এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  শিক্ষা

  • মানববধের নৈতিক যুক্তিঃ অন্য চোখে ভগবদ্গীতা

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | শিক্ষা | ১৩ মার্চ ২০২৩ | ৩৩০৮ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • গীতায় যুদ্ধের নৈতিক যুক্তি

    প্রস্তাবনাঃ

    ভারতবর্ষের বৃহত্তর জনসমুদয় হিন্দু ধর্মাবলম্বী।  এঁদের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ, যদিও হাতে গোনা লোক ছাড়া কেউ বেদ পড়েন না, ভাষাগত কারণে সম্ভবও নয়। তবে আজকাল বাংলা হিন্দি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় সুলভ অনুবাদ পাওয়া যায়। যাঁরা বেদকে সনাতন অজর অমর এবং ভগবানের মুখনিঃসৃত বলে বিশ্বাস করেন তাঁদের ধর্মাচরণকে এককথায় 'সনাতন হিন্দুধর্ম' আখ্যা দেওয়া হয়। এই সংজ্ঞাটি সম্ভবতঃ আদি শংকরাচার্যের তৈরি।

    সনাতন হিন্দু ধর্মের তাত্ত্বিক আশ্রয় হল তিন প্রস্থান — উপনিষদ, ব্রহ্মসূত্র এবং গীতা, যাকে একসঙ্গে ‘ত্রয়ী’ বলা হয়। শংকরাচার্য প্রতিষ্ঠিত দশনামী সম্প্রদায়ের সমস্ত সন্ন্যাসীদের অবশ্য পাঠ্য হোল ওই ‘ত্রয়ী’।

    এই ত্রয়ীর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য গ্রন্থ হোল ভগবদগীতা বা সংক্ষেপে ‘গীতা’। এর আকারও ছোট, অষ্টাদশ অধ্যায়ে বিভক্ত বইটিতে রয়েছে মোট ৬৮১, এবং গীতামাহাত্ম্য ইত্যাদি মিলিয়ে প্রায় ৭০০ শ্লোক। অন্ততঃ পকেট সংস্করণ গীতা প্রায় সবার বাড়িতে পাওয়া যাবে। শ্রাদ্ধশান্তি বা বিভিন্ন ধার্মিক অনুষ্ঠানে গীতা পাঠের প্রচলন রয়েছে।

    বর্তমান সময়ে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় -- গীতা বা তার নির্বাচিত অংশ, সমস্ত স্কুলে পাঠ্য করা হোক। উদ্দেশ্য অল্পবয়েসীদের মধ্যে ভারতীয় ঐতিহ্য ও নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া। বলা হয় গীতার বাণী আমাদের সমাজে আদর্শ আচরণবিধির জন্যে মডেল হবে।

    প্রশ্ন ওঠেঃ গীতার মূল্যবোধ বলতে ঠিক কী বোঝায়?

    এখানে ওখানে খামচে প্রসঙ্গের উল্লেখ না করে কয়েকটি শ্লোকের কথা বলা হয়। যেমন, তোমার অধিকার কেবল কর্ম করায়, ফলপ্রাপ্তিতে নয়। তাই ফলের চিন্তা না করে কর্ম করে যাও (গীতা, ২/৪৭)।  
    অথবা, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের সমাজে গুণ ও কাজের ভিত্তিতে চার বর্ণের সৃষ্টি করেছেন (গীতা, ৪/১৩)।
    অথবা, স্বধর্মে নিধন শ্রেয়ঃ, অন্য ধর্ম ভয়াবহ (গীতা, ৩/৩৫)।
    আর রয়েছে — সব ধর্ম ছেড়ে আমার শরণাগত হও, কোন পাপের ভয় কোর না; আমি আছি (গীতা, ১৮/৬৬)।

    কিন্তু গীতার মূল পরিপ্রেক্ষিত, স্থান-কাল- প্রসংগের কথা ভুলে বিচ্ছিন্নভাবে এই শ্লোকগুলোর চর্চা আমাদের বোধকে ঘুলিয়ে দেয়। আজকাল কোথাও সমগ্র গীতার অন্তর্নিহিত ভাবনা নিয়ে একটি সুসংবদ্ধ লেখা চোখে পড়ে না।

    এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে আমি চেষ্টা করছি গীতার মূল থিমে — আত্মীয় পরিজনের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণে পরাঙ্মুখ অর্জুনকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করতে নীতিকথায় — ন্যায় ও  অন্যায় যুদ্ধের ফারাকটুকু বোঝার চেষ্টা করা। কারণ, প্রায় প্রতিদিন ভারতের কোথাও না কোথাও স্বঘোষিত ধর্মযোদ্ধাদের হিংসা ও বিদ্বেষে ভরা ঘোষণা চোখে পড়ছে।

    ভগবদগীতা কার রচনা?

    • মনে হয় গীতা মহাভারতের কাহিনীর উল্লেখ সত্ত্বেও একটি স্বতন্ত্র রচনা। মুখোমুখি কৌরবের একাদশ অক্ষৌহিণী সেনা এবং পাণ্ডবদের সাত অক্ষৌহিণী। রথে বসে ধনুকের টংকার ও দু’পক্ষের শংখধ্বনির মধ্যে যে স্নায়বিক চাপ তার মাঝখানে বসে গম্ভীর মেটাফিজিক্স চর্চা? এগুলো বিভিন্ন সময়ে অনেক কবির সম্মিলিত সংযোজন।
    • অশোকের শাসনকালে কিছু ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠীলিপির নিদর্শন পাওয়া যায়, তাতে গীতার কোন উল্লেখ নেই। তবে প্রথম সংস্কৃত ভাষা এবং নাগরী লিপির নিদর্শন  দেখা যায় জুনাগড়ের তাম্রলিপিতে, যা  খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের মধ্যভাগে যা চারশতক পরের পতঞ্জলির যোগশাস্ত্রের  কথা মনে করায়। মনে হয় শুঙ্গ রাজবংশের (পুষ্যমিত্র শুঙ্গ স্থাপিত) থেকে গুপ্ত বংশের শাসনকালের মধ্যে বিভিন্ন কবির হাতের ছোঁয়ায়  বর্তমান রূপ ধরেছে ভগবদগীতা।


    গীতার দার্শনিক ভাষ্যের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ

    গীতা হল আসলে ষড়দর্শনের শেষতম দার্শনিক মত বেদান্ত বা উত্তরমীমাংসার অনুযায়ীদের সৃষ্টি। কারণ ১৮টি অধ্যায়ের প্রত্যেকটি  শেষ হচ্ছে “শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসু উপনিষৎসু ব্রহ্মবিদ্যায়াং যোগশাস্ত্রে” এই ভণিতা দিয়ে। (বড় হরফ আমার)। ব্রহ্মবিদ্যা বলে দার্শনিক ধারণাটি একান্তভাবে বেদান্তদর্শনের, অন্য কারও নয়।

    ষড়দর্শনের মধ্যে গীতায় শুধু সাংখ্য, যোগ ও বেদান্তের কথা রয়েছে। বাদ পড়েছে, ন্যায়, বৈশেষিক ও পূর্বমীমাংসা। বরং বেদবাদরতাঃ শ্লোকে (২/৪২, ৪৪) পূর্বমীমাংসা দর্শনের নিন্দা করা হয়েছে।

    কারণ, পূর্বমীমাংসা কেবল বেদের যাগযজ্ঞকেই শুরু ও শেষ মনে করে। নিরীশ্বরবাদী পূর্বমীমাংসা দর্শনে ব্রহ্ম বা ঈশ্বর কিছুই নেই। সাংখ্যে ঈশ্বর নেই, রয়েছে নিষ্ক্রিয় চেতন পুরুষ এবং সক্রিয় প্রকৃতির কথা। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের নাম সাংখ্য যোগ বটে, কিন্তু তাতে নিরীশ্বরবাদী সাংখ্যের মূল চরিত্র বদলে দিয়ে ঈশ্বর ও পরমাত্মা নিয়ে অনেক কথা ঢোকানো হয়েছে। ফলে যিনি গীতাকে ভারতীয় দর্শন বা অধ্যাত্ম চিন্তার সার বা সমন্বয় বলবেন, ভারতীয় বা বিদেশি পন্ডিত, তার মধ্যে গোঁজামিল থেকেই যাবে।

    গীতার তৃতীয় অধ্যায়ে সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ে বলা হয়েছে – প্রাণের উদ্ভব অন্ন থেকে,  অন্নের উদ্ভব বৃষ্টি থেকে, বৃষ্টির উদ্ভব যজ্ঞের ধোঁয়া থেকে, যজ্ঞের উদ্ভব কর্ম থেকে, কর্মের উদ্ভব ব্রহ্ম থেকে এবং ব্রহ্মের উদ্ভব অক্ষর থেকে (৩/১৪ এবং ৩/১৫)।

    আজ আমরা সবাই জানি বৃষ্টির উদ্ভব কীভাবে হয়, অবশ্যই যজ্ঞের ধোঁয়া থেকে নয়। আর ব্রহ্ম যদি অক্ষর থেকে উদ্ভবের পরিণাম তাহলে তিনি নিত্য সর্বোগতং স্থানু অচলোহং সনাতনঃ হতে পারেন না। কারণ উনি নিশ্চিত ভাবে একটি নির্ধারিত সময়ে একটি তত্ত্ব (অক্ষর) থেকে উদ্ভূত হচ্ছেন, তাহলে অমনই এক সময়ে তাঁর বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।

    মহাত্মা গান্ধীর গুজরাতিতে লেখা ‘অনাসক্তি যোগ’ ভাষ্যটি সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত বাংলায় ‘গান্ধীভাষ্য’ নামে অনুবাদ করেছেন। গান্ধীজি আবার তাঁর অহিংসার সঙ্গে গীতার হিংসাকে জোর করে মেলাতে চেষ্টা করেছেন। বলছেন — গীতার হিংসা প্রতীকী, আসল শারীরিক হিংসা নয়। কিন্তু মূল পাঠে প্রথম, দ্বিতীয় এবং একাদশ অধ্যায় পড়লে বোঝা যায় – ওটা গান্ধীজির বৃথা চেষ্টা। তেলে জলে মেশেনি।

    বরং সমগ্র গীতা জুড়ে রয়েছে ক্ষাত্রধর্ম এবং হিংসার ঔচিত্য, তার জয়গান। খেয়াল করা দরকার যে শ্রীকৃষ্ণ নিজেও ক্ষত্রিয় রাজপুরুষ।  

    গীতায় মনুসংহিতার জাতিবাদের প্রচন্ড প্রভাব। আধুনিক ব্যখ্যাকারেরা জোর করে মেলাতে গিয়ে শুধু ওই একটা শ্লোকের কথা বলেন - চাতুর্বণং ময়া সৃষ্ট গুণকর্মবিভাগশঃ। ওঁরা উল্লেখ করেন না “স্বনুষ্ঠিতাৎ পরধর্মাৎ বিগুণঃ স্বধর্ম শ্রেয়ান। স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ, পরোধর্মো ভয়াবহঃ” (৩/৩৫)।

    অর্থাৎ, অন্যধর্মের (জাতির) নির্দিষ্ট কর্ম ভালভাবে করার চেয়ে নিজের নিজের জাতিধর্মের অনুরূপ কর্ম খারাপভাবে করাই শ্রেয়স্কর ।
    নিজ জাতের অনুযায়ী কর্ম করতে গিয়ে মরে যাওয়া ভাল। নীচু জাত নীচুতেই থাকবে, দক্ষতার জোরে উপরে উঠতে পারবে না (১৮/৪১-৪৪)।

    উপরের সমস্ত টীকা/ব্যাখ্যা ভক্তের দৃষ্টিতে, যেখানে গীতা হচ্ছে শ্রীভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী। তা নিয়ে বিচার চলে না। শুধু মুগ্ধ হতে হয়, শুধু মেনে চলতে হয়।

    বাংলাসাহিত্যের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘পারাপার’ উপন্যাসে একটি চরিত্র বিমানের সন্দর্ভে বলেছেন যে গীতা হোল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কাব্য! গীতার বেশিরভাগটাই অনুষ্টুপ এবং অল্প একটু অংশ ত্রিষ্টুপ ছন্দে লেখা। কিন্তু কাব্যগুণ? ভিন্নরুচির্হিঃ লোকাঃ।

    গীতার মূল বক্তব্যঃ

    ভগবদগীতায় দুটো স্তর রয়েছে। একটা মহাভারত নামক মহাকাব্যের কাহিনীর অংশ, অন্যটি দার্শনিক সমন্বয় এবং কৃষ্ণ কাল্টের জয়গান।
     
    গীতা শুরুই হচ্ছে ধৃতরাষ্ট্রের সঞ্জয়কে প্রশ্নটি দিয়ে “ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ”। অর্থাৎ, রচনাকার প্রথমেই কুরুক্ষেত্রকে ধর্মক্ষেত্র মেনে নিয়েছেন।

    তাই কাহিনীর মূল থীম হল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আরম্ভের সময় ধনুর্বাণ ত্যাগ করে গালে হাত দিয়ে রথে বসা অর্জুনকে বুঝিয়ে সুজিয়ে যুদ্ধে রাজি করানো। কারণ অর্জুন যুদ্ধক্ষেত্রে মুখোমুখি আচার্য, পিতামহ, মাতুল, শ্বশুর, শালা, পুত্র, পৌত্র ও ভ্রাতাদের দেখে যুদ্ধ করতে চাইলেন না।  
    “আচার্যাঃ পিতরঃ পুত্রাস্তথৈব চ পিতামহাঃ।
    মাতুলাঃ শ্বশুরাঃ পৌত্রাঃ শালাঃ সম্বন্ধিনস্তথা’’।। (১/৩৩)

    বিষণ্ন অর্জুন কৃষ্ণকে বললেন -- স্বজনহত্যা করে বিজয়ী হতে চাই না, রাজ্যসুখও চাই না, এতে কোন মঙ্গল হবে না।
    ‘ ন চ শ্রেয়োনুপশ্যামি হত্বা স্বজনমাহবে।
    ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ ’।। (১/৩১)

    কারণ, যাঁদের নিয়ে রাজ্য এবং সুখভোগ করার কথা ভাবি, এখন তাদেরই হত্যা করতে হবে?
    “কিং নো রাজ্যেন গোবিন্দ, কিং ভোগৈর্জীবিতেন বা।
    যেষামর্থে কাঙ্ক্ষিতং নো রাজ্যং ভোগাঃ সুখানি চ ’’।।(১/৩২)

    এখানে অর্জুন এই যুদ্ধকে অন্যায় ভাবছেন মূলতঃ প্রাচীন গোষ্ঠীসমাজের কিনশিপ মূল্যবোধের প্রেক্ষিতে।

    কিন্তু দুর্যোধন আদি কৌরব তো অন্যায় ভাবে ছল করে পাণ্ডবদের রাজ্য কেড়ে নিয়ে ওদের বনবাসে পাঠিয়েছে, দ্রৌপদীকে অপমান করেছে। তাহলে ওই অন্যায়ের প্রতিকারে এই যুদ্ধ কি ন্যায়যুদ্ধ নয়?

    অর্জুন বলছেন, পৃথিবীর কথা ছাড়ুন, আমাকে ত্রিলোকের রাজা করলেও আমি এদের মারতে পারব না (১/৩৪)।

    ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রদের বধ করে কি সুখ পাব?
    “এই সকল আততায়ীকে হত্যা করিলে আমাদিগকে পাপ আশ্রয় করিবে” (১/৩৫)। (জগদীশ্বরানন্দের টীকা)

    অতএব দুর্যোধনাদি ও তাহাদের বান্ধবগণকে হত্যা করা উচিত নয়। স্বজনকে হত্যা করে আমরা কী করে সুখী হব? (১/৩৬)

    মানছি, ওরা রাজ্যলোভে অভিভূত হয়ে কুলক্ষয়জনিত দোষ এবং মিত্রদ্রোহজনিত পাপ দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু “হে জনার্দন! বংশনাশজনিত  দোষ উপলব্ধি করিয়াও আমরা এই পাপ হইতে নিবৃত্ত হইবার উপায় জানিব না কেন?” (১/৩৭-৩৮)।

    আমি এর প্রতিকার জানি না, অস্ত্রত্যাগ করলাম। এখন কৌরবরা আমাকে বধ করলেই অধিকতর কল্যাণ হবে (১/৪৫)।

    অর্থাৎ, অর্জুন একটি অন্যায়ের প্রতিকার হিসেবে অন্য একটি অন্যায়ের আশ্রয় নেওয়াকে যুক্তিযুক্ত মনে করছেন না। প্রতিশোধ, বদলা এসবের চেয়ে সার্বিক নরহত্যা এবং লোকক্ষয় ও কত নারী বিধবা হবে, অনাথ হবে – সেইটি তাঁর কাছে বৃহত্তর নৈতিক প্রশ্ন।

    তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে (দ্বিতীয় অধ্যায় থেকে) যুদ্ধ করার জন্য বোঝাতে শুরু করলেন।

    কৃষ্ণের যুক্তিগুলিঃ

    ধর্মযুদ্ধের পক্ষে কৃষ্ণের নৈতিকতার আধার বর্ণাশ্রম ধর্ম।  যে মানুষ যে কুলে বা জাতিতে জন্মেছে, সে যদি সেই জাতের জন্য  নির্ধারিত আচরণ মেনে চলে, তাহলেই ধর্মরক্ষা হয়, ন্যায় হয়।

    তাই উনি বলছেনঃ
    “ হে অর্জুন, আর্যগণের অযোগ্য, স্বর্গগতির প্রতিবন্ধক এই মোহ এই ক্লীবভাব এই কাপুরুষতা তোমায় মানায় না। এসব দুর্বলতা ছেড়ে শত্রু সংহারে নেমে পড়।’’ (২/২-৩)
    “ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ নৈতৎ ত্বযুপপদ্যতে।
    ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।’’

    অর্জুন মানতে পারছেন না। বলছেন ভীষ্ম-দ্রোণের মত গুরুজনদের হত্যা করে বেঁচে থাকার চেয়ে ভিক্ষে করে খাব — সে ও ভাল। (২/৪-৫)।
    তখন কৃষ্ণ এই যুদ্ধকে ন্যায়োচিত সিদ্ধ করতে তাঁকে দুটো যুক্তি দিলেন।
    এক, হত্যা বলতে কী বোঝায়? শরীরের ধ্বংস। কিন্তু দেহ তো অনিত্য, একমাত্র আত্মাই অবিনাশী। তাকে অস্ত্র ছেদ করতে পারে না, আগুন পোড়াতে পারে না, হাওয়া শুকোতে পারে না , ইত্যাদি (২/২৩)।
    “নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ।
    ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ।।’’

    এভাবে দেখলে যে মারে আর যে মরে দুজনেই অবিনশ্বর আত্মা রূপে থেকে যাবে। অর্থাৎ কেউ আসলে মরে না। মৃত্যু দৈহিক বিকার মাত্র। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা নষ্ট হয় না। আত্মা কেউকে মারে না, নিজেও মরে না। কেবল জামাকাপড় পাল্টানোর মত দেহ বদলায়।  তাহলে কেন আফশোস?  কেন শোক করা? ( ২.১১ - ১৭-১৯)।
    ‘ ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিৎ,
      নায়ং ভূত্বাভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
    অজো নিত্যং শ্বাশ্বতোয়ং পুরাণো,
      ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে’।। (২/২০)

    আর যদি তুমি আত্মাকে অবিনশ্বর মনে না কর, যদি ধরে নাও যে প্রত্যেক আত্মা স্বতন্ত্র, দেহের সঙ্গে জন্মায় ও মরে তাহলেও অনুশোচনা উচিত নয়। (২/২৬)। কারণ, জাত ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত এবং স্বীয় কর্মানুসারে মৃত ব্যক্তির পুনর্জন্ম অবশ্যম্ভাবী।
    ‘জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
    তস্মাদপরিহার্যের্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।। ’ (২/২৭)

    অর্থাৎ, শ্রীকৃষ্ণ এখানে জন্মমৃত্যুকে গুরুত্বহীন, ট্রিভিয়ালাইজ, করে যুদ্ধে অবশ্যম্ভাবী নরহত্যা জনিত পাপবোধ থেকে অর্জুনকে মুক্ত করে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকে উচিত ঠাউরিয়েছেন। বলা যায়, এক অর্থে এই ন্যায়যুদ্ধ/অন্যায় যুদ্ধ ডিকোটমিকেই বিতর্কের বা বিবেচনার বাইরে করে দিচ্ছেন।

    অর্জুন ঠিক সান্ত্বনা পাচ্ছেন না।

    তখন কৃষ্ণ ফের চলে এলেন বর্ণাশ্রমভিত্তিক ‘ধর্মযুদ্ধ’কে ন্যায়যুদ্ধের পর্যায়বাচী করতে।

    উনি বলছেন, এক, কোন প্রাণীর দেহনাশে শোক কর না; কারণ তার দেহে অবস্থিত আত্মা সদা অবধ্য।

    আর স্বধর্মের কথা ভাবলেই তোমার ভয় কেটে যাবে। কারণ, ধর্মসঙ্গত যুদ্ধ অপেক্ষা ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মঙ্গলকর আর কিছুই নাই।(২/৩১)।  

    হে পার্থ, এই প্রকার ধর্মযুদ্ধ হচ্ছে অনায়াস  স্বর্গদ্বারের মত।  শুধু ভাগ্যবান ক্ষত্রিয়ারাই এই সুযোগ পায়। (২/৩২)।

    আর এই ধর্মযুদ্ধ না করলে তুমি স্বীয় ক্ষত্রিয়ধর্ম ও কীর্তি পরিত্যাগ হেতু ‘প্রত্যবায়’ (পাপের) ভাগী হবে। সবাই ছি ছি করবে। ‘সম্মানিত ব্যক্তির পক্ষে অখ্যাতি মৃত্যু অপেক্ষাও অধিকতর দুঃখদায়ক’। (২/৩৪)

    কর্ণ ও ওর সঙ্গের যোদ্ধারা তোমাকে ভীতু ভাববে। সম্মান হারাবে, শত্রুরা অকথা-কুকথা বলবে; এর চেয়ে বেশি দুঃখের আর কী হতে পারে? (২/৩৬)

    আর এই যুদ্ধে মরে গেলে তুমি স্বর্গে যাবে; জয়ী হলে রাজ্য ভোগ করবে। অতএব, যুদ্ধের জন্যে দৃঢ় সংকল্প হয়ে লেগে পড়।

    খানিকটা ইসলামের জেহাদি ধর্মযুদ্ধের সঙ্গে মিল আছে না? ওরাও বলে যে ইসলামিক ধর্ম বা ন্যায়ের রাজ্য স্থাপনের জন্যে গাজী হয়ে শহীদ হলে বেহেস্তে গমন নিশ্চিত।

    ‘হতো বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম্‌।
    তস্মাদুত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃতনিশ্চয়ঃ।। (২/৩৭)

    তুমি ক্ষত্রিয়; ধর্মযুদ্ধই তোমার স্বধর্ম। সুতরাং ‘তুমি  সুখে অনুরাগ ও দুঃখে দ্বেষ না করিয়া এবং লাভ ও ক্ষতি, জয় পরাজয় তুল্য জ্ঞান করিয়া ধর্মযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। এইরূপ করিলে গুরুজনাদি-বধজনিত পাপ তোমার হইবে না’।
    ‘সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ।
    ততো যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপমবাপ্স্যসি’।।(২/৩৮)।

    এবার কৃষ্ণ অর্জুনকে পাপের থেকেও মুক্তি দিলেন। সোজাসুজি বললেন – তোমার অধিকার শুধু কর্ম করায়, ফলপ্রাপ্তিতে নয়। অতএব কোন কাজের ফল কী হবে (পাপপুণ্য) এসব নিয়ে ভাবতে নেই। নিষ্কাম হয়ে কর্ম কর। ফলপ্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা থেকেই আসক্তি জন্মায়, বন্ধনের কারণ হয়।
    “কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন” (২/৪৭)।
    “তুমি ভগবানের উদ্দেশে অনাসক্ত হইয়া বর্ণাশ্রমোচিত সর্ব কর্ম কর। (৩/৯)। অর্থাৎ ক্ষত্রিয় তার জন্মসিদ্ধ কর্তব্য/আচরণ যুদ্ধ করলে কোন পাপ হয় না।

    এরপর ১২টি অধ্যায় জুড়ে রয়েছে কিছু বৈদান্তিক ও অন্য দার্শনিক তত্ত্ব নিয়ে কৃষ্ণের উপদেশ। কিন্তু সামনে যে একাদশ অক্ষৌহিণী কৌরব সেনা দাঁড়িয়ে রয়েছে, দু’পক্ষের রণশংখ একে অন্যকে চ্যালেঞ্জ করে বেজে উঠছে — সে নিয়ে কোন কথা নেই।

    ইতিমধ্যে অর্জুনকে বিশ্বরূপ দর্শন করিয়ে যথেষ্ট ভয় দেখানো হয়েছে (১১শ অধ্যায়)। অর্জুন দেখছেন ভীষ্ম-দ্রোণ-কর্ণ-দুর্যোধন সবাই শ্রীকৃষ্ণের জ্বলন্ত মুখগহ্বরে প্রবেশ করে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে দাঁতের ফাঁকে মাংসের টুকরোর মত আটকে আছে।
    “বক্ত্রাণি তে ত্বরমাণা বিশন্তি, দংষ্ট্রাকরালানি ভয়ানকানি।
     কেচিদ্বিলগ্না দশনান্তরেষু, সংদৃশ্যন্তে চূর্ণিতৈরুত্তমাঙ্গৈঃ”।।

    এবার ভীত অর্জুনকে প্রবোধ দিয়ে কৃষ্ণ বোঝাচ্ছেন যে - আমি লোকক্ষয়কারী মহাকাল। তুমি না মারলেও এরা সবাই মরবে। তুমি শত্রুদের বধ করে যশস্বী হয়ে রাজ্য ভোগ কর।
    দ্রোণ, ভীষ্ম, জয়দ্রথ, কর্ণ সবাই এর মধ্যেই আমার হাতে মারা পড়েছে। কাজেই তুমি মৃতদের মারবে।
    ফলে তোমার কোন দায়িত্ব নেই, তুমি নিমিত্ত মাত্র। ভয় না পেয়ে যুদ্ধ কর, নিশ্চয়ই বিজয়ী হবে (১১/৩২-৩৩-৩৪)।
    “তস্মাৎ ত্বমুত্তিষ্ঠ যশো লভস্ব, জিত্বা শত্রূন্‌ ভুঙ্ক্ষ রাজ্যং সমৃদ্ধম্‌।
    ময়ৈবৈতে নিহতাঃ পূর্বমেব, নিমিত্তমাত্রং ভব সব্যসাচিন্‌”।। (১১/৩৩)

    শেষ অধ্যায়ে আবার উনি ফিরে গেলেন বর্ণাশ্রমের যুক্তিতে , “মানুষ নিজ নিজ বর্ণ ও আশ্রমের কর্মে নিরত হইয়া জ্ঞাননিষ্ঠাযোগ্যতানুসার সিদ্ধিলাভ করে”।
    “স্বে স্বে কর্মণ্যভিরতঃ সংসিদ্ধিং লভতে নরঃ।
      স্বকর্মনিরতঃ সিদ্ধিং যথা বিন্দতি তচ্ছৃণু”।। (১৮/৪৫)

    কিন্তু, “স্বীয় বর্ণ ও আশ্রমবিহিত ধর্ম অঙ্গহীনভাবে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কারণ, স্বভাবনিয়ত* কর্ম করিলে মানুষ পাপভাগী হয় না”।
    “শ্রেয়ান্‌ স্বধর্মো বিগুণঃ পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ।
    স্বভাবনিয়তং কর্ম কুর্বন্নাপ্নোতি কিল্বিষম্‌”।।(১৮/৪৭)
    *স্বভাবনিয়ত=স্বভাবজাত (গীতা ১৮/৪২-৪৪)। স্বামী জগদীশ্বরানন্দের টীকা (শ্রীমদ্ভগবদগীতা, পৃঃ ৩৮৯)।

    এখানে দুটো জিনিস স্পষ্ট। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধকে ন্যায় যুদ্ধ প্রতিপাদিত করতে শ্রীকৃষ্ণ গীতাতে কোন নীতিশাস্ত্রের সিদ্ধান্তকে আশ্রয় করেন নি। বরং তাঁর যুক্তি মূলতঃ একটাই -- ক্ষাত্রধর্ম পালন করলে ক্ষত্রিয়ের নরসংহারের পাপ হয় না। এখানে মনুসংহিতায় কথিত চতুর্বর্ণের আচরণবিধিকে হুবহু সমর্থন করা হয়েছে গীতার অন্তিম অধ্যায় (১৮তম) মোক্ষযোগে। দেখাই যাচ্ছে গীতা (১৮/৪৭) শ্লোকে জাতপাত এবং তার গুণকে জন্মজাত বলছেন, দক্ষতাজনিত যুক্তিকে খণ্ডন করছেন।

    আর শেষ অধ্যায়ে (১৮শ, মোক্ষযোগ) আরও ধমক দিচ্ছেনঃ  
    যদি তুমি পাণ্ডিত্যের অভিমানে আমার কথা না শোন, তাহা হইলে তুমি পুরুষার্থের অযোগ্য হইবে। (১৮/৫৮)
    ভাবছ, যুদ্ধ করবে না? ওটা তোমার অহংকারজনিত ভ্রম। তোমার ক্ষত্রিয় স্বভাবই তোমাকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করাবে। (১৮/৫৯)।

    শেষে ছাড়লেন মোক্ষম তিরঃ
    ‘সর্বধর্মান্‌ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।
    অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ’।। (১৮/৬৬)

    সকল ধর্মের অনুষ্ঠান ছেড়ে একমাত্র আমার শরণাগত হও। আমি তোমাকে সব রকম পাপের থেকে মুক্ত করব, খামোখা শোক কর না।

    ব্যস্‌; অর্জুন বললেন - আমি আপনার উপদেশ শুনে মোহমুক্ত হলাম, অজ্ঞান নষ্ট হয়েছে। এখন আপনার কথামত কাজ করব। (১৮/৭৩)।

    সোজা কথায়, সমগ্র গীতায় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকে ন্যায় যুদ্ধ বলতে শ্রীকৃষ্ণ জাতিধর্ম পালন এবং আমি বলছি তাই — এছাড়া আর কোন নীতি ও যুক্তির কথা বলেন নি।

    এ’ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ কী বলেছেন?

    “পারস্যে” ভ্রমণকাহিনীতে রবীন্দ্রনাথ গীতার নীতিবোধকে স্পষ্ট বিদ্রূপে বিঁধছেন — “গীতায় প্রচারিত তত্ত্বোপদেশও এইরকম একটি উড়োজাহাজ – অর্জুনের কৃপাকাতর মনকে সে এমন দূরলোকে নিয়ে গেল — যেখানে মারেই-বা কে, মরেই-বা কে,  কেই-বা আপন কেই-বা পর। বাস্তবকে আবৃত করার এমন অনেক তত্ত্বনির্মিত উড়োজাহাজ মানুষের অস্ত্রশালায় আছে, মানুষের সাম্রাজ্যনীতিতে, সমাজনীতিতে, ধর্মনীতিতে। সেখান থেকে যাদের উপর মার নামে তাদের সম্বন্ধে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে এই যে, ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে”। ( পারস্যে, পৃঃ ৫)

    ষোড়শ শতাব্দীতে মধ্যযুগের চার্চ আশ্রিত স্কোলাস্টিক দর্শনের বিপরীতে ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসী ফরাসী দার্শনিক রনে দেকার্তে বলেছিলেন – সবকিছুকেই প্রশ্ন করে বাজিয়ে নিয়ে তারপর বিশ্বাস করা উচিত; এমনকি ঈশ্বরকেও যুক্তিসিদ্ধ হতে হবে। সেখান থেকেই ইউরোপিয় দর্শনে আধুনিকতার সূত্রপাত।

    আমার আকাঙ্ক্ষা আজ একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ধর্মচর্চা ও ধর্মদর্শনের গ্রন্থগুলো আরও যুক্তিসিদ্ধ হোক, আরও জীবনমুখী হোক। আর সমস্যার সমাধান হিসেবে হত্যার ঔচিত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠুক, নায়যুদ্ধ অন্যায়যুদ্ধের সংজ্ঞা এবং প্রাসংগিকতা নিয়ে আরও সনিষ্ঠ আলোচনা হোক।

    =======================================

    ঋণস্বীকারঃ এই প্রবন্ধটি দু’বছর আগে মধ্যমগ্রাম নিবাসী কবি কমলেশ পালের অনুপ্রেরণায় লেখা। ওঁর কাছে আমি  রবীন্দ্রনাথের ‘পারস্যে’ প্রবন্ধে গীতা নিয়ে মন্তব্যটির উল্লেখ করার জন্যে বিশেষভাবে ঋণী।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 174.251.160.44 | ১৩ মার্চ ২০২৩ ০৮:২৮739658
  • আর ১৮ অধ্যায়ের ৬৭ নম্বর ভার্সটা প্রথমে পড়ে তারপর এগোলে ভালো। 
  • Ranjan Roy | ১৩ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৪739660
  • চতুর্ভুজ, 
    আপনার কথা মেনেঃ
    "ইদম তে না তপস্কায় না ভক্তায় কদাচন।
      ন চাশুশ্রূষব বাচ্যম্‌ ন চ মাম্‌ যোয়ভ্যসূয়তি"।। (গীতা, ১৮/৬৭)।
     
    এই গুহ্যজ্ঞান যা তোমাকে বলা হচ্ছে সেটা  যারা --তপস্বী নয়, ভক্ত নয়, আধ্যাত্মিক বিষয়  শুনতে অনিচ্ছুক বা আমার বিষয়ে অসূয়া বা ঈর্ষা করে-- তাদের কাছে কক্ষণো বলবে না। 
     বেশ, আমি তাহলে গীতাপাঠ বা চর্চায় অধিকারী নই। 
     এখানে মুশকিল হচ্ছে দুটো।
    এক, 
    আমি বরানগর মিশনে খাওয়ার সময় নিয়মিত গীতাপাঠ করেছি কয়েক বছর। ক্লাস সেভেন থেকে নাইন অব্দি। ফলে ওই শ্লোকটির সঙ্গে ভালভাবে পরিচিত।
     
     দুই, 
    রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয়ই অধিকারী ছিলেন। এতসবের পরেও উনি গীতার দর্শন নিয়ে বললেনঃ
    "“গীতায় প্রচারিত তত্ত্বোপদেশও এইরকম একটি উড়োজাহাজ – অর্জুনের কৃপাকাতর মনকে সে এমন দূরলোকে নিয়ে গেল — যেখানে মারেই-বা কে, মরেই-বা কে,  কেই-বা আপন কেই-বা পর। বাস্তবকে আবৃত করার এমন অনেক তত্ত্বনির্মিত উড়োজাহাজ মানুষের অস্ত্রশালায় আছে, মানুষের সাম্রাজ্যনীতিতে, সমাজনীতিতে, ধর্মনীতিতে। সেখান থেকে যাদের উপর মার নামে তাদের সম্বন্ধে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে এই যে, ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে”। ( পারস্যে, পৃঃ ৫)
     
    আমি পড়েছি স্বামী জগদীশ্বরানন্দের এবং জগদীশ চন্দ্র ঘোষের টীকা সমেত এডিশন দুটো।
    তবে আপনার পরামর্শ মেনে শ্রীধর স্বামীও পড়ব। 
  • Ranjan Roy | ১৩ মার্চ ২০২৩ ১২:৩৭739661
  • শ্রীধর স্বামী বুক  করে ফেললাম। ১৮ তারিখ নাগাদ পেয়ে যাব। 
  • ১০৮ | 103.76.82.52 | ১৩ মার্চ ২০২৩ ১৬:২৬739664
  • আর্কাইভ ভর্তি গীতা। নানা ভাষায়। সটীক। শুধু গীতা বিষয়েই এক মনোজ্ঞ ডেসক্রিপটিভ বিবলিওগ্রাফি হয়।
  • রবীন্দ্রনাথ | 2405:8100:8000:5ca1::24:fd20 | ১৩ মার্চ ২০২৩ ১৬:৩৬739665
  • এই মহাভারতে কেবল যে নির্বিচারে জনশ্রুতি সংকলন করা হইয়াছে তাহাও নহে। আতস-কাচের এক পিঠে যেমন ব্যাপ্ত সূর্যালোক এবং আর - একপিঠে যেমন তাহারই সংহত দীপ্তিরশ্মি, মহাভারতেও তেমনি এক দিকে ব্যাপক জনশ্রুতিরাশি আর - এক দিকে তাহারই সমস্তটির একটি সংহত জ্যোতি — সেই জ্যোতিটিই ভগবদ্‌গীতা। জ্ঞান কর্ম ও ভক্তির যে সমন্বয়যোগ তাহাই সমস্ত ভারত ইতিহাসের চরমতত্ত্ব। নিঃসন্দেহই পৃথিবীর সকল জাতিই আপন ইতিহাসের ভিতর দিয়া কোনো সমস্যার মীমাংসা কোনো তত্ত্ব নির্ণয় করিতেছে, ইতিহাসের ভিতর দিয়া মানুষের চিত্ত কোনো একটি চরম সত্যকে সন্ধান ও লাভ করিতেছে — নিজের এই সন্ধানকে ও সত্যকে সকল জাতি স্পষ্ট করিয়া জানে না, অনেকে মনে করে পথের ইতিহাসই ইতিহাস, মূল অভিপ্রায় ও চরম গম্যস্থান বলিয়া কিছুই নাই। কিন্তু ভারতবর্ষ একদিন আপনার সমস্ত ইতিহাসের একটি চরম তত্ত্বকে দেখিয়াছিল। মানুষের ইতিহাসের জ্ঞান ভক্তি ও কর্ম অনেক সময়ে স্বতন্ত্রভাবে, এমন - কি পরস্পর - বিরুদ্ধভাবে আপনার পথে চলে ; সেই বিরোধের বিপ্লব ভারতবর্ষে খুব করিয়াই ঘটিয়াছে বলিয়াই এক জায়গায় তাহার সমন্বয়টিকে স্পষ্ট করিয়া সে দেখিতে পাইয়াছে। মানুষের সকল চেষ্টাই কোনখানে আসিয়া অবিরোধে মিলিতে পারে মহাভারত সকল পথের চৌমাথার সেই চরম লক্ষ্যের আলোকটি জ্বালাইয়া ধরিয়াছে। তাহাই গীতা। এই গীতার মধ্যে য়ুরোপীয় পণ্ডিতেরা লজিকগত অসংগতি দেখিতে পান। ইহাতে সাংখ্য, বেদান্ত এবং যোগকে যে একত্রে স্থান দেওয়া হইয়াছে তাঁহারা মনে করেন সেটা একটা জোড়াতাড়া ব্যাপার — অর্থাৎ তাঁহাদের মতে ইহার মূলটি সাংখ্য ও যোগ, বেদান্তটি তাহার পরবর্তী কোনো সম্প্রদায়ের দ্বারা যোজনা করা। হইতেও পারে মূল ভগবদ্‌গীতা ভারতবর্ষের সাংখ্য ও যোগতত্ত্বকে আশ্রয় করিয়া উপদিষ্ট, কিন্তু মহাভারত - সংকলনের যুগে সেই মূলের বিশুদ্ধতা-রক্ষাই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল না — সমস্ত জাতির চিত্তকে সমগ্র করিয়া এক করিয়া দেখাই তখনকার সাধনা ছিল। অতএব যে গ্রন্থে তত্ত্বের সহিত জীবনকে মিলাইয়া মানুষের কর্তব্যপথ নির্দেশ করা হইয়াছে সে গ্রন্থে বেদান্ততত্ত্বকে তাঁহারা বাদ দিতে পারেন নাই। সাংখ্যই হউক যোগই হউক বেদান্তই হউক সকল তত্ত্বেরই কেন্দ্রস্থলে একই বস্তু আছেন, তিনি কেবলমাত্র জ্ঞান বা ভক্তি বা কর্মের আশ্রয় নহেন, তিনি পরিপূর্ণ মানবজীবনের পরমাগতি, তাঁহাতে আসিয়া না মিলিলে কোনো কথাই সত্যে আসিয়া পৌঁছিতে পারে না ; অতএব ভারতচিত্তের সমস্ত প্রয়াসকেই সেই এক মূল সত্যের মধ্যে এক করিয়া দেখাই মহাভারতের দেখা। তাই মহাভারতের এই গীতার মধ্যে লজিকের ঐক্যতত্ত্ব সম্পূর্ণ না থাকিতেও পারে কিন্তু তাহার মধ্যে বৃহৎ একটি জাতীয় জীবনের অনির্বচনীয় ঐক্যতত্ত্ব আছে। তাহার স্পষ্টতা ও অস্পষ্টতা, সংগতি ও অসংগতির মধ্যে গভীরতম এই একটি উপলব্ধি দেখা যায় যে, সমস্তকে লইয়াই সত্য, অতএব এক জায়গায় মিল আছেই। এমন - কি, গীতায় যজ্ঞকেও সাধনাক্ষেত্রে স্থান দিয়াছে। কিন্তু গীতায় যজ্ঞ ব্যাপার এমন একটি বড়ো ভাব পাইয়াছে যাহাতে তাহার সংকীর্ণতা ঘুচিয়া সে একটি বিশ্বের সামগ্রী হইয়া উঠিয়াছে। যে সকল ক্রিয়াকলাপে মানুষ আত্মশক্তির দ্বারা বিশ্বশক্তিকে উদ ্‌বো ধিত করিয়া তোলে তাহাই মানুষের যজ্ঞ। গীতাকার যদি এখনকার কালের লোক হইতেন তবে সমস্ত আধুনিক বৈজ্ঞানিক অধ্যবসায়ের মধ্যে তিনি মানুষের সেই যজ্ঞকে দেখিতে পাইতেন। যেমন জ্ঞানের দ্বারা অনন্ত জ্ঞানের সঙ্গে যোগ, কর্মের দ্বারা অনন্ত মঙ্গলের সঙ্গে যোগ, ভক্তির দ্বারা অনন্ত ইচ্ছার সঙ্গে যোগ, তেমনি যজ্ঞের দ্বারা অনন্ত শক্তির সঙ্গে আমাদের যোগ — এইরূপে গীতায় ভুমার সঙ্গে মানুষের সকল প্রকারের যোগকেই সম্পূর্ণ করিয়া দেখাইয়াছেন — একদা যজ্ঞকাণ্ডের দ্বারা মানুষের যে চেষ্টা বিশ্বশক্তির সিংহদ্বারে আঘাত করিতেছিল গীতা তাহাকেও সত্য বলিয়া দেখিয়াছে।
  • Subhadeep Ghosh | ১৩ মার্চ ২০২৩ ১৬:৪৭739666
  • রঞ্জনবাবু, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে লেখা আজকাল তেমন দেখি না। আপনার লেখা পড়ে সমৃদ্ধ হই। আরেকটি বইয়ের দিকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যদি না আপনার পড়া থাকে। অরবিন্দের 'গীতা-নিবন্ধ', শ্রী অরবিন্দ আশ্রম থেকে প্রকাশিত।
  • Ranjan Roy | ১৩ মার্চ ২০২৩ ২০:২৮739674
  • @রবীন্দ্রনাথ
    "পারস্যে" প্রবন্ধে গীতার " ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে" তত্ত্বকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন যে রবীন্দ্রনাথ তিনিই আরও অনেক আগে গীতার প্রশংসা করেছিলন। 
    দুটোই ওনার গীতা নিয়ে উপলব্ধি, তবে বিভিন্ন বয়সে।
     
    আপনি যদিও উদ্ধৃতিটির মূল প্রবন্ধের নামের উল্লেখ করেন নি, তবু ভাষার প্রকরণগত দিক থেকে ওই লেখাটি অনেক আগের বলে মনে হচ্ছে।
     
    কেউ কড়ি ও কোমল, সন্ধ্যা সংগীত, মায়ার খেলাতেই মুগ্ধ হতে পারেন।
    কেউ সেখানে না থেমে পুনশ্চ , নবজাতক, প্রান্তিকে।
    পছন্দ অপনী অপনী।
  • Ranjan Roy | ১৩ মার্চ ২০২৩ ২০:৩৫739676
  • শুভদীপ,
    না, শ্রী অরবিন্দ ডিভাইন লাইফ পড়েছিলাম, গীতা - নিবন্ধ পড়া হয় নি। এবার নিশ্চয়ই পড়ব।
    উনি বৈদান্তিক এবং ওঁর লজিক বেশ আঁটোসাঁটো।
    সবসময় অন্য মত শুনতে আগ্রহী, ইকো চেম্বার পছন্দ  নয়।
    আপনাকে ধন্যবাদ। 
  • মূল প্রবন্ধের নামের উল্লেখ | 77.111.245.13 | ১৩ মার্চ ২০২৩ ২০:৪৩739677
  • পরিচয় - ভারতবর্ষে ইতিহাসের ধারা - ১৩১৮
  • Ranjan Roy | ১৩ মার্চ ২০২৩ ২২:২৫739679
  • ধন্যবাদ। 
    দেখা যাচ্ছে আমার অনুমান সঠিক।
    "পারস্যে" প্রবন্ধটি 1339 থেকে 1343 অব্দি প্রথমে আষাঢ় সংখ্যা প্রবাসীতে,  তারপর বিচিত্রা পত্রিকায় চারবছর ধরে ধারাবাহিক প্রকাশিত  হয়।
    আপনার উদ্ধৃত "ভারত ইতিহাসের ধারা" 1318 সালে, অর্থাৎ কম করে 21 থেকে 25 বছর আগে।
     
    তাহলে কোন লেখাটির  মন্তব্যকে গীতার দর্শন নিয়ে রবীন্দ্রনাথের অভিমত বলে ধরা উচিত?
    দুই দশক আগের মত, নাকি পরেরটা?
     
    মুসোলিনির ফ্যাশিস্ত সরকারের প্রশংসাতেও রবীন্দ্রনাথ প্রথমে অভিভূত হয়েছিলেন,  পরে নিন্দায় মুখর।
    কোনটি রবীন্দ্রনাথের অভিমত? আগেরটি না পরের?
  • dc | 2401:4900:1f2b:75c3:fd0b:cdaa:cf3e:518d | ১৩ মার্চ ২০২৩ ২৩:২৫739680
  • ইয়ে, রবীন্দ্রনাথ যা কিছু বলেছেন তাই কি বেদবাক্য? এই ফিল্ডে কি কোন ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কলারলি কনসেনসাস ওপিনিয়ন নেই? নাকি কোন একজন যা কিছু বলেছেন শুধু তাই নিয়েই থাকতে হবে? 
  • আজ্ঞে | 2405:8100:8000:5ca1::d6:e12 | ১৩ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪৬739682
  • রবীন্দ্রনাথকে বাদ দিন। ১৯৩৫এও চিঠিতে লিখছেন, "কুৎসিত আদর্শবিকৃতি থেকে দেশকে রক্ষা করবার জন্যে যিনি প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রবৃত্ত, তিনি তো ধর্ম্মের জন্যেই প্রাণ দিতে প্রস্তুত; শ্রীকৃষ্ণ অর্জ্জুনকে এই ধর্ম্মের উদ্দেশেই প্রাণ দিতে ও নিতে স্বয়ং উপদেশ দিয়েছিলেন।" তাছাড়া বুদ্ধ ও গীতার শ্রীকৃষ্ণকে বলছেন নরদেবতা খুঁড়লে আর কি কি বেরোয় ঠিক নেই। এই সাক্ষীকে ধোপে টেকানো মুস্কিল হবে। অন্য মুরুব্বি ধরুন।
  • Ranjan Roy | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০০:১৬739683
  • ডিসির বক্তব্যের সঙ্গে সহমত।
     
    কিন্ত আমার গোটা লেখাটি গীতার মূল টেক্সট ধরে ধরে।
    কোন মুরুব্বি ধরে নয়। 
    রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতিটি কেকের উপর কিসমিস মাত্র। 
    কিন্তু কেউ মূল বক্তব্য বা প্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করছেন না।
     
    আর 1935 এর লেখাটির শীর্ষক ও প্রেক্ষিত জানালে বাধিত হব।
  • :|: | 174.251.160.44 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০২:৪৮739684
  • "কিন্ত আমার গোটা লেখাটি গীতার মূল টেক্সট ধরে ধরে।
    কোন মুরুব্বি ধরে নয়।" সেইটাই সমস্যা। বাচ্চারা যেমন অ-এ অজগর আসছে তেড়ে অজগর সম্পর্কে কোনও ধারণা ছাড়াই তেমন করে গীতা রিডিং পড়াকে আর যাই হোক গীতা পাঠ বলে না। আগে মুরুব্বি ধরে জিনিসটা শিখুন তারপর খাবলে খাবলে কোট করবেন। অর্থনীতি পড়তে গিয়ে মুরুব্বি ধরতে পেরেছেন গীতা পড়ার জন্য পারবেন না? সৎ প্রচেষ্টা থাকলে একদিন নিশ্চয়ই মৌলিক লেখা লিখতে পারবেন -- এজন্মে না হলেও জন্মান্তরে। গুড লাক। 
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:4086:1b9c:4988:c8a5 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৪:২৬739685
  • কারা কারা মুরুব্বি? সে নিয়ে কোন ঐক্যমত্য আছে কি?
  • :|: | 174.251.160.44 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৪:৪৭739686
  • ঐক্যমত্য যদি বলেন তা সে কোথাকার মুরুব্বি নিয়েই বা আছে? এমনকি অর্থ্যনীতিতে অমর্ত্য সেনের মুরুব্বীয়ানা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কোথাকার কে জানে কোন ভাইস চ্যান্সেলার বললেন উনি তো নোবেল পুরস্কার পানইনি! 
    সেই জন্য ঐক্যমত্যের অপেক্ষায় না থেকে বরং সাইটের ট্যাগ লাইনটা ফলো করলে ভালো, "গুরু ধরুন"।
  • Amit | 121.200.237.26 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৫:৫০739687
  • হেইডাই তো হোলো গে আসল মুশকিল। কিছু পাবলিক তো এদ্দিন সেই আশায় নিত্যানন্দ , আশারাম বাপু , রাম রহিম দের কেও গুরু ধরেছিলো বটেক। 
     
    তাপ্পর এসব সিদ্ধপুরুষ চিত্তের বেগড়ে আর আইনের যাঁতাকলে পুরো ভাজাপুরুষ হয়ে গ্যালেন। তো আজকে যাকে মহান গুরু ভেবে সাপ্টে ধরছেন , কালকে তিনি যে অন্য কাউকে জাপটে ধরবেন না সে ওয়ারেন্টি কোথায় ? 
     
    যাকগে। রঞ্জনদা লিখতে থাকুন। বেলাইন করবোনা। বুঝি না বুঝি ওনার লেখা গুলো এনজয় করি। 
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:4086:1b9c:4988:c8a5 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৬:২৯739688
  • রঞ্জন, আপনি লিখুন। আমি অন্ততঃ আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।
  • Ranjan Roy | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৬:৩৯739689
  • গুরু ও গুরুবাদ
    --------------------
    যদি বোঝার জন্য গুরুর দরকার,  সেই অর্থে বলেন তাহলে আমার গুরু আছেন বৈকি, এক নয় একাধিক, বলুন একগণ্ডা।
    " ও তোর অনেক গুরু , শতেক গুরু, গুরু অগণন"।
     
    সংস্কৃত দখল নেই। তাই গীতাপাঠে আমার গুরু স্বামী জগদীশ্বরানন্দ এবং জগদীশ চন্দ্র ঘোষ। 
    একজন নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী, অন্যজন সাকারে।
     
    যেমন, দর্শন চর্চায় আমার প্রধান গুরু রনে দেকার্ত, যিনি বলেছিলেন-- কোন কিছুই আপ্তবাক্য বলে নির্বিচারে মেনে নেওয়া উচিত নয়। আগে বাজিয়ে দেখতে হবে। এমনকি ঈশ্বরকেও যুক্তিসিদ্ধ হতে হবে ।
    দ্বিতীয় গুরু পূর্ব মীমাংসা দর্শনের আচার্য কুমারিল ভট্ট। 
    যিনি অসাধারণ তার্কিক। অপৌরুষেয় বেদ মানেন, কিন্ত সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করেন।
    তৃতীয় গুরু শূন্যবাদী বৌদ্ধ দার্শনিক নাগার্জুন।
     
    কিন্তুক গুরুবাদী নই। তাই  গুরুর সব বাক্য চোখ বুঁজে মানতে পারি না।
    তাই "যদ্যপি  আমার গুরু শুঁড়িবাড়ি যায়,
           তথাপি আমার গুরু রামানন্দ রায়" গোছের গুরুভক্তি আমার নেই। তাই উপরোক্ত গুরুদেরও অনেক সিদ্ধান্ত আমার অমান্য।
  • Ranjan Roy | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:০১739690
  • * অতেক গুরু। 
     
    শেষ দুটো কথা।
    গীতাকে যদি দার্শনিক গ্রন্থ ভাবেন তাহলে তার প্রেক্ষিত ও তত্ত্ব নিয়ে বিভিন্ন মতামত ও বিতর্ক চলবে। গুরুর চরণ ধর -- চলবে না। জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে কেউ শেষ কথা নন।
    অর্থনীতির কেইনস্ মার্ক্স অমর্ত্য  -- কেউই সমালোচনার উর্ধে নন।
    আর যদি গীতাকে শ্রীভগবানের মুখনি:সৃত মনে করেন তাহলে কোন কথাই নেই । বিতর্ক হবে শুধু কার ভাষ্য সঠিক বলে মানব -- শংকর, রামানুজ না শ্রীধর স্বামী-- সেই নিয়ে।
    নানা মুনির নানা মত যে। একেক জনের নৌকো একেক ঘাটে নিয়ে যায়।
    2 আমি গীতার 700 শ্লোকের টীকা লিখতে বসেছি কি?
    শুধু যুদ্ধ ও হিংসার  নৈতিক যুক্তির এবং বর্ণাশ্রমের যুক্তির চর্চা করেছি।
    সেই বিষয়ের কোন প্রাসঙ্গিক শ্লোক যদি বাদ পড়ে থাকে, তার উল্লেখ করলে বাধিত হব।
  • t | 2a03:94e0:242c:dead::1 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:০৫739691
  • গীতার তো অনেক ভাষ্য আছে। একটাও পড়েননি?
    কে সি পালের মত দাবি নিয়ে হাজির হলে লোকে সিরিয়াসলি কাউন্টার করবে আশা করেন?
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:4086:1b9c:4988:c8a5 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:১৩739693
  • কেসি পালের তত্ত্বের গোলমাল খুব সহজ বুদ্ধিতেই বোঝা যায়। যেমন রেট্রোগ্রেড মোশন অফ প্ল্যানেটস কেসি পালের তত্ত্বে সহজে ব্যাখ্যা করা যায়না।
     
    রঞ্জনের লেখায় সেরকম কোন গোলমাল দেখালে ভাল লাগবে।
  • dc | 2401:4900:1cd1:bbaf:c596:3067:8f9a:98bc | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৭:৪১739694
  • এই লেখাটায় রঞ্জনদার প্রোপোজিশান হলো এইটাঃ "সোজা কথায়, সমগ্র গীতায় কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধকে ন্যায় যুদ্ধ বলতে শ্রীকৃষ্ণ জাতিধর্ম পালন এবং আমি বলছি তাই — এছাড়া আর কোন নীতি ও যুক্তির কথা বলেন নি"। 
     
    এই প্রোপোজিশান এর পক্ষে রঞ্জনদা যেসব যুক্তি দিয়েছেন, তাতে তো আমার কোন লজিকাল ফ্যালাসি চোখে পড়লো না। এমনিতেও গীতা, বাইবেল, কোরান ইত্যাদি সব জায়গাতেই দেখা যায় বেসিক কথা হলো আমি যা বলছি তাই মেনে নাও, প্রশ্ন করো না। "আমি বলছি তাই" - এর বাইরে যেতে গেলে সেটা বাই ডেফিনিশান আর রিলিজিয়ন থাকে না। 
  • hi | 2405:8100:8000:5ca1::e3:d3ba | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৮:৩৯739695
  • কেসিপালের তত্ত্বের গোলমাল যিনি কেসিপালকে বুঝিয়ে দেবেন, রঞ্জনের তত্ত্বের গোলমাল তিনিই রঞ্জনকে বুঝিয়ে দেবেন। পড়াশোনা করিনির ইংরেজি 'গুরু ধরিনি' শুনে সবাই উৎসাহী নাই হতে পারে।
  • Amit | 121.200.237.26 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪১739696
  • কেও বলেন গুরু ধরুন। কেও বলেন কেসি পাল। আবার কেও বলেন কয়েক জন্ম পরে মৌলিক লেখা বেরোবে (জন্মান্তর -টর আবার যাঁরা মানে না তাদের মহা চাপ  মাইরি )। কিন্তু রঞ্জনদা কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে টু দা পয়েন্ট ওনার ভুলগুলো বা পাল্টা যুক্তি কেও আর দ্যান না কেন ? আর পাল্টা যুক্তিই বা কেন মহায় ? এক্কেরে কঠিন কঠিন সব তত্তবোধক প্রশ্ন করে ওনাকে প্যাচে ফেলে দ্যান না ? দ্যাখেন না সেই ইউনিফর্ম সিভিল কোডে র টইতে এমন চেপে ধরা হয়েছিল যে  রঞ্জনদা শেষে উদাস হয়ে মন কি বাত মোডে চলে গ্যালেন। 
     
    নেহাত গীতা পড়ার বয়স এখনো হয়নি। ভাব্ছি আর ২৫ বছর পরে ধরবো। তদ্দিন একটু পাপ টাপ করে নি -নাহলে  পুন্য দিয়ে ব্যালান্স কি করবো ছাই ? নাহলে দেখতেন এক্কেরে ডুয়েল। 
  • খি খি খি | 2405:8100:8000:5ca1::33:5dc2 | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৮:৪৭739697
  • গীতাকে খুনের হাতিয়ার বলতে দেখে ভক্তিবাদীদের হেব্বি ফাটছে। অইজন্যি পাকে প্রকারে এগোতে দিচ্ছে না ব্যক্তি আক্রমণ করে যাচ্ছে। ফুটোময়ী অমন  রাকৃমির ভেতরের ছুঁচোর কেত্তন লেখায় ক্ষেপে আছে। তারপর এইটে ত দলেবলে নেমে পড়েছে।
     
  • Ranjan Roy | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:৩৩739698
  • টি এবং হই
    মনে হচ্ছে আমার লেখাটি মন দিয়ে পড়েন নি।
    স্পষ্ট করেই বলেছি তিনটে ভাষ্য পড়েছি।
    জগদীশ্বরানন্দের টীকায় শংকরাচার্যের ভাষ্য (অদ্বৈতবাদ) এবং জগদীশ চন্দ্র ঘোষের টীকায় রামানুজ ভাষ্য ( বিশিষ্টাদ্বৈত) অনেক বার পড়েছি। আর পড়েছিলাম সতীশ চন্দ্র দাশগুপ্তের বাংলা অনুবাদে গীতার গান্ধীভাষ্য।
    এছাড়াও চারখণ্ড ব্রহ্মসূত্রের দুই পরস্পর বিরোধীভাষ্য--- শংকরাচার্যের ও রামানুজ-- পড়েছি।
    শংকরাচার্যের মায়াবাদ ও অধ্যাস নিয়ে গুরুর পাতায় দুবছর আগে বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম। 
    অবশ্য আমার মত সাধারণ পাঠকের লেখা  আমার মতোই হবে।
     সিরিয়াসলি নেবেন কিনা সেটা আপনাদের ব্যাপার। 
     
     
  • Ranjan Roy | ১৪ মার্চ ২০২৩ ০৯:৫৭739699
  • বিনয়ের সঙ্গে জানাই, কপিলের সাংখ্য সূত্র ও ঈশ্বরকৃষ্ঞের কারিকা পড়েছি। মাধবাচার্যের বিখ্যাত কম্পেন্ডিয়াম "সর্বদর্শন সংগ্রহ", কুমারিল ভট্টের পূর্ব মীমাংসা দর্শনের শবরস্বামীর ভাষ্যের উপর দীপিকা পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। অবশ্যই গঙ্গানাথ ঝা'র ইংরেজি অনুবাদে।
    তেমনই ঋদ্ধ হলাম গৌতমের ন্যায়সূত্রের উদয়নভাষ্য  নিয়ে ফণীভূষণ তর্কবাগীশ ও অন্নংভট্টৈর টীকা পড়ে।
     
    আপাতত মজে আছি ভারতীয় দর্শনে  প্রমাণের স্ট্যাটাস নিয়ে বিমলকৃষ্ঞ মতিলালের অক্সফোর্ড থিসিস নিয়ে।
    এতে বৈদিক ন্যায় দর্শন ও বৌদ্ধ মাধ্যমিক দর্শনের ইন্টারেস্টিং বিতর্ক বোঝা সম্ভব হবে।
    এ নিয়ে কখনও লিখব।
     
    দেখতেই পাচ্ছেন, গুরু অনেক ধরেছি। কিন্ত গুরুবাদে বিশ্বাস নেই।
  • Vladimir | 2405:8100:8000:5ca1::1:e3ad | ১৪ মার্চ ২০২৩ ১০:৩০739700
  • গীতা তো খুনের হাতিয়ারই বটেক। এই পড়েই তো বিপ্লবীরা সাহেবদের মারতে আর মরতে নেমেছিল। কিন্তু গুরুরা শুধু মায়াপাতায় গলাবাজিতেই থেমে থাকবেন? এমন একটা মানববধপ্রচারক বদগ্রন্থকে ব্যান করার একটা মামলা করবেন না? রাশিয়ায় করা যায়নি বলে কি ভারতেও হাল ছেড়ে দেবেন? আমি e=mc square মানি না বললে গুরুতে লোকে এসে হাততালি দেবে যতক্ষণ না কেউ প্রমাণ করে দেখাচ্ছে- শুধু এইটুকুই প্রত্যাশা? থিঙ্ক বিগ, কমরেডস। অল দ্য বেস্ট।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন