলাই ভালো মনে হয়। যেমন পতঞ্জলির যোগশাস্ত্রে কোথাও কুলকুণ্ডলিনী তত্বের উল্লেখমাত্র নেই। গোটাটাই তান্ত্রিক ঘরানার উত্তরাধিকার। বীর্যরক্ষা, উর্ধ্বরেতা হওয়ার ধারণা - এ সমস্ত কিছুও। তাই একদিকে শরীর যা বাসনার আদি উৎস তাকে ঘিরে উদযাপন রয়েছে তেমনি শরীরের প্রতি তীব্র ঘৃণাও প্রকাশিত হয়েছে। মহাপণ্ডিত অরিন্দম চক্রবর্তী লিখেছেন ‘প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর শান্তিদেব রচিত বোধিচর্যাবতার থেকে আরম্ভ করে শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃত পর্যন্ত রয়েছে শরীরকে ঘেন্না করার ইতিহাস '। 
    এই ঘেন্না থেকে, ভয় থেকেই নারীবিদ্বেষ এসেছে। গোটা কথামৃতে কোথাও নারীকে ভগবতী / কামিনী এই ডাইকোটমির বাইরে দেখা হয় নি। তুমি খুঁজে পাচ্ছো না, সেটা তোমার চয়েজ। 
  • এলেবেলে | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:১৯514330
  • শরীরকে ঘেন্না করা বা বলা ভালো শারীরিক কামনাকে ঘেন্না করা রামকৃষ্ণের চ্যালা শিক্ষিত বিবেকানন্দের মধ্যেও চারিয়ে যায়। এতটাই যায় যে নিজের ইন্দ্রিয়কে বশে রাখতে তিনি জ্বলন্ত আগুনের মালসার ওপর বসে পড়েন। এবং বীর্যধারণকে তিনি তাঁর প্রবাদপ্রতিম স্মৃতিশক্তির কারণ বলেন। 
  • কনস্পি | 2405:8100:8000:5ca1::42:23e2 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৩০514331
  • তো দুটো বইয়ের প্রত্যেকটা কথা কেন অন্য বইটাতে নেই এই নিয়ে তর্ক হচ্ছে? ভাল ভাল।
  • সিএস | 49.37.39.186 | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:০১514334
  • বিবেকানন্দ তো বেশ্যাগমন করতেন না মনে হয়। বিয়ে - টিয়েও করেননি। শরীরের কামড় সামলাতে গেলে ঐসব করতে হবে আর কি। নিজেকে কন্ট্রোলের আল্টিমেট উপায় আর কি !

    বীর্যভক্ষণের কী একটা গল্পও প্রচলিত ছিল না ?

    পুরুষেরা কামিনীসংসর্গ না করলে মেয়েরাও মনে হয় বেঁচে যেত। কন্ট্রাসেপ্টিভের ব্যবস্থা নেই, ফলে বছর বছর বাচ্চার জন্ম। মেয়েরাও যে রামকৃষ্ণর ভক্ত হয়ে পড়ল, সে এই কারণেই ?
  • এলেবেলে | ০২ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:০৫514335
  • আচ্ছা, গোপাল রায়ের প্রসঙ্গ উঠলে বলবেন। শ্রীম এবং অচিন্ত্য সেনগুপ্ত কীভাবে ঢপের কেত্তন পাতার পর পাতা গেয়ে গেছেন, তা ভার্বাটিম তুলে দেওয়া যাবে।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন